Class 10 History Soltuion
বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ(উনিশ শতকের মধ্যভাগ- বিশ শতকের প্রথমভাগ): বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
1. MCQs Question Answer
1. বাংলার ক্যাক্সটন বলা হয়-
A . পঞ্চানন কর্মকারকে B . সুরেশচন্দ্র মজুমদারকে
C. চার্লস উইলকিনসকে D. জেমস অগাস্টাস হিকিকে
উত্তৰ চাৰ্লস উইলকিনসকে ।
2. ‘বাংলা মুদ্রণশিল্পের জনক’ নামে পরিচিত ছিলেন-
A. জেমস অগাস্টাস হিকি B. নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড
C . চার্লস উইলকিনস D. মার্শম্যান
উত্তৰ চালৰ্স উইলকিস ।
3. মুদ্রণযন্ত্রে সর্বপ্রথম বাংলা বই ছাপা হয়-
A. রোমান হরফে B. বাংলা হরফে
C. হিন্দি হরফ D. সংস্কৃত হরফে
উত্তৰ ব়োমান হব়ফে ।
4. বাংলা ভাষায় প্রথম ছাপা বই হল-
A. বর্ণপরিচয়
B. এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গোয়েজ
C. মঙ্গল সমাচার মতিয়ের
D. অন্নদামঙ্গল
উত্তৰ অন্নদামঙ্গল ।
5. বাংলা ভাষায় প্রথম বই ছাপা হয়-
A. ১৫৫৬ খ্রি.
B. ১৭৭৮ খ্রি.
C. ১৭৮৫ খ্রি.
D. ১৮০০ খ্রি.
উত্তৰ ১৭৭৮ খ্ৰি.
6. কলকাতায় প্রথম মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন-
A. মাৰ্শম্যান B. জেমস অগাস্টাস হিকি
C. উইলিয়াম কেব়ি D. গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য
উত্তৰ জেমস অগাস্টাস হিকি
7. হালেদ রচিত গ্রন্থটি কার তৈরি করা অক্ষরে মুদ্রিত হয়?-
A. পঞ্চানন কর্মকারের
B. মনোহর কর্মকারের
C. চার্লস উইলকিনস-এর
D. সুরেশচন্দ্র মজুমদারের
উত্তৰ চাৰ্লস উইকিনস এব় ।
৪. ভারতে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা কৃতিত্ব হল-
A. ফরাসিদের
B. ইংরেজদের
C. পোর্তুগিজদের
D. ভারতীয়দের
উত্তৰ পোৰ্তুগিজদেব় ।
[ 9. শ্রীরামপুরে ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা করেন-
A. উইলিয়াম কেরি
B. চার্লস উইলকিনস
C. অগাস্টাস হিকি
D. জোশুয়া মার্শম্যান
উত্তৰ উইলিয়াম কেব়ি ।
10. উইলিয়াম কেরি ছিলেন-
A. ইংরেজির শিক্ষক
B. বাংলার শিক্ষক
C. গণিতের শিক্ষক
D. বিজ্ঞানের শিক্ষক
উত্তৰ বাংলাব় শিক্ষক ।
11. বটতলা প্রকাশনী সংস্থা থেকে প্রকাশিত বই হল-
A. চৈতন্যচরিতামৃত
B. নববাবু বিলাস
C. বর্ণপরিচয়
D. লোরচন্দ্রাণী
উত্তৰ নববাবু বিলাস ।
12. শ্রীরামপুর ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়-
A. ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে
B. ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে
C. ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে
D. ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে
উত্তৰ ১৮০০ খ্ৰিস্টাব্দে ।
13. ‘সিটি বুক সোসাইটি’ (১৮৯৬ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন-
A. উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়
B. সত্যজিৎ রায়
C. সন্দীপ রায়
D. যোগীন্দ্রনাথ সরকার
উত্তৰ যোগীন্দ্ৰনাথ সব়কাব় ।
14. কলকাতা সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটারি প্রতিষ্ঠা করেন-
A. দ্বারকানাথ ঠাকুর
B. গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য
C. মার্শম্যান
D. বিদ্যাসাগর
উত্তৰ বিদ্যাসাগব় ।
15. ‘দিগদর্শন’-এর সম্পাদক ছিলেন-
A. উইলিয়াম কেরি
B. জোশুয়া মার্শম্যান
C. ফেলিক্স কেরি
D. জন ক্লার্ক মার্শম্যান
উত্তৰ জোশুয়া মাৰ্শম্যান ।
16. এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়-
A. চুঁচুড়ায়
B. ঢাকায়
C. কলকাতায়
D. শ্রীরামপুরে
উত্তৰ শ্ৰীব়ামপুব়ে ।
17. ছাপাখানার জনক বলা হয়-
A. সুরেশচন্দ্র মজুমদারকে
B পঞ্চানন কর্মকারকে
C. চার্লস উইলকিনসকে
D. গুটেনবার্গকে
উত্তৰ গুটেনবাৰ্গকে ।
18. বাংলা পুস্তক ব্যবসায়ের পথিকৃৎ ছিলেন-
A. উইলিয়াম কেরি
B. রামমোহন রায়
C. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
D. গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য
উত্তৰ গঙ্গাকিশোব় ভট্টাচাৰ্য ।
19. প্রথম সচিত্র বাংলা বইয়ের নাম
A. অন্নদামঙ্গল
B. বর্ণপরিচয়
C. শিশুশিক্ষা
D. সন্দেশ
উত্তৰ অন্নদামঙ্গল ।
20. বাঙালির লেখা প্রথম বাংলা ছাপা বই হল-
A. বর্ণপরিচয়
B. শিশুশিক্ষা
C. হিতোপদেশ
D. প্রতাপাদিত্য চরিত্র
উত্তৰ প্ৰতাপাদিত্য চব়িত্ৰ ।
21. ‘বার্তাবহ যন্ত্র’ নামে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়-
A. কলকাতায়
B. শ্রীরামপুরে
C. রংপুরে
D. ঢাকায়
উত্তৰ ব়ংপুব়ে ।
22. ‘বর্ণমালা’ গ্রন্থটি প্রকাশ করে-
A. লন্ডন চার্চ মিশনারি
B. ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি
C. শ্রীরামপুর মিশন
D. স্কুল বুক সোসাইটি
উত্তৰ স্কুল বুক সোসাইটি ।
23. বাংলায় শিশুশিক্ষা-বিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থটি ছিল-
A. বাল্যশিক্ষা
B. বর্ণপরিচয়
C. শিশুশিক্ষা
D বর্ণমালা
উত্তৰ বৰ্ণপব়িচয় ।
24. ‘শিশুশিক্ষা’ গ্রন্থটি রচনা করেন-
A. মদনমোহন তর্কালঙ্কার
B. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
C. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
D. রামসুন্দর বসাক
উত্তৰ মদনমোহন তর্কালঙ্কার ।
25. পূর্ববঙ্গে শিশুশিক্ষা-বিষয়ক সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থটি ছিল-
A. বর্ণপরিচয়
B. বাল্যশিক্ষা
C. শিশুশিক্ষা
D. বর্ণমালা
উত্তৰ বাল্যশিক্ষা ।
26. বর্ণপরিচয় প্রকাশিত হয়েছিল-
A. ১৮৪৫ খ্রিস্টাব্দে
B. ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে
C. ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে
D. ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তৰ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ।
27. বাংলায় লাইনোটাইপ প্রবর্তিত হয়-
A. ১৭৭৮ খ্রি.
B. ১৮৭৮ খ্রি.
C. ১৯২৫ খ্রি.
D. ১৯৩৫ খ্রি.
উত্তৰ ১৯৩৫ খ্রি.।
28. গীতগোবিন্দ মুদ্রিত হয়-
A. হিন্দি প্রেস থেকে
B. সংস্কৃত প্রেস থেকে
C. উর্দু প্রেস থেকে
D. বেঙ্গলি প্রেস থেকে
উত্তৰ সংস্কৃত প্রেস থেকে ।
29. বাংলার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র কোনটি –
A. সোমপ্রকাশ
B. গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা
C. বাঙ্গাল গেজেট
D. বেঙ্গল গেজেট
উত্তৰ বেঙ্গল গেজেট ।
30. কোন ধরনের ছাপার কাজ করে ছাপাখানার ব্যাবসার সর্বাধিক প্রসার ঘটে?
A.অনুবাদ গ্রন্থ
B. ধর্মগ্রন্থ
C. পাঠ্যবই
D. সরকারি কাগজপত্র
উত্তৰ পাঠ্যবই ।
31. উপেন্দ্রকিশোর আধুনিক ফটোগ্রাফি ও মুদ্রণশিল্প সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে কাকে বিদেশ পাঠান?
A. সুখলতা রাওকে
B. সুকুমার রায়কে
C. সত্যজিৎ রায়কে
D. সন্দীপ রায়কে
উত্তৰ সুকুমার রায়কে ।
32. ভারতে ‘হাফ টোন প্রিন্টিং’ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন-
A. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
B. সুকুমার রায়
C. পঞ্চানন কর্মকার
D. চার্লস উইলকিন্স
উত্তৰ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ।
33. সর্বপ্রথম বাংলা অক্ষরের টাইপ তৈরি করেন-
A. হিকি সাহেব
B. চার্লস উইলকিনস
C. পঞ্চানন কর্মকার
D. উইলিয়াম কেরি সাহেব
উত্তৰ চার্লস উইলকিনস ।
34. রামরাম বসুর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ গ্রন্থটি মুদ্রিত হয়-
A. ঢাকায়
B. কলকাতায়
C. রংপুর
D. শ্রীরামপুর ছাপাখানায়
উত্তৰ শ্রীরামপুর ছাপাখানায় ।
35. ‘ইতিহাসমালা’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন-
A. রামমোহন রায়
B. ডেভিড হেয়ার
C. বিদ্যাসাগর
D. উইলিয়াম কেরি
উত্তৰ উইলিয়াম কেরি ।
36. জন অ্যান্ড্রুজ সাহেব সর্বপ্রথম ছাপাখানা গড়ে তোলেন-
A. হাওড়াতে
B. বর্ধমানে
C. হুগলিতে
D. কলকাতায়
উত্তৰ হুগলিতে ।
37. বাংলাদেশে প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়-
A. কলকাতায়
B. চট্টগ্রামে
C. বর্ধমানে
D. হুগলিতে
উত্তৰ হুগলিতে ।
38. বাঙালির লেখা প্রথম বাংলা ছাপা বই হল-
A. বর্ণপরিচয়
B. শিশুশিক্ষা
C. হিতোপদেশ
D. প্রতাপাদিত্য চরিত্র
উত্তৰ প্রতাপাদিত্য চরিত্র ।
39. ‘A Grammer of The Bengal Language’ গ্রন্থের রচয়িতা ছিলেন-
A. ম্যাথু ল্যাম্পসডেন
B. চার্লস উইলকিনস
C. নাথানিয়েল ব্রাসি হালওয়েড
D. উইলিয়াম জোনস
উত্তৰ নাথানিয়েল ব্রাসি হালওয়েড ।
40. বাংলা দেশে প্রথম কালার প্রিন্টিং প্রবর্তন করেন-
A. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
B. সুকুমার রায়
C. শরৎ কুমার লাহিড়ী
D. গুরুদাস চট্টোপাধ্যায়
উত্তৰ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
41. ‘A Grammar of the Bengal Language’ গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল-
A. ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে
B. ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে
C. ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে
D. ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে
উত্তৰ ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে ।
42. ‘হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং’ নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করেন-
A. সত্যজিৎ রায়
B. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
C. সুকুমার রায়
D. সন্দীপ রায়
উত্তৰ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ।
43. হাফটোন ব্লকে নির্মিত উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর প্রথম বইটি হল–
A. ছেলেদের রামায়ণ
B. টুনটুনির বই
C. সেকালের কথা
D. হিতোপদেশ
উত্তৰ সেকালের কথা ।
44. ভারতে হাফটোন প্রিন্টিং পদ্ধতির পথিকৃৎ বলা হয়-
A. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে
B. সুকুমার রায়কে
C. সত্যজিৎ রায়কে
D. জন অ্যান্ড্রুজকে
উত্তৰ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে ।
45. পোর্তুগিজদের প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়-
A. কালিকটে
B. গোয়াতে
C. বোম্বাইয়ে
D. দিল্লিতে
উত্তৰ গোয়াতে ।
46. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা প্রথম গ্রন্থ হল-
A. সেকালের কথা
B. গুপী গাইন বাঘা বাইন
C. টুনটুনির বই
D. ছেলেদের রামায়ণ
উত্তৰ ছেলেদের রামায়ণ
47. ‘ছেলেদের রামায়ণ’ বইটির জন্য বিভিন্ন ছবি আঁকেন-
A. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
B. রামচাঁদ রায়
C. নন্দলাল বসু
D. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তৰ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ।
48. ইউ রায় অ্যান্ড সন্স ছাপাখানার নামকরণ হয়-
A. ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দ
B. ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে
C. ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে
D. ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে
উত্তৰ ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে ।
49.’লাইনো টাইপ’ তৈরি করেছিলেন-
A. সুরেশচন্দ্র মজুমদার
B. পঞ্চানন কর্মকার
C. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী
D. চার্লস উইলকিনস
উত্তৰ সুরেশচন্দ্র মজুমদার ।
50. ‘ইউ এন রয় অ্যান্ড সন্স’ ভূমিকা নিয়েছিল-
A. বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে
B. বাংলায় চিকিৎসাবিদ্যার প্রসারে
C. বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে
D. বাংলায় মুদ্রণশিল্পের প্রসারে
উত্তৰ বাংলায় মুদ্রণশিল্পের প্রসারে
51. ‘ইউনিটেরিয়ান প্রেস’ স্থাপন করেন-
A. রাধাকান্ত দেব
B. রামমোহন রায়
C. রামরাম বসু
D. ড. রাধা গোবিন্দ কর
উত্তৰ রামমোহন রায় ।
52. ইউ রায় অ্যান্ড সন্স ভূমিকা নিয়েছিল-
A. বাংলায় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার
B. বাংলায় চিকিৎসাবিদ্যার প্রসারে
C. বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে
D. বাংলায় মুদ্রণশিল্পের প্রসারে
উত্তৰ বাংলায় মুদ্রণশিল্পের প্রসারে ।
53. ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স গড়ে ওঠে
A.১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে
B.১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে
C. ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ✔
D. ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে
54. LACS বা ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন-
A. ড. মহেন্দ্রলাল সরকার ✔
B.. তারকনাথ পালিত
C. রাসবিহারী ঘোষ
C. জগদীশচন্দ্র বসু
55. IACS-এর প্রথম অধিকর্তা হলেন-
A. মহেন্দ্রলাল সরকার
B. জগদীশচন্দ্র বসু
C. মেঘনাদ সাহা
D. প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় ✔
56. প্রথম নোবেল পুরস্কার জয়ী ভারতীয় বৈজ্ঞানিক ছিলেন-
A. জগদীশচন্দ্র বসু
B. প্রফুল্লচন্দ্র রায়
C. চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন ✔
D. সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
57 . ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’-এর যে
বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন-
A. জগদীশচন্দ্র বসু
B.সি ভি রমন ✔
C. প্রফুল্লচন্দ্র রায়
D. সত্যেন্দ্রনাথ বসু
58. বাষ্পীয় ইঞ্জিন আবিষ্কার করেন যে বাঙালি ইঞ্জিনিয়ার তিনি হলেন-
A. গোলক চন্দ্র নন্দী ✔
B. পলাশ চন্দ্র নন্দী
C. রাজেন্দ্র নাথ মুখার্জি
D. শিবচন্দ্র নন্দী
59. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ছিল-
A. জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা
B. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
C.. অহিংস অসহযোগ আন্দোলন
D. স্বদেশি আন্দোলন ✔
60. বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন-
A. জগদীশচন্দ্র বসু ✔
B. সত্যেন্দ্রনাথ বসু
C. চন্দ্রমুখী বসু
D. আনন্দমোহন বসু
61. ‘টেগোর অ্যান্ড কোং’ প্রতিষ্ঠা করেন-
A. দ্বারকানাথ ঠাকুর
B. দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
C. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ✔
D. রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর
62. উদ্ভিদের প্রাণ আছে-তা কে প্রমাণ করেন?
A. প্রফুল্লচন্দ্র রায়
B. চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন
C. জগদীশচন্দ্র বসু ✔
D. মেঘনাদ সাহা
63. ‘জাতীয় প্রযুক্তিবিদ্যার পথিকৃৎ’ বলা হয়-
A. রাজেন্দ্রলাল মিত্রকে ✔
B. মেঘনাদ সাহাকে
C. ড. মহেন্দ্রলাল সরকারকে
D. প্রমথনাথ বসুকে
64. ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল-
A.১৮৩৩ খ্রি.
B.১৮৫৬ খ্রি. ✔
C.১৮৮০ খ্রি.
D.১৯০৩ খ্রি.
65. কে প্রথম ‘জাতীয় শিক্ষা’ কথাটি ব্যবহার করেন?
A. প্রসন্নকুমার ঠাকুর ✔
B. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
C. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর
D দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
66. ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ (১৯০৬)-এর প্রথম সভাপতি ছিলেন-
A. রাসবিহারী ঘোষ ✔
B. অরবিন্দ ঘোষ
C. তারকনাথ পালিত
D. সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
66. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়-
A. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে
B.১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ✔
C. ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে
D.১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে
67. নিম্নলিখিত ব্যক্তিদের মধ্যে কে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব
সায়েন্স’-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না?
A. স্যার রাসবিহারী ঘোষ ✔
B. ইউজিন লাঁফো
C. চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন
D. আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
68. প্রথম ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার বলা হয়-
A. শিবচন্দ্রকে
B. সুরেশচন্দ্রকে
C. কেশব চন্দ্রকে
D. গোলক চন্দ্রকে ✔
69. ‘বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট’ কে প্রতিষ্ঠা করেন?
A. রাসবিহারী ঘোষ
B. তারকনাথ পালিত ✔
C. মহেন্দ্রলাল সরকার
D. নীলরতন সরকার
70. বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট-এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন-
A. অরবিন্দ ঘোষ
B. সতীশচন্দ্র বসু
C. যোগেশচন্দ্র ঘোষ
D. প্রমথনাথ বসু ✔
71. বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হলেন-
A. রাজনারায়ণ বসু
B. সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
C. তারকনাথ পালিত
D. অরবিন্দ ঘোষ ✔
72. ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠিত হয়-
A. ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে
B. ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ✔
C. ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
D.১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে
73. বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা, জগদীশচন্দ্র বসু অধ্যাপক ছিলেন-
A. গণিত শাস্ত্রের
B. রসায়ন শাস্ত্রের
C. পদার্থবিদ্যার ✔
D. উদ্ভিদবিদ্যার
74. “বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট” প্রতিষ্ঠিত হয়-
A. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে
B.১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ✔
C. ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে
D. ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে
75. Bengal Technical Institute কত সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়?
A.১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে
B. ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে
C.১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে ✔
D. ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে
76. ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ যন্ত্র আবিষ্কার করেন-
A. সত্যেন্দ্রনাথ বসু
B.জগদীশচন্দ্র বসু ✔
C.আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়
D.সি ভি রমন
77. ‘অব্যক্ত’ গ্রন্থটি রচনা করেন-
A. শিশিরকুমার ঘোষ
B. সি ভি রমন
C. সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
D. জগদীশচন্দ্র বসু ✔
78. ‘রেজোন্যান্ট যন্ত্র’ কে আবিষ্কার করেন?
A. সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
B.মেঘনাদ সাহা
C. জগদীশচন্দ্র বসু ✔
D. সিভি রামন
79. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ‘বিজ্ঞান কলেজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়-
A. ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে
B. ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে
C. ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ✔
D.১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে
80. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়-
A. ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে
B. ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ✔
C.১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে
D. ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে
81. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের Radio Physics বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়-
A. শিশিরকুমার মিত্রের নেতৃত্বে ✔
B. আনন্দমোহন বসুর নেতৃত্বে
C. সতীশচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে
D. শিশিরকুমার ঘোষের নেতৃত্বে
2. Very Short Question Answer
1. ‘Compendio Spiritual Da Vida Christa’ নামে গ্রন্থটি কোথায় মুদ্রিত হয়েছিল?
