Class 12 Chapter 6 Solution
মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন 1952-’53
1. MCQs Question Answer
1. ‘মুদালিয়র কমিশন’ অপর যে নামে পরিচিত তা হল-
(i) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কমিশন
(ii) মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন
(iii) কোঠারি কমিশন
(iv) জাতীয় শিক্ষানীতি
উত্তর: (ii) মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন
2. মুদালিয়র কমিশন কবে গঠন করা হয়?
(i) 1948 খ্রিস্টাব্দে
(ii) 1949 খ্রিস্টাব্দে
(iii) 1951 খ্রিস্টাব্দে
(iv) 1952 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (iv) 1952 খ্রিস্টাব্দে
3. মুদালিয়র কমিশনের সদস্যসংখ্যা কত ছিল?
(i) 4 জন
(ii) 6 জন
(iii) 7 জন
(iv) 9 জন
উত্তর: (iv) 9 জন
4. কত খ্রিস্টাব্দে মুদালিয়র কমিশনের রিপোর্ট সরকারের কাছে পেশ করা হয়?
(i) 1952 খ্রিস্টাব্দে
(ii) 1953 খ্রিস্টাব্দে
(iii) 1954 খ্রিস্টাব্দে
(iv) 1964 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (ii) 1953 খ্রিস্টাব্দে
5. মুদালিয়র কমিশনের রিপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা কত ছিল?
(i) 212টি
(ii) 311টি
(iii) 402টি
(iv) 474টি
উত্তর: (ii) 311টি
6. মুদালিয়র কমিশনে ক-জন ভারতীয় সদস্য ছিলেন?
(i) 2 জন
(ii) 5 জন
(iii) 7 জন
(iv) 9 জন
উত্তর: (iii) 7 জন
7. মুদালিয়র কমিশনে বিদেশি সদস্যসংখ্যা কত ছিল?
(i) 2
(ii) 5
(iii) 7
(iv) 9
উত্তর: (i) 2
৪. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সদস্য-সম্পাদক কে ছিলেন?
(i) শ্রী কে জি সায়েদিন
(ii) জাকির হোসেন
(iii) শ্রী এস টি ব্যাস
(iv) শ্রী অনাথ বসু
উত্তর: (iv) শ্রী অনাথ বসু
9. নীচের কোন্ ব্যক্তি মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের একজন বিদেশি সদস্য ছিলেন?
(i) ড. কিনেথ রাস্ট উইলিয়াম
(ii) ড. জেমস এম ডাফ
(iii) ড. আর্থার ই মরগ্যান
(iv) ড. আর্থার উইলসন
উত্তর: (i) ড. কিনেথ রাস্ট উইলিয়াম
10. নীচের কোন্ ব্যক্তি মুদালিয়র কমিশনের একজন অন্যতম বিদেশি সদস্য?
(i) ড. জেমস এম ডাফ
(ii) ড. আর্থার ই মরগ্যান
(iii) ড. আর্থার উইলসন
(iv) জন ক্রিস্টি
উত্তর: (iv) জন ক্রিস্টি
11. “আমাদের মাধ্যমিক শিক্ষা লক্ষ্যহীনতার শিক্ষা”-কোন্ কমিশন এই মন্তব্যটি করেছেন?
(i) কোঠারি কমিশন
(ii) মুদালিয়র কমিশন
(iii) রাধাকৃষ্ণণ কমিশন
(iv) স্যাডলার কমিশন
উত্তর: (ii) মুদালিয়র কমিশন
12. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মতে, মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য কী?
(i) গণতান্ত্রিক ভারতীয় সমাজব্যবস্থার জন্য যোগ্য নাগরিক সৃষ্টি করা
(ii) শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে ভারতীয় সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটানো
(iii) শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক উপযুক্ত মনোভাব ও প্রাথমিক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা
(iv) উপরোক্ত সবকটিই
উত্তর: (iv) উপরোক্ত সবকটিই
13. খ্রিস্টাব্দের 23 সেপ্টেম্বর মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়রের নেতৃত্বে ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন’ নামে একটি কমিশন গঠন করা হয়।
(i) 1948
(ii) 1949
(iii) 1951
(iv) 1952
উত্তর: (iv) 1952
14. মুদালিয়র কমিশনের বিদেশি সদস্যদের মধ্যে একজন হলেন অক্সফোর্ডের জেমস কলেজের অধ্যক্ষ
(i) জন হেনরি
(ii) জন কেনি
(iii) জন বিলার্ড
(iv) জন ক্রিস্টি
উত্তর: (iv) জন ক্রিস্টি
15. মুদালিয়র কমিশনের ভারতীয় সদস্যদের মধ্যে যাঁকে সম্পাদক পদে বসানো হয়েছিল, তিনি হলেন 1
(i) শ্রী অনাথ বসু
(ii) শ্রী এস টি ব্যাস
(iii) শ্রী কে জি সায়েদিন
(iv) ডক্টর কে এস শ্রীমালী
উত্তর: (i) শ্রী অনাথ বসু
16. মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো সম্পর্কে সুপারিশ করতে গিয়ে সম্পূর্ণ বিদ্যালয় শিক্ষার সময়-কালকে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বছর করার পক্ষে
(i) 8
(ii) 10
(iii) 12
(iv) 16
উত্তর: (iii) 12
17. 1948 খ্রিস্টাব্দে নিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের অভিমত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার অগ্রগতির অন্যতম পূর্বশর্ত কী?
(i) প্রাথমিক শিক্ষার পুনর্গঠন
(ii) মাধ্যমিক শিক্ষার পুনর্গঠন
(iii) মহাবিদ্যালয় শিক্ষার পুনর্গঠন
(iv) প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষার পুনর্গঠন
উত্তর: (i) প্রাথমিক শিক্ষার পুনর্গঠন
18. কোন্ কমিটি 1948 খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক শিক্ষা পুনর্গঠনের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়?
(i) রায় চাঁদ কমিটি
(ii) যশপাল কমিটি
(iii) তারা চাঁদ কমিটি
(iv) জনার্দন রেড্ডি কমিটি
উত্তর: (iii) তারা চাঁদ কমিটি
19. নীচের কোন্ সংস্থাটি 1948 খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক শিক্ষার পুনর্গঠনের জন্য একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়?
(i) কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ
(ii) রাজ্য শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ
(iii) কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন পর্ষদ
(iv) রাজ্য শিক্ষা উন্নয়ন পর্ষদ
উত্তর: (i) কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ
20. CABE পুরো কথাটি কী?
(i) ক্যালকাটা অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(ii) সেন্ট্রাল অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(iii) কোর অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(iv) কারেন্ট অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
উত্তর: (ii) সেন্ট্রাল অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
21. SABE পুরো কথাটি কী?
(i) সোশ্যাল অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(ii) সেভারেল অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(iii) স্টেট অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
(iv) সিনিয়র অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
উত্তর: (iii) স্টেট অ্যাডভাইসারি বোর্ড অব এডুকেশন
22. নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মুদালিয়র কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) শ্রী সুভাষ বসু
(ii) শ্রী অনাথ বসু
(iii) শ্রী রাসবিহারী বসু
(iv) শ্রী কমল বসু
উত্তর: (iii) শ্রী রাসবিহারী বসু
23. নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) শ্রীটিকে দেব
(ii) শ্রী এম কে ব্যাস
(iii) শ্রী এস টি ব্যাস
(iv) শ্রী এম কে দেব
উত্তর: (ii) শ্রী এম কে ব্যাস
24 . নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) ড. সি কে শ্রীমালী
(ii) ড. কে এস শ্রীমালী
(iii) ড. এম এস শ্রীমালী
(iv) ড. ডি কে শ্রীমালী
উত্তর: (iii) ড. এম এস শ্রীমালী
25. নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) শ্রী জি এ তারপরভেলা
(ii) শ্রী পি কে তারপরভেলা
(iii) শ্রী এম কে তার পরভেলা
(iv) শ্রী টি সি তারপরভেলা
উত্তর: (i) শ্রী জি এ তারপরভেলা
26. নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মুদালিয়র কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) শ্রীমতী হংসরাজ
(ii) শ্রীমতী হংস মেহতা
(iii) শ্রীমতী হংস খৈতান
(iv) শ্রীমতী হংস প্রধান
উত্তর: (ii) শ্রীমতী হংস মেহতা
27. নীচের শিক্ষাবিদগণের মধ্যে কে মুদালিয়র কমিশনের সদস্য ছিলেন না?
(i) ড. লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়র
(ii) ড. সুমন্ত কুমার মুদালিয়র
(iii) ড. কে এস শ্রীমালী
(iv) শ্রী এস টি ব্যাস
উত্তর: (ii) ড. সুমন্ত কুমার মুদালিয়র
28. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সভাপতি ছিলেন-
(i) ডি এস কোঠারি
(ii) এস রাধাকৃয়াণ
(iii) ড. জাকির হোসেন
(iv) এ. লক্ষণ স্বামী মুদালিয়র
উত্তর: (ii) এস রাধাকৃয়াণ
29. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন কত সালে গঠিত হয়?
(i) 1952 সালে
(ii) 1948 সালে
(iii) 1964 সালে
(iv) 1950 সালে
উত্তর: (i) 1952 সালে
30. বহুমুখী বিদ্যালয় ধারণাটি লক্ষ করা যায়-
(i) রাধাকৃয়ণ কমিশনে
(ii) কোঠারি কমিশনে
(iii) মুদালিয়র কমিশনে
(iv) অশোক মিত্র কমিশনে
উত্তর: (iii) মুদালিয়র কমিশনে
31. মুদালিয়র কমিশনের মতে ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত হবে-
(i) 40:1
(ii) 30:1
(iii) 45:1
(iv) 38:1
উত্তর: (i) 40:1
32. স্বাধীন ভারতের দ্বিতীয় শিক্ষা কমিশন হল-
(i) রাধাকৃয়ণ কমিশন
(ii) মুদালিয়র কমিশন
(iii) কোঠারি কমিশন
(iv) অশোক মিত্র কমিশন
উত্তর: (iii) কোঠারি কমিশন
33. নীচের কোন্ শিক্ষাবিদ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সদস্য ছিলেন?
