WBCHSE Class 12 Political Science Chapter 7 Solution | Bengali Medium

Class 12 Chapter 7 Solution

ভারতের শাসন বিভাগ

1. MCQs Question Answer

1. ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন-

a. প্রধানমন্ত্রী

b. রাষ্ট্রপতি ✔

c. উপৰাষ্ট্ৰপত

d. মন্ত্রিপরিষদ

2. ভারতের নিয়মতান্ত্রিক শাসক হলেন- 

a. রাষ্ট্রপতি✔

b. প্রধানমন্ত্রী 

c. স্পিকার

d. উপরাষ্ট্রপতি

3. ভারতের শাসন বিভাগের প্রকৃত শাসক হলেন-

a. রাষ্ট্রপতি

b প্রধানমন্ত্রী ✔

c. উপরাষ্ট্রপতি

d.রাজ্যপাল

4. ভারতের রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ হল-

a. ৪ বছর

b. ৫ বছর ✔

c. ৬ বছর

d. ৮ বছর

5. রাষ্ট্রপতি লোকসভায় ইঙ্গ-ভারতীয় সদস্যদের মধ্যে থেকে মনোনীত করতে পারেন-

a. ১ জনকে

b. ২ জনকে✔

c. ৩ জনকে

d. ৫ জনকে

6. পার্লামেন্টের অধিবেশন আহবান করেন-

a.  রাষ্ট্রপতি✔

b.  স্পিকার

c.  প্রধানমন্ত্রী

d. প্রধান বিচারপতি

7. রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টি উল্লেখ আছে সংবিধানের-

a.  ৫০ নং ধারায় 

b. ৫৫ নং ধারায়✔

c. ৬১ নং ধারায় 

d. ৭৫ নং ধারায়

৪. রাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির বিষয়টি আছে সংবিধানের-

a. ৫৫ নং ধারায় 

b. ৬১ নং ধারায় 

c. ৭৪ নং ধারায় ✔

d.৭৫ নং ধারায়

9 . ভারতের সঞ্চিত তহবিলের দায়িত্ব রয়েছে-

a. প্রধানমন্ত্রীর হাতে

b. স্পিকারের হাতে

c. রাষ্ট্রপতির হাতে✔

d. অর্থমন্ত্রীর হাতে

10. রাষ্ট্রপতির জারি করা অর্ডিন্যান্সের মেয়াদ হল-

a. ৬ সপ্তাহ✔

b. ৭ সপ্তাহ

c. ৮ সপ্তাহ

d. ১০ সপ্তাহ

11. রাজ্যসভায় সভাপতিত্ব করেন-

a. রাষ্ট্রপতি

b.  উপরাষ্ট্রপতি✔

c.  স্পিকার

d.  প্রধানমন্ত্রী

12. রাজ্যসভায় যিনি সভাপতিত্ব করেন, তাঁর পদটিকে বলা হয়-

a.  স্পিকার

b.  ডেপুটি স্পিকার

c. চেয়ারম্যান✔

d. সভাপতি

13. পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন-

a.  রাষ্ট্রপতি✔

b.  উপরাষ্ট্রপতি

c. স্পিকার 

d. প্রধানমন্ত্রী

14. ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন-

a.  ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ✔

b. ড. রাধাকৃয়ণ

c. এপিজে আবদুল কালাম

d. প্রতিভা দেবী সিং পাতিল

15. ভারতের বর্তমান উপরাষ্ট্রপতির নাম হল-

a. মহঃ হামিদ কুরেশি

b. মহঃ হামিদ আনসারি✔

c. বেঙ্কাইয়া নাইডু

d. প্রণব মুখোপাধ্যায়

16. ভারতে এযাবৎ জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে-

a. ৩ বার✔

b. ৪ বার

c. ৫ বার

d. ৬ বাব়

17. ভারতে আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে-

a.  ৬ বার

b.  ১ বার

c.  ৩ বার

d.  একবারও নয়✔

18. ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতির নাম হল-

a.     রামনাথ কোবিন্দ✔

b.    হামিদ আনসারি

c.    পি এ সাংমা

d.    প্রতিভা দেবী সিং পাতিল

19. ভারতের রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা হলেন-

a.    প্রধানমন্ত্রী✔

b.    মন্ত্রীপরিষদ

c.    উপরাষ্ট্রপতি

d.     সুপ্রিমকোর্ট

20. রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন-

a. প্রধানমন্ত্রী

b.  সুপ্রিমকোর্ট

c.  উপরাষ্ট্রপত✔

d.  মন্ত্রীপরিষদ

21. জরুরি কারণে সংসদ/লোকসভার কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানো যায়-

a.   ১ বছর✔

b. . ২ বছর

c.   ৩ বছর

d.   ৪ বছর

22. রাষ্ট্রপতির হাতে কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের সব ক্ষমতা অর্পিত আছে সংবিধানের-

a.    ৫১ ধারায়

b.    ৫৩ ধারায়✔

c.    ৫৪ ধারায়

d.    ৫৫ ধারায়

23. ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতিটি গৃহীত হয়েছে-

a.      আয়ারল্যান্ডের সংবিধান থেকে ✔

b.      ব্রিটেনের সংবিধান থেকে

c.      জার্মানির সংবিধান থেকে

 d.      কানাডার সংবিধান থেকে

24. ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করেন-

 a.   লোকসভার সদস্যগণ

 b.   রাজ্যসভার সদস্যগণ

 c.   লোকসভা এবং রাজ্যসভার সদস্যগণ

d.  লোকসভা এবং রাজ্যসভার সদস্যগণ নির্বাচিত সদস্যগণ এবং রাজ্য বিধানসভার নির্বাচিত   সদস্যগণ✔

25. রাজ্যে রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ করেন

 a.   রাষ্ট্রপতি✔

 b.      রাজ্যপাল

c.     প্রধানমন্ত্রী

d.     মুখ্যমন্ত্রী

26. ‘Indian Government and Politics’ গ্রন্থের প্রণেতা হলেন-

a.  জে সি জোহারি✔

b.   ল্যাস্কি

c.   অমর্ত্য সেন

d.   দুর্গাদাস বসু

27. তত্ত্বগতভাবে ভারতের শাসকপ্রধান কে?
a. প্রধানমন্ত্রী
b. রাষ্ট্রপতি ✔
c. সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি
d. মুখ্য নির্বাচন কমিশনার

28. ভারতে রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীর নাম কমপক্ষে কতজন নির্বাচক কর্তৃক প্রস্তাবিত হতে হয়?
a. ৩০
b. ৮০
c. ৫০ ✔
d. ৬০

29. ভারতে রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীর নাম কমপক্ষে কতজন নির্বাচক কর্তৃক সমর্থিত হতে হয়?
a. ২০
b. ৩০
c. ৮০
d. ৫০ ✔

30. ভারতে রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় কত টাকা জামানত রাখতে হয়?
a. ১০,০০০ টাকা
b. ১২,০০০ টাকা
c. ১৫,০০০ টাকা ✔
d. ২০,০০০ টাকা

31. ভারতের রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন?
a. নির্বাচনের মাধ্যমে ✔
b. মনোনয়নের মাধ্যমে
c. উত্তরাধিকারসূত্রে
d. জনগণের দ্বারা

32. বর্তমানে ভারতে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ক-টি?
a. ৬ ✔
b. ৭
c. ৮
d. ৯

33. ভারতের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার জন্য কমপক্ষে কতজন সদস্যের স্বাক্ষর প্রয়োজন?
a. অর্ধেক
b. এক-তৃতীয়াংশ
c. এক-চতুর্থাংশ ✔
d. এক-পঞ্চমাংশ

34. ভারতের রাষ্ট্রপতি বর্তমানে মাসে কত বেতন পান?
a. ৫০,০০০ টাকা
b. ১,০০,০০০ টাকা
c. ১,২৫,০০০ টাকা
d. ১,৫০,০০০ টাকা ✔

35. পদে থাকাকালীন রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা আনতে গেলে কতদিন আগে নোটিশ দিতে হয়?
a. একমাস
b. দুই মাস ✔
c. তিন মাস
d. চার মাস

36. ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের যাবতীয় শাসনকার্য কার নামে সম্পাদিত হয়?
a. রাষ্ট্রপতির নামে
b. প্রধানমন্ত্রীর নামে ✔
c. কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার নামে
d. সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নামে

37. কেন্দ্রের শাসনকার্য পরিচালনা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক?
a. ৭৭ নং ধারা
b. ৭৮ নং ধারা ✔
c. ৭৯ নং ধারা
d. ৮০ নং ধারা

38. কেন্দ্রের শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করা কার কর্তব্য?
a. কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার
b. কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর
c. কেন্দ্রীয় সংসদবিষয়ক মন্ত্রীর
d. প্রধানমন্ত্রীর ✔

39. ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক কে?
a. রাষ্ট্রপতি ✔
b. প্রধানমন্ত্রী
c. প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
d. স্থলবাহিনীর সেনাধিনায়ক

40. ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান কে?
a. প্রধানমন্ত্রী
b. রাষ্ট্রপতি ✔
c. প্রতিরক্ষামন্ত্রী
d. স্থলবাহিনীর প্রধান

41. ভারতে বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে সন্ধি বা চুক্তি কার নামে সম্পাদিত হয়?

  1. প্রধানমন্ত্রী
  2. প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
  3. কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী
  4. রাষ্ট্রপতি ✔

42. ভারতে যুদ্ধ ঘোষণা কে করতে পারেন?

  1. প্রধানমন্ত্রী
  2. রাষ্ট্রপতি ✔
  3. প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
  4. স্থলবাহিনীর প্রধান

43. রাষ্ট্রপতির জারি করা কোনো অধ্যাদেশকে সংসদের অধিবেশন শুরু হওয়ার কতদিনের মধ্যে অনুমোদন করাতে হয়?

  1. ২ সপ্তাহ
  2. একমাস
  3. ৬ সপ্তাহ ✔
  4. ২ মাস

44. ভারতীয় সংবিধানের কত নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন?

  1. ১২৩ নং ✔
  2. ১২৫ নং
  3. ১৩০ নং
  4. ২১৩ নং

45. ভারতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে রাজস্ব বণ্টনের জন্য অর্থ কমিশন কে গঠন করেন?

  1. প্রধানমন্ত্রী
  2. অর্থমন্ত্রী
  3. উপরাষ্ট্রপতি
  4. রাষ্ট্রপতি ✔

46. সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারকদের ভারতে কে নিয়োগ করেন?

  1. কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী
  2. প্রধানমন্ত্রী
  3. রাষ্ট্রপতি ✔
  4. উপররাষ্ট্রপতি

47. ভারতে সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টের কোনো বিচারক তাঁর পদচ্যুতির আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যেতে পারেন বলে সুপ্রিমকোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ কবে রায় দেয়?

  1. ১৯৯২ সালের ২৭ আগস্ট ✔
  2. ১৯৯২ সালের ২৮ আগস্ট
  3. ১৯৯২ সালের ২৯ আগস্ট
  4. ১৯৯২ সালের ৩০ আগস্ট

48. ভারতীয় সংবিধানের কোন্ অংশে রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা-সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে?

  1. চতুর্দশ অংশে
  2. ষোড়শ অংশে
  3. অষ্টাদশ অংশে ✔
  4. বিংশ অংশে

49. ভারতীয় সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি কত প্রকার জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন?

  1. দুই প্রকার
  2. তিন প্রকার ✔
  3. চার প্রকার
  4. পাঁচ প্রকার

50. ‘রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা’ ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী ঘোষণা করা যায়?

  1. ৩৫২ নং ধারা
  2. ৩৫৪ নং ধারা
  3. ৩৫৫ নং ধারা
  4. ৩৫৬ নং ধারা ✔

51. ভারতের রাষ্ট্রপতি সংবিধানের কত নং ধারা অনুসারে আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন?

  1. ৩৫২
  2. ৩৫৬
  3. ৩৬০ ✔
  4. ৩৬৫

52. জাতীয় জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণাকে কত দিনের মধ্যে ভারতীয় সংসদে অনুমোদিত হতে হয়?

  1. ১ মাসের মধ্যে ✔
  2. ২ মাসের মধ্যে
  3. ৪ মাসের মধ্যে
  4. ৬ মাসের মধ্যে

53. আর্থিক জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণাকে কত দিনের মধ্যে সংসদে অনুমোদিত হতে হয়?

  1. ১ মাসের মধ্যে
  2. ২ মাসের মধ্যে ✔
  3. ৩ মাসের মধ্যে
  4. ৪ মাসের মধ্যে

54. ভারতীয় সংবিধান অনুসারে পদমর্যাদার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে কে অবস্থান করেন?

  1. রাষ্ট্রপতি
  2. উপরাষ্ট্রপতি ✔
  3. প্রধানমন্ত্রী
  4. সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি

55. ভারতের উপররাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীকে কত বছর বয়স্ক হতে হয়?

  1. ২৫ বছর
  2. ৩০ বছর
  3. ৩৫ বছর ✔
  4. ৪০ বছর

56. ভারতের উপররাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার জন্য কত দিনের নোটিশ দিতে হয়?

  1. ১০ দিন
  2. ১২ দিন
  3. ১৪ দিন ✔
  4. ১৬ দিন

57. ভারতের উপররাষ্ট্রপতি বর্তমানে কত বেতন পান?

  1. ৫০,০০০ টাকা
  2. ৭৫,০০০ টাকা
  3. ১,০০,০০০ টাকা
  4. ১,২৫,০০০ টাকা ✔

58. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যসভায় সভাপতিত্ব করেন?

  1. ৬০ নং ধারা
  2. ৬৪ নং ধারা ✔
  3. ৬৫ নং ধারা
  4. ৬৬ নং ধারা

59. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে সাহায্য করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীপরিষদ থাকবে?

  1. ৬০ নং ধারা
  2. ৬২ নং ধারা
  3. ৭০ নং ধারা
  4. ৭৪ নং ধারা ✔

60. ভারতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কারণে কোন্ বছর জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়?

  1. ১৯৭২ সাল
  2. ১৯৭৩ সাল
  3. ১৯৭৪ সাল
  4. ১৯৭৫ সাল ✔

61. ভারতে এখনও পর্যন্ত একবারও যে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়নি, তা হল-

  1. জাতীয় জরুরি অবস্থা
  2. শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা
  3. আর্থিক জরুরি অবস্থা ✔
  4. সাংবিধানিক অচলাবস্থা

62. কেন্দ্রে ও রাজ্যে অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন যথাক্রমে-

  1. সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি
  2. শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি
  3. রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপাল ✔
  4. কেউই নন

63. রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা রাখা যায় সর্বাধিক-

  1. ২ বছর
  2. ১ বছর
  3. ৩ বছর ✔
  4. ৫ বছর

64. মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার রয়েছে-

  1. রাজ্যপালের
  2. প্রধানমন্ত্রীর
  3. রাষ্ট্রপতির ✔
  4. সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির

65. রাষ্ট্রপতি দণ্ডিত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদর্শন অথবা তার দণ্ডাজ্ঞা হ্রাস অথবা স্থগিত করতে পারেন সংবিধানের-

  1. ৭১ নং ধারা অনুসারে
  2. ৭২ নং ধারা অনুসারে ✔
  3. ১৪২ নং ধারা অনুসারে
  4. ১৪৪ নং ধারা অনুসারে

66. ভারতের কোন্ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়ে দ্বিতীয় পছন্দের ভোটের সাহায্য নেওয়া হয়েছিল-

  1. ভি ভি গিরি ✔
  2. জ্ঞানী জৈল সিং
  3. শঙ্করদয়াল শর্মা
  4. প্রণব মুখার্জি

67. ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সভাপতি নিযুক্ত হন-

  1. রাষ্ট্রপতির দ্বারা ✔
  2. প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা
  3. সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারা
  4. উপরাষ্ট্রপতির দ্বারা

68. ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে বাণী পাঠাতে পারেন-
a. স্পিকার
b. উপরাষ্ট্রপতি
c. রাষ্ট্রপতি ✔
d. প্রধানমন্ত্রী

69. রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করতে চাইলে তিনি তাঁর পদত্যাগপত্রটি-
a. হাইকোর্টের বিচারপতির কাছে জমা দেবেন
b. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির কাছে জমা দেবেন
c. প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেবেন
d. উপররাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবেন ✔

70. রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন-
a. লোকসভায় অধিবেশন চলাকালীন
b. লোকসভার অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন ✔
c. রাজ্যে গোলযোগ দেখা দিলে
d. অন্য কোনো কারণে

71. ভারতের রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুতি করা যায়-
a. লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে
b. রাজ্যসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে
c. ইমপিচমেন্ট পদ্ধতির মাধ্যমে ✔
d. গণভোটের মাধ্যমে

72. কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং উপজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চলসমূহের প্রধান প্রশাসক হলেন-
a. প্রধানমন্ত্রী
b. রাষ্ট্রপতি ✔
c. উপরাষ্ট্রপতি
d. রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রশাসক

73. “সাধারণত রাষ্ট্রপতি ক্যাবিনেটের পরামর্শক্রমে কাজ করেন” বলেছেন-
a. আম্বেদকর ✔
b. নেহরু
c. প্যাটেল
d. আয়েঙ্গার

74. “আমাদের রাষ্ট্রপতি অবশ্যই জড় যন্ত্রবৎ, ক্রিয়াশীল নন”-বলেছেন-
a. আম্বেদকর
b. নেহরু ✔
c. প্যাটেল
d. দুর্গাদাস বসু

75. “ব্রিটিশ সংবিধানে রাজা যেরূপ পদমর্যাদা ভোগ করেন আমাদের রাষ্ট্রপতি অনুরূপ পদমর্যাদাসম্পন্ন”-এ কথা বলেছেন-
a. আম্বেদকর ✔
b. নেহরু
c. রাজেন্দ্রপ্রসাদ
d. শ্রীনিবাস আয়েঙ্গার

76. “আমরা তাঁকে (রাষ্ট্রপতিকে) কোনো প্রকৃত ক্ষমতা অর্পণ করিনি, কিন্তু আমরা তাঁর পদমর্যাদাকে কর্তৃত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক করে গড়ে তুলেছি”-মন্তব্যটি করেছেন-
a. নেহরু ✔
b. প্যাটেল
c. আম্বেদকর
d. চিন্তামন দেশমুখ

77. সংবিধানের ৭৪(১) নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে সাহায্য ও পরামর্শ দান করেন-
a. প্রধানমন্ত্রী
b. উপরাষ্ট্রপতি
c. প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত একটি মন্ত্রীসভা ✔
d. বিরোধী দলের নেতা বা নেত্রী

78. ভারতে অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন-
a. রাষ্ট্রপতি ✔
b. প্রধানমন্ত্রী
c. পার্লামেন্ট
d. স্পিকার

79. উপররাষ্ট্রপতি সর্বাধিক কতদিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে পারেন-
a. ৩ মাস
b. ৫ মাস
c. ৬ মাস ✔
d. ১ বছর

80. ভারতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় সদস্যবৃন্দ নিযুক্ত হন-
a. প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির দ্বারা ✔
b. প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে উপররাষ্ট্রপতির দ্বারা
c. প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে প্রধান বিচারপতির দ্বারা
d. প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা

81. ভারতের রাষ্ট্রপতি অপসারণ পদ্ধতি (ইমপিচমেন্ট)-এর উল্লেখ রয়েছে-
a. ৫৩ নং ধারায়
b. ৬১ নং ধারায়
c. ৫৬ নং ধারায় ✔
d. ৭৭ নং ধারায়

82. ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার ক্ষমতা আছে-
a. রাষ্ট্রপতির ✔
b. প্রধানমন্ত্রীর
c. স্পিকারের
d. প্রধান বিচারপতির

83. উপররাষ্ট্রপতি সংসদের যে কক্ষে সভাপতিত্ব করেন, তার নাম-
a. লোকসভা
b. রাজ্যসভা ✔
c. বিধানসভা
d. বিধানপরিষদ

84. লোকসভার স্পিকারকে নিযুক্ত করেন-
a. প্রধানমন্ত্রী
b. প্রধান বিচারপতি
c. উপররাষ্ট্রপতি
d. রাষ্ট্রপতি ✔

85. ভারতের উপররাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করেন সংসদের-
a. উচ্চকক্ষের সদস্যরা
b. নিম্নকক্ষের সদস্যরা
c. উভয়কক্ষের সদস্যরা ✔
d. কোনোটিই নয়

86. রাষ্ট্রপতি ও উপররাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা দূর করে-
a. হাইকোর্ট
b. সুপ্রিমকোর্ট ✔
c. হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্ট উভয়ই
d. কেউই নয়

87. ভারতের রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক পদমর্যাদা হল-
a. প্রধানমন্ত্রীর সমান
b. প্রকৃত রাষ্ট্রপ্রধানের
c. আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধানের ✔
d. অধীনস্থ কর্মচারীর

88. ভারতের রাষ্ট্রপতির হাতে ‘ভিটো’ ক্ষমতা রয়েছে-
a. ৩ ধরনের ✔
b. ২ ধরনের
c. ৪ ধরনের
d. কোনোটিই নয়

89. কোনো বিলে সুস্পষ্টভাবে অসম্মতি জানাবার ক্ষমতাকে বলা হয়-
a. চরম ভিটো ✔
b. পকেট ভিটো
c. স্থগিতকারী ভিটো
d. কোনোটিই নয়

90. “আমরা মন্ত্রীপরিষদশাসিত শাসনব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে চেয়েছি, প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতা নিহিত রয়েছে মন্ত্রীসভা ও আইনসভার হাতে, রাষ্ট্রপতির হাতে তা নেই”-বলেছেন-
a. গান্ধিজি
b. আম্বেদকর
c. প্যাটেল
d. নেহরু ✔

