Class 8 History Chapter 4 Solution
ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র
1. MCQs Question Answer
1. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়েছিল-
(a) 1784 খ্রিস্টাব্দে (b) 1793 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1770 খ্রিস্টাব্দে (d) 1772 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (b) 1793 খ্রিস্টাব্দে।
2. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন-
(a) লর্ড কর্নওয়ালিস (b) ওয়ারেন হেস্টিংস
(c) লর্ড ওয়েলেসলি (d) লর্ড ক্লাইভ
উত্তর: (a) লর্ড কর্নওয়ালিস।
3. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সনদ নবীকরণ করা হত-
(a) 10 বছর অন্তর (b) 20 বছর অন্তর
(c) 30 বছর অন্তর (d) 40 বছর অন্তর
উত্তর: (b) 20 বছর অন্তর।
4. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্যবসার একচেটিয়া অধিকার হারায়-
(a) 1757 খ্রিস্টাব্দে (b) 1813 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1857 খ্রিস্টাব্দে (d) 1765 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (b) 1813 খ্রিস্টাব্দে।
5. রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন-
(a) স্যার জন শোর (b) ওয়ারেন হেস্টিংস
(c) ফিলিপ ফ্রান্সিস (d) টমাস মনরো
উত্তর: (d) টমাস মনরো।
6. মহলওয়ারি বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন-
(a) টমাস মনরো (b) ক্যাপটেন রিড
(c) হোল্ট ম্যাকেঞ্জি (d) লর্ড কর্নওয়ালিস
উত্তর: (c) হোল্ট ম্যাকেঞ্জি।
7. আবওয়াব হল- (হাওড়া জেলা স্কুল)
(a) দাদন (b) কর
(c) অতিরিক্ত কর (d) বেগার কর
উত্তর: (c) অতিরিক্ত কর।
8. ভারতে আমিনি কমিশন গঠন করা হয়-
(a) 1776 খ্রিস্টাব্দে (b) 1793 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1822 খ্রিস্টাব্দে (d) 1853 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (a) 1776 খ্রিস্টাব্দে।
9. বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর দেখা দেয়-
(a) 1776 খ্রিস্টাব্দে (b) 1765 খ্রিস্টাব্দে
(c) 1770 খ্রিস্টাব্দে (d) 1757 খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (c) 1770 খ্রিস্টাব্দে।
10. সম্পদের নির্গমন তত্ত্বটি প্রচার করেন-
(a) ঐতিহাসিক মার্শম্যান (b) ফিলিপ ফ্রান্সিস
(c) দাদাভাই নৌরজি (d) বিপান চন্দ্র
উত্তর: (c) দাদাভাই নৌরজি।
11. ভারতে রেলপথ নির্মাণ শুরু করেন-
(a) লর্ড হেস্টিংস (b) লর্ড কর্নওয়ালিস
(c) লর্ড ডালহৌসি (d) লর্ড ওয়েলেসলি
উত্তর: (c) লর্ড ডালহৌসি।
12. কুলি কাহিনী নিবন্ধ প্রকাশিত হয়-
(a) সমাচারদর্পণ-এ (b) দিগদর্শন-এ
(c) বেঙ্গল গেজেট-এ (d) সঞ্জীবনী-তে
উত্তর: (d) সঞ্জীবনী-তে।
13. কুলি কাহিনির লেখক হলেন-
(a) দ্বারকানাথ ঠাকুর (b) রামকুমার বিদ্যারত্ন
(c) রাজা রামমোহন (d) অক্ষয় কুমার দত্ত
উত্তর: (b) রামকুমার বিদ্যারত্ন।
14. ব্রিটিশ আমলে একটি বাণিজ্য ফসল হল-
(a) ধান (b) নীল
(c) সরষে (d) পাট
উত্তর: (b) নীল।
15. ‘মহল’ কথার অর্থ হল-
(a) গ্রামের সমষ্টি (b) শহরের সমষ্টি
(c) জেলার সমষ্টি (d) রাজ্যের সমষ্টি
উত্তর: (a) গ্রামের সমষ্টি।
2. Very Short Question Answer
1. পাঁচশালা বন্দোবস্ত কে চালু করেন?
উত্তর: ওয়ারেন হেস্টিংস চালু করেন।
2. দশশালা বন্দোবস্ত কে চালু করেন?
উত্তর: লর্ড কর্নওয়ালিস চালু করেন।
3. বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থা কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর: বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন লর্ড কর্নওয়ালিশ।
4. কে, কবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন?
উত্তর: লর্ড কর্নওয়ালিস 1793 খ্রিস্টাব্দে চালু করেন।
5. বাংলায় কে জমিদারি ব্যবস্থা প্রচলন করেন?
উত্তর: বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থা প্রচলন করেন কর্নওয়ালিশ।
6. কার আমলে রাজস্ব বোর্ড স্থাপিত হয়?
উত্তর: ওয়ারেন হেস্টিংস-এর আমলে স্থাপিত হয়।
7. রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের প্রবর্তক কে ছিলেন?
উত্তর: ক্যাপটেন আলেকজান্ডার রিড রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন।
8. কে, মহলওয়ারি ব্যবস্থা চালু করেন?
উত্তর: হোল্ট ম্যাকেঞ্জি মহলওয়ারি ব্যবস্থা চালু করেন।
9. ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দামি রত্ন কোন দেশ ছিল?
উত্তর: ভারতবর্ষ ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দামি রত্ন।
10. ‘মহল’ কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: ‘মহল’ কথাটির অর্থ গ্রামের সমষ্টি।
11. আবওয়াব কী?
উত্তর: নির্ধারিত রাজস্বের অতিরিক্ত করকে আবওয়াব বলা হয়।
12. আযোধ্যায় প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা কী নামে পরিচিত ছিল?
উত্তর: তালুকদারি ব্যবস্থা নামে পরিচিত ছিল।
13. মহাজনি কারবার বলতে কী বোঝো?
উত্তর: সুদের বিনিময়ে ঋণ দান এর কারবার মহাজনি কারবার নামে পরিচিত।
14. দুটি বাণিজ্যিক ফসলের নাম লেখো।
15. কোন্ আইন অনুযায়ী ইউরোপীয়রা ভারতে জমি ক্রয়ের অধিকার লাভ করে?
উত্তর: 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইন অনুযায়ী ভারতে জমি কেনার অধিকার লাভ করে।
16. নীল বিদ্রোহ কবে শুরু হয়েছিল?
উত্তর: 1859-60 খ্রিস্টাব্দে নীল বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল।
17. দাক্ষিণাত্যের হাঙ্গামা কোন্ ভূমি রাজস্ব নীতির ফলশ্রুতি ছিল?
উত্তর: রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ফলশ্রুতি ছিল।
18. Bengal Tenancy Act কবে চালু হয়?
উত্তর: 1885 খ্রিস্টাব্দে চালু হয়।
19. ‘দাদন’ কথার অর্থ কী?
উত্তর: ‘দাদন’ কথার অর্থ হল-অগ্রিম অর্থ প্রদান করা।
20. বাগিচা শিল্প কোথায় গড়ে উঠেছিল?
উত্তর: আসাম, বাংলা, দক্ষিণভারত ও হিমাচল প্রদেশের পার্বত্য অঞ্চলে বাগিচা শিল্প গড়ে উঠেছিল।
21. ভারতে রেলপথের জনক কাকে বলা হয়?
উত্তর: লর্ড ডালহৌসিকে ভারতে রেলপথের জনক বলা হয়।
22. ভারতে ডাক ও তার বিভাগের প্রচলন কে করেন?
উত্তর: লর্ড ডালহৌসি ভারতে ডাক ও তার বিভাগের প্রচলন প্রচলন করেন।
23. সম্পদের বহির্গমন তত্ত্বের জনক কে ছিলেন?
উত্তর: দাদাভাই নৌরজি হলেন এই তত্ত্বের জনক।
24. কোন আইনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আইন ভিত্তি বলে ধরা হয়?
উত্তর: 1784 খ্রিস্টাব্দে প্রণীত পিটের ভারত শাসন আইনকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের আইন ভিত্তি বলে।
25. দুটি বাগিচা ফসলের নাম লেখো।
উত্তর: চা ও কফি হল দুটি বাগিচা ফসল।
26. বাগিচা শিল্প কোথায় গড়ে ওঠে?
উত্তর: দক্ষিণে কেরালা এবং বাংলার দার্জিলিং ও আসামে বাগিচা শিল্প গড়ে ওঠে।
27. ‘বঙ্গদেশের কৃষক’ প্রবন্ধটি কে লিখেছেন?
উত্তর: ‘বঙ্গদেশের কৃষক’ প্রবন্ধটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন।
28. ভারতে প্রথম পাটকল কোথায় গড়ে ওঠে?
উত্তর: ভারতে প্রথম পাটকল হুগলির রিষড়াতে গড়ে উঠেছিল।
29. দশসালা বন্দোবস্ত কত খ্রিস্টাব্দে চালু হয়?
উত্তর: দশসালা বন্দোবস্ত ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে চালু হয়।
30. দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা কবে হয়েছিল?
উত্তর: 1875 খ্রিস্টাব্দের 12ই মে দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা হয়েছিল।
31. কবে, কোথায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হয়?
উত্তর: 1770 খ্রিস্টাব্দে, 1176 বঙ্গাব্দে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হয়। ছিয়াত্তরের মন্বন্তর হয়েছিল সমগ্র বাংলায়।
3. Short Question Answer
1. সূর্যাস্ত আইন কাকে বলে?
উত্তর: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রধানতম শর্ত ছিল-বাংলা বছরের শেষ দিনে সূর্যাস্তের আগে জমিদারগণ নিজেদের প্রদেয় রাজস্ব প্রদান না করলে তাদের জমিদারি বাজেয়াপ্ত করা হবে। এই আইন সূর্যাস্ত আইন নামে পরিচিত।
2. কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে পরিচালিত কৃষিকাজ পরিচালন পদ্ধতিকে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলা হয়।
এই ব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল খাদ্য ফসলের পরিবর্তে শিল্পের উপকরণমূলক ফসল চাষ। যেমন- তুলা, নীল, আখ, পাট, চা, কফি প্রভৃতি ফসল চাষে গুরুত্ব দেওয়া।
3. দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা কেন হয়েছিল?
উত্তর: 1875 খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভারতে সংঘটিত দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামার কারণগুলি হল- (i) রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কৃষকদের প্রদত্ত উচ্চহারে কর। (ii) আমেরিকার গৃহযুদ্ধের অবসানের ফলে ইংল্যান্ডে তুলার চাহিদা হ্রাস পাওয়া। (iii) তুলার দাম কমা সত্ত্বেও রাজস্বের হার না কমানো প্রভৃতি।
4. সম্পদের বহির্গমন কাকে বলে?
উত্তর: সম্পদের বহির্গমন কথার অর্থ হল প্রতিদানহীনভাবে একদেশের সম্পদ অন্যদেশে চলে যাওয়া। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের টাকায় ভারতীয় পণ্য কিনে অথবা নজরানা বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ ইংল্যান্ডে নিরবচ্ছিন্নভাবে চালান দেওয়ার ফলে ভারত আর্থিক দিক দিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। একেই সম্পদের বহির্গমন বলে।
5. অবশিল্পায়ন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: 1813 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে ভারতের বাজারের একচেটিয়া অধিকার চলে যায়। সেই সময় থেকেই ধীরে ধীরে বিভিন্ন ব্রিটিশ পণ্য ভারতে আমদানি করা হতে থাকে। তার ফলে নানারকম বৈষম্যমূলক প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয়ে ভারতের দেশীয় শিল্পগুলি ক্রমে ধ্বংস হতে থাকে। ভারতীয় শিল্পের এই অবলুপ্তির প্রক্রিয়াকে অবশিল্পায়ন বলা হয়।
6. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বলতে কী বোঝো?
উত্তর: বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে বাংলার জমিদারদের বংশ পরম্পরায় জমিদারি ভোগ দখলের যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
7. কী উদ্দেশ্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়?
উত্তর: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের উদ্দেশ্য হল- (i) রাজস্বের পরিমাণ চিরস্থায়ী ভাবে নির্ণয় করা। (ii) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করা। (iii) কোম্পানির অনুগ্রহভাজন এক প্রভাবশালী শ্রেণি তৈরি করা।
8. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দুটি সুফল লেখো।
উত্তর: (i) সরকারি বাজেট তৈরি করা সুবিধাজনক হয়। (ii) জমিদারি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার ফলে জমিদারগণ রায়ত ও জমির উন্নতিতে সচেষ্ট হয়।
9. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের দুটি কুফল লেখো।
উত্তর: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে- (i) রায়ত বা কৃষকরা জমিদারের ভূমিদাসে পরিণত হয়। (ii) শহরকেন্দ্রিক জমিদার শ্রেণির উৎপত্তির ফলে স্ব-নির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়।
10. রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মাদ্রাজ ও বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে জমি বন্দোবস্ত ও রাজস্ব নির্ধারণ-এর ব্যবস্থা করে। এটি রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
11. মহলওয়ারি বন্দোবস্ত কাকে বলে?
উত্তর: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে উত্তর-পশ্চিম ভারত ও মধ্যভারতে কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত মহল-এর রাজস্ব একজন বা কয়েকজন ব্যক্তির সাহায্যে আদায়ের ব্যবস্থাকে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত বলা হয়। জমির উৎপাদিকা শক্তি অনুযায়ী কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত মহল-এর পক্ষ ২০-৩০ বছরের জন্য এই বন্দোবস্ত চালু হয়।
12. ভাইয়াচারী ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: পাঞ্জাবের কয়েকটি অঞ্চলে জনপ্রতিনিধি ও কালেক্টরের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজস্বের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। প্রতিটি কৃষক আলাদা ভাবে রাজস্ব প্রদানের অধিকারী ছিল। ম্যাকেঞ্জি প্রবর্তিত এই ব্যবস্থা ভাইয়াচারি ব্যবস্থা নামে পরিচিত ছিল।
13. আবওয়াব কী?
উত্তর: আবওয়াব শব্দের অর্থ হল অতিরিক্ত কর। এর মাধ্যমে ঔপনিবেশিক আমলে নির্ধারিত রাজস্বের উপর এক প্রকার বাড়তি কর আদায় করে জমিদার, তালুকদার, সরকার রায়তদের ওপর আইন বহির্ভূত ভাবে শোষণ চালাত।
14. দাদন প্রথা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: পলাশির যুদ্ধের পর থেকে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নীল-সহ অন্যান্য অর্থকরী ফসল চাষের জন্য চাষিদের অগ্রিম অর্থ দিত। কোম্পানির পক্ষ থেকে অগ্রিম অর্থ নেওয়ায় চাষিরা কোম্পানি ছাড়া আর অন্য কোথাও উৎপন্ন ফসল বিক্রি করতে পারত না। যা ‘দাদন প্রথা’ নামে পরিচিত।
15. পত্তনি প্রথা কী?
উত্তর: ঔপনিবেশিক শাসনে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য জমিদার তাঁর বন্দোবস্ত নেওয়া জমিকে কয়েকটি ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করতেন। তারপর নির্দিষ্ট খাজনা প্রদানের শর্তে সেই জমি অন্যের কাছে বন্দোবস্ত দিতেন। এই ব্যবস্থা, ‘পত্তনি প্রথা’ নামে পরিচিত।
16. অবাধ বাণিজ্য বলতে কী বোঝো?
উত্তর: 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার আইন অনুযায়ী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পাশাপাশি ইংল্যান্ডের অন্যান্য বণিকেরাও ভারতে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে। একেই অবাধ বাণিজ্য বলা হয়।
17. প্রজাস্বত্ব আইন কী?
উত্তর: ১৮৮৫ খ্রি. ব্রিটিশ সরকার জমিদারদের অত্যাচারের হাত থেকে কৃষকদের রক্ষা করার জন্য এক আইন পাস করে। যা প্রজাস্বত্ব আইন নামে পরিচিত। এই আইন অনুসারে অস্থায়ী রায়ত বা কৃষকদের দখলি-স্বত্ব দেওয়া হয়।
18. ঔপনিবেশিক আমলে ব্যাংক ব্যবস্থায় কীভাবে বৈষম্য করা হতো?
উত্তর: ঔপনিবেশিক আমলে ভারতীয় ব্যাংকগুলি মূলত ইউরোপীয়দের দ্বারা পরিচালিত হত। এইসব ব্যাংকগুলি ভারতীয় শিল্পপতিদের ঋণ দিতে চাইত না। দিলেও নানাবিধ শর্ত চাপিয়ে দিত এবং অতিরিক্ত সুদ আদায় করতো।
19. ভারতে বস্ত্র শিল্পের ধ্বংসের প্রধান দুটি কারণ লেখো।
উত্তর: ভারতে বস্ত্র শিল্পের ধ্বংসের প্রধান দুটি কারণ- (i) তুলার ব্যবসার উপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া অধিকার স্থাপনের ফলে ভারতীয় তাঁতিরা তুলা কিনত অনেক বেশি দামে। (ii) দেশীয় রাজ্যগুলোর পতনের ফলে মিহি সূক্ষ্ম বস্ত্রের চাহিদা কমে যায়।
20. দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের দুটি ফলাফল লেখো।
উত্তর: দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের ফলে- (i) ভারত কাঁচামাল রপ্তানি ও শিল্পজাত পণ্য আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়। (ii) কারিগর শ্রেণি কৃষিক্ষেত্রে ভিড় করলে কৃষির উপর চাপ পড়ে। অর্থনৈতিক মন্দা দেখা যায়।
21. কোম্পানির অধীনে ভারতীয় অর্থনীতির চরিত্রের মূল তিনটি বিষয় কী কী?
উত্তর: কোম্পানির শাসনে ভারতীয় অর্থনীতির চরিত্রের মূল তিনটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এগুলি হল-সম্পদের বহির্গমন, অবশিল্পায়ন এবং ভারতীয়দের দারিদ্র্য।
22. ‘অবশিল্পায়ন’ কী?
উত্তর: শিল্পায়নের বিপরীতমুখী অবস্থাই হল অবশিল্পায়ন/ব্রিটিশ আমলে ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটির শিল্পের ধ্বংস সাধনকেই সাধারণত অবশিল্পায়ন বলা হয়। এর ফলে বেকারত্ব বাড়ে। শহরগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয় এবং ভারত কাঁচামাল সরবরাহের দেশে রূপান্তরিত হয়।
23. ভারতে রেলপথ স্থাপনে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: ভারতে রেলপথ স্থাপনে কোম্পানির উদ্দেশ্য ছিল-(i) ভারতে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ব্রিটিশ পণ্য পৌঁছে দেওয়া। (ii) অতি দ্রুত সেনাবাহিনী পাঠিয়ে এবং যেকোনো বিদ্রোহ দমন করা। (iii) ব্রিটিশ শিল্পপতিদের মূলধন বিনিয়োগের ব্যবস্থা করা।
24. ভারতে টেলিগ্রাফ স্থাপনের পিছনে ব্রিটিশ সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: ভারতে টেলিগ্রাফ স্থাপনের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল- (i) সমগ্র ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের খবর অতি দ্রুত সংগ্রহ করা। (ii) অতি দ্রুত প্রশাসনিক নির্দেশ প্রেরণ করা। (iii) ইংল্যান্ডের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করা।
25. বাগিচা শিল্প বলতে কী বোঝো?
উত্তর: বিপুল পরিমাণ জমিকে ঘিরে নিয়ে তাতে একই রকম ফসল বাণিজ্যিক কারণে চাষ করাকে বাগিচা শিল্প বলা হয়। ভারতে চা, কফি ও নীল ছিল বাগিচা ফসল।
26. মসলিন কী? এই শিল্পের ধ্বংসের মূল কারণ কী?
উত্তর: মসলিন হল প্রধানত বাংলার ঢাকা অঞ্চলে উৎপাদিত অতি সূক্ষ্ম সূতির কাপড়। এই শিল্পের ধ্বংসের কারণ হল- (ⅰ) দামি মসলিন এর দেশীয় ক্রেতার অভাব। (ii) কোম্পানি কর্তৃক বিভিন্ন মসলিন তাঁতির বুড়ো আঙুল কেটে নেওয়া।
27. অর্থনীতির আধুনিকীকরণ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে নিজেদের স্বার্থে চিরাচরিত কৃষি পণ্যের পরিবর্তে চা, নীল, পাট, তুলার মতো অর্থনৈতিক ফসল চাষে চাষিদের বাধ্য করে। রেলপথ স্থাপন করে বিদেশি পণ্যে বাজার ছেয়ে ফেলে। একেই অর্থনীতির আধুনিকীকরণ বলা হয়।
28. দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: বহিরাগত ব্যবসায়ীদের উৎপীড়ন, সাউকার বা মহাজনদের অত্যাচার, সরকারি রাজস্বের উচ্চহার এবং তুলার দাম অত্যধিক হ্রাস পাওয়ার ফলে সর্বস্বান্ত হয়ে যাওয়া মহারাষ্ট্রের পুনা ও আহমদনগর এলাকার রায়তরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সরকার এই বিদ্রোহকে দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা নামে অভিহিত করে। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই বিদ্রোহ চলে। ইহাই দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা নামে পরিচিত।
4. Long Question Answer
1. ভারতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন বলা হত কেন?
উত্তর: ব্রিটিশ উপনিবেশ পৃথিবীর সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়লেও প্রাকৃতিক সম্পদ, জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিক থেকে তাদের কাছে ভারত ছিল শ্রেষ্ঠ। ভারতীয় অর্থনীতির অভিমুখ ছিল ব্রিটেনের স্বার্থে পরিচালিত। মহাবিদ্রোহের (১৮৫৭ খ্রি.) পর থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রয়োজনে যথেচ্ছোভাবে ভারতীয় সম্পদ ব্যবহার করা হয়। ভারতকে ব্রিটিশ পণ্যের উন্মুক্ত বাজার হিসাবে ব্যবহর করা হয়। ল্যাঙ্কাশায়ারে তৈরি সূতি কাপড়ের ৮৫% কাপড় বিক্রি হত ভারতে। ভারতে রেলগাড়ি ও রেলপথ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ১৭% লোহা ও ইস্পাত ব্রিটেন থেকে আনা হত।
2. বাংলার কৃষক সমাজের ওপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রভাব কেমন ছিল বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: ভূমিকা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে যে সকল ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করেছিল চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ব্যবস্থা।
প্রভাব : চিরস্থায়ী ব্যবস্থা কৃষক সমাজের উপর দ্বি-মুখী প্রভাব ফেলেছিল। যেমন-
সুফল : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে-
(i) জমির পরিমাণ বৃদ্ধি : পতিত জমি উদ্ধার করে তাকে চাষযোগ্য করায় কৃষকদের হাতে অনেক বেশি চাষযোগ্য জমি তুলে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল।
(ii) রাজস্বের স্থিরতা : নির্দিষ্ট জমির জন্য কৃষকদের প্রদেয় রাজস্বের পরিমাণ নিশ্চিত করা হয়েছিল বলে বর্ধিত রাজস্ব তাদের দিতে হতো না।
(iii) সংস্কারমূলক কাজ : জমিদারির ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর জমিদারগণ নানাবিধ সংস্কারমূলক কাজ শুরু করেন। যেমন পুকুর কাটা, বিদ্যালয় স্থাপন, চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা, রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রভৃতি। এর সুফল কৃষক সমাজের কাছেও পৌঁছেছিল।
(iv) প্রজাহিতৈষী জমিদার: এক শ্রেণির জমিদারগণ প্রজাদের তথা কৃষকদের নানাবিধ উন্নয়নে সচেষ্ট হয়েছিল বলে, বাংলার কৃষক সমাজের একটি অংশ আর্থিক ভাবে উপকৃত হয়েছিল।
কুফল : অনেকে বলেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কৃষকদের জীবনে দুঃখদুর্দশার কারণ হয়ে উঠেছিল। এর ফলে-
(i) মালিকানা স্বত্ব : জমির মালিকানা স্বত্ব জমিদারের ছিল বলে যে-কোনো সময় কৃষকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করা হতো।
(ii) চুক্তির অংশ: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়েছিল কোম্পানি ও জমিদারদের মধ্যে। চুক্তির অংশ ছিল না বলে জমিদারদের ভাড়াটে কৃষক ভূমিদাসে পরিণত হয়।
(iii) উপরি অর্থ আদায় : নানাভাবে কৃষকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব ছাড়াও অর্থ আদায় করা হতো। জমিদারদের যে-কোনো উৎসবে অর্থের জোগান দিতে হতো কৃষকদেরই।
(iv) মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ: জমিদার ও কৃষকদের মধ্যবর্তী স্তরে অনেক উপ-শ্রেণির সৃষ্টি হয়। নায়েব, গোমস্তা, পাট্টাদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি কৃষকদের নানাভাবে অত্যাচার করে বর্ধিত অর্থ আদায় করত।
(v) ভুঁইফোড় জমিদার শ্রেণির উৎপত্তি: এক শ্রেণির বিত্তবান মানুষ লাভজনক কারবার হিসাবে জমিদারি কেনা শুরু করে। এরা জমির সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত কৃষকদের শোষণ করতে দ্বিধা করতেন না।
মূল্যায়ন : জমিদারি ব্যবস্থার ফলে এক শ্রেণির জমিদার শহরাঞ্চলে বিলাসবহুল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে গ্রামের অর্থ শহরে চলে যাওয়ার ফলে স্বনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতির বিনাশ ঘটে।
3. কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের সাথে কৃষক অসন্তোষ ও বিদ্রোহের কী সরাসরি সম্পর্ক ছিল? এই নিরিখে দাক্ষিণাত্যের হাঙ্গামাকে তুমি কীভাবে বিচার করবে?
উত্তর: ভূমিকা : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন কালের সূচনা পর্বে ভারতে কৃষিক্ষেত্রে যে প্রধান পরিবর্তন এসেছিল, তা হল কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ। ভারতীয় কৃষকেরা এই ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত ছিল না বলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হতে থাকে।
কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ ও কৃষক বিদ্রোহ: ঔপনিবেশিক শাসনে ভারতীয় কৃষকদের ওপর কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল। কৃষির উন্নতির ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সুযোগসুবিধা শক্তিশালী কৃষিজীবীরাই কাজে লাগাতে পেরেছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁদের বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ তাঁদের পক্ষে কৃষির উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় ভালো গবাদিপশু, উন্নত বীজ, সার ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার এবং সেচ ব্যবস্থার সুবিধা গ্রহণ সম্ভব ছিল না। তাছাড়া রাজস্বের হার বাড়লে কৃষকদের আয় কমে যায়। একথা ঠিক কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার কোনো নীতি ঔপনিবেশিক সরকারের ছিল না। তাই বহু কৃষক কৃষি শ্রমিক ও ভাগচাষিতে পরিণত হতেন। এইসব কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকবিদ্রোহ দেখা দেয়।
দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামাঃ আমেরিকার গৃহযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে দাক্ষিণাত্যের কৃষ্ণ মৃত্তিকা যুক্ত উর্বর অঞ্চলে ইংরেজ সরকার তুলা চাষে গুরুত্ব আরোপ করে। দক্ষিণ ভারতের অনুকূল পরিবেশে ব্যাপকভাবে তুলার চাষ প্রাথমিক পর্বে কৃষকদের কাছে লাভজনক হয়েছিল। কিন্তু গৃহযুদ্ধের অবসানের পর আমেরিকা থেকে তুলা আমদানি শুরু হলে ভারতে তুলার দাম ভীষণভাবে কমে যায়।
এমতাবস্থায় উৎপাদিত তুলার দাম না পাওয়া, রাজস্বের উচ্চহার এবং মহাজনদের অর্থের জন্য উৎপাতের কারণে কৃষকসমাজ বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। তারা মহাজনদের বাড়ি আক্রমণ করে। বন্ধকী কাগজপত্র পুড়িয়ে দিয়ে সংকট থেকে অব্যাহতি লাভের চেষ্টা করে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনী এই বিদ্রোহ দমন করে। ইংরেজরা একে দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা নামে অভিহিত করলেও এটি ছিল কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ।
4. বাংলার বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে কোম্পানির বাণিজ্য নীতির কী ধরনের সম্পর্ক ছিল? কেন দেশীয় ব্যাংক ও বীমা কোম্পানি তৈরি করেন ভারতীয়রা?
উত্তর: ভূমিকা: একসময় বাংলার বস্ত্র শিল্প ছিল পৃথিবী বিখ্যাত। ইউরোপের বাজারে তার আলাদা কদর ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের প্রথমার্ধে এই বস্ত্রশিল্পের অবক্ষয় ঘটে।
বস্ত্রশিল্পের সঙ্গে কোম্পানির বাণিজ্য নীতির সম্পর্কঃ নানাবিধ বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও 1813 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার বস্ত্রশিল্প নিজ ঐতিহ্য বজায় রেখেছিল। কিন্তু 1813 খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্ট বা সনদ আইন অনুযায়ী এদেশে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলি বাণিজ করার অধিকার লাভ করে। ব্রিটিশ সরকার ইংল্যান্ডের শিল্পজার বস্ত্রের উপর নামমাত্র আমদানি শুল্ক আরোপ করার পাশাপাশি বাংলার বস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপ করে।
এই বাণিজ্য নীতির ফলে বাংলা তথা ভারতের বাজারে ইংল্যান্ডের পণ্য সম্ভার ছেয়ে যায়। তুলনামূলকভাবে ভালো কাপড় ও দাম কমের ফলে ভারতীয় তথা বাংলার বস্ত্রের চাহিদাও ভীষণ ভাবে কমে যায়। ফলে বাংলার বস্ত্র শিল্পের অবক্ষয় তথা ধ্বংসের সূচনা হয়।
দেশীয় ব্যাংক ও বীমা শিল্প: নানা কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ও বীমা শিল্পে অর্থ লগ্নিতে এগিয়ে আসে। যেমন-
(i) বিত্তশালী সম্প্রদায়ের উদ্ভবঃ বাংলার জমিদার ও নীল চাষের সঙ্গে যুক্ত বিত্তশালী ব্যক্তি ও দক্ষিণ ভারতে তুলা চাষের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চিত হলে তারা ব্যাংক ও বিমা ব্যবসায় তা বিনিয়োগ করে।
(ii) ঋণ দানে বৈষম্যনীতি: ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলি ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে চাইত না বলে ভারতীয়রা বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ঋণদানকারী সংস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল।
(iii) সুদের বৈষম্য: একই ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়া হলেও ইউরোপীয়দের তুলনায় ভারতীয়দের কাছ থেকে অধিক হারে সুদ আদায় করা হত।
(iv) স্বাদেশিকতাবোধ: উনবিংশ শতকের নবজাগরণ যে স্বাদেশিকতাবোধের জন্ম দিয়েছিল, ব্যাংক ও বিমা শিল্পে অর্থ লগ্নির ক্ষেত্রে সেটিও একটি কারণ ছিল।
মূল্যায়ন: দেশীয় বস্ত্রশিল্পের পতন বাংলার কারিগর সম্প্রদায়কে কৃষিজীবীতে পরিণত করেছিল। ব্যাংক ও বিমা শিল্পে অর্থলগ্নি করলেও অল্প সংখ্যক ভারতীয়রা এক্ষেত্রে সাফল্যলাভ করেছিল।
5. লর্ড কর্নওয়ালিস কেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিলেন?
উত্তর: ভূমিকা: 1793 খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় যে ভূমি বন্দোবস্ত চালু করেন তা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নামে পরিচিত।
উদ্দেশ্য: চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের পিছনে লর্ড কর্নওয়ালিসের যে ভাবনাগুলি কাজ করেছিল সেগুলি হল- (ⅰ) আয় সুনিশ্চিত করা: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে কোম্পানির বাৎসরিক আয় সুনিশ্চিত করা ছিল তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য।
(ii) বাজেট তৈরির সুবিধা: রাজস্বের পরিমাণ পূর্ব থেকে জানা সম্ভব হলে বাৎসরিক বাজেট তৈরির কাজ সহজ হবে বলে মনে করা হয়েছিল।
(iii) খাজনা আদায়ের সুবিধা: জমিদারদের উপর রাজস্ব আদায়ের ভার দিলে রায়তদের কাছ থেকে খাজনা আদায় করা অনেক সুবিধা হবে বলে মনে করা হয়েছিল।
(iv) অনুগত সম্প্রদায় সৃষ্টি: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে একদল ব্রিটিশ অনুগ্রহভাজন প্রভাবশালী সম্প্রদায় সৃষ্টি করা।
(v) কৃষির উন্নতি: জমিদারি সম্পর্কে সুনিশ্চিত হয়ে জমিদারগণ কৃষি ও কৃষকের উন্নতির প্রতি সচেষ্ট হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল।
(vi) গণবিক্ষোভ থেকে রক্ষা পাওয়া: খাজনা আদায় করতে গিয়ে নানা সময় বিক্ষোভের সম্ভাবনা দেখা দিত। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে তা দূর করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হয়েছিল।
মূল্যায়ন : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে কোম্পানির রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকে সুরক্ষিত করা হয়েছিল বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন।
6. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: ভূমিকা : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থা সম্পর্কে যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছিল, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম। 1793 খ্রিস্টাব্দের 22 মার্চ এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল।
বৈশিষ্ট্যসমূহ: চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
(i) জমির মালিকানা: এই ব্যবস্থায় জমিদারদের সঙ্গে কোম্পানির চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল বলে জমিদাররা জমির মালিক হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে, কৃষকরা নয়।
(ii) বংশানুক্রমিক অধিকার: নির্দিষ্ট পরিমাণ রাজস্ব, নির্দিষ্ট সময়ে প্রদানের শর্তে জমিদাররা বংশ পরম্পরায় জমিদারি ভোগ দখলের অধিকার লাভ করে।
(iii) স্থায়ী রাজস্বের হার : চুক্তির মধ্য দিয়ে জমিদারি লাভ করেছিল বলে জমিদাররা বংশ পরম্পরায় একই পরিমাণ রাজস্ব প্রদান করার অধিকার লাভ করেছিল।
(iv) সূর্যাস্ত আইন: সূর্যাস্ত আইন অনুযায়ী বাংলা বছরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিন সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে রাজস্ব প্রদান করা ছিল বাধ্যতামূলক।
(v) মধ্যস্বত্বভোগী সম্প্রদায়: জমিদাররা রাজস্ব আদায়ের জন্য দেওয়ান, নায়েব, গোমস্তা, খাজনা আদায়কারী, পত্তনিদার, দর পত্তনিদার প্রভৃতি পদের সৃষ্টি করে। ফলে জমিদার ও কৃষকদের মধ্যবর্তী স্তরে বহু মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণির সৃষ্টি হয়।
(vi) রাজস্ব আদায়ের বাধা: বন্যা, খরা, মহামারি কোন অবস্থাতেই খাজনা মুকুব হওয়ার যেমন সম্ভাবনা ছিল না। এজন্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় রাজস্ব মেটাতে না পেরে অনেক জমিদার তাদের জমিদারি হারায়।
মূল্যায়ন: জমিদারি বন্দোবস্তের সুফল অপেক্ষা কুফল বেশি চ পরিলক্ষিত হয়েছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জমিদারগণ কৃষকদের ওপর শোষণ ও নিপীড়ন চালাতেন।
7. রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য ও ফলাফল লেখো।
অথবা, বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুফল ও কুফল কী ছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রচলিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাগুলির মধ্যে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত ছিল অন্যতম।
প্রবর্তক: ক্যাপটেন আলেকজান্ডার রিড এবং টমাস মনরো রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করেন।
এলাকা: সমগ্র বোম্বাই এবং উত্তর অংশ বাদ দিয়ে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে এই ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল।
বৈশিষ্ট্য: রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের যে সকল বৈশিষ্ট্য প্রতীয়মান হয়, সেগুলি হল-
(i) রাজস্ব প্রদান: কোম্পানি সরাসরি রায়তদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতো।
(ii) লিজ ব্যবস্থা: এই ব্যবস্থায় রায়তরা জমির মালিক ছিল না। 20-30 বছরের জন্য খাজনা প্রদানের শর্তে জমি চাষ করার অধিকার তাদের দেওয়া হয়েছিল।
(iii) রাজস্বের হার: জমির উর্বরতা শক্তি অনুযায়ী উৎপাদিত ফসলের 45 থেকে 55 শতাংশ রাজস্ব হিসাবে আদায় করা হত।
(iv) খাজনা বৃদ্ধি: 20 থেকে 30 বছর অন্তর নেই ব্যবস্থায় রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হতো।
(v) অপরিবর্তিত রাজস্ব বন্যা, খরা, মহামারি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও রাজস্বের হার অপরিবর্তিত থাকত। সাধারণত নগদ অর্থে রাজস্ব প্রদান করতে হত।
ফলাফল: রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কৃষক ও সরকার উভয়ের ক্ষেত্রেই মিশ্র ফলের সৃষ্টি করেছিল।
সুফল: এই ব্যবস্থার ভালো দিকগুলি হল-
(i) এই ব্যবস্থায় কোন মধ্যস্বত্বভোগী শ্রেণি ছিল না বলে রায়তরা অত্যাচারিত হত না।
(ii) সরকার নির্ধারিত রাজস্বের কর দিতে হত বলে কোন বাড়তি করের বোঝা রায়তদের বহন করতে হয়নি।
(iii) নিয়মিত খাজনা প্রদান করলে জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার কোনো ভয় ছিল না।
কুফল: এই ব্যবস্থার কুফলগুলি হল-
(i) এই ব্যবস্থায় জমির মালিক ছিল কোম্পানি। কৃষক তার ভাড়াটে চাষি মাত্র।
(ii) রাজস্বের হার ছিল যথেষ্ট বেশি।
(iii) সরকারি কর্মচারীরা মাঝে মাঝেই অত্যাচার করতো।
(iv) প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে রাজস্ব প্রদান না করায় অনেক চাষি জমি থেকে উৎখাত হয়েছিল।
মূল্যায়ন: রায়তওয়ারি ব্যবস্থার প্রবল রাজস্ব প্রদানের চাপ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না পারার ফলেই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা ঘটেছিল।
8. উনিশ শতকের ব্রিটিশ ভূমি রাজস্ব নীতি গ্রামীণ অর্থনীতির উপর কী প্রভাব ফেলেছিল? অথবা, ঔপনিবেশিক ভারতীয় সমাজে ব্রিটিশ ভূমি রাজস্বনীতির প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসিত ভারতে মূলত তিন ধরনের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল। প্রতিটি ব্যবস্থাই ছিল কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করার হাতিয়ার স্বরূপ। ফলে ভারতে গ্রামীণ অর্থনীতি যথেষ্ট আন্দোলিত হয়েছিল।
প্রভাব: ব্রিটিশ রাজস্ব নীতির প্রভাব ভারতীয় গ্রামীণ অর্থনীতিকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে। যেমন-
(i) চিরাচরিত অর্থনৈতিক সম্পকের অবসান: এর ফলে ভারতের চিরাচরিত অর্থনৈতিক সম্পর্কের অবসান ঘটে। মুঘল আমলে জমিদারগণ জমির মালিক ছিলেন না। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে কৃষক সম্প্রদায় জমিদারদের ভাড়াটে চাষিতে পরিণত হয়।
(ii) কৃষক শ্রেণির দুর্দশা: নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ফলে কৃষক সমাজের দুর্দশা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। জমিদাররা ইচ্ছামতো অতিরিক্ত কর আদায় করত। রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত বা মহলওয়ারি বন্দোবস্তেও রাজস্বের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি ছিল।
(iii) মহাজন সম্প্রদায়ের সৃষ্টি: ফসলের পরিবর্তে নগদে অর্থ প্রদান করতে হতো বলে চাষিরা ফসল বিক্রি করে সেই অর্থে রাজস্ব প্রদান করতো। অনেক সময় তারা ঋণ করতো। ফসল কেনা বা ঋণ দেওয়ার জন্য মহাজন সম্প্রদায় নামে এক নতুন শ্রেণির সৃষ্টি হয়। এরা ঋণের বিনিময়ে চাষিদের সর্বস্বান্ত করে দিতো।
(iv) মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব: নতুন ভূমিরাজস্ব নীতি জমিদার, তালুকদার প্রভৃতি ধনী বিত্তশালী শ্রেণির জন্ম দেয়। এরা মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় নামে পরিচিত ছিল। সাধারণত এরা সরকারের অনুগত সম্প্রদায়ে পরিণত হয়।
মূল্যায়ন: নতুন ভূমি রাজস্ব নীতির ফলে ভারতে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়। ধনী বিত্তশালী সম্প্রদায় সমাজের অন্যান্য শ্রেণির সঙ্গে পারস্পরিক মেলামেশা থেকে নিজেদের বিরত রাখত
5. Fill In The Blanks
1. ইজারাদারি ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন ।
উত্তর: ওয়ারেন হেস্টিংস
2. কে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের রত্ন বলা হতো।
উত্তর: ভারতকে
3. হুগলির প্রথম পাটের কারখানা চালু হয় ।
উত্তর: রিষড়াতে
4. নীল চাষের প্রত্যক্ষ উদ্যোগ নিয়েছিল ।
উত্তর: নীলকর সাহেবরা
5. কৃষকদের নীল চাষ করতে বাধ্য করতো ।
উত্তর: নীলকররা
6. ‘অবশিল্পায়ন’ কথাটির অর্থ হল ।
উত্তর: শিল্পের অবনমন।
7. ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অন্যতম প্রতীক ছিল ।
উত্তর: রেল ব্যবস্থা
৪. ভারতে রেলপথ নির্মাণে অর্থ বিনিয়োগ করে ।
উত্তর: ব্রিটিশ বেসরকারি কোম্পানিগণ।
9. 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ দমনে খুবই এর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তর: টেলিগ্রাফ
10. টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ভারতে প্রথম চালু হয় থেকে ডায়মন্ড হারবার।
উত্তর : কলকাতা
6. True And False
1. 1794 খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়।
উত্তর: ভুল।
2. নীল বিদ্রোহ হয়েছিল মাদ্রাজে।
উত্তর: ভুল।
3. দাক্ষিণাত্যে তুলা চাষের সঙ্গে আমেরিকার গৃহযুদ্ধের বিষয় জড়িত ছিল।
উত্তর: ঠিক।
4. রেলপথের বিস্তারের মাধ্যমে দেশীয় পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে গিয়েছিল।
উত্তর: ভুল।
5. টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা কোম্পানির শাসনের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছিল।
উত্তর: ঠিক।