WBBSE Class 10 History Chapter 1 ইতিহাসের ধারণা Solution | Bengali Medium

Class 10 History Chapter 12 Solution

ইতিহাসের ধারণা

1. MCQs Question Answer

1. ইতিহাস কোন্ শতকে সমাজবিজ্ঞান থেকে একটি পৃথক শাস্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে?

(a) সপ্তদশ শতকে

(b) অষ্টাদশ শতকে

(c ) ঊনবিংশ শতকে

(d) বিংশ শতকে

উত্তরঃ (c ) ঊনবিংশ শতকে

2. ইতিহাস হল অতীতের-

(a) কর্তব্যনিষ্ঠ বিবরণ

(b)  বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ

(c )কর্মনিষ্ঠ বিবরণ

(d) অর্থনিষ্ঠ বিবরণ

উত্তরঃ (d) অর্থনিষ্ঠ বিবরণ

3. ‘History from below’-প্রবন্ধটির রচয়িতা-

(a) লয়েড জর্জ

(b) মার্ক ফেরো

(c ) ই পি থমসন

(d)  মার্শাল ফচ

উত্তরঃ (c ) ই পি থমসন

4. অ্যানাল গোষ্ঠীর পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়-

(a) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে

(b) ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে

(c ) ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে

(d) ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ(a) ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে

5. ‘অ্যানাল স্কুল’ কর্তৃক যে ধরনের ইতিহাসচর্চা করা হয় তা হল-

(a) সাবলটার্ন

(b) টোটাল হিস্ট্রি

(c ) হিস্ট্রি ফ্রম বিলো

(d ) নারী ইতিহাস

উত্তরঃ (b) টোটাল হিস্ট্রি

6. অ্যানাল পত্রিকা গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চার মূল বিষয় ছিল-

(a) আঞ্চলিক ইতিহাস

(b) সামাজিক ইতিহাস

(c ) সামরিক ইতিহাস

(d) লোকসংস্কৃতি

উত্তরঃ(b) সামাজিক ইতিহাস

7. নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার শুরু হয়-

(a) ১৮৬০-এর দশকে

(b) ১৮৮০-এর দশকে

(c ) ১৯৩০-এর দশকে

(d) ১৯৬০-এর দশকে

উত্তরঃ(d) ১৯৬০-এর দশকে

৪. নতুন সামাজিক ইতিহাসে কাদের কথা বলা হয়েছে?

(a) রাজা-মহারাজা

(b)সাধারণ মানুষ

(c ) রাজনৈতিক নেতা

(d) সামন্তপ্রভু

উত্তরঃ (b)সাধারণ মানুষ

9. সাবলটার্ন গোষ্ঠীর একজন প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক হলেন-

(a) মার্ক ব্লখ

(b) ফার্নান্দ ব্রদেল

(c ) রণজিৎ গুহ

(d) রমেশচন্দ্র মজুমদার

উত্তরঃ(c ) রণজিৎ গুহ

10. সাবলটার্ন স্টাডিজের প্রকাশক কে?

(a) পার্থ চট্টোপাধ্যায়

(b) রণজিৎ গুহ

(c )জ্ঞানেন্দ্র পাণ্ডে

(d) তপন রায়চৌধুরি

উত্তরঃ(b) রণজিৎ গুহ

11. ‘এলিমেন্টারি অ্যাসপেক্ট অব পিজেন্ট ইনসারজেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) গৌতম ভদ্র

(b) রণজিৎ গুহ

(c ) সুমিত সরকার

(d)পার্থ চট্টোপাধ্যায়

উত্তরঃ(b) রণজিৎ গুহ

12. দ্য সোশ্যাল সায়েন্স হিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে-

(a) ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে

(b) ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে

(c ) ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে

(d ) ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ(c ) ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে

13. ‘খেলা যখন ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়

(b) বোরিয়া মজুমদার

(c ) রূপক সাহা

(d) গৌতম ভট্টাচার্য

উত্তরঃ(a) কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়

14. ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়-

(a) ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে

(b) ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে

(c ) ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে

(d) ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ(b) ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে

15. ভারতে ফুটবল খেলা প্রবর্তন করেন-

(a) ইংরেজরা

(b) ওলন্দাজরা

(c ) ফরাসিরা

(d) পোর্তুগিজরা

উত্তরঃ(a) ইংরেজরা

16. ‘ভারতীয় ফুটবলের জনক’ বলে যাকে অভিহিত করা হয়, তি হলেন-

(a) গোষ্ঠ পাল

(b) চুনী গোস্বামী

(c ) নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী

(d) পি কে ব্যানার্জি

উত্তরঃ (c ) নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারী

17. মোহনবাগান ক্লাব আইএফএ শিল্ড জয় করেছিলেন-

(a) ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে

(b) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে

(c ) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে

(d) ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে

উত্তরঃ (c ) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে

18. ‘নিষিদ্ধ শহর’ বলা হয়-

(a) লাসাকে

(b) বেইজিংকে

(c ) রোমকে

(d) কনস্ট্যানটিনোপলকে

উত্তরঃ(a) লাসাকে

19. ভারতের কোন্ অঞ্চলে দেবদেবীর পুজোয় ছানার তৈরি মিষ্টি ব্যবহাও করা হয়?

(a) উত্তরপ্রদেশের

(b) গুজরাটের

(c ) বাংলার

(d) কেরালার

উত্তরঃ(c ) বাংলার

20. ‘আ হিস্টোরিক্যাল ডিকশনারি অব ইন্ডিয়ান ফুড’ গ্রন্থটি রচনা করেন-ও

(a) প্যাট চ্যাপম্যান

(b) কে টি আচয়

(c ) হরিপদ ভৌমিক

(d) বেলা দে

উত্তরঃ(b) কে টি আচয়

21. ‘ফুড ইন হিস্ট্রি’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) হরিপদ ভৌমিক

(b) বিজয় চৌধুরী

(c ) বরুণ চক্রবর্তী

(d) রিয়াই টান্নাহিল

উত্তরঃ(d) রিয়াই টান্নাহিল

22. ভারতীয়রা আলুর ব্যবহার শিখেছিল যাদের কাছ থেকে-

(a) পোর্তুগিজ

(b) ইংরেজ

(c ) মুঘল

(d) ওলন্দাজ

উত্তরঃ(a) পোর্তুগিজ

23. রবীন্দ্রনাথ মণিপুরি নৃত্যকে কোথায় শেখানোর ব্যবস্থা করেন?

(a) জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে

(b) রবীন্দ্রভারতীতে

(c )শান্তিনিকেতনে

(d)শিলাইদহে

উত্তরঃ(c )শান্তিনিকেতনে

24. পাঞ্জাবের উট চালকদের গানকে বলা হয়-

(a) টপ্পা

(b) গজল

(c ) ঠুংরি

(d) বন্দিয়াল

উত্তরঃ(a) টপ্পা

25. ‘ভারতীয় সংগীত কা ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) রাজেশ্বর মিত্র

(b) উমেশ জোশী

(c ) প্যাট্রিক মৌতাল

(d) চার্লস রাসেল ডে

উত্তরঃ(b) উমেশ জোশী

26. ‘ডান্স ডায়ালেক্ট অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) আকৃতি সিনহা

(b) ওয়াং কেফেন

(c ) ল্যান্সডেল

(d) রাগিনী দেবী

উত্তরঃ(d) রাগিনী দেবী

27. ‘কনটেমপোরারি ইন্ডিয়ান আর্টিস্টস’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

(a) গীতা কাপুর

(b) কবিতা সিং

(c )জন ওয়েড

(d) অশোক মিত্র

উত্তরঃ(a) গীতা কাপুর

28. ‘ব্রিক টেম্পল অব বেঙ্গল’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) প্যাট্রিক নাটগেন্স

(b) পার্সি ব্রাউন

(c ) জে ফার্গুসন

(d) জর্জ মিশেল

উত্তরঃ(d) জর্জ মিশেল

29. ‘মল্লভূম বিষ্ণুপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) কুমুদনাথ মল্লিক

(b) সুধীরকুমার মিত্র

(c ) কেদারনাথ মজুমদার

(d) মনোরঞ্জন চন্দ্র

উত্তরঃ(d) মনোরঞ্জন চন্দ্র

30. ‘বাগেশ্বরী শিল্পপ্রবন্ধাবলী’ লেখেন-

(a) অশোক মিত্র

(b) গীতা কাপুর

(c ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

(d) জাহিদ চৌধুরী

উত্তরঃ(c ) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

31. রেশম আবিষ্কৃত হয় প্রাচীন-

(a) ভারতে

(b) রোমে

(c ) পারস্যে

(d) চিন দেশে

উত্তরঃ(d) চিন দেশে

32. ‘দৃশ্যকাব্য পরিচয়’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়

(b) ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়

(c ) বালদুন ধিংড়া

(d) আশুতোষ ভট্টাচার্য

উত্তরঃ(a) সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়

33. ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র হল-

(a) জামাই ষষ্ঠী

(b) বিল্বমঙ্গল

(c ) রাজা হরিশ্চন্দ্র

(d) বালিকা বধূ

উত্তরঃ(c ) রাজা হরিশ্চন্দ্র

34. ‘একেই বলে শুটিং’ গ্রন্থটি লিখেছিলেন-

(a) ঋত্বিক কুমার ঘটক

(b) তপন সিংহ

(c ) সত্যজিৎ রায়

(d) মৃণাল সেন

উত্তরঃ(c ) সত্যজিৎ রায়

35. সত্যজিৎ রায় যুক্ত ছিলেন-

(a) খেলার ইতিহাসে

(b) শহরের ইতিহাসে

(c ) নারীর ইতিহাসে

(d) শিল্পচর্চার ইতিহাসে

উত্তরঃ(d) শিল্পচর্চার ইতিহাসে

36. ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ চলচ্চিত্রের পরিচালক হলেন-

(a)  মৃণাল সেন

(b) বিজন ভট্টাচার্য

(c ) সত্যজিৎ রায়

(d) ঋত্বিক ঘটক

উত্তরঃ(c ) সত্যজিৎ রায়

37. দাদাসাহেব ফালকে যুক্ত ছিলেন-

(a) চলচ্চিত্রের সঙ্গে

(b) ক্রীড়া জগতের সঙ্গে

(c ) স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে

(d) পরিবেশের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে

উত্তরঃ(a) চলচ্চিত্রের সঙ্গে

38. ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতে প্রথম রেলপথ স্থাপিত হয় বম্বে থেকে-

(a) কলকাতা

(b) দিল্লি

(c )থানে

(d) গোয়া

উত্তরঃ(c )থানে

39. ‘দেখার রকমফের ঋত্বিক ও সত্যজিৎ’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) সত্যজিৎ রায়

(b) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

(c ) অপূর্ব কুণ্ডু

(d) মৃণাল সেন

উত্তরঃ(b) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

40. ‘বাঙালির ইতিহাস’ গ্রন্থটির লেখক হলেন-

(a) রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়

(b) দীনেশচন্দ্র সরকার

(c ) দীনেশচন্দ্র সেন

(d) নীহাররঞ্জন রায়

উত্তরঃ (d) নীহাররঞ্জন রায়

41. ভারতীয় যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থায় আধুনিকীকরণের যুগের প্রতিষ্ঠাতা হলেন-

(a) বেন্টিঙ্ক

(b) রিপন

(c ) ডালহৌসি

(d) কার্জন

উত্তরঃ

42. ভারতের কোন্ শহরকে ‘সংস্কৃতির শহর’ বলা হয়?

(a) মুম্বাই

(b) চেন্নাই

(c ) কলকাতা

(d) ভুবনেশ্বর

উত্তরঃ(c ) কলকাতা

43. ‘কমিউনিকেশন অ্যান্ড কলোনিয়ালিজম ইন ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) আর আর ভাণ্ডারী

(b) নীতিন সিন্হা

(c ) গৌতম চট্টোপাধ্যায়

(d) সুনীল কুমার মুন্সি

উত্তরঃ(b) নীতিন সিন্হা

44. সামরিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয়-

(a) ফ্রান্সে

(b) জার্মানিতে

(c ) ইংল্যান্ডে

(d) হল্যান্ডে

উত্তরঃ(c ) ইংল্যান্ডে

45. ‘দ্য দিল্লি অমনিবাস’ গ্রন্থটি কার লেখা?

(a) রাধাপ্রসাদ গুপ্ত

(b) নারায়ণী গুপ্ত

(c ) নিখিল সরকার

(d) রাধারমণ মিত্র

উত্তরঃ(b) নারায়ণী গুপ্ত

46. ‘মিলিটারি সিস্টেম অব দ্য মারাঠাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

(a) যদুনাথ সরকার

(b) কৌশিক রায়

(c ) সুরেন্দ্রনাথ সেন

(d) সুবোধ ঘোষ

উত্তরঃ(c ) সুরেন্দ্রনাথ সেন

2. Very Short Question Answer

1. নতুন ইতিহাসের প্রধান বিষয়বস্তু কী?

>> নতুন ইতিহাসের প্রধান বিষয়বস্তু হল সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের ইতিহাস।

2. ভারতে কে নিম্নবর্গের ইতিহাস রচনা করেন?

>> ভারতে ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে রণজিৎ গুহ প্রথম নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা শুরু করেন এবং পরবর্তীকালে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, গৌতম ভদ্র প্রমুখ এই চর্চাকে আরও প্রসারিত করেন।

3. নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চার জনক কে?

>> নিম্নবর্গীয় ইতিহাসচর্চার জনক হলেন রণজিৎ গুহ।

4. প্রথম কোন্ ইতিহাসবিদ সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের ইতিহাস রচনার কথা বলেন?

>> ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায় প্রথম সমাজের সকলশ্রেণির মানুষের ইতিহাস রচনার কথা বলেন।

5. কোন্ ইতিহাসে নীচে থেকে ওপরের দিকে দেখার রীতি প্রচলিত?

 >> নতুন সামাজিক ইতিহাসে নীচ থেকে ওপরের দিকে দেখার রীতি প্রচলিত। 

6. অ্যানাল গোষ্ঠীর কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।

>> অ্যানাল গোষ্ঠীর কয়েকজন ঐতিহাসিক ছিলেন মার্ক ব্লখ, লুসিয়েন ফেবর, ফার্নান্দ ব্রদেল, লাদুরি প্রমুখ।

7. নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত দুজন মার্কিন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।

>> নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত দুজন মার্কিন ঐতিহাসিক হলেন ইউজিন জেনোভিস ও হারবার্ট গুটম্যান।

৪. ‘সাবলটার্ন স্টাডিজ রিডার: ১৯৮৬-১৯৯৫’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন? 

>> ‘সাবলটার্ন স্টাডিজ রিডার: ১৯৮৬-১৯৯৫’ গ্রন্থটি রচনা করেন রণজিৎ গুহ।

9. ভারতীয় খেলার ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কী?

 > ভারতীয় খেলার ইতিহাসে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল-এই বছর ব্রিটিশ দলকে হারিয়ে ভারতের মোহনবাগান দল আই এফ এ শিল্ড জয়লাভ করে।

10. গৌতম ভট্টাচার্যের লেখা খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।

>> গৌতম ভট্টাচার্যের লেখা খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল-‘বাপি বাড়ি যা’, ‘পঙ্কজ’, ‘কাপমহলা’ ও ‘সচ্’।

11 . ফ্রাঙ্ক ওরেল কে ছিলেন?

>> ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়ক ছিলেন ফ্রাঙ্ক ওরেল।

উত্তর দাও

12. ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব বা কারা রচনা করেন? ইন্ডিয়ান ফুটবল: স্ট্রাইভিং টু স্কোর’ গ্রন্থটি

> ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়ান ফুটবল: স্ট্রাইভিং টু স্কোর’ গ্রন্থ রচনা করেন বোরিয়া মজুমদার ও কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

13. সচিন তেন্ডুলকরের আত্মজীবনীর নাম কী?

>> সচিন তেন্ডুলকরের আত্মজীবনীর নাম ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’।

14. ‘দ্য তাও অব ক্রিকেট: অন গেম্স অফ ডেসটিনি অ্যান্ড দ্য ডেসটিনিও গেম্স’ গ্রন্থটি কে লেখেন?

>> ‘দ্য তাও অব ক্রিকেট: অন গেম্স অফ ডেসটিনি অ্যান্ড দ্য ডেসটি অব গেম্স’ গ্রন্থটি লিখেছেন আশিষ নন্দী।

15. ‘ইন্ডিয়া ফুড অ্যান্ড কুকিং’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> ‘ইন্ডিয়া ফুড অ্যান্ড কুকিং’ গ্রন্থটি রচনা করেন প্যাট চ্যাপম্যান।

16. ‘টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম’ গ্রন্থটির লেখক কে?

>> ‘টোয়েন্টি টু ইয়ার্ডস টু ফ্রিডম’ গ্রন্থটির লেখক হলেন ক্রী ইতিহাসবিদ বোরিয়া মজুমদার।

17. পাল ও সেনযুগে বাংলায় কী ধরনের খাদ্যাভ্যাস চালু ছিল? 

>> পাল ও সেনযুগে বাংলায় ভাত ও নিরামিষ ভোজনের খাদ্যাভ্যা চালু ছিল।

18. প্রথম কে, কবে স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করেন?

>> কলকাতার বাগবাজারের নবীনচন্দ্র দাস ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে প্রথ স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করেন।

19. ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইটিং ইন মডার্ন আমেরিকা’ বইটি কে রচ করেন?

> ‘এ সোশ্যাল হিস্ট্রি অব ইটিং ইন মডার্ন আমেরিকা’ বইটি রচ করেন হারভে লেভেনস্টেইন।

20. ‘বাঙালির বেশবাস, বিবর্তনের রূপরেখা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

 >> ‘বাঙালির বেশবাস, বিবর্তনের রূপরেখা’ গ্রন্থটি রচনা করেন মন রায়।

21. ‘ক্লোদিং ম্যাটারস: ড্রেস অ্যান্ড আইডেনটিটি ইন ইন্ডিয়া’ বইটি। রচনা করেন?

>> ‘ক্লোদিং ম্যাটারস: ড্রেস অ্যান্ড আইডেনটিটি ইন ইন্ডিয়া’ বইটি রচ করেন এম্মা টারলো।

22. মান্না দে-র লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটির নাম কী ?

 > মান্না দে-র লেখা আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থটির নাম ‘জীবনে জলসাঘরে’।

23. ‘দ্য একজোটিক ইন ওয়েস্টার্ন মিউজিক’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন।

 > ‘দ্য একজোটিক ইন ওয়েস্টার্ন মিউজিক’ গ্রন্থটি রচনা কর জোনাথান বেলম্যান।

24. ‘দ্য ডন অব ইন্ডিয়ান মিউজিক ইন দ্য ওয়েস্ট’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> ‘দ্য ডন অব ইন্ডিয়ান মিউজিক ইন দ্য ওয়েস্ট’ গ্রন্থটি রচনা করেন পিটার লাভেজোলি।

25. ‘ডান্স অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> ‘ডান্স অব ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন শোভনা গুপ্ত।

26. ভারতের মন্দিরগুলিতে দেবদাসীদের নৃত্য কারা উপভোগ করত?

>> ভারতের মন্দিরগুলিতে দেবদাসীদের নৃত্য ব্রাহ্মণ ও সমাজের উচ্চবর্গের মানুষ উপভোগ করত।

27. উদয়শঙ্কর কী ধরনের নৃত্য পরিবেশন করতেন?

>> উদয়শঙ্কর প্রাচ্যের বিষয়কে কেন্দ্র করে পাশ্চাত্য রীতিতে নৃত্য পরিবেশন করতেন।

28. ‘বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থটি কার লেখা?

>> ‘বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থটি আশুতোষ ভট্টাচার্যের লেখা।

29. ‘শিল্প-ইতিহাসবিদ’ বা ‘Art-Historian’ কাদের বলা হয়?

> যেসব ইতিহাসবিদ শিল্পচর্চা করেন, তাঁদের বলা হয় ‘শিল্প ইতিহাসবিদ’ বা ‘Art-Historian’

30. ‘ভারতের নৃত্যকলা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> ‘ভারতের নৃত্যকলা’ গ্রন্থটি রচনা করেন গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়।

31 . ‘বাংলার মন্দির’ গ্রন্থটি কার লেখা?

>> ‘বাংলার মন্দির’ গ্রন্থটি হিতেশরঞ্জন সান্যালের লেখা।

32. ‘একেই বলে শুটিং’ ও ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ গ্রন্থ দুটি কার লেখা?

>> ‘একেই বলে শুটিং’ ও ‘বিষয় চলচ্চিত্র’ গ্রন্থ দুটি সত্যজিৎ রায়ের লেখা।

33. প্রথম সবাক বাংলা চলচিত্রের নাম কী?

>> প্রথম সবাক বাংলা চলচিত্রের নাম ‘দেনাপাওনা’ (১৯৩১ খ্রি.)।

34. ‘ভারতের চিত্রকলা’ গ্রন্থটি কার লেখা? 

>> ‘ভারতের চিত্রকলা’ গ্রন্থটি অশোক মিত্রের লেখা।

35. ‘চিত্রকথা’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> ‘চিত্রকথা’ গ্রন্থটি বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় রচনা করেন।

36. ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

37. কারা, কবে প্রথম চলচ্চিত্রের বায়োস্কোপের বাণিজ্যিক প্রদর্শনী করেন?

>> অগাস্ট লুমিয়ের ও লুই লুমিয়ের ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে প্রথম বায়োস্কোপের বাণিজ্যিক প্রদর্শনী করেন।

38. বিশ্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণকেন্দ্রের নাম উল্লেখ করো।

>> বিশ্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র নির্মাণকেন্দ্র হল আমেরিকার হলিউড এবং ভারতের মুম্বাই।

‘চলচ্চিত্র, মানুষ এবং আরও কিছু’ গ্রন্থটি কে রচনা করেন?

>> ‘চলচ্চিত্র, মানুষ এবং আরও কিছু’ গ্রন্থটি রচনা করেন ঋত্বিক কুমার ঘটক।

42. কে, কবে ক্যামেরা আবিষ্কার করেন?

>> আলেকজান্ডার ওয়ালকট ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ক্যামেরা আবিষ্কার করেন।

43. ভারতে কবে ক্যামেরা বা ফোটো তোলার যন্ত্র আসে?

> ভারতে ১৮৫০-এর দশকের প্রথমদিকে ক্যামেরা বা ফোটো তোলার যন্ত্র আসে।

44. ‘কুন্ডলীন তেল’ খ্যাত বাঙালি ফোটোগ্রাফারের নাম কী?

>> ‘কুন্তলীন তেল’ খ্যাত বাঙালি ফোটোগ্রাফারের নাম এইচ বোস বা হেমেন্দ্রনাথ বোস।

45. কলকাতায় জাতীয় নাট্যশালা কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

>> কলকাতায় জাতীয় নাট্যশালা (ন্যাশনাল থিয়েটার) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে।

3. Short Question Answer

1.ইতিহাস কী?

উত্তরঃ সাধারণভাবে ‘ইতিহাস’ হল অতীতের কথা। মানব প্রজাতির আবির্ভাবের সময় থেকে শুরু করে বর্তমানে মানবসভ্যতার চরম উৎকর্ষ লাভের সময় পর্যন্ত যাবতীয় ঘটনাবলি আলোচিত হয় যে শাস্ত্রে, তাই ইতিহাস। অন্যভাবে বলতে গেলে, ইতিহাস হল মানবসভ্যতার ধারাবাহিক বিবর্তনের কাহিনি।

2 বর্তমানকালে ইতিহাসের আলোচনায় সমাজের কোন্ স্তরের মানুষ স্থান পায়?

উত্তরঃ  বর্তমানকালে ইতিহাসের আলোচনায় সমাজের উচ্চস্তর থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত সমস্ত মানুষ অর্থাৎ রাজা, শাসক, অভিজাত, মধ্যবিত্ত, সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, সৈনিক, নারী প্রমুখ সকলেই স্থান পায়।

3.আধুনিক ইতিহাসচর্চার নানা বৈচিত্র্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বহু নতুন বিষয়ের আলোচনা যুক্ত হওয়ার ফলে তা যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতিহাসের এসব নতুন বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হল নতুন সমাজবিন্যাস, খেলাধুলা, খাদ্যাভ্যাস, শিল্পচর্চা, পোশাক-পরিচ্ছদ, যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থা, দৃশ্যশিল্প, স্থাপত্য, স্থানীয় অঞ্চল, শহর, যুদ্ধবিগ্রহ, পরিবেশ, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যা, নারী প্রভৃতির ইতিহাসচর্চা।

4.’নতুন সামাজিক ইতিহাস’ কী? অথবা, সামাজিক ইতিহাস কী?

উত্তরঃ রাজা-মহারাজা বা অভিজাত সমাজের মানুষের আলোচনা ছাড়াও বর্তমানকালে ইতিহাসে সমাজের নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষ, যেমন-কৃষক, শ্রমিক, মজুর, নারী প্রমুখ সকলের আলোচনা করা হয়। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হওয়া এই ধরনের ইতিহাসচর্চা ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’ নামে পরিচিত।

5. ‘অ্যানাল স্কুল’ কী?

উত্তরঃ ‘অ্যানাল স্কুল’ হল ফ্রান্সের একটি পত্রিকাগোষ্ঠী। মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর-এর উদ্যোগে ‘অ্যনাল্স অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। এই গোষ্ঠীর ইতিহাসচর্চায় সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, সাধারণ মানুষ, পরিবার, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থান পেয়েছে।

6. নতুন সামাজিক ইতিহাসের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলি কী?

উত্তরঃ  নতুন সামাজিক ইতিহাসের প্রধান আলোচ্য বিষয়গুলি হল জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক ঘটনাবলির বিবরণের বাইরে থাকা সাধারণ মানুষের স্থানীয় পৌর ও সামাজিক জীবন, সংস্কৃতি, জনস্বাস্থ্য, জাতিগত পরিচয়, দারিদ্র্য, গণমাধ্যম প্রভৃতি।

নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ ১৯৮০-র দশক থেকে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ায় বিভিন্ন দেশের গবেষকের উদ্যোগে জাতি, শ্রেণি, লিঙ্গ, ধর্ম প্রভৃতি নির্বিশেষে নিম্নবর্গের মানুষদের নিয়ে ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বা সাবলটার্ন স্টাডিজ নামে পরিচিত।

9.নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ঐতিহাসিকের নাম লেখো।

উত্তরঃ নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ঐতিহাসিক হলেন রণজিৎ গৃহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র প্রমুখ।

.রণজিৎ গৃহ রচিত নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তরঃ রণজিৎ গুহ রচিত নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ হল-[1] সিলেক্টেড সাবলটার্ন স্টাডিজ, [2] এলিমেন্টারি অ্যাসপেক্ট অব পিজেন্ট ইনসারজেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া, [3] সাবলটার্ন স্টাডিজ রিডার: ১৯৮৬-১৯৯৫।

বর্তমানকালে কোনো দেশ বা জাতির জীবনে খেলাধূলার গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ বর্তমানকালে কোনো দেশ বা জাতির জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব হল-[1] কোনো দেশ বা জাতির জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িক অবস্থান, নানান সামাজিক দিক খেলাধুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়। [2] বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে যোগাযোগ ও সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খেলাধুলোর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।

12.সাম্প্রতিককালে কারা খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন?
উত্তরঃ সাম্প্রতিককালে জে এ ম্যাসান, রিচার্ড হোল্ট, গৌতম ভট্টাচার্য, রূপক সাহা, বোরিয়া মজুমদার, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন

15. মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে ইতিহাসচর্চার কী ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে?

উত্তরঃ মানুষের খাদ্যাভ্যাস থেকে ইতিহাসচর্চার যে ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে সেগুলি হল- [1] কোনো সমাজের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা, [2] সেই সমাজের খাদ্যাভ্যাস কতখানি অন্য সমাজের দ্বারা প্রভাবিত, [3] স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা প্রভৃতি।

16.’ঢাকাই খাবার’ কী?

উত্তরঃ ঢাকা যখন প্রাদেশিক রাজধানী ছিল তখন এখানকার রন্ধনপ্রণালীর সঙ্গে পারসিক খাদ্যরীতির সংমিশ্রণ ঘটে। এর ফলে যে খাবার প্রস্তুত হয় তা ‘ঢাকাই খাবার’ নামে পরিচিত। এর অন্তর্ভুক্ত ছিল খিচুড়ি, হালিম, চালের গুঁড়োর পিঠে প্রভৃতি।

17.খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তরঃ খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন খ্যাতনামা গবেষক হলেন কে টি আচয়, প্যাট চ্যাপম্যান, শরীফউদ্দিন আহমেদ, হারভে লেভেনস্টেইন, জোনাথান রাইট, বিজয়া চৌধুরী, হরিপদ ভৌমিক প্রমুখ।

18.হরিপদ ভৌমিক ইতিহাসে বিখ্যাত কেন?

উত্তরঃ গবেষক হরিপদ ভৌমিক তাঁর ‘রসগোল্লা বাংলার জগৎমাতানো আবিষ্কার’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, বাংলার নদিয়া জেলার ফুলিয়ায় হারাধন ময়রা আদি রসগোল্লার সৃষ্টিকর্তা। এই কারণে তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত।

19.নবীনচন্দ্র দাস কে ছিলেন?

উত্তরঃ নবীনচন্দ্র দাস ছিলেন কলকাতার বাগবাজারের একজন ময়রা। নদিয়ার ফুলিয়ার হারাধন ময়রার তৈরি করা রসগোল্লা কিছুটা পরিবর্তন করে নবীনচন্দ্র ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি করেন।

20. মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে ইতিহাসচর্চার কী ধরনের উপাদান পাওয়া যেতে পারে?

উত্তরঃ মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে ইতিহাসচর্চার যে ধরনের উপাদান বা তথ্য পাওয়া যেতে পারে সেগুলি হল- [1] মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা, [2] সামাজিক রুচিবোধ, [3] সামাজিক উদারতার মাত্রা, [4] লিঙ্গবৈষম্য প্রভৃতি।

21.কবে কোথায় ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তরঃ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ড্রেস হিস্টোরিয়ানস’ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস চর্চা করা।

22.পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন  গবেষকের নাম লেখো।
উত্তরঃ পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন কার্ল কোহলার, এম্মা টারলো, মলয় রায়, নিরুপমা পুঞ্জির ত্রৈলোক্যনাথ বসু প্রমুখ।

23. সংগীতের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন এমন কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তরঃ সংগীতের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন এমন কয়েকজন গবেষ হলেন উমেশ জোশী, রাজকুমার, প্যাট্রিক মৌতাল, চার্লস রাসেল ডেন সুকুমার রায়, সুধীর চক্রবর্তী, মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী প্রমুখ।

24. আধুনিক ভারতের কয়েকজন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পীর নাম লেখো।

উত্তরঃ আধুনিক ভারতের কয়েকজন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্কর, অমলাশঙ্কর, রুক্মিনী দেবী, মল্লিকা সারাভাই, পণ্ডিত মহারাজ, অনিতা রত্নম প্রমুখ। হলেন উ বিরজু মহারাজ অনিতা রত্নম প্রমুখ। 

25. নৃত্যকলার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তরঃ নৃত্যকলার ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন ক্যারল ওয়েলস, জে অ্যাডশিড ল্যান্সডেল, ওয়াং কেফেন, রাগিনী দেবীমা আকৃতি সিনহা, শোভনা গুপ্তা, গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।

 26. আধুনিক বাংলা নাটকে অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তির নাম লেখো।

উত্তরঃ আধুনিক বাংলা নাটকে অসামান্য অবদান রেখেছেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি হলেন মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শিশির ভাদুড়ী, শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত প্রমুখ।

27. নাটকের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো। 

উত্তরঃ নাটকের ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়, আশুতোষ ভট্টাচার্য, বাবুল ভট্টাচার্য, সেলিম আল দীন, সাইমন জাকারিয়া, বালদুন ধিংরা প্রমুখ।

28. স্থাপত্যশিল্প নিয়ে ইতিহাসচর্চা করেছেন এমন কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তরঃ স্থাপত্যশিল্প নিয়ে ইতিহাসচর্চা করেছেন এমন কয়েকজন গবেষক হলেন জে ফার্গুসন, জর্জ মিশেল, পার্সি ব্রাউন, প্যাট্রিক নাটগেন্স, অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাপদ সাঁতরা, প্রণব রায়, হিতেশরঞ্জন সান্যাল, রবিউল হুসাইন, জাকারিয়া প্রমুখ।

29. স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তরঃ স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন- কালীকমল সার্বভৌম, কুমুদনাথ মল্লিক, নিখিলনাথ রায়, সতীশচন্দ্র মিত্র, রাধারমণ সাহা, কালীনাথ চৌধুরী, মনোরঞ্জন চন্দ্র, শ্রীকেদারনাথ মজুমদার, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুধীরকুমার মিত্র, ড. রতনলাল চক্রবর্তী প্রমুখ।

 30. প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র কোন্টি? এটি কার পরিচালনায় কবে মুক্তি পায়?

উত্তরঃ প্রথম ভারতীয় চলচ্চিত্র হল ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ (নির্বাক)।

‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’ দাদাসাহেব ফালকের পরিচালনায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি পায়।

31. ছবির দৃশ্যশিল্প বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ ছবির দৃশ্যশিল্প বলতে মূলত দুই ধরনের ছবিকে বোঝানো হয়। একধরনের ছবি হল শিল্পীর হাতে আঁকা ছবি এবং অন্য ধরনের হল ক্যামেরায় তোলা আলোকচিত্র বা ফোটোগ্রাফি।

 32. যানবাহন ও যোগাযোগের ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?
উত্তরঃ যানবাহন ও যোগাযোগের ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব হল, এর দ্বারা- [1] যানবাহন ও যোগাযোগের বিবর্তন সম্পর্কে জানা যায়। [2] এই বিবর্তন বিভিন্ন সমাজ ও সভ্যতাকে কতটা প্রভাবিত করেছে সে বিষয়ে জ্ঞানলাভ করা যায়।

33. ব্রিটিশরা ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্যে কী কী বিদ্যা ব্যবস্থা চালু করে?

উত্তরঃ ব্রিটিশরা ভারতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির উদ্দেশ্যে যেসব ব্যবস্থা চালু করে সেগুলি হল-[1] রেলপথের প্রতিষ্ঠা, [2] ডাক-ব্যবস্থার 0উন্নতি, [3] টেলিগ্রাফ ব্যবস্থার প্রবর্তন প্রভৃতি।

34. যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চায় খ্যাতি অর্জন করেছেন এমন কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তরঃ যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চার খ্যাতি অর্জন দান করেছেন এমন কয়েকজন গবেষক হলেন জন আর্মস্ট্রং, ইয়ান কের, সুনীল ফির কুমার মুন্সি, নীতিন সিনহা, গৌতম চট্টোপাধ্যায়, আর আর ভাণ্ডারী প্রমুখ।

35. সামরিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্ব কী?

উত্তরঃ সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রধান গুরুত্ব হল, এর দ্বারা- [1] সময়ের সঙ্গে যুদ্ধের বিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করা যায়। [2] যুদ্ধে কোনো শক্তির জয় বা পরাজয়ের ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় ইত্যাদি।

36. বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষকের নাম লেখো।

উত্তরঃ বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন গবেষক হলেন টমাস কুহন, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জে ডি বার্নাল প্রমুখ।

4. Long Question Answer

1. *সাম্প্রতিককালে ইতিহাসের আলোচনার বিষয়বস্তু নানা শাখায় প্রসারিত হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করো।

অথবা, আধুনিককালে ইতিহাসচর্চার নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ দিকগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ সাম্প্রতিককালে ইতিহাসের আলোচনার বিষয়বস্তু 

ভূমিকা: একদা ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে মূলত রাজা-মহারাজদের কাহিনি, রাজবংশের উত্থান-পতন, সেনাপতি বা দিগ্বিজয়ী বীরদের সাফল্য-ব্যর্থতার কাহিনি, সমাজের উচ্চবর্গের জীবনচর্চা প্রভৃতি আলোচনাই গুরুত্ব পেত। কিন্তু সাম্প্রতিককালে বহু নতুন বিষয় ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইতিহাসচর্চা বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেমন-

[1] রাজাদের কার্যকলাপ: বিগত শতাব্দীর মতো বর্তমানকালেও যুদ্ধবিগ্রহ, রাজ্যজয়, শান্তিপ্রতিষ্ঠা, সন্ধি, রাজবংশের উত্থান-পতন প্রভৃতি বিষয়ের ইতিহাসচর্চা অব্যাহত আছে।

[2] উচ্চবর্গের আলোচনা: বিগত শতকের মতো সাম্প্রতিককালেও অভিজাত, ভূস্বামী, জমিদার, সামন্তপ্রভু প্রভৃতি সমাজের উচ্চবর্গের আলোচনা ইতিহাসচর্চার অন্যতম বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

[3] সাধারণ মানুষের আলোচনা: বিগত শতক পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ, শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলা, পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ের ইতিহাসচর্চা অনেকটা উপেক্ষিত থাকলেও সাম্প্রতিককালে এসব বিষয়ের চর্চা ও গুরুত্ব যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। [

4] স্থানীয় ইতিহাস: সাম্প্রতিককালে আঞ্চলিক ও স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে চর্চাও ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মহাদেশ থেকে দেশ, দেশ থেকে স্থানীয় অঞ্চলের শহর ও গ্রাম, শহর ও গ্রাম থেকে ব্যক্তি, মানুষ প্রভৃতি সবকিছুই ইতিহাসের আলোচনায় স্থান পাচ্ছে।

[5] বিজ্ঞানের ইতিহাস: প্রাচীনকাল থেকে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার যে ধারাবাহিক অগ্রগতি ঘটেছে সে বিষয়ের ইতিহাসচর্চাও সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধি পেয়েছে। একদা ইতিহাসচর্চায় নারীরা যথেষ্ট উপেক্ষিত

[6] নারী ইতিহাস: থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন ইতিহাসবিদ নারী ইতিহাসচর্চায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন।

উপসংহার: সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে ইতিহাসচর্চার ধারারও পরিবর্তন ঘটে চলেছে। সংযোজিত হচ্ছে নতুন নতুন বিষয়। ফলে আধুনিক কালের ইতিহাসচর্চা আরও বেশি বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

2. নতুন সামাজিক ইতিহাস’ কী? কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নতুন সামাজিক ইতিহাসের চর্চা করা হয়?

উত্তরঃ  নতুন সামাজিক ইতিহাস-

ইতিহাসের আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল সামাজিক ইতিহাস। আগে সামাজিক ইতিহাস শুধু রাজা-মহারাজা, অভিজাতবর্গ ও উচ্চবর্গের আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানকালে এই আলোচনার যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে এবং সমাজের সাধারণ, নিম্নবর্গ ও প্রান্তিক মানুষের আলোচনাও এতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ফলে সামাজিক ইতিহাস ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’-রূপে পরিচিত হয়েছে।

নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার দৃষ্টিভঙ্গি

গত শতাব্দীর ৬ ও ৭-এর দশকে নতুন সামাজিক ইতিহাসের আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। এই সময় থেকে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সেসব মানুষের ইতিহাসচর্চা শুরু হয়।

[1] নীচ থেকে ওপর দিকে দৃষ্টিপাত: নতুন সামাজিক ইতিহাসের আলোচনায় ওপর থেকে নীচের দিকে দেখার পরিবর্তে নীচে থেকে ওপরের দিকে দেখার চেষ্টা করা হয়। অর্থাৎ সমাজের মুষ্টিমেয় উচ্চবর্গের মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং সমাজের বৃহত্তর ক্ষেত্রে সাধারণ ও নিম্নবর্গের মানুষের ভূমিকার ভিত্তিতে সমাজকে দেখার চেষ্টা করা হয়।

[2] বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রাধান্য: নতুন সামাজিক ইতিহাসে মুষ্টিমেয় উচ্চবর্গকে নয়, বৃহত্তর সাধারণ, নিম্নবর্গের ও প্রান্তিক মানুষকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। সমাজ-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর অবদান নতুন সামাজিক ইতিহাসে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।

উপসংহার: আধুনিক কালে নতুন সামাজিক ইতিহাসের ধারণা এক অভিনব ইতিহাসচর্চার জন্ম দিয়েছে। এর দ্বারা উপরতলার মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির বদলে বৃহত্তর ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের ভূমিকার ভিত্তিতে ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে, যা ইতিহাসচর্চার নতুন উৎসমুখ খুলে দিয়েছে।

3. ‘নতুন সামাজিক ইতিহাস’-এ কাদের আলোচনা প্রাধান্য পায়? আধুনিককালে কারা নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চাকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন?

উত্তরঃ নতুন সামাজিক ইতিহাসে প্রাধান্য

বিংশ শতকের নতুন সামাজিক ইতিহাসে সমাজের নিম্নবর্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আলোচনা প্রাধান্য পায়।

নতুন সামাজিক ইতিহাসের চর্চা

বিগত শতকে ১৯৬০-৭০-এর দশকে নতুন সামাজিক ইতিহাসের আলোচনার সূত্রপাত ঘটে। এই সময় থেকে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নতুন সামাজিক ইতিহাসকে জনপ্রিয় করে তোলেন। যেমন-

[1] অ্যানাল গোষ্ঠীর ভূমিকা: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মার্ক ব্লখ ও লুসিয়েন ফেবর ‘অ্যানাল্স অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’ নামে পত্রিকার প্রকাশ করেন। ফ্রান্সের এই অ্যানাল পত্রিকাগোষ্ঠী নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এই গোষ্ঠীর ফার্নান্দ ব্রদেল, লাদুরি প্রমুখ সাধারণ মানুষের পরিসংখ্যান, পরিবার, মনস্তত্ত্ব, সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি প্রভৃতি ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন।

[2] মার্কিন ঐতিহাসিকদের ভূমিকা: ইউজিন জেনোভিস, হারব গুটম্যান প্রমুখ মার্কিন ঐতিহাসিক সমাজের সাধারণ শ্রমিকদে জীবনযাত্রা, ক্রীতদাসপ্রথা, দাস সমাজ প্রভৃতি নিয়ে ইতিহাসচাল করেছেন। ‘পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট’ পত্রিকায়ও এই ধারার ইতিহাসচর্চা নানা প্রমাণ পাওয়া যায়।

[3] ভারতের ঐতিহাসিকদের ভূমিকা: ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া বিভিন্ন দেশে ১৯৮০-র দশক থেকে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চ (সাবলটার্ন স্টাডিজ) ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রণজিৎ গুহ, পাঞ্চ চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানেন্দ্র পান্ডে, শাহিদ আমিন, সুমিত সরকার, দীপেশ চক্রবর্তী, গৌতম ভদ্র প্রমুখ ঐতিহাসিক জাতিধর্মনির্বিশেষে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের ইতিহাসচর্চা করে নিম্নবর্গের ইতিহাসকে জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

উপসংহার: নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় ইতিহাসের বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। মার্ক ব্লখ, লুসিয়েন ফেবর প্রমুখ এই কাজে যে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন তা আজকের দিনে আরও যথাযথ ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

জেনে রাখো ঐতিহাসিক রণজিৎ গুহ তাঁর ‘সিলেক্টেড সাবলটার্ন স্টাডিজ’, ‘এলিমেন্টারি অ্যাসপেক্ট অব পিজেন্ট ইনসারজেন্সি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’, ‘সাবলটার্ন স্টাডিজ রিডার: ১৯৮৬- ১৯৯৫’ প্রভৃতি গ্রন্থে সামাজিক ইতিহাসে নিম্নবর্গের মানুষের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রতি আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, ভারতের জাতীয়তাবাদী ইতিহাস মূলত ‘উচ্চবর্গের মাহাত্ম্য ও আদর্শনিষ্ঠার বিবরণ। এই ইতিহাসে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার থাকে, সত্যিকারের অস্তিত্ব থাকে না।’

4.নতুন সামাজিক ইতিহাসের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ  ভূমিকা: মোটামুটিভাবে বিংশ শতাব্দীর ৬-৭-এর দশকে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ঘটে। এর কিছুকালের মধ্যেই এই ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন-

[1] আলোচনার ব্যাপকতা: নতুন সামাজিক ইতিহাসে আলোচনার পরিধি যথেষ্ট ব্যাপক এবং বহুমুখী। পোশাক-আশাক, খাদ্যাভ্যাস, খেলাধুলা, শিল্পচর্চা, পরিবেশ, জাতীয়তাবাদ, নারীবাদ-সহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ই এই ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত।

[2] সমাজের সর্বস্তরের আলোচনা: নতুন সামাজিক ইতিহাস শুধু রাজা-মহারাজা বা অভিজাতবর্গের আলোচনায় সীমাবদ্ধ নয়। এই চর্চার সাধারণ মানুষ, নিম্নবর্গীয় সমাজ, এমনকি প্রান্তিক অন্ত্যজদের জীবনযাত্রার আলোচনাও সমানভাবে গুরুত্ব পায়।

[3] আলোচনায় নিম্নবর্গীয়দের প্রাধান্য: গত শতাব্দীর ৯-এর দশক থেকে ভারত-সহ দক্ষিণ এশিয়ার সাবলটার্ন বা নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়ে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে। জাতিধর্মবর্ণনির্বিশেষে সমাজের নিম্নস্তরের মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে এই ইতিহাসচর্চা এগিয়ে চলেছে।

[4] আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চা: নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় বৃহত্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইতিহাসের বাইরেও স্থানীয় ও আঞ্চলিক ইতিহাসকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।

[5] উপাদানের নতুনত্ব: নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ঐতিহাসিক উপাদানের নতুনত্ব। এই চর্চায় শুধু সরকারি ও প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক নথিপত্রই শুধু নয়, বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কাগজপত্রও ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্ব পায়।

উপসংহার: বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্থে যে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার সূচনা হয় তা ইতিহাসচর্চার ক্ষেত্রে এক নব দিগন্তের সূচনা করে। এর ফলে ইতিহাসচর্চার নতুন নতুন উৎসমুখ খুলে যায়, যা প্রকৃত ইতিহাসচর্চাকে সার্থক করে তোলে।

5 স্থানীয় ইতিহাস ও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ স্থানীয় ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা

ভূমিকা: জাতি, দেশ বা মহাদেশের অতীত ঘটনাবলির আলোচনা ও বিশ্লেষণ বিগত শতকেও ইতিহাসচর্চার প্রচলিত ও স্বীকৃত প্রথা ছিল। দেশ বা জাতির অভ্যন্তরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্থানীয় অঞ্চলের ইতিহাসচর্চা তখন বিশেষ গুরুত্ব পেত না।

[1] স্থানীয় ইতিহাসের গুরুত্ব: ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিভিন্ন স্থান, অঞ্চল বা সম্প্রদায়ের ইতিহাস একত্রিত হয়ে কোনো দেশের জাতীয় ইতিহাস গড়ে ওঠে। তাই বিংশ শতকে স্থানীয় ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

[2] স্থানীয় ইতিহাসের বিষয়: বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্থানীয় ইতিহাসের চর্চা হয়ে থাকে। স্থানীয় অঞ্চলের আর্থসামাজিক বিবর্তন, শিল্প-স্থাপত্য, লোকসংস্কৃতি, স্থানীয় শাসকের ইতিবৃত্ত প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় স্থানীয় ইতিহাসের আলোচনায় উঠে আসে।

[3] যাচাইকরণ: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে অন্যতম হল মৌখিক উপাদান। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৌখিক উপাদানে বহু কল্পনা ও অতিকথার প্রবেশ ঘটে। তাই যথেষ্ট সাবধানতার সঙ্গে মৌখিক উপাদানগুলি যাচাই করে তারপর সেগুলি ইতিহাসের তথ্য হিসেবে ব্যবহার করা দরকার।

[4] জেলাস্তরের ইতিহাসচর্চা: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার একটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল জেলাস্তরের ইতিহাসচর্চা। বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন গবেষক এই বিষয়ে চর্চা করছেন। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম কালীকমল সার্বভৌম রচিত ‘সে ইতিহাস বগুড়ার বৃত্তান্ত’, কুমুদনাথ মল্লিক রচিত ‘নদীয়া কাহিনি’, নিখিলনাথ রায় রচিত ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনি’, সতীশচন্দ্র মিত্র রচিত ‘যশোহর খুলনার ইতিহাস’, এ কে এম গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ রচিত ‘নোয়াখালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য’, কালীনাথ চৌধুরী রচিত ‘রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’, শ্রীকেদারনাথ মজুমদার রচিত ‘ময়মনসিংহের ইতিহাস ও ময়মনসিংহের বিবরণ’ প্রভৃতি।

[5] ক্ষুদ্র অঞ্চলের ইতিহাসচর্চা: জেলাস্তর থেকে ক্ষুদ্রস্তর নিয়েও আজকাল ইতিহাসচর্চা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এরূপ ইতিহাসচর্চার কয়েকটি দৃষ্টান্ত হল ড. রতনলাল চক্রবর্তী রচিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রন্থিত ইতিহাস’, ড. খগেন্দ্রনাথ বসু রচিত ‘দৌলতপুরের বিবরণ’, বিপুলরঞ্জন সরকার রচিত ‘চাকদহ রামলাল একাডেমি: পট ও পটভূমিকা’ প্রভৃতি।

উপসংহার: বিভিন্ন স্থানের স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে কোনো দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয়। তাই স্থানীয় ইতিহাসচর্চা ছাড়া জাতীয় ইতিহাসের চর্চা করা খুবই কঠিন।

6. সাম্প্রতিককালে খেলাধূলা ও খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা কীভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে?

উত্তরঃ সাম্প্রতিককালে খেলাধুলা ও খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা

ভূমিকা: খেলাধুলার ইতিহাস খুবই প্রাচীন। মানুষের জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রোমান কবি জুভেনাল বলেছেন, “মানুষ দুটো জিনিসের জন্য আকুল হতে পারে-রুটি ও খেলাধুলা।”

[1] খেলাধুলার জনপ্রিয়তা: বিগত শতক থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলাধুলা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ঐতিহাসিক হবসবম উল্লেখ করেছেন যে, বিংশ শতকে ইউরোপীয় জীবনধারার অন্যতম প্রধান সামাজিক অভ্যাস হল খেলাধুলা।

[2] খেলাধুলার গুরুত্বঃ কোনো সমাজের খেলাধুলা সেই সমাজের স্বরূপ প্রকাশ করে থাকে। কোনো সমাজের মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ সেই সমাজের নারী স্বাধীনতার প্রমাণ দেয়। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ খেলোয়াড়দের হারিয়ে বাংলার মোহনবাগান দল আই এফ এ শিল্ড জিতে যে আনন্দে মেতে ওঠে, তা ছিল প্রকৃতপক্ষে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশদের বাংলা ভাগের জবাব।

[3] জাতীয় আবেগের প্রকাশ: খেলাধুলা বর্তমানে জাতীয় আবেগে পরিণত হয়েছে। খেলাধুলা জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সমাজবিবর্তন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রভৃতিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে চলেছে।

[4] পাশ্চাত্যে খেলার ইতিহাসের চর্চা: সাম্প্রতিককালে পাশ্চাত্যে খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা শুরু হয়েছে। জে এ ম্যাসান, রিচার্ড হোল্ড প্রমুখ গবেষক এই বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে গড়ে উঠেছে ‘ব্রিটিশ সোসাইটি অব স্পোর্টস হিস্ট্রি’।

[5] ভারতে খেলার ইতিহাসচর্চা: সাম্প্রতিককালে বাংলা তথা ভারতে খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় যাঁরা বিশেষ খ্যাতিলাভ করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বোরিয়া মজুমদার, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপক সাহা, গৌতম ভট্টাচার্য প্রমুখ।

উপসংহার: খেলাধুলা শারীরিক সক্ষমতা প্রদান করার পাশাপাশি বিনোদনেরও একটি বড়ো উৎস। তাই বর্তমান মানুষের কাছে খেলাধুলার গুরুত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি খেলাধুলার ইতিহাসচর্চার প্রসার ঘটেছে।

7 খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস এবং সাম্প্রতিককালের খ্যাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ  খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা

ভূমিকা: সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ধারাবাহিক বিবর্তন ও পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এই বিবর্তন ও পরিবর্তনে কোনো বিশেষ সভ্যতা বা সংস্কৃতির বিশেষ প্রভাব থাকে।

[1] সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা: কোনো মানবসমাজ ও সভ্যতার খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন সেই সমাজ ও সভ্যতার পরিবর্তনের পরিচায়ক। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন থেকে সেই সমাজ সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।

[2] প্রাচীন বাংলার দৃষ্টান্ত: প্রাচীনকালে বিভিন্ন সময়ে বাংলায় আমিষ আহার বিশেষ জনপ্রিয় হলেও পালযুগে বৌদ্ধধর্ম এবং সেনযুগে ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রভাবে বাংলায় ভাত ও নিরামিষ খাবারের প্রচলন বাড়ে। খাদ্যাভ্যাসের এই পরিবর্তন থেকে সেযুগে ধর্মীয় প্রাধান্যের আভাস পাওয়া যায়।

[3] সুলতানি আমলে বাংলার দৃষ্টান্ত: সুলতানি আমলে বাংলায় ইসলামি সংস্কৃতির প্রসার এখানকার খাদ্যাভাসে প্রভাব ফেলে। অধ্যাপক শরিফউদ্দিন আহমেদ দেখিয়েছেন যে, একসময় ঢাকা প্রাদেশিক মুসলিম শাসকদের রাজধানী হলে এখানকার খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে। তখন থেকে ঢাকার রন্ধনপ্রণালীতে পারসিক খাদ্যরীতির প্রবেশ ঘটে এবং ‘ঢাকাই খাবার’-এর উদ্ভব হয়।

[4] ঔপনিবেশিক আমল: ঔপনিবেশিক শাসনও এদেশের খাদ্যাভ্যাসে বিশেষ প্রভাব ফেলে। পোর্তুগিজদের প্রভাবে হুগলি জেলায় মিষ্টি। তৈরিতে ছানার ব্যবহার শুরু হয়। এভাবে খাদ্যাভ্যাস কোনো জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনকেও প্রভাবিত করে।

[5] উল্লেখযোগ্য গবেষকগণ: সম্প্রতি খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষকরা হলেন ড. কে টি আচয়, হারভে লেভেনস্টেইন, জোনাথন রাইট, রিয়াই টান্নাহিল, বিজয়া চৌধুরী, হরিপদ ভৌমিক প্রমুখ।

উপসংহার: খাদ্যাভ্যাসের মধ্য দিয়ে মানুষের সংস্কৃতি, রুচি, এমনকি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পরিচয় মেলে। তাই সাম্প্রতিককালে খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসচর্চার প্রসারের মধ্য দিয়ে মানবসংস্কৃতির পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয়গুলি জানা সম্ভব হচ্ছে।

৪. সাম্প্রতিককালের পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ সাম্প্রতিককালের পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা

ভূমিকা: পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যবহার প্রতিটি সভ্য মানবসমাজের অন্যতম। বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি জাতির পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে সেই জাতির ইতিহাসের নানা দিক জানা যায়।

 [1] পোশাক-পরিচ্ছদের বিবর্তন: সুপ্রাচীনকাল থেকে মানবজাতির পোশাক-পরিচ্ছদের ধারাবাহিক পরিবর্তন ও বিবর্তন লক্ষ করা যায়।

[2] পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা: বর্তমানে পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন গবেষক চর্চা করে ইতিহাসের নতুন নতুন দিক উন্মোচন করছেন।

[3] চর্চার সূচনা: বিংশ শতকের সূচনালগ্নে বিভিন্ন পণ্ডিত পোশাক- পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা শুরু করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই ইতিহাসচর্চার ব্যাপক প্রসার ঘটে।

[4] ইউরোপে চর্চা: সাম্প্রতিককালে ইউরোপে বিভিন্ন গবেষক পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক চর্চা করেছেন। এসব গবেষণা কাজের মধ্যে কার্ল কোহলার, জে ফর্বস ওয়াটসন, ও মাইকেল ডেভিস-এর অবদান উল্লেখযোগ্য।

[5] ভারতে চর্চা: সাম্প্রতিককালে ভারতেও পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস নিয়ে চর্চা চলছে। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল ত্রৈলোক্যনাথ বসুর ‘তাঁত ও রঙ’, মলয় রায়ের ‘বাঙালির বেশবাস: বিবর্তনের রূপরেখা’, নিরুপমা পুন্ডির ‘ফ্যাশন টেকনোলজি: টুডে অ্যান্ড টুমরো’ প্রভৃতি।

উপসংহার: বর্তমানে নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় পোশাক-পরিচ্ছদের ইতিহাসচর্চা বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মানবসংস্কৃতি, সেই সংস্কৃতির মানসিকতা, নারীস্বাধীনতা প্রভৃতি সম্পর্কে জানা সম্ভব হচ্ছে।

9.সাম্প্রতিককালে শিল্পচর্চার কোন্ শাখাগুলি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে? শিল্পের ইতিহাসচর্চায় সংগীত কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?

উত্তরঃ শিল্পচর্চার বিভিন্ন শাখা-

কোনো মানবগোষ্ঠীর শিল্পচর্চার ইতিহাস থেকে তার সাংস্কৃতিক অগ্রগতির আভাস পাওয়া যায়। এই শিল্পচর্চার প্রধান ধারাগুলি হল সংগীত, নৃত্য, নাটক ও চলচ্চিত্র।

শিল্পের ইতিহাসচর্চায় সংগীত-

মানব-ইতিহাসে শিল্পচর্চা সুপ্রাচীন। এই শিল্পচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল সংগীতের চর্চা। সাম্প্রতিককালে সংগীতের ইতিহাসচর্চা ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

[1] উচ্চবর্গের সংগীতচর্চা: প্রাচীনকালে রাজদরবার বা মন্দিরে যে সংগীতের চর্চা হত তা মূলত সমাজের উচ্চবর্গের মানুষের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সমাজের সাধারণ মানুষের সঙ্গে এর বিশেষ সংযোগ ছিল না। প্রাচীন সমাজে শ্রেণি বা বর্ণ বৈষম্যের বিষয়ে স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায় সেই সমাজের সংগীতচর্চা থেকে।

[2] প্রভাব: কোনো জাতি বা সমাজের সংগীত অন্য কোনো জাতি বা সমাজের সংগীতের দ্বারা প্রভাবিত কি না বা কতটা প্রভাবিত, তা সংগীতের ইতিহাসচর্চা থেকে জানা সম্ভব। কোনো জাতি বা সমাজের সংস্কৃতি কতটা সমৃদ্ধ তার আভাস পাওয়া যায় অন্য জাতি বা সমাজের ওপর পূর্বোক্ত জাতির সংগীতের প্রভাব বিচার করে।

[3] বিবর্তন: ভারতীয় সমাজে একসময় ধর্মীয় সংগীতের প্রাধান্য ছিল। কিন্তু ধারাবাহিক বিবর্তনের ফলে বিংশ শতকে ভারতীয় সংগীতের ব্যাপক পরিবর্তন দেখা যায়। বাংলা সংগীতের বিবর্তনের ধারায় বিংশ শতকে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, রজনীকান্তের গান প্রভৃতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

[4] বৈচিত্র্য: ধারাবাহিক বিবর্তন ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সংগীতের ভাণ্ডারে বিভিন্ন ধরনের সংগীত জায়গা করে নেয়। বর্তমানকালে যেমন ধর্মীয় সংগীতের পাশাপাশি পল্লিগীতি, লোকগীতি, বাউল গান, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, আধুনিক গান, চলচ্চিত্রের গান, ব্যান্ডের গান প্রভৃতির সমন্বয়ে বাংলা সংগীতের ভান্ডার বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

[5] গবেষকগণ: সাম্প্রতিককালে দেশবিদেশের বিভিন্ন গবেষক ও পণ্ডিত সংগীতের ইতিহাস নিয়ে চর্চা করছেন। ভারতীয় সংগীতের ইতিহাসচর্চায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন উমেশ জোশী, রাজ কুমার, করুণাময় গোস্বামী, সুধীর চক্রবর্তী, মৃদুলকান্তি চক্রবর্তী এবং জয়শ্রী ব্যানার্জী প্রমুখ।

উপসংহার: সংগীতের মধ্য দিয়ে মানুষের নানান উপলব্ধির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই শিল্পচর্চার ইতিহাসে মানুষের বুচি, সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রভাব জানার পাশাপাশি মানবসভ্যতার অগ্রগতি বোঝার ক্ষেত্রেও সংগীতের ইতিহাসচর্চা ক্রমশ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

10.সাম্প্রতিককালে দৃশ্যশিল্পের শাখা হিসেবে নৃত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ দৃশ্যশিল্পের শাখা হিসেবে নৃত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা

ভূমিকা: মানবসমাজে শিল্পচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারা হল নৃত্যকলা। সুপ্রাচীনকাল থেকে নৃত্যকলা বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠীর সংস্কৃতির অন্যতম উপাদান হিসেবে চলে আসছে।

[1] ধর্মীয় ক্ষেত্রে নৃত্যকলা: প্রাচীন ভারতে ধর্মীয় ক্ষেত্রে নৃত্যকলার প্রচলন থাকলেও এই নৃত্যকলার সঙ্গে একমাত্র সমাজের উচ্চবর্গের যোগ ছিল, সাধারণ মানুষের কোনো যোগ ছিল না। বিভিন্ন মন্দিরে দেবদাসীদের নৃত্য ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্গীয় মানুষের উপভোগের বিষয় ছিল। প্রচার করা হত, এই রীতি ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপেরই অঙ্গ। নৃত্যকলা থেকে সে যুগের সামাজিক বৈষম্যের পরিচয়ও পাওয়া যায়।

[2] বিবর্তন: যুগে যুগে নৃত্যকলার বিবর্তন ঘটেছে। প্রাচীনকালের ধর্মীয় বন্ধন থেকে নৃত্যকলা মুক্তিলাভ করে পরবর্তীকালে সাধারণ মানুষের সাংস্কৃতিক সম্পদ হয়ে উঠেছে। উচ্চবর্গের নৃত্যের পাশাপাশি আদিবাসী-সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের নৃত্যও সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

[3] বৈচিত্র্য: আধুনিককালে প্রতিটি সমাজের নৃত্যকলাতেই নানা বৈচিত্র্য এসেছে। কথক, ভরতনাট্যম, ছৌ, কুচিপুরী, কথাকলি, গৌড়ীয় নৃত্য প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের নৃত্যের সমন্বয়ে ভারতের নৃত্যকলার ভাণ্ডার বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। উদয়শঙ্কর, অমলাশঙ্কর, রুক্মিনী দেবী, মল্লিকা সারাভাই, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, অনিতা রত্নম-সহ বিভিন্ন নৃত্যশিল্পী এই বৈচিত্র্য বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। [

4] গবেষক ও গবেষণা গ্রন্থ: বিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগ থেকে নৃত্যকলার ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল জে অ্যাডশিড ল্যান্সডেল সম্পাদিত ‘ড্যান্স হিস্ট্রি: অ্যান ইনট্রোডাকশন’, ওয়াং কেফেনের ‘দ্য হিস্ট্রি অব চাইনিজ ড্যান্স’, রাগিনী দেবীর ‘ড্যান্স ডায়ালেক্ট অব ইন্ডিয়া’, আকৃতি সিনহার ‘লেট’স নো ড্যান্সেস অব ইন্ডিয়া’, শোভনা গুপ্তার ‘ড্যান্স অব ইন্ডিয়া’, গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভারতের নৃত্যকলা’ প্রভৃতি।

উপসংহার: মানব-ইতিহাসে সংস্কৃতির বিবর্তন ও বৈচিত্র্যকে তুলে ধরার কাজে নৃত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা আজ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এর দ্বারা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের গতিপ্রকৃতি জানা সম্ভব হচ্ছে।

11 সাম্প্রতিককালে দৃশ্যশিল্পের ইতিহাসে নাটকের ইতিহাসচর্চা কীভাবে কীরূপ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?

ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন সভ্যতায় নাট্যশিল্প অর্থাৎ নাটকের প্রচলন ছিল। সুপ্রাচীন গ্রিক সভ্যতায় প্রচলিত বিখ্যাত নাটকগুলি আজও বিভিন্ন দেশে মঞ্চস্থ হলে তা দর্শকদের মনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।

[1] ইউরোপে নাট্যচর্চা: প্রাচীনকালে ইউরোপে নাট্যচর্চার প্রচলন থাকলেও ইউরোপে আধুনিক নাট্যচর্চা শুরু হয় ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে এবং বিশেষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে। ইউরোপে শেকসপিয়ার, ক্রিস্টোফার মার্লো, বেন জনসন, জন গলসোর্দি, জর্জ বার্নার্ড শ প্রমুখের লেখা বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ হলে সেগুলি প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

[2] বাংলায় নাট্যচর্চা: অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতকে ভারতে বিশেষ করে বাংলায় আধুনিক নাট্যচর্চার প্রসার ঘটে। অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে বাংলা নাট্যচর্চার সূচনা হয় এবং ঊনবিংশ শতকে এর ব্যাপক প্রসার ঘটে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, শিশির ভাদুড়ী, শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্ত প্রমুখ বাংলা নাটকে অসামান্য অবদান রাখেন।

[3] মানুষের প্রতিচ্ছবি: বিভিন্ন দেশ বা সমাজে প্রচলিত নাটকগুলিতে সেখানকার সমকালীন ঘটনাবলি, শোষণ, অত্যাচার, বৈষম্য, সাম্রাজ্যবাদ, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি কাহিনি উঠে আসে। ফলে নাটক সেই সমাজের যথাযথ প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠতে পারে। আবার অনেক সময়ই নাটক লোকশিক্ষা ও জনমত গঠনে সহায়ক হয়ে ওঠে।

[4] গবেষক ও গবেষণা গ্রন্থ: সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন গবেষক যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নাটকের ইতিহাসচর্চা করছেন। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গীয় নাট্যশালার ইতিহাস’, সত্যজীবন মুখোপাধ্যায়ের ‘দৃশ্যকাব্য পরিচয়’, আশুতোষ ভট্টাচার্যের ‘বাংলা নাট্যসাহিত্যের ইতিহাস’, সেলিম আল দীনের লেখা ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’, সাইমন জাকারিয়ার লেখা ‘বাংলাদেশের লোকনাটক: বিষয় ও আঙ্গিক-বৈচিত্র্য’, বালদুন ধিংরার ‘ন্যাশনাল থিয়েটার ফর ইন্ডিয়া’ প্রভৃতি নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

উপসংহার: সাম্প্রতিককালে নাটকের ইতিহাসচর্চা নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। এর মধ্য দিয়ে মানবসভ্যতার আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিকগুলি তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে।

জোন রাখোঃ পাশ্চাত্যে ডেভিড ক্লাসনার-এর ‘এ হিস্ট্রি অব জেনে রাখো মডার্ন ড্রামা’, পিটার জিয়নডি-র ‘থিওরি অব দ্য মডার্ন ড্রামা’, রিচার্ড ড্রেইনের ‘টোয়েন্টিয়েথ-সেঞ্চুরি থিয়েটার: এ সোর্সবুক’, মড্রিস একস্টেইন-এর ‘রাইট অব স্প্রিং: দ্য গ্রেট ওয়ার অ্যান্ড দ্য বার্থ অব দ্য মডার্ন এজ’, মার্টিন ব্যানহাম সম্পাদিত ‘দি কেমব্রিজ গাইড টু থিয়েটার’ প্রভৃতি নাটকের ইতিহাসচর্চা বিষয়ক উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

12 সাম্প্রতিককালে শিল্পের ইতিহাসচর্চার চলচ্চিত্র কীরূপ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে?

