Class 7 Chapter 6 Solution
একুশের কবিতা
Short Question Answer
১. “মিশে আছে আমার মায়ের মুখ।”-‘মা’ কে? তিনি কোথায়
মিশে আছেন?***ইও
উত্তর: আশরাফ সিদ্দিকী রচিত ‘একুশের কবিতা’য় মায়ের মুখ বলতে কবি বাংলাভাষাকে বুঝিয়েছেন।
• এই বাংলাভাষা আমাদের বাংলাদেশের জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি গানের সঙ্গে মিশে আছে।
২. ‘তারা ঝরে গেল।’-‘তারা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? ‘তারা’ ঝরে গেল কেন?***
উত্তর: ‘তারা’ বলতে কবি আশরাফ সিদ্দিকী সেই মানুষগুলির কথা বলেছেন, যাঁরা মাতৃভাষার সম্মান বাঁচাতে আন্দোলন করেছিলেন। • ‘তারা’ অর্থাৎ বাংলাভাষী কবিরা পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন। তাই কবি বলেছেন, তারা ‘ঝরে গেলো।’
৩. ‘কত না গানের কলি!’ গানের কলি কার মুখে শোভা পেত?
উত্তর: কবি আশরাফ সিদ্দিকী ‘একুশের কবিতা’য় বাংলা মায়ের তথা বাংলাভাষার গানের কলির কথা বলেছেন। অর্থাৎ বাংলাভাষায় আমাদের দেশের জারি, সারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি গান গাওয়া হয়। বাংলাভাষা হল আমাদের মা। তিনিই আমাদের ভাষা মা। তাঁর মুখেই গানের কলি শোভা পেত।
৪. দিগন্ত কীসে মুখর হয়ে উঠেছে বলে কবি মনে করেন?
উত্তর: কবি আশরাফ সিদ্দিকী মনে করেন, সহস্র পাখির কলতালে
দিগন্ত মুখর হয়ে উঠেছে।
৫. “যিনি এখনো এ মিছিলে”-মিছিলে এসে কে দাঁড়িয়েছেন?
উত্তর: কবি আশরাফ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, মিছিলে এসে আমাদের ভাষা মা অর্থাৎ মাতৃভাষা তাঁর সমস্ত শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
৬. কোথায় গুলির আওয়াজ শোনা গিয়েছিল?
উত্তর: কবি আশরাফ সিদ্দিকী ‘একুশের কবিতা’য় জানিয়েছেন, বিন্নিধানের মাঠের ধারে গুলির, আওয়াজ শোনা গিয়েছিল।
৭. “পড়ে গেল মাটিতে”-কারা মাটিতে পড়ে গেল?
উত্তর: কবি আশরাফ সিদ্দিকী ‘একুশের কবিতা’য় জানিয়েছেন, কয়েকটি – পাখির গান শেষ না হতে তারা মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।
৮.’ইতিহাস থমকে দাঁড়িয়ে লিখে নিল সব’ ‘সব’ বলতে এখানে কী কী বোঝান হয়েছে?***
উত্তর: বিন্নি ধানের মাঠের পাশে কয়েকটা গুলির শব্দ এবং সেই সঙ্গে কয়েকটি পাখির অর্থাৎ মাতৃভাষা প্রেমিকদের গান শেষ না হতেই ঝরে মাটিতে পড়ে যাওয়া। সেই শোকে কালবৈশাখীর ঝড় ওঠা ও মাঠ, হাট, ঘাট, বন, মন কাঁপা-এই সমস্ত কিছুকেই ‘সব’ বলা হয়েছে, যা ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে।
৯. ‘তাই তো সহস্র পাখির কলতানে আজ দিগন্ত মুখর’- ‘সহস্র পাখি’ কাদের বলা হয়েছে?
উত্তর: তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান যখন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের উপরে জোর করে উর্দু ভাষাকে চাপিয়ে দেয়, তখন বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ একযোগে প্রতিবাদ করেছিল। পরবর্তীকালে বাংলা ভাষা যখন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পায়, তখন হাজার হাজার মানুষ আনন্দে মুখরিত হয়েছিল। আনন্দে আপ্লুত এই মানুষদের ‘সহস্র পাখি’ বলা হয়েছে।
১০.’পাখি সব করে রব’-উদ্ধৃতাংশটি কার লেখা কোন্ কবিতার
অংশ? কবিতাটি তাঁর লেখা কোন বইতে রয়েছে?
উত্তর: ১. উদ্ধৃতাংশটি মদনমোহন তর্কালঙ্কারের লেখা। ‘প্রভাত বর্ণন’ কবিতার অংশ।
• কবিতাটি কবির লেখা ‘শিশুশিক্ষা’ (প্রথমভাগ) বইতে রয়েছে।
১১. এই পঙক্তিটি পাঠের সুরকে ‘মন্ত্রের মতো’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: কবি ছোটোবেলায় ওই পঙ্ক্তি পাঠ করেছেন। মন্ত্রকে যেমন পবিত্র শব্দের মতো ব্যবহার করা হয়, তেমন কবিও ওই শব্দবন্ধকে পবিত্র মন্ত্রের মতো পাঠ করেছেন।
১২. এই সুরকে কেন ‘স্মৃতির মধুভাণ্ডার’ বলা হয়েছে? তা কবির
মনে কোন্ স্মৃতি জাগিয়ে তোলে ?***
উত্তর: কবি ছোটোবেলায় যখন পাঠ করতেন ‘পাখি সব করে রব’ তখন কবির মন আনন্দে ভরে উঠত। সেই স্মৃতি আজও মধুর হয়ে কবির মনে রয়েছে। তাই ওই স্মৃতিকে ‘স্মৃতির মধুভাণ্ডার’ বলা হয়েছে।• এই সুর কবির মনে জাগিয়ে তোলে কবির দেশের মাঠ, বন, নদী এবং ভাটিয়ালি, মুর্শিদি সুরের কথা। একই সঙ্গে বিন্নিধানের মাঠের পাশের গুলির শব্দ ও পাখিদের শেষ গান গাওয়া প্রভৃতি স্মৃতির জাগরণ ঘটায়।
১৩.’সেই আমার দেশ-মাঠ-বন-নদী’-দুই বঙ্গ মিলিয়ে তিনটি অরণ্য ও পাঁচটি নদীর নাম লেখো।
উত্তর: তিনটি অরণ্য সুন্দরবন, জলদাপাড়া, গোরুমারা।
• পাঁচটি নদী: পদ্মা, মেঘনা, ভাগীরথী, জলঙ্গী, ইছামতী।
Long Question Answer
১. “সেই শোকে কালবৈশাখীর ঝড় উঠল আকাশে”- কোন্ শোকের কথা বলা হয়েছে? ‘কালবৈশাখীর ঝড়’ কীভাবে আকাশে উঠেছিল?***
উত্তর: কবি আশরাফ সিদ্দিকী বিরচিত ‘একুশের কবিতা’য় দেখা যায় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল যে ভাষাপ্রেমীদের, তাঁদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শোকের কথা এখানে বলা হয়েছে।
• ভাষার অধিকার নিয়ে পাকিস্তানের দমননীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল বাংলাদেশের সহস্রটি কণ্ঠ। এই প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে পাক সেনারা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। প্রাণের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল প্রতিবাদী মিছিল। সমস্ত দেশ একত্রিত হয়েছিল।
মাতৃভাষার সমর্থনে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসায় সংঘবদ্ধ সংগ্রাম করেছিলেন পূর্ববাংলার মানুষরা। ফলে আশরাফ সিদ্দিকী দেখেছিলেন, সেদিনের সেই প্রতিবাদে সমস্ত জায়গা কেঁপেছিল। ইতিহাস থমকে দাঁড়িয়েছিল। পাকিস্তান সরকারবাধ্য হয়েছিলেন মাতৃভাষাকে উচ্চারণের স্বাধীনতা দিতে।
২. ‘একুশের কবিতা’ রচনার প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উত্তর: ১৯৪৭-এ স্বাধীনতা পেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু দেশ ভাগ হয়েছিল। হিন্দুস্থান ও পাকিস্তান- দুটি সমান্তরাল বিভাজন ঘটেছিল। এই পাকিস্তানকে আবার ভৌগোলিক সীমারেখা অনুসারে দুটি বর্গে ভাগ করা হয়েছিল-পূর্ব-পাকিস্তান ও পশ্চিম-পাকিস্তান।
পূর্ব-পাকিস্তানে বাংলার পরিবর্তে উর্দুকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালানো হয়। লাঞ্ছিত হয় বাংলা ভাষা। প্রতিবাদে গর্জে ওঠে সহস্রটি প্রাণ। শুরু হয় মিটিং-মিছিল-প্রতিবাদী আন্দোলন।
১৯৫২-এর ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীরা একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল করেন। সেই মিছিলের উপর খাজা নাজিমুদ্দিন সরকারের পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান যাঁরা, তাঁরা হলেন-
১. আব্দুল সালাম
২. রফিক-উদ্দিন আহমেদ
৩. সফিউর রহমান
৪. আব্দুল বরকত
৫. আব্দুল জব্বর
এই মৃত্যুর প্রতিবাদে সমস্ত দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। পশ্চিম- পাকিস্তান বাধ্য হয় পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলনকে মেনে নিতে। ১৯৭১-এ স্বাধীন জন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের মধ্যে দিয়ে
৩. কবিতাটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর: ১৯৪৭-এ স্বাধীনতা পাবার পর তৎকালীন ভারতবর্ষকে দুটি দেশে ভাগ করে দেওয়া হয়-ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তান দেশটাকে গড়া হয় ভারতবর্ষের পূর্ব ও পশ্চিমদিকের অংশ নিয়ে। যাদের মধ্যে ভৌগোলিক কিংবা ভাষা-সংস্কৃতিগত কোনো যোগাযোগ ছিল না। এই দেশের মূল শাসনের ভার পড়ে পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর।
ফলস্বরূপ পূর্ব পাকিস্তানেও বাংলার বদলে উর্দুকে রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসেবে চালানোর চেষ্টা চলে। মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতায় উত্তাল হয়ে ওঠে পূর্ববঙ্গা তথা পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে খাজা নাজিমুদ্দিন সরকারের পুলিশ গুলি চালায়। মারা যান আব্দুল সালাম, রফিক উদ্দিন আহমেদ, সফিউর রহমান, আবদুল বরকত এবং আব্দুল জব্বার। এঁরাই প্রথম ভাষা শহিদ।
এঁদের মৃত্যুতে পরবর্তী সময়ে গণআন্দোলন তুঙ্গে ওঠে এবং ১৯৭১-এ স্বাধীন জন প্রজাতন্ত্র বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের মধ্যে দিয়ে এই আন্দোলন সমাপ্ত হয়। কবি আশরাফ সিদ্দিকী সেই ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে এবং ওই দিনে শহিদদের স্মরণ করে উক্ত কবিতাটি রচনা করেন। তাই ‘একুশের কবিতা’ নামকরণের মধ্যে দিয়ে কবি যেন অঞ্জলি দিয়েছেন। তাই নামকরণও সম্পূর্ণরূপে সার্থকতা লাভ করেছে।
৪. এই কবিতায় ‘পাখি’ শব্দের ব্যবহার কতখানি সার্থক হয়েছে, তা কবিতার বিভিন্ন পড়ক্তি উদ্ধৃত করে আলোচনা করো
উত্তর: পাখি তার কলকাকলির মাধ্যমে যেমন প্রভাতে মানুষকে জাগিয়ে তোলে, তেমনই সুমিষ্ট কণ্ঠে গানগেয়ে ফেরে এ গাছ থেকে সে গাছ, এ গ্রাম থেকে সে গ্রাম। কবিতায় উদ্ধৃত-‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল’ এই পক্তিটির মধ্যে দিয়ে একটি প্রভাতের সূচনা কীভাবে হয়, তার বর্ণনা করেছেন।
কবি আশরাফ সিদ্দিকী তাঁর কবিতায় একই সঙ্গে নির্মম সকালের বর্ণনাও দিয়েছেন-‘কয়েকটি পাখির গান শেষ না হতেই তারা ঝরে গেলো।/পড়ে গেল মাটিতে’। এখানে পাখি অর্থে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের শরিকদের উল্লেখ করা হয়েছে। মুক্ত আকাশে প্রাণ খুলে গান গেয়ে যাওয়া যাদের স্বপ্ন ছিল।
আবার ‘সহস্র পাখির কলতানে’ বোঝাতে বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় সফল হওয়া আপামর মানুষের আনন্দকে বোঝানো হয়েছে।
৫. ব্যাখ্যা করো।
১. ‘কয়েকটি পাখির গান শেষ না হতেই তারা ঝরে গেলো পড়ে
গেল মাটিতে’।***
উৎস: আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা ‘একুশের কবিতা’ থেকে উদ্ধৃত
পঙ্ক্তিটি নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ: কবি মাতৃভাষার রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে উক্ত পঙ্ক্তিটি যোজনা করেছেন।
ব্যাখ্যা: ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে খাজা নাজিমুদ্দিন সরকারের পুলিশ গুলি চালায়। মারা যান আব্দুল সালাম, রফিকউদ্দিন আহমেদ, সফিউর রহমান, আব্দুল বরকত এবং আব্দুল জব্বার এর মতো কত পাখি। উপরিউক্ত পঙ্ক্তিতে সেই ঘটনার বর্ণনা আছে।
২. ‘সেই শোকে কালবৈশাখীর ঝড় উঠলো আকাশে।’
উত্তর: আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা ‘একুশের কবিতা’ থেকে আলোচ্য
অংশটি গৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ: পাখির কলগান অর্থাৎ মাতৃভাষা প্রেমিকদের গান থেমে যাওয়া
এবং মৃত্যু ঘটার শোক প্রকাশ করতে গিয়ে উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করেছেন
কবি।
ব্যাখ্যা: ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীদের অকথ্য অত্যাচার করে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। তারই শোক প্রকাশ করতে পাখিকে গুলিবিদ্ধকরে মারলে যে অবস্থা হয় ওই আন্দোলনের শরিকদেরও সেভাবে হত্যা করা হয়েছিল। যদিও পরবর্তীকালে বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা রূপে স্বীকৃতি দিলে সহস্র পাখির মতো সহজ বাংলার জনগণ মুক্ত কণ্ঠে কলকাকলিতে মেতে ওঠেন। তাই কবিতায় ‘পাখি’ শব্দের ব্যবহার যথাযথ হয়েছে।
৩. ‘কথায় কথায় কথকতা কতো রূপকথা’।
উত্তর: কবি ও প্রাবন্ধিক আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা ‘একুশের কবিতা’ থেকে এই উক্তিটি সংগৃহীত হয়েছে।
প্রসঙ্গ: কবি বাংলাভাষার স্বরূপ বলতে গিয়ে উক্ত প্রসঙ্গটি করেছেন।
ব্যাখ্যা: রূপকথা হলো লোককথারই একটি অংশ। বাংলাভাষার মধ্যে যে ছড়িয়ে রয়েছে কত ধরনের রূপকথা তার বলে শেষ করা যায় না। মাতৃভাষাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশের বিপ্লবীরা যে আত্মত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা রূপকথার মতোই শোনায়। সেই কথাটি বলতে গিয়ে কবি উপরের উদ্ধৃতিটি করেছেন।
৪. ‘তাই তো আজ দ্যাখো এ মিছিলে এসে দাঁড়িয়েছেন আমার
উত্তর : আশরাফ সিদ্দিকীর লেখা ‘একুশের কবিতা’ থেকে আলোচ্য
অংশটি নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ: বর্তমানে বা ২১ ফেব্রুয়ারির পরবর্তী সময়ের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে কবি উক্ত মন্তব্যটি করেছেন।
ব্যাখ্যা: ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী সময়ে যখন পূর্ববঙ্গে বাংলাভাষাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় তখন বাংলার সমস্ত জনগণ প্রাণ খুলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তারা বাংলাভাষায় নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারে।
কবির মনে হয়েছে, সেই আনন্দে রাস্তায় তখন দেশমাতাও মিছিলে এসে দাঁড়িয়েছে।
৫. টীকা লেখো: জারি, সারি, ভাটিয়ালি, বিন্নি ধান, কথকতা,
রূপকথা, মুর্শিদি।***
জারি: পারসি ‘জারি’ অর্থাৎ শোকপালন এবং বাংলা ‘গান’ এর সমন্বয়ে ‘জারিগান’ কথাটির উৎপত্তি। জারিগানের অর্থ শোক সংগীত। কারবালার প্রান্তরে হজরত মহম্মদের দৌহিত্র হোসেনের এবং পরিবারের অন্যদের শোচনীয় মৃত্যুকে উপলক্ষ্য করে জারিগান রচিত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর সূচনা থেকেই জারিগান রচনার প্রমাণ পাওয়া যায়। মুর্শিদাবাদে এই গান এখনও সমানভাবেই প্রচলিত।
সারি: বাংলা লোকসংগীতের একটি অন্যতম শ্রেণি হল সারিগান। এই গানের বৈশিষ্ট্য হল- ১. মাঝি-মাল্লারা নৌকা করে যখন মাছ শিকারে যায়, বা পারাপারের
কাজ করে তখন তারা এই গান মনের আপন খেয়ালে গায়।
২. এই গানের কোনো নির্দিষ্ট সুর বা তাল নেই।
* ভাটিয়ালি: বাংলা লোকসংগীতের অন্যতম জনপ্রিয় রূপ ভাটিয়ালি
গান। পূর্ববাংলার নীচু অংশ অর্থাৎ ভাটির দিকে নদনদী-প্লাবিত অঞ্চলেই ভাটিয়ালি গানের উদ্ভব ও বিকাশ। যে সব মাঝি মাল্লারা এই অঞ্চলে নৌকা চালায় তারাই এই গান গায়। গায়কের একক অন্তরের আশা-নিরাশা, প্রেমভাবনা এই গানের বিষয়। এর বিশেষত্ব হলো অন্যান্য লোক সংগীতের মতো সুর ধীরে ধীরে ওঠা নামা করে না। চড়া থেকে খাদে নেমে আসে আকস্মিকভাবে। কথা অপেক্ষা ভাটিয়ালি গানে সুরের প্রাধান্য দেখা যায়।
বিন্নিধান: বাংলাদেশের নীচু জমিতে, জমা জলে এই ধান চাষ
হয়। এটি বিশেষ একপ্রকার আউশ ধান। এই ধানের খইয়ের প্রশংসা খুব শোনা যায়। বিভিন্ন লোকছড়ার মধ্যে এই বিন্নিধানের খইয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।
কথকতা: কথকতা হল বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের পাঠ ও ব্যাখ্যা। রামায়ণ, মহাভারত বা বিভিন্ন পুরাণ কাহিনির বিভিন্ন ঘটনা বা কাহিনির উদাহরণসহ পাঠ ও ব্যাখ্যা করেন কথক। কোনো বাড়িতে বিশেষ বিশেষ কিছু পার্বণ উপলক্ষ্যে কথকতার প্রচলন আছে। এছাড়া অনেক ব্রাহ্মণ বিভিন্ন তীর্থস্থানে এই কথকতা আশ্রয় করেই জীবিকা নির্বাহ করে।
রূপকথা: রূপকথা হলো ছেলে ভুলানো নানাকরম কাল্পনিক কাহিনি।যেখানে রাক্ষস, খোকোস, দৈত্য প্রভৃতির সঙ্গে রাজকুমার লড়াই করে
কোনো দূর দ্বীপে বন্দি রাজকুমারীকে উদ্ধার করে। এই রূপকথা আমাদের বাংলা লোকসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
* মুর্শিদি: মুর্শিদি প্রধানত ইসলামীয় সাধনতত্ত্বের গান। তবে এই সাধনতত্ত্বে সহজিয়া সাধনতত্ত্বের প্রভাব আছে। বাস্তব ঘটনাকে অবলম্বন
করে দেহতত্ত্ব বিষয়ক গান, যা মুর্শিদ অর্থাৎ গুরু পরম্পরার মধ্য দিয়ে বহমান থাকে।
প্রত্যয় নির্ণয় করো।
কথকতা- কথ-অক+তা প্রত্যয়।।
মুর্শিদি- মুর্শিদ+ই প্রত্যয়।
মুখর – মুখ+র প্রত্যয়।
পোহাইল– প্র-ভা+ইল প্রত্যয়।
ভাটিয়ালি- ভাটিয়াল+ই প্রত্যয়।
নিম্নরেখ অংশগুলির কারকবিভক্তি নির্ণয় করো।
৯.১ পাখি সব করে রব।
উত্তর: কর্তৃকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৯.২ কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।
উত্তর: অধিকরণকারকে ‘এ’ বিভক্তি।
৯.৩ তাইতো সহস্র পাখির কলতানে আজ দিগন্ত মুখর।
উত্তর: কর্মকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৯.৪ তিনি বাংলা ভাষায় কথা বলতে বড়ো ভালোবাসেন।
উত্তর: কর্মকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।
৯.৫ রাখাল গোরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
উত্তর: কর্তৃকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।