Class 8 Chapter 3 Solution
ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা
1. MCQs Question Answer
1. ভারতে আগত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল-
(a) ধর্মীয় সংস্থা (b) বাণিজ্যিক সংস্থা
(c) আর্থিক সংস্থা (d) রাজনৈতিক সংস্থা
উত্তর: (b) বাণিজ্যিক সংস্থা
2. মাদ্রাজে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ঘাঁটি নির্মাণ করে-
(a) 1639 খ্রিস্টাব্দে (b) 1600 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1739 খ্রিস্টাব্দে (d) 1707 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (a) 1639 খ্রিস্টাব্দে
3. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির শীতকালীন প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল-
(a) ওটাকামুন্দ (b) মাদ্রাজ
(c) মুসুলিপটনম (d) সুরাট
উত্তর: (b) মাদ্রাজ
4. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির গ্রীষ্মকালীন প্রশাসনিক কেন্দ্র ছিল-
(a) ওটকামুন্দ (b) মাদ্রাজ
(c) ব্যাঙ্গালোর (d) সুরাট
উত্তর: (a) ওটকামুন্দ
5. প্রেসিডেন্সি গড়ে ওঠে যে দুর্গকে ঘিরে-
(a) ফোর্ট সেন্ট জর্জ (b) ফোর্ট উইলিয়াম
(c) ফোর্ট জর্জ (d) ফোর্ট সেন্ট পলস
উত্তর: (b) ফোর্ট উইলিয়াম
6. দ্বৈত শাসনের অবসানের পর বাংলার গভর্নর হন-
(a) ওয়ারেন হেস্টিংস (b) রবার্ট ক্লাইভ
(c) লর্ড কর্নওয়ালিস (d) ভ্যান্সিটার্ট
উত্তর: (a) ওয়ারেন হেস্টিংস
7. সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন-
(a) স্যার জন শোর (b) স্যার এলিজা ইম্পে
(c) চার্লস গ্রান্ট (d) স্যার উইলিয়াম কোলভিল
উত্তর: (b) স্যার এলিজা ইম্পে
8. কলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়-
(a) 1817 খ্রিস্টাব্দে (b) 1800 খ্রিস্টাব্দে –
(c) 1802 খ্রিস্টাব্দে (d) 1817 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (b) 1800 খ্রিস্টাব্দে
9. জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশনের বর্তমান নাম-
(a) বিদ্যাসাগর কলেজ (b) স্কটিশ চার্চ কলেজ
(c) হিন্দু কলেজ (d) প্রেসিডেন্সি কলেজ
উত্তর: (a) বিদ্যাসাগর কলেজ
10. বাংলার নদীপথগুলি জরিপ করেছিলেন-
(a) উইলিয়াম জোনস (b) এলিজা ইম্পে
(c) উইলিয়াম জেমস (d) জেমস রেনেল
উত্তর: (d) জেমস রেনেল
11. উইলিয়াম জোনস 1784 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-
(a) এশিয়াটিক সোসাইটি (b) কলকাতা মাদ্রাসা
(c) সংস্কৃত কলেজ (d) হিন্দু কলেজ
উত্তর: (a) এশিয়াটিক সোসাইটি
12. এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন-
(a) উইলিয়াম হান্টার (b) উইলিয়াম জোনস
(c) স্যার জন শোর (d) ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুন
উত্তর: (b) উইলিয়াম জোনস
14. 1812 খ্রিস্টাব্দে পাকাপাকি ভাবে বিলুপ্ত হয়-
(a) সিপাহি বাহিনি (b) দারোগা ব্যবস্থা
(c) ফৌজদারি ব্যবস্থা (d) সিভিল সার্ভিস
উত্তর: (b) দারোগা ব্যবস্থা
15. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়েছিল-
(a) 1784 খ্রিস্টাব্দে (b) 1793 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1770 খ্রিস্টাব্দে (d) 1772 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (b) 1793 খ্রিস্টাব্দে
16. সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা চালু করেন-
(a) ওয়ারেন হেস্টিংস (b) লর্ড কর্নওয়ালিস
(c) লর্ড ওয়েলেসলি (d) লর্ড বেন্টিঙ্ক
উত্তর: (b) লর্ড কর্নওয়ালিস
17. কার উদ্যোগে 11জন পণ্ডিত হিন্দু আইনগুলির সংকলন প্রস্তুত করেন?
(a) ওয়ারেন হেস্টিংস (b) লর্ড কর্নওয়ালিস
(c) লর্ড ওয়েলেসলি (d) লর্ড বেন্টিঙ্ক
উত্তর: (a) ওয়ারেন হেস্টিংস
18. দশশালা বন্দোবস্ত চালু করেন-
(a) ওয়ারেন হেস্টিংস (b) আলেকজান্ডার ডাফ
(c) লর্ড কর্নওয়ালিস (d) রবার্ট ক্লাইভ
উত্তর: (c) লর্ড কর্নওয়ালিস
19. ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন-
(a) ওয়ারেন হেস্টিংস (b) আলেকজান্ডার ডাফ
(c) লর্ড কর্নওয়ালিস (d) রবার্ট ক্লাইভ
উত্তর: (a) ওয়ারেন হেস্টিংস
2. Very Short Question Answer
1. বোম্বাই, মাদ্রাজ, কলকাতা, বাংলা
উত্তর: বাংলা (কলকাতা বাদে বাকি তিনটি ছিল ব্রিটিশ আমলের প্রেসিডেন্সি)।
2. ক্লাইভ, হেস্টিংস, দুপ্লে, কর্নওয়ালিস
উত্তর: দুপ্নে (দুপ্নে ফরাসি প্রতিনিধি, বাকিরা ইংরেজ গভর্নর)
3. বাংলা, বিহার, সিন্ধুপ্রদেশ, উড়িষ্যা
উত্তর: সিন্ধুপ্রদেশ (সিন্ধুপ্রদেশ ছাড়া বাকিগুলি বাংলা প্রেসিডেন্সির অংশ)
4. ডেভিড হেয়ার, উইলিয়াম কেরি, জোনাথন ডানকান, উইলিয়াম পিট
উত্তর: উইলিয়াম পিট (অন্যরা ছিলেন সমাজ সংস্কারক। পিট হলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী।
5. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কে চালু করেন?
উত্তর: লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ীবন্দোবস্ত চালু করেন?
6. ভারতীয় সেনারা ব্রিটিশ বাহিনীতে কি নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর: ভারতীয় সেনারা ব্রিটিশ বাহিনীতে সিপাহি নামে পরিচিত ছিল।
7. কর্নওয়ালিস কোড কত খ্রিস্টাব্দে চালু হয়?
উত্তর: 1793 খ্রিস্টাব্দে কর্নওয়ালিস কোড চালু হয়।
8. এলাহাবাদ অঞ্চলে কী ধরনের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা চালু ছিল?
উত্তর: মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করা হয়েছিল।
9. পরগনার জমি জরিপের কাজ কে শেষ করেন?
উত্তর: হজ ক্যামেরন 24 পরগনার জমি জরিপের কাজ শেষ করেন।
10. কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
উত্তর: 1857 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
11. জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশন এর সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: টমাস ব্যারিংটন মেকলে ছিলেন সভাপতি।
3. Short Question Answer
1. ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা কাকে বলে?
উত্তর: বাণিজ্যিক কারণে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের প্রায় সর্বত্র বাণিজ্যকুঠি নির্মাণ করলেও কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ ছিল এগুলির মধ্যে প্রধান। কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজের নিয়ন্ত্রণে আনা হয় আঞ্চলিক বাণিজ্য কেন্দ্রগুলিকে। এই তিনটিকে প্রেসিডেন্সি বলা হত। ব্রিটিশ কোম্পানির প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রিক এই ব্যবস্থাই প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা নামে পরিচিত।
2. কোম্পানি পরিচালিত আইন ব্যবস্থাকে সংহত করার ক্ষেত্রে লর্ড কর্নওয়ালিস কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?
