WBBSE Class 5 History Chapter 7 ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ ও বিবর্তন Solution | Bengali Medium

Class 5 History Chapter 7 Solution

ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ ও বিবর্তন

1. MCQs Question Answer

1. জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল-

(a) 1931 খ্রিস্টাব্দে

(b) 1919 খ্রিস্টাব্দে

(c) 1922 খ্রিস্টাব্দে

(d) 1916 খ্রিস্টাব্দে।

উত্তর: (d) 1916 খ্রিস্টাব্দে।

2. এডুইন মন্টেগু ছিলেন-

(a) ভারতের বড়োলাট

(b) ভারত সচিব

(c) আইনসচিব

(d) ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

উত্তর: (b) ভারত সচিব।

3. ব্রিটিশ সরকার গান্ধিজিকে উপাধি দেন-

(a) মহাত্মা

(b) জাতির জনক

(c) কাইজার-ই-হিন্দ

(d) রায় বাহাদুর

উত্তর: (c) কাইজার-ই-হিন্দ।

4. খুদা-ই-খিদমদগার কথাটির অর্থ-

(a) ঈশ্বরের দূত

(b) ঈশ্বরের কর্মচারী

(c) ঈশ্বরের সেবক

(d) আল্লার দূত

উত্তর: (c) ঈশ্বরের সেবক।

5. আইন অমান্য আন্দোলনের একজন নেত্রী হলেন-

(a) কল্পনা দত্ত

(b) বীণা দাস

(c) মাতঙ্গিনী হাজরা

(d) সরোজিনী নাইডু

উত্তর: (d) সরোজিনী নাইডু।

6. সুভাষচন্দ্র বসু সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন যাকে পরাজিত করে তিনি হলেন-

(a) পট্টভি সীতারামাইয়া

(b) চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী

(c) রাজেন্দ্র প্রসাদ

(d) জওহরলাল নেহরু

উত্তর: (a) পট্টভি সীতারামাইয়া।

7. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক ছিলেন-

(a) বিনয় বসু

(b) সূর্য সেন

(c) ক্ষুদিরাম বসু

(d) বাঘাযতীন

উত্তর: (b) সূর্য সেন।

8. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে অংশগ্রহণকারী মহিলা বিপ্লবী হলেন-

(a) কল্পনা দত্ত

(b) শান্তি চৌধুরি

(c) বীণা দাস

(d) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার

উত্তর: (d) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

9. বি. আর. আম্বেদকর ছিলেন যে সম্প্রদায়ের নেতা-

(a) তফশিলি সম্প্রদায়

(b) বর্ণ-হিন্দু-সম্প্রদায়

(c) মুসলমান সম্প্রদায়

(d) নমঃশূদ্র সম্প্রদায়

উত্তর: (a) তফশিলি সম্প্রদায়।

10. নেতাজি সুভাষচন্দ্র আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের নামকরণ করেন-

(a) শহিদ দ্বীপ

(b) স্বরাজ দ্বীপ

(c) সবুজ দ্বীপ

(d) স্বাধীন দ্বীপ

উত্তর: (a) শহিদ দ্বীপ।

11. সুভাষচন্দ্র বসু রচিত গ্রন্থটির নাম হল-

(a) পরিব্রাজক

(b) অভিনব ভারত

(c) তরুণের স্বপ্ন

(d) দি ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল

উত্তর: (d) দি ইন্ডিয়ান স্ট্রাগল।

12. রানি ঝাঁসী বাহিনীতে নারী সদস্যের সংখ্যা ছিল-

(a) 1800 জন

(b) 1600 জন

(c) 1000 জন

(d) 2000 জন

উত্তর: (b) 1600 জন।

13. আজাদ হিন্দ ফৌজ অধিকৃত দুটি ভারতীয় অঞ্চল হল-

(a) ঢাকা ও রাজশাহী

(b) ডিমাপুর ও কোহিমা

(c) রংপুর ও পাবনা

(d) কালিম্পং ও দার্জিলিং

উত্তর: (b) ডিমাপুর ও কোহিমা।

14. করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে ডাক দিয়েছিলেন-

(a) গান্ধিজি

(b) মহম্মদ আলি জিন্নাহ

(c) নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু

(d) বল্লভ ভাই প্যাটেল

উত্তর: (a) গান্ধিজি।

15. কুখ্যাত কলকাতার দাঙ্গা সংঘটিত হয় 1946 খ্রিস্টাব্দের-

(a) 13ই আগস্ট

(b) 14ই আগস্ট

(c) 15ই আগস্ট

(d) 16ই আগস্ট

উত্তর: (d) 16ই আগস্ট।

2. Very Short Question Answer

 1. গান্ধিজি কত খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন?

উত্তর: গান্ধিজি 1915 খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসেন।

2. ব্রিটিশ সরকার গান্ধিজিকে কোন উপাধি প্রদান করেন?

উত্তর: ব্রিটিশ সরকার গান্ধিজিকে কাইজার-ই-হিন্দ উপাধি প্রদান করেন।

3. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ভারতে কী প্রভাব ফেলেছিল?

উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ভারতের সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছিল।

4. হিন্দ স্বরাজ গ্রন্থটি কার লেখা?

উত্তর: হিন্দ-স্বরাজ গ্রন্থটি গান্ধিজি লিখেছিলেন।

5. গান্ধিজির কাছে চরকা কীসের প্রতীক ছিল?

উত্তর: গান্ধিজির কাছে চরকা অর্থনৈতিক আত্ম নির্ভরশীলতার প্রতীক ছিল।

6. মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন কবে পাশ হয়?

উত্তর: 1919 খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন পাশ হয়েছিল।

7. চম্পারণ ভারতের কোথায় অবস্থিত?

উত্তর: চম্পারণ ভারতের বিহারে অবস্থিত।

8. চৌরিচৌরা কোথায় অবস্থিত?

উত্তর: চৌরিচৌরা গ্রাম উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলায় অবস্থিত।

9. জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড কবে সংঘটিত হয়?

উত্তর: 1919 খ্রিস্টাব্দের 13ই এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল।

10. অসহযোগ আন্দোলনের কটি ধারা? কী কী?

উত্তর: দুটি ধারা ছিল। স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন।

11. কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়?

উত্তর: চৌরিচৌরা হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।

12. স্বরাজ্য দলের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর: স্বরাজ্য দলের প্রতিষ্ঠাতা হলেন-চিত্তরঞ্জন দাশ ও মতিলাল নেহরু।

13. কার নেতৃত্বে সাইমন কমিশন ভারতে আসে?

উত্তর: স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে সাইমন কমিশন ভারতে আসে।

14. ‘স্বরাজ্যদল’ কত খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়?

উত্তর: ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ‘স্বরাজ্যদল’ গঠিত হয়।

15. সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনের শ্লোগান কী ছিল? (বারাসাত হাইস্কুল)

উত্তর: সাইমন গো ব্যাক বা সাইমন ফিরে যাও ছিল এই আন্দোলনের মূল স্লোগান।

16. আইন অমান্য আন্দোলনের প্রথম পর্যায় কোন সন্ধির দ্বারা শেষ হয়?

উত্তর: 1931 খ্রিস্টাব্দে গান্ধি-আরউইন চুক্তি দ্বারা আইন অমান্য আন্দোলনের প্রথম পর্যায় শেষ হয়েছিল।

17. খান আব্দুল গফফর খান কী নামে পরিচিত?

উত্তর: খান আব্দুল গফফর খান সীমান্ত গান্ধি নামে পরিচিত।

18. রানি গিদালো কে ছিলেন? (সরিষা রামকৃষ্ণ মিশন)

উত্তর: নাগাল্যান্ডের তরুণী, যিনি আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

19. হিন্দুস্তান রিপাবলিকান পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর: চন্দ্রশেখর আজাদ হিন্দুস্তান রিপাবলিকান পার্টির প্রতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

20. হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মির প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর: মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন এই গুপ্ত সমিতির প্রতিষ্ঠাতা।

21. কাকোরি ষড়যন্ত্র কী? (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন)

উত্তর: কাকোরি রেল স্টেশনে বিপ্লবীদের ডাকাতি করার পরিকল্পনা জানার পর ব্রিটিশ সরকার যে তৎপরতা শুরু করেন, তা কাকোরি ষড়যন্ত্র নামে পরিচিত।

22. ‘বি-বা-দী’ নামে কারা পরিচিত?

উত্তর: বিনয়, বাদল ও দীনেশ ‘বি-বা-দী’ নামে পরিচিত।

23. ভগৎ সিং এর বিখ্যাত স্লোগান কী?

উত্তর: ভগৎ সিং এর বিখ্যাত স্লোগান হল-ইনকিলাব জিন্দাবাদ বা বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।

24. কার নেতৃত্বে কোথায় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়? (কুম্ভচক পল্লিশ্রী বিদ্যাভবন)

উত্তর: সতীশচন্দ্র সামন্তর নেতৃত্বে তমলুকে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

25. আজাদ হিন্দ ফৌজ কবে কোথায় গঠিত হয়?

উত্তর: 1942 খ্রিস্টাব্দের 1লা সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠিত হয়।

26. আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের কোন কোন অঞ্চল দখল করে। (উচ্চ বালিকা বিদ্যাপীঠ, বড়িশা)

উত্তর: আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের ডিমাপুর ও কোহিমা দখল করেছিল।

27. নৌ-বিদ্রোহ কবে শুরু হয়?

উত্তর: 1946 খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হয়েছিল।

28. কোন্ জাহাজে প্রথম নৌ-বিদ্রোহের সূচনা হয়?

উত্তর: তলোয়ার জাহাজে প্রথম নৌ-বিদ্রোহের সূচনা হয়। 

29. নৌ-বিদ্রোহের দাবি কী ছিল? (নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন)

উত্তর: নৌ-বিদ্রোহের দাবি ছিল-ভালো মানের খাদ্য প্রদান, বেতন বৈষম্য দূর করা এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের

3. Short Question answer

1. দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলন মহাত্মা গান্ধির রাজনৈতিক জীবনে কী প্রভাব ফেলেছিল?

উত্তর: দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্য নীতির বিরুদ্ধে গান্ধিজি নাটাল ন্যাশন্যাল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করে প্রবাসী ভারতীয়দের স্বার্থরক্ষায় অহিংসভাবে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন এবং ব্রিটিশ সরকারকে বেশ কয়েকটি দাবি মানতে বাধ্য করেছিলেন।আফ্রিকায় তাঁর আন্দোলনের সাফল্যের কথা ভারতে পৌঁছালে, এদেশে গান্ধিজি সম্পর্কে চরম উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। ভারতে পৌঁছানোর পূর্বেই তিনি জাতীয় নেতায় রূপান্তরিত হন।

2. কাকে, কেন ‘সীমান্ত গান্ধি বলা হত?

উত্তর: খান আব্দুল গফফর খানকে ‘সীমান্ত গান্ধি বলা হত। আব্দুল গফফর খান উত্তর-পশ্চিম ভারতের সীমান্ত অঞ্চলের দুর্ধর্ষ পাঠানদের অহিংস মন্ত্রে দীক্ষা দিয়ে তাদের সত্যাগ্রহের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। এজন্য তাঁকে সীমান্ত গান্ধি বলা হতো।

3. ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মাতঙ্গিনী হাজরার ভূমিকা কি ছিল?

উত্তর: ভারত ছাড়ো আন্দোলনে মেদিনীপুরের তমলুক এর 73 বছর বয়সী মাতঙ্গিনী হাজরা উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিলেন। তমলুকের সরকারি ভবন ও থানা দখলের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন। তাঁর অবদানকে | স্মরণ করার জন্য তাঁকে গান্ধি বুড়ি বলা হয়।

4. গান্ধিজি কীভাবে সাধারণ মানুষের আপনজন হয়ে ওঠেন?

উত্তর: গান্ধিজি অভিজাত পরিবারের সন্তান হয়েও হাঁটুর উপর ধুতি পরতেন, সরল হিন্দিতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশে যেতেন, তাদের যেকোনো সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট হতেন। এভাবেই গান্ধিজি সাধারণ মানুষের আপনজন হয়ে ওঠেন।

5. গান্ধি যুগ বলতে কী বোঝো? (আড়িয়াপাড়া হাইস্কুল)

উত্তর: গান্ধিজি 1915 খ্রিস্টাব্দে ভারতে আসার পর থেকে 1947 খ্রিস্টাব্দের স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যন্ত ভারতীয় রাজনীতি তাঁকে কেন্দ্র করেই প্রতিমুহূর্তে আবর্তিত হয়েছে। তিনিই ছিলেন ভারতীয় রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ। এজন্য এই সময়কালকে ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধি যুগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

6. গান্ধিজি পরিচালিত প্রথম তিনটি আন্দোলনের নাম লেখো।

উত্তর: গান্ধিজি পরিচালিত প্রথম তিনটি আন্দোলন হল: (i) 1917 খ্রিস্টাব্দে বিহারের চম্পারণ সত্যাগ্রহ। (ii) 1918 খ্রিস্টাব্দে আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ। এবং (iii) 1918 খ্রিস্টাব্দে খেড়া সত্যাগ্রহ।

7. জালিয়ানওয়ানাবাগ হত্যাকাণ্ড বলতে কী বোঝো? (লেকটাউন গভঃ গার্লস হাইস্কুল)

উত্তর: পাঞ্জাবের দুই শ্রদ্ধেয় সত্যাগ্রহী সৈফুদ্দিন কিচলু ও সত্যপালের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জালিয়ানওয়ালাবাগের মাঠে 1919 এর 13 এপ্রিল প্রায় 10 হাজার মানুষ শান্তি পূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানাতে থাকে। জেনারেল ও ডায়ারের নির্দেশে তাদের উপর ব্রিটিশ বাহিনী গুলিবর্ষণ করলে সরকারি হিসাবেই 397 জন নিহত ও 1200 লোক আহত হয়। ভারত ইতিহাসে এই ঘটনা জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড নামে পরিচিত।

8. অসহযোগ আন্দোলনের দুটি কর্মসূচি লেখো।

উত্তর: অসহযোগ আন্দোলনের দুটি কর্মসূচি হল-(i) সরকারি অফিস আদালত, স্কুল-কলেজ বর্জন করা। (ii) স্বদেশি দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, স্বদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠা ও চরকার ব্যবহার বৃদ্ধি করা।

9. অসহযোগ আন্দোলন কেন প্রত্যাহার করা হয়?

উত্তর: 1922 খ্রিস্টাব্দের ১ই ফেব্রুয়ারি উত্তর প্রদেশের গোরখ পুর জেলার সত্যাগ্রহীরা পুলিশি অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে চৌরিচৌরা থানা আক্রমণ করে তাতে আগুন লাগিয়ে দিলে 22 জন পুলিশ কর্মী মারা যান। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।

10. চৌরিচৌরা ঘটনা কী? (উচ্চ বালিকা বিদ্যাপীঠ বড়িশা)

উত্তর: 1922 খ্রিস্টাব্দের ১ই ফেব্রুয়ারি উত্তর প্রদেশের গোরখপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামের সত্যাগ্রহী ভগবান আহির এর উপর পুলিশ অকথ্য অত্যাচার চালালে ক্রুদ্ধ জনতা থানা আক্রমণ করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। এর ফলে 22 জন পুলিশকর্মী মারা যায়। এই ঘটনা চৌরিচৌরা ঘটনা নামে পরিচিত। এর ফলে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।

11. স্বরাজ্যপন্থী কাদের বলা হতো? (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন)

উত্তর: অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের পর কংগ্রেস এর একটি গোষ্ঠী আইনসভায় প্রবেশ করে সরকারের বিরোধিতা করার জন্য 1923 খ্রিস্টাব্দের 1লা জানুয়ারি কংগ্রেস এর মধ্যে থেকেই পৃথক একটি দল গঠন করেন। চিত্তরঞ্জন দাশ ও মতিলাল নেহরু ছিলেন এই দলের নেতা। এই গোষ্ঠীকেই স্বরাজ্যপন্থী বলা হত।

12. ‘খুদা-ই-খিদমদগার’ কাদের বলা হত? (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন) 

উত্তর: পশ্চিম সীমান্ত অঞ্চলে আইন অমান্য আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী সীমান্ত গান্ধির অনুগামীরা খুদা-ই-খিদমদগার নামে পরিচিত ছিল। এরা লাল রঙের কুর্তা পরত বলে এদের লাল কুর্তা বাহিনীও বলা হয়ে থাকে।

13. কংগ্রেস এর লাহোর অধিবেশন-এর গুরুত্ব কী ছিল? (কুম্ভচক পল্লিশ্রী বিদ্যাভবন)

উত্তর: কংগ্রেস 1929 খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনে প্রথম পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে আন্দোলন এর কথা ঘোষণা করেছিল। এই অধিবেশনেই আইন অমান্য আন্দোলনের ঘোষণা করা হয়। স্বায়ত্ত শাসনের পরিবর্তে কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজের আদর্শ গ্রহণ করে।

14. আলিন্দ যুদ্ধ বলতে কী বোঝো? (বারাসাত হাইস্কুল)

উত্তর: 1930 খ্রিস্টাব্দের ৪ই ডিসেম্বর তিন বিপ্লবী বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত ব্রিটিশ সরকারের কর্মকেন্দ্র রাইটার্স বিল্ডিংস অভিযান করে কারাবিভাগের ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেন এবং বেশ কয়েকজনকে আহত করেন। রাইটার্স এর অলিন্দে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে তাদের যুদ্ধ হয়। ভারত ইতিহাসে এই ঘটনা অলিন্দ যুদ্ধ নামে পরিচিত।

15. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় কোথায় কোথায় স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল? (আড়িয়াপাড়া হাইস্কুল)

উত্তর: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় অন্তত চারটি জাতীয় সরকার গড়ে ওঠে। এগুলি হল-বাংলায় মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার, যুক্ত প্রদেশের বালিয়া আজমগড় জাতীয় সরকার, উড়িষ্যার তালচের জাতীয় সরকার এবং মহারাষ্ট্রের সাতারা জাতীয় সরকার।

16. কারা, কোথায় আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন?

উত্তর: ক্যাপ্টেন মোহন সিং, প্রীতম সিং এবং রাসবিহারী বসু আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন। প্রথমে মালয়, পরে টোকিও সবশেষে সিঙ্গাপুর ছিল এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠা স্থল।

17. সুভাষচন্দ্র বসু কেন দেশত্যাগ করেন?

উত্তর: সুভাষচন্দ্র বসু বিশ্বাস করতেন যে, দেশের অভ্যন্তরে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন এর পাশাপাশি বাইরে থেকেও আঘাত করা দরকার। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সুযোগে ইংরেজ বিরোধী শক্তির সাহায্য নেওয়া দরকার। এই কারণেই সুভাষচন্দ্র বসু দেশত্যাগ করেন।

18. আজাদ হিন্দ ফৌজ ব্যর্থ হয়েছিল কেন? (নুঙ্গি হাইস্কুল)

উত্তর: নানা কারণে আজাদ হিন্দ ফৌজ ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল-

(i) বিভিন্ন প্রকার সংক্রামক ব্যাধি, প্রবল ঠান্ডা প্রভৃতি বিষয়গুলি আজাদি সেনাদের প্রাণ সংশয়ের কারণ হয়।

(ii) জাপানি সেনাবাহিনী নিজ দেশ রক্ষার জন্য বিমান বাহিনী প্রত্যাহার করলে ব্রিটিশ বোমার আঘাত থেকে আজাদ হিন্দ বাহিনীকে রক্ষা করার জন্য আত্মসর্মপণ করতে হয়। 

4. Long Question Answer

1. গান্ধির অহিংস-সত্যাগ্রহর আদর্শটি ব্যাখ্যা করো। এই আদর্শের সঙ্গে কংগ্রেসের প্রথম দিকের নরমপন্থীদের আদর্শের একটি তুলনামূলক আলোচনা করো।

উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধিজির আবির্ভাব এদেশে এক নতুন মতাদর্শের জন্ম দেয়। যা সত্যাগ্রহ নামে পরিচিত।

আদর্শ : গান্ধিজির সত্যাগ্রহের আদর্শের পিছনে অবদান ছিল টলস্টয়-এর ‘কিংডম অব গড উইদিন ইউ, রাসকিনের-আন-টু-দি লাস্ট গ্রন্থ দুটি এছাড়া প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্য, গীতার বাণী; বৌদ্ধ দর্শন প্রভৃতি।

তাঁর সত্যাগ্রহের মূল কথা ছিল সত্যের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা এবং অহিংসাকে জীবনের মূল মন্ত্র রূপে গ্রহণ করা।

নরমপন্থীদের সঙ্গে গান্ধিজির মতবাদের তুলনামূলক আলোচনা: গান্ধিজির মতাদর্শের সঙ্গে নরমপন্থীদের বেশ কিছু মিল ছিল। যেমন- (i) গান্ধিজি ও নরমপন্থীরা উভয়েই অহিংসার আদর্শে বিশ্বাসী ছিল। (ii) 1929 খ্রিস্টাব্দের আগে পর্যন্ত গান্ধিজি ভারতে স্বায়ত্তশাসনের পক্ষপাতী ছিলেন। (iii) গান্ধিজির মতো নরমপন্থীরাও ধর্ম নিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।

পার্থক্য: গান্ধিজির সঙ্গে নরমপন্থীদের কার্যকলাপের কয়েকটি অমিল ছিল। যেমন- (i) গান্ধিজির মতো নরমপন্থীরা রামরাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেন নি। (ii) নরমপন্থীরা সাধারণ অভিজাত সমাজ থেকে এসেছিলেন। অপর দিকে গান্ধিজি অভিজাততন্ত্রের অবসান ঘটিয়েছিলেন।

মূল্যায়ন: গান্ধিজি নিজে অভিজাত সমাজের প্রতিনিধি হলেও নিজেকে সাধারণ স্তরে নামিয়ে এনে জননায়কে রূপান্তরিত হয়েছিলেন।

2. অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল? ওই আন্দোলন রদ করার বিষয়ে গান্ধির সিদ্ধান্তের সঙ্গে কি তুমি একমত? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর: ভূমিকা: গান্ধিজি পরিচালিত ভারতে সর্বভারতীয় তিনটি আন্দোলনের মধ্যে অন্যতম আন্দোলন ছিল অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন।

বৈশিষ্ট্য: অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যগুলি হল- 

(i) এই আন্দোলনের মূল কর্মসূচি ছিল অসহযোগ ও অহিংসা। 

(ii) এই আন্দোলনের মূল ভিত্তি ছিল সরকারের সদিচ্ছার প্রতি অনাস্থা।

(iii) এই আন্দোলনের কর্মসূচি ছিল ইতিবাচক ও নেতিবাচক।

(iv) হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য গড়ে তোলা ছিল এই আন্দোলনের একটি বৈশিষ্ট্য। 

(v) ভারতের চিরকালীন অভিশাপ অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে গান্ধিজি প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।

আন্দোলন রদ সংক্রান্ত বিতর্ক: 1922 খ্রিস্টাব্দর ১ই ফেব্রুয়ারি উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামের জনতা পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে থানা আক্রমণ করে তাতে আগুন লাগিয়ে দিলে 21জন পুলিশ কর্মী মারা যান। এর ফলে গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেন।

গান্ধিজির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে জওহরলাল নেহরু, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ মুখর হন। তাঁদের মূল বক্তব্য ছিল-এতো বড়ো দেশের কোন একটা জায়গার ঘটনার জন্য সমস্ত দেশকে শাস্তি দিয়ে

গান্ধিজি ঠিক করেননি।

আমার মতামত: আমার মতে আদর্শ ও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধিজির সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কারণ-

(i) কোনো আন্দোলনই চিরস্থায়ী হতে পারে না, অহিংস অসহযোগ আন্দোলন প্রায় দু-বছর স্থায়ী হয়েছিল।

(ii) সাধারণ মানুষের জীবনযাপন প্রণালীর ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল।

(iii) গান্ধিজির মতে, আন্দোলন এখনই স্থগিত নাহলে তা হিংসাত্মক আন্দোলনের পরিণত হবে। এর ফলে সত্যাগ্রহের আদর্শ বাধাপ্রাপ্ত হত।

(iv) আন্দোলন ক্রমশ মধ্যবিত্তের হাত থেকে কৃষক শ্রেণির নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছিল।

মূল্যায়ন: গান্ধিজি সঠিক ভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন যে, ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য আরও অনেক পথ যেতে হবে। সুতরাং জনগণের আন্দোলন স্পৃহাকে এখনই শেষ করে দেওয়া ঠিক হবে না। সুতরাং আন্দোলন প্রত্যাহার করে তিনি যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন।

3. আইন অমান্য আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণের চরিত্র কেমন ছিল? সূর্য সেন ও ভগৎ সিং-এর সংগ্রাম কি গান্ধির মতামতের সহগামী ছিল?

উত্তর: ভূমিকা: আইন অমান্য আন্দোলন ছিল গান্ধিজি পরিচালিত দ্বিতীয় সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন। এটি ছিল তাঁর পরিচালিত তিনটি আন্দোলন এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক ও দীর্ঘস্থায়ী।

প্রকৃতি: গান্ধিজি পরিচালিত আইন অমান্য আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণের চরিত্র বা প্রকৃতি ছিল যথেষ্ট বর্ণময়। যেমন-

(i) মাত্র 78 জন অনুগামী নিয়ে তিনি ডান্ডি অভিযান শুরু করলেও ডান্ডিতে সেই সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌঁছেছিল।

(ii) যে সকল অঞ্চলে লবণ আইন অমান্য করা সম্ভব হয়নি, সেখানকার অধিবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অন্য কোনো আইন ভঙ্গের মাধ্যমে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।

(iii) মধ্যপ্রদেশ ও বোম্বাই অঞ্চলে অরণ্য সংরক্ষণ আইন অমান্য করা হয়।

(iv) গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ ও বাংলার মেদিনীপুরের কৃষকেরা খাজনা প্রদান বন্ধ করে দেয়।

(v) আন্দোলনের একটি বড়ো বৈশিষ্ট্য হল নারী সমাজ এর ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ।

(vi) আন্দোলনের প্রাণশক্তি ছিল যুবসম্প্রদায় এবং অর্থনৈতিক সম্পদ ছিল বণিক সম্প্রদায়। উভয়ের মধ্যে শ্রেণি স্বার্থ আলাদা হলেও জাতীয় স্বার্থ তাদের একত্রিত করেছিল।

ভগৎ সিং, সূর্য সেনদের সঙ্গে আদর্শগত পার্থক্য: গান্ধিজি সারাজীবন অহিংস আন্দোলনে অবিচল থেকেছেন। অপর দিকে ভগৎ সিং, সূর্য সেন প্রমুখ বিপ্লবীরা মনে করতেন যে সশস্ত্র প্রতিরোধ ছাড়া ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগ করানো যাবে না। উভয়ের উদ্দেশ্য ছিল ভারতের স্বাধীনতা, কিন্তু উদ্দেশ্য পূরণের উপায় বা পথ ছিল ভিন্ন। এজন্য 1931 খ্রিস্টাব্দের বড়োলাট আরউইন এর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও চুক্তি স্বাক্ষরের সময় তিনি ভগৎ সিং এর ফাঁসি রদের ব্যাপারে সরব হননি বলে যথেষ্ট সমালোচিত হয়েছিলেন।

4. জাতীয় রাজনীতিতে সুভাষচন্দ্র বসুর উত্থানের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করো। সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক চিন্তার উপর কোন কোন বিষয় ছাপ ফেলেছিল বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর: ভূমিকা: সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সুভাষচন্দ্র বসুর উত্থান ঘটে ছিল উল্কার গতিতে। তথাকথিত মৃত্যুর পরেও তিনি যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক থেকে গেছেন।

উত্থানের প্রেক্ষাপট: বস্তুতপক্ষে জাতীয় রাজনীতিতে সুভাষচন্দ্রের আবির্ভাব ঘটেছিল চমকপ্রদ ভাবে। আই সি এস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থানের অধিকারী হয়েও লোভনীয় সরকারি চাকুরি ছেড়ে দিয়ে জাতীয় আন্দোলনে তাঁর অংশগ্রহণ এর সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে মুগ্ধ করেছিল। তাছাড়া তিনি ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আপসহীন যোদ্ধা।

স্বাতন্ত্রতা: গান্ধিজির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকেও তাঁর বেশ কিছু সিদ্ধান্তের খোলামেলা প্রতিবাদ করে তিনি সমকালীন নেতাদের থেকে নিজের স্বাতন্ত্রতা প্রদর্শন করে যথেষ্ঠ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

নেতৃত্ব: শ্রমিক নেতা, কলকাতা কর্পোরেশনের দক্ষ প্রশাসক ৰূপেও তিনি সর্ব ভারতীয় খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। আদতে বামপন্থী বুপে পরিচিত সুভাষকে কংগ্রেস এর সভাপতি পদে বসাতে গান্ধিজি বাধ্য হয়েছিলেন।

কংগ্রেস ত্যাগ: সুভাষচন্দ্র জনপ্রিয়তার প্রমাণ দেন ত্রিপুরী অধিবেশনে সভাপতি পদে প্রার্থী হিসাবে গান্ধিজি মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাজিত করে। পরে কংগ্রেস ছেড়ে ফরওয়ার্ড ব্লক দল তৈরি করেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে তার পরিচালনা করেছিলেন।

কারাবরণ: সুভাষচন্দ্রের জীবনে কারাবরণ ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের মধ্যে তাকেই সবচেয়ে বেশি বার কারারুদ্ধ করেছিল। আজাদ হিন্দ ফৌজ এর সর্বাধিনায়ক হিসাবে সুভাষচন্দ্র জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণ করেন।

রাজনৈতিক চিন্তাধারা: সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক চিন্তার সূচনা হয়েছিল ছোটোবেলার শিক্ষক বেনীমাধব দাসের মাধ্যমে তিনি তাঁকে

জাতীয়তাবাদের আদর্শে দীক্ষা দিয়েছিলেন, স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শ ও চিত্তরঞ্জন দাশের ত্যাগ সুভাষচন্দ্রের রাজনৈতিক চিন্তাধারা। গড়ে উঠতে সাহায্য করেছিল।

একদিকে তিনি জার্মানির জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণীত হয়েছেন, অপর দিকে রাশিয়ার সাম্যবাদ তাঁকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছিল।

5. ভারত ছাড়ো আন্দোলন কি গান্ধির অহিংস সত্যাগ্রহের আদর্শ মেনে চলেছিল? নৌ-বিদ্রোহকে স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসাবে কীভাবে তুমি ব্যাখ্যা করবে?

উত্তর: ভূমিকা : গান্ধিজি পরিচালিত তিনটি সর্বভারতীয় আন্দোলনের মধ্যে ভারত ছাড়ো আন্দোলন ছিল সবচেয়ে তীব্র এবং সবচেয়ে সংক্ষিপ্ততম।

চরিত্র/প্রকৃতি: ভারত ছাড়ো আন্দোলন সর্বদা গান্ধিজির অহিংস সত্যাগ্রহের আদর্শ মেনে চলেনি। বরং বলা ভালো ভারত ছাড়ো আন্দোলন প্রথম থেকেই ছিল প্রকৃতিগত ভাবে সহিংস, অবশ্য এর পিছনে গান্ধিজির মূল শ্লোগানটি ছিল অনেকাংশে দায়ী। গান্ধিজি নিজেই বলে ছিলেন Do or Die বা ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’। এই শ্লোগান তুলে তিনি জনচিত্তকে দুর্বার করে তুলেছিলেন।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রেল লাইন উপড়ে ফেলা, সরকারি সম্পত্তিতে অগ্নি সংযোগ, জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মতো চরমপন্থী ঘটনা এই আন্দোলনে ঘটেছিল।

নৌ-বিদ্রোহ: 1946 খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত নৌ-বিদ্রোহ অবশ্যই ভারতীয় স্বাধীনতা লাভকে ত্বরান্বিত করেছিল। একে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশ বলতে কোন দ্বিধা নেই।

তাৎপর্য: নৌ বিদ্রোহ ছিল অতি সংক্ষিপ্ত কিন্তু যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। এই আন্দোলন ব্যাপকভাবে জনসমর্থন লাভ করেছিল। পুরো বোম্বাই আন্দোলনকারীদের সমর্থনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। যে কোনো জাতীয়তাবাদী আন্দোলন থেকে এর গুরুত্ব কম ছিল না।

মূল্যায়ন: বস্তুত পক্ষে 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ যেমন ভারতে মহারানির শাসন প্রক্রিয়ার সূচনা করেছিল। তেমনি তার 90 বছর পরে নৌ-বিদ্রোহের ফলে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের | প্রাথমিক পথ প্রস্তুত করেছিল।

6. ধরো তুমি অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানকারী একজন সাধারণ মানুষ। সে বিষয়ে তোমার অভিজ্ঞতা এবং দেশে ওই আন্দোলনে বিভিন্ন মানুষের যোগদান ও উৎসাহ বিষয়ে তোমার বন্ধুকে একটি চিঠি লেখো।

নামখানা 

20শে এপ্রিল, 1921

প্রিয় অঙ্কিত,

অনেকদিন তোর কোন খবর পাইনি, আমিও ভীষণ ব্যস্ত বলে তোর খবর নিতে পারিনি। যাই হোক, আশা করছি ভালো আছিস। মামা, মামি আর অঙ্কিতাও নিশ্চয় ভালো আছে। এখন যে জন্য তোকে চিঠি লেখা সেই অসহযোগ আন্দোলনে আমার যোগদানের খবর জানাই।

প্রায় দেড় বছর হল অসহযোগ আন্দোলন চলবে। একদম প্রথম থেকেই আমরা সরকারের সঙ্গে সব ধরনের অসহযোগিতার নীতি নিয়েই চলছি। গত এক বছর ধরে এখানকার জেলেরা মাছ ধরে আর সরকারি আড়তে জমা দিচ্ছে না। কম দামেও তারা সাধারণ ভারতীয়দের তা বিক্রি করছে। ডায়মন্ড হারবার থেকে বীরেন্দ্রনাথ শাসমল একদিন আমাদের গ্রামে এসে সবাইকে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এটা তারই ফল।

বীরেন্দ্রনাথ-এর সঙ্গে আমরা বেশকয়েকজন ডায়মন্ড হারবার গিয়েছিলাম। সেখানে বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে আমরা বিদেশি কাপড় সংগ্রহ করি। ডায়মন্ড হারবার এর কয়েকটা দোকান থেকেও কাপড় সংগ্রহ করে স্টেশন রোডের সামনে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ বাধা দিতে এলে সম্মিলিত প্রতিরোধ দেখে পিছু হটে।

এখানকার সরকারি আবাসগুলিতে ইংরেজরা কাজের লোক পাচ্ছে না, তাদের জামা কাপড় কেচে দেওয়ারও লোক পাচ্ছে না বলে খবর পেলাম।

এবার রাখি, পরে আবার কথা হবে। মামা মামিমাকে আমার প্রণাম জানাস। তুই আর অঙ্কিতা আমার ভালোবাসা_নিস। ঠাকুরপুকুর

 ইতি তোর অরিত্র।

 7. নৌ-বিদ্রোহের কারণ কী ছিল? (বেহালা হাইস্কুল) 

উত্তর: নৌ-বিদ্রোহের কারণগুলি হল-

(i) ইংরেজ সেনাদের চেয়ে নিকৃষ্ট মানের খাবার প্রদান।

(ii) একই পদে কর্মরত ইংরেজ সেনাদের দ্বারা অত্যাচারিত হওয়া।

(iii) একই পদে কর্মরত সেনাদের তুলনায় অনেক কম বেতন পাওয়া।

(iv) আজাদ হিন্দ সেনাদের নিঃশর্তে মুক্তিদান।

8. মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার সম্পর্কে কী জানো?

উত্তর: ভূমিকা : ভারতসচিব মন্টেগু ও বড়োলাট চেমসফোর্ড মিলিতভাবে ভারতের জন্য শাসনসংস্কার মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন নামে পরিচিত।

আইনের মূল বক্তব্য : মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের মূল বিষয়গুলি হল-

(i) দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা: কেন্দ্রীয় আইনসভাকে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট করা হয়। উচ্চকক্ষ বা কাউন্সিল অব স্টেট এবং নিম্নকক্ষ বা লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি।

(ii) সদস্যসংখ্যা : উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা হয় 60। এর মধ্যে 34 জন নির্বাচিত এবং 26 জন হতেন মনোনীত। নিম্ন কক্ষের 145 জন সদস্যের মধ্যে 105 জন হতেন নির্বাচিত এবং 40জন মনোনীত।

(iii) প্রাদেশিক শাসন : প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থাকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। সংরক্ষিত বিষয়গুলি হল প্রশাসন, পুলিশ অর্থ ও বিচার বিভাগ। প্রাদেশিক গভর্নর ও তার কার্যনির্বাহী পরিষদ এর দায়িত্বে ছিল।

অপর দিকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও স্বায়ত্তশাসন প্রভৃতি ছিল হস্তান্তরিত বিষয়। এসবের পরিচালনার ভার ছিল প্রাদেশিক মন্ত্রী পরিষদের হাতে।

(iv) সাম্প্রদায়িকতা : সম্প্রদায়ের ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

মূল্যায়ন : মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন ভারতে দায়িত্বশীল সরকার গঠনের কোনো চেষ্টা করেনি। চরমপন্থীরা তাই যথেষ্ট হতাশা প্রকাশ করেছিল। অ্যানি বেসান্ত একে ‘দাসত্বের পরিকল্পনা’ বলে অভিহিত করেছিলেন।

9. রাওলাট আইন কী? আইনে কী বলা হয়েছিল?

উত্তর: ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, ভারতে খাদ্য সংকট, বেকারত্ব বৃদ্ধি, সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি অবিচার প্রভৃতি কারণে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এই অবস্থার প্রতিরোধ করার জন্যই রাওলাট আইন প্রণয়ন করা হয়।

আইন পাশ : স্যার সিডনি রাওলাট এর নেতৃত্বাধীন রাওলাট কমিটি 1918 খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে যে রিপোর্ট পেশ করে। তার উপর ভিত্তি করে 1919 এর 18ই মার্চ রাওলাট আইন পাশ করা হয়।

আইনের বিভিন্ন ধারা: রাওলাট আইনের ধারাগুলি হল- 

(i) সন্দেহভাজন যে-কোনো ভারতীয়কে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে।

(ii) যে-কোনো ব্যক্তির বাড়ি বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি করা যাবে।

(iii) কোনো বিচার ছাড়াই আটক ব্যক্তিকে যতদিন খুশি ও কারারুদ্ধ রাখা যাবে।

(iv) কোনোরকম স্বাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই বিশেষ আদালতে বিচার হ করে ধৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া যাবে।

(v) বিশেষ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কোন রূপ আপীল করা যাবে না।

প্রতিক্রিয়া: কুখ্যাত রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা প্রতিবাদে গর্জে ওঠে। যেমন-

(i) দেশের বিভিন্ন স্থানে রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়।

(ii) আইনসভার অনেক সদস্য প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন.।

(iii) মহাত্মাগান্ধি এই আইনের বিরুদ্ধে রাওলাট সত্যাগ্রহ শুরু করেন। তাঁর ডাকে 1919 এর 6 এপ্রিল দেশ জুড়ে স্বতঃস্ফূর্ত ধর্মঘট পালিত হয়।

মূল্যায়ন: রাওলাট সত্যাগ্রহের সঙ্গে প্রথমে খিলাফৎ আন্দোলন যুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীকালে খিলাফৎ আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন যুক্ত হয়েছিল।

10. জালিয়ানওয়ানাবাগ হত্যাকাণ্ড বলতে কী বোঝো?

উত্তর: ভূমিকা: অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক মানসিকতার বহুবিধ নজিরের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস নজির হল পাঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড। 

প্রেক্ষাপট: রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে দেশের অন্যান্য প্রান্তের ন্যায় পাঞ্জাবও আন্দোলন শুরু করেছিল। তাদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড. সত্যপাল। ব্রিটিশ সরকার রাওলাট আইনেই এই দুজনকে গ্রেপ্তার করলে পাঞ্জাববাসীরা প্রতিবাদে সোচ্চার হন। সরকার নানাভাবে চেষ্টা করেও বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়।

জালিয়ানওয়ালাবাগে সমাবেশ: এসময় সমগ্র পাঞ্জাবে যেকোনো ধরনের সভা সমাবেশ এর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পাঞ্জাববাসী সরকারি নির্দেশ না মেনে 13 এপ্রিল অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালবাগ এর প্রান্তরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

হত্যাকাণ্ড: পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকাল থেকেই বহু মানুষ জালিয়ানওয়ালাবাগ প্রান্তরে সমবেত হতে থাকে। প্রায় দশ হাজার মানুষের এই জমায়েতে জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে ব্রিটিশ সেনা 10 মিনিট ধরে মেশিনগান থেকে গুলি ছুঁড়তে থাকে। ফলে সরকারি হিসাবেই 379 জন মারা যান ও 1200 এর বেশি আহত হয়। বেসরকারি মতে নিহতের সংখ্যা হাজারের বেশি। এই কুখ্যাত ঘটনা ইতিহাসে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ড নামে পরিচিত।

প্রতিক্রিয়া: জালিয়ানওয়ালাবাগ এর হত্যাকান্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা ভারতে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সরকারের এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন। মহাত্মা গান্ধি এই ঘটনার প্রতিবাদে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করার আগে সরকার প্রদত্ত কাইজার-ই-হিন্দ উপাধি ত্যাগ করেন।

11. খিলাফৎ আন্দোলন বলতে কীবোঝো? খিলাফং আন্দোলনে গান্ধিজির কী ভূমিকা ছিল? (পর্যদ নমুনা প্রশ্ন)

উত্তর: ভূমিকা : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে যে কটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল, খিলাফৎ আন্দোলন ছিল তার মধ্যে অন্যতম। দেশের মুসলমান সমাজের এই আন্দোলনকে হিন্দু সমাজও সমর্থন জানিয়েছিল।

পটভূমিকা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের সুলতান জার্মানির পক্ষ অবলম্বন করেছিল। যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার তুরস্ক সাম্রাজ্যের বেশ কিছু অংশ কেড়ে নেয়। তুরস্কের সুলতান তথা খলিফার ক্ষমতাও অনেকাংশে হ্রাস করা হয়।

খলিফার হৃত সম্মান পুনরুদ্ধার করার জন্য ভারতীয় মুসলমানরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল তা খিলাফৎ আন্দোলন নামে পরিচিত।

নেতৃত্বদান: খিলাফৎ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মহম্মদ আলি, সৌকত আলি, হাকিম আজমল খান, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ। গান্ধিজির ভূমিকা: গান্ধিজি খিলাফৎ আন্দোলনকে সমর্থন করেন। 1919 খ্রিস্টাব্দে সর্ব ভারতীয় খিলাফৎ অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। খিলাফৎ নেতৃবৃন্দ আন্দোলন পরিচালনার ভার গান্ধিজিকে অর্পণ করলে তিনি অসহযোগ আন্দোলন এর সঙ্গে খিলাফৎ আন্দোলনকে যুক্ত করে নেন।

কর্মসূচি: খিলাফৎ আন্দোলন এর কর্মসূচি ছিল-(i) সরকারি খেতাব বর্জন করা। (ii) সরকারি চাকুরি থেকে ইস্তফা দান। (iii) খাজনা বন্ধের জন্য হরতাল পালন এর মাধ্যমে জনমত গঠন করা।

পরিণতি: তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে খলিফাতন্ত্র উচ্ছেদ করে তুরস্কে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা হলে খিলাফৎ আন্দোলন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। 

মূল্যায়ন: হিন্দু-মুসলমান ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে খিলাফৎ – আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। তবে ধর্মনিরপেক্ষ । রাজনৈতিক দল হিসাবে জাতীয় কংগ্রেস একটি ধর্মীয় আন্দোলনে ন নিজেদের যুক্ত করেছিল বলে অনেকে মনে করেন।

12. অসহযোগ আন্দোলনের লক্ষ্য ও কর্মসূচি কী ছিল? আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছিল কেন?

উত্তর: ভূমিকা : মহাত্মা গান্ধি পরিচালিত তিনটি সর্বভারতীয় আন্দোলনের মধ্যে প্রথম আন্দোলন হল অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন।

আন্দোলনের লক্ষ্য: অসহযোগ আন্দোলনের লক্ষ ছিল- (i) পূর্ণ স্বরাজ অর্জন। (ii) জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিকার এবং (iii) খিলাফৎ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান।

আন্দোলনের লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে গান্ধিজি মন্তব্য করেন-“ভারতবাসীর মর্যাদা ও দাবির প্রতি উদাসীন, হৃদয়হীন বিদেশি সরকারের সঙ্গে কোনোরকম সহযোগিতা করা পাপ।

আন্দোলনের কর্মসূচি: অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচিগুলি হল- (i ) সরকারি খেতাব ও উপাধি বর্জন করা। (ii) সরকারি স্কুল কলেজ বয়কট করা। (iii) সমস্ত সরকারি অনুষ্ঠান বর্জন করা। (iv) আইন সভা থেকে পদত্যাগ করা। (v) আদালতের কাজে অংশগ্রহণ না করা। (iv) বিদেশি দ্রব্য বর্জন করা ইত্যাদি।

এই সমস্ত নেতিবাচক কর্মসূচির পাশাপাশি আন্দোলনের ইতিবাচক কর্মসূচি ছিল। স্বদেশি দ্রব্য উৎপাদন করা, স্বদেশি বিদ্যালয় স্থাপন করা, অস্পৃশ্যতা দূর করা এবং চরকা বিতরণ করা। 

আন্দোলন প্রত্যাহারের কারণ: অহিংস অসহযোগ আন্দোলন যখন চরম পর্যায়ে তখন উত্তর প্রদেশের গোরখপুর জেলার চৌরিচৌরা গ্রামের অধিবাসীরা 1927 এর 5 ফেব্রুয়ারি এক শোভাযাত্রার আয়োজন করে। পুলিশ নিরস্ত্র মিছিলে গুলি চালালে জনতা উত্তেজিত হয়ে থানা আক্রমণ করে এবং তাতে অগ্নিসংযোগ করে। এর ফলে 22জন পুলিশ কর্মী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। গান্ধিজি অহিংস আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠেছে দেখে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।

13. সাইমন কমিশন কেন গঠিত হয়েছিল? সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে ভারতীয়রা কেন আন্দোলন করেছিল?

উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ভারতীয়দের বারবার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য করে। এমনই এক ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ছিল সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন।

সাইমন কমিশন গঠন: 1919 খ্রিস্টাব্দে মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন-এর মেয়াদ ছিল দশ বছর। এই আইন অনুযায়ী ভারতীয়রা স্বায়ত্ত্বশাসন লাভের জন্য কতটা প্রস্তুত তা পরীক্ষা করার জন্য স্যার জন সাইমন এর নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা হয়।

ভারতীয়দের প্রতিবাদের কারণ: সাইমন কমিশন, এর বিরুদ্ধে ভারতীয়রা আন্দোলন করেছিল মূলত দুটি কারণে-

(i) কমিশনের সাত সদস্যের সবাই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ, একজনও ভারতীয় ছিলেন না।

(ii) একটি অ-ভারতীয় কমিশন ভারতীয়দের শাসনতান্ত্রিক যোগ্যতা বিচার করবে এটি ভারতীয়দের কাছে ছিল যথেষ্ট অপমানজনক।

আন্দোলনের সূচনা: 1928 খ্রিস্টাব্দের ও ফেব্রুয়ারি সাইমন কমিশনের সদস্যরা বোম্বাই বন্দরে পদার্পণ করলে ভারতীয়রা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।

(i) দেশ জুড়ে কমিশনের বিরুদ্ধে হরতাল ও বিক্ষোভ শুরু হয়।

(ii) কমিশন বিরোধী প্রধান স্লোগান হয় ‘Go back Simon’ I

(iii) ভারতের প্রথমসারির প্রায় সবকটা রাজনৈতিক দল কমিশন বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিল।

সরকারের প্রতিক্রিয়া: অত্যন্ত কঠোর হাতে সরকার সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন দমন করতে উদ্যত হয়। 1928 খ্রিস্টাব্দের 30 অক্টোবর সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে লালা লাজপত রাই পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হয়ে মারা যান।

মূল্যায়ন: ভারতীয়দের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও সাইমন কমিশন তার কাজ চালিয়ে দুই বছর ধরে কাজ চালানোর পর তারা দেশে ফিরে 1930 খ্রিস্টাব্দে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে 1935 এর ভারত আইন পাশ হয়েছিল।

14. আইন অমান্য আন্দোলনের কারণগুলি লেখো।

উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশ বিরোধী তিনটি সর্বভারতীয় আন্দোলন এর মধ্যে আইন অমান্য আন্দোলন ছিল সবচেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী ও ঘটনাবহুল।

কারণ: আইন অমান্য আন্দোলনের কারণগুলি হল-

(i) সাইমন কমিশন: মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের পর্যালোচনা করার জন্য সরকার সাইমন কমিশন গঠন করে। তবে কমিশন এর সাত সদস্যের মধ্যে একজনও ভারতীয় না থাকায় গান্ধিজি সরকার বিরোধী আন্দোলনের | প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।

(ii) নেহরু রিপোর্ট: সাইমন কমিশন এর সমান্তরাল একটি কমিটি সর্বদলীয় বৈঠকে গঠন করা হয়। নেহরু কমিটি নামে এই কমিশন তার রিপোর্ট পেশ করলে কংগ্রেস সরকারকে এই রিপোর্ট গ্রহণের দাবি জানায়। কিন্তু সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করলে একটি সর্বভারতীয় আন্দোলনের প্রয়োজন দেখা দেয়।

(iii) বামপন্থী আন্দোলন: 1925-এর পর থেকে ভারতে বামপন্থী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। যুব সমাজ ক্রমশ বামপন্থী ধারায় বিশ্বাসী হয়ে উঠছিল। তাদের আন্দোলনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি সর্বভারতীয় আন্দোলন এর দরকার ছিল।

(iv) বিপ্লববাদ-এর প্রসার: ভারতে এ সময় বিপ্লবী আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় এর সূচনা হয়। অলিন্দ যুদ্ধ, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, ভগৎ সিং কর্তৃক আইনসভায় বোমা নিক্ষেপ এর ঘটনায় ক্রমশ যুবসমাজে বিপ্লবী ভাবাদর্শ ছড়িয়ে পড়ছিল। এমতাবস্থায় যুব সমাজকে রক্ষাকরার জন্য মূল ধারার আন্দোলন এর প্রয়োজন দেখা দেয়।

(v) লাহোর অধিবেশন এর সিদ্ধান্ত: 1929 খ্রিস্টাব্দে লাহোর অধিবেশনে কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নেয় যে এখন থেকে পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে সর্বভারতীয় আন্দোলন পরিচালনা করা হবে। 26 জানুয়ারি স্বাধীনতা দিবস পালনের মাধ্যমে আন্দোলনের প্রাথমিক সূচনা হয়। মূল্যায়ন: আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন গান্ধিজি নিজে। 1930 এর 6 এপ্রিল গুজরাটের ডান্ডিতে সমুদ্রের জল থেকে নুন তৈরির মধ্য দিয়ে শুরু হয় লবণ আইন অমান্য আন্দোলন। 

15. টীকা লেখো: মাস্টারদা সূর্য সেন।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতের মুক্তি সংগ্রামে যারা সশস্ত্র প্রতিবাদ আন্দোলনে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ব্রিটিশ সরকারকে চরম বিপদগ্রস্ত করে তুলেছিলেন সূর্য সেন ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। পেশায় শিক্ষক ছিলেন বলে তিনি মাস্টারদা নামে অধিক জনপ্রিয় ছিলেন।

আদর্শ: মাস্টারদা সূর্যসেন বিশ্বাস করতেন যে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ব্রিটিশদের ভারত থেকে বিতাড়ন করা যাবে।

দলগঠন: ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লব পরিচলনার জন্য তিনি ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি নামে একটি গুপ্ত দল প্রতিষ্ঠা করেন।

অনুগামীবৃন্দ: সূর্য সেন এর অনুগামীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গিয়ে পড়েছিল। ছিলেন-গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, অনন্ত সিং, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত প্রমুখ।

কার্যকলাপ : সূর্য সেন এর কার্যকলাপ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। হল- (i) চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন: 1930 খ্রিস্টাব্দের 18 এপ্রিল মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম এর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অস্ত্রাগার লুঠ করা হয়।

(ii) জালালাবাদের যুদ্ধ: অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পর ২০শে এপ্রিল বিপ্লবীরা চট্টগ্রাম এর জালালাবাদ পাহাড়ে আশ্রয় নেয়। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ৪০ জনেরও বেশি ব্রিটিশ সেনা এবং 12 জন বিপ্লবী নিহত হয়।

(iii) ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ: মাস্টারদার নির্দেশে তাঁর মানস কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পাহাড়তলির ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ করেন।

গ্রেফতার: 1933 খ্রিস্টাব্দের 16 এপ্রিল জনৈক বিশ্বাস ঘাতকের দ্বারা মাস্টারদা ধরা পড়েন।

মূল্যায়ন: ব্রিটিশ সরকারের চরম শত্রু মাস্টারদা সূর্য সেন এর বিচার শেষে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। 1934 খ্রিস্টাব্দের 12 জানুয়ারি গভীর রাতে তার ফাঁসি হয়।

16. ভগৎ সিং স্মরণীয় কেন?

উত্তর: ভারতে বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনা করতে গিয়ে যেসব বীর সন্তান ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়েগেছেন, ভগৎ সিং ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

বিপ্লবী আদর্শের স্পর্শ লাভ: চন্দ্রশেখর আজাদ এর সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ভগত সিং এর বিপ্লবী আদর্শের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। তিনি আজাদ হিন্দুস্তান রিপাবলিকান পার্টির সদস্য হন।

নওজোয়ান ভারতসভা: 1928 এর 9 সেপ্টেম্বর তিনি হিন্দুস্তান রিপাবলিকান পার্টির দায়িত্ব গ্রহণ করে এর নাম রাখেন ‘হিন্দুস্তান সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন।’ এরপর তিনি নওজোয়ান ভারতসভা প্রতিষ্ঠা করেন।

কর্মসূচি: ভগৎ সিং-এর লক্ষ্য বা কর্মসূচি ছিল-

(i) বিপ্লবী পথে ভারত থেকে ইংরেজদের বিতাড়ন।

(ii) ভারতে বামপন্থী আদর্শ অনুযায়ী শ্রমিক শ্রেণির এক নায়কত্ব প্রতিষ্ঠা।

(iii) তাঁর বিখ্যাত স্লোগান ছিল ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বা বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।

কার্যকলাপ : ভগৎ সিং এর বিপ্লবী কার্যকলাপের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-

(i) লালা লাজপত রাই এর হত্যাকারী পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট স্যান্ডার্সকে প্রকাশ্য দিবালোকে 17ই ডিসেম্বর (1928) তিনি গুলি করে হত্যা করেন।

(ii) 1929 খ্রিস্টাব্দের ৪ই এপ্রিল দিল্লির আইনসভায় জনবিরোধী। বিল এর প্রতিবাদে বোমা নিক্ষেপ করেন। তাঁর সঙ্গী ছিলেন বটুকেশ্বর দত্ত।

লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা: কেন্দ্রীয় আইন সভায় বোমা নিক্ষেপ এর পরিপ্রেক্ষিতে ভগৎ সিং, বটুকেশ্বর দত্ত, রাজগুরু ও সুখদেব এর বিরুদ্ধে লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা শুরু হয়। বিচারে তাদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

ফাঁসি: 1931 খ্রিস্টাব্দের 23শে মার্চ লাহোর জেলে অন্যান্যদের সঙ্গে ভগৎ সিং এর ফাঁসি হয়।

মূল্যায়ন: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ভগৎ সিং চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। এক সময় তিনি সারা দেশে গান্ধিজির সমান জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। 

17. বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনে বিনয়-বাদল-দীনেশ এর অবদান কী ছিল? (আড়িয়াপাড়া হাইস্কুল, উ.মা.)

উত্তর: ভূমিকা : বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন এর প্রসারে যে তিন বিপ্লবীর অবদান অনস্বীকার্য তারা হলেন বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্ত।

বিনয় বসু: মেডিক্যাল কলেজ এর ছাত্র বিনয় বসু ছিলেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য। 1930 এর 31শে আগস্ট ঢাকার পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল ল্যোমানকে হত্যা করে কলকাতায় পালিয়ে আসেন।

বাদল গুপ্ত : বাদল গুপ্ত ছিলেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এর লেফটেনান্ট। ছাত্রাবস্থা থেকেই তিনি বিপ্লবী আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।

দীনেশ গুপ্ত : বাংলার অন্যতম বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স এর অন্যতম সদস্য ছিলেন। রাইটার্স বিল্ডিংস অভিযানে তাকে বিনয় ও বাদলের সহকারী হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। রাইটার্স 

বিল্ডিংস অভিযান: বিনয়-বাদল ও দীনেশ মিলিত ভাবে 1930 এর ৪ই ডিসেম্বর রাইটার্স বিল্ডিংস আক্রমণ করেন। তাঁদের গুলিতে কারা বিভাগের প্রধান কর্নেল সিম্পসন নিহত হন। বিচার বিভাগের সচিব নেলসন ও চিফ সেক্রেটারি টাইসন সহ অনেকে আহত হন।

অলিন্দ যুদ্ধ: ইতিমধ্যে পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্ট বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে রাইটার্স ঘিরে ফেললে তিন বিপ্লবীর সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীর গুলি বিনিময় হয়।

পরিণতি: ইতিমধ্যে বিপ্লবীদের গুলি শেষ হয়ে আসে, বিনয় ও দীনেশ নিজে একে অপরকে গুলি করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বাদল পটাশিয়াম সায়নাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। হাসপাতালে বিনয় মারা যান। সুস্থ হওয়ার পর 1931 এর 7 জুলাই দীনেশ এর ফাঁসি হয়।

গুরুত্ব: রাইটার্স বিল্ডিংস অভিযানের ফলে- (i) বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের গভীরতা প্রমাণিত হয়। (ii) প্রশাসনিক কেন্দ্রে আঘাত ইংরেজদের শঙ্কিত করে তোলে। (iii) স্বাধীনতা আন্দোলনে জাতীয় কংগ্রেস এর পাশাপাশি বিপ্লববাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। 

18. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও আজাদ হিন্দ ফৌজ এর ভূমিকা কী ছিল? 

উত্তর: ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

ছাত্রজীবন: উড়িষ্যার কটকের র‍্যাভেন্‌শ স্কুলের ছাত্র সুভাষ প্রথমে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। এরপর তিনি আই.সি.এস পড়ার জন্য বিলেত যান।

রাজনীতিতে যোগদান: আইসিএস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করেও তিনি লোভনীয় চাকুরি ত্যাগ করে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন।

সভাপতিরূপে সুভাষ: 1938 খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেসে তিনি কংগ্রেস-এর সভাপতি নির্বাচিত হন। পরের বছর তিনি গান্ধিজি মনোনীত প্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে 203 ভোটে হারিয়ে দিয়ে পুনরায় সভাপতি পদে নির্বাচিত হন।

ফরওয়ার্ড ব্লক দলগঠন: গান্ধিজির বিরোধিতায় বিরক্ত সুভাষ কংগ্রেস ত্যাগ করে ফরওয়ার্ড ব্লক দল গঠন করেন। দলটি বামপন্থী ভাবাদর্শে তিনি গড়ে তোলেন।

গৃহবন্দি সুভাষ: ভারত রক্ষা আইনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সুভাষকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।

দেশত্যাগ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযোগে ভারতের বাইরে থেকে ব্রিটিশ শক্তিকে আঘাত হানার জন্য তিনি গোপনে গৃহত্যাগ করেন। জিয়াউদ্দিন ছদ্মনামে প্রথমে কাবুল হয়ে তিনি চলে যান।

জার্মানিতে সুভাষ: রাশিয়ায় প্রয়োজনীয় সাহায্য না পেয়ে তিনি জার্মানিতে যান। এখানে বন্দি ভারতীয় সেনাদের নিয়ে তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন। এরা তাঁকে নেতাজি নামে অভিহিত করে।

আজাদ হিন্দুস্তান: জার্মানিতে তিনি আজাদ হিন্দুস্তান নামে একটি বেতার কেন্দ্র গড়ে তুলে ভারতবাসীকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তোলেন।

জাপানে সুভাষ : রাসবিহারী বসুর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এক দুঃসাহসিক ডুবোজাহাজ যাত্রার মাধ্যমে তিনি জাপানে এসে উপস্থিত হন।

আজাদ হিন্দ ফৌজ এর দায়িত্ব গ্রহণ: রাসবিহারী বসুর ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়ে তিনি তাঁর তৈরি আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

বাহিনীর পুনর্গঠন: আজাদ হিন্দ বাহিনীকে তিনি বেশ কয়েকটি ব্রিগেডে ভাগ করেন। এগুলি হল গান্ধি ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেড ঝাঁসি ব্রিগেড, আজাদ ও সুভাষ ব্রিগেড।

অস্থায়ী স্বাধীন সরকার: সিঙ্গাপুরকে কেন্দ্র করে তিনি অস্থায়ী স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। বন্ধুত্বের নিদর্শন স্বরু প জাপান সরকার তাঁর হাতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ তুলে দিলে তিনি এর নাম দেন যথাক্রমে শহিদ ও স্বরাজ দ্বীপ।

ভারত অভিযান: দিল্লি, চলো ধ্বনি তুলে আজাদি সেনারা ডিমাপুর ও কোহিমা সহ ভারতের 150 মাইল এলাকা ব্রিটিশ শাসন মুক্ত করে।

বিপর্যয়: ইতিমধ্যে জাপান রক্ষার জন্য জাপানি সেনা ও বিমান বাহিনী ফিরে গেলে আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিপর্যয় শুরু হয়।

বিমান দুর্ঘটনা: আজাদ হিন্দ বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে তিনি বিমানযোগে অন্যত্র যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাই হোকুর বিমান দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে সুভাষের তথাকথিত মৃত্যু সংবাদ প্রচারিত হয়।

মূল্যায়ন : স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সুভাষচন্দ্র বসুর  অবদানকে অস্বীকার করা যায় না। তাঁর মৃত্যুর ঘটনা ভারতবাসী আজও মেনে নিতে পারেনি।

19. নৌ-বিদ্রোহের কারণগুলি লেখো।

অথবা, 1946 খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত নৌ বিদ্রোহের কারণ ও গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষতম সংযোজন ছিল নৌ-বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ স্বাধীনতা লাভকে ত্বরান্বিত করেছিল।

কারণ: নৌ-বিদ্রোহের পশ্চাতে যে কারণগুলি বিদ্যমান ছিল সেগুলি হল-

(i) নিম্নমানের খাদ্য: ভারতীয় নৌ সেনাদের অত্যন্ত নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করা হত। বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও এই সমস্যার সমাধানে সরকার তৎপর হয়নি।

বেতন বৈষম্য: একই পদে অধিষ্ঠিত থাকা সত্ত্বেও একজন ভারতীয় নৌ সেনা ইংরেজ সেনাদের তুলনায় অত্যন্ত কম বেতন পেত। এই বৈষম্য সিপাহিদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছিল।

পদোন্নতি সংক্রান্ত বৈষম্য: ইংরেজ কর্মচারীদের সমান এমনকি বেশি যোগ্যতা থাকলেও ভারতীয় সেনাদের পদোন্নতি ঘটানো হত না বলে সেনারা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

ভারতীয়দের প্রতি দুর্ব্যবহার: ব্রিটিশ কর্মচারী ও সেনারা যখন তখন ভারতীয় সেনা ও কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিত ও অপমান করতো। ইংরেজ কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারে ক্ষুব্ধ অপমানিত সেনারা প্রতিশোধ নেওয়ার পথ খুঁজছিল।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুক্তিযুদ্ধ: ইন্দোনেশিয়ার মুক্তিযুদ্ধ ভারতীয় সেনার উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল। তারা ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যেতে অস্বীকার করেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নৌ সেনাদের একাংশকে ছাঁটাই করা হলে কাজ হারানোর ভয়ে অন্যরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনানীদের বিচার: আজাদ হিন্দ ফৌজ এর কার্যকলাপ নৌ-সেনাদের যথেষ্ট উজ্জীবিত করেছিল। দিল্লির লালকেল্লায় তাদের বিচার ও শাস্তিদানের সংবাদে নৌ-সেনারা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

সূচনা: 1946 খ্রিস্টাব্দের 19 ফেব্রুয়ারি বোম্বাই এর রয়‍্যাল ইন্ডিয়ান নেভির তলোয়ার নামক জাহাজে প্রথম নৌ-বিদ্রোহের সূচনা হয়। এম এস খানের নেতৃত্বে 20,000 নৌসেনা বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে।

গুরুত্ব: ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। যেমন-

(i) নৌসেনাদের বিদ্রোহের ফলে সরকার সুনিশ্চিত হয় যে, ভারতে তাদের রাজত্ব করার দিন শেষ হয়ে আসছে। 

(ii) নৌ বিদ্রোহের ফলেই ব্রিটিশ মন্ত্রীসভা ভারতে মন্ত্রী মিশন প্রেরণ করে দ্রুত তাদের স্বাধীনতা প্রদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য। 

(iii) ঐতিহাসিক রজনীপাম দত্তের মতে এই বিদ্রোহ ভারত ইতিহাসে নবযুগের সূচনা করেছিল।

মূল্যায়ন: নৌবিদ্রোহ মাত্র ৩দিন স্থায়ী হয়েছিল। ভারতের কোন রাজনৈতিক দল এই বিদ্রোহ সমর্থনে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল।

5. Fill In The Blanks

1 গান্ধিজির পুরো নাম হল |

উত্তর: মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধি

2. হোমরুল কথাটির অর্থ হল |

উত্তর: স্বায়ত্তশাসন

3. খলিফা শব্দের অর্থ    |

উত্তর: ধর্মীয় নেতা বা ধর্মগুরু

4. সীমান্ত গান্ধির অনুচরদের   বলা হত।

উত্তর: লাল কুর্তা

5. সুভাষচন্দ্র বসু   নামে পরিচিত ছিলেন।

উত্তর: নেতাজি

6. জাতির জনক বলা হত   কে।

উত্তর: মহাত্মা গান্ধিকে

7.   জালালাবাদ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

উত্তর: মাস্টারদা সূর্য সেন

8. অলিন্দ যুদ্ধের একজন বিপ্লবী হলেন   |

উত্তর: বিনয় বসু

9. সুভাষচন্দ্র বসু   ছদ্মনাম নিয়েছিলেন।

উত্তর: মহম্মদ জিয়াউদ্দিন

10.   হিন্দুস্তান সোস্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন।

উত্তর: ভগৎ সিং

6. True And False

1. কোম্পানি আমলে বার্মা প্রদেশের রাজধানী ছিল রেঙ্গুন।

উত্তর: ঠিক।

2. খুদা-ই-খিদমদগারের আর এক নাম লালকুর্তা বাহিনী।

উত্তর: ঠিক।

3. চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের নায়ক ছিলেন ভগৎ সিং।

উত্তর: ভুল।

4. মাস্টারদা নামে পরিচিত ছিলেন সূর্য সেন।

উত্তর: ঠিক।

5. স্বরাজ্যদলের সচিব ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু।

উত্তর: ঠিক।

6. তোজো ছিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী।

উত্তর: ঠিক।

7. সূর্য সেনকে সীমান্ত গান্ধি বলা হতো।

উত্তর: ভুল।

8. 1946 খ্রিস্টাব্দে নৌ-বিদ্রোহের সূচনা হয়।

উত্তর: ঠিক।

9. বিনয়-বাদল-দীনেশ এক সাথে বিবাদী নামে পরিচিত।

উত্তর: ঠিক।

10. সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ ফৌজ এর সূচনা করেন রাসবিহারী বসু।

উত্তর: ঠিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *