Class 7 Chapter 24 Solution
ভানুসিংহের পত্রাবলি
Very Short Question Answer
১.১ বর্ষামঙ্গল (আষাঢ়/অগ্রহায়ণ/শ্রাবণ) মাসে অনুষ্ঠিত হয়।
উত্তর: শ্রাবণ মাসে।
১.২ শান্তিনিকেতন (বীরভূম/বাঁকুড়া/পুরুলিয়া) জেলায় অবস্থিত।
উত্তর: বীরভূম।
১.৩ কবি (আত্রাই/পদ্মা/শিলাবতী) নদীর ওপর বোটে করে ভেসে চলেছেন।
উত্তর: আত্রাই।
১.৪ পৃথিবীর মনের কথাটি কবি শুনতে পান (জলের ওপর/ নদীর ওপর/মাটির ওপর)।
উত্তর: নদীর ওপর।
১.৫ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি পত্রসাহিত্যের উদাহরণ হল (শেষের কবিতা/গীতাঞ্জলি/ছিন্নপত্র)।
উত্তর: ছিন্নপত্র।
Short Question Answer
২.১ ‘কলকাতা শহরটা আমি মোটেই পছন্দ করিনে’- কবির এই অপছন্দের কারণ কী?
উত্তর: কবির চোখে কলকাতা শহরটা হল ইট-কাঠ-পাথরের কংক্রিট। আকাশটা সবসময় ধোঁয়ার মেঘে ঢাকা। কলকাতার বর্ষার মধ্যে কোনো নতুনত্ব নেই। সেখানে সবকিছু একঘেয়েমি। তাই কবি কলকাতা
শহরকে পছন্দ করেন না।
২.২ “সে গান কি কলকাতা শহরের হাটে জমবে”- কোন্ গানের কথা বলা হয়েছে? সে গান কলকাতা শহরের হাটে জমবে না-কবির এমন ভাবনা কেন? ***
উত্তর: এখানে বর্ষামঙ্গল গানের কথা বলা হয়েছে।
• বর্ষামঙ্গল গান শান্তিনিকেতনের ফাঁকা মাঠে, ধানের খেতের পাশে গাওয়া হতো। কিন্তু কলকাতায় এধরনের পরিবেশের বড়োই অভাব। তাই কলকাতায় এই গান জমবে না বলে কবির মনে হয়েছে।
২.৩ “তোমাদের ওখানে এতদিন বোধহয় বর্ষা নেমেছে।” -কার উদ্দেশ্যে কবি একথা লিখেছেন? ‘ওখানে’ বলতে কোন্ জায়গার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কবি রানু মুখার্জীর উদ্দেশ্যে একথা লিখেছেন।
• ওখানে বলতে বোলপুরের শান্তিনিকেতনের কথা বলা হয়েছে।
২.৪ ‘শান্তিনিকেতনের মাঠে যখন বৃষ্টি নামে….’ তখন কবির মনে কেমন অনুভূতি হয়?
