Class 6 Chapter 4 Solution
শিলা ও খনিজ পদার্থ
MCQs
1. জীবাশ্ম জ্বালানি তৈরি হয়-
(i) শিলা থেকে
(ii) জীবাশ্ম থেকে
(iii) জীবের দেহাবশেষ থেকে
(iv) কোনোটিই নয়
উত্তর: জীবের দেহাবশেষ থেকে
2. বর্তমানে কয়লা প্রধানত ব্যবহার করা হয়-
(i) উনুন জ্বালাতে
(ii) তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে
(iii) ধাতু নিষ্কাশন করতে
(iv) রং প্রস্তুতিতে
উত্তর: তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে
3. কয়লার প্রধান উপাদান মৌলটি হল-
(i) কার্বন
(ii) হাইড্রোজেন
(iii) অক্সিজেন
(iv) নাইট্রোজেন
উত্তর: কার্বন
4. কোন্টি পেট্রোলিয়ামজাত যৌগ নয়?
(i) প্লাস্টিক
(ii) আলকাতরা
(iii) পিচ্ছিলকারক তেল
(iv) কেরোসিন
উত্তর: আলকাতরা
5. সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের কয়লা হল-
(i) পিট
(ii) অ্যানথ্রেসাইট
(iii) লিগনাইট
(iv) বিটুমিনাস
উত্তর: অ্যানথেসাইট
6. রেললাইনের কালো পাথর হল-
(i) পিউমিস
(ii) ব্যাসল্ট
(iii) গ্র্যানাইট
(iv) নিস
উত্তর: ব্যাসল্ট
7. কোন্টি পাললিক শিলা নয়?
(i) বেলেপাথর
(ii) ব্যাসল্ট
(iii) চুনাপাথর
(iv) শেল
উত্তর: ব্যাসল্ট
8. বক্সাইট থেকে পাওয়া যায়-
(i) লোহা
(ii) অ্যালুমিনিয়াম
(iii) তামা
(iv) আয়রন
উত্তর: অ্যালুমিনিয়াম
9. তামা ও টিন মিশিয়ে পাওয়া যায়-
(i) কাঁসা
(ii) ব্রোঞ্জ
(iii) পিতল
(iv) সিলভার
উত্তর: ব্রোঞ্জ
10. নিম্নের কোন্টি জীবাশ্ম জ্বালানি নয়?
(i) কয়লা
(ii) গোবর
(iii) প্রাকৃতিক গ্যাস
(iv) কাঠ
উত্তর: গোবর
11. পিউমিসকে বলা হয়-
(i) স্লেটপাথর
(ii) চুনাপাথর
(iii) ঝামাপাথর
(iv) বেলেপাথর
উত্তর: ঝামাপাথর
12. সংকর ধাতু হল-
(i) মিশ্র পদার্থ
(ii) যৌগিক পদার্থ
(iii) মৌলিক পদার্থ
(iv) তেজস্ক্রিয় পদার্থ
উত্তর: মিশ্র পদার্থ
Very Short Question Answer
1. যে-কোনো দু-রকম পাললিক শিলার উদাহরণ দাও।
উত্তর: বেলেপাথর ও চুনাপাথর। এ ছাড়া জিপসাম, কাদাপাথর, সৈন্ধব লবণ ইত্যাদি পাললিক শিলা।
2. জীবাশ্ম জ্বালানির দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: কয়লা ও পেট্রোলিয়াম।
3.সৃষ্টির মুহূর্তে পৃথিবী কেমন ছিল?
উত্তর: গরম আর গলে যাওয়া পাথর দিয়ে তৈরি ছিল।
4. দুই বা ততোধিক খনিজ মিলিতভাবে কী গঠন করে?
উত্তর: শিলা।
5. পৃথিবীর গভীরে পাথর তরল অবস্থায় থাকে কেন?
উত্তর: পৃথিবীর গভীরে চাপ ও উন্নতা খুব বেশি থাকার জন্য।
6. জমাটবাঁধা লাভাকে কী বলে?
উত্তর: আগ্নেয়শিলা।
7. কোন্ পাথরে অনেক ছিদ্র থাকে?
উত্তর: পিউমিস পাথরে।
8. পিউমিস পাথরের অপর নাম কী?
উত্তর: ঝামাপাথর।
9. সবথেকে নরম শিলা কোন্টি?
উত্তর: পাললিক শিলা।
10. কোন্ শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায়?
উত্তর: পাললিক শিলায়।
11. মূল্যবান ধাতুগুলি কোন্ শিলাতে খনিজরূপে থাকে?
উত্তর: আগ্নেয়শিলাতে।
12. মুদ্রা ধাতু নামে কোন্ মৌলটি পরিচিত?
উত্তর: তামা।
13. পৃথিবীপৃষ্ঠ কী ধরনের শিলা দিয়ে তৈরি?
উত্তর: আগ্নেয় ও পরিবর্তিত শিলা।
14. মারবেল পাথর কী ধরনের শিলা?
উত্তর: পরিবর্তিত শিলা।
15. ধাতু নিষ্কাশন কী?
উত্তর: খনিজ থেকে ধাতুকে আলাদা করার পদ্ধতি।
16. কপার গ্লান্স-এ উপস্থিত প্রধান মৌলগুলি কী কী?
উত্তর: তামা ও সালফার।
17. মিশ্র ধাতুর দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: পিতল ও ব্রোঞ্জ।
18. তামা ও দস্তা দিয়ে তৈরি সংকর ধাতুর নাম কী?
উত্তর: পিতল।
19. রাংঝাল কী কাজে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: গয়নার সোনা ও বিভিন্ন ধাতু জোড়া দিতে।
20. ‘অশ্ম’ কথার অর্থ কী?
উত্তর: পাথর
21. সম্প্রতি ব্যবহৃত অজীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ দাও।
উত্তর: কাঠ, খড়, কাগজ, গোবর।
22. তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কাঁচামাল কী?
উত্তর: কয়লা।
23. বাতাস ছাড়া কয়লা দহন করলে যে-কঠিন অবশেষ পাওয়া যায় তাকে কী কাজে ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: ধাতু নিষ্কাশনে।
24. কয়লার অন্তধূম পাতনে প্রাপ্ত তরল অবশেষের নাম কী?
উত্তর: আলকাতরা।
25. LPG কী কাজে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: রান্নার কাজে।
26. LPG-এর পুরো নাম কী?
উত্তর: লিকুয়েফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস। (Liquefied Petroleum Gas) |
27. পেট্রোলিয়াম শোধনে প্রাপ্ত গ্যাসীয় জ্বালানির নাম কী?
উত্তর: প্রোপেন ও বিউটেন।
28. প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রধান উপাদান কী?
উত্তর: মিথেন।
29. শিলা কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর: শিলা তিন প্রকার, যেমন-আগ্নেয়শিলা, পাললিক শিলা ও পরিবর্তিত শিলা।
30. আগ্নেয়শিলা কত প্রকার ও কী কী?
উত্তর: আগ্নেয়শিলা তিন প্রকার, যথা-ব্যাসল্ট, গ্র্যানাইট ও পিউমিস।
Short Question Answer
1. শিলা কাকে বলে?
উত্তর: ভূত্বক গঠনের সব রকম উপাদানের সাধারণ নাম শিলা। শিলা বলতে শুধুমাত্র কঠিন পাথরকে বোঝায় না, নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা ইত্যাদি ভূপৃষ্ঠের যাবতীয় বস্তুকে একত্রে শিলা বলে।
2. আগ্নেয়শিলা কাকে বলে?
উত্তর: আগ্নেয় পদার্থ (অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত লাভা) শীতল হয়ে জমাট বেঁধে যে-শক্ত, কঠিন, স্তরবিহীন শিলা গঠন করে, তাকে আগ্নেয়শিলা বলে।
3. পাললিক শিলা কাকে বলে?
উত্তর: সমুদ্রগর্ভে ও বিশাল জলাশয়ের তলদেশে পলি জমাট বেঁধে অত্যধিক চাপ ও তাপের প্রভাবে অপেক্ষাকৃত নরম, স্তরযুক্ত সচ্ছিদ্র যে শিলা গঠিত হয়, তাকে পাললিক শিলা বলে।
4. নানান জলজ প্রাণীর জীবাশ্ম কোন্ শিলাস্তরে দেখা যায় ও কেন?
উত্তর: নানান জলজ প্রাণীর জীবাশ্ম পাললিক শিলাস্তরে পাওয়া যায়। কারণ ওইসব জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার পর তাদের নরম অংশগুলি নষ্ট হয়ে তার ওপর পলি জমে জীবাশ্ম তৈরি হয়।
5. খনিজ পদার্থ কাকে বলে?
উত্তর: বিভিন্ন শিলাস্তরে বর্তমান যেসব প্রকৃতিসৃষ্ট বস্তু, যাদের একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুক্তি আছে এবং বিভিন্ন ধাতু ও অধাতুর মিলিত যৌগরূপে বালি, মাটি ইত্যাদির সঙ্গে মিশে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়, তাদের খনিজ বলে।
6. আকরিক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: যেসব ধাতব খনিজ পদার্থ থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহজে ও সস্তায় বিশুদ্ধ ধাতু নিষ্কাশন করা হয়, তাদের আকরিক বলে। উদাহরণ: লোহার আকরিক হেমাটাইট (Fe2O3)।
7. সব আকরিকই খনিজ, কিন্তু সব খনিজ আকরিক নয়- উক্তিটি যুক্তি-সহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধাতুর যৌগ শিলাস্তরে বালি-মাটি ইত্যাদির সঙ্গে মিশে থাকে, এদের ধাতুর খনিজ বলে। আবার যেসব খনিজ থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা হয়, তাদের আকরিক বলে। সুতরাং, সব আকরিকই হল খনিজ। যেহেতু সব খনিজ পদার্থ থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা সম্ভব নয় সেহেতু সমস্ত খনিজ আকরিক নয়।
8. সংকর ধাতু বা মিশ্র ধাতু কী?
উত্তর: কোনো ধাতুর সঙ্গে অন্য ধাতু বা অধাতু বিশেষ মাত্রায় মিশিয়ে গলিয়ে নিয়ে সেই তরল মিশ্রণকে ঠান্ডা করে যে-মিশ্র পদার্থ বা কঠিন দ্রবণ পাওয়া যায়, তাকে সংকর ধাতু বা মিশ্র ধাতু বলে। উদাহরণ: তামা ও টিনের মিশ্রণে তৈরি ব্রোঞ্জ।
9. প্রাথমিক শিলা কাকে বলে ও কেন?
উত্তর: আগ্নেয়শিলা-কে প্রাথমিক শিলা বলে। যাবতীয় শিলার মধ্যে এই শিলা সর্বপ্রথম সৃষ্টি হয়েছে প্রায় 300 কোটি বছর আগে অতি প্রাচীন প্রিক্যাম্বিয়ান যুগে। ভূগর্ভের আগ্নেয় পদার্থ, ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে লাভারূপে জমাট বেঁধে সর্বপ্রথম পৃথিবীর পৃষ্ঠ বা ভূত্বক গঠন করে, সেজন্য একে প্রাথমিক শিলা বলে।
10. জীবাশ্ম বা ফসিল কাকে বলে?
উত্তর: জীবদেহের আংশিক বা সম্পূর্ণ শিলাভূত বা প্রস্তরীভূত অবস্থা বা ছাপ বহু দিন ধরে ভৌত-রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবে ভূগর্ভে বিভিন্ন পাললিক শিলাস্তরে সংরক্ষিত হলে, তাকে জীবাশ্ম বলে।
11. সোনার আংটি জল লাগলে বা খোলা হাওয়ায় পড়ে থাকলে কোনো পরিবর্তন হয় না, কিন্তু লোহার জিনিস ওইসব অবস্থায় থাকলে তাতে মরচে ধরে কেন?উত্তর: সোনা প্রকৃতিতে মৌল অবস্থায় পাওয়া যায়। এটি ভারী, স্থিতিশীল এবং রাসায়নিকভাবে কম সক্রিয় থাকে। কিন্তু লোহা আগ্নেয় শিলাস্তরে বিভিন্ন যৌগের সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় আকরিকরূপে পাওয়া যায়। লোহা রাসায়নিকভাবে সক্রিয়। ভিজে বায়ুতে বা জলের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এবং বাদামি রঙের মরচে গঠন করে। তাই লোহাতে জল লাগলে বা খোলা হাওয়ায় পড়ে থাকলে মরচে ধরে।
12. লোহার দুটি আকরিকের নাম লেখো।
উত্তর: লোহার দুটি আকরিকের নাম:
। হেমাটাইট (লাল রংযুক্ত) – Fe2O3
॥ ম্যাগনেটাইট – Fe3O4
13. কয়লার কয়েকটি উপজাত পদার্থের নাম লেখো।
উত্তর: কয়লার কয়েকটি উপেেজাত দ্রব্য হল-ন্যাপথলিন, স্যাকারিন, আলকাতরা, কোক গ্যাস ইত্যাদি।
14. দুটি জ্বালানি খনিজের উদাহরণ দাও।
উত্তর: দুটি জ্বালানি খনিজের উদাহরণ হল-কয়লা ও তেলশিলা বা অয়েলশেল।
15. জৈব শিলা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উত্তর: জীবজাত পদার্থ (উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ) মাটির নীচে বা জলে দীর্ঘসময় ধরে চাপা পড়ে চাপ, তাপ ও নানান ভৌত- রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে অঙ্গীভূত হয়ে যে-শিলা গঠন করে, তাকে জৈব শিলা বলে। জৈব শিলা এক বিশেষ রকমের পাললিক শিলা। উদাহরণ: কয়লা, তেলশিলা প্রভৃতি।
16. পেট্রোলিয়াম কী?উত্তর: অগভীর সমুদ্রে পাললিক শিলাস্তরে কোটি কোটি বছর ধরে নানান জলজ প্রাণীর মৃতদেহ তাপ, চাপ ও নানান ভৌত- রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে-তরল জৈব জ্বালানি সৃষ্টি করে, তাকেই পেট্রোলিয়াম বলে। এটি হল একটি অশুদ্ধ চটচটে তরল মিশ্রণ, যাকে শুদ্ধ করে বিভিন্ন জ্বালানি পাওয়া যায়।
17. পেট্রোলিয়াম পরিশোধনের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর: জীবের দেহাবশেষের ভৌত-রাসায়নিক পরিবর্তনে ভূগর্ভে পেট্রোলিয়াম এক প্রকার চটচটে তরল মিশ্রণ, এতে নানান অপদ্রব্য বা যৌগ, জল, মাটি ইত্যাদি মিশে থাকে। একে সরাসরি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। জল, মাটি ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় পদার্থগুলি শোধন করেই পেট্রোলিয়াম পাওয়া যায়।
18. লোহার সঙ্গে ক্রোমিয়াম মিশিয়ে যে মিশ্র ধাতু পাওয়া যায়, তার সঙ্গে লোহার ধর্মের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য কী?
উত্তর: লোহার সঙ্গে ক্রোমিয়াম মিশিয়ে প্রাপ্ত মিশ্র ধাতু স্টেনলেস স্টিলে জল লাগলে বা ভিজে আবহাওয়ায় কোনোভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়া করে না, অর্থাৎ এতে মরচে ধরে না কিন্তু লোহাতে জল লাগলে সেটি অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বিক্রিয়া করে বাদামি রঙের মরচে ধরে।
Long Question Answer
1. আগ্নেয়শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: আগ্নেয়শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ:
। আগ্নেয়শিলা খুব ভারী, কঠিন ও শক্ত, তাই এই শিলা সহজে ক্ষয়ে যায় না।
iⅱ আগ্নেয়শিলার মধ্যে কোনো রকম স্তরভাগ থাকে না, তাই একে অস্তরীভূত শিলা বলে।
iii আগ্নেয়শিলার উপাদানগুলি খুব সূক্ষ্ম এবং তারা খুব ঘনভাবে সন্নিবিষ্ট থাকে।
iv আগ্নেয় পদার্থ (লাভা) জমা হয়ে উত্তপ্ত অবস্থায় এই শিলা সৃষ্টি হয় এবং ভূত্বকের ওপর সবার প্রথমে গঠিত হয় বলে একে প্রাথমিক শিলাও বলে।
• আগ্নেয়শিলার মধ্যে জীবাশ্ম দেখা যায় না, তবে মূল্যবান ধাতুগুলি এই শিলায় পাওয়া যায়।
vi আগ্নেয়শিলা অম্লধর্মী বা ক্ষারকীয় উভয় প্রকার হতে পারে।
2. পাললিক শিলা কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর: পাললিক শিলার গঠন পদ্ধতি:
। বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় (ভূমিকম্প, ভূ-আলোড়ন, ভূমিধস) কিংবা প্রাকৃতিক শক্তির ঘাত-প্রতিঘাতে ভূত্বক
চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ওই শিলাচূর্ণ পলিরূপে হ্রদ, নদী-সমুদ্রের জলের নীচে জমা হয়।
॥ ধীরে ধীরে সেই পলিস্তর মাটির নীচে চলে যেতে থাকে।
iii বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এবং জৈব উপায়ে মাটির নীচের চাপ ও তাপের প্রভাবে ওই পলিস্তর জমাট বেঁধে কালক্রমে তার থেকে কঠিন পাললিক শিলা গঠিত হয়।
এরকমভাবে প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে যান্ত্রিক উপায়ে বেলেপাথর, কাদাপাথর, শেল প্রভৃতি পাললিক শিলা, রাসায়নিক উপায়ে ডলোমাইট, সৈন্ধব লবণ প্রভৃতি এবং জৈব উপায়ে চুনাপাথর, কয়লা প্রভৃতি পাললিক শিলা গঠিত হয়।
3. পাললিক শিলার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য:
। সমস্ত শিলার মধ্যে পাললিক শিলা সবথেকে নরম, হালকা ও ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়, সেজন্য সহজেই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ক্ষয়ে যায়।
ii সবরকম শিলার মধ্যে একমাত্র পাললিক শিলায় সচ্ছিদ্রতা
আছে। তাই এই শিলাস্তরে জল ও খনিজ তেল পাওয়া যায়।
iii পাললিক শিলার মধ্যে কোনো রকম স্ফটিক লক্ষ করা যায় না।
iv পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে একে স্তরীভূত শিলা-ও বলে।
4. রূপান্তরিত বা পরিবর্তিত শিলার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: রূপান্তরিত বা পরিবর্তিত শিলার বৈশিষ্ট্য:
। দীর্ঘসময় ধরে প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের আগ্নেয় ও পাললিক শিলাস্তর তাদের আগের বৈশিষ্ট্য হারিয়ে নতুনরূপে এই শিলা গঠন করে।
॥ এই শিলা অন্যান্য শিলার রূপান্তরের মাধ্যমে গঠিত হওয়ায় অন্য শিলা থেকে অনেক বেশি শক্ত ও কেলাসিত হয়। সেজন্য স্পষ্ট স্ফটিকও দেখা যায়।
iii বিভিন্ন মাধ্যম বা শক্তির প্রভাবে এই শিলা গঠিত হয়, যেমন- চাপ, উত্তাপ, দ্রবণ ইত্যাদি।
iv এই জাতীয় শিলার খুব সহজে ক্ষয় হয় না।
• এইপ্রকার শিলার স্তরবিন্যাস অস্পষ্ট ও অবিন্যস্ত।
vi রূপান্তরিত শিলায় কোনো জীবাশ্ম থাকে না, তবে আকরিক বা খনিজ থাকে।
5. জীবাশ্ম কীভাবে গঠিত হয়? অথবা, জীবাশ্ম পাথরের মধ্যে এল কী করে?
উত্তর: কোটি কোটি বছর আগে শামুক, মাছ, সাপ প্রভৃতি সবাই বেঁচেছিল। তারপর একদিন এরা মারা গেল। মাটিতে বা জলের নীচে পড়ে থাকতে থাকতে এদের দেহাবশেষে নানান পরিবর্তন ঘটতে লাগল। প্রথমে দেহের নরম অংশগুলি নষ্ট হয়ে গেল। তারপর সেই পড়ে থাকা অংশের ওপর ধীরে ধীরে পলি জমতে শুরু করল। কোটি কোটি বছর ধরে নানান পরিবর্তন ঘটে মাটির নীচে থাকা এইসব দেহাবশেষ একসময়ে পাথরে পরিণত হল। এই পাথুরে দেহাবশেষই হল জীবাশ্ম।
6. জ্বালানি কাকে বলে? উদাহরণ-সহ নানারকম জ্বালানির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর: যেসব বস্তু বা পদার্থকে পুড়িয়ে আমরা তাপশক্তি পাই এবং তাকে নানান কাজে লাগানো হয়, তাকেই জ্বালানি বলে।
জ্বালানি
সাম্প্রতিক জ্বালান জীবাশ্ম জ্বালানি
অধিকাংশ কঠিনরূপে থাকে, যেমন-কাঠ, খড়, কাগজ, আখের ছিবড়ে, তুষ ইত্যাদি।
1. কঠিন-কয়লা
2. তরল-পেট্রোলিয়াম
3. গ্যাসীয়-প্রাকৃতিক গ্যাস কোল গ্যাস, ইত্যাদি।
7. সংকর ধাতুর বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: সংকর ধাতুর বৈশিষ্ট্য:
। সংকর ধাতু দুই বা তার বেশি ধাতুর একটি সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব, তবে সাধারণ মিশ্রণ।
ii কিছু ক্ষেত্রে এক বা একাধিক ধাতুর সঙ্গে নানান অধাতু (কার্বন, সালফার, ফসফরাস ইত্যাদি) যুক্ত হয়েও সংকর ধাতু তৈরি হয়।
iii সংকর ধাতু সাধারণভাবে বিশুদ্ধ ধাতুগুলির তুলনায় অনেক বেশি নমনীয়, কঠিন, ঘাতসহ ও প্রসারণশীল হয়, যেমন-তামার তুলনায় তামা ও টিনের মিশ্রণে তৈরি সংকর ধাতু কাঁসা অনেক বেশি শক্ত।
iv সংকর ধাতুর রাসায়নিক সক্রিয়তা কম, পরিবর্তিত আবহাওয়াতে কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
8. সংকর ধাতুর ব্যবহারের উপযোগিতা বা গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: সংকর ধাতুর ব্যবহারের উপযোগিতা:
। সংকর ধাতু সাধারণ ধাতুর তুলনায় অনেক বেশি নমনীয়,
কঠিন ও বেশি ভার বহন করতে পারে, যেমন-লোহার সংকর ধাতু-ইস্পাত অনেক বেশি ভার বহন করতে পারে।
॥ সংকর ধাতুর তাপ ও তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা সুবিধামতো বাড়ানো বা কমানো যায়।
iii সংকর ধাতু রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়, বায়ু বা জলের সঙ্গে বিক্রিয়া প্রতিরোধের জন্য এদের ব্যবহার করা হয়।
iv ভালো ছাঁচ তৈরি করার জন্য, গহনা বা অন্যান্য সূক্ষ্ম কাজ করার জন্য সংকর ধাতু কাজে লাগে। সেজন্য মুদ্রা, মূর্তি, যন্ত্রপাতি, বাসনপত্র প্রভৃতি তৈরিতে সংকর ধাতু ব্যবহার করা হয়।
9. কয়লার ব্যাবহারিক গুরুত্ব বা উপযোগিতা সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: কয়লার ব্যাবহারিক গুরুত্ব:
। গৃহস্থের রান্নার জ্বালানি হিসেবে কয়লা বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
iⅱ তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে: তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা অপরিহার্য।
iii বিভিন্ন কলকারখানায় ইস্পাত উৎপাদনে এবং ধাতুবিদ্যায় উচ্চমানের কয়লা ব্যবহৃত হয়।
iv কোল গ্যাস: বায়ুশূন্যস্থানে কয়লার অন্তধূম পাতন করলে কোল গ্যাস পাওয়া যায়। এটি রান্নার কাজে ও আলো জ্বালানোর কাজে, প্লাস্টিক উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
• বাতাস ছাড়া বেশি উন্নতায় গরম করলে তরল অবশেষরূপে আলকাতরা পাওয়া যায়। এর থেকে অনেক জৈব যৌগ আলাদা করা হয়, যেমন-ন্যাপথলিন, জীবাণুনাশক ও নানান রঞ্জক পদার্থ।
10. কেন পেট্রোলিয়াম শোধন করা হয়? পেট্রোলিয়ামজাত যে-কোনো দুটি যৌগের নাম ও তাদের ব্যবহার উল্লেখ করো।
উত্তর: পেট্রোলিয়াম হল চটচটে তরল মিশ্রণ। এতে বহুরকমের যৌগ, জল, মাটি ইত্যাদি মিশে থাকে। একে সরাসরি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। জল, মাটি ও অপ্রয়োজনীয় পদার্থ দূর করার পর তবেই পেট্রোলিয়াম থেকে নানা জ্বালানি পাওয়া যায়, তাই পেট্রোলিয়াম শোধন করা হয়।
• পেট্রোলিয়ামজাত যৌগ:
i প্লাস্টিক: খেলনা, বাসনপত্র, চেয়ার, টেবিল, শৌখিন দ্রব্য প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
ii মোম: মোমবাতি, ভেসলিন, প্রসাধন সামগ্রী তৈরিতে কাজে লাগে।
11. প্রাকৃতিক গ্যাস কী? একে কীভাবে ব্যবহার করা হয়? প্রাকৃতিক গ্যাসের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: ভূগর্ভে পেট্রোলিয়াম উৎসের ওপরে কিংবা আলাদাভাবে যে-দাহ্য গ্যাস পাওয়া যায়, তাকেই প্রাকৃতিক গ্যাস বলে।
• ব্যবহার পদ্ধতি: প্রাকৃতিক গ্যাসকে (মিথেন) শোধন করে বেশি চাপে সিলিন্ডারে ভরে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
• প্রাকৃতিক গ্যাসের গুরুত্ব:
। প্রাকৃতিক গ্যাসের দহনে ধোঁয়াহীন শিখা সৃষ্টি হয়, তাই এটি দূষণমুক্ত জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
॥ প্রাকৃতিক গ্যাস (মূলত মিথেন)-এর তাপনমূল্য অন্যান্য গ্যাসীয় জ্বালানির থেকে বেশি, সেজন্য বর্তমানে যানবাহনে CNG ব্যবহৃত হচ্ছে।
iii রান্নার কাজে, কার্বনব্ল্যাক তৈরিতে এটি ব্যবহৃত হয়।
12. কথাটি ঠিক না ভুল যুক্তি দিয়ে বোঝাও: “কোনো ধাতুর সব খনিজই ধাতুর আকরিক”।
উত্তর: কথাটি ভুল। কারণ কোনো ধাতুর সব খনিজ ধাতুর আকরিক হতে পারে না। প্রকৃতির মধ্যে বিভিন্ন ধাতব যৌগকে শিলা বা পাথরের মতো কঠিন অবস্থায় কখনো ভূগর্ভে বা ভূপৃষ্ঠে পাওয়া যায়। প্রকৃতিজাত এইসব অজৈব পদার্থগুলিকে খনিজ পদার্থ বলে।
আবার যেসব খনিজ পদার্থে ধাতুর পরিমাণ বেশি থাকে এবং যার থেকে সহজে ও সুলভে ধাতু নিষ্কাশন করা যায়, তাকে ওই ধাতুর আকরিক বলা হয়।
কোনো ধাতুর এক বা একাধিক আকরিক থাকতে পারে, সব আকরিক খনিজ পদার্থ, কিন্তু সব খনিজ পদার্থই আকরিক নয়। যেমন-হেমাটাইট খনিজটি লোহার আকরিক, কিন্তু অপর খনিজ পদার্থ আয়রন পাইরাইটিস লোহার আকরিক নয় কারণ এর থেকে সুলভে লোহা নিষ্কাশন সম্ভব নয়।
13. “কোনো ধাতুর একাধিক খনিজ থাকলেও তার সবগুলিই আকরিক নাও হতে পারে”-ঠিক কি না বিচার করো।
উত্তর: পৃথিবীতে এমন কিছু ধাতু আছে যেগুলি বিভিন্ন যৌগ, বালি মাটি ইত্যাদি মিশ্রিত অবস্থায় পাওয়া যায়। এইসব ধাতুগুলিকে যৌগ খনিজ বা মিনারেল (Mineral) বলা হয়। যেসব খনিজ থেকে ধাতুকে সহজে বা সস্তায় বার করা যায় তাকে ধাতুর আকরিক বা ‘ওর’ (Ore) বলা হয়। কিন্তু সব খনিজ থেকে ধাতুকে খুব সহজভাবে বের করা যায় না। যেসকল খনিজ থেকে ধাতুকে সহজেই বের করা যায়, সেইসব খনিজগুলিকে ওই ধাতুর আকরিক বলে। এই কারণে বলা হয় যে, কোনো ধাতুর একাধিক খনিজ থাকলেও তার সবগুলিই আকরিক নাও হতে পারে।
Fil in the blanks
1. কয়লা, পেট্রোলিয়াম আর প্রাকৃতিক গ্যাসকে বলে ——————— ।
উত্তর: জীবাশ্ম জ্বালানি ।
2. কয়লা হল মানুষের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত —————— ।
উত্তর: জীবাশ্ম জ্বালানি ।
3. পেট্রোলিয়াম শোধনের সময় —————- ও গ্যাসীয় ——————জ্বালানি পাওয়া যায়।
উত্তর: প্রোপেন, বিউটেন ।
4. —————হল একটি চটচটে তরল মিশ্রণ।
উত্তর: পেট্রোলিয়াম ।
5. LPG সিলিন্ডারের প্রধান উপাদান ——————- ।
উত্তর: তরল প্রোপেন ।
6. শোধিত প্রাকৃতিক গ্যাসকে ———————–বলে।
উত্তর: CNG
7. পৃথিবীর গভীরে তরল অবস্থার পাথরকে বলে ———————– ।
উত্তর: ম্যাগমা ।
8. ম্যাগমা পাথরের ফাটল দিয়ে বেরিয়ে এলে, তাকে বলে ————————– ।
উত্তর: লাভা ।
9. জমাটবাঁধা লাভা —————– ই হল ।
উত্তর: আগ্নেয়শিলা ।
10. পিউমিস পাথরে ————— দেখা যায়।
উত্তর: ছিদ্র ।
11. গ্র্যানাইটের পরিবর্তনে তৈরি হয় ———————- ।
উত্তর: নিস ।
12. প্রকৃতিতে প্রাপ্ত ধাতুকে ———————- বলে।
উত্তর: ধাতুর খনিজ বা মিনার্যাল ।
13. যে-খনিজ থেকে ধাতু পাওয়া যায়, তাকে ———————–বলে।
উত্তর: আকরিক বা ওর ।
14. অ্যালুমিনিয়াম ও অক্সিজেন দিয়ে তৈরি আকরিককে বলে ————————–।
উত্তর: বক্সাইট ।
15. তামা ও দস্তা মিশিয়ে ————— তৈরি হয়।
উত্তর: পিতল ।
16. লোহায় মরচে পড়ে কিন্তু —————— এ মরচে পড়ে না।
উত্তর: কলঙ্কহীন ইস্পাত ।
17. ধাতু বা অধাতুর তরল মিশ্রণ ঠান্ডা হলে পাওয়া যায়।
উত্তর: সংকর ধাতু ।
18. ‘অশ্ম’ মানে ——————— ।
উত্তর: পাথর ।
True and False
1. গ্র্যানাইট পাথরে অনেক ছিদ্র দেখা যায়। ✔
2. জলের নীচে আগ্নেয়শিলা তৈরি হয়।✘
3. স্লেটপাথর তৈরি হয় শেল নামক আগ্নেয়শিলা থেকে।✘
4. সব আকরিক খনিজ পদার্থ, তবে সব খনিজ পদার্থ আকরিক নয়। ✔
5. অ্যালুমিনিয়াম, দস্তা প্রভৃতি প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।✘
6. লোহার আকরিক কপার গ্লান্স। ✔
7. ইস্পাত লোহার চেয়ে শক্ত এবং অনেক বেশি ভার সহ্য করতে পারে।✘
৪. পেট্রোলিয়াম হল গ্যাসীয় জ্বালানি। ✘
9. ধাতু নিষ্কাশনে উত্তপ্ত কয়লার কঠিন অবশেষ কোক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ✔
10. CNG-এর প্রধান উপাদান তরল প্রোপেন।✘