WBCHSE Class 12 Educational Science Chapter 9 Solution | Bengali Medium

Class 12 Educational Science Solution

ভিন্ন ধরনের সক্ষমতার শিশুদের শিক্ষা

1. MCQs Question Answer

1. অক্ষম শিশুদের শিক্ষার অধিকার কোন্ সম্মেলনে গৃহীত হয়?

(a)1972 খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো আয়োজিত এডগার ফাউরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে

(b) 1996 খ্রিস্টাব্দে জ্যাক ডেলরের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে

(c) 1989 খ্রিস্টাব্দে শিশুর অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে  ✔

(d) 1977 খ্রিস্টাব্দে আয়োজিত টিবিলিসি সম্মেলনে

2. নীচের কোন্ সম্মেলনে অক্ষম শিশুদের শিক্ষার অধিকার আইন গৃহীত হয়?

(a) 1990 খ্রিস্টাব্দে ‘ওয়ার্ল্ড ডিক্লারেশান ফর এডুকেশন ফর অল’

(b) 1989 খ্রিস্টাব্দে শিশুর অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে

(c) 2000 খ্রিস্টাব্দে ‘ডাকার ফ্রেমওয়াক ফর অ্যাকশন’ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে

(d) ওপরের সবগুলি  ✔

3. মানসিক দিক থেকে অস্বাভাবিকতার কারণ কী?

(a) মায়ের গর্ভকালীন অবস্থায় আয়োডিনের অভাব

(b) ভিটামিন A-এর অভাব

(c) শিশুর প্রতি অমানবিক আচরণ

(d) (A) ও (B) উভয়েই  ✔

4. ব্যতিক্রমী এবং ভিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন শিশুর অর্থ কী?

 (a) একই  ✔

(b) কিছু পার্থক্য আছে

(c) ব্যতিক্রমী শিশুর অর্থ নেতিবাচক

(d) ভিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন শিশুর অর্থ ইতিবাচক

5. নীচের কোন্ কমিশনে ভিন্নপ্রকৃতির সক্ষমতার অধিকারী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে?

(a) রাধাকৃয়ণ কমিশনে

(b) মুদালিয়র কমিশনে

(c) কোঠারি কমিশনে  ✔

(d)ওপরের সবগুলি

6. স্বাভাবিক শিশুদের নিরিখে ভিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের অবস্থান বর্ণনা করো।

(a) স্বাভাবিক শিশুদের অপেক্ষা তারা উচ্চস্থানে অবস্থান করে

(b) স্বাভাবিক শিশুদের অপেক্ষা তারা নিম্নস্থানে অবস্থান করে

(c) স্বাভাবিক শিশুদের অপেক্ষা তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণে ন্যূনতম পার্থক্য থাকে  ✔

(d) স্বাভাবিক শিশুদের অপেক্ষা তারা উচ্চস্থান বা নিম্নস্থানে অবস্থান করে

7. ভিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন শিশু বলতে কী বোঝায়?

(a) ব্যাহত শিশু

(b) অক্ষম শিশু

(c) প্রতিবন্ধী শিশু

(d) ওপরের সবগুলি  ✔

৪. ব্যাহত শিশু কাদের বলা হয়?

(a) যাদের বিশেষ কাজে অসুবিধা হয়, কিন্তু সব কাজে নয়  ✔

(b) যারা নির্দিষ্ট যন্ত্র বা কৌশল ব্যবহার করলে স্বাভাবিক শিশুর মতো কাজ করতে পারে

(c) স্বাভাবিকভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে অনতিক্রম্য বাধার সম্মুখীন হয়

(d) ওপরের কোনোটিই নয়

9. নীচের কোন্টি প্রতিবন্ধীর উদাহরণ?

(a) ডান হাতের কোনো আঙুল নেই

(b) বুদ্ধ্যঙ্ক 70

(c) পোলিও-আক্রান্ত শিশু  ✔

(d) ওপরের সবকটি

10. ব্রেইল লেখা হয় ক-টি বিন্দুর সাহায্যে?

(a) 6টি বিন্দু দিয়ে  ✔

(b) ৪টি বিন্দু দিয়ে

(c) 10টি বিন্দু দিয়ে

(d) 9টি বিন্দু দিয়ে

11. কে ব্রেইল আবিষ্কার করেন?

(a) রোহন ব্রেইল

(b) লুই ব্রেইল  ✔

(c) মাদাম কুরি

(d) মেরি কুরি

12. যারা দৃষ্টিহীন তাদের দর্শনজনিত তীক্ষ্ণতা কত?

 (a) 110-এর কম  ✔

 (b) 110- এর বেশি

 © 120-এর কম 

(d) 120-এর অধিক

13. যারা দৃষ্টিহীন সাধারণত তাদের অন্যান্য ইন্দ্রিয়ের তীক্ষ্ণতা কেমন হয়?

(a) কানে কম শোনে

(b) কথনে জড়তা দেখা যায়

(c) দৃষ্টি ব্যতীত অন্য ইন্দ্রিয়গুলি তীক্ষ্ণ হয়  ✔

(d) বোধশক্তি কম হয়

14. অ্যাবাকাস কোন্ শিক্ষার উপকরণ?

(a) বাংলা

(b) ইতিহাস

(c) গণিত  ✔

(d) জীবনবিজ্ঞান

15. শব্দ সৃষ্টি করা বইয়ের সাহায্যে কাদের পড়ানো হয়?

(a) বধিরদের

(b) বোবাদের

(c) দৃষ্টিহীনদের  ✔

(d) স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের

16. বাক্ পঠনের অপর নাম কী?

(a) স্পর্শ পঠন

(b) ওষ্ঠ পঠন  ✔

(c) দ্রুত পঠন

(d) দ্বার পঠন

17. ব্রেইল পদ্ধতি চালু হয়-

(a) 1820 সালে

(b) 1830 সালে

(c) 1810 সালে

(d) 1829 সালে  ✔

18. ‘বিশেষ শিক্ষা’ শব্দটি সাধারণত কাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়?

(a) প্রতিভাবানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে

(b) ব্যাহত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে  ✔

(c) মানসিক সমস্যাক্রান্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে

(d) চঞ্চল ও অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে

19. ইন্দ্রিয়গত ত্রুটিযুক্ত ব্যক্তিদের কী বলা হয়?

(a) মানসিক প্রতিবন্ধী

(b) দৈহিক প্রতিবন্ধী  ✔

(c) শিখনে অক্ষম শিক্ষার্থী

(d) আংশিক প্রতিবন্ধী

20. অডিয়োমিটার যন্ত্রের সাহায্যে কী পরিমাপ করা যায়?

(a) অন্ধত্ব

(b) বধিরত্ব  ✔

(c) রক্তের ক্ষারত্ব

(d) রক্তের অম্লত্ব

21. কোন্টি দৃষ্টিজনিত ব্যাহত শিক্ষার্থীদের লক্ষণ নয়?

(a) শিক্ষার্থীর চোখ দিয়ে ঘনঘন জল পড়ে

(b) শিক্ষকের দেওয়া নোট লিখতে বারংবার পাশে বসা সহপাঠীর মাথার দিকে তাকায়  ✔

(c) শিক্ষার্থী মাথা নীচু করে হাঁটে

(d) ব্ল‍্যাকবোর্ডের লেখা দেখে লেখার সময় পাশের সহপাঠীকে বারংবার জিজ্ঞাসা করে

22. মনোবিদ লোয়েনফেল্ড দৃষ্টিহীনদের ক-টি ভাগে ভাগ করেছেন?

(a) চারটি  ✔

(b) পাঁচটি

(c) তিনটি

(d) ছ-টি

23. শিক্ষার কোন্ পর্যায়ে ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন এবং শ্রবণ ক্ষমতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের পার্থক্য থাকা বিশেষ প্রয়োজন?

(a) শিক্ষার লক্ষ্য নির্দিষ্টকরণে

(b) পাঠক্রম নির্ধারণে

(c) শিক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগে  ✔

(d) মূল্যায়নে

24. ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষণে কোন্ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়?

(a) ব্রেইল পদ্ধতি

(b) স্পর্শভিত্তিক পদ্ধতি

(c) শব্দভিত্তিক পদ্ধতি

(d) ওপরের সবগুলি সী  ✔

25. ব্যাহত শিক্ষার্থীদের জন্য কোন্ নতুন শিক্ষাগত কৌশলের হচ্ছে?

(a) প্রথাবহির্ভূত শিক্ষা

(b) অনিয়ন্ত্রিত শিক্ষা

(c) অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা  ✔

(d) দূরশিক্ষা

26. দৃষ্টিহীন ও ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্য কী?

(a) আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা

(b) সংগতিবিধানে সহায়তা

(c) বৃত্তির সুযোগ সৃষ্টি

(d) ওপরের সবগুলি  ✔

27. নীচের কোনটি আংশিক দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহূত হয় না?

(a) চশমা

(b) বড়ো হরফের বইি

(c) ব্রেইল পদ্ধতি  ✔

(d) শ্রুতি সহায়ক উপকরণ

28. আংশিক দৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষণে নীচের কোন্ শ্রেণিকক্ষ কৌশলটি গৃহীত হয়?

(a) সামনের সারিতে বসার ব্যবস্থা করা

(b) জানালার পাশে বসার ব্যবস্থা

(c) ব্ল‍্যাকবোর্ডে কিছু লেখার সময় উচ্চারণ করে লেখা

(d) ওপরের সবগুলি  ✔

29. ভারতবর্ষে মোট দৃষ্টিহীন ব্যক্তির মধ্যে শতকরা কত অংশ শিক্ষার সুযোগ পায়?

(a) 5%

(b) 10%

(c) 1%  ✔

(d) 3%

30. ভারতবর্ষের কোন্ স্থানে দৃষ্টিহীনদের জন্য সবচেয়ে বৃহত্তর প্রতিষ্ঠানটি অবস্থিত?

(a) কলকাতার বেহালায়

(b) কলকাতার নরেন্দ্রপুরে

(c) দেরাদুনের রায়পুরে  ✔

(d) তামিলনাড়ুর গান্ধিগ্রামে

31. ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার প্রধান সমস্যা কী?

(a) পারদর্শিতায় পিছিয়ে থাকা

(b) সামগ্রিক অভিজ্ঞতা অর্জনে অসুবিধা

(c) হীনম্মন্যতা

(d) ওপরের সবগুলি  ✔

32. ভারতবর্ষে কোন্ দিনটি প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে গণ্য?

(a)15 এপ্রিল

(b) 15 মার্চ  ✔

(c) 10 মার্চ

(d) 10 এপ্রিল

33. মেন্টাল ম্যাপ (Mental Map) ব্যবহার করা হয়————-শিক্ষার জন্য।

(a) দৃষ্টিহীনদের  ✔

(b) বধিরদের

(c) মূকদের

(d) মানসিক ক্ষতিগ্রস্তদের

34. Inclusive education হল-

(a) কেবলমাত্র অন্ধ শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা

(b) বিশেষ ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা

(c) সব ধরনের শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা  ✔

(d) প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা

35. লুই ব্রেইল সালে ব্রেইলের সৃষ্টি করেন।

(a) 1820

(b) 1810

(c) 1830

(d) 1829  ✔

36. ‘স্ক্রিন রিডার’ যন্ত্র ব্যবহৃত হয়-

(a) দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার জন্য  ✔

(b) মূক ও বধিরদের শিক্ষার জন্য

(c)মানসিক প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার জন্য

(d) অনগ্রসরদের শিক্ষার জন্য

37. ভারতে প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়-

(a)15 এপ্রিল

(b) 15 মার্চ  ✔

(c)10 মার্চ

(d) 10 এপ্রিল

38. ব্রেইল পদ্ধতি চালু হয়-

(a) 1921 সালে

(b) 1930 সালে

(c) 1810 সালে

(d) 1829 সালে  ✔

39. ভারতে অন্ধদের জন্য জাতীয় গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে-

(a) গুজরাটে

(b) চেন্নাইতে

(c) অমৃতসরে

(d) দেরাদুনে  ✔

40. প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়-

(a)15 জানুয়ারি

(b) 17 মার্চ

(c)14 মার্চ

(d) 15 মার্চ  ✔

41. উঁচু খোদাই করা মানচিত্র ব্যবহৃত হয়-

(a) দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার জন্য  ✔

(b) মূক ও বধিরদের শিক্ষার জন্য

(c) মানসিক প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার জন্য

(d) অনগ্রসরদের শিক্ষার জন্য

42. টকিং বুক ব্যবহার করা হয় শিক্ষার জন্য-

(a) অন্ধদের  ✔

(b) বধিরদের

(c) মুকদের

(d) অতিরিক্ত চঞ্চলদের

43. ব্রেইল পদ্ধতি শুরু হয়-

(a)1820 সালে

(b) 1830 সালে

(c) 1810 সালে

(d) 1829 সালে  ✔

44. ব্রেইল লেখাতে লাগে যতগুলি বিন্দু (Dot)-

(a) 6টি  ✔

(b) ৪টি

(c) 10টি

(d) 11টি

45. ব্রেইল পদ্ধতির প্রবর্তক লুই ব্রেইল যে দেশের নাগরিক-

(a) ইংল্যান্ড

(b) ব্রাজিল

(c) স্পেন

(d) ফ্রান্স  ✔

1. যে-সমস্ত শিশু শুনতে পায় না, তাদের কী বলে?

(a) বোবা

(b) কালা    ✔

(c) দৃষ্টিহীন

 (d) খোঁড়া

2. ‘অক্টেভ ব্যান্ড’ নামক যন্ত্রের সাহায্যে কী পরিমাপ করা হয়?

(a) অন্ধত্ব

(b) বধিরত্ব    ✔

(c) মানসিক ক্ষমতা

(d) তোতলামি

3. শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক কোন্টি?

(a) জি বি

(b) ডি বি    ✔

(c) সি বি

(d) কে বি

4. ব্যাহত শিক্ষার্থীদের বিশেষ শিক্ষার ব্যবস্থা করার প্রধান কারণ কী?

(a)মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি

(b)বৃত্তির জন্য উপযুক্ত করে তোলা

(c) তাদের অধিকার বাস্তবায়িত করা    ✔

(d)হীনম্মন্যতা দূর করা লাউ

5. মূকবধিরদের শিক্ষার জন্য কে মৌলিক পদ্ধতি প্রবর্তন করেন?

(a) কোটি অ্যানকন

(b) জুয়ান পাবলো বঁনে    ✔

(c)লুইস ব্রেইল

(d) মাদাম কুরিজীব

6. নীচের বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে কোন্টি বধিরতার কারণে ব্যাহত হয় না?

(a) বৌদ্ধিক বিকাশ

(b) দৈহিক বিকাশ    ✔

(c) ভাষার বিকাশ

(d) সামাজিক বিকাশ

7. মূক ও বধির একইসঙ্গে বলার তাৎপর্য কী?

(a) বধিররা কথা বলতে পারে না    ✔

(b) যারা মূক তারা বধির হয়

(c) অনুশীলনের অভাবে বধিররা কথা বলতে পারে না

(d) জন্মগতসূত্রে বধিররা কথা বলতে পারে না

৪. স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি কত ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ শুনতে পায়?

(a) 25 ডেসিবেল থেকে 35 ডেসিবেল পর্যন্ত

(b) 25 ডেসিবেল পর্যন্ত   ✔

(c) 26 ডেসিবেল থেকে 40 ডেসিবেল পর্যন্ত

(d) 26 ডেসিবেল থেকে ৪০ ডেসিবেল পর্যন্ত

9. শ্রেণিকক্ষ শিক্ষণে কোন্টি ব্যাহত শ্রবণক্ষমতার লক্ষণ?

(a) নোট লেখার সময় শিক্ষার্থী স্বরবর্ণজনিত শব্দ লিখনে বেশি ভুল করে

(b) শিক্ষকের বক্তব্য শোনার সময় শিক্ষকের মুখমণ্ডল সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ করে

(c) শিক্ষককে বারংবার পাঠটি পুনরায় বলতে অনুরোধ করে

(d) ওপরের সবগুলি  ✔

10. মাত্রানুযায়ী বধিরতাকে ক-ভাগে ভাগ করা হয়?

(a) পাঁচ ভাগে    ✔

(b) চার ভাগে

(c) তিন ভাগে

(d) দু-ভাগে

11. কেন্দ্রীয় বধিরতা কাকে বলে?

(a)বহিঃকর্ণ-সম্পর্কিত গঠনগত ত্রুটিকে

(b) মধ্যকর্ণ-সম্পর্কিত গঠনগত ত্রুটিকে

(c) মস্তিষ্কের শ্রবণকেন্দ্রের ত্রুটিকে    ✔

(d) অন্তঃকর্ণ-সম্পর্কিত গঠনগত ত্রুটিকে

12. নীচের কোন্টি মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়?

(a) আত্মবিশ্বাস গঠনে সহায়তা করা

(b) হীনম্মন্যতা দূর করা

(c) শিক্ষাগত পারদর্শিতার উন্নয়ন

(d) ওপরের কোনোটিই নয়    ✔

13. নীচের কোন্ ধরনের বিকাশে মূক ও বধিরদের সমস্যা দেখা যায়?

(a) দৈহিক বিকাশে

(b) প্রাক্ষোভিক বিকাশে

(c) সামাজিক বিকাশে    ✔

(d) মানসিক বিকাশে

14. যারা সম্পূর্ণভাবে মূক ও বধির, তাদের পাঠদান পদ্ধতি হিসেবে নীচের 1 কোন্টি উপযুক্ত নয়?

(a) ওষ্ঠ পঠন

(b) শ্রবণ সহায়ক পদ্ধতি    ✔

(c) দলভিত্তিক পদ্ধতি

(d) আঙুলের সাহায্যে বানান শেখা

15. ভারতের কোথায় সর্বপ্রথম মূক ও বধির শিক্ষার্থীদের জন্য বিদ্যালয়

(a) কলকাতায়

(b) মাদ্রাজে

(c) বোম্বাই-এ    ✔

(d) দিল্লিতে

16. জাতীয় স্তরে মূক ও বধিরদের জন্য যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আছে তার নাম কী?

(a) ন্যাশনাল কাউন্সিল অব হিয়ারিং হ্যান্ডিক্যাপড

(b) ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হিয়ারিং হ্যান্ডিক্যাপড    ✔

(c) ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হিয়ারিং অ্যান্ড স্পিচ হ্যান্ডিক্যাপড

(d) ন্যাশনাল কাউন্সিল অব হিয়ারিং অ্যান্ড স্পিচ হ্যান্ডিক্যাপড

17. বর্তমানে যে রাজ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক সংখ্যায় মূক ও বধিরদের জন্য বিদ্যালয় আছে, তা হল-

(a) কলকাতা

(b) বোম্বাই    ✔

(c) তামিলনাড়ু

(d) দিল্লি

18. দূরদর্শনে মূক ও বধিরদের জন্য সংবাদ পাঠের সময় কী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়?

(a) ওষ্ঠ পঠন

(b) আঙুলের সাহায্যে বানান করা

(c) (A) ও (B) উভয়ের সাহায্যে 

(d) C) এবং দর্শনভিত্তিক পদ্ধতি    ✔

19.মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার সমস্যাগুলি হল-

(a) সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনে সমস্যা

(b) শিক্ষাজনিত সমস্যা

(c) প্রাক্ষোভিক সমস্যা একা

(d) ওপরের সবগুলি    ✔

20. শ্রেণিকক্ষে ভাষা ব্যবহারে ব্যাহত শিশুদের কীভাবে চিহ্নিত করা যায়?

(a) শিশুর মুখমণ্ডল গঠনে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়

(b) শিশু মাঝে মাঝে শব্দ ছেড়ে যায়

(c) শিশুর বক্তব্য বুঝতে অসুবিধা হয়

(d) ওপরের সবগুলি    ✔

21. কম্পন ও স্পর্শানুভূতি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়-

(a) অন্ধদের জন্য

(b) বধিরদের জন্য    ✔

(c) মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য

(d) শিক্ষাগত প্রতিবন্ধীদের জন্য

22. মুক ও বধির শিশুদের পাঠক্রমের অন্তর্গত একটি বিষয় হল—-

(a) সংগীত

(b) বেইল পাঠ

(c) হস্তশিল্প    ✔

(d) ওপরের সবকটি

23. নীচের কোন্ পদ্ধতিটি শ্রবণশক্তি ব্যাহতদের শিক্ষাদান করতে সাহায্য করে?

(a) Braille

(b) lip reading    ✔

(c) talking book

(d) lecture method

24.’অক্টেভ ব্যান্ড’ নামক যন্ত্রের সাহায্যে কী পরিমাপ করা হয়?

(a) অন্ধত্ব

(b) তোতলামি

(c) বিকলাঙ্গতা

(d) বধিরত্ব    ✔

25. ‘ঠোঁট নাড়া’ পদ্ধতি (Lip Movement) ব্যবহৃত হয় জন্য।                                                                

(a) মানসিক প্রতিবন্ধীদের

(b) দৃষ্টিহীনদের

(c) মূক ও বধিরদের    ✔

(d) প্রক্ষোভজনিত সমস্যা সংক্রান্ত

26.ঠোঁট নাড়া পদ্ধতির প্রবর্তক কে?

(a) ফ্রয়েড

(b) লুই ব্রেল

(c) জুয়ান পাবলো বঁনে    ✔

(d) স্যামুয়েল কার্ক

27.বাকপঠনের অপর নাম হল-

(a) স্পর্শ পঠন

(b) ওষ্ঠ পঠন    ✔

(c) দ্রুত পঠন

(d) ধীর পঠন

28.শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত পদ্ধতি হল-

(a) ব্রেইল

(b) ওষ্ঠ পঠন    ✔

(c) টকিং বুক

(d) বক্তৃতা পদ্ধতি

1. শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যার কারণ হল-

(a) অতিরিক্ত চাহিদা   ✔

(b) অতৃপ্ত চাহিদা  

(c) জন্মগত বৈশিষ্ট্য

(d) প্রতিকূল পরিবেশ

2. নীচের কোল্টিন্ট শিশুর আচরণগত সমস্যা?

(a) শিশু যখন তার সুশিক্ষিত আচরণ করে

(b) শিশুর আচরণ যখন সমাজের মানদণ্ড অনুযায়ী হয় না   ✔

(c) শিশুর আচরণ যখন তার বয়সোপযোগী নয়

(d) শিশু যখন তার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় না

3. নীচের কোল্টিন্ট শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ?

(a) ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণ না হওয়া   ✔

(b) সামাজিক চাহিদা পূরণ না হওয়া

(c) শিক্ষকের আচরণ

(d) গৃহ-পরিবেশের দুরবস্থা

4. নীচের কোল্টি মানসিক চাহিদা?

(a) আগ্রহ অনুযায়ী অধ্যয়নের সুযোগ

(b) অপরের সমর্থনের চাহিদা   ✔

(c) শেখার জন্য ইচ্ছা

(d) ওপরের কোনোটিই নয়

5. নীচের কোন্টির ওপর শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যার প্রভাব পড়ে?

(a) শ্রেণিকক্ষ শৃঙ্খলার ওপর

(b) সহপাঠীদের মনোযোগের ওপর

(c) শিক্ষকের পাঠদানের ওপর

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

6. আচরণগত সমস্যাক্রান্ত শিক্ষার্থী কার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে?

(a) নিজের   ✔

(b) শিক্ষকের

(c) সহপাঠীদের

(d) শ্রেণি শৃঙ্খলার

7. “প্রতিটি ব্যক্তি চায় অন্যেরা তাকে ব্যক্তি হিসেবে গুরুত্ব দিক”-উক্তিটি কার?