উত্তর: ভারতে প্রচলিত আইনগুলির অভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেন ওয়ারেন হেস্টিংস, লর্ড কর্নওয়ালিস তাকে পূর্ণতা দেন। কর্নওয়ালিস- (ⅰ) দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচার ও রাজস্ব আদায়ের আলাদা ব্যাবস্থা করেন। (ii) জেলা থেকে সদর পর্যন্ত আদালত ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান। (iii) নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করার অধিকার দেন। (iv) সব আদালতের প্রধান বিচারপতি হতেন ইউরোপীয়।
3. কোম্পানির সিপাহি বাহিনী বলতে কী বোঝো।
উত্তর: ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সেনা নিয়োগ পদ্ধতি অনুসরণ করে এক স্থায়ী সেনাবাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেয়। উত্তর ভারতের কৃষকদের কোম্পানির সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হত। এমনকি তাদের সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা করে রাখা হত। সেনা নিয়োগের ক্ষেত্রে কোম্পানি পূর্ব প্রচলিত জাতভিত্তিক ধারণাগুলির বিরোধিতা করেনি। এইসব প্রথা মেনেই গড়ে ওঠে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সিপাহি বাহিনী।
4. কোম্পানির শাসনে জরিপের ক্ষেত্রে জেমস রেনেল এর ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর: জেমস রেনেল ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের জরিপ ও মানচিত্র নির্মাণের জনক ও সার্ভেয়ার জেনারেল। 1764 খ্রিস্টাব্দে তিনি বাংলার নদী পথগুলির জরিপ করার দায়িত্ব পান।
1767 খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি রেনেলকে ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল বা জরিপ বিভাগের প্রধান হিসাবে নিয়োগ করে।
নদীপথ জরিপ: বাংলার নদীপথগুলি জরিপ করে রেনেল মোট 16টি মানচিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এগুলি ছিল বাংলার নদীপথের প্রথম মানচিত্র।
জমি জরিপ : তাঁর মাধ্যমেই কোম্পানির তরফে জমি জরিপ করা ও তার ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ণয় করা বিশেষ গুরুত্ব পায়।
5. ওয়ারেন হেস্টিংস ও লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের তুলনামূলক আলোচনা করো। ওই সংস্কারগুলির প্রভাব ভারতীয় উপর কীভাবে পড়েছিল?
উত্তর: ওয়ারেন হেস্টিংস ও লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতের বিচার ব্যবস্থাকে ভারতীয় ও ইউরোপীয় সংমিশ্রণে নতুন করে গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। তবে উভয়ের সংস্কারের ক্ষেত্রে কিছু পার্থক্য ছিল।
6. কমিটি অফ রেভেনিউ কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?
উত্তর: নববিজিত ভারতে তথা বাংলায় কি পদ্ধতিতে এবং কি পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা হবে তা নির্ধারণের জন্য কমিটি অফ রেভেনিউ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
7. ভারতে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি কীভাবে গড়ে উঠেছিল?
উত্তর: এদেশে বাণিজ্যের প্রয়োজনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ঘাঁটি নির্মাণ করে। এগুলির মধ্যে প্রধান হল বোম্বাই, মাদ্রাজ ও কলকাতা। কালক্রমে ব্রিটিশ অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে এই তিনটি কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ রেসিডেন্সি বা প্রশাসনিক অঞ্চল গড়ে ওঠে।
8. ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা কী?
উত্তর: ব্রিটিশ বণিক সংস্থা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় উপ-মহাদেশে সুষ্ঠুভাবে বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কিছু বাণিজ্যিক ঘাঁটি নির্মাণ করে। যে গুলির অন্যতম ছিল মাদ্রাজ, বোম্বাই ও কলকাতা, পরবর্তীকালে এই তিনটি বাণিজ্য ঘাঁটিকে নিয়ে গড়ে ওঠে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা।
9. বাংলা প্রেসিডেন্সি কোন্ কোন্ অঞ্চল নিয়ে গড়ে ওঠে?
উত্তর: বাংলা প্রেসিডেন্সি আকারে ছিল সর্ববৃহৎ। এটি গড়ে ওঠে বাংলা, বিহার, ওড়িশা, আসাম, ত্রিপুরা, উত্তর ও মধ্য ভারত, পাঞ্জাব এবং গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা অঞ্চল নিয়ে।
10. পিটের ভারত শাসন আইনের লক্ষ্য কী ছিল?
উত্তর: পিটের ভারত শাসন আইনের লক্ষ্য ছিল-(i) রেগুলেটিং আইনের ত্রুটিগুলি দূর করা এবং (ii) ভারতে কোম্পানির কার্যকলাপের উপর কঠোর দৃষ্টি আরোপ করা। তাছাড়া তাদের উপর পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ চাপানোর চেষ্টা হয়েছিল এই আইন দ্বারা।
11. 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের দুটি শর্ত লেখো।
উত্তর: 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের দুটি শর্ত হল- (i) ব্রিটিশ সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে কোম্পানিকে ভারতে শাসনের অধিকার প্রদান করা। (ii) কোম্পানির সনদের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি মিশনারিদের ধর্ম প্রচারের অধিকার দান করা।
12. কর্নওয়ালিস কোড কী?
উত্তর: ভারতে গভর্নর জেনারেল রূপে লর্ড কর্নওয়ালিস আইনের ক্ষেত্রে যে সকল প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারগুলি করেছিলেন সেগুলির বিধিবদ্ধরূপ হল কর্নওয়ালিস কোড।
13. আইনের শাসন বলতে কী বোঝো।
উত্তর: আইনের শাসন কথার আক্ষরিক অর্থ হল আইনের চোখে সকলেই সমান। গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস ভারতে প্রচলিত ব্রাহ্মণ বা মৌলবিদের বিশেষ অধিকার বাতিল করে আইনের অনুশাসন চালু করেন। এখন থেকে একই অপরাধে সকলেই সমান শাস্তি পাবে ঠিক হয়, যা আইনের শাসন নামে পরিচিত।
14. আইনের চোখে সমতা বলতে কী বোঝো।
উত্তর: আইনের চোখে সমতা বলতে বোঝায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রীপুরুষ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিক সমান। আইন যেমন প্রত্যেককেই নিরাপত্তা দেবে, তেমনি সম অপরাধে সমান শাস্তি সবাইকেই প্রদান করবে।
15. শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের বলা হয়?
উত্তর: শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনের তিনজন প্রতিষ্ঠাতা ও ধর্মযাজক উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ডকে শ্রীরামপুর ত্রয়ী বলা হয়। এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা ভাষার উন্নয়নে এদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য।
16. শ্রীরামপুর মিশনারিদের অবদান কী ছিল?
উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনারিরা খ্রিস্টধর্ম প্রচারের জন্য এদেশে এলেও তাঁরা-(i) বাংলায় মুদ্রণ যন্ত্র বসিয়ে বাংলা ভাষার বিভিন্ন বই ছাপানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। (ii) ভারতীয় মহাকাব্যের ইংরেজি অনুবাদ করেন। (iii) বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশ করেন। (iv) বেশ কিছু ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। (v) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটান।
17. লর্ড মেকলে ভারতীয়দের সম্পর্কে কেমন ধারণা পোষণ করতেন?
উত্তর: লর্ড মেকলে ভারতীয়দের সম্পর্কে যথেষ্ঠ অবজ্ঞা সূচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন। তাঁর মতে ভারতীয়রা হল অসৎ, নীতিহীন এবং অসভ্য। ভারতীয় জ্ঞান বিজ্ঞানকেও তিনি হেয় করতেন। এজন্যে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের সুপারিশ করেছিলেন।
18. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ কবে কী উদ্দেশ্যে তৈরি হয়?
উত্তর: 1800 খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতে আগত ইউরোপীয় সিভিলিয়ানদের ভারতীয় ভাষা, রীতিনীতি এবং আইন সম্পর্কে অবহিত করার জন্য লর্ড ওয়েলেসলি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
19. হিন্দু কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতার নাম লেখো। এই কলেজের বর্তমান নাম কী?
উত্তর: হিন্দু কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা হলেন ডেভিড হেয়ার। হিন্দু কলেজ-এর বর্তমান নাম হল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।
20. এশিয়াটিক সোসাইটি কে কত খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন স্যার উইলিয়াম জোনস। 1784 খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
21. মেকলে মিনিট কী?
উত্তর: লর্ড বেন্টিঙ্ক এর শিক্ষা সচিব লর্ড মেকলে 1835 খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি এদেশের শিক্ষা সংক্রান্ত একটি সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করেন। যা মেকলে মিনিট নামে পরিচিত।
22. জেমস রেনেল বিখ্যাত কেন?
উত্তর: জেমস রেনেল ছিলেন একজন সার্ভেয়ার। তিনিই প্রথম বাংলার নদীপথগুলি জরিপ করে 16টি মানচিত্র নির্মাণ করেন। 1767 খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ কোম্পানির সার্ভেয়ার জেনারেল রূপে নিযুক্ত হয়েছিলেন।
23. এশিয়াটিক সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল?
উত্তর: এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য হল-(i) প্রাচ্যবিদ্যা চর্চা অর্থাৎ গবেষণা করা। (ii) প্রাচ্যের বিভিন্ন দুর্লভ সামগ্রীগুলির সংরক্ষণ করা এবং (iii) প্রাচ্য ভাষায় বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশ করা।
24. পিটের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব কী?
উত্তর: পিটের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী ইংল্যান্ডে বোর্ড অব কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বোর্ড অব কন্ট্রোল ভারতে কোম্পানির সামরিক ও অসামরিক শাসন এবং রাজস্ব ব্যবস্থাকে পুরোপুরি পরিচালনা করবে। পরে অবশ্য গভর্নর জেনারেল-এর হাতে সমস্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়।
25. পিটের ভারত শাসন আইনে কী বলা হয়?
উত্তর: পিটের ভারত শাসন আইনে বলা হয় যে- (i) কোম্পানির শাসনসংক্রান্ত ক্ষমতার উপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে। (ii) বোর্ড অব কন্ট্রোল তৈরি করা হবে। (iii) এই আইনে গভর্নর জেনারেল এর ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ বলে ঘোষণা করা হয়।
26. বোর্ড অব কন্ট্রোলের গঠন কীভাবে হয়েছিল?
উত্তর: বোর্ড অব কন্ট্রোলের গঠন প্রক্রিয়া তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল। যেমন- (i) 24 সদস্যের ডাইরেক্টরি সভার গঠন। (ii) 6 সদস্যের বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠন এবং (iii) 3 সদস্যের সিক্রেট কমিটি গঠন।
27. সুপ্রিম কোর্টের গঠন বর্ণনা করা।
উত্তর: 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইন অনুযায়ী- (i) একজন প্রধান বিচারপতি ও তিনজন সহকারী বিচারপতিকে। নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত হয়। (ii) বিচারপতিদের উপযুক্ত বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রথম প্রধান বিচারপতি হন স্যার এলিজা ইম্পে।
28. কে, কেন ভারতীয়দের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ করেন?
উত্তর: লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ভারতীয়দের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ করেন।
কারণ: লর্ড ওয়েলেসলি মূলত দুটি কারণে এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন- (i) হিতবাদ দ্বারা প্রভাবিত বেন্টিঙ্ক উদারবাদী ছিলেন। তিনি চাকুরি ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে চেয়েছিলেন। (ii) ইউরোপীয়দের তুলনায় ভারতীয়দের বেতন কম ছিল বলে কোম্পানির ব্যয়সংকোচ সম্ভব হত।
29. 1820 খ্রিস্টাব্দের পর ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর গঠন কাঠামোয় কী পরিবর্তন আনা হয়েছিল?
উত্তর: 1820 খ্রিস্টাব্দের পর ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর গঠন কাঠামোয় বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছিল। যেমন- (ⅰ) মহারাষ্ট্র ও মহীশূরের পাহাড়ি উপজাতি এবং নেপালি গোর্খাদের মধ্য থেকে সিপাহি নেওয়া শুরু হয়। (ii) উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণ ও রাজপুতদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সংখ্যা কমতে থাকে।
(iii) নিয়োগ বিধি সংক্রান্ত নানাবিধ পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
30. ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থায় সামরিক জাতি বলতে কাদের বোঝানো হত?
উত্তর: 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ সরকার ভারতকে সামরিক ও অসামরিক জাতির ভিত্তিতে ভাগ করে। যে সমস্ত অঞ্চলের সিপাহিরা বিদ্রোহ দমনে সাহায্য করেছিল তাদের সামরিক জাতি আখ্যায় ভূষিত করা হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোর্খা, শিখ, পাঠান ও রাজপুতরা সামরিক জাতি হিসাবে পরিচিত হয়।
31. কোন্ আইন অনুযায়ী কবে সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইন অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রেগুলেটিং আইনের সুপারিশ অনুযায়ী 1774 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়।
32. দেশীয় শিক্ষা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ব্রিটিশ শাসনের পূর্ব পর্যন্ত ভারতে যে শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল তা দেশীয় শিক্ষা নামে পরিচিত ছিল। দেশীয় শিক্ষা ছিল-(i) সংস্কৃত ভাষাভিত্তিক পাঠশালা, চতুষ্পাঠী ও টোল কেন্দ্রিক, ব্যাকরণ, ধর্ম ও ধর্মীয় বিধান। সম্পর্কিত। (ii) মক্তব ও মাদ্রাসায় আরবি ও ফারসি ভাষায় ধর্মীয় আখ্যান ও বিধিবিধান সম্পর্কিত বিষয় পড়ানো হত।
33. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে মিশনারিদের ভূমিকা কি ছিল?
উত্তর: ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে মিশনারিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যেমন- (i) শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশনের মাধ্যমে 26টি আঞ্চলিক ভাষায় বই ছাপানোর ব্যাবস্থা করা হয়েছিল। (ii) এসময় আলেকজান্ডার ডাফ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-কলকাতা জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশন। ডেভিড হেয়ার, বেথুন প্রভৃতিরাও এসময় শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন।
34. প্রাচ্যবাদী কাদের বলা হয়?
উত্তর: 1813 খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন অনুযায়ী বছরে একলক্ষ টাকা শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করার কথা বলা হয়। যে সমস্ত শিক্ষাবিদ এই অর্থ ভারতীয় ভাষায় শিক্ষাদানের জন্য ব্যয় করার কথা বলেন, তাঁদের প্রাচ্যবাদী বলা হয়।
35. পাশ্চাত্যবাদী কাদের বলা হয়?