91. ‘যতক্ষণ বিদ্যুৎ থাকে না ততক্ষণ ইমার্জেন্সি লাইটের দরকার পড়ে, বিদ্যুৎ এসে গেলে তাকে তুলে রাখতে হয়। অনুরূপভাবে সাধারণ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির কোনো ভূমিকা নেই, সেই অবস্থায় যাবতীয় ক্ষমতা ভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নির্বাচনে কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হলে বা প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে”-বলেছেন-
a. নেহরু
b. আম্বেদকর
c. রামস্বামী ভেঙ্কটরমন ✔
d. কেউ নন

92. উত্তরাধিকার সূত্রে মনোনিত শাসক দেখা যায়-
a. পাকিস্তানে
b. বাংলাদেশে
c. গ্রেট ব্রিটেনে ✔
d. ভারতে

93. রাষ্ট্রপতি লোকসভায় কতজন ইঙ্গ-ভারতীয় সদস্য মনোনীত করেন?
a. 1
b. 2 ✔
c. 3
d. 4

94. রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে ন্যূনতম কত বছর বয়স্ক হতে হয়?
a. 25 বছর
b. 30 বছর
c. 35 বছর ✔
d. 40 বছর

95. জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী?
a. 360 নং ধারা
b. 362 নং ধারা
c. 352 নং ধারা ✔
d. 356 নং ধারা

96. ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভায় সর্বাধিক কতজন সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন?
a. 2
b. 4
c. 12 ✔
d. 14

97. ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি কে?
a. রাজেন্দ্র প্রসাদ
b. রাধাকৃষ্ণান ✔
c. কে আর নারায়ণন
d. জাকির হোসেন

98. রাষ্ট্রপতি অর্থ কমিশন গঠন করেন-
a. 2 বছর অন্তর
b. 3 বছর অন্তর
c. 5 বছর অন্তর ✔
d. 6 বছর অন্তর

99. ভারতের রাষ্ট্রপতি কত ধরনের জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন?
a. এক
b. দুই
c. তিন ✔
d. চার

100. ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিযুক্ত করেন-
a. রাষ্ট্রপতি ✔
b. প্রধানমন্ত্রী
c. প্রধান বিচারপতি
d. উপরাষ্ট্রপতি

101. কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যরা নিযুক্ত হন                    -এর দ্বারা।

a) রাষ্ট্রপতি ✔

b) প্রধানমন্ত্রী

c) স্পিকার

d) মুখ্যমন্ত্রী

102. যিনি পার্লামেন্টের যৌথ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন-

  1.  রাষ্ট্রপতি
  2.  স্পিকার ✔
  3.  প্রধানমন্ত্রী
  4.  উপরাষ্ট্রপতি

103. অর্থবিল প্রশ্নে সার্টিফিকেট প্রদান করেন-

  1. স্পিকার ✔
  2. প্রধানমন্ত্রী
  3. অর্থরাষ্ট্র
  4. পতিমন্ত্রী

104. লোকসভার প্রথম স্পিকার হলেন-

  1. জি ভি মভলঙ্কর ✔
  2. মীরাকুমার
  3. সুকুমার সেন
  4. সোমনাথ চ্যাটার্জি

105. লোকসভার বর্তমান স্পিকার হলেন-

  1.  সুকুমার সেন
  2. সোমনাথ চ্যাটার্জি
  3.  সুমিত্রা মহাজন ✔
  4.  পি এ সাংমা

106. কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় মন্ত্রী থাকেন-

  1. ২ প্রকারের
  2. ৩ প্রকারের ✔
  3. ৪ প্রকারের
  4. ৫ প্রকারের

107. রাজ্যসভা বিবেচনার জন্য অর্থবিল আটকে রাখতে পারে-

  1. ১০ দিন
  2. ১৪ দিন ✔
  3. ১৫ দিন
  4. ২০ দিন

108. UPSC সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ হল-

  1. ৫ বছর
  2. ৬ বছর ✔
  3. ৭ বছর
  4. ৮ বছর

109. বাস্তবে ভারতের প্রকৃত শাসক কে?

  1. প্রধানমন্ত্রী ✔
  2. সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি
  3. রাষ্ট্রপতি
  4. মুখ্য নির্বাচন কমিশনার

110. ভারতে সংসদের দুটি অধিবেশনের মধ্যে সর্বাধিক ব্যবধান কতদিনের হতে পারে?

  1. ৪ মাস
  2. ৫ মাস
  3. ৬ মাস ✔
  4. ৭ মাস

111 . বর্তমামোস কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যসংখ্যা লোকসভার মোট সদস্যসংখ্যার শতকরা কত ভাগের বেশি হবে না?

  1. ১৫ভাগ ✔
  2. ১৬ভাগ
  3. ২০ ভাগ
  4. ২১ ভাগ

112.ভারতীয় ভাগবিন্ধানের কততম সংশোধনী অনুসারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যসংখ্যা লোকসভার মোট সদস্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না?

  1. ৯০ তম
  2. ৯১ তম ✔
  3. ৯২ তম
  4. ৯৩ তম

113. কোনো অঙ্গরাজ্যের নামসর্বস্ব শাসক হলেন-

  1.  রাজ্যপাল ✔
  2. মুখ্যমন্ত্রী
  3.  স্পিকার
  4.  মন্ত্রিপরিষদ

114. অঙ্গরাজ্যের প্রকৃত শাসক হলেন-

  1. রাজ্যপাল
  2. মুখ্যমন্ত্রী ✔
  3.  হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি
  4. স্পিকার

115. রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা হলেন-

  1. মুখ্যমন্ত্রী ✔
  2. রাষ্ট্রপতি
  3. প্রধানমন্ত্রী
  4. পুলিশমন্ত্রী

116. রাজ্যপালের সাধারণভাবে কার্যকালের মেয়াদ হল-

  1.  ৪ বছর
  2. ৫ বছর ✔
  3. ৬ বছর
  4. ৮ বছর

117. রাজ্যের মন্ত্রীদের নিযুক্ত করেন-

  1. মুখ্যমন্ত্রী
  2. রাষ্ট্রপতি
  3. রাজ্যপাল ✔
  4. প্রধানমন্ত্রী

118. রাজ্যপাল দায়বদ্ধ থাকেন-

  1.  রাষ্ট্রপতির কাছে ✔
  2. উপরাষ্ট্রপতির কাছে
  3. প্রধানমন্ত্রীর কাছে
  4.  রাজ্যপাল

119. রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন-

  1. রাষ্ট্রপতি
  2. রাজ্যপাল ✔
  3. প্রধানমন্ত্রী
  4. মুখ্যমন্ত্রী

120. রাজ্যপালকে ‘সোনার খাঁচায় বন্দি পাখি’ বলেছেন-

  1.  জওহরলাল নেহরু
  2. রাজেন্দ্র প্রসাদ
  3. সরো সুচেতা কৃপালিনী ✔
  4. জিনী নাইডু

121. রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষে রয়েছেন-

  1.  রাজ্যপাল ✔
  2. মুখ্যমন্ত্রী
  3. মুখ্যসচিব
  4. মন্ত্রীপরিষদ

122. যার সম্মতি ছাড়া রাজ্য আইনসভায় অর্থবিল পেশ হয় না, তিনি হলেন-

  1. রাষ্ট্রপতি
  2. রাজ্যপাল ✔
  3. মুখ্যমন্ত্রী
  4. প্রধানমন্ত্রী

123. বর্তমানে ভারতে অঙ্গরাজ্যের সংখ্যা ক-টি?

  1. ২৫ ✔
  2. ২৬
  3. ২৭
  4. ২৯

124. রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণাকে কত দিনের মধ্যে ভারতীয় সংসদে অনুমোদিত হতে হয়?

  1.  ১ মাসের মধ্যে
  2.  ২ মাসের মধ্যে ✔
  3. ৩ মাসের মধ্যে
  4.  ৪ মাসের মধ্যে

125. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী ভারতের অঙ্গরাজ্যের জন্য একজন রাজ্যপাল থাকবেন?

  1.  ১৫২ নং ধারা
  2. ১৫৩ নং ধারা ✔
  3. ১৫৪ নং ধারা
  4. ১৫৫ নং ধারা

126. ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে? রাজ্যপালের কার্যকালের মেয়াদ কার ?

  1. রাষ্ট্রপতি ✔
  2. উপরাষ্ট্রপতি
  3. প্রধানমন্ত্রী
  4. কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী

127. ভারতে কোনো রাজ্যের রাজ্যপাল হওয়ার জন্য কমপক্ষে কত বছর বয়স্ক হতে হয়?

  1. ২৫ বছর
  2. ৩০ বছর
  3. ৩৫ বছর ✔
  4. ৪০ বছর

128. বর্তমানে ভারতে একজন রাজ্যপাল মাসে কত টাকা বেতন পান?

  1. ৫০,০০০ টাকা
  2. ৮০,০০০ টাকা
  3. ১,০০,০০০ টাকা
  4. ১,১০,০০০ টাকা ✔

129. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী কোনো রাজ্যের শাসন বিষয়ক যাবতীয় ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত?

  1. ১৫৩ নং ধারা
  2. ১৫৪ নং ধারা ✔
  3. ১৫৫ নং ধারা
  4. ১৫৬ নং ধারা

130. ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে দেওয়ানি অভিযোগ আনতে হলে কতদিন আগে নোটিশ দিতে হয়?

  1. ২ মাস ✔
  2. ৩ মাস
  3. ৪ মাস
  4. ৫ মাস

131. ভারতের কোনো রাজ্যের রাজ্যপাল রাজ্য বিধানসভায় কতজন ইঙ্গ- ভারতীয় সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন?

  1. ৫ জন
  2. ৪ জন
  3. ২ জন
  4. ১ জন ✔

132. রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান বা স্থগিত কে করতে পারেন?

  1. মুখ্যমন্ত্রী
  2. রাজ্য পরিষদীয় মন্ত্রী
  3. রাজ্যপাল ✔
  4. রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ

133. ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যের জন্য অধ্যাদেশ কে জারি করতে পারেন?

  1. মুখ্যমন্ত্রী
  2. রাষ্ট্রপতি
  3. রাজ্যপাল ✔
  4. রাজ্য আইন মন্ত্রী

2. Very Short Question Answer

1. লোকসভায় রাষ্ট্রপতি কতজন ইঙ্গ-ভারতীয় সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন?

রাষ্ট্রপতি ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায় থেকে দুই জনকে লোকসভার সদস্যরূপে মনোনীত করতে পারেন।

2 . ভারতের রাষ্ট্রপতিকে কীভাবে পদচ্যুত করা যায়?  অথবা, ভারতে রাষ্ট্রপতি কীভাবে অপসারিত হন?

ভারতের রাষ্ট্রপতিকে ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতির সাহায্যে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতির ভিত্তিতে অপসারণ করা যায়।

3. ভারতীয় শাসন বিভাগ কী কী অংশ নিয়ে গঠিত?

রাজনৈতিক ও অ-রাজনৈতিক অংশ।

4. ভারতের কোনো রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে হন?

রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা বা নেত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন।

5. রাজ্য বিধানসভার নেতা কে?

রাজ্য বিধানসভার নেতা হলেন মুখ্যমন্ত্রী।

6. বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করা, স্থগিত রাখা ইত্যাদি কাজ রাজ্যপাল কার পরামর্শে সম্পাদন করেন?

বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করা, স্থগিত রাখা ইত্যাদি কাজ রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে সম্পাদন করেন।

7. কাকে রাজ্যের ‘ ক্যাবিনেট তোরণের প্রধান স্তম্ভ’ বলে বর্ণনা করা হয়।

 ▶ মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যের ‘ক্যাবিনেট তোরণের প্রধান স্তম্ভ’ বলে বর্ণনা করা হয়।

8. রাজ্যের জনগণ কাকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে করেন?

জনগণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু বলে মনে করেন।

9. মুখ্যমন্ত্রীর বেতন, ভাতা ইত্যাদি কার দ্বারা ঠিক হয়?

মুখ্যমন্ত্রীর বেতন, ভাতা ইত্যাদি রাজ্য আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের দ্বারা ঠিক হয়।

10. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী কে ছিলেন?

পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ড. প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ ছিলেন।

11. পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর নাম কী?

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

12. সংবিধানে উপমুখ্যমন্ত্রী বা উপপ্রধানমন্ত্রীর পদের উল্লেখ আছে কি?

না, সংবিধানে উপমুখ্যমন্ত্রী বা উপপ্রধানমন্ত্রীর পদের উল্লেখ নেই।

13. রাজ্য আইনসভা কর্তৃক গৃহীত কোনো বিল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরিত হলে রাষ্ট্রপতি কী করবেন?

এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বিলে সম্মতি দিতে পারেন, আবার নাও দিতে পারেন। অথবা, সংশ্লিষ্ট বিলকে পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্য আইনসভায় পাঠাতে পারেন।

14. ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নাম কী?

ভারতের বর্তমান রাষ্ট্রপতি হলেন রাজনাথ কোবিন্দ এবং উপরাষ্ট্রপতি হলেন মহম্মদ হামিদ   আনসারি।

15. ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ কাদের নিয়ে গঠিত হয়?

ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা নিয়ে গঠিত হয়।

16. ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক অংশ কাদের নিয়ে গঠিত?

প্রশাসনিক কাজে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত উচ্চপদস্থ কর্মচারীবৃন্দসহ সাধারণ কর্মচারীরা শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক অংশের অন্তর্ভুক্ত।

17. শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ কতদিনের জন্য নির্বাচিত হন?

একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ নির্বাচিত হন।

18. শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ সম্পাদিত কাজের জন্য কার কাছে দায়ী থাকেন?

▶ শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশকে জনসাধারণের কাছে দায়িত্বশীল থাকতে হয়।

19. সম্পাদিত কাজের জন্য শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক অংশ কার কাছে দায়ী থাকে?

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক অংশকে দায়ী থাকতে হয়।

20. রাষ্ট্রপতি ভারতের কীরূপ শাসক?

রাষ্ট্রপতি ভারতের নিয়মতান্ত্রিক বা নামসর্বস্ব শাসক।

21. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থী কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না?

ভারতীয় সংবিধানের ৫৮(২) নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থী কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না।

22. ভারতের রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন?

ভারতের রাষ্ট্রপতি একটি নির্বাচক সংস্থা দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন।

23. রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের ভোটদান পদ্ধতির নাম কী?

রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের ভোটদান পদ্ধতির নাম হল একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নীতি।

24 . রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে নির্বাচকগণ ক-টি করে ভোট দিতে পারেন?

রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে যতজন প্রার্থী থাকেন ততগুলি ভোট দেওয়া যায়।

25. রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচিত হতে হলে কোন্ প্রার্থীকে কত ভোট পেতে হয় ?

রাষ্ট্রপতির পদে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রার্থীকে কোটা সংখ্যক ভোট পেতেই হয়।

26. রাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে তার মীমাংসা কে করে?

রাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো বিতর্ক দেখা দিলে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট তার মীমাংসা করে।

27. ভারতে আজ পর্যন্ত দ্বিতীয় পছন্দের ভোটে কে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন?

ভারতে আজ পর্যন্ত দ্বিতীয় পছন্দের ভোটে ভি ভি গিরি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

28. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায়?

সংবিধানের ৫৬ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায়।

29. কীসের অপরাধে ভারতের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতি চালু করা যায়?

সংবিধান ভঙ্গের অভিযোগে ভারতের রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতি চালু করা যায়।

30. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী ভারতের রাষ্ট্রীতির বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়?

সংবিধানের ৬১নং ধারা অনুসারে ভারতের রাষ্ট্রতির বিরুদ্ধে ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।

31. ভারতের রাষ্ট্রপতি পদাধিকারবলে যেসব কাজ করেন, তার জন্য তাঁকে কোথায় জবাবদিহি করতে হয় না?

ভারতের রাষ্ট্রপতি পদাধিকারবলে যেসব কাজ করেন, তার জন্য তাঁকে আদালতের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।

32. ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে কোন্ ধরনের মামলা দায়ের করা যায় না?

ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে থাকাকালীন অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায় না।

33. রাজ্যপালের বেতন, ভাতা ইত্যাদি রাজ্যের কোন্ তহবিল থেকে দেওয়া হয়?

রাজ্যপালের বেতন, ভাতা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঞ্চিত তহবিল থেকে দেওয়া হয়।

34. ভারতের কোনো রাজ্যের মন্ত্রীদের শপথবাক্য কে পাঠ করান?

ভারতের কোনো রাজ্যের মন্ত্রীদের শপথবাক্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল পাঠ করান।

35. রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে কে কাজ করেন?

রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে রাজ্যপাল কাজ করেন।

36. ভারতের কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সুপারিশ কে করতে পারেন?

সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল ভারতের কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সুপারিশ করতে পারেন।

37. রাজ্য বিধানসভা কর্তৃক গৃহীত কোন্ বিলে রাজ্যপাল সম্মতি দিতে বাধ্য থাকেন?

রাজ্য বিধানসভা কর্তৃক গৃহীত অর্থবিলে রাজ্যপাল সম্মতি দিতে বাধ্য থাকেন।

38. আইনভঙ্গের অপরাধে দণ্ডিত অপরাধীর দণ্ডাদেশ হ্রাস, স্থগিত বা মকুব করার ক্ষমতা কার হাতে ন্যস্ত?

আইনভঙ্গের অপরাধে দণ্ডিত অপরাধীর দণ্ডাদেশ হ্রাস, স্থগিত বা মকুব করার ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত।

39. রাজ্য মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যরা কীভাবে নিযুক্ত হন?

রাজ্য মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যরা মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশে রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত হন।

40. পশ্চিমবঙ্গের প্রথম রাজ্যপাল কে ছিলেন?

চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রথম রাজ্যপাল।

41. পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল কে?

পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজ্যপাল হলেন কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।

42. রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে ৩৫৬ নং ধারা জারির বিষয়টি কি আদালতের বিচারযোগ্য?

হ্যাঁ, রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে ৩৫৬ নং ধারা জারির সমগ্র বিষয়টি আদালতের বিচারযোগ্য।

43. রাজ্যপালকে ‘স্বর্ণপিঞ্জরে আবদ্ধ পক্ষী’ বলে কে অভিহিত করেছিলেন?

অথবা, কে রাজ্যপালকে ‘সোনার খাঁচায় অবদ্ধ পাখি’ বলে অভিহিত করেছেন?

সরোজিনী নাইডু রাজ্যপালকে ‘সোনার খাঁচায় অবদ্ধ পাখি’ বলে অভিহিত করেছেন।

45. কোন্ ধরনের বিলকে রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির কাছে সম্মতির জন্য পাঠাতে বাধ্য থাকেন?

হাইকোর্টের মর্যাদাহানিকর কোনো বিলকে রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির কাছে সম্মতির জন্য পাঠাতে বাধ্য থাকেন।

46. সংবিধান অনুযায়ী ভারতের রাষ্ট্রপতি নিজে বা তাঁর অধস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসন সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করবেন। এখানে ‘অধস্তন কর্মচারী’ কারা?

কেন্দ্রীয় মন্ত্রীগণ হল ‘অধস্তন কর্মচারী’।

47. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রের শাসনকার্য রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদিত হবে?

▶ সংবিধানে ৭৭(১) নং ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রের শাসনকার্য রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদিত হবে।

48. ভারতে অর্থ কমিশনের সদস্যরা কার দ্বারা নিযুক্ত হন?

ভারতে অর্থ কমিশনের সদস্যরা ভারতের রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত হন।

49. যুদ্ধ ঘোষণা বা শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে ভারতের রাষ্ট্রপতিকে কার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে হয়?

যুদ্ধ ঘোষণা বা শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভারতীয় সংসদ ও ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে হয়।

50. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান প্রতিনিধি কে?

▶ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান প্রতিনিধি হল ভারতের রাষ্ট্রপতি।

51. বিভিন্ন দেশে ভারতের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের কে প্রেরণ করেন? 

বিভিন্ন দেশে ভারতের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রেরণ করেন।

52. বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা ভারতের কার কাছে নিজ নিজ পরিচয়পত্র পেশ করেন?

বিদেশি কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে নিজ নিজ পরিচয়পত্র পেশ করেন।

53. কার সম্মতিক্রমে ভারতের রাষ্ট্রপতি বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে সন্ধি স্থাপন বা চুক্তি সম্পাদন করতে পারেন?

ভারতীয় পার্লামেন্টের অনুমোদনক্রমে রাষ্ট্রপতি বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে সন্ধি স্থাপন বা চুক্তি সম্পাদন করতে পারেন।

54. ভারতের রাষ্ট্রপতি কোন্ কোন্ বিলে সম্মতি দিতে বাধ্য? 

ভারতের রাষ্ট্রপতি অর্থবিল ও সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিলে সম্মতি দিতে বাধ্য।

56. ভারতের বাজেট কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কার পক্ষে সংসদে উত্থাপন করেন?

ভারতের বাজেট কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ভারতের রাষ্ট্রপতির পক্ষে সংসদে উত্থাপন করেন।

57. ভারতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা কে রদ করতে পারেন?

ভারতের রাষ্ট্রপতি কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা রদ করতে পারেন।

58. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা রদ করতে পারেন?

সংবিধানের ৭২নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কোনো ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞা রদ করতে পারেন।

59. ভারতে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি থাকলে সংবিধানের কত নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখা যায়?

ভারতে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি থাকলে সংবিধানের ১৯(১) নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকার স্থগিত রাখা যায়।

60. ভারতের কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন সর্বাধিক কত দিন চালু থাকতে পারে?

ভারতের কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন সর্বাধিক ৩ বছর চালু থাকতে পারে। 

61. ভারতে সর্বপ্রথম কোন রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয়?

পাঞ্জাব রাজ্যে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয়।

62. পাঞ্জাব রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন কবে জারি হয়?

১৯৫১ সালের ২০ জুন পাঞ্জাব রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয়।

63. পশ্চিমবঙ্গে আজ পর্যন্ত কতবার ‘রাষ্ট্রপতির শাসন’ জারি করা হয়েছে?

পশ্চিমবঙ্গে আজ পর্যন্ত মোট ৪ বার ‘রাষ্ট্রপতির শাসন’ জারি করা হয়েছে।

64. ভারতে আজ পর্যন্ত কতবার আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে?

ভারতে আজ পর্যন্ত একবারও আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়নি।

65. ভারতের রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদার সম্পর্কে নেহরু কী বলেছেন?

তিনি বলেছেন, ‘আমরা তাঁকে (রাষ্ট্রপতিকে) কোনো প্রকৃত ক্ষমতা অর্পণ করিনি; কিন্তু আমরা তাঁর পদমর্যাদাকে কর্তৃত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক করে গড়ে তুলেছি।’

66. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান রক্ষা করার শপথ নিতে হয়?

ভারতীয় সংবিধানের ৬০নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে সংবিধান রক্ষা করার শপথ নিতে হয়।

67. ভারতের রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা সম্পর্কে ড. আম্বেদকর কী মন্তব্য করেছিলেন?

ড. আম্বেদকর বলেছেন, ‘ব্রিটিশ সংবিধানে রাজা যেরূপ পদমর্যাদা ভোগ করেন, আমাদের রাষ্ট্রপতিও অনুরূপ পদমর্যাদা-সম্পন্ন’।

68. ভারতীয় সংবিধানের কত নং সংশোধন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বাধ্য?

সংবিধানের ৪২ তম সংশোধন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী চলতে বাধ্য।

69. ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে?

ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি।

70. ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

ড. সর্বপল্লী রাধাকৃয়ণ ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি।

71. রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন বিধি কোন্ আইনে রয়েছে?

‘রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন সংক্রান্ত আইন, ১৯৭৪’-এ ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন বিধি উল্লিখিত রয়েছে।

72. ভারতের রাজ্যসভার কোন্ কোন্ ক্ষেত্র থেকে কোনো ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করেন?

সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সমাজসেবা ইত্যাদি বিষয়ে কৃতী ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভার সদস্য মনোনীত করতে পারেন।

73. কার কাছে ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁর পদত্যাগপত্র পেশ করতে পারেন?

ভারতের রাষ্ট্রপতি উপরাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করতে পারেন।

74. ভারতের আইন বিভাগের মুখ্য আধিকারিক কে?

অ্যাটর্নি জেনারেল ভারতের আইন বিভাগের মুখ্য আধিকারিক।

75. ভারতের প্রথম নাগরিক কাকে বলে?

রাষ্ট্রপতিকে ভারতের প্রথম নাগরিক বলে।

76. রাষ্ট্রপতি কখন সমস্ত সরকারি কর্মীদের বেতন ও ভাতা হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারেন?

রাষ্ট্রপতি আর্থিক জরুরি অবস্থার সময় সমস্ত সরকারি কর্মীদের বেতন ও ভাতা হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারেন।

78. রাজ্যপালের কার্যকাল কার সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে?

রাজ্যপালের কার্যকাল রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করে।

79. ভারতে নির্বাচন কমিশনারদের কে নিয়োগ করেন?

ভারতে নির্বাচন কমিশনারদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন।

80. রাষ্ট্রীয়কৃত্যক কমিশন কার কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করে?

রাষ্ট্রীয়কৃত্যক কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করে।

81. রাষ্ট্রপতির দুটি বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতার উল্লেখ করো।

রাষ্ট্রপতির দুটি বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা হল বিচারক প্রদত্ত দণ্ড মকুব এবং মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ক্ষমা প্রদর্শন।

82. কী কারণে এবং কার দ্বারা রাষ্ট্রপতি পদচ্যুত হতে পারেন?

সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতির দ্বারা পার্লামেন্ট রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করতে পারে।

83 . সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় ক’ধরনের শাসক দেখা যায় এবং কী কী?

সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় দু-ধরনের শাসক দেখা যায়। যথাক্রমে- প্রকৃত শাসক ও নামসর্বস্ব শাসক।

84 . ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক কে?

রাষ্ট্রপতি ভারতের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।

85. ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়েছিল কোন্ কোন্ খ্রিস্টাব্দে?

ভারতে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৬২, ১৯৭১ ও ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে।

86. শাসন বিভাগের কোন্ অংশ সরকারি নীতি নির্ধারণ করে?

শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ সরকারি নীতি নির্ধারণ করে।

87. ভারতের উপরাষ্ট্রপতিকে কারা নির্বাচন করেন? অথবা, ভারতের উপরাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন? অথবা, ভারতের উপরাষ্ট্রপতি কাদের দ্বারা নির্বাচিত হন? 

ভারতের উপরাষ্ট্রপতি রাজ্যসভা ও লোকসভার সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নীতির ভিত্তিতে গোপন ভোটে নির্বাচিত হন।

88. ভারতের উপরাষ্ট্রপতি কতদিন স্বপদে অধিষ্ঠিত থাকেন?

ভারতের উপরাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের সদস্যদের নিয়ে গঠিত এক নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন।

89. পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের অধিবেশন কে আহ্বান করেন?

রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন আহ্বান করেন।

90. পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের অধিবেশনের সমাপ্তি কে ঘোষণা করেন?

পার্লামেন্টের অধিবেশনের সমাপ্তি রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ    নিয়ে থাকেন ।                 

91 . রাষ্ট্রপতি রাজ্যসভায় কতজন সদস্য মনোনীত করেন?

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যসভায় চারুকলা, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সমাজসেবা প্রভৃতি ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ১২ জন সদস্যকে মনোনীত করতে পারেন।

92 . রাষ্ট্রপতি কখন অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন?

ভারতের রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত থাকাকালীন প্রশাসনের জরুরি প্রয়োজনে অর্ডিন্যান্স বা অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন।

93. প্রজাতান্ত্রিক সরকার কাকে বলে?

যে রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান উত্তরাধিকারসূত্রে ওই পদ লাভ করেন না, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ কর্তৃক তিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হন, সেই সরকারকে প্রজাতান্ত্রিক সরকার বলে।

94. রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের/রাজ্য আইনসভার কোনো কক্ষের সদস্য হতে পারেন কি?

সংবিধানের ৫৯ নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের/রাজ্য আইনসভার সদস্য হতে পারেন না।

95. রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া বিল ভারতীয় পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে পুনরায় গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য থাকেন (১১১ নং ধারা)। এই প্রসঙ্গে সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত উল্লেখ করো।

২০০৬ সালের আগস্টে লাভজনক পদ-সংক্রান্ত বিলে রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালামের সম্মতির কথা উল্লেখ করা যায়।

2. Short Question Answer

1. রাজ্যপালের দুটি আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা উল্লেখ করো।

রাজ্যপালের দুটি আইন প্রণয়ন সংক্রান্ত ক্ষমতা হল-① রাজ আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করা, অধিবেশন স্থগিত রাখা এক প্রয়োজন হলে রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেওয়া, ② রাজ্য আইনসভায় পাস হওয়া বিলে সম্মতি দেওয়া বা না দেওয়া, প্রয়োজনে পুনর্বিবেচনার জন্য আইনসভার কাছে বিলটিকে ফেরত পাঠানো বা বিল সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া।

2. রাজ্যপাল কার দ্বারা নিযুক্ত ও পদচ্যুত হন? রাজ্যপালের কার্যকাল কর বছর?

রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। রাজ্যপালকে পদচ্যুত করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির। রাজ্যপালের স্বাভাবিক কার্যকাল পাঁচ বছর।

3. রাজ্যপাল কখন রাজ্য বিধানসভায় সদস্য মনোনয়ন করেন?

বিধানসভায় ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের যথেষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি না থাকলে রাজ্যপাল ওই সম্প্রদায়ের একজন ব্যক্তিকে বিধানসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে পারেন।

4. রাজ্যপাল কোন্ কোন্ বিলকে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠাতে বাধ্য? অথবা, কোন্ কোন্ বিল রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য সংরক্ষণ করা রাজ্যপালের অবশ্য কর্তব্য?

রাজ্যপাল তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী রাজ্য বিধানসভার যে-কোনো বিলবে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠাতে পারেন। তবে ব্যক্তিগত সম্পত্তি অধিগ্রহণ, হাইকোর্টের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি কয়েকটি ক্ষেত্রে রাজ্যপাল রাজ্য আইনসভার বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠাতে বাধ থাকেন।

5. রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলতে কী বোঝায়?

সংবিধানের ষষ্ঠ তপশিলে উল্লিখিত কিছু স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অবকাশ আছে, যেমন-মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ ও অপসারণ, বিধানসভা ভেঙে দেওয়া রাজ্যের সাংবিধানিক অচলাবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট প্রভৃতি। স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার ক্ষেত্রগুলিতে রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করেন না। তা ছাড়া স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার বৈধতা নিয়েও কোনো প্রশ্ন তোলা যায় না।

6. রাজ্যপালের দুটি বিশেষাধিকার উল্লেখ করো।

রাজ্যপালের কয়েকটি বিশেষ অধিকার রয়েছে। যেমন ① রাজ্যপাল তাঁর সম্পাদিত কাজকর্মের জন্য আদালতের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন, ② নিজের পদে থাকাকালীন রাজাপালের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ফৌজদারি মামলা আনা যায় না।

7. রাজ্যপালের যে-কোনো দুটি অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা উল্লেখ করো। 

রাজ্যপালের দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা হল- ① রাজ্য বিধানসভায় বাজেট বা অর্থবিল পেশ করার আগে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হয়,② রাজ্যের কোনো আকস্মিক দুর্যোগে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যপালের হাতে আকস্মিক ব্যয়সংকুলান তহবিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তহবিল থেকে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যপালের আছে।

৪. রাজ্যপালের দুটি শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতার উল্লেখ করো।

রাজ্যপালের শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল- তাঁর নিয়োগ-সম্পর্কিত ক্ষমতাবলে রাজ্যপাল রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা বা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন, ② রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে মনে করলে ৩৫৬ ধারা জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।

9. রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা কী?

সংবিধান [১৬৩(১) নং ধারা] অনুসারে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রীসভা শাসনকার্য পরিচালনায় রাজ্যপালকে সাহায্য করতে ও পরামর্শ দিতে পারে। মন্ত্রীসভায় গৃহীত যাবতীয় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও আইন সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্বন্ধে রাজ্যপালকে অবহিত করানোর দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর।

10. রাজ্যপাল পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতার প্রয়োজন?

সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতার প্রয়োজন সেগুলি হল-① ব্যক্তিকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, ② ন্যূনতম ৩৫ বছর বয়সি হতে হবে, ও তিনি কেন্দ্রীয় আইনসভা ও রাজ্য আইনসভার সদস্য হতে পারবেন না, ④ তিনি কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের অধীন কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।

11. রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার দুটি উদাহরণ দাও।

অথবা, ভারতের অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের যে-কোনো একটি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা উল্লেখ করো।

রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার দুটি উদাহরণ হল-① পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে তা স্বাধীনভাবে পালন করা এবং রাষ্ট্রপতির কাছে রাজ্যের সাংবিধানিক অচলাবস্থা-সম্পর্কিত রিপোর্ট পাঠানো।

12. রাজ্যপালের দুটি বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা উল্লেখ করো।

রাজ্যপালের দুটি বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা হল-① রাজ্যপাল আইনভঙ্গের অপরাধে দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত অপরাধীর দণ্ড হ্রাস করতে পারেন, ② রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করেন।

13. সংবিধানে কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে?

৩৬১ নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যপাল তাঁর সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য কোনো আদালতে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। পদে আসীন থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা যায় না।

14. অর্ডিন্যান্স জারির ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তই কি চূড়ান্ত?

অর্ডিন্যান্স জারির প্রশ্নে ৩৮তম সংশোধনী অনুযায়ী রাজ্যপালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু ১৯৭৮ সালে আগেকার ৩৮তম সংশোধনীতে পরিবর্তন আনা হয়। এক্ষেত্রে রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত আদালত বিচার করে এবং মতামত জানাতে পারে।

15. রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সম্পর্ক কী?

রাজ্যপালের প্রধান পরামর্শদাতা হলেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে রাজ্যপাল ও মন্ত্রীসভার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষিত হয়। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাজ্যপাল মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন কিংবা কোনো মন্ত্রীকে অপসারণ করেন।

16. নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র কাকে বলে?

যে শাসনব্যবস্থায় রাজা বা রানি তত্ত্বগতভাবে শাসন বিভাগের চূড়ান্ত কর্তৃত্বের অধিকারী হলেও প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত একটি ক্যাবিনেটের পরামর্শে পরিচালিত হন, সেই শাসনব্যবস্থাকে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বলে। 

17. ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাগুলি উল্লেখ করো। 

ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা-① প্রার্থীকে ভারতের নাগরিক হতে হয়, ② প্রার্থীকে অন্তত ৩৫ বছর বয়সি হতে হয়, ③ প্রার্থীর অবশ্যই লোকসভার সদস্য হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হয়, ④ প্রার্থীর কোনো লাভজনক পদে আসীন থাকা চলে না, প্রার্থীর মনোনয়নপত্র অন্তত ৫০ জন নির্বাচকের দ্বারা প্রস্তাবিত এবং অন্য ৫০ জন নির্বাচকের দ্বারা সমর্থিত হতে হয়।

18. ভারতের উপরাষ্ট্রপতিকে কীভাবে পদচ্যুত করা যায়?

উপরাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করতে গেলে ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী রাজ্যসভার অধিকাংশ সদস্যের দ্বারা পদচ্যুতি-প্রস্তাব গৃহীত হলে এবং লোকসভা তা অনুমোদন করলে উপরাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা যায়।

19. ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচক সংস্থা কাদের নিয়ে গঠিত হয়? 

অথবা, ভারতের রাষ্ট্রপতিকে কারা নির্বাচন করেন? অথবা, ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্বাচকমণ্ডলী কাদের নিয়ে গঠিত হয়? 

ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলী পার্লামেন্টের দুটি কক্ষের নির্বাচিত সদস্য ও রাজ্য আইনসভার নিম্নকক্ষ বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়।

20. ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিনিধিত্বের কোন্ নীতি অনুসরণ করা হয়?

ভারতের রাষ্ট্রপতি একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নীতির ভিত্তিতে গোপন ভোটের দ্বারা নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক নির্বাচিত হন।

21. রাষ্ট্রপতি কোন্ পরিস্থিতিতে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন?▶ সংবিধানের ৩৫২ নং ধারা অনুযায়ী বহিরাক্রমণ, যুদ্ধ অথবা অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র অভ্যুত্থান বা তার সম্ভাবনার জন্য সমগ্র ভারত কিংবা ভারতের কোনো অংশের নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে মনে করলে রাষ্ট্রপতি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

22. সংসদের পাঠানো আইনের খসড়ায় রাষ্ট্রপতি কী কী বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন?

ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, সংসদের উভয়কক্ষের অনুমোদিত বিজে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিতে পারেন কিংবা নাও দিতে পারেন, অথবা পুনরায় বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিলটিকে তিনি সংসদের কাছে ফেরত পাঠাতে পারেন।

23. কোন্ পরিস্থিতিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন?

লোকসভায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা আস্থা হারালে অথবা কেন্দ্রে তদারকি মন্ত্রীসভা (Caretaker Government) গঠিত হলে ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজস্ব বিবেচনা অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন।

24. কোন্ অবস্থায় ভারতের কোনো অঙ্গরাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা যায়? অথবা, রাষ্ট্রপতি কখন রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণা করতে পারেন? অথবা, রাষ্ট্রপতি শাসন বলতে কী বোঝায়?

ভারতের সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারা অনুযায়ী, কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অথবা অন্য কোনো সূত্র থেকে পাওয়া সংবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি যদি নিশ্চিত বা সন্তুষ্ট হন যে রাজ্যে সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হয়।

25. কখন আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যায় এবং তা কতদিন বলবৎ থাকে?

ভারতের সংবিধানের ৩৬০ নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে নিশ্চিত বা সন্তুষ্ট হন যে সমগ্র ভারত বা ভারতের কোনো অংশের আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে, তাহলে তিনি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

26. ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা কত প্রকার ও কী কী?

ভারতীয় সংবিধান অনুসারে, রাষ্ট্রপতির হাতে তিন প্রকার জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা রয়েছে। যথা-① আপৎকালীন বা জাতীয় জরুরি অবস্থা (৩৫২ নং ধারা), ② রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা (৩৫৬ নং ধারা) এবং আর্থিক জরুরি অবস্থা (৩৬০ নং ধারা)।

27. ভারতে তপশিলি জাতি ও উপজাতির কল্যাণে রাষ্ট্রপতি কী কী ব্যবস্থা নিতে পারেন?

ভারতের সংবিধানের পঞ্চম তপশিলে বর্ণিত তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি এবং অসমের তপশিলি অঞ্চলগুলির প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে বিশেষ কয়েকটি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যে-কোনো তপশিলি অঞ্চলের সীমানা পরিবর্তন অথবা কোনো তপশিলি অঞ্চলকে অ-তপশিলি অঞ্চল ঘোষণা, তপশিলি অঞ্চলে উপজাতি পর্ষদ গঠন ইত্যাদি।

28. ভারতের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি কী ব্যবস্থা নিতে পারেন?

রাষ্ট্রপতি ভারতের জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর, মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যদের নিয়োগ করেন। এ ছাড়া লেফটেন্যান্ট গভর্নরের রিপোর্ট বা অন্য কোনো সূত্র থেকে পাওয়া সংবাদের ভিত্তিতে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার পরিস্থিতিতে সংবিধানের ২৩৯ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

29. জাতীয় জরুরি অবস্থার যে-কোনো দুটি ফলাফল উল্লেখ করো।

জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফলে① পার্লামেন্ট রাজ্য তালিকাভুক্ত যে-কোনো বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে, ② প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার ব্যাপারে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে।

30. ভারতের কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন বা শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা জারি হওয়ার দুটি ফলাফল উল্লেখ করো।

কোনো রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বা রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হলে রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে স্থানান্তরিত হয়, ② লোকসভার অধিবেশন স্থগিত থাকলেও রাষ্ট্রপতি ‘ভারতের সঞ্চিত তহবিল’ থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জন্য ব্যয় মঞ্জুরির আদেশ দিতে পারেন।

31. আর্থিক জরুরি অবস্থার যে-কোনো দুটি ফলাফল উল্লেখ করো।

আর্থিক জরুরি অবস্থার দুটি ফলাফল হল-① আর্থিক ব্যাপারে কেন্দ্রের নির্দেশ রাজ্যগুলিকে মেনে চলতে হয়, ② রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বেতন ও ভাতা হ্রাস করার জন্যও কেন্দ্র নির্দেশ দিতে পারে।

32 . উপরাষ্ট্রপতির যে-কোনো দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের উল্লেখ করো।

উপরাষ্ট্রপতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে-① রাজ্যসভায় সভাপতিত্ব করা, ② রাষ্ট্রপতি অসুস্থ বা অনুপস্থিত হলে বা কোনো কারণে কর্মক্ষম না হলে অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা।

33. রাষ্ট্রপতির বিচার সংক্রান্ত দুটি ক্ষমতার উল্লেখ করো।

রাষ্ট্রপতির বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে অন্যতম হল সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ এবং পার্লামেন্টের সুপারিশক্রমে এই বিচারপতিদের পদচ্যুত করার ক্ষমতা, ② ফৌজদারি মামলায় দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখা, হ্রাস করা অথবা দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমাপ্রদর্শন করার ক্ষমতা।

34. কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে কতবার নির্বাচিত হতে পারেন এবং নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার আগে তাঁর পদ শূন্য হলে কে দায়িত্ব গ্রহণ করেন?

কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে কতবার নির্বাচিত হতে পারেন সে- সম্পর্কে সংবিধানে পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার আগে কোনো কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

35. একইসঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন?

একই সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সাময়িকভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। আবার প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণতম কোনো বিচারপতি সাময়িকভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন।

36. পকেট ভিটো বলতে কী বোঝ?

পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর কোনো বিল রাষ্ট্রপতির কাছে গেলে রাষ্ট্রপতি সেই বিলে স্বাক্ষর দিতে পারেন বা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন বা কোনো কিছু না করে অনির্দিষ্টকালের জন্য সংশ্লিষ্ট বিলটিকে আটকে রাখতে পারেন। এই অনির্দিষ্ট সময়কালের জন্য বিল আটকে রাখাকেই পকেট ভিটো বলা হয়।

37. ভারতের রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধের বিচার কে করেন?

১৯৭৮ সালের ৪৪তম সংবিধান সংশোধনী আইন অনুসারে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসার দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

38. রাষ্ট্রপতি লোকসভায় কখন ইঙ্গ-ভারতীয় সদস্য মনোনীত করতে পারেন?

লোকসভা নির্বাচনের পর রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে, লোকসভায় ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষ যথেষ্ট সংখ্যায় নির্বাচিত হতে পারেনি, তাহলে তিনি ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে লোকসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে পারেন।

39. রাষ্ট্রপতির পরোক্ষ নির্বাচন পদ্ধতির তাৎপর্য কী?

রাষ্ট্রপতির পরোক্ষ নির্বাচনের সাংবিধানিক পদ্ধতি একথাই প্রমাণ করে যে, সংবিধান রচয়িতাগণ রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রীসভাকে প্রকৃত শাসক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

40. রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধ কোনো আদালতে তোলা যায় কি?

রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়টি আদালতে তোলা যায়। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন-সংক্রান্ত সকল বিরোধ সুপ্রিমকোর্টে তোলা যায় এবং সুপ্রিমকোর্ট ওইসব বিরোধের বিচার করে।

41 রাষ্ট্রপতির ‘ভিটো’ ক্ষমতা বলতে কী বোঝ? এটি কত প্রকারের হয়? অথবা, ভারতের রাষ্ট্রপতি কয় ধরনের ভিটো প্রয়োগ করতে পারেন ও কী কী?

