WBBSE Class 8 দাঁড়াও Bangla Solution | Answer Bengali Medium

Class 8 Chapter 4 Bengali Medium

দাঁড়াও

Very Short Question Answer

১.১। শক্তি চট্টোপাধ্যায় কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?

উত্তর: রবীন্দ্র-পরবর্তী কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ১৯৩৩ সালে দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার অন্তর্ভুক্ত বহড়ু গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১.২। তাঁর লেখা একটি উপন্যাসের নাম লেখো।
উত্তর : শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখা একটি উপন্যাস হল ‘কুয়োতলা’।

Short Question Answer

২.১। ‘মতো’ শব্দ ব্যবহার করা হয় কখন? তোমার যুক্তির পক্ষে দুটি উহাদরণ দাও।

উত্তরের প্রথমাংশ : রবীন্দ্রোত্তর কবিদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘দাঁড়াও’ কবিতায় ‘মতো’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। ‘মতো’ একটি তুলনাবাচক শব্দ। দুটি বিষম বস্তুর মধ্যে তুলনা নির্দেশ করতে ‘মতো’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। যেমন- ‘আকাশের মতো সুন্দর ও প্রশস্ত তোমার কোমল মন।’ এখানে ‘মতো’ হল তুলনাবাচক শব্দ। দুটি বিসদৃশ বস্তুর মধ্যে যখন কোথাও কোনো সূক্ষ্ম সাদৃশ্য

অন্বেষণ করা হয় তখন ‘মতো’ ব্যবহৃত হয়।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: এমন দুটি তুলনাবাচক শব্দ দিয়ে বাক্য নির্মাণের দৃষ্টান্ত হল-

১। অমাবস্যার অন্ধকারের মতো দুর্ভেদ্য তার বাক্যালাপ।

বিশ্লেষণ: এখানে তুলনাবাচক শব্দ হল ‘মতো’। অর্থাৎ ‘অমাবস্যার অন্ধকার’ ও ‘বাক্যালাপ’-এই দুইয়ের মধ্যে তুলনা করতে ‘মতো’ ব্যবহৃত হয়েছে।

২। শিশুরা ফুলের মতো সুন্দর।

বিশ্লেষণ: এখানে শিশুদের সঙ্গে ফুলের তুলনাবাচক শব্দ হিসেবে ‘মতো’ ব্যবহৃত হয়েছে।

২.২। কবি পাখির মতো পাশে দাঁড়াতে বলছেন কেন?

উত্তর: রবীন্দ্রোত্তর কবিদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘দাঁড়াও’ কবিতায় সমগ্র বিশ্বে স্বার্থান্বেষী একদল মানুষ ফাঁদ পেতে রাখে। সে ফাঁদ হল তাদের লোভ, লালসা। শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এসব ফাঁদে জড়িয়ে পরে অসংখ্য দরিদ্র অসহায় মানুষ। কবির বক্তব্য-

(ক) পাখি যেমন তার চঞ্চ দিয়ে শিকারির জাল কেটে ফেলতে পারে; তেমন স্বার্থপর মানুষের বিছানো জাল কেটে অসহায় মানুষদের বের করে আনতে হবে।

(খ) অনুরূপে, পাখি যেমন তার বাচ্চাকে আগলে রাখে; তেমনি ভালোবাসা দিয়ে, স্নেহ দিয়ে দরিদ্র মানুষদের কাছে টেনে নিতে হবে। তাই কবি পাখির মতো পাশে দাঁড়াতে বলেছেন।

২.৪। ‘তোমার মতো মনে পড়ছে’-এই পঙ্ক্তির অন্তর্নিহিত অর্থ কী?

উত্তর: একালের অন্যতম বরণীয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘দাঁড়াও’ নামাঙ্কিত কবিতায় একদল ব্যক্তিগত স্বার্থে অন্য মানুষকে সর্বস্বান্ত করে। অন্য কিছু মানুষ থাকেন যারা চিরন্তন মনুষ্যত্বকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং মানবিক মূল্যবোধের কারণে অসহায়, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ান। এই শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের কথা সেই মুহূর্তে মনে পড়েছিল। কবির। মানুষের দুর্দিনে সেই বিবেকবান মানুষকে তাই স্মরণ করেছেন। কবি।

৯. কী ঘটেছে লেখো:

সন্ধ্যা > সন্ধে: এখানে স্বরসংগতির ফলে শব্দের শেষে অবস্থিত ‘আ’ ধ্বনিটি পরিণত হয়েছে ‘এ’ ধ্বনিতে।

ফাদ > ফাঁদ: এখানে স্বতোনাসিক্যীভবন ঘটেছে। কেননা, জোর করে একটি চন্দ্রবিন্দু আনা হয়েছে। এমন একটি স্বতোনাসিক্যীভবনের দৃষ্টান্ত হল- হাসপাতাল > হাঁসপাতাল, কাচ > কাঁচ।

Long Question Answer

২.৩। ‘মানুষই ফাঁদ পাতছে’- কবি এ কথা কেন বলেছেন? ‘মানুষ’ শব্দের সঙ্গে ‘ই’ ধ্বনি যোগ করেছেন কেন- তোমার কী মনে হয়?

উত্তরের প্রথমাংশ: বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘দাঁড়াও’ কবিতায় কবি বলছেন স্বার্থপর মানুষ শুধু নিজেদের সুখের কথা ভাবে। লোভী মানুষদের ফাঁদ পেতে থাকা, অর্থাৎ-(১) মানুষকে ঠকানো। (২) মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা। (৩) মানুষের সঙ্গে ছলনা করা মানুষ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যে মানুষের সঙ্গে এরকম ব্যবহার করে।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: মানুষের বিপদের কারণে অন্য আর একজন মানুষ। আসলে একদল মানুষ আছে যারা অত্যন্ত স্বার্থপর ও সংকীর্ণচেতা। শুধু শোষণ ও লোভ-লালসায় অন্যকে সর্বহারা করতে তারা তৎপর। এদের স্বভাবকে সুচিহ্নিত করতে কবি ‘ই’ ধ্বনিটি যোগ করেছেন। অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন-

(ক) মানুষের দুর্দশার মূল কারণ মানুষ-ই। (খ) মানুষের বর্বরতার কারণেই অন্য মানুষ লাঞ্ছিত হয়।

অর্থাৎ, মানুষই মানুষের বিপদের কারণ-এই বিষয়টি জোর দিয়ে বোঝানোর জন্যে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় অতিরিক্ত একটি ‘ই’ ধ্বনির ব্যবহার করেছেন।

২.৫। ‘এসে দাঁড়াও ভেসে দাঁড়াও এবং ভালোবেসে দাঁড়াও’-এই পঙ্ক্তিটির বিশেষত্ব কোথায়? এই ধরনের দুটি বাক্যে তুমি তৈরি করো।

উত্তরের প্রথমাংশ: বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের জনপ্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘দাঁড়াও’ নামাঙ্কিত কবিতায় ‘দাঁড়াও’ ক্রিয়াপদটি ক্রমাগত তিনবার ব্যবহৃত হয়েছে। এর মূল কারণ কবির অসহায় মানুষের পাশে সবসময় থাকার জন্যে আহ্বান করেছেন। সেই আহ্বানের সূত্রে দাঁড়াও ক্রিয়াপদটিকে গুরুত্ব দিয়ে তিনটি বাক্যখণ্ড ব্যবহার করেছেন। যথা-

(১) এসে দাঁড়াও। (২) ভেসে দাঁড়াও। (৩) ভালোবেসে দাঁড়াও অর্থাৎ, একটিই মূল অভিপ্রায় তা হল-নিঃস্বার্থে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কেননা, ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: এই ধরনের দুটি বাক্য হল-

(১) পাখির সুর চাই, নদীর গান চাই, সমব্যথী বন্ধু শুধু তোমাকে চাই। (২) আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকো, সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকো, বাতাসের দিকে তাকিয়ে থেকো, এদের মধ্যে আমাকে পাবে।

৩। ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’- কী কারণে কবি এই কথা বলেছেন? 

উত্তর: বিশ শতকের পাঁচের দশকের জনপ্রিয় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘দাঁড়াও’ নামাঙ্কিত তিন স্তবকের এই কবিতায় কবি মানুষের অসহায়তার কথা তুলে ধরেছেন। সমগ্র বিশ্বজুড়ে তখন চলছে মানুষের উপর মানুষের অবিচার-অত্যাচার-লাঞ্ছনার এক ভয়াবহ দুঃসময়। মানুষের বিপদের কারণ আর একদল মানুষ। কোথাও কারও প্রতি স্নেহ-মায়া-দায়বদ্ধতা নেই। শুধু একদলকে নিঃস্ব করে অন্যদলের আনন্দ ও আখের গুছিয়ে নেওয়া। মানুষের হাতে মানুষের এই অত্যাচার, উৎপীড়ন, অবমাননা, মৃত্যু দেখে শঙ্কিত কবি বারবার উচ্চারণ করেছেন ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’।

মানুষের অসহায়তা, বিপন্নতা এবং যন্ত্রণা বোঝাতে কবি ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’-এই কথাটি একাধিকবার উচ্চারণ করেছেন।

৫। কবিতাটির নাম ‘দাঁড়াও’ কতটা সার্থক? কবিতটির নাম ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ হতে পারে কি- তোমার উত্তরের ক্ষেত্রে যুক্তি দাও।

উত্তরের প্রথমাংশ: ছন্দ নিয়ে অভাবিত পরীক্ষা করেছেন যে শক্তি চট্টোপাধ্যায়, তাঁর ‘দাঁড়াও’ নামাঙ্কিত কবিতাটি বক্তব্যের গভীরতায় স্বতন্ত্র এক আবেদন সৃষ্টিতে সার্থক। এই কবিতার নামকরণ একটি ক্রিয়াপদকে আশ্রয় করে কেন্দ্রীভূত হলেও সেই নামকরণ একটি বিশেষ ব্যঞ্জনা লাভ করেছে।

সমস্ত প্রাপ্তি থেকে যারা বঞ্চিত, যারা অসহায়-পীড়িত-লাঞ্ছিত সেই মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে। তাই দেখা যায়-

(ক) ‘দাঁড়াও’ এই শব্দটি কবি ক্রমান্বয়ে ন’বার উচ্চারণ করেছেন। 

(খ) অন্য কোনো শব্দ এতবার তিনি ব্যবহার করেননি।

(গ) কবিতায় একই শব্দের বারংবার ব্যবহার করে তিনি আমাদের স্বার্থসর্বস্ব যাপিত জীবনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান করেছেন।

তাই ‘দাঁড়াও’ কবিতার নামকরণ কবিতার বিষয় অনুসারে সার্থক এবং শিল্পসম্মত হয়েছে।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: আলোচ্য এই কবিতার নাম যদি ‘মানুষ বড়ো কাঁদছে’ হতো তাহলে কবিতাটি নেতিবাচকতাকে প্রাধান্য দিত। সেখানে কবি নেতিবাচকতাকে ছাড়িয়ে ইতিবাচকতায় পৌঁছাতে চাইলেন। তাই তিনি মূল ভাববস্তুকে সরাসরি নামকরণে আনতে চাননি। তাছাড়া মানুষের কান্নাকে তিনি দেখাতে চাননি; বরং ব্যথিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত করতে চেয়েছেন। তাই ‘দাঁড়াও’ নামকরণটি অধিক প্রযোজ্য হয়েছে।

৬। কবি কাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করছেন বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর: কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় ‘দাঁড়াও’ নামাঙ্কিত কবিতায় অসহায়, বিপন্ন মানুষের পাশে ভালোবেসে দাঁড়াতে বলেছেন। তিনি কারও নাম না করে মধ্যমপুরুষে থাকা ‘তুমি’ নামাঙ্কিত সর্বনামপদে পাঠককেই চিহ্নিত করেছেন। অর্থাৎ যে পাঠকের মনের মধ্যে শুভবুদ্ধি কাজ করে, যারা দুঃখ-কষ্টে-যন্ত্রণায় থাকা মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারবেন বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ-কবি তাদেরকেই আহ্বান জানিয়েছেন। কবির বিশ্বাস সচেতন ও বিবেকবান মানুষই পারবে সমস্ত বিপন্ন মানুষকে মুক্তির পথ দেখাতে।

৭। কবিতাটি চলিত বাংলায় লেখা, শুধু একটা শব্দ সাধু ভাষার। শব্দটি খুঁজে বার করো এবং শব্দটিকে এভাবে ব্যবহার করেছেন কেন কবি?

উত্তর: শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘দাঁড়াও’ নামাঙ্কিত কবিতাটি চলিতভাষায় লেখা। কিন্তু এই কবিতায় ব্যতিক্রমী হল ‘তাহার’ নামাঙ্কিত একটি সাধু ভাষা। এর মূল কারণ-

(ক) ছন্দের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় কবিতাটিতে আট ও বার মাত্রা মিলে সর্বমোট কুড়ি মাত্রার মহাপয়ার তৈরি হয়েছে।

(খ) সেক্ষেত্রে ‘তাহার’ পরিবর্তে যদি ‘তার’ শব্দটি ব্যবহার করা হতো তাহলে বার মাত্রার পরিবর্তে এগার মাত্রা হতো। এর ফলে ছন্দ সাম্য নষ্ট হত।

তাই কবি ‘তার’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘তাহার’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।

৮। প্রথম স্তবকের তিনটি পঙ্ক্তির প্রত্যেকটির দলসংখ্যা কত? প্রতিটি পঙ্ক্তি কটি রুদ্ধদল ও মুক্তদল নিয়ে তৈরি?

উত্তরের প্রথমাংশ: প্রথম স্তবকে তিনটি পঙ্ক্তির প্রত্যেকটি দল সংখ্যা ষোলো।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: প্রতিটি পংক্তিতে বারোটি মুক্তদল ও চারটি রুদ্ধদল আছে।

পল্লীসমাজ

very Short Question Answer

১। কথাটা রমেশ বুঝিতে পারিল না। (যৌগিক বাক্যে)

উত্তর: কথাটা রমেশ শুনিল কিন্তু বুঝিতে পারিল না।

২। এ বাড়িতে আসিয়া যখন প্রবেশ করিল তখন সন্ধ্যা হয় হয়। (সরল বাক্যে)

উত্তর: প্রায় সন্ধ্যার সময়ে বাড়িতে আসিয়া প্রবেশ করিল।

৩। ওরা যাবে কি? (নির্দেশক বাক্যে)

উত্তর: ওরা যাবে না।

৪। বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিবারও তাহার প্রবৃত্তি হইল না। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)

উত্তর : বেণীর এই অত্যন্ত অপমানকর প্রশ্নের উত্তর দিতে তাহার প্রবৃত্তিতে বাধিল।

৫। তুমি নীচ, অতি ছোটো।  (যৌগিক বাক্যে)

উত্তর: তুমি নীচ এবং তুমি অতি ছোটো।

৬। পথে আর এতটুকু কাদা পাবার জো নেই দিদিমা। (প্রশ্নবোধক বাক্যে)

উত্তর: পথে আর এতটুকু কাদা পাবার কি জো আছে দিদিমা?

৭। মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ থাকায় ও সকলের কিছুই জানিতে। পারেন নাই। (জটিল বাক্যে)

উত্তর: মাসি উপরে ঠাকুরঘরে আবদ্ধ ছিলেন বলে এ সকলের কিছুই জানিতে পারেন নাই।

৮। এত অপমানের পরেও আমার আপনার সঙ্গে বিবাদ করতে ইচ্ছে করে না। (যৌগিক বাক্যে)

উত্তর: এত অপমানিত হলাম তবুও আপনার সঙ্গে বিবাদ করতে ইচ্ছে করে না।

৯। নিরুত্তরে বাহির হইয়া গেল। (না-বাচক বাক্যে)

উত্তর: উত্তর না দিয়া বাহির হইয়া গেল।

১০। নিজেই না হয় ক্ষতিপূরণ করে দিন না। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে) 

উত্তর: পারেন তো নিজেই ক্ষতিপূরণ করে দিন।

১১। রমা তুমি একবার বলো না, চুপ করে রইলে কেন? (নির্দেশক বাক্যে)

উত্তর: চুপ করে না থেকে রমাকে একবার বলতে বলা হল।

১২। বেণী ধমক দিয়া কহিল, পারবি নে কেন? (নির্দেশক বাক্যে) 

উত্তর: বেণী ধমক দিয়া না পারার কারণ জানিতে চাহিল।

১৩। মোরা নালিশ করতি পারব না। (হ্যাঁ-বাচক বাক্যে)

উত্তর: মোরা নালিশ করতি অপারগ।

১৪। ইহার কোনো হেতুই সে খুঁজিয়া পাইল না। (প্রশ্নবোধক বাক্যে) 

উত্তর: ইহার কোনো হেতুই সে কী খুঁজিয়া পাইয়াছিল।

১৫। তাহার চোখের জলে সমস্ত মুখ ভাসিয়া যাইতে লাগিল। (জটিল বাক্যে)

উত্তর: তাহার যে চোখের জল তাহাতে তাহার সমস্ত মুখ ভাসিয়া যাইতে লাগিল।

Short Question Answer

১.১। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম লেখো।

উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি উপন্যাসের নাম- ১. ‘রামের সুমতি’ ২. ‘চরিত্রহীন’

১.২। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোটোগল্পের নাম লেখো।

উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা দুটি ছোটোগল্প হল- ১. ‘লালু’ ২. ‘অভাগীর স্বর্গ’।

২.১। গোপাল সরকারের কাছে বসে রমেশ কী করছিল?

উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত উপন্যাসে রমেশ গোপাল সরকারের কাছে বসে জমিদারির হিসেবপত্র দেখছিল।

২.২। গ্রামের একমাত্র ভরসা কী ছিল?

উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় গ্রামের একমাত্র ভরসা ছিল একশো বিঘার মাঠটি। এর কারণ হল সমস্ত চাষিরই কিছু কিছু জমি মাঠটির অন্তর্ভুক্ত।

২.৩। ‘বোধ করি এই কথাই হইতেছিল’- কোন্ কথার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে?

উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় দুইদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টির জন্য একশো বিঘের চাষের মাঠ ডুবে যাওয়ার ফলে গ্রামের প্রায় কুড়িজন চাষি রমেশের কাছে সেই বাঁধ কেটে জল বের করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। বাঁধ কাটলে তাঁর প্রায় দুশো টাকার মাছ ভেসে যাবে বলে গ্রামের জমিদার বেণীবাবু কৃষকদের কথায় রাজি হন না। স্বয়ং রমেশ বেণীবাবুর কাছে উপস্থিত হলে তিনি বুঝতে পারেন হালদার মশাই ও বেণীবাবু বাঁধ নিয়ে কথা বলছেন।

২.৪। রমা আকবরকে কোথায় পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল?

উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় রমা আকবরকে একশো বিঘে জমির দক্ষিণ ধারের ঘোষাল ও মুখুজ্জেদের বাঁধ পাহারা দেবার জন্য পাঠিয়েছিল। উদ্দেশ্য ছিল যাতে রমেশ বাঁধ কেটে দিতে না পারে।

২.৫। ‘পারবি নে কেন’? -উদ্দিষ্টব্যক্তি কোন্ কাজটি করতে পারবে না?

উত্তর: দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত রচনায় উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হল রমাদের পিরপুরের প্রজা এবং লাঠিয়াল আকবর। বাঁধ পাহারা দিতে গিয়ে রমেশের হাতে সে আহত হয়। কিন্তু রমেশকে সে শ্রদ্ধা করত বলে সেই আঘাতের কথা সে থানায় গিয়ে জানাতে পারবে না বলে জানিয়েছে।

৩। নীচের প্রশ্নগুলির কয়েকটি বাক্যে উত্তর লেখো:

৩.১। কুড়িজন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়ল কেন?

উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ রচনায় দেখা যায় চাষের জমি নষ্ট হওয়ার কারণে কুড়ি জন কৃষক রমেশের কাছে এসে কেঁদে পড়েছিল। কেননা, তারা বেণী ঘোষালের অনেক অনুনয়, প্রার্থনা করা সত্ত্বেও কোনো লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে কৃষকরা রমেশের শরণাপন্ন হয়েছিল।

৩.২। রমেশ বেণীর কাছে জল বার করে দেবার হুকুম দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল কেন?

উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত এই রচনায় দেখা যায় একশো বিঘা মাঠের দক্ষিণে যে বাঁধ আছে তা ঘোষাল ও মুখুজ্জ্যেদের। জল উপচে পড়া জমি যখন চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ে তখন চাষিরা বেণী ঘোষালের কাছে গিয়েছিল। কিন্তু বেণী ঘোষাল বাঁধ কাটতে রাজি ছিলেন না। রমেশের মনে হয়েছিল সামান্য ক্ষতি হলেও চাষিদের বিরাট বড়ো ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে বাঁধ কাটা উচিত। তাই সে বেণী ঘোষালের কাছে উপস্থিত হয়ে জল বের করে দেওয়ার হুকুম দিতে অনুরোধ করেছিল।

৩.৩। বেণী জল বার করতে চায়নি কেন?

উত্তর: দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় বাঁধ সংলগ্ন জলা জমিতে বেণী মাছ চাষ করেছিলেন বলে তিনি বাঁধ কাটতে রাজি হননি। কেননা, বৈষয়িক বিষয়বুদ্ধির অধিকারী বেণী জানতেন দুশো টাকা লোকসান করা তার পক্ষে বড়ো ক্ষতি; তিনি বৃহৎ স্বার্থে সেই ক্ষতি স্বীকার করতে চাননি। এজন্যে রমেশের অনুরোধ সত্ত্বেও বেণী জল বার করতে চাননি।

৩.৪ । ‘ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখমুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল’- রমেশের এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?

উত্তর: দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় দেখা যায় স্নেহপ্রবণ ও মানবিক রমেশ বেণী ঘোষালের কাছে গিয়েছিল চাষিদের স্বার্থে। কিন্তু বেণী ঘোষাল অত্যন্ত স্বার্থপর। তিনি চাননি তার দুশো টাকার মাছ জলে ভেসে যাক। তাই তিনি রমেশকে জানিয়েছিলেন, চাষিদের ধান যদি জলে ডুবে যায় তবে ওই চাষিরা তাদের কাছে জমি বন্ধক দিয়ে টাকা ধার করবে। বেণী ঘোষালের এই অমানবিকতা, নীচ স্বার্থপরতা ও জঘন্য মনোবৃত্তির পরিচয় পেয়ে ঘৃণায়, লজ্জায়, ক্রোধে, ক্ষোভে রমেশের চোখমুখ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।

৩.৫। ‘রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হইয়া গেল’- রমেশের বিস্ময়ের কারণ কী ছিল?

উত্তর: মরমী কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ রচনায় দেখা যায় রমেশ ভেবেছিল রমা নিঃসন্দেহে বেণী ঘোষালের মতো স্বার্থসর্বস্ব হবে না। রমার মানস প্রবণতা সম্পর্কে রমেশের উচ্চ ধারণা ছিল। তাই সে রমার শরণাপন্ন হয়েছিল। কিন্তু রমেশ হতবাক হয় এই কারণে যে, রমা নিজের ক্ষতি স্বীকার করতে রাজি নয়। এমনকি দরিদ্র, অসহায়, বিপন্ন চাষিদের দুরবস্থার কথা জেনেও রমা তার কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি, রমার সেই মুহূর্তের বক্তব্য ছিল, ‘না অত টাকা লোকসান আমি করতে পারব না।’ এই কথা শুনে রমেশ বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে গিয়েছিল।

৩.৬। রমা রমেশের অনুরোধে রাজি হয়নি কেন?

উত্তর: কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় দেখা যায় রমেশের অনুরোধে রমা বাঁধ কাটতে রাজি হয়নি। কেননা, রমা কথাপ্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিল, ‘মাছ আটকে রাখার কী বন্দোবস্ত করবেন?’ কিন্তু অত জলে কোনো বন্দোবস্ত হওয়া সম্ভব নয় শুনে রমা রমেশের প্রস্তাবকে গ্রহণ করতে পারেনি। নাবালক ভাইয়ের সম্পত্তি ও জমিদারির অভিভাবিকা হিসেবে কোনো অর্থ ব্যয় করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

১০। নীচে দেওয়া শব্দদুটিকে দুটি আলাদা অর্থে ব্যবহার করে বাক্যরচনা করো:

যাত্রা (শুভ অর্থে): তোমার এই যাত্রা শুভ ও নিষ্কণ্টক হোক। 

যাত্রা (অভিনয় অর্থে): আমাদের গ্রামে ত্রিদিব ঘোষ সেদিন পিশাচ বক্তিয়ার অসাধারণ একটি যাত্রা করেছিলেন। 

বাঁধ (অপেক্ষা অর্থে) আশায় বুক বেঁধে থাকো, অবশ্যই তোমার কষ্টের ফল পাবে।

বাঁধ (প্রাচীর অর্থে): নদীর বাঁধ ভেঙে পাশের গ্রামগুলিতে জল ঢুকে পড়েছে।

Long Question Answer

৩.৭। ‘মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে’- কে, কার সম্পর্কে এ কথা বলেছিল? সে কেন এ কথা বলেছিল?

উত্তরের প্রথমাংশ: রবীন্দ্র-সমসাময়িক কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিল রমা সম্পর্কে রমেশ।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: অসহায় দরিদ্র চাষিদের সংকট মোচনের জন্য রমার শরণাপন্ন হয়েছিল ‘পল্লীসমাজ’-এর রমেশ। কিন্তু রমা জানিয়েছিল ‘না অত টাকা লোকসান আমি করতে পারব না।’

সামান্য কয়েকটি টাকার জন্যে রমা এতগুলি মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে-রমেশ তা কখনও কল্পনাই করতে পারেনি। কেননা, রমেশ জানত রমা সবার থেকে আলাদা। তাই সে বলেছিল, ‘তুমি যে এত নিষ্ঠুর হতে পার, আমি তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’ আসলে শরৎচন্দ্র তাঁর জীবনদর্শন থেকে বুঝেছিলেন মানুষ খাঁটি কিনা, তা চেনা যায় টাকার সম্পর্কে।

৩.৮। ‘রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির ন্যায় ফ্যালফ্যাল করিয়া চাহিয়া রহিল’- রমার এমন অবস্থা হয়েছিল কেন?

উত্তর: রবীন্দ্র-সমসাময়িক কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় রমা চায়নি ‘অত টাকা লোকসান’ হোক। রমার কথা শুনে হতাশ রমেশ জানিয়েছিল, ‘তুমি যে এত নিষ্ঠুর হতে পার, আমি তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’ চিরকাল রমা সম্পর্কে রমেশের ধারণা ছিল এই-রমা অত্যন্ত মানবিক এবং সবার থেকে আলাদা। কিন্তু রমেশের সেই ভুল ভেঙ্গেছে। রমেশের চোখে রমা এখন ‘তুমি নীচ, অতি ছোটো’। রমার সম্পর্কে রমেশের এই মূল্যায়নের কথা শুনে রমা বিহ্বল হতবুদ্ধির মতো ফ্যালফ্যাল করে চেয়েছিল।

৩.৯। রমা আকবরকে ডেকে এনেছিল কেন?

উত্তর: প্রখ্যাত কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ রচনায় পিরপুরের প্রজা আকবরকে রমা ডেকে এনেছিল যাতে রমেশের কাটা বাঁধ সে বাধা দিতে পারে। আসলে রমা চেয়েছিল রমেশ যেন বাঁধ কেটে তার লোকসান না ঘটায়।

৩.১০। ‘মোরা নালিশ করতি পারব না’- কে এ কথা বলেছে? সে নালিশ করতে পারবে না কেন?

উত্তরের প্রথমাংশঃ দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় রমার পিরপুরের প্রজা ও দুর্ধর্ষ লাঠিয়াল আকবর এ কথা বলেছে।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: অত্যন্ত কুচক্রী বেণী পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রমেশের নামে মিথ্যা নালিশ করার কথা বলেছিল। কিন্তু আকবর তার সেই বক্তব্য ও নির্দেশ উপেক্ষা করেছিল। কারণ আকবর ছিল সৎ মুসলমান প্রজা। সে কখনও চায়নি রমেশের ক্ষতি হোক। রমেশের পৌরুষত্বের প্রশংসা করেছিল। যে কৃষকদের কথা ভেবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা নালিশ করতে আকবরের বিবেকে বেঁধেছিল। তাই সে বেণী ঘোষালকে জানিয়েছিল, তার পক্ষে মিথ্যা নালিশ সম্ভব নয়।

৪। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো:

৪.১। ‘নইলে আর ব্যাটাদের ছোটোলোক বলেচে কেন?’ – বক্তা কে? এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার চরিত্রের কী পরিচয় পাও?

উত্তরের প্রথমাংশ: প্রখ্যাত কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ রচনায় আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন জমিদার বেণী ঘোষাল।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বেণীর চরিত্রের কয়েকটি দিক উঠে আসে। যেমন-

১. বেণী ঘোষাল খুব অহংকারী। তিনি কোনোভাবেই কৃষকদের অনুরোধ-উপরোধে কর্ণপাত করেননি। দরিদ্র প্রজারা সকাল থেকে তার কাছে দরবার করেও ব্যর্থ হয়েছিল।

২. লাভ লোকসান সম্পর্কে বেণী ঘোষাল অত্যন্ত সচেতন। তার পক্ষে দুশো টাকা লোকসান করা সম্ভব নয়। তিনি জানিয়েছেন দরিদ্র কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে জমি বন্ধক রেখে টাকা ধার নেবে।

৩. অত্যন্ত অবিবেচক বেণী ঘোষাল অসহায় দরিদ্র প্রজাদের ‘ছোটলোক’ বলে চিহ্নিত করেছেন। তার এই মন্তব্য প্রমাণ করে দরিদ্র মানুষ সম্পর্কে কতখানি তিনি অসহিষ্ণু ছিলেন। 

আসলে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় দেখিয়েছেন বেণী ঘোষালের মতো স্বার্থসর্বস্ব মানুষ শুধুমাত্র নিজের আখের গুছিয়ে নেবার জন্যে সচেষ্ট।

৪.২। বেণী, রমা ও রমেশ চরিত্র তিনটির তুলনামূলক আলোচনা করো। সেই সঙ্গে এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে কোন চরিত্রটি তোমার সবথেকে ভালো লেগেছে এবং কেন তা জানাও।

উত্তরের প্রথমাংশ: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘পল্লীসমাজ’ উপন্যাসে একাধিক চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তৎকালীন পল্লীমানুষের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা-দ্বেষ, লোভ-লালসা, পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি বিষয়গুলি তিনি তুলে ধরেছেন। আমাদের পাঠ্যাংশ ‘পল্লীসমাজ’ রচনায় আমরা

প্রধান তিনটি চরিত্রকে পাই। যথা- ১. বেণী ঘোষাল, ২. রমা, ৩. রমেশ।

চরিত্র ১: বেণী ঘোষাল।

বেণী ঘোষাল অত্যন্ত স্বার্থপর। নিজের সংকীর্ণ স্বার্থের জন্যে প্রজাদের সুবিধা-অসুবিধা তিনি দেখতে চাননি। বরং প্রজাদেরকে অপমান করে তিনি তাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদেরকে ছোটোলোক বলে ধিক্কার দিয়েছেন। প্রয়োজনে দরিদ্র প্রজারা তার কাছে জমি বন্ধক রেখে টাকা নিক-এমনটিও তিনি ঘোষণা করেছেন। এতটাই তিনি নীচ, রমেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা নালিশের জন্যে আকবরকে উৎসাহিত করেছেন।

চরিত্র ২: রমা।

রমা চরিত্রটি আপাত বিচারে স্বার্থসর্বস্ব মনে হলেও গভীর বিচারে রমা মানবিক। রমেশের সম্পর্কে তার গভীর শ্রদ্ধা ছিল। তাই লাঠিয়াল আকবরকে পাঠিয়েও তিনি মনে মনে চেয়েছিলেন রমেশের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। রমেশের কাছে পরাজিত হয়ে আকবর যখন জানিয়েছিল ‘মায়ের দুধ খেয়েছিল বটে ছোটোবাবু।’ তখন মনে মনে খুশি হয়েছিল রমা। এমনকি ‘মোরা নালিশ করতি পারব না’, এ কথা

শুনে রমা অনেকখানি হালকা হয়েছিল।

চরিত্র ৩ : রমেশ ।।

পল্লির স্বার্থসর্বস্ব জীবনে রমেশ যেন মরুভূমির মধ্যে একটুকরো মরুদ্যান বা ওয়েসিস। জমিদার হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে রমেশ দরিদ্র, অসহায় প্রজাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। যখন বেণী ঘোষাল ও রমা নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ ত্যাগ করতে চাইছিল না তখন বাধ্য হয়ে নিজেই বাঁধ কাটার উদ্যোগ নিয়েছিল। সে রমাকে জানিয়েছিল, ‘রমা, মানুষ খাঁটি কি না, চেনা যায় শুধু টাকার সম্পর্কে।’ রমেশ মহৎ ও উদার চরিত্র।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: ‘পল্লীসমাজ’ নামাঙ্কিত রচনায় এই তিনটি চরিত্রের মধ্যে রমেশ চরিত্রটি আমার ভালো লেগেছে। জমিদাররা সাধারণত অত্যন্ত হিসেবি এবং স্বার্থপর হয়। কিন্তু রমেশ তার ব্যতিক্রম। সে বিনয়ী, পরোপকারী এবং প্রজাদের সম্পর্কে মানবিক ও উদার। তাই এই চরিত্রটি আমার কাছে সম্মান ও শ্রদ্ধা পেয়েছে। এই চরিত্রটি আমাকে সব থেকে টেনেছে।

৪.৩। উপন্যাসের নামে পাঠ্যাংশটির নামকরণও ‘পল্লীসমাজ’-ই করা হয়েছে। নামকরণটি সুপ্রযুক্ত হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে মতামত জানাও।

উত্তর: দরদি কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘পল্লীসমাজ’ রচনার নামকরণটি হয়েছে বিষয়কেন্দ্রিক। শরৎচন্দ্র তাঁর একাধিক উপন্যাসের নামকরণ করেছেন প্রধান চরিত্রের দিকে তাকিয়ে। যেমন- ‘দেবদাস’, ‘শ্রীকান্ত’ ইত্যাদি। কিন্তু ‘চরিত্রহীন’, ‘পথের দাবী’, ‘পল্লীসমাজ’ ইত্যাদি উপন্যাসগুলি মূলত বিষয়কেন্দ্রিক।

পল্লীর স্বার্থপরতা, নীচতা, দলাদলি, রেষারেষি ইত্যাদি বিষয় ‘পল্লীসমাজ’ রচনাংশে উঠে এসেছে। পল্লির সাধারণ মানুষজন অনেকসময় সামান্য স্বার্থটুকু ত্যাগ করতে পারে না। এ রচনায় দেখা যায় বেণী ঘোষাল, রমা, রমার মাসিমা প্রত্যেকেই কোনো একটি স্বার্থ নিয়ে ভাবিত। কিন্তু তারা কেউ রমেশের মতো পল্লির মঙ্গলের চিন্তায় উদ্দীপ্ত নয়।

এই রচনাংশে শরৎচন্দ্র দেখাতে চেয়েছেন কিছু কিছু ভালো জমিদার ছিলেন যারা প্রজাদের মঙ্গলের কথাই ভেবেছেন। রমেশ তেমনই একজন জমিদার। বয়সের দিক থেকে তরুণ, শিক্ষিত, মার্জিত এবং প্রজা সম্পর্কে সচেতন রমেশকেও পল্লীসমাজের নানা চক্রান্তের সামনাসামনি হতে হয়েছিল।

কিন্তু পল্লীসমাজের মধ্যেও যে আকবরের মতো বলিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ মানুষ থাকে সেদিকেও শরৎচন্দ্র দৃষ্টিপাত করেছেন। সবমিলিয়ে পল্লিকেন্দ্রিক জীবন ও সংস্কৃতির চিত্র চিত্র এই রচনাংশে উপস্থাপিত হওয়ায় এর নামকরণ ‘পল্লীসমাজ’ যথাযথ হয়েছে বলেই মনে করি।

৪.৪। ‘পল্লীসমাজ’ পাঠ্যাংশে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কোনো নিদর্শন পেয়ে থাকলে সে সম্পর্কে আলোচনা করো। এ ধরনের ব্যবস্থার সুফল ও কুফল সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তরের প্রথমাংশ: দরদী কথাকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রণীত ‘পল্লীসমাজ’ রচনায় সামন্ততান্ত্রিক সমাজ কাঠামোর উপর আলোকপাত করেছেন। সামন্ততান্ত্রিক সমাজের মানুষ কৃষিনির্ভর জীবনযাপন করে। চাষবাস এবং গায়ে-গতরে খেটে এই মানুষজন অতি দারিদ্র্যে দিন অতিবাহিত করে।

‘পল্লীসমাজ’ রচনার শুরুতেই লেখক দেখিয়েছেন জনা কুড়ি চাষি বেণী ঘোষালের কাছে দ্বারস্থ হয়েছে। তাদের মাঠের একশো বিঘে ধানের জমি জলের তলায় নিমজ্জিত হওয়ায় তারা বিপন্ন, ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা এমন নিষ্ঠুর যে এদের কোনো কথাই শোনেনি বেণী ঘোষাল। বরং নিজের আর্থিক সুযোগ-সুবিধার কথা ভেবেছেন। শরৎচন্দ্র তাই লিখেছেন- ‘চাষিরা আজ… এইমাত্র কাঁদিতে কাঁদিতে উঠিয়া এখানে আসিয়াছে।’

চাষিদের কান্নায় সামন্ততন্ত্রের কোনো যায় আসেনা। কেননা, প্রজা শাসনে-শোষণে তাদের নগ্ন চরিত্র উঠে আসে। যে রমাকে রমেশ উদার ও মহৎ বলে ভেবেছিল সেই রমাও শেষপর্যন্ত বেণী ঘোষালের মতো জানায়-‘না অত টাকা লোকসান আমি করতে পারিবে না।’

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: আসলে সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার কিছু সুফল ও কিছু কুফল রয়েছে।

১. সুফল: সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় রমেশের মতো সৎ, মানবিক, উদার জমিদারদের অভাব ছিল না। যদিও তারা সংখ্যায় কম ছিলেন। তবু তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল প্রজাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গলসাধন করা। রবীন্দ্রনাথ এমন একজন উদারপন্থী জমিদার ছিলেন। তিনি শিলাইদহে প্রজাদের মঙ্গলের জন্যে নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন। সুতরাং সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার সুফল যে ছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

২. কুফল: সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় জমিদাররা ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের অনুপাত নিয়ে ভাবেন। ফলে তাদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় ব্যক্তিগত মালিকানা। ফলে প্রজারা নিঃস্ব, রিক্ত ও শোষিত হতে থাকে। জমিদারের অত্যাচারে, অবিচারে, প্রতাপে বাধ্য হতো প্রজারা ভিটেমাটি ত্যাগ অন্যত্র পালিয়ে যেতে। অর্থাৎ সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার কুফল ছিল। তাই মধ্যযুগে একাধিক কৃষক-বিদ্রোহের কথা জানা যায়।

ছন্নছাড়া

Very Short Question Answer

১.১। অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখো।

উত্তর: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা দুটি বইয়ের নাম হল-

১. ‘অমাবস্যা’, ২. ‘নীল আকাশ’।

১.২। তিনি কোন্ পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন?

উত্তর: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ‘কল্লোল’ পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন।

৯.১। ওই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে। (জটিল বাক্যে)

উত্তর: ওই সেই পথ যে পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।

৯.২। দেখছেন না ছন্নছাড়া কটা বেকার ছোকরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে? (যৌগিক বাক্যে)

উত্তর: দেখছেন না ছন্নছাড়া কটা বেকার ছোকরা রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে এবং আড্ডা দিচ্ছে?

৯.৩। কারা ওরা?   (প্রশ্ন পরিহার করো)

উত্তর: ওদের পরিচয় দাও।

৯.৪। ঘেঁষবেন না ওদের কাছে। (ইতিবাচক বাক্যে)

উত্তর: ওদের থেকে দূরে থাকুন।

৯.৫। একটা স্ফুলিঙ্গ-হীন ভিজে বারুদের স্তূপ। (না সূচক বাক্যে) 

উত্তর: একটা ভিজে বারুদের স্তূপ যেখানে কোনো স্ফুলিঙ্গ নেই।

৯.৬। জিজ্ঞেস করলুম, তোমাদের ট্যাক্সি লাগবে? (পরোক্ষ উক্তিতে) 

উত্তর: তাদের ট্যাক্সি লাগবে কি না জিজ্ঞেস করলুম।

৯.৭। আমরা খালি ট্যাক্সি খুঁজছি। (জটিল বাক্যে) 

উত্তর: আমরা এমন একটা ট্যাক্সি খুঁজছি যেটা খালি।

৯.৮। দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠেছে ফুল। (ক্রিয়ার কাল নির্দেশ করো)

উত্তর: পুরাঘটিত বর্তমান।

Short Question Answer

২.১। কবি প্রথমে গাছটিকে কেমন অবস্থায় দেখেছিলেন?

উত্তর: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ নামাঙ্কিত কবিতায় কবি গাছটিকে প্রথমে লতাপাতাহীন, জীর্ণ, শীর্ণ, শুষ্ক কাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কঙ্কালসর্বস্ব অবয়ব রূপে দেখেছিলেন।

২.২। ‘ড্রাইভার বললে, ওদিকে যাব না।’-ওদিকে না যেতে চাওয়ার কারণ কী?

উত্তর: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ নামাঙ্কিত কবিতায় ড্রাইভারের ওদিক না যাওয়ার কারণ ছিল-উদ্দিষ্ট স্থানে কয়েকটি ছন্নছাড়া বেকার ছোকরা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিল, যারা গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইতে এবং গাড়িতে উঠে ‘হাওয়া খাওয়ান’ বলে দাবি জানাতে পারে।

২.৩। ‘তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে।’ー সড়কের মাঝখানে, পথে এসে দাঁড়ানোর কারণ কী?

উত্তর: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ নামাঙ্কিত কবিতায় ছন্নছাড়া যুবকদের, সড়কের মাঝখানে, পথে এসে দাঁড়ানোর কারণ হল-

ক। ঘরে তাদের স্থান নেই।

খ। খেলার জন্য মাঠ নেই।

গ। আড্ডা দেওয়ার মতো মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে রকও নেই।

২.৪। ‘আমি বললুম, না ওখান দিয়েই যাব।’- কবির ‘ওখান’ দিয়েই যেতে চাওয়ার কারণ কী?

উত্তর: কল্লোলের কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ নামাঙ্কিত কবিতায় ‘ওখান’ থেকে যেতে চাওয়ার কারণ পথ কম হয়; অর্থাৎ শর্টকাটে যাওয়া যায়। তাই কবি ব্যস্ততার জন্য ওই পথ দিয়েই যেতে চেয়েছেন।

২.৫। ‘ওই দেখতে পাচ্ছেন না ভিড়?’- ওখানে কীসের ভিড়।

উত্তর: রবীন্দ্রপরবর্তী কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ নামাঙ্কিত কবিতায় একটা বেওয়ারিশ ভিখিরি গাড়ি চাপা পড়ায় রাস্তার লোকেরা জমায়েত হয়েছিল। সেই কারণেই এত ভিড়। 

২.৬। ‘কে সে লোক?’-‘লোক’টির পরিচয় দাও।

উত্তর: বিশ শতকের অন্যতম সফল কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ নামাঙ্কিত কবিতায় লোকটি হল একটি নিরীহ বেওয়ারিশ ভিখিরি; যার সেই অর্থে কোনো সামাজিক স্বীকৃতি নেই।

২.৭। ‘চেঁচিয়ে উঠল সমন্বরে….’-বলে কী তারা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল?

উত্তর: কল্লোলিয়ান কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া নামাঙ্কিত কবিতায় তারা সমস্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠল, ‘প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে।’

২.৮। ‘আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি’-কবি তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন কেন?

উত্তর: বিশ শতকের কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় গাড়ি চাপা পড়া বেওয়ারিশ ভিখিরির রক্তের দাগ যাতে কবির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামাকাপড়ে না লাগে সেই কারণেই কবি তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন।

২.৯। ‘ফিরে আসতেই দেখি’… ফেরার পথে কবি কী দেখতে পেলেন?

উত্তর: রবীন্দ্রপরবর্তী কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় কবি ফেরার পথে দেখলেন গলির মোড়ের সেই শুকনো গাছটা সবুজ পাতায়, সুশোভিত ফুলে, অপূর্ব গন্ধে, হাজার হাজার পাখিতে ভরে গেছে। 

২.১০। ‘অবিশ্বাস্য চোখে দেখলুম’- কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘোর কেন?

উত্তর: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় শীর্ণ, শুষ্ক, আপাত-প্রাণহীন, রুক্ষ যে গাছটি কবি দেখেছিলেন তার মধ্যে অনন্ত প্রাণের প্রকাশ লক্ষণ দেখে কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘোর এসেছিল।

Long Question Answer

৩.১। ‘ওই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে’- কবির যাত্রাপথের অভিজ্ঞতার বিবরণ দাও।

উত্তর: উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের ছন্নছাড়া কবিতা থেকে। ব্যস্ত কবি ট্যাক্সি নিয়ে যাচ্ছিলেন সেই পথ দিয়ে যেখানে লতাপাতাহীন মৃতপ্রায় এক গাছ দাঁড়িয়েছিল। ট্যাক্সিওয়ালার কথা না শুনে সময় বাঁচাতে কবি যখন যাত্রা শুরু করলেন তখন একদল ছন্নছাড়া যুবক গাড়ি থামিয়ে লিফট চেয়েছিল। সেই ছন্নছাড়া যুবক সহসা ভীড়াক্রান্ত জায়গা দেখে গাড়ি থামাতে বলে এবং রক্তাক্ত মৃতপ্রায় এক ভিখারিকে গাড়িতে তুলে নেয়। কবি লেখেন-

একটা বেওয়ারিশ ভিখিরি

রক্তে-মাংসে দলা পাকিয়ে গেছে।

ওরা রক্তে মাখামাখি সেই দলা-পাকানো ভিখিরিকে পাঁজাকোলা করে ট্যাক্সির মধ্যে তুলে নেয়। পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় রক্তের দাগে নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে কবি ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়েন। কিন্তু এটুকু বুঝতে পারেন এই ছন্নছাড়া যুবকের দল ছিল বলে এভাবে মৃতপ্রায় একটি মানুষ জীবনের নতুন আলো দেখতে পাবে।

৩.২। ‘গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে

গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া-‘

-একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে বলেও কেন পরের পঙ্ক্তিতে তাকে ‘গাছের প্রেতচ্ছায়া’ বলা হয়েছে তা বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: বিশ শতকের কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় কবি গাছ বলতে যা বোঝায় গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটিকে তার কোনো বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হতে দেখেননি। কেননা, সবুজপাতা, সুগন্ধী ফুল ও অফুরাণ ফলের সজ্জিত যে গাছ আমাদের ধারণায় উঠে আসে, কবির দেখা গাছটি তেমন ছিল না। সেই গাছটি ছিল রুগ্ন, জীর্ণ, শীর্ণ। তার কোনো লতাপাতা ছিল না। ছাল-বাকল ছিল না। তাই কবি একে গাছ না বলে গাছের প্রেতচ্ছায়া বলেছেন। অর্থাৎ প্রথমে জানিয়েছেন একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে। পরক্ষণে সংশোধনের সুরে জানিয়েছেন-গাছ নয়; গাছের প্রেতচ্ছায়া দাঁড়িয়ে আছে।

৩.৩। ‘ওই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।’-এভাবে কবিতায় উত্তমপুরুষের রীতি কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, অন্তত পাঁচটি পত্তি উদ্ধৃত করে বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: বিশ শতকের কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় উত্তম পুরুষের রীতিকেই গ্রহণ করেছেন। অর্থাৎ কবি এই কবিতার মধ্যে একটি আখ্যান তৈরি করেছেন এবং নিজেই সেই আখ্যানকে বিবৃত করেছেন। কবিতায় থাকা উত্তম পুরুষের রীতি কীভাবে ব্যবহৃত হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হল-

১। আমি বললুম, না ওখান দিয়েই যাব।

২। মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলুম।

৩। ওখান দিয়েই আমার শর্টকাট।

৪। বললুম, কদ্দুর যাবে।

৫। আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি।

৩.৪। ‘কারা ওরা’?-কবিতা অনুসরণে ওদের পরিচয় দাও।

উত্তর: বিশ শতকের কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় ওরা বলতে কবি সেই যুবকদের কথা বলেছেন যারা একঅর্থে ‘ছন্নছাড়া’। কেননা, এরা বেকার। কবি দেখেছেন-

ক। এদের জন্যে কলেজে সিট নেই।

খ। অফিসে চাকরি নেই।

গ। কারখানায় কাজ নেই।

ঘ। ঘরে-বাইরে কোথাও কোনো জায়গা নেই।

ঙ। প্রেম নেই।

চ। এদের প্রতি কারোর কোনো দরদ বা কর্তব্য নেই।

এদের আড্ডা দেওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। ফলে গলির পাশে কোথাও দাঁড়িয়ে এরা একসঙ্গে গল্পগুজব করে। কবির মতে এরা যেন কোনো এক ‘নেই রাজ্যের বাসিন্দে’।

৩.৫। ‘ঘেঁষবেন না ওদের কাছে।’- এই সাবধানবাণী কে উচ্চারণ করেছেন? ‘ওদের’ বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে?

ওদের কাছে না ঘেঁষার পরামর্শ দেওয়া হলো কেন?

উত্তরের প্রথমাংশ: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় কবি যে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন তার সচেতন ড্রাইভার এই সাবধান বাণীটি উচ্চারণ করেছিলেন।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: ‘ওদের’ বলতে রাস্তার গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একদল কাজকর্মহীন ছন্নছাড়া বেকার যুবকদের বোঝানো হয়েছে। কবি এদের চিহ্নিত করেছেন ‘নেই রাজ্যের বাসিন্দে’।

উত্তরের তৃতীয়াংশঃ ট্যাক্সি ড্রাইভার জানিয়েছিলেন ছন্নছাড়া যুবকগুলি গাড়ি দেখলেই লিফট্ চাইবে এবং সুযোগ বুঝে ড্রাইভার ও যাত্রীকে হেনস্থা করবে। তাই ড্রাইভার এমন সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছিলেন।

৩.৬। ‘তাই এখন এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে।’ -এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের জীবনের এমন পরিণতির কারণ কবিতায় কীভাবে ধরা পড়েছে তা নির্দেশ করো।

উত্তরের প্রথমাংশ: কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া গৃহবিবাগী একদল ছন্নছাড়া বেকার যুবকের কথা বলা হয়েছে।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: যে যুবকদের কথা অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তুলে ধরেছেন তাদের জীবনে কোনো ইতিবাচক সুফল দেখা যায়নি। তাই ক্রমাগত ‘নেই’ এই নেতিবাচক ক্রিয়াটিকে ব্যবহার করে কবি পরপর জানালেন, এদের জীবনে ঠিক কোন্ কোন্ জিনিস নেই। কবি লিখেছেন, এই নেই রাজ্যের বাসিন্দাদের সেই অর্থে সামাজিক কোনো স্বীকৃতি নেই। তাদের কোনো মর্যাদা নেই। সুখের কোনো শিহরণ নেই। এমনকি-

ক। ওদের জন্যে কলেজে সিট নেই

খ। অফিসে চাকরি নেই

গ। কারখানায় কাজ নেই

ঘ। ট্রামে-বাসে জায়গা নেই

ঙ। হাসপতালে বেড নেই

চ। বাড়িতে ঘর নেই

এমন একাধিক নেতিবাচকতায় দাঁড়িয়ে তবু এরা বাঁচতে পারত; কিন্তু বাঁচানোর মতো ইতিবাচক প্রেরণা না থাকায় এবং তাদের প্রতি কারোর কোনো দরদ না থাকায় এরা উদভ্রান্তের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে।

৩.৭। ‘জিজ্ঞেস করলুম তোমাদের ট্যাক্সি লাগবে?’- প্রশ্নবাক্যটিতে প্রশ্নকর্তার কোন অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে? তাঁর এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়ার পর কীরূপ পরিস্থিতি তৈরি হল?

উত্তরের প্রথমাংশ: আধুনিক কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় ট্যাক্সি ড্রাইভার যে অর্থে একদল যুবককে ছন্নছাড়া বলে চিহ্নিত করেছিলেন, প্রশ্নবাক্যটিতে প্রশ্নকর্তার তেমনটি মনে হয়নি। বরং প্রশ্নকর্তার মধ্যে সহানুভূতিশীল দরদি মনের পরিচয় পাওয়া যায়। 

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: কবিতায় উদ্ধৃত এই প্রশ্নটি তিনজন যুবককে করেছিলেন কবি। তিনজন যুবক গাড়িতে চেপে বসেছিল। হঠাৎ কিছুটা দূরে এক বেওয়ারিশ ভিখিরির রক্তাক্ত দেহ দেখে তারা এগিয়ে গিয়েছিল। অতি দ্রুত সেই দলাপাকানো দেহটাকে পাঁজাকোলা করে ট্যাক্সির মধ্যে তুলে নিয়েছিল। পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় রক্তের দাগে নষ্ট হতে পারে এই আশঙ্কা থেকে কবি ট্যাক্সি থেকে নেমে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছিলেন যারা এভাবে মানুষের পাশে গিয়ে উপস্থিত হয় তারা আসলে ছন্নছাড়া নয়।

৩.৮। ‘প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে।’- এই দুর্মর আশাবাদের ‘তপ্ত শঙ্খধ্বনি’ কবিতায় কীভাবে বিঘোষিত হয়েছে তা আলোচনা করো।

উত্তর: কল্লোল গোষ্ঠীর অন্যতম প্রতিবাদী কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় কবি একদল যুবকের কর্মতৎপরতা দেখে অভিভূত হয়েছিলেন।

মৃতপ্রায় পথযাত্রীকে দেখে গাড়ির মধ্যে বসে থাকা তিনটি যুবক দ্রুত এগিয়ে যায়। তারা একটি নিরীহ লোক গাড়ি চাপা পড়েছে দেখে রক্তে-মাংসে দলাপাকানো দেহটা দেখে অতি দ্রুত গাড়িতে তুলে নেয়। কবি লিখেছেন-

রক্তের মাখামাখি সেই দলা-পাকানো ভিখিরিকে 

ওরা পাঁজাকোলা করে ট্যাক্সির মধ্যে তুলে নিল।

চারপাশের মানুষজন যখন ব্যক্তিস্বার্থে হাত গুটিয়ে বসে থাকে তখনও একদল যুবক মৃতপ্রায় দেহটাকে নিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে এবং সোল্লাসে জানিয়ে দেয় ‘প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে।’ এই কথাটুকু সমগ্র কবিতায় বারংবার প্রতিধ্বনিত হয়।

গভীরতম প্রত্যয় আর আত্মবিশ্বাস থেকে ছন্নছাড়া একদল যুবক প্রমাণ করে চারিদিকে সংকীর্ণ গণ্ডীর মধ্যেও এখনও আশাবাদের যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। তাই গভীর প্রত্যয়ের সঙ্গে উচ্চারিত হয় ‘প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে’, এবং ‘তপ্ত শঙ্খধ্বনি’র মতো সেই কথা আকাশ-বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে যায়।

৩.৯। কবিতায় নিজের ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে চাওয়া মানুষটির ‘ছন্নছাড়া’-র প্রতি যে অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তা বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: বিশ শতকের কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় দুটি স্বতন্ত্র সংস্কৃতির পরিচয় রয়েছে। একদল মানুষ শহুরে এবং তারা নিজেদের তথাকথিত সভ্যসমাজের রুচিসম্পন্ন মানুষ বলে দাবি করেন। অন্যদল মানুষের জন্যে, বিপন্ন-অসহায় মানুষের পাশে সবসময় দাঁড়িয়ে থাকাকেই কর্তব্য বলে মনে করে।

কবি এক ব্যস্ত দিনে গাড়িতে চেপে যখন যাচ্ছিলেন ঠিক সেই সময় কয়েকটি তরুণ ট্যাক্সির সামনে দাঁড়িয়ে গেলে কবি জিজ্ঞাসা করেন-‘তোমাদের ট্যাক্সি লাগবে? লিফট চাই?’ সোল্লাসে চিৎকার করে ‘তিন-তিনটে ছোকরা’ উঠে পড়ে ট্যাক্সিতে। সামনে ভিড় দেখতে পেয়ে ওরা দ্রুত নেমে যায়। কবি দেখেন রাস্তার ওপর পড়ে থাকা একটি বেওয়ারিশ ভিখিরিকে ওরা দ্রুত তুলে ট্যাক্সির মধ্যে নিতে চায়। ওরা সমস্বরে চেঁচিয়ে বলে ‘প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে।’ ওদের এই অফুরাণ প্রাণসন্ধানী মানসিকতা দেখে অভিভূত কবির মনে অদ্ভুত এক সমবেদনা জেগে ওঠে। নিজের ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে চাওয়া মানুষটির ‘ছন্নছাড়া’দের প্রতি অন্য এক অনুভূতির প্রকাশ ঘটে।

৩.১০। কবিতায় ‘গাছটি’ কীভাবে প্রাণের প্রতীক হয়ে উঠেছে তা আলোচনা করো।

উত্তর: বিশ শতকের কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় ‘গাছ’ একটি প্রতীকে ব্যঞ্জনা পেয়েছে। প্রথমে গাছটিকে দেখে কবির মনে হয় ‘রুক্ষ রুষ্ট রিক্ত জীর্ণ’ লতাপাতাহীন এই গাছটি যেন গাছ নয়; গাছের কোনো ‘প্রেতচ্ছায়া’।

এই গাছটির মধ্যে যেমন কোনো প্রাণের প্রবাহ নেই, বেঁচে থাকার রসদ নেই; ঠিক তেমনিই শহরের চারপাশে আশ্রয়হীন, চাকরিহীন, গৃহহীন যুবকদের একই অবস্থা। গাছটির মতো তারাও যেন জীবনের রস থেকে বঞ্চিত। কবি সেই বঞ্চনার ইতিবৃত্ত তুলে ধরতে বলেছেন-

‘প্রেরণা-জাগানো প্রেম নেই

ওদের প্রতি সম্ভাষণে কারু দরদ নেই-‘

কিন্তু এরা ভালোবাসা পেলে, একটুকরো মমতা পেলে কীভাবে জগতের কল্যাণের কাজ করতে পারে তার নমুনা দিয়েছেন কবি। তাই রাস্তার উপরে বেওয়ারিশ ভিখিরিকে দেখে যখন কারও মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না; ঠিক তখনই এই ছন্নছাড়া ছেলেরা মৃতপ্রায় মানুষের মধ্যে প্রাণ খোঁজে।

এই ঘটনার সূত্র ধরে কবি দেখেন এই মরা গাছটিতে সবুজের সমারোহ। তার গায়ে অসংখ্য সবুজ কচি পাতা, বুকে তার সুগন্ধ, ডালে তার রং-বেরঙের পাখি। অর্থাৎ গাছ এখানে হয়ে ওঠে প্রাণের প্রতীক।

৩.১১। ‘এক ক্ষয়হীন আশা

এক মৃত্যুহীন মর্যাদা।’- ‘প্রাণকে’ কবির এমন অভিধায় অভিহিত করার সঙ্গত কারণ নিজের ভাষায় বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: কল্লোল গোষ্ঠীর প্রতিবাদী কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা ‘ছন্নছাড়া’ কবিতায় কবি একটি গাছের প্রেতচ্ছায়ার চিত্রকে সামনে এনে একদল তরুণের একঘেয়েমি জীবনের চিত্র এঁকেছেন। এই তরুণদের ভালোবাসার কেউ নেই। এদের জন্যে কোনো প্রেম নেই। এরা ওই রুক্ষ গাছটির মতোই প্রাণহীন। ভদ্রসমাজ এদের উপেক্ষা করে। ট্যাক্সির ড্রাইভার এদের স্বভাব-চরিত্র নিয়ে বিদ্রূপ করে। ভদ্রলোকেরা এদের দেখলে পাশ কাটিয়ে যায়।

কিন্তু কবি দেখেছেন এরাই প্রাণের প্রদীপ জ্বালায়। সেই প্রাণের প্রতীক হয়ে ওঠে গলির মোড়ের সেই গাছটি। প্রেতচ্ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে থাকা গাছটির শরীরে দেখা যায় হাজার হাজার ‘সোনালি কচি পাতা’। তার ডালে ‘রং-বেরঙের পাখি’। ধীরে ধীরে ঘন পত্রপুঞ্জে ভরে ওঠে গাছটি। কবি গাছটির দিকে তাকিয়ে যুবকদের সেই কণ্ঠোচ্চারিত ধ্বনি শুনতে পান-‘প্রাণ আছে, এখনও প্রাণ আছে’। এই প্রাণ হল ‘ক্ষয়হীন আশা’। এই প্রাণ হল কবির মতে ‘মৃত্যুহীন মর্যাদা’। অর্থাৎ কবিতার শেষে এসে কবি যেন গভীর আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, নিষ্প্রাণের মধ্যেই একসময় প্রাণের সমারোহ দেখা যাবে।