Class 12 Chapter 2.1 Solution
রূপনারানের কূলে
1. MCQs Question Answer
1. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি যে কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে সেটি হল-
(ক) প্রান্তিক
খ জন্মদিনে
গ শেষ লেখা ✔
ঘ) শেষ সপ্তক [বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজিয়েট স্কুল।
2. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি মূল কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা?
ক) ১১ ✔
খ) ১৩
গ) ১২
ঘ) ১৪
3. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি রচিত হয়-
ক) ২৮ ও ২৯ মে, ১৯৪১
খ) ৩০ ও ৩১ মে, ১৯৪১
গ) ১৬ ও ১৭ মে, ১৯৪১
ঘ) ১৩ ও ১৪ মে, ১৯৪১ ✔
4. ‘ রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-
ক) জোড়াসাঁকোতে
খ শান্তিনিকেতনে ✔
গ) শিলাইদহে
ঘ) মংপুতে
5. কবি রবীন্দ্রনাথ জেগে উঠেছেন–
ক) গোদাবরীর কূলে
খ) কাবেরীর কূলে
গ) রূপনারানের কূলে ✔
ঘ) দামোদরের কূলে
6. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় রূপনারান হল-
ক) বাংলার একটি নদী
খ) রূপময় জগৎ-সংসার ✔
গ) কল্পলোক
ঘ) বৈতরণী [নাকতলা হাই স্কুল
7. ‘রূপনারানের কূলে জেগে’ ওঠা বলতে এই কবিতায় বোঝানো হয়েছে-
ক) দীর্ঘ ঘুম থেকে জেগে ওঠা
খ) অচৈতন্য অবস্থা থেকে জ্ঞান লাভ করা
গ) বাস্তব জীবনবোধে উন্নীত হওয়া ✔
ঘ) মানসিকভাবে সচেতন হওয়া
8. রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি অনুধাবন করলেন-
ক) আকাশে মেঘ কেটে গেছে
খ) সূর্যালোকে চারদিক ঝলমল করছে
গ) নিদ্রাজগৎ আর বাস্তবজগতের প্রভেদ নেই
ঘ) স্বপ্নের জগৎ আর বাস্তবের বিস্তর তফাত ✔
9. “রূপ-নারানের কূলে/জেগে উঠিলাম,/জানিলাম…”- কবি কী জানলেন?
ক) এ জগৎ স্বপ্নময়
খ) এ জগৎ মায়াময়
গ) এ জগৎ স্বপ্ন নয় ✔
ঘ) এ জগৎ মায়ামুক্ত [সেন্ট লরেন্স হাই স্কুল)
10. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় যে অক্ষরের কথা বলা হয়েছে তা
ক) সোনার
খ) রক্তের ✔
গ) জলের
ঘ) শিক্ষার
11. কবি রবীন্দ্রনাথ নিজের রূপ দেখেছিলেন-
ক) দর্পণে
খ) হৃদয়ে
গ) রক্তের অক্ষরে ✔
ঘ) পল্লিগ্রামে
12 “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম”-কী দেখলেন?
ক) আপনার স্বপ্ন ✔
খ) আপনার জগৎ
গ) আপনার বেদনা
ঘ) আপনার রূপ
13 ‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন-
ক) জীবন রঙিন হয়ে দেখা দিল
খ) সুখস্মৃতিগুলি বর্ণময় হয়ে উঠল
গ) আঘাত-সংঘাতের যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে কবি দেখলেন ✔
ঘ) সংগ্রামী জীবনের মধ্য দিয়ে কবি অনুভব করলেন
14. ‘দেখিলাম আপনার রূপ’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন-
ক) নিজের অপূর্ব-সুন্দর রূপের সৌন্দর্য কবি অবলোকন করেছেন
(খ) নিজের জীবনদর্শনের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পেরেছেন ✔
(গ) প্রকৃতির সঙ্গে নিজের রূপের মেলবন্ধন ঘটাতে পেরেছেন
(ঘ) শাশ্বত সৌন্দর্যচেতনা উপলব্ধি করতে পেরেছেন
15. “দেখিলাম আপনার রূপ”- কীসে দেখলেন?
ক) জীবনের মধ্যে
খ) সত্যের মধ্যে
গ) স্বপ্নের মধ্যে
ঘ) রক্তের অক্ষরে ✔
16. “চিনিলাম আপনারে”-কবি কীভাবে নিজেকে চিনলেন?
ক) দুঃখে শোকে
খ)সুখে-আনন্দে
গ)বেদনায়-আঘাতে
ঘ) আঘাতে আঘাতে/বেদনায় বেদনায় ✔
17 কবি রবীন্দ্রনাথের কাছে সত্যের স্বরূপ হল-
ক) দুর্বোধ্য
খ) অজ্ঞেয়ণ
গ) কঠিনঘ ✔
ঘ) ব্যাখ্যার অতীত
18. রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি ভালোবাসলেন-
ক) জগৎকে
খ) আপনাকে
গ) সত্যকে ✔
ঘ) কঠিনকে
19. “কঠিনেরে ভালোবাসিলাম।”-কবি কঠিনকে ভালোবেসেছেন, কারণ-
(ক) সে বঞ্চনা করে না ✔
(খ) সে অপমান করে না
(গ) সে আঘাত করে না
(ঘ) সে সুন্দর
20 “জানিলাম এ জগৎ”-
ক) মিথ্যা নয়
খ) নিদ্রা নয়
গ) স্বপ্ন নয় ✔
ঘ) কঠিন নয়
21. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবির মতে এ জীবন হল-
ক) দুঃখ ভোগ করার জন্য
খ) দুঃখকে উপভোগ করার জন্য
গ) দুঃখকে অতিক্রম করার জন্য
ঘ) দুঃখের তপস্যা করার জন্য ✔
22, “সে কখনো করে না”-
ক) ঘৃণা
খ) আঘাত
গ) বিশ্বাসঘাতকতা
ঘ) বঞ্চনা ✔
23 “সে কখনো করে না বঞ্চনা।”-‘সে’ বলতে বোঝানো হয়েছে-
ক) কঠিনকে
খ) মৃত্যুকে
গ) সত্যকে ✔
ঘ) জীবনকে
24. “সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,”- কারণ-
ক) আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ জীবন
খ) মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে হয়
গ) কঠিন সত্যকে না ভালোবেসে উপায় নেই
ঘ) সে কখনও বঞ্চনা করে না ✔
25. ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’ হল-
ক) জীবন ✔
খ) ধর্ম
গ) কর্তব্য
ঘ) কর্ম
26. কবির আজীবন দুঃখের তপস্যা করার কারণ-
ক) শ্রেষ্ঠ কবি হওয়ার আকাঙ্ক্ষা
খ) মানবজাতির দুঃখমোচন
গ) সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করা ✔
ঘ) এ জীবন দুঃখময় [
27 কবি রবীন্দ্রনাথ যা লাভ করার কথা বলেছেন, তা হল-
ক) সত্যনিষ্ঠা
খ) মূলধন
গ) সত্যের মূল্য ✔
ঘ) সমাধান
28. কবি রবীন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন জীবনের সকল দেনা-
ক) মিটিয়ে দিতে
খ) মৃত্যুতে শোধ করতে ✔
গ) জমা রাখতে
ঘ) গ্রহণ করতে
29 মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ চেয়েছেন-
ক) জীবনের প্রশান্তি খুঁজতে
খ) জন্মান্তরে পৌঁছে যেতে
গ) সকল দেনা শোধ করতে ✔
ঘ) নতুন অভিজ্ঞতা খুঁজে পেতে
30. “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম”-
ক) মৃত্যুর রূপ
খ) আপনার রূপ ✔
গ) প্রকৃতির রূপ
ঘ) রূপনারানের রূপ
31 ‘এ জগৎ’-
ক) মিথ্যা নয়
(খ) সত্য নয়
(গ) স্বপ্ন নয় ✔
(ঘ) কঠিন নয়
2. Very Short Question Answer
1. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
উত্তর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
2. জেগে উঠিলাম”-কে, কোথায় জেগে উঠলেন?
উত্তর রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং রূপনারানের তীরে জেগে উঠলেন।
3. “জেগে উঠিলাম”-জেগে উঠে কবি কী উপলব্ধি করেছিলেন?
উত্তর বক্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপনারানের কূলে জেগে উঠে উপলব্ধি করলেন যে, ‘এ জগৎ স্বপ্ন নয়’।
4. দেখিলাম আপনার রূপ,”-কবি কীভাবে এই রূপ দেখলেন?
‘উত্তর রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রক্তের অক্ষরে নিজের এই রূপ দেখলেন।
5. . “চিনিলাম আপনারে”-কে ‘আপনারে’ চিনেছিলেন?
উত্তর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং ‘আপনারে’ অর্থাৎ
নিজেকে চিনেছিলেন।
6. “চিনিলাম আপনারে” কবি কীভাবে নিজেকে চিনলেন?
উত্তর দ্বন্দ্ব-সংঘাতমুখর এই বাস্তব পৃথিবীতে কবি আঘাতে-আঘাতে, বেদনায়- বেদনায় নিজেকে চিনলেন।
7. সত্য যে কঠিন”-তবু কবি সত্যকে ভালোবাসেন কেন?
উত্তর সত্য কঠিন জেনেও কবি সত্যকে ভালোবাসেন, কারণ সত্য কখনও বঞ্চনা করে না।
8 ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি সত্যকে কোন্ বিশেষণে ভূষিত করেন?
উত্তর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি সত্যকে ‘কঠিন’ বিশেষণে ভূষিত করেছেন।
9. “সত্য যে কঠিন”-বক্তা সত্যের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন?
উত্তর বক্তা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যকে কঠিন জেনেও তাকে ভালোবেসেছেন।
10. সে কখনো করে না বঞ্চনা।”-বক্তা কে?
উত্তর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় উল্লিখিত পঙ্ক্তিটির বস্তা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং।
11. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি কীসের মূল্য লাভ করতে চেয়েছেন?
উত্তর‘ রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করতে চেয়েছেন।
12. ‘সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে’ কী ঘটেছে কবিজীবনে?
উত্তর সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করবার জন্য সারাজীবন ধরে দুঃখের তপস্যা করতে হয়েছে কবিকে।
13. ‘সত্যের দারুণ মূল্য’ লাভ করার জন্য কী করতে হয়?
উত্তর ‘সত্যের দারুণ মূল্য’ অর্থাৎ প্রকৃত মূল্য লাভ করার জন্য আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা করতে হয়।।
3.Short Question Answer
‘1. রূপনারানের কূলে’ কবিতাটির রচনাকাল ও স্থান উল্লেখ করো।
উত্তর শান্তিনিকেতনের উদয়নে অবস্থানকালে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ মে এবং ১৪ মে এই দু-দিন ধরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি রচনা করেন।
2. “জানিলাম এ জগৎ/স্বপ্ন নয়।”-কখন কবি এ কথা জেনেছিলেন?
উত্তর কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবন-সায়াহ্নে যখন রূপনারানের কূলে জেগে উঠেছিলেন, তখনই জেনেছিলেন যে এ জগৎ স্বপ্ন নয়।
3. রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি কী জানলেন?
উত্তর রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি জানলেন যে, এ জগৎ স্বপ্ন নয়।
4. জানিলাম এ জগৎ/স্বপ্ন নয়।” কবির চোখে এ জগৎ কেমন?
উত্তর কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারানের কূলে’ জেগে উঠে জেনেছিলেন, যে জগতে তিনি ছিলেন তা স্বপ্ন নয়, তা আঘাত-সংঘাতে ভরা কঠিন বাস্তব।
5. “রক্তের অক্ষরে দেখিলাম” বলতে কীভাবে দেখার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর রূপনারানের কূলে’ কবিতায় ‘রক্তের অক্ষরে দেখিলাম’ বলতে কবি যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট মৃত্যুর অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন।
6. “চিনিলাম আপনারে”-এই চেনার স্বরূপ কী?
উত্তর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজেকে চেনার অর্থ আসলে সত্যের কঠিন অথচ যথাযথ স্বরূপকে চিনতে বা বুঝতে পারা।
7. “সত্য যে কঠিন” কবি সত্যকে কঠিন বলেছেন কেন? [পাঠভবন] অথবা, ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতার কবি সত্যকে কঠিন বলেছেন কেন?
উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় সত্য কঠিন বলতে বুঝিয়েছেন যে, সত্য সব সময় কাঙ্ক্ষিত নাও হতে পারে।
8. সে কখনো করে না বঞ্চনা।”-এরূপ বলার কারণ কী?
উত্তরসত্য যেহেতু মায়া বা স্বপ্ন নয়, তা কঠোর ও কঠিন বাস্তব, তাই তা কাউকে মোহাবিষ্ট বা স্বপ্নাবিষ্ট করে প্রবঞ্চনা করে না।
9. “সে কখনো করে না বঞ্চনা।”-কে কখনও করে না বঞ্চনা?
উত্তর রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জানিয়েছেন যে, কঠিন সত্য কখনও কবি তথা মানুষকে বঞ্চনা করে না।
10. “আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন”-কবি জীবনকে ‘দুঃখের তপস্যা’
মনে করেছেন কেন? অথবা, কবি জীবনকে দুঃখের তপস্যা বলেছেন কেন?
উত্তর জীবনধারণ করতে গিয়ে প্রতিটি মানুষকেই প্রতিনিয়ত ব্যথা-বেদনা-আঘাত- দুঃখ-দুর্দশাকে বরণ করতে হয় বলেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় জীবনকে দুঃখের তপস্যা বলেছেন।
11 …সকল দেনা শোধ করে দিতে।”-‘সকল দেনা’ বলতে কী বোঝ? [
উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় ‘সকল দেনা’ বলতে কোনো মানুষ তার সারা জীবনে যা যা অর্জন করে, সেসবের কথা বলেছেন। বোঝ?
12 “সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে”-‘সত্যের দারুণ মূল্য’ বলতে কী
উত্তর ‘সত্যের দারুণ মূল্য’ বলতে কবি অপ্রিয় ও কঠিন সত্যকে স্বীকার করার জন্য যে মনোবল ও নিরাসক্ত মনোভাবের প্রয়োজন, তার কথা বলেছেন।
13 কবি ‘মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে’ চান কেন?
উত্তর নিশ্চিন্তে মৃত্যুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে চান বলেই কবি প্রকৃতি ও মানবসমাজের সকল দেনা শোধ করে দিতে চান।
14. ‘জেগে উঠিলাম’—কবি কোথায়, কীভাবে জেগে উঠলেন?
উত্তর কবি রূপনারানের কূলে জেগে উঠলেন রক্তের অক্ষরে নিজেকে দেখতে দেখতে এবং আঘাত বেদনায় নিজেকে চিনতে চিনতে।
4. Long Question Answer
1. “রূপ-নারানের কূলে/জেগে উঠিলাম”-কবির এই জেগে ওঠার তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর. তাৎপর্য: কথামুখ: রবীন্দ্রনাথ তাঁর শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা ‘রূপনারানের কূলে’-তে জীবনের মধ্য থেকেই জীবনকে উপলব্ধির কথা বলেছেন। ‘রূপনারান’ শব্দটি এখানে কোনো বিশেষ নদীকে বোঝাতে নয়, এই প্রবহমান জীবনকালকে বোঝাতেই তা ব্যবহৃত হয়েছে। কবির অনুভব: জীবন-সায়াহ্নে উপনীত হয়ে কবি অনুভব করেছেন, এই জগৎ শুধুই স্বপ্ন নয়, বরং আঘাত ও বেদনার মধ্য দিয়ে জীবনের বিকাশই প্রকৃত সত্য। আঘাতে-বেদনায়, ‘রক্তের অক্ষরে’ অর্থাৎ অজস্র সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে এই সত্যকে উপলব্ধি করেছেন কবি। সে সত্য কঠিন, দ্বন্দ্বমুখর, কিন্তু সেই কঠিনকেই কবি ভালোবাসতে চেয়েছেন। কারণ কবির কথায়, “সেইখানেই প্রাণের গতি।” অন্য একটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
“সপ্ত সিন্ধু দশ দিগন্ত
নাচাও যে ঝংকারে,
আরাম হতে ছিন্ন করে
সেই গভীরে লও গো মোরে
অশান্তির অন্তরে যেথায়
শান্তি সুমহান।”
সত্যের মূল্য: জীবন মানে কবির কাছে ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’। এই দুঃখের তপস্যার উদ্দেশ্য আসলে সত্যের মূল্য দিয়ে জীবনের সমস্ত দেনা শোধ করে দেওয়া। তারপরেই মৃত্যুতে নিজেকে নিশ্চিন্তে সমর্পণ করে দেওয়া সম্ভব। এইভাবেই রবীন্দ্রনাথ অলীক কল্পনা বা ভাবের জগৎ থেকে দুঃখ-আঘাত-সংঘাত মুখর বাস্তব পৃথিবীতেই মানবের মুক্তি প্রত্যক্ষ করেছেন। শেষের কথা: জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে কবি মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মানবসংসারের তীরেই নিজের আশ্রয় খুঁজেছেন। ‘রূপনারানের কূলে’ জেগে ওঠা আসলে সেই সন্ধানেরই কাহিনি।
2. “জানিলাম এ জগৎ/স্বপ্ন নয়।” কবির এই মন্তব্যের তাৎপর্য লেখো।
উত্তর. তাৎপর্য: প্রাক্কথন: শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা ‘রূপনারানের কূলে’-তে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করার চেষ্টা করেছেন। ‘জন্মদিনে’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
“আমি পৃথিবীর কবি, যেথা তার যত ওঠে ধ্বনি আমার বাঁশির সুরে সাড়া তার জাগিবে তখনি।”
জীবনের যথার্থতা: আলোচ্য কবিতাটিতেও কবির এই মাটির পৃথিবীতে থাকার ইচ্ছাই প্রকাশিত হয়েছে। স্বপ্ন ও কল্পনার মায়া-আবরণকে দূরে সরিয়ে রবীন্দ্রনাথ যে জগৎকে দেখেছেন তা আঘাত-সংঘাতমুখর, বেদনায় কাতর। সেখানে প্রতিদিনের ব্যক্তিগত জীবনের হতাশা, যন্ত্রণা, নানা সামাজিক এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ইত্যাদির মধ্য দিয়েই জীবনের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। প্রকৃত সত্য: এই জীবন স্বপ্নের রঙে রঙিন নয়, রক্তের অক্ষরেই এর যথার্থ পরিচয়। তাই কবি উপলব্ধি করেছেন এ জীবনে ‘দুঃখের তপস্যা’ই সত্য, কিন্তু তার মধ্য দিয়েই ঘটবে জীবনের বিকাশ। এই ‘সত্য’ হল জীবনের যথাযথ তাৎপর্য বুঝতে শেখা। মানুষের ধর্ম প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-“তাই বিরাটকে বলি রুদ্র, তিনি মুক্তির দিকে আকর্ষণ করেন দুঃখের পথে।” জীবন দুঃখময়, কিন্তু তার মধ্য দিয়েই মানুষের চেতনার বিকাশ ঘটে। তখনই মানুষ জীবনের প্রকৃত ধর্মকে অনুভব করতে পারে। ইতিকথা: তাই স্বপ্নবিলাসিতায় নয়, দুঃখের তরঙ্গমুখরতার মাঝেই জীবনের ‘সত্য’-কে খুঁজে পাওয়া যায়।
3.”রক্তের অক্ষরে দেখিলাম/আপনার রূপ,”-এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর. ভূমিকা: শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের শেষ বেলায় পৌঁছে জীবন তথা নিজের প্রকৃত স্বরূপটি উপলব্ধি করতে চেয়েছেন। এই কবিতাটি রচনার কিছুদিন আগে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন সভ্যতার সংকট প্রবন্ধটি। এই প্রবন্ধেরই উপসংহারে তিনি লেখেন-
“নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক, এল মহাজন্মের লগ্ন।
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত
ধূলি তলে হয়ে গেল ভগ্ন।”
জীবনের যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি: ‘রূপনারানের কূলে’ অর্থাৎ ‘জীবনকালের শেষপ্রান্তে’ যখন উপনীত হন কবি, তখন তিনি স্বপ্নের মায়া থেকে সরে আসেন-আর তখনই জীবন ও জগতের যথার্থ স্বরূপ তাঁর চোখে ধরা পড়ে। মূল সত্য: এ জীবন আঘাত-সংঘাতে পূর্ণ। দ্বন্দ্বময় বাস্তবজগতে অজস্র সামাজিক ও রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়েই জীবনের যে বিকাশ-সেটাই সত্য। মায়া, ছলনা বা প্রবঞ্চনার ফাঁদ অতিক্রম করেই মানুষ উপলব্ধি করতে পারে জীবনের যথার্থ স্বরূপ, এই রূপময় বিশ্বের প্রকৃত পরিচয়। জীবনের যে স্বাভাবিক গতি বা বিকাশ, তাকে কল্পনা বা স্বপ্নবিলাসের দ্বারা উপলব্ধি করা যায় না। প্রকৃত সত্য কঠিন হলেও কবি তাকেই গ্রহণ করেছেন, কারণ সেখানে বঞ্চিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না। মানবচেতনার স্বরূপ: ‘রক্তের অক্ষরে’ অর্থাৎ যন্ত্রণার পথ ধরে এই গতিশীল অথচ কঠিন জীবনকেই কবি দেখতে চান। ‘আপনার রূপ’ বলতে কবি আসলে মানবাত্মার বা মানবচেতনা যথার্থ স্বরূপকেই বোঝাতে চেয়েছেন।
4. চিনিলাম আপনারে”-কে, কখন, কীভাবে নিজেকে চিনেছেন? এর ফলে তাঁর মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তা নিজের ভাষায় লেখো। ৩+২
উত্তর. আপন স্বরূপকে চেনা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় প্রশ্নোদ্ভূত মন্তব্যটি করেছেন। ‘রূপনারানের কূলে’ অর্থাৎ জীবনকালের শেষপ্রান্তে জেগে উঠে কবি তাঁর কল্পনার জগতের সঙ্গে বাস্তব পৃথিবীর কোনো সাদৃশ্যই খুঁজে পাননি। “জানিলাম এ জগৎ/স্বপ্ন নয়”- বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে এটাই কবির উপলব্ধি। আঘাত-সংঘাতের মধ্য দিয়েই যে জীবনের বিকাশ, তা কবি স্পষ্ট উপলব্ধি করেছেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক নানান সংঘাতের মধ্য দিয়েই যে সভ্যতার বিকাশ, জীবনের প্রতিক্ষেত্রের যে টানাপোড়েন ও রক্তক্ষরণ, কবি তাকে ‘সত্য’ বলে উপলব্ধি করেছেন এবং এভাবেই তিনি নিজের স্বরূপ চিনতে পেরেছেন।
▶ কবির প্রতিক্রিয়া: ‘রক্তের অক্ষরে’ কবি নিজেকে চিনতে পেরেছিলেন আঘাতে-বেদনায়। আর তখনই কবির উপলব্ধি হয়েছিল যে সত্যের প্রকৃত রূপ অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সেই কঠিন সত্যকেই ভালোবেসেছেন এই বিশ্বাসে যে, প্রকৃত সত্য কখনও ছলনা করে না, তাই তার দ্বারা বঞ্চিতও হতে হয় না। তাই সত্য ও জীবনের যথার্থ রূপের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করার অঙ্গীকারই এখানে কবির মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে।
5. “সত্য যে কঠিন”-এই উপলব্ধিতে কবি কীভাবে উপনীত হলেন তা ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতা অবলম্বনে লেখো। [নমুনা প্রশ্ন] অথবা, ‘রূপনারানের কূলে’ অবলম্বনে কবির উপলব্ধি নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর কথামুখ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবন-সায়াহ্নে এসে এক অনন্য জীবনদর্শনের মুখোমুখি হয়েছেন। আর সেই জীবনদর্শনের কথাই আলোচ্য ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে। সত্যের প্রকৃত মূল্য: স্বপ্নময় কাব্যের জগতের কবি এসে পৌঁছেছেন রুক্ষ গদ্যময় জীবনের পটভূমিতে। আলোচ্য কবিতায় কবি সত্যের মূল্যকে নতুনভাবে উপলব্ধি করেছেন। কবিরা যে কল্পনার দাসত্ব করেন, সেই স্বপ্ন-কল্পনার জগৎ সত্য নয়। সত্যের যথার্থ স্বরূপকে খুঁজে নিতে হয় আঘাত-সংঘাতমুখর জনসমাজের মধ্য থেকেই। সেখানে ‘রক্তের অক্ষরে’ অর্থাৎ সংঘর্ষ আর রক্তক্ষরণের মধ্য দিয়ে নিজের ব্যক্তিসত্তার নির্মাণ কবি লক্ষ করেন। জীবনের আসল রূপ: জীবনের গতি কখনও সরলরেখায় চলে না। দুঃখ, বেদনাবোধ আর অপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে জীবন এগিয়ে চলে। সেখানে ‘আঘাতে আঘাতে/বেদনায় বেদনায়’ নিজেকে চেনা যায়। কল্পনার মায়ালোক ক্ষণিকের, তা সাময়িকভাবে আনন্দ দিতে পারে; কিন্তু এই মোহের আবরণ ছিঁড়ে গেলে বোঝা যায় জীবন আসলে কল্পনানির্ভর নয়। বিশ্বসংসারের প্রকৃত রূপ: যখনই মানুষ কল্পনা বা স্বপ্নময়তাকে অতিক্রম করতে পারে, তখনই রূপময় বিশ্বের প্রকৃত রূপ তার কাছে স্পষ্ট হয়। সেখানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বেদনা-রক্তাক্ততা যতই থাকুক, সেটাই জীবনের যথার্থ রূপ এবং এটাই সত্যেরও স্বরূপ। সত্য তাই কবির কাছে ‘কঠিন’ বলেই উপলব্ধ হয়।
6. “সত্য যে কঠিন, কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,”- কবির কাছে ‘সত্য’র যে ধারণা প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় প্রকাশ করো।
উত্তর শুরুর কথা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুর পরে প্রকাশিত শেষ লেখা
কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতায় দেখা যায়, ‘রূপনারানের কূলে’ অর্থাৎ রূপময়,
প্রবহমান জীবনের শেষপ্রান্তে এসে কবি জেগে উঠেছেন। সেই জগতের মধ্যে
কোনো মায়াস্বপ্ন বা কল্পনাকে তিনি খুঁজে পাননি। পরিবর্তে তিনি এসে দাঁড়িয়েছেন
আঘাত-সংঘাতমুখর বাস্তব জনজীবনে। সত্য অভিজ্ঞতা: জীবনের অজস্র বেদনা এবং রক্তপাতকে কবি এখানে প্রত্যক্ষ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতাকেই করি সত্য বলে মনে করেছেন। ‘আত্মপরিচয়’-এ রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-“সত্যের লক্ষণই এই যে, সমস্তই তার মধ্যে এসে মেলে।…তাই সত্যের প্রতি শ্রদ্ধা করে। পৃথিবীটি বস্তুত যেমন, অর্থাৎ নানা অসমান অংশে বিভক্ত, তাকে তেমনি করেই জানবার সাহস থাকা চাই।” সত্যের প্রতি ভালোবাসা: আলোচ্য কবিতাটিতেও সত্যের এই কঠিন স্বরূপকে প্রত্যক্ষ করে রবীন্দ্রনাথ তাকেই ভালোবেসেছেন। কারণ তাঁর ভাবনায় সত্য কখনও বঞ্চনা বা ছলনা করে না। কবির কাছে জীবন আসলে দুঃখের তপস্যা। কিন্তু তা এই সত্যের মূল্য শোধ করার জন্যই। সত্যই জীবনের যথার্থতা: কল্পনা বা স্বপ্নবিলাসের দ্বারা জীবনের এই সত্যকে এড়িয়ে যাওয়ার অর্থ জীবনের স্বাভাবিক গতিকে ও তার যথার্থ স্বরূপকে অস্বীকার করা। অন্যদিকে, কঠিন সত্য জীবনের যথার্থ স্বরূপকে চিনিয়ে দেয়।
7. আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,”-কেন কবি এই জীবনকে ‘দুঃখের তপস্যা’ বলেছেন? এখানে কবির মনোভাবে বিবর্তনের যে ছবি পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় লেখো। ৩+২
উত্তর. জীবনকে ‘দুঃখের তপস্যা’ বলার কারণ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় জীবনকে ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’ বলেছেন। কবির কাছে জীবন হল আঘাত-সংঘাত, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে সত্যকে উপলব্ধি করা। সত্যের স্বরূপ অত্যন্ত কঠিন। সুখ এবং আনন্দকে অতিক্রম করে দুঃখের নির্মমতায় তার বিস্তার। সত্যকে পাওয়ার জন্য মানুষের – যে সাধনা, তা অত্যন্ত কঠিন। তাকে উপলব্ধি করার জন্য কল্পনার সৌধ থেকে নেমে আসতে হয় বাস্তবের অমসৃণ জমিতে। ‘রক্তের অক্ষরে’ নিজের রূপ দেখতে পাওয়া যায়, নিজেকে চিনতে পারা যায় আঘাতে-বেদনায়। জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছে কবি সত্যের যে কঠিন স্বরূপ, তা চিনতে পারেন এবং সেই কঠিনকেই তিনি ভালোবাসেন। কারণ, সত্য কখনও বঞ্চনা করে না। সত্যের প্রতি এই আকর্ষণ এবং তার স্বরূপের যথার্থ উপলব্ধি থেকেই কবির মনে হয় জীবন হল ‘আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা’।
▶ কবিমনের বিবর্তনের ছবি: সত্যের যে উপলব্ধিতে কবি পৌঁছেছেন তা আসলে কবিমনের এক স্পষ্ট বিবর্তনের ইঙ্গিত-কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবের রুক্ষ জমিতে নেমে আসা। কবিতার সূচনাতেই তাই কবি লিখেছেন “রূপ- নারানের কূলে/জেগে উঠিলাম,/জানিলাম এ জগৎ/স্বপ্ন নয়।” ‘রূপনারানের কূলে’ অর্থাৎ রূপময়, প্রবহমান জীবনকালের প্রান্তে উপনীত হয়ে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর রূপ দেখে অশীতিপর কবি তাই নিরাবরণ, প্রত্যক্ষীভূত ও অনিবার্য সত্যকে ভালোবেসে গ্রহণ করেছেন। ত্যাগ করেছেন স্বপ্নচারিতাকে। কল্পনা থেকে সত্যের পথে কবিচেতনার বিবর্তন এভাবেই ফুটে উঠেছে।
8. “মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।”- কোন্ দেনা শোধের কথা বলা হয়েছে কবিতাটি অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তর. প্রাক্কথন: শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা ‘রূপনারানের কূলে’-তে রবীন্দ্রনাথের আত্মোপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে।
‘রূপনারানের কূলে’ প্রকৃত জীবনবোধে জেগে ওঠায় কবির পরিণত উপলব্ধি এই যে, জগৎ স্বপ্ন নয়, ‘রক্তের অক্ষরে’ অর্থাৎ বাস্তবজগতের অজস্র সংঘাত- বেদনার মধ্য দিয়েই জীবনের প্রকৃত স্বরূপকে চেনা যায়। জীবনের দেনা শোধ: জীবনের সঙ্গে মানুষের এই পরিচয়ই ‘সত্য’ পরিচয়, এই পথই জীবনের ‘সত্য’-কে উপলব্ধি এবং আবিষ্কার করার একমাত্র উপায়। রানি চন্দকে এই কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট বলতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-“সত্য কঠিন- অনেক দুঃখ, দাবি নিয়ে আসে। স্বপ্নে তা তো থাকে না, কিন্তু তবুও আমরা সেই কঠিনকেই ভালোবাসি।” কবির কথায় এই কঠিনের জন্যই সবসময় দুঃসহ কাজ করতে আমরা তৈরি থাকি -“এমনি করে জীবনের দেনা শোধ করে চলি আমরা।” কবির বিশ্বাস: কবি বিশ্বাস করেন, প্রকৃতি ও মানবসমাজের কাছে প্রতিটি ব্যক্তিমানুষের যে ঋণ, তা এই জীবনেই শোধ করতে হয়। আঘাত ও বেদনাকে সহ্য করেও সত্যের দিকে এগিয়ে চলাই হল জীবনের যথার্থ ধর্ম। সত্যকে পাওয়ার জন্য মানুষের দুঃখের তপস্যা বা কঠিন সাধনা আসলে সত্যের দারুণ মূল্যকে শোধ করে দেওয়ার জন্য। এই সত্যকে যেহেতু সবসময়ই উপলব্ধি করতে হয়, তাই মৃত্যুর ঠিক আগের মুহূর্ত পর্যন্ত চলে মানুষের এই কঠোর সাধনা, জীবনের যথার্থ স্বরূপকে চিনতে পারার কঠিনতম প্রয়াস। ইতিকথা: মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দেওয়ার অর্থ জীবনের কাছে সত্যের যে দাবি, তা সম্পূর্ণ করা। এভাবেই কল্পনা ও স্বপ্নের জগৎ ত্যাগ করে দ্বন্দ্বমুখর জীবনের প্রতিই কবি নিজের পক্ষপাত প্রকাশ করেছেন।
9. ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ জীবনসায়াহ্নে উপনীত হয়ে যা উপলব্ধি করেছেন, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর. কবির উপলব্ধি: কথামুখ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা ‘রূপনারানের কূলে’-তে কবি তাঁর পরিণত বয়সের জীবনদর্শনের এক অসামান্য প্রকাশ ঘটিয়েছেন। প্রকৃতস্বরূপ: কবিতাটিতে দেখা যায়, স্বপ্নের জগৎ থেকে কবি ফিরে এসেছেন মাটি ও মানুষের টানে। আঘাতে-সংঘাতে-বেদনায় তিনি উপলব্ধি করেছেন নিজের প্রকৃত স্বরূপ, যা প্রকৃতপক্ষে মানবচেতনার যথাযথ রূপ। মানবজীবন কল্পনাবিলাসের কোমল মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো অসম্ভব বা অবাস্তবের প্রকাশ এ নয়। কঠোর সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মধ্য দিয়েই মানবজীবন সার্থকতা লাভ করে। দুঃখের তপস্যা: এই সত্যের স্বরূপ এটাই যে, তাতে জীবনের গতিশীলতা
প্রকাশ পায়। কবির কথায় আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা হল এই জীবন। তাকে স্বীকার করে রঙিন স্বপ্ন-কল্পনার জগতে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যে জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শেষের কথা: রানি চন্দকে রবীন্দ্রনাথ এই কবিতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন-“সত্য কঠিন-অনেক দুঃখ, দাবি নিয়ে আসে। স্বপ্নে তা তো থাকে না, কিন্তু তবুও আমরা সেই কঠিনকেই ভালোবাসি। ভালোবাসি সেই কঠিনের জন্য সবকিছু দুঃসহ কাজ করতে।” এভাবেই আলোচ্য কবিতাটিতেও এই জীবনের প্রকৃত স্বরূপটি চিনে নেওয়ার কথা বলেছেন কবি। ‘রূপনারানের কূলে’ এভাবেই তিনি সত্য ও জীবনের সন্ধান করেছেন।