ভারতের রাষ্ট্রপতির পার্লামেন্ট-প্রণীত বা রাজ্য আইনসভা-প্রণীত কোনো বিল বাতিল করে দেওয়ার ক্ষমতাকে ‘ভিটো’ ক্ষমতা বলে। এটি তিন প্রকারের হয়, যথা-① পূর্ণাঙ্গ বা চরম ভিটো, ② স্থগিতকারী ভিটো এবং পকেট ভিটো।

42. এমন কয়েকটি বিল উল্লেখ করো, যাদের উত্থাপনের পূর্বে রাষ্ট্রপতির পূর্বসম্মতির প্রয়োজন হয়।

কয়েকটি বিল পার্লামেন্টে উত্থাপনের পূর্বে রাষ্ট্রপতির পূর্বসম্মতি লাগে। যেমন-অর্থবিল, ভাষা-সম্পর্কিত বিল, নতুন রাজ্য বিল, রাজ্যের নাম ও সীমানা পরিবর্তন-সংক্রান্ত বিল, ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে অর্থব্যয়ের বিল প্রভৃতি।

43. রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের ব্যাপারে কী নীতি অনুসৃত হয়?

সংবিধানে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে ভোটের ব্যাপারে দুটি নীতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। যথা-① যথাসম্ভব বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব একই হারে হবে এবং অঙ্গরাজ্যগুলি ও লোকসভার মধ্যে ভোটের সমতা রক্ষিত হবে।

44. অর্ধ-রাষ্ট্রপতি শাসন কী?

কোনো রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হলে রাষ্ট্রপতি বিধানসভা না ভেঙে সাময়িকভাবে তার কাজ ও ক্ষমতা স্থগিত রাখতে পারেন। উদ্দেশ্য হল, সাময়িক সমস্যা কাটিয়ে যাতে বিধানসভার সদস্যরা বিকল্প একটি মন্ত্রীসভা তৈরি করতে পারেন। এই প্রকারের রাষ্ট্রপতি শাসনকে অর্ধ-রাষ্ট্রপতি শাসন বলে।

45. রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বলতে কী বোঝায়?

কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে বা অন্য কোনোভাবে রাষ্ট্রপতি যদি ‘সন্তুষ্ট’ হন যে, সংশ্লিষ্ট রাজ্যে উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতিতে সংবিধান অনুসারে শাসনকার্য পরিচালিত হওয়া সম্ভব নয় তখন তাকে রাজ্যের শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বলে।

46. ভারতীয় সংবিধানের ৪৪ তম সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে কীভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে?

৪৪তম সংবিধান সংশোধনী অনুসারে বর্তমানে জরুরি অবস্থা জারি থাকলেও রাষ্ট্রপতি ২০ নং ও ২১ নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলিকে খর্ব করতে পারেন না।

47. রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থার সময় যেসব বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন সেগুলির মধ্যে যে-কোনো দুটি উল্লেখ করো।

① রাজ্য সরকারের এবং রাজ্যপাল বা যে কোনো সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের যাবতীয় ক্ষমতা রাষ্ট্রপতি নিজের হাতে নিতে পারেন এবং ② রাজ্য আইনসভাকে বরখাস্ত করতে বা ভেঙে দিতে পারেন।

48. কী কারণে ভারতের রাষ্ট্রপতি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন?

সমগ্র ভারত বা তার যে-কোনো অংশের আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম বিপন্ন হয়েছে মনে করলে রাষ্ট্রপতি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

49. আর্থিক জরুরি অবস্থায় রাষ্ট্রপতি যেসব বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন সেগুলির মধ্যে যে-কোনো দুটি উল্লেখ করো।

① কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলিকে আর্থিক ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সবরকম নির্দেশ দিতে পারে এবং ② কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন, ভাতা প্রভৃতি হ্রাস করার নির্দেশ দিতে পারে।

50. রাষ্ট্রকৃত্যক বা আমলা কাদের বলা হয়?

সরকারি প্রশাসনে দু-ধরনের প্রশাসক থাকেন-① রাজনৈতিক প্রশাসক ও② অ-রাজনৈতিক প্রশাসক। এই অ-রাজনৈতিক প্রশাসক হল রাষ্ট্রকৃত্যক বা আমলা।

51. ভারতের রাষ্ট্রপতি কীভাবে নির্বাচিত হন?

ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রত্যক্ষভাবে জনসাধারণের ভোেট নির্বাচিত হন না। সংসদের দুটি কক্ষের নির্বাচিত সদস্য এবং রাজ্য-আইনসভার নিম্নকক্ষ বিধানসভার সদস্যদের নিয়ে গঠিত এক নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন।

52. কার্যকাল শেষ হওয়ার আগে কোন্ কোন্ পরিস্থিতিতে মন্ত্রীসভার পতন ঘটতে পারে?

▶ মন্ত্রীসভার সাধারণ কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর। কিন্তু তার আগে নিম্নলিখিত কারণে মন্ত্রীসভার পতন ঘটতে পারে- লোকসভা ভেঙে দেওয়া হলে, ② লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব পাস হলে, ③ লোকসভায় কোনো সরকারি বিল বা প্রস্তাব নাকচ হলে, ④ প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করলে।

53. কিচেন ক্যাবিনেট বলতে কী বোঝায়? 

প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর একান্ত অনুগত দু-তিনজন মন্ত্রীকে নিয়ে যে ছোটো একটি অভ্যন্তরীণ ক্যাবিনেট গড়ে ওঠে, তাকে কিচেন ক্যাবিনেট বা ঘরোয়া ক্যাবিনেট বলা হয়।

54. ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল ব্রিটেনের মতো ভারতে সংসদীয় গণতান্ত্রিক কাঠামো অনুসৃত হয়েছে, ② ভারতে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে অস্থায়ী রাজনৈতিক ও স্থায়ী অ-রাজনৈতিক-এই দুই ধরনের প্রশাসকের উপস্থিতি রয়েছে।

55. কেন্দ্রীয় প্রশাসন কোন্ স্থায়ী অ-রাজনৈতিক সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল?

① প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ② ক্যাবিনেট সচিবালয়, ③ কেন্দ্রীয় সচিবালয়-এই তিন স্থায়ী অ-রাজনৈতিক সংগঠনের ওপর কেন্দ্রীয় প্রশাসন নির্ভরশীল।

56. কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দুই ধরনের শাসক কারা?

কেন্দ্রীয় প্রশাসনের দুই ধরনের শাসক হলেন-① স্থায়ী অ রাজনৈতিক প্রশাসক, যেমন-আমলা ও সরকারি কর্মচারীবৃন্দ এবং ② অস্থায়ী রাজনৈতিক প্রশাসক, যেমন-রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্য।

57. সংখ্যালঘু সরকার বলতে কী বোঝ?

লোকসভার সাধারণ নির্বাচনের পর যে দল লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সেই দলই সরকার গঠন করে। কিন্তু যদি সেই দলের সদস্যসংখ্যা হ্রাস পায় এবং যদি সেই দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় তাহলে সেই দলের সরকারকে সংখ্যালঘু সরকার বলা হয়।

58. ‘প্রধানমন্ত্রী হলেন ভারতের প্রকৃত শাসকপ্রধান’ যুক্তি দাও।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রভৃত ক্ষমতার অধিকারী। তাঁকে প্রকৃত শাসক বলার যুক্তি হল- তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীদের নিয়োগ বা বরখাস্ত করলেও বাস্তবে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই তা করেন; পুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সহকর্মীদের পরামর্শ ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন, যা কার্যক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য।

59. ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়’ কী?

প্রধানমন্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করার জন্য তাঁর অধীনে একটি দফতর বা কার্যালয় থাকে। একেই বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

60. ক্যাবিনেট সচিবালয়ের প্রধান কাজ কী?

ক্যাবিনেট সচিবালয়ের প্রধান কাজ হল ক্যাবিনেট বা মন্ত্রীপরিষদ ও তার বিভিন্ন কমিটিকে সচিব পর্যায়ে সহায়তা করা।

61. প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কীভাবে গঠিত হয়?

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গঠিত হয় ১ জন প্রধান সচিব, ১ জন অতিরিক সচিব, ৩ জন যুগ্ম সচিব, ৪ জন আধিকারিক এবং বহুসংখ্যক দ্বিতীয় তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়ে। অনেকে একে ‘Think Tank’ বলে অভিহিত করেন।

62. ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদের রাষ্ট্রপতিকরণ বলতে কী বোঝায়?

ভারতের সংসদীয় রাজনীতিতে পরিবর্তিত দলীয় ব্যবস্থা এবং কেন্দ্রীভূত আমলাতন্ত্রের কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে তাঁর অবিসংবাদী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষমতাবৃদ্ধিকে অনেকে ‘প্রধানমন্ত্রী পদের রাষ্ট্রপতিকরণ’ বলে অভিহিত করেছেন।

3. Long Question Answer

প্রশ্ন 1 ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো। অথবা, ভারতের শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো। অথবা, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাজগুলির বিবরণ দাও ও তাঁর সাংবিধানিক ভূমিকা   ব্যাখ্যা করো। অথবা, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:  প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি

ভারতের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিই প্রকৃত শাসক। সংবিধানের ৭৫(১) নং ধারা অনুসারে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে-

[1] লোকসভার নেতা

i. লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রীসভা গঠন করেন।

ii. লোকসভার কার্যক্রম তিনি স্থির করেন। প্রধানমন্ত্রী লোকসভার কার্যপরিচালনা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।

iii. লোকসভার অধিবেশন কখন ডাকা হবে, কতদিন চলবে, কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর আলোচনা চলবে সে-সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নিজে সিদ্ধান্ত নেন। অধিবেশন স্থগিত রাখা বা লোকসভা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতিকে তিনি পরামর্শ দিতে পারেন।

iv. প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রধান মুখপাত্র হিসেবে লোকসভায় সরকারি নীতিগুলি ব্যাখ্যা করে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ বিলের ওপর বক্তৃতা ও সরকারি দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করাও তাঁর প্রধান দায়িত্ব। কোনো মন্ত্রী লোকসভায় বিতর্কে অংশ নিয়ে অসুবিধায় পড়লে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

v. সংসদে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক রেখে চলেন।

vi. লোকসভা পরিচালনা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য স্পিকারকে সাহায্য করা প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য।

[2] মন্ত্রীসভার নেতা

i. সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়োগ করেন। মন্ত্রীসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা চূড়ান্ত। আপাতদৃষ্টিতে অনেকে প্রধানমন্ত্রীকে ‘সমমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য’ বলে অভিহিত করলেও, এটা দেখা যায় যে, মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রভাব, প্রতিপত্তি ও মর্যাদা সবচেয়ে বেশি।

ii. মন্ত্রীসভার পুনর্গঠন, দফতর বণ্টন এবং পুনর্বণ্টন প্রভৃতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর প্রভূত ক্ষমতা লক্ষ করা যায়।

iii. মন্ত্রীসভায় সভাপতিত্ব এবং বিভিন্ন দফতরের নীতির সমন্বয়সাধন করা প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম কর্তব্য।

iv. মন্ত্রীসভার কাজকর্ম পরিচালনার জন্য যে সচিবালয় থাকে তা প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীনে কাজ করে।

v. মন্ত্রীসভার একাধিক স্থায়ী বা অস্থায়ী কমিটি নিয়োগের ক্ষমতাও প্রধানমন্ত্রীর রয়েছে। অধিকাংশ কমিটির সভাপতি হলেন প্রধানমন্ত্রী।

vi. মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত ক্ষমতা হল, তিনি যে-কোনো মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন বা রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে পদচ্যুত করাতে পারেন। এককথায়, প্রধানমন্ত্রীর অপ্রিয় কোনো সাংসদ মন্ত্রীসভায় টিকে থাকতে পারেন না। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে বাজপেয়ী মন্ত্রীসভায় কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রাম জেঠমালানির বা মনমোহন সিংহ মন্ত্রীসভায় নটবর সিংহ বা এ রাজার পদচ্যুতির কথা উল্লেখ করা যায়।

[3] সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা: প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা জোটের নেতা হিসেবে কাজ করেন। লোকসভার ভেতরে ও বাইরে তাঁকে দলের বা জোটের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে চলতে হয়। দল বা জোটের ঐক্য এবং সংহতি অটুট রাখা তাঁর দায়িত্ব। দল বা জোটের দেওয়া প্রতিশ্রুতি সরকারি কাজকর্মের মাধ্যমে রূপায়ণ করার ব্যাপারে তাঁকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হয়। দলের বা জোটের জনপ্রিয়তা রক্ষা ও বৃদ্ধি করার দায়িত্বও তাঁর হাতে রয়েছে। নির্বাচনে দল বা জোটের সাফল্যের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল।

[4] রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা: প্রধানমন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীসভার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে সরকারের উচ্চপদাধিকারীদের নিয়োগ করেন। দেশের সমগ্র শাসনব্যবস্থা কার্যত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির নামে পরিচালিত হয়। সংবিধানের ৪২তম এবং ৪৪তম সংশোধনের ফলে বর্তমানে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার পরামর্শ মানতে বাধ্য।

[5] পররাষ্ট্রনীতির রূপকার: প্রধানমন্ত্রী পররাষ্ট্রনীতির প্রধান রূপকার। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সদর্থক ভূমিকা অবলম্বনের প্রধান দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। কমনওয়েলথ সম্মেলন, জাতিপুঞ্জের শীর্ষ নেতাদের সম্মেলন, নির্জোট নেতাদের সম্মেলন এবং সার্ক বা আসিয়ানের মতো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভারতের প্রধান প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তাঁর গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বিশেষ কোনো আন্তর্জাতিক সমস্যায় ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তিনি ব্যাখ্যা করেন। এ ছাড়া বিশেষ দূত হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়োগ করতে পারেন।

[6] জাতির নেতা: প্রধানমন্ত্রী সমগ্র জাতির নেতা। গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা বিশ্লেষণে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা অনুধাবন, জনমতের উপলব্ধি এবং নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তার ওপর সরকার ও দলের

জনপ্রিয়তা নির্ভর করে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে সরকারে দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে জনগণকে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

উপসংহার: ভারতের সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে জোট সরকারের চল শুরু হওয়ার ফলে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কার্যাবলি তাঁর বিচক্ষণতা, সমন্বয়সাধনকারী নেতৃত্ব ও যোগ্য ব্যক্তিত্বের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

প্রশ্ন 2 ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা আলোচনা করো।

উত্তর: প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা

ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় প্রকৃত শাসক হলেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টিকে কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে-

[1] শাসনব্যবস্থায় গুরুত্ব: ভারতের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা অত্যন্ত ব্যাপক। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও এ কথা বলা যায় যে, সরকার হল দেশের প্রভু এবং সরকারের প্রভু হলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বহুলাংশে নির্ভর করে তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং সুদক্ষ নেতৃত্বের ওপর। বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রধান কারণ হল, ভারতের পরিবর্তনশীল দলীয় ব্যবস্থা এবং কেন্দ্রীভূত আমলাতন্ত্র উভয় ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর অবিসংবাদী কর্তৃত্বের স্বীকৃতি। অনেকে ভারতের মন্ত্রীসভা- শাসিত এইরূপ সংসদীয় শাসনব্যবস্থাকে প্রধানমন্ত্রী-শাসিত শাসনব্যবস্থা আখা দিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষমতা বৃদ্ধিকে প্রধানমন্ত্রী-পদের রাষ্ট্রপতিকরণ (Presidentialisation of the Prime Minister’s Office) নামে অভিহিত করা হয়। মন্ত্রীসভা-শাসিত সরকারে প্রধানমন্ত্রী এমন এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতার অধিকারী, যাকে শুধুমাত্র রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতির ভূমিকার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।

[2] ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা: ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কিছু কার্যকর সীমাবদ্ধতাও আছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে জনমতের গতিপ্রকৃতির দিকে তাকিয়ে শাসনকাজ পরিচালনা করতে প্রধানমন্ত্রী বাধ্য হন। অনুরূপভাবে, চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলির দাবিদাওয়াকেও তাঁকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে হয়। সর্বোপরি রয়েছে বিরোধী দলের সমালোচনা ও সক্রিয় ভূমিকা। বর্তমানে গণমাধ্যমও প্রভূত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই গণমাধ্যম-ব্যবস্থা জনগণকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। প্রধানমন্ত্রীকে শক্তিশালী গণমাধ্যমগুলির প্রভাবের দিকেও দৃষ্টি রাখতে হয়।

[3] পরিবর্তিত ভূমিকা: সাম্প্রতিককালে লোকসভার সাধারণ নির্বাচনে কোনো দলের পক্ষে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সম্ভব না হওয়ায় ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট (Hung Parliament)-এর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকার এক মৌলিক রূপান্তর ঘটেছে বলে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন দলের সম্মিলিত জোট সরকারের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নতুন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হচ্ছে। যে ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচির ভিত্তিতে বিভিন্ন দলের জোট সরকার গঠিত হয়, প্রধানমন্ত্রীকে তার দিকে দৃষ্টি রেখে সরকার পরিচালনা করতে হয়। তা ছাড়া সরকারের সমর্থনকারী জোট-সঙ্গী এবং জোটবহির্ভূত সহযোগী দলগুলির দৃষ্টিভঙ্গির কথা মাথায় রেখেও তাঁকে চলতে হয়। বস্তুত, জোট সরকারের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কখনোই মন্ত্রীসভার ওপর নিরঙ্কুশ আধিপতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ১৯৯৬ সালে সংযুক্ত গণতান্ত্রিক মোর্চা (UDA) সরকারের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়া, ১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে বি.জে.পি. নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক জোটের (NDA)-এর নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং সম্প্রতি ২০০৪ সালে এবং ২০০৯ সালে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোটের (UPA) নেতা রিসেবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর কথা উল্লেখ করা যায়। ২০০৫ সালের জুন মাসে BHEL-এর বিলগ্নিকরণকে কেন্দ্র করে ইউপিএ জোটের প্রধান শরিক সি পি আই (এম) এবং সি পি আই-এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মতবিরোধ ঘটে। ইউপিএ জোট শরিক বাম দলগুলি BHEL-এর দশ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার গৃহীত সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এর ফলে জোটের অভিন্ন মুনতম কর্মসূচি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে বাম দলগুলি মনে করে। এ ছাড়া ২০০৫ সালের জুলাই মাসে স্বাক্ষরিত ভারত-মার্কিন প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়েও বাম দলগুলি প্রতিবাদ জানায়। জোট সরকারের সমর্থনকারী শরিক দলুগলির কাছ থেকে এধরনের প্রতিবাদের সম্মুখীন হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। অতীতে এন ডি এ জোটের নেতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা গেছে। অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি রূপায়ণের ক্ষেত্রে জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে যথেষ্ট দক্ষতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই পরিবর্তিত ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জোট সরকারের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তিত অবস্থান সম্পর্কে অধ্যাপক জোহারির অভিমত হল, এ ধরনের সরকারে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য নয় [The result is that the Prime Minister of such a gov- ernment is not even a ‘primus inter pares’ (first among equals) as his position resembles the pathetic spectacle of tail wagging the body]

উপসংহার: বস্তুত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বহুলাংশে তাঁর নিজের গুণগত যোগ্যতা, বিচক্ষণতা ও ব্যক্তিত্বের ওপরনির্ভরশীল বলে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। সেই সঙ্গে লোকসভায় ক্ষমতাসীন জোট বা দলের শক্তি, দলীয় আনুগত্য প্রভৃতিও এক্ষেত্রে বিচার্য বিষয় হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন 3 ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো। অথবা, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও পদমর্যাদা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:  পৃষ্ঠা নং 125-এর বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক। নং প্রশ্নের উত্তর এবং পৃষ্ঠা নং 126-এর বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক ২নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।

প্রশ্ন 4 ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করো।

উত্তর:  চারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক

ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় তত্ত্বগতভাবে ভারতের শাসন বিভাগের প্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। সংবিধানের ৫৩ (১) নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, “The executive power of the Union shall be vested in the President”। বাস্তবে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা সামগ্রিকভাবে দেশের শাসনকাজ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হওয়ায় দেশের প্রকৃত শাসনক্ষমতা লোকসভার কাছে আস্থাশীল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভার হাতে অর্পিত হয়েছে। এখানে মন্ত্রীসভা তাঁদের সম্পাদিত কাজকর্মের জন্য রাষ্ট্রপতির বদলে লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। কাজেই তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও শাসন বিভাগের প্রধান নন। শাসন বিভাগের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভা।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি হল-

[1] প্রধানমন্ত্রীর নিয়োগকর্তা হিসেবে রাষ্ট্রপতি: সংবিধানের ৭৫ (১) নং ধারা অনুসারে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে অন্যান্য মন্ত্রীদেরও রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। প্রসঙ্গত বলা যায়, বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ব্যবহারের কোনো সুযোগ না থাকলেও, লোকসভায় কোনো দল বা জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হতে পারেন।

2] রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী হলেন রাষ্ট্রপতির প্রধান পরামর্শদাতা। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই রাষ্ট্রপতি এবং মন্ত্রীসভার মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্ত সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার দায়িত্বও প্রধানমন্ত্রীর। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুসারে সরকারের উচ্চপদাধিকারীদের নিয়োগ করেন। দেশের সমগ্র শাসনব্যবস্থা কার্যত প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির নামে পরিচালিত হয়। সংবিধানের ৪২তম এবং ৪৪তম সংশোধনের ফলে রাষ্ট্রপতি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার পরামর্শ মানতে বাধ্য।

[3] রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীসভার মধ্যে সংযোগকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী:

সংবিধানের ৭৮ নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মন্ত্রীসভার সংযোগ রক্ষা করেন প্রধানমন্ত্রী। শাসনকার্য পরিচালনা এবং আইনের প্রস্তাব সম্পর্কে মন্ত্রীসভার যাবতীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নিজে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতি যদি এই সম্পর্কে নিজেই কিছু জানতে চান তাহলে তাঁকে তা জানানোর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর। কোনো বিষয়ে কোনো মন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত যাতে মন্ত্রীসভা বিবেচনা করে, সেজন্য রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে পারেন।

[4] সাংবিধানিক দায়িত্ব সম্পাদনে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা:

সাংবিধানিক দায়িত্ব সম্পাদনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, নিছক আইনের গণ্ডিতে দুজনের সাংবিধানিক সম্পর্ক সীমাবদ্ধ নয়। অনেক সময় রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিচারবিবেচনাও এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে সবক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও জনপ্রিয়তার স্বতন্ত্র গুরুত্ব লক্ষ করা যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সক্রিয় ও স্থায়ী সমর্থন ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ১৯৭৯ সালের তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দেশাই এবং পরবর্তী সময়ের প্রধানমন্ত্রী চরণ সিংহ-এর সঙ্গে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি সঞ্জীব রেড্ডির সম্পর্কের কথা বলা যায়।

উপসংহার: সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, সংবিধানের স্তুতম সংশোধন এবং ৪৪তম সংশোধনের পরে ভারতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যাবতীয় বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। বর্তমান সাংবিধানিক ব্যবস্থায়। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি চলতে বাধ্য। ড জোহারির মতে, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী এই সংশোধনীর সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন এবং অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হবেন (Now the Prime Minister can take the benefit of the provision whereby the President has become bound to act on the aid and advice of his Council of Ministers)। কাজেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্ক এখন অনেকটাই তত্ত্বগত ও আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছাড়া আর কিছুই নয়। সর্বোপরি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বর্তমানে কার্যত দলীয় নির্বাচনে পর্যবসিত হয়েছে। এর ফলে রাষ্ট্রপতির পক্ষে অনেক সময় তাঁর দলীয় আনুগত্যকে কাটিয়ে ওঠা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

প্রশ্ন 5 ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ডারতের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদের মধ্যে সম্পর্ক

ভারতের শাসনব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীপরিষদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের শাসন বিভাগের প্রধান হলেও বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীপরিষদের হাতে শাসন বিভাগ পরিচালনার যাবতীয় ক্ষমতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা সামগ্রিকভাবে দেশের শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। এই কারণে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভাকে প্রকৃত শাসক বলা হয়। মন্ত্রীসভায় প্রধানমন্ত্রীর স্থান সম্পর্কে একটি প্রচলিত প্রবচন হল তিনি ‘সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য’ (First among the equals)। কিন্তু, কার্যত প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা আরও বেশি। সংবিধান অনুসারে মন্ত্রীসভার নেতা হলেন প্রধানমন্ত্রী, তাই মন্ত্রীসভাকে তিনি চালনা করেন। এই প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীপরিষদের সম্পর্কের বিষয়টি পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা যেতে পারে।

[1] মন্ত্রীসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা: মন্ত্রীসভা গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাই প্রধান। সংবিধানে বলা হয়েছে, অন্যান্য মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন (Ministers shall be appointed by the President on the advice of the Prime Minis- ter.)। মন্ত্রীসভায় কোন্ কোন্ সদস্য ক্যাবিনেট মন্ত্রী হবেন, কারা রাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী হবেন, সেসম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। প্রধানমন্ত্রীর পেশ করা তালিকা অনুসারে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীদের মধ্যে দফতর বণ্টন করেন। অতীতে এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর যে ভূমিকা ছিল বর্তমানে দলীয় রাজনীতি বিশেষ করে জোট রাজনীতির প্রভাবের কারণে তা অনেকটাই ক্ষুণ্ণ হয়েছে। মন্ত্রীসভা গঠনের সময় জোট শরিকদের দাবিদাওয়ার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হয়।

[2] মন্ত্রীসভার পুনর্গঠনে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা: মন্ত্রীসভার পুনর্গঠন এবং দফতর পুনর্বণ্টনের ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেহরু প্রয়োজন মনে করলে দফতরের পুনর্বণ্টন করতেন। রাজীব গান্ধি মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ২৪ বার ক্যাবিনেটের রদবদল ঘটিয়েছিলেন। অনেক সময় রাজ্য রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বিশেষ আস্থাভাজন হিসেবে ক্যাবিনেটে স্থান দিয়ে থাকেন। জোট রাজনীতির ধর্ম বজায় রেখে চলার তাগিদে প্রধানমন্ত্রী তাঁর খেয়ালখুশি মতো কিছু করতে পারেন না।

[3] মন্ত্রীদের পদচ্যুতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা: শুধুমাত্র নিয়োগ নয়, মন্ত্রীসভার সদস্যদের পদচ্যুতির ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোনো মন্ত্রীর নীতিগত কারণে বা অন্য কোনো কারণে বিরোধ দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হয়। অনেক সময় কোনো মন্ত্রী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে না চাইলে প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মন্ত্রীসভার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হওয়ার কথা বলে পদত্যাগে বাধ্য করতে পারেন। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত হিসেবে, ২০১০ সালের এপ্রিলে মনমোহন সিংহ-এর মন্ত্রীসভা থেকে কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শশী থারুরের পদত্যাগের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার কোর গ্রুপের দীর্ঘ বৈঠকের পর আইপিএল বিতর্কে জড়িয়ে পড়া শশী থারুরের পদচ্যুতির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে জোট রাজনীতির দায়বদ্ধতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষমতাও ক্ষুণ্ণ হতে দেখা যাচ্ছে। দৃষ্টান্ত হিসেবে, ২০১২ সালের রেল বাজেট পেশ করার পর রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর পদচ্যুতির কথা উল্লেখ করা যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের চাপে অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে রেল দফতরের নতুন মন্ত্রী হিসেবে মুকুল রায়ের নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হয়।

[4] মন্ত্রীসভার সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা: মন্ত্রীসভায় বা ক্যাবিনেটে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে সভার যাবতীয় কার্যক্রম নির্ধারণ করা হয়। ক্যাবিনেটের নীতি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। অনেক সময় তিনি এককভাবে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পর, তা মন্ত্রীসভাকে অবহিত করার জন্য বিষয়টিকে ক্যাবিনেটে পেশ করেন। অতীতে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গাম্বি ক্যাবিনেটে এভাবেই তাঁর আধিপত্য বজায় রেখেছিলেন।

[5] বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়সাধনকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা: ক্যাবিনেটের বিভিন্ন দফতরের মধ্যে এবং বিভিন্ন দফতর-সম্পর্কিত কাজকর্মের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে থাকেন প্রধানমন্ত্রী। তা ছাড়া পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিলে, সংশ্লিষ্ট বিষয়টিকে ক্যাবিনেটের সভায় পেশ করার আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে যেসব প্রস্তাব ক্যাবিনেটে পেশ করেন, সাধারণত ক্যাবিনেট তা সহজেই অনুমোদন করে। বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ক্যাবিনেটে একাধিক কমিটি গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী অধিকাংশ কমিটির সভাপতি হিসেবে তাঁর ভূমিকা পালন করেন। এসব কমিটির সদস্যদের নিয়োগ এবং কমিটির কাজকর্ম প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সচিবালয়ের মাধ্যমেও ক্যাবিনেটকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করতে পারেন, ক্যাবিনেটের কাজকর্মের তত্ত্বাবধান করতে পারেন।

উপসংহার: মন্ত্রীসভার সব সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী সমান গুরুত্ব দেন না। এজন্য বিশেষ কয়েকজনের সঙ্গে তিনি পরামর্শ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর একান্ত। আস্থাভাজন কয়েকজনকে নিয়ে অভ্যন্তরীণ ক্যাবিনেট বা ‘কিচেন ক্যাবিনেট’ গঠন করে থাকেন। বর্তমানে একে ‘কোর গ্রুপ’ বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীসভার সম্পর্কের বিষয়টির বিশ্লেষণের শেষে একথা বলা যায় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রকৃতপক্ষে মন্ত্রীসভায় শুধুমাত্র সমপর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে অগ্রগণ্য নন-সংসদীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর স্থান স্বতন্ত্র। ড. আম্বেদকর প্রধানমন্ত্রীকে ‘ক্যাবিনেট তোরণের প্রধান স্তম্ভ (The Prime Minister is really the keystone of the Cabinet arch.) বলে অভিমত প্রকাশ করেছিলেন। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান শাসনকাঠামোর প্রেক্ষিতে এ কথা সর্বতোভাবে সত্যি।

প্রশ্ন 6 কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার গঠন এবং কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো। 

উত্তর:  কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার গঠন

ভারতের সংসদীয় শাসনব্যবস্থা মন্ত্রীসভা-চালিত। সংবিধানের ৭৪(১) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, ভারতের রাষ্ট্রপতিকে তাঁর কাজে সহযোগিতা ও পরামর্শদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীসভা (Council of Min- isters) থাকবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যদের কেন্দ্রীয় আইনসভা বা সংসদের যে-কোনো কক্ষের সদস্য হতে হয়। সংসদের সদস্য নন, এমন কোনো ব্যক্তিকে মন্ত্রীসভার সদস্য করা হলে তাঁকে ছয় মাসের মধ্যে সংসদের যে-কোনো কক্ষ থেকে নির্বাচিত হতে হবে। মন্ত্রীসভার সদস্যসংখ্যা বা মর্যাদাগত পার্থক্য নিয়ে সংবিধানে বিস্তারিতভাবে কিছু বলা হয়নি। বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় তিন শ্রেণির মন্ত্রী রয়েছেন- [1] ক্যাবিনেটমন্ত্রী, [2] রাষ্ট্রমন্ত্রী (স্বাধীন দায়িত্ব) ও [3] উপমন্ত্রী। সব মন্ত্রীকে নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠিত হলেও ক্যাবিনেট গঠিত হয় মন্ত্রীসভার মাত্র কয়েকজন বিচক্ষণ মন্ত্রীকে নিয়ে। ক্ষমতাগত প্রশ্নেও মন্ত্রীসভার সঙ্গে ক্যাবিনেটের পার্থক্য রয়েছে। তত্ত্বগতভাবে মন্ত্রীসভা শাসন বিভাগের সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হলেও বাস্তবে ক্যাবিনেটই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ ও নির্ধারণ করে। ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা যেহেতু সরকারি নীতিনির্ধারকের ভূমিকা পালন করেন, তাই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলির দায়িত্ব এঁদের হাতে রয়েছে। অন্যদিকে, কম গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলির দায়িত্ব রয়েছে স্বাধীন দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রমন্ত্রীদের হাতে। সর্বশেষ পর্যায়ে উপমন্ত্রীরা বিভিন্ন মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের সহযোগিতা করেন।

কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

[1] নীতি নির্ধারণ ও রূপায়ণ: কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের প্রধান কাজ হল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারি নীতি নির্ধারণ করা জাতীয় ওই নীতিগুলির রূপায়ণ করা। ক্যাবিনেটের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ আবাপরে আন্তর্জাতিক বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

[2] আইন প্রণয়ন: কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটে যেসব নীতি ও কর্মসূচি গৃহীত হয় তা বাস্তবে রূপায়ণের জন্য আইন প্রণয়নের দরকার হয়ে পড়ে। মন্ত্রীরা সংসদে বিল পেশ করেন। পরে সেই বিল সংসদে গৃহীত হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করলে তা আইনে পরিণত হয়।

[3] শাসন বিভাগ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ভারপ্রাপ্ত: কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল শাসন বিভাগ পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ। সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি যাবতীয় শাসনক্ষমতার অধিকারী হলেও কার্যত এই ক্ষমতা থাকে ক্যাবিনেটের হাতে। ক্যাবিনেটের লিখিত পরামর্শ ছাড়া রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন না। বর্তমানে জনকল্যাণমূলক কাজকর্মের জন্য রাষ্ট্রের কর্মপরিধি বাড়ায় ক্যাবিনেটের প্রশাসনিক দায়িত্বও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

[4] সরকারের আয়ব্যয় নির্ধারণ: সরকারের আয়ব্যয় নির্ধারণ বা বাজেট রচনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক আর্থিক বছর শুরু হওয়ার আগে ক্যাবিনেটের তরফ থেকে অর্থমন্ত্রী পার্লামেন্টে বাজেট পেশ করেন। তার আগেই মন্ত্রীসভায় খসড়া বাজেট অনুমোদন করা হয়।

[5] বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়সাধন: সরকারি দফতরগুলির মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়ের জন্য আলাপ-আলোচনা, আন্তর্বিভাগীয় কমিটি নিয়োগ ইত্যাদি কাজ কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সম্পাদন করে থাকে। এজন্য ক্যাবিনেটের নিজস্ব সচিবালয় রয়েছে।

[6] পরিকল্পনা কমিশন গঠন: সরকারি নীতি ও কর্মসূচির সার্থক রূপায়ণের জন্য কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটকে পরিকল্পনা কমিশন গঠন করতে হয়। জাতীয় অর্থনৈতিক বিকাশের কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য কমিশন কাজ করে থাকে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার বিশিষ্ট তিনজন ক্যাবিনেট সদস্য এবং অন্যান্যদের নিয়ে কমিশন গঠিত হয়।

[7] উচ্চপদাধিকারীদের নিয়োগ: ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, তত্ত্বগতভাবে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে থাকেন। বাস্তবে কিন্তু তিনি কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের পরামর্শ অনুযায়ী চালিত হন। যেসব উচ্চপদাধিকারীর নিয়োগে ক্যাবিনেট পরামর্শ দিয়ে থাকে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ্যপাল, রাষ্ট্রদূত, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনার, ভারতের ব্যয়-নিয়ন্ত্রক ও মহাগণনা পরীক্ষক, নির্বাচন কমিশনার, অর্থ কমিশনার, আন্তঃরাজ্য পরিষদের আধিকারিকবৃন্দ, তিন (বায়ু-স্থল-নৌ) সামরিক বাহিনীর প্রধান, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিবৃন্দ প্রমুখ।

[৪] কূটনৈতিক ক্ষমতা: দেশের পররাষ্ট্র-সম্পর্কিত নীতি নির্ধারণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর যে-কোনো সন্ধি বা চুক্তি সম্পাদন করার ক্ষমতা ক্যাবিনেটের রয়েছে। বিদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে থাকেন।

উপসংহার: সংসদীয় শাসনব্যবস্থার রীতি অনুযায়ী ভারতে যাবতীয় সরকারি কাজকর্ম রাষ্ট্রপতির নামে পরিচালিত হলেও তা সম্পাদনা করে থাকে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট। সংসদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি এবং শাসন বিভাগের সংযোগ রক্ষার সেতু হিসেবে কাজ করে থাকে ক্যাবিনেট। বস্তুত, ব্রিটিশ ক্যাবিনেটের অনুকরণে ভারতের কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের ভূমিকা নির্ধারিত হয়েছে।

প্রশ্ন 7 ভারতের রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি আলোচনা করো।

উত্তর: রাষ্ট্রপতির নির্বাচন পদ্ধতি

ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান হলেন রাষ্ট্রপতি। কিন্তু তিনি প্রত্যক্ষভাবে ভারতে নির্বাচিত হন না। এক বিশেষ ও জটিল পদ্ধতির মাধ্যমে ভোটে নিতের রাষ্ট্রপতি একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নীতি ভিত্তিতে গোপন ভোটের দ্বারা এক নির্বাচক সংস্থা কর্তৃক পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন। সংসদের দুটি কক্ষের নির্বাচিত সদস্য এবং রাজ্য আইনসভার নিম্নকক্ষ বিধানসভার সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচক সংস্থা গঠিত হয়। রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়- 1 যথাসম্ভব সমহারে অঙ্গরাজ্যগুলির প্রতিনিধিত্ব এবং ② রাজ্য বিধানসভাগুলির প্রদত্ত ভোটসংখ্যয় সঙ্গে পার্লামেন্টের প্রদত্ত ভোটের সমতা রক্ষা। জনসাধারণের

তিনটি পর্যায়ে রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। পর্যায় তিনী হল-

[1] প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন প্রক্রিয়া

বিধানসভার একজন নির্বাচিত সদস্যের ভোটের মূল্য

সর্বশেষ জনগণনা অনুসারে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের লোকসংখ্যা বিধানসভার নির্বাচিত সদস্যের মোট সংখ্যা × ১০০০ =

রাজ্যের বিধানসভার সদস্যদের ভোটসংখ্যা নির্ণয়ের জন্য প্রথমে রাজ্যের জনসংখ্যাকে বিধানসভার সদস্যসংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হবে। এরপর ভাগফলকে ১০০০ দিয়ে ভাগ করে যা ভাগফল দাঁড়াবে তা হল প্রতি সদস্যের প্রদত্ত ভোটসংখ্যা। তবে এক্ষেত্রে ভাগশেষ যদি ৫০০ বা তার বেশি হয় তাহলে ভাগফলের সঙ্গে ১ যোগ করে ভোটসংখ্যা বের করার নিয়ম রয়েছে।

[2] দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন প্রক্রিয়া

সংসদের একজন নির্বাচিত সদস্যের ভোটের মূল্য

= সমস্ত রাজ্য বিধানসভাগুলির সদস্যদের ভোটের মোট মূল্য

             সংসদের উভয়কক্ষের সদস্যদের মোট সংখ্যা x ১০০০

দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে সংসদের সদস্যদের ভোট-মূল্য নির্ণয়। এজন্য প্রথমে রাজ্য বিধানসভাগুলির সদস্যদের মোট ভোটসংখ্যাকে সংসদের উভয়কক্ষের সদস্যদের মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করতে হয়। এভাবে যে ভাগফল পাওয়া যায় তা হল সংসদের প্রত্যেক সদস্যের ভোটসংখ্যা। তবে ভাগশেষ থাকলে এবং তা ভাজক সংখ্যার অর্ধেকের সমান বা বেশি হলে ভাগফলের সঙ্গে ১ যোগ করে সংসদের প্রতিটি সদস্যের ভোটের মূল্য নির্ণয় করা হয়।

[3] তৃতীয় পর্যায়ের নির্বাচন প্রক্রিয়া

রাষ্ট্রপতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ: এক্ষেত্রে নির্বাচনে যতজন প্রার্থী থাকবেন ভোটদাতারা ততগুলি পছন্দ জানাতে পারবেন। ভোটদাতাদের প্রথম পছন্দ জানাতেই হবে, না হলে ভোটপত্রটি বাতিল হয়ে যাবে। এভাবে ভোটগণনার পর সব প্রার্থীর প্রথম পছন্দের বৈধ ভোটগুলি যোগ করে যোগফলকে ২ দিয়ে ভাগ করে ভাগফলের সঙ্গে ১ যোগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তা হল ‘কোটা’।

           কোটা = মোট বৈধ ভোটসংখ্যা২ +১

কোনো প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতি-পদে নির্বাচিত হতে গেলে এই ‘কোটা’-নির্দিষ্ট ভোট অবশ্যই পেতে হবে। কিন্তু যদি কোনো হাতে গেলো ইনির্দিষ্ট ভোট না পান, তাহলে যিনি সবচেয়ে কমসংখ্যক প্রথম পছন্দের ভোট পেয়েছেন এবং তাঁকে নির্বাচন থেকে বাদ দিয়ে তাঁর পাওয়া দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দের

ভোটপত্রগুলিকে অন্যান্য প্রার্থীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। এভাবে যতক্ষণ পর্যন্ত না কোনো প্রার্থী ‘কোটা’-নির্দিষ্ট ভোট পাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থী- বাতিল এবং ভোটপত্রের হস্তান্তর চলতে থাকে।

বিষয়টিকে একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝানো যেতে পারে। ধরা যাক, রাষ্ট্রপতি-পদের প্রার্থীর সংখ্যা চার। প্রার্থীরা হলেন রাম, শ্যাম, যদু ও মধু। প্রথম গণনায় দেখা গেল সকলের প্রথম পছন্দের মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা এক লক্ষ। অতএব, কোটা হল ১,০০,০০০+২+১ = ৫০,০০১। ধরা যাক, রাম পেয়েছেন ৪৫,০০০, শ্যাম পেয়েছেন ৩৫,০০০, যদু পেয়েছেন ১১,০০০ এবং মধু পেয়েছেন ৯,০০০ মূল্যের ভোট। তাহলে দেখা যাচ্ছে, কোনো প্রার্থী কোটা পাননি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের নিয়ম অনুযায়ী সবচেয়ে কম প্রথম পছন্দের ভোট যিনি পেয়েছেন অর্থাৎ মধুকে বাদ দিতে হবে এবং মধুর প্রাপ্ত ৯০০০ ভোটকে দ্বিতীয় পছন্দ অনুযায়ী রাম, শ্যাম ও যদুর কাছে হস্তান্তর করতে হবে। ধরা যাক, ৯০০০ ভোটের মধ্যে রাম পেয়েছেন ৫,০১০ দ্বিতীয় পছন্দের ভোট, শ্যাম পেয়েছেন ২,০০০ দ্বিতীয় পছন্দের ভোট এবং যদু পেয়েছেন ১,৯৯০ দ্বিতীয় পছন্দের ভোট। এর ফলে রাম-এর প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দের ভোটের যোগফল দাঁড়াচ্ছে ৫০,০১০, শ্যাম-এর প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দের ভোটের যোগফল দাঁড়াচ্ছে ৩৭,০০০ এবং যদুর প্রথম ও দ্বিতীয় পছন্দের ভোটের যোগফল দাঁড়াচ্ছে ১২,৯৯০। সুতরাং, রাম কোটা সংখ্যক ভোট পাওয়ায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরূপে ঘোষিত হবেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, চতুর্দশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে (২০১৭) শ্রী রামনাথ কোবিন্দ ৭,০২,০৪৪ মূল্যের প্রথম পছন্দের ভোট পেয়ে তাঁর নিকটতম প্রার্থী মীরা কুমারকে ৩,৬৭,৩১৪ ভোটে পরাজিত করে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন।

প্রশ্ন 8 ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো। অথবা, ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসমূহ বিশ্লেষণ করো।অথবা, ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসমূহ আলোচনা করো।

উত্তর:  রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি

সংবিধানের ৫৩(১) নং ধারা অনুসারে, কেন্দ্রের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে (The executive power of the Union shall be vested in the President)। সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে যে প্রভূত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তা কয়েকটি ভাগে আলোচনা করা যেতে পারে।

[1] শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা: ভারতের রাষ্ট্রপতিকে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসক হিসেবে অভিহিত করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী তিনি নিজে বা তাঁর অধস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে শাসন সংক্রান্ত কার্যাবলি পরিচালনা করতে পারেন।

i. নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতা: ভারতের প্রকৃত শাসক প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্য, ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল, ব্যয়-নিয়ন্ত্রক ও মহাগণনা পরীক্ষক, নির্বাচন কমিশনার, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের সদস্য, অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল প্রমুখ উচ্চপদাধিকারীকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন। এদের অনেককে তিনি অপসারণ করতে পারেন।

ii. সামরিক ক্ষমতা: সংবিধান অনুযায়ী ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হলেন রাষ্ট্রপতি। তিনি স্থল, নৌ এবং বিমানবাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ করেন। যুদ্ধঘোষণা বা শান্তিস্থাপন করার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতির রয়েছে। অবশ্য সংসদের অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্রপতির এসব সিদ্ধান্ত বলবৎ হয় না। রাষ্ট্রপতি জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটির প্রধান হিসেবে তাঁর ভূমিকা পালন করেন।

Iii. কূটনৈতিক ক্ষমতা: বিদেশে ভারতের যাবতীয় সরকারি কাজকর্ম রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদিত হয়। ভারতের বৈদেশিক কূটনীতিকদের নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। অন্যান্য দেশ থেকে আসা কূটনীতিকদের তিনি

আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি হলেন জাতির প্রতিনিধি। সব ধরনের আন্তর্জাতিক সন্ধি ও চুক্তি রাষ্ট্রপতির নামে সম্পাদিত হয়।

iv. তত্ত্বাবধান সংক্রান্ত ক্ষমতা: ভারতবর্ষের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির

শাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রপতির অধীনে পরিচালিত হয়। তা ছাড়া কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির প্রশাসন পরিচালনার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতির কিছু বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির বিষয়েও রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কমিশন গঠন করে থাকেন। এ ছাড়া রাজ্যগুলির কাছে প্রয়োজনমতো প্রশাসনিক নির্দেশ পাঠানোর ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতির রয়েছে।

[2] আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা: ভারতের রাষ্ট্রপতি আইনসভা বা সংসদের

অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হন। রাষ্ট্রপতির আইন সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

i. অধিবেশন সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয়কক্ষের অধিবেশন

আহ্বান করতে কিংবা অধিবেশন স্থগিত রাখতে পারেন। রাষ্ট্রপতি লোকসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তা ভেঙে দিতেও পারেন। তবে সংসদের অধিবেশন আহ্বান বা স্থগিত রাখার বিষয়ে অথবা লোকসভা ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন। অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিল অনুমোদনের ক্ষেত্রে সংসদের উভয়কক্ষের মতবিরোধে অচলাবস্থা সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রপতি যৌথ অধিবেশন ডেকে তার অবসান ঘটাতে পারেন। সংসদের কোনো সদস্যের যোগ্যতার বিষয়ে প্রশ্ন উঠলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের কাছে সে-সম্পর্কে রিপোর্ট চাইতে পারেন এবং কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

ii. মনোনয়ন প্রদান: সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতি ১২ জন কৃতী ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারেন। এ ছাড়া লোকসভায় ইঙ্গ-ভারতীয় (Anglo-Indian) সম্প্রদায়ের যথোচিত সংখ্যক প্রতিনিধি নেই মনে করলে, রাষ্ট্রপতি ওই সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে অনধিক দুজনকে লোকসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত করতে পারেন।

iii. যৌথ অধিবেশনে ভাষণদান: সংসদের যে-কোনো কক্ষে বা উভয়কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। তাঁর এই ভাষণে মন্ত্রীসভার নীতি ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তা ছাড়া কোনো বিল বা অন্য কোনো বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বার্তা (Message) পাঠাতে পারেন।

iv. বিলে সম্মতিদান: উভয়কক্ষে পাস হওয়া প্রতিটি বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া আইনে পরিণত হতে পারে না। অর্থবিল ছাড়া অন্য যে-কোনো বিলে রাষ্ট্রপতি সম্মতি দিতে পারেন বা নাও পারেন অথবা বিলটিকে পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদের কাছে ফেরত পাঠাতে পারেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিলটি সংসদের উভয়কক্ষে পুনরায় দ্বিতীয়বার গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য থাকেন (১১১ নং ধারা)। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সংবিধানের সংশোধন সংক্রান্ত কোনো বিল সংসদের উভয়কক্ষে গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি তাতে অসম্মতি জানাতে পারেন না। সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্য আইনসভায় পাস হওয়া বিল রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হয়। রাজ্যপাল এক্ষেত্রে বিলটিতে অনুমোদন না দিয়ে রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য তা পাঠিয়ে দিতে পারেন (২০১ নং ধারা)।

v. অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি: সংসদের অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন বিশেষ প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন। এসব অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স সংসদ আইনের সমান কার্যকরী হয়।

vi. আগাম সম্মতিদান: কয়েকটি বিল পার্লামেন্টে পেশ করার আগে রাষ্ট্রপতির সম্মতির প্রয়োজন হয়। সেগুলি হল নতুন রাজ্য গঠন, রাজ্যের নাম ও সীমানা পরিবর্তন সংক্রান্ত বিল ইত্যাদি। কয়েকটি প্রতিবেদন বা রিপোর্ট রাষ্ট্রপতির নির্দেশে সংসদে পেশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে

বাজেট ও অতিরিক্ত বাজেট, অর্থ কমিশনের সুপারিশ, রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের রিপোর্ট প্রভৃতি।

[3] অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতির অর্থ-সংক্রান্ত ক্ষমতাগুলি হল-

i. অর্থবিল অনুমোদনা: রাষ্ট্রপতির পূর্ব সুপারিশ ছাড়া কোনো অর্থবিল লোকসভায় উত্থাপন করা যায় না। ঋণ সংক্রান্ত রাজস্ব প্রস্তাব বা সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপনের জন্যও রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।

ii. বাজেট প্রস্তাবনাা: প্রত্যেক আর্থিক বছরের জন্য সরকারের আনুমানিক আয়ব্যয়ের বিবরণী বা বাজেট অর্থমন্ত্রীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি সংসদে উত্থাপন করেন।

iii. আপৎকালীন ব্যয়নির্বাহা: আপৎকালীন ব্যয়নির্বাহের জন্য ভারতে যে আকস্মিক ব্যয়সংকুলান তহবিল (Contingency Fund of India) রয়েছে, তার দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে।

iv. অর্থ কমিশন গঠনা: কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে রাজস্ব বণ্টনের জন্য প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটি অর্থ কমিশন গঠন করার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতির রয়েছে।

[4] বিচার-সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাষ্ট্রপতির বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে-

i. বিচারপতি নিয়োগ: সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করার ক্ষমতা রয়েছে রাষ্ট্রপতির। সংসদের সুপারিশে এই বিচারপতিদের অপসারণ করার ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতির আছে।

ii. দণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষমা প্রদান: ফৌজদারি মামলায় দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখা বা হ্রাস করা অথবা দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদান করার ব্যাপারেও রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নিতে পারেন। রাষ্ট্রপতি মৃত্যু-দণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ক্ষমা প্রদান করতে বা মৃত্যুদণ্ড রদ করে অন্য দণ্ড দিতে পারেন।

[5] জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা: সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তিন

ধরনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন-

i. জাতীয় জরুরি অবস্থা (৩৫২ নং ধারা): রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র বিদ্রোহের ফলে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, তাহলে তিনি সমগ্র দেশে বা দেশের কোনো অংশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

ii. রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা (৩৫৬ নং ধারা): কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের প্রতিবেদন বা অন্য কোনো সূত্র থেকে পাওয়া সংবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে ওই রাজ্যে সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব নয়, সেক্ষেত্রে তিনি ওই রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থাজনিত জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন।

iii. আর্থিক জরুরি অবস্থা (৩৬০ নং ধারা): যদি রাষ্ট্রপতি মনে করেন যে ভারতের বা ভারতের কোনো অংশের আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম বিনষ্ট হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাহলে তিনি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।

[6] অন্যান্য ক্ষমতা: অন্যান্য ক্ষমতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রকৃত্যক কমিশনের সদস্যসংখ্যা ও সদস্যদের কার্যকাল ও চাকরির শর্তাবলি নির্ধারণ, কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংসদের সচিবালয়ের কর্মীদের নিয়োগ ও চাকরির শর্তাবলি নির্ধারণ, জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীসহ মন্ত্রীসভার নিয়োগ, তফশিলি অঞ্চল ও তফশিলি উপজাতি এবং অসমের তফশিলি অঞ্চলগুলির প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা, সুপ্রিমকোর্টের আদেশ বলবৎ করার জন্য নিয়মাবলি তৈরি করা ইত্যাদি।

উপসংহার: ভারতের সংসদীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লোকসভায় কোনো দল বা জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপতি যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তা তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতায় এক নতুন মাত্রা সংযোজিত করেছে।

প্রশ্ন 9 মন্ত্রীসভার সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা পর্যালোচনা করো।

উত্তর:  মন্ত্রীসভার সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে ডারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও গদমর্যাদা

ভারতের রাষ্ট্রপতির শাসনতান্ত্রিক পদমর্যাদার প্রশ্নটি নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যথেষ্ট মতানৈক্য লক্ষ করা যায়। অনেকে তাঁকে জাঁকজমকপূর্ণ সাক্ষীগোপাল (magnificent cipher) বা নামসর্বস্ব শাসক বলতে চান। আবার অনেকে তাঁকে প্রকৃত শাসক (real executive) হিসেবে অভিহিত করার পক্ষপাতী।

রাষ্ট্রপতিকে নামসর্বস্ব শাসক বলার যুক্তি

[1] সংসদীয় শাসনব্যবস্থা: ভারতে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা অনুসৃত হওয়ায় এখানে দেশের প্রকৃত শাসনক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভাকে দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৭৫(৩) নং ধারা অনুসারে, মন্ত্রীসভা তার সম্পাদিত কাজকর্মের জন্য রাষ্ট্রপতির বদলে লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকে। কাজেই তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান হলেও শাসন বিভাগের প্রধান নন।

[2] সাংবিধানিক স্বীকৃতি: সংবিধানের ৭৪ (১) নং ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতিকে তাঁর কাজকর্মে সাহায্য করা ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি মন্ত্রীসভা থাকবে। ৪৪তম সংবিধান সংশোধনী অনুসারে, রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার কোনো পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন, কিন্তু পুনর্বিবেচনার পর মন্ত্রীসভা যদি দ্বিতীয়বার একই পরামর্শ দেয় তাহলে মন্ত্রীসভার সেই পরামর্শ বা সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে রাষ্ট্রপতি বাধ্য থাকবেন। অনুরূপভাবে, রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের পাঠানো কোনো বিলে সম্মতি না দিয়ে বিলটিকে পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠালে সংশ্লিষ্ট বিলটি পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে পুনরায় গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি তাতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য থাকেন।

[3] জরুরি ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা: সংবিধানের ৪৪তম সংশোধনের মাধ্যমে

রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতাকে সংকুচিত করা হয়েছে। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভা বা ক্যাবিনেটের লিখিত সুপারিশ ছাড়া জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন না [৩৫২(৩) নং ধারা]। যে-কোনো ধরনের জরুরি অবস্থার ঘোষণার বিষয়টি একমাসের মধ্যে সংসদের উভয়কক্ষের উপস্থিত করতে হয়। এক্ষেত্রে ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের অনুমোদন প্রয়োজন তা না হলে ঘোষণাটি বাতিল হয়ে যায়।

[4] সামরিক ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা: রাষ্ট্রপতির সামরিক ক্ষমতা সংসদীয়

আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাঁর সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকেন।

[5] পরোক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা: রাষ্ট্রপতি জনগণের ভোটে সরাসরি

নির্বাচিত হন না। এই কারণে রাষ্ট্রপতি জনপ্রতিনিধিত্বের দাবি করতে পারেন না। অনেকে বলেন যে, রাষ্ট্রপতির পরোক্ষ নির্বাচনের সাংবিধানিক ব্যবস্থা এটা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে যে ভারতের সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রীসভা হল প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী, রাষ্ট্রপতি নন।

[6] স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অনুপস্থিতি: সংবিধান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে

রাজ্য প্রশাসনে রাজ্যপালের হাতে যেরকম ‘স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা’ ন্যস্ত রয়েছে, রাষ্ট্রপতির হাতে তেমন কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।

রাষ্ট্রপতিকে প্রকৃত শাসক বলার যুক্তি

[1] প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ-সম্পর্কিত বিষয়ক ক্ষমতা: সংবিধানের ৭৫(১) নং ধারা অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীপরিষদের নিয়োগকর্তা হলেন রাষ্ট্রপতি। ৭৫(২) নং ধারা অনুযায়ী, মন্ত্রীদের স্বপদে অধিষ্ঠিত থাকা | রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টির ওপর নির্ভরশীল। সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী,

রাষ্ট্রপতি লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বা সংখ্যাগরিষ্ঠ জোটের নেতা বা নেত্রীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। কিন্তু সংবিধানে এই সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া লোকসভায় কোনো দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রপতি স্ববিবেচনা অনুসারে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন।

[2] সাংবিধানিক স্বীকৃতি: সংবিধানের ৫৩(১) নং ধারায় কেন্দ্রীয়

সরকারের সমগ্র শাসনক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে বলা হয়েছে, তিনি নিজে বা তাঁর অধস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, এর অর্থ হল সংবিধান প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রপতির হাতে দেশের সমগ্র শাসনভার অর্পণ করেছে, মন্ত্রীসভার হাতে নয়।

[3] অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারির ক্ষমতা: সংসদের অধিবেশন বন্ধ

থাকাকালীন রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ বা ‘অর্ডিন্যান্স’ জারি করতে পারেন। এই অর্ডিন্যান্স আইনের মতো সমানভাবে কার্যকরী হয়। তবে অর্ডিন্যান্স জারির দিন থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে সেটিকে অনুমোদনের জন্য সংসদে পেশ করতে হয়। সংসদ অনুমোদন না দিলে সংশ্লিষ্ট অর্ডিন্যান্সটি বাতিল বলে গণ্য হয়। কাজেই রাষ্ট্রপতি অন্তত ছয় সপ্তাহের জন্য স্বেচ্ছায় প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনা করতে সক্ষম। এ ছাড়া সংবিধানে কোথাও বলা হয়নি যে, রাষ্ট্রপতি মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুসারে অর্ডিন্যান্স জারি করবেন বা করতে বাধ্য থাকবেন।

[4] নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি: ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের শাসনতান্ত্রিক প্রধান রাজা

বা রানির সঙ্গে যাঁরা ভারতের রাষ্ট্রপতির তুলনা করেন তাদের অভিমত যথার্থ নয় বলে অনেকে মনে করেন। যুক্তরাজ্যের রাজা বা রানির পদ বংশানুক্রমিক, অন্যদিকে ভারতের রাষ্ট্রপতি পাঁচ বছরের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য আইনসভার প্রতিনিধিদের দ্বারা সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত হন। কাজেই ব্রিটেনের রাজা বা রানির মতো ভারতের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে নিছক নিয়মতান্ত্রিক শাসক বলে অভিহিত করা ঠিক নয়।

[5] সাংবিধানিক সংকট নিরসনের ক্ষমতা: ভারতের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ত্রিশঙ্কু লোকসভার ক্রমবর্ধমান প্রবণতায় রাষ্ট্রপতির ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এই প্রসঙ্গে, ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে লোকসভায় আস্থাভোট গ্রহণের জন্য বাজপেয়ী সরকারকে রাষ্ট্রপতি কোচিরিল রামন নারায়ণনের নির্দেশ এবং আস্থাভোটে সরকার পরাজিত হওয়ার পর বিরোধীরা সরকার গঠনে ব্যর্থ হলে লোকসভা ভেঙে দিয়ে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্দেশ দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা যায়।

[6] সংবিধান রক্ষার দায়িত্ব: সংবিধানকে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে

শপথ নিতে হয় (৬০ নং ধারা)। এই ধারা অনুসারে, মন্ত্রীসভার কোনো পরামর্শকে অসাংবিধানিক মনে করলে রাষ্ট্রপতি তা গ্রহণ নাও করতে পারেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ, ১৯৯৭ এবং ১৯৯৮ সালে যথাক্রমে উত্তরপ্রদেশে ও বিহারে ৩৬৫ নং ধারা জারির জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সুপারিশের ঘটনা দুটি উল্লেখ করা যায়। তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি কে আর নারায়ণন এই দুটি ঘটনায় এক নজিরবিহীন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মন্ত্রীসভার সুপারিশ অনুমোদন না করে তা পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠিয়ে দেন। অনুরূপ দৃষ্টান্ত হিসেবে, ২০০৬ সালের মে মাসে রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম কর্তৃক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার ‘লাভজনক পদ’-সম্পর্কিত বিল পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনা উল্লেখ করা যায়।

উপসংহার: উপরোক্ত আলোচনার শেষে বলা যায়, ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নিছক নামসর্বস্ব শাসক বা জাঁকজমকপূর্ণ সাক্ষীগোপাল বলে অভিহিত করা যায় না। ভারতের রাষ্ট্রপতি সংবিধানের রক্ষাকর্তা ও জাতির প্রতীক। সাধারণত এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত হলেও লোকসভা নির্বাচনে কোনো দল বা জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হলে বা প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন হারালে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

প্রশ্ন 10 জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কে ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বিশ্লেষণ করো। অথবা, ভারতের রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতাগুলি আলোচনা করো। অথবা, ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরি ক্ষমতার বিবরণ দাও।

উত্তর: রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা ঘোষণা-সংক্রান্ত ক্ষমতা

জরুরি অবস্থা বলতে কী বোঝায় সে-সম্বন্ধে ভারতের সংবিধানে কোথাও কিছু বলা হয়নি। সংবিধানের ৩৬৬(১৮) নং ধারায় এই বিষয়ের প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে শুধু বলা হয়েছে, “Proclamation of Emergency means a Proc- lamation issued under Clause (1) of Article 352″। কে ভি রাও তাঁর Parliamentary Democracy of India শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেন যে, জরুরি অবস্থা হল এমন এক বিপজ্জনক পরিস্থিতি যেখানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া অনিবার্য হয়ে পড়ে। ভারতীয় সংবিধানের অষ্টাদশ অংশে ৩৫২-৩৬০ নং ধারার মধ্যে রাষ্ট্রপতিকে তিন শ্রেণির জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

সেগুলি হল- [1] জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা, [2] রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক

অচলাবস্থা-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা ঘোষণা, [3]

আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা।

[1] জাতীয় জরুরি অবস্থা: সংবিধানের ৩৫২ নং ধারায় রাষ্ট্রপতিকে

জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৪২ এবং ৪৪তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে নিশ্চিত বা সন্তুষ্ট হন যে যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা দেশের মধ্যে সশস্ত্র বিদ্রোহের ফলে সমগ্র ভারত বা ভারতের কোনো অংশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে বা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তাহলে তিনি সমগ্র ভারত বা ভারতের কোনো অংশে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তবে একমাত্র কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার লিখিত সুপারিশ ছাড়া রাষ্ট্রপতি এই ধরনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন না। ৪৪তম সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী, বর্তমানে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা সম্পর্কে রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যায়। জরুরি অবস্থা ঘোষণার একমাসের মধ্যে সংসদের কাছে তা অনুমোদনের জন্য পেশ করতে হয়। জাতীয় জরুরি অবস্থার অনুমোদন-সম্পর্কিত বিধিব্যবস্থার বিষয়ে সংবিধানে বলা হয়েছে যে, পার্লামেন্টের উভয়কক্ষে জরুরি অবস্থার ঘোষণাকে মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠের এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যের দুই- তৃতীয়াংশের দ্বারা সমর্থিত হতে হবে [৩৫২(৬) নং ধারা]। ভারতে এযাবৎ মোট তিনবার জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়।

প্রতিক্রিয়া: জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণার ফলে দেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থার ব্যাপক রদবদল ঘটে যায়। এসময়-

i. সংসদ রাজ্য-তালিকাভুক্ত যে-কোনো বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে।

ii. লোকসভার কার্যকাল আরও একবছর বাড়ানো যায়।

iii. প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার ব্যাপারে কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে পারে। রাজ্যগুলি এসব নির্দেশ মানতে বাধ্য থাকে।

iv. রাজস্ব বণ্টন-সংক্রান্ত বিধিব্যবস্থাও রাষ্ট্রপতির নির্দেশ অনুযায়ী পরিবর্তন করা যেতে পারে।

v. মৌলিক অধিকারের মধ্যে ১৯(১) নং ধারায় উল্লিখিত স্বাধীনতার অধিকারকে স্থগিত রাখা এবং ৩২ ও ২২৬ নং ধারা অনুযায়ী শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার অধিকারকে বাতিল করা যায়। তবে বর্তমানে সংবিধানের ৪৪তম সংশোধনী অনুযায়ী ২০ এবং ২১ নং ধারায় উল্লেখিত জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকারকে জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় কোনোভাবেই ক্ষুণ্ণ করা যায় না।

[2] রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা-সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা: সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারা অনুসারে, কোনো অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের রিপোর্টের ভিত্তিতে বা অন্য কোনোভাবে রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে নিশ্চিত বা সন্তুষ্ট হন যে, সেই রাজ্যের প্রশাসন সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না, তাহলে তিনি শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্তমানে ৪৪তম সংবিধান সংশোধনী অনুসারে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষণার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যায়। কোনো রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা ঘোষিত হলে আট সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঘোষণাটিকে সংসদের উভয়কক্ষে অনুমোদন লাভ করতে হয়। নচেৎ ঘোষণাটি বাতিল বলে গণ্য হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের বোম্মাই মামলার রায় অনুযায়ী ৩৫৬ নং ধারার প্রয়োগ-সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ আট সপ্তাহের মধ্যে সংসদের উভয়কক্ষে অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেওয়া যাবে না। সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারা এযাবৎ বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শতাধিকবার প্রয়োগ করা হয়েছে।

প্রতিক্রিয়া: কোনো রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বা রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করা হলে রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে স্থানান্তরিত হয়। রাষ্ট্রপতি রাজ্য আইনসভার যাবতীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীয় আইনসভা (সংসদ) বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিতে পারেন। তিনি রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দিতে বা স্থগিত রাখতেও পারেন।

[3] আর্থিক জরুরি অবস্থা: সংবিধানের ৩৬০ নং ধারায় রাষ্ট্রপতিকে আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি যদি এই মর্মে নিশ্চিত হন যে, সমগ্র ভারত বা ভারতের কোনো অংশের আর্থিক স্থায়িত্ব বা সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে, তাহলে তিনি এই ঘোষণা করতে পারেন। এখানেও রাষ্ট্রপতির সন্তুষ্টি চূড়ান্ত বলে বিবেচিত নয়। আর্থিক জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণাটিকে আট সপ্তাহের মধ্যে সংসদের উভয়কক্ষের অনুমোদন লাভ করতে হয়।

প্রতিক্রিয়া: আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে রাজ্যগুলির যাবতীয় আর্থিক বিষয়ে কেন্দ্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্থিক ব্যাপারে কেন্দ্রের নির্দেশ রাজ্যগুলিকে মেনে চলতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত ভারতে আর্থিক জরুরি অবস্থা একবারও ঘোষিত হয়নি।

উপসংহার: তত্ত্বগতভাবে জরুরি অবস্থা ঘোষণা সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে থাকলেও বাস্তবে কিন্তু প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা এ ব্যাপারে প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী। জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এককেন্দ্রিক চেহারা নেয়। রাজ্যগুলির স্বাতন্ত্র্য বিনষ্ট হয়। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। জরুরি অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার এই অপব্যবহার রোধ করার জন্যই সংবিধান সংশোধন করা হয় (৪৪তম)। তার ফলে বর্তমানে সংসদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অনুমতি ছাড়া কোনোক্রমেই জরুরি অবস্থা দীর্ঘদিন জারি করে রাখা যায় না। এই ব্যবস্থাকে একটি গণতান্ত্রিক রক্ষাকবচ বলে অনেকে মনে করেন।

প্রশ্ন 11 সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো-ভারতের উপরাষ্ট্রপতি।

উত্তর:  ভারতের উপরাষ্ট্রপতি

যোগ্যতা

ভারতীয় সংবিধানের ৬৩ নং ধারা অনুযায়ী, পদমর্যাদার দিক থেকে রাষ্ট্রপতির ঠিক পরেই উপরাষ্ট্রপতির পদ তৈরি করা হয়েছে। উপরাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীর যোগ্যতা সম্বন্ধে সংবিধানের ৬৬ নং ধারায় বলা হয়েছে যে উপরাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থীকে-

i. অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে,

ii. অন্ততপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে,

iii. রাজ্যসভায় সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাসম্পন্ন হবে,

iv. কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকার অথবা এই দুটি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো স্থানীয় বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অধীন কোনো লাভজনক পদে নিযুক্ত থাকতে পারবে না,

V. ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের আইন অনুসারে পদপ্রার্থীর নির্বাচনে প্রার্থীর নাম কমপক্ষে ৫ জন নির্বাচক কর্তৃক প্রস্তাবিত এবং ৫ জন কর্তৃক সমর্থিত হতে হবে।

এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সংসদের যে-কোনো কক্ষের বা রাজ্য আইনসভার যে-কোনো সদস্য উপরাষ্ট্রপতির পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন; তবে দায়িত্বভার গ্রহণের পর তাঁকে আইনসভার পদটি ছেড়ে দিতে হয়।

নির্বাচন

রাষ্ট্রপতির মতো উপরাষ্ট্রপতিও একটি নির্বাচকমণ্ডলী (Electoral College) কর্তৃক নিযুক্ত হন। পার্লামেন্টের দুটি কক্ষের সদস্যদের নিয়ে এই নির্বাচক সংস্থা গঠিত হয়। একক হস্তান্তরযোগ্য সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে গোপন ভোটের মাধ্যমে উপরাষ্ট্রপতিকে নির্বাচিত করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টের মনোনীত সদস্যরা অংশ নিতে পারেন না কিন্তু উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের নির্বাচিত ও মনোনীত, সমস্ত সদস্যরা অংশ নিতে পারেন।

কার্যকাল ও অপসারণ

উপরাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর। তিনি অবশ্য পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন। নির্ধারিত কার্যকাল শেষ হওয়ার আগে উপরাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন অথবা তাঁকে পদচ্যুতও করা যায়। উপরাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার জন্য ‘ইমপিচমেন্ট’ পদ্ধতির প্রয়োজন হয় না। তাঁকে পদচ্যুত করার জন্য ১৪ দিন আগে রাজ্যসভায় নোটিশ দিতে হয়। উপরাষ্ট্রপতির পদচ্যুতির বিষয়টি প্রস্তাবের আকারে রাজ্যসভায় উত্থাপন করতে হয়। প্রস্তাবটি যদি রাজ্যসভায় মোট সদস্যদের অধিকাংশের ভোটে গৃহীত হয় এবং লোকসভা যদি প্রস্তাবটিতে সম্মতি জানায়, তাহলে উপরাষ্ট্রপতি পদচ্যুত হন। ৪৪তম সংবিধান সংশোধন অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো বিরোধ বা বিতর্কের সৃষ্টি হলে সুপ্রিমকোর্ট তার নিষ্পত্তি করবে। সংবিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বেতন

সংশোধিত বেতন হার অনুযায়ী বর্তমানে উপরাষ্ট্রপতি তাঁর বেতন এবং অন্যান্য ভাতা পান। তবে উপরাষ্ট্রপতি যখন অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির কার্যভার পরিচালনা করেন, তখন তিনি রাষ্ট্রপতির প্রাপ্য বেতন, ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধাদি পেয়ে থাকেন।

ক্ষমতা ও পদমর্যাদা

সংবিধানে উপরাষ্ট্রপতিকে পদাধিকারবলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বা সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। বস্তুত, রাজ্যসভায় সভাপতিত্ব করাই হল উপরাষ্ট্রপতির প্রধান কাজ। এ ছাড়া রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, পদচ্যুতি বা পদত্যাগ ঘটলে উপরাষ্ট্রপতি অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতি-পদের কার্যভার চ্যুতি বা পদত্যাপারেন। রাষ্ট্রপতি অসুস্থ হলে বা অনুপস্থিত থাকলে বা অন্য কোনো কারণে কর্মক্ষম না হলে উপরাষ্ট্রপতিকে অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িানো কারণেরতে হয়। কার্যনির্বাহী রাষ্ট্রপতি (Acting President) রূপোয়িত্ব পালন করতে সময় উপরাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রপতির পদমর্যাদা ভোগ করে থাকেন। রাষ্ট্রপতির যাবতীয় ■ ক্ষমতা তিনি প্রয়োগ করতে পারেন। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে জাকির হোসেনের মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে ফখরুদ্দিন আলি আহমেদের মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বি ডি জাতি

এস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির কার্যভার পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে রাষ্ট্রপতি জৈল সিং চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গেলে উপরাষ্ট্রপতি হিদায়েতুল্লা অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

সংবিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক দায়িত্ব দুটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ

প্রথমত, রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসেবে, দ্বিতীয়ত অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, ভারতের উপরাষ্ট্রপতিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপরাষ্ট্রপতির মর্যাদা প্রদান করা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, পদত্যাগ বা পদচ্যুতি ঘটলে উপরাষ্ট্রপতি অস্থায়ীভাবে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন না; তিনি রাষ্ট্রপতির পদে উন্নীত হন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডির মৃত্যুর পর তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি জনসন রাষ্ট্রপতির পদে উন্নীত হন। অনেকের মতে, ভারতীয় উপরাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক গুরুত্ব অত্যন্ত সীমিত। তবে উপরাষ্ট্রপতির পদ অনেক সময় রাষ্ট্রপতি-পদে আসীন হওয়ার একটা অগ্রণী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ ড. রাধাকৃয়ণ, জাকির হোসেন, ভি ভি গিরি এবং কে আর নারায়ণনের কথা বলা যায়। তা ছাড়া পূর্বে পদমর্যাদার তালিকায় (Table of precedence) উপরাষ্ট্রপতি তৃতীয় স্থানে ছিলেন। প্রথমে রাষ্ট্রপতি, তারপর প্রধানমন্ত্রী এবং তারপরে উপরাষ্ট্রপতির স্থান ছিল। বর্তমানে পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে রাষ্ট্রপতির পরেই উপরাষ্ট্রপতিকে দ্বিতীয় স্থানে উন্নীত করা হয়েছে। রাজ্যসভার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে উপরাষ্ট্রপতির বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সাম্প্রতিককালে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের উপরাষ্ট্রপতির পরিচিতি ও পদমর্যাদা নানান দেশে তাঁর শুভেচ্ছা সফরের সাহায্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপরাষ্ট্রপতি এই ধরনের সফরে দেশের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন।

প্রশ্ন 12 রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি এবং পদমর্যাদা আলোচনা করো। অথবা, ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা পর্যালোচনা করোঅথবা, অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো। অথবা, ভারতের যে-কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো।

উত্তর: রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

ভারতের রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মতো সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপাল রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান। রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন- [1] শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা, [2] আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা, [3] অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা, [4] বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা এবং [5] স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা।

[1] শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা: সংবিধানের ১৫৪(১) নং ধারা অনুসারে

i. রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত সমস্ত ক্ষমতা তত্ত্বগতভাবে রাজ্যপালের হাতে রয়েছে। 1. রাজ্যের সমস্ত প্রশাসনিক কাজকর্ম তাঁর নামে সম্পাদিত হয়।

ii. রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন প্রণয়ন করার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।

iii. রাজ্যপালের শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হল তাঁর নিয়োগ- সম্পর্কিত ক্ষমতা। রাজ্যপাল এই ক্ষমতাবলে রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা জোটের নেতা অথবা নেত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন। পরে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শমতো অন্য মন্ত্রীদেরও তিনি নিয়োগ করেন। মুখ্যমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীদের পদচ্যুত করার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে। এ ছাড়া রাজ্যের মহাধিবক্তা (Advocate General), রাজ্য- জনপালন কৃত্যক কমিশনের সদস্য প্রভৃতি উচ্চপদস্থ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের রাজ্যপাল নিয়োগ করে থাকেন।

iv. রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বলে মনে করলে রাজ্যপাল ৩৫৬ ধারা জারি করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করতে পারেন।

v. রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য বা চ্যান্সেলার হিসেবে রাজ্যপালের একটি স্বতন্ত্র ভূমিকা রয়েছে।

[2] আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্য আইনসভার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গরূপে রাজ্যপাল যে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী সেগুলি হল-

i. রাজ্য আইনসভার অধিবেশন আহ্বান করা বা অধিবেশন স্থগিত রাখার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।

ii. রাজ্য বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে।

iii. রাজ্য আইনসভায় গৃহীত কোনো বিল রাজ্যপালের সম্মতি ছাড়া আইনে পরিণত হতে পারে না।

iv. অর্থবিল ছাড়া অন্যান্য বিলকে তিনি রাজ্য আইনসভায় পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন।

v. এ ছাড়া রাজ্য আইনসভা কর্তৃক অনুমোদিত কিছু বিলের ক্ষেত্রে তিনি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারবিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন।

vi. রাজ্য আইনসভার অধিবেশন বন্ধ থাকাকালীন জরুরি প্রয়োজনে রাজ্যপালের অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স জারি করার ক্ষমতা রয়েছে।

vii. রাজ্যপালের আইন সংক্রান্ত ক্ষমতার মধ্যে অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলি হল-দ্বিকক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভার ক্ষেত্রে উচ্চকক্ষে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, সমাজসেবায় খ্যাতিমান ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেওয়া; নিম্নকক্ষ বা বিধানসভায় প্রয়োজনে ইঙ্গ-ভারতীয় সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধিকে মনোনয়ন দেওয়া; দ্বিকক্ষবিশিষ্ট রাজ্য আইনসভায় যুগ্ম অধিবেশন আহ্বান করা; রাজ্য আইনসভায় বাণী প্রেরণ করা; প্রতি বছর রাজ্য আইনসভার প্রথম অধিবেশনের শুরুতে ভাষণ দেওয়া; রাজ্য- জনপালন কৃত্যক পরিষদ, অডিটর জেনারেল প্রভৃতি সংস্থার বার্ষিক রিপোর্ট বিচারবিবেচনা করা ইত্যাদি।

[3] অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্যপালের অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্য বিধানসভায় বাজেট বা অর্থবিল পেশ করার আগে অর্থমন্ত্রীকে রাজ্যপালের অনুমতি নিতে হয়। কোনো আকস্মিক দুর্যোগে রাজ্যে জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য রাজ্যপালের হাতে আকস্মিক ব্যয় তহবিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই তহবিল থেকে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যপালের রয়েছে।

[4] বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা: রাজ্য হাইকোর্টের বিচারপতিরা রাজ্যপালের

পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। রাজ্যের দেওয়ানি আদালতের বিচারপতি, অতিরিক্ত জেলা জজ, দায়রা জজ প্রমুখ রাজ্যপাল কর্তৃক নিযুক্ত হন। এ ছাড়া দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো অপরাধীর দণ্ডাদেশ হ্রাস, স্থগিত, এমনকি ক্ষমা প্রদান করার ক্ষমতাও রাজ্যপালের রয়েছে। তবে মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি এবং সামরিক আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তিদের রাজ্যপাল ক্ষমা প্রদান করতে পারেন না।

[5] স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা: নিজস্ব বিচারবিবেচনা অনুসারে রাজ্যপালের কাজ

করার ক্ষমতাকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বলা হয়। স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে রাজ্য মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করতে হয় না। এমনকি কোনো বিষয় স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অন্তর্গত কিনা সে প্রশ্নে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এক্ষেত্রে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যায় না [১৬৩(২) নং ধারা]। সংবিধানে যেসব ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলি হল-

i. পার্শ্ববর্তী কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসকের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অর্পিত হলে, রাজ্যপাল তা স্বাধীনভাবে পালন করতে পারেন,

ii. মণিপুরের পার্বত্য অঞ্চল ও সিকিমের ক্ষেত্রে রাজ্যপালকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে,

iii. নাগাল্যান্ডের রাজ্যপালকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হবে,

iv. মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের কয়েকটি অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য দুই রাজ্যের রাজ্যপালকে রাষ্ট্রপতি স্বতন্ত্র উন্নয়ন পর্ষদ গঠনের দায়িত্ব দিলে, সেই পর্ষদের পরিচালনা, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলসমূহের মধ্যে উন্নয়নমূলক ব্যয়ের ন্যায়সংগত বণ্টন প্রভৃতির দায়িত্ব রাজ্যপালকে পালন করতে হবে,

V. উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলির কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রশাসনিক বিষয়ে এবং অসম ও তার স্বয়ংশাসিত জেলা পরিষদের মধ্যে খনিজ সম্পদের লভ্যাংশ বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো বিরোধ দেখা দিলে রাজ্যপাল স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন,

vi. ১৯৮৬ সালের ৫৫তম সংবিধান সংশোধনী অনুযায়ী অরুণাচল প্রদেশের রাজ্যপালের সেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে।

রাজ্যপালের পদমর্যাদা

রাজ্যপাল যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক শাসক তাই তাঁর পদটিকে নেহাতই নামসর্বস্ব পদ বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, সংবিধানের কিছু ব্যবস্থার জন্য তাঁকে পুরোপুরি নিয়মতান্ত্রিক শাসক বলা চলে না। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ভোগ করে থাকেন যা তাঁকে শক্তিশালী প্রশাসকের ভূমিকায় অধিষ্ঠিত করেছে। এজন্য সংবিধান বিশেষজ্ঞরা তাঁকে প্রকৃত শাসনকর্তা বলে অভিহিত করেন। রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যাবলি বিশ্লেষণ করে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তিনি নিছক নিয়মতান্ত্রিক শাসক নন। রাজ্যপালের একটি দ্বৈত ভূমিকা রয়েছে। একদিকে তিনি রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান। আবার অন্যদিকে তিনি কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অধিকারী। তবে বিশেষ কয়েকটি ঘটনা বাদ দিলে দেখা যায়, ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে রাজ্যপালরা সাধারণভাবে নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধানের ভূমিকাই পালন করে চলেছেন।

প্রশ্ন 13. নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও ক্ষমতা আলোচনা করো। অথবা, অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপালের ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও ক্ষমতা

ভারতের রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রের মতো সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির মতো রাজ্যপালও নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান। সংবিধানের ১৫৩ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের জন্য একজন রাজ্যপাল নিযুক্ত হন। তবে দুই বা ততোধিক রাজ্যের জন্য একই ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করা যেতে পারে।

রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও ক্ষমতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে তাঁর নিয়মতান্ত্রিক ভূমিকার কথা তুলে ধরা যেতে পারে। রাজ্যপাল যেহেতু নিয়মতান্ত্রিক শাসক, তাই তাঁর পদটিকে নেহাত নামসর্বস্ব পদ বলে অনেকে অভিমত প্রকাশ করেন।

নিয়মতান্ত্রিক শাসক বলার কারণ

[1] রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুসারে ক্ষমতা প্রয়োগ: সংসদীয় প্রশাসনে রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শক্রমে রাজ্যপালকে তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীসভা রাজ্যপালের নামে রাজ্যের শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তা ছাড়া সংবিধানে একথা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে, রাজ্যপালকে পরামর্শ দান ও সাহায্য করার জন্য একটি মন্ত্রীসভা থাকবে। রাজ্যপাল এই সাংবিধানিক নির্দেশ অনুযায়ী চলতে বাধ্য।

[2] রাজ্য মন্ত্রীসভার দায়বদ্ধতা: সংবিধান অনুসারে রাজ্যের মন্ত্রীসভা তাদের সম্পাদিত কাজকর্মের জন্য রাজ্য বিধানসভার কাছে যৌথভাবে দায়বদ্ধ থাকে, রাজ্যপালের কাছে নয়। এ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায় যে রাজ্যপাল প্রকৃত শাসক নন, তিনি একজন নিয়মতান্ত্রিক শাসকমাত্র।

[3] মুখ্যমন্ত্রীর নিয়োগে আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা: নিয়োগ সংক্রান্ত ক্ষমতাবলে রাজ্যপাল, বিধানসভায় যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, তার নেতাকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত করে থাকেন। রাজ্যপালের এই ক্ষমতা নেহাতই আনুষ্ঠানিক।

[4] মন্ত্রীসভা বাতিলের নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা: মন্ত্রীসভাকে বাতিল করার যে ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে থাকে তাকেও তত্ত্বগত বলা হয়েছে। কারণ এক্ষেত্রেও রাজ্যপাল কতকগুলি নিয়ম অনুসরণ করেই কাজ করেন। বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তাদের গরিষ্ঠতা হারালে মন্ত্রীসভা পদচ্যুত হয়। অতএব, রাজ্য মন্ত্রীসভার টিকে থাকার বিষয়টি বিধানসভাতেই স্থির হয়ে যায়। সংবিধানের ১৬৪(১) নং ধারায় বলা হয়েছে, রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’র ওপর মন্ত্রীদের ক্ষমতাসীন থাকার বিষয়টি নির্ভরশীল। এই প্রসঙ্গে, ড বাবাসাহেব আম্বেদকরের বক্তব্য হল, এখানে ‘সন্তুষ্টি’ কথাটি দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থার স্বীকৃত নীতি অনুসারে ব্যবহৃত হয়েছে। আইনসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন যতদিন মন্ত্রীসভার প্রতি থাকবে, ততদিন মন্ত্রীরা ক্ষমতায় টিকে থাকবেন। সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন হারালে রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’ মন্ত্রীসভাকে ক্ষমতায় রাখতে পারে না।

[5] জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি: অনেকে মনে করেন, সংবিধান রচয়িতারা রাজ্যপালকে নিয়মতান্ত্রিক শাসক হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এই কারণে তিনি নির্বাচিত না হয়ে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন। তাই মন্ত্রীরা যেখানে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি, সেখানে রাজ্যপাল হলেন রাষ্ট্রপতির দ্বারা মনোনীত একজন ব্যক্তিমাত্র।

[6] স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা: রাজ্যপালের যে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা রয়েছে, সেক্ষেত্রেও তিনি একনায়কের মতো যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন না। আদালতের বিভিন্ন রায়ে একথা বলা হয়েছে। ১৯৫০ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে ঘোষণা করেন যে, রাজ্য মন্ত্রীসভার পরামর্শ ছাড়া স্বেচ্ছাধীনভাবে রাজ্যপালের কাজ করার ক্ষমতা নেই (The Governor under the present Constitution cannot act except in accordance with the advice of his ministers.)। গণপরিষদের সদস্যদের মধ্যে কৃয়মাচারি এবং মুন্সী প্রমুখ এই মতামত ব্যক্ত করেন। আম্বেদকরের বক্তব্য, রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা দায়িত্বশীল সংসদীয় ব্যবস্থায় কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না। সংবিধান বিশেষজ্ঞ এম ভি পাইলির মতে, এটা স্পষ্টভাবে বলা যেতে পারে যে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা বাস্তবে চরম ক্ষমতা হয়ে উঠতে পারে না। কারণ চরম স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা হল স্বৈরতন্ত্রের একটি উপাদান। রাজ্যপালকে যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে কাজ করতে হয়, তাই তিনি কোনো অবস্থাতেই একজন স্বৈরতান্ত্রিক হতে পারেন না।

প্রশ্ন 14. প্রকৃত শাসক হিসেবে রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও ক্ষমতার বিবরণ দাও।

উত্তর:  প্রকৃত শাসক হিসেবে রাজ্যপাল

সংবিধানের ১৫৪(১) নং ধারা অনুসারে রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা তত্ত্বগতভাবে রাজ্যপালের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি নিজে বা তাঁর অধস্তন কর্মীদের সাহায্যে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। আপাতদৃষ্টিতে রাজ্যপালকে নিয়মতান্ত্রিক শাসক বলে মনে হলেও অনেক সংবিধান বিশেষজ্ঞ তাঁকে প্রকৃত শাসক বলে অভিহিত করেছেন। এজন্য কতকগুলি সাংবিধানিক বিধিনিয়মের কথা তাঁরা তুলে ধরেন। এগুলি হল-

[1] রাজ্য প্রশাসনের সাংবিধানিক কর্তা: সংবিধানে এটা বলা হয়েছে যে, রাজ্যের প্রশাসনিক ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে ন্যস্ত রয়েছে। তিনি সরাসরি বা তাঁর অধস্তন কর্মচারীদের মাধ্যমে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। প্রয়োজনবোধে তিনি মন্ত্রীসভার সাহায্য ও পরামর্শ নিতে পারেন। সংবিধানের ১৫৪(১) নং ধারার এই বিধিতে রাজ্যপালকে রাজ্য প্রশাসনের কর্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

[2] শাসনকার্যে বাধ্যবাধকতার অনুপস্থিতি: ভারতীয় সংবিধানের ৪২তম সংশোধনী অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতিকে কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শক্রমে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে, অথচ রাজ্যে রাজ্যপালের শাসনকার্যে এ ধরনের কোনো বাধ্যবাধকতার ব্যবস্থা করা হয়নি। যদিও সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালকে সাহায্য ও পরামর্শদানের জন্য একটি মন্ত্রীসভা থাকে, কিন্তু মন্ত্রীদের পরামর্শ গ্রহণ করতে রাজ্যপাল বাধ্য নন। তা ছাড়া সাংবিধানিক বিধি থাকেন তাহলে সেই পরামর্শ কী ছিল, সেই সম্পর্কে আদালতে কোনো  তোলা যাবে না [১৬৩ (১) নং ধারা]।

[3] স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার প্রয়োগ: রাজ্যপালের হাতে যে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা আছে তা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই ক্ষমতা তাঁর নিজস্ব। স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার ক্ষেত্রগুলিতে তিনি মন্ত্রীসভার সঙ্গে পরামর্শ করেন না। তা ছাড়া স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা নিয়েও কোনো আইনি প্রশ্ন তোলা যায় না। সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলে উল্লিখিত কয়েকটি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ছাড়াও আরও অনেক বিষয়ে রাজ্যপালের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের অবকাশ আছে। এর মধ্যে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ ও অপসারণ, বিধানসভা ভেঙে দেওয়া, রাজ্যের সাংবিধানিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত রিপোর্ট, রাজ্য বিধানসভার বিল রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য প্রেরণ, রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি নির্দেশ, রাজ্য প্রশাসন ও আইন-সম্পর্কিত বিষয়ে রিপোর্ট পেশ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি নির্দেশ প্রভৃতি।

[4] মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য মন্ত্রীসভার নিযুক্তি: বিধানসভায় কোনো দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলে রাজ্যপাল তাঁর স্ববিবেচনা অনুযায়ী এমন কোনো সদস্যকে মুখ্যমন্ত্রী পদে নিযুক্ত করতে পারেন যাঁর পক্ষে অধিকাংশ সদস্যের সমর্থন আদায় করা সম্ভব। ১৯৮২ সালে হরিয়ানায় বিধানসভা নির্বাচনে কোনো দল এককভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। এই অবস্থায় রাজ্যপাল কংগ্রেস (আই) দলের নেতাকে মন্ত্রীসভা গঠনের সুযোগ দেন। সম্প্রতি ২০০৫ সালের মার্চ মাসে ঝাড়খন্ড রাজ্যের ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস-মুক্তিমোর্চা জোটের নেতা শিবু সোরেনকে মন্ত্রীসভা গঠনের জন্য রাজ্যপাল আহ্বান জানান। অনুরূপভাবে, ২০০৫ সালে গোয়া বিধানসভায় প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও রাজ্যপাল কংগ্রেস দলকে সরকার গড়তে ডেকে পাঠান।

[5] রাজ্য মন্ত্রীসভার কার্যকাল: সংবিধান অনুসারে রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’র ওপর মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য মন্ত্রীসভার কার্যকাল নির্ভরশীল। রাজ্যপাল তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজ্য মন্ত্রীসভাকে বাতিল করে দিয়েছেন-এই ধরনের বহু নজির রয়েছে। তবে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভজন কোনো মন্ত্রীসভাকে রাজ্যপাল এভাবে বাতিল করতে পারেন না।

[6] রাষ্ট্রপতির কাছে বিধানসভার বিল প্রেরণ: বিধানসভার বিল সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে রাজ্যপাল তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনার জন্য পাঠিয়ে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি রাজ্য মন্ত্রীসভার সঙ্গে কোনোরকম পরামর্শ করেন না। ১৯৫৪ সালে কেরল রাজ্য বিধানসভায় গৃহীত শিক্ষা বিলটি রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী নাম্বুদিরিপাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠিয়ে দেন। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৬ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় গৃহীত ১৩টি বিল রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেন।

[7] রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির সুপারিশ: রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার জন্য সুপারিশ করতে পারেন রাজ্যপাল। এই উদ্দেশ্যে রাজ্যের সাংবিধানিক অচলাবস্থা-সম্পর্কিত রিপোর্টটিও রাজ্যপাল তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে মন্ত্রীসভাকে না জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ৩৫৬ নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি হয়। রাজ্যপালের সুপারিশের ভিত্তিতে রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির বহু নজির ভারতের সাংবিধানিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়। ১৯৫১ সালের ২০ জুন থেকে আজ অবধি শতাধিকবার ৩৫৬ নং ধারা জারি হওয়ার যে নজির রয়েছে, তার মধ্যে অধিকাংশই শুধুমাত্র রাজ্যপালের সুপারিশের ভিত্তিতে ঘটেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৯৪ সালের এস. আর. বোম্মাই বনাম ভারত সরকার মামলার ঐতিহাসিক রায়ের পরবর্তী পর্যায়ে বর্তমানে ৩৫৬ নং ধারা জারি করে অঙ্গরাজ্যগুলির সরকারকে বরখাস্ত করা অথবা বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের প্রদত্ত এই রায় অনুসারে, ৩৫৬ নং ধারা প্রয়োগ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশ সংসদের । দুটি কক্ষের দ্বারা ৮ সপ্তাহের মধ্যে অনুমোদন করাতে হবে এবং অনুমোদিত না – হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজ্যে বিধানসভা ভাঙা যাবে না। রাষ্ট্রপতির শাসন জারির গোটা বিষয়টিই বর্তমানে আদালতের বিচারযোগ্য বিষয়। রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার বিষয়টি আদালতের বিচারে অবৈধ বিবেচিত হলে রাজ্য মন্ত্রীসভা ও রাজ্য বিধানসভাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার অধিকার রয়েছে আদালতের। সুপ্রিমকোর্টের এই গুরুত্বপূর্ণ রায়ের পর ৩৫৬ নং ধারার অপব্যবহার অনেকটা প্রতিহত হয়েছে। দৃষ্টান্তস্বরূপ ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিহারে রাবড়ি দেবীর সরকারকে বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি এবং পরে পার্লামেন্টে বিশেষত রাজ্যসভায় প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে ৮ সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি অনুমোদিত না হওয়ার আশঙ্কায় শেষপর্যন্ত রাষ্ট্রপতির শাসন প্রত্যাহার করে নিয়ে রাবড়ি দেবীর সরকারের পুনর্বহালের ঘটনাটি উল্লেখ করা যায়।

[৪] রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন আহ্বানে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা: রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন আহ্বান করার ব্যাপারেও রাজ্যপাল তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। ১৯৭১ সালে ওড়িশায় সরকারের প্রতি সহযোগী দলের সমর্থন প্রত্যাহারের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী আর এন সি দেওকে রাজ্যপাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ দিতে বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেন, অথচ এই ধরনের একই পরিস্থিতিতে হরিয়ানায় মুখ্যমন্ত্রী রাও বীরেন্দ্র সিংকে শক্তিপরীক্ষার কোনো সুযোগই রাজ্যপাল দেননি।

[9] রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্থাগিত রাখার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা: রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখার ব্যাপারেও রাজ্যপাল তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল কে সি রেড্ডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো মিশ্র মন্ত্রীসভাকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন।

উপসংহার: রাজ্যপালের পদমর্যাদা ও ক্ষমতার ব্যাপারে উপরোক্ত দুটি দিক বিশ্লেষণ করে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তিনি একেবারে নিছক নিয়মতান্ত্রিক শাসক নন। রাজ্যপালের একটি দ্বৈত ভূমিকা রয়েছে। একদিকে তিনি রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান, আবার অন্যদিকে তিনি স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার অধিকারীরূপে কেন্দ্রের প্রতিনিধি। তবে বিশেষ কয়েকটি ঘটনা বাদ দিলে ভারতীয় সংবিধানের ইতিহাসে বিগত দশকগুলিতে রাজ্যপালগণ মোটামুটি নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধানের ভূমিকা পালন করে চলেছেন, এটা বলা যায়।

প্রশ্ন 15. রাজ্যপালের সঙ্গে মন্ত্রীপরিষদের সম্পর্কের মূল্যায়ন করো। অথবা, ভারতের কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর মন্ত্রীপরিষদের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: রাজ্যপালের সঙ্গে মন্ত্রীপরিষদের সম্পর্ক

সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামো কেন্দ্রের মতো ভারতীয় অঙ্গরাজ্যগুলিতেও প্রবর্তিত হয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান হলেন রাজ্যপাল। প্রকৃত শাসনক্ষমতা মন্ত্রীসভার হাতে ন্যস্ত রয়েছে। সংবিধানের ১৬৩(১) নং ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রীসভা থাকবে। রাজ্যের প্রশাসন পরিচালনায় মন্ত্রীসভা রাজ্যপালকে পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করবে।

[1] মন্ত্রীসভা গঠন: সংবিধানের ১৬৪ নং ধারায় রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য মন্ত্রীসভার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কতকগুলি নির্দেশ উল্লিখিত হয়েছে। রাজ্যপাল রাজ্য বিধানসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদের নিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু বিধানসভায় কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে, সেক্ষেত্রে রাজ্যপালের স্ববিবেচনা অনুসারে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। ১৯৫৭ সালে কেরলে, ১৯৮২ সালে হরিয়ানায়, ১৯৯৭ সালে উত্তরপ্রদেশে, ২০০৫ সালে

ঝাড়খণ্ডে এবং গোয়ায় এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল মন্ত্রীসভা গঠনে স্ববিবেচনা প্রয়োগ করেন।

[2] রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’ এবং মন্ত্রীসভার কার্যকাল: সংবিধানের ১৬৪(১) নং ধারায় বলা হয়েছে, মন্ত্রীসভার কার্যকালের মেয়াদ রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’র ওপর নির্ভর করবে (… “The Ministers shall hold office during the pleasure of the Governor.”)। ড বাবাসাহেব আম্বেদকরের অভিমত হল, সংসদীয় শাসনব্যবস্থার স্বীকৃত মৌল নীতি অনুযায়ী ‘সন্তুষ্টি কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। বস্তুতপক্ষে, রাজ্য বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের সমর্থন না থাকলে রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’ সেই মন্ত্রীসভাকে টিকিয়ে রাখতে পারে না। (‘During pleasure’ is always understood to mean that the ‘pleasure’ shall not continue not withstanding the fact that the ministry has lost the confidence of the majority.)।

রাজ্যপাল সংবিধানের ১৬৪ (১) নং ধারা অনুযায়ী তাঁর ‘সন্তুষ্টি’ প্রত্যাহার করে নিয়ে মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করতে পারেন কিনা সেসম্পর্কে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল ধরমবীর, অজয় মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভাকে রাজ্য বিধানসভায় শক্তিপরীক্ষার সুযোগ না দিয়ে বরখাস্ত করেছিলেন। অনুরূপভাবে, ১৯৭০ সালে উত্তরপ্রদেশের চরণ সিং মন্ত্রীসভার ক্ষেত্রে রাজ্যপাল গোপাল রেড্ডি মুখ্যমন্ত্রীকে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ না দিয়ে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করার সুপারিশ করেন। ১৯৮৪ সালে সিকিম, জম্মু ও কাশ্মীর এবং অন্ত্রের মন্ত্রীসভাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপাল প্রায় একইভাবে বরখাস্ত করেন।

১৯৬৭ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাকির হোসেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে লেখা এক চিঠিতে জানিয়েছিলেন, রাজ্যপাল যদি মনে করেন যে মন্ত্রীসভা বিধানসভার আস্থা হারিয়েছে, তাহলে মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করার জন্য রাজ্যপাল স্ববিবেচনা অনুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। ১৯৬৮ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এক রায়ে জানায় যে, রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার পরামর্শকে উপেক্ষা করতে পারেন এবং মন্ত্রীসভার ওপর থেকে তাঁর ‘সন্তুষ্টি’ প্রত্যাহার করে মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করতে পারেন। কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় অবশ্য এক্ষেত্রে বিতর্কের সমাপ্তি ঘটাতে পারেনি। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে এক রায়ে ঘোষণা করে যে, রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসক হলেন রাজ্যপাল। রাজ্যপালের কোনো ব্যক্তিগত ‘সন্তুষ্টি’ নেই। রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’ হল মন্ত্রীসভার সন্তুষ্টিবিশেষ। মন্ত্রীসভার সহযোগিতা ও পরামর্শের প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’-র বিষয়টি বিচার করতে হবে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনকাঠামোর মুখ্য রীতি অনুযায়ী রাজ্যপাল মন্ত্রীসভার সহযোগিতা ও পরামর্শ অনুযায়ী সমস্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, সারকারিয়া কমিশনের অভিমত হল, যতক্ষণ রাজ্য বিধানসভায় মন্ত্রীসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকে ততক্ষণ রাজ্যপাল মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করতে পারেন না।

(3) স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা: সাধারণভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় রাজ্যপালকে মন্ত্রীসভার পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হলেও, যেসব ক্ষেত্রে তাঁর স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা আছে সেখানে তিনি মন্ত্রীসভার পরামর্শ নিতে বাধ্য নন। প্রসঙ্গত বলা যায়, কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে রাজ্যপাল এই স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন সেই বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। এই ব্যাপারে রাজ্যপালের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিয়েছে সংবিধান [১৬৩ (২) নং ধারা]। তার ফলে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতার আওতায় রাজ্যপাল কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সাংবিধানিকভাবে তার বিরোধিতা করা যাবে না।

সংবিধানে রাজ্যপালকে আইন, শাসন, অর্থ প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে তা অনেকটাই তত্ত্বগত, বাস্তবে কার্যক্ষেত্রে এসব ক্ষমতা মন্ত্রীসভা ভোগ করে থাকে। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রাজ্যের আইন, প্রশাসন প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রকৃত ক্ষমতা রাজ্য মন্ত্রীসভা প্রয়োগ করে। এই বিষয়ে যাবতীয় দায়দায়িত্ব মন্ত্রীসভার ওপর বর্তায়। স্বাভাবিক অবস্থায় রাজ্যপালের যে এর ভূমিকা, তাতে তাঁকে নামসর্বস্ব সাক্ষীগোপাল ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। রাজ্যপালের এই ভূমিকা রাজ্যের সুষ্ঠু প্রশাসন পরিচালনার পক্ষে সহায়ক।

রাজ্য মন্ত্রীসভার প্রশাসন পরিচালনা সংক্রান্ত নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহ, আইন প্রণয়ন-সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রস্তাব রাজ্যপালকে জানানোর দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রীর। তা ছাড়া রাজ্যপাল যদি নিজে থেকে রাজ্য প্রশাসন বিষয়ে কিছু জানতে চান, তাহলে সেই বিষয়ে তাকে অবগত করানোর দায়িত্বও মুখ্যমন্ত্রীর ওপর বর্তায়। রাজ্যপাল অনেক সময় কোনো বিশেষ বিষয় বিচারবিবেচনার জন্য মন্ত্রীসভায় পেশ করার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে পারেন। রাজ্য মন্ত্রীসভার সঙ্গে রাজ্যপালের সংযোগের সেতু রচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

[4] সংসদীয় রীতিনীতি: বস্তুত, সংসদীয় শাসনব্যবস্থার রীতিনীতির ওপর রাজ্যপাল ও মন্ত্রীসভার সম্পর্ক দাঁড়িয়ে রয়েছে। স্বাভাবিক অবস্থায় রাজ্যপালকে মন্ত্রীসভার সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে চলতে হয়। এই পরামর্শ অগ্রাহ্য করে স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ করে রাজ্যপাল মন্ত্রীসভাকে বরখাস্ত করতে পারেন। এমনকি তিনি বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থাও করতে পারেন। কিন্তু সেই নির্বাচনে আগের শাসক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে মন্ত্রীসভা গঠন করলে রাজ্যপালের প্রতি জনগণের অনাস্থা প্রকাশিত হয়। এই ঘটনা রাজ্যপাল-পদের পক্ষে মর্যাদাহানিকারক। এই প্রসঙ্গে দৃষ্টান্তস্বরূপ, ১৯৮৪ সালের ১৬ আগস্ট অন্ধ্রের তৎকালীন রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রী এন টি রামা রাওকে হঠাৎ বরখাস্ত করে অগণতান্ত্রিকভাবে সংখ্যালঘু কংগ্রেস দলের সমর্থনপুষ্ট ভাস্কর রাওকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন। অবশ্য এক মাসের মধ্যে বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে না পারায়, রাজ্যপাল ১৯৮৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ভাস্কর রাওকে পদচ্যুত করতে এবং পুনরায় রামা রাওকে মন্ত্রীসভা গঠনের জন্য আহ্বান জানাতে বাধ্য হন।

[5] মনোনীত পদাধিকারী: অনেকের মতে, রাজ্যপাল ও মন্ত্রীসভার সম্পর্কের বিষয়ে সংবিধানের ১৬৪ (১) নং ধারা এবং ১৬৪ (২) নং ধারা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৬৪(১) নং ধারায় যেমন রাজ্যপালের ‘সন্তুষ্টি’-র কথা বলা হয়েছে, পাশাপাশি ১৬৪(২) নং ধারায় রাজ্য বিধানসভার কাছে মন্ত্রীসভার যৌথ দায়বদ্ধতার নীতি ঘোষিত হয়েছে। সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে প্রকৃত ক্ষমতা অর্পিত থাকে। মন্ত্রীরা হলেন রাজ্যের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। অন্যদিকে, রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হয়ে আসেন, তাঁর মনোনয়নের সঙ্গে জনগণের নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এই কারণে রাজ্যপালকে জনপ্রতিনিধি বলা যায় না। সংসদীয় গণতান্ত্রিক প্রশাসনে মনোনীত পদাধিকারীর হাতে প্রকৃত ক্ষমতা থাকতে পারে না। বস্তুত, সংবিধান-প্রণেতারা রাজ্যপালের পদটিকে রাজ্যের নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধানের পদ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সংসদীয় শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুসারে, শাসনতান্ত্রিক প্রধান সর্বদা মন্ত্রীসভার পরামর্শমতো কাজ করবেন, এটাই প্রত্যাশা করা যায়। তা ছাড়া রাজ্যের প্রশাসনের দায়দায়িত্বের সবটাই মন্ত্রীসভার ওপর বর্তায়। রাজ্য প্রশাসনের কাজকর্মের জন্য রাজ্য মন্ত্রীসভাকে দায়ী করার অর্থ হচ্ছে, মন্ত্রীসভাকে প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। মন্ত্রীসভার ক্ষমতায় আসীন থাকার বিষয়টি, সংসদীয় রীতি অনুযায়ী, বিধানসভার সদস্যদের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল, রাজ্যপালের সন্তুষ্টির ওপর নয়। মন্ত্রীসভার সংখ্যাগরিষ্ঠতা যাচাই করার বিষয়টিও বিধানসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক, রাজ্যপালের অনুমানের ভিত্তিতে বিষয়টির নিষ্পত্তি হওয়া কাম্য নয়।

উপসংহার: সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রীসভার হাতে প্রকৃত ক্ষমতা ন্যস্ত রয়েছে। তত্ত্বগতভাবে রাজ্যপাল রাজ্য প্রশাসনের প্রধান হলেও, প্রকৃত ক্ষমতা তাঁর হাতে দেওয়া হয়নি। রাজ্যপাল একজন নিয়মতান্ত্রিক শাসক। মন্ত্রীসভার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সেভাবেই নির্ধারিত হয়।