WBCHSE Class 12 History Chapter 7 Solution | Bengali Medium

Class 12 History Solution

ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগ

1. MCQs Question Answer

1. ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের যে কলেজটিতে তাঁর বিখ্যাত ফালটন বক্তৃতা দেন, সেই কলেজটির নাম হল-

(A) ট্রিনিটি কলেজ

(B) ওয়েস্টমিনস্টার

(C) হার্ভার্ড

(D) ওয়েলিংটন

2. মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান, মি. এক্স ছদ্মনামে আমেরিকার যে পত্রিকায় তাঁর ‘বেষ্টনী তত্ত্ব’ প্রকাশ করেন সেই পত্রিকার নাম হল-

(A) ফরেন অ্যাফেয়ার্স

(B) দ্য ডন

(C) দ্য সানডে এক্সপ্রেস

(D) কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

3. ওয়ারশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়-

(A) ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে

(B) ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে

(C) ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে

(D) ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে

4. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাম্যবাদের প্রসার রোধের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি কার্যকর করে তা হল-

(A)  ট্রুম্যান নীতি

(B) কেন্নানের বেষ্টনী নীতি

(C) শক্তিসাম্য নীতি

(D) জোটনিরপেক্ষ নীতি

5. পটড্রাম সম্মেলনে যে সংকটের বীজ বোনা হয়, তা হল-

(A) সুয়েজ সংকট

(B) ভিয়েতনাম সংকট

(C) বার্লিন সংকট

(D) কঙ্গো সংকট

6. পট্সডাম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল-

(A) ১৯৪৩ সালে

(B) ১৯৪৪ সালে

(C) ১৯৪৫ সালে

(D) ১৯৪৬ সালে

7. বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা ঘটান-

(A) বুজভেল্ট

(B) ট্রুম্যান

(C) কেনেডি

(D) রেগন

8. Churchill’s Secret War- গ্রন্থটির রচয়িতা-

(A) মধুশ্রী মুখার্জী  

(B) চার্চিল

(C) গান্ধিজি

(D) আর. সি. মজুমদার

9. হ্যারি ট্রুম্যান ছিলেন মার্কিন-

(A) প্রধানমন্ত্রী

(B) অর্থমন্ত্রী

(C) রাষ্ট্রপতি

(D) কোনোটিই নয়

10. ফুলটন বক্তৃতা দিয়েছিলেন-

(A) চার্চিল

(C) স্ট্যালিন

(D) কেন্নান

11. জর্জ মার্শাল ছিলেন-

(A) মার্কিন প্রেসিডেন্ট

(B) মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব

(C) মার্কিন অর্থমন্ত্রী

(D) মার্কিন বাণিজ্য সচিব

12. বার্লিন অবরোধ শুরু হয়-

(A) ২৪ জুন, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে

(B) ২৪ জুন, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে

(C) ২৪ জুন, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে

(D) ২৪ জুন, ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে

13. বার্লিন অবরোধ প্রত্যাহৃত হয়-

(A) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে

(B) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে

(C) ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে

(D) ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ মে

14. যে দেশটি পূর্ব বা পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশের সড়কপথ অবরোধ করে সেটি হল-

(A) সোভিয়েত রাশিয়া

(B) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

(C) ফ্রান্স

(D) জাপান

15. বার্লিন প্রাচীর গড়া হয়েছিল-

(A) ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ আগস্ট

(B) ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ আগস্ট

(C) ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ১৩ আগস্ট

(D) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ আগস্ট

16. বার্লিন প্রাচীর ভাঙা হয়-

(A) ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে

(B) ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে

(C) ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে

(D) ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে

17. ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত-বিরোধী যে সামরিক চুক্তি হয়েছিল তা হল-

(A) ন্যাটো

(B) ব্রাসেল্স

(C) সিয়েটো

(D) ওয়ারশ

18. দুই জার্মানি পুনরায় ঐক্যবদ্ধ হয়-

(A) ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ অক্টোবর

(B) ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ অক্টোবর

(C) ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ অক্টোবর

(D) ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ৩ অক্টোবর

19. NATO গঠিত হয়-

(A) ১৯৪৮ খ্রি.

(B) ১৯৪৯ খ্রি.

(C) ১৯৫০ খ্রি.

(D) ১৯৫২ খ্রি.

20. ন্যাটো জোটের সদস্য ছিল না এমন একটি দেশ হল-

(A) ব্রিটেন

(B) ফ্রান্স

(C) ইটালি

(D) কিউবা

21. জার্মান ফেডারেল রিপাবলিক বলা হয় যে দেশকে তা হল-

(A) পূর্ব জার্মানি

(B) পশ্চিম জার্মানি

(C) জাপান

(D) ইটালি

22. কমিনফর্মে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল-

(A) ভারত

(B) পাকিস্তান

(C) শ্রীলঙ্কা

(D) যুগোশ্লাভিয়া

23. সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠন করে-

(A) ওপেক

(B) সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ

(C) জাতিসংগ

(D) কমিকন

24. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে সাম্যবাদের বিস্তার ঘটায়-

(A) সোভিয়েত ইউনিয়ন  

(B) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

(C) জার্মানি

(D) চিন

25. বুমানিয়ার একজন কৃষক নেতা ছিলেন-

(A) নগুয়েন আই কুয়োক

(B) আইওন মিহালেক

(C) আনোয়ার সাদাত

(D) মেনাচিম বেগিন

26. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন রাষ্ট্রপতি ছিলেন-

(A) উড্রো উইলসন

(B) হুভার

(C) রুজভেল্ট

(D) ট্রুম্যান

27. কোন্ রুশ রাষ্ট্রপ্রধানের আমলে রুমানিয়ায় রুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়-

(A) স্টালিন

(B) লেনিন

(C) কুশ্চেভ

(D) ব্রেজনেভ

28. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে চেকোশ্লোভাকিয়ার একজন কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন-

(A) ক্লিমেন্ট গটওয়াল্ড

(B) ভ্যাকলাভ নোসেক

(C) আলেকজান্ডার ডুবচেক

(D) গুস্তাভ হুসাক

29. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন-

(A) ক্লিমেন্ট গটওয়াল্ড

(B) গুস্তাভ হুসাক

(C) ভ্যাকলাভ নোসেক

(D) এডওয়ার্ড বেনেস

30 . দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর চেকোশ্লোভাকিয়ার রাষ্ট্রপতি হন-

(A) গুস্তাভ হুসাক

(B) ভ্যাকলাভ নোসেক

(C) ক্লিমেন্ট গটওয়াল্ড

(D) এডওয়ার্ড বেনেস

31 . পূর্ব ইউরোপের কোন্ দেশে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রত্যক্ষ মদত ছাড়াই রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ ও প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ঘটে?

(A) হাঙ্গেরি

(B) রুমানিয়া

(C) যুগোশ্লাভিয়া

(D) চেকোশ্লোভাকিয়া

32 . জার্মানির হাত থেকে মুক্তিলাভের পর স্বাধীনোত্তর যুগোশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হন-

(A) ইমরে নেগি

(B) মার্শাল জোসিপ ব্রোজ টিটো

(C) জর্জ. এফ. কেন্নান

(D) কেনেথ কাউন্ডা

33. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে কার নেতৃত্বে পূর্ব পোল্যান্ডে সোভিয়েতপন্থী সরকার গঠিত হয়?

(A) গোমুলকা

(B) বলেশলাভ বেরাট

(C) এডওয়ার্ড বেনেস

(D) ভ্যাকলাভ নোসেক

34. কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র সংকট শুরু হয়-

(A) ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে

(B) ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে

(C) ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে

(D) ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে

35. দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ছিলেন-

(A) হ্যারি ট্রুম্যান

(B) কেনেডি

(C) বুশ

(D) রোনাল্ড রেগন

36. কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল-

(A) আমেরিকা

(B) ব্রিটেন

(C) ফ্রান্স

(D) রাশিয়া

37. কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘কিউবা সংকটের’ অবসান ঘটান-

(A) মাও-সে-তুঙ

(B) স্টালিন

(C) কুশ্চেভ

(D) মলোটভ

38. ‘দিয়েন-বিয়েন-ফু’ ঘটনায় বিজয়ী ভিয়েতনাম সেনাপতি ছিলেন-

(A) ম্যাক আর্থার

(B) কিম উল সুং

(C) ড. সিংম্যান রি

(D) জেনারেল গিয়াপ

39. ইন্দোচিন সমস্যার সমাধানকল্পে কত খ্রিস্টাব্দে জেনেভা সম্মেলন বসেছিল?

(A) ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে

(B) ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে

(C) ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে

(D) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে

40. কোরিয়াকে যে অক্ষরেখা বরাবর ভাগ করা হয় সেটি হল-

(A) ৩৮°

(B) ৩০°

(C) ৪০°

(D) ৪১°

41. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উত্তর কোরিয়া বলতে কোন্ অঞ্চলকে বোঝানো হয়?

(A) ৩৮°  অক্ষরেখার দক্ষিণাংশকে

(B) ৩৮°  অক্ষরেখার উত্তরাংশকে

(C) ২২° অক্ষরেখার দক্ষিণাংশকে

(D) ২২° অক্ষরেখার উত্তরাংশকে

42. প্রজাতান্ত্রিক কোরিয়া (দক্ষিণ কোরিয়া) সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন-

(A) ড. সিংম্যান রি

(B) কিম উল সুপ্ত

(C) চিয়াং-কাই-শেক

(D) চৌ এন লাই

43. কার নেতৃত্বে উত্তর কোরিয়ায় সোভিয়েত অনুগামী একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়?

(A) চিয়াং-কাই-শেক

(B) ড. সিংম্যান রি

(C) কিম ইল সুঙ

(D) চৌ এন লাই

44. হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামবাসীরা কত বছর লড়াই চালানোর পর স্বাধীনতা লাভ করে-

(A) ২৫ বছর

(B) ৩০ বছর

(C) ৩৫ বছর

(D) ৪০ বছর

45. ভিয়েতমিন কে গঠন করেন?

(A) সুকর্ণ

(B) হো-চি-মিন

(C) ম্যাক আর্থার

(D) মাও-সে-তুঙ

46. ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির প্রতিবাদ হিসেবে গড়ে উঠেছিল- 

(A) সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন

(B) নিজোট আন্দোলন

(C) গণতান্ত্রিক আন্দোলন

(D) পুঁজিবাদী আন্দোলন

47. ঠান্ডা লড়াই-এর ক্ষেত্রে দুপক্ষের প্রধান শক্তিগুলি ছিল-

(A)  ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড

(B) সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

(C) গ্রেট ব্রিটেন ও জার্মানি

(D) জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

48. মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ, কেন্নান তার বেষ্টনী তত্ত্বে-

(A)  সোভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার তত্ত্ব পেশ করেন

(B) জার্মান প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার তত্ত্ব পেশ করেন

(C)  জাপানি প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার তত্ত্ব পেশ করেন

(D) ইটালির প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার তত্ত্ব পেশ করেন

49. Mr. X কার ছদ্মনাম ছিল?

(A) জর্জ কেন্নান-এর

(B) জর্জ হ্যারিস-এর

(C) ট্রুম্যান-এর

50. ‘ঠান্ডা লড়াই’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন-

(A) ডেভিড টমসন

(B) এ. জে. পি. টেলর

(C) ওয়াল্টার লিপম্যান

(D) ফ্রান্জ ফ্যানন

51. ঠান্ডা লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে-

(A) কেন্নানের বেষ্টনী তত্ত্বের মাধ্যমে

(B) ট্রুম্যান নীতির মাধ্যমে

(C) চার্চিলের ফালটন বক্তৃতার মাধ্যমে

(D) মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে

52. বেষ্টনী নীতির প্রবক্তা কে?

(A) মার্শাল

(B) চার্চিল

(C) ট্রুম্যান

(D) কেন্নান  

53. মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন-

(A) রাশিয়া

(B) আমেরিকা

(C) ব্রিটেন

(D) ফ্রান্স

54. মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা সংস্থা অর্থাৎ MEDO-এর পরবর্তীকালে নাম হয়-

(A) আর্থিক সহায়তা পরিষদ বা COMECON

(B) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা বা SENTO

(C) উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা বা NATO

(D) মধ্য এশিয়া চুক্তি সংস্থা বা CENTO

55. কোন্ দেশটি অ্যানজাস (১৯৫১) দেশভুক্ত ছিল না?

(A) অস্ট্রেলিয়া

(B) নিউজিল্যান্ড

(C) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

(D) সোভিয়েত রাশিয়ার

56. “The Cold War and Its Origin’ গ্রন্থের লেখক হলেন-

(A) ওয়াল্টার লিপম্যান

(B) ডি. এফ. ফ্লেমিং

(C) জর্জ কেন্নান

(D) উইনস্টন চার্চিল

57. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কোন্ দেশের সেনারা সমগ্র পূর্ব ও মধ্য ইউরোপকে জার্মানির কবল থেকে মুক্ত করে?

(A) সোভিয়েত রাশিয়া লাল ফৌজ

(B) ইটালির ব্ল‍্যাক শার্টস বাহিনী

(C) হিটলারের ব্রাউন শার্টস বাহিনী

(D) ভিয়েতনামের ভিয়েতমিন বাহিনী

58. বুমানিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি গঠিত হয়-

(A) কুমানিয়ার কমিউনিস্ট অনুগামীদের নিয়ে

(B) রুমানিয়ার শ্রমিক শ্রেণিকে নিয়ে

(C) রুমানিয়ার অকমিউনিস্ট অনুগামীদের নিয়ে

59. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রত্যক্ষ মদতে হাঙ্গেরীয়ে  গঠিত হয়-

(A) হাঙ্গেরীয় গণপ্রজাতন্ত্র

(B) দক্ষিণপন্থী হাঙ্গেরীয় গণপ্রজাতন্ত্র

(C) হাঙ্গেরীয় গণতন্ত্র

(D) হাঙ্গেরীয় প্রজাতন্ত্র

60. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে হাঙ্গেরিতে ক্ষমতায় আসে- 

(A) এ সমাজতন্ত্রী দল ও কমিউনিস্ট দলের মিলিত জোট।

(B) স্মল ল্যান্ড হোল্ডার্স দল এবং সমাজতন্ত্রী দলের মিলিত জোট

(C) স্মল ল্যান্ড হোল্ডার্স দল এবং কমিউনিস্ট দলের মিলিত জোট

(D) গণতন্ত্রী দল এবং ন্যাশনাল ইনডিপেন্ডেন্স জোট

61. মিশরের সুয়েজ খালকে কেন্দ্র করে সুয়েজ সংকট তৈরি হয়-

(A) মিশরের শাসক কামাল আতাতুর্কের আমলে

(B) মিশরের রাজা মিনেসের আমলে

(C) মিশরের রাষ্ট্রপতি আব্দুল গামাল নাসেরের আমলে

(D) আনোয়ার সাদাতের আমলে

62 . সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করেন-

(A) নেহরু

(B) নাসের

(C) টিটো

(D) চার্চিল

63. মিশরের সুয়েজ খালটি ৯৯ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পায়-

(A) ডাচ ক্যানাল কোম্পানি

(B) সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি

(C) পোর্তুগিজ ক্যানাল কোম্পানি

(D) সুইডিশ ক্যানাল কোম্পানি

64 . সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানিতে-

(A) ব্রিটেনের শেয়ার ছিল শতকরা ৪৪ ভাগ

(B) ফ্রান্সের শেয়ার ছিল শতকরা ১৫ ভাগ

(C) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার ছিল শতকরা ২৫ ভাগ

(D) জার্মানির শেয়ার ছিল শতকরা ১৬ ভাগ

65. নাসেরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের ক্ষেত্রে ইজরায়েলের প্রতিক্রিয়া ছিল-

(A) মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদুল গামাল নাসেরের বিরোধিতা

(B) মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদুল গামাল নাসেরকে সমর্থন

(C) মধ্যপ্রাচ্যে নাসেরের প্রাধান্য খর্বের দ্বারা ব্রিটেন ও ফ্রান্সের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সাহায্য

(D) সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানিতে ইজরায়েলের প্রাপ্তির দাবি উত্থাপন

66. সুয়েজ খাল যুক্ত করেছে-

(A) ভূমধ্যসাগর ও লোহিত সাগরকে

(B) পারস্য উপসাগর ও আরব সাগরকে

(C) ভূমধ্যসাগর ও পারস্য উপসাগরকে

(D) লোহিত সাগর ও পারস্য উপসাগরকে

67. জেনারেল নেগুইব কোন্ দেশের সেনানায়ক ছিলেন?

(A) মিশর

(B) ইজরায়েল

(C) আলজেরিয়া

(D) লিবিয়া

68. কোন্ সরকারের পতন ঘটিয়ে কিউবায় কাস্ত্রো ক্ষমতায় আসেন?

(A) বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে

(B) চে গুয়েভারা সরকারের পতন ঘটিয়ে

(C) মহম্মদ তারাকি সরকারের পতন ঘটিয়ে

(D) আয়াতুল্লা খোমেইনির সরকারের পতন ঘটিয়ে

69. তৃতীয় বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের মূলকেন্দ্র ছিল-

(A) ভিয়েতনাম

(B) কোরিয়া

(C) মিশর

(D) ইজরায়েল

70. ন-দিন-দিয়েম (Ngo-Dinh-Diem) সরকারের পতনের পর দক্ষিণ ভিয়েতনামের ভাগ্যনিয়ন্তা হয়ে ওঠে-

(A) উত্তর ভিয়েতনামের সোভিয়েত অনুগ্রহপুষ্ট রাষ্ট্রপতি

(B) দক্ষিণ ভিয়েতনামের মার্কিন অনুগ্রহপুষ্ট রাষ্ট্রপতি

(C) রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক গঠিত ভিয়েতনাম নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ

(D) সোভিয়েত মদতে গঠিত জনগণতান্ত্রিক কোরিয়া নামে সরক

71. রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে কোরিয়ার সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত অস্থায়ী কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন-

(A) ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ এ.ভি. আলেকজান্ডার

(B) ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে. পি. এস. মেনন

(C) মার্কিন কূটনীতিবিদ বাবুচ

(D) জার্মানি কূটনীতিবিদ রিবেনট্রপ

72. হো-চি-মিন ‘লিগ ফর দি ইনডিপেন্ডেন্স ইন ভিয়েতনাম’ গঠন করেন-

(A) ভিয়েতনামের মুক্তিকামীদের নিয়ে

(B) ভিয়েতনামের কৃষক শ্রেণিকে নিয়ে

(C) ভিয়েতনামের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে

(D) ভিয়েতনামের শ্রমিক শ্রেণিকে নিয়ে

73. দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনা ঘটেছিল-

(A) ১৯৭২ খ্রি.

(B) ১৯৫৩ খ্রি.

(C) ১৯৭৬ খ্রি.

(D) ১৯৫৪ খ্রি.

74. দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনাটি ঘটেছিল-

(A) কোরিয়ায়

(B) ভিয়েতনামে

(C) চিনে

(D) জাপানে

75. দিয়েন-বিয়েন-ফুর যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল-

(A) ভিয়েতনাম

(B) ফ্রান্স

(C) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

(D) কাম্বোডিয়া

76. দিয়েন-বিয়েন-ফুর যুদ্ধে পরাজিত হয়-

(A) ইংল্যান্ড

(B) নেদারল্যান্ড

(C) ফ্রান্স

(D) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

77. ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের পথিকৃৎ হলেন-

(A) হো-চি-মিন

(B) সুকর্ণ

(C) বেন বেল্লা

(D) মাও-সে-তুঙ

78. ভিয়েতনামে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন-

(A) নাসেৰ

(B) সুকর্ণ

(C) গিয়াপ

(D) হো-চি-মিন

79. ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে-

(A) বুশ সাম্যবাদের প্রসার ঘটতে শুরু করে

(B) মার্কিন পুঁজিবাদের প্রসার ঘটতে শুরু করে

(C) জাপানি সমরবাদের প্রসার ঘটতে শুরু করে

(D) তৃতীয় বিশ্বের নেতৃত্বে নির্জেটি আন্দোলনের প্রসার ঘটতে শুরু করে

80. টেট অভিযান কবে সংঘটিত হয়?

(A) ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে

(B) ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে

(C) ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে

(D) ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে

81. ‘কোরিয়া সংকট’ সমাধানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘ যে অস্থায়ী কমিশনটি গঠন করে তার নাম হল-

(A) United Nations Commission on Korea

(B) Commission on Korea Crisis

(C) United Nations Commission on Korea Crisis

(D) United Nations Temporary Commission on Korea

82. কোরিয়া যুদ্ধের শেষে যুদ্ধবন্দি সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতের জেনারেল থিমাইয়ার সভাপতিত্বে গঠিত কমিশনটির নাম ছিল-

(A) নিরপেক্ষ প্রত্যাবাসন কমিশন

(B) প্রত্যাবাসন কমিশন

(C) নিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমূহের প্রত্যাবাসন কমিশন

(D) জোটনিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমূহের প্রত্যাবাসন কমিশন

83. ভিয়েতনাম ওয়ার্কার্স পার্টি পরবর্তীকালে পরিচিত হয়-

(A) ভিয়েতনাম কমিউনিস্ট পার্টি

(B) ভিয়েতমিন পার্টি

(C) ভিয়েতনাম কংগ্রেস পার্টি

(D) ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক পার্টি

84. দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভিয়েতনাম ও ইন্দোচিনের সাম্রাজ্যবাদ কায়েম করেছিল-

(A) ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি 

(B) ফরাসি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি

(C) ডাচ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি

(D) ওলন্দাজ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি

85. ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকা হস্তক্ষেপ করেছিল কারণ আমেরিকা চেয়েছিল-

(A) তৃতীয় বিশ্বে জোটনিরপেক্ষতার প্রসার ঘটাতে

(B) পুঁজিবাদের অগ্রগতি রোধ করতে

(C) সোভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রোধ করতে

(D) ভিয়েতনামে বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে

86. ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে আত্মপ্রকাশ করে-

(A) স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভিয়েতনাম

(B) ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র

(C) সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্র

(D) সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম রাষ্ট্র

87.  ফ্রম ইয়াল্টা টু ভিয়েতনাম’ গ্রন্থের রচয়িতা হলেন-

(A) ডেভিড হরোউইজ

(B) গ্যাব্রিয়েল কলকো

(C) জি. অ্যালপারোভিচ

(D) জর্জ কেন্নান

88. পেরেস্ত্রৈকার প্রবর্তক ছিলেন-

(A) কুশ্চেভ

(B) লেনিন

(C) স্তালিন

(D) গর্বাচেভ

89. মার্কিন কূটনীতিবিদ বার্নার্ড বাবুচ ছিলেন-

(A) একজন বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী

(B) একজন সুবিখ্যাত রাজনীতিবিদ

(C) একজন জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদ

(D) একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি

90. U-2 কোন্ দেশের গোয়েন্দা বিমান?

(A) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

(B) সোভিয়েত রাশিয়া

(C) জার্মানি

(D) ফ্রান্স

91. পেন্টাগন কোন দেশের সমর দপ্তর?

(A) রাশিয়া

(B) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

(C) ইংল্যান্ড

(D) ফ্রান্স

92.’USSR’ বলতে বোঝায়-

(A) United States of Soviet Republic

(B) Union of Soviet Socialist Republic

(C) United States of Soviet Russia

(D) United States of Siberian Republic

93. সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিমি জোটের কাছে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার অনুরোধ রাখলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী-

(A) উইনস্টন চার্চিল দুমুখো নীতি নেন

(B) ট্রুম্যান দুমুখো নীতি নেন

(C) আইজেনহাওয়ার দুমুখো নীতি নেন

(D) মার্শাল দুমুখো নীতি নেন

94. পোল সীমান্ড নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমি দেশগুলির মতপার্থক্য দেখা দেয়-

(A) পটস্ডাম সম্মেলনে

(B) ইয়াল্টা সম্মেলনে

(C) বান্দুং সম্মেলনে

(D) প্যারিস সম্মেলনে

95. ইয়াল্টা সম্মেলন আয়োজিত হয়-

(A) জার্মানিতে

(B) রাশিয়ায়

(C) তুরস্কে

(D) পারস্যে

96. ইয়াল্টা সম্মেলন আহূত হয়-

(A) ১৯৪৩ খ্রি.

(B) ১৯৪৪ খ্রি.

(C) ১৯৪৫ খ্রি.

(D) ১৯৪৬ খ্রি.

97. ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা হয়েছিল-

(A) ইউরোপ মহাদেশে

(B) এশিয়া মহাদেশে

(C) আফ্রিকা মহাদেশে

(D) উত্তর আমেরিকা মহাদেশে

98. ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্ষেত্রে দু-পক্ষের প্রধান শক্তিগুলি ছিল-

(A) ফ্রান্স ও গ্রেট ব্রিটেন

(B) সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

(C) ব্রিটেন ও জার্মানি

(D) জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

99. আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে অ্যানজাস নামে মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়-

(A) প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে

(B) ভারত মহাসাগর অঞ্চলে

(C) আটলান্টিক মহাসাগর অঞ্চলে

(D) আরব মহাসাগর অঞ্চলে

100. ঠান্ডা লড়াই চলাকালে কোন্ সংকটকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে প্রথম যুদ্ধের উপক্রম হয়?

(A) সুয়েজ সংকটকে

(B) কোরিয়া সংকটকে

(C) বার্লিন সংকটকে

(D) কিউবা সংকটকে

101. ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্যারিস শান্তি বৈঠকে এক যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুসারে-

(A) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম থেকে সরে আসে

(B) সোভিয়েত ইউনিয়ন ভিয়েতনাম থেকে সরে আসে

(C) জাপান ভিয়েতনাম থেকে সরে আসে

ব্রিটেন ভিয়েতনাম থেকে সরে আসে

102. MAD (Mutually Assured Destruction) তত্ত্ব হল- 

(A) পারমাণবিক যুদ্ধের পরিণতিতে বিশ্বের ধ্বংসসাধন তত্ত্ব

(B) পরমাণু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানবকল্যাণতত্ত্ব

(C) পরমাণু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিজ ভূমির পরিমাণ বৃদ্ধির তত্ত্ব

 (D) জনসংখ্যা নিধন তত্ত্ব

103. প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়-

(A) ন্যাটো 

(B) আনরা

(C) মিডো

 (D) অ্যানজাস

104. পারমাণবিক অস্ত্র সংবরণ করে বিশ্বের স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ শুরু হয় মূলত-

(A) সতেরো শতকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে

(B) আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে

(C) উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে

 (D) কুড়ি শতকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে

105. ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবলুপ্তি-

(A) আঁতাত নামে পরিচিত  

(B) অ্যালায়েন্স নামে পরিচিত

(C) দাঁতাত নামে পরিচিত

 (D) মৈত্রী নামে পরিচিত

106. ‘দাঁতাত’ কথার অর্থ হল-

(A)  ঠান্ডা লড়াই

(B) বিদ্রোহ

(C) উত্তেজনা প্রশমন

 (D) উত্তেজনা বৃদ্ধি

107. 17° সমাক্ষরেখায় বিভক্ত দেশটি হল- 

(A) কোরিয়া

(B) ভিয়েতনাম

(C) মায়ানমার

 (D) চিন

108. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির প্রবক্তা ছিলেন-

(A) বুলগানিন 

(B) ক্রুশ্চেভ

(C) ব্রেজনেভ

 (D) গর্বাচেভ 

109.জোটনিরপেক্ষ নীতির উদ্ভাবক ছিলেন-

(A) মাও-সে-তুন্ড

(B) জওহরলাল নেহরু

(C) চৌ-এন-লাই

(D) নাসের

110. জোটনিরপেক্ষ কায়রো সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন-

(A) জোসিপ ব্রোজ টিটো

(B) গামাল আবদেল নাসের

(C) কেনেথ কাউন্ডা

(D) ফিদেল কাস্ত্রো

111. জোটনিরপেক্ষ লুসাকা সম্মেলন আয়োজিত হয়-

(A) জাম্বিয়ায়

(B) মিশরে

(C) যুগোশ্লাভিয়ায়

(D) কিউবাতে

112. জোটনিরপেক্ষ হাভানা সম্মেলন আয়োজিত হয়-

(A) জিম্বাবোয়েতে

(B) জাম্বিয়াতে

(C) কিউবাতে

(D) যুগোশ্লাভিয়াতে

113. জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে যুক্ত ছিল না-

(A) ভারত

(B) মিশর

(C) ফ্রান্স

(D) যুগোশ্লাভিয়া

114. নির্জেটি আন্দোলনের সূচনাকারী সম্মেলনটি ছিল—

(A) বান্দুং

(B) হাভানা

(C) কলম্বো

(D) নিউ দিল্লি

115. প্রথম নির্জেটি বেলগ্রেড সম্মেলনে-

(A) ২০টি সদস্যরাষ্ট্র যোগদান করে

(B) ২৫টি সদস্যরাষ্ট্র যোগদান করে

(C) ৩০টি সদস্যরাষ্ট্র যোগদান করে

(D) ৩৫টি সদস্যরাষ্ট্র যোগদান করে

116. প্রথম নির্জেটি বেলগ্রেড সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন-

(A) জোসেফ টিটো

(B) নাসের

(C) কেনেথ কাউন্ডা

(D) মেনন

117. ২৭ দফা দাবি পেশ করা হয়েছিল কোন্ সম্মেলনে?

(A) বান্দুং

(B) বেলগ্রেড

(C) তেহরান

(D) নতুন দিল্লি

118. লুসাকা নিজোট সম্মেলনের প্রস্তুতি হিসেবে কিছু কর্মসূচি স্থির করা হয়, যেমন-

(A) আর্থিক সহযোগিতা ও উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি

(B) নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কিছু কর্মসূচি গ্রহণ

(C) বিশ্বায়নের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ

বাণিজ্যায়নের লক্ষ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রকল্প গ্রহণ

119. আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বান্দুং সম্মেলনে গৃহীত দশটি নীতি

(A) বিশ্ববাসীর নিরাপত্তা রক্ষায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল

(B) বিশ্বে ঐক্য ও শান্তিপ্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল

(C) বিশ্ববাণিজ্যের সম্প্রসারণে সাহায্য করেছিল

(D) বিশ্বায়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল

120. বান্দুং সম্মেলনে চিনের প্রতিনিধিত্ব করেন-

(A) মাও-সে-তুঙ

(B) চৌ-এন-লাই

(C) সান-ইয়াৎ-সেন

(D) চিয়াং-কাই-শেক

2. Very Short Question Answer

1. বুলগানিন কে ছিলেন?

উত্তর- বুলগানিন ছিলেন সোভিয়েত রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।

2. কীসের উদ্দেশ্যে মার্কিন উদ্যোগে অ্যানজাস গঠিত হয়েছিল?

উত্তর- প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে মার্কিন উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল অ্যানজাস।

3. ওয়ারশ চুক্তি (Warsaw Pact) কবে ও কেন স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে সাম্যবাদের প্রসারের লক্ষ্যে ওয়ারশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

4. ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে সোভিয়েত ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে গঠিত সংস্থাগুলির নাম লেখো।

উত্তর- সোভিয়েত ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে গঠিত সংস্থাগুলির নাম হল- ‘কমিনফর্ম’, ‘ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা’।

5. জেনেভা সম্মেলনে কোন্ কোন্ দেশ অংশগ্রহণ করে?

উত্তর- জেনেভা সম্মেলনে আমেরিকা, ব্রিটেন, চিন, ফ্রান্স, ভিয়েতনাম, লাওস ও কম্বোডিয়া অংশগ্রহণ করে।

6. মার্কিন মদতে গঠিত দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের নাম লেখো।

উত্তর- মার্কিন মদতে গঠিত দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের নাম হল-প্রজাতান্ত্রিক কোরিয়া (Republic of Korea) |

7. সোভিয়েত মদতে গঠিত উত্তর কোরিয়ার সরকারের নাম লেখো।

উত্তর- সোভিয়েত মদতে গঠিত উত্তর কোরিয়ার সরকারের নাম হল-গণতান্ত্রিক কোরিয়া (Peoples’ Democratic Republic of Korea)।

8. বিভাজনের পর দুই কোরিয়ার রাজধানী কোথায় বিভাজ ছিল?

উত্তর- বিভাজনের পর দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী হয় সিওল এবং উত্তর কোরিয়ার রাজধানী হয় পিয়ংইয়ং।

9. ইমরে নেগি কে ছিলেন?

উত্তর- ইমরে নেগি ছিলেন হাঙ্গেরি যুক্তফ্রন্টের নেতা। রুশ প্রভাবিত হাঙ্গেরির নেতাদের মধ্যে তিনি ছিলেন স্টালিন বিরোধী গোষ্ঠীভুক্ত।

10. নির্জোট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দুজন নেতার নাম লেখো।

উত্তর- নির্জোট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দুজন নেতার নাম হল জওহরলাল নেহরু ও মার্শাল টিটো।

11. প্রথম নির্জোট সম্মেলন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

উত্তর-  প্রথম নির্জোট সম্মেলন যুগোশ্লাভিয়ার বেলগ্রেড শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

12..জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান রূপকার কে ছিলেন?

উত্তর-  জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রধান রূপকার ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু।

13. জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের দুজন নেতার নাম লেখো।

উত্তর-  আন্দোলনের দুজন নেতা ছিলেন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ও যুগোশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটো।

3. Short Question Answer

1. ঠান্ডা লড়াই কী?

উত্তর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে (১৯৪৫ খ্রি.) সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট এবং আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে কোনো প্রত্যক্ষ যুদ্ধ না হলেও দীর্ঘকাল ধরে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যুদ্ধের আবহ বা ছায়াযুদ্ধ চলতে থাকে। প্রকৃত যুদ্ধের সূচনা না হলেও উভয়ের মধ্যে চলতে থাকা এই যুদ্ধের পরিবেশকে ঠান্ডা লড়াই নামে অভিহিত করা হয়।

2. ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?

উত্তর মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর “The Cold War’ গ্রন্থে সর্বপ্রথম ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ কথাটি ব্যবহার করেন।

3. ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব ঘটে ক-টি পর্যায়ে?

উত্তর ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব ঘটে তিনটি পর্যায়ে, যথা-[i] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী পর্যায়,[ii] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পর্যায়, [iii] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়।

4. বিশ্ব রাজনীতিতে কোন্ ঘটনার পর দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির জন্ম হয়?

উত্তর সোভিয়েত রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর বিশ্বে দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির জন্ম হয়।

5. কখন দ্বিমেরু বিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল?

উত্তর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী জোট গড়ে উঠলে দ্বিমেরু বিশ্বের উদ্ভব ঘটেছিল।

6. ইয়াল্টা সম্মেলন কেন ডাকা হয়? অথবা, ইয়াল্টা সম্মেলন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

উত্তর ইয়াল্টা সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল- [i] বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, [ii] যুদ্ধের পর জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা, [iii] পোল্যান্ডের সমস্যার সমাধান করা প্রভৃতি।

7. কবে, কী উদ্দেশ্যে মেডো গঠিত হয়? অথবা, CENTO কী?

উত্তর- ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্যে বুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ করা এবং এখানকার তৈলসম্পদের ■ ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকার মদতে মধ্যপ্রাচ্যে গঠিত হয় মেডো যার পরে নাম হয় CENTO

৪. ট্রুম্যান নীতি কী?

উত্তর- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় (১৯৪৭ খ্রি., ১২ মার্চ) তুরস্ক ও গ্রিস-সহ বিশ্বের যে-কোনো দেশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন, যা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত।

10. কেন্নানের বেষ্টনী নীতি কী? ‘অথবা’ বেষ্টনী নীতি কী?

উত্তর- রাশিয়ায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান এক প্রবন্ধে সোভিয়েত রাশিয়ার আক্রমণাত্মক নীতি প্রতিহত করার এবং সোভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার যে নীতি ■ পেশ করেন, তা কেন্নানের বেষ্টনী নীতি নামে পরিচিত।

11. মার্শাল পরিকল্পনা কী?

উত্তর- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার  বিদেশমন্ত্রী

জর্জ সি. মার্শাল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এক পরিকল্পনা পেশ করেন, যা মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত।

12. মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কী ছিল? ‘অথবা’ মার্শাল পরিকল্পনার মূল কথা কী ছিল?

উত্তর- মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল- [i] ইউরোপের অর্থনৈতিক সংকট দূর করা, [ii] সোভিয়েত রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিহত করা, [iii] কমিউনিস্টদের অগ্রগতি রোধ করা, [iv] মার্কিন বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো প্রভৃতি।

13. ‘আনরা’ (UNRRA) কী?

উত্তর- ‘আনরা’ হল ‘সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রশাসন’ (United Nations Relief and Rehabilitation Association)। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

14. কমিকন কীভাবে গঠিত হয়েছিল? ‘অথবা’ কোন্ দেশের নেতৃত্বে কবে কমিকন (COMECON) গঠিত হয়? ‘অথবা’ COMECON কী?

উত্তর- সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মার্শাল পরিকল্পনার প্রত্যুত্তর হিসেবে কমিকন ■ (COMECON বা Council for Mutual Economic Assistance) নামে একটি আর্থিক সহায়তা পরিষদ গঠন করে।

15. পেরেস্ত্রৈকা কী?

উত্তর- সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচেভ প্রবর্তিত পেরেস্ত্রৈকার অর্থ হল ‘অর্থনৈতিক পুনর্গঠন’। এই নীতিতে পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলা হয়।

16. গ্লাসনস্ত কী?

উত্তর- সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচেভ প্রবর্তিত ‘গ্লাসনস্ত’ শব্দটির অর্থ হল ‘মুক্ত মন’। এর দ্বারা রাশিয়ায় রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রেই স্বাধীন ও মুক্ত আলোচনার কথা বলা হয়।

17. ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত শক্তিজোটগুলির নাম উল্লেখ করো।

উত্তর- ঠান্ডা লড়াই-এর প্রেক্ষাপটে সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে গড়ে তোলে ‘উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা’ (NATO)। তারপর একে একে গড়ে তোলে ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা’ (SEATO); ‘মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা সংস্থা’ (MEDO) [পরবর্তীকালে এটির নাম হয় ‘মধ্যপ্রাচ্য এশিয়া চুক্তি সংস্থা’ (CENTO)]; ‘অ্যানজাস’ (ANZUS) ইত্যাদি শক্তিজোট।

18. সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে কীভাবে ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা গঠিত হয়?

উত্তর- সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিকে (রাশিয়া, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বালগেরিয়া, আলবানিয়া ও পূর্ব জার্মানি) নিয়ে গঠন করে ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা (Warsaw Pact Organisation বা WPO), যা ছিল একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

20. ঠান্ডা লড়াইয়ের বাস্তববাদী বক্তব্যের মূল ধারণাটি কী?

উত্তর- বাস্তববাদী ধারণা ঠান্ডা যুদ্ধের জন্য সোভিয়েত বা মার্কিন কোনো একটি পক্ষকে চূড়ান্তভাবে দায়ী করায় বিশ্বাসী নয়। এই ধারণা অনুযায়ী ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনার জন্য সোভিয়েত বা মার্কিন উভয়পক্ষই দায়ী অথবা কোনো পক্ষই দায়ী ছিল না।

21. ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাগুলি কী কী?

উত্তর-  ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাগুলি মূলত চারটি। এগুলি হল- [i] চিরায়ত বা ঐতিহ্যবাহী বা রক্ষণশীল ধারণা (Traditional বা Orthodox View), [ii] সংশোধনবাদী ধারণা (Revisionist View), [iii] বাস্তববাদী ধারণা (Objective বা Realistic View) এবং [iv] অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারণা (View of Economic Conflict) |

22. ঠান্ডা লড়াইয়ের চিরায়ত বা ঐতিহ্যবাহী ধারণাটির মূল বক্তব্য কী?

উত্তর-  ঐতিহ্যবাহী ধারণার মূল বক্তব্য হল-ঠান্ডা লড়াই-এর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা সোভিয়েত ইউনিয়নই বেশি দায়ী।

23. ঠান্ডা লড়াইয়ের সংশোধনবাদী ধারণাটির মূল বক্তব্য কী?

উত্তর- সংশোধনবাদী ধারণার মূল বক্তব্য হল-সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণশীল নীতি নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতি ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল।

24. ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাগুলির ওপর সাম্প্রতিক অভিমত কী?

উত্তর- সাম্প্রতিক অভিমত অনুযায়ী সোভিয়েত কর্তৃত্ববাদী মনোভাব এবং মার্কিন ক্ষমতা লাভের প্রবণতা ঠান্ডা লড়াই-এর জন্ম দিয়েছিল।

25. কীসের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তিসাম্যের সূচনা ঘটেছিল?

উত্তর- ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে জার্মানি ও ইটালির একত্রীকরণের ফলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তিসাম্যের (Balance of Power) সূচনা ঘটেছিল।

26. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন কোন্ বৈঠকে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়?

উত্তর-  ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কায়রো ও তেহরান বৈঠকে চার্চিল, বুজভেল্ট ও স্টালিন দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার সিদ্ধান্ত নেন।

27. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে পূর্ব ইউরোপের কোন্ দেশগুলিতে রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হয়?

উত্তর-  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে সোভিয়েত রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে সমাজতান্ত্রিক ■ আদর্শের প্রসার ঘটায়। শুধু তাই নয় পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বালগেরিয়া, যুগোশ্লাভিয়া, আলবানিয়া, পূর্ব জার্মানিতে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণাধীন কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

28. স্টালিন কেন উদার ইউরোপের ঘোষণা করেন?

উত্তর- স্টালিন রাশিয়ার পাশাপাশি ইউরোপবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার ও নিজ নিজ দেশের সরকার গঠনের মতামত প্রয়োগের ওপর জোর দেন। এই লক্ষ্যপূরণের জন্য তিনি বুজভেল্ট-এর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করেন ও উদার ইউরোপের ঘোষণা করেন।

29. ট্রুম্যান নীতির দুটি উদ্দেশ্য কী ছিল? ‘অথবা’ ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর- ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্য ছিল-[i] অর্থ সাহায্যের নামে মার্কিন অস্ত্র ও শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী বিক্রয় করা এবং বিভিন্ন দেশে অল্প সুদে মার্কিন মূলধন লগ্নী করা। [ii] মার্কিন শিল্প ও এ বাণিজ্য এবং অস্ত্র কারখানাগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা।

30. মার্শাল পরিকল্পনার সরকারি নাম কী?

উত্তর- মার্শাল পরিকল্পনার সরকারি নাম হল-‘ইউরোপীয় পুনরুদ্ধার কর্মসূচি’ বা European Recovery Programme (ERP)।

31. মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলি মিলিত হয়ে কোন্ গোষ্ঠী গঠন করেছিল?

উত্তর- মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলি মিলিত হয়ে গঠন করেছিল-‘ইউরোপীয় আর্থিক সহায়তা গোষ্ঠী’ বা Organisation of European Economic Cooperation (OEEC)।

32. কোন্ দেশগুলি মার্শাল পরিকল্পনার ঘোষণামতো মার্কিন আর্থিক সাহায্য গ্রহণের যৌথ পরিকল্পনা নেয়?

উত্তর- তা মার্শাল পরিকল্পনায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলিতে আর্থিক সাহায্যদানের ঘোষণা করা হয়। এই মার্কিন আর্থিক সাহায্য গ্রহণের জন্য ১৬টি ইউরোপীয় রাষ্ট্র যৌথ পরিকল্পনা নেয়। এই রাষ্ট্রগুলি হল ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইটালি, লাক্সেমবার্গ, পোর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড, গ্রিস, তুরস্ক, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, জার্মানি।

33. মার্শাল পরিকল্পনার দুটি মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর-  মার্শাল পরিকল্পনার দুটি উদ্দেশ্য ছিল-[i] যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের দেশগুলিকে অর্থসাহায্য দিয়ে তাদের সোভিয়েত প্রভাব থেকে মুক্ত করা। [ii] অর্থসাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলিকে মার্কিন নীতির প্রতি আস্থাশীল করে তুলে মার্কিন রাষ্ট্রজোটের শক্তি বাড়ানো।

34. তৃতীয় বিশ্বে ঠান্ডা লড়াই-এর প্রভাবে উদ্ভূত কয়েকটি সংকটের নাম লেখো।

উত্তর-  টি তৃতীয় বিশ্বে ঠান্ডা লড়াই-এর প্রভাবে কোরিয়া সংকট, ভিয়েতনাম সংকট, সুয়েজ সংকট, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট প্রভৃতি সৃষ্টি হয়।

35. কাদের মধ্যে ম্যানিলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর-  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফিলিপিনস, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইত্যাদি দেশে ম্যানিলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৪ খ্রি.)। এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলিকে নিয়ে গঠিত হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা (SEATO)।

36. সিয়াটো কেন গঠিত হয়?

উত্তর-  মার্কিন মদতে কমিউনিস্ট চিনকে প্রতিরোধ ও ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট আগ্রাসন রোধ করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা বা সিয়াটো (SEATO)। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলকে কমিউনিস্ট আগ্রাসন থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আমেরিকার নেতৃত্বে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কেন্দ্র করে সিয়াটো (SEATO) গড়ে ওঠে।

37. SEATO-র পুরো নাম কী?

উত্তর- SEATO-র পুরো নাম হল Southeast Asia Treaty Organization (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা)।

38. ফালটন বক্তৃতার বিষয়বস্তু কী ছিল?

উত্তর- ফালটন বক্তৃতায় চার্চিল বলেছিলেন-আমেরিকা যদি এখনই সতর্ক না হয়, তাহলে একটা প্রাগৈতিহাসিক বিশাল আকৃতির পাখির মতো সোভিয়েত রাশিয়া একদিন সারা ইউরোপীয় সভ্যতাকে গ্রাস করবে। তাই ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তুলে রাশিয়ার ওই সম্প্রসারণ স্তন্ধ করে দিতে তিনি আমেরিকাকে আহ্বান জানান।

39. মেডো বা সেন্টো প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য কী ছিল?

উত্তর- মেডো বা সেন্টো প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য ছিল-মধ্যপ্রাচ্যে রুশ আগ্রাসন রোধ করা ও সেখানকার তৈল সম্পদের ওপর মার্কিন আধিপত্য স্থাপন করা।

40. মধ্যপ্রাচ্য’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর- সাধারণভাবে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীর থেকে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূ-ভাগ মধ্যপ্রাচ্য নামে পরিচিত। তবে মিশরকেও এর মধ্যে ধরা হয়। মিশর ছাড়া এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রগুলি হল তুরস্ক, প্যালেস্টাইন, ইরাক, ইরান, জর্ডন ও সৌদি আরব।

41. NATO কী?

উত্তর- বার্লিন সংকটের পর রাশিয়া যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সংকট তৈরি করতে না পারে তার জন্য পশ্চিমি দেশগুলি একজোট হয়ে যে সামরিক শক্তিজোট গঠন করে তার নাম NATOI

43. ন্যাটোর জন্ম হয় কেন?

উত্তর- বার্লিন সংকটের পর রাশিয়া যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো সংকট তৈরি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে পশ্চিমি দেশগুলি একত্রিত হয়ে ন্যাটো নামে সামরিক শক্তিজোট গঠন করে।

44. NATO-এর পুরো নাম কী? এর অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি দেশগুলির নাম কী? ‘অথবা’ NATO-এর পুরো কথা কী?

উত্তর- NATO-এর পুরো নাম হল ‘নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন’।

ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত কয়েকটি দেশ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ইতালি, নরওয়ে, পোর্তুগাল, নেদারল্যান্ড, গ্রিস, তুরস্ক ও জার্মানি।

45. ন্যাটো সামরিক জোটের কয়টি ভাগ ছিল?

উত্তর- ন্যাটো সামরিক জোটের তিনটি ভাগ ছিল, যথা- [i] অ্যালায়েড কম্যান্ড, [ii] আটলান্টিক অ্যালায়েড কম্যান্ড চ্যানেল, [iii] অ্যালায়েড কম্যান্ড ইউরোপ।

48. কোন্ কোন্ দেশের মধ্যে ওয়ারশ চুক্তি সম্পাদিত হয়? অথবা, ওয়ারশ চুক্তি কাদের নিয়ে হয়েছিল?

উত্তর- মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট দেশগুলির মধ্যে ওয়ারশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল (১৪ মে, ১৯৫৫ খ্রি.)। এই চুক্তিতে অংশ নিয়েছিল রাশিয়া, বালগেরিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি, আলবানিয়া, রুমানিয়া, চিন এবং চেকোশ্লোভাকিয়া।

50. ব্রেজনেভ তত্ত্ব (Brezhnev Doctrine) বলতে কী বোঝ?

উত্তর- পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট দেশগুলিতে কমিউনিস্ট বিরোধী আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যে ব্রেজনেভ যে তত্ত্বটি ঘোষণা করেছিলেন, সেটিই ‘ব্রেজনেভ তত্ত্ব’ নামে পরিচিত। ওই ঘোষণায় ব্রেজনেভ যা বলেছিলেন তার মূল কথা হল-কমিউনিস্ট দল পরিচালিত দেশগুলিকে আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক দায়বদ্ধতা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।

51. জোটনিরপেক্ষ নীতি কাকে বলে? ‘অথবা’ জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন কী?

উত্তর- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীকালে (১৯৪৫ খ্রি.) গড়ে ওঠা সোভিয়েত সাম্যবাদী জোট এবং মার্কিন পুঁজিবাদী জোট এই দুই-এর প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতি হল জোটনিরপেক্ষ নীতি।

52. ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের জেনেভা সম্মেলন কেন ডাক হয়েছিল?

উত্তর- ফ্রান্স ও ভিয়েতনামের মধ্যে যুদ্ধে ফ্রান্সের পরাজয়ের পর ভিয়েতনামের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের উদ্দেশ্যে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে জেনেভা সম্মেলন ডাকা হয়েছিল।

53. পটস্লাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত মেনে জার্মানির ওপর প্রয়োগ করা ‘৫টি ডি’ (Five D’s)-এর সম্পূর্ণ নাম লেখো।

উত্তর- ৫টি ডি হল-Demilitarisation (বেসামরিকীকরণ), Deindustrialisation (অব-শিল্পায়ন), Decentralisation (বিকেন্দ্রীকরণ), (গণতন্ত্রীকরণ), Denazification (অব-নাৎসিবাদীকরণ)। Democratisation

54. বার্লিন অবরোধ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর- সোভিয়েত ইউনিয়ন কিছু উদ্দেশ্যপূরণের লক্ষ্যে পশ্চিমি রাষ্ট্রজোটের পূর্ব বা পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশের সড়কপথ (যা ছিল সোভিয়েতের অধীনস্থ) অবরোধ করে (১৯৪৮ খ্রি., ২৪ জুন), যা বার্লিন অবরোধ নামে পরিচিত।

55. বার্লিন সংকটের ফলে জার্মানি কোন্ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়?

উত্তর- বার্লিন সংকটের ফলে জার্মানি পশ্চিম জার্মান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র এবং পূর্ব জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র-এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

56. বার্লিন এয়ারলিফট (Berlin Airlift) কী?

উত্তর- সোভিয়েত কর্তৃক বার্লিন অবরোধের কাছে নতিস্বীকার না করে ব্রিটেন ও আমেরিকা দীর্ঘ ১১ মাস ধরে ১৪০০ বিমানের সাহায্যে আকাশপথে বার্লিনে খাদ্য, ঔষধ, তেল, কয়লা প্রভৃতির জোগান দেয়, যা বার্লিন এয়ারলিফট নামে পরিচিত।

57. সুয়েজ সংকটের আশু কারণ কী ছিল?

উত্তর- সুয়েজ সংকটের আশু কারণ ছিল মিশরের শাসক গামাল আবদেল নাসের কর্তৃক সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির জাতীয়করণ (২৬ জুলাই, ১৯৫৬ খ্রি.) করা।

58. কে সুয়েজ খালের জাতীয়করণ করেন?

উত্তর- মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণায় সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানেল কোম্পানি জাতীয়করণ করার কথা জানান (১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই)।

59. নাসের কেন সুয়েজ খালের জাতীয়করণ করেন?

উত্তর- নাসের নীলনদের ওপর আসওয়ান শহরের কাছে ‘আসওয়ান বাঁধ প্রকল্প’ নামে একটি নদী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ওই কাজে অর্থ জোগানোর জন্য তিনি ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও বিশ্বব্যাংকের দ্বারস্থ হন। তারা ওই ঋণ দিতে প্রথমে সম্মত হয়। কিন্তু অল্প কাল পরেই ইংল্যান্ড ও আমেরিকা ওই ঋণ দিতে অস্বীকার করে। শুধু তাই নয়, তারা এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংককেও প্ররোচিত করে। বিশ্বব্যাংক এরপর মিশরের ওই ঋণের আবেদন বাতিল করে দেয়। এই কারণেই ক্ষিপ্ত নাসের সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির জাতীয়করণ করেন।

60. সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর- সুয়েজ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ভারতের বিদেশমন্ত্রী কৃয় মেনন ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করেন এবং পাঁচ দফা পরিকল্পনা পেশ করেন।

61. ফিদেল কাস্ত্রো কে ছিলেন?

উত্তর- ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন কিউবার জাতীয়তাবাদী নেতা। তাঁর নেতৃত্বে কিউবায় একনায়কতন্ত্রী বাতিস্তা সরকারের বদলে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

62. কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে কাদের মধ্যে প্রবল দ্বন্দ্ব শুরু হয়?

‘অথবা’ কিউবার ক্ষেপনাস্ত্র সংকট কী?

উত্তর- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ক্যারিবিয়ান সাগরের বুকে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক স্বল্পকালীন অথচ প্রবল দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই সংকট কিউবা ক্ষেপনাস্ত্র সংকট নামে পরিচিত।

63. ‘প্ল্যান্ট চুক্তি’ কী?

উত্তর- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে চুক্তির দ্বারা কিউবার অভ্যন্তরীণ ও বিদেশনীতির ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা লাভ করে (১৯০৩ খ্রি.) তার নাম ‘প্ল্যান্ট চুক্তি’।

64. কোরিয়া সংকটে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর- রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভা কর্তৃক গঠিত এক অস্থায়ী কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কে. পি. এস. মেনন কোরিয়া থেকে বিদেশি সেনা অপসারণ এবং সেখানে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দ্বারা এক জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব রাখেন।

65. কোরিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ ও উত্তর কোরিয়ায় কাদের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়?

উত্তর- কোরিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন প্রভাবাধীন এবং উত্তর কোরিয়ায় সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার গড়ে ওঠে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সিংম্যান রি-র নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তর কোরিয়ায় কিম ইল সুঙ-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট সরকার গঠিত হয়।

66. ৩৮০ অক্ষরেখা কী?

উত্তর- ১৯৪৫ সালে কোরিয়াবাসীর অনুমতি ছাড়াই কোরিয়াকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করে ৩৮” অক্ষরেখাকে দুই কোরিয়ার মধ্যে সীমারেখা হিসেবে ধার্য করা হয়। এই অক্ষরেখা বরাবর উত্তরাংশে সোভিয়েত রাশিয়ার এবং দক্ষিণ অংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।

67. কীভাবে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে প্রত্যক্ষ দক্ষিণ লড়াই শুরু হয়?

উত্তর- দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন একাধিপত্য সোভিয়েত রাশিয়া মেনে নিতে পারেনি। তাই ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন রুশ মদতে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী ৩৮ ডিগ্রি অক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করে এবং দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।

68. মার্শাল টিটো কে ছিলেন?

উত্তর- মার্শাল টিটো ছিলেন যুগোশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি যুগোশ্লাভিয়াকে সোভিয়েত-প্রভাব মুক্ত করার চেষ্টা করলে রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্টালিনের সঙ্গে তাঁর সংঘাত বাধে।

69. ভিয়েতনাম যুদ্ধ কী?

উত্তর- হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামবাসী দীর্ঘ ৩০ বছর (১৯৪৫-৭৫ খ্রি.) ধরে যে যুদ্ধ চালিয়েছিল, তা ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত।

70. ভিয়েতকং কারা?

উত্তর- ভিয়েতকং ছিল উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্টদের দ্বারা ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী সামরিক বাহিনী। এর পুরো নাম ছিল The People’s Liberation Armed Forces (PLAF)। এই বাহিনী ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং অন্যদিকে মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে যায়।

71. ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রেক্ষাপট লেখো।

উত্তর- প্রথমদিকে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ ও পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভিয়েতনামে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, চিন ও সোভিয়েত সাহায্যপুষ্ট ভিয়েতনামবাসী রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধ।

72. ভিয়েতমিন কী?

উত্তর- হো-চি-মিন ভিয়েতনামের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ‘লিগ ফর দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্স ইন ভিয়েতনাম’ (League for the Independence in Vietnam) গড়ে তোলেন। এই সংগঠনটি সংক্ষেপে ‘ভিয়েতমিন’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

73. নেভারে প্ল্যান কী?

উত্তর- ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালে ফরাসি সেনাপতি নেভারে ভিয়েতমিনদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এক নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যা ‘নেভারে প্ল্যান’ নামে পরিচিত।

74. দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনা কী? ‘অথবা’ দিয়েন বিয়েন-ফুতে কী ঘটেছিল?

উত্তর- টংকিং-এর দিয়েন-বিয়েন-ফু নামে ভিয়েতনামের একটি গ্রামে ফরাসিরা অস্ত্রঘাঁটি নির্মাণ করলে ভিয়েতনামিরা তা ধ্বংস করে দেন যা দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনা নামে পরিচিত।

75. জেনেভায় ইন্দোচিন সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে গৃহীত নে মূল সিদ্ধান্ত কী ছিল?

উত্তর- জেনেভা সম্মেলনের মূল সিদ্ধান্তে বলা হয়-১৭০ অক্ষরেখা বরাবর ভিয়েতনামকে দু- ভাগে ভাগ করা হবে এবং ওই অক্ষরেখার উত্তরাঞ্চলে ভিয়েতমিনদের এবং দক্ষিণাঞ্চলে ফরাসি নিয়ন্ত্রণাধীন ন-দিন-দিয়েম (Ngo-Dinh-Diem)-এর শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে।

76. মাই লাই ঘটনা কী?

উত্তর- ভিয়েতনাম মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভিয়েতনামে মাই লাই নামক স্থানে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে মার্কিন সেনাদল প্রায় ৫০০ জন নিরীহ ভিয়েতনামবাসীকে হত্যা করে। এই ঘটনার নাম মাই লাই ঘটনা।

78. হো-চি-মিন কে ছিলেন?
উত্তর- হো-চি-মিন ছিলেন ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের পথ-প্রদর্শক ও প্রাণপুরুষ। তাঁর নেতৃত্বে ভিয়েতনামবাসী দীর্ঘ ৩০ বছর (১৯৪৫-৭৫ খ্রি.) ধরে বিদেশি আধিপত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়েছিল।

79. ভিয়েতনাম যুদ্ধে যোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কীভাবে আমেরিকার মর্যাদাহানি ঘটেছিল?

উত্তর- এ ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকে আমেরিকাকে শেষপর্যন্ত লজ্জা, অপমান ও কলঙ্কের বোঝা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করতে হয়েছিল, এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমেরিকার মর্যাদাহানি ঘটেছিল।

80. ভিয়েতনাম সমস্যা সমাধানের জন্য জাতিপুঞ্জের তদারকি কমিশনের কী ভূমিকা ছিল?

উত্তর- ভিয়েতনাম সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ভারত, পোল্যান্ড, কানাডা নিয়ে গঠিত হয় জাতিপুঞ্জের তদারকি কমিশন। স্থির হয় এই কমিশনের মাধ্যমে দুই ভিয়েতনামের ঐক্যের মীমাংসা করা হবে। ততদিনে হো-চি-মিনের ভিয়েতমিনের সরকারের অধীনে থাকবে উত্তর ভিয়েতনাম এবং ফরাসি সেনার অধীনে থাকবে দক্ষিণ ভিয়েতনাম।

81. ‘ক্ষমার অভিযান’ (Mission of Mercy) কী?

উত্তর- ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বার্লিন প্রাচীর ভেঙে দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির পশ্চিমের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়। বার্লিন অবরোধের ৬৯ বছর পূর্তি উৎসবে হাজার হাজার বার্লিনবাসীর বার্লিনে সমবেত হওয়ার আভিযানটি (১২ মে, ২০০৯ খ্রি.) ‘ক্ষমার অভিযান’ নামে পরিচিত।

82. পটস্ডাম সম্মেলনে মূল আলোচ্য বিষয় কী ছিল?

উত্তর- পটড্রাম সম্মেলনে মূল্য আলোচ্য বিষয় ছিল জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায়, জার্মান সমাজব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং পোল্যান্ডের পশ্চিম সীমান্ত নির্ধারণ।

83. ইয়াল্টা সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় কী ছিল?

উত্তর- ইয়াল্টা সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন।

84. ফালটন বক্তৃতা কে, কবে প্রদান করেন?

উত্তর- প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ মার্চ আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের অন্তর্গত ফালটনের ওয়েস্টমিনস্টার কলেজে ফালটন বক্তৃতা প্রদান করেন।

85. কোন ঘটনার পর বিশ্বে সার্বিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের প্রচেষ্টা শুরু হয়?

উত্তর:  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকি শহর দুটিতে আণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে (১৯৪৫ খ্রি., আগস্ট) সার্বিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের প্রচেষ্টা শুরু হয়।

86. MAD তত্ত্ব কী?

উত্তর: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয় তরফেই পারমাণবিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে, ফলে ভবিষ্যতে পারমাণবিক যুদ্ধে বিশ্বে ধ্বংসসাধনের সম্ভাবনা দেখা দেয়, যা MAD তত্ত্ব নামে পরিচিত।

87. বাবুচ পরিকল্পনা কী?

উত্তর: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান কর্তৃক মনোনীত পারমাণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি বার্নার্ড বারুচ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জুন নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কিত যে পরিকল্পনা জাতিপুঞ্জের আণবিক শক্তি-বিষয়ক একটি কমিশনের কাছে পেশ করেন, তা বাবুচ পরিকল্পনা নামে পরিচিত।

88. আইজেনহাওয়ার তত্ত্ব কী?

উত্তর: মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার এক ঘোষণায় বলেন-আন্তর্জাতিক সাম্যবাদী দেশ দ্বারা বা সাম্যবাদ নিয়ন্ত্রিত কোনো দেশ দ্বারা অন্য কোনো দেশ আক্রান্ত হলে এবং সেই আক্রান্ত দেশের কাছ থেকে সাহায্যের আবেদন এলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সাহায্য দেবে। এই সাম্যবাদ প্রতিরোধ তত্ত্ব আইজেনহাওয়ার তত্ত্ব নামে পরিচিত। 

89. BRAVO Test কী?

উত্তর:  ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিকিনি অ্যাটল নামক দ্বীপে এক প্রচণ্ড শক্তিশালী হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়, ১৫ মেগাটন ক্ষমতাসম্পন্ন এই বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণের ঘটনাটি BRAVO Test নামে পরিচিত।

90. আইজেনহাওয়ার তাঁর পরিকল্পনায় কী উল্লেখ মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার করেন?

উত্তর:  মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার রাষ্ট্রসংঘে পেশ করা তাঁর পরিকল্পনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে এক আন্তর্জাতিক শক্তি কমিশন গঠনের কথা বলেন।

91. কোন্ প্রেক্ষাপটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদে শান্তির লক্ষ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রস্তাব পেশ করে?

উত্তর: সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন প্রথমে আণবিক বোমা আবিষ্কার করে, পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন আরও শক্তিশালী, হাইড্রোজেন বোমা আবিষ্কার করে। এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে শান্তির লক্ষ্যে পরমাণু অস্ত্র প্রস্তাব পেশ করেন।

92. ইউরেটম (EURATOM) কী?

উত্তর: ইউরেটম হল ইউরোপীয় আণবিক শক্তি কমিউনিটি। ইউরোপের পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলির উদ্যোগে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়।

93. বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত কয়েকটি চুক্তি উল্লেখ করো।

উত্তর: পরমাণু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল গঠনের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় একাধিক চুক্তি। যথা, দক্ষিণ মেরু অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল করার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় আন্টার্কটিকা চুক্তি এবং দক্ষিণ আমেরিকাকে অস্ত্রমুক্ত করার লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় ল্যাটেলোলকো (Tlatelolco) চুক্তি। এ ছাড়াও মার্কিন ও সোভিয়েত উভয়ের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয় SALT-1 ও SALT-2 চুক্তি।

94. 0SDI (Strategic Defence Initiative) কর্মসূচিটি কী?

উত্তর: মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান সোভিয়েত আক্রমণরোধের লক্ষ্যে এক নতুন প্রতিরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্রকে মহাকাশেই ধ্বংস করে ফেলার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যে কর্মসূচি গৃহিত হয় তার নাম SDI (Strategic Defence Initiative) |

95. NTBT (Nuclear Test Ban Treaty)-তে কারা, কবে স্বাক্ষর করেছিলেন?

উত্তর: ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট মস্কোতে রাশিয়া ও আমেরিকা পারমাণবিক পরীক্ষা বন্ধের চুক্তি NTBT (Nuclear Test Ban Treaty)-তে স্বাক্ষর করেছিলেন।

96. নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাদের মধ্যে SALT-1 স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর: সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান ব্রেজনেভ এবং মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান রিচার্ড নিকসনের মধ্যে SALT-1 চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

97. নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাদের মধ্যে SALT-2 স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর: নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান ব্রেজনেভ এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার- এর মধ্যে SALT-2 চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

98. নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাদের মধ্যে START-I চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর: নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গরবাচভ এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশের মধ্যে START-I চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (১৯৯১ খ্রি., জুলাই)।

99. নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কাদের মধ্যে START-II চুক্তিতে স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর: নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে রুশ প্রজাতন্ত্রের প্রধান বরিস ইয়েলৎসিন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বুশের সঙ্গে START-II চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন (১৯৯৩ খ্রি., জানুয়ারি)।

100. SALT-1 চুক্তির অন্যতম শর্তে কী বলা হয়?

উত্তর: SALT-1 চুক্তির অন্যতম শর্তে বলা হয়-সোভিয়েত ও মার্কিন দু-পক্ষই ক্ষেপণাস্ত্র- বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের (ABM বা Anti-Ballistic Missile) দ্বারা নিজেদের রাজধানী-সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলি রক্ষা করার অধিকার পাবে।

101. SALT-2 চুক্তির অন্যতম শর্ত হিসেবে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়?

উত্তর: SALT-2 চুক্তির অন্যতম শর্ত অনুসারে সোভিয়েত ও মার্কিন উভয় দেশের ক্ষেপণাস্ত্র এবং বোমারু বিমানের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।

102. গ্রোমিকো প্রস্তাব কী?

উত্তর: নিরাপত্তা পরিষদের উদ্যোগে গঠিত অ্যাটোমিক এনার্জি কমিশন পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল নিয়ন্ত্রণের প্রস্তাব নেয়। সোভিয়েত রাশিয়া এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নতুন যে প্রস্তাব দেয় তার নাম গ্রোমিকো প্রস্তাব। এই প্রস্তাবে পারমাণবিক উৎপাদন ও তার ব্যবহারের বিরোধিতা করা হয়।

103. START-I চুক্তির ফলশ্রুতি লেখো।

উত্তর: START-I চুক্তি অনুসারে সোভিয়েত ও মার্কিন এই দুই দেশ ১৬০০টি Strategic Nuclear Delivery Vehicles এবং ৬ হাজার যুদ্ধ বোমা রাখার অনুমতি লাভ করে।

104. START-II চুক্তির ফলশ্রুতি লেখো।

উত্তর:  START-II চুক্তি অনুযায়ী সোভিয়েত ও মার্কিন উভয় দেশ নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার অর্ধেকেরও বেশি নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে রাজি হয়।

105. ‘Ostpolitik’ কী?

উত্তর: পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হলে পশ্চিম ইউরোপে অধিক ক্ষতির আশঙ্কায় পশ্চিম জার্মানির চ্যান্সেলার উইলি ব্রান্ট এক নীতি নেন, যার নাম ‘Ostpolitik’। এই নীতির দ্বারা পূর্ব ইউরোপের সঙ্গে পশ্চিম ইউরোপে সুসম্পর্ক স্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়।

106. দাঁতাত কী?

উত্তর: সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী জোট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী জোটের মধ্যেকার ঠান্ডা লড়ায়ের অবসান প্রক্রিয়া দাঁতাত নামে পরিচিত। এই প্রক্রিয়ায় উভয় জোটের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হয় এবং উভয়ের মধ্যে রণনীতি বিষয়ে সমঝোতা গড়ে ওঠে।

107. সলিডারিটি আন্দোলন কী?

উত্তর: ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ডে লেচ ওয়ালেসার নেতৃত্বে সাম্যবাদ-বিরোধী যে অহিংস আন্দোলন শুরু হয় তার নাম সলিডারিটি আন্দোলন।

108. কোন্ লক্ষ্যে ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে?

উত্তর- নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষা এবং সোভিয়েত ও মার্কিন উভয় জোটের কাছ থেকেই সমানভাবে সাহায্য নিয়ে নিজের দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে।

109. নির্জোট আন্দোলন বলতে কী বোঝ?

উত্তর- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের কোনো একটি জোটে যোগ না দিয়ে নিরপেক্ষ থাকার নীতিই হল জোটনিরপেক্ষ বা নির্জোট নীতি। এই জোটনিরপেক্ষ দেশগুলি নিজেদের স্বার্থে যে আন্দোলন গড়ে তোলে তার নাম নির্জোট আন্দোলন।

110.’কমনওয়েলথ’ কী?

উত্তর- স্বাধীন সার্বভৌম দেশগুলি নিয়ে ব্রিটেনের উদ্যোগে গঠিত এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হল ‘কমনওয়েলথ’। বর্তমানে কমনওয়েলথ-এর সদস্যসংখ্যা প্রায় ৫০টি।

111. পঞ্চশীল নীতি কী?

উত্তর- শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি মেনেই ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে চিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই দ্বিতীয় বার ভারতে এলে ভারত ও চিনের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যে ৫টি নীতি স্থির হয়, তা পঞ্চশীল নীতি (২৯ এপ্রিল, ১৯৫৪ খ্রি.) নামে পরিচিত।

112. পঞ্চশীল নীতি কবে গৃহীত হয়?

উত্তর- ২৯ এপ্রিল ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চশীল নীতি গৃহীত হয়।

113. বান্দুং সম্মেলনের পরিচয় দাও।

‘অথবা’ বান্দুং সম্মেলন কবে, কোথায় হয়েছিল? এই সম্মেলনে কতগুলি দেশের প্রতিনিধি যোগদান করেছিল?

অথবা, বান্দুং সম্মেলন কবে, কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?

উত্তর- ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯টি দেশের প্রতিনিধিরা এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের পদক্ষেপ নেন (১৯৫৫ খ্রি., ১৮-২৬ এপ্রিল), যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত। সম্মেলনে বর্ণবৈষম্যের অবসান, ঔপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তি, পারমাণবিক অস্ত্র-পরীক্ষা ও ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

114. বান্দুং সম্মেলনে চিনের প্রতিনিধি কে ছিলেন?

উত্তর- ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯টি দেশের প্রতিনিধিরা এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের পদক্ষেপ নেন (১৯৫৫ খ্রি., ১৮-২৬ এপ্রিল), যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত। সম্মেলনে বর্ণবৈষম্যের অবসান, ঔপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তি, পারমাণবিক অস্ত্র-পরীক্ষা ও ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ প্রভৃতি বিষয়ে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

115. ব্যালফুর ঘোষণাপত্রে কী বলা হয়?

উত্তর- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিদেশ-সচিব আর্থার ব্যালফুর এক ঘোষণাপত্র জারি করে বলেন-ব্রিটিশ সরকার প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় বাসভূমি গড়ে তোলার সাধ্যমতো চেষ্টা চালাবে।

116. ‘কিং ক্রেন কমিশন’ (১৯১৯ খ্রি.) কেন গঠিত হয়?

উত্তর- প্যালেস্টাইন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয় ‘কিং ক্রেন কমিশন’ (১৯১৯ খ্রি.)।

117. আরব লিগ কবে গঠিত হয়? অথবা, কারা, কেন আরব লিগ গঠন করে?

উত্তর- লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ট্রান্সজর্ডন, সৌদি আরব, ইয়েমেন ও মিশর এই সাতটি আরব রাষ্ট্র ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাজধানী কায়রোতে একত্রিত হয়ে আরব লিগ গঠন করে। লিগের দাবি ছিল-প্যালেস্টাইনকে আর ব্রিটেনের অছি হিসেবে রাখা চলবে না। পাশাপাশি, সেখানে ইহুদি অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

118. কীভাবে প্যালেস্টাইন সমস্যার সৃষ্টি হয়?

উত্তর- আরব জাতীয়তাবাদীরা চেয়েছিল প্যালেস্টাইনের আরবদের (ফিলিস্তিনীয়) জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে, অপরদিকে জিওনবাদীদের লক্ষ্য ছিল প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যার ফলে প্যালেস্টাইন সমস্যার সৃষ্টি হয়।

119. PLO কী?

উত্তর- PLO-এর অর্থ হল Palestine Liberation Organization। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে জরডন- এ ইজরায়েলকে ধ্বংসের লক্ষ্যে এই প্যালেস্টাইন সংস্থাটি গড়ে ওঠে।

120. জিওনবাদ কী?

উত্তর- রোমানরা ইহুদিদের জেরুজালেম ও প্যালেস্টাইন থেকে বিতাড়িত করলেও ইহুদিদের মনে পুনরায় নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে সুপ্ত থাকে এবং বিশ শতকে এই ইচ্ছের বহিঃপ্রকাশ ঘটে যা জিওনবাদ নামে পরিচিত।

121. ইয়মকিপুর যুদ্ধ কী?

উত্তর- ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ অক্টোবর মিশর ও সিরিয়ার মিলিত বাহিনী ইজরায়েল অধিকৃত সিনাই উপত্যকার ওপর সামরিক অভিযান শুরু করে, এর জবাব হিসেবে ইজরায়েল সেনারা রুখে দাঁড়ালে যে চতুর্থ আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়, তার নাম ইয়মকিপুর যুদ্ধ।

122. কাদের মধ্যে ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে আরব-ইজরায়েল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়?

উত্তর-  ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান আনোয়ার সাদাত ও ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মেনাচিম বেগিন উভয়ের মধ্যে আরব-ইজরায়েল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

123. ইরান-ইরাক যুদ্ধের (১৯৮০-৮৮ খ্রি.) কারণগুলি কী ছিল?

উত্তর- উত্তর- ইরাকের রাষ্ট্রপ্রধান সাদ্দাম হুসেন মূলত তিনটি কারণে ইরান আক্রমণ করেন। যথা- [i] ইরাকের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়া সম্প্রদায়ের ওপর ইরানের শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত নেতা আয়াতুল্লা খোমেইনির প্রভাবের জন্য আশঙ্কিত হন সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত সাদ্দাম হুসেন। [ii] পারস্য উপসাগরের জলপথ ব্যবহারের লক্ষ্যে শাত-এল-আরব জলপথটির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। [iii] আরব জাতীয়তাবাদের অবিসংবাদী নেতা হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা।

124. তেল কূটনীতি কী?

উত্তর- আমেরিকা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়। আমেরিকার এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ তেল কূটনীতি (Oil Diplomacy) নামে পরিচিত।

125. ‘Operation Desert Storm’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর- মার্কিন সেনাপ্রধান নর্মান সোয়ার্জকফের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বহুজাতিক দেশগুলি ইরাকের বিরুদ্ধে যে সামরিক অভিযান চালায় (১৬ জানুয়ারি, ১৯৯১ খ্রি.) তার নাম ‘Operation Desert Storm’। ইরাকের বিরুদ্ধে এই সামরিক অভিযানে অংশ নিয়েছিল মার্কিন সেনাদল ছাড়াও ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, মিশর, সৌদি আরব, সিরিয়া, মরক্কো, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশের সম্মিলিত সেনাদল। এই সম্মিলিত সামরিক জোটের কাছে শেষপর্যন্ত সাদ্দাম হুসেনের নেতৃত্বে ইরাক পরাজিত হয়।

126. তেল কূটনীতির ওপর হস্তক্ষেপে মার্কিন বিদেশনীতির লক্ষ্য কী ছিল?

উত্তর- তেল কূটনীতির ওপর হস্তক্ষেপে মার্কিন বিদেশনীতির লক্ষ্যগুলি ছিল- [i] তেল সম্পদে সমৃদ্ধ মধ্য প্রাচ্যের ওপর নিরঙ্কুশ মার্কিন প্রভাব কায়েম করা, [ii] আন্তর্জাতিক তেল- বাণিজ্যের ওপর মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, [iii] তেল-বাণিজ্য থেকে প্রাপ্ত মুনাফার দ্বারা মার্কিন অর্থনীতিকে আরও মজবুত করা।

127. ওপেক (OPEC) কী?

উত্তর- মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করার লক্ষ্যে এক আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংগঠন গড়ে তোলে, যার নাম ওপেক (OPEC)।

128. OFID কী?

উত্তর- তেল রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত মুনাফার একটি নির্দিষ্ট অংশ দিয়ে ওপেক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করে (১৯৭৬ খ্রি.), এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির নাম হল OFID (OPEC Fund for International Development) |

129. ‘মধ্যপ্রাচ্য’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর- সাধারণভাবে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীর থেকে পাকিস্তানের পশ্চিম সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূ-ভাগ মধ্যপ্রাচ্য নামে পরিচিত। তবে মিশরকেও এর মধ্যে ধরা হয়। মিশর ছাড়া এই অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্রগুলি হল তুরস্ক, প্যালেস্টাইন, ইরাক, ইরান, জর্ডন ও সৌদি আরব।

130. কীভাবে চিনে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর-  সান-ইয়াৎ-সেনের নেতৃত্বে শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির সক্রিয় সহযোগিতায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে চিনে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

131. লং মার্চ কী?

উত্তর-  মাও-সে-তুঙ এবং চু-তের মিলিত প্রচেষ্টায় কমিউনিস্টদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে কিয়াং- সি প্রদেশ থেকে শেনসি পর্যন্ত ছয় হাজার মাইলের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পদযাত্রা ইতিহাস লং মার্চ নামে পরিচিত।

132. চিনে কার নেতৃত্বে লং মার্চ শুরু হয়েছিল? কতদিন পরে কবে তা শেষ হয়?

উত্তর-  চিনে ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর মাও-সে-তুঙ-এর নেতৃত্বে দীর্ঘ পদযাত্রা (লঙ মার্চ) শুরু হয়েছিল। চিনে দীর্ঘ পদযাত্রা ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ অক্টোবর শুরু হয়ে ৩৭০ দিন পরে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২০ অক্টোবর ওই যাত্রা শেষ হয়।

4. Long Question Answer

প্রশ্ন1. পটড্রাম সম্মেলন ও ইয়াল্টা সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর- পটস্ডাম সম্মেলন

পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে যেসব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পটস্ডাম সম্মেলন। জার্মানির রাজধানী বার্লিনের পাশে পটড্রাম শহরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী চলা এই সম্মেলনে মিলিত হন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুম্যান, সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক ই. স্টালিন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল।

আলোচ্য বিষয়

i. জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায়।

ii. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জার্মানির সমাজব্যবস্থার পুনর্গঠন।

iii. ইয়াল্টা সম্মেলনের ঘোষণাপত্রগুলির মূল্যায়ন।

iv. পোল্যান্ডের পশ্চিম সীমান্ত নির্ধারণ।

গৃহীত সিদ্ধান্ত

i. ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে। এই কাউন্সিল জার্মানি, ইতালি, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও ফিনল্যান্ডের সঙ্গে শান্তি চুক্তির খসড়া তৈরি করবে।

ii. জার্মানিকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয় যে, জার্মান জাতির স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে। এর পাশাপাশি জার্মানিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষা, রাজনৈতিক দলগুলির অস্তিত্ব রক্ষা, নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে।

iii. জার্মানির সমরবাদ ও নাৎসিবাদের সম্পূর্ণরূপে অবসান ঘটানো হবে এবং সামরিক শিক্ষাকেন্দ্র ও নাৎসি প্রতিষ্ঠানগুলির অস্তিত্ব বিলোপ করা হবে।

iv. জার্মানিতে যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হয় এমন কারখানাগুলি মিত্রপক্ষ নিজেদের অধিকারে নিয়ে আসবে।

v. আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে জার্মানির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে।

vi. পূর্ব প্রাশিয়াকে ভেঙে এর পশ্চিমাঞ্চল পোল্যান্ডকে দেওয়া হবে। আর অবশিষ্ট অংশ সোভিয়েত রাশিয়া পাবে।

vii. জার্মানির নৌবহরগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত রাশিয়া ও ব্রিটেন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে।

viii. জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করবে মিত্রপক্ষ নিযুক্ত কমিশন।

ইয়াল্টা সম্মেলন

পটভূমি: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষ্ণসাগরের পাশে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা প্রদেশে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইয়াল্টা নামে পরিচিত ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আর সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক স্টালিন।

আলোচ্য বিষয়

i. জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা।

ii. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন করা।

iii.বিশ্বে আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এক আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করা।

iv. রাশিয়ার দাবিমতো নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করা।

v. দূরপ্রাচ্যের যুদ্ধে রাশিয়ার যোগদানের গুরুত্ব পর্যালোচনা করা।

vi. পোল্যান্ডের সীমানা ও ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের প্রশ্নের সমাধান করা।

গৃহীত সিদ্ধান্ত 

i.জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ

[a] স্থির হয় নাৎসিবাদের কবল থেকে জার্মানবাসীকে মুক্ত করা হবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে।

[b] জার্মানির রাজধানী বার্লিনকেও চার ভাগ করে পশ্চিমাংশ আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে এবং পূর্বাঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলা হয়। ইংল্যান্ড ও আমেরিকার ভাগ থেকে ফ্রান্সকে কিছুটা অংশ দেওয়া হবে বলেও ঠিক হয়।

[c] স্থির হয় নবগঠিত জার্মানির শাসনতান্ত্রিক আইনকানুন আন্তর্জাতিক আইনের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

[d] সিদ্ধান্ত হয় জার্মানির অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে মিত্রপক্ষ।

[e] যুদ্ধে জার্মানি মিত্রপক্ষের যে ক্ষয়ক্ষতি করেছিল তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানির কাছ থেকে আপাতত ২০ মিলিয়ন ডলার আদায় করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ii. রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি

[a] রাষ্ট্রসংঘের সংবিধান রচনার জন্য আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে = মিত্রপক্ষের সকল দেশ এপ্রিল মাসে মিলিত হবে।

[b] রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলি ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা পাবে।

[c] নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ অছি পরিষদের রাষ্ট্রগুলির ব্যাপারে আলোচনা করতে পারবে।

iii. পোল্যান্ড নীতি

[a] ঠিক হয় দু-টুকরো পোল্যান্ডকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

[b] পোল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সীমানা অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য জার্মানির উত্তর-পশ্চিম দিকের ভূখণ্ড পাবে পোল্যান্ড।

iv. রাশিয়ার প্রাপ্তি

[a] দক্ষিণ মাঞ্জুরিয়ার রেলপথ ব্যবহারের অধিকার।

[৬] কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ, শাখালিনের দক্ষিণাংশ এবং তার নিকটবর্তী উপদ্বীপ।

[c] দাইরেনের বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়, সেখানে রাশিয়াকে বিশেষ সুযোগসুবিধা ও অধিকার প্রদান করা হয়।

[d] পোর্ট আর্থারকে নৌ-ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে ৯১ বছরের লিজের অধিকার প্রদান করা হয়।

প্রশ্ন2. ঠান্ডা লড়াই কাকে বলে? এর পটভূমি লেখো?

অথবা, ‘ঠান্ডা লড়াই’ কাকে বলে? কোন্ পরিস্থিতিতে ‘ঠান্ডা লড়াই’-এর উদ্ভব হয়?

অথবা, ঠান্ডা যুদ্ধ বলতে কী বোঝ? কোন্ পরিস্থিতিতে ঠান্ডা যুদ্ধের উদ্ভব হয়?

অথবা, ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝায়? কোন্ পরিস্থিতিতে ঠান্ডা লড়াই এর উদ্ভব হয়?

অথবা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে পৃথিবীতে ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভবের কারণগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর- ঠান্ডা লড়াই

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে একদিকে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট, অপরদিকে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য গড়ে তোলার জন্য এই দুই রাষ্ট্রজোটের মধ্যে যে গোপন লড়াই শুরু হয় তা ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত।

ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি/ঠান্ডা লড়াই উদ্ভবের পরিস্থিতি

1 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী পর্যায়: ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের বলশেভিক বিপ্লবকে দমন করার জন্য পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগোষ্ঠী (আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান) জারতন্ত্রের সমর্থনে রাশিয়ায় সেনা পাঠায়। সমাজতন্ত্রকে সূচনাকালেই শেষ করে দেওয়া ছিল তাদের উদ্দেশ্য। কাজেই রাশিয়ায় সমাজতন্ত্রের জন্মলগ্ন থেকেই বিশ্বে ‘দ্বিমেরুকরণ রাজনীতি’র জন্ম হয়।

2 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পর্যায়

i. দ্বিতীয় রণাঙ্গনের ভূমিকা: যুদ্ধ চলাকালে জার্মানির প্রবল আক্রমণে দিশাহারা সোভিয়েত রাশিয়া পশ্চিমি জোটের কাছে জার্মানির বিরুদ্ধে পশ্চিম ইউরোপে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার অনুরোধ রাখে। কিন্তু এই অনুরোধকে নিয়ে চার্চিলের দুমুখো নীতি স্টালিনকে কুদ্ধ করে তোলে।

ii. পটস্ডাম সম্মেলন: জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ নিয়ে সোভিয়েত ও মার্কিন মতবিরোধ প্রকট হয়ে ওঠে। পটড্রাম সম্মেলন থেকেই ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে আসে।

3 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়

i. চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা: ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের অন্তর্গত ফালটনে ওয়েস্টমিনস্টার কলেজে এক ভাষণে (১৯৪৬ খ্রি., ৫ মার্চ) বলেন, উত্তর বালটিক সাগরের তীরবর্তী স্টেটিন থেকে দক্ষিণ অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের ট্রিয়েস্ট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল লৌহ যবনিকার (সোভিয়েত) আড়ালে ঢাকা। ফালটন বক্তৃতায় চার্চিল রুশ আগ্রাসন থেকে ইউরোপীয় সভ্যতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অর্পণ করেন।

ii. কেন্নানের বেষ্টনী তত্ত্ব: রাশিয়ায় কর্মরত প্রাক্তন সহকারী মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান, মি. এক্স ছদ্মনামে আমেকিার ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’ নামে পত্রিকায় এক প্রবন্ধে সোভিয়েতের আক্রমণাত্মক নীতি প্রতিহত করার জন্য এবং সোভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য ‘বেষ্টনী তত্ত্ব’ (১৯৪৭ খ্রি., ৪ জুলাই) প্রকাশ করেন, যা মার্কিন প্রশাসন মেনে নেয়।

iii. ট্রুম্যান নীতি: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় (১৯৪৭ খ্রি., ১২ মার্চ) তুরস্ক ও গ্রিস-সহ বিশ্বের যে-কোনো দেশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন, যা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক আইজ্যাক ডয়েস্টার ট্রুম্যান নীতিকে ঠান্ডা লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বলে অভিহিত করেছেন।

iv. মার্শাল পরিকল্পনা: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী জর্জ মার্শাল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এক পরিকল্পনা পেশ করেন, যা মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত। ইউরোপে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা নিয়ে ট্রুম্যান নীতির পরিপূরক হিসেবে উপস্থাপিত হয় এই মার্শাল পরিকল্পনা। ফলে আরও ঘনীভূত হয়ে ওঠে ঠান্ডা লড়াই।

v. সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে আর্থিক সহায়তা পরিষদ গঠন : সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গঠন করে কমিকন (COMECON বা Council for Mutual Economic Assistance) নামে একটি আর্থিক সহায়তা পরিষদ। মার্শাল পরিকল্পনার প্রত্যুত্তর হিসেবে কমিকন গঠিত হয়েছিল।

চেকোশ্লোভাকিয়া, রুমানিয়া, বালগেরিয়া, আলবানিয়া ও পূর্ব জার্মানি) নিয়ে গঠিত হয় ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা (Warsaw Pact Organisation, WPO), যা ছিল একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

প্রশ্ন3. ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করো।

সূচনা: মার্কিন যুক্তিরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্রজোটের মধ্যে সংঘটিত ঠান্ডা যুদ্ধের চরি বা এই যুদ্ধের দায়বদ্ধতা নিয়ে ইতিহাসবিদ ও রাষ্ট্রতত্ত্ববিদদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী ধারণা লক্ষ করা যায়। এই পরস্পরবিরোধী ধারণাগুলিই হল ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণা।

উত্তর- ঠান্ডা যুদ্ধের তাত্ত্বিক ধারণাসমূহ

1.চিরায়ত বা ঐতিহ্যবাহী ধারণা

1. সমর্থকগণ: ঐতিহ্যবাহী ধারণার সমর্থকগণ হলেন-মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ, কেন্নান, হার্বার্ট ফিস, ম্যাক্সিম লিটভিনভ, জন স্পেনিয়ার, উইলিয়াম এইচ. ম্যাকলিন, মার্টিন ম্যাককাউলে, জে.

আর. ম্যাককারথি, জন ডব্লিউ. ম্যাসন প্রমুখ।

ii. মূল বক্তব্য: ঐতিহ্যবাহী ধারণার মূল বক্তব্য হল-ঠান্ডা লড়াইয়ের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা সোভিয়েত ইউনিয়নই বেশি দায়ী। এই ধারণা অনুযায়ী মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের শ্রেণিসংগ্রাম থেকেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা ঘটেছে। এই মতামত অনুসারে রাশিয়া তার কমিউনিস্ট জগতের পরিধি বাড়াতে চেয়েছিল, আর তা করতে গিয়ে রাশিয়া অকমিউনিস্ট দেশগুলির প্রতি মিত্রতামূলক সম্পর্ক নষ্ট করে। রাশিয়ার এই অগ্রগতি প্রতিরোধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সচেষ্ট হলে বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা ঘটে।

2 সংশোধনবাদী ধারণা

i.সমর্থকগণ: ঠান্ডা যুদ্ধে সংশোধনবাদী তাত্ত্বিক ধারণার পথপ্রদর্শক ছিলেন ওয়াল্টার লিপম্যান। এই ধারণার অন্যান্য কয়েকজন সমর্থক ছিলেন ডি. এফ. ফ্লেমিং, গ্যাব্রিয়েল কলকো, গার অ্যালপারোভিজ, হেনরি এ. ওয়ালেস, ওলিভার এডওয়ার্ডস, উইলিয়াম অ্যাপেলম্যান উইলিয়ামস, ওয়াল্টার লেফেভর, নরম্যান গ্রেবনের ডেভিড হরোউইজ, লয়েড গার্ডনার প্রমুখ।

ii. মূল বক্তব্য: সংশোধনবাদী তাত্ত্বিক ধারণার সমর্থকগণের মূল বক্তব্য হল-সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্প্রসারণশীল নীতি নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতি ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল। এই ধারণা অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করতে না পেরে নিজস্ব প্রভাবাধীন অঞ্চলের সম্প্রসারণ ঘটাতে শুরু করে ও ঠান্ডা যুদ্ধের সূচনাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে।

3 বাস্তববাদী ধারণা

i. সমর্থকগণ: ঐতিহ্যবাহী এবং সংশোধনবাদী উভয় ধারণার মধ্যবর্তী অবস্থান গ্রহণ করে একদল গবেষক, ঐতিহাসিক ঠান্ডা যুদ্ধের যে তত্ত্ব পেশ করেছেন তা ‘বাস্তববাদী তত্ত্ব’ নামে পরিচিত। এই তত্ত্বের কয়েকজন সমর্থক হলেন হ্যানস্ জে. মরগ্যানথাউ, লুই জে. হ্যালে, রিচার্ড ব্রুকেট, জন লুইস গ্যাডিস প্রমুখ।

ii. মূল বক্তব্য: বাস্তববাদী ধারণার সমর্থকেরা ঠান্ডা যুদ্ধের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোনো-একটি পক্ষকে চূড়ান্তভাবে দায়ী করায় বিশ্বাসী নন। এঁদের ধারণায় ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনার জন্য সোভিয়েত বা মার্কিন উভয়পক্ষই দায়ী ছিল অথবা কোনো পক্ষই দায়ী ছিল না।

4.অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাখ্যা: কেউ কেউ মনে করেন যে, ঠান্ডা লড়াই ছিল প্রকৃতপক্ষে আমেরিকার অর্থনৈতিক সম্প্রসারণের অন্যতম দিক। গ্যাব্রিয়েল কলকো, কর্ডেল প্রমুখ এই অভিমতের সমর্থক। গ্যাব্রিয়েল কলকো দেখিয়েছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। আমেরিকা তার এই আর্থিক শক্তিকে ব্যবহার করে বিশ্ব-অর্থনীতির প্রধান চালকের আসন লাভের চেষ্টা করেছিল। এই লক্ষ্যে আমেরিকা তার বিদেশনীতিতে পরিবর্তন ঘটায়। মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশকে বিপুল পরিমাণ অর্থসাহায্য দিয়ে আমেরিকা যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে নিজেকে পরিত্রাতা হিসেবে তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু বৈদেশিক ক্ষেত্রে আমেরিকার অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়নের প্রধান বাধা ছিল সোভিয়েত রাশিয়া।

উপসংহার: রাশিয়া ও তার অনুগত রাষ্ট্রগুলির বিরুদ্ধে আমেরিকা একপ্রকার ক্রুসেড ঘোষণা করে। এর ফলেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্রপাত ঘটে।

প্রশ্ন4. ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝায়? ঠান্ডা লড়াই-এর তাত্ত্বিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করো।

অথবা, ‘ঠান্ডা লড়াই’ বলতে কী বোঝায়? এর উদ্ভব সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যাগুলি আলোচনা করো।

ঠান্ডা লড়াই

উত্তর- TOPIC [A]-এর ২ নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘ঠান্ডা লড়াই’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

ঠান্ডা লড়াই-এর তাত্ত্বিক ভিত্তি

TOPIC [A]-এর ও নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরটি দ্যাখো।

প্রশ্ন5. ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্রমবিকাশের ওপর আলোকপাত করো।

সূচনা: রুশ নেতা স্টালিনকে বাদ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল আটলান্টিক সনদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বিশ্ব ব্যবস্থাকে গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেন। আটলান্টিক সনদের ঘোষণা (১৯১৪ খ্রি., ১৪ আগস্ট)-কে কেন্দ্র করে সোভিয়েত ও পশ্চিমি রাষ্ট্রজোটের পারস্পরিক দূরত্ব বাড়ে, যা পরবর্তীকালে ঠান্ডা লড়াইয়ের পথকে প্রশস্ত করে।

উত্তর- ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্রমবিকাশ (১৯৪২-৪৮ খ্রি.)

1 ইরান নিয়ে মতপার্থক্য: পারস্যের তৈলসম্পদ যাতে অক্ষশক্তি হস্তগত করতে না পারে সেই লক্ষ্যে গ্রেট ব্রিটেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পারস্যের মধ্যে এক ত্রি-পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তি বলে দক্ষিণাঞ্চলে ব্রিটিশ এবং উত্তরাঞ্চলে সোভিয়েত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ স্বীকার করে নেওয়া হয়। এ ছাড়াও স্থির হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে দুই দেশ পারস্য থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। পরে পারস্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রুশ হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে পারস্য রাষ্ট্রসংঘে অভিযোগ জানালে দুই (পারস্য ও রাশিয়া) দেশের মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের মধ্যস্থতায় এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (এপ্রিল, ১৯৪৬ খ্রি.)। স্থির হয় ২৫ বছরের জন্য উত্তর পারস্যের তৈল সম্পদের ওপর রুশ অধিকার স্বীকৃতি পাবে। কিন্তু ১৯৪৭ খ্রি. নবগঠিত পারস্যের পার্লামেন্ট (মজলিস) এই চুক্তি বাতিল করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্যের বিনিময়ে তার সঙ্গে পারস্য নতুন করে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এই চুক্তির ভিত্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারস্যকে সামরিক ও অসামরিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সম্পদ নিয়ে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির সূচনা হয়।

2 দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্নে মতভেদ: দ্বিতীয় রণাঙ্গনের প্রশ্নে রাশিয়া উদ্‌দ্বিগ্ন হয়ে পড়লে চার্চিল ঘোষণা (১৯৪২ খ্রি., মে) করেন, “১৯৪২-এর আগস্ট কিংবা সেপ্টেম্বরে ব্রিটেন মহাদেশীয় ভূখণ্ডে (ইউরোপের কোনো স্থানে) অবতরণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।” কিন্তু ঘোষণার কিছু দিন পরে (১৯৪২ খ্রি., জুলাই) ব্রিটেন ইউরোপে দ্বিতীয় রণাঙ্গনের পরিকল্পনা ত্যাগ করে। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে কায়রো ও তেহরান বৈঠকে চার্চিল, রুজভেল্ট ও স্টালিন দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কোথায় দ্বিতীয় রণাঙ্গন খোলা হবে, তা নিয়ে মতবিরোধ শুরু হয়।

3 গ্রিস সমস্যা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন হিটলারের নেতৃত্বে জার্মান সেনাবাহিনী গ্রিস দখল করেছিল। কিন্তু ব্রিটিশ বাহিনী গ্রিসকে জার্মান-মুক্ত করে (১৯৪৪ খ্রি.)। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে গ্রিসকে মুক্তাঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মোকাবিলার লক্ষ্যে গ্রেট ব্রিটেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চায়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান গ্রিসে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য পাঠান। ফলে রাশিয়া এবং পশ্চিমি শক্তিবর্গের মধ্যে অবিশ্বাস ও পারস্পরিক বিদ্বেষ বেড়ে যায়।

4 তুরস্ক বিরোধ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের শেষার্ধে রাশিয়া তুরস্কের পূর্বদিকে অবস্থিত প্রদেশের ওপর তার দাবি জানায়। কৃষ্ণসাগরের কাছাকাছি সমস্ত দেশের কাছে দার্দানালিকা প্রণালী উন্মুক্ত রাখার কথা বলা হয়। এ ছাড়া কৃষ্ণসাগরের কাছাকাছি অবস্থিত নয় এমন দেশের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া দার্দানালিকা প্রণালীতে যুদ্ধজাহাজ যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য তুরস্কের ওপর সোভিয়েত রাশিয়া চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু তুরস্ক সেই চাপকে অগ্রাহ্য করে আমেরিকার কাছে সাহায্য চায়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান তুরস্কে বিশেষ অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য পাঠালে ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

5 পটস্ডাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত: পটড্রাম সম্মেলনে জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ নিয়ে সোভিয়েত ও মার্কিন মতবিরোধ প্রকট হয়ে ওঠে। বলা হয়, পটড্রাম সম্মেলন থেকেই ঠান্ডা লড়াই প্রকাশ্যে আসে।

6 সোভিয়েতবিরোধী নীতিসমূহ

i. চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা: ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার মিসৌরি প্রদেশের অন্তর্গত ফালটনের ওয়েস্টমিনস্টার কলেজে এক ভাষণে (১৯৪৬ খ্রি., ৫ মার্চ) রুশ আগ্রাসন থেকে ইউরোপীয় সভ্যতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অর্পণ করেন।

ii. কেন্নানের বেষ্টনী তত্ত্ব: রাশিয়ায় কর্মরত প্রাক্তন সহকারী মার্কিন রাষ্ট্রদূত জর্জ এফ. কেন্নান, মি. এক্স ছদ্মনামে আমেরিকার ‘ফরেন অ্যাফেয়ার্স’ নামে পত্রিকায় এক প্রবন্ধে সোভিয়েতে আক্রমণাত্মক নীতি প্রতিহত করার জন্য এবং সোভিয়েত প্রভাবকে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য ‘বেষ্টনী তত্ত্ব’ (১৯৪৭ খ্রি., ৪ জুলাই) প্রকাশ করেন, যা মার্কিন প্রশাসন মেনে নেয়।

7.ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা: [i] আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে এক বক্তৃতায় (১৯৪৭ খ্রি., ১২ মার্চ) তুরস্ক ও গ্রিস-সহ বিশ্বের যে-কোনো দেশকে সোভিয়েত অগ্রাসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দেন। [ii] ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার বিদেশমন্ত্রী জর্জ মার্শাল যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপে আর্থিক পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে এক পরিকল্পনা পেশ করেন। ফলে ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্রমবিকাশ ঘটে।

উপসংহার: ঠান্ডা লড়াইয়ের ক্রমবিকাশ সার্বিকভাবে বিশ্বজুড়ে এক যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করলেও শেষপর্যন্ত, সোভিয়েত-মার্কিন দু-পক্ষের প্রচেষ্টায় কোনো দেশবাসীকে আর একটি বিশ্বযুদ্ধ দেখতে হয়নি।

প্রশ্ন6. বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ে ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনার ভূমিকা কী ছিল? ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনার গুরুত্ব লেখো।

উত্তর- ঠান্ডা লড়াই

1 ট্রুম্যান নীতি ও ঠান্ডা লড়াই

i. পরিচিতি: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন সংসদের এক যৌথ অধিবেশনে ট্রুম্যান বলেন যে, এখন থেকে পৃথিবীর যে-কোনো স্থানে স্বাধীন জনগণ যদি সশস্ত্র সংখ্যালঘু অথবা বাইরের শক্তির আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করাই হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। এই ঘোষণাই ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত। বলা বাহুল্য, ট্রুম্যান ‘সশস্ত্র সংখ্যালঘু’ বলতে সাম্যবাদী বিদ্রোহীদের এবং ‘বাইরের শক্তি’ বলতে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বুঝিয়েছিলেন।

ii. পটভূমি

[a] চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত মিসৌরি প্রদেশের ফালটন শহরে এক ভাষণে সাম্যবাদের প্রসার রোধ করার লক্ষ্যে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

[b ] কেন্নানের বেষ্টনী নীতি: মার্কিন বিদেশনীতির উপদেষ্টা জর্জ এফ. কেন্নান সোভিয়েত সম্প্রসারণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে এক প্রবন্ধ লিখে জানান, রুশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অহেতুক কোনো যুদ্ধে না গিয়ে আমেরিকার উচিত হবে যে অঞ্চলে’ সোভিয়েত প্রভাব রয়েছে তাকে সীমাবদ্ধ রাখা।

iii. উদ্দেশ্য

(a) রাজনৈতিক: যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান সোভিয়েত বা সাম্যবাদী প্রভাব প্রতিহত করার জন্য প্রতিরোধমূলক রণকৌশল গ্রহণ।

(b) অর্থনৈতিক: ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার অন্যতম লক্ষ্য ছিল অর্থসাহায্যের নামে অন্যান্য দেশকে অস্ত্র ও শিল্পজাত দ্রব্য বিক্রি করে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানো।

2. মার্শাল পরিকল্পনা ও ঠান্ডা লড়াই

1. পরিচিতি: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্শাল তাঁর ভাষণে বলেন-যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, হতাশা, বেকারত্ব-সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকটমোচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অর্থসাহায্য দেবে। “আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্যকে সফল করতে একটি পরিকল্পনা পেশ করেন। ওই পরিকল্পনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত সমগ্র ইউরোপেই আর্থিক পুনরুজ্জীবনের কথা বলা হয়। এই উদ্দেশ্যে তিনি তাঁর বক্তৃতায় European Recovery Programme বা ERP নামে এক কর্মসূচির কথা ঘোষণা করেন। এটিই মার্শাল পরিকল্পনা নামে খ্যাত।”

ii. পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল। এইসমস্ত দেশ আমেরিকার কাছ থেকে অর্থসাহায্য না পেলে স্বাভাবিকভাবেই সোভিয়েত রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে, তখন আর এইসমস্ত দেশকে সাম্যবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত করা যাবে না। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্শাল এই সত্যের পটভূমিকায় তাঁর পরিকল্পনার নীতি গ্রহণ করেন।

iii. উদ্দেশ্য

[a] সোভিয়েত প্রভাবমুক্ত ইউরোপ গঠন: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের দেশগুলিকে অর্থসাহায্য দিয়ে তাদের সোভিয়েত প্রভাব থেকে মুক্ত করা।

[b] মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা: অর্থসাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলির অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও মার্কিন আধিপত্য কায়েম করা।

iv. প্রয়োগ: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে পশ্চিম জার্মানি-সহ পশ্চিম ইউরোপের ১৬টি দেশ মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। এইসমস্ত দেশ মিলিত হয়ে গঠন করেছিল OEEC (Organisation for European Economic Cooperation) বা ‘ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা’। মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পশ্চিম জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, লুক্সেমবুর্গ, ডেনমার্ক, গ্রিস, আইসল্যান্ড, আয়ার্ল্যান্ড, ইটালি, নেদারল্যান্ডস্, নরওয়ে, পোর্তুগাল, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও তুরস্ক।

ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনার গুরুত্ব

1 আর্থিক স্বয়ম্ভরতা বৃদ্ধি: ইউরোপের ১৬টি দেশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে তিন বছরে ১২৫০ কোটি ডলার লাভ করে। এর ফলেই ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি আর্থিক স্বয়ম্ভরতা ফিরে পায়।

2 পুঁজিবাদী প্রবণতা বৃদ্ধি: গণতান্ত্রিক দেশগুলি সোভিয়েত সাম্যবাদ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোটের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

3 কমিউনিস্ট দলের পরাজয়: ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী দলগুলি নির্বাচনে কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলিকে পরাজিত করতে সমর্থ হয়। ফলে সেসব দেশে ধনতান্ত্রিক ধাঁচের ‘গণতান্ত্রিক সরকার’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন7. ট্রুম্যান নীতি কী? মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্যগুলি। কী ছিল?

উত্তর-ট্রুম্যান নীতি

TOPIC [A]-এর 6 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘ট্রুম্যান নীতি ও ঠান্ডা লড়াই’ শীর্ষক অংশের ‘পরিচিতি’ ও ‘পটভূমি’ অংশ দুটি দ্যাখো।

মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য

TOPIC [A]-এর 6 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘মার্শাল পরিকল্পনা ও ঠান্ডা লড়াই’ শীর্ষক অংশের ‘পরিচিতি’ ও ‘উদ্দেশ্য’ অংশ দুটি দ্যাখো।

প্রশ্ন8: ঠান্ডা লড়াই-এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? তৃতীয় বিশ্বের ওপর ঠান্ডা লড়াইয়ের কতটা প্রভাব পড়েছিল?

উত্তর-ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ‘ঠান্ডা লড়াই’। ঠান্ডা লড়াইয়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল-

1 কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে মহাশক্তিধর (Super-Power) রাষ্ট্ররূপে আবির্ভাব ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের। তাই ঠান্ডা লড়াই বলতে বোঝায় মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সারা বিশ্বে নিজ নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে।

2 বিভিন্ন দেশের সমর্থন লাভের দ্বন্দ্ব: উভয় রাষ্ট্রই বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে ও তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ করতে তৎপর ছিল। বিভিন্ন দেশের সমর্থন লাভের দ্বন্দ্বকে ঘিরে উদ্ভব ঘটে দ্বিমেরু রাজনীতি (Bipolar Politics)-র।

3 রাজনৈতিক মতাদর্শগত বিভেদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও সাম্যবাদের পক্ষে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। এর পরিণতি হিসেবে ঠান্ডা লড়াই নামে রাজনৈতিক মতবাদের লড়াই শুরু হয়।

4 সামরিক বলবৃদ্ধি: কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইকে কেন্দ্র করে দুইশক্তিজোট ভিতরে ভিতরে জোর সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে। প্রবল থেকে প্রবলতর শক্তিসম্পন্ন মারণাস্ত্র তৈরি ও সেগুলির পরীক্ষার নামে যুদ্ধ মহড়া শুরু হয় দুই শিবিরে। এইভাবে উভয়পক্ষই প্রবল সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে। বিশ্বে আতঙ্কজনক বাতাবরণ গড়ে ওঠে, যা ঠান্ডা লড়াই নামে অভিহিত হয়।

5 আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা: দু-পক্ষেরই অনুগত কোনো রাষ্ট্র কোনো অঞ্চলে যুদ্ধরত হলে ওই যুদ্ধকে ওই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ রাখতে উভয়েই তৎপর হয়ে ওঠে।

6 ছায়া যুদ্ধ: আমেরিকা ও রাশিয়া উভয় পক্ষের সামরিক শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও কোনো পক্ষই একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে অংশ নেয়নি। কেবল যুদ্ধের আবহ বজায় রেখেছিল।

তৃতীয় বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব

1 ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্তে জড়িয়ে পড়া: দুই বৃহৎ শক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলেই ঠান্ডা লড়াই পরিবেশের উৎপত্তি। কিন্তু ওই দুই শক্তি কখনোই নিজেদের মধ্যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েনি। অথচ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির পক্ষে ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্ত থেকে দূরে সরে থাকা কিন্তু সম্ভব হয়নি।

প্রশ্ন9. ঠান্ডা যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা করো। ঠান্ডা যুদ্ধের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর- ঠান্ডা যুদ্ধের পটভূমি

TOPIC [A]-এর ২ নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘ঠান্ডা লড়াইয়ের পটভূমি/ঠান্ডা লড়াই উদ্ভবের পরিস্থিতি’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

ঠান্ডা যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য

TOPIC [A]-এর ৪ নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহ’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

2 আমেরিকা ও রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে জাপান, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের আধিপত্য বিলুপ্ত হয়েছিল। এর ফলে এশিয়া মহাদেশের এক বিশাল অংশে যে রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা পূরণের লক্ষ্যে এগিয়েছিল ধনতান্ত্রিক আমেরিকা বা সমাজতান্ত্রিক রাশিয়া উভয় দেশই। ফলে ঠান্ডা লড়াইয়ের যে সূত্রপাত ইউরোপে হয়েছিল, তা ওই দুই মহাশক্তির হস্তক্ষেপে এবার এশিয়া মহাদেশেও ছড়িয়ে পড়ল। তৃতীয় বিশ্বও তা থেকে রক্ষা পেল না। দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ, সুয়েজ সংকট, আরব-ইজরায়েল বিরোধ, ভিয়েতনাম সংকট, ইরাক-ইরান যুদ্ধ, ইরাক-কুয়েত লড়াই, পাক- ভারত যুদ্ধ ইত্যাদি হল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

3 শক্তিজোটগুলির প্রভাব: নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে বৃহৎ শক্তিবর্গের গড়ে তোলা একাধিক শক্তিজোট তৃতীয় বিশ্বের ওপর ঠান্ডা লড়াইকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদতে কমিউনিস্ট চিনকে প্রতিরোধ ও ভিয়েতনামে কমিউনিস্ট আগ্রাসন রোধ করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা (SEATO)। এ ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে গড়ে তোলা হয় মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা সংস্থা (MEDO) (১৯৫৫ খ্রি.)। পরবর্তীকালে এই সংস্থারই নাম হয় বাগদাদ চুক্তি বা সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন (CENTO)। মধ্যপ্রাচ্যে রুশ আধিপত্য রোধ ও সেখানকার খনিজ তেল সম্পদের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব স্থাপনই ছিল এটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য।

প্রশ্ন10. ঠান্ডা লড়াই কী? এর বৈশিষ্ট্য লেখো। কোন্ পরিস্থিতিতে ঠান্ডা লড়াই-এর অবসান ঘটে।

অথবা, ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝ? এর বৈশিষ্ট্য আলোচনা সহ কোন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা লড়াই-এর অবসান ঘটে তা আলোচনা করো।

উত্তর- ঠান্ডা লড়াই

TOPIC [A]-র 2 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘ঠান্ডা লড়াই’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

ঠান্ডা লড়াই-এর বৈশিষ্ট্য

TOPIC [A]র ৪ নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রধান যেশিষ্ট্যসমূহ’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

ঠান্ডা লড়াই-এর অবসানকাল

প্রায় ৫০ বছর ধরে চলা ঠান্ডা যুদ্ধের ঠিক কবে অবসান ঘটে তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। তবে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির সময়কে অনেকে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানকাল বলে উল্লেখ করেছেন, কারণ এর ফলে বিশ্বরাজনীতি একমেরকেন্দ্রিক হয়ে যায়।

বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত একাধিক সম্মেলনে গৃহীত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবসান ঘটে।

1. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বৈঠক: সোভিয়েত ও মার্কিন নেতৃত্বাধীন দুই জোটের মধ্যেকার ঠান্ডা লড়াই-এর অবসানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় বেশ কয়েকটি শীর্ষ বৈঠক। এক্ষেত্রে বলা যায়, জেনেভায় আয়োজিত আফগানিস্তান সংকটকে কেন্দ্র করে পরমাণু যুদ্ধ রদের আলোচনা ছিল ঠান্ডা লড়াই অবসানের প্রথম পদক্ষেপ। এর পরে ওয়াশিংটন সম্মেলন (১৯৮৭ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর), মস্কো শীর্ষ বৈঠক (১৯৮৮ খ্রি., ২৯ মে), মাল্টা শীর্ষ সম্মেলন, হেলসিংকি শীর্ষ বৈঠক প্রভৃতি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। শেষপর্যন্ত ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের প্যারিস শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি কুশ নিজেই ঠান্ডা লড়াই-এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

2. শান্তিপূর্ণ সহাবসস্থান নীতি: সোভিয়েত রাশিয়ার দিক থেকে প্রথমে কুশ্চেভ, পরে ব্রেজনেভ-কোসিগিনের আমলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি স্থাপন রুশ বিদেশনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। অপর দিকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান প্রক্রিয়া শুরু হয়।

3. বহুমেরু রাজনীতির উত্থান: ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দ্বিমেরুকরণের পরিবর্তে বহুমেরুকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা ঘটে। তৃতীয় বিশ্ব থেকে চিনের উত্থান এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রবর্গ কর্তৃক স্বাধীন বিদেশনীতি গ্রহণ বহুমেরু রাজনীতির উত্থানকে ত্বরান্বিত করে। এতে শঙ্কিত হয়ে সোভিয়েত ও মার্কিন উভয় রাষ্ট্রই আরও সহনশীল হতে বাধ্য হয়। ফলে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবসানের সূচনা ঘটে।

প্রশ্ন ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সামরিক মৈত্রী চুক্তির পর্যালোচনা করো।

অথবা, ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রেক্ষাপটে গড়ে ওঠা মার্কিন ও সোভিয়েত সামরিক জোটের বর্ণনা দাও।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটসমূহ

1 ন্যাটো

i. গঠন: বিশ্বে সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে আর্থার ভ্যান্ডেনবার্গ আমেরিকার সেনেটে ‘ভ্যান্ডেনবার্গ রেজোলিউশন’ পেশ করলে (১৯৪৮ খ্রি., ১১ জুন) তা অনুমোদিত হয়। স্থির হয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থরক্ষার জন্য আমেরিকার বাইরে অবস্থিত রাষ্ট্রগুলির (নন-আমেরিকান পাওয়ার) সঙ্গে যৌথ সামরিক চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে। এরই ফলশ্রুতি হিসেবে ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেয় ন্যাটো অর্থাৎ উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (North Atlantic Treaty Organisation)।

ii. সদস্য: ন্যাটোর প্রাথমিক সদস্য ছিল ১২টি (বর্তমানে ২৮ টি) দেশ। প্রথমে বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, লুক্সেমবুর্গ, নেদারল্যান্ডস্, নরওয়ে, পোর্তুগাল, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর সদস্য হয়। পরে আরও কয়েকটি দেশ এতে যোগ দেয়।

iii. উদ্দেশ্য: [a] সোভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রোধ ও সোভিয়েত আগ্রাসনের হাত থেকে রক্ষার লক্ষ্যে এটি গঠিত হয়। [b] ন্যাটো গঠনের অপর একটি উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিম ইউরোপে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। [c] আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

2 অ্যানজাস

i. গঠন: কমনওয়েলথের সদস্যভুক্ত কয়েকটি দেশ একজোট হয়ে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের, ১ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষর করে পারস্পরিক নিরাপত্তা চুক্তি বা অ্যানজাস। এর সদর দপ্তর অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরাতে অবস্থিত।

ii. সদস্য: অ্যানজাস নামে নিরাপত্তা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ড। এক সপ্তাহের মধ্যে জাপান, আরও ৪৮টি দেশ এই চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

iii. উদ্দেশ্য: প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে গঠিত হয় অ্যানজাস (Australia, New Zealand, United States Security Treaty, সংক্ষেপে ANZUS)।

3 সিয়াটো

1. গঠন: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে কেন্দ্র করেও একটি সংস্থা গড়ে ওঠে (১৯৫৪ খ্রি., ৮ সেপ্টেম্বর)। এটির নাম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চুক্তি সংস্থা বা সিয়াটো (South-East Asia Treaty Organisation সংক্ষেপে SEATO)।

ii. সদস্য: এই সংগঠনটির সদস্য ছিল ৮টি দেশ, যথা- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ফিলিপিনস। এর প্রধান কার্যালয় ব্যাংককে অবস্থিত।

iii. উদ্দেশ্য: মূলত কমিউনিস্ট চিনের বিরুদ্ধাচরণ এবং ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের অগ্রগতি রোধের লক্ষ্যেই মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই জোট গঠিত হয়েছিল।

4 সেন্টো

i. গঠন: ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে গঠিত হয় মধ্যপ্রাচ্য প্রতিরক্ষা সংস্থা বা মেডো (Middle East Defence Organisation, সংক্ষেপে MEDO)। চুক্তিটি বাগদাদে স্বাক্ষরিত হওয়ায় এটি বাগদাদ চুক্তি নামেও পরিচিত। পরবর্তীকালে এই সংস্থার নাম হয় সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা সেন্টো (CENTO)।

ii. সদস্য: গঠনের সময় এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিল গ্রেট ব্রিটেন, পাকিস্তান, ইরাক ও ইরান। এই সংস্থাটির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত হয়।

iii. উদ্দেশ্য: এই সংস্থাটি সোভিয়েত বিরোধিতার এবং মার্কিন পুঁজিবাদী আদর্শ প্রচারের উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠে।

সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট

1 ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা: আমেরিকার নেতৃত্বে গড়ে-ওঠা পশ্চিমি সামরিক শক্তিজোট ন্যাটোর পালটা হিসেবে গড়ে ওঠে রাশিয়ার নেতৃত্বে সামরিক জোট ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা (Warsaw Pact Organisation (WPO) or Warsaw Treaty Organisation (WTO)]। এই চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়া চেয়েছিল তার নিজের এবং তার সহযোগী দেশগুলির নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান করতে।

i. চুক্তিস্বাক্ষরকারী দেশসমূহ: ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে ওয়ারশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট দেশগুলির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তিতে অংশ নিয়েছিল রাশিয়া, বালগেরিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, পূর্ব জার্মানি, আলবানিয়া, রুমানিয়া এবং চেকোশ্লোভাকিয়া।

ii. উদ্দেশ্য: [a] এই সমস্ত দেশ নিজেদের মধ্যে জোটবদ্ধ হয়েছিল যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। [b] পারস্পরিক অর্থ- সাহায্যের কর্মসূচি গ্রহণ ও তা রূপায়ণের লক্ষ্যে রাশিয়ার নেতৃত্বে ভবিষ্যতে এক আর্থিক সহায়তা পরিষদ গঠনের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়।

2 কমিকন: রাশিয়ার নেতৃত্বে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে গঠিত হয় পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা বা (Council for Mutual Economic Assistance বা COMECON)। এটি সামরিক সংস্থা না হলেও সামরিক জোটের সহায়ক হিসেবে কাজ করত।

প্রশ্ন12.ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা কী ছিল? ইউরোপে কীভাবে পরস্পরবিরোধী সামরিক জোট গড়ে ওঠে?

উত্তর- ট্রুম্যান নীতি: TOPIC [A]-র 6 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘ট্রুম্যান নীতি ও ঠান্ডা লড়াই’ শীর্ষক অংশের ‘পরিচিতি’ অংশটি দ্যাখো।

মার্শাল পরিকল্পনা: TOPIC [A]-র 6 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘মার্শাল পরিকল্পনা ও ঠান্ডা লড়াই’ শীর্ষক অংশের ‘পরিচিতি’ অংশটি দ্যাখো।

ইউরোপে পরস্পরবিরোধী সামরিক জোট গঠন

TOPIC [A]-র 11 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরটি দ্যাখো।

প্রশ্ন13. বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের সামগ্রিক প্রভাব আলোচনা করো। সংক্ষেপে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর- বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের সামগ্রিক প্রভাব

1 দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির উদ্ভবে: ঠান্ডা লড়াই ‘দ্বিমেরুকরণ রাজনীতি’র সৃষ্টি করেছিল। অর্থাৎ যুদ্ধ পরবর্তীকালে বিশ্বে যে দুটি  মহাশক্তির (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন) বিকাশ ঘটেছিল তাতে অন্য কোনো তৃতীয় শক্তির ভূমিকা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। উভয় শক্তিকে কেন্দ্র করেই পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক ও সামরিক দুনিয়া দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল।

2 আর্থসামাজিক উন্নয়নের গতি রোধে: ঠান্ডা লড়াই প্রত্যেক দেশকে নিজ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহ করার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ করেছিল। ফলে সেইসমস্ত দেশের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় ভীষণভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এই কারণে প্রতিটি দেশেরই আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি দারুণভাবে ব্যাহত হয়েছিল।

3. আঞ্চলিক সামরিক জোট গঠনে: ঠান্ডা লড়াইয়ের একটি অনুষঙ্গ ছিল বৃহৎশক্তিবর্গের আঞ্চলিক সামরিক জোট গড়ে তোলা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে ন্যাটো, সিয়াটো, মেডো (পরবর্তীকালে সেন্টো), অ্যানজাস আর রাশিয়ার তত্ত্বাবধানে ‘ওয়ারশ চুক্তি সংস্থা’ গড়ে তোলা হয়। ওইসমস্ত সামরিক জোটগঠন বিশ্বশান্তির পক্ষে মোটেই বাঞ্ছনীয় ছিল না। এগুলি একদিকে যেমন যুদ্ধের আশঙ্কাকে বজায় রেখেছিল, অন্যদিকে তেমনি রাষ্ট্রসংঘের গুরুত্বকে যথেষ্টই হ্রাস করে দিয়েছিল।

4 তৃতীয় বিশ্বের ধারণা গঠনে: ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্ত থেকেই জন্ম নিয়েছিল তৃতীয় বিশ্বের ধারণা। তাই সেই সময়ের সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এশিয়া, আফ্রিকা, লাটিন আমেরিকার দেশগুলি (তৃতীয় বিশ্ব) স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্তে শামিল করতে চায়নি। তবুও ওই সময়কালে তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে সংঘর্ষ ঘটেছিল তার পেছনে অনেক ক্ষেত্রেই কিন্তু ঠান্ডা লড়াইয়ের ভূমিকা ছিল।

5 জোটনিরপেক্ষ রাজনীতির উদ্ভবে: ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাবেই বিশ্বে জন্ম নিয়েছিল জোটনিরপেক্ষতা। জোটনিরপেক্ষ নীতি হল আমেরিকা বা সোভিয়েত ইউনিয়ন-কোনো জোট বা গোষ্ঠীর সঙ্গেই নিজেদের যুক্ত না করা। অর্থাৎ কী গণতান্ত্রিক ধনতন্ত্রবাদের জোট, কী সমাজতান্ত্রিক শিবির, । উভয়ের থেকেই সমদূরত্ব বজায় রাখা। এই নিরপেক্ষ রাজনীতির উদ্ভবে সাহায্য করে ঠান্ডা লড়াই।

6 বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকট সৃষ্টিতে: ঠান্ডা লড়াইয়ের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা দিয়েছিল কোরিয়া যুদ্ধ (১৯৫০-৫৩ খ্রি.), বার্লিন সংকট (১৯৬১ খ্রি.), কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট (১৯৬২ খ্রি.), আফগানিস্তানে সোভিয়েত যুদ্ধ (১৯৭৯-৮৯ খ্রি.), ন্যাটো সংকট (১৯৮৩ খ্রি.) প্রভৃতি।

ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকৃতি

1 যুদ্ধপরিবেশ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয় পক্ষই নিজেদের মধ্যে সরাসরি কোনো শক্তিপরীক্ষায় অবতীর্ণ না হলেও এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলিকে পরোক্ষভাবে মদত দিয়ে যুদ্ধের বাতাবরণ বজায় রেখেছিল। এসময় উভয় পক্ষই বিপজ্জনক পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় নেমেছিল।

2 সংঘর্ষহীনতা: উদ্দেশ্যমূলক প্রচার, অন্তর্ঘাত, এমনকি সীমিত কিছু নাশকতামূলক কাজকর্মকে ঠান্ডা লড়াই উৎসাহ দিলেও কোনো ক্ষেত্রেই তা শেষপর্যন্ত ব্যাপক সংঘর্ষে পরিণত হয়নি। উভয়পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা থাকলেও যুদ্ধের মর্মান্তিক পরিণতির ব্যাপারে উভয়েই ছিল সতর্ক। ফলে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ ঘটেনি।

3 আদর্শগত দ্বন্দ্ব: ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব দেখা যায়। একদিকে সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদের প্রসার অপরদিকে মার্কিন | নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী আগ্রাসনে তীব্র আদর্শগত দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

14. ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? সমগ্র বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর- ঠান্ডা লড়াইয়ের বৈশিষ্ট্য

TOPIC [A]-র ৪ নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রধান ■ বৈশিষ্ট্যসমূহ’ শীর্ষক অংশ দ্যাখো।

সমগ্র বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব

TOPIC [A]-র 13 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের সামগ্রিক প্রভাব’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

প্রশ্ন 15. বার্লিন অবরোধ বা বার্লিন সংকট আলোচনা করো।

অথবা, বার্লিন অবরোধ সম্পর্কে আলোচনা করো।

অথবা, বার্লিন সংকট পর্যালোচনা করো। ঠান্ডা লড়াই-এ বার্লিন অবরোধের গুরুত্ব কী ছিল?

সূচনা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে পটড্রাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জার্মানিকে রাশিয়া, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড-এই চারটি দেশের কর্তৃত্বাধীনে চারটি পৃথক অঞ্চলে ভাগ করা হয়। এখানে প্রতিটি রাষ্ট্র নিজেদের আলাদা আলাদা উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে চেয়েছিল। । রাশিয়া চেয়েছিল তার অধিকার করা পূর্ব জার্মানিতে এক তাঁবেদার সরকার। প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু মিত্রশক্তি চেয়েছিল তাদের অধিকার করা অঞ্চলগুলি নিয়ে পশ্চিম জার্মানি গঠন করতে। এর ফলে জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় বার্লিন সংকট।

উত্তর- বার্লিন অবরোধ বা বার্লিন সংকট

প্রেক্ষাপট

1. ‘৫টি ডি’ প্রয়োগ: পটস্ডাম সম্মেলনে ঠিক হয়, জার্মানির ওপর ‘৫টি ডি’ (Five D’s)-Demilitarisation (বেসামরিকীকরণ), Deindustrialisation (অব-শিল্পায়ন), Decentralisation (বিকেন্দ্রীকরণ), Democratization (গণতন্ত্রীকরণ), Denazification (অব-নাৎসিবাদীকরণ) প্রয়োগ করা হবে।

ii. জার্মানির বিভাজন: জার্মানিকে চার ভাগে ভাগ করা হবে-

[a] রাশিয়ার অঞ্চল: ওডার-নিস নদীর তীর বরাবর এল্ব পর্যন্ত অঞ্চলের অধিকার পাবে রাশিয়া।

[b] মার্কিন অঞ্চল: জার্মানির দক্ষিণ অঞ্চলের অধিকার পাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

[c] ব্রিটিশ অঞ্চল: জার্মানির উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের অধিকার পাবে ব্রিটেন।

[d] ফ্রান্সের অঞ্চল: জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অধিকার পাবে ফ্রান্সে।

III. একই অর্থনৈতিক নীতি: চারভাগে বিভক্ত হলেও সমগ্র জার্মানিতে অর্থনৈতিক নীতি থাকবে একটিই। জার্মানির চারটি ভাগে একই অর্থনীতি চালু রাখার জন্য বার্লিনে গঠিত হবে ACC (Allied Control Council) |

iv. বার্লিনের বিভাজন: জার্মানির রাজধানী বার্লিনকেও চার ভাগে ভাগ করা হবে বলে ঘোষণা করা হয়।

সোভিয়েত কর্তৃক বার্লিন অবরোধ: বার্লিন ছিল পূর্ব জার্মানির অংশ আর তাই তা ছিল রাশিয়ার কর্তৃত্বাধীন। আবার পশ্চিম জার্মানিতে মার্কিনিরা যে আর্থিক উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় তাতে রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়েছিল। এর ফলে রাশিয়া পশ্চিমি রাষ্ট্রজোটের পূর্ব বা পশ্চিম বার্লিনে প্রবেশের সড়কপথ (যা ছিল রাশিয়ার অধীনস্থ) অবরোধ করে (১৯৪৮ খ্রি., ২৪ জুন)। এই ঘটনা বার্লিন অবরোধ (Berlin Blockade) নামে পরিচিত।

সংকটের অবসান: রাশিয়ার বার্লিন অবরোধের ফলে পশ্চিম জার্মানিতে চরম খাদ্যসংকট দেখা দেয়। ব্রিটেন ও আমেরিকা রাশিয়ার অবরোধের কাছে নতিস্বীকার না করে দীর্ঘ ১১ মাস ধরে ১৪০০ বিমানের সাহায্যে আকাশপথে অবরুদ্ধ বার্লিন অঞ্চলকে প্রতিদিন ৮ হাজার টন খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ, তেল, কয়লা- সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জোগান দেয়। এই ঘটনা ‘Berlin Airlift’ নামে খ্যাত। স্টালিন এই আকাশপথে সরবরাহ ব্যবস্থার বিরোধিতা করার সাহস দেখাতে পারেননি। অবশেষে বাধ্য হয়ে রাশিয়া ২৯৩ দিন পর অবরোধ তুলে নেয় (১৯৪৯ খ্রি., ১২ মে)।

বার্লিন সংকটের ফলাফল: বার্লিন সংকটের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী।

i. জটিলতা বৃদ্ধি: বার্লিন সংকট আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছিল। আমেরিকা সাম্যবাদের প্রসার রোধ করতে চাইলে রাশিয়াও পুঁজিবাদের প্রসার রোধে সচেষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে বিশ্বরাজনীতি জটিল রূপ ধারণ করে।

ii. জার্মানিতে আলাদা সরকার: মার্কিন জোটের মদতে পশ্চিম জার্মানি, জার্মান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র (Federal Republic of Germany, FRG) হিসেবে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২১ মে আত্মপ্রকাশ করে। পশ্চিম জার্মানির প্রধান হন খ্রিস্টান ডেমোক্রেটিক দলের কনরাড আদানুর। আর রুশ জোটের মদতে পূর্ব জার্মানি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (German Democratic Republic, GDR)

হিসেবে পরিচিতি পায়। এই সরকারের কর্ণধার হন আটো গ্রোটোহল। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ আগস্ট পূর্ব জার্মান সেনাবাহিনী পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের মধ্যে কংক্রিটের ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে প্রাচীর গড়ে তোলে।

iii. সামরিক শক্তিবৃদ্ধি: এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে বৃহৎ শক্তিভুক্ত দেশগুলি নিজেদের সামরিক শক্তিকে আরও মজবুত করার দিকে নজর দেয়।

উপসংহার: বার্লিন সংকটের পরিণতি হিসেবে পরবর্তীকালে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতি আরও পরিপুষ্ট হয়।

প্রশ্ন16.পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদের বিস্তার সম্বন্ধে আলোচনা করো।

অথবা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া কীভাবে পূর্ব ইউরোপে তার প্রাধান্য স্থাপন করেছিল?

সূচনা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলির অন্যতম রাশিয়া চেয়েছিল পূর্ব ইউরোপে পুঁজিবাদ বা সাম্রাজ্যবাদের পরিবর্তে সাম্যবাদের বিস্তার ঘটাতে।

উত্তর- পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদের বিস্তার

1 রুশ-জার্মান দ্বন্দ্বের মাধ্যমে: তিনের দশকে নাৎসি জার্মানি পূর্বদিকে সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি গ্রহণ করলে ওইসমস্ত রাজ্য জার্মানির পদানত হয়। এইভাবে জার্মানির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজ অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নে রাশিয়া শঙ্কিত হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে রাশিয়ার লালফৌজই সমগ্র পূর্ব ও মধ্য ইউরোপকে জার্মানির কবলমুক্ত করে ওইসব অঞ্চলে সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে।

2 সোভিয়েত রাষ্ট্রজোট গঠনের দ্বারা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে রাশিয়া সরাসরি নিজের অঙ্গীভূত করে নেয়। এরপর পূর্ব ইউরোপের যুগোশ্লাভিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, বালগেরিয়া, আলবানিয়া, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, পোল্যান্ড ও পূর্ব জার্মানি-এই আটটি দেশকে রাশিয়া কমিনফর্মের অন্তর্ভুক্ত করে।

3 সোভিয়েতের উদ্দেশ্য: পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে সোভিয়েত তথা রাশিয়ার প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যেসমস্ত উদ্দেশ্যে তা হল-

i. সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের বিস্তার ঘটানো: বিশ্বের সর্বত্র সাম্যবাদী ভাবধারা বিস্তারের লক্ষ্যে পূর্ব ইউরোপের ওপর রাশিয়ার আধিপত্য স্থাপনের প্রয়োজন ছিল।

ii. শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর অভাব: ইউরোপের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুর্বল হয়ে পড়ে। সেই সুযোগ রাশিয়াকে পূর্ব ইউরোপে আধিপত্য বিস্তারে উৎসাহিত করে।

iii. নিরাপত্তা-বলয় গঠন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের নির্দেশে জার্মান সেনা রাশিয়ার ওপর আক্রমণ হেনেছিল। কাজেই যুদ্ধ- পরবর্তী সময়েও নিরাপত্তার তাগিদে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে একটি নিরাপত্তা-বলয় গড়ে তোলা সোভিয়েতের কাছে খুবই জরুরি ছিল।

iv. আর্থিক পুনরুজ্জীবন: নিজের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য সম্পদ আহরণ এবং নিজস্ব শিল্পজাত পণ্যের বাজার হিসেবেও পূর্ব ইউরোপ রাশিয়ার কাছে ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।

v. জোটবদ্ধতা: প্রাক্-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে কূটনৈতিক দিক থেকে রাশিয়া যে বিচ্ছিন্ন ছিল, তা থেকে মুক্তি পেতে সে একটি নিজস্ব জোট গড়ে তুলতে উৎসাহী ছিল।

4 পূর্ব ইউরোপে রুশিকরণের পদ্ধতি: পূর্ব ইউরোপকে রুশিকরণ করতে রাশিয়া পাঁচটি স্তরবিশিষ্ট একটি বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করেছিল। সেগুলি হল-

i. বুশ নিয়ন্ত্রণাধীন অস্থায়ী সরকার গঠন: প্রথমে রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু দেশের প্রতিষ্ঠিত সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী’, ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ ইত্যাদি আখ্যা দিতে শুরু করে। তারপর সেখানে ‘পপুলার ফ্রন্ট’ নামে সর্বদলীয় একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। এই সরকারকে এমনভাবে গড়া হয়, যাতে তার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কেবল সোভিয়েত কমিউনিস্টদের হাতে থাকে।

ii. অ-কমিউনিস্টদের উৎখাত: এর পরের স্তরে সেখানে অ- কমিউনিস্ট গোষ্ঠীগুলিকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা মাথায় উৎখাত করে মন্ত্রীসভার সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ-বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতর কমিউনিস্টদের অধীনে আনা হয়।

iii. একদলীয় কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা: সেখানে সমস্ত অ- কমিউনিস্ট মন্ত্রীদের বিতাড়িত করে কমিউনিস্টদের একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

iv. নতুন শাসনতন্ত্র রচনা ও প্রবর্তন: দেশগুলিতে রাশিয়ার অনুকরণে একটি নতুন শাসনতন্ত্র রচনা করে নিয়ন্ত্রিত গণভোটের মাধ্যমে সেই শাসনতন্ত্র প্রবর্তন করা হয়।

v. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল: এইভাবে সেখানকার কমিউনিস্ট বিরোধী দলগুলিকে দমন করে রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা দখল করে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, যানবাহন, ধর্মস্থান, সংবাদপত্র, এমনকি ব্যক্তিস্বাধীনতা-সমস্ত কিছুর ওপর দলীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়।

5. পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত কাঠামো: পূর্ব ইউরোপ সাভিয়েত-অনুগত রাষ্ট্রগুলির ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থায়ীভাবে বজায় রাখতে শিয়া যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তুলেছিল তার দুটি দিক ছিল- এমনৈতিক ও সামরিক। আসলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে আমেরিকার প্রশাল পরিকল্পনার প্রলোভন থেকে রক্ষা করে সেখানে সাম্যবাদকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যই রাশিয়াকে এরকম একটা শক্ত পরিকাঠামো গড়ে তুলতে বাধ্য করেছিল। উপসংহার: মার্কিন পুঁজিবাদের প্রসার রোধ করে সাম্যবাদী জোটকে অক্ষত রাখার লক্ষ্যেই মূলত রাশিয়া পূর্ব ইউরোপে প্রাধান্য বিস্তারে উদ্যোগী হয়।

17. কীভাবে রুমানিয়াতে সোভিয়েত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়?

সূচনা: পূর্ব ইউরোপের রুশ সম্প্রসারণের গতিধারায় রুমানিয়া ছিল। উল্লেখযোগ্য একটি দেশ। বহুদিন থেকেই রুমানিয়ার কমিউনিস্ট আন্দোলনে স্বতন্ত্রতা বজায় ছিল। রুমানিয়াই প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, যে জার্মান ফেডারেল রিপাবলিকের (পশ্চিম জার্মানি) সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল। সমাজতান্ত্রিক দেশ হয়েও রুমানিয়া তার বিদেশনীতিতে পুঁজিবাদী দেশগুলির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। তাই বোধ হয় সমাজতান্ত্রিক দেশ হয়েও রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক ততটা জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ হয়নি।

রুমানিয়ায় সোভিয়েত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা

1. বিবাদের কারণ: সোভিয়েত-রুমানিয়া বিবাদের কারণগুলি হল-

i. অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি, তেল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন প্রতিষ্ঠা, বিদেশনীতিতে পুঁজিবাদের আহ্বান ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে।

ii. রুমানিয়া ওয়ারশ চুক্তি জোটের ও কমিকন-এর সদস্যরাষ্ট্র ছিল; তবুও সে ফ্রান্স, ইটালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখায় সোভিয়েত রাশিয়া ক্ষুব্ধ হয়।

2 রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: রুমানিয়া নাৎসি-শাসনমুক্ত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে। তবে সেখানে তখনই কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাজা মাইকেল-এর নেতৃত্বে সেখানে রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।

3.স্টালিনের হস্তক্ষেপ: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে স্টালিন কুমানিয়ায় রুশ সেনা মোতায়েন করেন। সেইসঙ্গে তিনি রাজা মাইকেলকে কমিউনিস্টদের নিয়ে একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের নির্দেশ দেন। এই সময় স্টালিন ইচ্ছা করলেই রুমানিয়ায় একটি কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন। কিন্তু তখনও যুদ্ধ চলছিল এবং পশ্চিমি দেশগুলির সাহায্য ও সহযোগিতা তখনও রাশিয়ার প্রয়োজন ছিল। তাই বাস্তব- বুদ্ধিসম্পন্ন স্টালিন ওই মুহূর্তে সেখানে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করা থেকে বিরত থাকেন।

4 কমিউনিস্ট শক্তিবৃদ্ধি: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে রুমানিয়ায় কমিউনিস্ট-সমর্থিত ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। তবে সে সময় সংসদে কমিউনিস্ট সদস্যসংখ্যা ছিল মাত্র এক-ষষ্ঠাংশ। এই নতুন সরকার অ-কমিউনিস্টদের ওপর অকথ্য অত্যাচার শুরু করে। জনপ্রিয় কৃষকনেতা আইওন মিহালেক (Ion Mihalache) ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয়। বলা হয়, তাঁরা মার্কিন ও ব্রিটিশ মদত নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত। বিচারে তাঁদের দোষী সাব্যস্ত করা হয় ও তাঁদের পেজেন্টস পার্টি ভেঙে দেওয়া হয়। রাজা মাইকেল পদত্যাগ করেন (ডিসেম্বর, ১৯৪৭ খ্রি.)। রাজা মাইকেলের পদত্যাগের কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত বিরোধীদের দমন করে, একমাত্র কমিউনিস্ট-অনুগামীদের নিয়েই সেখানে গঠিত হয় ‘রমানিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি’ নামে কমিউনিস্ট দল। আসন্ন নির্বাচনে (১৯৪৮ খ্রি., ফেব্রুয়ারি) সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টি কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে মিশে যায়। নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল ৪১৪টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৪০৫টিতে জিতে সরকার গঠন করে।

উপসংহার: সোভিয়েত নিয়ন্ত্রণাধীনে নবগঠিত এই সরকার কাজ শুরু করলে, রুমানিয়ার ওপর রুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রশ্ন:18.চেকোশ্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও। 4+4

উত্তর- চেকোশ্লোভাকিয়ায় সোভিয়েত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা

1 সরকার গঠনের মাধ্যমে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে আলেকজান্ডার ডুবচেক-এর নেতৃত্বে রাজনৈতিক ব্যবস্থার গণতন্ত্রীকরণের উদ্যোগ শুরু হলে চেকোশ্লোভাকিয়ার সমাজতান্ত্রিক অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর চেকোশ্লোভাকিয়া জার্মানির বন্ধন থেকে মুক্ত হয়। কমিউনিস্ট নেতা ক্লিমেন্ট গোটওয়াল্ড প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে আয়োজিত সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্ট দল সর্বোচ্চ ভোট পায়। এদিকে প্রবাসী চেক রাষ্ট্রপতি এডওয়ার্ড বেনেস লন্ডন থেকে স্বদেশে ফিরে পুনরায় চেক প্রেসিডেন্ট পদ গ্রহণ করেন। রাশিয়ার চাপে বেনেস চেকোশ্লোভাকিয়ার রুথেনিয়া প্রদেশটি সোভিয়েতকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কমিউনিস্ট নেতা ভ্যাকলাভ নোসেক ছিলেন এই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

2 অ-কমিউনিস্ট উৎখাতের সুবাদে: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বেনেসের চেক সরকার আমেরিকার ‘মার্শাল পরিকল্পনা’র শর্তাবলি মেনে নিলে রাশিয়া শঙ্কিত হয়ে পড়ে। সে আশঙ্কা করে এর ফলে চেকোশ্লোভাকিয়ায় সাম্যবাদ-বিরোধী সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন সারা পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত কর্তৃত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই স্টালিনের নির্দেশে সেখানে শুরু হয় অ-কমিউনিস্টদের উৎখাত ও নিধন।

3 অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের সূত্রে: স্টালিনের পরামর্শ মেনে প্রধানমন্ত্রী গোটওয়াল্ড বিরোধী দলগুলিকেও নিশ্চিহ্ন করার কাজ শুরু করেন। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভ্যাকলাভ নোসেক প্রাগের আটজন পুলিশ অফিসারকে বরখাস্ত করে তাদের জায়গায় আটজন সাম্যবাদী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ করেন। সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এর তীব্র প্রতিবাদ করেন এবং ওইসমস্ত অফিসারকে পুনর্নিয়োগের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রী গোটওয়াল্ড কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেই সমর্থন করেন। ফলে যুক্তফ্রন্ট সরকার থেকে অ-কমিউনিস্ট অনেক মন্ত্রী পদত্যাগপত্র পেশ করেন। এর ফলে সে দেশে কমিউনিস্ট ও অ-কমিউনিস্টদের মধ্যে প্রবল দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।

4 বেনেসের পদত্যাগের সূত্রে: প্রেসিডেন্ট বেনেস অ-কমিউনিস্ট মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণে বাধ্য হলে চেকোশ্লোভাকিয়ায় কমিউনিস্ট- সংখ্যাগরিষ্ঠ এক মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ উদারপন্থী গণতান্ত্রিক নেতা এবং সরকারের বিদেশমন্ত্রী জ্যাঁ মাসারিক-এর সন্দেহজনকভাবে নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলে প্রেসিডেন্ট বেনেস পদত্যাগ করতে বাধ্য হন (জুন, ১৯৪৮ খ্রি.)। প্রধানমন্ত্রী গোটওয়াল্ড চেকোশ্লোভাকিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট হন (১৯৪৮ খ্রি.)। চেকোশ্লোভাকিয়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় সোভিয়েত কর্তৃত্ব।

রুশ ধাঁচে হাঙ্গেরিতে প্রজাতন্ত্র গঠন প্রক্রিয়া

1 সরকারি ক্ষমতালাভের মধ্যে দিয়ে: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে হাঙ্গেরিতে এক সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে স্মল ল্যান্ড হোল্ডার্স দল এবং সমাজতন্ত্রী দল মিলিতভাবে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসে। বিশ্বযুদ্ধোত্তর হাঙ্গেরিতে এই প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটে ও যুক্তফ্রন্টের শাসন শুরু হয়। কমিউনিস্ট দলের স্টালিনপন্থী রাকোসি সহকারী প্রধানমন্ত্রী পদ, আর স্টালিন বিরোধী ইমরে নেগি লাভ করেন স্বরাষ্ট্র দফতরের কার্যভার।

2 বিরোধীদের দমনের মাধ্যমে:  কমিউনিস্ট পার্টি স্বরাষ্ট্র দফতরের অপব্যবহারের দ্বারা বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে থাকে। দেশবিরোধী অন্তর্ঘাতমূলক কাজের অভিযোগ এনে বিরোধী দলকে কালিমালিপ্ত করা হয়। সমগ্র দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়।

3 নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন ঘটে। নতুন সরকার গঠনের জন্য পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জালিয়াতি ভরা এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে ‘ন্যাশনাল ইনডিপেন্ডেন্ট ফ্রন্ট’। সমাজবাদী গণতন্ত্রী নেতা আর্পাড সাকাসিট্স-এর নেতৃত্বে গঠিত হয় নবনির্বাচিত সরকার।

4 সোভিয়েতীকরণের মাধ্যমে:  স্টালিনের প্রত্যক্ষ মদতে নবগঠিত এই সরকারের সর্বেসর্বা হয়ে ওঠেন স্টালিনপন্থী রাকোসি। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২০ আগস্ট হাঙ্গেরিতে সোভিয়েতের অনুকরণে বামপন্থী গণপ্রজাতন্ত্র গঠন করা হয়। ক্রেমলিন নেতৃবৃন্দ হাঙ্গেরির কমিউনিস্ট নেতাদের এটা বোঝাতে সক্ষম হন যে, পশ্চিমি সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য হাঙ্গেরিকে সোভিয়েত অনুকরণে পরিচালনা করা দরকার। এই সূত্র ধরেই হাঙ্গেরির রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সোভিয়েত মডেলকে অনুসরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কৃষি, শিল্প এমনকি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও সোভিয়েত নীতি অনুসৃত হয়।

প্রশ্ন19. যুগোশ্লাভিয়া ও রাশিয়া কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে মনোমালিন্যের কারণ কী ছিল? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সোভিয়েত রাশিয়া ও পোল্যান্ডের সম্পর্ক লেখো।

উত্তর- যুগোশ্লাভিয়া ও রাশিয়ার মনোমালিন্যের কারণ

1 যুগোশ্লাভিয়ার স্বাধীন বিদেশনীতি: স্বাধীনোত্তর যুগোশ্লাভিয়াও বিদেশনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সোভিয়েত মডেলকে অনুসরণ করেনি। এর ফলে যুগোশ্লাভিয়া-সোভিয়েত সম্পর্কের অবনতির সূচনা ঘটে। আলবানিয়াতে যুগোশ্লাভিয়ার প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা রাশিয়া মেনে নিতে পারেনি। তাই মার্শাল টিটোর যুগোশ্লাভিয়ার সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়।

2 টিটোর স্বাধীনতাপ্রিয়তা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরেই সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্টালিনের সঙ্গে যুগোশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটোর সংঘাত বাধে। এই সংঘাতের মূল কারণ ছিল মার্শাল জোশেফ ব্রোজ টিটোর স্বাধীনতাপ্রিয়তা। তিনি রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের ধারণায় প্রভাবিত হননি। তিনি যুগোশ্লাভিয়ার নেতৃত্বাধীন বলকান ফেডারেশন গঠনে সচেষ্ট হলে স্টালিন ক্ষিপ্ত হন, কেন-না স্টালিন মনে করতেন এতে পূর্ব ইউরোপে নিরঙ্কুশ সাম্যবাদের প্রতিষ্ঠা বাধাপ্রাপ্ত হবে। টিটো যুগোশ্লাভিয়ায় সোভিয়েত রাশিয়ার পুলিশ ও সামরিক কর্মচারীদের ঘনঘন অনুপ্রবেশ মেনে না নিয়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানালে যুগোশ্লাভিয়া-সোভিয়েত সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সোভিয়েত সমালোচক মেডভেদভ-এর মতে যুগোশ্লাভিয়াতে টিটোর উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি এবং স্বাধীন বিচার শক্তি স্টালিনকে কুদ্ধ করেছিল।

3 পুঁজিবাদের অনুপ্রবেশ: সোভিয়েত নিষেধাজ্ঞা জারি সত্ত্বেও টিটো পশ্চিমি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একটি কমিউনিস্ট দেশ হয়েও যুগোশ্লাভিয়া যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ অন্যান্য পুঁজিবাদী দেশগুলির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল তাতে সোভিয়েতের সঙ্গে যুগোশ্লাভিয়ার সম্পর্কের অবনতি ঘটাই ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার।

4 ক্রমশ সাম্যবাদে অনাস্থা: যুগোশ্লাভিয়ার জাতীয়তাবাদী নেতারা বৃহত্তর যুগোশ্লাভিয়া গঠনের পথে সাম্যবাদের বিশ্বায়নকে অন্তরায় বলে মনে করতেন। সাম্যবাদের পথে অনেকটা এগিয়ে চলার পর হঠাৎ সাম্যবাদের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করায় যুগোশ্লাভিয়ার সঙ্গে সোভিয়েত তথা রাশিয়ার চরম মনোমালিন্য হয়।

মনোমালিন্যের পরিণতি: যুগোশ্লাভিয়া ও রাশিয়ার মনোমালিন্যে কমিউনিস্ট দুনিয়া টিটোর ওপর রুষ্ট হয়। রাশিয়া নানাভাবে তাকে ভয় দেখাতে থাকে। কিন্তু একদিকে সমগ্র যুগোশ্লাভিয়া এবং অন্যদিকে পশ্চিমি রাষ্ট্রবর্গের সামরিক ও আর্থিক সাহায্য টিটোকে রাশিয়ার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে শক্তি জোগায়। শেষপর্যন্ত টিটোকে বাগে আনতে না পেরে যুগোশ্লাভিয়াকে ‘কমিনফর্ম’ থেকে বিতাড়িত করা হয় (১৯৪৮ খ্রি., জুন)।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়া ও পোল্যান্ডের সম্পর্ক

1 সম্পর্কের প্রথম পর্ব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে পোল্যান্ডে এক সর্বদলীয় যৌথ মন্ত্রীসভা গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রকৃত অর্থে পোল্যান্ডে কমিউনিস্টদের প্রভাবই বৃদ্ধি পেয়েছিল। পোল্যান্ডের কমিউনিস্ট নেতা বলেশলাভ বেরাট (Boleslav Beirut)-এর নেতৃত্বে পূর্ব পোল্যান্ডে এক সোভিয়েতপন্থী সরকার গঠিত হয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে এই সরকার পোল্যান্ডের এক বিরাট অংশ রাশিয়াকে প্রদান করে। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ডে একটি নিরঙ্কুশ সাম্যবাদী সরকার গঠিত হয় এবং স্টালিনের পূর্ব-প্রতিশ্রুতিমতো এই সরকারে কয়েকজন অ-কমিউনিস্ট মন্ত্রীও নেওয়া হয়। তবে ওইসমস্ত মন্ত্রীর কোনো ক্ষমতাই ছিল না। এরপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পরিচালনাধীনে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে পোল্যান্ডে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টি ও তার সহযোগী দলগুলি জয়লাভ করে এবং পোল্যান্ডে নতুন শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন সরকারের প্রধান নিযুক্ত হন বলেশলাভ বেরাট।

2.সম্পর্কের দ্বিতীয় পর্ব:

i.গোমূলকা-বুশ সমঝোতা: পোল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা শুরু হলে স্টালিনের নির্দেশে পোল্যান্ডের উদারপন্থী নেতা গোমুলকাকে কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয় (১৯৪৮ খ্রি.)। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে গোমুলকাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এরপর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে বেরাটের মৃত্যু হলে পোল্যান্ডে সোভিয়েত বিরোধিতা তীব্র হয়। বিশেষ করে ক্রুশ্চেভের নিস্টালিনিকরণ নীতিতে উৎসাহিত হয়ে পোলিশ গণতন্ত্রীরা গোমুলকাকে নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনার দাবি তোলেন। গণবিদ্রোহ চরমে পৌঁছোয়। অবশেষে সোভিয়েত পলিটব্যুরো বাধ্য হয়ে গোমুলকাকে নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনে। ক্রুশ্চেভের নেতৃত্বাধীন এক রুশ প্রতিনিধি দল পোল্যান্ডে আসেন এবং গোমুলকাকে পোলিশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করেন (১৯৬৮ খ্রি., নভেম্বর)।

প্রশ্ন20.সুয়েজ সংকট সৃষ্টির কারণগুলি লেখো। সুয়েজ সংকটের গুরুত্ব বা ফলাফলগুলি উল্লেখ করো। 

অথবা, সুয়েজ সংকটের কারণ কী ছিল? এই সংকটের গুরুত্ব নির্ণয় করো।

অথবা, সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর- সুয়েজ সংকটের কারণ

1 ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখনও ব্রিটেন ও ফ্রান্স সে প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এর ফলে সুয়েজ সংকট তৈরি হয়। পরে জাতিপুঞ্জে মিশর এই প্রস্তাব তুলে ধরলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স সুয়েজ খালের ওপর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়, যা নাসেরের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না।

2 আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প: নাসের চেয়েছিলেন মিশরের আর্থিক উন্নয়নের জন্য নীলনদের ওপর আসওয়ান বাঁধ নির্মাণ করতে। কেন- না, এই বাঁধের সাহায্যে ৮ লক্ষ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে জলসেচ করে সেগুলি আবাদি জমিতে পরিণত করা যাবে। আবার এই বাঁধের জলাধার থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে তা শিল্পোন্নয়নে সাহায্য করবে। এই নির্মাণ প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছিল ১৪০০ মিলিয়ন ডলার। ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও বিশ্বব্যাংক মিলিতভাবে এই প্রকল্পের জন্য ৭০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজিও হয়। কিন্তু এক বছর আলোচনা চলার পর আমেরিকা ও ব্রিটেনের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক ঋণ প্রস্তাব বাতিল করে দিলে নাসের প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ হন।

3 সুয়েজ খাল জাতীয়করণ: ক্ষুদ্ধ নাসের সুয়েজ খাল এবং সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির জাতীয়করণ করেন (২৬ জুলাই, ১৯৫৬ খ্রি.) এবং ঘোষণা করেন যে, [i] এই সুয়েজ খাল থেকে আদায় করা অর্থ আসওয়ান বাঁধ নির্মাণে খরচ করা হবে। [ii] কোম্পানির বিদেশি অংশীদারদের প্রচলিত বাজারদর অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। [iii] আন্তর্জাতিক যোগসূত্র হিসেবে সব দেশের জাহাজ এই জলপথ ব্যবহার করতে পারবে। এর ঠিক তিনমাস পরে (২৯ অক্টোবর, ১৯৫৬ খ্রি.) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের গোপন প্ররোচনায় ইজরায়েল মিশর আক্রমণ করে।

সুয়েজ সংকটের গুরুত্ব বা ফলাফল

1 আরব দুনিয়ার পশ্চিমি বিদ্বেষ: প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমেত পশ্চিমি শক্তিগুলি নিজেদের স্বার্থে নানাভাবে ইজরায়েলকে সাহায্য করেছিল। এমতাবস্থায় সুয়েজ সংকটকে কেন্দ্র করে মিশরের ওপর ইঙ্গ-ফরাসি আক্রমণ শুরু হলে মিশর-সহ গোটা আরব দুনিয়ায় পশ্চিম-বিরোধী মনোভাবের সৃষ্টি হয়।

2 সুদৃঢ় আরব ঐক্য: পশ্চিম-বিরোধী মনোভাব আরবদের আরও সংহত করে তোলে। তাদের ঐক্য আরও দৃঢ় হয়। মিশর ও সিরিয়া ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠিত হয় ‘সংযুক্ত আরব প্রজাতন্ত্র’। নাসের হন তার প্রথম রাষ্ট্রপতি।

3 শত্রুতা বৃদ্ধি: সুয়েজ সংকট মিশর ও ইজরায়েলের মধ্যে শত্রুতাকে চরমে নিয়ে যায়। ইজরায়েলকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি আরও – জটিল হয়ে ওঠে।

4 মিশরের কর্তৃত্ব: মিশর কর্তৃক সুয়েজ খাল জাতীয়করণকে আন্তর্জাতিক দুনিয়া স্বীকৃতি দিলে সুয়েজ খালের ওপর মিশরের কর্তৃত্ব দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।

5 ইজরায়েলের মার্কিন নির্ভরতা বৃদ্ধি: সুয়েজ সংকটের জেরে • সংঘটিত দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধে ইজরায়েল আর্থিক ও সামরিক দিক ■ থেকে প্রচণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই ক্ষতিপূরণের জন্য ইজরায়েল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়।

প্রশ্ন21. সুয়েজ খাল জাতীয়করণের বিরুদ্ধে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়েলের যুগ্ম-চক্রান্ত বর্ণনা করো। সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর- ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়েলের যুদ্ধ-চক্রান্ত

1 ব্রিটেনের ভূমিকা: নাসের সুয়েজ খালকে মিশরের অধীনে জাতীয়করণ করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় প্রমাদ গোনে ব্রিটেন। কেন-না সুয়েজ খাল কোম্পানির শতকরা ৪৪ ভাগ শেয়ার ছিল ব্রিটেনের। নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের পর জানিয়েছিলেন যে, এই খালের পূর্বতন অংশীদার কোম্পানিগুলি বাজার-মূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবে। কিন্তু এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ব্রিটেনের কাছে যথেষ্ট ছিল না।

2 ফ্রান্সের ভূমিকা: ফ্রান্সও মধ্যপ্রাচ্য থেকে অশোধিত খনিজ তেল এই পথেই জাহাজে করে নিজের দেশে নিয়ে যেত। কাজেই সুয়েজ খাল কোম্পানির জাতীয়করণ ফ্রান্সের কাছে বিপর্যয়ের শামিল ছিল। নাসের সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার-মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত ছিলেন। তা ছাড়া সুয়েজ খাল দিয়ে রাজস্ব দানের বিনিময়ে অনুমতি সাপেক্ষে কোনো দেশেরই জাহাজ যাতায়াতে বাধা ছিল না। আন্তর্জাতিক মানের জলপথ সুয়েজ খাল থেকে ফরাসি কোম্পানির বিশাল অঙ্কের মুনাফার উৎস বন্ধ হয়ে গেলে ফ্রান্স মিশরের সঙ্গে বিরোধিতায় লিপ্ত হয়।

3 ইজরায়েলের ভূমিকা: ইজরায়েলও নাসেরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের তীব্র বিরোধিতা করে এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পাশে দাঁড়ায়। এর কারণগুলি হল-[i] নাসের ছিলেন ইজরায়েলের শত্রু। তাই মধ্যপ্রাচ্যে নাসেরের প্রাধান্য খর্ব করে ইজরায়েল বিপন্মুক্ত হতে চেয়েছিল। [ii] নাসের সুয়েজ খালে ইজরায়েলের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাই যুদ্ধে নেমে সে তার জাহাজ চলাচলকে নিশ্চিত করতে চেয়েছিল। [iii] ইজরায়েলের ওপর আরব সন্ত্রাসবাদীদের প্রায়শই যে আক্রমণ চলছিল, তাতে মিশরের একটা ভালো রকমের মদত রয়েছে বলে ইজরায়েলের অভিযোগ ছিল। এইসমস্ত কারণে মিশরকে একটা ভালোমতো শিক্ষা দিতে ইজরায়েল ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পক্ষ নিয়েছিল।

সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা

সুয়েজ সংকট সৃষ্টির পর থেকেই ভারত এই সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়। ভারত সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশ ছিল বলে, সুয়েজ সমস্যা সমাধানে ভারতের স্বার্থ জড়িত ছিল।

1 প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে: সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে নিজস্বার্থেই ভারত সুয়েজ সমস্যা (১৯৫৬ খ্রি.) সমাধানে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ভারত মনে করত ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ‘কনস্ট্যান্টিনোপল কনভেনশন’ অনুসারে সুয়েজ খাল মিশরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে সেই সঙ্গে সে এ-ও মনে করত যে, খাল ব্যবহারকারীদের একটি উপদেষ্টামূলক ভূমিকা থাকা দরকার।

 2 বিদেশমন্ত্রীর মাধ্যমে: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে সুয়েজ সমস্যার সমাধানে লন্ডন সম্মেলনে মিশরের কোনো প্রতিনিধি যোগদান না করায় ভারতের প্রতিনিধি বিদেশমন্ত্রী কৃষ্ণ মেনন দু-পক্ষের মধ্যে যোগসূত্রের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সুয়েজ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কৃয় মেনন পাঁচ দফা পরিকল্পনা পেশ করেন। তিনি সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে এক কমিটি গঠন করে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেন। তিনি মিশরের ওপরও খাল রক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন।

3 প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে: ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্ররোচনায় মিশরের ওপর ইজরায়েলের আক্রমণকে ভারত সরকার কঠোরভাবে নিন্দা করে। প্রধানমন্ত্রী নেহরু এটিকে এক ‘নগ্ন আক্রমণ’ বলে নিন্দা করেন।

4 জাতিপুঞ্জে যোগদান: জাতিপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনী হিসেবে ভারত মিশরে সেনা পাঠায়। যুদ্ধবিরতি কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে এবং বিদেশি সৈন্য অপসারণের বিষয়ে জাতিপুঞ্জে আলাপ-আলোচনাকালে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন22. সুয়েজ সংকট কেন দেখা দিয়েছিল? অথবা, সুয়েজ সংকটের কারণগুলি কী ছিল?

উত্তর- সুয়েজ সংকট

TOPIC [A]-এর 20 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘সুয়েজ সংকটের কারণ’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

প্রশ্ন23. সুয়েজ সংকটের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। এই সংকটে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

সুয়েজ সংকটের তাৎপর্য

TOPIC [A]-এর 20 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘সুয়েজ সংকটের গুরুত্ব বা ফলাফল’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

সুয়েজ সংকটে ভারতের ভূমিকা

TOPIC [A]-এর 21 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

প্রশ্ন 24.কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট সম্পর্কে কী জান? এর গুরুত্ব কী, ছিল?

অথবা, কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর- কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপ কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি নির্মাণকে কেন্দ্র করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক স্বল্পকালীন দ্বন্দ্ব শুরু হয় যার নাম কিউবার ক্ষেপনাস্ত্র সংকট।

1 পটভূমি: কিউবা ১৮৯৮ খ্রি. স্পেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার পর উন্নতির লক্ষ্যে মার্কিন মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। এই সুযোগ নিয়ে  মার্কিন পুঁজিপতিরা কিউবার অর্থনীতির মূলভিত্তি আখের খেতের ৪০ ভাগ দখল করে নেয়। কিউবার ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমেরিকা এর অনুগামী ফ্যালজেনিকো বাতিস্তাকে ১৯৫৪ খ্রি. রাষ্ট্রপতি পদে বসায়। ৫৬ তিনি মার্কিন পুঁজিবাদের তাঁবেদারে পরিণত হওয়ায় কিউবাবাসী তিস্তা সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়।

2. ফিদেল কাস্ত্রোর ভূমিকা: বাতিস্তা সরকারের জনবিরোধী প্রকর্মের প্রতিবাদে কিউবার তৎকালীন ছাত্রনেতা ফিদেল কাস্ত্রো তীর একারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলেন। ক্রমশ জনসমর্থন আদায় করে এক বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের দ্বারা বাতিস্তা সরকারের পতন ঘটিয়ে কাস্ত্রো এই কাস্ত্রো এরপর পুঁজিবাদী আমেরিকার দিক থেকে সরে এসে রাশিয়া, চিন ও অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি কিউবায় মার্কিন পুঁজিপতিদের চিনি কলগুলি জাতীয়মেনণ করেন। তার পাশাপাশি মার্কিন পুঁজিপতি গোষ্ঠীর পরিচালনাধীন ব্যাংক ও অন্যান্য শিল্পকেন্দ্রগুলিও জাতীয়করণ করেন।

3 কান্দ্রো অপসারণে আমেরিকার ভূমিকা: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কাস্ত্রোর এরকম কার্যকলাপে অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়ে নানাভাবে কাস্ত্রো সরকারের ত্ব পতনের পরিকল্পনা নেয়। মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের (CIA) গোপন সহায়তায় ১,৪০০ ভাড়াটে সৈন্য মার্কিন জাহাজে করে কিউবার ফ্লোরিডা উপকূলের কাছে পিগ উপসাগরে পৌঁছোয়। বিদ্রোহীদের সহায়তার জন্য মার্কিন বি-২৬ বিমান প্রস্তুত ছিল। কিন্তু কিউবার সেনাদল তাদের – চূড়ান্তভাবে পরাজিত করলে মার্কিন চক্রান্ত ব্যর্থ হয়।

4 কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি গঠন: কাস্ত্রো সরকার ৫০ লক্ষ কিউবাবাসীকে রক্ষার জন্য রাশিয়ার সাহায্যে কিউবাতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে কিউবার রাষ্ট্রপতি ফিদেল কাস্ত্রো রাশিয়া থেকে মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র (IRBM অর্থাৎ Intermediate Range Ballistic Missiles) গোপনে আমদানি করে কিউবাতে প্রতিস্থাপন করেছিলেন।

ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের গুরুত্ব

1 যুদ্ধোদ্যোগ হ্রাসে: এই সংকটের ফলেই শেষপর্যন্ত মস্কো ও ওয়াশিংটনের তরফে যুদ্ধোদ্যোগ হ্রাস পেতে থাকে।

2 মানবতার জয়ে: কিউবা সংকটকে কেন্দ্র করেই রুশ-মার্কিন উভয় পক্ষই আণবিক যুদ্ধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। ফলে হিংসার বিরুদ্ধে সংযম, শুভবুদ্ধি ও মানবতাবাদ শেষপর্যন্ত জয়যুক্ত হয়। ধ্বংসের হাত থেকে পৃথিবী রক্ষা পায়।

3 পারস্পরিক আলোচনায়: উভয়শক্তিই এরপর থেকে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানের পথ গ্রহণ করে। উভয়ের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করে।

4 পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিরোধ চুক্তিতে: এই সংকটের এক গুরুত্বপূর্ণ পরিণতি হল পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিরোধ চুক্তি স্বাক্ষর। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা ও ফ্রান্সের মধ্যে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।

5 হটলাইন স্থাপনে: এই সংকটের পরবর্তী সময় থেকে যে-কোনো সংকটের সরাসরি সমাধানের জন্য হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিনের মধ্যে হটলাইন-এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ স্থাপিত হয়।

6 কিউবায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়: ভৌগোলিক দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের এত কাছাকাছি একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, কিউবাই হল পশ্চিম গোলার্ধের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র।

অবশেষে (২০ নভেম্বর, ১৯৬২ খ্রি.) সোভিয়েত রাশিয়া কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি সরিয়ে নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও কিউবার বিরুদ্ধে নৌ-অবরোধ তুলে নেয়। এইভাবে দুই মহাশক্তিশালী রাষ্ট্রের শুভবুদ্ধির প্রভাবে বিশ্ব একটি সর্বনাশা মহাযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা পায়।

প্রশ্ন 25. কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট বলতে কী বোঝ? ঠান্ডা লড়াইকে এটি কতদূর প্রভাবিত করেছিল? 

উত্তর- কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট

TOPIC [A]-এর 24 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

ঠান্ডা লড়াইয়ের ওপর প্রভাব

1 আমেরিকার প্রতিক্রিয়া: ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে আমেরিকা তার গুপ্তচর বিমানের তোলা ছবি থেকে জানতে পারে যে, কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করেছে। কিউবা আমেরিকার দক্ষিণসীমা ফ্লোরিডা থেকে মাত্র ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কাজেই এখান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্র-সহ সমস্ত পশ্চিম গোলার্ধের নিরাপত্তাই ব্যাহত করতে পারে। কিউবায় রাশিয়ার এই প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিটি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডিকে অস্থির করে তোলে।

2 কিউবা অবরোধ: কালবিলম্ব না করে বিচলিত কেনেডি কিউবায় আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তার চতুর্দিকে নৌ-অবরোধের আদেশ দেন। সেই সঙ্গে ২২ অক্টোবর (১৯৬২ খ্রি.) এক বেতার ঘোষণা মারফত বিশ্ববাসীকে এই ব্যবস্থার কথা জানিয়েও দেন। তিনি আরও ঘোষণা করেন যে, কিউবাগামী সমস্ত জাহাজ, এমনকি সোভিয়েত জাহাজও যথাযথ অনুসন্ধানের পরই কিউবায় ঢোকার অনুমতি পাবে।

3 রাশিয়ার প্রত্যুত্তর: কিউবায় অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডির ঘোষণায় রাশিয়ায় মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সোভিয়েত সরকার তার সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়। সেনাবিভাগের কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয় এবং সবাইকে কাজে যোগ দিতে বলা হয়। এমনকি আসন্ন বিদায়ী কর্মচারীদের অবসরগ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়। সেইসঙ্গে রাশিয়া দৃপ্তকণ্ঠে জানিয়ে দেয় যে, কিউবাগামী কোনো সোভিয়েত জাহাজ পথিমধ্যে বাধাপ্রাপ্ত হলে যেন সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালানো হয়।

4 রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগ: কিউবা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া- তিনপক্ষই রাষ্ট্রসংঘে বিষয়টি উত্থাপন করে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব উ-থান্ট এবং বিশ্বের জোটনিরপেক্ষ বিভিন্ন রাষ্ট্র দু-পক্ষের (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন) কাছেই শান্তিরক্ষার অনুরোধ জানাতে থাকে। শেষপর্যন্ত ২৭ অক্টোবর (১৯৬২ খ্রি.) রুশ প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেভ মার্কিন রাষ্ট্রপতি কেনেডিকে জানান যে-[i] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি কিউবা আক্রমণ না করার প্রতিশ্রুতি দেয়; [ii] কিউবা থেকে যদি নৌ-অবরোধ প্রত্যাহার করা হয় এবং [iii] তুরস্ক থেকে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি যদি অপসারণ করা হয়- তাহলে রাশিয়াও কিউবা থেকে সমস্ত সামরিক বাহিনী অপসারণ করবে।

প্রশ্ন 26.কোরিয়া সংকট বা কোরিয়া যুদ্ধের বর্ণনা দাও। অথবা, কোরিয়া সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সূচনা: ১৯৪৫ সালে কোরিয়াবাসীর অনুমতি ছাড়াই কোরিয়াকে উত্তর ও দক্ষিণ ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। এর ফলে সৃষ্টি হয় কোরিয়া সংকট বা কোরিয়া যুদ্ধ।

উত্তর- কোরিয়া যুদ্ধের বিবরণ

1 সংকটের সূত্রপাত: কোরিয়া ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা পর্যন্ত জাপানের কর্তৃত্বাধীন ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে মার্কিন সেনা ও সোভিয়েত লালফৌজ জাপানের হাত থেকে কোরিয়াকে মুক্ত করে। অবশেষে জাপান সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হলে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ৩৮০ অক্ষরেখা বরাবর কোরিয়ার উত্তরাংশে রাশিয়ার ও দক্ষিণাংশে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়।

2 সমস্যা সমাধানে কমিশন গঠন: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে মস্কোয় রাশিয়া-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিলিত হয়ে এক ‘যুগ্ম কমিশন’ গঠন করে। এই কমিশন কোরিয়ার অস্থায়ী স্বাধীন সরকার গঠন করবে বলে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু আদর্শগত মতানৈক্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্র তখন বিষয়টি রাষ্ট্রসংঘে উত্থাপন করলে সমস্যা সমাধানের জন্য সাধারণ সভা ৯ টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে একটি অস্থায়ী কমিশন (United Nations Temporary Commission on Korea বা UNTCOK) গঠন করে (সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ খ্রি.)। এই কমিশনের ওপর কোরিয়া থেকে বিদেশি সেনা অপসারণ এবং শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পিত হয়। ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে. পি. এস. মেনন এই কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

3 দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকার গঠন: রাষ্ট্রসংঘের অস্থায়ী কমিশনের সদস্যদের রাশিয়া উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেয়নি। রাষ্ট্রসংঘ তখন নিজ তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি নির্বাচনের আয়োজন করে (১০ মে, ১৯৪৮ খ্রি.)। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর ১৫ আগস্ট প্রজাতান্ত্রিক কোরিয়া (Republic of Korea) নামে সেখানে মার্কিন-প্রভাবিত একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। সিওল হয় এর রাজধানী। এই সরকারকেই রাষ্ট্রসংঘ সমগ্র কোরিয়ার একমাত্র বৈধ সরকার বলে স্বীকৃতি জানায় (১২ ডিসেম্বর, ১৯৪৮ খ্রি.)। পরের বছর ১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রও প্রজাতান্ত্রিক কোরিয়া তথা দক্ষিণ কোরিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দান করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সবদিক থেকেই কোরিয়াকে সাহায্য করতে থাকে। মার্কিন মদতপুষ্ট সিংম্যান রি ছিলেন এই সরকারের প্রধান।

4 উত্তর কোরিয়ার আগ্রাসন: দক্ষিণ কোরিয়াকে কেন্দ্র করে সুদূরপ্রাচ্যে যখন একটি মার্কিন ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে, তখন কোরিয়া সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলেন উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট নেতা কিম ইল সুঙ। সোভিয়েত মদতে তিনি সেখানে গণতান্ত্রিক কোরিয়া (People’s’ Democratic Republic of Korea) নামে একটি সরকার গঠন করেন। পিয়ং ইয়ং হয় এর রাজধানী। এই সরকারের সেনাবাহিনী কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই হঠাৎ ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন ৩৮° অক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণে প্রবেশ করলে দু-পক্ষের মধ্যে শুরু হয় প্রত্যক্ষ লড়াই।

5 আন্তর্জাতিক সেনা প্রেরণ: নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী বলে চিহ্নিত করে এবং কোরিয়ায় রাষ্ট্রসংঘের সেনাবাহিনী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

6.চিনের অংশগ্রহণ: রাষ্ট্রসংঘ প্রেরিত বাহিনীর প্রধান জে. ম্যাক হন সিং আর্থার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শত্রুসেনা বিতাড়িত করার পর ৩৮° অক্ষরেখা কোরিয়া অতিক্রম করে উত্তর কোরিয়ায় ইয়াল নদীর তীর পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে সেখানে প্রভাবিত বামাবর্ষণ করলে চিন তার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এরপরই চিন কোরিয়া হচ্ছে যোগদান করে এবং অতি দ্রুত দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওল দখল করে নেয় (৪ জানুয়ারি, ১৯৫১ খ্রি.)।

জুলাই উত্তর বলে তি কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং-এ উভয়পক্ষের যুদ্ধবিরতি ঘটে। পূর্বের মতো ৩৮°  অক্ষরেখা ধরেই দুই কোরিয়ার রাষ্ট্রসীমা নির্ধারিত হয়।

৪ ফলাফল

1. বিভাজন স্বীকার: বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দুই কোরিয়ার সংযুক্তি i. তো দূরের কথা, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিভাজনকেই মেনে নিতে হয়।

ii. মানবিক ও আর্থিক ক্ষতি: যুদ্ধে দুই কোরিয়ারই প্রচন্ড ক্ষতি হয়। মার্কিনি, কোরীয়, চিনা সব মিলিয়ে ২৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ নিহত উত্তর হয়। উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

iii. আমেরিকার সামরিক শক্তিবৃদ্ধির প্রস্তুতি: যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধের পর তার সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার প্রস্তুতি নেয়।

iv. ঠান্ডা লড়াইয়ের বিস্তার: এই যুদ্ধের ফলে ঠান্ডা লড়াই সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিস্তার লাভ করে।

উপসংহার: কোরিয়ার যুদ্ধ প্রকৃত অর্থে ছিল অনাবশ্যক ও নিষ্ফল, কেন-না দীর্ঘস্থায়ী এই যুদ্ধের ফল ছিল শূন্য।

প্রশ্ন 27.কোরিয়া যুদ্ধের কারণগুলি কী ছিল? কোরিয়া সংকট সৃষ্টিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী ছিল? 

উত্তর- কোরিয়া যুদ্ধের কারণ

1.রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হয়। ফলে জাপান অধিকৃত কোরিয়ার উত্তরাংশ রাশিয়ার কাছে এবং দক্ষিণাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এসময় থেকে কোরিয়ার ৩৮° উত্তর অক্ষরেখার উত্তরাংশে রাশিয়া এবং ৩৮° উত্তর অক্ষরেখার দক্ষিণাংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে।

2 অস্থায়ী কমিশনের ব্যর্থতা: কোরিয়ার সমস্যা নিয়ে মস্কোতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় (১৯৪৫ খ্রি., ডিসেম্বর)। এই বৈঠকে উভয় রাষ্ট্র এক যুগ্ম কমিশন গঠনের কথা বলে। এই কমিশনের নেতৃত্বে কোরিয়ার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এক অস্থায়ী স্বাধীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু এই উদ্যোগ শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

3.কোরিয়ায় দুই সরকার প্রতিষ্ঠা: অস্থায়ী কমিশনের উদ্যোগ ব্যর্থ হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোরিয়ার সমস্যাকে জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভায় উত্থাপন করে। সাধারণ সভা তার ৯টি সদস্যরাষ্ট্র নিয়ে একটি অস্থায়ী কমিশন (United Nations Temporary Commission on Korea বা UNTCOK) গঠন করে। এই কমিশনের চেয়ারম্যান নিযুক্তি হন বিশিষ্ট ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে. পি. এস. মেনন। এই কমিশনের ওপর কোরিয়ায় জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু রাশিয়া জাতিপুঞ্জের সদস্যদের উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ করতে দেয়নি। তাই জাতিপুঞ্জের তত্ত্বাবধানে দক্ষিণ কোরিয়ায় নির্বাচনের (১০ মে, ১৯৪৮ খ্রি.) মাধ্যমে এক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। মার্কিন প্রভাবিত এই সরকারের প্রধান |

4 দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর উত্তর কোরিয়ার আক্রমণ: জাতিপুঞ্জের অস্থায়ী কমিশন এবং নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী বলে চিহ্নিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিপুঞ্জ দক্ষিণ কোরিয়ার পাশে দাঁড়ালে রাশিয়া ও চিন উত্তর কোরিয়ার পক্ষ নেয়। ফলে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধ বাধে।

কোরিয়া সংকট সৃষ্টিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা

1 সংকটে অংশগ্রহণ: উত্তর কোরিয়া ছিল রাশিয়ার দখলে। রাশিয়া এখানে তাদের অনুগত একটি কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়া ছিল মার্কিন অধীনস্থ।

উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করলে আমেরিকা দক্ষিণ কোরিয়াকে সব ধরনের সাহায্য দেওয়া শুরু করে। জাতিপুঞ্জ উত্তর কোরিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং মার্কিন সেনাপতি ডগলাস ম্যাকআর্থারকে জাতিপুঞ্জ বাহিনীর সেনাপতি করে আমেরিকা কোরিয়া যুদ্ধে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

2 সংকট সৃষ্টিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব

i. রাষ্ট্রপুঞ্জকে প্রত্যক্ষ মদত দান: আমেরিকার প্রত্যক্ষ যোগদানের জন্যই কোরিয়া যুদ্ধ বা কোরিয়া সংকট ধনতন্ত্র ও সাম্যবাদের ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্তে রূপান্তরিত হয়। আমেরিকার প্রচ্ছন্ন মদতেই জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী দেশরূপে চিহ্নিত করেছিল।

ii. সেনা প্রেরণে: মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান দক্ষিণ কোরিয়াকে সব ধরনের সাহায্য করতে প্রতিশ্রুতি দেন (১৯৫০ খ্রি., ২৫ জুন)। এই উদ্দেশ্যে তিনি মার্কিন সেনানায়ক জেনারেল ম্যাক আর্থারকে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেন। জাতিপুঞ্জের সমর্থন থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো অসুবিধে হয়নি।

iii. যুদ্ধবিরতিতে: দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর অবশেষে ১৯৫৩ খ্রি. ২৭ জুলাই উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পানমুনজমে উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

iv. সীমারেখা স্থিরীকরণে: এই শান্তিচুক্তির দ্বারা ৩৮০ অক্ষরেখাকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমারেখা বলে ঘোষণা করা হয়।

প্রশ্ন 28. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে কোরিয়া সংকটের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। 

উত্তর- কোরিয়া সংকটের কারণ

TOPIC [A]-এর 27 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘কোরিয়া যুদ্ধের কারণ’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

ফলাফল

TOPIC [A]-এর 26 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘ফলাফল’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

প্রশ্ন 29. কোরিয়া সংকটের সমাধানে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

সূচনা: কোরিয়া যুদ্ধে ভারত এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জওহরলাল নেহরুর প্রধানমন্ত্রিত্বে ভারত সরকার কোরিয়া সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত হয়।

উত্তর- কোরিয়া সংকটের সমাধানে ভারতের ভূমিকা

1 সভাপতিত্বে

1. যুদ্ধবিরতি ঘোষণায়: দুই কোরিয়ার মধ্যে সমস্যার সূচনা লগ্নেই তা সমাধানের উদ্দেশ্যে জাতিপুঞ্জ ৯ জন সদস্যের একটি অস্থায়ী কমিশন (United Nations Temporary Commission on Korea বা UNTCOK) গঠন করে। যার সভাপতি ছিলেন, বিশিষ্ট ভারতীয় কূটনীতিবিদ কে.পি.এস. মেনন। প্রতিবেদনে মেনন বৃহৎ শক্তিববর্গকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সমস্যা মিটিয়ে নেবার আহ্বান জানান এবং তা না হলে এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে সাবধান করে দেন। এই কমিশনের দায়িত্ব ছিল শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে কোরিয়ায় একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করা। অবশেষে ভারতের অদম্য প্রচেষ্টায় ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুলাই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল।

ii. যুদ্ধবন্দি সমস্যায়: যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবন্দি সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতের জেনারেল থিমাইয়ার সভাপতিত্বে গঠিত হয় ‘নিরপেক্ষ রাষ্ট্রসমূহের প্রত্যাবাসন কমিশন’ (Neutral Nations Repatria. tion Commission)। নিরপেক্ষ রাষ্ট্রজোটের এই কমিশন ঘোষণা বিয়া করে যে, [a] স্বদেশে ফিরতে না চাওয়া যুদ্ধবন্দিরা নিরপেক্ষ দেশে বাস করতে পারবেন। [b] স্বদেশে ফিরতে অনিচ্ছুক যুদ্ধবন্দিরা বেসামরিক ব্যক্তিরূপে চিহ্নিত হবেন। অনিচ্ছুক ও বেসামরিক ১৫ হাজার যুদ্ধবন্দি ফরমোজা (তাইওয়ান) এবং ৭ হাজার উত্তর কোরিয়ান যুদ্ধবন্দি দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাস করতে পারবেন। [c] যুদ্ধবন্দিদের ৬০ দিনের মধ্যে নিজ নিজ দেশে ফেরৎ পাঠাতে হবে। কমিশনের এই ঘোষণায় যুদ্ধবন্দি সমস্যার সন্তোষজনক মীমাংসা হয়।

2 শান্তির প্রতি দায়বদ্ধতায়: দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে ভারতও উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী বলে চিহ্নিত করে। তবে কোরিয়া সমস্যার সমাধানে তৃতীয় কোনো পক্ষের ৪ • হস্তক্ষেপের প্রস্তাবে ভারত প্রতিবাদ জানায়। ভারত জানায়, এতে কোরিয়া সমস্যা আরও জটিল হবে। ভারতের লক্ষ্য ছিল যুদ্ধের কর্মসূচি থেকে উভয়পক্ষকে সরিয়ে শান্তির পথে নিয়ে আসা। এই প্রতিবাদে শান্তির প্রতি ভারতের দায়বদ্ধতা সুস্পষ্ট হয়।

3 মার্কিন আগ্রাসনের বিরোধিতায়: তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক রাষ্ট্রসংঘকে তাঁবেদার সংগঠনে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে সমালোচনা করেন। তিনি এ ব্যাপারে স্পষ্ট ভাষায় ভারতের উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন ভারত স্থায়ীভাবে নিরপেক্ষ নয়; জোটবদ্ধ তো নয়ই। উত্তর কোরিয়ার বিরোধিতা করার অর্থ পশ্চিমি দেশগুলিকে তোষণ করা নয়।

4 চিন-কোরিয়া যুদ্ধবিরতিতে: জাতিপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনী উত্তর কোরিয়া দখলের পর চিন সীমান্তে ইয়ালু নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বোমাবর্ষণ শুরু করলে সোভিয়েত মদতপুষ্ট চিনের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী জাতিপুঞ্জের বাহিনীর ওপর পালটা আক্রমণ করে। চিনা বাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওল দখল করে নিলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান সেনাপতি জেনারেল ম্যাক আর্থারকে বরখাস্ত করে চিনের সঙ্গে সমঝোতা চায়। অবশেষে সোভিয়েতের মধ্যস্থতায় উভয়ের মধ্যে যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব আসে ভারত তাতে সমর্থন জানায়। ভারতের সভাপতিত্বে একটি নিরপেক্ষ কমিশনের ওপর দুই দেশের বন্দি বিনিময় দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইতিপূর্বে জাতিপুঞ্জে চিনকে আক্রমণকারী বলে অভিহিত করে একটি প্রস্তাব পাস হলে ভারত তার বিরোধিতা করে।

5 জোটনিরপেক্ষতার সুদৃঢ়করণে: ভারত যে জোটনিরপেক্ষ নীতির প্রতি আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী তা কোরিয়ার যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা থেকে পরিস্ফুট হয়। ভারতের জোটনিরপেক্ষতার মধ্যে যে কোনো খাদ নেই, তা বোঝা যায় যখন নেহরু সরকার প্রথমে উত্তর কোরিয়াকে আক্রমণকারী দেশ

হিসেবে ঘোষণা করে এবং পরে মার্কিন নীতির সমালোচনা করে।

6 পরস্পরবিরোধী সমালোচনা: [i] কোরিয়া যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসার লক্ষ্যে ভারতের ভূমিকাকে চিন ও রাশিয়া পশ্চিমি তোষণ বলে সমালোচনা করে। আবার, [ii] আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশ কোরিয়ার সমস্যায় ভারতের ভূমিকাকে কমিউনিস্ট তোষণ বলে সমালোচনা করে।

উপসংহার: কোরিয়ার সংকট বা কোরিয়া যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ মীমাংসা ভারত মনেপ্রাণেই চেয়েছিল। ভারতের এই আন্তরিক, সৎ ও নিরপেক্ষ ভূমিকা | পরোক্ষভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে উৎসাহিত করেছিল।

30.কোরিয়া সমস্যার পটভূমি আলোচনা করো। এই সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা পর্যালোচনা করো।

উত্তর- কোরিয়া সমস্যার পটভূমি TOPIC [A]- এর 27 । রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘কোরিয়া যুদ্ধের কারণ’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো |

কোরিয়া সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা: TOPIC [A]-এর 29 এবং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরটি দ্যাখো (সূচনা ও উপসংহার বাদে)।

31.ইন্দোচিন কীভাবে ঠান্ডা লড়াইয়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়? ভিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমি লেখো।

উত্তর- ইন্দোচিনের ঠান্ডা লড়াইয়ের কেন্দ্রে রূপান্তর প্রথম পর্যায়ে

1. ফরাসি উপনিবেশবাদের বিরোধিতার সূত্রে: ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়ান আন্নামের সম্রাটের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ইন্দোচিনের ওপর ঔপনিবেশিক আধিপত্য কায়েম করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মিত্রশক্তি জোটের সদস্যরাষ্ট্রগুলির ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের ভিত আলগা হতে শুরু করে। ইন্দোচিনে ফরাসি কর্তৃত্বের বিরোধিতা শুরু হয়। ফরাসি উপনিবেশবাদের এই বিরোধিতা ইন্দোচিনকে ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্তে জড়িয়ে দেয়।

II. জাপানি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার সুবাদে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর হাতে বিধ্বস্ত হয়ে ফ্রান্স ইন্দোচিন ত্যাগ করলে, জাপান সেখানে কর্তৃত্ব স্থাপন করে। জাপান ইন্দোচিনে পূর্বতন আন্নামের সম্রাট বাও-দাইয়ের নেতৃত্বে এক তাঁবেদারি সরকার প্রতিষ্ঠা করে। এর বিরুদ্ধে হো-চি-মিনের নেতৃত্বে পরিচালিত ইন্দোচিনের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সোভিয়েত সাম্যবাদী শক্তি সমর্থন জানালে ইন্দোচিন ঠান্ডা লড়াইয়ের কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়।

iii. মার্কিন হস্তক্ষেপের সূত্রে: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিমলগ্নে অক্ষশক্তি জোটের পরাজয় সুনিশ্চিত হলে, সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় জাপানি সাম্রাজ্যবাদের পতন ঘনিয়ে আসে। হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামি মুক্তি ফৌজ আরও তীব্রভাবে মুক্তি আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। এরকম পরিস্থিতিতে ফ্রান্স ব্রিটিশ ও মার্কিন মদতে ভিয়েতনামে ফরাসি ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠায় উদ্যত হলে ইন্দোচিন ঠান্ডা লড়াইয়ের কেন্দ্রে পরিণত হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে: দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনা ও জেনেভা সম্মেলনের মাধ্যমে ফ্রান্স ভিয়েতনাম থেকে সরে গেলে ইন্দোচিনে সাময়িক শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু জেনেভা সম্মেলনের সিদ্ধান্ত রূপায়ণের পথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ালে ভিয়েতনাম সংকটের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। ইন্দোচিনসহ সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্যবাদের প্রসার রোধের জন্য বেষ্টনী নীতিকে বলবৎ করতে উদ্যোগ নেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামে ন-দিন-দিয়েম (Ngo-Dinh-Diem)-কে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে ক্ষমতায় বসালে তাঁর বিরুদ্ধে চিন ও সোভিয়েত মদতে ভিয়েতমিনরা যুদ্ধ শুরু করে। এই যুদ্ধ ক্রমশ ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিবেশ তৈরি করে।

ডিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমি

হো-চি-মিনের নেতৃত্বে’ ভিয়েতনামবাসীরা সুদীর্ঘকাল (১৯৫৬-৭৫ খ্রি.) ধরে যে যুদ্ধ চালিয়েছিল তা ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত। বিশ্বজুড়ে সোভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রোধের জন্য মার্কিন আগ্রাসনের নগ্ন রূপ ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। প্রথমদিকে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ ও পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ভিয়েতনামে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে, চিন ও সোভিয়েত সাহায্যপুষ্ট ভিয়েতনামবাসী রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয় দীর্ঘস্থায়ী ভিয়েতনাম যুদ্ধ।

এই যুদ্ধের পটভূমি বিশ্লেষণে দেখা যায়-

1 উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রাম: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্গত মালয়, শ্যাম (থাইল্যান্ড), ব্রহ্মদেশ (মায়ানমার) ইত্যাদি দেশে উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রাম চরমে পৌঁছেছিল। এইসমস্ত উপনিবেশ-বিরোধী সংগ্রামে প্রভাবিত হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোচিন (টংকিং, আন্নাম, কোচিন-চিন, লাওস, কম্বোডিয়া) তথা ভিয়েতনামে হো-চি- মিন-এর নেতৃত্বে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল।

2 রুশ-জাপান যুদ্ধের ফলাফল: রুশ-জাপান যুদ্ধের ফলাফল জাপানের অনুকূলে যাওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবাসীর মন থেকে শ্বেতাঙ্গভীতি দূর হয়। রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ ভিয়েতনামবাসী প্রথমে ফরাসি ও পরে জাপানি উপনিবেশ বিস্তারে বাধা দিলে ভিয়েতনাম যুদ্ধ বাধে।

3 চিনের প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব: সান-ইয়াৎ-সেনের নেতৃত্বে শ্রমিক ও কৃষক শ্রেণির সক্রিয় সহযোগিতায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে চিনে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে চিনের এই প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লবের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভিয়েতনামিরা ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়।

4 মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমদিকে ভিয়েতনাম সংকটে হস্তক্ষেপ না করে নিরপেক্ষ থাকে। কিন্তু মাও-সে-তুঙ- এর নেতৃত্বে চিনে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠিত (১৯৪৯ খ্রি.) হলে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে সোভিয়েত মদতে সাম্যবাদের প্রসার ঘটতে শুরু করলে আমেরিকা চুপ করে থাকতে পারেনি। জেনেভা সম্মেলনের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে দক্ষিণ ভিয়েতনামে ন-দিন-দিয়েম (Ngo-Dinh-Diem) সরকারকে অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করতে শুরু করলে ভিয়েতনাম যুদ্ধ চরমে পৌঁছোয়।

5 পটস্ট্রাম সম্মেলনের সিদ্ধান্ত: পটস্ডাম সম্মেলনে (জুলাই, ১৯৪৫ খ্রি.) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, জাপান ইন্দোচিন থেকে সরে এলে ইন্দোচিনের ১৭° উত্তর অক্ষরেখা বরাবর উত্তরে কুয়োমিনতাং চিন এবং দক্ষিণে ব্রিটেন দায়িত্ব নেবে। কিন্তু ফ্রান্স ইন্দোচিনে তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ব্রিটেন দক্ষিণ ইন্দোচিন থেকে সরে যায় এবং কুয়োমিনতাং চিনও উত্তর ইন্দোচিন হো-চি-মিনের হাতে তুলে দেয়।

 প্রশ্ন32. হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

সূচনা: হো-চি-মিনের নেতৃত্বে, ভিয়েতনামবাসী (১৯৪৫-৭৫ খ্রি.) যে সংগ্রাম চালিয়েছিল, তা ইতিহাসে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত। ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভিয়েতনামিরা প্রথমে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ ও পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস করে স্বাধীনতা অর্জন করে।

উত্তর- ভিয়েতনাম যুদ্ধ

1 প্রথম পর্ব (১৯৪৫-৫৪ খ্রি.)

i. ফরাসি নীতি: ফ্রান্স প্রথমে দক্ষিণ ইন্দোচিনে আধিপত্য কায়েম করেছিল। কিন্তু ফ্রান্স শুধুমাত্র তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে রাজি ছিল না। সে চেয়েছিল গোটা ইন্দোচিনে ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে। অপরদিকে হো-চি-মিন চেয়েছিলেন ভিয়েতনামের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধের সূচনা ঘটে।

ii. ভিয়েতমিন-ফ্রান্স চুক্তি: ভিয়েতনাম সংঘর্ষের প্রথম দিকে ‘ভিয়েতমিন’ ও ফ্রান্সের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় (১৯৪৬ খ্রি., ১ মার্চ), যাতে ফ্রান্স ভিয়েতনামকে ইন্দোচিন ফেডারেশন ও ফরাসি ইউনিয়নের অংশরূপে স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে ফ্রান্স হাইফং অঞ্চলে বোমা নিক্ষেপ করে ৬ হাজার নিরীহ অসামরিক ভিয়েতনামিকে হত্যা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

iii. ইন্দোচিনে স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর থেকে টানা তিন বছর সংঘর্ষের পর বাও-ন্দাইয়ের নেতৃত্বে ইন্দোচিনে এক স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

iv. নেভারে প্ল্যান-দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনা: ফরাসি বাহিনী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের শেষদিক থেকে একের পর এক রণক্ষেত্রে হারতে থাকে। এই অবস্থায় ফরাসি সেনাপতি নেভারে ভিয়েতমিনদের সম্পূর্ণ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এক নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যা ‘নেভারে প্ল্যান’ নামে পরিচিত। এই পরিকল্পনা অনুসারে ফ্রান্স উত্তর ভিয়েতনামের টংকিং-এর দিয়েন-বিয়েন-ফু নামে একটি স্থানে অস্ত্রশস্ত্র সমেত একটি দুর্ভেদ্য ঘাঁটি নির্মাণ করে। কিন্তু সেনাপতি জেনারেল নগুয়েন গিয়াপের নেতৃত্বে ভিয়েতমিন সেনারা ফরাসি সেনাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।

2 জেনেভা সম্মেলন (১৯৫৪ খ্রি.): জেনেভা সম্মেলনে ২০ জুলাই যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্পাদিত হয়। নির্ধারিত হয়-[i] ১৭০ অক্ষরেখা বরাবর ভিয়েতনামকে দু-ভাগে ভাগ করা হবে। [ii] ওই অক্ষরেখার উত্তরাঞ্চলে ভিয়েতমিনদের এবং দক্ষিণাঞ্চলে ফরাসি নিয়ন্ত্রণাধীন ন-দিন-দিয়েমের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। [iii] উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনামের কোথাও কোনো বিদেশি সেনা থাকবে না। [iv] ভিয়েতনামের ওই বিভাজন হবে সম্পূর্ণ অস্থায়ী। [v] শান্তিপূর্ণ উপায়ে দুই ভিয়েতনামের মিলনের জন্য রাষ্ট্রসংঘ-গঠিত একটি তদারকি কমিশনের নেতৃত্বে নির্বাচন আহ্বান করা হবে (১৯৫৬ খ্রি., জুলাই)।

3 দ্বিতীয় পর্ব (১৯৫৬-৭৫ খ্রি.)

i. জেনেভা সম্মেলনের ব্যর্থতা: জেনেভা সম্মেলনের (১৯৫৪ খ্রি.) দ্বারা ভিয়েতনাম সমস্যার সমাধান হয়নি। জেনেভা সম্মেলন ভিয়েতনাম যুদ্ধের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটালেও আর একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে।

ii. যুদ্ধে আমেরিকার অংশগ্রহণ: ইন্দোচিনে হো-চি-মিনের প্রভাব- প্রতিপত্তিকে আটকানোর জন্য ফরাসি নিয়ন্ত্রাণাধীন ন-দিন-দিয়েম-কে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি পদে বসানো হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামে ব্যাপক আর্থিক ও সামরিক সাহায্য পাঠাতে শুরু করে।

iii. ভিয়েতকংদের সঙ্গে সংঘর্ষ: উত্তর ভিয়েতনামে মার্কিন অপচেষ্টাকে রুখে দিয়ে হো-চি-মিন বিভিন্ন জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি রূপায়ণের দ্বারা নিজের সরকারের জনপ্রিয়তা অক্ষুণ্ণ রাখেন। অপরদিকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে দিয়েম সরকার নির্বাচনের বিরোধিতা করলে, সমগ্র ইন্দোচিন জুড়ে প্রবল বিক্ষোভ দেখা দেয়। দক্ষিণ ভিয়েতনামে নবগঠিত জাতীয় মুক্তি ফ্রন্টের যোদ্ধা ভিয়েতকংদের সঙ্গে দিয়েম সরকারের সংঘর্ষ বাঁধে।

iv. স্বৈরাচারী দিয়েম সরকারের পতন: ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ভিয়েতকংদের বিরুদ্ধে মার্কিন ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম বাহিনী একজোট হয়ে আক্রমণ করে। ভিয়েতনামে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যায়। এদিকে গণ-অভ্যুত্থানে দিয়েম সরকারের পতন ঘটে (১৯৬৩ খ্রি., নভেম্বর)।

v. স্বাধীন ভিয়েতনামের আত্মপ্রকাশ: ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি উত্তর ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে আমেরিকার সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাস নাগাদ দক্ষিণ ভিয়েতনামের জেনারেল ভ্যান-মিন সায়্যানে ভিয়েতকংদের কাছে আত্মসমর্পণ করলে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম ঐক্যবদ্ধ হয়। আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্রের (Socialist Republic of Vietnam)।

উপসংহার: হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মুক্তিযুদ্ধগুলোতে অনুপ্রেরণা জোগায়।

প্রশ্ন 33.আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে? যুদ্ধে আমেরিকা কেন পরাজিত হয়?

অথবা, ভিয়েতনামে আমেরিকা হস্তক্ষেপ করেছিল কেন? ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়ের কারণ সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করো।

অথবা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল? ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়ের কারণ সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করো।

উত্তর- ভিয়েতনামে আমেরিকার হস্তক্ষেপের কারণ

1 সাম্যবাদ রোধ: প্রথমে সোভিয়েত নেতৃত্বে ও পরে চিনের মদতে সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াজুড়ে সাম্যবাদের প্রসার ঘটতে থাকে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সবসময় চেয়েছে সাম্যবাদের প্রভাব রোধ করতে। তাই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বেষ্টনী নীতি অনুসরণ করে দক্ষিণ ভিয়েতনামকে কমিউনিস্টদের প্রভাব থেকে মুক্ত করতে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কমিউনিস্ট প্রভাবকে সংযত রাখতে চেয়েছিল।

2 পুঁজিবাদের প্রসার: পুঁজিবাদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল ধনতন্ত্রের প্রয়োগ ও বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে নিজের অনুকূলে আনতে। তাই আন্তর্জাতিক বাজার তৈরির জন্য পুঁজিবাদের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমস্যাগুলিতে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে। এরই রেশ ধরে ভিয়েতনামের যুদ্ধে আমেরিকা অংশ নেয়।

3 তৃতীয় বিশ্বে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে এশিয়ার দেশগুলিকে অর্থ-সাহায্যের নামে শুরু হয় মার্কিন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। ভিয়েতনাম সমস্যা আমেরিকাকে তৃতীয় বিশ্বে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ এনে দেয়।

আমেরিকার পরাজয়ের কারণ

1 কমিউনিস্টদের বিরোধিতা: ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রদক্ষিণ ভিয়েতনামের দিয়েম সরকারকে সমর্থন করে ভুল করেছিল। কারণ,এই দিয়েম সরকারের বিরোধী কমিউনিস্টরা ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী। তারাভিয়েতকং অর্থাৎ জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট (National Liberation Front)-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে মার্কিনিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

2 ভিয়েতনামিদের তীব্র স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা: ভিয়েতনামিরা নিজেদের দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে লড়াই করেছিল। তাদের এই তীব্র স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষার কাছে হার মানতে হয়েছিল বিদেশি মার্কিনিদের। স্বাভাবিকভাবেই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ের কাছে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের পরাজয় অবশ্যম্ভাবী ছিল। যুদ্ধ যত এগিয়েছে মানসিকভাবে মার্কিনিরা ততই পিছিয়ে পড়েছে।

3 গেরিলা রণকৌশল: ভিয়েতনাম মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা যুদ্ধ- পদ্ধতিতে মার্কিনিদের থেকে এগিয়েছিল। শুধুমাত্র আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করে মার্কিন সেনাবাহিনী ভিয়েতনামি সেনাদের ধ্বংস করতে পারেনি।

4 অজানা পরিবেশ: মার্কিন সেনাবাহিনী মাতৃভূমি ছেড়ে সম্পূর্ণ অজানা, অচেনা পরিবেশে লড়াই করতে এসেছিল। তাই চেনাজানা পরিবেশে ভিয়েতনামি সেনারা সহজে যেভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করতে পেরেছিল মার্কিনিরা সেভাবে পারেনি।

5 সোভিয়েত ও চিনের ভূমিকা: সোভিয়েত ও চিন সাম্যবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ ভিয়েতনামকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র-সহ সামরিক সাজসরঞ্জাম নিয়মিত জোগান দিয়েছিল। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিপুল সংখ্যক সেনা এই যুদ্ধে নিয়োগ করলেও সফল হতে পারেনি।

6 ভৌগোলিক দূরত্ব: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভিয়েতনামের ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল কয়েক হাজার মাইল। এতদূর থেকে যুদ্ধকে নিয়ন্ত্রণ করে সফল হওয়া ছিল অসম্ভব। তাই শেষপর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের যুদ্ধ থেকে পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছিল।

প্রশ্ন: 34. পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পদক্ষেপ বর্ণনা করো।

উত্তর- পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ

1 প্রেক্ষাপট: পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার অনেক আগেই নিরস্ত্রীকরণের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোসিমায় ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্ট ও নাগাসাকিতে ১ আগস্ট আণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে সার্বিকভাবে পারমাপাসাকিতে নিষিদ্ধকরণের প্রচেষ্টা শুরু হয়।

 2 পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই সোভিয়েত ও মার্কিন উভয় তরফেই পারমাণবিক বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে যাতে পারমাণবিক যুদ্ধে বিশ্বের ধ্বংসসাধনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই ধ্বংস প্রক্রিয়া MAD (Mutually Assured Destruction) তত্ত্ব নামে পরিচিত। পরবর্তী সময়ে সোভিয়েত ও মার্কিন একে অপরকে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রথম আঘাত হানার ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করার নীতি নেয়। এই নীতির নাম Policy of Nuclear Deterrence। পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার অগ্রগতিকালে শক্তিসাম্য ত্রাসের সাম্য (Balance of Terror) নামে পরিচিতি লাভ করে।

3. শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ

1. আণবিক শক্তি কমিশন গঠন: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভার প্রস্তাব অনুসরণে একটি পরমাণু শক্তি কমিশন (Atomic Energy Commission) গঠন করা হয়। এই কমিশন আণবিক শক্তি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বিস্তারিত পরিকল্পনা রচনার সিদ্ধান্ত নেয়।

জেনেভা নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের স্মরণে প্রকাশিত একটি পোস্টকার্ড

ii. জেনেভা নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন: রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে জেনেভাতে এক নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলন বসে। এই সম্মেলনে নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি তদারকির জন্য ১০টি সদস্য রাষ্ট্রকে নিয়ে এক কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে সদর্থক আলোচনার প্রস্তাব রাখে।

iii. পরবর্তী সম্মেলনসমূহ: রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে, তারপর ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে আণবিক অস্ত্র রোধের লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ গৃহীত হয়। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মহাকাশে ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়।

iv. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগ

[a] বারুচ পরিকল্পনা: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি তথা কূটনীতিবিদ বার্নার্ড বারুচকে পারমাণবিক শক্তি কমিশনের প্রতিনিধি মনোনীত করেন। বারুচ নিরস্ত্রীকরণ সম্পর্কিত এক পরিকল্পনা কমিশনে পেশ করেন (১৯৪৬ খ্রি., ১৫ জুন) যা ‘বারুচ পরিকল্পনা’ নামে পরিচিত। এর দ্বারা একটি আন্তর্জাতিক আণবিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (International Atomic Development Authority বা LADA) গঠন করে পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের উৎস এবং পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে বেশ কিছু প্রস্তাব রাখা হয়।

[b] আইজেনহাওয়ার পরিকল্পনা: মার্কিন রাষ্ট্রপতি আইজেনহাওয়ার পারমাণবিক দ্রব্যের শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘে এক পরিকল্পনা পেশ করেন। এই পরিকল্পনায় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সামরিক ঘাঁটিগুলির আলোকচিত্র ও ব্লু প্রিন্ট বিনিময়ের উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও তিনি রাষ্ট্রসংঘের তত্ত্বাবধানে এক আন্তর্জাতিক শক্তি কমিশন গঠনের কথা বলেন।

v. সোভিয়েত ইউনিয়নের উদ্যোগ: সোভিয়েত ইউনিয়নও পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৪ জুন ‘গ্রোমিকো পরিকল্পনা’ নামে এক প্রস্তাব পেশ করে।

[a] সাধারণ সভায় নিরস্ত্রীকরণে প্রস্তাব পেশ: ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন সাধারণ সভার নিরস্ত্রীকরণ কমিশনের উপসমিতির কাছে এক প্রস্তাব পেশ করে। এই প্রস্তাবে বিভিন্ন দেশের সামরিক খাতের খরচের পরিমাণ কমানোর কথা বলা হয়।

[b ] সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধানের উদ্যোগ: সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি ক্রুশ্চেভ জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সভায় সর্বাত্মক নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব তোলেন। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি ব্রেজনেভ কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র সীমিতকরণের লক্ষ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান রিচার্ড নিকসনের সঙ্গে মস্কোতে সল্ট-১ চুক্তি (২৬ মে, ১৯৭২ খ্রি.) এবং পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের সঙ্গে ভিয়েনায় সল্ট-২ (১৮ জুন, ১৯৭৯ খ্রি.) চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীকালে সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গরবাচভ মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশের সঙ্গে START-1 (১৯৯১ খ্রি., ৩১ জুলাই) নামে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। এই চুক্তিতে সোভিয়েত ও মার্কিন উভয় রাষ্ট্রের অস্ত্রসম্ভারের অস্ত্রসংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। পরবর্তী রুশ প্রজাতন্ত্রের প্রধান বরিস ইয়েলৎসিন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বুশের সঙ্গে START-II চুক্তি সম্পাদন করেন (১৯৯৩ খ্রি., জানুয়ারি)।   এই চুক্তিতে উভয় দেশ নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার অর্ধেকেরও বেশি নিষ্ক্রিয় করে ফেলতে সম্মত হয়।

উপসংহার: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়া মূলত এই দুই দেশের নেতৃত্বে পারমানবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আবার এই দুই দেশের উদ্যোগেই মূলত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন পদক্ষেপ গৃহীত হয়।

প্রশ্ন 35.পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণগুলি কী ছিল? পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলাফল কী ছিল?

অথবা, পরমাণু অস্ত্র নিমার্ণে ব্যর্থতার কারণ ও ফলাফল লেখো।

উত্তর- পরমাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ

1. ঠান্ডা লড়াই: কোনো কোনো দেশ মুখে নিরস্ত্রীকরণের কথা বললেও বাস্তব ক্ষেত্রে সে ভয়ানক আগ্রাসন চালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আমেরিকা ও রাশিয়া উভয় শক্তি নিরস্ত্রীকরণের কথা বললেও এবিষয়ে তাদের আন্তরিকতা ছিল না। কেন-না, নিজেদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পক্ষে অস্ত্র হ্রাস করা সম্ভব ছিল না।

2. পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব: রাশিয়া ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গোপনে আণবিক বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটালে আমেরিকার বিশ্বাস ভঙ্গ হয়। আবার ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে (মে মাসে) আমেরিকা তার U-2 পর্যবেক্ষণ বিমান থেকে রাশিয়ার ওপর গুপ্তচর বৃত্তি চালালে রাশিয়ার অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। এই ধরনের অবিশ্বাসের ঘটনা নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করে।

3. অস্ত্রের ধরন নিয়ে সমস্যা: কোন্ দেশের কোন্ অস্ত্র ‘আক্রমণাত্মক’ এবং কোন্ অস্ত্র ‘রক্ষণাত্মক’ তা নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে মতবিরোধ থাকে। এক দেশ যে অস্ত্রকে ‘আক্রমণাত্মক’ বলে বিবেচনা করে অন্য দেশ তাকেই ‘রক্ষণাত্মক’ বলে মনে করতে পারে। এ বিতর্কের ফলে কোনো মীমাংসায় পৌঁছোনো সম্ভব হয়নি এবং নিরস্ত্রীকরণের বাস্তবায়নও অধরা থেকে যায়।

4. গুণগত নিরস্ত্রীকরণের সমস্যা: নিরস্ত্রীকরণ বলতে সাধারণত অস্ত্রের পরিমাণ হ্রাস বা অস্ত্রের বিলুপ্তি বোঝানো হয়। কিন্তু বিভিন্ন দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে পরিমাণগত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব হলেও গুণগত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়। এর কারণ হিসেবে ড. কিসিঞ্জার বলেছেন যে, প্রকৃত অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলে গবেষণাগারে। তাই কোনো দেশের সৈন্য সংখ্যা যতই হ্রাস করা হোক না কেন, এর দ্বারা প্রকৃত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়।

5. চুক্তি লঙ্ঘন: নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরও বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সময় চুক্তি লঙ্ঘন করার ফলে এবিষয়ে যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই চুক্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা গোপনে অস্ত্র উৎপাদন ও মজুতের কাজ চালিয়ে যায়।

পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলাফল

1 সভ্যতার বিলুপ্তির আশঙ্কা: পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা পৃথিবীর মানব-সভ্যতার অস্তিত্বকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বৃহৎ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলি ছাড়াও বর্তমানে মাঝারি শক্তিসম্পন্ন বহু দেশের হাতে বিপুল পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে যা সমগ্র পৃথিবী ধ্বংস করেও শেষ হবে না।

2 দূষণ: পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতা পৃথিবীর পরিবেশদূষণের মাত্রাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে। জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে যেখানেই পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালানো হোক না কেন পরমাণুর বর্জ্যপদার্থ প্রকৃতিতে মিশে গিয়ে সীমাহীন দূষণ ছড়াচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, সম্প্রতি জাপানের পরমাণু কেন্দ্র সুনামির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরমাণু বর্জ্য প্রকৃতিতে মিশে জমির ধান, নদীর মাছ-সবকিছুতেই প্রবেশ করেছে। মানুষ তার পরোক্ষ প্রভাবে ক্যান্সার-সহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুপথযাত্রী হচ্ছে বা হবে।

3 অর্থনৈতিক ক্ষতি: অস্ত্র প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলি তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি রূপায়ণ করতে গিয়ে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে সেসব দেশের বিরাট অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে এবং প্রকৃত উন্নয়ন কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

4 তৃতীয় বিশ্বের দুর্দশা: বৃহৎ শক্তিগুলি পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে সেই ব্যয় আদায় করার জন্য তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দরিদ্র দেশে নানাভাবে শোষণ চালাচ্ছে। ফলে এসব দেশের মানুষ দিনদিন দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হচ্ছে। এসব দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হতে বাধ্য হচ্ছে।

5 শক্তির অপব্যবহার: পরমাণু শক্তির মাত্রা খুবই ব্যাপক। এই শক্তিকে মানবকল্যাণে বহু কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। বিদ্যুৎ উৎপাদন, – চিকিৎসাবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পরমাণু শক্তির গুরুত্ব সীমাহীন। কিন্তু পরমাণু অস্ত্র প্রতিযোগিতার নেমে বহু দেশ পরমাণু শক্তির শুভ দিকটিকে কাজে না লাগিয়ে এই শক্তির অপব্যবহার করছে।

প্রশ্ন 36. দাঁতাত কী? বিশ্ব রাজনৈতিক দাঁতাতের উদ্ভবের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর- দাঁতাত

‘দাঁতাত’ (Detente) একটি ফরাসি শব্দ। এর অর্থ হল উত্তেজনা প্রশমন (relaxation of tension)। ১৯৭০-এর দশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঠান্ডা লড়াই ক্রমশ স্তিমিত হয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক ইতিহাসে এই পর্বটি দাঁতাত’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুপরিকল্পিত নীতি হল ‘দাঁতাত’। হেনরি কিসিংগারের মতে, দাঁতাত হল প্রত্যক্ষ সামরিক সংঘাত এবং সর্বোপরি পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ানোর লক্ষ্যে চিরাচরিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সমঝোতায় গুরুত্ব আরোপ।

দাঁতাতের উদ্ভবের কারণসমূহ

1 অস্ত্র হ্রাস সম্পর্কিত সম্মেলন: পারমাণবিক যুদ্ধ ভীতি রাশিয়া এবং আমেরিকা দুই দেশকে পরস্পরের কাছাকাছি আনে। ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসানে যে শীর্ষ সম্মেলনগুলির ভূমিকা ছিল সেগুলি হল-রুশ-মার্কিন জেনেভা শীর্ষ বৈঠক (১৯৮৫ খ্রি. ১৯ নভেম্বর), ওয়াশিংটন শীর্ষ সম্মেলন (১৯৮৭ খ্রি. ডিসেম্বর), মস্কো শীর্ষ বৈঠক (১৯৮৮ খ্রি., ২৯মে), মাল্টা শীর্ষ বৈঠক (১৯৯০ খ্রি. ৯ সেপ্টেম্বর), প্যারিস শিখর সম্মেলন (১৯৯০ খ্রি. ১৯ নভেম্বর), মস্কো শীর্ষ বৈঠক (১৯৯১ খ্রি. ৩০ জুলাই) ইত্যাদি। তবে প্যারিস শিখর সম্মেলনেই কার্যত ঠান্ডা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটেছিল বলা চলে। কারণ, মার্কিন রাষ্ট্রপতি বুশ নিজেই এই সম্মেলনকে ঠান্ডা লড়াই-এর সমাপ্তি বলে অভিহিত করেছিলেন।

2 রাজনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ: ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে সোভিয়েত রাশিয়ার ঐকান্তিক চেষ্টা সত্ত্বেও সাম্যবাদী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি জোটনিরপেক্ষতা নীতি অবলম্বন করে এবং ন্যাটো ভুক্ত দেশগুলি, বিশেষত ফ্রান্স ও ব্রিটেন নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব আরও মজবুত করার জন্য তাদের রাজনীতিকে বিশ্বজনীন করার প্রয়াস গ্রহণ করে। এর ফলে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির তীব্রতা হ্রাস পেতে থাকে।

3. গর্বাচেভের ভূমিকা: সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধানরূপে গর্বাচেভ গ্লাসনস্ত (মুক্তচিন্তা) ও পেরেস্ত্রৈকা (পুনর্গঠন)-এই দুই নীতির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইলে বিশ্বে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির উত্তেজনা প্রশমিত হতে শুরু করে।

4 শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি: সোভিয়েত রাশিয়ার দিক থেকে প্রথমে ক্রুশ্চেভ, পরে ব্রেজনেভের আমলে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতি স্থাপন রুশ বিদেশনীতির মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। অপর দিকে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠলে ঠান্ডা লড়াইয়ের অবসান প্রক্রিয়া শুরু হয়।

5.বহুমের রাজনীতির উত্থান: ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দ্বিমেরুতার পরিবর্তে বহুমেরুতার উত্থান ঘটতে শুরু করে। তৃতীয় বিশ্ব থেকে চিনের উত্থান এবং ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি সহ বিভিন্ন রাষ্ট্র কর্তৃক স্বাধীন বিদেশনীতি গ্রহণ বহুমেরু রাজনীতির উত্থানকে – ত্বরান্বিত করে। এতে শঙ্কিত হয়ে সোভিয়েত ও মার্কিন উভয় রাষ্ট্রই আরও সহনশীল হতে বাধ্য হয়। ফলে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবসান ঘটতে থাকে।

6. জোটনিরপেক্ষ নীতি: ভারতের নেতৃত্বে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি একে একে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করতে শুরু করলে এবং বহু ইউরোপীয় দেশ তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পুঁজি বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে উঠলে সোভিয়েত এবং মার্কিন, দুই জোটের মধ্যেকার ঠান্ডা লড়াইয়ের তীব্রতা হ্রাস পেতে থাকে। দাঁতাতের উদ্ভব ঘটে।

দাঁতাতের গুরুত্ব

1 স্নায়ুযুদ্ধের অবসান: সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট যেভাবে বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করেছিল তা থেকে বিশ্বকে মুক্ত করেছিল দাঁতাত। লৌহযবনিকা তুলে নেওয়া হয়েছিল। ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রতীক বার্লিন প্রাচীর ধূলায় মিশিয়ে দেওয়া কৃতিত্ব দাঁতাতের। দুই জোটের নেতৃত্বাধীন দেশগুলো বুঝেছিল অস্ত্র নয়, নিরস্ত্রীকরণই আসল পথ।

2 সামরিক জোটের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস: দাঁতাতের পর্বে সামরিক জোটগুলির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পায়। SEATO, CENTO-র মতো সামরিক জোটগুলি ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে যায়। NATO-এর ওয়ারশ চুক্তিগুলিরও আবশ্যকতা কমে আসে। পূর্ব ইউরোপে কমিউনিস্টদের পতন শুরু হলে ওয়ারশ চুক্তিও বিলুপ্ত হয়।

3 বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি: দাঁতাতের প্রভাবে বিভিন্ন দেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। সোভিয়েত-মার্কিন সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে আসার ফলে পূর্ব-পশ্চিম ইউরোপ, সোভিয়েত- পশ্চিম ইউরোপ, আমেরিকা-পূর্ব ইউরোপ, চিন-সোভিয়েত ও জাপান- সোভিয়েত সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। এই সমস্ত দেশগুলির মধ্যে দাঁতাতের পূর্বেকার তিক্ততার সম্পর্কের অবসান ঘটে। অর্থাৎ দাঁতাত এই দেশগুলির পারস্পরিক সম্পর্কের শীতলতাকে উন্নতায় বদলে দেয়।

4 নির্জোট আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা হ্রাস: নির্জোট দেশগুলি ইতিপূর্বে ঠান্ডা লড়াইকালে নিজেদের নিরাপত্তার স্থায়িত্ব এবং আর্থিক অগ্রগতির লক্ষ্যে সাম্যবাদী বা পুঁজিবাদী কোনো জোটেই যোগ দেয়নি। কারণ, তারা কোনো একটি জোটে যোগ দিয়ে অন্য জোটের বিরাগভাজন হতে চায়নি। এই লক্ষ্যে তারা নির্জোট আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। দাঁতাত রাজনীতি সেই নির্জোট আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতা হ্রাস করে।

5 ইউরোপের ঐক্য ও সংহতির সুদৃঢ়করণ: দাঁতাত রাজনীতি পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির পুনর্মিলন ঘটায়। পাশাপাশি প্যারিস শীর্ষ বৈঠকের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বিভাজন কমিয়ে আনা হয়। ইউরোপের আঞ্চলিক বিরোধগুলির শান্তিপূর্ণ মীমাংসার রাস্তা তৈরি হয়। সার্বিক রূপে ইউরোপীয় ঐক্য ও সংহতির ক্ষেত্র আগের তুলনায় অনেকটাই মজবুত হয়।

6 অন্যান্য ক্ষেত্রে: সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-এই দুই মহান শক্তিশালী দেশ দাঁতাতের জন্যই সামরিক খাতে বাড়তি খরচ থেকে সরে আসে। সেই অর্থ তারা জনকল্যাণমুখী কাজে খরচ করে। মুক্ত বাজার, অবাধ বাণিজ্য উদারীকরণ নীতি-এই সবকিছু আসলে দাঁতাতের ফলশ্রুতি। দাঁতাতের সুদূরপ্রসারী ফলাফল হিসেবেই সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতা এবং বিজ্ঞান- প্রযুক্তিতে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়েছিল।

প্রশ্ন 37. ভারতের জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ ও গুরুত্ব লেখো।

উত্তর- জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য

1 জাতীয় ঐতিহ্য রক্ষা: সুপ্রাচীন কাল থেকেই অহিংসা, শান্তি, সহমর্মিতা ও সহনশীলতার আদর্শে ভারত বিশ্বাসী। হিংসা-জর্জরিত পৃথিবীতে বুদ্ধ ও অশোকের শান্তির বাণী ভারতবর্ষের সীমানা ছাড়িয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। ক্ষমতার শীর্ষে উঠেও আকবর ও শিবাজি, সহনশীলতার কথা প্রচার করেন। এই সুমহান আদর্শ ও জাতীয় ঐতিহ্য বহন করার উদ্যোগ থেকেই ভারত সরকার জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণে অগ্রসর হয়।

2 রাজনৈতিক স্বতন্ত্রতা: রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভারত পুঁজিবাদ বা সাম্যবাদ-কোনোটিকেই সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করেনি। কারণ ভারত গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু নিজেই ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদের বিরোধী ছিলেন। নেহরু বলেছিলেন-বিশ্বের পক্ষে ও আমাদের পক্ষে যা ক্ষতিকর তা আমরা নির্দ্বিধায় নিন্দা করব।

3 আর্থসামাজিক উন্নতি: স্বাধীনতা লাভের ঠিক পরের মুহূর্ত থেকেই ভারত এক গভীরতর আর্থসামাজিক সংকটের মুখে পড়ে। দেশভাগ, উদ্বাস্তু সমস্যা, বেকারত্ব, খাদ্যাভাব, কালোবাজারি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-এসব সমস্যার ফলে ভারতীয় অর্থনীতি একেবারে ভেঙে পড়লে নেহরু স্বতন্ত্র আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণের দ্বারা আর্থসামাজিক পরিস্থিতির ■ উন্নতি ঘটাতে সচেষ্ট হন।

4 জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণ: জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে কোনো দেশেরই পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারিত হয় না। তবে এই স্বার্থ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে, কিন্তু কখনোই উপেক্ষিত হতে পারে না। সাম্যবাদী বা ধনতন্ত্রবাদী কোনো জোটের মধ্যে না গিয়ে নেহরু মিশ্র অর্থনীতি ও স্বাধীন বিদেশনীতি গ্রহণের দ্বারা জাতীয় স্বার্থের সংরক্ষণ চেয়েছিলেন। এ প্রসঙ্গে নেহরু বলেছেন- “স্বাভাবিকভাবেই আমি ভারতের স্বার্থের দিকে লক্ষ রেখেছি, কারণ এটিই আমার প্রধান কর্তব্য”।

5 নিরপেক্ষতা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাম্যবাদী ও ধনতন্ত্রবাদী-এই দুই পরস্পরবিরোধী শক্তিজোটে বিভক্ত বিশ্ব যখন ঠান্ডা লড়াইয়ে মত্ত, তখন ভারত কোনো জোটেই অংশগ্রহণ না করে নিরপেক্ষনীতি গ্রহণ করে।

6 তৃতীয় শক্তিজোটের নেতৃত্ব: যে সমস্ত দেশ ঠান্ডা লড়াইয়ের বাইরে থাকতে চাইছিল, কী আয়তন, কী জনসংখ্যা উভয় ব্যাপারেই ভারতের কাছে তারা ছিল নিতান্তই নগণ্য। সুতরাং নিজের নেতৃত্বে বিশ্বে একটা জোটনিরপেক্ষ গোষ্ঠী বা তৃতীয় শক্তিজোট গড়ে তোলার লক্ষ্যেও ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের গুরুত্ব

1 নবলব্ধ স্বাধীনতা রক্ষা: জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন এশিয়া-আফ্রিকার নিরপেক্ষ রাষ্ট্রগোষ্ঠীর নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষা করে তাদের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের প্রয়াসকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে।

2 ভারসাম্য রক্ষা: দ্বিমেরুকরণ রাজনীতির মাঝে তৃতীয় বিশ্বের আবির্ভাব ঘটিয়ে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বিশ্ব-রাজনীতিতে ভারসাম রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ও শান্তিপ্রতিষ্ঠা: বর্ণবৈষম্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও আণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করে এই আন্দোলন বিশ্বে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

4 জঙ্গি আগ্রাসন রোধ: এই আন্দোলন বিশ্বে সোভিয়েত-মার্কিন জঙ্গি আগ্রাসনকে যে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল তাতে সন্দেহ নেই জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের এ এক ব্যতিক্রমী সাফল্য।

5. তৃতীয় বিশ্বের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা: এই আন্দোলন শক্তিশালী হওয়ার আগে পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলিই বিশ্বরাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত। রিহান্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের বক্তব্যই ছিল শেষ কথা। কিন্তু এই 3 আন্দোলন তৃতীয় বিশ্বের সদ্য স্বাধীন, দরিদ্র ও অনুন্নত দেশ ও জাতিগুলিকে না আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে।

প্রশ্ন 38. জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ছিল? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য আলোচনা করো।

উত্তর- জোটনিরপেক্ষ নীতি

1 পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রজোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী রাষ্ট্রজোটের দ্বন্দ্বের ফলে বিশ্বে এক উত্তেজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যা ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত। এমতাবস্থায়, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এই রাজনৈতিক দ্বিমেরুকরণ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চায় এবং এই দুই পরস্পরবিরোধী রাষ্ট্রগোষ্ঠীর কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে নিজেদের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে চায়। জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষা করার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী উল্লেখযোগ্য কিছু দেশ হল ভারত, ■ মিশর, যুগোশ্লাভিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ঘানা, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি। এই আন্দোলনের কয়েকজন উল্লেখযোগ্য নেতা ছিলেন ভারতের জওহরলাল নেহরু, মিশরের গামাল আবদেল নাসের, যুগোশ্লাভিয়ার মার্শাল টিটো, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্ণ, ■ ঘানার নকুমা প্রমুখ। এই নীতি অনুসরণের ফলে ভারত এই দুই রাষ্ট্রের জোট এবং সেগুলির তাত্ত্বিক প্রভাব থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিল।

2 বান্দুং সম্মেলন: ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে এশিয়ার ১৪টি দেশ নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ়করণে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। এর ফলে ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯টি দেশের প্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে মিলিত হন যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত। এই সম্মেলনের মূল উদ্যোগকারী দেশগুলি ছিল ইন্দোনেশিয়া, বার্মা, পাকিস্তান, সিংহল ও ভারত এবং এই সম্মেলনের মধ্যমণি ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান জওহরলাল নেহরু। বান্দুং সম্মেলনে জওহরলাল নেহরু ঘোষিত দশশীল নীতি জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল বলে মনে করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে জোটনিরপেক্ষ নীতির শর্তাবলি আলোচনা করার জন্য বেলগ্রেড-এ প্রথম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে আয়োজিত হয়। ৫ থেকে ১২ জুন মিশরের রাজধানী কায়রোতে একটি Preparatory

Conference অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ২২টি দেশের বিদেশমন্ত্রী এক বৈঠকে মিলিত হন। এই বৈঠকে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সদস্য রাষ্ট্রগুলির জন্য নির্ধারিত নিয়মাবলি ও যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারিত করা হয়। এগুলি হল- [i] জোটনিরপেক্ষ সদস্যপদপ্রার্থী দেশকে স্বাধীন এবং স্বতন্ত্র নীতি মেনে চলতে হবে। [ii] জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের আদর্শকে সম্মান জানিয়ে বিভিন্ন দেশের উপনিবেশবিরোধী জাতীয় মুক্তিসংগ্রামকে সমর্থন জানাতে হবে। [iii] পরস্পরবিরোধী রাষ্ট্রজোটগুলির অন্তর্বর্তী সংঘাত বা প্রভাবকে এড়িয়ে চলতে হবে এবং ঠান্ডা যুদ্ধের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে এমন কোনো পারস্পরিক সামরিক চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া যাবে না। [iv] রাজনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থানগত ভিন্নতা সত্ত্বেও জোটনিরপেক্ষ দেশগুলিকে পারস্পরিক সহাবস্থান নীতি মেনে চলতে হবে। [v] কোনো সদস্য দেশ আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কোনো বৃহৎ শক্তিশালী দেশের সাথে যদি সামরিক সমঝোতা করে, তবে সেটিকে ঠান্ডা যুদ্ধের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। [vi] জোটনিরপেক্ষ নীতি অনুসরণকারী কোনো দেশ তার ভূখণ্ডকে বিদেশি শক্তির সামরিক স্বার্থে প্রদান করলেও সেই ভূখণ্ডকে ঠান্ডা যুদ্ধের স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে না।

জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য

TOPIC [C]-এর 1 নং রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তরের ‘জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য’ শীর্ষক অংশটি দ্যাখো।

প্রশ্ন 39. ভারতের জোটনিরপেক্ষ নীতির সাফল্য ও ব্যর্থতা আলোচনা করো।

উত্তর- জোটনিরপেক্ষ নীতির সাফল্য

1 দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়

i. কোরিয়া সমস্যা: ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধ সংক্রান্ত জটিল সমস্যা সমাধানে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে ভারত এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে। প্রথমে কোনো পক্ষই ভারতকে আমল না দিলেও পরে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগকে উভয় শক্তিই স্বাগত জানায়। যুদ্ধবিরতির পর বন্দি বিনিময় নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে ভারতের মধ্যস্থতায় জেনারেল থিমাইয়ার নেতৃত্বে এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয়।

ii. ভিয়েতনাম সমস্যা: ইন্দোচিনে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম ও পরে ভিয়েতনাম সমস্যা সমাধানেও ভারতের ভূমিকা ছিল খুবই উল্লেখযোগ্য। ফরাসি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলের জনসাধারণের মুক্তিসংগ্রামকে ভারত খোলা মনে সমর্থন করে। এ ব্যাপারে সম্মেলনের যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করার জন্য তিনটি কমিশন নিযুক্ত হয়। সেগুলির সভাপতি নিযুক্ত হন জে. এম. দেশাই, জে. এন. খোসলা এবং জে. পার্থসারথী।

iii. চিনকে জাতিপুঞ্জের সদস্য মনোনয়ন: ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে চিনে সাম্যবাদী প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হলে মার্কিনজোট প্রজাতন্ত্রী চিনকে জাতিপুঞ্জে স্বীকৃতি দেয়নি। বিবাদ থাকা সত্ত্বেও চিনকে জাতিপুঞ্জের সদস্য করার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে ভারত জোরালো বক্তব্য রাখে। অবশেষে কমিউনিস্ট চিনকে জাতিপুঞ্জ বা রাষ্ট্রসংঘের সদস্যরূপে গ্রহণ করা হয়।

2 পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকায়

i. মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট স্থাপন: ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট স্থাপনের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটো ও বাগদাদ চুক্তি ভারত অগ্রাহ্য করে।

ii. পশ্চিম এশিয়ার মুক্তি আন্দোলন: পশ্চিম এশিয়ায় সাম্রাজ্যবাদ- বিরোধী সংগ্রাম ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে ভারত অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়।

iii. সুয়েজ সংকটের সমাধান: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে সুয়েজ সংকট এবং মিশরের ওপর ইঙ্গ-ফরাসি ও ইজরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারত তীব্র প্রতিবাদ জানায়। নেহরু মিশরকে সাহায্য করতে ভারতীয় সেনা পাঠানোর হুমকি দেন। জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপে আক্রমণকারীরা মিশর ত্যাগ করে।

iv. কঙ্গোতে শান্তি স্থাপন: কঙ্গোকে ঐক্যবদ্ধ রেখে সেখানে শান্তি স্থাপনের জন্য রাষ্ট্রসংঘ বাহিনীকে সাহায্য করতে ভারত সেনাদল পাঠায়।

3 তৃতীয় বিশ্বের নেতৃত্বদানে: ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ভারত ও চিনের মধ্যে পঞ্চশীল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শান্তিস্থাপনে বিশ্ব এক নতুন পথনির্দেশ পায়। পরের বছরই ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া-আফ্রিকার ২৯টি রাষ্ট্রের এক সম্মেলনে ভারতের নেতৃত্বে বিশ্বে নির্জোট আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। পরে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে যুগোশ্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও ভারত ছিল মধ্যমণি। এইভাবে ভারত ঠান্ডা লড়াইয়ের বাইরে নির্জোট তৃতীয় বিশ্ব গঠনের পথে এগিয়ে যায়।

4 হাঙ্গেরি সমস্যায়: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে হাঙ্গেরিতে সোভিয়েত আক্রমণ এবং ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক কয়েকজন হাঙ্গেরীয় নেতার মৃত্যুদণ্ডের ঘটনায় ভারত প্রতিবাদ জানায়।

জোটনিরপেক্ষ নীতির ব্যর্থতা

1 ভারত-চিন বিরোধে: ভারতের নির্জোট নীতি কিন্তু চিন ও ভারতের মধ্যে বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতীয় ধর্মগুরু দলাই লামাকে ভারতে আশ্রয়দান এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টাকে কেন্দ্র করে ভারত-চিন বিরোধ সৃষ্টি হয়।

2 পাক-ভারত বিরোধে: কাশ্মীর প্রশ্ন, পাক-ভারত আন্তর্জাতিক সীমানা-বিরোধ ইত্যাদি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ককে তিক্ত করে তোলে। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে নেহরু-নুন চুক্তি (Nehru-Noon Treaty) দ্বারা ভারত বেরুবাড়ি অঞ্চলের একটা অংশ পাকিস্তানের হাতে তুলে দিলেও সীমানা-বিরোধ থামেনি। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান কচ্ছ সীমান্তের কিছু অঞ্চল অধিকার করলে পাক-ভারত যুদ্ধ বাঁধে।

প্রশ্ন 40. নেহরুর পঞ্চশীল নীতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। বান্দুং সম্মেলনের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তর- নেহরুর পঞ্চশীল নীতি

1 পরিচয়: ভারতের পররাষ্ট্রনীতির এক প্রধান অঙ্গ ছিল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এই নীতি মেনেই ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে চিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন- লাই দ্বিতীয়বার ভারতে এলে ভারত ও চিনের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যে পাঁচটি নীতি স্থির হয় (২৯ এপ্রিল) তা পঞ্চশীল নীতি নামে পরিচিত।

2. পরশীল নীতিসমূহ: প্রধানমন্ত্রী নেহরু বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে সম্রাট অশোকের আদর্শ ও ঐতিহ্য অনুসারে যে পাঁচটি নীতি ঘোষণা করেছিলেন সেগুলিই পঞ্চশীল নামে পরিচিত। এই নীতিগুলি ছিল- [i] দুইটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদাজ্ঞাপন। [ii] একে অপরকে আক্রমণ না করা। [iii] একে অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা। [iv] পরস্পরকে সমমর্যাদা ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান। [v] গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

বান্দুং সম্মেলন

1 পরিচয়: ১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসে এশিয়ার ১৪টি দেশ নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ়করণে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণ করে। এরপর ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯টি 17 (৫টি পৃষ্ঠপোষক দেশ, যথা- বার্মা, সিংহল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান এবং এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৪ টি দেশ) দেশের প্রতিনিধিরা একজোট হয়ে এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে মিলিত হন (১৯৫৫ খ্রি., ১৮-২৪ এপ্রিল) যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত।

2 উদ্দেশ্য: বান্দুং সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত-মার্কিন ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা। ও দশশীল নীতি: বান্দুং সম্মেলনে জওহরলাল নেহরুর পঞ্চশীল নীতি দশশীল নীতিতে পরিণত হয়। মনে করা হয় যে, এখানে গৃহীত ওই দশটি নীতিই বিশ্বে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল। ওই দশটি নীতি হল- [i] রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদা জ্ঞাপন। [ii] কোনো দেশের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আগ্রাসনমূলক ক্রিয়াকলাপ বা আগ্রাসনের ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়োগ না করা। [iii] কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা। [iv] সমমর্যাদা ও পারস্পরিক সহযোগিতা প্রদান করা। [v] গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান-আপস, আলাপ-আলোচনা বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমস্ত বিরোধের মীমাংসা করা। [vi] মানবাধিকার ও জাতিপুঞ্জের সনদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। [vii] সমস্ত বর্ণ ও জাতির সমান অধিকারের স্বীকৃতি। [viii] সমস্ত জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন। [ix] কোনো বৃহৎ শক্তির সামরিক স্বার্থরক্ষা করা থেকে বিরত হওয়া। [x] ন্যায়নীতি ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন।

4 বান্দুং সম্মেলনের সাফল্য: [i] এই সম্মেলনে যোগদানকারী ২৯টি দেশ পরস্পরের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পায়। [ii] এই সম্মেলনে আফ্রো-এশীয় দেশগুলি নিজেদের মতগুলি একে অপরকে জানানোর, বোঝানোর সুযোগ পায়। [iii] এই সম্মেলনে জওহরলালের গৌরবজনক ভূমিকা, মিশরের গামাল আবদেল নাসেরের ভূমিকা এবং ইন্দোনেশিয় সুকর্ণর ইতিবাচক ভূমিকার ফলে জাতীয় নেতারূপে তাঁদের মর্যাদা বাড়ে। [iv] এই সম্মেলনে যোগদানকারী সদস্য রাষ্ট্রগুলি জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য- নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়। [v] এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশগুলি একে অপরকে সহযোগিতা করার সুযোগ পায়।

5 বান্দুং সম্মেলনের ব্যর্থতা: বান্দুং সম্মেলনে সাফল্যের পাশাপাশি কয়েকটি ব্যর্থতাও দেখা যায়- [i] বিশ্বশান্তি নিয়ে এই সম্মেলনে আলোচনা হলেও এ ব্যাপারে কোনো নতুন পথের সন্ধান মেলেনি। [ii] বিশ্বরাজনীতির সমস্যাগুলির কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। [iii] এই সম্মেলন থেকে কোনো আন্তর্জাতিক স্থায়ী সংগঠন প্রতিষ্ঠার আভাস মেলেনি।GB 

প্রশ্ন 41. জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অংশ হিসেবে সম্মেলনের (১৯৬১ খ্রি.) ওপর আলোকপাত করো। বেলগ্রেড অথবা, প্রথম নির্জোট সম্মেলন (১৯৬১ খ্রি.)-এর বর্ণনা দাও।

সুচনা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে বিশ্বে একদিকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট অপরদিকে সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের বইবে আফ্রো-এশীয় ও লাতিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলি। স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এই দেশগুলি উভয়জোটের প্রভাবের বাইরে থেকে বিশ্বব্যাপী এক নির্জোট আন্দোলন গড়ে তোলারও। সিদ্ধান্ত নেয়।

উত্তর- বেলগ্রেড সম্মেলন (১৯৬১ খ্রি.)

1 প্রস্তুতি: প্রথম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন বেলগ্রেড-এ আয়োজিত হওয়ার আগে এই সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। ৫ থেকে ১২ জুন মিশরের রাজধানী কায়রোতে এই Preparatory Conference অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ২২টি দেশের বিদেশমন্ত্রীরা এক বৈঠকে মিলিত হন।

2 আয়োজন: বেলগ্রেড-এর প্রস্তুতি সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির প্রথম শীর্ষ সম্মেলন বসে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে যুগোশ্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে। এই সম্মেলন চলে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। সোভিয়েত-মার্কিন স্নায়ুযুদ্ধের উত্তপ্ত রাজনৈতিক বাতাবরণের মধ্যেই আয়োজিত হয় এই সম্মেলন।

3 অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবৃন্দ: ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরু, মিশরের রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের, যুগোশ্লাভিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান মার্শাল টিটো, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুকর্ন, ঘানার রাষ্ট্রপতি নকুমা, শ্রীলঙ্কার সিরিমাভো বন্দরনায়েক প্রমুখ নেতা বেলগ্রেডে নির্জোট সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। ওই সম্মেলনে ২৬টি সদস্য রাষ্ট্র যোগ দেয়। এতে পরিদর্শক হিসেবে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল, বলিভিয়া ও ইকোয়েডর যোগদান করেছিল। এই সম্মেলনে উপস্থিত দেশগুলির মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলির আধিক্য ছিল।

4 গৃহীত সিদ্ধান্ত: এই সম্মেলনের এক খসড়া প্রস্তাবে মার্কিন ও সোভিয়েত উভয় রাষ্ট্রকেই কোনো সংঘাতে জড়িত না হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর তত্ত্বাবধানে রচিত এই খসড়া প্রস্তাব ‘An Appeal for Peace’ নামে পরিচিতি পায়। এই সম্মেলনে অন্যান্য যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেগুলি হল-

i. উপনিবেশবাদের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে সক্রিয় থাকা।

ii. বিশ্বজুড়ে নিরস্ত্রীকরণের প্রচার চালানো এবং নিরস্ত্রীকরণের উদ্যোগকে সফল করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন।

iii. এই সম্মেলনে আরও ২৭ দফা সিদ্ধান্ত (27 Point Declaration) গ্রহণ করা হয়। এই ২৭ দফা সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল আলজেরিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন, অ্যাঙ্গোলায় পোর্তুগিজ উপনিবেশবাদের বিরোধিতা, কঙ্গোয় বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা প্রভৃতি।

iv. এই সম্মেলন থেকে রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবগুলির অনুসরণে প্যালেস্তিনীয় জনগণের অধিকারকে সুরক্ষিত করার দাবি জানানো হয়।

v. এ ছাড়াও এই সম্মেলন থেকে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পারমাণবিক পরীক্ষা, উপনিবেশবাদ এবং জাতিগত বৈষম্যের অবসানের দাবি ঘোষণা করা হয়।

5.গুরুত্ব: রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন, বান্দুং সম্মেলন যদি জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের জন্মদাত্রী হয়, তাহলে বেলগ্রেড সম্মেলন ছিল প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি। বেলগ্রেড সম্মেলন তৃতীয় বিশ্বের দুর্বল ও অনুন্নত দেশগুলিকে সংঘবদ্ধ হওয়ার একটি মঞ্চ গড়ে দেয়। তাদের আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করে। এইভাবেই মার্কিন-সোভিয়েত জঙ্গি আগ্রাসনকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন বিশ্বরাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষায় সফল হয়। এই সম্মেলনে যোগদানকারী রাষ্ট্রপ্রধানদের ঘোষণায় সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিকতাবাদ এবং নয়া ঔপনিবেশিকতাবাদের অবসান ঘটিয়ে স্থায়ী শান্তিপ্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হয়।

6 বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের মতামত

i. ভারত: ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু এই সম্মেলনে আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়ার কথা বলেন। নেহরু জোটনিরপেক্ষতার সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেন-জোট-নিরপেক্ষ বলতে সেই সমস্ত জাতিকে বোঝায়, যারা আদর্শগত এবং কার্যগতভাবে যুদ্ধ, সামরিক জোট বা মোর্চা গঠন করার বিরোধী।

ii. ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুকর্ন বলেন যে, জার্মানি, কোরিয়া বা ভিয়েতনামে ভূখণ্ডের অধিকার লাভকে কেন্দ্র করে দুই মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বন্ধ হওয়া প্রয়োজন, নতুবা বিশ্বশান্তির প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

iii. বার্মা: বার্মার রাষ্ট্রপতি ইউসু বলেন যে, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা করতে গেলে পরমাণবিক পরীক্ষা বন্ধ করতে হবে এবং উপনিবেশবাদ ও জাগতিক বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে।

উপসংহার: প্রথম নির্জোট সম্মেলন বেলগ্রেড সম্মেলন (১৯৬১ খ্রি.)-এ জোটনিরপেক্ষ ধারণাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন স্পষ্ট রূপ পায়। তাই বলা যায়, বেলগ্রেড সম্মেলন-এর মধ্যে দিয়েই নির্জোট আন্দোলনের সূচনা ঘটে।

প্রশ্ন 42. আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষের কারণগুলি কী?

সূচনা: বিভিন্ন কারণে আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল। এর পরিণতি হিসেবে শুরু হয়েছিল একাধিক আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ।

উত্তর- আরব জাতীয়তাবাদ উন্মেষের কারণ

1. ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন: কয়েকজন আরব নেতা সমস্ত রকম কলুষতা থেকে ইসলামকে মুক্ত করে তাকে আবার স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে একটি সংস্কার আন্দোলন শুরু করেন, যা আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটাতে সাহায্য করেছিল।

2 অতীত ঐতিহ্যের চর্চা: আল-বেরুনি, শেখ শাদি, ওমর খৈয়াম, আল্-মামুদি, ইবন সিনা প্রমুখ বিদগ্ধ ব্যক্তি আরববাসীকে অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব মনে করিয়ে দেয়। সিরিয়াতে আরবি ভাষা ও সাহিত্যচর্চা আরবদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটায়।

3 ব্রিটিশ নীতি: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বিদেশ-সচিব আর্থার ব্যালফুর এক ঘোষণাপত্র জারি করে বলেন-ব্রিটিশ সরকার প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য জাতীয় বাসভূমি গড়ে তোলার পক্ষে। এজন্য ব্রিটেন তার সাধ্যমতো চেষ্টা চালাবে। ব্রিটিশের এই ঘোষণাপত্র আরবদের ঐতিহ্যে আঘাত দেয়।

4 ভার্সাই সন্ধির দায়িত্ব: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ভার্সাই সন্ধিতে (১৯১৯ খ্রি.) মিত্রশক্তি আরব জাতীয়তাবাদকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিল। ঔপনিবেশিক স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ বা লিগের নির্দেশে ইরাক ও প্যালেস্টাইন যায় ব্রিটেনের এবং সিরিয়া ও লেবানন যায় ফ্রান্সের রক্ষণাধীনে।

5 জিওনবাদী আন্দোলন: ঊনবিংশ শতকের শেষদিকে প্যালেস্টাইনে ন স্বাধীন ইহুদি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়, যা জিওনিস্ট ব আন্দোলন (জিওনবাদী) নামে পরিচিত। এর ফলে আরব জাতীয়তাবাদী ও ■ জিওনবাদী আন্দোলনের ঘাতপ্রতিঘাত সৃষ্টি হয়।

প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পরিচয়

1 যুদ্ধের বর্ণনা: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে ইজরায়েল রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচটি আরব রাষ্ট্র (মিশর, জর্ডন, লেবানন, সিরিয়া ও ইরাক) ইজরায়েলের ওপর আক্রমণ হানলে সূচনা ঘটে প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের। জনসংখ্যা ও সামরিক শক্তির দিক থেকে আরবরা অনেক এগিয়ে বাকলেও ইজরায়েল শেষপর্যন্ত যুদ্ধে আরব রাষ্ট্রজোটকে পরাজিত করে কারী হয়নের বেশি বলো বিজয়ী ইজরায়েল জাতিপুঞ্জ নির্ধারিত সী-করে বাইরে অনেক বেশি এলাকা দখল করে নেয়। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে জাতিপুঞ্জের উদ্যোগে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে এ শান্তি ছিল নিতান্ত সাময়িক।

2 যুদ্ধেরে ফলাফল: প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধে ইজরায়েল জয়লাভ করে। ইজরায়েলের এই সাফল্য ছিল চমকপ্রদ।

1. ইজরায়েলের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি: আরব-ইজরায়েল যুদ্ধে জয়ের ফলে ইজরায়েল প্যালেস্টাইনের তিন-চতুর্থাংশ অঞ্চল দখল করে এবং লোহিত সাগরে অবস্থিত মিশরের এইলাট বন্দরের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। জাতিপুঞ্জের হস্তক্ষেপে জেরুজালেমকে দু-ভাগে বিভক্ত করে একটি ইজরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অপরটি জর্ডনের অধীনস্থ করা হয়।

ii. ফিলিস্তিনিরা দেশচ্যুত: এই যুদ্ধের ফলে প্রায় ২০ লক্ষ নিরীহ ফিলিস্তিনি গৃহহারা ও দেশছাড়া হয়। তারা জর্ডন, লেবানন, মিশর ও সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে চরম দুর্দশার মধ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

iii. আরবে উদ্বাস্তু সমস্যা: আরব দুনিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্রে এই ব্যাপক উদ্বাস্তু আগমন তাদের মধ্যে ইজরায়েলের প্রতি বিদ্বেষ আরও বাড়িয়ে দেয়। ফলে নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়।

iv. আরব রাজনীতিতে পরিবর্তন: যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আরব রাষ্ট্রগুলির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পরিবর্তনের সূচনা হয়। মিশরে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সঞ্চারিত হতে থাকে; ফলাফলস্বরূপ সিরিয়াতে সরকার-বিরোধী অভ্যুত্থান শুরু হয়।

v. ইজরায়েলকে বৃহৎ শক্তিবর্গের সমর্থন: আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে সমর্থন করে এবং তার নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দেয়।

3 আরবদের ব্যর্থতার কারণ

i. পুরোনো অস্ত্রশস্ত্র: যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের আধুনিকতার বিচারে আরবরা ইজরায়েলের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ছিল।

ii. অনৈক্য: আরব রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ঐক্যের প্রবল অভাব ছিল। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন ইহুদি সংস্থার কাছ থেকে ইজরায়েল পূর্ণ সমর্থন ও সাহায্য পেয়েছিল।

প্রশ্ন 43. কীভাবে স্বাধীন ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়? ইজরায়েল রাষ্ট্রের জন্ম মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে কী প্রভাব ফেলেছিল? 

উত্তর- স্বাধীন ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা

1 জিওনবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে: ইজরায়েলের রাজা সলোমনের মৃত্যুর বহুদিন পর হিব্রু রাজ্যটি জুদাহ ও ইজরায়েল এই দু-ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ রোমানরা ইহুদিদের এখান থেকে বিতাড়িত করলে ইহুদিরা ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তাদের মনে নিজেদের দেশে প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা সুপ্ত থাকে। উনিশ শতকে এই ইচ্ছা মাথাচাড়া দেয়, যা জিওনবাদ নামে পরিচিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ড. ওয়েইজম্যানের প্রচেষ্টায় জিওনবাদী আন্দোলনের তীব্রতা চরমে পৌঁছোয়।

2 আরব লিগ গঠনের দ্বারা: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সাতটি আরব রাষ্ট্র (মিশর, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন, ট্রান্স-জর্ডন, সৌদি আরব) একত্রিত হয়ে কায়রোতে ‘আরব লিগ’ গঠন করে প্যালেস্টাইনের ওপর ব্রিটিশ অছি উচ্ছেদের দাবি জানায়।

3 জাতিপুঞ্জের প্রস্তাব মেনে: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে জাতিপুঞ্জের সাধারণসভা প্যালেস্টাইন সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে ১১টি ২২ সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে এক বিশেষ কমিটি গঠন (UNSCOP বা United Nations Special Committee on Palestine) করে। কমিটির অধিকাংশ সদস্য প্যালেস্টাইনকে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করার পক্ষে মত দিলে জাতিপুঞ্জের সাধারণসভায় তা গৃহীত হয় (২৯ নভেম্বর, ১৯৪৭ খ্রি.)।

4 আফ্রিকা ও এশিয়াবাসীর সমর্থনের সূত্রে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইহুদি নেতৃবৃন্দ প্যালেস্টাইন বিভাজনের প্রস্তাবে সম্মতি জানায়। কিন্তু আরব দেশগুলির সঙ্গে একযোগে আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের অধিবাসীরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। নানা স্থানে সংঘর্ষ শুরু হয়। অন্য দিকে দলে দলে ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে প্রবেশ করতে থাকে। ক্রমেই অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

5 স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠা: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে আন্তর্জাতিক ইহুদি সংস্থার সভাপতি ডেভিড বেন গুরিয়ন স্বাধীন ইজরায়েল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন, যার রাজধানী করা হয় তেল আভিভকে। ড. ওয়েইজম্যান ও বেন গুরিয়ন যথাক্রমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েলের জন্মের প্রভাব

1 ফিলিস্তিনিদের দুর্দশায়: প্রতিষ্ঠা লগ্নেই আরব শক্তিজোটের সঙ্গে ইজরায়েলের যে যুদ্ধ বাধে, তাতে সকলকে অবাক করে দিয়ে ইজরায়েল জয়লাভ করে। লোহিত সাগরের ওপর মিশরের এইলাট বন্দর-সহ প্যালেস্টাইনের তিন-চতুর্থাংশ এলাকায় ইজরায়েল তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এর ফলে ২০ লক্ষ ফিলিস্তিনি গৃহহারা হয়ে অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ফিলিস্তিনিদের এই দুর্দশা ইজরায়েলের প্রতি মধ্যপ্রাচ্য তথা আরব দুনিয়ার বিদ্বেষ আরও বাড়িয়ে তোলে।

2 আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট গঠনে: জর্ডনে শরণার্থী ডা. জর্জ হাবাশ সফলভাবে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে গড়ে তোলেন আরব ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট নামে এক সংস্থা।

3 আল ফাতাহ প্রতিষ্ঠায়: ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন ছাত্র ফিলিস্থিনি যুবক ইয়াসের আরাফতের নেতৃত্বে কুয়েতে আল ফাতাহ্ নামে এক সংগঠন গড়ে তোলেন। আরবি শব্দ ফাতাহ-র অর্থ সাফল্য। প্যালেস্টাইনের মুক্তি আনাই ছিল এই সংগঠনের মূল লক্ষ্য।

4 প্যালেস্টাইন মুক্তিমোর্চা গঠনে: ১৯৬৪ খ্রি. প্যালেস্টাইনের আরব জাতীয়তাবাদীরা প্যালেস্টাইন মুক্তিমোর্চা বা পি. এল. ও. (Palestine Liberation Organization) গঠন করেন। এই সংগঠনেরও উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের হাত থেকে প্যালেস্টাইনকে মুক্ত করা। উল্লেখ্য ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে আল ফাতাহ্ সংগঠনটি এটির সঙ্গে মিশে যায় এবং ১৯৬৯ খ্রি. আল ফাতাহ নেতা ইয়াসের আরাফত পি. এল. ও.-র চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন।

5. আল সাইকা ও আরব লিবারেশন ফ্রন্ট গঠনে: বিভিন্ন আরব রাষ্ট্রগুলি নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে ইজরায়েল-বিরোধী নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। সিরিয়া গড়ে তোলে আল সাইকা সংগঠন এবং ইরাক গঠন করে আরব লিবারেশন ফ্রন্ট।

6 সুয়েজ সংকট: প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পর ইজরায়েল ও তার সহযোগী পশ্চিমি দেশগুলির সঙ্গে মিশরের নেতৃত্বাধীন আরব রাষ্ট্রগুলির সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটায় সুয়েজ খাল বিতর্ক। এই সুয়েজ সংকটেরই পরিণতি দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ।

প্রশ্ন 44.  ১৯৪৮-৪৯ খ্রিস্টাব্দের প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা করো। দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

উত্তর- প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পটভূমি

1 উগ্র জাতীয়তাবাদ: আরব জাতীয়তাবাদীরা চেয়েছিল প্যালেস্টাইনের আরব (ফিলিস্তিনীয়)-দের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে তুলতে, অপরদিকে জিওনবাদীরা চেয়েছিল প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ফলে আরব ও ইহুদি উভয় শক্তির মধ্যে এক সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়।

2 ব্রিটিশের পরস্পরবিরোধিতা

1. আরবদের সমর্থন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে তুরস্কের বিরুদ্ধে আরবদের সমর্থন লাভের লক্ষ্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার হেনরি ম্যাকমোহন মক্কার শরিফ হুসেনের কাছে আরবদের স্বাধীনতাদানের প্রতিশ্রুতি দেন (১৯১৫ খ্রি., অক্টোবর)। এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে আরবরা আশা করেছিল প্যালেস্টাইন স্বাধীন অঞ্চলভুক্ত থাকবে।

ii. ইহুদিদের সমর্থন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষার্ধে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে ইহুদিদের সমর্থনলাভের আশায় ব্রিটিশ বিদেশ-সচিব আর্থার ব্যালফুর বলেন-“প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জাতীয় বাসভূমি গঠনে ইংরেজ সরকারের সম্পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে এবং এই উদ্দেশ্যপূরণের জন্য ইংরেজ সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।”

3. পিল কমিশনের ব্যর্থতা: পিল কমিশন তার রিপোর্টে প্যালেস্টাইনকে তিনটি ভাগে ভাগ করার কথা বলে, যথা-[i] ইহুদিদের জন্য গঠিত হবে স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র। [ii] জেরুজালেম, বেথেলহেম ইত্যাদি – পবিত্র স্থানগুলি ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকবে। [iii] প্যালেস্টাইনের অন্যান্য স্থানগুলি ট্রান্স-জর্ডনের সঙ্গে যুক্ত করে এক নতুন আরব রাষ্ট্র গঠন করা হবে। 

4 আরব লিগ গঠন: আরব লিগও প্যালেস্টাইনের ওপর ব্রিটিশ ম্যান্ডেট উচ্ছেদের দাবি জানায়। এতে ব্রিটিশ প্যালেস্টাইন সমস্যা জাতিপুঞ্জের হাতে ছেড়ে দেয়। জাতিপুঞ্জের সাধারণ সভা এক কমিটি24 গঠন করে। এই কমিটির বেশিরভাগ সদস্য প্যালেস্টাইনকে আরব ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করার পক্ষে মত দিলে আরব-ইহুদি বিবাদ আরও জটিল হয়ে ওঠে।

5 ইজরায়েলের জন্ম: নবগঠিত ইজরায়েল রাষ্ট্রের ওপর পাঁচটি আরব রাষ্ট্র মিশর, জর্ডন, ইরাক, লেবানন ও সিরিয়া একযোগে আক্রমণ করলে শুরু হয় প্রথম আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আরব- ইজরায়েল যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হয়।

 দ্বিতীয় আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ

1 যুদ্ধের প্রেক্ষাপট

1. পৈতৃক ভূখণ্ডের দাবি: আরব দেশগুলি তাদের ভূখণ্ডে ইজরায়েলের অস্তিত্ব কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তারা যে-কোনো মূল্যে নিজেদের পিতৃভূমির মাটি উদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর ছিল।

ii. সীমানা নিয়ে বিরোধ: রাষ্ট্রীয় সীমানা নিয়ে ইজরায়েলের সঙ্গে আরব দেশগুলির বিরোধ ছিল।

iii. আরব শরণার্থীদের সমস্যা: ইজরায়েল থেকে বিতাড়িত আরব শরণার্থীদের সমস্যার সমাধান করা আরব দেশগুলির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল।

iv. ইজরায়েলের আরবদের সমস্যা: ইজরায়েলে বসবাসকারী আরবদের সমস্যাও ক্রমে জটিল হয়ে উঠেছিল।

v. প্রত্যক্ষ কারণ: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে মিশরের রাষ্ট্রপতি নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণ করে সেখানে ইজরায়েলের জাহাজের প্রবেশ নিষিদ্ধ করলে, এর বিরুদ্ধে ইজরায়েল জাতিপুঞ্জে আবেদন করে। এতে কোনো কাজ না হলে মিশরের বিরুদ্ধে ইজরায়েল ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ অক্টোবর যুদ্ধ ঘোষণা করে।

2 সংঘর্ষ

i. আক্রমণ: সুয়েজ খাল জাতীয়করণের প্রতিবাদে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও ইজরায়েল মিশর আক্রমণের গোপন পরিকল্পনা করে। সেই অনুসারে ইজরায়েল চ৯ অক্টোবর মিশর আক্রমণ করে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে মিশরের সিনাই উপদ্বীপ দখল করে নেয়।

ii. আমেরিকার উদ্যোগ: আমেরিকা জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ইজরায়েল ও মিশরের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করলে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ‘ভেটো’ প্রয়োগ করে প্রস্তাবটি বাতিল করে দেয়। ৩০ অক্টোবর মিশরের রাজধানী কায়রোর ওপর ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বিমানবাহিনী বোমা বর্ষণ করে।

প্রশ্ন 45. চিনে লং মার্চের প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর- চিনা কমিউনিস্টদের ‘লং মার্চ’: প্রেক্ষাপট

1 পরিচিতি: মাও-সে-তুঙ-এর নেতৃত্বে চিনা কমিউনিস্টরা ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে চিনের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের কমিউনিস্টদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ-পূর্ব চিনের কিয়াং-সি প্রদেশ থেকে উত্তরে শেনসি পর্যন্ত যে দীর্ঘ ৬০০০ মাইল পদযাত্রা করেছিলেন, চিন তথা বিশ্বের ইতিহাসে তা ‘লং মার্চ’ (১৬ অক্টোবর, ১৯৩৪ খ্রি.-১৯ অক্টোবর, ১৯৩৫ খ্রি.) নামে খ্যাত।

2 পটভূমি: কিয়াং-সি ও তার নিকটবর্তী এলাকায় কমিউনিস্টরা প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়ে উঠলে প্রজাতন্ত্রী চিনের কমিউনিস্ট বিরোধী রাষ্ট্রপতি চিয়াং- কাই-শেক তাদের দমন করার জন্য সেনা পাঠান (১৯৩৪ খ্রি.)। ঠিক ওই সময় জাপান মাঞ্জুরিয়া দখল করে উত্তর চিনের জোহাল পর্যন্ত ঢুকে পড়ে। কিন্তু চিয়াং জাপানের এই আগ্রাসনের কোনো প্রতিকার না করে কমিউনিস্ট- নিধনে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এই কারণে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই পদযাত্রাকারী কমিউনিস্টগণ তাদের পরিবার-পরিজনসহ কিয়াং-সি ত্যাগ করে উত্তর চিনে পীত নদীর বাঁকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ শেনসি প্রদেশ অভিমুখে দীর্ঘ পদযাত্রা শুরু করেন।

3 পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীগণ: মাও-সে-তুঙ এবং চু-তের মিলিত প্রচেষ্টায় কমিউনিস্টদের ঐক্যবদ্ধ করে শুরু হয় লং মার্চ বা দীর্ঘ পদযাত্রা। লংমার্চ বা দীর্ঘ পদযাত্রায় প্রায় এক লক্ষ চিনবাসী অংশগ্রহণ করেন। পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৮৫ হাজার জন ছিলেন সেনা (যারা এই আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন) এবং ১৫ হাজার জন ছিলেন সরকারি ও কমিউনিস্ট দলের কর্মী। এঁদের মধ্যে ৩৫ জন ছিলেন মহিলা।

4 পদযাত্রার বর্ণনা: ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অক্টোবর কিয়াং-সি প্রদেশ থেকে শুরু হওয়া ওই পদযাত্রা শেষ হয় পরের পছর ১৯ অক্টোবর। দীর্ঘ ওই ৩৭০ দিনের প্রবল দুঃখদুর্দশার মধ্যে ১৮টি গিরিশ্রেণি, ২৪টি নদনদী অতিক্রম করে যখন তারা শেনসি প্রদেশের ইয়েনানে এসে পৌঁছোন ততদিনে ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে ৯২ হাজারই মৃত্যুবরণ করেছেন। ৬ হাজার মাইলের ওই দীর্ঘ পথে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করতে করতে তাঁরা কোয়াং টুং, হুনান, কোয়াং-সি, কোয়োইচো, য়ুনান, সিকাং, জেকুরান, কানসু, শেনসি প্রভৃতি ১১টি চিনা প্রদেশ অতিক্রম করেন।

‘লং মার্চ’-এর গুরুত্ব

1 অভিজ্ঞতায়: দীর্ঘ পদযাত্রায় কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দের কাছে নতুন করে ধরা দেয় তাঁদের দেশ, দেশের মানুষ ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী। ভবিষ্যৎ দেশগঠনের ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা তাঁদের দারুণভাবে সাহায্য করে।

2 কষ্টসহিষুতায়: দীর্ঘ পদযাত্রার ওই অসহ্য পরিশ্রম চিনা কমিউনিস্টদের কষ্টসহিষ্ণুতা ও নিয়মানুবর্তিতা সম্বন্ধে নতুন করে শিক্ষা দেয়, যা পরে কুয়োমিনতাং বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে তাঁদের শক্তি জুগিয়েছিল।

3 অপ্রতিদ্বন্দ্বী মানসিকতা গঠনে: যে-কোনো প্রতিরোধ বা বাধাকে তুচ্ছ করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছোনো যায় দৃঢ় মানসিকতার সাহায্যে, তার উজ্জ্বল নিদর্শন এই পদযাত্রা। চিনের মাটিতে লালফৌজ যে অপ্রতিদ্বন্দ্বী এ কথা প্রমাণিত হয়।

4 সহানুভূতি লাভে: দীর্ঘ ওই পদযাত্রায় কমিউনিস্টরা সাধারণ মানুষের কাছে আন্তরিকভাবেই সহানুভূতি ও সাহায্য লাভ করে। যা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রগঠনের ক্ষেত্রে তাঁদের বিশেষ সাহায্য করেছিল।

5 দক্ষতা ও আস্থা অর্জনে: লং মার্চ-এর ওই বিশাল সাফল্যের শেষে চিনা কমিউনিস্টরা যে-কোনো সংকটকে অতিক্রম করার মতো দক্ষতা ও আস্থা অর্জন করেছিল।

এডগার স্নো-র মতে-লং মার্চ শুধুমাত্র নিরাপদ স্থানে পৌঁছোনোর প্রচেষ্টা ছিল না, তা ছিল একসঙ্গে দেশ, দেশবাসী এবং আরও অনেক কিছুকে নতুনভাবে আবিষ্কারের অভিযান।

প্রশ্ন 46. মাও-সে-তৃঙ-এর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের উত্থান কীভাবে ঘটেছিল?

অথবা, কীভাবে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চিনে গণপ্রজাতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তা আলোচনা করো। অথবা, ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের উত্থানের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।

সূচনা: গণপ্রজাতন্ত্রী চিনে ৪ মে (১৯১৯ খ্রি.) আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছিল তার ফলেই ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

উত্তর- গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের উত্থান

1 কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা: পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীর প্রচেষ্টায় চিনে (১৯২১ খ্রি., ১ জুলাই) সাংহাই প্রদেশের ফরাসি অধিকৃত একটি গার্লস স্কুলে গোপনে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠেছিল। পিকিং, চাঙসা, ক্যান্টন প্রভৃতি জায়গায় এই কমিউনিস্ট পার্টির শাখা গড়ে ওঠে। এই চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন চেন-তু- শিউ 32। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাও-সে-তুঙ, লিও- শাও-চি, চৌ-এন-লাই, চু-তে প্রমুখ।

2 লং মার্চ: রাষ্ট্রপতি চিয়াং-কাই-শেক ছিলেন প্রচণ্ড কমিউনিস্ট বিদ্বেষী। চিনা কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য তিনি তাদের প্রধান ঘাঁটি কিয়াং-সি অভিমুখে সেনাবাহিনী পাঠান (১৯৩৪ খ্রি.)। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই প্রায় এক লক্ষ চিনা কমিউনিস্ট তাদের পরিবার পরিজন-সহ কিয়াং-সি ত্যাগ করে উত্তর চিনে পীত নদীর বাঁকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ শেনসি প্রদেশ অভিমুখে দীর্ঘ পদযাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ এই পদযাত্রায় কমিউনিস্টরা ৬০০০ মাইল পথ অতিক্রম করেছিল। তারা এসময় সাধারণ – মানুষের আন্তরিক সহানুভূতি ও সাহায্য লাভ করে।

3 সিয়াং-ফু ঘটনা: মাও-সে-তুঙের নেতৃত্বে চিনা কমিউনিস্টরা উত্তর চিনের শেনসি প্রদেশে একটি প্রায় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিল, যার রাজধানী ছিল সিয়াং-ফু। কমিউনিস্টদের দমনের জন্য প্রজাতন্ত্রী চিনের রাষ্ট্রপতি চিয়াং-কাই-শেক সেখানে একদল সেনা পাঠান (১৯৩৫ খ্রি.)। ওইসব চিনা সৈন্য কমিউনিস্টদের দমনের পরিবর্তে সমর্থন করতে শুরু করে। এই সংবাদে বিচলিত চিয়াং নিজে সিয়াং-ফুতে উপস্থিত হন। তখন তাঁরই এক সেনাপতি চ্যাং-শিউ-সিয়াং হঠাৎ চিয়াংকে বন্দি করে (১২ ডিসেম্বর, ১৯৩৬ খ্রি.) এক অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে রাখে। প্রায় দু-সপ্তাহ বন্দি থাকার পর সোভিয়েত হস্তক্ষেপে এবং চৌ-এন-লাই-এর মধ্যস্থতায় চিয়াং ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পান।

4 কমিউনিস্ট শক্তিবৃদ্ধি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত জাপান ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আত্মসমর্পণ করে। এরপর কুয়োমিনতাং ও চিনা কমিউনিস্টদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আবার চরমে ওঠে। কিন্তু নানা কারণে কুয়োমিনতাং দলের সামরিক শক্তি তখন ক্রমহ্রাসমান। পক্ষান্তরে কমিউনিস্টরা ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে চিনের কৃষক ও শ্রমিক শ্রেণির সমর্থন লাভ করে।

5 কমিউনিস্ট দ্বারা প্রজাতন্ত্র গঠন: ক্রমবর্ধমান ও সামরিক শক্তির সহায়তায় মাও-এর নেতৃত্বে চিনা কমিউনিস্টরা একের পর এক চিনের বিভিন্ন ভূখণ্ড দখল করতে থাকে। শেষপর্যন্ত চিয়াং সরকারকে যুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে কমিউনিস্টরা পিকিং দখল করে। মূল ভূখণ্ড থেকে উচ্ছেদ হয়ে চিয়াং-কাই-শেক ফরমোজা (তাইওয়ান) দ্বীপে আশ্রয় নেন। সেখানে কুয়োমিনতাংরা জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে। আর চিনের মূল ভূখণ্ডে মাও- সে-তুঙের নেতৃত্বে ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জনগণের প্রজাতন্ত্র’ যা ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চিন’ নামে খ্যাত। মাও-সে-তুঙ হন এর প্রথম সভাপতি বা চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রী হন চৌ-এন-লাই।

6 কমিউনিস্টদের সাফল্যের কারণ

1. মাও-সে-তুঙের নেতৃত্ব: মাও-সে-তুঙের অসামান্য নেতৃত্বে চিনে কমিউনিস্ট দলের প্রতিষ্ঠা ও প্রসার ঘটেছিল। নেতারূপে তাঁর দক্ষতা,  সংগঠকরূপে তাঁর সাংগঠনিক বুদ্ধি ও শক্তি, সেনাপতিরূপে তাঁর রণকৌশল কমিউনিস্ট দলকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছিল।

ii জনসমর্থন: মাও-এর ডাকে সাড়া দিয়ে চিনবাসী যে-কোনো আত্মত্যাগে তৈরি ছিল। কৃষক, শ্রমিক-সহ সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছিল মাও-এর কমিউনিস্ট দল।

iii রাশিয়ার সাহায্য: সাম্যবাদের আঁতুড়ঘর রাশিয়া প্রথম থেকেই চাইত যে বিশ্বে সাম্যবাদী ভাবধারার প্রসার ঘটুক। সোভিয়েত নেতাদের ধারণা ছিল পুঁজিবাদের প্রসার রোধ করতে সাম্যবাদের বিস্তার প্রয়োজন। তাই চিনের সাংহাই নগরীতে যখন মাও-সে-তুঙের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হল (১৯২১ খ্রি.) তখন সবার আগে রাশিয়া এই দলকে সমর্থন করেছিল।

উপসংহার: মাও-সে-তুঙ-এর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের উত্থান বিশ্বের সাম্যবাদী ভিতকে আরও মজবুত করে।

প্রশ্ন 47. কমিউনিস্ট চিনের উত্থান আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে কতখানি প্রভাব ফেলেছে তা আলোচনা করো।

অথবা, গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের উত্থানে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়েছিল?

অথবা, বিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগের আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের ভূমিকা বিশ্লেষণ করো।

সূচনা: পুঁজিবাদ, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে কমিউনিস্ট রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে (১৯৪৯ খ্রি., ১ অক্টোবর) চিন এশিয়াতে তথা বিশ্বরাজনীতিতে ভারসাম্য আনে।

উত্তর- আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কমিউনিস্ট চিনের প্রভাব

1 সাম্যবাদী শিবিরের শক্তিবৃদ্ধি: বিশ্বের দ্বিমেরুকরণ রাজনীতিতে চিনের উত্থান সাম্যবাদী শিবিরে প্রথম শক্তিবৃদ্ধি ঘটায়। চিন ও বিশ্বের অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র রাশিয়ার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সমাজতান্ত্রিক শিবির গঠন করে।

2 সাম্যবাদী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ: রাশিয়ার সঙ্গে চিনের মৈত্রী বিশ্বে কমিউনিস্ট আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে। রাশিয়া ওই আন্দোলনকে জোরদার করতে নানাভাবে চিনের শিল্পায়ন, সমরসজ্জা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাহায্য করতে থাকে। শুধু তাই নয়, ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ রাশিয়া চিনকে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে সহযোগী নেতৃত্বের আসনেও বসায়।

3 রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক

i. সম্পর্কের সূচনা: চিনে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাশিয়ার যথেষ্ট ভূমিকা ছিল। চিনের লাল বিপ্লব সাম্যবাদী বিশ্ব গড়ে তোলার পথে ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ সোপান। কমিউনিস্ট রাষ্ট্ররূপে চিনের আত্মপ্রকাশের পর রাশিয়াই প্রথম তাকে স্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ii. মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর: বন্ধুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ উভয় দেশের মধ্যে প্রায় ৩০ বছরের জন্য মৈত্রী চুক্তি (১৯৫০-১৯৭৯ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়। এর সুফলরূপে রাশিয়ার কাছ থেকে চিন সহজ শর্তে ৩০ কোটি ডলার ঋণ পায়। এ ছাড়াও রাশিয়া পোর্ট আর্থার বন্দর ও মাঞ্জুরিয়ার রেলপথের অধিকার চিনের হাতে তুলে দেয়।

iii. বন্ধুত্বে ফাটল: কিন্তু ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে চিন-সোভিয়েত বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে চিন-সোভিয়েত মৈত্রী ছিন্ন হয়ে যায়। সে সময়কার সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেভের নির্দেশে চিন থেকে রাশিয়ার সব প্রযুক্তিবিদ, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক পরামর্শদাতাদের ফিরিয়ে আনা হয়। আসলে এই দ্বন্দ্বের মূলে ছিল কুশ্চেভের স্টালিন-বিরোধী নীতি, যা চিন মেনে নিতে পারেনি এবং মাও-সে-তুঙের স্বাধীন মনোভাব। পরবর্তী সময়ে কমিউনিস্ট চিন ন্যাটোকে সমর্থন করলে বেজিং ও মস্কোর দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়।

4 আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক

i. সম্পর্কের অবনতি: চিনের সঙ্গে প্রথমদিকে আমেরিকার সম্পর্ক ছিল বৈরিতার। চিনে সাম্যবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার পর মার্কিন-চিন সংঘাত শুরু হয়। চিনের কমিউনিস্ট বিরোধী চিয়াং-কাই-শেককে সমর্থন করা, রাষ্ট্রসংঘে সাম্যবাদী চিনের বিরোধিতা করা বা কোরিয়া যুদ্ধের সময় চিনের মূল ভূখণ্ডে আক্রমণ ও পরমাণু বোমা নিক্ষেপের হুমকি দেওয়া ইত্যাদির ফলে মার্কিন-চিন সম্পর্কের অবনতি ঘটে। কমিউনিস্ট চিনও মার্কিন বিদেশনীতির বিরোধিতা করা শুরু করে। কাগজে বাঘ বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমালোচনা করে।

ii. সম্পর্কের উন্নতি: সাতের দশক থেকে চিন মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে শুরু করে। চিনের সামরিক ও বৈজ্ঞানিক উন্নতি, রুশ-চিন দ্বন্দ্ব ইত্যাদি ঘটনা মার্কিন-চিন সম্পর্কের উন্নতিতে 33 সাহায্য করে।

5 গুরুত্বপূর্ণ এশীয় শক্তি: এতদিন কমিউনিস্ট ভাবধারা ও তার আধিপত্য রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপেই সীমাবদ্ধ ছিল। এবার কমিউনিস্ট চিনের উত্থানের পর তা এশীয় ভূখণ্ডেও ছড়িয়ে পড়ল। অচিরেই চিন এশিয়ার সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

6 তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে প্রভাব

i. তৃতীয় বিশ্বের নেতৃত্ব: শুধু এশিয়া মহাদেশই নয়, উন্নয়নশীল তৃতীয় বিশ্বের নেতা হিসেবেও চিন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে।

ii. সৌহার্দ্যতায়: এশিয়ার পাকিস্তান, ভারত, মঙ্গোলিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের পাশাপাশি আফ্রিকা মহাদেশের কঙ্গো, মালি, গিনি, তানজানিয়া, জাম্বিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রও চিনের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

iii. জোটনিরপেক্ষতায়: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি গ্রহণ করে চিনও জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তুলেছে।

iv. আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রতিষ্ঠায়: আন্তর্জাতিক শান্তি-প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে চিনা প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই-এর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। ফলশ্রুতি হিসেবে জেনেভা (১৯৫৪ খ্রি.) ও বান্দুংগুরুত্বপূর্ণ। ফলশ্রুতি হিসেবে জেনেভা (১৯৫৪ খ্রি.) ও বান্দুং (১৯৫৫ খ্রি.) সম্মেলনে চিন বৃহৎ শক্তির মর্যাদা লাভ করে।

5. Fill in The Blanks

1. ওয়ারশ চুক্তি সংস্থার সদস্য ছিল না এমন একটি দেশের নাম হল              |

(A) চিন

(B) রাশিয়া

(C) হাঙ্গেরি

(D) রুমানিয়া

2. মার্শাল পরিকল্পনা                 গ্রহণ করেনি।

(A) গ্রিস

(B) সুইজারল্যান্ড

(C) চেকোশ্লোভাকিয়া

(D) ইটালি

3. স্বাধীনতার পর উত্তর কোরিয়ার রাজধানী হয়                 |

(A) সিওল

(B) পিয়ং ইয়ং

(C) বেজিং

(D) মন্ট্রিল

4.৩৮° অক্ষরেখা বরাবর               দেশকে ভাগ করা হয়েছিল।

(A) চিন

(B) জাপান

(C) কোরিয়া

(D) ভিয়েতনাম 

5. ফিদেল কাস্ত্রো               রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।

(A) ব্রাজিলের

(B) বলিভিয়ার

(C) কিউবার

(D) চিলির

6. ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েতনামে ভিয়েতকংদের গণ অভ্যুত্থানের ফলে                 |

(A) দিয়েম সরকারের পতন ঘটে

(B) নগুয়েন সরকারের পতন ঘটে

(C) চিয়াং সরকারের পতন ঘটে

(D)  কিম ইল সুঙ সরকারের পতন ঘটে

7.               দেশের উত্তর-পূর্বদিকে সুয়েজ খাল অবস্থিত।

(A) স্পেন

(B) হল্যান্ড

(C) পোর্তুগাল

(D) মিশর

8. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ               খ্রিস্টাব্দে শেষ হয়।

(A) ১৯৪৪

(B) ১৯৪৫

(C) ১৯৪৬

(D) ১৯৪৮

9.                সম্মেলনের সিদ্ধান্ত অনুসারে জার্মানিকে ৪ টি পৃথক অঞ্চলে ভাগ করা হয়।

(A) ইয়াল্টা

(B) পটস্ডাম

(C) প্যারিস

(D) ওয়াশিংটন

10. পটস্ডাম সম্মেলন আয়োজিত হয়                |

(A) জাপানে

(B) চিনে

(C) জার্মানিতে

(D) ইটালিতে

11. ভিয়েতনাম থেকে              মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করেন।

(A) আইজেনহাওয়ার

(B) নিকসন

(C) কেনেডি

(D) রেগান

12.               ডয়েশ মার্ক (Deutsche Mark) নামে মুদ্রা চালু হয়।

(A) জাপানে

(B) জার্মানিতে

(C) সোভিয়েত রাশিয়ায়

(D) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে

13. বিদেশের মাটিতে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিটি               অবস্থিত ছিল।

(A) হাঙ্গেরিতে

(B) রুমানিয়ায়

(C) পোল্যান্ডে

 (D) কিউবাতে

14. মার্কিন গুপ্তচর সংস্থার নাম হল                 |

(A) CIA

(B) ISI

(C) CBI

 (D) CID

15. ‘White House’ বলতে             বোঝায়।

(A)  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির বাসস্থানকে

(B) ভারতের রাষ্ট্রপতির বাসস্থানকে

(C)  ফরাসি রাষ্ট্রপতির বাসস্থানকে

 (D) জার্মান চ্যান্সেলরের বাসস্থানকে

16. ‘First Lightning’ নামে          পরিচিত।

(A)  সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম সফল পারমাণবিক বিস্ফোরণ

(B) আমেরিকা কর্তৃক হিরোসিমায় বোমা বিস্ফোরণ 

(C) আমেরিকার প্রথম সফল পারমাণবিক বিস্ফোরণ

 (D) ভারতের পোখরানে প্রথম পারমাণবিক বিস্ফোরণ

17.             ‘বাগদাদের কসাই’ নামে নিন্দিত হন।

(A) সাদ্দাম হুসেন

(B) হোসনি মোবারক

(C) ফিদেল কাস্ত্রো

 (D) আয়াতোল্লা খোমেইনি

18. দলাই লামা হলেন                |

(A) রাজনীতিবিদ

(B) ধর্মগুরু

(C) খেলোয়াড়

 (D) অভিনেতা

19.             খ্রিস্টাব্দে দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতি ঘটে।

(A) ১৯৫১

(B) ১৯৫২

(C) ১৯৫৩

 (D) ১৯৫৪

20.              ‘নক্ষত্র যুদ্ধ’ (Star-War)-এর কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 

(A) মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টার

(B) রুশ রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচেভ

(C) বুশ রাষ্ট্রপতি ব্রেজনেভ 

(D) মার্কিন রাষ্ট্রপতি রেগান

21. মলোটভ ছিলেন                 |

(A) সোভিয়েত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

(B) সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রী  

(C) সোভিয়েত রাষ্ট্রদূত

(D) সোভিয়েত অর্থমন্ত্রী

22.প্রথম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনটি              আয়োজিত হয়।

(A) যুগোশ্লাভিয়ায়

(B) শ্রীলঙ্কায়

(C) কিউবায়

(D) মিশরে

23. বান্দুং সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল               খ্রিস্টাব্দে।

(A) ১৯৫৫

(B) ১৯৫৬

(C) ১৯৫৭

(D) ১৯৫৮

24. প্রথম নির্জোট সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন                 |

(A) জোসিপ ব্রোজ টিটো

(B) গামাল আবদেল নাসের

(C) কেনেথ কাউন্ডা

(D) হাওয়ারি বৌমেডিয়েন

25. দ্বিতীয় নির্জোট সম্মেলনে                 সভাপতিত্ব করেন।

(A) সিপ ব্রোজ টিটো

(B) গামাল আবদেল নাসের

(C) কেনেথ কাউন্ডা

(D) হাওয়ারি বৌমেডিয়েন

26.             নির্জোট সম্মেলন থেকে রুশ-মার্কিন সমঝোতার পরিবেশ গড়ে উঠতে শুরু করে।

(A) বেলগ্রেড

(B) আলজিয়ার্স

(C) হাভানা

(D) কলম্বো      

27.     দেশের উত্তরাংশ থেকে তুর্কিভাষী অধ্যুষিত আলেকজান্দ্রা নামে একটি রাজ্য সৃষ্টি করা হয়।

    (A) সিরিয়া

    (B) মিশর

    (C) সৌদি আরব

    (D) প্যালেস্টাইন

    28. মধ্যপ্রাচ্যে ইজরায়েল রাষ্ট্রের জন্মের প্রভাবে               |

    (A) এশিয়া মুক্তিমোর্চা গঠিত হয়

    (B) প্যালেস্টাইন মুক্তিমোর্চা গঠিত হয়

    (C) আফ্রিকা মুক্তিমোর্চা গঠিত হয়

    (D) আরব মুক্তিমোর্চা গঠিত হয়

    29. স্বাধীন ইজরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের               |

    (A) ২ ডিসেম্বর

    (B) ২৬ ফেব্রুয়ারি

    (C) ২২ মার্চ

    (D) ১৪ মে

    30. ইহুদি সাংবাদিক থিওডোর হারজল ছিলেন                 |

    (A) অস্ট্রিয়ার

    (B) জার্মানির

    (C) সিরিয়ার

    (D) মিশরের

    31. সাদ্দাম হুসেন ইরান আক্রমণ করেন                খ্রি.।

    (A) ১৯৮০

    (B) ১৯৮১

    (C) ১৯৮২

    (D) ১৯৭৯