Class 12 History Solution
ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন
1. MCQs Question Answer
1) প্রশ্ন ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের আইন অনুসারে ‘ভাইসরয়’ উপাধি পান-
(A) ব্রিটিশ সম্রাট
(B) ভারত সচিব
(C)গভর্নর
(D) গভর্নর-জেনারেল ✓
2) ভাইসরয়ের কার্যনির্বাহী পরিষদের প্রথম ভারতীয় সদস্য ছিলেন-
(A) সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ ✓
(B) গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়
(C) সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(D) উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
3. ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের বাংলার কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্য হন-
(A) কিশোরীলাল গোস্বামী ✓
(B) সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ
(C)সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(D) সালিমুল্লাহ্
4. পার্সিভ্যাল স্পিয়ার কত খ্রিস্টাব্দের আইনকে ‘পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রথম সরকারি উদ্যোগ’ বলে অভিহিত করেছেন?
(A) ১৮৯২ খ্রি.
(B) ১৯০৯ খ্রি. ✓
(C) ১৯১৯ খ্রি.
(D) ১৯৩৫ খ্রি.
5. ১৯০৯ খ্রি. ভারতের ভাইসরয় ছিলেন-
(A) মন্টেগু
(B) চেমসফোর্ড
(C) লর্ড কার্জন
(D) লর্ড মিন্টো ✓
6. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা কতজন সদস্য নিয়ে বড়োলাটের শাসন পরিষদ গঠিত হয়?
(A) ৪ জন
(B) ৭ জন ✓
(C) ৮ জন
(D) ১৬ জন
7. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা বড়োলাট তাঁর কার্যাবলির জন্য কার কাছে দায়ী থাকতেন?
(A) জনগণের কাছে
(B) বড়োলাটের কার্যনির্বাহক পরিষদের কাছে
(C) ভারতীয় পার্লামেন্টের কাছে
(D) ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে ✓
৪. মন্টেগু ছিলেন-
(A) ভারত-সচিব ✓
(B) ভাইসরয়
(C) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
(D) বাংলার গভর্নর-জেনারেল
9. কোন্ আইনের দ্বারা ভারতে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়?
(A) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট দ্বারা
(B) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট দ্বারা
(C) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট দ্বার
(D) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া অ্যাক্ট দ্বারা ✓
10. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্রীয় আইনসভার নিম্নকক্ষের সদস্যসংখ্যা কত নির্ধারণ করা হয়?
(A) ১৫৬
(B) ২৫০
(C) ২৬০
(D) ৩৭৫ ✓
11. কোন্ আইনের মাধ্যমে ‘চেম্বার অব প্রিন্সেস’ গঠন করা হয়?
(A) ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন
(B) মর্লে-মিন্টো আইন
(C) রাওলাট আইন
(D) মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন ✓
12. ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটায়-
(A) ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন ✓
(B) ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন
(C) ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন
(D) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন
13. কাউন্সিল আইন বলা হয়-
(A) ১৮৯২-এর ভারত শাসন আইনকে
(B) ১৯০৯-এর সংস্কার আইনকে ✓
(C) ১৯১৯-এর শাসন সংস্কার আইনকে
(D) ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনকে
14. মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা কতজন করা হয়?
(A) ১৬ জন
(B) ২৬ জন
(C) ৬০ জন ✓
(D) ৬৬ জন
15. মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইন পাস হয়-
(A) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ✓
(C) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে
16. মন্ট-ফোর্ড শাসন সংস্কার আইনকে ‘দাসত্বের পরিকল্পনা’ বলে অভিহিত করেন-
(A) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
(B) অ্যানি বেসান্ত ✓
(C) মহাত্মা গান্ধি
(D) মহম্মদ আলি জিন্না
17. কোন্ আইন দ্বারা বড়োলাটের শাসন পরিষদ গঠন করা হয়?
(A) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট দ্বারা
(B) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট দ্বারা ✓
(C) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট দ্বারা
(D) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া অ্যাক্ট দ্বারা
19. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে ভোটদানের অধিকার পেয়েছিল-
(A) ৬ শতাংশ মানুষ
(B) ৯ শতাংশ মানুষ
(C) ১৪ শতাংশ মানুষ ✓
(D) ২০ শতাংশ মানুষ
20. রাওলাট কমিশনের অপর নাম হল-
(A) সিডিশন কমিশন ✔
(B) সাইমন কমিশন
(C) অ্যাকওয়ার্থ কমিশন
(D) হুইটলি কমিশন
21. “উকিল নেহি, দলিল নেহি, আপিল নেহি” রাওলাট আইন সম্পর্কে এই উক্তিটি করেন-
(A) গান্ধিজি ✔
(B) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(C) মতিলাল নেহরু
(D) বল্লভভাই প্যাটেল
22. স্যার সিডনি রাওলাট ছিলেন-
(A) ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক নেতা
(B) ব্রিটিশ মন্ত্রী
(C) ব্রিটিশ ভারতের আইন সচিব
(D) ইংল্যান্ডের বিচারপতি ✔
23. রাওলাট আইনের প্রতিবাদে গান্ধিজি ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের কত তারিখে সারা দেশে ধর্মঘটের ডাক দেন?
(A) ৬ এপ্রিল ✔
(B) ১০ এপ্রিল
(C) ১৩ এপ্রিল
(D) ১৯ এপ্রিল
24. রাওলাট সত্যাগ্রহের সময় গান্ধিজিকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের কত তারিখে গ্রেপ্তার করা হয়?
(A) ৬ এপ্রিল
(B) ১০ এপ্রিল ✔
(C) ১৩ এপ্রিল
(D) ১৯ এপ্রিল
25. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ১৯১৯ এর-
(A) ৩ এপ্রিল
(B) ১৩ এপ্রিল ✔
(C) ২৩ এপ্রিল
(D) ৩০ এপ্রিল
26. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ‘কাইজার-ই-হিন্দ’ উপাধি ত্যাগ করেন-
(A) গান্ধিজি ✔
(B) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(C) সুভাষচন্দ্র বসু
(D) সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
27. জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য গঠিত সরকারি কমিটির নাম ছিল-
(A) হান্টার কমিটি ✔
(B) ডায়ার কমিটি
(C) চেমসফোর্ড কমিটি
(D) রাওলাট কমিটি
28. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডকে কসাইখানার গণহত্যার সঙ্গে সমতুল্য বলেন-
(A) সি. এফ. অ্যান্ড্রুজ ✔
(B) গান্ধিজি
(C) চার্চিল
(D) সুভাষচন্দ্র বসু
29. শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতির জন্য সরকার নিয়োগ করে-
(A) সাইমন কমিশন
(B) সিডিশন কমিশন
(C) অ্যাওয়ার্থ কমিশন
(D) হুইটলি কমিশন ✔
30. ভারতের প্রথম ‘ট্রেড ইউনিয়ন’ কোন্টি?
(A) গিরনি কামগার ইউনিয়ন
(B) নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন
(C) ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস
(D) মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন ✔
31. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া একজন বিদেশি-
(A) মুজাফ্ফর আহমেদ
(B) এসএ ডাঙ্গে
(C) ফিলিপ স্প্যাট ✔
(D) কেউ নয়
32. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত নন-
(A) এস এ ডাঙ্গে
(B) মুজাফ্ফর আহমেদ
(C) সোমনাথ লাহিড়ী ✔
(D) ফিলিপ স্প্র্যাট
33. মিরাট ষড়যন্ত্র ঘটে-
(A) ১৯২৯ খ্রি. ✔
(B) ১৯৩১ খ্রি.
(C) ১৯৪১ খ্রি.
(D) ১৯৩০ খ্রি.
34. ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়-
(A) কলকাতায়
(B) মাদ্রাজে
(C কানপুরে ✔
(D) লাহোরে
35 . ভারতে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়-
(A) ১৯৩০ খ্রি.
(B) ১৯২৫ খ্রি. ✔
(C)১৯২৭ খ্রি.
(D) ১৯৯৯ খ্রি.
36. গান্ধিজি কোন্ আইনকে “উকিল নেহি, দলিল নেহি, আপিল নেহি” বলে উল্লেখ করেন-
(A) ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনকে
(B) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো আইনকে
(C) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের রাওলাট আইনকে ✔
(D) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনকে
37. রাওলাট আইনকে ‘ভয়াবহ ভ্রান্তি’ বলে অভিহিত করে-
(A) আনন্দবাজার পত্রিকা
(B) অমৃতবাজার পত্রিকা ✔
(D) হিন্দু পত্রিকা
(D) কেশরী পত্রিকা
38. রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে যে ‘সত্যাগ্রহ সভা’ প্রতিষ্ঠিত হয় তার সভাপতি হয়েছিলেন-
(A) সিডনি রাওলাট
(B) ড. সত্যপাল ✔
(C) মহাত্মা গান্ধি
(D) মহম্মদ ইকবাল
39. গান্ধিজি রাওলাট সত্যাগ্রহ প্রত্যাহার করে নেন-
(A) এপ্রিল, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
(B) মে, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
(C) জুন, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
(D) জুলাই, ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ✔
40. কতজন শ্রমিক নেতাকে মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করা হয়?
(A) ১৩ জন
(B) ২৩ জন
(C) ৩০ জন
(D) ৩৩ জন ✔
41. ব্রিটিশ সরকার কমিউনিস্ট পার্টি ও তার সকল শাখা সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে-
(A) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ✔
(D) ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে
42. ‘সোশ্যালিস্ট’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-
(A) ডাঙ্গে ✔
(B) সিঙ্গারাভেল্লু চেট্টিয়ার
(C) মুজাফ্ফর আহমেদ
(D) পিসি জোশি
43. দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা ছিলেন-
(A) আবুল কালাম আজাদ
(B) আগা খাঁ ✔
(C) সৈয়দ আহমেদ খান
(D) খান আবদুল গফ্ফর খান
44. ভারতে সর্বপ্রথম বিভাজন ও শাসননীতি কার্যকর করেন-
(A) লর্ড লিটন
(B) লর্ড কার্জন ✔
(C) লর্ড রিপন
(D) কোনোটাই নয়
45. সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ প্রবর্তন করেন-
(A) র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ✔
(B) চার্চি
(C) মহাত্মা গান্ধি
(D) চেমসফোর্ড
46. প্রথম গোলটেবিল বৈঠক হয়
(A) ১৯৩০ খ্রি. ✔
(B) ১৯৩১ খ্রি.
(C) ১৯৩২ খ্রি.
(D) ১৯৩৩ খ্রি.
47. সাইমন কমিশন ও গোলটেবিল বৈঠকগুলির আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে-
(A) ১৯৩১ খ্রি.
(B) ১৯৩৩ খ্রি. ✔
(C) ১৯৩৪ খ্রি.
(D) ১৯৩৫ খ্রি.
48 . সাইমন কমিশনের সুপারিশ, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গোলটেবিল বৈঠকের সুপারিশ অনুযায়ী ভারত শাসন আইন পাস করা হয়-
(A) ১৯০৯ খ্রি.
(B) ১৯১৯ খ্রি.
(C) ১৯৩৫ খ্রি. ✔
(D) কোনোটিই নয়
49. ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ কার্যকরী করতে গিয়ে ব্রিটিশ সরকার সর্বপ্রথম তোষণ করে-
(A) হিন্দু সম্প্রদায়কে
(B) মুসলিম সম্প্রদায়কে ✔
(C) দলিত সম্প্রদায়কে
(D) শিখ সম্প্রদায়কে
50. ‘ বিভাজন ও শাসননীতি’ কার্যকরী করতে গিয়ে ব্রিটিশ সরকার দ্বিতীয় পর্যায়ে তোষণ করে-
(A) শিখ সম্প্রদায়কে
(B) দলিত সম্প্রদায়কে ✔
(C) মুসলিম সম্প্রদায়কে
(D) হিন্দু সম্প্রদায়কে
51. আর্চিবোল্ড, থিওডোর বেক, মরিসন প্রমুখ কোন্ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলিমদের মনে বিচ্ছিন্নতার
(A) হিন্দু ✔
(B) শিখ
(C) বৌদ্ধ
(D) ইঙ্গ-ভারতীয়
52. ভারতে অনগ্রসর শ্রেণির আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন-
(A) প্রমথরঞ্জন ঠাকুর ✔
(B) যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল
(C) গান্ধিজি
(D) ড. আম্বেদকর
53. ভারতে কোন্ আইনের মাধ্যমে প্রথম সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের নীতি চালু হয়?
(A) রাওলাট আইন
(B) মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন
(C) মর্লে-মিন্টো আইন
(D) লর্ড ক্রসের আইন ✔
54 . ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে সিমলা দৌত্যের উদ্যোগ নিয়েছিলেন-
(A) চিত্তরঞ্জন দাস
(B) মোতিলাল নেহরু
(C) আগা খাঁ ✔
(D) মহম্মদ আলি জিন্না
55. সিমলা বৈঠক হয়-
(A) ১৯০৪ খ্রি.
(B) ১৯০৬ খ্রি. ✔
(C) ১৯০৮ খ্রি.
(D) ১৯১০ খ্রি.
56. ‘দ্য ইন্ডিয়ান মুসলমান’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন-
(A) স্যার সৈয়দ আহমেদ
(B) রিজলে
(C) উইলিয়াম হান্টার ✔
(D) ডেলিসন রস
57. থিয়োডোর বেক যুক্ত ছিলেন-
(A) সতীদাহপ্রথা নিবারণের সঙ্গে
(B) বিধবাবিবাহ প্রচলনের সঙ্গে
(C) হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে
(D) আলিগড় আন্দোলনের সঙ্গে ✔
58. সিমলা ডেপুটেশনে গিয়ে মুসলিম প্রতিনিধি দল কোন্ বড়োলাটের সঙ্গে দেখা করেন?
(A) লর্ড কার্জন
(B) লর্ড মর্লে
(C) লর্ড মিন্টো ✔
(D) লর্ড মন্টেগু
59. কায়েদ-এ-আজম বলা হত-
(A) সৈয়দ আহমেদ খানকে
(B) সলিমুল্লাহকে
(C) মহম্মদ আলি জিন্নাকে
(D) সেনাপ্রধানকে
60. মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল-
(A) উত্তরপ্রদেশে
(B) চম্পারনে
(C) ঢাকায় ✔
(D) মিরাটে
61 . মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠা করেন-
(A) ঢাকার নবাব সলিমউল্লাহ ✔
(B) আগা খাঁ
(C) মহম্মদ আলি জিন্না
(D) লর্ড মিন্টো
62. কোন্ বড়োলটি বঙ্গভঙ্গ রদের কথা ঘোষণা (১৯১১ খ্রিস্টাব্দ) করেন?
(A) লর্ড মিন্টো
(B) লর্ড কার্জন
(C) লর্ড হার্ডিঞ্জ ✔
(D) লর্ড ওয়াভেল
63. মুসলিম লিগের কোন অধিবেশনে পাকিস্তান দাবি করা হয়?
(A) লাহোর ✔
(B) লক্ষ্ণৌ
(C) মাদ্রাজ
(D) পাঞ্জাব
64. কোন ঘটনার প্রতিবাদে গান্ধিজি অনশন করেন?
(A) রাওলাট আইন
(B) জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড ✔
(C) সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি
(D) গোলটেবিল বৈঠক
65. ব্রিটিশ সরকার বড়ো দেশীয় রাজ্যগুলির জন্য কতবার তোপধ্বনির ব্যবস্থা করত?
(A) ৩ বার
(B) ৭ বার
(C) ২১ বার ✔
(D) ২৮ বার
66. সর্ববৃহৎ দেশীয় রাজ্যটি ছিল-
(A) জম্মু ও কাশ্মীর
(B) হায়দ্রাবাদ✔
(C) মহীশূর
(D) মহারাষ্ট্র
67. কোন্ দেশীয় রাজ্য সর্বপ্রথম অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে স্বাক্ষর করে?
(A) অযোধ্যা
(B) তাঞ্জোর
(C) সুরাট
(D) হায়দ্রাবাদ✔
68. লর্ড ডালহৌসি যুদ্ধের দ্বারা কোন্ রাজ্যটি দখল করেন?
(A) পাঞ্জাব ✔
(B) তাঞ্জোর
(C) অযোধ্যা
(D) সাতারা
69. লর্ড ডালহৌসি কুশাসনের অজুহাতে যে রাজ্যটি দখল করেন তা হল-
(A) তাঞ্জোর
(B) নাগপুর
(C) অযোধ্যা ✔
(D) সম্বলপুর
70. স্বত্ববিলোপ নীতি অনুসারে দেশীয় রাজ্যগুলিকে কয় ভাগে বিভক্ত করা হয়?
(A) ২
(B) ৩ ✔
(C) 8
(D) 5
71. স্বত্ববিলোপ নীতি অনুসারে কোন্ ধরনের রাজ্যগুলি কোম্পানির অনুমতি সাপেক্ষে দত্তক গ্রহণ করতে পারত?
(A) কোম্পানির আশ্রিত দেশীয় রাজ্য ✔
(B) কোম্পানির সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য
(C) স্বাধীন দেশীয় রাজ্য
(D) ব্রিটিশ শাসনাধীন রাজ্য
72. কোন্ নীতির দ্বারা নানা সাহেবের বৃত্তি ও ‘পেশোয়া’ উপাধি বাতিল করা হয়?
(A) স্বত্ববিলোপ নীতির ✔
(B) বিভাজন ও শাসননীতির
(C) অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির
(D) সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির
2. Very Short Question Answer
1. মর্লে-মিন্টো আইনে কী বিষয়ে সংরক্ষণ করা হয়?
উত্তর মুসলিমদের পৃথক নির্বাচনের উদ্দেশ্যে তাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয়।
2. ‘মলে-মিন্টো সংস্কার আইন’ কবে পাস হয়?
উত্তর ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ‘মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন’ পাস হয়।
3. ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত-সচিব কে ছিলেন?
উত্তর ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত-সচিব ছিলেন লর্ড মর্লে।
4. মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের ক-টি অংশ ছিল ও কী কী?
উত্তর মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের দুটি অংশ ছিল, যথা- [i] কার্যনির্বাহক পরিষদ ও ii] আইন পরিষদ।
5. মর্লে-মিন্টো কে ছিলেন?
উত্তর ভারত-সচিব ছিলেন জন মর্লে এবং ভারতের বড়োলাট ছিলেন মিন্টো।
6. মর্লে-মিন্টো সংস্কারকে ‘ভারতবাসীর পক্ষে মৃত্যু সমান’ কে বলেছেন?
উত্তর মর্লে-মিন্টো সংস্কারকে ‘ভারতবাসীর পক্ষে মৃত্যু সমান’ বলেছেন গান্ধিজি।
7. মর্লে-মিন্টো আইনকে ‘উদার ও ন্যায্য আইন’ কে বলেছেন?
উত্তর মর্লে-মিন্টো আইনকে ‘উদার ও ন্যায্য আইন’ বলেছেন গোপালকৃয় গোখলে।
8. কোন্ আইনের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠিত হয়?
উত্তর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের ওপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠিত হয়।
9. ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনে কার হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়? অথবা, ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে সর্বোচ্চ ক্ষমতা কার হাতে কেন্দ্রীভূত হয়?
উত্তর ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনে গভর্নর-জেনারেলের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হয়।
10. গোলটেবিল বৈঠকের পর সরকার কবে, কী নামে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে?
উত্তর গোলটেবিল বৈঠকের পর সরকার ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য প্রস্তাবসমূহ’ শিরোনামে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে।
11. নিম্নকক্ষের কার্যকাল কত বছর স্থির করা হয়?
উত্তর নিম্নকক্ষের কার্যকাল স্থির করা হয় ৫ বছর।
12. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন অনুসারে কোন্ দুটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়?
উত্তর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন অনুসারে সিন্ধু ও ওড়িশা নামে দুটি নতুন প্রদেশ গঠন করা হয়।
13. কোন্ আইন অনুসারে ব্রহ্মদেশকে ভারতবর্ষ থেকে আলাদা করা হয়?
উত্তর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনানুসারে ব্রহ্মদেশকে ভারতবর্ষ থেকে আলাদা করা ।
14. রাওলাট আইন কবে পাস হয়?
উত্তর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মার্চ রাওলাট আইন পাস হয়।
15. কোন্ আইনকে গান্ধিজি ‘শয়তানি আইন’ বলেন?
উত্তর রাওলাট আইনকে গান্ধিজি ‘শয়তানি আইন’ বলেন।
16. রাওলাট সত্যাগ্রহের সূচনা কে করেন?
উত্তর গান্ধিজি রাওলাট সত্যাগ্রহের সূচনা করেন।
17. রাওলাট সত্যাগ্রহ কী?
উত্তর গান্ধিজির নেতৃত্বে কুখ্যাত রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে এক দীর্ঘস্থায়ী সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়। এটি ‘রাওলাট সত্যাগ্রহ’ নামে পরিচিত।
18. রাওলাট আইনের প্রতিবাদ করায় সরকার অমৃতসরের কোন্ দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করে?
উত্তর রাওলাট আইনের প্রতিবাদ করায় সরকার অমৃতসরের স্থানীয় নেতা সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড. সত্যপালকে গ্রেপ্তার করে।
19. কবে জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়?
উত্তর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।
20. ব্রিটিশ সরকার কাকে কাইজার-ই-হিন্দ উপাধি প্রদান করেছিল?
উত্তর ব্রিটিশ সরকার গান্ধিজিকে কাইজার-ই-হিন্দ উপাধি প্রদান করেছিল।
21. পাঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ ডায়ারকে কে হত্যা করেন ?
উত্তর পাঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ ডায়ারকে হত্যা করেন উধম সিং (১৩ মা ১৯৪০ খ্রি., লন্ডনে)।
22. কবে ও কোথায় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর কানপুরে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।
23. AITUC কবে গঠিত হয়?
উত্তর ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে AITUC বা নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস গঠিত হয়।
24. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় কতজন শ্রমিক নেতা অভিযুক্ত [HS/17]
উত্তর মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় ৩৩ জন শ্রমিক নেতা অভিযুক্ত হন।
25. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত দুজন ভারতীয় নেতার নাম লেখো।
উত্তর মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত দুজন ভারতীয় নেতার নাম মুজাফফর আহমেদ ও এম এ. ডাঙ্গে।
26. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত দুজন বিদেশির নাম লেখো
উত্তর মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত দুজন বিদেশির নাম হল বেঞ্জামিন ব্র্যাডলি ও ফিলিপ স্প্র্যাট।
27. মিরাট ষড়যন্ত্রের মামলায় অভিযুক্ত দুজন শ্রমিক নেতার নাম লেখো।
উত্তর: মিরাট ষড়যন্ত্রের মামলায় অভিযুক্ত দুজন শ্রমিক নেতা ছিলেন পি সি জোশি ও এসএ ডাঙ্গে।
28 কবে, কোথায় মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা হয় এবং এর প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ৩০ নভেম্বর ঢাকায় মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা হয় এবং এর প্রথম সভাপড়ি ছিলেন আগা খাঁ।
29. মুসলিম লিগের সম্পাদক কারা ছিলেন?
উত্তর: মুসলিম লিগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন মহসিন-উল-মূলক ও ভিকার-উল-মূলক।
30. ‘Now or Never’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘Now or Never’ গ্রন্থটির রচয়িতা চৌধুরি রহমত আলি।
31. কংগ্রেসকে ‘হিন্দু সংগঠন’ বলেছিলেন কে?
উত্তর: কংগ্রেসকে ‘হিন্দু সংগঠন’ বলেছিলেন সৈয়দ আহমেদ খান।
32. কবে এবং কাদের মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর: ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
33. কবে, কোথায় মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা হয় এবং এর প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ৩০ নভেম্বর ঢাকায় মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা হয় এবং এর প্রথম সভাপতি ছিলেন আগা খাঁ।
34. মুসলিম লিগের সম্পাদক কারা ছিলেন?
উত্তর: মুসলিম লিগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন মহসিন-উল-মূলক ও ভিকার-উল-মূলক।
35. ‘Now or Never’ গ্রন্থটির রচয়িতা কে?
উত্তর: ‘Now or Never’ গ্রন্থটির রচয়িতা চৌধুরি রহমত আলি।
36. কংগ্রেসকে ‘হিন্দু সংগঠন’ বলেছিলেন কে?
উত্তর: কংগ্রেসকে ‘হিন্দু সংগঠন’ বলেছিলেন সৈয়দ আহমেদ খান।
37. কবে এবং কাদের মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?
উত্তর: ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
38. কে, কবে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন?
উত্তর: বড়োলাট লর্ড ওয়েলেসলি ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন।
3. Short Question Answer
1. ব্রিটিশ সরকার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে কোন্ আইন পাস করে?
উত্তর ব্রিটিশ সরকার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল্স অ্যাক্ট’ বা ভারতীয় উপদেষ্টা পরিষদ আইন পাস করে
2. কোন্ আইনটি ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ‘কাউন্সিল আইন’ নামে পরিচিত। অথবা, কোন্ আইন ‘কাউন্সিল আইন’ নামে পরিচিত?
উত্তর ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন সাধারণভাবে কাউন্সিল আইন বা মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কার নামে পরিচিত। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া এই আইনের মাধ্যমে ভারতের ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় ভারতীয়দের আরও অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
3. ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন প্রণয়নের দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন প্রণয়নের দুটি কারণ ছিল-[1] মুসলিম লিগের নেতৃবৃন্দ সরকারের কাছে তাদের সদস্যদের পৃথক নির্বাচনের দাবি জানায়। [ii] আইন পরিষদে বেশি সংখ্যায় নির্বাচিত ভারতীয় সদস্য গ্রহণের দাবিতে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সোচ্চার হয়।
4. মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের দুটি উল্লেখযোগ্য শর্ত ছিল- [i] কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৬০ জন করা হয়। [ii] মুসলিম সম্প্রদায়কে পৃথকভাবে সদস্য নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়।
5. মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কারের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর মর্লে-মিন্টো শাসন সংস্কারের দুটি উদ্দেশ্য ছিল-[i] কংগ্রেসের নরমপন্থীদের সরকারের স্বপক্ষে রাখা, [ii] সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে মুসলিম সম্প্রদায়কে জাতীয় আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন রেখে জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করা।
6. ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্যসংখ্যা কত থেকে বাড়িয়ে কত করা হয়?
উত্তর ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্যসংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৬০ করা হয়।
7. ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো আইনে প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যসংখ্যা কত
করা হয়?
উত্তর ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মলে-মিন্টো আইনে বলা হয় যে, প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্যসংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়। মর্লে-মিন্টো আইনের দুটি ত্রুটি ছিল-[i] এই আইনে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কোনো ক্ষমতা বা তাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব ছিল না। [ii] এই আইনের দ্বারা মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে ইন্ধন দেয়।
8. মর্লে-মিন্টো আইনের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো।
উত্তর মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের দুটি প্রধান গুরুত্ব ছিল [1] এই আইনের দ্বারা বড়োলাটের শাসন পরিষদে একজন ভারতীয় সদস্য গ্রহণ করে সরকারি প্রশাসনে ভারতীয়দের যুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়। [ii] শাসনব্যবস্থায় ব্রিটিশ-রাজের সাংবিধানিক রীতিনীতি ও আইনের শাসন যুক্ত হয়।
9. মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের দুটি গুরুত্ব উল্লেখ করো।
উত্তর মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের দুটি প্রধান গুরুত্ব ছিল [1] এই আইনের দ্বারা বড়োলাটের শাসন পরিষদে একজন ভারতীয় সদস্য গ্রহণ করে সরকারি প্রশাসনে ভারতীয়দের যুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়। [ii] শাসনব্যবস্থায় ব্রিটিশ-রাজের সাংবিধানিক রীতিনীতি ও আইনের শাসন যুক্ত হয়।
10. ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা কেন্দ্রীয় আইনসভা কয়টি ভাগে বিভক্ত হয় ও কী কী?
উত্তর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা কেন্দ্রীয় আইনসভা উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ এই দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। উচ্চকক্ষের নাম হয় ‘রাষ্ট্র পরিষদ’ এবং নিম্নকক্ষের নাম হয় ‘আইন পরিষদ’।
11. ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন প্রণয়নের দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন প্রণয়নের দুটি কারণ ছিল- [1] কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি (১৯১৬ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হলে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। [II] প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের জনবল ও অর্থবল ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ভারত-সচিব মন্টেগু যুদ্ধের পর ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে প্রবর্তিত ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু চেমসফোর্ড আইন।
12. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা [1] কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যেসুনির্দিষ্টভাবে ক্ষমতা ও আয় বণ্টন করা হয়। [ii] আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য,কৃষি, সেচ, ভূমিরাজস্ব, যোগাযোগব্যবস্থা প্রভৃতি তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারগুলির হাতে প্রদান করা হয়।
13. ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেণু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা কেন্দ্রে কীরূপ আইনসভা গঠন করা হয়?
উত্তর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা হয়। এর নিম্নকক্ষের নাম হয় ‘কেন্দ্রীয় আইনসভা’ এবং উচ্চকক্ষের নাম হয় ‘রাষ্ট্রীয় পরিষদ’।
14. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনে কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য-সংখ্যা কত রাখা হয়?
উত্তর মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনে কেন্দ্রীয় আইনসভার সদস্য-সংখ্যা উচ্চকক্ষে ৬০ ও নিম্নকাক্ষে ১৪০ রাখা হয়।
15. ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টে-ফোর্ড সংস্কারে প্রাদেশিক সরকারের সংরক্ষিত ক্ষমতা কোনগুলি ছিল?
উত্তর প্রশাসন, বিচার, শ্রম প্রভৃতি। প্রাদেশিক গভর্নর ও তাঁর কার্যনির্বাহক সভার ওপর এই বিষয়গুলি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
16. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনে হস্তান্তরিত বিষগুলি কী ছিল?
উত্তর মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনে হস্তান্তরিত বিষয়গুলি ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বায়ত্তশাসন প্রভৃতি। এই বিষয়গুলি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাদেশিক মন্ত্রীদের হাতে।
17. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো।
উত্তর মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দুটি ত্রুটি ছিল-[i] এই আইনের দ্বারা ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। [ii] প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কেন্দ্রে ভাইসরয় এবং প্রদেশে গভর্নর ছিলেন সর্বেসর্বা।
18. মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দুটি পুরুত্ব উল্লেখ করো।
উত্তর মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দুটি গুরুত্ব ছিল [1] এই আইনের দ্বারা ভারতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সূচনা হয় এবং ভোটাধিকারের সম্প্রসারণ ঘটে। [ii] ভারতীয় প্রতিনিধিরা আইনসভায় প্রবেশের সুযোগ পেলে তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও শিক্ষালাভের সুযোগ ঘটে।
19. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন প্রণয়নের দুটি কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন প্রণয়নের দুটি কারণ ছিল-[1] ভারতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদের অগ্রগতির ফলে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করার কথা চিন্তা করতে শুরু করে। [ii] এই সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লবী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায় এবং বিপ্লবীদের অতি সক্রিয়তায় সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
20. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রে একটি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে। [ii] কেন্দ্রে পাঁচ বছর মেয়াদের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা হবে।
21. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে কী ধরনের আইনসভা গঠনের কথা বলা হয়?
উত্তর পাঁচ কার পোদের ভারত শাসন আইনে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনেরে কথা বলা হয়। এর উচ্চকক্ষের নাম কাউন্সিল অব স্টেটস এবং নিম্নকক্ষের নাম ফেডারেল অ্যাসেম্বলি
22. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে গভর্নর- জেনারেলের হাতে কীরূপ ক্ষমতা দেওয়া হয়?
উত্তর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে গভর্নর-জেনারেলের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়। [i] তিনি আইনসভা ও মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ উপেক্ষা করার এবং তাঁদের কাছে। হস্তক্ষেপ করার অধিকার পান। [ii] তিনি কিছু ‘স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা’ ও ‘স্ববিবেচনাপ্রসূত। ক্ষমতা’ ভোগ করতেন।
23. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বিভাজনের জন্য কয়টি তালিকা তৈরি করা হয় ও কী কী?
উত্তর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বিভাজনের জন্য ৩টি তালিকা তৈরি করা হয়, যথা-[i] কেন্দ্রীয় তালিকা, [ii] প্রাদেশিক তালিকা। [iii] যুগ্ম তালিকা।
24. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা প্রদেশে কী ধরনের আইনসভা গঠন করা হয়?
উত্তর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা প্রদেশে এককক্ষ এবং দ্বিকক্ষ-উত্তা ধরনের আইনসভা গঠন করা হয়। বাংলা-সহ ছয়টি প্রদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট এবং অবশিষ্ট পাঁচটি প্রদেশে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন করা হয়।
25. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইন অনুসারে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সর্বোচ্চ সদস্যসংখ্যা কত স্থির করা হয়?
উত্তর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন অনুসারে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের উচ্চকক্ষও অ নিম্নকক্ষের সদস্যসংখ্যা যথাক্রমে ২৬০ জন ও ৩৭৫ জন স্থির করা হয়।
26. উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষে কতজন নির্বাচিত ও কতজন মনোনীত সদস্য ছিলেন?
উত্তর উচ্চকক্ষে ১৫৬ জন নির্বাচিত ও ১০৪ জন দেশীয় রাজ্য থেকে মনোনীত সদস্য ছিলেন তুল নিম্নকক্ষে ২৫০ জন ব্রিটিশ ভারত থেকে নির্বাচিত ও ১২৫ জন দেশীয় রাজ্য থেকে মনোনীত ছিলেন।
27. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের নাম কী?
উত্তর কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের উচ্চকক্ষের নাম হয় Council of State বা রাষ্ট্রীয় পরিষদ এবং নিম্নকক্ষের নাম হয় House of Assembly বা ব্যবস্থা পরিষদ।
28. কোন্ আইনে এবং কোন্ চুক্তি অনুসারে তপশিলি সম্প্রদায়ের সদস্যদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়?
উত্তর হয় ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে পুনা চুক্তি (১৯৩২ খ্রি.) অনুসারে তপশিলি সম্প্রদায়ের সদস্যদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
29. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দুটি ত্রুটি উল্লেখ করো।
উত্তর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের উল্লেখযোগ্য দুটি ত্রুটি ছিল–[i] এই আইনে ভোটাধিকারের প্রসার ঘটানো হয়নি কেবলমাত্র ব্রিটিশ ভারতের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মানুষ ভোটদানের অধিকার পেয়েছিল। [ii] গভর্নর-জেনারেলের হাতে অতিরিক্ত $ ক্ষমতা দেওয়ার ফলে আইনসভার নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
30. রাওলাট কমিশন কী?
উত্তর ভারতীয়দের ব্রিটিশবিরোধী গণ-আন্দোলন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বন্ধ উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওল সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে। এটি ‘রাওলাট কমি ‘সিডিশন কমিশন’ নামে পরিচিত।
31. রাওলাট কমিশনের সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর রাওলাট কমিশনের সভাপতি ছিলেন ইংল্যান্ডের বিচারপতি সিডনি রাওলাট।
32. রাওলাট আইন কী?
উত্তর রাওলাট কমিশন বা সিডিশন কমিশন-এর ভিত্তিতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভায় এক দমনমূলক বিল উত্থাপিত হয় এবং ভারতীয় সদস্যদের প্রতিবাদ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ১৮ মার্চ বিলটি আইনে পরিণত হয়। এটি ‘রাওলাট আইন’ (Rowlatt Act) নামে পরিচিত।
33. রাওলাট আইন প্রবর্তনের দুটি কারণ উল্লেখ করো। অথবা, রাওলাট আইনের পিছনে কী উদ্দেশ্য ছিল?
উত্তর রাওলাট আইন প্রবর্তনের দুটি প্রধান কারণ হল-[i] ব্রিটেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পরাজিত তুরস্কের খলিফার ক্ষমতা খর্ব করলে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় সরকার-বিরোধী আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়। [1] প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, খরা, মহামারি, বেকারত্ব প্রভৃতি ঘটনার ফলে ভারতের সর্বত্র গণ-আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
34. রাওলাট আইন করে পাস হয়?
উত্তর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৮ মার্চ রাওলাট আইন পাস হয়।
35. রাওলাট আইনের দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর রাওলাট আইনে বলা হয় যে-[i] ব্রিটিশবিরোধী সব ধরনের প্রচারকার্যকে দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। [ii] সন্দেহভাজন যে-কোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে এবং বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল তাদের বন্দি রাখা বা নির্বাসন দেওয়া যাবে।
36. রাওলাট আইনের প্রতিবাদে কারা আইন পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করেন?
উত্তর: রাওলাট আইনের প্রতিবাদে মহম্মদ আলি জিন্না, মদনমোহন মালব্য এবং মাজহার-উল- হক আইন পরিষদের সদস্যপদ ত্যাগ করেন।
37 . জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড কী?
উত্তর রাওলাট আইন ও অন্যান্য কয়েকটি ঘটনার প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে মানুষ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভায় যোগদান করলে ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ সমাবেশের নিরস্ত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে কমপক্ষে এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড নামে পরিচিত।
38. জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে কার নির্দেশে গুলি চলে?
উত্তর পাঞ্জাবের মুখ্য প্রশাসক লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ ডায়ারের নির্দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে গুলি চলে।
39. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডে কত মানুষের মৃত্যু হয়?
উত্তর জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডে সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৩৭৯ জন এবং আহতের সংখ্যা ১২০০ জন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিশু, নারী-সহ অন্তত ১০০০ -এরও বেশি মানুষ ঘটনাস্থলে মারা গিয়েছিল।
40. জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের সময়ে প্রধান প্রশাসক কে ছিলেন?
উত্তর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের সময়ে পাঞ্জাবের প্রধান বা মুখ্য প্রশাসক ছিলেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও’ ডায়ার।
41. কে, কোন ঘটনার প্রতিবাদে ইংরেজদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন? অথবা, কে, কোন ঘটনার প্রতিবাদে নাইট উপাধি ত্যাগ করেন? অথবা, কোন্ ঘটনার প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন?
উত্তর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইংরেজদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন (১৯১৯ খ্রি.)।
42. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা কী?
উত্তর কমিউনিস্ট পার্টির কার্যকলাপ ও তাদের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক আন্দোলনকে স্তদ্ধ করতে সরকার ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ৩২ জন কমিউনিস্ট শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। এটি ‘মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে পরিচিত। মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান অভিযুক্ত কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন মুজাফ্যদ
43. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান অভিযুক্ত কয়েকজন কমিউনিস্ট নেতার নাম লেখো।
উত্তর আহমেদ, অমৃত শ্রীপাদ ডাঙ্গে, শিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, ধরণী গোস্বামী, পি. সি. যোশি গঙ্গাধর অধিকারী, ফিলিপ স্প্যাট প্রমুখ।
44. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান অভিযুক্ত কয়েকজন বিদেশি বা ব্রিটিশ নাগরিকের নাম লেখো। অথবা, মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় কোন্ ব্রিটিশ নাগরিককে অভিযুক্ত করা হয়?
উত্তর মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন ব্রিটিশ নাগরিক ছিলেন। এঁর হলেন ফিলিপ স্প্ল্যাট, বেঞ্জামিন ফ্রান্সিস ব্র্যাডলি এবং লেস্টার হাচিনসন।
45. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার দুটি ফলাফল উল্লেখ করো।
উত্তর মিরাট ষড়যন্ত্র মামলার উল্লেখযোগ্য দুটি ফল ছিল- [i] এই মামলার রায়ে কমিউনিস্ট পার্টির যাবতীয় প্রচারকার্য নিষিদ্ধ করা হয়। [ii] বিভিন্ন কমিউনিস্ট নেতার দীর্ঘমেয়াদের কারাদণ্ড ঘোষণা করা হয়।
46. কে, কবে ভারতে প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর বি. পি. ওয়াদিয়া এবং ভি. কে. মুদালিয়ার ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করেন।
47. ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ কার্যকর করার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত দুটি পদক্ষেপ উল্লেখ করো।
উত্তর: ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ কার্যকর করতে গিয়ে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেম্প মধ্যে প্রধান ছিল-[i] সরকার সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ক চালু করে। [ii] মুসলিমদের জন্য সরকার পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে।
48. ‘সিমলা ডেপুটেশন’ কী?
উত্তর: মুসলিম নেতা আগা খাঁর নেতৃত্বে ৩৫ জন ধনী অভিজাত মুসলিমের একটি প্রতিনিসিয় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর সিমলায় বড়লাট লর্ড মিন্টোর সঙ্গে দেখা করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। এটি সিমল ডেপুটেশন’ বা ‘সিমলা দৌতা’ নামে পরিচিত।
49. ১৯১৬ সালের লক্ষ্ণৌ কংগ্রেসের গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর: ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে চরমপন্থীরা আবার কংগ্রেদে ফিরে এলে নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে। ফলে কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
50. লক্ষ্ণৌ চুক্তি (১৯১৬ খ্রি.)-র দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর: লক্ষ্ণৌ চুক্তির দ্বারা- [i] কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ যৌথভাবে সরকারের কাছে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি পেশ করতে রাজি হয়। [ii] মুসলিম লিগের পৃথক নির্বাচনের দাবি কংগ্রেস মেনে নেয়।
51. গান্ধিজি কেন অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন? অথবা, অসহযোগ আন্দোলন কবে এবং কেন প্রত্যাহার করা হয়?
উত্তর: অসহযোগ আন্দোলনের কিছু আন্দোলনকারী উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরায় বেশ কিছু পুলিশকে পুড়িয়ে মারে (৫ ফ্রেব্রুয়ারি, ১৯২২ খ্রি.)। এই সহিংসার ফলে পাপিজি আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন (২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯২২ খ্রি.)।
52. সাইমন কমিশন কী উদ্দেশ্যে কবে গঠিত হয় এবং কারা এই কমিশন বর্জন করেন?
উত্তর: ভারতের নতুন সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন গঠিত হয়। সমগ্র কংগ্রেস এবং জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগের একাংশ সাইমন কমিশন বর্জন করেন।
53. ব্রিটিশ সরকার কী উদ্দেশ্যে ভারতে ‘বিভাজন ও শাসননীতি চালু করে,
উত্তর: ভারতীয়দের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করে এদেশে নিজেদের শাসনকে নিরাপদ ভারতীয়্যায়ী করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ভারতে ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ চালু করে।
54. ভারতে সর্বপ্রথম কে, কোথায় ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ কার্যকরী করেন?
উত্তর: ভারতে সর্বপ্রথম জন লরেন্স (১৮৬৪-৬৯ খ্রি.) পাঞ্জাবের সেনাবাহিনীতে ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ কার্যকরী করেন।
55. শাসননীতি শার্মননীতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গৃহীত দুটি পদক্ষেপ উল্লেখ করো।
উত্তর: ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ কার্যকর করতে গিয়ে সরকার যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেগুলির মধ্যে প্রধান ছিল-[i] সরকার সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করে। [ii] মুসলিমদের জন্য সরকার পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে।
56. ‘সিমলা ডেপুটেশন’ কী?
উত্তর: মুসলিম নেতা আগা খাঁ-র নেতৃত্বে ৩৫ জন ধনী অভিজাত মুসলিমের একটি প্রতিনিধি দল ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর সিমলায় বড়লাট লর্ড মিন্টোর সঙ্গে দেখা করেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষার দাবি জানিয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। এটি ‘সিমলা ডেপুটেশন’ বা ‘সিমলা দৌত্য’ নামে পরিচিত।
57. সিমলা সাক্ষাৎকারে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন কে?
উত্তর: সিমলা সাক্ষাৎকারে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আগা খাঁ।
58. সিমলা ডেপুটেশনের দুটি দাবি উল্লেখ করো।
উত্তর: সিমলা ডেপুটেশনের দুটি উল্লেখযোগ্য দাবি ছিল-[i] চাকরিতে বেশি সংখ্যায় মুসলিমদের নিয়োগ করতে হবে [ii] আইনসভায় মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
59. ব্রিটিশ শাসনকালে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের নাম লেখো।
উত্তর: ব্রিটিশ শাসনকালে হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি সংগঠনের নাম হল- ‘ভারত ধর্মমন্ডল’, ‘পাঞ্জাব হিন্দুসভা’, ‘হিন্দু মহাসভা’ প্রভৃতি।
60. ১৯১৬ সালের লক্ষ্ণৌ কংগ্রেসের গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর: ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে চরমপন্থীরা আবার কংগ্রেসে ফিরে এলে নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে। ফলে কংগ্রেসের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
61. লক্ষ্ণৌ চুক্তি (১৯১৬ খ্রি.)-র দুটি শর্ত উল্লেখ করো।
উত্তর: লক্ষ্ণৌ চুক্তির দ্বারা- [i] কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ যৌথভাবে সরকারের কাছে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি পেশ করতে রাজি হয়। [ii] মুসলিম লিগের পৃথক নির্বাচনের দাবি কংগ্রেস মেনে নেয়।
62. গান্ধিজি কেন অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন? অথবা, অসহযোগ আন্দোলন কবে এবং কেন প্রত্যাহার করা হয়?
উত্তর: অসহযোগ আন্দোলনের কিছু আন্দোলনকারী উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরায় বেশ কিছু পুলিশকে পুড়িয়ে মারে (৫ ফ্রেব্রুয়ারি, ১৯২২ খ্রি.)। এই সহিংসার ফলে গান্ধিজি আন্দোলন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন (২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯২২ খ্রি.)।
63. সাইমন কমিশন কী উদ্দেশ্যে কবে গঠিত হয় এবং কারা এই কমিশন বর্জন করেন?
উত্তর: ভারতের নতুন সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন গঠিত হয়। সমগ্র কংগ্রেস এবং জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগের একাংশ সাইমন কমিশন বর্জন করেন।
64. ভারতীয়রা সাইমন কমিশন বর্জন করেছিল কেন?
উত্তর: ভারতবাসীর শাসনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য গঠিত সাইমন কমিশনে কোনো ভারতীয় সদস্য না থাকায় এবং ভারতবাসী নিজেদের জন্য কতটা শাসন সংস্কারের প্রয়োজন, তা নির্ধারণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় সাইমন কমিশন বর্জন করেছিলেন।
65. কে, কবে ‘চোদ্দো দফা দাবি’ ঘোষণা করেন এবং এর মূল উদ্দেশ্য কী ছিল? অথবা, কে, কবে চোদ্দো দফা দাবি পেশ করেন?
উত্তর: মুসলিম লিগ নেতা মহম্মদ আলি জিন্না ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত মুসলিম লিগের অধিবেশনে তাঁর ‘চোদ্দো দফা দাবি’ ঘোষণা করেন। চোদ্দো দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের মুসলিমদের স্বার্থরক্ষা করা।
66. জিন্নার চোদ্দো দফা দাবির প্রধান চারটি দাবি উল্লেখ করো।
উত্তর: জিন্নার চোদ্দো দফা দাবির প্রধান চারটি দাবি ছিল–[i] ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন, [ii] প্রদেশগুলিতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন, [iii] কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলিমদের জন্য ১/৩ অংশ আসন সংরক্ষণ, [iv] মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
67. কে, কবে ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি’ ঘোষণা করেন এবং এর উদ্দেশ্য কী ছিল, ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি’ প্রয়োগের উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি’ ঘোষণা করেন। এই নীতির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করে ব্রিটিশবিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে দুর্বল করা এবং এদেশে ব্রিটিশ শাসনকে নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করা।
68. সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি কী?
উত্তর: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন নীতি ঘোষণা করেন তার নাম সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি। এই নীতির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলির মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করা।
69. ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি’র ঘোষিত দুটি উল্লেখযোগ্য নীতি উল্লেখ করো।
উত্তর: ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি’র দুটি নীতি হল- [1] মুসলিম, শিখ, ভারতীয় খ্রিস্টান, ইউরোপীয় প্রভৃতি সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। [ii] হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু ও অনগ্রসর হিন্দু-এই দুই ভাগে বিভক্ত করে তাদের পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
70. ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের পুনা চুক্তি কেন হয়েছিল?
উত্তর: ব্রিটিশ সরকার ভারতের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতির (১৯৩২ খ্রি.) দ্বারা হিন্দু দলিতদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেয়। এর প্রতিবাদে গান্ধিজি অনশন শুরু করলে দলিত নেতা ড. আম্বেদকর দলিতদের পৃথক নির্বাচনের অধিকারের দাবি থেকে সরে এসে গান্ধিজির সঙ্গে ‘পুনা চুক্তি’ (১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষর করেন।
71. মাহাদ মার্চ কী?
উত্তর: অস্পৃশ্যরা যাতে জনসাধারণের জলাশয় থেকে জল নিতে পারে, সেই দাবিতে আম্বেদকরের নেতৃত্বে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ মার্চ বোম্বাইয়ের কোলাবায় চৌদার জলাশয়ে যে পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়, তা ‘মাহাদ মার্চ’ (Mahad March) নামে পরিচিত।
72. কার নেতৃত্বে মনুস্মৃতি গ্রন্থ আগুনে পোড়ানো হয়?
উত্তর: আম্বেদকরের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের বর্ণবৈষম্যের ভিত্তি মনুস্মৃতি নামে প্রাচীন গ্রন্থটির কয়েকটি কপি আগুনে পোড়ানো হয়।
73. কার নেতৃত্বে কবে কলারাম মন্দির আন্দোলন শুরু হয়?
উত্তর: আম্বেদকর নাসিকে কলারাম মন্দিরে নিম্নবর্গের হিন্দুদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আন্দোলন শুরু করেন। তাঁর ডাকে অন্তত ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক এই মন্দিরে শ্রীরামচন্দ্রের বিগ্রহে পুজো দেওয়ার দাবি জানায়।
74. মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশনের গুরুত্ব কী?
উত্তর: মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশনের পর থেকে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের ঐক্য বিনষ্ট হয়। এই অধিবেশনেই প্রথম পৃথক পাকিস্তানের দাবি ওঠে এবং লিগ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে সরে এসে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাজনৈতিক দাবিদাওয়া আদায়ের চেষ্টা করে।
75. কোন্ আইনে মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রথম পৃথক ব্রি নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়?
উত্তর: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড কর্তৃক ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা (Communal Award) নীতি ঘোষণার দ্বারা মুসলিম সম্প্রদায়কে প্রথম পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়।
4. Long Question Answer
1/ মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের ত্রুটিগুলি কী ছিল? এই আইনের গুরুত্বগুলি উল্লেখ করো। 5+3
উত্তর: মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের ত্রুটি
1. বড়োলাটের চূড়ান্ত ক্ষমতা: মর্লে-মিন্টো আইনের মাধ্যমে বড়োলাটের আইনসভার হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছিল। এই আইনের দ্বারা বড়োলাট আইনসভার যে-কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সংশোধন বা বাতিল করার অধিকারী ছিলেন। বড়োলাট নিজের পছন্দে আইনসভার বেসরকারি সদস্যদের মনোনীত করতেন এবং তারা বড়োলাটের ইচ্ছানুসারে কাজ করতেন। এর ফলে কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে সরকারি ও মনোনীত সদস্যরা মিলে আইন পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশে পরিণত হন। এভাবে প্রকৃতপক্ষে বড়োলাটের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়।
2. ভোটাধিকার: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা ভারতীয়দের সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়নি। এর দ্বারা মুষ্টিমেয় ভারতীয়কে ভোটাধিকার দেওয়া হয়। তা ছাড়া নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কোনো ক্ষমতা বা তাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব ছিল না। তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের সম্পূর্ণ ক্ষমতা ছিল সরকারের হাতে।
3. অবশিষ্ট অধিকারহীনতা: এই আইনের মাধ্যমে দেশীয় রাজ্য, সামরিক বিভাগ, বিদেশনীতি প্রভৃতি বিষয়ে কোনো প্রস্তাব আনার অধিকার কক্ষ ও আইনসভার হাতে ছিল না। দায়িত্বশীলতার অভাব: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা কেন্দ্রে এবং প্রদেশে নির্বাচিত ভারতীয় জনপ্রতিনিধিদের বিশেষ কোনো গুরুত্ব স্বীকৃত হয়নি। ফলে এই আইন ভারতে কোনো দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা গড়ে লেন। তুলতে ব্যর্থ হয়।
4 সাম্প্রদায়িক নির্বাচন: মর্লে-মিন্টো আইন দ্বারা সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সাম্প্রদায়িকতাকে ইন্ধন দেয়। ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার এই আইনকে ‘পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রথম সরকারি উদ্যোগ’ বলে অভিহিত করেছেন।
5 কংগ্রেসের ক্ষোভ: মর্লে-মিন্টো আইন কংগ্রেসের চরমপন্থী ও নরমপন্থী উভয় গোষ্ঠীকেই অসন্তুষ্ট করে। এই আইন চরমপন্থী অংশকে – জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নিলে চরমপন্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। অন্যদিকে নরমপন্থীদের দাবিদাওয়াও এই আইনের দ্বারা পূরণ করা হয়নি।
মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের গুরুত্ব
1. বেসরকারি সদস্য বৃদ্ধি: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারাই ভারতের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে প্রথম বেসরকারি সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এর দ্বারা ভারতে প্রগতিশীল শ্রেণি সরকারের আইন রচনার কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়।
2. শাসনবিভাগে অংশগ্রহণ: মলে-মিন্টো আইনের দ্বারা বড়োলাটের শাসন পরিষদে একজন ভারতীয় সদস্য গ্রহণ করা হয়। এর ফলে সরকারি প্রশাসনে ভারতীয়দের যুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়।
3. স্বায়ত্তশাসনের সোপান: ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে মর্লে-মিন্টো আইন। ব্রিটেনের সাংসদ হেনরি কটন এই আইনকে ভারতে স্বায়ত্বশাসন প্রবর্তনের লক্ষ্যে একটি ধীর পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন।
4 আইনের শাসন: ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তনের আগে ভারতে মোগল যুগ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন প্রচলিত ছিল, তার পরিবর্তে মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন ভারতে সাংবিধানিক রীতিনীতির প্রচলন ও আইনের শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে।
প্রশ্ন ২ ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইনের শর্তাবলি আলোচনা
করো। এই আইনের ত্রুটিগুলি লেখো।
■ সূচনা: ভারতীয় আইন পরিষদে বেশি সংখ্যায় নির্বাচিত ভারতীয় সদস্য গ্রহণ ও তাদের হাতে বেশি পরিমাণে ক্ষমতা দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসে চরমপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান, ক্রমে বিপ্লবী • সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের প্রসার, বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলন প্রভৃতি ঘটনা সরকারকে যথেষ্ট বিপাকে ফেলে দেয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করা, কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতৃবৃন্দ এবং মুসলিম সম্প্রদায়কে খুশি করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ভারত সচিব জন মর্লে এবং বড়োলাট লর্ড মিন্টো একটি শাসন সংস্কারের পরিকল্পনা করেন। ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে এই শাসন সংস্কার প্রবর্তন করা হয়- যা মর্লে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইন বা ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইন নামে পরিচিত।
উত্তর: মর্লে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইনের শর্তাবলি
১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত মর্লে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইনের শর্তাবলির দুটি দিক ছিল। যথা-কার্যনির্বাহক পরিষদ এবং আইন পরিষদ।
1. কার্যনির্বাহক পরিষদ: মর্লে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইনে কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন প্রদেশে কার্যনির্বাহক পরিষদ গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
i. কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ: এই আইন অনুসারে কেন্দ্রে বড়োলাটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদে একজন করে ভারতীয় প্রতিনিধি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই হিসেবে প্রথম ভারতীয় সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ।
ii. প্রাদেশিক কার্য নির্বাহক পরিষদ: মলে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইন অনুসারে প্রতিটি প্রাদেশিক পরিষদেও একজন করে ভারতীয় প্রতিনিধি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বাংলা, বোম্বাই, মাদ্রাজ প্রভৃতি প্রদেশের গভর্নরের কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১ থেকে বাড়িয়ে ৪ জন করা হয়। কিন্তু বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল না। রাজা কিশোরীলাল গোস্বামীকে বাংলার কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়।
2 আইন পরিষদ: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক ংখ্যা আইন পরিষদের গঠন ও ক্ষমতার বিষয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
i. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ: কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৬০ জন করা হয়। এই আইন পরিষদ বাজেট তৈরি, বাজেট পাস, বাজেট সম্পর্কে আলোচনা, ভোটদানের অধিকার এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ করার ক্ষমতা পায়। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে মুসলিম সম্প্রদায়কে আলাদাভাবে সদস্য নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়।
ii. প্রাদেশিক আইন পরিষদ: প্রাদেশিক আইন পরিষদগুলির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০-এর মধ্যে রাখা এবং নির্বাচিত সদস্য সংখ্যার তুলনায় মনোনীত সদস্যদের সংখ্যা সর্বদা বেশি থাকবে বলে সিদ্ধান্ত ছিল- নেওয়া হয়। এই পরিষদগুলিও বাজেট তৈরি, বাজেট পাস, বাজেট সম্পর্কে আলোচনা ও ভোটদানের অধিকার পায়। গভর্নর-জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নরগণ তাঁদের অপছন্দের যে-কোনো সদস্যকে আইন পরিষদ থেকে অপসারণের অধিকার পান।
মলে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইনের ত্রুটি
TOPIC [A]-এর 1 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের ত্রুটি’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।
প্রশ্ন 3 ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত ভারত শাসন আইন বা মন্টেগু- চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের বিভিন্ন শর্তগুলি উল্লেখ করো।
সূচনা: ভারত-সচিব মন্টেগু ও ভাইসরয় লর্ড চেমসফোর্ডের যৌথ রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে নতুন ভারত শাসন আইন পাস হয়। এটি মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার বা ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত।
• মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের শর্তাবলি
• ক্ষমতা বণ্টন: মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা ও আয় সুনির্দিষ্টভাবে বণ্টিত হয়।
i. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে দেশরক্ষা, রেলব্যবস্থা, মুদ্রাব্যবস্থা, বৈদেশিক সম্পর্ক, আয়কর, শুল্ক, বাণিজ্য, ডাকব্যবস্থা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
ii. প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা: প্রাদেশিক সরকারগুলির হাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, পুলিশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সেচ, ভূমিরাজস্ব, যোগাযোগব্যবস্থা প্রভৃতি তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
2. কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ: মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা ৮ জন সদস্য নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ বা বড়োলাটের শাসন পরিষদ (Executive Council) গঠিত হয়। এই ৮ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জন সদস্য হবেন ভারতীয়। এই শাসন পরিষদের সহায়তায় বড়োলাট শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান। বড়োলাট তাঁর কার্যাবলির জন্য ভারতীয় প্রদায়কে আইনসভার কাছে নয়, ভারত-সচিব ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়ী থাকতেন।
ও কেন্দ্রীয় আইনসভা: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের দ্বারা কেন্দ্রীয় আইনসভা গঠন করা হয়। এর বিশেষ দিকগুলি সিদ্ধান্ত ছিল-
1. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা: মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। এর নিম্নকক্ষের নাম হয় ‘কেন্দ্রীয় আইনসভা’ (Legislative Assembly) এবং উচ্চকক্ষের নাম হয় ‘রাষ্ট্রীয় পরিষদ’ (Council of States) |
ii. সদস্যসংখ্যা: উচ্চকক্ষের ৬০ জন সদস্যের মধ্যে ২৬ জন ছিলেন বড়োলাটের দ্বারা মনোনীত ও ৩৪ জনকে নির্বাচিত এবং নিম্নকক্ষের ১৪০ (পরে ১৪৫) জন সদস্যের মধ্যে ৪০ জনকে মনোনীত এবং ১০০ (পরে ১০৫) জনকে নির্বাচিত করার ব্যবস্থা করা হয়। উভয় কক্ষে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
iii. আইন প্রণয়ন: আইনসভার সদস্যরা সভায় কোনো বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন, বিতর্কে যোগদান, ছাঁটাই বা সংশোধনী প্রস্তাব পেশ প্রভৃতির অধিকার পেলেও বৈদেশিক নীতি, সামরিক বিভাগ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বড়োলাটের পূর্ব অনুমতি ছাড়া আলোচনার অধিকার পেতেন না। বড়োলাট আইনসভার যে-কোনো আইন সংশোধন বা বাতিল করতে পারতেন। তিনি নিজেও অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন প্রণয়ন করতে পারতেন।
4 প্রাদেশিক দ্বৈতশাসন: মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা প্রদেশগুলিতে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। এর ৭০ শতাংশ সদস্য নির্বাচিত ও ৩০ শতাংশ সদস্য গভর্নরের দ্বারা মনোনীত করার ব্যবস্থা হয়। প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্বগুলিকে দুইভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা- সংরক্ষিত বিষয় এবং হস্তান্তরিত বিষয়। সংরক্ষিত বিষয়গুলি ছিল আইন- শৃঙ্খলা, অর্থ, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার, শ্রম প্রভৃতি। প্রাদেশিক গভর্নর ও তাঁর কার্যনির্বাহক সভার ওপর এই বিষয়গুলি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। হস্তান্তরিত বিষয়গুলি ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বায়ত্বশাসন প্রভৃতি। এই বিষয়গুলি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাদেশিক মন্ত্রীদের হাতে। মন্ত্রীরা তাদের কাজকর্মের জন্য প্রাদেশিক আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন। হস্তান্তরিত বিষয়ে প্রাদেশিক আইনসভার দ্বারা পাস করা কোনো আইন গভর্নর বা গভর্নর-জেনারেল বাতিল করতে পারতেন। এভাবে এই আইনের মাধ্যমে লাটি ভয়ে পদেশগুলিতে একদিকে গভর্নরের কার্যনির্বাহক সভা এবং অন্যদিকে পাদেশিক মন্ত্রীসভার দ্বৈত শাসনব্যবস্থা (Dyarchy) চালু হয়।
5 ভারত সচিবের কাউন্সিল: মন্টেণু-চেমসফোর্ড আইনে বলা হয় যে, ভারত সচিবের কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৮ থেকে ১২ জন হবে। এর অর্ধেক পীর সদস্য নিযুক্ত হবেন ভারতে কমপক্ষে ১০ বছর বসবাস বা চাকরি করেছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্য থেকে। এই সদস্যদের বেতন ও ভাতা প্রদানের দায়িত্ব তিনি দেওয়া হয় ব্রিটিশ সরকারের হাতে।
উপসংহার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে জাতীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ ভারতীয় নেতৃবৃন্দ নিজেদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ে আরও বেশি সচেতন হয়ে স্টিকার ওঠে। তাই ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের আইন তাদের খুশি করতে পারেনি।
প্রশ্ন 4 ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন-এর পটভূমি ব্যাখ্যা করো। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন-এর মূল ত্রুটিগুলি কী ছিল?
উত্তর:১৯০১ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের পটভূমি
1. ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের আইনের ত্রুটি: ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভায় মাত্র তিনজন মনোনীত সদস্যকে গ্রহণ করা হয়। ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনে সরকারের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদে বেসরকারি সদস্য হিসেবে ভারতীয়দের সংখ্যা বাড়ানো হয়। কিন্তু এই নামমাত্র সংস্কারে ভারতীয়রা সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পা ঐতিহাসিক বিপানচন্দ্র এসব আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের হাতে অধিকার দানের ঘটনাকে ‘একটি ধাপ্পাবাজি’ বলে অভিহিত করেছেন। ভারতীয়রা ২ ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের আইনে সন্তুষ্ট না হয়ে তাদের হাতে বেশি ক্ষমতা প্রদান এবং শাসনকার্যে আরও বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে।
2. কংগ্রেসের প্রতিবাদ: জাতীয় কংগ্রেসের রাজনৈতিক দাবিদাওয়ার তি অন্যতম বিষয় ছিল ভারতীয় আইন পরিষদে বেশি সংখ্যক নির্বাচিত ভারতীয় সদস্য গ্রহণ করা এবং তাদের হাতে আরও বেশি ক্ষমতা প্রদান করা। এসব এর দাবিতে জাতীয় কংগ্রেস ভারতের ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এটা সোচ্চার হয়। পূর্বতন আইনগুলির মাধ্যমে যেহেতু আইন পরিষদে বেশি * সংখ্যক নির্বাচিত ভারতীয় সদস্য গ্রহণের সুযোগ ছিল না, সেহেতু সরকার নতুন আইন প্রণয়নের কথা ভাবতে থাকে।
ও বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে দেশব্যাপী •বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশি আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার সমস্যার সম্মুখীন হয়। বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কংগ্রেসে চরমপন্থী গোষ্ঠীর উত্থান ঘটলে আন্দোলনের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকার বিপাকে পড়ে যায়।
4 বিপ্লবী আন্দোলন: বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের একটি ধারা ক্রমে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদের পথ ধরে। বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী গুপ্ত আন্দোলনের ফলে সরকার আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। বিপ্লবী আন্দোলন বাংলা, পাঞ্জাব ও মহারাষ্ট্রে অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। সরকার এসব আন্দোলন দুর্বল করার কথা ভাবতে শুরু করে।
5 মুসলিম লিগের দাবি: ঢাকায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে লিগের নেতৃবৃন্দ মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়। এ বিষয়ে তারা সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবিদাওয়া জানায়। মুসলিম সম্প্রদায়কে খুশি করার কথা সরকার ভাবতে শুরু করে।
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের ত্রুটিবিচ্যুতি
1. বড়োলাটের একাধিপত্য: মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের মাধ্যমে বড়োলাট ও তাঁর কার্যনির্বাহক সভার হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়। * তিনি আইনসভার যে-কোনো প্রস্তাব নাকচ করতে পারতেন। এই আইনে ভারতে কোনো প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়নি।
2. দায়িত্বশীলতার অভাব: এই আইন অনুসারে, বড়োলাট তাঁর কাজের জন্য ভারতীয় আইনসভার কাছে দায়ী ছিলেন না। তিনি দায়ী ছিলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ভারত সচিবের কাছে। ফলে এই আইনের দ্বারা ভারতে কোনো দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
3. স্বায়ত্তশাসনের অভাব: এই আইনে প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। কেন-না, প্রদেশে গভর্নর ছিলেন চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী। তিনি তাঁর মন্ত্রীসভার যে-কোনো সিদ্ধান্ত নাকচ করতে পারতেন।
4. আইনসভার ক্ষমতাহ্রাস: এই আইনের দ্বারা কেন্দ্রে গভর্নর- জেনারেল এবং প্রদেশে গভর্নরের চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে কেন্দ্র ও প্রদেশের নির্বাচিত আইনসভা কার্যত ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে।
5. ভোটাধিকার: মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনে সর্বসাধারণের ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়নি। এর দ্বারা স্বল্প সংখ্যক ধনী ব্যক্তি ভোটাধিকার
6. সাম্প্রদায়িকতা: এই আইনের দ্বারা ভারতে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ আরও বৃদ্ধি করা হয়। মুসলিমদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ন জন্য পৃথক নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য জাতীয় কংগ্রেসের • বোম্বাই অধিবেশনে এই আইনকে ‘তুচ্ছ, বিরক্তিকর ও নৈরাশ্যজনক’ বলে সমালোচনা করা হয়। শ্রীমতী অ্যানি বেসান্ত একে ‘দাসত্বের পরিকল্পনা’ এবং তিলক ‘সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেন।
প্রশ্ন 5 ১৯১৯ সালের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের শর্তগুলি উল্লেখ করো। এই আইনের ত্রুটিগুলি কী ছিল?
উত্তর: মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন (১৯১৯ খ্রি.)- এর শর্তাবলি
TOPIC [A]-র ও নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরটি দ্যাখো।
মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের ত্রুটিসমূহ
TOPIC [A]-র 4 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ত্রুটিবিচ্যুতি’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।
প্রশ্ন6 মন্টেগু-চেমসফোর্ডের সংস্কার আইনের (১৯১৯) সমালোচনামূলক আলোচনা করো।
উত্তর: মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের সমালোচনামূলক আলোচনা
TOPIC [A]র 4নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের ত্রুটিবিচ্যুতি’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।
প্রশ্ন 7 মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কারের (১৯১৯) বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো। এই আইনের ত্রুটিগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ
1. প্রেক্ষাপট: মলে-মিন্টো শাসন সংস্কার আইন (১৯০৯ খ্রি.) ভারতীয়দের খুশি করতে পারেনি। কারণ আইনের দ্বারা ভারতে কোনো দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতেও কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে পরবর্তী কয়েক বছরের পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশ ভারতের জনবল এবং অর্থবল ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, তাই স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দান করে ভারতীয়দের খুশি করার লক্ষ্যে ব্রিটিশ এক নতুন শাসন সংস্কার আইন প্রবর্তনে উদ্যোগী হয়।
2 আইনের বিভিন্ন দিক: [i] মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা ও আয় সুনির্দিষ্টভাবে বণ্টিত হয়। [ii] মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের দ্বারা ৭ জন সদস্য নিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ বা বড়োলাটের শাসনপরিষদ গঠিত হয়। এই ৭ জনের মধ্যে অন্তত ৩ জন সদস্য হবেন ভারতীয়। [iii] কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়। এর নিম্নকক্ষের নাম হয় ‘কেন্দ্রীয় আইনসভা’ এবং উচ্চকক্ষের নাম হয় ‘রাষ্ট্রীয় পরিষদ’। [iv] এই আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলিতে একদিকে গভর্নরের কার্যনির্বাহক সভা এবং অন্যদিকে প্রাদেশিক মন্ত্রীসভার দ্বৈত শাসনব্যবস্থা চালু হয়। [v] মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনে বলা হয় যে, ভারত-সচিবের কাউন্সিলের সদস্যসংখ্যা ৮ থেকে ১২ জন হবে।
3. গুরুত্ব: মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের দ্বারা ভারতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের সূচনা হয় এবং ভোটাধিকারের সম্প্রসারণ ঘটে। এই আইনের দ্বারা মন্ত্রীসভাকে তার কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী রাখার ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে ভারতে দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে।
4. প্রশাসনে ভারতীয়করণ প্রচেষ্টা: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে ভারতীয়দের হাতে যে পরিমাণ রাজনৈতিক অধিকার দেওয়া হয়, তা ইতিপূর্বে কোনো আইনের মাধ্যমেই ভারতীয়দের দেওয়া হয়নি। ঐতিহাসিক টমসন ও গ্যারাট এই আইনের প্রশংসা করে বলেন যে, প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় ভারতীয়দের স্থান দিয়ে ব্রিটিশ সরকার শাসনব্যবস্থায় ভারতীয়করণের পথ প্রস্তুত করে। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনশা ওয়াচা, তেজবাহাদুর সপ্ত, শ্রীনিবাস শাস্ত্রী প্রমুখ নরমপন্থী কংগ্রেস নেতা মন্ট-ফোর্ড সংস্কার আইনকে স্বাগত জানান। তাঁদের মতে এই আইন ছিল ভারতে দায়িত্বশীল সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এক বাস্তব ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।
মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের ত্রুটিসমূহ
TOPIC [A]-র 4নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন আইনের ত্রুটিবিচ্যুতি’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।
প্রশ্ন 8 ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ।
সূচনা: ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত-বিষয়ক যে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করে তা ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত। সরকার ঘোষণা করে যে, ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল থেকে এই আইন কার্যকরী হবে।
উত্তর: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্য
এই আইনের বিভিন্ন শর্তগুলিকে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা এর পর [1] কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়ক শর্ত, [2] প্রাদেশিক সরকার বিষয়ক শর্ত।
1. কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়ক শর্ত
i. যুক্তরাষ্ট্র গঠন: ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে দুই ধরনের রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল-[a] ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনাধীন অঞ্চল। [b] দেশীয় শাকদের দ্বারা শাসিত বিভিন্ন দেশীয় রাজ্য। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ভারতের প্রত্যক্ষ ব্রিটিশ শাসনাধীন রাজ্য ও বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রে একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশীয় রাজ্যগুলি তাদের ইচ্ছানুসারে এই যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দিতে পারত। যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার দেওয়া হয় বড়োলাট ও তাঁর অধীনস্থ একটি মন্ত্রীসভার হাতে।
ii. কেন্দ্র ও প্রদেশের তালিকা: যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের উদ্দেশ্যে তিনটি তালিকা তৈরি করা হয়, যথা-
[a] কেন্দ্রীয় তালিকা: কেন্দ্রীয় তালিকায় রাখা হয় সামরিক বিভাগ,বিদেশনীতি, রেল, ডাক, মুদ্রা প্রভৃতি।
b] প্রাদেশিক তালিকা: প্রাদেশিক তালিকায় রাখা হয় শান্তি-শৃঙ্খলা, [ শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পুলিশ প্রভৃতি।
[c] যুগ্ম তালিকা: যুগ্ম তালিকায় রাখা হয় সংবাদপত্র, মুদ্রণ, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন, বিবাহ, উত্তরাধিকার প্রভৃতি।
iii. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা: কেন্দ্রে পাঁচ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বলা হয়, আইনসভার উচ্চকক্ষ কাউন্সিল অব স্টেটস-এর ২৬০ জন সদস্যের মধ্যে ১৫৬ জন ব্রিটিশ ভারত থেকে নির্বাচিত ও ১০৪ জন দেশীয় রাজ্যগুলির রাজাদের দ্বারা মনোনীত হবেন এবং নিম্নকক্ষ ফেডারেল অ্যাসেম্বলি- র ৩৭৫ জন সদস্যের মধ্যে ২৫০ জন ব্রিটিশ ভারত থেকে নির্বাচিত ও ১২৫ জন দেশীয় রাজ্যগুলির রাজাদের দ্বারা মনোনীত হবেন।
iv. বড়োলাটের ক্ষমতা: বড়োলাট কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনার চূড়ান্ত ক্ষমতা পান। তাঁর হাতে আইনসভা আহ্বান ও বাতিলের ক্ষমতা দেওয়া হয়। আইনসভার উভয় কক্ষের দ্বারা অনুমোদিত কোনো বিলও তাঁর সম্মতি ছাড়া আইনে পরিণত হত না। অর্ডিন্যান্স জারি করে তিনি আইন তৈরি করতে পারতেন। তিনি আইনসভা ও মন্ত্রীপরিষদের পরামর্শ উপেক্ষা করার এবং তাঁদের কাজে হস্তক্ষেপ করার অধিকার পান। এ ছাড়া তাঁর হাতে কিছু ‘স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা’ ও ‘স্ববিবেচনাপ্রসূত ক্ষমতা’ ছিল। তিনি তাঁর কাজের জন্য সরাসরি ভারত-সচিব ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন।
v. মন্ত্রীসভা: কেন্দ্রে বড়োলাটের অধীনস্থ একটি মন্ত্রীসভা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বলা হয় যে, বড়োলাট আইনসভার সদস্যদের থেকে মন্ত্রীদের নিয়োগ করবেন এবং মন্ত্রীরা তাঁদের কাজের জন্য। জাতীয়তা আইনসভার কাছে দায়ী থাকবে।
vi. সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত বিষয়
[a] সংরক্ষিত বিষয়: সংরক্ষিত বিষয়ের মধ্যে ছিল প্রতিরক্ষা, 2 আ বিদেশনীতি, রিজার্ভ ব্যাংক, সেনাবাহিনী, রেল, অর্থ, মুদ্রা, শান্তি- শৃঙ্খলা, ধর্ম প্রভৃতি ‘সংরক্ষিত’ (Reserve) বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হয়। এসব বিষয়ে চূড়ান্ত ক্ষমতা ছিল বড়োলাটের হাতে।
[b] হস্তান্তরিত বিষয়: হস্তান্তরিত বিষয়ের মধ্যে ছিল শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ প্রভৃতি। ‘হস্তান্তরিত’ বিষয়গুলি গভর্নর- জেনারেল তাঁর মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে পরিচালনার দায়িত্ব পান। এভাবে কেন্দ্রে এক ধরনের ‘দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা’ (Dyarchy) প্রতিষ্ঠিত হয়।
vii. সাম্প্রদায়িক নির্বাচন: মুসলিম সদস্যদের সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে এবং তপশিলি সদস্যদের ‘পুনা চুক্তি’ (১৯৩২ খ্রি.)-র ভিত্তিতে পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। শিখ, খ্রিস্টান, ইঙ্গ-ভারতীয়, ইউরোপীয় উপযুক্ত প্রভৃতি প্রতিনিধিদেরও সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে আইনসভায় গ্রহণ করা হয়।
২. প্রাদেশিক সরকার বিষয়ক শর্ত:
1. আইনসভা: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা প্রাদেশিক আইনসভা এককক্ষ বা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট উভয়ই হতে পারত। বাংলা-সহ ছয়টি প্রদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট এবং অবশিষ্ট পাঁচটি প্রদেশে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠিত হয়।
ii. স্বায়ত্তশাসন: এই আইনের দ্বারা প্রদেশগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হয়। ফলে প্রদেশগুলিতে দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটে।
iii. মন্ত্রীসভা: প্রতিটি প্রাদেশিক গভর্নরের শাসনকার্যে সহায়তার জন্য তাঁর অধীনে একটি করে মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। মন্ত্রীরা প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যদের মধ্য থেকে মনোনীত হতেন এবং তাদের কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকতেন।
iv. গভর্নরের ক্ষমতা: কেন্দ্রের অনুকরণে প্রদেশগুলির শাসনকাঠানো গড়ে তোলা হয়। গভর্নর প্রদেশের আইন-শৃঙ্খলা, ধর্ম প্রভৃতি বিষয় পরিচালনার দায়িত্ব পান। আইনসভার যে-কোনো প্রস্তাব বাতিল করা, অর্ডিন্যান্স জারি করে আইন প্রণয়ন করা, আইনসভা ও মন্ত্রীসভা ভেঙে দিয়ে নিজের হাতে প্রদেশের শাসনক্ষমতা গ্রহণ করা প্রভৃতি বিশেষ ক্ষমতা গভর্নরের হাতে দেওয়া হয়।
V. সাম্প্রদায়িক নির্বাচন: প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতেও কেন্দ্রের সাম অনুকরণে মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। তপশিলি সম্প্রদায়ের জন্য ‘পুনা চুক্তি’ (১৯৩২ খ্রি.) অনুসারে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।
উপসংহার: এই আইনের দ্বারা ভারতে সাম্প্রদায়িক নির্বাচন চালু হওয়া, ভোটাধিকার সংকুচিত করা প্রভৃতি ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আইনটি ভারতীয়রা সাদরে গ্রহণ করেনি। এই আইনকে কংগ্রেস ‘সম্পূর্ণ হতাশজনক’ এবং মুসমিল লিগ ‘গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার ধ্বংসকারী’ বলে অভিহিত করে।
প্রশ্ন 9 ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন প্রণয়নের পটভূমি কী ছিল? এই আইনের ত্রুটিবিচ্যুতিগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের পটভূমি
1. জাতীয়তাবাদের প্রসার: ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী মানসিকতার যথেষ্ট প্রসার ঘটে। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের অগ্রগতিতে ব্রিটিশ সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ে। সরকার এই জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করে এদেশে ব্রিটিশ শাসনের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার উপায় খুঁজতে থাকে। তারা মনে করে যে, নতুন কোনো সংস্কার আইন প্রবর্তনের মাধ্যমে এই জাতীয়তাবাদকে দুর্বল করা সম্ভব।
2. আন্দোলনের তীব্রতা: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইন ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। ফলে বিভিন্ন দল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়। গান্ধিজির নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-২২ খ্রি.), আইন অমান্য আন্দোলন (১৯৩০-৩৪ খ্রি.) সহ বিভিন্ন আন্দোলন অত্যন্ত তীব্র হয়ে ওঠে।
3. বিপ্লবী কার্যকলাপ: ১৯৩০-এর দশকে দেশে ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিপ্লবী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ভগত সিং, বটুকেশ্বর দত্ত, রাজগুরু, বসন্ত বিশ্বাস, বাঘা যতীন-সহ বিভিন্ন বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মে সরকার আতঙ্কিত পড়ে।
4. সাইমন কমিশনের প্রতিক্রিয়া: ভারতীয়রা স্বায়ত্তশাসন লাভের উপযুক্ত কিনা তা বিচার করতে সাইমন কমিশন ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত এই কমিশনের রিপোর্টে শাসন পরিচালনা, আইন রচনা প্রভৃতি বিষয়ে ভারতীয়দের যোগ্যতা নিয়ে খুবই অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়। এতে ভারতীয়রা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
5. গোলটেবিল বৈঠক: সাইমন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার প্রথম গোলটেবিল (১৯৩০ খ্রি.), দ্বিতীয় গোলটেবিল (১৯৩১ খ্রি.) ও তৃতীয় গোলটেবিল (১৯৩২ খ্রি.) বৈঠকে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভারতে – সাংবিধানিক সংস্কারের বিষয়ে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা চালায়।
6. শ্বেতপত্র: সাইমন কমিশনের রিপোর্ট ও তিনটি গোলটেবিল বৈঠকে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর সরকার ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য প্রস্তাবসমূহ’ শিরোনামে – একটি ‘শ্বেতপত্র’ (White Paper) প্রকাশ করে। এসব প্রস্তাব এবং যৌথ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারত – শাসন আইন’ (Govt. of India Act, 1935) পাস করে।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ত্রুটিবিচ্যুতি
1. স্বায়ত্তশাসন বঞ্চনা: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা ভারতীয়দের হাতে প্রকৃত স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়নি। কেন্দ্রে গভর্নর- জেনারেল ও প্রদেশগুলিতে গভর্নরদের সীমাহীন ক্ষমতা স্বায়ত্তশাসনকে প্রহসনে পরিণত করে। ড. বিপান চন্দ্র বলেছেন যে, “এই নতুন ভারত শাসন আইন (১৯৩৫) ভারতের জাতীয়তাবাদী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়।”
2. যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান: এই আইনে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হলেও তাতে দেশীয় রাজ্যগুলির যোগদান দেশীয় রাজন্যবর্গের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্রস্তাবিত যুক্তরাষ্ট্রে সংখ্যালঘু হওয়ার আশঙ্কায় মুসলিমরা যুক্তরাষ্ট্র গঠনের বিরোধী ছিল।
3. যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত: এই আইনের দ্বারা কেন্দ্রের গভর্নর- জেনারেলের আধিপত্য এবং বিভিন্ন প্রদেশে কেন্দ্রীয় সরকারের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। গভর্নর-জেনারেলের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়। তাই আইনে যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলে বাস্তবে এককেন্দ্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। ফলে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ঐতিহাসিক রজনী পাম দত্ত বলেছেন যে, “প্রস্তাবিত ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র ছিল একটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত নামকরণ।”
4. নামমাত্র ভোটাধিকার প্রদান: এই আইনের দ্বারা ভোটাধিকারের সম্প্রসারণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ব্রিটিশ ভারতের মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ ভোটদানের অধিকার পায়। এই ফলে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়।
5. সাম্প্রদায়িক নির্বাচন: এই আইনে মুসলিমদের জন্য সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যান্য সংখ্যালঘুদের জন্যও সাম্প্রদায়িক নির্বাচনের কথা বলা হয়।
প্রশ্ন 10. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট ও শর্তাবলি আলোচনা করো। এই আইনের গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন উপাদান সক্রিয় ছিল। যেমন-
1. মন্ট-ফোর্ড আইনের ব্যর্থতা: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু- চেমসফোর্ড আইন প্রণয়নের পরবর্তীকালে ভারতীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায়। এই আইন ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হলে গান্ধিজির নেতৃত্বে সারা ভারতে প্রবল গণ আন্দোলন শুরু হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই সময় বিপ্লববাদী কার্যকলাপও যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রসার ব্রিটিশ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে।
2. সাইমন কমিশনের রিপোর্ট: এই সময় ভারতীয়রা স্বায়ত্তশাসন লাভের উপযুক্ত কিনা তা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে সাইমন কমিশন ভারতে আসে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে কমিশনের রিপোর্টে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর সুপারিশ করা হয়।
3. গোলটেবিল বৈঠক: সাইমন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নেয়। প্রথম (১৯৩০ খ্রি.), দ্বিতীয় (১৯৩১ খ্রি.) ও তৃতীয় (১৯৩২ খ্রি.)- এই তিনটি গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার নতুন সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন অনুভব করে। শেষপর্যন্ত সাইমন কমিশনেব রিপোর্ট ও গোলটেবিল বৈঠকের আলোচনা ও প্রস্তাবগুলির পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার ‘ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য প্রস্তাবসমূহ’ নামে একটি ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করে (১৯৩৩ খ্রি.)। অতঃপর ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে এই সকল প্রস্তাব এবং যৌথ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভারত শাসন আইন বা Government of India Act, 1935 পাস হয়।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের শর্তাবলি
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের শর্তাবলির মধ্যে ছিল-
1. যুক্তরাষ্ট্র গঠন: এই আইনে ব্রিটিশ শাসনাধীন রাজ্য ও বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যগুলিকে লিয়ে একটি সর্বভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠলের কথা বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার দেওয়া হয় বড়োলাট ও তাঁর অধীনস্থ একটি তোলা মন্ত্রীসভার হাতে।
কেন্দ্রীয় সরকার: ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনে কেন্দ্রে পাঁচ বছর সম্পূর্ণ মেয়াদি দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা গঠনের কথা বলা হয়। কেন্দ্রে মুসলিম সদস্যদের জন্য সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে এবং তপশিলি সদস্যদের পুনা চুদ্ধি (১৯৩২ খ্রি.)-র ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। কেন্দ্রীয় প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে সংরক্ষিত (পররাষ্ট্র সম্পর্ক, প্রতিরক্ষা, সেনাবাহিনী, জায়িক রেলপথ ইত্যাদি বিষয়) এবং হস্তান্তরিত (শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণের মতো জন্যও বিষয়গুলি) দপ্তরে রেখে কেন্দ্রে এক দ্বৈত শাসনব্যবস্থার (Dyarchy) প্রচলন ঘটানো হয়। কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনার কাজে বড়োলাটকে চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়।
প্রাদেশিক সরকার: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের দ্বারা প্রদেশগুলিকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রদান করা হয়। কেন্দ্রের অনুকরণেই প্রদেশগুলোরও শাসনকাঠামো গঠন করা হয়। তবে প্রদেশগুলিতে আইনসভা এককক্ষ বা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট উভয়ই হতে পারত। প্রদেশের ছোটোলাট বা গভর্নর তাঁর মন্ত্রীপরিষদের সাহায্যে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান। তাঁর হাতে বিশেষ ক্ষমতা ন্যস্ত করা হয়।
4. ক্ষমতার বণ্টন: ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনে যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা বলা হয় সেখানে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টনের উদ্দেশ্যে তিনটি তালিকা তৈরির কথা বলা হয়। যথা-
i. কেন্দ্রীয় তালিকা: এর মধ্যে ছিল বিদেশনীতি, রেল, ডাক, মুদ্রা প্রভৃতি।
ii . প্রাদেশিক তালিকা: এর মধ্যে ছিল শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, পুলিশ, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয় ইত্যাদি।
iii. যুগ্মতালিকা: এর অন্তর্ভুক্ত ছিল মুদ্রণ, সংবাদপত্র, দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন, বিবাহ, উত্তরাধিকার প্রভৃতি।
5 প্রাদেশিক বিভাজন: ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইন দ্বারা ভারতের প্রদেশগুলিকে দুইটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যথা-
i. গভর্নর শাসিত প্রদেশ: এর অন্তর্ভুক্ত ছিল বাংলা, বোম্বাই, মাদ্রাজ, যুক্তপ্রদেশসহ মোট ১১টি প্রদেশ।
ii. চিফ কমিশনার শাসিত প্রদেশ: এর অন্তর্ভুক্ত ছিল মাড়োয়ার, আজমীর, বেলুচিস্তান, কুর্গ এবং
আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ-এই পাঁচটি প্রদেশ।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের গুরুত্ব
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনও ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে এর পারেনি। তবুও এই আইন নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল-
1. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনের ভিত্তি রচনা: ১৯৩৫-এর ভারতশাসন ■ আইনের দ্বারা ভারতের শাসন ব্যবস্থাকে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রদান • করা হয়। তাই এই আইনের ফলে ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
2. দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন এই আইনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টনের মধ্য দিয়ে এক দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়।
ভোটাধিকার বৃদ্ধি: ১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইনের দ্বারা প্রথম বারের জন্য সরাসরি নির্বাচন উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি ভোট দেওয়ার অধিকারও বৃদ্ধি করা হয়। ভারতীয় সংবিধানের ভিত্তি: স্বাধীন ভারতের সংবিধানের যে কাঠামোটি আমরা দেখি তা ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে। উঠেছে।
স্বায়ত্তশাসনের অধিকার লাভ: ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন ভারতীয়দের বহুদিনের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের বাসনা পূরণ করে। জিন্না ও মুসলিম লিগ তার প্রশংসা করে।
11. কোন্ পরিস্থিতিতে ১৯১৯ খ্রি. মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন জারি হয়? ব্যাখ্যা করো। এই আইন ভারতবাসীর মধ্যে কী প্রভাব ফেলেছিল?
উত্তর: পরিস্থিতি বা পটভূমি
1. মলে-মিন্টো শাসনসংস্কারের ব্যর্থতা: মর্লে-মিন্টো সংস্কার টোলা (১৯০৯ খ্রি.) একদিকে যেমন ভারতবাসীর আশা পূরণ করতে পারেনি পান। তেমনই অন্যদিকে কংগ্রেসের নরমপন্থী বা চরমপন্থী কারোরই মন জয় করতে পারেনি। আসলে এই আইন প্রবর্তনের নেপথ্যে ছিল ব্রিটিশ শাসনের বি বঙ্গ প্রতি মুসলিমদের সমর্থন আদায়ের দুরভিসন্ধি।
2. স্বায়ত্তশাসন বিষয়ক বিক্ষোভ প্রশমন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ব্রিটিশ সরকার তার পূর্বকথা মতো ভারতবাসীকে এক স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ফিরিয়ে দেয়নি। এর ফলে ভারতবাসীর মনে যে তীব্র ক্ষোভ জন্মেছিল তা প্রশমনের প্রয়োজন ছিল।
3. নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের বিবাদের অবসান: ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের ‘সুরাট বিচ্ছেদ’-এর পর চরমপন্থীরা জাতীয় কংগ্রেস থেকে দূরেই ছিলেন। এরপর নির্বাসন থেকে ফিরে তিলক অনুধাবন করেন যে, চরমপন্থী ও নরমপন্থীদের মিলন ছাড়া জাতীয় অগ্রগতি অসম্ভব। তাই ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে চরমপন্থীরা যোগদান করলে জাতীয় কংগ্রেস আবার প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
4. কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের ঐক্য: বঙ্গভঙ্গ রদ, তুরস্কের ওপর ইটালির আক্রমণ, বলকান যুদ্ধ এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারের যুদ্ধযাত্রা ভারতীয় মুসলিমদের ক্ষুদ্ধ করে তোলে। এই সময় মুসলিম লিগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে। নতুন মুসলিম নেতৃত্ব আলিগড়ের সংকীর্ণ রাজনীতি বিসর্জন দিয়ে জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি গ্রহণ করে। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে যোগ দিয়ে লিগ-নেতৃত্ব জাতীয় কংগ্রেসের ‘স্বরাজ’-এর আদর্শ মেনে নেয় এবং যৌথভাবে জাতীয় আন্দোলন পরিচালনায় সম্মত হয়।
5. হোমরুল আন্দোলনের তীব্রতা: লক্ষ্ণৌ চুক্তি (১৯১৬ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হওয়ার পর তিলক ও বেসান্ডের নেতৃত্বে আলাদা আলাদা হোমরুল আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। এই আন্দোলনের তীব্রতায় ব্রিটিশের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটে। ভাইসরয় চেমসফোর্ড ভারত-সচিবকে টেলিগ্রাম করে জানান যে, হোমরুল আন্দোলন ভারতবাসীর ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
6. আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রভাব: রাশিয়ায় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর বিপ্লবে শ্রমিকশ্রেণির সাফল্য ভারতবাসীকে যেভাবে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল তাতে ব্রিটিশ সরকার ভয় পেয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া আমেরিকা-সহ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশ তাদের উপনিবেশগুলিতে স্বাধীনতার অধিকার প্রত্যর্পণের নিশ্চয়তা দিলে ভারতেও ব্রিটিশ বাধ্য হয় একই প্রতিশ্রুতি দিতে।
ভারতবাসীর ওপর প্রভাব
মন্টেগু-চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার ভারতবাসীকে খুশি করতে পারেনি।
1. জাতীয় নেতাদের প্রতিক্রিয়া: মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের বিরুদ্ধে ভারতের তৎকালীন জাতীয় নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। বালগঙ্গাধর তিলক এই শাসন সংস্কারকে ‘সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য’ বলে সমালোচনা করেন। শ্রীমতি অ্যানি বেসান্ত এই আইনকে ‘দাসত্বের নামান্তর’ অ্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, “এই প্রস্তাব ইংল্যান্ডের পক্ষে চালু করা এবং ভারতের পক্ষে গ্রহণ করা অসম্মানজনক।”
2. মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া: মুসলিম সম্প্রদায় এই আইনকে মেনে নিতে পারেনি। আসলে ব্রিটিশ সরকারের তুরস্ক নীতি নিয়ে মুসলিম সমাজ এমনিতেই বিপর্যস্ত ছিল। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও ভারতীয় মুসলমানদের মনে প্রবল সন্দেহ ও অবিশ্বাস দেখা দিয়েছিল। তাই এই শাসন সংস্কার ভারতীয় মুসলিমদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি।
3. কংগ্রেসি নেতাদের প্রতিক্রিয়া: জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী গোষ্ঠী এই আইনের প্রতি নরম মনোভাব জানালেও, কংগ্রেসের একটা বড়ো অংশ এই আইনের বিরোধিতা করেছিল। হাসান ইমামের সভাপতিত্বে বোম্বাইয়ে আয়োজিত জাতীয় কংগ্রেসের এক অধিবেশনে মন্টেগু- চেমসফোর্ডের শাসন সংস্কারের প্রস্তাবগুলিকে, ‘নগণ্য, নৈরাশ্যকর ও অসন্তোষজনক ‘inadequate, disappointing and unsatisfactory’ বলে সমালোচনা করা হয়। জাতীয় কংগ্রেস আইনগত প্রতিশ্রুতির দাবি জানিয়ে বলে, ভারতকে অনধিক পনেরো বছরের মধ্যে পূর্ণ দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা দিতে হবে। দিল্লিতে আয়োজিত জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে মদন মোহন মালব্য, লখনউ চুক্তি অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসনের অধিকার জানায়। কংগ্রেসের চরমপন্থী নেতারা এই আইনকে ‘অসন্তোষজনক, অপ্রচুর ও হতাশজনক’ বলে সমালোচনা করেন।
4. শিক্ষিত ভারতীয়দের প্রতিবাদ: মন্ট-ফোর্ড সংস্কার আইনে ভারতবাসীকে স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার বদলে, একটি নকল সংবিধান দেওয়া হয়েছিল। তাই শিক্ষিত ভারতীয়রা এই সংস্কার আইন মেনে নেয়নি। কেম্ব্রিজ গোষ্ঠীর ঐতিহাসিকগণও সমালোচনার সুরে বলেন-এই আইনের মাধ্যমে ভারতীয় রাজনীতিকদের ব্রিটিশ সরকারের অর্থনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়। শিক্ষিত শ্রেণি এই মতের পক্ষ নেয়, এবং – শাসনসংস্কারের বিরোধিতা করে।
12 ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ বলতে কী বোঝায়? ব্রিটিশ সরকারের উদ্যোগে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতি প্রসারের পরিচয় দাও।
অথবা, ‘শাসন ও বিভাজন’ নীতি কী? ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টির জন্য ব্রিটিশ সরকার এই নীতি কোন্ প্রেক্ষাপটে কীভাবে কার্যকর করেছিল?
উত্তর:’বিভাজন ও শাসননীতি’
সুপ্রাচীনকাল থেকে ভারতে বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকলেও ব্রিটিশ শাসনকালে সরকার নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে সুকৌশলে এই সম্প্রীতি ধ্বংস করে এবং হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বিভেদের প্রাচীর গড়ে তোলে। মূলত ভারতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দুর্বল
করে এদেশে ব্রিটিশ শাসনকে নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যেই ব্রিটিশ সরকার ভারতের জাতি, ধর্ম, ভাষা। যে, “ভারতে পরস্পরবিরোধী বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর অস্তিত্ব আমাদের পক্ষে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতে এক জাতির বিরদ্ধে অন্য জাতিকে এবং এক ধর্মের বিরুদ্ধে অন্য ধর্মকে ব্যবহার করে। ভারতে ব্রিটিশদের এই শাসন শখতি ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ (Divide and Rule Policy) নামে পরিচিত।
সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতির প্রসার
ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পর থেকে শুরু করে স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতি প্রয়োগ করে। ১৮৭০-এর দশক থেকে ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে। হিন্দু- মুসলিম ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সম্ভাবনা দূর করতে সরকার মুসলিম সম্প্রদায়কে তোষণ করে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক বিভেদ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেয়। এই সময়কালে সরকার কর্তৃক ব্যবহৃত বিভেদনীতিকে তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা যায়।
1 প্রথম পর্যায়: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে মোটামুটিভাবে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সরকার কর্তৃক গৃহীত সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতি প্রথম পর্বভুক্ত করা যায়। জন লরেন্স (১৮৬৪-৬৯ খ্রি.) এদেশে সর্বপ্রথম পাঞ্জাবের জিকোনাবাহিনীতে ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ কার্যকরী করেন। এই পর্বে ব্রিটিশ বিভেদনীতি হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বার্থে এবং মুসলিমদের হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে প্রয়োগ করা হত। ব্রিটিশরা প্রথমে মুসলিমদের আধিপত্য ধ্বংস করে ভারতে সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটিয়েছিল। প্রথমদিকে ব্রিটিশ প্রশাসনের দ্রু নিম্নস্তরের বিভিন্ন পদে কাজের জন্য শিক্ষিত হিন্দু ব্রাহ্মণরা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই পর্যায়ে ব্রিটিশরা হিন্দুদের প্রতি সদয় ছিল। এই সময় হিন্দুদের প্রতি তোষণনীতি গ্রহণ করা হয়। তখন লর্ড নি এলেনবরা বলেন যে, মুসলিম জনসমাজ মৌলিকভাবে আমাদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন, তাই আমাদের আসল লক্ষ্য হবে হিন্দুদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো।”
2 দ্বিতীয় পর্ব: ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ব্রিটিশ সরকারের বিভেদনীতির প্রকৃতি বদলাতে থাকে। সরকার হিন্দু তোষণের পরিবর্তে মুসলিমদের তোষণের নীতি গ্রহণ করে। স্যার উইলিয়াম লি নামে জনৈক উচ্চপদস্থ ব্রিটিশকর্তা ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ করেন যে, ১৮৬৯ থেকে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে শিক্ষাক্ষেত্রে এবং ব্রিটিশ প্রশাসনে ব্রাহ্মণদের আধিপত্য অত্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময় ডব্লিউ ডব্লিউ হান্টার তাঁর ‘দি ইন্ডিয়ান মুসলমানস্’ (১৮৭১ খ্রি.) গ্রন্থে মুসলিমদের প্রতি সরকারের নীতি পরিবর্তনের দাবি জানান। বিভেদনীতির প্রতি মুসলিমদের উৎসাহী করে তোলার উদ্দেশ্যে লর্ড মেয়ো (১৮৬৯-১৮৭২ খ্রি.) ভারতকে ‘দার-উল-ইসলাম’ বা ইসলামের দেশের পরিবর্তে ‘দার-উল-হাব’ বা শত্রুর দেশ বলে প্রচারে উসকানি দেন। লর্ড রিপন এক আইন প্রণয়নের (১৮৮২ খ্রি.) মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন এবং স্থানীয় স্বায়ত্বশাসনে মুসলিমদের আরও বেশি করে সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করেন। লর্ড ডাফরিন মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে বলেন যে, পাঁচ কোটি মানুষ নিয়ে মুসলিমরা নিজেরাই একটি জাতি, খুব শক্তিশালী একটি জাতি।
3 তৃতীয় পর্ব: তৃতীয় পর্যায়ে বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে সরকার উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়গুলিকেও তোষণ করতে শুরু করে। লর্ড কার্জনের আমলে সরকারের সাম্প্রদায়িক বিভেদ তীব্র আকার ধারণ করে। পরবর্তীকালে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা (১৯০৬ খ্রি.) হলে সরকার বিভেদনীতি প্রয়োগ করে বারংবার মুসলিম লিগ তথা মুসলিম সম্প্রদায়কে তোষণ করে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়। এর দ্বারা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে যথেষ্ট দুর্বল করতে সরকার বেশ কয়েকবার সফল হয়।
প্রশ্ন 13. ভারতে ‘বিভাজন ও শাসননীতি’র প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
ভূমিকা: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মহাবিদ্রোহে শামিল হলে বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে। এরপর থেকে হিন্দ-মুসলিম ঐক্যে বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দুর্বল করার উদ্যোগ নেয়। এই উদ্দেশ্যে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদনীতি প্রয়োগ করে সরকার ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ (Divide and Rule Policy) গ্রহণ করে। এর ফলে পরবর্তীকালে হিন্দু-মুসলিম অনৈক্য বৃদ্ধি পায় এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।
‘বিভাজন ও শাসননীতি’-র প্রেক্ষাপট
ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ গ্রহণ করে।
1 জাতীয় কংগ্রেসের উৎপত্তি: ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই দলের শক্তি ও জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কংগ্রেস জাতীয় আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকে। এই পরিস্থিতিতে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বৃদ্ধি করে সরকার ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দমনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। বিলেতের সরকার ভারতের জাতি, ধর্ম, অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রভৃতির সুযোগ – কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
2 আলিগড় আন্দোলনের সূচনা: ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে মুসলিম নেতা স্যার সৈয়দ আহমদের (১৮১৭-১৮৯৮ খ্রি.) নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশে আলিগড় আন্দোলনের সূচনা হয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিকাশ ঘটে। স্যার সৈয়দ আহমেদ বলেন যে, হিন্দু ও মুসলিম দুটি পৃথক জাতি। তাদের মধ্যে ঐক্য সম্ভব নয়। তিনি জাতীয় – কংগ্রেসকে একটি হিন্দু প্রতিষ্ঠান বলে অভিহিত করে মুসলিম সম্প্রদায়কে কংগ্রেস থেকে দূরে থাকতে বলেন। ব্রিটিশ সরকার আলিগড় আন্দোলনকে পরোক্ষে সমর্থন করে সাম্প্রদায়িক বিভেদকে উসকানি দেয়।
3 আন্দোলন দমন: ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড কার্জন স্পষ্ট ঘোষণা করেছিলেন যে, “যতদিন আমরা ভারত শাসন করব, ততদিন পর্যন্ত আমরা হলাম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শক্তি।” ফলস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার ভারতে নিজেদের শাসন নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করা এবং শ্বেতাঙ্গ জাতির শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দমন করার পরিকল্পনা করে। সরকার মনে করে যে, আন্দোলন দমন ও দুর্বল করার একটি অন্যতম উপায় হল হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য বৃদ্ধি করা। সরকার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এই বিভেদ কাজে লাগিয়ে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করে।
4 ব্রাহ্মণ্য সম্প্রদায়ের গতিরোধ: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ব্রিটিশবিরোধী জাতীয় চেতনার অগ্রভাগে অবস্থান করত। এই মধ্যবিত্তশ্রেণিতে সর্বাধিক সংখ্যাগরিষ্ঠ ও অগ্রগণ্য ছিল হিন্দু ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়। জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও চিন্তাধারায় অগ্রণী ব্রাহ্মণ্য সম্প্রদায়ের গতিরোধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ভারতের মুসলিম ও অন্যান্য অব্রাহ্মণ সম্প্রদায়গুলিকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করার পরিকল্পনা করে। সরকার ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ সৃষ্টিতে পরোক্ষে উৎসাহ দেয়। এভাবে সরকার হিন্দু- মুসলিমের মধ্যে, এমনকি বর্ণহিন্দু ও পিছিয়ে পড়া হিন্দুদের মধ্যে বিরোধ ও বিভেদ বৃদ্ধি করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা চালায়।
উপসংহার: মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কারে নির্বাচক মন্ডলীকে অন্তত দশটি অংশে বিভক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে তা দশ থেকে বেড়ে সতেরো হয়েছিল এবং হিন্দু সম্প্রদায়কে আরও দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তপশিলি জাতিকেও পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। পণ্ডিত লালবাহাদুর শাস্ত্রী সরকারের এই বিভেদনীতিকে ‘ভারতের জাতীয় ইতিহাসের ক্ষেত্রে একটি নির্লজ্জ ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রশ্ন 14. ব্রিটিশ সরকার ভারতে কীভাবে সাম্প্রদায়িক বিভেদ বৃদ্ধি করে?
ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে সাম্প্রদায়িক বিভেদ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু বলেছেন যে, “কখনও ভুললে চলবে না, ভারতের সাম্প্রদায়িকতা হল একটি পরবর্তীকালের ঘটনা যা আমাদের চোখের সামনে বিকশিত হয়েছে।” তবে এই বিভেদের উৎস ও বিকাশ সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ ব্রিটিশ সরকারের ‘বিভাজন ও শাসননীতি’-কে, আবার অনেকে ঔপনিবেশিক অর্থনীতির কুফলকে, আবার কেউ কেউ হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের পৃথক স্বার্থচিন্তাকে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব ও বিকাশের জন্য দায়ী করে থাকেন।
1 সরকারের উদ্দেশ্য: সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তি এদেশে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমন করে নিজেদের শাসন নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ গ্রহণ করে। বিভাজন ও শাসননীতির মূল কথা ছিল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বৃদ্ধি করা।
2 হিন্দু তোষণ: প্রথমদিকে সরকার ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণিকে নিজেদের অনুগত শ্রেণি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে। এই সময় মুসলিম সম্প্রদায় ভারতে ব্রিটিশ শাসন ও পাশ্চাত্য শিক্ষাকে সাদরে গ্রহণ করেনি। এই অবস্থায় সরকার মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুদের সমর্থন করে। সরকার হিন্দুদের নিয়ে, বিশেষত উচ্চবর্ণের হিন্দুদের নিয়ে গঠিত মধ্যবিত্তশ্রেণিকে তোষণ করতে থাকে।
সরকারি ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতা: ব্রিটিশ সরকার মুখে বহু ন্যায়নীতির কথা বলে এবং আইনের চোখে সাম্যনীতির কথা ঘোষণা করে। কিন্তু বাস্তবে সরকার ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণিকে আর্থিক সহায়তা দান, স্থানীয় ও প্রাদেশিক স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করে। এর ফলে মুসলিম, বিভিন্ন অব্রাহ্মণ হিন্দু, ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায় প্রভৃতি সরকারি অর্থনৈতিক সহায়তা ও সুবিধা লাভ করে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে তাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
4 মুসলিম তোষণ: ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পূর্বে ভারতে মুসলিমরাই ছিল রাজশক্তি। কিন্তু ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে হিন্দু সম্প্রদায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনায় মুসমিল সম্প্রদায় আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হিন্দু মধ্যবিত্তশ্রেণি হয়ে ওঠে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূত। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের উসকে দেয় এবং মুসলিম তোষণ শুরু করে। আলিগড় আন্দোলনের নেতা স্যার সৈয়দ আহমেদ ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলিগড়ে ‘অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। -এই আলিগড় কলেজ ও আলিগড় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আর্চিবোল্ড, থিওডোর বেক, মরিসন প্রমুখ ইংরেজ হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলিমদের মনে বিচ্ছিন্নতার মানসিকতা তৈরি করেন।
5 পশ্চাদপদ শ্রেণিকে তোষণ: ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলিম সম্প্রদায়ের আনুগত্য সুনিশ্চিত হওয়ার পর সরকার হিন্দু সম্প্রদায়কে উচ্চবর্ণ ও অনগ্রসর-এই দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের অব্রাহ্মণ ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির প্রতি তোষণনীতি গ্রহণ করে। আজমগড়ের ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ইউটিস জে. কিট্স ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারির ভিত্তিতে ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে অনগ্রসর শ্রেণির একটি তালিকা তৈরি করেন এবং শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে তাদের জন্য সংরক্ষণ ও বাড়তি সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তৎকালীন সেক্রেটারি অফ স্টেট জর্জ ফ্রাঙ্কিস হ্যামিলটন ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড কার্জনকে লেখেন যে, “আমরা যদি হিন্দুদের দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত করতে পারি তবে আমাদের শক্তি আরও সুদৃঢ় হবে।”সরকারের এই মনোভাবকে বাস্তবায়িত করার উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মণ্য শ্রেণির বিরুদ্ধে দাবিদাওয়া আদায়ের বিষয়ে সরকার অনগ্রসর শ্রেণির নেতাদের উৎসাহিত করতে থাকে। মহীশূর, মাদ্রাজ, বোম্বাই প্রভৃতি প্রদেশগুলিতে অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষণ চালু হয়। যুক্ত প্রদেশে প্রতি চারটি আসনের মধ্যে ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য ১টি করে আসন সংরক্ষিত হয়।
উপসংহার: হিন্দু-মুসলিম বিভাজন ছাড়াও সরকার হিন্দুদের বিভিন্ন উপ- সম্প্রদায়ে বিভক্ত করে। এভাবে সরকার অনগ্রসর সম্প্রদায়কে তাদের অনুগত শ্রেণিতে পরিণত করে জাতীয় আন্দোলন থেকে তাদের দূরে রাখার চেষ্টা চালায়।
প্রশ্ন 15. ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিকাশ ও প্রসারের কারণগুলি উল্লেখ করো।
সূচনা: ব্রিটিশ সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে এদেশে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ সৃষ্টি করে ব্রিটিশবিরোধী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনকে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেয়। ফলে ঊনবিংশ শতকের শেষদিক থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতালাভ পর্যন্ত সময়কালে ভারতে হিন্দু, মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়।
ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিকাশ ও প্রসার
1 সরকারের বিভেদনীতি: সাম্রাজ্যবাদী উরিটিশ্যে নিজেদের শাসনকে নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে হিন্দু-মুসলিম-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ বৃদ্ধি করে জাতীয় আন্দোলনকে দুর্বল করার চেষ্টা চালায়। সরকার মহাবিদ্রোহের পর থেকে হিন্দু তোষণ, বঙ্গভঙ্গের পর থেকে মুসলিম তোষণ এবং পরবর্তীকালে অনগ্রসর হিন্দুশ্রেণিকে তোষণ মামলা করে।
2 উন্নয়নে বৈষম্য: হিন্দু সম্প্রদায় পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নতি ঘটায়। ব্রিটিশ প্রশাসনের নিম্নস্তরের বিভিন্ন পদে • কাজের জন্য শিক্ষিত হিন্দু ব্রাহ্মণরা অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। কিন্তু পাশ্চাত্য শিক্ষা থেকে মুসলিমরা দূরে থাকায় তারা ক্রমে পিছিয়ে পড়ে। ফলে – অধিকাংশ সরকারি ও সামাজিক সুযোগসুবিধা লাভ করলেও মুসলিমরা তা থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে মানসিক বিভেদ বৃদ্ধি পায়।
3 সৈয়দ আহমদের ভূমিকা: স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের উদ্যোগে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠা আলিগড় আন্দোলন প্রথম থেকেই সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রচার করতে থাকে। সৈয়দ আহমেদ মুসলিমদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, হিন্দু ও মুসলিম দুটি পৃথক জাতি, তাদের স্বার্থও পৃথক। এদের * মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। তিনি মুসলিমদের কংগ্রেসের চেয়ে ব্রিটিশদের • প্রতি বেশি ভরসা করার উপদেশ দেন। তাঁর হিন্দুবিদ্বেষী নীতি ভারতে – ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’র জন্ম দেয়।
4 ধর্মীয় বিভেদ: হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে বহু ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক মিল থাকলেও ধর্মীয় বিভেদ ছিল তীব্র। ধর্মীয় কারণে তারা উভয়ই নিজেদের সম্পূর্ণ পৃথক বলে মনে করত। ভারত-সচিব লর্ড ক্রস (১৮৮৬-১৮৯২ খ্রি.) বড়োলাট লর্ড ডাফরিনকে বলেন যে, ভারতীয়দের ধর্মীয় বিভেদ আমাদের পক্ষে লাভজনক হবে।
5 প্যান ইসলামবাদের আদর্শ: ভারতের মুসলিম সম্প্রদায় প্যান ইসলাম অর্থাৎ ইসলামের বিশ্বব্যাপী শ্রেষ্ঠত্বের আদর্শে বিশ্বাসী ছিল। তাদের অনেকেই ভারতবর্ষের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পরিবর্তে আরব, সিরিয়া, ইরাক প্রভৃতি মুসলিম রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিল। তারা ভারতের স্বাধীনতা অপেক্ষা তুরস্কের সুলতান ‘খলিফা’র মর্যাদারক্ষায় বেশি আন্তরিক ছিল।
6 ঔপনিবেশিক অর্থনীতির কুফল: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীগুলি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমান সুযোগ পায়নি। শিল্পায়নের অভাবে দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে হিন্দুরা নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করায় মুসলিম সম্প্রদায় পিছিয়ে পড়ে। এরূপ অর্থনৈতিক বৈষম্য হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব বৃদ্ধি করে।
7 বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ: অভিজাত মুসলিমরা বাণিজ্য বা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে জমিদারি পেশায় যুক্ত হয়। এদিকে ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসারের ফলে হিন্দু বুর্জোয়া শ্রেণির উদ্ভব ঘটে। ফলে জমিদার সম্প্রদায়ভুক্ত অভিজাত মুসলিমরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে। এই শ্রেণিগত বৈষম্য সাম্প্রদায়িক মনোভাব বৃদ্ধি করে।
৪ হিন্দু জাতীয়তাবাদ: উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ভারতের প্রাচীন সাহিত্য-সংস্কৃতিকে কেন্দ্র করে হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিকাশ। । শুরু হয়। দয়ানন্দ সরস্বতীর আর্য সমাজ ও শুদ্ধি আন্দোলন, বঙ্কিমচন্দ্রের হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সাহিত্য, তিলকের শিবাজী ও গণপতি উৎসব, অরবিন্দ ঘোষ ও বিপিনচন্দ্র পালের আন্দোলনের ভাবধারায় কালী ও দুর্গার মাতৃমূর্তির প্রচার প্রভৃতি ঘটনা মুসলিমরা সুনজরে দেখেনি।
9 বঙ্গভঙ্গ: বাংলা ছিল জাতীয় কংগ্রেস এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পীঠস্থান। ব্রিটিশবিরোধী শক্তিকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে সরকার মুসলিম তোষণ শুরু করে। এজন্য বড়োলাট লর্ড কার্জন পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে উসকে দিয়ে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা করে এবং এই পরিকল্পনায় মুসলিমদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করে। বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশি আন্দোলন শুরু হলে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি ঘটে। বেশিরভাগ মুসলিম স্বদেশি আন্দোলন থেকে দূরে থেকে বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করে।
10 মুসলিম লিগ ও হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠা: মুসলিম সম্প্রদায় নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা, আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ প্রভৃতি উদ্দেশ্যে ভারতে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে নিজেদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান মুসলিম লিগ গঠন করে। লিগের ক্রমিক প্রসারে আতঙ্কিত হয়ে এর পালটা হিসেবে গড়ে ওঠে হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান হিন্দু মহাসভা (১৯১৫ খ্রি.)। উভয় সম্প্রদায়ের প্রধান কর্মসূচির অঙ্গ হয়ে পড়ে বিপক্ষ প্রতিষ্ঠানের দাবিদাওয়াগুলির বিরোধিতা করা। এর ফলে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
উপসংহার: হিন্দু-মুসলিম বিভেদের ফলে ভারতের জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হয় এবং ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালেও এই সাম্প্রদায়িক বিভেদ অব্যাহত থাকে।
প্রশ্ন 16. ঊনবিংশ শতকের শেষদিক থেকে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার প্রসারের বিবরণ দাও।
সূচনা: ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের পর থেকে সাম্প্রদায়িক বিভেদনীতির মাধ্যমে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দুর্বল করার উদ্যোগ নেয়। সরকার শাসনকার্যে ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ (Divide and Rule Policy) প্রয়োগ করে বিভিন্ন সময়ে হিন্দু, মুসলিম বা অনগ্রসর শ্রেণিকে তোষণ করতে থাকে। এর ফলে ঊনবিংশ শতকের শেষদিক থেকে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভেদের ধারাবাহিক প্রসার ঘটে।
ভারতে সাম্প্রদায়িকতার প্রসার
1 দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রসার: ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায় এদেশে তাদের ধর্মীয় আর্দশকে খুবই গুরুত্ব দিত। এদেশে হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রসারে যেমন কখনো-কখনো মুসলিম-বিরোধিতা লক্ষ করা যায়, তেমনি মুসলিম জাতীয়তাবাদেও হিন্দু-বিরোধিতা লক্ষ করা যায়। আলিগড় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা স্যার সৈয়দ আহমেদ খান দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রচার করে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদের প্রাচীর গড়ে তোলেন। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়কে বোঝাতে সচেষ্ট হন যে, হিন্দু ও মুসলিম দুটি পৃথক জাতি। এদের সুসম্পর্ক ও সহাবস্থান সম্ভব নয়। তিনি মুসলিম সম্প্রদায়কে জাতীয় কংগ্রেস ও হিন্দু সম্প্রদায় থেকে দূরে থাকতে পরামর্শ দেন।
2 সরকারি উসকানি:
i. লর্ড ক্রসের আইনের (১৮৯২ খ্রি.) দ্বারা সরকার ভারতে সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের নীতি চালু করে।
ii. কার্জনের স্বরাষ্ট্র সচিব রিজলে ঘোষণা করেন (১৯০১ খ্রি.) যে, ভারতে প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠলে উচ্চবর্গের হিন্দুদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। এজন্য তিনি বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের পৃথক প্রতিনিধিত্বের সুপারিশ করেন।
iii. ঢাকার নবাব সালিমুল্লাহ সরকারের বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা সমর্থন করায় লর্ড মিন্টো তাঁকে ১৪ লক্ষ টাকা সরকারি ঋণ দেন।
iv. ফ্রান্সিস রবিনসন উল্লেখ করেছেন, উচ্চপদস্থ ইংরেজ আমলারা যুক্তপ্রদেশের উচ্চবর্গের মুসলমানদের স্মরণ করাতেন যে, ভারতে ইসলামের অস্তিত্ব বিপন্ন, উর্দু ভাষা আক্রান্ত, শিক্ষাব্যবস্থাকে মুসলিম সংস্কৃতির প্রভাবমুক্ত করতে হিন্দুরা সচেষ্ট ইত্যাদি। যুক্তপ্রদেশে বহু ইংরেজ আমলা মুসলিম সম্প্রদায়কে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, হিন্দুদের আগ্রাসনে ভারতে ইসলামের ভাষা, সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব বিপন্ন।
1 বঙ্গভঙ্গ: সরকার বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টি করে কংগ্রেস ও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ধ্বংস করার উদ্যোগ নেয়। সরকার পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের বোঝানোর চেষ্টা করে যে, বাংলা দ্বিখণ্ডিত হলে পূর্ববঙ্গের মুসলিমদের বহু সুবিধা হবে। মুসলিম সম্প্রদায় তা বিশ্বাস করে বঙ্গভঙ্গকে সমর্থন করে। বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববঙ্গের লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার বামফিল্ড ফুলার ঘোষণা করেন যে, পূর্ববঙ্গে সরকারি চাকরিতে হিন্দুদের বাদ দিয়ে মুসলিমদের নিয়োগ করা হবে।
2 সিমলা ডেপুটেশন: মুসলিম নেতা আগা খাঁ-র নেতৃত্বে ৩৫ জন ধনী অভিজাত মুসলিমের একটি প্রতিনিধি দল ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে (১ অক্টোবর) সিমলায় বড়োলাট লর্ড মিন্টোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নিজ সম্প্রদায়ের স্বার্থরক্ষার দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেশ করে। এটি ‘সিমলা ডেপুটেশন’ নামে পরিচিত। এই স্মারকলিপিতে সরকারি চাকরিতে বেশি সংখ্যক মুসলিমদের নিয়োগ, পরীক্ষা ছাড়া উচ্চপদে মুসলিমদের নিয়োগ, আইনসভায় মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা, একটি পৃথক মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় গঠন প্রভৃতি সাম্প্রদায়িক দাবি জানানো হয়। সরকার ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনে এই দাবি কার্যকরী করে।
5 মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা: মুসলিম সম্প্রদায় তাদের রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার উদ্দেশ্যে একটি সংস্থা গঠনের প্রয়োজন উপলব্ধি করে। ঢাকার নবাব সালিমুল্লাহ্-র উদ্যোগে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় সর্বভারতীয় মুসলিম অধিবেশন বসে। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩০ ডিসেম্বর সর্বভারতীয় মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
6 হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা: মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাও যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। দয়ানন্দ সরস্বতীর আর্যসমাজ ও শুদ্ধি আন্দোলন, তিলকের গোরক্ষা সমিতির প্রতিষ্ঠা, শিবাজি ও গণপতি উৎসবের প্রচলন, বিপিনচন্দ্র পাল ও অরবিন্দ ঘোষের হিন্দু দেবীর প্রচার প্রভৃতি মুসলিম সম্প্রদায় সুনজরে দেখেনি।
উপসংহার: ভারতে সাম্প্রদায়িকতার প্রসার এদেশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কুপ্রভাব ফেলেছিল। স্বাধীনতার পরবর্তীকালেও এই প্রভ অব্যাহত রয়েছে। সমাজ-সংস্কৃতিজ
প্রশ্ন 17. মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলোচনা করো। প্রতিষ্ঠার পর প্রথমদিকে বিটিশ সরকারের সঙ্গো লিগের সম্পর্ক কীরূপ ছিল?
উত্তর: মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা
1 প্রেক্ষাপট:
ⅰ. ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে সিমলায় বডোলাট লর্ড মিন্টোর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মুসলিম নেতৃবৃন্দ সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেন। এই সময় তারা একান্ত আলোচনায় উপলব্ধি করেন যে, সরকারের কাছে মুসলিমদের দাবিদাওয়া জানানোর উদ্দেশ্যে নিজেদের একটি সংগঠন। গড়ে তোলা দরকার।
ii. কথিত আছে যে, মুসলিম নেতৃবৃন্দ সিমলায় লর্ড মিন্টোর সঙ্গে দেখা করলে মিন্টো তাদের একটি মুসলিম সংগঠন গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
iii. ঢাকার নবাব সালিমুল্লাহ-র ডাকে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় একটি সর্বভারতীয় মুসলিম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ৩০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সারা ভারত মুসলিম লিগ’ (All India Muslim League) গঠিত হয়। লিগের প্রথম সভাপতি নিযুক্ত হন আগা খাঁ।
2 উদ্দেশ্য: মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্যগুলি ছিল-
i. ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপন।
ii. মুসলিমদের অধিকার ও স্বার্থরক্ষার জন্য কাজ করা।
iii. জাতীয় কংগ্রেস ও হিন্দুদের প্রভাব-প্রতিপত্তি খর্ব করা।
iv. কংগ্রেস-বিরোধী অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে মৈত্রী প্রতিষ্ঠা করা প্রভৃতি।
3 প্রসার: প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লিগ দ্রুত মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। দেশের বিভিন্ন প্রদেশে এর শাখা গড়ে ওঠে। লিগের দাবির ভিত্তিতে মর্লে-মিন্টো আইনের (১৯০৯ খ্রি.) দ্বারা মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়, অর্থাৎ শুধু মুসলিমদের দ্বারাই আইনসভায় মুসলিম প্রতিনিধিদের নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। এর ফলে সাম্প্রদায়িক বিভেদ আরও বৃদ্ধি পায়।
ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে লিগের সম্পর্ক
1 বঙ্গভঙ্গ রদ: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাগ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পৃথক পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ সৃষ্টি হলে মুসলিম সম্প্রদায় খুশি হয়েছিল। ক কিন্তু বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা তীব্র আন্দোলনের ফলে সরকার ১৯১১ ব খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ করে দুই বাংলা আবার যুক্ত করতে বাধ্য হয়। ফলে ■ ঢাকা-কেন্দ্রিক পূর্ববঙ্গের মুসলিম আধিপত্যের যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল ■ তা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য মুসলিম সম্প্রদায় সরকারের ওপর ক্ষুদ্ধ হয়।
2 প্রগতিশীল নেতৃত্ব: এতদিন মুসলিম লিগে আলিগড়ের নেতাদের একাধিপত্য ছিল। প্রতিষ্ঠার কিছুকাল পর একদল প্রগতিশীল তরুণ মুসলিম নেতা মুসলিম লিগে যোগ দেন এবং নেতৃত্বের আসন গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মৌলানা মহম্মদ আলি, মৌলানা সৌকত আলি, মহম্মদ আলি জিন্না, হাকিম আজমল খান, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, হসরত মোহানী প্রমুখ। নতুন এই যুব নেতারা ঘোষণা করেন যে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শামিল হয়ে ভারতের স্বায়ত্তশাসন লাভই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
3 লক্ষ্ণৌ চুক্তি: লিগের তরুণ নেতাদের প্রচেষ্টায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরি হয়। এর ফলে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি (১৯১৬ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তিতে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে,
i. কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ যৌথভাবে সরকারের কাছে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবি জানাবে।
ii. কংগ্রেসের ‘স্বরাজ’-এর আদর্শ লিগ মেনে নেবে।
iii. লিগের পৃথক নির্বাচনের দাবি কংগ্রেস মেনে নেবে।
iv. প্রতিটি প্রাদেশিক আইনসভায় মুসলিম সদস্যের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা হবে।
v. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের এক-তৃতীয়াংশ সদস্য মুসলিম হবেন। ড. বিপান চন্দ্র মনে করেন যে, লক্ষ্ণৌ চুক্তি হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
4 খিলাফৎ আন্দোলন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৮ খ্রি.) তুরস্ক ৪ পরাজিত হলে ব্রিটেন তুরস্কের ব্যবচ্ছেদ এবং তুরস্কের খলিফার ক্ষমতা খর্ব করার উদ্যোগ নেয়। এতে ভারতীয় মুসলিমরা অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে খিলাফৎ আন্দোলন শুরু করে। কংগ্রেস ও মুসলিম লিগ ঐক্যবদ্ধভাবে এই আন্দোলনে শামিল হয়।
5 অসহযোগ আন্দোলন: গান্ধিজি ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন এবং ‘স্বরাজের’ দাবি জানান। কংগ্রেসের এই আন্দোলন ও দাবির প্রতি মুসলিম লিগ সমর্থন জানায়। এর ফলে হিন্দু-মুসলিম সংহতি বৃদ্ধি পায় এবং সাময়িকভাবে হলেও সাম্প্রদায়িক বিভেদ হ্রাস পায়।
18. অসহযোগ আন্দোলনের পরবর্তীকালে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভেদ বৃদ্ধি সম্পর্কে আলোচনা করো।
সূচনা: চৌরিচৌরা ঘটনার জেরে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন। এদিকে তুরস্কে খলিফার পদ লুপ্ত হলে ভারতের খিলাফৎ আন্দোলনও থেমে যায়। ফলে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি স্থাপনের চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং পুনরায় উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভেদ বাড়তে শুরু করে।
উত্তর: সাম্প্রদায়িক বিভেদ বৃদ্ধি
1 মুসলিম নেতৃত্বের দূরত্ব: খিলাফৎ আন্দোলন বন্ধের পর আবুল কালাম আজাদ ছাড়া সকল খিলাফৎ নেতাই গান্ধিজিকে ত্যাগ করেন। একদা গান্ধিজির ঘনিষ্ঠ মুসলিম নেতা মৌলানা মহম্মদ আলি ও মৌলানা সৌকত আলি প্রকাশ্যেই ঘোষণা করেন যে, তাঁরা প্রথমে মুসলিম, পরে ভারতীয়। মুসলিম নেতারা ‘তানজিম্’ ও ‘তাবলিখ’ আন্দোলন শুরু করে নিজেদের সংগঠনের লোকসংখ্যা ও শক্তিবৃদ্ধিতে মন দেয়।
2 হিন্দু নেতৃত্বের সাম্প্রদায়িকতা: হিন্দুদের নেতৃত্বাধীন হিন্দু মহাসভা এই সময় মুসলিম লিগের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার নিয়মিত বিরোধিতা করতে থাকে। হিন্দু নেতারা ‘শুদ্ধি’ আন্দোলনের মাধ্যমে নিজ সংগঠন ও সম্প্রদায়ের শক্তিবৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করে। এই সময় হিন্দু মহাসভা ছাড়াও আর্যসমাজ, ভারত ধর্মমণ্ডল, পাঞ্জাব হিন্দুসভা প্রভৃতি সংগঠনগুলি নতুন করে সক্রিয় হয়ে ওঠে।
3 সাইমন কমিশন: ভারতের নতুন সংবিধান রচনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে সাইমন কমিশন গঠন করলে জাতীয় কংগ্রেস ও আংশিক মুসলিম লিগ এই কমিশন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু লিগের পাঞ্জাব গোষ্ঠী নামে পরিচিত মহম্মদ শফি, ফিরোজ খাঁ নুন, ফজলি হোসেন, মহম্মদ ইকবাল প্রমুখ মুসলিম নেতা সাইমন কমিশনকে স্বাগত জানায়। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে এই নেতাদের বিভেদ বৃদ্ধি পায়।
নেহরু রিপোর্ট: মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে গঠিত একটি সর্বদলীয় কমিটি ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধানের একটি খসড়া পেশ করেন। এটি ‘নেহরু রিপোর্ট’ নামে পরিচিত। কিন্তু ওই বছর ২২ ডিসেম্বর কলকাতার সর্বদলীয় অধিবেশনে জিন্না লিগের জন্য কিছু বিশেষ সুবিধা দাবি করলে তা নাকচ হয়। ফলে তিনি অনুগামীদের নিয়ে অধিবেশন ত্যাগ করে মহম্মদ ইকবাল, আগা খাঁ প্রমুখ প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সঙ্গে মিলিত হন। এভাবে লিগে ঐক্য ফিরে এলে লিগের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
5 জিন্নার ভূমিকা: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের দিল্লিতে লিগের অধিবেশনে জিন্না ভারতের মুসলিমদের স্বার্থে ‘চোদ্দো দফা দাবি’ পেশ করেন। এতে মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি-সহ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দাবি জানানো হয়। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে লিগের ভরাডুবির পর ওই বছর লিগের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে জিন্না কংগ্রেস শাসনকে ‘হিন্দু শাসনের নামান্তর’ বলে ঘোষণা করেন এবং হিন্দু আধিপত্যের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তিনি সর্বশ্রেণির মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেন। এভাবে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার পারদ আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়।
6 সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নীতি ঘোষণা করে মুসলিম, ভারতীয় খ্রিস্টান, শিখ, হরিজন, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান প্রভৃতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জয় হয় এবং ভারতের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতির জটিলতা বৃদ্ধি পায়।
7 লাহোর প্রস্তাব: বিখ্যাত উর্দু কবি ও লিগ নেতা মহম্মদ ইকবাল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি তোলেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুসলিম ন্যাশনাল গার্ড, খাকসার বাহিনী-সহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লাহোর লিগের অধিবেশনে বাংলার প্রধানমন্ত্রী ফজলুল হক পৃথক পাকিস্তানের দাবি করে বলেন যে, ভারতে হিন্দু-মুসলিম দুটি জাতি আছে-দুটি সম্প্রদায় নয়। এজন্য মুসলিমদের জন্য একটি পৃথক সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রয়োজন।
৪ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম: মন্ত্রী মিশনের (১৯৪৬ খ্রি.) প্রস্তাব অনুসারে বড়োলাট লর্ড ওয়াভেল কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরুকে মন্ত্রীসভা গঠনের আহ্বান জানান। এতে জিন্না ও মুসলিম লিগ অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়। তারা এই সরকারে যোগ না দিয়ে পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে সোচ্চার হয়। পৃথক পাকিস্তান আদায়ের উদ্দেশ্যে তারা সরকারের বিরুদ্ধে ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম’ শুরু করে। এতে কলকাতায় পাঁচদিন ধরে (১৬-২০ আগস্ট, ১৯৪৬ খ্রি.) ব্যাপক দাঙ্গা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড চলে।
উপসংহার: প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ঘটনায় কলকাতায় ভয়াবহ হত্যালীলার পর একে একে নোয়াখালি, ত্রিপুরা, বিহার প্রভৃতি স্থানে ব্যাপক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ গান্ধিজিকে বোঝান যে, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ভারত বিভাজন ও পৃথক পাকিস্তান সৃষ্টিই একমাত্র পথ। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে গান্ধিজিও এই প্রস্তাব মেনে নিলে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করার সঙ্গে সঙ্গে দেশ দ্বিখণ্ডিত হয়।
প্রশ্ন 19. নেহরু রিপোর্ট কী? মহম্মদ আলি জিন্নার ‘চোদ্দো দফা দাবি’ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর: নেহরু রিপোর্ট
ভারতীয়দের ক্ষোভ প্রশমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার সাংবিধানিক সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর অঙ্গ হিসেবে সরকার সাইমন কমিশন গঠন করে। এই কমিশন ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসে। সাইমন কমিশনের বিরোধিতা করে ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতা মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে নেহরু রিপোর্ট (১৯২৮ খ্রি.) রচিত হয়।
1 ভারতীয়দের ক্ষোভ: ভারতের সংবিধান রচনা করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার যে সাইমন কমিশন গঠন করে তাতে কোনো ভারতীয় সদস্য স্থান পাননি। তা ছাড়া এই কমিশন গঠনকালে ভারত সচিব বার্কেনহেড (১৯২৪-২৮ খ্রি.) সংবিধান রচনার বিষয়ে ভারতীয়দের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এসব ঘটনায় ভারতীয়রা অত্যন্ত অপমানিত ও ক্ষুদ্ধ হয়ে যোগ্য জবাব দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
2 সর্বদলীয় সম্মেলন: মুসলিম নেতা এম. এ. আনসারির নেতৃত্বে দিল্লিতে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত একটি সর্বদলীয় সম্মেলনে মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির ওপর ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। মতিলাল নেহরু আগস্ট মাসে সর্বদলীয় সম্মেলনের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে সংবিধানের একটি খসড়া পেশ করেন। এটি নেহরু রিপোর্ট নামে পরিচিত।
জিন্নার ‘চোদ্দো দফা দাবি’
মহম্মদ আলি জিন্নার সভাপতিত্বে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে (২৮ মার্চ) দিল্লিতে মুসলিম লিগের অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে জিন্না ভারতের মুসলিমদের স্বার্থে তাঁর বিখ্যাত ‘চোদ্দো দফা দাবি’ (Fourteen Points) পেশ করেন।
1 চোদ্দো দফা দাবিসমূহ: মহম্মদ আলি জিন্নার চোদ্দো দফা দাবিগুলি ছিল-
i. ভারতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন।
ii. প্রদেশগুলিতে স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন।
iii. আইন সভাগুলিতে মুসলিমদের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি নির্বাচনের
সুযোগ দান।
iv. মুসলিমদের জন্য কেন্দ্রীয় আইনসভায় ১/৩ অংশ আসন সংরক্ষণ।
v. মুসলিমদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
vi. বাংলা, পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে মুসলিম আয়ো সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রেখে ভারতের প্রদেশগুলির পুনর্গঠন।
vii. সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধর্মীয় স্বাধীনতা দান।
viii. কোনো আইনসভার কোনো সম্প্রদায়ের ৩/৪ অংশ সদস্য কোনো হাতি বিলের বিরোধিতা করলে তা প্রত্যাহার।
ix. প্রাদেশিক আইনসভার অনুমতি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন না করা।
*. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় ১/৩ অংশ মুসলিম সদস্য গ্রহণ করা।
xi. রাজ্য ও স্থানীয় সংস্থাগুলিতে মুসলিমদের জন্য পদ সংরক্ষণ করা।
xii. সিন্ধু প্রদেশকে বোম্বাই প্রদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন প্রদেশ গঠন করা।
xiii. বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে সাংবিধানিক সংস্কার প্রবর্তন।
xiv. মুসলিম শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ।
2 সমালোচনা: জিন্নার চোদ্দো দফা দাবিগুলি ছিল নেহরু রিপোর্টের প্রস্তাবগুলির সম্পূর্ণ বিপরীত ধরনের। চোদ্দো দফা দাবির অধিকাংশই গণতান্ত্রিক আদর্শের পরিপন্থী ছিল। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায় দাবিগুলি সমর্থন করে এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক উত্তাপ বৃদ্ধি পায়। মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক সুসম্পর্ক বিনষ্ট হয়।
20. সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি কী? ভারতীয়দের মধ্যে এই নীতির কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?
অথবা, সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করো? ভারতীয়দের মধ্যে এই নীতির প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?
উত্তর: সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি
ব্রিটিশ সরকার ভারতে তাদের শাসনকে নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে হিন্দু, মুসলিম-সহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এজন্য সরকার ভারতে ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ অনুসরণ করে। সরকারের বিভাজন ও শাসননীতিকে কার্যকরী করতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যান্সেস ম্যাকডোনাল্ড ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন। তাঁর এই নীতি ‘সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা’ নামে পরিচিত।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড কর্তৃক সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারা [1] মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, ভারতীয় খ্রিস্টান, ইঙ্গ-ভারতীয়, ইউরোপীয় প্রভৃতি বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই নীতির দ্বারা মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত আসনে শুধু মুসলিমরা বা শিখদের জন্য সংরক্ষিত আসনে শুধু শিখরা নির্বাচিত হওয়ার অধিকার পাবে। [2] হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু, নিম্নবর্ণের হিন্দু বা দলিত, অস্পৃশ্য হিন্দু প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত করে তাদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা ৭ করা হয়। [3] কোনো কোনো নির্বাচন কেন্দ্রে শুধু অস্পৃশ্য সম্প্রদায়কে ভোটদানের অধিকার দেওয়া হয়।
প্রতিক্রিয়া
1 সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জয়: সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির মাধ্যমে মুসলিম লিগের যাবতীয় সাম্প্রদায়িক দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়। শুধু বাকি থাকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ফলে আপাতত মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ব্যাপক জয় ঘোষিত হয় এবং লিগের মানসিক শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। অবশ্য জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতারা সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি সমর্থন করেননি।
2 গান্ধিজির অনশন: জাতীয় কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতিরতীব্র বিরোধিতা করে। গান্ধিজি সরকারের এই নীতির প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর জারবেদা জেলে আমরণ অনশন করলে তাঁর জীবনরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতারা আইন অমান্যআন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্ব না দিয়ে দলিত সম্প্রদায়ের নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকরের সঙ্গে আলোচনায় বেশি গুরুত্ব দেন।
3 পুনা চুক্তি: সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে দলিত নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকর ও গান্ধিজির মধ্যে আলোচনার পর উভয়ের মধ্যে পুনা চুক্তি (২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির দ্বারা- [i] আম্বেদকর দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করেন ও হিন্দুদের যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেওয়া হয়। [ii] সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার মাধ্যমে তফশিলি সম্প্রদায় যতগুলি আসন পেত, তার দ্বিগুণ আসন তাদের জন্য সংরক্ষিত হয়। [iii] গান্ধিজি ২৬ সেপ্টেম্বর অনশন ভঙ্গ করেন।
4 পৃথক পাকিস্তানের দাবি: সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণার পর লিগের পৃথক পাকিস্তানের দাবি আরও জোরালো হয়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যাম্সে ম্যাকডোনাল্ড কর্তৃক সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারা [1] মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, ভারতীয় খ্রিস্টান, ইঙ্গ-ভারতীয়, ইউরোপীয় প্রভৃতি বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই নীতির দ্বারা মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত আসনে শুধু মুসলিমরা বা শিখদের জন্য সংরক্ষিত আসনে শুধু শিখরা নির্বাচিত হওয়ার অধিকার পাবে। [2] হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু, নিম্নবর্ণের হিন্দু বা দলিত, অস্পৃশ্য হিন্দু প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত করে তাদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। [3] কোনো কোনো নির্বাচন কেন্দ্রে শুধু অস্পৃশ্য সম্প্রদায়কে ভোটদানের অধিকার দেওয়া হয়।
প্রতিক্রিয়া
1 সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জয়: সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির মাধ্যমে মুসলিম লিগের যাবতীয় সাম্প্রদায়িক দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়। শুধু বাকি থাকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ফলে আপাতত মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ব্যাপক জয় ঘোষিত হয় এবং লিগের মানসিক শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। অবশ্য জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতারা সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি সমর্থন করেননি।
2 গান্ধিজির অনশন: জাতীয় কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির তীব্র বিরোধিতা করে। গান্ধিজি সরকারের এই নীতির প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর জারবেদা জেলে আমরণ অনশন করলে তাঁর জীবনরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতারা আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্ব না দিয়ে দলিত সম্প্রদায়ের নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকরের সঙ্গে আলোচনায় বেশি গুরুত্ব দেন।
3 পুনা চুক্তি: সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে দলিত নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকর ও গান্ধিজির মধ্যে আলোচনার পর উভয়ের মধ্যে পুনা চুক্তি (২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির দ্বারা- [i] আম্বেদকর দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করেন ও হিন্দুদের যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেওয়া হয়। [ii] সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার মাধ্যমে তফশিলি সম্প্রদায় যতগুলি আসন পেত, তার দ্বিগুণ আসন তাদের জন্য সংরক্ষিত হয়। [iii] গান্ধিজি ২৬ সেপ্টেম্বর অনশন ভঙ্গ করেন।
4 পৃথক পাকিস্তানের দাবি: সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণার পর লিগের পৃথক পাকিস্তানের দাবি আরও জোরালো হয়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে এর চৌধুরী রহমত আলি ও তাঁর অনুগামীরা ‘এখন অথবা কখনও না’ (Now or never) শীর্ষক চার পাতার এক পুস্তিকায় ভারতের মুসলিম-অধ্যুষিত ব পাঁচটি প্রদেশ-পাঞ্জাব, আফগান প্রদেশ বা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ড প্রদেশ, • কাশ্মীর, সিন্ধু এবং বেলুচিস্তান নিয়ে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের দাবি র জানায়। কিছুকাল পরে তিনি ‘পাকিস্তান জাতীয় আন্দোলন’ শুরু করেন এবং , প্রস্তাবিত ‘পাকিস্তান’ ভূখণ্ডে কয়েকটি প্রচারকেন্দ্র স্থাপন করেন। কিছুকাল । পরই ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লিগের লাহোর অধিবেশনে পৃথক পাকিস্তানের দাবি জানানো হয়।
প্রশ্ন 21. ব্রিটিশ শাসনকালে মধ্য ভারতে দলিত সম্প্রদায় কীরূপ সামাজিক বৈষম্যের শিকার হত? এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা দলিত শ্রেণির আন্দোলনের সূত্রপাত ও প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: মধ্য ভারতের দলিত সম্প্রদায়ের প্রতি সামাজিক বৈষম্য
মধ্য ভারতের মধ্যপ্রদেশে মাহার নামে এক অস্পৃশ্য ও অনগ্রসর হরিজন হিন্দু সম্প্রদায় বসবাস করত। তাদের অধিকাংশই ঝাড়ুদার, জুতো তৈরি প্রভৃতি নিম্নস্তরের পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিল। কেউ কেউ চাষের কাজ করত। এই অনগ্রসর শ্রেণি বর্ণহিন্দুদের দ্বারা নানা সামাজিক বৈষম্যের শিকার হয়েছিল, যেমন-
1. তারা সমাজে পশুর চেয়েও অধম জীব বলে গণ্য হত।
2. তারা সর্বসাধারণের ব্যবহার করা জলাশয় বা কুয়ো থেকে পানীয় জল – নিতে পারত না।
3. হিন্দু মন্দিরে প্রবেশেও তাদের অধিকার ছিল না।
4. তাদের জন্য ধোপা-নাপিতও বন্ধ ছিল।
5. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দলিত হিন্দুদের সন্তানরা বর্ণহিন্দুদের আধিপত্যকারী বিদ্যালয়ে ভরতি হওয়ার সুযোগ পেত না।
6.যেসব বিদ্যালয়ে হরিজন শিক্ষার্থীরা ভরতির সুযোগ পেত, সেখানে
তারা বর্ণহিন্দু শিক্ষার্থীদের পাশে বসতে পারত না।
7. তারা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের কোনো সুযোগ পেত না।
আন্দোলনের সূত্রপাত ও প্রসার
1 মাহাদ মার্চ: অস্পৃশ্য সম্প্রদায়কে জনসাধারণের জলাশয় থেকে জল নেওয়ার অধিকার দেওয়া হত না। এর প্রতিবাদে মাহার সম্প্রদায়ভুক্ত ড. ভীমরাও আম্বেদকর (১৮৯১-১৯৫৬ খ্রি.) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইয়ের কোলাবায় চৌদার জলাশয়ে ‘মাহাদ মার্চ’ (Mahad March)-এ নেতৃত্ব দেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের বর্ণবৈষম্যের ভিত্তি ‘মনুস্মৃতি’ গ্রন্থটির কয়েকটি কপি আম্বেদকরের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে আগুনে পোড়ানো হয়। এভাবে বর্ণহিন্দুদের প্রাধান্য ও বর্ণভেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূচনা হয়।
2 মন্দিরে প্রবেশের আন্দোলন: হরিজন ও অন্যান্য নিম্নবর্ণের হিন্দুরা হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের অধিকার পেত না। এর প্রতিবাদে আম্বেদকর ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে আন্দোলন শুরু করেন। আম্বেদকর বলেন, “ইউরোপীয় ক্লাবগুলিতে একদা লেখা থাকত যে, ভারতীয় ও কুকুর প্রবেশ নিষেধ। এখন হিন্দু মন্দিরে অস্পৃশ্যদের প্রবেশ নিষেধ করে কি একই ধরনের অবজ্ঞা করা হচ্ছে না?” তাঁর ডাকে নিম্নবর্ণের মাহার সম্প্রদায়ের অগণিত মানুষ আন্দোলনে শামিল হয়। তারা মন্দিরের জলাশয় থেকে জলপান করলে মন্দিরের পুরোহিত ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।
মন্দিরে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে জোরদার আন্দোলন আরম্ভ হয়। এতে নেতৃত্ব দেন ড. ভীমরাও আম্বেদকর।
3. কলারাম মন্দিরে আন্দোলন: মন্দিরে প্রবেশের দাবিতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ড. আম্বেদকরের নেতৃত্বে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে নাসিকের কলারাম মন্দিরে নিম্নবর্ণের হিন্দুদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। নিম্নবর্ণের অন্তত ১৫ হাজার হিন্দু স্বেচ্ছাসেবক এই মন্দিরে শ্রীরামচন্দ্রের বিগ্রহে পুজো দেওয়ার দাবি জানায়।
4 সত্যাগ্রহ আন্দোলন: ড. আম্বেদকর হিন্দু মন্দিরে দলিত হিন্দুদের প্রবেশাধিকারের দাবিতে নাসিকে এক সম্মেলনে (২ মার্চ, ১৯৩০ খ্রি.) সত্যাগ্রহ আন্দোলন আরম্ভ করার কথা ঘোষণা করেন। মন্দিরে প্রবেশাধিকারের দাবিতে তাঁর নেতৃত্বে নাসিকে আন্দোলনকারীদের দীর্ঘ এক মাইল লম্বা মিছিল হয়, যা সেই সময়ের নিরিখে নাসিকের সবচেয়ে দীর্ঘ মিছিল ছিল। মিছিল এগিয়ে মন্দিরের সামনে গিয়ে দেখে যে মন্দিরের সমস্ত ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে তারা প্রধান ফটকের সামনে অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন।
5 আক্রমণ: আম্বেদকরের নেতৃত্বে কলারাম মন্দিরের সামনে প্রায় ১ মাস ধরে দলিত হিন্দুদের সত্যাগ্রহ চলে। ৯ এপ্রিল আন্দোলনকারীরা মন্দিরের রথ স্পর্শ করলে উগ্র বর্ণহিন্দুরা সত্যাগ্রহীদের ওপর তীব্র আক্রমণ শুরু করে। আন্দোলন-কারীদের ওপর ব্যাপক সংখ্যায় ইট ও পাথর ছোড়া হয়। ফলে সারা শহরে দলিত ও বর্ণহিন্দুদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। গোলমালের ফলে মন্দিরটি অন্তত এক বছর বন্ধ থাকে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই উত্তেজনা চলে।
6 আইন প্রণয়ন: মন্দিরে প্রবেশাধিকারের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের খবর সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সহানুভূতি লাভ করে। নাসিকে আন্দোলন চলার সময়ই বোম্বাই-এর প্রাদেশিক কংগ্রেস সরকার ‘মন্দিরে প্রবেশ সংক্রান্ত বিল’ (Temple Entry Bill, 1933) পাস করে। ফলে দলিত ও অস্পৃশ্যরা হিন্দু মন্দিরে প্রবেশের আংশিক অধিকার পায়। কিছুদিন পর মাদ্রাজ, মধ্যপ্রদেশ ও অন্যান্য আইনসভায়ও এবিষয়ে আইন পাস করে।
প্রশ্ন 22 ব্রিটিশ শাসনকালে দক্ষিণ ভারতে মন্দিরে প্রবেশ সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পরিচয় দাও। অথবা, দক্ষিণ ভারতে মন্দির প্রবেশ সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পরিচয় দাও।
সূচনা: দক্ষিণ ভারতের কেরালায় নিম্নবর্ণের হিন্দুরা হিন্দু মন্দিরে প্রবেশ এবং মন্দির-সংলগ্ন পথ-সহ অন্যান্য কিছু পথে যাতায়াত করার অধিকার পেত না। সেখানে ইঝাবা ও পুলায়া নামে দলিত হিন্দুরা উচ্চবর্ণের মানুষদের যথাক্রমে ১৬ ফুট ও ৭২ ফুটের চেয়ে কাছে আসতে পারত না। এভাবে তারা ‘তিনদাল’ বা দূরবর্তী দূষণের শিকার হয়েছিল।
উত্তর: দক্ষিণ ভারতে মন্দিরে প্রবেশ সংক্রান্ত ঘটনায় গড়ে ওঠা আন্দোলন
1 ভাইকম সত্যাগ্রহ
i. কংগ্রেসের ভূমিকা: কংগ্রেসের কাঁকিনাড়া অধিবেশনে অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর কেরালা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি (কে.পি.সি.সি.) অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে প্রচার এবং হিন্দু মন্দির ও জনপথগুলি অবর্ণ বা হরিজনদের জন্য খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করার উদ্যোগ নেয়।
ii. ভাইকম গ্রামে প্রতিবাদ: কেরালার ত্রিবাঙ্কুরের ভাইকম গ্রামে একটি বড়ো মন্দিরের চারদিকে ছিল রাস্তা। ইঝাবা, পুলায়া প্রভৃতি নিম্নবর্ণের হিন্দুরা এই মন্দিরে প্রবেশ বা মন্দির-সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে হাঁটার অধিকার পেত না। এই গ্রাম থেকেই কংগ্রেস অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে।
iii. সত্যাগ্রহের সূচনা: কেরালা প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২ মার্চ ভাইকমের মন্দির-সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে উচ্চ ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের একটি মিছিল বের করার উদ্যোগ নেয়। এবিষয়ে সবর্ণদের নৈতিক চেতনা জাগিয়ে তুলতে জোর কদমে প্রচার অভিযান চালানো হয়। ‘নায়ার সার্ভিস সোসাইটি’, ‘নায়ার সমাজম্’, ‘কেরালা হিন্দুসভা’ প্রভৃতি সবর্ণ (বর্ণহিন্দু) সংগঠনগুলি এই আন্দোলনকে সমর্থন করে। নাম্বুদিরি নামে বর্ণশ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণদের প্রধান সংগঠন যোগক্ষমা সভা মন্দিরের দরজা অবর্ণদের জন্য খুলে দেওয়ার পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করে।
iv. আন্দোলনকারীদের মিছিল: মন্দিরের দিকে আন্দোলন- কারীদের অগ্রগতি আটকাতে মন্দির কর্তৃপক্ষ ও ত্রিবাঙ্কুর সরকার
মন্দিরমুখী সব রাস্তায় ব্যারিকেড তৈরি করে। সত্যাগ্রহীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠার পরিস্থিতিতে ভাইকম সত্যাগ্রহ সারা দেশে প্রবল উন্মাদনা সৃষ্টি করে। আন্দোলনে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকরা আসতে থাকে। ৩০ মার্চ সত্যাগ্রহ শিবির থেকে কেশব মেননের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। মিছিল ক্রমে ভাইকমের মন্দিরের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ মিছিল আটকে দেয় এবং বহু আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
V. আন্দোলনে ব্যর্থতা: তীব্র আন্দোলন সত্ত্বেও ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ৩০ মার্চ ভাইকম মন্দিরের দরজা অবর্ণ হিন্দুদের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হয়নি।
2 পরবর্তী আন্দোলন: সত্যাগ্রহ আন্দোলনের দ্বারা ভাইকম মন্দিরের দরজা অবর্ণ হিন্দুদের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব না হলেও দলিত মানুষের সামাজিক সাম্যপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন থেমে থাকেনি। ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকে।
1. মহারানির কাছে আবেদন: গান্ধিজি মহারানি ও অন্যান্য রাজকর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করে একটি আপসরফা করেন। ফলে মন্দিরের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলি ছাড়া চারপাশের রাস্তাগুলি অবর্ণ হিন্দুদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
ii. গুরুবায়ুর মন্দিরে সত্যাগ্রহ: কেরালার গুরুবায়ুর মন্দিরে অবর্ণদের প্রবেশের দাবিতে কবি সুব্রমনিয়ান তিরুমান্নুর-এর নেতৃত্বে ১৬ জনের একটি সত্যাগ্রহী দল ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে (২১ অক্টোবর) গুরুবায়ুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। প্রচুর যুবক আন্দোলনে যোগ দেয়। সমগ্র
কেরালায় ‘মন্দির প্রবেশ দিবস’ (১ নভেম্বর) পালিত হয়। প্রার্থনা, মিছিল, অর্থ সংগ্রহ ইত্যাদি চলতে থাকে।
iii. কেলাপ্পান ও গোপালনের আন্দোলন: অবর্ণ হিন্দুদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়ার দাবিতে কে. কেলাপ্পান ও এ. কে. গোপালনের নেতৃত্বে ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে (নভেম্বর) আন্দোলন আবার জোরদার হয়ে ওঠে। সকল হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য মন্দিরের দরজা না খোলা পর্যন্ত তিনি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনশন শুরু করেন। কেলাপ্পান শেষ পর্যন্ত গান্ধিজির অনুরোধে অনশন ভাঙলেও এই আন্দোলন সারা দেশে আবার আলোড়ন সৃষ্টি করে। গোপালন সারা কেরালায় প্রচার করে আন্দোলন সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করেন।
iv. আন্দোলনের জয়: দীর্ঘ আন্দোলনের পর অবর্ণ হিন্দুদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া সম্ভব হয়। ত্রিবাঙ্কুরের মহারাজা ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে জাতপাত-নির্বিশেষে সমস্ত হিন্দুদের জন্য সরকার-নিয়ন্ত্রিত সব মন্দির খুলে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারির নেতৃত্বে মাদ্রাজ মন্ত্রীসভা ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে সকলের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কংগ্রেস শাসিত অন্যান্য প্রদেশগুলিতেও অনুরূপ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
উপসংহার: ভারতীয় সমাজে সাম্প্রদায়িক বিভেদ জিইয়ে রাখার উদ্দেশ্যেই সরকার নিম্নবর্ণের মানুষদের মন্দিরে প্রবেশ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানে আন্তরিক উদ্যোগ নেয়নি। বরং সরকারের পুলিশ অনেক সময় মন্দিরে প্রবেশ সংক্রান্ত আন্দোলন দমন করে সবর্ণ ও অবর্ণ হিন্দুদের মধ্যে বিভেদ জিইয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল।
প্রশ্ন 23. রাওলাট আইন কী? কেন রাওলাট আইন (১৯১৯ খ্রি.) প্রবর্তন 1 করা হয়?
উত্তর: রাওলাট আইন (১৯১১ খ্রি.)
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে একদিকে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন প্রবর্তন করে জনগণকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা
করে, অন্যদিকে ভারতীয়দের ব্রিটিশবিরোধী গণ-আন্দোলন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে সরকার ইংল্যান্ডের বিচারপতি সার সিডনি রাওলাট-এর সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন (১৯১৮ খ্রি.) করে। এটি ‘রাওলাট কমিশন’ বা ‘সিডিশন কমিশন’ নামে পরিচিত। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসন্ন্য ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে এক দমনমূলক বিল উত্থাপিত হয় ভারতীয় সদস্যদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ১৮ মার্চ বিলটি আইনে পরিণয় হয়। এটি ‘রাওলাট আইন’ (Rowlatt Act) নামে পরিচিত।
রাওলাট আইন প্রবর্তনের কারণ
শ্বেতাঙ্গদের খুশি করার চেষ্টা: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু- বিভিন চেমসফোর্ড সংস্কারের মাধ্যমে সরকার ভারতীয়দের কিছুটা তোষণ ও তাদের কিছু কিছু স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে নগ্ন
সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতাসম্পন্ন কিছু কিছু ইংরেজ অসন্তুষ্ট হয়। এই শ্রেণিকে T করছে খুশি করার উদ্দেশ্যে সরকার ভারতীয়দের ওপর তীব্র দমনমূলক আইন এরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে।
2 সরকারের সুপারিশ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কালে ভারতের ব্রিটিশ আজ সরকার বিলাতের প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেনকে এক পত্রে জানায় যে, যুদ্ধের পর আামি ভারতের পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। এই সম্ভাব্য পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে আগাম ব্যবস্থা নিতে ভারত সরকার প্রধানমন্ত্রী চেম্বারলেনকে অনুরোধ করে।
3 ভারতরক্ষা আইন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে ব্রিটিশবিরোধী সব ধরনের আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকার ‘ভারতরক্ষা আইন’ (Defence of India Act, 1915) নামে একটি দমনমূলক আইন প্রবর্তন করেছিল। যুদ্ধ শেষে এই আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এই অবস্থায় যুদ্ধ- দি পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ভারতরক্ষা আইনের মতো একটি নতুন দমনমূলক আইন প্রণয়নের প্রয়োজন অনুভব করে।
4 মুসলিমদের ক্ষোভ: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মুসলিম জগতের ধর্মগুরু কে তুরস্কের খলিফা ইংল্যান্ডের বিপক্ষ জোটের হয়ে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। এজন্য যুদ্ধের পর ব্রিটিশ সরকার পরাজিত তুরস্কের খলিফার ক্ষমতা যথেষ্ট পরিমাণে খর্ব করে। তারা তুরস্কের ব্যবচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়। এতে ভারতীয় মুসলিম সম্প্রদায় ব্রিটিশদের ওপর অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়ে খিলাফৎ আন্দোলন শুরু করে।
5 গণ আন্দোলন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অনাবৃষ্টির ফলে শস্যহানি, বেকারত্ব, মহামারির প্রকোপ প্রভৃতির ফলে দেশবাসীর অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকায় দেশবাসী ব্রিটিশ সরকারের ওপর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়। এই ক্ষোভ দিকে দিকে গণ আন্দোলন রূপে ছড়িয়ে পড়ে।
6 শ্বেতাঙ্গদের অমানবিকতা: দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ অন্যান্য ব্রিটিশ উপনিবেশগুলিতে প্রচুর ভারতীয় কর্মরত ছিল। সেখানে ব্রিটিশ সরকার ও শ্বেতাঙ্গরা ভারতীয়দের সঙ্গে খুবই অমানবিক আচরণ করত। এই খবর ভারতে ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয়রা এদেশের সরকার ও শ্বেতাঙ্গদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়।
7 বিপ্লববাদের প্রসার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে সরকারের বিরুদ্ধে বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। বিপ্লবীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গদের ওপর আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড চালাতে শুরু করলে সরকার অত্যন্ত আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় সরকার ভারতীয়দের ওপর প্রচণ্ড দমনমূলক নীতি গ্রহণ করে সংকটজনক পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে।
৪ সিডিশন কমিটি: ভারতে ব্রিটিশবিরোধী ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে একটি কমিটি গঠন করে। এটি ‘সিডিশন কমিটি’ নামে পরিচিত। এই কমিটি ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে তার প্রতিবেদন পেশ করে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ কুখ্যাত রাওলাট আইন পাস হয়।
প্রশ্ন 23 রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল? গান্ধিজি কেন এই আইনের বিরোধিতা করেছিলেন?
উত্তর: রাওলাট আইনের উদ্দেশ্য
TOPIC [B]-এর 1 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘রাওলাট আইন প্রবর্তনের কারণ’ শীর্ষক অংশের 1, 3, 4 ও 7 নং পয়েন্টগুলি দ্যাখো।
রাওলাট আইনের বিরোধিতা ও গান্ধিজি
প্রেক্ষাপট: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ভারতে বৈপ্লবিক ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ব্রিটিশ সরকার শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য সরকার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে ‘সিডিশন কমিটি’ গঠন করে। এই কমিটির তৈরি আইনের খসড়াটি কেন্দ্রীয় আইনসভায় আইন হিসেবে গৃহীত হয়। এই আইনের নাম হয় রাওলাট আইন। আসলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতরক্ষা আইনের আয়ু শেষ হলে বিপ্লবী ও সন্ত্রাসবাদীদের দমনের জন্য এক নতুন আইনের দরকার পড়ে। এই আইন সেই দরকার মেটায়।
গান্ধিজির বিরোধিতা
1 আইনের আপত্তিকর দিক: ভারতীয়দের দৃষ্টিতে রাওলাট আইনের বেশকিছু আপত্তিকর দিক ছিল। রাওলাট আইনের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বিপ্লবী ও সন্ত্রাসবাদীদের দমনকে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই আইনে বিনাবিচারে যে-কোনো সন্দেহজনক ব্যক্তিকে আটক করা, তাদের বাসস্থানের ওপর নজর রাখা ও ঘর তল্লাশি করা, সম্পত্তি দখল করা, জুরি ছাড়া বুদ্ধদ্বার আদালতে বিচার করা, মোটা টাকার জামানত আদায় করা প্রভৃতি দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পুলিশকে এই আইন রূপায়ণের জন্য বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। গান্ধিজি তাই ভারতবাসীর সার্বিক স্বার্থরক্ষার লক্ষ্যে এই আইনের বিরোধিতা করেন।
2 জাতীয় আন্দোলনের রূপবদল: জাতীয় নেতা হিসেবে গান্ধিজি অনুভব করেছিলেন তরুণ প্রজন্ম আর আবেদন-নিবেদনের রাজনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। যুগবদলের সাথে সাথে পরের প্রজন্ম জাতীয় আন্দোলনের রূপ তথা পরিচালন পদ্ধতির বদল চেয়েছিল। গান্ধিজি তাঁর অসামান্য দূরদৃষ্টির দ্বারা এই সত্য অনুভব করেছিলেন। আসলে জাতীয় কংগ্রেসের প্রথমদিকের নরমপন্থী নেতৃবর্গ আবেদন-নিবেদন নীতির রাজনীতি করে ভারতবাসীর স্বার্থরক্ষায় তেমন সফল হননি। তাই জাতীয় স্তরে সরাসরি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
গান্ধিজি এই পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।
3 সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রয়োগ: গান্ধিজির রাজনৈতিক আদর্শ ছিল সত্যাগ্রহ। সত্যাগ্রহের দুটি দিক-একটি সত্যবাদিতা ও অপরটি অহিংসা। প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে শুদ্ধ তেজ বা শক্তি থাকে গান্ধিজি তাকেই বলেছেন ‘সত্যের শক্তি’। এই শক্তিরই অপর নাম ‘প্রেমের শক্তি’। গান্ধিজি মনে করতেন, এই শক্তি দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়। গান্ধিজি এই শক্তিকে দু- ভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, যথা-গঠনমূলক কাজে ও অন্যায়ের প্রতিশোধক হিসেবে। সত্যাগ্রহের মূল কথাই হল অন্যায়ের সঙ্গে অসহযোগিতা করা। গান্ধিজি মনে করতেন, রাওলাট আইন জারি করে ব্রিটিশ অন্যায় করেছে। তাই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
প্রশ্ন 24 রাওলাট আইন-বিরোধী আন্দোলনে সরকার কীরূপ দমনপীড়ন চালিয়েছিল?
সূচনা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী কার্য কার্যকলাপ ও গণ আন্দোলনগুলি দমন করার উদ্দেশ্যে সরকার বিচারপতি। পিল স্যার সিডনি রাওলাট-এর সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন (১৯১৭ খ্রি.) করে। এটি ‘রাওলাট কমিশন’ বা ‘সিডিশন কমিশন’ নামে পরিচিত। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে (১৮) মার্চ) এক তীব্র দমনমূলক আইন পাস করে। এই আইনটির আসল নাম ছিল ‘দ্য অ্যানার্টিক্যাল অ্যান্ড রেভল্যুশনারি অ্যাক্ট’। এটি সাধারণভাবে ‘রাওলাট নক আইন’ নামে পরিচিত।
উত্তর: রাওলাট আইন-বিরোধী আন্দোলনে দমনপীড়ন
1 পুলিশি দমনপীড়ন: দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও জনতার মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পাঞ্জাব এবং দিল্লিতে এই সংঘর্ষ ভয়ানক আকার ধারণ করে। গান্ধিজির ডাকে ধর্মঘটে (৬ এপ্রিল) যোগ দেওয়া আন্দোলনকারীদের কূপর পুলিশ গুলি চালালে ৮ জন নিহত ও প্রায় ১০০ জন আহত হয়। কলকাতায় কংগ্রেস এবং খিলাফৎপন্থীদের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়।
2 গান্ধিজি গ্রেপ্তার: দিল্লি ও পাঞ্জাবের পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গান্ধিজি ৭ এপ্রিল দিল্লির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তিনি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে পুলিশ ১০ এপ্রিল দিল্লির নিকটবর্তী পালওয়াল স্টেশনে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বোম্বাই পাঠিয়ে দেয়। এই ঘটনায় বোম্বাই, আমেদাবাদ, বিরামগাঁও-সহ বিভিন্ন স্থানে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। আমেদাবাদে সামরিক আইন জারি করা হয়। গান্ধিজি এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একেবারে সামনের সারিতে চলে আসেন। এই সময় থেকেই গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক নতুন যুগ শুরু হয়। অবশ্য রাওলাট সত্যাগ্রহে হিংসার প্রবেশ ঘটলে গান্ধিজি প্রচণ্ড মর্মাহত হয়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
3 পাঞ্জাবের পরিস্থিতি: রাওলাট-বিরোধী আন্দোলনে পাঞ্জাবেরপরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পাঞ্জাবের মুখ্য প্রশাসক লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার মাইকলে ও’ ডায়ার এখানে নির্মম অত্যাচার শুরু করেন। তিনি পাঞ্জাবে ব্যাপক হারে গ্রেপ্তার ও সভাসমিতির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। রাওলাট আইনের প্রতিবাদ করা এবং হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগে সরকার ১০ এপ্রিল (১৯১৯ খ্রি.) অমৃতসরের স্থানীয় দুই নেতা সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড. সত্যপালকে গ্রেপ্তার করে এবং বিনা বিচারে তাদের অজ্ঞাতস্থানে অন্তরীণ করে রাখে।
4 অমৃতসরে গুলিবর্ষণ: পুলিশের নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদে অমৃতসরে শান্তিপূর্ণ মিছিল হলে ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ মিছিলে অংশগ্রহণকারী জনতার ওপর গুলি চালায়। এতে ২০ জন নিহত এবং প্রায় ১৫০ জন আহত হয়। এরপর ক্ষুব্ধ জনতা সরকারি অফিস, রেল স্টেশন, ইংরেজদের বাসস্থান প্রভৃতির ওপর আক্রমণ চালায়।
5 জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড: কুখ্যাত রাওলাট আইন- বিরোধী আন্দোলনে সবচেয়ে নির্মম দমনপীড়নের ঘটনাটি ঘটে পাঞ্জাবের অমৃতসরে জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রায় দশ হাজার নিরস্ত্র মানুষ ১৩ এপ্রিল (১৯১৯ খ্রি.) এই মাঠের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দেয়। পাঞ্জাবের সামরিক শাসক মাইকেল ও’ ডায়ারের নেতৃত্বে সেনা ও পুলিশের এক বিশাল বাহিনী সমাবেশের জনতার ওপর নির্বিচারে পঞ্চাশটি রাইফেল থেকে অন্তত দশ মিনিট ধরে ১৬০০ রাউন্ড গুলি চালালে শিশু, নারী-সহ অন্তত ১০০০ মানুষের মৃত্যু হয়।
6 সামরিক আইন জারি: জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ এপ্রিল এক মিটিং-এ ডায়ার-সহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ অফিসার যে বিবৃতি দেন প্রকৃতপক্ষে তা ছিল ভারতীয়দের প্রতি হুমকি। জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনার পর সরকার অমৃতসর-সহ পাঞ্জাবের পাঁচটি জেলায় সামরিক আইন জারি করে। শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ ও জলের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভারতীয় আইনজীবীরা হরতালে অংশ নেওয়ায় সামরিক আইনের দ্বারা তাদের নানাভাবে শাস্তি দেওয়া হয়। বিশেষ আদালত গঠন করে অন্তত ৫১ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং বহু মানুষকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া মার্শাল ল কমিশন (১৯১৯ খ্রি.) গঠন করে প্রকাশ্য রাজপথে বেত্রাঘাত, হাত ও কোমরে শেকল বা দড়ি বেঁধে ঘোরানো প্রভৃতি অত্যাচার চলতে থাকে।
উপসংহার: পুলিশের সীমাহীন বর্বর দমনপীড়নের ফলে রাওলাট-বিরোধী আন্দোলন দুর্বল হতে বাধ্য হয়। তবে এই বর্বর দমনপীড়ন জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দকে নতুন করে সজাগ করে। রাওলাট আইনের চরম পরিণতি ছিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি ঘৃণাভরে ত্যাগ করেন।
প্রশ্ন 25 রাওলাট সত্যাগ্রহ কী? জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের
উত্তর: রাওলাট সত্যাগ্রহ
গান্ধিজি একসময় ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে ‘ঈশ্বরের আশীর্বাদ’ বলে মনে লাট করলেও কুখ্যাত রাওলাট আইনের সুপারিশগুলি কংগ্রেসের উদীয়মান নেতা মহাত্মা গান্ধিকে বিস্মিত করে। এই আইনের পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধিজি ব্রিটিশ শাসনকে ‘শয়তানবাদ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে তোলেন। এই আন্দোলন ‘রাওলাট সত্যাগ্রহ’ ভর্নর নামে পরিচিত।
1 প্রস্তুতি: প্রথমদিকে হোমরুল লিগের কিছু কর্মী ও কয়েকটি লাট ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সমর্থন নিয়ে গান্ধিজি রাওলাট সত্যাগ্রহে শামিল হন। ১০ অহিংস উপায়ে এবং শান্তিপূর্ণভাবে আইন অমান্য করে কারাবরণ করা ছিল ড. রাওলাট সত্যাগ্রহের প্রধান কর্মপন্থা। মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে তিনি দিল্লি, বীণ বোম্বাই, এলাহাবাদ, লক্ষ্ণৌ ও দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে আন্দোলনের সমর্থনে ব্যাপক প্রচার চালান। এই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রচার- দে পুস্তিকাও প্রকাশিত হয়।
2 কংগ্রেসের উদ্যোগ: রাওলাট সত্যাগ্রহের মাধ্যমে গান্ধিজি জাতীয় কংগ্রেসকে প্রত্যক্ষ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে শামিল করেন। কংগ্রেস এই আন্দোলনকে শহরে, গ্রামে, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী, দরিদ্র প্রভৃতি সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়। এভাবে কংগ্রেস তার দুর্বলতা কাটিয়ে ন- জাতীয় রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।
3 সত্যাগ্রহ সভা: রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর উদ্দেশ্যে গান্ধিজির সভাপতিত্বে ‘সত্যাগ্রহ সভা’ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং রাওলাট সত্যাগ্রহ শুরু হয়। এর সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয় বোম্বাই শহরে।
4 ধর্মঘট: গান্ধিজির ডাকে ৬ এপ্রিল (১৯১৯ খ্রি.) সারা দেশে – অভূতপূর্ব ও স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হয়। এটিই ছিল প্রথম সর্বভারতীয় ধর্মঘট। দিল্লিতে পুলিশের গুলিতে ৮ জন নিহত ও প্রায় ১০০ জন আহত হলে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দিল্লি অন্তত ৭ দিন অচল থাকে। ১০ এপ্রিল পুলিশ গান্ধিজিকে গ্রেপ্তার করলে দেশ বিক্ষোভে জ্বলে ওঠে।
5 মুসলিমদের ভূমিকা: মুসলিম সম্প্রদায়ের একটি বড়ো অংশ রাওলাট সত্যাগ্রহে শামিল হয়। জাফর আলি খান, কবি মহম্মদ ইকবাল, যুব নেতা আনসারি প্রমুখ মুসলিম নেতৃত্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে রাওলাট সত্যাগ্রহের প্রসার ঘটান। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সারা দেশে এত তীব্র আন্দোলন সত্ত্বেও সরকার কিন্তু রাওলাট আইন প্রত্যাহার করেনি।
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের পটভূমি
ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে তীব্র দমনমূলক রাওলাট আইন পাস করলে এই আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবে প্রতিবাদ আন্দোলন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। পাঞ্জাবে রাওলাট-বিরোধী আন্দোলনের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ও মর্মান্তিক ঘটনা ছিল ১৩ এপ্রিল (১৯১৯ খ্রি.) জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে একটি শান্তিপূর্ণ জমায়েতে ইংরেজ পুলিশের নির্বিচার গুলিচালনা এবং এর ফলে অন্তত ১০০০ মানুষের মৃত্যু। এই ভয়াবহ হত্যাকান্ডের পটভূমি নীচে উল্লেখ করা হল-
1 পাঞ্জাবে নির্যাতন: জুলুম চালিয়ে যুদ্ধের জন্য পাঞ্জাব থেকে সেনা ও অর্থ সংগ্রহ, ‘গদর’ বিদ্রোহ প্রতিরোধ প্রভৃতি উদ্দেশ্যে সরকার পাঞ্জাবে তীব্র দমনপীড়ন চালালে পাঞ্জাব ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। পাঞ্জাবের কর্মচ্যুত সেনাদের সমাবেশে এই ক্ষোভ তীব্র হয়ে ওঠে। এই অবস্থায় পাঞ্জাবের গভর্নর মাইকেল ও’ ডায়ারের অত্যাচারী শাসন পাঞ্জাবকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করে।
2 রাওলাট আইন: ভারতীয়দের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ এবং আন্দোলন কঠোর হাতে দমনের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী রাওলাট আইন প্রবর্তন করে। এই নিষ্ঠুর দমনমূলক আইনের বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের মানুষ প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠে। এই আইনের প্রতিবাদে পাঞ্জাব বারুদের স্তূপে পরিণত হয়।
3 নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তার: ‘পিপল্স কমিটি’ নামে একটি গণসংগঠন লাহোর ও অমৃতসরে রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবে ব্যাপক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলন ও হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডে মদত দেওয়ার অভিযোগে সরকার অমৃতসরের দুই নেতা ড. সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড. সত্যপালকে (১০ এপ্রিল, ১৯১৯ খ্রি.) গ্রেপ্তার করে। ফলে পাঞ্জাবের সাধারণ মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এদিকে গান্ধিজিকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে লাহোরে ব্যাপক ধর্মঘট শুরু হয়। পাঞ্জাবের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে জনতার খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায়। উত্তেজিত জনতা সরকারি অফিস-আদালত, টেলিগ্রাফ লাইন ও অন্যান্য সরকারি সম্পত্তিতে আক্রমণ চালায়।
4 অমৃতসরে সামরিক শাসন: রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন ক্রমশ জোরদার হয়ে উঠলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইকেল ও’ ডায়ারের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর হাতে অমৃতসর শহরের শাসনভার তুলে দেওয়া হয়। এই বাহিনী অমৃতসরে সামরিক আইন জারি করে ১১ এপ্রিল শহরেজনসভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করে।
5. Fill in The Blanks
1. খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন দ্বারা ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান ঘটে।
(A) ১৮৫৮ ✓
(B) ১৮৬১
(C) ১৮৯২
(D) ১৯০৯
2. জন মর্লে ছিলেন ভারতের ।
(A) গভর্নর-জেনারেল
(B) গভর্নর
(C) বড়োলাট
(D) সচিব ✓
3. ব্রিটিশ ভারতের প্রথম ভাইসরয় ছিলেন ।
(A) ওয়ারেন হেস্টিংস
(B) লর্ড ক্যানিং
(C) মাউন্টব্যাটেন ✓
(D) লর্ড বেন্টিঙ্ক
4. মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন পাস হয় ।
খ্রিস্টাব্দে।
(A) ১৯০৯
(B) ১৯১৯ ✓
(C) ১৯২৭
(D) ১৯৩৫
5. ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত শাসন অনুসারে ভারত থেকে পৃথক করা হয়।
(A) ব্রহ্মদেশকে ✓
(B) সিংহলকে
(C) নেপালকে
(D) ইংল্যান্ডকে
6. ১৮৯২ খ্রিস্টাব্দের নতুন ভারত শাসন আইনকে ‘একটি ধাপ্পাবাজি’ বলে অভিহিত করেছেন ।
(A) ঐতিহাসিক সুমিত সরকার
(B) ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র ✔
(C) ঐতিহাসিক ইরফান হাবিব
(D) ঐতিহাসিক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায়
7. মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন পাস হয় ।
(A) ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে
(B) ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে
(C) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে
(D) ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে ✔
৪. ১৯১৯-এর ভারত শাসন আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় আইনসভার উচ্চকক্ষের নাম রাখা হয়
(A) কেন্দ্রীয় আইনসভা
(B) রাষ্ট্রীয় পরিষদ ✔
(C) ফেডারেল অ্যাসেম্বলি
(D) কাউন্সিল অব স্টেটস
9. রাওলাট আইনের বিরোধিতা করায় সরকার কে অমৃতসর থেকে গ্রেপ্তার করে।
(A) গান্ধি
(B) জিন্না
(C) মদনমোহন মালব্য
(D) সৈফুদ্দিন কিচলু ✔
10. মাইকেল ও ‘ডায়ার ছিলেন।
(A) পাঞ্জাবের সামরিক শাসক ✔
(B) ভারতের বড়োলাট
(C) ভারতের গভর্নর-জেনারেল
(D) ভারত সচিব
11. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের তারিখে সংঘটিত হয়।
(A) ৩ এপ্রিল
(B) ২৩ এপ্রিল ✔
(C) ১৩ এপ্রিল
(D) ৩০ এপ্রিল
12. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলায় জনকে অভিযুক্ত করা হয়।
(A) ৩০
(B) ৩৩ ✔
(C) ৩৮
(D) ৪২
13. মিরাট ষড়যন্ত্র মামলা হয় |
(A) কংগ্রেসকে দুর্বল করার জন্য
(B) কমিউনিস্টদের দুর্বল করার জন্য✔
(C)বিপ্লবীদের দুর্বল করার জন্য
(D) চরমপন্থীদের দুর্বল করার জন্য
14. জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল এর নির্দেশের ফলে।
(A) মাইকেল ডায়ার
(B) মলে-মিন্টো ✔
(C) মন্টেগু-চেমসফোর্ড
(D) ডালহৌসি
15. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে |
(A) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ এপ্রিল
(B) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল ✔
(C) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩ এপ্রিল
(D) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০ এপ্রিল
16. সিমলা বৈঠকে মুসলিম প্রতিনিধিদের নেতৃত্ব দেন।
(A) ভিকার উল-মূলক
(B) সালিমুল্লাহ
(C) লিয়াকৎ হোসেন।
(D) আগা খাঁ✔
17. হরিজন পত্রিকা প্রকাশ করেন।
(A) গান্ধিজি✔
(B) নেহর্
(C) বল্লভভাই প্যাটেল
(D) বি. আর. আম্বেদকর
18. মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠিত হয় খ্রিস্টাব্দে।
(A) ১৯০৬✔
(B) ১৯০৮
(C) ১৯০২
(D) ১৯০৫
19. প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে ভারতের এক প্রধান রাজনৈতিক দল, যোগদান করেনি।
(A) কমিউনিস্ট পার্টি
(B) হিন্দু মহাসভা
(C) মুসলিম লিগ
(D) কংগ্রেস✔
20. জিন্না তাঁর চোদ্দো দফা দাবি মুসলিম লিগের অধিবেশনে ঘোষণা করেন।
(A) লাহোর
(B) দিল্লি✔
(C) কানপুর
(D) কলকাতা
21. ভাইকম সত্যাগ্রহের সাথে যুক্ত ছিলেন।
(A) রামমোহন
(B) জ্যোতিবা ফুলে
(C) নারায়ণ গুরু✔
(D) বীরসালিঙ্গম
22. ‘পুনা চুক্তি’ স্বাক্ষরিত হয় খ্রিস্টাব্দে।
(A) ১৯১৬
(B) ১৯১৮
(C) ১৯৩০
(D) ১৯৩২✔
23. র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ছিলেন |
(A) ব্রিটিশ রাজা
(B) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী✔
(C) ব্রিটিশ গভর্নর-জেনারেল
(D) ভারত-সচিব
24. এদেশে সর্বপ্রথম পাঞ্জাবের সেনাবাহিনীতে ‘বিভাজন ও শাসননীতি’ কার্যকরী করেন |
(A) লর্ড কার্জন
(B) জন লরেন্স✔
(C) ওয়েলেসলি
(D) ওয়ারেন হেস্টিংস
25. গান্ধিজি ‘হরিজন’ নামে ডাকতেন |
(A) ব্রাহ্মণদের
(B) ক্ষত্রিয়দের
(C) বৈয়বদের
(D) দলিত হিন্দুদের✔