WBBSE Class 10 Life Science Chapter 5 Solution | Bengali Medium

Class 10 Life Science Solution

পরিবেশ, তার সম্পদ এবং তাদের সংরক্ষণ

1. MCQs Question Answer

1. প্রোটিন, প্রোটোপ্লাজম, নিউক্লিক অ্যাসিড, ক্লোরোফিল ইত্যাদির গঠনের একটি প্রধান উপাদান হল- 

(A) ক্যালশিয়াম 

(B) ম্যাগনেশিয়াম 

(C) নাইট্রোজেন ✔

(D) হিলিয়াম

2. নীচের কোন্টি নাইট্রোজেন চক্রের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয়?

(A) নাইট্রিফিকেশন 

(B) ইউট্রোফিকেশন ✔

(C) অ্যামোনিফিকেশন 

(D) ডিনাইট্রিফিকেশন

3. নীচের যেটি নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী ব্যাকটেরিয়া নয়, সেটি হল-

(A) রাইজোবিয়াম

(B) মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস 

(C) নস্টক 

(D) অ্যাজোটোব্যাকটর ✔

4. শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের (মটর গাছের) মূলে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়া হল- 

(A) Rhizobium sp. ✔

(B) Azotobactor sp. 

(c) Clostridium sp, 

(D) Bacillus sp. 

5. যেসব ব্যাকটেরিয়া বায়ুর মৌল নাইট্রোজেনকে, নাইট্রোজেনের বিভিন্ন যৌগ হিসেবে মাটিতে ধরে রাখতে সাহায্য করে, তাদের বলে- 

(A)  মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া 

(B) পরজীবী ব্যাকটেরিয়া 

(C) নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া ✔

(D) মৃতজীবী ব্যাকটেরিয়া

6. নাইট্রোজেন স্থিতিকারী শৈবালটি হল-

(A) ভলভক্স 

(B) স্পাইরোগাইরা 

(C) ক্ল্যামাইডোমোনাস 

(D) অ্যানাবিনা ✔

7. মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে N-{2} -এর সংবন্ধন ঘটে, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন- 

(A) জল 

(B) লেগহিমোগ্লোবিন  ✔

(C) খনিজ 

(D) মৌল অ্যামোনিয়া

৪. লেগহিমোগ্লোবিন যে ব্যাকটেরিয়ার কাজে সাহায্য করে সেটি-

(A) রাইজোবিয়াম  ✔

(B) ক্লসট্রিডিয়াম 

(C) অ্যাজোটোব্যাকটর 

(D) সিউডোমোনাস

9. লেগহিমোগ্লোবিন নাইট্রোজেন চক্রের কোন্ ধাপের সঙ্গে যুক্ত? 

(A) নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ  ✔ 

(B) নাইট্রিফিকেশন 

(C) ডিনাইট্রি-ফিকেশন 

(D) অ্যামোনিফিকেশন

10. লেগহিমোগ্লোবিন কোথায় থাকে? 

(A) শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে  ✔

(B) ছত্রাকের দেহে 

(C) সাধারণ উদ্ভিদের মূলে 

(D) ব্যাকটেরিয়ার দেহে

11. নীচের কোল্টিন্ট মাটির উর্বরতা হ্রাস করে?

(A)  নস্টক 

(B)  সিউডোমোনাস  ✔

(C) নাইট্রোব্যাকটর 

(D) রাইজোবিয়াম

12. NO₂ (নাইট্রাইট) +0₂→ NO₃ (নাইট্রেট) এই বিক্রিয়াতে সাহায্য করে-

(A)  নাইট্রোব্যাকটর  ✔

(B) রাইজোবিয়াম 

(C) নস্টক 

(D) থায়োব্যাসিলাস

13. NH3   জারণ, NO3 -এই প্রক্রিয়াটি হল- 

(A) অ্যামোনিফিকেশন

(B) ডিনাইট্রিফিকেশন 

(C) নাইট্রোজেন ফিক্সেশন

(D) নাইট্রিফিকেশন ✔

14. কোন্টি N₂ -সংবন্ধনকারী ব্যাকটেরিয়া নয়?

(A) অ্যাজোটোব্যাকটর 

(B) নস্টক ✔

(C) রাইজোবিয়াম 

(D) ক্লসট্রিডিয়াম

15. কোন্ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নাইট্রোজেনের শিল্পঘটিত স্থিতিকরণ ঘটে?

(A) হেবার পদ্ধতি ✔ 

(B) হেলমন্টস্ পদ্ধতি 

(C) রাইমার টিম্যান বিক্রিয়া

(D) ফ্রিডেল ক্রাফট্স বিক্রিয়া

16. Bacillus mycoides (ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস) হল একপ্রকার-

(A) মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া

(B) অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া ✔

(C) ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া

(D) ইউরিফাইং ব্যাকটেরিয়া

17. অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া হল-

(A) ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস ✔

(B) রাইজোবিয়াম

(C) ক্লসট্রিডিয়াম 

(D) অ্যাজোলা 

18. অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রেট উৎপাদনকে বলে- 

(A) অ্যামোনিফিকেশন

(B) ডিনাইট্রিফিকেশন 

(C) ক্যালশিফিকেশন

(D) নাইট্রিফিকেশন ✔

19. নাইট্রোজেন চক্রের নাইট্রিফিকেশন নামক ধাপটির শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্যটি হল- 

(A) মৃত জীবদেহের প্রোটিন বিয়োজিত হয়ে অ্যামোনিয়া গঠন 

(B) অ্যামোনিয়া থেকে প্রথমে নাইট্রাইট ও পরে নাইট্রেট গঠন ✔

(C) নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন গঠন

(D) নাইট্রোজেন থেকে অ্যামোনিয়া গঠন

20. নীচের কোন্ জীবাণুটি নাইট্রিফিকেশনে অংশগ্রহণ করে?

(A) নাইট্রোসোমোনাস ✔

(B) অ্যাজোটোব্যাকটর

(C) সিউডোমোনাস

(D) থায়োব্যাসিলাস

21. Pseudomonas (সিউডোমোনাস) জীবাণুটি নাইট্রোজেন চক্রের নীচের কোন্ ধাপের সাথে যুক্ত?

(A) নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ

(B) নাইট্রিফিকেশন ✔

(C) ডিনাইট্রিফিকেশন

(D) অ্যামোনিফিকেশন

22. মাটির নাইট্রেট বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় প্রথমে অ্যামোনিয়া এবং পরে মুক্ত নাইট্রোজেন গ্যাসে পরিণত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মেশে। এই প্রক্রিয়াকে বলে- 

(A) নাইট্রিফিকেশন 

(B) অ্যামোনিফিকেশন

(C) ডিনাইট্রিফিকেশন ✔

(D) সিমবায়োসিস

23. নাইট্রোজেন মোচনকারী বা ডিনাইট্রিফাইং অণুজীব হল-

(A) নাইট্রোব্যাকটর

(B) অ্যাজোটোব্যাকটর

(C) অ্যানাবিনা

(D) সিউডোমোনাস ✔

24. নাইট্রোজেন চক্রের ডিনাইট্রিফিকেশন পদ্ধতির ক্ষেত্রে কোন্টি সঠিক ধাপ? 

(A) নাইট্রাইট নাইট্রেট অ্যামোনিয়া 

(B) নাইট্রেট নাইট্রাইট  নাইট্রোজেন অ্যামোনিয়া

(C) অ্যামোনিয়া নাইট্রাইট নাইট্রেট  নাইট্রোজেন

(D) নাইট্রেট  নাইট্রাইট  অ্যামোনিয়া নাইট্রোজেন ✔

25. নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন উৎপন্ন হওয়াকে বলে-

(A) নাইট্রিফিকেশন

(B) অ্যামোনিফিকেশন 

(C) ডিনাইট্রিফিকেশন ✔

(D) সিমবায়োসিস

26. পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিয়োজক হল- 

(A) প্রাণী

(B) উদ্ভিদ 

(C) ব্যাকটেরিয়া ✔

(D) ভাইরাস

27. মানুষের ক্রিয়াকলাপে পরিবেশে নাইট্রোজেনের যে যৌগগুলির বৃদ্ধি ঘটছে, তা হল-

(A)  N2O

(B) NO

(C)  NH3

(D) সবকটি ✔

28. ওজোন গহ্বর সৃষ্টিতে দায়ী নাইট্রোজেনঘটিত যৌগ হল-

(A) N2

(B) NO ও NO2 ✔

(C) HNO3ও HNO2

(D) NH3

29. যে পদ্ধতিতে অম্লবৃষ্টি হয়, তা হল-

(A) অ্যামোনিফিকেশন 

(B) নাইট্রিফিকেশন 

(C) ডিনাইট্রিফিকেশন 

(D) অম্লীকরণ ✔

30. অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী নাইট্রোজেনের যৌগগুলি হল-

(A) NO2

(B) NO

(C) HNO3

(D) সবকটি ✔

31. নাইট্রোজেন চক্রের সঠিক ক্রমটি শনাক্ত করো- 

(A) স্থিতিকরণ ডিনাইট্রিফিকেশন  অ্যামোনিফিকেশন  নাইট্রিফিকেশন 

(B) অ্যামোনিফিকেশন নাইট্রিফিকেশন  নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ ডিনাইট্রিফিকেশন

(C) নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ → অ্যামোনিফিকেশন → নাইট্রিফিকেশন → ডিনাইট্রিফিকেশন  ✔

(D)  নাইট্রিফিকেশন → নাইট্রোজেন  স্থিতিকরণ → নাইট্রিফিকেশন → অ্যামোনিফিকেশন

32. মাটিতে আবদ্ধ নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগ ভেঙে নাইট্রোজেনকে মুক্ত করে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াটির নাম হল-

(A) নাইট্রিফিকেশন 

(B) ডিনাইট্রিফিকেশন  ✔

(C) নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ

(D) অ্যামোনিফিকেশন

2. Very Short Question Answer

1. জৈব-ভূরাসায়নিক চক্রের কাজ কী?

▶ জৈব-ভূরাসায়নিক চক্রের কাজ হল পরিবেশের প্রয়োজনীয় মৌলগুলির ভারসাম্য রক্ষা করা।

2. একটি গ্যাসের নাম লেখো যা উদ্ভিদের প্রয়োজন, কিন্তু উদ্ভিদ বায়ু থেকে গ্যাসটিকে সরাসরি গ্রহণে অক্ষম।

▶ নাইট্রোজেন গ্যাস।

3. মাটিতে নাইট্রোজেন কী অবস্থায় থাকে?

▶ মাটিতে নাইট্রোজেন নাইট্রেট ও নাইট্রাইট লবণ হিসেবে থাকে।

4. জীবদেহে নাইট্রোজেনের প্রয়োজনীয়তা কী?

▶ জীবদেহের প্রোটিন গঠনের জন্য নাইট্রোজেন একটি অপরিহার্য উপাদান।

5. দুটি পতঙ্গভুক উদ্ভিদের নাম লেখো।

▶ কলসপত্রী ও সূর্যশিশির।

6. মাটিতে নাইট্রোজেনের জীবজ আবদ্ধকরণ কী কী উপায়ে হয়?

▶ মাটিতে নাইট্রোজেনের জীবজ আবদ্ধকরণ দুটি উপায়ে হয়, যথা- স্বাধীনজীবী অণুজীব দ্বারা ও মিথোজীবী অণুজীব দ্বারা।

7. জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ পদ্ধতিতে অংশগ্রহণকারী দুটি জীবাণুর নাম লেখো।

► Azotobacter (অ্যাজোটোব্যাকটর) ও Clostridium (ক্লসট্রিডিয়াম)।

৪. নাইট্রোজেন স্থিতিকারী একটি মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়ার নাম লেখো।

►Rhizobium leguminosarum (রাইজোবিয়াম লেগুমিনোসেরাম)।

9. একটি স্বাধীনজীবী নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়ার নাম লেখো।

► Clostridium (ক্লসট্রিডিয়াম)।

10. দুটি নাইট্রোজেন স্থিতিকারী উদ্ভিদের নাম লেখো যারা শিম্বগোত্রীয় নয়।

▶ ঝাউ এবং পাইন।

11. রাইজোবিয়ামও মটরগাছের পুষ্টিগত আদান- প্রদানকারী উপাদানের নাম লেখো।

► Rhizobium (রাইজোবিয়াম) মটরকে অ্যামোনিয়াম যৌগ সরবরাহ করে বিনিময়ে উদ্ভিদটি থেকে শর্করা খাদ্যরূপে সংগ্রহ করে।

12. দুটি নীলাভ-সবুজ শৈবালের উদাহরণ দাও, যারা সরাসরি বায়ুমণ্ডল থেকে N₂ শোষণ করে? অথবা, নাইট্রোজেন স্থিতিকারী দুটি শৈবালের নাম লেখো।

► Nostoc (নস্টক) এবং Anabaena (অ্যানাবিনা)।

13. একটি নাইট্রোজেন স্থিতিকারী অ্যাকটিনোব্যাকটেরিয়ার নাম লেখো। 

► Frankia (ফ্র্যাংকিয়া)।

14. কোন্ জীব বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন গ্যাস শোষণে সক্ষম?

► Nostoc (নস্টক) ও Rhizobium (রাইজোবিয়াম)।

15. নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী উৎসেচকটির নাম লেখো।

▶ নাইট্রোজিনেজ।

16. অ্যানাবিনা কোন্ ফার্নে বসবাস করে?

► Azolla (অ্যাজোলা)।

17. নাইট্রোজেনঘটিত দুটি সারের নাম লেখো।

► ইউরিয়া [CO(NH2)2] ও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট (NH₄NO₃)।

18. কোন্ সার ব্যবহারে মাটি আম্লিক হয়ে পড়ে?

▶ ইউরিয়া।

19. নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেনের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হওয়ার পদ্ধতির নাম কী?

▶ হ্যাবার বস।

20. জীবের মৃতদেহ এবং বর্জ্য ও রেচন পদার্থের বিয়োজনে অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়াকে কী বলে?

▶ অ্যামোনিফিকেশন।

21. অ্যামোনিফাইং বা অ্যামোনিফিকেশন করে এইরকম একটি ব্যাকটেরিয়ার নাম কী?

► Bacillus mycoides (ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস)।

22. নাইট্রিফিকেশনের অন্তর্গত ধাপগুলি কী কী?

▶ নাইট্রাইটেশন এবং নাইট্রেটেশন।

23. নাইট্রিফিকেশনের অন্তর্গত কোন্ প্রক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রাইট উৎপন্ন হয়?

▶ নাইট্রাইটেশন।

24. একটি নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার নাম লেখো।

► Nitrosomonas (নাইট্রোসোমোনাস)।

25. NH3NO2 NO3 A ও B চিহ্নিত স্থানে ব্যাকটেরিয়ার নাম লেখো।

▶ A→ নাইট্রোসোমোনাস, B→ নাইট্রোব্যাকটর।

26. নাইট্রেট থেকে নাইট্রোজেন উৎপন্ন হওয়াকে কী বলে?

▶ ডিনাইট্রিফিকেশন।

27. কোন্ প্রকার ব্যাকটেরিয়া নাইট্রেটকে নাইট্রোজেনে রূপান্তরিত করে?

▶ ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া।

28. একটি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটিরিয়ার নাম লেখো।

► Thiobacillus denitrificans (থায়াব্যাসিলাস ডিনাইট্রিফিক্যানস্)।

29. নাইট্রোজেন চক্রের পরিবর্তনে সৃষ্ট দুটি পরিবেশগত সমস্যার নাম লেখো।

▶ অ্যাসিড বৃষ্টি ও গ্রিনহাউস প্রভাব।

30. মানব ক্রিয়াকলাপজনিত একটি পরিবেশগত ক্ষতি উল্লেখ করো।

▶ জীবাশ্ম জ্বালানি ও সার ব্যবহারে মুক্ত নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O) একটি গ্রিনহাউস গ্যাস যা বিশ্ব উন্নায়ন ঘটায়।

31. একটি মানব ক্রিয়াকলাপের নাম লেখো যা নাইট্রোজেন চক্রকে প্রভাবিত করে।

▶ নাইট্রোজেনঘটিত সার ব্যবহার।

3. Short Question Answer

1. জৈব-ভুরাসায়নিক চক্র কাকে বলে?

উত্তর: যে চক্রাকার পথে জীবদেহের গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় মৌলগুলি (C, H, O, N, P, S, Ca) পরিবেশ থেকে জীবদেহে এবং জীবদেহ থেকে পরিবেশে আবর্তিত হয়, তাকে জৈব-ভূরাসায়নিক চক্র বলে। প্রকৃতির জৈব- ভূরাসায়নিক চক্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল নাইট্রোজেন চক্র।

2 ব্যবহৃত হলেও পরিবেশের মৌলিক উপাদানগুলির ঘাটতি না হওয়ার কারণ কী?

উত্তর: জীব পরিবেশ থেকে অনবরত বিভিন্ন প্রকার মৌলিক উপাদান গ্রহণ করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পরিবেশে ওইসব উপাদানগুলির ঘাটতি হয় না, তার প্রধান কারণ-① জীব পরিবেশের কোনো মৌলিক উপাদানই স্থায়ীভাবে অপসারিত করে না। এ ছাড়া উপাদানগুলি অনির্দিষ্টকাল ধরে আবদ্ধ করেও রাখে না। ② জীব পরিবেশ থেকে যেসব মৌলিক উপাদান গ্রহণ করে তা রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অথবা মৃত্যুর পরে পচনের মাধ্যমে পুনরায় পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়।

3 নাইট্রোজেন সংবন্ধন বা সংযোজন বা স্থিতিকরণ কাকে বলে?

উত্তর: বায়ুর নাইট্রোজেন যে সকল পদ্ধতিতে মাটিতে মেশে এবং নাইট্রোজেনঘটিত যৌগে পরিণত হয়, সেই পদ্ধতিগুলিকে একত্রে নাইট্রোজেন সংবন্ধন বা সংযোজন বা স্থিতিকরণ বলে।

4 বজ্রপাতের সঙ্গে নাইট্রোজেন চক্রের সম্পর্ক কী?

অথবা, নাইট্রোজেনের প্রাকৃতিক আবদ্ধকরণ বলতে কী বোঝ?

অথবা, প্রাকৃতিক উপায়ে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ কীভাবে ঘটে?

উত্তর: বজ্রপাতের সময়ে বাতাসের নাইট্রোজেন গ্যাস অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO₂) গঠন করে। এই NO₂ বৃষ্টির জলে নাইট্রাস অ্যাসিড (HNO₂) বা নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) রূপে মিশে মাটিতে নেমে আসে। এভাবে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ ঘটে। N2+O2→2NO, 2NO + O2→2NO2

5 নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে কী তৈরি করে? অথবা, নাইট্রোজেন চক্রে অ্যাসিড সৃষ্টির ভূমিকা কী?

উত্তর: নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে নাইট্রাস অ্যাসিড এবং নাইট্রিক অ্যাসিড-এ পরিণত হয় ও অ্যাসিড বৃষ্টির উপাদানরূপে পৃথিবীপৃষ্ঠে নেমে আসে। এর ফলে মাটি, নদী ও সমুদ্রের অম্লীকরণ ঘটে।। 2NO2 + H2O → HNO2 + HNO3

6 জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ বলতে কী বোঝ?

উত্তর:  নীলাভ-সবুজ শৈবাল বা সায়ানোব্যাকটেরিয়া এবং কিছু বিশেষ প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া, বাতাসের নাইট্রোজেনকে বিশেষ উৎসেচক, নাইট্রোজিনেজ-এর সাহায্যে বিজারিত করে অ্যামোনিয়ায় পরিণত করে এবং প্রোটোপ্লাজমে অঙ্গীভূত করে। একে জীবজ নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণ (biological nitrogen fixation) বলে।

7 মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধিতে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা কী?

উত্তর: রাইজোবিয়াম, ক্লসট্রিডিয়াম প্রভৃতি ব্যাকটেরিয়া বায়ুর মুক্ত N₂-কে বিভিন্ন যৌগে পরিণত করে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ তথা জমির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে। মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন অণুজীবেরা বিয়োজনের মাধ্যমে জৈববস্তু (হিউমাস) গঠন করে, যা মাটির মৌলের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে ও মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে।

৪ নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা কী?

উত্তর: নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিছু ব্যাকটেরিয়া পরিবেশ থেকে মুক্ত নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে মাটিতে নাইট্রাইটরূপে আবদ্ধ করে। পরে অন্য কিছু ব্যাকটেরিয়া মাটির নাইট্রাইটকে জারিত করে নাইট্রেটে পরিণত করে। নাইট্রোজেন চক্রের অন্তিম পর্যায়ে, মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহকে বিশ্লিষ্ট করে ব্যাকটেরিয়া বিভিন্নপ্রকার মৌলিক উপাদান পরিবেশে মুক্ত করে।

9 মুক্তজীবী ডাইঅ্যাজোট্রফ বা মুক্ত নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী জীবাণুর নাম লেখো।

উত্তর: (1) অবায়ুজীবী নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী জীবাণু: মাটিতে থাকা Clostridium (ক্লস্ট্রিডিয়াম), কাদায় থাকা Methanococcus (মিথেনোকক্কাস) নামক আর্কিয়া, সমুদ্রের তলদেশে থাকা Desulfovibrio (ডিসালফোভিব্রিও)। ② বায়ুজীবী নাইট্রোজেন আবদ্ধকারী জীবাণু: Azotobacter vinelandii (অ্যাজোটোব্যাকটার ভাইনল্যানডি)। (3) অক্সিজেন উৎপাদনকারী সালোকসংশ্লেষকারী জীবাণু: এরা সালোকসংশ্লেষ করলেও নাইট্রোজেন আবদ্ধ করতে সক্ষম হয়। যেমন-Anabaena cylindrica (অ্যানাবিনা সিলিনড্রিকা), Nostoc commune (নস্টক কমিউন) প্রভৃতি নীলাভ সবুজ শৈবাল, Plectonema (প্লেকটোনিমা)।

10 পতঙ্গভুক উদ্ভিদের পাতাগুলি বিভিন্নভাবে রূপান্তরিত হয় কেন?

উত্তর: পতঙ্গভুক মাংসাশী উদ্ভিদেরা যে মাটিতে জন্মায়, সেখানে নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা যায়। নাইট্রোজেনের চাহিদা মেটানোর জন্য এরা পতঙ্গ ধরে। সেইজন্য এই উদ্ভিদের পাতাগুলি বিভিন্নভাবে রূপান্তরিত হয়। এরা প্রোটিনভঙ্গক উৎসেচকের সাহায্যে প্রাণীজ প্রোটিনকে ভেঙে সরলতর করে যা উদ্ভিদ দ্বারা শোষিত হয়। যেমন-কলসপত্রী, সূর্যশিশির প্রভৃতি।

11 লেগহিমোগ্লোবিন কী? এর গুরুত্ব কী?

অনুরূপ প্রশ্ন, লেগ হিমোগ্লোবিন কোথায় থাকে?

উত্তর: লেগহিমোগ্লোবিন: লেগহিমোগ্লোবিন হল শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী অর্বুদে উপস্থিত গোলাপি বর্ণের রঙ্গক পদার্থ, যা রাসায়ানিকভাবে হিমোগ্লোবিন সদৃশ।

গুরুত্ব: এই রঙ্গকটি অর্বুদ, ব্যাকটেরয়েড এবং তার চারাপাশের পোষক কোশের কোশপর্দার মধ্যবর্তী স্থানে থাকে। এই রঙ্গকটি হল অক্সিজেন গ্রাহক, যা মুক্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে।

12 অর্বুদ কী?

উত্তর: ছোলা, মোটর, শিম প্রভৃতি শিম্বিগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে সৃষ্ট যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুটির মতো অংশে বিভিন্ন প্রজাতির রাইজোবিয়াম নামক মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে, তাদের অর্বুদ বলে।

13 নিফ জিনস্ কী?

উত্তর: নাইট্রোজিনেজ (Nitrogenase)-এর গঠন এবং সঠিক কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য রাইজোবিয়ামে যে সকল জিনকে সক্রিয় করা হয়, তাদের সম্মিলিতভাবে ‘নিফ জিনস্’ নামে অভিহিত করা হয়।

14 অ্যামোনিফিকেশন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: অ্যামোনিফিকেশন: যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন জীবাণুর দ্বারা উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ অথবা প্রাণীর নাইট্রোজেনযুক্ত যৌগ অ্যামোনিয়ায় রূপান্তরিত হয়, তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে।

মৃত জীবজ বস্তু  অ্যামোনিফিকেশন   অ্যামোনিয়াম মূলক (NH+4)

উদাহরণ: Bacillus mycoides (ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস) এবং Micrococcous (মাইক্রোকক্কাস) প্রভৃতি অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া এই পদ্ধতি সম্পন্ন হতে সাহায্য করে।

15 নাইট্রিফিকেশন কাকে বলে?

উত্তর:  যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন জীবাণুর দ্বারা মৃত্তিকাস্থিত অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইটে ও তারপর নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়, তাকে নাইট্রিফিকেশন বলে। বিভিন্ন নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া, যেমন-Nitrosomonas (নাইট্রোসোমোনাস) এবং Nitrobacter (নাইট্রোব্যাকটর) এই পদ্ধতিটি সম্পন্ন করে।

বাঅ্যামোনিয়া (NH3) নাইট্রাইট (NO₂)  নাইট্রিফিকেশন নাইট্রেট বা অ্যামোনিয়াম মূলক (NH4)

            (NO3) 

16 নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা কী?

উত্তর:  বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ এবং বর্জ্য পদার্থে উপস্থিত নাইট্রোজেন অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয়। Nitrosomonas (নাইট্রোসোমোনাস) নামক ব্যাকটেরিয়া অ্যামোনিয়াকে জারিত করে নাইট্রাইটে পরিণত করে। পরে Nitrobacter (নাইট্রোব্যাকটর) নামক ব্যাকটেরিয়া মাটির নাইট্রাইটকে জারিত করে নাইট্রেটে পরিণত করে। এইভাবে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নাইট্রোজেন মাটিতে আবদ্ধ হয়।

17 নাইট্রিফিকেশনের জন্য দায়ী জীবাণুগুলির নাম লেখো।

উত্তর: ① অ্যামোনিয়া থেকে নাইট্রাইট তৈরি: 

 (i)  ব্যাকটেরিয়া: Nitrosomonas (নাইট্রোসোকক্কাস)।

Nitrosococcus (নাইট্রোসোকক্কাস)

(ii) আর্কিয়া: Nitrosopumilus  (নাইট্রোসোপিউমিলাস),

Nitrososphaera (নাইট্রোসোস্ফেরা)

② নাইট্রাইট থেকে নাইট্রেট তৈরি: Nitrobacteria Nitrospira (নাইট্রোস্পাইরা) নামক ব্যাকটেরিয়া।

18 ডিনাইট্রিফিকেশন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: ডিনাইট্রিফিকেশন: যে পদ্ধতিতে, জীবাণুর দ্বারা নাইট্রেট বা অন্য নাইট্রোজেন-ঘটিত যৌগ ভেঙে গিয়ে পুনরায় নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয় এবং তা পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়, তাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বলে।

নাইট্রেট (NO 3 ) ডিনাইট্রিফিকেশন মুক্ত নাইট্রোজেন (N₂)

উদাহরণ: Pseudomonas (সিউডোমোনাস), Thiobacillus (থায়োব্যাসিলাস) প্রভৃতি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া এই পদ্ধতি সম্পন্ন হতে সাহায্য করে।

19 নাইট্রোজেন চক্রের গুরুত্ব কী?

উত্তর: ① নাইট্রোজেন চক্রের মাধ্যমে পরিবেশে নাইট্রোজেনের ভারসাম্য রক্ষিত হয়। ② জীবদেহের কোশ গঠনের জন্য যে নাইট্রোজেনের প্রয়োজন হয়, তা নাইট্রোজেন চক্রের দ্বারা জীবদেহে পরিবাহিত হয়। ফলে জীবজগতের অস্তিত্ব বজায় থাকে।

20 নাইট্রোজেন চক্রকে মানুষের কোন্ ক্রিয়াকলাপ প্রভাবিত করে?

উত্তর: ① জমিতে ব্যবহৃত নাইট্রোজেন সার শিম্বজাতীয় উদ্ভিদ চাষে অর্বুদ গঠন দ্বারা মাটিতে নাইট্রোজেন মাত্রা প্রভূত বৃদ্ধি পায়। ② কয়লা, তেল প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানির দহনে মুক্ত NO2 কালক্রমে বাতাসে নাইট্রোজেন গ্যাস মুক্ত করে। ③ অটোমোবাইল নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইডগুলি অ্যাসিড বৃষ্টির মতো ক্ষতিকর ঘটনা ঘটায়।

21 মানুষের ক্রিয়াকলাপ কীভাবে নাইট্রোজেন চক্র তথা পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে?

অনুরূপ প্রশ্ন, অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের প্রভাবে পরিবেশে দুটি ক্ষতিকর পরিবর্তন সম্পের্ক লেখো।

অথবা, “মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হচ্ছে”- যথার্থতা প্রমাণ করো।

উত্তর: ① জীবাশ্ম জ্বালানি ও নাইট্রোজেন সার-জাত নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O) একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। এটি বায়ুর উন্নতা বৃদ্ধি করে বিশ্ব উন্নায়ন ঘটিয়ে থাকে। ② অটোমোবাইল- জাত নাইট্রিক অক্সাইড (NO) আলোক রাসায়নিক ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে, এটি একটি পরিবেশদূষক যা শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতিসাধন করে। ③ নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলি অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়, ফলে বাস্তুতন্ত্র, স্মৃতিসৌধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

22 মানুষের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের ফলে নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হওয়ার সঙ্গে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলির সম্পর্ক স্থাপন করো।

উত্তর: বিশ্ব উন্নায়ন ও নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হওয়া: ① কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজনাতিরিক্ত N_{2} সার প্রয়োগ করলে, ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় ডিনাইট্রিফিকেশনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে অত্যধিক মাত্রায় নাইট্রাস অক্সাইড (N_{2}O) , নাইট্রিক অক্সাইড (NO), গ্যাসীয় নাইট্রোজেন উৎপন্ন হয়ে বায়ুমণ্ডলে চলে আসে। এইভাবে বায়ুমণ্ডলীয় নাইট্রোজেন বৃদ্ধির কারণে N_{2} চক্রের সাম্যতা বিঘ্নিত হয়। N_{2}*O তথা নাইট্রাস অক্সাইড হল একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। এর বিশ্ব উন্নায়ন ক্ষমতা CO_{2} -এর থেকে প্রায় 300 গুণ বেশি। ② এ ছাড়া কৃষিতে N_{2} যুক্ত সার ব্যবহারের ফলে মিথেন গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা বিশ্ব উন্নায়নকে ত্বরান্বিত করে।

23 সবুজ সার বলতে কী বোঝ?

উত্তর:  ধঞ্চে, শন এবং ছোলা প্রভৃতি জলজাতীয় উদ্ভিদের চাষ করার পর তাদের পাতা এবং কান্ড শস্যক্ষেত্রের মাটিতে পচিয়ে যে সার তৈরি করা হয়, তা সবুজ সার বা গ্রিন ম্যানিওর নামে পরিচিত।

4. Long Question Answer

প্রশ্ন 1 একটি রেখাচিত্রের বা পর্যায়চিত্রের মাধ্যমে নাইট্রোজেন চক্রের বর্ণনা দাও।

অথবা, নাইট্রোজেন চক্রের ধাপগুলি একটি পর্যায় চিত্রের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: নাইট্রোজেন চক্র: বাতাসে নাইট্রোজেনের পরিমাণ শতকরা 78.09 ভাগ। এ ছাড়াও মাটির মধ্যে নাইট্রেট, নাইট্রাইট এবং অন্য যৌগ হিসেবে নাইট্রোজেন আবদ্ধ থাকে। প্রকৃতিতে নাইট্রোজেন চক্র যে পর্যায়গুলির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়, সেগুলি হল-নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বা আবদ্ধকরণ, মাটির নাইট্রোজেনের জীবদেহে প্রবেশ, জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ এবং নাইট্রোজেনের মুক্তি ① নাইট্রোজেন স্থিতিকরণ বা আবদ্ধকরণ: যে পদ্ধতিতে বায়ুর নাইট্রোজেন মাটিতে মেশে এবং নাইট্রোজেনঘটিত যৌগে পরিণত হয়, তাকে নাইট্রোজেন সংযোজন বা স্থিতিকরণ বা আবদ্ধকরণ বলে। এই স্থিতিকরণ প্রধানত তিনটি পদ্ধতিতে ঘটে থাকে। এগুলি হল- [i] প্রাকৃতিক আবদ্ধকরণ: বজ্রপাত ও অগ্ন্যুৎপাতের সময়ে বাতাসের নাইট্রোজেন গ্যাস অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রিক অক্সাইড (NO) গঠন করে। এই নাইট্রিক অক্সাইড অক্সিজেনের দ্বারা জারিত হয় ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড NO2) গঠন করে। নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে নাইট্রাস অ্যাসিড (HNO2) ও নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) ^ – 9 পরিণত হয় এবং তা মাটিতে নেমে আসে।

N2+ O₂ 2NO ; 2NO +  O₂ 2NO₂ ;

2NO₂ + H2O H₂O HNO₂ + 

এই দু-প্রকার অ্যাসিড মাটির ধাতব লবণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাইট্রেটল যৌগ (পটাশিয়াম নাইট্রেট, ক্যালশিয়াম নাইট্রেট প্রভৃতি) গঠন করে। [ii] জীবজ আবদ্ধকরণ: [a] বিভিন্নপ্রকার অণুজীব, যেফরে। Azotobacter (অ্যাজোটোব্যাকটর), Clostridium (ক্লসট্রিডিয়াম) প্রভৃতি, বাতাসের মুক্ত নাইট্রোজেনকে নিজদেহে আবদ্ধ করে। মৃত্যুর পরে এদের দেহের নাইট্রোজেনঘটিত যৌগগুলি মাটিতে মিশে যায়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলিকে নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া বলে। [৮] বিভিন্ন প্রকার নীলাভ-সবুজ শৈবাল সরাসরি বাতাসের নাইট্রোজেনকে আবদ্ধ করে মাটির নাইট্রোজেন যৌগের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যেমন-Anabaena (অ্যানাবিনা), Nostoc (নস্টক) ইত্যাদি। [c] মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া, যেমন-Rhizobium (রাইজোবিয়াম) ছোলা, মটর প্রভৃতি শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে অর্বুদ (nodule) গঠন করে বসবাস করে এবং বায়ু থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন শোষণ করে নানাপ্রকার নাইট্রোজেনঘটিত যৌগ উৎপাদন করে। এইসব ব্যাকটেরিয়ার মৃত্যুর পরে তাদের দেহের নাইট্রোজেনঘটিত যৌগগুলি মাটিতে মিশে যায় ও নাইট্রোজেনের আবদ্ধকরণ ঘটে। [iii] শিল্পজাত আবদ্ধকরণ: কলকারখানায় বিভিন্ন ধরনের নাইট্রোজেন-সমৃদ্ধ সার তৈরি হয়। যেমন-হ্যাবার বস (Haber-Bosch) পদ্ধতিতে 300 – 400 deg * C তাপমাত্রায় এবং 35-100 MPa চাপে (MPa = মেগাপাসকাল, চাপের মেট্রিক বা SI একক) N_{2} ও H_{2} যুক্ত হয়ে NH_{3} উৎপন্ন হয়। NH_{3} ও অন্যান্য N_{2} -যুক্ত সার প্রয়োগের ফলে মাটিতে নাইট্রোজেন সংবন্ধন ঘটে।

N_{2} + 3H_{2} * (300 – 400 deg * C)/(35 – 100MPa) * 2N*H_{3}

② মাটির নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ: উদ্ভিদ, মাটিতে আবদ্ধ নাইট্রোজেনঘটিত লবণ শোষণ করে এবং নিজদেহের চাহিদাপূরণ করে। এই নাইট্রোজেন উদ্ভিদদেহে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনরূপে অবস্থান করে। প্রাণীরা খাদ্যের মাধ্যমে তা গ্রহণ করে নিজদেহে প্রবেশ করায় এবং তা প্রাণীদেহে প্রাণীজ প্রোটিনরূপে অবস্থান করে।

(3) জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ: জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুনঃপ্রবেশ ঘটে দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে। এই পদ্ধতি দুটি হল-[i] অ্যামোনিফিকেশন: উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ এবং প্রাণীর নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থ বিভিন্ন বিয়োজক দ্বারা বিয়োজিত হয়ে মাটিতে নাইট্রোজেনঘটিত যৌগের পরিমাণ বাড়ায়। এরপর এই যৌগগুলি অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া Bacillus mycoides (ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস) ও Micrococcus (মাইক্রোকক্কাস)-র দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে যে প্রক্রিয়ায় অ্যামোনিয়ায় পরিণত হয়, তাকে অ্যামোনিফিকেশন বলে। [ii] নাইট্রিফিকেশন: যে প্রক্রিয়ায় মাটির অ্যামোনিয়া বিভিন্নপ্রকার নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বিশ্লিষ্ট ও হয়ে নাইট্রাইট ও নাইট্রেটে পরিণত হয়, তাকে নাইট্রিফিকেশন বলে। নাইট্রিফিকেশনে অংশগ্রহণকারী ব্যাকটেরিয়াগুলিকে নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে অ্যামোনিয়া বা অ্যামোনিয়াম

আয়নগুলি মাটিতে Nitrosomonas (নাইট্রোসোমোনাস) নামক

ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় নাইট্রাইট যৌগে পরিণত হয় (নাইট্রাইটেশন)।

তারপর মাটিতে বসবাসকারী Nitrobacter (নাইট্রোব্যাকটর) নামক

ব্যাকটেরিয়া নাইট্রাইট যৌগকে নাইট্রেটে পরিণত করে (নাইট্রেটেশন)।

2NH4+302→ 4NO2 + 2H+ + 2H2O;

2NO2 + O2→ 2NO

④ নাইট্রোজেনের মুক্তি বা মোচন বা ডিনাইট্রিফিকেশন: যে প্রক্রিয়ায় মৃত্তিকাস্থিত নাইট্রাইট ও নাইট্রেট যৌগ থেকে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসে, তাকে ডিনাইট্রিফিকেশন বা নাইট্রোজেন মোচন বলে। এতে সাহায্য করে Thiobacillus (থায়োব্যাসিলাস), (সিউডোমোনাস) ইত্যাদি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া। Pseudomonas

NO3 → NO2 → NO + N2O → N2↑

[Note: N₂ চক্রের প্রতিটি ধাপ পৃথক প্রশ্ন হিসেবে আসতে পারে।]

প্রশ্ন 2 নাইট্রোজেন চক্র কাকে বলে? নাইট্রোজেন চক্রের যে-কোনো তিনটি ধাপে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: নাইট্রোজেন চক্র: যে সুনির্দিষ্ট চক্রাকার পথে পরিবেশ থেকে নাইট্রোজেন জীবদেহে প্রবেশ করে ও দেহ থেকে আবার পরিবেশে ফিরে এসে পরিবেশে নাইট্রোজেনের সাম্য বজায় রাখে, তাকে নাইট্রোজেন চক্র বলে।

নাইট্রোজেন চক্রে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা: নাইট্রোজেন চক্রের বিভিন্ন ধাপে ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম।

① নাইট্রোজেনের জীবজ আবদ্ধকরণে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা: Clostridium (ক্লসট্রিডিয়াম), Azotobacter (অ্যাজোটোব্যাকটর) প্রভৃতি স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়া বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেনকে আবদ্ধ করে, নাইট্রোজেনঘটিত যৌগ গঠন করে।

② জীবদেহ থেকে নাইট্রোজেনের মাটিতে পুন:  প্রবেশে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা: উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃতদেহ অথবা প্রাণীর নাইট্রোজেনযুক্ত রেচন পদার্থগুলি অ্যামোনিফিকেশন নামক প্রক্রিয়ার দ্বারা, Bacillus mycoides (ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস) প্রভৃতি অ্যামোনিফাইং

ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় অ্যামোনিয়াতে পরিণত হয়। মাটির অ্যামোনিয়া আবার নাইট্রিফিকেশন নামক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্লিষ্ট হয়ে নাইট্রাইট ও নাইট্রেটে পরিণত হয়। নাইট্রিফিকেশনে অংশগ্রহণকারী ব্যাকটেরিয়াগুলিকে নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া বলে। এই প্রক্রিয়ায় প্রথমে অ্যামোনিয়া বা অ্যামোনিয়াম আয়নগুলি মাটিতে Nitrosomonas (নাইট্রোসোমোনাস) নামক ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় নাইট্রাইট যৌগে পরিণত হয় (নাইট্রাইটেশন)। তারপর মাটিতে বসবাসকারী Nitrobacter (নাইট্রোব্যাকটর) নামক ব্যাকটেরিয়া নাইট্রাইট যৌগকে নাইট্রেটে পরিণত করে (নাইট্রেটেশন)।

2NH+30₂→ 2NO₂ + 4H+ + 2H₂ O; 2NO₂ + O2→2NO3

③ নাইট্রোজেনের মুক্তি বা ডিনাইট্রিফিকেশনে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা: ডিনাইট্রিফিকেশন নামক আরেকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটির নাইট্রাইট ও নাইট্রেট যৌগ থেকে Pseudomonas (সিউডোমোনাস), Thiobacillus (থায়োব্যাসিলাস) প্রভৃতি নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়ার ক্রিয়ায় নাইট্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। NO3→ NO2NO + N2O→N2 ↑

প্রশ্ন 3 নাইট্রোজেন চক্রে, বায়ুর N₂ অণুজীব দ্বারা কীভাবে আবদ্ধ হয় তা আলোচনা করো।

উত্তর: বায়ুর নাইট্রোজেন অণুজীব দ্বারা আবদ্ধকরণ: কিছুকিছু অণুজীব বায়ুর নাইট্রোজেনকে, নাইট্রোজেনঘটিত যৌগে রূপান্তরিত করে মাটিতে আবদ্ধ করে। অণুজীব দ্বারা নাইট্রোজেন স্থিতিকরণকে জীবজ আবদ্ধকরণ বলে। দুই ধরনের অণুজীব দ্বারা এই পদ্ধতিটি সম্পন্ন হয়। এখানে সেগুলি আলোচনা করা হল।

① স্বাধীনজীবী অণুজীব দ্বারা আবদ্ধকরণ: কিছু স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়া, যেমন-Clostridium (ক্লসট্রিডিয়াম), Azotobacter (অ্যাজোটোব্যাকটর) প্রভৃতি ও Nostoc (নস্টক), Anabaena (অ্যানাবিনা) প্রভৃতি সায়ানোব্যাকটেরিয়া (নীলাভ-সবুজ শৈবাল) বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে আবদ্ধ করে নাইট্রোজেন- ঘটিত যৌগ গঠন করে। এদের মৃত্যুর পরে নাইট্রোজেনঘটিত যৌগগুলি মাটিতে মিশে যায়।

② মিথোজীবী অণুজীব দ্বারা আবদ্ধকরণ: ছোলা, মশুর, সিম প্রভৃতি শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে যে অর্বুদ বা নডিউল থাকে, তাতে Rhizobium (রাইজোবিয়াম) নামক ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে। এই ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন শোষণ করে, তার কিছুটা ভাগ আশ্রয়দাতা উদ্ভিদকে সরবরাহ করে তাকে সাহায্য করে ও বাকি অংশ নিজের দেহে সঞ্চিত রেখে পরবর্তীকালে ব্যবহার করে। ব্যাকটেরিয়া ও উদ্ভিদটির মৃত্যুর পরে তাদের দেহের নাইট্রোজেন যৌগ মাটিতে মিশে যায়।

প্রশ্ন 4 মানব ক্রিয়াকলাপ কীভাবে নাইট্রোজেন চক্রকে প্রভাবিত করে এবং মানব ক্রিয়াকলাপে মুক্ত অধিক নাইট্রোজেনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করো।

অংশ প্রশ্ন, নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হওয়ার ফলে যেসব ঘটনা ঘটছে তার যে-কোনো প্রধান তিনটি ঘটনা ব্যাখ্যা করো।অংশ প্রশ্ন, “মানুষের ক্রিয়াকলাপের ফলে নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হচ্ছে”-দুটি ঘটনা উল্লেখ করে এর যথার্থতা প্রমাণ করো।

অথবা, ‘মানব ক্রিয়াকলাপের ফলে নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হচ্ছে’-ব্যাখ্যা করো। [

উত্তর: নাইট্রোজেন চক্রে প্রভাব সৃষ্টিকারী মানব ক্রিয়াকলাপ

① নাইট্রোজেন সারের ব্যবহার: জমির ফসল বৃদ্ধির জন্য জমিতে নাইট্রোজেন (নাইট্রেট, N-P-K সার প্রভৃতি) সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে পরিবেশে N₂O, NO₂ প্রভৃতি গ্যাসগুলির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

② নাইট্রোজেন স্থিতিকারী উদ্ভিদ চাষ: শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদ, যেমন- বিন, মটর, ডাল, বাদাম, ছোলা, রাজমা, সয়াবিন প্রভৃতি কৃষিজ উদ্ভিদগুলি প্রোটিনের জোগানদার বলে তাদের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বায়ুর নাইট্রোজেন অধিকমাত্রায় মাটিতে আবদ্ধ হচ্ছে।

③ জীবাশ্ম জ্বালানির দহন: খনিজ তেল, কয়লার দহনে নাইট্রিক অক্সাইড (NO), নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O) ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO₂) গ্যাসের মুক্তি ঘটে। ফলে পরিবেশে নাইট্রোজেনের জোগান বৃদ্ধি পায়।

মানব ক্রিয়াকলাপে মুক্ত অধিক নাইট্রোজেনের ক্ষতিকর প্রভাব

অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের প্রভাবে পরিবেশের প্রদত্ত ক্ষতিকর পরিবর্তনগুলি ঘটে থাকে।

① বিশ্ব উন্নায়ন: নাইট্রাস অক্সাইড গ্যাসটি তাপশোষী গ্রিনহাউস গ্যাস বা সূর্যালোকের প্রতিফলনে সৃষ্ট অবলোহিত আলো বা উত্তাপ শোষণ করে গ্রিনহাউস প্রভাব তথা বিশ্ব উয়ায়ন ঘটায়।

② আলোক-রাসায়নিক ধোঁয়াশা বা ফোটোকেমিকাল স্মগ: পেট্রোলিয়াম দহনজাত নাইট্রিক অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন ও আলোকের উপস্থিতিতে PAN (পারঅক্সি-অ্যাসিটাইল নাইট্রেট) উৎপন্ন করে যা আলোক- রাসায়নিক ধোঁয়াশা উৎপন্ন করে। এটি দৃশ্যদূষণ ও শ্বাসনালীর প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি সমস্যা সৃষ্টি করে।

③ অম্লীকরণ: নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলি বৃষ্টির জলের সঙ্গে বিক্রিয়ায় নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে, যা অম্লবৃষ্টির অন্যতম উপাদান। অম্লবৃষ্টি জলজ জীব ও উদ্ভিদ ধ্বংস করে নদী, হ্রদ, পুকুর প্রভৃতির বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য বিনষ্ট করে। এ ছাড়া অম্লবৃষ্টির প্রভাবে বনজ সম্পদের বিনাশ ঘটে, স্থাপত্য ও ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রশ্ন 5 শব্দচিত্রের মাধ্যমে নাইট্রোজেন চক্রটি বর্ণনা করো। নাইট্রোজেন চক্রটি ব্যাহত হলে যে যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, তার দুটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: প্রথম অংশের উত্তরের জন্য রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরের । নং দ্যাখো। দ্বিতীয় অংশের উত্তরের জন্য রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরের 4 নং-এর দ্বিতীয় অংশ দ্যাখো।

5. Fill in The Blanks

1. পতঙ্গের দেহ থেকে নাইট্রোজেন ঘটিত যৌগ সংগ্রহ করে কলসপত্রী ও সূর্যশিশির।

2. বায়ুর নাইট্রোজেন যে পদ্ধতিতে মাটিতে আবদ্ধ হয়, তাকে নাইট্রোজেনের আবদ্ধকরণ বলা হয়।

3. বজ্রপাতের সময়ে নাইট্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় নাইট্রিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়।

4. অ্যাজোটোব্যাকটর হল একটি স্বাধীনজীবী নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া।

5. অ্যানাবিনা হল একপ্রকার সায়ানোব্যাকটেরিয়া

6. মটর, ছোলা, বিন ইত্যাদি হল শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদ

7. হ্যাবার বস পদ্ধতিতে নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেনের বিক্রিয়ায় অ্যামোনিয়া উৎপন্ন হয়।

৪. নাইট্রোব্যাকটর একটি নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া।

9. মাটির অ্যামোনিয়া, নাইট্রাইট এবং পরে নাইট্রেটে পরিণত হয় নাইট্রিফিকেশন পদ্ধতিতে।

10. একটি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া হল সিউডোমোনাস

11. ডিনাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলে যে গ্যাসটি উৎপন্ন হয় তা হল নাইট্রোজেন

12. যানবাহনের ধোঁয়ায় নাইট্রোজেনঘটিত প্রধান যৌগ হল নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO₂)

13. নাইট্রিক অক্সাইড একটি প্রাথমিক দূষক যা অম্লবৃষ্টি সৃষ্টিতে সাহায্য করে।

14. নাইট্রোজেন চক্রের নাইট্রিফিকেশন পর্যায়ে অ্যামোনিয়া কতকগুলি ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে নাইট্রাইট এবং নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়।

6. True And False

1. বাতাসে নাইট্রোজেনের পরিমাণ প্রায় 28.09%।

> মিথ্যা [সূত্র-বাতাসে নাইট্রোজেনের পরিমাণ প্রায় 78%]

2. ক্লসট্রিডিয়াম হল স্বাধীনজীবী নাইট্রোজেন স্থিতিকারী ব্যাকটেরিয়া।

সত্য [সূত্র-এরা বায়ুর N₂ আবদ্ধ করে থাকে।]

3. একটি মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া হল অ্যানাবিনা।

▶ মিথ্যা [সূত্র-রাইজোবিয়াম, ব্র্যাডিরাইজোবিয়াম প্রভৃতি হল মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া। অ্যানাবিনা হল মিথোজীবী নীলাভ-সবুজ শৈবাল (অ্যাজোলা শ্যাওলার সঙ্গে মিথোজীবী)।]

4. বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে শোষণ করতে পারে নস্টক।

▶ সত্য [সূত্র-সায়ানোব্যাকটেরিয়া, স্বাধীনজীবী ব্যাকটেরিয়া ও মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে শোষণ করতে পারে এবং নস্টক একটি সায়ানোব্যাকটেরিয়া।]

5. শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলের অর্বুদে অ্যাজোটোব্যাকটর নামক মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া বাস করে।

▶ মিথ্যা [সূত্র-শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদের মূলে রাইজোবিয়াম নামক মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া বাস করে।]

6. নাইট্রোজেনের প্রাকৃতিক আবদ্ধকরণের একটি প্রক্রিয়া হল হ্যাবার বস পদ্ধতি।

▶ মিথ্যা [সূত্র-এটি শিল্পজাত নাইট্রোজেন আবদ্ধকরণের পদ্ধতি।]

7. অ্যামোনিফিকেশন হল একপ্রকার মিনেরালাইজেশন পদ্ধতি।

▶ সত্য [সূত্র-অ্যামোনিফিকেশন পদ্ধতিতে পরিবেশে খনিজ পদার্থগুলির মুক্তি ঘটে বলে, একে মিনেরালাইজেশন পদ্ধতি বলে।]

৪. মাটির নাইট্রোজেনঘটিত যৌগ থেকে গ্যাসীয় নাইট্রোজেনকে মুক্ত করে অ্যাজোটোব্যাকটর।

▶ মিথ্যা [সূত্র-এই অণুজীবটি মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধ করে। ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়াগুলি মাটির নাইট্রোজেনঘটিত যৌগকে মুক্ত নাইট্রোজেনে পরিণত করে, যেমন- Thiobacillus denitrifican (থায়োব্যাসিলাস ডিনাইট্রিফিক্যান্স)।]

9. নাইট্রোব্যাকটর একটি ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া।

▶ মিথ্যা [সূত্র-এটি নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া, ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া হল Pseudomonas denitr ficans (সিউডোমোনাস ডিনাইট্রিফিক্যান্স)।]

10. নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলি অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়।

▶ সত্য [সূত্র-এগুলি HNO, উৎপন্ন করে যা বৃষ্টির সঙ্গে মাটিতে নেমে আসে।]

——————————————————————————————————————–

পরিবেশদূষণ

1. MCQs Question Answer

1. প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাসটি হল- 

(A) অক্সিজেন 

(B) ওজোন

(C) কার্বন ডাইঅক্সাইড ✔

(D) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন

2. গ্রিনহাউস গ্যাস নয়- 

(A) মিথেন

(B) অক্সিজেন ✔

(C) কার্বন ডাইঅক্সাইড

(D) নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড

3. কোল্টিন্ট শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস?

(A) O2

(B) N2

(C) N2O ✔

(D) NH3

4. বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইডের স্বাভাবিক মাত্রা হল-

(A) 0.1%

(B) 0.01%

(C) 0.03% ✔

(D) 0.3%

5. রেফ্রিজারেশনে ও এয়ারকন্ডিশন শিল্প থেকে উদ্ভূত বায়ুদূষক হল-

(A) N2O

(B) SO2

(C) CFC

(D) H2O2

6. অ্যারোসলের ব্যাস হয়-

(A) 1 মাইক্রনের কম  ✔

(B) 1-5 মাইক্রন

(C) 5-15 মাইক্রন

(D) 15 মাইক্রনের বেশি

7. বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তরটি অবস্থিত– 

(A) ট্রোপোস্ফিয়ারে

(B) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ✔

(C) এক্সোস্ফিয়ারে 

(D) মেসোস্ফিয়ারে

৪. ওজোন স্তরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে যে গ্যাসটি, সেটি হল-

(A) কার্বন ডাইঅক্সাইড

(B) পারঅক্সি-অ্যাসিটাইল নাইট্রেট

(C) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ✔

(D) কার্বন মনোক্সাইড

9.বায়ুতে সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাসের প্রধান উৎস হল-

(A) তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র  ✔

(B) জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র 

(C) পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

(D) রাসায়নিক শিল্প

10. উদ্ভিদের যে অংশ সাধারণত বায়ুদূষণ ঘটায়, সেটি হল- 

(A) ফুল

(B) ফল 

(C) পাতা 

(D) পরাগরেণু ✔

11. ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়- 

(A) ধোঁয়ার সঙ্গে ধুলো মিশে 

(B) ধোঁয়ার সঙ্গে জলীয় বাষ্প মিশে 

(C) ধোঁয়ার সঙ্গে কুয়াশা মিশে  ✔

(D) ধোঁয়ার সঙ্গে অম্ল মিশে

12. PAN-এর পুরো নাম হল-

(A) প্যারা অ্যাসিটাইল নাইট্রেট

(B) পারঅক্সি-অ্যাসিটাইল নাইট্রেট ✔

(C) পারঅক্সি-অ্যাসিড নাইট্রেট

(D) প্যারা অ্যাসিডিক নাইট্রোজেন

13. CFC গ্যাস নির্গত হয়-

(A) তৈল শোধনাগার থেকে 

(B) ফ্রিজ তৈরির কারখানা থেকে  ✔

(C) যানবাহনের ধোঁয়া থেকে 

(D) ধোঁয়াশা থেকে

14. ফোমের গদি তৈরির কারখানা থেকে নির্গত হয়-

(A) PAN 

(B) সিসা

(C) CFC ✔

(D) NO2

15. PAN, SO3, HNO-এগুলি হল-

(A) প্রাথমিক বায়ুদূষক পদার্থ

(B) গৌণ বায়ুদূষক পদার্থ  ✔

(C) আংশিক বায়ুদূষক পদার্থ 

(D) বায়ুদূষক নয়

16. CO, SO₂ এবং NO হল- 

(A) প্রাথমিক দূষণকারী পদার্থ

(B) গৌণ দূষণকারী পদার্থ 

(C) প্রগৌণ দূষণকারী পদার্থ  ✔

(D) এগুলির কোনোটিই নয়

17. H2O2, PAN এবং HNO3 হল– 

(A) প্রাথমিক দূষণকারী পদার্থ 

(B) গৌণ দূষণকারী পদার্থ  ✔

(C) প্রগৌণ দূষণকারী পদার্থ 

(D) কোনোটিই নয়

18. প্রকৃতিতে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার সবচেয়ে বড়ো উৎস হল- 

(A) জলাজমিতে থাকা অণুজীবদের অবাত শ্বসন  ✔

(B) আগ্নেয়গিরির উদ্গিরন 

(C) উয় প্রস্রবণে ব্যাকটেরিয়ার শটন

(D) সাইক্লোন

19. SPM দ্বারা সাধারণত যে প্রকার দূষণ ঘটে- 

(A) শব্দদূষণ

(B) মৃত্তিকা দূষণ 

(C) জলদূষণ

(D) বায়ুদূষণ ✔

20. SPM-এর একটি উদাহরণ হল-

(A) সিসা 

(B) পরাগরেণু  ✔

(C) DDT

(D) প্লাস্টিক

2. Very Short Question Answer

1. বায়ুদূষণের প্রধান কারণ কী?

বায়ু সবচেয়ে বেশি দূষিত হয় গাড়ির ধোঁয়া ও রাসায়নিক শিল্পকেন্দ্র থেকে নির্গত ধোঁয়ার দ্বারা।

2. গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রধান ‘এফেক্ট’ কী?

বিশ্ব উন্নায়ন বা গ্লোবাল ওয়ামিং।

3. সর্বাধিক গ্রিনহাউস এফেক্ট সৃষ্টি করে কোন্ উপাদান?

জলীয় বাষ্প (30-70%)।

4. একটি জৈব গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখো।

মিথেন (CH4)।

5. একটি কৃত্রিম গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখো।

ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC)।

6. SPM-এর একটি উদাহরণ দাও। [

তেলের ধোঁয়া।

7. কোন্ মানব সৃষ্ট কারণে CO₂ -এর মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে?

জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, সিমেন্ট উৎপাদন এবং ক্রান্তীয় বনভূমি বিনাশের কারণে CO₂ -এর মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৪. বায়ুদূষকরূপে হাইড্রোকার্বনের উৎস কী?

বায়ুদূষকরূপে হাইড্রোকার্বনের উৎস হল-জীবাশ্ম জ্বালানির দহন ও কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া।

9. ওজোন স্তর বিনাশের কারণ কী?

ওজোন স্তর বিনাশের কারণ ওজোনবিনাশী ক্লোরোফ্লুরোকার্বন নির্গমন।

10. PANকী?

অনুরূপ প্রশ্ন, PAN-এর সম্পূর্ণ নাম লেখো।

PAN-এর সম্পূর্ণ নাম পারক্সি-অ্যাসিটাইল নাইট্রেট। এটি একটি গৌণ দূষক যা শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

11. তৈল শোধনাগার থেকে অসম্পূর্ণ দহনের ফলে উদ্ভূত কণাকে কী বলে?

পেট্রোলিয়াম পেটকোক কণা।

12. SPM-এর সম্পূর্ণ নাম কী?

সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার।

13. বাতাসে ভাসমান বস্তুকণা (SPM) মানুষের শরীরের শ্বাসতন্ত্রে কী প্রভাব ফেলে?

বাতাসে ভাসমান বস্তুকণা মানুষের শরীরে শ্বাসতন্ত্রের জ্বালা ও শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে।

14. মেট্রো শহরগুলিতে বায়ুদূষণের মূল কারণ কী?

মেট্রো শহরগুলিতে বায়ুদূষণের মূল কারণ হল-মোটরগাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া।

15. বায়ুদূষণ নির্দেশকের নাম লেখো।

লাইকেন।

16. ধূমপানের ফলে নির্গত ধোঁয়ায় উপস্থিত ক্ষতিকারক একটি পদার্থের নাম লেখো।

ক্লোরোবেঞ্জিন।

17. COPD কথাটির সম্পূর্ণ নাম কী?

ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ।

18. বায়ুদূষণের ফলে, কয়লাখনির শ্রমিকদের মধ্যে কী রোগ দেখা যায়?

ব্ল‍্যাক লাং।

19. ভারতে অবস্থিত দুটি সৌধের নাম লেখো যেখানে অম্লবৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়।

তাজমহল (আগ্রা) ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল (কলকাতা) হল ভারতে অবস্থিত এমন দুটি সৌধ সেখানে অম্লবৃষ্টির ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়।

20. স্টোন লেপ্রসি কী।

অম্লবৃষ্টির প্রভাবে মার্বেল (CaCO3) নির্মিত স্থাপত্যের উজ্জ্বলতা ম্লান হয়। এ ছাড়া পাথর ক্ষয়ে সৌন্দর্য্যহানি ঘটে। একে স্টোন লেপ্রসি বলে।

21. অম্লবৃষ্টিতে কোন্ অ্যাসিড সবচেয়ে বেশি থাকে?

সালফিউরিক অ্যাসিড।

22. ফ্লাই অ্যাশ-এর একটি উৎসের নাম লেখো।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

23. পৃথিবীর কত শতাংশ মিষ্টি জল?

3%1।

24. মানবসৃষ্ট কারণে জলাশয়ে শৈবাল বৃদ্ধির ঘটনাকে কী বলে?

কালচারাল ইউট্রোফিকেশন।

25. জলদূষণ বাড়তে থাকার দরুণ, অবশ্যম্ভাবী ফল হিসেবে কোন্ গ্যাসটির অভাব দেখা দেবে?

জলদূষণ বাড়তে থাকার দরুণ জলজ প্রাণীর জন্য জলে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেবে।

26. ইউট্রোফিকেশনে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রার কী পরিবর্তন ঘটে?

ইউট্রোফিকেশনের সময়ে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়।

27. শৈবাল দ্বারা উৎপাদিত দুটি ক্ষতিকর টক্সিনের নাম লেখো যা জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়।

নিউরোটক্সিন ও হেপাটোটক্সিন।

28. BOD-এর পুরো নাম লেখো।

বায়োলজিকাল অক্সিজেন ডিমান্ড।

29. জলে ডিটারজেন্ট মিশলে কোন্ প্রকার জীবের দ্রুত বংশবৃদ্ধি ঘটে?

শৈবাল।

30. বাস্তুতন্ত্রে একটি পুষ্টিস্তরে দূষক সঞ্চয়কে কী বলে?

জৈবসঞ্চয়ন।

31. কোন্ প্রাণীকলায় দূষক সঞ্চয় ঘটে?

অ্যাডিপোজ কলা।

32. DDT-এর সম্পূর্ণ নাম লেখো।

ডাইক্লোরোডাইফিনাইলট্রাইক্লোরোইথেন।

33. ইউট্রোফিকেশনের জন্য দায়ী দুই ধরনের সারের নাম লেখো।

ইউট্রোফিকেশনের জন্য দায়ী দুই ধরনের সার হল-ফসফেটজাতীয় সার ও নাইট্রেটজাতীয় সার।

34. জলে উপস্থিত কয়েকটি অদ্রবীভূত জৈবদূষকের নাম লেখো।

জলে উপস্থিত কয়েকটি অদ্রবীভূত জৈবদূষকের নাম-শুকনো পাতা, শৈবাল, পাট এবং ব্যাকটেরিয়া।

35. সিউয়েজ কী?

গৃহস্থালির কাজে ব্যবহারের পরে উদ্ভূত এবং পৌর নির্গমনে নিষ্কাশিত বর্জ্য- সমূহকে সিউয়েজ বলে।

36. জলবাহিত, ভাইরাসঘটিত দুটি রোগের নাম লেখো।

অনুরূপ প্রশ্ন, জলদূষণ-জনিত দুটি রোগের নাম লেখো।

হেপাটাইটিস-এ এবং পোলিওমায়েলাইটিস বা পোলিও।

37. জলবাহিত, ব্যাকটেরিয়াঘটিত দুটি রোগের নাম লেখো।

কলেরা এবং রক্ত-আমাশা।

38. জলবাহিত, প্রোটোজোয়াঘটিত দুটি রোগের নাম লেখো।

আমাশয় এবং জিয়ার্ডিয়াসিস।

39. জলবাহিত, কৃমিজাতীয় দুটি রোগের নাম লেখো।

টিনিয়াসিস, অ্যাসক্যারিয়াসিস।

40. আর্সেনিক দূষণ কোন্ জাতীয় দূষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

আর্সেনিক দূষণ জলদূষণের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

41. কত ফুট গভীরতার নলকূপগুলিতে আর্সেনিক থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে?

500-600 ফুট।

42. সিসার দূষণের ফলে হয়, এমন একটি রোগের নাম লেখো।

ডিসলেক্সিয়া।

43. জলে ক্যাডমিয়াম দূষণের ফলে কোন্ রোগ দেখা দেয়?

ইটাই-ইটাই।

44. পারদ দূষণের ফলে সৃষ্ট রোগের নাম লেখো।

মিনামাটা।

45. মানুষের দেহ থেকে নির্গত কোন্ কোন্ জীব মাটির দূষণ ঘটায়?

গোলকৃমি, হুক কৃমি প্রভৃতি।

46. জমিতে অতিরিক্ত হারে নাইট্রোজেনঘটিত সার ব্যবহার করলে মাটিতে কীসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়?

জমিতে অতিরিক্ত হারে নাইট্রোজেনঘটিত সার ব্যবহার করলে, মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পায়।

47. অত্যধিক হারে জলসেচ জমিতে কী প্রভাব ফেলে?

অত্যধিক হারে জলসেচ জমিকে লবণাক্ত করে তোলে।

48. একটি ইউডেফিক প্যাথোজেনের নাম লেখো।

অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু Bacillus anthracis (ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস)।

49. মানুষের শ্রুতিগ্রাহক অঙ্গটির নাম কী?

অর্গান অফ কর্টি।

50. শব্দদূষণের ফলে মানব হৃৎপিণ্ডে কী প্রভাব দেখা যায়?

শব্দদূষণের ফলে আমাদের মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, হৃদ্গতি বৃদ্ধি প্রভৃতি রোগ ঘটার সম্ভাবনা বাড়ে।

51. অ্যাকাউস্টিক ট্রমা বলতে কী বোঝ?

অতি উচ্চপ্রাবল্যের শব্দ আচম্বিতে শুনলে অন্তঃকর্ণের কক্লিয়ার স্থায়ীভাবে শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হওয়াকে অ্যাকাউস্টিক ট্রমা বলে।

52. ভারতে গ্রহণযোগ্য শব্দের মান দিনের বেলায় কত?

ভারতে গ্রহণযোগ্য শব্দের মান দিনের বেলায় 65 ডেসিবেল (dB)।

53. শব্দের প্রাবল্য বা শব্দদূষণ কোন্ এককে পরিমাপ করা যায়?

ডেসিবেল (dB)।

54. কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্ধারিত মান অনুযায়ী যানবাহনজনিত শব্দদূষণ মাত্রা কত হওয়া উচিত?

কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্ধারিত মান অনুযায়ী যানবাহনজনিত শব্দদূষণ মাত্রা 70-80 dB হওয়া উচিত।

55. শব্দের মাত্রা কত হলে সিস্টোলিক রক্তচাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়?

শব্দের মাত্রা 90 dB-র ঊর্ধ্বে হলে সিস্টোলিক রক্তচাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

56. শব্দের মাত্রা কত হলে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের বধিরতা দেখা যায়?

শব্দের মাত্রা 85 dB-এর ঊর্ধ্বে হলে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীদের বধিরতা দেখা যায়।

57. NIHL-এর সম্পূর্ণ নাম লেখো।

নয়েস ইনডিউস্ড হিয়ারিং লস।

58. শব্দদূষণ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমাদের কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার?

শব্দদূষণ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য কানে ইয়ার প্লাগ, ইয়ারমাফ ইত্যাদি ব্যবহার করা দরকার।

59. CPCB-এর পুরো নাম লেখো।

► CPCB-এর পুরো নাম হল Central Pollution Control Board।

3. Short Question Answer

1. পরিবেশদূষণ কাকে বলে?

উত্তর:  পরিবেশে যখন প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের অস্তিত্বের পক্ষে ক্ষতিকর বস্তুর উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়, সেই অবস্থাকে পরিবেশদূষণ বলে।

2. দূষক কাকে বলে?

উত্তর: যে সকল পদার্থের উপস্থিতি পরিবেশে অবাঞ্ছিত পরিবর্তন নিয়ে আসে এবং যার ফলে সমগ্র জীবজগৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাকে দূষক বলে। যেমন-ধুলো-বালি, ময়লা, আবর্জনা, CO2, NO2, SO2, সিসা, পারদ ইত্যাদি।

3. বাস্তুবিজ্ঞানী ওডাম পরিবেশের দূষণকারী পদার্থকে কত ভাগে ভাগ করেছেন ও কী কী?

উত্তর: বাস্তুবিজ্ঞানী ওডাম পরিবেশের দূষণকারী পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন, যথা-① জৈব-অভঙ্গুর দূষক ও ② জৈব ভঙ্গুর দূষক।

4. জৈব-অভঙ্গুর দূষক বলতে কী বোঝ?

উত্তর: যে জটিল দূষণকারী পদার্থগুলি সহজে সরল পদার্থে রূপান্তরিত না হওয়ার ফলে পরিবেশে জমা হতে থাকে ও জৈব-রাসায়নিক চক্রে আবর্তিত হতে থাকে, তাদের জৈব-অভঙ্গুর দূষক বলে। যেমন-DDT, পলিথিন ইত্যাদি।

5. জৈব ভঙ্গুর দূষক কী?

উত্তর: যে জটিল দূষণকারী পদার্থগুলি ব্যাকটেরিয়া, অণুজীব প্রভৃতি দ্বারা বিয়োজিত হয়ে সরল পদার্থে পরিণত হয়, তাকে জৈব ভঙ্গুর দূষক বলে। যেমন- গৃহস্থালির বর্জ্য, আবর্জনা ইত্যাদি।

6. দূষণের প্রকারভেদগুলি কী কী?

উত্তর: পরিবেশের উপাদান অনুযায়ী দূষণ প্রধানত চারপ্রকার, যথা- বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মৃত্তিকা দূষণ ও শব্দদূষণ।

7. প্রাকৃতিক বায়ুদূষক কাকে বলে?

উত্তর: প্রাকৃতিক উৎস থেকে যেসব দূষক পদার্থ উৎপন্ন হয়ে বায়ুকে দূষিত করে, তাদের প্রাকৃতিক বায়ুদূষক বলে। যেমন-ফুলের রেণু, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, জলাভূমির মিথেন গ্যাস ইত্যাদি।

৪. মনুষ্যসৃষ্ট বা অ্যানথ্রোপোজেনিক বায়ুদূষক কাকে বলে?

উত্তর:  মানুষের কার্যকলাপের ফলে সৃষ্ট বর্জ্য পদার্থ থেকে উৎপন্ন দূষক পদার্থ যা বায়ুকে দূষিত করে, তাকে মনুষ্যসৃষ্ট বা অ্যানথ্রো- পোজেনিক বায়ুদূষক বলে। যেমন- কারখানা থেকে নির্গত কয়লার ধোঁয়া।

9. ‘বিলাসবহুল ও আরামদায়ক জীবনযাত্রা বায়ুদূষণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ’-যুক্তিসহ উক্তিটি সমর্থন করো।

উত্তর: বিলাসবহুল ও আরামদায়ক জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত কয়েকটি সামগ্রী হল-চারচাকা গাড়ি, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার মেশিন, এরোপ্লেন ইত্যাদি। চার চাকার গাড়িতে যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করা হয়, তার থেকে বিভিন্ন হাইড্রোকার্বন ও কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়। ② আবার, রেফ্রিজারেশন ও এয়ারকন্ডিশন শিল্পে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন ব্যবহার করা হয়। ③ এরোপ্লেন থেকে নাইড্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড ও④ অন্যান্য শিল্প থেকে CO2, CO, NO, NO₂, H₂S ইত্যাদি। এই গ্যাসগুলি যখন বায়ুমণ্ডলে মেশে, তখন খুবই বায়ুদূষণ ঘটে। তাই বলা যায়- বিলাসবহুল ও আরামদায়ক জীবনযাত্রা বায়ুদূষণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ।

10. প্রাথমিক বা প্রধান বায়ুদূষক কাকে বলে?

উত্তর: যেসব বায়ুদূষক কোনো প্রাকৃতিক ঘটনায় অথবা মনুষ্যজনিত কারণে সরাসরি উৎপন্ন হয়, সেগুলিকে প্রাথমিক বায়ুদূষক বলে। এই দূষকগুলি হল- CO2, SO₂, ভাসমান বস্তুকণা (SPM), ট্রোপোস্ফিয়ারিক ওজোন ইত্যাদি।

11. গৌণ বায়ুদূষক কাকে বলে?

উত্তর:  সূর্যালোকের উপস্থিতিতে অথবা অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রাথমিক বায়ুদূষক পদার্থ যখন নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে আরও জটিল ও বেশি ক্ষতিকর বায়ুদূষক সৃষ্টি করে তখন সেগুলিকে গৌণ বায়ুদূষক বলে। যেমন-সালফিউরিক অ্যাসিড, ধোঁয়াশা, PAN ইত্যাদি।

12. গ্রিনহাউস এফেক্ট কী?

উত্তর: CO₂, CH4, CFC, N₂O প্রভৃতি দূষক গ্যাসগুলি পৃথিবীপৃষ্ঠে প্রতিফলিত তাপ শোষণ করে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। এই ঘটনাকে গ্রিনহাউস এফেক্ট বলে।

13. কয়েকটি ফ্লুরিনযুক্ত গ্যাসের নাম ও উৎস লেখো যেগুলি গ্রিনহাউস গ্যাস রূপে কাজ করে।

উত্তর: ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, হাইড্রোফ্লুরোকার্বন, পারফ্লুরোকার্বন, সালফার হেক্সাফ্লুরাইড ও নাইট্রোজেন ট্রাইফ্লুরাইড গ্যাসগুলি গ্রিনহাউস গ্যাস রূপে কাজ করে। এগুলি স্বল্প পরিমাণে উৎপন্ন হলেও তীব্র গ্রিনহাউস গ্যাস। নানাপ্রকার শিল্প থেকে (রেফ্রিজারেশন, অ্যারোসল উৎপাদন শিল্প) এগুলি উৎপন্ন হয়।

14. ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে কীভাবে ওজোন নামক গ্রিনহাউস গ্যাসটি উৎপন্ন হয়?

উত্তর: ভূসংলগ্ন ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে দূষণের ফলে সৃষ্ট নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ (NO₂), কার্বন মনোক্সাইড (CO) এবং উদ্বায়ী জৈব যৌগ (VOCবা ভোলাটাইল অরগ্যানিক কম্পাউন্ড), সূর্যালোকের প্রভাবে ওজোন গ্যাস তৈরি করে। মূলত যান নির্গমন, শিল্প উৎপাদন ও রাসায়নিক দ্রাবক হল ওই বায়ুদূষক উৎপাদনের প্রধান কারণসমূহ।

15. মানব ক্রিয়ায় ওজোন গ্যাসের কীরূপ পরিবর্তন ঘটেছে?

উত্তর: শিল্পজাত CFC-জাতীয় উপাদানগুলির প্রভাবে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ওজোন হ্রাস পেয়ে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে সূর্যালোকের UV রশ্মি মানুষ ও অন্যান্য জীবের ক্ষতিসাধন করে। ② পক্ষান্তরে, মাটি সংলগ্ন ট্রোপোস্ফিয়ার স্তরে নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, VOC প্রভৃতি সূর্যালোকের প্রভাবে ওজোন তৈরি করে। এই ওজোন, গ্লোবাল ওয়ার্মিং ঘটায়।

16 SPM বা PM কাকে বলে? এর উপাদানগুলি কী কী?

অথবা, SPM-এর উদাহরণ দাও।

উত্তর: SPM: শিল্প, দহন, প্রাকৃতিক উৎসজাত বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম কঠিন বা তরল কণাকে SPM বা সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার বলা হয়।

উপাদান: ভারী ধাতু, তেলের ধোঁয়া, ফ্লাইঅ্যাশ, অণুজীব, পরাগরেণু, সিমেন্টের ধুলো, ধুলিকণা, প্রভৃতি।

17 SPM-এর উৎসগুলি কী কী?

উত্তর: ভাসমান কণিকাগুলির উৎস হল যানবাহন, তৈল শোধনাগার, শিল্প-কলকারখানা, কৃষিক্ষেত্র প্রভৃতি। এইসব ক্ষেত্রে থেকে নির্গত বস্তুকণাগুলি বাতাসে ভাসমান অবস্থায় থেকে বায়ুকে দূষিত করে।

18. SPM-এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি লেখো।

উত্তর: ①10 মাইক্রোমিটারের থেকে ক্ষুদ্র SPM-গুলি শ্বাসতন্ত্র দিয়ে রক্তে প্রবেশ করে ও ক্যানসার ঘটায়। ② SPM-গুলি শ্বাসতন্ত্রে নানা রোগ, যেমন ব্রংকাইটিস, হাঁপানির তীব্রতা বৃদ্ধি, ফুসফুসে সংক্রমণ, কাশি, শ্বাসনালী প্রদাহ ঘটায়। ও হার্ট অ্যাটাক, হৃৎস্পন্দন মাত্রার পরিবর্তন এর দ্বারা ঘটে থাকে। ④ SPM-গুলি পরিবেশকে কুয়াশাচ্ছন্ন করে দর্শন-অযোগ্য করে তোলে, অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়।

19. অ্যারোসল কী?

উত্তর: আমাদের চারপাশের বাতাসে বিভিন্ন ধরনের কঠিন অথবা জলীয় ■ পদার্থের সূক্ষ্ম কণিকা কোলয়েড-রূপে ভাসমান অবস্থায় থাকে। এদের অ্যারোসল বলে। এদের ব্যাস । মাইক্রনের কম হয়। যেমন-ধুলো, ধোঁয়া, কুয়াশা ও বাষ্প।

20. ধোঁয়াশা কী?

উত্তর: বাতাসে নাইট্রোজেনের অক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বনের সাথে সূর্যরশ্মির আলোকরাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটলে যে ধোঁয়াটে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে ধোঁয়াশা (smog) বলে। ধোঁয়াশা হল ধোঁয়া এবং কুয়াশার সংমিশ্রণ।

21. লন্ডন ধোঁয়াশা কী?

উত্তর: ধোঁয়াশা হল ধোঁয়া ও কুয়াশার সংমিশ্রণ। 1952 সালের 5 ডিসেম্বর লন্ডনে একটি মারাত্মক ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। এটি প্রায় পাঁচ দিন স্থায়ী হয়। এটির প্রভাবে কয়েক হাজার মানুষ গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এটি লন্ডন ধোঁয়াশা নামে পরিচিত। বাতাসে নাইট্রোজেনের অক্সাইড এবং হাইড্রোকার্বনের সাথে সূর্যরশ্মির আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এই জাতীয় ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়।

22. যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়া কীভাবে বায়ুদূষণ ঘটায়?

উত্তর: যানবাহনের পরিত্যক্ত ধোঁয়াতে প্রচুর পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ প্রভৃতি থাকে। এই উপাদানগুলিই বায়ুদূষণ ঘটায়। মোট বায়ুদূষণের প্রায় 40 শতাংশ যানবাহনের ধোঁয়া থেকে ঘটে।

23. বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তর: বায়ুতে কার্বন ডাইঅক্সাইড বৃদ্ধির দুটি কারণ হল① প্রচুর পরিমাণে কয়লা, পেট্রোলিয়াম বা খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ও② নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস।

24. বায়ুদূষণের দুটি ক্ষতিকারক প্রভাব সম্বন্ধে লেখো।

উত্তর: বায়ুদূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে NO₂, SO₂ প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটে। অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্র, মার্বেলের নির্মিত স্থাপত্য, বনাঞ্চল প্রভৃতির প্রভূত ক্ষতিসাধন ঘটে। ② বায়ুদূষণের ফলে বায়ুতে বিভিন্ন দূষক যেমন-SPM -এর পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে ফুসফুসের রোগ যথা-হাঁপানি, COPD, ব্রংকাইটিস প্রভৃতি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়।

25. PAN কীভাবে সৃষ্টি হয়?

উত্তর: সূর্যালোকের উপস্থিতিতে নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোকার্বনের বিক্রিয়ায় পারক্সি-অ্যাসিটাইল নাইট্রেট বা PAN তৈরি হয়। এটির প্রভাবে চোখ জ্বালা, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ প্রভৃতি উপসর্গ দেখা যায়।

26. শিল্প, কলকারখানা, যানবাহন ইত্যাদি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া পরিশোধন করতে ব্যবহৃত দুটি যন্ত্রের নাম লেখো।

উত্তর: শিল্প, কলকারখানা, যানবাহন ইত্যাদি থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া পরিশোধনে ব্যবহৃত হয় এমন দুটি যন্ত্রের নাম হল- ① ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর ও ② ক্যাটালাইটিক কনভার্টার।

27. অ্যাসিড বৃষ্টির রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

উত্তর: অ্যাসিড বৃষ্টির রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলি হল-

① NOx+H₂O   HNO3  ② 2SO2 +O₂ 2SO₃ SO₃ + H₂O → H₂SO₄

উৎপন্ন নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO) ও সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄) বৃষ্টির সঙ্গে মিশে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে।

28. অ্যাসিড বৃষ্টির রাসায়নিক উপাদানগুলি লেখো।

উত্তর:  অ্যাসিড বৃষ্টির রাসায়নিক উপাদানগুলি হল-[i] সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄), [ii] নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO), [iii] কার্বনিক অ্যাসিড। (H₂CO₃)।

29. অ্যাসিড বৃষ্টিতে তাজমহল বা অন্য মার্বেল নির্মিত স্থাপত্যের ক্ষতি হয় কীভাবে?

উত্তর:  মার্বেল, চুনাপাথর প্রভৃতি প্রকৃতপক্ষে হল ক্যালশিয়াম কার্বনেট (CaCO₃)। এটি অ্যাসিডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফেট বা নাইট্রেট যৌগ উৎপন্ন করে যা স্থাপত্যের উজ্জ্বলতা ম্লান করে দেয়। এ ছাড়া পাথর ক্ষয়ে সৌন্দর্যহানি ঘটে, যাকে স্টোন লেপ্রসি বলে।

30. স্টোন ক্যানসারের কারণ কী?

উত্তর: স্টোন ক্যানসারের প্রধান কারণ হল অম্লবৃষ্টি বা অ্যাসিড রেন। বর্তমানে বিভিন্ন শিল্প কারখানা থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে প্রচুর মাত্রায় NO₂ এবং SO₂ গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এই গ্যাসগুলি বাতাসের জলীয়বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO₂) এবং সালফিউরিক অ্যাসিড (H₂SO₄) তৈরি করছে এবং বৃষ্টির জলের সঙ্গে সেগুলি বিভিন্ন স্থাপত্য কীর্তি যেমন আগ্রার তাজমহল, কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, দিল্লির লালকেল্লা প্রভৃতির ওপর পড়ে পাথরের ক্ষয়ীভবন ঘটিয়ে স্টোন ক্যানসার সৃষ্টি করছে।

31. ‘সাধারণ বৃষ্টির pH 5.6 অর্থাৎ সামান্য আম্লিক’-কেন তা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: বায়ুর CO₂, বৃষ্টির জলে দ্রবীভূত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিড তৈরি করে। তাই তার pH সামান্য আম্লিক হয়ে যায়। উল্লেখযোগ্য, অম্লবৃষ্টির pH 4.2-4.4 হয়।

32. ওজোন হোল বা ওজোন গহ্বর কী?

উত্তর: মানব ক্রিয়াকলাপজনিত কারণে সৃষ্ট ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, হ্যালোন প্রভৃতি গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর বিনাশ করে তাতে গহ্বর সৃষ্টি করে। একে ওজোন হোল বলে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, এভাবে ওজোন স্তরের ক্রমশ ঘনত্ব বিনষ্ট হওয়াকে বলে ওজোন স্তরের বিনাশ (ozone depletion)।

33. ওজোন হোলের ক্ষতিকর প্রভাব লেখো।

উত্তর: ওজোন হোলের ক্ষতিকর প্রভাবগুলি হল-① ওজোন হোল সৃষ্টি হলে সূর্যালোকের UV রশ্মি (UVA) পৃথিবীপৃষ্ঠে নেমে এসে ত্বকের ক্যানসার, ছানি প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে। ② UV রশ্মির প্রভাবে সায়ানোব্যাকটেরিয়া বিনষ্ট হয়, ফলে ধান উৎপাদন অতিমাত্রায় ব্যাহত হয়।

34. জলদূষণ কত প্রকারের হয়?

উত্তর: জলদূষণ প্রধানত পাঁচ প্রকারের হয়, যথা-① ভূনিম্নস্থ জলদূষণ, ② সমুদ্রের জলদূষণ, ③ নদীর জলদূষণ, ④ হ্রদের জলদূষণ এবং ⑤ পুকুরের ও অন্যান্য জলাশয়ের জলদূষণ।

35. জলের ভৌতদূষণ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: বিভিন্ন প্রকার দূষিত বর্জ্য পদার্থ জলে মিশলে জলের ভৌত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ জলের বর্ণ অস্বচ্ছ হয়ে যায় ও তাতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় ও বিস্বাদ হয়ে পড়ে ও জল ব্যবহারের অযোগ্য হয়। একে জলের ভৌতদূষণ বলে।

36. ইউট্রোফিকেশন কাকে বলে?

উত্তর: জলদূষণজনিত কারণে জলাশয়ে অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদান সৃষ্টির মাধ্যমে প্ল্যাঙ্কটনের সংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটে, যার ফলে জলের গুণমানের ঘাটতি দেখা যায়, একে ইউট্রোফিকেশন বলে।

37. ইউট্রোফিকেশনে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন হ্রাস পায় কেন?

উত্তর: জলে অতিরিক্ত শৈবালের বৃদ্ধির ফলে তাদের বিয়োজনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায় বলে জলের সমস্ত অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়া জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন ব্যবহার করে মৃত শৈবালের বিয়োজন বা ডিকম্পোজিশন ঘটায়। ফলে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন মাত্রা হ্রাস পায়।

38. ইউট্রোফিক জলাশয়ের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

অনুরূপ প্রশ্ন, ইউট্রোফিকেশন-এর ক্ষতিকর প্রভাবগুলি লেখো।

উত্তর: ইউট্রোফিক জলাশয়ের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-① জলে শৈবালের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে ‘অ্যালগাল ব্লুম’ সৃষ্টি হয় ও জলাশয়ের বর্ণ সবুজ হয়ে যায়। ফলে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে যায়। ② জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন মাত্রা হ্রাস পায় ফলে মাছ মারা যায়। ③ শৈবালের পচনের ফলে জলে স্ট্রিকনিন নামক বিষাক্ত পদার্থ উৎপন্ন হয়, যার ফলে জলজ জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

39 অ্যালগাল ব্লুম কাকে বলে?

উত্তর:  স্বাদু জল বা সামুদ্রিক লবণাক্ত জলে শৈবালের অতিবৃদ্ধি ঘটে জলের বর্ণ সবুজ হয়ে যায় ও ওই জলের বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হয়। একে অ্যালগাল ব্লুম বলে। ইউট্রোফিকেশনে অ্যালগাল ব্লুম ঘটে থাকে।

40. COD বলতে কী বোঝ? এটি দূষণ নির্দেশকরূপে কীভাবে কাজ করে?

উত্তর: COD: জলের জৈব উপাদানের পচন ও অজৈব রাসায়নিক, যেমন অ্যামোনিয়া ও নাইট্রাইটের জারণে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন মাত্রা নির্দেশ করে COD বা কেমিক্যাল অক্সিজেন ডিমান্ড।

দূষণ নির্দেশকরূপে কাজ: এটি জলে উপস্থিত জৈব ও অজৈব দূষক মাত্রা নির্দেশ করে। এর মান বৃদ্ধির অর্থ জলে দূষণ মাত্রা বৃদ্ধি।

41. জৈব অক্সিজেন চাহিদা বা BOD বলতে কী বোঝ?

উত্তর: কাগজ শিল্প, খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প, চর্মশিল্প প্রভৃতির উপজাত দ্রব্য ও গৃহস্থালির উপজাত দ্রব্যে প্রচুর পরিমাণে জৈব পদার্থ থাকে। এগুলি জলে মিশে বিভিন্ন অণুজীবের সংখ্যার অত্যধিক বৃদ্ধি ঘটায়। এতে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়। এর ফলস্বরূপ জলে অক্সিজেনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাকে জৈব অক্সিজেন চাহিদা বা BOD (Biological Oxygen Demand) বলে।

42. কৃষিক্ষেত্রে বর্জ্য বহির্গমন (agricultural run off) বলতে কী বোঝ?

উত্তর: কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার, বিভিন্ন প্রকার আগাছানাশকলের কীটনাশক, মাটি, ফসলজাত বর্জ্য বৃষ্টির জল বা চাষের অতিরিক্ত জলের

সাথে মিশে কৃষিক্ষেত্র থেকে নির্গত হয়ে যায়। একেই কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য বহির্গমন (agricultural run off) বলা হয়।

43. কোন্ কোন্ ধাতু বেশি পরিমাণে মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়?

উত্তর: বিভিন্ন ধাতব শিল্প থেকে সিসা, তামা, দস্তা, পারদ, নিকেল, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি ধাতু নির্গত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে ধাতুজনিত মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়।

44. কীটনাশক দ্রব্যের মাধ্যমে কোন্ কোন্ ধাতু মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়?

উত্তর: বিভিন্ন কীটনাশক দ্রব্যে তামা, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়াম ও পারদ যৌগ- রূপে উপস্থিত থাকে। সেগুলির প্রয়োগে মাটিতে ধাতুজনিত দূষণের সৃষ্টি হয়।

45 কৃষিক্ষেত্রে বর্জ্যে উপস্থিত পদার্থের নাম লেখো।

উত্তর: কৃষিক্ষেত্রে বর্জ্যে উপস্থিত পদার্থ হল-① DDT, BHC প্রভৃতি কীটনাশক। ② বিভিন্নপ্রকার নাইট্রেট ও ফসফেটজাতীয় সার।

46. মাটির পারমাণবিক দূষণ কীভাবে ঘটে?

উত্তর: পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও পারমাণবিক চুল্লী থেকে নির্গত বিভিন্ন তেজস্ক্রিয় উপজাত দ্রব্যের ফলে মাটির দূষণ ঘটে। তেজস্ক্রিয় উপজাত দ্রব্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল রেডিয়াম-106, প্রোমেথিয়াম-144।

47. কোন্ ধরনের কীটনাশক  অধিকমাত্রায় মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়?

উত্তর: ক্লোরিনেটেড হাইড্রোকার্বন- জাতীয় কীটনাশক, যেমন-DDT, BHC, অ্যালড্রিন প্রভৃতি অধিকমাত্রায় মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়।

48. জীববিবর্ধন বা জৈববিবর্ধন (biomagnification) কাকে বলে?

উত্তর: যে পদ্ধতিতে পরিবর্তনহীন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে এবং প্রতিটি খাদ্যস্তরের অন্তর্ভুক্ত জীবদেহে এর ঘনত্বের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বহুগুণ বৃদ্ধি পায়, তাকে জীববিবর্ধন বা জৈববিবর্ধন বা বায়োম্যাগনিফিকেশন বলে।

49. জীববিবর্ধনের কুফল লেখো।

উত্তর: দূষকগুলি খাদ্যশৃঙ্খল বরাবর বিবর্ধিত হলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-① জীবদেহে ক্যানসার ঘটতে পারে (যেমন-আর্সেনিক সঞ্চয়)। ② জীবের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পায়। ③ বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ঘটে যাকে টেরাটোজেনেসিস (teratogenesis) বলে। ④ প্রাণীদেহে যকৃৎ ও বৃক্কের ক্ষতি ও রোগ সৃষ্টি হয়।

50. একটি খাদ্যজালে জীবসংখ্যা বেশি হলে জীববিবর্ধনে তার কী প্রভাব পড়বে?

উত্তর: একটি খাদ্যজালে জীবসংখ্যা বেশি হলে তার খাদ্যশৃঙ্খলও বেশি হবে। ফলে কোনো জীবের খাদ্যে জীবপ্রজাতি সংখ্যাও বেশি থাকবে। ফলে জীববিবর্ধন মাত্রা লাফিয়ে অনেকটা বেড়ে যাবে।

51. জৈবসঞ্চয়ন বা জৈবপুঞ্জীভবন (bioaccumulation) কাকে বলে?

উত্তর: যে পদ্ধতিতে দূষক উপাদানগুলি জীবদেহ থেকে রেচনের মাধ্যমে নির্গত না হয়ে দেহে সঞ্চিত হয় ও দেহের ক্ষতিসাধন করে, তাকে জৈবসঞ্চয়ন বলে।

52. জৈবসঞ্চয়ন কেন ঘটে?

উত্তর: ① দূষকগুলি জলে অদ্রাব্য হলে তা মূত্র দ্বারা রেচিত না হয়ে দেহের নানা অঙ্গে জমে যায়। ② অনেক দূষক ফ্যাটে দ্রবীভূত হয়। এগুলি প্রাণীর মেদকলা বা অ্যাডিপোজ কলায় সঞ্চিত হয়। ③ দূষকগুলি দেহের পক্ষে অপরিচিত উপাদান বলে তার বিপাকে উপযুক্ত উৎসেচক দেহে থাকে না।

53. শব্দদূষণ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: উচ্চ প্রাবল্য ও উচ্চ তীব্রতা সহনসীমার ঊর্ধ্বের সুরবর্জিত কর্কশ যে শব্দ মানবদেহে ক্ষতিকর ও অবাঞ্ছনীয় পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে, তাকে শব্দদূষণ বলে। যেমন-বাজির শব্দ, মাইক্রোফোনের উচ্চ শব্দ, যানবাহন- জাত তীব্র শব্দ ইত্যাদি।

54. নিঃশব্দ অঞ্চল বা সাইলেন্স জোন কী?

উত্তর: সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড (CPCB) হসপিটাল, শিক্ষা- প্রতিষ্ঠান, কোর্ট প্রভৃতি স্থানের সন্নিহিত 100 m অঞ্চলে দিনের বেলায় শব্দের ন্যূনতম মাত্রা 50 dB নির্ধারিত করেছেন। এই অঞ্চলকে নিঃশব্দ অঞ্চল বলে।

55. শ্রবণেন্দ্রিয়ের অবসাদ বলতে কী বোঝ?

উত্তর:  90 ডেসিবেলের বেশি মাত্রায় শব্দ আমাদের কানে এসে পৌঁছলে সেটি শ্রবণ অঙ্গকে সাময়িকভাবে অকেজো করে তোলে এবং মানসিক অবসাদে ভোগে। এই ঘটনাকে শ্রবণেন্দ্রিয়ের অবসাদ বলা হয়।

56 শব্দদূষণ মানব শরীরে কান ও হৃৎপিণ্ডের ওপর কী কী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে?

উত্তর:  কানের ওপর প্রভাব-দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ শব্দ (100 dB)-এর কারণে অন্তঃকর্ণের অর্গান অফ কর্টি-র কোশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পায় বা বিনষ্ট হয়। একে ‘নয়েস ইনডিউস্ড হিয়ারিং লস’ বলে।

হৃৎপিন্ডের ওপর প্রভাব-90dB-এর ঊর্ধ্বে শব্দ হলে সিস্টোলিক রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন হার বৃদ্ধি পায়। অনবরত 60dB -এর ঊর্ধ্বে শব্দ শুনলে হৃৎপিন্ডের মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন নামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে হৃস্পেশিতে আংশিকভাবে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গিয়ে পেশির কার্যকারিতা বিনষ্ট হয়।

57. শব্দদূষণে মানুষ ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর কী সমস্যা হয়?

উত্তর: শব্দের আওয়াজে বন্যপ্রাণীরা পারস্পরিক যোগাযোগের ভাষা শুনতে পায় না (একে ‘মাস্কিং’ বলে)। ফলে সহজেই তারা অন্য প্রাণী দ্বারা শিকার হয়ে যায়। ② শব্দদূষণের ফলে বহু প্রাণীর আচরণগত পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

58. কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যানবাহন-জনিত শব্দদূষণের মাত্রা কত নির্ধারণ করেছে?

উত্তর: কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যানবাহন-জনিত শব্দদূষণের মাত্রা 70 dB নির্ধারণ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু শহরে যানবাহন-জনিত শব্দদূষণের মাত্রা এর থেকে অনেক বেশি।

59. শ্রবণ ক্লান্তি কী?

উত্তর: কোনো বস্তুর কম্পনের ফলে যে শক্তি প্রবাহিত হয়, তা আমাদের কানে শ্রবণের অনুভূতি সৃষ্টি করে। অর্থাৎ আমরা শুনতে পাই, কিন্তু 4000 বা তার বেশি কম্পাঙ্কের শব্দ যদি 90 ডেসিবেল বা তার বেশি প্রাবল্যে আমাদের কানে পৌঁছায়, তাহলে আমাদের শ্রবণের অনুভূতি অস্থায়ীভাবে হ্রাস পায়। এই অবস্থাকে শ্রবণ ক্লান্তি বলে।

60. নিম্নলিখিত দূষকগুলির ক্ষতিকারক প্রভাব তালিকাভুক্ত করো- গ্রিনহাউস গ্যাস, SPM, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার, অভঙ্গুর রাসায়নিক কীটনাশক।

উত্তর: বিভিন্ন দূষকের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি হল-

দূষকক্ষতিকারক প্রভাব
[1] গ্রিনহাউস গ্যাসবিশ্ব উন্নায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং
[2] SPMমানুষের শ্বাসতন্ত্রে জ্বালা ও শ্বাসকষ্ট
[3] কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সারইউট্রোফিকেশন ও জৈবসঞ্চয়ন
[3] অভঙ্গুর রাসায়নিক কীটনাশকজৈবসঞ্চয়ন ও জীববিবর্ধন

61. জৈবসঞ্চয়ন ও জীববিবর্ধন-এর পার্থক্য লেখো।

উত্তর: জৈবসঞ্চয়ন ও জীববিবর্ধন-এর পার্থক্যগুলি হল-

বিষয়জৈবসঞ্চয়নজীববিবর্ধন
[1] জীবএকটি জীবে দূষক সঞ্চয়।খাদ্যশৃঙ্খল বরাবর সমস্ত জীবে দূষক সঞ্চয়।
[2] দূষক মাত্রাদূষক মাত্রা জীবে একই থাকে।পুষ্টিস্তর বরাবর দূষকমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
[3] ধারণাক্ষুদ্রতর ধারণা, এটি জীববিবর্ধনের অন্তর্গত একক জীবস্তরের অবস্থা সূচিত করে।বৃহত্তর ধারণা, জৈবসঞ্চয়ন হল জীববিবর্ধনের একটি কারণ।

62. কোনো জৈব অভঙ্গুর পদার্থ খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করলে কীভাবে জৈব সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে, তা একটি রেখা মানচিত্রের মাধ্যমে উপস্থানা করো।

উত্তর: DDT একটি জৈব অভঙ্গুর পদার্থ, খাদ্যশৃঙ্খলের পুষ্টিপর্যায়ে DDT-র জৈব সঞ্চয়ের পরিমাণ কীভাবে বৃদ্ধি পায়, তা নীচের রেখাচিত্রে দেখানো হল-

জলে দ্রবীভূত DDTফাইটো- প্ল্যাঙ্কটনেরমধ্যে DDTজু প্ল্যাঙ্কটনেরDDTমাছের দেহে DDTমাছ ভক্ষপকারী পাখির দেহে DDT

0.01 ppm                 0.024 ppm                 0.123 ppm           1.05-12 ppm        100 ppm

63.  অ্যালার্জেন কী? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে পদার্থ ব্যক্তি বিশেষের দেহে প্রবেশ করলে অ্যালর্জি সৃষ্টিতে অংশ নেয়, তাকে অ্যালার্জেন বলে। অ্যালার্জেন সকল ব্যক্তির ক্ষেত্রে একইভাবে ক্রিয়া করে না।

অ্যালার্জেনের উদাহরণ হল-পরাগ, চিংড়ি, ধুলো ইত্যাদি।

64 ‘জৈব বিবর্ধনের ফলে সর্বোচ্চ শ্রেণির খাদকেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়’-বক্তব্যটির যথার্থতা একটি উদাহরনের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও।

উত্তর:  খাদ্যশৃঙ্খল বরাবর নীচ থেকে ক্রমশ উচ্চতর পুষ্টিস্তরে কোনো দূষকের ক্রমবর্ধমান সঞ্চয়ের ঘটনাকে জৈব বিবর্ধন বলে। জৈব বিবর্ধনের

দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস ও মরা মাছ ভেসে ওঠা, (v) ফুসফুসের বায়ু চলাচলের পথে প্রদাহ। 

ফলে সর্বোচ্চ শ্রেণির খাদকেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বক্তব্যটি সঠিক। কেননা | খাদ্যশৃঙ্খলের প্রতিটি পুষ্টিস্তরে দূষকের ঘনত্ব ক্রমপর্যায়ে বাড়তে থাকে। নীচের উদাহরণ থেকে এটি আরও ভালভাবে বোঝা যায়। ধরা যাক উৎপাদক ফসলে কোনো দূষকের মাত্রা 5 একক, একটি ফড়িং যদি পাঁচটি শস্য উদ্ভিদ খায়, তবে তার দেহে দূষকের মাত্রা হবে (5×5) একক বা 25 একক আবার একটি ব্যাঙ্গাচি যদি চারটি ফড়িং খায়, তবে তার দেহে দূষকের মাত্রা হবে (25×4) একক বা 100 একক। আবার একটি সাপ যদি তিনটি ব্যাঙ খায়, তার দেহে দূষকের মাত্রা হবে (100×3) একক বা 300 একক। অর্থাৎ তিনটি পুষ্টি পর্যায়ে দূষকের ঘনত্ব 60 গুণ বেড়ে গেল।

65. প্রদত্ত ঘটনাগুলির সম্ভাব্য কারণ কী হতে পারে? (i) কুমিরের সংখ্যা হ্রাস, (ii) পরাগমিলনে সাহায্যকারী পতঙ্গের সংখ্যা হ্রাস, (iii) নিদ্রাহীনতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি আংশিক বা সম্পূর্ণ বধিরতা, (iv) জলে

উত্তর: (i) কুমিরের সংখ্যা হ্রাসের কারণ-খাদ্য, আশ্রয় ও পরিবেশ প্রতিকূলতা। (ii) পরাগমিলনে সাহায্যকারী পতঙ্গের সংখ্যা হ্রাসের কারণ-কৃষিক্ষেত্রে অতিমাত্রায় কীটনাশকের প্রয়োগ। (iii) নিদ্রাহীনতা, রক্তচাপ বৃদ্ধি, আংশিক বা সম্পূর্ণ বধিরতার কারণ-অতি মাত্রায় শব্দদূষণ। (iv) জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস ও মরা মাছ ভেসে ওঠা-কারণ হল জলাশয়ে ফসফেট জাতীয় সার, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি মেশার ফলে শৈবালের ব্যাপক বৃদ্ধি তথা ইউট্রফিকেশন। (v) ফুসফুসের বায়ু চলাচলের পথে প্রদাহের কারণ-বায়ুতে মিশে থাকা ধুলোবালি, ছত্রাক, ঝুল, ধোঁয়া, পরাগরেণু ইত্যাদি বায়ুদূষক নাসিকাতে প্রবেশ।

4. Long Question Answer

1. বায়ুদূষণ কাকে বলে? বায়ুদূষণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ লিখো ।

উত্তর: বায়ুদূষণ: প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে, বায়ুমণ্ডলের কোনো গ্যাসীয় উপাদানের ঘনত্বের পরিবর্তনে বা অন্য কোনো ক্ষতিকর উপাদান মিশে জীবের ও পরিবেশের ক্ষতিসাধনের ফলে সৃষ্ট অবস্থাকে বায়ুদূষণ বলে।

বায়ুদূষণের কারণ: বায়ুদূষণের অন্যতম দুটি কারণ হল- ① গ্রিনহাউস গ্যাস এবং② SPM বা সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার। নীচে এগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল।

① গ্রিনহাউস গ্যাস: বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) , মিথেন (CH4) , ওজোন (O3) , ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) প্রভৃতি গ্যাস তাপ বিকিরণে বাধা দিয়ে পৃথিবীর উন্নতা বৃদ্ধি করে। এদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। নানা কারণে বায়ুমণ্ডলে এইসব গ্যাস বৃদ্ধি পায়। এগুলি হল-[i] কার্বন ডাইঅক্সাইড: জীবাশ্ম জ্বালানি, কলকারখানার ধোঁয়া ও জৈববস্তুর দহনের ফলে বায়ুতে CO2 -এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। CO2 সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী গ্রিনহাউস গ্যাস। [ii] ক্লোরোফ্লুরোকার্বনসমূহ (CFCs): জেট ইঞ্জিন, রেফ্রিজারেশন শিল্প ও এয়ার কন্ডিশন শিল্পে, অ্যারোসল স্প্রে, ডিওডোর‍্যান্টে ক্লোরোফ্লুরোকার্বন থাকে। এগুলি মুক্ত হলে বায়ুদূষণ ঘটে। [iii] নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ: কৃষিকাজে ব্যবহৃত নাইট্রোজেনঘটিত সার ও শিল্পকারখানা থেকে নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ মুক্ত হয়ে বায়ুদূষণ ঘটায়।

② SPM: বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন ধরনের বস্তুকণা ভেসে বেড়ায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-ধূলিকণা, পরাগরেণু, অণুজীব, ধাতব কণা, ছাই, ধোঁয়া ইত্যাদি সূক্ষ্ম তরল বা কার্বন কণা যেগুলি বায়ুদূষণ ঘটায়, তাদের SPM বা সাসপেনডেড পারটিকুলেট ম্যাটার বলে। এই ভাসমান কণাগুলির ব্যাস 1 মাইক্রনের কম হলে, তাদের অ্যারোসল বলে।

2. গ্রিনহাউস গ্যাস ও গ্রিনহাউস প্রভাব কাকে বলে? বিভিন্ন প্রকার গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম, প্রভাব ও সৃষ্টির কারণ লেখো।

উত্তর: গ্রিনহাউস গ্যাস ও গ্রিনহাউস প্রভাব: বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত যেসব গ্যাস তাপীয় বিকিরণে বাধা দান করে পৃথিবীর উয়তা বৃদ্ধি করে, তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। যেমন-CO2,CH4, CFCs ইত্যাদি। যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত CO₂, জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য কয়েকটি গ্যাসীয় পদার্থ পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে না দিয়ে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত রাখে, তাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে।

গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিকারী গ্যাসসমূহের নাম, প্রভাব ও সৃষ্টির কারণ

গ্যাসের নামপ্রভাবসৃষ্টির কারণ
[1] কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)এটি হল প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস। গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এই গ্যাসের ভূমিকা প্রায় 9-26 শতাংশ।জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, সিমেন্ট, শিল্পজ জ্বালানি গ্যাসের দহন।
[2] মিথেন (CH4)বিকিরিত তাপ ধারণ করার ক্ষমতা CO₂-এর তুলনায় প্রায় 25 গুণ বেশি। গ্রিনহাউস প্রভাবে এর অবদান প্রায় 9-14 শতাংশ।কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন, কৃষিক্ষেত্রে কৃষিবর্জ্যের পচন।
[3] ওজোন (O3)গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর অবদান প্রায় 3-7 শতাংশ। তাপ ধারণ ক্ষমতা CO₂ -এর প্রায় 10 গুণ।ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে CO, নাইট্রোজেন অক্সাইড প্রভৃতি দূষক আলোকের প্রভাবে ০₃ সৃষ্টি করে।
[4] ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCS)বিকিরিত তাপ ধারণ করার ক্ষমতা CO₂ -এর তুলনায় প্রায় 10,000-20,000 গুণ বেশি। গ্রিনহাউস প্রভাবে এর অবদান প্রায় 13 শতাংশ।এয়ারকন্ডিশনিং শিল্প, রেফ্রিজারেশন শিল্প, ফোম উৎপাদন, অ্যারোসল উৎপাদন।
[5] নাইট্রাস অক্সাইড (N2O)গ্রিনহাউস প্রভাব সৃষ্টিতে এর অবদান প্রায় 6 শতাংশ। এর তাপ ধারণ ক্ষমতা CO₂-এর প্রায় 275 গুণ।কৃষিকাজে N2- সার ব্যবহার, জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, শিল্পে উৎপাদন।

3. অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্লবৃষ্টি কী? অম্লবৃষ্টির কারণ কী এবং ভারতের কোথায় কোথায় অম্লবৃষ্টি বেশি হয়? 

উত্তর: অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্লবৃষ্টি: বাতাসে ভাসমান সালফার ডাইঅক্সাইড (SO₂), নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড (NO₂) প্রভৃতি গ্যাস বৃষ্টির, শিশির অথবা তুষারের সঙ্গে মিশে বিক্রিয়া করে গৌণ দূষক সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO) নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) প্রভৃতি তেরি করে ভূপৃষ্ঠে নেমে এসে মানবস্বাস্থ্য ও পরিবেশের কাড়তি তাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্লবৃষ্টি বলে। অ্যাসিড বৃষ্টির pH মাত্রা সাধারণত 5.0-এর নীচে হয়।

অ্যাসিড বৃষ্টির কারণ: মনুষ্যসৃষ্ট বায়ুদূষণ হল অ্যাসিড বৃষ্টির অন্যতম কারণ। শিল্পকারখানাগুলিতে বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানি দহনের ফলে প্রচুর মাত্রায় NO2এবং SO2 গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাসগুলি বাতাসের জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) এবং সালফিউরিক অ্যাসিড (H SO4) তৈরি করে এবং বৃষ্টির জলের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়ে। এইভাবেই মনুষ্যসৃষ্ট কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটে।

ভারতে অ্যাসিড বৃষ্টির ঘটনা: ভারতে মহারাষ্ট্রের চেম্বুর ও পুনে এবং কেরলের ত্রিবান্দ্রম-এ অ্যাসিড বৃষ্টির ঘটনা দেখা গেছে।

4 পরিবেশের ওপর অম্লবৃষ্টির বা অ্যাসিড রেন-এর প্রভাব লেখো।

অনুরূপ প্রশ্ন, অ্যাসিড বৃষ্টিজাত দুটি ক্ষতি উল্লেখ করো। 

উত্তর: পরিবেশের ওপর অম্লবৃষ্টির বা অ্যাসিড রেন-এর প্রভাব

① প্রাণী ও উদ্ভিদের ওপর প্রভাব: অম্লবৃষ্টির ফলে বেশিরভাগ জলাশয়ের মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। স্থলভাগের গাছপালা, কৃষিজ ফসল ধ্বংস হয়। অম্লবৃষ্টির কারণে জলাশয়ের pH-এর মান যদি 4-এর কম হয়, তবে ওই জলাশয়ের অধিকাংশ সজীব উপাদানের মৃত্যু ঘটে।

② মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব: অম্লবৃষ্টির ফলে মানুষের ত্বক ও কোশের অস্বাভাবিক ক্ষতি হয়। অম্লবৃষ্টির জন্য অ্যালুমিনিয়াম এবং তামা নির্মিত জলের পাইপ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং পানীয় জলের সঙ্গে মেশে এবং ওই জল পান করে বহু মানুষ পেটের রোগে ভোগে।

③ মাটির ওপর প্রভাব: অম্লবৃষ্টির প্রভাবে মাটির অম্লত্ব বৃদ্ধি পায়, যার ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায় এবং শস্যের ফলন ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণী ও সূক্ষ্ম জীবাণুরা মারা যায়।

④ বনাঞ্চলের ওপর প্রভাব: অম্লবৃষ্টির ফলে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়। শস্যক্ষেত্রের উৎপাদনও ভীষণভাবে হ্রাস পায়।

⑤ মার্বেলের কারুকার্যের ওপর প্রভাব: অম্লবৃষ্টির ফলে মার্বেলের বা চুনাপাথরের তৈরি বিভিন্ন কারুকার্য, স্থাপত্য নিদর্শনগুলি, যেমন- ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ফতেপুর সিক্রি, তাজমহল, কুতুবমিনার, ব্রিটেনের পার্লামেন্ট ভবন, সেন্ট পল্স গির্জা ইত্যাদি ভীষণভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। অম্লবৃষ্টির প্রভাবে পাথরের যে ক্ষয়ীভবন ঘটে, তাকে ‘স্টোন ক্যানসার’ বলে।

5. বায়ুদূষণ দ্বারা ঘটিত ফুসফুসের নানা ধরনের রোগগুলি সম্বন্ধে লেখো।

উত্তর: বায়ুদূষণ দ্বারা ঘটিত ফুসফুসের রোগ: দূষিত বায়ু প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, যার ফলে ফুসফুসে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি হয়। যেমন-① CO₂, NOX, প্রভৃতি বায়ুদূষক হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়া, ক্যানসার প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে। ② বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে কর্মরত শ্রমিকদের নানা ধরনের ফুসফুসের রোগ দেখা দেয়। ও কয়লাখনি থেকে নির্গত কার্বন কণা শ্রমিকদের ফুসফুসে একটি কালো রঙের আস্তরণ সৃষ্টি করে ব্ল্যাক লাং নামক রোগ সৃষ্টি করে। ④ অ্যাসবেসটস এবং সিলিকন শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের ফুসফুসে অ্যাসবেসটস এবং সিলিকন কণা বায়ুর মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং যথাক্রমে অ্যাসবেস্টোসিস ও সিলিকোসিস রোগ সৃষ্টি করে। ⑤ অনেক-ক্ষেত্রে, বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসনালী সরু হয়ে যায় এবং স্থায়ীভাবে শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি হয়, তাকে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা COPD বলে। অত্যধিক ধূমপানের ফলেও COPD হয়ে থাকে।

6. ভাসমান ক্ষুদ্র কণা প্রশ্বাসের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে সৃষ্টি হতে পারে এমন দুটি ব্যাধির একটি করে উপসর্গ লেখো। কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য জলাশয়ে মিশলে যে যে ঘটনাগুলি ঘটে তার ক্রম নির্মাণ করো।

উত্তর: ভাসমান ক্ষুদ্রকণা প্রশ্বাসের মাধ্যমে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে সৃষ্টি হতে পারে এমন দুটি ব্যাধি হল-① অ্যাজমা বা হাঁপানি, ② ব্রংকাইটিস।

① অ্যাজমা বা হাঁপানির উপসর্গ: তরল মিউকাসে ফুসফুসের সূক্ষ্ম বায়ুনালিগুলি বন্ধ হয়ে গিয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। রোগী শুয়ে থাকতে পারে না, মাথা নীচু করে হাঁপাতে থাকে। বুকে চাপ ও দমবন্ধ হয়ে আসা প্রভৃতি অনুভূত হয়।

② ব্রংকাইটিস-এর উপসর্গ: এই রোগে জ্বরসহ বুকে ব্যথা হয়, বুকের মধ্যে ঘড় ঘড় বা সাঁই সাঁই আওয়াজ শোনা যায়। প্রবল কাশি হয় এবং কাশির সঙ্গে কফের নির্গমন ঘটে।

কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য জলাশয়ে মিশলে যে যে ঘটনাগুলি ঘটে- ① অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদানের সংযোজনের ফলে প্ল্যাঙ্কটনের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পায়। জলের গুণমানের অবনতি ঘটে। অর্থাৎ ইউট্রোফিকেশন দেখা যায়। ② ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন দ্রুত বাড়ে। শৈবালের দ্রুত প্রজনন ও বৃদ্ধি ঘটে, জলাশয়ে তার ঘনত্ব বাড়ে। অ্যালগাল ব্লুম দেখা যায়। ③ জলাশয় বর্ণময় হয়ে ওঠে, কটু গন্ধযুক্ত হয়। এ ছাড়া জলের স্বচ্ছতা কমে। ④ অতিরিক্ত শৈবালের মৃত্যুর পরে জীবাণু দ্বারা বিয়োজন মাত্রা বৃদ্ধি পায় ও জলের সমস্ত অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়ে যায়। ⑤ অক্সিজেন ঘাটতির কারণে জলাশয়ের মাছ ও অন্যান্য প্রাণীরা মারা যায়। ⑥ অনেক শৈবাল ক্ষতিকর টক্সিন (যেমন-নিউরোটক্সিন) উৎপাদন করে, এই টক্সিনের প্রভাবে বিভিন্ন

7. জলদূষণ কাকে বলে? এর কারণগুলি লেখো।

অথবা, মিষ্টি জলের উৎসগুলি কী কী ভাবে দূষিত হয়-তোমার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মতামত জানাও।

উত্তর: জলদূষণ: প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলের সঙ্গে = বিভিন্নপ্রকার বর্জ্য, দূষিত ও বিষাক্ত পদার্থ ইত্যাদি মিশে যাওয়ার ফলে জল যদি নোংরা হয় এবং জলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে এবং এর ফলস্বরূপ জলজ উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে তাকে জলদূষণ বলে।

 জলদূষণের কারণ: নানা কারণে জল দূষিত হয়ে থাকে। নীচে কয়েকটি কারণ আলোচিত হল।

① কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য দ্বারা দূষণ: গ্রামাঞ্চলে চাষের জন্য ব্যবহৃত কীটনাশক, আগাছানাশক, রাসায়নিক সার ইত্যাদি প্রধানত বৃষ্টির জলের সঙ্গে ধুয়ে গিয়ে নিকটবর্তী নদীনালা বা পুকুরের জলে মেশে এবং জলকে দূষিত করে। কৃষিতে ব্যবহৃত নাইট্রেট, ফসফেটজাতীয় রাসায়নিক সার থেকে ইউট্রোফিকেশন-এর মতো সমস্যার সৃষ্টি হয়।

② কলকারখানার বর্জ্য দ্বারা দূষণ: শহরাঞ্চলে কলকারখানার দূষিত বর্জ্য নদী, সমুদ্র ও বড়ো জলাশয়ে এসে মেশে এবং জলদূষণ ঘটায়।

③জীবাণু ও গৃহস্থালির প্রাত্যহিক আবর্জনা দ্বারা দূষণ: গৃহস্থালির কাজে ব্যবহৃত জলে খাদ্যদ্রব্যের ফেলে দেওয়া অংশ, তরকারির পচা অংশ, মলমূত্র, সাবান, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি মিশে থাকে। ব্যাকটেরিয়া, কলকারখানার বর্জ্য দ্বারা জলদূষণ প্রোটোজোয়া ইত্যাদি মিশ্রিত এই নোংরা জল নর্দমা, পয়ঃপ্রণালী দিয়ে নদ-নদী, হ্রদ, খাল বা সমুদ্রের জলে পড়ে ও দূষণ ঘটায়।

④ যথেচ্ছ ব্যবহারজনিত দূষণ: বিভিন্ন জলাশয়ের জল, মানুষের যথেচ্ছ ব্যবহার, যেমন-মলমূত্র ত্যাগ, স্নান, বাসনপত্র ধোয়া, গবাদি পশুর স্নান বা কাপড় কাচার ফলে দূষিত হয় ও তাতে বিভিন্ন প্রকার জীবাণু জন্মায়।

⑤ ভারী ধাতু দ্বারা দূষণ: ভৌমজলের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটির নীচে জলস্তর স্বাভাবিকের থেকে অনেক নীচে নেমে যায়, যার ফলে জলে আর্সেনিক ও ফ্লুরাইডের ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং জলদূষণ ঘটায়।

৪. জলদূষণের ফলাফল বা ক্ষতিকর প্রভাব সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: জলদূষণের ফলাফল বা ক্ষতিকর প্রভাব: পরিবেশে জল দূষিত হলে তার ক্ষতিকর প্রভাব সমগ্র জীবজগতের ওপর পড়ে। ক্ষতিকর প্রভাবগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

① জীবাণুর প্রাদুর্ভাব ও রোগের সম্ভাবনা: [i] দূষিত জল পান করা, দূষিত জলে রান্না করা, হাত-পা ধোয়া বা স্নান করার ফলে মানুষের অনেক ধরনের স্বাস্থ্যহানি ঘটে থাকে। জলবাহিত কিছু রোগের নাম নীচের সারণিতে উল্লেখ করা হল।

কারক জীব বা জীবাণুরোগের নাম
ভাইরাসভাইরাল হেপাটাইটিস A ও E, পোলিও, শিশুদের ডায়ারিয়া ইত্যাদি।
ব্যাকটেরিয়াটাইফয়েড, ব্যাসিলারি ডিসেন্ট্রি, কলেরা ইত্যাদি।
প্রোটোজোয়াআমাশয়, জিয়ার্ডিয়াসিস ইত্যাদি।
কৃমিজাতীয়টিনিয়াসিস, অ্যাসক্যারিয়েসিস ইত্যাদি।

[ii] পারদ, লোহা, নিকেল, তামা, ক্লোরিন প্রভৃতি মিশ্রিত জল থেকে বিভিন্ন প্রকার চর্মরোগ ও পেটের অসুখ হয়। [iii] অধিক ফ্লুরিনযুক্ত জলথেকে অ্যালার্জি, বৃক্কের সমস্যা, প্যারালাইসিস, অস্থি বিকৃতি প্রভৃতি রোগ হয়।

②ইউট্রোফিকেশন: কাপড় কাচার ডিটারজেন্টে ব্যবহৃত ফসফেটজাতীয় রাসায়নিক বিভিন্ন জলাশয়ে গিয়ে জমা হয় ও সেখানে ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটায়। এই ঘটনাকে ইউট্রোফিকেশন বলে। এর ফলে জলের গুণগতমান হ্রাস পায়। জল দুর্গন্ধযুক্ত, বিস্বাদ, পানের অযোগ্য হয়। এ ছাড়া শৈবাল নিঃসৃত টক্সিন অন্যান্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটায়।

③অন্যান্য: [i] দূষিত জল মাটিতে বসবাসকারী উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও অন্যান্য জীবাণুকে ধ্বংস করে মাটির উর্বরতা কমিয়ে দেয়। [ii] নদী, পুকুর বা সমুদ্রের জল দূষিত হলে মাছসহ বহু সামুদ্রিক প্রাণী মারা যায়।

9. মৃত্তিকা দূষণ কাকে বলে? মৃত্তিকা দূষণের তিনটি কারণ লেখো।

উত্তর: মৃত্তিকা দূষণ: প্লাস্টিক, পলিথিন, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক, দৈনন্দিন আবর্জনা, ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া ইত্যাদি দূষক মাটিতে মিশে ভূপৃষ্ঠের ওপরে বিন্যস্ত মাটির স্তরের যে ভৌত, রাসায়নিক ও জৈব বৈশিষ্ট্যের অবাঞ্ছিত ও ক্ষতিকর পরিবর্তন বা ক্ষয়সাধিত হয়, তাকে মৃত্তিকা দূষণ বলে।

মৃত্তিকা দূষণের কারণ: বিভিন্ন কারণে মৃত্তিকা দূষণ ঘটে থাকে। এখানে মৃত্তিকা দূষণের তিনটি কারণ আলোচনা করা হল।

① জীবাণু সংক্রমণ: পৌর বর্জ্যের সঠিক ট্রিটমেন্ট না হলে তা মৃত্তিকা দূষণ ঘটায়। তা ছাড়াও হাসপাতালের পরিত্যক্ত বর্জ্য কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য, গুপালনক্ষেত্রের বর্জ্যতে অবস্থিত জীবাণু সরাসরি অথবা মশা, মাছি, ইঁদুর বাহিত হয়ে মানবদেহে রোগ সৃষ্টি করে।

② রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ: অত্যধিক ফলন পাওয়ার জন্য কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, আগাছানাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়। এর ফলে মাটিতে বসবাসকারী বিভিন্ন উপকারী জীব, যেমন- কেঁচো ও নাইট্রোজেন সংশ্লেষকারী বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে মাটির স্বাভাবিক উর্বরাশক্তি নষ্ট হয় এবং কীটনাশকগুলি মাটিতে জমে মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পায় এবং মাটি ক্রমে বন্ধ্যা হয়ে যায়।

③ অন্যান্য: বিভিন্ন শিল্প থেকে নির্গত নানা রকম অম্লঘটিত বর্জ্য পদার্থ মাটিতে ফেলার ফলে মাটির অম্লতা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত হারে জলসেচের ফলে মাটিতে লবণাক্ততার সৃষ্টি হয় ও মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়।

10. মৃত্তিকা দূষণের ফলাফল বা ক্ষতিকর প্রভাবগুলি লেখো।

অংশ প্রশ্ন, জীববিবর্ধন একটি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: মৃত্তিকা দূষণের ফলাফল বা মৃত্তিকা দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব: মৃত্তিকা দূষণের ফলে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব লক্ষ করা যায়। এগুলি নীচে আলোচনা করা হল।

①মানুষের ওপর প্রভাব: মানুষের ওপর মৃত্তিকা দূষণের যেসব প্রভাব দেখা যায়, তা হল-[i] রোগজীবাণুর সংক্রমণ: মাটি দূষিত হলে মাটিতে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর প্রাদুর্ভাব বাড়ে। ওই জীবাণু খুব সহজে মানুষের দেহে প্রবেশ করার সুযোগ পায় এবং মানবদেহে বিভিন্ন রকম রোগ সৃষ্টি করে, যার ফলে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়, যেমন- টিটেনাস রোগ সৃষ্টি করে Clostridium tetani (ক্লসট্রিডিয়াম টিটানি), গ্যাস-গ্যাংগ্রিন রোগ সৃষ্টি করে Clostridium perfringes (ক্লসট্রিডিয়াম পারফ্রিনজেস), অ্যাসপারজিলোসিস রোগ সৃষ্টিকারী Aspergillus sp. (অ্যাসপারজিলাস) প্রভৃতি অণুজীব। এর সংস্পর্শে কর্ণকুহর, শ্বাসনালী প্রভৃতি স্থানে সংক্রমণ ঘটে। [ii] খাদ্য উৎপাদন হ্রাস: মাটি দূষিত হলে, মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা শক্তি ব্যাহত হয়। ফলে খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমে যায়। পরোক্ষভাবে মানুষের খাদ্যের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ হয় না এবং মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে অর্থাৎ, মৃত্তিকাদূষণ থেকে মানুষের মধ্যে অপুষ্টিজনিত ব্যাধির সৃষ্টি হয়।

② জীববিবর্ধন: খাদ্যশৃঙ্খল বরাবর নীচ থেকে ক্রমশ উচ্চতর পুষ্টিস্তরে কোনো দূষকের ক্রমবর্ধমান সঞ্চয়ের ঘটনাকে জীববিবর্ধন বলে। জীববিবর্ধন দুটি ধাপে ঘটে থাকে। যেমন- [i] জৈবসঞ্চয়ন: মৃত্তিকায় উপস্থিত ক্রমক্ষয়হীন দূষকগুলি বাস্তুতন্ত্রের প্রতিটি খাদ্যশৃঙ্খলে পুঞ্জীভূত হওয়ার ঘটনাকে জৈবসঞ্চয়ন বলে। দূষকগুলি সাধারণত প্রাণীর মেদকলা বা অ্যাডিপোজ কলায় সঞ্চিত হয়ে থাকে। [ii] পুষ্টির স্তরে দূষকের ক্রমপ্রবাহ: খাদ্যশৃঙ্খলে প্রতিটি পুষ্টিস্তর খাদ্য-খাদক সম্পর্কযুক্ত হয়। ফলে জৈবসঞ্চয়নে পুঞ্জীভূত দূষক ক্রমান্বয়ে উৎপাদক, প্রাথমিক খাদক, গৌণ খাদক, প্রগৌণ খাদক প্রভৃতি পথে জীবদেহে অধিক ঘনত্বে সঞ্চিত হয়। এর ফলে সর্বোচ্চ খাদকস্তরে দূষক ঘনত্ব সর্বাধিক হয় (নীচের রেখাচিত্র লক্ষণীয়)। কীটনাশক DDT-এর পুষ্টিস্তরে ঘনত্ব বৃদ্ধি জৈববিবর্ধনের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

কৃষিক্ষেত্রে মাটিতে DDT

বৃষ্টির জলে ধুয়ে জলাশয়ে DDT প্রবেশ

একটি শৈবালের দেহে 0.04ppm DDT সঞ্চয়

একটি বড়ো মাছ এইরকম 5টি ছোটো মাছ খেলে তার দেহে 0.2×5=1ppm DDT সঞ্চয়

একটি ছোটো মাছ (প্রথম শ্রেণির খাদক) এইরূপ 5টি শৈবাল খেলে দেহে 0.04×5=0.2ppm DDT সঞ্চয়

11. শব্দদূষণের কারণগুলি লেখো।

শব্দদূষণের ফলাফলগুলি আলোচনা করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, মানুষের ওপর শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব উল্লেখ করো।

উত্তর: শব্দদূষণের কারণ: শব্দদূষণ বিভিন্ন কারণে ঘটে। নীচে কয়েকটি কারণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল।

① যানবাহন: যানবাহন হল শব্দদূষণের অন্যতম কারণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরাঞ্চলে যানবাহনের পরিমাণও ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলস্বরূপ শব্দদূষণও দিনের পর দিন ধরে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেসব যানবাহন থেকে বেশি শব্দদূষণ ঘটে সেগুলি হল মোটর সাইকেল, মোটর গাড়ি, বাস, লরি, ট্রাম, টেম্পো ইত্যাদি। এরোপ্লেন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি ওঠা ও নামার সময়ে ভীষণমাত্রায় শব্দদূষণের সৃষ্টি হয়। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (CPCB বা Central Pollution Control Board) যানবাহনজনিত শব্দের মাত্রা 70dB নির্ধারণ করলেও বহু শহরে শব্দের মাত্রা এর চেয়ে অনেক বেশি।

② শিল্প: বিভিন্ন কলকারখানায় দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি থেকে সৃষ্ট আওয়াজ মারাত্মক শব্দদূষণ ঘটায়। ভারতে শিল্পক্ষেত্রে ৪ ঘণ্টায় গড়ে সর্বাধিক 90 dB শব্দ সর্বোচ্চ সহনমাত্রা বলে নির্ধারিত। কিন্তু জাহাজ ও বিমান নির্মাণ, কাঠের মিল, খাদ্য উৎপাদন শিল্প, আসবাব নির্মাণ শিল্প, ধাতব পণ্য উৎপাদন শিল্পে এই সহনমাত্রার থেকে অনেক বেশি প্রাবল্যের শব্দ উৎপন্ন হয়। এর ফলস্বরূপ মারাত্মক শব্দদূষণ ঘটে।

③ অন্যান্য কারণ: এ ছাড়াও বর্তমানকালে শব্দদূষণের অন্যতম কারণ হল শব্দবাজি ও লাউডস্পিকারের অযাচিত ব্যবহার। প্রাকৃতিক কারণ যেমন, ধস, বজ্রপাত প্রভৃতিও শব্দদূষণ ঘটিয়ে থাকে।

শব্দদূষণের ফলাফল

① মানুষের ওপর প্রভাব: শব্দদূষণ মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা এবং হৃৎপিন্ডের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন- [i] কানের ওপর প্রভাব: দীর্ঘদিন ধরে উচ্চশব্দ (100 dB)-র কারণে অন্তঃকর্ণের অর্গান অফ কর্টি (শ্রুতিযন্ত্র)-র রোমকোশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস পায় বা বিনষ্ট হয়। একে ‘নয়েস ইনডিউস্ড হিয়ারিং লস’ (NIHL) বলে। NIHL দু-ভাবে মানুষের ক্ষতি করে-[a] উচ্চ প্রাবল্যের শব্দ এককালীন হঠাৎ শুনলে অন্তঃকর্ণের কক্লিয়া অংশের স্থায়ীভাবে শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়, একে অ্যাকাউস্টিক ট্রমা বলে। যেমন-150 dB-এর ঊর্ধ্বে বাজির শব্দ, বিস্ফোরণ প্রভৃতি। [৮] সাধারণ শব্দের থেকে উচ্চ প্রাবল্যের কোনো শব্দ (85 dB) অনবরত শুনতে থাকলে শ্রবণ ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। [ii] হৃৎপিণ্ডের ওপর প্রভাব: উচ্চ প্রাবল্যের শব্দ হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করে। যেমন- [a] উচ্চ প্রাবল্যের শব্দে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ু ও ভেগাস স্নায়ুর উদ্দীপনা বৃদ্ধি পায় ও হৃৎস্পন্দন বাড়ে। [b] 90 dB-এর ঊর্ধ্বে শব্দ হলে সিস্টোলিক রক্তচাপ যথেষ্ট বাড়ে। [c] অনবরত 60 dB-এর ঊর্ধ্বে শব্দ শুনলে হৃৎপিণ্ডের মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন নামক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এই রোগে হৃস্পেশিতে আংশিকভাবে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গিয়ে পেশির কার্যকারিতা নষ্ট হয়।

② অন্যান্য প্রাণীর ওপর প্রভাব: শব্দদূষণ মানুষ ছাড়াও অন্য প্রাণীর ওপরে ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। যেমন- [i] বধিরতা: 85dB-এর ওপরে শব্দ হলে তা প্রাণীদের শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস করে। [ii] প্রজননে বাধা: শব্দদূষণের ফলে বহু প্রাণী এবং পাখি প্রজননে অংশ নিতে পারে না। ফলে ওইসব প্রাণী ও পাখির নতুন অপত্য সৃষ্টি বাধাপ্রাপ্ত পায়। [iii] ভূণের বৃদ্ধি হ্রাস: ইঁদুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উচ্চশব্দে ভ্রুণের বৃদ্ধি হ্রাস পায়। [iv] মাস্কিং: পরিবেশের নানা শব্দ প্রাণীর আত্মরক্ষা, শিকার প্রভৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। শব্দদূষণের ফলে সেগুলি শুনতে না পেলে (মাস্কিং) প্রাণীর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে।

12 ‘অরণ্যকে প্রকৃতির ফুসফুস বলা হয়’- কথাটির ব্যাখ্যা দাও। প্লাস্টিক দূষণ রোধে তোমার ভূমিকা কী হওয়া উচিত?

উত্তর:  অরণ্যকে প্রকৃতির ফুসফুস বলা হয় কারণ অরণ্যের গাছপালাই বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেনের অন্যতম উৎস হিসেবে কাজ করে। সবুজ গাছপালা সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির সময় প্রচুর পরিমাণ অক্সিজেন বায়ুমন্ডলে বা পরিবেশে ত্যাগ করে। অরণ্যের গাছপালা প্রাণীদের শ্বাসকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে। তারা পরিবেশে বা বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেন ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের ভারসাম্যও বজায় রাখে। তাই অরণ্যকে ‘প্রকৃতির ফুসফুস’ বলা হয়।

প্লাস্টিক দূষণ রোধে আমার যে ভূমিকা পালন করা উচিত তা হল-

① বাড়ির ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্যগুলিকে যত্রতত্র ছুঁড়ে ফেলে না দিয়ে,

মিউনিসিপ্যালিটির কর্মীদের হাতে রিসাইক্লিং-এর জন্য তুলে দেওয়া। ② প্লাস্টিক সামগ্রী এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা, বিকল্প এবং জৈবভঙ্গুর সামগ্রী ব্যবহার করা। ও প্রতিদিন কমপক্ষে একজন ব্যক্তিকে প্লাস্টিক দূষণ বিষয়ে অবহিত করার চেষ্টা করা।

13 বর্তমানে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য সংবাদপত্র ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার চালানো হচ্ছে-এর পিছনে কী কারণ থাকতে পারে বলে তুমি মনে করো।

উত্তর: বর্তমানে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য সংবাদপত্র ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার চালানো হচ্ছে। এর পিছনে মূল কারণ হল- ① প্লাস্টিক দূষণের কবল থেকে পরিবেশকে রক্ষা করা। প্লাস্টিক দামে সস্তা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ টেকসই হওয়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্লাস্টিক উপাদান ব্যবহার করা হয়। ② প্লাস্টিক সহজে মাটির সাথে মিশে যায় না। এরা জৈবভঙ্গুরও নয়। প্লাস্টিক বর্জ্য পদার্থ দীর্ঘদিন অবিকৃত অবস্থায় থাকে, ফলে এগুলি পরিবেশকে দূষিত করে তোলে। ও প্লাস্টিক দূষণ ভূমি বা মাটির পাশাপাশি জলপথ ও মহাসাগরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। এটি অনুমান করা হয় যে, প্রতিবছর উপকূলীয় সম্প্রদায় থেকে 1.1-8.8 মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে প্রবেশ করে। জানা 

থেকে 1950 থেকে 2013 সালের শেষ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী সমুদ্রে 86 মিলিয়ন টন প্লাস্টিক জমা হয়েছে।

কিছু গবেষকের মতে, 2050 সাল নাগাদ ওজনের দিক থেকে সাগরে মাছের চেয়ে বেশি প্লাস্টিক সঞ্চিত থাকতে পারে। ④ 1950 থেকে 2018 সাল পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক 6.3 মিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়েছে, যার মধ্যে আনুমানিক 9% পুনর্ব্যবহার করা হয়েছে এবং 12% পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মোট কথা এই বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে প্রবেশ করেছে এবং সমগ্র বাস্তুতন্ত্র জুড়ে সমস্যার সৃষ্টি করছে। ⑤ বহু জীবন্ত প্রাণী, বিশেষ করে সামুদ্রিক প্রাণী প্লাস্টিক দূষণের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কখনও তারা প্লাস্টিক বস্তুর মধ্যে আটকে পড়েছে, আবার কখনও প্লাস্টিক বর্জ্য পদার্থকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার ফলে শারীরিক সমস্যায় ভুগে মৃত্যুবরণ করেছে। ⑥ ক্ষয়প্রাপ্ত প্লাস্টিক বর্জ্য সরাসরি ব্যবহার, পরোক্ষ ব্যবহার এবং বিভিন্ন হরমোন প্রক্রিয়ার ব্যাঘাতের ফলে মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। তাই প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে পারলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। এই প্রেক্ষিতেই সংবাদপত্র ও সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার চালানো হচ্ছে। 

14. নিম্নলিখিত দূষকগুলি পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যে কী কী প্রভাব ফেলে তা মূল্যায়ণ করো-অভঙ্গুর কীটনাশক, পরাগরেণু, ফসফেট ও নাইট্রেট সমূহ রাসায়নিক সার, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জীবাণু সমৃদ্ধ আবর্জনা, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন।

উত্তর:  উল্লিখিত দূষকগুলির পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবের মূল্যায়ণ

দূষকপরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবের মূল্যায়ণ
অভঙ্গুর কীটনাশকবিভিন্ন প্রকার অভঙ্গুর কীটনাশক খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করলে প্রতিটি খাদ্যস্তরে তাদের গাঢ়ত্বের মাত্রা জীববিবর্ধন প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পায়। এদের প্রভাবে পরাগসংযোগের সাহায্য জীবের মৃত্যু ঘটে, পাখির ডিমের খোলক পাতলা হতে থাকে, মানুষের দেহে ক্ষতিকর টিউমার সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষেত্রে ক্যানসার রোগ হয়।
পরাগরেণুপরাগরেণু হল এক বিশেষ প্রকার বায়ুদূষক, এটি মানবদেহে অ্যালার্জি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে।
ফসফেট ও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ রাসায়নিক সারফসফেট ও নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ রাসায়নিক সার যা কৃষিজমি থেকে ধুয়ে আসে তা পরিপোষকরূপে কাজ করে। সার মিশ্রিত জলে শ্যাওলা বা আগাছা জাতীয় উদ্ভিদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে। একে ইউট্রোফিকেশন বলে। ফলে জলাশয়ে BOD বেড়ে যায়। জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী মরে জলাশয়ের তলদেশে থিতিয়ে পড়ে। ফলে জলাশয় ভরাট হয়ে আসে।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জীবাণু সমৃদ্ধ আর্বজনাবিভিন্ন প্রকার দূষণ সৃষ্টি করে। পরিবেশে বিভিন্ন প্রকার রোগ জীবাণুর বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। এর থেকে বিভিন্ন প্রাণী ও মানুষের দেহেও রোগের সংক্রমণ ঘটে। ওই আবর্জনা মাটির উৎপাদিকা শক্তিও হ্রাস করে।
ক্লোরোফ্লুরোকার্বনগ্রিনহাউস প্রভাবে CFC-এর অবদান প্রায় 13 শতাংশ। পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। মানবদেহে ত্বকের ক্যানসার পরোক্ষভাবে ত্বরান্বিত করে। ওজোন গহ্বর সৃষ্টিতেও এটি বিশেষ ভূমিকা নেয়।

5. Fill in The Blanks

1. একটি গৌণ বায়ুদূষক হল PAN

2. রেফ্রিজারেশন শিল্পে  CFC ব্যবহৃত হয়।

3. নাইট্রোজেনঘটিত একটি গ্রিনহাউস গ্যাস হল নাইট্রাস অক্সাইড  ।

4. জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে CO₂নামক গ্রিনহাউস গ্যাস বায়ুতে মেশে।

5. ধানখেত থেকে উৎপন্ন একটি দাহ্য গ্রিনহাউস গ্যাস হল মিথেন

6. ধুলো, ধাতব কণা, অণুজীব, পরাগরেণু প্রভৃতিকে একত্রে অ্যারোসল  বলে।

7. অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী একটি গ্যাস হল SO₂

৪. অম্লবৃষ্টির কারণে জলের pH মাত্রা কমে যায়।

9. মার্বেল ও চুনাপাথর নির্মিত সৌধগুলি অ্যাসিড বৃষ্টি দ্বারা আক্রান্ত হয়।

10. মার্বেলে উপস্থিত ক্যালশিয়াম কার্বনেট অম্লবৃষ্টির সঙ্গে বিক্রিয়া করে সালফেট ও নাইট্রেট উৎপন্ন করে।

11. তাজমহলের সৌন্দর্য বিনষ্ট করছে অ্যাসিড বৃষ্টি

12. বায়ুদূষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ব্যাধি হল ব্রংকাইটিস

13. সিলিকোসিস  রোগের জন্য দায়ী একটি দূষক হল সিলিকাতত্ত্ব।

14. শ্বাসনালীর ব্যাস কমে স্থায়ী রোগকে বলে COPD ।  

15. DDT হল একটি জৈব সন্বয়ক ও জৈববিবর্ধক

16. জলাশয়ে পুষ্টি বস্তুর অতিবৃখিকে ইউট্রোফিকেশন বলে।

17. খাদ্যশৃঙ্খল যত বড়ো হয় দূষণ ঘনত্ব তত বেশি হয়।

18. শৈবাল নিঃসৃত নিউরোটক্সিন হল একটি ক্ষতিকর টক্সিন।

19. দূষিত জল পান করার ফলে সৃষ্ট একটি রোগ হল কলেরা

20. ভৌমজলে আর্সেনিক মিশ্রিত হলে আর্সেনিকোসিস রোগ হয়।

21. টাইফয়েড একটি  জলবাহিত/ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ।

22. সালমোনেল্লা টাইফি নামক ব্যাকটেরিয়া টাইফয়েড রোগ সৃষ্টি করে।

23. বাজারে বহুল বিক্রীত বোতলজাত ঠান্ডা পানীয় প্রস্তুত করতে মিষ্টি জলের প্রচুর অপচয় ঘটে।

24. মাটিতে বসবাসকারী জীবাণুকে ইউডেফিক জীবাণু বলে।

25. মাটিজাত একটি কুমির নাম হল অ্যাসকারিস

26. মৃত্তিকা দূষণঘটিত একটি রোগ হল টিটেনাস

27. শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক হল ডেসিবেল । 

28. CPCB নির্ধারিত যানবাহনজনিত শব্দদূষণ মাত্রা 70-80 ডেসিবেল।

29. 100  ডেসিবেলের উর্ধ্বের শব্দ দীর্ঘদিন শুনলে ‘নয়েজ ইনডিউসড হিয়ারিং লস’ হয়।

30. অনবরত 60 ডেসিবেলের উর্ধ্বে শব্দ শুনলে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

31. উচ্চ প্রাবল্যের শব্দে হৃৎস্পন্দন বাড়ে

6. True And False

1. মিথেন একটি গ্রিনহাউস গ্যাস।

সত্য [সূত্র-বায়ুমণ্ডলের মিথেন সূর্যের তাপ শোষণ করে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে অংশগ্রহণ করে, তাই এটি একটি গ্রিনহাউস গ্যাস।]

2. SO₂ প্রত্যক্ষ গ্রিনহাউস গ্যাস নয়।

সত্য [সূত্র-এটি অ্যারোসল তৈরিতে সাহায্য করে যা গ্রিনহাউস এফেক্ট সৃষ্টি করে, তাই SO₂ হল অপ্রত্যক্ষ গ্রিনহাউস গ্যাস।]

3. এক মাইক্রনের কম ব্যাস সম্পন্ন ক্ষুদ্র ভাসমান কণাকে অ্যারোসল বলে।

সত্য [সূত্র-অ্যারোসল বায়ুদূষণকারী একটি প্রধান উপাদান।]

4. SPM-ঘটিত রোগে শ্বাসনালী স্ফীত হয়।

সত্য [সূত্র-SPM শ্বাসনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে।]

5. সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিড, অ্যাসিড বৃষ্টির কারণ।

সত্য [সূত্র-সালফার ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলি বৃষ্টির জলকণার সঙ্গে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে H₂SO₄ ও HNO3 উৎপন্ন করে।] 

6. SO_{2} ও NH_{3} হল দুটি গ্রিনহাউস গ্যাস।

মিথ্যা [সূত্র-প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি হল CO_{2} CH_{4} O_{3} CFCs, N_{2}*O ইত্যাদি।]

7. নাইট্রাস অক্সাইড একটি গ্রিন হাউস গ্যাস।

সত্য [সূত্র-N₂O মূলত জীবাশ্ম জ্বালানি ও কৃষি সার ব্যবহারে উৎপন্ন হয়।]

৪. ব্ল‍্যাক লাং জলদূষণঘটিত একটি রোগ।

 ▶ মিথ্যা [সূত্র-কয়লা খনিতে দীর্ঘকালীন কাজ করলে কয়লার গুঁড়ো থেকে ফুসফুসে ব্ল‍্যাক লাং রোগ হয়।

9. অ্যাসিড বৃষ্টির কারণ হল বায়ুদূষণের ফলে সৃষ্ট S02NO2

সত্য [সূত্র-এই অক্সাইডগুলি বায়ুর জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড ও নাইট্রিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে এবং সেগুলি পৃথিবীতে বৃষ্টিরূপে ঝরে পরে।]

10. তাজমহল হল অ্যাসিড বৃষ্টি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত একটি সৌধ।

সত্য [সূত্র-তাজমহল মার্বেল পাথর নির্মিত হওয়ায় তা অ্যাসিড দ্বারা সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।]

11. জলের pH কমলে জলজ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়।

সত্য [সূত্র-জলের pH কমলে (আম্লিক হলে, অ্যাসিড বৃষ্টির কারণে) বা pH বাড়লে (ক্ষারীয় হলে, ডিটারজেন্ট ব্যবহারে) জলজ জীব মারা যায়। ফলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ব্যাহত হয়।]

12. বায়ুদূষণের কারণ হল ইউট্রোফিকেশন।

মিথ্যা [সূত্র-এটি জলদূষণের কারণ।]

13. পরিবেশের C*O_{2} -এর পরিমাণ বাড়লে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।

সত্য [সূত্র- C*O_{2} একটি গ্রিনহাউস গ্যাস। এর পরিমাণ বাড়লে তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।]

14. বায়ুদূষণ পরিমাপের একক হল ডেসিবেল।

মিথ্যা [সূত্র-শব্দদূষণ মাপা হয় ডেসিবেল একক দ্বারা।]

15. আর্সেনিকোসিসের কারণ হল জলে পারদদূষণ।

মিথ্যা [সূত্র-জলে আর্সেনিকের দূষণের কারণে আর্সেনিকোসিস রোগ হয়।]

16. ইউট্রফিক জলাশয়ের জল নীলচে বর্ণের হয়।

মিথ্যা [সূত্র-জল সবুজ বা লাল বর্ণের হয়ে যায়।]

17. BOD-এর সম্পূর্ণ নাম হল Biological Oxygen Demand |

মিথ্যা [সূত্র-BOD-এর সম্পূর্ণ নাম হল Biological Oxygen Demand 1]

18. আমাশয় এন্টামিবা নামক ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয়।

মিথ্যা [সূত্র-আমাশয় এন্টামিবা নামক প্রোটোজোয়ার সংক্রমণে হয়।]

19. অ্যালড্রিন একটি অজৈব পেস্টনাশক।

মিথ্যা [সূত্র-এটি জৈব পেস্টনাশক (অরগ্যানোক্লোরিন)।]

20. BHC একটি আগাছানাশক।

মিথ্যা [সূত্র-এটি একটি পতঙ্গনাশক রাসায়নিক যার জৈবসঞ্চয় ঘটে থাকে।]

21. DDT হল জৈব ভঙ্গুর দূষক।

মিথ্যা [সূত্র-এটি জৈব অভঙ্গুর।]

22. ভঙ্গুর দূষক জীববিবর্ধনের জন্য দায়ী।

মিথ্যা [সূত্র-জীববিবর্ধনের জন্য দায়ী দুষকগুলি অভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এগুলি জীবদেহ থেকে রেচিত না হয়ে দেহে সঞ্চিত হয় ও ক্ষতিসাধন করে।]

23. 90 dB-এর ঊর্ধ্বে শব্দ হলে সিস্টোলিক রক্তচাপ বাড়ে।

সত্য [সূত্র-এর ঊর্ধ্বে হৃৎস্পন্দন মাত্রা বৃদ্ধি, হৃদবৈকল্য প্রভৃতি সমস্যাও দেখা যায়।]

24. মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন জলদূষণঘটিত একটি রোগ।

মিথ্যা [সূত্র—শব্দদূষণের ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশিতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে রোগটি হয়ে থাকে।]

25. ‘গ্রিন মাফলার’ শব্দ দূষণের সঙ্গে সম্পর্কিত।

সত্য [সূত্র-গ্রিন মাফলার শব্দদূষণের নিয়ন্ত্রণের জন্য গৃহীত একটি পদক্ষেপ, যা সবুজ গাছপালা লাগানোর মাধ্যমে সম্পাদন করা হয়।]

26. CPCB নির্ধারিত যানবাহনজনিত শব্দদূষণ মাত্রা 40 dB।

মিথ্যা [সূত্র-এই মান 70-80 dB।]

——————————————————————————————————————–

পব়িবেশ এবং মানব জনসষ্টি

1. MCQs Question Answer

1. পৃথিবীব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার-

(A) 1.2%  ✔

(B) 2.2%

(C) 3.2%

(D) 4.2%

2. অত্যধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে বলা হয়-

(A) জন সম্প্রসারণ 

(B) জন উন্নয়ন 

(C) জনবিস্ফোরণ  ✔

(D) জনসংকোচন

3. UNFPA-এর বর্তমান নামটি কী? 

(A) ইউনাইটেড নেশন্স ফান্ড ফর পপুলেশন 

(B) ইউনাইটেড নেশন্স পপুলেশন ফান্ড  ✔

(C) ইউনাইটেড নেশন্স ফিনানসিয়াল প্রপার্টি 

(D) ইউনাইটেড নেশন্স ফান্ড ফর পারসোনাল অ্যাক্টিভিটিস

4. কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের বা দেশের মোট জনসংখ্যাকে ওই অঞ্চলের বা দেশের মোট জমির পরিমাণ দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায়- 

(A) জনসংখ্যা আয়তন 

(B) জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ 

(C) ধারণ ক্ষমতা 

(D) জনসংখ্যা ঘনত্ব ✔

5. যে প্রভাবকটি জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিপরীতে কাজ করে, তা হল- 

(A) সম্পৃক্ত বিন্দু 

(B) ধারণ ক্ষমতা 

(C) জনসংখ্যার চাপ 

(D) পরিবেশগত বাধা ✔

6. বিজ্ঞানের যে শাখায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভবিষ্যতে জনসংখ্যার পরিবর্তন সম্পর্কিত আলোচনা করা হয়, তাকে বলে- 

(A) ডেমোগ্রাফি  ✔

(B) ক্যালিগ্রাফি 

(C) বায়োগ্রাফি 

(D) সাইকোলজি

7. প্রতি বছর 11 জুলাই দিনটিতে আমরা পালন করি- 

(A) বিশ্ব পরিবেশ দিবস 

(B) বিশ্ব AIDS দিবস 

(C) বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ✔ 

(D) বিশ্ব জলাভূমি দিবস

৪. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ঘটা বাস্তুতান্ত্রিক ক্ষতি হল- 

(A) ভূমিক্ষয়

(B) জৈববৈচিত্র্যের হ্রাস 

(C) মরুভূমির বিস্তার 

(D) সবকটি ✔

9. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কোন্ সমস্যা দেখা দেয়? 

(A) মানব উন্নয়ন

(B) সামাজিক বিভাজন 

(C) খাদ্য সংকট  ✔

(D) কোনোটিই নয়

10. জনসংখ্যা ক্রমবৃদ্ধি ঘটলে ঘটে থাকে-

(A) পরিবেশ বিনাশ 

(B) জলদূষণ

(C) দারিদ্র্য 

(D) সবকটি ✔

11. নীচের কোন্টি ‘প্রকৃতির বৃক্ক’ নামে পরিচিত? 

(A) সমুদ্র 

(B) জলাভূমি  ✔

(C) N₂ গ্যাস 

(D) নালি 

12. বায়ুদূষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রোগগুলি হল- 

(A) ডায়ারিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস 

(B) হেপাটাইটিস, ব্রংকাইটিস, বধিরতা 

(C) ব্রংকাইটিস, হাঁপানি, ফুসফুস ক্যানসার  ✔

(D) ফুসফুস ক্যানসার, পোলিও, ম্যালেরিয়া

13. বায়ুতে পরাগরেণু, ছত্রাকের রেণু ও ধূলিকণার পরিমাণ হঠাৎ বেড়ে গেলে নীচের কোন্ সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় তা স্থির করো।

(A) যক্ষ্মা 

(B) অ্যাজমা  ✔

(C) ম্যালেরিয়া 

(D) ডেঙ্গু

14. শ্বাসনালী ও ব্রংকাসের সংকোচনে শ্বাসক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে তাকে বলা হয়- 

(A) এমফাইসিমা 

(B) অ্যাজমা ✔ 

(C) নিউমোনিয়া 

(D) ক্যানসার

15. বিশ্ব অ্যাজমা দিবস হল-

(A) 5 সেপ্টেম্বর 

(B) 6 জুন 

(C) 5 মে ✔ 

(D) ৪ ডিসেম্বর

16. অ্যাজমা রোগের কারণ- 

(A) ধূলিকণা  ✔

(B) তেজস্ক্রিয় পদার্থ

(C) N₂ গ্যাস 

(D) SO₂ 

17. হাঁপানির জন্য দায়ী- 

(A) হিস্টামিন 

(B) প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন 

(C) লিউকোট্রিন

(D) সবকটি  ✔

18. ব্রংকাইটিস হল- 

(A) মস্তিষ্কের রোগ 

(B) হৃৎপিণ্ডের রোগ 

(C) যকৃতের রোগ 

(D) ফুসফুসের রোগ ✔

19. ফুসফুসের বায়ু চলাচলের পথে প্রদাহ হল- 

(A) ব্রংকাইটিস ✔

(B) ক্যানসার 

(C) অ্যাসবেসটোসিস 

(D) হাইপক্সিয়া 

20. ব্রংকাইটিসের লক্ষণগুলি হল- 

(A) কাশি ও কফ 

(B) দমবন্ধভাব 

(C) অবরুদ্ধ নাক 

(D) সবকটি ✔

21. ফুসফুসের কলাকোশের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের ফলে ফুসফুসের কাজে বাধা সৃষ্টি হলে, তাকে বলে- 

(A) ফুসফুসীয় যক্ষ্মা 

(B) ফুসফুস ক্যানসার ✔

(C) এমফাইসিমা 

(D) সিস্টিক ফাইব্রোসিস

22. ফুসফুস ক্যানসারের জন্য দায়ী গ্যাসটি হল- 

(A) রেডন  ✔

(B) কার্বন ডাইঅক্সাইড 

(C) হাইড্রোজেন 

(D) নাইট্রোজেন

2. Very Short Question Answer

1. 2018-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে জনসংখ্যার বাৎসরিক বৃদ্ধির হার কত শতাংশ?

উত্তর: 1.2 শতাংশ।

2. ভারতবর্ষে 2001-2010 সালের মধ্যে কত শতাংশ কৃষিজমি থেকে বাসভূমি হয়েছে?

উত্তর: 1 শতাংশ।

3. বিশ্বে সবচেয়ে ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশ কোন্ট?

উত্তর: মোনাকো।

4. মানব জনগোষ্ঠীর বিজ্ঞানসম্মত অধ্যয়নকে কী বলে?

ডেমোগ্রাফি।

5. জৈবিক ক্ষমতা কাকে বলে?

উত্তর: পরিমিত শর্তসাপেক্ষে সর্বাধিক জনন ক্ষমতার হারকে জৈবিক ক্ষমতা বলে।

6. পপুলেশনের সর্বোচ্চ বৃদ্ধি অর্জনের প্রধান অন্তরায় কী?

উত্তর: পরিবেশগত বাধা।

7. কৃষিজমির পরিমাণ কোন্ কারণে হ্রাস পাচ্ছে?

অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে কৃষিজমি বাসভূমি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে।

৪. ‘ফেকানডিটি’ কী?

‘ফেকানডিটি’ শব্দটির মাধ্যমে বোঝানো হয়-একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা পপুলেশনের বহুসংখ্যক অপত্য বা সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা।

9. ভাইটাল সূচক কাকে বলে?

কোনো ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠী (পপুলেশন) একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যতসংখ্যক অপত্য (সন্তান) সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়, তাকে ভাইটাল সূচক বলা হয়।

10. অ্যাজমা বা হাঁপানি কী-জাতীয় রোগ?

অ্যাজমা বা হাঁপানি একপ্রকার ফুসফুসের অ্যালার্জি-ঘটিত রোগ।

11. অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে কোল্পকার রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়?

অ্যাজমা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে ইওসিনোফিল নামক শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

12. ফুসফুসের ক্লোমশাখা বা ব্রংকাসের প্রদাহ হয় কোন্ রোগে?

ব্রংকাইটিস।

13. ব্রংকাইটিসে কাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি?

ঝালাইকর্মী, দমকলকর্মী ও ধূমপায়ীদের ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

14.ডাক্তার তোমাকে বুকের এক্স-রে ও লাং ফাংশন টেস্ট করতে বললেন। তোমার কোন্ রোগের সম্ভাবনা আছে যা বায়ুদূষণের ফলে হয়ে থাকতে পারে?

ব্রংকাইটিস ও হাঁপানি।

15. সার্জিকাল মাস্ক পরলে কোন্ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব?

সার্জিকাল মাস্ক পরলে বায়ুবাহিত বিভিন্ন রোগ এবং ব্রংকাইটিস-জাতীয় রোগ (Chronic Obstructive Pulmonary Disease) থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

16.ফুসফুস ক্যানসার কোন্ কলাকোশে সৃষ্টি হয়?

ফুসফুস ক্যানসার মূলত ক্লোমশাখার আবরণী কলাকোশে সৃষ্টি হয়।

17. প্রধান দু-প্রকার ফুসফুস ক্যানসারের নাম লেখো।

প্রধান দু-প্রকার ফুসফুস ক্যানসার হল-ক্লোমশাখার ক্যানসার অর্থাৎ ব্রংকোজেনিক কারসিনোমা (95%) ও প্লুরাপর্দার ক্যানসার অর্থাৎ মেসোথেলিওমা।

18.অ্যাসবেসটোসিস কাদের মধ্যে দেখা যায়?

অ্যাসবেসটস শিল্পের শ্রমিকদের মধ্যে অ্যাসবেসটোসিস রোগ দেখা দেয়।

19.অ্যাসবেসটস ও ক্রোমিয়াম দেহের কোন্ অংশের ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত?

অ্যাসবেসটস ও ক্রোমিয়াম ফুসফুস ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

20. ক্যানসার কী?

যে রোগে দেহের কলাকোশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয় এবং তা সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে (মেটাস্ট্যাসিস) অন্যান্য কলার ক্ষতিসাধন করে, তাকে ক্যানসার বলে।

21. একটি ভৌত কারসিনোজেন ও একটি রাসায়নিক কারসিনোজেনের নাম লেখো।

একটি ভৌত কারসিনোজেন হল অতিবেগুনি রশ্মি এবং একটি রাসায়নিক কারসিনোজেন হল ফরম্যালিন।

22. মেটাস্ট্যাসিস কী?

ক্যানসারের চূড়ান্ত পর্যায়ে (advanced stage) ক্যানসার কোশগুলি দেহের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ার বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, এই পর্যায়কে মেটাস্ট্যাসিস বলে।

23. একটি প্রাকৃতিক কারসিনোজেনের নাম লেখো।

অতিবেগুনি রশ্মি বা UV রশ্মি।

24. কীটনাশক এবং আগাছানাশকের একটি করে ক্ষতিকর প্রভাব উল্লেখ করো।

কীটনাশক ও আগাছানাশক কারসিনোজেন-রূপে কাজ করে ও ক্যানসার রোগ সৃষ্টি করে।

25. ক্যানসার সৃষ্টির জন্য সক্রিয় জিনকে কী বলে?

অঙ্কোজিন।

26. ক্যানসার সৃষ্টিতে সক্ষম পদার্থকে কী বলা হয়?

কারসিনোজেন।

3. Short Question Answer

1. মানব জনসমষ্টি বা পপুলেশনের সংজ্ঞা দাও।

উত্তর: একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের মোট সংখ্যাকে মানব জনসমষ্টি বলা হয়।

2. আদমশুমারি কাকে বলে?

উত্তর: জনগণনা এবং জনগণনা-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কাজকে বলে আদমশুমারি। ভারতে প্রতি 10 বছর অন্তর জনগণনা করা হয়। ভারতে সর্বশেষ জনগণনা করা হয় 2011 সালে।

3. জনবিস্ফোরণ বা অতিপ্রজতা কাকে বলে?

উত্তর: অনিয়ন্ত্রিত জন্মহারের কারণে কোনো নির্দিষ্ট পপুলেশনের আকৃতি যদি এমন হয় যে, তার সদস্য সংখ্যা ধারণ ক্ষমতাকে অতিক্রম করে, তাহলে সেই অবস্থাকে জনবিস্ফোরণ বা অতিপ্রজতা বলে।

4. জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ কী?

উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি হল-① শিক্ষার অভাব, কুসংস্কার ও ধর্মীয় প্রভাবের জন্যই মূলত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জন্মহার বেশি যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ। ② খাদ্য, ওষুধপত্র ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র অধিক উৎপাদনের ফলে মানুষের গড় আয়ু যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মৃত্যুর হারও কমেছে। ③ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম অনুমান ও বিভিন্ন মহামারিজনিত রোগের প্রকোপ কম হওয়াতে জনসংখ্যাও ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

5. জনসংখ্যা বৃদ্ধির দুটি ক্ষতিকারক দিক উল্লেখ করো।

উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধির দুটি ক্ষতিকারক দিক হল-① প্রাকৃতিক সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার: খনিজ তেল ও অন্যান্য খনিজ উপাদান, জলাভূমি, খাদ্য প্রভৃতির অতিরিক্ত ব্যবহারে প্রাকৃতিক সম্পদ নিঃশেষিত অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। ② পরিবেশদূষণ: অতিরিক্ত জনসংখ্যার উন্নয়নের প্রবল চাপে বায়ু, মাটি, জল, শব্দ প্রভৃতির দূষণ প্রবল হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

6. মানব জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র্যের দুটি ক্ষতি লেখো।

উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জীববৈচিত্র্যের দুটি ক্ষতি হল- ① জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বনভূমি বিনাশ করে বাসস্থান সৃষ্টির ঘটনা ঘটে। ফলে জীবের বাসস্থান হ্রাস পায় ও জীববৈচিত্র্য যা কষ্টের সম্মুখীন হয়। ② জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বায়ু ও জলদূষণ বৃদ্ধি পায় যা জীবের বেঁচে থাকার নানা সমস্যা সৃষ্টি করে।

7. জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশগত বাধা কী কী?

উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পরিবেশগত বাধাগুলি হল① খাদ্যের অভাব, ② জল ও বাসস্থানের অভাব, ও রোগের প্রাদুর্ভাব, ④ দুর্ভিক্ষ ও মহামারি।

৪. জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অরণ্য বিনাশ করা হলে কী সমস্যা হয়?

উত্তর:  জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে অরণ্য বিনাশের সমস্যাগুলি হল- ① বৃষ্টিপাতের মাত্রা হ্রাস পায় ও তা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ② ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায় ও মরুকরণ ঘটে থাকে। ও জীবের বাসস্থান ও খাদ্যের অভাব ঘটে, ফলে জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ঘটে। ④ জলদূষণ ও বায়ুদূষণ ঘটে থাকে।

9. ওভার পপুলেশন কীভাবে জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ফেলে আলোচনা করো।

উত্তর: ওভার পপুলেশনের ফলে মিষ্ট জলের সংকট দেখা যায়। ফলে জীব সংকটগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ② বনজ সম্পদের অধিক আহরণের ফলে জীবের বাসস্থান, খাদ্য ও প্রজননে সমস্যা দেখা দেয়। ③ অধিক দূষণের ফলে জীব ও তার বাসস্থান বিনষ্ট হয়।

10. জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ঘটায়?

উত্তর: শিল্প, কৃষি ও অন্যান্য স্বাচ্ছন্দ্য দানকারী পদার্থের ব্যবহারের ফলে নানা দূষক, যেমন গ্রিনহাউস গ্যাস (CH₁, CFCs) পরিবেশে মুক্ত হয়। এগুলি বিশ্ব উন্নায়ন ঘটায়। ② জনসংখ্যা বৃদ্ধি বনবিনাশের কারণ। এর ফলে মরুকরণ ঘটে, ফলে বৃষ্টিপাতের ধরনের পরিবর্তন ঘটে এবং বৃষ্টিপাতের সামগ্রিক মাত্রাও হ্রাস পায়।

11. ক্রমাগত জলাভূমি ধ্বংস ও কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাসের পরিবেশগত পরিণাম কী কী হতে পারে?

উত্তর: জলাভূমি ধ্বংসের পরিবেশগত পরিণাম হল-① জলাভূমিতে যে জলজ জীবগুলি বসবাস করে (যেমন-জলজ গাছ, মাছ, ব্যাং, সাপ ইত্যাদি) তাদের বৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে। ② পৃথিবীব্যাপী জলের অভাব দেখা দিচ্ছে। ও স্থানীয় আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তিত হচ্ছে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।

কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাসের পরিবেশগত পরিণাম হল-① উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে ও খাদ্যের অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। ② স্বল্প পরিমাণ জমিতে অধিক ফসল উৎপাদনের প্রচেষ্টায় জমিতে রাসায়নিক সার অধিক মাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়াও অধিক জলসেচের ফলে জলের অভাব দেখা দিচ্ছে। ③ অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদনের উদ্দেশ্যে উচ্চফলনশীল শস্যবীজ ব্যবহৃত হওয়ায় কোনো শস্যের স্থানীয় ভ্যারাইটিগুলি লোপ পাচ্ছে। ফলে জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হচ্ছে।

12 ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার একটি সমস্যা হল জলাভূমি ধ্বংস-এর ফলে যে যে ঘটনা ঘটতে পারে, তার দুটি উল্লেখ করো।

উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য 11 নং প্রশ্নোত্তরের প্রথম অংশ দ্যাখো।

13. জলাশয়কে ‘প্রকৃতির বৃক্ক’ বলা হয় কেন?

উত্তর: জলাশয় পরিবেশের দূষকগুলি থিতিয়ে, পরিস্রাবণ করে পরিবেশকে পরিশ্রুত রাখে। বৃক্ক যেমন রক্তকে পরিশ্রুত করে দেহকে সুস্থ রাখে, জলাশয়ও তেমনি স্থানীয় পরিবেশের দূষক হ্রাস করে। এ ছাড়া বর্ষাকালে অতিরিক্ত জল সংগ্রহ করে ও গ্রীষ্মে জলের জোগান দিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখে।

14. অ্যাজমা বা হাঁপানির কারণগুলি কী কী?

উত্তর: অ্যাজমা বা হাঁপানির কারণগুলি হল-① পরিবেশগত কারণ: বিভিন্ন প্রাকৃতিক অ্যালারজেন-এর সংস্পর্শে রোগটি বৃদ্ধি পায়, যেমন- প্রাণীর মল, উদ্ভিদের পরাগরেণু, ধুলো ও ছত্রাক। এ ছাড়া, বিভিন্ন গৌণ দূষক, যেমন-ওজোন, ফরম্যালডিহাইড, PAN প্রভৃতি অ্যালারজেনের প্রভাব বাড়িয়ে দিয়ে অ্যাজমার প্রকোপ বৃদ্ধি করে। ② মনুষ্যসৃষ্ট কারণ: কলকারখানা বা গৃহে কয়লা, তেলের দহনে সৃষ্ট ধোঁয়া, কলকারখানায় সৃষ্ট সালফার ডাইঅক্সাইড (SO₂), নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইড ইত্যাদি।

15. হাঁপানির রোগ লক্ষণগুলি লেখো।

উত্তর: হাঁপানির রোগ লক্ষণগুলি হল-① কাশি প্রধানত রাতের দিকে কাশি হওয়া। ② দম বন্ধ হয়ে আসা। ও বুকে চাপ অনুভব করা। ④ বুকে সাঁইসাঁই আওয়াজ হওয়া।

16. অ্যাসবেসটোসিস কী?

উত্তর: অ্যাসবেসটসের কণা ফুসফুসে ঢুকে শ্বাসতন্ত্রের যে রোগ সৃষ্টি করে তাকে অ্যাসবেসটোসিস বলে। এর ফলে ফাইব্রোসিস ও প্লুরা পর্দার ক্যানসার হতে পারে।

17. ব্রংকাইটিসের রোগ লক্ষণগুলি লেখো।

উত্তর:  ব্রংকাইটিসের রোগ লক্ষণগুলি হল-① কাশি ও শ্বাসকষ্ট, ② ক্লান্ডি, ও স্বল্প জ্বর ও ঠান্ডাবোধ, ④ বুকে চাপ ধরা অর্থাৎ দমবন্ধভাব।

18. মানুষের ফুসফুস ক্যানসারের একটি কারণ ও একটি উপসর্গ লেখো।

অংশ প্রশ্ন, ক্যানসারের জন্য দায়ী মানবসৃষ্ট কারণগুলি লেখো।

উত্তর: ফুসফুস ক্যানসারের কারণ হল-মানুষের ফুসফুস ক্যানসারের একটি কারণ হল ধূমপান। তামাকজাত ধোঁয়ায় ফরম্যালডিহাইড, অ্যাসিট্যালডিহাইড প্রভৃতি কারসিনোজেন থাকে। এ ছাড়াও দূষিত পরিবেশে দীর্ঘদিন বসবাস করার ফলেও ফুসফুসের ক্যানসার হতে পারে।

ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গ হল-এই রোগে অনবরত কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত নির্গমন ঘটে থাকে। তা ছাড়াও গলায় ঘরঘর শব্দ, শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা, নিউমোনিয়া ও ব্রংকাইটিস সংক্রমণও ঘটে থাকে।

19. কারসিনোজেন কী?

উত্তর: যেসব ভৌত বা রাসায়নিক পদার্থ বা রশ্মি, কোশের DNA-র মধ্যে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করে, তাদের কারসিনোজেন বলে। এটি একপ্রকার মিউটাজেন (মিউটেশন ঘটাতে সক্ষম পদার্থ)।

20. সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়ায় উপস্থিত তিনটি কারসিনোজেনের নাম লেখো যেগুলি ফুসফুস ক্যানসার ঘটায়।

উত্তর: সিগারেট বা বিড়ির ধোঁয়ায় উপস্থিত তিনটি কারসিনোজেন, যেগুলি ফুসফুস ক্যানসার ঘটায়, সেগুলি হল-অ্যাসিট্যালডিহাইড, ভিনাইল ক্লোরাইড, ফরম্যালডিহাইড।

21. ক্যানসার সৃষ্টিকারী দুটি রাসায়নিক পদার্থের নাম লেখো। অথবা, রাসায়নিক কারসিনোজেন-এর নাম লেখো।

উত্তর: ক্যানসার সৃষ্টিকারী দুটি রাসায়নিক পদার্থ হল-বেঞ্চোপাইরিন (অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন, যা তামাক সেবনের ফলে দেহে প্রবেশ করে) এবং EMS (ইথাইল মিথেন সালফোনেট)।

22. ক্যানসার সৃষ্টির প্রধান দুটি পর্যায় কী কী?

উত্তর: ক্যানসার সৃষ্টির প্রধান দুটি পর্যায় হল① ক্যানসার সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে স্বাভাবিক কোশের মধ্যে জিনগত পরিবর্তনের কারণে কোশে দ্রুত অস্বাভাবিক বিভাজন শুরু হয় এবং সেখান থেকে টিউমার সৃষ্টি হয়। ② দ্বিতীয় পর্যায়ে ম্যালিগ্যান্ট টিউমারের কোশগুলির আন্তরকোশীয় সংযোগ বিনষ্ট হওয়ায় তা রক্ত বা লসিকায় বাহিত হয়ে অন্য স্থানে পৌঁছোয় (মেটাস্ট্যাসিস) ও অনিয়ন্ত্রিত কোশ বিভাজন শুরু করে গৌণ টিউমার তৈরি করে রোগটি দেহে ছড়িয়ে দেয়।

4. Long Question Answer

1. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যাগুলি উল্লেখ করো।

অথবা, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ফলে একটি অঞ্চলে কী কী পরিবেশগত সমস্যা ঘটতে পারে?

উত্তর: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সমস্যা: উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির ফলে অর্থনৈতিক পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে এবং বিভিন্নপ্রকার সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই অংশে কয়েকটি সমস্যা সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

① প্রাকৃতিক সম্পদের অতিব্যবহার এবং তার হ্রাস: পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ অফুরন্ত নয়। মানব জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে প্রাকৃতিক সম্পদের সংকট দেখা দিয়েছে। অতিব্যবহারের ফলে পৃথিবীতে ব্যক্তিপিছু প্রাকৃতিক সম্পদের মাত্রা হ্রাস পাচ্ছে।

② অরণ্য ধ্বংস এবং বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়: জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিল্পস্থাপন, বাসস্থান প্রতিষ্ঠা, বনজ দ্রব্য (যেমন-কাঠ, মধু) আহরণ, কৃষিজমির বিস্তার, গবাদিপশুর চারণভূমি বৃদ্ধি প্রভৃতি নানা কারণে বর্তমানে অরণ্য ধ্বংসের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান মানবসংখ্যা ও তাদের নির্বিচার ক্রিয়াকলাপের ফলে মরুভূমির বিস্তার ও বাস্তুতন্ত্রে অন্যান্য উপাদানের ক্ষয়, যেমন-ভূমিক্ষয়, জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি প্রভৃতি দেখা দিচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন-বন্যা, অনাবৃষ্টি, ঝড় প্রভৃতি ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

③কৃষিজমির হ্রাস: জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে বাসস্থানের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় মূলত শহরাঞ্চলগুলির প্রান্তভাগে অবস্থিত কৃষিজমি বাসভূমিতে পরিবর্তিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নশীল স্থানে কৃষিজমি হ্রাসের হার সর্বাধিক। ফলে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

④ মিষ্টি জলের অভাব: পৃথিবীর সমগ্র জলের 1% হল পানযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য। জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির ফলে কৃষি, শিল্প এবং দৈনন্দিন বিভিন্ন প্রয়োজনে এই জলের ব্যবহার অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ভৌমজলস্তর ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

⑤ বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন এবং বিশ্ব উন্নায়ন: শিল্প, কৃষি ও মানব উন্নয়নের অন্যান্য বিভিন্ন কার্যকলাপে সৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলের ভৌত ও রাসায়নিক অবস্থার পরিবর্তন করে। তাপশক্তি ও পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনকেন্দ্র বায়ুমণ্ডলের উয়তা বৃদ্ধি করে। ফলস্বরূপ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে বিশ্ব উন্নায়ন ঘটছে।

⑥ বায়ু, মাটি এবং জলদূষণ: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত কলকারখানা স্থাপন, কৃষিজ দ্রব্য উৎপাদন, বনজ সম্পদ আহরণ, ভূগর্ভস্থ জল নিষ্কাশন, কৃষিজমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অত্যাধিক ব্যবহারের ফলে ক্রমাগত বায়ু, মাটি, জল ইত্যাদি পরিবেশের উপাদানগুলি দূষিত হচ্ছে।

⑦ জলাভূমি ধ্বংস: অধিক জনসংখ্যার প্রভাবে বাসস্থান নির্মাণ, শিল্পস্থাপন, নগরায়ণ, কৃষিজমির সম্প্রসারণের ঘটনায় সাম্প্রতিক- কালে পুকুর, হ্রদ ধ্বংস করা হচ্ছে। ফলস্বরূপ জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে, স্থানীয় আবহাওয়া পরিবর্তিত হচ্ছে ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

⑧ খাদ্যসংকট: অত্যধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি হল বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সমস্যা। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের খাদ্য উৎপাদন ও তার সঠিক বণ্টন করা কঠিন কাজ। এর পরিণতি হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বহু মানুষ অপুষ্টির শিকার হচ্ছে এবং খাদ্যাভাবে অসংখ্য মানুষ, বিশেষত শিশুর মৃত্যু ঘটছে।

⑨সমাজের ওপর প্রভাব: সমাজে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, অপরাধ-প্রবণতা প্রভৃতিও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সমানুপাতিক হারে বাড়তে থাকে।

[Note: এখানে উল্লিখিত সমস্যাগুলির মধ্যে প্রশ্নমান অনুযায়ী কয়েকটি উল্লেখ করতে হবে।]

2. জনসংখ্যা বৃদ্ধি কীভাবে জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত করে, তা সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য: জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেভাবে জনস্বাস্থ্যকে বিঘ্নিত করে, তা এখানে উল্লেখ করা হল।

①খাদ্যাভাব ও অপুষ্টি: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কৃষিজমির অভাবে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পায় এবং খাদ্যের অভাব দেখা যায়। খাদ্যাভাব এবং অপুষ্টি জনস্বাস্থ্যকে ব্যাহত করে।

②শিল্পঘটিত দূষণ ও জনস্বাস্থ্য: বৃহৎ জনসংখ্যার বিভিন্ন চাহিদা মেটাতে  প্রচুর সংখ্যায় শিল্পস্থাপন করা হচ্ছে। এইসব শিল্প থেকে নির্গত ধোঁয়া, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, ধাতব বর্জ্য পদার্থ ক্রমেই বায়ু, জল ও মাটিকে দূষিত করে তোলে। এর ফলে জনস্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।

③ আবর্জনাঘটিত রোগের প্রকোপ: জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আবর্জনার পরিমাণ বাড়ে। আবর্জনা সময়মতো অপসারণ করা না হলে, সেখানে ইঁদুর, মাছি, মশার উপদ্রব বাড়ে। সেখান থেকে কলেরা, বসন্ত, প্লেগ, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি রোগের প্রকোপ বেড়ে জনস্বাস্থ্য বিঘ্নিত হয়।

④ চিকিৎসার সুযোগ সুবিধা হ্রাস: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য শয্যা এবং ওষুধ পাওয়া দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। অনেক সময় শয্যার অভাবে মেঝেতে শুইয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে হয়। ফলে চিকিৎসার অভাবে অনেকসময়ে রোগীর মৃত্যুও ঘটে।

3. “ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার একটি সমস্যা হল বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন এবং বিশ্ব উন্নায়ন”।-পরিবেশে এর কী কী প্রভাব পড়তে পারে তার সারসংক্ষেপ করো। শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের নানা শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা যায়-এরূপ দুটি সমস্যার নাম লেখো এবং তাদের একটি করে উপসর্গ বিবৃত করো।

উত্তর: পরিবেশের ওপর বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ও বিশ্ব উন্নায়নের প্রভাব: জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট একটি সমস্যা হল বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ও বিশ্ব উন্নায়ন। পরিবেশের ওপর এর প্রভাবগুলি হল- ① পরিবেশে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলির পরিমাণ পরিবর্তিত হচ্ছে। এই গ্যাসগুলি পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলস্বরূপ মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। মেরু ভালুক, মেরু খ্যাঁকশিয়াল প্রভৃতি প্রাণীর বাসস্থান হারিয়ে যাওয়ায় তাদের অস্তিত্ব সংকট দেখা দিচ্ছে।② বিশ্ব উয়ায়নের ফলে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে সমুদ্র পার্শ্ববর্তী নীচু স্থলভাগ সমুদ্রের গ্রাসে চলে যাচ্ছে। ③ বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তন ও বিশ্ব উন্নায়নের ফলে পৃথিবীব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে। ④ বিশ্ব উন্নায়নের ফলে বহু জীব তথা সমগ্র বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট হচ্ছে, জীববৈচিত্র্যও হ্রাস পাচ্ছে। যেমন-অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ্ ক্রমশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে চলেছে। ⑤ জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে কৃষিকাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং খাদ্যসংকট দেখা দিচ্ছে। ⑥ পরিবর্তিত তাপমাত্রায় নানা রোগজীবাণু অধিক সক্রিয় হচ্ছে এবং বিভিন্ন রোগ (যেমন-মশাবাহিত রোগ)-এর প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

4. ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ফলে আগামী দিনে যে সকল সংকটের মুখোমুখি আমাদের হতে হবে, তার ফলাফল বিশ্লেষণ করো।① খনিজ সম্পদের সংকট, ② শক্তি সংকট, ③ পানীয় জলের সংকট, ④ অরণ্য সম্পদের সংকট, ⑤ খাদ্য সংকট।

উত্তর: খনিজ সম্পদের সংকট: ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য অতিরিক্ত কয়লা, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি খনিজ সম্পদ আহরণ করার ফলে বর্তমানে খনিজ সম্পদের সংকট দেখা দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, 2014 সালের হিসেব অনুযায়ী পৃথিবীতে মাত্র 188.8 মিলিয়ন টন খনিজ তেল অবশিষ্ট রয়েছে। যা 46.2 বছর বাদে শেষ হয়ে যাবে।

② শক্তি সংকট: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে, যারা পৃথিবীতে শক্তির চাহিদা বাড়ছে। এই শক্তির বেশিরভাগটাই আসে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন থেকে। জীবাশ্ম জ্বালানির সীমিত ভান্ডার অদূর অবিষ্যতে নিঃশেষ হয়ে যাবে।

③ পানীয় জলের সংকট: পৃথিবীতে মিষ্টিজল মাত্র 3%। এর 1/3 অংশ হিমবাহ ও মেরু বরফ। পৃথিবীর সমগ্র জলের মাত্র 1% পানযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জলের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই ভৌমজলস্তর ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

④ অরণ্য সম্পদের সংকট: জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিল্পস্থাপন, বনজদ্রব্য (যেমন-কাঠ, মধু) আহরন, কৃষিজমির বিস্তার, গবাদি পশুর চারণভূমি বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে অরণ্য ধ্বংসের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

⑤ খাদ্য সংকট: জনসংখ্যাবৃদ্ধির ফলে খাদ্যের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। 2000-2008 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলিতে অপুষ্টির শিকার হয়েছে প্রায় 20 মিলিয়ন মানুষ। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতি 3.6 সেকেন্ডে একজন ব্যক্তির বুভুক্ষজনিত কারণে মৃত্যু হয়। এর 75%-ই হল শিশু।

5. ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ভূগর্ভস্থ জলের সংকট তৈরি করেছে-তোমার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বক্তব্যটি | যুক্তিসহ সমর্থন করো। মানুষের বসতি বৃদ্ধি কীভাবে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলেছে তার একটি ধারণা মানচিত্র নির্মাণ করো।

উত্তর: ভারতবর্ষের বিভিন্ন শহরে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ভূগর্ভস্থ জলের সংকট তৈরি করেছে। এই বক্তব্যটি খুবই যুক্তপূর্ণ। কারণ-① নীতি আয়োগ প্রকাশিত 2018 সালের রির্পোট অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা প্রায় 130 কোটি। সেখানে 60 কোটি নাগরিক বর্তমানে মাঝারি থেকে তীব্র জলকষ্টের শিকার এবং বছরে প্রায় 2 লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে শুধুমাত্র নিরাপদ জলের অভাবে। ② সারা দেশের 75% বাড়িতে শুদ্ধ পানীয় জলের কোনো উৎস নেই। ③ 84% গ্রামীণ বাড়িতে নলবাহিত জলের সংযোগ অনুপস্থিত। ④ জলসম্পদ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী 2030 সালে জলের সার্বিক চাহিদা ব্যবহারযোগ্য জলের পরিমাণের দ্বিগুণ হতে চলেছে যা কিনা জলসংকটকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে। ⑤ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বেঙ্গালুরু, দিল্লি, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদসহ দেশের 21টি শহরে ভূগর্ভস্থ জলের ভান্ডার শেষ হয়ে যাবে। আগামী 2030-এর পরে 40% নাগরিক শুদ্ধ পানীয় জল পাবেন না। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আর্সেনিক ও ক্লোরাইডের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। ৪ ভূগর্ভস্থ জল তুলে শিল্প, কলকারখানা ও অন্যান্য কাজে লাগানোয় জলস্তর ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। মহারাষ্ট্রের ঔরাঙ্গাবাদে ট্রেনে চেপে 14-15 কিমি দূরে পানীয় জল কিনতে যেতে হয় মানুষকে।

সুন্দরবন অঞ্চলে মানব ঘনত্ব তথা মানুষের বসতি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি, গোচারণ ও বাসস্থানের জন্য ম্যানগ্রোভ বিপুলমাত্রায় হ্রাস পাচ্ছে। এই সমস্ত কারণে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ বস্তুতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ও সেখানকার জৈববৈচিত্র্য ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

6. অ্যাজমা বা হাঁপানি কাকে বলে? অ্যাজমার পরিবেশগত কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো। 

উত্তর: অ্যাজমা বা হাঁপানি: প্রদাহজনিত কারণে মানুষের শ্বাসনালী স্ফীত হয়ে বায়ু চলাচলের পথ রুদ্ধ হওয়া ও শ্বাসকষ্ট-সহ অন্যান্য সমস্যার সৃষ্টি হওয়াকে অ্যাজমা বা হাঁপানি বলে। অ্যাজমা বা হাঁপানি হল একটি দীর্ঘকালীন পরিবেশঘটিত শ্বাসতন্ত্রীয় রোগ।

অ্যাজমার পরিবেশগত কারণ: অ্যাজমা অ্যালার্জিক এবং নন্- অ্যালার্জিক দুই প্রকারের হয়। এখানে দু-প্রকার অ্যাজমার পরিবেশগত কারণ আলোচনা করা হল।

① অ্যালার্জিক অ্যাজমা: এইপ্রকার অ্যাজমার জন্য দায়ী মূলত বায়ুদূষণ। পরিবেশের বিভিন্ন পদার্থ, যেমন-ধূলিকণা, পরাগরেণু ইত্যাদি অ্যালার্জেন তথা অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী পদার্থ দেহের ভিতরে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি ঘটে। অ্যালার্জি ঘটলে রক্তে ইওসিনোফিল কণিকার সংখ্যা বেড়ে যায়। ইওসিনোফিল ও মাস্ট কোশ থেকে হিস্টামিন, লিউকোট্রাইন নামক রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত হয়। এগুলি ব্রংকিওলের সংকোচন ঘটিয়ে অ্যালার্জিক অ্যাজমা সৃষ্টি করে। এই-জাতীয় অ্যাজমা শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

② নন-অ্যালার্জিক অ্যাজমা: এই-জাতীয় অ্যাজমার জন্য দায়ী হল অত্যধিক ধূমপান ও ভাইরাস সংক্রমণ। অনেক সময় নাকের ভিতর পলিপ সৃষ্টি হলেও এই-জাতীয় হাঁপানি বা অ্যাজমা ঘটে। এক্ষেত্রে ক্লোমশাখার প্রাচীরগাত্রে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এর ফলে ক্লোমশাখার অন্তঃস্থ গহ্বরের ব্যাস কমে যায় ও নন-অ্যালার্জিক অ্যাজমা ঘটে।

7. ব্রংকাইটিস কী? ব্রংকাইটিসের পরিবেশগত কারণ লেখো।

উত্তর:  ব্রংকাইটিস: ক্লোমশাখা বা ব্রংকাসের প্রদাহকে ব্রংকাইটিস বলা হয়। এটি হলে ফুসফুসের ব্রংকাস ও ব্রংকিওলগুলির শ্লেষ্মাপর্দায় প্রদাহ ঘটে। এটি প্রধানত দু-প্রকারের হয়। যথা-① তীব্র ব্রংকাইটিস, ② দীর্ঘকালীন ব্রংকাইটিস।

ব্রংকাইটিসের পরিবেশগত কারণ: ব্রংকাইটিসের জন্য দায়ী হল কিছু রাসায়নিক দূষক ও ধোঁয়া। এইগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।

① রাসায়নিক দূষক: বিভিন্ন রাসায়নিক দূষকগুলি (যেমন- অ্যাসবেসটস, সিলিকন ইত্যাদি) পরিবেশ থেকে শ্বাসক্রিয়ার সময় নাক দিয়ে শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে ব্রংকাইটিস ঘটে।

② ধোঁয়া: দীর্ঘকালীন বা ক্রনিক ব্রংকাইটিসের প্রধান কারণ হল ধোঁয়া। ঝালাই কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি এবং দমকলকর্মীদের ক্ষেত্রেও এই রোগের প্রকোপ লক্ষ করা যায়। পরিবেশদূষণকেও এই রোগের জন্য দায়ী করা যায়। কলকারখানার ধোঁয়া, গাড়ির পেট্রোল ও ডিজেলের ধোঁয়াও ব্রংকাইটিসের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই

রোগের ফলে শ্বাসনালীর ক্লোমশাখার শ্লেষ্মাস্তর থেকে অধিক পরিমাণ শ্লেষ্মা বা মিউকাস ক্ষরিত হয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করে।

৪. ক্যানসার রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশের ভূমিকার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, পরিবেশগত কী কী কারণে মানুষের ক্যানসার হতে পারে?

উত্তর: ক্যানসার রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশের ভূমিকা: ক্যানসার রোগটি জিন ও পরিবেশগত কারণের সমন্বয়ে ঘটে থাকে। ক্যানসার রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশের ভূমিকা নীচে আলোচনা করা হল।

① কীটনাশক ও আগাছানাশক: কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্নপ্রকার রাসায়নিক, জৈব-অভঙ্গুর কীটনাশক এবং আগাছানাশক খুব সহজেই মানবদেহে অতিরিক্ত মাত্রায় প্রবেশ করে ক্যানসার সৃষ্টি করে।

② পরিবেশগত অধিবিষ: বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জানা গেছে পরিবেশগত অধিবিষের সঙ্গে ক্যানসারের যোগসূত্র বর্তমান। কারসিনোজেন বা কারসিনোজেনিক পদার্থগুলি (যেমন-নিকোটিন, টার, কার্বন মনোক্সাইড, বেঞ্জোপাইরিন, হাইড্রোজেন সায়ানাইড প্রভৃতি) স্বাভাবিক কোশের DNA-র স্থায়ী পরিবর্তন ঘটায়। যার ফলে কোশে উপস্থিত জিন অঙ্কোজিনে রূপান্তরিত হয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করে।   

③তামাক সেবন: তামাকে নিকোটিন নামক থাকে। কারসিনোজেন দীর্ঘদিন জর্দা, খৈনি ইত্যাদি সেবন করলে তাতে উপস্থিত তামাক তথা নিকোটিন শরীরে প্রবেশ করে দাঁত, মুখ, জিহ্বা ও গলায় ক্যানসার সৃষ্টি করে।

④ধূমপান: যারা নিয়মিত ধূমপান করে তাদের দেহে বেঞ্চোপাইরিন, দগ্ধ টার ইত্যাদি কারসিনোজেনিক পদার্থগুলি খুব সহজে প্রবেশ করে এবং ফুসফুসের ক্যানসার ঘটায়।

⑤তেজস্ক্রিয় পদার্থ: যে সমস্ত ব্যক্তি তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে নিয়মিতকাজ করে থাকে তাদের শরীরে তেজস্ক্রিয়তাজনিত ক্যানসার বেশি দেখা যায়। খনিতে কর্মরত শ্রমিকরা রেডন নামক একপ্রকার তেজস্ক্রিয় গ্যাসের সংস্পর্শ এলে তাদের ফুসফুস ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

⑥ রাসায়নিক দূষক: বিভিন্ন রাসায়নিক দূষক, যেমন-অ্যাসবেসটস, ক্রোমিয়াম ইত্যাদির গুঁড়ো থেকেও ফুসফুসের ক্যানসার ঘটে। নির্মাণ কর্মী, ঝালাই-এর কাজে নিয়োজিত কর্মী, স্টিল কারখানার কর্মীদের দেহে খুব সহজেই অ্যাসবেসটস, ক্রোমিয়াম ইত্যাদি দূষক পদার্থ প্রবেশ করে। এর থেকে ফুসফুস ক্যানসারের প্রবণতা বাড়ে।

⑦ প্লাস্টিক দ্রব্য: এ ছাড়া যে সমস্ত কর্মী প্লাস্টিকজাত দ্রব্য উৎপাদনের কারখানায় কাজ করে তাদের মধ্যে যকৃৎ ও মূত্রথলির ক্যানসারের প্রবণতা বেশি হয়।

5. Fill in The Blanks

1. পৃথিবীর মোট জলের 3 শতাংশ হল মিষ্টি জল।

2. পৃথিবীতে পানযোগ্য জলের পরিমাণ সমগ্র জলের 1 শতাংশ

3. গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি বিশ্ব উয়ায়নের কারণ।

4. বিশ্ব উন্নায়নের ফলে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পায়।

5. বায়ুদূষণজনিত একটি ফুসফুসের রোগ হল ব্রংকাইটিস

6. অ্যাজমা একটি দীর্ঘকালীন শ্বাসতন্ত্রীয় রোগ।

7. উদ্ভিদের পরাগরেণু হাঁপানি রোগের একটি কারণ।

8. ব্রংকাইটিস রোগে ফুসফুসের ব্রংকাস ও ব্রংকিওলগুলির শ্লেষ্মাপর্দায় প্রদাহ ঘটে।

9. কয়লাখনিতে কর্মরত শ্রমিকদের ফুসফুসে অ্যানথ্রাকোসিস রোগ দেখা যায়।

10. ফুসফুসে তুলোর তন্তু জমে বিসিনোসিস নামক রোগ হয়।

11. শ্বাস চলাচল পথের প্রদাহ হল ব্রংকাইটিস

12. ধূমপানে ব্রংকাইটিস ও ফুসফুসের ক্যানসার রোগ হয়ে থাকে।

13. ফুসফুস ক্যানসারের মূল কারণ হল ধূমপান ।

14. কলাকোশ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হলে ক্যানসার রোগটি হয়।

15. মুখের অভ্যন্তরে ক্যানসার হওয়ার একটি প্রধান কারণ হল তামাক সেবন

16. 4 ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ক্যানসার দিবস পালিত হয়।

17. ক্যানসার সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থকে কারসিনোজেন বলে।

6. True And False

1. কয়লা ও তেলের দহনে সৃষ্ট ধোঁয়া অ্যাজমার একটি কারণ।

সত্য [সূত্র-এগুলি অ্যালার্জেন-রূপে অ্যাজমা সৃষ্টি করে বা তার প্রকোপ বৃদ্ধি করে।]

2. হাঁপানি রোগে ব্রংকিওলগুলি সরু হয়ে যায়।

সত্য [সূত্র-এর ফলে শ্বাসগ্যাস পরিবহণে সমস্যা সৃষ্টি হয় ও শ্বাসকষ্ট ঘটে থাকে।]

3. শ্বাসনালীর প্রদাহ সৃষ্টির কারণে ব্রংকাইটিস নামক রোগটি হয়।

সত্য [সূত্র-বায়ুদূষণ ও ধূমপানজনিত কারণে রোগটি হয়ে থাকে।]

4. ব্রংকাইটিস সৃষ্টিকারী রাসায়নিক দূষক হল অ্যাসবেসটস-এর সূক্ষ্ম গুঁড়ো।

সত্য [সূত্র-এর ফলে ফুসফুসের ক্লোমশাখায় প্রদাহ ঘটে।]

5. ক্যানসার রোগ সৃষ্টিতে পরিবেশদূষণের কোনও ভূমিকা নেই।

মিথ্যা [সূত্র-পরিবেশদূষণ ও জিনগত বংশানুসরণ উভয়ই ক্যানসার রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী।]

6. দেহের কলাকোশ অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হলে তা ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।

সত্য [সূত্র-অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত কোশ অন্যস্থানে বাহিত হয়ে নতুন টিউমার সৃষ্টি হলে তা ক্যানসারের বৈশিষ্ট্য (মেটাস্ট্যাসিস) বলে সূচিত হয়।]

7. কারসিনোজেনগুলি মানব জিনকে অঙ্কোজিন-এ পরিবর্তিত করে।

সত্য [সূত্র-মানব জিনকে সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করে কারসিনোজেন তাকে ক্যানসার সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করে।]

৪. বিনাইন টিউমার কোশে মেটাস্ট্যাসিস দেখা যায়।

মিথ্যা [সূত্র-ম্যালিগন্যান্ট টিউমার কোশ ক্যানসার সৃষ্টি করে ও মেটাস্ট্যাসিস ঘটায়।]

9. ক্যানসার রোগগ্রস্ত কোশগুলি সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাকে মেটাস্ট্যাসিস বলে।

▶ সত্য [সূত্র-ক্যানসারের চূড়ান্ত পর্যায়ে ক্যানসার কোশগুলি দেহের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে ও সেই স্থানে নতুন টিউমার সৃষ্টি করে।]

——————————————————————————————————————–

জীববৈচিত্ৰ্য এবং সংব়ক্ষণ 

1. MCQs Question Answer

1. ‘বায়োডাইভারসিটি’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন- 

(A) জিম্মারম্যান

(B) ডব্লিউ জি রোসেন ✔ 

(C) চার্লস ডারউইন 

(D) ল্যামার্ক

2. বর্তমান পৃথিবীতে মোট জীবপ্রজাতির সংখ্যা  (2011, নেচার পত্রিকা) 

(A) 1 মিলিয়ন 

(B) 8.7 মিলিয়ন  ✔

(C) 5.7 মিলিয়ন 

(D) 13.5 মিলিয়ন

3. জীববৈচিত্র্যের কারণ হল-

(A) বিবর্তন 

(B) অভিযোজন 

(C) মিউটেশন 

(D) সবকটি  ✔

4. প্রজাতির বিভিন্নতা সৃষ্টি হয়- 

(A) জিনগত জীববৈচিত্র্যের জন্য ✔

(B) বাস্তুতান্ত্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য

(C) প্রাণী বৈচিত্র্য জন্য

(D) উদ্ভিদ বৈচিত্র্যের জন্য

5. ‘বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য’ কথাটির সমার্থক হল-

(A) জিনগত বৈচিত্র্য 

(B) প্রজাতিগত বৈচিত্র্য 

(C) আবাসস্থলের বৈচিত্র্য ✔

(D) প্রাণী বৈচিত্র্য

6. স্থানীয় বৈচিত্র্য হল- 

(A) ডেল্টা বৈচিত্র্য 

(B) আলফা বৈচিত্র্য  ✔

(C) গামা বৈচিত্র্য

(D) বিটা বৈচিত্র্য

7. পৃথিবীতে অতিবৈচিত্র্যশালী দেশের সংখ্যা হল- 

(A) 10টি

(B) 13টি 

(C) 15টি 

(D) 17টি ✔

৪. জীববৈচিত্র্যপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে অন্যতম হল-

(A) ভারত, মাদাগাস্কার, অস্ট্রেলিয়া  ✔

(B) কানাডা, জাপান, নরওয়ে 

(C) উত্তর কোরিয়া, ইরান, লিবিয়া 

(D) বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা

9. নীচের যেখানে সর্বাধিক জীববৈচিত্র্য দেখা যায়- 

(A) বাদাবন 

(B) কোরাল রীফ 

(C) উন্নমন্ডলীয় বর্ষার অরণ্য  ✔

(D) তৈগা

10. ভারতে প্রাপ্ত উদ্ভিদ প্রজাতি, সমগ্র পৃথিবীর উদ্ভিদ প্রজাতির-

(A) 10% 

(B) 11% ✔

(C) 12% 

(D) 13%

11. মালদায় যেসব আম পাওয়া যায়, সেগুলির স্বাদ, রং, তন্ডুর পরিমাণ ও শর্করার পরিমাণ বিভিন্ন। এই বৈচিত্র্য যার পরিমাপ তা হল-

(A) সংকরায়ণ 

(B) প্রজাতিগত বৈচিত্র্য 

(C) প্রণোদিত পরিব্যক্তি 

(D) জিনগত বৈচিত্র্য ✔

12. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদটি হল- 

(A) সর্পগন্ধা  ✔

(B) সিনকোনা 

(C) পেয়ারা 

(D) কালমেঘ

13. ক্যাশমিয়ার, উল প্রস্তুত হয় যে প্রাণীর থেকে, তা হল- 

(A) ভেড়া

(B) ছাগল  ✔

(C) খরগোশ 

(D) বিড়াল

14. যে প্রজাতি সংখ্যায় স্বল্প হলেও অন্য প্রজাতি তথা বাস্তুতন্ত্রকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে, তাকে বলে-

(A) কিস্টোন প্রজাতি  ✔

(B) বিপন্ন প্রজাতি 

(C) লুপ্তপ্রায় প্রজাতি

(D) বিরল প্রজাতি

15. জীববৈচিত্র্য দিবস উদ্যাপন করা হয়- 

(A) 5 জুন 

(B) 22 মার্চ 

(C) 29 নভেম্বর 

(D) 22 মে ✔

16. হটস্পট ধারণাটির প্রবর্তক হলেন- 

(A) ডেভিড 

(B) সিম্পসন 

(C) মেয়ার 

(D) নরম্যান মায়ার্স ✔

17. সারা বিশ্বে জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের মোট সংখ্যা হল-

(A) 14টি 

(B) 24টি 

(C) 34টি  ✔

(D) 44টি

18. সারা পৃথিবীতে স্বীকৃত 34টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের মধ্যে ভারতে রয়েছে- 

(A) ২টি 

(B) 4টি  ✔

(C) ৪টি 

(D) 16টি

19. আমাদের দেশের একটি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট হিসেবে পরিগণিত হয়েছে- 

(A) নীলগিরি পর্বত

(B) আরাবল্লী পর্বত 

(C) পশ্চিমঘাট ✔

(D) পূর্বঘাট

20. কোল্টিন্ট হটস্পট নয়? 

(A) ইন্দো-বার্মা 

(B) পশ্চিমঘাট 

(C) সুন্দরবন ✔

(D) পূর্ব হিমালয় 

21. সিকিম, অসম, অরুণাচল প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের অন্তর্ভুক্ত হটস্পট অঞ্চলটি হল- 

(A) ইন্দো-বার্মা 

(B) পূর্ব হিমালয়  ✔

(C) পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা 

(D) সুন্দাল্যান্ড

22. পূর্ব-হিমালয় জীববৈচিত্র্য হটস্পটের একটি বিপন্ন প্রজাতি হল- 

(A) লায়ন-টেল্ড ম্যাকাক 

(B) ওরাং ওটাং 

(C) রেড পান্ডা  ✔

(D) নীলগিরি থর

23. হটস্পট অঞ্চলে যতগুলি সংবহনকলাযুক্ত এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব থাকবে, তা হল- 

(A) 1500  ✔

(B) 1600 

(C) 1700 

(D)  1800

24. ভারতের যে অংশ ইন্দো-বার্মা হটস্পটের অন্তর্গত তা হল- 

(A) আন্দামান ও নিকোবর 

(B) মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশ ✔

(C) তামিলনাড়ু ও নীলগিরি পার্বত্য অঞ্চল 

(D) সিকিম ও দার্জিলিং

25. সুন্দাল্যান্ড হল- 

(A) জাতীয় উদ্যান 

(B) হটস্পট  ✔

(C) অভয়ারণ্য 

(D) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ

26. সুন্দাল্যান্ড জীববৈচিত্র্য হটস্পটের অবস্থান হল-

(A) উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে 

(B) আন্দামান-নিকোবর, সুমাত্রা এবং জাভা প্রভৃতি দ্বীপ অঞ্চলে  ✔

(C) ভারতের পশ্চিম উপকূল বরাবর ঘন অরণ্যে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চলে 

(D) সিকিম, দার্জিলিং এবং তরাই অঞ্চলে

27. সুন্দাল্যান্ডে মোট যত সংখ্যক সংবহনকলাযুক্ত উদ্ভিদ আছে, তা হল- 

(A) 25,000  ✔

(B) 30,000 

(C) 35,000 

(D) 40,000

28. মেঘালয় যে বায়োডাইভারসিটি হটস্পটের অন্তর্গত সেটি হল-

(A) পূর্ব হিমালয় 

(B) পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও শ্রীলঙ্কা

(C) ইন্দোবার্মা  ✔

(D) সুন্দাল্যান্ড

29. ‘মেগাডাইভারসিটি নেশন’ বলা হয়, যে দেশকে সেটি হল- 

(A) ভারতবর্ষ  ✔

(B) রাশিয়া 

(C) ইরান 

(D) আফগানিস্তান

30. ভারতে যত শতাংশ উদ্ভিদ প্রজাতি এনডেমিক, তা হল- 

(A) প্রায় 11% 

(B) প্রায় 22% 

(C) প্রায় 33%  ✔

(D) প্রায় 44%

2. Very Short Question Answer

1. বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়ের মধ্যে যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে কী বলে?

জীববৈচিত্র্য।

2. পৃথিবীর কোথায় সবথেকে বেশি জীববৈচিত্র্য দেখা যায়?

ক্রান্তীয় বর্ষা অরণ্য অঞ্চলগুলিতে পৃথিবীর সবথেকে বেশি জীববৈচিত্র্য দেখা যায়।

3. সুস্থ ও কার্যকর বাস্তুতন্ত্রের ভিত্তি কী?

জীববৈচিত্র্য।

4. একই প্রজাতির মধ্যে জিনের বিভিন্ন প্রকরণ ও সমন্বয়কে কী বলে?

জিনগত বৈচিত্র্য।

5. কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির জীবের আপেক্ষিক প্রাচুর্যকে কী বলে?

প্রজাতিগত বৈচিত্র্য।

6. বাস্তুরীতি ও জীবসম্প্রদায়গত বৈচিত্র্যকে কী বলে?

বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।

7. পূর্ব হিমালয় হটস্পটের একটি বিলুপ্তপ্রায় স্তন্যপায়ী প্রাণীর নাম লেখো।

একশৃঙ্গ গন্ডার।

৪. পৃথিবীর সমগ্র জীবপ্রজাতির কত শতাংশ অতিবৈচিত্র্যশালী দেশে অবস্থিত?

70%।

9. ফ্লোরা কী?

কোনো একটি অঞ্চলের উদ্ভিদ প্রজাতির বিজ্ঞানসম্মত প্রজাতি পরিচয়কে ফ্লোরা বলে।

10. বিশ্ব পরিবেশ দিবস কবে পালিত হয়?

5 জুন।

11. পৃথিবী সংরক্ষণ দিবস কবে পালিত হয়?

3 ডিসেম্বর।

12. রিও বসুন্ধরা সম্মেলন কবে ও কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?

1992 সালে ব্রাজিলের রিও ডি-জেনিরো-তে বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

13. ভারতের কোন্ জীববৈচিত্র্যের হটস্পটে ‘লিফডিয়ার’ দেখা যায়?

পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে ‘লিফডিয়ার’ (Muntiacus putaoenesis) দেখা যায়।

14. বর্তমানে বিলুপ্ত ডোডো পাখি কোথায় পাওয়া যেত?

বর্তমানে বিলুপ্ত ডোডো পাখি মরিশাসে পাওয়া যেত।

15. CBD-এর পুরো নাম কী?

কনভেনশন অন বায়োডাইভারসিটি।

16. জীববৈচিত্র্যের হটস্পট কাকে বলে?

জীববৈচিত্র্যের প্রাচুর্য্যযুক্ত সর্বাধিক বিপদগ্রস্ত বাস্তুতান্ত্রিক অঞ্চলকে জীববৈচিত্র্যের হটস্পট বলে।

17. ভারতের দুটি জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের নাম লেখো।

① পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা এবং ② পূর্ব হিমালয়।

18. ভারতে মোট কতগুলি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে?

4টি।

19. সারা বিশ্বে কতগুলি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট আছে?

34টি।

20. ইন্দো-বার্মা হটস্পটের একটি উদ্ভিদের নাম কী?

Vanda coerulea নামক অর্কিড।

21. পূর্ব হিমালয় হটস্পটের একটি উদ্ভিদের নাম লেখো।

কলসপত্রী উদ্ভিদ (Nepanthes khasiana)

22. পূর্ব হিমালয় হটস্পটের একটি স্তন্যপায়ীর নাম লেখো।

রেড পান্ডা (Aliurus fulgens)।

23. ইন্দো-বার্মা হটস্পটের একটি প্রাণীর নাম কী?

সায়ামিজ কুমির (Crocodylus siamensis)।

24. সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের একটি উদ্ভিদের নাম লেখো।

সুন্দরী (Heritiera sp.)।

25. সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের একটি স্তন্যপায়ীর নাম লেখো।

ওরাংওটাং (Pongo sp.)।

26. জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের একটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

জীববৈচিত্র্যের হটস্পটের একটি বৈশিষ্ট্য হল এনডেমিজম অর্থাৎ

যে অঞ্চলের কথা বলা হচ্ছে, সেখানকার সব প্রজাতিই যেন প্রাথমিকভাবে স্থানীয় প্রজাতি বা সেখান থেকে উদ্ভুত প্রজাতি হয়।

27. ভারতের কোথায় বৃষ্টি অরণ্য বা রেইন ফরেস্ট দেখা যায়?

পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।

28. মেরু ভালুকের বিপন্নতার অন্যতম কারণটি উল্লেখ করো।

বিশ্ব উন্নায়ন।

29. কর্মসূচি-21 বা অ্যাজেন্ডা-21 কী?

রিও বসুন্ধরা সম্মেলনে (1992) একুশ শতকে পরিবেশ সংক্রান্ত অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যে বিশেষ কর্মসূচি গৃহীত হয়, তাকে কর্মসূচি-21 বা অ্যাজেন্ডা-21 বলে।

30. কিস্টোন প্রজাতি কী?

যেসব প্রজাতির জীবসংখ্যা কম থাকলেও কোনো বাস্তুতন্ত্রের কার্যপ্রণালী বৃহৎভাবে নিয়ন্ত্রণ করলে তাকে কিস্টোন প্রজাতি বলে, যেমন- রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার হল কিস্টোন প্রজাতি।

31. পশ্চিমবঙ্গের যে-কোনো একটি কিস্টোন প্রজাতির নাম উল্লেখ করো।

সুন্দরবনের বাঘ।

32. আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস হিসেবে কোন্ দিনটি পালিত হয়?

22 মে।

33. একটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের নাম লেখো।

গর্জন (Rhizophora apiculate)।

34. পশ্চিমবঙ্গের কোন্ অরণ্যকে UNESCO ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটরূপে ঘোষণা করেছে?

সুন্দরবন।

35. সুন্দরবন কোন্ প্রাণী সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত?

রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার।

36.সুন্দরবনের পরিবেশ-সংক্রান্ত সাম্প্রতিকতম উদ্বেগের কারণটির নাম লেখো।

লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংস এবং মিষ্টি জলের সংকট।

37. কুইনাইন-এর উৎস লেখো।

সিনকোনা।

3. Short Question Answer

1. জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি কাকে বলে?

উত্তর: পৃথিবীর স্থলভূমি, সমুদ্র বা অন্য জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন বিভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বা জৈববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলা হয়।

2. জীববৈচিত্র্যকে কতগুলি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং সেগুলি কী কী?

উত্তর: জীববৈচিত্র্যকে তিনটি আন্তঃসম্পর্কিত ধারণা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সেগুলি হল-① জিনগত বৈচিত্র্য, ② প্রজাতি বৈচিত্র্য এবং ③ বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য।

3. জিনগত বৈচিত্র্য কী?

উত্তর: বিভিন্ন প্রজাতির জীবের জিন ও ক্রোমোজোমের বৈচিত্র্য এবং কোনো একটি প্রজাতির জিনের ভেদ অথবা ভেরিয়েশনই হল জিনগত বৈচিত্র্য। একই প্রজাতির প্রত্যেক জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য আলাদা হয়ে থাকে।

4. প্রজাতি বৈচিত্র্য কী?

উত্তর: কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকায় বিবিধ প্রজাতির জীবের উপস্থিতি এবং তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্যকে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে। এই পৃথিবীর প্রত্যেক প্রজাতির নিজস্ব জিনগত গঠন বর্তমান। এই কারণে একটি প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি কিছুটা আলাদা হয়।

হয়েছে। (ii) মাছ, কাঁকড়া প্রভৃতি অতিরিক্ত সংগ্রহে বাঘেদের স্বাভাবিক খাদ্য হ্রাস পাচ্ছে, ফলে তারা সহজেই মানুষকে আক্রমণ করছে।

5. বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য কী?

উত্তর: একটি বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবদের নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জীবের গঠন ও বৈচিত্র্যকেই বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।

6. মানব সভ্যতার বিকাশে নিম্নলিখিত দুটি ক্ষেত্রে জীববৈচিত্র্যের ভূমিকা উল্লেখ করো। খাদ্য উৎপাদন, ② ওষুধ প্রস্তুতি। 

উত্তর: খাদ্য উৎপাদন: মানুষসহ সকল জীব তাদের খাদ্যের জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। জীববৈচিত্র্যের জন্যই মানুষ তার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। বিভিন্ন খাদ্য-উপাদান, যেমন- ভিটামিন, খনিজ লবণ ও শক্তি-সমৃদ্ধ খাদ্যের সৃষ্টির মাধ্যমে পুষ্টিতে মানবসমাজকে সাহায্য করে জীববৈচিত্র্য। এ ছাড়া খরা, বন্যা রোগ প্রতিরোধী শস্য জীববৈচিত্র্যের ফলেই সৃষ্টি করা সম্ভব হয়েছে। মাছ ও জলজ প্রাণী, পোলট্রি পাখি, মাংস ও দুধ উৎপাদক প্রাণীবৈচিত্র্য সামগ্রিকভাবে পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

② ওষুধ প্রস্তুতি: চিকিৎসায় ব্যবহৃত বহু ওষুধ হল জীবজাত। সিনকোনা গাছের ছাল থেকে তৈরি কুইনাইন ম্যালেরিয়ার ওষুধরূপে, সর্পগন্ধা গাছের মূলের ছাল থেকে প্রাপ্ত রেসারপিন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ তৈরিতে, ধুতুরা ফলের বীজ থেকে প্রাপ্ত ডাটুরিন হাঁপানির ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। – তুলসী, কালমেঘ, নিম প্রভৃতি ভেষজ উদ্ভিদগুলিও বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতিতে সাহায্য করে। Penicillum notatum (পেনিসিলিয়াম নোটেটাম) সহ অন্যান্য উপকারী ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া এবং বিভিন্ন প্রাণীজ উপাদানও ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়। 

7. ভারতের কোন্ কোন্ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়?

উত্তর: ভারতের উত্তর-পূর্ব হিমালয় অঞ্চল, ইন্দো-বার্মা অঞ্চল, পশ্চিমঘাট

বনাঞ্চল, আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, গুজরাট ও তামিলনাড়ুর সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরে প্রচুর পরিমাণে জীববৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।

৪. অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ বা মেগাডাইভারসিটি কান্ট্রি কাকে বলে?

উত্তর:  পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ, 17টি দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এই দেশগুলিকে অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ বা মেগাডাইভারসিটি কান্ট্রি বলা হয়। মেগাডাইভারসিটি দেশগুলির মধ্যে ব্রাজিল প্রথম স্থান অধিকার করে। ভারতবর্ষও একটি অন্যতম মেগাডাইভারসিটি কান্ট্রি।

9. প্রজাতি কাকে বলে?

উত্তর: জিনতত্ত্বগতভাবে স্বতন্ত্র, একই বৈশিষ্ট্যযুক্ত জীবগোষ্ঠী, যারা নিজেদের মধ্যে প্রজননশীল এবং প্রজননগতভাবে অন্য জীবগোষ্ঠী থেকে পৃথক, তাদের প্রজাতি বলে।

10. এনডেমিক প্রজাতি কাকে বলে?

উত্তর: যে উদ্ভিদ ও প্রাণী প্রজাতি কেবলমাত্র একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বাস করে, তাকে ওই অঞ্চলের এনডেমিক প্রজাতি বলে। যেমন-ভারতীয় সিংহ (গির), মুগা রেশম মথ (অসম)।

11. কোন্ বিজ্ঞানী কত খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম ‘বায়োডাইভারসিটি হটস্পট’ কথাটি ব্যবহার করেন?

উত্তর: জীববিজ্ঞানী নরম্যান মায়ার্স, 1988 খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম, ‘বায়োডাইভারসিটি হটস্পট’ কথাটি ব্যবহার করেন।

12. ‘কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল’ সংস্থা একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কোন্ দুটি শর্ত তুলে ধরেছে?

অথবা, কোনো অঞ্চলকে কখন হটস্পট বলে গণ্য করা হয়?

অনুরূপ প্রশ্ন, দুটি অঞ্চলের মধ্যে একটিকে জীববৈচিত্র্য হটস্পট বলে ঘোষণা করতে চাইলে কী কী শর্ত তুমি বিবেচনা করবে? 

উত্তর:  পরিবেশ-সংক্রান্ত সংস্থা ‘কনজারভেশন ইনটারন্যাশনাল’, একটি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-রূপে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য যে দুটি শর্ত তুলে ধরেছে, সেগুলি হল-① নির্দিষ্ট হটস্পট অঞ্চলে অন্তত 1500টি সংবহনকলাযুক্ত এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব থাকতে হবে। ② হটস্পট অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের অন্তত 70% প্রজাতিই বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকতে হবে।

13 হটস্পট কী? উদাহরণ দাও।

উত্তর: হটস্পট: পৃথিবীর যে বৃহত্তর অঞ্চলগুলিতে যথেষ্ট মাত্রায় জীববৈচিত্র্য উপস্থিত থাকলেও সেগুলি মানুষের দ্বারা বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কাগ্রস্ত, তাদের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট বা জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বলা হয়।

উদাহরণ: পূর্ব হিমালয় ও সুন্দাল্যান্ড, পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা।

14. হটস্পট হওয়ার শর্তগুলি কী কী?

উত্তর: হটস্পট হওয়ার প্রাথমিক শর্ত হল-① এনডেমিজম অর্থাৎ, যে অঞ্চলের কথা বলা হচ্ছে, সেখানকার সব প্রজাতিই যেন প্রাথমিকভাবে স্থানীয় প্রজাতি বা সেখান থেকে উদ্ভূত প্রজাতি হয়। ② অন্য কোনো অঞ্চল থেকে প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে প্রজাতি সংখ্যা বৃদ্ধি হটস্পট হওয়ার পূর্বশর্ত হবে না।

অন্য একটি মত অনুসারে, ① হটস্পট অঞ্চলে অন্তত 1500টি সংবহন কলাযুক্ত এনডেমিক উদ্ভিদ প্রজাতির অস্তিত্ব থাকবে। ② এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দাদের (প্রাথমিক বনাঞ্চল) অন্তত 70% প্রজাতিই যেন লুপ্ত হয়ে গিয়ে থাকে।

15. বায়োডাইভারসিটি হটস্পট-এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: বায়োডাইভারসিটি হটস্পটগুলি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এদের গুরুত্ব হল- এরা বহুসংখ্যাক স্থানীয় প্রজাতির সংরক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করে। ② এগুলি একটি স্বাস্থ্যকর বাস্তুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে। ③ এরা বিভিন্নপ্রকার প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে সহায়তা করে। ④ এগুলি স্থানীয় অঞ্চলের দূষণ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জীববৈচিত্র্যের হটস্পটগুলি বহু প্রজাতির আবাসস্থল হিসেবে কাজ করে। ⑥ এরা অন্যান্য প্রজাতি ও মানবজাতির জন্য খাদ্য এবং মানুষের বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এরা বিপন্ন বা বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীকে রক্ষা করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

16. পূর্ব হিমালয়কে ‘বায়োডাইভারসিটি হটস্পট’ বলার কারণ কী? অথবা, পূর্ব হিমালয় হটস্পটে পাওয়া যায় এমন জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ দাও।

উত্তর: পূর্ব হিমালয় বহু এনডেমিক প্রজাতির উৎপত্তিস্থল। এখানে প্রায় 5800 প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদের মধ্যে 2000টি প্রজাতি এনডেমিক। এখানে 45টি স্তন্যপায়ী, 50 টি পাখি, 17টি সরীসৃপ এবং 36টি উদ্ভিদ প্রজাতিসহ মোট 163টি বিপন্ন প্রজাতি বাস করে। এখানে কলসপত্রী (উদ্ভিদ), একশৃঙ্গ গন্ডার, সোনালি লেঙুর (প্রাণী) ইত্যাদি জীব বেশি দেখা যায়।

17. ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ ও শ্রীলঙ্কা-এই অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভুক্ত?

উত্তর: ওয়েস্টার্ন ঘাটস্ বা পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা অংশে ভারতের যে রাজ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত সেগুলি হল-গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং কেরল।

18. পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা-কে বায়োডাইভারসিটি হটস্পট বলার কারণ কী? অথবা, পশ্চিমঘাট-শ্রীলঙ্কা হটস্পটে পাওয়া যায় এমন জীববৈচিত্র্যের উদাহরণ দাও।

উত্তর: পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা অংশে প্রায় 5000 প্রজাতির সংবহনকলাযুক্ত উদ্ভিদ জন্মায়, যাদের মধ্যে 1700টি প্রজাতি এনডেমিক। এ ছাড়া, প্রাণীদের মধ্যে 140টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির মধ্যে 20টি প্রজাতি এনডেমিক। পাখির ক্ষেত্রে 450টি প্রজাতির মধ্যে 35টি প্রজাতি এনডেমিক। সরীসৃপের ক্ষেত্রে 260টি প্রজাতির মধ্যে 175টি প্রজাতি এবং উভচরের ক্ষেত্রে 135টি প্রজাতির মধ্যে 130টি প্রজাতি এনডেমিক। এখানে Magnolia nilagirica (ম্যাগনোলিয়া নিলাগিরিকা), Ixora elongata (ইক্সোরা ইলংগাটা) প্রভৃতি উদ্ভিদ এবং মালাবার লার্জ-স্পটেড সিভেট ও লায়ন-টেল্ড ম্যাকাক ইত্যাদি প্রাণীর উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।

19. ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের কোন্ কোন্ রাজ্য অন্তর্ভুক্ত?

উত্তর: ইন্দো-বার্মা অংশে ভারতের যে সকল রাজ্য অন্তর্ভুক্ত সেগুলি হল-মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ ও দক্ষিণ অসম।

20. সুন্দাল্যান্ড হটস্পটের অবস্থান ও এর জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতির নাম লেখো।

উত্তর: সুন্দাল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিও এবং ভারতের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত।

সুন্দাল্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রজাতি হল-সুন্দরী গাছ (উদ্ভিদ) অথবা ওরাংওটাং (প্রাণী)।

21. পৃথিবীর উন্নায়নের ফলে জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হচ্ছে তার চারটি উদাহরণ দাও।

অথবা, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে জীববৈচিত্র্য হ্রাস পাচ্ছে’-ব্যাখ্যা করো।

অথবা, ‘দূষণ জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ’-ব্যাখ্যা করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, বিশ্ব উন্নায়ন জীববৈচিত্র্যে কী প্রভাব ফেলবে তা উদাহরণসহ লেখো।

উত্তর: পৃথিবীর উন্নায়নের ফলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির 4 টি উদাহরণ হল-① অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সংলগ্ন প্রবাল প্রাচীরের ক্ষতি এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য হ্রাস। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা 1°C-2°C বৃদ্ধির ফলে উত্তর মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় আজ মেরু ভল্লুক খাদ্যের অভাবে সংকটাপন্ন, তেমনই সিন্ধুঘোটক, মেরু শেয়াল, পেঙ্গুইন প্রভৃতিও বিপদগ্রস্ত। ③ বিশ্ব উন্নায়নের ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ক্ষতি করছে। ④ বিশ্ব উন্নায়নের ফলে বিভিন্ন মাছের প্রজাতি, ওয়ালরাস, পরিযায়ী পাখি, শামুক-ঝিনুকের প্রজাতি, উভচরেরা আজ বিপদের সম্মুখীন।

22. জলজ ও স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় জীব-বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন করে এমন একটি করে বহিরাগত প্রজাতির উদাহরণ দাও।

উত্তর: জলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় বৈচিত্রের ক্ষতিসাধনকারী বহিরাগত উদ্ভিদ প্রজাতি-কচুরিপানা।

স্থলজ বাস্তুতন্ত্রে অবস্থিত স্থানীয় বৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধনকারী বহিরাগত প্রাণী প্রজাতি-আমেরিকান আরশোলা।

23 “চোরাশিকার ভারতের প্রাণীবৈচিত্র্যের বিপন্নতার একটি প্রধান কারণ”-যে যে কারণে এই চোরাশিকার ঘটে তার চারটি কারণ নির্ধারণ করো।

উত্তর: চোরাশিকারের চারটি কারণ হল-① কিছু কিছু পশুর দেহ উপাদান যেমন-বাঘের চামড়া, হরিণ বা বুনো মোষের শিং ইত্যাদি গৃহসজ্জার নান্দনিক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ② পশুর দেহজ উপাদান আয়ুর্বেদিক ওষুধের অনুপাত হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেমন-বাঘের হাড়, গন্ডারের খড়গ। ও বিভিন্ন প্রাণীর মাংস, যেমন-বুনো মোষ, হরিণ, বুনো শুয়োর ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে চড়া দামে বিক্রয় হয়। ④ চোরাশিকারের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বেআইনি অর্থ সহজে রোজগার করা হয়।

24. মানুষের জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: মানুষের জনসংখ্যার অতিবৃদ্ধির কারণে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় তা নীচের উদাহরণ দুটি থেকে বোঝা যায়।

① অরণ্য বিনাশ: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সুমাত্রা প্রভৃতি দেশে পাম তেল উৎপাদনের বৃদ্ধির জন্য পাম গাছ চাষের উদ্দেশ্যে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল কেটে ফেলা হয়েছে। এর ফলে ওরাংওটাং, সুমাত্রার হাতি, গন্ডার প্রভৃতির জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

② অতিব্যবহার: খাদ্য, চামড়া ইত্যাদি আহরণের জন্য মানুষ জীববৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। অতীতে রাশিয়ার স্টেলারস সি-কাউ, প্যাসেঞ্জার পায়রা অত্যধিক শিকারের কারণে বিলুপ্ত হয়েছে। বর্তমানে সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন প্রজাতি মানুষের অতিরিক্ত আহরণের কারণে বিলুপ্তপ্রায়।

25 “বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ ঘটলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়”-দুটি উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করো।

অনুরূপ প্রশ্ন, বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশের ফলে জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ঘটে-ভারতের ক্ষেত্রে এই বক্তব্যের যথার্থতা দুটি উদাহরণসহ প্রমাণ করো।

উত্তর: বিদেশ থেকে নতুন প্রজাতির জীবের অনুপ্রবেশ ঘটলে বা আমদানি করা হলে, দেশীয় দুর্বল প্রজাতিগুলি বহিরাগত প্রজাতিগুলির সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না ও অবলুপ্ত হয়। যেমন- জাহাজে আগত আমেরিকান আরশোলা (Periplaneta americana) দ্রুত ভারতীয় আরশোলা (Blatta orientalis) প্রজাতিকে বিনষ্ট করেছে। ② সৌন্দর্যবর্ধক হিসেবে কচুরিপানা গাছটিকে ব্রাজিল থেকে আনা হয়। কিন্তু খুব শীঘ্রই গাছটি তার হ্রস্বধাবক বা অফসেট দ্বারা বংশবিস্তার করে খালবিল নদীনালায় ভরে গেছে, ফলে অন্যান্য দেশীয় জলজ প্রজাতিগুলির বিলুপ্তি ঘটেছে।

26 বিশ্ব উয়ায়ণের ফলে সুন্দরবনের মানুষ ও জৈববৈচিত্র্যের কী কী সমস্যা হতে পারে?

উত্তর: বিশ্ব উন্নায়নের ফলে সুন্দরবনের মানুষ ও জৈববৈচিত্র্যের যে সকল সমস্যা হতে পারে, সেগুলি হল-① সমুদ্রজলের উন্নতা বৃদ্ধির ফলে দ্বীপভূমির নিমজ্জন ঘটবে। ② সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রে ক্রমাগত স্বাদু জলের অভাব ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য তৃণভূমি অনেকাংশে বিনষ্ট হবে। ফলে বুনো মহিষ, চিতল হরিণ, গন্ডার প্রভৃতি প্রাণী ওই অঞ্চলে বিলুপ্ত হবে। ③ জল দূষণের কারণে এবং পর্যাপ্ত খাদ্যের জোগান হ্রাস পাওয়ায় জলচর প্রাণীর বৈচিত্র্য ও সংখ্যা-উভয়েই যথেষ্ট হ্রাস পাবে। ④ মানব ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি, গোচারণ ও বাসস্থানের জন্যও ম্যানগ্রোভ বিপুলমাত্রায় হ্রাস পাবে।

27. সুন্দরবনের কয়েকটি বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণীর নাম লেখো।

উত্তর: সুন্দরবনের বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ হল-সুন্দরী, ক্যাওড়া (Sonneratia sp.) প্রভৃতি এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী হল-রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার, মেছোবিড়াল প্রভৃতি।

28. সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব উল্লেখ করো।

উত্তর: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অবদান বা গুরুত্ব হল-① এই অরণ্য সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলকে ভূমিক্ষয় থেকে রক্ষা করে। ② ঝড়ের প্রাবল্য থেকে নিকটবর্তী অঞ্চলকে রক্ষা করে। ③ মানুষের অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করে, যেমন-গৃহ নির্মাণের সামগ্রী, জ্বালানি, মধু ও ফল জোগান দেয়।

29. সুন্দরবনের যে দ্বীপগুলি জলে নিমজ্জিত তাদের নাম লেখো।

উত্তর: সুন্দরবনের নিমজ্জিত দ্বীপগুলি হল-ঘোরামারা, নিউ মুর দ্বীপ, সুপারিডাঙা, লোহাচারা, বেডফোর্ড প্রভৃতি।

30. সুন্দরবন সমস্যা সমাধানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

উত্তর: ① সমস্ত বনাঞ্চল সরকারী ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ② ম্যানগ্রোভ গাছের বৃক্ষরোপণ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ③ বাঘ ও অন্যান্য বন্য প্রজাতি সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

31 সুন্দরবন উন্নয়নে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে তুমি মনে করো?

অনুরূপ প্রশ্ন, সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ রক্ষা করার দুটি পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।

উত্তর: সুন্দরবন উন্নয়নে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত, সেগুলি হল- ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের বনসৃজন ও আদি বাস্তুতন্ত্র বজায় রেখেবনজ উপাদানের পরিমিত ও সুসংহত ব্যবহার ও তার পুনর্নির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি করা। ভারত ও বাংলাদেশ উভয়দেশের বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদেরা মিলিত হয়ে যৌথ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। ② স্থানীয় জনগণকে ওই বনাঞ্চল ও তার বন্যাপ্রাণের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সচেতন করা প্রয়োজন। বন্যপ্রাণ বিনাশের চরম পরিণতি সম্বন্ধে তাদের জ্ঞাত হতে হবে। ③ সুন্দরবন অঞ্চলের নদীদূষণ ও মাটি দূষণ যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে। ④ সুন্দরবনে পরিবেশ বিনাশ না করে কেবলমাত্র ইকোটুরিজমের ব্যবস্থা করতে হবে।

32. সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বিনাশের কারণ কী?

উত্তর: সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ বিনাশের কারণগুলি হল-① মানববসতি নির্মাণ ও জ্বালানির প্রয়োজনে ম্যানগ্রোভ কাটা হয়ে থাকে। ② প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝা ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিনাশ করে। ③ দূষণ, বিশ্ব উন্নায়নজনিত জলতল বৃদ্ধির ফলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য বিনষ্ট হচ্ছে। ④ চিংড়ি চাষের জন্য নতুন | জলাভূমি প্রস্তুতের উদ্দেশ্যে বহু ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ কাটা হয়ে থাকে।

4. Long Question Answer

1. জীববৈচিত্র্য কাকে বলে লেখো। এর গুরুত্বগুলি উল্লেখ করো।

অংশ প্রশ্ন, জীববৈচিত্র্যের তিনটি তাৎপর্য লেখো।

অনুরূপ প্রশ্ন, জীববৈচিত্র্যকে সম্পদরূপে গণ্য করা হয় কেন?

উত্তর: জীববৈচিত্র্য: স্থলভূমি, সমুদ্র বা অন্য জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন জীবের প্রজাতিগত, আন্তঃপ্রজাতিগত এবং বাস্তুতান্ত্রিক বিভিন্নতাকে জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলে।

জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব

① বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা: বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে জীববৈচিত্র্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রত্যেক জীব বাস্তুতান্ত্রিকভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একটি জীবের বিনাশ অন্য কোনো জীবের বিপন্নতার কারণ হতে পারে, তাই প্রজাতি বৈচিত্র্য যত বাড়বে সেই বাস্তুতন্ত্র তত বেশি স্থিতিশীল হবে।

পরিবেশগত মূল্য: পরিবেশদূষণ রোধ করতে এবং তার মাধ্যমে জীবমণ্ডল সার্বিক সংরক্ষণ ও তার কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য আবশ্যক।

③জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ: পরিবেশদূষণ রোধে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং জীবমণ্ডলের সার্বিক সংরক্ষণ ও তার কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য আবশ্যক। যেমন-ক্রান্তীয় বন CO₂ শোষণ করে বিশ্ব উয়ায়ন হ্রাস করে। বনভূমি জলশোষণ ও বাষ্পমোচন দ্বারা বৃষ্টিপাত তথা জলচক্র বজায় রাখে। অনেক উদ্ভিদ দূষক গ্যাস শোষণ করে পরিবেশ পরিশুদ্ধ করে।

④ অর্থনৈতিক মূল্য: মানুষ তার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ওষুধপত্র, প্রভৃতির জন্য সরাসরি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল, জীববৈচিত্র্যের জন্যই মানুষ তার ক্রমবর্ধমান খাদ্য চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। মানুষ বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ প্রজাতি থেকে বিভিন্নপ্রকার খাদ্যসামগ্রী ছাড়াও ড্রাগ ও ওষুধ, কাঠ, কাগজ, তন্তু, রবার, আঠা, রজন, ট্যানিন ইত্যাদি পেয়ে থাকে। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রাণীপ্রজাতি থেকে আমাদের দৈনন্দিন সামগ্রী, যেমন- মোম, সিল্ক, উল, মুক্তো, চামড়া, পালক, মধু, মাছ, মাংস ও দুগ্ধসামগ্রী পেয়ে থাকি।

⑤ নান্দনিক মূল্য: বিভিন্ন প্রজাতির জীব প্রকৃতিকে বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর করে তোলে।

⑥ নৈতিক মূল্য: প্রত্যেক জীবের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। 1982 সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কিত ঘোষণাপত্রে এই চিন্তাধারা স্বীকৃতি পেয়েছে।

2. জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদগুলি লেখো। ভারতের জীববৈচিত্র্যের হটস্পট-এর নাম উল্লেখ করো।

উত্তর: জীববৈচিত্র্যের প্রকার: জীববৈচিত্র্যকে প্রধান তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা-

① জিনগত বৈচিত্র্য: বিভিন্ন প্রজাতির জীবের মধ্যে জিনগত গঠনের সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়, যার জন্য এরা একে অন্যের থেকে সামান্য আলাদা হয়। একে জিনগত বৈচিত্র্য বলে।

② প্রজাতিগত বৈচিত্র্য: প্রজাতিগত বৈচিত্র্য হল কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিবিধ প্রজাতির জীবের উপস্থিতি ও তাদের আপেক্ষিক প্রাচুর্য।

③ বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য: একটি বাস্তুতন্ত্রের সজীব উপাদান বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবদের নিয়ে গঠিত। বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের জীবের গঠন ও বৈচিত্র্যকেই বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্য বলে।

ভারতের জীববৈচিত্র্য হটস্পট: ভারতের চারটি জীববৈচিত্র্য হটস্পট সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল।

① পূর্ব হিমালয়: ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি, যেমন-সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশ, অসম, অরুণাচল প্রদেশ এর অন্তর্গত। প্রাচীন সপুষ্পক উদ্ভিদের প্রাচুর্য্যের জন্য এই স্থানকে প্রজাতিভবনের উৎপত্তিস্থল বলে।

② ইন্দো-বার্মা: ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি, যেমন-মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও দক্ষিণ অসম এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।

③ পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, অর্থাৎ গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও কেরল রাজ্য এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত।

④ সুন্দাল্যান্ড: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুমাত্রা ও বোর্নিও এবং ভারতের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সুন্দাল্যান্ড হটস্পটটির অন্তর্ভুক্ত।

3. জীববৈচিত্র্য কী কী কারণে হ্রাস পায় তা সঠিক উদাহরণের সাহায্যে নির্ধারণ করো।

উত্তর: জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ

① জমি ব্যবহারের ধরন পরিবর্তন: জমি ব্যবহারের ধরন পরিবর্তনের ফলে উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রজাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ও তার সঙ্গে বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থলগুলিও সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া পৃথিবীতে জনসংখ্যার অত্যধিক চাহিদা পূরণ করার জন্য নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে।

② শিকার ও চোরাশিকার: খাদ্যের প্রয়োজনে, নিছক শিকারের আনন্দ উপভোগ করার জন্য অথবা চামড়া, শিং, চর্বি প্রভৃতি বিক্রি করে উপার্জনের লোভে বিভিন্ন বন্যজীবকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়। এর ফলে সেই প্রজাতিগুলি ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। যেমন-সুগন্ধি দ্রব্য প্রস্তুতের জন্য ভারতীয় কস্তুরীমৃগ নির্বিচারে হত্যার ফলস্বরূপ এখন এদের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে প্রজাতিটির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

③ বিশ্ব উন্নায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন: ইচ্ছেমতো বৃক্ষছেদন এবং অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ফলে বিশ্ব উন্নায়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। বহু প্রাণী ওই পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছে না। ফলে তারা অবলুপ্ত হচ্ছে। যেমন-বিশ্ব উন্নায়নের ফলে আন্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়ার দরুন সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।

④ দূষণ: সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে জলদূষণ, বায়ুদূষণ ও মৃত্তিকা দূষণের মাত্রাও প্রভূত পরিমাণে বাড়ছে। দূষণের ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। প্রকৃতিতে প্রাণীর সংখ্যা কমে যাওয়ার জন্য কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশককেই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।

⑤ অতিব্যবহার: বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি তাদের চাহিদা পূরণ করার জন্য বনাঞ্চল থেকে নির্বিচারে বিভিন্ন বৃক্ষলতা ও গুল্ম আহরণ করে। এর ফলে জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনাঞ্চল থেকে ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদগুলি সংখ্যায় অতি দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। অর্থনৈতিক গুরুত্বসম্পন্ন প্রাণীগুলিও অতিব্যবহারে আজ বিনাশের সম্মুখীন। যেমন-ভেষজ গুণসম্পন্ন সর্পগন্ধা গাছের অতিব্যবহারের ফলে প্রজাতিটি বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

⑥ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়: বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের ফলে বহু প্রজাতি চিরকালের মতো অবলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বন্যা, ভূমিক্ষয়, ভূমিকম্প, সুনামি ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলি বিভিন্ন স্থানের বহু জীববৈচিত্র্যকে বিলুপ্ত করেছে। যেমন-2004 সালের 26 ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে ঘটা সুনামির ফলে আন্দামানের প্রবাল প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

⑦ বহিরাগত প্রজাতির অনুপ্রবেশ: যে-কোনো বাস্তুতন্ত্রের নিজস্ব গঠনবৈচিত্র্য থাকে। বাইরে থেকে হঠাৎ কোনো প্রজাতি এলে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রের গঠন বিনষ্ট হয়। যেমন-‘হাইব্রিড মাগুর’ প্রজাতিটির আবির্ভাবে দেশি মাগুর প্রায় বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

4. সুন্দরবনের সমস্যাগুলি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করো।

অংশ প্রশ্ন, সুন্দরবনে একটি গবেষণা করতে গিয়ে তুমি নিম্নলিখিত তিনটি সমস্যা শনাক্ত করলে① খাদ্য-খাদক সংখ্যার ভারসাম্য ব্যাঘাত, ② নগরায়ণের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংস, ③ উয়তা বৃদ্ধির ওপর এদের প্রভাব কী কী হতে পারে তা বিশ্লেষণ করো।

অংশ প্রশ্ন, সুন্দরবনে দুটি পরিবেশগত সমস্যা হল-খাদ্য-খাদক সংখ্যার ভারসাম্য ব্যাঘাত ও সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি। এর সম্ভাব্য ফলাফলগুলি ব্যাখ্যা করো।

অংশ প্রশ্ন, বিশ্ব উন্নায়নের ফলে সমুদ্রের জলতলের উয়তা অধিক বৃদ্ধি পেলে সুন্দরবনের মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের কী কী সমস্যা হতে পারে?

উত্তর: সুন্দরবন অঞ্চলের সমস্যা: বর্তমানে সুন্দরবন অঞ্চলে বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই অঞ্চলের সমস্যাগুলি সম্পর্কে নীচে বর্ণনা করা হল।

① নগরায়ণের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদের ধ্বংস: নগরায়ণের জন্য এবং গৃহনির্মাণ, চাষ-আবাদ জ্বালানি কাঠের চাহিদা পূরণের জন্য সুন্দরবনের তীরবর্তী অঞ্চলে লবণাম্বু উদ্ভিদকে ধ্বংস করা হচ্ছে।

② কৃষি সংকট: লবণাম্বু উদ্ভিদের ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিরিক্ত ভূমিক্ষয়ের কারণে পলি জমে নদী এবং খাঁড়িগুলির গভীরতা হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে সমুদ্রের লবণাক্ত জল চাষের জমিকে প্লাবিত করে চাষ-আবাদেরও ক্ষতি করছে। এ ছাড়া ভূমিক্ষয়ের ফলে চাষের জমির উর্বরতাও কমিয়ে দিচ্ছে।

③ মিষ্টি জলের সংকট: সমুদ্র তীরবর্তী এই অঞ্চলে মিষ্টি জল বা স্বাদুজলের অভাব অত্যন্ত প্রকট। নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়ার ফলে, লবণাক্ত জল, পুকুর-ডোবার জলের সঙ্গে মিশে মিষ্টি জলের সংকট সৃষ্টি করছে।

④ বাসস্থান ধ্বংস: অরণ্য ধ্বংসের ফলে বহু বন্যপ্রাণী ও কীটপতঙ্গ তাদের বাসস্থান হারাচ্ছে যা প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ ছাড়া জোয়ারভাটা, বন্যার কারণে সুন্দরবনে ভূমিক্ষয় হয়।

⑤ দূষণ: হলদিয়া এবং কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কলকারখানাগুলি থেকে নির্গত শিল্পজাত বর্জ্য পদার্থগুলি নদী দ্বারা বাহিত হয়ে এই অঞ্চলে জলদূষণ ঘটায়। নদীর জলে এই সকল দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মাছ, মাছের ডিম, চিংড়ি ও অন্যান্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রভৃতি ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছে। মাছের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। জাহাজ থেকে নির্গত তেল ও অন্যান্য বর্জ্য জলে মুক্ত হয়ে দূষণ ছড়ায়।

⑥ খাদ্য-খাদকের ভারসাম্যে ব্যাঘাত: জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে পরিবেশ সমস্যা সুন্দরবনকে গ্রাস করছে। বহু প্রাণী অবলুপ্ত হওয়ার ফলে বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলে খাদ্য-খাদকের সংখ্যার ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে, যা পরোক্ষভাবে মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলছে। মানুষের দ্বারা মাছ, কাঁকড়া প্রভৃতি অতিরিক্ত সংগ্রহের ফলে বাঘেদের স্বাভাবিক খাদ্য হ্রাস পাচ্ছে, ফলে তারা সহজেই মানুষকে আক্রমণ করছে।

⑦ দ্বীপভূমির নিমজ্জন: বিশ্ব উন্নায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। সমুদ্রের জলের উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের বহু দ্বীপ জলে নিমজ্জিত হচ্ছে। যেমন-ভাঙ্গদুয়ানি দ্বীপটির 16.44% জলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘোরামারা, লোহাচারা, বেডফোর্ড প্রভৃতি দ্বীপগুলি জলে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। বিশ্ব উন্নায়নের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

5. সুন্দরবনের তিনটি পরিবেশগত সমস্যা হল-① খাদ্য-খাদকের সংখ্যার ভারসাম্যে ব্যাঘাত, ② নগরায়নের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংস, ③ সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি। সমস্যা তিনটির সম্ভাব্য ফলাফল বিশ্লেষণ করো।

ভারত ও ভারতের বাইরে ভৌগোলিক অঞ্চলে ব্যাপ্ত এমন একটি জীববৈচিত্র্য হটস্পটের অবস্থান ও ওই হটস্পটের একটি বিপন্ন জীবের নাম লেখো।

উত্তর: সমস্যা তিনটির সম্ভাব্য ফলাফল বিশ্লেষণ-

① খাদ্য-খাদকের সংখ্যার ভারসাম্যে ব্যাঘাত: (i) সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রে ক্রমাগত স্বাদুজলের অভাব ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য তৃণভূমি অনেকাংশে বিনষ্ট হয়েছে। ফলে বিভিন্ন প্রাণী, যেমন-বুনো মহিষ, চিতল হরিণ, গন্ডার প্রভৃতি প্রাণী খাদ্যের অভাবে এই অঞ্চলে বিলুপ্ত

② নগরায়নের জন্য লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংস: (1) লবণাম্বু উদ্ভিদ ধ্বংসের ফলে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হচ্ছে। (ii) ভূমিক্ষয় ও সাইক্লোন থেকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরোক্ষভাবে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস বা বিনষ্ট ক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে।

③ সমুদ্রের জলের উচ্চতা বৃদ্ধি: সমুদ্রের জলের উচ্চতা বৃদ্ধি ফলে সুন্দরবন অঞ্চলের বহু দ্বীপ জলে নিমজ্জিত হচ্ছে। যেমন ভাঙ্গাদুয়ানি দ্বীপটির 16.44% জলে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। এ ছাড়া ঘোরামারা, লোহাচারা, বেডফোর্ড প্রভৃতি ব-দ্বীপগুলি জলে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় প্রায় 5.5 km² দ্বীপাঞ্চল প্রতিবছর সমুদ্রের নীচে চলে যাচ্ছে।

ভারত ও ভারতের বাইরে ভৌগোলিক অঞ্চলে ব্যাপ্ত এমন একটি জীববৈচিত্র্য হটস্পটের অবস্থান এবং ওই হটস্পটের একটি বিপন্ন জীবের নাম-

ইন্দো-বর্মা হটস্পট: ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্য মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড ও দক্ষিণ আসাম এর অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া দক্ষিণ চিন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াও এর অন্তর্গত।

বিপন্ন জীব: সায়ামিজ কুমির (প্রাণী)।

5. Fill in The Blanks

1. ভূপৃষ্ঠের মাত্র 2.4 শতাংশ ভারতে উপস্থিত, কিন্তু পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যের 8.1 শতাংশ ভারতে বিদ্যমান।

2. জীবজাত ওষুধের একটি উৎস হল সিনকোনা গাছ।

3. ম্যালেরিয়ার ওষুধরূপে ব্যবহৃত হয় কুইনাইন ।

4. একটি উপকারী ছত্রাক হল পেনিসিলিয়াম । 

5. সর্পগন্ধা গাছের মূলের থেকে রেসারপিন পাওয়া যায় যা উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

৪. পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত সুন্দরবনের ক্ষেত্রমান 9630 বর্গকিমি ।

7. কাগজ প্রস্তুতির মণ্ড প্রকৃতপক্ষে উদ্ভিদের সেলুলোজ তন্তু।

৪. কাগজ তৈরিতে বাঁশ গাছ ব্যবহৃত হয়।

9. বাবলা, শিরিষ প্রভৃতি গাছ থেকে নিঃসৃত  গঁদ আঠা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

10. পাইন গাছের রজন তার্পিন তেল তৈরিতে কাজে লাগে।

11. হিং হল একপ্রকার রজন, যা রান্নায় ব্যবহৃত হয়।

12. প্রসাধনী শিল্পে মৌ মোম ব্যবহৃত হয়।

13. অ্যাঙ্গোরা উল পাওয়া যায় খরগোশ থেকে।

14. জীববৈচিত্র্যের সর্বাধিক প্রাচুর্যযুক্ত অঞ্চলকে হটস্পট বলা হয়।

15. জীববৈচিত্র্য হটস্পট শব্দটি সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন বিজ্ঞানী নরম্যান মায়ার্স ।

16. দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত একটি হটস্পট অঞ্চল হল পশ্চিমঘাট ।

17. প্রজাতিভবনের উৎপত্তিস্থল বলা পূর্ব হিমালয় হয় হটস্পট অঞ্চলকে।

18. পূর্ব হিমালয় হটস্পট অঞ্চলে প্রায় 2000 টি এনডেমিক সপুষ্পক উদ্ভিদ বর্তমান।

19. পূর্ব হিমালয় হটস্পট অঞ্চলে 163 টি বিপন্ন প্রজাতি বাস করে।

20. ইন্দো-বার্মা হটস্পট অঞ্চলে মোট উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা হল 13,500 টি।

21. ইন্দো-বার্মা হটস্পট অঞ্চলে প্রাপ্ত স্তন্যপায়ী প্রাণীর প্রজাতি হল 430 ।

22. পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা হটস্পট অঞ্চলে প্রায় 35 টি এনডেমিক পাখি প্রজাতি বর্তমান।

6. True And False

1. ভারতের একটি বিপন্ন প্রজাতি হল ক্যাঙারু।

মিথ্যা [সূত্র-ক্যাঙারু অস্ট্রেলিয়ার একটি বিপন্ন প্রজাতি।]

2. ব্রাজিল হল সর্বাপেক্ষা জীববৈচিত্র্যসম্পন্ন দেশ।

সত্য [সূত্র-ব্রাজিলের ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য প্রাচুর্যপূর্ণ হওয়ায় জৈববেচিত্র্য বেশি দেখা যায়।]

3. ক্যাফিন হল মোম তৈরির উপাদান।

মিথ্যা [সূত্র-ক্যাফিন হল কফির একটি উপক্ষার জাতীয় উপাদান।]

4. তার্পিন তেল বার্নিশে ব্যবহৃত হয়।

সত্য [সূত্র-পাইন গাছ থেকে প্রাপ্ত রেচন পদার্থ রজন তার্পিন তেল তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।]

5. পেট্রোলিয়াম থেকে ধুনো পাওয়া যায়।

মিথ্যা [সূত্র-রজন থেকে ধুনো পাওয়া যায়।]

6. কাগজ প্রস্তুতিতে শাল গাছ ব্যবহৃত হয়।

মিথ্যা [সূত্র-বাঁশ গাছের পাতা একাজে ব্যবহৃত হয়।]

7. হটস্পট অঞ্চলে অন্তত 1000টি এনডেমিক সংবহন কলাযুক্ত উদ্ভিদ থাকতে হবে।

মিথ্যা [সূত্র-হটস্পট অঞ্চলে অন্তত 1500টি এনডেমিক সংবহন কলাযুক্ত উদ্ভিদ থাকা জরুরি।]

৪. পূর্ব হিমালয় হটস্পটে সংরক্ষিত একটি বিপন্ন উদ্ভিদ হল রোডোডেনড্রন।

মিথ্যা [সূত্র-পূর্ব হিমালয় হটস্পটে সংরক্ষিত একটি বিপদগ্রস্ত উদ্ভিদ হল রডোডেনড্রন।]

9. আমাজন রেইন ফরেস্টকে পৃথিবী গ্রহের ফুসফুস বলা হয়।

সত্য [সূত্র-এটি পৃথিবীর বৃহত্তম বর্ষা অরণ্য। তাই অক্সিজেনের জোগানে পৃথিবীতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।]

10. মেক্সিকো হল একটি অতিবৈচিত্র্যশালী দেশ।

সত্য [সূত্র-পৃথিবীর সমগ্র বৈচিত্র্যের 10-20% মেক্সিকোতে অবস্থিত।]

11. জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তুন্দ্রা, ম্যানগ্রোভ কোরাল রিফ ইত্যাদি বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে।

সত্য [সূত্র-ফলে জীববৈচিত্র্য ওই সব অঞ্চলে হ্রাস পাচ্ছে ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।]

12. নাইট্রোজেন সার ব্যবহারে মাটি আম্লিক হয়ে যায়।

▶ সত্য [সূত্র-অ্যামোনিয়াম যুক্ত সার মাটিতে নাইট্রিফিকেশন দ্বারা নাইট্রেটে পরিণত হয় ও H+ আয়ন মাটিতে মুক্ত হয়।]

13.সুন্দরবন অঞ্চল গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত।

সত্য [সূত্র-এটি সুন্দরী ও অন্যান্য ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছ এবং ভারতীয় বাঘের জন্য প্রসিদ্ধ।]

14. সুন্দরবন অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত প্রকৃতির হয়।

সত্য [সূত্র-সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড প্রভৃতি উপাদান থাকার জন্য একে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা বলে।]

15. দ্বীপ নিমজ্জন সুন্দরবনের একটি পরিবেশগত সমস্যা।

সত্য [সূত্র-ঘোরামারা, লোহাচারা প্রভৃতি দ্বীপগুলি বিশ্ব উন্নায়নজনিত প্রভাবে জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে।]

——————————————————————————————————————–

[Long Question Answer]

1. সংরক্ষণ কাকে বলে? জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর: সংরক্ষণ: যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, তার নিয়ন্ত্রণ ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়, তাকে সংরক্ষণ বলে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতি: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য মূলত দুই ধরনের পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়, যথা-① ইন-সিটু সংরক্ষণ এবং ② এক্স-সিটু সংরক্ষণ।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ

ইন-সিটু সংরক্ষণএক্স-সিটু সংরক্ষণ
জাতীয় উদ্যানচিড়িয়াখানা
অভয়ারণ্যবোটানিক্যাল গার্ডেন
সংরক্ষিত বনাঞ্চল
বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভক্রায়োপ্রিজারভেশন

①ইন-সিট বা স্বস্থানিক সংরক্ষণ পদ্ধতি: এইজাতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে জীবগোষ্ঠীকে তাদের সমস্ত পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তার করার সমস্ত সুবিধা প্রদান করে সংরক্ষণ করা হয়। জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত অরণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ইত্যাদি স্বস্থানিক সংরক্ষণের বিবিধ পথ বা ক্ষেত্র। [i] জাতীয় উদ্যান: এটি হল সরকার অধিগৃহীত ও নিয়ন্ত্রণাধীন একটি অঞ্চল। এখানে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদসমূহকে চিরস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। 2013 সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতে 102টি জাতীয় উদ্যান সরকারিভাবে স্বীকৃত। জলপাইগুড়ির গোরুমারা এবং অসমের কাজিরাঙাতে এই ধরনের জাতীয় উদ্যান রয়েছে। [ii] অভয়ারণ্য: এই বনাঞ্চল, কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের আইন স্বীকৃত। এটি জাতীয় উদ্যানের তুলনায় ক্ষুদ্র। এখানে কাঠকাটা, চাষ-আবাদ করা এবং বনজ সম্পদ আহরণ করা অনুমতি সাপেক্ষ, তবে নিষিদ্ধ নয়। 2013 সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতে 515টি অভয়ারণ্য রয়েছে। গুজরাটের গির অরণ্য হল একটি অভয়ারণ্যের উদাহরণ। [iii] সংরক্ষিত অরণ্য বা বনাঞ্চল: এইপ্রকার বনভূমি রাজ্য সরকারের আয়ত্তাধীন। এখানে গাছ কাটা, শিকার করা, গৃহপালিত পশুচারণ বিশেষ সরকারি অনুমতি ছাড়া নিষিদ্ধ। কর্ণাটকের হানামাসাগর একটি সংরক্ষিত অরণ্য। [iv] বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ: এটি একটি বিশেষ অঞ্চল। এখানে বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী জমি অঞ্চলভিত্তিক ও নির্দিষ্ট ক্রিয়া কর্মভিত্তিক কতকগুলি নির্দিষ্ট অংশে ভাগ করা হয়। এখানে সংরক্ষণ ও উন্নয়ন উভয় কার্যই সম্পাদন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এবং তামিলনাড়ুর নীলগিরি হল খুবই সুপরিচিত বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।

② এক্স-সিটু বা অস্থানিক সংরক্ষণ পদ্ধতি: এইজাতীয় পদ্ধতির মাধ্যমে জীবগোষ্ঠীকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে কৃত্রিম উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়। চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, ক্রায়োসংরক্ষণ বা ক্রায়োপ্রিজারভেশন প্রভৃতির মাধ্যমে এক্স-সিটু সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। [i] চিড়িয়াখানা: চিড়িয়াখানাতে বিভিন্ন ধরনের স্থলজ ও জলজ প্রাণীকে সংরক্ষণ করা হয়। [ii] বোটানিক্যাল গার্ডেন: বোটানিক্যাল গার্ডেনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার বিরল এবং বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদকে সংরক্ষণ করা হয়। [iii] ক্রায়োপ্রিজারভেশন বা ক্রায়োসংরক্ষণ: পরাগরেণু, বীজ, উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ প্রায় -196°C তাপমাত্রায় তরল নাইট্রোজেনে সংরক্ষণ করা যায়। অনেক সময় কঠিন CO₂-তে -80°C তাপমাত্রায় উদ্ভিদ প্রোপাগিউল সংরক্ষণ করা হয়। এইপ্রকার সংরক্ষণ ক্রায়োসংরক্ষণ নামে পরিচিত।

2. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কাকে বলে? জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা লেখো।

অথবা, খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও তত্ত্ব উৎপাদনে জৈববৈচিত্র্যের ভূমিকা লেখো।

উত্তর: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ: যে বিশেষ পদ্ধতির দ্বারা জীববৈচিত্র্যের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালন ব্যবস্থার সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা হয় এবং জীববৈচিত্র্যকে বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব, অপব্যবহার এবং ধ্বংস থেকে রক্ষা করা হয়, তাকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বলে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা: নানা কারণে জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। নীচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হল।

① খাদ্যের ভাণ্ডার: জীববৈচিত্র্য হল পৃথিবীর সমস্ত জীবের খাদ্যের ভান্ডার। তাই পৃথিবীর খাদ্য ভান্ডারকে অটুট রাখতে ও খাদ্য সুরক্ষা বজায় রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অপরিহার্য।

② শক্তি প্রদানকারী উৎস: সবুজ উদ্ভিদ সূর্যালোকের সাহায্যে পরিবেশ থেকে সংগৃহীত CO₂ ও জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শর্করা-জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে। এক কথায় উদ্ভিদ আলোক শক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে খাদ্য তৈরি করে। ওই শক্তি উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্তরের প্রাণীদেহে প্রবাহিত হয় ও জীবনীশক্তি বজায় রাখে। তাই শক্তি প্রদানকারী হিসেবে জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনীয়তা জীবজগতের কাছে অপরিহার্য।

③ জিনবৈচিত্র্যের ভাণ্ডার: জীববৈচিত্র্য জিনবৈচিত্র্যের ভান্ডার হিসেবে কাজ করে। জিনবৈচিত্র্য অটুট রাখার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।

④ ওষুধের উৎস: বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে আধুনিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত করা হয়। জানা গেছে প্রায় 70,000 প্রজাতির উদ্ভিদ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

⑤ শিল্পের কাঁচামালের ভাণ্ডার: বিভিন্ন শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল জীববৈচিত্র্য থেকে পাওয়া যায়। সেই কারণে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বিশেষভাবে প্রয়োজন।

⑥ বাস্তুসংস্থানগত ভূমিকা: যে-কোনো বাস্তুতন্ত্রে জীবগোষ্ঠী পরস্পর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে। এদের মধ্যে উৎপাদক, খাদক, বিয়োজক ও পরিবর্তক থাকে। কোনো একটি সম্প্রদায়ের অবলুপ্তি খাদ্যশৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটায়। তাই বাস্তুতান্ত্রিক সাম্যতা রক্ষার জন্য জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ অপরিহার্য।

3. JFM সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

অংশ প্রশ্ন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট-এর ভূমিকা কী কী?

উত্তর: জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট (JFM): ভারত সরকার স্বীকৃত সরকারি ও স্থানীয় মানুষের যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় বনজ সম্পদের সুপরিচালন ব্যবস্থা হল জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট বা JFM। বন সুরক্ষা কমিটি (Forest Protection Committee বা FPC) নামক গ্রামীণ কমিটি ও বন দপ্তর একসাথে এটি পরিচালনা করে থাকে।

JFM-এর ঐতিহাসিক পটভূমি: JFM ধারণাটির প্রথম সূত্রপাত পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আরাবারি অরণ্যে (1971)। এই প্রকল্পটির সূচনা করা হয়েছিল জনগণের দাবী মেনে ধ্বংসের হাত থেকে অরণ্যকে বাঁচাতে। বনদপ্তরের নীতি অনুযায়ী 1971 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণবঙ্গে শালগাছের জঙ্গল পুনরুদ্ধারের জন্য মেদিনীপুর শহর থেকে 30 km দূরে আরাবারি অরণ্যে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার (DFO) শ্রী অজিত কুমার ব্যানার্জির নেতৃত্বে শালগাছ চাষের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি স্থানীয় 11টি গ্রামের মানুষদের সঙ্গে আলোচনা করে 1972 খ্রিস্টাব্দে বন সুরক্ষা কমিটি (Forest Protection Committee বা FPC) গড়ে তোলেন। এই কমিটিকে সদ্য রোপিত শালগাছের চারাগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিনিময়ে স্থানীয় মানুষদের গ্রামীণ নিযুক্তি স্কিমে চাকরির ব্যবস্থা ও কাঠের পরিবর্তে অন্য বনজ সম্পদ আহরণের অধিকার দেওয়া হয়। এর ফলে ওই অঞ্চলে বিশাল শালবন সৃষ্টি হয়। তাই এই উদ্যোগ সফল বলে প্রমাণিত হয়।

JFM ব্যবস্থাপনা: আরাবারির ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভারত সরকারের পরিবেশ ও বনমন্ত্রক সমস্ত রাজ্য সরকারকে, স্থানীয় জনসাধারণ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিকে সঙ্গে নিয়ে বন উন্নয়নের চালননীতি প্রণয়ন করে। সেই অনুযায়ী 22টি রাজ্য সরকার সংশ্লিষ্ট রাজ্য বনদপ্তরকে JFM ব্যবস্থাপনা করবার নির্দেশ দেয়। বর্তমানে ভারতে 10-25 মিলিয়ন হেক্টর C বন পরিচালনে JFM সহায়তা করে। JFM-এর অধীনে অনেকগুলি কমিটি গঠিত হয় যেগুলি বনসংরক্ষণে ভূমিস্তরে কাজ করে থাকে। এই কমিটিগুলি হল ফরেস্ট প্রোটেকশন কমিটি (FPC), ইকো-ডেভেলপমেন্ট কমিটি (EDC), ভিলেজ ফরেস্ট কমিটি (VFC) প্রভৃতি।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে JFM-এর ভূমিকা বা গুরুত্ব: বিভিন্ন রাজ্যে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে রাজ্য বনদপ্তরকে সক্রিয় সহযোগিতা করে JFM কমিটি।② বনে চোরাশিকারের ঘটনা তাৎক্ষণিক বনদপ্তরকে জানানোর কাজ করে JFM কমিটি। ও দাবানল, বেআইনি পশুচারণ, বনভূমি বিনাশের প্রচেষ্টা, বেআইনি খননকার্য রোধে প্রাথমিকভাবে বনদপ্তরকে তা জানানো ও সংশ্লিষ্ট কাজে বনদপ্তরের সঙ্গে JFM কমিটি কাজ করে থাকে।

4. একজন পরিবেশকর্মী হিসেবে PBR-এ তুমি কোন্ কোন্ বিষয় অর্ন্তভুক্ত করতে চাও, সে বিষয়ে তোমার মতামত ব্যক্ত করো।

উত্তর: একজন পরিবেশকর্মী হিসেবে আমি PBR-এ তথা পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার-এ যে সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে চাই, সেগুলি হল-

① আমাদের রাজ্যের প্রতিটি জেলায় পঞ্চায়েত ও মিউনিসিপ্যালিটি অঞ্চলে PBR তৈরি করবার কাজে স্থানীয় বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলি যাতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহন করতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে চাই।

② PBR-এ সমস্ত রকম প্রজাতি বিষয়ে সামগ্রিক তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে চাই, যেমন স্থানীয় জীব সম্প্রদায় সম্পর্কে নানান তথ্য ও সেগুলির লভ্যতা।

③ প্রজাতির বাসস্থান ও ওই প্রজাতিগুলির সম্বন্ধে ঐতিহ্যবাহী পরম্পরাগত বিশ্বাস-সংক্রান্ত তথ্য যাতে সঠিকভাবে সংগৃহীত থাকে, তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে চাই।

④ প্রজাতির থেকে প্রাপ্ত উৎপাদন (বা সম্পদ) সম্বন্ধে ধারণা, তাদের বাজারমূল্য, সংগ্রহের সময়, সংগ্রহের নিয়ম এবং তাদের পরিবহন পদ্ধতি সম্পর্কিত তথ্য যাতে PBR-এ লিপিবদ্ধ থাকে, তার ব্যবস্থা করতে চাই।

⑤ প্রজাতিজাত উৎপাদনের প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি, প্রজাতিজাত সম্পদের স্থানীয় ব্যবহার এবং পরিচালন পদ্ধতি এবং স্থানীয় ভৌগলিক তথ্য যাতে লিপিবদ্ধ করা হয়, সে বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করতে চাই।

⑥ স্থানীয় মানুষদের তরফ থেকে প্রজাতি সংরক্ষণের ধারণা ও উদ্যোগ সম্পর্কিত তথ্য লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করতে চাই।

5. জৈববৈচিত্র্য রক্ষায় তুমি কীভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে, JFM-এর ঐতিহাসিক পটভূমি আলোচনা করো।

উত্তর: জৈববৈচিত্র্য রক্ষায় আমি যেভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করব, তা

হল-

① সবার আগে আমি নিজে, আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ির নিকটবর্তী অংশে বৃক্ষরোপনের ব্যবস্থা করব।

② পরিবারের সদস্যরা যাতে ইচ্ছেমতো কোনো প্রাণীকে হত্যা না করে এবং গাছপালা ধ্বংস না করে, সে বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলবো।

③ প্রতিবেশী মানুষদের সাথে কথা বলে, তাদেরকে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিতে সামিল করবো এবং তারাও যাতে ইচ্ছেমতো গাছ না কাটে এবং বন্যপ্রাণীদের হত্যা না করে, সে বিষয়ে সচেতন করবো।

④ স্থনীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, নিকটবর্তী বিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষিকাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে জৈববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে জনসাধারণকে অবগত করার জন্য আলোচনা চক্র বা সেমিনারের ব্যবস্থা করবো।

⑤ স্থানীয় মানুষজন যাতে প্রতিবছর 5 জুন বিশ্বপরিবেশ দিবসে বৃক্ষরোপন করেন ও পরিবেশ সংরক্ষণে এগিয়ে আসেন তার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

JFM-এর ঐতিহাসিক পটভূমি: এটি রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তরের 1 নং-এ আলোচনা করা আছে।

6. PBR সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার (PBR): ভারত সরকার প্রণীত বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট বা জীববৈচিত্র্য আইন, 2002 অনুযায়ী প্রত্যেক পঞ্চায়েত, মিউনিসিপ্যালিটি বা শহরের কর্পোরেশনকে একটি বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি (BMC) স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর অন্যতম প্রধান কাজ হল একটি নথি তৈরি করে তাতে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য মজুত করা। জীববৈচিত্র্যের এই নথিটিকেই পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার বা PBR বলে।

PBR-এর তথ্যভান্ডারের প্রকৃতি: পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদ (West Bengal Biodiversity Board বা WBBB), উপরোক্ত আইন অনুযায়ী একটি উল্লেখযোগ্য PBR তৈরি করবার নির্দেশ দিয়েছেন। এই তথ্যভান্ডার শুধুমাত্র স্থানীয় প্রজাতির একটি সামান্য তালিকা নয়, জীববৈচিত্র্যের সম্পূর্ণ আধাররূপে গ্রহণ করা যায়। PBR-এ যে সমস্ত বিষয়ে তথ্য মজুত করা থাকে তা হল-① সমস্ত স্থানীয় প্রজাতি সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্য। ② প্রজাতির বাসস্থান। ও প্রজাতির থেকে প্রাপ্ত জৈবিক উৎপাদন (বা সম্পদ) সম্বন্ধে ধারণা, তাদের বাজারমূল্য, সংগ্রহের সময়, সংগ্রহের নিয়ম ও তাদের পরিবহণ পদ্ধতি। ④ প্রজাতিজাত উৎপাদনের প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি। ⑤ প্রজাতিজাত সম্পদের স্থানীয় ব্যবহার এবং পরিচালন পদ্ধতি। ⑥ স্থানীয় ভৌগোলিক তথ্য। ⑦ বিপন্ন প্রজাতি নির্ণয় ও স্থানীয় মানুষদের তরফ থেকে প্রজাতি সংরক্ষণের ধারণা ও উদ্যোগ। ৪ স্থানীয় প্রজাতিগুলি সম্বন্ধে ঐতিহ্যবাহী, পরম্পরাগত ও বিশ্বাস-সংক্রান্ত তথ্য।

PBR-এর ব্যবস্থাপনা: পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদের তত্ত্বাবধানে 14টি জেলায় পঞ্চায়েত ও মিউনিসিপ্যালিটি অঞ্চলে PBR তৈরি করা হয়েছে। PBR তৈরি করবার কাজে স্থানীয় স্কুল, কলেজ, সরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান (NGOs)-গুলি যাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে PBR-এর ভূমিকা বা গুরুত্ব: ① PBR স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেয়। তার ওপর নির্ভর করে বিপন্ন জীবগুলির সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়। ② স্থানীয় মানুষকে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের ব্যাপারে সজাগ করে সংরক্ষণে অংশীদার করতে সাহায্য করে PBR। ③ জীববৈচিত্র্যের অর্থনৈতিক কারণে সুস্থায়ী (sustainable) ব্যবহার।

7. বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি লেখো। [Howrah Zilla School] বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: বাঘের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ

① বাসযোগ্য স্থানের বিনাশ: মানব জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং আগ্রাসনের কারণে বনাঞ্চল ক্রমাগত ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে। এর ফলে বাঘের স্বাভাবিক বাসস্থান হ্রাস পাচ্ছে। ② চোরাশিকার: বাঘের চামড়া শৌখিন বস্তুরূপে ব্যবহৃত হয়। এর আন্তর্জাতিক মূল্যমান প্রায় 12,500 ডলার। বাঘের হাড়, চোখ, দাঁত প্রভৃতির ব্যাপক চাহিদার জন্য নির্বিচারে বাঘ হত্যা করা হয়।

③ প্রজননে বাধা: প্রজনন সঙ্গীর অভাবে বাঘের প্রজনন হার হ্রাস পেয়েছে এবং বাঘের সংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা: 1969 সালে দিল্লিতে IUCN-এর সাধারণ বৈঠকের পরে 1970 সালে ভারতবর্ষে বাঘ হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়। 1972 সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন চালু হয়। 1973 সালে 1 এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশমন্ত্রক, IUCN এবং WWF-এর সহযোগিতায় ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা ন্যাশনাল টাইগার কনজারেভশন অথোরিটি বা NTCA-এর প্রজেক্ট টাইগার চালু করে। এর মাধ্যমে ভারতবর্ষে বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টার সূত্রপাত হয়। 1973 সালে প্রাথমিকভাবে ৭টি অভয়ারণ্যের মাধ্যমে বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টার সূচনা হয়। বর্তমানে এই সংস্থার অধীনে ব্যাঘ্র প্রকল্পের সংখ্যা 42টি। জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক (উত্তরাখণ্ড) হল একটি বাঘ সংরক্ষণ কেন্দ্র।

8 গন্ডারের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি লেখো। গন্ডার সংরক্ষণ প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: গন্ডারের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ

① বন ধ্বংস: জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে তাদের বসতি গড়ে তুলতে ক্রমাগত বনাঞ্চলের গাছ কেটে ফেলায় গন্ডারের বাসস্থান বহুলাংশে নষ্ট হয়েছে।

② চোরাশিকার: গন্ডারের শিং গৃহসজ্জার উপকরণ, ভেষজ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এগুলি চোরাবাজারে মহামূল্যবান। অবাধ চোরাশিকারের ফলে গন্ডারের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। ও বংশবৃদ্ধি হার: গন্ডারের গর্ভধারণকাল দীর্ঘ (479 দিন) এবং একবছরে একটি বাচ্চা প্রসব করার কারণে এদের বংশবৃদ্ধির হার অনেক কম হয়।

গন্ডার সংরক্ষণ প্রচেষ্টা: ভারতে 85% গন্ডার অসমে পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক সংস্থা WWF (World Wide Fund for Nature)-এর সহযোগিতায় অসমের বনদপ্তর একটি প্রকল্প গ্রহণ করে, যার নাম ইন্ডিয়ান রাইনো ভিশন 2020 বা IRV 2020। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, 2020 সালের মধ্যে অসমে তথা ভারতবর্ষে গন্ডারের সংখ্যা 3000-এ নিয়ে যাওয়া। এই প্রকল্পের সাফল্যের কারণে 2013 সালে এই সংখ্যা অসমে 2544-এ এসে দাঁড়িয়েছে। 2013-এর সুমারি অনুযায়ী শুধু কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্কেই গন্ডারের সংখ্যা 1855 থেকে 2329 দাঁড়িয়েছে।

9. ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে তোমার দুটি সুচিন্তিত মৌলিক মতামত দাও। মিষ্টি জলের দূষণ রোধে তুমি কীভাবে সাধারণ মানুষকে সম্যক সচেতন করবে?

উত্তর: ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হলে-

① ইন-সিটু সংরক্ষণের মাধ্যমে গন্ডারের জন্য নিরাপদ বাসস্থান, উপযুক্ত পরিমাণ খাদ্য ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে।

② আইন প্রণয়নের মাধ্যমে গন্ডার শিকার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে এবং গন্ডাররা যাতে স্বাভাবিকভাবে প্রজননে অংশ নিতে পারে, তার জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

[ মিষ্টি জলের দূষণ রোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রূপে আমি যে কাজগুলি করতে পারি, সেগুলি হল-

① স্থানীয় মানুষজনকে একটি আলোচনা সভায় ডেকে, পৃথিবীতে মিষ্টিজলের পরিমাণ বা শতকরা অংশ সম্বন্ধে অবহিত করতে পারি। যেমন-তাদের জানাতে পারি পৃথিবীতে মোট জলের মাত্র 3% হল মিষ্টি জল। এর মধ্যে 1/3 হল অংশ হিমবাহ আর মেরু বরফ। পৃথিবীর সমগ্র জলের প্রায় 1% হল পানযোগ্য ও ব্যবহারযোগ্য।

② জনগণের কাছে আবেদন রাখতে পারি, নর্দমা ও পয়ঃপ্রণালির নোংরা জল নদীতে ফেলার আগে তা যেন শোধন করা হয়।

③ পুকুর-ডোবাকে কচুরিপানা মুক্ত রাখতে হবে এবং পানীয় জল ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে।

④ জলের অপব্যবহার রোধ করতে হবে এবং জলাশয়ে প্লাস্টিক ও পলিথিন নিক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।

10. সিংহের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি লেখো। সিংহ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। 

উত্তর: সিংহের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ

① বাসস্থানের বিনাশ: মানব জনসংখ্যার চাপে বনভূমির গাছ কেটে বাসভূমি গড়ে তোলায় সিংহের স্বাভাবিক বাসস্থান নষ্ট হয়েছে। গির অরণ্যের মধ্যে দিয়ে প্রধান সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে দুর্ঘটনায় বহুসংখ্যক সিংহ মারা যায়। ② চোরাশিকার: সিংহের হাড় ভেষজ ওষুধরূপে ব্যবহৃত হওয়ায় এবং নখ ও চামড়ার লোভে অসাধু ব্যবসায়ী, চোরাশিকারিরা সিংহ হত্যা করে অর্থ উপার্জন করে।

 সিংহ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা: জুনাগড়ের রাজা 1910 খ্রিস্টাব্দে প্রথম সিংহ সংরক্ষণের প্রচেষ্টা করেন। তিনি সিংহ হত্যা নিষিদ্ধ করেন। এই নিষেধ স্বাধীনতার পরেও বজায় থাকে। 1960 এবং 1970 সালে গির অরণ্যকে যথাক্রমে অভয়ারণ্য এবং জাতীয় উদ্যানরূপে ঘোষিত করা হয়। এখানে গুজরাট সরকারের তত্ত্বাবধানে গির লায়ন প্রজেক্ট চালু হয়। 1974 সাল থেকে এই পপুলেশন ক্রমশ বাড়তে থাকে। বর্তমানে গির অরণ্যে এশিয়ান সিংহের সংখ্যা 523 (2015, সিংহ গণনা অনুযায়ী)। 2015 সালে ভারত সরকারের পরিবেশমন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে প্রজেক্ট লায়ন (project lion) গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া এশিয়াটিক লায়ন রি- ইনট্রোডাকশন প্রজেক্ট-এর মাধ্যমে এশিয়ার সিংহকে বাঁচানোর জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

11. কুমিরের সংখ্যা হ্রাসের কারণগুলি লেখো। কুমির সংরক্ষণ প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। 

উত্তর: কুমিরের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ

① চোরাশিকার: কুমিরের চামড়া সংগ্রহের জন্য কুমির নিধন করা হয়।

② খাদ্য: কুমিরের ডিম খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করায় তাদের সংখ্যা হ্রাস

পায়। 

③ জেলেদের দ্বারা সংহার: জেলেরা মাছ ধরতে গিয়ে জালে কুমির উঠলে অনেকসময়ে তাকে মেরে ফেলে।

[⇨ কুমির সংরক্ষণ প্রচেষ্টা: কুমির সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে 1974 সালে ‘কুমির সংরক্ষণ গবেষণা প্রকল্প’ চালু হয়েছে। 1975 সালে ভারত সরকার কুমির প্রজনন ও পরিচালন প্রকল্প বা প্রজেক্ট ক্রোকোডাইল নামক কুমির সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণ করে। 16টি কুমির পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং 11টি কুমির স্যাংচুয়ারিতে ভারতবর্ষব্যাপী প্রকল্পটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রকল্পটিতে সহায়তা করবার জন্য কুশলী পরিচালকের প্রয়োজন অনুভব করে 1980 সালে হায়দ্রাবাদে কুমির প্রজনন ও পরিচালন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। ওড়িশার ভিতরকণিকা অভয়ারণ্য হল উল্লেখযোগ্য কুমির সংরক্ষণ প্রকল্প কেন্দ্র।

12. রেড পান্ডার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণগুলি লেখো।

রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রচেষ্টা সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর: রেড পান্ডার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণ

① বাসস্থানের বিনাশ: বনজ কাঠ সংগ্রহ ও কৃষিকাজের জমির সম্প্রসারণে রেড পান্ডার বাসযোগ্য বনভূমি হ্রাস পেয়েছে। এদের খাদ্য মূলত বাঁশ গাছের পাতা। এই গাছের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় প্রাণীটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ② কুকুরের আক্রমণ: এ ছাড়া কুকুর প্রায়শই এই প্রাণীটিকে আক্রমণ করে মেরে ফেরে। ও চোরাশিকার: রেড পান্ডার লোমশ চামড়া ও ঝালরের মতো সুন্দর ল্যাজ, থেকে টুপি ও পরিধান তৈরি হওয়ায় চোরাশিকারিরা প্রাণীটিকে শিকার করে।

[⇨ রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রচেষ্টা: বর্তমানে রেড পান্ডা একটি বিপন্ন প্রাণী। এই প্রাণীটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। 2005 সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার (WWF) নামক সংস্থা এবং সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশ সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রকল্প চালু করা হয়। সিকিমের বার্সি রোডোডেনড্রন অভয়ারণ্য ও কাঞ্চনজঙ্ঘা বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ-এ রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রকল্পকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। এই সংরক্ষণ প্রকল্প অনুযায়ী এই দুই অঞ্চলে বাঁশ ও অন্যান্য উদ্ভিদকে জ্বালানির কাজে ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় 200 জন মানুষকে কৃষিজ বর্জ্য ও কাদা থেকে তৈরি বিশেষ জৈব গুল (জ্বালানি) তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অরুণাচল প্রদেশে ‘কমিউনিটি কনজার্ভড এরিয়া’ বা CCA নামক রেড পান্ডার কতকগুলি বসতি অঞ্চলে স্থানীয় মানুষকেও সংরক্ষণে অংশীদার করা হয়। CCA অঞ্চলে রেড পান্ডার দর্শনের থেকে তাদের অতিরিক্ত রোজগারের ব্যবস্থাও করা হয়।

13. পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশের জলাময় ঘাসভূমিতেই শুধু পাওয়া যায়, এরকম একটি বিলুপ্তপ্রায় স্তন্যপায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য কী কী সংরক্ষণ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, তার সংক্ষিপ্তসার লেখো। নদীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব আলোচনা করো। 

উত্তর: পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশের জলাময় ঘাসভূমিতেই শুধু পাওয়া যায়, এরকম একটি বিলুপ্তপ্রায় স্তন্যপায়ী হল-রেড পান্ডা বা বেড়াল ভাল্লুক বা ফায়ার ফক্স বা লেসার পান্ডা। এদের সংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য যে সকল সংরক্ষণ প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলি হল-① সিকিমের বার্সি রোডোডেনড্রন অভয়ারণ্য ও কাঞ্চনজঙ্ঘা বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ-এ রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রকল্প কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ② এই সংরক্ষণ প্রকল্প অনুযায়ী, এই দুই অঞ্চলে বাঁশ ও অন্যান্য উদ্ভিদকে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ③ স্থানীয় 200 মানুষকে কৃষিজ বর্জ্য ও কাদা থেকে তৈরি বিশেষ জৈবগুল (জ্বালানি) তৈরিতে প্রশিক্ষণ দানের ব্যবস্থা হয়েছে। এ অরুণাচল প্রদেশে কমিউনিটি কনজার্ভড এরিয়া (CCA) নামক রেড পান্ডার কতকগুলি বসতি অঞ্চলে স্থানীয় মানুষকেও সংরক্ষণে অংশীদার করা হয়েছে।

[ নদীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব হল-① নদীর জলে বসবাসকারী নানারকম উদ্ভিদ, উৎপাদকরূপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলজ ক্ষুদ্র উদ্ভিদবৈচিত্র্য, খাদক জীবদের শক্তি সরবরাহ করে থাকে। ② নদীতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণীরাও নদীর বাস্তুতন্ত্রে নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। ③ নদীতে বসবাসকারী প্রতিটি উদ্ভিদ ও প্রাণী (যেমন-বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কচ্ছপ, ডলফিন ইত্যাদি) বাস্তুতান্ত্রিকভাবে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ④ নদীর বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যশৃঙ্খলের অন্তর্গত যে-কোনো একটি জীব নদীর বাস্তুতন্ত্র থেকে বিলুপ্ত হলে, সামগ্রিকভাবে নদীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। এভাবে নদীতে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণী তথা জীববৈচিত্র্য ওই বাস্তুতন্ত্রের তথা নদীর বাস্তুতন্ত্রের স্থিতিশীলতা বজায় রাখে।

14. ভারতে চটি বিপন্ন প্রজাতির নাম, সংরক্ষণ প্রকল্প ও স্থান উল্লেখ করো।

উত্তর:  ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতি

বিপন্ন প্রজাতিসংরক্ষণ প্রকল্পসংরক্ষণ স্থান
[1] ভারতীয় বাঘ‘প্রজেক্ট টাইগার’① সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (পশ্চিমবঙ্গ)
② জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক (উত্তরাখণ্ড)
[2] একশৃঙ্গ গন্ডার‘IRV 2020’ বা ‘ইন্ডিয়ান রাইনোভিশন 2020’① কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক (অসম)
② জলদাপাড়া ন্যাশনাল পার্ক (পশ্চিমবঙ্গ)
[3] এশিয়াটিক সিংহ‘গির এশীয় সিংহ পুনাবির্ভাব প্রজেক্ট’ (Gir Asiatic Lion Reintroduction Project)গির ন্যাশনাল পার্ক ও ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি (গুজরাট)
[4] কুমির (ঘড়িয়াল ও লবণাক্ত জলের কুমির)কুমির প্রজনন ও পরিচালন প্রকল্প’① ভিতরকণিকা স্যাংচুয়ারি (ওড়িশা)
② ভগবতপুর কুমির প্রকল্প সুন্দরবন (পশ্চিমবঙ্গ)
[5] রেড পান্ডা‘রেড পান্ডা প্রকল্প’① সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক, দার্জিলিং (পশ্চিমবঙ্গ)
② কাঞ্চনজঙ্ঘা ন্যাশনাল পার্ক, (সিকিম)

15. অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যানের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তর:  অভয়ারণ্য ও জাতীয় উদ্যানের পার্থক্য

বিষয়অভয়ারণ্যজাতীয় উদ্যান
[1] সংজ্ঞা রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণী হত্যা বা শিকার করা ও জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ কিন্তু গবেষণার সার্থে অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করা যায়, তাকে অভয়ারণ্য বলে।কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ও আয়তনে অভয়ারণ্য অপেক্ষা বড়ো যেসব নির্দিষ্ট বনাঞ্চলে প্রাণী হত্যা, মাছ ধরা, গাছকাটা এমনকি বিনা অনুমতিতে প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ, সেগুলিকে জাতীয় উদ্যান বলে।
[2] সীমারেখাসর্বদা নির্দিষ্ট নয়।আইন দ্বারা নির্ধারিত।
[3] জিনপুলসংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা থাকে।সংরক্ষণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাহীন।
[4] নিষেধাজ্ঞাকাঠ কাটা, চাষ-আবাদ, বনজসম্পদ আহরণ অনুমতি সাপেক্ষ, তবে নিষিদ্ধ নয়।কাঠ কাটা, চাষ-আবাদ, বনজসম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ।

Short Question Answer

——————————————————————————————————————–

1. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য বা গুরুত্ব লেখো।

উত্তর: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের দুটি উদ্দেশ্য হল-① সংখ্যায় কম এমন প্রাণীদের ও উদ্ভিদের অস্তিত্ব বজায় রাখা, ② দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাকে সুদৃঢ় করা এবং মানবকল্যাণে জীববৈচিত্র্যের বিজ্ঞানভিত্তিক সুষ্ঠু ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা।

2. ইন সিটু সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: কোনো জীবকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে বেঁচে থাকার ও বংশবিস্তার করার সমস্ত সুবিধা প্রদান করে সংরক্ষণ করাকে ইন-সিটু সংরক্ষণ বা স্বস্থানিক সংরক্ষণ বলে। যেমন-সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানে বাঘ সংরক্ষণ।

3. ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কী কী?

উত্তর: ইন-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা হল-① প্রাকৃতিক পরিবেশে কম খরচে সংরক্ষণ করা যায়। ② জীবের মুক্ত প্রজনন সম্ভব হয় বলে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়।

ইন-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধা হল-① বৃহৎ আয়তন স্থানের প্রয়োজন হয়। ② অসুস্থ জীবের চিকিৎসা সম্ভব হয় না।

4. এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।

উত্তর: এক্স-সিটু সংরক্ষণ: কোনো জীবকে সংরক্ষণের জন্য বিশেষ সুরক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন হয়, যা তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্ভব নয়, তখন সেই জীবকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। এই ধরনের সংরক্ষণকে এক্স-সিটু সংরক্ষণ বলে।

উদাহরণ: বোটানিক্যাল গার্ডেন-এ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা।

5. এক্স-সিটু সংরক্ষণের সুবিধা কী কী?

উত্তর: এক্স-সিটু সংরক্ষণের সুবিধাগুলি হল-① কোনো প্রজাতি বিপন্ন হলে তার সুচিকিৎসা, সংরক্ষণ ও প্রজনন এক্স-সিটু সংরক্ষণ দ্বারা সম্ভব হয়। ② কোনো প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায় হলে সম্পূর্ণ বিলুপ্তির আগে তার জনন উপাদান (জননকোশ বা রেণু) ক্রায়োসংরক্ষণ দ্বারা সংরক্ষিত করে ভবিষ্যতে জীব তৈরি সম্ভব হয়।

6. এক্স-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধা কী কী?

উত্তর: এক্স-সিটু সংরক্ষণের অসুবিধাগুলি হল-① এক্স-সিটু সংরক্ষণে সীমিত সংখ্যক জীবের প্রজনন সম্ভব হয় বলে জিনগত বৈচিত্র্য হ্রাস পায়। ② এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।

7. ইন-সিটু ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি বা পথগুলি লেখো।

উত্তর: ইন-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পথগুলি হল-জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, সংরক্ষিত অরণ্য, সুরক্ষিত বনাঞ্চল ইত্যাদি। এক্স-সিটু সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পথগুলি হল-চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বীজ বা সিড ব্যাংক, জিন ব্যাংক ইত্যাদি।

৪. ইন-সিটু ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্য লেখো।

উত্তর:  ইন-সিটু ও এক্স-সিটু সংরক্ষণের পার্থক্যগুলি হল-

বিষয়ইন-সিটু সংরক্ষণএক্স-সিটু সংরক্ষণ
[1] সংরক্ষণ স্থানজীবের স্বাভাবিকবাসস্থানেই তারসংরক্ষণ করা হয়।জীবের স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে সরিয়ে কৃত্রিম স্থানে সংরক্ষণ করা হয়।
[2] প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাবিপন্ন প্রজাতিকে শিকারি প্রজাতি থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।বিপন্ন প্রজাতিকে সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
উদাহরণজাতীয় পার্ক, অভয়ারণ্য।চিড়িয়াখানা, ক্রায়োসংরক্ষণ।

9. জাতীয় উদ্যান কাকে বলে? দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: জাতীয় উদ্যান: কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ও আয়তনে অভয়ারণ্য অপেক্ষা বড়ো যেসব নির্দিষ্ট বনাঞ্চলে প্রাণী হত্যা, মাছ ধরা, গাছ কাটা, এমনকি বিনা অনুমতিতে প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ সেগুলিকে জাতীয় উদ্যান বা ন্যাশনাল পার্ক বলে।

উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের গোরুমারা জাতীয় উদ্যান এবং মধ্যপ্রদেশের বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান।

10. জাতীয় উদ্যানের বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর: জাতীয় উদ্যানের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল-① জাতীয় উদ্যান হল সরকার অধিগৃহীত এবং নিয়ন্ত্রাণাধীন এক অঞ্চল যেখানে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। ② এইজাতীয় উদ্যানে কোনো ধরনের শিকার করা, চাষবাস করা বা গৃহপালিত পশুচারণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ও এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজ সম্পদকে জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয়।

11. জাতীয় উদ্যান স্থাপনের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

উত্তর: জাতীয় উদ্যান স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্দেশ্য হল- ① সংকটাপন্ন প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের এবং প্রজননের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রচনা করা। ② নির্দিষ্ট অঞ্চলটির প্রাকৃতিক পরিবেশ, উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ সম্পদসমূহের জাতীয় স্তরে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।

12. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জাতীয় অরণ্যের ভূমিকা লেখো।

উত্তর: জাতীয় অরণ্যগুলিতে সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হওয়া যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে। ভারতীয় সিংহ, রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার, একশৃঙ্গ গন্ডার প্রভৃতি প্রাণীগুলির সংখ্যা এর ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে। ② জাতীয় অরণ্যগুলি একমুখী মানব উন্নয়নের বদলে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ও স্থানীয় আদিবাসী, তাদের ঐতিহ্য ও পরম্পরা রক্ষা করতেও জাতীয় অরণ্য সাহায্য করে থাকে।

13. জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে ও গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলির নাম লেখো।

উত্তর: জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত উল্লেখযোগ্য প্রাণীগুলি হল-একশৃঙ্গ গন্ডার, বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ, হাতি, বাঘ, শূকর ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ইত্যাদি।

গোরুমারা জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষিত প্রাণীগুলি হল-বাইসন, গন্ডার, হাতি, গাউর, শ্লথ বিয়ার, সম্বর, বন্য শূকর, পিগমি হগ ইত্যাদি।

14 অভয়ারণ্য বা স্যাংচুয়ারি কাকে বলে? দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: অভয়ারণ্য: রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন এমন একটি বনাঞ্চল যেখানে আইনের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী হত্যা বা শিকার করা এবং জনসাধারণের প্রবেশ একেবারে নিষিদ্ধ, তাকে অভয়ারণ্য বলে। কিন্তু গবেষণার স্বার্থে অনুমতি সাপেক্ষে অভয়ারণ্যে প্রবেশাধিকার লাভ করা যায়।

উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের চাপড়ামারি ও ঝাড়খণ্ডের পালামৌ অভয়ারণ্য।

15. অভয়ারণ্যের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর: অভয়ারণ্যের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল① অভয়ারণ্যে বন্যপ্রাণী শিকার রাজ্য সরকার কর্তৃক আইন প্রণয়নের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। ② এই ধরনের বনাঞ্চলে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তবে মুখ্য বন আধিকারিক বা কর্তব্যরত সরকারি কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।

16. অভয়ারণ্য স্থাপনের যে-কোনো দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

উত্তর: অভয়ারণ্য স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্দেশ্য হল- ① চোরাশিকারির হাত থেকে প্রাণী বৈচিত্র্যকে রক্ষা করা। ② স্বাভাবিক পরিবেশে সংকটাপন্ন জীবপ্রজাতির সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।

17. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে অভয়ারণ্যের ভূমিকা লেখো।

উত্তর: ① অভয়ারণ্যগুলি স্থানীয় বা এনডেমিক প্রজাতিগুলি রক্ষা করতে সাহায্য করে। ② স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখা, জীবের প্রজননে স্থান প্রদান করে জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে অভয়ারণ্য সাহায্য করে। ③ অভয়ারণ্য ইকোপর্যটন দ্বারা মানুষকে আনন্দ প্রদান করে থাকে। প্রকৃতি ও জীব সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানলাভেও এগুলি সাহায্য করে।

18. বন্যপ্রাণী আইন অনুসারে অভয়ারণ্যে যে যে কাজ নিষিদ্ধ তার যে- কোনো চারটি তালিকাভুক্ত করো।

উত্তর: বন্যপ্রাণী আইন অনুসারে অভয়ারণ্যে যে যে কাজ নিষিদ্ধ, সেগুলি-① বন্যপ্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বনে প্রবেশ করাও নিষিদ্ধ। ② বন্যপ্রাণী শিকার ও বেআইনিভাবে বনভূমির জমি দখল নিষিদ্ধ। ও জনসাধারণের তথা পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ④ ইচ্ছেমতো বন্যপ্রাণী নিয়ে গবেষণা করা নিষিদ্ধ।

19. সংরক্ষিত অরণ্য বা সংরক্ষিত বনাঞ্চল কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: সংরক্ষিত অরণ্য: ভারতীয় বন আইন, 1927 অনুযায়ী রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যেসব অরণ্যে সাধারণের প্রবেশের অধিকার থাকে না, কিন্তু অনুমতি নিয়ে গবেষকরা প্রবেশ করতে পারে সেইসব বনভূমিকে সংরক্ষিত অরণ্য বলে।

উদাহরণ: কেরলের শোলায়ার (Sholayar) সংরক্ষিত অরণ্য, কর্ণাটকের হানামাসাগর (Hanumasagara) সংরক্ষিত অরণ্য।

20. সংরক্ষিত অরণ্য বা রিজার্ভ ফরেস্ট-এর দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর: সংরক্ষিত অরণ্য বা রিজার্ভ ফরেস্ট-এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি হল-① এই ধরনের অরণ্য রাজ্য সরকারের আয়ত্তাধীন। ② এইপ্রকার বনাঞ্চলে গাছকাটা, শিকার করা এবং গৃহপালিত পশুচারণ সরকারি অনুমতি ছাড়া নিষিদ্ধ থাকে।

21. জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মধ্যে তুলনা করো।

উত্তর: নীচে জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য ও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের তুলনা করা হল-

বিষয়জাতীয় উদ্যানঅভয়ারণ্যসংরক্ষিত বনাঞ্চল
[1] সংরক্ষণ স্থানকেন্দ্রীয় সরকার অধিগৃহীত ও নিয়ন্ত্রণাধীন যে অঞ্চলে বন্যপ্রাণী ও বনজ সম্পদের চিরস্থায়ী সংরক্ষণ করা হয়।রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে অঞ্চলে বন্যপ্রাণী অবাধে বিচরণ করে। স্বাধীনভাবে খাদ্যগ্রহণ করে। এখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ও বন্যপ্রাণী হত্যা বা শিকার নিষিদ্ধ।রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন যে অংশে সাধারণ মানুষের প্রবেশ তথা কাঠ-কাটা, শিকার করা নিষিদ্ধ।
[2] বৈশিষ্ট্যপ্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীবজ সম্পদের জাতীয় পর্যায়ে সংরক্ষণ করা হয়।সরকারি অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ, কেবলমাত্র প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়।কেবলমাত্র গবেষণার কাজেই ভিতরে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া যায়।
উদাহরণপশ্চিমবঙ্গের জলদাপাড়াপশ্চিমবঙ্গের চাপড়ামারিপশ্চিমবঙ্গের বক্সা

22. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ: যে বিশেষ বনাঞ্চলে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জন্য বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী জমি অঞ্চলভিত্তিক ও নির্দিষ্ট ক্রিয়াকর্মভিত্তিক কতকগুলি নির্দিষ্ট অংশে ভাগ করা হয়, তাকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ বলে।

উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন ও তামিলনাড়ুর নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।

23. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অংশগুলি ব্যাখ্যা করো। অথবা, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের বৈশিষ্ট্য বলো।

অনুরূপ প্রশ্ন, কোর অঞ্চল কাকে বলে? বাফার জোন কী? ট্রানজিশন অঞ্চল বলতে কী বোঝ?

উত্তর: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সুবিধার জন্য বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভকে তিনটি অংশে বিভক্ত করা হয়। এগুলি হল-① কোর অঞ্চল: বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কেন্দ্রে অবস্থিত সংরক্ষিত অংশকে কোর অঞ্চল বলে। এই অঞ্চলে জীবের প্রজনন সাধিত হয় ও এই অঞ্চলের ইকোসিস্টেম অন্য অঞ্চলগুলিতে স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়। এই অঞ্চলে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ② বাফার অঞ্চল: কোর অঞ্চলকে ঘিরে অবস্থিত অঞ্চল যেখানে মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত। এই অঞ্চলে নিয়ন্ত্রিত পর্যটন, গবেষণা প্রভৃতি কাজ করা হয়। (3) ট্রানজিশন অঞ্চল বা ‘এরিয়া অফ কো-অপারেশন’: স্থানীয় বাসিন্দা ও সংরক্ষণ কর্মীরা এই অঞ্চলে থাকেন, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের চেষ্টা করেন। এই অঞ্চলের বনজ উপাদান পরিমিতভাবে ব্যবহার করা যায়।

24. বাফার জোন কী?

উত্তর: বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের প্রধান তিনটি অঞ্চলের মধ্যে কেন্দ্রীয় কোর অঞ্চলকে পরিবেষ্টন করে যে অঞ্চলটি থাকে, তাকে বাফার জোন বলে। এটি কোর জোন ও ট্রানজিশন জোনের মাঝের অংশ। বাফার জোন হল বায়োস্ফিয়ার রির্জাভের সেই অংশ যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার, গবেষণা ও শিক্ষামূলক কাজকর্ম সীমিতভাবে অনুমোদিত।

25. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ স্থাপনের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

উত্তর: বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ স্থাপনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল- ① বায়োস্ফিয়ারে থাকা জীবসমূহকে প্রজাতিগত ও জিনগত বৈচিত্র্যের ভিত্তিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। ② মানুষ ও প্রকৃতির আন্তঃসম্পর্কের উন্নতিসাধনের ব্যবস্থা করা।

26 পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি ন্যাশনাল পার্ক ও একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের উদাহরণ দাও।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি ন্যাশনাল পার্ক হল জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান ও একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হল সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।

27. এক্স-সিটু সংরক্ষণের দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: এক্স-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ হল- চিড়িয়াখানা (আলিপুর চিড়িয়াখানা) ও ② বোটানিক্যাল গার্ডেন (আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন)।

28. এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর: এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র বা পথ হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি বৈশিষ্ট্য হল-① বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে সংগৃহীত স্থলজ ও জলজ প্রাণীকে চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম পরিবেশে সংরক্ষণ করা হয়। ② এখানে তাদের রক্ষণাবেক্ষণ, বংশবৃদ্ধির পাশাপাশি প্রয়োজনমতো প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজও করা হয়।

29 এক্স-সিটু সংরক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে চিড়িয়াখানার দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: ① পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ, সিংহ, হাতি, সাপ ইত্যাদি প্রাণীকে সংরক্ষণ করা হয়। ② অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে, ইন্দিরা গান্ধী জুলজিক্যাল পার্কে শ্লথ, ভালুক, বন্যকুকুর, পুমা, জাগুয়ার প্রভৃতি সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।

30. এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর: এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল-① বিভিন্ন ধরনের বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদ এবং ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে সংরক্ষণ করা হয়। ② বিরল এবং বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদগুলির কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়।

31. এক্স-সিটু সংরক্ষণের ক্ষেত্র হিসেবে দুটি বোটানিক্যাল গার্ডেনের উদাহরণ দাও।

উত্তর: ① আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন, শিবপুর, হাওড়া-এখানে 330 m পরিধিযুক্ত বিখ্যাত বটগাছ সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া অর্কিড, পান এখানে সংরক্ষিত করা হয়। ② জওহরলাল নেহেরু ট্রপিক্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ত্রিবান্দ্রম, কেরল- এখানে ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা হয়।

32. ক্রায়োসংরক্ষণ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: ক্রায়োসংরক্ষণ হল একটি এক্স-সিটু সংরক্ষণ প্রক্রিয়া যাতে কোশ, কলা বা অন্য কোনো সজীব দেহাংশ তরল নাইট্রোজেনে প্রায়-196°C তাপমাত্রায় রেখে দীর্ঘদিন সজীব রাখা হয়।

33. ক্রায়োপ্রিজারভেশন করার ক্ষেত্রে প্রধান দুটি সমস্যা উল্লেখ করো।

উত্তর: ক্রায়োপ্রিজারভেশনের সমস্যাগুলি হল-① দ্রুত তাপমাত্রা হ্রাসে কোশে বরফ জমে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। একে ‘ক্রায়োইনজুরি’ বলে। ② ধীরে ধীরে তাপমাত্রা হ্রাস করলে কোশীয় অভিস্রবণ পদ্ধতি বিনষ্ট হয়।

34.ক্রায়োসংরক্ষণের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো এবং একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: ক্রায়োসংরক্ষণের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-① এইজাতীয় সংরক্ষণের ক্ষেত্রে তরল নাইট্রোজেন ব্যবহার করা হয়। ② সাধারণত -196°C তাপমাত্রায় বিভিন্ন ধরনের পরাগরেণু, গ্যামেট, কলাকোশ, বীজ ইত্যাদি ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হয়।

উদাহরণ: পশ্চিমবঙ্গের বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, শিবপুর (হাওড়া)-তে ক্রায়োসংরক্ষণের প্রয়োগ দেখা যায়।

35. ক্রায়োপ্রোটেক্টান্ট কী? উদাহরণ দাও।

উত্তর: ক্রায়োপ্রোটেক্টান্ট: যে উপাদানগুলির ব্যবহারে সজীব কলারহিমায়নে তার গঠনগত উপাদান বিনষ্ট হয় না, তাদের ক্রায়োপ্রোটেক্টান্ট বলে। এদের অপর নাম ক্রায়োপ্রোটেক্টিভ এজেন্ট বা CPA।

উদাহরণ: গ্লিসারল, সুক্রোজ।

36. জিন ব্যাংক কাকে বলে উদাহরণসহ লেখো।

উত্তর: জীবের দেহের জিনগত উপাদানের ক্রায়োসংরক্ষণ স্থানকে জিন ব্যাংক বলে। উদ্ভিদের বীজ, প্রাণীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণু এখানে সংরক্ষণ করা হয়। সিড ব্যাংক, কলা ব্যাংক, ক্রায়োব্যাংক প্রভৃতি হল জিন ব্যাংকের উদাহরণ। যেমন-ন্যাশনাল ব্যুরো অফ প্ল্যান্ট জেনেটিক্স, নতুন দিল্লি, এখানে জিন ব্যাংক রয়েছে।

37. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ক্রায়োসংরক্ষণের গুরুত্ব কী?

উত্তর: ক্রায়োসংরক্ষণের গুরুত্ব হল① দুষ্প্রাপ্য ও বিলুপ্তপ্রায় জীবের জিন দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাগারে সংরক্ষণ করা যায়। এর ফলে জীবটির অবলুপ্তি রোধ করা যায়। ② ভবিষ্যতে প্রয়োজনমতো কোনো জীবসৃষ্টিতে পদ্ধতিটি সাহায্য করে থাকে।

38. আরবোরেটাম কী? জার্মপ্লাজম ব্যাংক কাকে বলে?

উত্তর: আরবোরেটাম: আরবোরেটাম হল এক্স-সিটু সংরক্ষণের বিশেষ পদ্ধতি। এখানে বৈজ্ঞানিক ও শিক্ষাগত কারণে দুষ্প্রাপ্য উদ্ভিদ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

জার্মপ্লাজম ব্যাংক: মূলত সজীব বীজ ও উদ্ভিদ দেহাংশ সংরক্ষণ স্থানকে জার্মপ্লাজম ব্যাংক বলে। এখানে ক্রায়োপ্রিজারভেশন দ্বারা এই সংরক্ষণ করা হয়। যেমন-বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, শিবপুর।

39. ইলিশ, মৌমাছি, পেঙ্গুইন, সর্পগন্ধা-উপরোক্ত জীবগুলির | বিপন্নতার কারণ কী কী হতে পারে-তা নির্ধারণ করো।

উত্তর: ① ইলিশের বিপন্নতার কারণ: শিশু ইলিশ সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ, জলদূষণ, বিশ্ব উন্নায়ণ ও জলবায়ুর পরিবর্তন।

② মৌমাছির বিপন্নতার কারণ: শস্যক্ষেত্রে অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার, অরণ্যধ্বংস, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ুর পরিবর্তন।

③ পেঙ্গুইনের বিপন্নতার কারণ: পরিবেশ দূষণ, চোরাশিকার, বিশ্ব উল্লায়ণ ও জলবায়ুর পরিবর্তন।

④ সর্পগন্ধার বিপন্নতার কারণ: অতিমাত্রায় ব্যবহার।

40. জীববৈচিত্র্য চুক্তি (biodiversity treaty) কী?

উত্তর: 1992 খ্রিস্টাব্দে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে যে বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের বা কনজারভেশন অফ বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি (CBD)-এর জন্য 150টি দেশ ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি দলিলে স্বাক্ষর করে, যা বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামে পরিচিত।

41. আন্তর্জাতিক বায়োডাইভারসিটি চুক্তি বা CBD-এর গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য কী কী?

উত্তর: বায়োডাইভারসিটি চুক্তি নামক দলিলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যগুলি হল-① জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ করা, ② জীববৈচিত্র্য থেকে প্রাপ্ত সম্পদ আহরণের দীর্ঘস্থায়ী বন্দোবস্ত করা এবং ③ জিনগত সম্পদের পক্ষপাতহীন ব্যবহারের সুযোগের ব্যবস্থা করা।

42. জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার প্রস্তাব উপস্থাপন করো।

উত্তর: ① কোনো অঞ্চলের বিপন্ন প্রাণীদের চিহ্নিত করা এবং তাদের প্রজনন, খাদ্য ও বাসস্থান সুনিশ্চিত করা। ② স্থানীয় উদ্ভিদ বিনষ্ট না করা, বনোন্নয়ন ও বৃক্ষরোপণ করা। ③ স্থানীয় জনগণ ও সরকারের যৌথ উদ্যোগে বন পরিচালন করা ও বনজ উপাদানের পরিমিত ব্যবহার সুনিশ্চিত করা।

43. JFM প্রথম কোথায় ও কীভাবে গঠিত হয়?

উত্তর: 1971 খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুরের (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর) আরাবারি অরণ্যে JFM উদ্যোগের প্রথম প্রচেষ্টা দেখা যায়। স্থানীয় মানুষদের গোচারণ ও গাছ কেটে নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার শ্রী অজিত কুমার ব্যানার্জি, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে বন সুরক্ষা কমিটি গঠন করেন এবং নতুনভাবে শালগাছ রোপণ ও পরিচালনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে প্রায় 12.6 মিলিয়ন মূল্যের শালবৃক্ষ সৃষ্টি সম্ভব হয় (1988)। এই ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ভারত সরকারের পরিবেশমন্ত্রক স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বন উন্নয়নের পরিচালন নীতি প্রণয়ন করেন।

44. ‘PBR শুধু একটি প্রামাণ্য নথি নয়, এটি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ।’-ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: PBR-এ স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের মাত্রা, ব্যবহার প্রভৃতি সংক্রান্ত তথ্য সম্বলিত হয়। কিন্তু এটি শুধু তথ্যপূর্ণ নথি নয়, এর মূল উদ্দেশ্য হল স্থানীয়ভাবে জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে বিশদে জেনে সেই অনুযায়ী তার যথাযথ পরিচালন। অর্থাৎ, জীববৈচিত্র্যের প্রয়োজনভিত্তিক ব্যবহার, সংরক্ষণ প্রভৃতি সক্রিয়তামূলক কাজ PBR-এর উদ্দেশ্য, তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এটি গুরুত্বপূর্ণ।

45. পিপলস্ বায়োডাইভার্সিটি রেজিস্টার (PBR)-এ জীববৈচিত্র্য- সংক্রান্ত যে প্রধান বিষয়গুলি লিপিবদ্ধ করা হয় তা লেখো।

উত্তর: PBR-এ যে সমস্ত বিষয়ে তথ্য মজুত করা থাকে তা হল- ① সমস্ত স্থানীয় প্রজাতি সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্য। ② প্রজাতির বাসস্থান। ③ প্রজাতির থেকে প্রাপ্ত জৈবিক উৎপাদন (বা সম্পদ) সম্বন্ধে ধারণা, তাদের বাজারমূল্য, সংগ্রহের সময়, সংগ্রহের নিয়ম ও তাদের পরিবহণ পদ্ধতি। ④ প্রজাতিজাত উৎপাদনের প্রক্রিয়াকরণের প্রযুক্তি। ⑤ প্রজাতিজাত সম্পদের স্থানীয় ব্যবহার এবং পরিচালন পদ্ধতি। ⑥ স্থানীয় ভৌগোলিক তথ্য। ⑦ বিপন্ন প্রজাতি নির্ণয় ও স্থানীয় মানুষদের তরফ থেকে প্রজাতি সংরক্ষণের ধারণা ও উদ্যোগ। ⑧ স্থানীয় প্রজাতিগুলি সম্বন্ধে ঐতিহ্যবাহী, পরম্পরাগত ও বিশ্বাস-সংক্রান্ত তথ্য।

46. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট (JFM) এবং পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার (PBR)-এর একটি করে ভূমিকা লেখো।

উত্তর: JMF কমিটির একটি ভূমিকা হল-বনে চোরাশিকারের ঘটনা তাৎক্ষণিক বনদপ্তরকে জানানো।

PBR-এর একটি ভূমিকা হল-স্থানীয় মানুষকে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের ব্যাপারে সজাগ করে, সংরক্ষণে অংশীদার হতে অনুপ্রাণিত করে।

47. বিপন্ন (endangered) প্রজাতি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: যেসব প্রাণীর অচিরেই লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাদের বিপন্ন হওয়ার কারণ যদি সমান মাত্রায় বজায় থাকে এবং তাদের পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনা কম থাকে তবে সেই ধরনের প্রাণীদের বিপন্ন প্রজাতি বলে। IUCN রেডলিস্টে এটি সংকটগ্রস্ত ক্যাটাগোরির অন্তর্গত একটি উপবিভাগ। এইজাতীয় প্রাণীদের সংরক্ষণ ভীষণভাবে আবশ্যক। যেমন-ভারতীয় বাঘ, গন্ডার ও সিংহ।

48. অবলুপ্ত (extinct) জীব বলতে কী বোঝ?

উত্তর: যেসব প্রাণী ও উদ্ভিদকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সংরক্ষণাগারেও আর দেখা যায় না, তাদের অবলুপ্ত জীব বলে। যেমন- ডাইনোসর, ডোডো পাখি, প্যাসেঞ্জার পিজিয়ন, ক্যারোলিনা প্যারাকিট ইত্যাদি।

49. বিপন্ন প্রাণী ও অবলুপ্ত প্রাণীর নামসহ একটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর: বিপন্ন প্রাণী ও অবলুপ্ত প্রাণীর নামসহ একটি পার্থক্য হল-

বিপন্ন প্রাণীঅবলুপ্ত প্রাণী
যেসব প্রাণীর অচিরেই লুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা, তাদের বিপন্ন হওয়ার কারণ যদি সমানমাত্রায় বজায় থাকে এবং তাদের পুনরুদ্ধার করার সম্ভাবনা কম থাকে, তবে সেই ধরনের প্রাণীকে বিপন্ন প্রাণী বলে। উদাহরণ-শকুন, ঘড়িয়াল।যেসব প্রজাতির জীবদেহ একটিও গত 50 বছরে দেখা যায়নি বা চিহ্নিত করা হয়নি, তাদের অবলুপ্ত প্রাণী বলে। উদাহরণ-গোলাপি মাথাওয়ালা হাস, এশিয়াটিক চিতা।

50. সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণের জন্য কোন্ বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর: ① ম্যানগ্রোভ অরণ্য বাঁচানো। ② স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের সংরক্ষণ জরুরি কারণ বাঘের স্বাভাবিক খাদ্যের জোগান অত্যন্ত জরুরি। ③ স্বাদুজলের জলাশয় সংরক্ষণ যাতে বাঘকে লবণাক্ত সামুদ্রিক জল পান করতে না হয়। ④ চোরাশিকারির অনুপ্রবেশ ও বাঘ-হত্যা বন্ধ করা।

51. ‘প্রজেক্ট টাইগার’ কী?

উত্তর: ‘প্রজেক্ট টাইগার’ হল ভারতীয় সরকার দ্বারা 1973 সালে প্রণীত একটি বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথোরিটি (NTCA) দ্বারা পরিচালিত হয় এবং বর্তমানেও তা রূপায়িত হয়ে চলেছে। এটি জিম করবেট ন্যাশনাল পার্কে প্রথম পরিচালিত হয়।

52. প্রজেক্ট টাইগারের উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: বাঘের বাসস্থান কমার কারণগুলি দূর করা। ② বাঘের পপুলেশন বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা প্রজেক্ট টাইগার একটি সফল উদ্যোগ। 1970 নাগাদ ভারতীয় বাঘের সংখ্যা ছিল 1200 যা বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় 2226 হয়েছে (2014 সেনসাস)।

53. ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য দুটি সংরক্ষণ- সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।

উত্তর: গন্ডার সংরক্ষণে গৃহীত ব্যবস্থাগুলি হল-① গন্ডারের জন্য বাসস্থান সুনিশ্চিত করা ও তাদের খাদ্য ও পানীয়ের যথেষ্ট জোগানের ব্যবস্থা করা। ② গন্ডারের প্রজননের ব্যবস্থা করা, সম্ভব হলে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’-এর মাধ্যমে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টা করা। ও জনগণের মধ্যে গন্ডার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।

54. একশৃঙ্গ গন্ডার কোন্ কোন্ ভারতীয় জাতীয় পার্কে দেখা যায়?

উত্তর: একশৃঙ্গ গন্ডার দেখা যায়① কাজিরাঙা জাতীয় পার্ক, অসম (সর্ববৃহৎ, 1855 গন্ডার) ② জলদাপাড়া জাতীয় পার্ক, পশ্চিমবঙ্গ ③ গোরুমারা জাতীয় পার্ক, পশ্চিমবঙ্গ ④ মানস জাতীয় পার্ক, অসম ⑤ দুধওয়া জাতীয় পার্ক, উত্তরপ্রদেশ।

55. একটি বিপন্ন সরীসৃপ প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য ইন-সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলি লেখো এবং পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত এরকম একটি সংরক্ষণ স্থানের নাম লেখো।

উত্তর: একটি বিপন্ন সরীসৃপ প্রজাতি হল কুমির। কুমিরের ইন-সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থাগুলি হল-① কুমিরের প্রজননের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি ও তার পরিচালন। ② ক্যাপটিভ ব্রিডিং দ্বারা অভয়ারণ্যে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ তৈরি ও প্রজননে সাহায্য করা। ও চোরাশিকার ও কুমিরের ডিম সংগ্রহ প্রতিরোধ করা।

[• পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি সংরক্ষণ স্থান হল-ভগবতপুর কুমির প্রকল্প, সুন্দরবন।

56. গঙ্গা নদীতে ঘড়িয়ালের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ লেখো।

উত্তর: ঘড়িয়ালের সংখ্যা কমার কারণগুলি হল-① ঘড়িয়ালের খাদ্য হল মাছ, গঙ্গা নদীতে দূষণের কারণে মাছের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। ফলে প্রাণীটি খাদ্যের অভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে। ② মাছধরার জালে ধরা পড়লে তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। ③ চাষে অতিরিক্ত জল ব্যবহার, বাঁধ নির্মাণ প্রমুখ কারণে এদের বাসস্থান কমে আসছে।

57. গির অরণ্যে সিংহ সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত পদক্ষেপ প্রস্তাব করো।

অথবা, সিংহ সংরক্ষণের জন্য ভারতবর্ষের গির জাতীয় উদ্যানে যে যে ইন- সিটু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করো।

উত্তর: ① গির অরণ্যে বন্য উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করা। এর ফলে সিংহের বাসস্থান ও খাদ্যের জোগান বজায় থাকে। ② চোরাশিকার বন্ধ করা। ও কৃষিজমি রক্ষার্থে যে বৈদ্যুতিক বেড়া ব্যবহার করা হয়, তা বন্ধ করা। উন্মুক্ত কুয়োতে পড়ে যাতে সিংহের আর মৃত্যু না হয়, তার ব্যবস্থা করা। ④ প্রজনন কেন্দ্রে প্রজনন প্রকল্প পরিচালনা করা।

58. রেড পান্ডা কোন্ কোন্ ভারতীয় জাতীয় পার্কে দেখা যায়?

উত্তর: রেড পান্ডা দেখা যায়-① সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্ক, দার্জিলিং (পশ্চিমবঙ্গ) ② নকরেক জাতীয় পার্ক, মেঘালয় ও নেওরাভ্যালি জাতীয় পার্ক, দার্জিলিং (পশ্চিমবঙ্গ)। ④ কাঞ্চনজঙ্ঘা জাতীয় পার্ক (সিকিম)। ⑤ নামদাফা জাতীয় পার্ক (অরুণাচল প্রদেশ)।

59.’ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ কাকে বলে?

উত্তর:  নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চল, চিড়িয়াখানা বা অন্য কোনো সংরক্ষণ সুবিধা সমন্বিত স্থানে প্রাণী প্রজনন দ্বারা তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির পদ্ধতিকে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ বলে। কুমির, গন্ডার, রেড পান্ডা প্রভৃতি বিপন্ন প্রাণীর ক্ষেত্রে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’-এর সাহায্য নেওয়া হয়।

60. রেড ডাটা বুক কাকে বলে?

উত্তর: IUCN নামক বিশ্বসংস্থা পৃথিবীর বিপদগ্রস্ত জীবগুলির সংরক্ষণের স্বার্থে ওই জীবগুলির একটি তালিকা বা লিস্ট প্রকাশ করে। একে রেড লিস্ট বা রেড ডাটা বুক বলে। সমস্ত জীবকে এই লিস্টে মোট ৭টি শ্রেণিতে বিভক্ত করে শ্রেণি ভাগ করা হয়। যেমন-অবলুপ্ত (extinct), বিপন্ন (endangered), সংকটাপন্ন (vulnerable) প্রভৃতি।

61. ‘গ্রিন ডাটা বুক’ কী?

উত্তর: এটি একটি ছোটো পরিবেশসংক্রান্ত তথ্য-সমৃদ্ধ পকেটবুক যাতে 200টিরও বেশি দেশের কৃষি, বনজসম্পদ, জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে তাৎক্ষণিক তথ্য পাওয়া যায়। এটি প্রতিবছর বিশ্ব ব্যাংক প্রকাশ করে থাকে।

62. ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই বা ‘লিট্ল গ্রিন ডাটা বুক’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবছর পরিবেশ-সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য সংবলিত একটি বই প্রকাশ করে। একে ক্ষুদ্র সবুজ তথ্য বই (little green data book) বলে। এই বইয়ে পৃথিবীর বন ও জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য, কৃষি প্রভৃতি প্রায় 50 টির অধিক বিষয়ে তথ্য প্রকাশিত হয়।

63. ভারতের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান আইনগুলি কী কী?

উত্তর: ভারতের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রধান আইনগুলি হল- দ্য ওয়াইল্ড লাইফ (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট, 1972; ② দ্য ফরেস্ট (কনজারভেশন) অ্যাক্ট, 1980; ③ দ্য এনভায়রনমেন্ট (প্রোটেকশন) অ্যাক্ট, 1986; ④ বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি অ্যাক্ট, 2002।

64. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে তাদের যে-কোনো দুটির নাম উল্লেখ করো।

উত্তর:  জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে সংস্থাগুলি এগিয়ে এসেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি সংস্থা হল-① WWF বা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার এবং  | ② IUCN বা ইনটারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার।

——————————————————————————————————————–

MCQ

1. কোনো প্রজাতিকে জাতীয় পার্কে বা অভয়ারণ্যে সংরক্ষণ করা হলে, তাকে বলা হয়-

(A) বিশেষ সংরক্ষণ

(B) ইন-সিটু সংরক্ষণ ✔

(C) এক্স-সিটু সংরক্ষণ

(D) কিস্টোন প্রজাতি সংরক্ষণ

2. প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণ হল-

(A) জাতীয় উদ্যান ✔

(B) চিড়িয়াখানা

(C) আরবোরেটাম

(D) বীজ-ব্যাংক

3. মূল প্রাকৃতিক বাসস্থানে অর্থাৎ নিজস্ব পরিবেশে কোনো প্রজাতিকে সংরক্ষণ করলে, তাকে বলা হয়-

(A) ক্রায়োপ্রিজারভেশন 

(B) এক্স-সিটু কনজারভেশন

(C) ইন-সিটু কনজারভেশন ✔

(D) বায়োকনজারভেশন

4. আমাদের দেশের জাতীয় উদ্যানের ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে-

(A) কেন্দ্রীয় সরকার ✔

(B) রাজ্য সরকার

(C) স্থানীয় সংস্থা

(D) রাষ্ট্রপুঞ্জ

5. পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান ভারতের যে রাজ্যে অবস্থিত, সেটি হল- ④

(A) উত্তরপ্রদেশ

(B) কেরল ✔

(C) পশ্চিমবঙ্গ

(D) অসম

6. গোরুমারা জাতীয় উদ্যান যে রাজ্যে অবস্থিত, তার নাম-

(A) মধ্যপ্রদেশ 

(B) উত্তরপ্রদেশ 

(C) কেরল

(D) পশ্চিমবঙ্গ ✔

7. ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান হল-

(A) বন্দিপুর জাতীয় উদ্যান

(B) করবেট জাতীয় উদ্যান  ✔

(C) কানহা জাতীয় উদ্যান

(D) পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান

৪. গোরুমারা সংরক্ষিত অরণ্য (1895) যে বছর অভয়ারণ্যরূপে ঘোষিত হয় , তা হল-

(A) 1960 

(B) 1949 ✔ 

(C) 1954 

(D) 1989

9. গোরুমারা অভয়ারণ্য (1949) যে বছর জাতীয় উদ্যানরূপে ঘোষিত হয়, তা হল- 

(A) 1999 

(B) 1992 

(C) 1994 ✔ 

(D) কোনোটিই নয়

10. চাপড়ামারি সংরক্ষিত অরণ্য (1895) যে বছর অভয়ারণ্যরূপে ঘোষিত হয়, তা হল-

(A) 1995 

(B) 1998 ✔ 

(C) 2014 

(D) কোনোটিই নয়

11. নীচের কোন্ সজ্জাটি গোরুমারা, করবেট, কুলিক, নন্দাদেবী-এই চারটি অরণ্যের সঠিক ক্রম নির্দেশ করে তা নির্বাচন করো-

(A) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, অভয়ারণ্য, জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান

(B) জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, অভয়ারণ্য

(C) জাতীয় উদ্যান, জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ✔

(D) অভয়ারণ্য, বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ, জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য

12. নীচের কোন্ জোড়টি সঠিক নয়?

(A) গির-গুজরাট 

(B) কানহা-উত্তরপ্রদেশ ✔

(C) করবেট-উত্তরাখণ্ড

(D) কাজিরাঙা -অসম

13. হ্যালিডে আইল্যান্ড বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য কোথায় অবস্থিত?

(A) পশ্চিমবঙ্গে ✔

(B) কেরালায়

(C) গোয়ায় 

(D) মহারাষ্ট্রে

14. ময়ূর ঝরণা হাতি রিজার্ভ পশ্চিমবঙ্গের যে জেলায় অবিস্থত- 

(A) বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর  ✔

(B) জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার

(C) পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া

(D) কোনোটিই নয়

15. পশ্চিমবঙ্গের যে জেলায় বেথুয়াডহরি ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি অবস্থিত তা হল-

(A) উত্তর চব্বিশ পরগনা 

(B) নদিয়া  ✔

(C) বীরভূম

(D) জলপাইগুড়ি

16. নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার সংরক্ষিত অঞ্চলটি অবস্থিত-

(A) কর্ণাটকের বনাঞ্চলে  ✔

(B) সিকিমের বনাঞ্চলে

(C) ওড়িশার বনাঞ্চলে

(D) দার্জিলিং-এর বনাঞ্চলে

17. সংরক্ষণের একটি আধুনিক ব্যবস্থা হল-

(A) জাতীয় উদ্যান

(B) সংরক্ষিত অরণ্য 

(C) অভয়ারণ্য

(D) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ✔

18. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভে যে অংশগুলি দেখা যায়- 

(A) কোর অঞ্চল

(B) বাফার অঞ্চল

(C)  ট্রানসিট অঞ্চল

(D) সবগুলি সঠিক ✔

19. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কেন্দ্রে যে অঞ্চলটি থাকে, তাকে বলা হয়-

(A) রিজার্ভ অঞ্চল 

(B) কোর অঞ্চল  ✔

(C) বাফার অঞ্চল 

(D) ট্রানজিশন অঞ্চল

20. সিমলিপাল, সুন্দরবন, মানস হল- 

(A) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ✔

(B) অভয়ারণ্য 

(C) জাতীয় উদ্যান

(D) কোল্ড স্পট

21. UNESCO-এর MAB প্রোগ্রামে যে ধারণাটি সংরক্ষিত হয়- 

(A) সংরক্ষিত অরণ্য 

(B) অভয়ারণ্য 

(C) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ✔

(D) জাতীয় উদ্যান

22. নীচের কোন্টি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ সম্পর্কিত সঠিক তথ্য তা শনাক্ত করো- 

(A) বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের সাথে স্থানীয় মানুষ ও অন্যান্য জীব সম্প্রদায়ের সংরক্ষণ করা হয় ✔

(B) জাতীয় উদ্যান ও অভয়ারণ্য বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অন্তর্ভুক্ত নয় 

(C) বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে স্থানীয় মানুষের উপস্থিতি এবং অংশগ্রহণ অনুমোদিত নয় 

(D) এর আকার সাধারণত একটি অভয়ারণ্যের থেকে ছোটো হয় [Madhyamik ’20]

23. নিম্নলিখিত ব্যাঘ্র প্রকল্পগুলির মধ্যে কোন্টি আমাদের রাজ্যে অবস্থিত তা স্থির করো-

(A) বন্দিপুর 

(B) সিমলিপাল 

(C) সুন্দরবন  ✔

(D) কানহা

24. নীচের যেটি ইন-সিটু কনজারভেশনের অন্তর্গত নয়, সেটি হল- 

(A) চিড়িয়াখানা  ✔

(B) জাতীয় উদ্যান 

(C) বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ  

(D) অভয়ারণ্য

25. জীববৈচিত্র্যকে তাদের মূল প্রাকৃতিক বাসস্থানে বা পরিবেশের বাইরে বজায় রাখার পদ্ধতিকে বলে-

(A) জৈব সংরক্ষণ 

(B) এক্স-সিটু সংরক্ষণ ✔

(C) ইন-সিটু সংরক্ষণ 

(D) ক্রায়োপ্রিজারভেশন 

26. JFM প্রকল্প প্রথম চালু হয়-

(A) পশ্চিমবঙ্গে  ✔

(B) হরিয়ানাতে 

(C) মধ্যপ্রদেশে 

(D) অসমে

27. JFM ধারণাটির প্রথম সূত্রপাত হয় পশ্চিমবঙ্গের যে জেলায়, তা হল- 

(A) পশ্চিম মেদিনীপুর  ✔

(B) হাওড়া 

(C) কলকাতা 

(D) নদিয়া

28. JFM প্রকল্পটি প্রথম শুরু হয়েছিল-

(A) সুন্দরবন অরণ্যে 

(B) আরাবারি অরণ্যে  ✔

(C) গোরুমারা অরণ্যে 

(D) জলদাপাড়া অরণ্যে

29. JFM-এর সূত্রপাত হয় যে সালে, তা হল-

(A) 1976

(B) 1985

(C) 1963

(D) 1971  ✔

30. পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আরাবারি অরণ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের যে প্রয়াসটি প্রথম শুরু হয়, সেটি হল- 

(A) ক্রায়ো সংরক্ষণ

(B) JFM ✔

(C) চিড়িয়াখানা 

(D) বোট্যানিক্যাল গার্ডেন 

31. PBR-এর পুরো কথাটি হল- 

(A) পাবলিক বায়োলজিক্যাল রেজিস্টার 

(B) পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেকোমেনডেশনস্ 

(C) পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার  ✔

(D) পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেকর্ড 

32. যে সালে ব্যাঘ্র প্রকল্প ভারতে শুরু হয়-

(A) 1970 

(B) 1971 

(C) 1969 

(D) 1973  ✔

33. অসমের কাজিরাঙা অরণ্য যে প্রাণীর সংরক্ষণের জন্য বিশেষভাবে খ্যাত, তা হল- 

(A) হরিণ 

(B) হাতি 

(C) একশৃঙ্গ গন্ডার  ✔

(D) সিংহ

34. গন্ডার নিম্নলিখিত কোন্ ভারতীয় রাজ্যে দেখা যায়?

(A) ত্রিপুরা 

(B) অসম  ✔

(C) উত্তরাখণ্ড 

(D) অরুণাচল প্রদেশ

35. গন্ডার পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের 

(A) সুন্দরবনে 

(B) জলদাপাড়ায় ✔

(C) বেথুয়াডহরিতে 

(D) পুরুলিয়ার জঙ্গলে

36. শিকারিরা গন্ডারকে হত্যা করে, মূলত তার- 

(A) মাংসের জন্য 

(B) দাঁতের জন্য 

(C) নখের জন্য 

(D) খড়গের জন্য ✔

37. ভারতবর্ষে সিংহ সংরক্ষিত হয়- 

(A) গির অরণ্যে ✔ 

(B) জিম করবেট জাতীয় অরণ্যে

(C) পশ্চিমঘাটের অরণ্যে 

(D) উদ্যানে জলদাপাড়া জাতীয়

38. IUCN ঘোষিত অতি সংকটাপন্ন বিপন্ন প্রজাতি হল- 

(A) বাঘ 

(B) ঘড়িয়াল  ✔

(C) গন্ডার 

(D) হরিণ

39. টিকরপাড়া কী জন্য বিখ্যাত?

(A) লিও প্রোজেক্ট 

(B) ক্রোকোডাইল প্রোজেক্ট  ✔

(C) রেড পান্ডা প্রোজেক্ট

(D) টাইগার প্রোজেক্ট 

40. পশ্চিমবঙ্গের যে সংরক্ষিত অঞ্চলে রেড পান্ডা পাওয়া যায়- 

(A) ময়ূর ঝরণা হাতি রিজার্ভ 

(B) সজনেখালি অভয়ারণ্য 

(C) সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্ক  ✔

(D) কোনোটিই নয়

41. সিঙ্গালিলা জাতীয় পার্ক যে জেলায় অবস্থিত- 

(A) কোচবিহার 

(B) দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা 

(C) দার্জিলিং  ✔

(D) মালদা

42. রেড ডেটা বুক তৈরি করে যে সংস্থা, তার নাম- 

(A) WWF 

(B) IUCN ✔ 

(C) IMF 

(D) FAO

43. IUCN-এর হেডকোয়ার্টার যে দেশে অবস্থিত- 

(A) গ্ল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড  ✔

(B) প্যারিস, ফ্রান্স 

(C) ভিয়েনা, অস্ট্রিয়া 

(D) নিউইয়র্ক, USA

——————————————————————————————————————–

Very Short Question Answer

1. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতিকে কতভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পদ্ধতিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

① ইন-সিটু সংরক্ষণ এবং ② এক্স-সিটু সংরক্ষণ।

2. জীবগোষ্ঠীকে তার প্রাকৃতিক পরিবেশে সংরক্ষণ করার পদ্ধতির নাম কী?

ইন-সিটু সংরক্ষণ।

3. পেরিয়ার জাতীয় উদ্যান (1982) কোন্ রাজ্যে অবস্থিত?

কেরল।

4. বনমন্ত্রক 2013-এর তথ্য অনুযায়ী, ভারতে কয়টি জাতীয় উদ্যান সরকারিভাবে স্বীকৃত?

102টি।

5. ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যানের নাম লেখো।

জিম করবেট ন্যাশনাল পার্ক।

6. পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত অভয়ারণ্যের নাম কী?

বিভূতিভূষণ ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি।

7. পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলায় অবস্থিত অভয়ারণ্যের নাম লেখো।

বল্লভপুর ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি।

৪. পশ্চিমবঙ্গের একটি পক্ষী অভয়ারণ্যের নাম লেখো।

চিন্তামণি কর পক্ষী অভয়ারণ্য (নরেন্দ্রপুর)।

9. পশ্চিমবঙ্গের একটি অভয়ারণ্যের নাম লেখো।

সজনেখালি ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি।

10. গির অরণ্যের অবস্থান লেখো।

গুজরাট।

11. ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ার কোথাকার রিজার্ভ ফরেস্ট?

উত্তরাখণ্ড।

12. পশ্চিমবঙ্গের একটি সংরক্ষিত অরণ্যের নাম লেখো।

চাপড়ামারি।

13. এটি কীসের চিত্র? a, b ও c অংশের নাম ও কাজ লেখো।   

এটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের অংশসমূহের চিত্র।

a = ট্রানজিশন অঞ্চল। এই অঞ্চলে বনসম্পদ পরিমিতভাবে ব্যবহার করা যায়।

b = বাফার অঞ্চল। এই অঞ্চলে মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত, তবে পর্যটন, গবেষণা ইত্যাদি কাজে ব্যবহারযোগ্য।

c = কোর অঞ্চল। কেন্দ্রীয় এই অঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ, বন্যপ্রাণী এই অঞ্চলে থাকে ও প্রজনন করে থাকে।

14. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কেন্দ্রে যে অঞ্চল থাকে তাকে কী বলে?

কোর অঞ্চল।

15. ভারতের প্রথম বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ কোন্টি?

নীলগিরি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ (তামিলনাড়ুর নীলগিরি অঞ্চলটি 1986 সালে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসেবে ঘোষিত হয়)।

16. কোন্ ইন-সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থায় অণুজীব, বন্যপ্রাণী ও বন্য উদ্ভিদসহ | মানুষের বৈচিত্র্য, কৃষ্টি ও জীবনযাত্রা সংরক্ষণ হয়? 

বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ সংরক্ষণ ব্যবস্থায়।

17. জীবগোষ্ঠীকে তার নিজস্ব প্রাকৃতিক পরিবেশের বাইরে কৃত্রিম পরিবেশে সংরক্ষণ করাকে কী বলে?

এক্স-সিটু সংরক্ষণ।

18. চিড়িয়াখানায় বাঘের সংরক্ষণ কী ধরনের সংরক্ষণ? 

এক্স-সিটু সংরক্ষণ।

19. পশ্চিমবঙ্গের একটি চিড়িয়াখানার নাম লেখো।

জুলজিক্যাল গার্ডেন, আলিপুর।

20. পশ্চিমবঙ্গের একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন-এর নাম লেখো।

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ভারতীয় বোটানিক গার্ডেন।

21. সাধারণত কত ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ক্রায়োপ্রিজারভেশন করা হয়?

সাধারণত -196°C তাপমাত্রায় ক্রায়োপ্রিজারভেশন করা হয়।

22. কোন্ প্রাণীতে ক্রায়োপ্রোটেকটান্ট পাওয়া যায়?

সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলের পতঙ্গ, মাছ ও উভচরে ক্রায়োপ্রোটেকটান্ট বা অ্যান্টিফ্রিজিং প্রোটিন কম্পাউন্ড পাওয়া যায়।

23. ক্রায়োপ্রোটেকটান্ট কীভাবে কোশে বরফ স্ফটিক তৈরি প্রতিরোধ করে?

ক্রায়োপ্রোটেকটান্ট কোশের জল অণুগুলির সঙ্গে কোশীয় উপাদানের হাইড্রোজেন বন্ধন সৃষ্টি হতে দেয় না ও স্ফটিক সৃষ্টি প্রতিরোধ করে।

24. ক্রায়োসংরক্ষণের মাধ্যমে কী কী সংরক্ষিত হয়?

গ্যামেট, ভ্রুণ, বীজ, পরাগরেণু ও কণা।

25. ক্রায়োইনজুরি কী?

অনেকসময় ক্রায়োপ্রিজারভেশন করার সময় দ্রুত জল থেকে বরফ জমার সময় কোশীয় গঠন বিনষ্ট হয়। একে ক্রায়োইনজুরি বলে।

26. সুন্দরবনের একটি প্রাণী প্রজাতির নাম লেখো।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

27. স্থানীয় মানুষ ও বনদপ্তর যৌথভাবে জঙ্গল পুনরুদ্ধারের জন্য যে ব্যবস্থা অনুসরণ করে, তার নাম লেখো।

JFM (Joint Forest Management) ।

28. JFM-এর পুরো কথাটি কী?

জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট।

29. JFM-এর অধীনস্থ কয়েকটি কমিটির নাম লেখো।

ফরেস্ট প্রোটেকশন কমিটি (FPC), ইকোডেভেলপমেন্ট কমিটি (EDC), ভিলেজ ফরেস্ট কমিটি (VFC) ইত্যাদি।

30. স্থানীয় মানুষ ও সরকারের কোন্ পরিচালন ব্যবস্থা জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে সাফল্য পেয়েছে?

JFMI

31. PBR-এর সম্পূর্ণ নাম কী?

পিপলস্ বায়োডাইভারসিটি রেজিস্টার।

31. ভারতীয় বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের নাম লেখো।

প্রজেক্ট টাইগার।

32. সুন্দরবন কোন্ প্রাণী সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত?

► রয়‍্যাল বেঙ্গল টাইগার।

33. ভারতের বাঘ সংরক্ষক অরণ্যের নাম লেখো।

সুন্দরবন।

34. ভারতের তিনটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র কী কী?

ভারতের তিনটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্রের নামগুলি হল-পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন, উত্তরাখণ্ডের করবেট টাইগার রিজার্ভ ও মধ্যপ্রদেশের কানহা।

35. ওড়িশার সাতকোশিয়া কোন্ বিপন্ন প্রাণী সংরক্ষণের জন্য বিখ্যাত?

ভারতীয় বাঘ।

36. পশ্চিমঘাট ও শ্রীলঙ্কা হটস্পটে সংরক্ষিত একটি বিপন্ন প্রাণীর নাম লেখো।

ভারতীয় বাঘ।

37. ভারত সরকারের অধীনস্থ সংস্থা NTCA-এর সম্পূর্ণ নাম কী?

> ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথোরিটি।

38. ভারতীয় একশৃঙ্গ গন্ডারের বৈজ্ঞানিক নাম কী?

Rhinoceros unicornis (রাইনোসেরস ইউনিকর্নিস)।

39. ভারতে একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণ প্রকল্পের নাম লেখো।

‘ইন্ডিয়ান রাইনোভিশন 2020’।

40. একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণের একটি স্থানের নাম কী?

কাজিরাঙা ন্যাশনাল পার্ক (অসম)।

41. পশ্চিমবঙ্গের কোথায় গন্ডার সংরক্ষণ করা হয়?

গোরুমারা ন্যাশনাল পার্ক।

42. এশিয়ান বা এশীয় সিংহের বৈজ্ঞানিক নাম লেখো।

Panthera leo perisica (প্যানথেরা লিও পারসিকা)।

43. এশীয় সিংহ সংরক্ষণ প্রকল্পের নাম লেখো।

গির লায়ন প্রজেক্ট।

44. গির অরণ্যের অবস্থা লেখো।

গুজরাট।

45. এশীয় সিংহ সংরক্ষণের একটি স্থানের নাম লেখো।

গির ন্যাশনাল পার্ক (গুজরাট)।

46. ঘড়িয়ালের বৈজ্ঞানিক নাম লেখো।

Gavialis gangeticus (গ্যাভিয়ালিস গ্যানজেটিকাস)।

47. লবণাক্ত জলের কুমিরের বৈজ্ঞানিক নাম লেখো।

Crocodilus porosus (ক্রোকোডাইলাস পোরোসাস)।

48. একটি কুমির প্রকল্পের উদাহরণ দাও।

ভগবতপুর কুমির প্রকল্প, পশ্চিমবঙ্গ।

49. ওড়িশার কোন্ অঞ্চলে কুমির প্রকল্প রয়েছে?

ভিতরকণিকা অভয়ারণ্য।

50. বাউলা প্রজেক্ট কী?

উড়িয়া ভাষায় বাউলা হল কুমির। কুমির সংরক্ষণে ভিতরকণিকার ডাঙ্গমল অঞ্চলের কুমির প্রকল্পকে বাউলা প্রজেক্ট বলে।

51. রেড পান্ডার বৈজ্ঞানিক নাম লেখো।

Ailurus fulgens (অ্যায়লিউরাস ফালজেন্স)।

52. রেড পান্ডার প্রধান খাদ্য কী?

রেড পান্ডার প্রধান খাদ্য হল বাঁশগাছের কচি পাতা।

53. রেড পান্ডা সংরক্ষণ প্রকল্পের নাম লেখো।

রেড পান্ডা কনজারভেশন প্রকল্প (2005)।

54. ভারতে একটি ক্যাপটিভ ব্রিডিং স্থানের নাম লেখো।

ওড়িশার নন্দনকানন।

55. দার্জিলিং-এর নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক-এ কোন্ বিপন্ন প্রাণী সংরক্ষিত হয়?

রেড পান্ডা।

56. পূর্ব হিমালয় হটস্পটে সংরক্ষিত একটি বিপন্ন প্রাণীর নাম লেখো।

রেড পান্ডা।

—————————————————————————————————————

Fill in The Blanks

1. কোনো জীবকে তার স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বাসস্থানে সংরক্ষণ করা হলে তাকে  ইন-সিটু সংরক্ষণ বলা হয়।

2. ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান স্থাপিত হয়  1936 সালে।

3. জিন ব্যাংক হল একপ্রকার এক্স-সিটু সংরক্ষণ ব্যবস্থা। 

4. জাতীয় উদ্যান একটি ইন-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ।

5. ভারতের সর্ববৃহৎ জাতীয় উদ্যান হল জিম করবেট জাতীয় উদ্যান।

6. ভরতপুর বার্ড স্যাংচুয়ারি রাজস্থানে অবস্থিত।

7. কর্ণাটকের বন্দিপুর হল একটি জাতীয় উদ্যান

৪. করবেট জাতীয় উদ্যানটি উত্তরাখণ্ড রাজ্যে অবস্থিত।

9. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হল একপ্রকার ইন-সিটু সংরক্ষণ।

10. সুন্দরবন হল পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত একটি বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।

11. IRV 2020 হল গন্ডার সংরক্ষণে ভারতীয় প্রকল্প।

12. কাজিরাঙাতে সংরক্ষিত প্রাণীটি হল একশৃঙ্গ গন্ডার

13. ওড়িশার ভিতরকণিকা অভয়ারণ্য হল উল্লেখযোগ্য কুমির সংরক্ষণ কেন্দ্র।

14. রেড পান্ডা সিকিম  রাজ্যের রাজ্য পশু।

15. ভারত সরকার প্রতিষ্ঠিত জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট নামক ব্যবস্থা 1971 সালে জঙ্গল পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয়।

16. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম JFM গঠিত হয় মেদিনীপুর জেলার আরাবারি অরণ্যে।

17. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম JFM গঠিত হয় 1971 খ্রিস্টাব্দে।

18. FPC হল JFM এর অধীনে গঠিত একটি কমিটি।

——————————————————————————————————————–

True And False

1. ভারতে প্রথম জাতীয় উদ্যান হল হেইলি জাতীয় উদ্যান।

সত্য [সূত্র-বর্তমানে তা করবেট ন্যাশনাল পার্ক নামে খ্যাত।]

2. চাপড়ামারি হল পশ্চিমবঙ্গের একটি জাতীয় উদ্যান।

মিথ্যা [সূত্র-এটি একটি অভয়ারণ্য।]

3. করবেট ন্যাশনাল পার্ক উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত।

মিথ্যা [সূত্র-উত্তরাখণ্ড রাজ্যে অবস্থিত।]

4. জাতীয় উদ্যান এক্স-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ।

মিথ্যা [সূত্র-এটি ইন-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ।]

5. পশ্চিমবঙ্গের ‘মানস’ জাতীয় উদ্যানে একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণ করা হয়।

মিথ্যা [সূত্র-অসমের ‘মানস’ জাতীয় উদ্যানে একশৃঙ্গ গন্ডার সংরক্ষণ করা হয়।]

6. বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভের কেন্দ্রে অবস্থিত অঞ্চলকে বাফার অঞ্চল বলে।

মিথ্যা [সূত্র-এর কেন্দ্রীয় অংশকে কোর অঞ্চল বলে যেখানে বন্যপ্রাণীরা নির্বিঘ্নে প্রজননে সহজে লিপ্ত হতে পারে।]

7. পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চল হল একটি বয়োস্ফিয়ার রিজার্ভ।

সত্য [সূত্র-এই অঞ্চলে মূলত ভারতীয় বাঘ সংরক্ষিত হয়।]

৪. চিড়িয়াখানা হল একটি ইন-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ।

মিথ্যা [সূত্র-এটি এক্স-সিটু সংরক্ষণের উদাহরণ।]

9. ক্রায়োপ্রিজারভেশনে–196°C তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়।

সত্য [সূত্র-তরল নাইট্রোজেন ব্যবহারে এই নিম্ন তাপমাত্রা সৃষ্টি সম্ভব হয়।]

10. ক্রায়োপ্রিজারভেশন পদ্ধতি দ্বারা উদ্ভিদাংশ থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হয়।

মিথ্যা [সূত্র-তা করা হয় মাইক্রোপ্রোপাগেশন পদ্ধতি দ্বারা। ক্রায়োপ্রিজারভেশন দ্বারা প্রোপাগিউল ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখা হয়।]

11. JFM ধারণার সূত্রপাত হয় 1975 খ্রিস্টাব্দে।

মিথ্যা [সূত্র- JFM ধারণার সূত্রপাত হয় 1971 সালে।]

12. JFM-এর সূত্রপাত হয় পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে।

মিথ্যা [সূত্র-JFM-এর সূত্রপাত হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের আরাবারি অরণ্যে।]

13. ভারতবর্ষে সরকার-জনগণ বন পরিচালনার মূল সংস্থা হল JFM

সত্য [সূত্র-সুষ্ঠুভাবে বন পরিচালন ও তার ব্যবহার JFM দ্বারা পরিচালিত হয়।]

14. সুন্দরবনে সুন্দরী গাছ লাগানোর মাধ্যমে ভারতে প্রথম JFM পরিচালন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।

মিথ্যা [সূত্র-আরাবারি অরণ্যে শালগাছ লাগানোর মাধ্যমে ভারতে প্রথম JFM পরিচালন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।]

15. PBR সংরক্ষণ ও বলবৎ করে স্থানীয় আইন।

মিথ্যা [সূত্র-এই কাজটি বায়োডাইভারসিটি ম্যানেজমেন্ট কমিটি (BMC) করে থাকে।]

16. ভারবর্ষে সিংহ সংরক্ষণ কেন্দ্র বর্তমান গুজরাটে।

সত্য [সূত্র-গুজরাটের গির ন্যাশনাল পার্ক-এ সিংহ সংরক্ষণ করা হয়।]

17. ভারতবর্ষের একটি অবলুপ্ত প্রাণী হল ভারতীয় সিংহ।

মিথ্যা [সূত্র-এটি IUCN লিস্টের বিপন্ন প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত।]