WBBSE Class 8 Bangla Chapter 5  গাছের কথা Solution | Bengali Medium

Class 8Chapter Bengali Medium

 গাছের কথা

1. Very Short Question Answer

1. জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা একটি বইয়ের নাম লেখো।

উত্তর : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা একটি বইয়ের নাম হল ‘অব্যক্ত’।

2. আগে যখন একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াইতে যাইতাম, তখন সব খালি-খালি লাগিত। (সরল বাক্যে)

উত্তর: আগে একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়াইতে গেলে সব খালি-খালি লাগিত।

3. তাদের অনেক কথা বুঝিতে পারি, আগে যাহা পারিতাম না। (হ্যাঁ-সূচক বাক্যে)

উত্তর: তাদের অনেক কথা বুঝিতে পারি, আগে যাহা অসম্ভব। ছিল।

4. ইহাদের মধ্যেও আমাদের মতো অভাব, দুঃখকষ্ট দেখিতে পাই। (জটিল বাক্যে)

উত্তর: আমাদের যেমন অভাব, দুঃখ-কষ্ট আছে, ইহাদের মধ্যে তেমন অভাব, দুঃখ-কষ্ট দেখিতে পাই।

5. তোমরা শুষ্ক গাছের ডাল সকলেই দেখিয়াছ। (না-সূচক বাক্যে)

উত্তর: শুষ্ক গাছের ডাল দেখ নাই এমন তোমাদের মধ্যে কেহ নাই।

6. প্রবল বাতাসের বেগে কোথায় উড়িয়া যায়, কে বলিতে পারে? (প্রশ্ন পরিহার করো)

উত্তর: প্রবল বাতাসের বেগে কোথায় উড়িয়া যায়, কেউ বলিতে পারে না।

2. Short Question Answer

1. জগদীশচন্দ্র বসু কী আবিষ্কার করেছিলেন?

উত্তর : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হল-‘উদ্ভিদ উত্তেজনায় সাড়া দেয়’, অর্থাৎ গাছেরও প্রাণ আছে। এছাড়া তিনি ‘ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্র’ আবিষ্কার করেছিলেন।

2. লেখক কবে থেকে গাছদের অনেক কথা বুঝতে পারেন?

উত্তর: রবীন্দ্র অনুরাগী বিজ্ঞানসাধক সাহিত্যিক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর লেখা ‘গাছের কথা’ গদ্যাংশে লেখক পাখি, নানান কীটপতঙ্গ ও গাছেদের যখন থেকে ভালোবাসতে শিখেছেন, তখন থেকেই তিনি তাদের কথা বুঝতে পেরেছেন।

3. ‘ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।’-কী দেখা যায়?

উত্তর : রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গ বিজ্ঞানসাধক সাহিত্যিক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত ‘গাছের কথা’ গদ্যাংশে লেখক মনে করেন যে, মানুষের মধ্যে যেমন কিছু সদ্‌গুণ বা ভালো কাজ করার প্রবণতা রয়েছে, ঠিক তেমনই গাছেদের মধ্যেও কিছু কিছু সেই ক্ষমতা দেখা যায়।

4. জীবিতের লক্ষণ কী তা লেখক অনুসরণে উল্লেখ করো।

উত্তর : আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত ‘গাছের কথা’ গদ্যাংশে জীবিতের লক্ষণ বলতে তাদের ‘গতি’ ও ‘বৃদ্ধি’র কথা বলা হয়েছে।

5. ‘বৃক্ষ শিশু নিরাপদে নিদ্রা যায়।’- বৃক্ষশিশু কোথায় নিদ্রা যায়?

উত্তর: বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত ‘গাছের কথা’ গদ্যাংশে বীজের উপরের কঠিন ঢাকনার আড়ালে বৃক্ষশিশু নিরাপদে নিদ্রা যায়।

6. অঙ্কুর বের হবার জন্য কী কী প্রয়োজন?

উত্তর: বিজ্ঞানসাধক আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত ‘গাছের কথা’ রচনাংশে আমরা দেখি অঙ্কুর বের হবার জন্য প্রয়োজন-উত্তাপ, জল এবং মাটির।

7. ‘আগে এসব কিছুই জানিতাম না’।- কোন্ বিষয়টি লেখকের কাছে অজানা ছিল?

উত্তর: লেখক জগদীশচন্দ্র বলেছেন, তিনি আগে জানতেন না গাছগুলি কথা বলতে পারে, তাদের জীবন আছে, মানুষের মতো আহার করে, দিন দিন বাড়তে থাকে ইত্যাদি বিষয়। 

8. ‘ইহাদের মধ্যেও তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।’-কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের মধ্যে কী লক্ষ করা যায়?

উত্তরের প্রথমাংশঃ এখানে গাছের কথা বলা হয়েছে।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর গভীর পর্যবেক্ষণশক্তিতে উপলব্ধি করেছেন, মানুষের মধ্যে যেমন সদ্‌গুণ আছে, গাছের মধ্যেও তার কিছু কিছু দেখা যায়।

3. Long Question Answer

1. গাছের জীবন মানুষের ছায়ামাত্র।’ -লেখকের এমন উক্তি অবতারণার কারণ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: জগদীশচন্দ্র বসুর ‘অব্যক্ত’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘গাছের কথা’ রচনায় লেখক গাছের জীবনযাপন ও মানুষের জীবন-যাপনের মধ্যে তুলনা করে আলোচ্য এই উক্তিটি করেছেন।

মানুষের মতো গাছ খাওয়া দাওয়া করে, দিনে দিনে বেড়ে ওঠে। জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর গভীর বিজ্ঞাননিষ্ঠ মন নিয়ে উপলব্ধি করেছেন যে মানুষের মতো গাছেরও অভাব, দুঃখ, কষ্ট ইত্যাদি মানবিক অনুভূতিগুলি রয়েছে। জীবন ধারণের জন্যে তাকে ক্রমাগত সংগ্রাম করতে হয়। তিনি লিখেছেন-

মানুষের মধ্যে যেরূপ সদ্‌গুণ আছে, ইহাদের মধ্যেও  তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।

অর্থাৎ গাছেরা একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। এমনকি তারা মানুষের মতো স্বার্থত্যাগ করে। মানবী মা যেমন তার সন্তানের জন্যে প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করতে কার্পণ্য করেন না; গাছও তেমন নিজেকে উৎসর্গ করে।

2. জীবনের ধর্ম কীভাবে রচনাংশটিতে আলোচিত ও ব্যাখ্যাত হয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: প্রখ্যাত গবেষক ও লেখক জগদীশচন্দ্র বসু গভীর পর্যবেক্ষণশক্তি ও সংবেদনশীল হৃদয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন যে, ‘গাছের জীবন মানুষের জীবনের ছায়ামাত্র।’ লেখকের এমন উক্তি অবতারণার কারণ হল-

মানুষের মধ্যে যেরূপ সদ্‌গুণ আছে, ইহাদের মধ্যেও  তাহার কিছু কিছু দেখা যায়।

জগদীশচন্দ্র বসু জানিয়েছেন, বৃক্ষদের মধ্যে একে অন্যকে সাহায্য করে। এদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব হয়। এরাও মানুষের মতো স্বার্থত্যাগ করে। মা যেমন সন্তানের জন্যে নিজের জীবন দান করেন, উদ্ভিদও তেমনই সন্তানের জন্যে সর্বস্ব বিসর্জন দেয়। তাই লেখকজগদীশচন্দ্র বসুর মনে হয়েছে, গাছের জীবন মানুষের জীবনের ছায়ামাত্র। লেখক প্রমাণ করতে চেয়েছেন মানব-হৃদয়ের সমস্ত গুণ এদের মধ্যেও রয়েছে।

3. ‘নানা উপায়ে গাছের বীজ ছড়াইয়া যায়।’- উপায়গুলি পাঠ্যাংশ অনুসরণে আলোচনা করো।

উত্তর: বিজ্ঞান সাধক জগদীশচন্দ্র বসুর ‘গাছের কথা’ গদ্যে লেখক দেখিয়েছেন নানা উপায়ে গাছের বীজ দূরে ছড়িয়ে পড়ে।

কৃষকেরা নিজের হাতে কর্ষিত জমিতে বীজ ছড়িয়ে দেয় ফলে সেই বীজ থেকে অসংখ্য প্রাণের সৃষ্টি হয়। তবে আমাদের চারপাশে যত গাছপালা দেখা যায় তা সবই মানুষের রোপিত বীজ থেকে জন্ম নেয়নি। কেননা অনেকসময় দেখা যায়-

ক। পাখিরা ফল খেয়ে যত্রতত্র বীজ ছড়িয়ে দেয়। সেই বীজ অনেক সময় দূর দেশে বাহিত হয় ফলে দূরদূরান্তে বাহিত সেই বীজ থেকে চারার জন্ম হয়।

খ। অনেক বীজ বাতাসে উড়ে দূর থেকে দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তুলোর বীজ হাওয়ার সঙ্গে ভাসতে ভাসতে বহুদূরে ছড়িয়ে যায়।

এভাবে বিচিত্র উপায়ে গাছের বীজ ছড়িয়ে পড়ে।

4. লেখক তাঁর ছেলেবেলার কথা পাঠ্যাংশে কীভাবে স্মরণ করেছেন, তা আলোচনা করো।

উত্তর: ‘গাছের কথা’ গদ্যে জগদীশচন্দ্র বসু প্রথমেই বলে নিয়েছেন একা একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে বেড়ানোর সময় তিনি গাছ-পালা, পাখ-পাখালির, কীট-পতঙ্গকে ভালোবেসে ফেলেন। তিনি উপলব্ধি করতে পারেন মানুষের মতো গাছেরও অনুভূতি আছে। তারাও কথা বলতে পারে। আমাদের মতো বিভিন্ন বিষয় উপলব্ধি করতে পারে। জগদীশচন্দ্র বসু লিখেছেন-

এখন ইহাদের মধ্যেও আমাদের মতো অভাব, দুঃখ কষ্ট দেখিতে পাই।

মানুষের মতো বৃক্ষেরও নানা সদ্গুণ আছে। এরাও স্বার্থত্যাগ করে। মানবী মায়ের মতো বৃক্ষ তার সন্তানের জন্যে জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে। গাছের মনের কথা, তাদের সংগ্রামের কথা জগদীশচন্দ্র ছোটোবেলা থেকেই উপলব্ধি করেছেন।

 5. পৃথিবী মাতার ন্যায় তাহাকে কোলে লইলেন।’ -বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে লেখকের গভীর উপলব্ধি উদ্ধৃতিটিতে কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে তা আলোচনা করো।

উত্তর : জগদীশচন্দ্র বসুর ‘গাছের কথা’ গদ্যে লেখক বৃক্ষশিশুকে তুলনা করেছেন মানবশিশুর সঙ্গে। আশ্বিন মাসের শেষে যখন প্রবল ঝড় হয়; তখন সেই ঝড়ে গাছের বীজ বহুদূরে উড়ে যায়। কখনো একখানা ভাঙা ইট কিংবা মাটির ডেলার নীচে আশ্রয় নেয়। ক্রমে ক্রমে ধুলো-মাটিতে বীজটি ঢাকা পড়ে যায়। সচরাচর বীজটিকে আর দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু জগদীশচন্দ্রের মনে হয়েছে, বীজটি ‘কিন্তু বিধাতার দৃষ্টির বাহিরে যায় নাই।’ কেননা, পৃথিবী মাতার ন্যায় তাহাকে কোলে তুলিয়া লইলেন।’

বিশ্বপ্রকৃতিকে জগদীশচন্দ্র মায়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কে লেখকের গভীর এই উপলব্ধি প্রমাণ করে প্রকৃতি মায়ের মতো স্নেহশীলা।

6. ‘প্রত্যেক বীজ হইতে গাছ জন্মে কিনা, কেহ বলিতে পারে না।’-বীজ থেকে গাছের জন্মের জন্য অত্যাবশ্যকীয় শর্তগুলি আলোচনা করো।

উত্তর: ‘অব্যক্ত’ গ্রন্থের অন্তর্গত ‘গাছের কথা’ রচনা থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে।

জগদীশচন্দ্র বসু এই গদ্যে জানিয়েছেন মানব শিশুর মতো বৃক্ষ শিশুরও বেঁচে থাকার কতকগুলি শর্ত রয়েছে। বীজ থেকে অঙ্কুর বের হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হল-

ক। পরিমিত জল, খ। উন্নতা, গ। মাটির সংস্পর্শ

বীজের কঠিন আবরণের ভিতরে নিরাপদে ঘুমিয়ে থাকে গাছের শিশুপ্রাণটি। পরিবেশের প্রতিকূলতায় সব সময় রসালো মাটির উপরে সে পড়ে না। অনেক সময় কঠিন পাথরের উপরে কোনো বীজ এসে পড়ে ফলে সে অঙ্কুরিত হতে পারে না। আসলে উপযুক্ত পরিবেশ না পেলে, বেঁচে থাকার রসদ সংগ্রহ করতে না পারলে বীজের ভিতরে গাছ সুপ্ত অবস্থায় থাকে। সুতরাং, প্রত্যেক বীজ থেকে গাছ জন্মগ্রহণ করে কিনা তা বলা সম্ভব নয়।

7. তখন সব খালি-খালি লাগিত।’- কখনকার অনুভূতির কথা বলা হল? কেন তখন সব খালি-খালি লাগত? ক্রমশ তা কীভাবে অন্য চেহারা পেল তা পাঠ্যাংশ অনুসরণে বুঝিয়ে দাও।

উত্তরের প্রথমাংশ: বিশ্বখ্যাত জীববিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু প্রণীত গাছের কথা নামাঙ্কিত গদ্য থেকে উদ্ধৃত হয়েছে আলোচ্য এই উক্তিটি। ‘তখন’ বলতে জগদীশচন্দ্র এখানে তাঁর বালককালের কথা বুঝিয়েছেন। উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: জগদীশচন্দ্র জানিয়েছেন, ‘আগে’ অর্থাৎ অল্পবয়সে যখন একা একা মাঠে কিংবা পাহাড়ে ঘুরতেন তখন প্রকৃতির সঙ্গে তাঁর প্রকৃত আত্মীয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তাই মূক প্রকৃতির অনেককিছুই তাঁর অজানা থাকায় ‘তখন সব খালি-খালি লাগত’।

উত্তরের তৃতীয়াংশ: প্রকৃতি মানুষকে নিজের করে নেয়। জগদীশচন্দ্র পরবর্তী জীবনে গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালি, কীট-পতঙ্গকে নিবিড় অন্তরঙ্গতায় ভালোবাসতে শুরু করেন। তিনি উপলব্ধি করেন আমাদের মতো গাছেরা জীবন ধারণের জন্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করে। তাদেরও বৃদ্ধি-বিকাশ রয়েছে। নানারকম সগুণাবলী রয়েছে। তারা একে অপরকে সাহায্য করে। এমনকী একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। সবথেকে বড় কথা মানবী মায়ের মতো বৃক্ষ মা সন্তানের জন্যে প্রাণ পর্যন্ত দান করে। জীব জগতের এই প্রাণবন্ত রূপ ধীরে ধীরে অনুভব করেন লেখক।

হাওয়ার গান

1. Short Question Answer

 1. দুর্বার ইচ্ছায় হাওয়া কী কী ছুঁয়ে গেছে?

উত্তর: রবীন্দ্র-পরবর্তী কবি বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় হাওয়ার ‘দুর্বার ইচ্ছা’ হল নিজস্ব একটি বাসস্থান পাওয়া। এই দুর্বার ইচ্ছায় তারা বারংবার ‘পৃথিবীর সব জল, সব তীর ছুঁয়ে’ গিয়েছে।

2. তার কথা হাওয়া কোথায় শুধায়?

উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসু প্রণীত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় কবি জানিয়েছেন, হাওয়াদের কোনো বাড়ি নেই। তাই ‘তারা শুধু কেঁদে মরে বাইরে।’ হাওয়া তার বাসস্থানের কথা জানার জন্যে জল-স্থল, নগর, বন্দর, অরণ্য, প্রান্তর, শূন্য তেপান্তর সর্বত্রই গিয়েছে। যদিও কেউ তার বাসস্থানের সন্ধান দিতে পারেনি।

3. মাস্তুলে দীপ জ্বলে কেন?

উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসু ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় মাস্তুলে দীপ জ্বলার প্রসঙ্গ এনেছেন। গভীর অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে জাহাজকে দীর্ঘ পথ চলতে হয়। তাই মাস্তুলে দীপ জ্বালাতে হয়। না হলে অন্ধকারে পথ চলা অসম্ভব।

4. পার্কের বেঞ্চিতে আর শার্সিতে কাদের উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে?

উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় পার্কের বেঞ্চিতে ঝরা পাতা এবং শার্সিতে কেঁপে ওঠা দেয়ালের পঞ্জরে হাওয়ার উপস্থিতির চিহ্ন রয়েছে।

5. নিশ্বাস কেমন করে বয়ে গেছে?

উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসু প্রণীত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় স্থায়ী বাসস্থান না থাকার ব্যথায় হাওয়ার নিঃশ্বাস সারা দিন রাত বুক-চাপা কান্নায় উত্তাল ও অস্থিরভাবে বয়ে যায়।

2. Long Question Answer

1. হাওয়ার চোখে ঘরের যে ছবি পাওয়া যায়, তা কবিতা অনুসরণে লেখো।

উত্তর: একালের অন্যতম আধুনিক কবি বুদ্ধদেব বসু প্রণীত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় হাওয়ার ব্যথা-বেদনার মূল কারণ ‘হাওয়াদের বাড়ি নেই।’ অথচ তার চোখের সামনে শুধু অসংখ্য সুখি গৃহকোণের চিত্র। যেমন-

ক।। একটি সুন্দর শিশু নিরাপদে, নিশ্চিন্তে দোলনায় ঘুমিয়ে রয়েছে।

খ।। কার্পেটের উপরে শুয়ে রয়েছে তন্দ্রাচ্ছন্ন কুকুর। 

গ।। ঘরে ঘরে মায়াবী আলো ছড়িয়ে জ্বলছে অন্ধকার দূর করা মোমবাতি।

পৃথিবীর সব প্রাণী দিনের শেষে আশ্রয়ে ফিরে আসে। প্রত্যেকের গৃহকোণে দেখা যায় সুখ-স্বপ্ন-স্বস্তির নানা চিহ্ন। কিন্তু হাওয়ার কোনো ‘বাড়ি নেই, দেশ নেই, শেষ নেই’। অন্যের সুখি গৃহকোণের ছবি দেখে তাই হাওয়ার কষ্টের শেষ নেই।

2. সমুদ্রের জাহাজের চলার বর্ণনা দাও।

উত্তর: রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের আধুনিক কবি বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ায় গান’ কবিতায় দেখা যায় ‘আঁধারে জাহাজ চলে’। জাহাজের মাস্তুলে দীপ জ্বলে। জাহাজের যাত্রীরা আমোদে-আহ্লাদে আপ্লুত থাকে। হাওয়ার চোখে ভাসে উদ্দীপনাময় নানা চিত্র। যেমন-

ক।। কেউ সিনেমা দেখে।

খ।। কেউ নাচ করে।

গ।। কেউ গান করে।

একসময় গান-বাজনা, আমোদ-আহ্লাদ থেমে যায়। ডেক নির্জন হয়। ক্লান্ত পৃথিবী ধীরে ধীরে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়। তখনও হাওয়া বিশ্রাম নিয়ে পারে না কেননা, সমুদ্রের জাহাজে নানা সুখ-স্বপ্ন তাকে গৃহকোণ অনুসন্ধানের স্বপ্ন দেখায়।

3. পৃথিবীর কোন্ কোন্ অংশে হাওয়া ঘুরে বেড়ায় লেখো।

উত্তর: বুদ্ধদেব বসু দেখেছেন ‘হাওয়াদের বাড়ি নেই’। তাই ‘তার শুধু কেঁদে মরে বাইরে’। বিরামহীন পথ চলায় হাওয়া পৃথিবীর সমস্ত স্থলভূমি, জলভূমি, নদী, সমুদ্রতীর, পাহাড়-পর্বত, বন্দর, নগর, অরণ্য, তেপান্তর সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু কোথাও সে ঘরের পথ দেখতে পায়নি। ঘুরে বেড়ানোই তার সার হয়েছে।

4. হাওয়াদের কী নেই? হাওয়ারা কোথায় কীভাবে তার খোঁজ করে?

উত্তরের প্রথমাংশ: কবি বুদ্ধদেব বসু প্রণীত ‘হাওয়ার গান’ কবিতায়। দেখা যায় ‘বুক-চাপা কান্না’য় হাওয়া জানিয়েছে, হাওয়াদের বাড়ি নেই। 

উত্তরের দ্বিতীয়াংশঃ স্থায়ী একটি বাসস্থান খোঁজার জন্যে হাওয়া। বিশ্বময় ঘুরে বেড়ায়। সে অশান্ত, অস্থির এবং ‘শুধু কেঁদে মরে বাইরে’। 

হাওয়ারা পৃথিবীর সব জল, সব তীর, পাহাড়ের গম্ভীর বন্দর, নগরের ঘন ভিড়, অরণ্য, প্রান্তর, শূন্য তেপান্তর সর্বত্র ঘুরে বেড়ায়। তবে তার সে অনিকেত পথ চলা শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়।

5. ‘চিরকাল উত্তাল তাই রে’- কে চিরকাল উত্তাল? কেন সে চিরকাল উত্তাল হয়ে রইল?

উত্তরের প্রথমাংশ: কবি বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় কবি জানিয়েছেন, হাওয়া চিরকাল ‘উত্তাল’ থাকে। উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: হাওয়া চেয়েছে, তার স্থায়ী বাসস্থান হোক।

বাসভূমির স্বপ্নে সে বিশ্বময় দৌড়ে বেড়ায়। অনিকেত তার পথ চলা। কোথাও তার স্থিতি নেই। সে অস্থির, অশান্ত। মেঘের মতো দৌড়ে বেড়ানোই তার কাজ। স্থায়ী বাসার জন্যে জল-স্থল, বন-জঙ্গল, শহর-নগর সে ঘুরে বেড়ায়। অবিরাম উন্মাদের মতো সে নিরন্তর পথ চলতে থাকে। কিন্তু কোথাও তার বাসস্থান-মেলে না। তাই সে চিরকাল উত্তাল হয়ে বয়ে চলে।

6.

কবিতাটির নাম ‘হাওয়ার গান’ দেওয়ার ক্ষেত্রে কী কী যুক্তি কবির মনে এসেছিল বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর: কবি বুদ্ধদেব বসুর ‘হাওয়ার গান’ কবিতায় হাওয়াকে কোনো জড়বস্তু হিসেবে কবি দেখেননি। সাধারণ মানুষের মতো হাওয়ার মধ্যে রয়েছে না পাওয়ার বেদনা। কবিতার শুরুতেই কবি নেতিবাচক একটি  চিত্র তুলে ধরেছেন-

হাওয়াদের বাড়ি নেই, হাওয়াদের বাড়ি নেই, 

নেই রে।

তারা শুধু কেঁদে মরে বাইরে।

জগতে সর্বত্র সুখের শিহরণ। কিন্তু হাওয়ার মন বিষণ্ণ। কেননা, তার বুকে সবসময় চাপা কান্না। তার চোখে পড়ে গৃহী মানুষের সুখের নানা চালচিত্র। যেমন-

ক।। একটি শিশু নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে দোলনায় ঘুমিয়ে থাকে।

খ। কার্পেটে অঘোরে ঘুমায় ক্লান্ত কুকুর।

গ। ঘরে ঘরে আলো দেয় স্বপ্নের মোমবাতি।

ঘ। জাহাজের যাত্রীরা আনন্দে উল্লাসে ‘কেহ নাচে, গান গায়।’ 

কিন্তু হাওয়ার যন্ত্রণা একটাই- ‘নেই, নেই, দেখা নেই, নেই রে’। অন্যেরা যখন সুখের গান করে হাওয়ার বুকে তখন অন্তহীন কান্না। তার গান আসলে ব্যথিত মনের যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি। এদিক থেকে ‘হাওয়ার গান’ কবিতাটির নামকরণ কবিতাটির মূল বিষয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। এই নামকরণ বিষয় অনুসারে সার্থক ও শিল্পমণ্ডিত হয়েছে।

কী করে বুঝব

1. Very Short Question Answer

 1. বুকু কোথায় বসে খেলা করছিল?

উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে ছ’বছরের বালক বুকু বাড়ির বাইরের রোয়াকে বসে খেলা করছিল।

2. ডাম্বল আলমারি ভেঙে কার বই নামিয়েছিল?

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে ডাম্বল আলমারি ভেঙে বুকুর সেজোকাকার বই নামিয়েছিল।

3. বুকুর মা-র কী কেনা ছিল?

উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকুর মা-র সিনেমার টিকিট কেনা ছিল।

4. বুকু কোন্ স্কুলে ভরতি হয়েছিল?

উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকু ‘আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’-এ ভরতি হয়েছিল।

2. Short Question Answer

1. আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য কোন্ কোন্ বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন?

উত্তর : আশাপূর্ণা দেবী তাঁর সাহিত্যকৃতির জন্য রবীন্দ্র পুরস্কার, সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, লীলা পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার, একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি. লিট এবং নানা সরকারি খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।

2. রিকশা থেকে কারা নামলেন?

উত্তর: একালের প্রখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে রিকশা থেকে দুটি বেজায় মোটাসোটা ভদ্রমহিলা আর বুকুর বয়সেরই এক ছেলে নেমেছিল।

3. বুকু আর বুকুর সেজো খুড়িমা অতিথিদের জন্যে কী কী খাবার নিয়ে আসে?

উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকু আর বুকুর সেজো খুড়িমা অতিথিদের জন্যে চা, শিঙাড়া, নিমকি, বড়ো বড়ো রাজভোগ, ভালো ভালো সন্দেশ নিয়ে আসেন।

3. Long Question Answer

1. বুকু খেলতে খেলতে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় কেন?

উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকু বাড়ির বাইরে রোয়াকে বসে খেলতে খেলতে দেখতে পেল একটা রিকশাগাড়ি তাদের বাড়ির সামনে এসে থামল। আর রিকশা থেকে দুটি বেজায় মোটাসোটা ভদ্রমহিলা আর তারই বয়সি কিন্তু মোটাসোটা একটি ছেলে নামল। রিকশাগাড়ির সামান্য পরিসরের মধ্যে কীভাবে এরা তিনজন বসেছিলেন- এটা ভেবে বুকু অবাক হয়ে যায়।

2. ‘সিঁড়ি ভেঙে আর উঠতে পারব না বাবা’- কারা এ কথা বলেছেন ? তাঁরা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে পারবেন না কেন?

উত্তরের প্রথমাংশ: একালের কালজয়ী লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে সুদূর উত্তরপাড়া থেকে ভবানীপুরের নির্মলাদেবীর বাড়িতে এসেছিলেন ছেনুমাসি ও বেনুমাসি। উদ্ধৃত উক্তিটি করা হয়েছিল বুকুকে উদ্দেশ্য করে।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: বুকু কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছে তার মা তিনতলার ছাতে, রান্নাঘরে রয়েছেন। ছেনুমাসি ও বেনুমাসি বাড়ি থেকে বেরিয়ে দুই তিন বার বাস বদল করে, অবশেষে রিকশায় চেপে বুকুদের বাড়িতে এসেছেন। ফলে এখন আর তিনতলা পর্যন্ত সিঁড়ি ভেঙে ওঠা সম্ভব নয়। তাঁরা হাঁফিয়ে উঠেছেন।

3. ‘ও কী! কান্ড করেছ তুমি’-কে, কী কাণ্ড করেছে?

উত্তর: একালের প্রখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকু তার সমবয়সি ডাম্বলকে উদ্দেশ্য করে এই কথা বলেছিল। ডাম্বল আলমারি ভেঙে বুকুর সেজোকাকার বই নামিয়েছিল। এটাকেই অস্বাভাবিক কাণ্ড বলে মনে হয়েছিল বুকুর।

অত্যন্ত অশান্ত প্রকৃতির ডাম্বল উত্তরপাড়া থেকে ভবানীপুরে বুকুদের বাড়িতে বেড়াতে এসে দস্যিপনা শুরু করেছিল। সে বুকুর সেজো কাকার সাজানো-গোছানো সুন্দর বইয়ের সারি থেকে ইচ্ছেমতো বই মাটিতে ফেলে জানিয়েছিল ‘দূর ছাই, ছবি নেই।’ ডাম্বলের সেই কান্ড কারখানা দেখে উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিল বুকু।

4. বুকু অবাক হয়ে ফ্যালফেলিয়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েছিল কেন?

উত্তর: একালের প্রখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকু তিনতলায় গিয়ে বাড়িতে অতিথি আসার খবর দিলে তার মা খুব বিরক্ত হয়ে ওঠেন। কেননা অসময়ে বাড়িতে অতিথি আসুক এটা তিনি মনে প্রাণে চাননি। অথচ বুকুর মা নির্মলাদেবী অতিথির সামনে এসে দিব্যি হাসি মুখে বলেন-

সত্যি কতকাল পরে দেখা-কী আনন্দ যে হচ্ছে কী করে বলব! ছেনুমাসিদের সামনে এসে নির্মলাদেবী ভালো ভালো কথা বলছেন দেখে অবাক হয় বুকু। মা হঠাৎ করে এমন বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলছেন কেন- এটা ভেবে বুকু অবাক হয়ে সবিস্ময়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েছিল।

5. ‘ছেলের কথা শুনেই বুকুর মা-র মাথায় বজ্রাঘাত’- ছেলের কথা শুনে বুকুর মা-র মাথায় বজ্রাঘাত হল কেন?

উত্তর: একালের জনপ্রিয় লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর লেখা ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকুর মুখে বাড়িতে অতিথি আসার কথা শুনে বুকুর মায়ের মাথা গরম হয়ে যায়। তাই তিনি রাগের মাথায় দু-চারটে খারাপ কথা বলে ফেলেন। অথচ ছেনুমাসি, বেনুমাসি ও দুরন্ত ডাম্বলকে বুকুর মা সাদর অভ্যর্থনা জানান।

বুকু অবশ্য হঠাৎ আসা অতিথিদের সামনে তার মায়ের অসন্তোষের কথা ব্যক্ত করে। সবার মাঝে এভাবে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেওয়ায় বুকুর মা-র মাথায় যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়।

6. ডাম্বলকে ইস্কুলে ভরতি করা হয়নি কেন?

উত্তর: মরমী কথাকার আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে ডাম্বলকে স্কুলে ভরতি করা হয়নি কারণ তার বাবা ছিল ভয়ানক কৃপণ। তাঁর এই সাত বছরের ছেলের জন্য তিনি বছরে স্কুলের মাইনে সাত টাকা দিতে পারবেন না। তাই ছেলে পড়াশুনার বদলে চাষবাস করে খাক এটাই তিনি চান। ডাম্বলের বাবার বক্তব্য ছিল-

ক) ‘পড়ে দরকার নেই’।

খ) ‘চাষবাস করে খাবে’।

অর্থাৎ অত্যন্ত কৃপণ পিতা পুত্রের পড়াশুনো বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন।

7. ‘কে জানে পাগলা-টাগলা হয়ে যাবে নাকি’-কার সম্পর্কে এই মন্তব্য করা হয়েছে? এমন সন্দেহের কারণ কী?

উত্তরের প্রথমাংশ: একালের জনপ্রিয় লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে নির্মলাদেবী তাঁর সন্তান বুকুর সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন। 

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: বেনুমাসির মুখে বুকুর কাণ্ডকারখানা শুনে বুকুর মা তো একেবারে হতবাক। কেননা, কথা প্রসঙ্গে বুকু ডাম্বলকে উদ্দেশ্য করে জানিয়েছে-

ক) ‘যেমন হাতির মতো দেখতে, তেমনই হাতির মতো বুদ্ধি।’

খ) ‘সেজো কাকা তোমার পিঠের ছাল তুলবেন।’

বুকুর মা নির্মলাকে এই কথাগুলি শুনিয়েছিলেন বেনুমাসি। ফলে ছেলের কথাবার্তা শুনে অতিথিদের সামনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন নির্মলা। কারণ এতটুকু ছেলের মুখে বড়োদের মতো কথা বেমানান। তাই তাঁর মনে সন্দেহ হয়েছিল ছেলে পাগলা-টাগলা হয়ে যাবে কি না। কেননা, নিতান্তই নির্বোধের মতো অতিথিদের সামনে এমন কথা বলা বুকুর মায়ের কাছে বিরক্তিকর মনে হয়েছিল। সেই বিরক্তি ও উৎকণ্ঠা থেকে এই প্রতিক্রিয়া করেছেন বুকুর মা নির্মলা।

8. ‘দুজনে মিলে চেঁচান, ‘বল, বল কেন ওসব বললি?’ -বুকু কেন ওসব বলেছিল?

উত্তর: সুখ্যাত লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকু একটি সরল সাদাসিধে নিষ্পাপ ছেলে। ফুলের মতোই তার পবিত্র মন। সে তার মায়ের কাছে শিখেছে যে সবসময় সত্যি কথা বলতে হয়, কোনো কথা গোপন করতে নেই। তাই আড়ালে তার বাবা-মা হঠাৎ আসা অতিথিদের সম্পর্কে যে সব কথা বলেছিলেন, সেসব কথা সে সবার সামনে বলে ফেলেছিল। ফলে একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।

নিতান্তই বিরক্ত হয়ে বেনুমাসি, ছেনুমাসি আর ডাম্বল তাদের বাড়ি থেকে চলে গেলে বুকুর মা রণমূর্তি ধারণ করেন। আশাপূর্ণা দেবী লিখেছেন-

ওঁরা বেরোবার সঙ্গে সঙ্গেই বুকুর মা রণচণ্ডী মূর্তি নিয়ে শুরু করেন ছেলে ঠ্যাঙাতে।

বুকুর ভূতুড়ে বুদ্ধির কথা শুনে বুকুর বাবাও প্রহারে লেগে যান। দুজনেই চিৎকার করে জানতে চান কেন সে তাদের সামনে ওসব কথা বলেছে। 

অসহায় বুকু আসলে সৎ, সরল ও স্পষ্টবাদী। তাই সে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে কথা বলতে সে শেখেনি। স্বাভাবিক সারল্যে যে কথাগুলি বলেছে তা হিতে বিপরীত হওয়ায় বাবা-মা এমন প্রহার করেছেন।

9. গল্পে বুকুর আচরণ তাঁর মাকে অতিথিদের সামনে অস্বস্তিতে ফেলেছিল। বুকুর এই আচরণ কি তুমি সমর্থন করো? বুকু কেন অমন আচরণ অতিথিদের সামনে করেছিল?

উত্তরের প্রথমাংশ: সংবেদনশীল লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘কী করে বুঝব’ গল্পে বুকুর আচরণ ওর মাকে চরম সংকটে ফেলেছিল। ওর এমন আচরণ করা উচিত হয়নি বলে আমার মনে হয়।

উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: কাজের সময় বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এলে আমরা অনেক সময় মনে মনে একটু বিরক্ত হই। আর আড়ালে-আবডালে কখনো-কখনো সেই অস্বস্তির কথা প্রকাশও করে ফেলি।

কিন্তু বাড়িতে অতিথি এলে তাদের আপ্যায়ন করা আমাদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। বুকু নেহাতই একটি বাচ্চা ছেলে। তাই তার মনটাও অত্যন্ত সরল। তাই সে যা শুনেছে তা-ই সবার কাছে বলে দিয়েছে। কিন্তু এটা যে অতিথির সামনে বলা উচিত নয়, এই বোধ তার মধ্যে এখনও জন্মায়নি।

বুকু দেখেছে ডাম্বল ছেলে হিসেবে মোটেই ভালো নয়। অথচ বুকুর মা দিব্যি জানিয়েছে ‘আর কি সুন্দর দেখতে হয়েছে!’ বুকু এ ধরনের মিথ্যা স্তুতিকে পছন্দ করেনি। তাই সে জানিয়েছে ‘যেমন হাতির মতো চেহারা তোমা তেমনই হাতির মতো বুদ্ধি’। আগন্তুক অতিথিদের সম্পর্কে বুকুর এই মন্তব্য ঠিক হয়নি।

অতিথিদের সম্পর্কে তার মায়ের প্রতিক্রিয়াগুলি সে ক্রমাগত বলে গিয়েছে। সত্যকে প্রকাশ করা ভালো, কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুসারে তা প্রকাশ করা উচিত। বুকু সত্য কথা এমন অনাবৃতভাবে প্রকাশ করেছিল যা হিতে বিপরীত হয়েছে। আসলে তার এমন আচরণের কারণ, তার মা তাকে শিখিয়েছিল-

ক) ‘সবসময়ে সত্যি কথা বলবি’।

খ) ‘কারো কাছে কিছু লুকোবি না’।

মায়ের এই কথা রাখতে এমন আচরণ অতিথিদের সামনে সে করেছিল।

10. ‘কী করে বুঝব, আসলে কী করতে হবে’- গল্পে বুকু এই কথা বলেছিল। -আসলে কী করা উচিত বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর : বুকু হল আশাপূর্ণা দেবী রচিত ‘কী করে বুঝব’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। মাতৃ আদেশ শিরোধার্য করেছিল সে। যে কারণে মিথ্যা কথা বলতে চায়নি। বুকুর মায়ের পরিচিত মাসিরা অসময়ে বাড়িতে এলে বিরক্ত হয় বুকুর মা। বুকু তার মায়ের মানসিক অস্বস্তির কথা অতিথিদের সামনে ব্যক্ত করে। সেই সত্য এতটাই অনাবৃত ছিল যে, ছেনুমাসিরা বাধ্য হন গৃহত্যাগ করতে। ওঁরা চলে যেতেই বুকুর মা রণচণ্ডী মূর্তি ধারণ করেন। ছেলেকে প্রহার করতে থাকেন। জানতে চান-

বল শয়তান ছেলে, কেন ওরকম কথা বললি?

বুকুর মায়ের বক্তব্য শুনে বিরক্ত বুকুর বাবা তাকে আরও জোরে মারতে থাকেন। কান্নায় ভেঙে পড়া বুকু জানায়-

নিজেই তো… বললে- সবসময়ে সত্যি কথা বলবি। বুকু সত্যি কথা বলে দুর্ভোগের শিকার হয়েছিল। আসলে অতিথিদের সামনে অপ্রিয় সত্যিকথা না বলার বয়স তার হয়নি। সে সত্যবাদী, সরল-নিষ্পাপ। আর অতিথিদের প্রতি তার মায়ের অস্বস্তির কথাটা সে জেনেছে। সেই সত্যটা প্রকাশ করেছে স্বাভাবিকভাবে। মায়ের আসল রূপটি প্রকাশ পাওয়ার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হল।

11. গল্পে দুটি ছোটো ছেলের কথা পড়লে-বুকু আর ডাম্বল। দুজনের প্রকৃতিগত মিল বা অমিল নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী দুটি বালকের কথা বলেছেন ‘কী করে বুঝব’ গল্পে। এই বালক দুটি হল- বুকু ও ডাম্বেল। এদের বয়স প্রায় কাছাকাছি। এদের দুজনের মধ্যে মিল হল-

১. দুজনে মুখে যা এসেছে বলেছে।

২. দু’জনেই অতি বাস্তববাদী হতে গিয়ে পরিবারের মান-সম্মান ভুলুণ্ঠিত করেছে।

৩. সত্যবাদী হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় তারা বড়োদের মুখের বুলি উচ্চারণ করেছে।

অবশ্য আশাপূর্ণা বুকু ও ডাম্বলের মধ্যে অমিলের জায়গাটিও রেখেছেন। বুকু অনেক বেশি ভদ্র ও সহনশীল। উভয় চরিত্রের তুলনামূলক আলোচনায় বলা যায়-

১. বুকু ডাম্বলের তুলনায় বোদ্ধা।

২। বুকু পড়াশোনায় মনোযোগী ছাত্র। সে আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কৃতি ছাত্র। অন্যদিকে ডাম্বল অমনোযোগী শিক্ষার্থী।

৩. পাঠ্যাভ্যাস ডাম্বলের মধ্যে নেই। তাই সে জানায়- ‘এঃ, ভারি তো বই! হতচ্ছাড়া বই! ছবি নেই।’

৪. ডাম্বল দুর্বিনীত। তাকে দেখে মনে হয় সে একরোখা। কিন্তু বুকু সত্যান্বেষী বালক। সে শৃঙ্খলিত জীবনযাপন করে।

এভাবে বুকু ও ডাম্বলের মধ্যে পার্থক্যের জায়গা করে দিয়েছেন আশাপূর্ণা দেবী।

12. গল্পটি পড়ে বুকুর প্রতি তোমার সমানুভূতির কথা ব্যক্ত করে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।

উত্তর: আশাপূর্ণা দেবী দেখিয়েছেন সব সময় সমস্ত সত্যিকে প্রকাশ করতে নেই। উপরন্তু তিনি দেখাতে চেয়েছেন, মানুষ ভিতরে-বাইরে দু’রকম কথা বলেন। অর্থাৎ মুখ ও মুখোশ এক নয়।

বুকুর মা চেয়েছিলেন, তার ছেলে হবে সত্যবাদী ও ন্যায়নিষ্ঠ। কিন্তু দেখা গেল বুকু সত্যবাদী হয়েও শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে। সে অতিথিদের সামনে একের পর এক সত্যকে সঠিকভাবে উন্মোচন করেছে।

এর ফলে ছেনুমাসিরা অপমানিত হয়েছেন। ওঁরা চলে গেলে তার মা ঠিক কী মনে করতে পারেন; সেই বিষয়টিও তার মনে এসেছে-

ছেলেটা কী অসভ্য হ্যাংলা- মাসিরা কী অহংকারী- এসে

তো মাথা কিনলেন, শুধু শুধু একগাদা পয়সা খরচ হয়ে গেল। বয়স্কদের মতো এসব কথা শুনে অত্যন্ত বিরক্ত হলেন ছেনুমাসিরা। তাঁরা তৎক্ষণাৎ গৃহত্যাগ করলেন। বুকুর মা ও বাবা ছেলের এই কথায় রুষ্ট হয়ে প্রহার করতে লাগলেন। আশাপূর্ণা লিখেছেন-

একে একে ছেলের ভূতুড়ে বুদ্ধির কথা বলতে থাকেন মা আর শুনতে শুনতে বাবা রেগে আগুন হয়ে ওঠেন। তখন তিনিও লেগে যান প্রহারে।

বুকুর মা ছেলেকে শিখিয়েছিল- ‘সবসময়ে সত্যি কথা বলবি’। এই সত্যি প্রকাশ করতে গিয়ে বুকু যে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছে, তা দেখে আমাদের কষ্ট হয়।