WBBSE Class 10 Bangla Chapter 2 অসুখী একজন Solution | Bengali Medium

Class 10 Bangla Chapter 2 Solution

অসুখী একজন

1. MCQs Question Answer

1. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি যে মূল কবিতার ভাষান্তর, তার কবি হলেন- 

ক পাবলো পিকাসো 

খ) পাবলো নেরুদা

খ) পাবলো নেরুদা

গ) গিউসেপ্নে উনগারেত্তি

উত্তর: ঘ) পেনত্তি সারিকোস্কি

2. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির ইংরেজি তরজমাটি হল- 

ক) The Unhappy Woman 

খ) The Unhapy

গ) The Unhappy One

(ঘ) The Unhappy Man

উত্তর: The Unhappy One

3. ‘অসুখী একজন’ শীর্ষক অনুবাদ-কবিতাটি নবারুণ ভট্টাচার্যের যে কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে-

ক)বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে 

খ) এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না

গ) মুখে মেঘের রুমাল বাঁধা

ঘ) রাতের সার্কাস

উত্তর: ক) বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে

4. কবি পাবলো নেরুদার জন্মস্থান- 

ক) চিলি 

খ) ফ্রান্স 

গ) ইটালি

ঘ) জার্মানি

উত্তর: ক) চিলি

5. কবি পাবলো নেরুদার জীবনকাল-

ক) ১৯০৪-১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ 

খ) ১৯০০-১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ

গ) ১৯০৫-১৯৭৮

(ঘ) ১৯০৭-১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ

উত্তর: ক ১৯০৪-১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ

6. পাবলো নেরুদার আসল নাম-

ক) নেফতালি রেয়েস বাসোয়ালতো 

খ) নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো

(গ) নেফতালি রিকার্দো পাবলো রেয়েস নেরুদা 

(ঘ) নেফতালি রিকার্দো পাবলো রেয়েস নেরুদা বাসোয়ালতো

উত্তর: নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো

7. কবি পাবলো নেরুদা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন- 

ক) ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে

খ) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে 

গ) ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে 

ঘ) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: ঘ ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে

8. নীচের যে কাব্যগ্রন্থটি পাবলো নেরুদার রচিত-

ক) Extravagaria 

খ) Extravaganza 

গ)Ozymandias

ঘ) The Masque of Anarchy

উত্তর: Extravagaria

9. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কবি পাবলো নেরুদার যে কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত, সেটি হল-

ক) Intimacies: Poems of Love 

খ) Extravagaria 

গ) The Captain’s Verses

ঘ) On the Blue Shore of Silence: Poems of the Sea

উত্তর: Extravagaria

10. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”-কথক ছেড়ে দিয়েছেন- 

ক) তাঁর বাড়িকে

খ) তাঁর ঘোড়াটিকে 

গ) একজন মেয়েকে 

ঘ) তাঁর মাকে

উত্তর: (গ) একজন মেয়েকে

11. “সে জানত না”-‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘সে’ বলতে বোঝানো হয়েছে-

ক) গির্জার এক নানকে 

খ) একটা কুকুরকে 

গ)একজন সাধারণ নারীকে 

ঘ) বাড়ির ভৃত্যকে

উত্তর: গ একজন সাধারণ নারীকে

12. ‘সে জানত না’ যে-

ক) কবিতার কথক আর কখনোই ফিরে আসবে না

(খ) কবিতার কথক তাকে ফিরে এসে সঙ্গে নিয়ে যাবে 

গ) যুদ্ধ আসবে রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো

ঘ) সমতলে আগুন ধরে যাবে

উত্তর: (ক) কবিতার কথক আর কখনোই ফিরে আসবে না

13. “একটা কুকুর চলে গেল, হেঁটে গেল”- 

ক) একজন অসুখী মেয়ে

খ) গির্জার এক নান 

গ) শান্ত হলুদ দেবতারা [হালতু আর্য্য বিদ্যালয়]

ঘ) গল্পের কথক 

উত্তর: খ গির্জার এক না

14. “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল।” বৃষ্টিতে যা ধুয়ে দিল- 

ক) পায়ের দাগ 

খ) রক্তের দাগ 

গ) চকের দাগ 

ঘ) চাকার দাগ 

উত্তর:  (ক) পায়ের দাগ

15. “ঘাস জন্মালো রাস্তায়”-কারণ-

(ক) সেই রাস্তা দিয়ে কেউ ফিরে আসেনি

(খ) রাস্তাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল 

ঘ) রাস্তার ওপর মাঠ তৈরি হয়েছিল

উত্তর:  ক) সেই রাস্তা দিয়ে কেউ ফিরে আসেনি

16. “বছরগুলো নেমে এল তারー”

ক) চলার পথে

খ) জীবনের ওপর 

গ) মাথার ওপর 

ঘ) ঘরের দরজায়

উত্তর: গ) মাথার ওপর

17. . “বছরগুলো/নেমে এল তার মাথার ওপর।” বছরগুলোর ‘নেমে আসা’-কে কবিতায় তুলনা করা হয়েছে-

ক) পরপর নেমে-আসা বৃষ্টিফোঁটার সঙ্গে

খ) পরপর নেমে-আসা পাথরের সঙ্গে 

গ) রাস্তায় ঘাস জন্মানোর সঙ্গে

ঘ) শান্ত হলুদ দেবতাদের হাজার বছরের ধ্যানের সঙ্গে

উত্তর: খ পরপর নেমে- আসা পাথরের সঙ্গে

18. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”-সেই মেয়েটি আজও অপেক্ষায়, কারণ- 

ক) সে জানতই না, কথক আর কখনও ফিরে যাবে না তার কাছে 

খ) তার জীবনের সব অবলম্বন যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছে 

গ) সে দুঃখ পেতে ভালোবাসে 

ঘ) সে জানত যুদ্ধ শেষ হলেই কথক তার কাছে ফিরে আসবে

উত্তর: ক) সে জানতই না, কথক আর কখনও ফিরে যাবে না তার কাছে

19. “তারপর যুদ্ধ এল”-যুদ্ধ কেমন? 

(ক) পাহাড়ের আগুনের মতো 

(খ) রক্তের সমুদ্রের মতো 

গ) আগ্নেয়পাহাড়ের মতো 

ঘ) রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো [পর্ষদ নমুনা]

উত্তর: ঘ) রক্তের এক আগ্নেয়- পাহাড়ের মতো

2. Very Short Question Answer

1. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির ইংরেজি তরজমাটির নাম কী?

উত্তর:  ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির ইংরেজি তরজমাটির নাম ‘The Unhappy One’ I

2. Extravagaria কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি কোন্ সময়পর্বে রচিত?

উত্তর:  কবি পাবলো নেরুদা রচিত Extravagaria কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি ১৯৫৭-১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ সময়পর্বে রচিত।

 3. Extravagaria কাব্যগ্রন্থে মোেট ক-টি কবিতা রয়েছে?

উত্তর:  কবি পাবলো নেরুদা রচিত Extravagaria কাব্যগ্রন্থে মোট ৬১টি

কবিতা রয়েছে।

4. কবি পাবলো নেরুদার জীবনকাল নির্দেশ করো।

উত্তর: চিলির প্রখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার জীবনকাল ১৯০৪-১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ।

5. কবি পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম কী?

উত্তর:  কবি পাবলো নেরুদার প্রকৃত নাম নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো।

6. কবি পাবলো নেরুদা কত খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?

উত্তর:  কবি পাবলো নেরুদা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

7. সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”-কোন্ কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে? এই পরিণতির কারণ কী? [মাধ্যমিক, ২০১৮]

উত্তর:  পঙ্ক্তি: ১২-৩২-এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

8. “সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না।”-‘সে’ কে? ‘আমি আর কখনো ফিরে আসব না’ বলার কারণ কী? [মাধ্যমিক, ২০২০]

উত্তর:  পঙ্ক্তি: ১-১১-এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক ৩ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

9. “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।”-‘তারা’ কারা? কেন স্বপ্ন দেখতে পারল না? [মাধ্যমিক, ২০২২]

উত্তর:  পঙ্ক্তি: ১২-৩২-এর ব্যাখ্যাভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক ৫ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

3. Short Question Answer

1. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কার লেখা?

উত্তর:  ‘অসুখী’ একজন’ কবিতাটি চিলির প্রখ্যাত প্রতিবাদী কবি পাবলো নেরুদার লেখা। প্রেমের কবিতাতেও এক আশ্চর্য কণ্ঠস্বরের স্রষ্টা এই কবি।

2. অসুখী একজন’ কবিতাটি কোন্ অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

উত্তর:  পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কবি নবারুণ ভট্টাচার্যের বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে নামের অনুবাদ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

3. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি পাবলো নেরুদার কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা?

উত্তর:  ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি চিলির প্রখ্যাত কবি পাবলো নেরুদার Extravagaria কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা।

4. অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়”-কে কাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন?

উত্তর:  কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কথক তাঁর প্রেমিকাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।

5. . “সে জানত না…”-কার কী না জানার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: কবি যে তাঁর প্রেমিকার কাছে আর কখনও ফিরে আসবেন না, সেই বিষয়টি প্রেমিকার না জানার কথা উদ্ধৃতাংশটিতে বলা হয়েছে।

6. “একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।”-এই ব্যঞ্জনাটি কীভাবে কবিতায় উপস্থাপিত হয়েছে?

উত্তর:  একটা কুকুর বা এক গির্জার নানের হেঁটে যাওয়ার ঘটনাটি উল্লেখের মধ্য দিয়ে একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে যাওয়ার ব্যঞ্জনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

7. “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল…” বৃষ্টি এসে কী ধুয়ে দিল?

উত্তর:  কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বৃষ্টি এসে পথের থেকে কথকের পায়ের দাগ ধুয়ে দিল।

8. “ঘাস জন্মালো রাস্তায়”-ব্যঞ্জনাটি কীসের?

উত্তর:  ‘অসুখী একজন’ কবিতায় রাস্তায় ঘাস জন্মানোর কথা বলার মধ্য দিয়ে যে পথে রেখে যাওয়া কবির পায়ের ছাপ চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার অর্থাৎ কবির স্মৃতি নষ্টের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

9. “নেমে এল তার মাথার ওপর।”-‘মাথার ওপর’ কী নেমে এল?

উত্তর:  কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কথকের জন্য অপেক্ষারতা নারীর ‘মাথার ওপর’ একটার পর একটা বছর নেমে আসার কথা বলা হয়েছে।

10. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় বছরগুলো পাথরের মতো মাথার ওপর নেমে আসার কথা বলা হয়েছে কেন?

উত্তর:  কবিতায় প্রতীক্ষারতা মেয়েটির দুঃসহ, সীমাহীন অপেক্ষাকে মাথার ওপর ক্রমাগত নেমে আসা পাথরের গুরুভারের সঙ্গে তুলনা করে বিচ্ছেদবেদনাময় বছরগুলি অতিক্রান্ত হওয়ার কথাই বলা হয়েছে।

11. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”-‘আমি’ কে? এই ছেড়ে দেওয়ার তাৎপর্য কী? 

উত্তর:  ‘আমি’ বলতে কবি নিজেকে বা কবিতার কথককে বুঝিয়েছেন।

যুদ্ধক্ষেত্রের আহ্বান বিপ্লবী কবিকে ঘর ছাড়তে বাধ্য করে। এই যুদ্ধক্ষেত্র হয়তো বিপ্লবের সশস্ত্র পথ। বৃহত্তর জীবনের এই আহ্বানের কাছে সাংসারিক বন্ধন নেহাৎই তুচ্ছ হয়ে যায়। সেই কারণেই প্রেমিকাকে অনন্ত অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে কবিকে চলে যেতে হয় দূরে। এই বিচ্ছেদের কথাই আলোচ্য অংশে বলা হয়েছে।

12. “আমি চলে গেলাম দূর… দূরে।”-কে, কেন দূরে চলে গিয়েছিলেন?

উত্তর: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমাকে ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছিলেন।

 মানুষ অনেক সময় কর্তব্যের খাতিরে, দেশ ও দশের মুক্তির জন্য বিপ্লবের পথে পা বাড়ায়। সেই পথ আসলে সশস্ত্র সংগ্রামের পথ। সেখান থেকে ফিরে আসা সবসময় সহজ হয় না। এভাবেই স্বদেশকে মুক্তিদানের লক্ষ্যে কবিও তাঁর প্রিয়জনকে ছেড়ে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন।

13. “সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না।”-সে’ কে? ‘আমি আর কখনো ফিরে আসব না’ বলার কারণ কী?

উত্তর:  ‘সে’ বলতে এখানে কবির প্রিয়তমার কথা বলা হয়েছে।

▶ নিজের প্রিয়জনকে ছেড়ে কবি যুদ্ধক্ষেত্র বা সশস্ত্র বিপ্লবের লক্ষ্যে যাত্রা করেছিলেন। ধ্বংস এবং মৃত্যুর ব্যাপকতা সেখানে তীব্রতর। একদিকে বিরুদ্ধ শক্তির প্রবল বাধা, অন্যদিকে পরিবর্তনের স্বপ্ন-এই দ্বন্দ্বে কবির ফিরে আসার পথ একেবারেই মসৃণ নয়। সে কারণেই কবি মন্তব্যটি করেছেন।

14. সমস্ত সমতলে ধরে গেল আগুন…”-কীভাবে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেল?

উত্তর:  কবি পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ভয়াবহ যুদ্ধের কারণে সমস্ত সমতলে আগুন ধরে গেল।

15. “উল্টে পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে”-কী উলটে পড়ল?

অথবা, যুদ্ধের ফলে শান্ত হলুদ দেবতাদের কী পরিণতি হয়েছিল?

উত্তর:  ‘অসুখী একজন’ কবিতায় হাজার বছর ধরে ধ্যানমগ্ন, স্বপ্নে বিভোর পাথুরে দেবতারা যুদ্ধের আঘাতে মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে উলটে পড়লেন।

16. “যেখানে ছিল শহর”- যেখানে শহর ছিল সেখানে যুদ্ধের পরে কী অবস্থা হয়েছিল? [জলপাইগুড়ি জিলা স্কুল]

উত্তর:  যেখানে শহর ছিল, যুদ্ধের পরে সেই শহরে ধ্বংসস্তূপের মাঝে ছড়িয়ে ছিল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা, রক্তের কালো দাগ।

4. Long Question Answer

1. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”-কে কাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন? কীভাবে তাকে রেখে যাওয়া হয়েছিল? এই ছেড়ে যাওয়ার বিশেষত্ব কী ছিল?

উত্তর: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমা মানুষটিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

▶ কবি তাঁর প্রিয়তমাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে পাড়ি দিয়েছিলেন বহুদূরে।

▶ বিপ্লব কিংবা স্বদেশের মুক্তি সংগ্রামের লক্ষ্যেই কবির এই চলে যাওয়া। এই চলে যাওয়ার পরে বহু সময় অতিবাহিত হয়, কবির স্মৃতিও ঝাপসা হতে হতে হারিয়ে যায়। অবশেষে ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’ যুদ্ধ আসে। শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ধ্বংসলীলা চলে। সমস্ত সমতলভূমিতে আগুন ধরে যায়। যে দেবতারা হাজার বছর ধরে ধ্যানমগ্ন ছিল, তারা মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কবির স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি, বারান্দা, গোলাপি গাছ, প্রাচীন জলতরঙ্গ-সহ সব কিছুই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়, জ্বলে যায় আগুনে। ধ্বংসের চিহ্ন হিসেবে পড়ে থাকল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা ইত্যাদি। কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও সেই মেয়েটি জেগে থাকল কবির অপেক্ষায়। মেয়েটি জানত না, যুদ্ধ কতটা সর্বনাশা। তাই সে ভাবতেও পারেনি, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কবি আর কোনোদিনই ফিরে আসবেন না। সে অপেক্ষায় থাকল। অন্যদিকে বৃহত্তর জীবনক্ষেত্র ছেড়ে কবিরও আর ফেরা হল না প্রিয়তমা মেয়েটির কাছে।

2 “অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়/আমি চলে গেলাম দূর… দূরে।”-বক্তা চলে যাওয়ার পরে কী কী ঘটেছিল?

উত্তর: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমাকে দরজায় অপেক্ষারত রেখে নিজের পথে এগিয়ে যান। সে পথ বিপ্লবের বা মুক্তিসংগ্রামের। মেয়েটি কিন্তু জানত না যে কর্তব্যের সুকঠিন পথ পেরিয়ে কবির পক্ষে আর ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। তার অপেক্ষার সময় এগিয়ে চলে। বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় চলে যাওয়া মানুষটির পায়ের দাগ, রাস্তায় ঘাস জন্মায়। তারপর যুদ্ধ আসে রক্তের আগ্নেয়পাহাড়ের মতো। শিশুহত্যা ঘটে, মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস হয়। যুদ্ধের তাণ্ডবে দেবতারা মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ধুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। ধ্বংসের এই উন্মত্ততায় বিপ্লবীর স্মৃতির স্মারকগুলোও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। তাঁর সুন্দর বাড়ি, তার বারান্দা, প্রিয় গোলাপি গাছ, ‘ছড়ানো করতলের মতো পাতা চিমনি’, প্রাচীন জলতরঙ্গ- সবকিছুই চূর্ণ হয়ে যায়, জ্বলে যায় আগুনে। শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকে কিছু কাঠকয়লা। রক্তের কালো দাগের সঙ্গে দোমড়ানো লোহা আর পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা যেন পড়ে থাকে ধ্বংসস্তূপের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে। এই ধ্বংস আর রক্তাক্ততার মধ্যে বিপ্লবীর প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষা একইরকমভাবে জেগে থাকে।

3. সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না।”- কার কথা বলা হয়েছে? কোথা থেকে কেন এই না ফেরার কথা বলা হয়েছে? না ফেরার কথা জানা না থাকায় কোন্ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? ১+২+২

উত্তর:  পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার প্রশ্নোদ্ভূত অংশে কবি তাঁর প্রিয়তমার কথা বলেছেন।

▶ কবি এখানে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাঁর না ফেরার কথা জানিয়েছেন। পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছে যে মানুষ, স্বাধীনতা কিংবা শোষণমুক্তিই তার লক্ষ্য। এই লড়াইয়ের পথ কখনোই মসৃণ নয়। তাই বিরুদ্ধ শক্তির প্রবল বাধা এবং প্রত্যাঘাতে মৃত্যুকেই সেখানে স্বাভাবিক বলে গ্রহণ করতে হয়। এই কারণেই কবি ফিরে না আসার কথা বলেছেন।

▶ মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবসময় সামাজিক কর্তব্যকে বুঝতে সক্ষম হয় না। আবেগের সঙ্গে বাস্তবের দূরত্ব তৈরি হয়। কবি বিপ্লবের যে সুকঠিন পথে যাত্রা করেছেন, তার স্বরূপ কবির প্রিয়তমার কাছে তাই স্পষ্ট হয় না। ফলে দরজায় প্রিয় মানুষটির জন্য তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। সপ্তাহের পরে সপ্তাহ, বছরের পর বছর কেটে যায়। সময়ের গতিতে কবির পায়ের ছাপ একদিন বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়, রাস্তা ঢেকে যায় ঘাসে, আরও অনেক বছর কেটে যায়। কিন্তু মেয়েটির অপেক্ষার শেষ হয় না।

4. “একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল।”- কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? বিষয়টি উল্লেখের কারণ আলোচনা করো। ২+৩

উত্তর পাবলো নেরুদা-র ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমা মানুষটিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বিপ্লবের পথে অথবা স্বদেশের মুক্তি সংগ্রামে। পরিচিত সংসারজীবন থেকে এই চলে যাওয়া বহুদূরে। কিন্তু প্রিয়তমা মানুষটি জানত না যে, বিপ্লব বা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। তাই দরজায় দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। সে অপেক্ষা ক্রমশ সীমাহীন হয়ে যায়। সপ্তাহ আর বছরের কেটে যাওয়া সেদিকেই ইঙ্গিত করে।

▶ কবি চলে যান যুদ্ধক্ষেত্রে। অপেক্ষায় জেগে থাকেন তাঁর প্রিয়তমা নারীটি। কিন্তু সময় থেমে থাকে না। রাস্তায় চলে যায় কুকুর, হেঁটে যায় গির্জার নান। অর্থাৎ জীবন তার বিচিত্র আয়োজন নিয়ে এগিয়ে চলে স্বাভাবিক ছন্দে। এরই মধ্যে বৃষ্টি এসে ধুয়ে দেয় কবির পায়ের চিহ্ন। স্মৃতি ক্রমশ বিবর্ণ হতে থাকে। রাস্তায় ঘাস জন্মায়। কবির পায়ের দাগ চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়। ভালোবাসার মানুষের অপেক্ষা চলতেই থাকে। একটার পরে একটা বছর যেন পাথরের মতো মেয়েটির মাথার ওপরে নেমে আসতে থাকে। কিন্তু প্রতীক্ষার অবসান ঘটে না। অপেক্ষার সেই অসীম বিস্তারই যেন উল্লিখিত মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে।

5. “যেখানে ছিল শহর সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা।”-‘অসুখী একজন’ কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখো।

উত্তর: যুদ্ধ মানেই ধ্বংস আর রক্তাক্ততা। পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাতেও শিশু আর বাড়িদের খুন হওয়ার ছবি যুদ্ধের ভয়াবহ চরিত্রকেই তুলে ধরে। যুদ্ধ এসেছিল রক্তের আগ্নেয় পাহাড়ের মতো। সমস্ত সমতল জুড়ে আগুন ধরে গেল। আর তার আগ্রাসনে পুড়ে গেল সবকিছু। শিশুমৃত্যু ঘটল, মানুষের বাসস্থান ধ্বংস হল, ছারখার হয়েগেল সাজানো পৃথিবী। মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে পড়ল শান্ত হলুদ দেবতার মূর্তি। তারাও আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। অর্থাৎ যুদ্ধের আগুনে যেন পুড়ে

গেল মানুষের ঈশ্বরবিশ্বাসও। অথচ এরাই হাজার হাজার বছর ধরে শান্তির প্রতীক হয়ে মন্দিরে অধিষ্ঠিত হয়েছিল। যুদ্ধের আগুনে পুড়ে গেল কবির ফেলে আসা সাধের বাড়িঘর, বারান্দায় টাঙানো ঝুলন্ত বিছানা, বাগান, চিমনি আর প্রাচীন জলতরঙ্গ। যেখানে শহর ছিল সেখানে পড়ে থাকল শহরের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু কাঠকয়লা আর দোমড়ানো লোহা। ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকল পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। জমাট রক্তের কালো দাগ হত্যালীলা এবং ধ্বংসস্তূপের সাক্ষী হয়ে থেকে গেল।

6. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”-এই অপেক্ষার তাৎপর্য সমগ্র কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।

অথবা, 

“আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”-অপেক্ষমান এই নারীর মধ্যে দিয়ে কবি মানবীর ভালোবাসার যে রূপটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন তা পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো। [টাকি রামকৃয় মিশন হাই স্কুল]

উত্তর: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভালোবাসার বিস্তারের কথা বলেছেন। মুক্তির আহ্বানে সাড়া দিয়ে একজন বিপ্লবীকে তার সংসার, পরিজনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়। কবির একান্ত প্রিয় মানুষ এই বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারে না। চলে তার অপেক্ষা। সপ্তাহ শেষ হয়ে বছর চলে যায়, প্রতীক্ষার অবসান হয় না। যুদ্ধ শুরু হয়। সাজানো শহর ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হয়। মানুষ নিরাশ্রয় হয়, শিশুহত্যার মতো নারকীয় ঘটনা ঘটে। ভেঙে পড়ে মন্দিরের প্রতিমা। যে বিপ্লবী যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছিল তার স্মৃতিচিহ্নগুলিও ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় কথকের সুন্দর বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা ইত্যাদি। শহর হয়ে ওঠে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর পাথরের মূর্তির এক ধ্বংসস্তূপ। রক্তের কালো দাগ নিশ্চিত করে দেয় ধ্বংসের উন্মত্ত চেহারাকে। কিন্তু পাথরের উপরে ফুলের মতোই ধ্বংসস্তূপের উপরে জেগে থাকে ভালোবাসা। কবির প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষার শেষ হয় না। কেন-না যুদ্ধ সম্পত্তি বিনষ্ট করতে পারে, জীবনহানি ঘটাতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার অবসান ঘটাতে পারে না।

7. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।”-কোন্ মেয়েটি? তার অপেক্ষায় কার কীভাবে কেটেছে লেখো। ২+৩ [সেন্ট জন’স ডায়াশেসন গার্লস এইচ এস স্কুল]

উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার পরে যে মেয়েটি তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিল, এখানে সেই মেয়েটির কথাই বলা হয়েছে।

▶ পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভালোবাসার বিস্তারের কথা বলেছেন। মুক্তির আহ্বানে সাড়া দিয়ে একজন বিপ্লবীকে তার সংসার, পরিজনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়। কবির একান্ত প্রিয় মানুষ এই বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারে না। চলে তার অপেক্ষা। সপ্তাহ শেষ হয়ে বছর চলে যায়, প্রতীক্ষার অবসান হয় না। যুদ্ধ শুরু হয়। সাজানো শহর ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হয়। মানুষ নিরাশ্রয় হয়, শিশুহত্যার মতো নারকীয় ঘটনা ঘটে। ভেঙে পড়ে মন্দিরের প্রতিমা। যে বিপ্লবী যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছিল তার স্মৃতিচিহ্নগুলিও ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় কথকের সুন্দর বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা ইত্যাদি। শহর হয়ে ওঠে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর পাথরের মূর্তির এক ধ্বংসস্তূপ। রক্তের কালো দাগ নিশ্চিত করে দেয় ধ্বংসের উন্মত্ত চেহারাকে। কিন্তু পাথরের উপরে ফুলের মতোই ধ্বংসস্তূপের উপরে জেগে থাকে ভালোবাসা। কবির প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষার শেষ হয় না। কেন-না যুদ্ধ সম্পত্তি বিনষ্ট করতে পারে, জীবনহানি ঘটাতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার অবসান ঘটাতে পারে না।

8. “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।”-‘সব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তা কীভাবে আগুনে জ্বলে যায় আলোচনা করো। ২+৩

উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতা কবি তাঁর প্রিয় যে বাড়িটিতে থাকতেন সেটি চূর্ণ হয়ে গেল। সেই বারান্দা যার ঝুলন্ত বিছানায় তিনি ঘুমিয়ে থাকতেন সেটিও ধ্বংস হয়ে গেল। চূর্ণ হয়ে গেল প্রিয় গোলাপি গাছ, যার পাতা ছড়ানো করতলের মতো, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ। ‘সব’ শব্দটির দ্বারা এইসব কিছু চূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

▶ বিপ্লবীর পথ-চলা সংগ্রামের দুর্গম পথে। তাই যুদ্ধ সেখানে অনিবার্য। যুদ্ধ আসে রক্তের আগ্নেয়পাহাড়ের মতো। অর্থাৎ ধ্বংস আর রক্তাক্ততাই যুদ্ধের একমাত্র ফল। কবির মতে সমস্ত সমতলভূমিতে ধরে যায় আগুন। সে আগুন অনেক কিছুকেই ধ্বংস করে। ধ্যানমগ্ন দেবতারা চূর্ণ হন। মানুষের আশ্রয় আর অবলম্বন হিসেবে সেটি আর গ্রাহ্য হয় না। অর্থাৎ আগুন লাগে মানুষের দীর্ঘদিনের চিরাচরিত বিশ্বাসেও। তার ফলেই যুদ্ধের আগুনে ছাই হয়ে যায় সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন। বিপ্লবীর যা কিছু প্রিয় এবং একান্তভাবেই নিজস্ব, সেসবই চূর্ণ হয়ে জ্বলে যায়। এই যুদ্ধ যেন এভাবেই ধ্বংসকে নিশ্চিত করে দিয়ে যায়। আগুনের সর্বগ্রাসী তাণ্ডবের চিহ্ন হিসেবে পড়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা ইত্যাদি। এভাবেই সবকিছু আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।

9. সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না।”-কোন্ মেয়েটির? কীসে তার মৃত্যু হল না? কীভাবে তা সম্ভব হল? ১+১+৩

উত্তর: পাবলো নেরুদার লেখা ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যে মেয়েটিকে কবি বিপ্লব অথবা যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময়ে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে গিয়েছিলেন, সেই মেয়েটির কথা বলা হয়েছে।

▶ যুদ্ধেও তার মৃত্যু হল না।

▶ কবি যখন যুদ্ধক্ষেত্রে যান তখন থেকেই কবির প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষার শুরু। সে জানত না যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। ফলে তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। সপ্তাহ আর বছর কেটে যায়। বছরগুলো পাথরের মতো তার মাথার উপরে নেমে আসে। এরপরে যুদ্ধ আসে। ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’ সেই যুদ্ধে মানুষের বাসভূমি আগুনে জ্বলে যায়। দেবতারা চূর্ণ হয়ে মন্দির থেকে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়। কবির ফেলে আসা প্রিয় বাড়ি, বারান্দা, গোলাপি গাছ চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি যাবতীয় স্মৃতিই আগুনে জ্বলে যায়। শহরের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে পড়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা। তার মধ্যেও যখন মেয়েটির অপেক্ষায় জেগে থাকার কথা বলা হয় তা আসলে প্রতীকী। কবি বোঝাতে চান যে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জেগে থাকে ভালোবাসা। যুদ্ধ কোনোদিন জীবনকে পরাজিত করতে পারে না। এভাবেই মেয়েটি বেঁচে থাকে অনন্ত অপেক্ষার মধ্যে দিয়ে।

10. “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে”-অসুখী একজন’ কবিতা অবলম্বনে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: পাবলো নেরুদার Extravagaria গ্রন্থ থেকে গৃহীত একটি কবিতা

‘অসুখী একজন’ নামে তরজমা করেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য। সেই কবিতায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চিরজীবী ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। যুদ্ধ কবির কাছে ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’। শিশুহত্যা, নিরাশ্রয়তা যুদ্ধের ভয়াবহ রূপকে স্পষ্ট করে দেয়। মারণ যুদ্ধের স্পর্শে ছারখার হয়ে যায় পৃথিবী। প্রলয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ধ্বংস হয়ে যায় সব কিছু। যুদ্ধের আগুনে নিঃশেষ হয়ে যায় চারপাশ। মন্দিরের ভিতরে প্রতিমার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের ঈশ্বরত্বও ধ্বংস হয়। যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় লুপ্ত হয়ে যায় কবির সমস্ত স্মৃতি। তাঁর ফেলে আসা সুন্দর বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি যাবতীয় স্মৃতিচিহ্ন, সবই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। যুদ্ধ শুধু আর্থিক ক্ষতি বা জীবনহানি নয়, যুদ্ধ ডেকে আনে মানবিক বিপর্যয়ও। মানুষের স্মৃতির সঞ্চয়কে সে শূন্য করে দেয়। যেসব জিনিসকে আশ্রয় করে অনুভূতির বিস্তার ঘটে সেগুলি যুদ্ধের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়। ঘরছাড়া একজন বিপ্লবীর মধ্যেও ফেলে আসা দিনের জন্য যে আবেগ কাজ করে, তা এই গোপন দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যায়।