WBBSE Class 8 Bangla Chapter 7 Solution | Bengali Medium

Class 8 Chapter 7 Bengali Medium

জেলখানার চিঠি

1. Very Short Question Answer

 1. নেতাজি মনে করতেন না যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তরে একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে।

উত্তর: নেতাজি মনে করতেন যে, আমাদের সমস্ত দুঃখকষ্টের অন্তের একটা মহত্তর উদ্দেশ্য কাজ করছে।

2. কারাগারে বন্দি অবস্থায় নেতাজি সুভাষ গীতার আলোচনা লিখেছিলেন।

উত্তর: কারাগারে বন্দি অবস্থায় লোকমান্য তিলক গীতার আলোচনা লিখেছিলেন।

3. জেলজীবনের কষ্ট মানসিক অপেক্ষা দৈহিক বলে নেতাজি মনে করতেন।

উত্তর: জেলজীবনের কষ্ট দৈহিক অপেক্ষা মানসিক বলে নেতাজি মনে করতেন।

2. Short Question Answer

1. রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে তিনি কোন্ দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন?

উত্তর: রাসবিহারী বসু ছিলেন একজন বিপ্লবী ও সংগঠক। তাঁর কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র বসু ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ গঠনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

2. সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কেন?

উত্তর: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন দেশপ্রেমিক। ছাত্র হিসেবে ছিলেন অসাধারণ মেধাবী। প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক ওটেন ছিলেন ভারতবিদ্বেষী। দেশ সম্পর্কে ওটেনের বিরূপ বক্তব্যে ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র এবং তাকে প্রহার করেছিলেন। তাই শিক্ষককে প্রহার করার অভিযোগে তাঁকে কলেজ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল।

3. মান্দালয় জেল কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: মান্দালয় জেল বার্মায় অবস্থিত। বার্মার বর্তমান নাম মায়ানমার। ব্রিটিশ শাসনাধীনে যাঁরা স্বাধীনতার জন্যে আন্দোলন করেছেন, তাঁদের এই জেলে রেখে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালানো হতো। সুভাষচন্দ্র বসু ও বালগঙ্গাধরের মতো দেশপ্রেমিদের এখানে বন্দি রাখা হয়েছিল।

3. Long Question Answer

1. কোন্ ব্যাপারটিকে পত্রলেখক আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে দেখার কথা বলেছেন?

উত্তর: ‘জেলখানার চিঠি’ গদ্যে সুভাষচন্দ্র বসু দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র কবি ও গায়ক দিলীপকুমারকে তাঁর কারাবরণের কথা বলতে গিয়ে এই উক্তি করেছেন।

১৯২৫, মে মাসের ২ তারিখে মান্দালয় জেল থেকে সুভাষচন্দ্র এই পত্র লেখেন। পত্রলেখক জানান, কারাবরণের ঘটনাকে তিনি

আধ্যাত্মিক দিক থেকে বিচার করতে চান- ঘটনাগুলি যখন মেনে চলতেই হচ্ছে তখন সমস্ত ব্যাপারটাকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়েও দেখা যেতে পারে।

সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন যে, তাঁর কারাবাসের বিষয়টি দিলীপকুমারের কাছে দুঃখজনক বলে মনে হতে পারে। তাঁর ‘প্রবৃত্তি ও মার্জিত রুচিতে আঘাত’ করতে পারে।

 2. বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তি সঞ্চারিত হয় কীভাবে?

উত্তর: সুভাষচন্দ্রের মধ্যে ছিল এক দার্শনিক মন। তিনি দর্শনশাস্ত্র মন দিয়ে পড়েছিলেন। সেই জ্ঞান, বিচারশক্তি ও গ্রহণশক্তি তাঁর কারাবরণের দিনগুলি অতিবাহিত করতে সাহস জুগিয়েছিল। সুভাষচন্দ্র এই চিঠিতে বারবার আধ্যাত্মিক শক্তি (Spritual Power)-র কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন-

“মানুষ যদি তার নিজের অন্তরে ভেবে দেখবার যথেষ্ট বিষয় খুঁজে পায়, তাহলে বন্দি হলেও তার কষ্ট নেই।”

 3. ভারতীয় জেল বিষয়ে একটি পুস্তক সুভাষচন্দ্রের লেখা হয়ে ওঠেনি কেন?

উত্তর: ২.৫.১৯২৫ তারিখে বিখ্যাত নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র সুরকার ও সাহিত্যিক দিলীপকুমার রায় একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠির মূল প্রতিপাদ্য ছিল-

১. সুশিক্ষিত মানুষ কেন কারাগার পছন্দ করেন না? 

২. জেলখানার পরিবেশ কেমন?

৩. জেলখানা সম্পর্কিত আইন সংশোধন করা প্রয়োজন কেন?

এইসব আলোচনা প্রসঙ্গে দিলীপকুমার রায়কে সুভাষচন্দ্র জানান, জেলের যে কষ্ট তা শারীরিক অপেক্ষা আরও বেশি মানসিক। তিনি কারাবরণের অভিজ্ঞতা নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখতে পারেন। কিন্তু পত্রে তা লেখা সম্ভব নয়। তিনি জানিয়েছেন-

“আমার বেশি উদ্যম ও শক্তি থাকলে একখানা বই ফেলার চেষ্টা করতাম কিন্তু সে চেষ্টার উপযুক্ত সার্মথ্যও আমার নেই।”

একজন লেখকের যে মন ও মানসিকতার প্রয়োজন হয়; একজন দেশপ্রেমিকের সেই সময়টুকু থাকে না। তাই লেখার জন্যে যে উদ্যমের প্রয়োজন, তা সুভাষচন্দ্রের ছিল না।

4. সুভাষচন্দ্র কেন দিলীপ রায়ের প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি?

উত্তর: কারাবরণের নিরানন্দ দিনগুলিতে বসে মন দিয়ে বই পড়েছিলেন দেশনায়ক সুভাষচন্দ্র। বইগুলি পাঠিয়েছিলেন নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সুযোগ্য পুত্র দিলীপকুমার রায়।

বইগুলির প্রাপ্তি স্বীকার করেছিলেন সুভাষচন্দ্র। অত্যন্ত খুশি হয়ে জানিয়েছিলেন, তাঁর বইগুলি গুণে-মানে-বিবেচনায় সত্যিই অসাধারণ। তবে সেই মুহূর্তে তিনি ফেরত দিতে পারছেন না। কেননা, ‘তাদের অনেক পাঠক জুটেছে।’ তাছাড়া দিলীপকুমার ইচ্ছে হলে আরও তেমন সুন্দর বই পাঠাতে পারেন। সেগুলি ‘সাদরে গৃহীত হবে।’ এভাবে উৎসাহী পাঠক সুভাষচন্দ্র দিলীপ রায়ের প্রেরিত পুস্তক ফেরত পাঠাতে চাননি।

5. নেতাজি ভবিষ্যতের কোন্ কর্তব্যের কথা এই চিঠিতে বলেছেন? কেন এই কর্তব্য স্থির করেছেন? কারা-শাসন প্রণালী বিষয়ে কাদের পরিবর্তে কাদের প্রণালীকে তিনি অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন?