উত্তর: ভারতে শিক্ষাদানের মাধ্যম হওয়া উচিত পাশ্চাত্য তথা ইংরেজি ভাষা। এই মতবাদে যে সমস্ত শিক্ষাবিদ বিশ্বাসী ছিলেন, তাদের পাশ্চাত্যবাদী বলা হয়।
36. প্রাচ্যপাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ভারতের শিক্ষার মাধ্যম এদেশীয় না পাশ্চাত্য তথা ইংরেজি হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে 1836 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শিক্ষাবিদদের মধ্যে বিরোধের সূচনা হয়। এইচ টি প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রভৃতিরা প্রাচ্য ভাষায় শিক্ষাদানের সমর্থক ছিলেন। অপরদিকে আলেকজান্ডার ডাফ, মেকলে, স্যান্ডার্স ছিলেন পাশ্চাত্য ভাষার সমর্থক। এই বির্তক প্রাচ্য পাশ্চাত্য দ্বন্দু নামে পরিচিত।
4. Long Question Answer
1. ভারতে কোম্পানির শাসনের বিস্তার ও সেনাবাহিনীর বৃদ্ধির মধ্যে কী সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলে মনে হয়? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর: ভূমিকা: ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা ও তার বিস্তারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বৃদ্ধির সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলেই আমার মনে হয়।
সংখ্যাবৃদ্ধি: ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা যে যুদ্ধের মাধ্যমে হয়েছিল সেই পলাশির প্রান্তরে মোট ইংরেজ সেনা ছিল 3,000 1 এর মধ্যে ভারতীয় সিপাহি ছিল 2,200 জন। ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সিপাহিদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
প্রথম পর্বে উত্তর ভারতের ব্রাহ্মণ ও রাজপুত কৃষকরা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে অংশ নিয়েছিল। দেওয়ানি লাভের পর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটে। একই সঙ্গে সিপাহিদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়।
বোম্বাই, মাদ্রাজ ও কলকাতা প্রেসিডেন্সির জন্য স্থায়ী সিপাহিবাহিনী গড়ে তোলা হয়। আঞ্চলিক কৃষক ও উপজাতি বিদ্রোহ দমন করার প্রয়োজনে সিপাহিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
কাঠামোগত পরিবর্তন: 1820 এর পর থেকে দেশীয় সিপাহি বাহিনীর কাঠামোগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। এসময় মারাঠা ও মহীশূর অঞ্চলের পাহাড়ি উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষেরা সিপাহি বাহিনীতে যোগ দিতে থাকে। সগৌলির সন্ধির পর থেকে নেপালি গোর্খারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অঙ্গীভূত হতে শুরু করে।
সিপাহি বিদ্রোহের প্রাক্কালে ভারতে দেশীয় সিপাহির সংখ্যা দাঁড়ায় দুই লক্ষ আশি হাজার। বিদ্রোহের পর ভারতকে সামরিক ও অসামরিক এই দুটি ভাগে ভাগ করে সামরিক এলাকা থেকে সেনা সংগ্রহ শুরু হয়।
ভারতে দেশীয় সিপাহিদের সংখ্যা 1880 খ্রিস্টাব্দে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজারে পৌঁছে যায়।
মূল্যায়ন: সুতরাং, দেখা যাচ্ছে যে ব্রিটিশ বাহিনীতে ভারতীয় সেনার নিয়োগ ছিল প্রয়োজনভিত্তিক। সাম্রাজ্যের স্থিতি শক্তিশালী হতেই সেনার সংখ্যা হ্রাস করা হয়। আবার পার্শ্ববর্তী দেশ জয়ের প্রয়োজনে সেনার সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। ভারতের মোট রাজস্বের প্রায় 40 শতাংশ সেনাবাহিনীর পিছনে খরচ করা হতো।
2. ব্রিটিশ কোম্পানির প্রশাসন ব্যাবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কী ছিল? কীভাবে আমলারা একটি সংকীর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল?
উত্তর: ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার একটি অপরিহার্য স্তম্ভ ছিল আমলাতন্ত্র। অসামরিক শাসনব্যবস্থা পরিচালনার ক্ষেত্রে যারা কার্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তারা আমলা নামে পরিচিত। আমলা কেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থা আমলাতন্ত্র নামে পরিচিত হয়।
আমলাতন্ত্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিশ। তিনি অনুভব করেছিলেন যে, উপযুক্ত বেতনের অভাবেই কোম্পানির কর্মচারীরা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এজন্য তিনি বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন-
1. সিভিল সার্ভিস বা অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।
2. প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করে তোলার প্রচেষ্টা চালান।
3. তিনি কোম্পানির প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যবসা বন্ধ করার পাশাপাশি তাদের উপহার নেওয়া বন্ধ করে দেন।
4. চাকুরির মেয়াদের ওপর নির্ভর করে তাদের পদোন্নতির ব্যবস্থা করেন।
5. কর্মচারীদের বেতন বহুগুণ বৃদ্ধি করেন, এবং
6. সিভিল সার্ভিসে ভারতীয়দের নিয়োগ বন্ধ করেন।
এর ফলে অচিরেই আমলারা একটি সুদক্ষ শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
সংকীর্ণ গোষ্ঠীতে পরিণত হওয়া: প্রথমে ব্রিটিশ আমলাদের ভালোমতো প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য লর্ড ওয়েলেসলি 1800 খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কোম্পানির পরিচালকরা ভারত অপেক্ষা ইংল্যান্ডে প্রশিক্ষণ দেওয়া অনেক বেশি উপযুক্ত বলে মনে করতেন। এজন্য ইংল্যান্ডে হেইল বেরি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে পড়ার ফলে সিভিল সার্ভেন্টদের মধ্যে ঐক্যবোধ তৈরি হয়।
হেইল বেরি কলেজে একসঙ্গে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফলে এবং সকলেই ইংরেজ হওয়ার ফলে সিভিল সার্ভেন্টদের মধ্যেও এক ঐক্যবোধ গড়ে ওঠে। একই সঙ্গে তাদের মধ্যে জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা গড়ে ওঠে। ফলে কালক্রমে তারা একটি সংকীর্ণ গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ভারতীয়দের সঙ্গে মেলামেশা করাকে তারা অপমানজনক বা মর্যাদা হানিকর বলে মনে করতো।
3. কোম্পানির শাসনের সঙ্গে জমি জরিপের সম্পর্ক কী ছিল? ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করা ও তা তুলে দেওয়ার পিছনে কারণ ছিল?
উত্তর: কোম্পানির শাসন ও জমিজরিপ: ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ, এজন্য প্রাচীন কাল থেকেই জমি জরিপের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মধ্যযুগে আলাউদ্দিন খলজি, শেরশাহ, আকবর জরিপের কাজটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন। কোম্পানির শাসনের সূচনার অল্প দিনের মধ্যেই জমি জরিপের কাজ শুরু হয়।
দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সমতা আনার জন্য জমি জরিপের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়। ইতিমধ্যে 1760 খ্রিস্টাব্দে ফ্র্যাঙ্কল্যান্ড ২৪ পরগনা জেলার জমি জরিপ করেছিলেন। পরবর্তীকালে জেমস রেনেলকে সার্ভেয়ার জেনারেল নিয়োগ করে জমি জরিপের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল।
ইজারাদারি বন্দোবস্ত : 1772 খ্রিস্টাব্দে বাংলার গভর্নর হয়ে এদেশে এসে ওয়ারেন হেস্টিংস প্রথমেই দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটান। প্রত্যাহার করেন এবং রাজস্ব আদায়ের জন্য ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করেন। সর্বোচ্চ খাজনা প্রদানের শর্তে বাংলা প্রেসিডেন্সির নির্দিষ্ট এলাকার জমি এক একজন ইজারাদারকে ইজারা দেওয়া হতো। প্রথমে পাঁচ বছরের জন্য জমির ইজারা দেওয়া হত। পরবর্তীকালে পাঁচশালা বন্দোবস্তের পরিবর্তে একশালা বন্দোবস্ত চালু করা হয়। এই ব্যবস্থা ইজারাদারি ব্যবস্থা নাম পরিচিত ছিল।
প্রত্যাহারের কারণ : অতি শীঘ্রই ইজারাদারি ব্যবস্থায় বেশ কিছু ত্রুটি দেখা যায় যেমন- (ⅰ) রাজস্ব আদায়ের জন্য ইজারাদাররা রায়তদের উপর তীব্র শোষণ ও অত্যাচার চালাতো।
(ii) বন্দোবস্তের ফলে ছোটো ছোটো ইজারাদারগণ অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতো।
(iii) নির্দিষ্ট সময় শেষে জমি ছেড়ে দিতে হতো বলে ইজারাদারগণ জমি বা কৃষকের উন্নতির প্রতি কোনরূপ যত্ন নিত না।
(iv) ইজারাদারগণ নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব দিতে না পারলে ইজারা কেড়ে নেওয়া হত সত্য, তবে সরকারের ক্ষতি কম হত না।
প্রতিক্রিয়া: পরবর্তী গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিস প্রথমে দশশালা বন্দোবস্ত পরে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করে ইজারাদারি বন্দোবস্ত বাতিল করে দেন। এর ফলে জমিদাররা জমির উর্বরতা এবং কৃষকের উন্নতির প্রতি যত্নশীল হয়।
4. রেগুলেটিং অ্যাক্ট কত খ্রিস্টাব্দে পাশ হয়? এই আইন কোম্পানির কার্যকলাপের উপর কীভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল?
উত্তর: ভূমিকা: এদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ব্রিটিশ কোম্পানি যে সকল আইন প্রণয়ন করেন সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল রেগুলেটিং অ্যাক্ট বা আইন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লর্ড নর্থের উদ্যোগে 1773 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ‘রেগুলেটিং অ্যাক্ট’ বা ‘নিয়ন্ত্রণমূলক আইন’ পাশ করে। শর্তাবলি: রেগুলেটিং আইন দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। প্রথম অংশটি ছিল কোম্পানির গঠনগত। দ্বিতীয় অংশটি ছিল কোম্পানির শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত। আইনে-
(i) বাংলা প্রেসিডেন্সির গভর্নরকে গভর্নর জেনারেল এর মর্যাদায় ভূষিত করা হয়।
(ii) বাংলা সুবার গভর্নর জেনারেল ও চার সদস্যের কাউন্সিলের হাতে শাসনভার আর্পিত হয়।
(iii) বোম্বাই ও মাদ্রাজের গভর্নরকে যুদ্ধ ও শান্তির ক্ষেত্রে বাংলার গভর্নর জেনারেল এর নির্দেশ মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
(iv) একজন প্রধান বিচারপতি ও তিনজন সাধারণ বিচারপতি
নিয়ে কলকাতা সুপ্রিমকোর্ট গঠনের কথা বলা হয়।
(v) সদস্যদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য গভর্নরদের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং
(vi) গভর্নর জেনারেল ও কাউন্সিলের সদস্যদের কার্যকলাপের মেয়াদ পাঁচ বছর করা হয়।
উদ্দেশ্য: রেগুলেটিং আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করা। কোম্পানির শাসনতান্ত্রিক ত্রুটি বিচ্যুতির কারণে এসময় কোম্পানি প্রায় দেউলিয়া হয়ে যায়।
বাংলা, বোম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির মধ্যে ক্ষমতার পরিধি নিয়ে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। এইসব অব্যবস্থা দূর করার জন্য রেগুলেটিং আইন প্রবর্তন করে ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করার চেষ্টা করা হয়।
মূল্যায়ন : 1773 খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং আইনের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানির উপর ব্রিটিশ সরকারের যে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ক্রমশ তার পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে। একসময় কোম্পানির প্রশাসনিক অধিকার পার্লামেন্ট নিজের হাতে তুলে নিয়েছিল।
5. পিটের ভারত শাসন আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল? এই আইনে কোম্পানির পরিচালনার ব্যাপারে কী বলা হয়?
অথবা, পিটের ভারত শাসন আইনের উদ্দেশ্য ও ঘোষিত নীতিগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: 1776 খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং আইন দ্বারা ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর যে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, পিটের ভারত শাসন আইন ছিল তার পরবর্তী স্তর। 1784 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিট নতুন একটি আইন প্রণয়ন করেন, যা পিট প্রণীত বা পিটের ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত।
উদ্দেশ্য: পিটের ভারত শাসন আইনের উদ্দেশ্যগুলি হল-(i) 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইনের ত্রুটিগুলি দূর করা। (ii) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসনিক ক্ষমতাকে যথা সম্ভব সংকুচিত করা। এবং (iii) কোম্পানির উপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
ঘোষিত নীতি/কোম্পানির পরিচালনা সম্পর্কিত ধারা: পিটের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ভারতে কোম্পানির শাসন সংক্রান্ত কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়। এগুলি হল-
(i) এই আইন মোতাবেক একটি বোর্ড অফ কন্ট্রোল তৈরি করা হয়। গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা চার থেকে কমিয়ে তিন করা হয়।
(ii) কোম্পানির শাসন ও রাজস্বব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বোর্ড অব কন্ট্রোল গঠন করা হয়।
(iii) মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সির উপর বাংলার গভর্নর জেনারেল এর ক্ষমতা সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়।
(iv) শুধুমাত্র আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়া যুদ্ধ না-করা এবং রাজ্যবিস্তার থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
(v) ঠিক হয় প্রধান সেনাপতি ও দুজন কাউন্সিলার শাসন কার্য পরিচালনায় গভর্নর জেনারেলকে সাহায্য করবেন।
(vi) কোম্পানির কর্মচারীদের দূর্নীতিমুক্ত করার জন্য চাকুরির শেষে তাদের সম্পদের হিসাব দান বাধ্যতামূলক করা হয়।
মূল্যায়ন: পিটের ভারত শাসন আইন দ্বারা একদিকে যেমন রেগুলেটিং আইনের ত্রুটিগুলি দূর করা হয়েছিল। অন্যদিকে তেমনি সরকার ও কোম্পানির মধ্যে সমন্বয় রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তবে এই আইনের ফলে গভর্নর জেনারেল অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী হন।
6. লর্ড ক্লাইভের পর কে বাংলার গভর্নর হন? তাঁর শাসন সংস্কারগুলি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো। অথবা, গভর্নর রূপে ওয়ারেন হেস্টিংস-এর শাসন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারগুলি লিপিবদ্ধ করো।
উত্তর: ভূমিকা: লর্ড ক্লাইভের পর বাংলার গভর্নর রূপে নিযুক্ত হন ওয়ারেন হেস্টিংস। 1773 খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইন অনুযায়ী 1774 খ্রিস্টাব্দের থেকে তিনি গভর্নর জেনারেল নামে পরিচিত হন।
শাসন সংস্কার: ওয়ারেন হেস্টিংস এর শাসনতান্ত্রিক সংস্কারগুলি হল-
(i) 1772 খ্রিস্টাব্দে তিনি দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটান। (ii) বাংলা ও বিহারের নায়েব, নাজিম যথাক্রমে রেজা খাঁ ও সীতাব রায়কে পদচ্যুত করে রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা কোম্পানির হাতে তুলে নেন।
(iii) রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা আনার জন্য তিনি ‘রাজস্ব বোর্ড’ বা ‘Board of Revenue’ গঠন করেন।
(iv) ইজারাদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে জমির পাঁচশালা, একশালা বন্দোবস্ত দিয়ে ইজারাদারদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব আদায় সুনিশ্চিত করেন।
বিচারসংক্রান্ত সংস্কার: প্রদেশের বিচার বিভাগীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। যেমন-
(i) এগারো জন হিন্দু পণ্ডিতকে দিয়ে হিন্দু আইনবিধি সংকলনের ব্যবস্থা করেন। এই সংকলনটির ইংরেজি অনুবাদ করা হয়।
(ii) ফৌজদারের পরিবর্তে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ভার ম্যাজিস্ট্রেটদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
(iii) দেওয়ান কোশাগার মুর্শিদাবাদ থেকে সরিয়ে কলকাতায় নিয়ে এসে ‘কেন্দ্রীভূত ও শাসন’ ব্যবস্থার ভিত্তি রচনা করেন।
(iv) বাংলাকে 10টি এবং বিহারকে ৪টি ফৌজদারি অঞ্চলে ভাগ করে প্রতিটি অঞ্চলে থানা প্রতিষ্ঠা করে পুলিশি ব্যবস্থার প্রচলন করেন।
(v) 1781 খ্রিস্টাব্দে ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরদের মাধ্যমে শান্তিরক্ষার ব্যবস্থা করেন।
মূল্যায়ন: এদেশে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ওয়ারেন হেস্টিংস কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। বিচার বিভাগকে দুর্নীতি মুক্ত করার জন্য তার সময়েই কলকাতা সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
7. লর্ড কর্নওয়ালিসের বিচার বিভাগীয় সংস্কারগুলি আলোচনা করো।
অথবা, কোম্পানি পরিচালিত আইন ব্যবস্থাকে সংহত করার ক্ষেত্রে কর্নওয়ালিস কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?
উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে মুঘল শাসন প্রণালী থেকে ইউরোপীয় শাসন প্রণালীতে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি আইনগুলিকে সংহত করে একটি কোড বা বিধিবদ্ধ আইন চালু করেন।
বিচার বিভাগীয় সংস্কার: কর্নওয়ালিসের বিচার বিভাগীয় সংস্কারগুলি হল-
(i) বিচার বিভাগকে সরকারের প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
(ii) বিচার বিভাগ থেকে রাজস্ব বিভাগকে পৃথক করে বিচারবিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা করেন।
(iii) জেলা কালেক্টরদের বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়।
(iv) জেলা ফৌজদারি আদালত তুলে দিয়ে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত স্থাপন করেন।
(v) পরীক্ষামূলকভাবে কলকাতা, ঢাকা, মুর্শিদাবাদ ও পাটনায় চারটি প্রাদেশিক দেওয়ানি আদালতে আপিল করার অধিকার দান করেন।
(vi) সাড়ে নিজামত আদালত মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় সরিয়ে আনা হয়।
(vii) নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সদর নিজামত আদালতে আপিল করার অধিকার দান করেন।
(viii) দণ্ডবিধির কঠোরতা যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস করেন এবং অমানবিক ও নিষ্ঠুর দণ্ডদান প্রথা তুলে দেন।
মূল্যায়ন: ওয়ারেন হেস্টিংস প্রবর্তিত বিচারব্যবস্থা কর্নওয়ালিসের আমলে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আধুনিক ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা ছিল তাঁর মূল উদ্দেশ্য। অবশ্য বিচারব্যবস্থায় তাঁর আমলে ইউরোপীয়দের প্রাধান্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
8. লর্ড কর্নওয়ালিস পুলিশি ব্যবস্থার কী সংস্কার করেছিলেন?
অথবা, কর্নওয়ালিসের সংস্কারগুলি ব্রিটিশ পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে কতটা মজবুত করেছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনকে সুদৃঢ় করার উদ্দেশ্যে লর্ড কর্নওয়ালিস কোম্পানির পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ব্যাপক পরিবর্তন এনে এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে কোম্পানির শাসনের প্রধান দুটি স্তম্ভে পরিণত করেন।
পুলিশি সংস্কার: কোম্পানির পুলিশ বাহিনীতে কর্নওয়ালিস একগুচ্ছ সংস্কারসাধন করেন। যেমন-
(i) আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ভার জমিদারদের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তিনি তা সুবিন্যস্ত পুলিশ বাহিনীর হাতে তুলে দেন।
(ii) 1791 খ্রিস্টাব্দে পুলিশ কমিশনার পদ সৃষ্টি করে কলকাতায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ভার তার উপর অর্পণ করেন।
(iii) প্রতিটি জেলাকে কতকগুলি থানায় ভাগ করে প্রতিটি থানায় 20-30 জন কনস্টেবল সহ একজন করে দারোগা পদ সৃষ্টি করেন। দারোগা ছিলেন থানা এলাকার শান্তি রক্ষাকারী।
(iv) থানার দারোগা ও কনস্টেবলদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেওয়া হয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের হাতে।
(v) শহরের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ভার দেওয়া হয় পুলিশ সুপারিন্টেডেন্টদের।
(vi) গ্রামের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ভার দেওয়া হয় গ্রামীণ চৌকিদারদের উপর।
(vii) পুলিশদের বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে তাদের সৎ ও দুর্নীতি মুক্ত করে তোলার চেষ্টা করেন।
সেনাবাহিনীর সংস্কার: লর্ড কর্নওয়ালিস সেনাবাহিনীর সংস্কারের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি-
(i) কোম্পানির স্থায়ী সেনাবাহিনীর সদস্যসংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি করেন।
(ii) উত্তর ভারতের রাজপুত ও কৃষকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেন। এদের নাম দেওয়া হয় সিপাহিবাহিনী।
(iii) কোম্পানির হয়ে বিভিন্ন যুদ্ধে দেশীয় সিপাহিদের অধিক পরিমাণে নিয়োগ করা কর্নওয়ালিসের সময় থেকেই শুরু হয়।
মূল্যায়ন: ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সর্বাধিক প্রয়োজনীয় পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে আধুনিক ও উন্নতমানের করে তুলে কর্নওয়ালিস প্রদেশে ব্রিটিশ শাসনকে দৃঢ় ভিত্তির উপর স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
9. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কেন ভারতীয়দের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করেছিল? কোম্পানির আমলে সেনাবাহিনী কেমন ছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসারে এদেশের সিপাহি বাহিনী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
নিয়োগের কারণ: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির এদেশে রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আত্মপ্রকাশের সূচনা লগ্ন থেকেই এদেশীয় কিছু মানুষকে সামরিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে নিজেদের সেনাবহিনীর = সদস্য করে নিয়েছিল। কারণ সূচনা লগ্নে ইংল্যান্ড থেকে ব্যাপক হারে সেনা সংগ্রহ করার মতো আর্থিক সংগতি তাদের ছিল না।
পরবর্তীকালে তারা অনুভব করে যে, যথার্থ শিক্ষা প্রদান করলে সেনা হিসাবে ভারতীয়রা যথেষ্ট কৃতিত্বের পরিচয় দিতে পারে। তাছাড়া তাদের বেতনও যথেষ্ট কম দেওয়া হত বলে অর্থের অপচয় রোধ করা সম্ভব হত। এজন্য ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমান্বয়ে এদেশীয়দের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা শুরু করে।
কোম্পানির সেনাবাহিনী: প্রাথমিক পর্যায়ে ইউরোপীয় বণিকদের পারস্পরিক বিবাদের জন্যই কোম্পানি সেনাবাহিনী গড়ে তোলে। মেজর স্টিনজার লরেন্স মাদ্রাজে এবং মেজর প্যাট্রিক বেঙ্গল ইউরোপীয়ান রেজিমেন্ট গড়ে তোলেন।
পলাশির যুদ্ধের প্রাক্কালে রবার্ট ক্লাইভ 3,000 সৈন্য নিয়ে বেঙ্গল নেটিভ রেজিমেন্ট করে তোলেন। এরা লাল পল্টন নামেও পরিচিত ছিল।
তিনটি প্রেসিডেন্সির জন্য পৃথক সেনাবাহিনী ও সেনাপতি নির্বাচন করে কোম্পানি ঠিক করে যে- (i) মোট সেনাবাহিনীর এক ভাগ হবে ইউরোপীয়। (ii) গোলন্দাজ বাহিনীতে ভারতীয়দের নিয়োগ করা হবে না। (iii) পাঠান, শিখ, রাজপুত ও গোর্খাদের মধ্য থেকে অধিক সংখ্যায় ভারতীয়দের নিয়োগ করা হবে।
মূল্যায়ন: কোম্পানির সেনাবাহিনীতে ভারতীয়দের নিয়োগ করা হলেও তাদের উচ্চপদ দেওয়া হতো না। তাদের বেতন ছিল যথেষ্ট কম। খাদ্যের মান ছিল খুবই খারাপ। ইউরোপীয়রা তাদের সঙ্গে ভীষণ খারাপ আচরণ করত।
10. আমলাতন্ত্র কী? আমলাতন্ত্র কীভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল?
অথবা, কোম্পানির আমলাতন্ত্র বলতে কী বোঝ? অথবা, সিভিল সার্ভিস বলতে কী বোঝো? কীভাবে তা গড়ে তোলা হয়েছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য গড়ে তোলার পিছনে যে তিনটি স্তম্ভ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, সিভিল সার্ভিস বা আমলাতন্ত্র ছিল তার মধ্যে অন্যতম। অসামরিক শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে উপনিবেশিক শাসকের প্রধান হাতিয়ার ছিল আমলাতন্ত্র।
ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য দক্ষ প্রশাসকদের গড়ে তোলার জন্য কোম্পানি প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যে সকল উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়োগ করেছিল তাদের সিভিল সার্ভেন্ট বা আমলাতন্ত্র বলা হয়। সরকারের যাবতীয় সিদ্ধান্তকে সুচারুভাবে বাস্তবায়িত করাই ছিল আমলাদের প্রধান কাজ।
গৃহীত পদক্ষেপ: সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থার জনক ছিলেন লর্ড কর্নওয়ালিস। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, দুর্নীতি মুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব, যদি কিছু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। এই উদ্দেশ্যে তিনি-
(i) অসামরিক প্রশাসন তথা সিভিল সার্ভিস ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।
(ii) সিভিল সার্ভেন্টদের দুর্নীতি এবং ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা দূর করার জন্য তাদের বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি নানাবিধ সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন।
(iii) ইউরোপীয় আমলাদের ভালোমত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রথমে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে, পরে হেইলবেরি কলেজে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
(iv) পরবর্তীকালে পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে আমলা নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়।
মূল্যায়ন: প্রথমদিকে ভারতীয়দের প্রশাসক পদে বসানো হত না। কর্নওয়ালিস ভারতীয়দের প্রশাসনিক দায়িত্ব দিতে আদৌ রাজি ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীকালে লর্ড ডালহৌসির আমলে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ করার ব্যবস্থা করা হলে ভারতীয়রাও সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ লাভ করে।
11. ভারতে ইংরেজ কোম্পানির আমলে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা উল্লেখ করো।
অথবা, ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল এদেশে আগত খ্রিস্টান মিশনারি ও অন্যান্য শিক্ষাবিদগণ। পরবর্তীকালে সরকারি উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়।
মিশনারিদের উদ্যোগ: যে সকল খ্রিস্টান মিশনারিগণ এদেশে শিক্ষা বিস্তারে সচেষ্ট হয়েছিল, তাদের তিনটি স্তরে ভাগ করা
(i) ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটিঃ ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটির তিন সদস্য উইলিয়াম কেরি, যোশুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে একটি মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। এরা ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে পরিচিত।
এই মিশন থেকে একটি কাগজের কল ও একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। 16টি ভারতীয় ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ করে মিশন তা প্রচার করতে শুরু করে। 1818 খ্রিস্টাব্দে তারা শ্রীরামপুরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে। এছাড়াও প্রায় 126টি বিদ্যালয় তারা প্রতিষ্ঠা করেছিল।
(ii) স্কটিশ মিশনারিদের ভূমিকা: স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ ছিলেন ভারতের শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে একজন প্রথিতযশা ব্যক্তি। তিনি 1830 খ্রিস্টাব্দে জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইনস্টিটিউশন গড়ে তোলেন। বর্তমানে এটি স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত।
(iii) লন্ডন মিশনারিদের ভূমিকা: রবার্ট মে, চার্লস গ্রান্ট, উইলিয়াম ফোর্স প্রমুখ লন্ডনের মিশনারিরা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
(iv) জেসুইট মিশনারিদের ভূমিকা: ভারতে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে জেসুইট মিশনারিদের ভূমিকাও কম ছিল না। তাদের উদ্যোগে কলকাতার দুই প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ ও লরেটো কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
(v) ব্যক্তিগত উদ্যোগঃ মিশনারিদের পাশাপাশি বিভিন্ন ইউরোপীয় শিক্ষাবিদ এদেশে শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ডেভিড হেয়ার নামক একজন ঘড়ি ব্যবসায়ী। তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় হেয়ার স্কুল।
ড্রিংক ওয়াটার বেথুন বিদ্যাসাগরের সহায়তায় প্রতিষ্ঠা করেন বেথুন স্কুল। তবে বেসরকারি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। ডেভিড হেয়ারের প্রত্যক্ষ উদ্যোগে রাজা রাধাকান্তদেবের অর্থ সাহায্যে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মূল্যায়ন: খ্রিস্টান মিশনারিদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তন দ্বারা খ্রিস্টধর্মের মহান বাণী সাধারণ মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিয়ে তাদের ধর্মান্তরিত করা। তবে উদ্দেশ্য যাই হোক, তাদের প্রচেষ্টার ফলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল।
12. চার্লস উডের প্রতিবেদনে কী বলা হয়েছিল? এর ফল কী হয়েছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ভারতে শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে চার্লস উড নামটি স্মরণীয়। সমকালীন বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি রূপে তিনি এদেশের শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে যে প্রতিবেদনটি পেশ করেন তা ‘উডের ডেসপ্যাচ’ বা ‘প্রতিবেদন’ নামে পরিচিত।
উদ্দেশ্য: ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে পাশ্চাত্যের শিল্প, সাহিত্য, দর্শন ও বিজ্ঞানের সঙ্গে ভারতীয়দের পরিচিত করানোই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য।
প্রতিবেদনের বক্তব্যঃ চার্লস উডের প্রতিবেদনে-
(i) এদেশে শিক্ষার প্রসারের জন্য স্বতন্ত্র একটি শিক্ষাবিভাগ গঠনের কথা বলা হয়।
(ii) লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়।
(iii) বিদ্যালয়গুলিকে সরকারি অনুদান দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
(iv) আরও অনেক বেশি সংখ্যায় প্রাথমিক ও ইংরেজি স্কুল স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।
(v) প্রাথমিক শিল্প ও স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তারের উপর গুরুত্ব প্রদানের কথা বলা হয়।
(vi) দুঃস্থ ও মেধাবি ছাত্রদের বৃত্তিদানের সুপারিশ করা হয়।
(vii) সুদক্ষ শিক্ষক তৈরির জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়।
(viii) শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পাশ্চাত্যের পাশাপাশি দেশীয় ভাষাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ফলাফল: চার্লস উডের সুপারিশ অনুযায়ী-
(i) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শিক্ষা সংক্রান্ত দফতর খোলা হয়।
(ii) 1857 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
(iii) ভারতে সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
মূল্যায়ন: ভারতে শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে উডের প্রতিবেদন এতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল যে এই নির্দেশনামাকে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ‘ম্যাগনাকার্টা’ বা ‘মহাসনদ’ বলা হয়ে থাকে।
13. প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব বলতে কী বোঝো? পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে সরকারি উদ্যোগ সম্পর্কে কী জানো?
উত্তর: ভূমিকা: উনবিংশ শতকের সূচনা লগ্নে এদেশে শিক্ষার মাধ্যম কি হওয়া উচিত সে বিষয়ে শিক্ষাবিদদের মধ্যে বিতর্কের সূচনা হয়। একদল প্রাচ্য ভাষাকে গুরুত্ব দেন। অন্য দিকে পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকও কম ছিলেন না। এই পারস্পরিক মতভেদকে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্ব বলা হয়ে থাকে।
প্রাচ্যবাদী: রাজা রাধাকান্তদেব, এইচ. টি. প্রিন্সেপ, কোলব্রুক প্রভৃতি ব্যক্তিরা মনে করতেন যে, ভারতে শিক্ষাদানের মাধ্যম হওয়া উচিত ভারতীয় ভাষার মাধ্যম। এর দ্বারা এদেশের সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ ঘটানো সম্ভব। এরা প্রাচ্যবাদী নামে পরিচিত।
পাশ্চাত্যবাদী: রাজা রামমোহন রায়, আলেকজান্ডার ডাফ, টমাস ব্যারিংটন মেকলে প্রমুখ মনিষীরা ভারতে শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে পাশ্চাত্য তথা ইংরেজি ভাষাকে অগ্রাধিকারের পক্ষপাতী ছিলেন। এরা বিশ্বাস করতেন যে পাশ্চাত্যের উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে ভারতের কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস দূর করা সম্ভব। এদের পাশ্চাত্যবাদী বলা হয়।
দ্বন্দ্বের অবসান: জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন এর সভাপতি টমাস ব্যারিংটন মেকলে 1835 খ্রিস্টাব্দে যে শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ করেন, তাতে পাশ্চাত্য ভাষায় শিক্ষা দানের সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ গৃহীত হলে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।
সরকারি উদ্যোগ: 1835 খ্রিস্টাব্দে মেকলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সরকারি ভাবে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে জোয়ার, আসে। যেমন-
(i) 1835 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
(ii) বোম্বাইতে এলফিনস্টোন ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়।
(iii) সরকারি শিক্ষা দপ্তর এর মাধ্যমে বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
(iv) 1857 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মূল্যায়ন : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার সুদূর প্রসারী পরিবর্তন আনে। যেমন-
(i) শিক্ষিত, মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় নামক একটি প্রগতিশীল সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হয়।
(ii) ভারতে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে।
(iii) রাজনৈতিক সভা সমিতি গড়ে ওঠে।
(iv) নবজাগরণের ফলে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মনোভাব গড়ে ওঠে।
14. উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে এশিয়াটিক সোসাইটির (কুম্ভচক পল্লিশ্রী বিদ্যাভবন) অবদান আলোচনা করো।
উত্তর: ভূমিকা: ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার এবং ভারতীয় সংস্কৃতির রক্ষণাবেক্ষণে যে কটি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল, এশিয়াটিক সোসাইটি ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম।
প্রতিষ্ঠা: 1784 খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম জেমস কর্তৃক কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
উদ্দেশ্য: এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পিছনে যে উদ্দেশ্য ছিল, তা হল-
(i) প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যগুলি সংস্কৃত থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে মেল বন্ধন ঘটানো।
(ii) এশিয়ার প্রাচীনতম সাহিত্য, সংস্কৃতি, দর্শন ও জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।
(iii) প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির উপাদানগুলি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। কার্যাবলি : উপরিউক্ত উদ্দেশ্যগুলি পূরণের জন্য এশিয়াটিক সোসাইটি যেসব কার্য সম্পাদন করে সেগুলি হল-
(i) প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম, দর্শন ও ইতিহাস নিয়ে গবেষণার ব্যবস্থা হয়।
(ii) ভারতের অষ্টাদশ পুরাণের ইংরেজিতে অনুবাদের ব্যবস্থা করা।
(iii) শকুন্তলা, মনুসংহিতা, ভগবদগীতার ইংরেজি অনুবাদ করা।
(iv) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে সেগুলি নিয়ে গবেষণার ব্যবস্থা করা।
মূল্যায়ন : এশিয়াটিক সোসাইটি তার কর্মপদ্ধতির মাধ্যমে অচিরেই ভারতীয়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা অর্জনে সফল হয়। ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠত্ব বিশ্বের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।
15. জরিপ কী? উপনিবেশিক শাসনে জমি জরিপের জন্য যে ব্যাবস্থাগুলি গ্রহণ করা হয়েছিল তা লেখো। (রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন)
উত্তর: জরিপ কথার আক্ষরিক অর্থ হল মাপজোক করা। কোনো জমির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিমাপ করে ক্ষেত্রফল বা আয়তন নির্ণয় করাকেই জরিপ বলা হয়। যারা এই মাপজোক এর কাজ করেন, তাদের আমিন বলা হয়।
গৃহীত ব্যবস্থা : কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে জমিজরিপের যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল সেগুলি হল-
(i) কোম্পানির জমিদারি মাপজোক : 1757 খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধের পর নতুন নবাব মিরজাফর কোম্পনিকে কলকাতা থেকে কুলপী পর্যন্ত 24টি পরগনার জমিদারি প্রদান করে। রবার্ট ক্লাইভ এই অঞ্চলের জমি জরিপের দায়িত্ব দেন ফ্রাঙ্কল্যান্ডকে।
তাঁর মৃত্যুর পর হগ ক্যামেরন এই কাজ শেষ করেন।
(ii) নদী জরিপ: বাংলার নদীগুলির গতিপথ ও দৈর্ঘ্য চিহ্নিত করার জন্য কোম্পানি জেমস রেনেলকে দায়িত্ব দেন। তিনি নদীপথ জরিপ করে মোট 16টি মানচিত্র তৈরি করেন।
কমিটি অব রেভেনিউ : 1770 খ্রিস্টাব্দে ‘কমিটি অব রেভেনিউ’ গঠন করে রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়গুলি দেখাশোনার দায়িত্ব তার উপর অর্পিত হয়। 1786 খ্রিস্টাব্দে কমিটির নতুন নাম হয় ‘বোর্ড অব রেভেনিউ’।
পাঁচশালা বন্দোবস্ত: বাংলার গভর্নর জেনারেল রূপে হেস্টিংস এদেশে ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেন। সর্বোচ্চ রাজস্ব প্রদানের শর্তে তিনি পাঁচ বছরের জন্য জমি ইজারা দিতেন। পরে অবশ্য এই ব্যবস্থাকে একশালা বন্দোবস্তে নামিয়ে আনা হয়েছিল।
মূল্যায়ন : ইজারাদারি ব্যবস্থা ক্রমশ জটিল ও সমস্যাসংকুল হয়ে পড়ায় লর্ড কর্নওয়ালিশ1790 খ্রিস্টাব্দে দশশালা বন্দোবস্ত চালু করেন এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রস্তাব প্রদান করেন। ইংল্যান্ড থেকে অনুমতি এলে 1793 খ্রিস্টাব্দে বাংলা প্রেসিডেন্সিতে জমিদারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল।
5. Fill In The Blanks
1. (হেস্টিংস/ ক্লাইভ/ কর্নওয়ালিস) পাঁচশালা বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন।
উত্তর: হেস্টিংস
2. (হিন্দু/ বেনারস/ প্রেসিডেন্সি) কলেজ কলকাতায় 1817 খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয়।
উত্তর: হিন্দু
3. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা হয় (1771/1773/1800) খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: 1800
4. তিনটি প্রেসিডেন্সিতে তিনটি আলাদা (পরিষদ/ প্রধানমন্ত্রী/ রাজা) থাকত।
উত্তর: পরিষদ
5. দ্বৈতশাসন ব্যাবস্থা তুলে দেওয়া হয় (1772/ 1773/ 1817) খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: 1772
6. ভারতে নতুন বিচারব্যাবস্থা চালু হয় (1772/ 1773/ 1765) খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: 1772
7. কোম্পানির আমলে ভারতে দেওয়ানি আদালতগুলির প্রধান ছিলেন (ইউরোপীয়/ভারতীয়/আর্মেনীয়) গণ।
উত্তর: ইউরোপীয়গণ
8. অসামরিক শাসনব্যবস্থার প্রধান স্তম্ভ ছিল (আমলাতন্ত্র/ পরিষদ/বিচারবিভাগ)
উত্তর: আমলাতন্ত্র।
9. কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (উইলিয়াম জোন্স/জোনাথন ডানকান/উইলিয়াম কেরি)।
উত্তর: উইলিয়াম জোন্স
10. বাংলা ভাষায় প্রথম পূর্ণাঙ্গ বই (জোনাথান ডানকান/রামমোহন রায়/ডেভিড হেয়ার)-এর অনুবাদ করা আইনের বই।
উত্তর: জোনাথান ডানকান
6. True And False
1. বাংলা প্রেসিডেন্সিকে সেন্ট জর্জ দুর্গ প্রেসিডেন্সি বলা | হত।
উত্তর: ভুল।
2. বেনারসে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জোনাথন ডানকান।
উত্তর: ঠিক।
3. উইলিয়াম কেরি ছিলেন শ্রীরামপুরের মিশনারি সোসাইটির সদস্য।
উত্তর: ঠিক।
4. দশ বছরের ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার জন্য কোম্পানি ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেছিল।
উত্তর: ভুল।
5. বাংলা প্রেসিডেন্সিকে সেন্ট জর্জ দুর্গ প্রেসিডেন্সি বলা হত।
উত্তর: ভুল।
6. স্যার এলিজা ইম্পে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন।
উত্তর: ঠিক।
7. উইলিয়াম কেরি সেন্ট উইলিয়াম কলেজে পড়াতেন।
উত্তর: ঠিক।
8. ইংরেজি ভাষা প্রশাসনের ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয় 1835 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ভুল।
9. উইলিয়াম কেরি ছিলেন শ্রীরামপুর মিশনারির অন্যতম সদস্য।
উত্তর: ঠিক।
10. সিন্ধুপ্রদেশ বোম্বাই প্রেসিডেন্সির অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উত্তর: ঠিক।
11. 1817 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
উত্তর: ঠিক।
12. সুপ্রিমকোর্ট কেবলমাত্র কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
উত্তর: ভুল।
13. নারীশিক্ষায় উদ্যোগী হয়েছিলেন- বেথুন।
উত্তর: ঠিক।
14. মেকলের প্রতিবেদন পেশ হয় 1858 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ভুল।
15. চার্লস উড ছিলেন বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি।
উত্তর: ঠিক।
16. উইলিয়াম পিট ছিলেন গভর্নর জেনারেল।
উত্তর: ভুল।
17. বাংলার প্রথম গভর্নর ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ।
উত্তর: ঠিক।
18. প্রথমদিকে কোম্পানির আমলারা দুর্নীতিপরায়ণ ছিল।
উত্তর: ঠিক।
19. কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন ওয়ারেন হেস্টিংস।
উত্তর: ঠিক।
20. আলেকজান্ডার ডাফ ছিলেন শ্রীরামপুর মিশনের সদস্য।
উত্তর: ভুল।
21. চার্লস উডের নির্দেশনামা জারি হয় 1854 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ঠিক।
22. সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হয় রেগুলেটিং আইন দ্বারা।
উত্তর: ভুল।
23. মেকলে মিনিট প্রকাশিত হয় 1835 খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ঠিক।
24. লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন।
উত্তর: ঠিক।