>> ‘Compendio Spiritual Da Vida Christa’ নামে গ্রন্থটিপোর্তুগিজদের গোয়ার মুদ্রণযন্ত্রে (১৫৬১ খ্রি.) মুদ্রিত হয়েছিল।
2. ‘Compendio Spiritual Da Vida Christa’ বইটি কোথায় সংরক্ষিত আছে?
>> ‘Compendio Spiritual Da Vida Christa’ বইটি নিউইয়র্কের পাবলিক লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে।
3. কোন্ ছাপাখানায় কলকাতার প্রথম ক্যালেন্ডার মুদ্রিত হয়?
>> জেমস অগাস্টাস হিকি-এর ছাপাখানায় কলকাতার প্রথম ক্যালেন্ডার মুদ্রিত হয়।
4. প্রথম কোন্ বাঙালি ছাপাখানার জন্য অক্ষরের ছাঁচ বা টাইপ তৈরি করেন?
>> পঞ্চানন কর্মকার প্রথম বাঙালি হিসেবে ছাপাখানার জন্য অক্ষরের ছাঁচ বা টাইপ তৈরি করেন।
5. বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোন্ সাহেবের নাম জড়িত?
>> বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রুজ সাহেবের নাম জড়িত।
6. কোন্ বছর শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়?
>> ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।
7. শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা কোন্টি?
>> শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক পত্রিকা হল ‘সমাচার দর্পণ’ (১৮১৮ খ্রি.)।
৪. ঢাকা প্রেস কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
>> ঢাকা প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে।
9. চিনে কবে মুদ্রণশিল্পের আবিষ্কার হয়?
>> ৫৯৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ চিনে মুদ্রণশিল্পের আবিষ্কার হয়।
10. চিনের মুদ্রণপ্রযুক্তি কাদের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছেছিল?
>> চিনের মুদ্রণপ্রযুক্তি আরবদের মাধ্যমে ইউরোপে পৌঁছেছিল।
11. বোম্বাইয়ে কবে প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়?
>> বোম্বাইয়ে ১৬৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়।
12. কে, কবে চুঁচুড়ায় প্রথম মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন?
>> চুঁচুড়ায় প্রথম চার্লস উইলকিনস ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।।
13. বাংলার প্রথম সংবাদপত্র কোনটি?
>> বাংলার প্রথম সংবাদপত্র ‘দিগদর্শন’ (১৮১৮ খ্রি.)।
14. ঢাকায় প্রথম কবে ছাপাখানা স্থাপিত হয়?
>> ঢাকায় প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয় ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে।
15. পূর্ববঙ্গের কোথায়, কবে প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয়?
» পূর্ববঙ্গের রংপুরে প্রথম ছাপাখানা স্থাপিত হয় ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে।
16. ‘বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ’-টি কে রচনা করেন?
>> ‘বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ’-টি রচনা করেন রাধাকান্ত দেব।
17. ‘বিদ্যাহারাবলী’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
>> ফিলিক্স কেরি ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ‘বিদ্যাহারাবলী’ গ্রন্থটি রচনা করেন।
18. ‘পাখি সব করে রব’ কবিতাটি কার লেখা?
>> ‘পাখি সব করে রব’ কবিতাটি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের লেখা।
19. ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত গোবিন্দপ্রসাদ দাস রচিত উল্লেখযোগ্য পাঠ্যবই কোন্টি?
>> ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত গোবিন্দপ্রসাদ দাস রচিত উল্লেখযোগ্য পাঠ্যবই হল ‘ব্যাকরণ সার’।
20. অষ্টাদশ শতকে কোন্টি কলকাতার সবচেয়ে বড়ো ছাপাখানা ছিল?
>> অষ্টাদশ শতকে কলকাতার সবচেয়ে বড়ো ছাপাখানা ছিল ‘অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’।
21. বাবুরাম কত খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন?
>> বাবুরাম ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত প্রেস প্রতিষ্ঠা করেন।
22. আনুমানিক কবে, কোন্ দেশে সর্বপ্রথম মুদ্রণশিল্পের উদ্ভব ঘটে?
>> আনুমানিক ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে চিনে সর্বপ্রথম মুদ্রণশিল্পের উদ্ভব ঘটে।
23. কে, কবে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করেন?
>> জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ ১৫৫৪ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করেন।
24. কে ‘ছাপাখানার জনক’ নামে পরিচিত?
>> জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ ‘ছাপাখানার জনক’ নামে পরিচিত।
25. ভারতের কোথায়, কারা প্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন?
>> ভারতের গোয়ায় পোতুর্গিজরা প্রথম আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র স্থাপন করেন।
26. ‘বর্ণপরিচয়’ কে রচনা করেন?
>> ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ‘বর্ণপরিচয়’ রচনা করেন।
27. সবচেয়ে পুরোনো বাংলা মুদ্রিত বইয়ের নমুনা কোথায় পাওয়া যায়?
>> সবচেয়ে পুরোনো বাংলা মুদ্রিত বইয়ের নমুনা পাওয়া যায় ১৬৮২ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে মুদ্রিত একটি বইয়ে।
28. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম চিত্রিত গ্রন্থের নাম লেখো।
>> বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম চিত্রিত গ্রন্থটি হল ১৮১৬ সালে কলকাতার ফেরিস অ্যান্ড কোম্পানির ছাপাখানা থেকে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের উদ্যোগে প্রকাশিত রায়গুণাকর ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্য।
29. বাংলা মুদ্রণশিল্পে পঞ্চানন কর্মকারের অবদান কী?
>> পঞ্চানন কর্মকার উন্নত বাংলা অক্ষরের ছাঁচ বা টাইপ তৈরি করেন।
30. লাইনো টাইপ দিয়ে প্রথম কোন্ বইটি ছাপা হয়?
>> লাইনো টাইপ দিয়ে প্রথম ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হালেদ রচিত ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ (১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দ) বইটি প্রকাশিত হয়।
31. শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত একটি বাংলা সাহিত্যের নাম লেখো।
>> শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত একটি বাংলা সাহিত্য হল রামরাম বসুর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’।
32. শিশুশিক্ষা-বিষয়ক প্রথম উল্লেখযোগ্য বাংলা বই কোন্টি?
>> শিশুশিক্ষা-বিষয়ক প্রথম উল্লেখযোগ্য বাংলা বই হল মদনমোহন তর্কালঙ্কারের লেখা ‘শিশুশিক্ষা’।
33. কে, কবে ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থটি রচনা করেন?
>> ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থটি রচনা
করেন।
34. এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকার নাম কী ছিল?
>> এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকার নাম ছিল ‘এশিয়াটিক রিসার্চেস’।
35. ‘বিদ্যাসাগর সাট’ বলতে কী বোঝো?
>> ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা মুদ্রণের কাজে সহায়তার জন্য অক্ষর সংযোজনের বিশেষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এই পদ্ধতি ‘বিদ্যাসাগর সাট’ নামে পরিচিত।
36. ‘অন্নদামঙ্গল’ গ্রন্থের চিত্রগুলি কে এঁকেছেন?
>> ‘অন্নদামঙ্গল’ গ্রন্থের চিত্রগুলি এঁকেছিলেন শিল্পী রামচাঁদ রায়।
37. প্রথম কোথায় প্রসেস প্রিন্টিং-এর বিকাশ শুরু হয়?
>> উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামে ছাপাখানায় প্রথম প্রসেস প্রিন্টিং-এর বিকাশ শুরু হয়।
38. কে ‘টুনটুনির বই’ রচনা করেন?
>> উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ‘টুনটুনির বই’ রচনা করেন।
39. ‘শিশুসেবধি’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?
>> ‘শিশুসেবধি’ গ্রন্থটি রচনা করেন ক্ষেত্রমোহন দত্ত।
40 * ভারতের সর্বপ্রথম কবে, কারা, কোথায় আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে?
উত্তর [ ভারতে সর্বপ্রথম ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পোর্তুগিজরা গোয়ায় আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।
41 * কারা প্রথম মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যে বাংলা বই ছাপায়?
উত্তর পোর্তুগিজ মিশনারিরা সর্বপ্রথম পোতুর্গালের রাজধানী লিসবন থেকে রোমান হরফে বাংলা বই ছাপায় এবং তা বাংলায় নিয়ে আসে।
42 **প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ গ্রন্থটি কবে, কোথা থেকে প্রকাশ করেন?
উত্তর রামরাম বসু ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ গ্রন্থটি ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশ করেন।
43 *ঢাকায় প্রথম কে, কবে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর ঢাকায় প্রথম আলেকজান্ডার বারবেখ ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
44. বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট-এর প্রথম অধ্যক্ষ কে ছিলেন?
>> অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের প্রথম অধ্যক্ষ।
45. কারা কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করেন?
>> কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য জমি দান করেন তারকনাথ পালিত এবং রাসবিহারী ঘোষ।
46. কে ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল্স’ প্রতিষ্ঠা করেন?
>> আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল্স’ প্রতিষ্ঠা করেন।
47. বর্তমানে ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ কলকাতার কোথায় অবস্থিত?
>> বর্তমানে ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ কলকাতার যাদবপুরে অবস্থিত।
48. কে, কবে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন?
>> স্যার উইলিয়াম জোনস ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
3. Short Question Answer
1 *ব্রিটিশ শাসনকালে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নাম লেখো।
উত্তর [ ব্রিটিশ শাসনকালে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হল ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’, ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’, ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’, ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’, ‘বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট’ প্রভৃতি।
2 * ব্রিটিশ শাসনকালে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম লেখো।
উত্তর ব্রিটিশ শাসনকালে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে বাংলায় প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ছিল কলকাতার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৮৫৬ খ্রি.), কলকাতায় ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন’ (১৯০৪ খ্রি.), যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯০৬ খ্রি.) প্রভৃতি।
3 *কে, কবে, কোথায় ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন?
অথবা, IACS কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফোর সহায়তায় বিখ্যাত চিকিৎসক ড. মহেন্দ্রলাল সরকার ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন।
4 * ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা আই এ সি এস প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?
উত্তর ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা আই এ সি এস প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল- [1] পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত গবেষণা এবং [2] বিজ্ঞান-বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন।
5 উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’-এর ভূমিকা কী ছিল? [Madhyamik 2017] অথবা, বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে IACS-এর ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর উনিশ শতকে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’-এর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। [1] এখানে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত গবেষণা চলত। [2] দেশ- বিদেশের বহু খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও গবেষক এখানে গবেষণা করেছেন ও বিজ্ঞান-বিষয়ক বহু বক্তৃতা প্রদান করেছেন। [3] এখানকার গবেষণার কাজ প্রকাশের উদ্দেশ্যে ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’ নামে নিজস্ব জার্নাল প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়।
6 * মহেন্দ্রলাল সরকার কে ছিলেন?
অথবা, ড. মহেন্দ্রলাল সরকার স্মরণীয় কেন?
উত্তর[ ড. মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪ খ্রি.) ছিলেন একজন খ্যাতনামা চিকিৎসক। তিনি ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে (২৯ জুলাই) কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ ■ বা আই এ সি এস প্রতিষ্ঠা করেন।
7 *কে, কোথায় গবেষণা করে ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেন?
উত্তর বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স
বা আই এ সি এস-এ গবেষণা করে রমন এফেক্ট আবিষ্কার করেন।
৪ * মেঘনাদ সাহা কোন্ বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন? এখানে কোন্ বিষয়ে মৌলিক গবেষণার কাজ চলত?
উত্তর মেঘনাদ সাহা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স-এ একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।
9 *কারা, কবে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর আইনজীবী ও শিক্ষাদরদি স্যার তারকনাথ পালিত ও স্যার রাসবিহারী ঘোষ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
10 * কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদানকারী কয়েকজন খ্যাতনামা শিক্ষকের নাম লেখো।
উত্তর কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদানকারী কয়েকজন খ্যাতনামা শিক্ষক ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, শিশির কুমার মিত্র প্রমুখ।
11 * কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম লেখো যারা পরবর্তীকালে অত্যন্ত খ্যাতি অর্জন করেন।
উত্তর [ সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী যাঁরা পরবর্তীকালে অত্যন্ত খ্যাতি অর্জন করেন।
12 তারকনাথ পালিত কে ছিলেন?
উত্তর [ স্যার তারকনাথ পালিত ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী ও শিক্ষাদরদি। তিনি স্বদেশি আন্দোলনের যুগে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে রাসবিহারী ঘোষের সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
13 * রাসবিহারী ঘোষ কে ছিলেন?
উত্তর [ স্যার রাসবিহারী ঘোষ ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী ও শিক্ষাদরদি। তিনি স্বদেশি আন্দোলনের যুগে বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার প্রসারেরউদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে তারকনাথ পালিতের সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
14 * কে, কবে বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন? বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর [ খ্যাতনামা বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় বসু বিজ্ঞান মন্দির
বা বোস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
[◆ বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স, পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশ্বমানের গবেষণার ব্যবস্থা করা।
15 বসু বিজ্ঞান মন্দিরকে মন্দির বলা হয় কেন?
উত্তর [ বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু বলেন যে, মানুষের চেতনা ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির দ্বারা বিজ্ঞানের সত্য প্রতিষ্ঠা করা গেলেও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বাইরে এমন কিছু সত্য আছে যা বিশ্বাসের দ্বারা অর্জন করতে হয়। সেই বিশ্বাস প্রভাবিত সত্য উপলব্ধি করার একমাত্র স্থান হল মন্দির। তাই তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নামকরণে ‘মন্দির’ শব্দটি যুক্ত করেন।
16 বসু বিজ্ঞান মন্দিরে কোন্ কোন্ বিষয়ে গবেষণা হত?
উত্তর বসু বিজ্ঞান মন্দিরে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স, পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশ্বমানের গবেষণা হত।
17 ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুরে কী উদ্দেশ্যে টেকনিকাল কলেজ স্থাপিত হয়?
উত্তর স্বদেশি আন্দোলনের যুগে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে যাদবপুরে টেকনিকাল কলেজ স্থাপিত হয়।
18 * আধুনিক ছাপাখানায় ব্যবহারের উপযোগী বাংলা অক্ষরের টাইপ নির্মাণে কাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে?
উত্তর আধুনিক ছাপাখানায় ব্যবহারের উপযোগী বাংলা অক্ষরের টাইপ প্রথম তৈরি করেন চার্লস উইলকিনস। পরবর্তীকালে তাঁর সহযোগী পঞ্চানন কর্মকার আরও উন্নত টাইপ তৈরি করেন। পরবর্তীকালে সুরেশচন্দ্র মজুমদার আরও উন্নত বাংলা টাইপ তৈরি করে বাংলা মুদ্রণব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তোলেন।
19. বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর বাংলার ছাপাখানার বিকাশে পঞ্চানন কর্মকারের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। [1] তিনি ছিলেন বাংলা ভাষার ছাপাখানার হরফ নির্মাণের অন্যতম রূপকার। [2] তিনি বাংলা ছাপাখানায় সচল ধাতু হরফের প্রচলন করেছিলেন।
20 * সুরেশচন্দ্র মজুমদার কে ছিলেন?
উত্তর সুরেশচন্দ্র মজুমদার ছিলেন আনন্দবাজার প্রকাশনা সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। তিনি রাজশেখর বসুর পরামর্শে বাংলা অক্ষর নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করে ‘লাইনো টাইপ’ নামে এক উন্নত বাংলা অক্ষরের টাইপের নির্মাণ করেন।
21 বাংলা ছাপাখানার বিকাশে লাইনোটাইপ প্রবর্তনের গুরুত্ব কী?
উত্তর প্রকাশনা সংস্থার কর্মী সুরেশচন্দ্র মজুমদারের বাংলা অক্ষর নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষার ফল ছিল লাইনোটাইপ। এই উন্নত অক্ষর টাইপের জন্য বাংলার ছাপাখানায় অক্ষরবিন্যাসে নতুনত্ব ও মৌলিকত্ব আসে। এই টাইপ ছাপাখানার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
22. লাইনো টাইপ কী?
উত্তর ‘লাইনো টাইপ’ হল সুরেশচন্দ্র মজুমদার কর্তৃক নির্মিত এক ধরনের উন্নত বাংলা অক্ষরের টাইপ। এই প্রকার টাইপে পুরো লাইন ধরে ছাপা হত এবং কোনো ধরনের পরিবর্তন করতে চাইলে পুরো লাইনটিকেই নতুন রূপে বানাতে হত।
23. ‘বিদ্যাসাগর সাট’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যাসাগর ছাপাখানার জগতেও তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। তিনি বাংলা মুদ্রণের জন্য অক্ষরবিন্যাসের এক বিশেষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এই পদ্ধতিই ‘বিদ্যাসাগর সাট’ নামে পরিচিত।
24. ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাংলায় গণশিক্ষার পরিস্থিতি কীরূপ ছিল
উত্তর ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পূর্বে বাংলায় মুদ্রিত বই না থাকায় হাতে লেখা বই ছিল শিক্ষার মাধ্যম। এই বহুমূল্য বই সমাজের মুষ্টিমেয় উচ্চবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা কিনলেও তা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে ছিল। এজন্য তখন বাংলায় গণশিক্ষার প্রসার ঘটেনি।
25. বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্ব কী?
উত্তর বাংলার মুদ্রণের ইতিহাসে বটতলা প্রকাশনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। [1] এই প্রকাশনীতে
কম খরচে বেশি বই ছাপা হত। [2] এই ছাপায় হ্যান্ডমেড পেপারের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়। ফলে স্বদেশি কারিগরির মুনশিয়ানা ফুটে ওঠে। এ ছাড়া পুঁথি, পাঁচালি এবং অনুবাদ সাহিত্যের প্রকাশনার প্রসার ঘটে।
26. বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের প্রভাব কতটা?
উত্তর বাংলার সাংস্কৃতিক জীবনে ছাপাখানার বিকাশের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ করা যায়-[1] বাংলায় গণশিক্ষার প্রসার শুরু হয়। [2] উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সস্তায় বইপত্র শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছোতে থাকে। [3] সাধারণ মানুষ সুলভে বইপত্র থেকে বিভিন্ন জ্ঞান আহরণের সুযোগ পায়। [4] বইয়ের ব্যাবসার নতুন বাজার গড়ে ওঠে।
27. *ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা বাংলায় শিক্ষার প্রসারে কী ধরনের সুবিধা করে দেয়?
উত্তর আধুনিক ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা বাংলায় শিক্ষার প্রসারে নানাভাবে সহায়তা করে। [1] ছাপাখানায় মুদ্রিত বিপুল সংখ্যক বই অল্প সময়ে পাঠক ও শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যায়। [2] ছাপাখানায় মুদ্রিত বইয়ের মূল্য হাতে লেখা বইয়ের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় দরিদ্র ও সাধারণ পড়ুয়ারা ছাপাখানার বইপত্র কিনতে সক্ষম হয়। [3] ছাপাখানাগুলিতে বহু বাংলা বই মুদ্রিত হওয়ায় মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়।
28. * শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত দুটি সংবাদপত্রের নাম লেখো।
উত্তর শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদপত্রছিল মাসিক ‘দিগদর্শন’ (১৮১৮ খ্রি.) এবং সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’ (১৮১৮ খ্রি.)।
29. শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে কোন্ কোন্ ভাষায় বইপত্র প্রকাশিত হয়?
উত্তর শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে বাংলা, হিন্দি, অহমীয়া, উড়িয়া, মারাঠি, সংস্কৃত-সহ বিভিন্ন
ভারতীয় ভাষায় বইপত্র প্রকাশিত হয়।
30. শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে কোন্ ধরনের বইপত্র প্রকাশিত হয়?
উত্তর শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে ‘বাইবেল’, ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’, প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন সাহিত্যের অনুবাদ, হিতোপদেশ, বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রভৃতি বইপত্র প্রকাশিত হয়।
31. বাংলার ছাপাখানা বিকাশে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের অবদান কী?
উত্তর বাংলার ছাপাখানার বিকাশে শ্রীরামপুর মিশন প্রেসের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল, এখান থেকে- [1] বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। [2] প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন সাহিত্যের অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। [3] বিভিন্ন স্কুল পাঠ্যবই প্রকাশিত হয়। [4] ‘দিগদর্শন’, ‘সমাচার দর্পণ’, ‘বেঙ্গল গেজেট’-সহ বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়।
32.*উইলিয়াম কেরি কে ছিলেন?