উত্তর: ১ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু চেয়েছিলেন, তৎকালীন ব্রিটিশ-শাসিত কারা-শাসন পদ্ধতির সংস্কার হোক। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় কারা-সম্পর্কিত আইনের আমূল পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র। ১১৯২৫, মে মাসের ২ তারিখে শ্রদ্ধেয় সুরকার দিলীপকুমার রায়কে সুভাষচন্দ্র লিখেছিলেন-

“তুমি ধারণাই করতে পারবে না, কেমন করে মানুষ দীর্ঘকাল কারাবাসের ফলে ধীরে ধীরে দেহে ও মনে অকালবৃদ্ধ হয়ে যেতে থাকে।”

কারাবরণের দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকে সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন-

ক। কারাবরণে থাকা মানুষের মানসিকতার অবনমন ঘটতে থাকে।

খ। কারাবাসকালে অপরাধীর মানসিক ও আধ্যাত্মিক কোনো উন্নতি হয় না।

গ। কারাবরণকারী ধীরে ধীরে মানসিক শক্তি, সতেজতা, আনন্দ হারিয়ে ফেলে।

ঘ। জেলের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর ও আরামদায়ক নয়। ফলে দ্রুত শরীর ভাঙতে থাকে।

এইসব কারণে সুভাষচন্দ্র কারা-শাসন প্রণালীর আমূল পরিবর্তন করতে চেয়েছেন।

• সুভাষচন্দ্র ব্রিটিশ প্রবর্তিত কারা আইন প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন- কোনো ভদ্র বা সুশিক্ষিত ব্যক্তি কারাবাস পছন্দ করতেই পারে না। জেলখানার সমস্ত আবহাওয়াটা মানুষকে যেন বিকৃত অমানুষ করে তোলারই উপযোগী।

সুভাষচন্দ্র মনে করতেন, ব্রিটিশ কারা-আইন পরিবর্তন করা উচিত। তার পরিবর্তে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেট্স-এর মতো সমৃদ্ধশালী দেশগুলির সংশোধনী আইনকে গ্রহণ করা উচিত।

6. ‘সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি।’-বক্তা কে? তিনি কীজন্য খুশি হয়েছেন?

উত্তর: উদ্দৃত অংশের বক্তা হলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। • ব্রিটিশ অধীনস্ত ভারতে যাঁরা দেশবাসীর হয়ে লড়াই করেছেন, বন্দি স্বদেশ জননীর হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই কারাবরণ করতে হয়েছে। কারাগারের অনালোকিত ও অনুদার পরিবেশে তাঁদের জীবন অতিবাহিত হতো। এইসব বরেণ্য দেশনেতাদের কাছে কোনো চিঠিপত্র সরাসরি আদান-প্রদান হতো না। কেননা-

১।। প্রথমেই কারাকর্তৃপক্ষ জানতে চাইতেন চিঠির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টি কী?

২। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ‘double distillation’ বা দুবার পরীক্ষা করে নিতেন।

৩।। চিঠির মধ্যে গোপন কোনো তথ্য থাকলে তা বন্দিদের কাছে পৌঁছাত না।

ফলে কারও চিঠি পাওয়া-নাপাওয়া সব নির্ভর করতো কারাকর্তৃপক্ষের মানসিকতার উপরে। সভাষচন্দ্র লিখেছেন, দিলীপকুমার প্রেরিত পত্র বিনা বাধাতে ২৪/৩/২৫ তারিখে তাঁর হাতে পৌঁছায়। সুতরাং, সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন-

“মাঝে মাঝে যেমন ঘটে… এবার তা হয়নি। সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি।”

7. ‘আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।’-কে, কাকে এ কথা বলেছেন? কীসের উত্তর দেবার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: ১ ‘জেলখানার চিঠি’ নামাঙ্কিত পত্রে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। বিখ্যাত নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলালের পুত্র মরমী সুরকার দিলীপকুমার রায়কে একথা বলেছেন।

• দিলীপকুমার রায়ের পত্র পেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। দিলীপকুমারকে লিখেছেন-

তোমার চিঠি হৃদয়তন্ত্রীকে এমনই কোমলভাবে স্পর্শ করে চিন্তা ও অনুভূতিকে অনুপ্রাণিত করেছে যে, আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন।

সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন, তাঁর মনের কথা সম্পূর্ণ অনাবৃত করা সম্ভব নয়। কেননা-

প্রথমত।। এই চিঠি সেন্সরের (Censor) হাত অতিক্রম করে তবে দিলীপকুমার রায়ের হাতে পৌঁছাবে।

দ্বিতীয়ত ।। সুভাষচন্দ্র তাঁর মনের গভীরতম আবেগ ও চিন্তাকে উন্মুক্ত করতে পারেননি।

ফলে সুভাষচন্দ্রের মনের অব্যক্ত কথা কোনোদিন ভবিষ্যৎকালের কাছে হয়তো পৌঁছাবে না।

8. ‘পরের বেদনা সেই বুঝে শুধু যেজন ভুক্তভোগী।’- উদ্ধৃতির সমার্থক বাক্য পত্রটি থেকে খুঁজে নিয়ে লেখো। সেই বাক্যটি থেকে লেখকের কোন্ মানসিকতার পরিচয় পাও?

উত্তর: ব্রিটিশ অধীনস্ত ভারতে কারাসংক্রান্ত নীতি-নির্দেশাবলি সভ্য সমাজের উপযোগী ছিল না। তাই নিজে কারাগারে থাকার সময় সুভাষচন্দ্র উক্ত মন্তব্যটি করেছেন। এই মন্তব্যের সমার্থক বাক্যটি হল- 

আমার মনে হয় না, আমি যদি স্বয়ং কারাবাস না করতাম তাহলে একজন কারাবাসী বা অপরাধীকে ঠিক সহানুভূতির চোখে দেখতে পারতাম।

• সুভাষচন্দ্র বসু প্রশ্নোদ্ভূত যে মন্তব্য করেছেন, তা প্রমাণ করে তৎকালীন কারা আইন কতখানি অমানবিক ও অনৈতিক ছিল। কেননা তিনি লিখেছেন-মানুষ দীর্ঘকাল কারাবাসের ফলে ধীরে ধীরে দেহে ও মনে অকালবৃদ্ধ হয়ে যেতে থাকে। সুভাষচন্দ্র চেয়েছিলেন, কারা-শাসন প্রণালীর সংশোধন হোক। অপরাধীদের প্রতি মানবিক দৃষ্টিকোণ ও সহানুভূতি বর্ষিত হোক। তাই দিলীপকুমার রায়কে পত্রে জানিয়েছেন, ‘ভবিষ্যতে কারা-সংস্কার আমার একটা কর্তব্য হবে।’

9. ‘আমার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে, অনেকখানি লাভবান হতে পারব।’- কোন্ প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি? জেলজীবনে তিনি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কীভাবে লাভবান হবার কথা বলেছেন?

উত্তর: ‘জেলখানার চিঠি’ নামাঙ্কিত পত্রে সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর নির্জন কারাকক্ষে দিন অতিবাহিত করার কথা শুনিয়েছেন। সুভাষচন্দ্র লিখেছেন, কারাগারের পরিবার-পরিজনহীন নির্জনতার মধ্যে থাকার সময় অনেক গভীর কথা ভাববার অবকাশ থাকে। সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি।

• দিলীপকুমার রায়কে সুভাষচন্দ্র পত্রে লিখেছেন- জেলের মধ্যে যে নির্জনতায় মানুষকে বাধ্য হয়ে দিন কাটাতে হয় সেই নির্জনতাই তাঁকে জীবনের চরম সমস্যাগুলি তলিয়ে বুঝবার সুযোগ দেয়।

সুভাষচন্দ্র জানিয়েছিলেন, যে সব জটিল প্রশ্নের উত্তর তিনি পাচ্ছিলেন না; কারাকক্ষে বসে তার উত্তর তিনি পেয়েছেন। যে সমস্ত – আগে ছিল দুর্বল ও অস্পষ্ট ধোঁয়াশাচ্ছন্ন: এখন সেগুলির অর্থ স্পষ্ট হয়েছে। এমনকি আধ্যাত্মিক জগৎ সম্পর্কে তিনি বহু তথ্য জানতে পেরেছেন; যা তাঁর উপলব্ধিকে আরও গভীরতা দান করেছে।

10. ‘Martyrdom’ শব্দটির অর্থ কী? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তা কী বক্তব্য রেখেছেন?

উত্তর: ১ ‘Martyrdom’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হলো- ১. আত্মবলিদান, ২. আত্মোৎসর্গ, ৩. মহৎকর্মে আত্ম-নিয়োগ

দেশের মঙ্গলের জন্যে ও পরাধীনতার নাগপাশ থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করার জন্যে সুভাষচন্দ্র বিপ্লবী কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছিলেন। তাঁর কারাবাসকে শ্রদ্ধা জানিয়ে দিলীপকুমার রায় ‘Martyrdom’ শব্দটির প্রয়োগ করেছিলেন। সেই প্রসঙ্গে সুভাষচন্দ্র জানান-

১. এই কথাটি বলে সুভাষচন্দ্র গভীর অনুভূতি ও প্রাণের মহত্ত্বেরই পরিচয় দিয়েছেন।

২. সুভাষচন্দ্রের মধ্যে সামান্য কিছু হলেও ‘Humour’ বা রসবোধ অবশিষ্ট আছে। ‘Martyrdom’ বা ‘শহিদত্ব’ বিশেষণকে তিনি গ্রহণ করতে পারছেন না।

৩. কেননা Martydom বিষয়টি তাঁর কাছে ‘বড়োজোর একটা আদর্শই হতে পারে।’

সুভাষচন্দ্রের এই বক্তব্য আমাদের অভিভূত করে। তিনি কতখানি বিনয়ী, আত্মত্যাগী ও বিপ্লবী চিন্তার দ্বারা অনুরক্ত ছিলেন; এই উদ্ধৃতি তারই প্রমাণ।

11. ‘যখন আমাদিগকে জোর করে বন্দি করে রাখা হয় তখনই তাদের মূল্য বুঝতে পারা যায়।’- কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? ‘তাদের মূল্য’ বিষয়ে লেখকের বক্তব্য আলোচনা করো।

উত্তর: প্রসঙ্গ: কারাগারের দিনগুলিতে বসে সুভাষচন্দ্রের মনে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতার কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন। তাঁর মনে হয়েছিল দীর্ঘদিন কারাবাসের ফলে মানুষ দেহ-মনে একেবারেই অকালবৃদ্ধ হয়ে পড়ে। কারাগারের পরিবেশ মোটেই সুখকর নয়। সেখানে আনন্দ নেই। দেহের উপযোগী কোনো খাদ্য নেই। মানসিক অবকাশের মতো কোনো পরিবেশ নেই। সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি।

 লেখকের বক্তব্য: কোনো মানুষ যখন অনেকের মধ্যে থাকেন তখন তিনি যে আনন্দ লাভ করেন, সেই আনন্দ কখনও কারাকক্ষের মধ্যে পাওয়া যায় না। কারাকক্ষের পরিবেশ কখনোই মানুষের বেঁচে থাকার মতো সুখকর অনুভূতি নিয়ে হাজির হয় না। সুভাষচন্দ্র বসু জানিয়েছেন যাঁদের কারাকক্ষে বন্দি রাখা হয়, তাঁদের সারাটা জীবন বিষণ্ণতায় কাটাতে হয়। সুতরাং তাঁর মনে হয়েছে জেলের শাসন পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে পরিবর্তন করা সম্ভব হলে তবেই বন্দিরা সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার পাবে।

12. ‘মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা কী কঠোর ও নিরানন্দময়।’- যে ঘটনায় লেখকের মনে এই উপলব্ধি ঘটে তার পরিচয় দাও। (জে.এন. একাডেমি)

উত্তর: লেখকের উপলব্ধি: দিলীপকুমার রায়কে পত্রে কারাগারের তৎকালীন অমানবিক ব্যবস্থা দেখে ক্ষুণ্ণ সুভাষচন্দ্র বসু এই উক্তিটি করেছেন। 

ব্রিটিশ শাসিত কারাগারে বন্দি মানুষদের ওপরে শারীরিক-মানসিক যেসব কষ্ট দেওয়া হতো; তাতে হতাশ হয়েছেন সুভাষচন্দ্র বসু। বন্দিরা যেভাবে মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়, তা নিঃসন্দেহে অমানবিক। সুভাষচন্দ্রের মনে হয়েছে-জেলের মধ্যে দৈহিক কষ্ট অপেক্ষা মানসিক কষ্ট অনেক বেশি। এখানে অত্যাচার ও অপমানের আঘাত অনেক বেশি। ফলে বন্দি-জীবনটা অনেকটা যন্ত্রণাদায়ক।

সংশোধিত হওয়ার সুযোগ না দিয়ে মানসিক আঘাত হানার ফলে কয়েদিরা নিজের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন থেকে ভ্রষ্ট হয়। সুতরাং, সুভাষচন্দ্র চেয়েছেন, বন্দি মানুষের জীবনে অন্তত আনন্দ ও পরিতৃপ্তি পাওয়ার মতো ব্যবস্থা হোক।

কিন্তু ব্রিটিশ-শাসিত কারাগারে থেকে বন্দিরা মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছে; তাদের নৈতিক অবনতি ঘটেছে। তাই সুভাষচন্দ্রের এই বক্তব্য।

13. এই চিঠিতে কারাবন্দি অবস্থাতেও দুঃখকাতর, হতাশাগ্রস্ত নয়, বরং আত্মাবিশ্বাসী ও আশাবাদী নেতাজির পরিচয়ই ফুটে উঠেছে।-পত্রটি অবলম্বনে নিজের ভাষায় মন্তব্যটির যথার্থতা পরিস্ফুট করো।

উত্তর: কারাকক্ষের নিরানন্দময় দিনগুলিতে সুভাষচন্দ্র একের পর এক বই পড়েছেন। কারার লৌহপ্রাচীর তাঁর মনের গতিকে রুদ্ধ করতে পারেনি। তবে ব্রিটিশ-শাসিত ভারতে বন্দিরা কীভাবে শারীরিক-মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছেন’, সেই বিষয়ের প্রতিও তিনি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। তিনি লিখেছেন-

জেলখানার সমস্ত আবহাওয়াটা মানুষকে যেন বিকৃত অমানুষ করে তোলারই উপযোগী।

তবু সুভাষচন্দ্র সেই নিরানন্দময় কারাবাসের দিনগুলিতেও দেশমাতার কথা ভেবেছেন। শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন কবি নজরুল, বিপ্লবী বালগঙ্গাধর তিলকের মতো দেশপ্রেমীদের। জেলের নির্জনতায় বসে তিনি দার্শনিক চিন্তা-চেতনার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শক্তি অর্জন করেছেন।

জেলখানায় মানুষ এমনভাবে মানসিক-শারীরিক-আত্মিক সংকটের শিকার হতো যার ফলে তার জীবনে অকালবার্ধক্য এসে হাজির হতো। সুভাষচন্দ্র কারাগারের মধ্যে মানুষের উপরে এই পীড়নকে মেনে নেননি। তিনি সমাধানের পথ খুঁজেছেন।

সুভাষচন্দ্র মনে করেন, দুঃখ-কষ্টের মধ্যে দিয়ে মানুষ শিক্ষালাভ করবে। তিনি লিখেছেন- “দুঃখ-যন্ত্রণা উন্নততর কর্ম ও উচ্চতর সফলতার অনুপ্রেরণা এনে দেবে।” এভাবে আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী সুভাষচন্দ্রের জীবনদর্শন আলোকিত হয়েছে এই পত্রের মধ্যে।

14. কারাগারে বসে নেতাজির যে ভাবনা, যে অনুভব, তার অনেকখানি কেন অকথিত রাখতে হবে?

উত্তর: সুভাষচন্দ্র বসু মান্দালয় কারাগারে দ্বিজেন্দ্র-পুত্র দিলীপকুমার রায়কে তৎকালীন কারাগারের অবস্থা জানিয়েছেন। বন্দিদের ওপরে যেভাবে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করা হতো তার বর্ণনা করেছেন। তিনি ভবিষ্যতে নিজের পরিকল্পনা বিষয়ে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর মনের সব কথা তাঁর পক্ষে বলা সম্ভব নয়। কারণ তাঁর উদ্দেশ্য ও অভিপ্রায় এখনই প্রকাশ করতে চান না। তাছাড়া এই চিঠি ‘Censor’-এর হাত অতিক্রম করে যাওয়া সহজ নয়। তাই তিনি লিখেছেন-

আজ যা ভাবছি ও যা অনুভব করছি, তার অনেকখানিই কোনো এক ভবিষ্যৎকাল পর্যন্ত অকথিত রাখতে হবে।

সুতরাং, সুভাষচন্দ্র বলেছেন, যতদিন তিনি কারাগারে অবস্থান করবেন, ততদিন তাঁর মনের অনেক কথাই অপ্রকাশিত থাকবে।

15. ‘শুধু শাস্তি দেওয়া নয়, সংশোধনই হওয়া উচিত জেলের প্রকৃত উদ্দেশ্য।’-তুমি কি এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও। (Open Ended Question)

উত্তর: মান্দালয় কারাগারে বসে যে কথাগুলি সুভাষচন্দ্র তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, তার অন্যতম বক্তব্য-বিষয় হল ‘শুধু শাস্তি দেওয়া নয়, সংশোধনই হওয়া উচিত জেলের প্রকৃত উদ্দেশ্য।’ এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি সহমত পোষণ করি।

ব্রিটিশ শাসিত ভারতে কারা-সংস্কার না করে কয়েদির উপরে শারীরিক-মানসিক অত্যাচার করায় তাদের জীবন থেকে আনন্দ-স্বস্তি-শান্তিটুকু হারিয়ে গিয়েছিল। সুভাষচন্দ্র মনে করেন- জেলের দৈহিক কষ্ট অপেক্ষা মানসিক কষ্ট অনেক বেশি।

কারাগারের কাজ হল বন্দির মনে উন্নত মার্জিত চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটানো। এর ফলে একজন বন্দি তার ভুলগুলি শুধরে নিতে পারে। গান, ছবি আঁকা, নাটক, খেলাধূলা ইত্যাদির মাধ্যমে বন্দির জীবনে আনন্দের বার্তা আনা সম্ভব।

শুধু কঠোর অনুশাসন, শারীরিক-মানসিক নির্যাতন নয়, একজন বন্দিকে যথার্থেই সংশোধিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়াই হল কারাগারের নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং সুভাষচন্দ্র বসুর এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি সহমত পোষণ করি।

16. ‘আমাদের দেশের আর্টিস্ট বা সাহিত্যিকগণের যদি কিছু কিছু কারাজীবনের অভিজ্ঞতা থাকত তাহলে আমাদের শিল্প ও সাহিত্য অনেকাংশে সমৃদ্ধ হতো।’-এ প্রসঙ্গে কারাজীবন যাপন করা কয়েকজন সাহিত্যিকের নাম এবং তাঁদের রচিত গ্রন্থের নাম উল্লেখ করো। 

উত্তর: সুভাষচন্দ্র তাঁর পত্রে জানিয়েছেন যে ‘অপরাধীদের প্রতি একটা সহানুভূতি’ থাকা আবশ্যক। কারাশাসন-বিধি শুধুমাত্র কঠোর অনুশাসনের ব্যবস্থা করলে বন্দিদের জীবন বিষময় হয়ে ওঠে। | সুভাষচন্দ্র মনে করেন, আমাদের দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক যদি কারাজীবনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারতেন; তাহলে তাঁদের সাহিত্য আরও বাস্তব ও জীবন্ত হয়ে উঠত। এই প্রসঙ্গে তিনি কবি নজরুল ইসলামের কথা বলেছেন। 

কারাজীবনযাপন করেছেন এমন কয়েকজন লেখক হলেন নজরুল ইসলাম, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীনাথ ভাদুড়ী। এঁদের উল্লেখযোগ্য লেখাগুলি হল-

১. নজরুল ইসলাম: ফণিমনসা, বিষের বাঁশী, সর্বহারা

২. তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়: পাষাণপুরী

৩. সতীনাথ ভাদুড়ী: জাগরী

স্বাধীনতা

1. Very Short Question Answer

 1. ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?

উত্তর : ল্যাংস্টন হিউজের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম হল ‘The Weavy Blues’ I

2. Short Question Answer

 1. তিনি কোন্ দেশের রেনেসাঁর অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত?

উত্তর : বিংশ শতাব্দীর কুড়ির দশকের স্বনামধন্য কবি ল্যাংস্টন হিউজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্লেম রেনেসাঁসের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে পরিচিত।

2. Long Question Answer

1. মানুষ পরাধীন হয় কখন?

উত্তর: একজন মানুষ যখন অন্যের দ্বারা পদানত; তখন সে পরাধীন। কখনও প্রতিষ্ঠানের দ্বারা, রাষ্ট্রের দ্বারা, কখনও বা অন্য দেশের দ্বারা যখন আমরা আমাদের সার্বভৌম ক্ষমতা হারিয়ে ফেলি, তখন আমরা পরাধীন। অর্থাৎ অন্যের অধীন হলে তাকে পরাধীন বলা হয়।

2. পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা পাওয়ার পথগুলি কী কী?

উত্তর: ফরাসি দার্শনিক রুশো বলেছিলেন- “Man is born free, but everywhere he is in chains.” মানুষ স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। ঔপনিবেশিক যুগে আমরা ছিলাম পরাধীন। কোনো মানুষ, কোনো জাতি, কোনো দেশ পরাধীন হলে তখন তা অত্যন্ত লজ্জার। তখন আত্মগ্লানি, আত্মমর্যাদাহীন লাঞ্ছিত জীবন কষ্টের কারণ হয়। এজন্যে প্রয়োজন কতকগুলি বিষয়। যেমন-

১. সংঘবদ্ধ শক্তি

২. পারস্পরিক আলোচনা

৩. প্রয়োজনে বিপ্লব বা বিদ্রোহ

৪. কোনো প্রলোভনে পা না দেওয়া

৫. প্রবল দেশাত্মবোধ ও স্বদেশপ্রীতি

এভাবে মানুষ একত্রিত হয়ে দেশের জন্যে আমরণ সংগ্রাম করলে একদিন স্বাধীনতা আসবেই।

3. ‘স্বাধীনতা’ কবিতাটির মধ্যে দুটি ‘পক্ষ’ আছে- ‘আমি-পক্ষ’ আর ‘তুমি-পক্ষ’। এই ‘আমি পক্ষ’ আর ‘তুমি-পক্ষ’-এর স্বরূপ বিশ্লেষণ করো। এই ক্ষেত্রে ‘সে পক্ষ’ নেই কেন?

উত্তর : ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় দুটি ‘পক্ষ’ আছে। অর্থাৎ শাসক আর শাসিতের স্পষ্ট ভূমিকা আছে। যেমন-

১. আমি-পক্ষ: পরাধীন মানুষ এই পক্ষের অন্তর্ভুক্ত। এরা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও সর্বহারা।

২. তুমি-পক্ষ: এই পক্ষে অবস্থান করে আগ্রাসী ও পররাজ্যলোভী শাসক। এরা ক্ষমতালোভী। অন্যকে লাঞ্ছনা দিয়ে, বঞ্চনা করে আনন্দ পায়। এই দুটি ‘পক্ষ’ ছাড়াও ‘সে পক্ষ’ থাকতে পারত। ‘সে’ হল এই

দুটি পক্ষের বাইরে তৃতীয় পক্ষ। যে সবকিছুর ঊর্ধ্বে অবস্থান করে দুই পক্ষের ন্যায়-অন্যায়কে প্রত্যক্ষ করে। ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ এই ‘সে-পক্ষ’কে রাখতে চাননি।

4. ‘সময়ে/সবই হবে, কাল একটা নূতন দিন’- কবিতার মধ্যে উদ্ধৃতিচিহ্নের ভিতরে থাকা কথাটি কার/কাদের কথা বলে তোমার মনে হয়? তারা এ ধরনের কথা বলেন কেন?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর: মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ তাঁর ‘স্বাধীনতা’ নামাঙ্কিত কবিতায় আপসকামী দেশনেতা তথা সুযোগসন্ধানী নেতাদের কথা বলেছেন বলে আমার মনে হয়।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর: শাসকদলের তোষামোদকারী একদল দেশনেতা থাকেন, যারা স্বাধীনতা কোনও একদিন আসবে বলে স্বপ্ন দেখান। কিন্তু কবি ল্যাংস্টন হিউজ মনে করেন, স্বাধীনতা স্বপ্ন-বিলাসী মানুষের কল্পনার ফসল নয়। স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বিপ্লবের সংগ্রামী পথে স্বাধীনতা অর্জিত হয়। এর জন্যে সংগ্রাম, বিদ্রোহ, বিপ্লব ও আত্মত্যাগের প্রয়োজন হয়।

পৃথিবীর ইতিহাস এই শিক্ষা দিয়েছে যে, স্বাধীনতাকামী মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে একদিন মুক্ত পৃথিবী গঠিত হবে। সাধারণ মানুষের বলিষ্ঠ প্রতিবাদে ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব কিংবা ইতালির ঐক্য আন্দোলন সম্ভব হয়েছে।

সুতরাং ‘সময়ে/সবই হবে’- এই আপসকামী বক্তব্য ঠিক নয়। প্রতিনিয়ত আলাপ-আলোচনা, মিটিং-মিছিল, বিপ্লব-বিদ্রোহের মধ্যে দিয়েই দেশ স্বাধীন হবে- এটাই প্রকৃত সত্য।

5. ‘আগামীকালের রুটি/দিয়ে কি আজ বাঁচা যায়’-এখানে ‘আগামীকাল’ আর ‘আজ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘আগামীকাল’ মার্কিন কবি ল্যাংস্টোন হিউজ কোনো মিথ্যা স্বপ্নে বিশ্বাস করেন না। তিনি এমন বক্তব্যে বিশ্বাসী নন যে- “সময়ে সবই হবে, কাল একটা নূতন দিন।” ভবিষ্যতে আপনা-আপনি দেশ স্বাধীন হবে, মানুষ পরাধীনতা থেকে মুক্তি পাবে-এমন অলীক কল্পনায় কবি বিশ্বাস করেন না।

শুধু স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে পরাধীন, লাঞ্ছিত জাতি বাঁচতে পারে না। কোনো একদিন শুভ সময় আসবে-এ শুধু তত্ত্বকথা মাত্র। কেননা, বিপ্লবের পথে অসংখ্য মানুষের আত্মবলিদানের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হবে-এটাই স্বাভাবিক। ‘আগামীকালের রুটি’ হল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। কিন্তু তা শুধু স্বপ্নের ফসল নয়। তার জন্যে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়।

‘আজ’ ‘আজ’ বলতে কবি তৎকালীন সময়ের পরাধীন অবস্থাকে নির্দেশ করেছেন। পরাধীনতার গ্লানি মানুষের বেঁচে থাকার আনন্দকে হরণ করেছে। মানবতাকে লাঞ্ছিত করেছে। দেশ যখন লাঞ্ছিত, দেশের মানুষ যখন বঞ্চিত; তখন মিথ্যা স্বপ্ন দেখানোর অর্থই হয় না। কবি ল্যাংস্টন হিউজ বোঝাতে চেয়েছেন, ভবিষ্যতের প্রস্তুতিহীন স্বপ্ন নিয়ে কোনো জাতি, কোনো দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। 

6. “মৃত্যুর পরে তো আমার… প্রয়োজন হবে না।”

উত্তর: মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি জানিয়েছেন দাসত্বের শৃঙ্খল নিয়ে কোনো মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না।

যদি কোনো মানুষ মনে করে, স্বাধীনতা আজ না হয় আগামীকাল অর্জিত হবে তাহলে সে ভুল করবে। কেননা, মনে রাখতে হবে যে, স্বাধীনতা সহজেই অর্জিত হওয়ার নয়। মৃত্যুর পর কখনও স্বাধীনতার প্রয়োজন-অপ্রয়োজন কিছুই থাকে না। তাই কবি মনে করেন, জীবিত অবস্থাতেই স্বাধীনতাকে অর্জন করা আবশ্যক।

7. “স্বাধীনতা একটা শক্তিশালী বীজপ্রবাহ।”

উত্তর: মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি জানিয়েছেন, স্বাধীনতা ধারাবাহিক সংগ্রামের ফসল।

তাই কবি স্বাধীনতাকে ‘শক্তিশালী বীজপ্রবাহ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। বীজের মধ্যে যেমন আগামী দিনের একটি অঙ্কুর বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং সেই অঙ্কুর যেমন একসময় বনস্পতিতে রূপান্তরিত হয়; আমাদের স্বাধীনতাও ঠিক তেমন। স্বাধীনতা তাই একটি বহু প্রার্থিত সাধনারই বাস্তব রূপ। বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা কবির মতে একটা ‘শক্তিশালী বীজপ্রবাহ’ যেন।

8. “আমাদেরও তো অন্য সকলের… জমির মালিকানার।”

উত্তর: মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি জানিয়েছেন, পরাধীন মানুষের স্বাধীনতা চাই।

বিজয়ী মানুষ তার প্রভূত ক্ষমতার বলে পরাজিত মানুষের উপরে দখলদারীর মতো ভূমিকা পালন করে। কবির মনে হয়েছে, পরাধীন মানুষেরও দীর্ঘদিন সংগ্রাম করে স্বাধীনতা অর্জনের অধিকার আছে। তাই দেখা যায়, মুক্তিকামী মানুষ দিনের পর দিন সংগ্রাম করেও বেঁচে থাকার অধিকার, মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর অধিকার, দু-কাঠা জমির মালিকানার অধিকার প্রত্যাশা করে।

9. “স্বাধীনতা আমার প্রয়োজন/তোমার যেমন।”

(Open Ended Question বর্ধমান রাজ কলেজিয়েট স্কুল)

উত্তর: মার্কিন কবি ল্যাংস্টন হিউজ রচিত ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় কবি জানিয়েছেন, বেঁচে থাকার জন্যে প্রত্যেকের স্বাধীনতার প্রয়োজন।

‘আমরা’ বলতে মানুষেয় কথা বলা হযেছে। পাশাপাশি ‘তোমার’ বলতে শাসকের কথা বলা হযেছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সবসময় চায় দুর্বল দেশগুলির উপরে আধিপত্য বিস্তার করতে। আর মুক্তিকামী মানুষ চায় বেঁচে থাকার অধিকার অর্জন করতে। তাই স্বাধীনতা সবারই প্রয়োজন। কবি রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন- “স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়।”

10. নীচের প্রতিটি শব্দের ব্যাসবাক্যসহ সমাস নির্ণয় করো: স্বাধীনতা, দুকাঠা, আগামীকাল, বীজপ্রবাহ

উত্তর :

স্বাধীনতা : স্ব-এর অধীনতা সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস

দুকাঠা : দুই কাঠার সমাহার দ্বিগু সমাস

আগামীকাল : আগামী যে কাল কর্মধারয় সমাস

বীজপ্রবাহ: বীজ থেকে বীজে যে প্রবাহ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস

11. স্বাধীনতা নিয়ে লেখা আরো দুটি কবিতার উল্লেখ করো এবং এই কবিতার সঙ্গে তাদের তুলনামূলক আলোচনা করো।

উত্তর: স্বাধীনতা নিয়ে আরও দুটি কবিতা হলো-

১. রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়: স্বাধীনতা

২. শামসুর রাহমান: স্বাধীনতা তুমি

উনিশ শতকের প্রেক্ষাপটে রচিত রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতা’ কবিতায় পরাধীন ভারতবর্ষের স্বদেশ চেতনা প্রকাশ পেয়েছে। ব্রিটিশ শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে দেশ স্বাধীনতা লাভ করুক, তবেই দেশের মানুষ স্বর্গসুখ লাভ করতে পারবে। স্বাধীনতার জন্যে কেউ যদি প্রাণ দেয় তাহলে তার থেকে বড়ো আত্মত্যাগ আর কিছু হতে পারে না।

শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতায় স্বাধীনতার পক্ষে কবির অপূর্ব দরদ উচ্চারিত হয়েছে। কবি একের পর এক উপমা চয়ন করে স্বাধীনতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। যাঁরা মহান পুরুষ তাঁরা স্বাধীনতার জন্যে কীভাবে নিজেদের সঁপে দিয়েছেন তার অনুভূতিও এই কবিতায় ধরা পড়েছে।

সুতরাং স্বাধীনতা নিয়ে ল্যাংস্টন হিউজ, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় ও শামসুর রাহমান যে বক্তব্য প্রকাশ করেছেন তার একটি গুরুত্ব চোখে পড়ার মতো। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। সেই স্বাধীনতাকে অর্জন করতে হয় নিঃস্বার্থ লড়াই ও আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। এই কবিতা ও উল্লিখিত কবিতার মূল সুর এটাই।

আদাব

1. Very Short Question Answer

1. সমরেশ বসুর ছদ্মনাম কী?

উত্তর: সমরেশ বসুর ছদ্মনাম হলো-‘কালকূট’। এছাড়া তিনি ‘ভ্রমর’ নামেও লিখতেন।

2. তাঁর লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।

উত্তর: সমরেশ বসুর লেখা দুট উপন্যাস হলো-‘বি.টি রোডের ধারে’ ও ‘শ্রীমতী কাফে’।

3. কোন্ সময়পর্বের কথা গল্পে রয়েছে?

উত্তর: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে হওয়া দাঙ্গার কালপর্বের কথা গল্পে বলা হয়েছে।

4. ‘ডাস্টবিনের দুই পাশে দুটি প্রাণী’-প্রাণীদুটির পরিচয় দাও?

উত্তর: দুটি প্রাণী বলতে একজন মাঝি এবং অন্যজন সুতাকলের মজুরকে বোঝানো হয়েছে।

5. ‘ওইটার মধ্যে কী আছে?’-বক্তা কীসের প্রতি ইঙ্গিত করে?

উত্তর: বক্তা হলো সুতা মজুর। সে মাঝির বগলে থাকা পুঁটলির প্রতি ইঙ্গিত করেছে।

6. গল্পে কোন্ নদীর প্রসঙ্গ রয়েছে?

উত্তর: গল্পে বুড়িগঙ্গা নদীর প্রসঙ্গ রয়েছে।

2. Short Question Answer

1. সুতা-মজুরের ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ফুটে উঠল…’-তার এই হাসির কারণ কী?

উত্তর: সুতা মজুর মনে মনে ভাবে নৌকার এই মাঝি যখন বাড়ি ফিরবে তখন তার পত্নী আবেগ ভরা গলায় বলবে-মরণের মুখ থেকে সে বেঁচে এসেছে; এর উত্তরে মাঝি কী বলবে তা ভেবে সুতা মজুরের ঠোঁটের কোণে একটু হাসির রেখা ফুটে ওঠে।

3. Long Question Answer

1. ‘শহরে ১৪৪ ধারা আর কারফিউ অর্ডার জারী হয়েছে।’- লেখকের অনুসরণে গল্পঘটনার রাতের দৃশ্য বর্ণনা করো।

উত্তর: হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গার প্রেক্ষিতে সমরেশ বসু লেখেন ‘আদাব’ গল্পটি। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক নেতারা মানুষের মধ্যে শুধু বিভেদের প্রাচীর গড়ে দিয়েছিল। ফলে একে অন্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে ছুটে এসেছিল। এমন এক অবস্থায় দুজন মানুষ অত্যন্ত ভয়ার্ত হয়ে একটি ডাস্টবিনের পাশে আশ্রয় নেয়।

চারপাশে তখন সেনাবাহিনি ও পুলিশ কর্মীর দাপাদাপি। ডাস্টবিনের আড়ালে বসে থাকা দুজন মানুষ একে অপরের সঙ্গে কথা বলেছিল। দুজন-দুজনার প্রতি সহমর্মী হয়ে উঠেছিল। তারা এক ভয়ংকর মৃত্যুমুখী পরিবেশের সামনে দাঁড়িয়ে যেভাবে আতঙ্কিত হয়েছিল, লেখক সেই রাতের অপূর্ব বর্ণনা করেছেন।

2. ‘হঠাৎ ডাস্টবিনটা একটু নড়ে উঠল।’- ‘ডাস্টবিন নড়ে ওঠা’র অব্যবহিত পরে কী দেখা গেল?

উত্তর: দুটো রাস্তার সংযোগস্থলে একটি ডাস্টবিন পড়েছিল। সেই ডাস্টবিনের কাছে আশ্রয় নেওয়ার সময় স্পষ্টই বোঝা যায়, আর একজন মানুষ সেখানে আছে। তখন একে অন্যের প্রতি সন্দেহ করে। প্রথমে মনে হয় নিশ্চয় কোনো চতুষ্পদ প্রাণী এখানে আছে। একসময় খানিকটা ভয় ও কৌতূহলের সঙ্গে দেখা যায়, ডাস্টবিনের ওপাশ থেকে আর একজন মানুষ একই ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে অন্যজনকে বোঝার চেষ্টা করছে। সুতরাং ‘আদাব’ গল্পে ভীতপ্রদ একটি পরিবেশ তৈরি করার জন্যে লেখক ডাস্টবিন নড়ে ওঠার প্রসঙ্গকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

3. হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতির আবহ গল্পে কীভাবে রচিত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো। (Open Ended Question

উত্তর: নেতাদের পারস্পরিক স্বার্থপরতার কারণে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস, ভয়, ঘৃণা, হিংসা এবং রক্তক্ষয়ী পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ‘আদাব’ গল্পে দেখা যায় ডাস্টবিনের আড়ালে দুজন মানুষ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে। তাদের দুজনের মনে প্রবল সংশয় দেখা যায়। এই সংশয়ের কারণ হলো-তারা একে অন্যকে বোঝার চেষ্টা করে। উভয়ের মনে হয় পাশের মানুষটি গুপ্ত ঘাতকের কাজ করবে কিনা।

কিছুক্ষণ একসঙ্গে কাটানোর পর তারা এই সত্যে উপনীত হয় যে, তাদের মধ্যে কোনো ষড়যন্ত্রী মন নেই। সুতা মজুরকে নৌকার মাঝি প্রশ্ন করে-এসব মার-দাঙ্গা-কাটাকুটি-খুনোখুনি করে লাভ কী? তারা দুজন দুজনের সঙ্গে কথা বলে। একসময় উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়। মাঝি চলে যাওয়ার সময় বলে-এই রাতের কথা সে কখনও ভুলবে না। কপালে থাকলে আবার দেখা হবে।

এভাবে উভয়ের মধ্যে গভীর এক সম্প্রীতির বোধ সঞ্চারিত হয়। সমরেশ বসুর ‘আদাব’ হলো বিশুদ্ধ মানবিকতাবোধে উদ্দীপ্ত সম্প্রীতির গল্প।

4. ‘মুহূর্তগুলিও কাটে যেন মৃত্যুর প্রতীক্ষার মতো’।-সেই বুদ্ধ উত্তেজনাকর মুহূর্তগুলির ছবি গল্পে কীভাবে ধরা পড়েছে তা দৃষ্টান্তসহ আলোচনা করো।

উত্তর: হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার প্রেক্ষিতে সমরেশ বসু লেখেন ‘আদাব’ গল্পটি। এই গল্পে সমকালের অন্ধ সাম্প্রদায়িকতা ধরা পড়েছে। ডাস্টবিনের পাশে দুজন অপিরিচিত মানুষ প্রবল সংশয় ও সন্দেহ নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে কথা বলেছে। একে অন্যের জাতি ও ধর্ম সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। গভীর আতঙ্কে দুজন নিজেদের মধ্যে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করেছে বিপরীত মানুষটি গোপন কোনো অভিসন্ধি নিয়ে ক্ষতি করতে চায় কিনা।

তারা যখন একে অন্যের সঙ্গে গল্প করছে এবং পরিস্থিতিটাকে বোঝার চেষ্টা করছে তখন বাইরে প্রবল উত্তেজনা। চারিদিকে সেনাবাহিনীর টহল। পাশাপাশি বন্দুকধারী পুলিশ ঘুরছে। অর্থাৎ চারপাশ জুড়ে রয়েছে মৃত্যুর ইশারাময় সংকেত। সুতরাং ‘আদাব’ গল্পের মধ্যে এমন এক পরিবেশের ছবি অঙ্কিত হয়েছে যেখানে পদে পদে মৃত্যুভয় অপেক্ষা করেছে।

এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে মুসলমান মাঝি জানায়, তার কাছে ইদের পোশাক পরিচ্ছদ রয়েছে। সুতরাং তাকে বাড়ি ফিরতেই হবে। এই কথাগুলি শুনে হিন্দু সুতাকলের মজুরের মনে কষ্ট হয়। যখন নৌকার মাঝি বিদায় নিয়ে চলে যায়, ঠিক সেই সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। মাঝি যেভাবে মৃত্যুর আগে তার আক্ষেপের কথা শোনায় তা আমাদের মনকে ব্যথিত করে।

5. ‘এমনভাবে মানুষ নির্মম নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে কী করে?’- উদ্ধৃতিটির আলোকে সেই সময়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটটি আলোচনা করো। (Open Ended Question)

