Class 8 Chapter 7 Solution
মানুষের কার্যাবলি ও পরিবেশের অবনমন
MCQs
1. মৎস্য শিকার হল-
(a) প্রকৃতিনির্ভর (b) প্রযুক্তিনির্ভর
(c) সেবামূলক (d) শিক্ষামূলক কাজ
উত্তর: (a) প্রকৃতিনির্ভর।
2. আর্থ সামিট বা বসুন্ধরা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়-
(a) 1975 সালে (b) 1984 সালে
(c) 1992 সালে (d) 2002 সালে
উত্তর: (d) 1992 সালে
3. জীববৈচিত্র্যের হ্রাস ঘটলে-
(a) পরিবেশদূষণ (b) পরিবেশের অবনমন হয়
(c) পরিবেশ গঠন (d) পরিবেশ ধ্বংস হয়
উত্তর: (b) পরিবেশের অবনমন হয়।
4. ইউরোপ মহাদেশে শিল্পবিপ্লব ঘটেছিল-
(a) পঞ্চদশ শতকে (b) ষোড়শ শতকে
(c) সপ্তদশ শতকে (d) অষ্টাদশ শতকে
উত্তর: (d) অষ্টাদশ শতকে।
5. পৃথিবীর সর্বাধিক দূষিত শহরের সংখ্যা ভারতে আছে-
(a) 9টি (b) 13টি
(c) 15টি (d) 18টি
উত্তর: (b) 13টি।
6. চিপকো আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল-
(a) অন্ধ্রপ্রদেশে (b) মহারাষ্ট্রে
(c) রাজস্থানে (d) উত্তরাখণ্ডে
উত্তর: (d) উত্তরাখণ্ডে।
7. নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন-
(a) সুন্দরলাল বহুগুণা (b) মেধা পাটেকর
(c) বাবা আমতে (d) পান্ডুরাম হেগড়ে
উত্তর: (b) মেধা পাটেকর।
8. World Health Day পালিত হয়-
(a) 15 মার্চ (b) 7 এপ্রিল
(c) 1 মে (d) 5 জুন
উত্তর: (b) 7 এপ্রিল।
9. ভারতে সবুজ বিপ্লব ঘটেছিল-
(a) পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশায় (b) বিহার-ঝাড়খণ্ডে
(c) পাঞ্জাব-হরিয়ানায় (d) উত্তরপ্রদেশ-মধ্যপ্রদেশে।
উত্তর: (c) পাঞ্জাব-হরিয়ানায়।
10. পরিবেশ বিষয়ক একটি আন্দোলন হল-
(a) চিপকো আন্দোলন (b) আর্থ সামিট
(c) আপিকো আন্দোলন (d) সবুজ বিপ্লব
উত্তর: (b) আর্থ সামিট।
11. WHO-এর সদর দপ্তর অবস্থিত-
(a) প্যারিস (b) ওয়াশিংটন
(c) রোম (d) জেনেভা শহরে।
উত্তর: (d) জেনেভা শহরে।
12. ভোপালের গ্যাস দুর্ঘটনার প্রাণঘাতী গ্যাসটি ছিল-
(a) কার্বন মনোক্সাইড (b) পটাশিয়াম সায়ানাইড
(c) মিথাইল আইসোসায়ানেট (d) কার্বন ডাইঅক্সাইড
উত্তর: (d) মিথাইল আইসোসায়ানেট।
13. সুন্দরলাল বহুগুণা-
(a) নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন (b) চিপকো আন্দোলন
(c) গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (d) সবগুলির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন
উত্তর: (b) চিপকো আন্দোলন।
Very Short Question Answer
1. ‘আর্থ সামিট’ কোন্ দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তর: ব্রাজিলে।
2. পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ও পরমাণু বিস্ফোরণ কোথায় হয়েছিল?
উত্তর: চের্নোবিল শহরে।
3. পরিবেশ অবনমনের একটি প্রাকৃতিক কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর: ভূমিকম্প।
4. পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘গ্রিন হাউস গ্যাস’ কোন্ দেশ থেকে নির্গত হয়?
উত্তর: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।
5. ভৌমজল প্রধানত কীসের দ্বারা দূষিত হয়?
উত্তর: আর্সেনিক।
6. একটি প্রকৃতি নির্ভর কাজের নাম বলো।
উত্তর: বনজসম্পদ সংগ্রহ।
7. ‘চিপকো’ কথার অর্থ কী?
উত্তর: জড়িয়ে ধরা।
৪. একটি অচিরাচরিত বা পরিবেশবান্ধব শক্তির উদাহরণ দাও।
উত্তর: সৌরশক্তি।
9. কত সালে Ganga Action Plan এর সূচনা হয়?
উত্তর : 1986 সালে।
10. আপিক্কো বা চিপকো আন্দোলনের ন্যায় Arrey আন্দোলন সাম্প্রতিককালে কোন্ রাজ্যে সফল হয়েছে?
উত্তর: মহারাষ্ট্র।
11. ভারতের কোন্ রাজ্যে সাইলেন্ট ভ্যালি আন্দোলন ঘটেছিল।
উত্তর: কেরল।
12. কত সালে চিপকো আন্দোলন হয়? (লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ)
উত্তর: 1973 সালে।
13. কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, বায়ুশক্তি।
উত্তর: বায়ুশক্তি।
14. টর্নেডো, সাইক্লোন, ফাইলিন, সুনামি।
উত্তর: সুনামি।
15. ভোপাল, জেনেভা, রোম, ব্রাসিলিয়া।
উত্তর: ভোপাল।
16. জলদূষণ, শব্দদূষণ, মৃত্তিকা দূষণ, বায়ুদূষণ।
উত্তর: শব্দদূষণ।
17. চেরনোবিল, ফুকুসিমা, সাইলেন্ট ভ্যালি, মিনামাটা।
উত্তর: সাইলেন্ট ভ্যালি।
18. আমি একপ্রকার বৃষ্টিপাত, যা মার্বেল পাথরের অট্টালিকা ক্ষয় করে দিতে পারি। আমি কে?
উত্তর: অ্যাসিড বৃষ্টি।
20. আমি একপ্রকার উন্নয়ন পদ্ধতি, যা ভবিষ্যতে প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখি। কে আমি?
উত্তর: স্থিতিশীল উন্নয়ন।
21. আমি মাটির সঙ্গে মিশে যেতে পারি না, সেজন্য ভূমিদূষণ করতে বাধ্য হই। কে আমি?
উত্তর: প্লাস্টিক।
22. আমি একটি সংস্থা, বিশ্বের মানবজাতির শরীর ও স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি। কে আমি?
উত্তর: WHO।
23. আমাকে সংহার করলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয় ও অক্সিজেনের অভাব হয়। আমি কে?
উত্তর: স্বাভাবিক উদ্ভিদ।
Short Question Answer
প্রশ্ন 1: পরিবেশের অবনমন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: সামগ্রিকভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুণগত মান হ্রাস পাওয়াকে পরিবেশের অবনমন বলা হয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনাবলি যেমন-ভূমিকম্প, ভূমিধস, সুনামি, অগ্ন্যুৎপাত, ঘূর্ণিঝড় এবং মানুষের নানান ধরনের অর্থনৈতিক কাজকর্ম যথা-নগরায়ণ, শিল্পায়ন, নদীতে বাঁধ নির্মাণ, রাস্তা তৈরি প্রভৃতির কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের স্বাভাবিক গুণগত মানের হ্রাস ঘটে বা জীবের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশের বিনষ্ট করে পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট করে পরিবেশের অবনমন ঘটায় ও জীববৈচিত্র্য হ্রাস করে।
প্রশ্ন 2: হোমিওস্ট্যাটিক ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন ভৌত ও জৈব প্রক্রিয়াগুলি কার্যাবলীতে প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো অংশের ক্ষতি বা পরিবর্তন হলে তা নিজে থেকেই পূরণ হয়ে যায়। একে হোমিওস্ট্যাটিক ব্যবস্থা বলা হয়।
প্রশ্ন 3: বিশ্ব উন্নায়ন (Global Warming) কাকে বলে?
উত্তর: বর্তমানে পৃথিবীতে মানুষের নানান ধরনের দায়িত্ববোধহীন কার্যকলাপ এবং বিজ্ঞানের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের ফলে বায়ুমণ্ডলে ‘গ্রিন হাউস গ্যাসসমূহের’ (যেমন-CO₂, CH CFC, N₂O, O2, CO, SO₂, NH, প্রভৃতি) মাত্রাতিরিক্তভাবে পরিমাণ ও ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর গড় উয়তা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পৃথিবী ক্রমশ উদ্বুতর ঘটনাকে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উন্নায়ন বলে অভিহিত করেছেন। উন্নায়নের প্রভাবের ফলে হিমবাহ গলন, খরার প্রকোপ বৃদ্ধি, খামখেয়ালি বৃষ্টিপাত ইত্যাদি ঘটে।
প্রশ্ন 4 : ‘স্থিতিশীল উন্নয়ন’ (Sustainable Development) বলতে কী বোঝো?
উত্তর: স্থিতিশীল উন্নয়নের আক্ষরিক অর্থ হল ‘ধীরগতির উন্নয়ন’। যে পদ্ধতির মাধ্যমে বর্তমানে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার ও উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যৎ মানবসমাজের উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত রাখা এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়নকে দীর্ঘস্থায়ী করাকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলা হয়।
প্রশ্ন 5: অ্যাসিড বৃষ্টি (Acid Rain) কীভাবে হয়?
উত্তর: বায়ুতে ভাসমান হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড, নাইট্রিক অ্যাসিড ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসীয় পদার্থের সঙ্গে শিশির, কুয়াশা, তুষার ও বৃষ্টির জল মিশে যে রাসায়নিক পদার্থের অধঃক্ষেপণ হয়, তাকে অম্ল বৃষ্টি বা অ্যাসিড বৃষ্টি বলে। এই অ্যাসিড বৃষ্টির প্রভাবে চুনাপাথর ও শ্বেতপাথরের তৈরি স্ট্যাচু ও স্মৃতিসৌধগুলির ব্যাপক ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীজগৎ ও উদ্ভিদজগৎ-এর ব্যাপক ক্ষতি হয়।
প্রশ্ন 6: G-20 বলতে কী বোঝো?
উত্তর: 2003 খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীর 20টি উন্নয়নশীল দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের, রাষ্ট্রপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় G-20 বা Group-201 G-20-এর সদস্যভুক্ত দেশগুলির উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রসার এবং নিজেদের উদ্দেশ্য পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো। বর্তমানে এর 23টি দেশের মধ্যে ভারত অন্যতম।
প্রশ্ন 7: ঝুমচাষ কী?
উত্তর: প্রাচীন অবৈজ্ঞানিক কৃষিব্যবস্থা। পার্বত্য অঞ্চলে উপজাতি ও যাযাবর শ্রেণির মানুষরা বন কেটে ও জঙ্গল পুড়িয়ে সেখানে কয়েক বছর একটানা যে কৃষিকাজ করে, তাকে ঝুমচাষ বলে। উল্লেখ্য, এই প্রাচীন অবৈজ্ঞানিক কৃষি ব্যবস্থা করে ও সেখানকার মাটির উর্বরতা হ্রাস ও ভূমিক্ষয় ঘটায় এই কৃষিকে স্থানান্তর কৃষি বলে। উত্তর-পূর্ব ভারতে এই কৃষি প্রচলিত হলেও বর্তমানে নিষিদ্ধ।
প্রশ্ন ৪ : আর্থ সামিট (Earth Summit) কী?
উত্তর: 1992 সালের 3-14 জুন রাষ্ট্রসংঘের (UNO) ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে পরিবেশদূষণ ও অবনমন প্রতিরোধ করার জন্য সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলন বা বসুন্ধরা সম্মেলন (Earth Summit) অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারতসহ 178 টি দেশ এবং প্রায় 1400 বেসরকারি সংগঠনের (NGO) প্রায় 30 হাজারের বেশি প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন 9: E-Waste কী?
উত্তর: E-Waste শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল ‘Electronic Waste’। বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, যেমন-মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মাইক্রোওভেন, রেফ্রিজারেটর, ব্যাটারি ও রিমোটচালিত খেলনা প্রভৃতি যন্ত্রপাতির ভাঙা ও অকেজো বর্জ্যপদার্থসমূহকে E-Waste বলা হয়।
প্রশ্ন 10: গ্রিন পিস আন্দোলন কী? এর উদ্দেশ্যগুলি কী কী?
উত্তর: 1971 খ্রিস্টাব্দে নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডাম শহরে পরিবেশ সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের ব্যাপারে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হয়, যা সংক্ষেপে গ্রিন পিস বা Green Peace International নামে বিশ্ববিখ্যাত। সমগ্র পৃথিবীর 150 টি দেশ এবং প্রায় 50 লক্ষ স্বেচ্ছাসেবক এই সংস্থার সদস্য। গ্রিন পিস সংস্থার মূল উদ্দেশ্যগুলি ছিল-(i) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, (ii) পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধ করা, (iii) পরিবেশ সুরক্ষার জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন,প্র (iv) পরিবেশ অবনমনের কারণ অনুসন্ধান করা, (v) পরিবেশ দূষণ রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য জনসচেতনা বৃদ্ধি করা, (vi) পুকুর বা জলাশয় ভরাটকরণ বন্ধ করা। (vil) বড়ো বড়ো বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করা ইত্যাদি।
প্রশ্ন 11: পরিবেশ অবনমনের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয় প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থাকে ধ্বংস করে থাকে। সেগুলি হল-(i) অগ্ন্যুৎপাত, (ii) ঘূর্ণিঝড়, (iii) অতিবৃষ্টি, (iv) খরা, (v) প্রভৃতি। ধস, (vi) সুনামি, (vii) দাবানল, (viii) ভূমিকম্প
প্রশ্ন 12: পরিবেশ অবনমনের ক্ষেত্রে মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি লেখো। (লবণ হ্রদ বিদ্যাপীঠ)
উত্তর: বর্তমানে পৃথিবীতে পরিবেশ অবনমনের ক্ষেত্রে মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সেগুলি হল-(i) জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি, (ii) অপরিকল্পিত নগরায়ণ, (iii) জীবাশ্ম জ্বালানির (খনিজ তেল ও কয়লা) মাত্রা বৃদ্ধি, (iv) কৃষিজমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, (v) পুকুর ও জলাশয় ভরাট করা, (vi) সামরিক অস্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যুদ্ধবিগ্রহ, (vii) অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিজ ফসল উৎপাদন, (viii) বাড়ির বর্জ্য পদার্থসমূহ যত্রতত্র নিক্ষেপ, এবং প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি, (ix) নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন, (x) শিল্প ও কলকারখানা থেকে নির্গত গরম জল ও বর্জ্য নদীতে নিষ্কাশন, (xi) নর্দমা ও পয়ঃপ্রণালী নিয়মিত পরিষ্কার না করা, (xii) বাঁধ নির্মাণ ও জলাধার তৈরি করা, (xiii) মাত্রাতিরিক্ত খনিজ সম্পদ, উত্তোলন, (xiv) অম্লবৃষ্টি প্রভৃতি।
প্রশ্ন 13: পরিবেশ অবনমনের তিনটি ফলাফল উল্লেখ করো। (বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাই স্কুল)
অথবা: পরিবেশের অবনমনের ফলে কী হয়? (পান্নালাল ইনস্টিটিউশন)
উত্তর: পরিবেশ অবনমনের ফলে- (i) জল, বায়ুর মাটির মতো প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারযোগ্যতা নষ্ট হয়। (ii) বিভিন্ন রোগ, যেমন- ডায়ারিয়া, শ্বাসকষ্ট, বধিরতা ইত্যাদি ছড়ায়। (iii) মানুষের তথা প্রাণীকুলের স্বাস্থ্যহানি ঘটা ও জীববৈচিত্র্যের হ্রাস।
প্রশ্ন 14: চেরনোবিল দুর্ঘটনা (Chernobyl Disaster) সম্পর্কে কী জানো?
উত্তর: 1986 সালের 26 এপ্রিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত ইউক্রেনের চেরনোবিল শহরের পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের বিস্ফোরণ পৃথিবীর বৃহত্তম ও ভয়ঙ্করতম পারমাণবিক বিস্ফোরণ।
তেজস্ক্রিয় পদার্থের পরীক্ষাগারে ভয়াবহ বিস্ফোরণের প্রভাবে পার্শ্ববর্তী প্রায় 3000 বর্গকিমি এলাকা সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়। তেজস্ক্রিয় গ্যাসকে কঠিন বস্তুকণা ও ছাই বহুদূর পর্যন্ত বায়ু, মৃত্তিকা ও জলকে দূষিত করে।
এই দুর্ঘটনার প্রভাবে 31 জন মানুষের মৃত্যু হয় ও 209 জন কর্মী আহত হন। 10 কোটি মানুষকে পুনর্বাসন করতে হয়।
প্রশ্ন 15: ফুকুসিমা রাসায়নিক দুর্ঘটনা সম্পর্কে আলোকপাত করো।
উত্তর: 2011 সালের 11 মার্চ জাপানের রাজধানী টোকিও শহরে যে শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিল, তার প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগর সৃষ্ট ‘সুনামির’ আঘাতে ফুকুসিমার পারমাণবিক চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এই বিস্ফোরণের প্রভাবে ফুকুসিমা ও তার পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ, প্রাণীকূল তথা জৈববৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় 3 লক্ষ মানুষ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
প্রশ্ন 16: স্থিতিশীল উন্নয়নের উদ্দেশ্যগুলি লিপিবদ্ধ করো।
উত্তর: বুন্টল্যান্ড কমিশনের মতে, স্থিতিশীল উন্নয়নের মূল উদ্দেশ্যগুলি হল-(i) মানুষের প্রাথমিক চাহিদা (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান) পূরণ করা ও শিক্ষার প্রসার ঘটানো। (ii) জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা। (iii) অর্থনৈতিক বুনিয়াদ দৃঢ় করাও উন্নতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করা। (iv) অপ্রচলিত শক্তির (সূর্য তাপ, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, জোয়ারভাটা প্রভৃতি) ব্যবহার বৃদ্ধি করা। (v) দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ। (vi) বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করা ও বনসৃজন করা। (vii) শান্তি ও সৌজন্য প্রতিষ্ঠা। (viii) মৃত্তিকা ও ভূমির পরিকল্পনা মাফিক ব্যবহার এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার হ্রাস করা। (ix) বিজ্ঞানসম্মতভাবে দূষণহীন পরিবেশ গড়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা।
প্রশ্ন 17: গঙ্গার জলকে দূষণমুক্ত করার জন্য তোমাকে দায়িত্ব দেওয়া হলে তুমি গ্রহণ করতে এমন তিনটি ব্যবস্থার একটি তালিকা তৈরি করো।
উত্তর: গঙ্গার জলকে দূষণমুক্ত করার জন্য- (i) নদীতে আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধকরণ। (ii) শহরের দূষিত নোংরা জলকে পরিশ্রুত করে গঙ্গায় ফেলা। (iii) গঙ্গাকে পরিষ্কার রাখার জন্য সরকারি বা বেসরকারিভাবে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
প্রশ্ন: 18. পরিবেশ দূষণ পরিবেশ অবনমনকে ত্বরান্বিত করে ব্যাখ্যা করো। (মাল্টিপারপাস গভঃ গার্লস হাইস্কুল, আলিপুর)
উত্তর: পরিবেশ দূষণ পরিবেশ অবনমনকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে, কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা যায়।
(i) কারখানার থেকে জলাশয়ে বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপের ফলে সৃষ্ট জলদূষণের প্রভাবে মাছের মৃত্যু ও স্থানীয় মানুষের শরীরে রোগ সৃষ্টি করে।
(ii) মাঠে প্লাস্টিক ফেলে মাটি দূষণের মাধ্যমে মাটিতে জন্মানো ফসলের বিষক্রিয়াতে মানুষের দেহে রোগ সৃষ্টি করে।
(iii) হিরোশিমা নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের ফলে জল, বায়ু, মাটি, শব্দ সব কিছুরই দূষণে ফলে বহু মানুষের
সঙ্গে সঙ্গে মারা যাওয়া ও তেজস্ক্রিয় রশ্মির প্রভাবে বিভিন্ন অসুস্থ, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম নেওয়ার ঘটনাও পরিবেশ দূষণে পরিবেশের অবনমন ঘটায়।
Long Question Answer
প্রশ্ন 1: উদাহরণ দিয়ে পরিবেশ দূষণ আর পরিবেশ অবনমনের পার্থক্য বুঝিয়ে দাও। (পর্ষদ নমুনা)
উত্তর: পরিবেশ দূষণ আর পরিবেশ অবনমন খুবই সংযুক্ত দুটি বিষয়। কিন্তু এক নয়।
প্রকৃতপক্ষে পরিবেশের কোনো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বা বিষয়ে যদি বিষাক্ত পদার্থের সংযোগের ঘটনাকে বলা হয় পরিবেশ দূষণ। আর পরিবেশের সামগ্রিক গুণমানের হ্রাসকে বলা হয় পরিবেশ অবনমন। যেমন, শহরে কারখানার ধোঁয়া বায়ু দূষিত করে। আবর্জনায় মাটি ও জল নোংরা করার ঘটনা পরিবেশ দূষণ। বায়ুর দূষণ মানুষের শ্বাসকষ্ট এবং জল ও মাটিতে অনেক প্রাণীর মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের আন্ত্রিক, ডায়ারিয়া পরিবেশের অবনমন হল।
কাজেই দুটো এক বিষয় নয়। অর্থাৎ পরিবেশ দূষণ খুব বেশি মাত্রায় হতে থাকলে পরিবেশ অবনমন হয়।
প্রশ্ন 2: পরিবেশের অবক্ষয় রোধের উপায়গুলি আলোচনা করো। অথবা, পরিবেশের অবনমন নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি লেখো।
উত্তর: বর্তমান পৃথিবীতে যতই আধুনিক সভ্যতার বিকাশ ঘটছে, ততই প্রাকৃতিক পরিবেশের অবক্ষয় বা গুণগত মান হ্রাস পাচ্ছে। ফলে সমগ্র জীবজগৎসহ অত্যাধুনিক মানবসভ্যতা এক চরম সংকটময় পরিস্থিতির সামনে উপস্থিত হয়েছে। সেজন্য পরিবেশের অবক্ষয় বা অবনমন রক্ষা করার উপায়গুলি হল-(i) জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা। জনসংখ ্যা ও প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা। (ii) শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটিয়ে জনসাধারণকে বাস্তবমুখী করা। (iii) সরকারি ও বেসরকারি প্রচার মাধ্যমের মধ্য দিয়ে জনগণকে আত্মসচেতন ও পরিবেশপ্রেমী করে তুলতে হবে। (iv) নগরায়ণ ও শিল্পায়নের হার কমানো ও পরিকল্পনা রূপায়ণ করা। (v) কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস ও জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। (vi) অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও তৃণ, মৎস্য, সূর্যরশ্মি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ শক্তি, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতির ব্যবহার বাড়াতে হবে। (vii) জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, খনিজ তেল) ব্যবহার হ্রাস এবং অপুনর্ভব সম্পদের পরিকল্পনামাফিক ব্যবহার করা। (viii) অরণ্যের বৃক্ষচ্ছেদন বন্ধ করে বনসৃজনের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। (ix) প্রতিটি জনগণের জন্য সুষম খাদ্য সুনিশ্চিত করা এবং দারিদ্র্যমুক্ত করে তোলা। (x) বৃহদাকার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের সময় প্রাকৃতিক পরিবেশের সুরক্ষার দিকে বিশেষ গুরুত্ব করে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে। (xi) উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৃত্তিকা ও ভূমিকে ব্যবহার করে প্রকৃতিকে রক্ষা করাও বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস রোধ করা। (xii) পরিবেশের অবক্ষয় রোধ করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কঠোর সরকারি আইন প্রণয়ন করতে হবে।
প্রশ্ন 3: বহুমুখী নদী পরিকল্পনা কীভাবে পরিবেশের অবনমন ঘটাতে পারে, তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: যে পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে নদীতে বাঁধ দিয়ে জল আটকে সেখান থেকে নানা উদ্দশ্যে যেমন জলবিদ্যুৎ উৎপাদন, জলসেচ, মৎস্যচাষ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ভূমিক্ষয় রোধ, নৌপরিবহণ, পানীয় জল সরবরাহ প্রভৃতি জনহিতকর কাজগুলি সুসম্পন্ন করা হয় তাকে বহুমুখী নদী পরিকল্পনা বলে।। কিন্তু এই পরিকল্পনা রূপায়ণের সময় প্রাকৃতিক পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়, সেগুলি হল-
(i) স্বাভাবিক উদ্ভিদ ধ্বংস: বাঁধ নির্মাণ স্থলের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তৃণভূমি, আগাছা ঝোপঝাড়পূর্ণ ভূমি নষ্ট হয়ে যায় ও বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধ পায়।
(ii) বাস্তুতন্ত্র ও জীবের আশ্রয়স্থল ধ্বংস: তৃণভূমির মধ্যে গড়ে ওঠা স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র ও খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট হয়। এছাড়া বড়ো বড়ো বৃক্ষের শাখায় বসবাসকারী প্রাণীর আশ্রয়স্থল ধ্বংস হয়ে যায়।
(iii) শিলাস্তরে ফাটল ও ভূমিসমতা: বাঁধ নির্মাণের পর বিশাল জলাধারের চাপে জলাধারের নীচের ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শিলাস্তরে ফাটল সৃষ্টি হলে এবং ধসের সম্ভাবনা বাড়ায় এবং জলাধারের প্রবল চাপে স্থানীয়ভাবে ভূমিকম্প ও ভূমিধস দেখা যায়।
(iv) নদীর নাব্যতা হ্রাস: জলাধারের পিছনের দিকে জলের প্রবাহ প্রায় স্থির হওয়ায় নদীতে পলি সঞ্চয়ে নদীর নাব্যতা হ্রাস পায়।
(v) জমিতে লবণতা বৃদ্ধি: জলাধার থেকে প্রাপ্ত জল নিয়ে ক্রমান্বয়ে জলসেচের প্রয়োগ কৃষিক্ষেত্রে লবণতার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও উয়তা হ্রাস পায়। ফলে কৃষিজ ফসলের উৎপাদন ও গুণগত মানও হ্রাস পায়।
(vi) রোগের প্রাদুর্ভাব: জলাধার থেকে জল চুঁইয়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের গর্তে সারাবছর জমাটবদ্ধ জলে মশার বংশবিস্তার হয় এবং। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়ার মতো প্রাণঘাতী জ্বরের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।
(vii) জীববৈচিত্র্য ধ্বংস: জলাধারের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বনভূমি ধ্বংস হওয়ার কারণে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়।
(viii) বাস্তুচ্যুত: নদীতে বাঁধ নির্মাণ করে জলাধার তৈরির সময় নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষের বসতবাড়ি ও জমির ব্যাপক ক্ষতিতে বহু মানুষ কর্মহীন ও বাস্তুচ্যুত হয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন-3: ‘গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান’ কী?
উত্তর: 14 জুন, 1986 খ্রিস্টাব্দে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচি অনুসারে প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে গঙ্গার জলদূষণ প্রতিরোধ করার জন্য ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী রাজীব গান্ধি মহাশয় ‘গঙ্গা উন্নয়ন প্রকল্পের’ (‘Ganga Action Plan’ বা GAP) শুভ সূচনা করেছিলেন। ভারতের অন্যতম পবিত্র নদী, জাতীয় সম্পদ। ভারতের দীর্ঘতম নদী গঙ্গার জলকে দূষণমুক্ত করতে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী শহরে এই পরিকল্পনার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়।
এই প্রকল্পের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি হল- (i) শহরের দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত জল ও শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য পদার্থ সরাসরি গঙ্গায় ফেলা বন্ধ করতে হবে। (ii) দূষিত জল দূষণমুক্ত করে গঙ্গায় ফেলতে হবে। (iii) গঙ্গার ভাঙন রোধে পাড় বাঁধানো এবং গঙ্গার স্নানঘাট সংস্কার ও সৌন্দর্যায়ন বৃদ্ধি করা। (iv) শিল্পাঞ্চলের দূষণ প্রতিরোধ করা ও গঙ্গার নাব্যতা বৃদ্ধি করতে। সুলভ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শৌচাগার নির্মাণ এবং গঙ্গার তীরের শ্মশানঘাটগুলিতে বৈদ্যুতিক চুল্লির ব্যবস্থা করা। (v) গঙ্গার জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা। (vi) দূষণ প্রতিরোধের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং GAP-এর কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করা প্রভৃতি।
প্রশ্ন-4: ওপরের ছবিগুলি দেখে তোমার মনে কী প্রতিক্রিয়া হচ্ছে? মানুষের কী কী কাজের ফলে এগুলি ঘটে? আলোচনা করে লেখো।
উত্তর: (i) ভূমিকম্প: পারমাণবিক বোমার পরীক্ষানিরীক্ষা, ডিনামাইট দ্বারা পাহাড় ফাটিয়ে রাস্তা তৈরি, খনিজ পদার্থ উত্তোলন, বাঁধ নির্মাণ করে জলাধার তৈরি করার জন্য ভূমিকম্প হয়।
(ii) জলদূষণ ও জলাভাব : কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার, গৃহস্থালির আবর্জনা নিক্ষেপ, শিল্প ও কলকারখানার দূষিত জল জলাশয়ে মিশে জলদূষণ ঘটায়। বৃষ্টির হ্রাস জলাভাব সৃষ্টি করে।
(iii) জীববৈচিত্র্য হ্রাস: সামগ্রিকভাবে পরিবেশ দূষণে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে। জলাশয় ভরাট ও বনভূমি ধ্বংসের কারণে জীব-সম্প্রদায় বিপন্ন ও অবলুপ্ত হতে থাকে। উদাহরণ-এশিয়ার সিংহ, রেড পান্ডা ও নানান ধরনের উদ্ভিদসমূহ এই কারণে বিপন্ন হচ্ছে।
(iv) রাসায়নিক দুর্ঘটনা : মালিকপক্ষের উদাসীনতা, পুরোনো যন্ত্রপাতির ব্যবহার, পর্যবেক্ষণ এবং যথাযথ সাবধানতা এবং শিক্ষিত ও দক্ষ কর্মচারীর অভাবের জন্য রাসায়নিক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। উদাহরণ-ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা (1984 সালে)।
(v) বিশ্ব উন্নায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন: জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মানুষের দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাজকর্মের জন্য বর্তমান পৃথিবীতে উন্নায়নের বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফের গলন, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, দাবানল ও খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রভৃতি।
(vi) বন্যা: অপরিকল্পিতভাবে বৃক্ষচ্ছেদন, মৃত্তিকাক্ষয়, নদীর গভীরতা হ্রাস, নদীর পাড়ে বসতির বিস্তার, নদীতে বাঁধ নির্মাণ প্রভৃতির কারণে নদীতে বন্যা মানুষসহ সমস্ত জীবকুল প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন করছে।
(vii) প্রাকৃতিক সম্পদের হ্রাস: জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের অপরিকল্পিতভাবে গচ্ছিত অপুনর্ভব সম্পদের যথেচ্ছভাবে ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
(viii) মুদ্রাস্ফীতি, চাহিদা জোগানের ভারসাম্য হ্রাস: জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য চাহিদা বৃদ্ধি, সাথে সাথে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় বাজারে মুদ্রাস্ফীতির কারণে জিনিসপত্রের দাম মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে চলেছে।
(ix) বায়ুদূষণ: বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত খনিজ তেল ও কয়লা বায়ুদূষণ ঘটায়।
(x) খরা: কৃষিক্ষেত্রে জলসেচ, প্রয়োজনে শিল্প এবং পানীয় জল সরবরাহের জন্য ভূগর্ভের ভৌমজলস্তর থেকে অতিরিক্ত জল উত্তোলন করা এবং নগরায়ণ, শিল্পায়ন ও পরিবহণের প্রসারে যথেচ্ছভাবে বৃক্ষচ্ছেদন করা হয়। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। খরার প্রবণতা বৃদ্ধি করেছে।
প্রশ্ন 5: কী হবে ভবিষ্যৎ মানবসমাজের? পরিবেশের অবনমন নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: বর্তমান যুগে মানষের নানাবিধ কার্যকলাপ ও প্রকৃতির উপর অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের ফলে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে পরিবেশের অবনমন ঘটছে। সামগ্রিকভাবে সমস্ত জীবজগৎসহ মানবসভ্যতা এক সংকটাপন্ন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। পরিবেশের এই অবনমন নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি হল-
(i) শিক্ষার প্রসার: শিক্ষার অভাব ও দারিদ্র্য থাকলে পরিবেশ দ্রুত ধ্বংস হবে। পরিবেশগত অবনমন থেকে রক্ষার জন্য জনগণকে শিক্ষিত, সচেতন, দারিদ্র্যমুক্ত ও আত্মসচেতন করতে হবে।
(ii) বিকল্প শক্তির ব্যবহার: অপ্রচলিত ও পরিবেশবান্ধব শক্তি যেমন- সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ প্রভৃতির ব্যবহার বৃদ্ধি করে পরিবেশ দূষণ হ্রাস এবং জীবাশ্ম জ্বালানির সংরক্ষণ করবে।
(iii) সম্পদের পরিপূর্ণ ও পুনর্ব্যবহার: প্রাকৃতিক সম্পদকে পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার ও সম্পদের পুনর্ব্যবহার বা রূপান্তরের উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
(iv) সম্পদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ: প্রকৃতিতে পাওয়া বিভিন্ন অপুনর্ভব সম্পদের (যেমন-খনিজ সম্পদসমূহ), ব্যবহার হ্রাস করতে হবে এবং পুনর্ভব সম্পদসমূহ যেমন-তৃণভূমি, বনভূমি, মৎস্যচারণক্ষেত্র সমূহকে প্রয়োজন মতো পরিকল্পনামাফিক ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ রোধ হবে।
(v) জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণঃ প্রকৃতিতে জীব ও জড় পরস্পর নির্ভরশীল হওয়ায় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
(vi) প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণঃ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট মাটি, বায়ু, জল, স্বাভাবিক উদ্ভিদসমূহকে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উপর প্রত্যেককে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
(vii) পরিকল্পনামাফিক উন্নয়ন: ব্যক্তিগতভাবে, সামাজিকভাবে বা সরকারিভাবে গৃহীত উন্নত পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরায়ণ, শিল্পায়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, নদী পরিকল্পনার প্রভৃতি থাকতে হবে।
(viii) জনসচেতনতা বৃদ্ধি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে, বিভিন্ন সংঘ ও সমাজসেবী সংগঠনের মাধ্যমে অথবা দৈনিক সংবাদপত্র, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরিবেশগত অবনমনের কুফল এবং নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং করণীয় কার্যাবলি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(xi) আইন প্রণয়ন: পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য কঠোর সরকারি আইন কানুন প্রণয়ন করতে হবে।
(xii) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ: শুধুমাত্র আইন প্রণয়নে নয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনার মাধ্যমে না হলে কোনো আইনই পরিবেশকে অবনমনের হাত থেকে রক্ষা করা যেতে পারে।
ভুল সংশোধন করে লেখো:
1. 1984 সালে আর্থ সামিট আয়োজিত হয়।
উত্তর: 1992 সালে আর্থ সামিট আয়োজিত হয়।
2. আগ্নেয় পদার্থের সংস্পর্শে প্রাকৃতিক পরিবেশ কৃত্রিমভাবে দূষিত হয়।
উত্তর: আগ্নেয় পদার্থের সংস্পর্শে প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রত্যক্ষভাবে দূষিত হয়।
3. মধ্যপ্রদেশের কয়না জলাধারের চাপে ভূমিকম্প হয়েছিল।
উত্তর: মহারাষ্ট্রে কয়না জলাধারের চাপে ভূমিকম্প হয়েছিল।
4. নর্মদা বাঁচাও একটি প্রকৃতি নির্ভর কাজ।
উত্তর: নর্মদা বাঁচাও একটি সেবামূলক কাজ।
5. ভৌমজলের সঙ্গে আর্সেনিক মিশলে ভূমিদূষণ হয়।
উত্তর: ভৌমজলের সঙ্গে আর্সেনিক মিশলে জলদূষণ হয়।
6. 1992 সালের আর্থ সামিটে 187টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল।
উত্তর: 1992 সালের আর্থ সামিটে 178টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল।
Fil in blanks
1. অর্থনীতির দিক থেকে ভারত হল একটি দেশ।
উত্তর: উন্নয়নশীল।
2. আর্থ সামিটে টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল।
উত্তর: 178।
3. কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে ও দূষিত হয়।
উত্তর: মাটি, জল।
4. জাপানের ফুকুসিমা শহরে সালে পরমাণু দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
উত্তর: 2011।
5. তারিখে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত হয়।
উত্তর: 5 জুন।
6. উত্তরাখণ্ডের অঞ্চলে চিপকো আন্দোলন হয়েছিল।
উত্তর: গাড়োয়াল।
7. একটি জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ।
উত্তর: কয়লা।
৪. মরুভূমির প্রসারের ফলে পরিবেশের ঘটে।
উত্তর: অবনমন।
9. ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল গ্যাস।
উত্তর: MIC।
10. দূষণের ফলে ইটাই ইটাই রোগ হয়।
উত্তর: ক্যাডমিয়াম।
11. সবুজ বিপ্লবে কৃষি উৎপাদন বাড়ালেও ব্যবহারের ফলে জীবজগৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর মাটি দূষিত হয়েছে।
উত্তর: রাসায়নিক সার ও কীটনাশক।
12. ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা হয় সালে।
উত্তর: 1984
13. WHO-এর পুরো নাম ।
উত্তর: World Health Organisation
True and False
1. ফুওরাইড দূষণের ফলে ফ্লুরোসিস রোগ হয়।
উত্তর: শুদ্ধ।
2. CFC পুরো কথাটি হলো ক্লোরোফ্লুরোকার্বন।
উত্তর: শুদ্ধ।
3. ওজোন গ্যাস প্রাণী জগৎকে রক্ষা করে।
উত্তর: অশুদ্ধ।
4. গ্রামাঞ্চলে ধোঁয়াশা দেখা যায়।
উত্তর: অশুদ্ধ।
5. টাইফয়েড একটি বায়ুবাহিত রোগ।
উত্তর: অশুদ্ধ।
6. আর্সেনেট ও আর্সেনাইট পরিবেশে দূষণ হ্রাস করে।
উত্তর: শুদ্ধ।
7. বাবা আমতে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের সূচনা করেন।
উত্তর: অশুদ্ধ।
৪. আউচ আউচ রোগ জার্মানিতে দেখা গিয়েছিল।
উত্তর: অশুদ্ধ।
9. তেহরি একটি জলাধারের নাম।
উত্তর: শুদ্ধ।