উত্তর উইলিয়াম কেরি ছিলেন শ্রীরামপুরের একজন খ্রিস্টান মিশনারি। তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে একটি আধুনিক ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা। শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বাংলা ভাষার উন্নতির ক্ষেত্রেও তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে।
33 *শিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর ছাপাখানার অবদান কী?
উত্তর শিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর ছাপাখানার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল। এখানে সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, সমাজসংস্কার প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে বইপত্র ছাপা হত। বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রসারে এই ছাপাখানার ভূমিকা ছিল অসীম।
36. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য কোন্ কোন্ ছাপাখানা থেকে বইপত্র ছাপা হত?
উত্তর ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রীরামপুর ছাপাখানা, হিন্দুস্তানি প্রেস, পারসিয়ান প্রেস, সংস্কৃত প্রেস প্রভৃতি ছাপাখানা থেকে বইপত্র ছাপা হত।
37. *শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে বিপুল সংখ্যক বইপত্র ছাপার একটি পরিসংখ্যান দাও।
উত্তর শ্রীরামপুর ছাপাখানায় ১৮০১-৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অন্তত ৪০টি ভাষায় ২ লক্ষেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
38. শিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর মিশনারিদের কী উদ্যোগ ছিল?
উত্তর শ্রীরামপুর মিশনারিরা শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলাদেশে ৬,৭০৩ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে ১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। এ ছাড়া নারীশিক্ষার জন্য বিদ্যালয়, উচ্চশিক্ষার জন্য শ্রীরামপুরে এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি কলেজ (১৮১৮ খ্রি.) প্রভৃতিও তাঁদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়।
39. বাংলায় মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কোন্ কোন্ নতুন পেশার সৃষ্টি হয়?
উত্তর বাংলায় মুদ্রণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কাগজ উৎপাদন, কাগজ বিক্রি, বই ছাপানো, বই বাঁধাই, বই বিক্রি প্রভৃতি নতুন পেশার সৃষ্টি হয়।
40. *বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশিত হওয়ার আগে বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে
প্রকাশিত শিশুশিক্ষা-বিষয়ক কয়েকটি বাংলা গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশিত হওয়ার আগে বিভিন্ন ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত শিশুশিক্ষা-বিষয়ক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল শ্রীরামপুর মিশন প্রণীত ‘লিপিধারা’ (১৮১৫ খ্রি.), রাধাকান্ত দেব রচিত ‘বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ’ (১৮২১ খ্রি.), স্কুল বুক সোসাইটি কর্তৃক দুই খণ্ডে প্রকাশিত ‘বর্ণমালা’ (সম্ভবত ১৮৫৩-৫৪ খ্রি.), ক্ষেত্রমোহন দত্ত কর্তৃক দুই খণ্ডে রচিত
‘শিশুসেবধি’ (১৮৫৪ খ্রি.) প্রভৃতি।
41. মদনমোহন তর্কালঙ্কার কে ছিলেন?
উত্তর মদনমোহন তর্কালঙ্কার ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার অন্যতম পন্ডিত এবং নবজাগরণের অন্যতম অগ্রদূত। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের অধ্যাপক মদনমোহন বাংলা ভাষার বিকাশ ও বাংলায় শিশুশিক্ষার প্রসারে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। তিনি শিশুদের শিক্ষার জন্য ‘শিশুশিক্ষা’ নামের বিখ্যাত গ্রন্থটি লেখেন।
42. ‘স্থানীয় স্কুল সম্বন্ধে আভাস’ কী?
উত্তর শ্রীরামপুর মিশনের মিশনারি জোশুয়া মার্শম্যান বাংলার গ্রামাঞ্চলে বাংলা ভাষায় গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
এই পরিকল্পনা ‘স্থানীয় স্কুল সম্বন্ধে আভাস’ নামে পরিচিত।
43. * শিশুশিক্ষার ক্ষেত্রে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের অবদান কী?
উত্তর বাংলার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে মদনমোহন তর্কালঙ্কার ‘শিশুশিক্ষা’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। ‘শিশুশিক্ষা’র প্রথম ভাগ ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে, দ্বিতীয় ভাগ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে এবং পরবর্তীকালে তৃতীয় ভাগ ও ‘বোধোদয়’ শিরোনামে চতুর্থ ভাগ প্রকাশিত হয়। ‘শিশুশিক্ষা’ বাংলার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
44. *বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে সেগুলি থেকে মুদ্রিত কয়েকটি জনপ্রিয় পাঠ্যবইয়ের নাম লেখো।
উত্তর বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে সেগুলি থেকে বিভিন্ন বইপত্র প্রকাশিত হতে থাকে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গোবিন্দ প্রসাদ দাস রচিত ‘ব্যাকরণ সার’, প্রাণলাল চক্রবর্তী
রচিত ‘অঙ্কবোধ’, কেদারেশ্বর চক্রবর্তী রচিত ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, আনন্দকিশোর সেন রচিত ‘অর্থের সার্থকতা’, দীননাথ সেন রচিত ‘বাংলাদেশ ও আসামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ’ এবং ‘ঢাকা জেলার জেলাব় ভূগোল এবং সংক্ষেপে ঐতিহাসিক বিবব়ণ প্ৰভৃতি ।
45. প্রথম সচিত্র বাংলা বই কোটি? এই বইয়ের চিত্রগুলি কে আঁকেন?
উত্তর প্রথম সচিত্র বইটি হল কলকাতার ফেরিস অ্যান্ড কোম্পানির ছাপাখানা থেকে প্রকাশিত ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল (১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে)। • মূলত বাঙালি চিত্রশিল্পীরা অন্নদামঙ্গল বইটির
ছবিগুলি এঁকেছিলেন। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রামচাঁদ রায়।
46. ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর সেগুলিতে কী ধরনের বইপত্র ছাপা হত?
উত্তর ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর সেগুলিতে বিভিন্ন অনুবাদ গ্রন্থ, পাঠ্যবই,শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বই, সাহিত্য-বিষয়ক বইপত্র, কবিতার বই, নাটক, গানের বই, ভ্রমণকাহিনি, চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ক
বইপত্র প্রভৃতি ছাপা হত।
47. *ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর সেগুলিতে বইপত্র ছাড়া কী ধরনের মুদ্রণের কাজ হত?
উত্তর ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর সেগুলিতে বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ছাড়া মিলিটারি বিল, ভাতা প্রদানের ফর্ম, সামরিকবাহিনীর বিধিবিধান, সরকারি নির্দেশিকা প্রভৃতি মুদ্রণের কাজ হত।
48. হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’ সংবাদপত্রটির গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে জেমস অগাস্টাস হিকি প্রকাশিত বেঙ্গল গেজেট পত্রিকাটির গুরত্ব হল- [1] এটি ছিল এশিয়া তথা ভারতের প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র। [2] এই পত্রিকা থেকে
সমকালীন বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে জানা যায়।
49. অনারেবল কোম্পানিজ প্রেসে কী ধরনের ছাপার কাজ হত?
উত্তর অনারেবল কোম্পানিজ প্রেসে বিভিন্ন সরকারি কাগজপত্র, বেসরকারি বইপত্র, এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকা ‘এশিয়াটিক রিসার্চেস’ প্রভৃতি ছাপা হত।
50. *ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে বাংলার ছাপাখানাগুলিতে প্রথমদিকে কী ধরনের ছাপার কাজ হত?
উত্তর ব্যাবসায়িক উদ্দেশ্যে বাংলার ছাপাখানাগুলিতে প্রথমদিকে সরকারি কাগজপত্র, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পাঠ্যবই, পঞ্জিকা, ভ্রমণকাহিনি, চিকিৎসাবিজ্ঞান-বিষয়ক বই, কবিতা, নাটক, উপন্যাস, গানের বই, ব্যাকরণ, অভিধান, ইউরোপের ঘটনাবলি নিয়ে লেখা বই প্রভৃতি ছাপার কাজ হত।
51. *ছাপাখানাগুলিতে স্কুলকলেজের নীতিশিক্ষা-বিষয়ক কোন্ কোন্ গ্রন্থ ছাপা হত?
উত্তর ছাপাখানাগুলিতে স্কুলকলেজের নীতিশিক্ষা-বিষয়ক ‘হিতোপদেশ’, ‘বত্রিশ সিংহাসন’, ‘তোতা ইতিহাস’, ‘বোধোদয়’, ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’, ‘নীতিকথা’ প্রভৃতি গ্রন্থ ছাপা হত।
52. *ছাপাখানাগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোন্ কোন বিষয়ের পাঠ্যবই ছাপা হত?
উত্তর ছাপাখানাগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য ভূগোল, ইতিহাস, সাহিত্য,গণিত, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, কারিগরিবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, নীতিশিক্ষা প্রভৃতি বিষয়ের পাঠ্যবই ছাপা হত।
53. ঊনবিংশ শতকে বাংলায় ছাপাখানার প্রসারের একটি পরিসংখ্যান দাও।
উত্তর কলকাতায় ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হয়। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কলকাতায় ১৭টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৫-৮৬ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারতে ১০৯৪ টি ছাপাখানা ছিল। এর মধ্যে বাংলা প্রদেশে ছিল ২২৯টি ছাপাখানা
54. ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাপা বইয়ের প্রকৃতি কীরূপ ছিল?
উত্তর উনিশ শতকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাপা বইগুলির প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য ছিল-[1] বইগুলির মুদ্রণ ও সাজসজ্জা আকর্ষণীয় করার চেষ্টা হত। [2] ছাত্রদের পাঠ্যপুস্তক এবং সহায়ক পুস্তক প্রচুর প্রকাশিত হত। [3] অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যাবসায়িক লাভই বই প্রকাশের অন্যতম লক্ষ্য হত।
55. *উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কে ছিলেন?
উত্তর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন একজন খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক, চিত্রকর, সুরকার, প্রকাশক এবং বাংলায় ছাপাখানার অগ্রপথিক। তিনি কলকাতায় ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে মুদ্রণশিল্পের উন্নতির বিষয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করেন।
56. *উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা প্রথম বই কোন্টি? এটি কোথা থেকে প্রকাশিত হয়?
উত্তর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা প্রথম বই হল ‘ছেলেদের [• উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ‘ছেলেদের রামায়ণ’ বইটি যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয়।
57. *উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কবে, কোথায় আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার শিবনারায়ণ দাস লেনে আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
58. *উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর [ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ‘ছেলেদের রামায়ণ’, ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, পশুপাখি ও ভ্রমণকাহিনি নিয়ে ‘সেকালের কথা’, বাংলার লোককথা নিয়ে লেখা ‘টুনটুনির বই’ প্রভৃতি।
59.* কে, কবে ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন? এটি কাদের জন্য প্রকাশিত হয়?
উত্তর উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন।
[◆ ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটি ছোটোদের জন্য প্রকাশিত হয়।
60. উপেন্দ্রকিশোরের ছাপাখানার বিশেষ কৃতিত্ব কী ছিল?
অথবা, ‘প্রসেস প্রিন্টিং’ সম্বন্ধে কী জান?
উত্তর উপেন্দ্রকিশোরের ছাপাখানার বিশেষ কৃতিত্ব ছিল প্রসেস প্রিন্টিং নামে এক ধরনের উন্নত মুদ্রণ কৌশল আবিষ্কার। তিনি তাঁর ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামে ছাপাখানায় নিরন্তর পরীক্ষানিরীক্ষা
চালিয়ে এই উন্নত মুদ্রণ কৌশলের উদ্ভাবন করেন।
5. Long Question Answer
1 *বাংলায় আধুনিক ছাপাখানার বা মুদ্রণশিল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর বাংলায় আধুনিক ছাপাখানা বা মুদ্রণশিল্প
ভূমিকা: জার্মানির জোহানেস গুটেনবার্গ ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার করার এক শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপে মুদ্রণশিল্পের অভাবনীয় প্রসার ঘটে। ইউরোপে পোর্তুগিজরা প্রথম ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের গোয়ায় এই মুদ্রণযন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।
[1] ভারতে মুদ্রণযন্ত্র: অষ্টাদশ শতকের শেষ এবং উনিশ শতকের প্রথম ভাগে ইউরোপের খ্রিস্টান মিশনারিরা ভারতের বিভিন্ন স্থানে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করলে এদেশে মুদ্রণশিল্পের পথ চলা শুরু হয়।
[2] বাংলায় মুদ্রণযন্ত্রের প্রতিষ্ঠা: পোর্তুগিজ মিশনারিরা অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে বাংলায় আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র নিয়ে আসে। পরে ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস অগাস্টাস হিকি কলকাতায় এবং ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিনস চুঁচুড়ায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
[3] বাংলা অক্ষরের সূচনা:
পোর্তুগিজ মিশনারিরা প্রথমে নিজেদের দেশে রোমান হরফে বাংলা বই ছাপিয়ে এদেশে নিয়ে আসেন। পরবর্তীকালে বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হলে চার্লস উইলকিনস প্রথম বাংলা অক্ষর তৈরি করেন। কিছুকাল পর হুগলি জেলার সুদক্ষ স্বর্ণশিল্পী পঞ্চানন কর্মকার বাংলা অক্ষরের উন্নত টাইপ তৈরি করেন।
[4] সুরেশচন্দ্র মজুমদারের অক্ষর : পঞ্চানন কর্মকারের পরবর্তীকালে সুরেশচন্দ্র মজুমদার ‘লাইনো টাইপ’ নামক আরও উন্নত বাংলা অক্ষরের টাইপ তৈরি করেন। এই অক্ষরে ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হালেদ রচিত ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ নামক পূর্ণাঙ্গ বইটি প্রকাশের (১৭৭৮-৭৯ খ্রি.) মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় বই ছাপা শুরু হয়।
5] পূর্ববঙ্গে ছাপাখানা: ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গে প্রথম রংপুরে ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হয়। ঢাকায় ছাপাখানা স্থাপিত হয় ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে। এভাবে উনিশ শতকের শেষভাগে বাংলার নানা প্রান্তে ছাপাখানার প্রসার ঘটে।
উপসংহার: উনিশ শতকে বাংলায় গড়ে ওঠা ছাপাখানাগুলিকে কেন্দ্র করে বই ছাপা, কাগজ শিল্প, বই বাঁধাইয়ের কাজ প্রভৃতিতে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়। পাঠ্যপুস্তকের জন্য প্রয়োজনীয় চিত্র, ম্যাপ এবং হরফ নির্মাণকারী শিল্পীদের গুরুত্ব বাড়ে।
2. হ্যালহেডের ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ গ্রন্থটি গুরুত্বপূর্ণ কেন? বাংলার ছাপাখানার বিকাশে চার্লস উইলকিনস-এর ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। [
উত্তর [ হ্যালহেডের ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ গ্রন্থের গুরুত্ব
নাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড রচিত ‘এ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ হল বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ বই। ইংরেজিতে লেখা হলেও বইটিতে প্রচুর বাংলা হরফে লেখা বাংলা শব্দ ছিল। এটি ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।এটিই ছিল প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা ব্যাকরণ বই। চার্লস উইলকিন্স-এর ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত বইটি বাঙালি পণ্ডিত মহলে সমাদর লাভ করে।
বাংলা ছাপাখানার বিকাশে চার্লস উইলকিনস এর ভূমিকা
চার্লস উইসকিনস ছিলেন বাংলা মুদ্রণের অগ্রদূত। বাংলা ছাপাখানার বিকাশে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
[1] বাংলা হরফ তৈরি: পোর্তুগিজরা প্রথম দিকে নিজেদের দেশে রোমান হরফে বাংলা বই ছেপে বাংলায় নিয়ে আসত। পরবর্তীকালে বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পর্বে চার্লস উইলকিনস বাংলা হরফ তৈরি করলে বাংলা বই ছাপার কাজ শুরু হয়।
[2] চুঁচুড়ায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা: চার্লস উইলকিনস ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে চুঁচুড়ায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছাপাখানায় হ্যালহেডের ব্যাকরণ বই ছাপার কাজ হত।
[3] কলকাতায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা: চার্লস উইলকিনস ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ‘অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে বই ছাপার ব্যাপক অগ্রগতি ঘটে।
[4] প্রভাব: উইলকিনস-এর চুঁচুড়ার ছাপাখানা পরবর্তীকালে শ্রীরামপুব় মিশনারিদের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত করে।
[5] লেখক ও অনুবাদক: উইলকিনস নিজে বেশ কিছু বই লেখেন এবং বাংলা ও সংস্কৃত থেকে কয়েকটি বই অনুবাদ করেন।
3. * বাংলায় গণশিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানার কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর গণশিক্ষার প্রসারে শ্রীরামপুর ছাপাখানার ভূমিকা
ভূমিকা: শ্রীরামপুর মিশনের খ্রিস্টান মিশনারি ও বিশিষ্ট ভাষাবিদ উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত বইপত্র কম দামে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছোতে শুরু করলে বাংলা ভাষায় গণশিক্ষার প্রসার সম্ভব হয়।
[1] বাংলা অনুবাদ: শ্রীরামপুরের ছাপাখানা থেকে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কেরির নির্দেশনায় বাইবেল, রামরাম বসু, মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রমুখের উদ্যোগে রামায়ণ, মহাভারত, বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য প্রভৃতির বাংলা অনুবাদ।
[2] বাংলা গদ্য সাহিত্য: বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রসারে শ্রীরামপুর ছাপাখানা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড। ফলে সাধারণ পাঠকদের হাতে বাংলা সাহিত্য পৌঁছোনোর সুযোগ আসে।
[3] পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ: শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে ছাত্রদের উপযোগী অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক ছাপা হতে থাকে। এইসব পাঠ্যপুস্তক সাধারণ ছাত্রদের হাতে কম দামে বা বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি সুন্দর ঝকঝকে পাঠ্যপুস্তকের হাজার হাজার কপি শ্রীরামপুরের ছাপাখানা থেকে ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়।
[4] গণশিক্ষার প্রসার: শ্রীরামপুর ছাপাখানায় মুদ্রিত বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অনুদিত গ্রন্থ, বিভিন্ন বাংলা সাহিত্য এবং পাঠ্যপুস্তক সুলভে বাংলার সাধারণ পাঠক ও শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে পৌঁছে যায়। ফলে বাংলায় গণশিক্ষার ব্যাপক প্রসার শুরু হয়।
উপসংহার: শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানা থেকে প্রথম দিকে ‘ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে’র পাঠ্যবইগুলি ছাপানো হলেও পরবর্তীকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাহিদা মেটাতে এখান থেকে প্রচুর পাঠ্যপুস্তক প্রকাশিত হতে থাকে। ফলে বাংলায় গণশিক্ষার প্রসার আরও দ্রুততর হয়।
4. শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কীভাবে একটি অগ্রণী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল?
উত্তর ভূমিকা: ডেনমার্ক থেকে আগত শ্রীরামপুরের খ্রিস্টান মিশনারিরা নিজেদের ধর্মীয় প্রচারসহ বেশকিছু জনকল্যাণমূলক উদ্দেশ্যে সেখানে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছাপাখানা প্রাচ্যের মুদ্রণশিল্পে গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করে।
[1] ছাপাখানা স্থাপন: শ্রীরামপুর মিশনের খ্রিস্টান মিশনারি উইলিয়ম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে একটি ছাপাখানা স্থাপন করেন যা এশিয়ার সর্ববৃহৎ এবং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ছাপাখানা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
[2] শ্রীরামপুর ত্রয়ীর উদ্যোগ: শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড (শ্রীরামপুর ত্রয়ী)-এর উদ্যোগে বাংলায় গণশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ১৮০১-১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শ্রীরামপুরের ছাপাখানা থেকে ৪০টি ভাষায় ২ লক্ষেরও বেশি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়।
[3] অনুবাদ প্রকাশ: শ্রীরামপুরের ছাপাখানা থেকে বাংলা, হিন্দি, অসমিয়া, উড়িয়া, মারাঠি, সংস্কৃত প্রভৃতি ভারতীয় ভাষায় বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতির অনুবাদ ছাপা হয়।
[4] অন্যান্য ছাপার কাজ: ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ছাত্রদের জন্য পাঠ্যপুস্তক, রামরাম বসুর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’, বিভিন্ন সংবাদপত্র প্রভৃতিও শ্রীরামপুরের ছাপাখানা থেকে ছাপা হয়।
[5] দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সুবিধা: শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানা থেকে প্রচুর বাংলা পাঠ্যপুস্তক প্রকাশের ফলে সাধারণ মানুষের হাতে খুব কম দামে বা বিনামূল্যে বই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। ফলে গ্রাম- বাংলার দরিদ্র শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভের সুযোগ পায়।
উপসংহার: শ্রীরামপুরের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার ফলে মুদ্রিত বইয়ের দাম জনসাধারণের নাগালে চলে আসে। এর ফলে যে শিক্ষা শুধুমাত্র সমাজের উচ্চবর্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তা ক্রমে সর্বসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
5. *শিক্ষার প্রসারে উইলিয়াম কেরি ও শ্রীরামপুর মিশনের অবদান কী?
