Class 7 Chapter 12 Solution
কুতুব মিনারের কথা
Short Question Answer
১.১ কোন্ সম্রাট ‘অশোকস্তম্ভ’কে দিল্লি নিয়ে এসেছিলেন?
উত্তর: সম্রাট ফিরোজ তুঘলক ‘অশোকস্তম্ভ’কে দিল্লি নিয়ে
এসেছিলেন।
১.২ কুতুবমিনার নামটি কার নামানুসারে রাখা হয়েছে এবং কেন?
উত্তর: কুতুবমিনার নামটি কুতুবউদ্দিন আইবকের নামানুসারে রাখা হয়েছে।
১.৩ কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য আর কে মিনার গড়তে চেষ্টা করেছিলেন?
উত্তর: আলাউদ্দিন খিলজি কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য মিনার গড়তে চেষ্টা করেছিলেন।
১.৪ মিনারেট বা মিনারিকা কী? মিনারের সঙ্গে এর পার্থক্য কোথায়?**
উত্তর: মিনারেট বা মিনারিকা হল মিনারের চেয়ে আকৃতিতে অনেক ছোটো চূড়া।
• উভয়ের পার্থক্য নির্ণয়ে বলা যায় যে মিনার তার নিজস্ব মহিমা ও ক্ষমতার উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে থাকে। আর মসজিদ সমাধি কিংবা অন্য কোনো ইমারতের অঙ্গ হিসেবে মিনারেট বা মিনারিকা গড়ে তোলা হয়।
১.৫ ‘কুতুব মিনার পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার’- এই উদ্ধৃতিটির আলোকে মিনারটির পাঁচটি বিশিষ্টতা উল্লেখ করো।
উত্তর: কুতুব মিনারের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য হলো-১. কুতুব মিনার পাঁচতলার মিনার। ২. প্রথম তলাতে আছে ‘বাঁশি’ ও ‘কোণ’এর পরপর সাজানো নকশা। ৩. তৃতীয় তলাতে আছে শুধু কোণ। ৪. হিন্দু-মুসলমান স্থাপত্য ভাবনার সমন্বয় ঘটেছে কুতুব মিনারের গঠনকার্যে। ৫. কুতুব মিনারের গায়ে অদ্ভুত কারুকার্য দেখা যায়। সমস্ত মিনারটিকে কোমরবন্ধের মতো ঘিরে রয়েছে সারি সারি লতা-পাতা, ফুলের মালা ও চক্রের নকশা।
১.৬ মিনারটির গঠনে হিন্দু-মুসলিম সাংস্কৃতিক মিলনের চেহারাটি কীভাবে ধরা পড়েছে তা লেখো।***
উত্তর: কুতুব মিনারের গঠনকার্যে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতি মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। সমস্ত মিনারটিকে কোমরবন্ধের মতো ঘিরে রয়েছে সারি সারি লতা-পাতা, ফুলের মালা, চক্রের নকশা। এগুলো জাতে হিন্দু এবং এর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে এক সারি অন্তর, অন্তর আরবি লেখার সার-সেগুলো জাতে মুসলমান।সমগ্র মিনারটির পরিকল্পনা করেছে মুসলমান, আর যাবতীয় কারুশিল্প করেছে হিন্দু। ভারতবর্ষে মুসলমানদের সর্বপ্রথম সৃষ্টিকার্যে হিন্দু-মুসলমান মিলে গিয়ে যে অদ্ভুত সাফল্য দেখিয়েছিল তা অসাধারণ। পরবর্তীকালেও এই মিলন অটুট ছিল।
১.৭ কুতুবমিনারের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলতে গিয়ে লেখক আর কোন্ কোন্ স্থাপত্যকীর্তির প্রসঙ্গ এনেছেন?
উত্তর: কুতুবমিনারের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলতে গিয়ে লেখক অশোকস্তম্ভ, তাজমহল, দিল্লির সেক্রেটারিয়েট, রাজভবন এবং কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের প্রসঙ্গ এনেছেন।
১.৮ আলাউদ্দিন খিলজী চেষ্টা করেও কুতুব মিনারের চেয়ে মহত্তর স্থাপত্য গড়তে পারেননি কেন?
উত্তর: একমাত্র আলাউদ্দিন খিলজিই কুতুবমিনারের সমতুল্য আর একটি মিনার তৈরির দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। কুতুবের দুগুণ ঘের দিয়ে তিনি আর একটি মিনার গড়তে আরম্ভ করেন। তাঁর বাসনা ছিল মিনারটি কুতুবের দ্বিগুণ উঁচু হবে। কিন্তু ইমারত মাত্রেরই একটি অপটিমাম সাইজ আছে-অর্থাৎ যার চেয়ে বড়ো হলে ইমারত খারাপ দেখায়, ছোটো হলেও খারাপ দেখায়। সমস্ত শিল্পের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। তাছাড়া মিনার সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই তিনি মারা যান। এর ফলে আলাউদ্দিনের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়।
ব্যাকরণের সহজ পাঠ
১. পদান্তর করো: স্বীকার, পৃথিবী, দুঃসাহস, চিহ্ন।
উত্তর: স্বীকার (বি)- স্বীকৃত (বিণ)। পৃথিবী (বি)- পার্থিব (বিণ)। দুঃসাহস (বি)- দুঃসাহসী (বিণ)। চিহ্ন (বি)- চিহ্নিত (বিণ)
২. সন্ধিবিচ্ছেদ করো: সোৎসাহে, দ্যুলোকে, সন্দেহ, সর্বাঙ্গ।
উত্তর: সোৎসাহে স উৎসাহে, দ্যুলোকে- দিক্ + লোকে, সন্দেহ- সম্ + দেহ, সর্বাঙ্গ- সর্ব অঙ্গ।
৩. বিপরীত শব্দ লেখো: সামঞ্জস্য, সাহস, মিলন, বিখ্যাত।
উত্তর: সামঞ্জস্য-বৈষম্য, সাহস-ভয়, মিলন-বিরহ, বিখ্যাত- কুখ্যাত।
Long Quetion Answer
১. ‘কুতুব পাঁচতলার মিনার।’ কুতুবমিনার সম্পর্কে এই মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।***
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলি কুতুবমিনার দেখে বিস্মিত হয়েছেন। এই মিনার হল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার। লেখক জানিয়েছেন- এর পূর্ববর্তী নিদর্শন এদেশে নেই, ইরান-পুরাণেও নেই… মিনারের ক্ষেত্রে কুতুব প্রথম এবং শেষ এক্সপেরিমেন্ট।
এই মিনারের পাঁচটি তল বড়ো বিচিত্র। যেমন-
ক। প্রথম তলাতে আছে নানা সাজানো নকশা।
খ। দ্বিতীয় তলাতে শুধু বাঁশি।
গ। তৃতীয় তলাতে শুধু কোণ।
ঘ। চতুর্থ ও পঞ্চম তলাতে কী ছিল তার জানার উপায় নেই। কেননা, বজ্রাঘাতে সে দুটি ভেঙে যায়। ফিরোজ শাহ তুলক ও সিকন্দার লোদি এই মিনারটি চতুর্থ ও পঞ্চম তলাটি মেরামত করেন। এই মিনারের সৌন্দর্য আজও বিশ্ববাসীর বিস্ময়ের উদ্রেক করে।
২. “ইমারত তৈরি করা কত সোজা।”- লেখকের একথা বলার কারণ কী?
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলি ‘কুতুবমিনারের কথা’ নামাঙ্কিত গদ্যে মন্তব্য করেছেন-
ইমারত তৈরি কত সোজা! কারিগরের হাতে সেখানে কত অজস্র
মালমশলা!
এ কথা বলার কারণ লেখক বোঝাতে চেয়েছেন কুতুবমিনারের • নির্মাণ কাজ খুব সহজ নয়। আমাদের দেশে নানা সুন্দর ইমারত তৈরি হয়েছে। কিন্তু কুতুবমিনারের বিকল্প আজও তৈরি হয়নি। কত রাজা কুতুবমিনারের নকল করতে চেয়েছেন কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। দেখা গিয়েছে গম্বুজ তৈরি হয়েছে, থাম তৈরি হয়েছে, আর্চ করা হয়েছে; আরও কত কী কাজ করা হয়েছে। কিন্তু কুতুবমিনারের মতো সৌন্দর্য সেগুলিতে আসেনি। লেখক তাই বক্রোক্তি করে বলেছেন, ইমারত তৈরি করা বেশ সহজ কাজ। আসলে ইমারত তৈরি করা যে বেশ সহজ কাজ মজা করে সেই কথাই বলেছেন।
৩. মিনারিকা কী? কুতুবমিনার প্রসঙ্গে মিনারিকার উল্লেখের কারণ কী?
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলি কুতুবমিনার প্রসঙ্গে মিনারিকার কথা বলেছেন। কোনো মসজিদ, সমাধি বা অন্যকোনো ইমারতের অঙ্গ হিসেবে যে মিনার সৃষ্টি করা হয় সেগুলিকেই মিনারিকা বলে।
• কুতুবমিনার এমন এক আশ্চর্য সৃষ্টি যার কোনো বিকল্প হতে পারে না। অনেক রাজা বা সম্রাট চেয়েছিলেন কুতুবের বিকল্প মিনার তৈরি হোক। আলাউদ্দিন খিলজি এমন দুঃসাধ্য কর্মটি করতে চেয়েছিলেন। সৈয়দ মুজতবা আলি লিখেছেন-“একমাত্র তিনিই চেয়েছিলেন কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দিতে। তাই কুতুবের দ্বিগুণ ঘের দিয়ে তিনি আর একটি মিনার গড়তে আরম্ভ করেন।” কুতুবমিনারের পাশাপাশি বেশ কিছু মিনারিকা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তাজের মিনারিকা। এই মিনারিকা ভুবন বিখ্যাত। শিল্পী একে সাদামাটা করেও অপূর্ব রূপ প্রদান করেছেন। বেগম রানি সিপ্রির মসজিদে একটি মধুর দর্শন মিনারিকা বহু ভূপর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কিন্তু এদের কেউ কুতুব মিনারের সমকক্ষ নয়।
৪. রানি সিপ্রির মসজিদের মিনারিকার নিজস্ব মূল্য কেন আছে বলে লেখক মনে করেন?
