WBBSE Class 10 History Chapter 7 Solution | Bengali Medium

Class 10 History Solution

বিশ শতকের ভারতে নারী, ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

1. MCQs Question Answer

1. বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু হয়-

  1.  ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে       
  1.  ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে
  1.  ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে
  1.  ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে

2. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করেন

  1.  লর্ড লিটন
  1.  লর্ড ডালহৌসি
  1.  লর্ড কার্জন        ✔ 
  1. লর্ড মাউন্টব্যাটেন

3. ‘নারী-কর্মমন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-

  1.  ঊর্মিলা দেবী         
  1.  বাসন্তী দেবী 
  1. কল্পনা দত্ত
  1.  লীলা নাগ

4. ‘দীপালি সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন-

  1. কল্পনা দত্ত
  1. লীলা নাগ       
  1. বাসন্তী দেবী
  1.  বীণা দাস

5. ‘রাষ্ট্রীয় স্ত্রী সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন-

  1.  নেলী সেনগুপ্তা
  1.  বাসন্তী দেবী
  1.  সরোজিনী নাইডু      
  1.  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

6. ‘বঙ্গলক্ষ্মীর ব্রতকথা’ রচনা করেন-

  1.  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  1.  অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
  1. রজনীকান্ত সেন 
  1. রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী       

7. লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠা করেন-

  1.  প্রভাবতী বসু 
  1. সরলাদেবী চৌধুরানি      
  1.  লীলা নাগ 
  1. সরোজিনী নাইডু

৪. আইন অমান্য আন্দোলনে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল-

  1. বীরভূম
  1.  মেদিনীপুর    
  1. মুরশিদাবাদ
  1. নদিয়া

9. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় গোপনে কংগ্রেসের বেতারকেন্দ্র পরিচালনা করেন-

  1.  সুচেতা কৃপালনী 
  1. সরোজিনী নাইডু
  1.  অরুণা আসফ আলি
  1. ঊষা মেহতা     

10. বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়ে ‘ফুলতার’ ছদ্মনাম গ্রহণ করেন-

  1.  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার     
  1. কল্পনা দত্ত
  1. বীণা দাস
  1. কল্যাণী দাস

11. ‘শৃঙ্খল ঝংকার’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

  1. কল্পনা দত্ত
  1.  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
  1.  বীণা দাস     
  1. কল্যাণী দাস

12. আইন অমান্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন-

  1.  বীণা দাস 
  1. কমলা দেবী চট্টোপাধ্যায়      
  1.  কল্পনা দত্ত
  1.  রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

13. ‘নারী সত্যাগ্রহ সমিতি’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল-

  1.  বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে
  1.  অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে
  1.  আইন অমান্য আন্দোলনের সময়ে  
  1.   ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়ে

14. চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দেন-

  1.  সূর্য সেন
  1.  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার    
  1.  গণেশ ঘোষ
  1.  কল্যাণী দাস

15. মাতঙ্গিনী হাজরা ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন যে স্থানে-

  1.  তমলুক     
  1.  সুতাহাটা
  1. বরিশাল 
  1. পুরুলিয়া

16. আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর নাম ছিল-

  1. প্যাটেল ব্রিগেড
  1.  গান্ধি ব্রিগেড
  1.  নেহরু ব্রিগেড
  1.  ঝাঁসির রানি ব্রিগেড        

17. ‘ঝাঁসির রানি ব্রিগেড’-এর নেতৃত্ব দেন-

  1.  সরোজিনী নাইডু 
  1. লক্ষ্মী স্বামীনাথন      
  1.  অরুণা আসফ আলি
  1.  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

18. অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটির সম্পাদক ছিলেন-

  1.  শচীন্দ্র প্রসাদ বসু    
  1.  কৃয় কুমার মিত্র
  1.  চিত্তরঞ্জন দাস 
  1.  আনন্দমোহন বসু

19. কলকাতার ‘অনুশীলন সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন-

  1. শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু 
  1.  কৃয়কুমার মিত্র 
  1. সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়   
  1.  পুলিনবিহারী দাস

20. ‘ঢাকা অনুশীলন সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন-

  1. কৃয়কুমার মিত্র 
  1. পুলিনবিহারী বসু     
  1. শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু  
  1. সতীশচন্দ্র বসু

21. বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়ে প্রথম শহিদ হন-

  1. ক্ষুদিরাম বসু       
  1.  বিনয় বসু 
  1.  দীনেশ গুপ্ত  
  1. বাঘাযতীন

22. কোন্ মামলায় ক্ষুদিরামের ফাঁসির আদেশ হয়?

  1.  রেশমি রুমাল মামলা  
  1. কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা
  1.  আলিপুর বোমার মামলা 
  1. মজফ্ফরপুর ষড়যন্ত্র মামলা      

23. সূর্য সেন প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবীদলের নাম ছিল-

  1.  অনুশীলন সমিতি
  1.   গদর দল 
  1. ইন্ডিয়ান রিপাবলিক্যান আর্মি          
  1.   বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স

24. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে নেতৃত্ব দেন-

  1. ভগৎ সিং 
  1.  বিনয় বসু 
  1. সূর্য সেন     
  1.   রাসবিহারী বসু

25. ‘মাস্টারদা’ নামে পরিচিত ছিলেন-

  1. বেণীমাধব দাস
  1.  সূর্য সেন         
  1.  কৃষ্ণকুমার মিত্র 
  1.  হেমচন্দ্র ঘোষ

26. ‘গদর পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন-

  1. লালা হরদয়াল 
  1. সুফি অম্বাপ্রসাদ
  1.  অজিত সিং
  1.  শ্যামজি কৃয়বর্মা

27. ‘গদর’ শব্দের অর্থ হল-

  1. পবিত্র
  1.  বিপ্লব
  1.  দেশপ্রেম
  2.  মাতৃভূমি

28. ‘অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠা করেন-

  1. পুলিনবিহারী বসু
  1.  কৃষ্ণকুমার মিত্র 
  1. সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
  1.  শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু     

29. অলিন্দ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন-

  1.  বিনয় বসু   
  1. বাদল গুপ্ত 
  1.  দীনেশ গুপ্ত
  1.  সিম্পসন

30. ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে কে সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন?

  1.  বাঘাযতীন
  1.  বসন্ত বিশ্বাস
  1. রাসবিহারী বসু      
  1. সুভাষচন্দ্র বসু

31. বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যা করার চেষ্টা করেন-

  1.  বীণা দাস   
  1. কল্পনা দত্ত
  2.  প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার 
  1. সুনীতি চৌধুরি

32. ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে (১২ ফেব্রুয়ারি) ‘রশিদ আলি দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেয়-

  1.  জাতীয়তাবাদী ছাত্র পরিষদ 
  1. মুসলিম ছাত্র লিগ    
  1.  বামপন্থী ছাত্র সংগঠন
  1.  কংগ্রেস ছাত্র পরিষদ

2. Very Short Question Answer

1. কে প্রথম বয়কট আন্দোলনের ডাক দেন?

>> কৃষ্ণ কুমার মিত্র প্রথম বয়কট আন্দোলনের ডাক দেন।

2. কোন্ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কলকাতায় ফেডারেশন হলের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা হয়?

» ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কলকাতায় ফেডারেশন হলের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা হয়।

3. ‘ফেলে দাও রেশমি চুড়ি বঙ্গনারী’ গানটি কে রচনা করেন?

>> ‘ফেলে দাও রেশমি চুড়ি বঙ্গনারী’ গানটি মুকুন্দ দাস রচনা করেন।

4. লীলা নাগ (রায়) কোন্ সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

>> লীলা নাগ (রায়) দীপালি সংঘের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

5. গান্ধিজির নেতৃত্বে কবে ডান্ডি অভিযান শুরু হয়?

>> গান্ধিজির নেতৃত্বে ১২ মার্চ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ডান্ডি অভিযান শুরু হয়।

6. রাজকুমারী অমৃত কাউরের নেতৃত্বে কোন্ রাজ্যে আইন অমান্য আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে?

>> রাজকুমারী অমৃত কাউরের নেতৃত্বে পাঞ্জাবে আইন অমান্য আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

7. ‘জয়শ্রী’ পত্রিকাটি কে প্রকাশ করেন?

>> বিপ্লবী লীলা নাগ (রায়) ‘জয়শ্রী’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন।

৪. আদালতে বিস্ফোরণের উদ্দেশ্যে কে গান-কটন তৈরির পরিকল্পনা করেন?

>> আদালতে বিস্ফোরণের উদ্দেশ্যে কল্পনা দত্ত গান-কটন তৈরি পরিকল্পনা করেন।

9. ‘চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> বিপ্লবী কল্পনা দত্ত ‘চট্টগ্রাম অভ্যুত্থান’ গ্রন্থটি রচনা করেন।

10. আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর নাম কী ছিল?

>>আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর নাম ছিল ঝাঁসির রানি ব্রিগেড।

11. কার্লাইল সার্কুলারের বিরুদ্ধে কলকাতায় ছাত্রদের কোন্ সংগঠন গড়ে ওঠে?

>> কার্লাইল সার্কুলারের বিরুদ্ধে কলকাতায় অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি নামক একটি ছাত্র সংগঠন গড়ে ওঠে।

12.*লবণ আইন অমান্যকারী একজন নারীর নাম লেখো।

>> লবণ আইন অমান্যকারী কয়েকজন নারী হলেন কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়/অবন্তিকা বাঈ গোখেল।

13.কোন্ আন্দোলনের সময় নারী সত্যাগ্রহ সমিতি প্রতিষ্ঠা হয়?

>> আইন অমান্য আন্দোলনের (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) সময় কলকাতায় নারী সত্যাগ্রহ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

14. *আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বাংলার একজন নারী বিপ্লবীর নাম লেখো।

>> আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বাংলার একজন নারী বিপ্লবী ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

15. জাতীয় কংগ্রেস কবে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব গ্রহণ করে?

>> ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট জাতীয় কংগ্রেস ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব গ্রহণ করে।

16. *কোথায় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে?

>> ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে।

17. ‘গান্ধিবুড়ি’ নামে কে পরিচিত ছিলেন?

>> মাতঙ্গিনী হাজরা ‘গান্ধিবুড়ি’ নামে পরিচিত ছিলেন।

18. ঊষা মেহতা কোন্ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

>> ঊষা মেহতা ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

19.*বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একজন নারীর নাম লেখো।

>> বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত একজন উল্লেখযোগ্য নারী ছিলেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

20. কল্পনা দত্ত কোন্ বিপ্লবী দলে যোগ দেন?

>> কল্পনা দত্ত সূর্য সেনের ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি-তে যোগ দেন।

21. কল্পনা দত্ত কাকে বিবাহ করেন?

>> বিপ্লবী কল্পনা দত্ত কমিউনিস্ট নেতা পি সি জোশীকে বিবাহ

22. ভারতে কোন্ সময় ব্রিটিশবিরোধী মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লবী কার্যাবলি শুরু হয়?

>> স্বদেশি আন্দোলনের শেষের দিকে ব্রিটিশবিরোধী মুক্তিসংগ্রামে বিপ্লবী কার্যাবলি শুরু হয়।

23. বিশ শতকে কোন্ কোন্ রাজ্যে বিপ্লবী আন্দোলন অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে?

>> বিশ শতকে বাংলা, মহারাষ্ট্র, পাঞ্জাবে বিপ্লবী আন্দোলন অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

24. কে, কবে কলকাতায় অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন?

>> সতীশচন্দ্র বসু, ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

25. কলকাতা অনুশীলন সমিতির সভাপতি কে ছিলেন?

>> কলকাতা অনুশীলন সমিতির সভাপতি ছিলেন প্রমথনাথ মিত্র।

26. রাসবিহারী বসু কী ছদ্মনামে জাপানে পালিয়ে যান?

>> রাসবিহারী বসু পি এন ঠাকুর ছদ্মনামে জাপানে পালিয়ে যান।

27. কোন্ মামলায় বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিলের ফাঁসি হয়?

>> ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলায় বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিলের ফাঁসি হয়।

28. কে, কবে পুলিশ ইনস্পেকটর লোম্যানকে হত্যা করেন?

>> বিপ্লবী বিনয় বসু, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পুলিশ ইনস্পেকটর লোম্যানকে হত্যা করেন।

28. কবে অলিন্দ যুদ্ধ সংগঠিত হয়?

>> ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর অলিন্দ যুদ্ধ সংগঠিত হয়।

29. রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে বিনয়-বাদল-দীনেশ কাকে হত্যা করেন?

>> রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে বিনয়-বাদল-দীনেশ কুখ্যাত কারা অধিকর্তা সিম্পসনকে হত্যা করেন।

30. বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্যরা পরবর্তীকালে কোন্ দলে যোগ দেন?

>> বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্যরা পরবর্তীকালে ফরওয়ার্ড ব্লক দলে যোগ দেন।

31. কার বিশ্বাসঘাতকতায় সূর্য সেন ধরা পড়েন?

>> নেত্র সেনের বিশ্বাসঘাতকতায় সূর্য সেন ধরা পড়েন।

32. কবে রশিদ আলি দিবস পালিত হয়?

>> ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি রশিদ আলি দিবস পালিত হয়।

33. *কে ডন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন?

>> সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে ডন সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।

34. কবে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়?

>> কলকাতার বিভিন্ন কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিরা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে (৩১ জুলাই) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংগ্রাম কমিটি প্রতিষ্ঠা করে।

35. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় যেসব রাজ্যে ছাত্র আন্দোলন অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে সেগুলির যে-কোনো একটির নাম করো।

>> অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলায় ছাত্র আন্দোলন অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

3. Short Question Answer

1 * ভারতের মুক্তিসংগ্রামের কোন্ আন্দোলনগুলিতে ছাত্রদের অতি সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়?

উত্তর: ভারতের মুক্তিসংগ্রামের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন (১৯০৫ খ্রি.), অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০ খ্রি.), আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০ খ্রি.), ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.) প্রভৃতি জাতীয় আন্দোলনে এবং বিভিন্ন গুপ্ত বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অতি সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখা যায়।

2* ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা কী ভূমিকা নেয়?

উত্তর: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। [1] তারা ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে আসে, [2] বিদেশি কাগজ-কলম বর্জন করে, [3] বিদেশি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালায়, [4] গ্রামগঞ্জে ঘুরে বিদেশি পণ্য বর্জন ও স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের প্রচার চালায়।

3 * ‘কার্লাইল সার্কুলার’ কী?

উত্তর: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লে ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য বাংলা সরকারের মুখ্যসচিব কার্লাইল একটি দমনমূলক সার্কুলার বা ঘোষণা জারি করেন। এটি কার্লাইল সার্কুলার নামে পরিচিত। এই সার্কুলারের দ্বারা ছাত্রদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ, ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি প্রভৃতি নিষিদ্ধ হয়।

4. স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের সময় দুটি দমনমূলক সার্কুলারের নাম লেখো।

উত্তর: স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের (১৯০৫ খ্রি.) সময় ব্রিটিশ সরকার প্রবর্তিত দুটি দমনমূলক সার্কুলার হল-কার্লাইল সার্কুলার/পেডলার সার্কুলার/লিয়ন সার্কুলার।

5 * কোন্ পরিস্থিতিতে প্রথম জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন শুরু হয়?

উত্তর: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হলে ছাত্ররা সরকার নিয়ন্ত্রিত স্কুলকলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের জন্য স্বদেশি জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে থাকেন।

6* শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু কে ছিলেন?

উত্তর: শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ছিলেন বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় কলকাতার রিপন কলেজের একজন ছাত্রনেতা। এই সময় সরকার ছাত্র আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ‘কার্লাইল সার্কুলার’ জারি করলে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে কলকাতায় ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ (১৯০৫ খ্রি.) গড়ে ওঠে। সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে (১৯০৮ খ্রি.) কারারুদ্ধ করে।

7. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়?

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী জাতীয় শিক্ষা আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণগুলি ছিল-[1] সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা দেশের নেতৃবৃন্দ গড়ে তুলতে পারেননি। [2] জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পাস করা ছাত্রদের সরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ ছিল না।

8 * কবে, কোথায় ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়? এর সভাপতি ও সম্পাদক কারা ছিলেন?

উত্তর: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে (নভেম্বর) কলকাতার রিপন কলেজের ছাত্র শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। [ ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’র সভাপতি ছিলেন কৃষ্ণকুমার মিত্র এবং সম্পাদক ছিলেন শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু।

9. অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?

 উত্তর: সরকার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা রদ করার জন্য কার্লাইল সার্কুলার, লায়ন সার্কুলার প্রভৃতি জারি করে। এর প্রতিবাদী প্রচেষ্টারূপে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

10 * ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: ‘অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল- [1] ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা, [2] বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের শামিল করা, [3] শাস্তিপ্রাপ্ত বা সরকারি বিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত ছাত্রদের শিক্ষালাভের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।

11 * অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রদের উদ্যোগ কেমন ছিল?

উত্তর: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে সারা দেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা ব্রিটিশ-নিয়ন্ত্রিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান 

বর্জন, বিদেশি পণ্য বর্জন, বিদেশি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং প্রভৃতি – কর্মসূচি গ্রহণ করে। কিছু ছাত্র সশস্ত্র বিপ্লবের পথ গ্রহণ করে।

12* অসহযোগ আন্দোলনের সময় গড়ে-ওঠা কয়েকটি স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম লেখো।

উত্তর: অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে গড়ে-ওঠা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল কাশী বিদ্যাপীঠ, বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, বিহার বিদ্যাপীঠ, গুজরাট বিদ্যাপীঠ, বারাণসী বিদ্যাপীঠ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রভৃতি।

13 * অসহযোগ আন্দোলনের সময় গড়ে-ওঠা স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পাঠদানকারী কয়েকজন শিক্ষকের নাম লেখো।

উত্তর: অসহযোগ আন্দোলনের সময় গড়ে-ওঠা স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে পাঠদানকারী কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন ড. জাকির হোসেন, ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ, লালা লাজপৎ রায়, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ।

14 * আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কোন্ কোন্ রাজ্যে ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে?

উত্তর: আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বোম্বাই, গুজরাট, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম প্রভৃতি রাজ্যে ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে।

15. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ছাত্র আন্দোলনের যে-কোনো দুটি ঘটনা উল্লেখ করো।

উত্তর: আইন অমান্য আন্দোলনের সময়- [1] বহু স্থানে ছাত্ররা ধর্মঘট করে এবং সরকারি স্কুলকলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। [2] ছাত্ররা বিলিতি পণ্য বর্জন করে এবং বিলিতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালায়।

16 * বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার দুটি উল্লেখযোগ্য বিপ্লবী গুপ্তসমিতির নাম লেখো।

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার দুটি উল্লেখযোগ্য বিপ্লবী গুপ্তসমিতি ছিল কলকাতা ও ঢাকার অনুশীলন সমিতি এবং কলকাতার যুগান্তর।

17 * ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকির প্রধান বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করো।

উত্তর: অত্যাচারী বিচারপতি কিংসফোর্ড কলকাতা থেকে মুজফফরপুর বদলি হয়ে গেলে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি মুজফ্ফরপুর যান। সেখানে কিংসফোর্ডকে বোমা মারতে গিয়ে ভুলবশত তিনি মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা মিস কেনেডিকে হত্যা করেন। ঘটনার পর প্রফুল্ল চাকি পুলিশের হাতে ধরা না দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে ক্ষুদিরাম ধরা পড়লে বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।

18 * * বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন নারীর নাম লেখো।

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নারী ছিলেন সরলাদেবী চৌধুরানি, হেমাঙ্গিনী দাস, কুমুদিনী মিত্র, লীলাবতী মিত্র, কুমুদিনী বসু, সুবালা আচার্য, নির্মলা সরকার প্রমুখ।

19 * * তেভাগা আন্দোলন কী?

উত্তর- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পরবর্তীকালে বাংলার দরিদ্র বর্গাদার চাষিরা জোতদারের কাছ থেকে উৎপন্ন ফসলের ২/৩ অংশ পাওয়ার দাবিতে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে একটি আন্দোলন গড়ে তোলে। এটি তেভাগা আন্দোলন নামে পরিচিত।

20 * ব্রিটিশ শাসনকালে গড়ে-ওঠা দুটি নমঃশূদ্র সংগঠনের নাম লেখো।

উত্তর- ব্রিটিশ শাসনকালে গড়ে-ওঠা দুটি উল্লেখযোগ্য নমঃশূদ্র সংগঠন ছিল নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন/উন্নয়নী সভা (১৯০২ খ্রি.)/ বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন (১৯১২ খ্রি.)/নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি (১৯২৬ খ্রি.)/বঙ্গীয় দলিত শ্রেণি সমিতি (১৯২৬ খ্রি.)।

21*রাসবিহারী বসু মন রাসবিহারী বসু কে ছিলেন?

উত্তর: রাসবিহারি বসু ছিলেন ভারতের বৈপ্লবিক মুক্তিসংগ্রামের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা । তাঁর নির্দেশে বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাস বড়োলাট লর্ড হার্ডিঞ্জ-কে লক্ষ করে বোমা নিক্ষেপ করেন। রাসবিহারী ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ-বিরোধী সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এই খবর ফাঁস হয়ে গেলে তিনি পি এন ঠাকুর ছদ্মনামে জাপানে পালিয়ে যান।

22 *কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা কী?

উত্তর: বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের নির্দেশে রামপ্রসাদ বিসমিল-সহ কয়েকজন বারী উত্তর প্রদেশের কাকোরি রেল স্টেশনে ট্রেনে ডাকাতি করে। এই ঘটনার এরিপ্রেক্ষিতে যে মামলা শুরু হয় তা কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।

23* কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কারা পুলিশ অফিসার সন্ডার্স-কে হত্যা করেন?

উত্তর: সাইমন কমিশন-বিরোধী বিক্ষোভের সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে লালা লাজপৎ রায়ের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে বিপ্লবী ভগৎ সিং, রাজগুরু ও আজাদ পুলিশ অফিসার সন্ডার্স-কে (১৯২৮ খ্রি.) হত্যা করেন।

24 * আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বাংলার দুজন সক্রিয় চরমপন্থী বিপ্লবীর নাম লেখো।

উত্তর: আইন অমান্য আন্দোলনের সময় বাংলার দুজন সক্রিয় চরমপন্থী বিপ্লবী হলেন সূর্য সেন/অম্বিকা চক্রবর্তী/গণেশ ঘোষ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার/কল্পনা দত্ত/বীণা দাস/বিনয় বসু/বাদল গুপ্ত/দীনেশ গুপ্ত।

25 * কোন্ ঘটনার জন্য কারা, কবে ‘অপারেশন ফ্রিডম’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়?

উত্তর: বিভিন্ন জেলে বন্দি বিপ্লবী ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ওপর পুলিশি নির্যাতনের প্রতিবাদে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ দল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ‘অপারেশন ফ্রিডম’ শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়।

26 * কে, কবে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ দল প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রেরণায় সুভাষচন্দ্র বসু ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স দল বা বি ভি নামে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন।

27*’বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’-এর দুজন উল্লেখযোগ্য সদস্যের নাম লেখো।

 উত্তর: ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’-এর দুজন উল্লেখযোগ্য সদস্য ছিলেন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী।

28 * কারা, কবে রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করেন?

উত্তর: বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের। ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করেন।

29 * অলিন্দ যুদ্ধ কী?

উত্তর: সশস্ত্র বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে কুখ্যাত কারা অধিকর্তা সিম্পসন-কে হত্যা করেন। এরপর বিশাল পুলিশ-বাহিনী তাদের ওপর পালটা আক্রমণ চালালে রাইটার্স বিল্ডিং-এর বারান্দায় উভয় পক্ষের তীব্র গুলির লড়াই চলে। এই ঘটনা ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

30 * অলিন্দ যুদ্ধের পর বিনয়-বাদল-দীনেশের কী পরিণতি হয়?

উত্তর: অলিন্দ যুদ্ধের পর বাদল গুপ্ত পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। বিনয় ও দীনেশ গুলিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আহত হন। পরে বিনয় হাসপাতালে মারা যান এবং দীনেশ সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁর ফাঁসি হয়।

31 * ডান্ডি অভিযান কী?

উত্তর: ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইন ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধি তাঁর ৭৮ জন অনুগামী নিয়ে সমুদ্র তীরবর্তী ডান্ডি নামক স্থানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ২৪১ দিন ব্যাপী এই যাত্রা ডান্ডি অভিযান নামে পরিচিত।

32 * সূর্য সেন কে ছিলেন?

উত্তর: সূর্য সেন ছিলেন ভারতের একজন বীর বিপ্লবী। ‘মাস্টারদা’ নামে পরিচিত সূর্য সেন ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিক আর্মি’ (১৯৩০ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নেতৃত্ব দেন। তাঁর নির্দেশে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন। 

33 * বীণা দাস কে ছিলেন?

উত্তর:  বীণা দাস ছিলেন ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম গুরত্বপূর্ণ বিপ্লবী নেত্রী। তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে (৬ ফেব্রুয়ারি) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতারত অবস্থায় গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ করে গুলি চালান। কিন্তু তাঁর গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

34 * চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত দুজন বিপ্লবীর নাম লেখো।

উত্তর: মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে সংঘটিত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে নির্মল সেন/অম্বিকা চক্রবর্তী/গণেশ ঘোষ/অনন্ত সিংহ/ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার/ কল্পনা দত্ত বিপ্লবী যুক্ত ছিলেন।

35 * চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলায় বিপ্লবীদের কী সাজা হয়?

উত্তর- চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের বিচারে সূর্য সেনের ফাঁসি এবং গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল-সহ ১২ জনের জেল হয়।

36 * আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের বিচারের বিরুদ্ধে কীরূপ প্রতিবাদ দেখা দেয়?

উত্তর- আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের বিচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১১ নভেম্বর আজাদ হিন্দ সপ্তাহ, ১২ নভেম্বর আজাদ হিন্দ দিবস এবং ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি রশিদ আলি দিবস পালিত হয়।

37* রশিদ আলি কে ছিলেন?

উত্তর- রশিদ আলি ছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনীর অন্যতম সেনাপতি। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সেনার হাতে বন্দি হওয়ার পর বিচারে রশিদ আলিকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত (১৯৪৬ খ্রি.) করা হয়।

38 * রশিদ আলি দিবস কেন পালিত হয়েছিল?

উত্তর- ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের হাতে বন্দি আজাদ হিন্দ বাহিনীর অন্যতম সেনাপতি রশিদ আলির বিচার হয়। বিচারে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন তিনি। এই দণ্ডের প্রতিবাদে মুসলিম ছাত্র লিগ কলকাতায় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালনের কথা ঘোষণা করে।

39 * রশিদ আলির কারাদণ্ডের ঘোষণার কীরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়?

উত্তর- রশিদ আলির কারাদণ্ডের ঘোষণার প্রতিবাদে বাংলা উত্তাল হয়ে ওঠে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় ব্যাপক গণ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১১ ফেব্রুয়ারি মুসলিম ছাত্র লিগ কলকাতায় ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় এবং ১২ ফেব্রুয়ারি (১৯৪৬ খ্রি.) দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করে।

40 * বিশ শতকে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ-বিরোধী প্রধান জাতীয় আন্দোলনগুলির নাম উল্লেখ করো।

উত্তর: বিশ শতকে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ-বিরোধী প্রধান জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলি ছিল—[1] বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন (১৯০৫-১১ খ্রি.), [2] অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.), [3] আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) এবং [4] ভারত ছাড়ো বা আগস্ট আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.)।

41 * স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন?

উত্তর: স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন- [1] বঙ্গভঙ্গের দিন ঘরে ঘরে অরন্ধন ও উপবাস পালন করেন। [2] বিলিতি পণ্য বয়কট করেন। [3] বিভিন্ন মিছিল- মিটিং-এ যোগ দেন। [4] বিলিতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালান প্রভৃতি।

42* ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর বাংলার নারীসমাজ কেন অরন্ধন পালন করে?

উত্তর: স্বদেশি আন্দোলনের সূচনালগ্নে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর আহ্বানে বাংলার নারীরা অরন্ধন পালন করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল-[1] বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, [2] হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাঙালি ঐক্যের স্বরূপ তুলে ধরা, [3] নারীদের অংশগ্রহণে স্বদেশি আন্দোলনকে শক্তিশালী করা।

43* ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বয়কট আন্দোলনের সময় বাংলার নারীদের বিলিতি পণ্য বয়কটের কয়েকটি উদাহরণ দাও।

উত্তর:  ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বয়কট আন্দোলনের সময়-[1] বাংলার বহু নারী বিলিতি কাপড় বর্জন করে বাংলার তাঁতের তৈরি মোটা সুতোর কাপড় ব্যবহার করতে শুরু করেন। [2] বিলিতি কাঁচের চুড়ি ব্যবহার বন্ধ করেন। [3] রান্নাঘরে বিলিতি লবণ ও চিনির ব্যবহার বন্ধ করেন। [4] বিলিতি ওষুধপত্র ব্যবহার বন্ধ করেন। [5] বহু ছাত্রছাত্রী সরকারি স্কুলকলেজ ত্যাগ করে।

44 * বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল- [1] আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা সমাজের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছিলেন। [2] আন্দোলনে মুসলিম নারীদের অংশগ্রহণ বেশি ছিল না।

45 * আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা কী ধরনের কর্মসূচি নেন?

উত্তর: আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীরা- [1] বিদেশি পণ্য বর্জন করে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের আবেদন জানান। [2] বিলিতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালান। [3] বিভিন্ন সভা ও শোভাযাত্রায় অংশ নেন। [4] তিলক স্বরাজ তহবিলে নিজেদের অর্থ ও অলংকার দান করেন। [5] প্রিন্স অব ওয়েল্স-এর ভারত সফরের (১৯২১ খ্রি.) সময় বোম্বাইয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রভৃতি।

46* আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের অন্তত দুটি কর্মসূচি উল্লেখ করো।

উত্তর: আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি হল-[1] তাঁরা লবণ আইন অমান্য করেন। [2] তারা বিভিন্ন সভা- সমাবেশে অংশ নেন।

47* আইন অমান্য আন্দোলনে বাংলার নারীদের ভূমিকা কীরূপ ছিল?

উত্তর: আইন অমান্য আন্দোলনে- [1] বাংলার শিক্ষিত নারীদের সঙ্গে কৃষক পরিবারের নারীরাও যোগ দেয়। [2] মেদিনীপুরের ঘাটাল, কাঁথি, তমলুক প্রভৃতি স্থানের নারীরা লবণ আইন অমান্য করেন।

48. ভগিনী সেনা কী?

উত্তর: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় মেদিনীপুর জেলায় গঠিত তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের অধীনে মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে একটি বাহিনী গড়ে ওঠে যা ভগিনী সেনা নামে পরিচিত।

49* মাতঙ্গিনী হাজরা কে ছিলেন? অথবা, মাতঙ্গিনী হাজরা স্মরণীয় কেন?

উত্তর: মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় একজন গান্ধিবাদী নেত্রী। ৭৩ বছরের মাতঙ্গিনী হাজরা তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ‘গান্ধিবুড়ি’ নামে পরিচিত।

50. তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কী কী উদ্যোগ নিয়েছিল?

উত্তর: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে (১৭ ডিসেম্বর) তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়। এই সরকার একটি পৃথক শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলে। সতীশচন্দ্র সামন্ত ছিলেন এর সর্বাধিনায়ক। তাঁর অধীনে আইন-শৃঙ্খলা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিচার, কৃষি, প্রচার, সমর ইত্যাদি বিভাগে পৃথক পৃথক সচিব নিয়োগ করা হয়। জনকল্যাণ, ত্রাণকার্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে এই সরকার যথেষ্ট কাজ করে।

51.  বীণা দাস বিখ্যাত কেন?

উত্তর: বীণা দাস ছিলেন ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবী নেত্রী। তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে (৬ ফেব্রুয়ারি) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতারত অবস্থায় গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ করে গুলি চালান। কিন্তু তাঁর গুলি লক্ষভ্রষ্ট হয়।

52. লীলা নাগ কে ছিলেন?

উত্তর- লীলা নাগ (রায়) ছিলেন দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠাতা। আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেওয়ায় তিনি ৬ বছরের জন্য কারারুদ্ধ হন। তিনি সুভাষচন্দ্রের প্রেরণায় কংগ্রেসে যোগ দেন। সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস ছেড়ে ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করলে লীলা নাগ তাঁতে যোগ দেন। তিনি ভারতীয় গণপরিষদে যোগ দিয়ে ভারতের সংবিধান রচনায় অংশ নেন।

 53. * দীপালি সংঘের কার্যাবলি কীরূপ ছিল?

উত্তর- দীপালি সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য নারীদের প্রস্তুত করা। এখানে লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা শিক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে মেয়েদের সাহস ও শক্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

54* কে, কবে দীপালি শিল্প প্রদর্শনী চালু করেন? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর-[1] লীলা নাগ (রায়) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে দীপালি শিল্প প্রদর্শনী চালু করেন।

[2]দীপালি সংঘের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল মেয়েদের হাতের কাজ, শিল্প ও অন্যান্য কারিগরি কাজের প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।

55 * দীপালি সংঘের গুরুত্বপূর্ণ দুটি উদ্যোগ উল্লেখ করো।

উত্তর- দীপালি সংঘের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হল- [1] দীপালি শিল্প প্রদর্শনী প্রতিষ্ঠা, [2] ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ১২টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা।

56. শিক্ষার প্রসারে দীপালি সংঘের অবদান কী ছিল?

উত্তর- দীপালি সংঘ শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সংঘের উদ্যোগে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ১২টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দীপালি স্কুল, নারী শিক্ষামন্দির প্রভৃতি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

57 *প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কে ছিলেন?

উত্তর- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের এক অন্যতম নেত্রী। তিনি সূর্য সেনের সঙ্গে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন (১৯৩০ খ্রি.), জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ (১৯৩০ খ্রি.), প্রভৃতিতে অংশ নেন। তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের (১৯৩২ খ্রি.) ঘটনা ঘটে।

58* প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার কেন আত্মহত্যা করেন?

উত্তর- প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালীকিংকর দে- সহ বিপ্লবীদের একটি সশস্ত্র দল ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন। পুলিশ পালটা আক্রমণ চালালে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে প্রীতিলতা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

59.*কল্পনা দত্ত কে ছিলেন?

উত্তর- কল্পনা দত্ত ছিলেন ভারতের মুক্তিসংগ্রামের এক অন্যতম বিপ্লবী নেত্রী। তিনি গান-কটন তৈরির উদ্দেশ্যে কলকাতা থেকে বিস্ফোরক আনেন। আদালতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তিনি বিপ্লবীদের পালাতে সাহায্য করেন। ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেও ঘটনার এক সপ্তাহ আগে তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান।

60*লক্ষ্মী সায়গল কে ছিলেন?

উত্তর- লক্ষ্মী সায়গল ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজে ঝাঁসির রানি ব্রিগেডের প্রধান নেত্রী। তিনি নিজের ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দিয়ে দেশের মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ করেন।

61*ঝাঁসির রানি ব্রিগেড সম্পর্কে কী জান?

উত্তর- আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর নাম ছিল ঝাঁসির রানি ব্রিগেড। এর প্রধান নেত্রী ছিলেন ক্যাপটেন লক্ষ্মী সায়গল। সমাজের বিভিন্ন স্তর

থেকে উঠে আসা ১৫০০ মহিলা এই বাহিনীতে যোগ দেন। অক্টোবর মাসে এই বাহিনীর সামরিক ট্রেনিং শুরু হয়। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সঙ্গে ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী অভিযান শুরু (১৯৪৪ খ্রি.) করে ক্যাপটেন লক্ষ্মী সায়গল ব্রিটিশ সেনার হাতে গ্রেফতার হন (১৯৪৫ খ্রি.)।

62. ননীবালা দেবী স্মরণীয় কেন?

উত্তর- ননীবালা দেবী ইতিহাসে স্মরণীয়, কারণ- [1] তিনি ছিলেন এক দুঃসাহসী বিপ্লবী। [2] নিজের বাড়িতে বিপ্লবীদের গোপনে আশ্রয় দিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। [3] তাঁকে মাটির নীচে জানালাহীন কক্ষে আটক রাখা হয়। [4] একদা প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি অবস্থায় পুলিশ সুপার গোল্ডিকে কষিয়ে চড় মারেন। [5] তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম রাজবন্দি।

63 * ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তর- ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের দুটি বৈশিষ্ট্য ছিল-[1] ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের স্বদেশি আন্দোলনের সময় নারীদের আন্দোলন মূলত বাংলায় সীমাবদ্ধ থাকলেও পরবর্তী আন্দোলনগুলিতে তা সর্বভারতীয় রূপ নেয়। [2] কংগ্রেস পরিচালিত আন্দোলনগুলিতে মূলত উচ্চবিত্ত সমাজের নারীরা নেতৃত্ব দিতেন।

64* কোন্ পরিস্থিতিতে পুনা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর- ব্রিটিশ সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারা দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেয়। এর প্রতিবাদে গান্ধিজি আমরণ অনশন শুরু করলে তাঁর প্রাণসংশয় দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজির সঙ্গে আম্বেদকর পুনা চুক্তি স্বাক্ষর করে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এলে আপাতত সমস্যা মেটে।

65.* পুনা চুক্তির (১৯৩২ খ্রি.) দ্বারা কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়?

উত্তর- পুনা চুক্তির দ্বারা- [1] আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেন, [2] গান্ধিজি নির্বাচনে দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৭৮টি থেকে বাড়িয়ে ১৫১টি করার দাবি মেনে নেন।

66.গুরুচাঁদ ঠাকুর স্মরণীয় কেন?

উত্তর- বাংলার দলিত আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। পিতা হরিচাঁদ ঠাকুরের মতোই তিনি মতুয়া সম্প্রদায়ের উন্নয়ন, দলিত হিন্দুদের শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য নানান কাজ করেছেন। দলিতদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি বাংলার গ্রামে গ্রামে অংসখ্য বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন। ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের মতুয়া আন্দোলনের কান্ডারি ছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুর। তার প্রচেষ্টাতেই চণ্ডালের পরিবর্তে নমঃশূদ্র নাম সরকারি স্বীকৃতি পায়।

67. *নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে কী জান?

উত্তর- ব্রিটিশ শাসনকালে নমঃশূদ্র নামে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত সম্প্রদায় তাদের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক পশ্চাদ্গামিতার বিরুদ্ধে এক দীর্ঘ আন্দোলন গড়ে তোলে। এটি নমঃশূদ্র আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৮৭২ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই আন্দোলনের ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়।

68.* ব্রিটিশ আমলে বাংলার নমঃশূদ্রদের অবস্থা কেমন ছিল?

উত্তর- ব্রিটিশ আমলে বাংলার নমঃশূদ্রদের অধিকাংশই ছিলেন খুব গরিব। অশিক্ষা, অচিকিৎসা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার অভাব ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী। ব্রিটিশ সরকার এবং জমিদারশ্রেণি নমঃশূদ্রদের ওপর তীব্র শোষণ-পীড়ন চালাত। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের ঘৃণার চোখে দেখত এবং ‘চণ্ডাল’ বলত।

69. * ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতার নাম লেখো।

উত্তর- ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলনের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরচাঁদ ঠাকুর, রাজেন্দ্রলাল  মণ্ডল, মুকুন্দবিহারী মল্লিক, বিরাটচন্দ্র মণ্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, প্রমথরঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ।

70 * কবে, কোন্ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম নমঃশূদ্র আন্দোলন শুরু হয়?

উত্তর- ১৮৭২-৭৩ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর-বাখরগঞ্জ অঞ্চলে প্রথম নমঃশূদ্র আন্দোলন শুরু হয়। এই সময় এই অঞ্চলের এক বিশিষ্ট নমঃশূদ্র নেতার মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উচ্চবর্ণের নিমন্ত্রিত হিন্দুরা আসতে অস্বীকার করলে নমঃশূদ্ররা সেই উচ্চবর্ণের সঙ্গে আর্থসামাজিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। উচ্চবর্ণের কৃষিকাজ, ঘর ছাওয়া বা অন্যান্য কাজ করতে নমঃশূদ্ররা অস্বীকার করে।

4. Long Question Answer

1 *অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.) পর্বে নারী আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর: অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

ভূমিকা: মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত অহিংস আন্দোলনে নারীসমাজও যুক্ত হয়ে পড়েন।

[1] বিলিতি পণ্য বর্জন: অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় বহু নারী বিলিতি পণ্য মিছিল-মিটিং ও বিলিতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালায়।

[2] বিক্ষোভ প্রদর্শন: প্রিন্স অব ওয়েলস ভারত সফরে এলে (১৯২১ খ্রি.) বোম্বাইয়ে সহস্রাধিক নারী বিক্ষোভ দেখান। কলকাতার রাস্তায় প্রকাশ্যে বিক্ষোভ দেখিয়ে বাসন্তী দেবী, ঊর্মিলা দেবী, সুনীতি দেবী প্রমুখ কারাবরণ করেন। নেলী সেনগুপ্তা ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে স্টিমার ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন।

[3] স্বদেশি পণ্যের প্রচার: অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিভিন্ন নারী স্বদেশি প্রচার চালান। বহু নারী নিজেদের অলংকার এবং চরকায় সুতো কেটে ও কাপড় বুনে, তিলক স্বরাজ তহবিল-এ নিজেদের অর্থ দান করে আন্দোলনকে সফল করার উদ্যোগ নেন। ঊর্মিলা দেবীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত নারী-কর্মমন্দির-এর সদস্যরা কলকাতায় আইন অমান্য করেন।

[4] আন্দোলনের নেতৃত্বে: বাসন্তী দেবী, ঊর্মিলা দেবী, হেমপ্রভা মজুমদার, অ্যানি বেসান্ত, সরোজিনী নাইডু, জ্যোতির্ময়ী গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ নারী অসহযোগ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন।

[5] পরবর্তী আন্দোলন: ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন বন্ধ হওয়ার পরও নারীদের আন্দোলন চলতে থাকে। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার দীপালি সংঘের সদস্যরা আন্দোলন চালিয়ে যান। মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘও গ্রামে গ্রামে আন্দোলনের প্রচার চালায়।

উপসংহার: অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করে। আন্দোলনে নারীদের সক্রিয়তায় উৎসাহিত হয়ে কংগ্রেস এই সময় নারীদের জন্য সদস্যপদ গ্রহণের দরজা খুলে দেয়। এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে বাসন্তী দেবী, উর্মিলা দেবী, নেলী সেনগুপ্ত, মোহিনী দেবী, লাবণ্যপ্রভা চন্দ প্রমুখ নারী ইতিহাসে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেন।

2 *আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) নারী আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর: আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

ভূমিকা: জাতীয় কংগ্রেস ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। গান্ধিজির ডাকে দেশের নারী সমাজ সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে অংশ নেয়।

[ 1] আন্দোলনের সূচনা: গান্ধিজি ৭৮ জন অনুগামী নিয়ে ১২ মার্চ (১৯৩০ খ্রি.) গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে সমুদ্র উপকূলবর্তী ডান্ডির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ৫ এপ্রিল তারা ডান্ডিতে সমুদ্রের জল থেকে লবণ তৈরি করে সরকারের লবণ আইন ভঙ্গ করেন। এই ডান্ডি অভিযান ও লবণ আইন ভঙ্গ আন্দোলনে বহু নারীও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

[2 ] আন্দোলনের কর্মসূচি: গান্ধিজির ডাকে সারা ভারতে হাজার হাজার নারী সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশ নিয়ে বিদেশি পণ্য ব্যবহার বন্ধ করেন। তাঁরা বিদেশি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং করেন, সরকারি স্কুলকলেজ, অফিস-আদালত ত্যাগ করেন, সরকারকে রাজস্ব দেওয়া বন্ধ করেন। এইভাবে তাঁরা আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলেন।

[3 ] আন্দোলনের প্রসার: কলকাতা, দিল্লি, বোম্বাই, এলাহাবাদ,লখনউ, লাহোর প্রভৃতি শহরে অসংখ্য নারী আইন অমান্য আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়, অবন্তিকা বাঈ গোখেল প্রমুখের নেতৃত্বে অসংখ্য নারী লবণ আইন ভঙ্গ করেন। দিল্লিতে ১৬০০ জন নারী কারাবরণ করেন। কলকাতায় নারী সত্যাগ্রহ সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পাঞ্জাবে রাজকুমারী অমৃত কাউর আইন অমান্য আন্দোলনকে শক্তিশালী করেন।

[4] বাংলায় নারীদের ভূমিকা: বাংলার নারীরা আইন অমান্য আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল। মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল, কাঁথি, তমলুক প্রভৃতি স্থানের নারীরা পুলিশি নির্যাতন উপেক্ষা করে সরকারের লবণ আইন ভঙ্গ করেন। আইন অমান্য আন্দোলনকালে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, সুহাসিনী গাঙ্গুলি প্রমুখ নারী সশস্ত্র বিপ্লবী কার্যকলাপ চালান।

[5]নেতৃত্বদান: জাতীয় স্তরে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী নারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন কস্তুরবা গান্ধি, কমলা নেহরু, সরোজিনী নাইডু, বাসন্তী দেবী, ঊর্মিলা দেবী, সরলাবালা দেবী, নেলী সেনগুপ্তা, লীলা নাগ (রায়) প্রমুখ।

উপসংহার: ভারতের নারী সমাজ ব্যাপকভাবে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এজন্য কেউ কেউ আইন অমান্য আন্দোলনকে ভারতের নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রথম ধাপ বলে উল্লেখ করেছেন। এই আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রেক্ষাপটে মহাত্মা গান্ধি তাঁর ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’ পত্রিকায় লেখেন-নারীদের দুর্বল ভাবা মূর্খামি।

3 *ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে (১৯৪২ খ্রি.) নারী আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর: ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

ভূমিকা: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৭ আগস্ট বোম্বাই শহরে কংগ্রেসের অধিবেশনে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। গান্ধিজি জাতির উদ্দেশ্যে বলেন যে, ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগ এবং ভারতীয়দের পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া দেশবাসী সন্তুষ্ট হবে না। তিনি বলেন, “আমরা করব বা মরব।”-“করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে”।

[1] নারীদের সক্রিয় যোগদান: আন্দোলন ঘোষণার কিছুদিনের মধ্যেই জাতীয় স্তরের প্রায় সব নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলে সর্বস্তরের ভারতবাসীর সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য নারীও সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে শামিল হয়।

[2] জাতীয় স্তরে আন্দোলন: জাতীয় স্তরে সুচেতা কৃপালনী, নন্দিতা কৃপালনী ও অরুণা আসফ আলি নারীদের সংগঠিত করে এই আন্দোলনে শামিল করেন। অরুণা আসফ আলির নেতৃত্বে বোম্বাইয়ে আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে।

[3] বাংলায় আন্দোলন: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বাংলার নারীদের অংশগ্রহণ বিশেষ গৌরবজনক ছিল। মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সঙ্গে যুক্ত নারীরা ভগিনী সেনা গঠন করে। কৃষক পরিবারের ৭৩ বছর বয়স্কা বৃদ্ধা গান্ধিবাদী মাতঙ্গিনী হাজরা মেদিনীপুরের তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দিয়ে পুলিশের গুলিতে * মৃত্যুবরণ করেন। তিনি গান্ধিবুড়ি নামে পরিচিত হন। এ ছাড়া রানিচন্দ, এলা দত্ত, সুনীতা সেন, লাবণ্যপ্রভা দত্ত, মায়া ঘোষ প্রমুখ বঙ্গনারী ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলেন।

[4] আসাম ও পাঞ্জাবে আন্দোলন: আসামের কিশোরী কনকলতা বডুয়া, পাঞ্জাবের গৃহবধূ ভোগেশ্বরী ফুকোননী, ঊষা মেহতা প্রমুখ নারী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ঊষা মেহতা গোপনে কংগ্রেসের বেতারকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।

উপসংহার: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছে। আন্দোলনে নারীদের যোগদান প্রসঙ্গে গান্ধিজি মন্তব্য করেছেন যে, “ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস লেখার সময় নারীদের বীরত্বের কথা সর্বাধিক স্থান দখল করবে।”

4 *মাতঙ্গিনী হাজরা ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?

উত্তর: মাতঙ্গিনী হাজরা

ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা (১৮৭০-১৯৪২ খ্রি.)। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলায় ভারত ছাড়ো আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

[ 1] প্রাথমিক পরিচয়: মাতঙ্গিনী হাজরা ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মেদিনীপুর জেলার তমলুকের একটি দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আর্থিক সংকটের জন্য তিনি শিক্ষাগ্রহণ করতে পারেননি। তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে নিঃসন্তান অবস্থায় বিধবা হন।

[2] আন্দোলনে অংশগ্রহণ: মাতঙ্গিনী হাজরা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে এবং ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে তিনি ৬ মাস কারাবাস করেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন।

[3] থানা অভিযান: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে ৭৩ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা ওই বছর ২৯ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুরের তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দেন। পুলিশের প্রতিরোধ উপেক্ষা করে তিনি মিছিলের অগ্রভাগে থেকে বন্দেমাতরম ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে চলেন।

[4] মৃত্যু: ১৪৪ ধারা অমান্য করায় পুলিশ মাতঙ্গিনী হাজরার ওপর গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়েও তিনি বন্দেমাতরম ধ্বনি দিতে দিতে ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা হাতে সামনে এগিয়ে চলেন। অবশেষে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি ইতিহাসে গান্ধিবুড়ি নামে অমর হয়ে আছেন।

উপসংহার: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার আত্মোৎসর্গ স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। স্বদেশের জন্য মাতঙ্গিনীর মৃত্যুবরণের দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে বাংলার তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার মানুষকে ব্রিটিশ- বিরোধী আন্দোলনে উদ্ভবদ্ধ করেছিল।

5.*সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদানের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের যোগদান

ভূমিকা: বিংশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয় আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলা ছিল এই বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। এই আন্দোলনে বাংলার বহু নারীও যোগ দান করেন।

[1] সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত: বাংলার বহু নারী অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর দল প্রভৃতি সশস্ত্র গুপ্তসমিতির সঙ্গে যুক্ত হন। প্রকাশ্য সমিতি দীপালি সংঘের সদস্য হয়েও বহু নারী গোপনে বিপ্লবী কার্যকলাপ পরিচালনার প্রশিক্ষণ নেন।

[2] সমর্থন ও সহায়তা দান: বাংলার বহু তরুণী বিপ্লবী দলগুলির সংস্পর্শে এলে তাঁদের মা, মাসিমা, কাকিমা প্রমুখও নানা বৈপ্লবিক কাজকর্মে তাদের সাহায্য করেন। তাঁরা বাড়িতে বিপ্লবীদের গোপনে আশ্রয় দিয়ে বা বাড়িতে অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার সুযোগ করে দিয়ে বিপ্লবীদের সহায়তা করেন।

[3] আর্থিক সহায়তাদান: বিপ্লবীরা যখন দেশমাতার মুক্তির জন্যনিঃস্বার্থভাবে কাজ করে চলেছেন তখন বহু নারী নিজেদের টাকা- পয়সা, সোনার গয়না প্রভৃতি দিয়ে বৈপ্লবিক কাজে সহায়তা করেন।

[4] সর্বস্তরের নারীদের যোগদান: বিশ শতকে বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে সমাজের সকল স্তরের নারীরা অংশগ্রহণ করেন। বিপ্লবী আন্দোলনের প্রথমদিকে স্বর্ণকুমারী দেবী, সরলাদেবী, আশালতা সেন, সরোজিনী নাইডু, ননীবালা, দু’কড়িবালা দেবী, ইন্দুমতী দেবী প্রমুখ নারী নানান বৈপ্লবিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে লীলা নাগ (রায়), প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, বীণা দাস প্রমুখ বিপ্লবী চরম আত্মোৎসর্গের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

উপসংহার: বাংলার নারীরা ব্রিটিশ-বিরোধী বৈপ্লবিক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ-দু-ভাবেই অংশগ্রহণ করেছে। প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন নারী বৈপ্লবিক কার্যকলাপে যেরকম দুঃসাহসের পরিচয় দিয়েছে তার দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসেও বিরল।

6. * বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে লীলা নাগের অবদান উল্লেখ করো। অথবা, বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে দীপালি সংঘের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো।

অথবা, ইতিহাসে লীলা নাগ স্মরণীয় কেন?

উত্তর: বিপ্লবী আন্দোলনে লীল নাগ/দীপালি সংঘের ভূমিকা

ভূমিকা: বিংশ শতকে কংগ্রেসের উদ্যোগে জাতীয় আন্দোলনগুলি ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ করতে ব্যর্থ হলে বাংলায় সরকারের বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময় নারীদের সংগঠিত করে বিপ্লবী কার্যকলাপে শামিল করার ক্ষেত্রে দীপালি সংঘের গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

[1] দীপালি সংঘের প্রতিষ্ঠা: কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করার পর সুভাষচন্দ্র বসুর ঘনিষ্ঠ লীলা নাগ (রায়) (১৯০০-৭০ খ্রি.) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় দীপালি সংঘ নামে একটি নারী সংগঠন স্থাপন করেন। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, বীণা দাস, শান্তি দাস প্রমুখ এই সংঘের সদস্যা ছিলেন।

[2] সংঘ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য: দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে লীলা নাগের উদ্দেশ্য ছিল নারী সমাজকে সংঘবদ্ধ করে ব্রিটিশ-বিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে শামিল করা। মেয়েদের বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনার যোগ্য করে তোলার জন্য এই সংঘ উৎসাহ প্রদান করত।

[3] প্রশিক্ষণ: মেয়েদের সাহস ও শক্তিবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে দীপালি সংঘে নিয়মিত লাঠিখেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা শিক্ষা প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়া হত। এ ছাড়া মেয়েদের হাতের কাজ, শিল্পকর্ম প্রভৃতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে ‘দীপালি শিল্প প্রদর্শনী’ (১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে) গড়ে তোলা হয়।

[4] শিক্ষার প্রসার: শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে দীপালি সংঘ ঢাকায় ১২টি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। এ ছাড়া তাদের উদ্যোগে ‘দীপালি স্কুল’, ‘নারী শিক্ষামন্দির’, ‘শিক্ষাভবন’ প্রভৃতি ইংরেজি উচ্চবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। লীলা নাগ ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ‘দীপালি ছাত্রী সংঘ’ নামে ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।

[5] পত্রিকা প্রকাশ: লীলা নাগ দীপালি সংঘের পক্ষ থেকে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেরণায় তিনি এই পত্রিকার নাম রাখেন ‘জয়শ্রী’।

উপসংহার: লীলা নাগ শুধু বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে নয়, তিনি সমাজকল্যাণেও নিজেকে উজাড় করে দেন। ১৯৪৬ -এর দাঙ্গা-বিধ্বস্ত নোয়াখালিতে তিনি ত্রাণকার্যে যোগ দেন। তিনি ‘ন্যাশনাল সার্ভিস ইন্সটিটিউট’ নামে একটি -। জনকল্যাণমূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে ভারতীয় সংবিধান রচনায়ও তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

7* বীণা দাস ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?

উত্তর: বীণা দাস

ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যাঁদের আত্মবলিদা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলার বিপ্লবী বীণ দাস (১৯১১-৮৬ খ্রি.)।

[ 1] আন্দোলনে যোগদান: বীণা কৈশোরেই পিতা বেণীমাধব দাসের (সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষক) আদর্শ ও স্বদেশপ্রেমের ভাবধারায় অণুপ্রাণিত হন। কলকাতার বেথুন কলেজে পড়াশোনার সময় বীণ ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন বয়কট, পিকেটিং আন্দোলন কলকাতার কংগ্রেস অধিবেশনের স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী প্রভৃতিতে অংশ নেন।

[2] বিপ্লবী দলে যোগদান: সুহাসিনী দত্ত, শান্তি দাশগুপ্ত প্রমুখের সঙ্গে বীণা দাসও বিপ্লবী দলে যোগ দেন। এরপর তিনি যুগান্তর দলের কর্মী কমলা দাশগুপ্তের কাছ থেকে একটি রিভলভার সংগ্রহ করেন।

[3] জ্যাকসনকে গুলি: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে (৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২ খ্রি.) গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসন বক্তৃতা দিতে শুরু করলে বীণা তাকে লক্ষ করে গুলি চালাতে থাকেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্যভ্রষ্ট হন।

[4]কারাবাস: জ্যাকসনকে গুলি চালানোর ঘটনায় বীণা গ্রেফতার হন। বিচারে তাঁর ৯ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়। মেদিনীপুর জেলে থাকার সময় জেলারের অনাচারের প্রতিবাদে বীণা দাস, শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী প্রমুখ অনশন শুরু করেন।

[5] কংগ্রেসে যোগদান: জেল থেকে মুক্তিলাভের (১৯৩৯ খ্রি.) পর বীণা ‘মন্দিরা’ নামে মাসিক পত্রিকার মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের ভাবধারা প্রচারের কাজ চালিয়ে যান। এই সময় কংগ্রেসে যোগ দিয়ে তিনি পুনরায় ৩ বছর (১৯৪২-৪৫ খ্রি.) কারাবাস করেন।

উপসংহার: ঔপনিবেশিক শাসনের অন্ধকার সরিয়ে ভারতে এক নতুন ভোর আনতে যাঁরা জীবন পণ করেছিলেন, বিপ্লবী বীণা দাস তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তবে নির্ভীক এই অগ্নিকন্যার শেষজীবন ছিল খুবই বেদনাদায়ক। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি হরিদ্বারে আশ্রয় নেন। সেখানে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে (২৬ ডিসেম্বর) সহায়সম্বলহীন অবস্থায় পথের ধারে মৃত্যুবরণ করেন।

8* বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদোরের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।

অথবা, ইতিহাসে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার স্মরণীয় কেন?

উত্তর:  বিপ্লবী আন্দোলনে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের অবদান

ভূমিকা: আদর্শবোধ ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে যারা নিজেদের জীবনকে অর্থবহ করে তুলেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (১৯১১-৩২ খ্রি.)।

[1] বিপ্লবী আন্দোলনে আগ্রহ: প্রীতিলতা ছাত্রাবস্থায় ঢাকার দীপালি সংঘে এবং পরে কলকাতায় ছাত্রী সংঘে যোগ দিয়ে লাঠিখেলা, ছোরাখেলা প্রভৃতি শেখেন। তখন থেকেই বিপ্লবী আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হন। এই আগ্রহ থেকে তিনি সূর্য সেনের বিপ্লবী দলে যোগ দিয়ে ফুলতার ছদ্মনাম গ্রহণ করেন।

[2] চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন: মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনায় প্রীতিলতা গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এরপর তিনি টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অফিস ধ্বংস, পুলিশ লাইন দখল, জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ (১৯৩০ খ্রি.), ধলঘাটের যুদ্ধ (১৯৩২ খ্রি.) প্রভৃতি কর্মসূচিতে অংশ নেন।

[3] ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ: প্রীতিলতার নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালিকিঙ্কর দে প্রমুখ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে (২৪ সেপ্টেম্বর) আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন। পুলিশ পালটা আক্রমণ চালালে উভয় পক্ষের সম্মুখ যুদ্ধ হয়।

[4] মৃত্যুবরণ: পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে প্রীতিলতা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। এভাবে দেশমাতার মুক্তিযুদ্ধে নিবেদিতপ্রাণ প্রীতিলতা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।

উপসংহার: প্রীতিলতাকে তাঁর মা আদর করে ডাকতেন ‘রানি’ বলে। প্রীতিলতার মৃত্যুর প্রসঙ্গে কল্পনা দত্ত লিখেছেন- “প্রীতির বাবা শোকে দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেলেন, কিন্তু প্রীতির মা গর্ব করে বলতেন, ‘আমার মেয়ে দেশের কাজে প্রাণ দিয়েছে’।” পরিবারের চরম আর্থিক দুর্দশায় ধাত্রীর কাজ করে সংসার চালিয়েও প্রীতিলতার মায়ের এই গর্বটুকু বড়োই বীরত্বপূর্ণ।

জেনে রাখো প্রীতিলতাদের ধলঘাটের সংঘর্ষের খবরটি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘চট্টগ্রামে সৈন্য ও বিপ্লবীদের সংঘর্ষ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। লেখা হয়- “গত রাত্রে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার নিকটে বিপ্লবী ও সৈন্যদের এক সংঘর্ষ হইয়া গিয়াছে। ফলে গুর্খা বাহিনীর ক্যাপটেন ক্যামের ও দুইজন বিপ্লবী নিহত হইয়াছেন। বিপ্লবীদের নিকট দুইটি রিভলভার ও গুলি ইত্যাদি পাওয়া গিয়াছে। নিহত বিপ্লবীদের একজনকে নির্মল সেন বলিয়া সনাক্ত করা হইয়াছে।”

9* বিপ্লবী আন্দোলনে কল্পনা দত্তের অবদান উল্লেখ করো। অথবা, ইতিহাসে কল্পনা দত্ত স্মরণীয় কেন?

উত্তর: বিপ্লবী আন্দোলনে কল্পনা দত্তের অবদান

ভূমিকা: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলার যেসব নারী ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বিপ্লবী কল্পনা দত্ত (১৯১৩-৯৫ খ্রি.)।

[1] আন্দোলনে যোগদান: কলকাতার বেথুন কলেজে পড়ার সময়ই তিনি বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও কানাইলাল দত্তের বিপ্লবী ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হন। এই সময় তিনি কল্যাণী দাস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ছাত্রী সংঘে যোগ দেন এবং বিক্ষোভ, হরতাল প্রভৃতি আন্দোলনে অংশ নেন।

[2] সূর্য সেনের দলে যোগদান: কল্পনা চট্টগ্রামে ফিরে (১৯৩০ খ্রি.) পূর্ণেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমে বিপ্লবী সূর্য সেনের সঙ্গে পরিচিত হন। এরপর তিনি সূর্য সেন প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি-র চট্টগ্রাম শাখায় যোগ দেন।

[3] বিস্ফোরক আমদানি: কল্পনা কলকাতা থেকে গোপনে বিস্ফোরক এনে তা দিয়ে গান-কটন তৈরি করেন এবং এর সাহায্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জেলবন্দি বিপ্লবী গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং, লোকনাথ বল প্রমুখকে পালাতে সহায়তা করার চেষ্টা করেন।

[4] ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা: সূর্য সেন প্রীতিলতার সঙ্গে কল্পনাকেও চট্টগ্রামে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব দেন। কিন্তু আক্রমণের এক সপ্তাহ আগে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন।

[5] গৈরালা গ্রামে সংঘর্ষ: জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর কল্পনা ও তাঁর কয়েকজন সঙ্গী পুলিশের সঙ্গে গৈরালা গ্রামে গুলির লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়েন। সংঘর্ষের পর সূর্য সেন ধরা পড়লেও কল্পনা দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

[6] কারাদণ্ড: তিন মাস পর গৈরালা গ্রামের পুলিশের সঙ্গে অন্য একটি সংঘর্ষের সময় কল্পনার পিস্তলের গুলি ফুরিয়ে গেলে তিনি ধরা পড়েন। বিচারে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে কল্পনার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

উপসংহার: কারাদণ্ডে দন্ডিত হলেও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই থেমে যায়নি। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পেয়ে কমিউনিস্ট পার্টি-তে যোগ দিয়ে কল্পনা ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যান। তিনি ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

10 *বিপ্লবী আন্দোলনে আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর ভূমিকা কী ছিল?

অথবা, বিপ্লবী আন্দোলনে লক্ষ্মী সায়গলের ভূমিকা কী ছিল? অথবা, লক্ষ্মী সায়গল স্মরণীয় কেন?

উত্তর: বিপ্লবী আন্দোলনে আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর / লক্ষ্মী সায়গলের ভূমিকা

ভূমিকা: ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনী-সহ সকল বীর সেনাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিপ্লবী লক্ষ্মী সায়গল এই নারীবাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে অসামান্য কৃতিত্বের পরিচয় দেন।

[1] ঝাঁসির রানি ব্রিগেড: সুভাষচন্দ্র ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজের নারী-ব্রিগেড গঠন করেন। এই বাহিনীর নাম হয় ঝাঁসির রানি ব্রিগেড। প্রায় ১৫০০ মহিলা এই বাহিনীতে যোগদান করলে বাহিনীর শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

[2] নেতৃত্বদান: সিঙ্গাপুরে কর্মরত চিকিৎসক ড. লক্ষ্মী স্বামীনাথন নিজের উজ্জ্বল কর্মজীবন ছেড়ে এই বাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ক্যাপটেন লক্ষ্মী নামে পরিচিত হন। তাঁর অধীনে ব্রিগেডের নারীদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধের উপযোগী করে তোলা হয়।

[3] আক্রমণ সংঘটন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষশক্তিভুক্ত জাপান ভারতের মাটিতে মিত্রশক্তিভুক্ত ব্রিটিশ শক্তিকে আক্রমণ করতে এগিয়ে এলে আজাদ হিন্দ বাহিনী এবং লক্ষ্মী সায়গলের নেতৃত্বে ঝাঁসি বাহিনীও সিঙ্গাপুর থেকে ব্রহ্মদেশের দিকে এগোতে থাকে।

[4] বিপর্যয়: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে জাপানের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়ে ব্রহ্মদেশ সীমান্তে আজাদ হিন্দ বাহিনীও সংকটের মুখে পড়ে। এই অবস্থায় লক্ষ্মী সায়গলের নেতৃত্বে ঝাঁসি বাহিনীর বীর নারীগণ জঙ্গলের লতাপাতা খেয়েও যুদ্ধ চালিয়ে চরম আত্মত্যাগের পরিচয় দেন।

[5] পরাজয়: শেষপর্যন্ত আজাদ হিন্দ বাহিনী পরাজিত হয়। ক্যাপটেন লক্ষ্মী ব্রিটিশ সেনার হাতে গ্রেফতার (মে, ১৯৪৫ খ্রি.) হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাস পর্যন্ত তিনি বার্মার জেলে বন্দি ছিলেন।

উপসংহার: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে লক্ষ্মী সায়গলের নেতৃত্বাধীন আজাদ হিন্দ বাহিনীর নারীবাহিনীর ত্যাগ ও তিতিক্ষার নজির ইতিহাসে বিরল। স্বাধীন ভারতের স্বপ্নে বিভোর এই বাহিনীর আত্মবলিদান বিফলে যায়নি। তাঁদের প্রদর্শিত পথে লড়াই করে কিছুকাল পর ভারতবাসী স্বাধীনতা লাভ করে।

জেনে রাখো

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মী স্বামীনাথন দ্বিতীয় বার প্রেম সায়গলকে বিবাহ করেন। বিবাহের পর তিনি লক্ষ্মী সায়গল বা সেহগল নামে পরিচিত হন।

ভারতের রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মী সায়গলকে ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করেন।

11 *বিশ শতকে ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী নারী আন্দোলনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?

উত্তর: ব্রিটিশ-বিরোধী নারী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

ভূমিকা: বিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে নারীরাও পিছিয়ে ছিলেন না। এই সময় নারী আন্দোলনের বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন-

[1] আন্দোলনের প্রসার: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের নারীদের অংশগ্রহণ মূলত বাংলায় সীমাবদ্ধ ছিল। তবে পরবর্তীকালে অহিংস অসহযোগ (১৯২০ খ্রি.), আইন অমান্য (১৯৩০ খ্রি.) ও ভারত ছাড়ো (১৯৪২ খ্রি.) আন্দোলনের সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা আন্দোলনে শামিল হন।

[2] কংগ্রেসের নেতৃত্বে আন্দোলন: জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে যেসব আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল সেগুলিতে মূলত সমাজের উচ্চবিত্ত নারীরাই অংশগ্রহণ করত।

[3] অকংগ্রেসি আন্দোলন: কংগ্রেস দলের বাইরে যেসব আন্দোলন সংঘটিত হত সেগুলিতে সমাজের নিম্নবিত্তদের আন্তরিক অংশগ্রহণ লক্ষ করা যেত।

[4] বিপ্লবী আন্দোলন: বেশকিছু নারী ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলন ও কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ব্রিটিশ সরকারের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছিলেন। বিপ্লবী আন্দোলনে মূলত শিক্ষিত নারীরা যোগ দিত।

[5] বিপ্লবী আন্দোলনের ব্যাপকতা: অন্যান্য রাজ্যে বিপ্লবী কার্য-কলাপের কিছু দৃষ্টান্ত থাকলেও বিপ্লবী নারী আন্দোলনের সর্বাধিক প্রসার লক্ষ করা যায় বাংলাতেই।

[6] পুরুষদের সহযোগী: বিভিন্ন আন্দোলনে নারীরা মূলত পুরুষদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। এইসব আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে পুরুষদের ভূমিকাই মুখ্য ছিল।

উপসংহার: বিশ শতকে নারীরা পুরুষের সহযোদ্ধা হিসেবে ব্রিটিশ-বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেয়। ফলে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

12. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীসমাজ কীভাবে অংশগ্রহণ করেছিল? তাদের আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা কী ? 

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ

ভূমিকা: সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ করলে বাংলা তথা ভারতে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত হয়। এই আন্দোলনে নারীরাও বিপুল সংখ্যায় অংশগ্রহণ করেন।

[1] বিলিতি পণ্য বর্জন: বহু নারী বিলিতি পণ্য যেমন বিলিতি শাড়ি,কাচের চুড়ি, লবণ, ওষুধপত্র প্রভৃতির ব্যবহার বন্ধ করে দেন এবং দেশীয় মোটা কাপড়ের ব্যবহার শুরু করেন। গৃহকোণ ছেড়ে বেরিয়ে তাঁরা মিছিল-মিটিং ও পিকেটিং-এ অংশ নেন। এই প্রসঙ্গে কবি মুকুন্দ দাস গান লেখেন “ফেলে দাও রেশমি চুড়ি”।

[2] স্বদেশি পণ্যের প্রচার: স্বদেশি পণ্যের প্রচারে বিভিন্ন নারী এগিয়ে আসেন এবং প্রচারকার্য চালান। এই সময় সরলাদেবী চৌধুরানি ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ স্থাপন করেন।

[3] জাতীয় শিক্ষা: বহু ছাত্রী ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে আসে। তারা দেশীয় নিয়ন্ত্রণে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ভরতি হয়।

[4] অরন্ধন: ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করলে বাংলার নারীরা ঘরে ঘরে অরন্ধন ও উপবাস পালন করেন।

[5] আন্দোলনে নেতৃত্ব: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে মুরশিদাবাদের গিরিজা সুন্দরী, ফরিদপুরের সৌদামিনী দেবী, বরিশালের সরোজিনী দেবী ও মনোরমা বসু, ঢাকার ব্রাহ্মময়ী সেন, বীরভূমের দুকড়িবালা দেবী, খুলনার লাবণ্যপ্রভা দত্ত প্রমুখ নারী স্থানীয়ভাবে এবং সরলাদেবী চৌধুরানি, হেমাঙ্গিনী দাস, কুমুদিনী মিত্র, লীলাবতী মিত্র, কুমুদিনী বসু, সুবালা আচার্য, নির্মলা সরকার প্রমুখ নারী জাতীয় স্তরে আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দেন।

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের সীমাবদ্ধতা:

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে নারীদের আন্দোলনের বেশকিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন-

[1] সীমিত অংশগ্রহণ: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে নারীরা অংশগ্রহণ করলেও তা কখনোই খুব ব্যাপক আকার ধারণ করেনি। নারীসমাজের সীমিত অংশই এই আন্দোলনে অংশ নেয়।

[2] উচ্চবর্ণের আন্দোলন: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে মূলত তথাকথিত উচ্চবর্ণের কিছু হিন্দু পরিবারের নারী অংশগ্রহণ করেন। নিম্নবর্ণের হিন্দু ও মুসলিম নারীদের অংশগ্রহণ প্রায় ছিল না বললেই চলে।

[3] পুরুষের প্রাধান্য: এই আন্দোলনে নারীরা অংশগ্রহণ করলেও আন্দোলনের নীতি-পদ্ধতি নারীরা স্থির করতে পারতেন না। তা মূলত পুরুষ আন্দোলনকারীরাই স্থির করতেন।

13. * বিংশ শতকে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণের কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করো। অথবা,  সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ

ভূমিকা: বিংশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনে বিভিন্ন নারীও যুক্ত হয়ে পড়েন। দীপালি সংঘের বিভিন্ন সদস্যা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত, সুহাসিনী গাঙ্গুলী, শান্তি ঘোষ, সুনীতি চৌধুরী, বীণা দাস প্রমুখ বঙ্গনারী সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।

[1] দীপালি সংঘ: বাংলার নারীদের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে শামিল করার উদ্দেশ্যে বিপ্লবী লীলা নাগ (রায়) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় ‘দীপালি সংঘ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংঘের সদস্যাদের লাঠি খেলা, শরীরচর্চা, অস্ত্রচালনা প্রভৃতি শিক্ষা দেওয়া হত।

[2 ] চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন: সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের (১৯৩০ খ্রি.) ঘটনায় বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এর পর তিনি টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন অফিস ধ্বংসের কাজে অংশ নেন এবং জালালাবাদের পাহাড়ের যুদ্ধে (১৯৩০ খ্রি.) প্রবল বিক্রমে লড়াই করে পালাতে সক্ষম হন।

[3] ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ: প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালীকিঙ্কর দে প্রমুখ বিপ্লবী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে। এই লড়াইয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আগে প্রীতিলতা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

[4] কল্পনা দত্তের বিভিন্ন কার্যকলাপ: সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র সদস্য বিপ্লবী কল্পনা দত্ত জেলের অন্যান্য বিপ্লবীদের পালানোর সুযোগ করে দিতে কলকাতা থেকে বিস্ফোরক নিয়ে আসেন। পরে প্রীতিলতার সঙ্গে ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দায়িত্ব পান। কিন্তু আক্রমণের আগেই তিনি ধরা পড়ে যান।

[5 ] জ্যাকসনকে গুলি: বিপ্লবী বীণা দাস ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন বয়কট আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে (১৯৩২ খ্রি.) গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে লক্ষ করে বীণা গুলি চালালে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়।

[6 ] ঝাঁসি বাহিনীর বীরত্ব: চিকিৎসক ড. লক্ষ্মী সায়গল নিজের উজ্জ্বল কর্মজীবন ছেড়ে সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনীর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের ব্রিটিশ শক্তিকে আক্রমণ করে পরাজিত হলে লক্ষ্মী ব্রিটিশ সেনার হাতে গ্রেফতার হন।

উপসংহার: ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণে কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায়। যেমন- [1] মূলত বাংলার নারীরাই বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অনেক বেশি সংখ্যায় অংশ নিয়েছিল। এই কাজে ভারতের অন্যত্র নারীদের অংশগ্রহণ তেমনভাবে লক্ষ করা যায় না। [2] মূলত উচ্চস্তরের শিক্ষিত নারীরা এই কাজে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। সমাজের নিম্নস্তরের নারীদের মধ্যে এর বিশেষ কোনো প্রভাব পড়েনি।

14. *বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উত্তর- বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

ভূমিকা: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই সময় বিভিন্ন গুপ্তসমিতির প্রতিষ্ঠা, বিপ্লবীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ, বৈপ্লবিক কার্যকলাপ। শুরু হয়।

[1] অনুশীলন সমিতি: বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনের প্রসারের ক্ষেত্রে অনুশীলন সমিতি সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। বিপ্লবী সতীশচন্দ্র বসুর উদ্যোগে এবং ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্র (পি মিত্র)-র সহায়তায় ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মদন মিত্র লেনে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে সদস্যদের কুস্তি, শরীরচর্চা, চরিত্র গঠন প্রভৃতির সঙ্গে গোপনে বিপ্লবী কাজকর্ম চলত। অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, চিত্তরঞ্জন দাশ প্রমুখ এই সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গভঙ্গ- বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহি, চট্টগ্রাম, রংপুর প্রভৃতি জেলায় এই সমিতির শাখা গড়ে ওঠে। বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের উদ্যোগে ঢাকার অনুশীলন সমিতির কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

[2] যুগান্তর দল ও অন্যান্য সমিতি: বিপ্লবী ভাবধারা প্রচারের উদ্দেশ্যে বারীন ঘোষ ও উপেন্দ্রনাথ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ‘যুগান্তর’ পত্রিকা প্রকাশ করেন। এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে যুগান্তর দল গঠিত হয়। এই দলের সদস্যরা পূর্ববঙ্গ ও আসামের অত্যাচারী ছোটোলাট ব্যামফিল্ড ফুলার ও বাংলার গভর্নর অ্যান্ড্রু ফ্রেজারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। যুগান্তর দলের সদস্যরা ঢাকার প্রাক্তন ম্যাজিস্ট্রেট মি. অ্যালেনকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। যুগান্তর দল ছাড়াও এই সময় বাংলায় আত্মোন্নতি সমিতি, ব্রতী সমিতি, সুহৃদ সমিতি প্রভৃতি বিপ্লবী কার্যকলাপ চালিয়ে যায়।

[3] কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা: যুগান্তর দলের সদস্য ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি কলকাতার অত্যাচারী ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ইতিমধ্যে কিংসফোর্ড মুজফফরপুর বদলি হয়ে গেলে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল মজফফরপুর চলে যান। সেখানে তাঁরা কিংসফোর্ডকে মারতে গিয়ে ভুলবশত বোমার আঘাতে মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা মিস কেনেডি নামে দুজন নিরপরাধ মহিলাকে হত্যা করেন। এই ঘটনার পর প্রফুল্ল চাকি আত্মহত্যা করলেও ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন। আলিপুর বোমার মামলার রায়ে তাঁর ফাঁসি হয়।

[4] ব্রিটিশ অফিসারদের হত্যা: বাংলার বিপ্লবীরা বিভিন্ন অত্যাচারী ব্রিটিশ অফিসার এবং তাদের সহযোগী ভারতীয়দের হত্যার পরিকল্পনা করেন। [i] আলিপুর বোমার মামলার সরকারি উকিল আশুতোষ বিশ্বাস বিপ্লবীদের গুলিতে নিহত হন। [ii] ডেপুটি পুলিশসুপার সামসুল আলম হাইকোর্টেই বিপ্লবীদের হাতে প্রাণ হারান। [iii] ক্ষুদিরাম বসুকে ধরিয়ে দেওয়ার অপরাধে বিপ্লবীরা পুলিশ অফিসার নন্দলাল ব্যানার্জি-কে হত্যা করেন।

[5] বুড়িবালামের যুদ্ধ: সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করে বাঘাযতীন জার্মানি থেকে তিনটি অস্ত্রবোঝাই জাহাজ বাংলায় আনার ব্যবস্থা করেন। উড়িষ্যার বালেশ্বরে আগত মাভেরিক জাহাজের অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাঘাযতীন, চিত্তপ্রিয়, মনোরঞ্জন, নীরেন, জ্যোতিষ প্রমুখ বালেশ্বরে পৌঁছোন। কিন্তু গোপন খবর পেয়ে পুলিশ কমিশনার টেগার্ট বিপ্লবীদের ঘিরে ফেললে বুড়িবালাম নদীর তীরে পুলিশ ও বিপ্লবীদের মধ্যে ব্যাপক গুলির লড়াই চলে। চিত্তপ্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে এবং পরে গুরুতর আহত বাঘাযতীন হাসপাতালে মারা যান। অন্য কয়েকজনের ফাঁসি অথবা কারাদণ্ড হয়।

[6] চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন: মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে একদল বিপ্লবী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রামের সরকারি অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন। এই অভিযানে সূর্য সেনের সহযোগী ছিলেন নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত প্রমুখ বিপ্লবী। লুণ্ঠিত অস্ত্র নিয়ে বিপ্লবীরা জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেন। এখানে পুলিশের সঙ্গে তুমুল গুলির লড়াইয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর ৭০ থেকে ১০০ জন এবং বিপ্লবীদের ১২ জনের মৃত্যু হয়। পরে অবশ্য সূর্য সেন ধরা পড়লে বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।

[7] অলিন্দ যুদ্ধ: বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং অভিযান করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করলে কুখ্যাত কারা অধিকর্তা সিম্পসন নিহত হন। এই ঘটনা ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। বাদল পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। বিনয় এবং দীনেশ গুলিতে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আহত হন। পরে বিনয় হাসপাতালে মারা যান এবং দীনেশের ফাঁসি হয়।

[৪] ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ: প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালীকিঙ্কর দে প্রমুখ সশস্ত্র বিপ্লবীদের একটি দল ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও পালটা আক্রমণ চালালে গ্রেফতার হওয়ার আগেই প্রীতিলতা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

[9] অন্যান্যদের ভূমিকা: গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে শুরু করলে (১৯৩২ খ্রি.) বিপ্লবী বীণা দাস তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালান যদিও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বিপ্লবী কল্পনা দত্ত কলকাতা থেকে বিস্ফোরক এনে আদালতে বিস্ফোরণের উদ্যোগ নেন।

উপসংহার: ভারতের মুক্তি সংগ্রামে বাংলার সম্পূর্ণ বিফলে যায়নি। বিপ্লবী কার্যকলাপ যে ব্রিটিশদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল, তাতে সন্দেহ নেই।

15. *মাস্টারদা সূর্য সেনের বিপ্লবী জীবন সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর- সূর্য সেন

ভূমিকা: মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন এমনই একজন ব্যক্তি যিনি সংসারের মায়াজালে নিজেকে বন্দি না রেখে দেশমাতার উদ্দেশ্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।

[1] বিপ্লববাদে আগ্রহ: সূর্য সেন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি এ পাস করার পর চট্টগ্রামে ফিরে গিয়ে বিপ্লবী দল গঠনের উদ্যোগ নেন। এই সময় তাঁর সহযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অম্বিকা চক্রবর্তী, নগেন্দ্রনাথ সেন, চারুবিকাশ দত্ত, অনুরূপ সেন, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ প্রমুখ। তাঁদের নিয়ে সূর্য সেন ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি নামে সশস্ত্র বিপ্লবী দল গড়ে তোলেন।

[2] নাগরখানা পাহাড়ের যুদ্ধ: রেল শ্রমিকদের বেতন নিয়ে যাওয়ার সময় সূর্য সেনের গুপ্তসমিতির সদস্যরা ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে (১৩ ডিসেম্বর) বেতনের ১৭ হাজার টাকা ছিনতাই করে। প্রায় ২ সপ্তাহ পর গোপন খবর পেয়ে পুলিশ নাগরখানা পাহাড়ে বিপ্লবীদের আক্রমণ করলে উভয় পক্ষের খন্ডযুদ্ধ শুরু হয়। সূর্য সেন ও অম্বিকা চক্রবর্তী গ্রেফতার হন। অবশ্য পরে তাঁরা মামলা থেকে নিষ্কৃতি পান।

[3] টেগার্টকে হত্যার পরিকল্পনা: বিপ্লবীরা কলকাতার পুলিশ উ কমিশনার অত্যাচারী টেগার্ট সাহেবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলে সূর্য সেনের বেশ কয়েকজন সহযোগী ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে ধরা পড়ে যান কিন্তু সূর্য সেন পালাতে সক্ষম হন। অবশ্য ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে সূর্য সেন ধরা পড়েন এবং ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জেলে বন্দি থাকেন।

[4 ] চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন: সূর্য সেনের নেতৃত্বে গণেশ ঘোষ,লোকনাথ বল, অনন্ত সিংহ-সহ ৬৫ জন সশস্ত্র বিপ্লবী চারটি উপদলে বিভক্ত হয়ে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল রাত দশটায় চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ করেন ও অস্ত্র লুঠ করেন। তাঁরা অস্ত্রাগারটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর বিপ্লবীরা টেলিগ্রাম ও টেলিফোন অফিস আক্রমণ করে এবং পুলিশ ব্যারাক দখল করে নেয়। সূর্য সেন অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেন। ১৮ থেকে ২১ এপ্রিল- এই চারদিন চট্টগ্রামে ব্রিটিশ শাসনের অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত ছিল। ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনাই হল ‘ভারতের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে সাহসিকতাপূর্ণ কাজ’।

[5 ] জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ: অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর বিপ্লবীরা নিকটবর্তী জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেন। এই সময় সশস্ত্র ইংরেজ সেনা তাঁদের আক্রমণ করে। দুই ঘণ্টার তুমুল যুদ্ধে ১২ জন বিপ্লবী এবং ৭০ থেকে ১০০ জন ব্রিটিশ সেনা নিহত হয়। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সূর্য সেন পালাতে সক্ষম হন।

[6]মামলা: বিপ্লবীদের খোঁজে পুলিশ চারদিকে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে, ফলে বিপ্লবী ধরা পড়েন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের নিয়ে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলা শুরু হলে সূর্য সেন মাইন ব্যবহার করে জেলের প্রাচীর উড়িয়ে দিয়ে বন্দিদের মুক্ত করার এক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। নেত্র সেন নামে জনৈক বিশ্বাসঘাতকের সহায়তায় ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে পুলিশ সূর্য সেনকে গ্রেফতার করে।

[7] পরিণতি: শেষপর্যন্ত মামলায় সূর্য সেন ও তারকেশ্বর দস্তিদারের ফাঁসির আদেশ হয়। অনন্ত সিং, লোকনাথ বল, গণেশ ঘোষ-সহ ১২ বিপ্লবীর দ্বীপান্তর হয়। জেলবন্দি সূর্য সেনের ওপর অকথ্য শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর দাঁত ও হাড় ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারি তাঁদের ফাঁসি কার্যকর হয়। তাঁর মৃতদেহ বহু দূরে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।

উপসংহার: দেশমাতার মুক্তির উদ্দেশ্যে বাংলার প্রতিভাবান যুবকরা যেভাবে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল তা স্বাধীন ভারতবর্ষকে মহিমান্বিত করেছে। তাঁদের নিয়েই স্বাধীন ভারতে সংগীত রচিত হয়েছে “মাগো, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে, তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি…. আমরা চিরদিনই হাসি মুখে মরতে জানি…।”

16. বিনয়, বাদল ও দীনেশের বৈপ্লবিক কার্যকলাপের বিবরণ দাও। অথবা, অলিন্দ যুদ্ধ সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: বিনয়-বাদল-দীনেশ/অলিন্দ যুদ্ধ

ভূমিকা: সুভাষচন্দ্র বসুর উদ্যোগে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (বি ভি) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে ওঠে। এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিলেন বিনয় কৃয় বসু, বাদল গুপ্ত এবং দীনেশ গুপ্ত। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৮ ডিসেম্বর তাঁরা কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করেন। এই ঘটনা অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত।

[1] লোম্যান হত্যা: মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বিনয় বসু বাংলার অত্যাচারী পুলিশ ইনস্পেকটর লোম্যান এবং ঢাকার পুলিশ সুপার হাডসনকে লক্ষ করে গুলি চালালে লোম্যানের মৃত্যু (১৯৩০ খ্রি.) হয়। ঘটনার পর বিনয় গা ঢাকা দেন। লোম্যান হত্যাকাণ্ডের পর যুবকদের ওপর পুলিশি অত্যাচার চরমে ওঠে।

[2] সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনা: ইতিমধ্যে কারা বিভাগের ইনস্পেকটর জেনারেল কর্ণেল সিম্পসনের উদ্যোগে আলিপুর জেলে বন্দি সুভাষচন্দ্র-সহ বিভিন্ন নেতার ওপর চরম শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। ফলে বিনয় বসু সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সিম্পসন 

রাইটার্স বিল্ডিং-এ তার দফতরে বসতেন। এজন্য বিনয় বসু রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে সিম্পসনকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

[3] অভিযান: বিপ্লবী বিনয় বসুর নেতৃত্বে বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ৮ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে। অসংখ্য পুলিশের প্রহরা অতিক্রম করে তাঁরা নিমেষে সিম্পসনের দফতরের সামনে চলে যান এবং সিম্পসনের সহকারী জ্ঞান গুহকে ঠেলে দফতরে ঢুকে পড়েন যেখানে সিম্পসন কর্মরত। বিনয় মুহূর্তের মধ্যে বলে উঠলেন, “প্রে টু গড কর্নেল। ইওর লাস্ট আওয়ার হ্যাস কাম।” সঙ্গে সঙ্গে বিপ্লবীদের পিস্তলের ৬টি গুলি সিম্পসনের দেহ বিদীর্ণ করে দেয় এবং দেহটি মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে।

[4] অলিন্দ যুদ্ধ: বিপ্লবীরা পালাতে গেলে পুলিশ কমিশনার টেপার্টের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনী তাঁদের ঘিরে পালটা আক্রমণ চালায়। বিপ্লবীরাও গুলি চালাতে থাকে। দীনেশ গুলিবিদ্ধ হয়েও লড়াই চালিয়ে যান। রাইটার্স বিল্ডিং-এর বারান্দায় সংঘটিত উভয় পক্ষের এই লড়াই ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।

[5] মৃত্যু: বিপ্লবীদের গুলি ফুরিয়ে এলে তারা রাইটার্স বিল্ডিং-এর একটি ফাঁকা ঘরে ঢোকেন। সেখানে বাদল পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। বিনয় ও দীনেশ নিজেদের রিভলভারের শেষ দুটি গুলি নিজেদের মস্তিষ্কে চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে হাসপাতালে বিনয় নিজের মস্তিষ্কের ক্ষতস্থানে আঙুল চালিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। চিকিৎসায় দীনেশ সুস্থ হয়ে ওঠার পর তাঁর ফাঁসি হয়।

উপসংহার: বিনয়-বাদল-দীনেশের সীমাহীন দুঃসাহস ও আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বিরল। অলিন্দ যুদ্ধের ঘটনা ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের মনে গভীর আতঙ্কের সৃষ্টি করে। তারা উপলব্ধি করে যে, এদেশে ব্রিটিশদের জীবন মোটেই আর নিরাপদ নয়। এই বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গীতিকার মোহিনী চৌধুরীর ভাষায় বলা যায়, “মুক্তির মন্দির সোপানতলে, কত প্রাণ হল বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে।” ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম রাখা হয়েছে ‘বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ’ বা সংক্ষেপে বি-বা-ব্দী বাগ।

17. পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উত্তর: পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন

ভূমিকা: বিংশ শতকে পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ব্যাপক প্রসার ঘটে যা ব্রিটিশ সরকারের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। লালা হরদয়াল, অজিত সিং, সুফি অম্বাপ্রসাদ, রাসবিহারী বসু প্রমুখ বিপ্লবীর উদ্যোগে পাঞ্জাব বিপ্লবের অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়।

[1] সাহারাণপুর গুপ্তসমিতি: প্রবাসী বাঙালি জে এম চট্টোপাধ্যায় ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে কয়েকজন যুবককে সঙ্গে নিয়ে পাঞ্জাবের সাহারানপুরে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি গড়ে তোলেন। এই সমিতিতে 

পরবর্তীকালে লালা হরদয়াল, সর্দার অজিত সিং, সুফি অম্বাপ্রসাদ প্রমুখ বিপ্লবী যোগ দেন। লালা লাজপৎ রায় এই সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। অজিত সিং ও অম্বাপ্রসাদ কয়েকটি বিপ্লবী পত্রিকা প্রকাশ করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘স্বরাজ’,’ঝিঙ্গের-শিয়াল’ প্রভৃতি।

[2] আর্য সমাজের ভূমিকা: আর্য সমাজের সক্রিয় সহযোগিতায় পাঞ্জাবে বেশ কয়েকটি গুপ্তসমিতি গড়ে ওঠে। এসব সমিতির সদস্যরা বোমা তৈরি, অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ প্রভৃতি কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল। পাঞ্জাবের গভর্নর মাইকেল ও ‘ডায়ার জানান যে, ১৯০৭ থেকে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পাঞ্জাবের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের জন্য যে অসংখ্য হিন্দু অভিযুক্ত হয়েছিল তারা সকলেই আর্য সমাজের লোক ছিল।

[3] হরদয়ালের ভূমিকা: লালা হরদয়াল ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে লন্ডন থেকে ফিরে এসে পাঞ্জাবে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীদের সহায়তায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে ‘গদর পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতেও এর শাখা গড়ে ওঠে। পাঞ্জাব থেকে এই পার্টির সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘গদর’ প্রকাশিত হতে থাকে।

[4] রাসবিহারী বসুর ভূমিকা: প্রবাসী বাঙালি বিপ্লবী রাসবিহারী বসু পাঞ্জাবের বিভিন্ন বিপ্লবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বৈপ্লবিক আদর্শের প্রচার শুরু করেন। তাঁর পরামর্শে তাঁর অনুগামী বসন্ত বিশ্বাস দিল্লিতে বড়োলাট লর্ড হার্ডিঞ্জের শোভাযাত্রায় বোমা নিক্ষেপ করে। রাসবিহারীর পরিকল্পনা অনুযায়ী পাঞ্জাবের সহকারী পুলিশ কমিশনার গর্ডনকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাহোরের লরেন্স গার্ডেনে বিপ্লবীরা বোমা রাখেন। তিনি ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের গোপন পরিকল্পনা করেন। অবশ্য বাস্তবায়নের আগেই এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়।

[5] ভগৎ সিং-এর ভূমিকা: সাইমন কমিশন-বিরোধী আন্দোলনের সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে পাঞ্জাবের বিপ্লবী নেতা লালা লাজপৎ রায়ের মৃত্যু হয়। এর প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে বিপ্লবী ভগৎ সিং, রাজগুরু ও আজাদ পুলিশ অফিসার সন্ডার্সকে হত্যা (১৯২৮ খ্রি.) করেন। পরের বছর ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লি আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ করেন। পরে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ভগৎ সিং, রাজগুরু ও শুকদেবের ফাঁসি (১৯৩১ খ্রি.) হয়।

উপসংহার: পাঞ্জাবের বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। ফলে সরকার বিপ্লবীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন শুরু করে। ধীরে ধীরে পাঞ্জাবের বিপ্লবী আন্দোলনের গতি হ্রাস পায়।

18.* মহারাষ্ট্রের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উত্তর- মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন

ভূমিকা: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা, মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাবে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের যথেষ্ট প্রসার ঘটে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন ভারতের মুক্তি সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হয়।

[ 1] বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে: মহারাষ্ট্রের প্রখ্যাত বিপ্লবী ছিলেন বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে (১৮৪৫-৮৩ খ্রি.)। তিনি গুপ্ত বিপ্লবী দল গঠন করে যুবকদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবধারার প্রসার ঘটাতে থাকেন। তিনি ‘রামোসিস’ নামে অনুন্নত সম্প্রদায়ের যুবকদের অস্ত্রশিক্ষা দেন। বৈপ্লবিক কার্যাবলির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে তিনি রাজনৈতিক ডাকাতি, সরকারি কোষাগার লুঠ, ধনীদের কাছ থেকে বলপূর্বক অর্থ আদায় প্রভৃতি শুরু করেন। অবশেষে তিনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার (১৮৭৯ খ্রি.) হলে বিচারে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়।

[ 2] বালগঙ্গাধর তিলক: মহারাষ্ট্রে বিপ্লবী ভাবধারার প্রচারে চরমপন্থী নেতা বালগঙ্গাধর তিলকের (১৮৫৬-১৯২০ খ্রি.) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। তিনি মহারাষ্ট্রের গণপতি উৎসবের প্রচলন করে দেবতা গণেশকে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকদের হাত থেকে ভারতের উদ্ধারকারী হিসেবে তুলে ধরেন। এ ছাড়া শিবাজি উৎসবের প্রচলনের দ্বারা তিনি মারাঠা জাতিকে নিজেদের গৌরবময় অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি ‘কেশরী’ ও ‘মারাঠী’ নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশ করেন।

[3] চাপেকর ভ্রাতৃদ্বয়: দামোদর চাপেকর ও বালকৃয় চাপেকর নামে দুই ভাই মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনের দুই বীর সৈনিক ছিলেন। প্লেগ কমিশনার মি. র‍্যান্ড ও তাঁর সহকারী আয়ার্স্ট বোম্বাইয়ে প্লেগ রোগ দমনের সময় সাধারণ মানুষের ওপর ভয়ানক অত্যাচার শুরু করলে চাপেকর ভ্রাতৃদ্বয় অত্যাচারী র‍্যান্ড ও আয়ার্স্টকে হত্যা (১৮৯৭ খ্রি.) করে গা ঢাকা দেন। দুই বিশ্বাসঘাতকের সহায়তায় চাপেকর ভ্রাতৃদ্বয় পুলিশের হাতে ধরা পড়লে বিচারে তাঁদের প্রাণদণ্ড হয়। পরে দুই বিশ্বাসঘাতককে হত্যা করেন চাপেকরদের অপর ভাই বাসুদেব।

[4] বালসমাজ ও আর্যবান্ধব সমাজ: বিশ শতকের প্রথমার্ধে মহারাষ্ট্রে বেশ কয়েকটি বিপ্লবী গুপ্তসমিতি গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বালসমাজ ও আর্যবান্ধব সমাজ। নাগপুর, অমরাবতী, ওয়ার্ধা প্রভৃতি শহরে বালসমাজের কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়ে। আর্যবান্ধব সমাজ দেশে সশস্ত্র বিপ্লবী অভ্যুত্থান ঘটানোর উদ্দেশ্যে বিপ্লবীদের প্রস্তুত করতে থাকে।

[5] ঠাকুর সাহেব: ঠাকুর সাহেব নামে বিপ্লবী বিশ শতকে মহারাষ্ট্রে অতি সক্রিয় বিপ্লবী কার্যকলাপ চালান। তিনি গুপ্তসমিতি গড়ে তোলেন। তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিম ভারতে বিপ্লবী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।

[6] সাভারকার ভ্রাতৃদ্বয: মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন বিনায়ক দামোদর সাভারকার (১৮৮৩-১৯৬৬ খ্রি.) এবং তাঁর ভাই গণেশ সাভারকার। তাঁরা ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে নাসিকে মিত্রমেলা নামে একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করে সেখানকার তরুণদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবধারার প্রসার ঘটান। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ হয় অভিনব ভারত। সারা দেশে এর শাখা গড়ে ওঠে। বিনায়ক সাভারকার লন্ডনে গিয়ে বোমা তৈরির কৌশল, অস্ত্রশস্ত্র ও বিপ্লবীদের জীবনী রচনা করে ভারতে পাঠান। তাঁর অনুগামী বিপ্লবীরা বিচারক জ্যাকসনকে হত্যা করে। এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে বিনায়ক সাভারকারের যোগ থাকার সম্ভাবনায় পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ ২৬ বছর কারাদণ্ডের পর তিনি মুক্তি পান। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘বীর সাভারকার’ নামে পরিচিত।

উপসংহার: মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকার তীব্র দমননীতি গ্রহণ করে। নাসিক ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯১০ খ্রি.) বহু বিপ্লবীকে অভিযুক্ত ও গ্রেফতার করে তাদের আন্দোলনকে দুর্বল করা হয়। তা সত্ত্বেও মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন সারা দেশের বিপ্লবীদের মুক্তি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছিল তাতে সন্দেহ নেই।

19 * বিশ শতকে ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর: বিশ শতকে ভারতে ছাত্র আন্দোলন

ভূমিকা: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী (১৯০৫ খ্রি.), অহিংস অসহযোেগ (১৯২০ খ্রি.), আইন অমান্য (১৯৩০ খ্রি.), ভারত ছাড়ো (১৯৪২ খ্রি.) প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনগুলি সংঘটিত হয়। এসব আন্দোলনে ভারতের ছাত্রসমাজ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করে এবং অন্যান্য আন্দোলনেও তারা শামিল হয়।