উত্তর শিক্ষার প্রসারে উইলিয়াম কেরি ও শ্রীরামপুর মিশনের ভূমিকা
ভূমিকা: খ্রিস্টান মিশনারি উইলিয়াম কেরি ভারতে আসার আগে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা মূলত উচ্চসমাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। উইলিয়াম কেরি বাংলায় এসে শ্রীরামপুরে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কেরির উদ্যোগে শ্রীরামপুর মিশন বাংলায় গণশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
1] ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা: উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই ছাপাখানা থেকে বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত-সহ বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ ও পাঠ্যপুস্তক প্রকাশিত হয়ে সুলভে গ্রামগঞ্জের সাধারণ শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হতে থাকে।
[2 ] বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: কেরি সাহেবের উদ্যোগে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শ্রীরামপুর ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে ৬,৭০৩ জন ছাত্র নিয়ে ১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। শ্রীরামপুর মিশন বাংলায় প্রথম মহিলা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে নারীশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
3] কলেজ প্রতিষ্ঠা: উইলিয়াম কেরি ও তাঁর দুই সহযোগী সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করে শ্রীরামপুরে একটি ডিগ্রি কলেজ (১৮১৮ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল এশিয়ার প্রথম ডিগ্রি কলেজ।
[4] বাংলা ভাষায় শিক্ষার প্রসার: কেরি সাহেব উপলব্ধি করেছিলেন, গ্রামবাংলায় গণশিক্ষার প্রসারের জন্য প্রয়োজন মাতৃভাষা তথা বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান করা। এজন্য তিনি বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসারের চেষ্টা চালান।
[5] প্রগতিশীলতা: কেরি সাহেব ভারতের প্রাচীন পিছিয়ে-পড়া শিক্ষারীতির পরিবর্তে আধুনিক সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, দর্শন প্রভৃতি শিক্ষাদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মন থেকে যাবতীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার দূর করার চেষ্টা করেন।
উপসংহার: শিক্ষার প্রসারে উইলিয়াম কেরি ও তাঁর শ্রীরামপুর মিশনের অবদান অসামান্য।
গবেষক বিশাল মঙ্গলবাদী তাঁর ‘উইলিয়াম কেরির অবদান’ নামক গ্রন্থে লিখেছেন যে, যে সকল ধর্মযাজক নিজেদের সুবিধার জন্য জনগণকে সত্যান্বেষণের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করতেন,উইলিয়াম কেব়ি সেই যাজকদেব় বিব়ুদ্ধে দাড়াতে মানুষকে আত্মিক শক্তি দিলেন ।
6. *ছাপার কাজে আধুনিক বাংলা অক্ষর বা হরফ নির্মাণের অগ্রগতিব় বিবরণ দাও।
উত্তর আধুনিক বাংলা অক্ষর বা হরফ
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ইউরোপের খ্রিস্টান মিশনারিদের উদ্যোগে বাংলায় ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ঘটে এবং বাংলা ভাষায় বিভিন্ন বইপত্রের প্রকাশ শুরু হয়। বাংলা ভাষায় বই ছাপার প্রয়োজনে এই সময় আধুনিক বাংলা হরফের উদ্ভব এবং তার নানা বিবর্তন ঘটে।
[1] চার্লস উইলকিনস-এর উদ্যোগ: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী চার্লস উইলকিনস ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার চুঁচুড়ায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে ছাপার কাজের প্রয়োজনে তিনি সর্বপ্রথম বাংলা অক্ষর বা হরফের টাইপ বা নকশা তৈরি করেন। তবে সেই সমস্ত অক্ষরগুলি ছিল অত্যন্ত সাধারণ বা নিম্নমানের।
[2] পঞ্চানন কর্মকারের উদ্যোগ: চার্লস উইলকিনস-এর পরবর্তীকালে সুদক্ষ স্বর্ণশিল্পী পঞ্চানন কর্মকার উন্নত বাংলা অক্ষরের ছাঁচ বা টাইপ তৈরি করেন। তাঁকে বাংলা টাইপের জনক বলা হয়। তাঁর তৈরি করা টাইপেই শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানায় বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ছাপার কাজ শুরু হয়।
[3] মনোহর কর্মকারের উদ্যোগ: পঞ্চানন কর্মকার অক্ষরের টাইপ তৈরির কৌশল তাঁর জামাতা মনোহর কর্মকারকে শিখিয়ে যান। ফলে পরবর্তীকালে মনোহর বাংলা অক্ষর তৈরিতে খুবই দক্ষতার পরিচয় দেন এবং আরও উন্নত বাংলা অক্ষর বা হরফ তৈরি করেন।
[4] সুরেশচন্দ্র মজুমদারের উদ্যোগ: পঞ্চানন কর্মকারের পর সুরেশচন্দ্র মজুমদার বাংলা টাইপ বা অক্ষর তৈরিতে আরও দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি ‘লাইনো টাইপ’ নামক আরও উন্নত এক ধরনের বাংলা অক্ষর বা টাইপ তৈরি করেন।
উপসংহার: চার্লস উইলকিনস সাহেবের হাত ধরে বাংলা অক্ষর বা হরফ বা নকশার যাত্রা শুরু হলেও পঞ্চানন কর্মকার ও তাঁর জামাই মনোহর কর্মকারের দক্ষতায় তা অনেক বেশি মার্জিত হয়। পরে সুরেশচন্দ্র মজুমদারের ‘লাইনো টাইপ’ পদ্ধতি নিঃসন্দেহে বাংলা অক্ষরকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
7. *ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় শিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার কীরূপ ভূমিকা ছিল?
উত্তর শিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার ভূমিকা
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে ইউরোপের খ্রিস্টান মিশনারিদের মাধ্যমে বাংলার বিভিন্ন স্থানে ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হয়। বাংলায় শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে এই ছাপাখানাগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
[1] পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ: বাংলার ছাপাখানাগুলিতে স্কুলকলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রচুর পরিমাণ পাঠ্যপুস্তক ছাপা হতে থাকে। এইসব পাঠ্যপুস্তকের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল সাহিত্য,
গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি। ছাপাখানায় মুদ্রিত বইপত্রের সুন্দর মুদ্রণ এবং কম দাম হওয়ায় তা গ্রামবাংলার সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের হাতেও পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হয়। এই সব বইগুলি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
[2] অন্যান্য গ্রন্থ প্রকাশ: ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের পর থেকে বাংলায় বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত, বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য প্রভৃতির অনুবাদ, বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। এগুলি সুলভে বাংলার সাধারণ পাঠকদের হাতে পৌঁছে যায়।
[3] সংবাদপত্রাদি প্রকাশ: ছাপাখানাগুলি থেকে বাংলা ও ইংরেজিতে বেশকিছু সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রও প্রকাশিত হতে থাকে। এইসব সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রগুলিতে দৈনন্দিন সংবাদ ছাড়াও নিয়মিত বিভিন্ন জ্ঞানমূলক বিষয়ের আলোচনা স্থান করে নেয়।
[4] নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: ছাত্রদের পাঠ্যপুস্তক রচনা করে তা কম খরচে বা বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি (১৮১৭ খ্রি.) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি স্থাপিত হলে তার অধীনে বেশ কয়েকটি স্কুল গড়ে ওঠে।
উপসংহার: ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত সুলভ বইপত্র সাধারণ মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে যায়। ফলে বাংলায় শিক্ষার ব্যাপক ও দ্রুত প্রসার শুরু হয়।
8. *বাংলায় শিশুশিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর বাংলায় শিশুশিক্ষার প্রসারে ছাপাখানার ভূমিকা
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উনবিংশ শতকের প্রথম ভাগের মধ্যে ছাপাখানার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ছাপাখানার প্রসার বাংলার শিশুশিক্ষার
প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
[1] শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বইপত্র প্রকাশ: বাংলায় ছাপাখানার প্রসারের ফলে এইসব ছাপাখানায়
মুদ্রিত হয়ে শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বিভিন্ন বইপত্রের হাজার হাজার কপি সুলভে বাংলার গ্রামেগঞ্জে পৌঁছে যায়। বাংলার শিশুদের মধ্যে সহজে প্রাথমিক শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গ্রন্থকার শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বইপত্র রচনা করেন।
[2] প্রাথমিক উদ্যোগ :বাংলার শিশুশিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশন প্রণীত ‘লিপিধারা’ (১৮১৫ খ্রি.), রা:ধাকান্ত দেব রচিত ‘বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থ’ (১৮২১ খ্রি.), স্কুল বুক সোসাইটি কর্তৃক দুই খণ্ডে প্রকাশিত ‘বর্ণমালা’ (সম্ভবত ১৮৫৩-৫৪ খ্রি.), ক্ষেত্রমোহন দত্ত কর্তৃক দুই খণ্ডে রচিত ‘শিশুসেবধি’ (১৮৫৪ খ্রি.) প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে এইসব বই খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি।
[3] মদনমোহন তর্কালঙ্কার: বাংলায় শিশুশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে মদনমোহন তর্কালঙ্কার ‘শিশুশিক্ষা’ নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। প্রকাশের পর সেটি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভের ফলে ‘শিশুশিক্ষা’র প্রথম ভাগ ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে, ‘শিশুশিক্ষা’র দ্বিতীয় ভাগ ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে এবং পরবর্তীকালে এর তৃতীয় ভাগ ও ‘বোধোদয়’ শিরোনামে চতুর্থ ভাগ প্রকাশিত হয়। ‘শিশুশিক্ষা’ বাংলার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘শিশুশিক্ষা’-কে বাংলার প্রথম ‘প্রাইমার’ বলা হয়।
[4] ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর: শিশুদের বর্ণশিক্ষা ও শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে দুই খণ্ডে ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। এটি শীঘ্রই ‘শিশুশিক্ষা’র জনপ্রিয়তাকে অতিক্রম করে যায়। দুই পয়সা মূল্যের পাতলা এই বইটি বাংলার শিক্ষাজগতে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি ঘটায়।
[5] রামসুন্দর বসাক: রামসুন্দর বসাক ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বাল্যশিক্ষা’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। এটি পূর্ববঙ্গের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
[6] রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সহজপাঠ’ নামক শিশুশিক্ষা-বিষয়ক একটি বই লেখেন। এটিও শিশুশিক্ষার প্রসারে যথেষ্ট অবদান রাখে। পশ্চিমবঙ্গের নানা বিদ্যালয়ে এই বইটি পাঠ্য বইরূপে স্বীকৃত ছিল।
উপসংহার: ছাপাখানাগুলিতে শিশুদের জন্য মুদ্রিত বইগুলি বাংলার সর্বত্ৰ ছড়িয়ে পড়ে এবং শিশুশিক্ষার বিস্তারে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার আগে এই অগ্রগতির মোটেই সম্ভাবনা ছিল না।
9. ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।
উত্তর ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক
ভূমিকা: ঔপনিবেশিক আমলে বাংলা তথা ভারতে আধুনিক মুদ্রণব্যবস্থা চালু হলে মানুষের হাতে
প্রচুর ছাপা বইপত্র আসতে থাকে। এসব ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ছাপা বই একদিকে যেমন শিক্ষার অগ্রগতি ঘটায়, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান শিক্ষার অগ্রগতি ছাপা বইয়ের চাহিদা বৃদ্ধি করে।
[1] গণশিক্ষার দিকে যাত্রা: ইতিপূর্বে হাতে লেখা বইয়ের দাম খুব বেশি হত। তাই এসব বই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল এবং শিক্ষাদান ব্যবস্থা ছিল উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ছাপা বই দামে সস্তা হওয়ায় তা সাধারণ মানুষ কেনার ও পড়ার সুযোগ পায়। এভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ঘটে যা গণশিক্ষার প্রসারের পটভূমি তৈরি করে।
[2] পাঠ্যবইয়ের সহজলভ্যতা: ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রচুর পরিমাণ মুদ্রিত ও দামে সস্তা পাঠ্যবই বাজারে আসতে থাকে। ফলে বইয়ের অভাব দূর হয় এবং শিক্ষাবিস্তারের পথ মসৃণ হয়।
3] মাতৃভাষায় শিক্ষা: ছাপাখানার মাধ্যমে বাংলা ভাষায় ভাষাশিক্ষা,গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান ইত্যাদি বই, বোধিনী বা সহায়িকা বই বাংলা ভাষায় ছাপা হতে থাকে। ফলে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাতৃভাষায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়।
[4] শিশুশিক্ষা: ছাপা বই শিশুশিক্ষার অগ্রগতি ঘটাতে সহায়তা করে। ছাপাখানায় মুদ্রিত মদনমোহন তর্কালংকারের ‘শিশুশিক্ষা’, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’, রামসুন্দর বসাকের ‘বাল্যশিক্ষা’র মতো বইগুলি শিশুশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
[5] উচ্চশিক্ষা: আশিস খাস্তগীর উল্লেখ করেছেন যে, উনিশ শতকের মধ্যভাগে ব্যাপক পরিমাণে পাঠ্যবই প্রকাশ হতে থাকলে তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হয়ে ওঠে। ফলে, বাঙালির উচ্চশিক্ষার অগ্রগতি অনেক সহজ হয়।
[ 6] নারীশিক্ষার অগ্রগতি: উনিশ শতকের শেষার্ধে নারীশিক্ষার দাবি ক্রমশ জোরদার হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সুলভ ছাপা বই নারীদের হাতে পৌঁছালে নারীশিক্ষার গতি ত্বরান্বিত হয়।
উপসংহার: ছাপা বই একদিকে শিক্ষার বিস্তারে ভূমিকা নিয়েছিল, অন্যদিকে শিক্ষার
গুণগতমান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
10. ছাপাখানা বাংলায় শিক্ষাবিস্তারে কীরূপ পরিবর্তন এনেছিল?
উত্তর বাংলায় শিক্ষাবিস্তারের পরিবর্তনে স্খপাখানার ভূমিকা
অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে বাংলায় আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে ছাপাখানার যথেষ্ট প্রসার ঘটে। এর ফলে বাংলায় শিক্ষাবিস্তারে যথেষ্ট পরিবর্তন ঘটে।
[1] সর্বজনীন শিক্ষা: বঙ্গদেশে আধুনিক ছাপাখানা প্রবর্তনের আগে হাতে লেখা বইয়ের মাধ্যমে পড়াশোনার কাজ চলত। ফলে বইয়ের মূল্য খুব বেশি হত। তাই তখন পড়াশোনা মূলত উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। দরিদ্রদের পক্ষে তাই শিক্ষাগ্রহণ সম্ভব ছিল না। কিন্তু ছাপাখানার বিস্তারের ফলে সুলভ মূল্যের বই বাজারে এলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সুলভে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়।
[2] বাংলা শিক্ষার প্রসার Ă: ছাপাখানার প্রসারের আগে আরবি, সংস্কৃত ও শাস্ত্রের বক্তব্য মুখস্থ করার মধ্যে শিক্ষা সীমাবদ্ধ ছিল। পরবর্তীকালে ছাপাখানার বই বাজারে এলে শিক্ষার্থীরা নিজ মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়। ফলে বাংলা ভাষা শিক্ষার যথেষ্ট প্রসার ঘটে।
[3] শিশুশিক্ষার বই: ছাপাখানার প্রসারের ফলে শিশুশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ছাপাখানায় মুদ্রিত মদনমোহন তর্কালঙ্কারের ‘শিশুশিক্ষা’, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’, রামসুন্দর বসাকের ‘বাল্যশিক্ষা’ প্রভৃতি শিশুশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
[4] বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষা: ছাপাখানায় মুদ্রিত সুলভ বইপত্র বাজারে এলে সাহিত্য, ব্যাকরণ, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, গণিত, ইংরেজি ভাষা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার প্রসার ঘটতে শুরু করে।
[5] নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি (১৮১৭ খ্রি.) ছাপাখানায় মুদ্রিত বইপত্র বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পৌঁছে দিতে থাকে। ফলে জনশিক্ষার প্রসারের পথ সুগম হয়। ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হতে থাকলে শিক্ষার আরও প্রসার ঘটে।
মূল্যায়ন: ছাপাখানার প্রসারের ফলে বাংলায় জনশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটে।
ফলে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি ভদ্রলোক শ্রেণির উৎপত্তি ঘটে। এই শ্রেণি
ইংরেজদের অফিস-আদালতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
11. *বাংলা পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে ছাপাখানার উদ্যোগের পরিচয় দাও।
উত্তর বাংলা পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে ছাপাখানার উদ্যোগ
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং
ঊনবিংশ শতকের প্রথম ভাগের মধ্যে ছাপাখানার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ছাপাখানাগুলিতে বিভিন্ন ধরনের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রিত হয়ে সেগুলি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে যায়। যেমন-
[1] শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বইপত্র: বাংলার ছাপাখানাগুলিতে শিশুশিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বই ছাপা হয়। এইসব বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মদনমোহন তর্কালঙ্কার রচিত ‘শিশুশিক্ষা’, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’, রামসুন্দর বসাক রচিত ‘বাল্যশিক্ষা’ প্রভৃতি। এইসব বই থেকেই বাংলার শিশুরা বাংলা বর্ণের সঙ্গে পরিচিত হয়।
2] বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যবই: শিশুশিক্ষার বই ছাড়াও [ ছাপাখানাগুলিতে বিদ্যালয় স্তরের ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য প্রভৃতি বিষয়ে প্রচুর পাঠ্যপুস্তক রচিত হয়। উনবিংশ শতকের এরূপ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হল গোবিন্দ প্রসাদ দাস রচিত ‘ব্যাকরণ সার’, প্রাণলাল চক্রবর্তী রচিত’অঙ্কবোধ’, কেদারেশ্বর চক্রবর্তী রচিত
‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, আনন্দকিশোর সেন রচিত ‘অর্থের সার্থকতা’, দীননাথ সেন রচিত ‘বাংলাদেশ
ও আসামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ’ এবং ‘ঢাকা জেলার ভূগোল এবং সংক্ষেপে ঐতিহাসিক বিবরণ’ প্রভৃতি।
[3] সহায়ক বইপত্র: উনবিংশ শতকে পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও ছাপাখানার মালিকরা ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন সহায়ক বইপত্র প্রকাশ করতেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এইসব বইয়ের যথেষ্ট চাহিদাও ছিল।
উপসংহার: বাংলা ভাষায় শিক্ষাগ্রহণের জন্য পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পেলে ছাপাখানাগুলিতে বিপুল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। মুদ্রিত পাঠ্যবইগুলি বাংলার শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছালে শিক্ষার প্রসারে আরও গতি আসে।
12. *বাংলায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পরবর্তীকালে ছাপাখানা ও মুদ্রণশিল্প কীভাবে নতুন
ব্যাবসা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে?
অথবা, বাংলার ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগ
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে উনবিংশ শতকের প্রথমভাগ পর্যন্ত সময়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ছাপাখানা স্থাপিত হয়। ছাপাখানার প্রসারের ফলে মুদ্রণশিল্প একটি প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদারি ব্যাবসা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
1] পাঠ্যবই প্রকাশ: শিক্ষার্থীদের অক্ষরজ্ঞানসহ গণিত, বিজ্ঞান, [ ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য প্রভৃতি বিভিন্ন পাঠ্য বিষয়ের বইপত্র ছাপাখানার মালিকরা তাঁদের ছাপাখানায় ছাপতে থাকেন। কয়েক দশকের মধ্যেই পাঠ্যবইয়ের একটি বৃহৎ বাজার গড়ে ওঠে। এইসব বই বিক্রি করে মালিকদের ব্যাবসার দ্রুত প্রসার ঘটে।
[2] অন্যান্য বইপত্র প্রকাশ: ছাপাখানার মালিকরা সাহিত্য, কবিতা, নাটক, গানের বই, ধর্মগ্রন্থ, অনুবাদ গ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনি, চিকিৎসাশাস্ত্র, গবেষণামূলক গ্রন্থ, অভিধান প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ছেপে পাঠককুলের একটি বড়ো বাজার তৈরি করেন। ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদেব়প্রয়োজনীয় সহায়ক বইপত্র ছেপে ব্যাবসার আরও বৃদ্ধি ঘটান।
[3] পত্রপত্রিকা প্রকাশ: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে পরবর্তী এক শতকের মধ্যে বাংলায় বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের পত্রপত্রিকা ছিল। এসব পত্রপত্রিকা ছাপার ফলে ছাপাখানার ব্যাবসার আরও প্রসার ঘটে।
[4] অন্যান্য মুদ্রণ: ব্রিটিশ শাসনকালে অফিস-আদালতের যথেষ্ট প্রসার ঘটে। ফলে এইসব
প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাগজপত্র মুদ্রণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মিলিটারি বিল, ভাতার ফর্ম, সামরিক বাহিনীর বিধিবিধান, সার্কুলার, বিজ্ঞপ্তি প্রভৃতি কাগজপত্র ছাপার কাজ শুরু হলে ছাপাখানার ব্যাবসা বৃদ্ধি পায়।
[5] আনুষঙ্গিক ব্যাবসা: ছাপাখানার ব্যাবসার উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলে এর সঙ্গে যুক্ত আনুষঙ্গিক ব্যাবসারও ধারাবাহিক প্রসার ঘটতে থাকে। যেমন-কাগজ বিক্রি, বই বাঁধাই, বই বিক্রি ইত্যাদি।
[6] ছাপাখানার সংখ্যাবৃদ্ধি: ছাপার কাজের ব্যাবসায়িক চাহিদা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে
কলকাতায় ছাপাখানার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কলকাতায় ১৭টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৫-৮৬ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারতে ১,০৯৪টি ছাপাখানা ছিল। এর মধ্যে বাংলা প্রদেশেই ছিল ২২৯টি ছাপাখানা।
উপসংহার: যে-কোনো শিল্প গড়ে ওঠে বাজারে তার চাহিদার ওপর নির্ভর করে। বইয়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আঠারো-উনিশ শতকে মুদ্রণশিল্প একটি উজ্জ্বল, লাভজনক ও সম্ভাবনাময় ব্যাবসা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
13. বাংলায় মুদ্রণশিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?
অথবা, বাংলার ছাপাখানার বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর বাংলার মুদ্রণশিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের অবদান
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে ইউরোপীয় খ্রিস্টান মিশনারিরা প্রথম বাংলায় আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন বাঙালিও মুদ্রণশিল্পের বিকাশে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বাক্ষর রাখেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।
[1] শিক্ষানবিশ: ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য্য’ নামে গ্রন্থটি থেকে তাঁর সম্পর্কে জানা যায়। গঙ্গাকিশোর প্রথম জীবনে শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশনের ছাপাখানায় কম্পোজিটরের কাজ করতেন। এখান থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে তিনি পরবর্তীকালে কলকাতায় এসে বই প্রকাশের কাজ শুরু করেন।
[2] সচিত্র বই: গঙ্গাকিশোর ফেরিস এন্ড কোম্পানি প্রেস থেকে ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে কবি ভারতচন্দ্রের সচিত্র অন্নদামঙ্গল কাব্যটি ছাপেন। এটিই ছিল বাঙালিদের সম্পাদনায় প্রথম সচিত্র বই। তৎকালীন বিখ্যাত শিল্পী রামচাঁদ রায়ের আঁকা ছবি এই বইয়ে ব্যবহার করা হয়।
[3] বাঙালি গেজেটি প্রেস: অন্নদামঙ্গলের ব্যাপক বিক্রিতে উৎসাহিত হয়ে গঙ্গাকিশোর ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় বাঙ্গাল গেজেটি প্রেস স্থাপন করেন। এটি ছিল বাঙালি মালিকানায় প্রথম ছাপাখানা। তিনি এখান থেকে নিজ সম্পাদনায় বাঙ্গাল গেজেটি প্রকাশ করতে থাকেন।
[4] বিভিন্ন বই: অন্নদামঙ্গল কাব্য ছাড়াও গঙ্গাকিশোর বিভিন্ন বই প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘এ গ্রামার ইন ইংলিশ এন্ড বেঙ্গলি’, ‘গণিত নামতা ব্যাকরণ লিখবার আদর্শ’, ‘দায়ভাগ’, ‘চিকিৎসার্ণব’, ‘শ্রীমদ্ভাগবতগীতা’, ‘দ্রব্যগুণ’ প্রভৃতি।
উপসংহার: বাঙালিদের মধ্যে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যই ছিলেন প্রথম সংবাদপত্র সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রথম বাংলা সচিত্র বইয়ের প্রকাশক। তাঁর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে এরপর থেকে বহু বাঙালি নিজেদের উদ্যোগে ■ ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে বইপত্র ও সংবাদপত্র প্রকাশনার জগতে
প্রবেশ করেন।
14. বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভূমিকা আলোচনা করো।
অথবা, মুদ্রণশিল্পে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কীভাবে বিপ্লব এনেছিলেন?
অথবা, বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভূমিকার মূল্যায়ন করো।
উত্তর মুদ্রণশিল্পের ক্ষেত্রে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান
ভূমিকা: উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১৮৬৩-১৯১৫ খ্রি.) ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী।
তিনি নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে ঊনবিংশ শতকে নিম্নমানের মুদ্রণশিল্পের ব্যাপক উন্নতি
ঘটাতে সক্ষম হন।
(1) ইউ রায় অ্যাধুনিক প্রতিষ্ঠা: উপেন্দ্রকিশোর ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বিদেশ থেকে আধুনিক উন্নত মুদ্রণযন্ত্র এনে কলকাতার শিবনারায়ণ দাস লেনে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এর নাম হয় ইউ রায় অ্যান্ড সন্স। এখানে তিনি মুদ্রণের কাজে উন্নতি ঘটানোর উদ্দেশ্যে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালান।
[2] হাফটোন ব্লক তৈরি: উপেন্দ্রকিশোর তাঁর ছাপাখানায় কাঠের পরিবর্তে তামা ও দস্তার পাতে অক্ষর বা ছবি খোদাই করে মুদ্রণের প্রয়োজনীয় ব্লক তৈরি করেন। তিনি অন্ধকার ঘরে বসে আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরণ লক্ষ করে হাফটোন ব্লক তৈরির সূত্র উদ্ভাবন করেন। এর ফলে মুদ্রণশিল্প অনেক উন্নত হয়।
[3] ছবির ব্যবহার: উপেন্দ্রকিশোর বইয়ের প্রচ্ছদ ও বইয়ের ভেতরে লেখার সঙ্গে বিভিন্ন ছবির মুদ্রণ উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। এই বিষয়ে তিনি ষাট ডিগ্রি স্ক্রিন, ডায়াফ্রাম পদ্ধতি, স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্র, ডায়োটাইপ, রিপ্রিন্ট প্রভৃতি পদ্ধতি ব্যবহার করে রংবেরঙের নানা ছবি মুদ্রণের ব্যবস্থা করেন।
[4] স্টুডিয়ো স্থাপন: উপেন্দ্রকিশোর তাঁর ছাপাখানার সঙ্গে ছবি আঁকার একটি স্টুডিয়ো খোলেন। এখানে তিনি আধুনিক ফোটোগ্রাফি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। এর ফলে সাদাকালো ছবি প্রচলনের যুগে তিনি ছোটোদের জন্য রংবেরঙের বিভিন্ন বই প্রকাশ করতে
সক্ষম হন। তিনি আধুনিক ফোটোগ্রাফি ও মুদ্রণশিল্প সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে তাঁর
পুত্র সুকুমার রায়কে ইংল্যান্ডে পাঠান (১৯১১ খ্রি.)।
[5] প্রকাশনা: বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার পর মুদ্রণশিল্পের যথেষ্ট উন্নতি ঘটিয়ে উপেন্দ্রকিশোর তাঁর ছাপাখানা থেকে ছোটোদের জন্য নিজের লেখা রঙিন বই একের পর এক প্রকাশ করতে থাকেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘ছেলেদের মহাভারত’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘সেকালের কথা’, ‘টুনটুনির বই’, ‘সন্দেশ’ পত্রিকা প্রভৃতি।
উপসংহার: উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কর্তৃক বাংলার মুদ্রণশিল্পের আধুনিকীকরণের বিভিন্ন উপায় উদ্ভাবন এবং ‘ইউ এন রায় অ্যান্ড সন্স’ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাঁর উদ্যোগগুলি বাংলার মুদ্রণশিল্পকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।
15. *ছাপাখানায় মুদ্রিত বইপত্রের মাধ্যমে বাংলায় কীভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটে?
উত্তব় : ছাপাখানায় বইয়ের মুদ্রণ ও বাংলায় শিক্ষার প্রসার
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে বাংলায় আধুনিক ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা হয় এবং ঊনবিংশ শতকের প্রথমভাগে ছাপাখানার ব্যাপক প্রসার ঘটে। এসব ছাপাখানায় শিক্ষার্থীদের উপযোগী বহু বইপত্র ছাপা হয়ে তাদের হাতে পৌঁছে যায়। ফলে বাংলায় শিক্ষার যথেষ্ট প্রসার ঘটতে শুরু করে।
[1] প্রেক্ষাপট: বঙ্গদেশে আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার আগে হাতে লেখা পুথিপত্রের সাহায্যে শিক্ষাগ্রহণের কাজ চলত। এই বইয়ের মূল্য খুব বেশি হত বলে এই সময় নিম্নবিত্ত দরিদ্র সমাজে শিক্ষার প্রসারের বিশেষ সুযোগ ছিল না। তাই এই সময় বাংলার শিক্ষাদান মূলত সমাজের উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। তা ছাড়া এই সময় শিক্ষা বলতে মূলত ছিল দীর্ঘ আরবি বা সংস্কৃত কবিতা বা শাস্ত্রের বক্তব্য মুখস্থ করা। এককথায়, ছাপা বইপত্র বাজারে আসার আগে বাংলায় শিক্ষার প্রসার ছিল খুবই সীমাবদ্ধ।
[2] ছাপা বইয়ের সহজলভ্যতা: ঊনবিংশ শতকের শুরু থেকে ছাপাখানায় ছাপা প্রচুর সংখ্যক সুদৃশ্য বইপত্র বাজারে আসতে শুরু করে। একদিকে এসব মুদ্রিত বইয়ের জোগান ছিল বিপুল, অন্যদিকে এগুলি দামেও ছিল সস্তা। ফলে দরিদ্র, সাধারণ শিক্ষার্থী ও পাঠকদের হাতে সহজেই ছাপা বইপত্র পৌঁছে যায়। বাংলার ছাপাখানাগুলি থেকে মাতৃভাষা বাংলায় ছাপা প্রচুর বইপত্র বাজারে আসতে শুরু করলে শিক্ষার্থীরা নিজের মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পায়। ফলে বাংলায় ব্যাপক শিক্ষাবিস্তার শুরু হয়।
[3] শ্রীরামপুর ছাপাখানার অবদান: খ্রিস্টান মিশনারি উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করলে এদেশে শিক্ষার প্রসারে ভীষণ সুবিধা হয়। এশিয়ার তৎকালীন সর্ববৃহৎ এই ছাপাখানা থেকে বাংলাসহ বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত, বিভিন্ন প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য প্রভৃতির অনুবাদ, হিতোপদেশ, বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধ, রামরাম বসুর ‘প্রতাপাদিত্য চরিত্র’ প্রভৃতি প্রকাশিত হয়। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজসহ
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্য বিপুল সংখ্যক পাঠ্যপুস্তক এই ছাপাখানায় মুদ্রিত হয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যায়।
4] পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ: ছাপাখানাগুলির মুদ্রিত বইপত্র বিনামূল্যে বা সস্তায় ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি (১৮১৭ খ্রি.) প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি স্থাপিত হলে তার অধীনে বেশ কয়েকটি স্কুল গড়ে ওঠে। এইসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে পাঠ্যপুস্তকের হাজার হাজার কপি শ্রীরামপুরের ছাপাখানায় ছাপায়। ফলে শহর ও গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের যেসব সাধারণ মানুষ বিদ্যাশিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল তাদের হাতে ছাপাখানায় মুদ্রিত সুন্দর ঝকঝকে পাঠ্যবই পৌঁছে যায়।
[5] শিশুশিক্ষার জন্য বই প্রকাশ: বাংলার শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ছাপাখানাগুলিতে প্রচুর সংখ্যক শিশুশিক্ষা-বিষয়ক বইপত্র ছাপা হতে থাকে। এসব মুদ্রিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মদনমোহন তর্কালংকারের ‘শিশুশিক্ষা’, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’, রামসুন্দর বসাকের ‘বাল্যশিক্ষা’ প্রভৃতি। বিদ্যাসাগর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’-এর তাঁর জীবদ্দশাতেই মোট ১৫২টি সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং বইটির ৩৫ লক্ষেরও বেশি কপি পাঠকদের কাছে পৌঁছে যায়। ১৮৬৯-১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই ১২ বছরের মধ্যে ৪১ লক্ষেরও বেশি শিশুশিক্ষার বই ছাপা হয়।
[6] অন্যান্য পাঠ্যবই প্রকাশ: বিদ্যালয় স্তরের বিভিন্ন বিষয়ের প্রচুর পাঠ্যবই ছাপাখানাগুলিতে মুদ্রিত হয়ে সস্তায় বাংলার সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের হাতে পৌঁছে যায়। এরূপ কিছু উল্লেখযোগ্য পাঠ্যবই ছিল গোবিন্দপ্রসাদ দাস রচিত ‘ব্যাকরণ সার’, প্রাণলাল চক্রবর্তী রচিত ‘অঙ্কবোধ’, কেদারেশ্বর চক্রবর্তী রচিত ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’, আনন্দকিশোর সেন রচিত ‘অর্থের সার্থকতা’, দীননাথ সেন রচিত ‘বাংলাদেশ ও আসামের সংক্ষিপ্ত বিবরণ’ এবং ‘ঢাকা জেলার ভূগোল এবং সংক্ষেপে ঐতিহাসিক বিবরণ’ প্রভৃতি। এইসব বইপত্র বাংলার গ্রামগঞ্জে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
[7] সংবাদপত্রের ভূমিকা: ঊনবিংশ শতকে বাংলার ছাপাখানাগুলিথেকে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়ে বাংলায় গণশিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এসব সংবাদপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মার্শম্যান সম্পাদিত মাসিক ‘দিগদর্শন’ ও সাপ্তাহিক ‘সমাচার দর্পণ’, গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘বেঙ্গল গেজেট, রামমোহন রায় সম্পাদিত ‘সম্বাদ কৌমুদী, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত –
‘সম্বাদ প্রভাকর’, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পাদিত ‘তত্ত্ববোধিনী’ প্রভৃতি।
16. বাংলায় ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগসমূহের একটি সংক্ষিপ্ত বিবব়়ণ দাও।
ভূমিকা: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে ঊনবিংশ শতকের প্রথমভাগ পর্যন্ত সময়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ছাপাখানা স্থাপিত হয়। ছাপাখানার প্রসারের ফলে মুদ্রণশিল্প একটি প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদারি ব্যাবসা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
[1] পাঠ্যবই প্রকাশ: শিক্ষার্থীদের অক্ষরজ্ঞানসহ গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, সাহিত্য প্রভৃতি বিভিন্ন পাঠ্য বিষয়ের বইপত্র ছাপাখানার মালিকরা তাঁদের ছাপাখানায় ছাপতে থাকেন। কয়েক দশকের মধ্যেই পাঠ্যবইয়ের একটি বৃহৎ বাজার গড়ে ওঠে। এইসব বই বিক্রি করে মালিকদের ব্যাবসার দ্রুত প্রসার ঘটে।
[2] অন্যান্য বইপত্র প্রকাশ: ছাপাখানার মালিকরা সাহিত্য, কবিতা, নাটক, গানের বই, ধর্মগ্রন্থ, অনুবাদ গ্রন্থ, ভ্রমণকাহিনি, চিকিৎসাশাস্ত্র, গবেষণামূলক গ্রন্থ, অভিধান বিভিন্ন ধরনের বইপত্র ছেপে পাঠককূলের একটি বড়ো বাজার তৈরি করেন। ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সহায়ক বইপত্র ছেপে ব্যাবসার আরও বৃদ্ধি ঘটান।
[3]পত্র পত্রিকা প্রকাশ: অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে পরবর্তী এক শতকের মধ্যে বাংলায় বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্র প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক, দৈনিক প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের পত্রপত্রিকা ছিল। এসব পত্রপত্রিকা ছাপার ফলে ছাপাখানার ব্যাবসার আরও প্রসার ঘটে।
[4] অন্যান্য মুদ্রণ: ব্রিটিশ শাসনকালে অফিস-আদালতের যথেষ্ট ঘটে। ফলে এইসব মুদ্রণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মিলিটারি বিল, ভাতার ফর্ম, সামরিক বাহিনীর বিধিবিধান, সার্কুলার, বিজ্ঞপ্তি প্রভৃতি কাগজপত্র ছাপার কাজ শুরু হলে ছাপাখানার ব্যাবসা বৃদ্ধি পায়।
[5] আনুষঙ্গিক ব্যাবসা: ছাপাখানার ব্যাবসার উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলে এর সঙ্গে যুক্ত আনুষঙ্গিক ব্যাবসারও ধারাবাহিক প্রসার ঘটতে থাকে। যেমন-কাগজ বিক্রি, বই বাঁধাই, বই বিক্রি ইত্যাদি।
[6] ছাপাখানার সংখ্যাবৃদ্ধি: ছাপার কাজের ব্যাবসায়িক চাহিদা ক্রমাগত বাড়তে থাকলে কলকাতায় ছাপাখানার সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কলকাতায় ১৭টি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৮৫-৮৬ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারতে ১,০৯৪টি ছাপাখানা ছিল। এর মধ্যে বাংলা প্রদেশেই ছিল ২২৯টি ছাপাখানা।
উপসংহার: যে-কোনো শিল্প গড়ে ওঠে বাজারে তার চাহিদার ওপর নির্ভর করে। ইয়ের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে আঠারো-উনিশ শতকে মুদ্রণশিল্প একটি উজ্জ্বল, লাভজনক ও সম্ভাবনাময় ব্যাবসা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
17. বাংলার ছাপাখানা ও মুদ্রণের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের অবদান ব্যাখ্যা করো। ছাপাখানার ফলাফল বা প্রভাবগুলিকে তুমি কীভাবে ব্যাখ্যা করবে?
উত্তৰ : বাংলার ছাপাখানা ও মুদ্রণে বিদ্যাসাগরের অবদান
বাংলার শিক্ষার প্রসারে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অসামান্য অবদান রয়েছে। শিক্ষার সংস্কার থেকে শিক্ষার প্রসার-উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর আন্তরিক উদ্যোগ লক্ষ করা যায়। শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি ছাপাখানা ও মুদ্রণ শিল্পের সঙ্গেও যুক্ত হয়ে পড়েন।
[1] ছাপাখানার জগতে যাত্রা: বিদ্যাসাগর ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনার চাকরি ছেড়ে দেবার পর বিকল্প জীবিকা হিসেবে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তিনি ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে ৬০০ টাকা ঋণ নিয়ে বন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারকে অংশীদার হিসেবে নিয়ে কলকাতায় ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
[2] বর্ণমালার সংস্কার: বই মুদ্রণের ক্ষেত্রে অক্ষর বা বর্ণমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু বিদ্যাসাগরের পূর্বে শব্দ বোঝানোর ক্ষেত্রে বাংলা অক্ষরের মধ্যে কিছু গণ্ডগোল ছিল। যেমন-বর্গীয় জ ও অন্তঃস্থ য় হরফের আলাদা আলাদা উচ্চারণের হরফ বসানোর ক্ষেত্রে ‘ঘ’ হরফের মাধ্যমেই কাজ চালিয়ে দেওয়া হত। বিদ্যাসাগর এই ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটান। তিনি ‘য’ বর্ণটির নীচের ফুটকি দেওয়ার পদ্ধতি চালু করে অন্তঃস্থয় উচ্চারণের হরফ তৈরি করেন। ‘ড’ ও ‘ঢ’- এর ক্ষেত্রেও যথাক্রমে ‘ড়’ ও ‘ঢ়’ হরফের প্রচলন করেন। ঋ-কার (,), ‘উ-কার’ () ও ‘উ-কার’ () লেখার প্রচলনও তিনিই করেন।
[3] প্রথথম গ্রন্থ। প্রকাশ: বিদ্যাসাগরের ছাপাখানা থেকে প্রথম প্রকাশিত
গ্রন্থটি হল রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রচিত ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্য। নদীয়া জেলার কৃয়নগর রাজবাড়িতে সংরক্ষিত মূল অন্নদামঙ্গল কাব্যের পান্ডুলিপিটি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিদ্যাসাগর কৃয়নগরে আসেন এবং বইটি সংগ্রহ করেন। এরপর তাঁর সম্পাদিত এই গ্রন্থটি তাঁর ছাপাখানা থেকে দুই খন্ডে প্রকাশিত হয়।
[4] পুস্তকের ব্যাবসা: ছাপানো বই বিক্রির কাজেও বিদ্যাসাগর এগিয়ে আসেন। তাঁর নিজস্ব ছাপাখানায় উৎপাদিত পুস্তক বিক্রির উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৪৭ খ্রিস্টাব্দে ও ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে ‘সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটারি’ ও ‘কলিকাতা পুস্তকালয়’ নামে দুটি বইয়ের দোকান খোলেন। তাঁর নিজের লেখা ‘বর্ণপরিচয়’ বইটির দুটি খন্ড (প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ) বিক্রি করে তিনি কয়েক হাজার টাকা উপার্জন করতেন।
ছাপাখানার প্রভাব বা ফলাফল
ছাপাখানার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বা ফলাফল লক্ষ করা যায়। যেমন-
[1] জনশিক্ষার প্রসার: ছাপাখানায় মুদ্রিত বইপত্র বাজারে আসার আগে হাতে লেখা বইগুলির দাম অত্যন্ত বেশি হত। আর মুদ্রিত বইগুলির দাম সেই তুলনায় অনেক কম হওয়ায় তা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আসে। ফলে জনশিক্ষার প্রসারে ছাপাখানা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে সক্ষম হয়।
[2] বৌদ্ধিক বিকাশ: ছাপাখানা জনগণের বৌদ্ধিক বিকাশেও সহায়তা করেছিল। ছাপাখানার ফলে নানান ধরনের বই সব বয়সের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। পত্র-পত্রিকা ও সংবাদপত্রের সংখ্যা বাড়ে। এইভাবে পাঠকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সাধারণ মানুষের বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটতে থাকে।
[3] নতুন ব্যবসায়ী শ্রেণির আত্মপ্রকাশ: ছাপাখানার বিস্তারের ফলে এই পেশাকে কেন্দ্র করে এক নতুন ব্যবসায়ী শ্রেণির আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই শ্রেণি ছাপাখানার প্রতিষ্ঠা করে বইপত্র প্রকাশ ও বিক্রির লাভজনক ব্যাবসা শুরু করে। বইয়ের বিপুল বিক্রির ফলে তারা দিন দিন অর্থনৈতিকভাবে ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে।
4] কর্মসংস্থান সৃষ্টি: ছাপাখানা প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ [ করে দেয়। অক্ষর সাজানো, সাদা কাগজে বই ছাপা, বই বাঁধাই-সহ নানা কাজের জন্য ছাপাখানাগুলি লোক নিয়োগ করত। এর ফলে নতুন কর্মসংস্থান গড়ে ওঠে।
উপসংহার: প্রথম পর্বে ছাপাখানাগুলি বাংলায় শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। পরবর্তী পর্বে বিদ্যাসাগরের আবির্ভাবের পর শিক্ষার প্রসারে আরও গতি আসে। প্রকৃতপক্ষে, বিদ্যাসাগরের জনশিক্ষার প্রসার, নারীশিক্ষার প্রসার প্রভৃতি উদ্যোগে ছাপাখানারও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।
18. *ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলির ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা
ভূমিকা: ব্রিটিশ সরকার ভারতে পাশ্চাত্য ধাঁচের বিভিন্ন অফিস-আদালত প্রতিষ্ঠা করলে এসব স্থানে কাজের জন্য আধুনিক পাশ্চাত্য ও ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। এই প্রয়োজনে সরকার ভারতে পাশ্চাত্য ধাঁচের আধুনিক শিক্ষার সূচনা করে। আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার সূচনা হয় বাংলায়। এই সময় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স, কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ, বসু বিজ্ঞান মন্দির, জাতীয় শিক্ষা পরিষদ, বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট প্রভৃতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি বাংলা তথা ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
[1] ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (আই এ সি এস)
[ i] প্রতিষ্ঠা: পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত গবেষণা, অধ্যয়ন, বিজ্ঞান-বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন প্রভৃতির উদ্দেশ্যে বিখ্যাত চিকিৎসক ড. মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩- ১৯০৪ খ্রি.) ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই কলকাতায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (সংক্ষেপে আই এ সি এস) প্রতিষ্ঠা করেন।
ii] পত্রিকা: আই এ সি এস থেকে ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স নামে বিজ্ঞান-বিষয়ক জার্নাল প্রকাশিত হয়। এই জার্নালে এখানকার বিজ্ঞানী ও গবেষকদের গবেষণাকর্ম নিয়মিত প্রকাশিত হত।
[iii ] খ্যাতনামা গবেষকগণ: এখানকার গবেষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, চুনিলাল বসু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর, মেঘনাদ সাহা, কে এস কুয়ান প্রমুখ।
iv) রমন ক্রিয়া: এখানে গবেষণা করে বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন তাঁর বিখ্যাত রমন ক্রিয়া (রমন এফেক্ট) আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
2. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ
[i) প্রতিষ্ঠা: বিশিষ্ট আইনজীবী স্যার তারকনাথ পালিত ও স্যার রাসবিহারী ঘোষের উদ্যোগে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ বা ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠিত হয়।
[ii] খ্যাতনামা শিক্ষকগণ: সে যুগের খ্যাতনামা শিক্ষক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, শিশির কুমার মিত্র প্রমুখ কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদান করেন। তাঁদের প্রচেষ্টায় এখানে বিশ্বমানের শিক্ষাদান ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে এর যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
(iii) খ্যাতনামা শিক্ষার্থীগণ: এখানে পড়াশোনা করে খ্যাতনামা বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেন।
[3] বসু বিজ্ঞান মন্দির
[i] প্রতিষ্ঠা: ভারতে একটি আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সে যুগের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে (৩০ নভেম্বর) কলকাতায় বসু বিজ্ঞান মন্দির বা বোস ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তাঁর মুন্সিগঞ্জের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের বৃহদংশ এই প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যয় করেন।
[ii] বিষয়-বৈচিত্র্য: বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশ্বমানের মৌলিক গবেষণা চালানোই ছিল বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য। জগদীশচন্দ্র বসুর উদ্যোগে এখানে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় গবেষণার ব্যবস্থা করা হয়।
[4] বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউটব
[i] প্রতিষ্ঠা: তারকনাথ পালিতের প্রচেষ্টায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে (২৫ জুলাই) কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট নামে একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট-এর সঙ্গে মিলে যায়।
[ii] বিষয়-বৈচিত্র্য: কলাবিভাগের পাশাপাশি এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রযুক্তি, শিল্পপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয়। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের গবেষণা কর্ম প্রকাশের জন্য এই প্রতিষ্ঠান থেকে ‘টেক’ নামে একটি জার্নাল প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়।
উপসংহার: বাংলার বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি পরবর্তীকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়। বসু বিজ্ঞান মন্দিরে দীর্ঘ গবেষণার পর জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষক আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় বেঙ্গল কেমিক্যাল্স প্রতিষ্ঠা করে দেশকে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখান। সত্যেন্দ্রনাথ বোস এবং মেঘনাদ সাহা স্বাধীন ভারতে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনে যুক্ত থেকে দেশ গঠনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
19. ভারতের বিজ্ঞান আন্দোলনে মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান কী?
অথবা, ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষা ও আন্দোলনের ক্ষেত্রে মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান কী?
উত্তর ভারতের বিজ্ঞান শিক্ষা ও আন্দোলনে মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান
ভূমিকা: ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় যাঁদের অসামান্য অবদান রয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ড. মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪ খ্রি.)। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় এম. ডি ডিগ্রিধারী মহেন্দ্রলাল অ্যালোপ্যাথি এবং হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার এই দুই পদ্ধতিতেই দক্ষতা অর্জন করেন। ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদানগুলির মধ্যে রয়েছে-
[1] যুক্তিবাদের প্রসার: পেশায় চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর করে তাদের যুক্তিবাদের সমর্থক হতে বলেন। তিনি মনে করতেন যে, মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান চেতনার বিকাশ হলেই, সমাজ কুসংস্কারমুক্ত হবে।
[2] আই এ সি এস-এর প্রতিষ্ঠা: দেশীয় বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে মহেন্দ্রলাল সরকার বিশিষ্ট বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার উইজিন লাঁতো-র সহায়তায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ (সংক্ষেপে IACS) প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠান যাদবপুরে স্থানান্তরিত হয়।
[3] পরিচালন সমিতি: মহেন্দ্রলাল সরকার আমৃত্যু ‘আই এ সি এস’-এর সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়াও পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ স্বনামধন্য ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির সদস্যপদ অলংকৃত করেন। স্যার গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ব্যক্তি এর অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।
[4] অধিকর্তা নিয়োগ: ‘আই এ সি এস’-কে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সঞ্চালনার উদ্দেশ্যে মহেন্দ্রলাল ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায়কে অধিকর্তা পদে নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ড. নীলরতন সরকার, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ খ্যাতনামা ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা পদে নিযুক্ত হন।
[5] গবেষণা: এই প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা, অধ্যয়ন এবং বিজ্ঞান-বিষয়ক বক্তৃতার সুব্যবস্থা করা হয়। উক্ত গবেষণা ও বক্তৃতা প্রদানের কাজে মহেন্দ্রলাল দেশবিদেশের খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের এখানে শামিল করেন।
[6] গবেষণাপত্র: গবেষক অধ্যাপকদের বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণামূলক কাজগুলি প্রকাশের জন্য আই এ সি এস ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’ নামে একটি জার্নাল প্রকাশের ব্যবস্থা করে। এ ছাড়াও দেশবিদেশের বিভিন্ন বিজ্ঞান পত্রিকায় এখানকার বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হত।
[7] বিজ্ঞানী ও আবিষ্কার: ড. মহেন্দ্রলাল সরকার আই এ সি এস-এ সমকালীন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের যুক্ত করেছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, চুনিলাল বোস, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর, মেঘনাদ সাহা, কে. এস. কৃয়াণ প্রমুখ। এই প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেই বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন তাঁর বিখ্যাত ‘রমন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পদার্থবিদ্যায় ‘নোবেল’ পুরস্কার লাভ করেন।
উপসংহার: আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার প্রসারে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের আই এ সি এস বাংলা তথা ভারতের বিজ্ঞানচর্চাকে কয়েক ধাপ এগিয়ে দেয়। বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণ, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমনের নোবেল পুরস্কার লাভ প্রভৃতি এই প্রতিষ্ঠানকে খ্যাতির শিখরে নিয়ে যান। সমাজসংস্কারের কাজেও মহেন্দ্রলালের অসামান্য অবদান রয়েছে।
20. উনিশ শতকে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে যা জান লেখো।
অথবা, বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
উত্তর বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ও বিজ্ঞান শিক্ষার যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। এর ফলে বাংলা কারিগরি শিক্ষার দ্রুত প্রসার ও অগ্রগতি শুরু হয়। এ বিষয়ে কয়েকজন ইংরেজ ও ভারতীয়র উদ্যোগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
[1] শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা: বাংলার সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং-এ প্রতিষ্ঠিত ‘ক্যালকাটা কলেজ অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং’। কলেজটি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে শিবপুরে স্থানান্তরিত হয় এবং এর নতুন নাম হয় ‘বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’। এই কলেজ ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ডিগ্রি প্রদান শুরু করে।
[2] কারিগরি শিক্ষার প্রসারের দাবি: উনিশ শতকের শেষ দিকে কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংবাদপত্রগুলিতে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের দাবি জানানো শুরু হয়। এর পরিণতি হিসেবে কলকাতায় ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন’ (১৯০৪ খ্রি.), ‘যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ’ (১৯০৬ খ্রি.) প্রভৃতি গড়ে ওঠে।
[3] বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে দেশে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই সূত্রেই বাংলায় স্বদেশি ধাঁচে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ গৃহীত হয়। এই উদ্দেশ্যে আইনজীবী তারকনাথ পালিতের প্রচেষ্টায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই কলকাতায় ‘বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট’ নামে একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ফলে বাংলার বহু শিক্ষিত যুবক কারিগরিবিদ্যা লাভ করে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।
[4] CET: দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ‘বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট’ ও ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ’ একত্রে মিশে যায়। এর নতুন নাম হয় ‘বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিকাল স্কুল’। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নাম হয় ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ বা CET।
[1] জ্ঞানচর্চার শাখা: CET-এ কলাবিভাগের পাশাপাশি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রযুক্তি, শিল্পপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয়।
[ii] জার্নাল প্রকাশ: CET এর ছাত্রছাত্রীরা ‘টেক’ নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করে। এই জার্নালের প্রথম সংখ্যাটি তাঁরা স্বদেশি আন্দোলনের যুগের সেই সকল আত্মত্যাগীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন যাঁরা জাতীয় শিক্ষার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
উপসংহার: ব্রিটিশ শাসক ও শিল্পপতিরা কারিগরি ক্ষেত্রে ভারতীয়দের অদক্ষ বলে মনে করত। এজন্য তারা কারিগরি শিক্ষার পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ না করায় বাংলায় কারিগরি শিক্ষার যথার্থ প্রসার ব্যহত হয়। তবে স্বাধীনতার পরে ভারতে কারিগরি শিক্ষার প্রসারে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম হল ভারতের বিভিন্ন শহর-সহ পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরে
21. জগদীশচন্দ্র বসুর বিজ্ঞান গবেষণা উল্লেখ করে “বসু বিজ্ঞান মন্দির” প্রতিষ্ঠা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর জগদীশচন্দ্র বসুর বিজ্ঞান গবেষণা
ভূমিকা: বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ও উদ্ভিদবিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭ খ্রি.) ছিলেন ঔপনিবেশিক ভারতের আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার পুরোধা। প্রাথমিক পর্বে তাঁর জজ-ব্যারিস্টার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও পিতার নির্দেশে তিনি বিজ্ঞান সাধনায় মন দেন এবং পরবর্তীকালে একজন বড়োমাপের বিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন। তাঁর বিজ্ঞান গবেষণার দিকগুলি ছিল-
[1] চিকিৎসাশাস্ত্রে অধ্যয়ন: বিজ্ঞানের গবেষণা শুরু করে জগদীশচন্দ্র টানা এক বছর চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু ওই কাজে তাঁর স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা
দেয়। ফলে তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রের চর্চা ছেড়ে ক্রাইস্ট কলেজে ভরতি হয়ে যান।
(2) পদার্থবিদ্যার প্রতি আগ্রহ: ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানবিভাগে।স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর তিনি পদার্থবিদ্যার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এই কাজে তাঁর প্রধান উৎসাহদাতা ছিলেন রেভারেন্ড ফাদার লাফোন্ট। পরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজে যোগ দেন। এই সময় থেকেই তাঁর প্রকৃত গবেষণা জীবনের সূচনা হয়।
3 ) পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা: জগদীশচন্দ্র পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিদ্যুৎতরঙ্গের আলোকধর্মী প্রবণতার মধ্যে প্রতিফলন, সমবর্তী বিচ্ছুরণ, সর্বমোট প্রতিফলন, প্রতিসরণ প্রভৃতি। তাঁর এই গবেষণাগুলি বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিক উন্মোচিত করে।
[4] বেতার বার্তা আবিষ্কার: জগদীশচন্দ্র তাঁর আকাশ-তরঙ্গ ও বৈদ্যুতিক চুম্বক তরঙ্গ গবেষণার সূত্র ধরে বেতার বার্তার সূত্র আবিষ্কার করেন। তাঁর আবিষ্কৃত ‘ক্রিস্ট্যাল রিসিভার’ যন্ত্রের দ্বারা তিনি কোনোরকম তারের সংযোগ ছাড়াই শব্দ আদানপ্রদানের ব্যবস্থা করেন। নিজের বাসভবন থেকে এক কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত তাঁর কর্মস্থল প্রেসিডেন্সি কলেজে শব্দ প্রেরণের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর এই যন্ত্রের কার্যকারিতা প্রমাণ করেন।
5 ] উদ্ভিদবিদ্যার গবেষণা: পদার্থবিদ্যার পাশাপাশি অধ্যাপক জগদীশচন্দ্র উদ্ভিদবিদ্যার ক্ষেত্রেও গবেষণার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তাঁর আবিষ্কৃত ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ যন্ত্র প্রথম প্রমাণ করে যে উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে। তাঁর এই আবিষ্কার উদ্ভিদবিজ্ঞানের গবেষণায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করে।
[6 ] গবেষণামূলক রচনা: জগদীশচন্দ্র বসু বিজ্ঞান গবেষণামূলক অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। এগুলি ‘দ্য ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিন’, ‘প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি’-সহ বিখ্যাত
পত্রপত্রিকাগুলিতে প্রকাশিত হত।
[7 ] বসু বিজ্ঞান মন্দির: জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপকের পদ থেকে ইস্তফা (১৯১৫ খ্রি.) দেন এবং বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্যে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে (৩০ নভেম্বর) কলকাতায় ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ বা ‘বোস ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন। এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ‘দ্য ভয়েস অব লাইফ’ শিরোনামে স্বাগত ভাষণে তিনি প্রতিষ্ঠানটিকে জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।
উপসংহার: পরাধীন ভারতের বিজ্ঞান গবেষণার অগ্রগতিতে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর অসামান্য অবদান ছিল। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনের ডেইলি এক্সপ্রেস পত্রিকা জগদীশচন্দ্র বসুকে গ্যালিলিয়া-নিউটনের সমকক্ষ বিজ্ঞানী বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন-“ভারতের কোনও বৃদ্ধ ঋষির তরুণ মূর্তি/তুমি হে আর্য আচার্য জগদীশ।”
22 *ঔপনিবেশিক আমলে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর [ ঔপনিবেশিক বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ
ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে বাংলায় পাশ্চাত্য ধাঁচের আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল না। উনবিংশ শতক থেকে বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ শুরু হয়।
[1] পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার: ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার যথেষ্ট প্রসার ঘটে। এর ফলে বাংলার শিক্ষার্থীরা পাশ্চাত্যের আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যা সম্পর্কে অবহিত হয়। এভাবে বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের পটভূমি তৈরি হয়।
[2] প্রাথমিক উদ্যোগ: বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার প্রথম দিকের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ছিল স্যার উইলিয়াম জোনস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এশিয়াটিক সোসাইটি (১৭৮৪ খ্রি.)। এই সোসাইটির পত্রিকায় বিজ্ঞান-বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হত। এ ছাড়া রসায়নবিদ জন ম্যাকে ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর কলেজে রসায়নশাস্ত্র সম্পর্কে পড়ানো শুরু করেন।
[3] বিজ্ঞান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: ঔপনিবেশিক আমলে ব্রিটিশ সরকার এবং কোনো কোনো বিশিষ্ট ভারতীয় মনীষীর উদ্যোগে বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
[4] কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান: বাংলায় বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে কারিগরি শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যেও বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কলকাতার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৮৫৬ খ্রি.), অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন (১৯০৪ খ্রি.), যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (১৯০৬ খ্রি.) প্রভৃতি। উপসংহার: ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার যে সূত্রপাত ঘটেছিল তা কিছুকালের মধ্যেই ভারতের অন্যান্য প্রদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ভিত্তির ওপরই স্বাধীন ভারতের বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার পথচলা শুরু হয়।
23.*ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (আই এ সি এস)-এর প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা সম্পর্কে কী জান? অথবা, ড. মহেন্দ্রলাল সরকার স্মরণীয় কেন?
উত্তর আই এ সি এস-এর প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা
ভূমিকা: আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক ভারতে যে সকল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যেঅন্যতম ছিল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স বা আই এ সি এস।
[1] প্রতিষ্ঠা: বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফো-র সহায়তায় বিখ্যাত চিকিৎসক ড. মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪ খ্রি.) ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে (২৯ জুলাই) কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রতিষ্ঠানটি যাদবপুরে স্থানান্তরিত হয়।
[2] পরিচালনা: ড. মহেন্দ্রলাল সরকার আমৃত্যু আই এ সি এস-এর সম্পাদক ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ। প্রতিষ্ঠানটির পৃষ্ঠপোষকতা করেন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।
[3] অধিকর্তা: আই এ সি এস-এর প্রথম অধিকর্তা ছিলেন প্যারীমোহন মুখোপাধ্যায় (১৯১২ খ্রি.)। পরবর্তীকালে ড. নীলরতন সরকার, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ খ্যাতনামা ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের অধিকর্তা পদে নিযুক্ত হন।
[4] উদ্যোগ: আই এ সি এস-এর কর্তৃপক্ষের সক্রিয় উদ্যোগে ও পরিচালনায় এখানে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা, বিজ্ঞান- বিষয়ক বক্তৃতা প্রদান, গবেষণাপত্র প্রকাশ প্রভৃতির ব্যবস্থা হয়। গবেষকদের গবেষণামূলক কাজ প্রকাশের জন্য এখান থেকে ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’ নামে একটি বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশিত হতে থাকে।
উপসংহার: ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ (আই এ সি এস) এর প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ড. মহেন্দ্রলাল সরকার ভারতে প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সূচনা করেন। ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সহায়তা ও দক্ষ পরিচালন গোষ্ঠী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অধিকর্তা পদে
যোগদান এই প্রতিষ্ঠানকে গৌরবান্বিত করেছে।
24. *ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (আই এ সি এস)-এর প্রতিষ্ঠা এবং বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স (IACS)-এর অবদান লেখো।
উত্তর [আই এ সি এস
ভূমিকা: বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা ও চর্চার উদ্দেশ্যে উনিশ শতকে ভারতে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স বা আই এ সি এস।
1] প্রতিষ্ঠা: বিখ্যাত চিকিৎসক ড. মহেন্দ্রলাল সরকার অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফো-র সহযোগিতায় ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ফর দ্য কাল্টিভেশন সায়েন্স বা আই এ সি এস প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে এটি যাদবপুরে স্থানান্তরিত হয়।
[2] গবেষণা: এই প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত মৌলিক গবেষণা এবং বিজ্ঞান-বিষয়ক বক্তৃতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এসব গবেষণা ও বক্তৃতা প্রদানের কাজে দেশবিদেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী অংশ নিয়েছেন।
[3] গবেষণাপত্র প্রকাশ: নিজেদের বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণামূলক কাজগুলি প্রকাশের জন্য আই এ সি এস ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে। এ ছাড়া দেশবিদেশের বিভিন্ন গবেষণাপত্র ও বিজ্ঞান পত্রিকায় এখানকার গবেষক ও বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজ প্রকাশিত হত।
[4] খ্যাতনামা বিজ্ঞানী: আই এ সি এস-এর বিজ্ঞান গবেষণার কাজের সঙ্গে বিভিন্ন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী যুক্ত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, চুনিলাল বসু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর, মেঘনাদ সাহা, কে এস কৃয়ান প্রমুখ।
[5] গবেষণা বিদ্যালয়: বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা এখানে একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এতে এক্স রশ্মি, আলোকবিজ্ঞান, চুম্বকত্ব, রমন ক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়ে নানা মৌলিক গবেষণার কাজ হয়
উপসংহার: ‘আই এ সি এস’-এর প্রতিষ্ঠা বাংলায় আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণায় যুগান্তকারী পরিবর্তন
আনে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টায় মৌলিক বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণাপত্র প্রকাশের মধ্যে দিয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
25. বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল?
উত্তর বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড. মহেন্দ্রলাল সরকারের অবদান
ভূমিকা: বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে মহেন্দ্রলাল সরকারের অসামান্য অবদান রয়েছে।
[1] যুক্তিবাদের প্রচার: পেশায় চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার মানুষের অন্ধবিশ্বাস দূর করে তাদের যুক্তিবাদের সমর্থক হতে বলেন।
[2] আই এ সি এস-এর প্রতিষ্ঠা: পদার্থ ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত মৌলিক গবেষণা, বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতার আয়োজন প্রভৃতি উদ্দেশ্যে মহেন্দ্রলাল ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বৌবাজার স্ট্রিটে ‘ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞান সভা’ (ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বা (আই এ সি এস) প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাঁফো তাঁকে এ কাজে বিশেষ সহায়তা করেন।
(3) বিজ্ঞান পত্রিকা প্রকাশ: মহেন্দ্রলালের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত আই এ ফিজিক্স’ নামক এই পত্রিকাতে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের গবেষণা প্রকাশিত হত।
উপসংহাব় বিজ্ঞানচর্চাকে অনেক ধাপ এগিয়ে দেয়। জগদীশচন্দ্র বসু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট তথা ভারতের রমন, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ বিখ্যাত বিজ্ঞানী তাঁর প্রতিষ্ঠানে গবেষণা করেছেন। এখানে গবেষণা করেই চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন ‘রমন ক্রিয়া’ (রমন এফেক্ট) আবিষ্কার করেন, যার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার পান।
26. * আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের কী ভূমিকা ছিল? অথবা, বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের উৎকর্ষ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের ভূমিকা
ভূমিকা: লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সময় স্বদেশি বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে শিক্ষাদরদি স্যার তারকনাথ পালিত ও স্যার রাসবিহারী ঘোষ ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।
[1] মৌলিক গবেষণা: কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা সক্রিয় সহযোগিতা পেয়ে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণার কাজ করার সুযোগ পান। ফলে বিজ্ঞানচর্চার যথেষ্ট মানোন্নয়ন ঘটে।
2] খ্যাতনামা শিক্ষার্থী: কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে পড়াশোনা এবং বিজ্ঞানসাধনা করে বহু শিক্ষার্থী পরবর্তীকালে বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এই রকম শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
[3] খ্যাতনামা শিক্ষক: সেই যুগের বহু স্বনামধন্য শিক্ষক ও বিজ্ঞানী কলকাতা বিজ্ঞান কলেজে শিক্ষাদান করেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্যার চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, শিশিরকুমার মিত্র প্রমুখ। তাঁদের পরিশ্রমে এখানে বিশ্বমানের শিক্ষাদানব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে এর যোগসূত্র স্থাপিত হয়।
4 শিক্ষকদের উদ্যোগ: কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের বিভিন্ন শিক্ষক দেশ ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এখানকার শিক্ষক আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল্স’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশের যুবসমাজকে সরকারি চাকরির মুখাপেক্ষী না থেকে স্বনির্ভর হতে উৎসাহিত করেন। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মেঘনাদ সাহা স্বাধীন ভারতে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন-এ যুক্ত থেকে দেশ গঠনের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
| উপসংহার: ঔপনিবেশিক আমলে ‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ দেশীয় বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করে। বিশিষ্ট অধ্যাপকদের উপস্থিতিতে এবং কৃতী ছাত্রদের সাফল্যে এই প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
27. * বিজ্ঞানের গবেষণার ক্ষেত্রে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’-এর অবদান সংক্ষেপে লেখো।
অথবা, বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের উৎকর্ষ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর [ বিজ্ঞানচর্চায় বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান / উৎকর্ষ
ভূমিকা: ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দির বা বোস ইন্সটিটিউট। ভারতের আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার উৎকর্ষ বৃদ্ধিতে এই প্রতিষ্ঠানের অবদান গুরুত্বপূর্ণ।
[1] বিভিন্ন শাখা: বসু বিজ্ঞান মন্দির-এ পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, পরিবে বিজ্ঞান
প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার চর্চা ও গবেষণার ব্যবস্থা করা হয়।
[2] উন্নত গবেষণা: জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর প্রতিষ্ঠিত বসু বিজ্ঞান মন্দিরে
বিশ্বমানের উন্নত গবেষণার ব্যবস্থা করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি মুন্সিগঞ্জের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থের একটি বড়ো অংশ এখানে ব্যয় করেন। গবেষণার প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও জগদীশচন্দ্র বসুকে অর্থ সাহায্য করেন।
3] ক্রেসকোগ্রাফ আবিষ্কার: বসু বিজ্ঞান মন্দিরে দীর্ঘ গবেষণার পর জগদীশচন্দ্র বসু ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে তিনি প্রমাণ করেন, প্রাণীদের মতো উদ্ভিদেরও প্রাণ এবং অনুভূতি শক্তি আছে। এখানকার গবেষণার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফল হল জগদীশচন্দ্র বসু কর্তৃক রেডিয়ো আবিষ্কার যা বর্তমানে বিশ্বের বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষ স্বীকৃতিলাভ করেছে।
[4] আন্তর্জাতিক খ্যাতি: বাংলা তথা ভারতের বিজ্ঞান-বিষয়ক গবেষণা ও বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বসু বিজ্ঞান মন্দিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বিজ্ঞানচর্চায় বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছে। এখানকার গবেষকগণ পরবর্তীকালে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিজ্ঞানচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেছেন।
উপসংহার: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হয়। আধুনিক গবেষণাগারে জগদীশচন্দ্র বসুর ‘ক্রেসকোগ্রাফ’ যন্ত্র আবিষ্কার এই প্রতিষ্ঠানকে গৌরবান্বিত করেছে।
28. *বাংলার কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট- এর অবদান লেখো।
অথবা, কারিগরি শিক্ষার বিকাশে বাংলায় ‘বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট’-এর কী ভূমিকা ছিল?
অথবা, টীকা লেখো: বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট।
উত্তর বাংলার কারিগরি শিক্ষার প্রসারে বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট
ভূমিকা: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে তারকনাথ পালিত (১৮৩১-১৯১৪ খ্রি.) কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।
[1] জাতীয় শিক্ষার উদ্যোগ: স্বদেশি আন্দোলনের সময় দেশে ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার একটি
অন্যতম উদ্যোগ ছিল বাংলায় স্বদেশি ধাঁচে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এই উদ্দেশ্যে আইনজীবী
তারকনাথ পালিতের প্রচেষ্টায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুলাই কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট নামে একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
[2] সমন্বয়: দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের উদ্দেশ্যে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল টেকনিকাল
ইন্সটিটিউট ও বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ একত্রে মিশে যায় এবং বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিকাল স্কুল নাম গ্রহণ করে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই ঐক্যবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নাম হয় কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বা CET।
[3] কার্যক্রম: উভয় প্রতিষ্ঠান মিশে যাওয়ার পর কলাবিভাগের পাশাপাশি এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রযুক্তি, শিল্পপ্রযুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয়। এর ফলে বাংলার বহু শিক্ষিত যুবক কারিগরি বিদ্যা লাভ করে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে।
[4] জার্নাল: কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি-র ছাত্রছাত্রীরা ‘টেক’ নামে একটি জার্নাল প্রকাশ করে। এই জার্নালের প্রথম সংখ্যাটি তারা স্বদেশি আন্দোলনের যুগের সেই সকল আত্মত্যাগীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে যাঁরা জাতীয় শিক্ষার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
উপসংহার: বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউটের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় শিক্ষার দ্বারা বাংলার যুবকদের কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলা। বলা বাহুল্য যে, এই প্রতিষ্ঠান তার উদ্দেশ্যপূরণে সফল হয়েছিল।
29. *’জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর [ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ
ভূমিকা: লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা দ্বিখন্ডিত করার পর স্বদেশি আন্দোলন শুরু হয়। এই সময় ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বাংলায় বাস্তব রূপায়ণ হল জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠা।
[1] প্রতিষ্ঠা: সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ১২ জন সদস্য নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গড়ে ওঠে। এর প্রথম সম্পাদক হন রাসবিহারী ঘোষ।
[2] আর্থিক সহায়তা : জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ৫ লক্ষ টাকা, সূর্যকান্ত আচার্যচৌধুরী ২.৫ লক্ষ টাকা এবং রাজা সুবোধচন্দ্র মল্লিক ১ লক্ষ টাকা দান করেন।
[3] উদ্দেশ্য: জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল-জাতীয় আদর্শ অনুসারে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে শিক্ষাদান করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশসেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলা, নৈতিক শিক্ষা দান করা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রভৃতি।
[4] কার্যক্রম: পরিষদের কর্তৃপক্ষ নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সাহিত্য, কলা, বিজ্ঞান, কারিগরি প্রভৃতি শিক্ষার বিষয়ে নিজেরাই পাঠক্রম তৈরি করে। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর অধ্যক্ষ হন অরবিন্দ ঘোষ। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে বাংলার বিভিন্ন স্থানে জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে।
[5 ] বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা: বাংলায় স্বদেশি ধাঁচে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে শিক্ষাদরদি তারকনাথ পালিত ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ও বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট একসঙ্গে
মিশে গিয়ে হয় বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিকাল স্কুল।
[6] ব্যর্থতা: বিভিন্ন কারণে শেষপর্যন্ত জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্দেশ্য অনেকাংশে ব্যর্থ হয়। এগুলি হল- [i] জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতি সরকারের স্বীকৃতি ছিল না। এজন্য বহু ছাত্র এই শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী ছিল না। [ii] এই শিক্ষা গ্রহণের পর যে ডিগ্রি পাওয়া যেত তা দিয়ে সরকারি চাকরি লাভের সুযোগ ছিল না। [iii] পরিষদের অধীনস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি কিছুদিনের মধ্যেই প্রবল অর্থসংকটের শিকার হয়।
উপসংহার: শেষপর্যন্ত ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করে নিলে স্বদেশি আন্দোলনও থেমে যায়। সেই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কাজকর্মও বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেলেও বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিকাল স্কুল যথারীতি চলতে থাকে। পরবর্তীকালে এটি যাদবপুর কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং এবং সবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
30. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
ভূমিকা: শান্তিনিকেতন ছিল বর্তমান বীরভূম জেলার বোলপুরের সন্নিকটে অবস্থিত একটি গ্রাম। আগে এই স্থানের নাম ছিল ভুবনডাঙ্গা। এই স্থান কলকাতার ঠাকুরবাড়ির বিখ্যাত মানুষের পদার্পণে প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠে।
[ 1] আশ্রমের নামকরণ: রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর নিভৃতে ধর্মচর্চা করার উদ্দেশ্যে ভুবনডাঙ্গায় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই স্থানের নতুন নামকরণ করেন ‘শান্তিনিকেতন’।
[2] ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। তিনি সুবিস্তৃত প্রাকৃতিক পরিবেশে এই আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজের ও অন্যান্য আশ্রমিকদের বসবাসের জন্য সুন্দর সুন্দর ভবন নির্মাণ করেন।
[3] বিশ্বভারতীর পরিকল্পনা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একটি আদর্শ শিক্ষাদান
ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে শান্তিনিকেতনে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে শুরু করেন যার নাম হয় ‘বিশ্বভারতী’।
[4] বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: অবশেষে তিনি বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের সন্নিকটে শান্তিনিকেতনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য
ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পল্লিসংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সুরুল গ্রামে একটি কুঠিবাড়ি কিনে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে পল্লি সংগঠনের কাজ শুরু করেন। শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল-
[1] পল্লি সংগঠন: গ্রামীণ মানুষকে পল্লিজীবনের নানাদিক সম্পর্কে সচেতন করে তোলাই ছিল কবির উদ্দেশ্য। ইংল্যান্ড থেকে ভারতে এসে এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন লেনার্ড এলমহার্স্ট। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে যে ‘শিক্ষাসত্র’টি প্রতিষ্ঠিত হয়, সেটিই ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে শ্রীনিকেতনে স্থাপিত হয়। এখানে ‘শিক্ষাসত্র’ বিদ্যালয়টিকে শান্তিনিকেতনের ‘পাঠভবন’-এর আদলে স্থাপন করা হয়েছিল।
[2] কৃষির উন্নয়ন: গ্রামীণ অর্থনীতির মূল ভিত্তি হল কৃষিকাজ। তাই রবীন্দ্রনাথ শ্রীনিকেতনের বিভিন্ন কর্মপদ্ধতির মধ্য দিয়ে কৃষির উন্নতির উদ্যোগ নেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘পল্লিশিক্ষাসদন’ নামে এখানে একটি কৃষি মহাবিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়। সঙ্গে গ্রামীণ শিল্পোৎপাদন ও গো-পালন চলতে থাকে।
[3] স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসার: শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার একটি অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা। গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে শ্রীনিকেতনকে মডেল হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্যে এখানে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে ‘শিশু ও মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
[4] শিক্ষার প্রসার: শিক্ষার প্রসার ঘটানো ছিল শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য। শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগকে সকল স্তরের জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এই উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘লোক-শিক্ষা সংসদ’ স্থাপন করা হয়।
উপসংহার: শান্তিনিকেতন ও শ্রীনিকেতন উভয়ই ছিল গ্রাম। রবীন্দ্রনাথের সাধের দুই গ্রামেই তাঁর স্বপ্ন ডানা মেলতে পেরেছিল। বর্তমানে এই দুটি স্থান রবীন্দ্র ঐতিহ্যের পীঠস্থান হিসেবে পরিগণিত হয়।
31. প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
অথবা, প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয়ের ক্ষেত্রে রবীন্দ্রচিন্তা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষাকে মানুষ ও প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন কোনো বিষয় বলে মনে করতেন না। তিনি মনে করতেন, শিক্ষার সঙ্গে প্রকৃতি ও মানুষের সমন্বয় গড়ে তোলা
দরকার। তাঁর শিক্ষাভাবনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল তাঁর প্রকৃতি ভাবনা।
[1] অরণ্য ধ্বংসের বিপদ: রবীন্দ্রনাথ বলেন যে, সকল জীব বৃক্ষদের অবলম্বন করে বেঁচে থাকে। কিন্তু আজ মানুষ নির্মমভাবে বন ধ্বংস করে মরুভূমিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন অরণ্যের সংরক্ষণ। ‘অরণ্য দেবতা’ প্রবন্ধে তিনি লিখেছেন, “অনেক মানুষ অরণ্যকে ধ্বংস করে নিজেরাই ক্ষতি ডেকে এনেছে। বায়ুকে নির্মল করার ভার যে গাছের ওপর, যার পত্র ঝরে গিয়ে ভূমিতে উর্বরতা দেয়, তাকেই সে নির্মূল করেছে। বিধাতার যা কিছু কল্যাণের দান, আপনার কল্যাণ, বিস্মৃত হয়ে মানুষ তাকেই ধ্বংস করেছে।”
[2] প্রকৃতির মধ্যে শিক্ষাব্যবস্থা: রবীন্দ্রনাথ বলেন যে, “এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে আবার আমাদের আহ্বান করতে হবে সেই বরদাত্রী বনলক্ষ্মীকে….।”তিনি শান্তিনিকেতনে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেই তাঁর আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ উৎসবকে জোরদার করে তোলেন।
[3] গ্রামের উন্নয়নের ভাবনা: পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে জমিদারির দেখাশোনার দায়িত্ব (১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ) পেয়ে রবীন্দ্রনাথ গ্রামে এসে গ্রামবাংলার আসল রূপটি চিনতে পারেন। তাই তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের পথ ছেড়ে গ্রাম সংগঠনের মাধ্যমে পল্লিগ্রামের মঙ্গলের চিন্তাভাবনা শুরু করেন। তিনি উপলব্ধি করেন, গ্রামই ভারতের প্রাণ। গ্রামের চিকিৎসালয়’ এবং পতিসরে হাসপাতাল স্থাপন ছাড়াও তিনি গ্রামে তাঁতের কাজ, মৃৎশিল্প প্রভৃতি কুটিরশিল্পের বিকাশে উদ্যোগ নেন। জমিদারির প্রজাদের বিবাদের মীমাংসার জন্য সালিশি সভারও আয়োজন করেন তিনি।
[4] কৃষির উন্নয়ন: রবীন্দ্রনাথ পল্লিগ্রামের মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে কৃষিকাজের উন্নতির বিষয়ে বিভিন্ন রকম চিন্তাভাবনা শুরু করেন। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে আদর্শ কৃষিক্ষেত্র স্থাপন করে সেখানে ট্র্যাক্টর, পাম্পসেট ও জৈব সার ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব আনেন। রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহের কুঠিবাড়ির ৮০ বিঘা জমিতে আধুনিক কৃষিখামার গড়ে তোলেন।
[5] কৃষিবিদ্যা শিক্ষা: সেযুগে ধনী বাঙালি পরিবারের একমাত্র লক্ষ্য ছিল তাদের সন্তানদের আই সি এস বা ব্যারিস্টার বানানো। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নিজ পুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বন্ধুপুত্র সন্তোষচন্দ্র মজুমদার ও জামাতা নগেন্দ্রনাথ গাঙ্গুলিকে কৃষিবিদ্যা শিখতে বিদেশে পাঠান। চাষের কাজে বৈজ্ঞানিক প্রথায় উন্নত বীজ, সার, সেচ প্রভৃতি ব্যবহার করে জনসাধারণের উন্নতিবিধানই ছিল তার এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্য।
[6] হিতৈষী তহবিল: রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে প্রজাদের বকেয়া খাজনার ওপর সামান্য হিতৈষীশুল্ক ধার্য করে এবং জমিদারি থেকে তার সমপরিমাণ অর্থ ভরতুকি দিয়ে ‘হিতৈষী তহবিল’ গড়ে তোলা হয়। এই তহবিলের অর্থ গ্রামে রাস্তাঘাট নির্মাণ, মন্দির-মসজিদের সংস্কার, স্কুল-মাদ্রাসা স্থাপন, চাষিদের বিপদকালে সাহায্যদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যয় করা হত।
[7] সম্প্রীতি: রবীন্দ্রনাথের শিক্ষানীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ দূর করা। তিনি জমিদারি দেখাশোনা করতে এসে তাঁর কর্মক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান-ব্রাহ্মণ-চন্ডালের ভেদাভেদ দূর করে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন।
[৪] অন্যান্য উদ্যোগ: রবীন্দ্রনাথ আধুনিক পঞ্চায়েতের ধাঁচে গ্রামের পরিচালন কাঠামো গড়েছিলেন। তিনি গ্রামে সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেন এবং স্বল্প সুদে চাষিদের ঋণদানের জন্য পতিসর কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। চাষিরা যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় তার জন্য তিনি ‘টেগোর অ্যান্ড কোং’ (১৮৯৫ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করে ন্যায্য মূল্যে তাদের দ্বারা উৎপাদিত ধান ও পাট কিনে বাজারে বিক্রির দায়িত্ব নেন।
উপসংহার: ‘জীবনস্মৃতি’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন “আমার শিশুকালেই বিশ্বপ্রকৃতির সাথে আমার খুব একটি সহজ ও নিবিড় যোগ ছিল।” প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের জীবন ও অস্তিত্বের এই সহাবস্থান তাঁর শিক্ষাচিন্তায় সর্বদা প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।
32. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উত্তর [ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট
ভূমিকা: ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education বা NCE) প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ছিল নিম্নরূপ:
[1] বয়কট আন্দোলন: লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ করলে এর বিরুদ্ধে বয়কট আন্দোলন শুরু হয়। জাতীয় নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘গোলদীঘির গোলামখানা’ বলে ব্যঙ্গ করে ছাত্রদের এই প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার আহ্বান জানান। কারণ, দীঘির সন্নিকটে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানত ব্রিটিশদের অফিস-আদালতের কেরানিই তৈরি করত।
[2] শিক্ষাক্ষেত্রে বিকল্প উদ্যোগ: স্বদেশি আন্দোলনের সময়ে বিদেশি সবকিছু বয়কট করে এর বিকল্প হিসেবে দেশীয় জিনিসপত্রের ব্যবহার শুরু হয়। বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বিদেশি শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিহোর স্বদেশি ধাঁচের একটি জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। সম্ভবত প্রসন্নকুমার ঠাকুরই সর্বপ্রথম ‘জাতীয় শিক্ষা’ কথাটি ব্যবহার করেন।
[3] জাতীয় শিক্ষা আন্দোলনের ব্যাপ্তি: স্বদেশি আন্দোলনের সময় বাংলায় জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ নভেম্বর পার্ক স্ট্রিটে ১৫০০ জন প্রতিনিধি নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে স্বদেশি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
[4] জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠন: এইরকম পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিপরীতে স্বদেশি শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ মার্চ ৯২ জন সদস্য নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ প্রতিষ্ঠিত হয়।
উপসংহার: বাংলার জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় আদর্শ অনুসারে শিক্ষাদানের কথা ভাবছিলেন। সেই সময় লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ (১৯০৫) ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ারে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ (১৯০৬) গঠিত হওয়ার সুযোগ আসে এবং এই পরিষদ জাতীয় শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
33. *জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় শিক্ষার অগ্রগতির ক্ষেত্রে জাতীয় নেতৃবৃন্দের উদ্যোগ কীরূপ ছিল?
উত্তর জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় শিক্ষার অগ্রগতি
ভূমিকা: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে এদেশে স্বদেশি শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই বিষয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দ গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেন।
[ 1] ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা: দেশীয় নেতৃবৃন্দ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতায় সরব হন ও বিকল্প স্বদেশি ধাঁচের জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হন। সম্ভবত ‘জাতীয় শিক্ষা’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন প্রসন্নকুমার ঠাকুর।
[2] বিকল্প সংস্থা গঠন: সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে (১১ মার্চ) ৯২ জন সদস্য নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গড়ে ওঠে। এই পরিষদের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল-জাতীয় আদর্শ অনুসারে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা দান করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশসেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলা, নৈতিক শিক্ষা দান করা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রভৃতি।
[3] আর্থিক সহায়তা লাভ: জাতীয় শিক্ষা ও জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কাজকর্মের প্রসারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি আর্থিক সহায়তা করেন এই ব্যাপারে ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ৫ লক্ষ টাকা, সূর্যকান্ত আচার্যচৌধুরী ২.৫ লক্ষ টাকা এবং সুবোধচন্দ্র মল্লিক ১ লক্ষ টাকা দান করেন।
[4] বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ গঠন: জাতীয় শিক্ষা পরিষদ-এর অধীনে ১৯০৬
খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ। রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, বিনয়কুমার সরকার, হারানচন্দ্র চাকলাদার, সখারাম গণেশ দেউসকর, ধর্মানন্দ কোশাম্বী প্রমুখ খ্যাতনামা শিক্ষকগণ এখানে শিক্ষাদান করতেন।
[5] বহু জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: দেশীয় শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ-এর উদ্যোগে বাংলার বিভিন্ন স্থানে জাতীয় বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথাও বলা হয়।
উপসংহার: বাংলার তৎকালীন জাতীয় নেতৃবৃন্দ একদিকে বিদেশি শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতায় সরব ছিলেন, অন্যদিকে স্বদেশি শিক্ষার প্রচলনে ও অর্থনৈতিক তহবিল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
34. *জাতীয় শিক্ষার প্রসারে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ভূমিকা কেমন ছিল?
উত্তর জাতীয় শিক্ষার প্রসারে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের ভূমিকা
ভূমিকা: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে স্বদেশি বা জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে গড়ে-ওঠা জাতীয় শিক্ষা পরিষদ জাতীয় শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
[1] উদ্দেশ্য: জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল জাতীয় আদর্শ অনুসারে সাহিত্য, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা দান করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশসেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলা, নৈতিক শিক্ষা দান করা, মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রভৃতি।
[2] বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা: স্বদেশি প্রথায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ। সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন এর সুপারিন্টেন্ডেন্ট। রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, বিনয়কুমার সরকার, হারানচন্দ্র চাকলাদার, সখারাম গণেশ দেউসকর, ধর্মানন্দ কোশাম্বী প্রমুখ খ্যাতনামা শিক্ষকরা এখানে শিক্ষাদান করতেন।
[3] বহু জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রেরণায় বাংলার বিভিন্ন স্থানে জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট। বিভিন্ন ধনবান ব্যক্তির আর্থিক সহায়তায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি নিযুক্ত হন রাসবিহারী ঘোষ।
[4] সামাজিক অবদান: জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে
বহু শিক্ষার্থী স্নাতক হয়ে পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছে। এসব প্রাক্তন ছাত্রদের নিয়ে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ছাত্রসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সভাপতি ছিলেন অবিনাশ চন্দ্র ভট্টাচার্য এবং যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন হীরালাল রায় ও উপেন্দ্র চন্দ্র ঘোষ।
উপসংহার: ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ শহর ও বাংলার বিভিন্ন স্থানে জাতীয় কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এই পরিষদ জাতীয় আদর্শ অনুসারে শিক্ষাদান, পাঠ্যসূচি নির্মাণ, আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার প্রভৃতি উদ্যোগ গ্রহণ করে।
35. *জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগ এবং জাতীয় শিক্ষার প্রসার কেন ব্যর্থ হয়?
উত্তর জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগ এবং জাতীয় শিক্ষার প্রসার ব্যর্থ হওয়ার কারণ
ভূমিকা: লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা প্রদেশ দ্বিখন্ডিত করলে এই সময় বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের অঙ্গ হিসেবে নেতৃবৃন্দ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা তথা ভারতে স্বদেশি ধাঁচে জাতীয় শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই উদ্যোগ বিভিন্ন কারণে অনেকাংশে ব্যর্থ হয়। যেমন-
[1] সরকারের বিরূপতা: ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে গড়ে-ওঠা জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ও জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে সরকার মোটেই সুনজরে দেখেনি। সরকারি প্রতিবন্ধকতার ফলে স্বদেশি ধাঁচে গড়ে-ওঠা জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতি পদে পদে ব্যাহত হয়েছে।
[2] কর্মক্ষেত্রে বঞ্চনা: সরকার তার নিজস্ব শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বীকৃতি দেয়নি। এজন্য জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাস করে ডিগ্রি পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে সরকারি চাকরি লাভ করার সুযোগ একেবারেই ছিল না। ফলে মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের শিক্ষার্থীরা জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে।
[3] আর্থিক সংকট: প্রথমদিকে অনেক উৎসাহ ও আশা নিয়ে জাতীয় শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ শুরু হলেও কিছুকাল পর থেকে আর্থিক সংকটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির কাজকর্ম ব্যাহত হতে থাকে। সূচনা লগ্নে বহু আর্থিক দান পাওয়ার আশা থাকলেও অনেকাংশেই তা পূরণ হয়নি।
[4] অভিভাবকদের অনীহা: বেশিরভাগ অভিভাবক ও শিক্ষার্থী জাতীয় শিক্ষার চেয়ে ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা গ্রহণেই বেশি আগ্রহী ছিল। ফলে সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এসব কারণে বঙ্গভঙ্গ- বিরোধী স্বদেশি আন্দোলন দুর্বল হতে শুরু করলে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থাও ক্রমে ব্যর্থ হতে থাকে।
উপসংহার: প্রবল প্রত্যাশা নিয়ে ‘জাতীয় শিক্ষা পরিষদ’ গঠিত হলেও কিছুকালের মধ্যেই এই পরিষদের উদ্যোগ এবং জাতীয় শিক্ষার প্রসার অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলি ছিল জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি ব্রিটিশ সরকারের বিমাতৃ সুলভ আচরণ, সরকারি
কর্মক্ষেত্রে এখানকার শিক্ষার্থীদের প্রতি বঞ্চনা, তীব্র অর্থনৈতিক সংকট প্রভৃতি।
36. *শিক্ষা সংক্রান্ত ঔপনিবেশিক ধারণার বিরোধিতায় গৃহীত কয়েকটি উদ্যোগের উল্লেখ করো।
উত্তর [ শিক্ষা সংক্রান্ত ঔপনিবেশিক ধারণার বিরোধিতায় গৃহীত কয়েকটি উদ্যোগ
ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার আগে এদেশে আধুনিক শিক্ষার বিকাশ ঘটেনি। ব্রিটিশ সরকার এদেশে সুপরিকল্পিতভাবে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটায়। তবে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি তুলে ধরে বহু ভারতীয় মনীষী এর বিকল্প হিসেবে দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রসারে উদ্যোগী হন।
[1] জাতীয় শিক্ষার উদ্যোগ: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হলে এদেশে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিরোধিতা করে স্বদেশি ধাঁচে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার নানা উদ্যোগ গৃহীত হয়। এর জন্য ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে তোলা হয়।
[2] ‘গোলদীঘির গোলামখানা’ পরিত্যাগ: জাতীয় নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘গোলদীঘির গোলামখানা’ বলে ব্যঙ্গ করে ছাত্রদের এই প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার আহ্বান জানান। কারণ, গোলদিঘি বা কলেজ স্কোয়ারের কাছে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শিক্ষা না দিয়ে শুধু ব্রিটিশদের অফিস-আদালতে কাজের জন্য কেরানি তৈরি করত। এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে বহু ছাত্রছাত্রী সেই ‘গোলামখানা’ ছেড়ে জাতীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করে।
[3] রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগ: জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিকল্প শিক্ষানীতি দেশবাসীকে এক নতুন দিশা দেখাতে সমর্থ হয়। নিজস্ব শিক্ষানীতি নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো এবং ব্রিটিশ শিক্ষানীতির বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি বীরভূমের শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
উপসংহার: ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার সমালোচনার ফলে স্বদেশি যুগে ভারতে জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠার পরিস্থিতি তৈরি হয়। এর ফলে ভারতীয় শিক্ষা কিছুকালের মধ্যে পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ ত্যাগ করতে সক্ষম হয়।
6. Fill in THe Blanks
1. সর্বপ্রথম আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়।
উত্তৰ জাৰ্মানিতে ।
2. ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
উত্তৰ জেমস অগাস্টাস হিকি ।
3. ছাপাখানাটি এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাপাখানা হিসেবে খ্যাতি লাভ করে।
উত্তৰ শ্ৰীব়ামপুব়েব় ।
4. ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।
উত্তৰ সমাচাব়চন্দ্ৰকা ।
5. সম্বাদ প্রভাকর পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ।
উত্তৰ ঈশ্বব়চন্দ্ৰ গুপ্ত ।
6. প্রথমদিকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ছাত্রদের জন্য পাঠ্যপুস্তক ছাপা হত ।
উত্তৰ শ্ৰীব়ামপুব়েব় ।
7. শিক্ষার্থীদের হাতে কম খরচে বা বিনামূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়।
উত্তৰ ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি
৪. ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে শ্রীরামপুর মিশনের উদ্যোগে টি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়।
উত্তৰ ১০৩ ।
9. তৈরি করা অক্ষরে উইলিয়াম কেরি বাইবেলের বাংলা অনুবাদ ছাপেন।
উত্তৰ পঞ্চানন কৰ্মকব়েব় ।
10. উদ্যোগে শিশুশিক্ষা-বিষয়ক ‘লিপিধারা’ গ্রন্থটি প্রণীত হয়।
উত্তৰ শ্ৰীব়ামপুব় ।
11. ছাপাখানা থেকে মুদ্রিত কেদারেশ্বর চক্রবর্তীর লেখা বইটি হল ।
উত্তৰ বাঙ্গগালাব় ইতিহাস ।
12. ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ বইটি প্রকাশ করেন ।
উত্তৰ গঙ্গাকিশোব় ।
13. গ্রন্থটি বাংলার প্রথম ‘প্রাইমার’ গ্রন্থ নামে পরিচিত।
উত্তৰ শিশুশিক্ষা ।
14. প্রথম সচিত্র বাংলা বই হল ।
উত্তৰ অন্নদামঙ্গল ।
15. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী জন্মগ্রহণ করেন জেলায়।
উত্তৰ ময়মনসিংহ ।
16. উপেন্দ্রকিশোর তাঁর ছাপাখানার সঙ্গে একটি খোলেন।
উত্তৰ সটুডিয়ো ।
17. উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছোটোদের জন্য পত্রিকা প্রকাশ
করেন।
উত্তৰ সন্দেশ ।
18. ‘হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং’ নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করেন।
উত্তৰ উপেন্দ্ৰকিশোব় ।
19. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তারকনাথ পালিত ও রাসবিহারী ঘোষ
লক্ষ টাকা ও জমি দান করেন।
উত্তৰ ৪২ ।
20. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের রাজাবাজার ক্যাম্পাসটি শিক্ষাপ্রাঙ্গণ নামে পরিচিত।
উত্তৰ রাসবিহারী ঘোষ ।
21. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের বালিগঞ্জ ক্যাম্পাসটি শিক্ষাপ্রাঙ্গণ নামে পরিচিত।
উত্তৰ তারকনাথ পালিত ।
22. রসায়নবিদ ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর কলেজে রাসায়নশাস্ত্র শিক্ষাদান শুরু করেন।
উত্তৰ জন ম্যাক ।
23. আবিষ্কারে জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান আজ বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে।
উত্তর . বেতার ।
7. True And False
1. চিন থেকে প্রথম ছাপাখানার প্রযুক্তি আরবে এবং আরব থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
উত্তৰ ঠিক ।
2. ছাপাখানার জন্য বাংলা অক্ষরের নকশায় ধারাবাহিকতা ছিল এই রকম : চার্লস উইলকিনস → সুরেশচন্দ্র মজুমদার পঞ্চানন কর্মকার।
উত্তৰ ভূল ।
3. ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার আগে শিক্ষার্থীরা সস্তায় নিজেদের পাঠ্যবই কেনার সুযোগ
পেয়েছিল।
উত্তৰ ভূল ।
4. ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার পর মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি পায় ।
উত্তৰ ঠিক ।
5. শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড ‘শ্রীরামপুর ত্রয়ী’ নামে পরিচিত।
উত্তৰ ঠিক ।
6. শিশুশিক্ষা-বিষয়ক প্রথম জনপ্রিয় গ্রন্থটি হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সহজপাঠ’।
উত্তৰ ভূল ।
7. উইলিয়াম জোনস অনুদিত কালিদাসের ‘ঋতুসংহার’ গ্রন্থটি ‘অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’-এ ছাপা হয়।
উত্তৰ ঠিক ।
৪. বিদ্যাসাগর রচিত ‘বর্ণপরিচয়’ তাঁর জীবদ্দশাতেই মোট ১৫২টি সংস্করণ প্রকাশিত হয় এবং ৩৫ লক্ষেরও বেশি ছাপা বই পাঠকদের কাছে পৌঁছে যায়।
উত্তৰ ঠিক ।
9. বাংলায় লাইনো টাইপ প্রবর্তন করেন বিদ্যাসাগর।
উত্তৰ ভূল ।
10. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কলেজে পড়ার সময়ই ‘সখা’, ‘সাথী’, ‘মুকুল’, ‘বালক’ প্রভৃতি শিশুপত্রিকাগুলিতে নিয়মিত লিখতে শুরু করেন।
উত্তৰ ভূল ।
11. উপেন্দ্রকিশোর fউন্নতমানের ছবি ছাপার কৌশল উদ্ভাবন করেন।
উত্তৰ ঠিক ।
12. আধুনিক ফটোগ্রাফি ও মুদ্রণশিল্প সম্পর্কে উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পুত্র সুকুমার রায়কে ইংল্যান্ডে পাঠান।
উত্তৰ ঠিক ।
13. ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠায় ড. মহেন্দ্রলাল সরকারকে সহায়তা করেন ফাদার ইউজিন লাঁফো।
উত্তৰ ঠিক ।
14. ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ বৌবাজার থেকে পরবর্তীকালে হাওড়ায় স্থানান্তরিত হয়।
উত্তৰ ভুল ।
15. কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের আর-এক নাম ছিল ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’।
উত্তৰ ঠিক ।
16. বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু এবং মেঘনাদ সাহা স্বাধীন ভারতে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশনে যুক্ত ছিলেন।
উত্তৰ ঠিক ।
17. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতায়।
উত্তৰ ভুল ।
18. ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বসু বিজ্ঞান মন্দির ও বেঙ্গল টেকনিকাল ইন্সটিটিউট একসঙ্গে মিলে যায়।
উত্তৰ ভুল ।
19. ‘কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি’ ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
উত্তৰ ঠিক ।