Class 10 Chapter 1 Solution
জ্ঞানক্ষু
1. MCQs Question Answer
1. কাকে দেখে তপনের চোখ মার্বেলের মতন হয়ে পিসেমশাইকে গেল?
ক) দিদিকে
খ) নতুন মেসোমশাইকে
গ) বাবাকে
ঘ) নতুন
উত্তর: খ) নতুন মেসোমশাইকে
2. নতুন মেসোমশাই ছিলেন একজন-
ক) লেখক
খ) গায়ক
গ) বই প্রকাশক
(ঘ) চিকিৎসক
উত্তর: ক) লেখক
3. “ছোটোমাসি সেই দিকে ধাবিত হয়।”-ছোটোমাসি ধাবিত হয়-
(ক) ছোটোমেসোর দিকে
(খ) রান্নাঘরের দিকে
গ) তপনের দিকে
(ঘ) ছাদের দিকে
উত্তর: (ক) ছোটোমেসোর দিকে
4. তপনের লেখা গল্প তার মেসোমশাইকে কে দিয়েছিল?-
ক) মা
খ) বড়োমাসি
গ) ছোটোমাসি
ঘ) বাবা
উত্তর: গ) ছোটোমাসি
5. তপন অবশ্য মাসির এই হইচইতে মনে মনে”-
ক) আনন্দ পায়
খ) উল্লসিত হয়
গ) খুশি হয়
ঘ) পুলকিত হয়
উত্তর: ঘ) পুলকিত হয়
6. . “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।”
ক) তপনের মাসিকে
খ) তপনের বাবাকে
গ) তপনের মাকে
ঘ) তপনের নতুন মেসোকে
উত্তর: (ঘ) তপনের নতুন মেসোকে
7. “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা”-‘উপযুক্ত কাজ’-টা হল-
ক) তপনের গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়া
(খ) তপনের গল্পটা কারেকশান করে দেওয়া
গ) তপনকে লেখায় উৎসাহ দেওয়া
ঘ) তপনকে গল্প লেখার নিয়মকানুন শিখিয়ে দেওয়া
উত্তর: ক) তপনের গল্পটা ছাপিয়ে দেওয়া
8. . যে পত্রিকায় তপনের গল্প ছাপিয়ে দেওয়ার কথা হয়েছিল-
ক) শুকতারা
(খ) সন্ধ্যাতারা
(গ) একতারা
(ঘ) সাহিত্যধারা
উত্তর: খ) সন্ধ্যাতারা
9. ছোটোমেসোমশাই তপনের গল্প হাতে পেয়ে কী বলেছিলেন?-
ক) আর-একটা গল্প লেখার কথা
খ) আরও দুটো গল্পদেওয়ার কথা
গ) এই গল্পটাই একটু কারেকশান করার কথা
(ঘ) কোনোটাই নয়
উত্তর: গ) এই গল্পটাই একটু কারেকশান করার কথা
10. ছোটোমেসো শ্বশুরবাড়িতে কিছুদিন ছিলেন, কারণ-
ক) ছোটোমাসির শরীর ভালো ছিল না
খ) তাঁর কলেজের ছুটি চলছিল
গ) কিছু জরুরি কাজ ছিল তাঁর
ঘ) কোনোটাই নয়
উত্তর: (খ) তাঁর কলেজের ছুটি চলছিল
11. লেখার আসল মূল্য বুঝবে-
ক) ছোটোেমাসি
খ) ছোটোমেসো
(গ) বড়োেমেসো
(ঘ) তপনের মা
উত্তর: খ) ছোটোমেসো
12. “তপনের হাত আছে”-কথাটির অর্থ হল-
ক) হস্তক্ষেপ
(খ) ভাষার দখল
(গ) মারামারি
(ঘ) জবরদস্তি
উত্তর: খ) ভাষার দখল
13. “যেন নেশায় পেয়েছে”- যে নেশার কথা বলা হয়েছে-
(ক) গল্প ছাপানোর নেশা
(খ) মেসোর সমকক্ষ হওয়ার নেশা
গ) গল্প লেখার নেশা
(ঘ) বাড়িতে সম্মান বাড়ানোর নেশা
উত্তর: (গ) গল্প লেখার নেশা
14. “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?”-অলৌকিক ঘটনাটি হল-
ক) এক লেখকের সঙ্গে তপনের ছোটোমাসির বিয়ে হয়েছে
(খ) বাড়িতে তপনের নাম হয়ে গেছে কবি, সাহিত্যিক, কথাশিল্পী
(গ) তপনের লেখা গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে
(ঘ) তপন দেখল ছাপানো গল্পের একটি লাইনও তার নিজের নয়
উত্তর: তপনের লেখা গল্প সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপা হয়েছে
2. Very Short Question Answer
1. কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল।
উত্তর: তপনের-সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি।
2. অনেক বই ছাপা হয়েছে মেসোর।
উত্তর: বই-কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
3. এবিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের।
উত্তর: তপনের-সম্বন্ধপদ, ‘এর’ বিভক্তি।
4. মামার বাড়িতে এই বিয়ে উপলক্ষ্যেই এসেছে তপন।
উত্তর: বাড়িতে-অধিকরণকারক, ‘তে’ বিভক্তি।
5. ছোটোমাসি সেই দিকে ধাবিত হয়।
উত্তর: ছোটোমাসি-কর্তৃকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
6. তোমার গল্প আমি ছাপিয়ে দেবো।
উত্তর: তোমার-সম্বন্ধপদ, ‘র’ বিভক্তি।
7. বিকেলে চায়ের টেবিলে ওঠে কথাটা।
উত্তর: বিকেলে-অধিকরণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
8. তপন বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়।
উত্তর: দৃষ্টিতে-করণকারক, ‘তে’ বিভক্তি।
9. যেন নেশায় পেয়েছে।
উত্তর: নেশায়-করণকারক, ‘য়’ বিভক্তি।
10. তপনের লেখা গল্প পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
উত্তর: পত্রিকায়-অধিকরণকারক, ‘য়’ বিভক্তি।
11. আঃ ছোটোমাসি, ভালো হবে না বলছি।
উত্তর: ছোটোমাসি-সম্বোধন পদ, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
12. তার মানে মেসো তপনের গল্পটিকে আগাগোড়াই কারেকশান করেছেন।
উত্তর: গল্পটিকে-কর্মকারক, ‘টি’ নির্দেশক, ‘কে’ বিভক্তি।
13. কেশে গলা পরিষ্কার করে।
উত্তর: কেশে-করণকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
14. না কি অতি আহ্লাদে বাক্য হরে গেল?