[1] বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হলে ছাত্ররা ব্রিটিশদের স্কুলকলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে থাকে। তারা বিলিতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং করে, বিলিতি পণ্য বর্জন ও স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের প্রচার চালিয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলেন। এই সময় ডন সোসাইটি, অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রভৃতি ছাত্র সংগঠন গড়ে ওঠে।

[2] অসহযোগ আন্দোলন: অসহযোগ আন্দোলনে সারা দেশের ছাত্ররা শামিল হয়। বাংলা, আসাম, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার প্রভৃতি রাজ্যের ছাত্ররা বয়কট আন্দোলনকে তীব্র করে তোলে।

[3] আইন অমান্য আন্দোলন: আইন অমান্য আন্দোলনের ঢেউ সারা দেশের ছাত্রদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্ররাও নানাভাবে এই আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে।

[4] ভারত ছাড়ো আন্দোলন: বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ-সহ বিভিন্ন রাজ্যের ছাত্ররা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেয়। এলাহাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ও বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গ্রামে ঘুরে ঘুরে আন্দোলনের প্রচার চালায়। ছাত্র ধর্মঘট, পিকেটিং, সরকারি স্কুলকলেজ বর্জন প্রভৃতি চলতেই থাকে।

[5] অন্যান্য আন্দোলন: মূল ধারার আন্দোলনের বাইরে বহু ছাত্র,বিপ্লবী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে। ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকি, বাঘাযতীন প্রমুখ ছাত্র দুঃসাহসিক আন্দোলনে অংশ নেন। অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর গোষ্ঠী, ব্রতী সমিতি, সাধনা সমিতি, সুকৃত সমিতি প্রভৃতি সংগঠন ছাত্রদের বৈপ্লবিক কার্যকলাপে উৎসাহিত করে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের বিচার শুরু হলে এর বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে।

 উপসংহার: বিশ শতকে ভারতীয় ছাত্ররা ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের অনুরোভাগে থেকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করেছেন। শিল্পোলেনের মঘট, বিলাতি পণ্যের বিরুদ্ধে পিকেটিং, জাতীয়তাবাদী ও বিপ্লবী ভাবাধারার প্রচার ও প্রসার প্রভৃতি ক্ষেত্রে ছাত্রদের ভূমিকাই ছিল সর্বাধিক।

20. *বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে (১৯০৫-১১ খ্রি.) ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

ভূমিকা: বাঙালির ব্রিটিশ-বিরোধিতাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা প্রদেশকে দ্বিখন্ডিত করেন। এর বিরুদ্ধে যে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে ওঠে তাতে বাংলা তথা ভারতের ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

[1] শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ত্যাগ: এই সময় ছাত্রসমাজ উৎসাহের সঙ্গে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে এসে জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ভরতি হয়। আন্দোলনে ছাত্রদের উৎসাহ দেখে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, ছাত্ররা ছিল এই আন্দোলনের স্বনিয়োজিত প্রচারক।

[2] সংগঠন তৈরি: বিভিন্ন ছাত্র ও যুবনেতা ছাত্রদের সংগঠিত করে আন্দোলনে শামিল করেন। ছাত্রনেতা সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ডন সোসাইটি (১৯০২ খ্রি.), শচীন্দ্রনাথ বসু-এর অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি প্রভৃতি ছাত্রদের আন্দোলনে শামিল করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। কলকাতার বিভিন্ন কলেজের ছাত্র প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলে।

[3] বয়কট আন্দোলন: ছাত্ররা বিদেশি দ্রব্য বর্জন করে এবং বিলিতি লবণ, চিনি, কাপড় প্রভৃতি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালায়। তারা বিদেশি পণ্য বর্জনের জন্য প্রচার চালায় এবং বিদেশি পণ্যে অগ্নিসংযোগ করে। ছাত্ররা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে স্বদেশি পণ্য ব্যবহারের সপক্ষে প্রচার চালায়।

[4] সভা-সমাবেশ: ছাত্ররা স্কুলকলেজ থেকে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নেয়। ৭ আগস্ট প্রায় ৫ হাজার ছাত্র মিছিল করে টাউন হলের সভায় যোগ দেয়। এভাবে ছাত্র আন্দোলন যথেষ্ট শক্তিশালী হলেও ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই আন্দোলনে ভাটা পড়ে।

উপসংহার: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে ছাত্ররা ঝাঁপিয়ে পড়লেও এই আন্দোলনের শেষদিকে ছাত্র আন্দোলন গতি হারিয়ে ফেলে। ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, দেশীয় প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি না মেলা প্রভৃতি কারণে ছাত্ররা আবার ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থায় ফিরতে থাকে।

21.* কার্লাইল সার্কুলার কী?

উত্তর: কার্লাইল সার্কুলার

ভূমিকা: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গ করলে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে ছাত্ররা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

[1] প্রেক্ষাপট: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে প্রচুর ছাত্র সক্রিয়ভাবে যোগ দেওয়ায় সরকার বিব্রত হয়ে পড়ে।

[2 ] কার্লাইল সার্কুলার ঘোষণা: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী তীব্র ছাত্র আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে বাংলার সরকারের মুখ্য সচিব কার্লাইল এক ঘোষণা জারি করেন, যা কার্লাইল সার্কুলার (১৯০৫ খ্রি.) নামে পরিচিত।

[3] পদক্ষেপ: [1] এই সার্কুলারে বলা হয় যে-কোনো কলেজ সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করলে বা ছাত্ররা কলেজ ত্যাগ করলে সেই কলেজের সব ধরনের সরকারি সহায়তা বন্ধ করা হবে। (11) ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টররা।

[4] অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি: কার্লাইল সার্কুলারের তীব্র বিরোধিতায় কলকাতার রিপন কলেজের ছাত্রনেতা শচীন্দ্র প্রসাদ বসু অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি (নভেম্বর, ১৯০৫ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। এর সভাপতি ছিলেন কৃয় কুমার মিত্র এবং সম্পাদক ছিলেন শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু। এর উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের শামিল করা, সরকারি স্কুলকলেজ থেকে বিতাড়িত ছাত্রদের শিক্ষালাভের বিকল্প সুযোগ করে দেওয়া প্রভৃতি।

উপসংহার: স্বদেশি যুগে ছাত্র আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যে কার্লাহল সার্কুলারের মতো কালা কানুনও সম্পূর্ণ সাফল্য পায়নি। বরং এই সার্কুলার আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়ে ছাত্র আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করে। ছাত্ররা এই সার্কুলারে ভীত না হয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যায়।

22. *অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি সম্পর্কে টীকা লেখো।

অথবা, শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু স্মরণীয় কেন?

উত্তর- অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি

ভূমিকা: ছাত্রদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ- বিরোধী আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে বাংলার সরকারের মুখ্য সচিব আর ডব্লিউ কার্লাইল তীব্র দমনমূলক এক সার্কুলার জারি করেন যা কার্লাইল সার্কুলার নামে পরিচিত।

[1] প্রেক্ষাপট: ছাত্র আন্দোলন ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কার্লাইল সার্কুলার- এর দ্বারা সরকার ছাত্রদের মিটিং-মিছিল ও সভাসমিতি নিষিদ্ধ করে। পাশাপাশি ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি উচ্চারণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এই দমনমূলক ঘোষণার বিরুদ্ধে ছাত্রদের উদ্যোগে অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি (নভেম্বর, ১৯০৫ খ্রি.) গড়ে ওঠে।

[2] প্রতিষ্ঠা: কলকাতার রিপন কলেজের (বর্তমান সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) ছাত্রনেতা এবং সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু কার্লাইল সার্কুলার-এর বিরুদ্ধে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এর সভাপতি ছিলেন কৃয়কুমার মিত্র এবং সম্পাদক ছিলেন শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু।

[3] কার্যাবলি: এই সোসাইটির প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল-[i] ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ করে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাখা, [ii] ছাত্রদের উৎসাহিত করা, (iii) সরকারি স্কুলকলেজ থেকে বিতাড়িত বা শান্তিপ্রাপ্ত ছাত্রদের বিকল্প শিক্ষালাভের ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।

[4] সক্রিয়তা: অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির উদ্যোগে ব্রিটিশবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নতুন গতি আসে। শচীন্দ্রপ্রসাদ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে একটি পতাকারও নকশা করেন। তিনি নিয়মিত ছাত্রদের সংঘবদ্ধ করার কাজ চালিয়ে যান। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে সরকার তাঁকে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে গ্রেফতার করে রাওয়ালপিন্ডি জেলে বন্দি করে।

উপসংহার: কার্লাইল সার্কুলার ছিল বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দমনের উদ্দেশ্যে প্রণীত এক কালাকানুন। এর মোকাবিলা করে অ্যান্টি- সার্কুলার সোসাইটিই ছাত্রদের প্রকৃত বন্ধু হয়ে ওঠে। শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর উদ্যোগে গঠিত অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি বিতাড়িত ছাত্রদের বিকল্প পথের সন্ধান দিতে সক্ষম হয়।

23. *অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে (১৯২০-২২ খ্রি.) ভারতের ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর: অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ভারতের ছাত্র আন্দোলন

ভূমিকা: বিভিন্ন কারণে জাতীয় কংগ্রেস মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

[1] শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বর্জন: আন্দোলনে যোগ দিয়ে ছাত্ররা সরকারি স্কুলকলেজ ত্যাগ করে। এই সময় মাধ্যমিক স্তরে ১২ লক্ষ ৮১ হাজার ৮১০ জন এবং কলেজ স্তরে ৫২ হাজার ৪৮২ জন ছাত্র সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বেরিয়ে আসে বলে একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়।

[2] স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন: আন্দোলনের সময় কংগ্রেসের উদ্যোগে বেশ কিছু স্বদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গুজরাট বিদ্যাপীঠ, বারাণসী বিদ্যাপীঠ, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া প্রভৃতি।

[3] বয়কট আন্দোলন: ছাত্ররা বিদেশি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং চালায়, বিলিতি পণ্যে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিদেশি পণ্য বর্জনের প্রচার চালিয়ে বয়কট আন্দোলনকে জনপ্রিয় করে তোলে। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বোম্বাই-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ছাত্রদের বয়কট আন্দোলন খুবই জোরদার হয়ে ওঠে।

[4] আন্দোলনের প্রসার: ছাত্রদের বয়কট আন্দোলন বাংলায় খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসের মধ্যে কলকাতার বেশিরভাগ কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। কলকাতার বাইরেও ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক আকার নেয়।

উপসংহার: অসহযোগ আন্দোলনের সময় ছাত্র আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠলেও উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরা গ্রামে উত্তেজিত জনতা থানার ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারলে (১৯২২ খ্রি.) গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। ফলে ছাত্র আন্দোলনও ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং একমসয় আন্দোলন থেমে যায়।

24. *আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) ভারতের ছাত্র আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উত্তর: আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ভারতের ছাত্র আন্দোলন

ভূমিকা: মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ভারতের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন। এই আন্দোলনে ভারতের ছাত্রসমাজ আন্তরিকভাবে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে।

[1] বয়কট আন্দোলন: আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল হয়ে বিভিন্ন প্রদেশের ছাত্ররা তীব্র বয়কট আন্দোলন শুরু করে। তাদের উদ্যোগে বিলিতি পণ্য বর্জন, বিদেশি পণ্যের দোকানের সামনে পিকেটিং,বিদেশি পণ্যে অগ্নি-সংযোগ প্রভৃতি চলতে থাকে। গান্ধিজির নির্দেশের অপেক্ষা না করে বহু ছাত্র সরকারি স্কুলকলেজ ছেড়ে বেরিয়ে আসে।

[2] সক্রিয়তা: ছাত্ররা বিভিন্ন স্থানে ধর্মঘট শুরু করে। তারা জাতীয় পতাকার রং নিজেদের পোশাকে ব্যবহার করে পুলিশের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াতে থাকে। এই সময় বোম্বাই, গুজরাট, পাঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম প্রভৃতি প্রদেশে সক্রিয় ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়।

[3] আন্দোলনের প্রসার: গুজরাটের আমেদাবাদ, সুরাট ও খেদা জেলায় স্কুলকলেজের প্রচুর ছাত্র এই আন্দোলনে যোগ দেয়। আসামে শিক্ষা অধিকর্তা কানিংহামের স্বৈরাচারী নীতির বিরুদ্ধে সেখানকার ছাত্ররা প্রবল আন্দোলন শুরু করে। বাংলার শ্রীহট্ট জেলায় ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরীক্ষা এর ফলে বাতিল হয়ে যায়।

[4] আন্দোলনের অবসান: সরকারি বিভেদনীতি, উচ্চ ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ প্রভৃতির ফলে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আইন অমান্য আন্দোলন তার গতি হারাতে থাকে। গান্ধিজি ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করলে ছাত্র আন্দোলনও সাময়িকভাবে থেমে যায়।

উপসংহার: ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আইন অমান্য আন্দোলনে ভাটা পড়লেও ছাত্র আন্দোলনের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলতে থাকে। পরে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তা আবার অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে।

25.* ভারত ছাড়ো আন্দোলন বা আগস্ট আন্দোলন পর্বে (১৯৪২ খ্রি.) ভারতের ছাত্র আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উত্তর: ভারত ছাড়ো বা আগস্ট আন্দোলন পর্বে ভারতের ছাত্র আন্দোলন

ভূমিকা: নানা পরিস্থিতিতে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করার কথা ঘোষণা করেন। এর সঙ্গে সঙ্গে ছাত্ররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আন্দোলনে যোগ দেয়।

[1] নেতৃত্বহীনতা: ভারত ছাড়ো আন্দোলন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রসমাজ নিজেদের মতো করে আন্দোলন শুরু করে। বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, উড়িষ্যা প্রভৃতি প্রদেশে ছাত্ররা বিপুল সংখ্যায় আন্দোলনে শামিল হয়।

[2] উত্তরপ্রদেশে আন্দোলন: উত্তরপ্রদেশে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় ও বারাণসী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আন্দোলনের সপক্ষে প্রচার চালিয়ে সাধারণ মানুষকে আন্দোলনমুখী করে তোলে। ছাত্ররা বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজে যুক্ত হয়ে পড়ে। বারাণসীর ছাত্রদের সক্রিয়তায়। পাঁচ দিন ধরে সরকারি প্রশাসন স্বপ্ন হয়ে যায়।

[3] দক্ষিণ ভারতে আন্দোলন: দক্ষিণ ভারতে আন্দোলনরত ছাত্ররা ধর্মঘট চালাতে থাকে। গোদাবরীর তীরে ব্রিটিশ পুলিশ আন্দোলনরত পাঁচ জন ছাত্রকে গুলি করে হত্যা করে।

[4] অন্যান্য রাজ্যে আন্দোলন: বিহারে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষে ৭ জন ছাত্র মারা যায়। বাংলায় ছাত্র আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কলকাতা ও মেদিনীপুরের ছাত্ররাও অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে। গুজরাটে স্কুলপড়ুয়া বালক-বালিকাদের নিয়ে গড়ে ওঠে বানর সেনা নামে সংগঠন।

উপসংহার: ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল এক স্বতঃস্ফূর্ত জনজাগরণ। ছাত্রদের অংশগ্রহণ এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায়। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সাফল্য ছাত্রদের অংশগ্রহণের ওপর অনেকটাই  নির্ভরশীল ছিল।

26. বিংশ শতকে বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনের প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনের প্রসার

ভূমিকা: বিংশ শতকে ভারতে অহিংস আন্দোলনের পাশাপাশি সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনেও বাংলার ছাত্রসমাজ যোগ দেয়।

[1] বিপ্লবী সমিতি গঠন: বাংলায় সতীশচন্দ্র বসু, প্রমথনাথ মিত্র,পুলিনবিহারী দাস, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত, হেমচন্দ্র কানুনগো প্রমুখের উদ্যোগে বিভিন্ন বিপ্লবী গুপ্তসমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-[i] কলকাতার অনুশীলন সমিতি (১৯০৬ খ্রি.), যুগান্তর গোষ্ঠী, [ii] ঢাকার অনুশীলন সমিতি, মুক্তি সংঘ, [iii] ফরিদপুরের ব্রতী সমিতি, [iv] ময়মনসিংহের সাধনা। সমিতি ও সুহৃদ সমিতি প্রভৃতি।

[2] কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা: অত্যাচারী বিচারপতি কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি বোমা ছুঁড়ে ভুল করে মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যাকে হত্যা করেন। ত পরে প্রফুল্ল চাকি আত্মহত্যা করলেও ক্ষুদিরাম ধরা পড়ে ফাঁসিতে প্রাণ দেন (১৯০৮ খ্রি.)।

[3] বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে মামলা: বাংলার বহু বিপ্লবীর বিরুদ্ধে আলিপুর বোমা মামলা (১৯০৮ খ্রি.), ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা (১৯১০ খ্রি.), হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা (১৯১০ খ্রি.), বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলা (১৯১২- ১৩ খ্রি.) প্রভৃতি দায়ের করা হয়।

[4] মুখোমুখি যুদ্ধ: বিপ্লবী বাঘাযতীন উড়িষ্যার বালেশ্বরে গিয়ে জার্মানি থেকে অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা চালান। কিন্তু সেখানে বুড়িবালাম নদীর তীরে পুলিশের সঙ্গে যুদ্ধে (১৯১৫ খ্রি.) তিনি আহত হয়ে পরে মারা যান। এসময় মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের (১৯৩০ খ্রি.) ঘটনা ঘটে। বিপ্লবী বিনয়-বাদল-দীনেশ কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ (১৯৩০ খ্রি.) করেন, যা অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত।

উপসংহার: বিংশ শতকে বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকে বাংলার ছাত্ররা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে অত্যন্ত শক্তিশালী করেছিল। বস্তুত শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন যখন বিশেষ সাফল্য পাচ্ছিল না, তখন ছাত্রদের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনই ব্রিটিশদের আতঙ্কিত করতে সক্ষম হয়েছিল।

27. *আজাদ হিন্দ বাহিনীর বন্দি সেনাদের মুক্তির দাবিতে ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: বন্দি আজাদ হিন্দ সেনাদের মুক্তির দাবিতে ছাত্র আন্দোলন

ভূমিকা: স্বাধীনতার জন্য নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনী ভারতের ব্রিটিশ শক্তিকে আক্রমণ করে। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই যুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে বহু আজাদি সেনা ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হয়। তাঁদের মুক্তির দাবিতে ভারতে তীব্র ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়।

[1] বন্দি সেনাদের বিচারের প্রতিক্রিয়া: দিল্লির লালকেল্লায় সামরিক আদালতে বন্দি আজাদি সেনাদের বিচার শুরু হলে (৫ নভেম্বর, ১৯৪৫ খ্রি.)-এর প্রতিবাদে ছাত্ররা আন্দোলন শুরু করে।

[2] মিছিল ও অবরোধ: কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন বঙ্গীয় প্রাদেশিক ছাত্র কংগ্রেস, কমিউনিস্ট পার্টির ছাত্র সংগঠন ভারতের ছাত্র ফেডারেশন এবং ইসলামিয়া কলেজের (বর্তমান মৌলানা আজাদ কলেজ) প্রচুর ছাত্র ডালহৌসি স্কোয়ারের উদ্দেশ্যে মিছিল করে। কিন্তু পুলিশ মিছিল আটকে দিলে ছাত্ররা ধর্মতলা স্ট্রিট (বর্তমান লেনিন সরণি) অবরোধ করে।

[3] মিছিলে গুলি: ছাত্রদের জমায়েতে পুলিশ গুলি চালালে (২১ নভেম্বর) ক্যালকাটা টেকনিক্যাল স্কুলের রামেশ্বর চট্টোপাধ্যায় নামে এক ছাত্র নিহত হয় এবং বেশকিছু ছাত্র আহত হয়।

[4] ধর্মঘট: পুলিশের গুলিচালনার প্রতিবাদে কলকাতার ছাত্ররা ২২ ও ২৩ নভেম্বর ধর্মঘট পালন করে। বহু গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে পুলিশ আবার গুলি চালায়।

[5] গভর্নরের রিপোর্ট: বাংলার ছাত্র আন্দোলন এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে তৎকালীন গভর্নর তাঁর রিপোর্টে বড়োলাট ওয়াভেলকে লেখেন যে, “পরিস্থিতি খুবই বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক। ছাত্রদের ওপর গুলি চালালেও তারা দাঁড়িয়েই থাকছে, বড়োজোর একটু পিছিয়ে গিয়ে আবার আক্রমণ করছে।”

উপসংহার: আজাদ হিন্দ সেনাদের মুক্তির দাবিতে ভারতীয় ছাত্ররা যে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তা ব্রিটিশ শাসকদের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। ইংরেজ পুলিশের বন্দুকের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে দুঃসাহসী ছাত্রদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার তৎকালীন গভর্নর ব্যারন ক্যাসি সরকারকে এক রিপোর্টে লেখেন যে, “খুবই বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ছাত্রদের উপর গুলি চালালেও তারা দাঁড়িয়েই থাকছে….।”

28. *প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলায় সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলায় সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপ

ভূমিকা: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের শেষদিকে বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত খুবই সক্রিয় থাকে।

[1] গুপ্তসমিতি প্রতিষ্ঠা: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে বাংলার বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি বিপ্লবী গুপ্তসমিতি গড়ে ওঠে। যেমন, অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর সমিতি, মুক্তি সংঘ, ব্রতী সমিতি,

সাধনা সমিতি, সুহৃদ সমিতি প্রভৃতি ছাত্রদের বৈপ্লবিক ভাবধারায় অনুপ্রাণিত করে।

[2] মানিকতলায় বোমার কারখানা: হেমচন্দ্র কানুনগো রাজনৈতিক ও সামরিক শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে বিদেশে যান। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্বদেশে ফিরে এসে মানিকতলায় একটি বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন করেন।

[3] কিংসফোর্ডকে হত্যার চেষ্টা: অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গ বিচারপতি কিংসফোর্ডকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে বোমা নিক্ষেপ করেন। কিন্তু ভুলবশত সেই বোমার আঘাতে মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যা নিহত হন। পরে প্রফুল্ল চাকি গুলিতে আত্মহত্যা করেন এবং ক্ষুদিরাম ধরা পড়লে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে (১১ আগস্ট) তাঁর ফাঁসি হয়।

[4] ষড়যন্ত্র মামলা: আলিপুর বোমার মামলায় (১৯০৮ খ্রি.) বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, উল্লাসকর দত্ত প্রমুখের দ্বীপান্তর হয়। এ ছাড়া ঢাকা ষড়যন্ত্র মামলা (১৯১০ খ্রি.), হাওড়া ষড়যন্ত্র মামলা (১৯১০ খ্রি.), বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলা (১৯১২-১৩ খ্রি.) প্রভৃতির দ্বারাও বহু বিপ্লবীকে সাজা দেওয়া হয়।

[5] বুড়িবালামের যুদ্ধ: বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (বাঘাযতীন) জার্মানি থেকে আসা অস্ত্র সংগ্রহ করতে উড়িষ্যায় গেলে সেখানে বালেশ্বরের বুড়িবালামের যুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে আহত হন এবং পরে মারা যান।

উপসংহার: ইংরেজদের প্রচণ্ড দমনপীড়নের ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত গোপনে বাংলার সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপ চলেছিল। এই পর্বে ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকি, বাঘা যতীন প্রমুখর আত্মাহুতি ও বলিদান দুঃখজনক হলেও তা বহু তরুণকে স্বাধীনতা সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছিল।

29. *বিপ্লবী আন্দোলনে ক্ষুদিরামের অবদান কী ছিল? অথবা, ভারতের ইতিহাসে ক্ষুদিরাম বসু স্মরণীয় কেন?

উত্তর: ক্ষুদিরামের অবদান/ক্ষুদিরামের স্মরণীয় হওয়ার কারণ

ভূমিকা: ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে অসামান্য আত্মত্যাগের নজির রেখেছেন বাংলার অগ্নিপুত্র ক্ষুদিরাম বসু (১৮৮৯-১৯০৮ খ্রি.)।

[1] বিপ্লবী জীবনের সূচনা: ক্ষুদিরাম বসু ছাত্রাবস্থায় তাঁর শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত হন এবং বৈপ্লবিক কাজ করার উদ্দেশ্যে যুগান্তর দলে যোগ দেন। তিনি পুলিশ কর্তাদের ওপর বোমা হামলার (১৯০৫ খ্রি.) দায়ে তিন বছর জেলে কাটান। ছাড়া পেয়ে যুগান্তর দলের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে তিনি ট্রেন-ডাকাতিতে (১৯০৭ খ্রি.) অংশ নেন।

[2] কিংসফোর্ডকে হত্যার প্রচেষ্টা: যুগান্তর দলের বারীন্দ্র কুমার ঘোষ প্রফুল্ল চাকি ও ক্ষুদিরাম বসুর হাতে অত্যাচারী কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব দেন। ইতিমধ্যে কিংসফোর্ড বদলি হয়ে কলকাতা থেকে মুজফফরপুর চলে গেলে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি মুজফফরপুর যান। সেখানে তাঁরা বোমা মেরে কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলবশত মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যাকে হত্যা করেন।

[3] ফাঁসি: কেনেডি হত্যার পর প্রফুল্ল চাকি আত্মহত্যা করলেও ক্ষুদিরাম ধরা পড়েন। বিচারে (আলিপুর বোমা মামলা, ১৯০৮ খ্রি.) তাঁর ফাঁসি (১১ আগস্ট, ১৯০৮ খ্রি.) হয়। তিনি ভয়লেশহীনভাবে ফাঁসির দড়ি গলায় পড়েন।

[4] প্রেরণা: ক্ষুদিরাম তাঁর জীবন উৎসর্গ করে প্রমাণ করেন যে, জীবনের চেয়ে মৃত্যু মহান। তাই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশবাসী যে- কোনো মূল্য দিতে প্রস্তুত। তিনি দুঃসাহসিক কাজকর্ম এবং আত্মত্যাগের যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তা দেশের তরুণ সমাজকে বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ করে।

উপসংহার: স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ক্ষুদিরামের আত্মবলিদান ইতিহাসের এক বিরল দৃষ্টান্ত। তাঁর মৃত্যুতে ভারতীয় যুবমানসে যে আগুন জ্বলে ওঠে, তা কিছুকালের মধ্যে দাবানলের সৃষ্টি করে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে বেগবতী করে।

30. *বিপ্লবী আন্দোলনে প্রফুল্ল চাকির অবদান কী ছিল? অথবা, ভারতের ইতিহাসে প্রফুল্ল চাকি স্মরণীয় কেন?

উত্তর: প্রফুল্ল চাকির অবদান/প্রফুল্ল চাকি স্মরণীয় হওয়ার কারণ

ভূমিকা: ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনে যাঁরা অসামান্য আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলার অগ্নিপুত্র প্রফুল্ল চাকি (১৮৮৮-১৯০৮)।

[1] বিপ্লবী জীবনের সূচনা: প্রফুল্ল চাকি ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে বান্ধব সমিতি-তে যোগ দিয়ে বৈপ্লবিক কাজ শুরু করেন। স্বদেশি আন্দোলনের সময় তিনি রংপুরের জাতীয় বিদ্যালয়ের ছাত্রদের লাঠিখেলা ও মুষ্ঠিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেন। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবী বারীন্দ্র কুমার ঘোষ প্রফুল্লর ওপর পূর্ববঙ্গের ছোটোলাট ব্যামফিল্ড ফুলারকে হত্যার দায়িত্ব দেন।

[2] কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব: যুগান্তর দলের বারীন্দ্র কুমার ঘোষ প্রফুল্ল চাকি ও ক্ষুদিরাম বসুর হাতে অত্যাচারী ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার দায়িত্ব দেন। ইতিমধ্যে কিংসফোর্ড বদলি হয়ে কলকাতা থেকে মুজফফরপুর চলে গেলে ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল মুজফফরপুর যান। সেখানে কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে ভুলবশত মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যাকে তাঁরা বোমার আঘাতে হত্যা করেন।

[3] আত্মহত্যা: কেনেডি হত্যার পর ধরা পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিলে প্রফুল্ল চাকি নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেন। অবশ্য পরে ক্ষুদিরাম ধরা পড়লে বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।

উপসংহার: দেশপ্রেমিক প্রফুল্ল চাকির মৃত্যু বাংলার যুবসমাজকে নতুন করে সক্রিয় করে তোলে। নন্দলাল নামে যে পলিশ ইনস্পেকটর প্রফুল্লকে করিয়ে দিয়েছিল, তাকে হত্যা করেন রণেন গাঙ্গুলি ও শ্রীশচন্দ্র পামিরাকে দুই বিপ্লবী।

31. *বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে অনুশীলন সমিতির কী ভূমিকা ছিল?

উত্তর: বিপ্লবী আন্দোলনে অনুশীলন সমিতির ভূমিকা

ভূমিকা: বিংশ শতকের শুরুতে বাংলায় বেশ কয়েকটি বিপ্লবী গুপ্তসমিতি গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অনুশীলন সমিতি।

[1] প্রতিষ্ঠা: অনুশীলন সমিতি ছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুশীলন তত্ত্বের আদর্শে গঠিত বাংলার একটি সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন। আইনজীবী প্রমথনাথ মিত্র (পি মিত্র)-এর সহায়তায় বিপ্লবী সতীশচন্দ্র বসু ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ কলকাতার ১২, মদন মিত্র লেনে এই সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

[2] সদস্যবৃন্দ: তৎকালীন বাংলার বহু বিপ্লবী অনুশীলন সমিতির সদস্য ছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ, চিত্তরঞ্জন দাশ, শশীভূষণ রায়চৌধুরী, যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

[3] কার্যাবলি: অনুশীলন সমিতির প্রধান লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা অর্জন। এই উদ্দেশ্যে অনুশীলন সমিতির সদস্যদের লাঠিখেলা, ব্যায়াম প্রভৃতির প্রশিক্ষণ চলত। সেই সঙ্গে গোপনে বোমা তৈরি, অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণ, অত্যাচারী ব্রিটিশ কর্মচারীদের হত্যার পরিকল্পনা চলত।

[4] বিভিন্ন শাখা: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে অনুশীলন সমিতির সক্রিয়তা বহুগুণ বেড়ে যায়। এই সময় ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, রাজশাহি, রংপুর, চট্টগ্রাম প্রভৃতি জেলায় এই সমিতির শাখা গড়ে ওঠে। বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের উদ্যোগে ঢাকার অনুশীলন সমিতি (১৯০৬ খ্রি.) খুবই শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

উপসংহার: বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনকে সফল করে তোলার জন্য অর্থের প্রয়োজন ছিল। অনুশীলন সমিতির সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ডাকাতির মাধ্যমে এই অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করতেন। পরাধীন দেশমাতার মুক্তির উদ্দেশ্যে একাজ অন্যায় ছিল না।

32.*টীকা লেখো: আলিপুর বোমার মামলা।

উত্তর: আলিপুর বোমার মামলা

ভূমিকা: বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি মুজফ্ফরপুরে গিয়ে বোমা ছুঁড়ে অত্যাচারী ইংরেজ ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে মারতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ভুলবশত তাঁরা মিসেস কেনেডি ও তাঁর কন্যাকে হত্যা করে ফেলেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ নানা স্থানে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে।

[1] গ্রেফতার: পুলিশ বিপ্লবীদের গোপন ঘাঁটি মুরারিপুকুর বাগানবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বোমা তৈরির কারখানা, বহু তাজা বোমা ও অস্ত্রশস্ত্র  খুঁজে পায়। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে পুলিশ অরবিন্দ ঘোষ ও তাঁর ভাই বারীন্দ্র কুমার ঘোষ-সহ ৪৭ জন বিপ্লবীকে গ্রেফতার করে।

[2] মামলার সূচনা: পুলিশ গ্রেফতার হওয়া বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২১ মে আলিপুর সেশন আদালতে মামলা শুরু করে। এটি আলিপুর বোমার মামলা নামে পরিচিত। এই মামলাটিই ছিল ভারতীয় বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের প্রথম ষড়যন্ত্র মামলা।

[3] বিচারপতি: আলিপুর বোমার মামলার বিচারপতি ছিলেন ইংল্যান্ডে অরবিন্দের ছাত্রজীবনের সহপাঠী পি সি বিচ ক্রফট। এ ছাড়া ছিলেন লাথুনিপ্রসাদ ও জানকিপ্রসাদ নামে দুজন ভারতীয় বিচারপতি।

[4] বিচারের রায়: ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে আলিপুর বোমার মামলার রায় বেরোয়। এই রায়ে বারীন্দ্র কুমার ঘোষ ও উল্লাসকর দত্তর মৃত্যুদণ্ড, হেমচন্দ্র কানুনগো, অবিনাশ ভট্টাচার্য, ইন্দুভূষণ রায়-সহ বিভিন্ন বিপ্লবীর বিভিন্ন মেয়াদের দ্বীপান্তর হয়। পরে আবেদনের ভিত্তিতে বারীন্দ্র ও উল্লাসকরের মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর হয়। অরবিন্দ ঘোষ মুক্তি পান।

উপসংহার: আলিপুর বোমার মামলার ঘটনা বাংলার বিপ্লববাদকে আরও সক্রিয় করে তোলে। এই মামলার সঙ্গে যুক্ত সরকারি আইনজীবী আশুতোষ বিশ্বাস ও পুলিশ ইনস্পেকটর সামসুল আলম খুন হন। কানাইলাল দত্ত ও সত্যেন বসু বিশ্বাসঘাতক বিপ্লবী নরেন গোঁসাইকে জেলের ভেতরেই হত্যা করেন।

33. *টীকা লেখো: বুড়িবালামের যুদ্ধ (১৯১৫ খ্রি.)।

অথবা, ইতিহাসে বাঘাযতীন স্মরণীয় কেন?

উত্তর: বুড়িবালামের যুদ্ধ/বাঘাযতীন

ভূমিকা: বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে বীর বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৭৯-১৯১৫ খ্রি.) অর্থাৎ বাঘাযতীনের মতো আত্মত্যাগের কাহিনি ইতিহাসে বিরল। জানা যায়, যতীন্দ্রনাথ প্রথম জীবনে একটি বাঘ হত্যা করায় তিনি বাঘাযতীন নামে পরিচিত হন।

[1] অস্ত্র লুণ্ঠন: যতীন্দ্রনাথ রডা কোম্পানির ৫০টি মাউজার পিস্তল ও ৪৬ রাউন্ড কার্তুজ লুঠ করেন।

[2] অস্ত্র আমদানির পরিকল্পনা: বাঘাযতীন বিদেশ থেকে অস্ত্র এনে ভারতে এক সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী তিনি জার্মানির কনসালের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনটি অস্ত্রবোঝাই জাহাজ ভারতে আনার উদ্যোগ নেন। তাঁর অনুগামী চিত্তপ্রিয় রায়চৌধুরী, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত, জ্যোতিষ পাল, নীরেন দাশগুপ্ত প্রমুখ বিপ্লবী উড়িষ্যার বালেশ্বরে উপস্থিত হন।

[3] যুদ্ধ: অস্ত্র আমদানির খবর পেয়ে পুলিশবাহিনী বিপ্লবীদের ঘিরে ফেলে। সেখানে বুড়িবালামের তীরে পুলিশের সঙ্গে বিপ্লবীদের তীব্র গুলির লড়াই চলে। এই সময় বাঘাযতীন গুলিবিদ্ধ হন। ৯ সেপ্টেম্বর

(১৯১৫ খ্রি.) সূর্যাস্তের সঙ্গে বুড়িবালামের যুদ্ধও শেষ হয়।

[4] মৃত্যু: ১০ সেপ্টেম্বর বালেশ্বর হাসপাতালে বাঘাযতীনের প্রচুর রক্তবমি হয়। এর কিছুক্ষণ পরে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পূর্বে নিজের রক্ত দেখে তিনি হেসে বলেন- “এত রক্ত ছিল শরীরে? ভাগ্যক্রমে, প্রতিটি বিন্দু অর্পণ করে গেলাম দেশমাতার চরণে।”

উপসংহার: দেশমাতার মুক্তির উদ্দেশ্যে বাঘাযতীনের নির্ভীক আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। এই আত্মত্যাগ সম্পর্কে কবিগুরুর ভাষায় বলা যায়-“নিঃশেষ প্রাণ, যে করিবে দান, ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই।” তাঁর আত্মত্যাগ তরুণ বিপ্লবীদের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে আরও উৎসাহিত করে।

34. টীকা লেখো: লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা (১৯১৫ খ্রি.)।

উত্তর: লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা

ভূমিকা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ভারতের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ব্যাপক প্রসার ঘটে। বিশ্বযুদ্ধ শুরু (১৯১৪ খ্রি.) হলে বিপ্লবী রাসবিহারী বসু গদর পার্টির সদস্যদের সহায়তায় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করেন।

[1] মামলার সূচনা: রাসবিহারী বসুর নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের দিন নির্ধারিত হয় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি। কৃপাল সিং নামে গদর পার্টির এক সদস্য বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের কাছে এই পরিকল্পনা ফাঁস করে দেন। এরপর পুলিশ বহু বিপ্লবীকে গ্রেফতার করে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রথম লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা (১৯১৫ খ্রি.) শুরু করে।

[2] অভিযুক্ত: লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় ২৯১ জন বিপ্লবীকে অভিযুক্ত করা হয়। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রাসবিহারী বসু, বিষুগণেশ পিংলে, ভাই পরমানন্দ, কর্তার সিং, হরনাম সিং প্রমুখ।

[3] সাজা: অভিযুক্ত বিপ্লবীদের বিভিন্ন ধরনের সাজা ঘোষণা করা হয়। বিষুগণেশ পিংলে, কর্তার সিং, হরনাম সিং-সহ বেশ কয়েকজন বিপ্লবীর ফাঁসি হয়। এ ছাড়া, ১১৪ জনের যাবজ্জীবন এবং ৯৩ জনের বিভিন্ন মেয়াদী কারাদণ্ড হয়। ৪২ জন বিপ্লবী নিরপরাধ বলে মুক্তি পান। মামলায় প্রধান অভিযুক্ত রাসবিহারী বসু পি এন ঠাকুর ছদ্মনামে সমুদ্রপথে জাপানে পালিয়ে যান।

উপসংহার: লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার বিপ্লবী কর্মকাণ্ড দমন করতে তীব্র নিপীড়ন চালায়। ফলে আপাতত পাঞ্জাবে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড যথেষ্ট ব্যাহত হয়।

35. *১৯২০ দশকের শেষদিকে, বিশেষ করে আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে বাংলায় সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপের পরিচয় দাও।

উত্তর: আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে বাংলায় সশস্ত্র বৈপ্লবিক কার্যকলাপ

ভূমিকা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন কিছুদিনের জন্য দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু বিশ শতকের দুইয়ের দশকের শেষদিকে, বিশেষ করে আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে এই আন্দোলন আবার যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে।

[1] চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন: মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত-সহ ৬৫ জন বিপ্লবী চট্টগ্রাম অস্ত্রাগারে অভিযান (১৮এপ্রিল, ১৯৩০ খ্রি.) চালিয়ে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র লুঠ করেন। তাঁরা পুলিশ লাইন, ডাক ও তার অফিস আক্রমণ করেন। লুণ্ঠনের পর জালালাবাদ লাইনড়ে বিপ্লবীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল যুদ্ধে একজন বিপ্লবী মারা গেলেও সূর্য সেন-সহ বাকিরা পালাতে সক্ষম হন। পরে ধরা পড়লে সূর্য সেনের ফাঁসি (১৯৩৪ খ্রি.) হয়।

[2 ] ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ: সূর্য সেনের নির্দেশে এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের নেতৃত্বে শান্তি চক্রবর্তী, কালীকিঙ্কর দে প্রমুখ বিপ্লবী ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামের পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন। শেষপর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা না দিয়ে প্রীতিলতা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

[3] রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ: বিপ্লবী বিনয়-বাদল-দীনেশ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে (৮ ডিসেম্বর) কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং আক্রমণ করে কুখ্যাত জেল অধিকর্তা সিম্পসনকে হত্যা করেন। বিশাল পুলিশবাহিনী বিপ্লবীদের ওপর পালটা আক্রমণ চালালে ভবনের বারান্দায় উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গুলির লড়াই চলে যা ‘অলিন্দ যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। বাদল লড়াই শেষে ধরা না দিয়ে আত্মহত্যা করেন, বিনয় পরে হাসপাতালে মারা যান এবং দীনেশের ফাঁসি হয়।

[4] জ্যাকসনকে গুলি: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে (১৯৩২ খ্রি.) গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসন বক্তৃতা দিতে শুরু করলে বীণা দাস তাকে লক্ষ করে গুলি চালাতে থাকেন। কিন্তু তাঁর গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। বীণা গ্রেপ্তার হন। বিচারে তাঁর ৯ বছর সশ্রম কারাদণ্ড হয়।

উপসংহার: ১৯২০-এর আইন অমান্য আন্দোলনের সময় ভারতে বিপ্লবী আন্দোলন খুব সক্রিয় ছিল। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনের মূল ধারা থেকে গেলেও বাংলায় বিপ্লববাদের আগুন ক্রমশ প্রসারিত হতে থাকে। পরবর্তী এক দশকে বাংলার বিভিন্ন বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড তারই প্রমাণ।

36. *গদর পার্টি সম্পর্কে কী জানো সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: গদর পার্টি

ভূমিকা: ‘গদর’ শব্দের অর্থ হল ‘বিপ্লব’। ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী বৈপ্লবিক আন্দোলনের ইতিহাসে ‘গদর পার্টি’র অবদান অসামান্য।

[1] প্রতিষ্ঠা: আমেরিকার প্রবাসী বিপ্লবী মোহন সিং ভাকনার সহায়তায় বিপ্লবী লালা হরদয়াল ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে গদর পার্টির প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রায় ১৫ হাজার প্রবাসী ভারতীয় গদর পার্টির সদস্য হন। এই পার্টির প্রথম সভাপতি ছিলেন মোহন সিং ভাকনা, সহ-সভাপতি ছিলেন মহম্মদ বরকতুল্লা এবং সম্পাদক ছিলেন লালা হরদয়াল।

[2] পত্রিকা প্রকাশ: গদর পার্টি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর ‘গদর’ পত্রিকা নামে দলের মুখপত্র প্রকাশ করে। পত্রিকায় হিন্দি, ইংরেজি, গুজরাটি, উর্দু প্রভৃতি ভাষায় বিপ্লবী আদর্শের প্রচার চালানো হয়।

[3] বিপ্লবের প্রসার: ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সেই সুযোগে গদর পার্টি বৈপ্লবিক কর্মকান্ডের দ্বারা ভারতের ব্রিটিশ শাসনকে উৎখাত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এই উদ্দেশ্যে আমেরিকা, কানাডা থেকে পার্টির বহু সদস্য ভারতে ফিরতে শুরু করেন।

[4] অভ্যুত্থানের চেষ্টা: বিপ্লবী রাসবিহারী বসু গদর পার্টির সদস্যদের সহায়তায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু কৃপাল সিং নামে জনৈক  বিশ্বাসঘাতক ইংরেজদের কাছে এই পরিকল্পনার খবর ফাঁস করে দিলে তা ব্যর্থ হয়।

[5]  ষড়যন্ত্র মামলা: মার্কিন সরকার লালা হরদয়ালকে নৈরাজ্যবাদী বলে ঘোষণা করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করে। ফলে তিনি আমেরিকা থেকে সুইজারল্যান্ডে চলে যান। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার গদর পার্টির বিরুদ্ধে হিন্দু ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে।

[6] পার্টি নিষিদ্ধকরণ: মামলার পর সরকার গদর পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

উপসংহার: ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে গদর পার্টি এক নতুন বৈপ্লবিক মাত্রা যোগ করে। এই প্রচেষ্টা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন গতি এনে দেয়। ভারতের স্বাধীনতা লাভই ছিল এই পার্টির মূল লক্ষ্য। তাই ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর এই পার্টির আর প্রয়োজন না থাকায় এটি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হয়।

37. *জার্মানিতে ভারতীয় বিপ্লবীদের কার্যকলাপ কীরূপ ছিল?

উত্তর: জার্মানিতে ভারতীয় বিপ্লবীদের কার্যকলাপ

ভূমিকা: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে প্রবাসী ভারতীয়রা জার্মানিতে সক্রিয়ভাবে বিপ্লবী কার্যকলাপ শুরু করে।

[1] বার্লিন কমিটি গঠন: ভারতের বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে ‘বার্লিন কমিটি’ নামে একটি বিপ্লবী সংগঠন গড়ে ওঠে। এর উল্লেখযোগ্য কয়েকজন সদস্য ছিলেন বিপ্লবী ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, রাজা মহেন্দ্রপ্রতাপ প্রমুখ। এই কমিটির প্রধান লক্ষ্য ছিল বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ভারতীয় বিপ্লবীদের সহায়তা করা।

[2] বার্লিন কমিটির কর্মসূচি: বার্লিন কমিটি বিভিন্ন বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়। [i] এই কমিটির উদ্যোগে ইরানে একটি বৈপ্লবিক অভ্যুত্থান ঘটে। [ii] বার্লিন কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার কমিউনিস্ট নেতা লেনিনের সঙ্গে দেখা করেন। [iii] শেখ মাহমদুল হাসান, মৌলানা আবদুল্লা প্রমুখ কাবুল থেকে ভারতের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রচার চালান।

[3] ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স কমিটি গঠন: জার্মানির প্রবাসী ভারতীয় বিপ্লবীরা ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ‘জার্মান ইউনিয়ন অব ফ্রেন্ডলি ইন্ডিয়া’ প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে এই সমিতির সঙ্গে আমেরিকার গদর দলের সংযোগ স্থাপিত হলে এর নাম হয় ‘ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্ট কমিটি’ (১৯১৫ খ্রি.)।

উপসংহার: বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ইউরোপীয় জোট রাজনীতিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জার্মানি অবস্থান করত। তাই ভারতে ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতীয় বিপ্লবীরা সে দেশের সরকারের কাছ থেকে বাধা নয়, বরং বিভিন্ন সময় সহায়তা পেয়েছিল।

38.* ভগৎ সিং ইতিহাসে স্মরণীয় কেন?

উত্তর: ভগৎ সিং

ভূমিকা: বিপ্লবী ভগৎ সিং নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে আত্মত্যাগের যে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তা দেশবাসীকে মুগ্ধ করে।

[1] বিপ্লবের সূচনা: ভগৎ সিং কৈশোরেই বিপ্লবী ভাবধারায় আকৃষ্ট হন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে সরকারি স্কুল-বই ও বিলিতি পোশাক পুড়িয়ে ফেলেন।

[2] নেতৃত্বের সূচনা: ভগৎ সিং ‘হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন’-এর সদস্য হওয়ার পরপরই এই দলের নেতৃত্ব দেন। পরে এই সংগঠনের ব্যাপক পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় ‘হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন’। ভগৎ সিং ‘নওজওয়ান ভারত সভা’, ‘কীর্তি কিষান পার্টি’ প্রভৃতি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে বিপ্লবীদের সংঘবদ্ধ করতে থাকেন।

[3] সন্ডার্সকে হত্যা: সাইমন কমিশন-বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের লাঠির আঘাতে লালা লাজপৎ রায়ের মৃত্যু হয়। এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ভগৎ সিং, রাজগুরু ও আজাদ পুলিশ অফিসার সন্ডার্সকে হত্যা করেন।

[4] আইনসভায় বোমা: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত দিল্লি আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ করেন। এরপর তাঁরা ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক’, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’ জাতীয় নানা স্লোগান দিতে দিতে পুলিশের হাতে ধরা দেন। জেলে থাকার সময় ব্রিটিশ ও ভারতীয় বন্দিদের মধ্যে সমানাধিকারের দাবিতে ভগৎ সিং টানা ৬৪ দিন অনশন চালান।

উপসংহার: লাহোর ষড়যন্ত্র মামলার (১৯২৯ খ্রি.) রায়-এ ভগৎ সিং-সহ রাজগুরু ও শুকদেবের ফাঁসি হয়। ফাঁসির আগে ভগৎ সিংকে জানানো হয়, আর মাত্র আড়াই ঘণ্টা বাকি। ভগৎ সিং বললেন, “আড়াই ঘণ্টা কেন! এখনই নিয়ে চলো! আমরা তো প্রস্তুত হয়েই আছি।”

39.* টীকা লেখো: বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স।

উত্তর:বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স

ভূমিকা: অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.) ব্যর্থ হওয়ার পরে ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ নামের সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

[1] প্রতিষ্ঠা: ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশন বসে। এখানে কংগ্রেস সভাপতি মতিলাল নেহরুকে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানানোর উদ্দেশ্যে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রেরণায় ও সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে একটি স্বেচ্ছাসেবকবাহিনী গঠিত হয়। এর নাম হয় ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ বা সংক্ষেপে ‘বি ভি’।

[2] নেতৃত্ব: বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এর প্রধান নির্দেশক বা GOC ছিলেন সুভাষচন্দ্র এবং প্রধান পরিচালক ছিলেন সত্য গুপ্ত। সত্য গুপ্ত সারা বাংলা ঘুরে ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’-কে একটি শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার বিভিন্ন স্থানে এর শাখা গড়ে ওঠে।

[3] দেশপ্রেম: বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্যদের স্বদেশপ্রেম ছিল অত্যন্ত গভীর। সমকালীন বহু পুরুষ ও নারী বিপ্লবী বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স-এ যোগ দেয়। এর বিপ্লবী সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত, গণেশ ঘোষ প্রমুখ।

[4] উদ্যোগ: বি ভি-র চরিত্র ছিল সামরিক। [i] ভারতের স্বাধীনতার লক্ষ্যে সদস্যদের যে-কোনো আত্মত্যাগের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করা হয়। [ii] তাঁরা বিপ্লবীদের অস্ত্র-প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। পার্ক সার্কাস অঞ্চলে এই সামরিক প্রশিক্ষণ চলত। [iii] তাঁরা কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারদের হত্যার পরিকল্পনা করেন। [iv] তাঁদের হাতে ডগলাস, বার্জ ও পেডি নামে তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হন।

উপসংহার: বাংলায় অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পরবর্তী সময়ে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই সময় তাদের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপগুলি ছিল-যুবকদের মধ্যে আত্মত্যাগের মানসিকতা তৈরি করা, তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া, অত্যাচারী পুলিশ কমিশনারদের হত্যা করা প্রভৃতি।

40. *বিনায়ক দামোদর সাভারকার সম্পর্কে কী জান?

উত্তর- বিনায়ক দামোদর সাভারকার

ভূমিকা: ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী দামোদর বিনায়ক সাভারকারের (১৮৮৩-১৯৬৬ খ্রি.) অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

[1] মিত্রমেলা: ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে সাভারকার মহারাষ্ট্রে ‘মিত্রমেলা’ নামে একটি সমিতি গড়ে তোলেন। যুবকদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবধারার প্রসার এবং তাঁদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া এই সমিতির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।

[2] অভিনব ভারত: দামোদর সাভারকারের ভাই গণেশ সাভারকার ইটালির নেতা ম্যাৎসিনির ‘ইয়ং ইতালি’ সংগঠনটির অনুকরণে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে মিত্রমেলার নামকরণ করেন ‘অভিনব ভারত’। এর লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা অর্জন।

[3] ভারতে কার্যকলাপ: সাভারকারের আদর্শে সারা দেশে ‘অভিনব ভারত’-এর বিভিন্ন শাখা গড়ে ওঠে। এর সদস্যদের মধ্যে বিপ্লবী ভাবধারার প্রচার, শরীরচর্চা, লাঠি খেলা প্রভৃতির প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের লড়াইয়ে অংশগ্রহণের যোগ্য করে তোলা হত।

[4] লন্ডনে কার্যকলাপ: সাভারকার লন্ডনে গিয়ে সেখান থেকে বোমা তৈরির কৌশল, অস্ত্রশস্ত্র এবং বিপ্লবীদের জীবনী রচনা করে ভারতীয় বিপ্লবীদের জন্য পাঠান। তাঁর অনুগামী বিপ্লবীরা বিচারক জ্যাকসনকে হত্যা করেন।

 [5] কারাদণ্ড: জ্যাকসন হত্যাকান্ডের সঙ্গে যোগ সন্দেহে পুলিশ সাভারকারকে গ্রেফতার করে। দীর্ঘ ২৬ বছর কারাদণ্ডের পর তিনি মুক্তি পান।

উপসংহার: সাভারকার ছিলেন পাকিস্তানপন্থী মুসলিম-বিরোধী হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। হিন্দু মহাসভার সভাপতি সাভারকার হিন্দু সমাজের জাতিভেদপ্রথার বিরোধী ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ‘বীর সাভারকার’ নামে ইতিহাসে খ্যাত হয়ে আছেন।

41. *ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অবদান কী?

উত্তর: সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অবদান

ভূমিকা: ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার লিখেছেন, “গান্ধিজি পরিচালিত অহিংস আন্দোলন এবং বিপ্লবী আন্দোলন ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের দুটি ধারা। এরা ছিল পরস্পরের পরিপূরক।” ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।

[1] গ্রহণযোগ্যতা: কংগ্রেসের নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনগুলির ওপর দেশের তরুণ সম্প্রদায়ের অনেকে বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। তাদের কাছে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন ব্রিটিশ-বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের যথার্থ ধারা হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

[2] ব্রিটিশ শাসনের ত্রাস: বিংশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলি ব্রিটিশ শক্তির মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন গুপ্তহত্যা, সামরিক অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা প্রভৃতির মাধ্যমে ব্রিটিশদের মনে যথেষ্ট ত্রাস বা আতঙ্কের সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়।

[3] মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা: সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যুবকদের উপলব্ধি করতে শেখায় যে, তারা জন্ম থেকেই মায়ের জন্য বলি-প্রদত্ত। মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গ করা এক পুণ্যকর্ম।

[4] আন্তর্জাতিক যোগাযোগ: প্রবাসী বিপ্লবীরা বিদেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র, বোমা তৈরির কৌশল, বিখ্যাত বিপ্লবীদের জীবনী প্রভৃতি স্বদেশের সশস্ত্র বিপ্লবীদের জন্য পাঠাতে থাকে। এভাবে বিপ্লবী আন্দোলন ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পরাধীন ভারতের সমস্যা বিশ্বের নজরে আসে।

উপসংহার: সশস্ত্র বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ তখন যুবসাজের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিল। এই আন্দোলনে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তি আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। তারা উপলব্ধি করে যে, ভারতে তাদের দিন ফুরিয়ে এসেছে।

42. *বিপ্লবী আন্দোলনের ব্যর্থতার প্রধান কারণগুলি কী ছিল?

উত্তর: বিপ্লবী আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ

ভূমিকা: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিপ্লবীদের দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ, সততা প্রভৃতি ছিল প্রশ্নাতীত। তা সত্ত্বেও এই আন্দোলন দেশের স্বাধীনতা এনে দিতে ব্যর্থ হয়। যার নানা কারণ ছিল। যেমন-

[1 ] গণসংযোগের অভাব: বিপ্লবী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত যুবকদের অধিকাংশই এসেছিলেন সমাজের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় থেকে। তাই তাদের আন্দোলনও শিক্ষিত ও মধ্যবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

[2] মতভেদ: বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে বিপ্লবীদের মধ্যে বা বিপ্লবী সংগঠনগুলির মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মতভেদ লক্ষ করা গেছে। যেমন- প্রমথনাথ মিত্র প্রমুখ তাদের আন্দোলনকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাইলেও বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যার সীমাবদ্ধ পথেই তাদের আন্দোলনকে পরিচালিত করতে চেয়েছিলেন। এছাড়া কখনো-কখনো তাঁদের মধ্যে অনৈক্যও দেখা গেছে।

[3] দমননীতি: ব্রিটিশ সরকার সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে তীব্র দমননীতি গ্রহণ করে। ব্যাপক পুলিশি তল্লাশি, গ্রেফতারি, চরম পুলিশি নির্যাতন, মামলা প্রভৃতির মাধ্যমে সরকার বিপ্লবী আন্দোলনের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়।

[4] বিশ্বাসঘাতকতা: বিপ্লবী দলের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্বাসঘাতকদের অস্তিত্ব বিপ্লববাদের যথেষ্ট ক্ষতি করে। রাসবিহারী বসু, বাঘাযতীন প্রমুখ বিপ্লবীর পরিকল্পনাগুলি বিশ্বাসঘাতকদের জন্যই ব্যর্থ হয়।

[5] আঞ্চলিকতা: বিপ্লবীদের কার্যকলাপ প্রধানত বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে সীমাবদ্ধ ছিল। এর ফলে এই আন্দোলন সারা দেশে একসঙ্গে ব্রিটিশ সরকারকে চাপে ফেলতে ব্যর্থ হয়।

উপসংহার: ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনগুলি আপাত দৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ জনমানসে গভীর ছাপ ফেলেছিল। ব্রিটিশ শক্তি উপলব্ধি করেছিল, বিপ্লবীদের কার্যকলাপ ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে অচিরেই ধ্বংস করবে।

43.*টীকা লেখো: রশিদ আলি দিবস।

উত্তর: রশিদ আলি দিবস

ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম আত্মত্যাগের যে সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠা করে তার দৃষ্টান্ত বিশ্ব-ইতিহাসে বিরল।

[1] আজাদ হিন্দ বাহিনীর অভিযান: জাপানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আজাদ হিন্দ বাহিনী ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে ব্রহ্মদেশের সীমান্ত দিয়ে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।

[2] পরাজয়: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান শীঘ্রই কোণঠাসা হয়ে পড়লে আজাদ হিন্দ বাহিনী জাপানের সহযোগিতা লাভে বঞ্চিত হয়। ফলে অস্ত্র ও রসদের অভাবে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বহু সেনা বিপর্যস্ত হয়ে ব্রিটিশদের হাতে বন্দি হয়।

[3] বিচার: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির লালকেল্লায় বন্দি আজাদি সেনাদের বিচার শুরু হলে এর প্রতিবাদে সারা ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে। ১১ নভেম্বর আজাদ হিন্দ সপ্তাহ এবং ১২ নভেম্বর আজাদ হিন্দ দিবস হিসেবে পালিত হয়।

[4] রশিদ আলির সাজা: বন্দি আজাদি সেনাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন ক্যাপটেন রশিদ আলি। বিচারে তাঁর ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।

[5] আন্দোলনের সূচনা: রশিদ আলির মুক্তির দাবিতে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি মুসলিম ছাত্র লিগ কলকাতায় ছাত্র ধর্মঘট করে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলিও এই ধর্মঘটে শামিল হয়। ছাত্ররা ১২ ফেব্রুয়ারি দিনটি রশিদ আলি দিবস হিসেবে পালন করার কথা ঘোষণা করে।

[6] আন্দোলনের প্রসার: ধর্মঘটী ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে কলকাতা ও নিকটবর্তী শিল্পাঞ্চলগুলিতেও ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছোয় যে, কলকাতার ব্রিটিশ প্রশাসন কার্যত ভেঙে পড়ে। কয়েকদিনের সংঘর্ষে কলকাতায় অন্তত ২০০ জনের মৃত্যু হয়।

উপসংহার: রশিদ আলি দিবসের আন্দোলনের চাপে শেষপর্যন্ত সীমান্তের গভর্নর কানিংহাম প্রধান সেনাপতিকে সব বিচার বাতিল করার পরামর্শ দেন। ড. অমলেশ ত্রিপাঠি এই আন্দোলনের স্বরূপ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে লিখেছেন যে “মৃত (?) সুভাষ জীবিত সুভাষের চেয়ে ঢের বেশি শক্তিশালী প্রতিপন্ন 

হয়েছিল।”

45. ‘দলিত আন্দোলন’ বলতে কী বোঝ? দলিত আন্দোলনে ড. আম্বেদকরের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর- দলিত আন্দোলন

ঔপনিবেশিক আমলে ‘দলিত’ বা ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের অনগ্রসর এবং পশ্চাত্পদ শ্রেণি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের অত্যাচার, শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়ে যে বহুমুখী আন্দোলন শুরু করেছিল তা ‘দলিত আন্দোলন’ নামে পরিচিত।

দলিত আন্দোলনে ড. আম্বেদকরের ভূমিকা

ঔপনিবেশিক ভারতে দলিত আন্দোলনের নেতৃত্বদানে যিনি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি হলেন ড. বাবাসাহেব ভীমরাও রামজি আম্বেদকর (১৮৯১-১৯৫৬ খ্রি.)। দলিত আন্দোলনে তাঁর বহুমুখী ভূমিকা হল-

[ 1] অনগ্রসর পরিবারে জন্ম: আম্বেদকর মহারাষ্ট্রের অনগ্রসর মাহার সম্প্রদায়ের অন্তর্গত ও দলিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দলিত পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি বাল্যকাল থেকেই দলিতদের প্রতি উচ্চবর্ণের বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক বিষয়গুলি লক্ষ করেন। তখন থেকেই এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন।

[2] বহিষ্কৃত হিতকারিণী সভা: ড. আম্বেদকর দলিতদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই শহরে ‘বহিষ্কৃত হিতকারিণী  সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন। দলিতদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার এবং আর্থিক উন্নয়ন ঘটানোই ছিল এই সভার মূল কাজ।

[3] মাহার সত্যাগ্রহ: আম্বেদকর মহারাষ্ট্রের কোলাবা জেলায় পানীয় জল ব্যবহারকে কেন্দ্র করে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মাহার সত্যাগ্রহ শুরু করেন। এরপর তিনি হিন্দুধর্মের বর্ণবৈষম্য ও জাতিভেদ প্রথার মূল- ভিত্তি, তথা ‘মনুস্মৃতি’ গ্রন্থটি প্রকাশ্যে আগুনে পোড়ান।

[4] গোলটেবিল বৈঠক: আম্বেদকর ভারতের অনগ্রসর শ্রেণির নেতা হিসেবে ১৯৩০ ও ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের ডাক পান। এই বৈঠক দুটিতে তিনি ভারতীয় দলিতদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া উপস্থাপন করেন ও তাদের অধিকার আদয়ে সচেষ্ট হন।

[5] সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস: আম্বেদকর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে সর্বভারতীয় নিপীড়িত শ্রেণির কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করে দলিতদের ঐক্যবদ্ধ করার এবং তাদের জন্য রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের চেষ্টা করেন।

[6] পুনা চুক্তি: আম্বেদকর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস নেতা গান্ধিজির সঙ্গে পুনা চুক্তি স্বাক্ষর করে দলিতদের জন্য নির্বাচনে আসন সংরক্ষণ, চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ প্রভৃতি বেশকিছু দাবিদাওয়া আদায়ে সক্ষম হন।

[7] অল ইন্ডিয়া সিডিউলড কাস্ট ফেডারেশন: আম্বেদকর ১৯৪০খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া সিডিউলড কাস্ট ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দলিতদের ঐক্যবদ্ধ করতে এবং তাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হন। দলিতদের স্বার্থে তিনি ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট লেবার পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলেন।

[৪] পিপলস এডুকেশন সোসাইটি: আম্বেদকর ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ‘পিপলস এডুকেশন সোসাইটি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে দলিত সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

[9] সংবিধান সভার সভাপতি: ভারতের স্বাধীনতা লাভের পর ড. আম্বেদকর ভারতের সংবিধান সভার খসড়া কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। এই সময় ভারতের সংবিধান রচনা করে তিনি সাংবিধানিকভাবে দলিতদের স্বার্থরক্ষার বিভিন্ন ব্যবস্থা করেন।

46. দলিতরা কেন আন্দোলনের পথে গিয়েছিল?

উত্তর- ঔপনিবেশিক আমলে বাংলা তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় হিন্দুসমাজের অনগ্রসর দলিত সম্প্রদায় আন্দোলনে শামিল হয়। দলিত আন্দোলনের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন-

[1] উচ্চবর্ণের অত্যাচার: ভারতীয় হিন্দুসমাজের দলিত সম্প্রদায় দীর্ঘকাল ধরে উচ্চবর্ণের দ্বারা নানাভাবে শোষণ ও অত্যাচারের শিকার হয়েছিল। দলিতরা উচ্চবর্ণের বাড়ি ও জমিতে নিম্নস্তরের কাজকর্ম করে উচ্চবর্ণের জীবনকে সহজসরল করত।

[2] মন্দিরে প্রবেশের অধিকার না থাকা: হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও দলিত

সম্প্রদায়ের মানুষ উচ্চবর্ণের বাধায় অধিকাংশ হিন্দুমন্দিরে প্রবেশ করার বা মন্দিরের দেবমূর্তিতে পুজো দেওয়ার অধিকার পেত না। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলিতে এই বাধা অত্যন্ত তীব্র হয়ে উঠেছিল।

[3] পানীয় জলের অধিকার না থাকা: উচ্চবর্ণের বাধাদানের ফলে সর্বসাধারণের জন্য পুকুর বা জলাশয়গুলি থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করার অধিকার দলিতদের ছিল না। সেগুলি শুধু উচ্চবর্ণের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত ছিল। ফলে দলিতরা পানীয় জলের জন্য তীব্র সমস্যায় পড়ত।

[4] শিক্ষাগ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা: দলিত পরিবারের সন্তানরা সর্বসাধারণের জন্য নির্মিত পাঠশালায় ভরতি হওয়ার সুযোগ পেত না। অনেক সময় তারা উচ্চবর্ণের পরিবারের সন্তানদের পাশে বসে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পেত না। উচ্চবর্ণের সন্তানদের থেকে দূরে বসে বা গৃহের বাইরে বসে দলিত সন্তানদের শিক্ষাগ্রহণ করতে হত।

[5] সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে বাধা: দলিতরা সামাজিক ক্ষেত্রে নানা বঞ্চনা ও অপমানের শিকার হত। সামাজিক মেলামেশার ক্ষেত্রে তাদের ওপর নানা বাধানিষেধ আরোপিত হয়েছিল।

[6] রাজনৈতিক বঞ্চনা: ভারতের দলিতরা বিপুল সংখ্যায় বসবাস করলেও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন পর্বে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের খুব বেশি প্রতিনিধিত্ব ছিল না। নানা কৌশলে তাদের বঞ্চিত করে উচ্চবর্ণের লোকজনই দলিতদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হত। তারাই সমস্ত রাজনৈতিক ক্ষমতা ভোগ করত।

47. বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর- বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন

ভূমিকা: ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার হিন্দু জনগোষ্ঠীর একটি বড়ো অংশই ছিল নিম্নবর্ণের দলিত হিন্দু। এই সময় বাংলার দলিত হিন্দুদের মধ্যে  

সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত। ১৮৭২ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সারা বাংলাজুড়ে নমঃশূদ্র আন্দোলন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

[1] আন্দোলনের কারণ: ঔপনিবেশিক শাসনকালে বিভিন্ন কারণে বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

            [i]সামাজিক অমর্যাদা: উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অস্পৃশ্য বলে মনে করত এবং তাদের ঘৃণার চোখে দেখত।

            [ ii] সীমাহীন দারিদ্র্য: দারিদ্র্য ছিল নমঃশূদ্রদের নিত্যসঙ্গী।কৃষিকাজ ছিল তাদের প্রধান পেশা। এ ছাড়া তারা মাছ ধরা, তাঁত বোনা, অন্যের বাড়ি ও জমিতে দিনমজুরের কাজ করা প্রভৃতি অত্যন্ত কম আয়ের পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

            [iii] অর্থনৈতিক শোষণ: দরিদ্র নমঃশূদ্রদের ওপর জমিদার ও সরকারের তীব্র শোষণ চলত।

            [iv] সার্বিক দুর্দশা: অশিক্ষা, অচিকিৎসা, সামাজিক অমর্যাদা নমঃশূদ্রদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল।

[2] আন্দোলনের পথে যাত্রা: নমঃশূদ্র সম্প্রদায় নিজেদের আর্থসামাজিক দুরবস্থা দূর করার উদ্দেশ্যে সামাজিক আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে বিভিন্ন সময় নেতৃত্ব দেন হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর, রাজেন্দ্রনাথ মন্ডল, মুকুন্দবিহারী মল্লিক, বিরাটচন্দ্র মন্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, প্রমথরঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ নমঃশূদ্র নেতা।

[3] আন্দোলনের সূচনা: ফরিদপুর-বাখরগঞ্জ অঞ্চলে ১৮৭২-৭৩ খ্রিস্টাব্দে একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা হয়। এখানে এক বিশিষ্ট নমঃশূদ্র নেতার মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে উচ্চবর্ণের লোকজন আসতে অস্বীকার করে। এরপর নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের সঙ্গে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তারা উঁচু জাতের কৃষিকাজ, ঘর ছাওয়া বা অন্যান্য কাজ করতে অস্বীকার করে।

[4] মতুয়া ধর্মের প্রসার: নমঃশূদ্র নেতা শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ‘মতুয়া’ নামে এক ধর্মীয় ভাবধারার প্রচার করে নমঃশূদ্রদের ধর্মীয় আদর্শে ঐক্যবদ্ধ করেন। মতুয়া ধর্মকে কেন্দ্র করে নমঃশূদ্র আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে। হরিচাঁদের পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর নমঃশূদ্রদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন।

[5] চেতনার জাগরণ: হরিচাঁদ ঠাকুর ও তাঁর পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর উপলব্ধি করেন যে, নমঃশূদ্রদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার খুবই জরুরি। তাই তাঁরা আন্দোলনের বার্তা গ্রামগঞ্জের নমঃশূদ্রদের মধ্যে প্রচার করেন। তাঁরা সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নমঃশূদ্রের যাত্রাগান, পালাগান, সাপ্তাহিক ‘মুষ্ঠি’ সংগ্রহ প্রভৃতি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এর ফলে নমঃশূদ্রদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

[6] নমঃশূদ্র সংগঠন: নমঃশূদ্র সংগঠনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল  ‘নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’, ‘উন্নয়নী সভা’ (১৯০২ খ্রি.), ‘বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন’ (১৯১২ খ্রি.), ‘নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি (১৯২৬ খ্রি.), ‘বেঙ্গল ডিপ্রেস্ড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘বঙ্গীয় দলিত শ্রেণি সমিতি’ (১৯২৬ খ্রি.) প্রভৃতি। এসব সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে নমঃশূদ্রদের সম্মেলনের আয়োজন হয়।

[7] রাজনৈতিক দাবি: নমঃশূদ্ররা ক্রমে রাজনৈতিকভাবেও বিভিন্ন দাবিদাওয়া জানাতে থাকে। [i] ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের বঙ্গভঙ্গকে তারা সমর্থন করে। [ii] তারা নিজেদের সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের জন্য

সরকারের কাছে দাবি জানায়। [iii] লন্ডনে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে (১৯৩০-৩২ খ্রি.) আইনসভায় বেশিসংখ্যক দলিত প্রতিনিধি গ্রহণের দাবি জানানো হয়। [iv] আম্বেদকরের পৃথক নির্বাচনের দাবি এবং সরকারের ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতিকে তারা সমর্থন করে।

উপসংহার: নমঃশূদ্রদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে বাংলার দলিতরা বেশ কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার লাভ করতে সক্ষম হয়। তবে দেশভাগের   সময় নমঃশূদ্র নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল নমঃশূদ্রদের পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার আবেদন জানালেও শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরসূরি প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের নেতৃত্বে নমঃশূদ্রদের একটি বড়ো অংশ মাতৃভূমি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর নমঃশূদ্ররা পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের শিকার হলে এবং পশ্চিমবঙ্গে নিঃস্ব- রিক্ত উদ্বাস্তু জীবনের সম্মুখীন হলে তাদের আন্দোলনে ভাটা পড়ে।

48.*দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক সম্পর্কে কী জান?

উত্তর- দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক

ভূমিকা: ভারতের সাংবিধানিক সংস্কার প্রবর্তনের জন্য জাতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লন্ডনে তিনটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। এগুলির মধ্যে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল।

[1] বৈঠক: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক বসে। এই বৈঠকে কংগ্রেসের প্রতিনিধি হিসেবে মহাত্মা গান্ধি, মুসলিম লিগের প্রতিনিধি হিসেবে মহম্মদ আলি জিন্না এবং দলিত প্রতিনিধি ড. ভীমরাও আম্বেদকর এই বৈঠকে যোগ দেন।

[2] গান্ধিজির দাবি: বৈঠকে গান্ধিজি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি উত্থাপন করেন- [i] একমাত্র কংগ্রেস সারা ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবে। [ii] অস্পৃশ্যরা সংখ্যালঘু নয়, তারাও হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। [iii] মুসলিম বা সংখ্যালঘুদের পৃথক নির্বাচনের নীতি বাতিল করতে হবে। গান্ধিজির সঙ্গে আম্বেদকর-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু প্রতিনিধিরা একমত ছিলেন না।

[3] বিতর্ক: দলিত শ্রেণির অধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব লাভের বিষয়কে কেন্দ্র করে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে গান্ধিজির সঙ্গে আম্বেদকরের তীব্র মতপার্থক্য দেখা যায়। এই সুযোগে হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি (১৯৩২ খ্রি.) ঘোষণা করেন।

[4] ব্যর্থতা: সরকার সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারা দলিত-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিকে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দিলে আম্বেদকর তা সমর্থন করেন। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজি মুসলিম ও শিখদের পৃথক নির্বাচন মেনে নিলেও দলিতদের পৃথক নির্বাচনের নীতির বিরোধিতা করে আমরণ অনশন শুরু করেন। এভাবে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

উপসংহার: ইংরেজদের ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ এই সময় ভারতীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছিল। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মতভেদ বাড়ছিল। ফলে এই বৈঠকের ব্যর্থতা একপ্রকার অনিবার্য ছিল।

49. *দলিত শ্রেণির অধিকারের বিষয়ে গান্ধিজির সঙ্গে আম্বেদকরের বিতর্ক সম্পর্কে আলোচনা করো। 

অথবা, দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টাকা লেখো।

অথবা, দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি ও আম্বেদকর বিতর্কের মূল প্রসঙ্গটি আলোচনা করো।

উত্তর- দলিতদের অধিকার সম্পর্কে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক

 ভূমিকা: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে ভারতের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কংগ্রেস দলের প্রতিনিধি মহাত্মা গান্ধি এবং দলিত শ্রেণির প্রতিনিধি ড. ভীমরাও আম্বেদকর। দলিতদের অধিকার নিয়ে বৈঠকে গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে তীব্র মতভেদ ও বিতর্ক দেখা দেয়।

[1] মতভেদের কেন্দ্রবিন্দু: গান্ধিজি ও আম্বেদকরের মধ্যে মতভেদের 

মূল বিষয় ছিল উচ্চবর্ণের হাত থেকে দলিতদের অধিকার ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব আদায়। এই অধিকার আম্বেদকর যেভাবে বা যতটা চাইছিলেন তার সঙ্গে গান্ধিজি একমত ছিলেন না।

[2] আম্বেদকরের পৃথক নির্বাচনের দাবি: আম্বেদকর লক্ষ করেছিলেন যে, দলিতরা ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় তারা সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে এবং এজন্য তারা নির্বাচনে নিজেদের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধিকে জেতাতে ব্যর্থ হয়। তাই আম্বেদকর দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচন, তথা রাজনৈতিক অধিকার দাবি করেন।

[3] পৃথক নির্বাচনে গান্ধিজির আপত্তি: গান্ধিজি দাবি করেন যে, দলিতরা সংখ্যালঘু নয়, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই তিনি দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার দাবির বিরোধিতা করেন।

[4] সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা: এই অবস্থায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি (১৯৩২ খ্রি.) ঘোষণার মাধ্যমে দলিত- সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেন। আম্বেদকর তা সমর্থন করেন।

[5] গান্ধিজির অনশন: গান্ধিজি মুসলিম ও শিখদের পৃথক নির্বাচন মেনে নিলেও দলিতদের পৃথক নির্বাচনের নীতির বিরোধিতা করে আমরণ অনশন শুরু করেন।

উপসংহার: দলিতদের অধিকারের প্রশ্নে গান্ধিজির উদ্যোগকে আম্বেদকর পর্যাপ্ত নয় মনে করে দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবিতে অটল থাকেন। কিন্তু এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ অনশনে গান্ধিজির প্রাণসংশয় দেখা দিলে আম্বেদকর গান্ধিজির সঙ্গে পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করেন।

50. *কোন্ প্রেক্ষাপটে পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়? এই চুক্তিতে কী বলা হয়েছিল?

