WBBSE Class 12 History Chapter 6 Solution | Bengali Medium

Class 10 History Solution

বিশ শতকের ভারতে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

1. MCQs Question Answer

1. রাওলাট সত্যাগ্রহের প্রধান কেন্দ্র ছিল—

a). মাদ্রাজ

B).বাংলা

C). বোম্বাই   ✔

D).উড়িষ্যা

2. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল-

A). ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে

B) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে   ✔

C) ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে

D).১৯১১ খ্রিস্টাব্দে

 3. লর্ড কার্জন বাংলা দ্বিখণ্ডিত করেন-

A). ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে  ✔

B). ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে

C). ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে

D) .১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে

4. বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তকে ‘গভীর জাতীয় বিপর্যয়’ বলেছেন-

A). সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়   ✔

B). সুরেন্দ্রনাথ সেন

C) অরবিন্দ ঘোষ

D). বীরেন্দ্রনাথ শাসমল

5. বঙ্গভঙ্গ যে দিন ঘোষিত হয় তা হল

A). ১৬ অক্টোবর    ✔

B). ১৬ জুলাই

C). ১৬ জুন

D) ১৬ সেপ্টেম্বর

6. স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হয়েছিল-

A). ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে   ✔

B) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে

C). ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে

D). ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে

7. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ছিল কোন্ আন্দোলনের প্রকৃত সূচনাকাল?

A) অসহযোগ আন্দোলন   ✔

B) শ্রমিক আন্দোলন

C). গান্ধিজির আঞ্চলিক আন্দোলন

D) আইন অমান্য আন্দোলন

 ৪. ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন-

A). চিত্তরঞ্জন দাশ

B)লালা লাজপত রায়   ✔

C). মহাত্মা গান্ধি

D). বিপিনচন্দ্র পাল        

9. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরে কৃষক আন্দোলনে কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন

A). সোমেশ্বর চৌধুরী

B). দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমল    ✔

C). শৈলজানন্দ সেন

D) গৌরীশংকর মিশ্র

10. অসহযোগ আন্দোলনে বীরভূমের কৃষক আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন-

A). বীরেন্দ্রনাথ শাসমল

B) সোমেশ্বর চৌধুরী

C) স্বামী বিদ্যানন্দ

D). জিতেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায়   ✔

11. ‘দেশপ্রাণ’ নামে পরিচিত ছিলেন-

A). সতীশচন্দ্র সামন্ত

B). অশ্বিনীকুমার দত্ত

C). বীরেন্দ্রনাথ শাসমল  ✔

D) যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত

 12. মদনমোহন মালব্যের উদ্যোগে কিষান সভা গঠিত হয়-

A). ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে  ✔

B) ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে

C) ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে

D). ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে

13. বাবা রামচন্দ্র ছিলেন-

A). কংগ্রেসি নেতা

B) শ্রমিক নেতা

C) কৃষক প্রজা পার্টির নেতা

D). কিষান সভার নেতা  ✔

14. বাবা রামচন্দ্র কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন-

A) বিহারে

B). যুক্তপ্রদেশে  ✔

C) রাজস্থানে

D).মহারাষ্ট্রে

 15. বাবা রামচন্দ্র অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন-

A). বাংলায়

B) বোম্বাইতে

C). সাতারায়

D)অযোধ্যায়   ✔

16. তিন কাঠিয়া প্রথার অবসান হয়-

A) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে  ✔

B).১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে

C). ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে

D).১৯২১ খ্রিস্টাব্দে

17. ‘চম্পারণ কৃষি বিল’ পাস হয়-

A). ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে ✔

B) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে

C). ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে

D).১৯২১ খ্রিস্টাব্দে

18. ভারতে গান্ধিজির দূত নামে পরিচিত-

A). মোতিলাল তেজওয়াত  ✔

B) সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল

C). পট্টভি সীতারামাইয়া

D) চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী

19. চৌরিচৌরার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কোন্ আন্দোলন প্রত্যাহার করার চেষ্টা করা হয়?

A). স্বদেশি  

B). অহিংস

C) আইন অমান্য  ✔

D). ভারত ছাড়ো

20. বিজোলিয়া আন্দোলনের নেতা ছিলেন-

A)  শচীন সান্যাল

B. বল্লভভাই প্যাটেল

C. মানিকলাল বর্মা ✔

D.বাবা রামচন্দ্র

21. বাবা গরিবদাস ও মাদারি পাশি কোন্ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

A). খিলাফৎ

B).বারদৌলি ✔

C).একা

D). আইন অমান্য

22. একা আন্দোলনের নেতা ছিলেন-

A). মাদারি পাশি  ✔

B). ড. আম্বেদকর

C). মহাত্মা গান্ধি

D).বাবা রামচন্দ্র

 23. বারদৌলি সত্যাগ্রহ হয়েছিল-

A). বোম্বাইয়ে

B).পাঞ্জাবে

C).মাদ্রাজে

D).গুজরাটে  ✔

 24. একা আন্দোলন ঘটেছিল

A). বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের পর্যায়ে

B). আইন অমান্য আন্দোলনের পর্যায়ে

C). অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের পর্যায়ে  ✔

D). ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পর্যায়ে

 25. ‘কুনবি’ বলা হত-

A). উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের

B) পাঞ্জাবের কৃষকদের

C). বাংলার কৃষকদের

D). গুজরাটের কৃষকদের   ✔

 26. ‘পতিদার যুবক মণ্ডল’ গড়ে ওঠে-

A). বারদৌলিতে ✔

B)   মাদ্রাজে

C) .কলকাতায়

D) .বিহারে

27. ‘পতিদার যুবক মণ্ডল’ গড়ে তোলা হয়-

A. কৃষকদের কর বৃদ্ধির প্রতিবাদের জন্য

B. কৃষকদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য

C. কালিপরাজদের শোষণ করতে

D.বিভিন্ন সমাজসংস্কারের উদ্দেশ্যে ✔

28. বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের নেতা ছিলেন-

 A). মাদারি পাশি

B). বল্লভভাই প্যাটেল ✔

C). গান্ধিজি

D). জয়প্রকাশ নারায়ণ

29. বল্লভভাই প্যাটেল কত সালে সর্দার উপাধিতে ভূষিত হন?

A). ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে

B). ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে  ✔

C). ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে

D) .১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে

 30. ‘হালি’ প্রথা কোথায় প্রচলিত ছিল?

A).বারদৌলিতে ✔

B) .বীরভূমে

C) .খেদায়

D). আমেদাবাদে

31. বারদৌলি সত্যাগ্রহ অনুষ্ঠিত হয়

A). ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে

B).১৯২২ খ্রিস্টাব্দে

C).১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ✔

D).১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে

32. ‘কালিপরাজ’ নামে কৃষকরা কোথায় বসবাস করত?

A). বারাণসী

B) .দিনাজপুর

C). সাঁওতাল পরগনা

D).বারদৌলি  ✔

33. আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কেরলের কৃষক আন্দোলনে কোন্ কংগ্রেস নেতা নেতৃত্ব দেন?

 A). বাল রামকৃয়

B) কেলাপ্পান  ✔

C). স্বামী সহজানন্দায়াত

D).মৌলানা ভাসানি

34. কৃষক প্রজাপার্টি প্রতিষ্ঠা করেন-

A). বীরেন্দ্রনাথ শাসমল

B). প্রফুল্লচন্দ্র সেন

C). বাবা রামচন্দ্র

D). ফজলুল হক ✔

 35. ‘লাঙ্গল যার, জমি তার’- এই স্লোগানটি ছিল

A). কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের

B). ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির

C) কৃষক প্রজা পার্টির ✔

D) সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট পার্টির

36. সারা ভারত কিষান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের

 A). ১১ জানুয়ারি

B) .১১ ফেব্রুয়ারি

C) .১১ মার্চ

D) .১১ এপ্রিল ✔

 37. মোপলা বিদ্রোহ (১৯২১) হয়েছিল-

A). মালাবার উপকূলে  ✔

B). কোঙ্কন উপকূলে

C) গোদাবরী উপত্যকায়

D). তেলেঙ্গানা অঞ্চলে

 38. সর্বভারতীয় কিষান সভার প্রথম সভাপতি ছিলেন-

A). এন জি রঙ্গ

B). স্বামী সহজানন্দ ✔

C). বাবা রামচন্দ্র

D). লালা লাজপত রায়

 39. খুদা-ই-খিদমঙ্গার প্রতিষ্ঠা করেন-

A). খান আবদুল গফ্ফর খান ✔

B). মহাত্মা গান্ধি

C). বাবা রামচন্দ্র

D). মৌলানা ভাসানি

40. পুন্নাপ্রা ভায়লার আন্দোলন হয়েছিল-

A). গোদাবরীতে

B). ত্রিবাঙ্কুরে

C). মালাবারে

D). পাঞ্জাবে ✔

41. ভারতের প্রথম শ্রমিক সংগঠন ছিল-

  1.  গিরনি কামগার ইউনিয়ন 
  1. মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন  
  1.  ইন্ডিয়ান মিলহ্যান্ডস্ ইউনিয়ন
  1.  সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস

42. ব্রিটিশ সরকার প্রণীত শ্রমিক দমনমূলক বিল হল-

  1.  শিল্প বিরোধ বিল   
  1. ইলবার্ট বিল
  1.  রাওলাট বিল
  1.  জন নিরাপত্তা বিল

43. নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল-

  1. ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে
  1.  ১৯২0 খ্রিস্টাব্দে    
  1.  ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে
  1. ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে

44. ‘স্বরাজ্য দল’-এর সভাপতি ছিলেন

  1.  মোতিলাল নেহরু
  1.  চিত্তরঞ্জন দাশ 
  1. নেতাজি
  1. মহাত্মা গান্ধি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে

45. গিরনি কামগার ইউনিয়ন স্থাপিত হয়-

(a) ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে

(b) ১৯২৮  খ্রিস্টাব্দে 

© ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে

(d) ১৯৩২খ্রিস্টাব্দে

46. ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কার সভাপতিত্বে বোম্বাইয়ে ‘AITUC’ প্রতিষ্ঠিত হয়?

  1.  লালা লাজপত রায়    
  1. মানবেন্দ্রনাথ রায়
  1.  বল্লভভাই প্যাটেল 
  1. দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন রায়

47. ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, শওকত ওসমানি ও নলিনী গুপ্তকে গ্রেফতার করে শুরু হয়-

  1.  কানপুর ষড়যন্ত্র মামলা     
  1.  লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা
  1.  মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা
  1.  কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা

48. ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়-

  1.  ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে 
  1.  ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
  1.  ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে
  1. ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে     

49. ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট পার্টি অব বেঙ্গল’-এর সভাপতি ছিলেন-

  1. এন জি রঙ্গ
  1.  হেমন্তকুমার সরকার 
  1.  নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত      
  1.  কুতুবউদ্দিন আহমেদ

50. ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস’ পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন-

  1.  পিসি জোশী     
  1.  বল্লভভাই প্যাটেল
  1. বালগঙ্গাধর তিলক
  1.  জওহরলাল নেহরু

51. ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি যুক্ত ছিল-

  1.  রাওলাট সত্যাগ্রহে
  1.  অসহযোগ আন্দোলনে     
  1.  বারদৌলি সত্যাগ্রহে
  1.  সাইমন কমিশন-বিরোধী আন্দোলনে

52. গণবাণী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-

  1. কাজী নজরুল ইসলাম 
  1.  মুজাফফর আহমেদ    
  1.   এস এস মিরাজকর
  1.  অরবিন্দ ঘোষ

53. ‘যুব কমরেড লিগ’ কার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে?

  1.  এস এ ডাঙ্গের
  1.  মুজাফফর আহমেদের
  1.  পিসি জোশীর     
  1.  নিম্বকারের

54. বামপন্থী পত্রিকা ক্লান্তি প্রকাশিত হয়-

  1.  মহারাষ্ট্র থেকে    
  1. বাংলা থেকে
  1. পাঞ্জাব থেকে
  1.  উত্তরপ্রদেশ থেকে

55. ভারতের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন হল-

  1.  মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন     
  1. কলকাতা লেবার ইউনিয়ন
  1. মুম্বাই লেবার ইউনিয়ন
  1. দিল্লি লেবার ইউনিয়ন

56. ‘লেবার স্বরাজ পার্টি’র নাম পরিবর্তন করে কী রাখা হয়?

  1.  কিষান দল 
  1. পেজেন্টস পার্টি 
  1. ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি  
  1.  লেবার পার্টি

57. ‘কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হয়-

  1.  ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে
  1. ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে
  1. ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে     
  1. ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে

58. কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়-

  1.  ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে
  1. ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে       
  1.  ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে
  1. ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে

59. কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল-

  1. কলকাতায়
  1. দিল্লিতে
  1.  বোম্বাইতে    
  1. মাদ্রাজে

60. ‘Socialist’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

  1.  এস এ ডাঙ্গে    
  1.  সন্তোষ কুমারী গুপ্তা 
  1. সন্তোষ সিং
  1.  মুজাফফর আহমেদ

61. ভারতে বামপন্থী আন্দোলনের জনক ছিলেন-

(a) লালা লাজপত রায়

(b) রাসবিহারী বসু

© সিঙ্গারাভেল্লু চেট্টিয়ার

(d) মানবেন্দ্রনাথ রায়     

62. বিশুবরণ প্রসাদ কী নামে সর্বাধিক পরিচিত?

  1. স্বামী শ্রদ্ধানন্দ 
  1. স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী 
  1. স্বামী বিদ্যানন্দ   
  1. ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ

63. সি মার্টিন ছদ্মনাম গ্রহণ করেন-

  1.  রাসবিহারী বসু
  1. নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য    
  1.  মুজাফফর আহমেদ
  1.  এস এ ডাঙ্গে

64. নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য কোথায় ‘মানবেন্দ্রনাথ’ ছদ্মনাম গ্রহণ করেন?

  1. রাশিয়ায়
  1.  জার্মানিতে 
  1. আমেরিকায়     
  1. ব্রিটেনে

65. দেশাভিমানী বলা হয় সাম্যবাদী নেতা-

  1.  মুজাফফর আহমেদকে
  1.  শ্রীপাদ অমৃত ডাঙ্গেকে
  1.  রামকৃয় পিল্লাইকে       
  1. নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যকে

66. তাসখন্দে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন-

  1. মুজাফফর আহমেদ
  1.  পিসি যোশী
  1.  এস এ ডাঙ্গে
  1.  মানবেন্দ্রনাথ রায়   

67. র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়-

  1.  ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে
  1.  ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে
  1. ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে
  1.  ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে    

68. র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠন করেন-

  1. পিসি যোশী
  1. এস এ ডােঙ্গে
  1.   এম এন রায়     
  1.  জয়প্রকাশ নারায়ণ

69. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত ব্রিটিশ কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন-

  1.  ফিলিপ ফ্রান্সিস
  1.  ফিলিপ স্প্ল্যাট   
  1. লেলিন
  1. স্টিফেন হেনিংহ্যাম

70.’মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ (১৯২৯) হয়েছিল-

(a)   জাতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে

(b) বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে     

© শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে

(d) কৃষক নেতাদের বিরুদ্ধে

71. আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়-

(a) ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে  

(b) ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে

© ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে

(d) ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে

2. Very Short Question Answer

1. অসহযোগ আন্দোলনে মেদিনীপুরের কৃষক আন্দোলনের প্রধান নেতা কে ছিলেন?

>> অসহযোগ আন্দোলনে মেদিনীপুরের কৃষক আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন বীরেন্দ্রনাথ শাসমল।

2. মহাত্মা গান্ধির প্রকৃত নাম কী?

>> মহাত্মা গান্ধির প্রকৃত নাম মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি।

3. বাবা রামচন্দ্র কে ছিলেন?

 >> অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশে কিষান সভার নেতা ছিলেন বাবা রামচন্দ্র।

4. একা আন্দোলনের এরূপ নামকরণের কারণ কী?

 >> একা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আন্দোলনকারীরা একতাবদ্ধ থাকার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করে বলে এই আন্দোলনের নাম হয় ‘একা’ বা ‘একতা’ আন্দোলন।

5. একা আন্দোলনের দুজন নেতার নাম লেখো।

>> একা আন্দোলনের দুজন নেতা হলেন মাদারি পাশি ও বাবা গরিবদাস।

6. কংগ্রেস কেন একা আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়?

>> একা আন্দোলনের শেষদিকে আন্দোলনে হিংসাত্মক কার্যকলাপ ঘটলে কংগ্রেস আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়।

7. বারদৌলি সত্যাগ্রহের পরিণতি কী হয়?

>> বারদৌলি সত্যাগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নিযুক্ত কমিটি ৬.০৩ শতাংশ খাজনা বৃদ্ধি অনুমোদন করলে কৃষকরা তা দিতে রাজি হয়।

৪. কাদের নেতৃত্বে বিহারে কিষান সভা গড়ে ওঠে?

>> স্বামী সহজানন্দ, যদুনন্দন শর্মা প্রমুখের নেতৃত্বে বিহারে কিষান সভা গড়ে ওঠে।

9. কোন্ ঘটনার প্রতিবাদে বারদৌলির কৃষকরা খাজনা দেওয়া বন্ধ করে?

>> রাজস্ব বৃদ্ধির প্রতিবাদে বারদৌলির কৃষকরা খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।

10. কে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোর কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেন?

>> জওহরলাল নেহরু ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোর কংগ্রেসে সভাপতিত্ব করেন।

11. কংগ্রেস কবে স্বাধীনতা দিবস পালন করে?

>> কংগ্রেস ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন করে।

12. গান্ধিজি কোন্ ঘটনার মাধ্যমে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন?

>> গান্ধিজি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল গুজরাটের ডান্ডিতে সমুদ্রের জল থেকে লবণ তৈরির মাধ্যমে লবণ আইন ভঙ্গ করে আইন অমান্য আন্দোলনের (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) সূচনা করেন।

13. মৌলানা ভাসানি কে ছিলেন?

>> মৌলানা ভাসানি ছিলেন আইন অমান্য আন্দোলনের সময় পূর্ববঙ্গের কৃষক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী মুসলিম কৃষকদের নেতা।

14. কে অন্ধ্রপ্রদেশে ‘রায়ত সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন?

>> এন জি রঙ্গ ১৯৩৩-৩৪ খ্রিস্টাব্দে কৃষকদের নিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশে ‘রায়ত সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন।

15. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কোথায় ‘চাষি মল্লা’ গড়ে উঠেছিল?

>> ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় উড়িষ্যার তালচেরে ‘চাষি মল্লা’ গড়ে ওঠে।

16. “করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে”-এটি কার উক্তি?

>> “করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে”-এটি মহাত্মা গান্ধির উক্তি।

7. কে ভারতীয় বিপ্লবী কমিটি গঠন করেন?

>> মানবেন্দ্রনাথ রায় বার্লিনে ভারতীয় বিপ্লবী কমিটি গঠন করেন।

৪. ভারতে প্রথম কবে ‘মে দিবস’ পালিত হয়?

» ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ১মে বোম্বাইয়ে প্রথম ‘মে দিবস’ পালিত হয়।

9. স্বামী বিশ্বানন্দ ও স্বামী দর্শনানন্দ কোন্ শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

>> স্বামী বিশ্বানন্দ ও স্বামী দর্শনানন্দ রানিগঞ্জ কয়লাখনি শ্রমিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

10. ‘লাঙল’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

>> ‘লাঙল’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

11. ‘লেবার-কিষান গেজেট’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

>> ‘লেবার-কিষান গেজেট’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন সিঙ্গারাভেল্লু চেট্টিয়ার।

12. ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রথম কবে, কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়?

> ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রথম ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।

13. ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’র যুবশাখার নাম কী ছিল?

>> ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’র যুবশাখার নাম ছিল ‘যুব কমরেড লিগ’।

19. সরকার কবে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে?

>> ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে সরকার কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

20. কে ‘র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ গঠন করেন?

>> মানবেন্দ্রনাথ রায় ‘র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ গঠন করেন।

21. ‘ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> ‘ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন’ গ্রন্থটি রচনা করেন মানবেন্দ্রনাথ রায়।

3. Short Question Answer

1. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজ আগ্রহী ছিল না কেন?

 উত্তর [ বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষক সমাজের অনাগ্রহের কারণগুলি হল-[1] জাতীয় কংগ্রেস এই আন্দোলনের দ্বারা কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বার্থপূরণের উদ্যোগ নেয়নি। [2] আন্দোলনের নেতারা কৃষকদের জন্য ‘সুনির্দিষ্ট কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি’-ও গ্রহণ করেনি।

2.মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে এবং জাতীয় কংগ্রেসের পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনগুলি কী ছিল?

উত্তর [ মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে এবং জাতীয় কংগ্রেসের পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হয়েছিল তিনটি। যথা- [1] অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.), [2] আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) এবং [3] ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.)।

3 আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ কী?

উত্তর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে গুজরাটের আমেদাবাদের বস্ত্র শ্রমিকরা ৫০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি জানালে মালিকশ্রেণি তাতে কর্ণপাত করেনি। ফলে গান্ধিজি এখানকার শ্রমিকদের নিয়ে অহিংস উপায়ে ধর্মঘট ও অনশন শুরু করেন। এটি আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

4 কংগ্রেস কবে কোন্ অধিবেশনে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব গ্রহণ করে?

উত্তর কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে লালা লাজপত রায়ের সভাপতিত্বে কলকাতা অধিবেশনে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ উ আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব নেয়।

5 অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার কোন্ কোন্ জেলায় কৃষক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে?

উত্তর অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার মেদিনীপুর, পাবনা, বগুড়া, বীরভূম, রাজশাহি, রংপুর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায় কৃষক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে।

6 কৃষক আন্দোলনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর কৃষক আন্দোলনের দুটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল- [1] অধিকাংশ কৃষক আন্দোলন ছিল বিক্ষিপ্ত এবং একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। [2] কৃষক আন্দোলনগুলি কখনও জমিদার-মহাজন-বিরোধী ছিল; আবার কখনও ব্রিটিশবিরোধী ছিল।

7 অসহযোগ আন্দোলনে মেদিনীপুরে কৃষকরা কীভাবে শামিল হয়?

উত্তর মেদিনীপুরে ক্ষুদ্র, মধ্যবিত্ত, জোতদার-সকলশ্রেণির কৃষক অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়। এখানকার তমলুক ও কাঁথি মহকুমার ইউনিয়ন বোর্ড চৌকিদারি কর বন্ধ করলে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে।

৪ অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশে কৃষক আন্দোলন কীরূপ আকার ধারণ করে?

উত্তর অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি, প্রতাপগড়, সুলতানপুর-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে কিষান সভার উদ্যোগে কৃষক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। বাবা রামচন্দ্রের গ্রেফতারের পর এই রাজ্যের হরদৈ, বরাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় ‘একা’ নামে কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

9. অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিহারের কোন্ কোন্ অঞ্চলে কৃষকবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে?

উত্তর [অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিহারের সীতামারি, দ্বারভাঙ্গা, ভাগলপুর, মুজফফরপুর, পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, মধুবনী প্রভৃতি অঞ্চ্যলে কৃষকবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।

10 উত্তরপ্রদেশে কবে, কাদের উদ্যোগে কিষান সভা প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর উত্তরপ্রদেশে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে মদনমোহন মালব্যের সমর্থনে গৌরীশংকর মিশ্র ও ইন্দ্রনারায়ণ ত্রিবেদীর উদ্যোগে কিষান সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

11 *কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্রের কীরূপ ভূমিকা ছিল?

উত্তর অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলনে বাবা রামচন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন- [1] তিনি যুক্তপ্রদেশে গঠিত কিষান সভার নেতৃত্বে কৃষকদের নিয়ে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলেন। [2] তাঁর নেতৃত্বে কিষান সভার আন্দোলন কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনের সাথে মিশে গিয়ে জোরালো হয়ে ওঠে।

12 *আপ্লুরি সীতারাম রাজু কে ছিলেন?

 উত্তর আপ্লুরি সীতারাম রাজু ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের রম্পা বিদ্রোহের নেতা। তাঁর নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন গেরিলা যুদ্ধে পরিণত হয়। মাদ্রাজে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার নৃশংসভাবে রম্পা বিদ্রোহ দমন করে ও শ্রীরাম রাজুকে হত্যা করে।

13 অসহযোগ আন্দোলনের সময় কারা বারদৌলি অঞ্চলে গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন? এখানে কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়?

উত্তর অসহযোগ আন্দোলনের সময় গান্ধিবাদী সত্যাগ্রহী নেতা কল্যাণজি মেহতা ও দয়ালজি দেশাই বারদৌলি অঞ্চলে গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

[ বারদৌলিতে হালি প্রথা, সুরাপান, পণপ্রথা প্রভৃতির বিরুদ্ধে এখানকার কৃষকদের সচেতন করে তোলা হয়। গঠনমূলক কর্মসূচি হিসেবে বারদৌলি অঞ্চলে বিদ্যালয়, সত্যাগ্রহ শিবির বা আশ্রম প্রভৃতি গড়ে তোলা হয়।

14 অসহযোগ আন্দোলনের সময় জওহরলাল নেহরু কীভাবে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন?

উত্তর অসহযোগ আন্দোলনের সময় ‘একা আন্দোলনের’ নেতা বাবা রামচন্দ্র গ্রামের কৃষকদের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখার অনুরোধ করে কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুকে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে গ্রামে আসার অনুরোধ জানান। এভাবে নেহরু কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।

15 কবে, কোন্ ঘটনার ফলে গান্ধিজি অহিংস অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন?

উত্তর [ ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে (৫ ফেব্রুয়ারি) উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার বিশ শতকের ভারতে কৃ রারিচৌরা গ্রামে উত্তেজিত জনতা থানায় অগ্নি সংযোগ করে ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারে। আন্দোলনে হিংসার প্রবেশ ঘটায় গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

16 চৌরিচৌরার ঘটনাটি কী?

উত্তর কে চৌরিচৌরা হল উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার একটি গ্রাম। এখানে অসহযোগ আন্দোলনের সময় ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি উত্তেজিত জনতা থানায় ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারে।

17 একা আন্দোলন কী?

উত্তর কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর বৃদ্ধি, কর আদায়ে রীমাহীন অত্যাচার, প্রভুর জমি ও খামারে কৃষকদের বিনা বেতনে বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা প্রভৃতি কারণে যুক্তপ্রদেশের (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) উত্তর- পশ্চিম অযোধ্যা, অর্থাৎ হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথমভাগে যে আদেলায় সংঘটিত হয় তা একা আন্দোলন নামে পরিচিত।

18 ‘একা’ আন্দোলন কাদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল? কৃষকদের প্রধান শপথ কী ছিল?

উত্তর [ মাদারি পাশি ও বাবা গরিবদাস প্রমুখের নেতৃত্বে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগে যুক্তপ্রদেশে একা আন্দোলন হয়েছিলা একা আন্দোলনে যোগদানকারী কৃষকরা শপথ গ্রহণ করে যে, [1] তারা নথিভুক্ত করের বেশি অর্থ প্রদান করবে না। [2] অপরাধীদের সাহায্য করবে না। [3] বেগার শ্রম দেবে না। [4] জমি থেকে উৎখাত করলেও তারা জমি ছেড়ে চলে যাবে না। [5] তারা পঞ্চায়েতের যাবতীয় সিদ্ধান্ত মেনে চলবে।

19 কবে, কোথায় ‘একা আন্দোলন’ সংঘটিত হয়েছিল?

উত্তর [ ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম ভাগে যুক্ত- প্রদেশের (বর্তমান উত্তরপ্রদেশ) উত্তর-পশ্চিম অযোধ্যা, অর্থাৎ হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় ‘একা আন্দোলন’ সংঘটিত হয়েছিল।

20 একা আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি কী কী?

উত্তর[ একা আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি ছিল- [1] কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ কর বৃদ্ধি, [2] কর আদায়ে সীমাহীন অত্যাচার, [3] প্রভুর জমি ও খামারে কৃষকদের বিনা বেতনে বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা প্রভৃতি।

21 ‘পতিদার’ ও ‘কুনবি’ কাদের বলা হত?

উত্তর পতিদার শব্দের অর্থ হল ‘একখণ্ড জমির মালিক’। পতিদাররা ছিল গুজরাটের একটি ধনী কৃষক সম্প্রদায়। এরা নিজেদের রামচন্দ্রের বংশধর বলে দাবি করত।

[• গুজরাটের সুরাট জেলার অন্তর্গত বারদৌলির সম্পন্ন ধনী কৃষকদের কুনবি বলা হত।

22 বারদৌলি সত্যাগ্রহ কী?

উত্তর গুজরাটের বারদৌলি তালুকের কৃষকদের ওপর রাজস্বের পরিমাণ যথেষ্ট বাড়িয়ে দেওয়া হলে কৃষকরা রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে অহিংস উপায়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে। এটি বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

23 বারদৌলি সত্যাগ্রহের কারণ কী ছিল?

অথবা, বারদৌলি সত্যাগ্রহ আন্দোলন কেন শুরু হয়? 

উত্তর [৯ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভয়ানক বন্যায় গুজরাটের বারদৌলি তালুকে কৃষকদের ফসল নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সরকার সেখানকার কৃষকদের ওপর রাজস্বের হার ৩০ শতাংশ (পরে কমিয়ে ২২ শতাংশ) বাড়িয়ে দেয়। তাই কৃষকরা খাজনা বন্ধের দাবি তোলে। এ ছাড়া ভূমিরাজস্ব কমানোর দাবিতে বারদৌলির কৃষকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে।

24 হালি প্রথা কী? এই প্রথা কোথায় চালু ছিল?

 অথবা, হালি প্রথা কাকে বলে?

উত্তর গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে নিম্নবর্ণের ‘কালিপরাজ’ সম্প্রদায়ভুক্ত কৃষকরা উচ্চবর্ণের ‘উজলিপরাজ’ সম্প্রদায়ের মালিকদের জমিতে বংশানুক্রমে শ্রমিকের কাজ করত। উচ্চবর্ণের অধীনে নিম্নবর্ণের মানুষের বংশানুক্রমে এই কাজের প্রথাটি ‘হালি প্রথা’ নামে পরিচিত।

[ গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে হালি প্রথা চালু ছিল।

25 বারদৌলির কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে নিযুক্ত দুজন সত্যাগ্রহী নেতার নাম লেখো।

উত্তর বারদৌলির কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির কাজে নিযুক্ত দুজন সত্যাগ্রহী নেতা ছিলেন কল্যাণজি মেহতা ও দয়ালজি দেশাই।

26 বারদৌলি সত্যাগ্রহ পরিচালনায় বল্লভভাই প্যাটেলের সহযোগী কয়েকজন নেতার নাম লেখো।

উত্তর বারদৌলি সত্যাগ্রহ পরিচালনায় বল্লভভাই প্যাটেলের সহযোগী কয়েকজন নেতা ছিলেন নরহরি পারিখ, রবিশংকর ব্যাস, মোহনলাল পান্ডে প্রমুখ।

27 বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্বে দেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নারীর নাম লেখো।

উত্তর বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেন এমন কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নারী ছিলেন মিঠুবেন প্যাটেল, মণিবেন প্যাটেল, সারদা মেহতা, ভক্তি বাই প্রমুখ।

28 বারদৌলি সত্যাগ্রহের সমর্থনে কারা আইনসভা থেকে পদত্যাগ করেন?

উত্তর বারদৌলি সত্যাগ্রহের সমর্থনে বোম্বাই আইনসভার সদস্য কে এম মুনসি ও লালজি নারাণজি আইনসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

29 সর্বভারতীয় কিষান সভার প্রথম উল্লেখযোগ্য নেতা কারা ছিলেন?

উত্তর সর্বভারতীয় কিষান সভার প্রথম উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন রাম মনোহর লোহিয়া, জয়প্রকাশ নারায়ণ, ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ, বঙ্কিম মুখার্জি, মোহন সিং প্রমুখ।

30 ফজলুল হক কী নামে পরিচিত ছিলেন? তাঁর কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক কী ছিল?  

উত্তর আবুল কাশেম ফজলুল হক ‘শের-ই-বঙ্গাল’ নামে পরিচিত ছিলেন।

[• বাংলার ‘কৃষক প্রজা পার্টি’র অন্যতম নেতা ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির প্রতীক ছিল ‘লাঙল’।

31 স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ২৬ জানুয়ারি দিনটির গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তর স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ২৬ জানুয়ারি দিনটির গুরুত্ব ছিল যে, জওহরলাল নেহরুর সভাপতিত্বে লাহোর কংগ্রেস অধিবেশনে (১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে) দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়- 

[1] কংগ্রেস ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস পালন করবে,

 [2] ভারত পূর্ণ স্বাধীনতা না পাওয়া পর্যন্ত প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হবে।

32 আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কোন্ কোন্ প্রদেশে কৃষক আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে?

উত্তর আইন অমান্য আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলা, গুজরাট, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, কেরলে, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশে কৃষক আন্দোলন জোরালো হয়ে ওঠে।

33 আইন অমান্য আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনে কারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?

উত্তর [ আইন অমান্য আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রফি আহমেদ কিদোয়াই, কালিকাপ্রসাদ কানুনগো, অঞ্জনি কুমার প্রমুখ।

34 *বখস্ত আন্দোলন কোথায় এবং কী জন্য হয়েছিল?

 উত্তর ‘বখস্ত’ আন্দোলন কারিয়ানন্দ শর্মার নেতৃত্বে ১৯৩৬-৩৮ খ্রিস্টাব্দে বিহারের বারহিয়া তাল, রিওরা, মাজিওয়ানা, আমওয়ারি প্রভৃতি অঞ্চলে হয়েছিল। জমিদারের হাতে কৃষকের বাধা পড়ে থাকা জমিকে ‘বখস্ত’ জমি বলা হয়। জমিদারের হাত থেকে এই জমি ফিরে পাওয়ার দাবিতে ‘বখস্ত’ আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।

35 স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্লিপস-কে কী উদ্দেশ্যে ভারতে পাঠানো হয়?

উত্তর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতীয় অর্থসম্পদ ও জনশক্তির সহায়তা ব্রিটেনের খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের অর্থসম্পদ ও জনশক্তি যুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্লিপসকে ভারতে পাঠায়।

36 ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কোন্ কোন্ প্রদেশে কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে?

উত্তর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বিহার, উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, গুজরাট, বোম্বাই, উড়িষ্যা, আসাম, মধ্যপ্রদেশ, মাদ্রাজ প্রভৃতি প্রদেশে কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

37 ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলার কৃষকবিদ্রোহ কীরূপ ছিল?

উত্তর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলার মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমা, পটাশপুর থানা, খেজুরী থানা, দিনাজপুরের বালুরঘাট প্রভৃতি এলাকায় কৃষকরা জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।

38 ‘তেভাগা’ নামকরণ কেন হয়?

 উত্তর বাংলার বর্গাদার কৃষক বা ভাগচাষিরা ফ্লাউড কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জোতদারের কাছ থেকে উৎপন্ন ফসলের দুই-তৃতীয়াংশ অধিকারের দাবিতে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে এক বিরাট আন্দোলন গড়ে তোলে (১৯৪৬ খ্রি.)। উৎপন্ন ফসলের তিনভাগের দুইভাগ পাওয়ার দাবিতে এই আন্দোলন হয়েছিল বলে এর নাম হয় ‘তেভাগা’ আন্দোলন।

39 *কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কী কারণে কৃষক আন্দোলনকে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট ছিলেন?

 উত্তর কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ কৃষক আন্দোলনকে একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট ছিলেন কারণ, তারা চেয়েছিলেন- [1] কৃষক আন্দোলন যাতে হিংসাত্মক পথে না যায়, [2] খাজনা বন্ধের আন্দোলনে দেশপ্রেমিক জমিদাররা অসন্তুষ্ট না হন।

40 মোপলা আন্দোলন কবে, কী উদ্দেশ্যে সংঘঠিত হয়েছিল?

উত্তর দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূল অঞ্চলে ১৮৭৩-১৯২১ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মোপলা আন্দোলন হয়েছিল। মোপলা আন্দোলনের কারণ ছিল কৃষকদের উপর জমিদারদের অত্যাচার বন্ধ করা।

41 *মোপলা বিদ্রোহের (১৯২১) কারণ কী?

 উত্তর [ মোপলা বিদ্রোহের (১৯২১) প্রধান কারণগুলি ছিল- [1] ব্রিটিশ সরকার মোপলার কৃষকদের ওপর তীব্র রাজস্বের বোঝা ও অন্যান্য বেআইনি কর চাপিয়ে দেয়। [2] জমিতে কৃষকদের অধিকার অস্বীকার করা হয়। [3] কৃষকদের ওপর জমিদারদের তীব্র অত্যাচার ও শোষণের ফলে তারা ক্ষুব্ধ হয়।

42. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলার শ্রমিক-মজুরদের অংশগ্রহণের দুটি উদাহরণ দাও।

উত্তর : [ বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলার শ্রমিক-মজুরদের অংশগ্রহণের কয়েকটি উদাহরণ হল-ময়মনসিংহের মুচিরা বিদেশি জুতো সারাতে অস্বীকার করে।/বরিশালের ওড়িয়া রাঁধুনিরা রান্নায় বিদেশি দ্রব্য  ব্যবহার করতে অস্বীকার করে।/কালীঘাটের ধোপারা বিলাতি কাপড় কাচতে অস্বীকার করে।

43. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার দুটি শ্রমিক ধর্মঘটের নাম উল্লেখ করো।

উত্তর : বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার উল্লেখযোগ্য শ্রমিক ধর্মঘটগুলি  হল-কলকাতার রেলওয়ে ও ট্রাম কোম্পানি/ হাওড়ার বার্ন কোম্পানি/জামালপুর রেল ওয়ার্কশপ/বাউড়িয়া জুটমিল/ বজবজের ক্লাইভ জুটমিল প্রভৃতির শ্রমিক ধর্মঘট।

44. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলার শ্রমিক ধর্মঘটে উৎসাহ ত দিয়েছিলেন এমন দুজন কংগ্রেস নেতার নাম লেখো।

উত্তর : ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলায় শ্রমিক ধর্মঘটে উৎসাহ দিয়েছিলেন এমন উল্লেখযোগ্য কংগ্রেস নেতা হলেন বিপিনচন্দ্র পাল, চিত্তরঞ্জন দাশ, লিয়াকত হোসেন, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী প্রমুখ।

45. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার কয়েকজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো।

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য শ্রমিক নেতা ছিলেন-প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, প্রেমতোষ বসু, অপূর্ব কুমার ঘোষ, অশ্বিনী কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

46. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার বাইরে কয়েকটি শ্রমিক ধর্মঘটের নাম উল্লেখ করো।

উত্তর:  বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় বাংলার বাইরে উল্লেখযোগ্যভ শ্রমিক ধর্মঘটগুলি হল-তামিলনাড়ুর তুতিকোরিনে বস্ত্র কারখানা/ বোম্বাই- এ অস্ত্র কারখানা ও রেলওয়ে ওয়ার্কশপ/পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডির অস্ত্র কারখানা ও রেলওয়ে ওয়ার্কশপ প্রভৃতি স্থানে শ্রমিক ধর্মঘট।

47. কোন্ কোন্ শ্রমিক নেতা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন?

উত্তর বি পি ওয়াদিয়া, এন এম জোশী, জোশেফ ব্যাপ্তিস্তা, প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, সুরেন্দ্রনাথ হালদার প্রমুখ শ্রমিক নেতা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

48. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় দুটি শ্রমিক ধর্মঘটের নাম উল্লেখ করো।

উত্তর:  অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় উল্লেখযোগ্য শ্রমিক ধর্মঘটগুলি হল-কলকাতার ট্রাম কোম্পানি, বন্দর, পাটকল/ জামশেদপুরের টাটা ইস্পাত কারখানা/রানিগঞ্জের কয়লাখনি প্রভৃতিতে শ্রমিকদের ধর্মঘট।

49. নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? অথবা, নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস কী উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:  নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল-[1] আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনে ভারতীয় সংগটনের সদস্যপদ গ্রহণ করা, [2] ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলা। [3] শ্রমিকদের ন্যায্য দাবিদাওয়া আদায় করা প্রভৃতি।

50. কবে, কাদের উদ্যোগে লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:  ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস নামে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম, হেমন্ত কুমার সরকার, কুতুবউদ্দিন আহমদ, সামসুদ্দিন হুসেন প্রমুখ।

51.  কবে, কোথায় ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি অব বেলাল প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর:  ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা কংগ্রেসের অভ্যন্তরে লেবার স্বরাজ পার্টি অব বেঙ্গল দল গঠিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে কৃল্পনগরে আয়োজিত নিখিল বঙ্গ প্রজা সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই দলের নতুন নামকরণ করেন ওয়ার্কার্স  অ্যান্ড পেজেন্ট পার্টি অব বেঙ্গল।

52. ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি কেন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তর:  [1] পুঁজিবাদ-বিরোধী ঐক্যবদ্ধ কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলন গড়ে ন তোলা, [2] পত্রপত্রিকা প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যমে দেশে সাম্যবাদের প্রসার ঘটানো, [3] বামপন্থী দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

53. কবে, কীভাবে সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর: ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি-র বিভিন্ন প্রাদেশিক শাখাগুলি – ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি  প্রতিষ্ঠিত হয়।

54. সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি-র কয়েকটি মুখপত্রের নাম লেখো।

উত্তর: ‘সারা ভারত ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’র কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মুখপত্র ছিল ‘লাঙল’, ‘গণবাণী’, ‘শ্রমিক’, ‘সোশ্যালিস্ট’, ‘কীর্তি’, ‘লেবার-কিষান গেজেট’ প্রভৃতি।

55. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী? অথবা

 ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ শুরু করা হয়েছিল কেন?

উত্তর: ব্রিটিশ সরকার ভারতে বামপন্থী ও শ্রমিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, পি সি যোশী- সহ মোট ৩৩ জন বামপন্থী শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে এক মামলা শুরু করে। এটি মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। ১৯৩৩ সালে মামলায় রায়ে বিভিন্ন বন্দির বিভিন্ন মেয়াদের কারাদন্ড হয় ।  

56. কাদের নিয়ে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করা হয়? অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্তদের কয়েকজনের নাম লেখো।

উত্তর: ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে (২০ মার্চ) ৩৩ জন শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২৯ খ্রি.) শুরু করা হয়। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, মীরাজকর, পি সি জোশী, গঙ্গাধর অধিকারী, শিবনাথ ব্যানার্জি, ধরণী গোস্বামী প্রমুখ।

57. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কেন বিচারব্যবস্থার কলঙ্করূপে নিন্দিত?

উত্তর: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা বিচারব্যবস্থার কলঙ্করূপে নিন্দিত। কারণ—[1] এই মামলার দ্বারা গঠনমূলক কমিউনিস্ট আন্দোলনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দমন করার চেষ্টা করা হয়। [2] অভিযুক্তদের আইনি অধিকার খর্ব করা হয়। [3] অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ না পেলেও অভিযুক্তদের অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়।

58. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত তিন ব্রিটিশ শ্রমিক নেতার নাম লেখো। 

উত্তর:  মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত তিনজন ব্রিটিশ শ্রমিক নেতা হলেন-বেঞ্জামিন ব্র্যাডলি, ফিলিপ স্প্ল্যাট ও লেস্টার হ্যাচিনসন প্রমুখ।

59. শ্রমিক আন্দোলন পর্বে দুজন ব্রিটিশ কমিউনিস্টের নাম লেখো।

উত্তর: শ্রমিক আন্দোলন পর্বে দুজন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট হলেন- [1] বেঞ্জামিন ব্র্যাডলি ও [2] ফিলিপ স্প্ল্যাট।

60. জুডিসিয়াল স্ক্যান্ডাল বলতে কী বোঝ?

উত্তর: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ২০ মার্চ ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলন বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেফতার করে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা করেন। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে এই মামলার রায়ে বিভিন্ন নেতার দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড হয়। এই ঘটনাটি ইতিহাসে জুডিসিয়াল স্ক্যান্ডাল নামে পরিচিত।

61. সরকার কবে রয়‍্যাল কমিশন নিয়োগ করে? এই কমিশন নিয়োগের উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: ব্রিটিশ সরকার ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে রয়‍্যাল কমিশন নিয়োগ করে।

• রয়‍্যাল কমিশন নিয়োগের উদ্দেশ্য ছিল শ্রমিককল্যাণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

62. কবে, কাদের উদ্যোগে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়?

উত্তর: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট নেতা বি টি রণদিভে, সোমনাথ লাহিড়ী প্রমুখের নেতৃত্বে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়।

63. কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় (বা দ্বিতীয় বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা) কোন্ কমিউনিস্ট নেতাদের জড়ানো হয়?

উত্তর: কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯২৪ খ্রি.) মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, শওকৎ ওসমানী, নলিনী গুপ্ত প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতাদের জড়ানো হয়।

মনের যোশী রাতে

64. প্রথম কার নেতৃত্বে, কোথায়, কবে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হয়? এই দল কবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে? অথবা, কে কত খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ গড়ে তোলেন?

উত্তর:– মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে এবং অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি , মহম্মদ সাফিক প্রমুখের সহযোগিতায় ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে প্রথম ‘ভারতের কমেউনিস্ট পাটি’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

– মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রতিষ্ঠিত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ‘কমিউনিস্ট ইনটারন্যাশনাল’ বা ‘কমিনটার্ন’-এর স্বীকৃতি লাভ করে।

65.ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘দ্বিজ’ বলা হয় কেন?

উত্তর: ‘দ্বিজ’ কথার অর্থ হল যার দু-বার জন্ম। [1] মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে প্রথম ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ প্রতিষ্ঠিত হয়। [2] পরে সিঙ্গারাভেল্লু চেট্টিয়ারের সভাপতিত্বে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কানপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দু-বার প্রতিষ্ঠার জন্য আক্ষরিক অর্থে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে ‘দ্বিজ’ বলা হয়।

66. কাদের নেতৃত্বে, কবে, কোথায় কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর: জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুত পট্টবর্ধন, ইউসুফ মেহের আলি, অশোক মেহতা, মিনু মাসানী প্রমুখের নেতৃত্বে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস সমাজতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়।

67. কী উদ্দেশ্যে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর: কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল (১৯৩৪ খ্রি.) প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি ছিল-[1] কংগ্রেসে সমাজতান্ত্রিক আদর্শগুলি গ্রহণ করার জন্য বর্ষীয়ান নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। [2] দরিদ্র দেশবাসীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার দাবিতে কাজ করা। [3] পুঁজিপতি, জমিদার ও দেশীয় রাজাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া [4] ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করা।

68. ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল?

উত্তর: ভারতে কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল- [1] ভারতের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন, [2] কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি প্রভৃতি।

69. মানবেন্দ্রনাথ রায় কে ছিলেন?

