WBBSE Class 10 Bangla Chapter 8 সিরাজদ্দৈলা Solution | Bengali Medium

Class 10 Bangla Chapter 8 Solution

সিরাজদ্দৈলা

1. Very Short Question Answer

১. ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদৌল্লার চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। [মাধ্যমিক, ২০১৭]

উত্তর:  সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক ১নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

২. “কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা”-কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে? এ কথা বলার কারণ কী? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০১৭]

উত্তর:  অনুচ্ছেদ: ১-৪০-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ১ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

৩. “বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়-মিলিত হিন্দু- মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।”-কাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে? এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০১৮]

উত্তর:  অনুচ্ছেদ: ৪১-১০৯-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ১২ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

৪. “মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন।”-কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০১৮]

উত্তর: অনুচ্ছেদ: ১-৪০-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

৫. “বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।”-কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে? কোন্ দুর্দিনের জন্য তাঁর এই আবেদন? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০১৯]

উত্তর:  অনুচ্ছেদ: ৪১-১০৯-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ১০ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

৬. “ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো!”-বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনোভাব লক্ষ করা যায়? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০১৯]

উত্তর:  অনুচ্ছেদ: ১১০-১৭১-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ১ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

৭. “এইবার হয়তো শেষ যুদ্ধ!”-কোন্ যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? বক্তা এই যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কেন? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০২০]

উত্তর:  অনুচ্ছেদ: ১১০-১৭১-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ৯ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

৮. “দরবার ত্যাগ করতে আমরা বাধ্য হচ্ছি জাঁহাপনা।”-বক্তা কে? তাঁরা কেন দরবার ত্যাগ করতে চান? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০২২]

উত্তর:  অনুচ্ছেদ: ৪১-১০৯-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

৯. “বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আলপনা”-বক্তা কে? কোন্ দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০২২]

উত্তর: অনুচ্ছেদ: ৪১-১০৯-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ১৫ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

১০. “ওকে ওর প্রাসাদে পাঠিয়ে দিন জাঁহাপনা। ওর সঙ্গে থাকতে আমার ভয় হয়।”-বক্তা কে? তার এরকম ভয় হওয়ার কারণ কী? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০২২]

উত্তর: অনুচ্ছেদ: ১১০-১৭১-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ৮ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

১১. “বাংলার মান, বাংলার মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সর্বরকমে আমাকে সাহায্য করুন।”-সিরাজ কাদের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছিলেন? কেন তিনি এই সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছেন? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০২৩]

উত্তর:  অনুচ্ছেদ: ৪১-১০৯-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ১১ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

১২. “এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো।” বক্তা কাকে দরবার ত্যাগ করতে বলেছেন? তাকে দরবার ত্যাগ করতে বলার কারণ কী? ১+৩ [মাধ্যমিক, ২০২৩]

উত্তর:  অনুচ্ছেদ: ১-৪০-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী ৬ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

2. Long Question Answer

১. “কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা!”-কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে? এ কথা বলার কারণ কী?

উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলা তাঁর রাজসভায় উপস্থিত ইংরে জদের প্রতিনিধি ওয়াটসের উদ্দেশে প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।

▶ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং নবাব সিরাজের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘আলিনগরের সন্ধি’ অনুযায়ী, ইংরেজরা কোনোমতেই নবাবের বিরুদ্ধে কোনোরকম যুদ্ধযাত্রা বা যুদ্ধের আয়োজন করবে না। কিন্তু, সিরাজের হাতে কলকাতার অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের একটি পত্র এসে পৌঁছোয়। এই পত্রের মাধ্যমে সিরাজ জানতে পারেন যে, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বে তাঁর বিরুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইতিমধ্যেই সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আরও সৈন্য ও নৌবহরের কথা ভাবছে। তিনি এও জানতে পারেন, বহুদিন আগে থেকেই স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ নবাবের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধযাত্রার ছক কষেছিলেন এবং পরিকল্পনামাফিকই আলিনগরের সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করতে তাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন। সর্বোপরি, নবাবের রাজসভায় উপস্থিত কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসও এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার। তাই ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ সিরাজ ওয়াটসকে প্রকাশ্য রাজসভায় এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছেন।

২. “জান এর শাস্তি কী?”-কে, কেন এ কথা বলেছেন? ১+৩

উত্তর: নবাব সিরাজদ্দৌলা মন্তব্যটি করেছেন।

▶ অ্যাডমিরাল ওয়াটসন কর্তৃক ওয়াটসকে লেখা একটি চিঠি কোনোভাবে নবাবের হাতে এলে তিনি বুঝতে পারেন, ওয়াটস বহুদিন ধরেই সিরাজবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশীদার। লর্ড ক্লাইভের নেতৃত্বে, অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের উদ্যোগে ইংরেজরা বাংলায় সিরাজের বিরুদ্ধে সৈন্যদল পাঠাতে চলেছে। এই যুদ্ধে ওয়াটস যে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত রয়েছে, তা-ও সিরাজ জানতে পারেন ওয়াটসের নিজের হাতে লেখা একটি চিঠি থেকে। সেই চিঠিতে ওয়াটস সরাসরি অ্যাডমিরাল ওয়াটসনকে জানিয়েছেন, সিরাজের ওপরে ভরসা করা অসম্ভব এবং অর্থহীন। ফলে ফরাসি ঘাঁটি চন্দননগর আক্রমণ করাই হবে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। এ ছাড়া, সিরাজ ক্রমশ বুঝতে পেরেছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর দরবারে জায়গা পেয়ে ওয়াটস তাঁর বিরুদ্ধে সভাসদদের উত্তেজিত করেছেন। ওয়াটসই কলকাতার ইংরেজদের উপদেশ দিয়েছেন নবাবের আদেশ লঙ্ঘন করতে। তাই সিরাজ ওয়াটসকে এর যথোচিত শাস্তি দিতে চেয়ে প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি করেছেন।

৩. “আমার এই অক্ষমতার জন্যে তোমরা আমাকে ক্ষমা করো।”-কে, কেন এই মন্তব্য করেছেন? যাঁকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা তাঁর মধ্যে এই মন্তব্যের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? ২+২ [পাঠভবন]

উত্তর: সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।

▶ ইংরেজরা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর অধিকার করলে নবাবের সাহায্যের আশায় মঁসিয়ে লা সিরাজের রাজসভায় আসেন। সিরাজ ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও জানান যে, কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণে তাঁর বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে। তাই তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলও আর নতুন যুদ্ধের

পক্ষপাতী নন। এই অবস্থায় ফরাসিদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও তাদের। সাহায্য করা অসম্ভব জানিয়ে সিরাজ মন্তব্যটি করেন।

▶ উদ্ধৃত মন্তব্যটির উত্তরে মঁসিয়ে লা বলেছিলেন যে, সিরাজের সমস্যার কথা বুঝতে পেরেছেন এবং নবাবের জন্য তিনি আন্তরিকভাবেই দুঃখিত। একইসঙ্গে নিজেদের অবস্থাও তাঁকে কষ্ট দিচ্ছে। ভালোবাসার এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া তাঁদের আর কোনো উপায় নেই। একইসঙ্গে তিনি নবাবকে তাঁর ভাবী বিপদ সম্পর্কেও সচেতন করে দেন। তিনি জানান, তাঁরা বাংলা ছেড়ে চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্তিমিত আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে, আর তাতেই নবাবের সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।

৪. “তোমার কথা আমার চিরদিনই মনে থাকবে।” কার কথা বলা হয়েছে? কেন তাঁর কথা মনে থাকবে?

উত্তর: ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের প্রশ্নোদ্ভূত অংশে নবাব সিরাজের দরবারে উপস্থিত ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লার কথা বলা হয়েছে।

▶ ফরাসিদের প্রতি নবাব সিরাজের বিশেষ দুর্বলতা ছিল। মঁসিয়ে লা-র কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে সিরাজ তা স্বীকারও করেছেন। ফরাসিদের সঙ্গে বাংলা দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা তিনি স্মরণ করেছেন। তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, ফরাসিরা কখনোই নবাবের সঙ্গে অসদ্ব্যবহার করেননি। ইংরেজরা চন্দননগর দখল করে নেওয়ার পরে ফরাসিরা নবাবের কাছে নিরাপত্তা চাইলেও অসহায় নবাব তাদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। কিন্তু এরজন্যে নবাবের মনে গ্লানি তৈরি হয়। মঁসিয়ে লার কাছে তিনি ক্ষমাপ্রার্থনাও করেন। মঁসিয়ে লা-ও এই বন্ধুত্বের খাতিরেই এ-দেশ ছেড়ে তাঁদের চলে যাওয়া অনিবার্য জানিয়ে নবাবকে তাঁর বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দেন। সিরাজ এর মধ্যে মঁসিয়ে লা-র ‘অন্তরের প্রীতি’র পরিচয় দেখতে পান। তাই চিরবিচ্ছেদের মুহূর্তে দাঁড়িয়েও, ফরাসিদের প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা- কে সিরাজ জানিয়েছেন যে, তাঁর কথা নবাবের চিরকাল মনে থাকবে।

৫.”I know we shall never meet”-কে, কাকে এ কথা বলেছেন? এই বক্তব্যের পূর্বপ্রসঙ্গ কী ছিল?

উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার উদ্দেশে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিলেন।

▶ ইংরেজরা বাংলায় ফরাসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আয়োজন শুরু করলে ফরাসিদের পক্ষে তা ঠেকানো মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ, এর আগে ফরাসিরা ইংরেজ আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য দুর্গনির্মাণের চেষ্টা করলে নবাবই তাতে আপত্তি জানান। নবাবের আদেশ ফরাসিরা শিরোধার্য করলেও ইংরেজরা তা মানেনি। তারা ফরাসিদের চন্দননগর কুঠি অধিকার করে নেয় এবং সমস্ত বাণিজ্যকুঠির অধিকার দাবি করে। বিপন্ন ফরাসিদের পক্ষ থেকে মঁসিয়ে লা সামরিক সাহায্যের আশায় নবাবের কাছে আসেন। কিন্তু সিরাজের পক্ষে সেই মুহূর্তে এই প্রত্যাশা পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ, কলকাতা জয়ে এবং পূর্ণিয়ার যুদ্ধে তাঁর লোকবল ও অর্থবল যথেষ্ট কমে যায়। ফলে নবাবের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে ফরাসিদের বাংলা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই বিদায়গ্রহণের মুহূর্তে ব্যথিত মঁসিয়ে লা এ কথা বলেন।

৬. “এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো।”- বক্তা কাকে, কেন দরবার ত্যাগ করার আদেশ দিয়েছিলেন?

অথবা,

 “এই মুহূর্তে তুমি আমার দরবার ত্যাগ করো।”-বক্তা কাকে দরবার ত্যাগ করতে বলেছেন? তাকে দরবার ত্যাগ করতে বলার কারণ কী? ১+৩ [কারমেল হাই স্কুল; রামকৃয় মিশন বিদ্যালয়, নরেন্দ্রপুর] 

উত্তর: সিরাজদ্দৌলা তাঁর দরবারে উপস্থিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নে উদ্ধৃত আদেশটি দিয়েছিলেন।

▶ একাধিক ঘটনায় ইংরেজদের অপরাধ যে সভ্যতা এবং শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে, তা স্পষ্ট করে দেন সিরাজদ্দৌলা। অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্রটিকে সামনে এনে তিনি দেখান যে, সেখানে কর্নেল ক্লাইভের কথামতো কলকাতায় সৈন্যসমাবেশের কথা আছে। চিঠির শেষে লেখা ছিল- “বাংলায় আমি এমন আগুন জ্বালাইব, যাহা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়াও নিভানো যাইবে না।” ওয়াটস এই চিঠির দায় নিতে অস্বীকার করলে নবাব ওয়াটসের লেখা চিঠিটিও বের করেন। সেই চিঠিতে লেখা ছিল যে, নবাবের ওপর নির্ভর করা অসম্ভব এবং অর্থহীন। তাই, চন্দননগর আক্রমণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ। সিরাজ ওয়াটসের বিরুদ্ধে নবাবের সভাসদদের উত্তেজিত করার এবং কলকাতার ইংরেজ প্রশাসনকে নবাবের আদেশ লঙ্ঘনে প্ররোচিত করার অভিযোগও আনেন। আর এসবেরই শাস্তি হিসেবে নবাব সিরাজ ওয়াটসকে দরবার ত্যাগ করার নির্দেশ দেন।

৭. “তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত।”-বক্তা কাদের কাছে কেন লজ্জিত? ১+৩ [নব নালন্দা হাই স্কুল; নিউ ব্যারাকপুর কলোনি গার্লস হাই স্কুল; রানাঘাট দেবনাথ ইন্সটিটিউশন ফর গার্লস; টাকি রামকৃয় মিশন হাই স্কুল]

উত্তর:  ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে জানিয়েছেন যে তিনি ফরাসিদের কাছে লজ্জিত।

▶ মঁসিয়ে লা সিরাজের দরবারে এসেছিলেন ইংরেজদের কাছ থেকে চন্দননগর রক্ষার জন্য নবাবের সাহায্য প্রার্থনা করতে। নবাব ফরাসিদের সঙ্গে বাংলার দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। নবাবের সঙ্গে তারা যে কখনও অসদ্ব্যবহার করেননি সে-কথাও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করেন। আলোচনায় সিরাজ তাঁকে জানান ইংরেজরা যে তাঁর সম্মতি না নিয়ে চন্দননগর অধিকার করেছে, ফরাসিদের সমস্ত বাণিজ্যকুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে-তিনি এসব বিষয়ে অবহিত। কিন্তু কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর প্রচুর লোকক্ষয় এবং অর্থব্যয় হয়েছে। তা ছাড়া নবাবের মন্ত্রীমণ্ডলও নতুন করে কোনো যুদ্ধে আগ্রহী নন। সেই কারণে ফরাসিদের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি

থাকলেও তাঁর পক্ষে যে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এই অক্ষমতার জন্য মঁসিয়ে লা-র কাছে নবাব সিরাজদ্দৌলা ক্ষমাপ্রার্থনা ও লজ্জা প্রকাশ করেছেন।