উত্তর- পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.)

ভূমিকা: ভারতের দলিতশ্রেণির অধিকার ও মর্যাদা প্রদানের বিষয়কে কেন্দ্র করে কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধি ও দলিত সম্প্রদায়ের নেতা ড. ভীমরাও আম্বেদকরের মধ্যে তীব্র মতভেদ দেখা যায়।

[1] সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা: গান্ধি-আম্বেদকর মতভেদ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের অনৈক্যের সুযোগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা (১৯৩২ খ্রি.) নীতি ঘোষণা করেন। এর দ্বারা দলিত-সহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়।

[2] গান্ধিজির অনশন: গান্ধিজি মুসলিম এবং শিখদের পৃথক নির্বাচন মেনে নিলেও দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচন নীতির তীব্র বিরোধিতা করে যারবেদা জেলে আমরণ অনশন শুরু করেন।

[3] চুক্তি স্বাক্ষর: অনশনের ফলে গান্ধিজির প্রাণ সংশয় হলে পরিস্থিতি সংকটজনক হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে গান্ধিজির সঙ্গে ড. আম্বেদকর পুনা চুক্তি (২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষর করে পরিস্থিতি সামাল দেন। ফলে দলিতদের পৃথক নির্বাচন রোধ করা সম্ভব হয়

পূনা চুক্তির শর্তাবলি 

পুনা চুক্তির দ্বারা- [1] আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করে হিন্দুদের যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেন, [2] গান্ধিজি নির্বাচনে দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৭৮টি থেকে বাড়িয়ে ১৫১টি করার দাবি মেনে নেন।

উপসংহার: ব্রিটিশ সরকার ভারতের বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করে রাখতে চাইত। পুনা চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের সেই চেষ্টা আপাতত ব্যর্থ হয়। দলিত হিন্দু সম্প্রদায় পৃথক নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এলে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

51. * বিশ শতকের শুরুতে ভারতে দলিতদের পরিচয় ও অধিকার উল্লেখ করো।

উত্তর- দলিতদের পরিচয় ও অধিকার

ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকেই ভারতীয় সমাজের উচ্চবর্ণ বিভিন্ন অধিকার ও মর্যাদা ভোগ করলেও দলিতরা সামাজিক অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত ছিল।

[1] পরিচয়: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের প্রথম আদমশুমারিতে (১৮৭২ খ্রি.) জন্ম ও মর্যাদা অনুসারে ভারতীয় হিন্দুদের শ্রেণিবিভাগ করা হয়। সেই অনুসারে নিম্নবর্ণের মাহার, নাদার, চামার, হরিজন, নমঃশূদ্র, ইঝাভা প্রভৃতি সম্প্রদায় ‘দলিত’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। প্রথম আদমশুমারি অনুসারে ভারত অস্পৃশ্য দলিত হিন্দু ছিল ১৩ শতাংশ।

[2] অধিকার: ভারতের উচ্চবর্ণের হিন্দুরা যথেষ্ট অধিকার ভোগ করলেও দলিতদের অধিকার যথেষ্ট সংকুচিত ছিল। দলিতরা হিন্দু উচ্চবর্ণের শোষণ, অত্যাচার, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার ছিল। তারা মন্দিরে প্রবেশ, পুকুর বা জলাধারের জল ব্যবহার, বিদ্যালয়ে পড়াশোনা, সামাজিক মেলামেশা প্রভৃতি ক্ষেত্রে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের মতো সমান অধিকার পেত না। বিশ শতকে মাহার সম্প্রদায়ের ড. ভীমরাও আম্বেদকরের নেতৃত্বে ভারতের দলিত সম্প্রদায় আন্দোলনে শামিল হয়।

উপসংহার: ভারতের দলিতরা যে বর্ণবৈষম্যের শিকার ছিল তার বিরুদ্ধে প্রথম শক্তিশালী প্রতিবাদ শুরু করেন দলিত নেতা ড. ভীমরাও আম্বেদকর। মূলত তাঁকে সামনে রেখেই বিশ শতকে বিভিন্ন প্রদেশে দলিত নেতাদের কর্মসূচি পরিচালিত হত।

52. *বিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে দলিতদের অধিকার আদায়ের দাবিতে বিভিন্ন উদ্যোগগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর- দলিতদের অধিকার আদায়ের উদ্যোগ

ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকেই ভারতের হিন্দু দলিত সম্প্রদায় উচ্চবর্ণের শোষণ, অত্যাচার, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হত। ঔপনিবেশিক আমলেও উচ্চবর্ণের মানুষরা তাদের স্পর্শ বাঁচিয়ে চলত। তাদের মন্দিরে প্রবেশেও বাধা দেওয়া হত। ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সমাজসংস্কারমূলক সংগঠন দলিতদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার হয়। দলিতরা রাজনীতি- সচেতন হয়ে ওঠে এবং নিজেদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে শামিল হয়।

[1] দক্ষিণ ভারত: মহারাষ্ট্রে দলিত নেতা জ্যোতিবা ফুলে সত্যশোধক সমাজ (১৮৭৩ খ্রি.) এবং মাদ্রাজে টি এম নায়ার ও পি থিয়াগারায়া চেট্টি জাস্টিস পার্টি (১৯১৭ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন।

[2] পাঞ্জাব: পাঞ্জাবে দলিতদের অধিকারের দাবিতে শিখ সম্প্রদায়ের উদ্যোগে অকালী আন্দোলন ও নানকানা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

[3 ] কংগ্রেসের আন্দোলন: কংগ্রেস অসহযোগ আন্দোলনের (১৯২০-২২ খ্রি.) সময় থেকে গান্ধিজির নেতৃত্বে দলিতদের বিভিন্ন অধিকার দাবি করতে থাকে। দলিতদের সামাজিক অবহেলার বিরুদ্ধে গান্ধিজি হরিজন আন্দোলন শুরু করেন।

[4] দলিতদের অসন্তোষ: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দলিতদের স্বার্থে শুধু মন্দিরে প্রবেশের অধিকার, অস্পৃশ্যতা দূর করার মতো যে উদ্যোগ নিয়েছিল তাতে দলিত নেতৃবৃন্দ সন্তুষ্ট হয়নি এই সময় উচ্চশিক্ষা, সরকারি চাকরি, সামাজিক মর্যাদা প্রভৃতির অধিকার আদায়ে দলিত নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের পথে অগ্রসর হয়।

[5] দলিতদের উদ্যোগ: বিশ শতকে দলিতরা নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলনে শামিল হয়। এগুলির মধে উল্লেখযোগ্য ছিল কেরালায় নারায়ণ গুরুর নেতৃত্বে ভাইকম সত্যাগ্রত (১৯২৪ খ্রি.), গুরু বায়ুর মন্দিরে প্রবেশের আন্দোলন, তামিলনাড়ুন রামস্বামী নাইকার-এর নেতৃত্বে আত্মসম্মান আন্দোলন, কেরালাভ কেলাপ্পান ও গোপালনের নেতৃত্বে দলিত আন্দোলন, বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন প্রভৃতি।

উপসংহার: বিশ শতকে দলিতরা বিভিন্ন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাদের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করছিল। অনেক অধিকার আদায়ে তারা সক্ষমও হয়। কিন্তু দলিতদের মধ্যে অনৈক্য, আন্দোলনের গতিপথ হারিয়ে ফেলা প্রভৃতি কারণে বহু অধিকার আজও তারা আদায় করতে পারেনি।

53. * ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলায় নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের পরিচয় দাও।

উত্তর- বাংলায় নমঃশূদ্র সম্প্রদায়

ভূমিকা: ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার হিন্দুসমাজের একটি বড়ো অংশ ছিল নিম্নবর্ণের অস্পৃশ্য বা দলিত হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত। দলিত হিন্দুদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নমঃশূদ্র সম্প্রদায়।

[1] বসতি: নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের বসতি ছিল মূলত পূর্ববঙ্গে। পূর্ববঙ্গের ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোহর, ফরিদপুর, বাখরগঞ্জ প্রভৃতি জেলায় নমঃশূদ্রদের আধিক্য ছিল। এ ছাড়া অন্যান্য জেলাতেও নমঃশূদ্ররা বসবাস করত।

[2] পেশা: কৃষিকাজ ছিল নমঃশূদ্রদের প্রধান পেশা। পূর্ববঙ্গের হিন্দু কৃষকদের প্রায় ৯০ শতাংশই ছিল নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত। কৃষিকাজ ছাড়া তারা চাষবাস, মাছ ধরা, তাঁত বোনা, অন্যের বাড়ি ও জমিতে দিনমজুরের কাজ করা প্রভৃতির পেশার সঙ্গেও যুক্ত ছিল।

[3] দুর্দশা: উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের ঘৃণার চোখে দেখত। নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল। এ ছাড়াও ছিল সরকার ও জমিদারদের শোষণ। অশিক্ষা, বিনা চিকিৎসা, দারিদ্র্য, রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার অভাব ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী।

[4] মতুয়া ধর্ম: নমঃশূদ্রদের অন্যতম নেতা শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর তাঁর অনুগামীদের মধ্যে ‘মতুয়া’ নামে একটি ধর্মীয় ভাবধারা প্রচার করেন। নমঃশূদ্রদের একটি বড়ো অংশ এই ধর্মমত গ্রহণ করে।

উপসংহার: ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার দলিতদের অগ্রভাগে ছিল নমঃশূদ্ররা। চিন্তাচেতনায় অন্যান্য দলিতদের চেয়ে এগিয়ে থাকা নমঃশূদ্ররা উনিশ শতকে বর্ণহিন্দুদের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘকালীন সামাজিক আন্দোলন শুরু করে। এর দ্বারা তারা নিজ সমাজের প্রভূত উন্নতিও ঘটায়।

54. *ঔপনিবেশিক বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন হওয়ার কারণগুলি কী ছল?

উত্তর- নমঃশূদ্র আন্দোলন হওয়ার কারণ

ভূমিকা: নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ছিল ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত হিন্দু সম্প্রদায়। উনিশ ও বিশ শতকে বিভিন্ন কারণে তারা আন্দোলনে শামিল হয়।

[1] অস্পৃশ্যতা: নমঃশূদ্ররা হিন্দু হওয়া সত্ত্বেও উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত। নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের বাড়িতে পা ফেলার অধিকার পেত না অন্যদিকে ব্রাহ্মণ পুরোহিতরাও নমঃশূদ্রদের বাড়িতে পূজা, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান প্রভৃতি করতে রাজি হত না। এজন্য নমঃশূদ্রদের মনে তীব্র ক্ষোভ ছিল।

[2] দারিদ্র্য: নমঃশূদ্ররা অন্যের কৃষিজমিতে মজুরের কাজ, মাছ ধরা, তাঁত বোনা, অন্যের বাড়ি ও জমিতে দিনমজুরের কাজ করা প্রভৃতি  নিম্ন আয়ের পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল। এইসব কারণে প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে তাদের মনে ক্ষোভ জমেছিল।

[3] শোষণ: নমঃশূদ্ররা নানা ধরনের শোষণের শিকার হয়েছিল। তাদের ওপর জমিদার ও সরকার করের বোঝা বাড়ানোর ফলে তীব্র অর্থনৈতিক শোষণ চলত।

[4] পশ্চাদ্গামিতা: অশিক্ষা, চিকিৎসার অভাব নমঃশূদ্রদের জীবনের নিত্যসঙ্গী ছিল। সমাজের সকলের সঙ্গে তারা শিক্ষা, চিকিৎসা, বিভিন্ন পরিসেবা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল।

[5] সাম্প্রদায়িকতা: মুসলিম সম্প্রদায়ও নমঃশূদ্রদের ওপর বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চালাত। তারা বলপূর্বক নমঃশূদ্র কৃষকের জমির ফসল কেটে নিয়ে যেত, জমিতে গোরু-ছাগল ছেড়ে দিয়ে চারাগাছ নষ্ট করত। এর ফলে নমঃশূদ্ররা সংঘবদ্ধ হয়ে এসবের মোকাবিলার উদ্যোগ নেয়।

উপসংহার: বাংলায় দলিত আন্দোলনের অগ্রদূত ছিল নমঃশূদ্র আন্দোলন। এই আন্দোলনের দ্বারা নমঃশূদ্ররা নিজেদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়।

55. *ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার প্রধান নমঃশূদ্র সংগঠনগুলির পরিচয়দাও।

উত্তর- বাংলার নমঃশূদ্র সংগঠন

ভূমিকা: ঔপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার দলিত নমঃশূদ্র সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার, সামাজিক মর্যাদা ও রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এই সময় বাংলায় নমঃশূদ্রদের বেশ কয়েকটি সংগঠন গড়ে ওঠে।

[1] গুরুচাঁদ ঠাকুরের উদ্যোগ: নমঃশূদ্র নেতা গুরুচাঁদ ঠাকুর উনিশ শতকের শেষদিকে ‘নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘নমঃশূদ্র কল্যাণ সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সভাপতিত্বে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে খুলনা জেলায় ‘নিখিল বঙ্গ নমঃশূদ্র সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়।

[2] গুরুচাঁদের অনুগামীদের উদ্যোগ: গুরুচাঁদ ঠাকুরের অনুগামীদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা নমঃশূদ্রদের কয়েকটি সংগঠন হল ‘উন্নয়নী সভা’ (১৯০২ খ্রি.), ‘বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন’ (১৯১২ খ্রি.), ‘নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি’ (১৯২৬ খ্রি.) প্রভৃতি।

[3] বঙ্গীয় দলিত শ্রেণি সমিতি: ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কাঁচরাপাড়ায় নমঃশূদ্রদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে ‘বঙ্গীয় দলিত শ্রেণি সমিতি’ বা ‘বেঙ্গল ডিপ্রেস্ড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন’ গঠিত হয়। মুকুন্দবিহারী মল্লিক ছিলেন এর প্রথম সভাপতি।

[4] সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপট: ‘বঙ্গীয় দলিত শ্রেণি সমিতি’ পরবর্তীকালে ‘অল ইন্ডিয়া ডিপ্রেস্ড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন’ বা ‘নিখিল ভারত দলিত শ্রেণি সমিতি’র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। নমঃশূদ্র নেতা বিরাট চন্দ্র মণ্ডল এই সর্বভারতীয় সংগঠনের কমিটিতে বাংলার প্রতিনিধি (১৯৩০ খ্রি.) নিযুক্ত হন।

[5] কংগ্রেসের সহযোগী সংগঠন: নমঃশূদ্র নেতা যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল,প্রমথরঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ইনডিপেন্ডেন্ট সিডিউলড কাস্ট পার্টি’ গঠন করে কংগ্রেসকে সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেন।

উপসংহার: ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার বিভিন্ন নমঃশূদ্র সংগঠন পৃথক সুথকভাবে কাজ করায় তাদের শক্তিশালী ঐক্য হিসেবে গড়ে উঠতে কিছুটা ■মস্যা হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর সেই বিভাজন আরও বৃদ্ধি পায়।

56.*রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের দাবিতে বাংলার নমঃশূদ্রদের উদ্যোগ ও আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর- নমঃশূদ্রদের রাজনৈতিক অধিকার

ভূমিকা: শুধু সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নয়, নিজ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের দাবিতে ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার দলিত নমঃশূদ্র সম্প্রদায় সচেষ্ট হয়ে ওঠে।

[1] সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্ব: নমঃশূদ্ররা সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের জন্য সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের দাবি জানাতে থাকে। ফলে সরকার মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের (১৯১৯ খ্রি.) মাধ্যমে বাংলা প্রদেশের আইনসভায় একজন দলিত প্রতিনিধি পাঠানোর ব্যবস্থা করে। সাইমন কমিশনেও (১৯২৮ খ্রি.) দলিতদের রাজনৈতিক অধিকার দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

[ 2] রাজনৈতিক ক্ষমতা: নমঃশূদ্র নেতা গুরুচাঁদ ঠাকুর ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে

খুলনা জেলায় এক সম্মেলনে ঘোষণা করেন যে, নমঃশূদ্রদের সামাজিক ও পার্থিব উন্নতির জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের একান্ত প্রয়োজন।

[3] গোলটেবিল বৈঠকে প্রতিনিধি: সরকার ভারতে প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্দেশ্যে ভারতীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। নমঃশূদ্ররা এই বৈঠকে বাংলা থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক দলিত প্রতিনিধি রাখার দাবি জানায়।

[4] পৃথক নির্বাচন: বাংলার নমঃশূদ্ররা আম্বেদকরের পৃথক নির্বাচন ও সরকারের ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি’-কে সমর্থন করে। তারা  দাবি করে যে, দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচকমণ্ডলী সৃষ্টি হলে তারা যথেষ্ট পরিমাণে রাজনৈতিক সুবিধা লাভ করবে।

[5] পুনা চুক্তির বিরোধিতা: ড. আম্বেদকর গান্ধিজির সঙ্গে পুনা চুক্তির (১৯৩২ খ্রি.) দ্বারা দলিতদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এলে ‘নিখিলবঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি’ এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে।

[6] আইনসভায় সংরক্ষণ: দলিতদের ধারাবাহিক দাবির ফলে ১৯৩৫খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে বাংলার আইনসভায় দলিতদের জন্য ২০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত হয়।

উপসংহার: ১৯৪৭ সালে দেশভাগের ফলে নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের একটি বড়ো অংশ ভারতে চলে এলে পূর্ববঙ্গে থাকা নমঃশূদ্রদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি হ্রাস পায়। আবার ভারতে এসেও তাদের বিভিন্ন অংশ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, দণ্ডকারণ্য-সহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে তাদের আন্দোলন অনেকখানি শক্তি হারিয়ে ফেলে।

5. Fill in The Blanls

1. বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ______ অক্টোবর।

উত্তর- ১৬

2. মুরশিদাবাদের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে______  সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলেন ।

উত্তর- গিরিজাসুন্দরী

3. ফরিদপুর জেলায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে______ সক্রিয় আন্দোলন গড়ে  তোলেন।

উত্তর-  সৌদামিনী দেবী

4. বরিশাল জেলায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে______ সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলেন।

উত্তর-  সরোজিনী দেবী

5. ব্রাহ্মময়ী সেন _______ জেলায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নেন।

উত্তর- ঢাকা

6. দু’কড়িবালা দেবী_______ জেলায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সক্রিয়আন্দোলনে অংশ নেন।

উত্তর- বীরভূম

7. লাবণ্যপ্রভা দত্ত_______  জেলায় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলনে অংশ নেন।

উত্তর-  খুলনা

৪. জেল থেকে মুক্তিলাভের পর কল্পনা দত্ত_______ যোগ দেন।

উত্তর- কমিউনিস্ট পার্টিতে

9. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরে_______ গড়ে ওঠে।

উত্তর-  ভগিনী

10. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তমলুক থানা অভিযানে নেতৃত্ব দেন_______

উত্তর- মাতঙ্গিনী হাজরা

11. ভারতীয় মুক্তিসংগ্রামের প্রথম মহিলা শহিদ ছিলেন_______

উত্তর-প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

12. আজাদ হিন্দ ফৌজের ঝাঁসির রানি বাহিনীর প্রধান নেত্রী ছিলেন_______

উত্তর- লক্ষ্মী সায়গল

13 কার্লাইল সার্কুলার জারি করা হয়______ আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে।

উত্তর- ছাত্র

14.______ সার্কুলারের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতায় অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি গড়ে ওঠে।

উত্তর-  কার্লাইল

15.______ আন্দোলনের সময় গুজরাটে স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে ‘বানর সেনা’ গড়ে ওঠে।

উত্তর-  ভারত ছাড়ো

16. মানিকতলায় বোমা তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন_______

উত্তর- হেমচন্দ্র কানুনগো 

17. মাস্টারদা নামে পরিচিত ছিলেন_______

উত্তর-   সূর্য সেন 

18. ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি _______ হত্যার পরিকল্পনা করেন।

উত্তর-   কিংসফোর্ডকে

19. ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকির বোমায় নিহত হন______

উত্তর-  . মিসেস কেনেডি ও মিস কেনেডি

20. ‘হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন’ নামে দলটি প্রতিষ্ঠা করেন________

উত্তর-  চন্দ্রশেখর আজাদ

21. লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯২৯ খ্রি.) ________এর ফাঁসি হয়।

উত্তর-   ভগৎ সিং

22. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর বিপ্লবীরা_________ আশ্রয় নেয়।

উত্তর-  জালালাবাদ পাহাড়ে সেনের

23. ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ১৩ মে_________ ফাঁসি হয়।

উত্তর-  সূর্য সেনের

6. True And False

1. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলার উচ্চ ও মধ্যবিত্ত হিন্দু নারীরা অংশ নিয়েছিল।

উত্তর-  ঠিক 

2. দীপালি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন কল্পনা দত্ত।

উত্তর-  ভূল

3. আজাদ হিন্দ বাহিনীতে নারীদের নিয়ে লক্ষ্মীবাই বাহিনী গড়ে ওঠে।

উত্তর-  ভূল

4. মাতঙ্গিনী হাজরা ছিলেন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের নেত্রী।

উত্তর-  ভূল

5. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা এমএ ছিলেন কাদম্বিনী বসু (গাঙ্গুলী)।

উত্তর-  ভূল

6. লীলা নাগ হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রথম মহিলা।

উত্তর-  ঠিক 

7. লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রতিষ্ঠা করেন বাসন্তী দেবী।

উত্তর-  ভূল

৪. বিপ্লবী গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিং প্রমুখকে আদালত থেকে পালাতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে কল্পনা দত্ত কলকাতা থেকে বিস্ফোরক আনেন।

উত্তর- ঠিক 

9. বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী ছিলেন বাসন্তী দেবী।

উত্তর- ভূল

10. ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন হল কলকাতার ছাত্রীসংঘ।

উত্তর- ভূল

11. ‘কার্লাইল সার্কুলার’-এ বলা হয় যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার ছাত্রদের আন্দোলন থেকে বিরত করতে না পারলে সেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনুদান বন্ধ করা হবে এবং অনুমোদন বাতিল করা হবে।

উত্তর- ঠিক

12. হেমচন্দ্র কানুনগো রাজনৈতিক ও সামরিক শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে বিদেশযাত্রা করেন।

উত্তর-  ঠিক

13. বসন্ত বিশ্বাস লর্ড কার্জনকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করেন।

উত্তর-. ভুল

14. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কুমিল্লার স্কুলছাত্রী শান্তি ঘোষ ও সুনীতি চৌধুরীর গুলিতে জেলা শাসক নিহত হন (১৯৩১ খ্রি.)।

উত্তর-. ঠিক

15. পার্ক সার্কাস এলাকায় ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’-এর সদস্যদের নিয়মিত সামরিক কায়দায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হত।

উত্তর-. ঠিক

16. ‘বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স’ প্রতিষ্ঠা করেন চিত্তরঞ্জন দাশ।

উত্তর- ভুল

17. সূর্য সেনের অনুগামী অনন্ত সিংহ, দেবেন দে ও নির্মল সেন ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে রেলকর্মীদের বেতনের ১৭ হাজার টাকা লুঠ করেছিলেন।

উত্তর- ঠিক