(a) স্কিনারের

(b) রজার্সের

(c) ম্যাসলোর ✔  

(d) উপরোক্ত কারোর নয়

৪. ব্যক্তির চাহিদাগুলিকে কোন্ মনোবিদ্ পিরামিডের আকারে রূপ দিয়েছেন?

(a) কার্লি রজার্স

(b) সিগমান্ড ফ্রয়েড

(c) ম্যাসলো   ✔

(d) আইজ্যাঙ্ক

9. স্বাভাবিক জীবনযাপনে নীচের কোন্ চাহিদা পূরণ করা একান্ত প্রয়োজন?

(a) শারীরবৃত্তীয় চাহিদা

(b) নিরাপত্তার চাহিদা

(c) ভালোবাসার চাহিদা

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

10. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘মিড-ডে-মিল’ সরবরাহের মধ্য দিয়ে কোন্ ধরনের চাহিদার পরিতৃপ্তি হয়?

(a) ভালোবাসার চাহিদা

(b) নিরাপত্তার চাহিদা

(c) শারীরবৃত্তীয় চাহিদা   ✔

(d) ওপরের সবগুলি

11. কোয়ারি (Quary) তার সমীক্ষায় আচরণগত সমস্যাগুলিকে ক-টি ভাগে ভাগ করেছেন?

(a) তিন ভাগে

(b) দু-ভাগে

(c) চার ভাগে   ✔

(d) পাঁচ ভাগে

12. নীচের কোন্টি আচরণগত বিশৃঙ্খলা?

(a) অপরাধবোধ

(b) বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যাওয়া

(c) বদমেজাজ  ✔ 

(d) চুরি করা

13. নীচের কোন্টি শ্রেণিকক্ষ-সম্পর্কিত সমস্যামূলক আচরণ?

(a) আক্রমণধর্মিতা

(b) মিথ্যা বলার প্রবণতা

(c) অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

14. নীচের কোন্টি আক্রমণধর্মিতার বিদ্যালয়ভিত্তিক কারণ নয়?

(a) শিক্ষকের অবহেলা

(b) শিক্ষকের অধিক প্রত্যাশা

(c) ADHD   ✔

(d) বিদ্যালয়ের কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

15. আক্রমণধর্মিতার কারণ নির্ণয়ে শিক্ষকের কী করণীয়?

(a) শিক্ষার্থীর বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকার

(b) কেস স্টাডি

(c) নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর বিভিন্ন পরিস্থিতিতে আচরণ পর্যবেক্ষণ

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

16. আক্রমণধর্মী শিক্ষার্থীর চিকিৎসার কৌশল কী?

(a) খেলাভিত্তিক চিকিৎসা

(b) শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা

(c) পরামর্শ দান

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

17. নীচের কোল্টি অত্যন্ত জেদি হওয়ার সঠিক কারণ নয়?

(a) কঠোর শাসন.

(b) অত্যধিক প্রশ্রয়   ✔

(c) একাকিত্ব

(d) শিশুকে সর্বদা সমালোচনা

18. নেতিবাচক মানসিকতার প্রতিকারের উপায় কী?

(a) সন্তানকে সঙ্গ দেওয়া

(b) বিদ্যালয়ের নির্দেশনামা বিভাগের সহযোগিতা

(c) সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

19. শ্রেণিকক্ষে নীচের কোল্টি অবশ্যই সমস্যামূলক আচরণ?

(a) আক্রমণধর্মিতা   ✔

(b) অনুমতি না নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করা

(c) মিথ্যা কথা বলা

(d) আদেশ পালন না করা

20. অনুমতি না নিয়ে বিদ্যালয় পরিত্যাগ করা কখন সমস্যামূলক আচরণ বলে গণ্য করা হয়?

(a) শিক্ষকের পাঠদান যখন শিক্ষার্থীর পছন্দ হয় না

(b) বিদ্যালয়ের পরিবেশ যখন শিক্ষার্থীদের কাছে ক্লান্তিকর

(c) শিক্ষকের কঠোর শাসন   ✔

(d) ওপরের সবগুলি

21.এ-স্কুল পালানোর প্রতিকার কী?

(a) শিক্ষকের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক

(b) বিদ্যালয়ের কাজগুলি হবে আনন্দদায়ক

(c) শিক্ষার্থীর অসুবিধার বিষয়টি শিক্ষককে জানাতে হবে

 (d) ওপরের সবগুলি   ✔

22. নীচের কোল্টিন্ট সমস্যামূলক আচরণ নয়?

(a) কোনো কারণ ব্যতীত মিথ্যা কথা বলা

(b) ঘনঘন মিথ্যা কথা বলা

(c) যে মিথ্যা কথায় সহপাঠীর ক্ষতি হয়

(d) কৌতুকের জন্য যখন মিথ্যা কথা বলে   ✔

23. মিথ্যা কথা বলার সমস্যার প্রতিকার-

(a) মৌলিক চাহিদাপূরণ

(b) দলগত কাজে অংশগ্রহণ করা

(c) সত্যি কথা বললে প্রশংসা করা

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

24. চুরি করার কারণ কী?

(a) দারিদ্র্য

(b) নিরাপত্তাবোধের অভাব

(c) ধনের প্রতি লালসা

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

25. নীচের কোন্টি শ্রেণিকক্ষের একটি অপেক্ষাকৃত গুরুতর সমস্যা?

(a) চুরি করা   ✔

(b) মিথ্যা কথা বলা

(c) স্কুল পালানো

(d) অবাধ্যতা

26. চুরি করার সমস্যা প্রতিকারের উপায় কী?

(a) শিক্ষক এবং পিতা-মাতার সহানুভূতি

(b) কারণ অনুসন্ধান

(c) কারণ অনুসন্ধানের পর পরামর্শদান

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

27. নীচের কোন্টি শ্রেণিকক্ষে প্রতারণার উদাহরণ?

(a) গৃহকাজ অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিয়ে আসা

(b) সহপাঠী অনুপস্থিত হলেও উপস্থিত বলা

(c) শ্রেণিকক্ষ পরীক্ষায় পাশে বসা বন্ধুকে প্রশ্নের উত্তর বলে দেওয়া

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

28. ‘ক্লিপ্টোম্যানিয়া’ কী?

(a) দামি জিনিস দেখলে চুরি করা

(b) দুষ্প্রাপ্য জিনিস চুরি করা

(c) প্রয়োজন না থাকলেও চুরি করা   ✔

(d) ওপরের কোনোটিই নয়

29. কোন্টি প্রতারণার কারণ নয়?

(a) অভাববোধ

(b) অন্যকে বিপদে ফেলা   ✔

(c) নৈতিকতার অভাব

(d) লোভ

30. প্রতারণামূলক আচরণের প্রতিকার কোন্টি?

(a) শিক্ষার্থীর সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যাশা

(b) আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা

(c) নৈতিকতার বিকাশ

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

31. উৎপীড়নের কারণ কী?

(a) বদমেজাজ

(b) হীনম্মন্যতা

(c) হিংসা   ✔

(d) ক্রোধ

32. উৎপীড়নের প্রতিকারের উপায় কী?

(a) শিক্ষকের নিরপেক্ষতা

(b) পিতা-মাতা ও শিক্ষকের ভালোবাসা   ✔

(c) মনোচিকিৎসার সাহায্য গ্রহণ

(d) ওপরের সবগুলি

33. বদমেজাজের কারণ কী?

(a) আত্মপ্রকাশের সুযোগের অভাব

(b) কঠোর শাসন

(c) স্বাধীনতার অভাব

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

34. নীচের কোনটি শ্রেণিকক্ষে সমস্যা-সমাধানের সাধারণ কৌশল হিসেবে গণ্য হয় না?

(a) শিক্ষাদানকে আকর্ষণীয় করে তোলা

(b) শাস্তিদান   ✔

(c) কর্তৃত্ব সহকারে আদেশ

(d) শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে চেনা

35. সমস্যামূলক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নীচের কোল্টিন্ট করা উচিত নয়?

(a) শিক্ষার্থীদের আচরণগুলিকে পারস্পরিক তুলনা করা

(b) অন্যদের সামনে শিক্ষার্থীদের হেয় করা

(c) নিশ্চিত হওয়ার পূর্বে শিক্ষার্থী সম্পর্কে মন্তব্য করা

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

36. সমস্যা প্রতিকারে শিক্ষকের কোন্ কাজটি অবশ্যই করা দরকার?

(a) সমস্যাকে উপেক্ষা করা

(b) সমস্যাকে লঘু করে ফেলা

(c) সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা   ✔

(d) প্রধান শিক্ষকের নজরে নিয়ে আসা

37. “সমস্যার প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো”-এ ব্যাপারে পিতা-মাতার ভূমিকা কী?

(a) শিশু মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে পিতা-মাতার সাধারণজ্ঞান

(b) পিতা-মাতার সঙ্গে হার্দ্য সম্পর্ক

(c) শিশুকে সঙ্গদান

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

38. সন্তানের আচরণগত সমস্যা নিরাময়ের জন্য পিতা-মাতার কী করা উচিত নয়?

(a) সন্তানের আচরণকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা

(b) বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যাবে এই ধারণা পোষণ করা   ✔

(c) শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলা

(d) সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলা

39. সমস্যামূলক আচরণ প্রতিকারের জন্য শিক্ষকের কী করণীয়?

(a) শিক্ষার্থীর সমস্যাটিকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা

(b) শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলা

(c) পিতা-মাতার নিকট থেকে তথ্যসংগ্রহ করা

(d) ওপরের সবগুলি   ✔

40. নীচে উল্লেখ করা বিদ্যালয়ের কার্যাবলির মধ্যে কোল্টিন্ট শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক আচরণ বিকাশে সাহায্য করে না?

(a) বিভিন্ন দিকে আগ্রহ বিকাশের ব্যবস্থা করা

(b) যেসব কার্যাবলিতে শিক্ষার্থী স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায়, তার ব্যবস্থা করা

(c) বিভিন্ন ধরনের কঠিন কাজ দিয়ে শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় ভালো ফল করার চেষ্টা করা সারিক   ✔

(d) শ্রেণিকক্ষে নীতি ও যৌন শিক্ষার ব্যবস্থা করা

41. একজন নম্র স্বভাবের ছাত্র বিগত 2/3 দিন ধরে শ্রেণিকক্ষে উদ্ধত আচরণ করছে, শিক্ষক হিসেবে তোমার কী করণীয়?

(a) উপেক্ষা করা

(b) তার প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখা

(c) ব্যক্তিগত সাক্ষাৎ করা   ✔

(d) শ্রেণিকক্ষ থেকে বহিষ্কার করা

42. একজন মেধাবী ছাত্র শ্রেণিকক্ষ পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল করতে পারছে না। এক্ষেত্রে শিক্ষকের কী কর্তব্য?

(a) অভিভাবককে সচেতন করা

(b) পাঠে অমনোযোগিতার জন্য শিক্ষার্থীর প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করা

(c) শিক্ষার্থীর সঙ্গে একান্তে কথাবার্তা বলা   ✔

(d) শিক্ষার্থীর প্রতি অন্যান্য শিক্ষকের কী মনোভাব সে সম্পর্কে অবহিত হওয়া

43. একজন সাধারণ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় হঠাৎ আশাতিরিক্ত ভালো ফল করেছে, এর কারণ কী?

(a) শিক্ষার্থী পাঠে খুব মনোযোগী হয়েছে

(b) শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রতিযোগিতার মানসিকতা তীব্র হয়েছে

(c) শিক্ষার্থী অসদুপায় গ্রহণ করেছে

(d) বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন   ✔

44. শ্রেণিকক্ষে অধিকাংশ সমস্যামূলক আচরণের সমাধান কীভাবে সম্ভব?

(a) শিক্ষকগণই সমাধান করতে সক্ষম   ✔

(b) অভিভাবকগণ সমাধান করতে সক্ষম

(c) সমাধানে পরামর্শদাতার সহযোগিতা প্রয়োজন

(d) মনোচিকিৎসকের সহযোগিতা প্রয়োজন

45. ‘মনস্তত্ত্বমূলক নাটকাভিনয়’- কোন্ ব্যক্তি এইরূপ মনোচিকিৎসার উদ্ভাবক?

(a) আমাফ্রয়েড

(b) স্কিনার

(c) মোরেলো   ✔

(d) সিগমান্ড ফ্রয়েড

46. কোন্ মনোবিজ্ঞানী আচরণগত সমস্যা-সমাধানে রীতিসিদ্ধভাবে সংবেদনশীলতার অবসান ঘটানোর মাধ্যমে সফল হয়েছিলেন?

(a) স্কিনার

(b) সিগমান্ড ফ্রয়েড

(c) ল্যাজারাস   ✔

(d) উপরোক্ত কেউ নয়

2. Very Short Question Answer

1. আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় উন্নয়নশীল দেশে বিদ্যালয়ে কত শতাংশ অক্ষম শিশু উপস্থিত থাকে?

▶ আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় উন্নয়নশীল দেশে শতকরা মাত্র 2 জন অক্ষম শিশু বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে।

2. আমাদের দেশে কত সালে শিক্ষার অধিকার আইন (Right to Education Act) চালু হয়েছে?

▶ 2010 খ্রিস্টাব্দের 1 এপ্রিল থেকে আমাদের দেশে শিক্ষার অধিকার আইন চালু হয়েছে।

3. তীব্রতা অনুযায়ী ভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের কটি ভাগে ভাগ করা হয় এবং তা কী কী?

▶ তীব্রতা অনুযায়ী ভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়-ব্যাহত, অক্ষম এবং প্রতিবন্ধী।

4. সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা যে পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ করে তাকে কী বলে?

 ▶ সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা যে পদ্ধতিতে শিক্ষা গ্রহণ করে, তাকে বলা হয় ব্রেইল পদ্ধতি।

5. ব্রেইলে ক-টি বিন্দু থাকে?

▶ ব্রেইলে 6 টি বিন্দু থাকে।

6. ব্রেইলের স্টাইলাস কী?

▶ ব্রেইল ব্যবস্থায় পুরু কার্ডবোর্ড বা কাগজের ওপর যে শক্ত জিনিস দিয়ে উঁচু উঁচু ডট বা বিন্দু দেওয়া হয়, তাকে স্টাইলাস বলা হয়।

7. সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের পাঠক্রমের বিশেষত্ব কী?

▶ সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে ব্রেইল পদ্ধতির ওপর নির্ভর করতে হয়।

8. একজন দক্ষ ব্রেইল পাঠক মিনিটে কতগুলি শব্দ পড়তে পারে?

▶ একজন দক্ষ ব্রেইল পাঠক মিনিটে 60 টি শব্দ পড়তে পারে।

9. দৃষ্টিহীনদের শিক্ষায় ব্যবহৃত হয় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের নাম লেখো।

► দৃষ্টিহীনদের শিক্ষায় ব্যবহৃত হয় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র হল ফোনোগ্রাম।

10. প্রতিবন্ধী ও স্বাভাবিক শিশুদের মধ্যে কারা বেশি আবেগপ্রবণ?

▶ প্রতিবন্ধী শিশু ও স্বাভাবিক শিশুদের মধ্যে স্বাভাবিক শিশুরা বেশি আবেগপ্রবণ।

11. লুই ব্রেইল কত খ্রিস্টাব্দে ‘ব্রেইল পদ্ধতি’র প্রচলন করেন?

▶ লুই ব্রেইল 1829 খ্রিস্টাব্দে ‘ব্রেইল পদ্ধতি’র প্রচলন করেন।

12. লোয়েনফেল্ড দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের ক-টি ভাগে ভাগ করেছেন?

▶ লোয়েনফেল্ড দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের চারভাগে ভাগ করেছেন।

13. ভারতবর্ষে দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ উল্লেখ করো।

► দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ভাষায় ‘ভারতীয় ব্রেইল’ রচনা করার ব্যবস্থা করেছে। 

14. আমাদের দেশে প্রতি বছর কোন্ দিনটি প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালিত হয়?

▶ ভারতে প্রতি বছর 15 মার্চ প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালিত হয়।

15. রাষ্ট্রসংঘ কোন্ বছরকে ‘প্রতিবন্ধী বর্ষ’ হিসেবে পালনের নির্দেশ দেয়?

▶ রাষ্ট্রসংঘ 1981 খ্রিস্টাব্দকে প্রতিবন্ধী বর্ষ হিসেবে পালনের নির্দেশ দেয়।

16. হ্যান্ডিক্যাপ শব্দটির অর্থ কী?

▶ হ্যান্ডিক্যাপ শব্দটির অর্থ প্রতিযোগিতামূলক কাজে অসুবিধা।

17. দৃষ্টিহীনদের শিক্ষায় ব্যবহৃত হয়, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের নাম লেখো।

► দৃষ্টিহীনদের শিক্ষায় ব্যবহৃত হয়, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রের নাম- ফোনোগ্রাম বা শব্দসৃষ্টিকারী বই বা কথা বলা যন্ত্র।

18. দৃষ্টিহীন শিশুদের গড় IQ (বুদ্ধ্যঙ্ক) কত?

► দৃষ্টিহীন শিশুদের গড় IQ (বুদ্ধ্যঙ্ক) 98.51

19. আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের জন্য যে হরফ ব্যবহার করা হয়, তার উচ্চতা কত পয়েন্ট?

▶ আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের জন্য যে হরফ ব্যবহার করা হয়, তার উচ্চতা 18 পয়েন্ট।

20.ব্রেইল লেখার টাইপ মেশিনে কী ভিত্তিক শিক্ষা দেওয়া হয়?

▶ ব্রেইল লেখার টাইপ মেশিনে ‘স্পর্শভিত্তিক’ শিক্ষা দেওয়া হয়।

21. সাধারণভাবে বই যে টাইপে ছাপা হয়, তার উচ্চতা কত পয়েন্ট?

▶ সাধারণভাবে বই যে টাইপে ছাপা হয়, তার উচ্চতা 10 পয়েন্ট।

22. আমাদের দেশে দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার সূত্রপাত কারা করেন?

▶ সেবাধর্মে ব্রতী মিশনারিরা আমাদের দেশে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সূত্রপাত করেন।

23. মিশনারিরা সর্বপ্রথম কত খ্রিস্টাব্দে অমৃতসর শহরে দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন?

▶ মিশনারিরা সর্বপ্রথম 1883 খ্রিস্টাব্দে অমৃতসর শহরে দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।

24. দৃষ্টিহীনদের জন্য স্থাপিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে কত খ্রিস্টাব্দে দেরাদুনের রায়পুরে স্থানান্তরিত করা হয়?

▶ 1897 খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে দেরাদুনের রায়পুরে স্থানান্তরিত করা হয়।

25. কার প্রচেষ্টায় 1907 খ্রিস্টাব্দে দাদার-এর ব্লাইন্ড স্কুলটি স্থাপিত হয়?

▶ অ্যানা মিলার্ডের প্রচেষ্টায় 1907 খ্রিস্টাব্দে দাদার-এর ব্লাইন্ড স্কুলটি স্থাপিত হয়।

26. ভারতে দৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা কত?

▶ ভারতে দৃষ্টিহীন মানুষের সংখ্যা প্রায় 40 লক্ষ। মেরাজ

27. বর্তমানে ভারতে যে কটি ব্লাইন্ড স্কুল আছে, তাতে মোট কত হাজার ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে?

▶ বর্তমানে ভারতে যে কটি ব্লাইন্ড স্কুল আছে, তাতে মোট পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ব্যবস্থা রয়েছে।

28. ‘ভারতী ব্রেইল’ কী?

▶ আমাদের দেশের দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ভাষায় যে ব্রেইল রচনার ব্যবস্থা করেছেন তাকে বলা হয় ভারতী ব্রেইল।

29. কত খ্রিস্টাব্দে ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ব্লাইন্ড’ স্থাপিত হয়?

▶ 1952 খ্রিস্টাব্দে ‘ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ব্লাইন্ড’ স্থাপিত হয়।

30. গ্লুকোমা কী?

 ▶গ্লুকোমা হল এমন একপ্রকার চোখের রোগ যার কারণে ব্যক্তি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে পড়ে।

31. মায়োপিয়া কী?

▶ যে রোগে দূরের দৃষ্টি ব্যাহত হয়, তাকে মায়োপিয়া বলে।

32. হাইপার মেট্রোপিয়া কী?

▶ যে রোগে নিকটের দৃষ্টি ব্যাহত হয়, তাকে হাইপার মেট্রোপিয়া বলে।

33. ‘গ্লাস কারিকুলাম’কে কী ধরনের কারিকুলাম বলা হয়?

▶ ‘প্লাস কারিকুলাম’কে কমপেনসেটারি কারিকুলাম বলা হয়।

34. হোয়াইট ক্যান স্টিক কী?

▶ অন্ধ ব্যক্তিরা যে সাদা লাঠির সহায়তায় হাঁটাচলা করেন, তাকেই হোয়াইট ক্যান স্টিক বলে।

35. বর্তমানে ব্যতিক্রমী শিশুরা কী নামে পরিচিত?

▶ বর্তমানে ব্যতিক্রমী শিশুরা ‘চিলড্রেন উইথ স্পেশাল নিড’ বা ‘চ্যালেঞ্জড শিশু’ নামে পরিচিত।

36. অন্ধ শিশুদের একটি শিক্ষাপদ্ধতির নাম লেখো।

▶ অন্ধ শিশুদের জন্য একটি শিক্ষাপদ্ধতি হল ব্রেইল পদ্ধতি।

36. দৃষ্টিহীন শিক্ষার জন্য ভারত সরকারের যে-কোনো একটি পদক্ষেপ উল্লেখ করো।

► দৃষ্টিহীন শিক্ষার জন্য ভারত সরকার বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করেছে।

37. পূর্ণ অন্ধদের শিক্ষাপদ্ধতির নামটি লেখো।

▶ পূর্ণ অন্ধদের ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়।

38. বর্তমানে ব্যতিক্রমী শিশুরা কী নামে পরিচিত?

▶ বর্তমানে ব্যতিক্রমী শিশুরা Differently abled children নামে পরিচিত।

39. বর্তমানে ব্যতিক্রমী শিশুরা কী নামে পরিচিত?

▶ বর্তমানে ব্যতিক্রমী শিশুরা CWSN (Children with Special Need

40. টকিং বুক কাদের জন্য ব্যবহার করা হয়?

▶ ‘টকিং বুক’ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবহার করা হয়।

41. সামাজিক বিকাশে দৃষ্টিহীন শিশুরা সাধারণ শিশুদের তুলনায় কত শতাংশ পিছিয়ে থাকে?

▶ সামাজিক বিকাশে দৃষ্টিহীন শিশুরা সাধারণ শিশুদের তুলনায় প্রায় আশি শতাংশ পিছিয়ে থাকে। 

42. সম্পূর্ণ বধির কাদের বলে?

▶ যাদের শ্রুতিশক্তি ৪০ ডেসিবেলের অধিক তাদের সম্পূর্ণ বধির বলে।

43. কেন্দ্রীয় বধিরতার কারণ কী?

▶ কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ মস্তিষ্কের শ্রবণকেন্দ্রের ত্রুটির ফলে এই ধরনের বধিরতা হয়ে থাকে।

44. পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে কোন দুটি ইন্দ্রিয় জ্ঞানমূলক অভিজ্ঞতা অর্জনে সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করে?

▶ চোখ এবং কান জ্ঞানমূলক অভিজ্ঞতা অর্জনে সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করে।

45. কোন্ শিক্ষাবিদ ঠোঁট নাড়ার কৌশল এবং ঠোঁট নাড়া দেখে ভাষা বোঝার কৌশল আবিষ্কার করেন?

