Class 7 Chapter 4 Solution
বঙ্গভূমির প্রতি
Very Short Question Answer
১. মধুসূদন দত্তের জন্ম কবে?
উত্তর: ১৮২৪ সাল, জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে বাংলাদেশের যশোহর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মধুসূদন দত্ত।
২. মধুসূদন দত্তের পিতা ও মাতার নাম লেখো।
উত্তর: মধুসূদন দত্তের পিতা হলেন রাজনারায়ণ দত্ত। মাতা ছিলেন জাহুবী দেবী।
৩. মধুসূদন দত্তের ধর্মান্তরিত হওয়ার পর নাম কী হয়েছিল?
উত্তর : মধুসূদন দত্ত যখন ধর্মান্তরিত হন, তখন তাঁর নাম হয় ‘মাইকেল’।
৪. ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি কবে লেখা হয়?
উত্তর: ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ লেখা হয় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে।
৫. ‘সাধিতে মনের সাদ’-এখানে ‘সাদ’ শব্দটি ঠিক কোন্ অর্থে প্রয়োগ করা হয়েছে?
উত্তর: ‘সাদ’ কথাটি ‘সাধ’ বা ‘বাসনা’ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যাকরণে একে বলা হয় অল্পপ্রাণীভবন। যেমন- ‘বাঘ’ থেকে ‘বাগ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।
৬. কবিতা থেকে পাঁচটি উপমা বা তুলনাবাচক শব্দ খুঁজে নিয়ে লেখো।
উত্তর: ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় ব্যবহৃত পাঁচটি উপমা বা তুলনা বাচক শব্দ হল- জীব-তারা, দেহ-আকাশ, জীবন-নদ, অমৃত-হ্রদ, স্মৃতি-জল।
৭. ‘মন্দির’ শব্দটির আদি ও প্রচলিত অর্থ দুটি লেখো।***
উত্তর: ‘মন্দির’ শব্দের আদি অর্থ ‘যে কোনো গৃহ’ ও প্রচলিত অর্থ ‘দেবালয়’।
৮. কবিতাটিতে কোন্ কোন্ ঋতুর উল্লেখ রয়েছে?**
উত্তর: ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটিতে ‘বসন্ত’ ও ‘শরৎ’ ঋতুর উল্লেখ রয়েছে।
৯. ‘মানস’ শব্দটি কবিতায় কোন্ কোন্ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?***
(হুগলী কলেজিয়েট স্কুল)
উত্তর: ‘মানস’ শব্দটি কবিতায় একটি ‘মন’ অর্থে, অপরটি ‘মানস সরোবর’ অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ এটিও যমক অলংকার।
১০. ‘পরমাদ’ শব্দটি কোন্ মূল শব্দ থেকে এসেছে?
উত্তর: ‘পরমাদ’ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ ‘প্রমাদ’ থেকে এসেছে।
Short Question Answer
১. ‘নাহি খেদ তাহে’ কী হলে কবির মনে কোনো খেদ থাকবে না বলে কবি মনে করেন?**
উত্তর: কবি মধুসূদন দত্ত প্রবাসে থাকার সময় ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ তাঁর গভীর ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন। জননীর কাছে সন্তান যেমন ভালোবাসা দাবি করে, কবিও তেমন বঙ্গভূমির কাছে তাঁর ভালোবাসা ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রবাসে জীবন কাটানোর সময় যদি তাঁর মৃত্যু ঘটে, তবু আক্ষেপ করবেন না। শুধু একটি মাত্র তাঁর প্রার্থনা-দেশবাসী যেন তাঁদের মনে কবিকে জায়গা দেন।
২. ‘চিরস্থায়ী কবে নীর, হায়রে জীবন নদে?’
উত্তর: কবি মধুসুদন দত্ত মানবজীবনের সঙ্গে যুক্ত জীবন ও মৃত্যুর প্রবাহকে এখানে তুলে ধরেছেন। নদীর মতো জীবনেও আসে পরিবর্তনের নানা স্রোত। জীবনের সেই প্রবাহ মানুষকে জন্ম থেকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ফলে জীবন-নদী ক্রমাগত বয়ে চলে সামনের দিকে।
৩. ‘দেহ দাসে সুবরদে!’-কী দেওয়ার কথা বলা হয়েছে? কীভাবেতা পাওয়া সম্ভব বলে কবি মনে করেছেন?
উত্তর: কবি মধুসুদন দত্ত জননী জন্মভূমির কাছে বর প্রার্থনা করেছেন। ‘সুবরদে’ কথার অর্থ হল, সুন্দর বর প্রদান করেন যিনি। দেশমাতা কবিকে যেন ‘সুবরদে’ অর্থাৎ অমরত্ব দান করেন, সে কথাই এখানে বলা হয়েছে।
দেশজননী কবিকে মনে রাখবেন, এই বিশ্বাস কবির ছিল। কবি জননীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, তাঁর দোষগুলি ভুলে যদি শুধু গুণগুলিকে বিচার করেন, তবেই তিনি অমরত্ব পাবেন। অর্থাৎ বঙ্গমাতা যেন কবির সৃষ্টিশীল জীবনকে গ্রহণ করে খুশি হন। তাহলেই দেশবাসীর মনে কবি রয়ে যাবেন।
৪. ‘ফুটি যেন স্মৃতিজালে’-কবি এখানে কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: কবি মধুসূদন দত্ত ১৮৬২ সালে লেখেন ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি। এই কবিতায় কবির স্বদেশপ্রীতি লক্ষণীয়। কবি প্রার্থনা করেছেন, বঙ্গভূমির তথা বঙ্গবাসীর স্মৃতিতে কবি যেন থেকে যান।যুগের পর যুগ তিনি যেন মানুষের মনে বিরাজ করেন।
৫. কবির নিজেকে বঙ্গভূমির দাস বলার মধ্যে দিয়ে তাঁর কোন্ মনোভাবের পরিচয় মেলে?
উত্তর: কবি মন-প্রাণ দিয়ে বঙ্গভূমিকে ভালোবেসেছেন। স্বদেশের
এই পুণ্যভূমির প্রতি অগাধ ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে কবির এই উক্তির মধ্যে।
৬. “মধুহীন কোর না গো”- ‘মধু’ শব্দটি কোন্ দুটি অর্থে প্রযুক্ত হয়েছে?
উত্তর: অলংকারের ভাষায় ‘মধু’ শব্দটি হলো যমক অলংকার। একই শব্দ একবার মাত্র ব্যবহৃত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন অর্থের দ্যোতনা দিলে তাকে যমক অলংকার বলে। মধু কথার দুটি অর্থ রয়েছে- ১. মধু = কবি মধুসূদন দত্ত। ২. মধু = মিষ্টতা।
৭ “এ মিনতি করি পদে”-কবি কার কাছে কী প্রার্থনা জানিয়েছেন?***
( কটাই হাই স্কুল, উ.মা)
উত্তর: কবি মধুসূদন দত্ত ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতায় বঙ্গভূমিকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে এই প্রার্থনাই জানিয়েছেন-দেশমাতৃকা যেন তাঁকে মনে রাখেন। কবি যেন বঙ্গভূমির হৃদয় থেকে হারিয়ে না যান।
৮. “সেই ধন্য নরকুলে” কোন্ মানুষ নরকুলে ধন্য হন?
উত্তর: এই মরণশীল পৃথিবীতে যে মানুষ মৃত্যুর পরেও তাঁর কর্মের দ্বারা মানুষের হৃদয়রাজ্যে বিরাজ করেন, মানুষের কাছে শ্রদ্ধা লাভ করেন; নরকুলে সেই মানুষ ধন্য।
Long Question Answer
১. ‘নাহি, মা, ডরি শমনে’-একথা বলার কারণ কী?
উত্তর: প্রবাস জীবনে থাকার সময় কবি বঙ্গভূমি সম্পর্কে তাঁর ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছেন। ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ নামাঙ্কিত কবিতায়
কবি জানিয়েছেন, বিদেশে থাকার সময় যদি তাঁর মৃত্যুও হয়, তবে
তিনি ভয় পাবেন না। কেননা, তিনি জানেন-
জন্মিলে মরিতে হবে,
অমর কে কোথা কবে,
এই সত্য জানার পরেও কবি বিশ্বাস করেন বঙ্গমাতা তাঁকে অমরত্ব দেবেন। কেননা, তিনিই একমাত্র ‘সুবরদে’-অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ বর প্রদান করতে পারেন। তাই কবি ‘শমন’ অর্থাৎ মৃত্যুকে ভয় পান না।
২. ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি রচনার প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।
উত্তর: কবি মধুসূদন দত্ত দুটি গীতিকবিতা লিখেছিলেন। একটি হল ‘আত্মবিলাপ’, অন্যটি হল ‘বঙ্গভূমির প্রতি’। মহাকবি হওয়ার জন্যে কবি মধুসূদন তাঁর পরিবার-পরিজন-স্বজন, সবাইকে ত্যাগ করেছিলেন। উপরন্তু তাঁর আকাঙ্ক্ষা ছিল তিনি প্রচুর ধনলাভ করবেন। সেই সংকল্পে তিনি দেশত্যাগ করেছিলেন। তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। প্রথমে মাদ্রাজ এবং পরে ইংল্যান্ডে পাড়ি দিয়েছিলেন।
স্বদেশ ও সমাজ থেকে কবি দূরে চলে আসার পর তাঁর মনের মধ্যে অদ্ভুত এক স্বদেশপ্রীতি দেখা যায়। ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতা ইংল্যান্ড যাত্রা উপলক্ষ্যে লেখা। ১৮৬২ সালে এই কবিতাটি তিনি লেখেন। বাংলা ভাষায় এই জাতীয় কবিতা তিনি ইতিপূর্বে আর লেখেননি। মাতৃভূমির প্রতি অগাধ টান এই কবিতার প্রতি ছত্রে, প্রতি বর্ণে লিপিবন্ধ হয়েছে।
স্বদেশপ্রীতি কবিতাটির শিল্পসাফল্যের মূল চাবিকাঠি। সেই সঙ্গে কবির মৃত্যুচেতনাও প্রত্যক্ষ করা যায়।
৩. ‘মক্ষিকাও গলে না গো, পড়িলে অমৃত হ্রদে’।-উক্তিটির তাৎপর্য বিচার করো।
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৬২ সালে লিখেছিলেন ‘বঙ্গভূমির প্রতি’ কবিতাটি। এ কবিতার প্রথমেই কবি লিখলেন-‘রেখো, মা, দাসেরে মনে’। মাতৃভূমিকে ‘মা’ বলে কবি সম্বোধন করেছেন। তিনি জানেন, জীবন-মৃত্যুর খেলায় আসা-যাওয়া আছে। তাই কবি লিখেছেন-
জন্মিলে মরিতে হবে,
অমর কে কোথা কবে,
কিন্তু কবি বিশ্বাস করেন, বঙ্গঙ্গভূমি তাঁকে ভুলে কখনও যাবেন না। কেননা, তিনি তো অমৃতময়ী। অমৃতে পড়লে মক্ষিকাও কখনো মরে না। সুতরাং, ‘অমৃতরূপ হ্রদে’ পড়ে কবিও অমরত্ব পাবেন। কেননা, তিনি যে জননী বঙ্গভূমির কৃতি সন্তান।
৪. কবির দৃষ্টিতে নশ্বর মানুষ কীভাবে অমরতা লাভ করতে পারে তা লেখো।
উত্তর: এই চলমান পৃথিবীর বহমান পথে কোনো কিছুই স্থির নয়। পৃথিবীতে সমস্তই নশ্বর। তবু কিছু মানুষ মৃত্যুর পরেও অমরতা লাভ করতে পারে। হয়তো তার নশ্বর দেহখানি কালের গতিতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে কিন্তু তার এমন কিছু কর্ম রয়েছে যার দ্বারা মানুষের মনে চিরজীবী হয়ে বিরাজ করছেন। কবি এই মানুষকে ধন্য বলেছেন-
সেই ধন্য নরকুলে, লোকে যারে নাহি ভুলে,
তাই কর্মের মাধ্যমেই মানুষ অমরতা লাভ করতে সক্ষম হয়। যেমন-ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ মনীষী এমন কর্ম করে গেছেন, যার দ্বারা তাঁরা মৃত্যুর পরেও অমরতা লাভ করতে পেরেছেন। কবির দৃষ্টিতে নশ্বর মানুষ এভাবেই অমরতা লাভ করতে পারেন।