উত্তর: আহ্লাদে-করণকারক, ‘এ’ বিভক্তি।
15. তপন আর পড়তে পারে না।
উত্তর: পড়তে-কর্মকারক, ‘শূন্য’ বিভক্তি।
16. এই কদিন আগে তপনের ছোটোমাসির বিয়ে হয়ে গেল দেদার ঘটাপটা করে।
উত্তর: ছোটোমাসির-ছোটো যে মাসি (সাধারণ কর্মধারয়) তার।
17. তপনের নতুন মেসোমশাই একজন লেখক।
উত্তর: মেসোমশাই-যিনি মেসো তিনিই মশাই (সাধারণ কর্মধারয়)।
18. কখন তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল? [পাঠভবন]
উত্তর: তপন যখন শুনল তার নতুন মেসোমশাই একজন লেখক তখনই তার চোখ মার্বেল হয়ে গেল।
19. “…বিয়ে হয়ে গেল দেদার ঘটাপটা করে।”-কার ঘটাপটা করে বিয়ে হয়েছিল?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের ছোটোমাসির ঘটাপটা করে বিয়ে হয়েছিল।
20. “এবিষয়ে সন্দেহ ছিল তপনের”-কোন্ বিষয়ে তপনের সন্দেহ ছিল? [হুগলি ব্রাঞ্চ গভঃ স্কুল; দক্ষিণ খেজুরি বাণীমঞ্চ হাই স্কুল]
উত্তর: একজন লেখকও যে সাধারণ মানুষের মতো হতে পারে, তাদের আচরণও যে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতোই হয়ে থাকে, সেই বিষয়ে তপনের সন্দেহ ছিল।
21. কাকে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল? [অ্যান্ড্রুজ হাই স্কুল]
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে ছোটোমেসোমশাইকে দেখে তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল।
22. তপনের নতুন মেসো কোন্ পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের নতুন মেসো পেশায় অধ্যাপক ছিলেন।
23. “বিকেলে চায়ের টেবিলে ওঠে কথাটা”-চায়ের টেবিলে কোন্ কথা ওঠে? [গভঃ স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল, টাকি হাউস]
উত্তর: তপনের গল্প লেখা আর মেসোমশাইয়ের তা ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতির কথাই চায়ের টেবিলে ওঠে।
.24. “সেটা জানতে তো বাকি নেই।”-কী জানতে বাকি নেই?
উত্তর: গল্প জিনিসটা কী তা জানতে তপনের বাকি নেই।
25. . “হঠাৎ ভয়ানক একটা উত্তেজনা অনুভব করে তপন।”- তপন কেন উত্তেজনা অনুভব করেছিল?
উত্তর: একটি সত্যিকারের গল্প লিখে ফেলেছিল বলে তপন উত্তেজনা অনুভব করেছিল।
26. তপন তার গল্প লেখার কথা প্রথম কাকে বলেছিল?
উত্তর: তপন তার গল্প লেখার কথা প্রথম তার ছোটোমাসিকে বলেছিল।
27. “আর তোমরা বিশ্বাস করবে কিনা জানি না…”-কোন্ ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: একজায়গায় বসে তপনের একটা গোটা গল্প লিখে ফেলার প্রসঙ্গে আলোচ্য মন্তব্যটি করা হয়েছে।
28. “যেন নেশায় পেয়েছে।”-কীসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটিতে তপনের গল্প লেখার অক্লান্ত চেষ্টার কথা বলা হয়েছে।
3. Short Question Answer
1. অনেক বই ছাপা হয়েছে”-কার অনেক বই ছাপা হয়েছে?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের লেখক ছোটোমেসোর অনেক বই ছাপা হয়েছে।
2. “তবে তপনেরই বা লেখক হতে বাধা কী?”-তপনের লেখক হতে বাধা ছিল কেন?
উত্তর: তপন মনে করত লেখকরা তার মতো সাধারণ মানুষ নন, তাঁরা হয়তো অন্য গ্রহের জীব। তাই তার নিজের লেখক হতে বাধা ছিল।
3. তপনের লেখক হতে বাধা নেই কেন?
উত্তর: নতুন মেসোকে দেখে তপন বুঝতে পারল তিনি আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ মানুষ, আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নন। তাই তার নিজেরও লেখক হতে কোনো বাধা নেই।
4. তপনের লেখা গল্প দেখে তার ছোটোমেসো কী বলেছিলেন?
উত্তর: তপনের লেখা গল্প দেখে তার ছোটোমেসো বলেছিলেন যে, গল্পটা
ভালোই হয়েছে। শুধু একটু সংশোধন করে দেওয়া দরকার। তাহলেই তার লেখা ছাপতে দেওয়া যাবে।
5. . কী কারণে মেসোমশাই তপনের লেখা ভালো বলেছিলেন?
উত্তর: ছোটোমেসোমশাইয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে, তাই শ্বশুরবাড়ির একটি বাচ্চাছেলেকে খুশি করতেই মূলত তপনের মেসোমশাই লেখা ভালো হয়েছে বলেছিলেন।
6. “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা”-কোন্ কাজকে ‘মেসোর উপযুক্ত কাজ’ বলে ছোটোমাসি মনে করেন?
উত্তর: তপন একটা গল্প লিখেছিল। তার লেখক মেসোমশাই যদি সেই গল্পটিকে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন, তবেই সেটা মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে বলে ছোটোমাসি মনে করে।
7. “নতুন মেসোই বুঝবে।”-নতুন মেসো কী বুঝবে?
উত্তর: জ্ঞানপীঠ পুরস্কারে সম্মানিত আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে নতুন মেসো তপনের লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝবে।
8. “লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝলে নতুন মেসোই বুঝবে।”-লেখার প্রকৃত মূল্য কেবল নতুন মেসোই বুঝবেন কেন?
উত্তর: তপনের নতুন মেসো একজন নামকরা লেখক। তাই লেখক মানুষ হিসেবে তিনিই তপনের লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝবেন।
9. “তপন প্রথমটা ভাবে ঠাট্টা”-কোন্ কথাটা তপন ঠাট্টা ভেবেছিল?
উত্তর: একটু সংশোধন করে দিলে তপনের লেখা গল্পটি ছাপানো চলে- ছোটোমেসোর এই কথাটাকেই তপন প্রথমে ঠাট্টা ভেবেছিল।
10. সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় লেখা ছাপা প্রসঙ্গে তপনের মেসোমশাই কী বলেছিলেন?
উত্তর: সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তপনের মেসোমশাইয়ের পরিচিত। তাই তপনের লেখা দেখে মেসোমশাই বলেছিলেন, তিনি যদি সন্ধ্যাতারা পত্রিকার সম্পাদককে লেখা ছাপানোর কথা বলেন তাহলে সম্পাদকমশাই না বলতে পারবেন না।
11. “তপন আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।”-তপনের এই অবস্থার কারণ কী?
উত্তর: নতুন মেসো তপনের লেখাটা ‘কারেকশান’ বা সংশোধন করে ছাপিয়ে দিতে চাইলে তপন আহ্লাদে কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।
12. “আর সেই সুযোগেই দেখতে পাচ্ছে তপন-” তপন কী দেখতে পাচ্ছিল?
উত্তর: তপনের নিজের ছোটোমেসো একজন লেখক হওয়ায় সে দেখতে পাচ্ছিল, লেখক মানে আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নন, তিনিও তপনদের মতোই সাধারণ মানুষ।
13. “ছোটোমাসি সেই দিকে ধাবিত হয়।”-ছোটোমাসি কোন্ দিকে ধাবিত হয়?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে নতুন মেসোমশাই যেখানে দিবানিদ্রা দিচ্ছিলেন সেদিকে ছোটোমাসি ধাবিত হয়।
14. “তপন অবশ্য মাসির এই হইচইতে মনে মনে পুলকিত হয়।”- তপনের এই পুলকের কারণ কী?
উত্তর: তপনের মাসি তপনের লেখা নিয়ে মেসোমশাইয়ের কাছে গিয়ে হইচই করলে সে এই ভেবে পুলকিত হয় যে তার লেখার মূল্য একমাত্র লেখক মেসোমশাইয়ের পক্ষেই বোঝা সম্ভব।
15. “এইসব মালমশলা নিয়ে বসে।”-কীসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা গল্প লিখতে গিয়ে রাজারানির গল্প, খুনজখম, অ্যাকসিডেন্ট, না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া ইত্যাদি যেসব বিষয়ে লেখে, সেসবের কথা বলা হয়েছে।
16. “এটা খুব ভালো।”-বক্তার এ কথা বলার কারণ কী ছিল?
উত্তর: তপন স্কুলে তার ভরতি হওয়ার দিনের অভিজ্ঞতা আর অনুভূতির বিষয় নিয়ে গল্প লিখেছিল বলে প্রশংসা করেই তপনের মেসোমশাই মন্তব্যটি করেন।
17. গল্প লেখার পর তপনের কী মনে হয়েছিল?
উত্তর: একটা গোটা গল্প সে লিখে ফেলেছে-এটা ভেবেই তপনের সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল, তার মাথার চুল পর্যন্ত খাড়া হয়ে উঠল। সে ভাবল এখন তাকেও লেখক বলা যায়।
4. Long Question Answer
1. তপন যেন কোথায় হারিয়ে যায় এইসব কথার মধ্যে।”-‘এইসব কথা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তপনের হারিয়ে যাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের গল্প প্রকাশের পরে মেসো সুকৌশলে প্রকাশ করে দেন তাঁর ‘কারেকশান’-এর কথা। সে কথাটাই এরপর ছড়িয়ে পড়ে সারা বাড়িতে। তপনের বাবা যাবতীয় কৃতিত্ব মেসোমশাইকেই দেন। তার মেজোকাকু বলেন যে, ওরকম মেসো থাকলে তাঁরাও গল্প লেখার চেষ্টা
মতোই। সেই মুহূর্তে তার জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। যদিও তপনের জ্ঞানচক্ষু প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক পরে খুলেছিল।
▶ ছোটোমাসির ভূমিকা: তপনের সারাদুপুর ধরে লেখা গল্পটা তার ছোটোমাসি একরকম জোর করেই তার মেসোকে দেখায়। ছোটোমেসো সেই লেখার প্রশংসাও করেন। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও বলেন যে, গল্পটার একটু সংশোধনের দরকার। ছোটোমেসোর বক্তব্য: ছোটোমেসো সেই লেখা ছাপানোর ব্যবস্থাও করে দেবেন বলে কথা দেন। তপন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখবে বলে। গল্পপ্রকাশ: সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় সত্যিই তার লেখা একসময় প্রকাশিত হয়। ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখে তপন এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভব করে। নিজস্বতা খুঁজে না-পাওয়া: কিন্তু সবাইকে লেখাটা পড়ে শোনাতে গিয়ে সে ছাপার অক্ষরে লেখার সঙ্গে নিজের লেখাটির কোনো মিল খুঁজে পায় না। পুরো লেখাটা আগাগোড়াই তার মেসোমশাইয়ের সংশোধন করা। গভীর দুঃখ ও জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন: দুঃখে, লজ্জায়, অপমানে তপন ভেঙে পড়ে। এবার যেন প্রকৃতই তার অন্তর্দৃষ্টি জেগে ওঠে। নিজের সৃষ্টির প্রতি অধিকারবোধ জন্মায় তপনের মনে। সে দৃঢ় সংকল্প করে, নিজের লেখা সে নিজেই ছাপতে দেবে, অন্যের দয়া গ্রহণ করবে না।
2. “তপন বইটা ফেলে রেখে চলে যায়,”-তপন বইটা ফেলে রেখে চলে যায় কেন? এরপর সে কী করেছিল?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে ছোটোমেসোমশাইয়ের উদ্যোগে তপনের গল্প প্রকাশিত হয় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায়। তবে মেসো সবাইকে জানিয়ে দেন যে লেখাটি ‘নেহাত কাঁচা’ হওয়ায় তাঁকে প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হয়েছে। ক্রমে তপনের প্রতিভাকে ছাপিয়ে ছোটোমেসোর মহত্ত্বের কথাই প্রচারিত হয়ে যায়। এরপরে তপন যখন মায়ের নির্দেশে গল্পটি নিজে পাঠ করতে যায়, দেখে গল্পের প্রত্যেকটি লাইন তপনের অপরিচিত। সে হতবাক হয়ে যায়, তার পড়া থেমে যায়। মেসোমশাই সংশোধনের নামে গোটা গল্পটাই যে নতুনভাবে লিখে দিয়েছেন! আর সেই গল্পের ভিতর থেকে তপনের লেখা একেবারে হারিয়ে গিয়েছে। মা-র ধমকে সে আবার পড়তে শুরু করে, কিন্তু গল্পটি মাথায় ঢোকে না তার। অনেক প্রশংসা হয়, লেখক মেসোর ভূমিকার কথাও বলে অনেকে। কিন্তু তপন তখন এসব শুনতে পায় না। হতাশায় বইটা ফেলে রেখে সে উঠে চলে যায়।
বইটা ফেলে রেখে তপন ছাদে চলে যায়, শার্টের তলা দিয়ে চোখ মোছে। সে সংকল্প করে যে এরপর যদি কখনও লেখা ছাপতে হয়, তা সে নিজেই গিয়ে দিয়ে আসবে। নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন সে আর কোনোভাবেই পড়বে না।
3. “তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।”- তপনের এই মনে হওয়ার কারণ গল্পের কাহিনি অবলম্বনে আলোচনা করো। অথবা, ‘আজ’ বলতে কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে যেদিন তপনের ছোটোমাসি আর মেসোমশাই সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে তাদের বাড়িতে এসেছিলেন (যেখানে তার প্রথম গল্প ছাপা হয়েছিল)-সেদিনের কথা বলা হয়েছিল।
▶ আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তার নতুন মেসোমশাইকে দেখে লেখকদের সম্পর্কে তপনের কাল্পনিক ধারণা সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছিল। সে অবাক হয়েছিল এই দেখে যে, লেখকরাও একেবারেই সাধারণ মানুষ। তখন তপনের মনেও লেখক হওয়ার সাধ জেগে ওঠে এবং সে লিখে ফেলে তার জীবনের প্রথম গল্পটি। কৌশলে ছোটোমাসির হাত ঘুরে সে গল্প পৌঁছেও যায় মেসোমশাইয়ের কাছে। কিছু কারেকশানের কথা বললেও তপনের বিষয়ভাবনার মৌলিকতার কথা বলে সেটিকে ছাপিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি
দেন মেসোমশাই। শুরু হয় তপনের দিন গোনা। একসময় সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেই লেখা-‘প্রথম দিন’। কিন্তু যা হতে পারত তপনের জীবনের ‘সবচেয়ে সুখের দিন’, তা-ই হয়ে যায় তার ‘সবচেয়ে দুঃখের দিন’। ছাপার অক্ষরে নিজের যে লেখা প্রকাশকে তার ‘অলৌকিক’ ঘটনা বলে মনে হয়েছিল, তা-ই তাকে প্রায় বাক্যহীন করে দেয়। চারপাশে তপনের গল্পের প্রশংসার থেকেও মেসোর মহত্ত্বই সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। তপনের অপমান তীব্র হয় লেখাটি পড়তে গিয়ে। সে দেখে, রচনার একটি লাইনও তার চেনা নয়-মেসোমশাই গল্পটিকে আগাগোড়াই কারেকশান করে দিয়েছেন। লেখক তপন হারিয়ে গিয়েছে সেই গল্প থেকে।
নিজের লেখকসত্তার এই অপমানে চোখ জলে ভিজে যায় তপনের।
4 “শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন,”-তপনের দুঃখের কারণ কী? সে কী ধরনের সংকল্প গ্রহণ করেছিল?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপন ভাবত লেখকরা বোধ হয় অন্য জগতের বাসিন্দা। ইতিমধ্যে তার ছোটোমাসির বিয়ে হয় একজন লেখকের সঙ্গে। তপন দেখতে পায়, মেসোও তার বাবা-কাকুর মতোই একজন স্বাভাবিক মানুষ। তখন থেকেই লেখক হওয়ার জেদ তার মাথায় চেপে বসে। সে লিখেও ফেলে একটি গল্প। লেখক মেসো সেই গল্পটি সন্ধ্যাতারা নামক একটি পত্রিকায় ছাপিয়ে দেন। ছাপানো লেখা হাতে পেয়ে তপন হতভম্ব হয়ে যায়। সে দেখতে পায়, পুরো লেখাটাই তার নতুন মেসো সংশোধন করে দিয়েছেন। তপন এই লেখার মধ্যে নিজেকেই আর খুঁজে পায় না। এতে তপন অপমানিত বোধ করে। নিজের সৃষ্টির এই সম্পূর্ণ বদলে যাওয়াই তপনের দুঃখের কারণ।
▶ নিজের গল্পের এই আমূল পরিবর্তন দেখে লজ্জিত ও দুঃখিত তপন এক দৃঢ় সংকল্প করে। সে বুঝতে পারে, নিজের লেখা কাঁচা হলেও অন্যের দ্বারা সংশোধন করানো উচিত নয়। তাই তপন প্রতিজ্ঞা করে, এবার থেকে সে নিজে গিয়ে পত্রিকা সম্পাদকের হাতে লেখা দিয়ে আসবে। নিজের গল্প পড়তে বসে অন্যের লেখা লাইন যেন তাকে আর কখনোই পড়তে না হয়।
5. “তার চেয়ে দুঃখের কিছু নেই, তার থেকে অপমানের।” -দুঃখ আর অপমানের কারণ কী? এই দুঃখ আর অপমান দূর করতে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী সংকল্প গ্রহণ করেছিল?
অথবা, দুঃখ আর অপমানের কারণ কী? এই দুঃখ আর অপমান থেকে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি কী শিক্ষা লাভ করেছিল?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের প্রধান চরিত্র তপনের ধারণা ছিল লেখকরা কোনো সাধারণ মানুষ নন, আকাশ থেকে পড়া অতিমানবিক কোনো প্রতিভা। তপনের এই ধারণা দূর হয় তার নতুন মেসোকে দেখে। লেখক হওয়ার প্রবল ইচ্ছা তার মনেও জেগে ওঠে। মামার বাড়িতে বসেই তপন লিখে ফেলে একটা গল্প। মেসো প্রতিশ্রুতি দেন সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তিনি সেটা ছাপিয়ে দেবেন। কিন্তু ছাপানো গল্পটা পড়ে তপন হতবাক হয়ে যায়। গল্পের প্রতিটি লাইন নতুন, আনকোরা। ছোটোমেসো সংশোধনের নামে গল্পটি নতুন করে লিখে দিয়েছেন। তার মধ্যে তপন নিজেকে একেবারেই খুঁজে পায় না। তার মনে হয় লেখাটা তার নয়। নিজের লেখার আমূল পরিবর্তন দেখে তপন দুঃখ পায় ও অত্যন্ত অপমানিত বোধ করে।
► দুঃখ আর অপমান থেকে তপন নতুন এক অভিজ্ঞতা লাভ করে। তপন সংকল্প করে, ভবিষ্যতে সে যদি কখনও লেখা ছাপতে দেয়, তাহলে সে নিজেই পত্রিকা সম্পাদকের কাছে দিয়ে আসবে। তাতে ছাপা হোক বা না হোক তার দুঃখ নেই। কেউ তো আর বলতে পারবে না, “অমুক তপনের লেখা ছাপিয়ে দিয়েছে।” আত্মমর্যাদাসম্পন্ন তপন আরও বুঝেছিল, অপরের সাহায্য নিয়ে কখনোই লেখক হওয়া যায় না।
6. আজ আর অন্য কথা নেই”-কোন্ দিনের কথা বলা হয়েছে? সেদিন অন্য কোনো কথা নেই কেন?
উত্তর: সন্ধ্যাতারা পত্রিকা নিয়ে যেদিন তপনের ছোটোমাসি এবং ছোটোমেসো তপনের বাড়িতে আসেন এখানে সেই দিনের কথা বলা হয়েছে।
▶ সন্ধ্যাতারা পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়েছিল তপনের লেখা প্রথম গল্প ‘প্রথম দিন’। এ ঘটনায় বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। মেসোর কারেকশানের কথা ছড়িয়ে পড়ে। তপনের বাবা, তার মেজোকাকু-সহ গোটা বাড়ি তপনের গল্প আর তা প্রকাশে মেসোর ভূমিকা নিয়েই শুধু আলোচনা করে। তাই সেদিন সেখানে অন্য কোনো কথা ছিল না।
7. “কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল”-কোন্ কথা শুনে কেন তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল
উত্তর: ▶ছোটোমেসোমশাই একজন লেখক-এ কথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল।
▶ তপনের ধারণা ছিল লেখকরা বোধ হয় অন্য জগতের মানুষ। তাই একজন লেখককে সামনে থেকে দেখা তার কাছে এক স্বপ্নপূরণের মতো ছিল। সেকারণেই ছোটোমেসো বই লেখেন আর সেই বই ছাপা হয় শুনে তপনের চোখ মার্বেলের মতো হয়ে গিয়েছিল। একজন ‘সত্যিকার লেখক’-কে যে এভাবে সামনে থেকে দেখা সম্ভব সেটাই তপনের কাছে অবিশ্বাস্য ছিল।
8. “নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের”-তপন কোথায় নতুন মেসোকে দেখেছিল? কীভাবে তপনের নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল?
উত্তর: ▶ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামার বাড়িতে গিয়ে তপন নতুন মেসোকে দেখেছিল।
▶ তপনের ভাবনায় লেখকরা ছিল এক অন্য জগতের মানুষ। কিন্তু লেখক ছোটোমেসোমশাইকে দেখে তার ধারণা সম্পূর্ণ পালটে যায়। তার বাবা, ছোটোমামা বা মেজোকাকুর মতোই তিনিও সিগারেট খান, দাড়ি কামান, বেশি খাবার দিলে বারণ করেন, তর্কে মেতে ওঠেন, দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করে সিনেমা দেখতে কিংবা বেড়াতে চলে যান। তপন দেখল, নিছক সাধারণ মানুষের মতোই তাঁর সমস্ত আচার-আচরণ। এসব দেখেই তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল।
9. আর সেই সুযোগেই দেখতে পাচ্ছে তপন।”-কোন্ সুযোগে তপন কী দেখতে পাচ্ছে?
উত্তর ▶ছোটোমাসির বিয়ে উপলক্ষ্যে মামার বাড়িতে তপনের আসা এবং গরমের ছুটি থাকায় থেকে যাওয়াকেই উল্লিখিত অংশে সুযোগ বলা হয়েছে।
▶ গরমের ছুটি থাকায় বিয়ের পর-পরই ছোটোমেসোমশাইও নতুন শ্বশুরবাড়িতে কয়েকদিন কাটাচ্ছিলেন। তিনি একজন লেখক। এর আগে কোনো লেখককে সামনাসামনি দেখার সুযোগ হয়নি তপনের। লেখকরা যে আকাশ থেকে পড়া কোনো জীব নয়, নিতান্তই সাধারণ মানুষ, তা এভাবেই প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয় তপনের।
10. “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই”- এখানে ‘জহুরি’ বলতে কার কথা বোঝানো হয়েছে? কথাটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। ১+২ [পাঠভবন; সাদি আরএন হাই স্কুল; উত্তরপাড়া রাষ্ট্রীয় উচ্চবিদ্যালয়; কাঁথি হাই স্কুল]
উত্তর: ▶ ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের অন্তর্গত আলোচ্য অংশটিতে ‘জহুরি’ বলতে তপনের লেখক ছোটোমেসোর কথা বলা হয়েছে।
▶ তপন জীবনে প্রথমবার গল্প লিখে তার ছোটোমাসিকে দেখায়। ছোটোমাসি লেখাটি হাতে পাওয়ামাত্র তাঁর স্বামীকে দেখাতে নিয়ে যায়। তপনের ছোটোমেসো লেখক ছিলেন। জহুরি যেমন কোন্টা আসল রত্ন আর কোন্টা নকল তা বলতে পারেন, তেমনই একজন লেখকই বলতে পারেন কোন্ লেখাটা ভালো আর কোন্ লেখাটা খারাপ। তাই তপন ভেবেছিল এই লেখার আসল মূল্য শুধু তার মেসোমশাই-ই বুঝবেন।
11. “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা।”-কোন্ট্রি, কেন মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে বলে বক্তা মনে করেছে?
উত্তর: তপনের লেখা গল্প পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করে দিলে সেটা ছোটোমেসোর উপযুক্ত কাজ হবে বলে তপনের ছোটোমাসি মনে করেছেন। তপন একটা গল্প লিখেছিল। ছোটোমাসি সেই গল্পটি ছাপাবার উদ্দেশ্যে তপনের ছোটোমেসোর হাতে দেয়। মেসো গল্পটি পড়েন এবং বলেন যে, একটু কারেকশান করে দিয়ে সেটি ছাপতে দেওয়া চলে। তপনের উদ্যোগকে উৎসাহ দিতে ছোটোমাসি তার স্বামীকে গল্পটি ছাপিয়ে দিতে অনুরোধ করে। সে মনে করে সেটাই হবে তার স্বামী অর্থাৎ তপনের ছোটোমেসোর উপযুক্ত
12. “…সবাই তপনের গল্প শুনে হাসে।”—কখন? সবাই তপনের গল্প শুনে হাসলেও, তপনের ছোটোমেসো তাকে কী বলেছিলেন?
উত্তর: ▶ তপনের মামাবাড়িতে বিকেলে চায়ের টেবিলে সকলে তপনের গল্প শুনে হেসেছিল।
▶ ছোটোমেসো প্রশংসা করে বলেছিলেন যে, তপনের সমবয়সি ছেলেরা রাজারানির গল্প কিংবা খুন জখম, অ্যাকসিডেন্ট নিয়ে গল্প লেখে। কিন্তু তপন এত অল্পবয়সেই চেনা গণ্ডির বাইরে বেরিয়েছে। রাজারানির গল্প, খুন-জখম- অ্যাকসিডেন্টের গল্প, না খেতে পেয়ে মরে যাওয়ার গল্প বাদ দিয়ে সে নিজের স্কুলে ভরতি হওয়ার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা এবং নিজের অনুভূতির বিষয়ে গল্প লিখেছে, যা প্রশংসার যোগ্য।
13. “তপন বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকায়।”-কখন তপনকে এভাবে দেখা যায় এবং তপনের বিহ্বলতার কারণ কী?
উত্তর: যখন তপনের গল্পটি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা চলছিল এবং ছোটোমেসো তার লেখার প্রশংসা করছিলেন তখনই তপন বিহ্বল হয়ে গিয়েছিল।
▶ নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে যে গল্পটি সে লিখেছিল, সেটি ছিল তার সৃষ্টিশীলতার প্রথম প্রকাশ। সেটি পত্রিকায় ছাপা হবে-এই আশা তপনকে পুলকিত করেছিল। তা ছাড়া তার নতুন মেসো তপনের লেখাটার এবং বিষয় নির্বাচনের প্রশংসা করেছিলেন। ‘ওর হবে।’- একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের মুখে নিজের এই প্রশংসা শুনে তপন আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল।
14. “কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের।”-কী কারণে এ কথা বলা হয়েছে? সত্যিই তার জ্ঞানচক্ষু খুলেছিল কি না আলোচনা করো।
উত্তর: ▶আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে মামার বাড়িতে গিয়ে তপন তার নতুন মেসোমশাইয়ের সঙ্গে পরিচিত হয়। তিনি একজন লেখক। লেখকরা কতটা সাধারণ মানুষদের মতো, তা নিয়ে তপনের সন্দেহ ছিল। কিন্তু ছোটোমেসোকে দেখার পরে তার ভুল ভাঙে। তিনি ছোটোমামা বা মেজোকাকুর মতোই দাড়ি কামান, সিগারেট খান, অতিরিক্ত খাবার তুলতে বলেন, স্নানের সময়ে স্নান করেন, ঘুমানোর সময়ে ঘুমান, খবরের কাগজের সংবাদ নিয়ে তর্কে মাতেন এবং দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে হতাশা প্রকাশ করে সিনেমা দেখতে চলে যান। তিনি বেড়াতেও বেরোন সেজেগুজে। অর্থাৎ আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর কোনো পার্থক্যই নেই। এই সত্য উপলব্ধি করেই তপন মনে করেছিল যে তার জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছে।
▶ তপনের সত্যিকারের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় গল্পের শেষে। তার লেখা গল্পটি ছোটোমাসি জোর করেই ছাপানোর জন্য মেসোকে দিয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা যায়, লেখাটি সম্পূর্ণ পালটে গেছে। তার প্রত্যেকটি লাইন তপনের অপরিচিত। সংশোধনের কথা বলে ছোটোমেসো প্রায় সম্পূর্ণ গল্পটাই নতুন করে লিখেছেন। গভীর দুঃখ ও মনোকষ্টে তপন সংকল্প করে, এরপরে যদি লেখা
ছাপাতে দিতে হয় তাহলে তা সে নিজের হাতেই দেবে। এভাবেই তার জ্ঞানচক্ষুর যথার্থ প্রকাশ ঘটে।
15. “লেখার প্রকৃত মূল্য বুঝলে নতুন মেসোই বুঝবে”- এ কথা কার, কখন, কেন মনে হয়েছিল তা আলোচনা করো।
উত্তর: ▶আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে এ কথা তপনের মনে হয়েছিল।
▶ তপন এক দুপুরবেলায় বসে একটা গোটা গল্প লিখে ফেলে। আস্ত একটা গল্প লিখে ফেলার পর প্রথমে সে নিজেই ব্যাপারটা বিশ্বাস করতে পারে না। কিন্তু সে-ই গোটা গল্পটা লিখেছে ভেবে তার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। গল্পটার কথা সে প্রথমে জানায় ছোটোমাসিকে, কারণ ছোটোমাসি ছিল তার ‘চিরকালের বন্ধু’। ছোটোমাসি তার লেখাটা নিয়ে সেটা ছোটোমেসোকে দেখায়। তপন এতে কিছুটা লজ্জিত হলেও মনে মনে খুশি হয়। এইসময়েই তপনের মনে প্রশ্নে উল্লিখিত ভাবের প্রকাশ ঘটে।
▶ তপন ভেবেছিল, লেখার প্রকৃত মূল্য একমাত্র তার ছোটোমেসোমশাই-ই বুঝবেন। কেন-না তপনের এই নতুন মেসোমশাই ছিলেন একজন লেখক। তিনি অনেক বই লিখেছেন আর সেইসব বই ছেপেও বেরিয়েছে। তাই লেখার মূল্য অন্য সকলের থেকে তিনি বেশি বুঝবেন বলেই তপনের ধারণা ছিল। একজন লেখকই আর একজন লেখকের লেখার মূল্য বুঝতে পারেন। ‘রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই।’ সাহিত্যবোধহীন একজন মানুষের পক্ষে তার লেখার যথার্থ মূল্য বোঝা সম্ভব নয় বলে তপন মনে করে। তাই ছোটোমেসোর হাতে তার লেখাটি যাওয়ায় সে পুলকিত হয়।
16. লেখার পর যখন পড়ল, গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের।”-কোন্ লেখার কথা এখানে বলা হয়েছে? সেই লেখা পড়ে তপনের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠার কারণ কী? ২+৩
উত্তর: তপন গরমের ছুটিতে মামার বাড়িতে এসে এক নির্জন দুপুরে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে গিয়ে একাসনে বসে একটি গল্প লিখে ফেলে। এখানে ওই গল্পটির কথাই বলা হয়েছে।
▶ নতুন মেসোকে দেখে তপনের গল্প লেখার উৎসাহ বেড়ে গিয়েছিল। আগে তার ধারণা ছিল, লেখকরা তাদের মতো সাধারণ মানুষ নন, অন্য কোনো অলৌকিক জগতের মানুষ। কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে তার সেই ধারণা বদলে যায়। “”লেখক’ মানে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নয়, তপনদের মতোই মানুষ”-এই ভাবনা থেকেই তার লেখক হতে চাওয়ায় কোনো বাধা থাকে না। উৎসাহভরে হোেমটাস্কের খাতা নিয়ে তিনতলার সিঁড়িতে উঠে যায়। তারপর একাসনে বসে লিখে ফেলে গোটা একটি গল্প। তপন নিজের সৃষ্টিতে আনন্দিত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে। সেটি আগাগোড়া পড়ার পর তার শরীরে একটা শিহরন খেলে যায়। তপন ভাবতেই পারেনি এত সুন্দর একটা গল্প সে নিজেই লিখতে পারবে। নিজস্ব ভাব ও ভাবনার এই প্রকাশ দেখে তার গায়ে তখন কাঁটা দিয়ে ওঠে।
17. জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন কীভাবে হয়েছে তা বর্ণনা করো।
উত্তর: লেখক সম্পর্কে ধারণা: তপনের নিজস্ব ভাবনায় লেখকরা ছিল অন্য জগতের মানুষ। কিন্তু তার লেখক ছোটোমেসোকে দেখে এবং তাঁর
আচার-ব্যবহার পর্যবেক্ষণ করে তপন বোঝে, লেখকরা সাধারণ মানুষের
মতোই। সেই মুহূর্তে তার জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। যদিও তপনের জ্ঞানচক্ষু প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক পরে খুলেছিল।
▶ ছোটোমাসির ভূমিকা: তপনের সারাদুপুর ধরে লেখা গল্পটা তার ছোটোমাসি একরকম জোর করেই তার মেসোকে দেখায়। ছোটোমেসো সেই লেখার প্রশংসাও করেন। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও বলেন যে, গল্পটার একটু সংশোধনের দরকার। ছোটোমেসোর বক্তব্য: ছোটোমেসো সেই লেখা ছাপানোর ব্যবস্থাও করে দেবেন বলে কথা দেন। তপন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখবে বলে। গল্পপ্রকাশ: সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় সত্যিই তার লেখা একসময় প্রকাশিত হয়। ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখে তপন এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভব করে। নিজস্বতা খুঁজে না-পাওয়া: কিন্তু সবাইকে লেখাটা পড়ে শোনাতে গিয়ে সে ছাপার অক্ষরে লেখার সঙ্গে নিজের লেখাটির কোনো মিল খুঁজে পায় না। পুরো লেখাটা আগাগোড়াই তার মেসোমশাইয়ের সংশোধন করা। গভীর দুঃখ ও জ্ঞানচক্ষুর উন্মীলন: দুঃখে, লজ্জায়, অপমানে তপন ভেঙে পড়ে। এবার যেন প্রকৃতই তার অন্তর্দৃষ্টি জেগে ওঠে। নিজের সৃষ্টির প্রতি অধিকারবোধ জন্মায় তপনের মনে। সে দৃঢ় সংকল্প করে, নিজের লেখা সে নিজেই ছাপতে দেবে, অন্যের দয়া গ্রহণ করবে না।
18. . তপনের লেখক হওয়ার পিছনে তার ছোটোমাসির ভূমিকা কতখানি ছিল আলোচনা করো।
উত্তর: সূচনাপর্বে ভূমিকা: ছোটোমাসির বিয়ে হওয়ার পর নতুন মেসোমশাইকে দেখে লেখক সম্পর্কে তপনের ধারণা সম্পূর্ণ পালটে যায়। কেন-না নতুন মেসো একজন লেখক এবং তিনিও আর পাঁচজন মানুষের মতোই। এবার তপন নিশ্চিত হয়, তার পক্ষে লেখক হওয়ার পথে আর কোনো বাধা নেই। সুতরাং তপনের লেখক হওয়ার সূচনাপর্বটি তৈরি করে দিয়েছে তার মাসি। তপনের লেখা নিয়ে তার মাসিই তাকে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন। গল্প লেখা ও গল্পপ্রকাশে ভূমিকা: দুপুরবেলা হোমটাস্কের খাতায় তপন
একটি গল্প লিখে প্রথমে তার ছোটোমাসিকেই দেখায়। এরপর তপনের লেখা গল্পটা তার মাসিই নতুন মেসোকে পড়তে দিয়ে বলেছেন-“তা হলে বাপু তুমি ওর গল্পটা ছাপিয়ে দিও।”
মূল্যায়ন: ছোটোমাসিই তপনের চিরকালের বন্ধু-“বয়সে বছর আষ্টেকের বড়ো হলেও সমবয়সি, কাজেই মামার বাড়ি এলে সব কিছুই ছোটোমাসির কাছে।” সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় মেসোর উদ্যোগে গল্প ছাপা হলে ছোটোমাসির মধ্যে আত্মতুষ্টির আনন্দ লক্ষ করা যায়। তাই বলা যায়, তপনের লেখক হওয়ার পিছনে তার ছোটোমাসির উৎসাহ এবং অনুপ্রেরণা ছিল অপরিসীম।
19. জ্ঞানচক্ষু’ গল্প অবলম্বনে তপন চরিত্রটির পরিচয় দাও।
উত্তর: কথামুখ: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তপন। তার চরিত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলি গল্পে দেখতে পাওয়া যায়, তা হল-
কল্পনাপ্রবণতা: লেখক সম্পর্কে তপনের মনে এক বিস্ময় বাসা বেঁধেছিল। সে ভাবত, লেখকরা অন্য জগতের বাসিন্দা, আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁদের কোনো মিলই নেই।
সৃজনশীলতা: ছোটোমাসির বিয়ের পর তপনের ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যায়। কারণ তার নতুন মেসো ছিলেন একজন লেখক, যাঁর অনেক বই ছাপা হয়েছে। একজন লেখককে খুব কাছ থেকে দেখে লেখক হওয়ার প্রেরণায় তপন লিখে ফেলে সম্পূর্ণ একটা গল্প। নতুন মেসো সেই গল্পের প্রশংসা করায় তপন লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।
আবেগপ্রবণতা ও সংবেদনশীলতা: সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় তপনের গল্পটা ছেপে বেরোলে সে অবাক হয়ে যায়। এর কারণ, মেসো সংশোধন করতে গিয়ে তার লেখা গল্পটা আগাগোড়া পালটে দিয়েছেন। তপন সেই গল্পের মধ্যে নিজেকেই খুঁজে পায় না। তাই সে হতাশ হয়ে পড়ে।
আত্মাভিমান: মেসোর সংশোধনের ফলে তার নিজের লেখার পালটে যাওয়া তপন মেনে নিতে পারে না। তাই সে সংকল্প করে, ছাপা হোক বা না হোক, এবার থেকে নিজের লেখা নিজেই পত্রিকা সম্পাদকের কাছে জমা দেবে। এই আত্মসম্মানবোধই তপনকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ করেছে।
20. ছোটোগল্প হিসেবে ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটির সার্থকতা আলোচনা করো।
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটির সূচনা হয়েছে ছোটোগল্পের
প্রত্যাশিত আকস্মিকতা দিয়ে- “কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল!” তপন নামের একটি কিশোর চরিত্রকে গল্পের কেন্দ্রে রেখে লেখিকা তার স্বপ্ন আর স্বপ্নভঙ্গের কাহিনি রচনা করেছেন। তপনের লেখক মেসোমশাই তার লেখাকে আপাদমস্তক পালটে দিয়ে সন্ধ্যাতারা পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ঘটনায় তপনের লেখকসত্তা প্রবল আঘাত পায়। ছাপার অক্ষরে শুধুই নিজের নামের প্রকাশ নয়, নিজের সৃজনশীলতার প্রতি স্বীকৃতির আকাঙ্ক্ষা এবং তা না হওয়ার যন্ত্রণা তপন চরিত্রটিকে অন্য মাত্রা দেয়। কাহিনির পরিণতি যতই গুরুগম্ভীর হোক, তাকে অসামান্য ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন লেখিকা। গল্পে তপনের লেখক মেসোমশাইয়ের চরিত্রটি বর্ণনার গুণে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে – “ঠিক ছোটো মামাদের মতোই খবরের কাগজের সব কথা নিয়ে প্রবলভাবে গল্প করেন, তর্ক করেন, আর শেষ পর্যন্ত ‘এ দেশের কিছু হবে না’ বলে সিনেমা দেখতে চলে যান…।”-এই অনবদ্য রচনাশৈলী কাহিনিকে গতিশীল করেছে। তবে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি সার্থকতা পেয়েছে তার পরিণতিতে। মৌলিকতায় বিশ্বাসী এক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কিশোর লেখকের যন্ত্রণা শুধু চরিত্রটিকে নয়, গল্পটিকেও অসামান্যতা দিয়েছে।