WBBSE Class Chapter 7 History Solution | Bengali Medium

অধ্য়ায়  জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি

MCQs Question Answer

১.১ মধ্যযুগে গাঙ্গেয় সমভূমিতে উৎপন্ন ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল-

ক) আঙুর

খ) আম

গ) খেজুর

ঘ জাম

উত্তর: (খ) আম।

১.২ সুলতানি যুগে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল-

(ক) বহলাল লোদির রাজত্বকালে

খ) ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে

গ) ইব্রাহিম লোদির রাজত্বকালে

(ঘ) আলাউদ্দিন খলজির রাজত্বকালে

উত্তর: (গ) ইব্রাহিম লোদির রাজত্বকালে।

১.৩ মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের সময়ে গরিব মানুষদের রোজের খাবার ছিল-

ক খিচুড়ি

খ) ভাত

(গ) গরুটি

(ঘ) বিরিয়ানি

উত্তর: ক) খিচুড়ি।

১.৪ মধ্যযুগের খেলাধুলোর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় খেলা ছিল-

(ক) ফুটবল

খ) কবাডি

গ) বক্সিং

(ঘ)কুস্তি

উত্তর: ঘ) কুস্তি।

১.৫ দক্ষিণ ভারতে ভক্তিবাদ জনপ্রিয় হয়েছিল-

(ক) খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে

(খ) খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে

গ) খ্রিস্টীয় নবম শতকে

(ঘ) খ্রিস্টীয় দশম শতকে

উত্তর: (ক) খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে।

১.৬ অলভার এবং নায়নার সাধকরা যে ভাষায় ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা জানাতেন তা হল-

ক) হিন্দি

(খ) বাংলা

(গ) তামিল

(ঘ) তেলুগু

উত্তর: (গ) তামিল।

১.৭ শিখদের প্রথম গুরু ছিলেন-

ক) গুরু অর্জুন

গ) গুরু তেগবাহাদুর

খ গুরু নানক

ঘ) গুরু গোবিন্দ সিং

উত্তর: খ) গুরু নানক।

১.৮ মীরাবাঈ তাঁর সমস্ত জীবন উৎসর্গ করেছিলেন-

ক) শিবের প্রতি ভক্তিতে

খ) দুর্গার প্রতি ভক্তিতে

গ শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিতে

ঘ সরস্বতীর প্রতি ভক্তিতে

উত্তর: গ) শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিতে।

১.৯ কবীর রচিত হিন্দি ভাষায় দুই পঙ্ক্তির কবিতাকে বলা হয়-

ক) ছড়া

খ) ভজন

(গ) কীর্তন

(ঘ) দোহা

উত্তর: (ঘ) দোহা।

১.১০ সাঁই ছিলেন-

(ক) ভক্তিবাদী

(খ) নাথপন্থী

গ চিশতি সুফিবাদী

(ঘ) সহজিয়াবাদী

উত্তর: (ক) ভক্তিবাদী।

(পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন)

১.১১ সুফিদের আবির্ভাব হয়-

ক) পূর্ব এশিয়ায়

(খ) পশ্চিম এশিয়ায়

(গ) মধ্য এশিয়ায়

(ঘ) দক্ষিণ এশিয়ায়

উত্তর: (গ) মধ্য এশিয়ায়।

১.১২ ভারতে চিশতি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন-

(ক) মইনউদ্দিন চিশতি

(খ) নিজামউদ্দিন আউলিয়া

(গ) বখতিয়ার কাফি

(ঘ) শিহাবউদ্দিন সুহরাবাদি

উত্তর: (ক) মইনউদ্দিন চিশতি।

১.১৩ সুহরাবর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন-

(ক) নিজামউদ্দিন আউলিয়া

(খ) মইনউদ্দিন চিশতি

(গ) বদরউদ্দিন জাকারিয়া

(ঘ) বখতিয়ার কাফি

উত্তর: (গ) বদরউদ্দিন জাকারিয়া।

১.১৪ ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন-

ক) রূপ গোস্বামী

(খ) বৃন্দাবন দাস

(গ) সনাতন গোস্বামী

ঘ) কৃষ্ণদাস কবিরাজ

উত্তর: ঘ কৃষ্ণদাস কবিরাজ।

১.১৫ শ্রীচৈতন্যদেব ভক্তি প্রচার করেন-

(ক) সংস্কৃত ভাষায়

(খ) হিন্দি ভাষায়

(গ) বাংলা ভাষায়

(ঘ) প্রাকৃত ভাষায়

উত্তর: গ) বাংলা ভাষায়।

১.১৬ ঘাঁটু গানে প্রভাব দেখা যায়-

ক) বৈষুব ভক্তির

খ) মণিপুরী নাচের

গ) শিখ ধর্মের

(ঘ) দোহার

উত্তর: ক) বৈষুব ভক্তির

(পর্ষদ নমুনা প্রথ

১.১৭ উত্তর-পূর্ব ভারতে ভক্তি আন্দোলন বিকশিত হয়েছিল-

(ক) শ্রীচৈতন্যদেবের নেতৃত্বে

(খ) কবীরের নেতৃত্বে

(গ) শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের নেতৃত্বে

(ঘ) গুরু নানকের নেতৃত্বে

উত্তর: গ) শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের নেতৃত্বে

১.১৮ শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের প্রচারিত ভক্তির মূলকথা ছিল-

ক) বৈষুব ধর্ম

খ) নাম ধর্ম

গ) শিখ ধর্ম

ঘ) জৈন ধর্ম

উত্তর: খ) নাম ধর্ম

১.১৯ বিভিন্ন ধর্মের বৈশিষ্ট্যগুলিকে ভিত্তি করে ‘দীন-ই-ইলাহি’ তৈ করেন-

ক) বাবর

খ) আকবর

গ) জাহাঙ্গির

(ঘ) ঔরঙ্গজেব

উত্তর: (খ) আকবর

১.২০ আকবর প্রথমে ইসলাম ধর্ম নিয়ে উলেমার সঙ্গে আলোচন করেন-

ক) দিল্লিতে

গ) ফতেহপুর সিকরিতে

খ) আগ্রাতে

(ঘ) এলাহাবাদে

উত্তর: গ) ফতেহপুর সিকরিতে

১.২১ ‘কুয়াত-উল ইসলাম’ মসজিদটি বানানো শুরু করেছিলেন-

(ক) মহম্মদ ঘুরি।

খ) কুতুবউদ্দিন আইবক

গ) ইলতুৎমিস

(ঘ) আলাউদ্দিন খলজি

উত্তর: খ) কুতুবউদ্দিন আইবক

১.২২ আলাউদ্দিন খলজির আমলে তৈরি ‘আলাই দরওয়াজা’ তৈ হয়েছিল-

(ক) মার্বেল পাথর দিয়ে

খ) গ্র্যানাইট দিয়ে

(গ) লাল বেলেপাথর দিয়ে

ঘ) চুনাপাথর দিয়ে

উত্তর: (গ) লাল বেলেপাথর দিয়ে

১.২৩ আফগান শাসক শেরশাহের সমাধি সৌধ অবস্থিত-

(ক) দিল্লিতে

(খ) আগ্রাতে

(গ) এলাহাবাদে

(ঘ) সাসারামে

উত্তর: (ঘ) সাসারামে

১.২৪ ‘চাহার বাগ’-এর প্রসার ঘটেছিল-

ক) সুলতানি আমলে

খ) কুতুবশাহি আমলে

গ) মুঘল আমলে

(ঘ) তুর্কি আমলে

উত্তর: গ) মুঘল আমলে

১.২৫ গুজরাট জয়ের স্মৃতিতে বুলন্দ দরওয়াজা তৈরি করেছিলেন-

(ক) আলাউদ্দিন খলজি

(খ) শের শাহ

(গ) আকবর

(ঘ) শাহজাহান

উত্তর: (গ) আকবর

১.২৬ ‘পিয়েত্রা দুরা’ কারুকার্যের ব্যবহার দেখা যায়-

(ক) ইতিমাদ-উদ দৌলার সমাধি সৌধে

খ) কুয়াত-উল ইসলাম মসজিদে

গ) তাজমহলে

(ঘ) লালকেল্লায়

উত্তর: (ক) ইতিমাদ-উদ দৌলার সমাধি সৌধে

১.২৭ ‘গোল গুম্বদ’ নির্মাণ করেন-

ক) শেরশাহ

খ) আদিল শাহ

গ) হোসেন শাহ

ঘ) সিকান্দর শাহ

উত্তর: (খ) আদিল শাহ

১.২৮ সিকান্দর শাহ ‘আদিনা মসজিদ’ তৈরি করেছিলেন-

ক) বিষুপুরে

খ) গৌড়ে

গ) পান্ডুয়ায়

(ঘ) বসিরহাটে

উত্তর: গ) পান্ডুয়ায়

১.২৯ গৌড়ের সবচেয়ে বড়ো মসজিদ হল-

(ক) তাঁতিপাড়া মসজিদ

খ গুম্মত মসজিদ

(গ) লোটান মসজিদ

(ঘ) বড়ো সোনা মসজিদ

উত্তর: ঘ) বড়ো সোনা মসজিদ

১.৩০ ‘হমজানামা’ বই-এর অলংকরণের কাজ শুরু হয়েছিল-

(ক) হুমায়ুনের আমলে

(খ) আকবরের আমলে

(গ) জাহাঙ্গিরের আমলে

(ঘ) শাহজাহানের আমলে

উত্তর: ক) হুমায়ুনের আমলে

১.৩১ মহাভারতের ফারসি অনুবাদের নাম-

(ক) হমজানামা

গ) জাফরনামা

(খ) রজমনামা

(ঘ) তুতিনামা

উত্তর: (খ) রজমনামা

১.৩২ মুঘলযুগে প্রতিকৃতি আঁকা শুরু হয়-

(ক) আকবরের সময়ে

(খ) জাহাঙ্গিরের সময়ে

(গ) শাহজাহানের সময়ে

(ঘ) ঔরঙ্গজেবের সময়ে

উত্তর: (ক) আকবরের সময়ে

১.৩৩ কোনো কিছুর সঙ্গে সাদৃশ্য মিলিয়ে ছবি আঁকাকে বলা হয়-

(ক) ক্যালিগ্রাফি

(খ) মিনিয়েচার

গ) অণুচিত্র

(ঘ) তসভির

উত্তর: ঘ) তসভির

১.৩৪ মুঘল শিল্পীদের মধ্যে ‘শিরিন কলম’ বা ‘মিষ্টি কলম’ ছদ্মনাম ছিল-

(ক) মির সঈদ আলির

(খ) খোয়াজা আবদুস সামাদের

গ) দসবন্তের

(ঘ) বসওয়ানের

উত্তর: (খ) খোয়াজা আবদুস সামাদের

১.৩৫ ‘সংগীত শিরোমণি’ রচনাটি উৎসর্গ করা হয়-

(ক) সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলককে

(খ) গোয়ালিয়রের রাজা মান সিং তোমরকে

গ) জৌনপুরের ইব্রাহিম শাহ শরকিকে

(ঘ) মুঘল সম্রাট আকবরকে

(সরিষা রামকৃষ্ণ মিশন সারদা মন্দির)

উত্তর: গ) জৌনপুরের ইব্রাহিম শাহ শরকিকে

১.৩৬ ‘মেঘমল্লার’ রাগটি সৃষ্টি করেছেন-

ক) বৈজু বাওরা

খ) তানসেন

(গ) মান সিং তোমর

ঘ) ইব্রাহিম শাহ শরকি

উত্তর: (খ) তানসেন

১.৩৭ মণিপুরী নাচের জন্য কুমিল পোশাক তৈরি করেন-

ক) ভীমসেন

খ) চন্দ্রভান

(গ) ঈশ্বর দাস

ঘ) ভাগ্যচন্দ্র

উত্তর: ঘ ভাগ্যচন্দ্র

১.৩৮. শ্রীকৃষ্ণ বিজয়-এর মূল ভিত্তি ছিল-

ক) রামায়ণ

খ) মঙ্গল কাব্য

গ) ভাগবত

(ঘ) শিবায়ন

উত্তরঃ (গ) ভাগব

১.৩৯ রামায়ণের বাংলা অনুবাদ করেন-

ক) কৃত্তিবাস ওঝা

(খ) কাশীরাম দাস

(গ) মালাধর বসু

(ঘ) বড়ু চণ্ডীদাস

উত্তর: (ক) কৃত্তিবাস ওঝা

১.৪০ ইউরোপীয় চিকিৎসা পদ্ধতি ভারতে আসে-

(ক) খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকে

(খ) খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে

(গ) খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে

(ঘ) খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতকে

উত্তর: গ) খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে (মজিলপুর জে এম ট্রেনিং স্কুল)

Very Short Question Answer

২.১ মধ্যযুগে কোথায় শিল্পাঞ্চল ছিল?

উত্তর: মধ্যযুগে বাংলা ও গুজরাটে শিল্পাঞ্চল ছিল।

২.২ সুলতানি ও মুঘলযুগে কোন্ কোন্ শিল্পগুলি বংশগত ছিল?

উত্তর: সুলতানি ও মুঘলযুগে চিনি এবং নানান সুগন্ধি আতর তৈরি শিল্প বংশগত ছিল।

২.৩ সুলতান বহলোল লোদির আমলে প্রচলিত মুদ্রার নাম কী ছিল?

উত্তর: সুলতান বহলোল লোদির আমলে প্রচলিত মুদ্রার নাম ছিল বহলোলি মুদ্রা।

২.৪ সুলতানি আমলে দিনরাত্রি মিলিয়ে কত পল গণনা করা হত?

উত্তর: সুলতানি আমলে দিনরাত্রি মিলিয়ে তিন হাজার ছশো পল গণনা করা হত।

২.৫ দক্ষিণ ভারতের ভক্তিবাদীরা কী নামে পরিচিত?

উত্তর: দক্ষিণ ভারতের ভক্তিবাদীরা অলভার এবং নায়নার নামে পরিচিত ছিল।

২.৬ নায়নার সাধকরা কোন্ ভাষায় ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা জানাত?

উত্তর: নায়নার সাধকরা তামিল ভাষায় ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা

২.৭ শিখ ধর্মের প্রবর্তক কে ছিলেন?

উত্তর: শিখ ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন গুরুনানক।

২.৮ শিখদের ধর্মগ্রন্থের নাম কী?

উত্তর: শিখদের ধর্মগ্রন্থের নাম ‘গুরুগ্রন্থসাহিব’।

২.৯ ‘গুরুগ্রন্থসাহিব’ কোন্ লিপিতে লেখা?

উদ্ভব: ‘গুরুগ্রন্থসাহিব’ গুরুমুখি লিপিতে লেখা।

২.১০ সাধিকা মীরাবাঈ তাঁর সাধিকা জীবনের বেশিরভাগ সময় কোথায় কাটিয়েছিলেন? (সোনারপুর বিদ্যাপীঠ)

উত্তর: সাধিকা মীরাবাঈ তাঁর সাধিকা জীবনের বেশিরভাগ সময় গুজরাটের দ্বারকায় কাটিয়েছিলেন।

২.১১ একজন দোহা রচয়িতার নাম উল্লেখ করো।

উদ্ভব: একজন দোহা রচয়িতার নাম হল কবীর।

২.১২ সুফিদের দুটি ভাগ কী কী ছিল? (বিধাননগর গভ: হাই স্কুল)

উদ্ভব: সুফিদের দুটি ভাগ ছিল-চিন্তি ও সুহরাবর্দি।

২.১৩ যেসমস্ত সুফিরা ইসলামের আইন মেনে চলতেন না তাদের কী বলা হয়?

উদ্ভব: যেসমস্ত সুফিরা ইসলামের আইন মেনে চলতেন না তাদের বলা হত বে-শরা।

২.১৪ কার নেতৃত্বে বাংলায় ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়?

উদ্ভব: শ্রীচৈতন্যদেবের নেতৃত্বে বাংলায় ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়।

২.১৫ শ্রীচৈতন্যদেব কোন্ সুলতানের সময়কালে ভারতে ধর্মপ্রচার করেছিলেন?

উদ্ভব: শ্রীচৈতন্যদেব সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের সময়কালে ভারতে ধর্মপ্রচার করেছিলেন।

২.১৬ অসমে কে ভক্তিবাদ প্রচার করেছিলেন?

উত্তর: অসমে শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ভক্তিবাদ প্রচার করেছিলেন।

২.১৭ শঙ্করদেব প্রচারিত ভক্তির মূলকথা কী?

উত্তর: শঙ্করদেব প্রচারিত ভক্তির মূলকথা হল নাম ধর্ম।

২.১৮ দীন-ই-ইলাহি কে, কবে প্রবর্তন করেন?

উত্তর: দীন-ই-ইলাহি ১৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আকবর প্রবর্তন করেন।

২.১৯ ইসলামীয় স্থাপত্যের দুটি মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

উত্তর: ইসলামীয় স্থাপত্যের দুটি মূল বৈশিষ্ট্য ছিল খিলান এবং গম্বুজ।

২.২০ কোন মসজিদের মিনারটি কুতুবমিনার বলে বিখ্যাত?

উত্তর: কুয়াত-উল ইসলাম মিনারটি কুতুবমিনার বলে বিখ্যাত।

২.২১ দিল্লির তুঘলকাবাদে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সমাধির বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

উত্তর: দিল্লির তুঘলকবাদে গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সমাধির বৈশিষ্ট্য ছিল খাড়া দেয়ালের বদলে গম্বুজ-বসানো ঢালু দেয়াল।

২.২২ ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্যরীতিতে লোদি সুলতানদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান কি ছিল?

উত্তর: ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্যরীতিতে লোদি সুলতানদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল আটকোণা সমাধি সৌধগুলি।

২.২৩ কার আমলে ‘দীনপনাহ’ নামে শহরটির নির্মাণ শুরু হয়?

উত্তব: হুয়ায়ুনের আমলে ‘দীনপনাহ’ নামে শহরটির নির্মাণ শুরু হয়।

২.২৪ মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের আত্মজীবনীর নাম কী? এটি কোন্ ভাষায় লেখা?

উত্তর: মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের আত্মজীবনীর নাম ‘তুজুক-ই-জাহাঙ্গিরি। এটি ফারসি ভাষায় লেখা।

২.২৫ কার আমলে ইতিমাদ-উদদৌলার সমাধি তৈরি হয়েছিল?

উত্তর: জাহাঙ্গিরের সময়ে ইতিমাদ-উদদৌলার সমাধি তৈরি হয়েছিল।

 ২.২৬ মুঘল স্থাপত্যশিল্পের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন কী?

উত্তর: মুঘল স্থাপত্যশিল্পের শ্রেষ্ঠ নির্দশন হল শাহজাহানের আমলে বানানো ‘তাজমহল’।

২.২৭ ‘বিবি-কা-মকবারা’ কোন্ সম্রাটের আমলে নির্মিত হয়েছিল?

উত্তর: ‘বিবি-কা-মকবারা’ সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে নির্মিত হয়েছিল।

২.২৮ ভারতের সবচেয়ে বড়ো গম্বুজ কোন্টি?

উত্তর: বিজাপুরের মহম্মদ আদিল শাহ নির্মিত গোল গম্বুজটি ভারতের সবচেয়ে বড়ো গম্বুজ।

২.২৯ হায়দারাবাদের চারমিনার কোন্ আমলে তৈরি হয়?

(হাওড়া জেলা স্কুল)

উত্তর: কুতুব শাহি আমলে হায়দারাবাদের চারমিনার তৈরি হয়।

২.৩০ বিজয়নগরের রাজধানীর নাম কী ছিল?

উত্তর: বিজয়নগরের রাজধানীর নাম ছিল হাম্পি।

২.৩১ জোড়-বাংলা মন্দির কোথায় অবস্থিত?

উত্তর: জোড়-বাংলা মন্দির বিষ্ণুপুরে অবস্থিত।

২.৩২ বাংলা মন্দিরের চূড়াকে কী বলা হয়?

উত্তর: বাংলা মন্দিরের চূড়াকে বলা হয় ‘রত্ন’।

২.৩৩ যে বাংলা মন্দিরের পাঁচটি চূড়া থাকে তাকে কী বলা হয়?

উত্তর: যে বাংলা মন্দিরের পাঁচটি চূড়া থাকে তাকে পঞ্চরত্ন মন্দির বলা হয়।

২.৩৪ কে, কোথায় আদিনা মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন?

উদ্ভব: মালদহের পান্ডুয়ায় সিকান্দর শাহ আদিনা মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।

২.৩৫ পান্ডুয়ায় সুলতান জালালউদ্দিন মহম্মদ শাহের সমাধি কী নামে বিখ্যাত?

উদ্ভব: পান্ডুয়ায় সুলতান জালালউদ্দিন মহম্মদ শাহের সমাধি ‘একলাখি সমাধি’ নামে বিখ্যাত।

২.৩৬ কার আমলে গৌড়ের ‘দাখিল দরওয়াজা’ নির্মিত হয়?

উত্তর: বরবক শাহের আমলে গৌড়ের ‘দাখিল দরওয়াজা’ নির্মিত হয়।

২.৩৭ ‘ফিরোজ মিনার’ কত খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়?

উত্তর: ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ফিরোজ মিনার’ তৈরি হয়।

২.৩৮ গৌড়ের সবচেয়ে বড়ো মসজিদ কোনটি?

উত্তর: ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে তৈরি ‘বড়ো সোনা মসজিদ’ গৌড়ের সবচেয়ে বড়ো মসজিদ।

২.৩৯ সুন্দর হাতের লেখার চর্চাকে ইংরেজিতে কী বলে?

উদ্ভব: সুন্দর হাতের লেখার চর্চাকে ইংরেজিতে Calligraphy (ক্যালিগ্রাফি) বলে।

২.৪০ আকারে এবং আয়তনে ছোটো ছবিগুলিকে কি বলা হয়?

উদ্ভব: আকারে এবং আয়তনে ছোটো ছবিগুলিকে ইংরাজিতে মিনিয়েচার (Miniature) এবং বাংলায় অণুচিত্র বলা হয়।

২.৪১ প্রতিকৃতি আঁকার প্রচলন শুরু হয় কোন্ মুঘল সম্রাটের সময় থেকে?

উত্তর: প্রতিকৃতি আঁকার প্রচলন শুরু হয় মুঘল সম্রাট আকবরের সময় থেকে।

২.৪২ চিত্রশিল্পীরা কার আমলে প্রথম ছবিতে স্বাক্ষর শুরু করেন?

উত্তর: চিত্রশিল্পীরা জাহাঙ্গিরের আমলে প্রথম ছবিতে স্বাক্ষর শুরু করেন।

২.৪৩ ‘সংগীত শিরোমণি’ ও ‘মান-কৌতূহল’ বই দুটির মিল কোথায়? (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন)

উত্তর: ‘সংগীত শিরোমণি’ ও ‘মান-কৌতূহল’ বই দুটি শাস্ত্রীয় সংগীতচর্চার ওপর লেখা।

২.৪৪ বৈজু বাওরা কে ছিলেন?

উত্তর: বৈজু বাওরা ছিলেন গোয়ালিয়রের রাজা মান সিং তোমরের আমলের সংগীতশিল্পী।

২.৪৫ ‘দীপক’ ও ‘মেঘমল্লার’ রাগ কে সৃষ্টি করেন?

উত্তর: ‘দীপক’ ও মেঘমল্লার’ রাগ তানসেন সৃষ্টি করেন।

২.৪৬ আবুল ফজলের লেখায় কতজন সংগীত শিল্পীর নাম পাওয়া যায়? (হিন্দু স্কুল)

উদ্ভব: আবুল ফজলের লেখায় ছত্রিশজন সংগীতশিল্পীর নাম পাওয়া যায়।

২.৪৭ মণিপুরি নৃত্যশৈলীর মূল বিষয়বস্তু কী?

উত্তর: মণিপুরি নৃত্যশৈলীর মূল বিষয়বস্তু হল সংকীর্তন এবং রাসলীলা।

২.৪৮ জিয়াউদ্দিন বারণি কে ছিলেন? (পর্যদ নমুনা প্রশ্ন)

উত্তর: জিয়াউদ্দিন বারণি ছিলেন মুঘল আমলের বিখ্যাত ঐতিহাসিক।

২.৪৯ কাশ্মীরের সুলতান জৈন-উল আবেদিনের উৎসাহে কে ‘রাজতরঙ্গিনী’ রচনা করেছিলেন?

উত্তর: কাশ্মীরের সুলতান জৈন-উল আবেদিনের উৎসাতে কল্য ‘রাজতরঙ্গিনী’ রচনা করেছিলেন?

২.৫০ কে মহাভারত বাংলায় অনুবাদ করেন?

উত্তর: কাশীরাম দাস বাংলায় মহাভারত অনুবাদ করেন?

২.৫১ ভাগবত-এর খানিক অংশ বাংলায় কে অনুবাদ করেন?জা নাম কী ছিল?

উত্তর: ভাগবত-এর খানিক অংশ বাংলায় অনুবাদ করেন মালদ বসু। সেই অনুবাদ গ্রন্থটির নাম ছিল শ্রীকৃষ্ণ বিজয়।

২.৫২ শ্রীচৈতন্যের আমলে বাংলায় কোন তিন লৌকিক দেবসে পুজোর চল ছিল?

উত্তর: শ্রীচৈতন্যের আমলে বাংলায় মনসা, চণ্ডী এবং ধর্ম ঠাকুর-৫ তিন দেবদেবীর পুজোর চল ছিল।

২.৫৩ কোন সুলতানের আমলে দিল্লিতে ‘সূর্যঘড়ি’ স্থাপন করা হয়:

উত্তর: সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে দিল্লিতে একা মানমন্দিরের উপর সূর্যঘড়ি স্থাপন করা হয়।

২.৫৪ কোন সময়ে এবং কোন্ কোন দেশ থেকে ভারতে বন্দুকে প্রযুক্তি আসে?

উত্তর: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে চিন ও মিশর থেকে বন্দুকে প্রযুক্তি আসে ভারতে।

২.৫৫ কোথায় প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয়?

উত্তর: চিনে প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয়।

২.৫৬ ভারতে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন কারা?

উত্তর: ভারতে প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন ইউরোপীয় মিশনারিরা।

২.৫৭ খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতকে তুলো বুনবার যন্ত্র ‘চরখি’ কোথা থেকে আসে?

উত্তর: খ্রিস্টপূর্ব একাদশ শতকে তুলো বুনবার যন্ত্র ‘চরখি’ মধ্য এশিয়া। থেকে আসে।

২.৫৮ কোন্ গ্রন্থে ভারতে চরকা ব্যবহারের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়?

উত্তর: ইসামির লেখা ‘ফুতুহ-উস সালাতিন’ বইতে ভারতে প্রথম চরকা ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়।

২.৬০ দক্ষিণ ভারতে কারা সেচব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন?

উত্তর: দক্ষিণ ভারতে বিজয়নগরের শাসকরা সেচব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছিলেন।

৩.১৮ তানসেন কে ছিলেন? তাঁর সৃষ্ট দুটি রাগের নাম লেখো।

উত্তর: মুঘল সম্রাট আকবরের রাজসভার একজন সংগীতশিল্পী ছিলেন তানসেন।

৩.১৫ মুঘলযুগের দুজন নারী চিত্রশিল্পীর নাম লেখো।

উত্তর: মুঘলযুগের দুজন নারী চিত্রশিল্পীর নাম হল নাদিরা বানু, সাহিফা বানু।

Short Question Answer

৩.১৯ ভারতবর্ষে কত রকমের ধ্রুপদী নৃত্য আছে?

উত্তর: ভারতবর্ষে ছ-রকমের ধ্রুপদী নৃত্য আছে-ভারতনাট্যম, কথাকলি, ওড়িশি, কুচিপুড়ি, কথক এবং মণিপুরী।

৩.২০ মণিপুরী নৃত্যের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।

উত্তর: ভারতে ধ্রুপদী নৃত্যের মধ্যে নবীনতম এক নৃত্যশৈলী হল মণিপুরী নৃত্য। এই নৃত্যের দুটি বৈশিষ্ট্য হল-

(i) এই নৃত্যশৈলীতে ভক্তিরসের প্রভাব দেখা যায়।

(ii) নৃত্যের সাথে সাথে ছেলেরা পুষ্প নামে ঢোল বাজিয়ে নাচ করে।

৩২১ মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ের রচনাগুলিকে ক-ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?

উত্তর: মুঘল সম্রাট আকবরের সময়ের রচনাগুলিকে তিনভাগে ভাগ

করা যায়।

(1) ইতিহাস লেখা (ii) অনুবাদ সাহিত্য (iii) কবিতা।

৩২২ ‘পাঁচালি’ কী?

উত্তর: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের গোড়ার বাংলা সাহিত্যে দেবদেবীর মহিমা প্রচারের উদ্দেশ্যে গীতিকা করা হত। কিছু কিছু গীতিকায় সাধারণ মানুষের জীবনের ছড় ধরা থাকত। এই গীতিকাগুলির বেশিরভাগ সুর করে গাওয়া হয়। এগুলিকে বলা হত ‘পাঁচালি’। রামায়ণ, মহাভারতের অনুবাদ। দেবদেবীর পাঁচালি সবই গাওয়ার রেওয়াজ ছিল।

৩.২৩ ‘নাথ সাহিত্য’ কাকে বলে?

উত্তর: বাংলায় সুলতানি আমলে নাথযোগী নামের এক ধর্ম সম্প্রস ছিল। তাদের ধর্ম-কর্ম, আচার-আচরণ নিয়ে লেখা সাহিত্যয়ে বলে ‘নাথ সাহিত্য’। নাথসাহিত্য থেকে সন্ন্যাস-জীবনযাপনের কথা জানা যায়।

৩.২৪ ‘চৈতন্যজীবনীকাব্য’ কাকে বলে?

উত্তর: শ্রীচৈতন্যদেবের জীবন এবং কাজ নিয়ে বাংলা সাহিতে অনেক বৈয়ব কবি বহু কাব্য রচনা করেছেন। এগুলিকে ‘চৈতন্যজীবনীকাব্য’ বলা হয়। ‘চৈতন্যজীবনীকাব্য’ থেরে সমকালীন সমাজের নানা দিক সম্পর্কে বহু তথ্য জানা যায়। এ ছাড়া চৈতন্যদেবের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কেও অনেক তথ্য পাওয় যায়।

৩.২৫ কোন্ কাব্যে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির চিতোর রাজ অভিযানের কথা আছে? এটি কার লেখা?

উত্তর: পদ্মাবতী কাব্যে সুলতান আলাউদ্দিন খলজির চিতোর রাজ অভিযানের কথা আছে। এটি সৈয়দ আলাওলের লেখা।

৩.২৬ ‘পারসিক চক্র’ কী? কৃষক সমাজে এটি জনপ্রিয় হয়নি কেন?

উত্তর: খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতক নাগাদ পারস্য দেশ থেকে ভারতে আসে বেল্ট এবং গিয়ার লাগানো এক ধরনের যন্ত্র। এই যন্ত্রটিকে বলা হয় সাকিয়া বা পারসিক চক্র। ছোটো নাগরদোলার মতে দেখতে কাঠের তৈরি এই যন্ত্রের মাধ্যমে পশুশক্তির সাহায্যে কুয়ে বা খাল থেকে জল তোলা যেত। যন্ত্রটি দামি হওয়ায় ভারতীয় কৃষক সমাজে এটি জনপ্রিয় হয়নি।

৩.২৭ সুলতান ও মুঘলযুগে নির্মিত ঘরবাড়িগুলির বৈশিষ্ট্য কী ছিল।

উত্তর: সুলতান ও মুঘলযুগের নির্মিত ঘরবাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল বাঁকানো খিলান, গম্বুজ, চুনের ব্যবহার ইত্যাদি।

৩১ সুলতানি ও মুঘলযুগে নদীর ধারে শিল্পগুলি তৈরি করা হত কেন?

উত্তর: সুলতানি ও মুঘলযুগে কাঁচামাল আমদানি এবং তৈরি মাল রপ্তানির সুবিধার জন্য নদীর ধারে শিল্পগুলি তৈরি করা হত।

৩২ সুলতানি ও মুঘলযুগে প্রচলিত শিল্পগুলি কী ছিল?

উত্তর: সুলতানি ও মুঘলযুগে কৃষি পণ্যকে ভিত্তি করে গ্রামে কারিগরী শিল্প চলত। এই সময়ে চিনি এবং নানান সুগন্ধি আতর তৈরির শিল্প ছিল বিখ্যাত। এ ছাড়া প্রচলিত শিল্পের মধ্যে বস্ত্রশিল্প, ধাতুর কাজ, পাথরের কাজ, কাগজ শিল্প প্রভৃতি ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

৩.৩ সুলতানি ও মুঘল যুগে গরিব জনগণের বসতি কেমন ছিল?

উত্তর: সাধারণ গরিব জনগণের বসতির জন্য সামান্য কিছু উপকরণ লাগত। একটা পাতকুয়া, ডোবা বা পুকুর থাকলেই বসতি তৈরি করে নিতে পারত গ্রামের মানুষ। ঘর তোলার জন্য কয়েকটি গাছের গুঁড়ি, চাল ছাইবার জন্য কিছু খড় তারা ব্যবহার করত।

৩.৪ ভক্তিবাদ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: সুলতানি ও মুঘলযুগে এক শ্রেণির সাধকের আবির্ভাব হয়েছিল যারা ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর আরাধনার কথা প্রচার করেন। একেই ভক্তিবাদ বলে। এই ভক্তির দুটি বৈশিষ্ট্য ছিল।

(1) ঈশ্বরের কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা।

(ii) ঈশ্বরলাভের জন্য জ্ঞান বা যোগ ছেড়ে ভক্তের ভক্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া।

৩.৫ গুরু নানক বিখ্যাত কেন?

উত্তর: মধ্যযুগের ভক্তিসাধকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন গুরু নানক। তাঁর দর্শন এবং বাণীর ওপর নির্ভর করে শিখ ধর্ম গড়ে উঠেছিল। এই ধর্মের দশজন গুরুর মধ্যে তিনি ছিলেন প্রথম গুরু।

৩.৬ দোহা কাকে বলে?

উত্তর: হিন্দি ভাষায় কবীরের দুই পঙ্ক্তির কবিতাকে বলা হয় দোহা। তাঁর গান এবং দোহা শুনলে বোঝা যায় তিনি ধর্মের লোক-দেখানো আচারের বিরোধী ছিলেন।

৩৭ সুফিবাদের আবির্ভাব কোথায় হয়েছিল? ‘সুফি’ কথাটির অর্থ কী? (মহিষাদল রাজ হাইস্কুল)

উত্তর: সুফিবাদের আবির্ভাব হয়েছিল মধ্যে এশিয়ায়। ‘সুফি’ কথাটি এসেছে ‘সুফ’ শব্দ থেকে যার অর্থ আরবিতে পশমের তৈরি এক টুকরো কাপড়। বিশ্বাস করা হয় যে, এরকম কম্বল জাতীয় জিনিস গায়ে দিতেন সুফি সাধকরা, খ্রিস্টান সন্তরা এবং সন্ন্যাসীরা।

২.৫৯ কোন্ গ্রন্থের মধ্য দিয়ে ইসলামি দুনিয়ার বিজ্ঞান সম্বনে ভারতের চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দেওয়া হয়?

(সুনীতি অ্যাকাডেমি)

উত্তর: অল-বিরুনির লেখা কিতাব-অল-হিন্দ গ্রন্থের মধ্য দিয়ে ইসলামি দুনিয়ায় বিজ্ঞান সম্বন্ধে ভারতের চিন্তাভাবনা ছড়িয়ে দেওয় হয়।

৭.৪ দীন-ই-ইলাহি:

খ্রিস্টীয় ১৫৭০-এর দশকে মুঘল বাদশাহ আকবর ফতেপুর সিকরিতে নানান ধর্মের গুরুদের ডেকে ধর্মীয় নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। এইসব আলোচনার ভিত্তিতে তিনি দীন-ই-ইলাহি নামে এক নতুন মতাদর্শ চালু করেন। বর্তমানে মনে করা হয় যে, দীন-ই-ইলাহি আসলে ছিল আকবরের প্রতি চূড়ান্ত অনুগত কয়েকজন অভিজাতদের মধ্যে প্রচারিত এক আদর্শ।

৪.২ সুলতানি ও মুঘলযুগে সমাজ কেমন ছিল?

উত্তর: সুলতানি ও মুঘলযুগে সমাজ ছিল যৌথ পরিবার ভিত্তিক। সমাজে ধনী ও মধ্যবিত্ত পরিবারে পুরুষের তুলনায় নারীর স্থান ছিল নীচে। হিন্দু এবং মুসলমান সমাজে ঘোমটা এবং পর্দার প্রচলন ছিল। কিন্তু গরিব কৃষক পরিবারে নারী ও পুরুষরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসারে এবং খামারে কাজ করতো। সেসব ক্ষেত্রে মহিলাদের পর্দা বা ঘোমটার বিশেষ প্রচলন ছিল না।

৭.৫ সুলতানি ও মুঘল স্থাপত্য :

ভারতে সুলতানি শাসন শুরু হওয়ার পর ভারতীয় ও ইসলামীয়-এই দুই শিল্পধারা মিশে তৈরি হয় ইন্দো-ইসলামীয় শিল্প রীতি। সুলতানি যুগে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থাপত্য শিল্প কুতুবমিনার, ইলতুৎমিসের সমাধি, আলাই-দরওয়াজা ইত্যাদি। মুঘল শাসনের সময়ে স্থাপত্য শিল্পের বিরাট পরিবর্তন হয়, নানান স্থাপত্য রীতির সহজ মেলামেশার ছাপ মুঘল স্থাপত্যে দেখা যায়। মুঘল যুগের বিখ্যাত স্থাপত্য শিল্প হল বুলন্দ দরওয়াজা, ফতেপুর সিকরি, লাল কেল্লা, জামি মসজিদ, মোতি মসজিদ এবং বিশ্বের বিস্ময় তাজমহল।

৩৮ ভারতে সুফিদের মধ্যে কোন্ দুটি গোষ্ঠী বেশি প্রভাবশালী ছিল? তাঁরা কোন কোন অঞ্চলে বেশি প্রভাববিস্তার করেছিল?

উত্তর: ভারতে সুফিদের গোষ্ঠী: ভারতে সুফিদের দুটি গোষ্ঠী ছিল বেশি প্রভাবশালী-(1) চিশতি (ii) সুহরাবর্দি।

প্রভাবিত অঞ্চল:

(1) চিশতি: ভারতে চিশতি গোষ্ঠীর বেশি প্রভাব ছিল দিল্লি ও গঙ্গা-যমুনার দোয়াব অঞ্চলে।

(ii) সুহরাবর্দি: ভারতে সুহরাবর্দি গোষ্ঠীর বেশি প্রভাব ছিল সিন্ধু, পাঞ্জাব ও মুলতান অঞ্চলে।

৩৯ শ্রীচৈতন্য কত রকমের কীর্তন সংগঠিত করেন ও কী কী?

উত্তর: শ্রীচৈতন্য দু-রকমের কীর্তন সংগঠিত করেন- (i) নামকীর্তন, (ii) নগরকীর্তন।

(i) নামকীর্তন: ঘরে বসে কীর্তন গান গাওয়াকে বলা হত নামকীর্তন।

(ii) নগরকীর্তন: নগরে শোভাযাত্রা করে ঘুরে ঘুরে যে কীর্তন গাওয়া হত, তাকে বলা হত নগরকীর্তন।

৩.১০ মির্জা নাথান কে ছিলেন?

উত্তর: মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের সেনাপতি ছিলেন মির্জা নাথান। তিনি বাংলা ও আসামে বহুদিন ধরে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি ‘দীন-ই-ইলাহি’ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। নিজের দীক্ষিত হওয়ার ঘটনার কথা লিখে গিয়েছেন নিজের আত্মজীবনীতে।

৩.১১ কুতুবমিনারে কেন হিন্দু ও জৈন স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়?

উত্তর: আশপাশের সাতাশটি হিন্দু ও জৈন মন্দিরের ভাঙা অংশ কুতুবমিনারের মসজিদ বানানোর কাজে ব্যবহার হয়। তাই এতে হিন্দু ও জৈন স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়।

৩.১২ ‘চাহার বাগ’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ‘চাহার বাগ’ বলতে বোঝায় চারভাগে ভাগ করা সাজানো বাগান। মুঘল সম্রাট বাবরের বাগানের খুব শখ ছিল। মুঘল সম্রাটগণ প্রাসাদ দুর্গ বানানোর পাশাপাশি বাগানও তৈরি করতেন। মুঘল আমলে চার ভাগে ভাগ করা এরকম সাজানো বাগান তৈরি করা হত। একে ‘চাহার বাগ’ বলা হত। আগ্রায়, কাশ্মীরে ‘চাহার- বাগ’-এর নিদর্শন রয়েছে।

৩.১৩ ‘পঞ্চরত্ন মন্দির’ কী?

উত্তর: সুলতানি আমলে বাংলায় আয়তক্ষেত্র আকারের কাঠামোর উপর একাধিক চূড়া দিয়ে মন্দির তৈরি শুরু হয়। এগুলির নাম ছিল রত্ন। পাঁচটি চূড়াবিশিষ্ট মন্দিরের নাম ছিল ‘পঞ্চরত্ন মন্দির’।

৩.১৪ টেরাকোটার কাজ কী? (পুরুলিয়া জেলা স্কুল)

উত্তর: ‘টেরাকোটা’ শব্দের অর্থ হল পোড়ামাটি। প্রাচীন বাংলার মন্দিরগুলির দেয়ালে পোড়ামাটির যে কারুকাজ করা হত তার নাম পোড়ামাটির বা টেরাকোটার কাজ। বাঁকুড়ার বিষুপুর ছাড়াও বাংলার নানা অঞ্চলে এই ধরনের মন্দির দেখা যায়।

৩.১৬ ‘তসভির’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: কোনো কিছুর সঙ্গে সাদৃশ্য মিলিয়ে ছবি আকার রীতিকে ‘তসভির’ বলা হয়। মুঘল সম্রাট আকবর ‘তসভির’ আঁকার ব্যাপারে প্রবল আগ্রহী ছিলেন। তাঁর আমলে বহু চিত্রকর ‘তসভির’ এঁকে খ্যাতি অর্জন করেন। সম্রাট আকবর চিত্রকরদের চিত্রের শিল্পগুণ বিচার করে পুরস্কার দিতেন। আকবরের আমলের বিখ্যাত চিত্রশিল্পীগণ হলেন মির সঈদ আলি, খোয়াজা আবদুস সামাদ, দসবন্ত, বসওয়ান প্রমুখ।

৩.১৭ মুঘল আমলের চিত্রশিল্পী বসওয়ান বিখ্যাত কেন?
উত্তর: মুঘল আমলের একজন শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী ছিলেন বসওয়ান। ছবির পটভূমিকা বা নানান অবয়ব আঁকাতে, রঙের ব্যবহারে, প্রতিকৃতি আঁকাতে বা অন্যান্যা বহু শাখায় বসওয়ালের দক্ষতা ছিল অসাধারণ।

৪.৫ মুঘল আমলে চিত্রশিল্পী দসবন্ত বিখ্যাত কেন?

উত্তর: মুঘল আমলের একজন শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পী ছিলেন দসবন্ত।

• শিল্পী হিসেবে দসবন্তের ভূমিকা: দসবন্ত ছিলেন এক পালকি বাহকের ছেলে। ছোটোবেলা থেকে তিনি এত ছবি আঁকতে ভালোবাসতেন যে, দেয়ালেও এঁকে ফেলতেন মানুষের ছবি। দসবন্ত বাদশাহ আকবরের সুনজরে পড়েছিলেন। কালক্রমে আঁকার দক্ষতায় বাকি সব শিল্পীদের তিনি ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অকালে তাঁর মৃত্যু হলেও দসবন্তের ছবিগুলো তাঁর প্রতিভার সাক্ষী।

Long Question Answer

৪.৬ সুলতানি ও মুঘলযুগে সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কি ধরনের

পরিবর্তন ঘটেছিল তা বিশ্লেষণ করো। (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন) উত্তর: সুলতানি ও মুঘলযুগে সামরিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক

ধরনের পরিবর্তন ঘটেছিল।

(i) আগ্নেয়াস্ত্র: খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকের প্রথমার্ধে বারুদ-ব্যবহারকারী আগ্নেয়াস্ত্র চিন থেকে মোঙ্গলদের হাত ঘুরে ভারতে এসে পৌঁছায়।

(ii) বারুদচালিত রকেট: কিছু পরে ভারতের কিছু অঞ্চলে শুরু হয় বারুদচালিত রকেটের ব্যবহার।

(iii) বন্দুক: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে চিন ও মামেলুক- শাসিত মিশর থেকে বন্দুকের প্রযুক্তি আসে ভারতে। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে পোর্তুগিজরা এই প্রযুক্তি দক্ষিণ ভারতে ছড়িয়ে দেয়।

(iv) কামান: বন্দুক তৈরির প্রযুক্তির সময়কালেই মুঘলরা উত্তর ভারতে কামানের ব্যবহার চালু করে।

আট/দশটি বাক্যে উত্তর দাও:৫

৫.১মধ্যযুগের ভারতে কিভাবে ফারসি ভাষার ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বেড়েছিল তা বিশ্লেষণ করো। (পাঠ্যবই: অনুশীলনী)

উত্তর: ভূমিকা : মধ্যযুগের ভারতে ফারসি ভাষার ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

 ফারসি ভাষার ব্যবহার: সুলতানি শাসকদের হাত ধরে ভারতে ফারসি ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। এর আগে মধ্য এশিয়া ও

ইরানে ফারসি ভাষা প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল। সেই কারণে ভারতের তুর্কি শাসকরা ফারসি ভাষাকে গুরুত্ব দিতেন। সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক, ইলতুৎমিশ এবং খলজি বংশের সুলতানরা ফারসি ভাষার বিশেষ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সুলতানি যুগে লাহোর ফারসি ভাষা চর্চার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

মুঘল সম্রাট বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গির, শাহজাহানের সময়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য আরও উন্নত হতে থাকে।

• ফারসি ভাষার জনপ্রিয়তা: ফারসি ভাষায় সাহিত্য ও ইতিহাস সৃষ্টি হতে থাকলে এর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

• নতুন ফারসি রচনাশৈলীর উদ্ভব: ফারসি সাহিত্যিক ও দার্শনিক আমির খসরু ফারসি কাব্য লেখার নানান পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। তিনি ফারসি সাহিত্যের এক নতুন রচনাশৈলী ‘সবক-ই-হিন্দ’ আবিষ্কার করেন।

• ফারসিতে ইতিহাস রচনা: মধ্যযুগের ঐতিহাসিগণ ইতিহাস লেখার জন্য ফারসি ভাষাকে পছন্দ করতেন। ফারসি ভাষার বিখ্যাত ঐতিহাসিকগণ হলেন সুলতানি যুগের মিনহাজ-ই-সিরাজ, জিয়াউদ্দিন বরনি, ইসামি এবং মুঘল যুগে আবুল ফজল, বদাউনি, নিজামউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

• ফারসি অনুবাদ চর্চা: মধ্যযুগে বহু রচনা মূল সংস্কৃত থেকে ফারসিতে অনুবাদ করা হয়। এই ধারার প্রথম লেখক ছিলেন জিয়া নকশাবি। তিনি সংস্কৃত ভাষায় লেখা গল্পমালা ফারসিতে অনুবাদ করেন। তার নাম দেন ‘তুতিনামা’। এছাড়া কাশ্মীরের সুলতান জৈন-উল আবেদিনের উৎসাহে কলহন-এর ‘রাজতরঙ্গিনী’ এবং ‘মহাভারত’ ফারসিতে অনুবাদ করা হয়।

• ফারসি কবিতা: পারস্য এবং ভারতের এক সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ঘটেছিল ফারসি ভাষার মধ্য দিয়ে। এর ফলে এক বিশিষ্ট কাব্যরীতির জন্ম হয় ফৈজি, উরফি নাজিরি, বেদিলের মতো কবিদের লেখায়।

• মুঘল আমলে বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গিরের জীবনীও রচিত হয়েছিল ফারসি ভাষাতে। তার ফলে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল।

৫২ সুলতানি এবং মুঘল আমলে সামরিক এবং কৃষি প্রযুক্তিতে কি কি পরিবর্তন ঘটেছিল বলে তোমার মনে হয়।

উত্তর: ভূমিকা: সুলতানি এবং মুঘল আমলে সামরিক এবং কৃষি প্রযুক্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছিল।

• সামরিক প্রযুক্তি:

(1) আগ্নেয়াস্ত্র: খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকের প্রথমার্ধে বাবুদ ব্যবহারকারী আগ্নেয়াস্ত্র চিন থেকে মোঙ্গলদের হাত ঘুরে ভারতে এসে পৌঁছায়।

(ii) বারুদচালিত রকেট: কিছু পরে ভারতের কিছু অঞ্চলে শুরু হয় বারুদচালিত রকেটের ব্যবহার।

(ii) বন্দুক: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে চিন ও মায়ে শাসিত মিশর থেকে বন্দুকে প্রযুক্তি আসে ভারতে। বিস ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে পোর্তুগিজরা এই প্রযুক্তি সং ভারতে ছড়িয়ে দেয়।

(iv) কামান: বন্দুক তৈরির প্রযুক্তির সময়কালে মুঘলরা উত্তরভ৬ কামানের ব্যবহার চালু করে।

• কৃষি প্রযুক্তি:

(1) কলমপ্রথা: ভারতে প্রাচীনকাল থেকে যে কলমপ্রথা উ আসছিল, এই সময়ে তার খুব উন্নতি হয়। হাত ধরে কিছু উন্নত ইউরোপীয় প্রযুক্তি ভারতে আসে। ফ ভারতে উন্নতমানের ফল-ফুলের চাষ শুরু হয়।

(ii) পারসিক চক্র: খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতক নাগাদ পারস্যদে থেকে ভারতে আসে বেল্ট এবং গিয়ার-লাগানো সাকিয়া। পারসিক চক্র। ছোটো নাগরদোলার মতো দেখতে কাঠের তৈ এই যন্ত্রের মাধ্যমে পশুশক্তির সাহায্যে কুয়ো বা খাল থেরে জল তোলা যেত। উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু কিছু অঞ্চয়ে এটি ব্যবহার হতো।

(iii) সেচ ব্যবস্থা: মধ্যযুগে ভারতে সেচব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল এই সময় বড়ো বড়ো জলাধার তৈরি করে নালার মাধ্যসে জমিতে জল নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। অন্য দিয়ে উত্তর এবং পূর্ব ভারতে ছোটো বড়ো নদীগুলি থেকে খালেদ মাধ্যমে জল সরাসরি পৌঁছে যেত চাষের জমিতে। এর ফলে কৃষির উন্নতি হয়েছিল।

৫.৩ ভক্তিবাদ ও সুফিবাদের মধ্যে তুলনা করো।

উত্তর: ভূমিকা: মধ্যযুগের ভারতে সুলতানি আমলে ভক্তিবাদ ও সুফিবাদ নামে দুটি ধর্মীয় মতবাদ বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ভক্তিবাদে হিন্দু সাধক ও সুফিবাদে মুসলমান সাধকদের প্রাধান্য থাকলেও উভয় মতবাদের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।

• ভক্তিবাদ:

(i) ভক্তিবাদের মূল কথা ভক্তিবাদের মূল কথা ছিল ভগবানের প্রতি ভক্তের ভালোবাসা বা ভক্তি। ঈশ্বরলাভের জন্য জ্ঞান বা যোগ ছেড়ে ভক্ত ভক্তির মাধ্যমে ভগবানের কাছে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করবে।

(ii) সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব: ভক্তিবাদের প্রভাবে সমাজে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ, জাতপাতের ভেদাভেদ অনেক কমে যায়। নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

(iii) ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রভাব: আচার সর্বস্ব ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রভাব হ্রাস পায়। তার বদলে নতুন ধর্মীয় সম্প্রদায় গড়ে ওঠে, যেমন- নানকের নেতৃত্বে শিখ, শ্রীচৈতন্যদেবের নেতৃত্বে বৈষুব সম্প্রদায়।

(iv) সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রভাব: আঞ্চলিক ভাষার সমৃদি ঘটে। যেমন-চৈতন্য পদাবলি বাংলা ভাষাকে, কবিরের দোহ হিন্দি ভাষাকে, নামদেব মারাঠি ভাষাকে, নানক গুরুমুখি ভাষাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন।

• সুফিবাদ :

(ⅰ) সুফিবাদের মূল কথা: বিভিন্ন ধর্মীয় আইন কানুনের বাইরে ভক্তির দ্বারা ঈশ্বরের আরাধনা করাই ছিল সুফিবাদের মূল কথা।

(ii) সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব : সুফিবাদের আদর্শ সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষকে জাতপাত ও ভেদাভেদ থেকে মুক্ত হওয়ার পথ দেখায়।

(iii) ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রভাব: সুফিবাদের সংস্পর্শে একাধিক মুসলিম শাসক ও অভিজাত সম্প্রদায় ধর্মীয় ক্ষেত্রে সহনশীলতার আদর্শ গ্রহণ করেন। তা ছাড়া হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ওলাবিবি, বনবিবি, গাজিবাবা, সত্যপির প্রমুখ দেবদেবীর পূজা শুরু হয়।

iv) সাহিত্য সংস্কৃতির ক্ষেত্রে প্রভাব : সুফিদের খানকাগুলি (

বিদ্যাচর্চার অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়। সুফিসাধকরা হিন্দিতে কবিতা ও গানের মাধ্যমে তাদের কথা প্রচার করায় হিন্দি ভাষার সমৃদ্ধি ও প্রসার ঘটে। আঞ্চলিক ভাষায় রচিত সাহিত্যের অগ্রগতি ঘটে।

• উপসংহার: ভক্তিবাদ ও সুফিবাদের মধ্যে মিল থাকা সত্ত্বেও কিছু কিছু অমিলও লক্ষ করা যায়। ভক্তিসাধকরা রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন না কিন্তু সুফি সাধকদের মধ্যে সুহরাবর্দি সম্প্রদায় রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।

৪.৩ ভক্তিবাদের উত্থানের কারণ কি ছিল?

উত্তর: খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ-পঞ্চদশ শতকে সমগ্র ভারতবর্ষে ভক্তিবাদের প্রসার ঘটে।

• রাজপুত ও ব্রাহ্মণদের ক্ষমতা হ্রাস: খ্রিস্টীয় অষ্টম শতক নাগাদ উত্তরভারতে হর্ষবর্ধনের পতনের পরে কয়েকজন রাজপুত রাজা ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে। এদের সমর্থন করার জন্য সমাজে ব্রাহ্মণ পুরোহিতদেরও প্রভাব বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দ্বাদশ শতকের শেষদিকে তুর্কিদের কাছে রাজপুত রাজারা হেরে গেলে ব্রাহ্মণদের ক্ষমতা হ্রাস পায়।

• অলভার ও নায়নার সাধকদের উত্থান: খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের গোড়ায়, দক্ষিণ ভারতে অলভার এবং নায়নার সাধকদের আবির্ভাব হয়। তাঁরা সহজ সরল ভাষায় ঈশ্বর আরাধনার কথা বলেন, যা সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে।

• ব্রাহ্মণ্য, বৌদ্ধ এবং জৈনধর্মের অসারতা: মধ্যযুগে ব্রাহ্মণ্য, বৌদ্ধ এবং জৈনধর্ম মানুষের জীবনে অচল হয়ে পড়েছিল। কারণ এই সব ধর্মমতগুলি অযথা ধর্মীয় রীতিনীতির উপর জোর দিত এবং আধ্যাত্মিক জীবনযাপন করতে বলতো। ফলে এই ধর্মগুলির প্রতি মানুষের আবেগও ছিল না, আবার এইগুলিতে মানুষ ভালো থাকার সন্ধানও পায়নি।

• ভক্তিবাদী সাধকদের আবির্ভাব খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতকে নামদেব, জ্ঞানেশ্বর, তুকারাম, রামানন্দ, কবীর, নানক, শঙ্করদেব, চৈতন্যদেব, মীরাবাঈ প্রমুখ ভক্তিসাধকদের প্রচারের ফলে ভক্তি আন্দোলনের প্রসার ঘটে। ভারতবর্ষের দিকে দিকে তাদের কথা, উপদেশ, বাণী, গান, কবিতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

৪.৪ সুলতানি যুগের স্থাপত্যের মূল বৈশিষ্ট্য কি?

উত্তর: সুলতানি যুগের স্থাপত্যের মূল কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো-

(i) সুলতানি আমলে ভারতীয় ও ইসলামীয় শিল্পধারা মিশে তৈরি হয় ইন্দো-ইসলামীয় শিল্পরীতি।

(ii) এই সময়ে স্থাপত্যে লাল বেলে পাথরের ব্যবহার দেখা যায়।

(iii) এই সময় আটকোনা সমাধি সৌধ নির্মাণ, বড়ো দরওয়াজা স্থাপন ছিল বিশেষ স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য।

(iii) দিল্লির সুলতানি শাসকরা গম্বুজ বসানো ঢালু দেয়াল তৈরির শিল্পরীতি চালু করেন।

৭.১ জীবনযাত্রা:

সুলতানি ও মুঘল যুগে সুলতান, বাদশাহ, রাজা- উজিররা দেশ শাসন করতেন গরিব সাধারণ জনগণের উপার্জন করা টাকায়।

দেশের বেশিরভাগ মানুষ গ্রামেই বাস করত। তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ চাষবাস করত। আবার কিছু মানুষ শিল্প বা ব্যাবসাবাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

সুলতানি ও মুঘল যুগে সমাজ ছিল যৌথ পরিবারভিত্তিক। সমাজে এবং পরিবারে পুরুষদের তুলনায় নারীর স্থান ছিল নীচে।

সুলতানি ও মুঘলযুগের শাসক ও অভিজাতরা ধনী হলেও গরিব জনগণের জীবনযাত্রা ছিল খুবই সাধারণ। দিল্লিতে এবং আঞ্চলিক রাজ্যগুলিতে শাসকের বদল ঘটলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

৭.২ নতুন লোকায়ত ধর্মীয় ভাবনা :

ভক্তি ও সুফিবাদ মধ্যযুগের ভারতে জীবনযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল ধর্ম। এইসময় ধর্মপ্রচারকগণ ভগবানের সঙ্গে ভক্তের সম্পর্কের ওপর জোর দেন। মধ্যযুগে ভক্তিবাদ ও সুফিবাদ নামক ধর্মীয় মতাদর্শ প্রচারিত হয়।

• ভক্তিবাদ: খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্ম মানুষের জীবনে অচল হয়ে পড়েছিল। কারণ এই ধর্মমতগুলি অযথা রীতিনীতির ওপর জোর দিত বা চূড়ান্তভাবে অ-সাংসারিক জীবন যাপন করতে বলত। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ভারতে অলভার এবং নায়নার সাধকরা ভক্তিবাদের প্রচার করেন।

খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকে এই ভক্তিবাদী ধারা দক্ষিণভারত থেকে পশ্চিম ভারত হয়ে ক্রমশ উত্তর এবং পূর্ব ভারতে ছড়িয়ে পড়ে, এর ফলে সামাজিক এবং ধর্মীয় জীবনে ব্রাহ্মণদের দাপট কমতে শুরু করে।

খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতকে নামদেব, জ্ঞানেশ্বর, তুকারাম, রামানন্দ, কবীর, নানক, শঙ্করদেব, চৈতন্যদেব, মীরাবাঈ প্রমুখ তাঁদের কথা, লেখা, কবিতা এবং গান দিয়ে ভক্তিবাদের প্রচার করেন। এঁদের সবার ভক্তিদর্শনের মূলকথা ছিল দুটি। একটি হল কোনো ভেদাভেদ না করে সব মানুষের

কাছে ঈশ্বরের বাণী পৌঁছে দেওয়া। অন্যটি হল সমস্ত আচার ছেড়ে ভগবানকে নিজের মতো করে পাওয়া। খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের শেষদিকে সাধিকা মীরাবাঈ-এর আবির্ভাব হয়। তিনি সাংসারিক বন্ধনের মধ্যে নিজেকে আটকে না রেখে শ্রীকৃষ্ণ বা গিরিধারীর প্রতি একনিষ্ঠ ভক্তিতে তাঁর সমস্ত জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর রচিত পাঁচশোরও বেশি ভক্তিগীতি ভারতীয় সংগীত এবং সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। ভক্তিবাদী সাধকদের মধ্যে অনেক মীরাবাঈ নীচুজাতির সাধকও ছিলেন যেমন, সন্ত রামানন্দের শিষ্যদের মধ্যে ছিল জাতিতে চামার রবিদাস, নাপিত সাই বা কসাই সাধনা।

• সুফিবাদ: খ্রিস্টীয় দশম-একাদশ শতক থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় আইন কানুনের বাইরে বহু মুসলমান ঈশ্বরকে নিজের মতো করে আরাধনা করার পথ খুঁজছিলেন। সুফিসাধকরা তাঁদেরকে সেই পথ দেখান। ভারতে সুফিসাধকরা দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিলেন, একটি ছিল চিশতি সম্প্রদায় এবং অপরটি ছিল সুহরাবর্দি সম্প্রদায়। চিশতি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মইনউদ্দিন চিশতি এবং সুহরাবর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বদরউদ্দিন জাকারিয়া।

৭.৩ শ্রীচৈতন্য ও বাংলায় ভক্তিবাদ :

• সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রভাব: খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে বাংলায় ভক্তি আন্দোলনের প্রচার ও প্রসার ঘটেছিল শ্রীচৈতন্যদেব এবং তাঁর সঙ্গীদের চেষ্টায়। শ্রীচৈতন্যদেব বাংলায় বৈষুব ধর্ম প্রচার করেছিলেন। নবদ্বীপ হয়ে উঠেছিল এই ধর্ম-আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। শ্রীচৈতন্যদেব এবং তাঁর অনুগামীরা বাহ্যিক আড়ম্বরের বদলে ভক্তির ওপরেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, তার ফলে বৈষুব ভক্তির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

• উত্তর-পূর্ব ভারতে ভক্তি আন্দোলন: পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের নেতৃত্বে উত্তর-পূর্ব

শ্রীচৈতন্য

ভারতের অসমে ভক্তি আন্দোলনের একটি ধারা বিকশিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন কৃষ্ণের উপাসক। তাঁর প্রচারিত ভক্তির মূলকথা ছিল ‘নাম ধর্ম’।

ফতেপুর সিকরি

• আঞ্চলিক স্থাপত্য সুলতানি ও মুঘলযুগে ভারতের নানা অঞ্চলে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। আঞ্চলিক শিল্পগুলির মধ্যে গুজরাট, বাংলা এবং দক্ষিণ ভারতের স্থাপত্য শিল্প বিখ্যাত।

দক্ষিণ ভারতের গুলবর্গা দুর্গ ও বিদরের দুর্গ, আহমেদনগরের চাঁদ বিবির প্রাসাদ, বিজাপুরের গোল গম্বুজ, হায়দরাবাদারে চারমিনার আঞ্চলিক স্থাপত্যের নির্দশন।

বিজয়নগরের মন্দির ও ইমারতগুলিতে হিন্দু এবং ইসলামীয় স্থাপত্য রীতির মিশ্রণ দেখা যায়।

• বাংলার স্থাপত্য রীতি: খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে বাংলাদেশে মুসলমান শাসন ছড়িয়ে পড়ার ফলে বাংলায় কাঠামো নির্মাণের

মূল গঠনভঙ্গি ছিল ইসলামি রীতি অনুসারে। তবে বাচ্চাও কারুকার্য ও কাঁচামাল ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলার লৌকিকরা ছাপ দেখা যায়।

বাংলার বাড়ি বা মন্দির ঢালু ধাঁচে তৈরি করা হত যা বৃষ্টির জল দাঁড়াতে না পারে। এই নির্মাণ পদ্ধতির নাম বাংলা। মন্দিরের দেয়ালে পোড়ামাটির বা টেরাকোটার ক করা হত। বাংলার স্থাপত্যরীতির উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। বাঁকুড়া-বিষ্ণুপুরের মন্দির, আদিনা মসজিদ, একলাখি সমা দাখিল দরওয়াজা, তাঁতি পাড়া মসজিদ, ফিরোজ মিনার, ব সোনা মসজিদ ইত্যাদি।

৭.৬ সুলতানি ও মুঘল যুগের শিল্পকলা :

• দরবারি চিত্রকলা: সুলতানি ও মুঘল যুগের শিল্পকলায় গুরুত্বপ ছিল দরবারি চিত্রকলা। এই দুই যুগে বই এবং পান্ডুলিপিতে আঁকার চল শুরু হয়। সুন্দর হাতের লেখার শিল্পেরও এইস খুব চর্চা হত। একে বলা হত Calligraphy বা হস্তলিপিকি বা হস্তলিপিশিল্প। অলংকরণ করা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছিল-কল্পসূত্র, কালচক্রকথা, চৌরপঞ্চাশিকা, হমজানাম তুতিনামা, রজমনামা, পাদশাহনামা প্রভৃতি। বইয়ের প্রতি পৃষ্ঠা সাজানো হত সূক্ষ্ম হস্তলিপি বা ছবি দিয়ে। আকার এব ‘আয়তনে ছোটো এই ছবিগুলিকে বলা হয় মিনিয়েচার।

মুঘল যুগের চিত্রকলা

মুঘল আমল থেকে প্রতিকৃতি আঁকা শুরু হয়। নাদিরা বার

সাহিফা বানুর মতো মুঘল নারীরা নিজেরা ছবি আঁকতেন

মুঘল দরবারি ছবিগুলিতে বাদশাহ, অভিজাতরাই বিষয়বস্তু হিসেবে বেশি গুরুত্ব পেত। তবে তার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, তাদের কাজকর্মও ছবির মধ্যে ফুটে উঠেছিল।

• আঞ্চলিক চিত্রকলা: মুঘলদের দরবারি চিত্রশিল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক ছবি আঁকার রীতি দেখা যায়। রাজস্থান এবং পাহাড়ি অঞ্চলে (জম্মু, কাশ্মীর, কাংড়া প্রভৃতি) নানান ছবি আঁকার রীতি দেখা যায়। পৌরাণিক নানান দৃশ্য এবং বিষয় এই ছবিগুলির মূলকেন্দ্র ছিল। বিষয়বস্তু হিসেবে রাধা-কৃষ্ণের ব্যবহারও লক্ষ করা যায়।

• সংগীত ও নৃত্য: সুলতানি এবং মুঘল আমলে সংগীত এবং নৃত্যশিল্পের চর্চা হত। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে সুফি পিরদের সমা গান, কবীর, নানক, মীরাবাঈয়ের ভজন, শ্রীচৈতন্যের কীর্তন সংগীতশিল্পকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। সুলতানি যুগে শাস্ত্রীয় সংগীতের চর্চা ছিল। এই সময়ের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী ছিলেন বৈজু বাওরা।

আবুল ফজলের লেখায় মুঘল যুগে ছত্রিশজন সংগীতশিল্পীর নাম পাওয়া যায়। তানসেন ছিলেন তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত। পরবর্তীকালে ঔরঙ্গজেব সরকারিভাবে সংগীতের পৃষ্ঠপোষণা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের সেই ঐতিহ্য আজও চলেছে।

• নৃত্যশিল্প: মণিপুরী নৃত্য: ভারতবর্ষে ধ্রুপদী নাচ ছিল মূলত

ছ-টি: ভারতনাট্যম, কথাকলি, ওড়িশি, কুচিপুড়ি, কথক এবং মণিপুরী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মণিপুরী নৃত্যশৈলী।

৭.৭ ভাষা ও সাহিত্য

৭.৭.১ আরবি ও ফারসি মধ্যযুগে ভারতে আরবি ও ফারসি ভাষার প্রচলন ছিল। সুলতানি যুগ থেকে ফারসি ভাষা বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। দিল্লির সুলতান, কুতুবউদ্দিন আইবক, ইলতুৎমিস, খলজি শাসকরা ফারসি ভাষার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ফারসি সাহিত্যিক ও দার্শনিকদের মধ্যে আমির খসরুর লেখা ছিল

সবচেয়ে বিখ্যাত। এ ছাড়া এই ভাষার বিখ্যাত ঐতিহাসিকরা ছিলেন মিনহাজ-ই সিরাজ, ইসামি এবং জিয়াউদ্দিন বারনি

প্রমুখ। ফারসি ভাষার জনপ্রিয়তা এবং কার্যকারিতা আরও বেড়েছিল মুঘল আমলে। মুঘল আমলে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হল-বাবরের আত্মজীবনী ‘তুজুক-ই-বাবরি’ বা ‘বাবরনামা’, গুলবদন বেগমের লেখা ‘হুমায়ুননামা’। এই সময় এক বিশেষ কাব্যরীতির জন্ম হয় ফৈজি, উরফি, নাজিরি, বেদিলের মতো কবিদের লেখায়।

সম্রাট আকবরের আমলের রচনাগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- (i) ইতিহাস লেখা (ii) অনুবাদ সাহিত্য (iii) কবিতা। ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল-আবুল ফজলের ‘আকবরনামা’ এবং ‘আইন-ই-আকবরি’ বদাউনির ‘মুন্তাখাব-উৎ-তওয়ারিখ’ এবং নিজামউদ্দিন আহমেদের ‘তবকাত-ই-আকবরি’ ইত্যাদি।

জাহাঙ্গিরের আমলে বিখ্যাত কবি ছিলেন তালিব আমুলি, শাহজাহানের সময়ে ছিলেন আবদুল হামিদ লাহোরি।

এই সময় ঈশ্বরদাস নাগর, চন্দ্রভান ব্রাহ্মণ বা ভীমসেন বুরহানপুরির মতো হিন্দু লেখকরাও ফারসি ভাষায় লিখেছেন।

বাংলা সাহিত্য: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের

প্রথম দিকে বাংলা সাহিত্যে দেবদেবীর মহিমা প্রচার করা হত। এই সময়ে যা লেখা হতো, তা সুর করে গাওয়া হত। একে বলা হত পাঁচালি। শ্রীকৃয়কে নিয়ে বিভিন্ন পদ-কবিতা লেখা হত, এগুলিকে বলা হত পদাবলি সাহিত্য, রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবতের কিছু অংশ বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল।

বাংলা সাহিত্যের আর-একটি প্রধান ধারা ছিল, ‘মঙ্গলকাব্য’ ‘চণ্ডীমঙ্গল’ ‘মনসামঙ্গল’, ‘ধর্মমঙ্গল’ ছিল মঙ্গলকাব্যগুলির মধ্যে অন্যতম।

নাথ যোগীদের নিয়ে রচিত হয়েছিল ‘নাথ সাহিত্য’। চৈতন্যদেবের জীবনী নিয়ে রচিত হয়েছিল চৈতন্যজীবনী কাব্য’। পরবর্তীকালে আরবি-ফারসির সঙ্গে বাংলা ভাষা মিশে গিয়ে নতুন ধারার লেখা চালু হয়েছিল।

৭.৮ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি :

সুলতানি ও মুঘল আমলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি ঘটে। সুলতানিযুগে জ্যোতির্বিজ্ঞানের উন্নতি ঘটে। মুঘল বাদশাহ আকবরও অঙ্ক, জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোলের ওপর বিশেষ নজর দেন। সম্রাট জাহাঙ্গির উদ্ভিদবিদ্যা ও জীববিদ্যার বিষয়ে কিছু কথা তাঁর গ্রন্থ ‘তুজুক-ই-জাহাঙ্গিরি’-তে লিখেছেন। চিকিৎসাবিদ্যা, সামরিক প্রযুক্তি, লিখন পদ্ধতি, বয়নশিল্পেও বিরাট পরিবর্তন আসে। কৃষিশিল্প, ঘরবাড়ি নির্মাণশিল্পেও নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়।

  • কিছু বিশেষ শব্দ ও তার অর্থ:
  • জোলাহা-তাঁতি
  • পির-গুরু
  • সমা-সুফি কীর্তন
  • সত্র-বৈষুব ভক্তদের জমায়েত হওয়ার স্থান
  • দীন-ধর্ম
  • ঝরোখা-জানালা
  • গড়-দুর্গ
  • ফতেহ-জয়
  • ক্যালিগ্রাফি-হস্তলিপিবিদ্যা
  • মিনিয়েচার-অণু চিত্র
  • রেকাব-ঘোড়ার দু-পাশে সৈনিকের পা রাখার জন্য পাদানি।
  • চরখি-তুলো ধুনবার যন্ত্র

(ক) সুলতানি ও মুঘল যুগে ভারতে কোন্-কোন ফল, সবজি এবং শষ্যের চাষ সবচেয়ে বেশি হত?

উত্তর: সুলতানি ও মুঘল যুগে বিভিন্ন ধরনের ফল, সব্জি এবং শস্যের চাষ হত।

(i) ফল: আম, আঙুর, খেজুর, জাম, কলা, কাঁঠাল, নারকেল

প্রভৃতি ফলের চাষ হত।

(ii) সবজি: বেগুন, লাউ, কুমড়ো, ডুমুর, বিভিন্ন ধরনের শাক প্রভৃতি সবজির চাষ হত।

(iii) শস্য: ধান, গম, যব, বিভিন্ন ধরনের ডাল, সরষে, তিল প্রভৃতি খাদ্যশস্য চাষ করা হত।

(খ) মধ্যযুগের ভারতে ভক্তি সাধক-সাধিকা কারা ছিলেন? উত্তর : মধ্যযুগের ভারতে এক শ্রেণির সাধক-সাধিকারা ভগবানের প্রতি

ভক্তির কথা প্রচার করেছিলেন, তাদের ভক্তিবাদী সাধক-সাধিকা বলা হয়।

ভক্তিবাদী সাধক: রামানন্দ, কবীর, নানক, শ্রীচৈতন্য প্রমুখ। ভক্তিবাদী সাধিকা: মীরাবাঈ।

(৫) সিলসিলা কাকে বলে? চিশতি সুফিদের জীবনযাপন কেমন ছিল?

উত্তর সুফি সাধকগণ বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিলেন। সুফি সাধকদের গোষ্ঠীকে ‘সিলসিলা’ বলা হত। ভারতে দুটি সুফি গোষ্ঠী ছিল প্রভাবশালী (1) চিশতি (ii) সুহরাবর্দি।

• চিশতি সিলসিলার সুফিদের জীবনযাপন ছিল খোলামেলা। তাঁরা ধর্ম, অর্থ, ক্ষমতার মাপকাঠিতে মানুষকে বিচার করতেন না। তাঁদের কাছে সব মানুষ ছিল সমান। তাঁরা রাজনীতি এবং রাজদরবার থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতেন। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, রাজ্য পরিচালনার কাজে জড়িয়ে পড়লে ঈশ্বরসাধনা সম্ভব নয়। ঈশ্বরের আরাধনা করাই ছিল তাঁদের মূল আদর্শ।

(ঘ) দীন-ই-ইলাহির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান কেমন ছিল?

উত্তর: মুঘল সম্রাট আকবর ‘দীন-ই-ইলাহি’ মতাদর্শ চালু করেন। দীন-ই-ইলাহি গ্রহণে শুরুতে শপথ গ্রহণ করতে হত।

• শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান :

• যিনি দীন-ই-ইলাহি ধর্ম গ্রহণ করতেন, তিনি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁর জীবন (জান), সম্পত্তি (মাল), ধর্ম (দীন), সম্মান (নামুস), বিসর্জন (কুরবান) দেওয়ার’ শপথ নিতেন।

• শিষ্য (মুরিদ) যেমন তার সুফি গুরুর (পির) পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে, তাঁকেও তেমনি বাদশাহের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে হতো।

• অনুষ্ঠান শেষ হবার পর বাদশাহ তাঁকে দিতেন একটি নতুন পাগড়ি, সূর্যের একটি পদক ও পাগড়ির সামনে লাগাবার জন্য বাদশাহের নিজের ছোটো একটি ছবি।

(৩) স্থাপত্য হিসেবে আলাই দরওয়াজার বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর • সুলতান আলাউদ্দিন খলজি কুতুবমিনারের চত্বরে যে দরওয়াজা নির্মাণ করেছিলেন তা ‘আলাই দরওয়াজা’ নামে পরিচিত।

• আলাই দরওয়াজার বৈশিষ্ট্য:

(1) এটি ছিল ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্য শিল্পের অসাধারণ নমুনা।

(ii) এটি লাল বেলে পাথর দিয়ে তৈরি হয়েছে।

(iii) দরওয়াজার গায়ে আল্লাহ-র কথার পরিবর্তে সুলতানের প্রশংসা খোদাই করা হয়েছে।

(iv) এটি কুতুবমিনারের চত্বরেই নির্মিত হয়েছে।

(চ) ক্যালিগ্রাফি এবং মিনিয়েচার বলতে কী বোঝায়?

উত্তর ক্যালিগ্রাফি (Calligraphy): সুন্দর হস্তলিপি বিদ্যা বা হস্তলিপি শিল্পকে ইংরেজিতে বলে ক্যালিগ্রাফি (Calligraphy)। সুলতানি ও মুঘল আমলে এই শিল্পের খুব চর্চা হত। তখনকার দিনে ছাপখানা ছিল না তাই বইগুলো হাতে লেখা হত। সেই বইগুলোতে এই শিল্পের নমুনা দেখা যায়।

• মিনিয়েচার (Miniature): আকার এবং আয়তনে ছোটো ছবিগুলিকে বলা হয় ‘মিনিয়েচার’ (Sliniature)। ‘মিনিয়েচার’ কথাটা ইংরাজি। বাংলায় একে বলা হয় ‘অণুচিত্র’। এই ধরনের ছবি আঁকা হত কাগজে বা বইয়ের অলংকরণ হিসেবে।

মুঘল আমলের ক্যালিগ্রাফি

(ছ)শিবায়ন কী? এর থেকে বাংলার কৃষকের জীবনের কী পরিচয় পাওয়া যায়?

উত্তর: শিবায়ন: হিন্দুদের দেবতা শিবকে নিয়ে লেখা সাহিত্যগুলি ‘শিবায়ন’ নামে পরিচিত। পুরাণ বা ধর্মগ্রন্থগুলিতে শিবকে নিয়ে যে কাহিনিগুলি লেখা হয়েছে তার সঙ্গে শিব-দুর্গার ঘর-সংসারের কথা জুড়ে ‘শিবায়ন’ কাব্যগুলি রচিত হয়েছে।

• শিবায়নে বাংলার কৃষকদের জীবনের পরিচয়: শিবায়নের লেখায় দেখা যায় শিব কৃষক হয়ে চাষবাস করে রোজগারের চেষ্টা করছেন আর দুর্গা কৃষক রমণী হিসেবে শিবকে নানা কাজে সাহায্য করছেন। বাংলার গরিব কৃষক পরিবার যেন শিব-দুর্গার পরিবার হয়ে গেছে।

(জ)কাগজ কোথায় আবিষ্কার হয়েছিল? মধ্যযুগের ভারতে কাগজের ব্যবহার কেমন ছিল তা লেখো।

উত্তর: খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে চিনে প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয়।

• খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভারতে কাগজ তৈরির প্রবৃদি চিন থেকে প্রথম নিয়ে আসে মধ্য এশিয়ার মোঙ্গলরা। সময়ের মধ্যে ভারতে কাগজের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। ৩ ফলে লেখাপড়ার কাজ সহজ হয়। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতায় ভারতে কাগজ নাকি এতটাই সস্তা ছিল যে, ময়রা মিষ্টি। জন্য কাগজ ব্যবহার করত।

৪। বিশদে (১০০-১২০টি শব্দের মধ্যে) উত্তর দাও :

(ক) মধ্যযুগের ভারতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল?

উত্তর: ভূমিকা: মধ্যযুগের ভারতে বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করত। গ্রামের সমাজ ব্যবস্থা ছিল যৌথ পরিবারভিত্তিক। 

কবীর

(i) ঘরবাড়ি: মধ্যযুগে গরিব সাধারণ মানুষরা পাতকুয়া, ডোবা বা পুকুরের ধারে বসতি তৈ করত। ঘর তৈরির জন্য লাগত কয়েকটি গাছের গুঁড়ি, চার ছাইবার জন্য লাগত কিছু খড়।

(ii) খাদ্য: সমাজে সাধারণ মানুষের রোজের খাবার ছিল একঘেঁটে খিচুড়ি। সারাদিনে একবার মাত্র বিকেলবেলায় তারা খেত গরিবরা মাংসের স্বাদ প্রায় জানতই না।

(iii) পোশাক: সাধারণ গরিব মানুষের পরবার পোশাকও যথো ছিল না। বিছানার চাদর ছিল একটি বা বড়ো জোর দুটি তাই তারা পেতে শুতো, দরকারে গায়ে দিত। গরমের দিনে তা যথেষ্ট হলেও দারুণ শীতে তাদের ভীষণই কষ্ট হত।

(iv) আসবাব: গরিবদের ঘরগুলিতে একজোড়া খাটিয়া এবং রান্নার দু-একখানি বাসনই ছিল আসবাব।

(v) জীবিকা: গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ চাষবাসের সাথে যুক্ত ছিল। যাদের চাষ বাস ছিল না, তাদের কষ্ট করে জীবন কাটাতে হত। তখনকার দিনে উৎপাদিত প্রধান খাদ্যশস্য ছিল গম, ধান, তিল, মুগ এবং মুসুর, বিভিন্ন শাকসবজি প্রভৃতি কৃষকরা খাজনা দেওয়ার পর বাকি অংশ ভোগ করত।

(vi) বিনোদন: কুস্তি, তিরধনুক ও বর্শা ছোঁড়া, সাঁতার ছিল তাদের প্রিয় খেলা। লোকগান, নাচ, সংসাজা ছিল তাদের আনন্দ্যে অন্যতম মাধ্যম।

• উপসংহার: সুলতানি ও মুঘলযুগে দেশের সাধারণ মানুষে জীবনযাত্রা প্রায় একইরকম ছিল। হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর অভাবের সংসার-সেযুগে ভারতের গরিব, কৃষক, কারিগর শ্রমিকের জীবন বলতে ছিল এটুকুই।

(খ) কবীরের ভক্তি ভাবনায় কীভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ এক হয়ে গিয়েছিল বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের একজন বিখ্যাত ভক্তিসাধক ছিলেন কবীর। তাঁর অনুগামীরা ‘কবীর পন্থী’ নামে পরিচিত।

• বাল্যজীবন: কবীরের জন্ম-তারিখ ও পিতামাতা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা যায় না। তবে তিনি বারাণসীতে এক মুসলিম জোলাহা (তাঁতি) পরিবারে পালিত হন।

• ভক্তি ভাবনা: রামানন্দের শিষ্য কবীরের ভক্তি চিন্তায় ইসলামের একেশ্বরবাদের সঙ্গে বৈষুব, নাথযোগী এবং তান্ত্রিক বিশ্বাসের মিলন দেখা যায়। কবীরের কাছে সকল ধর্মই ছিল এক এবং সব ঈশ্বরই সমান। কবীর মনে করতেন রাম, হরি, গোবিন্দ, আল্লাহ, সাঁই, সাহিব-এই সবই হলো এক ঈশ্বরেরই বিভিন্ন নাম। কবীর বিশ্বাস করতেন যে, মানুষ তার ভক্তি দিয়ে নিজের মনেই ঈশ্বর খুঁজে পাবে। তার জন্য মন্দিরে-মসজিদে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই মূর্তি পুজো বা গঙ্গাস্নান বা নামাজ পড়া তাঁর কাছে ছিল অর্থহীন। তখনকার সামাজিক জীবনে কবীরের ভাবনার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম।

• দোহা: হিন্দি ভাষায় দুই পঙ্ক্তির কবিতাকে দোহা বলে। ভক্তিবাদের প্রচারে কবীরের দোহাগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

(গ) বাংলায় বৈয়ব আন্দোলনের ফলাফল কী হয়েছিল বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতকে বাংলায় শ্রীচৈতন্যদেব এবং তাঁর সঙ্গীদের চেষ্টায় ভক্তি আন্দোলনের প্রসার ঘটে। শ্রীচৈতন্যদেব বাংলার বৈষুবীয় ঐতিহ্য আর ভক্তিবাদের ভাবনাকে একাকার করে দেন। তাঁর নেতৃত্বে বৈয়ব ধর্ম ভক্তি আন্দোলন হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে।

(i) বৈষুব ভক্তি আন্দোলনের প্রসার: শ্রীচৈতন্যদেব যে ভক্তি আন্দোলন প্রচার করেছিলেন তার ফলে বাংলায় বৈষুব ভক্তির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। বাংলায় হাজার হাজার মানুষ বৈষুব ধর্মের অনুগামী হয়।

(ii) সমাজের জাতিভেদ প্রথা হ্রাস: শ্রীচৈতন্যদেব এবং তাঁর অনুগামী বৈষুবরা জাতিভেদ মানতেন না। তাঁদের প্রচারের ফলে সমাজ থেকে জাতিভেদ পুরো দূর না হলেও অনেক কমেছিল।

(iii) বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ: শ্রীচৈতন্যদেব বাংলা ভাষাতে ভক্তি প্রচার করেন। শ্রীচৈতন্যকে কেন্দ্র করে বাংলাভাষায় তাঁর জীবনী নিয়ে অনেক কাব্য লেখা হয়। এগুলিকে ‘চৈতন্য জীবনীকাব্য’ বলা হয়। যেমন- ‘চৈতন্য ভাগবত’, ‘চৈতন্য মঙ্গল’, ‘চৈতন্যচরিতামৃত’ প্রভৃতি। এছাড়া বহু মুসলমান কবি বৈষ্ণবগান- কবিতা লেখেন। ঘাঁটু, খাঁটু-তেলেনা, পটুয়া, রামলীলা, পৌষ পার্বণ ইত্যাদির গানে আজও বৈষুব

প্রভাবলক্ষ করা যায়।

শ্রীচৈতন্য

(iv) বাংলায় সংস্কৃতিতে কীর্তনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি: শ্রীচৈতন্যদেবের আগেও কীর্তন গান ছিল। শ্রীচৈতন্যের কীর্তনগানের মাধ্যমে ভক্তিবাদ প্রচারের ফলে বাংলায় কীর্তনের ব্যাপক জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। কীর্তন দুভাবে গাওয়া হতো-নামকীর্তন ও নগরকীর্তন।

• উপসংহার: শ্রীচৈতন্যদেব বৈয়ব আন্দোলনের মাধ্যমে ভক্তির ভাবনাকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বাংলায় এক নতুন সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক পরিবেশ তৈরি হয় এর মধ্য দিয়ে। জ্ঞানের বদলে ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরলাভের উপরে জোর দেওয়া হয়।

(3) বাদশাহ আকবরের দীন-ই-ইলাহি সম্বন্ধে একটি টীকা লেখো। 

উত্তর: ভূমিকা: মুঘল সম্রাট আকবর ‘সুলহ-ই-কুল’ আদর্শে ‘দীন-ই- ইলাহি’ নামে এক নতুন ধর্ম প্রবর্তন করেন।

• প্রেক্ষাপট: আকবর ফতেহপুর সিকরিতে প্রথমে ইসলাম ধর্ম নিয়ে উলেমার সঙ্গে আলোচনা করতেন। পরে তিনি নানান ধর্মের গুরুদের ডেকে ধর্মীয় নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। এইসব আলোচনার ভিত্তিতে তিনি ‘দীন-ই-ইলাহি’ চালু করেন।

• শপথ: যিনি ‘দীন-ই-ইলাহি ধর্ম গ্রহণ করতেন, তিনি শপথ গ এহণ অনুষ্ঠানের শুরুতে তাঁর জীবন (জান), সম্পত্তি (মাল), ধর্ম (দীন), সম্মান (নামুস) ও বিসর্জন (কুরবান) দেওয়ার শপথ নিতেন। এছাড়াও শপথগ্রহণকারীকে বাদশাহের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করতে হতো। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শেষে বাদশাহ শপথ গ্রহণকারীকে একটি নতুন পাগড়ি, সূর্যের একটি পদক ও পাগড়ির সামনে লাগাবার জন্য বাদশাহ নিজের ছোটো একটি ছবি দিতেন।

• বৈশিষ্ট্য: নানা ধর্মের গুরুদের সঙ্গে আলোচনা করে আকবর বিভিন্ন ধর্ম থেকে নিজের পছন্দ মতো কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য বেছে নিতেন। সেই বৈশিষ্ট্যগুলিকে ভিত্তি করে তিনি ‘দীন-ই-ইলাহি’ তৈরি করেন।

• প্রয়োগ: আকবর নিজের সভাসদদের মধ্যে এই ধর্মের প্রচলন করেছিলেন। আসলে ‘দীন-ই-ইলাহি’ ছিল আকবরের প্রতি চূড়ান্ত অনুগত কয়েকজন অভিজাতদের মধ্যে প্রচারিত এক আদর্শ। আকবর নিজে তাঁদের বেছে নিতেন।

• উপসংহার: ‘দীন-ই-ইলাহি ধর্মমত প্রবর্তনের মাধ্যমে আকবর বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের ঐক্যবদ্ধ করেন এবং ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে নিজের কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করেন। তা সত্ত্বেও আকবরের মৃত্যুর আগেই এই ধর্মের অবক্ষয় শুরু হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথেই এই মতাদর্শের অবসান ঘটে।

(৩) মুঘল সম্রাটের আমলে বাগান তৈরি এবং দুর্গ নির্মাণ সম্বন্ধে

উত্তর: ভূমিকা: মুঘল সম্রাটদের আমলে বাগান তৈরি এবং দুর্গ নির্মাণ রীতির সূচনা ঘটে। মুঘল সম্রাটরা আত্মরক্ষার জন্য যেমন দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন, তেমনি নিজেদের শখের জন্য সুন্দর বাগানও তৈরি করেছিলেন।

• মুঘল সম্রাটদের আমলে বাগান তৈরি এবং দুর্গনির্মাণ:

• বাগান তৈরি: ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বাবরের বাগান তৈরির খুব শখ ছিল। তাঁর আমলে চারভাগে ভাগ করা বাগান বানানোর এক নতুন কৌশল দেখা যায়। এই কৌশলের ফারসি নাম ‘চাহার বাগ’, হিন্দিতে বলা হয় ‘চার বাগ’। মুঘলরা মধ্য এশিয়া ও পারস্য থেকে এই ধরনের বাগানের ধারণা নিয়ে এসেছিল। মুঘল সম্রাট আকবর, জাহাঙ্গির, শাহজাহান বাগানের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন।

চাহার বাগ

কাশ্মীরের নিশাদবাগ, লাহোরের শালিমার বাগ, দিল্লিতে হুমায়ুনের সমাধি এবং আগ্রার তাজমহল চত্বরে এই ‘চাহার বাগ’ রীতির নিদর্শন পাওয়া যায়।

• দুর্গ নির্মাণ: আকবর মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে প্রথম দুর্গ নির্মাণের সূচনা হয়েছিল। দুর্গ নির্মাণের ফলে একদিকে সাম্রাজ্য সুরক্ষিত হয়েছিল, অন্যদিকে স্থাপত্য শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল। আগ্রা দুর্গ ছিল আকবরের আমলের প্রথম স্থাপত্য। আজমির, লাহোর, কাশ্মীর, এলাহাবাদ প্রভৃতি স্থানে। দুর্গ (গড়) গুলিও আকবরের সময়ে তৈরি করা হয়েছিল।

• জাহাঙ্গির: পরবর্তী সম্রাট জাহাঙ্গির লাহোরে বসবাস করতেন

এবং সেখানেই তিনি দুর্গের মধ্যে প্রাসাদ গড়ে তুলেছিলেন।

• শাহজাহান: শাহজাহানও আগ্রা এবং লাহোরে দুর্গের সুরক্ষার চেষ্টা করেছিলেন।

• ঔরঙ্গজেব: ঔরঙ্গজেব ও দিল্লি দুর্গ সুরক্ষার দিকেই অধিক গুরুত্ব দিতেন।

• উপসংহার: মুঘল সম্রাটরা শুধু যুদ্ধ এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রেই দক্ষ ছিলেন না, তাঁদের নির্মিত বাগান ও দুর্গগুলি দেখলে তাঁদের উন্নত রুচির পরিচয় ও পাওয়া যায়।

(চ) মধ্যযুগের বাংলার স্থাপত্যরীতির পর্যায়গুলির মূল বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

উত্তর: ভূমিকা: খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে বাংলাদেশে মুসলমান শাসন ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই এই সময়ে ইসলামি রীতি অনুসারে বাংলায় অনেক প্রাসাদ, মন্দির, মসজিদ ও সমাধিসৌধ তৈরি হয়েছিল।

• বৈশিষ্ট্য:

(1) বাংলার স্থাপত্যকীর্তিগুলি ইসলামি রীতি অনুসারে নির্মিত হয়েছিল।

(ii) বাংলার স্থাপত্যরীতির আর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল ইমার ইটের ব্যবহার।

(iii) বেশিরভাগ মন্দির তৈরি করা হতো ঢালু ধাঁচে, যাতে রা জল দাঁড়াতে না পারে। এই বিশেষ নির্মাণ পদ্ধতির নাম। বাংলা।

(iv) পাশাপাশি দুটি স্থাপত্য কাঠামো জুড়ে তৈরি হতো জোড় স্থাপত্যরীতি।

জোড়বাংলার মন্দির

(v) চাল বা চালভিত্তিক মন্দির ও তৈরি হতো। ইসলামীয় স্থাপতে ধাঁচে চালাগুলির মাথায় খিলান, গম্বুজ বানানো হতো।

(vi) আয়তক্ষেত্রাকার স্থাপত্য কাঠামোর ওপরে একাধিক চূড়া দি মন্দির তৈরি হতো।

(vii) মন্দিরগুলির বেশির ভাগের দেয়ালে পোড়ামাটির বা টেরাকোট কাজ করা হতো।

• বিভিন্ন পর্যায়: মধ্যযুগের বাংলার স্থাপত্য শিল্পের ইতিহাসা তিনটি মূল পর্যায়ে ভাগ করা যায়।

(i) প্রথম পর্যায় (১২০১-১৩৩৯ খ্রি:)

(ii) দ্বিতীয় পর্যায় (১৩৩৯-১৪৪২ খ্রি:)

(iii) তৃতীয় পর্যায় (১৪৪২-১৫৩৯ খ্রি:)

• পর্যায় ভিত্তিক স্থাপত্য শিল্পের নির্দশন:

(i) প্রথম পর্যায়: বাংলার রাজধানী ছিল গৌড়। এই পর্যায়ে নিদর্শন হলো ত্রিবেণীতে জাফর খানের সমাধির ভগ্নাবশে এবং বসিরহাটের কিছু ভগ্ন স্তূপ।

(ii) দ্বিতীয় পর্যায়: এই পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য হলো মালদহে পান্ডুয়ায় সিকান্দর শাহের বানানো আদিনা মসজিদ, গৌড়ে শেখ আকি সিরাজের সমাধি, হুগলি জেলায় ছোটো পান্ডুয় মিনার ও মসজিদ।

(iii) তৃতীয় পর্যায়: এই পর্যায়ের নিদর্শন ছিল পান্ডুয়ায় সুলতা জালালউদ্দিন মহম্মদ শাহর সমাধি বা একলাখি সমাধি, গৌডে বরবক শাহের দাখিল দরওয়াজা, তাঁতি পাড়া মসজিদ, গুণা মসজিদ, লোটান মসজিদ, ফিরোজ মিনার, বড়ো সোনা মসজি ছোটো সোনা মসজিদ ইত্যাদি।

(ছ) মুঘল চিত্রশিল্পের উন্নতিতে মুঘল বাদশাহদের কী ভূমিকা ছিল

উত্তর: ভূমিকা: মুঘল শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতকায় চিত্রশিরে মানের যথেষ্ট উন্নতি ঘটে। মুঘল চিত্রকলার বিষয়বস্তু ছিল

প্রাকৃতিক দৃশ্য, দরবারি চিত্রকলা, বই অলংকরণ, প্রতিকৃতি অংকন ইত্যাদি।

• বৈশিষ্ট্য: মুঘল চিত্রকলার বৈশিষ্ট্যগুলি হলো-

(1) মুঘল চিত্রকলায় ভারতীয় ও পারসিক রীতির সংমিশ্রণ ঘটেছিল।

(ii) ইউরোপীয় ছবি আঁকার রীতি-নীতি মুঘল চিত্রশিল্পে বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।

(iii) অল্প পরিসরে অনুচিত্র বা মিনিয়েচার চিত্রাঙ্কন পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা যায় মুঘল চিত্রশিল্পে।

(iv) মুঘল সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতকায় দরবারে এবং দরবারের বাইরে রাজস্থান এবং পাহাড়ি অঞ্চলে (জম্মু, কাশ্মীর, কাংড়া প্রভৃতি) লোকশিল্পের চিত্রকলার বিকাশ লক্ষ করা যায়।

• মুঘল বাদশাহদের ভূমিকা:

• বাবর: সম্রাট বাবর ছিলেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পূজারি। তিনি চিত্রশিল্পের প্রসারের উদ্দেশ্যে তাঁর রাজদরবারে বেশ কয়েকজন চিত্রশিল্পীকে স্থান দিয়েছিলেন।

• হুমায়ুন: হুমায়ুন চিত্রশিল্পের প্রসার ঘটানোর জন্য ইরান ও আফগানিস্তান থেকে আবদুস সমাদ ও মির সঈদ আলি নামে দুই চিত্রশিল্পীকে দিল্লিতে নিয়ে এসে মুঘল কারখানা খোলেন। সেই কারখানায় বইগুলি অপূর্ব সুন্দর হাতের লেখা ও অলংকরণ দিয়ে সাজানো হতো। ‘হজানামা’ বই-এর অলংকরণের কাজ তাঁর সময়েই শুরু হয়।

• আকবর: মুঘল সম্রাট আকবর চিত্রশিল্পে প্রবল আগ্রহী ছিলেন। তাঁর আমলে বহু চিত্রকর পরিচিতি পায়। তিনি ছবির শৈল্পিক গুণের বিচার করে পুরস্কার ঘোষণা করতেন। তাঁর দরবারে ছিলেন মির সঈদ আলি, খোয়াজা আবদুস সামাদ, দসবন্ত, বসওয়ান প্রমুখ বিখ্যাত চিত্রশিল্পীরা।

• জাহাঙ্গির: জাহাঙ্গিরের সময় থেকেই ইউরোপীয় ছবি আঁকার রীতি-নীতির ছাপ মুঘল চিত্রশিল্পে পড়েছিল। জাহাঙ্গিরের দরবারে উল্লেখযোগ্য চিত্রশিল্পীরা ছিলেন বিষেণ দাস, ওস্তাদ মনসুর, ফারুক বেগ প্রমুখ।

• শাহজাহান: শাহজাহান স্থাপত্য শিল্পের উপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করলেও তিনি চিত্রশিল্পের অনুরাগী ছিলেন। তাঁর সময়ে সমরকান্দি, মহম্মদ নাদির প্রমুখ চিত্রশিল্পী ছিলেন উল্লেখযোগ্য।

• ঔরঙ্গজেব: সম্রাট ঔরঙ্গজেব চিত্রকলার প্রতি বিশেষ আগ্রহ দেখাননি বলে এই সময়ে মুঘল চিত্রশিল্পের কোনো উন্নতি হয়নি।

(জ) মধ্যযুগের ভারতে কীভাবে ফরাসি ভাষার ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বেড়েছিল তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ভূমিকা: মধ্যযুগের ভারতে ফারসি ভাষার ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

• ফারসি ভাষার ব্যবহার: সুলতানি শাসকদের হাত ধরে ভারতে ফারসি ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। এর আগে মধ্য এশিয়া ও ইরানে ফারসি ভাষা প্রশাসনিক ভাষা হিসেবে প্রচলিত ছিল।

সেই কারণে ভারতের তুর্কি শাসকরা ফারসি ভাষাকে গুরুত্ব দিতেন। সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক, ইলতুৎমিশ এবং খলজি বংশের সুলতানরা ফারসি ভাষার বিশেষ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সুলতানি যুগে লাহোর ফারসি ভাষা চর্চার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল।

মুঘল সম্রাট বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গির, শাহজাহানের সময়ে ফারসি ভাষা ও সাহিত্য আরও উন্নত হতে থাকে।

• ফারসি ভাষার জনপ্রিয়তা: ফারসি ভাষায় সাহিত্য ও ইতিহাস সৃষ্টি হতে থাকলে এর জনপ্রিয়তা দিনে দিনে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

• নতুন ফারসি রচনাশৈলীর উদ্ভব: ফারসি সাহিত্যিক ও দার্শনিক আমির খসরু ফারসি কাব্য লেখার নানান পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। তিনি ফারসি সাহিত্যের এক নতুন রচনাশৈলী ‘সবক-ই-হিন্দ’ আবিষ্কার করেন।

• ফারসিতে ইতিহাস রচনা: মধ্যযুগের ঐতিহাসিগণ ইতিহাস লেখার জন্য ফারসি ভাষাকে পছন্দ করতেন। ফারসি ভাষার বিখ্যাত ঐতিহাসিকগণ হলেন সুলতানি যুগের মিনহাজ-ই-সিরাজ, জিয়াউদ্দিন বরনি, ইসামি এবং মুঘল যুগে আবুল ফজল, বদাউনি, নিজামউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

• ফারসি অনুবাদ চর্চা: মধ্যযুগে বহু রচনা মূল সংস্কৃত থেকে ফারসিতে অনুবাদ করা হয়। এই ধারার প্রথম লেখক ছিলেন জিয়া নকশাবি। তিনি সংস্কৃত ভাষায় লেখা গল্পমালা ফারসিতে অনুবাদ করেন। তার নাম দেন ‘তুতিনামা’। এছাড়া কাশ্মীরের সুলতান জৈন-উল আবেদিনের উৎসাহে কলহন-এর ‘রাজতরঙ্গিনী’ এবং ‘মহাভারত’ ফারসিতে অনুবাদ করা হয়।

• ফারসি কবিতা: পারস্য এবং ভারতের এক সাংস্কৃতিক আদান প্রদান ঘটেছিল ফারসি ভাষার মধ্য দিয়ে। এর ফলে এক বিশিষ্ট কাব্যরীতির জন্ম হয় ফৈজি, উরফি নাজিরি, বেদিলের মতো কবিদের লেখায়।

• মুঘল আমলে বাবর, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গিরের জীবনীও রচিত হয়েছিল ফারসি ভাষাতে। তার ফলে ফারসি ভাষা ও সাহিত্যের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল।

(ব) সুলতানি ও মুঘল আমলে সামরিক এবং কৃষি প্রযুক্তিতে কী পরিবর্তন ঘটেছিল বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর: ভূমিকা: সুলতানি এবং মুঘল আমলে সামরিক এবং কৃষি প্রযুক্তিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছিল।

• সামরিক প্রযুক্তি :

(i) আগ্নেয়াস্ত্র: খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকের প্রথমার্ধে বারুদ ব্যবহারকারী আগ্নেয়াস্ত্র চিন থেকে মোঙ্গলদের হাত ঘুরে ভারতে এসে পৌঁছায়।

(ii) বারুদচালিত রকেট: কিছু পরে ভারতের কিছু অঞ্চলে শুরু হয় বারুদচালিত রকেটের ব্যবহার।

(iii) বন্দুক: খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে চিন ও মামেলুক শাসিত মিশর থেকে বন্দুকে প্রযুক্তি আসে ভারতে। খ্রিস্টীয়

ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে পোর্তুগিজরা এই প্রযুক্তি দক্ষিণ ভারতে ছড়িয়ে দেয়।

(iv) কামান: বন্দুক তৈরির প্রযুক্তির সময়কালে মুঘলরা উত্তরভারতে কামানের ব্যবহার চালু করে।

• কৃষি প্রযুক্তি:

(i) কলমপ্রথা: ভারতে প্রাচীনকাল থেকে যে কলমপ্রথা চলে আসছিল, এই সময়ে তার খুব উন্নতি হয়। পোর্তুগিজদের হাত ধরে কিছু উন্নত ইউরোপীয় প্রযুক্তি ভারতে আসে। ফলে ভারতে উন্নতমানের ফল-ফুলের চাষ শুরু হয়।

(ii) পারসিক চক্র: খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতক নাগাদ পারস্যদেশ থেকে ভারতে আসে বেল্ট এবং গিয়ার-লাগানো সাকিয়া বা পারসিক চক্র। ছোটো নাগরদোলার মতো দেখতে কাঠের তৈরি এই যন্ত্রের মাধ্যমে পশুশক্তির সাহায্যে কুয়ো বা খাল থেকে জল তোলা যেত। উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু কিছু অঞ্চলে এটি ব্যবহার হতো।

(iii) সেচ ব্যবস্থা: মধ্যযুগে ভারতে সেচব্যবস্থার উন্নতি হয়েছিল। এই সময় বড়ো বড়ো জলাধার তৈরি করে নালার মাধ্যমে জমিতে জল নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হতো। অন্য দিকে উত্তর এবং পূর্ব ভারতে ছোটো বড়ো নদীগুলি থেকে খালের মাধ্যমে জল সরাসরি পৌঁছে যেত চাষের জমিতে। এর ফলে কৃষির উন্নতি হয়েছিল।

কল্পনা করে লেখো (১০০-১৫০টি শব্দের মধ্যে)

(ক) রাজনীতি, জীবনযাপন এবং ধর্ম নিয়ে একজন সুহরাবর্দি সুফি সাধকদের সঙ্গে কবীরের কাল্পনিক সংলাপ লেখো।

উত্তর: কবিরের সঙ্গে সুহরাবর্দি সুফি সাধকের কাল্পনিক সংলাপ: স্থান: দিল্লি সময়কাল: সুলতানি আমল।

• সুহরাবর্দি সুফিসাধক: আমি সুহরাবর্দি সম্প্রদায়ভুক্ত একজন সুফিসাধক। আপনার সাথে রাজনীতি, জীবনযাপন এবং ধর্ম নিয়ে আলোচনা করার জন্য আপনার কাছে এসেছি।

• কবির: বলুন, কি জানতে চান?

• সুহরাবর্দি সুফিসাধক: আপনাদের মতো ভক্তিবাদী সাধকরা রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে চান না কেন?

• কবির: রাজনৈতিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ঈশ্বরের আরাধনা করার সময় পাবো না। মনের ভক্তিভাব হারিয়ে যাবে।

• সুহরাবর্দি সুফিসাধক: রাজ্য পরিচালনার কাজে যুক্ত হলে সুলতানের কাছ থেকে বিভিন্ন উপহার বা সাহায্য বা রাজ্যে ধর্মীয় উচ্চপদ লাভ করা যায়। তার ফলে অনেক আরামের জীবন আমরা কাটাতে পারি।

• কবির: জীবনযাপনের ব্যাপারে আপনাদের আদর্শ কি?

• সুহরাবর্দি সুফিসাধক: চিশতি সুফিসাধকদের মতো আমরা দরিদ্র জীবন গ্রহণকে সঠিক পথ বলে মনে করি না। আমরা

মনে করি, দারিদ্র্য ঈশ্বর চিন্তায় বিঘ্ন ঘটায়। যাই। ব্যাপারে আপনার মতামত কি? হোক,

• কবির: আমার বিশ্বাস, মানুষ ভক্তির মধ্যে দিয়েই সুন্দর খুঁজে পাবে। মূর্তিপূজা, গঙ্গাস্নান অর্থহীন। বা নামাজ পড়া আমার

সুহরাবর্দি সুফিসাধক: ঈশ্বর সম্পর্কে আপনার ধারণা।

• কবির : আমার ধারণায় সব ধর্মই এক, সব ঈশ্বরই অর্থাৎ রাম, হরি, গোবিন্দ, আল্লাহ, সাঁই, সাহিব এগুলি ঈশ্বরের বিভিন্ন নাম।

• সুহরাবর্দি সুফিসাধক: তাহলে মন্দির বা মসজিদ্দে প্রয়োজন?

• কবির: মন্দির বা মসজিদে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন তিলের মধ্যে যেমন তেল আছে, চকমকি পাথরের মধ্যে আগুন আছে, তেমনি ঈশ্বর আছেন সকলের মধ্যেই।

• সুহরাবর্দি সুফিসাধক: আপনি কিভাবে ভক্তিবাদের হ করেন?

• কবির : আমি হিন্দি ভাষায় দুই পঙক্তির কবিতা অর্থাৎ দো মাধ্যমে ভক্তিবাদের প্রচার চালাই।

সুহরাবর্দি সুফিসাধক : আপনার সঙ্গে আমি একমত। আং ভক্তি এবং পবিত্র মন নিয়ে ঈশ্বরকে ডাকলে তাঁর দেখা পাং যাবে। আল্লাহর দয়ায় আবার আমাদের দেখা হবে।

(গ) যদি তুমি মুঘল কারখানার একজন চিত্রশিল্পী হতে তায়া বাদশাহের সুনজরে পড়ার জন্য তুমি কী কী ছবি আঁকতে?

উত্তর: আমি মুঘল কারখানার একজন চিত্রশিল্পী। বাদশাহের সুনজরে পড়ার জন্য এবং চিত্রশিল্পী হিসেবে আমি সেই ছবিগুলি আঁকব যে ধরনের ছবি আমি ভালো আঁকতে পারি। মুঘল সম্রাটরা শিল্পের সমঝদার। সম্রাটকে আমি আমার শিল্পের প্রতি নিষ্ঠা, বিষয়বস্তুর গভীরতা ও রঙের বিচিত্র ব্যবহারে মুগ্ধ করার চেষ্টা করবো।

• ছবি আঁকার নানা দিক:

(i) দরবারি চিত্রকলা: গুজরাট সহ পশ্চিম ভারতের চিত্রশিল্পীরা দরবারি চিত্র এঁকে মুঘল দরবারে স্থান পেয়েছিলেন। আমিও সম্রাটদের খুশি করার জন্য মুঘল দরবারের সুন্দর সুন্দর কারুকার্যময় দৃশ্য আঁকব।

(ii) বইতে ছবি আঁকা বা অলংকরণ: বই বা পাণ্ডুলিপিতে রঙিন ছবি থাকলে দেখতে সুন্দর হয় এবং ছবি দিয়ে সহজে বিষয় বোঝানো যায়। এ ব্যাপারে মুঘল শাসকদেরও খুব উৎসাহ আছে। তাই আমি বই-এর বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিলিয়ে সুন্দর সুন্দর ছবি আঁকব।

(iii) অণুচিত্র অঙ্কন: মুঘল আমলে মিনিয়েচার বা অণুচিত্র আঁকার রেওয়াজ ছিল। সোনালি ও নানা উজ্জ্বল রঙের সাহায্যে আমিও অণুচিত্র আঁকব।

(iv) ইউরোপীয় পদ্ধতি অনুসরণ: ইউরোপীয় ছবি আঁকার রীতিনীতির ছাপ পড়েছিল মুঘল চিত্রশিল্পে। ছবিতে বাস্তবতা ও প্রকৃতিবাদের ছাপ স্পষ্ট হতে থাকে। ভারতের প্রকৃতি, উদ্ভিদ ও প্রাণী ছবির বিষয়বস্তু হয়ে উঠে আসে। আমিও ইউরোপীয় পদ্ধতি মেনে ছবি এঁকে মুঘল বাদশাহকে খুশি করার চেষ্টা করবো।

(v) প্রতিকৃতি অঙ্কন: মুঘল সম্রাটদের আমলে প্রতিকৃতি আঁকার উন্নতি হয়। আমিও মুঘল সম্রাটদের প্রতিকৃতি এঁকে তাঁদের সুনজরে আসার চেষ্টা করবো।

(ঘ) ধরো তুমিই আজ তোমার শ্রেণির শিক্ষক-শিক্ষিকা। তুমি বাংলা ভাষায় আরবি এবং ফারসি শব্দের ব্যবহার সম্বন্ধে পড়াচ্ছ। রোজকার বাংলা কথাবার্তায় ব্যবহৃত আরবি-ফারসি শব্দে একটি তালিকা তুমি ছাত্র-ছাত্রীদের দিতে চাও। এমন একটি তালিকা তুমি তৈরি করো। দরকারে একটি বাংলা অভিধানের সাহায্য নাও।

উত্তর:আমি একজন শিক্ষিকা। আজ আমি ছাত্রীদের বাংলা ভাষায় আরবি এবং ফারসি শব্দের ব্যবহার সম্বন্ধে পড়াব। আমরা প্রতিদিন যে বাংলা ভাষায় কথা বলি তার মধ্যে অনেক আরবি এবং ফারসি শব্দ ব্যবহার করি। যেমন-তোমরা সবাই খাতা ও কলম নিয়ে ক্লাস করছো। এর মধ্যে খাতা হলো ফারসি, শব্দ এবং কলম হলো আরবি শব্দ। এইভাবে আমরা প্রতিদিনের বাংলা ভাষায় কথাবার্তার মধ্যে যে আরবি এবং ফারসি শব্দ ব্যবহার করি তার একটি তালিকা তৈরি করব।

• আরবি-আরব দেশের ভাষা।

• ফারসি-পারস্য দেশের ভাষা।

আরবি শব্দ

1. আদালত 2. আদায় 3. আসবাব 5. আসাম 6. আমি 7. ইজারা 4. আফগান ৪. ইনাম 9. ইনসান

10. উকিল 11. কবর 12. কলম 13. কানুন 14. কফিন 15. কাজি 16. কৈফিয়ৎ 17. কোরান 18. কিতাব 19. খলিফা

20. খেতাব 21. জেলা/জিলা 22. তবলা 23. তাজমহল 24. দালাল 25. দরখাস্ত 26. দখল 27. নবাব 28. নগদ

29. বাতিল

30. বিদায় 31. কফি 32. হিসাব 33. হিসাব 34. হুকুম 35. হামলাফারসি শব্দ

1. আওয়াজ 2. আন্দাজ 3. আবহাওয়া 4. আমদানি 5. আরাম 6. আস্তে 9. কাগজ 10. কামাই 7. আয়না 11. কামান

৪. ওস্তাদ 12. কারখানা 13. খরচ

14. খাতা 15. খাম 16. খুব 17. গরম 18. গোলাপ 19. গোয়েন্দা 20. গ্রেফতার 21. চশমা 22. চাকরি

23. চাদর 24. চাঁদা 25. জায়গা 26. দরজা 27. দোকান 28. পর্দা 29. পরোয়ানা 30. বাজার 31. বাগান

32. রাস্তা 33 রোজ 34. মিনার 35. মোহর

Ture And False

২.১ কৃষিপণ্যকে ভিত্তি করে গ্রামে কারিগরী শিল্প থাকত।

উত্তর: ঠিক।

২.২ সুলতানি ও মুঘল যুগে সমাজ ছিল পরিবারভিত্তিক।

উত্তর: ঠিক।

২.৩ মধ্যযুগে বাংলায় বাঁটুল ছোঁড়া নামে এক ধরনের খেলার প্র ছিল।

উত্তর: ঠিক।

২.৪ মধ্যযুগে ভারতের জীবনযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল উচ

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: মধ্যযুগে ভারতে জীবনযাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গা ধর্ম।

২.৫ ভক্তিবাদের মূলে ছিল ভগবানের প্রতি ভালোবাসা বা জাদ

উত্তর: ঠিক।

২.৬ মীরাবাঈ রচিত একশোরও বেশি ভক্তিগীতি ভারতীয় সাধ এবং সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: মীরাবাঈ রচিত পাঁচশোরও বেশি ভক্তিগীতি ভার? সংগীত এবং সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ।

২.৭ কবীর ছিলেন গুরু নানকের একজন শিষ্য।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: কবীর ছিলেন রামানন্দের একজন শিষ্য।

২.৮ সুফি ধারায় গুরুকে বলা হয় ‘মুরিদ’। (নাকতলা হাইস্কু

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: সুফি ধারায় শিষ্যকে বলা হয় ‘মুরিদ’।

২.৯ চৈতন্যদেব বৈয়বীয় নাটক অভিনয়ের উদ্যোগ নেন।

উত্তর: ঠিক।

২.১০ শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ছিলেন একেশ্বরবাদী এবং শিবের উপাসক

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: শ্রীমন্ত শঙ্করদেব ছিলেন একেশ্বরবাদী এবং কয়ে উপাসক।

২.১১ আকবর কখনও ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেননি।

উত্তর: ঠিক।

২.১২ দীন-ই-ইলাহির প্রথাগুলি ইসলামের রক্ষণশীল ব্যাখ্যাবাদের কা ছিল খুবই জনপ্রিয়।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: দীন-ই-ইলাহির প্রথাগুলি ইসলামের রক্ষণশীল ব্যাখ্যাকারদের কাছে ছিল ইসলামবিরোধী।

২.১৩ ভারতীয় ও ইসলামীয় শিল্পধারা মিশে তৈরি হয় ইন্দো-ইসলামীয় শিল্পরীতি।

উত্তর: ঠিক।

২.১৪ কুতুবমিনার, গিয়াসউদ্দিন তুঘলকের সমাধি, আলাই দরওয়াজা -সব মিলিয়ে কুতুব চত্বর হয়ে উঠেছিল সুলতানি স্থাপত্যের নজির।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: কুতুবমিনার, ইলতুৎমিসের সমাধি, আলাই-দরওয়াজা- সব মিলিয়ে কুতুব-চত্বর হয়ে উঠল সুলতানি স্থাপত্যের নজির।

২.১৫ দাক্ষিণাত্যে ঔরঙ্গাবাদে ঔরঙ্গজেব তাঁর বেগমের স্মৃতিতে নির্মাণ করেন বিবি-কা মকবারা।

উত্তর: ঠিক।

২.১৬ বিজাপুরের চাঁদ বিবির প্রাসাদ একটি টিলার উপর আটকোণা ভিত্তির উপর নির্মিত।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: আহমেদনগরের চাঁদ বিবির প্রাসাদ একটি টিলার উপর আটকোণা ভিত্তির উপর নির্মিত।

২.১৭ ইমারতের ইটের ব্যবহার বাংলার স্থাপত্যরীতির একটি বৈশিষ্ট্য। (পুরুলিয়া জেলা স্কুল)

উত্তর: ঠিক।

২.১৮ অঞ্চলের নামেই স্থাপত্যরীতির নাম হওয়ার একটি উদাহরণ হল জোড়-বাংলা।

উত্তর: ঠিক।

২.১৯ ফিরোজ মিনার লাল ও নীল রং-এর চকচকে টালি দিয়ে অলংকৃত।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: ফিরোজ মিনার সাদা ও নীল রং-এর চকচকে টালি দিয়ে অলংকৃত।

২.২০ মুঘলযুগে বাইরের শিল্পীদের দিয়ে অন্দরমহলের মহিলাদের ছবি আঁকানোর প্রচলন ছিল।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: মুঘল যুগে বাইরের শিল্পীদের দিয়ে অন্দরমহলের মহিলাদের ছবি আঁকানোর প্রচলন ছিল না।

২.২১ বৈষুব পদাবলির ভিত্তিতে রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে রাসলীলাগুলি তৈরি করা হয়।

উত্তর: ঠিক।

২.২২ গুলবদন বেগমের লেখা ‘হুমায়ুননামা’ আরবি ভাষার লেখা একটি বিখ্যাত গ্রন্থ।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: গুলবদন বেগমের লেখা ‘হুমায়ুননামা’ ফারসি ভাষায় লেখা একটি বিখ্যাত গ্রন্থ।

২.২৩ চন্ডী, মনসা, ধর্ম প্রভৃতি দেবী-দেবতা সমাজের নীচু তলার মানুষের পুজো পেতেন।

উত্তর: ঠিক।

২.২৪ মধ্যযুগে বিজ্ঞানে উন্নতির বহু তথ্য অল বিরুনির কিতাব-অল হিন্দ-এ পাওয়া যায়।

উত্তর: ঠিক।

২.২৫ খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভারতে কাগজ তৈরি করার প্রযুক্তি চিন থেকে প্রথম নিয়ে আসে মধ্য এশিয়ার মোঙ্গলরা।

উত্তর: ঠিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *