Class 8 Chapter 8 Solution
সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশভাগ
1. MCQs Question Answer
1. ভারতে মন্ত্রী মিশন তৈরি হয়-
(a) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (b) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।
2. শের-ই-বঙ্গাল নামে পরিচিত ছিলেন-
(a) ফজলুল হক
(b) আগা খান
(c) জিন্নাহ
(d) সৈয়দ সুরাবর্দি।
উত্তর: (a) ফজলুল হক।
3. ‘সারে জাঁহাসে আচ্ছা, হিন্দুস্থান হামারা’ লিখেছেন-
(a) মহম্মদ ইকবাল
(b) চৌধুরী রহমত আলি
(c) সলিল চৌধুরী
(d) রশিদ আলি।
উত্তর: (a) মহম্মদ ইকবাল।
4. ‘পাকিস্তান’ শব্দের উদ্ভাবক হলেন-
(a) ইকবাল
(b) জিন্নাহ
(c) ফজলুল হক
(d) চৌধুরী রহমত আলি
উত্তর: (d) চৌধুরী রহমত আলি।
5. অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়-
(a) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে
(b) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে
(c) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে
(d) ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে
উত্তর: (a) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে
6. প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেন-
(a) ফজলুল হক
(b) আগা খান
(c) জিন্নাহ
(d) লিয়াকত আলি
উত্তর: (c) জিন্নাহ
7. প্রত্যক্ষ সংগ্রামের সময় বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন-
(a) ফজলুল হক
(b) সৈয়দ সুরাবর্দি
(c) আগা খান
(d) জিন্নাহ
উত্তর: (a) ফজলুল হক
8. র্যাডক্লিফ কমিশন এর কাজ ছিল-
(a) সীমানা নির্ধারণ করা
(b) নদীর জলের ভাগ স্থির করা
(c) ভাষা স্থির করা
(d) উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধান করা
উত্তর: (a) সীমানা নির্ধারণ করা
9. ভারতের স্বাধীনতা আইন পাশ হয়-
(a) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই
(b) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই
(c) ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই
(d) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই
উত্তর: (a) ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই
10. ভারতের শেষ ভাইসরয় ছিলেন-
(a) লর্ড লিনলিথগো
(b) লর্ড মাউন্টব্যাটেন
(c) লর্ড ওয়াভেল
(d) লর্ড নর্থব্রুক
উত্তর: (b) লর্ড মাউন্টব্যাটেন
2. Very Short Question Answer
1. ঔপনিবেশিক ভারতে সরকারি ভাষা হিসাবে ফারসির বদলে ইংরেজিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়-(১৮৪৭/১৮৩৭/১৮৫০) খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে।
2. ভারতে মুসলিম সমাজের আধুনিকীকরণের অভিযান প্রথম শুরু করেছিলেন-(মহম্মদ আলি জিন্নাহ/মৌলানা আবুল কালাম আজাদ/স্যার সৈয়দ আহমদ খান)
উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমদ খান।
3. কৃষক প্রজা পার্টির নেতা ছিলেন-(এ কে ফজলুল হক/মহম্মদ আলি জিন্না/জওহরলাল নেহরু)।
উত্তর: এ কে ফজলুল হক।
4. স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল-(১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট/১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট/১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি)।
উত্তর: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট।
5. আলিগড় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কে
উত্তর: আলিগড় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ খান।
6. প্রাক্-স্বাধীনতা পর্বে ভারতের কোন্ অঞ্চলে মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য ছিল?
উত্তর: বাংলা, পাঞ্জাব, সিন্ধুপ্রদেশ ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তপ্রদেশে।
7. কবে ইংরেজি ভাষা সরকারি ভাষার স্বীকৃতি পায়?
উত্তর: ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজিকে সরকারি ভাষা করা হয়।
8. আদমসুমারি কথার অর্থ কী?
উত্তর: আদমসুমারি কথার অর্থ জনগণনা।
9. আলিগড় আন্দোলন এর প্রবক্তা কে?
উত্তর: আলিগড় আন্দোলন এর প্রবক্তা স্যার সৈয়দ আহমেদ খান।
10. দ্বি-জাতি তত্ত্বের জনক কে?
উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমেদ খানকে দ্বি-জাতি তত্ত্বের জনক বলা হয়।
11. মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়।
12. মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর: ঢাকার নবাব সলিম উল্লাহ মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
13. ‘সারে জাঁহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্তান হামারা’-কার লেখা?
উত্তর: মহম্মদ ইকবাল-এর লেখা।
14. আদমশুমারি কী?
উত্তর: ভারতের জনশিক্ষা বিন্যাসের ধারণালাভের জন্য যে জনগণনা করা হয় তা হল আদমশুমারি।
15. জিন্নাহ কবে কংগ্রেস ত্যাগ করেন?
উত্তর: ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশনে।
16. মুসলিম লিগ কোথায় প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: মুসলিম লিগ ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
17. সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি কে ঘোষণা করেন?
উত্তর: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ঘোষণা করেন।
18. কৃষক প্রজা পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর: এ কে ফজলুল হক।
19. ইউনিয়নিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তর: স্যার সিকান্দার হায়াৎ খান।
20. পাকিস্তান প্রস্তাব কে উত্থাপন করেছিলেন?
উত্তর: চৌধুরি রহমত আলি উত্থাপন করেছিলেন।
21. কলকাতায় দাঙ্গা কবে হয়?
উত্তর: কলকাতায় দাঙ্গা হয় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট।
22. সিমলা বৈঠকের উদ্যোক্তা কে ছিলেন?
উত্তর: বড়োলাট লর্ড ওয়াভেল সিমলা বৈঠকের উদ্যোক্তা ছিলেন।
23. সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হল কেন?
উত্তর: মহম্মদ আলি জিন্নাহর পাকিস্তান দাবিতে অনড় থাকার জন্য বৈঠক ব্যর্থ হয়।
24. ভারতীয় গণপরিষদের অধিবেশন কবে বসে?
উত্তর: ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে বসেছিল।
25. প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক কে দিয়েছিলেন?
উত্তর: মহম্মদ আলি জিন্নাহ ডাক দিয়েছিলেন।
26. প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক কবে দেওয়া হয়েছিল?
উত্তর: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট দেওয়া হয়েছিল।
27. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার রচয়িতা কে?
উত্তর: মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা রচনা করেন ভি পি মেনন।
28. র্যাডক্লিফ কমিশন কবে গঠিত হয়?
উত্তর: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৭ জুন গঠিত হয়।
29. কী জন্য র্যাডক্লিফ কমিশন গঠন করা হয়?
উত্তর: ভারত-পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণের জন্য।
30. মহম্মদ ইকবাল কে ছিলেন?
উত্তর: পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদী কবি এবং সারে জাঁহা সে আচ্ছা সংগীতের রচয়িতা।
31. Now or Never কার লেখা?
উত্তর: চৌধুরি রহমত আলির লেখা।
32. The Indian Musalman’s কার লেখা?
উত্তর: উইলিয়াম হান্টার এর লেখা।
33. কয়েদ-ই-আজম শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: কয়েদ-ই-আজম কথার অর্থ মহান নেতা।
34. কাকে কয়েদ-ই-আজম বলা হয়?
উত্তর: মহম্মদ আলি জিন্নাহকে বলা হতো।
35. পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনক কাকে বলা হয়?
উত্তর: মহম্মদ আলি জিন্নাহকে বলা হয়।
36. পাকিস্তানের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে?
উত্তর: মহম্মদ আলি জিন্নাহ প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
37. ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?
উত্তর: ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি।
38. ভারত কবে স্বাধীন হয়?
উত্তর: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট।
3. Short Question Answer
1. সাম্প্রদায়িকতা বলতে কী বোঝো?
উত্তর: একই দেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে, বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মধ্যে যদি বিদ্বেষ, হিংসা ও বিকাশের সূচনা হয়, তখন তা সাম্প্রদায়িকতা নামে পরিচিত হয়।
2. দুজন হিন্দু উগ্র-জাতীয়তাবাদীর নাম লেখো।
উত্তর: মদনমোহন মালব্য ও ভি কে হেডগেওয়ার হলেন হিন্দু উগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা।
3. দুইজন গোঁড়া মুসলমান নেতার নাম লেখো।
উত্তর: মহম্মদ ইকবাল, সলিম উল্লাহ ছিলেন গোঁড়া মুসলমান নেতা।
4. আদমসুমারি বলতে কী বোঝো?
উত্তর: আদমসুমারি কথার অর্থ হল জনগণনা। ভারতে প্রতি দশ বছর অন্তর আদমসুমারির সূচনা করেছিল ব্রিটিশ সরকার, আদমসুমারির মাধ্যমে স্ত্রী-পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধ, জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
5. আলি ভ্রাতৃদ্বয় কাদের বলা হয়?
উত্তর: সৌকত আলি ও মহম্মদ আলি, আলি ভ্রাতৃদ্বয় নামে পরিচিত। এদের নেতৃত্বে খিলাফৎ আন্দোলনের সূচনা হয়।
6. কবে, কোথায় মুসলিম লিগ গঠিত হয়?
উত্তর: ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগ গঠিত হয়। ঢাকায় নবাব সলিম উল্লাহের নেতৃত্বে মুসলিম লিগ গঠিত হয়েছিল।
7. মুসলিম লিগের মূল কর্মসূচি কী ছিল?
উত্তর: মুসলিম লিগের মূল কর্মসূচি ছিল-(ⅰ) মুসলমানদের স্বার্থ ও রাজনৈতিক অধিকার সুরক্ষিত করা, (ii) কংগ্রেস এর কার্যকলাপের বিরোধিতা করা এবং (iii) ইংরেজদের প্রতি অনুগত থেকে নিজেদের স্বার্থ সুরক্ষিত করা।
8. হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদ কী?
উত্তর: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রাচীন বা বেদভিত্তিক শৃঙ্খল ও নৈতিকতার বাঁধনে বেঁধে নিজেদের সামাজিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করা ও সামাজিক কুসংস্কারগুলি দূর করার জন্য যে আন্দোলন চলেছিল তা এককথায় হিন্দু-পুনরুজ্জীবনবাদ নামে পরিচিত।
9. সিমলা বৈঠক কবে কার উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে সিমলা বৈঠক হয়েছিল। সিমলা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল লর্ড ওয়াভেল এর উদ্যোগে। মহম্মদ আলি জিন্নাহর অনড় মনোভাবের জন্য এই বৈঠক ব্যর্থ হয়েছিল।
10. সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা কী?
উত্তর: ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড ভারতে সম্প্রদায়ের উপর ভিত্তি করে আইনসভায় সদস্য নির্বাচনের কথা ঘোষণা করেন। হিন্দু সমাজের পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ও পৃথক নির্বাচনে লড়াই করার সুযোগ লাভ করে। একেই সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা বলা হয়।
11. দ্বি-জাতি তত্ত্ব কী?
উত্তর: আলিগড় আন্দোলনের জন্য স্যার সৈয়দ আহমদ ঘোষণা করেন যে ভারতে বসবাসরত হিন্দু ও মুসলমান ঐতিহাসিক ভাবেই দুটি পৃথক জাতি। এদের চালচলন রীতিনীতিও আলাদা। এই নীতিকেই বলা হয় দ্বি-জাতি তত্ত্ব।
12. পাকিস্তান প্রস্তাব কবে কোথায় উত্থাপিত হয়?
উত্তর: পাকিস্তান প্রস্তাব উত্থাপিত হয় মুসলিম লিগ-এর লাহোর অধিবেশনে। চৌধুরি রহমত আলি লাহোর অধিবেশনে প্রথম পাকিস্তান প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
13. পাকিস্তান প্রস্তাবের মূল কথা কী?
উত্তর: পাকিস্তান প্রস্তাবের মূল কথা হল–(i) ভারতে ঐতিহাসিকভাবেই হিন্দু ও মুসলমান দুটি পৃথক জাতি। (ii) ভারতে মুসলিম প্রধান অঞ্চলগুলি নিয়ে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গড়ে তোলা হবে। তার নাম দেওয়া হবে পাকিস্তান। (iii) পঞ্জাব, বাংলা, কাশ্মীর, সিন্ধু প্রদেশ বালুচিস্তান নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়।
14. দু’জন জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতার নাম লেখো।
উত্তর: দু’জন জাতীয়তাবাদী মুসলমান নেতার নাম হলো বদরুদ্দিন তৈয়াবজি ও মৌলানা আবুল কালাম আজাদ।
15. প্রত্যক্ষ সংগ্রাম বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের অন্তর্বর্তী নির্বাচনে কংগ্রেস চমকপ্রদ সাফল্য লাভ করায় মুসলিম লিগের নেতা মহম্মদ আলি জিন্নাহ পাকিস্তান গঠন সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েন। তিনি পাকিস্তান দাবি আদায়ের জন্য মুসলমানদের সরাসরি লড়াইয়ে নামতে বলেন (১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট)। একেই প্রত্যক্ষ সংগ্রাম বলা হয়।
16. দেশ ভাগের জন্য সরকারের শেষ পরিকল্পনা কী? এর রচয়িতা কে?
উত্তর: দেশ ভাগের জন্য সরকারের শেষ পরিকল্পনা ছিল মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনার রচয়িতা ছিলেন বড়োলাটের আইন সচিব ভি পি মেনন।
17. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার দুটি ধারা লেখো।
উত্তর: মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার দুটি ধারা হলো-(i) ভারত ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক ডোমিনিয়ন গড়ে তোলা হবে, (ii) ডোমিনিয়ন দুটিকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে।
18. কত খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগ পরিকল্পনা গৃহীত হয়? এর মূল বক্তব্য কী ছিল?
উত্তর: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন ভারত বিভাগ পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা পাবে বলে ঠিক হয়।
19. র্যাডক্লিফ লাইন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: সীমানা কমিশনের চেয়ারম্যান স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ করে দেন। এই সীমানাকেই র্যাডক্লিফ লাইন বলা হয়ে থাকে।
20. স্বাধীন ভারতের প্রথম ও শেষ গভর্নর জেনারেল কারা ছিলেন?
উত্তর: প্রথম গভর্নর জেনারেল-লর্ড মাউন্টব্যাটেন। শেষ গভর্নর জেনারেল-চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী।
21. স্বদেশি আন্দোলন বাংলার হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?
উত্তর: স্বদেশি আন্দোলন বাংলার হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে দুভাবে প্রভাবিত করেছিল।
(i) ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে একজন মুসলিম নেতৃত্ব প্রচার করতে থাকে যে, হিন্দু সম্প্রদায় নিজেদের স্বার্থেই বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করছে। সাম্প্রদায়িকতার সূচনা হয় এখান থেকেই।
(ii) স্বদেশি আন্দোলন-এর সমর্থকগণ আন্দোলন পরিচালনায় বিভিন্ন দেবদেবীর কথা উত্থাপন করে ধর্মভীরু মুসলমানদের ভীত করে তুলেছিল।
22. ভারতীয় মুসলমানেরা খিলাফৎ আন্দোলন শুরু করেছিলেন কেন?
উত্তর: সারা বিশ্বের ন্যায় ভারতীয় মুসলমানরাও তুরস্কের সুলতানকে তাদের খলিফা বা ধর্মগুরু বলে মনে করতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্র শক্তি তথা ইংল্যান্ড তুরস্কের সুলতান এর মর্যাদাহানি ঘটালে মুসলমানরা ক্রুদ্ধ হন।
এ কারণেই ভারতীয় মুসলমানরা খলিফার সম্মান পুনরুদ্ধার করার জন্য খিলাফৎ আন্দোলন শুরু করে।
23. 1930 খ্রিস্টাব্দ ভারতে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন?
উত্তর: 1930 খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের এলাহাবাদ অধিবেশনে গোঁড়া সাম্প্রদায়িক নেতারা তাদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবি উত্থাপন করে। চৌধুরি রহমত আলির মতো ছাত্র নেতারাও’ বিচ্ছিন্নতাবাদী মতামত প্রকাশ করে। আইন অমান্য আন্দোলনেও তারা মুসলমানদের যোগ দিতে নিষেধ করে অর্থাৎ এসময় থেকেই মুসলমানদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতাবাদী মানসিকতার বীজ রোপিত হয়।
4. Long Question Answer
1. আলিগড় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর: আলিগড় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল-
(ক) মুসলমানদের পাশ্চাত্যকরণের মাধ্যমে আত্মশক্তি বৃদ্ধি করা।
(খ) বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার দূর করা।
(গ) ঔপনিবেশিক সরকারের প্রতি আনুগত্য দেখানো।
(ঘ) মুসলিম সম্প্রদায়ের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা।
(ঙ) কংগ্রেস রাজনীতি থেকে মুসলমানদের পৃথক করা।
2. স্যার সৈয়দ আহমদ খান কীভাবে মুসলমান সমাজকে আধুনিকীকরণের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তর : ভূমিকা : স্যার সৈয়দ আহমদ ছিলেন মুসলমান জগতের রামমোহন। তাঁর নেতৃত্বে মুসলমান সমাজ আধুনিকতার স্পর্শ লাভ করে।
শিক্ষার আধুনিকীকরণ : পাশ্চাত্য শিক্ষায় স্যার সৈয়দ আহমেদ খান শিক্ষিত না হয়েও স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলিম সমাজের আধুনিকীকরণে সচেষ্ট হন। তিনি-
(i) মুসলিম সমাজে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী হন।
(ii) মুসলমান সমাজকে পাশ্চাত্য যুক্তিবাদী আদর্শে দীক্ষিত করার জন্য তিনি 1863 খ্রিস্টাব্দে ট্রান্সলেসন সোসাইটি গড়ে তোলেন।
(iii) মুসলিম সমাজের আধুনিকীকরণের লক্ষে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আলিগড় অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ।
(iv) শিক্ষার পাশাপাশি মুসলমান সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুপ্রথা যেমন-তালাক প্রথা, পর্দা প্রথা, বহুবিবাহ প্রথা ও বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
(v) মুসলমান সমাজকে আধুনিক রাজনৈতিক চেতনায় সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রেও তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করেন।
মূল্যায়ন : স্যার সৈয়দ আহমদ যে রাজনৈতিক আন্দোলনের
সূচনা করেন, তা ব্রিটিশ সরকারের মদতে সাম্প্রদায়িক রূপ লাভ করে। একারণে স্যার সৈয়দ আহমেদ খানকে এদেশে সাম্প্রদায়িকতার প্রসার ঘটানোর জন্য দায়ী করা হয়। তাঁকে দ্বি-জাতি তত্ত্বের জনক বলা হয়।
3. কীভাবে উনিশ শতকে হিন্দু-পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল? সাম্প্রদায়িক মনোভাব তৈরিতে ওইসব আত্ম ন্দোলনগুলির ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর : ভূমিকা : উনিশ শতকের ভারতে সমাজ ও ধর্ম সংস্কারের অন্তরালে হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনের সৃষ্টি হয়েছিল।
কারণ: হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন এর উত্থানের কারণগুলি হল-
(i) অতীত ঐতিহ্য : শিক্ষিত হিন্দু সম্প্রদায় অতীত ঐতিহ্যের আলোকে ভবিষ্যতকে আলোকিত করে তোলার জন্য সচেষ্ট হয়। তাদের প্রচার হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে।
(ii) অভিন্ন ধর্মমত: হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদীরা বিশ্বাস করতো যে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীদের এক অভিন্ন ধর্মীয় স্বার্থ বিদ্যমান। সব দেব দেবীরই শীর্ষে রয়েছে পরম ব্রহ্ম। একারণেও হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদ এর উত্থান ঘটে।
(iii) প্রতীক চিহ্ন: বিভিন্ন সংস্কার আন্দোলনে বেশ কিছু প্রতীক এর ব্যবহার শুরু হলে হিন্দুরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। ফলে সৃষ্টি হয় পুনরুজ্জীবনবাদের।
(iv) কল্পকাহিনির প্রচার: এসময় অতীতের উজ্জ্বলতাকে তুলে ধরার জন্য নানারূপ কল্প কাহিনির সৃষ্টি করা হয়। বিভিন্ন গৌরব গাথা প্রচার করার ফলে হিন্দু ধর্মের পুনরুজ্জীবন ঘটে।
(v) হিন্দুদর্শন: অতীতের হিন্দুদর্শন থেকে এমন ধারণা প্রকাশ পেতে থাকে যে, হিন্দু রাষ্ট্র ব্যবস্থাই অতীতের সাফল্যের সবচেয়ে বড়ো কারণ। ১৯২৪ খ্রি. নাগাদ হিন্দু মহাসভার মত উগ্র জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলির শক্তি বাড়তে থাকে। মদনমোহন মালব্যের ন্যায় নেতারা কংগ্রেসে গুরুত্ব লাভ করলে, কংগ্রেসের সঙ্গে মুসলমানদের দূরত্ব বাড়তে থাকে।
(vi) সাহিত্য: সমসাময়িক বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সাহিত্যে অতীতের উজ্জ্বলতা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছিল। আনন্দমঠ উপন্যাস, বন্দেমাতরম সংগীত, দয়ানন্দ সরস্বতীর বেদভাষ্য হিন্দু পুনরুজ্জীবন বাদে সাহায্য করেছিল।
সাম্প্রদায়িকতার প্রসার: উনিশ শতকের হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন এদেশে সাম্প্রদায়িকতার প্রসারে সাহায্য করেছিল। যেমন-
(i) তিলকের গণপতি ও শিবাজি উৎসব হিন্দুধর্মের উগ্রতা বৃদ্ধি করে। মুসলিম সমাজ ভীত হয়ে পড়ে।
(ii) স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর শুদ্ধি আন্দোলন মুসলিম জনজাতিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
(iii) বঙ্কিমচন্দ্রের বন্দেমাতরম সংগীত ভারতীয় জাতীয়তাবাদের মূল মন্ত্র হলেও নিরাকার মতবাদে বিশ্বাসী মুসলিমরা এই গান গাইতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
(iv) ১৮৯০ এর দশকে গোহত্যা বিরোধী আন্দোলন মুসলমান সমাজকে যথেষ্ট শঙ্কিত করে তুলেছিল। এভাবেই ভারতে সাম্প্রদায়িকতার সূচনা হয়েছিল।
4. অহিংস-অসহযোগ আন্দোলনের পরে কীভাবে মুসলমান নেতাদের অনেকের সঙ্গে কংগ্রেস এর দূরত্ব তৈরি হয়েছিল?
উত্তর: ভূমিকা: অসহযোগ আন্দোলন শেষ হওয়ার পর থেকে মুসলমান নেতৃত্বের সাথে কংগ্রেস এর ক্রমবর্ধমান দূরত্ব তৈরি হতে থাকে।
কারণ: অসহযোগ পরবর্তী ভারতে মুসলমান ও কংগ্রেস নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব তৈরির কারণগুলি হল-
(i) তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে খলিফাতন্ত্রের অবসান ঘটলে আদর্শ চ্যুতির হতাশা থেকে মুসলমানদের একটি অংশ কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
(ii) এসময় মালাবার উপকূলের মোপালা আন্দোলন সাম্প্রদায়িকরূপ ধারণ করলে তা দমন করতে না পারার জন্য কংগ্রেস নেতৃত্ব মুসলমান নেতৃত্বকে দায়ী করলে মুসলমান নেতৃত্ব কংগ্রেস এর প্রতি বিরূপ হয়।
(iii) মদনমোহন মালব্যের ন্যায় উগ্রপন্থী হিন্দু নেতারা কংগ্রেসে প্রভাব বিস্তার করলে মুসলমান নেতৃত্ব কংগ্রেস থেকে দূরত্ব সৃষ্টি করে।
(iv) ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে বাংলা ও পাঞ্জাবের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে মুসলিম প্রার্থী না দেওয়ায় মুসলমানেরা কাফ্রে এর প্রতি ক্রুদ্ধ হয়।
(v) ১৯২৮ এরপর মহম্মদ আলি জিন্নাহ কংগ্রেসি সংস্রব তাছ করলে মুসলিম সম্প্রদায় কংগ্রেস থেকে সরে যায়।
মূল্যায়ন : মুসলিম সমাজের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই দূরত্বের ফলে আইন অমান্য আন্দোলনে মুসলমান সমাজ সেই অর্থে যোগদান করেনি।
5. ১৯৪০-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কীভাবে ভারত ভাগ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল? তোমার কী মনে হয় ভারত বিভাগ সতি অপরিহার্য ছিল? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৪০-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের রাজনৈতিক পরম্পরা দেখে অনুমান করা সহজতর হয়ে ওঠে যে, ভারত বিভাগ অনিবার্য ছিল।
ঘটনাক্রম: যেসকল ঘটনা প্রবাহ ভারত বিভাগকে স্পষ্ট করে তুলেছিল, সেগুলি হল-
(i) মুসলিমলিগের ভূমিকা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মুসলিম লিগ ব্রিটিশ সরকারকে সব ধরনের সাহায্যের বিনিময়ে পৃথক পাকিস্তানের দাবি জানায়। ওয়াভেল পরিকল্পনা এই দাবি পূরণ না করলেও সরকারের সহযোগিতা মুসলিম লিগ পেতেই থাকে। ভারতে ছাড়ো আন্দোলন দেশব্যাপী তুমুল উত্তেজনা সৃষ্টি করলেও মুসলিম লিগ এর নেতৃত্বে মুসলিম সমাজ আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছিল।
(ii) রাজাজিসূত্র বা সি. আর. ফর্মুলা: সি আর. ফর্মুলা বা রাজাজি ফর্মুলা মেনে মুসলিম লিগ গণ ভোটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছিল।
(iii) মন্ত্রীমিশনের ব্যর্থতা: ক্যাবিনেট মিশনের পরামর্শমতো অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিলেও মুসলিম লিগ প্রতি ক্ষেত্রে কংগ্রেস এর বিরোধিতা করতে থাকে।
(iv) প্রত্যক্ষ সংগ্রাম: পাকিস্তান দাবি আদায়ের জন্য জিন্নাহ প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিলে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভারত বিভাগকে স্পষ্টতর করে তোলে।
উপরিউক্ত ঘটনা ক্রম ভারত বিভাগকে স্পষ্ট করে তোলে।
ভারত বিভাগের অপরিহার্যতা: ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে নির্বাচনের পর লিগ-কংগ্রেস জোট সরকার গঠন না করা ছিল কংগ্রেস এর চরমতম ভুল। এর ফলে লিগ ক্রমশ ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠে এবং তারা বিভাজনের জিগির তুলতে থাকে। মুসলমান সম্প্রদায় ক্রমশ বিশ্বাস করতে থাকে যে, পাকিস্তান দাবি আদায় করা সম্ভব। কংগ্রেস এর নেতৃত্বে এসময় গান্ধিজির প্রভাব কমতে থাকে এবং নেহরু ও প্যাটেল এর ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ক্ষমতা লাভের আকাঙ্খায় তারা ঘটনা পরম্পরা সঠিক ভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। বাংলায় কৃষক প্রজা পার্টিকে তারা যদি সমর্থন করতো। তাহলে মুসলিম লিগ ফজলুল হকের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারতো না। বস্তুতপক্ষে এসময় কংগ্রেসী নেতৃবৃন্দের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত ভারত বিভাগকে অনিবার্য করে তুলেছিল।
6. মনে করো, ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট তুমি ভারত ভাগের কথা জানতে পারলে। তোমাকে তোমার ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে তোমার প্রতিক্রিয়া কি হবে, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: আজ ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭, দুপুর ১২ আকাশবাণী কলকাতা থেকে বেতারবার্তায় ঘোষণা করা হয়েছে। আজ মধ্যরাত্রিতে ভারত বিভাগ কার্যকর করা হবে। এক মুহূর্তে গভীর এক হতাশা আমায় গ্রাস করলো।
স্বাধীনতা আন্দোলনে আমি ছিলাম প্রথম সারির যোদ্ধা। একসময় বিপ্লবী কার্যকলাপে অংশ নিয়ে জেল খেটেছি। পরে কৃষক ও পার্টির সদস্য হিসাবেও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছি বাংলায় ফজলুল হকের সরকার স্থাপিত হওয়ায় ভেবেছিলাম আমরা অন্তত দেশ ভাগের শিকার হবো না।
কিন্তু ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের সেই ভয়াবহ দাঙ্গার স্মৃতি আজও যথেষ্ট সতেজ, আমাদের এই খুলনায় একদল দাঙ্গাবাজ লোকের হাতে অসংখ্য হিন্দু নরনারী হতাহত হয়। এলাকায় আমি পরিচিত ছিলাম বলে এখানকার মুসলিম প্রতিবেশীরাই সেদিন আমাকে রক্ষা করেছিল। আজও তারা আশ্বাস দিচ্ছে থেকে যাওয়ার জন্য। আমাকে তারা যে-কোনো মূল্যে রক্ষা করবে কথা দিয়েছে।
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি নেতৃত্বের রাশ চলে যাচ্ছে বহিরাগত গুন্ডাদের হাতে। আমার পরিবারকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার প্রতিবেশীদের হবে না। আমাকে আমার জন্মভূমি ছেড়ে পাড়ি দিতে হবে কোনো এক অজানা বাসস্থানের খোঁজে। সম্ভব হলে আজ থেকেই নিতে হবে সব ধরনের প্রস্তুতি।
এখানকার বাস্তুবাড়ি, ধানজমি, পুকুর হয়তো বিক্রি করতেই পারবো না। খুব বেশি দেরি করলে ভারতে ভালো জায়গা খুঁজে পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। আমার জন্মভূমি খুলনা এখন পূর্ব পাকিস্তান-এর অংশ। এখানে আমাদের মতো ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয় বলে আগে থেকেই ভারতের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছেন। আমিই বোধহয় দেরি করে ফেললাম।
7. ভারতে সাম্প্রদায়িকতা বিকাশের কারণগুলি লেখো।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায় দীর্ঘকাল পাশাপাশি বাস করার ফলে উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আত্মীয়তার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। ব্রিটিশ সরকারের ঔপনিবেশিক নীতি উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ এর প্রাচীর তুলে দিয়ে যে অবিশ্বাসের ভিত স্থাপন করে, তাকেই সাম্প্রদায়িকতা বলা হয়।
উদ্ভবের কারণ: সাম্প্রদায়িকতার বিকাশের পিছনে একাধিক কারণ ছিল। যেমন- জেনে রাখা ভালো
ধর্মীয় রীতিনীতি: হিন্দু ধর্ম ও ইসলাম ধর্মের পালনীয় রীতিনীতির মধ্যে নানাবিধ পার্থক্য ছিল। সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভবের পিছনে এটি প্রাথমিক অনুঘটকের কাজ করেছিল।
অর্থনৈতিক কারণ: মোগল আমলে শাসক সম্প্রদায় মুসলমান ছিল বলে মুসলমান সমাজ আর্থিক সমৃদ্ধি ভোগ করতেন। নানাবিধ উচ্চ রাজপদে অধিষ্ঠিত থেকে হিন্দুরাও সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ইংরেজ আমলে শাসকের পদ হারিয়ে মুসলমানরা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়তে থাকে। ইংরেজি শেখার ফলে হিন্দুদের অবস্থা একই থাকে। এর ফলে পারস্পরিক বিভেদ এর সূচনা হয়।
বিভেদ নীতি: হিন্দুদের মধ্যে ক্রমশ জাতীয়তাবাদী ভাবধারা বৃদ্ধি পাওয়ায় শাসক সম্প্রদায় মুসলমানদের প্রতি তোষণ নীতি গ্রহণ করে। ফলে সাম্প্রদায়িক বিভেদ নীতি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
হিন্দু পুনরুজ্জীবন: মদনমোহন মালব্য ও ভি কে হেদগেওয়ার যথাক্রমে হিন্দু মহাসভা ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ গঠন করে হিন্দু সম্প্রদায় এর পুনরুজ্জীবনে সচেষ্ট হলে, মুসলিম সম্প্রদায় শঙ্কিত হয়ে ওঠে। সাম্প্রদায়িক বিভেদের পিছনে এটিও একটি বড়ো কারণ ছিল।
মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা: স্যার সৈয়দ আহমদ প্রথম মুসলমানদের পৃথক জাতি বলে ঘোষণা করেন, তাঁর পথ অনুসরণ করে আগা খান, সলিম উল্লাহ প্রভৃতিরা মুসলমানদের হিন্দুদের থেকে পৃথক করতে সচেষ্ট হয়। সরকারের প্রতি অনুগত থেকে মুসলমানদের জন্য নানাবিধ সুযোগসুবিধা আদায়ে সচেষ্ট হলে পারস্পরিক সন্দেহ ও বিদ্বেষ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
মূল্যায়ন: মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক মনোভাবের উপশমের ক্ষেত্রে যে সহিষ্ণুতা ও দায়িত্ববোধের পরিচয় দেওয়া দরকার ছিল, কংগ্রেস নেতৃত্ব তা দিতে পারেনি। এর অবশ্যম্ভাবী ফল ছিল দেশভাগ।
8. মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি আলোচনা করো।
অথবা, মুসলিম লিগ সম্বন্ধে আলোচনা করো। এটি কীভাবে তৈরি হয়েছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ভারতের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মুসলিম লিগের আবির্ভাব এদেশের নিস্তরঙ্গ রাজনৈতিক চরিত্রে প্রবল ঝড়ের সূচনা করেছিল।
প্রেক্ষাপট: মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠার পিছনে একাধিক কারণ বিদ্যমান। যেমন-
বঙ্গভঙ্গ: ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জন এর বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত পূর্ব বাংলার অভিজাত মুসলমানদের খুশি করেছিল। কিন্তু বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন গতিলাভ করলে তারা শঙ্কিত হয়ে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রয়োজন অনুভব করে।
সিমলা সাক্ষাৎকার: মুসলমানদের জন্য বিভিন্ন দাবি দাওয়া আদায়ের জন্য আগা খান এর নেতৃত্বে একটি মুসলিম প্রতিনিধি দল লর্ড মিন্টোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বড়োলাট মিন্টো মুসলিম নেতাদের একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার পরামর্শ দেন।
লক্ষ্ণৌ-এর উদ্যোগ: লক্ষ্ণৌ এর নবাব ভিকার উল মূলক এবং মহসিন-উল-মূলক মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক সংগঠন তৈরি করার জন্য ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁরা মুসলিমদের শিক্ষার জন্য সচেষ্ট হন।
সলিম উল্লাহের উদ্যোগ: বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনরায় মুসলিমদের জন্য সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ঢাকার নবাব সলিম উল্লাহ 1906 খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় মুসলিম লিগ সম্মেলন এর আহ্বান করে। দেশের বিভিন্ন সলিম উল্লাহ প্রান্তের প্রতিনিধিদের সামনে তিনি একটি রাজনৈতিক দল গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। অন্য নেতৃবৃন্দ সমর্থন করলে মুসলিম লিগ এর আবির্ভাব হয়।
প্রতিষ্ঠা ও নেতৃত্ব: ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়। আগা খান হন এর সভাপতি। ভিকার উল মূলক ও মহসিন-উল মূলক হন যুগ্ম সম্পাদক।
মূল্যায়ন: প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্যায়েই মুসলিম লিগ সরকারের অনুগত থাকার কারণে, মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনে মুসলমানদের জন্য নানাবিধ সুযোগসুবিধা লাভ করে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের আইনে তাদের জন্য আসন সংরক্ষণের অধিকার লাভ করে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তারা ভারত বিভাজন ঘটাতে সক্ষম হয়।
9. দ্বিজাতি তত্ত্ব কী? দ্বিজাতি তত্ত্বের উদ্ভবের পটভূমি আলোচনা করো। (মিত্র ইন্সটিউশন মেন)
উত্তর: ভূমিকা: ভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসে সাম্প্রদায়িকতার প্রথম বীজ বপন করেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান, তাঁর আলিগড় আন্দোলনের মাধ্যমে। জেনে রাখা ভালো
মূল বক্তব্য: দ্বি-জাতি তত্ত্বের মূল কথা হল-ভারতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি আলাদা জাতি। ধর্মীয় ক্ষেত্র ছাড়াও সমাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সভ্যতা সবক্ষেত্রেই উভয়ের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান।
উদ্ভবের পটভূমি: দ্বি-জাতি তত্ত্বের উদ্ভবের পিছনে কারণগুলি হলো-
আর্থিক বৈষম্য: ব্রিটিশ শাসনের প্রথম পর্বে এদেশের মুসলিম সম্প্রদায় সরকারের বিরোধিতা করেছিল। অপরদিকে হিন্দুসম্প্রদায় পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণ করে সরকারের সমর্থক শ্রেণিতে পরিণত হয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করে। এই আর্থিক বৈষম্য শ্রেণিগত বিভেদের সৃষ্টি করে।
বিভেদ নীতি: হিন্দু সম্প্রদায়ের জাতীয়তাবাদী মানসিকতা দমন করার জন্য সরকার এসময় উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদনীতির প্রয়োগ ঘটায়। ফলে দুই সম্প্রদায় এর মধ্যে দূরত্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।
হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা: নবজাগরণের পর্যায়ে শিবাজি উৎসব, গণপতি উৎসব, বীরাষ্টমী ব্রত, রাখিবন্ধন প্রভৃতি উৎসবের সূচনা, আর্য সমাজের শুদ্ধি আন্দোলন, হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের কার্যকলাপ মুসলমান সমাজকে শঙ্কিত করে তোলে। তারা নিজেদের পৃথক করে তোলে। তারা নিজেদের পৃথক জাতি বলে ভাবতে শুরু করেছিল।
মুসলিমদের বিদ্বেষ: মুসলিম নেতৃত্ব যেমন, স্যার সৈয়দ আহমদ, চৌধুরি রহমত আলি, মহম্মদ আলি জিন্নাহ প্রমুখ ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক বিভেদ নীতির কথা প্রচার করে মুসলমানদের একটি বড়ো অংশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক মনোভাব জাগিয়ে তুলেছিলেন।
গোষ্ঠী রাজনীতি: এসময় ভারতে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় উভয়েই সংকীর্ণ গোষ্ঠী চৌধুরি রহমত আলি রাজনীতি শুরু করে। এর বিষময় ফল হিসেবে দ্বি-জাতি তত্ত্বের বৃদ্ধি ঘটতে থাকে।
মূল্যায়ন: মুসলিম নেতারা ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক বার্তার মাধ্যমে দ্বি-জাতি তত্ত্বের আদর্শ প্রচার করলেও মুসলিম প্রধান বাংলা বা পঞ্জাবে তারা যথেষ্ট দুর্বল ছিল। কৃষক প্রজাপার্টি বা ইউনিয়নিস্ট পার্টির সঙ্গে কংগ্রেস সমঝোতায় পৌঁছাতে পারলে মুসলিম লিগ এর বাড়বাড়ন্ত রোখা সম্ভব হতো।
10. মুসলিম লিগের লাহোর প্রস্তাবের গুরুত্ব কী ছিল? অথবা, টীকা লেখো: মুসলিম লিগ-এর লাহোর অধিবেশন।
উত্তর: ভূমিকা: স্বাধীনতা লাভের একদশক আগে সংঘটিত মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশন নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক জগতে আলোড়ন সৃষ্টি হয়।
লাহোর প্রস্তাব: ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মার্চ মহম্মদ আলি জিন্নাহের সভাপতিত্বে মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশন শুরু হয়। এই অধিবেশনে শিকন্দার হায়াৎ খান পাকিস্তান প্রস্তাব উত্থাপন করেন। বাংলার প্রধানমন্ত্রী ফজলুল হক ও খালি কুজ্জামান প্রস্তাবটি সমর্থন করেন।
বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত: হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত কার্যকর করলে পশ্চিম ভারতের সাম্প্রদায়িকতা পূর্ব ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে। শত চেষ্টা করেও বাঙালি বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় তা দূর করতে পারেনি।
লর্ড মিন্টোর ভূমিকা: ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমদের একটি প্রতিনিধি দল সিমলায় ভাইসরয় লর্ড মিন্টোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাদের কংগ্রেস এর সমান্তরাল একটি রাজনৈতিক দল গঠনের পরামর্শ দেন। এর ফলেই মুসলিম লিগ এর সৃষ্টি হয়। যে দল প্রথম থেকেই ব্রিটিশ মদত পুষ্ট ও সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে পরিচিত ছিল।
মলে-মিন্টো সংস্কার আইন: এই আইনে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে মুসলিমদের পৃথক নির্বাচনের অধিকার প্রদান করে ঘোষণা করা হয় যে তারা সম্প্রদায় হিসেবে হিন্দুদের থেকে পৃথক।
মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন: এই আইনে মুসলিমদের জন্য পৃথক আসন সংরক্ষণ করে সরকার দ্বি-জাতি তত্ত্বকে পুষ্ট করে।
গোলটেবিল বৈঠক: ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে লন্ডনে গোলটেবিল বৈঠকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড, হিন্দু, মুসলমান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ প্রভৃতিদের পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া হিন্দুদেরও পৃথক নির্বাচনে লড়াই করার অনুমতি দিয়ে এদেশে বৃহত্তর পরিমণ্ডলে র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করলে জাতি হিসাবে ভারতীয়দের অস্তিত্ব সংকটের সম্মুখীন হতে হয়।
মূল্যায়ন: ব্রিটিশ সরকারের ক্রমাগত সাম্প্রদায়িক উস্কানি মুসলিম লিগকে উৎসাহিত করেছে এবং প্রত্যক্ষ সংগ্রামের মতো চরম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূচনা করে তারা এদেশের বিভাজন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে।
11. কীভাবে উনিশ শতকে হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল? সাম্প্রদায়িক মনোভাব তৈরিতে ওইসব আন্দোলনগুলির ভূমিকা কী ছিল? (হেয়ার স্কুল)
উত্তর: পাঠ্যপুস্তকের প্রশ্নোত্তরের অন্তর্ভুক্ত. 4 নং দাগের ‘খ’ প্রশ্নের উত্তর দেখো।
৪.৪ ভারতে মুসলিম রাজনীতি ও ভারত বিভাজনে জিন্নাহর ভূমিকা কেমন ছিল? (বড়িশা উচ্চবালিকা বিদ্যাপীঠ)
উত্তর: ভূমিকা: একসময়ের হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের দূত মহম্মদ আলি জিন্নাহ ক্রমশ সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন হয়ে পড়েন এবং পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির প্রধান কান্ডারীতে পরিণত হন।
প্রথম জীবন: করাচির খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে পড়াশোনার পর লন্ডন থেকে ব্যারিস্টারী পাশ করে জিন্নাহ বোম্বাইতে আইন ব্যবসার জন্য চলে আসেন।
রাজনীতিতে যোগদান: ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা সম্মেলনে তিনি উপস্থিত থাকলেও, দাদাভাই নৌরজির নেতৃত্বে কংগ্রেসে যোগদান করেন।
কাউন্সিলার : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি বোম্বাই এর নির্বাচনী এলাকা থেকে কাউন্সিলার হিসেবে নির্বাচিত হন।
কংগ্রেস ত্যাগ: খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস-এর নাগপুর অধিবেশনে মতবিরোধের কারণে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেন।
মুসলিম লিগে যোগদান : ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি মুসলিম লিগের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে তিনি সভাপতিত্ব করেন। তাঁরই নেতৃত্বে কংগ্রেস মুসলিম লিগের মধ্যে লক্ষ্ণৌ চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়।
সর্বদলীয় বৈঠক: ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বদলীয় বৈঠকে নেহের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। জিন্নাহ এই সুপারিশে কয়েকটি সংশোধনী আনেন। কিন্তু তাঁর প্রস্তাব বাতিল হয়ে গেলে তিনি পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন হয়ে পড়েন।
চৌদ্দোদফা দাবি: ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের সভাপতি হিসাবে তিনি চৌদ্দোদফা দাবি উত্থাপন করেন। এর ফলে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বৃদ্ধি ঘটে এবং দ্বি-জাতি তত্ত্বের পুনরায় উদ্ভব ঘটে।
সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা: ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে র্যামসে ম্যাকডোনাল্ড সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘোষণা করে জিন্নাহর প্রায় সব দাবি মেনে নিলে মুসলিম জগতের অবিসংবাদী নেতা হিসাবে জিন্নাহর আবির্ভাব ঘটে।
পাকিস্তান প্রস্তাব: ১৯৩৭-এর নির্বাচনে মুসলিম লিগ পরাজিত হলে জিন্নাহ আরও সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৪০-এর লাহোর অধিবেশনে পাকিস্তান প্রস্তাব উত্থাপনের ব্যবস্থা করেন ও তাকে স্বীকৃতি দেন।
মন্ত্রী মিশন ও জিন্নাহ: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে মন্ত্রীমিশন ভারতে আসে। জিন্নাহ তার পাকিস্তান দাবিতে অনড় থাকলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
প্রত্যক্ষ সংগ্রাম: কংগ্রেস ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিলে ক্রুদ্ধ জিন্নাহ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম এর ডাক দেন। সারাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূচনা হয়।
ভারত বিভাজন: উদ্ভুত পরিস্থিতি লক্ষ করে, উভয় সম্প্রদায়ের জীবনহানি রুখতে কংগ্রেস ভারত বিভাগ মেনে নিলে জিন্নাহ পরিতৃপ্তি লাভ করেন।
মূল্যায়ন : ভারত, পাকিস্তান দুটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলে মহম্মদ আলি জিন্নাহ পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল হিসাবে শপথ নেন। ১৯৪৮-এর ১১ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।
12. মন্ত্রী মিশন-এর পরিকল্পনা কী ছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা প্রদান প্রক্রিয়াকে সহজতর করার লক্ষে ব্রিটিশ সরকার যেসব কমিশন ভারতে প্রেরণ করেছিল মন্ত্রী মিশন বা ক্যাবিনেট মিশন ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম।
উদ্দেশ্য: মন্ত্রী মিশনের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় নেতৃবৃন্দর সঙ্গে কথা বলে ভারতের স্বাধীনতা প্রদান প্রক্রিয়াকে সুগম করা।
সদস্য: মন্ত্রী মিশনের সদস্যরা ছিলেন ইংল্যান্ডের তিনজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী। এরা হলেন ভারত সচিব স্যার পেথিক লরেন্স, বাণিজ্যসভার সভাপতি স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস এবং নৌবাহিনীর প্রধান এ ভি আলেকজান্ডার।
ভারতে আগমন: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ মন্ত্রীমিশন ভারতে আসে।
কার্যকলাপ : ভারতে আসার পর মন্ত্রী মিশনের ভারতের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যান।
পরিকল্পনা : আলোচনার শেষে মন্ত্রী মিশন যে পরিকল্পনা পেশ করে সেটি হলো-
যুক্তরাষ্ট্র গঠন: ব্রিটিশশাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে।
শ্রেণিবিভাজন : সমগ্র ভারত ভূখণ্ডকে মিশন তিনটি ভাগে ভাগ করে। তারা হিন্দু প্রধান এলাকাকে ‘ক’, মুসলমান প্রধান অঞ্চলকে ‘খ’ এবং উভয় সম্প্রদায়ভুক্ত অঞ্চলকে ‘গ’ শ্রেণিভুক্ত করে।
স্বায়ত্তশাসন : বলা হয় প্রদেশগুলিকে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদান করা হবে। তারা নিজেদের জন্য সংবিধান তৈরি করতে পারবে। প্রয়োজনে নিজেরা জোটবদ্ধ হতে পারবে।
সংবিধান সভা : প্রত্যেক শ্রেণির রাজ্য ও দেশীয় রাজ্যগুলির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সংবিধান সভা অথবা গণপরিষদ গঠন করতে পারবে। গণপরিষদ সংবিধান রচনার কাজ করবে।
অন্তর্বর্তী সরকার : সংবিধান রচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সবকটি রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নিয়ে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।
মূল্যায়ন: মন্ত্রী মিশনের পরিকল্পনায় ভারত ভাগের ইঙ্গিত থাকায় মুসলিম লিগ এই প্রস্তাব মেনে নেয়। একই কারণে কংগ্রেস প্রাথমিক ভাবে প্রস্তাব এর বিরোধিতা করলেও পরে প্রস্তাবের পরিকল্পনা অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারে যোগদান করেছিল।
13. টীকা লেখো: মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা (বড়িশা হাইস্কুল)।
উত্তর: ভূমিকা: মুসলিম লিগের অনড় মনোভাব, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং ব্রিটিশ সরকারের ভারত ত্যাগের সিদ্ধান্ত কংগ্রেসকে ভারত বিভাগ মেনে নিতে বাধ্য করে। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত বিভাগের যে পরিকল্পনা করেন, তা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা নামে পরিচিত।
প্রস্তাব পেশ: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন মাউন্টব্যাটেন তার পরিকল্পনা পেশ করেন।
প্রস্তাবের মূল বিষয়: মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল-(i) ভারতকে ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি ডোমিনিয়ান সৃষ্টি করা হবে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। (ii) পশ্চিম পঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পূর্ব বাংলা, বালুচিস্তান ও সিন্ধুপ্রদেশ নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হবে। (iii) পাঞ্জাব ও বাংলার সীমানা নির্ধারণের জন্য স্যার র্যাডক্লিফের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হবে। (iv) দেশীয় রাজ্যগুলি স্বাধীন থাকতে পারে, অথবা যেকোনো ডোমিনিয়নে যোগ দিতে পারবে। (v) উভয় ডোমিনিয়ন নিজেদের গণপরিষদের মাধ্যমে তাদের সংবিধান রচনা করতে পারবে।
ফলাফল: মহাত্মা গান্ধি, আবুল কালাম আজাদ প্রভৃতিরা ভারত বিভাগের পরিকল্পনার বিরোধিতা করলেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে শেষপর্যন্ত প্রস্তাবটি মেনে নেন। সমগ্র পাঞ্জাব ও বাংলা পাকিস্তানভুক্ত করতে না পারায় জিন্নাহ পাকিস্তানকে ‘বিকলাঙ্গ ও কীটদগ্ধ’ বলে ঘোষণা করেন।
মূল্যায়ন: মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট স্বাধীন ভারতের আত্মপ্রকাশ |
5. Fill In The Blanks
1. মুসলিম সমাজের রামমোহন বলা হয় |
উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমেদকে
2. আলিগড় কলেজ এর প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন |
উত্তর: থিওডোর বেক
3. চৌদ্দোদফা দাবির প্রবক্তা হলেন ।
উত্তর: জিন্নাহ
4. মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠিত হয় খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: 1906
5. পাকিস্তান শব্দের অর্থ হল |
উত্তর: পবিত্র ভূমি
6. মুসলিম লিগের লাহোর অধিবেশন খ্রিস্টাব্দে হয়।
উত্তর: ১৯৪০
7. ঢাকার নবাব ছিলেন |
উত্তর: সালিম উল্লাহ
8. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে পদযাত্রা করেন ।
উত্তর: মহাত্মা গান্ধি
6. True And False
1. উনিশ শতকে হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানেরা শিক্ষা চাকরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল
উত্তর: ঠিক।
2. হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন ভারতে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে প্রভাবিত করেছিল।
উত্তর: ঠিক।
3. মহাত্মা গান্ধি খিলাফৎ আন্দোলন সমর্থন করেনি।
উত্তর: ভুল।
4. পাকিস্তান প্রস্তাব তোলা হয়েছিল ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের লাহোর অধিবেশনে।
উত্তর: ঠিক।
5. আলিগড় আন্দোলনে নেতৃত্বে ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমেদ।
উত্তর: ঠিক।
6. বদরুদ্দিন তৈয়াবজি কংগ্রেস এর নেতা ছিলেন।
উত্তর: ঠিক।
7. মহম্মদ আলি জিন্নাহ প্রথম পাকিস্তান শব্দটি ব্যবহার করেন।
উত্তর: ভুল।
8. সি আর ফর্মুলা দেন চক্রবর্তী রাজা গোপালাচারী।
উত্তর: ঠিক।
9. র্যাডক্লিফ লাইন হল ভারত ও চিনের সীমানা।
উত্তর: ভুল।
10. পাকিস্তানের জন্ম হয় ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ভুল।
11. পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন লিয়াকত আলি।
উত্তর: ঠিক।
12. স্বাধীন ভারতের উত্থান ঘটে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে।
উত্তর: ঠিক।
13. স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
উত্তর: ঠিক।
14. স্বাধীন ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল ছিলেন মহাত্মা গান্ধি।
উত্তর: ভুল।