(i) শ্রী কে জি সায়েদিন
(ii) শ্রী এম কে সায়েদিন
(iii) শ্রী জি কে দুজারদিন
(iv) শ্রী ডি কে সায়েদিন
উত্তর: (i) শ্রী কে জি সায়েদিন
34. মুদালিয়র কমিশন মূলত গঠিত হয়েছিল যে শিক্ষাস্তরের উন্নতির জন্য-
(i) প্রাথমিক
(ii) মাধ্যমিক
(iii) উচ্চশিক্ষা
(iv) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা
উত্তর: (ii) মাধ্যমিক
35. মুদালিয়র কমিশন যে শ্রেণি থেকে ঐচ্ছিক বিষয়গুলি বাছাই করার সুপারিশ করেছিলেন-
(i) অষ্টম শ্রেণি
(ii) নবম শ্রেণি
(iii) দশম শ্রেণি
(iv) একাদশ শ্রেণি
উত্তর: (ii) নবম শ্রেণি
36. মুদালিয়র কমিশনের রিপোর্টে ক-টি অধ্যায় ছিল?
(i) ৪টি
(ii) 12টি
(iii) 16টি
(iv) 20টি
উত্তর: (iii) 16টি
37. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়-
(i) 22 সেপ্টেম্বর, 1952
(ii) 23 সেপ্টেম্বর, 1952
(iii) 24 সেপ্টেম্বর, 1952
(iv) 20 সেপ্টেম্বর, 1952
উত্তর: (ii) 23 সেপ্টেম্বর, 1952
2. Very Short Question Answer
1. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন কবে কাজ শুরু এবং কবে কাজ শেষ করে?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন 1952 খ্রিস্টাব্দে কাজ শুরু করে এবং 1953 খ্রিস্টাব্দে কাজ শেষ করে।
2. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টটি কত পৃষ্ঠাব্যাপী ছিল?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টটি 311 পৃষ্ঠাব্যাপী ছিল।
3. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে কতগুলি অধ্যায় ছিল?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে 16টি অধ্যায় ছিল।
4. মাধ্যমিক শিক্ষার একটি লক্ষ্য উল্লেখ করো।
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষার একটি লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সৃষ্টিশীলতার বিকাশ সাধন করা।
5. মুদালিয়র কমিশনের অপর নাম কী ছিল?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের অপর নাম মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন।
6. মুদালিয়র কমিশনের সদস্যসংখ্যা কত ছিল?
উত্তর: : মুদালিয়র কমিশনের সদস্যসংখ্যা ছিল 9 জন। আমা
7. কোন্ শিক্ষা কমিশন ত্রিভাষাসূত্রের কথা বলেছেন?
উত্তর: মুদালিয়র শিক্ষা কমিশন সর্বপ্রথম ত্রিভাষাসূত্রের কথা বলেছেন।
8. মুদালিয়র কমিশন নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কত বছর পঠনপাঠনের জন্য সুপারিশ করে?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের তিন বছর পঠনপাঠনের জন্য সুপারিশ করে।
9. মুদালিয়র কমিশন উচ্চবিদ্যালয় বলতে কোন্ প্রকার বিদ্যালয়কে সূচিত করে?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন উচ্চবিদ্যালয় বলতে সেই সময়ে প্রচলিত দশম শ্রেণির বিদ্যালয়গুলিকে সূচিত করে।
10. মুদালিয়র কমিশনের রিপোর্টে উচ্চমাধ্যমিক স্তর কত বছর করার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের রিপোর্টে উচ্চমাধ্যমিক স্তর 4 (চার) বছর করার কথা বলা হয়েছে।
11. মুদালিয়র কমিশন দ্বারা উল্লিখিত মাধ্যমিক শিক্ষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ব্যক্ত করো।
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হল-① উপযুক্ত নাগরিক সৃষ্টি করা, ② জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি করা।
12. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন প্রস্তাবিত উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রমে ভাষা ব্যতীত আর কী কী কেন্দ্রীয় বিষয় (core subject) ছিল?
উত্তর: সমাজবিজ্ঞান, গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান এবং হাতের কাজ বা হস্তশিল্প।
13. মুদালিয়র কমিশন কী ধরনের স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন বহুমুখী বিদ্যালয় (Multipurpose school) প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়।
3. Short Question Answer
1. মুদালিয়র শিক্ষা কমিশন প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামোটি উল্লেখ করো।
উত্তর: মুদালিয়র শিক্ষা কমিশন প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামোটি হল- ①4 অথবা 5 বছরের প্রাথমিক বা নিম্নবুনিয়াদি শিক্ষাস্তরের পর মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু হবে। ② মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে (i) 3 বছরের নিম্নমাধ্যমিক (অথবা উচ্চবুনিয়াদি) স্তর থাকবে এবং (ii) চার বছরের উচ্চতর মাধ্যমিক স্তর থাকবে।
2. মুদালিয়র কমিশন উল্লিখিত তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষার যে-কোনো দুটি ত্রুটি বা সমস্যা লেখো।
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন উল্লিখিত তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষার ত্রুটি বা সমস্যা হল-① প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষা অতিমাত্রায় পুস্তককেন্দ্রিক, যান্ত্রিক ও বৈচিত্র্যহীন এবং পরীক্ষানির্ভর। ② প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বারা শিক্ষার্থীর বিভিন্ন রুচি, আগ্রহ ও প্রবণতার যথাযথ পরিতৃপ্তি ঘটে না।
3. মাধ্যমিক স্তরে ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত কী ছিল?
উত্তর: মাধ্যমিক স্তরে ভাষা শিক্ষা সম্পর্কে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত হল-① মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা। ② মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যবর্তী স্তরে শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে দুটি ভাষা শিখতে হবে। জুনিয়র বেসিক স্তরের পর ইংরেজি এবং হিন্দি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ③ উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কমপক্ষে দুটি ভাষা শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
4. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মত অনুযায়ী পাঠক্রম রচনার যে-কোনো দুটি মৌলিক নীতি লেখো।
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মত অনুযায়ী পাঠক্রম রচনার যে-কোনো দুটি মৌলিক নীতি হল- ① শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিবৈষম্য, ব্যক্তিগত চাহিদা ও আগ্রহের প্রতি নজর দিয়ে পাঠক্রমকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলতে হবে। ② পাঠক্রম যাতে সমাজজীবনের প্রয়োজনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
5. মুদালিয়র কমিশন মধ্যবর্তী বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীর জন্য পাঠক্রমে কোন্ কোন্ বিষয় অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করেছেন?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন মধ্যবর্তী বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার্থীর জন্য পাঠক্রমে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে-① ভাষা (মাতৃভাষা, হিন্দি ও ইংরেজি), ② সমাজবিদ্যা, ও সাধারণ বিজ্ঞান, ④ অঙ্ক, ⑤ শিল্প ও সংগীত, ⑥ হাতের কাজ এবং শারীরশিক্ষা।
6. মুদালিয়র কমিশন উচ্চ ও উচ্চতর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রমে কী কী কেন্দ্রীয় বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছেন?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন উচ্চ ও উচ্চতর মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রমে যে কেন্দ্রীয় বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছিলেন
সেগুলি হল-① ভাষা (মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা এবং হিন্দি, ইংরেজি ইত্যাদি ভাষার মধ্য থেকে একটি ভাষা); ② সাধারণ বিজ্ঞান, ③ সমাজবিদ্যা এবং একটি হাতের কাজ।
7. মুদালিয়র কমিশন উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্তরের জন্য বহুমুখী পাঠক্রমের যে সাতটি গ্রুপের সুপারিশ করেছেন, সেগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্তরের জন্য বহুমুখী পাঠক্রমের যে সাতটি গ্রুপের সুপারিশ করেছেন, সেগুলি হল- ① মানবিক বিদ্যা, ② বিজ্ঞান, ও কারিগরি বিদ্যা, ④ বাণিজ্য, ⑤ কৃষিবিদ্যা, চারুকলা এবং ⑦ গার্হস্থ্য বিজ্ঞান।
৪. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মতে, বহুমুখী বিদ্যালয় কাদের বলা হবে?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মতে, বহুমুখী বিদ্যালয় হল এমন এক ধরনের বিদ্যালয় যেখানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নপ্রকার লক্ষ্য, আগ্রহ এবং সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন বিষয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
9. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা এবং নীতিশিক্ষা প্রসঙ্গে কী সুপারিশ করেছে?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা এবং নীতিশিক্ষা প্রসঙ্গে যে সুপারিশ করেছে তা হল, বিদ্যালয়ের শুরুতে সমবেত প্রার্থনা এবং মহাপুরুষদের বাণী পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক-অভিভাবিকাদের সম্মতি ছাড়া বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাবে না।
10. পাঠ্যাতিরিক্ত কার্যাবলি প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ কী ছিল?
উত্তর: পাঠ্যাতিরিক্ত কার্যাবলি প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ ছিল, এইপ্রকার কার্যাবলি বিদ্যালয়ে প্রদত্ত শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গরূপে পরিগণিত হবে এবং বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে এই কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় ব্যয় করতে হবে।
11. শিক্ষার্থীদের চরিত্রগঠন প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ কী ছিল?
উত্তর: শিক্ষার্থীদের চরিত্রগঠন প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ ছিল, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি পরিমাণে সমাজজীবনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। নানান ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ, নেতৃত্বদানের সুযোগ প্রদান এবং সমাজসেবায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের চরিত্র সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে।
12. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মতে, শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যাপ্তিকাল কী হওয়া উচিত?
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের মতে-① মাধ্যমিক কিংবা উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের সময়কাল হবে দু-বছর এবং ② স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষকদের জন্য এই সময়কাল আপাতত এক বছর থাকলেও, পরে তা দু-বছর করতে হবে।
13. শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ কী ছিল?
উত্তর: শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশ হল, প্রচলিত পরীক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতির মূল্যায়নের জন্য অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা এবং শিক্ষকদের দ্বারা রক্ষিত বিদ্যালয়ের রেকর্ডের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। পরীক্ষায় রচনাধর্মী প্রশ্নের পাশাপাশি নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার প্রবর্তন করতে হবে।
14. পরীক্ষা ও মূল্যায়নের উন্নতির প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের যে- কোনো দুটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ লেখো।
উত্তর: পরীক্ষা ও মূল্যায়নের উন্নতি প্রসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ হল-① শুধু বাৎসরিক পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দেওয়া যাবে না। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফলাফল ও শিক্ষার্থীদের অন্যান্য কাজের রেকর্ডও বিবেচনা করা প্রয়োজন। ② নৈর্ব্যক্তিক অভীক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
15. শিক্ষার্থীদের কাজের মূল্যায়নের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন যে ‘Five- point-scale’-এর সুপারিশ করেছিল তা লেখো।
উত্তর: শিক্ষার্থীদের কাজের মূল্যায়নের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন যে ‘Five-point-scale’-এর সুপারিশ করেছিল, তা হল-‘A’- excellent, ‘B’-good, ‘C’-fair and average, ‘D’-poor এবং ‘E’-very poor |
16. শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার মূল্যায়নের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন যেসব গ্রেডের সুপারিশ করেছিলেন, সেগুলি লেখো।
উত্তর: শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার মূল্যায়নের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন যেসব গ্রেডের সুপারিশ করেছিলেন, সেগুলি হল- ‘A’-distinction, ‘B’-credit, ‘C’-pass, ‘D’ and ‘E’-failure (or casesreferred back)।
17. মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন যে সর্বাত্মক পরিচয়পত্রের সুপারিশ করেছিলেন, তার থেকে কী কী বিষয় জানা যেতে পারে?
উত্তর: সর্বাত্মক পরিচয়পত্র থেকে প্রতিটি শিক্ষার্থীর আগ্রহ, প্রবণতা, ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য, সামাজিক মেলামেশার ক্ষমতা, পড়াশোনার অগ্রগতি প্রভৃতি বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায়।
18. AICTE-র পুরো কথাটি কী?
উত্তর: AICTE-র পুরো কথাটি হল অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন (All India Council for Technical Education)।
19. CRC-এর পুরো কথাটি কী?
উত্তর: CRC-এর পুরো কথাটি হল-কিউমুলেটিভ রেকর্ড কার্ড (Cumulative Record Card)।
20. কোন্ কমিশনে সর্বপ্রথম মাধ্যমিক স্তরে সর্বাত্মক পরিচয়পত্রে শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়জীবনের সব ধরনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করার সুপারিশ করে?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন সর্বপ্রথম মাধ্যমিক স্তরে সর্বাত্মক পরিচয়পত্রে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়জীবনের সব ধরনের ঘটনা লিপিবদ্ধ করার সুপারিশ করে।
21. মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের শেষে কী ধরনের পরীক্ষা গ্রহণের সুপারিশ করে?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের শেষে কেবল একটি সাধারণ বহিস্থ পরীক্ষা গ্রহণের সুপারিশ করে।
22. মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নম্বরের বা সংখ্যামানের পরিবর্তে কীসের সুপারিশ করে?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে নম্বরের বা সংখ্যামানের পরিবর্তে ‘গ্রেড’ বা ‘আক্ষরিক মান’ প্রদানের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে বা সুপারিশ করে।
23. পাঠ্যপুস্তকের গুণগত মান বৃদ্ধি করার জন্য মুদালিয়র কমিশন কী সুপারিশ করে?
উত্তর: পাঠ্যপুস্তকের গুণগত মান বৃদ্ধি করার জন্য মুদালিয়র কমিশন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাঠ্যপুস্তক কমিটি গঠনের সুপারিশ করে। ওই কমিটি একটি স্বাধীন সংস্থারূপে কাজ করবে।
24. মুদালিয়র কমিশনের মতে পাঠ্যপুস্তক কমিটির সভ্য কারা?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের মতে, পাঠ্যপুস্তক কমিটির সভ্য হিসেবে যাঁরা কমিটিতে যোগ দিতে পারবেন, তাঁরা হলেন-① রাজ্য সরকারের বিচার বিভাগীয় প্রতিনিধি, ② পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য, ③ আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ④ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুজন প্রধান শিক্ষক, ⑤ দুজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং ⑥ সরকারি শিক্ষা আধিকারিক।
25. তহবিল গঠন এবং আর্থিক সাহায্যদান প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত কী ছিল?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন পাঠ্যপুস্তক বিক্রয় থেকে একটি তহবিল গঠনের সুপারিশ করে। ওই তহবিল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তিদান, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ এবং অন্যান্য আর্থিক সাহায্যের সুপারিশ করা হয়।
26. বিদ্যালয়ে কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন প্রসঙ্গে কমিশনের অভিমত কী ছিল?
উত্তর: বিদ্যালয়ে কোনো শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন প্রসঙ্গে কমিশনের অভিমত ছিল, বিদ্যালয় কোনো বিষয়ে একটিমাত্র পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন করবে না। বরং একই মানের একাধিক পুস্তক নির্বাচন করবে।
27. পাঠ্যপুস্তক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত কী ছিল?
উত্তর: পাঠ্যপুস্তকে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত ছিল, পাঠ্যপুস্তকগুলি কোনো বিশেষ জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হবে না। এমনকি কোনো সম্প্রদায়ের বিশ্বাসে আঘাত লাগতে পারে এমন তথ্যও পরিবেশন করা যাবে না।
28. মুদালিয়র কমিশন উচ্চতর মাধ্যমিক পাঠক্রমকে কয়টি অংশে ভাগ করে এবং সেগুলি কী কী?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন উচ্চতর মাধ্যমিক পাঠক্রমকে দুটি অংশে ভাগ করে, সেগুলি হল-① আবশ্যিক বা মূল পাঠক্রম এবং ② ঐচ্ছিক অংশ।
29. মুদালিয়র কমিশন উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমের ঐচ্ছিক অংশের মানবিক বিদ্যায় কোন্ কোন্ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমের ঐচ্ছিক অংশে মানবিক বিদ্যায় যে বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে, তা হল- ① একটি প্রাচীন ভাষা বা একটি অন্য ভাষা যা শিক্ষার্থী আবশ্যিক অংশে গ্রহণ করেনি, ② ইতিহাস, ③ ভূগোল, ④ অর্থনীতি ও পৌরবিজ্ঞান, ⑤ মনোবিজ্ঞান ও তর্কশাস্ত্র, ⑥ গণিত, ⑦ সংগীত এবং ৪ গার্হস্থ্য বিজ্ঞান।
30. মুদালিয়র কমিশন উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমের ঐচ্ছিক অংশের বিজ্ঞান বিভাগে কোন্ কোন্ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশন উচ্চতর মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমে ঐচ্ছিক অংশের বিজ্ঞান বিভাগে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করে, সেগুলি হল-① পদার্থবিদ্যা, ② রসায়নশাস্ত্র, ③ জীববিদ্যা, ④ ভূগোল, ⑤ গণিত এবং শারীরবিদ্যা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান।
31. মুদালিয়র কমিশনের চারটি বিচার্য বিষয় উল্লেখ করো।
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের চারটি বিচার্য বিষয় হল-① ভারতবর্ষে মাধ্যমিক শিক্ষার তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে ব্যাপক অনুসন্ধান করা। ② মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য, সংগঠন ও বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা। ③ প্রাথমিক, বুনিয়াদি ও উচ্চতর শিক্ষার সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার সম্পর্ক স্থাপন করা। 4 বিভিন্নপ্রকার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করা।
4. Long Question Answer
1. মুদালিয়র কমিশন বর্ণিত সাধারণ শিক্ষার কাঠামো সংক্রান্ত সুপারিশগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: সাধারণ শিক্ষার কাঠামো সংক্রান্ত সুপারিশসমূহ মুদালিয়র কমিশন বর্ণিত সাধারণ শিক্ষার কাঠামো-সংক্রান্ত সুপারিশগুলি হল-
[1] শিক্ষার সময়কাল: মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার কাঠামো সম্পর্কে সুপারিশ করতে গিয়ে সম্পূর্ণ বিদ্যালয় শিক্ষার সময়কালকে 12 বছর করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছে।
[2] প্রাথমিক বা নিম্নবুনিয়াদি শিক্ষান্তর: কমিশনের মতে, মানবজীবনের প্রস্তুতির জন্য মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হলেও, সুপরিকল্পিতভাবে শিক্ষার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পর্যায়ের সঙ্গে সংগতি রেখে তার পুনর্গঠনের কাজ করতে হবে। তাই কমিশনের সুপারিশ হল, 4 বা 5 বছরের প্রাথমিক বা নিম্নবুনিয়াদি স্তরের পর মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর শুরু হবে।
[3] মাধ্যমিক শিক্ষান্তর: কমিশনের মতে, মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষায় দুটি পর্যায় থাকবে। পর্যায় দুটি হল- 1. নিম্ন-মাধ্যমিক এবং ii. উচ্চতর মাধ্যমিক।
[4] বিকল্প শিক্ষা-কাঠামো: বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক- অভিভাবিকাদের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে কমিশন একটি বিকল্প মাধ্যমিক শিক্ষা-কাঠামোর প্রস্তাব করে। নতুন প্রস্তাবে বলা হয়, প্রচলিত ব্যবস্থা অনুযায়ী 10 বছরের বিদ্যালয় শিক্ষা হবে 11 বছরের। মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষায় যে ‘ইনটারমিডিয়েট’ স্তরটি ছিল, সেটিকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করে, তার 1 বছর মাধ্যমিক স্তরের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে এবং বাকি 1 বছরকে স্নাতক স্তরের সঙ্গে যোগ করে 3 বছরের ডিগ্রি কোর্স পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে যতদিন পর্যন্ত না উপর্যুক্ত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত নিম্নমাধ্যমিক ও প্রস্তাবিত উচ্চতর মাধ্যমিক-উভয় ব্যবস্থাই পাশাপাশি চালানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
[5] মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর সম্পর্কিত অন্যান্য সুপারিশ:
i. দশম শ্রেণির (SF বা স্কুল ফাইনাল) বিদ্যালয়গুলিকে একাদশ শ্রেণির (HS বা হায়ার সেকেন্ডারি) বিদ্যালয়ে উন্নীত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ii. যে সকল শিক্ষার্থী স্কুল ফাইনাল (দশম শ্রেণির) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে তাদেরকে এক বছরের প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স (PU) অধ্যয়ন করে স্নাতক স্তরে পড়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
iii. যে সকল শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণির পাঠ তথা HS অথবা PU (প্রাক্-
বিশ্ববিদ্যালয়) কোর্স শেষ করবে, তারাই শুধু পেশাগত শিক্ষার কলেজে ভরতি হবার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
iv. বৃত্তি বা পেশাগত শিক্ষার কলেজগুলিতে এক বছরের প্রাক্-বৃত্তিমূলক কোর্স চালু করার প্রস্তাবও করা হয়।
v. শিক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের রুচি, প্রবণতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী শিক্ষালাভের সুযোগ পায়, তার জন্য মাধ্যমিক স্তরে বহুমুখী বিদ্যালয় (Multipurpose School) স্থাপনের কথাও বলা হয়।
vi. বহুমুখী বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে ছাত্রছাত্রীরা যাতে উচ্চতর কারিগরি শিক্ষার পাঠগ্রহণের সুযোগ পায়, তার জন্য কমিশন পলিটেকনিক অথবা প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রস্তাব করে।
vii. কমিশন প্রতিটি রাজ্য সরকারকে গ্রামীণ বিদ্যালয় স্থাপনের পরামর্শ দেয় এবং মহাবিদ্যালয়গুলিতে কৃষিবিদ্যা, উদ্যানপালন, পশুপালন, কুটিরশিল্প প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য সুপারিশ করে।
2. মুদালিয়র কমিশন কারিগরি শিক্ষার কাঠামো সম্পর্কে কী সুপারিশ করে? ‘সহশিক্ষা’ সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: কারিগরি শিক্ষার কাঠামো সংক্রান্ত সুপারিশসমূহ
সাধারণ শিক্ষাকাঠামোর পাশাপাশি কমিশন কারিগরি শিক্ষার কাঠামো প্রসঙ্গে কতকগুলি সুপারিশ বা প্রস্তাব লিপিবদ্ধ করে। সেগুলি এখানে উল্লেখ করা হল-
[1] কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন: কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, প্রতিটি
রাজ্যে সম্পূর্ণ পৃথকভাবে অথবা বহুমুখী বিদ্যালয়ের সঙ্গে অধিক সংখ্যক কারিগরি বিদ্যালয় বা প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষার প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা দরকার।
[2] কেন্দ্রীয় কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন: দেশের বড়ো বড়ো শহরগুলিতে ‘কেন্দ্রীয় কারিগরি বিদ্যালয়’ স্থাপন করা দরকার। তাহলে ওইসব কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠান স্থানীয় বিদ্যালয়গুলির প্রয়োজন মেটানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
[3] শিল্পকেন্দ্রের কাছাকাছি কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা: বড়ো বড়ো শিল্প তালুকের নিকটবর্তী অঞ্চলে কারিগরি বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে, তাহলে কারিগরি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিকটবর্তী শিল্পকেন্দ্রে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শেখার সুযোগ পাবে।
[4] এআইসিটিই (AICTE)-এর সহযোগিতা গ্রহণের ব্যবস্থা: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বা অন্যান্য কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রযুক্তি শিক্ষার পাঠক্রম প্রণয়ন, নিয়মনীতি নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণের জন্য AICTE (All India Council for Technical Education)-এর মতো সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে শিক্ষাক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
[5] শিল্প-শিক্ষা কর আদায়: কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে কমিশন শিল্প-শিক্ষা কর (Industrial Education tax) ধার্য করার সুপারিশও করে।
সহশিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশসমূহ
কমিশন সহশিক্ষার কাঠামো সম্পর্কেও কতকগুলি মূল্যবান সুপারিশ বা প্রস্তাব লিপিবদ্ধ করে। সেগুলি হল-
[1] গার্হস্থ্য বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা: কমিশনের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে উভয় সম্প্রদায় একই ধরনের সুযোগ লাভ করবে। তবে সহশিক্ষার বিদ্যালয়ে এবং কেবল মেয়েদের জন্য স্থাপিত বিদ্যালয়ে ‘গার্হস্থ্য বিজ্ঞান’ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
[2] সরকারি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা: দেশের যে সকল অঞ্চলে স্ত্রীশিক্ষার প্রসার যথাযথভাবে ঘটতে পারেনি, সেই সকল স্থানে সরকারি প্রচেষ্টায় বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
[3] বালিকা ও শিক্ষিকাদের প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা: সহশিক্ষা বা মিশ্র বিদ্যালয়গুলিতে বালিকাদের জন্য এবং তাদের শিক্ষাদানে নিযুক্ত শিক্ষিকাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
3. প্রচলিত বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার কাঠামোর সঙ্গে মুদালিয়র কমিশন প্রস্তাবিত বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার কাঠামোর তুলনা করো। সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার কাঠামো ছাড়া কমিশন অন্যান্য বিদ্যালয় সম্পর্কে কী সুপারিশ করে?
উত্তর: প্রচলিত বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার কাঠামোর সঙ্গে মুদালিয়র কমিশন প্রস্তাবিত বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষার কাঠামোর তুলনা
অন্যান্য বিদ্যালয়ের কাঠামো সম্পর্কিত সুপারিশ
সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার কাঠামো ছাড়াও কমিশন অন্যান্য বিদ্যালয়ের কাঠামো প্রসঙ্গেও কতকগুলি সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে। সেগুলি নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] পাবলিক স্কুলের পরিবর্তনসাধন: কমিশন দেশের প্রচলিত পাবলিক স্কুলগুলির প্রসঙ্গে বলে, যত শীঘ্র সম্ভব ওই বিদ্যালয়গুলিকে জাতীয় শিক্ষাকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ওইগুলির জন্য সরকারি অনুদানও ধীরে ধীরে কমিয়ে ফেলতে হবে।
[2] আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপন: যেসব ব্যক্তি বদলিযোগ্য (transferable) চাকুরি করেন, তাঁদের সন্তানদের জন্য গ্রামাঞ্চলে আবাসিক বিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে।
[3] বিশেষ বিদ্যালয় স্থাপন: দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। এ ছাড়া অনগ্রসর সম্প্রদায়ের জন্যও
কিছু সংখ্যক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
প্রশ্ন
4. পাঠক্রমে সাতটি মূল বিভাগ বা প্রবাহের অবতারণা প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশন প্রচলিত শিক্ষার পাঠক্রমের যে ত্রুটি চিহ্নিত করেন, তা লেখো। পাঠক্রমের মূল অংশের এবং ঐচ্ছিক অংশের বিষয় সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশ উল্লেখ করো।
উত্তর: প্রচলিত পাঠক্রমের ত্রুটি মুদালিয়র কমিশন প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম সম্পর্কে সুপারিশ করার আগে প্রচলিত শিক্ষার পাঠক্রমের কতকগুলি ত্রুটি চিহ্নিত করে। ত্রুটিগুলি হল-
[1] পুথিকেন্দ্রিক ও তাত্ত্বিক: মুদালিয়র কমিশনের মতে, প্রচলিত পাঠক্রম পুথিকেন্দ্রিক ও তত্ত্বমূলক, জীবনের সঙ্গে এই পাঠক্রমের কোনো যোগ নেই।
[2] বিষয়গতভাবে ভারাক্রান্ত: প্রচলিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম বিষয়গতভাবে খুবই ভারাক্রান্ত। অথচ বিষয়গুলির বেশিরভাগ অংশ তাৎপর্যহীন এবং সমৃদ্ধ নয়।
[3] ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক নয়: কমিশনের মতে, প্রচলিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠক্রম শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক নয়। ওই পাঠক্রমে ব্যাবহারিক ও কর্মভিত্তিক বিষয়ের যথেষ্ট অভাব ছিল।
[4] বয়ঃসন্ধিকালের চাহিদাপূরণে সহায়ক নয়: প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম বয়ঃসন্ধিকালের ছাত্রছাত্রীদের চাহিদাপূরণে সহায়ক ছিল না।
[5] পরীক্ষানির্ভর: প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রম ছিল মূলত পরীক্ষানির্ভর। মাত্রাতিরিক্ত পরীক্ষার চাপ ছাত্রছাত্রীদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলত।
[6] কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনে সহায়ক বিষয়ের অভাব: প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমে দেশের শিল্প ও অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়ক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক দক্ষতা অর্জনের উপযোগী তেমন কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
উল্লিখিত ত্রুটিগুলিকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে মুদালিয়র কমিশন নিম্নলিখিত পাঠক্রমের সুপারিশ করে-
[1] নিম্নমাধ্যমিক স্তরের জন্য: নিম্নমাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়গুলিতে যেসব বিষয় পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে, সেগুলি হল। ভাষা, ii. সামাজিক শিক্ষা, iii. সাধারণ বিজ্ঞান, iv. গণিত, v. কলা ও সংগীত, vi. হাতের কাজ, vii. শিল্প এবং viii. শারীরশিক্ষা।
[2] উচ্চ ও উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য: কমিশনের মতে, নিম্নমাধ্যমিক স্তরের পাঠ শেষ করার পর প্রতিটি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিশেষ বিশেষ সামর্থ্য ও অনুরাগ একটি নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে। তাই, এই পর্যায়ের পাঠক্রম প্রণয়নের সময় ছাত্রছাত্রীদের সামর্থ্য ও অনুরাগের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পাঠক্রমে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও বিষয়বস্তুকে এমনভাবে সংযোজিত করতে হবে, যাতে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের রুচি, প্রবণতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে পারে। এই নীতির কথা বিবেচনা করে মুদালিয়র কমিশন পাঠক্রমকে দুটি অংশে ভাগ করে উপস্থাপন করে। এদের একটি হল- আবশ্যিক (compulsory) বা মূল (core) অংশ; অপরটি হল ঐচ্ছিক (elective) অংশ। এ ছাড়াও অতিরিক্ত বিষয় (optional subject)-ও থাকবে।
পাঠক্রমের মূল এবং ঐচ্ছিক অংশের বিষয়সমূহ সম্পর্কে সুপারিশ মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক পাঠক্রমকে মূল অংশ ও ঐচ্ছিক অংশে ভাগ করেন। পাঠক্রমের উভয় অংশের বিষয়সমূহ সম্পর্কেই কমিশনের রিপোর্টে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।
মূল অংশের বিষয়সমূহ
কমিশন পাঠক্রমের আবশ্যিক বা মূল অংশে যে বিষয়গুলিকে উপস্থাপন করেছে, তা নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] ভাষা: এই পর্যায়ে দুটি ভাষা শেখা দরকার।
(i)মাতৃভাষা বা আঞ্চলিক ভাষা, অথবা মাতৃভাষা এবং প্রাচীন ভাষার মিশ্রণ।
(ii) নীচে উল্লিখিত ভাষাগুলির মধ্যে যে-কোনো একটি-① হিন্দি (যাদের মাতৃভাষা হিন্দি নয়), ② প্রাথমিক ইংরেজি (যারা আগে ইংরেজি পড়েনি), ও ইংরেজি (যারা আগে ইংরেজি পড়েছে), ④ একটি আধুনিক ভারতীয় ভাষা (হিন্দি ছাড়া), ⑤ একটি আধুনিক ইউরোপীয় ভাষা (ইংরেজি ব্যতীত), ⑥ একটি প্রাচীন ভাষা।
[2] সমাজবিজ্ঞান: সাধারণ পাঠ (প্রথম দু-বছর সময়কালের জন্য)
[3] গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান: সাধারণ পাঠ (প্রথম দু-বছর সময়কালের জন্য)
[4] হাতের কাজ বা হস্তশিল্প: নীচের বিষয়গুলির মধ্যে থেকে যে-কোনো একটি-কাঠের কাজ, ধাতুর কাজ, বয়ন ও বুনন, টাইপোগ্রাফি, দর্জির কাজ, বানান তৈরি, সেলাই ও সূচিশিল্প, মূর্তি নির্মাণ, কর্মশালায় প্রস্তুতিমূলক কাজ ইত্যাদি।
ঐচ্ছিক অংশের বিষয়সমূহ
কমিশন ঐচ্ছিক পাঠক্রমে বিভিন্ন পাঠ্যবিষয়গুলিকে সাতটি মূল প্রবাহে বা বিভাগে ভাগ করে উপস্থাপন করেছে। এদের যে-কোনো বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীকে তিনটি বিষয় নির্বাচন করতে হবে। নীচে সাতটি বিভাগ ও সেগুলির অন্তর্গত বিষয় উল্লেখ করা হল-
শিক্ষার্থীরা উপর্যুক্ত বিভাগের বিষয়গুলি থেকে আরও একটি বিষয়কে অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।
5. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন রূপ এবং সর্বার্থসাধক উচ্চবিদ্যালয় প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর:
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন রূপ ও সর্বার্থসাধক উচ্চবিদ্যালয় প্রসঙ্গে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত
মুদালিয়র কমিশনের মতে, মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করতে হবে তাদের প্রবণতা, সামর্থ্য ও বুচির ভিত্তিতে। সেই কারণে কমিশন মূল সাতটি প্রবাহ বা বিভাগের সুপারিশ করে। ওই প্রবাহ (stream) অনুযায়ী শিক্ষাদানের জন্য কমিশন বিভিন্ন ধরনের বিদ্যালয় প্রসঙ্গেও তার অভিমত ব্যক্ত করে। নীচে কয়েকপ্রকার বিদ্যালয় সম্পর্কে আলোচনা করা হল-
[1] নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়: কমিশনের মতে, এই ধরনের বিদ্যালয়গুলিতে
তিনটি শ্রেণি থাকবে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ছাত্রছাত্রীরা এই ধরনের বিদ্যালয়ে ভরতি হতে পারবে। প্রাথমিক শিক্ষার পর এখানে শিক্ষার্থীরা তিন বছর অধ্যয়ন করতে পারবে।
[ 2] উচ্চবিদ্যালয়: তৎকালীন সময়ে প্রচলিত দশম শ্রেণি বিশিষ্ট বিদ্যালয়গুলি এই বিভাগের অন্তর্গত হবে।
[3] উচ্চতর বিদ্যালয়: এই ধরনের বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের ব্যবস্থা থাকবে। অর্থাৎ, শিক্ষার্থীরা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে এখানে চার বছর পড়াশোনা করতে পারবে।
[4] সর্বার্থসাধক বা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়: কমিশনের মতে, যে সমস্ত অঞ্চলে সুযোগ পাওয়া যাবে, সেখানে সর্বার্থসাধক বা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। এখানে শিক্ষার্থীরা তাদের রুচি, সামর্থ্য ও প্রবণতা অনুযায়ী প্রবাহ বা বিভাগ নির্বাচনের সুযোগ পাবে। কমিশনের মতে, পৃথকভাবে অথবা এই বিদ্যালয়গুলির সঙ্গে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
[5] কৃষিশিক্ষার বিদ্যালয়: গ্রামাঞ্চলে কৃষি বিষয়ে শিক্ষার জন্য কৃষি বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করে ওইসব বিদ্যালয়ে কৃষিবিদ্যা ছাড়াও বাগান তৈরি, পশুপালন এবং বিভিন্ন ধরনের কুটিরশিল্প বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
[6] কারিগরি শিক্ষার বিদ্যালয়: দেশের শিল্পাঞ্চলগুলির নিকটবর্তী অংশে কারিগরি শিক্ষার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
[7] পাবলিক বিদ্যালয়: ইংরেজ শাসনকালে ভারতবর্ষে বহু পাবলিক স্কুল স্থাপিত হয়। কমিশন ওই পাবলিক স্কুলগুলিকে জাতীয় ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে পঠনপাঠন চালানোর জন্য সুপারিশ করেন।
[৪] আবাসিক বিদ্যালয়: যে সমস্ত ব্যক্তিকে চাকুরি সূত্রে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে হয়, তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য অথবা যাদের অভিভাবক-অভিভাবিকা ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করতে পারে না, তাদের জন্য গ্রামাঞ্চলে কমিশন আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপনের সুপারিশ করে।
[9] আবাসিক দিবা বিদ্যালয়: কমিশনের মতে, এই ধরনের বিদ্যালয়ে আহার ও জলখাবারের ব্যবস্থা থাকবে। এই জন্য অভিভাবক-অভিভাবিকাদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হবে।
[10] প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়: কমিশনের মতে, দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েদের জন্য বিশেষ ধরনের বিদ্যালয় বা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে।
[11] আংশিক সময়ের বিশেষ বিদ্যালয়: কমিশনের মতে, যে সমস্ত শিক্ষার্থী 14 বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা সম্পূর্ণ না করে মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেবে, তাদের জন্য আংশিক সময়ের বিশেষ বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।
[12] বালিকা বিদ্যালয়: কমিশনের মতে, প্রত্যেক রাজ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে পৃথক বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। ওইসব বিদ্যালয়ে গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সংগীত প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
6. মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ‘শিক্ষণ পদ্ধতি’ বিষয়ে যে সকল মূল্যবান সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে, তা লেখো। ‘নির্দেশনা ও পরামর্শদান’ সম্পর্কে কমিশনের সুপারিশগুলি কী কী?
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষণ পদ্ধতি বিষয়ক সুপারিশ
মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য গতিশীল শিক্ষণ পদ্ধতির সুপারিশ করে। ওই সুপারিশে যা বলা হয়, তা নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] তথ্য পরিবেশনের পরিবর্তে মূল্যবোধ 3 কর্মপ্রবণতার বিকাশসাধন: কমিশনের মতে, বিদ্যালয় স্তরের শিক্ষণ পদ্ধতির লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মূল্যবোধ ও সঠিক ধারণা গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে কর্মের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করা।
[2] মুখস্থের পরিবর্তে কর্মমুখী প্রকল্প পদ্ধতি গ্রহণ: পঠনপাঠনের ক্ষেত্রে মুখস্থের পরিবর্তে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন কর্মমুখী প্রকল্পে যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়। যে-কোনো বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব প্রকাশভঙ্গি ও চিন্তাশক্তির বিকাশের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
[3] ব্যক্তিগত ও দলগত কর্মপ্রচেষ্টার ওপর গুরুত্ব প্রদান: বিদ্যালয় স্তরে
শিক্ষার্থীরা যাতে ব্যক্তিগত ও দলগত কর্মপ্রচেষ্টায় শিক্ষালাভের চেষ্টা করে, সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করার সুপারিশ করা হয়।
[4] বাড়ির কাজের ওপর গুরুত্ব: কমিশন ছাত্রছাত্রীদের দৈনিক বাড়ির কাজ (home task) দেওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে।
[5] গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা: প্রতিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাতে গ্রন্থাগার গড়ে ওঠে, তার জন্য কমিশন সুপারিশ করে। ওইসব গ্রন্থাগারে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক নিয়োগ করার পরামর্শও দান করা হয়।
[6] শিক্ষা-সহায়ক উপকরণের ব্যবহার: শিক্ষাদানের সময় ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণ এবং কঠিন বিষয়গুলি সহজ করে বোঝানোর জন্য শ্রেণিকক্ষে প্রয়োজনীয় শিক্ষা-সহায়ক উপকরণ ব্যবহার প্রসঙ্গেও মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন অভিমত ব্যক্ত করে।
মুদালিয়র কমিশনের নির্দেশনা ও পরামর্শদান বিষয়ক সুপারিশ কমিশন মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষামূলক এবং বৃত্তিমূলক নির্দেশনা ব্যবস্থা চালু করার সুপারিশ করে। কমিশনের সুপারিশগুলি নীচে উল্লেখ করা হল-
| [1] নির্দেশনা ও পরামর্শদানের ওপর গুরুত্ব:
মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা-
কর্তৃপক্ষকে শিক্ষামূলক নির্দেশনা ও পরামর্শদানের বিষয়ে সঠিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
[2] শিক্ষাক্রম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি: বহুমুখী শিক্ষাক্রম সম্পর্কে – ছাত্রছাত্রীরা যাতে বিভিন্ন তথ্য জানতে পারে, তার জন্য চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ সামর্থ্য এবং পছন্দের বিষয়গুলি চলচ্চিত্রের তথ্যের সঙ্গে যাচাই করার সুযোগ পাবে।
[3] গাইডেন্স অফিসার ও কেরিয়ার মাস্টার নিয়োগ: প্রত্যেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গাইডেন্স অফিসার ও কেরিয়ার মাস্টার নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানুকূল্যে বিদ্যালয়ে নিযুক্ত শিক্ষকদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দান করতে হবে।
7. মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক সম্পর্কে কী কী সুপারিশ করে? ‘পরীক্ষা সংস্কার’ বিষয়ে কমিশন যেসব সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে, তা লেখো।
উত্তর:
মুদালিয়র কমিশনের মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক বিষয়ক সুপারিশ মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন প্রচলিত মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক প্রসঙ্গেও মূল্যবান সুপারিশ দান করে। সুপারিশগুলি হল-
[1] পাঠ্যপুস্তক কমিটি গঠন: পাঠ্যপুস্তকের গুণগতমান বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাঠ্যপুস্তক কমিটি গঠনের সুপারিশ করে। এই কমিটি একটি স্বাধীন সংস্থারূপে কাজ করবে। এই কমিটিতে সভ্য হিসেবে যারা যোগদান করতে পারবেন, তাঁরা হলেন, রাজ্য সরকারের বিচার বিভাগীয় প্রতিনিধি, ii. পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একজন সদস্য, iii. আঞ্চলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, iv. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুইজন প্রধান শিক্ষক, ৬. দুইজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, vi. সরকারি শিক্ষা আধিকারিক।
[2] তহবিল গঠন ও আর্থিক সাহায্য দান: কমিশন পাঠ্যপুস্তক বিক্রয় থেকে একটি তহবিল গঠনের সুপারিশ করেন। ওই তহবিল থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তিদান, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণ এবং অন্যান্য আর্থিক সাহায্য প্রদানের সুপারিশও করা হয়।
[3] পুস্তক নির্বাচন: কমিশনের প্রতিবেদনে এও বলা হয়, বিদ্যালয় কোনো শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোনো বিষয়ে একটিমাত্র পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন করবে না। বরং একই মানের একাধিক পুস্তক নির্বাচন করবে।
[4] নিরপেক্ষতা বজায় রাখা: পাঠ্যপুস্তকগুলি কোনো বিশেষ জাতি, ধর্ম বা রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হবে না। এমনকি কোনো সম্প্রদায়ের বিশ্বাসে আঘাত লাগতে পারে এমন তথ্য এগুলিতে পরিবেশিত হবে না। অর্থাৎ, পুস্তক প্রণয়নের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব নিরপেক্ষতা রাখতে হবে।
[5] পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তনের নীতি: কমিশন, বিদ্যালয় স্তরের কোনো শ্রেণিতে বছর বছর বই পরিবর্তনের, পক্ষপাতী নয়। কমিশনের মতে কোনো- একটি পাঠ্যপুস্তক নির্বাচন করা হলে, তা ওই শ্রেণিতে কয়েক বছর পড়ানো উচিত। মুদালিয়র কমিশনের পরীক্ষা সংস্কার বিষয়ক সুপারিশ পরীক্ষা একটি প্রয়োজনীয় ক্ষতিকারক প্রক্রিয়া। এটির বিকল্প এখনও পর্যন্ত সঠিকভাবে আবিষ্কৃত হয়নি। মুদালিয়র কমিশন মাধ্যমিক পরীক্ষাব্যবস্থার সংস্কার প্রসঙ্গে কতকগুলি মূল্যবান সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে। সেগুলি নীচে উল্লেখ করা হল-
[1] আধুনিক বিষয়াত্মক পরীক্ষা: মুদালিয়র কমিশন গতানুগতিক পরীক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক বিষয়াত্মক পরীক্ষাব্যবস্থার দ্বারা নির্ভরযোগ্য করে তোলার ব্যাপারে অভিমত প্রকাশ করে।
[2] সর্বাত্মক পরিচয়পত্র: কমিশন শুধু বার্ষিক পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার পরিবর্তে তাদের বিদ্যালয় জীবনের সব ধরনের ঘটনাগুলি সর্বাত্মক পরিচয়পত্র বা কিউমুলেটিভ রেকর্ড কার্ড (Cumulative Record Card)-এ লিপিবদ্ধ করার সুপারিশ করে।
[3] অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা: শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের সময় অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা (যেমন-সাপ্তাহিক, মাসিক, পার্বিক ও ষান্মাষিক পরীক্ষা) এবং বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল, রেকর্ড ইত্যাদি সব ধরনের বিষয় বিবেচনার বিষয়ে সুপারিশ করে।
[4] বহিস্থ পরীক্ষা: মাধ্যমিক স্তরের শেষে কেবল একটি সাধারণ বহিস্থ পরীক্ষা (Public Examination) গ্রহণের সুপারিশ করে।
[5] গ্রেড প্রদান: মূল্যায়নের সময় ‘নম্বরের’ বা সাংখ্যমানের পরিবর্তে ‘গ্রেড’ বা ‘আক্ষরিকমান’ প্রদানের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে।
[6] কম্পার্টমেন্টাল পরীক্ষা: সাধারণ বহিস্থ পরীক্ষায় একটি বা দুটি বিষয়ে যারা অকৃতকার্য হবে, তাদের জন্য কম্পার্টমেন্টাল পরীক্ষা প্রচলনের সুপারিশ করে।
৪. মুদালিয়র কমিশন শিক্ষক প্রসঙ্গে কী কী সুপারিশ করে? ‘মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার সংগঠন ও পরিচালনা’ বিষয়ে কমিশনের সুপারিশগুলির সম্পর্কে লেখো। 4+4
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের শিক্ষক বিষয়ক সুপারিশ
মুদালিয়র কমিশন শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করে কতকগুলি মূল্যবান সুপারিশ করেছে। সেগুলি এখানে উল্লেখ করা হল-
[1] শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগের নীতি: বিদ্যালয়ে শিক্ষক নির্বাচন ও নিয়োগের ব্যাপারে যথাসম্ভব একই নীতি অনুসরণ করতে হবে।
[2] যোগ্যতা অনুযায়ী বেতনদানে কমিটি: শিক্ষকদের যোগ্যতা অনুযায়ী যাতে বেতন প্রদান করা যায়, তার জন্য বিশেষ কমিটি নিয়োগ করতে হবে।
[3] অবসরের বয়স: শিক্ষকের অবসরের বয়স হবে 60 বছর।
[4] বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ: শিক্ষকের ছেলেমেয়েরা বিনা বেতনে বিদ্যালয়ে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাবে।
[5] বিনাব্যয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বিনাব্যয়ে শিক্ষকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার
ব্যবস্থা থাকবে। প্রয়োজনে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পাবে। [6] গৃহশিক্ষকতা বারণ: বিদ্যালয়ে নিযুক্ত কোনো শিক্ষকই গৃহশিক্ষকতা করতে পারবেন না।
[7] আর্থিক নিরাপত্তা: শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য পেনশন, প্রভিডেন্ড ফান্ড ও জীবন বিমার ব্যবস্থা করা।
[৪] শিক্ষক প্রশিক্ষণ: প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের ক্ষেত্রে সরকার স্নাতকদের জন্য এক বছরের এবং যারা স্নাতক নয় তাদের জন্য দুই বছরের শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা করবে।
মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার সংগঠন ও পরিচালনা বিষয়ক সুপারিশ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার সংগঠন ও পরিচালনার জন্য মুদালিয়র কমিশন কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ লিপিবদ্ধ করে-
[1] কমিটি গঠন: সর্বোচ্চ স্তরে কেন্দ্রে এবং প্রতিটি রাজ্যে শিক্ষামন্ত্রীদের একটি করে কমিটি থাকবে। ওই কমিটি, মন্ত্রীর অধীনে শিক্ষার বিভিন্ন সমস্যা
নিয়ে আলোচনা এবং সমাধানের ব্যবস্থা করবে। বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য একটি সংযোগ রক্ষাকারী কমিটিও গঠন করতে হবে। ওই কমিটিতে শিক্ষা অধিকর্তা আহ্বায়ক হিসেবে কাজ করবেন।
[2] মধ্যশিক্ষা পর্ষদ গঠন: প্রতিটি রাজ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য একটি করে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ গঠন করতে হবে। এই পর্ষদের সভাপতি হবেন রাজ্যের শিক্ষা অধিকর্তা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদে 25 জন করে অভিজ্ঞ সদস্য থাকবেন। তাঁরা মাধ্যমিক শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে নীতি নির্ধারণ করবেন।
[3] পর্ষদের কাজ: কমিশন পর্ষদকে কতকগুলি দায়িত্ব পালনের বিষয়ে নির্দেশ দান করে। এগুলি হল-
1. মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিকে অনুমোদন দেওয়া,
II. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকশিক্ষিকাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা,
iii. পাঠক্রম প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠন করা,
iv. পরীক্ষা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তা সুচারুরূপে সম্পন্ন করা,
v. শিক্ষা অধিকর্তাকে মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে নির্দেশ দান করা,
vi. শিক্ষক প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
15. মুদালিয়র কমিশন কবে, কোন্ কোন্ সদস্য নিয়ে গঠিত হয়? মুদালিয়র কমিশনের বিচার্য বিষয়সমূহ আলোচনা করো।
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের গঠন ও তার সদস্যবৃন্দ স্বাধীনতার পর, সর্বভারতীয় ভিত্তিতে মাধ্যমিক শিক্ষার সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পর্ষদ প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কে ব্যাপক অনুসন্ধান ও প্রচলিত ব্যবস্থার উপযোগিতা বিচারের দায়িত্ব নেওয়া হয়। এর জন্য 1952 খ্রিস্টাব্দের 23 সেপ্টেম্বর, মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়রের নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন তথা মুদালিয়র কমিশন গঠন করা হয়।
মুদালিয়র কমিশনে সাতজন ভারতীয় সদস্য এবং দুজন বিদেশি সদস্য ছিলেন। ভারতীয় সদস্যরা হলেন ড. লক্ষ্মণস্বামী মুদালিয়র (সভাপতি), ড. কে এস শ্রীমালী, শ্রীমতী হংস মেহতা, শ্রী জে এ তারপরভেলা, শ্রী এম টি ব্যাস, শ্রী কে জি সায়েদিন এবং শ্রী অনাথ বসু (সদস্য-সম্পাদক)। বিদেশি সদস্যদের মধ্যে ছিলেন অক্সফোর্ডের জেমস্ কলেজের অধ্যক্ষ জন ক্রিস্টি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ড. কিনেথ রাস্ট উইলিয়াম।
মুদালিয়র কমিশনের বিচার্য বিষয়সমূহ মুদালিয়র কমিশনের বিচার্য বিষয়গুলি হল-
[1] লক্ষ্য নির্ধারণ: মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার লক্ষ্য কী হবে, তা নির্ধারণ করা।
[2] লক্ষ্যে পৌঁছোনোর পথ সম্পর্কে নির্দেশনা: মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য উপযুক্ত পথ সম্পর্কে নির্দেশনা দান।
[3] শিক্ষার পুনর্গঠন সম্পর্কে পরামর্শ: তৎকালীন সময়ে প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার পুনর্গঠন কীভাবে করা যায়, সে সম্পর্কে সুচিন্তিত মতামত দান।
[4] পাঠক্রম প্রণয়নে পরামর্শ: তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষার পাঠক্রমে কী- জাতীয় পরিবর্তন প্রয়োজন এবং তা কীভাবে প্রণয়ন করা হবে, সে সম্পর্কে পরামর্শ দান।
[5] বিদ্যালয়ের পুনর্বিন্যাস: তৎকালীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির পুনর্বিন্যাস সম্পর্কে পরামর্শ দান।
[6] প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে সমন্বয়সাধন: মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠনের আগে সরকার প্রাথমিক স্তরে গান্ধিজি প্রবর্তিত কর্মকেন্দ্রিক বুনিয়াদি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাই সরকার কমিশনের কাছ থেকে সেইসব সুপারিশ আহ্বান করে, যা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে সার্থক সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
[7] বিভিন্ন ধরনের বিদ্যালয়ের মধ্যে সম্পর্কস্থাপন: মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার জন্য সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে উঠবে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কী হবে, সে বিষয়েও কমিশনকে পরামর্শ। দানের জন্য অনুরোধ করা হয়।
[৪] অন্যান্য বিষয়ে অভিমত: মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যানা বিষয়গুলির সম্বন্ধে কমিশন তার সুচিন্তিত অভিমত পোষণ করে, সেগুলির সংস্কার প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় সুপারিশ বা পরামর্শ দানের কথা বলা হয়।
16. মুদালিয়র কমিশনের প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য কী? মুদালিয়র কমিশন প্রচলিত শিক্ষার যে সকল ত্রুটি সম্পর্কে আলোকপাত করেন, সেগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য
মুদালিয়র কমিশন তার প্রতিবেদনে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রতিটি দিক সম্পর্কে আলোকপাত করে সুচিন্তিত সুপারিশ নথিভুক্ত করে। এই কমিশন একদিকে যেমন প্রচলিত মাধ্যমিক শিক্ষার ত্রুটিগুলি সম্পর্কে বিচারবিশ্লেষণ করেছে, অন্যদিকে স্বাধীন ভারতে মাধ্যমিক শিক্ষার স্বরূপ কী হওয়া উচিত এবং কী নীতি গৃহীত হলে এই নতুন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রচলিত হতে পারবে, সে সম্পর্কে বিশদভাবে আলোকপাত করেছে। এই কমিশনের প্রতিবেদনে 16টি অধ্যায়ে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়-
[1] ভূমিকা, [2] প্রচলিত ব্যবস্থার সমীক্ষা, [3] নতুন মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য, [4] মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন, [5] ভাষা শিক্ষা, [6] মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির পাঠক্রম, [7] মাধ্যমিক শিক্ষার নতুন পদ্ধতি, [৪] চরিত্রগঠনের শিক্ষা, [9] বিদ্যালয়ে পথনির্দেশ ব্যবস্থা, [10] শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যশিক্ষা, [11] পরীক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তন, [12] শিক্ষকদের উন্নতিবিধান, [13] প্রশাসনিক সমস্যা, [14] আর্থিক সমস্যা, [15] কমিশনের দৃষ্টিতে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধারণা গঠন এবং [16] উপসংহার।
প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি বিষয়ে মুদালিয়র কমিশনের অভিমত মুদালিয়র কমিশনের সদস্যবৃন্দ যখন প্রচলিত শিক্ষার অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ভারতের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন, সেই সময় বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহু তথ্য সংগৃহীত হয়। তার ভিত্তিতে শিক্ষার সংস্কার ও পুনর্গঠনের সুবিধার জন্য কমিশন কতকগুলি ত্রুটি সুসংবদ্ধভাবে প্রকাশ করে। সেগুলি হল-
[1] বাস্তবজীবনের সঙ্গে সংগতিহীন শিক্ষাক্রম: সারা দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে যে শিক্ষা দান করা হয়, তার সঙ্গে সঠিক অর্থে জীবনের কোনো সংযোগ নেই। তাই এই শিক্ষাক্রমের মধ্য দিয়ে যারা শিক্ষা লাভ করে, তারা ভবিষ্যতে সমাজজীবনের উপযুক্ত হয়ে উঠতে পারে না।
[2] বৈচিত্র্যহীন শিক্ষা: প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার পাঠক্রম বৈচিত্র্যহীন ও গতানুগতিক। তাই এই শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সার্বিক বিকাশ ঘটে না। ফলে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই শিক্ষায় শিক্ষিতরা পিছিয়ে পড়ে।
[3] পুথিগত বিদ্যার ওপরে গুরুত্ব: প্রচলিত শিক্ষায় বিদ্যালয়গুলিতে কেবল পুথিগত বিদ্যার আয়ত্তের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। খেলাধুলো, গানবাজনা, শরীরচর্চা, হাতের কাজ, সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ প্রভৃতির ওপর কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। [4] মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা: তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে কেবল ইংরেজি শিক্ষার বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হত। মাতৃভাষা বা অন্যান্য দেশীয় ভাষাকে তেমন কোনো গুরুত্ব দেওয়া হত না। ফলে ইংরেজি মুখস্থ করতেই শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ সময় কেটে যেত।
[5] যান্ত্রিক পুনরাবৃত্তিমূলক শিখন পদ্ধতি: মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে যান্ত্রিক পুনরাবৃত্তিমূলক শিখনে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দান করা হত। ফলে ছাত্রছাত্রীরা স্বাধীনভাবে কোনো বিষয়ে চিন্তা করার পরিবর্তে মুখস্থবিদ্যার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠত। ফলে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণ বা নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হত।
[6] শিক্ষার্থীর অত্যধিক সংখ্যা: বিদ্যালয়গুলির প্রত্যেকটি শ্রেণিতে অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী থাকায় তারা ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষকের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে একদিকে যেমন ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক সঠিকভাবে গড়ে উঠতে পারে না, অন্যদিকে শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীদের আচরণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
[7] শিক্ষকদের আর্থিক দুরবস্থা: বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা
উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও সুযোগসুবিধা পেতেন না। ফলে তাঁরা বিদ্যালয়ে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে অনীহা প্রকাশ করতেন। এর ফলে মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় দেখা দিয়েছিল।
[৪] ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষাপদ্ধতি: তৎকালীন মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থায় যে পরীক্ষাপদ্ধতি অনুসৃত হত, তা অনেকাংশেই ত্রুটিপূর্ণ। ফলে শিক্ষার্থীরা কেবল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যই সচেষ্ট হত। জ্ঞানার্জন, দক্ষতালাভ, চারিত্রিক বিকাশ প্রভৃতি তাদের কাছে ছিল মূল্যহীন।
17. মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য বিষয়ে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশগুলি আলোচনা করো। [ABTA inter School Test]
উত্তর: মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য বিষয়ে মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশসমূহ –
মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে মাধ্যমিক শিক্ষার কয়েকটি লক্ষ্য স্থির করে। সেগুলি হল-
[1] উপযুক্ত নাগরিক সৃষ্টি: কমিশনের মতে, শিক্ষার লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের জাতীয় লক্ষ্যপূরণের সহায়ক সুযোগ্য নাগরিকরূপে গড়ে তোলা। অর্থাৎ, এমন একপ্রকার শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভাবীকালে দেশের সুযোগ্য নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালনে সমর্থ হবে।
[2] জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধি: মাধ্যমিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন যার ফলে তারা আগামী দিনে জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধিতে এবং জীবনের মান উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব পালনে আগ্রহী ও সমর্থ হয়।
[3] গণসংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটানো: মাধ্যমিক শিক্ষার অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে গণসংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন ঘটানো। আর্থিক কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষ এতদিন শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ দেশের সমৃদ্ধির জন্য গণসংস্কৃতির বিকাশ অপরিহার্য।
[4] গণতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে তোলা: স্বাধীন ভারতের বিকাশ ঘটাতে গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা যাতে আগামী দিনে যোগ্য, সক্ষম সুনাগরিক হয়ে উঠতে পারে তার জন্য ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
[5] অর্থনৈতিক বিকাশে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ
লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের ব্যাবহারিক ও বৃত্তিমূলক দক্ষতার উন্নতিসাধন করা। তাদের মধ্যে এমন মনোভাব গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা দেশের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসাধনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে।
[6] সাংস্কৃতিক বিকাশে সহায়তা: মাধ্যমিক শিক্ষার অপর একটি লক্ষ্য হল ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতিমূলক আগ্রহ ও প্রবণতার বিকাশ ঘটানো। কারণ এগুলি ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিত্বের বিকাশের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। তা ছাড়া এগুলিকে বাদ দিয়ে কোনোভাবেই জাতীয় সংস্কৃতি গঠন করা যায় না।
[7] নেতৃত্বদানের যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা: কমিশনের মতে, মাধ্যমিক
শিক্ষার একটি লক্ষ্য হওয়া উচিত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে নেতৃত্বদানের যোগ্যতা সৃষ্টি করা। এই উদ্দেশ্যে কমিশন সুপারিশ করে, সতেরো বছর বয়স পর্যন্ত দেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন। এই শিক্ষার দুটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল-
i. শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্বের সার্বিক বিকাশ, বৃত্তিমূলক যোগ্যতা অর্জন, গণতান্ত্রিক নাগরিকতার বিকাশ ও নেতৃত্বদানের যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা।
ii. উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রস্তুতি ও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক শিক্ষাদানের মাধ্যমে ইচ্ছুকদের উৎসাহিত করা।
[৪] বয়ঃসন্ধিক্ষণের চাহিদাপূরণ: শিক্ষার্থীদের বয়ঃসন্ধি-কালের দৈহিক, মানসিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক বিভিন্ন বিকাশের ধারা ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি নজর দিতে হবে।
i. বয়ঃসন্ধিকালে শিক্ষার্থীরা খুবই কর্মমুখর হয়ে ওঠে। সেই কারণে মাধ্যমিক শিক্ষা যাতে শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তার চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
ii. বয়ঃসন্ধিকালে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সহযোগিতামূলক যৌথকর্মের ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজের পক্ষে মঙ্গলময় আচার-আচরণে তারা যাতে অভ্যস্ত হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
iii. বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষার্থীদের আবেগ ও প্রক্ষোভ যাতে বাঞ্ছিত পথে প্রশমিত হয়, তার জন্য মাধ্যমিক স্তরে বৃত্তিমূলক শিক্ষার আয়োজন করতে হবে।
iv. বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষার্থীদের যৌন কৌতূহল প্রশমনের জন্য মাধ্যমিক স্তরেই তাদেরকে সৃষ্টিধর্মী সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে।
[9] মানবিক গুণাবলির বিকাশ: মাধ্যমিক শিক্ষার লক্ষ্য হবে ছাত্রছাত্রীদের
মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করা, কর্মপ্রেরণা জাগ্রত করা এবং বিভিন্ন ধরনের মানবিক গুণাবলির বিকাশসাধনে সহায়তা করা। এর জন্য সঠিকভাবে পাঠক্রম প্রণয়নও করতে হবে।
[10] শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি: মাধ্যমিক স্তরের ছাত্রছাত্রীরা যাতে বিদ্যালয়ের গতিশীল জীবনধারার সঙ্গে সহজভাবে মানিয়ে নিতে পারে এবং শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে, তার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাগ্রহণ মাধ্যমিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
[11] নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠন: মাধ্যমিক শিক্ষার আর-একটি লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া, যার ফলে তারা আগামী দিনে দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারে এবং কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
18. “মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশগুলি তত্ত্ব এবং আদর্শগত দিক থেকে আকর্ষণীয় হলেও প্রয়োগের দিক থেকে ত্রুটিপূর্ণ”- এইরূপ বলার কারণ সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশসমূহ আকর্ষনীয় কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ
স্বাধীনতা লাভের পাঁচ বছরের মধ্যে প্রকাশিত মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের প্রতিবেদন (1952-53) ভারতের শিক্ষাক্ষেত্রে এক অভূতপূর্ব আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। কমিশনের দৃষ্টিতে মাধ্যমিক শিক্ষা হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এক আনন্দময় পরিবেশে শিক্ষার্থীরা চরিত্রগঠন ও যথার্থ গুণবিকাশের সুযোগ পাবে। মাধ্যমিক স্তরে পাঠক্রমের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তার ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য অনুযায়ী বিকাশের সুযোগ দেওয়া হবে-এই উদ্দেশ্যে কমিশন বহুমুখী পাঠক্রমের সুপারিশ করেছিল।
তবে তত্ত্ব ও আদর্শগত দিক থেকে কমিশনের সুপারিশগুলি আকর্ষণীয় হলেও, প্রয়োগের দিক থেকে এর ত্রুটির পরিমাণও নিতান্ত কম নয়। ত্রুটিগুলি এখানে উল্লেখ করা হল-
[1] পথনির্দেশের ত্রুটি: কমিশন মাধ্যমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য নির্দেশ করেছে। কিন্তু কীভাবে সেই লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব, তার পথ নির্দেশ করেনি। ফলে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
[2] পরিকাঠামোগত ত্রুটি: কমিশন বহুমুখী পাঠক্রম প্রবর্তনের সুপারিশ করেছিল। এর জন্য প্রয়োজন ছিল অধিক সংখ্যক বহুমুখী বিদ্যালয় স্থাপন। বাস্তব ক্ষেত্রে সমস্ত দশম শ্রেণির বিদ্যালয়কে পরিকাঠামোর অভাবে বহুমুখী বিদ্যালয়ে পরিবর্তিত করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া অধিকাংশ বহুমুখী বিদ্যালয়ে সাত ধরনের শিক্ষাপ্রবাহের মধ্যে কেবল কলা ও বিজ্ঞান শাখার ওপর পাঠদানের ব্যবস্থা হয়েছিল।
[3] ব্যক্তিবৈষম্যজনিত ত্রুটি: কমিশন ব্যক্তিবৈষম্যের নীতি অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের সামর্থ্য, প্রবণতা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে বিষয় নির্বাচনের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে ব্যক্তিবৈষম্য অনুসারে পরামর্শ ও পরিচালনার ব্যবস্থা অবলম্বন করা অধিকাংশ বিদ্যালয়েই সম্ভব হয়নি।
[4] অবৈজ্ঞানিক পাঠপ্রবাহ নির্বাচন: অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাতটি পাঠপ্রবাহ থেকে একটি নির্বাচনের জন্য কমিশন যে সুপারিশ করেছিল, তাও বিজ্ঞানসম্মত নয়। কারণ, নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে এই বয়সের শিক্ষার্থীরা কখনও ভবিষ্যৎ জীবনে কর্মপন্থা নির্বাচন করতে পারে না। এক্ষেত্রে তারা বাবা-মা, শিক্ষক-শিক্ষিকা বা বন্ধুবান্ধবের দ্বারা প্রভাবিত হতে বাধ্য হয়।
[5] অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব: কমিশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নির্দেশনা ও পরামর্শদানের সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে, অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সঠিক নির্দেশনা ও পরামর্শদানের জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
[6] মূল্যায়নে ত্রুটি: কমিশন পরীক্ষা-সংস্কারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করার কথা বলেছে। কিন্তু এই সংস্কারের সঠিক নির্দেশ না থাকায় মাধ্যমিক স্তরের মূল্যায়ন আজও পরীক্ষা-শাসনে জর্জরিত। আজও এই স্তরে অপচয় ও অনুত্তীর্ণতার অভিশাপ একইভাবে কাজ করে চলেছে।
ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও মুদালিয়র কমিশনের সুপারিশগুলির ফলশ্রুতি হিসেবে মাধ্যমিক স্তরে বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আগামী দিনে আমাদের দেশের ‘মাধ্যমিক শিক্ষা’ জাতীয় আশা- আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক হয়ে উঠবে। তাই এই কমিশনের সুপারিশগুলি পর্যালোচনা করে বলা যেতে পারে, মুদালিয়র কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশগুলি আমাদের দেশের মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার সামনে নতুন জগতের দরজা খুলে দিয়েছে।