উত্তর: মানবেন্দ্রনাথ রায় ছিলেন ভারতের একজন বামপন্থী স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁর প্রকৃত নাম নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার তাসখন্দে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’, ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ‘লিগ অব র‍্যাডিক্যাল কংগ্রেসমেন’, ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ‘র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ প্রতিষ্ঠা করেন।

70. নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য (মানবেন্দ্রনাথ রায়) বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সময় যে ছদ্মনামগুলি গ্রহণ করেছিলেন তার যে-কোনো দুটি উল্লেখ করো।

উত্তর: নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিপ্লবী কর্মকান্ডের সময় মি. মার্টিন/ মানবেন্দ্রনাথ রায়/ হরি সিং / ড. মাহমুদ / মি. হোয়াইট / মি. ব্যানার্জি প্রভৃতি ছদ্মনাম গ্রহণ করেছিলেন।

71. মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রথম কবে, কোন্ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হন?

উত্তর: মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রথম ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ‘হাওড়া-শিবপুর ষড়যন্ত্র মামলা-য় অভিযুক্ত হয়ে ৪ বছর কারাবাস করেন।

72. ‘ভ্যানগার্ড অব ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স’ পত্রিকা সম্পর্কে কী জান?

উত্তর: ভারতের বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির বার্লিন থেকে ‘ভ্যানগার্ড অব ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি ডাকযোগে ভারতে পাঠানো হতে থাকে। সরকার এই পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করেন।

73. মানবেন্দ্রনাথ রায় কী উদ্দেশ্যে কংগ্রেস দলে যোগ দেন?

উত্তর: কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে মানবেন্দ্রনাথ রায় কংগ্রেস দলে যোগ দেন এবং কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ‘লিগ অব র‍্যাডিক্যাল কংগ্রেসমেন’ (১৯৩৭ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন।

74. ‘India in Transition’ গ্রন্থটি কার লেখা? এর পূর্বনাম কী ছিল?

উত্তর: [ ‘India in Transition’ গ্রন্থটি মানবেন্দ্রনাথ রায়ের লেখা।

 [ এই গ্রন্থটির পূর্বনাম ছিল—’Vanguard of Indian Independence ।

75. মানবেন্দ্রনাথ রায়ের লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর : মানবেন্দ্রনাথ রায়ের লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল- ‘ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন’, ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবক্ষয় ও পতন’, ‘ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা’, ‘বিজ্ঞান ও কুসংস্কার’, ‘নব মানবতাবাদ’, ‘একটি ইস্তেহার’ প্রভৃতি।

76. কে, কেন ‘র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ গঠন করেন?

উত্তর: মানবেন্দ্রনাথ রায় ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে সাম্রাজ্যবাদ- বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠন করেন।

77. কারা, কী উদ্দেশ্যে ‘ইনডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ’ গঠন করেন?

উত্তর : [1] সুভাষচন্দ্র বসু ও জওহরলাল নেহরু ‘ইনডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ’ গঠন করে। [2] ‘ইনডিপেন্ডেন্স ফর ইন্ডিয়া লিগ’ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল সমাজতান্ত্রিক উপায়ে ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোর সংস্কার করা।

78. বিশ শতকে ভারতের যে-কোনো দুটি বামপন্থী দলের নাম লেখো।

উত্তর: বিশ শতকে ভারতের বামপন্থী দলের নাম হল-ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি/কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল/ বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল/ র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি / কৃষক-প্রজা পার্টি / জাতীয় কৃষক পার্টি / জাস্টিস পার্টি প্রভৃতি।

79. ফরওয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠার পটভূমি কী?

উত্তর: সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেস এবং ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরী কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলে গান্ধিজি-সহ অন্যান্য কংগ্রেসি নেতারা সুভাষচন্দ্রের বিরোধিতা করে সদস্যপদ ত্যাগ করেন। এই প্রেক্ষাপটে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস সভাপতির পদ ত্যাগ করে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন।

80. সারা ভারত কিষান কংগ্রেসের প্রধান দাবিগুলি কী ছিল?

উত্তর: সারা ভারত কিষান কংগ্রেসের (১৯৩৬ খ্রি.) প্রধান দাবিগুলি ছিল-[1] জমিদারি ও বেগার প্রথার উচ্ছেদ, [2] কৃষিঋণ মকুব, [3] খাজনা হ্রাস প্রভৃতি।

81. কে, কবে ফরোয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন?

অথবা, কে, কোন্ বৎসর ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন?

উত্তর: সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস দলের অভ্যন্তরে ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেন।

82.কে, কবে ‘বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী দল’ প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: অমূল্যচন্দ্র অধিকারীর নেতৃত্বে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে (১৯ মে) রামগড়ে ‘বিপ্লবী সমাজতন্ত্রী’ (Revolutionary Socialist Party) দল গঠন করা হয়।

83. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কোন্ কোন্ স্থানে ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট হয়?

উত্তর: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় দিল্লি, বোম্বাই, আমেদাবাদ, লখনউ, কানপুর, নাগপুর, জামশেদপুর, মাদ্রাজ, ব্যাঙ্গালোর প্রভৃতি স্থানে ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট হয়।

84. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা আলোচনা করো।

অথবা,

 ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর: কমিউনিস্ট পার্টি কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করে কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে এই আন্দোলন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেয়।

85. ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে কমিউনিস্ট পার্টি দূরে ছিল কেন?

উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানির হিটলার কমিউনিস্ট রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ (১৯৪১ খ্রি.) করলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সোভিয়েত রাশিয়া ও তার মিত্র ব্রিটেনের পক্ষ নেয়। কংগ্রেস ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে সেই ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দিলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মনে করে যে, যুদ্ধের এই পরিস্থিতিতে ব্রিটেনকে বিব্রত না করাই উচিত। এজন্য কমিউনিস্ট পার্টি ভারত ছাড়ো আন্দোলন | থেকে দূরে সরে ছিল।

86. বিবৃতি: গান্ধিজি কখনোই শ্রমজীবীদের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে চাননি।

ব্যাখ্যা ১: গান্ধিজি ছিলেন মিল-মালিকশ্রেণির প্রতিনিধি। ব্যাখ্যা ২: গান্ধিজি পুঁজি এবং শ্রমের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে চেয়েছিলেন। ব্যাখ্যা ৩: গান্ধিজি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত ছিলেন।

ব্যাখ্যা ২: গান্ধিজি পুঁজি এবং শ্রমের মধ্যে সংঘর্ষ এড়াতে চেয়েছিলেন।

87. বিবৃতি: রবীন্দ্রনাথ ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা পছন্দ করতেন না।

ব্যাখ্যা ১: কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থা ছিল ব্যয়সাপেক্ষ। ব্যাখ্যা ২: কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যম ছিল মাতৃভাষা। ব্যাখ্যা ৩: কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মনের বিকাশ ঘটাত না।

ব্যাখ্যা ৩: কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের মনের বিকাশ ঘটাত না।

88. বিবৃতি: বিশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে বামপন্থীদের দূরত্ব তৈরি হয়।

ব্যাখ্যা ১: বামপন্থীরা কংগ্রেস-বিরোধী ছিলেন। ব্যাখ্যা ২: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় কমিউনিস্টদের গ্রেফতারে কংগ্রেসের নীরবতা। ব্যাখ্যা ৩: কংগ্রেসের কমিউনিস্ট বিরোধিতা।

ব্যাখ্যা ২: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় কমিউনিস্টদের গ্রেফতারে কংগ্রেসের নীরবতা।

89. বিবৃতি: ভারত সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করে।

ব্যাখ্যা ১: এর উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লবীদের দমন করা। ব্যাখ্যা ২: এর উদ্দেশ্য ছিল আইন অমান্য আন্দোলন দমন করা। ব্যাখ্যা ৩: এর উদ্দেশ্য দেশব্যাপী সাম্যবাদী কার্যকলাপ দমন করা। 

4. Long Question Answer

1 বিশ শতকে ভারতে কৃষক আন্দোলন শুরু হওয়ার প্রধান কারণগুলি কী ছিল? এই সময় কোন্ কোন্ কৃষক আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে?

উত্তর [ বিশ শতকে ভারতে কৃষক আন্দোলনের কারণ

বিশ শতকে ভারতে কৃষক আন্দোলন শুরু হওয়ার প্রধান কারণগুলি ছিল

নিম্নরূপ-

[1]রাজস্ব বৃদ্ধি: দেশের দরিদ্র কৃষকদের ওপর সরকার বারবার রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করলে কৃষকরা ক্ষুব্ধ হয়।

[2] জমিদার ও তালুকদারদের শোষণ: সরকারের ঘনিষ্ঠ জমিদার ও তালুকদাররা কৃষকদের ওপর বিভিন্নভাবে শোষণ ও অত্যাচার চালায়।

[3]স্বাধীনতার স্বপ্ন: কৃষকরা আন্দোলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের স্বপ্ন দেখেছিল।

বিশ শতকে কৃষক আন্দোলনের সক্রিয়তা

বিশ শতকে ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দোলন হল-

 [1] বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলন (১৯০৫ খ্রি.),

 [2] অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০ খ্রি.)

 [3] আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০ খ্রি.),

 [4] ভারত ছাড়োআন্দোলন(১৯৪২ খ্রি.)

 এই চারটি আন্দোলনের সময় ভারতে কৃষক আন্দোলনও যথেষ্ট সক্রিয় বা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তা ছাড়া অহিংস অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলনের মধ্যবর্তী সময়েও বামপন্থীদের উদ্যোগে কৃষক আন্দোলন চলে।

উপসংহার: বিংশ শতকের কৃষক আন্দোলনগুলি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে শুরু হয়। এসব আন্দোলনে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের উদ্দেশ্যে কংগ্রেস-সহ বামপন্থী দলগুলি চেষ্টা চালায়।

2 * বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে স্বদেশি আন্দোলনে কৃষকশ্রেণির কীরূপ ভূমিকা ছিল?

উত্তর [ স্বদেশি আন্দোলনে কৃষকশ্রেণির ভূমিকা

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত করে ব্রিটিশ-বিরোধিতা দুর্বল করার চেষ্টা করেন। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া জাতীয় স্তরের আন্দোলনে কৃষকদের মিশ্র ভূমিকা লক্ষ করা যায়।

 [1] কংগ্রেসের ভূমিকা: কংগ্রেস বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষকদের শামিল করার বা খাজনা প্রদান বন্ধে কৃষকদের উৎসাহিত করার বিশেষ উদ্যোগ নেয়নি। অরবিন্দ ঘোষ আশঙ্কা করেন যে, কৃষকরা খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করলে দেশপ্রেমিক জমিদাররা ক্ষুদ্ধ হবেন। এজন্য ড. সুমিত সরকার বলেছেন যে, ‘সুনির্দিষ্ট কৃষিভিত্তিক কর্মসূচির অভাবে এই আন্দোলনে কৃষকদের যুক্ত করা যায়নি।’

[2] বাংলায় কৃষক আন্দোলন: কংগ্রেস উদ্যোগ না নিলেও বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে বাংলার কৃষকরা স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে সীমিতভাবে শামিল হয়। বহু কৃষক পরিবারে বিলাতি পণ্য বর্জন করা হয়। কৃষক পরিবারের রান্নাঘরে বিলাতি চিনি, লবণ প্রভৃতির ব্যবহার বন্ধ হয়।

[3] মুসলিম কৃষকদের ভূমিকা: বাংলার হিন্দু কৃষকদের একাংশ বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করলেও পূর্ববঙ্গের মুসলিম কৃষকরা আন্দোলনে যোগ না দিয়ে বরং বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করেছিল। কারণ তারা মনে করেছিল যে, পূর্ববঙ্গের মুসলিম কৃষকদের কাছে বঙ্গভঙ্গ মঙ্গলজনক।

[4] দলিত কৃষকদের ভূমিকা: পূর্ববঙ্গের হিন্দু দলিত কৃষকশ্রেণি,বিশেষ করে নমঃশূদ্র কৃষকরা রাজেন্দ্রলাল মণ্ডলের নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করেছিল।

উপসংহার: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষকদের ভূমিকা ছিল সীমিত। তথাপি কংগ্রেসের সহযোগিতা ছাড়াই বেশ কিছু অঞ্চলে কৃষকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ প্রশংসার দাবি রাখে।

3 বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষকশ্রেণির আগ্রহ ছিল না কেন? অথবা, বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষকসমাজ যোগ দেয়নি কেন?

 উত্তর ( বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কৃষকশ্রেণির অনাগ্রহে কারণ/বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষকসমাজের যোগ না দেওয়ার কারণ

ভূমিকা: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন বড়ো আকার ধারণ করলেও কৃষকসমাজ এই আন্দোলনে ব্যাপকভাবে অংশ নেয়নি। এর পেছনে নানা কারণ ছিল। যেমন

[1 ] উপযুক্ত কর্মসূচীর অভাব: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান অভিভাবক জাতীয় কংগ্রেস উপযুক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করে আন্দোলনে কৃষকদের শামিল করার চেষ্টা করেনি। অধ্যাপক ড. সুমিত সরকারের মতে, ‘সুনির্দিষ্ট কৃষিভিত্তিক কর্মসূচি’র অভাবে এই আন্দোলনে কৃষকদের যুক্ত করা যায়নি।

[2] জমিদার ঘেঁষা নীতি: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেস দেশপ্রেমিক জমিদারদের সহযোগিতা লাভের আশা করত। এজন্য তারা কৃষক আন্দোলনকে উসকে দিয়ে জমিদারদের ক্ষুদ্ধ করতে চায়নি। অরবিন্দ ঘোষ আশঙ্কা করেন যে, কৃষকরা খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু করলে দেশপ্রেমিক জমিদাররা ক্ষুদ্ধ হবেন। ফলে কংগ্রেস নেতৃত্ব কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেননি।

[3 ] উচ্চবর্গের নেতৃত্ব: ড. শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় দেখিয়েছেন যে,বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের অধিকাংশ নেতাই ছিলেন উচ্চজাতিভুক্ত হিন্দু জমিদার। তারা তৃণমূল স্তরে নিম্নবর্ণের হিন্দু ও মুসলিম কৃষকদের মধ্যে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হন। অধ্যাপক সুমিত সরকারও কৃষকশ্রেণিকে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের শরিক করে নেওয়ার ক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দের উদাসীনতাকে দায়ী করেছেন।

[4] নেতৃবৃন্দের অদূরদর্শিতা: কৃষিপ্রধান ভারতের যে-কোনো গণ আন্দোলনের মূলভিত্তি হল সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষকশ্রেণির অংশগ্রহণ। আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ অদূরদর্শী হওয়ায় তারা এই চরম সত্যটিকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হন এবং কৃষকদের আন্দোলনে আকৃষ্ট করা থেকে বিরত থাকেন।

[5] আগ্রহের অভাব: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন ভদ্রলোক শ্রেণি ও কৃষকশ্রেণির মধ্যে বিরাট ফারাক তৈরি করে। ফলে সাধারণ কৃষকরা তথাকথিত ভদ্রলোক শ্রেণির নেতৃত্বাধীন এই আন্দোলনের প্রতি বিশেষ আকৃষ্ট হয়নি।

উপসংহার: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষকশ্রেণি সক্রিয় ও ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ না করায় আন্দোলন কিছুটা হলেও দুর্বল হয়। অধ্যাপক সুমিত সরকারও বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের স্থায়িত্বের অভাব ও ব্যর্থতার জন্য কৃষকশ্রেণির অনাগ্রহকে দায়ী করেছেন।

4 বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

 উত্তর বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

ভূমিকা: দেশপ্রেমিক জমিদার শ্রেণি অসন্তুষ্ট হতে পারে এই ভেবে কংগ্রেস বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই সময় বেশ কিছু জায়গায় কৃষক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। যেমন-

[1] পূর্ববঙ্গ: বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনকালে পূর্ববঙ্গের দরিদ্র মুসলিম কৃষকরা জমিদারের অতিরিক্ত শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তোলে। ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, বাখরগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে মুসলিম কৃষকদের আন্দোলন সাম্প্রদায়িক রূপ নেয়।

[2] পাঞ্জাব: লর্ড মিন্টোর শোষণমূলক আইনের প্রতিবাদে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাবের কিছু এলাকায় কৃষকরা আন্দোলনমুখী হয়ে ওঠে। এখানকার শিক্ষিত কৃষকশ্রেণি অন্যান্য কৃষকদের সংঘবদ্ধ করার কাজে বিশেষ ভূমিকা নেয়। লালা লাজপত রায়, অজিত সিংহ প্রমুখও কৃষকদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেন।

[3] বিহার: বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময়কালে বিহারের চম্পারণ জেলার মতিহারিবেতিয়া অঞ্চলে শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। তিনকাঠিয়া ব্যবস্থা অনুসারে সরকার কৃষকদের জোর করে নীলচাষ করতে বাধ্য করলে কৃষকরা সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলনে নামে।

[4] মেবার: মেবারের উদয়পুর অঞ্চলের ‘বিজোলিয়া’ নামে জমিদারি এলাকার কৃষকদের ওপর প্রায় ৮৫ ধরনের কর ও উপকর চাপানো হয়। এর প্রতিবাদে এখানকার অগণিত কৃষক উদয়পুরের মহারানার বিরুদ্ধে কর বন্ধের আন্দোলন শুরু করে। এতে নেতৃত্ব দেন সীতারাম দাস নামে জনৈক সাধু।

উপসংহার: বঙ্গবঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় কৃষক সমাজের ক্ষোভ- বিক্ষোভ বিচ্ছিন্নভাবে তাদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে। কিন্তু কংগ্রেসের সহযোগিতার অভাবে, আবার কোথাও সাম্প্রদায়িক কারণে কৃষকদের এই আন্দোলন ব্যাপক ও সর্বভারতীয় চরিত্র লাভ করতে পারেনি।

5 * অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে (১৯২০-২২ খ্রি.) ভারতের কৃষক আন্দোলনের পরিচয় দাও।

অথবা, অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন কেমন আকার ধারণ করেছিল?

উত্তর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ডারতের কৃষক আন্দোলন

ভূমিকা: দেশে মূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড প্রভৃতির প্রতিবাদে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। বহু কৃষক এই আন্দোলনে শামিল হয়।

[1] বাংলা: বাংলার মেদিনীপুর, পাবনা, কুমিল্লা, রাজশাহি, বগুড়া, রংপুর, বীরভূম, দিনাজপুর ও বাঁকুড়া জেলার কৃষকরা কংগ্রেসের অসহযোগ ও বয়কট আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে। মেদিনীপুরে বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, রাজশাহিতে সোমেশ্বর চৌধুরী, বীরভূমে জিতেন্দ্রলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

[2] বিহার: বিহারের ভাগলপুর, মুজফ্ফরপুর, পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, দ্বারভাঙ্গা, মধুবনী, সীতামারি জেলার কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়ে জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

[3] যুক্তপ্রদেশ

[i] কিষান সভার উদ্যোগ: যুক্তপ্রদেশে (উত্তরপ্রদেশ) বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে কিষান সভা (১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে) রায়বেরিলি, প্রতাপগড়, সুলতানপুর প্রভৃতি অঞ্চলে কৃষক আন্দোলনকে চরম রূপ দেয়।

[ii] একা আন্দোলন: ১৯২১-২২ খ্রিস্টাব্দে উত্তরপ্রদেশের হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে শামিল হয় যা একা আন্দোলন নামে পরিচিত।

[iii] চৌরিচৌরার ঘটনা: ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে (৫ ফেব্রুয়ারি) উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামে উত্তেজিত কৃষকরা থানায় আগুন লাগিয়ে ২২ জন পুলিশকে পুড়িয়ে মারে।

[4]অন্যান্য রাজ্যে: অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার কৃষকরা, পাঞ্জাবের অকালী শিখ ও জাঠ কৃষকরা, উড়িষ্যার কৃষকরা অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

[5 ] অসহযোগ আন্দোলনের পর: গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেও বিভিন্ন স্থানে কৃষক আন্দোলন চলতে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বারদৌলি সত্যাগ্রহ। কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেল গুজরাটের দুর্দশাগ্রস্ত কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এই আন্দোলন সংগঠিত করেন।

উপসংহার: অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হলে অসহযোগ আন্দোলন প্রকৃত অর্থে সর্বভারতীয় চরিত্র লাভ করে। তবে যেসব স্থানে কৃষকদের আন্দোলন হিংসাত্মক রূপ নেয় সেগুলিকে মহাত্মা গান্ধি সমর্থন করেননি।

6 *অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে (১৯২০-২২খ্রি.) বাংলায় কৃষক আন্দোলনের পরিচয় দাও।

উত্তর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে বাংলায় কৃষক আন্দোলন

ভূমিকা: গান্ধিজির নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে বাংলায় এই আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলার বহু কৃষকও এই আন্দোলনে যোগদান করে।

[1] কংগ্রেসের আন্দোলন: কংগ্রেস নেতারা ‘স্বরাজ’ বা স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে বাংলার বহু কৃষক এই আন্দোলনে আকৃষ্ট হয়।

[2] আন্দোলনের প্রসার: অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষকবিদ্রোহের প্রসার ঘটে। মেদিনীপুর, পাবনা, বগুড়া, বীরভূম, রাজশাহি, রংপুর, কুমিল্লা, দিনাজপুর, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায় কৃষকরা কংগ্রেসের অসহযোগ ও বয়কট আন্দোলনকে সমর্থন জানায়।

[3] মেদিনীপুর: মেদিনীপুরে বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে দরিদ্র, মধ্যবিত্ত, স্বচ্ছল প্রভৃতি সর্বস্তরের কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়ে জমিদারদের খাজনা ও চৌকিদারি কর দেওয়া বন্ধ করে।

[4] বীরভূম: বীরভূম জেলার জিতেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কৃষকরা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে।

[5] পূর্ববঙ্গ: খিলাফত আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীল পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলার মসলিম কৃষকরা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়। তারা জমিদার-জোতদারদের সামাজিক বয়কট শুরু করে। রাজশাহি জেলায় সোমেশ্বর চৌধুরীর নেতৃত্বে কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়ে খাজনা প্রদান বন্ধ করে দেয়।

উপসংহার: অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে উঠলে তা অসহযোগ আন্দোলনেরও শক্তি বৃদ্ধি করে। কৃষক আন্দোলনের এইরকম সংঘটিত রূপ এর আগে দেখা যায়নি।

7 *একা আন্দোলন সম্পর্কে কী জান?

উত্তর  একা আন্দোলন

ভূমিকা: মহাত্মা গান্ধির ডাকে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.) শুরু হলে উত্তরপ্রদেশে এই আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। এই রাজ্যের অযোধ্যা অঞ্চলে কৃষকদের নিয়ে একা আন্দোলন গড়ে ওঠে।

[1] ‘একা’ নামকরণ: ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে কৃষক আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারী কৃষকরা একতাবদ্ধ থাকার শপথ নেওয়ায় এই আন্দোলনের নাম হয় ‘একা’বা ‘একতা’ আন্দোলন।

[2] নেতৃত্ব: একা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মাদারি পাশি ও বাবা গরিবদাস। এই আন্দোলন উত্তরপ্রদেশের উত্তর-পশ্চিম অযোধ্যা অঞ্চলের হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

[3] কারণ: একা আন্দোলনের প্রধান কারণগুলি ছিল-

[i] কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ নতুন কর আরোপ,

 [ii] কর আদায়ে চরম অত্যাচার,

 [iii] প্রভুর জমি ও খামারে কৃষককে বিনা বেতনে বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করা প্রভৃতি।

[4] শপথা: আন্দোলনকারীরা শপথ গ্রহণ করে যে, তারা –

 [i] অতিরিক্ত কর দেবে না,

 [ii] বেগার শ্রম দেবে না,

 [iii] অপরাধীদের সাহায্য করবে না,

 [iv] জমি থেকে উৎখাত করলেও তারা জমি ছেড়ে যাবে না,

[v] তারা পঞ্চায়েতের যাবতীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেবে।

[5] কংগ্রেসের ভূমিকা: প্রথমদিকে কংগ্রেস একা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানালেও কিছুকাল পর এই আন্দোলনে হিংসার প্রবেশ ঘটলে কংগ্রেস ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে যায়।

উপসংহার: একা আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে কংগ্রেস ও জাতীয় নেতৃবৃন্দ সরে গেলে আন্দোলন কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ওপর তীব্র সরকারি দমননীতির ফলে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাস নাগাদ এই আন্দোলন থেমে যায়।

৪ *বারদৌলি কৃষক আন্দোলনের ওপর সংক্ষিপ্ত টাকা রচনা করো।

 উত্তর [ Topic A-এর ওনং ব্যাখ্যামূলক উত্তরভিত্তিক প্রশ্নের উত্তরে-এর ‘বারদৌলি আন্দোলন’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

9. বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের কীরূপ মনোভাব ছিল?