উত্তরঃ  শিল্পের ইতিহাসচর্চায় চলচ্চিত্র-

ভূমিকা: আধুনিক যুগে সিনেমা বা চলচ্চিত্রকে অনেকেই বিনোদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বলে মনে করে থাকেন। অগাস্ট লুমিয়ের ও লুই লুমিয়ের নামে দুই ভাই ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে (২৮ ডিসেম্বর) প্যারিসে প্রথম বায়োস্কোপের সফল বাণিজ্যিক প্রদর্শনী করেন।

[1] চলচ্চিত্র নির্মাণের কেন্দ্র: বিংশ শতকের প্রথমার্ধে আমেরিকার হলিউড এবং ভারতের বোম্বাই, চলচ্চিত্র নির্মাণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে। দাদাসাহেব ফালকের পরিচালনায় ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম নির্বাক ছবি ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ মুক্তি পায়। বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে ওঠে কলকাতা (টালিগঞ্জ)।

[2] কাহিনির বৈচিত্র্য: চলচ্চিত্রের কাহিনির বিষয়বস্তু বিভিন্ন ধরনের  হয়ে থাকে। ঐতিহাসিক ঘটনা, সমকালীন সমাজের ঘটনাবলি ও পরিস্থিতি, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, ঔপনিবেশিক শাসন, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। ফলে চলচ্চিত্র থেকে সমকালীন সমাজের ঐতিহাসিক তথ্য জানা যায়। উদাহরণ হিসেবে ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘সুবর্ণরেখা’ প্রভৃতি সিনেমার কথা বলা যায়। যেগুলিতে দেশভাগের বলি হয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের জীবন-যন্ত্রণা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। 

[3] ইউরোপের চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা: চলচ্চিত্রের দীর্ঘ যাত্রাপথের বিবর্তনের ইতিহাস নিয়ে আজকাল যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ইংরেজি গ্রন্থ হল পাম কুক-এর ‘দি সিনেমা বুক’, ফ্রান্সেসকো ক্যাসেটি-র ‘থিওরিস অব সিনেমা’, জিওফ্রে নাওয়েল স্মিথ-এর ‘দ্য অক্সফোর্ড হিস্ট্রি অব ওয়ার্ল্ড সিনেমা’ প্রভৃতি।

[4] বাংলায় চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা: চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চায় বাংলাও পিছিয়ে নেই। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাংলা গ্রন্থ হল-ঋত্বিক কুমার ঘটকের ‘চলচ্চিত্র, মানুষ এবং আরও কিছু’, সত্যজিৎ রায়ের ‘একেই বলে শুটিং’ ও ‘বিষয় চলচ্চিত্র’, তপন সিংহের ‘চলচ্চিত্র আজীবন’, অপূর্ব কুমার কুন্ডুর ‘ইউরোপের চলচ্চিত্র’, ‘ভিনদেশী চলচ্চিত্র’, নির্মাল্য আচার্যর ‘শতবর্ষে চলচ্চিত্র’, জাকির হোসেন রাজুর ‘চলচ্চিত্রের চালচিত্র’, ফারহানা মিলির ‘সিনেমা এলো কেমন করে’, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ‘দেখার রকমফের: ঋত্বিক ও সত্যজিৎ’ প্রভৃতি।

উপসংহার: চলচ্চিত্র সবযুগেই সমাজের আয়না হিসেবে কাজ কার চলেছেন। সাম্প্রতিককালে চলচ্চিত্রের ইতিহাসচর্চা সামাজিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

13.আধুনিককালে স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চা

ভূমিকা: প্রাচীন গুহামানব যেদিন ঘরবাড়ি তৈরি করতে শিখেছে, সেদিন থেকেই স্থাপত্যশিল্পের সূত্রপাত ঘটেছে। স্থাপত্যশিল্প ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

[1] স্থাপত্য নির্মাণ: অতীতে একসময় মূলত রাজা-মহারাজা ও ধনী ব্যক্তিরাই স্থাপত্য নির্মাণে আগ্রহ দেখাতেন। বর্তমান যুগে শাসকগোষ্ঠী ছাড়া অন্যান্য মানুষজনও স্থাপত্য নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত।

[2] স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চা: স্থাপত্য নির্মাণের প্রেক্ষাপট, শিল্পরীতি, পৃষ্ঠপোষকতা প্রভৃতি বিষয়গুলি আধুনিক ইতিহাসচর্চায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইউরোপ, ভারত তথা বাংলার বিভিন্ন যুগের স্থাপত্যগুলি সাম্প্রতিককালে ইতিহাসচর্চায় স্থান পেয়েছে।

[3] ভারতে চর্চার সূচনা: ভারতে ঊনবিংশ-বিংশ শতকে স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ঘটে। এক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন আলেকজান্ডার কানিংহাম, পার্সি ব্রাউন, জে ফার্গুসন, ক্যাথরিন অ্যাশার প্রমুখ।

[4] বাংলার স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চা: বাংলার বিভিন্ন যুগের স্থাপত্যশিল্পের ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন গবেষক চর্চা করেছেন এবং করে চলেছেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জর্জ মিশেল, বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, শামসুন্নাহার লাভলী, ড. নাজিমুদ্দিন আহমেদ, রবিউল হুসাইন প্রমুখ।

উপসংহার: সামগ্রিক ইতিহাসের অংশরূপে স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চা আজ শুধু সংস্কৃতির ইতিহাসকেই তুলে ধরে না, অর্থনৈতিক ইতিহাসের নানা দিকও উদ্‌ঘাটিত করে। পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিকল্পনারও আভাস মেলে স্থাপত্যের ইতিহাসচর্চায়।

14. আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করো। 

অথবা, আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফিরগুরুত্ব কী? 

উত্তরঃ আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় ফোটোগ্রাফির ব্যবহার-

ভূমিকা: ক্যামেরার সাহায্যে কোনো ঘটনা বা বিষয়ের ছবি তোলার প্রক্রিয়া সাধারণভাবে ফোটোগ্রাফি বা আলোকচিত্র নামে পরিচিত। আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চায় বা ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফির ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। যেমন-

[1] তথ্য প্রদান: ক্যামেরায় তোলা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার ছবি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। যেমন- জন মুরে, ফেলিক্স বিয়াতো, লাল দীনদয়াল প্রমুখ ফোটোগ্রাফারের তোলা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের বিভিন্ন ছবিগুলি মহাবিদ্রোহের ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়। জাতীয় কংগ্রেসের নানা অধিবেশনের ছবিগুলি সেকালের রাজনৈতিক ইতিহাসের দলিলরূপে বিবেচিত হয়।

[2] তথ্যকে সমর্থন: ফোটোগ্রাফ বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যকে আরও জোরালো করে তোলে। যেমন-১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় যে ভয়াবহ দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল বলে তথ্য পাওয়া যায় তাকে আরও জোরালো করে তোলে সেই দাঙ্গার বিভিন্ন ছবিগুলি।

[3] তথ্যের যথার্থতা নির্ণয়: কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে লোকমুখে বহু গুজব বা ভ্রান্ত তথ্য ঘুরে বেড়ালেও সেই ঘটনার বিষয়ে ক্যামেরায় তোলা ছবি থেকে সঠিক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। যেমন-দেশভাগ (১৯৪৭ খ্রি.) এবং তারপরে উদ্‌দ্বাস্তুদের জীবন-যন্ত্রণার ভয়াবহতা কোনো কোনো রাজনীতিক খাটো করে দেখাতে চাইলেও সমকালীন ফোটোগ্রাফগুলি সেই ভয়াবহতার প্রমাণ দেয়।

[4] সাবধানতা অবলম্বন: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফ ব্যবহারের সময় যথেষ্ট সচেতন থাকা উচিত। কেন-না, ফোটোগ্রাফার অনেকসময় নিজের দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ রাখার উদ্দেশ্যে বা প্রকৃত ঘটনা থেকে পৃথক ছবি তুলে নতুন কিছু দেখানোর উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ কিছু ছবি তুলতে পারেন। সেই ছবিতে ইতিহাসের প্রকৃত তথ্য না-ও দিতে পারে। যেমন-১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জিন্নার নেতৃত্বে মুসলিম লিগ পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে আন্দোলন শুরু করলেও ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইয়ে তোলা ছবিতে জিন্না ও গান্ধিজির আন্তরিক সুসম্পর্ক ধরা পড়ে। কিন্তু এই ‘সুসম্পর্ক’ কতটা বাস্তব ছিল তা নিয়ে বিতর্ক আছে।

উপসংহার: আধুনিক কালের ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ফোটোগ্রাফি। ফোটোগ্রাফির কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। তবে সাবধানে ফোটোগ্রাফিকে ইতিহাস রচনার কাজে ব্যবহার করলে তা ইতিহাসের যথার্থ উপাদান হয়ে উঠতে পারে।

15.দৃশ্যশিল্পের ক্ষেত্রে চিত্রকলা ও ফোটোগ্রাফির ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ দৃশ্যশিল্পের ক্ষেত্রে চিত্রকলা ও ফোটোগ্রাফির ইতিহাসচর্চা-

ভূমিকা: দৃশ্যশিল্পের অন্তর্গত চিত্রশিল্পের দুটি উল্লেখযোগ্য ধারা হল চিত্রকলা বা ছবি আঁকা এবং ফোটোগ্রাফি। শিল্পীরা রং-তুলির সহায়তায় কোনো দৃশ্য বা বিষয়ের ছবি আঁকেন, আর ফোটোগ্রাফার তাঁর ক্যামেরার সাহায্যে কোনো দৃশ্যের ছবি তোলেন।

[1] ছবি আঁকা: মানবসমাজে প্রাগৈতিহাসিক যুগেই ছবি আঁকার সূত্রপাত ঘটে। চিত্রকররা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সমকালীন কোনো বিষয়ের ছবি এঁকে থাকেন। তবে সেই ছবিতে শিল্পীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রভাব পড়লেও ছবির বিষয়বস্তু যে তথ্যনিষ্ঠ হয়ে থাকে, তা পণ্ডিতরা স্বীকার করেন। প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত এরূপ অসংখ্য ছবি সমকালীন ইতিহাসের উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

[2] চিত্রকলার ইতিহাসচর্চা: বর্তমানে বিভিন্ন পণ্ডিত চিত্রকলার ইতিহাসচর্চা করে চলেছেন। এই চর্চার ক্ষেত্রে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকার্য হল অশোক মিত্র রচিত ‘ভারতের চিত্রকলা’, ড. নীলিমা আফরিন রচিত ‘বাংলাদেশের শিল্পকলার উৎস সন্ধান’, সৈয়দ লুৎফল হক রচিত ‘চিত্রকলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ প্রভৃতি।

[3] গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস হিসেবে ফোটোগ্রাফি: ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ওয়ালকট ক্যামেরা আবিষ্কারের পর থেকে ক্যামেরার সাহায্যে ছবি তোলা অর্থাৎ ফোটোগ্রাফি চর্চার বিষয়টি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে। সাধারণ ক্যামেরায় সাদা-কালো ও রঙিন ছবির যুগ পেরিয়ে বর্তমানে ডিজিট্যাল ক্যামেরায় উন্নতমানের ছবি তোলা সম্ভব হচ্ছে। ফোটোগ্রাফাররা ক্যামেরার সাহায্যে কোনো ঘটনা বা বিষয়ের যথার্থ ছবি তোলেন, যা পরবর্তীকালে ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজে লাগে।

[4] গবেষকগণ: বর্তমানকালে বিভিন্ন গবেষক ফোটোগ্রাফি নিয়ে ইতিহাসচর্চা করছেন। এই বিষয়ে এ কে এম মহসীন, মহম্মদ হুমায়ুন কবীর, জন ওয়েড, আর ডগলাস নিকেল প্রমুখ গবেষণা করেছেন। উপসংহার: ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আঁকা ছবি ও ফোটোগ্রাফ-দুটিই ইতিহাসচর্চার কাজে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ফোটোগ্রাফ অনেকটাই জীবন্ত, এবং আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এর প্রাসঙ্গিকতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

16.যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চা-

ভূমিকা: যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রাচীনকাল থেকেই সভ্যতার অগ্রগতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আসছে। প্রাচীনকালে চাকার আবিষ্কার থেকে শুরু করে হাল আমলের ইনটারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন এক নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। এই ব্যবস্থা বিভিন্ন দেশের ইতিহাসকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে।

[1] ইউরোপে প্রভাব: আধুনিক যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইউরোপের ইতিহাসকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে। জাতীয় ঐক্য বৃদ্ধি, শিল্পবিপ্লব প্রভৃতি ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

[2] ভারতে প্রভাবঃ আধুনিক যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশেষ করে ভারতের রেল, সড়ক, ডাক প্রভৃতি ব্যবস্থা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ও ঐক্য বৃদ্ধি করে জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছে। এর দ্বারাই ব্রিটিশ শক্তি নির্বিচারে ভারতীয় অর্থসম্পদ লুণ্ঠন করেছে। আবার রেলপথ ব্যবহার করে ভারতে বিপ্লবী কার্যকলাপ, বিপ্লবীদের পলায়ন ইত্যাদিও সম্ভব হয়েছে।

