WBBSE Class 10 Bangla Chapter 9 প্রলয়োল্লাস Solution | Bengali Medium

Class 10 Bangla Chapter 9 Solution

প্রলয়োল্লাস

1. MCQs Question Answer

১. নজরুল রচিত প্রথম কবিতার নাম- 

ক) লিচু চোর 

(খ )মুক্তি 

(গ)ঝিঙে ফুল   

(ঘ) প্রভাত 

উত্তর:  (খ) মুক্তি  

২. নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রকাশিত হয়-

 (ক) ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে 

 (খ) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে

 (গ) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে 

 (ঘ) ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: (গ) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে

৩. নীচের কোল্টিন্ট নজরুলের লেখা কাব্যগ্রন্থ নয়?

(ক) চক্রবাক

(খ) ফণীমনসা

(গ বিষের বাঁশি

(ঘ) মানসী

উত্তর: ঘ মানসী

৪. কাজী নজরুল ইসলাম সম্পাদিত পত্রিকার নাম-

(ক) ধূমকেতু

(খ) বিজলি 

(গ) ভারতী 

(ঘ) মোসলেম ভারত

উত্তর: (ক) ধূমকেতু

৫. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!”-কবি কার জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?-

(ক) প্রকৃতির

(খ) মানুষের

(গ) ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা শিবের 

(ঘ) দেশমাতার

উত্তর:(গ) ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতা শিবের

৬. “ওই নূতনের কেতন ওড়ে…”- কেমনভাবে কেতন ওড়ে? 

(ক) লেলিহান শিখার মতো 

(খ) বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে 

(গ) কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো 

(ঘ) হঠাৎ ধূমকেতুর দেখা দেওয়ার মতো

উত্তর:(গ) কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো

৭. “আসছে এবার…”-কে আসছে?-

(ক) জাঠ-কালাপাহাড় 

(খ) অত্যাচারী শাসক ইংরেজ 

(গ) প্রলয়ংকর শিব 

(ঘ)ঘনতুন পতাকা

উত্তর:(গ) প্রলয়ংকর শিব

৮. “সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল”-কে আগল ভাঙে?-

(ক) প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল শিব 

(খ) জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী 

(গ) দেশের সাধারণ মানুষঘ 

(ঘ) বিশ্বমাতা

উত্তর:(ক) প্রলয়-নেশার নৃত্য-পাগল শিব

৯. ‘মৃত্যু-গহন অন্ধকূপে’ বলতে কবি বুঝিয়েছেন-

(ক)ভীতিজনক স্থান 

(খ) রাত্রির অন্ধকা

(গ) কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজ

(ঘ) পরাধীন ভারত

উত্তর: (গ) কুসংস্কারগ্রস্ত সমাজ

১০. ‘মহাকালের চণ্ড-রূপে’ আসছেন- 

(ক সৃষ্টির দেবতা

(খ) কালবৈশাখীর ঝড়

(গ) মহাকালীঘ

(ঘ) মহানিশা

উত্তর: (ক) সৃষ্টির দেবতা

১১. “বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর।”-ভয়ংকরের রূপটি কার?- 

(ক) দুর্গার

(খ) মহাকালের চণ্ডরূপের

(গ) ধূমকেতুর 

(ঘ) দিগম্বরের

উত্তর: (খ) মহাকালের চণ্ডরূপ

১২. “ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর।”- ভয়ংকরের হাসির কারণ-

(ক মৃত্যুজয়ের আনন্দ 

(খ) কালবৈশাখী ঝড় আসার আনন্দ

(গ) দীর্ঘকালের আগল ভাঙার আনন্দ

(ঘ) চারিদিক স্তব্ধ হয়ে থাকার আনন্দ

উত্তর:(গ) দীর্ঘকালের আগল ভাঙার আনন্দ

১৩. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!”-যাঁর জয়ধ্বনি করতে হবে, তিনি হলেন– 

(ক) ধ্বংসের দেবতা

(খ) মহাকাল

(গ দেশমাতা

(ঘ) দেশনেতা

উত্তর:(ক) ধ্বংসের দেবতা

১৪. “কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন দুলায়।”-কে?

(ক)বাতাস

(খ) চামব

(গ) সাগর 

(ঘ )ঝামর

উত্তর:(ঘ) ঝামর

১৫. “সর্বনাশী জ্বালামুখী—তার চামর চুলায়!”-

(ক) চরাচর

(খ) বন্ধ কূপ

(গ) দিগন্তরে

(ঘ) ধূমকেতু

উত্তর: (ঘ) ধূমকেতু

১৬. “বিশ্বপাতার বক্ষ কোলে”-যা ঝোলে-

(ক) ফুল 

(খ) ফল

(গ মুণ্ডু 

(ঘ) কৃপাণ

[কৃয়নগর কলেজিয়েট স্কুল]

উত্তর: (ঘ) কৃপাণ

১৭. অট্টরোলের হট্টগোলে- 

(ক) বিশ্বমায়ের আসন দুলে উঠেছে 

(খ) চরাচর স্তব্ধ হয়ে গেছে 

(গ) জগৎজুড়ে প্রলয় এসেছে 

(ঘ) ঝড়-তুফান এসেছে

উত্তর: (খ) চরাচর স্তব্ধ হয়ে গেছে

Very Short Question Answer

১. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?     [রায়পুর এসএসআরএ বিদ্যালয়; শ্রীরামকৃয় শিক্ষালয়]  

উত্তর: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

২. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়?

উত্তর:  অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর (কার্তিক, ১৩২৯ বঙ্গাব্দ) মাসে প্রকাশিত হয়।

৩. কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?

 উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অগ্নিবীণা (প্রকাশ- অক্টোবর, ১৯২২)।

৪. কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি কাকে উৎসর্গ করেন?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থটি শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করেন।

প্রলয়োল্লাস’ অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা?

উত্তর: বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা।

3. Short Question Answer

১. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা কে করেন?

উত্তর: অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা করেন ‘চিত্রকর-সম্রাট’ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রচ্ছদটি আঁকেন চিত্রশিল্পী শ্রীবীরেশ্বর সেন।

২. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে কোথায় প্রকাশিত হয়েছিল?

উত্তর: অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের উৎসর্গ কবিতাটি গ্রন্থে সংযুক্ত হওয়ার আগে মাসিক উপাসনা পত্রিকায় ১৩২৮ বঙ্গাব্দের শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল।

 ৩. অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট ক-টি কবিতা রয়েছে?

উত্তর:  অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থে মোট বারোটি কবিতা রয়েছে- ‘প্রলয়োল্লাস’, ‘বিদ্রোহী’, ‘রক্তাম্বরধারিণী মা’, ‘আগমনী’, ‘ধূমকেতু’, ‘কামালপাসা’, ‘আনোয়ার’, ‘রণভেরী’, ‘শাত-ইল-আরব’, ‘খেয়াপারের তরণী’, ‘কোরবাণী’, ‘মোহররম’।

৪. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”-পঙক্তিটিতে কাদের জয়ধ্বনি করতেবলা হয়েছে?   [সাদি আরএন হাই স্কুল, রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুল] অথবা, “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!” কবি কাদের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন?

উত্তর:  কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি দেশের স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ তরুণ বিপ্লবীদের জয়ধ্বনি করতে বলা হয়েছে।

৫. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”-কার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘প্রলয়োল্লাস’-এ ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতার জয়ধ্বনি করার কথা বলা হয়েছে।

৬. “ওই নূতনের কেতন ওড়ে—”-নূতনের কেতন ওড়ার সংবাদ কে বহন করে এনেছে?

উত্তর:  কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘নূতনের কেতন’ ওড়ার সংবাদ কালবৈশাখীর ঝড় বহন করে এনেছে।

৭. ‘নূতনের কেতন’ ওড়া বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?     

উত্তর:  কাজী নজরুল ইসলাম ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘নূতনের কেতন’ ওড়া বলতে বোঝাতে চেয়েছেন যে, পরাধীনতার বন্ধন থেকে, ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তির দিন আসন্ন।

৮. “আসছে এবার…”-কে, কীভাবে আসছেন?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের নেশায় নৃত্যপাগল শিব সিন্ধুপারে সিংহ-দরজায় আঘাত করে আসছেন।

৯.. “সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল”-‘সিন্ধুপারের সিংহদ্বার’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?     [কমলা গার্লস স্কুল]

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার আলোচ্য অংশে ‘সিন্ধুপারের সিংহদ্বার’ বলতে সমুদ্রপারের আন্দামানের সেলুলার জেলের প্রবেশপথকে বোঝানো হয়েছে।

১০. . “মহাকালের চণ্ড-রূপে”–‘চণ্ড-রূপ’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর:  বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার আলোচ্য অংশে ‘চণ্ড-রূপ’ বলতে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ, ভীষণ, ভয়ানক, ভয়ংকর, উদ্ধত রূপকে বোঝায়।

১১. “… আসছে ভয়ংকর।”-‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ভয়ংকরের রূপটি কেমন?

 উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ভয়ংকরের রূপটি অত্যন্ত ভীষণ ও উদ্ধত। তিনি বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে অবতীর্ণ হন।

১২. “… গগন দুলায়” গগন কীভাবে দুলে ওঠে?

 উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ধ্বংসের দেবতা শিবের কেশরাশির ঝাপটায় গগন অর্থাৎ সারা আকাশ দুলে ওঠে বলে কবি কল্পনা করেছেন।

১৩. “… ধূমকেতু তার চামর চুলায়!”-‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘ধূমকেতু’ র কী কী বিশেষণ প্রযুক্ত হয়েছে?      [নব নালন্দা হাই স্কুল]

 উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ধূমকেতুর ক্ষেত্রে ‘সর্বনাশী’ ও ‘জ্বালামুখী’ বিশেষণ দুটি প্রযুক্ত হয়েছে।

১৪. “বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে/রক্ত তাহার কৃপাণ ঝোলে/ দোদুল দোলে!”-পঙ্ক্তিগুলোর অর্থ বুঝিয়ে লেখো।

 উত্তর: আলোচ্য পঙ্ক্তিগুলোর অর্থ হল-সর্বনাশী রূপ ধরে যে ধ্বংসের দেবতার আগমন ঘটে, তা বিশ্বপিতার বক্ষকে রক্তাক্ত করে পৃথিবীকে আন্দোলিত করে তোলে।

4. Long Question Answer

. “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”-কাদের উদ্দেশ্যে কবির এই আহবান? কবিতায় কেন এই আহ্বানটি পুনরাবৃত্ত হয়েছে লেখো।     

অথবা, “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”কবির এই কথা বলার কারণ সংক্ষেপে লেখো। অথবা, “প্রলয়োল্লাস” কবিতায় একদিকে ধ্বংসের চিত্র আঁকা হয়েছে আবার অন্যদিকে নতুন আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।                                   

উত্তর: যাদের উদ্দেশে এই আহ্বান: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি নজরুল ইসলাম দেশবাসীর উদ্দেশে এই আহ্বান জানিয়েছেন।

আহ্বানের পুনরাবৃত্তির কারণ: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় মোট উনিশবার “তোরা সব জয়ধ্বনি কর” এই আহ্বানসূচক পঙ্ক্তিটি উচ্চারিত হয়েছে, যা বুঝিয়ে দেয় এই পঙ্ক্তিটিতেই কবি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। আসলে ‘প্রলয়োল্লাস’ হল ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির বন্দনা। স্বাধীনতাপ্রিয় যে তরুণের দল তাদের দুর্জয় সাহস আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে পরাধীনতা এবং সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটাতে চায় কবি তাদেরই জয়ধ্বনি করতে বলেছেন। কবির কথায় তারা হল ‘অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল, ‘কিন্তু তারাই সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে আঘাত করে নতুন চেতনা, বিপ্লবের বার্তাকে বয়ে আনে। অসুন্দরকে দূর করতে তারা আপাত ভয়ংকরের বেশ ধরে। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে নবপ্রাণের প্রতিষ্ঠা ঘটে, প্রাণহীনতার বিনাশ হয়। “… জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে। জরায়-মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ-লুকানো ওই বিনাশে!” প্রলয়ংকর শিবের মতো রুদ্রমূর্তিতে যে বিপ্লবীশক্তির অভ্যুদয় ঘটে তারাই ধ্বংসের মধ্য দিয়ে সৃষ্টির কারিগর। তাই তাদের অভ্যর্থনা জানাতে হবে সমাজকে সুন্দর করে তুলতে। এ কারণেই ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ পঙ্ক্তিটি পুনরাবৃত্ত হয়েছে কবিতায়। এ হল বিপ্লবী যুবশক্তির প্রতি কবির মুগ্ধ অভিবাদন।

২.প্রলয়োল্লাস’ কবিতার মূল রক্করা সংক্ষেপে আলোচনা করো ।

অথবা, ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় প্রলয়ের মধ্যে কবি উল্লাস অনুভব করেছেন কীভাবে বুঝিয়ে লেখো।         

অথবা, ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি প্রলয় ও আশাবাদের সুর কীভাবে ব্যক্ত করেছেন তা বর্ণনা করো।       

উত্তর: প্রাক্কথন: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ আসলে কবির জীবন-উল্লাসের কবিতা। শোষণ-বঞ্চনা, পরাধীনতার নাগপাশকে ছিন্ন করে জীবনের যে জাগরণ ঘটে, স্বাধীনতা আর সাম্যের ভোরে যার প্রতিষ্ঠা হয় তাকেই কবি স্বাগত জানিয়েছেন। গ্রন্থাকারে যে বছর (১৯২২) ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি প্রকাশ পায় ওই একই বছরে ধূমকেতু পত্রিকার এক সংখ্যায় নজরুল লেখেন- “পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে। সকল কিছু নিয়ম-কানুন বাঁধন-শৃঙ্খলা মানা- নিষেধের বিরুদ্ধে।”সুন্দরের আবির্ভাব: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাতেও দেখা যায়- “সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল”। পঙ্ক্তিটি দেখেই বোঝা যায় কবি স্পষ্ট বিদ্রোহের কথাই বলছেন। ভয়ংকরের বেশে এ হল সুন্দরের আবির্ভাব। প্রবল তেজ, বিপর্যয় নিয়ে যে বিপ্লবীশক্তির আগমন ঘটে তা প্রাথমিকভাবে শঙ্কিত করতে পারে, কিন্তু বিশ্বমায়ের আসন সেই পাতে। চিরসুন্দরের প্রতিষ্ঠা: কবি দেখেছেন ‘অন্ধ কারার বদ কুপে। দেবতা বাঁধা যজ্ঞ-যুপে” এই ‘দেবতা’ স্বাধীনতার প্রতীক। এখন থেকে মুক্ত হয়ে তার আগমনের সময় হয়ে গিয়েছে। রথচক্রের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তাই আলোচ্য কবিতায় কবি বলেছেন যে ধ্বংস দেখে ভা পাওয়ার কিছু নেই, প্রাণহীন অসুন্দরকে বিনাশ করতেই এই ধ্বংস। এরপরই চিরসুন্দরের প্রতিষ্ঠা ঘটবে। তাকেই স্বাগত জানানোর জন্য সকলকে আহ্বান করেছেন কবি।

৩.প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটিতে কবির রচনারীতির যে যে বৈশিষ্ট্য প্রকাণ পেয়েছে, তা লেখো।

উত্তর: রচনাশৈলী: বাংলা সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী’ কবি হিসেবে নজরুলের প্রতিষ্ঠা হলেও সেই বিদ্রোহের সুরকে কবিতায় সার্থক করে তুলেছিল নজরুলের অনবদ্য রচনাশৈলী। এক্ষেত্রে শব্দ ব্যবহারের বৈচিত্র্য তাঁর কবিতাকে বিশিষ্ট করে তুলেছিল। শব্দ প্রয়োগ: পবিত্র সরকার নজবুল সম্পর্কে বলেছেন- “বাংলার প্রায় সমস্ত কবির তুলনায় নজরুলের অভিধান বিস্তৃততর।” কিন্তু আরবি-ফারসি শব্দের যে বিপুল ব্যবহার সাধারণত নজরুলের কবিতায় দেখা যায় তা ‘প্রলয়োল্লাস’-এ নেই। বরং তৎসম শব্দবাহুল্য এই কবিতায় ধ্বনিময়তা থাকা সত্ত্বেও গাম্ভীর্য নিয়ে এসেছে। যেমন- “দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায়। দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!” পঙ্ক্তি বিন্যাস: কবিতার চালে একইসঙ্গে উচ্ছ্বাস আর গাম্ভীর্য মিলে যাওয়া নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী। কবিতার পঙ্ক্তিগুলি অসম। কিন্তু তারই অন্ত্যমিল সার্থকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রায় ধ্রুবপদের মতো ফিরে এসেছে “তোরা সব জয়ধ্বনি কর!” এই পঙ্ক্তিটি। এই জয়ধ্বনিই কবিতার মূলকথা। এই জয়ধ্বনি স্বাধীনতার, নবযুগের। ভাষা ও ছন্দের মিশেল: বিপ্লবীশক্তির যে জীবনোল্লাস কবিতার প্রাণ তাকে ভাষা এবং ছন্দের মধ্যে অনায়াসে মিশিয়ে দিয়েছেন কবি। তীব্র বেদনা, ক্রোধ, সেখান থেকে নতুন জাগরণের স্বপ্ন-কবিতার নির্মাণকে ছুঁয়ে আছে ভালো করেই।

৪. ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতা অবলম্বনে কাজী নজরুল ইসলামের সংগ্রাম চেতনার পরিচয় দাও।

উত্তর: কথামুখ: কবি নজরুল কলমকে তরবারিতে রূপান্তরিত করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অংশীদার হয়েছিলেন। ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি কবির সামাজিক ও রাজনৈতিক চেতনার অনবদ্য প্রকাশ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়েই নজরুলের কবিপ্রতিভার বিকাশ ঘটে। সামাজিক অবক্ষয়: তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন সমকালীন সমাজের সর্বব্যাপী অবক্ষয়ের রূপ। এই পচনশীল সমাজ ধ্বংস করে নতুন সমাজ গড়ার অদম্য ইচ্ছা বুঝে নিয়ে কবি মহাকালরূপী শিবের আগমন কামনা করেছেন। নটরাজ শিবের আগমন: নজরুল জানেন, সর্বব্যাপী দুর্দশা আর অবক্ষয় থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে রক্ষক ও সংহারক নটরাজ শিবকেই প্রয়োজন। এই অলৌকিক শক্তিই সামাজিক পাঁকে ফোটাবে মানবিকতার পদ্ম। সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা: মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হলেই সমাজে সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা হবে। তার জন্য জীর্ণতার অবসান চাই। ধ্বংসরূপী শিব তাঁর বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে রুদ্রমূর্তিতে আবির্ভূত হবেন। তিনি ভেঙে দেবেন জড়তাগ্রস্ত, বিপথগামী সমাজকে। শিবের সংহারক মূর্তি: সমগ্র কবিতায় প্রলয়রূপী শিবের সংহারক মূর্তিকেই কবি তুলে ধরেছেন। নজরুলের সংগ্রামী চেতনার পথেই নটরাজ শিবের আবাহন সূচিত হয়েছে। এই শিবই দেশপ্রেমের স্বরূপ: শিবের প্রতীকে নজরুল তারুণ্যের শক্তিকে মর্যাদা দিয়েছেন। সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠার জন্য কবির এই চেষ্টা তাঁর দেশপ্রেমের স্বরূপকেই স্পষ্ট করে তোলে।

৫.প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় নজরুল সমাজ পরিবর্তনের যে ইঙ্গিত দিয়েছেন তার বর্ণনা দাও।

অথবা, ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার পটভূমি আলোচনা প্রসঙ্গে নজরুলের কবিমানসের পরিচয় দাও।

উত্তর: কথামুখ: ব্রিটিশ-শাসিত ভারতবর্ষে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে ইংরেজ সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে কঠোর দমননীতির আশ্রয় নিয়েছিল। এর সঙ্গে কবি পর্যবেক্ষণ করেছেন যে, বিপ্লবীরা দেশের স্বাধীনতার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। মূল্যবোধের অবক্ষয়: আবার, ধর্মের নামে ভণ্ডামি চলছে চারিদিকে। মেকি দেশনেতারা স্বার্থের খেলায় মেতে উঠেছে। কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস মানুষের মূল্যবোধের অবক্ষয়কে আরও সর্বব্যাপী করেছে। সমাজ পরিবর্তন: এই অবস্থায় নজরুল উপলব্ধি করেছিলেন যে আগে সমাজকে পালটাতে হবে। জড়তাগ্রস্ত মৃতপ্রায় মানুষকে জীবনের আলোয় ফিরিয়ে আনতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন প্রলয়রূপী শিবের মতো কোনো অলৌকিক শক্তিকে। সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠা: সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে জাতিকে গ্রাস করবে অসুন্দর। কবি কামনা করলেন নটরাজ শিবের আবির্ভাবকে। এই নটরাজ শিবই হলেন নববিধানের বাণীবাহক। তিনিই জীর্ণ সমাজকে ধ্বংস করে সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করবেন। আর আশাবাদী হলেন এই ভেবে- “এবার মহানিশার শেষে। আসবে ঊষা অরুণ হেসে।”জয়ধ্বনি: নবসৃষ্টির কামনায় জয়ধ্বনি দিলেন সেই প্রলয়ংকরের। ধ্বংস দেখে ভয় নয়, বরং সৃষ্টিসুখের উল্লাসে টগবগিয়ে উঠল কবিমন। সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় কাল-ভয়ংকরের ভীষণমূর্তি তখন আর ভীতিজনক মনে হল না। বরং তাঁকে বরণ করার প্রত্যাশায় কবি দেশবাসীকে আহ্বান জানালেন।

৬. “ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়।”-‘নূতনের কেতন’ কী? ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতার বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।    

উত্তর: ‘কেতন’ শব্দের অর্থ পতাকা। ‘নূতনের কেতন’ অর্থাৎ স্বাধীনতার ভিত্তিতে যে নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, তার প্রতীক পতাকার কথা বলা হয়েছে।

  • ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অগ্নিগর্ভ সময়ে কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি রচিত হয়েছে। সমগ্র পৃথিবী-জুড়ে নানাভাবে মুক্তি আন্দোলনের যে ঘটনাগুলি ঘটছিল কবি সেগুলি সম্পর্কেও সজাগ ছিলেন। এসব থেকেই তাঁর মনে হয়েছিল যে, নতুন দিনের আগমন সুনিশ্চিত হতে লেছে। তার আগমন ‘কালবোশেখির ঝড়’-এর মতো। কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সর্বনাশের পথ ধরে এই পরিবর্তন আসবে- “বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর।” সর্বনাশী ধূমকেতুর মতো তার আবির্ভাব ঘটবে। সশস্ত্র সেই আবির্ভাবে স্থিতাবস্থার আসন টলে যাবে। মধ্যাহ্ন সূর্যের প্রখরতা কিংবা মেঘগর্জনের মতো প্রবলভাবে ঘটবে বিপ্লবীশক্তির আগমন। মহাসমুদ্র দুলে উঠবে সেই ভয়ংকরের আগমনে। আবার এই ভয়ংকরের আড়ালেই রয়েছে সুন্দরের প্রতিশ্রুতি। প্রলয়ের রূপ ধরে এ হল ‘চিরসুন্দর’-এর আগমন- ভাঙনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টিই তাঁর লক্ষ্য। তাই ভয়ংকরকে ভয় না পেয়ে তার জয়ধ্বনি করতে বলেছেন কবি। কারণ ‘কালবোশেখির ঝড়’-এই ওড়ে নূতনের কেতন’- “কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর।”

৭. “বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!”-এখানে ‘ভয়ংকর’ বলতে কাদের কথা বলা

হয়েছে? তাদের কীভাবে আগমন ঘটছে নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় ‘ভয়ংকর’ বলতে মহাকালের মতো চণ্ড মূর্তিতে যে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন ঘটছে তাদের কথা বলা হয়েছে।

▶ যে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন কবি প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের লক্ষ্য স্বাধীনতা। ইংরেজের দুর্গে আঘাত হানাই তাদের লক্ষ্য। কালবৈশাখির ঝড়ের প্রচণ্ডতা নিয়ে তাদের আগমন ঘটে। তারা ‘নূতনের কেতন’ ওড়ায়। পুরোনো ব্যবস্থার বদল ঘটিয়ে তারা এক মানুষের বাসযোগ্য সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে চায়, যেখানে অত্যাচার অন্যায়ের অবসান ঘটবে। কিন্তু তার জন্য সকলের আগে প্রয়োজন পুরোনো ব্যবস্থার বদল। তাই ধ্বংসের উন্মত্ততা নিয়ে তরুণ বিপ্লবীদের আগমন ঘটে। কবি তাদেরকে বলেছেন- “অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য পাগল।”শিব যেমন তাঁর রুদ্র মূর্তিতে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়েছিল এই তরুণদলও চায় সত্য, ন্যায় এবং সুন্দরের প্রতিষ্ঠা করতে। ‘সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে’ অর্থাৎ সমুদ্রপারে আন্দামানের সেলুলার জেলের দরজা ভাঙতে চায় তারা। কারণ এই কারাগার ইংরেজের অত্যাচার ও দমনের প্রতীক। এই মৃত্যুপুরীতে মহাকালের চণ্ড-মূর্তিতে এভাবেই ভয়ংকরের আগমন ঘটে।

৮. “দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার জটায়।”-মন্তব্যটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। কবিতায় এই প্রসঙ্কাটি উল্লেখের কারণ কী?                                                                                          ২+৩

উত্তর: ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রবল রূপকে তুলে ধরার জন্য প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটির উপস্থাপনা করেছেন। মধ্যাহ্নকালীন সূর্যের দীপ্তি ভয়াল, তা অগ্নিজ্বালা সৃষ্টি করে। আবার আকাশে যখন মেঘ করে, মনে হয় যেন আগুনরঙা জটাজাল সৃষ্টি হয়েছে। সেই মেঘ থেকে ঝরে পড়া বৃষ্টি যেন দিগন্তেরই কান্না। বিন্দু বিন্দু করে পড়া চোখের জলের মতো সেই বৃষ্টি সপ্তমহাসমুদ্রকে আলোড়িত করে তোলে। কবি প্রলয়ের এই রূপকে শুধু প্রকৃতিতেই নয়, চারপাশের সমাজজীবনেও প্রত্যক্ষ করেছেন।

▶ প্রলয়ের ধ্বংসের মধ্যেই বিশ্বমায়ের সৃষ্টির অভিষেক দেখেছেন কবি। যুগবাণী গ্রন্থের ‘নবযুগ’ নামক রচনায় নজরুল লিখেছেন- “আজ মহাবিশ্বে মহাজাগরণ, আজ মহামাতার মহা আনন্দের দিন, আজ মহামানবতার মহাযুগের মহা উদ্বোধন।” বিক্ষোভ-আন্দোলনের তীব্রতায় ধ্বংসের যে উন্মাদনা কবির চোখে পড়ে তার সঙ্গে কবি মিল খুঁজে পান প্রকৃতির ভয়ংকর রূপের। সেই রূপে মানুষ শঙ্কিত ও দিশাহারা হয়ে উঠলেও তার মধ্যেই কবি নতুন দিন ও জীবনের নিশ্চিত প্রতিশ্রুতি খুঁজে পেয়েছেন। সংগ্রামের সেই ভয়ংকর রূপকে প্রকাশ করতে গিয়েই কবি এই মন্তব্যটি করেছেন।

৯. “জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে/জরায়-মরা মুমুর্ষুদের প্রাণ লুকানো ওই বিনাশে।”-‘জগৎ জুড়ে প্রলয়’ কথাটির অর্থ লেখো। এই প্রলয়ের সার্থকতা কী?

উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতাটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিতে রচিত হলেও পৃথিবীজুড়ে যে গণমুক্তির সংগ্রামগুলিকে কবি নানাভাবে সংঘটিত হতে দেখেছেন, তাও তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছে। কাব্য রচনার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতাও কবিকে প্রভাবিত করেছে। রাশিয়ার বিপ্লব, তুরস্কে কামাল পাশার উত্থান, আয়ার্ল্যান্ডের বিপ্লব ইত্যাদি ঘটনা নজরুলের মনে প্রবলভাবে দাগ কেটেছিল। সংগ্রাম এবং শোষণমুক্তির নানা চেহারা বিক্ষিপ্ত আকারে নানাভাবে থাকলেও বিপ্লবের সেই উন্মাদনা কবিকে স্পর্শ করেছিল। ‘জগৎ জুড়ে প্রলয়’ বলতে এই বিশ্বব্যাপী সংগ্রাম-আন্দোলনের কথাই বোঝানো হয়েছে।

▶প্রলয় ধ্বংসের বার্তাবাহক হলেও সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে এই প্রলয়কে কবি স্বাগত জানিয়েছেন। কারণ, তাঁর মতে এই প্রলয় প্রচলিত ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নতুন দিনের প্রতিষ্ঠাকে নিশ্চিত করবে, যা আসলে স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠা। যুগবাণী-র ‘নবযুগ’ রচনায় নজরুল লিখেছিলেন-“নরে আর নারায়ণে আজ আচার-ভেদ নাই। আজ নারায়ণ মানব। তাঁহার হাতে স্বাধীনতার বাঁশী।” প্রলয়ের মধ্যে এই নতুন ব্যবস্থাকেই দেখেছেন কবি। তাই ভয়ংকরকে ভয় না পেয়ে তার জয়ধ্বনি করার কথা বলেছেন তিনি।