 উত্তর [ বারদৌলি সত্যাগ্রহের প্রতি জাতীয় কংগ্রেসের মনোভাব

ভূমিকা: ব্রিটিশ সরকার বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে ভূমিরাজস্বের হার ৩০% বাড়িয়ে দিলে কৃষকদের দুর্দশা বাড়ে। তারা সরকারের কাছে আবেদন করে রাজস্বের হার কমাতে ব্যর্থ হলে আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়।

[1] কংগ্রেসকে প্রস্তাব: গুজরাটের সক্রিয় নেতা নরহরি পারিখ, রবি শঙ্কর ব্যাস, মোহনলাল পাণ্ডে প্রমুখ গ্রামের ক্ষুদ্ধ কৃষকদের সঙ্গে আন্দোলনের পন্থা নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাতে কংগ্রেসের নেতৃত্ব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন।

[2] প্যাটেলের সঙ্গে আলোচনা: গান্ধিবাদী কংগ্রেস নেতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল ইতিপূর্বে গুজরাটের খেদা সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দিয়ে খ্যাতিলাভ করেন। গুজরাটের নেতৃবৃন্দ প্যাটেলের সঙ্গে দেখা করে তাদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার প্রস্তাব দেন।

[3] প্যাটেলের পরামর্শ: প্যাটেল কৃষকদের বলেন যে, তিনি ঐক্যবদ্ধ কৃষকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে রাজি আছেন। কিন্তু খাজনা প্রদান বন্ধ করলে কৃষকদের জেল, জমি থেকে উৎখাত প্রভৃতি ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা জানান যে, তারা যে-কোনো ঘটনার মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।

[4] গান্ধিজির সম্মতি: এরপর প্যাটেল বারদৌলির আন্দোলনকারীদের মনোভাবটি গান্ধিজিকে জানান। গান্ধিজি প্যাটেলের উদ্যোগে সম্মতি জানান। তবে গান্ধিজি জানান যে, তিনি নিজে বা কংগ্রেস প্রত্যক্ষভাবে বারদৌলির এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবে না।

উপসংহার: প্যাটেলের নেতৃত্বে বারদৌলি সত্যাগ্রহ তীব্র আকার ধারণা করে। এতে নেতৃত্ব দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নেতা হিসেবে প্যাটেলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

10 আইন অমান্য আন্দোলনের (১৯৩০ খ্রি.) সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর আইন অমান্য আন্দোলন

ভূমিকা: মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করে। ভারতবর্ষের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের ফলে এই আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

[1] কারণ: আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার পিছনে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি ছিল –

[i] দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্ব, বিশ্ব-অর্থনীতিতে মহামন্দা প্রভৃতির ফলে ভারতীয় অর্থনীতির দুর্দশা, 

[ii] সাধারণ  ভারতীয়দের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রসার,                                                  

[iii] বৈপ্লবিক  কর্মকাণ্ডের সক্রিয়তা,

[iv] ব্রিটিশ বাণিজ্যনীতির ফলে ভারতীয় বাণিজ্যের ক্ষতি প্রভৃতি।

[2] আন্দোলনের সূচনা: গান্ধিজি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ ৭৮ জন অনুগামী নিয়ে সমুদ্রের উপকূলে গুজরাটের ডান্ডি নামক স্থানে লবণ আইন অমান্য ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। ৬ এপ্রিল সমুদ্রের জল থেকে লবণ তৈরি করে সরকারি আইন ভঙ্গের মাধ্যমে তিনি এই আন্দোলনের সূচনা করেন।

[3] আন্দোলনের প্রসার: আন্দোলন শুরু হওয়ার পর তা শীঘ্রই বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, যুক্তপ্রদেশ, দিল্লি, পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, গুজরাট, বোম্বাই, মাদ্রাজ, কর্ণাটক প্রভৃতি অঞ্চলে প্রসার লাভ করে। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে গান্ধিবাদী নেতা খান আবদুল গফফর খান (সীমান্ত গান্ধি)-এর নেতৃত্বে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে।

 [4] ব্যর্থতা: ইতিমধ্যে ব্রিটিশ সরকারের বিভেদনীতি, ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি ঘোষণা, বর্ণহিন্দু ও দলিত হিন্দুদের মধ্যে বিরোধ প্রভৃতির ফলে এই আন্দোলন দুর্বল হতে শুরু করে। শেষপর্যন্ত কংগ্রেস ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে (৮ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়।

উপসংহার: আইন অমান্য আন্দোলন শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হলেও ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সংগ্রাম একেবারে থেমে যায়নি। পরবর্তীকালে ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এর চূড়ান্ত প্রকাশ দেখা গিয়েছিল।

11 * আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) ভারতবর্ষে কৃষক আন্দোলনের বিবরণ দাও।

উত্তর আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ভারতবর্ষে কৃষক আন্দোলন

ভূমিকা: গান্ধিজি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৬ এপ্রিল আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করার পর শীঘ্রই উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলা, গুজরাট, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব-সহ বিভিন্ন প্রদেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

[1] উত্তরপ্রদেশ: রায়বেরিলি, আগ্রা, বারাবাঁকি, লখনউ, প্রতাপগড়-সহ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন 

স্থানের কৃষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে এখানে আইন অমান্য আন্দোলন প্রকৃত গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। উত্তরপ্রদেশে আন্দোলনরত কৃষকরা সরকার, জমিদার ও তালুকদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। রফি আহমেদ কিদোয়াই, কালিকা প্রসাদ, অঞ্জনি কুমার প্রমুখ এখানকার কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

[2] বিহার: আইন অমান্য আন্দোলনের প্রভাবে স্বামী সহজানন্দ, যদুনন্দন শর্মা প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বিহারে কিষান সভা গঠন করেন। বিহারে কৃষক আন্দোলন মূলত অহিংস পথে চললেও মুঙ্গের ও মুজফ্ফরপুর থানা আক্রমণের মতো সহিংস ঘটনাও ঘটে।

[3] বাংলা: জোতদারদের বিরুদ্ধে বাংলার মেদিনীপুর জেলার কাঁথি ও মহিষাদলে কৃষকরা আন্দোলনে অংশ নেয়। এ ছাড়া আরামবাগ, শ্রীহট্ট প্রভৃতি স্থানেও কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

[4]গুজরাট: গুজরাটের সুরাট, বারদৌলি, খেদা প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলন চালিয়ে যায়। পুলিশের অত্যাচার সত্ত্বেও বহু স্থানে কৃষকরা অন্তত ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খাজনা দেওয়া বন্ধ রাখে।

[5] অন্যান্য প্রদেশ: অন্যান্য প্রদেশেও কৃষকরা আন্দোলনে শামিল হয়।

[i] কংগ্রেস নেতা কেলাপ্পান কেরলে কৃষকদের নিয়ে সত্যাগ্রহ চালান।

 [ii] অন্ধ্রপ্রদেশে বাল রামকৃয়ের নেতৃত্বে কৃষকরা খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।

 [iii] পাঞ্জাবে জলসেচ কর ও রাজস্ব হ্রাসের দাবিতে কৃষকরা আন্দোলন চালায়।

 [iv] মধ্যপ্রদেশ ও কর্ণাটকের কৃষকরাও খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।

উপসংহার: আইন অমান্য আন্দোলন থেমে যাওয়ার পরও কৃষক আন্দোলন ধীরগতিতে চলতে থাকে। এই পর্বে বামপন্থী ও কমিউনিস্টরা কৃষকদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন।

 12 * উত্তরপ্রদেশে আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষকদের কী ভূমিকা ছিল?

উত্তর উত্তরপ্রদেশে আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষকদের ভূমিকা

ভূমিকা: কংগ্রেসের ডাকে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের সর্বাধিক সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়।

[1]. গণ আন্দোলন: উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলি, আগ্রা, বারাবাঁকি, লখনউ, প্রতাপগড়-সহ বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে এবং এই আন্দোলন প্রকৃত গণ আন্দোলনের রূপ নেয়।

[2] খাজনা প্রদান বন্ধ: উত্তরপ্রদেশের কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়ে সরকার, এমনকি জমিদার এবং তালুকদারদেরও খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। পুলিশি নির্যাতন সত্ত্বেও তারা খাজনা দিতে রাজি হয়নি।

[3] নেতৃত্ব: উত্তরপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন রফি আহমেদ কিদোয়াই, কালিকা প্রসাদ, অঞ্জনি কুমার প্রমুখ।

[4] কংগ্রেসের উদ্যোগ: কংগ্রেস দল প্রথম থেকেই উত্তরপ্রদেশের কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি কৃষকদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দেয়।

[5] বামপন্থীদের উদ্যোগ: কমিউনিস্ট এবং সমাজতন্ত্রীরাও কৃষকদের আন্দোলনে যুক্ত হয়। গান্ধিজি কৃষকদের কিছু খাজনা দেওয়ার কথা বললেও বামপন্থীরা তাতে রাজি হয়নি।

উপসংহার: উত্তরপ্রদেশের কৃষকদের আইন অমান্য আন্দোলন জনমনে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছোয় যে, কৃষকদের সমর্থন ছাড়া এখানে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠতে পারত না।

13 আইন অমান্য আন্দোলনের পরবর্তীকালে কৃষক আন্দোলনের অগ্রগতি কেমন ছিল?

উত্তর আইন অমান্য আন্দোলনের পরবর্তীকালে কৃষক আন্দোলন

ভূমিকা: ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে আইন অমান্য আন্দোলন থেমে গেলেও কৃষক আন্দোলন ধীরগতিতে চলতে থাকে।

[1] নেতৃত্ব: আইন অমান্য আন্দোলনের পরবর্তীকালে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন বামপন্থী ও কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন পি সি জোশী, অজয় ঘোষ, রাম মনোহর লোহিয়া, জয় প্রকাশ নারায়ণ, ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ, বঙ্কিম মুখার্জি, মোহন সিং প্রমুখ।

[2] কিষান সভার ভূমিকা: এই সময়ের কৃষক আন্দোলনে কিষান সভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে লখনউতে সর্বভারতীয় কিষান সভা স্থাপিত হয়। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন বিহারের স্বামী সহজানন্দ এবং প্রথম সম্পাদক ছিলেন উত্তরপ্রদেশের এন জি রঙ্গ। এর প্রথম অধিবেশনে জওহরলাল নেহরু উপস্থিত ছিলেন।

[3] কৃষক-কল্যাণমূলক আইন: কৃষক আন্দোলনের চাপে বিভিন্ন প্রদেশের কংগ্রেসি মন্ত্রীসভাগুলি কৃষকদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে বেশ কয়েকটি আইন পাস করে।

[4] পদযাত্রা: অন্ধ্রপ্রদেশের কিষান সভার উদ্যোগে প্রায় ২ হাজার কৃষক ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ১৩০ দিন ধরে প্রায় ১৫০০ মাইল পদযাত্রা করে কৃষকদের দুর্দশার প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে।

[5] ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূচনা: ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে কৃষক আন্দোলন আবার গতিশীল হয়ে ওঠে।

উপসংহার: আইন অমান্য আন্দোলনের পরবর্তীকালে বিভিন্ন বামপন্থী ও কমিউনিস্ট নেতাদের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানের কৃষক আন্দোলনগুলি চলতে থাকে। পরবর্তীকালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষক আন্দোলন পুনরায় ও অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে।

14 টীকা লেখো: কিষান সভা/নিখিল ভারত কিষান সভা।

উত্তর কিষান সভা/নিখিল ভারত কিষান সভা

ভূমিকা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রভাবে ভারতের কৃষকশ্রেণি সাম্রাজ্যবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ক্রমে সচেতন হয়ে ওঠে। এর পরিণতিতে ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত কিষান সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

[1] প্রেক্ষাপট: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের অহিংস অসহযোগ আন্দোলন এবং ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের আইন অমান্য আন্দোলনে কৃষকশ্রেণি যুক্ত হয়ে পড়ে। তাদের সংগঠিত করে কৃষক আন্দোলন জোরদার করার উদ্দেশ্যে এই সময় জাতীয়তাবাদী, বামপন্থী ও সমাজতান্ত্রিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে ওঠে।

[2] এন জি রঙ্গ প্রমুখের উদ্যোগ: প্রথমে এন জি রঙ্গ এবং ই এম এস নাম্বুদ্রিপাদ কিষান সভা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। তাঁরা ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতীয় কৃষক ও কৃষি-শ্রমিক যুগ্ম সংস্থা নামক কৃষকদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।

[3] কিষান সভা প্রতিষ্ঠা: এরপর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে নিখিল ভারত কিষান সভা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উত্তরপ্রদেশের লখনউ শহরে এর প্রথম অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিহারের কৃষক নেতা স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী।

[4] লক্ষ্য: কিষান সভার প্রধান লক্ষ্যগুলি ছিল-

[i] জমিদারি ও মহাজনি প্রথার বিলোপ, 

[ii] ভূমিরাজস্ব ও খাজনার পরিমাণ হ্রাস,

 [iii] বেগার প্রথার অবসান,

 [iv] সেচব্যবস্থার উন্নতি,

 [v] বনজ সম্পদ সংগ্রহের চিরাচরিত অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া,

 [vi] জাতীয় আন্দোলনে কৃষকদের শামিল করা প্রভৃতি।

 (5) গুরুত্ব: নিখিল ভারত কিষান সভা প্রতিষ্ঠার ফলে

[i] কৃষকশ্রেণির ওপর শোষণের বিরুদ্ধে কৃষকরা সচেতন হয়ে ওঠে।

 [ii] ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কৃষকরা আরও বেশি সংখ্যায় যোগ দিতে থাকে।

উপসংহার: কিষান সভা ব্রিটিশবিরোধী কৃষক আন্দোলনের এক প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি গড়ে দেয়। রুশ ঐতিহাসিক জি. কাতোভস্কি নিখিল ভারত কিষান সভার প্রতিষ্ঠাকে ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন।

15. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের (১৯৪২খ্রি.) সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর ভারত খড়ো আন্দোলন

ভূমিকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-৪৫ খ্রি.) সময় ভারতবর্ষে আগত ক্লিপস মিশন (১৯৪২ খ্রি.) ভারতীয়দের স্বাধীনতা দানের প্রতিশ্রুতিগত দেওয়ায় ভারতীয় নেতৃবৃন্দ চরম হতাশ হন। তাই ব্রিটিশ বিরোধী আদিলনা আরও তীব্র হতে থাকে।

[1] আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ: জাতীয় কংগ্রেস ৭ আগস্ট বোম্বাই অধিবেশনে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। পরের দিনই জাতীয় স্তরের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে।

[2] গণ আন্দোলন: নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারের পর দেশবাসী শীর্ষ নেতাদের ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মাদ্রাজ, আসাম ইত্যাদি রাজ্যের কৃষক, নারী, ছাত্র প্রভৃতি সর্বস্তরের ভারতবাসী এই আন্দোলনে শামিল হয়। ফলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শীঘ্রই গণ আন্দোলনে পরিণত হয়।

[3] আন্দোলনের ব্যাপকতা: আন্দোলনকারীরা সরকারি দমননীতি উপেক্ষা করে বিলাতি পণ্য ও ব্রিটিশ স্কুলকলেজ বর্জন, মিছিল-মিটিং, বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করা, রেল-টেলিগ্রাফ-টেলিফোনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা, থানা আক্রমণ প্রভৃতি কর্মসূচিতে অংশ নেয়

[4] বাংলায় আন্দোলন: বাংলায় মেদিনীপুরের তমলুক, কাঁথি, পটাশপুর, খেজুরী, বালুরঘাট প্রভৃতি স্থানে ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রবল আকার নেয়। তমলুকে ব্রিটিশ সরকারের বিকল্প তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সতীশচন্দ্র সামন্ত ছিলেন এই সরকারের প্রধান। তাঁর অনুগামীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অজয় মুখোপাধ্যায় ও সুশীলচন্দ্র ধাড়া। মেদিনীপুরের ৭৩ বছরের বৃদ্ধা মাতঙ্গিনী হাজরা আন্দোলনে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান।

[5] জাতীয় নেতৃবৃন্দ: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিভিন্ন নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন জয়প্রকাশ নারায়ণ, রাম মনোহর লোহিয়া,নরেন্দ্র দেব, যোগেশ চ্যাটার্জি, অরুণা আসফ আলি, সুচেতা কৃপালনি, উষা মেটা, অচ্যুৎ পট্টবর্ধন প্রমুখ।

উপসংহার: ধনী, দরিদ্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত জাতিধর্মনির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের ফলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রকৃত গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার এই আন্দোলন সম্পর্কে বলেছেন-“বিয়াল্লিশের বিদ্রোহ ছিল মূলত সৈনিকের যুদ্ধ। তাঁরা স্বাধীনতার শহীদের মতো জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।”

16 * ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলনের অগ্রগতির পরিচয় দাও।

উত্তর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলনের অগ্রগতি

ভূমিকা: ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হয়। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, বাংলা, গুজরাট, বোম্বাই, উড়িষ্যা, আসাম, মধ্যপ্রদেশ, মাদ্রাজ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রদেশের কৃষকশ্রেণি সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে।

[1] উদ্দেশ্য: জমিদার ও অবস্থাপন্ন কৃষকরা কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করে এবং জাতীয়তাবাদী লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। নিম্নবর্ণের দরিদ্র কৃষকরা স্বপ্ন দেখেছিল যে, তাদের আন্দোলন সফল হলে দেশে স্বাধীনতা আসবে এবং দরিদ্র কৃষকদের দুর্দশা দূর হবে।

[2] বিহারে আন্দোলন: বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজফ্ফ্ফরপুর, পূর্ণিয়া, সাঁওতাল পরগনা প্রভৃতি অঞ্চলের আদিবাসী কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দেয়। বিহারের ৮০ শতাংশ থানাই আন্দোলনকারীদের দখলে চলে যায়। বিহারের দ্বারভাঙ্গার জমিদার আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করার সরকারি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি বন্দি কৃষকদের মুক্তির জন্যও তিনি উদ্যোগ নেন।

[3] বাংলায় আন্দোলন: বাংলার মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমা, পটাশপুর থানা, খেজুরী থানা, দিনাজপুরের বালুরঘাট প্রভৃতি এলাকায় আন্দোলনরত কৃষকরা জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।

[4] গুজরাটে আন্দোলন: গুজরাটের সুরাট, খান্দেশ, ব্রোচ প্রভৃতি জেলায় কৃষকরা গেরিলা আক্রমণ চালায়। সুরাটে কৃষকরা রেলপথ অবরোধ করে, রেল-যোগাযোগ ছিন্ন করে এবং সরকারি নথিপত্র পুড়িয়ে দেয়।

[5] উড়িষ্যায় আন্দোলন: উড়িষ্যার তালচেরে আন্দোলনকারী কৃষকরা চাষি মল্লা-রাজ প্রতিষ্ঠা করে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে।

উপসংহার: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সারা ভারতে সংগঠিত কৃষক আন্দোলনগুলি ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে। এই সময় জমিদারদের বিরোধিতা নয়, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতাই কৃষক আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

17 *ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলায় কৃষক আন্দোলনের বর্ণনা দাও।

উত্তর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলায় কৃষক আন্দোলন

ভূমিকা: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে (১৯৪২ খ্রি.) বাংলার বিভিন্ন জেলার কৃষকদের অংশগ্রহণের ফলে বাংলায় এই আন্দোলন যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

[1] লক্ষ্য: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগদানকারী বাংলার কৃষকদের প্রধান লক্ষ্য ছিল-

 [i] ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে ভারতের স্বাধীনতা লাভ।

 [ii] শোষণমুক্তির মাধ্যমে কৃষকদের অবস্থার উন্নতি ঘটানো।

[2] আন্দোলনের প্রসার: বাংলার মেদিনীপুর জেলার তমলুক মহকুমা, পটাশপুর থানা, খেজুরী থানা, দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট প্রভৃতি এলাকার কৃষকরা এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে ও জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।

[3] আন্দোলনকারী কৃষক: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে বাংলার রাজবংশী, আদিবাসী, নমঃশূদ্র প্রভৃতি সম্প্রদায়ের চাষিরা আন্তরিকভাবে শামিল হয়। তবে পূর্ববঙ্গের মুসলিম কৃষকদের একটি বড়ো অংশ আন্দোলন থেকে দূরে ছিল। কেন-না, তারা সাম্প্রদায়িক মনোভাব নিয়ে নিজেদের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলার উচ্চবর্ণের হিন্দুদের চিহ্নিত করেছিল।

[4] কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা: কমিউনিস্ট পার্টি ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে কৃষকদের দূরে সরে থাকার নির্দেশ দেয়। তবে পার্টির নির্দেশ বহু কৃষক অমান্য করে।

উপসংহার: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় বাংলায় সংগঠিত কৃষক আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। বাংলার বিভিন্ন স্থানে পার্টির নির্দেশ অমান্য করে কমিউনিস্টদের আন্দোলনে যোগদান আন্দোলনগুলিকে বিশেষ তাৎপর্যমন্ডিত করেছে।

18 ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পরবর্তীকালে ভারতের প্রধান কৃষক আন্দোলনগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের (১৯৪২ খ্রি.) পরবর্তীকালে কৃষক আন্দোলন

ভূমিকা: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রভাব যথেষ্ট হ্রাস পায়। তবে এরপরও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে কৃষক আন্দোলন চলতে থাকে। যেমন-

[1] মহারাষ্ট্র: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মহারাষ্ট্রের দহনু ও উমাবরগাঁ তালুকে জমিদার ও ইজারাদারদের শোষণের বিরুদ্ধে ভারলিস উপজাতির আন্দোলন শুরু হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বামপন্থী নেতা দালভী ও পারুলেকর। এই আন্দোলনের ফলে বেগার প্রথা ও ভূমিদাস প্রথার অবসান ঘটে। 

[2] বিহার: বিহারে বকস্ত নামে জমি থেকে প্রজাদের উচ্ছেদের বিরুদ্ধে কৃষকরা আন্দোলন করে। এটি বকস্ত আন্দোলন নামে পরিচিত।

[3] ত্রিবাঙ্কুর: ত্রিবাঙ্কুরের পুন্নাপ্রা-ভায়লার অঞ্চলের কৃষক ও শ্রমিকরা কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে আন্দোলন চালায়। এর ফলে স্বাধীনতা লাভের পর ত্রিবাঙ্কুরের ভারতভুক্তি সহজ হয়।

[4] বাংলা: বাংলার রংপুর, দিনাজপুর, খুলনা, ময়মনসিংহ, যশোহর, মেদিনীপুর, ২৪ পরগনা, জলপাইগুড়ি প্রভৃতি জেলার বর্গাদার বা ভাগচাষিরা উৎপন্ন ফসলের ২/৩ অংশ পাওয়ার দাবিতে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে আন্দোলন শুরু করে। এটি তেভাগা আন্দোলন নামে পরিচিত।

[5] হায়দ্রাবাদ: হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানা অঞ্চলে সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ কৃষক ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে আন্দোলন শুরু করে। এটি তেলেঙ্গানা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

উপসংহার: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পরবর্তীকালে সংঘটিত কৃষক আন্দোলনগুলির অধিকাংশই ছিল বিচ্ছিন্ন এবং বহুক্ষেত্রে আঞ্চলিক প্রবণতা যুক্ত। অধিকাংশ আন্দোলনে বামপন্থীদের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

 19 কিষান সভা প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর কিষান সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য

 ভূমিকা: কংগ্রেসের বামপন্থী অংশ, কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল ও কমিউনিস্টরা ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে ‘সারাভারত কিষান কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে কিষান সভা তার একটি ইস্তাহার প্রকাশ করে কৃষকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া তুলে ধরে। এই ইস্তাহার থেকে কিষান সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা যায়।

[1] জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ: জমিদারি প্রথা ছিল কৃষকদের দুর্দশার অন্যতম কারণ। তাই কিষান সভা জমিদারি প্রথার উচ্ছেদের দাবি জানায়।

[2] কৃষিঋণ মকুব: কৃষকরা ঋণ নিয়ে অনন্তকাল ঋণের জালে জড়িয়ে থাকত। কিষান সভা এই ঋণ মকুবের দাবি জানায়।

[3] বেগার প্রথার অবসান: জমিদারের জমিতে কৃষকদের যে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে হত বা বেগার শ্রম দিতে হত, কিষান সভা এই প্রথার অবসানের দাবি করে।

[4] খাজনা হ্রাস: কৃষকদের খাজনার হার অন্তত ৫০ শতাংশ হ্রাস করার জন্য কিষান সভা দাবি জানায়।

[5] বনজ-সম্পদে অধিকার: ইতিপূর্বে ব্রিটিশ সরকার অরণ্য আইন পাস করে ভারতীয়দের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। প্রকৃতির বনজ-সম্পদ আহরণে কৃষকদের অধিকার দানের জন্য কৃষকসভা দাবি জানায়।

 [6] জমি প্রদান: সরকারের অনাবাদী জমি এবং জমিদারের খাস জমি কৃষকদের হাতে প্রদানের জন্য কিষান সভা দাবি করে।

উপসংহার: কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, তাদের দাবিদাওয়া আদায় এবং তাদের প্রতি অন্যায়ের প্রতিকারের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা কিষান সভা স্বাধীনতার প্রাক্কালে ব্রিটিশ-বিরোধী গণ আন্দোলনগুলিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। ফলে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ফলবতী হয়।

20 বিংশ শতাব্দীর ভারতে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে কংগ্রেস ও বামপন্থী রাজনীতির সংযোগ আলোচনা করো।

 উত্তর বিংশ শতাব্দীর ডারতে কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে কংগ্রেস ও বামপন্থী রাজনীতির সংযোগ

ভূমিকা: বিশ শতকে ভারতে ব্রিটিশবিরোধী বিভিন্ন কৃষক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনগুলির সঙ্গে কংগ্রেস ও বিভিন্ন বামপন্থী দল রাজনৈতিক সংযোগ গড়ে তুলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালায়।

[1] বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্ব: অরবিন্দ ঘোষের মতো কেউ কেউ এমন আশঙ্কা করেছিলেন যে কৃষকদের স্বার্থযুক্ত আন্দোলনে সক্রিয়তা দেখালে দেশপ্রেমিক জমিদাররা কংগ্রেসের প্রতি ক্ষুব্ধ হতে পারেন। তাই কংগ্রেস বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষকদের শামিল করতে ঝাঁপিয়ে পড়েনি। যদিও পাঞ্জাবে লর্ড মিন্টো কর্তৃক ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ক্যানাল আইনের বিরুদ্ধে লালা লাজপত রায় ও অজিত সিংহদের যুক্ত হতে দেখা যায়।

[2] অসহযোগ আন্দোলন পর্ব: অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ভারতের নানা স্থানে জমিদার বিরোধিতা, খাজনা বন্ধ, বিভিন্ন প্রকার কর বন্ধ, লুঠতরাজ, ছোটোখাটো সংঘর্ষ প্রভৃতির মাধ্যমে কৃষক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলার মেদিনীপুর জেলায় বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের নেতৃত্বে শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন হয়। কংগ্রেসে নেতৃত্বাধীন ‘একা আন্দোলন’, ‘বারদৌলি সত্যাগ্রহ’ প্রভৃতিতে কৃষকদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এসব আন্দোলনে মাদারি পাসি, বাবা গরিব দাস, বল্লভভাই প্যাটেল-সহ বিভিন্ন কংগ্রেস নেতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন।

[3] আইন অমান্য আন্দোলন পর্ব: আইন অমান্য আন্দোলন কালে বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কেরল, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, পাঞ্জাব-সহ নানা স্থানে কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে। উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন কৃষক আন্দোলনগুলির সাথে কংগ্রেস ও বামপন্থী দলগুলি যুক্ত হয়ে পড়ে। কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী ও কমিউনিস্ট দলগুলি কৃষকদের খাজনা দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ রাখার প্রস্তাব দেয়। আইন অমান্য আন্দোলন থেমে যাওয়ার পরও বামপন্থী ও কমিউনিস্ট দলগুলির নেতৃত্বে ধীর গতিতে কৃষক আন্দোলন চলতে থাকে।

[4] ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্ব: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মধ্যবিত্ত ও প্রান্তিক কৃষকরা, এমনকি খেতমজুর শ্রেণিও সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্টিফেন হেনিংহ্যামের মতে, পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে কৃষকরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেয়। কমিউনিস্ট পার্টি উ দলগতভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করলেও বহু কমিউনিস্ট নেতা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। হিতেশরঞ্জন সান্যাল দেখিয়েছেন যে, মেদিনীপুর জেলায় কৃষকসভার বহু সদস্য পার্টির নির্দেশ অমান্য করে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দেয়।

উপসংহার: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন, অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, আইন অমান্য আন্দোলন ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনে কৃষকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আবার বামপন্থী ও কমিউনিস্ট দলগুলির লড়াকু নেতৃত্ব যেভাবে কৃষক আন্দোলনগুলিকে সর্বাত্মক করে তোলে তা কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

21 কৃষক আন্দোলনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা কী?

উত্তর কৃষক আন্দোলনে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ভূমিকা ভূমিকা: বিংশ শতকে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষক আন্দোলনগুলি

শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেসের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল।

[1] অসহযোগ আন্দোলন: কংগ্রেসের উদ্যোগে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে কৃষক আন্দোলনও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কংগ্রেসের উদ্যোগে বাংলার মেদিনীপুর, পাবনা, কুমিল্লা, রাজশাহি, বগুড়া, রংপুর, বীরভূম, দিনাজপুর, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায়, বিহারের ভাগলপুর, মুজফ্ফরপুর, পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, দ্বারভাঙ্গা, মধুবনী প্রভৃতি জেলায়, যুক্তপ্রদেশের হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর প্রভৃতি জেলায় কৃষক আন্দোলন চলে।

[2] একা আন্দোলন: ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ ও ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের শুরুতে উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা অঞ্চলে মাদারি পাশি ও বাবা গরিবদাসের নেতৃত্বে ‘একা’ নামে কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কংগ্রেস এই আন্দোলনকে সমর্থন জানায়।

[3] বারদৌলি সত্যাগ্রহ: জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি অঞ্চলে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এক শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন গান্ধিবাদী কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেল।

[4] আইন অমান্য আন্দোলন: কংগ্রেসের উদ্যোগে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য শুরু হলে কৃষক আন্দোলন আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। উত্তরপ্রদেশের আগ্রা, রায়বেরিলি, বারাবাঁকি, লখনউ, প্রতাপগড়, বাংলার মেদিনীপুর, শ্রীহট্ট, বিহারের বিভিন্ন স্থানে, গুজরাটের সুরাট, বারদৌলি, খেদা প্রভৃতি জেলায় কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

[5] ভারত ছাড়ো আন্দোলন: কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজফফরপুর, পূর্ণিয়া, সাঁওতাল পরগনা, বাংলার মেদিনীপুর, দিনাজপুর, গুজরাটের সুরাট, খান্দেশ, ব্রোচ, উড়িষ্যার তালচের প্রভৃতি জেলায় শক্তিশালী কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে।

উপসংহার: সমগ্র বিশ শতক জুড়ে ভারতে সংগঠিত কৃষক আন্দোলনগুলি কংগ্রেসের নেতৃত্বে সমৃদ্ধ হয়। প্রাথমিক পর্বে কংগ্রেস কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষা করলেও পরবর্তীকালে তারা কৃষকদের স্বার্থের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়। ফলে কৃষকরা কংগ্রেসি রাজনীতির ঘনিষ্ঠ হয়।

22. *বিশ শতকে ভারতে কৃষক আন্দোলনের অগ্রগতির পরিচয় দাও। অথবা, বিশ শতকে ভারতে কৃষক আন্দোলনের বর্ণনা দাও।

 উত্তর [ বিশ শতকে ভারতে কৃষক আন্দোলন

 ভূমিকা: বিশ শতকে ভারতের কৃষক আন্দোলনে জাতীয় রাজনীতির প্রভাব পড়ে। এই সময় ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে কৃষকশ্রেণি সক্রিয়ভাবে যোগদান করে।

[1] বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময়: কংগ্রেস নেতাদের উদ্যোগের অভাবে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের সময় কৃষকশ্রেণি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি। ড. সুমিত সরকার বলেছেন যে, ‘সুনির্দিষ্ট কৃষিভিত্তিক কর্মসূচির অভাবে এই আন্দোলনে কৃষকদের যুক্ত করা যায়নি। তা ছাড়া পূর্ববঙ্গের মুসলিম কৃষকরা বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করেছিল।

[2] অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময়: অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের (১৯২০-২২ খ্রি.) সময় গান্ধিজির ডাকে সারা দেশের বহু কৃষক এই আন্দোলনে শামিল হয়।

[i] বাংলা: বাংলার মেদিনীপুর, পাবনা, কুমিল্লা, রাজশাহি, বগুড়া, রংপুর, বীরভূম, দিনাজপুর, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলার বহু কৃষক আন্দোলনে অংশ নেয়।

[ii] বিহার: বিহারের ভাগলপুর, মুজফফরপুর, পূর্ণিয়া, মুঙ্গের, দ্বারভাঙ্গা, মধুবনী, সীতামারি প্রভৃতি জেলার কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দিয়ে জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে।

[iii] যুক্তপ্রদেশ: যুক্তপ্রদেশে (বর্তমান উত্তরপ্রদেশে) বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এ রাজ্যের হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি জেলার কৃষকরা একতাবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে শামিল হয় যা একা আন্দোলন নামে পরিচিত।

[iv] অন্যান্য প্রদেশ: অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলার কৃষকরা, পাঞ্জাবের অকালী শিখ ও জাঠ কৃষকরা, উড়িষ্যার কিছু কিছু অঞ্চলের কৃষকরা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। অসহযোগ আন্দোলনের পরবর্তীকালে কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেল গুজরাটের দুর্দশাগ্রস্ কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে বারদৌলি সত্যাগ্রহ (১৯২৮ খ্রি.) করেন

[3] আইন অমান্য আন্দোলনের সময়: আইন অমান্য আন্দোলনেও (১৯৩০-৩৪ খ্রিস্টাব্দে) বিভিন্ন প্রদেশের কৃষকশ্রেণি সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়।

[i] উত্তরপ্রদেশ: রায়বেরিলি, আগ্রা, বারাবাঁকি, লখনউ, প্রতাপগড়- সহ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে এখানে আইন অমান্য আন্দোলন প্রকৃত গণ আন্দোলনে পরিণত হয়।

[ii] বিহার: স্বামী সহজানন্দ, যদুনন্দন শর্মা প্রমুখের নেতৃত্বে গঠিত কিষান সভা বিহারে কৃষকদের আন্দোলনে শামিল করে।

[iii] বাংলা: বাংলার কাঁথি, মহিষাদল, আরামবাগ, শ্রীহট্ট প্রভৃতি স্থানে কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দেয়।

[iv] গুজরাট: গুজরাটের সুরাট, বারদৌলি, খেদা প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা সত্যাগ্রহ আন্দোলন চালিয়ে যায়।

[v] অন্যান্য প্রদেশে: কেরলর কেলাপ্পান এবং অন্ধ্রে বাল রামকৃষ্ণ কৃষকদের খাজনা বন্ধে উৎসাহিত করেন। মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, পাঞ্জাবেও সেচকর ও রাজস্ব কমানোর দাবিতে কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দেয়।

[4] ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে দেশ উত্তাল হয়ে উঠলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরাও আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

[i] বিহার: বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজফ্ফ্ফরপুর, পূর্ণিয়া, সাঁওতাল পরগনা প্রভৃতি অঞ্চলের আদিবাসী কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দেয়। বিহারের ৮০ শতাংশ থানাই আন্দোলনকারীদের দখলে চলে যায়।

[ii] বাংলা: বাংলার মেদিনীপুরের তমলুক মহকুমা, পটাশপুর থানা, খেজুরী থানা, দিনাজপুরের বালুরঘাট প্রভৃতি এলাকায় আন্দোলনরত কৃষকরা জমিদারদের খাজনা দেওয়া বন্ধ করে।

[iii] গুজরাট: গুজরাটের সুরাট, খান্দেশ, ব্রোচ প্রভৃতি জেলায় কৃষকরা গেরিলা আক্রমণ চালায়।

[iv] উড়িষ্যা: উড়িষ্যার তালচেরে আন্দোলনকারী কৃষকরা চাষি মল্লা-রাজ প্রতিষ্ঠা করে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে।

উপসংহার: বিশ শতকে কৃষক আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হলেও ভারতের সর্বত্র কৃষকদের এই আন্দোলনে শামিল করা যায়নি। কোনো কোনো কংগ্রেস নেতা কৃষকদের খাজনা বন্ধের আন্দোলনে শামিল করে জমিদারদের ক্ষিপ্ত করতে চাননি। কেন-না, জমিদাররা কংগ্রেসের সক্রিয় সমর্থক ছিল। বহু ক্ষেত্রে মুসলিম কৃষকরা কংগ্রেস পরিচালিত আন্দোলন থেকে দূরে সরে গিয়েছিল।

23. অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলনের প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো।

অথবা, অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময়কালে ভারতের কৃষক আন্দোলনের বিবরণ দাও।

 উত্তর অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

ভূমিকা: ১৯২০-১৯২২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ব্রিটিশ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে গান্ধিজির নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন চলে। এই সময় ভারতের বিভিন্ন স্থানে কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে যা অসহযোগ আন্দোলনে শক্তি জোগায়।

[1] বাংলা: অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র বাংলার মেদিনীপুর জেলার বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা বীরেন্দ্রনাথ শাসমল কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং খাজনা বন্ধের ডাক দেন। এই ডাকে সাড়া দিয়ে অগণিত কৃষক ব্রিটিশ দমননীতি উপেক্ষা করে অসহযোগ আন্দোলনে শামিল হয়। এ ছাড়া বাংলার পাবনা, রংপুর, কুমিল্লা, দক্ষিণ দিনাজপুর, বীরভূম প্রভৃতি স্থানেও কৃষক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

[2] বিহার: বিহারের কৃষকদের মধ্যেও অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের প্রভাব পড়ে। সেখানকার জমিদার শ্রেণি কৃষকদের ওপর খাজনা বৃদ্ধি করে এবং খাজনা প্রদানে অক্ষম ব্যক্তির ওপর চরম অত্যাচার চালায়। এর প্রতিবাদে বিহারের কৃষক শ্রেণি ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন বিহারের মুঙ্গের, পূর্নিয়া, ভাগলপুর প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

[3] রাজস্থান: অসহযোগ আন্দোলনের যুগে পশ্চিম ভারতের রাজস্থানে কৃষকবিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এই অঞ্চলে বিজয় সিং পথিক ও মানিক লাল ভার্মার নেতৃত্বে সংঘটিত বিজোরিয়াতে সামন্ততন্ত্র, বিরোধী কৃষকবিদ্রোহ উল্লেখযোগ্য। এই আন্দোলনে কৃষকদের প্রধান দাবি ছিল জমির ওপর কৃষকদের পূর্ণ অধিকার প্রদান করা।

[4] যুক্তপ্রদেশ: অসহযোগ আন্দোলন পর্বে কৃষকবিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল যুক্তপ্রদেশ। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে মদনমোহন মালব্য যুক্তপ্রদেশের এলাহাবাদে কিষান সভা গঠন করে। এই সভার প্রধান কর্মসূচি ছিল-

[i] কৃষক ও জমিদারদের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা,

 [ii] শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা,

 [iii] কৃষকদের স্বার্থ সম্পর্কিত আইন প্রণয়ন করা। যুক্তপ্রদেশের এলাহাবাদ, প্রতাপগড়, রায়বেরিলি, ফৈজাবাদ, অযোধ্যা প্রভৃতি স্থানে কৃষকবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে অযোধ্যার বরদৈ তালুকে মাদারি পাসির নেতৃত্বে সংঘটিত এক আন্দোলন (১৯২১-২২ খ্রি.) ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

[5] অন্ধ্রপ্রদেশ: অসহযোগ আন্দোলনের কালে দক্ষিণ ভারতে অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টুর জেলায় ব্যাপক কৃষকবিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ থেকে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের শুরু পর্যন্ত এখানকার কৃষকরা সরকারকে খাজনা বন্ধের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়। এরপর ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট থেকে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের মে পর্যন্ত আধা-উপজাতি রাম্পা কৃষকরা আন্দোলন করে। এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয় সীতারাম রাজু।

 [6] খুজরাট: অসহযোগ আন্দোলনের সময় গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে বিশিষ্ট গান্ধিবাদী নেতা বল্লভভাই প্যাটেল খাজনা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন যা বারদৌলি সত্যাগ্রহ (১৯২৮ খ্রি.) নামে পরিচিত। আন্দোলনে কৃষকরা তাৎক্ষণিক সাফল্যও পায়। সেখানকার আন্দোলনকারী মহিলারা বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘সর্দার’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

[7] কেরল: কেরলের মালাবার উপকূলের মুসলিম কৃষকদের মোপলা বলা হত। এই অঞ্চলে রাজস্বের হার খুবই বেশি ছিল। সেইসঙ্গে এখানকার জেনমি বা জমিদারেরা মুসলিম কৃষকদের ওপর ব্যাপক শোষণ-অত্যাচার চালাত। এর প্রতিবাদে মোপলা কৃষকরা স্থানীয় জমিদারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। অবশ্য এই বিদ্রোহে অনেকে সাম্প্রদায়িকতার আভাস পেয়েছেন।

উপসংহার: অসহযোগ আন্দোলনের সময় ভারতের কৃষকরা গান্ধিজির আদর্শে উদ্‌বুদ্ধ হয়ে আন্দোলনে যোগ দেয়। ফলে ভারতের নানা প্রান্তে কৃষক বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। কিছু মানুষ গান্ধিজিকে দেবতা রূপে পুজো করতে শুরু করে। তাদের বিশ্বাস ছিল যে, গ্রামের অত্যাচারী জমিদার ও মহাজন শ্রেণির মানুষের হাত থেকে গান্ধিজি তাদের রক্ষা করবে।

24. বারদৌলি আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। তুমি কি মনে কর যে, এই আন্দোলন ভূমিহীন কৃষকশ্রেণি এবং কৃষিশ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় সফল হয়েছিল?

 উত্তর বারদৌলি আন্দোলন

ভূমিকা: গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকের কৃষকরা ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এক শক্তিশালী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে, যা বারদৌলি সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

[1] কৃষকদের অবস্থা: বারদৌলি তালুকের সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক ছিল নিম্নবর্ণের কালিপরাজ সম্প্রদায়ভুক্ত। সীমাহীন দারিদ্র্য, সামাজিক অবজ্ঞা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল।

[2] আন্দোলনের কারণ: ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভয়ংকর বন্যায় বারদৌলি অঞ্চলের প্রচুর ফসল নষ্ট হয়। কৃষকরা দুর্ভিক্ষের শিকার হওয়া সত্ত্বেও সরকার তাদের ওপর প্রথমে ৩০ শতাংশ এবং পরে তা কমিয়ে প্রায় ২২ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে। ফলে কৃষকরা বিদ্রোহী হয়।

 [3] প্যাটেলের নেতৃত্ব: বারদৌলি সত্যাগ্রহে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য কৃষকরা গান্ধিবাদী কংগ্রেস নেতা বল্লভভাই প্যাটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি এখানে কৃষকদের ঐক্যবদ্ধ করে অহিংস প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন। বারদৌলির কৃষক-রমণীরা তাঁকে ‘সর্দার’ উপাধি দেন।

[ 4] অন্যান্য নেতৃত্ব: আন্দোলনে নরহরি পারিখ, রবিশংকর ব্যাস,মোহনলাল পান্ডে প্রমুখ সর্দার প্যাটেলকে সহযোগিতা করেন। মিঠুবেন প্যাটেল, মণিবেন প্যাটেল, সারদা মেহতা, ভক্তি বাই প্রমুখ নারী এই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।

[5] প্রভাব: আন্দোলনের সমর্থনে বোম্বাই বিধানসভার সদস্য কে এম মুনশি ও লালজি নারাণজি পদত্যাগ করেন। গান্ধিজিও বারদৌলিতে এসে আন্দোলনে নেতৃত্বদানের কথা ঘোষণা করেন। শেষপর্যন্ত সরকার নিযুক্ত এক কমিটি ৬.০৩ শতাংশ খাজনা বৃদ্ধি অনুমোদন করলে কৃষকরা তা দিতে রাজি হয়।

বারদৌলির কৃষকদের শক্তিশালী আন্দোলনে শেষপর্যন্ত ইংরেজ সরকার হার মানতে বাধ্য হয়। আন্দোলনের চাপে সরকার শেষপর্যন্ত ‘ব্লুমফিল্ড- ম্যাক্সওয়েল তদন্ত কমিটি’ গঠন করে বর্ধিত রাজস্বের হার কমাতে বাধ্য হয়।

বারদৌলি আন্দোলন এবং ভূমিহীন কৃষকশ্রেণি ও কৃষি- শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা

বারদৌলি আন্দোলন গুজরাটের বারদৌলি তালুকের ভূমিহীন কৃষক ও কৃষিশ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় বেশকিছু সাফল্য পেয়েছিল। যেমন-

[1] কর বৃদ্ধি প্রত্যাহার: ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ভয়ানক বন্যার ফলে বারদৌলির কৃষকদের ফসল নষ্ট হলে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। তা সত্ত্বেও সরকার বারদৌলির কৃষকদের উপর প্রথমে ৩০ শতাংশ এবং পরে তা পরিবর্তন করে প্রায় ২২ শতাংশ রাজস্ব বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করে। কিন্তু সত্যাগ্রহ আন্দোলনের চাপে সরকার শেষ পর্যন্ত একটি কমিটি নিয়োগ করে। এই কমিটি ৬.০৩ শতাংশ খাজনা বৃদ্ধি অনুমোদন করলে কৃষকরা তা দিতে রাজি হয়।

[2] কৃষক তহবিল প্রতিষ্ঠা: সরকারের উদ্যোগে বারদৌলি কৃষকদের জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়। আন্দোলনের অন্যতম নেতা সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দ্বারা তা পরিচালিত হয়। এই তহবিল কৃষকদের খাজনা ও ঋণ পরিশোধে সহায়তা করেছিল।

[3] কৃষকদের অধিকারের স্বীকৃতি: বারদৌলি সত্যাগ্রহ জমি ও ফসলের উপর কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে। ফলে কৃষকদের জীবিকার নিরাপত্তা বাড়ে।

[4] ভবিষ্যৎ আন্দোলনের প্রেরণা: বারদৌলি সত্যাগ্রহের সাফল্য ভারতজুড়ে অন্যান্য আন্দোলনকে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার এবং তাদের নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করেছিল।

25. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব লেখো।

 উত্তর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের কারণ

ভূমিকা: স্বাধীনতা লাভের পূর্বে ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল এদেশের সর্বশেষ বৃহত্তম ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন। গান্ধিজির নেতৃত্বে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ৮ আগস্ট কংগ্রেসের বোম্বাই অধিবেশনে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। আন্দোলনকে শুরুতেই দমনের উদ্দেশ্যে সরকার ৯ আগস্ট ভোরে বোম্বাই স্টেশন থেকে কংগ্রেসের প্রথম শ্রেণির প্রায় সকল নেতাদের গ্রেফতার করলে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভারতীয়দের ওপর ব্রিটিশ সরকারের অত্যাচার, সরকারের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় নীতি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে বেকারত্ব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট প্রভৃতি এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে।

[ 1] ক্লিপস মিশনের ব্যর্থতা: ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ সরকার ভারতের প্রথম শ্রেণির নেতাদের সঙ্গে আলাপ- আলোচনার উদ্দেশ্যে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে (২৯ মার্চ) ভারতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠান। স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্লিপসের নেতৃত্বাধীন এই প্রতিনিধি দল বা ‘ক্লিপস মিশন’ জানায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতকে ‘ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস’ বা স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা দেওয়া হবে। কিন্তু গান্ধিজি পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোনো প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। তিনি এই প্রস্তাবটিকে “ফেল পড়া ব্যাংকের ওপর আগামী তারিখের চেক” বলে প্রত্যাখ্যান করেন।

[2] গান্ধিজির ভূমিকা: ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে গান্ধিজি স্পষ্টতই বুঝতে পারেন যে, এটিই ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার আদর্শ সময়। এজন্য তিনি ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ‘Do or Die’-এর ডাক দেন।

[3] ভারতের দিকে জাপানের অগ্রগতি: ভারত ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। তাই জাপান দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্রিটিশ বাহিনীর মিত্রজোটকে পরাজিত করে ভারতের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় নেতারা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনের প্রয়োজন অনুভব করেন।

[4] দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সৈন্যদের জন্য ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ খাবার পাঠানো হতে থাকে। এর ফলে ভারতে খাদ্যদ্রব্য-সহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যও যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। মূল্যবৃদ্ধি ভারতীয়দের ক্ষুদ্ধ করে।

[5] সেনাদের ওপর অত্যাচার: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয় সৈন্যদের দূরদেশে বিপদসংকুল যুদ্ধক্ষেত্রগুলিতে পাঠানো হয়। নিয়মিত বেতন না পাওয়া, এই পদে কর্মরত শ্বেতাঙ্গ সৈন্যদের চেয়ে কম বেতন পাওয়া, অত্যন্ত নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ, শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচার প্রভৃতি ছিল ভারতীয় সেনাদের নিত্যসঙ্গী। বহু ভারতীয় সৈন্যের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের কখনও পদোন্নতি বা উচ্চপদে নিয়োগের সুযোগ ছিল না। এইসব ঘটনা ভারতীয়দের ক্ষুদ্ধ করেছিল।

[6] কৃষকশ্রেণির পুঞ্জীভূত ক্ষোভ: বাংলা, বিহার, আসাম ও উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানের কৃষকরা ছিল ভূমিহীন, দরিদ্র ও খেত- মজুর। তাদের ওপর করের বোঝা, উৎপন্ন ফসলের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া প্রভৃতি ঘটনা তাদের ক্ষুদ্ধ করে এবং আন্দোলনে উৎসাহ জোগায়।

[7] শ্রমিকশ্রেণির পুঞ্জীভূত ক্ষোভ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে ভারতের শ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানায়। কিন্তু মালিকশ্রেণি তাদের মজুরি বৃদ্ধি করেনি। বরং যুদ্ধের ডামাডোলে শিল্পপণ্য বিক্রি ব্যাহত হলে কলকারখানাগুলি থেকে বহু শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। ফলে ক্ষুব্ধ শ্রমিকশ্রেণি আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের গুরুত্ব

ভারত ছাড়ো আন্দোলন আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও এই আন্দোলনের নানা গুরুত্ব ছিল। যেমন-

[1] আন্দোলনের ব্যাপ্তি: সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। কৃষক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ, ছাত্রছাত্রীনির্বিশেষে সকলের যোগদানের ফলে এটি প্রকৃত অর্থে গণ- আন্দোলনে পরিণত হয়। জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে সম্পাদিত ‘The Indian Nation in 1942’ গ্রন্থে ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে জাতীয়তাবাদী গণ আন্দোলন বলে অভিহিত করা হয়েছে।

[2] স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ভারতবাসী স্বাধীনতা লাভের জন্য প্রস্তুত এবং তা অর্জনের জন্য তারা সব ধরনের ত্যাগ, তিতিক্ষা, অত্যাচার, লাঞ্ছনা- এমনকি মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত। ড. অম্বাপ্রসাদ বলেছেন, “১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও তা ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ভারতের স্বাধীনতার ভিত্তি প্রস্তুত করে।”

[3] ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি: ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রমাণ করে যে, মুক্তিসংগ্রামে ভারতের জয় অনিবার্য। বড়োেলাট লর্ড ওয়াভেল ব্রিটিশ সরকারকে লেখেন, “ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের দিন শেষ হয়েছে। পুনরায় এই ধরনের একটি আন্দোলন হলে তা মোকাবিলা করার শক্তি সরকারের নেই।”

[4] কংগ্রেসের প্রভাব বৃদ্ধি: ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্রের মতে, জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ৪২-এর আন্দোলন হল চূড়ান্ত পর্যায়। কংগ্রেসের ডাকে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে দেশের সর্বস্তরের মানুষ শামিল হয়। ফলে জনমানসে কংগ্রেসের প্রভাব আরও ব্যাপক ও সর্বাত্মক হয়।

[5 ] সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রসার: মুসলিম লিগ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ না করলেও উত্তরপ্রদেশ, বিহার, চট্টগ্রাম, শিলচর-সহ বহু স্থানের মুসলমানগণ এই আন্দোলনে যোগ দেয় এবং আন্দোলনে নানাভাবে সহায়তা করে। ফলে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। উল্লেখ্য যে, এইসময় কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি।

উপসংহার: ভারতে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল এক ব্যাপক আন্দোলন। এই আন্দোলনকে সামনে রেখে দেশপ্রেমিক ভারতবাসী স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। বড়োেলাট লিনলিথগো বলেছেন, “১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে এত বড়ো বিদ্রোহ আর হয়নি।” এই আন্দোলন ১৯৪৭ -এর স্বাধীনতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়।

26. বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতির বিবরণ দাও।

অথবা, 

বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর [ বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি ভূমিকা: বিশ শতকে ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী জাতীয় আন্দোলন শুরু হলে ভারতের শ্রমিকশ্রেণি তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

[ 1] বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময়: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী :

স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের সময় বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে শ্রমিক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ মিছিল-মিটিং-এ অংশ নেয়, বিলাতি পণ্য বর্জন করে এবং ধর্মঘটে শামিল হয়। [i] মুচিরা বিদেশি জুতো সারাতে, রাঁধুনিরা রান্নায় বিদেশি দ্রব্য ব্যবহার করতে, ধোপারা বিলাতি কাপড় কাচতে অস্বীকার করে।

[ii] কলকাতার বিভিন্ন কলকারখানা, ছাপাখানা, চটকল, রেলওয়ে, ট্রাম কোম্পানি, হাওড়ায় বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি, বরিশালে সেটেলমেন্ট, জামালপুরে রেল ওয়ার্কশপ, বাউড়িয়ায় জুটমিল, তুতিকোরিনে বস্ত্র কারখানা, বোম্বাই ও রাওয়ালপিন্ডিতে অস্ত্র কারখানা ও রেলওয়ে ওয়ার্কশপ প্রভৃতিতে শ্রমিক ধর্মঘট হয়।

[2] অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময়: এসময় ভারতে অন্তত :

৪৫০টি শ্রমিক ধর্মঘট হয়। মাদ্রাজ শ্রমিক ধর্মঘটের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। কলকাতার বিভিন্ন ওয়ার্কশপ, রেলওয়ে, ট্রাম কোম্পানি, বন্দর, পাটকল, জামশেদপুরে টাটা ইস্পাত কারখানা, রানিগঞ্জের কয়লাখনি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট হয়। বোম্বাই, কানপুর, শোলাপুর, জামালপুর প্রভৃতি শহরেও ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট হয়।

[3] আইন অমান্য আন্দোলনের সময়: কংগ্রেসের আইন অমান্য আন্দোলনের সময় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। মহারাষ্ট্র, বাংলা, আসাম, মাদ্রাজ-সহ বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিক ধর্মঘট হয়।

[i] মহারাষ্ট্রের শোলাপুর, নাগপুর ও বোম্বাইয়ে ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট হয়। বোম্বাইয়ে রেল-শ্রমিকরা রেললাইনে অবরোধ করে সত্যাগ্রহ আন্দোলন চালায়। [ii] বাংলায় কলকাতার বিভিন্ন চটকল, পরিবহণ ও শিল্পকারখানা, কুলটির লৌহ-ইস্পাত কারখানা, রানিগঞ্জের কয়লাখনি প্রভৃতির শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। [iii] করাচি বন্দর, হীরাপুরে লৌহ-ইস্পাত কারখানা, আসামের ডিগবয় তৈলশোধনাগার, মাদ্রাজের শিল্পকারখানার শ্রমিকরাও এই ধর্মঘটে শামিল হয়।

[4] ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়: কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক শ্রেণিকে কংগ্রেস পরিচালিত ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়। তা সত্ত্বেও শ্রমিকশ্রেণির একটি বড়ো অংশ এই সময় নানা আন্দোলনে শামিল হয় এবং বিভিন্ন কলকারখানায় ধর্মঘট করে। জামশেদপুরে টাটা ইস্পাত কারখানা শ্রমিক ধর্মঘটে ১৩ দিন বন্ধ থাকে। আমেদাবাদের বস্ত্র-শ্রমিকরা ৩ মাসেরও বেশি সময় ধর্মঘট চালিয়ে যায়। দিল্লি, বোম্বাই, লখনউ, কানপুর, নাগপুর, মাদ্রাজ, ব্যাঙ্গালোর প্রভৃতি স্থানের শ্রমিকরা সপ্তাহব্যাপী ধর্মঘট ও হরতাল পালন করে।

উপসংহার: কংগ্রেসের পরিচালিত বিভিন্ন জাতীয় আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণি অংশগ্রহণ করলেও কংগ্রেস দলের তুলনায় কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিকশ্রেণির ওপর বেশি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। এজন্য কমিউনিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে সরকার বিভিন্ন কমিউনিস্ট নেতাকে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মামলায় জড়িয়ে দেয় এবং কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা (১৯৩৪ খ্রি.) করে।

27.   * বিশ শতকে ভারতে বামপন্থী রাজনীতি ও আন্দোলনের চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করো।   

 অথবা,

 বিশ শতকে ভারতের বামপন্থী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। 

উত্তর [ বিশ শতকে বামপন্থী রাজনীতি ও আন্দোলনের চরিত্র

ভূমিকা:   ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় মার্কসবাদী বলশেভিক বিপ্লব সম্পন্ন হলে ভারতেও এর প্রভাব পড়ে। বিশ শতকে ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের প্রাধান্য সত্ত্বেও বামপন্থী ভাবধারা, রাজনীতি ও আন্দোলনের যথেষ্ট প্রসার ঘটে। এদেশে বামপন্থী রাজনীতি ও আন্দোলনের চরিত কংগ্রেসি রাজনীতি ও আন্দোলন থেকে অনেক ক্ষেত্রেই পৃথক ছিল। 

[1] প্রতিকূলতা: ভারতে বামপন্থী রাজনীতি ও আন্দোলনের প্রসারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিকুলতা ছিল। একদিকে কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রতিরোধে সরকার যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। অন্যদিকে সমাজের উচ্চস্তরে কংগ্রেসের প্রাধান্য থাকায় সেখানে বামপন্থী ভাবধারা যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে ব্যর্থ হয়। এজন্য মানবেন্দ্রনাথ রায়কে ভারতের বাইরে, রাশিয়ার তাসখন্দে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’র প্রতিষ্ঠা (১৭ অক্টোবর, ১৯২০ খ্রি.) করতে হয়। মুজাফফর আহমেদও বাংলায় গোপনে কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রচার চালান।

[2] দমননীতি: সরকার কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করে, বিভিন্ন কমিউনিস্ট নেতাকে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা, লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা প্রভৃতিতে ফাঁসিয়ে বামপন্থী ভাবধারা ধ্বংস করার চেষ্টা চালায়।

[3] কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থা: কমিউনিস্ট পার্টি ছাড়া বিভিন্ন ছাড়া বিভিন্ন কংগ্রেস নেতার নেতৃত্বে কংগ্রেসের অভ্যন্তরেও বামপন্থী ভাবধারার প্রসার ঘটে। তাঁদের লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা লাভের পর ভারতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। জয়প্রকাশ নারায়ণ, অচ্যুত পট্টবর্ধন, ইউসুফ মেহের আলি, অশোক মেহতা, মিনু মাসানী প্রমুখ কংগ্রেস নেতা ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ‘কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল’ গঠন করেন। জয়প্রকাশ নারায়ণ ছিলেন এই দলের সম্পাদক।

[4] লক্ষ্য: ভারতের বামপন্থী রাজনীতি ও আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল কৃষক ও শ্রমিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তি ঘটানো। তবে ঔপনিবেশিক শাসনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনই ছিল বামপন্থীদের প্রধান উদ্দেশ্য। রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। মাদ্রাজের কমিউনিস্ট নেতা সিঙ্গারাভেল্লু চেট্টিয়ার ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে গয়া কংগ্রেসে ঘোষণা করেন যে, “আমি একজন কমিউনিস্ট। আমরা এখনই ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চাই, পরে সমাজতন্ত্র।”

[5] গণভিত্তি: ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি-সহ বিভিন্ন বামপন্থী দলগুলি দরিদ্র কৃষক ও ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। দেশের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে জাতীয় আন্দোলনগুলিতে শামিল করার ক্ষেত্রে বামপন্থী দলগুলির সর্বাধিক ভূমিকা ছিল। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন আন্দোলনগুলি ছাড়াও বামপন্থীদের উদ্যোগে কৃষক ও শ্রমিকরা বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নিয়ে বামপন্থী রাজনীতির গণভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে।

উপসংহার: কমিউনিস্ট পার্টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সরকারকে সহযোগিতা প্রদানের নীতি গ্রহণ করে, কংগ্রেসের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করে এবং দেশভাগের ক্ষেত্রে ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিরোধী নীতি গ্রহণ করে।

বিশ শতকের ভারতে কৃষক,।

28.  অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বের শ্রমিক আন্দোলন সম্বন্ধে যা জান লেখো । 

উত্তর –  অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বের শ্রমিক আন্দোলন

ভূমিকা: গান্ধিজির নেতৃত্বে কংগ্রেস দল ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এই আন্দোলন শীঘ্রই গণ আন্দোলনে পরিণত হয়। এই আন্দোলন পর্বে শ্রমিকশ্রেণির আন্দোলন বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল।

[1 ] শ্রমিক আন্দোলনের কারণ:  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় শ্রমিকদের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ শিল্পপণ্য বিক্রি করে মালিকশ্রেণি প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। কিন্তু শ্রমিকদের কোনো বেতন বাড়েনি, কাজের সময় কমেনি বা অন্য কোনো সুযোগসুবিধা দেওয়া হয়নি। শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, বেতন বৃদ্ধি করা, শিল্পে দেশীয় উদ্যোগ বৃদ্ধি, ভারতীয়দের হাতে স্বায়ত্তশাসন প্রদান প্রভৃতি দাবিতে তারা ক্ষুদ্ধ ছিল।

[2] নেতৃত্ব: গান্ধিজির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে বি পি ওয়াদিয়া, এম এন যোশী, ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, সুরেন্দ্রনাথ হালদার- সহ বেশ কিছু শ্রমিক নেতা এই আন্দোলনে যোগদান করেন। গান্ধিজির ডাকে এবং শ্রমিক নেতাদের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিকরা অসহযোগ আন্দোলনে শামিল হয়।

[3] এ আই টি ইউ সি: অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে বামপন্থী নেতারা ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ‘অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’ গড়ে তোলেন। এর প্রথম সভাপতি ছিলেন লালা লাজপত রায়। এই সভার মধ্য দিয়ে সমগ্র শ্রমিক সম্প্রদায়কে জাতীয় আন্দোলনে অংশগ্রহণের ডাক দেওয়া হয়।

[4] ধর্মঘট: অসহযোগ আন্দোলনের সময় শ্রমিকদের উদ্যোগে সারা ভারতে প্রায় ৪৫০টি ধর্মঘট হয়। কলকাতা ও মাদ্রাজে রেল, ট্রাম কোম্পানি, বন্দর, পাটকল, জামশেদপুরের লৌহ ইস্পাত কারখানা, রানিগঞ্জের কয়লাখনি প্রভৃতি ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ব্যাপক ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়।

5] ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির ভূমিকা:  ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হলে শ্রমিক আন্দোলনও আপাতত গতি হারায়। পরে শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দল শ্রমিক-কৃষকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে শ্রমিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।

মূল্যায়ন: ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। গান্ধিজির অহিংস আদর্শে পরিচালিত হয়ে শ্রমিকশ্রেণি আন্দোলনের সূচনা করেন। দ্রুত এই আন্দোলন দেশের বিভিন্ন কলকারখানায় ছড়িয়ে পড়ে।

জেনে রাখো :  ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজের সমুদ্রতীরে  সিঙ্গারাভেল্লু চেটিয়ারের নেতৃত্বে শ্রমিকদের জমায়েতে মে দিবস পালিত হয়। এটিই ছিল ভারতে প্রথম মে দিবস পালন।

29.  আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা কি ছিল ? 

উত্তর :  আইন অমান্য আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা

ভূমিকা: মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেস দল ভারতের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের শ্রমিকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলে আইন অমান্য আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

[1 ] মহারাষ্ট্রে ধর্মঘট: আইন অমান্য আন্দোলনের সময় মহারাষ্ট্রের শোলাপুর, নাগপুর ও বোম্বাই-এ ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট সংঘটিত হয়। শোলাপুরে বস্ত্র শ্রমিকদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে ক্ষিপ্ত শ্রমিকরা রেলস্টেশন, থানা, আদালত ও সরকারি দপ্তরে আক্রমণ চালায়। বোম্বাইয়ে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক স্বাধীনতার দাবি জানায়। বোম্বাইয়ের রেল শ্রমিকরা রেললাইনে শুয়ে, রেল অবরোধ করে আইন অমান্য করে।

2] বাংলায় ধর্মঘট: আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দিয়ে কলকাতার বিভিন্ন চটকল, পরিবহণ ও শিল্পকারখানার শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। এ ছাড়া কুলটির লৌহ-ইস্পাত কারখানা, রানিগঞ্জের কয়লাখনি প্রভৃতি স্থানের শ্রমিকরাও ধর্মঘট করে।

3] অন্যান্য স্থানে ধর্মঘট: গান্ধিজি গুজরাটের ডান্ডি নামক স্থানে ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইন ভেঙে আইন অমান্য করেন। এই আন্দোলনে গান্ধিজির সঙ্গে বহু শ্রমিক অংশ নেয়। এ ছাড়া করাচি বন্দর, হীরাপুরে লৌহ-ইস্পাত কারখানা, আসামের ডিগবয় তৈলশোধনাগার, মাদ্রাজের শিল্পকারখানার শ্রমিকরাও ধর্মঘটে শামিল হয়।

4] কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকা: শ্রমিকদের আইন অমান্য আন্দোলনে শামিল করার ক্ষেত্রে কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বি টি রণদিভে, সোমনাথ লাহিড়ী প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতার নেতৃত্বে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে রেড ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। শ্রমিক ধর্মঘটে কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় ভূমিকা থাকায় সরকার প্রথম ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

[5] অর্থনৈতিক মহামন্দার প্রভাব: আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিক মহামন্দার কুপ্রভাবে ভারতীয় শ্রমিকরাও অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার হয়। শ্রমিকদের মজুরি হ্রাস, শ্রমিক ছাঁটাই, বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রভৃতির ফলে শ্রমিকশ্রেণি ঘোর সংকটে পড়ে। বাংলার বিভিন্ন চা-বাগান বন্ধ হয়ে যায় এবং বিদেশে চা রপ্তানি ব্যাহত হয়। ফলে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

[6] শ্রমিক শ্রেণির পুনর্জাগরণ: ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির আইন অমান্য আন্দোলনের সঙ্গে শ্রমিকদের আন্দোলনও দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর ১৯৩৭-এর নির্বাচনে কংগ্রেস ৭টি প্রদেশে মন্ত্রীসভা গঠন করলে শ্রমিকদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দেয়। আবার নতুন করে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে উঠতে থাকে এবং শ্রমিক ধর্মঘট শুরু হয়।

মূল্যায়ন: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার (১৯২৯ খ্রি.) পর ভারতে শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শ্রমিক আন্দোলন আবার সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পায়। শ্রমিকদের সহযোগিতায় আইন অমান্য আন্দোলন শক্তিশালী রূপ ধারণ করে। তবে আইন অমান্য আন্দোলন ক্রমশ দুর্বল হতে থাকলে শ্রমিক আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে পড়ে।

30. ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টি কেন গড়ে উঠেছিল? এদের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি কী ছিল?

উত্তর:  ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টি গড়ে ওঠার কারণ

ভূমিকা: বাংলায় কংগ্রেস পার্টির অভ্যন্তরে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১ নভেম্বর লেবার স্বরাজ পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে এর নাম হয় ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি অব বেঙ্গল’। ক্রমে বিভিন্ন প্রদেশে আরও শাখা গড়ে ওঠে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সব শাখাগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ গড়ে ওঠে। এই পার্টি গড়ে ওঠার কয়েকটি কারণ ছিল-

1] বামপন্থার প্রসার: জাতীয় কংগ্রেসে গান্ধিজির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর থেকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থার বিশেষ প্রসার ঘটতে শুরু করে। কংগ্রেসের বামপন্থী নেতৃবৃন্দ তাঁদের ভাবাদর্শকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে কৃষক ও শ্রমিকদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজন বোধ করেন।

2] সংগঠনের শাখা পরিচালনা: বিভিন্ন কারখানায় গড়ে ওঠা শ্রমিক সংগঠনগুলিকে পরিচালনা করা বিশেষ প্রয়োজন ছিল। এজন্য ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন দেখা দেয়। বেঙ্গল জুট ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন, ময়মনসিংহ ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্ট পার্টি, ঢাকেশ্বরী মিল শ্রমিক ইউনিয়ন, বেঙ্গল গ্লাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন-সহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন এই পার্টির দ্বারা পরিচালিত হত।

3] আন্দোলন পরিচালনা: বামপন্থীরা দেশের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণিকে ঐক্যবদ্ধ করে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছিল। এই উদ্দেশ্যে বামপন্থীদের উদ্যোগে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

[4] সর্বভারতীয় রূপ: সারা দেশের কৃষক ও শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল। ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি ছিল সেই কেন্দ্রীয় সংগঠন।

ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টির উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি

প্রতিষ্ঠার পর থেকে ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টি বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। যেমন-

[1] আন্দোলন: ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টি কৃষক ও শ্রমিকদের নিজ দলের ছত্রছায়ায় এনে ঐক্যবদ্ধ করতে থাকে এবং তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে আন্দোলন পরিচালনা করতে থাকে।

[2] শ্রেণিসংগ্রাম: ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টি তার প্রতিষ্ঠাকালীন ইস্তেহারপত্রে ঘোষণা করেছিল যে এই দল শ্রেণিসংগ্রামের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে বৃহত্তর দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির অর্থনৈতিক মুক্তির উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছে। সেই অনুসারে এই দল মেহনতি মানুষের পূর্ণ স্বাধীনতা ও আর্থসামাজিক মুক্তির উদ্দেশ্যে কাজ করে যায়।

[3] জমিদারি প্রথার বিলোপ: ভারতীয় কৃষিব্যবস্থায় প্রচলিত জমিদারি ব্যবস্থার অবসানের উদ্দেশ্যে ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে ও চেষ্টা চালায়।

[4] পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ: ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টি ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাই পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে এবং প্রায় ১২৫০০ ভোট পায়।

[5] কারামুক্তিতে সহায়তা: ব্রিটিশ সরকার ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে কারারুদ্ধ করে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করে বিচার শুরু করে। ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টি আইনি লড়াই ও অন্যান্য উদ্যোগের মাধ্যমে অভিযুক্তদের মধ্যে ২৫ জনকে কারামুক্ত করতে সক্ষম হয়।

[6] মুখপত্র প্রকাশ: ওয়ার্কার্স ও পেজেন্টস পার্টির বিভিন্ন শাখা নিজেদের দলীয় মুখপত্র প্রকাশ করে কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে দলীয় বার্তা প্রচারের উদ্যোগে নেয়। এসব পত্রপত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত ‘লাঙল’। এ ছাড়া ছিল ‘গণবাণী’, ‘লাল নিশান’, ‘জাগরণ’, ‘কীর্তি’ প্রভৃতি।

[7] যুব শাখা: এই পার্টি নিজ ভাবধারা সমাজে ব্যাপকভাবে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের যুব শাখা সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। এর নাম হয় ‘যুব কমরেডস লিগ’। এই সংগঠন প্রতিষ্ঠায় পি সি জোশী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

31. *ভারতের বামপন্থী ভাবধারা ও আন্দোলনের প্রসারে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর : বামপন্থী ডাবধারা মানবেন্দ্রনাথ রায় ও আন্দোলনের প্রসারে মানবেন্দ্রনাথ রায়

ভূমিকা: বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে ভারতে বামপন্থী ভাবধারা জনপ্রিয় হতে থাকে। এই সময় ভারতে বামপন্থী ভাবধারা ও আন্দোলনের প্রসারের ক্ষেত্রে সর্বাধিক অগ্রগণ্য হলেন মানবেন্দ্রনাথ রায় (১৮৮৭-১৯৫৪ খ্রি.) বা এম এন রায় (আসল নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য)।

[1] বৈপ্লবিক কাজ: নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য সি মার্টিন, মানবেন্দ্রনাথ রায়,হরি সিং, ড. মাহমুদ, সি. হোয়াইট, মি. ব্যানার্জি প্রভৃতি ছদ্মনাম ব্যবহার করে বৈপ্লবিক কাজকর্ম চালান। বিপ্লবী কর্মকান্ডের অভিযোগে তিনি ‘হাওড়া-শিবপুর ষড়যন্ত্র মামলা’য় (১৯১০ খ্রি.) অভিযুক্ত হয়ে ৪ বছর কারাবাসে কাটান। মুক্তিলাভের পর তিনি ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে জার্মানিতে গিয়ে বার্লিনে ‘ভারতীয় বিপ্লবী কমিটি’ গঠন করেন।

[2] কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা: মানবেন্দ্রনাথ লেনিনের আমন্ত্রণে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় যান এবং মস্কোয় অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় সম্মেলনে যোগ দেন। এরপর তিনি অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি, মহম্মদ সাফিক প্রমুখের সহযোগিতায় রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (১৭ অক্টোবর, ১৯২০ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন।

[3] পত্রিকা: মানবেন্দ্রনাথ ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন থেকে ‘ভ্যানগার্ড অব ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স’ নামে একটি পাক্ষিক পত্রিকা প্রকাশ করে তা ডাকযোগে ভারতের নানা অঞ্চলে পাঠাতে থাকেন। পত্রিকাটির নাম কয়েকবার পরিবর্তন করলেও ব্রিটিশ সরকার বারবার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে।

[4] ভাবধারা প্রচার: মানবেন্দ্রনাথের অনুপ্রেরণায় বিভিন্ন কমিউনিস্ট নেতা ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে কমিউনিস্ট ভাবধারা প্রচারের কাজে নেমে পড়েন। তাঁর প্রেরণায় মুজাফফর আহমেদের নেতৃত্বে কলকাতায় এবং এস এ ডাঙ্গের নেতৃত্বে পশ্চিম ভারতে কমিউনিস্ট আদর্শ প্রচারিত হয়। 

[5] কংগ্রেসে যোগদান: মানবেন্দ্রনাথ ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ফিরে এলে সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। তিনি ৬ বছর কারাবাসের পর মুক্তি লাভ করেন। মুক্তিলাভের পর কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং কংগ্রেসের অভ্যন্তরে লিগ অব র‍্যাডিক্যাল কংগ্রেসমেন (১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্র বসুকে সভাপতি পদে সমর্থন জানান।

[ 6 ]র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি গঠন: কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারা প্রসারের বিশেষ সম্ভাবনা না থাকায় মানবেন্দ্রনাথ কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে (১৯৪০ খ্রি.) ‘র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি’ গঠন করেন।

উপসংহার: মানবেন্দ্রনাথ রায় আমৃত্যু বামপন্থী ভাবধারা ও আন্দোলনের প্রসারে নিরলস লড়াই চালিয়ে যান। তাঁর লেখা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ইন্ডিয়া ইন ট্রানজিশন’, ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবক্ষয় ও পতন, ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা’, ‘বিজ্ঞান ও কুসংস্কার’, ‘নব মানবতাবাদ’: একটি ইস্তেহার’ প্রভৃতি। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে দেরাদুনে মানবেন্দ্রনাথ রায়ের মৃত্যু হয়। ‘অমৃতবাজার পত্রিকা’ তাঁকে ‘সারা বিশ্বে বিচরণকারী নিঃসঙ্গ সিংহ’ বলে অভিহিত করেছে।

32.  বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা আলোচনা করো। 

 উত্তর:  বিংশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা

ভূমিকা: বাঙালি বিপ্লবী ও রাজনৈতিক নেতা মানবেন্দ্রনাথ রায়ের হাত ধরেই রাশিয়ার তাসখন্দে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে ভারতের উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলন এক অন্য রূপ ধারণ করে। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে প্রথম সর্বভারতীয় কমিউনিস্ট সম্মেলন হয় এবং এখানেই সিঙ্গারাভেলু চেট্টিয়ারের সভাপতিত্বে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকেই ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

[1] কৃষক-শ্রমিক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা: বাংলায় মুজাফফর আহমেদ, হেমন্তকুমার সরকার প্রমুখ কমিউনিস্টরা শ্রমিক ও কৃষকদের সংগঠিত করে ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’ গঠন করেন (১৯২৫ খ্রি.)। এই পার্টির অনুকরণে বোম্বাই, পাঞ্জাব ও যুক্তপ্রদেশে অনুরূপ পার্টি গড়ে ওঠে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’।

[2] মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা: ঔপনিবেশিক সরকার কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ৩২ জন কমিউনিস্ট নেতা বা শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে এক মামলা শুরু করেন, যা মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এই মামলায় মুজফ্ফর আহমেদ, কিশোরীলাল ঘোষ, ধরণী গোস্বামী, গোপেন চক্রবর্তী, রাধারমণ মিত্র, গোপাল বসাক এবং শিবনাথ মুখোপাধ্যায় অভিযুক্ত হন।

[3] হালিমের কলকাতা কমিটি: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার পরবর্তীকালে আবদুল হালিম প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতা বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন বজায় রাখেন। হালিমের নেতৃত্বে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কলকাতা কমিটি।

[4] ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের উদ্যোগ: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত ও বঙ্কিম মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে গঠিত হয় ‘ইন্ডিয়ান প্রলেতারিয়ান রেভলিউশনারি পার্টি’। পরবর্তীকালে এই পার্টি কমিউনিস্ট আন্দোলনে যোগদান করে।

উপসংহার: বাংলার কমিউনিস্ট আন্দোলন ছিল ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের ভিত্তির রূপকার। বামপন্থী বা কমিউনিস্টরা উপনিবেশ- বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

33. *’কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারার অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারার অগ্রগতি

কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভারতে বামপন্থী ভাবধারা ও আন্দোলনের দ্রুত প্রসার ঘটতে শুরু করলে ব্রিটিশ সরকার আতঙ্কিত হয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারা ক্রমে শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

[1]কংগ্রেসে কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ: সরকার ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর ফলে কমিউনিস্ট নেতারা জাতীয় কংগ্রেস ও কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বামপন্থার কাজ চালিয়ে যান। এভাবে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারা ক্রমে প্রবল হতে শুর করে।

[2] কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দলের প্রতিষ্ঠা: আচার্য নরেন্দ্র দেব ও জয়প্রকাশ নারায়ণের উদ্যোগে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে কংগ্রেস সোশ্যালিস্ট পার্টি বা কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল-এর প্রতিষ্ঠা হয়। জয়প্রকাশ নারায়ণ ছিলেন এই দলের সাধারণ সম্পাদক। এই দলের অন্যান্য নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রাম মনোহর লোহিয়া, অচ্যুত পট্টবর্ধন, ইউসুফ মেহের আলি প্রমুখ।

[3] সমাজতন্ত্রী দলের উদ্যোগ: কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারার প্রসার ঘটাতে যথেষ্ট উদ্যোগী হয়। এই দলের প্রধান লক্ষ্য ছিল কৃষক ও শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শক্তিশালী করা, ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন, বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ, দেশীয় রাজতন্ত্র ও জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি প্রভৃতি। এই দলের প্রভাবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস কৃষিসংস্কার, ভূমিসংস্কার, শিল্প-বিরোধ সমস্যা প্রভৃতি বিষয়ে নজর দিতে বাধ্য হয়।

[4 ] কিষান কংগ্রেস: কংগ্রেসের বামপন্থী অংশ, কংগ্রেস সমাজতন্ত্রী দল ও কমিউনিস্টরা ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে সারা ভারত কিষান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এন জি রঙ্গ এর সভাপতি এবং স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী এর সম্পাদক নিযুক্ত হন। এই পার্টি জমিদার ও বেগার প্রথার উচ্ছেদ, কৃষিঋণ মকুব, খাজনা হ্রাস প্রভৃতি দাবি জানায়। এই দলের নেতৃত্বে কৃষক আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়।

[5] তরুণ নেতৃত্ব: তরুণ কংগ্রেস নেতা সুভাষচন্দ্র বসু ও জওহরলাল নেহরু মনে করতেন যে, রাজনৈতিক স্বাধীনতা লাভের সঙ্গে এদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণের অবসান ঘটানো দরকার। এরজন্য তাঁরা এদেশে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। সুভাষচন্দ্র বসু মনে করতেন যে, এদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসন হল ভারতীয়দের দারিদ্র্যের মূল কারণ। এই শাসনের অবসান ঘটানোর উদ্দেশ্যে তিনি প্রয়োজনে সশস্ত্র বিপ্লবকেও সমর্থন করেন। তিনি ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন।

উপসংহার: কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী ভাবধারার প্রসার কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী নেতাদের বিশেষভাবে খুশি করতে পারেনি। বামপন্থীদের সহায়তায় বামপন্থী ভাবধারার অনুগামী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হলে গান্ধিজি খুশি হতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে নেহরু গান্ধিজির প্রতি আনুগত্য জানালেও গান্ধি-সুভাষ বিরোধের কারণে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন। ফলে ফরওয়ার্ড ব্লক ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে একটি পৃথক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।

34. ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে ভারতে শ্রমিকশ্রেণির ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর [ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণির ভূমিকা

ভূমিকা: গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ আগস্ট বোম্বাই অধিবেশনে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব করে। প্রস্তাবের পরের দিনই সরকার কংগ্রেসের প্রথম সারির প্রায় সকল নেতাকে গ্রেফতার করলে জনগণ নিজের হাতে আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব তুলে নেয়। এই আন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণির অংশগ্রহণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

[ 1] ব্রিটিশ বিরোধিতা: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে শ্রমিকরা প্রাথমিক পর্বে ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগের দাবি জানায়। তাদের বিশ্বাস ছিল ব্রিটিশরা ভারত ত্যাগ করলে তাদের অবস্থার উন্নতি হবে।

2] শ্রমিকদের দাবি: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ে আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠে। শ্রমিকদের দাবিদাওয়াগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল তাদের কাজের সময়কাল কমানো, বেতন বৃদ্ধি, বিনা ব্যয়ে চিকিৎসার সুযোগ, বিমার বন্দোবস্ত, ভাতার প্রচলন, সন্তানদের জন্য শিক্ষার সুযোগ প্রভৃতি।

[3 ] ধর্মঘট পালন:  ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে কমিউনিস্টদল উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ না করার আহ্বান জানায়। কিন্তু শ্রমিকরা কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেয় এবং স্থানে স্থানে ধর্মঘট ও হরতাল পালন করে। কমিউনিস্ট নেতারা ভারত ছাড়ো আন্দোলন থেকে দূরে থাকলেও বহু শ্রমিক আন্দোলনে যোগ দেয়।

[4] শ্রমিক আন্দোলনের প্রসার: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় ভারতের সর্বত্র শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপক প্রসার ঘটে। বাংলা, বিহার, দিল্লি, বোম্বাই, লখনউ, মাদ্রাজ, কানপুর, নাগপুর প্রভৃতি স্থানে শ্রমিক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে।

5] খণ্ডযুদ্ধ: শ্রমিকদের ধর্মঘট ও আন্দোলনকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যে সরকার পুলিশ ও সেনাদলের দ্বারা আন্দোলনকারীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন শুরু করে। ফলে সেনা ও পুলিশের সাথে শ্রমিকদের সংঘাত বাধে। বোম্বাইয়ের রাজপথে সেনা ও পুলিশের সাথে শ্রমিকদের খণ্ডযুদ্ধে প্রায় ২৫০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এভাবে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

উপসংহার: পূর্ববর্তী শ্রমিক আন্দোলনগুলিতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে এই দল শ্রমিকশ্রেণিকে আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করে। অবশ্য কমিউনিস্ট নেতাদের এই প্রচেষ্টা সম্পূর্ণ ফলপ্রসূ হয়নি। অধ্যাপক আদিত্য মুখার্জী বলেছেন যে, পার্টি লাইন আলাদা হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ কমিউনিস্ট কর্মীরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

35. বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলন শুরু হওয়ার প্রধান কারণগুলি কী ছিল? এই পর্বে কোন্ কোন্ সময় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে?

উত্তর [ বিশ শতকে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের কারণ

ভূমিকা: উনিশ শতকের শেষদিকে ভারতে বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠলে কারখানার কাজে নিযুক্ত একটি শ্রমিকশ্রেণির উদ্ভব ঘটে। শ্রমিকশ্রেণি বিশ শতকে বিভিন্ন কারণে আন্দোলন শুরু করে। যেমন-

[1] কম মজুরি: শিল্পকারখানাগুলিতে কর্মরত শ্রমিকদের দিনে প্রচুর সময় কাজ করতে বাধ্য করা হলেও তাদের খুব কম মজুরি দেওয়া হত। ফলে শ্রমিকদের আর্থিক দুর্দশা কোনোদিন কাটত না।

[2] দুরবস্থা: দুরবস্থা ছিল শ্রমিকদের জীবনের নিত্যসঙ্গী। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, অসুখবিসুখে চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়া প্রভৃতির ফলে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।

[3] অশিক্ষা: আর্থিক সংকট ও কারখানার কাজে প্রচুর সময় ব্যয় হওয়ায় শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষাগ্রহণের বিশেষ সুযোগ ছিল না।

[4]নেতৃত্ব: বিভিন্ন কারণে শ্রমিকরা ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে কংগ্রেস ও বামপন্থী নেতৃবৃন্দ শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনে শামিল করতে সক্ষম হন।

বিশ শতকে শ্রমিক আন্দোলনের সক্রিয়তা

বিশ শতকের ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দোলন হল-[1] বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলন (১৯০৫ খ্রি.), [2] অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০ খ্রি.), [3] আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০ খ্রি.), [4] ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.)। এই চারটি আন্দোলনের সময় ভারতে শ্রমিক আন্দোলনও যথেষ্ট সক্রিয় বা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তা ছাড়া অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে বামপন্থীদের উদ্যোগে শ্রমিক আন্দোলন চলে।

উপসংহার: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের শোষিত শ্রমিকশ্রেণি সংঘবদ্ধ আন্দোলনের যে উদ্যোগ নেয় তাতে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে কংগ্রেস, বামপন্থী-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এর ফলে স্বদেশি, অসহযোগ, আইন অমান্য ও ভারত ছাড়ো প্রভৃতি আন্দোলনগুলিতে শ্রমিকশ্রেণি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।

36. * বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের সময় শ্রমিক শ্রেণির ভূমিকা কীরূপ ছিল?[Madhyamik 2020]

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ- বিরোধী আন্দোলন পর্বে বাংলায় প্রমিকা আন্দোলনের অগ্রগতি

ভূমিকা: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরাও এই আন্দোলনে শামিল হয়না তবে এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের সর্বাধিক প্রসার ঘটে।

[1] মিছিল ও জমায়েত: লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করলে বাংলার বিভিন্ন কল- কারখানার শ্রমিক ও মজুররা প্রতিবাদ মিছিল ও জমায়েতে যোগ দেয়।

[2] বয়কট: বাংলার বিভিন্ন জেলার শ্রমিক ও মজুররা বিলাতি পণ্য বয়কট করে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে। ময়মনসিংহের মুচিরা বিদেশি জুতা সারাতে, বরিশালের উড়িয়া রাঁধুনিরা রান্নায় বিদেশি দ্রব্য ব্যবহার করতে, কালীঘাটের ধোপারা বিলাতি কাপড় কাচতে আপত্তি জানায়।

[3] রেল ধর্মঘট: বাংলার বিভিন্ন স্থানে রেল শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কর্মচারীরা ব্যাপক ধর্মঘট শুরু করে এবং রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে। জামালপুর, খড়গপুর, আসানসোল প্রভৃতি স্থানের রেল-ওয়ার্কশপ-এর কর্মচারীরাও ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে।

[4] চটকলে ধর্মঘট: কলকাতার সন্নিহিত বাউড়িয়া জুটমিল, বজবজে ক্লাইভ জুটমিল প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের চটকল শ্রমিকরাও ধর্মঘট করে।

[5] অন্যান্য ধর্মঘট: এ ছাড়া কলকাতার ট্রাম কোম্পানি, ছাপাখানা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। বরিশাল সেটেলমেন্ট, হাওড়ার বার্ন কোম্পানি প্রভৃতির শ্রমিকরাও ধর্মঘট করে।

6] কুলি ও মেথরদের ধর্মঘট: কলকাতা পুরসভার ২ হাজার কুলি এবং মেথরও ধর্মঘটে শামিল হয়। এই ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকদের সমর্থনে কলকাতায় মিছিল বের হয়।

7] আন্দোলনের অবসান: আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর ব্যাপক পুলিশি নির্যাতন শুরু হলে বাংলার শ্রমিক আন্দোলন দিশাহারা হয়ে পড়ে। তা ছাড়া ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে গণ আন্দোলন ক্রমে দুর্বল হতে শুরু করলে শ্রমিক আন্দোলনও গতি হারিয়ে ফেলে।

উপসংহার: বাংলার বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলনে শ্রমিকরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপকতায় সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ে। অবশ্য ব্রিটিশ সরকারের কঠোর দমননীতি এবং ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সরকার কর্তৃক বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণার ফলে বাংলার শ্রমিক আন্দোলন তার গতি হারায়।

37. বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি

ভূমিকা: ভারতের বড়োলাট লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করলে এর বিরুদ্ধে বাংলা তথা সারা ভারতে স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনে ভারতের শ্রমিকশ্রেণির অংশগ্রহণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

[1] প্রতিবাদ: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হলে সেদিন শ্রমিকরা এর প্রতিবাদে বিভিন্ন মিছিল-মিটিং ও জমায়েতে অংশ নেয়।

[2] বয়কট আন্দোলন: শ্রমিক-মজুররা স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিলাতি পণ্য বর্জন করে। ময়মনসিংহের মুচিরা বিদেশি জুতো সারাতে, বরিশালের উড়িয়া রাঁধুনিরা রান্নায় বিদেশি দ্রব্য ব্যবহার করতে, কালীঘাটের ধোপারা বিলাতি কাপড় কাচতে আপত্তি জানায়।

[3] হরতাল ধর্মঘট: কলকাতার বিভিন্ন কলকারখানা, ছাপাখানা, চটকল, রেলওয়ে ও ট্রাম কোম্পানির শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। হাওড়ায় বার্ন কোম্পানি, বরিশালে সেটেলমেন্ট, জামালপুরের রেল ওয়ার্কশপ, বাউড়িয়ার জুটমিল, তুতিকোরিনে বস্ত্র কারখানা, বোম্বাই ও রাওয়ালপিন্ডিতে অস্ত্র কারখানা ও রেলওয়ে ওয়ার্কশপ প্রভৃতিতে শ্রমিক ধর্মঘট হয়।

[4] নেতৃত্ব: বিপিনচন্দ্র পাল, চিত্তরঞ্জন দাশ, লিয়াকত হোসেন, শ্যামসুন্দর চক্রবর্তী প্রমুখ কংগ্রেস নেতা শ্রমিক ধর্মঘটে উৎসাহ প্রদান করেন। প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, প্রেমতোষ বসু, অপূর্বকুমার ঘোষ, অশ্বিনীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ শ্রমিক নেতাও শ্রমিকদের ধর্মঘট ও হরতালে নেতৃত্ব দেন।

[5] দমননীতি: শ্রমিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকার তীব্র দমনপীড়ন চালায়। বোম্বাইয়ে পুলিশ ও সেনার গুলিতে ১৬ জন শ্রমিক মারা যায় এবং ৫০ জন আহত হয়। অন্যত্রও কঠোর দমনপীড়ন চলে।

উপসংহার: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে কৃষকদের তুলনায় শ্রমিকদের অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে শ্রমিকরা বাংলার নানা স্থানে বিদেশি পণ্য বয়কটে অংশ নেয়। সরকারের তীব্র দমননীতির ফলে এই সময় শ্রমিকদের আন্দোলন ব্যর্থ হলেও তা পরবর্তীকালের শ্রমিক আন্দোলনগুলিকে প্রভাবিত করে।

জেনে রাখো-  স্বদেশি আন্দোলনের সময় বাংলায় যে ব্যাপক  শ্রমিক আন্দোলন চলে তার গুরুত্ব কতটা ছিল সে বিষয়ে আভাস পাওয়া যায় বাংলার গভর্নর ফ্রেজার-এর প্রতিবেদনে।

38.’নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’- এর গঠন সম্পর্কে কী জান? 

উত্তর:  নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের গঠন

ভূমিকা: বিংশ শতকের শুরু থেকে ভারতে বামপন্থার প্রসার ঘটতে শুরু করে। শ্রমিকশ্রেণির মধ্যে কমিউনিস্ট মতবাদ বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে।

[1] প্রেক্ষাপট: ভারতের শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে কমিউনিস্ট ভাবধারা বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করলে ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। এই সময়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আই এল ও প্রতিষ্ঠিত হলে এর সদস্যপদ গ্রহণের উদ্দেশ্যে ভারতের শ্রমিক নেতারা আগ্রহ প্রকাশ করে।

[2] শ্রমিক সম্মেলন: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে শ্রমিকদের সংগঠিত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্য সফল করতে নিখিল ভারত শ্রমিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ অক্টোবর মাদ্রাজে আয়োজিত এই সম্মেলনে ১৮টি শ্রমিক ইউনিয়নের ৮০৬ জন প্রতিনিধি যোগ দেয়।

[3]গঠন: মাদ্রাজে সংগঠিত শ্রমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয়ভ কংগ্রেসের নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ‘নিখিল ভারতে ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’ বা All India Trade Union Congress (AITUC) গঠিত হয়। এই সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন লালা লাজপত রায়, সহসভাপতি ছিলেন জোসেফ ব্যপ্তিস্তা এবং সম্পাদক ছিলেন দেওয়ান চমনলাল।

[4] কংগ্রেসের দৃষ্টিভঙ্গি: নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার পরথেকেই এই সংগঠনের সঙ্গে কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে চলে। অবশ্য গান্ধিজি এই সংগঠন সম্পর্কে খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি।

উপসংহার: বিংশ শতাব্দীতে শ্রমিক আন্দোলনের ব্যাপকতা ও বামপন্থী ভাবধারার প্রসার ‘নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। রুশ বিপ্লবের দ্বারা প্রভাবিত এই সংগঠন শ্রমিকদের সংগঠিত করে তাদের অর্থনৈতিক মুক্তিদানের স্বপ্ন দেখেছিল।

39. *অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি

ভূমিকা: অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয়। এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

[1] লক্ষ্য: অহিংস অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানকারী শ্রমিকদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, বেতন বৃদ্ধি করা, ভারতীয়দের হাতে স্বায়ত্তশাসন দান প্রভৃতি।

[2] নেতৃত্ব: অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দ ছিলেন প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরী, ব্যোমকেশ চক্রবর্তী, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুরেন্দ্রনাথ হালদার প্রমুখ।

[3] ধর্মঘটের ব্যাপকতা: বাংলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রমিক, মজুর ও কুলিরা অসহযোগ আন্দোলনের সময় ধর্মঘট চালায়। ১৯২০-২১ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় অন্তত ১৩৭টি শ্রমিক ধর্মঘট হয়। আর এই সমস্ত ধর্মঘটে ২,৪৪,১৮০ জন শ্রমিক অংশগ্রহণ করেছিল।

4] বিভিন্ন স্থানে ধর্মঘট: অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক ধর্মঘট হয়। [i] কলকাতার রেলওয়ে, ট্রাম কোম্পানি, বন্দর, পাটকল প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট চলে। [ii] ইস্টবেঙ্গল রেল এবং স্টিমার কোম্পানির শ্রমিকরাও ধর্মঘট করে। [iii] চাঁদপুরে স্টিমার ধর্মঘট হয়। [iv] কয়লাখনি, চা বাগান প্রভৃতি স্থানের শ্রমিকরাও ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করে।

উপসংহার: অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের যুগে শ্রমিক আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্র ছিল বাংলা। ভারতে অন্যান্য স্থানের তুলনায় বাংলার শ্রমিক আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। তবে অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক আন্দোলনও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

40. * টীকা লেখো: ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি। 

অথবা, ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

অথবা, ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টির পরিচয় দাও। 

উত্তর: ওয়ার্কার্স অ্যান্ড গেজেন্টস পার্টি

ভূমিকা: কংগ্রেস দল শ্রমিক ও কৃষকদের সংঘবদ্ধ করে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করার যে উদ্যোগ নেয় সেক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি।

[1] পেজেন্টস পার্টির বাংলা শাখা: কাজি নজরুল ইসলাম, হেমন্ত কুমার সরকার, কুতুবউদ্দিন আহমেদ, সামসুদ্দিন হুসেন প্রমুখের উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় কংগ্রেস দলের মধ্যে ‘লেবার স্বরাজ পার্টি অব দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস’ নামে একটি দল প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে এই দলের নাম হল ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি অব বেঙ্গল

2] পেজেন্টস পার্টির সর্বভারতীয় শাখা: বাংলার অনুকরণে বিভিন্ন প্রদেশে শীঘ্রই এই পার্টির শাখা গড়ে ওঠে। এই শাখাগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক হন আর এস নিম্বকার।

[3] উদ্যোগ: এই দল শ্রমিকদের মধ্যে প্রচার করতে থাকে যে, শ্রমিকরা অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বাধীনতা না পেলে রাজনৈতিক দিক থেকে স্বাধীনতার কোনো মূল্যই থাকবে না। পেজেন্টস পার্টির নেতারা রাজনৈতিক আন্দোলন ও শ্রেণি সংগ্রাম সম্পর্কে শ্রমিকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে থাকেন।

[4] মুখপত্র: বিভিন্ন প্রদেশে এই পার্টির মুখপত্র প্রকাশের মাধ্যমে শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চলতে থাকে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘লাঙল’, ‘গণবাণী’, ‘শ্রমিক’, ‘সোশ্যালিস্ট’ ‘কীর্তি’, ‘লেবার-কিষান-গেজেট’ প্রভৃতি।

[5] আন্দোলন: এই দলের পরিচালনায় বোম্বাইয়ে রেল, ছাপাখানা, পৌরসভা, বন্দর প্রভৃতির শ্রমিকরা শক্তিশালী সরকার-বিরোধী আন্দোলন করে।

[6] মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা: এই দলের আন্দোলনে আতঙ্কিত হয়ে সরকার এই দলের বহু নেতাকে গ্রেফতার করে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯২৯ খ্রি.) অভিযুক্ত করলে তাদের আন্দোলনের গতি দুর্বল হয়ে যায়।

উপসংহার: ‘ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি-র মূল লক্ষ্য ছিল কৃষক-শ্রমিক = স্বার্থে কাজ করা। এই দল তাদের মুখপত্রের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষকে বামপন্থী চিন্তাধারায় উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। জমিদারি প্রথা বিলোপ, ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের স্বাধীনতা, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দান প্রভৃতির পক্ষে এই সংগঠন প্রস্তাব গ্রহণ করে।

41. কমিউনিস্ট ভাবধারা ও শ্রমিক আন্দোলনের প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কয়েকটি উদ্যোগ উল্লেখ করো।

উত্তর: কমিউনিস্ট ডাবধারা ও শ্রমিক আন্দোলনের প্রসারে সরকারের উদ্যোগ

ভূমিকা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভারতে কমিউনিস্ট ভাবধারা ও শ্রমিক আন্দোলনের দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট ভাবধারা ও শ্রমিক আন্দোলনের প্রসার রোধ করার উদ্দেশ্যে সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে।

[1] হুইটলি কমিশন গঠন: শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল করার উদ্দেশ্যে সরকার শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য কিছু পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করে। এই উদ্দেশ্যে সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে হুইটলি কমিশন গঠন। করে। সরকার বোঝাতে চায় যে, ভারতের শ্রমিকদের উন্নয়নের বিষয়ে জাতীয় নেতৃবৃন্দের চেয়ে সরকার বেশি আগ্রহী।

2/ শিল্প-বিরোধ ও জন নিরাপত্তা বিল: কমিউনিস্ট ভাবধারা ও শ্রমিক আন্দোলনের প্রসারের উদ্দেশ্যে বড়োলাট লর্ড আরউইন তীব্র দমনমূলক নীতি গ্রহণ করেন। তিনি শিল্প-বিরোধ বিল পাস করে। শ্রমিক ধর্মঘটকে বেআইনি ঘোষণা করেন এবং জন নিরাপত্তা বিল পাস করে কমিউনিস্টদের দমন করার চেষ্টা করেন।

[3] মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা: কমিউনিস্ট ভাবধারা ও শ্রমিক আন্দোলনের প্রসার রোধ করার উদ্দেশ্যে সরকার ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে গ্রেফতার করে তাদের মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় (১৯২৯ খ্রি.) অভিযুক্ত করে। এই নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুজাফফর আহমেদ, মিরাজকর, পি সি জোশী, গঙ্গাধর অধিকারী, শিবনাথ শাস্ত্রী, ধরণী গোস্বামী, এস এ ডাঙ্গে, মকবুল হুদা, ফিলিপ স্প্র্যাট, বেঞ্জামিন ব্র্যাডলি প্রমুখ।

4] কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ: শ্রমিক আন্দোলনের নেপথ্যে কমিউনিস্ট পার্টির যথেষ্ট ভূমিকা লক্ষ করে সরকার ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করে।

উপসংহার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনার মধ্যবর্তী সময়ে ভারতে কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রী ভাবধারার যথেষ্ট প্রসার ঘটে। এই ভাবধারার প্রভাবে এই সময় শ্রমিক আন্দোলনও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। সরকার তীব্র দমনপীড়ন, কমিউনিস্ট নেতাদের গ্রেফতার প্রভৃতির দ্বারা শ্রমিক আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা চালায়।

42. * আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিকদের ক্ষোভের কারণ কী ছিল? এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর : আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) ভারতে শ্রমিকদের অসন্তোষের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন-

[1] মজুরি হ্রাস: আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হওয়ার আগে বিভিন্ন শ্রমিকদের মজুরি কমিয়ে দেওয়া হয়।

[2]অর্থনৈতিক মন্দা: ১৯২৯-৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা বা মহামন্দা দেখা দিলে শ্রমিকদের ওপরও এই মন্দার প্রভাব পড়ে।

[3]বেকারত্ব: মহামন্দার ফলে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেলে বহু শ্রমিক কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে।

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে বাংলায় শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের

শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

[1] কলকাতা: আইন অমান্য আন্দোলনের সময় কলকাতা ও তার সন্নিহিত অঞ্চলের রেলওয়ে, ট্রাম কোম্পানি, চটকল, পরিবহণ ব্যবস্থা-সহ বিভিন্ন শিল্পকারখানার শ্রমিকরা ধর্মঘট করে।

[2] অন্যত্র: কলকাতার বাইরে বাংলার বিভিন্ন স্থানেও শ্রমিক, মজুর, কুলিরা আন্দোলনে শামিল হয়। কুলটির লৌহ-ইস্পাত কারখানা, রানিগঞ্জের কয়লাখনি প্রভৃতি স্থানের শ্রমিকরাও ধর্মঘট করে।

উপসংহার: ব্রিটিশ সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার দ্বারা শ্রমিক আন্দোলনকে দুর্বল করতে সমর্থ হলেও শ্রমিকরা ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনে আবার ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে আন্দোলন ব্যাপক হয়ে ওঠে।

43. *টীকা লেখো: মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা।

উত্তর :  মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা (১৯২১-৩৩ খ্রি.)

ভূমিকা: ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পর ভারতে দ্রুতগতিতে কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রসার ঘটতে থাকে।

[1] কমিউনিস্টদের প্রসার: ১৯২০-এর দশকের শুরু থেকে ভারতের কমিউনিস্টরা দেশের কৃষক ও শ্রমিকদের সংঘবদ্ধ করে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে থাকে। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশনে কমিউনিস্ট দলের নেতৃত্বে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক যোগ দেয় এবং পূর্ণ স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়।

[2] সরকারের উদ্বেগ: কমিউনিস্ট ভাবধারা ও কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনের দ্রুত প্রসারে সরকার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে কমিউনিস্টদের দমন ও শ্রমিক আন্দোলন থামিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকার মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় বিভিন্ন কমিউনিস্ট নেতাকে জড়িয়ে দেয়।

3] মামলার রায়: ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার রায় প্রকাশিত হয়। মামলায় ৩৩ জন কমিউনিস্ট নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়। এঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মুজাফফর আহমেদ, শিবনাথ ব্যানার্জি, ধরণী গোস্বামী, এস এ ডাঙ্গে, পি সি জোশী, ফিলিপ স্প্যাট, গঙ্গাধর অধিকারী প্রমুখ। মামলার রায়ে কমিউনিস্ট পার্টি ও কমিউনিস্টদের যাবতীয় প্রচারকার্য নিষিদ্ধ হয়।

উপসংহার: ব্রিটিশ সরকার ভারতে বামপন্থী আন্দোলনকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ শুরু করে। এই মামলার রায়ে ৩৩ জন গুরুত্বপূর্ণ কমিউনিস্ট নেতার কারাদণ্ড হলে ভারতে বামপন্থী আন্দোলন সংকটের মুখে পড়ে। কিছুদিনের মধ্যে সরকার কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে বামপন্থী আন্দোলন আপাতত স্তিমিত হয়ে পড়ে।

44. বিশ শতকে কংগ্রেসের আন্দোলনের সঙ্গে কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলনের সম্পর্ক উল্লেখ করো। 

উত্তর-  কৃষক, শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্ক

ভূমিকা: বিশ শতকের শুরুর দিকে ভারতে কৃষক, শ্রমিক এবং বামপন্থী আন্দোলনেরও প্রসার ঘটে।

1] আন্দোলনে কংগ্রেসের নেতৃত্ব:  বিশ শতকে ভারতে 

[i] বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলন (১৯০৫ খ্রি.) [ii] অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০ খ্রি.) [iii] আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০ খ্রি.) [iv] ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২ খ্রি.)- এই চারটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে কংগ্রেস সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।

[2] কৃষক আন্দোলন: বিশ শতকে ভারতের জাতীয় আন্দোলনগুলিতে কৃষক সম্প্রদায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। তারা সরকারকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে। কংগ্রেস দলও কৃষকদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করে।

3] শ্রমিক আন্দোলন: কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিভিন্ন আন্দোলনে দেশের শ্রমিকরা অংশগ্রহণ করে কংগ্রেসের আন্দোলনকে জোরালো করে তোলে। কংগ্রেসি আন্দোলনের বাইরেও শ্রমিকরা ধর্মঘট, বিক্ষোভ, হরতাল প্রভৃতিতে যুক্ত হয়। কংগ্রেস এসব আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়।

4] বামপন্থী আন্দোলন: বিশ শতকের দুইয়ের দশক থেকে ভারতে বামপন্থী ও কমিউনিস্ট ভাবধারা এবং আন্দোলনের যথেষ্ট প্রসার ঘটে। দেশের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির ওপর কমিউনিস্ট দলের সর্বাধিক প্রভাব ছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সুভাষচন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু প্রমুখের উদ্যোগে কংগ্রেসের অভ্যন্তরেও বামপন্থী ভাবধারা জনপ্রিয় হয়।

5] কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টি: বিভিন্ন রাজনৈতিক পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে মতভেদ লক্ষ করা যায়।

উপসংহার: বিশ শতকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বামপন্থী শাখা সক্রিয় হয়ে তাদের আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকদের শামিল করার চেষ্টা করে। তবে কৃষক ও শ্রমিকদের ওপর কংগ্রেসের তুলনায় বামপন্থী দলগুলির বেশি প্রভাব ছিল এবং তাদের আন্দোলনেই বামপন্থী দলগুলি শক্তিশালী হয়েছিল।

45. ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রধান ধারাগুলি কী ছিল?

উত্তর- বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের প্রধান ধারাসমূহ

ভূমিকা: বাংলা ছিল ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনের পীঠস্থান। ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতির শক্তি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ অর্থাৎ বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত করলে এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। এই আন্দোলনের বিভিন্ন ধারা ছিল। যেমন-

[1] বয়কট: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বিলাতি সামগ্রী বর্জন ও বিদেশি সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা শুরু হয়। এই ধারা ‘বয়কট’ আন্দোলন নামে পরিচিত।

[2] স্বদেশি: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে বিলাতি পণ্য বর্জন করে তার পরিবর্তে স্বদেশি পণ্য ব্যবহার ও প্রসার, স্বদেশি শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই ধারা স্বদেশি আন্দোলন নামেপরিচিত।

[3] জাতীয় শিক্ষা: আন্দোলনকারীরা ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা- প্রতিষ্ঠানগুলি ত্যাগ করতে শুরু করে। পাশাপাশি, সম্পূর্ণ দেশীয় উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়।

[4] বিপ্লবী কার্যকলাপ: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের শেষ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানে গুপ্ত-বিপ্লবী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়।

উপসংহার: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের শেষপর্বে আন্দোলন সশস্ত্র সংগ্রামে পরিণত হয়। ঐতিহাসিক অমলেশ ত্রিপাঠী লিখেছেন, “প্রকাশ্যে কংগ্রেসের মাধ্যমে এবং গোপনে বিপ্লবীদের মাধ্যমে অরবিন্দ যুগপৎ আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন। তার অনুসারীরা পুরোপুরি সন্ত্রাসবাদে ঝুঁকে পড়ে।

46. অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের (১৯২০ খ্রি.) সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর –  অহিংস অসহযোগ আন্দোলন

ভূমিকা: নানা পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতা মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ-বিরোধী অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়।

[1] কারণ: অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পিছনে প্রধান কারণগুলি ছিল-[i] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন লাভে ব্যর্থতা, [ii] দেশজুড়ে মূল্যবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব, খাদ্যাভাব, [iii] দমনমূলক রাওলাট আইন পাস, [iv] জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, [v] ব্রিটিশ শক্তি কর্তৃক তুরস্কের ব্যবচ্ছেদ ও তুরস্কের সুলতানের (খলিফা) ক্ষমতা হ্রাস প্রভৃতি।

[2] আন্দোলনের সূচনা: ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। গান্ধিজি ‘স্বরাজ’ অর্জনকে আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপরই সারা দেশে আন্দোলন শুরু হয়ে যায়।

3] আন্দোলনের প্রসার: অসহযোগ আন্দোলনে ইতিবাচক অর্থাৎ গঠনমূলক এবং নেতিবাচক অর্থাৎ ধ্বংসাত্মক উভয় ধরনের কর্মপন্থা গ্রহণ করা হয়। একদিকে বিলিতি পণ্য, সরকারি স্কুলকলেজ, আদালত, আইনসভা প্রভৃতি বর্জন শুরু হয়, অন্যদিকে দেশীয় পণ্যের প্রসার, দেশীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়, হিন্দু- মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দেওয়া হয়।

[4]নেতৃত্ব: চিত্তরঞ্জন দাশ, মতিলাল নেহরু, বিঠলভাই প্যাটেল, বল্লভভাই প্যাটেল, রাজেন্দ্র প্রসাদ, জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু, সীতারামাইয়া প্রমুখ অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলেন।

[5] আন্দোলন প্রত্যাহার: ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামে উত্তেজিত জনতা থানায় আগুন লাগিয়ে ২২ জন পুলিশকে হত্যা করলে অহিংস মতাদর্শে বিশ্বাসী গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহার (২৫ ফেব্রুয়ারি) করে নেন।

উপসংহার: গান্ধিজি চৌরিচৌরার ঘটনার ফলে আন্দোলন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলে মতিলাল নেহরু, জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন। কেউ কেউ একে ‘জাতীয় বিপর্যয়’, ‘পর্বতপ্রমাণ ভুল’ প্রভৃতি বলে অভিহিত করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কংগ্রেস কার্যনির্বাহক সমিতি গান্ধিজির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে।

5. Fill in The Blanls

1.                    বলতে বোঝায় বিলিতি দ্রব্য বর্জন।

উত্তৰ   বয়কট ।

2.                       বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তকে ‘গভীর জাতীয় বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়েছেন।

উত্তৰ . সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ।

3. অন্ধ্রপ্রদেশে রায়ত সভা প্রতিষ্ঠিত হয়                       খ্রিস্টাব্দে।

উত্তৰ . ১৯৩৩ ।

4.                      খ্রিস্টাব্দে একা আন্দোলন শুরু হয়।

উত্তৰ ১৯২১ ।

5.                       বারদৌলি সত্যাগ্রহের সময় ‘সর্দার’ উপাধি পান।

উত্তৰ  বল্লভভাই প্যাটেল  ।

6. ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে                        অধিবেশনে কংগ্রেস ‘পূর্ণ স্বরাজ’ দাবি করে।

উত্তৰ  লাহোর 

7. গান্ধিজি লবণ আইন ভঙ্গ করেন                      খ্রিস্টাব্দে।

উত্তৰ  ১৯৩০

৪. সারা ভারত কিষান কংগ্রেসের সম্পাদক হন                        ।

উত্তৰ  স্বামী সহজানন্দ ।

9. ————- আন্দোলনের সময় বোম্বাইয়ে পুলিশ ও সেনার গুলিতে ১৬ জন শ্রমিক মারা যায় এবং ৫০ জন আহত হয়।

উত্তর- বঙ্গভঙ্গ-

10. আর এস নিম্বকার ছিলেন ‘অল ইন্ডিয়া ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি’র —————

উত্তর- সম্পাদক 

11. ভারতে প্রকাশিত প্রথম কমিউনিস্ট পত্রিকাটি হল————–

উত্তর-  সোশ্যালিস্ট

12. সন্তোষকুমারী গুপ্তা সম্পাদিত পত্রিকাটির নাম ছিল—————

উত্তর- শ্রমিক

13. ‘কীর্তি’ পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন————-

উত্তর- সন্তোষ সিং

14. ‘ইনকিলাব’ পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন——————

উত্তর-  গোলাম হোসেন

15. মস্কোয় অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় সম্মেলনে যোগ দেন।

উত্তর-  মানবেন্দ্রনাথ রায়

6. True And False

1. অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলনের হিংসাত্মক • কার্যকলাপকে জওহরলাল নেহরু সমর্থন করেননি।

উত্তৰ   ঠিক ।

2. অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশের রায়বেরিলিতে কৃষক আন্দোলন তীব্র 

আকার ধারণ করে।

উত্তৰ   ঠিক ।

3. অসহযোগ আন্দোলনের সময় উত্তরপ্রদেশে লুঠতরাজ ও ছোটোখাটো সংঘর্ষের ঘটনা, জমিদারদের বিরোধিতা প্রভৃতি ঘটলেও মহাত্মা গান্ধি এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন।

উত্তৰ  ভুল ।

4. বাবা রামচন্দ্র ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের নেতা।

উত্তৰ  ভুল ।

 5. কংগ্রেস ও খিলাফৎ নেতারা একা আন্দোলনে সমর্থন জানায়।

উত্তৰ   ঠিক ।

6. মোপলা আন্দোলন একটি শ্রমিক আন্দোলন ছিল।

 উত্তৰ  ভুল ।

7. প্যাটেল বারদৌলি তালুককে ১৩টি অঞ্চলে বিভক্ত করে ১৩ জন নেতাকে সত্যাগ্রহ পরিচালনার দায়িত্ব দেন।

উত্তৰ   ঠিক ।

৪. গান্ধিজি বল্লভভাই প্যাটেলকে ‘সর্দার’ উপাধি দেন।

 উত্তৰ  ভুল ।

9. বারদৌলি সত্যাগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নিযুক্ত এক কমিটি ৬.০৩ শতাংশ খাজনা বৃদ্ধি অনুমোদন করলে কৃষকরা তা দিতে রাজি হয়।

 উত্তৰ   ঠিক ।

10. ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে মহাত্মা গান্ধি আমেদাবাদ বস্ত্র কারখানার শ্রমিকদের নিয়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন করেন।

উত্তর- ঠিক

11. ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করা হয় মুসলিম লিগকে।

উত্তর-  ভূল 

12. কংগ্রেসের অভ্যন্তরে ‘ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি’ গড়ে ওঠে।

উত্তর- ভূল 

13. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় জমিদারদের বিরোধিতা নয়, সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতাই ছিল কৃষক আন্দোলনের অন্যতম লক্ষ্য।

উত্তর- ঠিক 

14. ফরওয়ার্ড ব্লক ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে একটি পৃথক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

উত্তর – ঠিক 

15. ফরওয়ার্ড ব্লক প্রতিষ্ঠা করেন সুভাষচন্দ্র বসু।

উত্তর-  ঠিক