[3] অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা: সাম্প্রতিককালে ইনটারনেট ব্যবস্থা সমগ্র বিশ্বে নিমেষে যোগাযোগ স্থাপন করার সুযোগ করে ভ দিয়েছে। ফলে আজ সমগ্র বিশ্ব যেন ঘরের দোরগোড়ায় চলে এসেছে। এখন যে-কোনো তথ্য বা খবর নিমেষে বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় এর দ্বারা বিশ্ব-ইতিহাস যথেষ্ট প্রভাবিত হচ্ছে।

[4] যানবাহন-যোগাযোগ সংক্রান্ত ঐতিহাসিক গবেষণা: বিংশ শতকে যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়ে জন আর্মস্ট্রং, ইয়ান কের, সুনীল কুমার মুন্সি, গৌতম চট্টোপাধ্যায়, আর আর ভান্ডারী প্রমুখ গবেষণা করেছেন।

[5] ইনটারনেট সংক্রান্ত ঐতিহাসিক গবেষণা: সম্প্রতি ইনটারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়ে নানা গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন প্রকাশ চক্রবর্তী, ফ্রেডরিখ কিটলার, নারায়ণ চন্দ্র বসাক, প্রশান্ত রায় প্রমুখ।

উপসংহার: সামগ্রিক বিচারে দেখা যায়, যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতিহাসের গতিকে প্রভাবিত করেছে। যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত হয়ে ইতিহাসের অনেক দিককে তুলে ধরেছে।

17. শহরের ইতিহাস ও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ শহরের ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা-

ভূমিকা: কোনো ক্ষুদ্র ও জনবিরল গ্রাম সময়ের ধারা বেয়ে কোনো একসময়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরে পরিণত হয়ে ওঠে। তাই গ্রাম থেকে শহরের উদ্ভব, বিকাশ ও বিবর্তনের একটি ইতিহাস থাকে।

[1] শহরের ইতিহাসের গুরুত্ব: স্থানীয় ইতিহাসচর্চার মতো শহরের ইতিহাসচর্চাও অনেকটাই ক্ষুদ্র অঞ্চল নিয়ে হয়ে থাকে। কিন্তু শহরগুলি কোনো বৃহৎ ভূখণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হয় ওঠায় দেশ বা জাতির ইতিহাসে শহরের ইতিহাসচর্চার বিশেষ গুরুত্ব থাকে। যেমন-বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসচর্চায় কলকাতা শহরের উদ্ভব ও বিকাশের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

[2] শহরের ইতিহাসের বিষয়: শহরের ইতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি হল শহরের আর্থসামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক চর্চা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্থাপত্য-ভাস্কর্যের উন্নতি, শিল্প-সংস্কৃতির ধারা, ধর্মের প্রভাব, নগরায়ণ প্রক্রিয়া প্রভৃতি।

[3] ইউরোপে শহরের ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত: বিংশ শতকের, প্রথমার্ধে শহরের ইতিহাসচর্চার প্রচলন থাকলেও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চায় গতি আসে ১৯৭০-এর দশকে। এই সময়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন থার্নস্টর্মের নেতৃত্বে শহরের ইতিহাসচর্চার ধারাটি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরবর্তীকালে এডুইন বরোজ, মাইক ওয়ালেস, এস জি বেকল্যান্ড, রোনাল্ড টেলর প্রমুখ এই ধারাকে সমৃদ্ধ করেন।

[4] ভারতে শহরের ইতিহাসচর্চা: ভারতীয় গবেষকদের মধ্যে নারায়ণী গুপ্তা দিল্লি নিয়ে, রীনা ওল্ডেনবার্গ লখনউ দিয়ে, ক্রিস্টিন ডবিন মুম্বই নিয়ে, যতীন্দ্রমোহন রায় ঢাকা নিয়ে, রাধারমণ মিত্র কলকাতা নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন। শহরের ইতিহাসচর্চা

নিয়ে বাংলায় যাঁরা গবেষণা করেছেন তাদের মধ্যে রাধারমণ মিত্র, ড. সৌমিত্র শ্রীমানী, বিজয়কুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, মুনতাসীর মামুন, যতীন্দ্রমোহন রায় ও শামসুদ্দোহা চৌধুরী উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার: শহরের ইতিহাসচর্চা আজ সামগ্রিক ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মূলত শহরের প্রকৃতি আলোচনাই এই ইতিহাসচর্চার মূল বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে।

18. সামরিক ইতিহাস ও এই বিষয়ে ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ সামরিক ইতিহাস ও ইতিহাসচর্চা-

ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সভ্যতা, রাষ্ট্র ও রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক উপাদান ছিল সামরিক শক্তি। যুদ্ধের জন্য সামরিক শক্তি অপরিহার্য ছিল।

[1] ধারাবাহিক পরিবর্তন: প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিটি দেশ, জাতি ও সভ্যতায় সামরিক কাঠামো, যুদ্ধাস্ত্র প্রভৃতির ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটেছে। সামরিকবাহিনীতে পদাতিক, রথ বা হস্তিবাহিনীর পরিবর্তে বর্তমানে ট্যাংক বা সাঁজোয়াবাহিনী, বিমানবাহিনী প্রভৃতি এবং তিরধনুক, তরবারি প্রভৃতির পরিবর্তে কামান, বন্দুক, বোমা, বিষাক্ত গ্যাস প্রভৃতির প্রচলন ঘটেছে।

[2] সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রসার: ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত যুদ্ধ- সংক্রান্ত আলোচনা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানকালে এই ধারার পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক সজ্জা, রণকৌশল, সামরিক পোশাক প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিষয়ও ইতিহাসচর্চার মধ্যে প্রবেশ করেছে।

 [ 3] ইউরোপে সামরিক ইতিহাসচর্চা: বিংশ শতকে ইউরোপে সামরিক ইতিহাসচর্চার প্রসার ঘটে। বার্নেট, কোরেলি, শেলফোর্ড বিডওয়েল, জন টেরাইন প্রমুখ প্রাচীন ও আধুনিক যুদ্ধবিদ্যার তুলনা- মূলক গবেষণা করেছেন। রজার স্পিলার, জন হোয়াইট ক্লে প্রমুখ যুদ্ধ ও যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত নানা কিংবদন্তিদের নিয়ে গবেষণা করেছেন।

[4] ভারতে সামরিক ইতিহাসচর্চা: ভারতে বিগত শতকে সামরিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয়। ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা করেছেন। এ ছাড়া রবার্ট আর্ম, সুবোধ ঘোষ, দীপ্তনীল রায়, নিখিলেশ ভট্টাচার্য প্রমুখ এবিষয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া সাম্প্রতিককালের সামরিক ইতিহাসচর্চায় কৌশিক রায় একটি অগ্রগণ্য নাম।

উপসংহার: রাষ্ট্র তার সামরিক শক্তির দ্বারা যুদ্ধবিগ্রহ, সাম্রাজ্যবিস্তার প্রভৃতির মাধ্যমে ইতিহাসের ঘটনাবলিকে নানাভাবে প্রভাবিত করেছে। তাই নতুন সামাজিক ইতিহাসচর্চায় সামরিক ইতিহাসচর্চা আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

জেনে রাখোঃ সাম্প্রতিককালে সামরিক ইতিহাসচর্চার একজন খ্যাতনামা গবেষক হলেন কৌশিক রায়। তাঁর লেখা ‘ফ্রম হিদাসপিস টু কার্গিল: এ হিস্ট্রি অব ওয়ারফেয়ার ইন ইন্ডিয়া ফ্রম ৩২৬ বিসি টু ১৯৯৯ এডি’, ‘দ্য আর্মি ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’, ‘ওয়ার অ্যান্ড সোসাইটি ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’, ‘দ্য ইন্ডিয়ান আর্মি ইন দ্য টু ওয়ার্ল্ড ওয়ার্স’, ‘দ্য আর্মড ফোর্সেস অব ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্ডিয়া ১৯৪৭-২০০৬’, ‘মিলিটারি ট্রানজিশন ইন আর্লি মডার্ন এশিয়া ১৪০০-১৭৫০’, ‘ওয়ার অ্যান্ড স্টেট-বিল্ডিং ইন আফগানিস্তান’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।

19.সাম্প্রতিককালে পরিবেশের ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ পরিবেশের ইতিহাসচর্চা

ভূমিকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত পরিবেশ নিয়ে মানুষের ভাবনাচিন্তা ছিল যথেষ্ট কম। কিন্তু মানুষ যেভাবে পরিবেশের ধারাবাহিক ক্ষতি করে চলেছে তাতে মানবসভ্যতার অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে পড়েছে।

[1] পরিবেশের ধ্বংসসাধন: আধুনিককালে যুদ্ধে বিভিন্ন ভয়ানক মারণাস্ত্রের ব্যবহার, কৃষি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার, গাছপালা কেটে আধুনিক নগর ও শিল্পসভ্যতার প্রসার প্রভৃতির ফলে আমাদের চারিদিকের পরিবেশ ভয়ংকরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

[2] দূষণ: জল, বায়ু, খাদ্য, শব্দ প্রভৃতি দূষণ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, দূষণের মাত্রা এই রকম হারে বাড়তে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষ তথা জীবকুলের অস্তিত্ব সম্পূর্ণ লুপ্ত হতে পারে।

[3] আন্দোলন: পরিবেশের ধ্বংসসাধন ও দূষণের সম্পর্কে মানুষ ক্রমাগত সচেতন হয়ে উঠেছে। শুরু হয়েছে পরিবেশবাদী নানা আন্দোলন। ভারতে চিপকো আন্দোলন, নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন, তেহরি-গাড়োয়াল আন্দোলন প্রভৃতি পরিবেশবাদী আন্দোলন যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

[4] ইউরোপে পরিবেশের ইতিহাসচর্চা: সাম্প্রতিককালে ইউরোপে পরিবেশের ইতিহাসচর্চার যথেষ্ট প্রসার ঘটেছে। এই বিষয়ে ইউরোপের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম হল র‍্যাচেল কারসন রচিত ‘সাইলেন্ট স্প্রিং’, আলফ্রেড ক্রসবি রচিত ‘ইকোলজিক্যাল ইম্পিরিয়ালিজম’, রিচার্ড গ্রোভ রচিত ‘গ্রিন ইম্পিরিয়ালিজম’ প্রভৃতি।

[5] ভারতে ও বাংলায় পরিবেশের ইতিহাসচর্চা: পরিবেশের ইতিহাস নিয়ে সাম্প্রতিককালে ভারতে এবং বাংলায়ও যথেষ্ট চর্চা হচ্ছে। ইরফান হাবিব, ড. মণীষ প্রধান, সুধাংশু পাত্র, অশোক কুমার বসু, তরুণ সরকার, অপরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, শমিত কর, সাহিদা বেগ এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন।

উপসংহার: মানবসভ্যতার সমস্ত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পরিবেশ অঙ্গাঙ্গী- ভাবে জড়িত। তাই পরিবেশ ইতিহাসচর্চার বিকাশ ও অগ্রগতি বর্তমানে বেশ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

20. সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ও তার প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরঃ  সাম্প্রতিককালে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা-

ভূমিকা: আদিম মানুষ যখন চাকার আবিষ্কার করেছে বা পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখেছে তখন থেকেই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পথচলা শুরু হয়েছে বলে ধরা যায়। সেই সময় থেকে বিবর্তনের পথ বেয়ে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি আজ উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে গিয়েছে।

[1] প্রাচীন যুগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি: প্রাচীনকালে মিশর, ব্যাবিলন, গ্রিস, ভারত প্রভৃতি দেশে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি খুব ধীরগতিতে হয়েছিল। তবে মধ্যযুগে এসে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে কৃষি, যুদ্ধাস্ত্র প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে।

[2] আধুনিক যুগে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি: আধুনিককালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা, কৃষি, শিল্প, যুদ্ধসহ বিজ্ঞান- প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় চূড়ান্ত বিকাশ লক্ষ করা যায়।

[3] ভৌগোলিক আবিষ্কার ও শিল্পবিপ্লব: পঞ্চদশ শতকে স্পেন, পোর্তুগাল, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের জাহাজ নির্মাণশিল্পে অগ্রগতিও পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড-সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে সংঘটিত শিল্পবিপ্লব আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি সারা বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে।

[4] গবেষণা গ্রন্থ: বিজ্ঞান-প্রযুক্তির বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গবেষণাকর্ম হল জে ডি বার্নাল রচিত ‘ইতিহাসে বিজ্ঞান’, টমাস কুহন রচিত ‘দ্য স্ট্রাকচার অব সায়েন্টিফিক রেভোলিউশনস্’, ডেভিড আরনল্ড রচিত ‘সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেডিসিন ইন কলোনিয়াল ইন্ডিয়া’, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় রচিত ‘এ হিস্ট্রি অব হিন্দু কেমিস্ট্রি’, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান ও সমাজ’ এবং ‘প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’, দীপক কুমার রচিত ‘সায়েন্স অ্যান্ড দ্য রাজ’, তপন চক্রবর্তী রচিত ‘শতবর্ষে বাঙালির বিজ্ঞানসাধনা’ প্রভৃতি।

উপসংহার: সুদূর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত বিজ্ঞান মানুষের জীবনের নিত্যসঙ্গী। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির হাত ধরেই মানবসভ্যতা ক্রমশ উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। তাই মানবসভ্যতার ইতিহাস রচনায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ইতিহাসচর্চা অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

21. সাম্প্রতিককালে চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার পরিচয় দাও।

উত্তরঃ সাম্প্রতিককালে চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা

ভূমিকা: প্রাচীনকালেই বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পাশাপাশি চিকিৎসাবিদ্যার সূত্রপাত ঘটেছে। প্রাচীন ও মধ্য যুগ পেরিয়ে চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতি বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।

[1] বিবর্তন: প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন যুগে চিকিৎসাবিদ্যার নানা পরিবর্তন, উন্নতি ও বিবর্তন ঘটেছে। ফলে আয়ুর্বেদিক, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি, আকুপাংচার প্রভৃতি চিকিৎসাবিদ্যার নানা শাখার উদ্ভব ঘটেছে।

[2] ভারতে অগ্রগতি: ভারতে প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটেছিল বলে জানা যায়। কুষাণ যুগ, গুপ্ত যুগ এবং তার পরবর্তীকালে বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ভারতীয় চিকিৎসকদের নাম জানা যায়। তবে মধ্যযুগে এসে ভারতীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি থমকে যায়।

[3] প্রাচ্যে ও পাশ্চাত্যে চিকিৎসাবিদ্যা: আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার অগ্রগতি প্রথম ইউরোপে শুরু হয়। ইউরোপের বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শক্তির মাধ্যমে তা প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে মধ্যযুগীয় পিছিয়ে-পড়া চিকিৎসাবিদ্যা ঔপনিবেশিক আমলে পাশ্চাত্যের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার প্রচলন ঘটে।

[4] গবেষক ও গবেষণা গ্রন্থ: সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন দেশে চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চা যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞান’, পার্থসারথি চক্রবর্তী রচিত ‘চিকিৎসা- বিজ্ঞানের আজব কথা’, তপন চক্রবর্তী রচিত ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস’ প্রভৃতি।

উপসংহার: প্রাচীনকাল থেকে ধারাবাহিক বিবর্তনের মধ্য দিয়ে চিকিৎসাবিদ্যা আজ বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। চিকিৎসাবিদ্যার এই বিবর্তনের কথা চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসচর্চার মধ্য দিয়েই জানা যায়।

22. নারী ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন ধারাগুলি আলোচনা করো। অথবা, নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখো।

উত্তরঃ নারী ইতিহাসচর্চার বিভিন্ন ধারা-

ভূমিকা: ইতিহাসের বিষয়বস্তু সমগ্র মানবজাতি, যার অর্ধেক অংশ হল নারী। অথচ বিগত শতাব্দীতেও ইতিহাসচর্চায় নারীজাতিকে পুরুষের সমান গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হত না। ইতিহাসে নারী কী ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়ে বর্তমানকালে চর্চা শুরু হয়েছে। এই চর্চাই হল নারী ইতিহাস।

[1] ইতিহাসে নারীর ভূমিকা: যুগে যুগে ইতিহাসে নারীর আসামান্য অবদান রয়েছে। নেফারতিতি, ক্লিওপেট্রা, রাজিয়া, নূরজাহান, দুর্গাবতী প্রমুখ নারী নিজের যোগ্যতার দ্বারা প্রাচীন ও মধ্যযুগে রাজনৈতিক ক্ষমতার অসীম আধারে পরিণত হয়েছিলেন। বিংশ- একবিংশ শতকেও বিভিন্ন দেশের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতির ওপর বিশ্বের বিভিন্ন নারী প্রাধান্য বিস্তার করেছেন।

[2] ইতিহাসে নারীর বঞ্চনা: ইতিহাসের আলোচনায় পুরুষের আন্দোলন, যুদ্ধ, রাজনীতি, কূটনীতি প্রভৃতি গুরুত্ব পেলেও নারীদের নেতৃত্ব, অধিকার, দাবিদাওয়া, আন্দোলন, মর্যাদা, শিক্ষাসংস্কৃতি প্রভৃতির যথেষ্ট আলোচনা ইতিহাসে করা হত না।

[3] নারী ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত: ইতিহাসে নারীদের ভূমিকা নিয়ে আধুনিককালে গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটছে এবং পুরুষের সঙ্গে নারী ইতিহাসের চর্চাও গুরুত্ব পেতে শুরু করেছে। ১৯৭০-এর দশক থেকে নারী ইতিহাসচর্চার সূত্রপাত ঘটেছে।

[4] পাশ্চাত্যে নারী ইতিহাসচর্চা: সম্প্রতি পাশ্চাত্যে নারীবাদী ইতিহাসচর্চাবিষয়ক বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এগুলি লিখেছেন জোয়ান কেলি, গের্ডা লার্নার, বেটি ফ্রিডান, কেটলিন মোরান, জেসিকা ভ্যালেন্টি, জুডিথ বাটলার প্রমুখ গবেষক।

[5] ভারতে নারী ইতিহাসচর্চা: ভারতে নারী ইতিহাসচর্চা করেছেন নীরা দেশাই, জেরাল্ডিন ফোর্বস, বি আর নন্দ, কমলা ভাসিন প্রমুখ ইতিহাসবিদ এবং বাংলায় দীনেশচন্দ্র সেন, রামেন্দ্র চৌধুরী, শ্রীমন্মথনাথ সরকার, রাজশ্রী বসু, চিত্রা দেব, মালেকা বেগম, মাহমুদ শামসুল হক প্রমুখ এই ব্যাপারে চর্চা করেছেন।

উপসংহার: নারীদের ভূমিকাকে বাদ দিয়ে ইতিহাসচর্চা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই বর্তমান যুগের ইতিহাসচর্চায় নারী ইতিহাসচর্চা অবশ্যই অপরিহার্য।

5. Fill in The Blanks

1. সাধারণভাবে ‘ইতিহাস’ হল____কথা।

উত্তরঃ অতীতের ।

2.____প্রস্তর যুগের মানুষ ছিল খাদ্যসংগ্রাহক।

উত্তরঃ প্রাচীন ।

3. _____কর্তৃক প্রকাশিত পত্রিকার নাম হল ‘অ্যানাল্স অব ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল হিস্ট্রি’।

উত্তরঃঅ্যানাল গোষ্ঠী।

4. ভারতে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা শুরু হয় বিগত শতকের দশকে_____-এর

উত্তরঃ ৮০

5. ‘একাদশে সূর্যোদয়’ ও ‘বিদ্রোহী মারাদোনা’ গ্রন্থ দুটি রচনা করেন_____।

উত্তরঃরূপক সাহা ।

6. ঢাকার খাদ্যরীতির সঙ্গে_____খাদ্যরীতির সংমিশ্রণে ‘ঢাকাই খাবার’

তৈরি হয়।

উত্তরঃ পারসিক।

7. হুগলির বাঙালিরা_____সংস্পর্শে এলে দুধ-কাটা ছানা ও চিনি মিশিয়ে মিষ্টি তৈরি করতে শুরু করে।

উত্তরঃ পোর্তুগিজদের।

8. রেশম প্রস্তুতে চিনাদের অভিজ্ঞ হওয়ার কথা জানা যায় তাদের____থেকে।

উত্তরঃ পোশাক-পরিচ্ছ।

9. বর্তমান____মেয়েরা ব্রাহ্মিকা পদ্ধতিতে শাড়ি পরেন।

উত্তরঃ বাঙালি ।

10. অগসবার্গ শহরের_____প্রথম পোশাকের ছবি সংবলিত একটি বই প্রকাশ করেন। 

উত্তরঃ ম্যাথেউস সোয়ার্জ ।

11. ‘দ্য হিস্ট্রি অব চাইনিজ ডান্স’ গ্রন্থটি রচনা করেন_____।

উত্তরঃ ওয়াং কেফেন।

12. ‘এ ন্যাশনাল থিয়েটার ফর ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন_____।

উত্তরঃ বালদুন ধিংড়া ।

13. ‘এ শর্ট হিস্ট্রি অব দ্য ক্যামেরা’ গ্রন্থটি রচনা করেন_____ ।

উত্তরঃ জন ওয়েড।

14. ‘বাংলাদেশের শিল্পকলার উৎস সন্ধান’ গ্রন্থটি রচনা করেন____।

উত্তরঃ ড. নীলিমা আফরিন ।

15. ‘ইন্ডিয়ান আর্কিটেকচার’ গ্রন্থটি রচনা করেন_____।

উত্তরঃ পার্সি ব্রাউন।

16. ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ : গ্লোরিয়াস ১৫০ ইয়ার্স’ গ্রন্থটি রচনা করেন____।

উত্তরঃ আর আর ভান্ডারী।

17. ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন_____।

উত্তরঃ দাদাসাহেব ফালকে।

18. ‘দ্য সিনেমা বুক’ গ্রন্থটি রচনা করেন_____।

উত্তরঃ পাম কুক।

19. ‘পাবনা জেলার ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন______।

উত্তরঃ রাধারমণ সাহা ।

20. ‘রাজশাহীর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ গ্রন্থটি রচনা করেন______।

উত্তরঃ  কালীনাথ চৌধুরী।

21. ‘ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী’ গ্রন্থটি রচনা করেন_____।

উত্তরঃ মুনতাসীর মামুন।

22. ‘মিলিটারি হিস্ট্রি অব মেডিয়াভাল ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন____।

উত্তরঃ পাজল ব্রাড সাধু ।

23. ‘দ্য আর্মি ইন ব্রিটিশ ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি রচনা করেন____।

উত্তরঃ কৌশিক রায় ।

24. বসন্ত সবেরওয়ালের লেখা বইটি হল______।

উত্তরঃ প্যাস্টোরাল পলিটিক্স ।

25. ‘এনভায়রনমেন্টাল হিস্ট্রি’ বইটির লেখক হলেন______।

উত্তরঃ মহেশ রঙ্গরাজন ।

26. ‘হিস্ট্রি অব সায়েন্স’ গ্রন্থটি রচনা করেন_____।

উত্তরঃ জে ডি বার্নাল ।

27. ‘প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞান’ গ্রন্থটির রচয়িতা হলেন_____।

উত্তরঃ দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়।

28. ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটির লেখক হলেন_____।

উত্তরঃ জেরাল্ডিন ফোর্বস ।

29. ‘হোয়াট ইজ প্যাট্রিয়ার্কি’ গ্রন্থটির লেখক হলেন_____।

উত্তরঃ কমলা ভাসিন ।

30. ‘দ্য চেঞ্জিং পজিশন অব ইন্ডিয়ান উইমেন’ গ্রন্থটি রচনা করেন______।

উত্তরঃ এম এন শ্রীনিবাস ।

31. ‘দ্য ইন্ডিয়ান উইমেন : ফ্রম পর্দা টু মডার্নিটি’ গ্রন্থটি রচনা কে_____।

উত্তরঃ বি আর নন্দ।

6. True And False

1. ডেভিড টমসন বলেছেন যে, বিশ শতকে ইউরোপীয় জীবনধারার গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অভ্যাস হল খেলাধুলা।

উত্তরঃ ভুল ।

2. নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ ছিল খাদ্য উৎপাদক।

উত্তরঃ ঠিক ।

3. দেবতার নৈবেদ্য হিসেবে ছানার তৈরি মিষ্টান্ন ব্যবহার করা হয় অন্ধ্রপ্রদেশে।

উত্তরঃ ভুল ।

4. ‘রসগোল্লা: বাংলার জগৎমাতানো আবিষ্কার’ গ্রন্থটি রচনা করেন হরিপদ ভৌমিক।

উত্তরঃ ঠিক ।

5. খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদ প্রভৃতি থেকে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার আভাস পাওয়া যায়।

উত্তরঃঠিক ।

6. ভারতের কামান প্রথম ব্যবহৃত হয় পলাশির যুদ্ধে।

উত্তরঃভুল ।

7. ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা ঋত্বিক ঘটক।

উত্তরঃভুল ।

৪. ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব আইএফএ শিল্ড জয় করে।

উত্তরঃভুল ।

9. ক্রিকেট ‘খেলার রাজা’ নামে পরিচিত।

উত্তরঃঠিক ।

10. ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মোহনবাগান ক্লাব আইএফএ শিল্ড জয় করেছিল।

উত্তরঃঠিক ।

11. প্রাচীন ভারতে সংগীত ও নৃত্য সাধারণ মানুষের রোজকার জীবনের সঙ্গে খুবই যুক্ত ছিল।

উত্তরঃভুল ।

12. মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালিকে নৃত্যের বিষয়ে আগ্রহী করে তুলেছিলেন উদয়শংকর।

উত্তরঃঠিক ।

13. ‘থিওরিজ অব সিনেমা’ গ্রন্থটি রচনা করেন ফ্রান্সেসকো ক্যাসেটি।

উত্তরঃঠিক ।

14. ‘দ্য স্টোরি অব আর্কিটেকচার’ গ্রন্থটি রচনা করেন পার্সি ব্রাউন।

উত্তরঃভুল ।

15. ‘নদীয়া কাহিনী’ গ্রন্থটি ‘শহরের ইতিহাস’-এর অন্তর্গত।

উত্তরঃভুল ।

16. ভারতে রেলপথের প্রতিষ্ঠা এদেশে ব্রিটিশদের সাম্রাজ্যের প্রসার ও ভারতীয়দের ওপর শোষণ চালানোর সুবিধা করে দিয়েছে।

উত্তরঃঠিক ।

17. ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রন্থিত ইতিহাস’ হল স্থানীয় ইতিহাসচর্চার একটি উদাহরণ।

উত্তরঃঠিক ।

18. ‘এনভায়রনমেন্টাল হিস্ট্রি’ হল চিকিৎসার ইতিহাসচর্চা বিষয়ক একটি বই।

উত্তরঃভুল ।

19. জে ডি বার্নাল নারী ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত।

উত্তরঃভুল ।

20. নীরা দেশাই স্থানীয় ইতিহাসচর্চার সঙ্গে যুক্ত।

উত্তরঃভুল ।

21. কৌশিক চট্টোপাধ্যায়ের গবেষণার বিষয়বস্তু হল ক্রিকেট।

উত্তরঃ ভুল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *