Class 12 Philosophy Solution
আরোহমূলক দোষ
1. Long Question Answer
1. আরোহমূলক দোষ কী? বিভিন্নপ্রকার আরোহমূলক দোষের উল্লেখ করো।
আরোহমূলক দোষ
আরোহ অনুমানোর ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করি। সিদ্ধান্তে এই সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয় কিছু জাত সত্যের ওপর নির্ভর করে ঠিকই নির্ভর করে সিন্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লোক (Inductive rap) অবশ্যই থাকে। এই আরোহমূলক লাফের বিষয়টি সবসময় যে সঠিক হয়, এমন নয়। অর্থাৎ, এরূপ লাফের ক্ষেত্রে অবশ্যই একপ্রকার সংশয় থেকেই যায়। এর ফলে আরোহ অনুমানের সিখান্ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কিছু ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষি লাফের ক্ষেত্রে অবশ্যই একপ্রকার পোদের সৃষ্টি হয়। আরও বলা যায় যে, আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম দোষের (fallacies) উদ্ভব হয়। অণুলিকেই মাছের আরোহমূলক দোষ (Inductive fallacies)
আরোহমূলক দোখের প্রকার
আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটিকে যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে বিভিন্ন প্রকার দোষের সৃষ্টি হয়। এই সমস্ত দোষগুলিকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা –[1] অনুমান সংক্রান্ত দোষ এবং [2] অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ।
অলুমান সংক্রান্ত দোষ
আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে যে সমস্ত নিয়মের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলিকে যথাযথভাবে মেনে না চললে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় অনুমান সংক্রান্ত দোষ। এই অনুমান সংক্রান্ত দোষগুলিকে আবার তিনভাগে বিভক্ত করা যায়-[1] কারণ সংক্রান্ত দোষ (2) সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ এবং [3] উপমা যুক্তি সংক্রান্ত দোষ।
(1) কারণ সংক্রান্ত দোষ: আরোহ অনুমানের মূল উদ্দেশ্য হল সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। এর মাধ্যমে একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্ককে হলিত করা হয়। এই কার্যকারণ সম্পর্কটিকে তাই যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হয়। এই সম্পর্কটিকে যদি যথাযথভাবে নির্ণয় করা না হয়, তাহলে কোনো কার্যের প্রকৃত কারণটি কখনোই ধরা পড়ে না। কোনো কার্যের প্রকৃত কারণকে উল্লেখ না করে, অবভাসিত কোনো কারণকে যদি প্রকৃত কারণরূপে উল্লেখ করা হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, সেই দোষকেই বলা হয় কারণ সংক্রান্ত দোষ।
তারণ সংক্রান্ত দোষের বিভাগ: কারণ সংক্রান্ত দোষকে আবার চারভাগে ভাগ করা যায়- (a) অবান্তর শর্ত বা বিষয়কে কারণ বলার দোষ (b) সহকার্যকে কারণ বলার দোষ [c] একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ এবং (d) কাকতালীয় দোষ। কোনো অবান্তর বিষয়কে যদি কোনো কার্যের কারণ বলে মনে করা হয় তাহলে অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষ হয়। একই কারণ থেকে উদ্ভূত দুটি বিষয়ের একটিকে যদি আর-একটির কারণ বলা হয়, তাহলে সহকার্যকে কারণ বলার দোষ হয়। কোনো ঘটনার একটি অনিবার্য বা আবশ্যিক শর্তকে যদি সমগ্র কারণরূপে মনে করা হয়, তাহলে একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ হয়। আর অহেতুক কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণ বলা হলে কাকতালীয় দোষের উদ্ভব হয়।
অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ
আরো অনুমানের মূল উদ্দেশ্যই হল পর্যবেক্ষণলব্ধ কতকগুলি দৃষ্টান্তের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। এই উদ্দেশ্যে যেসমস্ত দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়, তা যদি যথাযথ না হয়, তবে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ। আমাদের পর্যবেক্ষণের শ্রান্তির জন্যই এই ধরনের দোষ উৎপন্ন হয় বলে একে পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত দোষ রূপেও উল্লেখ করা হয়। এই দোষ আবার দু- প্রকারের- [1] অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ এবং (2) ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ।
অপর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাবে উল্লেখ করা যায়- [i] নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ এবং [ii] প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণ। ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাগে বিভক্ত করা যায়- (i) ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ এবং [ii] সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ।
আরোহমূলক দোষের ছক
আরোহ অনুমান সংক্রান্ত দোষগুলিকে নীচের ছকটির সাহায্যে সহজভাবে উল্লেখ করা যায়।
2. অনুমান সংক্রান্ত দোষগুলি কী? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
আরোহ অনুমান সংক্রান্ত দোষ
আরোহ অনুমানের নিয়মগুলিকে যথাযথ অনুসরণ না করে যদি সিদ্ধান্ত গঠন করা হয় তাহলে অনুমান সংক্রান্ত দোষের উদ্ভব হয়। এই অনুমান সংক্রান্ত দোষ হল মূলত তিনটি-[1] কারণ সংক্রান্ত দোষ [2] সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ এবং [3] উপমা যুক্তি সংক্রান্ত দোষ। এই সমস্ত দোষগুলিকে নীচে উদাহরণ-সহ পরপর আলোচনা করা হল-
[1] কারণ সংক্রান্ত দোষ: আরোহ অনুমানের মূল কাজই হল সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। এরূপ বচন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে একপ্রকার কার্যকারণ সম্বন্ধকে স্থাপন করা হয়। কার্যকারণ সম্বন্ধটিকে এক্ষেত্রে যথাযথভাবে উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু সবসময় এই কার্যকারণ সম্বন্ধকে যথাযথভাবে উল্লেখ করা যায় না। এর ফলে কোনো কার্যের প্রকৃত কারণটিকে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। প্রকৃত কারণটিকে যদি যথাযথভাবে নির্ণয় করা না যায়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব ঘটে, সেই দোষকেই বলা হয় কারণ সংক্রান্ত দোষ।
উদাহরণ | যখনই জোয়ার হয় তারপরেই ভাটা হয়।.: জোয়ারই হল ভাটার কারণ। |
ব্যাখ্যা | আমাদের অভিজ্ঞতায় অনেক সময় দেখা যায় যে, একই সার্বিক নিয়মের জন্য দুটি ঘটনা ঘটে। এই দুটি ঘটনাকে তাই সহকার্যের মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। এই দুটি ঘটনার একটিকে তাই অন্যটির কারণ বলা যায় না। এক্ষেত্রে যদি একটিকে অন্যটির কারণ বলা হয়, তাহলে সেই দোষকে বলা হয় কারণ সংক্রান্ত দোষ। এই উদাহরণটিতে দেখা যায় যে, জোয়ারের পরই ভাটা আসে এবং সেকারণেই জোয়ারকে ভাটার কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জোয়ার এবং ভাটা কোনোটিই অন্যটির কারণ বা কার্য নয়। এ দুটি হল সহকার্যের সম্বন্ধে আবদ্ধ। কারণ, এই দুটি ঘটনাই পৃথিবীর আহ্নিক গতি নামক সার্বিক নিয়মের কার্যরূপে গণ্য। এর ফলে জোয়ারকে ভাটার কারণরূপে উল্লেখ করায় কারণ সংক্রান্ত দোষের উদ্ভব হয়েছে। |
[2] সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ বা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ: আরোহ অনুমানের প্রকৃত উদ্দেশ্যই হল সিদ্ধান্তে কার্যকারণ সম্পর্কিত একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু কার্যকারণ সম্পর্কের বিষয়টির ওপর গুরুত্ব আরোপ না করে, যদি কেবলমাত্র আমাদের অবাধ অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে একটি সার্বিক সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়, তবে তা দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে এরূপ দোষকেই বলা হয় সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ। এই সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষের নাম হল অবৈধ সামান্যীকরণ (fallacy of illicit generalization)। কারণ, এরূপ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তে সামান্য বা সার্বিক বচনটি যথাযথভাবে নিঃসৃত না হয়ে অবৈধভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়।
উদাহরণ | এ পর্যন্ত আমি যতগুলো দাঁড়কাক দেখেছি সেগুলি সবই কালো।.. সিদ্ধান্ত করা যায় যে, সব দাঁড়কাক হয় কালো। |
ব্যাখ্যা | উদাহরণটিতে দেখা যায় যে, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় কিছু দাঁড়কাককে কালোরূপে দেখেছি। এর কোনো ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত আজ পর্যন্ত আমাদের নজরে আসেনি। এই কয়েকটি অবাধ দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করেই আমরা একটি সার্বিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, সব দাঁড়কাকই হয় কালো। এখানে কিন্তু দাঁড়কাক এবং কালো রং-এর মধ্যে কোনো প্রকৃত কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। সেকারণেই এখানে কার্যকারণ সম্পর্ককে উপেক্ষা করে আমরা কিছু বিশেষ হ্যাঁ-বাচক দৃষ্টান্ত থেকে একটি সার্বিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। এর ফলে এরূপ আরোহ অনুমানটি অবৈধ সামান্যীকরণের দোষে (fallacy of illicit generalization) দুষ্ট। |
[3] উপমা যুক্তি সংক্রান্ত দোষ বা মন্দ উপমার দোষ: আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অনেক সময় আমরা উপমা বা সাদৃশ্য ব্যবহার করেও অনুমান গঠন করি। উপমা বা সাদৃশ্য ব্যবহার করে আমরা যখন কোনো অনুমান গঠন করি, তখন তাকে বলা হয় উপমা বা সাদৃশ্য যুক্তি (argument by মূল analogy)। উপমা যুক্তিতে দুটি বিষয় বা ঘটনার মধ্যে যদি কয়েকটি বিষয়ে মিল বা সাদৃশ্য লক্ষ করা যায় এবং এদের কোনোটিতে যদি অন্য একটি নতুন বিশেষ ০৮ গুণ লক্ষ করা হয়, তাহলে অনুমান করা যায় যে, ওই নতুন বিশেষ গুণটি ে অপরটির মধ্যেও আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, যুক্তিবাক্যে যে সমস্ত গুণের সাদৃশ্য বা মিলের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে নতুন কোনো বিষয়ের সাদৃশ্য অনুমান করা হয়, তাকে প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ হতে হয়। যদি এরূপ যথাযথ সাদৃশ্য দেখা যায় তাহলে সাদৃশ্য বা উপমা যুক্তিটি উত্তম উপমা (good analogy) রূপেই গণ্য হয়। কিন্তু সাদৃশ্য যদি যথাযথ বা প্রাসঙ্গিক না হয় তবে সেক্ষেত্রে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকে বলা হয় মন্দ
উপমা (bad analogy)-র দোষ। অর্থাৎ, উপমার অপপ্রয়োগেই এরূপ দোষের। উদ্ভব ঘটে।
উদাহরণ | একটি টেবিলের সঙ্গে একটি গোরুর কিছু বিষয়ে মিল দেখা গেল, যেমন-উভয়েরই একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা আছে, উভয়েরই চারটি পা আছে ইত্যাদি।আবার দেখা গেল যে, গোরু আমাদের দুধ দেয় (যা গোরুর মধ্যে একটি নতুন গুণরূপে গণ্য)।সুতরাং, উপমার ভিত্তিতে অনুমান করা যায় যে, টেবিলও আমাদের দুধ দেবে। |
ব্যাখ্যা | এরূপ উদাহরণটি হল একটি মন্দ বা দুষ্ট উপমার (bad analogy)উদাহরণ। কারণ এখানে যুক্তিবাক্যে গোরু এবং টেবিলের মধ্যে যে সাদৃশ্য বা উপমা রচনা করা হয়েছে, তার সঙ্গে সিদ্ধান্তে অনুমেয় সাদৃশ্যটি কখনও প্রাসঙ্গিক বা যথাযথ নয়। এরূপ উপমাটি একেবারেই। অবাস্তব এবং কাল্পনিক। সেকারণেই এরূপ যুক্তিটির ক্ষেত্রে মন্দ উপমার উদ্ভব হয়েছে। |
3. সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো- অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ
Topic-A-এর দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক ২ নং প্রশ্নের উত্তরের ‘সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ বা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ’ শীর্ষক অংশ দ্যাখো।
4. অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ কোনগুলি? অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ কী?
অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষসমূহ
আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে অনুমান সংক্রান্ত দোষ ছাড়াও আর এক ধরনের দোষ দেখা যায় এবং সেই দোষটি হল অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ। এই অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষকেই বলা হয় পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত দোষ। আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে আমরা মূলত অনুমানই গঠন করি। কিন্তু সেই অনুমান নির্ভর করে কতগুলি পর্যবেক্ষণলব্ধ দৃষ্টান্তের ওপর। সুতরাং অনুমানের ক্ষেত্রে যে পর্যবেক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে, তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু পর্যবেক্ষণ করার ক্ষেত্রেও আমাদের নানারকম ভ্রান্তির সম্ভাবনা থেকে যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নানা রকম দোষের উদ্ভব ঘটে।
অ-অনুমান সংক্রান্ত দোষ তথা পর্যবেক্ষণমূলক দোষকে তর্কবিদ মিল (Mill) মূলত দু-ভাগে ভাগ করেছেন- [1] অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) এবং [2] ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of mal- observation)। এই দু-ধরনের দোষই মূলত আমাদের পর্যবেক্ষণের ত্রুটি [2 থেকে উঠে আসে। ইন্দ্রিয়ের দুর্বলতা, আবেগ এবং নানাবিধ সংস্কারের ফলে অনেক সময় যথাযথভাবে অনুমানের দৃষ্টান্তগুলির পর্যবেক্ষণের ব্যর্থতাই এই সমস্ত দোষের উদ্ভব ঘটায়।
অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ
আরোহ অনুমানের মূল উদ্দেশ্যই হল সিদ্ধান্তে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করা। এই সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে আমরা একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্ককে উল্লেখ করতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন হল বিভিন্ন রকম ঘটনা বা দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করা। কারণ, যথাযথ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমেই সঠিক কার্যকারণ সম্পর্ককে হাজির করা যায়। কিন্তু নানা কারণে আমরা প্রয়োজনীয় ঘটনা বা দৃষ্টান্তসমূহকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। এর ফলে কিছু ঘটনা বা দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ থেকেই যায়। এরূপ অবস্থা সত্ত্বেও যদি আমরা কোনো অনুমান গঠন করি, তবে তা দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। অনুমানের ক্ষেত্রে এরূপ দোষকেই বলা হয় অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ।
5. অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ কয়প্রকার ও কী কী? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
অপর্যবেক্ষণমূলক দোষের শ্রেণিবিভাগ
অপর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা হয়- [1] নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ (non-observation of relevant negative instances) এবং [2] প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণ (non-observation of essential circumstances)। এই দু-ধরনের অপর্যবেক্ষণমূলক দোষকে উদাহরণ-সহ নীচে আলোচনা করা হল-
[1] নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ: কোনো একটি ঘটনাকে যথাযথভাবে আলোচনা করার জন্য সেই ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত সমস্ত সদর্থক ও নঞর্থক ঘটনা বা শর্তসমূহকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। কারণ, আমরা কোনো ঘটনার আলোচনার মাধ্যমেই তার কার্যকারণ সম্পর্ককে নির্ণয় করি। কারণ হল সদর্থক ও নঞর্থক ঘটনা বা শর্তের সমষ্টি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় যে, আমরা শুধুমাত্র সদর্থক ঘটনাগুলিকেই পর্যবেক্ষণ করে থাকি, নঞর্থক ঘটনাসমূহকে পর্যবেক্ষণ করি না। এর ফলে গঠিত আরোহ অনুমানটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। এরূপ দোষটি হল নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণ। এখানে নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকে না-দেখা বা উপেক্ষা করা হয় বলে এরূপ দোষটিকে না-দেখা বা উপেক্ষার দোষরূপেও উল্লেখ করা হয়।
উদাহরণ | কয়েক দিন বৃহস্পতিবারের বারবেলায় যাত্রা করে অশুভ লক্ষণ দেখা দিয়েছে।অতএব, সিদ্ধান্ত করা যায় যে, বৃহস্পতিবারের বারবেলায় যাত্রা অশুভ। |
ব্যাখ্যা | এখানে আমরা ঘটনার কয়েকটি সদর্থক দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করেছি মাত্র। এখানে কোনো নঞর্থক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। অর্থাৎ,বৃহস্পতিবারের বারবেলায় যাত্রা করেও যেসমস্ত ক্ষেত্রে কোনো অশুভ সংকেত পাওয়া যায়নি, সেগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে বা পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। অথচ আরোহ অনুমানটি গঠনের ক্ষেত্রে এগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। সেকারণেই এরূপ যুক্তিটি নঞর্থক দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণজনিত দোষে দুষ্ট। |
[2] প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণ: অনেক সময় দেখা যায়, আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে আমরা যে কার্যকারণ সম্পর্কযুক্ত একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করি, সেই প্রক্রিয়ায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রয়োজনীয় বহু পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে উপেক্ষা করে থাকি। পারিপার্শ্বিক অবস্থাগুলির মধ্যে যেমন অনেক অবান্তর ঘটনা থাকে, তেমনি আবার অনেক প্রয়োজনীয় ঘটনাও থাকে। যথাযথভাবে কার্যকারণ সম্বন্ধমূলক আরোহ সিদ্ধান্তকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে এই সমস্ত প্রয়োজনীয় অবস্থাসমূহকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এগুলিকে উপেক্ষা করে যদি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তবে তা দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। এরূপ দোষকেই বলা হয় প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণজনিত দোষ।
উদাহরণ | পরীক্ষার আগের দিন গৃহশিক্ষক ছাত্রকে পড়াতে আসেননি এবং ছাত্রটির পরীক্ষায় ফল ভালো হয়নি। সুতরাং অনুমান করা যায় যে, পরীক্ষার আগের দিন গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতিই হল ছাত্রটির পরীক্ষায় ভালো ফল না করার কারণ। |
ব্যাখ্যা | এরূপ অনুমানটিতে যে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে কোনো ছাত্রের পরীক্ষার ফল ভালো না হওয়া নামক কার্যটির কারণ হিসেবে শুধুমাত্র একটি অবস্থার তথা পরীক্ষার আগের দিন গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতির কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া এর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য আর যে সমস্ত প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থা আছে, সেগুলির কথা আদৌ উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ, অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থাগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যেমন-প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়া, ভালো করে প্রস্তুতি না নেওয়া, পরীক্ষার হলে দেরিতে উপস্থিত হওয়া, প্রশ্ন পেয়ে মাথা ঘোরা ইত্যাদি অবস্থাগুলিকে আদৌ উল্লেখ করা বা পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। সেকারণেই এরূপ অনুমানটি প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণ দোষে দুষ্ট। |
6. [i] টীকা লেখো: কাকতালীয় দোষ
[ii] ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ কয়প্রকার ও কী কী? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
[1] কাকতালীয় দোষ
যে কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকে কারণরূপে গ্রহণ করলে কাকতালীয় দোষের উদ্ভব হয়। এরূপ দোষে যা প্রকৃত কারণ নয় তাকেই কারণ বলে উল্লেখ করা হয় (Non-causa Pro-causa)। কাকতালীয় দোষ সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কারণের গুণগত লক্ষণে বলা হয়েছে যে, কারণ হল শর্তহীন, অপরিবর্তনীয় অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনা। অর্থাৎ, কার্যের যে-কোনো অব্যবহিত পূর্ববর্তী ঘটনাকেই কারণ বলা যায় না। কোনো কার্যের ঠিক আগের ঘটনাটি অনেক সময় আকস্মিকও হতে পারে। আর ঘটনাটি যদি আকস্মিক হয় তবে তা কখনোই শর্তহীন ও অপরিবর্তনীয় রূপে গণ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে কার্যের ঠিক আগের ওই আকস্মিক ঘটনাটিকে যদি কার্যটির কারণ বলে ধরা হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকেই বলা হয় কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc)।
কাকতালীয় দোষের হেতু
কাকতালীয় দোষটির উদ্ভব হয়েছে এভাবেই যে, তাল গাছের ওপর দিয়ে কাক উড়ে যাওয়ায় তালটি মাটিতে পড়ে গেল। সেকারণেই কাক উড়ে যাওয়াকে তাল পড়ার কারণ বলে মনে করা হয়েছে। সাধারণত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এবং অবাস্তব কল্পনাই হল এই দোষের মূলভিত্তি। আবার, অনেক সময় দেখা যায় যে, ব্যতিরেকী পদ্ধতির অপপ্রয়োগের ফলেও এই ধরনের দোষের উদ্ভব হয়। ব্যতিরেকী পদ্ধতি যদি পরীক্ষণের ওপর নির্ভর না করে পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভরশীল হয়, তখন তার অপপ্রয়োগে অনেক সময় এই ধরনের দোষ ঘটে থাকে।
উদাহরণ | মাদুলি ধারণ করার পরই তার রোগ সারল।সুতরাং, মাদুলি ধারণই হল তার রোগ সারার কারণ।আরোহ যুক্তিটিকে ব্যতিরেকী পদ্ধতির আকারে উপস্থাপিত করলে পাই, |
উদাহরণ | পূর্ববর্তী ঘটনাঅনুবর্তী ঘটনামাদুলি ধারণ হয়নিমাদুলি ধারণ হয়েছে।রোগ সারেনিরোগ সেরেছে। .: মাদুলি ধারণ রোগ সারার কারণ। |
ব্যাখ্যা | এখানে এই আরোহ যুক্তিটিকে ব্যতিরেকী পদ্ধতির আকারে সাজিয়ে পর্যবেক্ষণের সাহায্যে মাদুলি ধারণ ও রোগ সারার মধ্যে একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু মাদুলি ধারণ কখনোই রোগ সারার প্রকৃত কারণ নয়। যদিও মাদুলি ধারণ রোগ সারার পূর্ববর্তী ঘটনারূপে গণ্য, তবু তা নেহাতই এক আকস্মিক ঘটনা। এরূপ ঘটনাটি তাই নিয়ত ও শর্তান্তরহীন নয়। এ হল আমাদের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারপ্রসূত চিন্তামাত্র। এক্ষেত্রে তাই কাকতালীয় দোষ-এর উদ্ভব হয়েছে। |
[ii] ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষের প্রকার
পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে, আমাদের ইন্দ্রিয়ের অক্ষমতা বা অসুস্থতার কারণে কোনো বস্তুকে ঠিক সেই বস্তুরূপে পর্যবেক্ষণ না করে অন্য বস্তুরূপে পর্যবেক্ষণ করে থাকি। যেমন-আমরা অনেক সময়ই কোনো ছায়াকে কায়ারূপে, দড়িকে সাপরূপে এবং চলন্ত ট্রেনে গাছপালা প্রভৃতিকে ছুটন্তরূপে দেখে থাকি। এরূপ ভ্রান্ত প্রত্যক্ষের পরিপ্রেক্ষিতে যদি কোনো অনুমান টির গঠন করা হয় তবে সেই অনুমানটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে। এই ধরনের দোষের নাম হল ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ।
এই ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা যায়-[1] ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of individual mal-observation) এবং [2] সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of universal mal-observation)। এই দু-ধরনের দোষের বিষয় দুটিকে উদাহরণ-সহ নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ: অনুমান গঠন করতে গিয়ে যদি দৃষ্টান্তমূলক ঘটনাকে ব্যক্তিবিশেষ ভুল হিসেবে দেখে, তবে সেই ধরনের পর্যবেক্ষণকে বলা হয় ব্যক্তিগত ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ। এখানে পর্যবেক্ষণগত ভুলটি হল কোনো একজন ব্যক্তির, সার্বিকভাবে কোনো ভ্রান্তি নয়। যেমন-দূরের কোনো গাছের কাণ্ডকে দেখে মানুষ মনে করা, কোনো মহিলাকে দেখে পুরুষ মনে করা ইত্যাদি।
[2] সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণমূলক দোষ: কোনো ঘটনার পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিবিশেষের ভ্রান্তি না হয়ে যদি তা কোনো সার্বিক নীতির ফলে ভ্রান্তি হয়, তবে সেই ধরনের পর্যবেক্ষণকে বলা হয় সার্বিক ভ্রান্ত পর্যবেক্ষণ। এখানে ব্যক্তিবিশেষের ভ্রান্তির কোনো ভূমিকা থাকে না। এখানে থাকে সঠিক কোনো নীতির ভ্রান্তিমূলক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, জলপূর্ণ কাঁচের পাত্রে ডোবানো কোনো লাঠিকে বাঁকা দেখার ভ্রান্তি, সমউচ্চতাসম্পন্ন পরপর বাড়িগুলিকে ক্রমান্বয়ে বেশি উচ্চতাসম্পন্নরূপে দেখার ভ্রান্তি ইত্যাদি।
7. [i] একটি আবশ্যিক বিষয় বা শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ কী? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
[ii] সংক্ষিপ্ত টাকা লেখো: সহকার্যকে কারণ বলার দোষ
[i] একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ
কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার ক্ষেত্রে কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনারূপে যে সমস্ত বিষয় লক্ষ করা যায় সেগুলি কতকগুলি শর্তের সমষ্টি মাত্র। এই সমস্ত শর্তগুলির কোনো কোনোটি আবশ্যিক বা অনিবার্য (necessary) রূপে গণ্য হতে পারে, আবার সেগুলির কোনো কোনোটি অনাবশ্যক বা অবান্তর রূপেও গণ্য হতে পারে। কারণের ক্ষেত্রে আবার একাধিক অনিবার্য শর্তও থাকতে পারে। একাধিক অনিবার্য শর্তের সমষ্টিকে কারণরূপে উল্লেখ না করে, যদি তাদের মধ্যে থেকে একটিমাত্র অনিবার্য শর্তকে কারণরূপে উল্লেখ করা হয়, তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, তাকে বলা হয় একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ।
উদাহরণ | বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার ফলেই বৈদ্যুতিক ট্রেন চলতে শুরু করল। অতএব, সিদ্ধান্ত করা যায় যে, বৈদ্যুতিক সংযোগই হল বৈদ্যুতিক ট্রেন চলার কারণ। |
ব্যাখ্যা | উদাহরণটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সংযোগই হল ট্রেন চলার একমাত্র কারণ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যায় যে, শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সংযোগই ট্রেন চলার কারণরূপে গণ্য হতে পারে না। কারণ, বিদ্যুৎ সংযোগ ট্রেন চলার একটি আবশ্যিক শর্ত মাত্র, কখনোই তা সম্পূর্ণ কারণ নয়। এরূপ একাধিক আবশ্যিক শর্ত কারণের ধারণার মধ্যে থাকতেই পারে, যেমন- ট্রেনের ইঞ্জিন ঠিক থাকা, ড্রাইভারের ট্রেন চালানো, ট্রেন লাইন যথাযথ থাকা ইত্যাদি। ট্রেন চলার জন্য এই সমস্ত শর্তগুলোও একান্ত প্রয়োজন। এগুলোও আবশ্যিক শর্তরূপে গণ্য। কিন্তু এই সমস্ত শর্তগুলোকে কারণের অন্তর্ভুক্ত না করে যদি শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সংযোগকেই ট্রেন চলার কারণরূপে উল্লেখ করা হয়, তাহলে এরূপ একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ উৎপন্ন হয়। |
[ii] সহকার্যকে কারণ বলার দোষ
কার্যকারণ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায় যে, কারণ হল কার্যের পূর্ববর্তী ঘটনা এবং কার্য হল কারণের অনুবর্তী ঘটনা। কিন্তু কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমরা সবসময় যথাযথভাবে এই পূর্ববর্তী ও অনুবর্তী ঘটনার হিসেবটি মাথায় রাখি না। আমাদের অভিজ্ঞতায় অনেক সময় দেখা যায় যে, একই সার্বিক নীতির ফলে দু-ধরনের কার্য সংঘটিত হয়। এই দু-ধরনের কার্য তাই একে অপরের সহকার্যের সম্পর্কে আবদ্ধ। সেকারণেই এই দুটির একটি কখনোই অন্যটির কারণ হতে পারে না। দুটি সহকার্যের একটিকে যদি অন্যটির কারণ বা কার্য বলে মনে করা হয় তাহলে যে দোষের উদ্ভব হয়, সেই দোষের নাম হল সহকার্যকে কারণ বলার দোষ।
উদাহরণ | দিনের পর রাত্রি আসে।সুতরাং সিদ্ধান্ত করা যায় যে, দিন হল রাত্রিরঅথবাজোয়ারের পর ভাটা আসে .. জোয়ার হল ভাটার কারণ। |
ব্যাখ্যা | এই উদাহরণগুলিতে দেখা যায় যে, দিন ও রাত্রি এবং জোয়ার ও ভাটা নামক ঘটনাগুলি একই সার্বিক কারণ থেকে নিঃসৃত। এই সার্বিক কারণটি হল পৃথিবীর আহ্নিক গতি। সেকারণেই দিন ও রাত্রিকে এবং জোয়ার ও ভাটাকে সহকার্যরূপে গণ্য করা হয়। এগুলির একটি তাই অপরটির কারণ হতে পারে না। সেকারণেই এরূপ যুক্তিগুলিতে সহকার্যকে কারণরূপে মনে করার দোষ ঘটেছে। |
2.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো: হেমন্তের পর শীত আসে। অতএব হেমন্ত শীতের কারণ।
আরোহ যুক্তি | হেমন্তের পর শীত আসে। অতএব, হেমন্ত শীতের কারণ। |
দোষ | সহকার্যকে কারণ মনে করার দোষ (fallacy of mistaking coeffect as a cause)। |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোযযুক্ত |
ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি সহকার্যকে কারণ বলে মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, হেমন্ত ও শীত এই দুটি ঋতু হল একই কারণ তথা পৃথিবীর বার্ষিক গতি থেকে উদ্ভূত। সুতরাং, এইদুটি ঋতু সহকার্য রূপেই গণ্য। এই দুটির একটিকে তাই কখনোই অপরটির কারণ বা কার্য বলা যায় না। অথচ এখানে সেটাই করা হয়েছে বলে আরোহ যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
8. চের আরোহ যুক্তিটির বিচার করো এবং কোনো দোষ থাকলে তা উল্লেখ করো:
ছাত্রটির পরীক্ষায় খারাপ ফলের কারণ হল তার গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি।
আরোহ যুক্তি | ছাত্রটির পরীক্ষায় খারাপ ফলের কারণ হল তার গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি। |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ (fallacy of mistaking a necessary condition as a cause) অথবা, প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation of relevant instances)। |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত |
ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটির ক্ষেত্রে যে দোষের উদ্ভব হয়েছে, তা হল একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ। কারণ, গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি ছাত্রটির পরীক্ষায় খারাপ ফলের একটি আবশ্যিক শর্ত হতে পারে, কিন্তু কখনোই তা সমগ্র কারণরূপে বিবেচিত হতে পারে না। গৃহশিক্ষকের অনুপস্থিতি ছাড়াও ছাত্রটির পরীক্ষার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি না নেওয়া, শরীর সুস্থ না থাকা, বাড়িতে অশান্তি হওয়া এবং প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়া প্রভৃতি নানাবিধ শর্তই থাকতে পারে। এখানে সেই সমস্ত শর্তগুলিকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র একটি আবশ্যিক শর্তকে ঘটনার সমগ্র কারণ বলে মনে করায় উক্ত দোষের উদ্ভব হয়েছে।আবার ছাত্রটির পরীক্ষায় খারাপ ফলের জন্য যে সমস্ত পারপার্শ্বিক অবস্থা জড়িত আছে, সেগুলিকে আদৌ পর্যবেক্ষণ করা হয়নি বলে এই আরোহ যুক্তিটি প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণমূলক দোষেও দুষ্ট। |
9. কারণ সংক্রান্ত দোষ কোনগুলি? উদাহরণ-সহ অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক শর্তকে কারণ মনে করার দোষটি আলোচনা করো।
কারণ সংক্রান্ত দোষ
আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তে আমরা যে একটি সামান্য সংশ্লেষক বচন প্রতিষ্ঠা করি তার মাধ্যমে একপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্কের ইঙ্গিত দেওয়া হয়। সিদ্ধান্তে এই কার্যকারণ সম্পর্কটিকে যথাযথ বা সার্বিকভাবে নির্ণয় করতে হয়। কিন্তু কার্যকারণ সম্পর্কটি যদি যথাযথ বা সার্বিকভাবে নির্ণয় না করে অযথার্থ বা ভুলভাবে নির্ণয় করা হয়, তাহলে আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে কারণ সংক্রান্ত দোষ-এর আবির্ভাব ঘটে। কারণ সংক্রান্ত দোষরূপে যেগুলিকে উল্লেখ করা যায়, সেগুলি হল-[1] অবান্তর শর্তকে কারণ বলার দোষ, [2] একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ, [3] সহ-কার্যকে কারণ বলার দোষ এবং [4] কাকতালীয় দোষ প্রভৃতি।
অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোখ
কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয় করার ক্ষেত্রে আমরা সবসময়ই চেষ্টা করি কোনো ঘটনার প্রকৃত কারণটিকে উল্লেখ করতে। কিন্তু কোনো ঘটনার প্রকৃত কারণকে নির্ণয় করা কখনোই সহজসাধ্য নয়। কারণকে বলা হয় কার্যরূপ ঘটনার নিয়ত পূর্ববর্তী ঘটনা। এই পূর্ববর্তী ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে বিভিন্ন রকম শর্ত (conditions)। সমস্ত শর্তগুলি প্রাসঙ্গিকও হতে পারে, আবার তা অপ্রাসঙ্গিকও হতে পারে। কার্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্ত বা ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, সেগুলিকে বলা হয় প্রাসঙ্গিক শর্ত। আর যে সমস্ত শর্ত বা ঘটনার কোনো ভূমিকাই নেই, সেগুলিকে বলা হয় অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর শর্ত। কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমাদের কাজ হল এই সমস্ত অপ্রাসঙ্গিক বা অবান্তর ঘটনাগুলিকে সরিয়ে রেখে প্রাসঙ্গিক শর্তসমূহকে কারণরূপে উল্লেখ করা। কিন্তু আমরা সবসময় এরূপ প্রয়াে সফল হই না। অনেক সময় আমরা তাই ভুলক্রমে অথবা অজ্ঞতা অনুসা কোনো অপ্রয়োজনীয় অবান্তর শর্তকে কারণ বলে মনে করি এবং এভাে কার্যকারণ সম্বন্ধকে প্রতিষ্ঠা করি। যখনই এরূপ করা হয় তখন যে দোলে আবির্ভাব হয়, তাকে বলে অবান্তর শর্ত বা বিষয়কে কারণ বলে মনে ক দোষ। সাধারণত অন্বয়ী পদ্ধতি এবং সহপরিবর্তন পদ্ধতির অপপ্রে এরূপ দোষের উদ্ভব ঘটে।
উদাহরণ | জলের সঙ্গে বিভিন্ন রকম ওষুধ খেয়ে বিভিন্ন রকম রোগের নিরাময় হয়েছে।.: অন্বয়ী পদ্ধতির সাহায্যে সিদ্ধান্ত করা যায় যে, জলই হল রোগ নিরাময়ের কারণ। |
ব্যাখ্যা | উদাহরণটিতে দেখা যায় যে, বিভিন্ন রকম রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম ওষুধের ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ, কোনো একটি নির্দিষ্ট ওষুধ কখনোই সবক্ষেত্রে উপস্থিত নয়। কিন্তু বিভিন্ন রকম রোগ নিরাময়ের সবক্ষেত্রেই জলপান সাধারণভাবে উপস্থিত বলে জলপানকেই রোগ নিরাময়-এর কারণরূপে অনুমান করা হয়। বাস্তবে কিন্তু জলপানের সঙ্গে রোগ নিরাময়ের কোনো প্রকৃত কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। জলপানকে তাই রোগ নিরাময়ের একটি অবান্তর শর্ত বলা যায়। এক্ষেত্রে তাই অবান্তর বিষয়কে কারণ বলে মনে করার দোষের উদ্ভব হয়েছে। |
10. সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো-মন্দ উপমা
মন্দ উপমা
আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অনেক সময় আমরা উপমা বা সাদৃশ্য ব্যবহার করেও অনুমান গঠন করি। উপমা বা সাদৃশ্য ব্যবহার করে আমরা যখন কোনো অনুমান গঠন করি তখন তাকে বলা হয় উপমা বা সাদৃশ্য যুক্তি (argument by analogy)। উপমা যুক্তিতে দুটি বিষয় বা ঘটনার মধ্যে যদি কয়েকটি বিষয়ে মিল বা সাদৃশ্য লক্ষ করা যায় এবং এদের কোনোটিতে যদি অন্য শ্য একটি নতুন বিশেষ গুণ লক্ষ করা হয়, তাহলে অনুমান করা যায় যে, ওই নতুন
আরোহমূলক দোষ
315
বিশেষ গুণটি অপুরটির মধ্যেও আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে, যুক্তিবাক্যে যে সমস্ত গুণের সাদৃশ্য বা মিলের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে অপর কোনো নতুন বিষয়ের সাদৃশ্য অনুমান করা হয়, তাকে প্রাসঙ্গিক তথ্য দরকার যে, যুক্তিবাক্যে যে সমস্ত গুণের সাদৃশ্য বা মিলেছিলে সাদৃশ্য বা উপমা যুক্তিটি উত্তম উপমা (good analogy) রূপেই গণ্য হয়। কিন্তু সাদৃশ্য যদি যথাযথ বাঘা হতে হয়। যদি এরুপ যথাযথ সাদৃশ্য দেখা যায় তায়, তাকে বলা হয় মন্দ উপমা (bad analogy)-র দোষ। অর্থাৎ, উপমার অপপ্রয়োগেই এরূপ দোষের উদ্ভব ঘটে।
উদাহরণ | একটি টেবিলের সঙ্গে একটি গোরুর কিছু বিষয়ে মিল দেখা গেল, যেমন—উভয়েরই একটি নির্দিষ্ট উচ্চতা আছে, উভয়েরই চারটি পা আছে ইত্যাদি। আবার দেখা গেল যে, গোরু আমাদের দুধ দেয় (যা গোরুর মধ্যে একটি নতুন গুণরূপে গণ্য)। সুতরাং, উপমার ভিত্তিতে অনুমান করা যায় যে, টেবিলও আমাদের দুধ দেবে। |
ব্যাখ্যা | এরূপ উদাহরণটি হল একটি মন্দ বা দুষ্ট উপমার (bad analogy) উদাহরণ। কারণ এখানে যুক্তিবাক্যে গোরু এবং টেবিলের মধ্যে যে সাদৃশ্য বা উপমা রচনা করা হয়েছে, তার সঙ্গে সিদ্ধান্তে অনুমেয় সাদৃশ্যটি কখনও প্রাসঙ্গিক বা যথাযথ নয়। এরূপ উপমাটি একেবারেই অবাস্তব এবং কাল্পনিক। সেকারণেই এরূপ যুক্তিটির ক্ষেত্রে মন্দ উপমার উদ্ভব হয়েছে। |
11. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির বিচার করো এবং কোনো দোষ থাকলে তা উল্লেখ করো:
[i] কৃষককে যন্ত্রচালিত লাঙল দাও, ফসল ভালো হবে।
[ii] কল্লোল নিশ্চয়ই বুদ্ধিমান, কেননা সে রোগা।
আরোহ যুক্তি | কৃষককে যন্ত্রচালিত লাঙল দাও, ফসল ভালো হবে। | |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ (fallacy of mistaking a necessary condition as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এরূপ আরোহ যুক্তিটির ক্ষেত্রে একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ হয়েছে। কারণ, এখানে ভাল ফসল হওয়ার জন্য শুধুমাত্র কৃষককে যন্ত্রচালিত লাঙল দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে, কারণ হল কতকগুলি শর্তের সমষ্টি। এখানে তাই কৃষকদের যন্ত্রচালিত লাঙল দেওয়ার সঙ্গে আরও অনেক বিষয়ই ভালো ফসলের জন্য উল্লেখ করা যায়- যেগুলিকে এখানে উপেক্ষা করা হয়েছে। যন্ত্রচালিত লাঙল ভালো ফসল হওয়ার একটি আবশ্যিক শর্ত হলেও তা কখনো সমগ্র কারণরূপে গণ্য হতে পারে না। সুতরাং, এখানে উক্ত দোষের উদ্ভব হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | কল্লোল নিশ্চয়ই বুদ্ধিমান, কেননা সে রোগা। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ অথবা অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (illicit generalization or fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এরূপ যুক্তিটিতে মাত্র কয়েকটি সদর্থক দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করে, তাড়াহুড়ো করে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে আরও যে সমস্ত দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল-সেগুলিকে আদৌ পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। সেকারণেই যুক্তিটিকে অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট বলা যায়। এরূপ যুক্তিটি গঠনের ক্ষেত্রে আবার দেখা যায় যে, রোগা অথচ বুদ্ধিমান নয়-এরূপ দৃষ্টান্তগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। সেজন্যই এরূপ যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট রূপেও উল্লেখ করা যায়। |
12. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির বিচার করো এবং কোনো দোষ থাকলে তা উল্লেখ করো:
[i] বৃহস্পতিবারের বারবেলায় যাত্রা অশুভ।
[ii] সব দাঁড়কাক হয় কালো।
[i] TOPIC-A-এর দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক চনং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।
[ii] TOPIC-A-এর দীর্ঘ উত্তরভিত্তিক ২নং প্রশ্নের ‘সামান্যীকরণ সংক্রান্ত দোষ বা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ’ শীর্ষক অংশ দ্যাখো।
13.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] সব কাকই কালো, কারণ অন্য রং-এর কাক আমি দেখিনি।
[ii] মই থেকে পা ফসকে মাটিতে পড়ে মানুষটি মারা গেল। সুতরাং বলা যায় যে, মই থেকে পড়ে যাওয়াই মানুষটির মৃত্যুর কারণ।
আরোহ যুক্তি | সব কাকই কালো, কারণ অন্য রং-এর কাক আমি দেখিনি। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ (illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | সম্ভাব্য | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণের দোষে দুষ্ট (fallacy of illicit generalization)। কারণ, এক্ষেত্রে কয়েকটি অবাধ অভিজ্ঞতামূলক সদর্থক দৃষ্টান্ডের ওপর নির্ভর করেই এরকম সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ ধরনের সামান্যীকরণের মূলভিত্তিই হল। অবাধ অভিজ্ঞতা। এখানে কার্যকারণ সম্পর্কের ওপর কোনো গুরুত্ব আরোপ করা হয়নি, এই আরোহ সিদ্ধান্তটি তাই কোনোমতেই সুনিশ্চিত নয়, সম্ভাব্যমূলক। |
আরোহ যুক্তি | মই থেকে পা ফসকে মাটিতে পড়ে মানুষটি মারা গেল। সুতরাং বলা যায় যে, মই থেকে পড়ে যাওয়াই মানুষটির মৃত্যুর কারণ। | |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ (fallacy of mistaking a necessary condition as a cause)। | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটির ক্ষেত্রে যে দোষের উদ্ভব ঘটেছে, সেই দোষের নাম হল একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ। কারণ, মই থেকে পড়ে যাওয়া ব্যক্তিটির মৃত্যুর একটি শর্ত হতে পারে, কিন্তু কখনোই তার মৃত্যুর সমগ্র কারণ নয়। আমরা জানি যে, কারণ হল সদর্থক এবং নঞর্থক শর্তসমূহের সমষ্টি। একটি শর্তকে তাই কারণের সহায়ক বলে মনে হতে পারে, কিন্তু কখনোই সমগ্র প্রকৃত কারণ হতে পারে না। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত রূপে গণ্য। |
14. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] তাপমান যন্ত্রের পারদ নেমে যাওয়াই নিকটবর্তী হ্রদের জল জমে যাওয়ার কারণ।
[ii] শহরতলিতে নতুন নতুন কলেজ খোলা হলে কলকাতার কলেজগুলিতে ভিড় কমে। কারণ, শহরতলির ছাত্ররা কলকাতার কলেজে ভিড় করবে না।
আরোহ যুক্তি | তাপমান যন্ত্রের পারদ নেমে যাওয়াই নিকটবর্তী হ্রদের জল জমে যাওয়ার কারণ। | |
দোষ | সহকার্যকে কারণ বলে মনে করার দোষ (fallacy of mistaking coeffect as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত বা দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি একটি সহকার্যকে কারণ মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, তাপমান যন্ত্রে পারদের নেমে যাওয়া ও নিকটবর্তী হ্রদের জল জমার মধ্যে প্রকৃত কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। ঘটনা দুটি সহকার্যের সম্পর্কে আবদ্ধ। উভয়েই অন্য একটি কারণ দ্বারা সংঘটিত হয়, এবং তা হল আবহাওয়ার তাপমাত্রা কমে যাওয়া। এই দুটি ঘটনাই তাই কেউ কারও কারণ বা কার্য নয়। সুতরাং, গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | শহরতলিতে নতুন নতুন কলেজ খোলা হলে কলকাতার কলেজগুলিতে ভিড় কমে। কারণ, শহরতলির ছাত্ররা কলকাতার কলেজে ভিড় করবে না। | |
দোষ | প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation of relevant instances) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটি প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে আরও বহু প্রয়োজনীয় শর্তসমূহকে উপেক্ষা করে শুধু একটি শর্তের ওপরই গুরুত্ব দিয়ে এরকম সিদ্ধান্ত করা হয়েছে। শহরতলিতে নতুন নতুন কলেজ না থাকা যেমন কলকাতার কলেজগুলিতে ভিড় হওয়ার প্রয়োজনীয় শর্ত, তেমনি এরকম আরও বহু শর্ত কলকাতার কলেজগুলিতে ভিড়ের পিছনে আছে এবং সেগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। যথা-উত্তম পরিবেশ, উপযুক্ত অধ্যাপক, উন্নত ল্যাবরেটরি এবং গ্রন্থাগার ইত্যাদি। ফলত যুক্তিটি উত্ত দোষে দুষ্ট। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
15. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] ইংরেজির পরীক্ষকরা নিশ্চয়ই খুব কঠোর মনোভাবাপন্ন। কারণ, প্রতি বছর অনেক ছাত্রই অকৃতকার্য হয়।
[ii] বেশিক্ষণ ধরে জলে ডুব দিয়ে স্নান কোরো না। কেননা এক টুকরো দড়ির মতো শরীরেও পচনের আশঙ্কা আছে।
আরোহ যুক্তি | ইংরেজির পরীক্ষকরা নিশ্চয়ই খুব কঠোর মনোভাবাপন্ন। কারণ প্রতি বছর অনেক ছাত্রই অকৃতকার্য হয়। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে অপরাপর প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। প্রত্যেক বছর ইংরেজিতে যে প্রচুর ছাত্র ফেল করে, তার অনেক কারণ থাকতে পারে। যথা, প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়া, উপযুক্ত ছাত্র না থাকা, যথাযথ পরিকাঠামো না থাকা, ইত্যাদি। কিন্তু এখানে এই সমস্ত প্রাসঙ্গিক দৃষ্টান্ডগুলিকে উপেক্ষা করে একটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | বেশিক্ষণ ধরে জলে ডুব দিয়ে স্নান কোরো না। কেন-না, এক টুকরো দড়ির মতো শরীরেও পচনের আশঙ্কা আছে। | |
দোষ | মন্দ উপমা দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে দড়ির সঙ্গে দেহের উপমা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে, সমমান বিষয়ের মধ্যেই উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করা সংগত, অসমমান পদদ্বয়ের মধ্যে উপমা কখনোই কাম্য নয়। ফলত এক্ষেত্রে উত্ত দোষের উদ্ভব ঘটেছে। এক্ষেত্রে তাই ঘটনান্বয়ের মধ্যে কোনোপ্রকার কার্যকারণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
16. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] এই ওষুধটি নিশ্চয়ই বিশেষ ফলদায়ক। কেন-না সমস্ত শংসাপত্রই ওষুধটির আশ্চর্য নিরাময় করার সাক্ষ্য দেয়।
[ii]একটি দেশের চরম পরিণতি অবশ্যই ধ্বংস। কারণ, দেশ হল জীবদেহের মতোই। আর জীবদেহের ধ্বংস বা মৃত্যু আছে।
আরোহ যুক্তি | এই ওষুধটি নিশ্চয়ই বিশেষ ফলদায়ক। কেন-না, সমস্ত শংসাপত্রই ওষুধটির আশ্চর্য নিরাময় করার সাক্ষ্য দেয়। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটিতে অপর্যবেক্ষণমূলক দোষের উদ্ভব ঘটেছে। কারণ, এক্ষেত্রে শংসাপত্রে ওষুধটির গুণের কথা বলা হয়েছে এবং শুধু সেগুলি বিবেচিত হয়েছে। কিন্তু এর নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকে উল্লেখ করা বা বিবেচনা করা হয়নি। অথচ আমরা জানি যে, কারণ হল সদর্থক এবং নঞর্থক দৃষ্টান্তসমূহের সমষ্টি। এদের সবগুলিকেই বিবেচনা করে কার্যকারণ সম্বন্ধ নির্ণয় করা উচিত। কিন্তু এখানে তা করা হয়নি। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | একটি দেশের চরম পরিণতি অবশ্যই ধ্বংস। কারণ, দেশ হল জীবদেহের মতোই। আর জীবদেহের ধ্বংস বা মৃত্যু আছে। | |
দোষ | মন্দ উপমা দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে দেশের সঙ্গে জীবদেহের উপমা করা হয়েছে। অথচ, আমরা জানি যে, উপমা সমমান পদের মধ্যেই সম্ভব, বিজাতীয় পদের মধ্যে নয়। এখানে দেশ এবং জীবদেহ সমজাতীয় পদ নয়, উভয়েই বিষমজাতীয়। অথচ এই উভয়ের মধ্যে সাদৃশ্য রচনা করা হয়েছে। ফলত যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
17. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] সূরা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে না, কেন-না তাহলে চিকিৎসকরা নিশ্চয়ই এর ব্যবস্থাপত্র দিতেন না।
[ii] শিক্ষাই সকল অসন্তোষের মূল, কেননা শিক্ষিত ব্যক্তিরাই উপযুক্ত চাকরি না পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
আরোহ যুক্তি | সুরা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে না, কেন-না তাহলে চিকিৎসকরা নিশ্চয়ই এর ব্যবস্থাপত্র দিতেন না। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটিরা ক্ষেত্রেও অপর্যবেক্ষণমূলক দোষের উদ্ভব হয়েছে। কারণ, এক্ষেত্রে কিছু দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করা হলেও, আরও অনেক প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্তকে উপের্যবেক্ষণমূলক দোষের উদ্ভব হয়েছে। কারপুরায় যাদের শরীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তগুলিকে এক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়নি। ফলত এক্ষেত্রে দোষের উদ্ভব হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | শিক্ষাই সকল অসন্তোষের মূল, কেন-না শিক্ষিত ব্যক্তিরাই উপযুক্ত চাকরি না পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে শিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে অসন্তোষের প্রকৃত কারণ হয়তো আমাদের নজর এড়িয়ে গেছে। তা ছাড়াও বলা যায় যে, শিক্ষিত ব্যক্তি, যারা চাকরি পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছে, তাদের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্তগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। ফলত এই আরোহ অনুমানটি উক্ত দোষে দুষ্ট। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
18. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] নিম্নতর প্রাণীরা মানুষের মতোই যন্ত্রণা বোধ করে।
[ii] আমি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করি না। কারণ, যারা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেন তাঁদেরও মৃত্যু হয়।
আরোহ যুক্তি | নিম্নতর প্রাণীরা মানুষের মতোই যন্ত্রণা বোধ করে। | |
দোষ | নেই | |
সিদ্ধান্ত | যথার্থ বা দোষবিহীন | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটির ক্ষেত্রে যে অনুমানের প্রয়োগ ঘটানো হয়েছে, তা হল সাদৃশ্য বা উপমা অনুমান। কারণ, এক্ষেত্রে মানুষের সঙ্গে নিম্নতর প্রাণীর সাদৃশ্য নির্ণয় করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, মানুষেরা যেমন যন্ত্রণা অনুভব করে, তাদের সদৃশ নিম্নতর প্রাণীরাও যন্ত্রণা বোধ করে; যেহেতু মানুষের সঙ্গে নিম্নতর প্রাণীর বহুক্ষেত্রেই সাদৃশ্য বা মিল আছে। এই যুক্তির ক্ষেত্রে সাদৃশ্যটি যথাযথ বলে একে উত্তম বা ভালো উপমা রূপে স্বীকার করা হয়। গৃহীত সিদ্ধান্তটিকে তাই দোষবিহীন তথা যথার্থ বলে ধরা হয়। |
আরোহ যুক্তি | আমি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করি না। কারণ, যারা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করেন তাঁদেরও মৃত্যু হয়। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে, তার সপক্ষে যতগুলি প্রয়োজনীয় দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল, তার সবগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষেও দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে কয়েকটি অবাধ অভিজ্ঞতামূলক দৃষ্টান্তের ওপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানে কার্যকারণ সম্বন্ধের ওপর কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
19. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] ভোরের স্বপ্ন সত্য হয়।
[ii] তুমি সূর্যগ্রহণের সময় খেয়েছ এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছ। সুতরাং, সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়াই তোমার অসুস্থতার কারণ।
আরোহ যুক্তি | ভোরের স্বপ্ন সত্য হয়। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ (illicit generalization) অথবা, অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে কেবলমাত্র কতকগুলি সদর্থক দৃষ্টান্তের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণের পরিধি যদি বাড়ানো যেত, তাহলে হয়তো দেখা যেত যে, এমন অনেক ভোরের স্বপ্ন আছে যেগুলি সত্য হয়নি। এই আরোহ যুক্তিটিকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের বা দৃষ্টান্ডের অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ হিসেবেও বলা যায়। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | তুমি সৃর্যগ্রহনের সময় খেয়েছ এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছ। সুতরাং সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়াই তোমাৰ অনুস্থতার কারণ। | |
দোষ | কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়া এবং অসুস্থ হওয়ার মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। এই ঘটনা দুটি কাকতালীয়ভাবে যুক্ত বলে উক্ত দোষের উদ্ভব হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
20. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] যার বৃদ্ধি আছে, তারই ক্ষয় আছে। অতএব, তোমার জনপ্রিয়তারও একদিন ক্ষয় হবে।
[ii] বিদ্যুৎচমক বজ্রনির্ঘোষের কারণ।
আরোহ যুক্তি | যার বৃদ্ধি আছে তারই ক্ষয় আছে। অতএব, তোমার জনপ্রিয়তারও একদিন ক্ষয় হবে। | |
দোষ | মন্দ উপমা দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এটি ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক বা মন্দ উপমা অনুমানের দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে উপমা বা সাদৃশ্যটি যথাযথভাবে করা হয়নি। এক্ষেত্রে দেখা র যায় যে, যে-কোনো বস্তুর ক্ষয়-বৃদ্ধির সঙ্গে জনপ্রিয়তার ক্ষয়-বৃদ্ধির মিল দেখা হয়েছে। কিন্তু এটি যুক্তিসংগত বা যথার্থ নয়। সুতরাং, অনুমানটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | বিদ্যুৎচমক বজ্রনির্ঘোষের কারণ। | |
দোষ | সহকার্যকে কারণ মনে করার দোষ (fallacy of mistaking coeffect as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এটি সহকার্যকে কারণ মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, আমরা জানি যে, বিদ্যুৎচমক এবং বজ্রনির্ঘোষ উভয় ঘটনাই মেঘের সংঘর্ষের ফলে ঘটে। সুতরাং, উভয় ঘটনাই সহকার্যরূপে গণ্য। আর যে সমস্ত জানি রোল বিদ্যুকামরূপে স্বীকৃত, সেগুলি কখনোই একে অপরের কারণ হতে। পারে না। এখানে সে রকম হওয়ার ফলেই এরকম দোষের সৃষ্টি হয়েছে। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
21. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] উত্তরপ্রদেশের ভূমিকম্পের অব্যবহিত পরেই মেদিনীপুরে বাস দুর্ঘটনা হল। অতএব, এই ভূমিকম্পই মেদিনীপুরের বাস দুর্ঘটনার কারণ।
[ii] এই কলেজের যে কয়েকজন ছাত্রীকে আমি চিনি তারা সকলেই ভালো গান গায়। সুতরাং, এই কলেজের সব ছাত্রীই সুগায়িকা।
আরোহ যুক্তি | উত্তরপ্রদেশের ভূমিকম্পের অব্যবহিত পরেই মেদিনীপুরে বাস দুর্ঘটনা হল। অতএব এই ভূমিকম্পই মেদিনীপুরের বাস দুর্ঘটনার কারণ। | |
দোষ | অবান্তর বিষয়কে কারণ মনে করার দোষ (fallacy of mistaking an irrelevant condition as cause) অথবা, কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি অবান্তর বিষয়কে কারণ বলে মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে কার্যের সঙ্গে কারণের কোনো কার্যকারণ সম্পর্কই নেই। উত্তরপ্রদেশের ভূমিকম্পের সঙ্গে মেদিনীপুরের বাস দুর্ঘটনার তাই কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না। অথচ এক্ষেত্রে এরকমই করা হয়েছে বলে, উক্ত দোষের উদ্ভব ঘটেছে। যুক্তিটিকে আবার কাকতালীয় দোষে দুষ্ট রূপেও অভিহিত করা যায়। যুক্তিটির সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | এই কলেজের যে কয়েকজন ছাত্রীকে আমি চিনি তারা সকলেই ভালো গান গায়। সুতরাং এই কলেজের সব ছাত্রীই সুগায়িকা। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ (illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণের দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে শুধুমাত্র কয়েকটি অবাধ সদর্থক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করেই সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যারা এই কলেজের ছাত্রী অথচ গান জানে না, তাদের দৃষ্টান্তগুলি আমাদের সামনে উপস্থিত হয়নি, পর্যবেক্ষণকে আরও ব্যাপক করলে হয়তো এরকম দৃষ্টান্তগুলি চোখে পড়ত, এবং তার ফলে এরকম সিদ্ধান্ত স্থাপন করা সম্ভব হত না। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোযযুক্ত। |
22. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] মানবশিশুর মতো চারাগাছেরও জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। সুতরাং মানবশিশুর মতো চারাগাছটিরও চিন্তাশক্তি আছে।
[ii] নতুন পোশাকটি পরার পরই তার জ্বর হল। সুতরাং নতুন পোশাকটিই তার জ্বরের কারণ।
আরোহ যুক্তি | মানবশিশুর মতো চারাগাছেরও জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। সুতরাং মানবশিশুর মতো চারাগাছটিরও চিন্তাশক্তি আছে। | |
দোষ | মন্দ উপমা (bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি মন্দ উপমা বা ভ্রান্ত সাদৃশ্যমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে চারাগাছের সঙ্গে মানবশিশুর সাদৃশ্য দেখানো হয়েছে। অথচ আমরা জানি যে, উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করতে হয় সমজাতীয় বিষয় বা বস্তুর মধ্যে। কিন্তু এখানে চারাগাছ এবং মানবশিশু সমজাতীয় নয় বরং। বিজাতীয়। সুতরাং, এক্ষেত্রে সাদৃশ্য রচনা করা হলে উক্ত দোষের উদ্ভব ঘটে। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | নতুন পোশাকটি পরার পরই তার জ্বর হল। সুতরাং নতুন পোশাকটিই তার জ্বরের কারণ। | |
দোষ | কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | আরোহ যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে যে-কোনো পূর্ববর্তী ঘটনা বা শর্তকে কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু যে-কোনো পূর্ববর্তী ঘটনাকেই কারণ বলে ধরা যায় না। পূর্ববর্তী ঘটনার সঙ্গে কার্যের একটি কার্যকারণ সম্বন্ধ থাকে। কিন্তু এখানে পূর্ববর্তী ঘটনা অর্থাৎ নতুন পোশাক পরার সঙ্গে জ্বরের কোনো কার্যকারণ সম্বন্ধ নেই। উভয়ের সম্পর্ক হল তাই কাকতালীয় বা আকস্মিক। সেকারণেই আরোহ অনুমানটি এই ধরনের দোষে দুষ্ট। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
23. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো এবং কোনো দোষ থাকলে তা উল্লেখ করো:
[i] শীতের পরেই বসন্ত আসে। কাজেই শীত হল বসন্তের কারণ।
[ii] উচ্চশিক্ষা ভালো নয়, কেন-না অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিই মানসিক বিকারগ্রস্ত।
আরোহ যুক্তি | শীতের পরেই বসন্ত আসে। সুতরাং শীতই বসন্তের কারণ। | |
দোষ | সহকার্যকে কারণ বলার দোষ (fallacy of mistaking coeffect as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এটি সহকার্যকে কারণ বলে মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, শীত এবং বসন্ত ঋতু দুটি ঋতুচক্রের কারণে আসে। সুতরাং, এই দুটি ঘটনাকে সহ-ঘটনা বা সহকার্যরূপে ধরা হয় তাই কেউ কারও কারণ বা কার্য হতে পারে না। অথচ এখানে একটিকে আর-একটির কারণরূপে স্বীকার করা হয়েছে। ফলত এরূপ দোষের উদ্ভব হয়েছে। এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | উচ্চশিক্ষা ভালো নয়, কেন-না অধিকাংশ উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিই মানসিক বিকারগ্রস্ত। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ (illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণের দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে শুধু কয়েকটি অবাধ সদর্থক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তটিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যারা উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি অথচ মানসিক বিকারগ্রস্ত নয়, তাদের বিষয়টিকে এখানে অপর্যবেক্ষণ (non-observation) করা হয়েছে। এই ধরনের অপর্যবেক্ষণমূলক দৃষ্টান্তগুলির কথা এখানে আদৌ বিচার-বিবেচনায় আনা হয়নি। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
24.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] জোয়ারের পর ভাটা হয়। সুতরাং জোয়ারই ভাটার কারণ।
[ii] মাদুলি ধারণ করার পর তার রোগ সারল। সুতরাং মাদুলি ধারণই রোগ সারার কারণ।
আরোহ যুক্তি | জোয়ারের পর ভাটা হয়। সুতরাং জোয়ারই ভাটার কারণ। | |
দোষ | সহকার্যকে কারণ বলার দোষ (fallacy of mistaking coeffect as a cause) | |
গৃহীত সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এ যুক্তিটি সহকার্যকে কারণ বলে মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, আমরা জানি যে, পৃথিবীর আহ্নিক গতির জন্যই জোয়ার এবং ভাটা সংঘটিত হয়। সুতরাং, উভয়েইলে মনে করা রো সৃষ্ট বলে সহকার্যরূপে গণ্য। কোনো সহকার্যকে অপর সহকার্যের কারণ বা কার্য বলা যায় না। অথচ এখানে তাই করা হয়েছে। ফলত এটি উক্ত দোষে দুষ্ট। এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | মাদুলি ধারণ করার পর তার রোগ সারল। সুতরাং মাদুলি ধারণই রোগ সারার কারণ। | |
দোষ | কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে মাদুলি ধারণ এবং রোগ সারার মধ্যে কোনো প্রকৃত কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। উভয়ের সম্পর্ক হল নেহাতই কাকতালীয় বা আকস্মিক। যুক্তিটি তাই একটি অবান্তর বিষয়কে কারণ বলে মনে করার দোষে দুষ্ট। এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
25. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] গাছের মতোই কারখানার জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। সুতরাং কারখানার প্রাণ আছে।
[ii] বৃষ্টি হলেই বন্যা হয়।
আরোহ যুক্তি | গাছের মতোই কারখানার জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। সুতরাং কারখানার প্রাণ আছে। | |
দোষ | মন্দ উপমা (bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | অনুমানটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট, কারণ, এক্ষেত্রে গাছের সঙ্গে কারখানার সাদৃশ্য বা উপমা রচনা করা হয়েছে। অথচ আমরা জানি যে, সমজাতীয় বিষয় বা বস্তুর মধ্যে সাদৃশ্য রচনা করতে হয়, কখনোই অসম বা বিষম জাতীয় বিষয় বা বস্তুর মধ্যে নয়। এখানে কিন্তু তাই করা হয়েছে বলে, অনুমানটি এরূপ দোষে দুষ্ট। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই এখানে ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | বৃষ্টি হলেই বন্যা হয়। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation)অথবা, অবৈধ সামান্যীকরণ (illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও বন্যা হয়নি-এমন সব দৃষ্টান্তকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই সমস্ত দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। ফলত এটি উক্ত দোষে দুষ্ট। এটি আবার অবৈধ সামান্যীকরণ দোষেও দুষ্ট। কারণ, এখানে কয়েকটি অবাধ সদর্থক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তটিকে গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
26.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] ধূমকেতু ওঠার পরই ভূমিকম্প হল। সুতরাং ধূমকেতু ওঠাই হল ভূমিকম্পের কারণ।।
[ii] ফোড়ার কারণ হল আম খাওয়া।
আরোহ যুক্তি | ধূমকেতু ওঠার পরই ভূমিকম্প হল। সুতরাং ধূমকেতু ওঠাই হল ভূমিকম্পের কারণ। | |
দোষ | কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে ধূমকেতু ওঠাকে ভূমিকম্পের কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে, ধূমকেতু ওঠার সঙ্গে ভূমিকম্পের কোনো প্রকৃত কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। এদের সম্পর্ক নেহাতই কাকতালীয় বা আকস্মিক। সুতরাং, এটি এরূপ দোষে দুষ্ট। এখানে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত এবং দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | ফোড়ার কারণ হল আম খাওয়া। | |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ (fallacy of mistaking a necessary condition as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এক্ষেত্রে শুধু একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ হয়েছে। কারণ, ফোড়া হওয়ার একটি শর্ত আম খাওয়া হলেও, এর আরও যে সমস্ত শর্ত আছে সেগুলিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। অথচ আমরা জানি যে, কারণ হল কতকগুলি শর্তের সমষ্টি। কোনো একটি শর্ত তাই সমগ্র কারণরূপে গণ্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
27. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] যুদ্ধের পরেই মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা গেল। সুতরাং, যুদ্ধই মহামারির কারণ।
[II] আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন। সুতরাং বৃষ্টি হবে।
আরোহ যুক্তি | যুদ্ধের পরেই মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা গেল। সুতরাং, যুদ্ধই মহামারির কারণ। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে যুদ্ধ মহামারির একটি সহযোগী শর্ত হলেও, এছাড়া আরও অনেক শর্ত আছে-যেগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। সুতরাং, সমস্ত শর্তকে বিচার-বিবেচনা না করে অব্যবহিত যে-কোনো ঘটনাকেই কারণরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন। সুতরাং, বৃষ্টি হবে। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | অনুমানটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে কয়েকটি অবাধ সদর্থক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তটিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমরা নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকে এক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ করিনি। অর্থাৎ, আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন হয়েও, বৃষ্টি হয়নি-এমন ক্ষেত্রকে আমরা পর্যবেক্ষণ না করেই এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
28. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] মানসিক হাসপাতালে অধিকাংশ রোগীই উচ্চশিক্ষিত। সুতরাং, উচ্চশিক্ষাই মানসিক রোগের কারণ।
[ii] ডাক্তারদের ভালো হস্তাক্ষর দেখিনি, সুতরাং নিশ্চয়ই ডাক্তারি শিক্ষা খারাপ হস্তাক্ষরের কারণ।
আরোহ যুক্তি | মানসিক হাসপাতালে অধিকাংশ রোগীই উচ্চশিক্ষিত। সুতরাং, উচ্চশিক্ষাই মানসিক রোগের কারণ। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে মানসিক হাসপাতালের রোগীদের মধ্যে যারা উচ্চশিক্ষিত নয়, তাদের বিষয়গুলিকে পর্যবেক্ষণ না করেই, এরূপ সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়েছে। অথচ সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে এই সমস্ত দৃষ্টান্তগুলিকেও পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। এটি তাই অবৈধ সামান্যীকরণ দোষেও দুষ্ট। এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত রূপে গণ্য। |
আরোহ যুক্তি | ডাক্তারদের ভালো হস্তাক্ষর দেখিনি, সুতরাং নিশ্চয়ই ডাক্তারি শিক্ষা খারাপ হস্তাক্ষরের কারণ। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) অথবা, অবৈধ সামান্যীকরণ (illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে যে-সমস্ত ডাক্তারদের হাতের লেখা ভালো নয়, শুধু তাদের দৃষ্টান্ডগুলোকেই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। যেসকল ডাক্তারদের হাতের লেখা ভালো তাদের দৃষ্টান্তগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। ফলে যে সিদ্ধান্ত গঠিত হয়েছে, তা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষেও দুষ্ট এ কথা বলা যায়। এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত রূপে গণ্য। |
29.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] উপনিবেশগুলি ফলের মতো। কারণ, ফলগুলি পাকলে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায়, তেমনই উপনিবেশগুলি উন্নত হলে মূল দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
[II] বড়ো হাসপাতালের তুলনায় ছোটো হাসপাতালে মৃত্যুর হার কম। সুতরাং বড়ো হাসপাতালের তুলনায় ছোটো হাসপাতালে চিকিৎসা ভালো হয়।
আরোহ যুক্তি | উপনিবেশগুলি ফলের মতো। কারণ, ফলগুলি পাকলে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায়, তেমনই উপনিবেশগুলি উন্নত হলে মূল দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। | |
দোষ | মন্দ উপমার দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটি মন্দ উপমা বা দুষ্ট উপমা দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে উপমান এবং উপমেয় সমজাতীয়ন্ত্রণে পণ্য নয়। অথচ আমরা জানিয়ে উপমা বা সাদৃশ্য গঠন করা হয় সমজাতীয় বাস্তি কারণ, এমেদের উপমান এবং তা করা হয়েছে বিষমজাতীয় বস্তুখয়ের মধ্যে ভান্ত ও উপনিবেশ হল ভিন্ন জাতীয়, সমজাতীয় নয়াকি বাবার মধ্যে। কি এখানে তালায় মন্দ উপমা। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভান্ত ও দোষযুক্ত রূপে গণ্য। |
আরোহ যুক্তি | বড়ো হাসপাতালের তুলনায় ছোটো হাসপাতালে মৃত্যুর হার কম। সুতরাং বড়ো হাসপাতালের তুলনায় ছোটো হাসপাতালে চিকিৎসা ভালো হয়। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে বড়ো হাসপাতালের তুলনায় ছোটো হাসপাতালের মৃত্যুর হারই শুধু পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে, অন্য বিষয়গুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। সুতরাং যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট বলে দাবি করা যায়। এক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্তটিকে গ্রহণ করা হয়েছে, তা ভ্রান্ত এবং দোষযুক্ত। |
30.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] সব রাস্তাই রোমে গেছে। যেমন, সব নদীই সাগরে গেছে।
[ii] রাস্তা মেরামতের পরই গাড়িটি উলটে গেল। সুতরাং, রাস্তা মেরামতই গাড়ি ওলটানোর কারণ।
আরোহ যুক্তি | সব রাস্তাই রোমে গেছে, যেমন সব নদীই সাগরে গেছে। | |
দোষ | মন্দ উপমার দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এরূপ আরোহ যুক্তিটি মন্দ উপমা বা ভ্রান্ত সাদৃশ্য দোষে দুষ্ট। কারণ, যুক্তিটির ক্ষেত্রে যে উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করা হয়েছে, সেই দুটি বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য রচনা একেবারেই অবান্তর। কারণ, এখানে রাস্তার সঙ্গে নদীর এবং রোম নগরের সঙ্গে সাগরের তুলনা করা হয়েছে। যুক্তিটির অন্তর্গত উপমার বিষয়গুলি তাই যথাযথ বা প্রাসঙ্গিক নয়। সেকারণেই যুক্তিটি মন্দ উপমার দোষে দুষ্ট। |
আরোহ যুক্তি | রাস্তা মেরামতের পরই গাড়িটি উলটে গেল। অতএব, রাস্তা মেরামতই গাড়ি ওলটানোর কারণ। | |
দোষ | কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে রাস্তা মেরামত এবং গাড়ি ওলটানোর মধ্যে কোনো কার্যকারণ সম্বন্ধ থাকতে পারে না। নেহাতই আকস্মিক বা কাকতালীয়ভাবে ঘটনা দুটি ঘটেছে। এরূপ ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে কোনো নিশ্চয়তা ও সার্বিকতা নেই। সুতরাং, সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
31.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] দিনের পরেই রাত্রি আসে, তাই দিন রাত্রির কারণ।
[ii] এ পর্যন্ত যত সাদা ফুল দেখেছি সেগুলি রাতে ফোটে। সুতরাং সব সাদা ফুলই রাতে ফোটে।
আরোহ যুক্তি | দিনের পরেই রাত্রি আসে, তাই দিন রাত্রির কারণ। | |
দোষ | সহকার্যকে কারণ বলে মনে করার দোষ (fallacy of mistaking coeffect as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এটি সহকার্যকে কারণ মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, পৃথিবীর আহ্নিক গতির ফলে দিন ও রাত্রি হয়। তাই দিন ও রাত্রির মধ্যে প্রকৃত কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। এই ঘটনা দুটি সহকার্যের সম্পর্কে আবদ্ধ। উভয়েই অন্য একটি কারণ দ্বারা সংঘটিত হয় এবং তা হল পৃথিবীর আহ্নিক গতি। এই দুটি ঘটনাই তাই কেউ কারও কারণ বা কার্য নয়। সুতরাং, এক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
আরোহ যুক্তি | এ পর্যন্ত যত সাদা ফুল দেখেছি সেগুলি রাতে ফোটে। সুতরাং, সব সাদা ফুলই রাতে ফোটে। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ (fallacy of illicit generalization) অথবা, অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ, এক্ষেত্রে কেবলমাত্র কতকগুলি সদর্থক দৃষ্টান্তের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণের পরিধি যদি বাড়ানো যেত, তাহলে হয়তো দেখা যেত যে, এমন অনেক সাদা ফুল আছে যেগুলি দিনে ফোটে। এই আরোহ যুক্তিটিকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ের বা দৃষ্টান্তের অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ হিসেবেও মনে করা যায়। গৃহীত সিদ্ধান্তটি তাই ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
32.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] মানুষের মাথা হল একটি সুপার কম্পিউটার, কারণ তা কম্পিউটারের মতোই সুনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ক্রমিকভাবে কাজ করে।
[ii] আমার কয়েকজন বন্ধু রাম ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে গেঁটেবাতে আক্রান্ত হল। সুতরাং রাম ডাক্তারের ওষুধ খেলেই গেঁটেবাতে আক্রান্ত হতে হবে।
আরোহ যুক্তি | মানুষের মাথা হল একটি সুপার কম্পিউটার, কারণ তা কম্পিউটারের মতোই সুনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ক্রমিকভাবে কাজ করে। | |
দোষ | মন্দ উপমার দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে মানুষের মাথার সঙ্গে কম্পিউটার-এর উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করা হয়েছে। উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করার ক্ষেত্রে যথাযথ সমজাতীয় বিষয়ের ক্ষেত্রে তা করা উচিত ছিল। কিন্তু এখানে বিজাতীয় ও অ-যথাযথ দুটি বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য রচনা করার ফলে তা ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | আমার কয়েকজন বন্ধু রাম ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে গেঁটেবাতে আক্রান্ত হল। সুতরাং রাম ডাক্তারের ওষুধ খেলেই গেঁটেবাতে আক্রান্ত হতে হবে। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ (illicit generalization)অথবা, অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে কতগুলি অবাধ সদর্থক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্তে এটি সামান্য সংশ্লেষক বচন অনুমান করে নেওয়া হয়েছে। সুতরাং, গৃহীত সিদ্ধান্তটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত রূপে গণ্য।এছাড়াও বলা যায় যে, ন্যায় যুক্তিটি গঠন করার ক্ষেত্রে যে সমস্ত দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল তার সবগুলিকে পর্যবেক্ষণ না করে শুধুমাত্র কয়েকটি দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এর ফলে অপর্যবেক্ষণমূলক দোষের উদ্ভব হয়েছে। ফলে যে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে তা ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। |
34.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। কারণ, ধূমপান করেও বহু ব্যক্তি সুন্দর স্বাস্থের অধিকারী
[II] আমি যে সমস্ত বন্ধুর সংস্পর্শে এসেছি তাদের সবাইকেই স্বার্থপর দেখেছি। কাজেই বন্ধুমাত্রই স্বার্থপর বলা যায়।
আরোহ যুক্তি | ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়। কারণ, ধূমপান করেও বহু ব্যক্তি সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ অথবা অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (illicit generalization/fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই যুক্তিটিতে মাত্র কয়েকটি সদর্থক দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং তাড়াহুড়ো করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে আরো অনেক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। এক্ষেত্রে ধূমপান করার ফলে যাদের স্বাস্থ্যের হানি হয়েছে সে সমস্ত দৃষ্টান্তগুলোকে আদৌ পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। এর ফলে এরূপ আরোহ যুক্তিটিকে অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট অথবা অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্টরূপে অভিহিত করা হয়। |
আরোহ যুক্তি | আমি যে সমস্ত বন্ধুর সংস্পর্শে এসেছি তাদের সবাইকেই স্বার্থপর দেখেছি। কাজেই বন্ধু মাত্রই স্বার্থপলা যায়। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ (fallacy of illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে অত্যন্ত সীমিত গুটিকয়েক সদর্থক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে এটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র কয়েকটি ব্যক্তিগত অবাধ দৃষ্টান্ডের ওপর নির্ভর করেই ব্যক্তিগত অভিমতকে সাঙ্কিতাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। সেকারণেই এই আরোহ যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
35.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] ছেলেমেয়েরা ফলের মতো। ফলগুলি পাকলে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায়, তেমনি ছেলেমেয়েরা সমৃদ্ধ হলে বাবামায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
[ii] শিক্ষা অসন্তোষের কারণ। কেন-না শিক্ষিত যুবকরা চাকরি না পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে।
আরোহ যুক্তি | ছেলেমেয়েরা ফলের মতো। ফলগুলি পাকলে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায়, তেমনি ছেলেমেয়েরা সমৃদ্ধ হলে বাবামায়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। | |
দোষ | মন্দ উপমার দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি মন্দ উপমার দোষে দুষ্ট (bad analogy)। কারণ, এখানে দুটি বিষমজাতীয় বিষয়ের সঙ্গে সাদৃশ্য রচনা করা হয়েছে। গাছের ফল এবং ছেলেমেয়ে দুটি বিষয় কখনোই সমজাতীয় বিষয় নয়, অথচ এদের মধ্যে সাদৃশ্য তথা উপমা রচনা করা হয়েছে বলে যুক্তিটি উত্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | শিক্ষা অসন্তোষের কারণ। কেন-না শিক্ষিত যুবকেরা চাকরি না পেয়ে অসেন্তাষ প্রকাশ করে। | |
দোষ | একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে মনে করা (fallacy of mistaking an irrelevant condition as cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি অবৈধ (invalid)। কারণ, এখানে একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে মনে করা হয়েছে। শিক্ষিত যুবকেরা চাকরি না পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করতেই পারে। তার জন্য সরকার বা অন্য কোনো সংস্থা দায়ী হলেও শিক্ষা যা মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে জাগ্রত করে, তা কখনোই অসন্তোষের কারণ হতে পারে না। ফলত যুক্তিটি একটি অবান্তর ঘটনাকে কারণ বলে মনে করার দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
36. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] রাম যে পরীক্ষায় ফেল করবে তা বোঝাই গিয়েছিল, কারণ পরীক্ষার হলে যাওয়ার পথে তার সঙ্গে একটি অপয়া লোকের দেখা হয়েছিল।
[ii] জলের সঙ্গে ঔষধ খাওয়ার ফলে রোগ সারে। কাজেই বলা যায় যে, জল হল রোগ নিরাময়ের কারণ।
আরোহ যুক্তি | রাম যে পরীক্ষায় ফেল করবে তা বোঝাই গিয়েছিল, কারণ পরীক্ষার হলে যাওয়ার পথে তার সঙ্গে একটি অপয়া লোকের দেখা হয়েছিল। | |
দোষ | একটি অবান্তর শর্তকে কারণরূপে অভিহিত করার দোষ (fallacy of mistaking an irrelevant condition as cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি একটি অবান্তর শর্তকে কারণরূপে অভিহিত করার দোষে দুষ্ট। কারণ, রামের পরীক্ষা ভালো না হওয়ার আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ । কারণ থাকতে পারে। যেমন- প্রশ্নপত্র ভালো না হওয়া, ঠিকমত উত্তর দিতে না পারা, সাজেশান ফেল করা ইত্যাদি। কিন্তু এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলিকে বাদ দিয়ে একটি তুচ্ছ ও অবান্তর বিষয়কে কারণরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ওই অবান্তর বিষয়টির সঙ্গে পরীক্ষার ফেল করার কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। ফলত যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | জলের সঙ্গে ঔষধ খাওয়ার ফলে রোগ সারে। কাজেই বলা যায় যে, জল হল রোগ নিরাময়ের কারণ। | |
দোষ | অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে কারণ বলার দোষ (fallacy of mistaking an irrelevant condition ascause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি অপ্রাসঙ্গিক বিষয়কে কারণ বলার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে জলপান কখনোই রোগ নিরাময়ের কারণরূপে গণ্য হতে পারে না। রোগ নিরাময়ের মূল কারণ হল ঔষধ সেবন। কিন্তু এখানে ঔষধ সেবনের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে একটি অবান্তর ও তুচ্ছ বিষয়কে সমগ্র কারণরূপে স্বীকার করা হয়েছে। ফলত যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
37.নীচের আরেৎ মুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] কর্ণ পর্যন্ত যত রাজহাঁস দেখেছি, তার সবই সাদা। সুতরাং বলা যায় যে, সব রাজহাঁসই সাদা।
[II’ মানুষের মতো গাছেরও হ্রাসবৃদ্ধি আছে। সুতরাং মানুষের মতো গাছেরও বুদ্ধি আছে।
আরোহ যুক্তি | আজ পর্যন্ত যত রাজহাঁস দেখেছি, তার সবই সাদা। সুতরাং বলা যায় যে, সব রাজহাঁসই সাদা। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ (fallacy of illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে আমার সীমিত অভিজ্ঞতায় যে সমস্ত রাজহাঁস দেখেছি, তাদের সবই সাদা এবং অন্য কোনো রং-এর রাজহাঁস আমি দেখিনি। এই সীমিত সংখ্যক ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতামূলক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে এখানে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | মানুষের মতো গাছেরও হ্রাসবৃদ্ধি আছে। সুতরাং মানুষের মতো গাছের ও বৃদ্ধি আছে। | |
দোষ | মন্দ বা দুষ্ট উপমার দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে উপমেয় বিষয় দুটি সমজাতীয় না হয়ে বিজাতীয়রূপে গণ্য। অথচ আমরা জানি যে, উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করতে হয় সমজাতীয় বিষয় বা ঘটনাদ্বয়ের মধ্যে। কিন্তু এখানে গাছ ও মানুষ সমজাতীয় না হয়ে ভিন্ন জাতীয়রূপে গণ্য। অথচ তাদের মধ্যে সাদৃশ্য বা উপমা রচনা করা হয়েছে। এর ফলে যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
38.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] বারুদ হল বিস্ফোরণের কারণ।
[ii] জীবদেহের মতোই জাতির জন্ম, বর্ধন ও লয় আছে। সুতরাং জাতিও এক জীবদেহ।
আরোহ যুক্তি | বারুদ হল বিস্ফোরণের কারণ। | |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ (fallacy of mistaking a necessary condition as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে শুধুমাত্র একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র এই আবশ্যিক শর্তটি কখনোই বিস্ফোরণের কারণ হতে পারে না। এর সঙ্গে আরও অন্যান্য অনেক শর্তই জড়িত থাকে, যেমন বারুদকে টাটকা হতে হবে, তাতে অগ্নিসংযুক্ত হতে হবে ইত্যাদি। কিন্তু এই সমস্ত প্রয়োজনীয় শর্তসমূহকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র বারুদকেই বিস্ফোরণের কারণরূপে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলত উক্ত দোষের উদ্ভব হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | জীবদেহের মতোই জাতির জন্ম, বর্ধন ও লয় আছে। সুতরাং জাতিও এক জীবদেহ। | |
দোষ | মন্দ বা দুষ্ট উপমার দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি মন্দ উপমার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে দুটি ভিন্ন জাতীয় বিষয়ের সঙ্গে উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করা হয়েছে। জীবদেহের সঙ্গে জাতির তুলনা বা সাদৃশ্য রচনা কখনোই বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ, এ দুটি বিষয় হল ভিন্ন জাতীয়। সেকারণেই বলা যায় যে, এই আরোহ যুক্তিটি মন্দ উপমা বা দুষ্ট উপমার দোষে দুষ্ট। |
39.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] তুমি সূর্যগ্রহণের সময় খেয়েছ এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছ। সুতরাং সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়াই হল তোমার অসুস্থতার কারণ।
[ii] আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন, সুতরাং বৃষ্টি হবে।
আরোহ যুক্তি | সূর্যগ্রহণের সময় তুমি খেয়েছো এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছো। সুতরাং সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়াই হল তোমার অসুস্থতার কারণ। | |
দোষ | অবান্তর ঘটনাকে কারণরূপে অভিহিত করার দোষ (fallacy of mistaking an irrelevant condition as cause) অথবা, কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি অবান্তর ঘটনাকে কারণরূপে অভিহিত করার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে একটি অবাধে বিষয়কে অসুস্থ হওয়ার কারণরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়া অসুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে একটি অবান্তর ঘটনা একারণে-ব অসুস্থ হওয়ার কোনো কার্যকারণ সম্বন্ধই নেই। সুতরাং যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে।আবার বলা যায় যে, সূর্যগ্রহণের সময় খাওয়া জাংসতার পরেই অসুস্থ হওয়া কার্যকারণহীন তথা কাকতালীয়ভাবে সংথত হয়েছে বলে যুক্তিটিকে কাকতালীয় দোষেও দুষ্ট বলা যায়। |
আরোহ যুক্তি | আকাশ ঘন মেঘে আচ্ছন্ন, সুতরাং বৃষ্টি হবে। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non observation)অথবা, অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ (fallacy of illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে কয়েকবার আকাশে ঘন মেঘ দেখে বৃষ্টি হওয়া দেখা গেছে এবং সেই অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতেই মনে করা হয়েছে যে, আকাশে যেহেতু ঘনমেঘ আছে সেহেতু বৃষ্টি হবে। এখানে কিন্তু কোনো নঞর্থকি দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। অর্থাৎ, ঘন মেঘ দেখা গেছে অথচ বৃষ্টি হয়নি, এরুপ দৃষ্টান্তকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলত যুক্তিটি উত্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
40.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:=
[i] বেশি বিদ্যার্জন খারাপ, কেন-না অনেক বিদ্বান ব্যক্তিই বিকৃত মস্তিষ্ক।
[ii] ময়লা কি খুলে পরিষ্কার হয় না? যদি হয় তবে আমাদের সমস্ত পাপ গঙ্গার পবিত্র জলে অবগাহন করে মুক্ত হওয়া কি অসম্ভব। কাজেই যতদিন মানুষ মাঝে মাঝে গঙ্গায় স্নান করবে, ততদিন সে যেভাবেই কাজ বা চিন্তা করুক না কেন, কিছু যায় আসে না।
আরোহ যুক্তি | বেশি বিদ্যার্জন খারাপ, কেন-না অনেক বিদ্বান ব্যক্তিই বিকৃত মস্তিষ্ক। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোযযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | আরোহ যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এই যুক্তিটিতে শুধুমাত্র কিছু সদর্থক দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং তারই ভিত্তিতে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অথচ এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে এর নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলিকেও পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। এখানে কিন্তু তা করা হয়নি। ফলত যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | ময়লা কি খুলে পরিষ্কার হয় না? যদি হয় তবে আমাদের সমস্ত পাপ গঙ্গার পবিত্র জলে অবগাহন করে মুক্ত হওয়া কি অসম্ভব? কাজেই যতদিন মানুষ মাঝে মাঝে গঙ্গায় স্নান করবে ততদিন সে যেভাবেই কাজ বা চিন্তা করুক না কেন, কিছু যায় আসে না। | |
দোষ | মন্দ বা দুষ্ট উপমার দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | আরোহ যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট কারণ, আমরা জানি যে, উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করতে হয় সমজাতীয় দুটি বিষয়ের মধ্যে। কিন্তু এখানে যে উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করা হয়েছে তা দুটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের মধ্যে। ময়লাকে গঙ্গার জলে ধোয়া আর পাপকে গঙ্গার জলে ধোয়া-র মধ্যে কোনো সাদৃশ্য বা উপমা রচনা হতে পারে না। ফলত যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
41.নীচের আরোহ যুক্তিগুলি বিচার করো এবং কোনো দোষ থাকলে তা উল্লেখ করো:
[i] আজকাল শিক্ষিত মহিলারা গৃহকর্মে বিমুখ। সুতরাং নারীশিক্ষায় উৎসাহ দেওয়া উচিত নয়।
[II] টেলিগ্রাম অশুভ। কারণ, তা দুঃসংবাদ বহন করে।
আরোহ যুক্তি | আজকাল শিক্ষিত মহিলারা গৃহকর্মে বিমুখ। সুতরাং নারীশিক্ষায় উৎসাহ দেওয়া উচিত নয়। | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation)অথবা, অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ (fallacy of illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে শুধুমাত্র কতকগুলি সদর্থক দৃষ্টান্তকে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটিকে প্রতিষ্ঠা করার পূর্বে এর বিরুদ্ধে নঞর্থক দৃষ্টান্তগুলোকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। সুতরাং এই খারোহ যুক্তিটি উত্ত দোষে দুষ্ট। |
আরোহ যুক্তি | টেলিগ্রাম অশুভ। কারণ, তা দুঃসংবাদ বহন করে। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ (fallacy of illicit generalization)অথবা, অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে কতকগুলি অশুভ সংবাদ বহনকারী টেলিগ্রামের দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়েছে বলে এই আরোহ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট হয়েছে। আবার, একে অপর্যবেক্ষণমূলক দোষেও দুষ্ট বলা যেতে পারে। কারণ, এখানে যে সমস্ত টেলিগ্রাম শুভ সংবাদ বহন করেছে তাদের দৃষ্টান্তগুলিকে আদৌ পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। অথচ এগুলিকে পবেক্ষণ করা উচিত ছিল। সেকারণেই যুক্তিটি অপর্যবেক্ষণজনিত দোষেও দুষ্ট হতে পারে। |
42.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[I] ‘অস্কার’ পুরস্কার পাওয়ার অব্যবহিত পরেই সত্যজিৎ রায় মারা যান। সুতরাং এই পুরস্কার পাওয়া তাঁর মৃত্যুর কারণ।
[ii] থাইরয়েড গ্রন্থি বাদ দিলে বুদ্ধিহীন হয়। তাই থাইরয়েডে গ্রন্থি হল বুদ্ধিহীনতার কারণ।
আরোহ যুক্তি | ‘অস্কার’ পুরস্কার পাওয়ার অব্যবহিত পরেই সত্যজিৎ রায় মারা যান। সুতরাং এই পুরস্কার পাওয়াই হল তার মৃত্যুর কারণ। | |
দোষ | কাকতালীয় দোষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc)অথবা, অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষ (fallacy of mistaking an irrelevant condition as cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে ‘অস্কার’ পুরস্কার পাওয়া আর সত্যজিৎ রায়ের মারা যাওয়ার মধ্যে কোনো কার্যকারণ সম্বন্ধই নেই। এই দুটি ঘটনা নেহাতই হঠাৎ বা কাকতালীয়ভাবে ঘটেছে বলে একটিকে আর একটির কারণ বলা যায় না। অথচ এখানে একটিকে আর একটির কারণ বলা হওয়ায় তা উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। আবার, ‘অস্কার’ পাওয়া মারা যাওয়ার পক্ষে একটি অবান্তর কারণরূপে গণ্য হওয়ায় এই আরোহ যুক্তিটি অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষেও দুষ্ট। |
আরোহ যুক্তি | থাইরয়েড গ্রন্থি বাদ দিলে বুদ্ধিহীন হয়। তাই থাইরয়েড গ্রন্থি হল বুদ্ধিহীনতার কারণ। | |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ (fallacy of mistaking a necessary condition as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে থাইরয়েড গ্রন্থির ছেদন হল বুদ্ধিহীনতার একটি আবশ্যিক শর্ত, কিন্তু কখনোই সমগ্র শর্ত নয়। থাইরয়েড গ্রন্থি ছেদন ছাড়াও বুদ্ধিহীনতার ক্ষেত্রে আরো অনেক নানাবিধ শর্ত থাকতেই পারে। কিন্তু এখানে সেগুলিকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র এই একটি শর্তকেই সমগ্র কারণরূপে বিবেচনা করা হয়েছে। এর ফলে যুক্তিটিতে [i] উক্ত দোষের উদ্ভব হয়েছে। |
43.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎ না থাকাই ট্রেন না চলার কারণ।
[II] ছোটো শিশুর মতো চারাগাছটির জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। সুতরাং মানব শিশুর মতো চারাগাছটির চিন্তাশক্তি আছে।
আরোহ যুক্তি | বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎ না থাকাই ট্রেন না চলার কারণ। | |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ (fallacy of mistaking a necessary condition as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | আরোহ যুক্তিটি একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে বৈদ্যুতিক তারে বিদ্যুৎ না থাকাকেই ট্রেন না চলার কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু এটা একটা কারণের শর্তমাত্র, কখনোই সমগ্র কারণ নয়। ট্রেন না চলার আরো অনেক শর্ত থাকতেই পারে। কিন্তু সেই সমস্ত শর্তগুলির কথা না ভেবে শুধুমাত্র একটি অপরিহার্য শর্তকে সমগ্র কারণরূপে উল্লেখ করায় যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | ছোটো শিশুর মতো চারাগাছটির জন্ম ও বৃদ্ধি আছে। সুতরাং মানব শিশুর মতো চারাগাছটির চিন্তাশক্তি আছে। | |
দোষ | মন্দ উপমার দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি মন্দ উপমা বা দুষ্ট উপমা দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে দুটি ভিন্ন জাতীয় বিষয়ের মধ্যে উপমা রচনা করা হয়েছে। উত্তম উপমা গঠনের জন্য সমজাতীয় বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য পর্যবেক্ষণ করা উচিত। কিন্তু এখানে তা না করে দুটি ভিন্ন জাতীয় বিষয়ের মধ্যে উপমা রচনা করা হয়েছে। সেকারণেই এই আরোহ যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
44. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] তরকারিতে টম্যাটো দিলে সুস্বাদু হয়, কাজেই টম্যাটো হল তরকারি সুস্বাদু হওয়ার কারণ।
[ii] আমি যত ডাক্তার দেখেছি তাদের হাতের লেখা খারাপ, তাই সব ডাক্তারের হাতের লেখা খারাপ।
আরোহ যুক্তি | তরকারিতে টম্যাটো দিলে সুস্বাদু হয়, কাজেই টম্যাটো হল তরকারি সুস্বাদু হওয়ার কারণ। | |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ (fallacy of mistaking a necessary condition as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | আরোহ যুক্তিটি একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে একটিমাত্র আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণ বলা হয়েছে। কিন্তু আমরা জানি যে, কারণ হল বিভিন্ন শর্তের সমষ্টি। সেকারণেই একটি মাত্র শর্তকে কখনোই সমগ্র কারণ বলা যায় না। একটি শর্ত কারণের একটি অংশ হলেও কখনোই সমগ্র কারণ নয়। অথচ এখানে তরকারি সুস্বাদু হওয়ার অনেক শর্তের মধ্যে শুধুমাত্র টম্যাটো দেওয়াকে সমগ্র কারণরূপে উল্লেখ করায় এই আরোহ যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | আমি যত ডাক্তার দেখেছি তাদের হাতের লেখা খারাপ, তাই সব ডাক্তারের হাতের লেখা খারাপ। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ (fallacy of illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | আরোহ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে মাত্র কয়েকটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় পাওয়া দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গঠন করা হয়েছে। এরূপ সার্বিক সিদ্ধান্তটি গঠন করার আগে আরো অনেক দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। সেগুলি না করেই তাড়াহুড়ো করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
45.নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের কারণ হিসেবে বলা হল মুন্ডসর্বস্ব রাহ্ মাঝে মাঝে সূর্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করে।
[ii] কয়েকজন অসৎ ফেরিওয়ালাকে দেখে সিদ্ধান্ত করা হল যে, সব ফেরিওয়ালা অসৎ।
আরোহ যুক্তি | সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের কারণ হিসেবে বলা হল মুণ্ডসর্বস্ব রাহু মাঝে মাঝে সূর্য ও চন্দ্রকে গ্রাস করে। | |
দোষ | অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষ (fallacy of mistaking an irrelevant condition as cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | আরোহ যুক্তিটি অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে একটি অবান্তর ঘটনাকে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ বলা হয়েছে। সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ হিসেবে মুন্ডসর্বস্ব রাহু-র বিষয়টি আদৌ বিজ্ঞানসম্মত নয় এবং তা আমাদের অভিজ্ঞতার পরিপন্থী। এটি একটি অবাস্তব কাল্পনিক ঘটনা ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ সেই অবাস্তব অবান্তর ঘটনাকেই সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের কারণ বলায় তা উত্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | কয়েকজন অসৎ ফেরিওয়ালাকে দেখে সিদ্ধান্ত করা হল যে, সব ফেরিওয়ালা অসৎ। | |
দোষ | অবৈধ সামান্যীকরণ দোষ (fallacy of illicit generalization) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি অবৈধ সামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে মাত্র কয়েকটি ব্যক্তিগতভাবে পাওয়া সদর্থক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র কয়েকজন ফেরিওয়ালাকে অসৎ দেখেই তাড়াহুড়ো করে বলা হয়েছে যে, সব ফেরিওয়ালাই অসৎ। এরূপ সামান্যীকরণ কিন্তু যথার্থ নয় বলেই যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
46. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] আকাশে ধূমকেতু আবির্ভাবের ঠিক পরই রাজার মৃত্যু হল। সুতরাং, আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাবই হল রাজার মৃত্যুর কারণ।
[ii] দুর্ভিক্ষের কারণ হল দেবতার রোষ।
আরোহ যুক্তি | আকাশে ধূমকেতু আবির্ভাবের ঠিক পরই রাজার মৃত্যু হল। সুতরাং, আকাশে ধূমকেতুর আবির্ভাবই হল রাজার মৃত্যুর কারণ। | |
দোষ | কাকতালীয় দৈাষ (fallacy of post hoc ergo propter hoc) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি কাকতালীয় দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে কার্য ও কারণ সম্বপ্নের যথার্থ ব্যাখ্যা ছাড়াই কাকতালীয়ভাবে তা গ্রহণ করা হয়েছে। আকাশে ধূমকেতু ওঠা এবং রাজার মৃত্যুর সঙ্গে কোনো সংগত ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা নেই। প্রথম ঘটনাটির পর দ্বিতীয় ঘটনাটি কাকতালীয়ভাবে ঘটে গেছে এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথমটিকে দ্বিতীয়টির কারণ বলা হয়েছে। সেকারণেই এরূপ যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | দুর্ভিক্ষের কারণ হল দেবতার রোষ। | |
দোষ | অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষ (fallacy of mistaking an irrelevant condition as cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি একটি অবান্তর বিষয়কে কারণ বলার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে যে ঘটনাটিকে কারণ রূপে উল্লেখ করা হয়েছে, সেই ঘটনাটি তথা দেবতার রোষ-এর সঙ্গে কার্য তথা দুর্ভিক্ষের প্রকৃত কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই। এক্ষেত্রে দেবতার রোষ হল একটি অবান্তর বা অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা। একেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করায় আরোহ যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
47. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] আমবাগানের আমগাছে উঠে আম পাড়তে গিয়ে মালির হুংকারে গাছ থেকে পড়ে গেলাম, আর সিদ্ধান্ত করলাম যে, মালির হুংকারই হল আমার পড়ে যাওয়ার কারণ।
[ii] বাড়ির কাজের লোককে বিতাড়িত করাতেই বাড়ির চুরিচামারি বন্ধ হল। কাজেই বলা যায় যে, বাড়ির কাজের লোকই চুরিচামারি করত।
আরোহ যুক্তি | আমবাগানের আমগাছে উঠে আম পাড়তে গিয়ে মালির হুংকারে গাছ থেকে পড়ে গেলাম, আর সিদ্ধান্ত করলাম যে, মালির হুংকারই হল আমার পড়ে যাওয়ার কারণ। | |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলে মনে করার দোষ (fallacy of mistaking a necessary condition as a cause)অথবা, প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ (fallacy of non-observation of relevant instances) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটি ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত। কারণ, এখানে একটি আবশ্যিক শর্তকে সমগ্র কারণরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু একটি শর্ত কখনোই একটি সমগ্র কারণরূপে গণ্য হতে পারে না সমগ্র কারণ হল বিভিন্ন শর্তের সমষ্টি মাত্র। অথচ একটি মাত্র শর্তকে কারণরূপে স্বীকার করার ফলে যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। আবার, উল্লেখ করা যায় যে, যুক্তিটিতে গাছ থেকে পড়ে যাওয়ার জন্য আর যেসমস্ত প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার উল্লেখ করা যায়, যেমন ভয় পেয়ে পড়ে যাওয়া, গাছের ডাল ফসকে পড়ে যাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি বলে যুক্তিটি প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক অবস্থার অপর্যবেক্ষণ দোষেও দুষ্ট। |
আরোহ যুক্তি | বাড়ির কাজের লোককে বিতাড়িত করাতেই বাড়ির চুরিচামারি বন্ধ হল। কাজেই বলা যায় যে, বাড়ির কাজের লোকই চুরিচামারি করত। | |
দোষ | একটি আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার (mistaking a necessary condition as a cause) দোষ | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহ যুক্তিটিতে একটিমাত্র আবশ্যিক শর্তকে কারণ বলার দোষ দেখা যায়। কারণ হল একাধিক শর্তের সমষ্টি একটিমাত্র শর্তকে তাই কারণ বলা যায় না। বাড়ির চুরিচামারি বন্ধ হওয়ার আরো অনেক শর্ত থাকতে পারে। কিন্তু সেগুলিকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র একটি শর্তকেই সম্পূর্ণ কারণরূপে অভিহিত করায় যুক্তিটিতে উক্ত দোষের উদ্ভব ঘটেছে। |
48. নীচের আরোহ যুক্তিগুলির দোষ বিচার করো:
[i] হেমন্তের পর শীত আসে। অতএব হেমন্ত শীতের কারণ।
[ii] একটি গোরু বাদামি রং-এর, টেবিলটিও বাদামি রং-এর। গোরুর চারটি পা আছে, টেবিলেরও চারটি পা আছে। গোরু দুধ দেয়, অতএব টেবিলও দুধ দেয়।
আরোহ যুক্তি | হেমন্তের পর শীত আসে। অতএব, হেমন্ত শীতের কারণ। | |
দোষ | সহকার্যকে কারণ মনে করার দোষ (fallacy of mistaking coeffect as a cause) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এাই আরোহ যুক্তিটি সহকার্যকে কারণ বলে মনে করার দোষে দুষ্ট। কারণ, হেমন্ত ও শীত এই দুটি হল একই কারণ তথা পৃথিবীর বার্ষিক গতি থেকে উদ্ভূত। সুতরাং, এই দুটি ঋতু সহকার্য ৰূপেই পণ্য। এই দুটির একটিকে তাই কখনো-অপরটির কারণ বা কার্য বলা যায় না। অথচ এখানে সেটাই করা হয়েছে বলে আরোহ যুক্তিটি উক্ত দোষে দুষ্ট হয়েছে। |
আরোহ যুক্তি | একটি গোরু বাদামি রং-এর, টেবিলটিও বাদামি রং-এর। গোরুর চারটি পা আছে, টেবিলেরও চারটি পা আছে। দৈ দুধ দেয়, অতএব টেবিলও দুধ দেয়। | |
দোষ | দুষ্ট বা মন্দ উপমা দোষ (fallacy of bad analogy) | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | আরোহ যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে উপমা বা সাদৃশ্য রচনা করা হয়েছে দুটি ভিন্ন জাতীয় বিষয়ের সঙ্গে। কিন্তু উপমাকে সমজাতীয় বিষয়ের মধ্যে উল্লেখ করতে হয়, কখনোই বিষমজাতীয় বিষয়ের মধ্যে নয়। অথচ এখানে দুটি বিষমজাতীয় বিষয়ের মধ্যে সাদৃশ্য বা উপমা রচনা করে এক অবান্তর উপমার বিষয়কে উল্লেখ করা হয়েছে। সেকারণেই এই আরোহ যুক্তিটি মন্দ উপমা দোষে দুষ্ট। |
49. নীচের আরোহ যুক্তিগুলি বিচার করো এবং কোনো দোষ থাকলে তা উল্লেখ করো:
[i] বদ্ধ পরিষ্কার জল ডেঙ্গির কারণ।
[ii] কুকুরেরাও মানুষের মতো প্রাণী সূতরাং কুকুরেরাও মানুষের মতো বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন।
আরোহ যুক্তি | বদ্ধ পরিষ্কার জল ডেঙ্গির কারণ | |
দোষ | অপর্যবেক্ষণমূলক দোষ অথবা, অবৈধ সামান্যীকরণের দোষ | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[i] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহী যুক্তিটি অপর্যবক্ষণমূলক দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে যে সমস্ত ক্ষেত্রে বদ্ধ পরিষ্কার জল আছে অথচ তা ডেঙ্গির কারণ নয়-সেরূপ দৃষ্টান্তগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়নি। অথচ এরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে এই ধরনের দৃষ্টান্তগুলিকেও পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। গুটিকয়েক দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করেই এক্ষেত্রে এক প্রকার সামান্যীকরণ করা হয়েছে বলে একে অবৈধ সামান্যীকরণের দোষে দুষ্ট রূপেও উল্লেখ করা যায়। |
আরোহ যুক্তি | কুকুরেরাও মানুষের মতো প্রাণী সুতরাং কুকুরেরাও মানুষের মতো বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন। | |
দোষ | মন্দ-উপমার দোষ | |
সিদ্ধান্ত | ভ্রান্ত ও দোষযুক্ত | |
[ii] | ব্যাখ্যা ও বিচার | এই আরোহী যুক্তিটি মন্দ-উপমার দোষে দুষ্ট। কারণ, এখানে মানুষের সঙ্গে কুকুরের তুলনা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো উপমা রচনার ক্ষেত্রে দুটি সমজাতীয় বিষয়ের মধ্যে উপমা করা উচিত, কোনো বিজাতীয় বিষয়ের মধ্যে উপমা করা উচিত নয়। মানুষ এবং একটি ইতর প্রাণীর মধ্যে উপমা সৃষ্টি করায় যুক্তিটি তাই এরূপ দোষে দুষ্ট হয়েছে। |