৮. “মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন।”-কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল? ১+৩

উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য উক্তিটিতে অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের পত্রের কথা বলা হয়েছে। ওয়াটসন সিরাজদ্দৌলার দরবারে ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে এই পত্রটি লিখেছিলেন।

▶ ইংরেজদের অপরাধ যে সভ্যতা এবং শিষ্টাচারের সীমা অতিক্রম করেছে, তা উল্লেখ করতে গিয়ে নবাব সিরাজদ্দৌলা ওয়াটসনের পত্রটির কথা উত্থাপন করেন। তিনি মুনশিকে পত্রটি বের করতে বলেন এবং মুনশি পত্রটি ওয়াটসকে দেন। ওয়াটসকে দিয়ে প্রথমে পত্রটির শেষ অংশ পড়ান, তারপরে সভাসদদের বোঝানোর জন্য মুনশিকে তার তরজমা করতে বলেন। সেই অনুবাদের বক্তব্য হল-কর্নেল ক্লাইভের প্রত্যাশামতো সৈন্যদল শীঘ্রই কলকাতায় এসে পৌঁছোবে। তিনি অতি দ্রুত আর-একটি জাহাজ মাদ্রাজে পাঠিয়ে সংবাদ দেবেন যে, আরও সৈন্য এবং জাহাজ বাংলায় আবশ্যক। সবশেষে প্রায় হুমকির সুরে ওয়াটসন বলেন যে বাংলায় তিনি এমন আগুন জ্বালাবেন যা গঙ্গার সমস্ত জল দিয়েও নেভানো যাবে না।

৯. “আমার এই অক্ষমতার জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো”-বক্তা কাদের কাছে কোন্ অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন? [পর্ষদ নমুনা] উত্তর শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা-কে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছেন।

▶ ইংরেজরা ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর অধিকার করে নিলে নবাবের সাহায্য পাওয়ার আশায় মঁসিয়ে লা সিরাজের রাজসভায় আসেন। ফরাসিদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা সিরাজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন- “তোমরা, ফরাসিরা, বহুদিন থেকেই বাংলা দেশে বাণিজ্য করচ। আমার সঙ্গে কখনো তোমরা অসদ্ব্যবহার করনি।” তিনি বলেন, ইউরোপে ইংরেজ আর ফরাসিদের লড়াইয়ের প্রভাবে এখানেও ইংরেজরা চন্দননগর অধিকার করে ফরাসিদের কুঠি ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এরপর নবাব সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধিকে তাঁর অক্ষমতার কথা জানিয়ে বলেন যে, কলকাতা জয় করতে গিয়ে এবং পূর্ণিয়ায় শওকত জঙ্গের সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁর বহু লোকক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়েছে। তাঁর মন্ত্রীমণ্ডলও এই সময় নতুন কোনো যুদ্ধের পক্ষপাতী নন। এই অবস্থায় সহানুভূতি থাকলেও ফরাসিদের সাহায্য করা বা ইংরেজদের সঙ্গে বিবাদ করা সম্ভব নয়।

১০. আর কত হেয় আমাকে করতে চান আপনারা?”-কারা কাকে কীভাবে হেয় করেছিল?

উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজ মীরজাফর, জগৎশেঠ, রাজবল্লভ প্রমুখ তাঁর সভাসদ এবং অভিজাতদের উদ্দেশে তাঁকে হেয় করার অভিযোগ করেছিলেন।

বাংলার সিংহাসনে আরোহণের পর থেকেই নবাব সিরাজ তাঁর বিরুদ্ধে প্রধান সিপাহসালার থেকে অভিজাত-সকলের বিরোধিতা উপলব্ধি করেছিলেন। নবাব যখন তাঁর সভার ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে বহিষ্কার করেন তখন রাজবল্লভ ইংরেজদের নবাববিরোধী ভূমিকার কথা জেনেও তাতে আপত্তি জানান। জগৎশেঠ নবাবের বিরুদ্ধে অবিবেচনার অভিযোগ আনেন। সিরাজ স্পষ্ট বুঝতে পারেন যে, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই এই অভিজাতরা তৎপর।

এই ঘটনায় সিরাজের অভিমান তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়। অভিমান করেই নিজের অপরাধ তিনি স্বীকার করেছেন, সমস্ত অভিযোগ মাথা নীচু করে গ্রহণ করেছেন। তিনি কোনো কটূক্তির প্রতিবাদও করেননি।

অথচ এইসব অভিজাতরা সমস্ত দেশে তাঁর দুর্নাম রটিয়েছেন, কর্মচারীদের মনে তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধার ভাব এনে দিয়েছেন, আত্মীয়স্বজনের মন বিষিয়ে দিয়েছেন এবং এভাবে সবসময়ে সবক্ষেত্রে তাঁকে হেয় করার চেষ্টা চলেছে বলে নবাব মনে করেছেন।

১১. আমার উপদ্রব নয় শেঠজি, আমার সহিষুতাই আপনাদের স্পর্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে!”-কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? সহিষ্ণুতা কার স্পর্ধা বাড়িয়েছে এবং কীভাবে? ২+২

উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নিজের দরবারে নবাব সিরাজ মুখোমুখি হয়েছিলেন তাঁর রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে। সেখানে রাজা রাজবল্লভ স্পষ্টই জানিয়েছিলেন যে ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে নবাব অপমান করে না তাড়ালেই পারতেন। জগৎশেঠ নবাবের বিরুদ্ধে অবিবেচনার অভিযোগ আনেন। পালটা হিসেবে সিরাজ তাঁদের বিরুদ্ধে স্বার্থসিদ্ধির অভিযোগ আনলে জগৎশেঠ বলেন যে, স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইলে “বাংলার সিংহাসনে এতদিনে অন্য নবাব বসতেন।” সিরাজ এই মন্তব্যে দুঃসাহস দেখলে জগৎশেঠ বলেন- “আপনার উপদ্রবই আমাদের মনে এই সাহস এনে দিয়েছে।” এর উত্তর দিতে গিয়েই সিরাজ প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেন।

▶ সিরাজের মতে তাঁর সহিষ্কৃতা রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ, মীরজাফর প্রমুখের স্পর্ধা বাড়িয়েছে। এই সহিষুতাই তাদের নবাবের মুখের সামনে এভাবে কথা বলার সাহস জুগিয়েছে, ইংরেজদের হয়ে কথা বলার স্পর্ধা দিয়েছে। এমনকি নবাববিরোধী চক্রান্তে শামিল হতেও তাদের পিছপা করেনি। 

১২. আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে শুধু এই আশ্বাস দিন”- কাদের কাছে বক্তা ভিক্ষা চান? তিনি কী আশ্বাস প্রত্যাশা করেন? ১+৩ [পর্ষদ নমুনা]

উত্তর:  শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের অন্যতম চরিত্র সিরাজ তাঁর বিরুদ্ধপক্ষের মীরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ প্রমুখের কাছে ‘ভিক্ষা’ চেয়েছেন।

▶ কোম্পানির ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ধীরে ধীরে সমগ্র বাংলা দখলের উদ্দেশ্যে বিস্তৃত হয়েছিল। নবাব সিরাজদ্দৌলা এই সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এবং বুঝেছিলেন তাঁরই অধীনস্থ ক্ষমতাদখলে উদ্‌গ্রীব কিছু কর্মচারী ও সভাসদ এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কিন্তু নবাব মনেপ্রাণে চাইতেন বাংলার স্বাধীনতা যেন অটুট থাকে। আর সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মীরজাফর ও বাকি কিছু সভাসদ তাঁকে ত্যাগ করলে এই সংহতি বিনষ্ট হবে বলে সিরাজ মনে করেছিলেন। তাই সমস্ত বিচার বন্ধ রেখে, সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিয়ে, সভায় ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন সিরাজ। এজন্য তিনি নিজের সমস্ত দোষের জন্য ক্ষমা চান এবং মীরজাফর ও অন্যান্যদের রাজদরবার থেকে চলে না যেতে অনুরোধ করেন। তাঁদের কাছে প্রার্থনা জানান, “বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।” তিনি তাঁদের মুখে তাঁকে ছেড়ে না যাওয়ার আশ্বাসটুকু শুনতে চান।

.১৩. “বাংলার এই দুর্দিনে আমাকে ত্যাগ করবেন না।” কাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হয়েছে? কোন্ দুর্দিনের জন্য তাঁর এই আবেদন? ১+৩

উত্তর:   শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা উল্লিখিত মন্তব্যটি সিপাহসালার মীরজাফর ও তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশ্যে করেছেন।

▶ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্রমশই তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে। তাদের সঙ্গে যুদ্ধে কলকাতা জয় করতে পারলেও নবাবের প্রচুর লোকবল ও অর্থবল উভয় শক্তির ক্ষয় হয়েছে। এরপরে ইংরেজরা কাশিমবাজার অভিমুখে সৈন্য পাঠিয়েছে, নবাবের মিত্রপক্ষ ফরাসিদের কাছ থেকে চন্দননগরের দখল নিয়েছে। শুধু তাই নয়, ক্রমাগত নবাববিরোধী ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে। ওয়াটসন এবং ওয়াটস্-এর যে দুটি চিঠি নবাব সর্বসমক্ষে আনেন, তাতে এই ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট প্রমাণ ছিল। সভাসদ ও দেশীয় অভিজাতরা যে নবাব-বিরোধী ছিলেন এবং তাদের সঙ্গেও ইংরেজরা সমঝোতা করেছিল, সেকথা ওই চিঠিদুটিতে ছিল। এর সাথে উল্লেখ ছিল ঘসেটি বেগমের নবাব-বিরোধিতাও। এভাবে ভিতরে ও বাইরে নবাব বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছিলেন। এই সংকটজনক পরিস্থিতিকেই নবাব ‘দুর্দিন’ বলেছেন। তবে একে সিরাজ ব্যক্তিগত দুর্দিন না বলে বাংলার দুর্দিন বলেছেন। কারণ, তাঁর পরাজয় বা বিপর্যয়ের অর্থ বাংলার স্বাধীনতার অবসান। মীরজাফর-সহ রাজবল্লভ, জগৎ শেঠদের কাছে তিনি এই আশঙ্কা = থেকে তাঁর পাশে থাকার আবেদন রেখেছেন।

১৪. বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়-মিলিত হিন্দু- মুসলমানের মাতৃভূমি এই গুলবাগ বাংলা।”-কাদের উদ্দেশ্য করে এ কথা বলা হয়েছে? এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তার কী চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে?

অথবা, “হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।”-এই বক্তব্যের মাধ্যমে বক্তার দেশপ্রেমের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা নাট্যাংশ অবলম্বনে লেখো। [শ্রীরামপুর ইউনিয়ন ইন্সটিটিউশন]

উত্তর:  শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে নবাব সিরাজদ্দৌলা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ প্রমুখের উদ্দেশে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

▶ সিংহাসনে বসার পর থেকেই নবাবের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। রাজসভার মধ্যেই মীরজাফরের নেতৃত্বে বিত্ত ও ক্ষমতাবানদের আলাদা একটা দল গড়ে ওঠে। এসব জানতে পেরেই সিরাজ রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ প্রমুখকে হিন্দু-মুসলমান বিভেদ না করতে আহ্বান জানান। আলোচ্য উক্তিটির মধ্য দিয়ে হিন্দু-মুসলিম দুটি জাতির মধ্যে সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরেছেন সিরাজ। তাঁর প্রজারা যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, তারই চেষ্টা করেছিলেন এই তরুণ নবাব। সিরাজ বলেন বাংলা কোনো বিশেষ ধর্ম বা ধর্মগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য নয়। হিন্দু-মুসলমানের মিলিত বাসভূমি গুলবাগ এই বাংলা। ইংরেজরা বিদেশি জাতি। তাই তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করতে চাওয়া মানে তা দেশদ্রোহ। নিজেরা পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে কোম্পানির কাছে বাংলা দখল করাটা সহজ হয়ে যাবে। সেই কারণেই ধর্মকে দূরে সরিয়ে রেখে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হবে। প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটির মধ্য দিয়ে সিরাজের উদারনৈতিক অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের প্রকাশ ঘটেছে।

১৫. সুতরাং আমি মুসলমান বলে আমার প্রতি আপনারা বিরূপ হবেন না।”- উদ্ধৃতিটির বক্তা কে? তাঁর এরূপ বিলাপের কারণ কী? ১+৩

উত্তর:   নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন নবাব সিরাজদ্দৌলা স্বয়ং।

▶ স্বাধীন নবাবি আমলের অস্তমিত পর্যায়ের খানিক আভাস নাট্যকার আলোচ্য নাট্যাংশে তুলে ধরেছেন। এই সময় একদিকে জগৎশেঠ, মীরজাফরের মতো সভাসদদের অসহযোগিতা, অন্যদিকে ঘসেটি বেগম ও অন্যদের ব্যক্তিগত স্তরে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার বাসনা সিরাজদ্দৌলাকে বিধ্বস্ত করেছিল। তবুও তিনি ঘরোয়া কোন্দল, রাজসভার বিবাদ উপেক্ষা করে একমাত্র শত্রু হিসেবে ব্রিটিশ কোম্পানিকেই চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তিনি পারস্পরিক দোষারোপের বদলে নিজেদের ভুল সংশোধনে মন দিতে বলেন; এর থেকে নবাব বাদ দেননি নিজেকেও। এমনকি ইংরেজের হাত থেকে স্বাধীনতা রক্ষা করার পরে বিচারের মুখোমুখি হতেও তিনি রাজি হয়েছেন। তিনি নিজে আগে যা যা ভুল করেছেন তারজন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থনাও করেছেন। তাঁর কাছে- “হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।” তাই হিন্দু ও মুসলিম উভয়কেই ধর্মীয় বিভেদের ঊর্ধ্বে ওঠার পরামর্শ দিয়েছেন এবং স্বদেশের স্বার্থে বিনয়ের ভঙ্গিতে তিনি প্রশ্নে উদ্ধৃত মন্তব্যটি করেছেন।

১৬. ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো!” – উদ্ধৃতাংশের বক্তা কাকে ‘মূর্খ’ বলে সম্বোধন করেছেন? তাঁর এরূপ বিরূপ মন্তব্যের কারণ কী? ১+৩

অথবা, ‘ওখানে কী দেখচ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো!” বক্তা কে? উদ্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি বক্তার কী মনোভাব লক্ষ করা যায়? ১+৩

উত্তর:  নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত লিখিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজকে ‘মূর্খ’ বলে সম্বোধন করেছেন।

▶ ঘসেটি বেগম বা মেহেরুন্নিসা নবাব আলিবর্দি খাঁর বড়ো মেয়ে, সম্পর্কে সিরাজের মাসি। ঘসেটির বিয়ে হয় ঢাকার শাসনকর্তা শাহমৎ জঙ্গের সঙ্গে। দত্তক পুত্র ইকরমের মৃত্যু হলে তার শোকে শাহমৎ জঙ্গও মারা যান। বিধবা + ঘসেটি বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন। এদিকে আলিবর্দি খাঁ সিরাজদ্দৌলাকে বাংলার শাসনকর্তা মনোনীত করেন। এই ঘটনা ঘসেটি বেগমের ঈর্ষার কারণ হয়। তিনি আলিবর্দির মেজো মেয়ের ছেলে শওকত জঙ্গকে সিরাজের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন। রাজবল্লভ এবং অন্যদেরও নিজের দলে টানেন। এসব জানতে পেরে ক্ষিপ্ত সিরাজ ঘসেটির মতিঝিলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন। অবশেষে তাঁকে নিজের রাজপ্রাসাদে নজরবন্দি করে রাখেন। সিরাজের বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয় শওকত জঙ্গ। এইসব ঘটনার ফলে ঘসেটি বেগম হয়ে ওঠেন প্রতিহিংসাপরায়ণ। তারই প্রকাশ ঘটেছে উল্লিখিত মন্তব্যে।

১৭. “ঘসেটির বন্ধন মোচন হবে সিরাজের পতন হবে, সুদিন নয়?”- বক্তা কে? এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কোন্ মনোভাব ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো। ১+৩ [হাওড়া যোগেশচন্দ্র গার্লস স্কুল] 

উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে উল্লিখিত অংশটির বক্তা ঘসেটি বেগম।

▶ নবাববিরোধী ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার জন্য সিরাজ ঘসেটিকে তাঁর মতিঝিল প্রাসাদ থেকে মুরশিদাবাদে নিজের প্রাসাদে এনে বন্দি করে রাখেন। এরফলে সিরাজের প্রতি ঘসেটির বিদ্বেষ আরও তীব্রতর হয়ে ওঠে। শওকত জঙ্গের মৃত্যুও সিরাজের জন্যই হয়েছে, তাই নবাবের পতনই ঘসেটির একমাত্র বিবেচ্য হয়ে দাঁড়ায়। “মাসিকে তুমি গৃহ-হারা করেচ, মাসির সর্বস্ব লুটে নিয়েচ, মাসিকে দাসী করে রেখেচ।”-সিরাজের প্রতি ঘসেটির এই অভিযোগ তীব্রতর হয়। মতিঝিল অধিকার করা, তাঁর সঞ্চিত সম্পদ হস্তগত করা, তাঁর পালিত পুত্রকে সিংহাসন থেকে দূরে রাখা-এরকম অজস্র অভিযোগ সিরাজের বিরুদ্ধে করা হয়। আর এইসব কারণেই সিরাজের সর্বনাশ ঘসেটি বেগমের কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাহিনী কাশিমবাজার কুঠির দিকে আসছে শুনে ঘসেটি আশা প্রকাশ করে যে তারা মুরশিদাবাদের দিকেও আসবে। আর সেটাই হবে তাঁর ‘সুদিন’। সিরাজের সিংহাসন যেদিন অন্য কেউ অধিকার করবে সেদিনই তাঁর প্রতিহিংসা চরিতার্থ হবে। এইভাবে ঘসেটির তীব্র সিরাজ-বিদ্বেষ প্রকাশিত হয়েছে।

১৮. তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা।”-কার বুকে, কেন রক্তের তৃষা বলে বক্তা মনে করেছেন? এই উক্তির আলোকে বক্তার মানসিকতার পরিচয় দাও। ২+২

উত্তর:  শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজ পলাশির প্রান্তরের রক্তপিপাসাকে দেখেছেন। তাঁর ভাবনায় পলাশি নামের একটি তাৎপর্য ধরা পড়েছে। সিরাজ আশঙ্কার সঙ্গে বলেছেন যে, একসময় হয়তো লাখে লাখে পলাশ ফুল ফুটে প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত, সেই কারণেই স্থানটির নাম হয় পলাশি। আর আজ সেই প্রান্তর যেন ব্রিটিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বাংলার মানুষের বুকের রক্তপানের জন্য মুখিয়ে রয়েছে।

▶ ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্রের শিকার হন সিরাজদ্দৌলা। একদিকে সেনাপতি মীরজাফর ও অন্য অভিজাতরা অন্যদিকে সিরাজের নিজের মাসি ঘসেটি বেগম সিরাজের পতনের জন্য চক্রান্তে লিপ্ত। বিচক্ষণ সিরাজ বুঝতে পেরেছেন এর ফলস্বরূপ ইংরেজ কোম্পানি আরও মরিয়া হয়ে উঠবে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করতে। তাই পলাশির যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী জেনে তিনি গভীরভাবে হতাশ হয়েছেন। কারণ এই যুদ্ধে জয়লাভের কোনো আশা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। তাঁর মনে হয়েছে, একসময় পলাশ ফুলে লাল হয়ে থাকা পলাশি যেন রক্তের তৃয়ায় আকুল হয়ে আছে।

১৯. এইবার হয়তো শেষ যুদ্ধ!”-কোন্ যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? বক্তা এই যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কেন?

উত্তর: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশের অন্তর্গত উদ্ধৃতিটিতে পলাশির যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।

▶ নবাব সিরাজদ্দৌলা তার পত্নী লুৎফাউন্নিসাকে এ কথা বলেছেন। লুৎফা সিরাজের সুখ-দুঃখের চিরসঙ্গী। বিদ্রোহী ও সহিষ্ণু প্রতিহিংসাপরায়ণ ঘসেটি বেগম সিরাজকে চরম অভিশাপ দিলে তিনি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এমন সময় লুৎফ-উন্নিসা তাকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে বলেন। সিরাজ তাকে জানান পলাশির যুদ্ধের পর তিনি বিশ্রাম পাবেন। বিশ্রামের কথায় সিরাজের হয়তো মনে হয়েছিল এই বিশ্রাম সুখের অথবা দুঃখের যে-কোনোটাই হতে পারে। পলাশির প্রান্তরে আবার যুদ্ধের সম্ভাবনা ঘনীভূত হয়ে উঠেছে। সিরাজ একেই শেষ যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছেন। কেন-না তিনি মনে করেন যদি তিনি যুদ্ধে জয়ী হন তাহলে হয়তো আর যুদ্ধ হবে না। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তখন আর মাথা তুলে দাঁড়াবার ক্ষমতা থাকবে না। সমস্ত ব্যাবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে তাদের দেশে ফিরে যেতে হবে। আর পরাজিত হলে সিরাজ নিশ্চিতভাবেই সিংহাসন হারাবেন। হয়তো শত্রুর হাতে তাকে খুন হতে হবে। তখন আর নতুন কোনো যুদ্ধের প্রয়োজন হবে না। সিরাজদ্দৌলা একচ্ছত্রভাবে এ দেশ শাসন করবে। যুদ্ধে তাদের চ্যালেঞ্জ করার মতো আর কেউ থাকবে না।

২০. সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে সংলাপসৃষ্টিতে নাট্যকারের কৃতিত্বের পরিচয়

উত্তর: ভূমিকা: অ্যারিস্টট্ল নাটকের যে ছয়টি উপাদানের কথা বলেছেন তার মধ্যে চতুর্থ উপাদান হল সংলাপ। নাট্যকাহিনির সার্থক রূপায়ণে সংলাপের বিশেষ ভূমিকা আছে।

সংলাপ রচনার যথার্থতা: শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কালজয়ী নাটক সিরাজদ্দৌলার এই পাঠ্যাংশে সংকলিত অংশে সিরাজ ও ওয়াটসের সংলাপ দিয়ে নাট্যদৃশ্যের সূচনা হয়েছে। ওয়াটস ইংরেজ চরিত্র। তাই তাঁর সংলাপ ইংরেজি ভাষায় রচিত হয়েছে। তিনি যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা অন্বয়গত দিক থেকে ত্রুটিযুক্ত। এই ত্রুটিযুক্ত ভাষা এক জন ইংরেজ চরিত্রের পক্ষে সুপ্রযুক্ত হয়েছে বলা যায়। অন্যদিকে মঁসিয়ে লা পুরোপুরিই ইংরেজিতে কথা বলেছেন। নাহলে তাঁর চরিত্রটি বাস্তবতা হারাত। নাট্যদৃশ্যে সিরাজের সংলাপগুলি সম্রাটসুলভ গাম্ভীর্য এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। আবার মীরজাফর ও ঘসেটি বেগমের সাথে কথোপকথনে সিরাজ চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ ধরা পড়েছে। অপ্রধান চরিত্রগুলিও উপযুক্ত সংলাপের গুণে স্বমহিমায় ফুটে উঠেছে। বলা যায়, ঐতিহাসিক নাটকের গাম্ভীর্য বজায় রাখতে নাট্যকার সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ শিল্পকৌশলের পরিচয় দিয়েছেন।