উত্তর: ব্রিটিশ সরকারের ‘ডিভাইড অ্যান্ড বুল’ নীতির ফলে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক বিদ্বেষের বিষ ছড়িয়ে পড়ে। শহর জুড়ে শুধু হানাহানি দেখা যায়। গুপ্তহত্যা, লুঠতরাজ, ১৪৪ ধারা, সেনাবাহিনির অত্যাচার-সব মিলিয়ে এক আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। চারিদিকে চিৎকার, কান্না, আর্তনাদ শোনা যায়।

এমন এক ভয়ংকর পরিবেশকে সামনে রেখে সমরেশ বসু লিখেছেন ‘আদাব’ গল্পটি। দাঙ্গা বিধ্বস্ত শহরে দুজন অচেনা-অজানা মানুষ মুখোমুখি বসে এমন এক নিষ্ঠুর অবস্থার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে চেয়েছে। বস্তুত, এই গল্পে ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা বিধ্বস্ত সময় ও সংকটের বিশ্বস্ত ছবি তুলে ধরেছেন সমরেশ বসু।

6. ‘রাত্রির নিস্তব্ধতাকে কাঁপিয়ে দিয়ে মিলিটারি টহলদার গাড়িটা একবার ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে একটা পাক খেয়ে গেল।’

উত্তর: উৎসঃ  ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে।

প্রসঙ্গঃ দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অবস্থান সম্পর্কে এই প্রসঙ্গটি এসেছে।

তাৎপর্যঃ দাঙ্গা মোকাবিলার জন্যে শহরজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা। এক-এক সময় শোনা যাচ্ছিল লুঠেরার উল্লাস ধ্বনি। কখনও শোনা যাচ্ছিল মৃত্যু ভয়ে ভীত মানুষের আর্তনাদ। রাত্রির নিস্তব্ধতা নেমে এলে মিলিটারির টহলদার গাড়ির ভিক্টোরিয়া পার্কের পাশ দিয়ে পাক খেয়ে যাওয়ার শব্দ-রীতিমতো পরিবেশের আতঙ্ককে আরও বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছিল।

7. ‘ডাস্টবিনের দুইপাশে দুটি প্রাণী, নিস্পন্দ নিশ্চল।’

উত্তর: উৎসঃ বিশ শতকের চল্লিশের দশকের প্রখ্যাত কথাকার সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। প্রসঙ্গ ৩ দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতে পারস্পরিক সন্দেহ-ভয়- আতঙ্ক থেকে এই প্রসঙ্গটি এসেছে।

তাৎপর্যঃ পরস্পর বিপরীত দুদিক থেকে দুটি গলির দুটি মুখ যে বড়ো একটি জায়গায় মিশেছে, সেই মোড়ে দুজন ভীত সন্ত্রস্ত লোক পড়ে থাকা একটি ডাস্টবিনের আড়ালে আত্মগোপন করে। দুজন পরস্পরের মধ্যে ভাব বিনিময় করতে চায়। কিন্তু দুজনের মনেই প্রবল সংশয়। কেননা, দুজন জানতে চাইছে তারা কে কোন্ জাতি ও ধর্মের মানুষ। দুজনেই দুজনকে সন্দেহ করে-তাদের কে হিন্দু, কে মুসলমান? সেই অস্বস্তিকর পরিবেশে লেখক উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

8. ‘স্থান-কাল ভুলে রাগে-দুঃখে মাঝি প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে।’

উত্তর: উৎসঃ প্রখ্যাত কথাকার সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে।

প্রসঙ্গঃ মাঝির মনে সন্দেহ জাগে। তার মনে হয় সুতা মজুর তাকে আটকে রেখে কোনো বিপদে ফেলতে চায়। সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি। 

তাৎপর্যঃ বিপদের সম্ভাবনা উপলব্ধি করেই সুতা মজুর মাঝিকে ডাস্টবিনের পাশ থেকে যেতে নিষেধ করেছিল। কিন্তু মাঝি কোনো কথা শোনেনি। মাঝির জেদ দেখে সুতা মজুরের মনেও তখন প্রবল সংশয় ও সন্দেহ দেখা যায়। মাঝিকে সে বলে, মাঝির মতলব ভালো মনে হচ্ছে না। কেননা, সে হয়তো কোনো লোকজন ডেকে এনে সুতা মজুরের ক্ষতি করতে পারে। একথা শুনে মাঝি স্থান-কাল ভুলে রাগে-দুঃখে চেঁচিয়ে ওঠে। কেননা, মাঝি কোনো ক্ষতি করতে চায়নি। মাঝির বক্তব্য থেকে স্পষ্ট অনুমান করা যায়-মাঝির মধ্যেও ছিল এক দরদি মানুষ।

9. ‘অন্ধকারের মধ্যে দু’জোড়া চোখ অবিশ্বাসে উত্তেজনায় আবার বড়ো বড়ো হয়ে উঠল।’

উত্তর: উৎস সমরেশ বসু প্রণীত ‘আদাব’ গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে।

প্রসঙ্গঃ অন্ধকারের মধ্যে অপরিচিত দুজন মানুষ পরস্পরের পরিচয় জানতে চেয়েছিল। তাদের মধ্যে অবিশ্বাস ছিল, সন্দেহ ছিল, সংশয় ছিল। সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি।

তাৎপর্যঃ ডাস্টবিনের পাশে হিন্দু ও মুসলমান পৃথক সম্প্রদায়ের দুজন মানুষ একে অপরকে চেনার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু অন্ধকারের মধ্যে কেউ কাউকে বুঝতে পারছিল না। উভয়ের কথোপকথনের সময় মুসলমান মাঝি দেশলাই কাঠি জ্বালিয়ে ‘সোহান্ আল্লা’ বলে উঠলে সুতা-মজুর চমকে ওঠে। কেননা, সে বুঝতে পারে, তার সামনের মানুষটি মুসলমান। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সামনে দাঁড়িয়ে দুটি মানুষ তখন অসম্ভব অবিশ্বাসে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। লেখক এই বিষয়টি বর্ণনা করতে গিয়ে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

10. ‘সুতো-মজুরের বুকের মধ্যে টনটন করে ওঠে।’

উত্তর: উৎসঃ বিশ শতকের চল্লিশের দশকের প্রখ্যাত কথাকার সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে।

প্রসঙ্গঃ পরিবারের কাছে ফিরতে চেয়েছে মুসলমান মাঝি। কীভাবে সে ফিরবে এ কথা ভেবে সুতা-মজুরের মনের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক এই উক্তি করেছেন।

তাৎপর্যঃ সামনে ইদ। ইদ উপলক্ষে বিরাট আয়োজন। ফলে মুসলমান মাঝিকে বাড়ি ফিরতেই হবে। ইতিমধ্যেই আটদিন অতিবাহিত হয়েছে। সে পরিবারের কোনো খবর পায়নি। আজকে বাড়ি ফেরার প্রয়োজনে সে বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে যাবে। একদিকে মাঝির বাড়ি ফেরা এবং পাশাপাশি মৃত্যুর হাতছানি-এই দুইয়ের মাঝখানে থেকে সুতা-মজুরের মনের মধ্যে সংশয় দেখা দিয়েছে। দেখার বিষয় এই যে, দুজন মানুষ সমস্ত সংশয়-সন্দেহ কাটিয়ে শেষপর্যন্ত একে অন্যের জন্যে মঙ্গল প্রার্থনা করেছে। সুতা-মজুরের বুকের মধ্যে টনটন করে ওঠার অর্থ হলো গভীর এক মমত্ববোধ জেগে ওঠা।

11. ‘ভুলুম না ভাই এই রাত্রের কথা।’

উত্তর: উৎসঃ অসংখ্য কালজয়ী ছোটোগল্প প্রণেতা সমরেশ বসুর ‘আদাব’ গল্প থেকে এই উক্তিটি নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গঃ হিন্দু ও মুসলমান পৃথক দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে কী গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক হতে পারে তা বোঝাতে গিয়ে এই উক্তিটি করা হয়েছে।

তাৎপর্যঃ দীর্ঘক্ষণ কথা বলার পর মুসলমান মাঝি হিন্দু সুতা-মজুরের কাছ থেকে বিদায় নিতে চেয়েছে। ততক্ষণে তাদের মধ্যে গভীর এক হৃদ্য সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তারা একে অন্যের মঙ্গলকামনা করেছে। অর্থাৎ উভয়ের মধ্যে আর সম্পর্কের কোনো সংকট তৈরি হয়নি। খুশির ইদের আগের রাতে মাঝি অত্যন্ত আপ্লুত হয়েছে। পাশাপাশি হিন্দু সুতা-মজুরের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছে মুসলমান মাঝি।

ভয় কি মরণ

1. Very Short Question Answer

1. “হও রে আগুয়ান।”- কাদের এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সমস্ত পরাধীন মানুষকে এগিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে।

2. “আর কি দানব থাকিবে বঙ্গে।”- কবি কাদের দানব বলেছেন?

উত্তর: অত্যাচারী ইংরেজদের কবি মুকুন্দদাস ‘দানব’ বলে চিহ্নিত করেছেন।

2. Short Question Answer

1. “ভয় কি মরণে”- কবি একথা বলেছেন কেন?

উত্তর : স্বাধীনতা আন্দোলন করতে গেলে মৃত্যুকে ভয় পেলে চলবে না। যত বিপর্যয় আসুক না কেন এগিয়ে যেতে হবে। তাই কবি একথা বলেছেন।

2. “মাতঙ্গী মেতেছে আজ”-মাতঙ্গী বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?

উত্তর : ‘মাতঙ্গী’ কথার সাধারণ অর্থ হলো-হস্তিনী। কিন্তু চারণকবি মুকুন্দদাস এখানে ‘মাতঙ্গী’ বলতে দশ মহাবিদ্যার একটি রূপকে স্মরণ করেছেন।

3. “ভূত পিশাচ নাচে”-একথা বলার কারণ কী?
উত্তর : দেবী দুর্গা যেমন অসুর বধ করার জন্যে ভয়ংকরী মূর্তি ধারণ করেছিলেন; এখানে তেমন মূর্তি কল্পনা করা হয়েছে। অর্থাৎ স্বয়ং দেশজননী যেন মহাবিদ্যার রূপে উপস্থিত হয়েছেন।

শিকল-পরার গান

1. Very Short Question Answer

1. কবি কাজী নজরুল ইসলাম কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর : কাজী নজরুল ইসলাম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার অন্তর্গত চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

2. Short Question Answer

1. তিনি কী কী ধরনের গানের রচয়িতা?

উত্তর : কবি কাজী নজরুল ইসলাম রাগপ্রধান, ভক্তিগীতি, গজল, লোকগীতি, দেশাত্মবোধক, হাস্যকৌতুক, প্রেম-বিরহ পর্যায় প্রভৃতি নানা ধরনের গানের রচয়িতা। তবে তাঁর অধিকাংশ জনপ্রিয় গান দেশাত্মবোধক।

2. ‘শিকল-পরা ছল’ বলতে কবি প্রকৃতপক্ষে কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর : কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘শিকল-পরা ছল’ বলতে প্রকৃতপক্ষে পরাধীন ভারতবর্ষে মুক্তকামী মানুষের কারাবরণকে বোঝাতে চেয়েছেন। শিকল পরার ছলনার মধ্যে দিয়েই তারা মাতৃভূমির

শৃঙ্খল-মোচন করতে চায়।

3. “ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়”- ‘বাঁধন-ভয়’ ক্ষয় করতে কারা কোথায় এসেছে?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘শিকল-পরার গান’ কবিতায় পরাধীন ভারতবাসীরা বন্দি হওয়ার ভয় অর্থাৎ ‘বাঁধন-ভয়’ ক্ষয় করতে এসেছে।

4. ‘মুক্তি-পথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা’ কীভাবে রচিত হয়?

উত্তর: স্বাধীনতার লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী মানুষের শিকলের শব্দে মুক্তিপথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা রচিত হয় বলে কবি নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন।

3. Long Question Answer

1. মোদের অস্থি দিয়েই জ্বলবে দেশে আবার বজ্রানল।”- পঙ্ক্তিটিতে ‘আবার’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে কেন?

উত্তর: ভারতীয় পুরাণ ও মিথ থেকে জানা যায়, দধীচি মুনির অস্থি দিয়ে তৈরি হয়েছিল বজ্র। এই বজ্র দিয়ে শক্তিশালী দৈত্যরাজ বৃত্রাসুরকে বধ করা সম্ভব হয়েছিল। একইভাবে দেশবাসীর আত্মবলিদানের মধ্যে দিয়েই বহু আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা আসবে বলে মনে করেন কবি। ‘আবার’ শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে পুনরায় সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হবে বলে কবি বিশ্বাস করেন। বলাবাহুল্য ইংরেজদের বৃত্রাসুরের সঙ্গে কবি তুলনা করেছেন।

2. স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির বাসনা কীভাবে ‘শিকল-পরার গান’ কবিতায় ধরা পড়েছে, তা আলোচনা করো। (মালদা টাউন হাই স্কুল)

উত্তর: ব্রিটিশ শাসকরা ভারতীয়দের উপর অমানুষিক অত্যাচার করেছিলেন। তাঁরা ইচ্ছামতো বিপ্লবীদের কারাগারে রুদ্ধ করে রেখেছিলেন। কবি নজরুল ইসলাম দেখেছিলেন, এই শাসকশ্রেণি শিকল পরিয়ে এদেশের যাঁরা প্রকৃত মুক্তিদূত তাঁদের বন্দি করেছিলেন। সেই শিকল ভেঙে বিপ্লবীদের মুক্ত করতে চেয়েছিলেন কবি। তিনি বিশ্বাস করতেন, ভয় দেখিয়ে কখনও কোনো জাতিকে আটকে রাখা যায় না। কবির স্পষ্ট অভিমত-ভয় দেখিয়ে ব্রিটিশরা দেশ শাসন করছে।

ফলে যাঁরা মানুষের কল্যাণে ব্রিটিশ শাসনকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন, সেই বিপ্লবের অগ্রদূতের উপরেই চলেছিল অমানবিক অত্যাচার। এই লাঞ্ছনাকারীদের বিরুদ্ধে কবি প্রতিবাদ করেছেন ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দধীচি মুনি যেমন নিজের দেহের অস্থি বিসর্জন দিয়ে দেবরাজ ইন্দ্রকে বজ্র নির্মাণ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন; ঠিক তেমনই ভারতবর্ষের দামাল সন্তানরা নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়ে এদেশের মানুষের মুখে হাসি আনতে চেয়েছিলেন। এভাবে স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির বার্তা ধরা পড়েছে ‘শিকল পড়ার গান’ কবিতায়।

3. “বাঁধন-ভয়কে করবো মোরা জয়”- কেন এই বাঁধন? কারা, কীভাবে এই ‘বাঁধন-ভয়’কে জয় করবে?

(আলিপুরদুয়ার হাই স্কুল; চিত্তরঞ্জন হাই স্কুল, পুরুলিয়া) 

উত্তর: কেন এই বাঁধনঃ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ রাজশক্তির শৃঙ্খলিত বাঁধন থেকে মুক্তির কথা বলেছেন কবি নজরুল ইসলাম। বন্দি মানুষের মুক্তির কথা ‘শিকল পরার গান’ কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে। 

বাঁধন-ভয় জয় করার উপায়ঃ শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে ইংরেজ রাজশক্তির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর কথা বলা হয়েছে আলোচ্য এই কবিতায়। স্বাধীনতার জন্যে যাঁরা আন্দোলন করেছেন, তাঁরাই যে শেষপর্যন্ত সমস্ত বন্ধন-ভয় থেকে মুক্ত হয়ে দেশের জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করবেন-এই বার্তা কবি এই কবিতায় দিয়েছেন। লাঞ্ছিত মানুষ একদিন জাগ্রত হবেন, তাঁরা অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন, এই বার্তা এই কবিতায় ধ্বনিত হয়েছে। সুতরাং কবি নজরুল ইসলাম স্পষ্টই বলেছেন, বিপ্লবীকে কখনোই ভয় দেখিয়ে ঘরের মধ্যে বন্দি করা যাবে না। তাঁর অভিমত এমন- “তোমরা ভয় দেখিয়ে করছ শাসন, জয় দেখিয়ে নয়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *