Class 10 Chapter 2 Solution
সংস্কার: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
1. MCQs
1. ভারতের প্রথম বাঙালি সংবাদপত্র প্রকাশক হলেন-
(i) গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য
(ii) অক্ষয়কুমার দত্ত
(iii) বঙ্কিমচন্দ্র চট্যোপাধ্যায়
(iv) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
উত্তরঃগঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য
2. বাংলা ভাষায় প্রথম প্রকাশিত পত্রিকাটির নাম-
(i) সমাচার দর্পণ
(ii) সোমপ্রকাশ
(iii) বঙ্গদর্শন
(iv) দিগদর্শন
উত্তরঃদিগদর্শন
3. বাঙালি পরিচালিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্রটি হল-
(i) সমাচার দর্পণ
(ii) সম্বাদ প্রভাকর
(iii) ব্রাহ্মণ সেবধি
(iv) বাঙাল গেজেটি
উত্তরঃবাঙাল গেজেটি
4. ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়-
(i) ১৮৩৩ খ্রি.
(ii) ১৮৫৯ খ্রি.
(iii) ১৮৬০ খ্রি.
(iv) ১৮৬৩ খ্রি.
উত্তরঃ ১৮৬৩ খ্রি.
5. ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা ছিল একটি-
(i) দৈনিক পত্রিকা
(ii) মাসিক পত্রিকা
(iii) সাপ্তাহিক পত্রিকা
(iv) ত্রৈমাসিক পত্রিকা
উত্তরঃ মাসিক পত্রিকা
6. ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-
(i) দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ
(ii) উমেশচন্দ্র দত্ত
(iii) কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
(iv) শিশিরকুমার ঘোষ
উত্তরঃউমেশচন্দ্র দত্ত
7. বাংলায় প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র প্রকাশ করেন-
(i) হরিনাথ মজুমদার
(ii) হ্যারিয়েট বিচার স্টো
(iii) জেমস অগাস্টাস হিকি
(iv) উমেশচন্দ্র দত্ত
উত্তরঃ জেমস অগাস্টাস হিকি
৪. বামাবোধিনী পত্রিকার একজন বিশিষ্ট লেখিকা ছিলেন-
(i) চন্দ্রমুখী বসু
(ii) কাদম্বিনী গাঙ্গুলি
(iii) মানকুমারী বসু
(iv) সরোজিনী নাইডু
উত্তরঃ মানকুমারী বসু
9. উনিশ শতকের নারীদের অবস্থা জানার জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাময়িকপত্র ছিল-
(i) হিন্দু প্যাট্রিয়ট
(ii) সমাচার দর্পণ
(iii) গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা
(iv) বামাবোধিনী
উত্তরঃ বামাবোধিনী
10. বামাবোধিনীর ‘বামা’ আসলে কারা?
(i) বিধবারা
(ii) নববিবাহিতরা
(iii) বালিকারা
(iv) সমগ্র নারী জাতি
উত্তর: সমগ্র নারী জাতি
11. অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
(i) শিশিরকুমার ঘোষ
(ii) দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়
(iii) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
(iv) উমেশচন্দ্র দত্ত
উত্তরঃ শিশিরকুমার ঘোষ
12. ‘সোমপ্রকাশ’ ছিল একটি-
(i) দৈনিক পত্রিকা
(ii) পাক্ষিক পত্রিকা
(iii) সাপ্তাহিক পত্রিকা
(iv) মাসিক পত্রিকা
উত্তরঃ সাপ্তাহিক পত্রিকা
13. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম প্রবর্তক ও স্বত্বাধিকারী ছিলেন-
(i) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
(ii) মধুসূদন রায়
(iii) অক্ষয়কুমার দত্ত
(iv) দীনবন্ধু মিত্র
উত্তরঃ মধুসূদন রায়
14. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন-
(i) গিরিশচন্দ্র ঘোষ
(ii) হরিশচন্দ্র মুখার্জি
(iii) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
(iv) অক্ষয়কুমার দত্ত
উত্তরঃ গিরিশচন্দ্র ঘোষ
15. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-
(i) হরিশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
(ii) হরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(iii) হরিশচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়
(iv) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
উত্তরঃ হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
16. দিগদর্শন পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-
(i) হরচন্দ্র রায়
(ii) ঈশ্বর গুপ্ত
(iii) মার্শম্যান
(iv) উইলিয়ম কেরি
উত্তরঃ মার্শম্যান
17. প্রথম কোন্ পত্রিকায় লালন ফকিরের গান প্রকাশিত হয়?
(i) হিন্দু প্যাট্রিয়ট-এ
(ii) সম্বাদ প্রভাকর-এ
(iii) বামাবোধিনী-তে
(iv) গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা-তে
উত্তরঃ গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা-তে
18. যে সাহিত্যিক পাবনার কৃষকবিদ্রোহ সমর্থন করেছিলেন তিনি হলেন-
(i) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(ii) মধুসূদন দত্ত
(iii) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(iv) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তরঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
19. ডালহৌসির নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী নীতির সমালোচনা করা হয়-
(i) গ্রামবার্তাপ্রকাশিকায়
(ii) বামাবোধিনী পত্রিকায়
(iii) হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায়
(iv) ভারতী পত্রিকায়
উত্তরঃ
20. ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা’ প্রতিষ্ঠা করেন-
(i) উমেশচন্দ্র দত্ত
(ii) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
(iii) হরিনাথ মজুমদার
(iv) কালীপ্রসন্ন সিংহ
উত্তরঃ (iv) কালীপ্রসন্ন সিংহ
21. সাঁওতাল এলাকায় সামরিক শাসন জারির তীব্র বিরোধিতা করা হয়-
(i) হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায়
(ii) প্রবাসী পত্রিকায়
(iii) গিরিশচন্দ্র ঘোষ
(iv) ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
উত্তরঃ (i) হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায়
22. ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’র লেখক হলেন-
(i) দিগ্দর্শন পত্রিকায়
(ii) সঞ্জীবনী পত্রিকায়
(iii) প্যারিচাঁদ মিত্র
(iv) কালীপ্রসন্ন সিংহ
উত্তরঃ (iv) কালীপ্রসন্ন সিংহ
23. ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদের প্রকাশক ছিলেন-
(i) কালীপ্রসন্ন সিংহ
(ii) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়
(iii) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
(iv) রেভাঃ জেমস লং
উত্তরঃ (iv) রেভাঃ জেমস লং
24. ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশের জন্য জেমস লঙের কারাদণ্ড হয়-
(i) ১ মাস
(ii) ৪৬ মাস
(iii) ১ বছর
(iv) ১২ বছর
উত্তরঃ (i) ১ মাস
25. নীলদর্পণ নাটককে ‘আংকল টমস কেবিন’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন-
(i) শিশির কুমার ঘোষ
(ii) নবগোপাল মিত্র
(iii) দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়
(iv) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তরঃ (iv) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
26. ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি ছাপা হয়েছিল-
(i) নদিয়াতে
(ii) ঢাকায়
(iii) শ্রীরামপুরে
(iv) কলকাতায়
উত্তরঃ (iii) শ্রীরামপুরে
27. তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন-
(i) ঈশ্বর গুপ্ত
(ii) কেশবচন্দ্র সেন
(iii) অক্ষয় কুমার দত্ত
(iv) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
উত্তরঃ (ii) কেশবচন্দ্র সেন
28. ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ প্রকাশিত হত-
(i) দৈনিক
(ii) পাক্ষিক
(iii) মাসিক
(iv) বাৎসরিক
উত্তরঃ (iii) মাসিক
29. গ্রামবার্ত্তপ্রকাশিতা প্রকাশিত হত –
(i) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(ii) দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ
(iii) হরিনাথ মজুমদার
(iv) গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ন
উত্তরঃ(iii) হরিনাথ মজুমদার
30. ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ প্রকাশিত হত-
(i) যশোর থেকে
(ii) রানাঘাট থেকে
(iii) কুষ্টিয়া থেকে
(iv) বারাসাত থেকে
উত্তরঃ(iii) কুষ্টিয়া থেক
2. Very Short Question Answer
1. ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’র শেষ সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তরঃ বামাবোধিনী পত্রিকা’র শেষ সম্পাদক ছিলেন আনন্দ কুমার দত্ত।
2. ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা কতদিন চলে?
উত্তরঃ বামাবোধিনী পত্রিকা ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চলে।
3. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা কোন্ ভাষায় প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়।
4. হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কে ছিলেন?
উত্তরঃ হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন নির্ভীক সাংবাদিক এবং ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক।
5. ‘অবলাবান্ধব’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?
উত্তরঃ অবলাবান্ধব’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়।
6. কোন্ পত্রিকাকে ‘গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক’ বলা হয়?
উত্তরঃ ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’-কে ‘গ্রামীণ সংবাদপত্রের জনক’ বলা হয়।
7. হরিনাথ মজুমদার সাধারণ মানুষের কাছে কী নামে পরিচিত ছিলেন?
উত্তরঃ হরিনাথ মজুমদার সাধারণ মানুষের কাছে ‘কাঙাল হরিনাথ’ নামে পরিচিত ছিলেন।
৪. ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকা কোথা থেকে প্রকাশিত হত?
উত্তরঃ ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকা অবিভক্ত বাংলার কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থেকে প্রকাশিত হত।
9. কলকাতা থেকে প্রথম কোন্ সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়?
উত্তরঃ কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র হল ‘বেঙ্গল গেজেট’।
10. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বাঙালি পরিচালিত প্রথম পত্রিকা কোন্টি?
উত্তরঃ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত বাঙালি পরিচালিত প্রথম সংবাদপত্র হল ‘বাঙ্গালা গেজেট’।
11. কালীপ্রসন্ন সিংহের অমর সাহিত্যকীর্তি কোন্টি?
উত্তরঃ কালীপ্রসন্ন সিংহের অমর সাহিত্যকীর্তির নাম হল ‘হুতোম প্যাঁচার নক্সা’।
12. কে, কবে বিদ্যোৎসাহিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তরঃ কালীপ্রসন্ন সিংহ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যোৎসাহিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
13. দীনবন্ধু মিত্র কে ছিলেন?
উত্তরঃ দীনবন্ধু মিত্র ছিলেন একজন বাংলা সাহিত্যিক, ‘নীলদর্পণ’ নাটক ছিল যাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি।
14. দীনবন্ধু মিত্র কবে, কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তরঃ দীনবন্ধু মিত্র ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার চৌবেড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
15. নীলবিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে কোন্ বাংলা নাটকটি রচিত হয়?
উত্তরঃ নীলবিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি রচিত হয়।
16. কবে, কারা কাদের বিরুদ্ধে নীলবিদ্রোহ করে?
উত্তরঃ ১৮৫৮-৫৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ বাংলার অত্যাচারী নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে বাংলার অত্যাচারিত নীলচাষিরা নীলবিদ্রোহ করে।
17. নীলদর্পণ কে রচনা করেন?
উত্তরঃ নীলদর্পণ রচনা করেন দীনবন্ধু মিত্র।
18. ‘নীলদর্পণ’ নাটকে প্রধান অত্যাচারী নীলকর সাহেবের চরিত্রটির নাম কী?
উত্তরঃ‘নীলদর্পণ’ নাটকে প্রধান অত্যাচারী নীলকর সাহেবের চরিত্রটির নাম ছিল উড।
19. কলকাতায় জাতীয় নাট্যশালা কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃকলকাতায় জাতীয় নাট্যশালা ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়।
20. কোন্ বাংলা নাটক প্রথম ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়?
উত্তরঃবাংলা নাটক ‘নীলদর্পণ’ প্রথম ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়।
21. রেভাঃ জেমস লং কোন্ অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছিলেন?
উত্তরঃ রেভারেন্ড জেমস লং-এর নামে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ ছাপা হয়, তাই তাঁকে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়।
22. রেভারেন্ড জেমস লং সাহেবের বিচারে জরিমানার ১ হাজার টাকা কে পরিশোধ করেন?
>> রেভারেন্ড জেমস লং সাহেবের বিচারে জরিমানার ১ হাজার টাকা পরিশোধ করেন কালীপ্রসন্ন সিংহ।
3. Short Question Answer
1. বামাবোধিনী সভা-র উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তরঃ বামাবোধিনী সভা-র উদ্দেশ্য ছিল—[1] সামাজিক কুসংস্কারের বিরোধিতা করা, [2] নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানো, [3] নারীদের অধিকার ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা, [4] নারীজাতির স্বার্থে বিভিন্ন বইপত্র ও পত্রিকা প্রকাশ করা প্রভৃতি।
2. ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের কীরূপ সামাজিক তথ্য জানা যায়?
উত্তর: ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের বাংলার নারীদের অবস্থা, গৃহচিকিৎসা, শিশুপালন, গৃহকার্য, শিল্পকর্ম, পরিবার ও সমাজের যোগসূত্র হিসেবে নারীর ভূমিকা প্রভৃতি সম্পর্কে নানা তথ্য জানা যায়।
3. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় সমকালীন বাংলার কীরূপ সামাজিক চিত্র পাওয়া যায়?
উত্তর: হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় সমকালীন বাংলার সামাজিক শোষণ, সাধারণ মানুষের ওপর সরকার ও পুলিশের অত্যাচার, নীলচাষিদের ওপর শোষণ ও অত্যাচার, দরিদ্রশ্রেণির ওপর অত্যাচার, দরিদ্রদের দুরবস্থা প্রভৃতির চিত্র পাওয়া যায়।
4. সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রতি ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার কী মনোভাব ছিল?
উত্তরঃ ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হলে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা এই বিদ্রোহকে সমর্থন করে এবং সাঁওতাল এলাকায় সামরিক শাসন জারির তীব্র বিরোধিতা করে। পত্রিকায় সাঁওতালদের ওপর সীমাহীন শোষণের চিত্র নিয়মিত তুলে ধরা হয়।
5. নারীসমাজের উন্নতির বিষয়ে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা কীরূপ উদ্যোগ নেয়?
উত্তরঃ ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা নারীসমাজের উন্নতিতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। যেমন-[1] এই পত্রিকা বিধবাবিবাহকে সমর্থন করে। [2] নারীশিক্ষার সমর্থনে ব্যাপক প্রচার চালায়। [3] পতিতা সমস্যা নিয়ে নানা প্রবন্ধ প্রকাশ করে।
6. গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকায় কী কী আলোচনা প্রকাশিত হত?
উত্তর:‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকায় নীলকর, জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচারের বিবরণ, সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, বিপ্লবীদের শপথ ও বীরত্বগাথা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা প্রকাশিত হত।
7. ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ উপন্যাসের ভাষা কীরূপ?
উত্তর: ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ উপন্যাসটি কলকাতার কথ্য ভাষায় হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে রচিত হয়েছে। ইতিপূর্বে বাংলা গদ্যে নিরঙ্কুশ কথ্যভাষার ব্যবহার দেখা যায় না।
‘8. হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’য় তৎকালীন সমাজের মানুষকে কয় ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে ও কী কী?
উত্তরঃ ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’য় তৎকালীন সমাজের মানুষকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা- [1] ইংরেজি-শিক্ষিত সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী, [2] ইংরেজি শিক্ষিত নব্যপন্থী যারা সাহেবি চালচলনের অনুকরণকারী নয় এবং [3] ইংরেজি না-জানা গোঁড়া হিন্দুসমাজ।
9. দীনবন্ধু মিত্রের লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: দীনবন্ধু মিত্রের লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হল ‘নীলদর্পণ’, ‘নবীন তপস্বিনী’, ‘সধবার একাদশী’, ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ প্রভৃতি। ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি দীনবন্ধু মিত্রের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি।
10. কে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন এবং কার নামে এটি প্রকাশিত হয়?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন বলে গবেষকগণ মনে করেন। ব্রিটিশ সরকারের শাস্তি এড়াতে ‘নীলদর্পণ’ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ খ্রিস্টান পাদরি রেভারেন্ড জেমস লং-এর নামে প্রকাশিত হয়।
4. Long Question Answer
1 উনিশ শতকে সাময়িক পত্র, সংবাদপত্র, সাহিত্য প্রভৃতিতে কীভাবে সমকালীন বঙ্গীয় সমাজের চিত্র ফুটে উঠেছে?
উত্তর: সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যে তৎকালীন বঙ্গসমাজ-
ভূমিকা: পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে উনিশ শতকে বাংলায় শিক্ষা-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নবজাগরণ সংঘটিত হয় বলে অনেকে মনে করেন।
[1] অগ্রগতি: উনিশ শতকের নবজাগরণের প্রভাবে বাংলায় সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র, সাহিত্য প্রভৃতির যথেষ্ট বিকাশ ঘটে। এগুলিতে তৎকালীন বাংলার সমাজচিত্র প্রতিফলিত হতে দেখা যায়।
[2] সাময়িকপত্র: উনিশ শতকে বাংলা থেকে প্রকাশিত সাময়িকপত্রগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিল হিকির ‘বেঙ্গল গেজেট’, মার্শম্যানের ‘দিগদর্শন’ ও ‘সমাচার দর্পণ’ এবং গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের ‘বাঙ্গাল গেজেট’। পরবর্তীকালে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পাদিত ‘সম্বাদ প্রভাকর’, অক্ষয়কুমার দত্ত সম্পাদিত ‘তত্ত্ববোধিনী’, উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদিত ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’, দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ সম্পাদিত ‘সোমপ্রকাশ’, স্বর্ণকুমারী দেবী সম্পাদিত ‘ভারতী’, রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’ প্রভৃতি সাময়িকপত্রে বাংলার সমাজ, অর্থনীতি প্রভৃতি বিষয়ে নানা রচনা প্রকাশিত হতে থাকে।
[3] সংবাদপত্র: উনিশ শতকের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বাঙালির সম্পাদনায় বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বঙ্গদর্শন’, হরিনাথ মজুমদার (কাঙাল হরিনাথ) সম্পাদিত ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’, কৃষ্ণকুমার মিত্র সম্পাদিত ‘সঞ্জীবনী’, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায় সম্পাদিত ‘সন্ধ্যা’, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বেঙ্গলি’ প্রভৃতি। এসব সংবাদপত্রে সমসাময়িক বাংলার সমাজজীবনের নানা চিত্র পাওয়া যায়।
[4] সাহিত্য: উনিশ শতকে বিভিন্ন সাহিত্যেও সমকালীন বঙ্গীয় সমাজের নানা ঘটনার প্রতিফলন ঘটে। এরূপ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাহিত্যগ্রন্থ হল কালীপ্রসন্ন সিংহ রচিত ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’, দীনবন্ধু মিত্র রচিত ‘নীলদর্পণ’, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘আনন্দমঠ’, ‘দেবী চৌধুরানি’, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’, ‘কৃষ্ণচরিত’, প্যারীচাঁদ মিত্র রচিত ‘আলালের ঘরে দুলাল’, নবীনচন্দ্র সেন রচিত ‘পলাশীর যুদ্ধ’ প্রভৃতি।
উপসংহার: উনিশ শতকে এইসকল সাময়িকপত্র, সংবাদপত্র ও সাহিত্যগুলি যথার্থভাবেই তৎকালীন সমাজের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছিল। সমকালীন বাংলার নেতিবাচক প্রবণতাগুলি দূর করার ক্ষেত্রেও এগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
2 “বামাবোধিনী পত্রিকা’র প্রকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা, টীকা লেখো: বামাবোধিনী পত্রিকা।
উত্তর: ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’-র প্রকাশ-
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সাময়িকপত্রগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্রের সেনের অনুগামী উমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪০-১৯০৭ খ্রি.) সম্পাদিত ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’।
[1] সামাজিক প্রেক্ষাপট: উনিশ শতকের মধ্যভাগেও বাংলায় স্ত্রীশিক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশেষ সমর্থন ছিল না। তাই এই সময় পর্যন্ত নারীশিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটেনি। এই পরিস্থিতিতে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে তাদের সচেতন করে তোলার উদ্দেশ্যে উমেশচন্দ্র দত্ত বিশেষ উদ্যোগ নেন।
[2] বামাবোধিনী সভা: বাঙালি ‘বামা’ অর্থাৎ নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ও নারী সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের যোগ্য করে তোলা, নারীদের মনের কথা তুলে ধরা, নারীজাতির স্বার্থে বিভিন্ন বইপত্র প্রকাশ প্রভৃতির উদ্দেশ্যে উমেশচন্দ্র দত্ত কয়েকজন তরুণ ব্রাহ্মকে নিয়ে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন।
[3] পত্রিকার প্রথম প্রকাশ: বামাবোধিনী সভার পক্ষ থেকে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’র প্রকাশ শুরু হয়। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন উমেশচন্দ্র দত্ত। এই পত্রিকার প্রকাশে উমেশচন্দ্র দত্তকে বিশেষভাবে সহায়তা করেছিলেন ক্ষেত্রমোহন দত্ত, বসন্তকুমার দত্ত প্রমুখ।
[4] পরিচালনা: কলকাতার সিমুলিয়ার বামাবোধিনী সভার কার্যালয় থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হত। উদারমনস্ক সংস্কারকদের নিয়ে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা-র সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করা হয়। ‘বামাবোধিনী পত্রিকার শেষ সম্পাদক ছিলেন আনন্দকুমার দত্ত। নানা উত্থানপতনের মধ্য দিয়ে পত্রিকাটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ৬০ বছর ধরে প্রকাশিত হয়।
উপসংহার: বামাবোধিনী পত্রিকা সমকালীন বাংলার নারী সমাজের অন্তরের কথা তুলে ধরতে সক্ষম হয়। এই পত্রিকায় নামে ও বেনামে বিভিন্ন ok sir ji নারী তাঁদের নিজস্ব লেখালেখি প্রকাশ করার সুযোগ পাওয়ায় সাহিত্য জগতে নতুন লেখিকাদের আবির্ভাব ঘটে।
3.’বামাবোধিনী পত্রিকা’-য় বাংলার সমকালীন সমাজের কীরূপ প্রতিফলন ঘটেছে?
উত্তর: ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’-য় সমকালীন সমাজের প্রতিফলন-
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত যেসব সাময়িকপত্রে সমকালীন বঙ্গীয় সমাজের প্রতিফলন ঘটেছে সেগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদিত ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নামক মাসিক পত্রিকা। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’-র প্রকাশ শুরু হয়। উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলার সমাজের, বিশেষ করে নারীদের অবস্থা কেমন ছিল তা ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ থেকে জানা যায়।
[1] নারীশিক্ষার প্রতিফলন: উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলার নারীদের সামাজিক অবস্থার বিশেষ অগ্রগতি ঘটেনি। নারীশিক্ষার বিষয়টিকে সাধারণ মানুষ সুনজরে দেখত না। ফলে বাংলায় নারীশিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটেনি।
[2] নারীর মর্যাদার প্রতিফলন: এই সময় বাংলার নারীরা সাধারণত বাড়ির অন্দরমহলে জীবন কাটাতে অভ্যস্ত ছিল। তাদের অধিকার ও মর্যাদা বিশেষ ছিল না।
[3] সামাজিক কুসংস্কারের প্রভাব: ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা উনিশ শতকে বাংলার বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার তুলে ধরে এসবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়। নারীদের বাল্যবিবাহ, পুরুষদের বহুবিবাহ, মদ্যপান প্রভৃতির বিরুদ্ধে এই পত্রিকায় নিয়মিত প্রচার চালানো হয়।
উপসংহার: বাংলার তৎকালীন সামাজিক সমস্যাগুলি দূর করার উদ্দেশ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নিয়মিত প্রচার চালায়। পত্রিকাটি নারীশিক্ষার প্রসার, নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাংলায় নারী আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
4.নারীসমাজের উন্নতির লক্ষ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ কীরূপ উদ্যোগ নিয়েছিল?
উত্তর: নারীসমাজের উন্নতির লক্ষ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’-র উদ্যোগ-
ভূমিকা: ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্র সেনের অনুগামী উমেশচন্দ্র দত্ত ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নামে একটি মাসিক পত্রিকার প্রকাশ শুরু করেন। বাংলার নারীসমাজের উন্নতির লক্ষ্যে এই পত্রিকা বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। যেমন-
[1] সামাজিক সংস্কার: উনিশ শতকে এদেশের হিন্দুসমাজে মেয়েরা বাল্যবিবাহ, পণপ্রথা প্রভৃতির শিকার ছিল। এসব সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে এবং নারীদের মন থেকে যাবতীয় কুসংস্কার ও সন্দেহ দূর করার উদ্দেশ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নিয়মিত প্রচার চালিয়ে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়।
[2] শিক্ষার প্রসার: উনিশ শতকেও সাধারণ মানুষ নারীশিক্ষাকে বিশেষ সমর্থন করত না। এই অবস্থায় ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নারীশিক্ষার সমর্থনে, নারী সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিয়মিত প্রচার চালায়।
[3] নারী-অধিকার প্রতিষ্ঠা: উনিশ শতকেও নারীরা মূলত বাড়ির অন্দরমহলে আবদ্ধ ছিল। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ের কোনো সুযোগ ছিল না। ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নারীদের সামাজিক অধিকার ও মর্যাদা প্রদানের লক্ষ্যে নিয়মিত প্রচার চালায়। নারী-অধিকারের উদার সমর্থকদের নিয়ে এই পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলী গড়ে তোলা হয়।
[4] প্রগতিশীলতার প্রয়াস: নারীরা যাতে নিজস্ব লেখনীর মাধ্যমে নিজেদের মতামত জানাতে পারে, সেই উদ্দেশ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ গোষ্ঠী স্বনামে বা বেনামে নারীদের এই পত্রিকায় নিয়মিত লেখার সুযোগ করে দেয়। পত্রিকাগোষ্ঠী নারীজাতির স্বার্থরক্ষা ও সামাজিক অগ্রগতির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বইপত্র ও পত্রিকা প্রকাশ করে।
উপসংহার: নারীসমাজের উন্নতির লক্ষ্যে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল তাতে শুধু যে নারীদের উন্নতি হয়েছিল তাই নয়, এর ফলে গোটা সমাজেরই অগ্রগতি হয়েছিল।
5.উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পর্কে কী জান?
উত্তর: উমেশচন্দ্র দত্ত-
ভূমিকা: উমেশচন্দ্র দত্ত (১৮৪০-১৯০৭ খ্রি.) ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার একজন সমাজসচেতন ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী। সমকালীন বাংলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি স্বকীয়তার স্বাক্ষর রাখেন।
[1] প্রথম জীবন: উমেশচন্দ্র দত্ত ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার মজিলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল হরমোহন দত্ত। তিনি ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ভবানীপুরের একটি খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন। তিনি ডাক্তারি পড়ার জন্য মেডিকেল কলেজে ভরতি হলেও দারিদ্রের জন্য ডাক্তারি পড়া ছাড়তে বাধ্য হন।
[2] ব্রাহ্মসমাজে নেতৃত্ব: উমেশচন্দ্র দত্ত ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিয়েই শীঘ্রই ব্রাহ্মনেতা কেশবচন্দ্রে সেনের অনুগামীতে পরিণত হন। তিনি স্থানীয় মানুষের আপত্তি অগ্রাহ্য করে হরিনাভিতে ব্রাহ্মসমাজের একটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রাহ্মসমাজে বিভাজনের পর সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ (১৮৭৮ খ্রি.) প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
[3] বামাবোধিনী সভা: উমেশচন্দ্র দত্ত কয়েকজন তরুণ ব্রাহ্মকে নিয়ে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে বামাবোধিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সভার উদ্দেশ্য ছিল ‘বামা’ অর্থাৎ নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটানো, নারী সচেতনতা বৃদ্ধি, নারীদের অধিকার ও মর্যাদা দান প্রভৃতি বিষয়ে কাজ করা।
[4] বামাবোধিনী পত্রিকা: নারীদের সামাজিক উন্নতি, নারীশিক্ষার প্রসার, নারীদের মনের কথা প্রকাশের সুযোগ দান প্রভৃতি উদ্দেশ্যে উমেশচন্দ্র ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ প্রকাশ করেন। এই পত্রিকা ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চালু ছিল।
[5] অন্যান্য অবদান: উমেশচন্দ্র দত্ত বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেন। তিনি সিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সিটি কলেজের অধ্যক্ষও হন। তিনি ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে মানিকতলায় মূক ও বধিরদের জন্য বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ‘বামারচনাবলী’ ও ‘স্ত্রীলোকদের বিদ্যার আবশ্যকতা’ তাঁর লেখা দুটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
[6] মৃত্যু: উমেশচন্দ্র দত্ত তাঁর সহজ ও সরল জীবনযাপনের জন্য সকলের কাছে ‘সাধু’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়।
উপসংহার: নারীশিক্ষা ও নারী উন্নতির জন্য ব্যক্তি উমেশচন্দ্র বরাবরই আগ্রহী ছিলেন। নারীদের জন্য বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, পত্রিকা প্রকাশ প্রভৃতি অসামান্য অবদানের জন্য তিনি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
6. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় বাংলার সমকালীন সমাজের কীরূপ প্রতিফলন ঘটেছে?
উত্তর: ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় বাংলার সমকালীন সমাজের প্রতিফলন-
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলা থেকে প্রকাশিত যেসব পত্রপত্রিকায় সমকালীন সমাজের প্রতিফলন ঘটেছে, সেগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা। সমকালীন বঙ্গসমাজের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র এই পত্রিকায় ফুটে ওঠে। যেমন-
[1] দরিদ্র মানুষের দুর্দশা: ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় বাংলার তৎকালীন সমাজের দরিদ্র কৃষক- মজুরদের দুর্দশা-দুরবস্থায় মর্মাহত ছিলেন। দরিদ্রদের দুরবস্থার নানা ঘটনার চিত্র তিনি তাঁর পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশ করতেন।
[2] শোষণ অত্যাচার: তৎকালীন বাংলার প্রজারা সর্বদা কীভাবে ব্রিটিশ সরকার, সরকারের পুলিশ, জমিদার ও মহাজনদের শোষণ ও অত্যাচারের শিকার হয়, তা এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া সাঁওতাল পরগনার আদিবাসীরা কীরূপ অত্যাচারের শিকার হয়, সাঁওতাল বিদ্রোহের সময় সরকারি সেনা কীরূপ নৃশংসভাবে অগণিত সাঁওতালদের হত্যা করে, বিদেশি নীলকর সাহেবরা কীভাবে বাংলার চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করত, তারা চাষিদের ওপর কীরূপ নির্মম অত্যাচার চালাত, তার বিবরণও ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত।
[3] অর্থনৈতিক দুর্দশা: ব্রিটিশ সরকার বাংলার চাল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানি করে বিনিময়ে মদ আমদানি করত। এর ফলে বাংলার অর্থনৈতিক দুর্দশা ও সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাওয়ার নানা খবর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় প্রকাশিত হত।
[4] নারীর অবস্থা: সমাজে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা ধারাবাহিক প্রচার চালায়। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহের প্রবর্তন করলে হরিশচন্দ্র তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে বিধবাবিবাহের সমর্থনে জনমত গড়ে তোলেন। নারীশিক্ষাকে সমর্থন করে এই পত্রিকায় নারীশিক্ষার সপক্ষে ব্যাপক প্রচার চালায়।
[5] সামাজিক কুসংস্কার: মেয়েদের বাল্যবিবাহ, পুরুষদের বহুবিবাহ, মদ্যপান প্রভৃতি সামাজিক কু-প্রথার বিরুদ্ধে নানা সংবাদ ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় নিয়মিত ছাপা হত।
উপসংহার: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা উনিশ শতকের আর্থ-সামাজিক জীবনের মুখপত্র হয়ে ওঠে। অত্যাচারী নীলকর, জমিদার প্রমুখের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এই পত্রিকা সরব প্রতিবাদ জানায়।
7. বাংলায় নীলচাষিদের কল্যাণে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা কী ছিল?
অথবা, নীলকরদের বিরুদ্ধে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার কী ভূমিকা ছিল?
উত্তর:বাংলায় নীলচাষিদের কল্যাণে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা-
ভূমিকা: উনিশ শতকে নীলকর সাহেবদের শোষণ ও অত্যাচারে বাংলার নীলচাষিদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সাহসী সম্পাদক হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দুর্দশাগ্রস্ত নীলচাষিদের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন।
[1] প্রকৃত তথ্য প্রচার: বিদেশি নীলকর সাহেবরা বাংলার দরিদ্র চাষিদের খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিবর্তে নীলচাষে বাধ্য করত, চাষিদের নানাভাবে ঠকাত। নীলকরদের শোষণ ও অত্যাচারে চাষিদের জীবনে সীমাহীন দুর্দশা নেমে আসত এবং এসব বিষয়ের খবরাখবর হরিশচন্দ্র তাঁর পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশ করতেন।
[2] শিক্ষিতশ্রেণির সচেতনতা বৃদ্ধি: গ্রামবাংলার নীলচাষিদের ওপর সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচারের কাহিনি ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকলে কলকাতার শিক্ষিত উচ্চ ও মধ্যবিত্ত বাঙালি সম্প্রদায় এবিষয়ে বিস্তারে জানতে পারে। ফলে তারা নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠে।
[3] আইনি পরামর্শ দান: হরিশচন্দ্র নীলচাষিদের সমস্যার বিবরণ শুনে তা থেকে তাদের মুক্ত করার জন্য নানাভাবে সহায়তা করতেন। তাদের দরখাস্ত লিখে দেওয়া, প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হতে পরামর্শ দেওয়া প্রভৃতি কাজে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করতেন।
উপসংহার: অত্যাচারিত নীলচাষিদের কল্যাণে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পত্রিকা ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’-এর নতুন বিভাগ ‘নীল জেলা’ নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের নীল বিদ্রোহ কিংবা ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে সরকার কর্তৃক ‘নীল কমিশন’ গঠনের পিছনে এই পত্রিকার প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না।
৪. হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে কী জান?
উত্তর: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়-
ভূমিকা: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় (১৮২৪-১৮৬১ খ্রি.) ছিলেন উনিশ শতকে বাংলার এক নির্ভীক দেশপ্রেমিক, সাংবাদিক এবং সমাজসেবক। ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে নীলচাষিদের দুর্দশার বিবরণ তিনি সকলের সামনে তুলে ধরেন।
[1] প্রথম জীবন: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে ভবানীপুরের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল রামধন মুখোপাধ্যায়। ভবানীপুরের পাঠশালায় পড়ার সময়ই তিনি অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দেন। অত্যন্ত দারিদ্র্যের শিকার হয়ে হরিশচন্দ্র স্কুলজীবন থেকেই বিভিন্ন কাজে যোগ দিয়ে অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন।
[2] পত্রিকার সম্পাদনা: মধুসূদন রায়ের কাছ থেকে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকা ও প্রেসের মালিকানা স্বত্ব কিনে নেন। তাঁর সম্পাদনায় এই পত্রিকার উৎকর্ষ ও জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই পত্রিকায় বাংলার নীলচাষিদের ওপর সীমাহীন অত্যাচারের বিবরণ নিয়মিত প্রকাশ করা হত। ফলে কলকাতার শিক্ষিত সমাজ এ বিষয়ে জানতে পারে এবং প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে।
[3] নীলচাষিদের সহায়তা: বাংলার অত্যাচারিত নীলচাষিদের দুর্দশা মোচনের জন্য হরিশচন্দ্র প্রচুর পরিশ্রম করতেন। চাষিদের আর্থিক সহায়তা, আইনি পরামর্শ প্রভৃতি দানের উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়ির দরজা সর্বদা চাষিদের জন্য খোলা ছিল।
[4] অন্যান্য উদ্যোগ: হরিশচন্দ্র ভারত থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, চিনি, তৈলবীজ প্রভৃতি রপ্তানি ও মদ আমদানির বিরোধিতা করেন। তিনি ডালহৌসির (১৮৪৮-৫৬ খ্রি.) নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী নীতির তীব্র বিরোধিতা করেন। কিন্তু অন্যদিকে তিনি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহে ব্রিটিশদের সমর্থন করেন।
[5] মৃত্যু: সীমাহীন পরিশ্রমের ফলে হরিশচন্দ্রের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। কিছুকাল পর তাঁর যক্ষ্মারোগ ধরা পড়ে। অবশেষে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে (১৪ জুন) মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উপসংহার: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় দেশকল্যাণের কাজে তাঁর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকাকেই হাতিয়ার করে তুলেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর প্রাকমুহূর্তেও জ্বরের ঘোরে তাঁর দায়িত্বপূর্ণ উক্তি ছিল- “ওরে, পেট্রিয়ট মেশিনে ওঠাসনে, প্রুফটা আর-একবার আমাকে দিয়ে দেখিয়ে তবে ছাপিস।”
9. ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকার প্রকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকার প্রকাশ-
ভূমিকা: উনিশ শতকের বাংলায় গ্রামীণ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ‘গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা’ নামের পত্রিকাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
[1] পত্রিকার প্রকাশ: ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা থেকে ‘গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা’ নামে পত্রিকাটির প্রকাশ শুরু হয়। পরে ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত বাংলার কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থেকে ‘মথুরানাথ প্রেস’ (এম এন প্রেস) নামক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে সেখান থেকে পত্রিকা প্রকাশের কাজ চলতে থাকে।
[2] অগ্রগতি: ‘গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকাটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হত। পরে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে পত্রিকাটি পাক্ষিক এবং ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পত্রিকায় পরিণত হয়।
3] সম্পাদক: ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার (১৮৩৩-৯৬ খ্রি.), যিনি কাঙাল হরিনাথ নামেই প্রসিদ্ধ। তিনিই এই পত্রিকার জন্য সংবাদ সংগ্রহ করতেন, সম্পাদনা করতেন এবং পাঠকদের হাতে পৌঁছে দিতেন। অর্থাৎ তিনি ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, সম্পাদক, প্রকাশক এবং বিক্রেতা।
[4] পত্রিকার উদ্দেশ্য: ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ সংবাদগুলি সকলের সামনে তুলে ধরা। পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় (মে, ১৮৬৩ খ্রি.) সম্পাদক হরিনাথ মজুমদার লেখেন, “এ পর্যন্ত বাঙ্গালা সংবাদপত্রিকা যতই প্রচারিত হইতেছে তাহা কেবল প্রধান প্রধান নগর ও বিদেশীয় সম্বাদাদিতেই পরিপূর্ণ। গ্রামীয় অর্থাৎ মফস্সলের অবস্থাদি কিছুই প্রকাশিত হয় না।…. যাহাতে গ্রামবাসীদের অবস্থা… প্রকাশিত হয় তাহাই এই পত্রিকার প্রধানোদ্দেশ্য……।”
[5] আর্থিক সংকট: ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকা কখনও আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে পায়নি। বিভিন্ন সহৃদয় ব্যক্তির আর্থিক সহায়তার দ্বারা দীর্ঘ ২৫ বছর পত্রিকাটি চালু ছিল। অবশেষে মাত্র ৭ টাকা ঋণের দায়ে পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।
উপসংহার: ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকাটি ছিল উনিশ শতকের সময়োপযোগী একটি পত্রিকা। পত্রিকাটি লোকসানে চলা সত্ত্বেও শুধুমাত্র গ্রামীণ মানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে পত্রিকাটি চালু রাখা হয়েছিল।
10 .’গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের বাংলার কী ধরনের সমাজচিত্র পাওয়া যায়?
উত্তর:‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকায় বাংলার সমাজচিত্র-
ভূমিকা: উনিশ শতকে কাঙাল হরিনাথ সম্পাদিত ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ ছিল বাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা। এই পত্রিকায় তৎকালীন বাংলার সমাজজীবনের যথেষ্ট প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। যেমন-
[1] সরকারের শোষণ: ব্রিটিশ সরকারের শোষণ ও অত্যাচারে বাংলার দরিদ্র প্রজাদের জীবন কীরূপ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল তা কাঙাল হরিনাথ তাঁর ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকায় তুলে ধরেন।
[2] জমিদারদের শোষণ: ব্রিটিশ সরকারের সহযোগী বাংলার জমিদার, জোতদার, মহাজন প্রমুখের শোষণ ও অত্যাচার সাধারণ বাঙালি সমাজে কীরূপ দুর্দশার সৃষ্টি করেছিল তাও এই পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় তুলে ধরা হয়, পুলিশের কাছে বিচার চেয়েও এর কোনো প্রতিকার মিলত না। বরং অভিযোগকারীরাই পুলিশের নির্যাতনের শিকার হত।
[3] বিদ্রোহ ও দুর্ভিক্ষের সংবাদ: ১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জে প্রজাবিদ্রোহ শুরু হলে ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ প্রজাদের পক্ষ নেয়। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে দুর্ভিক্ষ শুরু হলে কাঙাল হরিনাথ তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের পক্ষে সোচ্চার হন।
[4] নীলকরদের অত্যাচার: কাঙাল হরিনাথ কিছুদিন নীলকুঠিতে কাজ করার সময় কৃষকদের ওপর নীলকর সাহেবদের শোষণ ও অত্যাচারের বিষয়টি স্বচক্ষে দেখেন। নীলচাষিদের ওপর এই শোষণ ও অত্যাচারের বিবরণ তিনি নিয়মিত তাঁর পত্রিকায় প্রকাশ করতে থাকেন।
উপসংহার: গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার ক্ষেত্রে ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ সংবাদপত্রটি ছিল উপযুক্ত একটি মাধ্যম। এই পত্রিকায় বাংলার সাধারণ মানুষের সামগ্রিক শোষণ-অত্যাচারের ছবি নিয়মিত তুলে ধরে বাংলার মানুষকে সচেতন করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
11. হরিনাথ মজুমদার বা কাঙাল হরিনাথ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর:হরিনাথ মজুমদার বা কাঙাল হরিনাথ-
ভূমিকা: হরিনাথ মজুমদার (১৮৩৩-১৮৯৬ খ্রি.) ছিলেন উনিশ শতকের একজন প্রতিভাবান সাংবাদিক, লেখক, গীতিকার ও মানবতাবাদী। তিনি কাঙাল হরিনাথ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন।
[1] প্রথম জীবন: কাঙাল হরিনাথ ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে অবিভক্ত নদিয়া জেলার কুমারখালিতে (বর্তমান বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল হরচন্দ্র মজুমদার। আর্থিক দুর্দশার কারণে হরিনাথের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশি দূর অগ্রসর হয়নি।
[2] ‘গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা’ প্রকাশ: কাঙাল হরিনাথ নিজের উদ্যোগে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা’ নামে পত্রিকা প্রকাশ করেন। পত্রিকাটি প্রথমে মাসিক হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরে ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাক্ষিক এবং ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সাপ্তাহিক পত্রিকায় পরিণত হয়। এই পত্রিকায় নিয়মিত সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে নানান প্রবন্ধ প্রকাশিত হত।
[3] শোষণের বিরোধিতা: কাঙাল হরিনাথ বাংলার চাষিদের ওপর সরকার ও জমিদারদের শোষণ ও অত্যাচার, নীলচাষিদের ওপর লাঞ্ছনা, সুদখোর মহাজনদের অত্যাচার প্রভৃতি খবরাখবর গুরুত্বের সঙ্গে তাঁর পত্রিকায় প্রকাশ করতেন। এর ফলে এই শোষণ ও অত্যাচারের ঘটনাবলি শিক্ষিত সমাজের নজরে আসে এবং এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে ওঠে।
[4] শিক্ষার প্রসারে ভূমিকা: কাঙাল হরিনাথ তাঁর পত্রিকার মাধ্যমে গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রসারের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যান। তিনি কয়েকজন বন্ধুর সহায়তায় ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে নিজ গ্রামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ওই গ্রামে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় (১৮৫৬ খ্রি.) কৃয়নাথ মজুমদারকে বিশেষভাবে সহায়তা করেন।
[5] সাহিত্য ও সংগীত চর্চা: হরিনাথ বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘বিজয় বসন্ত’, ‘চারু-চরিত্র’, ‘কবিতা কৌমুদী’ প্রভৃতি। আর্থিক দুরবস্থার কারণে একসময় ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ বন্ধ হয়ে গেলে হরিনাথ সাংবাদিকতা ছেড়ে ধর্মসাধনায় মন দেন। তিনি ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে একটি বাউল সংগীতের দল গড়ে তোলেন যা ‘কাঙাল ফকিরের চাঁদের দল’ নামে পরিচিত ছিল। তিনি বেশকিছু বাউল গান রচনা করেন। “হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হল” তাঁর লেখা একটি উল্লেখযোগ্য গান।
উপসংহার: হরিনাথ মজুমদারের সবচেয়ে বড়ো কৃতিত্ব ছিল ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ প্রকাশ। পাশাপাশি শেষজীবনে একজন বাউল সংগীতকার হিসেবে তিনি যেসব গান রচনা করেন সেগুলি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- সহ অনেকের মন জয় করে।
জেনে রাখো:জীবনের অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে মনীষী কাঙাল হরিনাথ ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকা লিখেছিল- “নদিয়া জেলাবাসী একজন মহান ব্যক্তিত্বকে হারাল।”
12.কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ উপন্যাস থেকে তৎকালীন বাংলার কী সমাজচিত্র পাওয়া যায়?
অথবা, ‘হুতোমপ্যাঁচার নকশা’ গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজচিত্র পাওয়া যায়? [Madhyamik 2018]
উত্তর:‘হুতোম প্যাঁচার নক্সা’-য় তৎকালীন বাংলার সমাজচিত্র-
ভূমিকা: সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ (১৮৬১ খ্রি.) উনিশ শতকের বাংলার একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। উনিশ শতকে যেসব বাংলা সাহিত্যগ্রন্থে সেকালের বাংলার সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল এই গ্রন্থ। যেমন-
[1] মধ্যবিত্তদের মানসিকতা: কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থে ‘হুতোম প্যাঁচা’ ছদ্মনামে ঊনবিংশ শতকের বাংলার মধ্যবিত্ত সমাজের মানসিকতা ও ক্রিয়াকলাপের তীব্র সমালোচনা করেন।
[2] বাবুসমাজের জীবনযাত্রা: উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত কলকাতায় হঠাৎ ফুলেফেঁপে ওঠা অত্যন্ত ধনী বাবুদের মধ্যে যে সামাজিক অবক্ষয় শুরু হয়, তার স্বরূপটি ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ গ্রন্থে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাবুসংস্কৃতির তীব্র সমালোচনা করে গ্রন্থটি সমকালীন শিক্ষিত বাঙালিকে সচেতন করে তার সামাজিক দায়িত্ব পালন করেছে।
[3] কলকাতাবাসীর শ্রেণিবিভাগ: কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর গ্রন্থে তৎকালীন কলকাতাবাসীদের তিনভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা- [i] ইংরেজি শিক্ষাপ্রাপ্ত এবং সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী, [ii] ইংরেজি শিক্ষায় নব্যপন্থী, যারা সাহেবি চালচলনের অন্ধ অনুকরণকারী নয় এবং [iii] ইংরেজি না-জানা গোঁড়া হিন্দুসমাজ। কালীপ্রসন্ন সিংহের কথায়, এরা সবাই কমবেশি জাল-জুয়াচুরি বা ফন্দি-ফিকির করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করত।
[4] কলকাতার সামাজিক জীবন: কালীপ্রসন্ন সিংহর ‘হুতোম প্যাঁচার নক্সা’য় তৎকালীন কলকাতার সাধারণ সামাজিক জীবনের ছবি ফুটে উঠেছে। গ্রন্থটির প্রথমভাগে আলোচিত হয়েছে চড়ক পার্বণ, কলিকাতার বারোইয়ারি পূজা, ছেলেধরা, কৃশ্চানি হুজুক, সাতপেয়ে গরু, দরিয়াই ঘোড়া, লক্ষ্ণৌয়ের বাসা এবং দ্বিতীয় ভাগে আলোচিত রথ, দুর্গোৎসব, রামলীলা প্রভৃতি তৎকালীন কলকাতার প্রতিচ্ছবি।
উপসংহার: কালীপ্রসন্ন সিংহের ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ রচনাটি ছিল উনিশ শতকের কলকাতার কথ্য ভাষায় এবং হাস্যরসাত্মক ভঙ্গিতে রচিত একটি ব্যঙ্গাত্মমূলক সাহিত্য। এর মধ্য দিয়ে তৎকালীন ঔপনিবেশিক সমাজের এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
13. কালীপ্রসন্ন সিংহ সম্পর্কে কী জান?
উত্তর: কালীপ্রসন্ন সিংহ-
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন কালীপ্রসন্ন সিংহ। তিনি ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার এক ধনী জমিদার বংশে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ২৯ বছরের স্বল্পকালীন জীবনে তিনি সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখেন।
[1] বিদ্যোৎসাহিনী সভা: কালীপ্রসন্ন সিংহ মাত্র ১৫ বছর বয়সে বিদ্যোৎসাহিনী সভা (১৮৫৫ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। এই সভার সদস্যরা প্রতি সপ্তাহে মিলিত হয়ে প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা করতেন। এই সভা বিধবাবিবাহ ও সমাজসংস্কারের পক্ষে নানা মতামত প্রচার করত। এই সভা মাইকেল মধুসূদন দত্তকে গণ-সংবর্ধনা (১৮৬১ খ্রি.) দেয়।
[2] লং-এর জরিমানা: দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০ খ্রি.) নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করার অভিযোগে জেমস লং-এর একমাস কারাদণ্ড ও ১ হাজার টাকা জরিমানা হলে (১৮৬১ খ্রি.) কালীপ্রসন্ন সিংহ জরিমানার টাকা তৎক্ষণাৎ পরিশোধ করে দেন।
[3] সাহিত্যকীর্তি: কালীপ্রসন্ন সিংহের অমর সাহিত্যকীর্তি হল ‘হুতোমপ্যাঁচার নক্সা’ রচনা। এই উপন্যাসে তিনি উনিশ শতকের বাঙালি মধ্যবিত্ত, ইংরেজি শিক্ষাপ্রাপ্ত কলকাতাবাসী এবং সামাজিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়া বাবু সম্প্রদায়ের মানসিকতার তীব্র সমালোচনা করেছেন। কলকাতার কথ্যভাষায় (Calcutta Cockney) এই উপন্যাস রচনা করে তিনি বাংলা গদ্যরীতির নতুন পথের সন্ধান দেন। এ ছাড়া তিনি সতেরো খণ্ডে মহাভারতের বাংলা অনুবাদ ও ‘পুরাণসংগ্রহ’ রচনা করেন।
[4] মানবকল্যাণ: কালীপ্রসন্ন সিংহ একজন জমিদার হলেও সেকালে মানবদরদী ব্যক্তি হিসেবেও যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তিনি দুর্দশাগ্রস্ত বহু মানুষকে অকাতরে দান করতেন।
বিধবাবিবাহ আইন পাস হলে তিনি বিধবা-বিবাহকারীকে ১ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
[5] আর্থিক দুর্দশা: অকাতরে দান ও সমাজকল্যাণে অর্থব্যয় করে কালীপ্রসন্ন গভীরভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। ঋণের দায়ে তিনি উড়িষ্যার জমিদারি এবং কলকাতার বেঙ্গল ক্লাব বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। তিনি বন্ধু এবং আত্মীয়দের দ্বারাও প্রতারিত হন।
[6] মৃত্যু: কালীপ্রসন্ন ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২৯ বছর বয়সে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর কৃষ্ণদাস পাল লিখেছেন, “… কালীপ্রসন্ন ছিলেন একটি উজ্জ্বল চরিত্র এবং এমন একটি প্রদীপ্ত প্রতিশ্রুতিবান কর্মজীবনের এভাবে একটি আকস্মিক এবং দুঃখজনক সমাপ্তির জন্য আমরা পর্যাপ্তরূপে আমাদের খেদ প্রকাশ করতে অপারগ।”
উপসংহার: প্রচণ্ড ধীশক্তির অধিকারী কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর স্বল্প জীবনকালের মধ্যে যা কিছু করে গেছেন তা আমাদের বিস্ময় সৃষ্টি করে। দুঃখের বিষয়, এই মহান মানুষটির জীবনের আকস্মিক এবং দুঃখজনক পরিসমাপ্তি ঘটেছিল।
14. *দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকে সমকালীন বাংলার সমাজচিত্র কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছিল?
অথবা, ‘নীলদর্পণ’ নাটক সম্পর্কে কী জান? অথবা, ‘নীলদর্পণ’ নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায়? [Madhyamik 2019]
উত্তরঃ ‘নীলদর্পণ’ নাটকে সমকালীন বাংলার সমাজচিত্র-
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলার সমাজজীবনের চিত্র যেসব সাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে সেগুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিল দীনবন্ধু মিত্রের লেখা নাটক ‘নীলদর্পণ’।
[1] প্রেক্ষাপট: উনিশ শতকে ইউরোপের বস্ত্রশিল্পের প্রয়োজনে নীলের চাহিদা যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতিতে ইংরেজ-সহ বিভিন্ন ইউরোপীয় ব্যবসায়ী বাংলায় এসে এখানকার চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করে। এর ফলে বাংলার চাষিদের জীবনে চরম দুর্দশা নেমে আসে। এই প্রেক্ষাপটে দীনবন্ধু মিত্র ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০ খ্রি.) নাটকটি রচনা করে তা ঢাকা থেকে প্রকাশ করেন।
[2] চাষিদের দুর্দশা: অত্যাচারী নীলকর সাহেবরা বাংলার দরিদ্র চাষিদের ধানের পরিবর্তে নীলচাষে বাধ্য করে। ফলে চাষিদের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এদিকে নীল উৎপাদন করে চাষি যথার্থ মূল্য থেকেও বঞ্চিত হয়। এর ফলে আর্থিক দিক থেকে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জীবনে নেমে আসা দুর্দশা যা ‘নীলদর্পণ’ নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয়।
[3] অত্যাচার: ‘নীলদর্পণ’ নাটকে নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের সীমাহীন শোষণ ও অত্যাচারের বিবরণ সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়। চাষিদের জমি থেকে উৎখাত, গোরু-বাছুর কেড়ে নেওয়া, ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো, নীলকুঠিতে চাষিকে ধরে নিয়ে গিয়ে অমানবিক শারীরিক নির্যাতন চালানো প্রভৃতি এই নাটকে তুলে ধরা হয়। নাটকে উল্লিখিত নীলকর উড-এর অত্যাচার মানুষের মনে শিহরণ সৃষ্টি করে।
[4] নীল বিদ্রোহ: তীব্র শোষণ ও অত্যাচারের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার দরিত্র নীলচাষিরা ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে যা ‘নীলবিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। ‘নীলদর্পণ’ নাটকে এই বিদ্রোহের সূত্রপাত ও প্রসারের চিত্র প্রতিফলিত হয়।
উপসংহার: উনিশ শতকের বাংলার কৃষক সমাজের ওপর নীলকর সাহেবদের অত্যাচার ও তাদের দুঃখ-দুর্দশার ছবি জ্বলন্ত হয়ে উঠেছিল দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকে। এই নাটকে বাংলার কৃষকদের অসহায়তার যে মর্মস্পর্শী ছবি তুলে ধরা হয়েছে তা ইংল্যান্ডের বহু সভ্য ইংরেজের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল।
15 .দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকের গুরুত্ব কী?
উত্তর: ‘নীলদর্পণ’ নাটকের গুরুত্ব-
ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলার নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের শোষণ, অত্যাচার ও নীলবিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্ট নাট্যকার ও সমাজসেবক দীনবন্ধু মিত্র (১৮২৯-১৮৭৩ খ্রি.) ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০খ্রি.) নাটক রচনা করেন। সমকালীন প্রেক্ষাপটে এই নাটকের অপরিসীম গুরুত্ব ছিল। যেমন-
[1] নীলচাষিদের দুর্দশা: নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে বাংলার চাষিদের বাধ্য হয়ে নীলচাষ করা, চাষিদের ওপর নীলকরদের সীমাহীন নির্যাতন চালানো, তার ফলে নীলবিদ্রোহের সূত্রপাত (১৮৫৮ খ্রি.) প্রভৃতি বিভিন্ন ঘটনার চিত্র ‘নীলদর্পণ’ নাটকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
[2] শিক্ষিতসমাজে আলোড়ন: ‘নীলদর্পণ’ নাটকে নীলচাষিদের ওপর যে নির্মম অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়, তা থেকে শিক্ষিতসমাজ নীলচাষিদের ওপর নীলকরদের এইসব জুলুম ও অত্যাচার সম্পর্কে জানতে পারে। ফলে বাংলার শিক্ষিতসমাজে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
[3] ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ: ‘নীলদর্পণ’-ই হল প্রথম বাংলা ভাষায় লেখা নাটক যা ইংরেজিতে অনূদিত হয়। ইংরেজি অনুবাদটি খ্রিস্টান পাদ্রি রেভারেন্ড জেমস লং-এর নামে প্রকাশিত হয়। অনেকে মনে করেন, মাইকেল মধুসূদন দত্ত এই গ্রন্থটির অনুবাদ করেন এবং ব্রিটিশ সরকারের শাস্তি এড়াতে তা লং সাহেবের নামে প্রকাশ করেন। যাই হোক, সরকার লং সাহেবকে অভিযুক্ত (১৮৬১ খ্রি.) করে। বিচারে তাঁর একমাস কারাদণ্ড এবং ১ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য হয়।
[4] ইউরোপে প্রচার: ইংরেজি-সহ কিছু ইউরোপীয় ভাষায় এই নাটকটি অনূদিত হয়। ‘নীলদর্পণ’ নাটক থেকে ইউরোপের মানুষ বাংলার চাষিদের ওপর নির্মম অত্যাচারের কাহিনি জেনে শিহরিত হয়।
উপসংহার: দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটক শুধুমাত্র নীলচাষিদের দুর্দশাকেই তুলে ধরেনি; এই নাটক সাম্রাজ্যবাদী শোষণ ও অত্যাচার সম্পর্কে শিক্ষিত বাঙালি সমাজকে সচেতন ও প্রতিবাদী করে তোলার মাধ্যমে তাদের মনে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়েছিল।
5. Fill in The Blanks
1. ————————- ছিলেন ‘আধুনিক ভারতের জনক’।
উত্তর: রাজা রামমোহন রায়
2. ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন —————————- ।
উত্তরঃ ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় গেজেট
3. গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য সম্পাদিত সংবাদপত্র ছিল ———————– ।
উত্তরঃবাঙ্গালা
4. ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ ———————- পালন করে। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
উত্তরঃ গ্রামীণ
5. ইউরোপীয়রা —————————-খবর জানতে পারে। পত্রিকা থেকে নীলচাষিদের ওপর অত্যাচারের ।
উত্তরঃ হিন্দু প্যাট্রিয়ট
6. নীলচাষিদের ওপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয় ——————————-।
উত্তরঃহিন্দু প্যাট্রিয়ট প্যাঁচার নক্সা
7. ব্যঙ্গ-বিদ্রূপাত্মক সামাজিক রচনার একটি উদাহরণ হল ————————-।
উত্তরঃ হুতোম
8. —————————-গ্রন্থে কলকাতার বাবুদের সামাজিক অবক্ষয় তুলে ধরা হয়েছে।
উত্তরঃ হুতোমপ্যাঁচার নক্সা
6. True and False
1. উনিশ শতকের একটি উল্লেখযোগ্য সাময়িকপত্র ছিল ‘বামাবোধিনী’ নামে মাসিক পত্রিকা।
উত্তরঃঠিক
2. ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ। [Madhyamik 2019]
উত্তরঃ ঠিক
3. ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকাটি প্রথমে সাপ্তাহিক ছিল, পরে এটি দৈনিকে রূপান্তরিত হয়।
উত্তরঃঠিক
4. উমেশচন্দ্র দত্তর কাছ থেকে হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকার প্রেস ও কাগজ স্বত্ব কিনে নেন।
উত্তরঃ ভুল
5. গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা পত্রিকা প্রকাশ করেন হরিনাথ মজুমদার।
উত্তরঃ ঠিক
6. নীলচাষিদের ওপর শোষণের প্রতিকারের চিন্তা করে কাঙাল হরিনাথ ‘গ্রামবার্তাপ্রকাশিকা’ প্রকাশ করেন।
উত্তরঃঠিক
7. হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়কে একবার জমিদারদের আক্রমণের হাত থেকে লালন ফকির তাঁর দলবল নিয়ে রক্ষা করেন।
উত্তরঃভুল
৪. ‘নীলদর্পণ’ নাটকের প্রেক্ষাপটে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলায় নীলবিদ্রোহ সংঘটিত হয়।
উত্তরঃভুল
9. ‘কাঙাল ফকির চাঁদ’ নামে হরিনাথ মজুমদার বাউলগান লেখেন।
উত্তরঃ ঠিক
10. হেমাঙ্গ বিশ্বাস ছিলেন একজন গণসংগীত শিল্পী।
উত্তরঃঠিক