উত্তর: লেখক সৈয়দ মুজতবা আলি লিখেছেন ‘কুতুবমিনারের কথা’। কুতুব মিনার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রথমেই তিনি বলে নিয়েছেন- “কুতুবমিনার পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার…এর পূর্ববর্তী নিদর্শন এ দেশে নেই, ইরান-তুরানেও নেই।” ফলে যারাই কুতুবমিনারের বিকল্প মিনার করতে চেয়েছেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন। লেখক মুজতবা আলি কুতুবমিনারের চেয়ে আলাদা ধরনের আর একটি মিনারিকা দেখেছিলেন। গুজরাটের আহমদাবাদে এমন একটি অপূর্ব সুন্দর মিনারিকা রয়েছে। রাজা আহমেদ বেগম রানি সিপ্রির উদ্দেশ্যে অসাধারণ একটি মিনারিকা নির্মাণ করেছিলেন। মুজতবা আলি লিখেছেন, গুজরাট ও রাজপুতানার মেয়েদের হাতের মণিবন্ধে যে বিচিত্র আকারের, বিচিত্র দর্শনের অসংখ্য বলয়-কঙ্কন থাকে, এই মিনারিকাতে তেমন সৌন্দর্য রয়েছে। এই মিনারটি দেখলে মনে হয় রাজেশ্বরী সিপ্রি যেন তাঁরই অনুপম হাতখানি আকাশের দিকে মেলে দিয়েছেন। তিনি যেন ভুবনেশ্বরের কপালে তিলক পরিয়ে দিতে চাইছেন। এই মিনারটি কুতুবের অনুকরণে তৈরি নয়। অথচ এটি অদ্বিতীয়। এর নিজস্ব শিল্পমূল্য রয়েছে।
একটি বাক্যে উত্তর দাও:
১. পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার কোন্টি?
উত্তর: পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিনার হল-কুতুবমিনার।
২. কুতুবমিনারের কয়টি তলা?
উত্তর: কুতুবমিনারের পাঁচটি তলা।
৩.সমস্ত মিনারটি কী দিয়ে ঘেরা।
উত্তর: সমস্ত মিনারটি সারি সারি লতা-পাতা, ফুলের মালা, চক্রের নকশা দিয়ে ঘেরা।
৪. মিনারটি কীভাবে ভেঙে পড়েছিল?
উত্তর: মিনারটি বজ্রাঘাতে ভেঙে পড়েছিল।,
৫. মিনারটি কারা মেরামত করেছিলেন?
উত্তর: মিনারটি ফিরোজ তুঘলক এবং সিকন্দর লোদি মেরামত করে। দিয়েছিলেন।
৬. মিনারের খোদাইয়ের কাজ কারা করেছিলেন?
উত্তর: মিনারের খোদাইয়ের কাজ হিন্দু শিল্পীরা করেছিলেন।
৭. কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দিতে চেয়েছিলেন কোন্ রাজা?
উত্তর: আলাউদ্দিন খিলজি কুতুবের সঙ্গে পাল্লা দিতে চেয়েছিলেন।
৮.মিনার কাকে বলে?***
উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলি লিখেছেন, ‘আপন মহিমায় নিজস্ব ক্ষমতায় যে স্তম্ভ দাঁড়ায় তার নাম মিনার’।
৯. মিনারিকা কাকে বলে?***
উত্তর: মসজিদ, সমাধি কিংবা অন্যকোনো ইমারতের অঙ্গ হিসাবে যে মিনার কখনও থাকে, কখনও থাকে না, তার নাম মিনারেট- মিনারিকা।
১০. ভুবনবিখ্যাত একটি মিনারিকার নাম লেখো।
উত্তর: তাজের মিনারিকা ভুবনবিখ্যাত।
১১. আমেদাবাদের নাম কার নাম অনুসারে?
উত্তর: রাজা আহমেদের নাম অনুসারে আমেদাবাগ নামটি হয়েছে।
১২. আমেদাবাদে বিখ্যাত মিনারিকা কোন্টি?
উত্তর: বেগম রানি সিপ্রির মসজিদ আমেদাবাদের বিখ্যাত একটি মিনারিকা।