WBBSE Class 8 Bangla Chapter 8 Solution | Bengali Medium

Class 8 Chapter 8 Bengali Medium

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

1. Very Short Question Answer

1. হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত দুটি বই-এর নাম লেখো।

উত্তর : হীরেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত দুটি বই-এর নাম- ইন্দ্রজিতের খাতা ও ইন্দ্রজিতের আসর।

2. কোন্ নামে তিনি সমধিক পরিচিত?

উত্তর: ‘ইন্দ্রজিৎ’ নামে হীরেন্দ্রনাথ দত্ত সমধিক পরিচিত।

2. Long Question Answer

1. শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের প্রথম যুগে যাঁরা রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে বিদ্যালয়ের কাজে এসে যোগ দিয়েছিলেন, এমন কয়েকজনের কথা আলোচনা করো।

উত্তর: শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের প্রথম যুগে যাঁরা রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে বিদ্যালয়ের কাজে এসে যোগ দিয়েছিলেন তাঁদের অনেকেই বঙ্গীয় বিদ্যাচর্চার অঙ্গনে নিজেদের যথাযথ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমোহন সেন, নন্দদুলাল সেনগুপ্ত প্রমুখ।

১. হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অত্যন্ত স্নেহধন্য ছিলেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রহ্মচর্যাশ্রমে সংস্কৃতের অধ্যাপক রূপে • দীর্ঘদিন তিনি পড়িয়েছিলেন। অধ্যাপনাকালেই তিনি কবির অভিপ্রায় অনুসারে ১৩১২ বঙ্গাব্দে ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ সংকলন শুরু করেন। ১৩৫২ বঙ্গাব্দে এই গ্রন্থ রচনার কাজ সমাপ্ত হয়। বিশ্বভারতী তাঁকে ডি.লিট এবং ১৯৫৭ খ্রি. ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি দ্বারা সম্মানিত করে।

২. বিধুশেখর শাস্ত্রী: মাত্র ১৭ বছর বয়সে বিধুশেখর শাস্ত্রী ‘কাব্যতীর্থ’ হন। ১৩১১ বঙ্গাব্দে শান্তিনিকতনে যোগ দেন। তিরিশ বছর বিশ্বভারতীতে অধ্যাপনা করেন। এরপর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং ‘আশুতোষ অধ্যাপক’ পদে নিযুক্ত হন। তিনি ফরাসি, জার্মান, তিব্বতী, চিনা ও ইংরেজি ভাষা অধ্যয়ন করেন। তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৭টি। তার মধ্যে ৩টি ইংরেজি ভাষায়। গ্রন্থগুলিতে ন্যায়, দর্শন, ব্যাকরণ, শব্দকোষ, পালি, বৌদ্ধধর্ম-পরিচয় প্রভৃতি নানা বিচিত্র বিষয়ের সমাবেশ আছে।

৩. ক্ষিতিমোহন সেন: ১৯০৮ খ্রি. রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে ক্ষিতিমোহন সেন বিশ্বভারতীর ব্রহ্মচর্যাশ্রমে যোগদান করেন। বিশ্বভারতী বিদ্যাভবনে অধ্যক্ষরূপে কর্মজীবন শেষ করেন। তাঁর ‘Hinduism’ গ্রন্থটি ফরাসি, জার্মান ও ডাচ্ ভাষায় অনূদিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো-‘কবীর’, ‘ভারতীয় মধ্যযুগের সাধনার ধারা’, ‘দাদু’, ‘ভারতের সংস্কৃতি’, ‘বাংলার সাধনা’, ‘জাতিভেদ’, ‘ভারতের হিন্দু-মুসলমানের যুক্ত সাধনা’, ‘বলাকা কাব্য পরিক্রমা’ ইত্যাদি।

2. ‘এর কৃতিত্ব অনেকাংশে শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য’… – কোন্ কৃতিত্বের কথা বলা হয়েছে? তার বহুলাংশ ‘শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য’ বলে লেখক মনে করেছেন কেন?

উত্তর: কোন্ কৃতিত্ব = এখানে সাধারণ মানুষের দ্বারা অসাধারণ কার্য সম্পাদনের কৃতিত্বের কথা বলা হয়েছে।

এই কৃতিত্ব শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য বলে লেখক মনে করেছেন। কারণ এরূপ মানুষ শান্তিনিকেতন নিজের হাতে তৈরি করেছে।

> ‘শান্তিনিকেতনের প্রাপ্য’ বলে মনে হবার কারণ = শান্তিনিকেতন রবীন্দ্রনাথের সাধনার কেন্দ্রস্থল। এই প্রতিষ্ঠানে এমন অনেকেই ছিলেন যাঁরা সাধারণ হয়েও শেষ পর্যন্ত জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। অর্থাৎ, শান্তিনিকেতনের সান্নিধ্যে এসে তাঁদের জীবনধারা বদলে গিয়েছিল। তাই লেখকের মনে হয়েছে, এইসব বরেণ্য মানুষের বিশ্বজোড়া খ্যাতির মূলে রয়েছে শান্তিনিকেতনের অবদান। তাই উদ্ধৃত বক্তব্যটি প্রকাশ করা হয়েছে।

3. ‘আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতনের দান অপরিসীম।’

  • লেখক এ প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনের কোন্ কোন্ গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উল্লেখ করেছেন?