উত্তর: শান্তিনিকেতনের মাঠে বর্ষা নামলে কবির মনে নতুন লেখা গানগুলি উঁকি দেয় এবং গুনগুন স্বরে আপনা আপনিই গেয়ে ওঠেন তিনি। কখনও বা এসরাজে বাজিয়ে তোলেন। বর্ষার প্রাকৃতিক পরিবেশ যেন কবির মনে গানের সৃষ্টি করে।
২.৫ “আজ সকালেই সে পালাবে স্থির করেচে-” ‘আজ’ বলতে যে দিনটির কথা বলা হয়েছে তার সাল ও তারিখ কত? ‘সে’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? সে কোথায় পালাবে এবং কেন?***
উত্তর: ‘আজ’ বলতে ২৯ শে আষাঢ়, ১৩২৯ বঙ্গাব্দের কথা বলা
হয়েছে।
১ ‘সে’ বলতে এখানে দিনুবাবু অর্থাৎ দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা
বলা হয়েছে।
• দিনুবাবু শান্তিনিকেতনে পালাবেন। কারণ কলকাতা শহরের পরিবেশে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না।
২.৬ “সমস্তটার উপর বাদল-সায়াহ্ণের ছায়া”-কবির চোখ দিয়ে দেখা এই ‘সমস্তটা’র বর্ণনা দাও।**
উত্তর: জলে পরিপূর্ণ নদী তাতে শৈবাল ভেসে আসছে। পল্লির আঙিনা পর্যন্ত এই জল উঠছে। বাঁশের ঝাড়, আম, কাঁঠাল, তেঁতুল, কুল, শিমূল প্রভৃতি গাছ যেন গ্রামগুলিকে ঢেকে ফেলেছে। জলের ওপর জেগে থাকা কবি ধানের মাথা কবির চোখে অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। দুদিকের সবুজের মাঝখান দিয়ে বর্ষার জলে পরিপূর্ণ নদীটি গেরুয়া রঙের ধারা বহন করে যেন এগিয়ে চলেছে বলে কবির মনে হয়েছে।
২.৭ ‘কলকাতায় না এলে আরো জমত’-কী জমত? কবির কলকাতায় আসার সঙ্গে তা না জমে ওঠার সম্পর্ক কী?**
উত্তর: এখানে কবির খাতায় গান জমার কথা বলা হয়েছে।
• কলকাতার কৃত্রিমতা কবির পছন্দ হয় না। শান্তিনিকেতনের প্রাকৃতিক পরিবেশের সাহচর্যে কবির মনে আপনা আপনিই গানের সৃষ্টি হতো। কিন্তু কলকাতায় সেরকম হয় না।
২.৮ “খাতার দিকে চোখ রাখবার এখন সময় নয়” -কোন্ সময়ের কথা বলা হয়েছে? খাতার দিকে চোখ রাখবার সময় কবির নেই কেন?***
উত্তর: আত্রাই নদীর উপর বোটে ভেসে চলার সময়কার কথা এখানে বলা হয়েছে।
• আত্রাই নদীর উপর দিয়ে বোটে ভেসে চলার সময় কবির চোখ প্রকৃতির বিভিন্ন দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত। তাই প্রকৃতির এই সৌন্দর্য ছেড়ে খাতার দিকে চোখ রাখার সময় কবির নেই।
৯. বর্ষার কলকাতা শহরকে কবির বিশেষভাবে অপছন্দ করার কারণ কী?
উত্তর: কলকাতা শহরটাকে কবির মনে হয় যেন একটা ইট-কাঠ-পাথরের স্তূপ। এখানে বর্ষা ঠিকমতো বিরাজ করে না। বড়ো বড়ো অট্টালিকার ছাদে ঠোক্কর খেতে খেতে সে যেন খোঁড়া হয়ে পড়ে। কবির গানও এখানে ঠিক জমে না। বর্ষা যে সবুজ রং বয়ে আনে তা কলকাতায় থাকে না। তাই এই কৃত্রিমতায় ভরা কলকাতা কবির কাছে পছন্দের নয়।
১০. নববর্ষা বলতে কী বোঝো?
ন উত্তর: ‘নববর্ষা’ বলতে সাধারণত নতুন বর্ষাকে বোঝায় অর্থাৎ বর্ষার প্রারম্ভকে বোঝায়। আষাঢ় মাসের শুরুতে যে বর্ষণ নামে তাকে নববর্ষা
বলা হয়ে থাকে।
১১. বর্ষা ঋতুকে নিয়ে লেখা রবীন্দ্রনাথের দুটি গান ও দুটি কবিতার নাম লেখো।
উত্তর: বর্ষা ঋতুকে কেন্দ্র করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনেক গান ও কবিতা লিখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুটি গান ও দুটি কবিতা হলো-
গান- ‘ওগো আমার শ্রাবণ মেঘে…।’
‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে….।’
কবিতা-বর্ষাযাপন, আষাঢ়।
১২. সবুজ রঙের উত্তরীয় বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: বর্ষার আগমনে চারিদিক সবুজে ভরে যায়। মাঠে মাঠে নতুন ঘাসের জন্ম হয়, গাছে গাছে নতুন পাতার সৃষ্টি হয়। এই সময় পরিবেশটাকে দেখলে মনে হয় যেন চারিদিকে কে একটা সবুজ রঙের চাদর মেলে ধরেছে। এই সবুজ রঙের সমারোহকেই কবির সবুজ উত্তরীয় বলে মনে হয়েছে।
১৩. “কলকাতা শহরে হাটে…” শহরকে হাটের সঙ্গে তুলনায় ব্যঞ্জনাটি কোথায়?
উত্তর: ‘হাট’ কথার অর্থ হলো-প্রচুর মানুষের সমাগম। হাট এমন একটি জাগায় বসে, যেখানে খুব অল্প জায়গার মধ্যে অনেক লোকের সমাবেশ ঘটে। আর মানুষের কণ্ঠস্বরে জায়গাটি সবসময় কোলাহল পূর্ণ থাকে। হাটে কখনও শান্তভাব থাকে না। কলকাতা শহরটিও ঠিক তেমনি। এখানে খুব স্বল্প পরিসর স্থানে অনেক মানুষ বাস করে। এখানকার পরিবেশ সবসময় কোলাহল পূর্ণ থাকে। শান্তভাব এখানে থাকে না। তাই কলকাতা শহরটাকে কবি হাটের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
১৪. আষাঢ় মাসের বর্ষাকে কলকাতা শহরে মানায় না- কবির
এ জাতীয় মন্তব্যের অর্থ কী?
উত্তর: কলকাতা জনবহুল শহর। এখানে ফাঁকা জায়গার বড়োই অভাব। কিন্তু কবির ফাঁকা মাঠে বর্ষার নাচ দেখতে ভালো লাগে। তাই শান্তিনিকেতন কবির প্রিয় জায়গা। কলকাতা শহরে বর্ষার এই নাচ পদে পদে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তাই কবির মনে হয়েছে কলকাতা শহরে আষাঢ় মাসের বর্ষা মানায় না।
১৫. আত্রাই নদীটি কোথায়? সেই নদীতে বোটে যেতে যেতে কবি কবে নির্বাচিত পত্রটি লিখেছিলেন?
উত্তর: বর্তমানে আত্রাই নদীটি দক্ষিণ দিনাজপুরে অবস্থিত।
> সেই নদীতে যেতে যেতে কবি ২ শ্রাবণ, ১৩২৯ বঙ্গাব্দে নির্বাচিত
পত্রটি লিখেছিলেন।
১৬. নদীপাড়ের গ্রামগুলির ছবি কীভাবে কবির চোখে ধরা পড়েছে?
উত্তর: গ্রামগুলির উঠোন অবধি জল উঠেছে, বাঁশের ঝাড়, কাঁঠাল, তেঁতুল, কুল, শিমুল প্রভৃতি গাছ নিবিড় হয়ে গ্রামগুলিকে ঢেকে ফেলেছে। নদীর ধারে কাঁচা ধানের খেতে কোথাও কোথাও জল উঠেছে। তারই মাঝে নদীর দুই তীর ঘন সবুজ হয়ে রয়েছে।
১৮.১ কলকাতায় বর্ষামঙ্গল গান হবে।
উত্তর: ভবিষ্যৎ কাল।
১৮.২ অনুরোধে পড়ে কখনও কখনও আমার নতুন বর্ষার গান গাইতে হয়েছে।
উত্তর: অতীত কাল।
১৮.৩ আজ সকালেই সে পালাবে স্থির করেছে।
উত্তর: পুরাঘটিত বর্তমান কাল।
১৮.৪ আত্রাই নামক একটি নদীর উপর বোটে ভেসে চলেছি।
উত্তর: ঘটমান বর্তমান কাল।
১৮.৫ অনেকদিন বোলপুরের শুকনো ডাঙায় কাটিয়ে এসেছি।
উত্তর: অতীত কাল।
১৯. নীচের বাক্যগুলিকে দুটি বাক্যে আলাদা করে লেখো।
১৯.১ কথা হচ্ছে এবার শ্রাবণ মাসে আর বছরের মতো কলকাতায় বর্ষামঙ্গল গান হবে।
উত্তর: কথা হচ্ছে।
শ্রাবণ মাসে আর বছরের মতো কলকাতায় বর্ষামঙ্গল গান হবে।
১৯.২ শান্তিনিকেতনের মাঠে যখন বৃষ্টি নামে তখন তার ছায়ায় আকাশের আলো করুণ হয়ে আসে।
উত্তর: শান্তিনিকেতনের মাঠে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টির ছায়ায় আকাশের আলো করুণ হয়ে আসে।
১৯.৩ আমার এই বোট ছাড়া নদীতে আর নৌকা নেই।
উত্তর: নদীতে আমার এই বোট আছে।
নদীতে আর কোনো নৌকা নেই।
১৯.৪ আমার দুই চক্ষু এখন বাইরের দিকে চেয়ে থাকতে চায়, খাতার দিকে চোখ রাখবার এখন সময় নয়।
উত্তর: আমার দুই চক্ষু এখন বাইরের দিকে চেয়ে থাকতে চায়।
এখন খাতার দিকে চোখ রাখবার সময় নয়।
১৯.৫ আজ রাত্রের গাড়িতেই কলকাতায় যাব মনে করে ভালো লাগছে না।
উত্তর: আজ রাত্রের গাড়িতেই কলকাতায় যাব। ভালো লাগছে না।
১.১ কলকাতা শহর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের মনোভাব কেমন ছিল?
উত্তর: কলকাতা শহর সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের সেই অর্থে কোনো আগ্রহ ছিল না। সবসময় তাঁর মনে হত ইট-কাঠ-পাথরের ‘একটা মস্ত
জন্তু’ যেন তাকে গ্রাস করে ফেলেছে।
১.২ কোন্ জায়গার বৃষ্টি রবীন্দ্রনাথের খুব পছন্দ ছিল?
উত্তর: শান্তিনিকেতনের মাঠে যখন বৃষ্টি নামত তখন কবির মন আনন্দে ভরে উঠত। অর্থাৎ শান্তিনিকেতনের বৃষ্টি রবীন্দ্রনাথের খুব পছন্দ ছিল।
১.৩ কলকাতায় যে বৃষ্টি হত তা কেমন?
উত্তর: কলকাতা শহরে যে বৃষ্টি হতো তা দেখে রবীন্দ্রনাথের মন ভরত না। কেননা, কলকাতা শহরে বৃষ্টি প্রকাণ্ড সব বাড়ির ছাদে ঠোকর খেতে খেতে প্রায় মিলিয়ে যায়। ফলে সেই বৃষ্টির নৃত্যচপল সুর ও ছন্দ অনুভব করা যেত না।
১.৪ কবি কোন্ নদীর উপর ভেসে চলতেন?
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’তে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, তিনি উত্তরবঙ্গের আত্রাই নদীর ওপর ভেসে চলতেন।
১.৫ “কিন্তু হয়তো হয়ে উঠবে না”- কী হয়ে উঠবে না বলে
লেখক জানিয়েছেন?
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, বর্ষা প্রকৃতির অপরূপ রূপ দেখে কবির মনে নানা গানের সুর এসে হাজির হতো। কিন্তু সে গান পুরোপুরি পূর্ণতা পেত না।
১.৬ “বোটে করে ভেসে চলেছি”-কে কোথায় বোটে করে ভেসে চলেছেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আত্রাই নামক এক নদীর উপর বোটে করে পল্লির বিভিন্ন প্রান্তরে ভেসে চলেছেন।
১.৭ কার প্রতি রবীন্দ্রনাথের গভীর ভালোবাসা ছিল?
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, নদী ও আকাশের প্রতি কবির গভীর শ্রদ্ধা ছিল।
১.৮ কোথায় কবি অনেকদিন অতিবাহিত করেছেন?
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, বোলপুরের শুকনো ডাঙায় তিনি অনেকদিন অতিবাহিত করেছেন।
১.৯ কোথায় ফিরে আসার চিন্তায় রবীন্দ্রনাথের মন খারাপ হয়েছিল?
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, রাতের গাড়িতে পুনরায় কলকাতায় ফিরে আসার চিন্তায় তাঁর মন বেদনাতুর হয়েছিল।
১.১০ “আজ সকালেই সে পালাবে”- কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, দিনুবাবু অর্থাৎ দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর সকালেই পালাবেন।
Long Question Answer
৩. দু-চার কথায় পরিচয় দাও:
উত্তর: শান্তিনিকেতন: পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার অন্যতম শিক্ষাকেন্দ্র শান্তিনিকেতন। রবীন্দ্রনাথ এখানে এক নতুন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। রবীন্দ্রনাথ সৃষ্ট আশ্রমিক পরিবেশ এখনও সেখানে বর্তমান।
- দিনু: দিনুর প্রকৃত নাম দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র, দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো। তিনি ছিলেন রবীন্দ্রসংগীতের প্রধান স্বরলিপিকার। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের অন্যতম প্রধান সহকারী ছিলেন এই দিনু।
- বর্ষামঙ্গল: বর্ষামঙ্গল একধরনের গান। যেটি শান্তিনিকেতনে
রবীন্দ্রনাথ সূচনা করেছিলেন। এই গান মূলত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে অর্থাৎ বর্ষাকালে গাওয়া হতো। গ্রাম্য পরিবেশে এই গান শ্রুতিমধুর হয়ে উঠত।
- আত্রাই: আত্রাই হল উত্তরবঙ্গের একটি নদীর নাম। এটি হল মাঝারি ধরনের নদী। বর্তমানে দক্ষিণদিনাজপুরে এটি অবস্থিত।
৪. একটি বর্ষণমুখর দিনের অভিজ্ঞতা বিষয়ে একটি ছোটো অনুচ্ছেদ রচনা করো।
উত্তর: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের পর বর্ষা নেমে আসে প্রকৃতির বুকে। গলি থেকে রাজপথ সর্বত্রই তখন হিমেল বাতাস আর বৃষ্টির অসংখ্য কণা চারপাশে জমে থাকে। বৃষ্টির সরব পতনে ধারাপাতের মতো একটা সুর তৈরি হয়। মন তখন উদাস হয়ে পড়ে। বর্ষায় নিজের আস্তানা থেকে বেরিয়ে আসে কালো রঙের ঝাড়ুদার পাখিগুলি।
এমন এক মেঘাবৃত দিনের কথা আমার স্মৃতিতে এখনও জড়িয়ে রয়েছে। সেদিন সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছিল। জলের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একসময় আধভেজা হয়ে গিয়েছি। ছাতা কোনোভাবে বর্ষাকে রুখে দিতে পারেনি। এমন এক বিপুল বর্ষার দিনে হয়তো ঘরে ঘরে মায়েরা দুষ্টু সন্তানদের দিকে তাকিয়ে বলছেন ‘আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে’। পথভোলা পথিক আপন মনে তখন গাইছিল। রাস্তার পাশে সবুজ ধান আর তার অদূরে আমাদের গ্রামের যমুনা নদীটি নিজের মতো করে বর্ষাস্নাত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর দূর থেকে ভেসে আসছিল
জেলেদের উদাস কণ্ঠে গাওয়া ভাটিয়ালি সুর। আমি স্কুলে পৌঁছতে পৌঁছতে শেষ পর্যন্ত আদ্যন্ত ভিজে গেলাম। স্কুলে পৌঁছে দেখি আমার মতো আমাদের ক্লাসের বন্ধুরা এবং উঁচু ক্লাসের দাদারাও ভিজে গিয়েছে। আমাদের জীববিজ্ঞানের শিক্ষক সন্দীপ বাবু জানালেন, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অধিকাংশ শিক্ষক ভিজে যাওয়ায় আজকে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে না। তাহলে এত কষ্ট করে আসার কী কোনো অর্থ থাকবে না? আমাদের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক অলোক বাবু জানালেন, সবাই যখন আমরা ভিজে গিয়েছি তবে আজকে ছাত্র-শিক্ষক ফুটবল খেলা হবে। আমাদের চারঘাট স্কুলের মাঠটি ছিল অপূর্ব সুন্দর। প্রতি বছর একবার ছাত্র-শিক্ষক খেলা হত। ফলে খেলার আলাদা পোশাক ছিল। সুযোগ মতো ছাত্ররা সেই প্রস্তাবে আনন্দে উৎসাহিত হয়ে উঠল।
আমি সেই অর্থে খেলাধুলা ভালো জানতাম না। কিন্তু মারাদোনা তখন আমাদের কাছে আদর্শ ফুটবলার। ফলে আমাদের মধ্যে তখন একটা স্বপ্ন জন্মগ্রহণ করত। সুতরাং আমিও সুযোগ বুঝে নেমে পড়লাম মাঠে। খেলা একঘণ্টা হওয়ার আগেই শিক্ষকরা ২-০ গোলে এগিয়ে গেলেন। আমাদের গোলকিপার হাফ টাইমের পরে বদলানো হল। উত্তম গাঙ্গুলি আমাদের সঙ্গে পড়ত। পড়াশোনায় ও খুব একটা ভালো না হলেও, খেলাধুলোতে ওর যথেষ্ট দক্ষতা ছিল। প্রথম ওর গোলেই আমরা কিছুটা ধাতস্ত হলাম। খেলার মিনিট চারেক আগে উত্তমের আচমকা কিক করা একটা বল আমার মাথায় এসে লাগল এবং সেটি যেকোনো অজ্ঞাত কারণেই হোক ইতিহাসের সুবোধ বাবুর হাত ফসকে সোজা গোলে ঢুকে গেল। সবাই আমাকে নিয়ে সেকি আনন্দ! ততক্ষণে আমার মাথার যন্ত্রণা আরও বেড়ে চলল। সেদিনের বর্ষণমুখর দিনের সেই অভিজ্ঞতা আজও আমার মনে বাসা বেঁধে রয়েছে।
১৭. আকাশ আর নদীর প্রতি ভালোবাসা, সর্বোপরি বর্ষা প্রকৃতির প্রতি কবির পক্ষপাত কীভাবে পত্রদুটিতে প্রতিফলিত হয়েছে?
উত্তর: বর্ষাকালে আত্রাই নদীর উপর দিয়ে ভেসে যেতে যেতে কবির মনে হয় যেন তিনি প্রকৃতির কোনো গোপন রহস্যের সন্ধান পেয়েছেন। বর্ষার আকাশও তাঁর অতিপ্রিয় জিনিস। বর্ষার নদী এবং আকাশের সৌন্দর্য কবি অকপটে স্বীকার করেছেন।
সর্বোপরি বলা যায়, বর্ষাকালকে তিনি অধিক মাত্রায় ভালোবেসেছেন। যে কারণে বর্ষাকালে কলকাতায় থাকতে তাঁর প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে। বর্ষাকে তিনি এক যুবতি রূপে কল্পনা করেছেন যার নাচ শান্তিনিকেতনের ফাঁকা মাঠে ভালো জমে ওঠে। কলকাতায় যা একেবারেই মানায় না। নদীর উপর দিয়ে যেতে যেতে কবির মনে আপনা আপনিই গান জেগে ওঠে। কিন্তু বর্ষা প্রকৃতির সৌন্দর্য অনুভব করতে গিয়ে তিনি গান লেখার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেন। শেষপর্যন্ত আবার রাতের গাড়িতে
কলকাতা যেতে হবে একথা ভেবে কবির কষ্ট হয়েছে। এইভাবে বর্ষার প্রকৃতির প্রতি কবির পক্ষপাত প্রকাশিত।
২.১ “কলকাতা শহরটা আমি মোটেই পছন্দ করিনে”-বক্তা কে? কলকাতা শহর তাঁর পছন্দ না হওয়ার কারণ কী?***
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথ হলেন উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা।
• কলকাতা শহরে বর্ষা-প্রকৃতির মধ্যে কোনো বৈচিত্র্য নেই। সেই বর্ষা ক্লান্তিকর, একঘেয়ে এবং নিতান্তই বর্ণবিরল। সেই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের এই মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
শহর কলকাতা রবীন্দ্রনাথের কখনই পছন্দ ছিল না। নগর জীবন তাঁর কাছে শুধুমাত্র ইট-কাঠ-পাথরের ‘একটা মস্ত জন্তু’ বিশেষ। তাঁর বারবার মনে হয়েছে নগর জীবনে প্রকৃতির কোনো জায়গা নেই। এখানে বর্ষাকালে যেটুকু বৃষ্টি হয় তা ‘ছাদে ঠোকর খেতে খেতে খোঁড়া হয়ে পড়ে।’ সে বর্ষা কোনো নৃত্য চোখে পড়ে না। ফলে কবির মনে গানের সুর বেজে ওঠে না। কোথাও সবুজ প্রকৃতির মধ্যে শিহরণ দেখা
যায় না। পুবে বাতাসের জটাজালও দেখা যায় না। তাই কলকাতা। শহরটা কবির মোটেই পছন্দের জায়গা ছিল না।
২.২ “আমার মনের মধ্যে গান জেগে ওঠে”-বক্তা কে? কখন তাঁর মনের মধ্যে গান জেগে উঠত? **
উত্তর: ১৯৩০-এ প্রকাশিত ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথই হলেন এই উদ্ধৃতাংশটি বক্তা।
• শান্তিনিকেতনের বিপুল প্রকৃতির অঞ্চলে রবীন্দ্রনাথ খুঁজে পেয়েছিলেন তাঁর মনের আনন্দ। শান্তিনিকেতনের মাঠে যখন নিবিড় ঘন বর্ষা নেমে আসত তখন কবির মন আনন্দে আপ্লুত হতো। কেননা, সেই নববর্ষার সিঞ্চনে পুলকিত হতো গাছপালা। আর সবুজ বৃক্ষরাজি যেন আপন মনে কথা বলতে চাইত। এমন বর্ষাস্নাত দিনে রবীন্দ্রনাথের মনে গানের সুর জেগে উঠত। সেই সুর পৌঁছে যেত ভাইপো দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঘরে। তিনি তখন কবির সেই কথা ও সুরকে স্বরলিপিতে পরিণত করতেন। এভাবে শান্তিনিকেতনের বর্ষায় অভিভূত থাকতেন রবীন্দ্রনাথ।
২.৩ “আর এখানে নববর্ষা”- এখানে বলতে কোন্ স্থানের কথা বলা হয়েছে? সেখানে বর্ষাপ্রকৃতি কেমন ছিল?**
উত্তর: রানু অধিকারিকে উৎসর্গ করে লেখা ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথ ‘এখানে’ বলতে কলকাতার কথা উল্লেখ করেছেন।
• কলকাতার বর্ষাপ্রকৃতি রবীন্দ্রনাথের মনে কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। কেননা, কলকাতার বদ্ধ অঞ্চলটুকুর মধ্যে প্রকৃতির খেলা করবার অবকাশটুকু যেন নেই। সেখানে বর্ষা নামতো বাড়ির ছাদের উপরে। আর সেই বৃষ্টিকণা ঠোকর খেতে খেতে একপ্রকার খোঁড়া হয়ে নিচে নামতো। ফলে সেই বৃষ্টির কোনো ছন্দ ছিল না। ছিল না কোনো নৃত্যের আয়োজন। ফলে এমন বর্ষা দেখে কবির মনে গান
আসত না। কবি সেই বর্ষার পুবে বাতাসের মধ্যে কোনো জটাজাল
দেখতে পেতেন না। ফলে কবির মন খারাপ হতো।
২.৪ “সেই গানের সুর ঠিকমতো বাজে না”-কার কোন্ গানের সুরের কথা বলা হয়েছে? সেই ‘গানের সুর’ ঠিকমতো না বাজার কারণ কী?
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথের গানের সুরের কথা বলা হয়েছে। এখানে ‘বর্ষামঙ্গল’ গানের সুরের কথা এসেছে।
• শান্তিনিকেতনের বৃষ্টিস্নাত দিনে যে গান হৃদয় থেকে
স্বতঃস্ফূর্তভাবে উচ্চারিত হতো। সেই গান কলকাতার রুক্ষ্ম-শুষ্ক জীবনযাপনে গাওয়া সম্ভব হতো না। কেননা, কলকাতার নাগরিক জীবনে প্রকৃতির খেলাধুলা সেই অর্থে চলে না। কলকাতায় যে বর্ষা হতো সেই বর্ষার কোনো ছন্দ থাকত না। গাছপালাগুলি সবুজের সমারোহে ভরে উঠত না। ফলে সেখানে যে বর্ষামঙ্গল গান হতো তার মধ্যে ঠিকমতো সুর বেজে উঠত না।
২.৫ “আজ সকালেই সে পালাবে”- সে বলতে কার কথা বলা হয়েছে? তাঁর পরিচয় দাও।
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথ ‘সে’ বলতে দিনু বাবু তথা দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বুঝিয়েছেন।
• রবীন্দ্রনাথের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৌত্র হলেন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৮৬২, ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে তিনি। জন্মগ্রহণ করেন। দ্বারকানাথ ঠাকুরের ঐতিহ্য ঠাকুরবাড়ির প্রায় প্রত্যেকেই বহন করেছিলেন। এই দিনেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রজীবনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের গানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বরলিপিকার ছিলেন তিনি। কবি তাঁর ‘ফাল্গুনী’ নাটকের উৎসর্গ পত্রে লিখেছিলেন, ‘আমার সকল গানের কান্ডারি’। এই দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন শান্তিনিকেতনের সংগীতভবনের অধ্যক্ষ। ১৯৩৫, জুলাই মাসের ২১ তারিখে ৫৩ বছর বয়সে কলকাতার বাসভবনে দেহত্যাগ এই রবীন্দ্রস্নেহধন্য স্বরলিপিকার।
২.৬ “কলকাতায় বর্ষামঙ্গল গান হবে”- ‘বর্ষামঙ্গল’ গান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর: রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রিয় ঋতু হলো বর্ষা। বিভিন্ন প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, বর্ষা হল বিরহের ঋতু ও বিরহীর ঋতু। এই ঋতুকে বরণ করার জন্যে যে উৎসবের আয়োজন করেছিলেন কবি তারই নাম ‘বর্ষামঙ্গল’। ১৯২১ সালে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির প্রাঙ্গণে ‘বর্ষামঙ্গল’ উৎসবের সূচনা হয়। পরের বছর শ্রাবণ মাসে কলকাতায় পুনরায় বর্ষামঙ্গল গানের আয়োজন করা হয়। সেই প্রসঙ্গেই ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’তে ‘বর্ষামঙ্গল’ প্রসঙ্গটি আসে। এই উৎসব উপলক্ষে যে গানগুলি গাওয়া হতো, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-‘ওগো আমার শ্রাবণ মেঘের’, ‘বাদল মেঘে মাদল বাজে’, ‘এই
শ্রাবণের বুকের ভিতর’ ইত্যাদি।
২.৭ “পৃথিবীর যেন মনের কথাটি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে”-কোন্ প্রসঙ্গে এই বক্তব্য? এই বক্তব্যের তাৎপর্য উল্লেখ করো।
উত্তর: ‘ভানুসিংহের পত্রাবলী’ নামাঙ্কিত গদ্যে রবীন্দ্রনাথ উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন। বোটে ভাসমান কবি বর্ষা প্রকৃতির রূপ দেখে মুগ্ধ
হয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি।
আত্রাই নামক একটি নদীতে বোটে ভেসে চলার সময় কবি বর্ষাস্নাত পৃথিবী দেখে অভিভূত হয়েছিলেন। প্রবল বর্ষায় নদীর কূল প্লাবিত হয়েছিল। দলে দলে শৈবাল ভেসে চলেছিল। পল্লির প্রাঙ্গণে জল উঠে এসেছিল। প্রবল বৃষ্টিতে দূরের গ্রামগুলি কুয়াশার মতো অস্পষ্ট দেখাচ্ছিল। কবির দুটি চোখ বাইরের দিকে কি যেন খুঁজে চলেছিল। বোলপুরের শুকনো ডাঙায় এমন নববর্ষা কবি দেখেননি। এখন এই নদীর উপর এসে কবির মনে হয়েছে পৃথিবীর মনের কথাটি তিনি শুনতে পাচ্ছেন।