Class 6 Chapter 9 Solution
মরশুমের দিনে
Very Short Question Answer
১. বাঙালির প্রিয় উৎসব কী?
উত্তর: বাঙালির প্রিয় উৎসব দুর্গোৎসব।
২. বাঙালির প্রিয় উৎসব কোন্ মরশুমে অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তর: বাঙালির প্রিয় উৎসব শরৎকালে অনুষ্ঠিত হয়।
৩. নতুন ধানের ফলন উপলক্ষ্যে যে উৎসব হয়, তাকে কী বলে?
উত্তর: নতুন ধানের ফলন উপলক্ষ্যে যে উৎসব হয়, তাকে ‘নবান্ন’ বলে।
৪. ম ধানের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু কে?
উত্তর: ধানের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু হল বৃষ্টি।
৫. ‘মরশুমের দিনে’ রচনাংশে কোন্ ফসলকে ‘ধন’ বলা হয়েছে?
উত্তর: মরশুমের দিনে’ রচনাংশে ধানকে ‘ধন’ বলা হয়েছে।
৬. “কেউ যেন ঝকঝকে তকতকে করে মেজে রেখেছে”-কী মেজে রাখার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: শরৎকালে যতদূর দৃষ্টি যায় নীলরঙের আকাশটাকে মেজে রাখার কথা বলা হয়েছে।
৭. মফস্সল শহরে বাস কোথায় দাঁড়িয়ে থাকে?
উত্তর: মফস্সল শহরে বাস ডিপোয় দাঁড়িয়ে থাকে।
৮. মসলা মাটি ও আকাশ কী কী দেয়?
উত্তর: মাটি ফসল দেয়, আকাশ জল দেয়।
৯. ফলার কী কী দিয়ে খাওয়া হয়?
উত্তর: ফলার চিঁড়ে-গুড়-মুড়ি-খই আর দই দিয়ে খাওয়া হয়।
১০. শিলাবৃষ্টির সময় ছেলেরা হইহই করে কোথায় ছোটে?
উত্তর: শিলাবৃষ্টির সময় ছেলেরা হইহই করে আমবাগানে ছোটে।
১১. “এদেশের যত পালা-পার্বণ, উৎসব-আনন্দ, সব- কিছুরই মূলে আছে…”- কী? (বর্ষা/চাষবাস/ জলসেচ/ শস্যরোপণ)।
উত্তর: চাষবাস;
১২. “শহর ছাড়ালেই রাস্তার দু-পাশে দেখা যাবে…”- কী দেখা যাবে? (গাছপালা/দোকানপাট/মাথার ওপর দরাজ আকাশ/নদ-নদী-খাল-বিল)।
উত্তর: মাথার ওপর দরাজ আকাশ
১৩.’মরশুমের দিনে’ রচনায় বর্ণিত ‘লোকালয় পার হলেই’ কী দেখা যায়? (বনজঙ্গল/দূরে দূরে গ্রাম/আদিগন্ত মাঠ/শুধুই আকাশ)।
উত্তর: আদিগন্ত মাঠ
১৪. ‘মরশুমের দিনে’ রচনায় বর্ণিত ধানকাটার পর মাঠের অবস্থা কেমন হয়? (শূন্য/শুকনো, কঙ্কালসার/ শুকনো খটখটে/খাঁ খাঁ)।
উত্তর: শুকনো, কঙ্কালসার;
১৫. “খুকু খাবে পেট ভরে/নিয়ে যাবে ঘর।”- কী নিয়ে যাবে? (জাম/আনারস/আম/কাঁঠাল)।
উত্তর: আম;
১৬.”ছেলেরা ছড়ার ঝুলি উপুড় করে দেয়।” -কী কারণে? (আম কুড়োনোর আনন্দে/বনভোজনে মেতে উঠে। বৃষ্টির ছন্দে/পরীক্ষাশেষের আনন্দে)।
উত্তর: বৃষ্টির ছন্দে;
১৭. “আজ সেই সওদাগরও নেই” -আর কী নেই? (নৌকো/জাহাজ/বাণিজ্য/মালপত্র)।
উত্তর: বাণিজ্য;
১৮. এদেশে সওদাগররা কতগুলি ডিঙা ভাসিয়ে সমুদ্রে বাণিজ্যে যেত? (পাঁচ/সাত/নয়/এগারো)।
উত্তর: সাত;
১৯. ‘গরম মাটিতে জল পড়ে’ কী ওঠে? (মাটির গন্ধ/ ধুলোর কণা/ভাপ/কিছুই নয়)।
উত্তর: ভাপ
২০. “আসি আসি করেও আসে না” -কী আসে না? (বন্ধু/ বাবা/বৃষ্টি/পুজো)।
উত্তর: বৃষ্টি
২১. বছরের গোড়ার মাস ধরা হত (বর্ষা/গ্রীষ্ম/শরৎ/ অগ্রহায়ণ)-কে।
উত্তর: অগ্রহায়ণ;
২২. শরতের রোদ যেন কাঁচা (তামা/রুপো/হীরে/সোনা)-র মতো।
উত্তর: সোনা;
২৩. কখনো-কখনো বিকালে ঝিম-ধরা আকাশে দেখা দেয় (কালো/সাদা/ধূসর/বেগবান) মেঘ।
উত্তর: বেগবান
২৪. ধানের সব থেকে বড়ো বন্ধু হল (রোদ/কৃষক/সার/বৃষ্টি)।
উত্তর: বৃষ্টি
২৫. আকাশের জল চেয়ে (ভাদুলি/ক্ষেত্র/পুণ্যিপুকুর/বসুধারা) ব্রত করা হয়।
উত্তর: বসুধারা।
২৬. কত এদেশের সমস্ত পালাপার্বণ, আনন্দ-উৎসব-এসবের মূলে কী রয়েছে?
উত্তর: এদেশের সমস্ত পালাপার্বণ, আনন্দ-উৎসব-এসবের মূলে রয়েছে চাষবাস।
২৭. বসুধারা ব্রত কোন্ ঋতুতে হয়?
উত্তর: বসুধারা ব্রত গ্রীষ্ম ঋতুতে হয়।
২৮. কাজল-বৃষ্টির সময় এককালে বছর শুরু হত বলে মরশুমের নাম কী ছিল?
উত্তর: জল বৃষ্টির সময় এককালে বছর শুরু হত বলে মরশুমের নাম ছিল ‘বর্ষ’।
২৯. কীসের রং তামার হাঁড়ির মতো?
উত্তর: আকাশের রং তামার হাঁড়ির মতো।
৩০. কোন্ সময় আকাশের জল চেয়ে ‘বসুধারা’ ব্রত পালন করা হয়?
উত্তর: যখন কালবৈশাখী রোদে পুড়ে আগুন ঝরে, তখন ‘বসুধারা’ ব্রত পালন করা হয়।
৩১. আচমকা ঝড়বৃষ্টিতে ছেলেরা কী করে?
উত্তর: আচমকা ঝড়বৃষ্টিতে ছেলেরা হই হই করে আমবাগানে ছোটে আম কুড়োবার জন্য এবং অন্ধকার হলে সঙ্গে হ্যারিকেন নেয়।
৩২. বৃষ্টির মধ্যে চাষিরা কীভাবে মাঠে যায়?
উত্তর: বৃষ্টির মধ্যে হোগলার তৈরি মাথালে মাথা-পিঠ ঢেকে, দুরন্ত জলের মধ্যেই গামছা পরে চাষিরা বেরিয়ে পড়ে মাঠের কাজে।
৩৩. “বাস যাবে দূরের শহরের কী গঞ্জে।” -বাস কোথা থেকে যাবে?
উত্তর: বাস ছোটো মফস্সল শহরের ডিপো থেকে যাবে।
৩৪.”সেদিকে নজর রেখে যাত্রীর দল কাছেপিঠে ঘুরঘুর করে।” -কোন্দিকে নজর রাখার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: বাসের যাত্রীরা তাদের মালপত্র নিজেদের জায়গায় রেখে যখন দীর্ঘক্ষণের জন্য কোনো স্টপেজে নামে, তখন সেইদিকে তারা নজর রাখে।
৩৫. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থটির নাম কী?
উত্তর: সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থটির নাম ‘পদাতিক’ (১৯৪০)।
৩৬. তাঁর লেখা একটি গদ্যের বইয়ের নাম লেখো।
উত্তর: তাঁর লেখা একটি গদ্যের বইয়ের নাম ‘ঢোল গোবিন্দের আত্মদর্শন’।
৩৭. ধান শব্দটি কোন্ শব্দ থেকে এসেছে?
উত্তর: ‘ধান্য’ শব্দ থেকে ‘ধান’ শব্দটি এসেছে।
Short Question Answer
১)’অগ্রহায়ণ’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ‘অগ্রহায়ণ’ বলতে বোঝায়, বছরের শুরু বা মার্গশীর্ষ মাস। বর্তমানে বাংলা সালের অষ্টম মাস হলেও আগে প্রথম মাস হিসেবে একে গ্রাহ্য করা হত। ‘অগ্র’ শব্দটির অর্থ শুরু বা গোড়া। আর ‘হায়ন’ মানে বছর। ‘হায়ন’ শব্দের আর-একটি অর্থ হচ্ছে ফসল।
২)যাক মেঘকে নামাবার জন্য মেয়েরা দল বেঁধে ছড়া করে তাকে কী কী নামে ডাকে?
উত্তর: মেঘকে নামানোর জন্য মেয়েরা দল বেঁধে ছড়া করে তাকে কালো মেঘা, ফুলতোলা মেঘা, ধুলোট মেঘা, তুলোট মেঘা, বার মেঘা, আড়িয়া মেঘা, হাড়িয়া মেঘা, কুড়িয়া মেঘা, সিঁদুর মেঘা ইত্যাদি নামে ডাকে।
৩)‘অগ্রহায়ণ’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ‘অগ্রহায়ণ’ বলতে বোঝায়, বছরের শুরু বা মার্গশীর্ষ মাস। বর্তমানে বাংলা সালের অষ্টম মাস হলেও আগে প্রথম মাস হিসেবে একে গ্রাহ্য করা হত। ‘অগ্র’ শব্দটির অর্থ শুরু বা গোড়া। আর ‘হায়ন’ মানে বছর। ‘হায়ন’ শব্দের আর-একটি অর্থ হচ্ছে ফসল।
Long Question Answer
১ বাস-ডিপোয় অপেক্ষমান যাত্রীদের ছবি কীভাবে পাঠ্যাংশে ধরা পড়েছে?
উত্তর: লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘মরশুমের দিনে’ গদ্যাংশে বাস-ডিপোয় অপেক্ষমাণ যাত্রীদের এক বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। ছোটো মফস্সল শহরের ডিপোয় দাঁড়িয়ে থাকা বাসের ছাদে • ধরাধরি করে মাল তোলে বাসের কনডাক্টর আর ক্লিনার। বাসের ভিতরে নিজের নিজের জায়গায় হাতের জিনিস রেখে অনেকেই তখন বাইরে এসে দাঁড়ায়। সামনে চায়ের দোকানে বেঞ্চির ওপর বসে চা খেতে থাকা ড্রাইভারকে নজরে রেখে, যাত্রীর দল কাছেপিঠে ঘুরঘুর করে। গরমের সময় তারা যেমন গায়ে হাওয়া লাগায়, তেমনই শীতের সময় বসে রোদ পোহায়।
২.“গ্রামের সঙ্গে শহরের যে এখনও নাড়ির টান”-এই নাড়ির টানের প্রসঙ্গ রচনাংশে কীভাবে এসেছে?
উত্তর: মরশুমের দিনে ফসল উঠলে বাসের ভিড় হয় দেখার মতো। মেয়ে দেখতে, পুজো দিতে, জিনিস কিনতে, সিনেমা দেখতে, মামলার তদবির-তদারক করতে তখন লোকজনেরা শহরে যায়। উকিল-মোক্তার, বামুন-পুরুত, দর্জি-দোকানি সকলেই বিভিন্ন প্রয়োজনে জীবিকার তাগিদে শহরমুখী হয়। ফসল উঠলে, হাতে পয়সা এলে তখনই দেখা যায় এই তৎপরতা। এই কর্মব্যস্ততার বর্ণনা প্রসঙ্গেই কবির রচনাংশে নাড়ির টানের কথা এসেছে।
৩.“ধানের সবচেয়ে বড়ো বন্ধু বৃষ্টি”-বৃষ্টির সময়ে ধানখেতের ছবিটি কেমন হয়? অন্য যে যে সময়ে ধান চাষ হয়ে থাকে, তা লেখো।
উত্তর: বৃষ্টির সময়ে ধানখেতের ছবিটি হয় মনোরম। নববর্ষায় ক-দিনের মধ্যেই বৃষ্টির জলে খেত ভরে যায়। হোগলার তৈরি মাথালে বা তালপাতায় তৈরি শার্সিতে চাষিরা মাথা-পিঠ ঢেকে দুরন্ত জলের মধ্যেই গামছা পরে বেরিয়ে পড়ে মাঠের কাজে। ধান রোয়া, আল বাঁধার কাজ সেরে ফেলতে শুরু করে। এ ছাড়াও আছে, পাটের জমি। তার জন্যেও প্রচুর কাজ থাকে।
অন্য সময়েও ধানের চাষ হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ধানের চারা বপণ করে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে ফসল কাটা হয়। একে বলা হয় আউশ ধান। আর পৌষ-মাঘ মাসে ধানের চারা পুঁতে বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে যে ফসল কাটা হয় তাকে বলা হয় বোরো ধান। বছরে মোট তিনবার ধান চাষ করা হয়।
৪ “আগে বছর আরম্ভ হত অগ্রহায়ণে”-এর সম্ভাব্য কারণ কী?
উত্তর: দেশীয় মতে, আগে বছর শুরু হত জলবৃষ্টি আর ফসলের সময় থেকে। মাসের নাম আর ঋতুর নামের মধ্যে আজও তাই তার স্মৃতিচিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়। তেমনই ‘অগ্রহায়ণ’ মাসের নামের মধ্যেও এর সম্ভাব্য কারণ রয়েছে। ‘হায়ণ’ কথার অর্থ হল ‘বছর’ আর ‘অগ্র’ শব্দের অর্থ হল শুরু। সুতরাং, ‘অগ্রহায়ণ’ শব্দের অর্থ বছরের গোড়া। এই কারণেই অগ্রহায়ণ মাস থেকে বছরের শুরু হত।
৫.“এদেশের যত পালা-পার্বণ, উৎসব-আনন্দ, সব কিছুরই মূলে রয়েছে চাষবাস।”- বাংলার উৎসব- খাদ্য-সংস্কৃতির সঙ্গে চাষবাস কতটা জড়িত বলে তুমি মনে করো?
উত্তর: ভারতীয় সভ্যতার উন্মেষ ও বিকাশের নেপথ্যে রয়েছে কৃষিকাজ। সেই কৃষিকাজকে ঘিরে সংঘটিত হয় নানা উৎসব, গড়ে ওঠে খাদ্যাভ্যাস তথা সাংস্কৃতিক পার্বণ। ভারতীয় অর্থনীতির মূল কাঠামোও দাঁড়িয়ে আছে কৃষিকাজের ওপর।
চাষবাসের জন্যে অপরিহার্য উপাদান জল। বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে ভারতীয় লোকসংস্কৃতি। তাই দেখা গিয়েছে, মাঠে জল পাওয়ার জন্য চাষির ঘরের মেয়ে-বউরা উদ্যাপন করে ‘বসুধারা ব্রত’, ‘ক্ষেত্রব্রত’।
আবার অন্য কোথাও বৃষ্টির অভাবে পালিত হয় ‘মেঘরানির কুলো’ নামানোর প্রথা। কুলো, জল-ঘট নিয়ে চাষিঘরের অল্পবয়সি মেয়েরা দলে দলে পাড়ায় বেরিয়ে পড়ে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে গান গায় আর সংগ্রহ করে চাল-তেল-সিঁদুর, পয়সা, পান, সুপারি প্রভৃতি।
‘ভাদুলি ব্রত’ মনে করিয়ে দেয় পুরোনো দিনের কথা, যখন এদেশে সওদাগরেরা সপ্তডিঙা ভাসিয়ে বাণিজ্যে যেত। বাপ-ভাই- স্বামী, যারা বাণিজ্যে যেত, তারা যেন নিরাপদে ঘরে ফিরে আসে, সেই উদ্দেশ্যে এই ব্রতপালন করা হয়।
আবার চাষবাসকে কেন্দ্র করে পালিত হয় বাংলার লোক- – উৎসব ‘নবান্ন’। কৃষকের ঘরে নতুন ধান তুললে সেই চালের ধানে – নবান্ন উদ্যাপিত হয়। তার ক্ষীণ অস্তিত্ব এখনও আছে বাংলারৃ গ্রামঘরে। সাধ্যমতো নতুন চালের ভাত রান্না করে প্রতিবেশী ও আত্মীয়-পরিজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়। এভাবেই পারস্পরিক – সম্পর্ক স্থায়িত্বলাভ করে।
বস্তুত, চাষবাস হল ‘উর্বরতার সংস্কৃতি’। এই উর্বরতার সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলার চৈত্র মাসে অনুষ্ঠিত ‘গাজন’-ও বাঙালি জীবনে একাত্ম হয়ে গিয়েছে।
৬. ত “শহর ছাড়ালেই দু-পাশে দেখা যাবে”-শহরের চিত্রটি কেমন? তা ছাড়িয়ে গেলে কোন্ দৃশ্য দেখা যাবে?
উত্তর: ‘মরশুমের দিনে’ পাঠ্যাংশের লেখকের কথা অনুযায়ী, শহর – ছাড়ালেই দু-পাশে দেখা যাবে মাথার ওপর দরাজ আকাশ। বাস- রাস্তার দু-ধারে বট-পাকুড়, শাল-সেগুনের গাছ। তার ডালে মাঝে – মাঝে দৃষ্টি আটকে যাবে। দেখা যাবে, কালো কুচকুচে বাঁধানো রাস্তা মাঝে মাঝে বাঁক নিয়ে চলে গিয়েছে সোজা সামনের দিকে।
গরমকালে আবার শহরের এই রাস্তায় দেখা যায় অন্য দৃশ্য। যেতে যেতে মনে হয়, দূরে যেন জল চিকচিক করছে আর সেই জলে উলটো হয়ে পড়েছে দু-পাশের গাছের ছায়া। কিন্তু আসলে, তা যেন মরীচিকা।
অন্যদিকে শহর ছাড়িয়ে গ্রামে ঢুকলেই বদলে যায় দৃশ্যপট। বাসরাস্তার ধারে ধারে লোকালয়। বড়ো গ্রামে দেখা যাবে, ইটের দালানবাড়ি, ছোটো গ্রামে খড় কিংবা টিনের চালাবিশিষ্ট মাটির বাড়ি। – লোকালয় পার হলেই আবার দিগন্তবিস্তৃত মাঠ। এক-এক ঋতুতে দেখা যায় তার এক-এক রূপ-রূপান্তর।
ঋতুভেদেও গ্রামে দৃশ্যান্তর ঘটে। শরতের আকাশে যতদূর চোখ চলে যায়, মনে হয় আকাশটাকে কেউ যেন ঝকঝকে-তকতকে করে মেজে রেখেছে। নীচে কোথাও মাটি দেখা যায় না। সামনে-পিছনে একটানা সবুজ ধান। তার ওপর দিয়ে মাঝে মাঝে হাওয়া-ঢেউ খেলে যায়। দূরে দাঁড়িয়ে থাকে একটা-দুটো তাল-খেজুর কিংবা শিশুপলাশ। আবার শরতের শেষে মাঠের সে আর-এক চেহারা। যতদূর চোখ যায় দেখা যায় রুক্ষ মাটি, গ্রামের শুকনো কঙ্কালসার চেহারা। আলগুলি জেগে থাকে, বুকের হাড়-পাঁজরের মতো। গ্রামে যাওয়ার মেঠো পথ জেগে ওঠে। একটু বেলা বাড়লে মাটি তেতে ওঠে।
চাষিরা তাই সকাল সকাল দ্রুত পায়ে বাড়ি ফেরে। প্রখর গ্রীষ্মে নদী-পুকুর, খালবিল শুকিয়ে যায়। গাছের পাতা ঝরে যায়। যেন এলোমেলো শুকনো কয়েকটি কাঠির কঙ্কাল উড়তে থাকে। রাখালের দল ছড়ি হাতে বট-অশখের তলায় বসে থাকে। মাঝে মাঝে আগুনের হলকার মতো হাওয়া দেয়।
৭.“এই রাস্তার ওপরই এক ভারি মজার দৃশ্য দেখা যায়।” -মজার দৃশ্যটি কেমন তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত দৃশ্যটি মূলত দেখা যায় গরমকালে। চারদিকে
তখন হাওয়া আগুনের মতো তেতে থাকে। সামনে এগিয়ে যেতে যেতে মনে হয়, দূরে যেন জল চিকচিক করছে আর সেই জলে উলটো হয়ে পড়েছে দু-পাশের গাছের ছায়া। কিন্তু এগিয়ে গেলে দেখা যায় সব মুহূর্তেই উধাও! কোথায় জল? কোথায় ছায়া? ঠিক যেন মরুভূমির মরীচিকা।
৮.“ব্রতের ভিতর দিয়ে মনে পড়ে যায় সেই আপনজনদের কথা, যারা দূরে আছে”-শিক্ষক/শিক্ষিকার সাহায্য নিয়ে এমনই কিছু ‘ব্রত’র ছড়া খাতায় সংগ্রহ করো।
উত্তর: কিছু ব্রতছড়ার নমুনা হল-
(১) “পুণ্যিপুকুর পুষ্পমালা কে পূজে রে দুপুরবেলা? আমি সতী লীলাবতী ভাইয়ের বোন পুত্রবতী, হয়ে পুত্র মরবে না পৃথিবীতে ধরবে না।”
(২) “তুষ-তুষালি, তুমি বো। তোমার পুজা করে যে- ধনে ধানে বাড়ন্ত সুখে থাকে আদি অন্ত।। তোষলা লো তুষকুন্তি ধনে ধানে গাঁয়ে গুন্তি, ঘরে ঘরে গাই বিউন্তি।।”
(৩) “এ নদী সে নদী একখানে সুখ, ভাদুলি-ঠাকুরানি ঘুচাবেন দুখ। এ নদী সে নদী একখানে মুখ দিবেন ভাদুলি তিনকুলে সুখ।”
৯.“ধান কাটার পর একবারে আলাদা দৃশ্য”-এই দৃশ্যে কোন্ ঋতুর ছবি ফুটে উঠেছে? সেই ঋতু সম্পর্কে কয়েকটি বাক্যে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।
উত্তর: ধান কাটার পর গ্রীষ্ম ঋতুর ছবি এই দৃশ্যে ফুটে উঠেছে। গ্রীষ্মকালে শূন্য মাঠে যতদূর চোখ যায়, চারিদিক তখন খাঁ খাঁ করে। মাটি রুক্ষ, মাঠ-প্রান্তর কঙ্কালসার, শুকনো। আলগুলি
জেগে থাকে বুকের হাড়-পাঁজরের মতো। অন্যদিকে, মাটির ওপরে আকাশের রং তখন তামার হাঁড়ির মতো। রোেেদর দিকে তাকানো যায় না। গোরুর গাড়ির চাকায়, মানুষের পায়ে মাটির ডেলাগুলি ভেঙে গুঁ যারা মাঠে গিয়েছিল, বেলা বাড়তেই তারা তাড়াতাড়ি ঘরে ফেরে। নদী- পুকুর, খালবিল শুকিয়ে যাড়ো গুঁড়ো হয়ে ধুলো হয়ে যায়। সেই ধুলো কখনও ঘূর্ণি হাওয়ায়, দমকা বাতাসে উড়ে উড়ে দৃষ্টি আড়াল করে দেয়। ভোরবেলায়। গাছে পাতা থাকে না। নদীনালার ধার ছাড়া কোথাও ঘাসের ডগা পর্যন্ত দেখা যায় না। রাখাল বালক ছড়ি হাতে গাছের ছায়ায় বসে থাকে। মাঝে মাঝে হাওয়া বয়-দেন আগুনের হলকা। জলের জন্য চারদিকে হাহাকার ওঠে।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর
ঝড়ে – প্রবল বায়ুবেগে।
• শুদ্ধ বানানটিতে” চিহ্ন দাও:
৭.১এক মুহূর্ত/মূহূর্ত/মুহূর্ত,
উত্তর: মুহূর্ত
৭২ অগ্রহায়ন/অগ্রহায়ন/অগ্রহায়ণ,
উত্তর: অগ্রহায়ণ
৭.৩এত বিলক্ষণ/বিলক্ষন/বিলখ্যন,
উত্তর: বিলক্ষণ
৭.৪ মরিচিকা/মরীচিকা/মরীচীকা।
উত্তর: মরীচিকা।
Grammar
• নীচের বিশেষ্য শব্দগুলিকে বিশেষণে এবং বিশেষণ শব্দগুলিকে বিশেষ্যে রূপান্তরিত করো :
মফস্সল, বৎসর, খর, ব্রত, বিস্তর, পর্বত, ঝড়।
উত্তর: বিশেষ্য বিশেষণ
মফস্সল মফস্সলীয়
বৎসর বাৎসরিক
খরা খর
ব্রত ব্রতী
বিস্তর বিস্তৃত,বিস্তারিত
পর্বত পার্বত্য
ঝড় ঝোড়ো
• নীচের বাক্যগুলি থেকে শব্দবিভক্তি এবং অনুসর্গ খুঁজে নিয়ে লেখো:
এক কেউ এসেছিল দোকানের জন্য মাল তুলতে।
উত্তর: দোকানের- ‘এর’ বিভক্তি। মাল- ‘শূন্য’ বিভক্তি। জন্য- অনুসর্গ।
বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে অন্য সমস্ত আওয়াজ ডুবে যায়।
উত্তর: বৃষ্টির-‘র’ বিভক্তি। শব্দে-‘এ’ বিভক্তি। ডুবে-‘এ’ বিভক্তি। আওয়াজ-‘শূন্য’ বিভক্তি।
সন্ধে নাগাদ উলু দিয়ে ব্রত শেষ হয়।
উত্তর: ব্রত ‘শূন্য’ বিভক্তি। উলু ‘শূন্য’ বিভক্তি। দিয়ে- অনুসর্গ।
ছেলেরা হই হই করে ছোটে আমবাগানে।
উত্তর: ছেলেরা-‘রা’ বিভক্তি। আমবাগানে- ‘এ’ বিভক্তি।
• পাঠ থেকে নিম্নলিখিত শব্দগুলির সমার্থক শব্দ খুঁজে লেখো:
অম্বর, ধরা, মৃত্তিকা, প্রান্তর, তটিনী।
উত্তর: অম্বর আকাশ
প্রান্তর মাঠ
ধরা পৃথিবী
তটিনী নদী
মৃত্তিকা মাটি
• নীচের সমোচ্চারিত/প্রায়-সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ-গুলির অর্থ লেখো:
ধোয়া জলে বাধা গায়ে ঝরে
উত্তর: ধোয়া – পরিষ্কার করা।
ধোঁয়া – ধুম/ধূম্র।
জলে – নীরে বা বারিতে।
জ্বলে – পোড়ে বা পুড়ে যায়।
বাধা – প্রতিবন্ধকতা।
বাঁধা – বদ্ধ, আটকানো।
গায়ে – শরীরে।
গাঁয়ে – গ্রামে।
ঝরে – পড়ে যায়, পতিত হয়।
ঝড়ে – প্রবল বায়ুবেগে।