উত্তর: প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত শান্তিনিকেতনের অবদানকে আলোচনাকালে কতকগুলি বিষয় তুলে ধরেছেন। তাঁর মনে হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে শান্তিনিকেতন সমগ্র বিশ্বকে এই বার্তা দিয়েছে-বিদ্যালয় শুধু বিদ্যাদান করে না, বিদ্যাচর্চার পীঠস্থান হয়েও কাজ করে।

শান্তিনিকেতন আসলে বিদ্যা-বিকিরণের স্থান। বিদ্যার্জনের পথ সুগম করে দেওয়া বিদ্যাকেন্দ্রের অন্যতম প্রধান কর্তব্য। শান্তিনিকেতন এই কর্তব্যটি সম্পন্ন করেছে।

রবীন্দ্রনাথ নিজে তাঁর সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। তিনি যাঁদের আহ্বান করেছিলেন তাঁরাও নিজেদের নিঃশর্তে সমর্পণ করেছেন। ফলে বহু নবীন প্রতিভার জন্ম হয়েছে শান্তিনিকেতনে। তাই প্রাবন্ধিক উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন।

4. ‘আপাতদৃষ্টিতে যে মানুষ সাধারণ তাঁরও প্রচ্ছন্ন সম্ভাবনা রবীন্দ্রনাথের সর্বদর্শী দৃষ্টিতে এড়াতে পারেনি।’ -লেখক এ প্রসঙ্গে কাদের কথা স্মরণ করেছেন? জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় তাঁদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর: স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব = লেখক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত এই প্রসঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধুশেখর শাস্ত্রী, ক্ষিতিমোহন সেন প্রমুখ ব্যক্তিদের কথা স্মরণ করেছেন।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় তাঁদের অবদান = রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্বপ্নের সাধনপীঠ শান্তিনিকেতনে এসে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় জগতের সবথেকে দুর্লভ এক কর্ম করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার বৃহত্তম অভিধান রচনা করেছেন। বিধুশেখর শাস্ত্রী ছিলেন বহু ভাষাবিদ। তিনি ১৭টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি পান। সংস্কৃত পণ্ডিত ক্ষিতিমোহন সেন একাধিক গ্রন্থ লিখেছেন। তাঁর গ্রন্থ হিন্দি, গুজরাটি ও অসমিয়া ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ‘কবীর’, ‘দাদু’, ‘বাংলার বাউল’ তাঁর অসামান্য গ্রন্থ।

5. ‘এঁরা প্রাণপণে সেই দাবি পূরণ করেছেন।’-কাদের কথা বলা হয়েছে? কীই বা সেই দাবি? সেই দাবিপূরণে প্রাণপণে তাঁদের নিয়েজিত হও? তারই বা কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর: কাদের কথা হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধুশেখর শাস্ত্রী ও ক্ষিতিমোহন সেন প্রমুখ ব্যক্তিত্বের কথা বলা হয়েছে।

উল্লিখিত দাবি = রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন নিজেকে নিঃশেষে দান করেছিলেন শান্তিনিকেতনের কাজে; তেমন তিনি যাঁদের সেখানে এনেছিলেন, তাঁরাও নিঃশর্তে সর্বস্ব প্রদান করেছিলেন। এখানে সেই দাবির কথা বলা হয়েছে।

নিয়োজিত হবার কারণ = এই দাবি পূরণের লক্ষ্যে প্রাণপণে তাঁদের নিয়োজিত হওয়ার পিছনে কারণ ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুপ্রেরণা। কবির সান্নিধ্যে এসে তাঁরা জীবন সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শেখেন। ফলে নিজেদের সারস্বত সাধনায় সমর্পণ করেন।

6. শান্তিনিকেতনের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক কীভাবে গড়ে উঠেছিল? প্রবন্ধ অনুসরণে তাঁর সারাজীবনব্যাপী সারস্বত-সাধনার পরিচয় দাও।

উত্তর: শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সম্পর্ক জমিদারি মহল্লা পরিদর্শনকালে আমিনের সেরেস্তায় নিযুক্ত হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে রবীন্দ্রনাথ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তিনি দিনে সেরেস্তার কাজ সেরে রাত্রিতে কী করেন? প্রত্যুত্তরে হরিচরণবাবু বলেছিলেন তিনি সংস্কৃত চর্চা করেন। একখানা বইয়ের পাণ্ডুলিপিও তিনি রবীন্দ্রনাথকে দেখান। সেই পাণ্ডুলিপি দেখে রবীন্দ্রনাথ তার মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছিলেন। সেই থেকে শান্তিনিকেতনের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।

সারস্বত-সাধনার পরিচয় = ১৩০৯ সালে হরিচরণ শান্তিনিকেতনে যোগদান করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অসমাপ্ত গ্রন্থ সমাপ্ত করেন। এরপর কবির আহ্বানে সুবৃহৎ বাংলা অভিধান রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৩১২ সাল থেকে ১৩৫২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ চল্লিশ বছর তিনি এই গ্রন্থ সম্পাদনায় অতিবাহিত করেন। এই মহান কর্মের জন্য তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী স্বর্ণপদক এবং বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তম (ডি.লিট) উপাধিতে ভূষিত হন।

7. রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের পরিচয় প্রবন্ধটিতে কীভাবে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে আলোচনা করো। 

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অসমাপ্ত ‘সংস্কৃত প্রবেশ’ নামক পুস্তকটি রচনার ভার হরিচরণবাবুর হাতে অর্পণ করেন। শান্তিনিকেতনে বসবাসের শুরু থেকে বিদ্যাচর্চায় যে উৎসাহ ও প্রেরণা তিনি কবির কাছ থেকে পেয়েছিলেন, হরিচরণবাবুর কাছে তা ছিল দেবতার আশীর্বাদ স্বরূপ।

এক সময় প্রবল আর্থিক সংকটের কারণে হরিচরণবাবু কলকাতায় ফিরে যান। কবি তখন মহারাজ মণীন্দ্রচন্দ্রের কাছে অনুরোধ করে মাসিক পঞ্চাশ টাকা বৃত্তি ধার্য করিয়েছিলেন। ১০৫ খণ্ডে সমাপ্ত অভিধান-মুদ্রণ শেষ হওয়ার পূর্বে কবি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। হরিচরণবাবু জানিয়েছেন, যিনি তাঁর প্রেরণাদাতা, তাঁর হাতে এর শেষ খণ্ড অর্পণ করতে পারেননি।

জীবনের চল্লিশ বছরের সাধনায় হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় যেন এক মহাযোগী হয়ে উঠেছিলেন। হীরেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন, বাঙালির জীবনে ধৈর্য ও নিষ্ঠার যে অভাব দেখা যায়, সেই অভাব হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ছিল না। এভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে হরিচরণবাবুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যের পরিচয় পাওয়া যায়।

8. ‘একক প্রচেষ্টায় এরূপ বিরাট কাজের দৃষ্টান্ত বিরল।’ -কোন্ কাজের কথা বলা হয়েছে? একে ‘বিরাট কাজ’ বলার কারণ কী? 

উত্তর: কোন্ কাজ এখানে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ রচনার কথা বলা হয়েছে।

বিরাট কাজ বলার কারণ = একে বিরাট কাজ বলার কারণ, এটি হল বাংলা ভাষার বৃহত্তম অভিধান। ৩৭/৩৮ বছর বয়সে তিনি অভিধান গ্রন্থ রচনার কাজে হাত দেন। ১৩১২-১৩৫২ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ১০৫টি খণ্ডে এই বৃহদায়তন গ্রন্থটি মুদ্রিত হয়। এই অভিধানে বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য থেকে বহু দৃষ্টান্ত তুলে ধরে লেখক ভাষার বৈচিত্র্য দেখিয়েছেন। সুতরাং এমন এক দুঃসাধ্য কর্মপ্রয়াসকে ‘বিরাট কাজ’ বলাই সংগত।

9. হরিচরণবাবুকে দেখে তাঁর সম্পর্কিত শ্লোকটি আমার মনে পড়ে যেত’- শ্লোকটি কার লেখা? শ্লোকটি উদ্ধৃত করো।

উত্তর: শ্লোকের রচয়িতা উদ্ধৃত শ্লোকটি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত। শ্লোক শ্লোকটি নিম্নরূপ-

কোথা গো ডুব মেরে রয়েছ তলে 

হরিচরণ! কোন গরতে?

বুঝেছি! শরদ-অবধি জলে 

মুঠাচ্ছ খুব অরথে।

10. হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংকলিত অভিধানটির নাম কী? গ্রন্থটির রচনা, মুদ্রণ ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে নানাবিধ ঘটনার প্রসঙ্গ প্রাবন্ধিক কীভাবে স্মরণ করেছেন?

উত্তর: অভিধানের নাম = হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সংকলিত অভিধানটির নাম ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’। 

গ্রন্থ রচনার ঘটনা = রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে হরিচরণবাবু এই গ্রন্থটি ১৩১২ সাল থেকে ১৩৫২ সালের মধ্যে রচনাকার্য সমাপ্ত করেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে তিনি অক্লান্ত সাধনা করেছিলেন। অর্থকে সুস্পষ্ট করতে বাংলা ও সংস্কৃত সাহিত্য থেকে বহু উদ্ধৃতি গ্রহণ করেছিলেন। গ্রন্থটি মুদ্রণের কাজ শেষ হওয়ার আগে প্রাবন্ধিক তাঁকে শান্তিনিকেতনের লাইব্রেরি গৃহে নিবিষ্ট মনে’ কাজ করতে দেখেছেন। তাছাড়াও তিনি অবসর গ্রহণের পরও নিজের কাজে এত অভিনিবিষ্ট থাকতেন যে, কোনো মাস মাহিনার খবর থাকত না।

11. প্রাবন্ধিকের সঙ্গে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত স্মৃতির প্রসঙ্গ প্রবন্ধে কীরূপ অনন্যতার স্বাদ এনে দিয়েছে তা আলোচনা করো।

উত্তর: প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ব্যক্তিগত স্মৃতির প্রসঙ্গে শান্তিনিকেতনের একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। যখন প্রাবন্ধিক শান্তিনিকেতনের কাজে যোগ দেন, তখন হরিচরণবাবুর অভিধানটির মুদ্রণকার্য সম্পন্ন হয়নি। সেই সময় তিনি হরিচরণবাবুকে লাইব্রেরি গৃহের একটি ছোট্ট কক্ষে একমনে কাজ করতে দেখেছেন।

হরিচরণবাবু যেন শব্দের সমুদ্র থেকে মুঠো মুঠো অর্থ কুড়িয়েছেন। অভিধান ছাপানোর কাজ শেষ হওয়ার পরেও তাঁর সাধনা থামেনি। তাঁর কাজের প্রতি ছিল গভীর নিষ্ঠা। জীবনের শেষপ্রান্তে উপনীত হয়েও কখনো ক্লান্ত হননি। তাঁর গভীর নিষ্ঠা, নিরন্তর বিদ্যাচর্চা ও নিরলস পরিশ্রম নিঃসন্দেহে মুগ্ধ করে।

12. তিনি অভিধান ছাড়াও কয়েকখানা গ্রন্থ রচনা করে গিয়েছেন।’ -হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত অন্যান্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম ও বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর: ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনের সবথেকে বড়ো কাজ। এছাড়া তিনি ম্যাথু আর্নল্ডের ‘শোরাব রোস্তম’ এবং ‘বশিষ্ঠ বিশ্বামিত্র’, ‘কবিকথা মঞ্জুষা’ প্রভৃতি গ্রন্থ অমিত্রাক্ষর ছন্দে অনুবাদ করেছিলেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য ছাত্রপাঠ্য গ্রন্থ: ‘সংস্কৃত প্রবেশ’, ‘পালি প্রবেশ’, ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’, ‘Hints on Sanskrit Translation and Composition’। তাছাড়া ‘কবির কথা’, ‘রবীন্দ্রনাথের কথা’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা।

12. হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর অনুরাগ কীভাবে ব্যক্ত করেছেন, তা বিশদভাবে আলোচনা করো।

উত্তর: প্রাবন্ধিক হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ব্যক্তিগতভাবে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নিজেকে অনেক ঋণী বলে মনে করেছেন। প্রাবন্ধিক খুব কাছের থেকে তাঁকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। গ্রন্থাগারের ছোটো একটি ঘরে হরিচরণবাবু থাকতেন। তখন ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ গ্রন্থের প্রকাশনার কাজ শুরু হয়নি। যদিও গ্রন্থ লেখার কাজ সমাপ্ত হয়ে গিয়েছে। জীবনের সবথেকে মহার্ঘ্য কর্ম তিনি সমাপ্ত করেছেন। প্রাবন্ধিকের মতে, তিনি একজন প্রসন্নচিত্ত ও সাধক মনের মানুষ ছিলেন। আর এজন্য অকৃত্রিম পরিশ্রমের ফসল স্বরূপে ভবিষ্যতের হাতে তুলে দিয়েছেন ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’-এর মতো এই মহামূল্যবান সম্পদ।

কি বৃথা যায়?

1. Very Short Question Answer

1. হেয়ার সাহেবের একজন বন্ধুর নাম লেখো।

উত্তর: হেয়ার সাহেবের একজন বন্ধু হলেন রাজা রামমোহন রায়।

2. “আপনার যাইবার প্রয়োজন নাই।”-কে, কাকে একথা বলেছে?

উত্তর: চন্দ্রশেখর হেয়ার সাহেবকে একথা বলেছে।

.3. “আপনি আমাদের জ্ঞানদাতা পিতা।”-এই উক্তিটি কার?

উত্তর: উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়।

4. মেয়েদের শিক্ষার জন্যে কোন্ ইংরেজ সর্বাধিক ভাবিত ছিলেন?
উত্তর: মেয়েদের শিক্ষার জন্যে তৎকালীন গভর্নর জেনারেলের আইনমন্ত্রী বেথুন সাহেব সর্বাধিক ভাবিত ছিলেন।

2. Short Question Answer

1. দুজন ইংরেজ এদেশের লোককে অকপটে ভালোবাসিতেন।”-এরা কারা?

উত্তর : উদ্ধৃত উক্তিতে যে দুজনের কথা বলা হয়েছে, তাঁরা হলেন-ডেভিড হেয়ার ও ড্রিঙ্ক ওয়াটার বিটন বা বেথুন সাহেব।

2. “সেই নামেই সকলে ইঁহাকে জানে।”- কোন্ নামের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর : ‘বেথুন’ নামের কথা বলা হয়েছে। বাঙালিরা বিটন শব্দের বিকৃত উচ্চারণ করতেন বেথুন। এখানে সেই নামটি শেষ পর্যন্ত অমরত্ব পায়।

3. “তাহারা তো প্রাতঃস্মরণীয় লোক হন নাই?”-এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: হেয়ার সাহেবের পূর্বেও অনেক ঘড়িওয়ালা সাহেব এদেশে এসেছিলেন, কিন্তু তাঁরা কেউ এদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াননি।

ঘুরে দাঁড়াও

1. Very Short Question Answer

 1. প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত সম্পাদিত কবিতা পত্রিকাটির নাম কী?

উত্তর : প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত সম্পাদিত কবিতা পত্রিকাটির নাম হলো ‘অলিন্দ’।

2. তাঁর রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।

উত্তর : প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত রচিত দুটি কাব্যগ্রন্থ হলো- ‘এক ঋতু’ (১৯৫৮), ‘সদর স্ট্রীটের বারান্দা’ (১৯৬৬)।

2. Short Question Answer

1. কবিতায় কবি কোন্ আহ্বান জানিয়েছেন?

উত্তর: কবির আহ্বান কবি প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত ‘ঘুরে দাঁড়াও’ কবিতায় প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন। ক্রমাগত প্রতিকূলতার সামনে দাঁড়িয়ে পিছিয়ে না গিয়ে পরিস্থিতিকে

বদলে ফেলার জন্যে কবি আহ্বান করেছেন।

3. Long Question Answer

 1. ‘ছোট্ট একটা তুক করে বাইরেটা পালটে দাও’- ‘বাইরে টায় কী ধরনের বদল ঘটবে বলে কবি আশা করেন? সেই কাঙ্ক্ষিত বদল ঘটলে জীবন কীভাবে অন্যরকম হবে বলে কবি মনে করেন?

উত্তর: কবির আশা = কবি প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত মনে করেন মানুষ যদি একবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে, যদি সে বাইরের জগৎটাকে তুক করে ফেলতে পারে, তাহলে সাইকেল-রিকশাগুলো শিস দিয়ে বনে-বনান্তরে চলে যাবে। কাদা-ভরতি রাস্তা উঠে পড়বে ছায়াপথের কাছাকাছি। সবুজ-শ্যামল-স্নিগ্ধ গাছগুলি নদীর জলে স্নান করে আসবে। জেগে উঠবে উপান্তের শহরতলি।

কাঙ্ক্ষিত বদল = সেই কাঙ্ক্ষিত বদল ঘটলে মানুষ ইচ্ছে মতো সবকিছুকে পরিবর্তন করে দিতে পারবে। শুধু নিজেকে নয়, প্রকৃতি জীবন ও সমাজ জীবনকেও সে বদলে দিতে পারবে। আর তখন সেই মানুষের সংস্পর্শে সবকিছু দ্রুত পরিবর্তিত হবে।

2. “সরতে সরতে সরতে/তুমি আর কোথায় সরবে?”- কবি কোথা থেকে এই ‘সরণ’ লক্ষ করেছেন? এক্ষেত্রে তাঁর দেওয়া পরামর্শটি কী?

উত্তর: লক্ষণীয় ‘সরণ’ = কবি প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত আপোসে বিশ্বাস করেন না। তিনি হেরে যেতে চান না। তিনি সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অসংগতির বিরুদ্ধে প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চান। তিনি মনে করেন মানুষ যেন পিছাতে পিছাতে শেষ পর্যন্ত বিন্দুতে মিলিয়ে না যায়। এখানে উদ্ধৃত পঙ্ক্তিতে সে কথাই বলা হয়েছে।

কবির পরামর্শ = কবি মনে করেন অসহায়ভাবে সবকিছু মেনে নেওয়ার কোনো মানে নেই। সুতরাং, ঘুরে দাঁড়ানোই ভালো। যদি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয় তাহলে সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সম্ভব হবে। অতএব কবির পরামর্শ, “এখন হাত বাড়াও।”

3. “এবার ঘুরে দাঁড়াও।” আর “এখন ঘুরে দাঁড়াও।”- পঙ্ক্তি দুটিতে ‘এবার’ আর ‘এখন’ শব্দদুটির প্রয়োগ সার্থকতা বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: শব্দ প্রয়োগের সার্থকতা উদ্ধৃত পঙ্ক্তিতে কবি প্রণবেন্দু দাশগুপ্ত প্রথমে বলেছেন, “এবার ঘুরে দাঁড়াও।” অর্থাৎ, মানুষ যেন সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা অর্জন করে।

পরক্ষণে কবি বলেছেন, “এখন ঘুরে দাঁড়াও।” অর্থাৎ এরপর আর ঘুরে দাঁড়ানোর সময় পাওয়া যাবে না। কেননা, মানুষ তখন নিজেকে হারিয়ে ফেলবে। সুতরাং মানুষকে স্থির লক্ষ্যে পৌঁছে যেতে হলে অবশ্যই ঘুরে দাঁড়ানো আবশ্যক।

তাই ‘এবার’ শব্দে ঘুরে দাঁড়ানোর অপরিহার্যতা এবং ‘এখন’ শব্দে এই মুহূর্ত থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করা হয়েছে।

সুভা

1. Very Short Question Answer

 1. জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত কোন্ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত লিখতেন?

উত্তর: ‘ভারতী’ পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত লিখতেন।

2. ভারতের কোন্ প্রতিবেশী দেশে তাঁর লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়?

উত্তর: বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান জাতীয় সংগীত হিসেবে গাওয়া হয়।

3. সুভার প্রকৃত নাম কী?

উত্তর: সুভার প্রকৃত নাম হলো সুভাষিণী।

4. সুভার বাবা কে?

উত্তর: সুভার বাবা হলেন বাণীকণ্ঠ।

5. সুভা কোন্ গ্রামে বাস করত?

উত্তর : সুভা চণ্ডীপুর গ্রামে বাস করত।

6. গল্পে সুভার কোন্ কোন্ বন্ধুর কথা রয়েছে?

উত্তর : গল্পে সুভার দুই অন্তরঙ্গ বন্ধু অর্থাৎ গোয়ালের দুই গাভী-সর্বশী ও পাঙ্গুলির কথা আছে।

7. কে সুভাকে ‘সু’বলে ডাকত?

উত্তর: প্রতাপ সুভাকে সু বলে ডাকত।

2. Long Question Answer

1. ‘সে নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন এবং সঙ্গীহীন’- সুভা সম্পর্কে এ রকম উপমা লেখক ব্যবহার করেছেন কেন?

উত্তর : ‘সুভা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভাষিণী। সে মূক অথচ অসাধারণ মানবিক। সে কথা বলতে পারে না ঠিকই, কিন্তু তার চোখের ভাষা বলে দেয় সে কী বলতে চাইছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-

তাহার চোখের ভাষা অসীম উদার এবং অতলস্পর্শ গভীর। সুভার কথা বলতে গিয়ে লেখক বারবার প্রকৃতির প্রসঙ্গ টেনেছেন। বাক্যহীনা প্রকৃতি আর মূক সুভা অনেকখানি যেন কাছাকাছি। এজন্যে সুভার সমবয়সী ছেলে-মেয়েরা তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইত না। নির্জন দুপুর যেন ‘শব্দহীন’ ও ‘সঙ্গীহীন’ সুভাও তেমন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই দুটি উপমানকে ব্যবহার করে সুভার চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যকে আলোকিত করেছেন।

2. চণ্ডিপুর গ্রামের বর্ণনা দাও।

উত্তর: লেখক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চন্ডিপুর গ্রামের একটি ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এই গ্রামের পাশ দিয়ে একটি নদী বয়ে যেত। সেই নদীটি গৃহস্থ ঘরের মেয়েটির মতো। নদীর দু-পাশের দুটি গ্রামের সঙ্গে একটি সংযোগ রেখা তৈরি হয়েছিল। গ্রামে বিচিত্র কর্মের মানুষজন থাকত। জেলেরা-মাঝিরা মধ্যাহ্নে বিশ্রাম নিতে যেত। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িগুলি ছিল আটচালা। গ্রাম জুড়ে নানা গাছগাছালি ছিল।

3. সুভার সঙ্গে সর্বশী ও পাঙ্গলির সম্পর্ক কী রকম ছিল?

উত্তর: সুভার জীবনে সর্বশী ও পাঙ্গুলির বেশ বড়ো ভূমিকা ছিল। সুভা যখন কোনো কারণে কষ্ট পেত তখন এই মুক প্রাণী দুটি সুভার মনের কষ্ট বুঝতে চাইত। সুভা গোয়াল ঘরে প্রবেশ করে দুই বাহুর দ্বারা সর্বশীর গ্রীবা বেষ্টন করে তার কানের কাছে নিজের গলা ঘষত। পাঙ্গুলি স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে সুভাকে দেখত। সুভা নিয়ম করে তিনবার গোয়াল ঘরে যেত। এছাড়া অপ্রয়োজনেও এই গাভী দুটির কাছে আসত। এরা যেন সুভার মর্মবেদনা বুঝতে পারত। সুভার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে এরা যেন সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করত।

4. “এইজন্য প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝিত”- প্রতাপের কাছে সুভা কীভাবে মর্যাদা পেত, তা গল্প অবলম্বনে লেখো।

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘সুভা’ গল্পের তৃতীয় পরিচ্ছেদে লিখেছেন- 

গোঁসাইদের ছোটো ছেলেটি তাহার নাম প্রতাপ। লোকটি নিতান্ত অকর্মণ্য।

এই অকর্মণ্য প্রতাপের একমাত্র শখ ছিল মাছ ধরা। অপরাহ্নে নদীতীরে তাকে প্রায় দেখা যেত। এই উপলক্ষে সুভার সঙ্গে প্রতাপের প্রায় দিনই সাক্ষাৎ হতো। সে এমন সঙ্গি চাইত, যে অযথা বাক্যব্যয় করবে না। কেননা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-

মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গিই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

এজন্যে সুভাকে পছন্দ করত প্রতাপ এবং আদর করে তাকে ‘সু’ বলে ডাকত।

5. “তাহাদের জাতি ও পরকাল রক্ষা হইল”- কাদের সম্পর্কে এ কথা লেখক বলেছেন। তাঁর এরূপ মন্তব্যের কারণ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: যাদের সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে সুভার বাবা ও মায়ের সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে।

এরূপ মন্তব্যের কারণ = সুভা গল্পের চতুর্থ পরিচ্ছেদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- ‘সুভা’ গল্পের চতুর্থ পরিচ্ছেদে

১. সুভার বয়স ক্রমেই বাড়িয়ে উঠিতেছে।

২. এ দিকে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতামাতা চিন্তিত হইয়া উঠিয়াছে। 

সুভার মা সুভাকে তার গর্ভের কলঙ্ক বলেই মনে করে। সুভার বাবা অবশ্য অন্য সন্তানদের তুলনায় তাকে বেশি স্নেহ করে। সুভার প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাকে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে বিবাহ দেওয়া হয়। কিন্তু পাত্রপক্ষকে জানানো হয় না যে, সে মূক ও বধির। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, কন্যার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে বিবাহের সমস্ত আয়োজন করে সুভার বাবা-মা নিশ্চিন্তে দেশে ফেরে। তাদের এই ভেবে আনন্দ হয় যে, জাতি ও পরকাল রক্ষা পেয়েছে।

6. “প্রকৃতি যেন তাহার ভাষার অভাব পূরণ করিয়া দেয়”- মানুষের ভাষার অভাব কীভাবে প্রকৃতি পূরণ করতে পারে তা আলোচনা করো।

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সুভা’ গল্পের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে লিখেছেন-

প্রকৃতি যেন তাহার ভাষার অভাব পূরণ করিয়া দেয়। যেন তাহার হইয়া কথা কয়।

প্রকৃতি ও সুভার মধ্যে লেখক বিশেষ একটি মিল দেখিয়েছেন। এরা দুজনেই মূক। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কয়েকটি বিষয় এনেছেন এবং দেখিয়েছেন যে তারা কেউ কথা বলতে পারে না। যেমন-

১. নদীর কলধ্বনি

২. লোকের কোলাহল

৩. মাঝির গান

৪. পাখির ডাক

৫. তরুর মর্মর

এই সব মিলে মিশে সমুদ্রের তরঙ্গের মতো সুভার মনের উপকূলে এসে ভেঙে পড়ত। প্রকৃতি মূক হলেও তারও যে একটা ভাষা আছে; সুভা তা উপলব্ধি করত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বসংসারব্যাপী বিস্তৃত হতে দেখেছেন মূক প্রকৃতির নিজস্ব ভাষা। তৃণভূমি থেকে নক্ষত্রলোক পর্যন্ত বিস্তৃত সে ভাষার মর্ম উপলব্ধি করতে পারে সুভা।

7. সুভার সঙ্গে মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব কেমন ছিল তা লেখো।

উত্তর: চন্ডীপুর গ্রামে সমবয়সী বালক-বালিকারা সুভার কথা না বুঝলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন- “সুভার যে গুটিকতক অন্তরঙ্গ বন্ধুর দল ছিল না, তাহা নহে।” এই অন্তরঙ্গ বন্ধুরা হল-

১. গোয়ালের দুটি গাভী

২. ছাগল

৩. বিড়াল শাবক

শেষের দুটি প্রাণীর সঙ্গে ‘সমকক্ষভাবের মৈত্রী’ না থাকলেও এরা যথেষ্ট আনুগত্য প্রকাশ করত। কিন্তু সর্বশী ও পাঙ্গুলির সঙ্গে সুভার আন্তরিক হৃদ্যতা বা অন্তরঙ্গ বন্ধুত্বের গাঢ় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সুভা কখন মিনতি করছে, তা তারা মানুষের অপেক্ষা ভালো বুঝতে পারত। এই দুটি গাভী সুভার মনের সমস্ত অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারত। ফলে সুভার সঙ্গে মনুষ্যেতর প্রাণীর প্রাণের সম্পর্ক রচিত হয়েছিল।

8. শুক্লা দ্বাদশীর রাত্রিতে সুভার মনের অবস্থা কেমন ছিল? তার মনের অবস্থা এরকম হওয়ার কারণ কী?

উত্তর: সুভার মনের অবস্থা শুক্লা দ্বাদশীর রাতে সুভা শয়নগৃহ থেকে বেরিয়ে এসে তার চিরপরিচিত নদীতটে উপস্থিত হয়। বালিকা সুভার মন তখন ব্যথা-বেদনায় দীর্ণ। প্রকৃতিমাকে সুভা যেন দুই বাহুতে জড়িয়ে ধরে বলতে চেয়েছিল-

তুমি আমাকে যাইতে দিও না মা, আমার মতো দুটি বাহু বাড়াইয়া তুমিও আমাকে ধরিয়া রাখো। যদিও প্রকৃতি মা সুভার এই প্রার্থনায় সাড়া দেননি।

মনের অবস্থা এরকম হওয়ার কারণ = সুভা আবাল্যলালিত গ্রামটিকে ত্যাগ করতে চায়নি। সে বিবাহের বাধ্যবাধকতায় জড়িয়ে পড়তে চায়নি। তাই দেখা যায়-

১. বাবার সামনে বসে অঝোরে কেঁদেছিল।

২. বাল্যসঙ্গি সর্বশী ও পাঙ্গুলির কাছে বিদায় নেওয়ায় সময় অশ্রুপ্লাবিত হয়েছিল।

৩. প্রতাপের মাছ ধরার সময় কাছে যায়নি, দূরে ব্যথিত মনটি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল।

সুভা প্রকৃতির বুক থেকে, তার গ্রাম থেকে চিরকালের মতো বিদায় নিতে চায়নি। তাই তার মন ব্যথায় ভরে উঠেছিল।

9. গল্পের একেবারে শেষ বাক্যটি গল্পের ক্ষেত্রে কতখানি প্রয়োজন আলোচনা করো।।

উত্তর: ছোটোগল্পের সমাপ্তি কেমন হবে সেই প্রসঙ্গে ‘সোনার তরী’ কাব্যের ‘বর্ষাযাপন’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লেখেন, “শেষ হয়ে হইল না শেষ”। ‘দেনাপাওনা’, ‘ত্যাগ’, ‘নষ্টনীড়’ গল্পের মতো সুভা গল্পের শেষে লেখক চমৎকার একটি উপসংহার টেনেছেন।

সুভা যে কথা বলতে পারে না, এই সত্য গোপন করেছিল তার পরিবার। বিবাহের পর পাত্র বুঝতে পারে বিবাহিতা এই বালিকা কথা বলতে পারে না। সুতরাং, তার মনে হয়, সুযোগ বুঝে মেয়েটির বাবা পাত্রস্থ করে মুক্ত হয়েছেন।

সুভা অবশ্য তার মনের কথা বোঝাতে পারেনি। সুযোগসন্ধানী বর পুনরায় বিবাহের বন্দোবস্ত করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন-

এবার তাহার স্বামী চক্ষু এবং কর্ণেন্দ্রিয়ের দ্বারা পরীক্ষা করিয়া এক ভাষাবিশিষ্ট কন্যা বিবাহ করিয়া আনিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেখিয়েছেন, সমাজের কাছে পাত্রী যেন সুলভ কোনো পণ্যবস্তু: ইচ্ছামতো তাকে গ্রহণ-বর্জন করা যায়।

10. মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব নিয়ে আরো দু-একটি গল্পের নাম লেখো এবং ‘সুভা’ গল্পটির সঙ্গে তুলনা করো।

উত্তর: মানুষ ও মনুষ্যেতর প্রাণীর বন্ধুত্ব নিয়ে লেখা এরকমই একটি গল্প হলো প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘আদরিণী’। বাংলা ছোটোগল্পের ইতিহাসে এটি অসামান্য একটি গল্প। একটি হাতির সঙ্গে সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্কের গভীরতা এই গল্পের মধ্যে উঠে এসেছে। 

এই গল্পের প্রধান চরিত্র জয়রাম মুখোপাধ্যায়। সে হাতিটিকে গভীরভাবে ভালোবাসে। জয়রাম হাতি কিনেছে পঞ্চান্ন বছর বয়সের কাছাকাছি সময়ে। একসময় অর্থনৈতিক অসহায়তায় আদরিণীকে বিক্রি করার প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। কন্যাতুল্য হাতিটি পিতার মতো স্নেহপ্রবণ জয়রামের থেকে দূরে সরে গিয়ে শেষপর্যন্ত মারা গিয়েছে।

‘সুভা’ গল্পে যেমন দুটি গাভীর সঙ্গে সুভার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রক্ষিত হয়েছে; ‘আদরিণী’ গল্পে তেমন হাতির সঙ্গে জয়রামের একটি মানবিক সম্পর্ক রচিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *