Class 12 Philosophy Solution
মিলের পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি
1. MCQs Question Answer
1. কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য মিল কয়টি পদ্ধতির উল্লেখ করেছেন।
(a) দুটি
(b) তিনটি
(c) চারটি
(d) পাঁচটি ✔
2. মিলের পাঁচটি পদ্ধতিকে কীরূপ পদ্ধতি বলা হয়।
(a) পর্যবেক্ষণমূলক
(b) পরীক্ষণমূলক ✔
(c) গঠনমূলক
(d) সমালোচনামূলক
3. মিলের পাঁচটি পদ্ধতির মধ্যে মৌলিক পদ্ধতি কয়টি।
(a) একটি
(b) দুটি ✔
(c) তিনটি
(d) পাঁচটি
4. মিলের পদ্ধতিগুলি কোন্ সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
(a) অপনয় ✔
(b) উপনয়
(c) প্রমাণ
(d) অপ্রমাণ
5. মিলের পদ্ধতিগুলির মূল উৎস কার চিন্তাধারায় প্রতিফলিত।
(a) বেনের
(b) বেকনের ✔
(c) হোয়েলের
(d) জোসেফের
6. মিলের পদ্ধতিগুলিকে আর কী নামে চেনা যায়?
(a) অবরোহমূলক পদ্ধতি
(b) ঐ আরোহমূলক পদ্ধতি ✔
(c) উপমামূলক পদ্ধতি
(d) ও সাধারণ অনুমান পদ্ধতি
7. মিলের পদ্ধতিগুলির মধ্যে মৌলিক পদ্ধতি অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি কোনগুলি।
(a) সহপরিবর্তন ও পরিশেষ পদ্ধতি
(b) অন্বয়ী ও মিশ্র পদ্ধতি
(c) ব্যতিরেকী ও সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
৪. অপসারণ বা অপনয় সূত্রগুলির মূল কাজ কী।
(a) অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে অপসারণ করা ✔
(b) অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে অনুসরণ করা
(c) অপ্রয়োজনীয় তথ্যকে গ্রহন করা
(d) প্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দেওয়া
9. অপনয় সূত্র কয়টি?
(a) একটি
(b) দুটি
(c) তিনটি
(d) চারটি ✔
10. প্রথম অপনয় সূত্রের ওপর কোন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত।
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) মিশ্র পদ্ধতি
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
11. দ্বিতীয় অপনয় সূত্রের ওপর কোন্ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত।
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি c
(c) অন্বয়-বাতিরেকী পদ্ধতি
(d) পরিশেষ পদ্ধতি
12. তৃতীয় অপনয় সূত্রের ওপর কোন্ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত।
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি ✔
(d) পরিশেষ পদ্ধতি
13 চতুর্থ অপনয় সূত্রের ওপর কোন পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত।
(a) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্মতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) পরিশেষ পদ্ধতি ✔
(d) অন্বয়ী পদ্ধতি
14. অপসারণ সূত্রগুলির ভিত্তি কী?
(a) কারণের নিয়ম
(b) কার্যের নিয়ম
(c) কার্যকারণ নিয়ম ✔
(d) পরীক্ষণের নিয়ম
15. পদ্ধতিগুলিকে আবিষ্কারের জন্য মিল কার কাছে ঋণী।
(a) বেকনের কাছে ✔
(b) বেনের কাছে
(c) জোসেফের কাছে
(d) হোয়েলের কাছে
16. ‘কার্যকারণ নিয়ম থেকে অপসারণের সূত্রগুলি অনুসৃত হয়েছে’-এ কথা কে বলেন।
(a) বেন ✔
(b) জোসেফ
(c) হোয়েল
(d) নাগেল
17. মিলের পদ্ধতিগুলির মূল উদ্দেশ্য কী?
(a) পদ্ধতিগুলির উদ্দেশ্য হল আমাদের জ্ঞান বাড়ানো
(b) পদ্ধতিগুলির উদ্দেশ্য হল আমাদের চিন্তাশক্তি বাড়ানে
(c) পদ্ধতিগুলির উদ্দেশ্য হল অবরোহমূলক সিদ্ধান্তকে নিশ্চিত করা
(d) পদ্ধতিগুলির উদ্দেশ্য হল আরোহমূলক কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা ✔
18. মিলের পদ্ধতিগুলি সর্বপ্রথম কার চিন্তাধারায় উদিত হয়।
(a) ফ্রান্সিস বেকনের চিন্তাধারায় উদিত হয় ✔
(b) হোয়েলের চিন্তাধারায় উদিত হয়
(c) বেনের চিন্তাধারায় উদিত হয়
(d)নাগেলের চিন্তাধারায় উদিত হয়
19. মিলের পদ্ধতিগুলিকে পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি কেন বলা হয়।
(a) পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে পদ্ধতিগুলি প্রতিষ্ঠিত বলে
(b) পরীক্ষণকে মূল হাতিয়ার করার ফলে
(c) পরীক্ষণকে পর্যবেক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করার ফলে
(d) পদ্ধতিগুলি আবিষ্কার ও প্রমাণের পদ্ধতি বলে ✔
20. বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমানের গুরুত্বপূর্ণ কাজটি কী।
(a) কার্যকারণ সম্বন্ধ আবিষ্কার করা
(b) কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রমাণ করা
(c) কার্যকারণ সম্বন্ধ আবিষ্কার প্রমাণ করা ✔
(d) কার্যকারণ সম্বন্ধ অনুমান করা
21. অপনয় সূত্র কী?
(a) যে সূত্রগুলির ওপর নির্ভর করে জ্ঞান উৎসারিত হয়
(b) যেগুলির ওপর নির্ভর করে অবরোহ যথাযথ হয়
(c) যেগুলির ওপর নির্ভর করে কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠিত ✔
(d) যেগুলির ওপর নির্ভর করে উপমা যুক্তি প্রতিষ্ঠিত
22. অপনয় সূত্রের মূল উদ্দেশ্য কী?
(a) কার্যকারণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলিকে গ্রহণ করা
(b) কার্যকারণের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলিকে অপসারিত করা ✔
(c) কার্যকারণের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা
(d) কার্যকারণের ক্ষেত্রে মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া
23. প্রথমদিকে অপনয় সূত্র ছিল কয়টি?
(a) দুটি
(b) তিনটি ✔
(c) চারটি
(d) বহু
24. চতুর্থ অপনর সূত্রটি কে সংযুক্ত করেছেন?
(a) যুক্তিবিজ্ঞানী বেকন
(b) যুক্তিবিজ্ঞানী মিল
(c) যুক্তিবিজ্ঞানী জোসেফ ✔
(d) যুক্তিবিজ্ঞানী বেন
25. পাঁচটি পদ্ধতির মধ্যে মিল কয়টিকে মৌলিক পদ্ধতি বলেছেন?
(a) একটিকে
(b) দুটিকে ✔
(c) তিনটিকে
(d) সবগুলিকেই
26. মৌলিক পদ্ধতি কোনগুলি?
(a) অন্বয়ী ও অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(b) পরিশেষ পদ্ধতি অন্বয়-ব্যতিরেকী ও সহপরিবর্তন
(c) অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(d) ব্যতিরেকী ও পরিশেষ পদ্ধতি
27. কোন্ পদ্ধতি অপনয় সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়?
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) কোনো পদ্ধতিই নেই যা অপনয় ✔
28. বৈজ্ঞানিক আরোহের লক্ষ্য হল-
(a) অভিজ্ঞতা অর্জন করা
(b) কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয় করা ✔
(c) পর্যবেক্ষণ করা
(d) পরীক্ষণ করা
29. মিলের পরীক্ষণ পদ্ধতিগুলির অন্য নাম হল-
(a) অবরোহমূলক অনুশাসন
(b) আরোহমূলক অনুশাসন ✔
(c) যৌক্তিক অনুশাসন
(d) এদের কোনোটিই নয়
30. ‘A System of Logic’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন-
(a) বেন
(b) জোসেফ
(c) মিল ✔
(d) মেলোন
31. পরীক্ষণমূলক পদ্ধতিগুলির কথা মিলের আগে প্রথম কে উল্লেখ করেছেন?
(a) হ্যারিসন
(b) বেকন ✔
(c) মেলোন
(d) জনসন
32. কার্যকারণ সংক্রান্ত নিয়ম থেকেই বর্জন বা অপসারণের বিষয়গুলি পাওয়া যায়-এরূপ অভিমতটি হল-
(a) বেনের ✔
(b) জনসনের
(c) হ্যামিলটনের
(d) জোসেফের
33. ‘আবিষ্কারের পদ্ধতিতে শুধুমাত্র কার্যকারণ সম্পর্ককেই আবিষ্কার করা হয়’-এটা হল-
(a) সত্য ✔
(b) মিথ্যা।
(c) সংশয়াত্মক
(d) সত্য ও মিথ্যা উভয়ই
34. তৃতীয় অপনয় সূত্রের ভিত্তি হল-
(a) কারণের পরিমাণগত লক্ষণ ✔
(b) নয় কারণের গুণগত লক্ষণ
(c) কারণের গুণগত ও পরিমাণগত লক্ষণ
(d) এদের কোনোটিই
35. মিলের পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতিগুলির সিদ্ধান্তটি সবসময়েই–
(a) বৈধ
(b) অবৈধ
(c) সম্ভাব্য ✔
(d) এদের কোনোটিই নয়
36. মিলের পদ্ধতিগুলোকে—মূলক পদ্ধতি বলা হয়।
(a) অবরোহ
(b) আরোহ ✔
(c) অনুমান
(d) কল্পনা
37. মিলের পদ্ধতিগুলি হল সংখ্যায় কয়টি?
(a) দুটি ✔
(b) তিনটি
(c) চারটি
(d) পাঁচটি
38. মিলের পদ্ধতিগুলি কার পদ্ধতি থেকে নিঃসৃত?
(a) জোসেফের
(b) মেলোনের
(c) বেকনের ✔
(d) বেনের
39. আরোহ পদ্ধতিগুলিকে বলা হয়–মূলক পদ্ধতি।
(a) পর্যবেক্ষণ
(b) পরীক্ষণ ✔
(c) অনুমান
(d) প্রমাণ
40. আরোহ পদ্ধতিগুলি কোন্ সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত?
(a) অপনয় ✔
(b) উপনয়
(c) নিগমন
(d) অনুগমন
41. পাঁচটি পদ্ধতির মধ্যে মৌল পদ্ধতি হল সংখ্যায়-
(a) তিনটি
(b) চারটি
(c) দুটি ✔
(d) একটি
42. অপনয় সূত্রগুলি সংখ্যায় মোট–
(a) দুটি
(b) চারটি ✔
(c) তিনটি
(d) পাঁচটি
43. মিলের পাঁচটি পদ্ধতির মধ্যে মৌল পদ্ধতি হল–
(a) অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী ✔
(b) ব্যতিরেকী ও মিশ্র
(c) মিশ্র ও সহপরিবর্তন
(d) সহপরিবর্তন ও পরিশেষ
44. যে যুক্তিবিজ্ঞানী পরীক্ষণমূলক আরোহ পদ্ধতির প্রবর্তন করেন, তিনি হলেন ।
(a) বেন
(b) কোয়াইন
(c) মিল ✔
(d) জোসেফ
45. একাধিক সদর্থক দৃষ্টান্ত এবং পূর্ববর্তী ও অনুবর্তী ঘটনাগুলিতে একটি বিষয়ে মিল যে পদ্ধতিতে দেখা যায়-
(a) ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে
(b) অন্বয়ী পদ্ধতিতে ✔
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতিতে
56. অন্বয়ী পদ্ধতিকে কী ধরনের পদ্ধতি বলা হয়।
(a) পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি
(b) পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি ✔
(c) প্রমাণমূলক পদ্ধতি
(d) অবরোহাত্মক পদ্ধতি
57. কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কারের মূল পদ্ধতিরূপে কোন পদ্ধতিকে উল্লেখ করা যায়।
(a) বাতিরেকী পদ্ধতিকে
(b) অন্বয়ী পদ্ধতিকে ✔
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে
(d) মিশ্র পদ্ধতিকে
58 ‘ভালো পড়াশোনা করলে ভালো ফল হয়’-এখানে কোন পদ্ধতির প্রয়োগ হয়েছে।
(a) অন্বয়ী পদ্ধতির ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতির
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতির
59. কোন্ পদ্ধতিতে বহুকারণের সম্ভাবনা দেখা যায়?
(a) অন্বয়ী পদ্ধতিতে c
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে
(c) সংযুক্ত পদ্ধতিতে
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতিতে
60. আবিষ্কারের পদ্ধতিরূপে কোন্ পদ্ধতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
61. অন্বয়ী পদ্ধতিকে কেন পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি বলা হয়।
(a) হয় বলে অনুমানকে পর্যবেক্ষণ করা হয় বলে ✔
(b) পর্যবেক্ষণের সাহায্যে দৃষ্টান্তগুলি সংগৃহীত হয় বলে
(c) কার্যকারণ সম্বন্ধকে পর্যবেক্ষণ করা
(d) পর্যবেক্ষণকে নিশ্চিত ধরা হয় বলে
62. অন্বয়ী পদ্ধতির প্রকৃতিগত অসম্পূর্ণতা কী?
(a) অন্বয়ী পদ্ধতির দৃষ্টান্ত অসংখ্য হল অন্বয়ী পদ্ধতির প্রকৃতিগত অসম্পূর্ণতা
(b) অন্বয়ী পদ্ধতির প্রকৃতিতে বহুকারণবাদের বীজ লুক্কায়িতই হল তার প্রকৃতিগত অসম্পূর্ণতা ✔
(c) অন্বয়ী পদ্ধতির প্রকৃতিতে নিশ্চয়তার অভাবই হল তার অসম্পূর্ণতা
(d) অন্বয়ী পদ্ধতির প্রকৃতিতে সম্ভাব্যতার বিষয়টিই হল তার অসম্পূর্ণতা
63. অন্বয়ী পদ্ধতির ব্যাবহারিক অসম্পূর্ণতা কী?
(a) প্রকৃত কারণের অপর্যবেক্ষণের সম্ভাবনা ✔
(b) সমস্ত দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণের সম্ভাবনা
(c) কার্যকারণ সম্বৎ অপ্রমাণের সম্ভাবনা
(d) কার্যকারণ সম্বন্ধে মিথ্যা অনুমানের সম্ভাবনা
64. কারণ থেকে কার্য ও কার্য থেকে কারণ অনুমান করা যায় মিলের যে আরোহমূলক পদ্ধতিতে সেটি হল-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) পরিশেষ পদ্ধতি
65. মিল যে পদ্ধতিকে ‘প্রধানত আবিষ্কারের পদ্ধতি, প্রমাণের পদ্ধতি নয়’ বলেছেন তা হল-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) পরিশেষ পদ্ধতি
66. মিলের যে পদ্ধতি কার্যকারণকে সহ-অবস্থান থেকে পৃথক করতে পারে না, তা হল
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) যুগ্ম পদ্ধতি
(c) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
67. অন্বয়ী পদ্ধতিতে যে দোষ দেখা যায়, তা হল-
(a) কাকতালীয় দোষ
(b) অপর্যবেক্ষণ দোষ ✔
(c) মন্দ উপমা
(d) অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ
68. মিলের অন্বয়ী পদ্ধতির অপপ্রয়োগ ঘটলে যে দোষটি হয়, সেটি হল-
(a) কাকতালীয় দোষ
(b) অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ ✔
(c) সহকার্যকে কারণ বলার দোষ
(d) মন্দ উপমা দোষ
69. অন্বয়ী পদ্ধতিকে যে ধরনের পদ্ধতি বলা হয়, তা হল-
(a) পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি
(b) প্রমাণমূলক পদ্ধতি
(c) পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি ✔
(d) অবরোহমূলক পদ্ধতি
70. অন্বয়ী পদ্ধতিটি হল একটি–
(a) অমৌলিক পদ্ধতি
(b) প্রমাণ পদ্ধতি
(c) সহযোগী পদ্ধতি
(d) মৌলিক পদ্ধতি ✔
71. মিলের কোন্ পদ্ধতিটি মূলত আবিষ্কারের পদ্ধতি।
(a) অন্বয়ী গখতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্মতি
72. কারণ থেকে কার্য ও কার্য থেকে কারণ অনুমান করা যায় মিলের যে পদ্ধতিতে, তা হল-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
73. মিল যে পদ্ধতিকে প্রমাণ পদ্ধতি নয় বলে উল্লেখ করেছেন, তা হল-
(a) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(b) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(c) এদের কোনোটিই নয়
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
74. “পাগলা কুকুরের কামড়ে জলাতঙ্ক হয়”- এখানে অনুসৃত পদ্ধতিটি হল-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
75. “বিদ্যুৎচমক বজ্রনির্ঘোষের কারণ”-এখানে কোন পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায়।
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) অন্বয়-ব্যতিরেকী
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
76. “মা হলেই মহামারি হয়”-এখানে কোন পদ্ধতি প্রযুক্ত হতে পারে?
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) ব্যাতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) অন্বয় ব্যতিরেকী পদ্ধতি
77. বহুকারণের সম্ভাবনা থেকে যে পদ্ধতিটি মুক্ত নয়, তা হল-
(a) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(b) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(c) অন্বয় ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(d) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
78. মিলের পরতিগুলির মধ্যে যে পদ্ধতিটির প্রয়োগক্ষেত্র সর্বাপেক্ষা ব্যাপকমতি অস্বরূপরিবর্তন পদ্ধতি
(a) অন্বয় পদ্ধতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতির
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতির
(d) অন্বয় ব্যাতিতের পদ্ধতির
79. “আমি যতবারই ফুচকা খাইয়েছি, ততবারই পারভিন আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে। সুতরাং আমি সিদ্ধান্ত করতে পারি যে, ফুচকা খাওয়ানোই হল মেসেজ 26 পাঠানোর কারণ”- এখানে অনুসৃত পদ্ধতিটি হল-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) মিশ্র বা সংযুক্ত পদ্ধতি
80.অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে সদর্থক দৃষ্টান্তগুচ্ছের মধ্যে কীসের মিল দেখা যায়?
(a) অনুপস্থিতির
(b) উপস্থিতির c
(c) উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতির
(d) উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতির
81. অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থাগুলি হল-
(a) নিয়ন্ত্রিত
(b) অনিয়ন্ত্রিত ✔
(c) নিয়ন্ত্রিত অথবা অনিয়ন্ত্রিত
(d) এদের কোনোটিই নয়
82. অন্বয়ী পদ্ধতি হল একটি মূলক পদ্ধতি।
(a) পরীক্ষণ
(b) পর্যবেক্ষণ ✔
(c) অনুমান
(d) অবরোহ
83. অন্বয়ী পদ্ধতির সিদ্ধান্ত সবসময়ই হয়।
(a) নিশ্চিত
(b) সম্ভাব্য ✔
(c) মিথ্যা
(d) সত্য
84. বহুকারণবাদের জন্ম দেয়–পদ্ধতি।
(a) অন্বয়ী ✔
(b) ব্যতিরেকী
(c) সংযুক্ত
(d) সহপরিবর্তন
85. ব্যতিরেকী পদ্ধতির পরিবর্তিত রূপ হল-
(a) সহপরিবর্তন পদ্ধতি ✔
(b) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) অন্বয়ী পদ্ধতি
(c) পরিশেষ পদ্ধতি
86. একটিমাত্র সদর্থক দৃষ্টান্ত এবং একটিমাত্র নঞর্থক দৃষ্টান্ত দেখা যায় যে পদ্ধতিতে-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতিতে
(b) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে
(c) ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে ✔
(b) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
87. আংশিক কার্যকারণের সঙ্গে সামগ্রিক কার্যকারণের সম্পর্ক দেখা যায় যে পদ্ধতিতে—
(a) অন্বয়ী পদ্ধতিতে
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতিতে
(d) পরিশেষ পদ্ধতিতে ✔
88.ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে যে ধরনের পদ্ধতি বলা হয়-
(a) পরীক্ষণমূলক ✔
(b) পর্যবেক্ষণমূলক
(c) সাধারণ পদ্ধতি
(d) সংজ্ঞামূলক পদ্ধতি
89. মিলের পদ্ধতিগুলির মধ্যে যেটি প্রকৃতপক্ষে পরীক্ষণমূলক–
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(c) ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(d) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
90. ব্যতিরেকী পদ্ধতির জন্য মোট কয়টি দৃষ্টান্ডের প্রয়োজন হয়?
(a) একটি দৃষ্টান্তের
(b) দুটি দৃষ্টান্ডের ✔
(c) তিনটি দৃষ্টান্তে
(d) বহু দৃষ্টান্ডের
91. ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি বলেছেন-
(a) মেলোন
(b) মিল ✔
(c) হোয়েল
(d) বেন
92. “বায়ুপূর্ণ ঘরে ঘণ্টা বাজে, বায়ুশূন্য ঘরে ঘণ্টা বাজে না”- এখানে যে পদ্ধতির প্রয়োগ হয়েছে-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতির
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতির ✔
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) মিশ্র পদ্ধতির
93. আবিষ্কার ও প্রমাণের পদ্ধতিরূপে যে পদ্ধতিটি যথার্থ–
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(c) সংযুক্ত পদ্ধতি
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
94. প্রমাণের পদ্ধতিরূপে যে পদ্ধতিটি বিশেষভাবে স্বীকৃত-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতিটি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতিটি ✔
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতিটি
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতিটি
95. ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে যে কারণে পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি বলা হয়–
(a) পরীক্ষণের পদ্ধতি গ্রহন করা হয় বলে
(b) পরীক্ষণের সাহায্যে কার্যকারণ প্রমাণ করা হয় বলে ✔
(c) পরীক্ষণমূলক গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে হয় বলে
(d) পরীক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত বলে
96. অন্বয়ী পদ্ধতির একটি পরিবর্তিত রূপ হল-
(a) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(b) পরিশেষ পদ্ধতি
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(d) এদের কোনোটিই নয়
97. একাধিক সদর্থক দৃষ্টান্ত এবং একাধিক নঞর্থক দৃষ্টান্ত দেখা যায় যে পদ্ধতিতে-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতিতে
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে
(c) অন্বয় বাতিতেরী পদ্ধতিতে ✔
(d) পরিশেষ পদ্ধতিতে
98. দ্বৈত-অন্বয়ী পদ্ধতি বলা হয় যে পদ্ধতিকে–
(a) ব্যতিরেকী
(b) অন্বয়ী
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী ✔
(d) সহপরিবর্তন
99. “ভালো পড়াশোনা করলে ভালো ফল হয়, আর না করলে ভালো ফল হয় না”-এখানে কোন পদ্ধতির প্রয়োগ করা যায়।
(a) অন্বয়ী পদ্ধতির
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতির
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতির ✔
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতির
100. অন্বয়-বাতিরেকী পদ্ধতিকে কেন অন্বয়ী পদ্ধতির যুগ্ম প্রয়োগ বলা হয়?
(a) দু-বার অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়োগ হয় বলে
(b) দু-বার দু-ভাবে অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়োগ হয় বলে
(c) অন্বয়ী ও বাতিরেকীর যুগ্ম প্রয়োগ বলে
(d) সদর্থক দৃষ্টান্ডগুচ্ছে উপস্থিতির মিল (অন্বয়) এবং নঞর্থক দৃষ্টান্ডগুচ্ছে অনুপস্থিতির মিল (অন্বয়) দেখা যায় বলে ✔
101. উপস্থিতির ও অনুপস্থিতির সাদৃশ্য দেখা যায় যে পদ্ধতিতে-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতিতে
(b) ব্যাতিরেকী পদ্ধতিতে
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতিয়ে ✔
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতিতে
102. মিলের যে পদ্ধতিটিতে সদর্থক ও নঞর্থক উভয়প্রকার দৃষ্টান্ডগুচ্ছই থাকে, তা হল-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
103. মিল যে পদ্ধতিকে দ্বৈত-অন্বয়ী পদ্ধতি বলেছেন-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতিকে
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে ✔
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতিতে
104. অন্থায়ী পদ্ধতির একটি উন্নতরূপ রূপে উল্লেখ করা হয়-
(a) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে
(b) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে ✔
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে
(d) পরিশেষ পদ্ধতিকে
105.”যখনই আমি সকালে বেড়াতে যাই তখনই আমার ঠান্ডা লাগে, আর যখন আমি সকালে বেড়াতে যাই না তখন আমার ঠান্ডা লাগে না। সুতরাং সকালে বেড়ানোই আমার ঠান্ডা লাগার কারণ”-এই যুক্তিটিতে মিলের কোন্ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে।
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
106. অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতিটি সম্পর্কে বলা যায় যে এটি হল একটি-
(a) পর্যবেক্ষণল পদ্ধ ✔
(b) প্রমাণমূলক পদ্ধতি
(c) পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি
(d) সমালোচনামূলক পদ্ধতি
মিলের পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি
107. অময় ব্যাতিরেকী পদ্ধতিকে সংযুক্ত পদ্ধতি বলা হয়, কারণ–
(a) পদ্ধতি মদর্থক ও নঞর্থক দু-ধরনের দৃষ্টান্ডগুচ্ছের সংযোগে গঠিত ✔
(b) একাধিক সদর্থক দৃষ্টান্ডের সংযোগে গঠিত
(c) একাধিক নঞর্থক দৃষ্টান্ডের সংযোগে পঠিত
(d) অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে সংযুক্ত করে
108. অন্ধতির প্রকারভেরৃপে সহপরির্তন ছাড়া আর যে পদ্ধতির উল্লেখ করা যায়, তা হল–
(a) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(b) অন্বয়-ব্যাতিরেকী পদ্ধতি ✔
(c) পরিশেষ পদ্ধতি
(d) এদের কোনোটিই নয়
109.কোন পদ্ধতিকে অন্বয়ী পদ্ধতির যুগ্ম প্রয়োগ বলা হয়?
(a) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে
(b) সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে
(c) পরিশেষ পদ্ধতিকে
(d) অন্বয় ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে ✔
110. অন্বয় ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচ্ছের মধ্যে যে ধরনের মিল দেখা যায়, তা হল-
(a) অনুপস্থিতির ✔
(b) উপস্থিতির
(c) উপস্থিতি অথবা অনুপস্থিতির
(d) এদের কোনোটিই নয়
111. অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি হল—পদ্ধতির একপ্রকার ভেদ
(a) ব্যতিরেকী
(b) সহপরিবর্তন
(c) অন্বয়ী ✔
(d) পরিশেষ
112. “পাকা তালের ওপর দিয়ে কাক উড়ে যাওয়ার জন্যই তালটি পড়ে গেল। সুতরাং বলা যায় যে, কাক উড়ে যাওয়াই হল তাল পড়ে যাওয়ার কারণ”-এরূপ অনুমানটি হতে পারে যে পদ্ধতিতে, তা হল-
(a) ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(b) অন্বয়ী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) সংযুক্ত পদ্ধতি
113. “প্যাঁচার ডাক অবশ্যই অনুভ। কারণ, অগ্নিকান্ডের আগের রাত্রে প্যাচার ডাক শোনা গিয়েছিল” – এখানে পদ্ধতিটি হল-
(a) অন্বয়ী
(b) ব্যতিরেক ✔
(c) অন্বয়ী-ব্যতিরেকী
(d) সহপরিবর্তন
114. “যখনই সে মিথ্যা বলে তখনই সে চোক গেলে, আর যখনই সে মিথ্যা বলে না তখনই সে ঢোঁক গেলে না। সুতরাং অনুমান করা যায় যে, তাঁর টোক পেপার কারণই হল মিথ্যা বলা”-এখানে পদ্ধতিটি হল-
(a) অন্বয়ী
(b) ব্যতিরেকী
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী ✔
(d) সহপরিবর্তন
115. “অহংকার হলে পতন হবে- এমন অনুমান কোন পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে গঠন করা যায়?
(a) অন্বয়ী পদ্ধতির ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতির
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতির
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতির
116. ‘ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয় পরিপ অনুমানের ভিত্তি হল-
(a) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(b) অন্বয়ী পদ্ধতি ✔
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) অন্বয় বাতিরেক্টা পদ্ধতি
117. “ঢিল মারলে পাটকেল খেতে হয়, আর না মারলে তা খেতে হয় না”-এর ভিত্তি হল-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
118. “তোমায় যতই দেখি ততই আমার ভালো লাগে”-এখানে প্রযুক্ত পদ্ধতি হল-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি ✔
(d) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
119. “বায়ুপূর্ণ পাত্রে ঘণ্টা বাজে, কিন্তু বায়ুশূন্য পাত্রে ঘণ্টা বাজে না”- এখানে পদ্ধতিটি কী হতে পারে?
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) সংযুক্ত পদ্ধতি
120. “চম্বলে আসা মাত্রই আমার মনে দস্যুবৃত্তি ভর করল। সুতরাং সিদ্ধান্ত করা যায় যে, চম্বলে আসাই আমার দস্যুবৃত্তির কারণ”-এখানে পদ্ধতিটি হল
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(c) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
(d) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি
121. “আম খেলে ফোঁড়া হয়, আর না খেলে ফোঁড়া হয় না সুতরাং আম খাওয়াই ফোঁড়ার কারণ”-এখানে পদ্ধতিটি হল-
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
122. “চাহিদা বাড়লে দামও বাড়ে”-এক্ষেত্রে পদ্ধতির প্রয়োগ করা যায়।
(a) অন্বয়ী
(b) ব্যতিরেকী
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী
(d) সহপরিবর্তন ✔
123. অগ্নিকান্ডের আগে প্যাঁচার ডাক শোনা গেছিল। অতএব প্যাঁচার ডাক অশুভ। এখানে যে পদ্ধতির প্রয়োগ হয়েছে তা হল-
(a) অন্বয়ী
(b) ব্যতিরেকী ✔
(c) যুগ্ম-পদ্ধতি
(d) সহপরিবর্তন
124. আজপর্যন্ত যত মানুষ দেখেছি তাদের সবাই স্বার্থপর। অতএব সম মানুষই স্বার্থপর। এখানে প্রযুক্ত পদ্ধতিটি হল–
(a) অন্বয়ী ✔
(b) ব্যতিরেকী
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী
(d) সহপরিবর্তন
125. বৃদ্ধি হলেই বন্যা হয়।-এখানে যে পদ্ধতির প্রয়োগ করা যায় তা হল-
(a) অন্বয়ী ✔
(b) ব্যতিরেকী
(c) অন্বয়-ব্যতিরেকী
(d) সহপরিবর্তন
126. অর্থের জোগান যত কমবে মানুষের দুর্ভোগ ততই বৃদ্ধি পাবে। পদ্ধতি সহপরিবর্তন পদ্ধতি এখানে কোন্ পদ্ধতির প্রয়োগ করা যায়?
(a) অন্বয়ী পদ্ধতি
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) মিশ্র পদ্ধতি
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি ✔
127. উত্তাপ যত বাড়ে পারদস্তম্ভের উচ্চতাও ততই বৃদ্ধি পায়। এখানে যে পদ্ধতির প্রয়োগ করা যায় তা হল
(a) অন্বয়ী
(b) ব্যতিরেকী
(c) অন্বয় ব্যতিরেকী
(d) সহপরিবর্তন ✔
128. যে যুক্তিবিজ্ঞানী পরীক্ষামূলক আরোহী যুক্তির প্রবর্তন করেন, তিনি হলেন-
(a) আই এম কোপি
(b) কার্ভেদ রিড
(c) জন স্টুয়ার্ট মিল ✔
(d) ডব্লিউ ভি ও কোয়াইন
129. মিলের যে আরোহমূলক পদ্ধতিতে একগুচ্ছ নঞর্থক দৃষ্টান্ত যাচাই করা হয় তা হল–
(a) অন্বয়ী-ব্যতিরেকী পদ্ধতি ✔
(b) ব্যতিরেকী পদ্ধতি
(c) অন্বয়ী পদ্ধতি
(d) সহপরিবর্তন পদ্ধতি
130. ‘আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন। সুতরাং বৃষ্টি হবে।’-এক্ষেত্রে মিলের পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা হয়েছে-
(a) অন্বয়ী ✔
(b) অন্বয়ী-ব্যতিরেকী
(c) ব্যতিরেকী
(d) সহপরিবর্তন
4. Long Question Answer
1.অপসারণ সূত্র বলতে কী বোঝায়? মিলের পদ্ধতিগুলির ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব কী?
উত্তর: অপসারণ সূত্র
বৈজ্ঞানিক আরোহ অনুমানের মূল কাজ হল একটি কার্যকারণ সম্বন্ধকে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আমরা জানি যে, আলোচ্য ঘটনার সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অনেক অপ্রয়োজনীয় তথা অবান্তর বিষয়ও যুক্ত থাকে যেগুলি কখনোই কার্য-কারণের সহায়ক নয়। কার্যকারণ নিয়মকে প্রতিষ্ঠা করতে গেলে এই সমস্ত বিষয়গুলিকে তাই একান্তভাবেই বাদ দেওয়া প্রয়োজন। এই সমস্ত অবান্তর বিষয়গুলিকে বর্জন করার নামই হল অপসারণ (elimination)। এই অপসারণ পদ্ধতিই মিলের পরীক্ষণমূলক পদ্ধতিগুলির মূলভিত্তি। অপসারণ সূত্র ছাড়া মিলের পদ্ধতিগুলি তাই এক পাও এগোতে পারে না।
অপসারণ শুধু নঞর্থক প্রক্রিয়া নয়, তা সদর্থক প্রক্রিয়াও: মিলের পদ্ধতিগুলির পিছনে যে অপসারণমূলক সূত্র রয়েছে অনেক তর্কবিদই তাকে নঞর্থক প্রক্রিয়ারূপে অভিহিত করেছেন। কারণ, এর কাজই হল শুধু অপ্রয়োজনীয় বিষয়কে বাদ দেওয়া, গ্রহণ করা নয়। কিন্তু অপসারণের এই ধারণাটি ঠিক নয়। কারণ, প্রত্যেকটি পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির দুটি দিক আছে, যার একটি হল সদর্থক দিক এবং অপরটি হল নঞর্থক দিক। নঞর্থক দিকের পরিপ্রেক্ষিতে যেমন অবান্তর বিষয়সমূহকে বাদ দেওয়া হয়, তেমনই সদর্থক দিকের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকারণ নিয়মকে প্রতিষ্ঠা ও প্রমাণ করা হয়। কোনো কার্যকারণ সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা ও প্রমাণ করার জন্য সদর্থক দিকটিও অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এই সদর্থক দিকটি ছাড়া নঞর্থক বিষয়টি আদৌ চিন্তা করা যায় না। অপসারণের সূত্র তাই শুধুমাত্র কোনো নঞর্থক দিক নয়, এটি অবশ্যই সদর্থক দিকেরও দিশারি। সুতরাং, অপসারণের ধারণাটি শুধুমাত্র নঞর্থক পদ্ধতি-এরূপ কারণটি একান্তই ভ্রান্ত ধারণা।
মিলের পদ্ধতিগুলির ক্ষেত্রে অপসারণের গুরুত্ব
মিলের পদ্ধতিগুলির মূল উদ্দেশ্য হল কার্যকারণ সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা করা। এরূপ প্রক্রিয়ায় কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমরা প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু প্রকল্প গঠন করে থাকি। কিন্তু সমস্ত প্রকল্পগুলোই যে কার্যকারণ সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত হবে এমন নাও হতে পারে। সুতরাং সেক্ষেত্রে প্রয়োজন হল-অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে বর্জন করা। এই বর্জন করার বিষয়কেই বলা হয় অপসারণ করা। অর্থাৎ দেখা যায় যে, অপসারণ পদ্ধতির প্রয়োগ না ঘটিয়ে আমরা কখনোই প্রকৃত কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করতে পারি না। সে কারণেই বলা যায় যে, মিলের পদ্ধতিগুলির ক্ষেত্রে এই অপসারণ পদ্ধতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
2. অপসারণের সূত্রগুলিকে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অপসারণের সূত্রাবলি
যুক্তিবিজ্ঞানে আমরা প্রথমদিকে তিনটি অপসারণ সূত্রের পরিচয় পাই। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে তর্কবিদ জোসেফ (Joseph) এগুলির সঙ্গে আরও একটি অপসারণ সূত্র যোগ করেন। এর ফলে অপসারণের ক্ষেত্রে মোট চারটি সূত্র দেখা যায়। এই সমস্ত সূত্রগুলিকে পরপর উল্লেখ করা হল।
প্রথম সৃএ | পূর্ববর্তী কোনো ঘটনাকে যদি অপসারণ করা হয় এবং তার জন্য কার্যটি ঘটার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা না হয়, তাহলে সেই পূর্ববর্তী ঘটনাটি কারণের অন্তর্ভুক্ত নয় (whatever antecedent can be left out without prejudice to the effect, can be no part of the cause)। কারণের গুণগত লক্ষণ থেকে অপসারণের এই সূত্রটি পাওয়া যায়। |
ব্যাখ্যা | কার্যকারণ নিয়মের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জানি যে, প্রত্যেকটি কার্যই কোনো-না-কোনো কারণ দ্বারা উৎপন্ন। কারণটি যদি হাজির থাকে, তাহলে কার্যটিও হাজির হয়। আর কারণটি অনুপস্থিত থাকলে কার্যটিও অদৃশ্য হয়। অর্থাৎ, কারণটি উপস্থিত নেই, অথচ কার্যটি উপস্থিত-এমন কখনোই হতে পারে না। অতএব আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, পূর্ববর্তী ঘটনার কোনো অংশকে যদি অপসারণ বা বর্জন করা সত্ত্বেও যদি কার্যটি সংঘটিত হয়, তাহলে এরূপ কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বা কারণের একটি অংশরূপে দাবি করা যায় না। |
দ্বিতীয় সূত্র | কোনো একটি পূর্ববর্তী ঘটনাকে অপসারণ করার ফলে যদি অনুবর্তী কোনো ঘটনাও অপসারিত হয় তাহলে পূর্ববর্তী ঘটনাটি অনুবর্তী ঘটনাটির কারণ বা কারণের অংশরূপে বিবেচিত হবে (when an antecedent cannot be left out without the consequent disappearing, such antecedent must be the cause, or part of the cause) অপসারণের এই সূত্রটিও কারণের গুণগত লক্ষণ থেকেই নিঃসৃত। |
ব্যাখ্যা | অপসারণের এই সূত্রটিও কার্যকারণ নিয়ম থেকে পাওয়া। কার্যকারণ সূত্র অনুযায়ী দাবি করা হয় যে, কোনো কার্যের সিদ্ধির জন্য কারণের উপস্থিতি একান্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে, যদি কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনাসমূহের মধ্যে একটি ঘটনাকে অপসারণ করলে কার্য উৎপত্তিতে বাধা আসে, তাহলে সেই ঘটনার সঙ্গে কার্যটির একটি কার্যকারণ সম্পর্ক আছে। অথবা বলা যেতে পারে যে, পূর্ববর্তী কোনো ঘটনাকে যদি বর্জন করা হয় এবং তার ফলে কার্যটিও যদি অন্তর্হিত হয়, তাহলে কার্যটির সঙ্গে ওই পূর্ববর্তী ঘটনার কোনো-না-কোনোপ্রকার কার্যকারণ সম্বন্ধ থাকে। |
তীয় সূত্র | কোনো পূর্ববর্তী একটি ঘটনার বাড়া-কমার সঙ্গে যদি অনুবর্তী কোনো একটি ঘটনারও বাড়া-কমা ঘটে, তাহলে সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে যে, ঘটনাদ্বয়ের মধ্যে একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্ক আছে (an antecedent and a consequent increasing and decreasing together in numerical concomitance, are to be held as cause and effect)। সূত্রটি কারণের পরিমাণগত লক্ষণেই নিহিত। |
ব্যাখ্যা | কার্যকারণের পরিমাণগত লক্ষণের মধ্যেই অপসারণের এই সূত্রটি নিহিত। আমরা জানি যে, পরিমাণের দিক থেকে কারণ হল কার্যের সমান। কার্য তাই আর কিছুই নয়, কারণের একটি রূপান্তরিত অবস্থামাত্র। সুতরাং কারণের মধ্যে যদি কোনোরকম পরিমাণগত পরিবর্তন দেখা যায়, তবে একইরকম পরিবর্তন দেখা যায় কার্যের মধ্যেও। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দাবি করা যায় যে, একটি ঘটনার কোনো পরিমাণগত পরিবর্তন যদি অপর কোনো ঘটনার পরিমাণগত পরিবর্তনকে সূচিত করে, তবে উভয় ঘটনার মধ্যে এক প্রকার কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে বলে মনে করা হয়। |
চতুর্থ সূত্র | অপসারণের এই তিনটি সূত্র ছাড়াও তর্কবিজ্ঞানী জোসেফ (Joseph) একটি অতিরিক্ত অপসারণ সূত্রের উল্লেখ করেছেন। এই সূত্রটি হল-কোনো একটি ঘটনাকে যদি অপর ঘটনার কারণ বলে জানা থাকে, তাহলে সেই ঘটনাটিকে আর অন্য কোনো ঘটনার বা কার্যের কারণরূপে উল্লেখ করা যাবে না (nothing is a cause of phenomenon which is known to be the cause of a different phenomenon)। অপসারণের এই সূত্রটিকে একটি অতিরিক্ত সূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রথম তিনটি অপসারণের সূত্রকে মৌলিকরূপে গণ্য করা হয়েছে। কারণ, এই তিনটি সূত্র ছাড়া মিলের পদ্ধতিগুলোকে কখনোই ব্যাখ্যা করা যায় না। মিলের পদ্ধতিগুলি তাই একান্তভাবেই এই তিনটি অপসারণ সূত্রের ওপর নির্ভরশীল। তর্কবিদ বেন (Bain) অপসারণের এই সূত্রটিকে অতিরিক্ত একটি সূত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে পরিশেষ পদ্ধতিটি। |
3. মিলের পদ্ধতিগুলির মূল কাজ কী? মিলের পদ্ধতি মোট কয়টি ও কী কী? এদের মধ্যে মৌলিক পদ্ধতি কয়টি?
উত্তর: মিলের পদ্ধতিগুলির মূল কাজ
তর্কবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল (J. S. Mill) আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয় করার জন্য পাঁচটি পদ্ধতির প্রবর্তন করেছেন। পরপর দুটি ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আদৌ আছে কি না-তা এই পাঁচটি পদ্ধতির সাহায্যে আবিষ্কার ও প্রমাণ করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিগুলি একত্রিতভাবে মিলের
পরীক্ষমৃলক পদ্ধতি নামে পরিচিত। আরোহ অনুমানের ক্ষেো কার্যকারন সম্পর্ক নির্ণয়ের এই সমস্ত পদ্ধতিগুলিকে বিভিন্ন নামে উল্লেখ করা হয়। অনেকে আবার এই সমস্ত পদ্ধতিগুলিকে আরোহমূলক অনুশাসন বা সূত্র (inductive canons) রূপেও অভিহিত যে নামেই অভিহিত না কেন, এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এই সমস্ত পদ্ধতিগুলির মূল উদ্দেশ্য হল–কার্যকারণসম্বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা।
মিলের পদ্ধতির সংখ্যা
কার্যকারণ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে মিল (Mill)-এর পদ্ধতি বা সূত্র হিসেবে যেগুলিকে উল্লেখ করা যায়, সেগুলি সংখ্যায় মোট পাঁচটি। এগুলিকে তাই বলা হয় পঞ্চপরীক্ষণমূলক পদ্ধতি। এই পাঁচটি পদ্ধতি হল- [1] অন্বয়ী পদ্ধতি [2] ব্যতিরেকী পদ্ধতি [3] মিশ্র বা অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি [4] সহপরিবর্তন পদ্ধতি এবং [5] পরিশেষ পদ্ধতি।
মিলের পদ্ধতি
মিল প্রবর্তিত এই পাঁচটি পদ্ধতির মধ্যে প্রথম দুটি পদ্ধতি তথা অন্বয়ী পদ্ধতি ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি-কে মৌলিক পদ্ধতিরূপে উল্লেখ করা হয়। এই দুটি ছাড়া, যার বাকি যে তিনটি পদ্ধতির উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলি মূলত ওই প্রথম দুটি পদ্ধতিরই অবস্থাভেদে পরিবর্তিত ভিন্ন রূপ মাত্র। যেমন বলা যায়, অন্বয়ী পদ্ধতিটির একটি পরিবর্তিত রূপ হল অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি। আবার সহপরিবর্তন পদ্ধতিটি হল ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্বয়ী পদ্ধতির পরিবর্তিত রূপ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতির পরিবর্তিত রূপ। পরিশেষ পদ্ধতিটিকে ব্যতিরেকী পদ্ধতিরই একটি রূপান্তরিত আকাররূপে গণ্য করা হয়। সুতরাং দেখা যায় যে, মৌলিক বা মূল পদ্ধতি হল দুটি-অন্বয়ী পদ্ধতি এবং ব্যতিরেকী পদ্ধতি। এই দুটি মৌলিক পদ্ধতির ওপর বাকি পদ্ধতিগুলি নির্ভরশীল বলে বাকি তিনটি পদ্ধতিকে গৌণ পদ্ধতিরূপে উল্লেখ করা হয়।
পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি হিসেবে অন্বয়ী পদ্ধতি আর পরীক্ষামূলক পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতি
অন্বয়ী পদ্ধতি এবং ব্যতিরেকী পদ্ধতি –অপেক্ষাকৃতভাবে ব্যতিরেকী পদ্ধতিটিই অন্য পদ্ধতিটির তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই পদ্ধতিটি যেহেতু পরীক্ষণমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাওয়া, তাই এর সাহায্যে আমরা সুনিশ্চিতভাবে কার্যকারণ সম্পর্ককে আবিষ্কার ও প্রমাণ করতে পারি। সেজন্য এই ব্যতিরেকী পদ্ধতিটিকেই একমাত্র প্রমাণের পদ্ধতিরূপে দাবি করা হয়। অপরদিকে, অন্বয়ী পদ্ধতিটি মূলত পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল বলে, তা কার্যকারণ সম্পর্ক সম্বন্ধে একটা ইঙ্গিত দেয় মাত্র, কিন্তু তাকে নিশ্চিতভাবে কখনোই প্রমাণ করতে পারে না। অন্বয়ী পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটি তাই সবসময়ই সম্ভাবনামূলক, কখনোই নিশ্চিত নয়। এরূপ পদ্ধতিটি তাই কার্যকারণ সম্পর্ককে আবিষ্কার করে মাত্র, কখনোই তাকে প্রমাণ করতে পারে না। সেইজন্যই অন্বয়ী পদ্ধতিকে আবিষ্কারের পদ্ধতিরূপে গণ্য করা হয়।
4. মিলের পদ্ধতিগুলির প্রয়োগের লক্ষণগত বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: মিলের পদ্ধতিগুলির প্রয়োগের লক্ষণগত বৈশিষ্ট্যসমূহ
তর্কবিদ মিল বিশেষ বিশেষ ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ককে আবিষ্কার করার উদ্দেশ্যে পাঁচটি পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির প্রয়োগ করেছেন। পদ্ধতিগুলির সাহায্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করার উদ্দেশ্যে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের সাহায্যে বিভিন্নরকম দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা হয় এবং সেগুলিকে যথাযথভাবে পূর্ববর্তী ও অনুবর্তী ঘটনা হিসেবে সন্নিবেশিত করা হয়। এরপর কার্যকারণ সম্পর্কের আকারটিকে দৃষ্টান্তের প্রতীকীকরণের মাধ্যমে উপস্থাপিত করা হয়। আবার সেই আকারটি কোন্ পদ্ধতির আকার থেকে পাওয়া, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেক্ষেত্রে কোন্ পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে, তার উল্লেখ করা যায়। আকারটির ক্ষেত্রে কোন্ পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে, তা নির্ভর করে পঞ্চপদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলির ওপর। পদ্ধতিগুলির প্রয়োগগত লক্ষণগুলিকে পর পর উল্লেখ করা হল:
[1] অন্বয়ী পদ্ধতির লক্ষণগত প্রয়োগ: এই পদ্ধতির লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল যে, এই ক্ষেত্রে দুই বা তার অধিক সদর্থক দৃষ্টান্তগুচ্ছ থাকে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে কয়েকটি পূর্ববর্তী ঘটনা থাকে এবং কয়েকটি অনুবর্তী ঘটনা থাকে। এই উভয়প্রকার ঘটনাসমূহের মধ্যে শুধু একটি বিষয়ে মিল থাকে এবং এই একটি বিষয় ছাড়া আর সমস্ত বিষয়েই অমিল লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ,
অন্বয়ী পদ্ধতি = দুই বা ততোধিক সদর্থক দৃষ্টান্ত অগ্রবর্তী ও অনুবর্তী ঘটনার মধ্যে একটি বিষয়ে মিল
[2] ব্যতিরেকী পদ্ধতির লক্ষণগত প্রয়োগ: এক্ষেত্রে কেবল দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়োজন হয়। এই দুটি দৃষ্টান্তের একটি হল সদর্থক দৃষ্টান্ত এবং অপরটি হল নঞর্থক দৃষ্টান্ত। সদর্থক দৃষ্টান্তে একটি সাধারণ ঘটনা অগ্রবর্তী এবং অনুবর্তী হিসেবে থাকলেও, সেটি নঞর্থক দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত। অর্থাৎ
ব্যতিরেকী পদ্ধতি = একটি সদর্থক দৃষ্টান্ত ও একটি নঞর্থক দৃষ্টান্ত+ উভয় দৃষ্টান্তে একটি বিষয়ে অমিল
[3] অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতির লক্ষণগত প্রয়োগ: এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে দুই ধরনের দৃষ্টান্তগুচ্ছ দুই বা ততোধিক ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। সদর্থক দৃষ্টান্তগুচ্ছে অগ্রবর্তী ঘটনায় একটি বিষয় এবং অনুবর্তী ঘটনায় আর-একটি বিষয় সর্বদাই উপস্থিত। কিন্তু নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচ্ছে ওই দুটি সাধারণ ঘটনাই অনুপস্থিত। অর্থাৎ,
অন্বয়-ব্যতিরেকী পদ্ধতি=দুই বা ততোধিক সদর্থক দৃষ্টান্ত ও দুই বা ততোধিক নঞর্থক দৃষ্টান্ত সদর্থক দৃষ্টান্তগুচ্ছে অগ্রবর্তী ও অনুবর্তী ঘটনার মধ্যে একটি বিষয়ে উপস্থিতির মিল নঞর্থক দৃষ্টান্তগুচ্ছে অগ্রবর্তী ও অনুবর্তীর মধ্যে একটি বিষয়ে অনুপস্থিতির মিল
[4] সহপরিবর্তন পদ্ধতির লক্ষণগত প্রয়োগ: সহপরিবর্তন পদ্ধতির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সেক্ষেত্রে দুই বা ততোধিক সদর্থক দৃষ্টান্ত পরিলক্ষিত হয় এবং অগ্রবর্তী ঘটনাসমূহের একটির সঙ্গে অনুবর্তী ঘটনাসমূহের একটির হ্রাসবৃদ্ধির সম্পর্ক পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ,
সহপরিবর্তন পদ্ধতি = দুই বা ততোধিক সদর্থক দৃষ্টান্ত + অগ্রবর্তী ও অনুবর্তীর মধ্যে বাড়া-কমার সম্বন্ধ
[5] পরিশেষ পদ্ধতির লক্ষণগত প্রয়োগ: পরিশেষ পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও মাত্র দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়োজন হয়। যার একটি সদর্থক ও একটি নঞর্থক। সদর্থক দৃষ্টান্তে পূর্ববর্তী ঘটনা ও অনুবর্তী ঘটনার উল্লেখ থাকে। কিন্তু নঞর্থক দৃষ্টান্তে একটি কার্যের একটি নির্দিষ্ট অংশের কারণ জানা থাকে। এর ফলে, সেক্ষেত্রে বিয়োগ পদ্ধতিতে বাকি অংশের কারণ জানা যায়। অর্থাৎ,
পরিশেষ পদ্ধতি = একটি সদর্থক দৃষ্টান্ত যা সমগ্র ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত ও একটি নঞর্থক দৃষ্টান্ত যা একটি অংশের কারণরূপে জ্ঞাত + সমগ্র থেকে অংশের বিয়োগ প্রক্রিয়া
5. দৃষ্টান্ত-সহ অন্বয়ী পদ্ধতির ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অন্বয়ী পদ্ধতি
অন্বয়ী পদ্ধতিটি অপসারণের প্রথম সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ, অন্বয়ী পদ্ধতি অনুসারে আমরা দেখি যে, পূর্ববর্তী ঘটনার একটা নির্দিষ্ট অংশ ছাড়া আর অন্যান্য সমস্ত অংশকে বাদ দিলেও কার্যটি ঘটার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হয় না। সেক্ষেত্রে আমরা তাই বলতে পারি যে, অপসারিত ঘটনাগুলির কোনোটিই কার্যের কারণ নয়। এই পদ্ধতিটিকে একটি মৌলিক পদ্ধতিরূপে গণ্য করা হয়। কারণ, এই পদ্ধতিটির ওপর আবার অন্বয়-ব্যতিরেকী ও সহপরিবর্তন পদ্ধতি নির্ভরশীল।
মিলের সংজ্ঞা
তর্কবিজ্ঞানী মিল (Mill) অন্বয়ী পদ্ধতির সূত্রটিকে যেভাবে উপস্থাপিত করেছেন, তা হল “আলোচ্য কোনো অনুসন্ধানমূলক ঘটনার দুই বা ততোধিক দৃষ্টান্তে যদা অন্য একটি ব্যাপার সর্বদাই উপস্থিত থাকে, তাহলে বুঝতে হবে যে, ওই ব্যাপারটি বিচার্য ঘটনার কারণ বা কার্য বলে বিবেচিত।”
অর্থাৎ, যদি দুটি ঘটনাকে বিভিন্ন দৃষ্টান্তে একইসঙ্গে বারবার থাকতে দেখা যায়, তাহলে ওই উপস্থিতির মিল দেখে বলতে পারা যায় যে, ওই দুটি ঘটনা কার্যকারণ সম্বন্ধে আবদ্ধ। মিলের মতে, অন্বয়ী পদ্ধতিটি প্রথম অপসারণের সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। এই পদ্ধতিটি যে অপসারণের সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত, তা হল “পূর্ববর্তী কোনো ঘটনাকে যদি অপসারণ করা হয়, এবং তার জন্য কার্যটি ঘটনার ক্ষেত্রে যদি কোনো অসুবিধা না হয়, তাহলে সেই পূর্ববর্তী ঘটনাটি কারণের অন্তর্ভুক্ত নয়।” অর্থাৎ, আলোচ্য ঘটনার সঙ্গে যদি সবসময়ই কোনো একটি ব্যাপার উপস্থিত থাকে, তাহলে আলোচ্য ঘটনাটির সঙ্গে ওই ব্যাপারটির একটি কার্যকারণ সম্পর্ক আছে বলা যায়।
মিলের সংজ্ঞার সাপেক্ষে কার্যকারণের ব্যাখ্যা: ধরা যাক, আমরা কোনো একটি ঘটনার কারণ বা কার্যকে আবিষ্কার করতে চাই। ঘটনাটি যদি একটি কার্য হয়, তাহলে তার কারণটিকে আমরা আবিষ্কার করতে চাই। আর ঘটনাটি যদি কারণ হয়, তাহলে তার কার্যটিকে আমরা জানতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করে কারণ নামক ঘটনার কার্যটিকে, অথবা কার্য নামক ঘটনার কারণটিকে আবিষ্কার করতে চাই। সেজন্য আমরা দুই বা ততোধিক দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করি। পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে আমরা এমন কতকগুলি দৃষ্টান্ত গ্রহণ করি, যেখানে প্রত্যেকটি দৃষ্টান্তেই এই ব্যাপারটি সাধারণভাবে উপস্থিত থাকলেও অন্য এমন বিষয় বা ব্যাপার সেখানে থাকতে পারে-যা সমস্ত দৃষ্টান্তে সাধারণভাবে উপস্থিত নয়। এজন্যই সাধারণ পূর্ববর্তী ঘটনাকে অনুবর্তী ঘটনার সঙ্গে কার্যকারণ সম্পর্কে আবদ্ধ বলে মনে করা হয়।
সাংকেতিক উদাহরণ | পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ) অনুবর্তী ঘটনা (কার্য) ABCD ABDE AFMP abcd abde afmp .. A হল a-এর কারণ, অথবা a হল A-এর কার্য। |
ব্যাখ্যা | এক্ষেত্রে A হল একটি কারণ ঘটনা, এবং a হল একটি কার্য ঘটনা। a নামক কার্য ঘটনার কারণ নির্ণয় করার জন্য আমরা একাধিক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণের সাহায্যে সংগ্রহ করলাম। এই সমস্ত দৃষ্টান্তগুলিতে অগ্রবর্তী বা পূর্ববর্তী ঘটনা হিসেবে A, B, C, D, E, F, M, P প্রভৃতি উপস্থিত। কিন্তু এগুলির কোনো কোনোটি এক-একটি দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত। একমাত্র একটি ঘটনাই তথা A সকল দৃষ্টান্তেই উপস্থিত। অর্থাৎ, A নামক ঘটনাটি ছাড়া আর বাদবাকি ঘটনাগুলি তথা B, C, D, E, F, M, P প্রভৃতি ঘটনাগুলি না থাকলেও, অনুবর্তী ঘটনা হিসেবে উপস্থিত। সুতরাং এ থেকে সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে যে, A নামক ঘটনাটি a-এর কারণ বা a নামক ঘটনাটি A-এর কার্য। |
বাস্তব উদাহরণ | পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ) অনুবর্তী ঘটনা (কার্য)মশার কামড় + পচাজল দুর্গন্ধম্যালেরিয়া জ্বর + সর্দি + ঝিমুনিমশার কামড় + পরিষ্কার জল +স্যাঁতসেতে আবহাওয়াম্যালেরিয়া জ্বর + মাথাধরা + অনুৎসাহমশার কামড় + গরম আবহাওয়া কীটনাশক স্প্রেম্যালেরিয়া জ্বর + কাশি + সর্দি … মশার কামড়ই ম্যালেরায়া জ্বরের কারন। |
6. অন্বয়ী পদ্ধতির দ্বিবিধ ক্রিয়া কী? উদাহরণ-সহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: দ্বিবিধ ক্লিয়ারূপে অন্বয়ী পদ্ধতি
অন্বয়ী পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা কারণ থেকে কার্যকে যেমন অনুমান করতে পারি, তেমনি আবার কার্য থেকে কারণকেও অনুমান করতে পারি। অর্থাৎ, অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে এরূপ দ্বিবিধ ক্রিয়া লক্ষ করা যায়। এই দ্বিবিধ ক্রিয়া হল-[1] কারণ থেকে কার্যের অনুমান ও [2] কার্য থেকে কারণের অনুমান।
সাংকেতিক উদাহরণ:
পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ) | অনুবর্তী ঘটনা (কার্য) |
ABC ADE AFG | abc ade afg |
.. A হল a-এর কারণ, অথবা a হল A-এর কার্য।
কারণ থেকে কার্যের অনুমান: আমরা এই সাংকেতিক উদাহরণটিতে যাকে কারণরূপে উল্লেখ করেছি, তা হল A, এই A নামক কারণের অনুগামী হিসেবে যে সমস্ত ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে a নামক ঘটনাটি সাধারণভাবে সবক্ষেত্রেই উপস্থিত। অর্থাৎ,
A→ a নামক অনুবর্তী ঘটনা সকল দৃষ্টান্তেই উপস্থিত।
… A থেকে a নামক কার্যটি অনুমান করা যায়।
কার্য থেকে কারণের অনুমান: সাংকেতিক উদাহরণটিতে যাকে আমরা কার্যরূপে উল্লেখ করেছি, তা হল a, এই a নামক কার্যের অগ্রগামী হিসেবে যে সমস্ত ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে A নামক ঘটনাটি সাধারণভাবে অন সবক্ষেত্রেই উপস্থিত। অর্থাৎ,
a → A নামক অনুবর্তী ঘটনা সকল দৃষ্টান্তেই উপস্থিত।
… a থেকে A নামক কারণটি অনুমেয়।
কারণ থেকে কার্য (মূর্ত উদাহরণ)
বাস্তব উদাহরণ | পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ) নুবর্তী ঘটনা (কার্য)বায়ু পরিবর্তন + ভালো হোটেল ভালো খাবারস্বাস্থ্যের উন্নতিবায়ু পরিবর্তন + সস্তা হোটেল + সস্তা খাবারস্বাস্থ্যের উন্নতিবায়ু পরিবর্তন + মাঝারি হোটেল মাঝারি খাবারস্বাস্থ্যের উন্নতি .. বায়ু পরিবর্তনই হল স্বাস্থ্যের উন্নতির কারণ। |
ব্যাখ্যা | ধরা যাক, বায়ু পরিবর্তনের ফলে তার কার্য বা ফল (effect) কী হতে পারে-তা আমরা অনুমান করতে চাই। এক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করতে পারি, যারা বায়ু পরিবর্তন করেছে। এই সমস্ত বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রাপ্ত দৃষ্টান্তগুলিকে বিশ্লেষণ করে দেখা গেল যে, বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিল, বিভিন্ন রকম খাবার খেয়েছিল, বিভিন্ন রকম পোশাক পরেছিল, বিভিন্ন রকম হোটেলে উঠেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেখা গেল যে-যারাই বায়ু পরিবর্তন করেছে, তাদেরই স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। অর্থাৎ, পূর্ববর্তী ঘটনা হিসেবে একমাত্র বায়ু পরিবর্তন করা ছাড়া, আর অন্য কোনো ঘটনাই সাধারণভাবে পূর্ববর্তী ঘটনা হিসেবে উপস্থিত নেই। সুতরাং অপসারণের নিয়ম অনুযায়ী অপ্রয়োজনীয় ঘটনাগুলিকে বর্জন করে, অনুমান করা যায় যে বায়ু পরিবর্তনই হল স্বাস্থ্যের উন্নতির কারণ। |
কার্য থেকে কারণ (মূর্ত উদাহরণ)
বাস্তব উদাহরণ | পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ)অনুবর্তী ঘটনা (কার্য)ডাল + সবজি + বুটি + মাছপেট খারাপডাল + সবজি + ভাত + চাটনিপেট খারাপডাল ভাত + মাছ+ পোস্তপেট খারাপডাল+বুটি + সবজি + চাটনিপেট খারাপ … পেট খারাপের কারণ হল ডাল খাওয়া। |
ব্যাখ্যা | ধরা যাক, একটি ছাত্রাবাসে সকল ছাত্রেরই পেটের অসুখ হয়েছে। এর কারণ কী তা আমরা আবিষ্কার করতে চাই। এই উদ্দেশ্যে আমরা বিভিন্ন ছাত্রের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করলাম। দেখা গেল যে, যারা পেটের অসুখে ভুগছে তাদের সকলেই আগের দিন রাত্রে বিভিন্ন রকম খাবার খেয়েছে, যথা সবজি, ডাল, মাছ, রুটি, ভাত, পোস্ত এবং চাটনি ইত্যাদি। কিন্তু পর্যবেক্ষণে আরও দেখা গেল যে, পেটের রোগে যে সকল ছাত্র ভূগছে তারা একটি খাবার সাধারণভাবে সকলেই খেয়েছে এবং তা হল ডাল। এই ডাল নামক খাবারটি ছাড়া অন্যান্য খাবারগুলিকে তাই অপসারণ করলেও, পেট খারাপ নামক কার্যটি উপস্থিত থেকেই যায়। সুতরাং পেট খারাপের কারণ হিসেবে ডাল খাওয়া নামক ঘটনাটিকে অনুমান করা যায়। |
7. অন্বয়ী পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: অন্বয়ী পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
তর্কবিদ মিলের সংজ্ঞাটিকে বিশ্লেষণ করলে অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। অন্বয়ী পদ্ধতির এই সমস্ত লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলিকে নীচে উল্লেখ করা হল:
[1] পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি হিসেবে অন্বয়ী পদ্ধতি: অন্বয়ী পদ্ধতি মূলত একটি পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি। কারণ, এক্ষেত্রে আমরা কার্যকারণ সম্বন্ধটিকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে সমস্ত দৃষ্টান্তগুলিকে সংগ্রহ করি, সেগুলি মূলত পর্যবেক্ষণের ওপরই নির্ভরশীল। পর্যবেক্ষণলব্ধ এই সমস্ত দৃষ্টান্তগুলির মাধ্যমে আমরা কার্যকারণ সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছোই।
[2] অগ্রবর্তী ও অনুবর্তী ঘটনার মধ্যে মিল হিসেবে অন্বয়ী পদ্ধতি: অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা একাধিক দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করে থাকি। এই সমস্ত দৃষ্টান্তগুলির মধ্যে কোনো কোনোটি পূর্ববর্তী ঘটনা হিসেবে এবং কোনোটি অনুবর্তী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। পূর্ববর্তী ঘটনা এবং অনুবর্তী ঘটনাগুলির মধ্যে একটি বিষয়ে এখানে মিল লক্ষ করা যায়। যে বিষয়ে উভয় ঘটনার মধ্যে মিল দেখা যায়, সেই ঘটনা দুটিকে কার্যকারণ সম্বন্ধে আবদ্ধ বলে মনে করা হয়।
[3] সহজসরল পদ্ধতি হিসেবে অন্বয়ী পদ্ধতি: অন্বয়ী পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ ও সরল একটি পদ্ধতি। কারণ, এই পদ্ধতিতে কোনোপ্রকার জটিলতা নেই। এখানে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণের সাহায্যে কিছু সদর্থক দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করা হয় এবং মিল বা সাদৃশ্যের পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকারণ সম্বন্ধটিকে অনুমান করা হয়।
[4] আবিষ্কারের পদ্ধতি হিসেবে অন্বয়ী পদ্ধতি: অন্বয়ী পদ্ধতি হল একটি আবিষ্কারের পদ্ধতি। কারণ, এই পদ্ধতিটিতে কার্যকারণ সম্বন্ধকে যাবিষ্কার করা হয়, কখনোই তাকে প্রমাণ করা হয় না। পূর্ববর্তী ও অনুবর্তী ঘটনার মধ্যে মিল লক্ষ করেই আমরা কার্যকারণ সম্বন্ধকে শুধুমাত্র অনুমান করি, কিন্তু কখনোই তাকে প্রমাণ করতে পারি না।
[5] সম্ভাব্য হিসেবে অন্বয়ী পদ্ধতি: অন্বয়ী পদ্ধতিতে আমরা কার্যকারণ সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, তা সবসময়ই সম্ভাব্যরূপে গণ্য। এরূপ পদ্ধতিটি কখনোই নিশ্চিতরূপে গণ্য নয়। কারণ এরূপ পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা কার্যকারণ সম্বন্ধকে শুধুমাত্র অনুমান করি, কখনোই তাকে প্রমাণ করতে পারি না। সে কারণেই বলা যায় যে, অন্বয়ী পদ্ধতিতে গৃহীত সিদ্ধান্তটি সবসময়ই সম্ভাব্য (probable) রূপে গণ্য।
[6] ব্যাপক প্রয়োগক্ষেত্র হিসেবে অন্বয়ী পদ্ধতি: অন্বয়ী পদ্ধতি যেহেতু শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল, সেহেতু আমরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রচুর সংখ্যক দৃষ্টান্তকে গ্রহণ করতে পারি। এর ফলে অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়োগক্ষেত্রটি অত্যন্ত ব্যাপক হয় এবং আমাদের অভিজ্ঞতাকে অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই সমৃদ্ধ করে তোলে।
8. অন্বয়ী পদ্ধতির সুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: অন্বয়ী পদ্ধতির সুবিধা
কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অন্বয়ী পদ্ধতির সুবিধাগুলি হল-
[1] পর্যবেক্ষণযোগ্যতার সুবিধা: অন্বয়ী পদ্ধতি মূলত একটি পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি। সেজন্য দাবি করা যায় যে, এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের সুবিধাগুলিও বর্তমান। অবশ্য এই পদ্ধতিকে পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি বলা হলেও, পরীক্ষণের সাহায্যেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। তবে ব্যাপকভাবে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির প্রয়োগের জন্য আমরা ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণের ওপরই নির্ভর করি। আরও বলা যায়, যে সমস্ত ক্ষেত্রে পরীক্ষণকে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়, সেই সমস্ত ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিটিকে প্রয়োগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, বন্যা, মহামারি, ভূমিকম্প, গ্রহণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করতে গেলে, একমাত্র নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিই হল অন্বয়ী পদ্ধতি।
[2] ব্যাপক প্রয়োগক্ষেত্রের সুবিধা: পরীক্ষণের তুলনায় পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির পরিধি অনেক বেশি বলে এই পদ্ধতির প্রয়োগক্ষেত্রও অত্যন্ত ব্যাপক। অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে আমরা একদিকে যেমন কারণ থেকে কার্যে পৌঁছোতে পারি, তেমনই আবার কার্য থেকে কারণেও পৌঁছোতে পারি। এ ছাড়াও বলা যায় যে, কোনো ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে অন্যান্য পদ্ধতিগুলি যেখানে একেবারেই অচল, সেক্ষেত্রে একমাত্র নির্ভরশীল পদ্ধতি হল অন্বয়ী পদ্ধতি। এই অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগ করেই আমরা একদিকে যেমন অ্যানোফিলিস মশার কামড়কে ম্যালেরিয়ার কারণ বলতে পারি, তেমনি আবার ম্যালেরিয়াকে অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের কার্যরূপেও উল্লেখ করতে পারি। এভাবেই অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়োগক্ষেত্রটি যে অত্যন্ত ব্যাপক, তা বলা যায়।
[3] বলিষ্ঠ প্রকল্প গঠনের সুবিধা: অন্বয়ী পদ্ধতি কারণ সম্পর্কে বলিষ্ঠ প্রকল্প (hypothesis) গঠন করতে সাহায্য করে এবং কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কারের পথটিকে অত্যন্ত প্রশস্ত করে। অনেক সময় আমরা পরপর দুটি ঘটনা একসঙ্গে ঘটলেই তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক আছে বলে মনে করি। কিন্তু দুটি ঘটনা পরপর একসঙ্গে ঘটলেই তাদের মধ্যে যে কার্যকারণ সম্পর্ক আছে, এমন দাবি নিশ্চিতভাবে করা যায় না। একমাত্র অন্বয়ী পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগের ফলেই পরপর ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনার মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নিশ্চিতভাবে প্রতিষ্ঠা না করা গেলেও, সে সম্পর্কে একটি বলিষ্ঠ প্রকল্প অবশ্যই গঠন করা যায়।
[4] সহজসরল পদ্ধতির সুবিধা: অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়োগ পদ্ধতিটি হল অত্যন্ত সহজ ও সরল। অন্যান্য পদ্ধতির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, দৃষ্টান্তগুলিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে সংগ্রহ করতে হয়। কারণ সংগৃহীত দৃষ্টান্তগুলি যদি ভুল হয়, তবে কার্যকারণ সম্পর্কের বিষয়টিও ভুল হয়। কিন্তু অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তগুলিকে অত্যন্ত সচেতনভাবে সংগ্রহ না করলেও চলে। যদি এক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত এসে যায়ও, তাহলে তাকে অপসারণের মাধ্যমে অতি সহজেই বর্জন করা যেতে পারে। সেকারণেই অন্যান্য পদ্ধতিগুলির তুলনায় অন্বয়ী পদ্ধতি অবশ্যই সহজ ও সরলরূপে গণ্য।
[5] আবিষ্কারের পদ্ধতি হিসেবে সুবিধা: তর্কবিদ মিল (Mill) অন্বয়ী পদ্ধতিকে একটি আবিষ্কারের পদ্ধতি হিসেবে অভিহিত করেছেন, প্রমাণের পদ্ধতি হিসেবে নয়। স্বাভাবিকভাবেই এই পদ্ধতি কার্যকারণ সম্বন্ধকে প্রমাণ করতে না পারলেও, অবান্তর বিষয় বা ঘটনাগুলিকে অপসারণ করে একটি সম্ভাব্য কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ে সাহায্য করে।
[6] বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে সাহায্যকারী: বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিতে সাহায্যকারী হিসেবে অস্থায়ী পদ্ধতির যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে তা অস্বীকার করা যায় না। কারণ এরকম পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে আমরা অপ্রয়োজনীয় বিষয় বা ঘটনাগুলিকে অপসারণ করতে পারি। এর ফলে বৈজ্ঞানিক আলোচনার পথটি আরও সহজ ও মসৃণ হয়ে ওঠে। কারণ বৈজ্ঞানিক আলোচনা অত্যন্ত সহজেই প্রকল্প গঠন করে, তাকে যাচাই করতে পারে এবং কার্যকারণ সম্বন্ধকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
9. অন্বয়ী পদ্ধতির অসুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: অন্বয়ী পদ্ধতির অসুবিধা
অন্বয়ী পদ্ধতি মূলত পর্যবেক্ষণের পদ্ধতি বলে, তার মধ্যে পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন দোষও লক্ষ করা যায়। অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে নীচের অসুবিধাগুলি উল্লেখ করা যায়:
[1] প্রকৃতিগত দোষের অসুবিধা: প্রকৃতিগত দোষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হল বহুকারণবাদের সম্ভাবনা। অনেক সময় দেখা যায় যে, বহুকারণের সম্ভাবনার ফলে অন্বয়ী পদ্ধতি দ্বারা প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটি ব্যর্থ বা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বহুকারণবাদের সম্ভাবনাটি অন্বয়ী পদ্ধতির গঠন প্রকৃতির মধ্যেই নিহিত। সেকারণেই একে অন্বয়ী পদ্ধতির প্রকৃতিগত দোষরূপে অভিহিত করা হয়। এরূপ প্রকৃতিগত দোষ থেকে মুক্ত হওয়া সহজ নয়।
[2] ব্যাবহারিক দোষের অসুবিধা: অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়োগের ব্যাবহারিক ক্ষেত্রগুলিতেও একাধিক দোষ বা ত্রুটি দেখা যায়। এগুলিকেই বলা হয় অন্বয়ী পদ্ধতির ব্যাবহারিক দোষ। এই ধরনের দোষগুলি আবার কীরকম সেগুলিকে নীচে উল্লেখ করা হল-
i. অপর্যবেক্ষণজনিত ব্যাবহারিক দোষের অসুবিধা: অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমরা যে সমস্ত দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করি, তা পর্যবেক্ষণের সাহায্যে সংগৃহীত। পর্যবেক্ষণের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা অবশ্যই আছে। তাই অন্বয়ী পদ্ধতি অনিবার্যভাবেই কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ, পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতার ফলে আমরা কারণ হিসেবে যে সমস্ত পূর্ববর্তী ঘটনাসমূহকে সংগ্রহ করি, তার মধ্যে প্রকৃত কারণটি উপস্থিত নাও থাকতে পারে। প্রকৃত কারণটিকে তাই আমরা অনেক সময় অপর্যবেক্ষণ করে থাকি। এর ফলে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যটিই ব্যাহত হয়ে পড়ে।
ii. ঘটনার সহাবস্থানের দোষের অসুবিধা: অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দোষ দেখা যায় এবং তা হল দুটি ঘটনার সহাবস্থানের সম্পর্ককে কার্যকারণ সম্পর্করূপে অভিহিত করার প্রবণতা। এরূপ প্রবণতার সম্ভাবনাটিও অত্যন্ত ব্যাপক। এর ফলে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। কারণ, অন্বয়ী পদ্ধতির প্রয়োগ করে সহাবস্থান ও কার্যকারণ সম্বন্ধের মধ্যে যে একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে-সেই পার্থক্যটিকে আমরা ভুলে যাই এবং প্রকৃত কার্যকারণ সম্পর্ককে নির্ণয় করতে ব্যর্থ হই।
10.মিলের অন্বয়ী পদ্ধতি আলোচনা করো। [সংজ্ঞা, আকার, দৃষ্টান্ত, সুবিধা (২টি), অসুবিধা (২টি)]
উত্তর:
সংজ্ঞা | তর্কবিজ্ঞানী মিল (Mill) অন্বয়ী পদ্ধতির সূত্রটিকে যেভাবে উপস্থাপিত করেছেন, তা হল ‘আলোচ্য কোনো অনুসন্ধানমূলক ঘটনার দুই বা ততোধিক দৃষ্টান্তে যদি অন্য একটি ব্যাপার সর্বদাই উপস্থিত থাকে, তাহলে বুঝতে হবে যে, ওই ব্যাপারটি বিচার্য ঘটনার কারণ বা কার্য বলে বিবেচিত।’ |
আকার | পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ)অনুবর্তী ঘটনা (কার্য) ABCD ABDE AFMP abcd abde afmp…A হল -এর কারণ, অথবা হল A-এর কার্য। |
দৃষ্টান্ত | পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ)অনুবর্তী ঘটনা (কার্য)মশার কামড় পচাজল + দুর্গন্ধম্যালেরিয়া জ্বর সর্দি + ঝিমুনিমশার কামড় পরিষ্কার জল স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াম্যালেরিয়া জ্বর মাথাধরা + অনুৎসাহমশার কামড় গরম আবহাওয়া কীটনাশক স্প্রেম্যালেরিয়া জ্বর কাশি + সর্দি .: মশার কামড়ই হল ম্যালেরিয়া জ্বরের কারণ, অথবা ম্যালেরিয়া জ্বর হল মশাকামড়ের কার্য |
সুবিধা | i. অন্বয়ী পদ্ধতি মূলত একটি পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি। সেজন্য দাবি করা যায় যে, এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের সুবিধাগুলিও বর্তমান। অবশ্য এই পদ্ধতিকে পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি বলা হলেও, পরীক্ষণের সাহায্যেও এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়। তবে ব্যাপকভাবে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির প্রয়োগের জন্য আমরা ব্যাপকভাবে পর্যবেক্ষণের ওপরই নির্ভর করি। আরও বলা যায়, যে-সমস্ত ক্ষেত্রে পরীক্ষণকে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়, সেই সমস্ত ক্ষেত্রেও এই পদ্ধতিটিকে প্রয়োগ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, বন্যা, মহামারি, ভূমিকম্প, গ্রহণ প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করতে গেলে, একমাত্র নির্ভরযোগ্য পদ্ধতিই হল অন্বয়ী পদ্ধতি। |
ii. তর্কবিদ মিল (Mill) অন্বয়ী পদ্ধতিকে একটি আবিষ্কারের পদ্ধতি হিসেবে অভিহিত করেছেন, প্রমাণের পদ্ধতি হিসেবে নয়। স্বাভাবিকভাবেই এই পদ্ধতি কার্যকারণ সম্বন্ধকে প্রমাণ করতে না পারলেও, অবান্তর বিষয় বা ঘটনাগুলিকে অপসারণ একটি সম্ভাব্য কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ে সাহায্য করে, | |
অসুবিধা | । প্রকৃতিগত দোষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ হল বহুকারণবাদের সম্ভাবনা। অনেক সময় দেখা যায় যে, বহুকারণের সম্ভাবনার ফলে অন্বয়ী পদ্ধতি দ্বারা প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটি ব্যর্থ বা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বহুকারণবাদেরাদের সম্ভাবনা। অনেক চির গঠন প্রকৃতির মধ্যেই নিহিত। সেকারণেই একে অন্বয়ী পদ্ধতির প্রকৃতিগত দোষরূপে অভিহিত করা হয়। এরূপ প্রকৃতিগত দোষ থেকে মুক্ত হওয়া সহজ নয়।ii. অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমরা যে সমস্ত দৃষ্টান্ড সংগ্রহ করি, তা পর্যবেক্ষণের সাহায্যে সংগৃহীত। আমরা এটাও জানি যে, পর্যবেক্ষণের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা অবশ্যই আছে। তাই অন্বয়ী পদ্ধতি অনিবার্যভাবেই কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ, পর্যবেক্ষণের সীমাবদ্ধতার ফলে আমরা কারণ হিসেবে যে সমস্ত পূর্ববর্তী ঘটনাসমূহকে সংগ্রহ করি, তার মধ্যে প্রকৃত কারণটি উপস্থিত নাও থাকতে পারে। প্রকৃত কারণটিকে তাই আমরা অনেক সময় অপর্যবেক্ষণ করে থাকি। এর ফলে কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যটিই ব্যাহত হয়ে পড়ে। |
11.ব্যতিরেকী পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলো কী তা উল্লেখ করো।
উত্তর: ব্যতিরেকী পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
ব্যতিরেকী পদ্ধতির সংজ্ঞাটিকে বিশ্লেষণ করলে এই পদ্ধতিটির ক্ষেত্রে কতকগুলি বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলিকে নীচে উল্লেখ করা হল:
[1] পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি: ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে কার্যকারণ সম্পর্কটিকে পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা যায়। এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে মাত্র দুটি দুষ্টান্ডের
প্রয়োজন হয়। এই দুটি দৃষ্টান্তের একটি সদর্থক দৃষ্টান্ত ও অপরটি নঞর্থক এই দুটি দৃষ্টান্ডের মধ্যে থাকে, কিন্তু নঞর্থক দৃষ্টান্তে ঘটনাটি অনুপস্থিত থালোচ্য ঘটনাটি এই একটি বিষয় ছাড়া, আর অন্যান্য সমস্ত বিষয়ে দৃষ্টান্ত দুটির মধ্যে মিল থাকে। দাবি করা হয় যে, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ব্যতিরেকী পদ্ধতির দৃষ্টান্ডকে ইচ্ছামতো সংগ্রহ প্রা যায় না। শুধুমাত্র পরীক্ষণই এই পদ্ধতির প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত সরবরাহ করতে পারে। সেই কারণেই ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে একটি পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি (method of experiment) বলা হয়।
(2) প্রমাণের পদ্ধতি: ব্যতিরেকী পদ্ধতি একটি প্রমাণমূলক পদ্ধতি (method of proof)-ও বটে। কারণ, এটি মূলত পরীক্ষণনির্ভর। আর পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি সর্বদাই প্রমাণযোগ্য। পরীক্ষণের ক্ষেত্রে ঘটনাটি যে সমস্ত পরিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে ঘটে, সেই সমস্ত অবস্থাগুলির ওপর আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। এর ফলে আমরা বার বার একই বিষয়কে পরীক্ষা করে একই ফল পেতে পারি। স্বাভাবিকভাবেই তাই আমরা আমাদের প্রয়োজনমতো বিষয়টিকে প্রমাণ করতে পারি। সেজন্যই ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে একটি প্রমাণের গদ্ধতিরূপে দাবি করা হয়।
(3) একটি মাত্র বিষয়ের ব্যতিরেক বা পার্থক্য: ব্যতিরেকী পদ্ধতির ক্ষেত্রে মাত্র দুটি দৃষ্টান্ডের প্রয়োজন হয়। এই দুটি দৃষ্টান্তের মধ্যে আর সব বিষয়ে মিল বা সাদৃশ্য থাকলেও, মাত্র একটি বিষয়ে উভয় দৃষ্টান্ডের মধ্যে অমিল বা যতিরেক দেখা যায়। এই একটি মাত্র ব্যতিরেক বা পার্থক্যই কার্যকারণ সম্পর্ককে প্রমাণ করতে পারে। এ কারণেই মেলোন (Mellone) এবং কফি (Coffey) প্রমুখ তর্কবিদগণ ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে একক ব্যতিরেকী পদ্ধতিরূপে উল্লেখ করেছেন।
4. অসতর্ক প্রয়োগে দোষের সম্ভাবনা: দৈনন্দিন জীবনে আমরা সবসময় সচতনভাবে ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে প্রয়োগ করি না-এ কথা ঠিক। সচেতনভাবে এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ না করলে অনেক সময় অনুমানলব্ধ সিধান্তটি অবৈধ হয়ে যায়। যেমন, অনেক সময় আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাবের পর রাজার মৃত্যু হলে, ধূমকেতুর আবির্ভাবকে রাজার মৃত্যুর কারণ বলে উল্লেখ করা হয়। এইরূপ অসতর্কভাবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগ করলে কাকতালীয় দোষের উদ্ভব হয়। দৈনন্দিন জীবনে এই পদ্ধতির অসতর্ক প্রয়োগে তাই নির্ভরযোগ্য সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না।
[5] শ্রেষ্ঠ বা নির্ভুল পদ্ধতি: অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করলে একমাত্র ব্যতিরেকী পদ্ধতিটিই কার্যকারণ সম্পর্ক সম্বন্ধে নির্ভুল তথ্য দিতে পারে। কারণ, এরূপ পদ্ধতিতে পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণের সাহায্যে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করা হয়। সে কারণেই তর্কবিদ মিল (Mill) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে সফল আরোহ পদ্ধতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ পদ্ধতিরূপে উল্লেখ করেছেন।
2. ব্যতিরেকী পদ্ধতির সুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: ব্যতিরেকী পদ্ধতির সুবিধা
ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রমাণমূলক পদ্ধতি বলে তার কতকগুলি সুবিধা রয়েছে। এই সমস্ত সুবিধাগুলি হল-
[1] পরীক্ষণযোগ্যতার সুবিধা: ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি। সেজন্যই এই পদ্ধতিতে পরীক্ষণের সুযোগসুবিধাগুলি আছে। সেজন্য এই পদ্ধতির সাহায্যে যে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়, তা কখনোই সম্ভাব্য নয়, তা সুনিশ্চিত। এই পদ্ধতিটি তাই সঠিকভাবেই কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
[2] সহজ ও সরল পদ্ধতির সুবিধা: ব্যতিরেকী পদ্ধতি হল একটি অত্যন্ত সহজ ও সরল পদ্ধতি। সেইজন্যই এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে কোনো ঝামেলা থাকে না। কারণ, এখানে মাত্র দুটি দৃষ্টান্ডের প্রয়োজন হয়। এই ণর দুটি দৃষ্টান্তের একটি হল সদর্থক দৃষ্টান্ত এবং অন্যটি হল নঞর্থক দৃষ্টান্ত। এদের মধ্যে যে বিষয়ে ব্যতিরেক বা অমিল, তাকেই আলোচ্য ঘটনার কারণ বা কার্য রূপে অভিহিত করা হয়। এই পদ্ধতিটিকে তাই সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সহজেই প্রয়োগ করতে পারে।
[3] প্রমাণযোগ্যতার সুবিধা: তর্কবিদ মিল (Mill) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে প্রমাণের পদ্ধতি (method of proof) রূপে অভিহিত করেছেন। অন্বয়ী পদ্ধতি অথবা অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়, অনেক সময় সেই সমস্ত সিদ্ধান্তকে প্রমাণ বা যাচাই করতে হলে ব্যতিরেকী পদ্ধতির ওপরই নির্ভর করতে হয়। সেই কারণেই প্রমাণের পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির মূল্যটিকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না।
[4] বহুকারণবাদ থেকে মুক্ত হওয়ার সুবিধা: অন্যান্য পদ্ধতির ক্ষেত্রে, বিশেষ করে অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটি অনেক সময় বহুকারণবাদের দোষে দুষ্ট হতে পারে। কিন্তু ব্যতিরেকী পদ্ধতির মাধ্যমে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত কখনোই বহুকারণবাদের পথটিকে প্রশস্ত করে না। এরূপ পদ্ধতি সবসময়ই একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করে এবং যথাযথভাবে কার্যকারণ সম্বন্ধটিকে নির্দেশ করে। ব্যতিরেকী পদ্ধতিটি তাই বহুকারণের সম্ভাবনা থেকে মুক্ত।
[5] সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ পদ্ধতির সুবিধা: সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ পদ্ধতি রূপে ব্যতিরেকী পদ্ধতিকেই উল্লেখ করেছেন তর্কবিদ মিল (Mill)। কারণ, অন্যান্য পদ্ধতির মাধ্যমে সিদ্ধান্তে যে কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে পরীক্ষণের সাহায্যে প্রমাণ করে ব্যতিরেকী পদ্ধতিই। সেকারণে এরূপ পদ্ধতিটিকেই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রমাণ পদ্ধতি বলা হয়।
12. ব্যতিরেকী পদ্ধতির অসুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: ব্যতিরেকী পদ্ধতির অসুবিধা
ব্যতিরেকী পদ্ধতির ক্ষেত্রে উপরিউক্ত সুবিধাগুলি থাকলেও তার কতকগুলি দোষ বা ত্রুটি আছে। ব্যতিরেকী পদ্ধতির এই সমস্ত দোষ বা ত্রুটির পরিপ্রেক্ষিতে যে সমস্ত অসুবিধার সৃষ্টি হয় সেগুলিকে নীচে উল্লেখ করা হল:
[1] সীমিত প্রয়োগের অসুবিধা: ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি। সেকারণেই পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির যাবতীয় সীমাবদ্ধতা এই পদ্ধতির মধ্যে দেখা যায়। আমরা জানি, পরীক্ষণের ক্ষেত্র অত্যন্ত সংকীর্ণ। সুতরাং, যে সমস্ত ক্ষেত্রে পরীক্ষণ সম্ভব নয়, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগও সম্ভব নয়। অতএব দেখা যায় যে, অন্যান্য পদ্ধতিগুলির তুলনায় ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগক্ষেত্রও অত্যন্ত সীমিত।
[2] একমুখী পদ্ধতির অসুবিধা: ব্যতিরেকী পদ্ধতি পরীক্ষণ নির্ভর হওয়ায় আমরা কারণ থেকে কার্যে যেতে পারি; কিন্তু কার্য থেকে কখনোই কারণে আসতে পারি না। আমরা সম্ভাব্য কারণের সাথে কিছু যোগ বা বিয়োগ করে আলোচ্য ঘটনার কারণ নির্ণয় করতে পারি। কিন্তু কার্যের সঙ্গে কিছু যোগ বা বিয়োগ করতে পারি না। ব্যতিরেকী পদ্ধতি অনুসারে কোনো কার্যের কারণ আবিষ্কার করতে হলে সেই কার্যের কিছু কল্পিত কারণকে গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু এরূপ কল্পিত কারণ দ্বারা কার্যটি সম্পন্ন হয় কি না-তা পরীক্ষণের মাধ্যমে দেখতে হয়। কিন্তু এ ধরনের কারণ কল্পনা করা কোনো প্রমাণ পদ্ধতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
[3] কারণ ও শর্তের পার্থক্যহীনতার অসুবিধা: ব্যতিরেকী পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা কারণ এবং শর্তের মধ্যে পার্থক্য করতে ব্যর্থ হই। কারণ, এই পদ্ধতি প্রমাণ করার চেষ্টা করে যে, অগ্রবর্তী কোনো ঘটনা হল অনুবর্তী কোনো ঘটনার কারণ। কিন্তু অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেখা গেছে যে, অনেক সময় অগ্রবর্তী ঘটনাটি কারণ না হয়ে কারণের একটি অংশ বা শর্তরূপে গণ্য হয়। উদাহরণস্বরূপ, মশলামুড়ির ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম মশলা লবণবিহীন মুড়িতে দিলে তা কখনোই সুস্বাদু হয় না। কিন্তু লবণ দিলেই তা সুস্বাদু হয়ে ওঠে। তাহলে সেক্ষেত্রে যদি ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করে বলা হয় যে, লবণই হল মশলামুড়ি সুস্বাদু হওয়ার কারণ-তাহলে তা ভুল হবে। কারণ, সেক্ষেত্রে একটি শর্তকে কারণরূপে উল্লেখ করা হয়, যা আদৌ যুক্তিসংগত নয়।
[4] কাকতালীয় পদ্ধতি: অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যদি প্রয়োগ না করা যায়, তাহলে ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগের ফলে কাকতালীয় দোষের উদ্ভব ঘটে। এই কাকতালীয় দোষের ফলে অবান্তর কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণরূপে উল্লেখ করা হয়-যা একটি পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
13.ব্যতিরেকী পদ্ধতিটি অপসারণের কোন্ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত? ব্যতিরেকী পদ্ধতির সূত্রটিকে উল্লেখ করো।
উত্তর: অপসারণের দ্বিতীয় সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত ব্যতিরেকী পদ্ধতি
ব্যতিরেকী পদ্ধতিটি অপসারণের দ্বিতীয় সূত্রের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ, কোনো ঘটনাকে অপসারণ বা বর্জন করলে যদি কার্যটি ঘটার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা হয়, তাহলে সেই ঘটনাটি কারণ বা কারণের অংশরূপে বিবেচিত। দুটি দৃষ্টান্তের মধ্যে একটি মাত্র বিষয়ের অমিল বা ব্যতিরেকের ওপর নির্ভর করেই এরূপ পদ্ধতিটির সাহায্যে কার্যকারণ সম্পর্কটিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ, একটি মাত্র বিষয়ের ব্যতিরেকের মাধ্যমে কার্যকারণ সম্পর্কটিকে নির্ণয় করার চেষ্টা করা হয় বলে এরূপ পদ্ধতিটিকে বলা হয় ব্যতিরেকী পদ্ধতি।
কতকগুলি পরিপ্রেক্ষিতে
তর্কবিদ মিল (J.S. Mill) ব্যতিরেকী পদ্ধতির সূত্রটি যেভাবে উল্লেখ করেছেন, তা হল: যে দৃষ্টান্তে বিচার্য ঘটনাটি উপস্থিত আছে এবং যে দৃষ্টান্তে ওই ঘটনাটি উপস্থিত নেই, তাদের মধ্যে একটি ছাড়া আর সব ব্যাপারেই যদি মিল থাকে, তাহলে যে ব্যাপার প্রথম দৃষ্টান্তে উপস্থিত আছে এবং দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত আছে, সেটি বিচার্য ঘটনার কারণ অথবা কার্য অথবা কারণের অপরিহার্য অংশরূপে বিবেচিত।
অর্থাৎ, পারিপার্শ্বিক অবস্থাসমূহ একরকম থাকলেও, যদি কোনো ঘটনাকে সরিয়ে নিলে অন্য একটি ঘটনাও সরে যায় এবং সেটি হাজির করলে ওই ঘটনাটিও আবার এসে হাজির হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে, ওই দুটি ঘটনার মধ্যে একপ্রকার কার্যকারণ সম্বন্ধ আছে।
ব্যতিরেকী পদ্ধতির দুটি রূপ
ব্যতিরেকী পদ্ধতির দুটি রূপ দেখা যায়। [1] অগ্রবর্তী বা পূর্ববর্তী ঘটনাগুলি থেকে কোনো ঘটনা বাদ দিলে, অনুবর্তী ঘটনার ক্ষেত্রেও কিছু বাদ পড়ে যায়। [2] পূর্ববর্তী ঘটনার সঙ্গে কিছু নতুন ঘটনা যুক্ত করার ফলে লক্ষ করা যায় যে, অনুবর্তী ঘটনার ক্ষেত্রেও সঙ্গে সঙ্গে নতুন কোনো বিষয় যুক্ত হয়ে যায়।
সাংকেতিক উদাহরণ 1 | পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ)অনুবর্তী ঘটনা (কার্য) ABC abcসদর্থক দৃষ্টান্ত BC bcনঞর্থক দৃষ্টান্ত .: A হল a-এর কারণ। |
ব্যাখ্যা: এখানে সদর্থক ও নঞর্থক দুটি দৃষ্টান্ত আছে। সদর্থক দৃষ্টান্তে পূর্ববর্তী ঘটনাতে A আছে এবং সঙ্গে সঙ্গে অনুবর্তী ঘটনাতেও এ আছে। আবার দেখা যায় যে, নঞর্থক দৃষ্টান্তে পূর্ববর্তী ঘটনাতে A নেই, সঙ্গে সঙ্গে অনুবর্তী ঘটনাতেও এ নেই। অথচ অন্যান্য পারিপার্শ্বিক ঘটনাগুলি একই আছে। সুতরাং, বলা যায় যে, এ হল a -এর কারণ।
সাংকেতিক উদাহরণ 2 | পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ)অনুবর্তী ঘটনা (কার্য) BC bcনঞর্থক দৃষ্টান্ত ABC abcসদর্থক দৃষ্টান্ত .: A হল -এর কারণ। |
ব্যাখ্যা: এখানে নঞর্থক ও সদর্থক দুটি দৃষ্টান্ত আছে। নঞর্থক দৃষ্টান্তের পূর্ববর্তী ঘটনায় A নেই এবং সঙ্গে সঙ্গে অনুবর্তী ঘটনাতেও a নেই। কিন্তু সদর্থক দৃষ্টান্তের পূর্ববর্তী ঘটনাতে A আছে এবং সঙ্গে সঙ্গে অনুবর্তী ঘটনাতেও a আছে। অথচ অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থাগুলি একই আছে। সুতরাং, বলা যায় যে, A হল a -এর কারণ।
বাস্তব উদাহরণ | কোনো পাত্র যদি বায়ুতে পূর্ণ থাকে এবং তার মধ্যে যদি ঘণ্টাধ্বনি সৃষ্টি করা হয়, তাহলে তা শোনা যায়। কিন্তু পাত্রটি থেকে যদি বায়ুকে বের করে দেওয়া হয় অর্থাৎ, বাদ দেওয়া হয়-তাহলে ঘণ্টা নাড়ালেও তা শোনা যায় না। সুতরাং অনুমান করা যায় যে, বায়ুর উপস্থিতিই হল ঘণ্টাধ্বনি শোনার কারণ। |
14.”থাইরয়েড গ্রন্থি ছেদনের ফলে বৃদ্ধি ক্ষীণ হল। সূতরাং থাইরয়েড গ্রন্থি বৃদ্ধির কারণ।” ওপরের দৃষ্টান্তে মিলের কোন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে? পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো [চিহ্নিতকরণ, সংজ্ঞা, আকার, সুবিধা (২টি), অসুবিধা (২টি)]। অথবা, মিলের ব্যতিরেকী পদ্ধতি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
চিহ্নিতকরণ | ব্যতিরেকী পদ্ধতি |
সংজ্ঞা | তর্কবিদ মিল (J.S. Mill)-এর মতে ব্যতিরেকী পদ্ধতির সূত্রটি হল-“যে দৃষ্টান্তে বিচার্য ঘটনাটি উপস্থিত আছে এবং যে দৃষ্টান্তে ওই ঘটনাটি উপস্থিত নেই, তাদের মধ্যে একটি ছাড়া আর সব ব্যাপারেই যদি মিল থাকে, তাহলে যে ব্যাপার প্রথম দৃষ্টান্তে উপস্থিত আছে এবং দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে অনুপস্থিত আছে, সেটি বিচার্য ঘটনার কারণ অথবা কার্য অথবা কারণের অপরিহার্য অংশরূপে বিবেচিত”। |
আকার | আকার1 পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ)অনুবর্তী ঘটনা (কার্য)ABC (সদর্থক দৃষ্টান্ত)abc (সদর্থক দৃষ্টান্ত)BC (নঞর্থক দৃষ্টান্ত)bc (নঞর্থক দৃষ্টান্ত) … A হল a-এর কারণ। আকার 2 পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ)অনুবর্তী ঘটনা (কার্য)BC (নঞর্থক দৃষ্টান্ত)bc (নঞর্থক দৃষ্টান্ত)ABC (সদর্থক দৃষ্টান্ত)abc (সদর্থক দৃষ্টান্ত) .. A হল a-এর কারণ। |
সুবিধা | i. ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি। সেজন্যই এই পদ্ধতিতে পরীক্ষণের সুযোগসুবিধাগুলি আছে। এই পদ্ধতির সাহায্যে যে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়, তা কখনোই সম্ভাব্য নয়, তা সুনিশ্চিত। এই পদ্ধতিটি তাই সঠিকভাবেই কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করতে পারে।ii. তর্কবিদ মিল (Mill) ব্যতিরেকী পদ্ধতিকে প্রমাণের পদ্ধতি (method of proof) রূপে অভিহিত করেছেন। অন্বয়ী পদ্ধতি অথবা অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করে যে সমস্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়, অনেক সময় সেই সমস্ত সিদ্ধান্তকে প্রমাণ বা যাচাই করতে হলে, ব্যতিরেকী পদ্ধতির ওপরই নির্ভর করতে হয়। সেই কারণেই প্রমাণের পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির মূল্যটিকে কখনোই অস্বীকার করা যায় না। |
অসুবিধা | i. ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি। সেকারণেই পরীক্ষণমূলক পদ্ধতির যাবতীয় সীমাবদ্ধতা এই পদ্ধতির মধ্যে দেখা যায়। আমরা জানি, পরীক্ষণের ক্ষেত্র অত্যন্ত সংকীর্ণ। সুতরাং যে সমস্ত ক্ষেত্রে পরীক্ষণ সম্ভব নয়, সেই সমস্ত ক্ষেত্রে কার্যকারণ সুম্পর্ক নির্ণয়ের জন্য পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগও সম্ভব নয়। অতএব দেখা যায় যে, অন্যান্য পদ্ধতিগুলির তুলনায় ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগক্ষেত্রও অত্যন্ত সীমিত।ii. অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যদি প্রয়োগ না করা যায়, তাহলে ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রয়োগের ফলে কাকতালীয় দোষের উদ্ভব ঘটে। এই কাকতালীয় দোষের ফলে অবান্তর কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণরূপে উল্লেখ করা হয়-যা একটি পরীক্ষণমূলক পদ্ধতি হিসেবে ব্যতিরেকী পদ্ধতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। |
15. অন্বয়ী পদ্ধতির সঙ্গে ব্যতিরেকী পদ্ধতির তুলনা করো।
উত্তর: অন্বয়ী পদ্ধতি মূলত পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল।
বিষয় | অন্বয়ী পদ্ধতি | ব্যতিরেকী পদ্ধতি |
1. নির্ভরগত | অন্বয়ী পদ্ধতি মূলত পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল। | ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত পরীক্ষণের ওপর নির্ভরশীল। |
2. নিয়ন্ত্রণগত | অন্বয়ী পদ্ধতিতে পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে ঘটনাসমূহকে আমরা কখনোই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। ঘটনা ঠিক যেভাবে ঘটে, আমরা ঠিক সেভাবেই ঘটনাকে পর্যবেক্ষণ করতে বাধ্য হই। | ব্যতিরেকী পদ্ধতিতে পরীক্ষণের ক্ষেত্রে ঘটনাসমূহ আমাদের নিয়ন্ত্রণাধীন বলে আমরা সেগুলিকে প্রয়োজনমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। |
3. পদ্ধতিগত | অন্বয়ী পদ্ধতি হল মূলত একটি আবিষ্কারের পদ্ধতি। কারণ এই পদ্ধতি কার্যকারণ সম্পর্ককে আবিষ্কার করে মাত্র, প্রমাণ করে না। | ব্যতিরেকী পদ্ধতি মূলত প্রমাণের পদ্ধতি। কারণ, এই পদ্ধতি আবিষ্কৃত কার্যকারণ সম্পর্ককে প্রমাণও করে। |
4.অপসারণের সূত্রগত | অন্বয়ী পদ্ধতিটি অপসারণের প্রথম সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। | ব্যতিরেকী পদ্ধতিটি অপসারণের দ্বিতীয় সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। |
বিষয় | অন্বয়ী পদ্ধতি | ব্যতিরেকী পদ্ধতি |
5. দৃষ্টান্তগত | অন্বয়ী পদ্ধতি পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল বলে তা শুধুমাত্র দুই বা ততোধিক সদর্থক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভরশীল।\ | ব্যতিরেকী পদ্ধতি পরীক্ষণের ওপর নির্ভরশীল বলে, সেক্ষেত্রে মাত্র দুটি দৃষ্টান্তের প্রয়োজন হয়। এই দুই দৃষ্টান্তের একটি হল সদর্থক দৃষ্টান্ত এবং অপরটি হল নঞর্থক দৃষ্টান্ত। |
6. দৃষ্টান্তের মিল ও অমিলগত | অন্বয়ী পদ্ধতির দৃষ্টান্তসমূহের ক্ষেত্রে আমরা ঘটনাগুলির মধ্যে মিল বা অন্বয় পর্যবেক্ষণ করি। | ব্যতিরেকী পদ্ধতির দৃষ্টান্তসমূহের মধ্যে আমরা অমিল বা ব্যতিরেক লক্ষ করি। |
7.বহুকারণবাদের প্রবণতাগত | অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে বহুকারণবাদের সম্ভাবনা থেকেই যায়। | ব্যতিরেকী পদ্ধতির ক্ষেত্রে কিছু বহুকারণবাদের বিষয়টি আসে না। |
৪. সহাবস্থানের ক্ষেত্রগত | অন্বয়ী পদ্ধতির সাহায্যে কার্যকারণ সম্পর্ককে সহাবস্থানের ক্ষেত্র থেকে পৃথক করা সম্ভব নয়। | ব্যতিরেকী পদ্ধতির ক্ষেত্রে কার্যকারণ সম্পর্ককে সহাবস্থানের সম্পর্ক থেকে পৃথক করা অপেক্ষাকৃতভাবে সহজ। |
9. কার্যকারণের প্রক্রিয়াগত | অন্বয়ী পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা কারণ থেকে যেমন কার্য আবিষ্কার করতে পারি, তেমনি আবার কার্য থেকে কারণ আবিষ্কার করতে পারি। | ব্যতিরেকী পদ্ধতির ক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র কারণ থেকে কার্যের দিকেই যেতে পারি, কার্য থেকে কারণের দিকে কখনোই যেতে পারি না। |
10. দৃষ্টান্তের সংখ্যাগত | অন্বয়ী পদ্ধতির ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তের সংখ্যাকে প্রয়োজনমতো বৃদ্ধি করা যায়। | ব্যতিরেকী পদ্ধতির দৃষ্টান্তের সংখ্যাকে কখনোই প্রয়োজনমতে বৃদ্ধি করা যায় না। |
11. সিদ্ধান্তের প্রকৃতিগত | অন্বয়ী পদ্ধতির সিদ্ধান্তটি সম্ভাব্যরূপে গণ্য। | ব্যতিরেকী পদ্ধতির সিদ্ধান্তটি নিশ্চিতরূপে গ্রাহ্য। |
16. মিলের সহপরিবর্তন পদ্ধতির সূত্রটিকে ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মিলের সহপরিবর্তন পদ্ধতি
মিলের সহপরিবর্তন পদ্ধতিটি তৃতীয় অপসারণের সূত্রের ওপর ভিত্তি করে গঠিত। আমরা জানি যে, পরিমাণের দিকনারথেকে কারণ ও কার্য পরস্পর পরস্পরের সমান। স্বাভাবিকভাবেই কারণের থেকে। আশে যদি বাড়ে বা কমে, তাহলে কার্যেও অনুরূপ বাড়া-কমা ঘটা স্বাভাবিকা থোর্থাৎ কারণের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্কো কার্যের মধ্যেও পরিবর্তন দেখাভাবিক। অর্থাৎ, কারণের পরিধ্যে যদি কোনোপ্রকার বাড়া-কমা দেখা যায়, তাহলে মনে করা যেতে পারে যে, ঘটনাদ্বয় কার্যকারণ সম্বন্ধে আবদ্ধ।
সহপরিবর্তন পদ্ধতির সংজ্ঞা
মিলের সংজ্ঞা: তর্কবিদ মিল সহপরিবর্তন পদ্ধতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন ‘কোনো ঘটনার বিশেষভাবে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটলে তার সঙ্গে সঙ্গে যদি আর-একটি ঘটনারও ওই একইভাবে নিয়মিত হ্রাসবৃদ্ধি হালতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে যে, ওই দুটি ঘটনার মধ্যে কোনো-না-কোনো প্রকারের কার্যকারণ আছে’। অর্থাৎ, যখনই একটি একইভাবে বা বিপরীতভাবে বাড়ে বা কমে, তখনই বুঝতে হবে যে, পূর্বগামী ঘটনাটি কারণ এবং অনুগামী ঘটনাটি কার্যরূপে বিবেচিত। দুটি ঘটনার একই সঙ্গে একইভাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করে সিদ্ধান্ত গঠন করা হয় বলে এই – গদ্ধতিকে সহপরিবর্তন পদ্ধতি বলে।
কফির সংজ্ঞা: তর্কবিজ্ঞানী কফি (Coffey)-র মতে, “দুটি ঘটনা যদি একসঙ্গে হ্রাস বা বৃদ্ধি পায় এবং অন্যান্য বিষয়গুলি অপরিবর্তিত থাকেন অর্থদি তারা নিজ নিজ ভাবে পরিবর্তিত হয়, তাহলে অনুমান করা যায় যে, ঘটনাদ্বয় কার্যকারণ সম্বন্ধে আবদ্ধ”।
দ্বিমুখী পরিবর্তনে কার্য ও কারণ: সহপরিবর্তন পদ্ধতির ক্ষেত্রে ঘটনা দুটির বাধা যে ধরনের পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে তা একমুখী পরিবর্তন রূপেও ভাষ পাহতে পারে, আবার বিপরীতমুখী পরিবর্তন রূপেও গ্রাহ্য হতে পারে। অর্থাৎ, কারণ নামক ঘটনাটি যেভাবে বাড়ে-কমে, ঠিক সেইভাবে কার্য নামক ঘটনাটিও বাড়ে-কমে। আবার ‘কারণ’ নামক ঘটনাটি যেভাবে বাড়ে-কমে ঠিক তার পিরীতভাবেও ‘কার্য’ নামক ঘটনাটিও বাড়তে-কমতে পারে। যাই হোক না কেন, এটা অত্যন্ত পরিষ্কার যে, সহপরিবর্তন পদ্ধতির ক্ষেত্রে দ্বিমুখী পরিবর্তনের হয়েটিকে লক্ষ করা যায়।
সাংকেতিক উদাহরণ | একমুখী পরিবর্তন (সাংকেতিক উদাহরণ): পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ) অনুবর্তী ঘটনা (কার্য) ABC abc A+BC a + bc A-BC a-bc .: A হল a ঘটনাদ্বয় কার্যকারণে আবদ্ধ বিপরীতমুখী পরিবর্তন (সাংকেতিক উদাহরণ): পূর্ববর্তী ঘটনা (কারণ) অনুবর্তী ঘটনা (কার্য) ABC abc A + BC a-bc A-BC a + bc …A হল a ঘটনা দুটি কার্যকারণে সম্পর্কিত। |
বাস্তব উদাহরণ
[1] একমুখী পরিবর্তন: উত্তাপ যতই বৃদ্ধি পায়, থার্মোমিটারের পারদের উচ্চতাও ততই বাড়ে। অতএব সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে যে, উত্তাপ বৃদ্ধিই হল থার্মোমিটারের পারদের উচ্চতা বাড়ার কারণ।
[2] বিপরীতমুখী পরিবর্তন: খাদ্যশস্যের আমদানি যতই বাড়ে, খাদ্যশস্যের দাম ততই কমে। অতএব সিদ্ধান্ত করা যায় যে, খাদ্যশস্যের আমদানি বৃদ্ধিই হল তার দাম কমার কারণ।
17. সহপরিবর্তন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: সহপরিবর্তন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য
সহপরিবর্তন পদ্ধতির সংজ্ঞাটিকে বিশ্লেষণ করলে তার কতকগুলি নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। সহপরিবর্তন পদ্ধতির এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যগুলিকে উল্লেখ করা হল-
[1] তৃতীয় অপসারণের সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত: সহপরিবর্তন পদ্ধতির প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যে, এই পদ্ধতিটি তৃতীয় অপসারণের সূত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ, তৃতীয় অপসারণের সূত্রে ঘটনা দুটির মধ্যে হ্রাসবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতেই কার্যকারণের মধ্যে সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বলা হয়েছে।
[2] যে-কোনো ধরনের পরিবর্তন স্বীকৃত: সহপরিবর্তন পদ্ধতির ক্ষেত্রে ঘটনা দুটির মধ্যে যে পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছে, তা একমুখী পরিবর্তন হতে পারে, আবার তা বিপরীতমুখী পরিবর্তনও হতে পারে। অর্থাৎ, যে-কোনো ধরনের পরিবর্তনই এখানে গ্রাহ্য হতে পারে।
[3] পরিমাণগত পরিবর্তনের একমাত্র পদ্ধতি: সহপরিবর্তন পদ্ধতি হল এমনই এক পদ্ধতি যেখানে শুধুমাত্র কারণ ও কার্যের পরিমাণগত পরিবর্তনের বিষয়টিকে মেনে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আর অন্য কোনো পদ্ধতির ক্ষেত্রেই পরিমাণগত পরিবর্তনের বিষয়টিকে মেনে নেওয়া হয়নি।
[4] ব্যাপক সংখ্যক দৃষ্টান্ত বিবেচনার অন্তর্ভুক্ত: সহপরিবর্তন পদ্ধতির ক্ষেত্রে পরিমাণগত বিষয়টিকে মেনে নেওয়া হয়েছে বলেই, আমরা প্রচুর সংখ্যক দৃষ্টান্তকে আমাদের বিবেচনার অন্তর্ভুক্ত করতে পারি। বিভিন্ন রকম পরিবর্তনের বিষয়টিকে বোঝানোর জন্য দৃষ্টান্তের সংখ্যাও তাই ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়।
[5] পর্যবেক্ষণের ব্যাপকতা: পর্যবেক্ষণের ব্যাপকতাকে সহপরিবর্তন পদ্ধতির অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্যরূপে উল্লেখ করা হয়। কারণ, এখানে আমরা ব্যাপক পর্যবেক্ষণলব্ধ ঘটনাগুলির সঙ্গে পরিমাণের হেরফের করে সেগুলিকে আরও ব্যাপকরূপে উপস্থাপিত করতে পারি।
[6] বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের একমাত্র উপযুক্ত পদ্ধতি: বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে সহপরিবর্তন পদ্ধতিই একমাত্র উপযুক্ত পদ্ধতি হিসেবে গণ্য। কারণ, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজন হল স্থায়ী কার্যকারণ সম্বন্ধের জ্ঞান। স্থায়ী কার্যকারণ সম্বন্ধের বিষয়কে কখনোই অপসারণ করা যায় না। কিন্তু তার হ্রাসবৃদ্ধি ঘটানো যেতেই পারে।
[7] অন্বয়ী পদ্ধতি ও ব্যতিরেকী পদ্ধতির রূপান্তর: সহপরিবর্তন পদ্ধতিটি দুটি মৌল পদ্ধতির (fundamental methods) রূপান্তর হিসেবে গণ্য। কারণ, এরূপ পদ্ধতিটি ক্ষেত্রবিশেষে অন্বয়ী পদ্ধতির রূপান্তর হিসেবে, আবার ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিরেকী পদ্ধতির রূপান্তর হিসেবে গণ্য।
18. সহপরিবর্তন পদ্ধতির সুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: সংপরিবর্তন পদ্ধতির সুবিধা
অন্যান্য পর্যবেক্ষণ পদ্ধতির মতো সহপরিবর্তন পদ্ধতির ক্ষেত্রেও কিছু পর্যবেক্ষণলব্ধ সুবিধা দেখা যায়। এই সমস্ত সুবিধাগুলিকে নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] ব্যাপক প্রয়োগক্ষেত্র: ব্যতিরেকী পদ্ধতির সঙ্গে তুলনা করে সহপরিবর্তন পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার কথা উল্লেখ করা যায়। ব্যতিরেকী পদ্ধতির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সদর্থক দৃষ্টান্তে যে সমস্ত ঘটনা উপস্থিত থাকে, নঞর্থক দৃষ্টান্তে তার একটি অপসারিত হয়। কিন্তু প্রকৃতিতে এমন কিছু ঘটনার পরিচয় আমরা পাই, যেগুলিকে সম্পূর্ণভাবে অপসারণ করা যায় না। যেমন- মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, বায়ুমণ্ডলের চাপ প্রভৃতি। সুতরাং যে সমস্ত ক্ষেত্রে এরূপ প্রাকৃতিক কারণ উপস্থিত থাকে, সেইসমস্ত ক্ষেত্রে ঘটনাগুলিকে অপসারণ করা না গেলেও, সহপরিবর্তন পদ্ধতি প্রয়োগ করে তাদের হ্রাসবৃদ্ধি করানো যেতেই পারে। সুতরাং দাবি করা যায় যে, যে সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রমাণমূলক প্রয়োগ সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে প্রয়োগ করা চলে। সহপরিবর্তন পদ্ধতির প্রয়োগ ক্ষেত্রটি তাই অত্যন্ত ব্যাপক।
[2] ব্যতিরেকী পদ্ধতির বিকল্প পদ্ধতি: সহপরিবর্তন পদ্ধতিটি অনেকসময় ব্যতিরেকী পদ্ধতির একটি বিকল্প পদ্ধতিরূপে গণ্য হয়। এর ফলে যে সমস্ত ক্ষেত্রে ব্যতিরেকী পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব নয়, সে সমস্ত ক্ষেত্রে সহপরিবর্তন পদ্ধতি প্রয়োগ করে কার্যকারণ সম্পর্কের একটা অনুমান গঠন করা যেতে পারে। সেকারণেই সহপরিবর্তন পদ্ধতিটিকে অনেক সময় ব্যতিরেকী পদ্ধতির একটি বিকল্প পদ্ধতিরূপে মনে করা হয়।
[3] কারণ ও কার্যের মধ্যে পরিমাণগত সামঞ্জস্যসাধন: মিলের পদ্ধতিগুলি প্রয়োগ করে আমরা দুটি ঘটনার মধ্যে একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার করতে পারি ঠিকই, কিন্তু ঘটনা দুটির মধ্যে যে একপ্রকার পরিমাণগত সামঞ্জস্য আছে, তা জানা সম্ভব নয়। কার্যকারণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই চাহিদাটিকে পূরণ করে সহপরিবর্তন পদ্ধতি। সুতরাং কারণ ও কার্যের মধ্যে পরিমাণগত সামঞ্জস্যবিধানের সুবিধাটি সহপরিবর্তন পদ্ধতিটিতে আছে।
[4] অন্বয়ী ও ব্যতিরেকী পদ্ধতির সুবিধাযুক্ত: সহপরিবর্তন পদ্ধতিটি অন্বয়ী এবং ব্যতিরেকী নামক মৌলিক পদ্ধতি দুটির পরিবর্তিত রূপ হওয়ায়, এক্ষেত্রে ওই দুটি পদ্ধতির সুবিধা বিদ্যমান। কারণ, সহপরিবর্তন পদ্ধতিটি ক্ষেত্রবিশেষে অন্বয়ী পদ্ধতির এবং ক্ষেত্রবিশেষে ব্যতিরেকী পদ্ধতির পরিবর্তিত রূপ হিসেবে গণ্য হয়। সুতরাং দাবি করা যায় যে, এই পদ্ধতিটিতে অন্বয়ী পদ্ধতি এবং ব্যতিরেকী পদ্ধতির সুবিধাগুলিও উপস্থিত।
[5] বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের সহায়ক: বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে গুরুত্ব দিতেই হয়। কারণ, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিটিকেই একমাত্র উপযুক্ত পদ্ধতিরূপে বিবেচনা করা হয়। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের মৌল উদ্দেশ্যই হল স্থায়ী কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করা। আর স্থায়ী কার্যকারণ সম্বন্ধের ক্ষেত্রে অপসারণের বিষয়টি একেবারেই অচল। আমরা সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র কার্য ও কারণের পরিমাণগত রূপান্তরই ঘটাতে পারি। আর এরূপ বিষয়টিই কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। সহপরিবর্তন পদ্ধতিটিতে তাই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানে সহায়তা করার সুবিধা আছে।
19. সহপরিবর্তন পদ্ধতির অসুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: সহপরিবর্তন পদ্ধতির অসুবিধা
সহপরিবর্তন পদ্ধতিটি কখনোই একটি নির্দোষ পদ্ধতিরূপে গণ্য নয়। সহপরিবর্তাবেই এই পদ্ধতিটির ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা বা দোষ দেখা যায়। এই সমস্ত দোষগুলিকে নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] কারণের গুণগত পরিবর্তনে অক্ষম: সহপরিবর্তন পদ্ধতির সবচেয়ে বড়ো দোষ হল যে কার্যকারণের গুণগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পদ্ধতিটি আদৌ প্রযোজ্য নয়। পারস্পরিক দুটি ঘটনা যখন পরিমাণের দিক থেকে বাড়ে-কমে তখনই কেবল এই পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব। কিন্তু আমরা অনেক সময় দেখি যে, পরিমাণের পরিবর্তন ঘটাতে গিয়ে কোনো ঘটনার গুণগত পরিবর্তনও হয়ে যায়। তখন কিন্তু এই পদ্ধতিটি একেবারেই অচল হয়ে পড়ে।
[2] পরিমাণগত পরিবর্তনের বাইরে অচল: পরিমাণগত পরিবর্তন যতদূর পর্যবেক্ষণ করা যায়, ততদূরই এই পদ্ধতিটিকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু এই নির্দিষ্ট সীমানার বাইরে এই পদ্ধতির প্রয়োগ একেবারেই অনিশ্চিত। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, পরীক্ষণের মাধ্যমে আমরা উত্তাপ এবং জলের প্রসারণের মধ্যে সহপরিবর্তনের মাধ্যমে কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারলেও, এই অভিজ্ঞতার বাইরে যদি অন্য কিছু থাকে, তাহলে সেখানে এই পদ্ধতির প্রয়োগ সম্ভব নয়।
[3] অপরাপর পদ্ধতির ত্রুটির উপস্থিতি: সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে মিলের র্যকারণ প্রকার ক্ষেত্রে ণ ও ভটিতে কোনো কোনো সময় অন্বয়ী পদ্ধতির, আবার কোনো কোনো সময় ব্যতিরেকী পদ্ধতির প্রকারভেদরূপে উল্লেখ করা হয়। তাই যদি হয়, তাহলে অন্বয়ী পদ্ধতির ত্রুটিগুলিও এই পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আবার ব্যতিরেকী পদ্ধতির ত্রুটিগুলিও এই পদ্ধতির মধ্যে উপস্থিত। অতএব বলা যায় যে, এই পদ্ধতিটি কোনোক্রমেই কার্যকারণ সম্পর্ককে প্রমাণ করতে পারে না। আবার তা সহাবস্থানের ক্ষেত্র থেকেও কার্যকারণ সম্বন্ধকে উদ্ধার করতে পারে না।
[4] শুধুই পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতি না হওয়ার অসুবিধা: সহপরিবর্তন পদ্ধতিটিকে অনেক সময় অন্বয়ী পদ্ধতি ও ব্যতিরেকী পদ্ধতি নামক দুটি মৌল পদ্ধতির রূপান্তররূপে গণ্য করা হয়। কোনো কোনো সময় বলা হয় যে, তা অন্বয়ী পদ্ধতির এক রূপান্তর বিশেষ, আবার কোনো কোনো সময় দাবি করা হয় যে, তা ব্যতিরেকী পদ্ধতির রূপান্তর বিশেষ। তাই যদি হয়, তাহলে সহপরিবর্তন পদ্ধতিকে শুধুমাত্র পর্যবেক্ষণমূলক পদ্ধতিরূপে গণ্য করার ক্ষেত্রে অসুবিধা আছে।
[5] যথার্থ কার্যকারণ ব্যাখ্যার অনুপযোগী: সহপরিবর্তন পদ্ধতির প্রয়োগ করে আমরা দুটি ঘটনার বাড়া-কমার লক্ষণটিকে ধরে নিয়েই তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠা করে থাকি। এর ফলে অনেক সময় ভুল কার্যকারণ ধারণার জন্ম হয়। যেমন, জোয়ার-ভাটার বাড়া-কমার সম্পর্ককে ধরে নিয়ে আমরা অনেকেই জোয়ারকে ভাটার এবং ভাটাকে জোয়ারের কারণ বলে থাকি। কিন্তু জোয়ার এবং ভাটা নামক ঘটনাগুলি কখনোই একে অপরের কারণ হতে পারে না। এ দুটি ঘটনা সহকার্যরূপেই গণ্য যা পৃথিবীর আহ্নিক গতি নামক কারণ থেকেই নিঃসৃত। সুতরাং বলা যায় যে, এই পদ্ধতিটির মধ্যে যথার্থ কার্যকারণ ব্যাখ্যার অসুবিধা আছে।