Class 8 Chapter 6 Bengali Medium
পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি
1. Very Short Question Answer
1. তাঁর লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর: জীবনানন্দ দাশের লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম-‘ঝরাপালক’। এর প্রকাশকাল ১৯২৭।
2. ‘দু-পহর’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘দু-পহর’ শব্দটির অর্থ হল ‘দুপুরবেলা’। ‘দ্বিপ্রহর’ শব্দ থেকে ‘দু-পহর’ কথাটি এসেছে।
2. Short Question Answer
1. কেবল প্রান্তর জানে তাহা’-‘প্রান্তর’ কী জানে?
উত্তর: রবীন্দ্র পরবর্তী আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় কবির মনে কোন্ গল্প, কাহিনি, স্বপ্ন ঘর বেঁধেছে তা অন্য কেউ না জানলেও কেবল প্রান্তরই তার খবর রাখে।
2. ‘তাহাদের কাছে যেন এ জনমে নয়- যেন ঢের যুগ ধরে কথা শিখিয়াছে এ হৃদয়’- কাদের কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তর: আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় ‘তাহাদের’ বলতে বিস্তৃত প্রান্তর এবং সেই প্রান্তরে উড়ে বেড়ানো শঙ্খচিলের কথা বলা হয়েছে।
3. ‘জলসিড়িটির পাশে ঘাসে…’-কী দেখা যায়?
উত্তর: আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় জলসিড়ির পাশে বুনো চালতার নুইয়ে পড়া শাখাগুলি দেখা যায়, নদীর জলে তাদের প্রতিবিম্ব পড়ে।
4. ‘জলে তার মুখখানা দেখা যায়…’- জলে কার মুখ দেখা যায়?
উত্তর: একালের অন্যতম আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় বুনো চালতা গাছের ডালের যে ছায়া নদীর জলের এসে পড়েছে, তারই মুখের কথা বলা হয়েছে।
5. ‘ডিঙিও ভাসিছে কার জলে…’- ডিঙিটি কেমন?
উত্তর: কবি-পুরোহিত জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় জলের ভাসমান যে ডিঙিটির কথা বলা হয়েছে সেটি ‘ঝাঁঝরা-ফোঁপরা’, অর্থাৎ একেবারেই ভাঙাচোরা ডিঙি।
6. ডিঙিটি কোথায় বাঁধা রয়েছে?
উত্তর: বিশ শতকের তিনের দশকের কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় ডিঙিটি জলসিড়ি নদীটির পাড়ে হিজল গাছে বাঁধা রয়েছে।
3. Long Question Answer
1. পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরকে কবি ভালোবাসেন কেন?
উত্তর: রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় কবির গভীর প্রকৃতিপ্রেম ছবির মতো উঠে এসেছে। পল্লিগ্রামের নির্জন দুপুরবেলা অদ্ভুত এক স্বপ্নময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে কবির মনে। গ্রামের চিরপরিচিত প্রান্তর এবং সেই প্রান্তরের উপর দিয়ে উড়তে থাকা শঙ্খচিল একমাত্র জানে কবির মনে কোন্ স্বপ্ন বাসা বেঁধে আছে।
গ্রামবাংলার অতি তুচ্ছ ‘শুল্ক পাতা’, ‘শালিকের স্বর’, ‘ভাঙা মাঠ’, ‘নক্শাপেড়ে শাড়িখানা’ গায়ে জড়ানো একটি মেয়ের রৌদ্রের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় বিমুগ্ধ নয়নে দেখেছেন কবি।
জলসিড়ি নদীটির পাশে নুইয়ে থাকা বুনো চালতার ডাল কবির মনে অন্য আরেক ভাবলোকের জন্ম দিয়েছে। ‘হিজল গাছে-বাঁধা এই বিবর্ণ, জীর্ণ ডিঙিটি মালিকহীন। ভাঙাচোরা ডিঙিটির মালিক হয়তো কোনো তার কাছে ফিরে আসবে না। এই না আসার বোধ থেকে কম্পি মনে অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা জায়গা করে নিয়েছে। ডিঙিটি যেমন একাধী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে আছে, আমরাও তেমন প্রিয়জন থেকে বিচ্ছিন্ন। তাই কবি লেখেন-
“ডিঙিও ভাসিছে কার জলে,
মালিক কোথাও নাই, কোনোদিন এই দিকে আসিবে না আর,”
পাড়াগাঁয়ের দ্বিপ্রহরে অদ্ভুত এক শান্ত, নির্জনতা, বিষণ্ণতা বিরাজ করে। কবি সেই বিষণ্ণতাকেই পছন্দ করেন। আর সেই সূত্রে নির্জন দ্বিপ্রহরের নিস্তব্ধ পাড়াগাঁকে কবি ভালোবেসে ফেলেন।
2. ‘স্বপ্নে যে-বেদনা আছে’- কবির স্বপ্নে কেন বেদনার অনুভূতি?
উত্তর: বিশ শতকের তিনের দশকের কবি জীবনানন্দ দাশ প্রণীত ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা কবিতার শেষে দেখা যায়। এই কবিতায় কবি পাড়াগাঁয়ের প্রান্তর, সেখানে উড়ন্ত শঙ্খচিল, শুকনো পাতা ঝরে পড়া, শালিকের আলাপন ইত্যাদি প্রসঙ্গকে এনে পল্লিজীবনের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরেছেন।
দুপুরের রৌদ্রে নাপাড়ের অসাধারণ একটি শাড়ি পরে বাংলার এক অপূর্ব সুন্দরী মেয়ে হলুদ পাতার মতো কোথায় যেন হারিয়ে যায়। জলসিড়ি নদীটির পাশে ঘাসের উপর অসংখ্য শাখা নিয়ে নুইয়ে থাকে বুনো চালতার গাছটি। পুরোনো ভাঙা-চোরা মালিকহীন একটি ডিঙি নদীর জলে ভাসতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে হিজল গাছে বাঁধা এই ডিঙিটির মালিক ফিরে আসে না। কবি লেখেন-
মালিক কোথাও নাই,
কোনোদিন এই দিকে আসিবে না আর/
ঝঝরা-ফোঁপরা, আহা,
ডিঙিটিরে বেঁধে রেখে গিয়েছে হিজলে:
কবিতার শেষাংশে এসে কবির মনে অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা দেখা যায়। রিক্ত পৃথিবীর কেমন এক বেদনাময় দৃশ্য কবির সামনে ভেসে ওঠে। ফলে কবির স্বপ্নে মিশে থাকে ব্যথা-রক্তিম বেদনার অনুভূতি।
3. প্রকৃতির কেমন ছবি কবিতাটিতে ফুটে উঠেছে তা আলোচনা করো।
উত্তর: জীবনানন্দের কবিতা প্রকৃতির বর্ণময় কারুকার্যে ছবির মতো উঠে আসে। ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের প্রতিটি কবিতার মধ্যে প্রকৃতির অন্তরঙ্গ আলাপন ধরা পড়ে। অসংখ্য গাছ-গাছালি, নদী-প্রান্তর, পাখ-পাখালি কবির একাধিক কবিতায় দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ নামাঙ্কিত কবিতায় নিস্তব্ধ দুপুরের বর্ণনা প্রসঙ্গেঙ্গ এসেছে রোদে ক্লান্ত শালিকের স্বর, বিস্তীর্ণ প্রান্তর, হলুদ পাতার মতো সরে যাওয়া একটি মেয়ের ছবি।
জীবনানন্দের একাধিক কবিতায় শঙ্খচিল ও ধানসিড়ি নদীর কথা এসেছে। কবির মনের কথা শুধুমাত্র ‘প্রান্তর জানে’, আর জানে ‘ঐ প্রান্তরের শঙ্খচিল’।
কবি দেখেন হিজল গাছে বাঁধা পড়ে রয়েছে বিবর্ণ-ভাঙাচোরা একটি ডিঙি। বহুদিন ধরে তার মালিক তার কোনো সংবাদ রাখে না। কবির নিঃসঙ্গ মনের সঙ্গে কোথাও যেন মিল রয়েছে নির্জনে পড়ে থাকা ডিঙিটির।
এই কবিতায় শঙ্খচিল, নক্কাপেড়ে শাড়ি, বুনো চালতার নুইয়ে পড়া, জলসিড়ি নদী ইত্যাদি প্রসঙ্গ নির্জন গ্রামবাংলার অপূর্ব শ্রী ও সৌন্দর্যকে রূপায়িত করেছে।
4. ‘কেঁদে কেঁদে ভাসিতেছে আকাশের তলে’- কবির এমন মনে হওয়ার কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় নির্জন দুপুরের বর্ণনার পাশাপাশি গ্রামবাংলার অপূর্ব শোভার বর্ণনা করা হয়েছে। কবিতার শুরু হয়েছে ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে। কবি প্রথমেই জানিয়ে নিয়েছেন তাঁর হৃদয়ে যে স্বপ্ন বাসা বেঁধেছে তাঁর খবর শুধু রাখে প্রান্তর আর প্রান্তরের শঙ্খচিল। এই কথাগুলি বলবার পর কবি হিজল গাছে বাঁধা এবং নদীর জলে ভেসে থাকা মালিকহীন একটি জীর্ণ-বিবর্ণ ভাঙাচোরা ডিঙির কথা তুলে ধরেন।
কবি খেয়াল করেন এই ডিঙির কোনো মালিক নেই। তাঁর মনে হয়েছে সে মালিক ‘কোনোদিনই এইদিকে আসিবে না আর’। আর এভাবেই পড়ে থাকবে ভাঙাচোরা ডিঙিটা। কবির মনের একাকিত্ব আর নির্জনে পড়ে থাকা ডিঙিটি যেন কোথাও এক হয়ে ওঠে। জরাজীর্ণ ডিঙিটির এভাবে অনাদরে নির্জন নদীর কূলে পড়ে থাকার কারণে কবির মনে হয়েছে ডিঙিটি যেন ‘কেঁদে-কেঁদে ভাসিতেছে আকাশের তলে’।
5. পাড়াগাঁর দু-প্রহর ভালোবাসি… শীর্ষক কবিতাটি ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা? ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় কবি জীবনানন্দের কবি-মানসিকতার পরিচয় কীভাবে ধরা দিয়েছে, তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তরের প্রথমাংশ: রবীন্দ্র পরবর্তী আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতাটি ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থের পঁচিশ সংখ্যক কবিতা।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: জীবনানন্দ সম্পর্কে যদি এককথায় কিছু বলার থাকে তাহলে বলতে হয়-তিনি প্রকৃতির কবি, প্রকৃত কবি। তাঁর একাধিক কবিতায় রূপসী বাংলার অপূর্ব লাবণ্যময় রূপ আলোক-উদ্ভাসিত হয়েছে। আলোচ্য এই কবিতায় বাংলার অপরূপ রূপের বর্ণনার প্রসঙ্গে কবি একটির পর একটি চিত্রকল্প তুলে ধরেছেন। যেমন-
১. প্রান্তরে উড়তে থাকা শঙ্খচিল
২. শুষ্ক পাতার ঝরে পড়া
৩. শালিকের স্বর
৪. ভাঙা মাঠ
৫. নক্শাপেড়ে শাড়ি
৬. বুনো চালতার নুয়ে পড়া ডাল
৭. জলসিড়ি নদীর চিত্র
৮. জলে ভাসমান ভাঙাচোরা একটি ডিঙি
এইসব খণ্ডচিত্রগুলি একত্রিত হয়ে রূপসী বাংলার এক রূপময় চিত্র তৈরি করে। নির্জন, নিস্তব্ধ দুপুর কবির মনে অদ্ভুত এক একাকিত্ব নিয়ে হাজির হয়। প্রকৃতির বুকে এক বিষণ্ণতা দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথ যেমন ছিন্নপত্রাবলীর বিভিন্ন পত্রে বিষন্ন প্রকৃতির কথা তুলে ধরেছেন; কবি জীবনানন্দ দাশ অনুরূপ এক বেদনাবোধের পরিচয় দিয়েছেন এই কবিতার শেষাংশে।
6. কবিতাটির গঠন-প্রকৌশল আলোচনা করো।
উত্তর: ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক-কবি জীবনানন্দ দাশের প্রতিটি কবিতা নানা বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। আমাদের আলোচ্য ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ নামাঙ্কিত কবিতাটি গঠন প্রকৌশলে অসামান্য একটি সনেটের মর্যাদা লাভ করেছে।
সনেটধর্মী কবিতায় থাকে ১৪টি পঙ্ক্তি। তাই একে চতুর্দশপদী কবিতাও বলা যায়। পাঠ্য কবিতাটির প্রথম আটটি পঙ্ক্তিতে রয়েছে। একটি ভাব। সেই ভাবেরই প্রসারণ ঘটেছে শেষের ছয়টি পঙ্ক্তিতে। অর্থাৎ প্রথম স্তবকে রয়েছে অষ্টক বা আটটি পঙ্ক্তি এবং দ্বিতীয় স্তবকে রয়েছে ষটক বা ছটি পঙ্ক্তি। মিলের বিন্যাস এমন-
১. প্রথম স্তবকের আটটি পঙ্ক্তি এমন ক, খ, খ, ক, ক, খ, খ, ক।
২. দ্বিতীয় স্তবকের ছয়টি পঙক্তি এমন চ, ছ, চ, ছ, চ, ছ।
মিশ্রকলাবৃত্ত বা অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত এই কবিতায় মাত্রাবিন্যাস পদ্ধতি হল ৮/৮/৬। এর ফলে এই কবিতার লয় ধীর। কবিতার শব্দ নির্মাণেও রয়েছে যথেষ্ট বৈচিত্র্য। যেমন-
১. দেশজ শব্দ: ডিঙি, নুয়ে আছে।
২. তৎসম শব্দ: রৌদ্র, হৃদয়, শুষ্ক।
৩. চলিত গদ্যধর্মী শব্দ: দু-পহর, নক্শাপেড়ে।
কবি জীবনানন্দ দাশ এমন অসাধারণ চিত্রকল্প বা Image এই কবিতার মধ্যে তুলে ধরেছেন যা অতুলনীয়। কবি আলোচ্য কবিতার শেষাংশে অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা ফুটিয়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে কবিতাটির গঠন প্রকৌশল একেবারে স্বতন্ত্র।
7. ‘রৌদ্রে যেন ভিজে বেদনার গন্ধ লেগে আছে’- কবিতায় কীভাবে এই অপরূপ বিষণ্ণতার স্পর্শ এসে লেগেছে, তা যথাযথ পঙ্ক্তি উদ্ধৃত করে আলোচনা করো।
উত্তর: রবীন্দ্র পরবর্তী আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের ‘পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি’ কবিতায় কবির প্রকৃতি প্রেমের অপূর্ব ভালোবাসা ব্যক্ত হয়েছে। পল্লিগ্রামের নির্জন দ্বিপ্রহর দেখে বিমুগ্ধ কবি প্রথমেই বিবৃতির সুরে জানিয়েছেন-
“পাড়াগাঁর দু-পহর ভালোবাসি-রৌদ্রে যেন গন্ধ লেগে আছে স্বপনের-“
অর্থাৎ রূপসী বাংলার প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধের পরিচয় আলোকময় হয়ে উঠেছে। পল্লির বৈশিষ্ট্য হল অদ্ভুত এক নির্জনতা। দ্বিপ্রহরের রৌদ্রে কবি দেখেছেন, ‘ভিজে বেদনার গন্ধ’। সেই বেদনাকে যেন প্রগাঢ় করেছে জনহীন প্রান্তর। সেই প্রান্তরের উপর দিয়ে উড়ে যায় শঙ্খচিল।
প্রত্যেকের হৃদয়েই স্বপ্ন থাকে। কবি অবশ্য জানিয়ে দেন, ‘স্বপ্নে যে-বেদনা আছে’ সেই বেদনার প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে শুষ্ক পাতায়, শালিকের স্বরে, ভাঙা মঠে। বুনো চালতার শাখা নুয়ে পড়ে নদীর জলের কাছে। কবি তাই জানান, ‘জলে তার মুখখানা দেখা যায়’।
কবিতার শেষাংশে এসে কবি একটি ভাঙাচোরা ডিঙির পরিচয় দেন। সেই ডিঙির কোনো মালিক নেই। একাকী নির্জন নদীর কূলে দাঁড়িয়ে থাকা ডিঙিটির কাছে হয়তো কোনোদিন তাঁর মালিক ফিরে আসবে না। তাই ‘ডিঙিটিরে বেঁধে রেখে গিয়েছে হিজলে।’ কবির মনে হয়েছে, ‘রৌদ্রে যেন ভিজে বেদনার গন্ধ লেগে আছে’। তাই কোথাও যেন ‘কেঁদে-কেঁদে ভাসিতেছে আকাশের তলে’। কবিতার শেষে এভাবে এক বিষণ্ণতা ধরা দেয়।
আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে
1. Very Short Question Answer
1. আষাঢ়ের ভেজা পথে কে এসেছে?
উত্তর : কবি বিজয় সরকার লিখেছেন, আষাঢ়ের ভিজে পথে এসেছে দুরন্ত শ্রাবণ।
2. কোথায় চর পড়েছে?
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন চূর্ণি নদীর ঘূর্ণিপাকে চর পড়েছে।
3. মেঠো আগুন কীভাবে নেভে?
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, জলের ছিটে লেগে মেঠো আগুন নেভে।
4. শ্রাবণের মেঘেও কী নিভে যায় না?
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, শ্রাবণের মেঘে ‘রাবণের চিতা’ নেভে না।
5. ‘রাবণের চিতা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, ‘রাবণের চিতা’ হল মানুষের মনের মধ্যে জায়মান থাকা দুঃখ-কষ্ট।
2. Short Question Answer
1. কবির মনের কূলে কখন ভাঙন লেগেছে?
উত্তর : কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ নামাঙ্কিত গানে জানিয়েছেন, কবির মনের কূলে যখন ঘর ভাঙা শ্রাবণ আসে, তখন ভাঙন লাগে।
2. কে উদাস চোখে শ্রাবণে বন্যা দেখেছিল?
উত্তর : কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ নামাঙ্কিত গানে জানিয়েছেন, হিজল গাছে বসে থাকা এক জলপরি কন্যা উদাস চোখে শ্রাবণের বন্যা দেখেছিল।
3. শ্রাবণকে কবি কেন ‘ঘরভাঙা’ বলেছেন?
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, শ্রাবণের বন্যা তাঁর স্বপ্নের ঘরটিকে ভেঙে দিয়েছিল। তাই শ্রাবণকে কবি ‘ঘরভাঙা’ বলে অভিহিত করেছেন।
4. জলপরি কন্যা’ কোথায় থাকে?
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, ছায়াভিটে হিজল গাছে জলপরি কন্যা থাকে।
5. আমি কাঁদি তাহার কান্না…’- ‘আমি’ কে?
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে ‘আমি’ বলতে গীতিকার-কবি বিজয় সরকারকে বোঝানো হয়েছে।
6. ‘শ্রাবণ ফিরে এলেও’-কার ফিরে আসার আশা নেই?
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, শ্রাবণ মাস পুনরায় ফিরে এলেও বানে ভেসে যাওয়া ঘরের ফিরে আসার কোনো আশা নেই।
7. ‘এলো আমার দুরন্ত শ্রাবণ’-শ্রাবণকে ‘দুরন্ত’ বলার কারণ কী?
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, শ্রাবণের প্রবল বন্যা কবির স্বপ্নের গৃহটি ভেসে যায়। শ্রাবণের এই প্লাবনকে চিহ্নিত করতে কবির ‘দুরন্ত’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
3. Long Question Answer
1. এলো আমার দুরন্ত শ্রাবণ’-শ্রাবণকে ‘দুরন্ত’ বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে শ্রাবণকে ‘দুরন্ত’ বলেছেন। শ্রাবণের অফুরাণ বর্ষণে কবির ভালোবাসার গৃহপ্রাঙ্গণটি ভেসে গিয়েছে। কবি আশ্রয়চ্যুত হয়েছেন। তাঁর জীবনের ছন্দ নষ্ট হয়েছে। হিজল গাছের ছায়াবৃত ভিটে মাটি থেকে হারিয়ে গিয়েছে ‘জলপরি কন্যা’ তথা কবির ভালোবাসার মানুষটি। এখনও কবি তাঁর জন্যে কাঁদেন। কবির বুকে যেন সবসময়ই ‘রাবণের চিতা’ জ্বলতে থাকে। শ্রাবণের মেঘ আসে এবং তখন ‘আগুন জ্বলে দ্বিগুণ বেগে’। শ্রাবণ তাঁর ভালোবাসাকে যেন সমূলে উচ্ছেদ করেছে। তাই শ্রাবণকে ‘দুরন্ত’ বলা হয়েছে।
2. ‘সেই চরেতে বেঁধেছিলাম বসতি এক ঘর।’ কে, কোথায় ঘর বেঁধেছিলেন? সেই ঘর বাঁধার পরিণতি কী হয়েছিল?
উত্তরের প্রথমাংশ: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, চূর্ণি নদীতে ঘূর্ণিপাকের ফলে যে পলি জমে চর সৃষ্টি হয়েছিল; সেই ভাসমান চরের বুকে কবি তাঁর ভালোবাসার ঘরটি বেঁধেছিলেন।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: অনেক স্বপ্ন নিয়ে কবি ঘর বেঁধেছিলেন। সেই ঘরে বাস করত অসাধারণ সুন্দরী এক ‘জলপরি কন্যা’। সেই ঘরটি শ্রাবণের প্রচণ্ড বন্যায় ভেসে যায়। ফলে কবির স্বপ্ন ভেঙে যায়। দূরত্ব শ্রাবণের জলের তাণ্ডবে বসতবাড়িটি নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কবির সমস্ত সুখ-স্বপ্ন-স্বস্তি কোথায় যেন ভেসে যায়।
3. ‘ফিরে আসার আশা নাই রে’-কার ফিরে আসার কথা বলা হয়েছে? তার ফিরে না আসার কারণ কী ছিল?
উত্তরের প্রথমাংশ: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, চূর্ণি নদীর ঘূর্ণিপাকে জেগে ওঠা চরে তিনি ভালোবাসার ঘর বেঁধেছিলেন। ‘দুরন্ত শ্রাবণ’ এসে তাঁর সেই ঘরটিকে ভাসিয়ে দেয়। ঘরের মানুষটিও হারিয়ে যায়। সেই ঘর আর সেই অসামান্য সুন্দরী ‘জলপরি কন্যা’র আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশঃ যে চলে যায় সে আর ফিরে আসে না। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় শ্রাবণ ফিরে আসে; কিন্তু শ্রাবণ ফিরে এসে কবির ভালোবাসার ঘরটিকে ফিরিয়ে দিতে পারে না। তাই কবির মনে হয়েছে সেই সুখী গৃহকোণটি ফিরে আসার আর কোনো আশা নেই।
4. ‘এমনই তোর বিধাতার বাধন’-কে, কোন্ প্রসঙ্গে একথা বলেছেন? ‘বিধাতার বাধন’ প্রসঙ্গটি আসার কারণ কী?
উত্তরের প্রথমাংশ: কবি বিজয় সরকার ‘আষাঢ়ের কোনো ভেজা পথে’ গানে জানিয়েছেন, চূর্ণি নদীর ঘূর্ণিপাকে যেখানে চর পড়েছিল, সেই চরেতে কবি তাঁর বসতি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু শ্রাবণের বন্যায় কবির সর্বস্ব ভেসে যায়। সেই প্রসঙ্গে বিধাতাকে উদ্দেশ্য করে এই উক্তিটি করেছেন কবি।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: ভারতীয় দর্শনে ‘অদৃষ্টবাদ’, ‘কর্মফলবাদ’ বিশেষভাবে প্রচলিত রয়েছে। কবি বিজয় সরকার এই গানের শেষাংশে বিধাতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন এই কারণে যে, মানুষ স্বপ্ন দেখে এক আর লাভ করে অন্য আর এক। অর্থাৎ প্রত্যেকেই যেন বিরহী যক্ষের মতো তাঁর সুখ-স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত। অর্থাৎ বিধাতার অভিপ্রায়ই কবি যেন তাঁর ঘর হারিয়ে ফেলেছেন। এখানে কবির গভীর দুঃখ ও প্রগাঢ় বিষণ্ণতা ধরা পড়েছে।
নাটোরের কথা
1. Very Short Question Answer
1. তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কোন সম্পর্কে সম্পর্কিত?
উত্তর: তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইপো ছিলেন।
2. Short Question Answer
1. লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী, তখনকার নাটোরের মহারাজার নাম কী ছিল?
উত্তর: লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণনা অনুযায়ী, তখনকার নাটোরের মহারাজার নাম ছিল- জগদিন্দ্রনাথ। লেখকরা তাঁকে ‘নাটোর’ নামেই ডাকতেন।
2. তিনি কোন্ ‘রিসেপশন কমিটি’র প্রেসিডেন্ট ছিলেন?
উত্তর: নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ নাটোরে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক সম্মেলনে আপ্যায়ন কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
3. সরাঘাট থেকে লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা কোন্ নদীতে স্টিমার চড়েছিলেন?
উত্তর: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘নাটোরের কথা’ গদ্যাংশে দেখা যায়, সারাঘাট থেকে লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা পদ্মানদীতে স্টিমার চড়েছিলেন।
4. নাটোরে প্রোভিন্সিয়াল কনফারেন্সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন্ গানটি পরিবেশন করেছিলেন?
উত্তর: সুবিখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং সুলেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নাটোরের কথা’ গদ্যাংশে নাটোরের প্রোভিন্সিয়াল কনফারেন্সে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সোনার বাংলা’ গানটি পরিবেশন করেছিলেন।
3. Long Question Answer
1. আজ সকালে মনে পড়ল একটি গল্প’- লেখকের অনুসরণে সেই ‘গল্প’টি নিজের ভাষায় বিবৃত করো।
উত্তর: সুবিখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং সুলেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নাটোরের কথা’ গদ্যাংশে লেখক প্রশ্নোক্ত বক্তব্যটি প্রকাশ করেছেন।
স্বদেশি যুগে নাটোরে আয়োজিত এক প্রাদেশিক সম্মেলনে কীভাবে লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা সেই সম্মেলনে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য তর্ক-বিতর্ক করেছিলেন সেই গল্পই স্মরণ করেছেন।
নাটোরে আয়োজিত এক প্রাদেশিক সম্মেলনের রিসেপশন কমিটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর পরিবারের আরও অনেকে আমন্ত্রিত হন এই সম্মেলনে। যেমন অবনীন্দ্র নিজে, তাঁর দীপুদা অর্থাৎ দীপেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মেজো জ্যাঠামশায়, ন-পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল এবং বাড়ির অন্যান্য ছেলেরা। এছাড়াও আমন্ত্রিত হয়েছিলেন অনেক প্রভাব প্রতিপত্তিশালী নেতা এবং লালমোহন ঘোষের মতো বিদগ্ধ পন্ডিত ব্যক্তিও।
নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথকে ‘নাটোর’ নামেই লেখক ডাকতেন। সেই নাটোরই লেখকদের যাওয়া-আসার সুবন্দোবস্ত করে দিয়েছিলেন। নাটোরে যাওয়ার জন্য তিনি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছিলেন, জলপথে যাওয়ার জন্য স্টিমারের ব্যবস্থা করেছিলেন। যাত্রাপথে খাওয়াদাওয়ারও আয়োজন ছিল যথেষ্ট এবং লেখক ও অন্যান্য যাত্রীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় তা দেখাশোনার জন্যেও লোকজন নির্দিষ্ট ছিল।
যখন সম্মেলন শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, এই সম্মেলন বাংলা ভাষায় হবে। লেখক ও তাঁর সঙ্গীরাও রবীন্দ্রনাথকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু নেতারা চেয়েছিলেন সম্মেলন হবে ইংরেজি ভাষায়। এতে লেখকদের সঙ্গে নেতাদের বিরোধের ফলে দুটো আলাদা দল তৈরি হয়েছিল। যাদের একপক্ষ বলবে বাংলায় আর অন্যপক্ষ ইংরেজিতে।
সম্মেলন শুরু হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের গাওয়া ‘সোনার বাংলা’ গান দিয়ে। কিন্তু সমস্যা হলো যখনই কেউ ইংরেজিতে বক্তৃতা দিতে শুরু করেন তখনই চারিদিক থেকে ‘বাংলা, বাংলা’ বলে সমস্বরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়েছিল। অবনীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, ‘মুখ আর খুলতেই দিই না কাউকে’।
একপ্রকার বাধ্য হয়ে কনফারেন্সের নেতৃবৃন্দ বাংলাতেই বলা শুরু করেছিলেন। এভাবে আন্তর্জাতিক ভাষার পাশে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল প্রাদেশিক ভাষা, মাতৃভাষা বাংলা। সেই উল্লাসের পরিচয় প্রসঙ্গে অবনীন্দ্রনাথ লিখেছেন-
সেই প্রথম আমরা পাবলিকলি বাংলা ভাষার জন্য লড়লুম। এই বিষয়টি লেখকের একদিন সকালে মনে পড়েছিল।
2. নাটোর নেমন্তন্ন করলেন…’- সেই নেমন্তন্নের তালিকায় কাদের নাম ছিল বলে লেখক স্মরণ করতে পেরেছেন?
উত্তর: সুবিখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং সুলেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নাটোরের কথা’ গদ্যাংশে দেখা যায় নেমন্তন্নের তালিকায় থাকা যে নামগুলি লেখক স্মরণ করতে পেরেছেন তাঁরা হলেন-লেখকের বাড়ির দীপুদা অর্থাৎ দীপেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবিকাকা অর্থাৎ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, লেখকের মেজো জ্যাঠামশায় সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ন-পিসেমশাই জানকীনাথ ঘোষাল, উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, লালমোহন ঘোষ, সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি এবং ঠাকুর বাড়ির অন্যান্য ছেলেরা।
3. ‘রওনা হলুম সবাই মিলে হৈ হৈ করতে করতে।’- কোথায় রওনা হলেন? কীভাবেই বা রওনা হলেন?
উত্তরের প্রথমাংশ: সুবিখ্যাত চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নাটোরের কথা’ গদ্যাংশে লেখকরা নাটোরে যাওয়ার জন্য রওনা হলেন।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশঃ স্বদেশি যুগে এক প্রাদেশিক সম্মেলনে রবীন্দ্রনাথসহ বিশিষ্টজনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ। নাটোরে যাওয়ার জন্য যে স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল লেখকরা তাতে চড়ে প্রথমে গেলেন সারাঘাট। আর সেখান থেকে স্টিমার চড়ে নাটোরে পৌঁছালেন।
4. স্টিমারে খাওয়া-দাওয়ার প্রসঙ্গ আলোচনায় লেখকের সরস মনের পরিচয় কীভাবে দেদীপ্যমান হয়ে উঠেছে তা বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: সুবিখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং সুলেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নাটোরের কথা’ গদ্যাংশে নাটোরগামী স্টিমারে লেখক খাওয়া-দাওয়ার যে বর্ণনা দিয়েছেন তাতে তাঁর সরস মনের পরিচয় মেলে।
লেখক জানিয়েছেন, খাওয়ার সময় ডেকের উপর টেবিল-চেয়ার সাজিয়ে খাওয়ার জায়গা প্রস্তুত করা হয়। লম্বা টেবিলের একদিকে বসেছিলেন হোমরাচোমরা নেতাদের দল এবং অন্যদিকে ছিলেন লেখকের সঙ্গীসাথিরা এবং লেখকের পাশে দীপুদা। এরপর বয়’রা খাবার পরিবেশন করতে শুরু করে নেতাদের দলটির দিক থেকে। কিন্তু নেতাদের দলের মাঝখানে থাকা একজন ব্যক্তি এত বেশি পরিমাণে খাবার নিতে থাকে যে, এতে লেখকদের দিকে পরিবেশনের আগেই প্লেটের খাবার প্রায় শেষ হয়ে যেতে থাকে। কাটলেটের প্লেট কাছে আসা মাত্রই সেই কর্তাব্যক্তি ছ-সাতখানা কাটলেট একেবারেই তুলে নেন। ফলে অন্যদের জন্য বিশেষ কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
আবার দীপুদার অতি প্রিয় পুডিংও সেই ব্যক্তি এত পরিমাণে তুলে নেন যে দীপুদার কাছে আসার আগেই তা ফুরিয়ে যাবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। সেই ভদ্রলোকের দৈত্যের মতো খাওয়া দাওয়া দেখে লেখকরা বিস্মিত হন। এত খাওয়াদাওয়ার জন্য ভদ্রলোকের শরীরও ছিল দেখবার মতো। তাই অবনীন্দ্রনাথ বেশ মজা করে লিখেছেন, ‘অমন ‘জাইগ্যানটিক’ খাওয়া আমরা কেউ কখনও দেখিনি’।
5. ‘যেন ইন্দ্রপুরী।’ কীসের সঙ্গে ‘ইন্দ্রপুরী’র তুলনা করা হয়েছে? কেনই বা লেখক এমন তুলনা করেছেন?
উত্তরের প্রথমাংশ: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘নাটোরের কথা’ শীর্ষক গদ্যাংশে নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথের বাড়িকে ‘ইন্দ্রপুরী’র সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশঃ প্রোভিন্সিয়াল কনফারেন্সের উদ্দেশ্যে বাড়িতে অতিথি সমাগমের জন্য জগদিন্দ্রনাথ তাঁর বাড়ি থেকে বৈঠকখানা সমস্ত কিছুই সুন্দরভাবে সাজিয়েছিলেন। বাড়িতে রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো ঝাড়লণ্ঠন, তাকিয়া, ভালো ভালো দামি ফুলদানি, সুদৃশ্য কার্পেট দিয়ে এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যা নজর কাড়ে লেখকের। তাই লেখক বাড়িটিকে দেবরাজ ইন্দ্রের বাসস্থান ‘ইন্দ্রপুরী’র সঙ্গে তুলনা করেছেন।
6. ‘একেই বলে রাজসমাদর।’- উদ্ধৃতিটির আলোকে নাটোরের মহারাজার অতিথি-বাৎসল্যের পরিচয় দাও।
উত্তর: সুবিখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং সুলেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নাটোরের কথা’ গদ্যাংশে নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ লেখক ও অন্যান্যদের নাটোরে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন।
আগে থেকেই শিখিয়ে-পড়িয়ে রাখা কাজের লোকেরা সমস্ত জিনিস না চাইতেই সময়মাফিক এনে দিতে থাকে। খাওয়া-দাওয়া, গল্পগুজব, গান বাজনার মধ্যে দিয়ে সময় কাটতে থাকে। কোনো ব্যক্তি
কখন কি খেতে পছন্দ করেন তাও আগে জেনে নেওয়া হয়েছিল। তাই পছন্দমাফিক জিনিস যথাসময়ে পৌঁছে যেতে থাকে প্রত্যেক ব্যক্তির কাছেই। এমনকি রানিও তাঁর অন্দর মহল থেকে নিজের হাতে রেঁধে পাঠাতে থাকেন পিঠে-পায়েস।
এ ছাড়া প্রত্যেকে যখন যা ফরমাশ করেছেন তখনই তা পূরণের জন্য জগদিন্দ্রনাথ ও সর্বদা তৎপর। তাই দেখা যায় লেখক মজা করে চায়ের সাথে গরম সন্দেশ খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা মাত্রই হালুইকাররা খাবার ঘরের দরজার সামনেই গরম সন্দেশ বানাতে শুরু করে।
ধুতি-চাদর, বিছানা-পত্র সমস্তই গোছানো ছিল। চাওয়ার আগেই ভৃত্যরা হাতের কাছে সেই জিনিস পৌঁছে দিয়েছিল। বিপুল এই আয়োজনের মধ্যে এরূপ বিলাসিতা ও ত্রুটিহীনতার মধ্য দিয়েই নাটোরের মহারাজার অতিথি বাৎসল্যের পরিচয় ফুটে উঠেছে। তাই লেখক একে বলেছেন ‘রাজসমাদর’।
7. ‘নাটোরের খুব আগ্রহ’- কোন্ প্রসঙ্গে তাঁর আগ্রহের কথা এখানে বলা হয়েছে?
উত্তর: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে যেমন ছিলেন প্রখ্যাত লেখক তেমনিই চিত্রশিল্পী হিসেবেও তিনি ছিলেন যথেষ্ট দক্ষ। জগদিন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে নাটোরে গিয়ে তিনি অবসর সময়ে গ্রামে ঘুরতে বেড়ান এবং স্কেচ নিতে থাকেন গ্রামের পুরোনো বাড়ি-ঘর-মন্দিরের। লেখকের এই স্কেচ সম্বন্ধে নাটোর অর্থাৎ মহারাজা জগদিন্দ্রনাথেরও বিশেষ আগ্রহ ছিল। তাই তিনি লেখককে ঘুরিয়ে দেখান তাঁর রাজত্বের বিশেষ কিছু জিনিসপত্র ও রানির অন্দরমহল। লেখকও স্কেচ করতে থাকেন নিজের পছন্দমতো জিনিসগুলির। নাটোরও লেখককে ফরমাশ করতে থাকেন এটা-ওটা স্কেচ করে দেবার জন্য। লেখকের স্কেচের প্রতি নাটোরের এই আগ্রহের কথাই এখানে বলা হয়েছে।
8. ‘আগে থেকেই ঠিক ছিল’-আগে থেকে কী ঠিক থাকার কথা বলা হয়েছে? সেই উপলক্ষ্যে কোন্ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা পাঠ্যাংশে রয়েছে, তা আলোচনা করো।
উত্তরের প্রথমাংশ: শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নাটোরের কথা’ গদ্যাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে। লেখক জানিয়েছেন, আগে থেকেই ঠিক ছিল যে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রস্তাব তুলবেন যাতে কনফারেন্সের বক্তৃতাসহ অন্যান্য কথাবার্তা বাংলা ভাষাতে হয়।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: কনফারেন্স শুরুর আগেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রস্তাব দেন যে, বাংলা ভাষাতেই যেন কনফারেন্স হয়। অর্থাৎ তিনি চেয়েছিলেন কনফারেন্সে বাংলা ভাষাকে স্থান দিতে। লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা রবীন্দ্রনাথকে সমর্থন করে তাঁর দলে যোগ দেন। কিন্তু নেতারা লেখকদের কথায় পাত্তা না দিয়ে জানান, যেমন কংগ্রেসে হয়, তেমনি কনফারেন্স হবে ইংরেজি ভাষায়। এতে লেখকদের সাথে নেতাদের বিরোধের ফলে দুটো দল তৈরি হয়। যাদের একপক্ষ বলবেন ইংরেজিতে আর অন্যপক্ষ বাংলায়।
কিন্তু সমস্যা শুরু হয় যখন প্রেসিডেন্টসহ অন্যেরা ইংরেজিতে বক্তৃতা দিতে আসেন; তখনই লেখক ও তাঁর দলের ছেলেরা একসঙ্কো চেঁচামেচি করতে থাকেন বাংলায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। ফলে কেউ আর কিছু বলতে পারেন না। এই পরিস্থিতিতে ইংরেজি ভাষায় অভিজ্ঞ লালমোহন ঘোষ বাধ্য হয়েই বক্তৃতা দেন বাংলা ভাষায়। তবে বাংলা ভাষাতেও তিনি খুব সুন্দর বক্তৃতা দেন। লেখকের মনে হয় এর ফলে মাতৃভাষারই স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা রক্ষিত হয়েছে।
9. আমাদের তো জয়জয়কার’। -কী কারণে লেখক ও তাঁর সঙ্গীদের ‘জয়জয়কার’ হলো?
উত্তর: শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নাটোরের কথা’ গদ্যাংশ থেকে উদ্ধৃত উক্তিটি গৃহীত হয়েছে।
কনফারেন্স শুরু হওয়ার আগে লেখকের কাকা রবি ঠাকুর প্রস্তাব দেন যাতে কনফারেন্স বাংলা ভাষায় হয়। লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সমর্থন করেন। কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয় নেতাদের নিয়ে। কারণ তাঁদের মতে কনফারেন্স ইংরেজি ভাষায় হবে। এই মত পার্থক্য নিয়ে লেখকদের সঙ্গে নেতাদের বিস্তর তর্কাতর্কির ফলে দুটো আলাদা দল তৈরি হয়। যাদের একপক্ষ বলবে ইংরেজিতে আর অন্যপক্ষ বলবে বাংলা ভাষায়।
কিন্তু বক্তারা ইংরেজিতে বলতে শুরু করলেই ‘বাংলা, বাংলা’ করে প্রবল চেঁচামেচি শুরু হয়। শেষপর্যন্ত পার্লামেন্টারি বক্তা লালমোহন ঘোষ মঞ্চে উঠে বাংলা ভাষাতে চমৎকার বক্তৃতা করেন। অবনীন্দ্রনাথের মনে হয়েছে এটা হল তাঁদের একপ্রকার তাঁদের মাতৃভাষার প্রতি সম্মানের প্রতিদান। তাই তিনি জানিয়েছেন, সেদিন তাঁদের উল্লাস এবং জয়জয়কার ঘোষিত হয়েছিল।
10. ‘সেই প্রথম আমরা পাবলিকলি বাংলা ভাষার জন্য লড়লুম।’- লেখকের অনুসরণে সেই ‘লড়াই’-এর বিশদ বিবরণ দাও।
উত্তর: সুবিখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং সুলেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঘরোয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত ‘নাটোরের কথা’ থেকে উক্তিটি গৃহীত হয়েছে।
প্রাদেশিক সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে লেখকের কাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রস্তাব দেন যাতে কনফারেন্স বাংলা ভাষায় হয়। লেখক ও তাঁর দলের ছেলেরাও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সমর্থন করে জানান যে, তাঁরা বাংলা ভাষার জন্যই লড়বেন।
কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হয় নেতাদের নিয়ে। কারণ, তাঁরা বলেন কনফারেন্স ইংরেজি ভাষায় হবে। এতে লেখকদের সঙ্গে নেতাদের বিস্তর তর্কাতর্কির পর দুটো পৃথক দল তৈরি হয়। যাদের একপক্ষ বক্তৃতা দেবেন ইংরেজিতে আর অন্যপক্ষ বাংলায়।
কিন্তু দেখা গেল বক্তৃতার শুরুতে প্রেসিডেন্ট বক্তৃতা দিতে এসে যেই ইংরেজিতে কথা বললেন তখনই ছেলেরা একসাথে চেঁচিয়ে উঠলেন বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে। এর ফলে কেউ প্রায় কিছুই বলতে পারলেন না। তাই পরিস্থিতি বুঝে ইংরেজি ভাষায় অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারি বক্তা লালমোহন ঘোষ বক্তৃতা দিলেন বাংলা ভাষায়। তবে ইংরেজির মতোই তিনি বাংলাতেও সুন্দর বক্তৃতা করেছিলেন।
বাংলা ভাষার প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা থেকেই লেখক ও তাঁর সঙ্গীরা এভাবে বাংলা ভাষার জন্য পাবলিকলি লড়েছিলেন। যার ফলস্বরূপ শেষপর্যন্ত কনফারেন্সে বাংলা ভাষা প্রচলিত হয় এবং লেখকদের এই প্রচেষ্টা সার্থক হয়।
৩। নির্দেশ অনুযায়ী বাক্য পরিবর্তন করো :
স্বাদেশিকতা
1. Very Short Question Answer
1. জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে যে সভা হয়েছিল সেই সভার সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্যোগে যে সভা হয়েছিল সেই সভার সভাপতি ছিলেন রাজনারায়ণ বসু।
2. এই সভায় আমাদের প্রধান কাজ”-‘প্রধান কাজ’টি কী?
উত্তর: এখানে প্রধান কাজ বলতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুঝিয়েছেন-স্বদেশি আন্দোলনের উত্তেজনার আগুন পোহানো।
3. “ওটার প্রতি মানুষের একটা গভীর শ্রদ্ধা আছে।”-‘ওটা’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘ওটা’ বলতে বীরত্বের প্রসঙ্গ বোঝানো হয়েছে।
4. “সেই ধাক্কাটা সামলাইবার চেষ্টা করিয়াছি?”- কীভাবে সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে?
উত্তর: সভা করে, বাক্যালাপ করে, গান গেয়ে সেই ধাক্কাটা সামলানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
5. সকলেই অবাক হইয়া তাকাইত।”-কাকে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকাত?
উত্তর: জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরকে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকাত।
2. Short Question Answer
1. জ্যোতিদাদার উদ্যোগে আমাদের একটি সভা হয়েছিল।” -‘জ্যোতিদাদা’ কে?
উত্তর : উদ্ধৃত প্রশ্নে ‘জ্যোতিদাদা’ হলেন-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা ও দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পঞ্চম পুত্র জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। ইনি হলেন একই সঙ্গে একজন নাট্যকার, সুরকার, সম্পাদক ও চিত্রশিল্পী।
2. ইহাতেই সকলের রোমহর্ষণ হইত।”-‘ইহাতেই’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘ইহাতেই’ বলতে বোঝানো হয়েছে বুদ্ধ দ্বারের অন্ধকার ঘরের মধ্যে বসে ঋকমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে চুপিচুপি কথা বলা। অর্থাৎ স্বাদেশিকের সভা অনুষ্ঠিত হত রহস্যে আবৃত হয়ে।
3. তাহা কঠোর ট্র্যাজেডিতে পরিণত হইতে পারিত।”- ‘ট্র্যাজেডি’ কথার অর্থ কী?
উত্তর: ট্র্যাজেডি কথার অর্থ হল গুরুগম্ভীর ঘটনার আদ্য-মধ্য- অন্ত্য সম্বলিত কোনো কাহিনি। অ্যারিস্টটল ট্র্যাজেডিকে বলেছেন, ‘of an action that is serious)’
4. “নানা প্রকারের নমুনা উপস্থিত করিতে আরম্ভ করিলেন।”- কীসের নমুনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সর্বজনীন পরিচ্ছদ কেমন হতে পারে সে বিষয়ে নানা প্রকারের নমুনা উপস্থিত করতে আরম্ভ করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।
5. এরূপ সর্বজনীন পোশাকের নমুনা”-সর্বজনীন পোশাকের নমুনাটি কেমন?
উত্তর: পায়জামার উপর একখণ্ড কাপড় পাট করে একটা স্বতন্ত্র কৃত্রিম মালকোঁচা জুড়ে দিয়েছিলেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। সোলার টুপির সঙ্গে পাগড়ির সঙ্গে মিশেল করে এমন একটি পদার্থ তৈরি করেছিলেন, যা উৎসাহী লোকজন শিরোভূষণ করেছিলেন। এখানে সেই বিষয়ের কথা বলা হয়েছে।
3. Long Question Answer
1. রতবর্ষের একটা সর্বজনীন পরিচ্ছেদ কী হইতে পারে, এই সভায় জ্যোতিদাদা তাহার নানাপ্রকারের নমুনা উপস্থিত করিতে আরম্ভ করিলেন।”-জ্যোতিদাদা কে? তাঁর বিভিন্ন নমুনার পরিচয় দাও। (বোলপুর হাইস্কুল)
উত্তর: জ্যোতিদাদার পরিচয়ঃ অতিসংক্ষিপ্ত ১ নং প্রশ্নের উত্তর। জোতিদাদা হলেন রবীন্দ্রনাথের দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।
> বিভিন্ন নমুনার পরিচয়: স্বদেশি আন্দোলনের প্রবল উৎসাহে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন সর্বজনীন পোশাকের পরিকল্পনা করতে। সেই পরিকল্পনা অনুসারে তিনি পাশ্চাত্য ঘরানার পোশাক ঘেয়ে সরে এসে সরাসরি এমন একটি পোশাকের পরিকল্পনা করেন যা একেবারে স্বতন্ত্র। পায়জামার উপর একখণ্ড কাপড় পাট করে একটা স্বতন্ত্র কৃত্রিম মালকোচার মতো জুড়ে দিলেন। সোলার টুপির সঙ্গে পাগড়ির সংযোগে শিরোভূষণ তৈরি করলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মজা করে লিখেছেন, এই পোশাকের ফলে “ধুতিও ক্ষুণ্ণ হইল, পায়জামাও প্রসন্ন হইল না।”
ড়াই নদীর তীরে
1. Very Short Question Answer
1. কবি জসীমউদ্দীন কোন অভিধায় অভিহিত?
উত্তর: কবি জসীমউদ্দীন ‘পল্লিকবি’ অভিধায় অভিহিত।
2. তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো।
উত্তর: তাঁর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থের নাম হল ‘নকশীকাঁথার মাঠ’ ও ‘রাখালি’।
3. কবিতায় বর্ণিত নদীটির নাম কী?
উত্তর: কবিতায় বর্ণিত নদীটির নাম ‘গড়াই।’
4. মাচানের পরে কী আছে?
উত্তর: মাচানের পরে সিমলতা আর লাউ-কুমড়ার ঝাড় আছে।
5. মানুষের বসত করার কথা এখানে কারা বোঝেনি?
উত্তর: বনের পাখিরা মানুষের বসত করার কথা বোঝেনি।
6. উঠানেতে কী কী শুকাচ্ছে?
উত্তর: উঠানেতে মটরের ডাল, মসুরের ডাল, কালোজিরা, ধনে, লংকা, মরিচ রোদে শুকাচ্ছে।
7. বাড়িটিকে ভালোবেসে কারা বেড়াতে এলে কিছুক্ষণ থেমে রয়?
উত্তর: সাঁঝ-সকালের রঙিন মেঘেরা বাড়িকে ভালোবেসে বেড়াতে এলে কিছুক্ষণ থেমে রয়।
2. Short Question Answer
1. ‘কুটীরখানিরে লতাপাতা ফুল মায়ায় রয়েছে ঘিরে’- এখানে কুটিরটিকে লতাপাতা-ফুলের মায়া দিয়ে ঘিরে রাখা বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: পল্লিকবি জসীমউদ্দিন যে কুটিরটিকে কবিতায় বর্ণিত করেছেন, সেটির চারিপাশে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন লতাপাতা, ফুলের গাছ, যার আবরণে কুটিরটির সৌন্দর্য যেন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। কবির রঙিন তুলির আঁচড়ে গ্রামবাংলার একটি নৈসর্গিক চিত্র এখানে উদ্ভাসিত হয়েছে।
2. ডাহুক মেয়েরা বেড়াইতে আসে গানে গানে কথা কয়ে’- ‘ডাহুক মেয়ে’ কারা? তারা কাদের নিয়ে আসে? তারা কীভাবে কথা বলে? (রামনগর রাও হাইস্কুল)
উত্তর: ডাহুক মেয়ে: উদ্ধৃত অংশটিতে ‘ডাহুক মেয়ে’রা বলতে কবি ডাহুক পাখিদের কথা বলেছেন।
> যাদের নিয়ে আসে: ডাহুক পাখিরা এঁদো ডোবা থেকে তাদের ছোটো ছোটো ছানাদের সঙ্গে নিয়ে আসে।
> কথা বলার ভঙ্গি: ডাহুক পাখিরা সংগীতের মাধ্যমে তাদের মধ্যে কথাবার্তা বলে।
3. ‘যেন একখানি সুখের কাহিনি নানান আখরে ভরি’- ‘আখরা শব্দটির অর্থ কী? সুখের কাহিনির যে নানা ছবি কবি এঁকেছেন তার মধ্যে কোনটি তোমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে এবং কেন?
উত্তর: ‘আখর’ শব্দটির অর্থ হল অক্ষর। সুখের কাহিনির যে নানা ছবি কবি এঁকেছেন তার মধ্যে রোদে শুকোতে দেয়া লংকা, মসুর, মটর, জিরে ও ধনের আলপনার চিত্রটা আমার সবচেয়ে বেশি সৌন্দর্যমন্ডিত বলে মনে হয়েছে।
3. Long Question Answer
1. ‘কিছুখন যেন থামিয়া রয়েছে এ বাড়িরে ভালোবেসে’- রঙিন মেঘেরা বাড়িটিকে ভালোবেসে থেমে থাকে। এর মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: আমরা জানি আকাশে উন্মুক্ত মেঘের দল বাতাসের চালনায় এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ভেসে চলে। কিন্তু কবি এখানে দেখিয়েছেন যে, গড়াই নদীর তীরে সেই কুটিরটির প্রতি ভালোবাসার আকর্ষণে রঙিন মেঘের দল যেন কিছুক্ষণের জন্য থমকে দাঁড়িয়ে গেছে। প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের যে পারস্পরিক ভালোবাসা গ্রামবাংলার দৈনন্দিন জীবনের ছন্দটিকে বহন করে নিয়ে চলে- বাস্তবে তা প্রত্যক্ষ করা না গেলেও, অনুভূতির দ্বারা বোঝা যায় এবং এই সুন্দর রূপটি পৃথিবীর আর অন্য কোথাও গেলেও অনুভব করা যায় না।
2. ‘এ বাড়িতে যত আনন্দ হাসি আঁকা জীবন্ত করি’- কবিতায় কবি প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম যে গ্রামীণ কুটিরের জীবন্ত ছবি এঁকেছেন তার বিবরণ দাও। (Open Ended Question)
উত্তর: জসীমউদ্দীনের রচিত ‘সোজনবাদিয়ার ঘাট’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত আলোচ্য ‘গড়াই নদীর তীরে’ শীর্ষক কবিতাটিতে পল্লিকবি গড়াই নদীর তীরে প্রকৃতির সঙ্গে গ্রামীণ জীবনের নিবিড় একাত্মতা সাধনে একটি গ্রামীণ কুটিরকে আশ্রয় করে যে অপরূপ চিত্র অঙ্কন করেছেন তা কবির রঙিন তুলির আঁচড়ে অনবদ্য রূপলাভ করেছে।
কুটিরটি লতাপাতা-ফুলের দ্বারা আবৃত হয়ে এক অপরূপ শোভা লাভ করেছে। এই লতা-পাতাগুলি যেন পরম যত্নে মায়ামমতা দিয়ে কুটিরটিকে পরিবেষ্টন করে রয়েছে। এখানে এর মধ্যে দিয়ে গ্রামবাংলার প্রকৃতির সঙ্গে মানবজীবনে পারস্পরিক মমতাময় সম্পর্কের বাঁধন (দোলায় আন্দোলিত হয়, সকালে-সন্ধ্যার আলোর মধ্যে প্রস্ফুটিত হয়)- দেখে উঠোনের কোণে অপয়া লক্ষ্মীছাড়া বুনো ফুলগুলি বিদ্বেষের হাসিতে উন্মুক্ত হয়ে ওঠে। মাচানের উপরে থাকা সিম-লতা আর লাউ-কুমড়ার ঝাড়গুলি যেন আড়াআড়ি করে সমস্ত ফুলগুলি দোলায়; তার তলায় পাওয়া যায় লাল নটে শাকের বর্ণময় অস্তিত্ব। বাড়ির বধূর রোদে শুকোতে দেওয়া লাল শাড়ির বর্ণনাটি গ্রামবাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যের বর্ণনায় বাড়তি মাত্রা সংযোজন করেছে। ডাহুক । পাখিরা তাদের ছোটো খাটো ছানাদের নিয়ে এঁদো ডোবা থেকে এখানে ‘বেড়াতে’ আসে, তারা গানের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে কথোপকথন চালায়। গাছের শাখায় বনের পাখিরা এখানে মানুষের বসতির কথা জানে না বলে নির্ভয়ে-নিঃশঙ্ক চিত্তে গান জুড়ে দেয়। কুটিরের প্রাঙ্গণে রোদে শুকোতে দেওয়া হয়েছে মটরের ডাল, মসুর, কালোজিরা, ধনে, লংকা-মরিচ। এদের রঙিন বর্ণের পাশেই পাওয়া যায় সাদা আলপোনার চিত্র- বাংলার একান্ত নানা নৈসর্গিক অনুষঙ্গের বিবরণ দিয়ে কবি গড়াই নদীর তীরে অবস্থিত কুটিরটির একটি জীবন্ত ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। এর মধ্য দিয়ে পল্লিবাংলার একটি সুখময়-শান্তিপূর্ণ জীবনকাহিনি বর্ণময় হয়ে উঠেছে।
3. ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় কবি পরম মমতায় গ্রামীণ কুটিরের ছবি এঁকেছেন। আমাদের প্রত্যেকেরই নিজের বাড়ির সঙ্গে এমন একটি মমতাময় সম্পর্ক আছে। তুমি তোমার বাড়ির বিভিন্ন অনুষঙ্গের বিবরণ দিয়ে একটি অনুচ্ছেদ লেখো। (Open Ended Question)
উত্তর: ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতায় কবি পরম মমতায় গ্রামীণ কুটিরের যে ছবি এঁকেছেন তা মন জুড়িয়ে দেয়। এই কুটিরটিকে কেন্দ্র করে প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ধরা পড়েছে। আমাদের প্রত্যেকেরই মনে পড়তে পারে নিজের বাড়ির চারপাশের এমন অপূর্ব পরিবেশের কথা। আমার বাড়ি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার স্বরূপনগর থানার চারঘাট গ্রামে। গ্রামটির আদুরে ডাকনাম হলো-গড়পারা। এই নাম শুনে স্বভাবতই মনে হয় চারপাশ জুড়ে গড়ের মাঠের মতো বিস্তীর্ণ প্রান্তর পড়ে রয়েছে। সত্যিই তাই। এখানে বিরাট বড়ো খেলার মাঠ, তালদিঘি, যমুনা নদী, অনেকগুলি আম-জাম-কাঁঠাল-সুপারি-নারিকেল ঘেরা পুকুর রয়েছে। আমাদের গ্রামটি যেন সবুজ পাঁচিলে ঘেরা রয়েছে। সেখানে প্রকৃতির বিমুগ্ধ ছবি চোখে পড়ার মতো। মাঠের পর মাঠ জুড়ে রয়েছে সবুজ ধান। আর শীতে কত ফসলের সমারোহ। শিমুল, নাগেশ্বর, জারুল, অশোক, কৃষ্ণচূড়া, হিজল, কনকচূড়া, পলাশ, দেবকাঞ্চন, শ্বেতকাঞ্চন, নাগলিঙ্গম ইত্যাদি গাছ গ্রামের চারপাশ জুড়ে রয়েছে। সবমিলিয়ে গ্রামটি যেন একটা স্বপ্নের মতো।