▶ শিক্ষাবিদ প্যাবলো বনে ঠোঁট নাড়ার কৌশল ও ঠোঁট নাড়া দেখে ভাষা বোঝার কৌশল আবিষ্কার করেন।

46. কোন্ শিক্ষাবিদ কল্পনা ও স্পর্শ পদ্ধতিতে পাঠদান আবিষ্কার করেন?

▶ শিক্ষাবিদ কেটি অ্যালকর্ন ও সোফিয়া অ্যালকর্ন কল্পনা ও স্পর্শ পদ্ধতিতে পাঠদান আবিষ্কার করেন।

47. কে মুক ও বধিরদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে মৌখিক পদ্ধতির প্রবর্তন করেন?

▶ জে পি বোনেট মূক ও বধিরদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে মৌখিক পদ্ধতির প্রবর্তন করেন।

48. কোন্ ধরনের প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য ওষ্ঠ পঠন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়?

▶ মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য ওষ্ঠ পঠন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

49. ‘করপল্লবী’ পদ্ধতি কোন্ ধরনের প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্যবহৃত হয়?

▶ মূক ও বধিরদের জন্য ‘করপল্লবী’ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।

50. দূরদর্শনে বধিরদের জন্য কীভাবে সংবাদ পরিবেশন করা হয়?

► দূরদর্শনে বধিরদের জন্য ওষ্ঠ পঠন ও আঙুল সঞ্চালন পদ্ধতির সাহায্যে সংবাদ পরিবেশন করা হয়।

51. ভারতে সর্বপ্রথম কোথায় এবং কবে মূক ও বধিরদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়?

▶ 1884 সালে বোম্বাইয়ে সর্বপ্রথম মূক ও বধিরদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।

52. আমাদের দেশে মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থাটি উল্লেখ করো।

▶ আমাদের দেশে মূক ও বধির শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

53. শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক কী?

▶ শব্দের তীব্রতা পরিমাপের একক হল ডেসিবেল বা ডি.বি.।

54. স্বল্প ব্যাহত শ্রুতিযুক্ত ছেলেমেয়েরা কত ডেসিবেল শব্দ শুনতে পায়?

▶ স্বল্প ব্যাহত শ্রুতিযুক্ত ছেলেমেয়েরা 26 থেকে 40 ডেসিবেলের শব্দ শুনতে পায়।

55. গুরুতর ব্যাহত শ্রুতিসম্পন্ন শিশুরা কত ডেসিবেলের শব্দ শুনতে পায়? 

▶ গুরুতর ব্যাহত শ্রুতিসম্পন্ন শিশুরা 41 থেকে ৪০ ডেসিবেলের শব্দ শুনতে পায়।

56 পূর্ণ বধিরদের শ্রবণশক্তি কত ডেসিবেল?

▶ পূর্ণ বধিরদের শ্রবণশক্তি ৪০ ডেসিবেলের বেশি।

57. আমাদের দেশে মূক ও বধির শিশুদের জন্য স্থাপিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা কত? 

▶’আমাদের দেশে মূক ও বধির শিশুদের জন্য স্থাপিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় 270।

58. পশ্চিমবঙ্গে মূক ও বধিরদের জন্য নির্মিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা কত?

▶ পশ্চিমবঙ্গে মূক ও বধিরদের জন্য নির্মিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা 15।

59. ভারতে মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কতকগুলি শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে?

▶ ভারতে মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মাত্র ছয়টি শিক্ষক-শিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।

60. বধিরদের শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম শিক্ষকের স্বীকৃতি কে অর্জন করেন?

▶ বধিরদের শিক্ষার ক্ষেত্রে Pedro Ponce de Leon প্রথম শিক্ষকের স্বীকৃতি অর্জন করেন।

61. দৃষ্টিহীনদের জন্য নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা আমাদের দেশে কত খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়?

► দৃষ্টিহীনদের জন্য নিয়মতান্ত্রিক শিক্ষা আমাদের দেশে 1943 খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়।

62. ‘বধির’ কারা?

▶ যারা শুনতে পায় না, তাদের বধির বলা হয়।

63. কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতি কে প্রবর্তন করেন?

▶ কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতি প্রবর্তন করেন কেটি অ্যালকর্ন ও সোফিয়া অ্যালকর্ন।

64. কাদের জন্য শিক্ষায় করপল্লবী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়?

▶ মূক ও বধিরদের শিক্ষায় কর পল্লবী পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

65. করপল্লবী কীসের পদ্ধতি?

▶ করপল্লবী মূক ও বধিরদের শিক্ষাদানের পদ্ধতি।

67. আচরণগত সমস্যা কাকে বলে?

▶ সমাজ-অবাঞ্ছিত পথে চাহিদাপূরণের প্রক্রিয়াকে আচরণগত সমস্যা বলা হয়।

68. আচরণগত সমস্যার প্রধান কারণ কী?

▶ মৌলিক চাহিদা পরিতৃপ্ত না হলে আচরণগত সমস্যা দেখা যায়।

69. আচরণগত সমস্যার একটি পারিবারিক কারণ উল্লেখ করো।

▶ বাবা-মায়ের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি আচরণগত সমস্যার অন্যতম পারিবারিক কারণ।

70. আচরণগত সমস্যার একটি বিদ্যালয়ঘটিত কারণ উল্লেখ করো।

▶ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন স্বাধীনভাবে কাজ করার কোনো সুযোগ না পাওয়া-আচরণগত সমস্যার একটি বিদ্যালয়ঘটিত কারণ।

71 . শিক্ষককৃত একটি আচরণ উল্লেখ করো যা শিক্ষার্থীর মধ্যে আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে।

▶ শিক্ষকের আকর্ষণহীন, একঘেয়ে শিক্ষণ পদ্ধতি শিক্ষার্থীর মধ্যে আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে।

72. ব্যক্তির ‘চাহিদার পিরামিড’ কে উল্লেখ করেন?

▶ স্যার আব্রাহাম ম্যাসলো (1970) ব্যক্তির ‘চাহিদার পিরামিড’ উল্লেখ করেন।

73. ম্যাসলোর চাহিদার পিরামিডের সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ চাহিদা দুটি কী?

▶ ম্যাসলোর চাহিদার পিরামিডের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ চাহিদা দুটি হল যথাক্রমে শারীরবৃত্তীয় চাহিদা এবং আত্মপ্রতিষ্ঠার চাহিদা।

74. একটি শারীরবৃত্তীয় চাহিদার উল্লেখ করো।

▶ ক্ষুধা হল একটি শারীরবৃত্তীয় চাহিদা।

75. সামাজিক প্রেষণার ক্ষেত্রে ম্যাসলোর কোন্ দুটি চাহিদা বিশেষ সক্রিয় হয়?

▶ সামাজিক প্রেষণার ক্ষেত্রে ভালোবাসা এবং একাত্মতার চাহিদা বিশেষ সক্রিয় হয়।

76. কোন্ মনোবিজ্ঞানী এবং তাঁর সহযোগীগণ আচরণগত সমস্যার শ্রেণিবিভাগ করেছেন?

► কোয়ারি (Quarry) এবং তাঁর সহযোগীগণ আচরণগত সমস্যার শ্রেণিবিভাগ করেছেন।

77.আক্রমণধর্মিতা শ্রেণিকক্ষের কাজে কী ক্ষতি করে?

▶ আক্রমণধর্মিতা শ্রেণিকক্ষে দলগত কাজে অসুবিধার কারণ হয়।

78. আক্রমণধর্মিতা বিদ্যালয়ের কী ক্ষতি করে?

▶ আক্রমণধর্মিতা বিদ্যালয়ের সম্পত্তি নষ্ট করে, বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা এবং একাত্মবোধের ক্ষতি করে।

79. শ্রেণিকক্ষে নেতিবাচক আচরণের উদাহরণ দাও।

▶ অবাধ্যতা, উদ্ধত আচরণ, একগুঁয়েমি ইত্যাদি হল শ্রেণিকক্ষে নেতিবাচক আচরণের উদাহরণ।

80. বদমেজাজের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করো।

▶ বদমেজাজের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল-(a)অবহেলা এবং (b) স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগের অভাব।

3. Short Question Answer

1. ভিন্ন ধরনের সক্ষমতার শিশুদের শিক্ষা কোন্ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত হয়?

▶ 1989 খ্রিস্টাব্দে শিশুর অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভিন্ন ধরনের সক্ষমতার শিশুদের শিক্ষা প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়।

2. 2000 খ্রিস্টাব্দে ‘ডাকার ফ্রেমওয়ার্কার ফর অ্যাকশন’-এ ভিন্ন ধরনের শিশুদের শিক্ষা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

▶ ডাকারের ‘ফ্রেমওয়ার্ক অফ অ্যাকশন’-এ বলা হয়েছে, 2015 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সকলের জন্য শিক্ষা বাস্তবায়িত হবে, যার মধ্যে ভিন্ন ধরনের সক্ষমতার শিশু অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত হবে।

3. মায়ের খাদ্যে আয়োডিনের অভাবের সঙ্গে শিশুর মানসিক অস্বাভাবিকতার সম্পর্ক কী?

▶ এক আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মায়ের খাদ্যে আয়োডিনের অভাবের কারণে বছরে 41 লক্ষ শিশু মানসিক দিক থেকে অস্বাভাবিকতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

4. শিক্ষার অধিকার (RTE) আইনে ভিন্ন ধরনের সক্ষম শিশুদের শিক্ষা সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?

▶ শিক্ষার অধিকার আইনে বলা হয়েছে দেশের প্রতিটি শিশু, সে সুস্থসবল বা ভিন্ন প্রকৃতির সক্ষমতার অধিকারী (ব্যাহত, অক্ষম বা প্রতিবন্ধী), নির্বিশেষে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে তাদের শিক্ষা দিতে হবে।

5. উদাহরণ সহকারে ব্যাহত শিশুর সংজ্ঞা উল্লেখ করো।

▶ অনেক সময় দৈহিক গঠন, ইন্দ্রিয়-সংক্রান্ত বিষয়, অঙ্গসঞ্চালনগত বা পেশিগত অসুবিধার কারণে কোনো শিশু কোনো বিশেষ কাজ করতে অসুবিধার সম্মুখীন হয়, অথচ সামগ্রিকভাবে তার কোনো অসুবিধা থাকে না। এই ধরনের প্রতিবন্ধকতাযুক্ত শিশুকে ব্যাহত শিশু বলা হয়। যেমন- কোনো শিশু বাঁ চোখে খুব কম দেখে, তার জন্য তার বিশেষ কাজে অসুবিধা হতে পারে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে অসুবিধার কারণ হয় না।

6. উদাহরণ সহকারে অক্ষম শিশুর সংজ্ঞা দাও।

▶ শারীরিক কোনো ত্রুটির ফলে শিশু যখন স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না, কিন্তু চিকিৎসা এবং যন্ত্র ব্যবহারের সাহায্যে যখন সে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়, তখন তাকে অক্ষম বলে। যেমন-উপযুক্ত ক্ষমতাসম্পন্ন চশমা ব্যবহারে যখন একটি শিশু দৃষ্টিশক্তির অভাব পূরণ করতে পারে, তখন তাকে অক্ষম শিশু বলে।

7. প্রতিবন্ধী কাকে বলে?

▶ অক্ষমতার ফলে কোনো ব্যক্তি বা শিশু যখন পরিবেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অনতিক্রম্য বাধার সম্মুখীন হয়, তাকে প্রতিবন্ধী বলে।

8. আন্তর্জাতিক স্তরে দৃষ্টিহীন কাদের বলা হয়?

▶ ব্যাবহারিক দিক থেকে যে ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি ২০ 1 ভাগের কম, ব বা যে ব্যক্তি দেড় মিটার দূরত্ব থেকেও আঙুল গুণতে পারে না, তাকে দৃষ্টিহীন বলে।

9. লোয়েনফেল্ডের মতে দৃষ্টিগত ত্রুটিজনিত ব্যক্তিদের ক-টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে?

▶ লোয়েনফেল্ডের মতে, দৃষ্টিশক্তির ত্রুটিজনিত ব্যক্তিদের চারটি ভাগে ভাগ করা যায়- (a)জন্মগত দৃষ্টিহীন, (b) পাঁচ বছর বয়সের পর সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, (c) জন্মগতভাবে আংশিক দৃষ্টিহীন এবং (d) অর্জিত আংশিক দৃষ্টিহীন।

10. ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার চারটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য উল্লেখ। করো।

▶ ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার চারটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল- (a) আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা, (b) সংগতিবিধানে সহায়তা,(c) বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার এবং (d) বৃত্তিমুখী শিক্ষাদান।

11. ব্রেইল পদ্ধতির সাহায্যে সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা কীভাবে শিক্ষালাভ করে?

▶ ব্রেইল পদ্ধতিতে পুরু কাগজ বা কার্ডবোর্ডের ওপর উঁচু উঁচু ছয়টি বিন্দুকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে পাঠ্য বিষয়গুলিকে উপস্থাপিত করা হয়। সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা হাতের স্পর্শের মাধ্যমে বিষয়গুলির পাঠোদ্ধার করে সেগুলিকে আয়ত্ত করে।

12. আংশিক দৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ পদ্ধতিগুলি উল্লেখ করো।

▶ আংশিক দৃষ্টিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-উপযুক্ত লেন্সসম্পন্ন চশমার ব্যবহার, বড়ো হরফের মুদ্রণ, দর্শন ও শ্রুতি সহায়ক যন্ত্রের ব্যবহার এবং শ্রেণিকক্ষে বিশেষ কৌশল প্রয়োগ।

13. অন্ধ-শিশুদের শিক্ষার দুটি সমস্যা লেখো।

▶ (a) অন্ধ শিশুরা স্বাভাবিক শিশুর মতো লিখতে, পড়তে ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে না। (b) আবেগজনিত কারণে তারা ঠিকমতো নিজেদের জানিয়ে নিতে পারে না।

14. ব্রেইল কী?

► দৃষ্টিহীনদের পড়ানোর জন্য লুইস ব্রেইল 1829 খ্রিস্টাব্দে এক বিশেষপ্রকার স্পর্শ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, তাই হল ব্রেইল পদ্ধতি। বর্তমানে বাংলা ভাষায় উন্নত মানের ব্রেইল লেখা হয়।

15. বধিরতাকে ক-টি ভাগে ভাগ করা হয়?

▶ বধিরতাকে ছয় ভাগে ভাগ করা হয়-a()_ স্বল্প বধিরতা (b) মৃদু বধিরতা, (c) মাঝারি বধিরতা, (d)গুরুতর বধিরতা (e) প্রায় সম্পূর্ণ বধিরতা এবং (f) সম্পূর্ণ বধিরতা।

16. মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার চারটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করো।

 ▶ মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার চারটি উদ্দেশ্য হল-(a) আত্মবিশ্বাস গঠন, (b) কথা বলার ক্ষমতা তৈরি করা, (c) শ্রবণমূলক প্রশিক্ষণ এবং (d) বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দান।

17. আংশিক বধির শিশু কাদের বলা হয়?

▶ আংশিক বধির বলতে সেইসব শিশুদের বোঝায় যাদের মধ্যে শ্রবণের ক্ষমতা অল্প হলেও বর্তমান। শ্রবণমূলক প্রশিক্ষণ দিলে বা শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার করলে এই ধরনের শিশুরা আংশিক হলেও শুনতে পায়।

18. কোয়ারি আচরণগত সমস্যাগুলিকে ক-টি এবং কী কী ভাগে ভাগ করেছেন?

▶ কোয়ারি আচরণগত সমস্যাগুলিকে চারটি ভাগে ভাগ করেছেন- (a) আচরণ সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা, (b) ব্যক্তিত্ব সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা, ও অপরিণত এবং (c) সামাজিক দুষ্কৃতি।

19. বিদ্যালয়ে আচরণ-সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা, ব্যক্তিত্ব-সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা, অপরিণত এবং মানসিক দুষ্কৃতির একটি করে উদাহরণ দাও।

▶ বিদ্যালয়ে আচরণ-সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা, ব্যক্তিত্ব-সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা, অপরিণত এবং মানসিক দুষ্কৃতির একটি করে উদাহরণ হল যথাক্রমে বদমেজাজি, হীনম্মন্যতা, চূড়ান্ত নিষ্ক্রিয় এবং বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যাওয়া।

20. আক্রমণধর্মিতা প্রতিকারের উপায় কী?

▶ খেলাধুলা ও বিভিন্ন ধরনের সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং যথাযথ পরামর্শ গ্রহণের দ্বারা আক্রমণধর্মিতার প্রতিকার সম্ভব।

21. বিদ্যালয় কীভাবে নেতিবাচক আচরণ প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে পারে?

▶ শিক্ষকের স্নেহ-ভালোবাসা, সহানুভূতি, সঙ্গদান এবং পরামর্শদানের মাধ্যমে বিদ্যালয় নেতিবাচক আচরণ প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে পারে।

22. কোন্ ক্ষেত্রে স্কুল পালানো সমস্যামূলক আচরণের পর্যায়ে পড়ে?

▶ যখন শিক্ষক বা বিদ্যালয়ের অবাঞ্ছিত আচরণের ফলে শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয় ত্যাগ করে, তখন তা সমস্যামূলক আচরণের পর্যায়ে পড়ে।

23. স্কুল পালানোর সমস্যা প্রতিকারের দুটি উপায় উল্লেখ করো।

▶ স্কুল পালানোর সমস্যা প্রতিকারের দুটি উপায় হল-(a) বিদ্যালয়ে আনন্দদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি এবং (b) শিক্ষকগণের প্রাসঙ্গিক ও আকর্ষণীয়ভাবে বক্তব্য উপস্থাপন।

24. অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখন কী?

▶ যে কোনোরকম অক্ষম শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত সম্পূরক প্রদীপন ও সহায়ক পরিষেবা দিয়ে সন্নিহিত বিদ্যালয়ে বয়সোচিত শ্রেণিতে প্রবেশের অধিকারই হল অন্তর্ভুক্তিমূলক শিখন।

25. প্রতারণার প্রধান কারণগুলি কী?

▶ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষকের অধিক প্রত্যাশা, শিক্ষার্থীদের নৈতিকতার অভাব এবং নিরাপত্তার অভাব প্রভৃতিই হল প্রতারণার প্রধান কারণ।

26. বিদ্যালয়ভিত্তিক প্রত্যাশার প্রতিকার কী?

▶ শিক্ষার্থীর সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যাশা করা, প্রশংসা করা, নৈতিক বোধ এবং আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করাই হল বিদ্যালয়ভিত্তিক প্রত্যাশার প্রতিকার।

27. বদমেজাজের প্রতিকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় বলো।

▶ বদমেজাজের প্রতিকারের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল-(a) পরামর্শদান এবং (b) সহপাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা।

28. শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা প্রতিকারের চারটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল উল্লেখ করো।

▶ শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা প্রতিকারের চারটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হল- (a) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, (b) শিক্ষণের বিষয়কে আকর্ষণীয় করা, (c) শিক্ষার্থীকে উৎসাহ দান এবং (d) সমগ্র বিশৃঙ্খলাকে নিয়ন্ত্রণ করা।

29. সমস্যামূলক শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার জন্য শিক্ষকদের কোন্ চারটি প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকা প্রয়োজন?

 ▶প্রতিম স্যামূলক আচরণ করা, অন্যদের সামনে শিক্ষার্থীকে অপমান করা, শিক্ষার্থীর আগ্রহ অনুযায়ী কাজ করতে না দেওয়া এবং নিশ্চিত হওয়ার পূর্বে শিক্ষার্থী সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করা প্রভৃতি প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

30. শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যা প্রতিকারে বাবা-মায়ের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা উল্লেখ করো।

▶ শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যা প্রতিকারে বাবা-মায়ের চারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল-(a) শিশুর মৌলিক চাহিদাপুরণ, (b) বাবা-মায়ের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, (c) শিশুকে পরিমিত স্বাধীনতাদান এবং (d)বয়ঃসন্ধিক্ষণে বিশেষ পরামর্শদান।

31. শ্রেণিকক্ষের দুটি আচরণগত সমস্যার উল্লেখ করো।

▶ শ্রেণিকক্ষের দুটি আচরণগত সমস্যা হল-(a) পঠনপাঠনের সময় অন্য শিক্ষার্থীকে বিরক্ত করা, (b) শ্রেণির শৃঙ্খলা মেনে না চলা।

4. Long Question Answer

1.ভিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন শিশু কাদের বলে? এই ধরনের শিশু সম্পর্কে আধুনিক ব্যাখ্যা দাও।

উত্তর:ডিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন শিশু

[1] শিশুর ক্ষমতা (ability) কোনো দিকে সাধারণ বা গড় থেকে নির্দিষ্ট মাত্রায় কম বা অধিক হলে, তাকে ব্যতিক্রমী বা ভিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন শিশু বলে।

[2] মনস্তত্ত্ববিদ বার্বের (Barbe) মতে, ব্যতিক্রমধর্মী বলতে সেই সমস্ত শিশুদের বোঝায়, যারা সাধারণ বা স্বাভাবিকদের তুলনায় নির্দিষ্ট মাত্রায় ভিন্ন। এই ভিন্নতার কারণে তাদের জন্য বিদ্যালয়ে বিশেষ ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

ভিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন শিশুর আধুনিক ব্যাখ্যা

বর্তমানে ভিন্ন সক্ষমতাসম্পন্ন শিশু শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়, যেমন- ব্যাহত (impaired), অক্ষম (disabled) এবং প্রতিবন্ধী =] (handicapped)। শব্দ তিনটি ভিন্নধর্মীর প্রতিশব্দ হলেও ধারণাগত কিছু পার্থক্য দেখা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation) এ প সম্পর্কে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

[1] ব্যাহত: ব্যাহত বলতে প্রধানত দৈহিক গঠন, ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত বিষয়, অঙ্গসঞ্চালনগত বা পেশিগত অসুবিধা বোঝানো হয়। যেমন-কোনো শিশু বা ব্যক্তির হয়তো বাঁ-হাতের তিনটি আঙুল নেই। এর জন্য কোনো বিশেষ কাজে অসুবিধা হতে পারে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে অসুবিধার কারণ হয় না।

[2] অক্ষমতা: শারীরিক গঠন, ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত, অঙ্গ সংক্রান্ত এবং পেশিগত ক্ষমতার অভাবে যদি কোনো শিশু বা ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজে অসুবিধার সৃষ্টি হয়, তখন তাকে অক্ষমতা বলা হয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তি সাধারণভাবে বিশেষ কাজ করতে সক্ষম নয়।

[3] প্রতিবন্ধী: অক্ষমতার ফলে কোনো ব্যক্তি বা শিশু যখন পরিবেশের সঙ্গে স্বাভাবিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে অনতিক্রম্য বাধার সম্মুখীন হয়, তখনই তাকে প্রতিবন্ধী বলে। যেমন-কোনো শিশু বা ব্যক্তি যদি বধির হয়, সেক্ষেত্রে ‘দৈহিক পরিশ্রমের ক্ষেত্রে তার কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু যে সমস্ত কাজে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে তাকে খুবই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়।

2.ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন বলতে কাদের বোঝায়?

উত্তর:ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন

[1] আন্তর্জাতিক দৃষ্টিহীনত্ব নিবারণী সংস্থা (International Association for the Prevention of Blindness)-এর মতে, ব্যাবহারিক দিক থেকে যে ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তির  120ভাগের কম, বা যে ব্যক্তি দেড় মিটার দূরত্ব থেকেও আঙুল গুণতে পারে না, তাকে দৃষ্টিহীন বা ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন বলা হয়।

[2] আমেরিকায় যেসব লোকজন স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের তুলনায় 120ভাগেরও কম দেখে, তাদের দৃষ্টিহীন বা ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন বলা হয়।

[3] ফ্রান্সে যেসব ব্যক্তিস্তর দৃষ্টিক্ষমতা স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের তুলনায় 120 ভাগের কম, তাদেরকেই কেবল দৃষ্টিহীন গোষ্ঠীর মধ্যে ফেলা হয়।

3.. ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্নদের শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি লেখো।

উত্তর: : ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুর শিক্ষার উদ্দেশ্য

ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি হল-

 [1] অভিজ্ঞতা অর্জনে সহায়তা : শ্রবণ, স্পর্শ প্রভৃতি পদ্ধতি অবলম্বন করে দৃষ্টিহীনদের বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করা হয়। এগুলি দৃষ্টিহীনদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সাহায্য করে।

[2] হীনম্মন্যতা দূরীকরণ ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: দৃষ্টিহীন শিশুরা চোখে  দেখতে না পাওয়ার জন্য সবসময় হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে। দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল এদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা, হীনম্মন্যতা দূর করা এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করা।

[3] ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি: দৃষ্টিহীনদের শিক্ষার আর একটি উদ্দেশ্য হল তাদের সমাজসচেতন করে তোলা। উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণ করলে তারাও যে দেশের উৎপাদনশীলতায় অংশ নিতে পারবে, এ বিষয়ে তাদের মধ্যে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করা দরকার।

[4] বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার: চোখ ছাড়া অন্যান্য ইন্দ্রিয়কে দৃষ্টিহীনরা  যাতে সাবলীলভাবে ব্যবহার করতে পারে, সে বিষয়ে জ্ঞান বা তথ্য পরিবেশন করাও এই শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। দৃষ্টিহীন শিশুরা তাদের অন্য ইন্দ্রিয়গুলিকে যত বেশি ব্যবহার করবে, তারা তত বেশি সক্রিয়তা লাভ করবে এবং নিজেদের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হবে।

[5] বিশেষ মানসিক ক্ষমতার প্রয়োগ: দৃষ্টিহীন শিশুরা বিশেষ মানসিক  ক্ষমতা বা প্রবণতা অনুযায়ী শিক্ষালাভ করে ভবিষ্যৎ জীবনে যাতে বুজিরোজগার করতে পারে, সে বিষয়ে তাদের সহযোগিতা করা এই শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য।

[6] সংগতিবিধান ও প্রশিক্ষণ দান: দৃষ্টিহীন শিশুরা যাতে সামাজিক  পরিবেশের সঙ্গে সংগতিবিধান করতে পারে, সে বিষয়ে তাদের বিভিন্ন ধরনের কৌশল শেখানো এই শিক্ষার একটি উদ্দেশ্য।

দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় কাজগুলির জন্য অন্যের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে তারা নিজেরাই যাতে সেগুলি যথাযথভাবে করতে পারে, সে বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়াও এই শিক্ষার উদ্দেশ্য। একেবারে ছোটোবেলা থেকে এইসব কৌশল শেখালে তারা স্বাভাবিক শিশুদের মতো রোজকার কাজে পটু হয়ে উঠতে পারে।

[7] বৃত্তিমুখী প্রশিক্ষণ দান: দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্য  হল, তাদের বৃত্তিমুখী প্রশিক্ষণ দেওয়া, যা তাদের রুজিরোজগারে সাহায্য করে। ফলে তারা কিছুটা স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার সুযোগ পায়।

4.   দৃষ্টিহীন শিশুদের শ্রেণিবিভাগ লেখো।

উত্তর: দৃষ্টিহীন শিশুদের শ্রেণিবিভাগ

দৃষ্টিহীন বা ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুদের শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে দুটি মতভেদ লক্ষ করা যায়- [1] প্রচলিত শ্রেণিবিভাগ এবং [2] মনোবিদ লোয়েনফেল্ড-কৃত শ্রেণিবিভাগ।

প্রচলিত শ্রেণিবিভাগ

দর্শনজনিত ত্রুটিসম্পন্ন শিশুদের প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন-

[1] সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন: যারা একেবারেই দেখতে পায় না এবং পড়াশোনার  জন্য ব্রেইল প্রণালীর সাহায্য নিতে বাধ্য হয়, তাদের সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন বলা হয়। তারা শ্রবণ ও স্পর্শশক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়। দৃষ্টিশক্তির প্রয়োজন হয় এমন কোনো কাজ তারা করতে পারে না।

[2] আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন: যেসব শিশুদের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক শিশুদের  থেকে দুর্বল এবং যারা বড়ো হরফের ছাপানো লেখা পড়তে পারে, কিংবা বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু কিছু সাধারণ হরফের লেখাও পড়তে পারে, তাদের বলা হয় আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন।

লোয়েনফেল্ডের শ্রেণিবিভাগ

মনোবিদ লোয়েনফেল্ড (Lowenfeld) দৃষ্টিহীনদের প্রধান চারটি শ্রেণিতে ভাগ  করেছেন। এই চারটি শ্রেণি হল-

[1] জন্মগত দৃষ্টিহীন: যেসব ছেলেমেয়েরা জন্মগতভাবে পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, তারা এই শ্রেণিভুক্ত।

[2] পাঁচ বছর বয়সের পর সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন: যেসব ছেলেমেয়েরা পাঁচ বছর  বয়সের পর কোনো কারণে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, তাদের এই শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এইসব ছেলেমেয়েরা মানসিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে প্রথম শ্রেণির দৃষ্টিহীনদের থেকে অনেকটা আলাদা।

[3] জন্মগতভাবে আংশিক দৃষ্টিহীন: এই ছেলেমেয়েরা জন্মগতভাবে  আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে। এই ধরনের ছেলেমেয়েরা বড়ো হরফের ছাপানো লেখা ছাড়া পড়তে পারে না।

[4] অর্জিত আংশিক দৃষ্টিহীন: এই ছেলেমেয়েরা জন্মগতভাবে স্বাভাবিক  দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন হলেও পরবর্তীকালে কোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা বা রোগব্যাধির কারণে আংশিকভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে।

5.. দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষা পদ্ধতি আলোচনা করো।

উত্তর: দৃষ্টিহীন শিশুদের শিক্ষাপদ্ধতি

দৃষ্টিহীন শিশুদের পাঠদানের জন্য বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সাধারণ পদ্ধতিতে স্বাভাবিক শিশুদের যেভাবে পড়ানো হয়, দৃষ্টিহীন শিশুদের

সেভাবে পড়ানো যায় না। শিশুরা কতখানি দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন সে বিষয়ে পরিমাপ করার পর উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বনের দ্বারা পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করা হয়। সাধারণত দৃষ্টিহীন শিশুদের পঠনপাঠনের জন্য স্পর্শ পদ্ধতি ও শ্রবণ পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়।

[1] ব্রেইল পদ্ধতি: বর্তমানে সারা বিশ্বে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য ব্রেইল পদ্ধতি প্রচলিত। লুইস ব্রেইল 1829 খ্রিস্টাব্দে এই বিশেষ স্পর্শ পদ্ধতির প্রচলন করেন। বর্তমানে বাংলা ভাষাতেও উন্নত মানের ব্রেইল লেখা হয়। ব্রেইল ব্যবস্থায় পুরু কার্ডবোর্ড বা কাগজের ওপর যে শক্ত জিনিস দিয়ে উঁচু উঁচু ডট বা বিন্দু দেওয়া হয়, তাকে বলা হয় ‘স্টাইলাস’। উঁচু উঁচু ছয়টি বিন্দুকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে বাঁদিক থেকে ডানদিকে ব্রেইল লেখা হয়। এই পদ্ধতিতে হাতের স্পর্শের মাধ্যমে লেখা পড়তে হয়। বৈজ্ঞানিক সংকেত, গণিত, সংগীতের স্বরলিপি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় ব্রেইলের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়।

[2] ব্যক্তিকেন্দ্রিক পদ্ধতি: অন্ধ শিশুদের পড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যক্তিকেন্দ্রিক [ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রত্যেক শিশুর প্রতি আলাদাভাবে উ যত্ন নেওয়া হয়। প্রতিটি শিশুর চাহিদা অনুযায়ী শিখন পদ্ধতি আলাদাভাবে নির্বাচিত হয়।

[3] শব্দনির্ভর পদ্ধতি: অন্ধ শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য টকিং বুক, উ ফোনোগ্রাম, টেপরেকর্ডার, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে পাঠ্যসূচির বিভিন্ন অংশের ওপর অডিয়ো ক্যাসেট প্রভৃতির ব্যবহার করা হয়।

[4] নির্ভুল অভিজ্ঞতা দান: অন্ধ ছেলেমেয়েরা মূলত স্পর্শ এবং শ্রবণের মাধ্যমে বিশ্বজগৎ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে। সেই কারণে তাদের পড়ানোর সময়ে স্পর্শেন্দ্রিয় এবং শ্রবণেন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে সঠিক অভিজ্ঞতাদানের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।

[5] সক্রিয়তাভিত্তিক পদ্ধতি: দৃষ্টিহীনদের সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন কাজে  অংশগ্রহণ করানো হয়। পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের সঙ্গে তাদের পরিচয় ঘটিয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে একদিকে তারা যেমন অনুপ্রাণিত হয়, অন্যদিকে যথাযথ অভিজ্ঞতা লাভ করে।

[6] সামগ্রিক ধারণা গঠন: মানুষ চোখে দেখে যেসব অভিজ্ঞতা অর্জন করে,তা মূলত সামগ্রিক বা সমন্বয়ধর্মী হয়। এজন্যই স্বাভাবিক ছেলেমেয়েরা কোনো বস্তুকে সামগ্রিকভাবে দেখে। এই কারণে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সময় একটি বস্তুর নানান অংশ সম্পর্কে পৃথক পৃথকভাবে ধারণা দেওয়ার পর, ওইসব অভিজ্ঞতাগুলির সমন্বয়সাধন করা হয়ে থাকে। সামগ্রিক ধারণা না পেলে তাদের শিক্ষা অপূর্ণ থেকে যায়।ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, দৃষ্টিহীনদের শিখন পদ্ধতি মূলত ব্রেইল ব্যবহারের কৌশলের ওপর নির্ভরশীল। যেসব দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়ে ব্রেইল পাঠে দক্ষতা অর্জন করে, তাদের ব্রেইল পদ্ধতিতেই পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।

6..আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশু কাদের বলে? এই ধরনের দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষণ পদ্ধতি আলোচনা করো।

উত্তর:: আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশু

যেসব শিশুদের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক শিশুদের থেকে দুর্বল এবং যারা বড়ো হরফের ছাপানো লেখা পড়তে পারে, কিংবা বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছু কিছু সাধারণ হরফের লেখাও পড়তে পারে, তাদের বলা হয় আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশু।

আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষণ পদ্ধতি

আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে যেসব শিখন পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া হয়, তা নীচে আলোচনা করা হল-

[1] চশমা ব্যবহারের দ্বারা শিখন: আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার জন্য ফ্রেশনেল লেন্স, গ্যালিলিয়ান চশমা প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া এই শিশুদের শ্রেণিকক্ষের প্রথম সারিতে বসিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়।

[2] বড়ো হরফের বইয়ের ব্যবহারের দ্বারা শিখন: আংশিক  দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষাদানের সময় বড়ো হরফে ছাপানো বই ব্যবহার করা হয়। স্বাভাবিক শিশুদের জন্য ব্যবহৃত বইয়ে ছাপানো অক্ষরগুলি যেখানে 10 পয়েন্টের হয়, সেখানে আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের জন্য 18 পয়েন্ট থেকে 24 পয়েন্ট-বিশিষ্ট অক্ষরে ছাপা বই ব্যবহৃত হয়।

 [3] দর্শনে সহায়ক যন্ত্রের ব্যবহারের দ্বারা শিখন: এই পদ্ধতিতে ব উন্নতমানের লেন্স অথবা বৃহদীকরণের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রের সাহায্যে শিক্ষাদান করা হয়।

[4] শ্রুতিসহায়ক উপকরণের ব্যবহারের দ্বারা শিখন: শ্রুতি সহায়ক ১, উপকরণ বলতে সাধারণত ফোনোগ্রাম, টকিং মেশিন, টকিং বুক, টেপরেকর্ডার, অডিয়ো-ক্যাসেট প্রভৃতিকে বোঝায়। এইসব উপকরণের সাহায্যে আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। সাদিক মীড় কাবা

[5] শ্রেণিকক্ষে কিছু কৌশল প্রয়োগ: আংশিক দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের  শ্রেণিকক্ষে সামনের সারিতে বসাবার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন, যাতে তারা  ব্ল‍্যাকবোর্ডের লেখা দেখতে পায়। ব্ল্যাকবোর্ড দেখার সময় জানালার বাইরে যাতে মাঝে মাঝে তাকায়, সে ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে। ব্ল্যাকবোর্ডে লেখার সময় শিক্ষক উচ্চারণ করে এবং বড়ো হরফে লিখবেন।

7.. দৃষ্টিহীন ও ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম উল্লেখ করো।

উত্তর: : দৃষ্টিহীন ও ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পাঠক্রম

দৃষ্টিহীন এবং ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো সাধারণধর্মী এবং বৃত্তিমুখী ও কারিগরি শিক্ষা-দুই-ই গ্রহণ করতে পারে। দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েরা বেশিরভাগ জ্ঞান স্পর্শ ও শ্রবণের মাধ্যমে অর্জন করে। তাই এই দুটি মাধ্যমকে আরও বেশি সংগঠিত ও পরিকল্পিত করতে হবে। এদের পাঠক্রমে চার ধরনের বিষয়কে স্থান দেওয়া হয়। যেমন-

[1] প্রধান বা মূল বিষয়: দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীরা ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে থাকে। এজন্য শুরুতেই তাদের ব্রেইল পাঠ এবং ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখা শেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।

[2] সাধারণ বিষয়: সাধারণ বিষয়, যেমন-সাহিত্য ও ভাষা, বিজ্ঞান, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল প্রভৃতি ছাড়াও দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য স্বাস্থ্যবিজ্ঞান চর্চার ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি তাদের শারীরিক গঠনের যথাযথ বিকাশ ঘটানোর জন্য শারীরশিক্ষার পাঠদানের ব্যবস্থা থাকে।

[3] সহপাঠক্রমিক বিষয়: দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে  সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই গানবাজনা, চারুশিল্প, হস্তশিল্প প্রভৃতি বিষয়ে উৎসাহদানের ব্যবস্থা থাকে।

[4] অতিরিক্ত বিষয়: দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের  মতো দক্ষ করার জন্য ব্রেইল, অ্যাবাকাস (গণনার উপকরণ), প্রাত্যহিক জীবনযাপনের শিক্ষা, ইন্দ্রিয়মূলক প্রশিক্ষণ প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়।  

ছেলেমেয়েদের শিক্ষার প্রধান বিষয় হিসেবে ব্রেইল লেখা এবং পড়ার ওপর বিশেষ নজর দেওয়া হয়।

৪.. ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার সমস্যাগুলি লেখো।

উত্তর: : ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার সমস্যা

[1] ইন্দ্রিয়জনিত সমস্যা: ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের মতো লিখতে, পড়তে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে না। ফলে তাদের সামগ্রিক ধারণা গঠনের ক্ষেত্রে কিছু না কিছু ত্রুটি থেকেই যায়। এই ত্রুটির মূল কারণ হল দৃষ্টিশক্তির অভাব।

[2] শিক্ষাজনিত সমস্যা: ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের মতো  নির্দিষ্ট বয়সে বিদ্যালয়ে ভরতি হয় না। বেশি বয়সে বিদ্যালয়ে আসার ফলে তারা এমনিতেই একই বয়সি স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় পিছিয়ে থাকে। এর ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতা দেখা দেয়, যা তাদের শিক্ষাগ্রহণে বাধার সৃষ্টি করে।

[3] সামগ্রিক অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে সমস্যা: চোখ হল মানুষের  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইন্দ্রিয়। এটিকে জ্ঞানের সবচেয়ে মূল্যবান প্রবেশদ্বার বলা হয়। তাই ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুরা কোনো বিষয়ে সামগ্রিক অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়।

[4] নিরাপত্তামূলক সমস্যা: ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা  তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়। আবেগজনিত কারণে অনেক সময় তারা ঠিকমতো নিজেদের চারপাশের পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। অন্যের করুণা, বিদ্রুপ, তাচ্ছিল্য প্রভৃতি তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতাবোধের জন্ম দেয়, যেটি তাদের ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশে বাধার সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে।

9. ভারতের ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করো।

 ভারতের ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করো।

উত্তর: : ভারতের ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের বর্তমান অবস্থা

আমাদের দেশে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সূত্রপাত করেন সেবাধর্মে ব্রতী

মিশনারিরা। তাঁরা সর্বপ্রথম 1883 খ্রিস্টাব্দে অমৃতসর শহরে দৃষ্টিহীনদের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন।

[1] দেরাদুনের ব্লাইন্ড স্কুল: 1897 খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে  দেরাদুনের রায়পুরে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আমাদের দেশের দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের জন্য প্রতিষ্ঠিত সবচেয়ে বড়ো বিদ্যালয়। বর্তমানে এটি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। এই বিদ্যালয়টি ছাড়াও দক্ষিণ ভারতে একই সময়ে আরও দু-একটি ব্লাইন্ড স্কুল গড়ে ওঠে।

[2] পশ্চিমবঙ্গের ব্লাইন্ড স্কুল: পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার বেহালায় 1899 খ্রিস্টাব্দে ব্লাইন্ড স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।

[3] দাদার-এর ব্লাইন্ড স্কুল: অ্যানা মিলার্ডের প্রচেষ্টায় 1907 খ্রিস্টাব্দে  দাদার-এর ব্লাইন্ড স্কুলটি স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে এগুলিতে সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়।

[4] স্বাধীনতার আগের ব্লাইন্ড স্কুলের সংখ্যা: 1883 খ্রিস্টাব্দ থেকে শুরু  করে 1947 খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত ভারতে 34টি ব্লাইন্ড স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।

[5] স্বাধীনতার পরে প্রতিষ্ঠিত ব্লাইন্ড স্কুল: স্বাধীনতার ঠিক পরে 1960 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে আরও 26টি ব্লাইন্ড স্কুল গড়ে তোলা হয়। সব মিলিয়ে 1960 খ্রিস্টাব্দে ভারতে ব্লাইন্ড স্কুলের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় 60-এ। 2004 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে ব্লাইন্ড স্কুল এবং ওই ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় 135 থেকে 140-এর মধ্যে।

[6] ভারতে দৃষ্টিহীনদের পড়াশোনার সুযোগ: ভারতে দৃষ্টিহীন মানুষের  সংখ্যা চল্লিশ লক্ষের বেশি। এদের মধ্যে বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী বয়সের ছেলেমেয়ে কমপক্ষে চার লক্ষ। বর্তমানে দেশে যে ক-টি ব্লাইন্ড স্কুল আছে, তাতে মোট পাঁচ হাজার ছেলেমেয়ের পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।

[7] ভারতে দৃষ্টিহীনদের জন্য পাঠক্রম: যে বিদ্যালয়গুলি রয়েছে তার  বেশিরভাগের পাঠক্রম প্রাথমিক স্তরেই শেষ। তারপর কিছু বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে সংগীতশিক্ষার ব্যবস্থাও। কিন্তু উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা সব বিদ্যালয়ে নেই। 

[৪] পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা: পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য কিছু ব্যতিক্রম লক্ষ করা  যায়। দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়গুলির অধিকাংশই স্বেচ্ছাব্রতী প্রতিষ্ঠানের অন্তর্গত। রাজ্য সরকার এক্ষেত্রে কিছু আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে। তবে, এই সাহায্য পরিচালন- ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশ। এখানে শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থাও ঠিকমতো নেই। বছরে মাত্র 50 জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। আমাদের রাজ্যে নরেন্দ্রপুরে শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। নরেন্দ্রপুরে ব্রেইল প্রেসও রয়েছে। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মফস্সল শহরেও দৃষ্টিহীনদের জন্য কয়েকটি বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে এবং সেখানে ব্রেইলের কাজও হচ্ছে।

10. .ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার জন্য ভারত সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা সংক্ষেপে লেখো।

 উত্তর: : ব্যাহত দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষার জন্য ভারত সরকারের পদক্ষেপ

 প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য হলেও আমাদের দেশে সরকারের পক্ষ থেকে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের মধ্যে শিক্ষাপ্রসারের উদ্দেশ্যে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যেমন-

[1] বৃত্তির ব্যবস্থা: দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করেছে।

[2] সরকারি অনুদান: দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি যে অর্থ ব্যয় করবে তার 75% অর্থ সরকারি অনুদান হিসেবে মঞ্জুর করার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।

[3] গ্রন্থাগার স্থাপন: দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ এবং ব্রেইল সংরক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যোগে জাতীয় গ্রন্থাগার স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন দৃষ্টিহীন বিদ্যালয়ে ব্রেইল সরবরাহের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

[4] ‘ভারতী ব্রেইল’: আমাদের দেশের দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ভাষায় ‘ভারতী ব্রেইল’ রচনা করার ব্যবস্থাও করেছে। এর জন্য বিশেষ গবেষণা সংস্থার সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

[5] শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য  বর্তমানে ভারতে তিনটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। সেখান থেকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে ব্লাইন্ড স্কুলে শিক্ষাদানের কাজ করা যায়। ওই তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে একটি দিল্লিতে, একটি মুম্বাইতে এবং আর-একটি পশ্চিমবঙ্গের নরেন্দ্রপুরে অবস্থিত।

[6] কর্মে নিয়োগের ব্যবস্থা: দৃষ্টিহীন মানুষদের মধ্যে যারা বিশেষ  শিক্ষণপ্রাপ্ত, তাদের শারীরিক প্রতিবন্ধী নিয়োগ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিভিন্ন কাজে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর জন্য Employment Bureau তৈরি করা হয়েছে। চাকরিতে 2% প্রতিবন্ধীকে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

[7] সাধারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা: এ ছাড়া সমন্বয়িত শিক্ষার মাধ্যমে  দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েরা যাতে সাধারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে, তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যদিও এতে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

[৪] প্রতিবন্ধী দিবস পালন: আমাদের দেশে প্রতি বছর 15 মার্চ দিনটি প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

11..প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সমস্যাগুলি কী কী?

উত্তর::প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার সমস্যা

প্রতিবন্ধী শিশুরা স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় সবসময়ই পিছিয়ে থাকে। শিক্ষার ক্ষেত্রে সবার সমান সুযোগ থাকলেও নানান প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা সঠিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ করতে পারে না। শিক্ষার ক্ষেত্রে এই ধরনের কয়েকটি সমস্যা নীচে উল্লেখ করা হল-

[1] অর্থের অভাব: প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয়, সেই পরিমাণ অর্থ সরকারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে এই ধরনের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ শিক্ষা পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না।

[2] শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব: প্রতিবন্ধী শিশুদের বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পড়ানোর জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সহৃদয় শিক্ষক-শিক্ষিকার বড়োই অভাব।

[3] উপযুক্ত উপকরণের অভাব: প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার জন্য যেসব শিক্ষা-সহায়ক উপকরণের প্রয়োজন হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যায় না।

[4] অভিভাবকদের উদাসীনতা: বেশিরভাগ অভিভাবক প্রতিবন্ধী শিশুদের পড়াশোনার ব্যাপারে উদাসীন থাকেন।

[5] হীনম্মন্যতা: প্রতিবন্ধী শিশুরা যেহেতু স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় সবদিক থেকে পিছিয়ে থাকে, তাই তারা হীনম্মন্যতায় ভোগে। ফলে তাদের শিক্ষার কাজটিও ব্যাহত হয়।

[6] বিদ্যালয়ের অভাব: প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য যে ধরনের বিদ্যালয় প্রয়োজন তার সংখ্যা খুবই কম। এটিও প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করে। কারণ সাধারণ বিদ্যালয়গুলিতে তারা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে না।

[7] চিকিৎসকের অভাব: প্রতিবন্ধীদের জন্য মাঝে মাঝে চিকিৎসকের দ্বারা তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন হয়। বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো চিকিৎসকের সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

[৪] অভিভাবকের সচেতনতার অভাব: সাধারণ শিশুদের মতো প্রতিবন্ধী শিশুদের সারাদিনের অনেকটা সময় কাটে বাড়ি ও পরিবারের মধ্যে। প্রতিবন্ধী শিশুদের সর্বদাই দেখাশোনার প্রয়োজন। অভিভাবকদের সচেতনতা এবং উপযুক্ত জ্ঞানের অভাবে এইসব শিশুদের প্রয়োজনমতো দেখাশোনা সম্ভব হয় না, যার ফলে সমস্যা দেখা যায়।

12. .প্রতিবন্ধী কাদের বলা হয়? প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রেণিবিন্যাস করো। 

উত্তর: : প্রতিবন্ধী

যেসব ব্যক্তি দৈহিক, ইন্দ্রিয়গত, মানসিক ও শিখনগত ত্রুটির কারণে নির্দিষ্ট মাত্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপনে অক্ষম, তাদের প্রতিবন্ধী বলে।

প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রেণিবিন্যাস

প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রধানত 6 ভাগে ভাগ করা যায়-

[1] শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু: চলনে অক্ষম শিশুকে দৈহিক প্রতিবন্ধী বলে।  পেশি এবং অস্থিসন্ধির অসুবিধার কারণে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক চলন ব্যাহত হয়।

[2] দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু: যে-সমস্ত শিশুর স্বাভাবিক অবস্থায় বা  লেন্স ব্যবহারের পরেও দৃষ্টি তীক্ষ্ণতা

20/200বা তারও কম অথবা শিশুর দৃষ্টিশক্তি 20/200 -এর বেশি কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা 20 ইঞ্চির বেশি নয়, তাদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু বলে।

[3] শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু: যখন কোনো শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা এতটাই খারাপ হয় যে, শ্রবণ যন্ত্রের ব্যবহার ছাড়া সে অন্যের কথা শুনতে পায় না, তখন তাকে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশু বলে।

[4] মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু: American Association on Mental Deficiency মানসিক প্রতিবন্ধকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছে যে, বিকাশকালীন সময়ে (18 বছরের মধ্যে) প্রকাশ মান, গড় অপেক্ষা অনেক নিম্নমানের বৌদ্ধিক কার্যাবলি এবং অভিযোজনমূলক আচরণের ঘাটতিকেই মানসিক প্রতিবন্ধকতা বলে।

[5] শিখনে অক্ষম শিশু: মৌখিক বা লিখিত ভাষা ব্যবহারে, অর্থ বোঝার  ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়ে শোনা, পাঠ করা, বানান করা, গাণিতিক সমস্যার সমাধান ইত্যাদি ক্ষেত্রে ত্রুটি, যা শিখনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাকে শিখন প্রতিবন্ধকতা বলে।

[6] প্রক্ষোভজনিত সমস্যার কারণে প্রতিবন্ধী শিশু: প্রক্ষোভজনিত সমস্যার  কারণে যেসব শিশুর আচরণে সমস্যার সৃষ্টি হয়, তারাও প্রতিবন্ধী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত।

13..ব্রেইল পদ্ধতির উপর সংক্ষিপ্ত টাকা লেখো। অথবা, ব্রেইল পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: : ব্রেইল পদ্ধতি

বর্তমানে সারা বিশ্বে দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য ব্রেইল পদ্ধতি চালু রয়েছে। এটি এক বিশেষ প্রকার স্পর্শ পদ্ধতি। ফরাসি দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি লুই ব্রেইল 1829 খ্রিস্টাব্দে এই বিশেষ পদ্ধতির প্রচলন করেন। পদ্ধতিটি পরবর্তীকালে আরও উন্নত করা হয়। 1950 খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘের শিক্ষামূলক বিজ্ঞানভিত্তিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (UNESCO) বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় ব্রেইল পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। বর্তমানে বাংলা ভাষায় উন্নতমানের ব্রেইল লেখা হয়। ব্রেইল ব্যবস্থায় পুরু কার্ডবোর্ড বা কাগজের ওপর যে শক্ত জিনিস দিয়ে উঁচু উঁচু ডট বা বিন্দু দেওয়া হয়, তাকে বলা হয় ‘স্টাইলাস’। উঁচু উঁচু 6টি বিন্দুকে বিভিন্নভাবে সাজিয়ে বাঁ-দিক থেকে ডানদিকে ব্রেইল লেখা হয়। ব্রেইলকে 

হাতের স্পর্শের মাধ্যমে পড়তে হয়। বৈজ্ঞানিক সংকেত, গণিত, সংগীতের স্বরলিপি প্রভৃতি ব্রেইলের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। এখানে একটি ব্রেইলের সংকেত দেখানো হল-  হাতের স্পর্শের মাধ্যমে পড়তে হয়। বৈজ্ঞানিক সংকেত, গণিত, সংগীতের স্বরলিপি প্রভৃতি ব্রেইলের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। এখানে একটি ব্রেইলের সংকেত দেখানো হল-

ব্রেইলের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা থাকে। ব্রেইল খুব ভারী হয়। তা ছাড়া ব্রেইলের ক্ষেত্রে বইয়ের তুলনায় অনেক বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। ব্রেইলে দক্ষতা অর্জন করতে সময় বেশি লাগে। যে-সমস্ত ছাত্রছাত্রী ব্রেইল পাঠে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে, তারা সর্বাধিক 60টি শব্দ প্রতি মিনিটে পড়তে পারে। ব্রেইল পাঠে দক্ষতা অর্জন করার পর ছাত্রছাত্রীদের ব্রেইল লেখার শিক্ষাদান করা হয়। স্টাইলাসের সাহায্যে ছাত্রছাত্রীরা ব্রেইল লেখে। বর্তমানে সহজ উপায়ে দ্রুততার সঙ্গে ব্রেইল লেখার জন্য টাইপ মেশিন ব্যবহৃত হয়। এই মেশিনে 6টি বোতাম থাকে। ওই বোতামগুলি 6টি বিন্দুকে নির্দেশ করে। সুদক্ষ ব্রেইল লেখকরা প্রতি মিনিটে প্রায় 60টি শব্দ টাইপ করতে পারে। ব্রেইল হাতেও লেখা যায়। বিশেষ ধরনের স্লেট ও শক্ত স্টাইলাস দিয়ে ব্রেইল লিখতে হয়। ইদানীং ছোটো আকারের ব্রেইল স্লেট ব্যবহার করা হয়। এই ব্রেইল স্লেট পকেটেও রাখা যায়। বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যেও ব্রেইল লেখার ব্যবস্থা হয়েছে। যেহেতু দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের ব্রেইলের মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হয়, তাই তাদের শিক্ষণ পদ্ধতি মূলত ব্রেইল ব্যবহারের কৌশলের ওপর নির্ভরশীল।

14. মূক ও বধির শিশু কাদের বলে? সাধারণত কী কারণে এরা মুক ও বধির হয়?

উত্তর: মুক ও বধির শিশু

[1] যেসব শিশু কথা বলতে পারে না, তাদের মুক বা বোবা (dumb) বলে এবং যেসব শিশু শুনতে পায় না, তাদের বধির বা কালা (deaf) বলে।

[2] একটি শিশু যে স্বল্প শ্রবণশক্তি নিয়ে অথবা একেবারে শ্রবণশক্তিহীন অবস্থায় জন্মায় কিংবা যে শিশুর শ্রবণশক্তি তার ভাষা ও বাচনিক ভঙ্গি বিকাশের আগেই নষ্ট হয়ে গেছে, তাকেই মূক ও বধির বলা হয়।

মুকত্ব ও বধিরতার কারণ

মূক ও বধির শিশুরা মূলত শ্রবণজনিত কারণে এবং কথা বলতে না পারার জন্য সাধারণ ছেলেমেয়েদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ে। তাদের এই শারীরিক ত্রুটির পিছনে নানা কারণ থাকে।

মৃকত্বের কারণ

[1] স্বরযন্ত্রের ত্রুটির কারণে অনেকের কথার মধ্যে আড়ষ্টতা বা অস্পষ্টতা দেখা দেয়।

[2] স্বরযন্ত্রের ত্রুটির মাত্রা খুব বেশি হলে ছেলেমেয়েরা একেবারেই কথা বলতে পারে না। এইজাতীয় ছেলেমেয়েদের সম্পূর্ণ মূক বলে।

[3] স্বরযন্ত্র ত্রুটিহীন হওয়া সত্ত্বেও শ্রবণশক্তির ত্রুটির কারণে বহু ছেলেমেয়ে মূক হয়।

বধিরতার কারণ 

[1] শ্রবণ ইন্দ্রিয় তথা কানের কোনো অংশে ত্রুটি দেখা দিলে শ্রবণক্রিয়া ব্যাহত হয়।

[2] শ্রবণজনিত ত্রুটি থেকেই ছেলেমেয়েরা বধির বা আংশিক বধির হয়।

[3] শ্রবণজনিত ত্রুটি অনেক সময় জন্মগত হয়। 

[4] স্বাভাবিক শিশু বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণে বা দুর্ঘটনার ফলে শ্রবণক্ষমতা হারায়।

[5] শ্রবণজনিত ত্রুটির ফলে ছেলেমেয়েরা একদিকে যেমন শুনতে পায় না, অন্যদিকে কথা বলতে না শেখায় বোবায় পরিণত হয়। বোবা ছেলেমেয়েদের ভাষাগত বিকাশও ঘটে না।

15. কোনো শিশু বধির কি না তা নির্ণয় করার জন্য কী কী যন্ত্র ব্যবহার করা হয়? বিভিন্ন প্রকার শ্রবণজনিত ত্রুটিসম্পন্ন শিশুর সংজ্ঞা দাও।

 উত্তর: শ্রবণজনিত ত্রুটির পরিমাপ

কোনো শিশু বধির কি না তা নির্ণয় করার জন্য বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। যেমন-সাউন্ড লেবেল মিটার, অক্টেভ ব্যান্ড, ফ্রিকোয়েন্সি অ্যানালাইজার, অডিয়োমিটার ইত্যাদি।

বিভিন্ন প্রকার শ্রবণজনিত ত্রুটিসম্পন্ন শিশুর সংজ্ঞা

[1] কোনো ব্যক্তি যদি 25 ডেসিবেল তীব্রতাসম্পন্ন শব্দ শুনতে পায়, তাহলে তাকে স্বাভাবিক শ্রবণযুক্ত ব্যক্তি বলে।

[2] আবার কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি শ্রবণের জন্য 25 ডেসিবেলের অধিক তীব্রতাসম্পন্ন শব্দের প্রয়োজন হয়, তাহলে সেই ব্যক্তিকে শ্রবণের দিক থেকে ত্রুটিসম্পন্ন বলা হয়।

[3] যেসব শিশুদের শ্রবণের জন্য 26 ডেসিবেল থেকে ৪০ ডেসিবেল তীব্রতাসম্পন্ন শব্দের প্রয়োজন হয়, তাদের ব্যাহত শ্রুতিসম্পন্ন শিশু বলা হয়।

[4] যাদের শ্রবণের ক্ষেত্রে 26 ডেসিবেল থেকে 40 ডেসিবেল তীব্রতাসম্পন্ন শব্দের প্রয়োজন হয় তাদের স্বল্প ব্যাহত শ্রুতিসম্পন্ন বলে।

[5] যাদের ক্ষেত্রে শ্রবণের জন্য 41 ডেসিবেল থেকে ৪০ ডেসিবেল তীব্রতাসম্পন্ন শব্দের প্রয়োজন হয়, তাদের গুরুতর ব্যাহত শ্রুতিসম্পন্ন বলে।

[6] যাদের শ্রুতিশক্তি ৪০ ডেসিবেলের ওপরে তাদের পূর্ণবধির বলে।

16. মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্য লেখো।

উত্তর: মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্য

মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষাদানের পিছনে যে উদ্দেশ্যগুলি কাজ করে সে সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হল-

[1] বাচনিক ক্ষমতার বিকাশ: মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য হল তাদের বাচনিক ক্ষমতার বিকাশে সহায়তা করা। অর্থাৎ, তাদের মধ্যে কথা বলার ক্ষমতার বিকাশ ঘটানো এবং যথাযথভাবে ভাষাশিক্ষা দেওয়া। বিশেষ করে অন্যের ভাষা বুঝতে পারা এবং নিজে বলতে পারার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

[2] সামাজিক বিকাশ: মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্য হল তাদের সামাজিক বিকাশে সহায়তা করা। সামাজিক বিকাশের জন্য প্রয়োজন সমাজের অন্য সদস্যদের ভাষা বোঝা এবং তাদের নিজের ভাষা বোঝানো।

[3] শ্রবণমূলক প্রশিক্ষণ দান: মূক ও বধির ছেলেমেয়েরা যেহেতু শুনতেপায় না, তাই তাদের বিভিন্ন ধরনের বিকাশের জন্য প্রয়োজন শ্রবণমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। এদের শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা উপযুক্ত শ্রবণমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া।

[4] অভিভাবক-অভিভাবিকাদের প্রশিক্ষণ দান: এই প্রকার শিক্ষার আর- একটি উদ্দেশ্য হল মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের অভিভাবক-অভিভাবিকাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে তাঁরা বাড়িতে নিজেদের মুক ও বধির সন্তানদের যথাযথভাবে সাহায্য করতে পারবেন।

[5] আত্মবিশ্বাস গঠন: মূক ও বধির ছেলেমেয়েরা নিজেদের শ্রবণজনিত ত্রুটির কারণে সর্বদা হীনম্মন্যতায় ভোগে। তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সাহায্য করা এইপ্রকার শিক্ষার একটি বিশেষ উদ্দেশ্য। আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠলে তারা সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

[6] উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ: মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্য হল শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন- শ্রেণিকক্ষে সামনের সারিতে তাদের জন্য বসার ব্যবস্থা করা, পড়ানোর সময়ে স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা যাতে ছেলেমেয়েরা তা বুঝতে পারে, সর্বোপরি শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র ও অন্যান্য প্রযুক্তির সাহায্যে তাদের শুনতে সাহায্য করা ইত্যাদি।

[7] বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দান: মূক ও বধির ছেলেমেয়েরা যাতে বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী জীবনে স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জন করতে পারে, সে বিষয়ে সাহায্য করাও এইপ্রকার শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

[৪] সহপাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা: মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার আর-একটি উদ্দেশ্য হল তাদের জন্য উপযুক্ত সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির ব্যবস্থা করা। খেলাধুলা, জিমনাস্টিকস্, হস্তশিল্প, ছবি আঁকা প্রভৃতির ব্যবস্থা করলে তারা নিজেদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ পায়। তাদের মধ্যে থেকে হীনম্মন্যতা দূর হয়।

17. বধির শিশুদের শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করো।

উত্তর: বধির শিশুদের শ্রেণিবিভাগ

বধির শিশুদের বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়। যেমন- [1] মাত্রানুযায়ী শ্রেণিবিভাগ, [2] বয়স অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ, [3] ভাষাগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ, [4] কর্ণের ত্রুটি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ এবং [5] কেন্দ্রীয় বধিরতা অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ। এগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-

[1] মাত্রানুযায়ী বধিরতা: শ্রবণজনিত ত্রুটির মাত্রানুযায়ী শিশুদের প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। এদের একটি হল বধির (deaf) এবং অন্যটি হল আংশিক বধির (hard of hearing)। বধির বলতে সেইসব শিশুদের বোঝায় যারা সম্পূর্ণরূপে শ্রবণক্ষমতা হারিয়েছে। এইসব শিশুদের শ্রবণমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এরা শ্রবণের অনুভূতি গ্রহণ করতে পারে না, অর্থাৎ শুনতে পায় না। অন্যদিকে, আংশিক বধির বলতে সেইসব শিশুদের বোঝায় যাদের মধ্যে শ্রবণের ক্ষমতা অল্প হলেও বর্তমান। এসব শিশুদের শ্রবণমূলক প্রশিক্ষণ দিলে বা শ্রবণযন্ত্র ব্যবহার করলে এই ধরনের শিশুরা আংশিক হলেও শুনতে পায়।

ভারত সরকারের জনকল্যাণ মন্ত্রকের তথ্যের ভিত্তিতে মাত্রানুযায়ী বধিরতাকে ছয়ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলি হল-

[2] বয়স অনুযায়ী বধিরতা: বয়স অনুযায়ী বধিরতাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল—

জন্মগতভাবে যারা বধির, তারা জন্মের পর কোনোদিনই কিছু শুনতে পায় না। অন্যদিকে, সংগঠিত বধিরতার ক্ষেত্রে শিশু জন্মের পর ভালোভাবে শুনতে পেলেও পরবর্তীকালে কোনো রোগব্যাধির জন্য বধিরতাপ্রাপ্ত হয়।

[3] ভাষাগত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বধিরতা: এই জাতীয় বধিরতাকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। ভাগগুলি হল-

শিশুর জন্মগ্রহণের পর তার ভাষাগত বিকাশের আগেই শ্রবণজনিত ত্রুটির কারণে যে বধিরতা হয়, তাকে ভাষাগত বিকাশের পূর্ববর্তী বধিরতা (pre- language deafness) বলে। অন্যদিকে, শিশুর জন্মের পর তার ভাষাগত বিকাশ কিছুটা হওয়ার পর যদি কোনো বিশেষ কারণে শ্রবণজনিত ত্রুটি ঘটে, তাহলে ভাষাগত বিকাশের পরবর্তী বধিরতা (post-language deafness) দেখা যায়।

[4] কর্ণের ত্রুটি অনুযায়ী বধিরতা: শোনার ক্ষেত্রে তিন ধরনের ত্রুটি লক্ষ করা যায়, যথা-ⅰ. বহিঃকর্ণ ও মধ্যকর্ণের গঠনগত কোনো সমস্যা থেকে শ্রবণ সঞ্চারণের বধিরতা (conductive loss), ii. অন্তঃকর্ণের ককলিয়া এবং অর্ধবৃত্তাকার নালী থেকে বহির্গত স্নায়ুজনিত বধিরতা (sensory neural loss) এবং iii. প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় প্রকার ত্রুটি মিলিয়ে মিশ্র বধিরতা (mixed loss)।

[5] কেন্দ্রীয় বধিরতা: এইপ্রকার বধিরতা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের প্রধান অংশ মস্তিষ্কের শ্রবণকেন্দ্রের ত্রুটির ফলে ঘটে থাকে।

18. মূক ও বধির শিশুদের পাঠক্রম সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: মূক ও বধির শিশুদের পাঠক্রম ও শিক্ষণ পদ্ধতি

মানবসমাজে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য প্রয়োজন হল ভাষা। মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে ভাষামূলক প্রতিবন্ধকতাই যোগাযোগের সবচেয়ে বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই তাদের পাঠক্রমে ও শিক্ষণ পদ্ধতিতে ভাষাশিক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়।

পাঠক্রম

নির্দিষ্ট শিক্ষামূলক পরিবেশে বিশেষ শিক্ষাদান কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকশিক্ষিকার দ্বারা মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তাদের পাঠক্রমে যে বিষয়গুলি রাখা হয়, তা হল- [1] বাচনিক ভঙ্গিমার বিকাশের জন্য ওষ্ঠপঠন বা বাক্-পঠন (lip-reading), [2] শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের যথাযথ ব্যবহার শেখা, [3] গণিত, [4] সমাজবিজ্ঞান, [5] নানা প্রকারের হস্তশিল্প বা হাতের কাজ।

মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের জন্য নানা প্রকারের সৃজনশীল কাজ বিশেষভাবে উপযোগী। এ ছাড়া পরিবেশ পরিচিতি, বাগান করা প্রভৃতিও পাঠক্রমে রাখা হয়। বর্তমানে কম্পিউটার প্রশিক্ষণও মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। বিদেশে এ বিষয়ে প্রচুর গবেষণাও হয়েছে। 

বর্তমানে আমাদের দেশের মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া আলপনা, রঙের সাহায্যে ছবি আঁকা, বই বাঁধানো, পোশাক- পরিচ্ছদ তৈরি, সূচিশিল্প, বয়নশিল্প প্রভৃতি বিষয়েও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

19. মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার পদ্ধতি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: শিক্ষার পদ্ধতি

মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের মধ্যে যারা আংশিকভাবে বধির তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে শ্রুতি সহায়ক যন্ত্র ব্যবহার করলে এবং তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিলে তারা স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের মতো কথাবার্তা বলতে এবং শুনতে পারে। কিন্তু যারা সম্পূর্ণরূপে মূক ও বধির তাদের জন্য নিম্নলিখিত শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়-

[1] ওষ্ঠপঠন: বক্তার কথা বলার সময় তার ঠোঁটের নড়াচড়া দেখে কথা বা ভাব বুঝতে পারাকে ওষ্ঠপঠন বা বাক্-পঠন বলা হয়। মূক ও বধির ছেলেমেয়েরা বক্তার মুখের সামগ্রিক পরিবর্তন, নড়াচড়া ইত্যাদি লক্ষ করে বক্তার কথা বোঝার চেষ্টা করে থাকে। পরে একইভাবে ঠোঁটের সঞ্চালন দেখে তারা ভাষা শিখে থাকে। এই পদ্ধতির আর-এক নাম মৌখিক পদ্ধতি। এর প্রবর্তক হলেন জুয়ান পাবলো বনে।

[2] আঙুলের দ্বারা বানান শেখা: যেসব ছেলেমেয়ে সম্পূর্ণরূপে বধির তারা মনের ভাব প্রকাশের জন্য আঙুল সঞ্চালনের সাহায্য নেয়। তাদের এই বিষয়ে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আঙুল সঞ্চালনের মাধ্যমে এই ছেলেমেয়েদের অক্ষর, শব্দ, বাক্য ও বানান লেখা সহজে শেখানো যায়। এই সঞ্চালন পদ্ধতির প্রবর্তক হলেন পেরিয়ার। ভারতে এই পদ্ধতি করপল্লবী (Kara Pallavi) নামে পরিচিত।

[3] কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে মূক ও বধির ছেলেমেয়েরা অভিজ্ঞ শিক্ষকের কথা বলার সময় তাদের মুখে হাত বুলিয়ে, গলা স্পর্শ করে শব্দ উচ্চারণ করতে শেখে। কম্পন ও স্পর্শ পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন কেটি অ্যালকর্ন ও সোফিয়া অ্যালকর্ন।

[4] শ্রবণ সহায়ক পদ্ধতি: এই পদ্ধতিটি মূলত আংশিকভাবে বধির ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। উচ্চশক্তিসম্পন্ন শ্রবণ সহায়ক যন্ত্রের সাহায্যে আংশিক বধিরদের বধিরতা অনেকটা দূর করা যায়।

[5] দর্শনভিত্তিক পদ্ধতি: মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের দর্শনভিত্তিক পদ্ধতিতেও মনের ভাব প্রকাশের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এতে কয়েকটি প্রতীক ব্যবহার করা হয়। শিক্ষক মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের এইসব প্রতীকের ব্যবহার শিখিয়ে দেন। তারা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শিক্ষকের মতো মুখভঙ্গি করে শব্দ উচ্চারণ করার চেষ্টা করে এবং ধীরে ধীরে তা আয়ত্ত করে।

উপরিউক্ত পদ্ধতিগুলির দ্বারা মূক ও বধিরদের শিক্ষাদান করতে গেলে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধৈর্যশীল শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ধরনের ছেলেমেয়েদের ভাষা বিকাশ ও পাঠদানের জন্য গবেষণা চলছে।

20:ভারতে মূক ও বধিরদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থা আলোচনা করো।

উত্তর: ডারতে মূক ও বধিরদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থা

পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতে মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষা নিয়ে যতটা কাজ হয়েছে, আমাদের দেশে সেই তুলনায় কাজ হয়েছে খুব কম।

[1] বেসরকারি উদ্যোগ: এদেশে প্রাথমিকভাবে মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদান শুরু হয় মূলত মানবতা ও দাতব্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনগুলি এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেয়। ধীরে ধীরে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও শিক্ষাপ্রসারের উদ্দেশ্যে প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

[2] সরকারি উদ্যোগ: পরবর্তীকালে সরকারিভাবেও সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়। ভারতে সর্বপ্রথম 1884 খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইয়ে (মুম্বই) মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় 1893 খ্রিস্টাব্দে প্রথম মূক ও বধিরদের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। পরবর্তীকালে কলকাতায় মূক ও বধিরদের জন্য আরও কয়েকটি বিদ্যালয় গড়ে উঠেছে।

[3] ভারতে মূক ও বধিরদের সংখ্যা: ভারতে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব এডুকেশন এবং কোঠারি কমিশন (1964-64) শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের সংখ্যা নির্ণয়ে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই দুই সংস্থার পক্ষ থেকে যেসব তথ্য সংগৃহীত হয়, তার ভিত্তিতে অনুমান করা হয় যে, ভারতে 5 থেকে 14 বছর বয়সের প্রায় 1 কোটি 25 লক্ষ ছেলেমেয়ে কমবেশি বধিরতাজনিত ত্রুটিতে ভুগছে। 20 লক্ষেরও বেশি মানুষ মূক ও বধির। এইসব মানুষের মধ্যে ‘বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী’ ছেলেমেয়ের সংখ্যা প্রায় চার লক্ষ। কিন্তু আমাদের দেশে মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের জন্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র 270টি। পশ্চিমবঙ্গে মূক ও বধিরদের জন্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র 15টি।

[4] শিক্ষার সুযোগ ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ: পরিসংখ্যান থেকে বলা যায় যে, মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের মধ্যে মাত্র 1% শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। বর্তমানে প্রতিটি রাজ্যে এদের জন্য কমপক্ষে একটি করে সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। অন্যগুলি সাহায্যপ্রাপ্ত বেসরকারি বিদ্যালয়। ভারতে মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মাত্র ছয়টি শিক্ষক- শিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এইসব বিদ্যালয়ে এক বছরের জন্য শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা হয়। বছরে সত্তর জন শিক্ষক এখান থেকে প্রশিক্ষণ পেতে পারেন। আমেদাবাদ, দিল্লি, লখনউ, কলকাতা, হায়দ্রাবাদ ও চেন্নাইতে শিক্ষক-শিক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।

[5] কলকাতার মূক ও বধির বিদ্যালয়: আমাদের রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মূক ও বধির বিদ্যালয়টি হল Calcutta Deaf and Dumb School। এখানে চার থেকে বারো বছরের মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের ভরতি করা হয়। এখানে প্রথম চার বছরে যে চারটি শ্রেণি পড়ানো হয় তা হল প্রিপারেটরি-Ⅰ, প্রিপারেটরি-II, জুনিয়র-Ⅰ এবং জুনিয়র-II। এই পর্যায়গুলিতে কীভাবে কথা বলা যায়, তা শেখানো হয়। এরপর যে চারটি শ্রেণিতে পড়ানো হয় তা হল জুনিয়র-III,

দ। সিনিয়র-Ⅰ, সিনিয়র-II এবং সিনিয়র-III। এই বিদ্যালয়টি ডিরেক্টরেট অফ টেকনিকাল এডুকেশন-এর নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।

21. মূক ও বধিরদের শিক্ষার জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?

উত্তর: মুক ও বধিরদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাসমূহ

মুক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখনও আমাদের দেশে এই জাতীয় শিক্ষার সুযোগ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এই পরিস্থিতিতে মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সুব্যবস্থা করতে হলে যেসব কাজ অবিলম্বে করতে হবে, তা হল-

[1] পরিসংখ্যান গ্রহণ: সারা দেশে মূক ও বধির ছেলেমেয়ের সংখ্যা বর্তমানে ঠিক কত, তা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে।

[2] সঠিক সংখ্যক বিদ্যালয় স্থাপন: সমস্ত মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের জন্য উপযুক্ত সংখ্যক বিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।

[3] সরকারি আর্থিক সহায়তা: মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সমস্ত খরচ কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারকে বহন করতে হবে।

[4] বিশেষ শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণ: মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য উপযুক্ত শিক্ষকশিক্ষিকার ব্যবস্থা করার জন্য বিশেষ শিক্ষক- শিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করতেই হবে।

[5] সাধারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষার ব্যবস্থা: এই মূহূর্তে যদি যথেষ্ট সংখ্যক মুক ও বধির বিদ্যালয় স্থাপন সম্ভব না হয়, তা হলে সাধারণ বিদ্যালয়গুলিতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের দ্বারা মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

[6] ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি: মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে এবং অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে সহানুভূতির সঙ্গে তাদের পড়াতে হবে।

[7] আধুনিক উপকরণ ও প্রযুক্তি: শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক শিক্ষামূলক উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

22. উদাহরণ-সহ শ্রেণিকক্ষে সাধারণ আচরণগত সমস্যা কাকে বলে লেখো। এই প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের সাধারণ আচরণগত সমস্যার কারণগুলি উল্লেখ করো। 1+3

উত্তর: শ্রেণিকক্ষে সাধারণ আচরণগত সমস্যা

শ্রেণিকক্ষে অবস্থানকালীন কোনো শিক্ষার্থী যখন শ্রেণিকক্ষে সমর্থিত আচরণের

পরিবর্তে অবাঞ্ছিত আচরণ করে, তাকে শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা বলে। যেমন-শিক্ষকের আদেশ না মানা, সহপাঠীকে উৎপীড়ন করা ইত্যাদি।

শিক্ষার্থীদের সাধারণ আচরণগত সমস্যার কারণ

কোনো শিক্ষার্থী যখন তার লক্ষ্যপূরণের জন্য সমাজ-অবাঞ্ছিত পন্থা অবলম্বন করে, তখনই তার মধ্যে আচরণগত সমস্যা লক্ষ করা যায়। শিশুদের এই আচরণগত সমস্যার প্রধান কারণ হল-

[1] ব্যক্তিগত এবং সামাজিক চাহিদাপূরণের অভাব: বিভিন্ন লক্ষ্যপূরণের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক চাহিদার সৃষ্টি হয়। তাদের এইসব চাহিদার যথাযথ পরিতৃপ্তি না ঘটলে বিভিন্ন আচরণগত সমস্যা দেখা দেয় এবং তারা সমাজ-অবাঞ্ছিত পন্থা অবলম্বনে আগ্রহী হয়।

[2] অপরিণত ব্যক্তিত্ব: অনেক সময় বয়স অনুযায়ী শিশুর ব্যক্তিত্বের যথাযথ বিকাশ না ঘটায় তারা পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে না। তাই শিশুর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এই ক্ষোভ থেকেও শিশু আচরণগত সমস্যার শিকার হতে পারে।

[3] শিক্ষকের আচরণ: শ্রেণিকক্ষে কিছু কিছু আচরণগত সমস্যার কারণ শিক্ষক নিজেই। কোনো কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রতি বক্রোক্তি করেন এবং কারণে-অকারণে অপমানজনক এবং মর্যাদাহানিকর আচরণ করেন। শিক্ষার্থীরা সুযোগ পেলেই প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শ্রেণিকক্ষে সমস্যা সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকের শিক্ষণ পদ্ধতি এবং ব্যক্তিত্ব শিক্ষার্থীরা আদৌ পছন্দ করে না। সেক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে বিশৃঙ্খল আচরণ করে।

[4] শ্রেণিকক্ষের অবস্থা: শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যার অন্য একটি কারণ হল শ্রেণিকক্ষের অবস্থা। শ্রেণির ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে তাদের বসার স্থান সংকীর্ণ হয়, যা অস্বস্তির কারণ হয়।

[5] সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থা: যেসব সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অবাঞ্ছিত আচরণ দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হল দূরদর্শন, চলচ্চিত্র, কমিক্স, পত্রপত্রিকা ইত্যাদি। এগুলি অনেক সময় শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে।

 [6] গৃহ-পরিবারের অবস্থা: গৃহ-পরিবারের কিছু ঘটনা এবং বিষয় শিক্ষার্থীদের আচরণগত সমস্যার কারণ বলে বিবেচিত হয়। যেসব শিক্ষার্থীদের বাবা এবং মা ব্যক্তিগত কাজের জন্য দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীকে সঙ্গ দিতে পারেন না, তাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা দেখা যায়। এইসব শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবহেলিত মনে করে, যার প্রতিক্রিয়া শ্রেণিকক্ষের আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।

23. শ্রেণিকক্ষে সমস্যাগুলির তালিকা উল্লেখ করো।

উত্তর: শ্রেণিকক্ষে সমস্যাগুলির তালিকা

কোয়ারি (Quary) এবং তার সহকারীগণ আচরণগত সমস্যাগুলির বহু প্রচলিত একটি তালিকা প্রস্তুত করেছেন। বাবা-মা, শিক্ষক, জীবন ইতিহাস এবং নির্দিষ্ট প্রশ্নাবলির প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি থেকে কয়েকশো বিশৃঙ্খল আচরণসম্পন্ন শিশুদের তথ্যসংগ্রহ করে এবং পরিসংখ্যানগত কৌশল প্রয়োগ করে কোয়ারি ও তার সঙ্গীরা একটি তালিকা প্রস্তুত করেছেন। এই তালিকাটি আচরণগত সমস্যার শ্রেণিকরণ হিসেবে গৃহীত হয়েছে, যা নীচে উল্লেখ করা হল-

24. আক্রমণধর্মিতার কারণগুলি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: আক্রমণধর্মিতা : কারণ ও প্রতিকার

শিক্ষার্থীরা যখন কোনোরকম গুরুতর কারণ ছাড়াই অন্য সহপাঠীদের আক্রমণ করে, মারধর করে বা তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করে, তখন শিক্ষার্থীর আচরণটিকে আক্রমণধর্মিতা বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

আক্রমণধর্মিতার কারণ

আক্রমণধর্মিতার কারণগুলিকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়-

[1] ব্যক্তিগত কারণ: সাধারণত শিশুর কোনো ইচ্ছাপূরণ না হলে, তার মধ্যে হতাশা দেখা যায়। এই হতাশার প্রতিক্রিয়া বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম হল আক্রমণধর্মিতা। হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সে অন্যকে আক্রমণ করে, জিনিসপত্র ভাঙে, গুরুজনদের প্রতি অশালীন আচরণ করে ইত্যাদি।

এ ছাড়াও ব্যক্তিগত কারণ হিসেবে আরও কয়েকটি কথা উল্লেখ করা যায়, যেমন-ADHD (Attention Deficit Hyperactivity Disease), বাবা- মায়ের অবহেলা, অতিরিক্ত শাসন ইত্যাদি। মাদক বা নিষিদ্ধবস্তু গ্রহণের ফলেও অনেকে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। অনেকসময় মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণেও এমন হতে পারে।

[2] বিদ্যালয়ভিত্তিক কারণ

i. শিক্ষকের অবহেলা ও পক্ষপাতদুষ্টতা: শিক্ষকের অবহেলা এবং পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ, জাতপাত তুলে কথা বলা ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আক্রমণধর্মিতা প্রকাশ পেতে পারে।

ii .শিক্ষার্থীদের কাছে অধিক প্রত্যাশা: শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকের অত্যধিক এবং অবাস্তব প্রত্যাশাও আক্রমণধর্মিতার বিদ্যালয়ভিত্তিক কারণ।

iii. বাবা-মায়ের অবহেলা এবং শিক্ষকের পারিবারিক অশান্তি : শ্রেণিকক্ষে আক্রমণধর্মিতার কারণ বিশ্লেষণে অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে, বাবা-মায়ের অবহেলা এবং নিষ্ঠুর আচরণই হল এর উৎস। শিক্ষকগণও অনেক সময় তাদের পারিবারিক জীবনের অশান্তি ও হতাশা শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার্থীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করেন, যার ফলে শিক্ষার্থীরাও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।

25. আক্রমণধর্মিতা প্রতিকারের উপায়গুলি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: আক্রমণধর্মিতা প্রতিকারের উপায়

শিশুর আচরণে আক্রমণধর্মিতা লক্ষ করা গেলে দ্রুত তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য যা যা করণীয়, সেগুলি হল-

[1] কারণ নির্ণয়: শিশুর মধ্যে আক্রমণধর্মিতা দেখা দিলে প্রথমে তার কারণ নির্ণয় করা প্রয়োজন। এর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক বা পরামর্শদাতা শিক্ষার্থী এবং তার অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করবেন। প্রয়োজনবোধে হতাশা পরিমাপক অভীক্ষা ব্যবহার করা যেতে পারে। কেস স্টাডির (case study) সাহায্যেও আক্রমণধর্মিতার কারণ নির্ণয় করা যেতে পরে।

[2] চাহিদার তৃপ্তি: কারণ নির্ণয়ের পরে যে সমস্ত চাহিদা অতৃপ্তির জন্য হতাশা দেখা দিয়েছে তার প্রতিটি পরিতৃপ্তির জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করতে হবে। আন্তরিক স্নেহ ও সহানুভূতিমূলক আচরণের দ্বারা শিশুমন থেকে নিরাপত্তার অভাববোধ দূর করা প্রয়োজন।

[3] আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করা: যে ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলার জন্য শিশু এইজাতীয় আচরণ করে, সেক্ষেত্রে তার আত্মবিশ্বাস যাতে ফিরে আসে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন। আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করার জন্য যেসব পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে, তা হল-

i. খেলা চিকিৎসা: খেলার মধ্য দিয়ে আক্রমণধর্মিতায় আক্রান্ত শিক্ষার্থী খেলার বস্তু ছুড়ে বা ভেঙে ফেলে বা চাপ দিয়ে পুতুল ইত্যাদির আকার বিকৃত করে তার আক্রমণধর্মী আচরণ তৃপ্ত করার সুযোগ পায়।

ii . অন্যান্য কৌশল: খেলা চিকিৎসা শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগযোগ্য কৌশল না হওয়ায় সেখানে অভিনয়, বিতর্ক, আবৃত্তি, সংগীত প্রভৃতি সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এর প্রতিকার বা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

iii. পরামর্শদান: অনেক সময় পরামর্শদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। বিদ্যালয়ে শ্রেণির কাজ সমাপ্ত হবার পর শিক্ষক-পরামর্শদাতা আক্রমণধর্মী শিশুকে ব্যক্তিগতভাবে তার অসুবিধাগুলি বক্তব্যের আকারে

 প্রকাশের স্বাধীনতা দেন। এই বক্তব্য প্রকাশের মধ্য দিয়েই তার অবদমিত ইচ্ছাগুলির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এ ছাড়া অনেক সময় দলগতভাবে কাজ করার ফলেও শিক্ষার্থী আক্রমণধর্মী আচরণ থেকে মুক্ত হতে পারে। সবশেষে মনে রাখতে হবে, গঠনমূলক এবং সৃজনমূলক কাজের মধ্য দিয়ে আক্রমণধর্মিতার চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।

26. শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যামূলক আচরণ হিসেবে নেতিবাচক মনোভাব, অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমির লক্ষণগুলি কী? এ ধরনের আচরগুলির কারণ ও প্রতিকারের উপায় উল্লেখ করো।

উত্তর: শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যামূলক আচরণ হিসেবে নেতিবাচক মনোভাব, অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমির লক্ষণ

সমস্যামূলক শিশু শ্রেণিকক্ষে যে সমস্ত ব্যতিক্রমী আচরণ করে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নেতিবাচক মনোভাব, অবাধ্যতা ও একগুঁয়েমি এবং স্কুল পালানো। নীচে এ ধরনের আচরণের লক্ষণসমূহ উল্লেখ করা হল।

নেতিবাচক মনোভাবের লক্ষণ

নেতিবাচক মনোভাব, অবাধ্যতা, একগুঁয়েমি প্রভৃতিকে শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যামূলক আচরণের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। অভিভাবকদের কথা না শোনা, তাঁদের পরামর্শে কোনো গুরুত্ব আরোপ না করা, সর্বদা বিপরীত দিকে যাওয়ার মানসিকতাকে নেতিবাচক মনোভাব এবং অবাধ্যতা বলা হয়। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা ভীষণ জেদি হয়। তারা ভালোমন্দ বিচার করে না, নিজেরা যা মনোস্থির করে তা করবেই, কোনোরকম অনুরোধে এরা কর্ণপাত করে না।

নেতিবাচক মনোভাব এবং স্কুল পালানোর কারণ ও প্রতিকারসমূহ

শিক্ষার্থীর এই ধরনের আচরণের কারণগুলি না জানলে সেগুলি প্রতিকারের উপায় নির্ধারণ করাও সম্ভব নয়। এখানে উক্ত সমস্যামূলক আচরণগুলির কারণ ও প্রতিকার উভয়ই উল্লেখ করা হল।

নেতিবাচক মনোভাবের কারণ

এই ধরনের আচরণের প্রধান কারণগুলি হল-[1] অতি শাসন এবং নির্মম শাস্তি, [2] শিশুর কাজে সবসময় সমালোচনা, [3] বাড়িতে বাবা-মা বা অভিভাবকদের অবহেলা, স্নেহ-ভালোবাসার অভাব, বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অবহেলা, তাঁদের পক্ষপাতমূলক আচরণ ইত্যাদি, [4] একাকিত্ব।

নেতিবাচক মনোভাব প্রতিকারের উপায়

শিশুর অবাধ্যতা, একগুঁয়েমি ও নেতিবাচক মনোভাব দূর করার জন্য অভিভাবক ও শিক্ষকশিক্ষিকাদের নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন-[1] সন্তানকে সঙ্গ দেওয়া, সন্তানের সঙ্গে সময় কাটানো, [2] সামর্থ্য ও বয়স অনুযায়ী সন্তানের সাফল্য প্রত্যাশা করা, [3] প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রতি শিক্ষকের মনোযোগ প্রদান, তাদের বোঝানো, উৎসাহদান এবং পক্ষপাতমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকা, [4] বিদ্যালয়ের নির্দেশনা ও পরামর্শদান বিভাগের সাহায্য নেওয়া এবং প্রয়োজনমতো মনোচিকিৎসকের সাহায্য গ্রহণ করা প্রভৃতি।

27. শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যামূলক আচরণ হিসেবে স্কুল পালানোর লক্ষণগুলি কী? এই আচরণের কারণ ও প্রতিকারের উপায় লেখো।

উত্তর: শিক্ষাক্ষেত্রে সমস্যামূলক আচরণ হিসেবে স্কুল পালানোর লক্ষণ

প্রাক্-অনুমতি ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিদ্যালয় ত্যাগ করাকে স্কুল পালানো বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি সমস্যামূলক আচরণের পর্যায়ে না পড়লেও, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটিকে সমস্যামূলক শিক্ষার্থীর লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষক, বিদ্যালয়ের নিয়মনীতি ইত্যাদির সঙ্গে সংগতির অভাব ঘটলে এই ধরনের আচরণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায়, যা বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলায় সমস্যা সৃষ্টি করে।

স্কুল পালানোর কারণ

সাধারণত যেসব কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুল পালানোর প্রবণতা দেখা যায় তা নীচে উল্লেখ করা হল-

[1] পাঠদান পদ্ধতিগত ত্রুটি: অবৈজ্ঞানিক ও ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতি শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঠ্যবিষয়ের প্রতি অনিচ্ছার উদ্রেক করতে পারে এবং শ্রেণিকক্ষে সে উপস্থিত থাকতে চায় না।

[2] শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সামর্থ্যভিত্তিক শিক্ষাদানের অভাব: মেধাবী ও প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের কাছে গতানুগতিক পুথিগত শিক্ষা বিরক্তির কারণ হয় এবং তারা শ্রেণিকক্ষে থাকতে চায় না। অপরদিকে, অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের

কাছে শ্রেণিকক্ষের পঠনপাঠন দুরুহ বলে মনে হয় এবং যেতে চায়। সে ক্লাস থেকে পালিয়ে

[3] অমনস্তাত্ত্বিক শৃঙ্খলা এবং শিক্ষকের নির্মম আচরণ: বিদ্যালয়ের কঠোর শৃঙ্খলা, কোনো কোনো শিক্ষকের নির্মম আচরণ ও শাস্তিদানের ব্যবস্থা নিশুর মনে ভীতির সঞ্চার করে, যা তাকে বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে কোনো প্ররোচিত করে।

[4] অন্যান্য কারণ: স্কুল পালানোর উপযুক্ত কারণগুলি ছাড়াও আরও নানারকমের কারণ থাকতে পারে। যেমন-সহপাঠীদের উপহাস, শ্রেণির কাজ না করা, দল বা গ্যাং-এর সঙ্গে সিনেমা যাওয়া বা অবাঞ্ছিত কাজ করা ইত্যাদি।

স্কুল পালানোর প্রতিকারের উপায়

এই ধরনের আচরণের প্রতি প্রথম থেকেই দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় শিক্ষার্থী কেবলমাত্র পারদর্শিতার ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ে না, পরবর্তী সময়ে ব্যক্তি ও সমাজজীবনেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যার কারণ হয়।

[1] মনোবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাপদ্ধতি: এই ধরনের আচরণের প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন হল মনোবিজ্ঞানসম্মত শিক্ষাপদ্ধতির সাহায্যে পাঠ্য বিষয়কে শিক্ষার্থীর কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা।

[2] আনন্দদায়ক বিদ্যালয় পরিবেশ: বিদ্যালয় যাতে শিক্ষার্থীর কাছে ‘আনন্দ নিকেতন’ হয় সেই দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

[3] শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকরণ: শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব সমবুদ্ধিসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভাগ গঠন করতে হবে।

[4] আকর্ষণীয় শিক্ষণ: শ্রেণি-শিক্ষণ যাতে প্রাণবন্ত এবং আকর্ষণীয় হয়, সে ব্যাপারে শিক্ষক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন, যেমন-দক্ষতার সঙ্গে বক্তব্য উপস্থাপন, শিক্ষোপকরণের ব্যবহার ইত্যাদি।

[5] শান্তি রদ: দৈহিক ও মানসিক শাস্তি এবং রূঢ় আচরণ অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

[6] ধৈর্যশীলতা: শিক্ষার্থীদের বক্তব্য ধৈর্য সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

28. শ্রেণিকক্ষের আচরণগত সমস্যা হিসেবে মিথ্যা কথা বলা ও চুরি করার কারণগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর: মিথ্যা কথা বলা ও চুরি করার কারণ

আত্মরক্ষার জন্য মিথ্যা বলা বা উৎসাহের বশবর্তী হয়ে অতিরঞ্জনের কারণে মিথ্যা বলা সমস্যামূলক আচরণের অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে অহেতুক এবং অতিরিক্ত মিথ্যা বলা, যা সহপাঠীদের ক্ষেত্রে এবং শ্রেণিকক্ষে সমস্যা সৃষ্টি করে, তা সমস্যামূলক আচরণের মধ্যে পড়ে। উপযুক্ত ব্যবস্থার অভাবে পরবর্তীকালে এ ধরনের শিক্ষার্থী বিপথগামী হয়ে উঠতে পারে।

একইভাবে, অতি শৈশবে শিশুর মধ্যে যখন স্বত্বাধিকার বোধ জন্মায়নি, তখন যদি সে অন্যের বস্তু গ্রহণ করে তাকে অপহরণ বা চুরি করা বলে না। কিন্তু কিশোরদের ক্ষেত্রে প্রাক্-অনুমতি ছাড়া কোনো বস্তু গ্রহণ করাকে চুরি করা বা অপহরণ বলে। এটি নিঃসন্দেহে একটি সমস্যামূলক আচরণ।

মিথ্যা বলার কারণ

মিথ্যা কথা বলার প্রধান কারণগুলি হল-

[1] বাস্তব জীবনের ইচ্ছাপূরণ করা।

[2] স্বাভাবিকভাবে আত্মস্বীকৃতির চাহিদাপূরণ না হওয়া।

[3] মা-বাবা ও শিক্ষকদের অবহেলার দরুন অন্যের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা।

[4] হীনম্মন্যতা।

চুরি করার কারণ

বিভিন্ন কারণে কিশোরদের মধ্যে এই ধরনের সমস্যামূলক আচরণ দেখা দিতে পারে। যেমন-

[1] বাবা-মায়ের আর্থিক সংগতির অভাব: আর্থিক সংগতির অভাবে বাবা-মা যখন শিশুর চাহিদাপূরণে অসমর্থ তখন শিশুর মধ্যে চুরি করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

[2] নিরাপত্তা বোধের অভাব: নিরাপত্তাবোধের অভাবেও অনেক সময় শিশু চুরি করতে প্রবৃত্ত হয়।

[3] সুযোগসুবিধা যখন বাধাপ্রাপ্ত হয়: যে সুযোগসুবিধা শিশু এত দিন ভোগ করেছে, তা কোনো কারণে বাধাপ্রাপ্ত হলে শিশু চুরির আশ্রয় নিতে দ্বিধা ায় বোধ করে না।

[4] অন্যদের পীড়ন করার ইচ্ছা: অপরকে পীড়ন করার আকাঙ্ক্ষা অনেক সময় শিশুর মধ্যে চুরির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।

[5] যৌন বস্তুর প্রতীক: অপহৃত বস্তুকে অনেক সময় শিশু যৌন বস্তুর প্রতীকরূপে ভাবে।

29. শ্রেণিকক্ষের আচরণগত সমস্যা হিসেবে মিথ্যা কথা বলা ও চুরি করার প্রতিকারের উপায়সমূহ লেখো।

উত্তর: মিথ্যা কথা বলা ও চুরি করার প্রতিকারের উপায়সমূহ

শিক্ষার্থীর মিথ্যা কথা বলা কিংবা চুরি করার প্রবৃত্তির যদি শুরুতেই প্রতিকার করা – না যায়, তবে তার পরবর্তী জীবনে তা সমাজবিরোধী আচরণে পর্যবসিত হয়।

মিথ্যা বলার প্রতিকারের উপায়

মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করলে সাময়িকভাবে শিশুর চাহিদার পূরণ হলেও অন্তর্দ্বন্দ্বের স্থায়ী সমাধান হয় না। উপরন্তু সাময়িক চাহিদাপূরণের জন্য তার মিথ্যা বলার মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে মিথ্যা বলা তার ব্যক্তিত্বের একটা স্থায়ী বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। শিশুর বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পায়, অপসংগতির মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং তার ব্যক্তিগত চরিত্রের অবনতি ঘটে। সে ক্রমশ সমাজবিরোধী আচরণে লিপ্ত হয়। এই কারণে প্রথম থেকেই মিথ্যা কথা বলার প্রতিকারের উপায় গ্রহণ করা আবশ্যক। এর জন্য প্রয়োজন হল-

[1] মৌলিক চাহিদাপূরণ: যতদূর সম্ভব শিশুর মৌলিক চাহিদাপূরণ করা।

[2] গুরুজন ব্যক্তির মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকা: শিক্ষক ও বাবা-মা যেন শিশুর সম্মুখে মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকেন সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

[3] মার্জনা করা: অপরাধ স্বীকার করলে মার্জনা করা।

[4] দলগত কাজ: শিক্ষার্থীর সামর্থ্য অনুযায়ী দলগত কাজের মধ্য দিয়ে শিশুর আত্মস্বীকৃতির চাহিদাপূরণ করা।

[5] পরামর্শদান: ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

[6] মনোচিকিৎসকের সাহায্যগ্রহণ: পরিবেশ পরিবর্তন এবং মনোচিকিৎসকের সাহায্যগ্রহণ করা। চুরি করার প্রতিকারের উপায়

শিশুর চৌর্য আচরণ যত শীঘ্র সম্ভব প্রতিকার করা প্রয়োজন। অন্যথায় শিশুর এই ধরনের আচরণ অভ্যাসে রূপ নিতে পারে, যার ফলে পরবর্তী কালে সে দাগী চোর বা অন্যান্য অপরাধমূলক আচরণের শিকার হয়। শিশুর এইজাতীয় আচরণ প্রতিকারের জন্য করণীয় হল-

[1] চুরির কারণ অনুসন্ধান: কী কারণে শিশুরা এই ধরনের আচরণে লিপ্ত হয়েছে, তা জানা প্রয়োজন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

[2] বাবা-মায়ের সহানুভূতি: শিক্ষক ও বাবা-মা শিশুর প্রতি সহানুভূতিশীল হবেন এবং নীতিবোধ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।

[3] নিয়ন্ত্রিতভাবে চাহিদাপূরণ: বাবা-মা সাধ্যমতো শিশুর চাহিদাপূরণ করবেন, তবে শিশুর চাহিদা মাত্র সব কিছু সরবরাহ করবেন না। চাহিদা যে সবসময় পূরণ হয় না, সেই পরিস্থিতির সঙ্গে শিশুকে সচেতন করা প্রয়োজন, অন্যথায় শিশু চাহিদামতো কিছু না পেলেই চুরি করতে প্রবৃত্ত হবে।

[4] সঠিক যৌন শিক্ষা: বিদ্যালয়ে যৌন শিক্ষার ব্যবস্থা, অবসর বিনোদনের সুযোগ প্রভৃতি এইজাতীয় সমস্যামূলক আচরণ দূর করতে সহায়ক হবে।

[5] পরামর্শদান: শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

[6] মনোচিকিৎসকের সাহায্য: সমস্যার গুরুত্ব অনুযায়ী মনোচিকিৎসকের সাহায্য গ্রহণ করা উচিত। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, কোনোরকম প্রয়োজন ছাড়াও কোনো কোনো ব্যক্তি চুরি করে। যেমন-উচ্চবিত্ত ঘরের কোনো শিক্ষার্থী একাধিক ঘড়ি থাকা সত্ত্বেও বন্ধুর বাড়ি গিয়ে ঘড়ি চুরি করে। এই ধরনের চুরির অভ্যাসকে ‘ক্লিপ্টোম্যানিয়া’ (Kleptomania) বলে। এর প্রতিকারের জন্য মনোচিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া একান্ত অপরিহার্য।

30.শ্রেণিকক্ষে সমস্যামূলক আচরণ হিসেবে অন্যকে উৎপীড়নের কারণ এবং প্রতিকারের উপায়সমূহ আলোচনা করো।

উত্তর: অন্যকে উৎপীড়নের কারণ

অনেক সময় কোনো শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষের সহপাঠীদের অযথা উৎপীড়ন করে। এটি একটি সমস্যামূলক আচরণ। সাধারণত যেসব শিক্ষার্থী শিক্ষকের দ্বারা অবহেলিত হয় বা শিক্ষকের সুনজরে থাকে না তারা শিক্ষকের প্রিয় বা সুনজরে থাকা শিক্ষার্থীদের বিরক্ত বা নির্যাতন করে।

অনেক সময় শিক্ষার্থী অল্পতেই রেগে যায়। একে বদমেজাজ বলে, যা সমস্যামূলক আচরণের আর-একটি উদাহরণ। বদমেজাজ হল ক্রোধের আক্রমণাত্মক বহিঃপ্রকাশ। সামাজিক পরিবেশে শিশু যখন তার চাহিদাপূরণে সক্ষম হয় না, তখনই সে বদমেজাজি হয়ে ওঠে।

মনোসমীক্ষকদের মতে, শিক্ষার্থীর এইজাতীয় আচরণের কারণ হল অহংসত্তার জটিলতা (ego complex) বা যৌনতামূলক জটিলতা (sex complex)-এর ফল।

উৎপীড়ন প্রতিকারের উপায়

শিশুর এই আচরণ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রতিকার করা দরকার। এর জন্য প্রয়োজনীয় উপায়গুলি হল-

[1] সকলের প্রতি শিক্ষকের সমান দৃষ্টিভঙ্গি: শিক্ষকের উচিত শ্রেণির  ভালো শিক্ষার্থীর সাথে অন্য সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখা এবং সকলের প্রতি সমান যত্ন নেওয়া।

[2] বাবা-মায়ের শাসন: শিক্ষার্থীর এইরকম আচরণ যাতে ক্রমশ বৃদ্ধি না পায় সেজন্য বাবা-মায়ের উচিত যথাসময়ে তাদের সেই বিষয়ে শাসন করা।

[3] মনোচিকিৎসকের সাহায্যগ্রহণ: বিশেষ সমস্যার গুরুত্ব অনুযায়ী তি প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে এবং এক্ষেত্রে তারাই এই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারেন।

31.শ্রেণিকক্ষে সমস্যামূলক আচরণ হিসেবে বদমেজাজের কারণ ও সেগুলির প্রতিকারের উপায়সমূহ আলোচনা করো।

উত্তর: বদমেজাজের কারণ

বদমেজাজ প্রদর্শনের অন্যতম কারণ হল অবহেলা, আত্মপ্রকাশের সুযোগের অভাব, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগের অভাব এবং দাবি আদায়ের প্রচেষ্টা।

প্রতিকারের উপায়

শৈশবেই এই ধরনের আচরণের প্রতিকার বিশেষ প্রয়োজন। অন্যথায় পরবর্তী সময়ে ব্যক্তির অভিযোজনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। বদমেজাজ দূর করার উপায়গুলি হল-

[1] আত্মপ্রকাশের সুযোগ দান: শিক্ষার্থীকে আত্মপ্রকাশের সুযোগ দিতে হবে এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

 [2] পরামর্শদান: বিদ্যালয়ে বা শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থী যখন বদমেজাজ প্রদর্শন করে তখন তাকে অন্যান্য শিক্ষার্থীর থেকে পৃথক করে পরামর্শদানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি বদমেজাজের ক্ষতিকর দিকটা তাকে বোঝাতে হবে।

[3] সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করার সুযোগ দান: শিক্ষার্থীকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ দিয়ে তার সাফল্যকে নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সে শিক্ষক এবং অন্যদের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়।

[4] সহানুভূতি: শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে শিক্ষার্থীর সঙ্গে খুব সহানুভূতিশীল হতে হবে।

[5] সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলির সুযোগদান: খেলাধুলা, নাটকাভিনয়, সমাজসেবামূলক কাজ ইত্যাদি সহ-পাঠক্রমিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের মধ্য  দিয়ে শিক্ষার্থীকে সকলের সঙ্গে একত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

[6] মনোচিকিৎসার ব্যবস্থা: ঈর্ষাপরায়ণতার কারণে শিক্ষার্থী যদি এইজাতীয় আচরণ করে তাহলে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

32. শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা প্রতিকারের জন্য সাধারণ কিছু কৌশলের উল্লেখ করো।

উত্তর: শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা প্রতিকারের সাধারণ কৌশল

বিভিন্ন ধরনের আচরণগত সমস্যাক্রান্ত শিক্ষার্থীদের সমস্যার প্রতিকারের উপায় হিসেবে কতকগুলি সাধারণ কৌশল আছে। সেগুলি সাধারণ শিক্ষকগণ বিশেষ প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন না হলেও শ্রেণিকক্ষে প্রয়োগ করতে পারেন।

[1] সংকেত: শিক্ষক ঠোঁটের কাছে আঙুল ধরে বা চোখের ইশারায় অশান্ত শিক্ষার্থীকে তার নিজের জায়গায় চুপ করে বসে থাকতে নির্দেশ দিতে পারেন।

[2] শিক্ষার্থীর কাছে উপস্থিত হওয়া: শিক্ষক যদি শ্রেণিকক্ষে বিশৃঙ্খলারত শিক্ষার্থীদের কাছে অগ্রসর হন, তাহলে সুফল দেখা দেয়।

[3] বিশৃঙ্খলাকে উপেক্ষা করা: শিক্ষক যদি মনে করেন বিশৃঙ্খলাকে সাময়িকভাবে উপেক্ষা করলে বিশৃঙ্খলা স্বাভাবিকভাবে থেমে যাবে, সেক্ষেত্রে তিনি তাই করবেন।

[4] কর্তৃত্ব সহকারে আদেশ: কর্তৃত্বের সঙ্গে এবং স্পষ্টভাবে আদেশ দিলে অধিকাংশ সময়েই সুফল পাওয়া যায়।

(5) দৃঢ়ভাবে নিয়ন্ত্রণ: খুব জোরের সঙ্গে আদেশ দেওয়া, বিশৃঙ্খল হয় তার ওপর কঠোরভাবে নজর রাখা প্রভৃতিও কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর হয়।

[6] শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে চেনা: প্রতিটি শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে জানতে পারলে বিশৃঙ্খলা হ্রাস পায়। এই জন্যই কোনো শিক্ষার্থীকে তার ভালো আচরণের জন্য পুরস্কার প্রদান করার আগে তার কাছে কী ধরনের আচরণ আশা করা হয়, তা জানা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

[7] সঠিক সময় সঠিক কৌশল প্রয়োগ: সঠিক সময়ে সঠিক কৌশল প্রয়োগ করলে অবাঞ্ছিত আচরণকে আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দ শিক্ষার্থীরই নিজস্বতা আছে এবং সকলেই তার নিজস্ব ভঙ্গিতে প্রতিক্রিয়া করে।

উল্লিখিত কৌশলগুলি অবলম্বন করে শ্রেণিকক্ষে সমস্যামূলক আচরণসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি তাদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে শিক্ষকদের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

33.শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে পিতা-মাতার ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তর: শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে পিতা-মাতার ভূমিকা

শিশু যখন নতুন নতুন অভিযোজনের সম্মুখীন হয়, তখন অনেক সময় তার মধ্যে নানা ধরনের সমস্যমূলক আচরণ লক্ষ করা যায়। এইসব আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে শিশুর পিতা-মাতা এবং পরামর্শদাতা-উভয়ের ভূমিকাই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর প্রথম আশ্রয়স্থল তার গৃহ-পরিবেশ, যেখানে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। “প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভালো” (Prevention is better than cure)-এর কথা মাথায় রেখে শিশুর মধ্যে যাতে কোনোভাবে সমস্যামূলক আচরণ দেখা দিতে না পারে, সে ব্যাপারে বাবা-মাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

[1] শিশুর মৌলিক চাহিদাপূরণ: শিশুর মৌলিক চাহিদা, যেমন-

ভালোবাসার চাহিদা, দৈহিক ও মানসিক নিরাপত্তার চাহিদা, স্বাধীনতার চাহিদা ইত্যাদি পূরণের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। বাবা-মাকে শিশুর ন্যূনতম বস্তুগত চাহিদা মেটাতে হবে।

[2] বাবা-মায়ের মধ্যে হাদ্য সম্পর্ক: বাবা-মায়ের মধ্যে হার্দ্য সম্পর্ক শিশুর সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মা-বাবার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক যদি বিদ্বেষমূলক হয়, সেক্ষেত্রে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

[3] নৈতিক আদর্শ: বাবা-মায়ের আচরণে নৈতিকতা শিশুর নৈতিক বিকাশে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। তাই সন্তানের কাছ থেকে মা-বাবা যে ধরনের নৈতিক আচরণ প্রত্যাশা করবেন, তাঁদের মধ্যেও যেন ওই ধরনের নৈতিক আচরণ প্রকাশ পায়।

[4] শৃঙ্খলা রক্ষা: শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যেমন স্বেচ্ছাচারিতাকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক নয়, তেমনি কঠোর শৃঙ্খলাও শিশুর সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। শিশুকে শাসন করার ব্যাপারে বাবা-মায়ের কতকগুলি নিয়ম মেনে চলা উচিত। যেমন-

i. রাগের বশবর্তী হয়ে শিশুকে শাসন করা উচিত নয়।

ii. শিশুকে তার সামর্থ্য এবং বয়স অনুযায়ী বোঝাতে হবে।

iii. বাবা-মায়ের একজন যখন শিশুকে শাসন করছেন, তখন অন্যজন যেন শিশুর পক্ষ অবলম্বন না করেন।

[5] শিক্ষার্থীর বয়ঃসন্ধিক্ষণে বাবা-মায়ের বিশেষ ভূমিকা: বয়ঃসন্ধিক্ষণে শিক্ষার্থীর জীবনে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক এবং প্রাক্ষোভিক পরিবর্তন দেখা দেয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এই হঠাৎ পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনে সক্ষম হয় না, যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। মা-বাবার দায়িত্ব হল লা বয়ঃসন্ধিক্ষণের পরিবর্তনগুলির সম্পর্কে সন্তানদের অবহিত করা, এই ধরনের পরিবর্তন যে সকলের জীবনে ঘটে সে সম্পর্কে জ্ঞাত করা এবং এক্ষেত্রে সন্তানদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দান।

উপরোক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও শিশু বা শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি কোনো সমস্যামূলক আচরণ দেখা যায়, সেক্ষেত্রে বাবা-মা কোনোরকম অবহেলা না করে মনোচিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন।

34. শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে পরামর্শদাতার ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তর: শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে পরামর্শদাতার ভূমিকা

শিক্ষার্থীর জীবনে পরামর্শদাতার ভূমিকা খুবই জটিল ও চ্যালেঞ্জিং। পরামর্শগ্রহীতার আর্থসামাজিক-সাংস্কৃতিক-প্রাক্ষোভিক’ পরিস্থিতি অনুযায়ী এই ভূমিকা নিয়ন্ত্রিত হয়। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সেগুলি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। তবে সাধারণভাবে যে ভূমিকাগুলি দেখা যায়, সেগুলি নীচে আলোচনা করা হল-

[1] পরামর্শদানে সতর্কতা: যেসব বিদ্যালয়ে পরামর্শদাতা আছে, সেখানে তাঁর প্রধানত দুটি দায়িত্ব। প্রথমত, পরামর্শদাতাকে নিশ্চিত হতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর আর কোনো ক্ষতি না হয়। দ্বিতীয়ত, পরামর্শদাতাকে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পরিবেশের ওপর, বিশেষ করে বিদ্যালয় এবং গৃহ-পরিবেশের ওপরে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কারণ, শিশু যে পরিবেশের মধ্যে বড়ো হয়েছে, যা তার সমস্যামূলক আচরণের জন্য দায়ী, তার আর পরিবর্তন সম্ভব নয়।

[2] শিক্ষার্থীর সমস্যার প্রকৃতি বিবেচনা: পরামর্শদাতা যদি মনে করেন যে শিক্ষার্থীর সমস্যা গুরুতর, তখন তিনি সমস্যার প্রকৃতি এবং গভীরতা নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন ধরনের মনস্তাত্ত্বিক অভীক্ষা, পর্যবেক্ষণ ও শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবেন।

[3] পরামর্শদাতার সুপারিশ: বিশদভাবে অধ্যয়ন শেষ হওয়ার পর, প্রাপ্ত ফলের ভিত্তিতে বাবা-মার সঙ্গে আলোচনা করে পরামর্শদাতা কিছু সুপারিশ করেন। সুপারিশের মধ্যে তিনি শিক্ষার্থীর চিকিৎসা এবং বাবা-মার কোনো একজনকে পরামর্শ গ্রহণের কথা বলেন। কারণ, চাহিদাপূরণের পাশাপাশি বাবা- মায়ের জানা প্রয়োজন কীভাবে তাঁরা গৃহ-পরিবেশে এই ধরনের সন্তানের সঙ্গে আচরণ করবেন।

[4] পরামর্শদাতা এবং শিক্ষক: পরামর্শদাতা সমস্যায় আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতার ব্যাপারে শিক্ষকদের সঙ্গে সর্বদা আলোচনা করবেন। পরামর্শদাতা মাঝে মাঝে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনাচক্রে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের অসুবিধা এবং সমস্যার কথা ব্যাখ্যা করবেন। এ ছাড়া সমস্যাক্রান্ত শিক্ষার্থীদের আচরণ সংশোধনের জন্য কী ধরনের পরিকল্পনা বা কর্মসূচি গ্রহণের প্রয়োজন তা ব্যাখ্যা করবেন।

সবশেষে উল্লেখ করা যায় যে, শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি এমন সমস্যামূলক আচরণ দেখা দেয় যা শিক্ষক বা বিদ্যালয়ের পরামর্শদান বিভাগের পক্ষে সমাধান সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাকে মনোচিকিৎসকের কাছে পাঠানো একান্ত প্রয়োজন।

35. .শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে শিক্ষকের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর: শিক্ষার্থীর আচরণগত সমস্যার প্রতিকারে শিক্ষকের ভূমিকা

সাধারণত নির্দিষ্ট বয়সে শিশু প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং নতুন সামাজিক পরিবেশের সম্মুখীন হয়। শিশুর নতুন ধরনের অভিযোজন শুরু হয়, যার ফলে বিভিন্ন কারণে সমস্যামূলক আচরণ দেখা দিতে পারে। এই জন্য শিক্ষার্থীর সমস্যামূলক আচরণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে শিক্ষকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নীচে শিক্ষকের ভূমিকাগুলি উল্লেখ করা হল-

[1] আচরণ মনস্তত্ব সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন: সাধারণ সমস্যামূলক আচরণ নির্দিষ্টকরণ এবং সমাধানের জন্য শিক্ষার্থীদের আচরণ মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে শিক্ষককে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তিনি অবশ্যই শিক্ষার্থীদের শুভানুধ্যায়ী হবেন এবং শিক্ষাদানকালে নিষ্ঠাবান হবেন। শিক্ষার্থীদের জীবনদর্শন গঠনে তাকে উদ্যোগী হতে হবে। শ্রেণিকক্ষে পঠনপাঠনের অনুকূল আবহাওয়া সৃষ্টি করার কৌশলগুলি সম্পর্কে শিক্ষক অবহিত হবেন।

[2] বক্তব্য প্রকাশে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা: শিক্ষার্থীদের বক্তব্য প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। তারা যাতে নির্ভয়ে সব কথা বলতে পারে, সেই আবহাওয়া সৃষ্টি করতে হবে।

[3] শ্রেণিকক্ষে মানবিক সম্পর্ক গঠন: মানবিক সম্পর্ক গঠনের ওপর আলাদা ‘ক্লাস’ করা যেতে পারে। এই ‘ক্লাসে’ মানবিক সম্পর্ক সম্পর্কিত তাত্ত্বিক আলোচনা হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাগুলির চরিত্র, সমাধানের পন্থা ইত্যাদির ওপর আলোচনা করা হবে।

[4] নীতি ও যৌন শিক্ষা: বয়ঃসন্ধিক্ষণের অধিকাংশ সমস্যাই নৈতিকতা ও যৌনতা সম্পর্কিত অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল। এগুলি সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের অন্তরায়। তাই নৈতিক শিক্ষা ও যৌন শিক্ষা এই বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ জরুরি।

[5] শিল্প ও সাহিত্য সৃষ্টি: শিল্প ও সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত হতে পারে। সেজন্য শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শিল্প ও সাহিত্য সৃষ্টিতে উৎসাহ দেবেন।

[6] জীবনশৈলী শিক্ষার ব্যবস্থা: জীবনশৈলী শিক্ষা হল সেই ধরনের গুণাবলি বা দক্ষতা অর্জন, যা সুষ্ঠু অভিযোজন এবং ইতিবাচক আচরণের জন্য প্রয়োজন। প্রাত্যহিক জীবনের চাহিদা এবং চ্যালেঞ্জকে সার্থকভাবে মোকাবিলা করার জন্য জীবনশৈলী শিক্ষা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য দশটি গুণের কথা উল্লেখ করেছে, যা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিকাশে সচেষ্ট হবে। এই গুণাবলিগুলি হল-সিদ্ধান্তগ্রহণ, সমস্যাসমাধান, সৃজনশীল চিন্তন, সমালোচনামূলক চিন্তন, কার্যকরী যোগাযোগ, পারস্পরিক সম্পর্কস্থাপন, আত্মসচেতনতা, সহানুভূতি (empathy), প্রাক্ষোভিক ভারসাম্য এবং মানসিক চাপের সঙ্গে মোকাবিলা।

36. সমস্যামূলক আচরণ সংশোধনের জন্য ক্রীড়াভিত্তিক চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর:সমস্যামূলক আচরণ সংশোধনের জন্য ক্রীড়াভিত্তিক চিকিৎসা

সমস্যামূলক আচরণ পরিবর্তনের জন্য অন্যতম মনোচিকিৎসা পদ্ধতি হল ক্রীড়াভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি।

এই পদ্ধতিতে খেলার মধ্য দিয়ে শিশুর অবদমিত ক্রোধ, ঘৃণা এবং আক্রমণাত্মক মানসিকতা দূর হয় এবং সে আবেগ-ভারসাম্য ফিরে পায়। একে খেলার মাধ্যমে বিরেচন (catharsis) বলে। এর পাশাপাশি মনোচিকিৎসক

শিশুর খেলাকে বিভিন্ন দিক দিয়ে বিশ্লেষণ করে তার মানসিক দ্বন্দ্বের স্বরূপ বুঝে নিয়ে শিশুকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন।

শিশুর বিকাশ অনুযায়ী চার রকমের খেলা দেখা যায়- [1] অঙ্গ- সঞ্চালনমূলক খেলা, [2] কল্পনামূলক খেলা, [3] অনু- করণমূলক খেলা ও [4] স্বপ্নচারিতামূলক খেলা। সুস্থ শিশু স্বাভাবিকভাবেই প্রতিটি পর্যায়ের খেলাগুলি খেলে এবং তার মধ্যে সুস্থ ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। কিন্তু যেসব শিশু সুস্থভাবে খেলার সুযোগ পায় না, তাদের আবেগের বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং তাদের ব্যক্তিত্বের মধ্যে বৈকল্য দেখা দেয়। ক্রীড়াভিত্তিক চিকিৎসার কতকগুলি পর্যায় আছে। এগুলি হল নিম্নরূপ-

 [1] প্রথম পর্যায়: মনোচিকিৎসক শিশু এবং তার পরিবারের সাথে পরিচিত হয়ে শিশু সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য, যেমন-তার বংশগতি, পরিবেশ, দৈহিক ও মানসিক গঠন ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্যসংগ্রহ করবেন।

শিশুর দৈহিক সুস্থতা এবং সেইজন্য খেলাধুলা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে কি না, বাবা-মা এবং অভিভাবক শিশুকে খেলাধুলায় উৎসাহিত করেছেন, না বাধা দিয়েছেন সেইসব বিষয়ে চিকিৎসক ভালোভাবে জানবার চেষ্টা করবেন।

[2] দ্বিতীয় পর্যায়: বিভিন্ন রকম খেলার উপকরণ দিয়ে দেখতে হবে শিশু কী ধরনের খেলাধুলা পছন্দ করে। তার খেলাধুলা বয়স অনুযায়ী কি না, খেলাধুলার প্রতিটি পর্যায় শিশু অতিক্রম করেছে কি না-এসব বিষয়ে অনুসন্ধান করতে হবে।

[3] তৃতীয় পর্যায়: শিশুকে বিভিন্ন ধরনের খেলার সামগ্রী দেওয়া হয় এবং দেখা হয় কী ধরনের সামগ্রী সে পছন্দ করে। তার পছন্দমতো খেলার সামগ্রী তার বয়সানুযায়ী কি না, সামগ্রীগুলি সঠিকভাবে বিন্যস্ত হয়েছে কি না ইত্যাদির মাধ্যমে শিশুর মানসিক অসুস্থতার কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয় করা হয়।

[4] চতুর্থ বা শেষ পর্যায়: শিশুকে তার পছন্দ অনুযায়ী খেলার জন্য উৎসাহিত করা হয়, যাতে তার অবদমিত আবেগ মুক্ত হতে পারে। পাশাপাশি শিশুর আচরণ পর্যবেক্ষণ করে তার মানসিক দ্বন্দ্বের কারণটি ধীরে ধীরে শিশুর কাছে উপস্থাপিত করতে হবে। এইভাবে শিশু একদিকে যেমন তার আবেগ- ভারসাম্য ফিরে পায়, অন্যদিকে তেমনই দ্বন্দ্বের কারণটি উদ্‌ঘাটিত হওয়ার ফলে মনোচিকিৎসক শিশুকে সুস্থ করে তুলতে পারেন।

37 .মনস্তত্ত্বমূলক নাটকাভিনয় পদ্ধতি বলতে কী বোঝ?

উত্তর: মনস্তত্বমূলক নাটকাডিনয়

মনস্তত্ত্বমূলক নাটকাভিনয় একটি দলগত মনোচিকিৎসা পদ্ধতি। জে. এল. মোরেনো (JL Moreno) এর উদ্ভাবক। এই পদ্ধতিতে রোগী নিজে নাটক লেখে এবং নায়কের চরিত্রের মধ্য দিয়ে তার সুখ-দুঃখ, অপূর্ণ কামনা-বাসনা, যন্ত্রণা ইত্যাদি প্রকাশ করে ফেলে। এর ফলে তার রুদ্ধ আবেগ মুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।

সাইকো-ড্রামা বা মনস্তত্ত্বমূলক নাটকাভিনয় দুটি উপায়ে কাজ করে-

[1] রোগী নিজে দর্শক এবং অন্য একজন রোগীর ভূমিকায় অভিনয় করে। এর ফলে রোগী বুঝতে পারে তার বিকৃত আচরণের স্বরূপ। এই আচরণ তার ও সমাজের কী ক্ষতি করছে তাও সে বুঝতে পারে এবং ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে সে তার আচরণে পরিবর্তন ঘটাতে উদ্যোগী হয়।

[2] রোগী তার পরিবারের কোনো একজনের ভূমিকায় অভিনয় করে এবং অপর এক ব্যক্তি রোগীর ভূমিকায় অভিনয় করে। এতে পারিবারিক সম্পর্কের কোথায় অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে এবং সেই জটিলতা কীভাবে মানসিক রোগের কারণ হয়েছে, তা সে বুঝতে পারে। এই অবস্থায় মনোচিকিৎসক রোগীর সঙ্গে কথাবার্তার মাধ্যমে রোগীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগী নিজের আচরণের অবাস্তব বা। অসামাজিক দিক সম্পর্কে সচেতন হয় এবং আচরণে পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হয়।

38. সমস্যামূলক আচরণ প্রতিকারের উদ্দেশ্যে ‘আচরণ পরিবর্তনকারী চিকিৎসা’ পদ্ধতি আলোচনা করো।

উত্তর: আচরণ পরিবর্তনকারী চিকিৎসা

শিখনের মৌলিক চারটি বিষয়কে ভিত্তি করেই আচরণ পরিবর্তনকারী চিকিৎসা রূপ পেয়েছে। এই চারটি বিষয় হল-[1] তাড়না (drive), [2] ইঙ্গিত (clues), [3] প্রতিক্রিয়া (response) এবং [4] শক্তিদায়ী উদ্দীপক (reinforcement)।

চিকিৎসা কৌশল

আচরণ পরিবর্তনকারী চিকিৎসার ক্ষেত্রে নানা ধরনের চিকিৎসা কৌশল অবলম্বন করা হয়ে থাকে। নীচে এগুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

[1] রীতিসিদ্ধভাবে সংবেদনশীলতার অবসান ঘটানো: যেসব ক্ষেত্রে উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী উদ্দীপক (anxiety provoking stimulus) সহজেই নির্দিষ্ট করা যায়, সেইসব ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা প্রযোজ্য। আতঙ্ক, ফোবিয়া, অবসেশন, কম্পালসন-এসব ক্ষেত্রে এই চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায়। এই চিকিৎসা তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়-

i. যে যে বস্তুতে রোগীর উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে উৎকণ্ঠার মাত্রা অনুযায়ী বিন্যাস করা হয়। সবচেয়ে কম উৎকণ্ঠা উদ্রেককারী প্রথমে এবং সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠা উদ্রেককারী সবশেষে থাকে।

ii. এরপর মন ও শরীরে একটা নিরুদ্বেগ অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে। এই নিরুদ্বিগ্ন অবস্থায় কোনো উৎকণ্ঠা উদ্রেককারী বস্তু বা অবস্থা সহজে ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে না। এই চিকিৎসাপদ্ধতি, যা দেহে-মনে নিরুদ্বেগ অবস্থার সৃষ্টি করে উৎকণ্ঠা উদ্রেককারী বস্তু বা অবস্থাকে ব্যর্থ করে দেয়, তাকেই বলা হয় বিপরীত প্রতিক্রিয়ার সাহায্যে অপসংগতিমূলক আচরণকে নিবৃত্ত করা (reciprocal inhibition)। অর্থাৎ, দ্বিতীয় ধাপের কাজ হচ্ছে শরীর ও মনে শৈথিল্য আনার ব্যবস্থা করা।

iii. তৃতীয় ধাপে শরীর শিথিল থাকা অবস্থায় ক্রমোচ্চমানে বিন্যস্ত উদ্বেগ সৃষ্টিকারী উদ্দীপকগুলিকে ক্রমান্বয়ে প্রয়োগ করে তাদের প্রভাব থেকে রোগীকে মুক্ত করা হয়। 

পদ্ধতিটির সুবিধা: আইজাঙ্ক এবং রাচম্যান (Eysenck and Rachman) এই প্রকারের চিকিৎসার কতকগুলি সুবিধার উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-① এই চিকিৎসাপদ্ধতি মনস্তাত্ত্বিক নীতিভিত্তিক এবং পরীক্ষাগারে পরীক্ষিত। ② সাধারণ উৎকণ্ঠা থেকে দুরূহ মানসিক ব্যাধি-সমস্ত রকমের মানসিক রোগের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সমানভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব।

পদ্ধতিটির অসুবিধা: রীতিবদ্ধ সংবেদনশীলতার অবসান ঘটানোর পদ্ধতি প্রয়োগে কিছু কিছু অসুবিধাও দেখা যায়। যেমন-① রোগীদের স্পষ্ট ধারণা গঠনে অসুবিধা হয়। ② আধ ঘণ্টার বেশি সময়ব্যাপী চিকিৎসাপদ্ধতি চললে রোগীদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা যায়।

[2] তীব্রভাবে উদ্দীপক প্রয়োগ: পূর্বোক্ত ক্ষেত্রে উদ্বেগ সৃষ্টিকারী উদ্দীপকগুলিকে পরপর ক্রমোচ্চমান অনুযায়ী প্রয়োগ করার কথা বলা হয়েছে।

এখানে প্রথমেই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগকারী উদ্দীপকটিকে প্রয়োগ করা হয়। অন্যান্য ব্যবস্থা আগের মতোই।

[3] বিরক্তি সৃষ্টি করে রোগ নিরাময়: বদভ্যাসের ফলে কোনো ব্যক্তি যখন অবাঞ্ছিত বা অপসংগতিমূলক আচরণ করে, সেই মুহূর্তে ওই ব্যক্তি অপছন্দ করে এমন অর্থাৎ, বিরক্তি সৃষ্টিকারী অবস্থার সৃষ্টি করলে অবাঞ্ছিত কাজ করার ঝোঁক হ্রাস পায়।

[4] অন্যের দেখে শেখা: এখানে ব্যক্তি দেখে, সে যে অবস্থায় ভয় পায় বা তার উৎকণ্ঠা দেখা দেয়, অনুরূপ অবস্থায় অন্য ব্যক্তি নির্ভয়ে থাকে বা কোনো উৎকণ্ঠা দেখা যায় না। এই অবস্থায় পূর্বোক্ত ব্যক্তির ভয় বা উৎকণ্ঠা হ্রাস পেতে থাকে। ক্রমশ উক্ত অবস্থা ব্যক্তির মধ্যে আর ভয় সৃষ্টি করতে পারে না। এই কৌশলের সঙ্গে সাইকো-ড্রামার সাদৃশ্য দেখা যায়।

[5] আকাঙ্ক্ষিত কাজের জন্য পুরস্কার: শিশুচিকিৎসায় এই পদ্ধতি খুব কার্যকরী। এখানে শিশুকে তার আকাঙ্ক্ষিত বস্তু উপহার দিয়ে তার মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণকে ধীরে ধীরে দূর করা যেতে পারে। অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণটি দূর হয়ে যাওয়ার পর শিশুর আকাঙ্ক্ষিত বস্তুটিও ধীরে ধীরে সরিয়ে নেওয়া হয়।

[6] বিপরীত প্রতিক্রিয়া: এখানে উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী উদ্দীপকের উপস্থিতির পাশাপাশি উৎকণ্ঠা নিবৃত্তকারী উদ্দীপকও উপস্থিত করা হয়, যার ফলে উৎকণ্ঠা সৃষ্টিকারী উদ্দীপক দুর্বল হয়ে পড়ে।

39. মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো। [Midnapore Collegiate School]

উত্তর: মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা

মূক ও বধির শিশুরা আমাদের সমাজেরই একটি অংশ। তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বিবেচনা করে, তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা উচিত। মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের যুক্তি হল-

[1] মূক ও বধির শিশুরা তাদের প্রতিকূলতার জন্য সাধারণ বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। পঠন পাঠনের জন্য যে পরিকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার দরকার, তার ব্যবস্থা সাধারণ বিদ্যালয়ে করা সম্ভব নয়। তাই তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা দরকার।

[2] মূক ও বধির শিশুরা খুবই আবেগপ্রবণ হয়, ফলে সাধারণ শ্রেণি শিখনের সময় তাদের আচার-আচরণ দেখে স্বাভাবিক শিশুরা হাসাহাসি করলে, তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা তৈরি হয়, তাদের আত্মবিশ্বাস করতে থাকে। তাই তাদের জন্য বিশেষ শিক্ষার দরকার।

[3] মূক ও বধির শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করলে, তারা ভাবে সমাজ ও রাষ্ট্র তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং সংবেদনশীল। ফলে তারা শিক্ষায় আগ্রহী হয় এবং সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি সম্ভবমতো কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করে।

[4] মূক ও বধির শিশুদের হীনম্মন্যতা দূর করতে, পাশাপাশি উপযুক্ত বৃত্তি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সাহায্যে তাদের ভবিষ্যতে স্বাবলম্বী করে তুলতে তাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।

[5] মূক ও বধির শিশুদের শিক্ষার আর একটি প্রয়োজনীয়তা হল তাদের বিভিন্ন ধরনের কাজ চালানোর উপযোগী গঠন ক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করা এবং নানান ধরনের যান্ত্রিক কৌশল অবলম্বনের দ্বারা তাদের শ্রবণ দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা।

40.মূক ও বধির এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যাগুলি আলোচনা করো। 

উত্তর: মূক ও বমির শিশুদের শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা

শ্রেণিকক্ষে মূক ও বধির শিশুদের মধ্যে যে ধরনের আচরণগত সমস্যা লক্ষ করা যায়, সেগুলি হল-

[1] মুক ও বধির শিশুরা শ্রেণির মধ্যে তেমন কোনো কথা বলে না। কেবল তাকিয়ে থাকে মাত্র।

[2] তারা শিক্ষক শিক্ষিকার কথা বুঝতে পারে না।

[3] ঘণ্টা বাজলেও তা তারা শুনতে পায় না।

[4] পাশের কোনো শিশু বা শিক্ষার্থী তাকে ডাকলে, সে ওই ডাক শুনতে পায় না বা তার কোনো উত্তর দেয় না।

[5] পড়াশোনার প্রতি কোনো ধরনের মনোযোগ থাকে না। আবেগপ্রবণ ও আত্মকেন্দ্রিক হওয়ায় তারা নিজেদেরকে অন্যান্যদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখে।

[6] তারা আচমকাই যে-কোনো ব্যাপারে উত্তেজিত হয়ে পড়ে, আবার কখনো-কখনো অশোভন আচরণও করে। 

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শ্রেণিকক্ষে আচরণগত সমস্যা

শ্রেণিকক্ষে দৃষ্টিহীন বা ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুদের মধ্যে যে ধরনের আচরণগত সমস্যা লক্ষ করা যায়, তা হল-

[1] ব্যাহত দৃষ্টিসম্পন্ন শিশুরা বেশি বয়সে বিদ্যালয়ে ভরতি হয়। এর ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতা দেখা দেয়।

[2] চোখে দেখতে না পাওয়ার কারণে তারা কোনো বিষয়ের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা অর্জনের ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়।

[3] তারা ব্ল‍্যাকবোর্ড থেকে খাতায় কোনো কিছু টোকার সময় অনেক কিছু বাদ দিয়ে ফেলে। দূরের লেখা স্পষ্টভাবে দেখতে পায় না।

[4] বস্তু চেনার ক্ষেত্রেও তাদের অসুবিধা হয়। তারা হীনম্মন্যতায় ভোগে। তারা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়। আবেগজনিত কারণে অনেক সময় তারা ঠিকমতো নিজেদের চারপাশের পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে পারে না।

41. প্রতিবন্ধীদের সমস্যা কাটাতে পিতা-মাতা ও শিক্ষকের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর: প্রতিবন্ধীদের সমস্যা কাটাতে পিতা মাতা ও শিক্ষকের ভূমিকা

শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা অথবা আচরণগত বৈশিষ্ট্যের কারণে একজন শিশু অন্যান্যদের থেকে আলাদা বিবেচিত হলে, তাকে আমরা প্রতিবন্ধী হিসেবে বিবেচনা করি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় দশ শতাংশই প্রতিবন্ধী। এই প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজেরই অংশ। প্রতিবন্ধকতার কারণে তাদের মধ্যে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ওই সমস্যা সমাধানে পিতা-মাতা এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের যথেষ্ট ভূমিকা থাকে। এখানে সংক্ষেপে তা আলোচনা করা হল।

[1] সমাজের বেশিরভাগ মানুষের ধারণা হল প্রতিবন্ধী শিশুরা কোনো উৎপাদনশীল কাজের দায়িত্ব নিতে পারে না। কিন্তু পিতামাতা ও শ্রেণিকক্ষের শিক্ষক শিক্ষিকাদের ইতিবাচক মানসিকতা থাকলে কোনো কোনো অক্ষমতার মাত্রাকে কমানো যায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাধাগ্রস্ত অবস্থা, অক্ষমতা ও প্রতিবন্ধী-এই তিনটি বিষয়ে সচেতন হয়ে প্রত্যেককে কাজ করতে হবে, তাহলে প্রতিবন্ধকতা অনেকখানি হ্রাস করা যাবে।

[2] প্রতিবন্ধীরা যাতে তাদের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারে, তার জন্য পিতা- মাতা এবং অভিভাবক অভিভাবিকাকে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। অত্যন্ত হৃদয়বান হয়ে প্রতিবন্ধী শিশুর বিকাশে সহায়তা করতে হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও অনেক বেশি দায়িত্ববান এবং কর্তব্যপরায়ণ হতে হবে। প্রয়োজনে অনেক বেশি সময় শিশুর বিকাশের জন্য দান করতে হবে।

[3] পিতামাতা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার আন্তরিক সহযোগিতা, ভালোবাসা পেলে প্রতিটি প্রতিবন্ধী শিশু তাদের প্রতিবন্ধকতা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবে। তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতার বোধ ধীরে ধীরে দূরীভূত হবে এবং তারা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলে তারা শিক্ষায় আগ্রহী হবে এবং সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কর্তব্যপালনে সচেষ্ট হবে।

[4] প্রতিবন্ধীদের সমস্যা কাটানোর জন্য পিতামাতাকে এবং শিক্ষক শিক্ষিকাকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তবেই তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার প্রকৃতি অনুযায়ী, প্রতিবন্ধী শিশুর প্রতি তাদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারবে।

42. প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য আলোচনা করো।

উত্তর: প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা দশভাগ প্রতিবন্ধী। এঁরা প্রত্যেকেই এই বিশ্বের সদস্য। এই বিশ্বে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার অধিকার নিয়েই এরা পৃথিবীতে এসেছে। এদেরও সার্বিক বিকাশ প্রয়োজন। তাই প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা। নীচে প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-

[1] হীনম্মন্যতাবোধ দূর করে আত্মবিশ্বাস জাগানো: দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আর্থিক-বিভিন্ন কারণে প্রতিবন্ধীরা হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকে। বর্তমানের প্রতিযোগিতামূলক সমাজে এরা মানিয়ে নিতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে সরকার থেকে এদের সুযোগ দিলেও হীনম্মন্যতার কারণে এরা সুযোগ গ্রহণ করতে পারে না। তাই শিক্ষাদানের মাধ্যমে এদের মধ্য থেকে হীনম্মন্যতাবোধ দূর করে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে হবে।

[2] বিচ্ছিন্নতা দূরীকরণের ব্যবস্থা করা: প্রতিবন্ধীরা সবসময় নিজেদেরকে স্বাভাবিকদের থেকে পৃথক করে রাখে। তাদেরকে শিক্ষার মূল প্রবাহে আনতে হলে সমাজ থেকে তাদের এই বিচ্ছিন্নতা দূর করতে হবে। শিক্ষার মধ্য দিয়েই এই বিচ্ছিন্নতা দূর করা সম্ভব।

[3] দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যবস্থা করা: প্রতিবন্ধী শিশুদেরকে উপযুক্ত শিক্ষাদানের মাধ্যমে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিলে তারা ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে। তাদের মধ্যে থেকে দারিদ্র্য দূরীভূত হবে। তারা সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসতে সক্ষম হবে।

[4] উৎপাদনশীল নাগরিকে পরিণত করা: প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের আর একটি উদ্দেশ্য হল তাদের বৃত্তিমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপাদনশীল নাগরিকে পরিণত করা এবং তারা যাতে আর্থিক দিক থেকে স্বনির্ভরশীল হতে পারে তার ব্যবস্থা করা।

[5] কাজ চালানোর উপযোগী পঠনক্ষমতার বিকাশ ঘটানো: প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষাদানের অপর একটি উদ্দেশ্য হল তাদের বিভিন্ন কাজ চালানোর উপযোগী পঠন ক্ষমতার বিকাশে সাহায্য করা।