WBBSE Class 7 Chapter 2 History Solution | Bengali Medium

ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের কয়েকটি ধারা

MCQs Question Answer

১.১ প্রাচীন বাংলার জনপদগুলির মধ্যে বঙ্গ ছিল একটি-

(ক) বিভাগ

খ) জেলা

গ রাজ্য

ঘ প্রদেশ

উত্তর: ক বিভাগ

১.২ ‘অর্থশাস্ত্র’ গ্রন্থটি রচনা করেন-

ক) কালিদাস

খ আবুল ফজল

(গ) কৌটিল্য

(ঘ) বাণভট্ট

উত্তর:গ) কৌটিল্য

১.৩ ‘বঙ্গ’ ও ‘সু্যু’ নাম দুটির উল্লেখ পাওয়া যায় কালিদাসের-

(ক) ‘মেঘদূতম’ গ্রন্থে

খ) ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’ গ্রন্থে

গ ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম্’ গ্রন্থে

ঘ ‘রঘুবংশম্’ গ্রন্থে

উত্তর ঘ ‘রঘুবংশম্’ গ্রন্থে

১.৪ পশ্চিমবঙ্গ হল একটি অঙ্গরাজ্য স্বাধীন-

ক) ভারতের

খ) বাংলাদেশের

গ) পাকিস্তানের

(ঘ) শ্রীলঙ্কার

উত্তর:(ক) ভারতের

১.৫ বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে-

(ক) ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে

খ) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে

গ) ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে

(ঘ) ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: (খ) ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে

১.৬ প্রাচীন বাংলার অঞ্চলগুলির মধ্যে বৃহত্তম ছিল-

(ক) বরেন্দ্র

(গ) পুণ্ড্রবর্ধন

খ) বঙ্গ

ঘ) গৌড়

উত্তর : গ পুণ্ড্রবর্ধন

১.৭ রাঢ় এবং সুঘ্ন অঞ্চল দুটি ছিল ভাগীরথীর-

ক) পূর্বদিকে

(খ) পশ্চিমদিকে

(গ) উত্তরদিকে

(ঘ) দক্ষিণদিকে

উত্তর : (খ) পশ্চিমদিকে

১.৮ উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ়ের মাঝের সীমানা ছিল-

(ক) দামোদর নদ

(খ) ভাগীরথী নদী

(গ) অজয় নদ

(ঘ) করতোয়

উত্তর: গ) অজয় নদ

১.৯ শশাঙ্কের রাজধানী ছিল-

(ক) কর্ণসুবর্ণ

খ) সমতট

(গ) কনৌজ

ঘ বিক্রমপুর

উত্তর:ক) কর্ণসুবর্ণ

১.১০ সমতটকে বাংলার বাকি অঞ্চলের থেকে আলাদা করে রেখেছিল-

ক) সুবর্ণরেখা নদী

(খ) মেঘনা নদী

গ) ভাগীরথী নদী

(ঘ) রূপনারায়ণ নদী

উত্তর: খ)  মেঘনা নদী

১.১১ সুয়ান জাং (হিউয়েন সাঙ-এর ভ্রমণ বিবরণীতে ‘বৌদ্ধবিদ্বেষী’) বলা হয়েছে-

(ক) গোপালকে

(খ) ধর্মপালকে

গ) শশাঙ্ককে

(ঘ) হর্ষবর্ধনকে

উত্তর:গ) শশাঙ্ককে

১.১২ শশাঙ্ক ধর্মীয় বিশ্বাসে ছিলেন-

ক) বৈষুব

খ শৈব

গ) বৌদ্ধ

(ঘ) জৈন

উত্তর: (খ) শৈব

১.১৩ ‘হর্ষচরিত’-এর রচয়িতা হলেন-

(ক) কালিদাস

খ) রামপাল

(গ) বাণভট্ট

ঘ) কৌটিল্য

উত্তর: (গ) বাণভট্ট

১.১৪ শশাঙ্কের আমলে প্রচলিত ছিল-

ক তামার মুদ্রা

খ) ব্রোঞ্জের মুদ্রা

গ)  রূপার মুদ্রা

(ঘ) সোনার মুদ্রা

উত্তর: ঘ সোনার মুদ্রা

১.১৫ বাংলার প্রথম নির্বাচিত রাজা ছিলেন-

ক) শশাঙ্ক

খ) গোপাল

গ ধর্মপাল

(ঘ) বল্লাল সেন

উত্তর:খ) গোপাল

১.১৬ পাল রাজাদের আদি নিবাস ছিল-

(ক) বঙ্গাল

(গ) হরিকেল

খ সমতট

ঘ) বরেন্দ্র অঞ্চলে

উত্তর: ঘ বরেন্দ্র অঞ্চলে

১.১৭ বাংলায় পাল বংশের রাজত্ব শুরু হয়-

ক) আনুমানিক ৭৫০ খিস্টাব্দে

খ) আনুমানিক ৭৭৪ খিস্টাব্দে

গ আনুমানিক ৮০৬ খিস্টাব্দে

ঘ আনুমানিক ৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর : (ক) আনুমানিক ৭৫০ খিস্টাব্দে

১.১৮ বাংলায় কৈবর্ত বিদ্রোহ ঘটেছিল-

(ক) একাদশ শতকের প্রথম ভাগে

(খ) একাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে

(গ) একাদশ শতকের তৃতীয় ভাগে

(ঘ) একাদশ শতকের চতুর্থ ভাগে

উত্তর:(খ) একাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে

১.১৯ কৈবর্ত বিদ্রোহ দমন করেছিলেন রাজা-

(ক) গোপাল

খ) ধর্মপাল

গ) দেবপাল

ঘ) রামপাল

উত্তর: (ঘ) রামপাল

১.২০ সেন রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল দক্ষিণ ভারতের-

ক) মহারাষ্ট্র

খ) গুজরাট

(গ) রাজস্থান

(ঘ) কর্ণাট অঞ্চলে

উত্তর: (ঘ) কর্ণাট অঞ্চলে

১.২১ লক্ষ্মণ সেনের রাজধানী ছিল পূর্ববঙ্গের-

ক) ঢাকায়

খ) চট্টগ্রামে

গ বিক্রমপুরে

(ঘ) খুলনায়

উত্তর: গ বিক্রমপুরে

১.২২ সেন বংশের শেষ রাজা ছিলেন-

(ক) সামন্ত সেন

(খ) বিজয় সেন

গ) বল্লাল সেন

(ঘ) লক্ষ্মণ সেন

উত্তর: (ঘ) লক্ষ্মণ সেন

১.২৩ ত্রিশক্তির সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছিল-

(ক) পাল, কৈবর্ত, সেন

(খ) পাল, গুর্জর প্রতিহার, রাষ্ট্রকূট

(গ) চোল, পান্ড্য, পাল

(ঘ) চোল, পাল, রাষ্ট্রকূট

উত্তর: (খ) পাল, গুর্জর প্রতিহার, রাষ্ট্রকূট 

১.২৪ চোল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন-

(ক) বিজয়ালয়

(খ) প্রথম রাজরাজ

(গ) প্রথম রাজেন্দ্র চোল

(ঘ) মুট্টাবাইয়া

উত্তর: (ক) বিজয়ালয়

১.২৫ আরবদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ভারতের-

ক পূর্বদিকে

(খ) পশ্চিমদিকে

(গ) উত্তরদিকে

(ঘ) দক্ষিণদিকে

উত্তর: খ পশ্চিমদিকে

১.২৬ হজরত মহম্মদ প্রবর্তিত ধর্মের নাম-

(ক) বৌদ্ধ ধর্ম

খ) জৈন ধর্ম

(গ) ইসলাম ধর্ম

(ঘ) পেগান ধর্ম

উত্তর (গ) ইসলাম ধর্ম

১.২৭ ‘খলিফা’ শব্দের অর্থ হল-

(ক) প্রতিনিধি

(খ) সামন্ত

গ কর্মচারী

(ঘ) শাসক

উত্তর: ক) প্রতিনিধি

১.২৮ আবুবকর ছিলেন-

(ক) প্রথম খলিফা

(খ) দ্বিতীয় খলিফা

গ) তৃতীয় খলিফা

(ঘ) চতুর্থ খলিফা

উত্তর: (ক) প্রথম খলিফা

১.২৯ আরবরা সিন্ধুপ্রদেশ আক্রমণ করেন-

(ক) ৭০০ খ্রিস্টাব্দে

খ) ৭১০ খ্রিস্টাব্দে

(গ) ৭১২ খ্রিস্টাব্দে

ঘ) ৭১৫ খ্রিস্টাব্দে

উত্তর : গ ৭১২ খ্রিস্টাব্দে

১১.৩০ সুলতান মাহমুদ ভারতবর্ষ আক্রমণ করেছিলেন-

(ক) ১০ বার

(খ) ১২ বার

(গ) ১৫ বার

(ঘ) ১৭ বার

উত্তর: ঘ ১৭ বার

১.৩১ দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন-

(ক) সুলতান মাহমুদ

(খ) মহম্মদ বিন কাশিম

(গ) কুতুবউদ্দিন আইবক

(ঘ) মহম্মদ ঘুরি

উত্তর: গ কুতুবউদ্দিন আইবক

১.৩২ বাংলায় তুর্কি আক্রমণ ঘটে-

(ক) বিজয় সেনের আমলে

(খ) সামন্ত সেনের আমলে

(গ) বল্লাল সেনের আমলে

(ঘ) লক্ষ্মণ সেনের আমলে

উত্তর: (ঘ) লক্ষ্মণ সেনের আমলে

(পাঠ্যবই: অনুশীলনী)

১.৩৩ সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল-

(ক) ভারতবর্ষে স্থায়ী সাম্রাজ্য গঠন

(খ) ভারতের ধন সম্পদ লুণ্ঠন

(গ) ভারতে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন

ঘ) পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাসক হওয়া

উত্তর: ঘ) পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাসক হওয়া

২.১ বঙ্গ, পুণ্ড্র, সুঘ্ন ও তাম্রলিপ্ত ইত্যাদিকে একেকটি আলাদা রাজ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে- (ঋকবেদ/মহাভারত/অর্থশাস্ত্র) গ্রন্থে।

উত্তর: মহাভারত

২.২ ত্রয়োদশ শতকের ঐতিহাসিক (বদাউনি/কাফি খাঁ/ মিনহাজ-ই-সিরাজ)-এর লেখাতে বঙ্গ রাজ্যের কথা আছে।

উত্তর: মিনহাজ-ই-সিরাজ

২.৩ প্রাচীন বাংলার সীমানা তৈরি হয়েছিল- (ভাগীরথী, পদ্মা, মেঘনা/গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু/কৃয়া, কাবেরী, গোদাবরী) নদী দিয়ে।

উত্তর: ভাগীরথী, পদ্মা, মেঘনা

২.৪ প্রাচীন সমতট ছিল- (গঙ্গা/ভাগীরথী/মেঘনা) নদীর পূর্ব দিকের এলাকা।

উত্তর: মেঘনা

২.৫ কর্ণসুবর্ণ নগরের কাছেই অবস্থিত ছিল- (ওদন্তপুরী/রক্ত মৃত্তিকা/সোমপুরী) বৌদ্ধবিহার।

উত্তর: রক্তমৃত্তিকা

২.৬ সন্ধ্যাকর নন্দীর (রামচরিত/রঘুবংশম/মৃচ্ছকটিকম) কাব্যে কৈবর্ত বিদ্রোহের বিবরণ পাওয়া যায়

উত্তর: রামচরিত

২.৭ কৈবর্ত বিদ্রোহের ফলে- (বঙ্গ/গৌড়/বরেন্দ্র) অঞ্চল পালেদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল।

উত্তর: বরেন্দ্র

২.৮ পাল রাজা রামপালের রাজধানী ছিল- (লক্ষ্মণাবতী/কর্ণসুবর্ণ/ রামাবতী) নগরে।

উত্তর: রামাবতী

২.৯ কৈবর্ত বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন- (ভীম/রামপাল/প্রথম মহীপাল) (পাঠ্যবই: অনুশীলনী)

উত্তর: ভীম

২.১০ ত্রিশক্তি সংগ্রামের উদ্দেশ্য ছিল- (লক্ষ্মণাবতী

কনৌজ/

কর্ণাট অঞ্চল) দখল।

উত্তর: কনৌজ

২.১১ প্রথম স্বাধীন রাষ্ট্রকূট রাজা ছিলেন- (ভোজ/

বিজয়ালয়

দন্তিদুর্গ)

উত্তর: দন্তিদুর্গ

২.১২ চোলদের রাজধানীর নাম ছিল- (কর্ণাট

তাঞ্জোর/লক্ষ্মণাবতী)।

উত্তর: তাঞ্জোর

২.১৩ প্রথম রাজেন্দ্র চোল গঙ্গা নদীর তীরে পাল রাজাকে হারিয়ে- (গঙ্গাইকোন্ড চোল

সকলোত্তর পথনাথ

শকারি) উপাধি গ্রহণ করেন।

উত্তর: গঙ্গাইকোন্ড চোল

২.১৪ (কৃষ্ণা

কাবেরী

গোদাবরী)-নদী ব্যবস্থাকে ঘিরে চোল রাজ্য গড়ে উঠেছিল।

উত্তর: কাবেরী

২.১৫ ভারতের-(মৌর্য

গুপ্ত

চোল) রাজবংশ বিদেশে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।

উত্তর: চোল

২.১৬ হজরত মহম্মদ তাঁর অনুগামীদের নিয়ে মদিনা শহরে চলে আসেন-(৬২০

৬২২

৬২৫) খ্রিস্টাব্দে।

উত্তর: ৬২২ খ্রিস্টাব্দে

২.১৭ ইসলামীয় সাল গণনাকে বলা হয়- (বঙ্গাব্দ

শকাব্দ

হিজরি)।

উত্তর: হিজরি

২.১৮ প্রথম

দ্বিতীয়

তৃতীয়)

উত্তর: দ্বিতীয়

২.১৯ আরবদের পর যে মুসলিম শক্তি ভারত আক্রমণ করেন, তাঁরা হলেন-(তুর্কি

মোগল

পাঠান)।

উত্তর: তুর্কি

২.২০ সুলতানি যুগের একজন ঐতিহাসিক ছিলেন-(মহম্মদ ঘুরি

মিনহাজ-ই-সিরাজ

মহম্মদ বখতিয়ায় খলজি)।

উত্তর: মিনহাজ-ই-সিরাজ।

Very Short Question Answer

২.১ কোন্ গ্রন্থে বাংলাকে ‘সুবা বাংলা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে?

উত্তর: আবুল ফজলের লেখা ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থে বাংলাকে ‘সুবা বাংলা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

২.২ ‘সুবা’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: সুবা শব্দের অর্থ প্রদেশ বা রাজ্য।

২.৩ প্রাচীন বাংলার নাম ‘বেঙ্গালা’ কারা দিয়েছিলেন?

উত্তর: ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে ইউরোপীয় ভ্রমণকারী ও বণিকরা প্রাচীন বাংলার নাম ‘বেঙ্গালা’ দিয়েছিলেন।

২.৪ স্বাধীনতার আগে প্রাচীন বাংলা কী কী নামে পরিচিত ছিল?

উত্তর: স্বাধীনতার আগে প্রাচীন বাংলা ‘বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ’ বা ‘বেঙ্গল’ নামে পরিচিত ছিল।

২.৫ আমাদের রাজ্যের নাম কখন থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়েছে?

উত্তর: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সময় বাংলার পশ্চিম ভাগের নাম হয় পশ্চিমবঙ্গ। যা আমাদের রাজ্যরূপে পরিচিত।

২.৬ কীভাবে পূর্ব পাকিস্তানের নাম হয় বাংলাদেশ?

উত্তর: ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের মুক্তি যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান আলাদা স্বাধীন দেশ হলে তার নাম হয় বাংলাদেশ।

২.৭ প্রাচীন বাংলার প্রধান অঞ্চলগুলির নাম কী ছিল?

উত্তর: প্রাচীন বাংলার প্রধান অঞ্চলগুলি ছিল পন্ডবর্ধন, বরেন্দ্র, বলা, বঙ্গাল, রাঢ়, সুপ্ন, গৌড়, সমতট ও হরিকেল।

২.৮ প্রাচীন বাংলার কয়েকটি জনগোষ্ঠীর নাম কী?

উত্তরঃ প্রাচীন বাংলায় কয়েকটি জনগোষ্ঠীর নাম ছিল বঙ্গ, গৌড়, পুন্ড্র প্রভৃতি।

২.৯ গুপ্তযুগে পুন্ড্রবর্ধন বলতে কী বোঝাত?

উত্তর : গুপ্তযুগে পুণ্ড্রবর্ধন বলতে একটি ভুক্তি বা শাসন এলাকাকে বোঝাত।

২.১০ কোন্ অঞ্চলটি বরেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল?

উত্তর: ভাগীরথী ও করতোয়া নদীর মধ্যবর্তী এলাকা বরেন্দ্র নামে পরিচিত ছিল।

২.১১ প্রাচীনকালে কোন্ অঞ্চলটিকে ‘বঙ্গ’ বলা হয়েছে?

উত্তর: প্রাচীনকালে পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর মাঝে ত্রিভুজের মতো দেখতে বদ্বীপ এলাকাকে ‘বঙ্গ’ বলা হত।

২.১২ কীভাবে বঙ্গের সীমানা বদলে গিয়েছিল?

উত্তর: ভাগীরথীর পশ্চিম দিকে রাঢ় এবং সূক্ষ্ম নামে দুটো আলাদা অঞ্চলের উৎপত্তি ঘটেছিল বলে বঙ্গের সীমানা বদলে গিয়েছিল।

২.১৩ মহাভারতের গল্পে এবং কালিদাসের কাব্যে রাঢ় অঞ্চলের কোন্ কোন্ নদীর উল্লেখ আছে?

উত্তর: মহাভারতের গল্পে এবং কালিদাসের কাব্যে ভাগীরথী ও কাঁসাই নদীর নাম উল্লেখ আছে।

২.১৪ কোন্ শতকে শশাঙ্ক গৌড়ের রাজা হন?

উত্তর: খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে শশাঙ্ক গৌড়ের রাজা হন।

২.১৫ বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা কে ছিলেন?

উত্তর: শশাঙ্ক ছিলেন বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা।

২.১৬ ‘রক্তমৃত্তিকা’ (রাঙামাটি) বৌদ্ধবিহারটি কোথায় অবস্থিত ছিল?

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার চিরুটি (বর্তমান নাম কর্ণসুবর্ণ) রেলস্টেশনের কাছে রাজবাড়িডাঙায় ‘রক্তমৃত্তিকা’ (রাঙামাটি) বৌদ্ধবিহারটি অবস্থিত ছিল।

২.১৭ চিনা বৌদ্ধ পর্যটক সুয়ান জাং-এর বিবরণীতে ‘রক্তমৃত্তিকা’ (রাঙামাটি) বৌদ্ধবিহারকে কী নামে উল্লেখ করা হয়েছে?

উত্তর: চিনা বৌদ্ধ পর্যটক সুয়ান জাং-এর বিবরণীতে ‘রক্তমৃত্তিকা’ (রাঙামাটি) বৌদ্ধবিহারের নাম ‘লো-টো-মো-চিহ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

২.১৮ শশাঙ্কের মৃত্যুর পর কে কর্ণসুবর্ণ দখল করেছিলেন?

উত্তর: কামরূপরাজ ভাস্করবর্মা কর্ণসুবর্ণ দখল করেছিলেন।

২.১৯ শশাঙ্ক কোন্ দেবতার উপাসক ছিলেন?

উত্তর: শশাঙ্ক শিবের উপাসক ছিলেন।

২.২০ হর্ষবর্ধনের সভাকবির নাম কী?

উত্তর: হর্ষবর্ধনের সভাকবির নাম বাণভট্ট।

২.২১ ইৎ-সিঙ্ কে ছিলেন?

উত্তর: ইৎ-সিঙ্ ছিলেন একজন চীনা পর্যটক।

২.২২ গৌড়তন্ত্র কী?

উত্তরঃ শশাঙ্কের আমলে গৌড়ে যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তাকে গৌড়তন্ত্র বলা হয়।

২.২৩ শশাঙ্কের আমলে কোন্ ধাতুর মুদ্রা প্রচলিত ছিল?

উত্তর: শশাঙ্কের আমলে সোনার মুদ্রা প্রচলিত ছিল।

২.২৪ পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

উত্তরঃ পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন গোপাল।

২.২৫ কোন্ পালরাজার রাজত্বকালে কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়েছিল? 

উত্তরঃ দ্বিতীয় মহীপালের রাজত্বকালে কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়েছিল।

২.২৬ কৈবর্ত বিদ্রোহের পর কোন্ পালরাজা সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন?

উত্তর: কৈবর্ত বিদ্রোহের পর রামপাল পাল সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন।

২.২৭ কোথায় রামপাল রাজধানী স্থাপন করেন?

উত্তর: বরেন্দ্র অঞ্চলের রামাবতী নগরে রামপাল রাজধানী স্থাপন করেন।

২.২৮ সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?

উত্তর: সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সামন্ত সেন।

২.২৯ সেনবংশের শেষ শক্তিশালী রাজা কে ছিলেন?

উত্তর: লক্ষ্মণ সেন ছিলেন সেন বংশের শেষ শক্তিশালী রাজা।

২.৩০ গুর্জর প্রতিহার বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?

উত্তর: গুর্জর প্রতিহার বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন রাজা ভোজ।

২.৩১ চোল রাজা বিজয়ালয় কাকে সরিয়ে চোল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: রাজা মুট্টাবাইয়াকে সরিয়ে চোল রাজা বিজয়ালয় চোল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

২.৩২ কোন্ চোল রাজা কল্যাণীর চালুক্য শক্তিকে পরাজিত করেন?

উত্তর: প্রথম রাজরাজের পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র কল্যাণীর চালুক্য শক্তিকে পরাজিত করেন।

২.৩৩ দক্ষিণ ভারতের কোন্ রাজারা প্রথম দক্ষ নৌবাহিনী গড়ে তোলেন?

উত্তর: প্রথম রাজরাজ এবং রাজেন্দ্র চোল প্রথম দক্ষ নৌবাহিনী গড়ে তোলেন।

২.৩৪ আরবের কোন্ দিকে আরব সাগর অবস্থিত?

উত্তর: আরবের দক্ষিণদিকে আরব সাগর অবস্থিত।

২.৩৫ আরবের যাযাবর মানুষদের কী বলা হত?

উত্তর: আরবের যাযাবর মানুষদের বেদুইন বলা হত।

২.৩৬ বেদুইনদের অন্যতম খাদ্য কী ছিল?

উত্তর: খেজুর এবং উটের দুধ ছিল বেদুইনদের অন্যতম খাদ্য।

 ২.৩৭ আরবের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নাম লেখো।

উত্তর: ‘মক্কা’ ও ‘মদিনা’ হল আরবের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।

২.৩৮ কখন, কোথায় ইসলাম ধর্মের জন্ম হয়?

উত্তর: খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপে ইসলাম ধর্মের জন্ম- হয়।

২.৩৯ ইসলাম ধর্মের অনুগামীরা কী নামে পরিচিত?

উত্তর: ইসলাম ধর্মের অনুগামীরা মুসলমান নামে পরিচিত।

২.৪০ হজরত মহম্মদের মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যাওয়াকে আরবি ভাষায় কী বলা হয়?

উত্তর: হজরত মহম্মদের মক্কা ছেড়ে মদিনায় চলে যাওয়াকে আরবি ভাষায় ‘হিজরত’ বলা হয়।

২.৪১ কত খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘হিজরি’ নামে ইসলামীয় সাল গণনা শুরু হয়?

উত্তর: ৬২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ‘হিজরি’ নামে ইসলামীয় সাল গণনা শুরু হয়।

 ২.৪২ ‘খলিফা’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘খলিফা’ হল একটি আরবি শব্দ। ‘খলিফা’ শব্দের অর্থ হল প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী।

২.৪৩ প্রথম খলিফার নাম কী?

উত্তর: প্রথম খলিফার নাম হল ‘আবুবকর’।

২.৪৪ ইসলামীয় জগতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা কে ছিলেন?

উত্তর: ইসলামীয় জগতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতা ছিলেন ‘খলিফা’।

২.৪৫ যেসব অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের ক্ষমতা ছড়িয়ে পড়েছে, তার নাম কী?

উত্তর: যেসব অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের ক্ষমতা ছড়িয়ে পড়েছে, তার নাম দার-উল-ইসলাম।

২.৪৬ খলিফার অধিকারের অঞ্চলকে কী বলা হয়?

উত্তর: খলিফার অধিকারের অঞ্চলকে ‘খিলাফৎ’ বলা হয়।

২.৪৭ আরবীয়রা কবে সিন্ধু প্রদেশ অভিযান করেন?

উত্তর: ৭১২ খ্রিস্টাব্দে আরবীয়রা প্রথম সিন্ধু প্রদেশ অভিযান করেন।

 ২.৪৮ ভারতে প্রথম মুসলমান আক্রমণকারী কে ছিলেন?

উত্তর: ভারতে প্রথম মুসলমান আক্রমণকারী ছিলেন মহম্মদ বিন কাশেম।

২.৪৯ সুলতান মাহমুদ কোথাকার শাসক ছিলেন?

উত্তর: সুলতান মাহমুদ গজনির শাসক ছিলেন।

২.৫০ খ্রিস্টীয় একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে কোন্ দুই তুর্কি শাসক ভারতীয় উপমহাদেশে বিজয় অভিযান করেন?

উত্তর: খ্রিস্টীয় একাদশ এবং দ্বাদশ শতাব্দীতে গজনির সুলতান মাহমুদ এবং ঘুরের শাসক মুইজউদ্দিন মহম্মদ বিন সাম (মহম্মদ ঘুরি) ভারতীয় উপমহাদেশে বিজয় অভিযান করেন।

২.৫১ অল বিরুনির লেখা কোন্ গ্রন্থ থেকে ভারতের ইতিহাস জানা যায়?

উত্তর: অলবিরুনির লেখা ‘কিতাব-অল-হিন্দ’ থেকে ভারতের ইতিহাস জানা যায়।

২.৫২ ‘শাহনামা’ কাব্য কে লিখেছিলেন?

উত্তর: কবি ফিরদৌসি ‘শাহনামা’ কাব্য লিখেছিলেন।

২.৫৩ তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ কবে, কাদের মধ্যে হয়েছিল?

উত্তর: ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে রাজপুত রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান ও মহম্মদ ঘুরির মধ্যে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়েছিল।

২.৫৪ তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে কে পরাজিত হয়েছিলেন?

উত্তর: তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে রাজপুত রাজা তৃতীয় পৃথ্বীরাজ চৌহান পরাজিত হয়েছিলেন।

২.৫৫ কে, কবে দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিতে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

২.৫৬ ১২০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে কোন্ তুর্কি সেনাপতি বাংলার নদিয়া দখল করেন?

উত্তর: ১২০৪-০৫ খ্রিস্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি ইখাতিয়ারউদ্দিন মহম্মদ বখতিয়ার খলজি বাংলার নদীয়া দখল করেন।

২.৫৭ বখতিয়ার খলজি কোথায় রাজধানী স্থাপন করেন?

উত্তর: বখতিয়ার খলজি ‘লক্ষ্মণাবতী’ দখল করে রাজধানী স্থাপন করেন। এই শহরকে সমকালীন ঐতিহাসিকরা ‘লখনৌতি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

২.৫৮ বখতিয়ার খলজি কত খ্রিস্টাব্দে মারা যান?

উত্তর: ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে বখতিয়ার খলজি মারা যান।

২.৫৯ কত খ্রিস্টাব্দে, কোথায় লক্ষ্মণ সেন মারা যান?

উত্তর: ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে পূর্ববঙ্গে লক্ষ্মণ সেন মারা যান।

২.৬০ বখতিয়ার খলজি বাংলার পর কোথায় রাজ্য বিস্তার করার চেষ্টা করেন?

উত্তর: বখতিয়ার খলজি বাংলার পর তিব্বতে রাজ্যবিস্তার করার চেষ্টা করেন।

Short Question Answer

৩১ আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ কীভাবে গঠিত হয়েছিল?

উত্তর: অঙ্গরাজ্য ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট আমাদের দেশ ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। এই সময় থেকে পশ্চিমবঙ্গ স্বাধীন ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য রূপে পরিচিত হয়।

নামকরণ: স্বাধীনতা লাভের আগে পশ্চিমবঙ্গ, বাংলা বা

বেঙ্গল-এর অংশ ছিল। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের দেশ ভাগের সময় বাংলা ভাগ হয় এবং বাংলার পূর্বভাগ নতুন দেশ পাকিস্তানে চলে যায়। বাংলার পশ্চিমভাগ ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামে ভারতের একটি রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৩২ বাংলাদেশ কীভাবে গঠিত হয়?

উত্তর: অবিভক্ত বাংলা: বর্তমানে বাংলাদেশ ভারতের একটি প্রতিবেশী দেশ। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের আগে বাংলাদেশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তখন তা ‘বাংলা’ বা ‘বেঙ্গল’ নামে পরিচিত ছিল।

বাংলাদেশ গঠন: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সময় বাংলা ভাগ হয় এবং বাংলার পূর্বভাগ নতুন দেশ পাকিস্তানে চলে যায়। তখন তার নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়। তখন তার নতুন নাম হয় বাংলাদেশ।

৩.৩ প্রাচীন বাংলার প্রধান অঞ্চলগুলির নাম লেখো। এই নামকরণের কারণ কী ছিল?

উত্তর: প্রধান অঞ্চলগুলির নাম: প্রাচীন বাংলার প্রধান অঞ্চলগুলি নাম ছিল-(i) পুন্ড্রবর্ধন (ii) বরেন্দ্র (iii) বঙ্গ (iv) বঙ্গাল (v) রাঢ় (vi) সুঘ্ন (vii) গৌড় (viii) সমতট এবং (ix) হরিকেল।

নামকরণের কারণ প্রাচীন বাংলার প্রধান অঞ্চলগুলির নামকরণ হয়েছে সাধারণভাবে ওইসব অঞ্চলের অধিবাসীদের নাম অনুসারে। এক একটি জনগোষ্ঠীর নাম থেকেই বঙ্গ, গৌড়, পুন্ড্র ইত্যাদি নামগুলি এসেছে।

পুন্ড্রবর্ধন বাংলার কোন কোন্ অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছিল?

৩.৪ উত্তর: পুণ্ড্রবর্ধন ছিল প্রাচীন বাংলার অঞ্চলগুলির মধ্যে বৃহত্তম।

• পুণ্ড্রবর্ধন গড়ে উঠেছিল পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের দিনাজপুর, বগুড়া, রাজশাহি এবং পাবনা নিয়ে। এক সময় শ্রীহট্ট বা সিলেট পুণ্ড্রবর্ধনের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

গুপ্তযুগে পুন্ড্রবর্ধন ছিল একটি ভুক্তি বা শাসন-এলাকা।

৩.৫ বর্তমানে বাংলার কোন্ অঞ্চল গৌড় নামে পরিচিত? গৌড়ের রাজধানী কোথায় ছিল?

উত্তর: প্রাচীন এবং মধ্যযুগের বাংলায় গৌড় ছিল গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।

• খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে বরাহমিহিরের রচনা অনুযায়ী মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং বর্ধমান জেলার পশ্চিম ভাগ নিয়ে তৈরি হয়েছিল গৌড়।

• ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ে বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলাই ছিল প্রাচীনকালের গৌড়।

• গৌড়ের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ।

৩.৬ কেন সমতটকে প্রাচীন ইতিহাসে বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকা বলে ধরা হত?

উত্তর: মেঘনা নদীর পূর্বদিকের এলাকা প্রাচীন বাংলায় ‘সমতট’ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের কুমিল্লা- নোয়াখালি অঞ্চলের সমভূমিকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চল বিস্তৃত ছিল। মেঘনা নদী সমতটকে বাংলার বাকি অঞ্চলের থেকে আলাদা করে রেখেছিল। এই কারণে সমতটকে প্রাচীন বাংলার সীমান্তবর্তী এলাকা বলে ধরা হত।

৩.৭০ হরিকেল বলতে বাংলার কোন্ অঞ্চলকে বোঝায়?

উত্তর: প্রাচীন বাংলায় ‘হরিকেল’ বলতে বোঝাত সমতট অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকের এলাকাকে।

• বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূল অঞ্চল প্রাচীন যুগে ‘হরিকেল’ নামে পরিচিত ছিল।

অনেকে বলেন শ্রীহট্টের প্রাচীন নাম ছিল ‘হরিকেল’।

৩.৮০ শশাঙ্কের রাজধানী কোথায় ছিল? এটি কোথায় অবস্থিত?

উত্তর: শশাঙ্কের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ।

• অবস্থান : বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার চিরুটি রেলস্টেশনের কাছে রাজবাড়িভাঙায় প্রাচীন রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এর কাছেই কর্ণসুবর্ণ অবস্থিত ছিল। কর্ণসুবর্ণ স্থানীয়ভাবে রাজা কর্ণের প্রাসাদ নামে পরিচিত।

৩,৯০ ‘লো-টো-মো-চিহ’ সম্পর্কে কী জানো লেখো।

উত্তর: পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার চিরুটি (বর্তমান নাম কর্ণসুবর্ণ) রেলস্টেশনের কাছে রাজবাড়িভাঙায় প্রাচীন রক্তমৃত্তিকা (রাঙামাটি) বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষে পাওয়া গেছে। চিনা  বৌদ্ধ পর্যটক সুয়ান জাং (হিউয়েন সাঙ)-এর বিবরণীতে এই বৌদ্ধ বিহারের উল্লেখ আছে। চিনা ভাষায় এই বৌদ্ধ বিহারের নামই হল ‘লো-টো-মো-চিহ’।

৩,১০ কীভাবে বাংলায় পালশাসন শুরু হয়?

উত্তর: শশাঙ্কের মৃত্যুর পর খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের মধ্যভাগ থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত একশো বছর ধরে বাংলায় কোনো কেন্দ্রীয় শাসন ছিল না। এই সময় বাংলায় চরম অরাজক অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, যা ইতিহাসে ‘মাৎস্যন্যায়’ নামে পরিচিত। এই অরাজক অবস্থার অবস্থানের জন্য বাংলার প্রভাবশালী লোকেরা আনুমানিক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে ‘গোপাল’ নামে একজন সামন্ত রাজাকে বাংলার রাজা নির্বাচন করেন। ফলে ওই সময় থেকে বাংলায় পাল বংশের রাজত্ব শুরু হয়।

৩.১১ দেবপালের সময় পাল রাজ্যসীমা কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল?

উত্তর: পাল রাজা ধর্মপালের ছেলে দেবপালের সময়ে পাল রাজ্যসীমা উত্তরে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণে অন্তত বিন্ধ্যপর্বত পর্যন্ত এবং উত্তর-পশ্চিমে কম্বোজ দেশ থেকে পূর্বে প্রাগজ্যোতিষপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

৩১২ দেবপালের পরে পালদের ক্ষমতা কমতে শুরু করেছিল কেন? 

উত্তর: দেবপালের পরে পালদের ক্ষমতা কমতে শুরু করেছিল।

কারণ: (i) পালেদের নিজেদের মধ্যে গোলমাল শুরু হয়েছিল। (ii) দাক্ষিণাত্যের রাষ্ট্রকূট, পশ্চিম ভারতের এবং ওড়িশার শাসকরা নবম শতকে বাংলা এবং বিহারে অনেক এলাকা জয় করে নিয়েছিল।

৩.১৩ কৈবর্ত বিদ্রোহ কবে এবং কার বিরুদ্ধে হয়েছিল?

উত্তর: আনুমানিক ১০৭০-৭১ খ্রিস্টাব্দে কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়েছিল।

• পাল রাজাদের দুর্বলতার সুযোগে দ্বিতীয় মহীপালের শাসনকালে কৈবর্ত নেতা ‘দিব্য’ বা ‘দিব্বোক’ বিদ্রোহ করেন। এই বিদ্রোহের আরও দুজন নেতা ছিলেন রুদোক এবং ভীম।

৩.১৪ সেন রাজাদের বংশ পরিচয় সম্পর্কে লেখো।

উত্তর: সেন রাজারা বংশগতভাবে প্রথমে ছিলেন ব্রাহ্মণ, পরে তাঁরা ক্ষত্রিয় হয়ে যান। তাই এই বংশের শিলালেখতে সেন বংশকে ‘ব্রহ্ম-ক্ষত্রিয়’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, সেনরা ছিলেন বৈদ্য।

৩১৫ ‘ত্রিশক্তি সংগ্রাম’ নামটি কি তুমি যথার্থ বলে মনে করো? যুক্তি দাও। (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন)

উত্তর: উত্তরাপথের অবস্থানগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ কনৌজ দখলকে কেন্দ্র করে পাল, গুর্জর-প্রতিহার এবং রাষ্ট্রকূট-এই তিন রাজশক্তির মধ্যে যে সংগ্রাম চলেছিল, তাই ‘ত্রিশক্তি সংগ্রাম’ নামে পরিচিত। প্রায় দুশো বছর ধরে চলা এই সংগ্রামে তিনটি বংশেরই শক্তি শেষ হয়ে যায়। তাই আমি মনে করি ‘ত্রিশক্তি সংগ্রাম’ নামটি যথার্থ।

৩.১৬ রাজপুত কাদের বলা হয়?

উত্তর: খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে হুণদের আক্রমণের পরে বেশ কিছু মধ্য-এশীয় উপজাতির মানুষ উত্তর-পশ্চিম ভারতে বসবাস করতে থাকে। স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের বিবাহ হয়। এদের বংশধরদের ‘রাজপুত’ বলা হয়।

৩.১৭ কে, কখন ‘গঙ্গাইকোল্ডচোল’ উপাধি গ্রহণ করেন?

উত্তর: প্রথম রাজেন্দ্র চোল ‘গঙ্গাইকোন্ডচোল’ উপাধি গ্রহণ করেন।

• তিনি বাংলার পাল বংশের বিরুদ্ধে এক অভিযান চালান।

এই অভিযানে গঙ্গা নদীর তীরে পালরাজাকে হারিয়ে ‘গঙ্গাইকোল্ডচোল’ উপাধি গ্রহণ করেন। উক্ত অঞ্চল তিনি অধিকার করেন।

৩.১৮ আরব উপদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থানের উল্লেখ করো।

উত্তর: ভারতের পশ্চিমে আরব সাগর পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম ভাগে আরব উপদ্বীপ অবস্থিত। এর পশ্চিমে লোহিত সাগর, দক্ষিণে আরব সাগর এবং পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর।

• আরব উপদ্বীপে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার জন্য অধিকাংশই মরুভূমি অঞ্চল।

৩.১৯ মক্কা শহরের দখলদারি নিয়ে বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে সংঘর্ষ লেগে থাকত কেন?

উত্তর: খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের শুরুতে, কিছু কিছু আরব উপজাতি ব্যাবসাকেই প্রধান জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। মক্কা শহর দুটি বাণিজ্যপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ার জন্য এই নগরের দখলদারি নিয়ে বিভিন্ন উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগে থাকত।

৩.২০ হজরত মহম্মদকে আল্লাহ বা ঈশ্বরের বার্তাবাহক বলা হয় কেন?

উত্তর: ৬১০ খ্রিস্টাব্দে হজরত মহম্মদ ঘোষণা করেন যে আল্লাহ বা ঈশ্বর তাঁকে দূত মনোনীত করেছেন। সেজন্যই মহম্মদকে আল্লাহ্ বা ঈশ্বরের বার্তাবাহক বলা হয়। আল্লাহর বাণী সাধারণ মানুষ মহম্মদের থেকেই জানতে পারেন।

৩.২১ হিজরত কী? অথবা হিজরি সাল কেন গণনা করা হয়?

উত্তর: মক্কার প্রতিষ্ঠিত অধিবাসীদের ধর্মীয় আচার আচরণের সাথে মহম্মদের ধর্মীয় মতের যথেষ্ট ফারাক ছিল। তাই ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর অনুগামীদের নিয়ে মদিনা চলে আসেন। মক্কা থেকে মদিনায় এই চলে যাওয়াকে আরবি ভাষায় ‘হিজরত’ বলা হয়। পরে এই চলে যাওয়ার সময় থেকে হিসাব করে ‘হিজরি’ নামে ইসলামীয় সাল গণনা শুরু হয়।

৩.২২ ইসলাম ধর্মের উদ্ভব হয় কীভাবে? মুসলমান কাদের বলা হয়?

উত্তর: ৬১০ খ্রিস্টাব্দে হজরত মহম্মদ ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ বা ঈশ্বর তাঁকে দূত মনোনীত করেছেন। আল্লাহর বাণী তিনি সাধারণ মানুষের কাছে প্রচার করেন। ফলে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে তাঁর অনুগামীদের নেতৃত্বে আরবে ‘ইসলাম’ নামে এক নতুন ধর্মের উদ্ভব হয়।

• হজরত মহম্মদের বা ইসলাম ধর্মের অনুগামীদের ‘মুসলমান’ বলা হয়।

৩.২৩ ‘খলিফা’ কাদের বলা হয়? ‘খিলাফৎ’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: খলিফা: ‘খলিফা’ হল একটি আরবি শব্দ এর অর্থ হল প্রতিনিধি বা উত্তরাধিকারী।

• হজরত মহম্মদের মৃত্যুর পর তাঁর প্রধান চার সঙ্গী একে মুসলমানদের নেতা নির্বাচিত হন। এদের বলা হয় ‘খলিফা’।

• ইসলামীয় জগতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতাকে বলা হয় ‘খলিফা’।

• খিলাফৎ : ইসলাম ধর্মের ক্ষমতা যেসব অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলি হলো ‘দার-উল-ইসলাম।’ খলিফা হলেন ‘দার-উল-ইসলাম’-এর প্রধান নেতা। খলিফার এই অধিকারের এলাকাকে বলা হয় ‘খিলাফৎ’।

৩.২৪ তুর্কি আক্রমণকালে বাংলার নদিয়া বলতে কোন্ অঞ্চলকে বোঝায়?

উত্তর : তুর্কি আক্রমণকালে বাংলার নদিয়ার ভৌগোলিক অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকদের মতভেদ রয়েছে।

• অনেকের মতে, বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী নদীর তীরে নদিয়া অবস্থিত ছিল, যা আজ নদীর তলায় চলে গেছে।

• আবার অনেকে মনে করেন, বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার নৌদা গ্রামই হল সেকালের নদিয়া।

(৫) খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকের আঞ্চলিক রাজ্যগুলি কেমনভাবে গড়ে উঠেছিল?

উত্তর: খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতকে ভারতে অনেকগুলি আঞ্চলিক রাজ্য গড়ে উঠেছিল। এই রাজ্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মালব, কনৌজ, স্থানীশ্বর বা থানেশ্বর, কামরূপ, গৌড় প্রভৃতি।

• গুপ্ত সাম্রাজ্যের দুর্বলতার সুযোগে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এইসব রাজ্যগুলি গড়ে উঠেছিল। এইসব রাজ্যের শাসকগণ ছিলেন গুপ্ত রাজাদের সামন্ত বা কর্মচারী। গুপ্ত রাজাদের দুর্বলতার সুযোগে তারা নিজেদের এলাকায় রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন এবং স্বাধীন শাসকে পরিণত হয়েছিলেন। এই সমস্ত শাসকেরা নিজ নিজ স্বার্থে পারস্পরিক দ্বন্দু বা মৈত্রীর সম্পর্ক বজায় রাখত।

8.8 ‘গৌড়তন্ত্র’ বলতে কী বোঝায়?

উত্তর: ভূমিকা: গৌড়রাজ শশাঙ্কের রাজত্বকালে গৌড়ে যে শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল, তাকে বলা হয় গৌড়তন্ত্র।

• কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা: শশাঙ্কের শাসনব্যবস্থায় রাজ্যে এক শ্রেণির কর্মচারী বা আমলা শ্রেণি গঠন করা হয়, যারা গ্রামের স্থানীয় লোকেরা যেসব প্রশাসনিক কাজকর্ম করত, সেই সব কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ফলে গৌড়রাজ্যে এক নতুন ধরনের শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। যেখানে কেন্দ্র থেকে সমগ্র রাজ্যের গ্রামন্তর পর্যন্ত প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত।

Long Question Answer

খ) কর আমলের বাংলার আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল তা লেখো। 

উত্তর ভূমিকা: শশাঙ্ক প্রথম জীবনে একজন মহাসামন্ত হলেও পরবর্তীকালে তিনি গৌড়ের স্বাধীন শাসক হন। ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে থেকে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্বাধীনভাবে তিনি রাজ্যশাসন করেন।।

(1) মুদ্রার মান: শশাঙ্কের আমলে সোনার মুদ্রা প্রচলিত ছিল কিন্তু তার মান পড়ে গিয়েছিল। নকল সোনার মুদ্রাও দেখা যেত। রূপোর মুদ্রা ছিল না।

শশাঙ্কের মুদ্রা

(ii) কৃষিনির্ভরতা: শশাঙ্কের আমলে অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর। কৃষির গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় সমাজ ক্রমশ গ্রামকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিল। ফলে সমাজে জমির চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

(ii) ব্যাবসাবাণিজ্যে মন্দা তাঁর রাজত্বকালে ব্যাবসাবাণিজ্যে মন্দা দেখা দেওয়ায় নগরের গুরুত্ব কমতে শুরু করে।

(iv) বণিকদের গুরুত্ব হ্রাস: ব্যাবসাবাণিজ্যে মন্দার কারণে শ্রেষ্ঠী বা বণিকদের গুরুত্ব ও ক্ষমতা হ্রাস পায়।

• সুতরাং বলা যেতে পারে, শশাঙ্কের আমলে বাংলার আর্থিক

অবস্থার অবনতি ঘটে।

গ) মাৎস্যন্যায় কী?

উত্তর ভূমিকা: শশাঙ্কের মৃত্যুর পর খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকের

মন্যভাগ থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় একশো বছর (৬৫০-৭৫০ খ্রিস্টাব্দ) ধরে বাংলায় যে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সামাজিক অনাচার চলেছিল, তাকে ‘মাৎস্যন্যায়ের যুগ’ বলা হয়।

• আক্ষরিক অর্থ: ‘মাৎস্যন্যায়’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল মাছের মতো আচরণ। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে ‘ মাৎস্যন্যায়’-এর উল্লেখ আছে।

• প্রকৃত অর্থ: পুকুরের বড়ো মাছ যেমন ছোটো মাছকে খেয়ে

ফেলে, শশাঙ্কের মৃত্যুর পর তেমনি শক্তিশালী লোক দুর্বল লোকেদের ওপর অত্যাচার করে। এই অরাজক অবস্থাই ‘মাৎস্যন্যায়’ নামে পরিচিত।

• অবসান: শেষপর্যন্ত বাংলার প্রভাবশালী লোকেরা মিলে খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের মধ্যভাগে (আনুমানিক ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে) ‘গোপাল’ নামে একজন সামন্তরাজাকে বাংলার রাজা নির্বাচন করে। এর ফলে মাৎস্যন্যায় যুগের অবসান ঘটে এবং পাল বংশের রাজত্ব শুরু হয়। গোপাল ছিলেন পালবংশের প্রতিষ্ঠাতা।

(ঙ) সে রাজাদের আদিনিবাস কোথায় ছিল? কীভাবে তাঁরা বালায় শাসন কায়েম করেছিলেন?

উত্তর সেন রাজাদের আদিনিবাস সেন রাজাদের আদিনিবাস ছিল দক্ষিণ ভারতের কর্ণাট অঞ্চলে অর্থাৎ মহীশূর এবং তার আশেপাশের এলাকায়।

• সেন রাজাদের শাসন প্রতিষ্ঠা: একাদশ শতকে সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা সামন্ত সেন কর্ণাট থেকে রাঢ় বা বর্ধমান অঞ্চলে এসে আধিপত্য বিস্তার করেন।

• সামন্ত সেনের পুত্র হেমন্ত সেন পাল রাজাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রাঢ় অঞ্চলে সেনেদের আধিপত্য আরও বৃদ্ধি করেন।

• তাঁর পুত্র বিজয় সেনকে বাংলায় স্বাধীন সেন বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। তিনি রাঢ়, গৌড়, পূর্ববঙ্গ এবং মিথিলা জয় করে সেন রাজ্যের পরিধি বাড়িয়েছিলেন।

(চ) সুলতান মামুদ ভারত থেকে লুঠ করা ধনসম্পদ কীভাবে ব্যবহার করেছিলেন?

উত্তর ভূমিকা: গজনির সুলতান মাহমুদ ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেছিলেন। তিনি ভারতের মন্দিরগুলি থেকে প্রচুর ধনসম্পদ লুণ্ঠন করে নিজের দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন।

• লুঠ করা ধনসম্পদের ব্যবহার: তিনি ভারতবর্ষ থেকে যে সমস্ত ধনসম্পদ লুঠ করে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেগুলি তিনি ভালো কাজে ব্যয় করেছিলেন।

(1) তিনি তাঁর রাজধানী গজনি এবং অন্যান্য শহরকে সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন।

(ii) রাজধানী গজনি সহ অন্যান্য শহরে অনেক প্রাসাদ ও মসজিদ নির্মাণ করে ছিলেন।

(iii) তিনি একাধিক গ্রন্থাগার ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতন ও ছাত্রদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

(iv) বাগিচা তৈরি, খাল খনন, জলাধার নির্মাণ আমুদরিয়ার উপর বাঁধ নির্মাণ ছিল তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি।

(v) তিনি বিখ্যাত পণ্ডিত ও দার্শনিক অলবিরুনি ও কবি ফিরদৌসির পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।

(ক) প্রাচীন বাংলার রাঢ়-সু্যু এবং গৌড় অঞ্চলের ভৌগোলিক পরিচয় দাও।

উত্তর:

রাঢ় সূক্ষ্ম-প্রাচীন বাংলার রাঢ় অঞ্চল দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। যথা-উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণ রাঢ়। জৈন ঐতিহ্য অনুযায়ী উত্তর রাঢ় বজ্জভূমি বা বজ্রভূমি এবং দক্ষিণ রাঢ় সুপ্ত ভূমি বা সূক্ষ্মভূমি নামে পরিচিত।

উত্তর ও দক্ষিণ রাঢ়ের মাঝখানে ছিল অজয় নদ।

উত্তর রাঢ়: বর্তমান মুরশিদাবাদ জেলার পশ্চিমভাগ, বীরভূম জেলা, সাঁওতাল পরগনার একাংশ এবং বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার উত্তরভাগ নিয়ে উত্তর রাঢ় গঠিত ছিল।

দক্ষিণ রাঢ়: বর্তমানকালের হাওড়া, হুগলি ও বর্ধমান জেলার বাকি অংশ এবং অজয় ও দামোদর নদের মাঝের এলাকা নিয়ে দক্ষিণ রাঢ় গঠিত ছিল। অন্যভাবে বলতে গেলে দক্ষিণ রাঢ় ছিল বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী অঞ্চল।

মহাভারতে ও কালিদাসের রচনায় রাঢ়-সুস্থ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এই অঞ্চল ভাগীরথী ও কংসাবতী (কাঁসাই) নদীর মধ্যভাগে সমুদ্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

গৌড়: প্রাচীন ও মধ্যযুগে গৌড় বলতে একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝাত। খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকে বরাহমিহিরের রচনা থেকে জানা যায় যে বর্তমানকালের মুরশিদাবাদ, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার পশ্চিমভাগ গৌড়ের অন্তর্গত ছিল।

খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে শশাঙ্কের আমলে ভাগীরথীর পশ্চিমতীরের বর্তমান মুরশিদাবাদ জেলাকে নিয়ে মূল গৌড় গড়ে উঠেছিল। যার রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। গৌড়ের সীমানা উত্তরে পুণ্ড্রবর্ধন থেকে দক্ষিণে ওড়িশার উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। খ্রিস্টীয় অষ্টম-নবম শতকে গৌড় বলতে সমগ্র পাল রাজ্যকে বোঝানো হত।

খ) শশাঙ্কের সঙ্গে বৌদ্ধদের সম্পর্ক কেমন ছিল, সে বিষয়ে তোমার মতামত দাও।

উত্তর ভূমিকা: বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা ছিলেন শশাঙ্ক। শশাঙ্কের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বিভিন্ন মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

শশাঙ্ক ও বৌদ্ধধর্মের মধ্যে সম্পর্ক:

• শশাঙ্কের ধর্ম: শশাঙ্ক ছিলেন শৈব বা শিবের উপাসক।

• শশাঙ্কের বিরুদ্ধে, অভিযোগ ‘আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প’ নামক বৌদ্ধ গ্রন্থ, সুয়ান জাং (হিউয়েন সাঙ)-এর ভ্রমণ বিবরণীতে, হর্ষবর্ধনের সভাকবি বাণভট্টের রচনা ‘হর্ষচরিত’ গ্রন্থে শশাঙ্ককে ‘বৌদ্ধবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

• বৌদ্ধবিদ্বেষী বলার কারণ শশাঙ্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ

করা হয় যে-(i) তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যা করেছিলেন। (ii) তিনি বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মীয় স্মারক ধ্বংস করেছিলেন।

• শশাঙ্ক বৌদ্ধবিদ্বেষী ছিলেন বলে মনে হয় না, কারণ- (1) শশাঙ্কের শাসনকালের কয়েক বছর পরে সুয়ান জাং (হিউয়েন সাঙ) কর্ণসুবর্ণ নগরের উপকণ্ঠে রক্তমৃত্তিকা বৌদ্ধবিহারের সমৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। (ii) শশাঙ্কের মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পর চিনা পর্যটক ইৎ-সিঙ্ বাংলায় বৌদ্ধধর্মের উন্নতির কথা বলেছেন।

• সিদ্ধান্ত: সুতরাং শশাঙ্ককে পুরোপুরি ‘বৌদ্ধবিদ্বেষী’ বলা যায় না। তাঁর বিরুদ্ধে ‘বৌদ্ধবিদ্বেষী’ বলে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা কিছুটা অতিরঞ্জিত ছিল এবং অনেকাংশেই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য করা হয়েছিল।

গ) ত্রিশক্তি সংগ্রাম কাদের মধ্যে হয়েছিল? এই সংগ্রামের মূল কারণ কী ছিল?

উত্তর: উত্তরাপথের কনৌজকে কেন্দ্র করে বাংলার পাল, পশ্চিম ভারতের গুর্জর-প্রতিহার এবং দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্রকূটদের মধ্যে ত্রিশক্তি সংগ্রাম হয়েছিল।

• ত্রিশক্তি সংগ্রামের কারণ-

(i) রাজনৈতিক গুরুত্ব: হর্ষবর্ধনের রাজত্বকালে কনৌজ ‘মহোদয়শ্রী’ বা ‘শ্রেষ্ঠনগরীর’ মর্যাদা লাভ করেছিল। যার ফলে কনৌজের রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। এছাড়া এই সময় কনৌজকে কেন্দ্র করে যে সামাজিক ঐক্য গড়ে উঠেছিল, তার একচ্ছত্র অধিপতি হওয়ার জন্যই ত্রিশক্তি সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল।

(ii) অর্থনৈতিক গুরুত্ব: কনৌজ অঞ্চলের নদীভিত্তিক বাণিজ্য এবং খনিজ দ্রব্য আর্থিক দিক থেকে লোভনীয় ছিল। তাছাড়া কনৌজ ছিল গাঙ্গেয় উপত্যকার কৃষিসম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চল। কনৌজের ভালো অর্থনৈতিক অবস্থার জন্যই ত্রিশক্তি সংগ্রাম হয়েছিল।

(iii) ভৌগোলিক গুরুত্ব: কনৌজের অবস্থান ছিল গঙ্গা-যমুনা-দোয়াব

অঞ্চলের ঠিক মধ্যবর্তী স্থানে। তাই অবস্থানগত সুবিধার জন্যই সবাই কনৌজ দখল করতে চেয়েছিল।

(iv) সামরিক গুরুত্ব: গঙ্গা-যমুনা-দোয়াবের মধ্যবর্তী উঁচু স্থানে কনৌজ অবস্থিত ছিল। সেই কারণে জলপথ বা স্থলপথ ধরে কনৌজ থেকে সেনা অভিযান করা ছিল অনেক সহজ ও নিরাপদ। তাই তিনটি শক্তিই কনৌজকে দখল করে সেখানে একটি শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলতে চেয়েছিল।

(v) মর্যাদা বৃদ্ধি: হর্ষ-পরবর্তী যুগে উত্তর ভারত বা দক্ষিণ ভারতের রাজারা কনৌজ দখল করে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে চেয়েছিল।

• ফলাফল: অষ্টম শতাব্দী থেকে প্রায় দুশো বছর ধরে চলা এই ত্রিশক্তি সংগ্রামে পাল, গুর্জর-প্রতিহার এবং রাষ্ট্রকূটদের মধ্যে কেউই স্থায়ীভাবে কনৌজের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি।

• এই সংগ্রামের ফলে তিনটি বংশেরই শক্তি শেষ হয়ে যায়। প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হয়।

• দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধ হবার ফলে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য নষ্ট হয় এবং বিদেশিদের আক্রমণের পথ প্রশস্ত হয়।

(চ) ইসলাম ধর্মের প্রচারের আগে আরব দেশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। ইসলাম ধর্মের প্রচার আরব দেশে কী বদল এনেছিল?

উত্তর : ইসলাম ধর্ম প্রচারের আগে আরব দেশ :

(i) অবস্থান : ভারতের পশ্চিমে আরব সাগর পেরিয়ে এশিয়া

মহাদেশের পশ্চিম ভাগে আরব উপদ্বীপ অবস্থিত। এর পশ্চিমে লোহিত সাগর, দক্ষিণে আরব সাগর এবং পূর্বদিকে পারস্য উপসাগর।

(ii) গুরুত্বপূর্ণ শহর: মক্কা ও মদিনা আরবের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।

(iii) বেদুইন: আরবের যাযাবর মানুষদের বেদুইন বলা হত। তারা উট পালন করত।

(iv) প্রধান খাদ্য: আরব বেদুইনদের প্রধান খাদ্য ছিল খেজুর এবং উটের দুধ।

(v) জীবিকা: খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের শুরুতে, কিছু কিছু আরব উপজাতির প্রধান জীবিকা ছিল ব্যাবসা।

(vi) উপজাতি সংঘর্ষ দুটি বাণিজ্যপথের সংযোগস্থলে মক্কা শহর অবস্থিত। তাই মক্কা শহর দখল করা নিয়ে উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকত।

• ইসলাম ধর্মের প্রচারে আরব দেশের বদল: খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে আরব উপদ্বীপে ইসলাম ধর্মের জন্ম হয়। ‘হজরত মহম্মদ’ ছিলেন ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক। ইসলাম ধর্মের অনুগামীরা ‘মুসলমান’ নামে পরিচিত। হজরত মহম্মদ মক্কা ও মদিনা সহ আরবের বিরাট ভূখণ্ডে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন।

• হজরত মহম্মদের ইসলাম ধর্ম প্রচারের ফলে আরব উপজাতিদের মধ্যে ধর্মীয় বিভেদ বন্ধ হয়, ঐক্য গড়ে ওঠে। হজরত মহম্মদের মৃত্যুর পূর্বেই আরবের মূল ভূখণ্ডে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল।

কল্পনা করে লেখো। (১০০-১৫০টি শব্দের মধ্যে)

(ক) মনে করো তুমি রাজা শশাঙ্কের আমলের একজন পর্যটক। তুমি তাম্রলিপ্ত থেকে কর্ণসুবর্ণ যাচ্ছো। পথে তুমি কোন্ কোন্ অঞ্চল ও নদী দেখতে পাবে? কর্ণসুবর্ণে গিয়েই বা তুমি কী দেখবে?

উত্তর: সূচনা: আমি একজন চৈনিক পর্যটক, নাম চুয়াং লিং। তাম্রলিপ্ত থেকে শশাঙ্কের রাজধানী কর্ণসুবর্ণের দিকে যাচ্ছি।

• পথের বিবরণ: ১। তাম্রলিপ্ত তাম্রলিপ্ত দক্ষিণ রাঢ় ‘অঞ্চলে অবস্থিত। প্রাচীনকালের একটি বিখ্যাত বন্দর।

২। কর্ণসুবর্ণ: গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের রাজধানী হল কর্ণসুবর্ণ।

• পথ: তাম্রলিপ্ত থেকে কর্ণসুবর্ণে যাবার দুটি পথ আছে। (i) স্থলপথ, (ii) জলপথ।

আমি স্থলপথে যাচ্ছি। স্থলপথ ধরে তাম্রলিপ্ত থেকে কর্ণসুবর্ণ যেতে অনেক অঞ্চল ও নদনদী পেরিয়ে যেতে হবে।

• অঞ্চল:

• দক্ষিণ রাঢ় ও উত্তর রাঢ় তাম্রলিপ্ত দক্ষিণ রাঢ় অঞ্চলে অবস্থিত, আর কর্ণসুবর্ণ উত্তর রাঢ় অঞ্চলে অবস্থিত। তাই তাম্রলিপ্ত থেকে কর্ণসুবর্ণে যেতে হলে আমাকে সমগ্র দক্ষিণ রাঢ় ও উত্তর রাঢ় অঞ্চলের কিছু অংশ পেরিয়ে যেতে হবে।

• নদনদী: তাম্রলিপ্ত রূপনারায়ণ বঙ্গোপসাগরের মোহনার দিকে অবস্থিত। তাই রূপনারায়ণের তীর থেকে যাত্রা শুরু করে দামোদর, অজয় নদ পেরিয়ে ময়ূরাক্ষী নদীর তীরে এসে পৌঁছলাম। ময়ূরাক্ষীর পাশ ধরে এগিয়ে গিয়ে পৌঁছলাম কর্ণসুবর্ণ নগরে।

খ) মনে করো যে তুমি কৈবর্ত নেতা দিব্য। পাল রাজাদের বিরুদ্ধে তোমার অভিযোগগুলি কী কী থাকবে? কীভাবেই বা তুমি তোমার বিদ্রোহী সৈন্যদল গঠন ও পরিচালনা করবে তা লেখো।

উত্তর: আমি বরেন্দ্রভূমির এক সামন্ত। আমার নাম দিব্য। পাল রাজাদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজকর্মের জন্য আমি বিদ্রোহ করতে বাধ্য হয়েছি।

• পাল রাজাদের বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ: (i) পালরাজা দ্বিতীয় মহীপাল অত্যন্ত অত্যাচারী ও অযোগ্য শাসক। (ii) তিনি তাঁর দুই ভাই দ্বিতীয় শূরপাল ও রামপালকে কারাগারে বন্দি করে ক্ষমতা দখল করেছেন। (iii) আমাদের জীবিকা হল মাছ ধরা। বৌদ্ধধর্মাবলম্বী দ্বিতীয় মহীপাল মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তাহলে আমরা সংসার চালাব কি করে?

• সৈন্যদল গঠন ও পরিচালনা: সেনাদল গঠন করে তাদের আমাদের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি জানাব।

• উদ্দেশ্য: (i) আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য অত্যাচারী ও অযোগ্য দ্বিতীয় মহীপালকে সিংহাসনচ্যুত করা। (ii) দ্বিতীয় মহীপালকে সিংহাসনচ্যুত করার পর আমরাই শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করার দায়িত্ব গ্রহণ করব।

• কর্মসূচী: দ্বিতীয় মহীপালের এই অনৈতিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের সেনাদল গঠন করতে হবে। তাদের কয়েকটি দলে ভাগ করতে হবে এবং বিশ্বস্ত সেনাপতির উপর দায়িত্ব দিতে হবে।

• সংবাদ আদানপ্রদান করা এবং আমাদের মধ্যে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করছে কি না সে দিকে লক্ষ রাখার জন্য কয়েকজন গুপ্তচর নিয়োগ করতে হবে।

• সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে আমরা দ্বিতীয় মহীপালকে আক্রমণ করব।

(ঘ) মনে করো তুমি বাংলায় তুর্কি আক্রমণের দিন দুপুরবেলায় নদিয়া শহরের রাজপথ দিয়ে যাচ্ছিলে, সেই সময় কী দেখলে?

উত্তর: আমি একজন ব্যবসায়ী, নাম চন্দ্র বণিক। ব্যাবসার কাজে আমি নদিয়া শহরের রাজপথ দিয়ে যাচ্ছিলাম।

মক্কা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল

• সময়কাল: তখন দুপুরবেলা। রাস্তাঘাটে লোকজন বিশেষ নেই। হঠাৎ দেখলাম আমার পাশ দিয়ে ষোলো-সতেরো জন অশ্বারোহী রাজবাড়ির দিকে চলে গেল। ভাবলাম ঘোড়া ব্যবসায়ীরা তো ঘোড়া বিক্রি করতে আসে, তারাই হয়তো ঘোড়া বিক্রি করতে এসেছে। কিছুদূর যাবার পর আবার একদল অশ্বারোহী চলে গেল।

• পরবর্তী ঘটনার বিবরণ: আমি রাজবাড়ির কাছাকাছি এসে দেখলাম রাস্তার লোকজন দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়ে যাচ্ছে। তাদের মুখে খবর পেলাম ওই অশ্বারোহী বাহিনী রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করেছে। ওরা ঘোড়া ব্যবসায়ী নয়, তুর্কি সেনাবাহিনী। তুর্কি সেনারা আসছে শুনে রাজা লক্ষ্মণ সেন নদীপথে পূর্ববঙ্গের দিকে পালিয়ে গেছেন। আরও শুনলাম, ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে অনেক তুর্কি সেনা নদিয়ায় ঢুকে পড়েছে। আমিও বাড়ির দিকে ছুটতে শুরু করলাম। তবে লক্ষ্মণ সেন পালিয়ে যাওয়ায় তুর্কিরা বিনা যুদ্ধে নদিয়া দখল করে নেওয়ায় আর গণ্ডগোল বিশেষ হল না। শেষ পর্যন্ত আমিও বাড়ি পৌঁছে গেলাম।

৪.১ প্রাচীন বাংলার ‘বঙ্গ’ অঞ্চলটির ভৌগোলিক অবস্থানের বর্ণনা দাও। অথবা, প্রাচীন বাংলার বঙ্গ বলতে কোন্ অঞ্চলটিকে বোঝানো হত?

উত্তরঃ ভূমিকা: প্রাচীন বাংলার জনপদগুলির একটি অন্যতম জনপদ ছিল ‘বঙ্গ’।

• বঙ্গের ভৌগোলিক অবস্থান: প্রাচীনকালে পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর মাঝে ত্রিভুজের মতো দেখতে বদ্বীপ এলাকাকে ‘বঙ্গ’ বলা হত। সম্ভবত ভাগীরথীর পশ্চিম দিকের এলাকাও এর মধ্যে ছিল।

• বঙ্গের সীমানা বৃদ্ধি পরবর্তীকালে ভাগীরথীর পশ্চিম দিকে ‘রাঢ়’ এবং ‘সুপ্ন’ নামে দুটো আলাদা অঞ্চলের উৎপত্তি ঘটলে বঙ্গের সীমানা বৃদ্ধি পায়।

• একাদশ-দ্বাদশ শতকের বঙ্গ খ্রিস্টীয় একাদশ-দ্বাদশ শতকে ‘বঙ্গ’ বলতে এখনকার বাংলাদেশের ঢাকা-বিক্রমপুর, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলকে বোঝানো হত।

৪.২ প্রাচীন বাংলার রাঢ় এবং সূক্ষ্ম বলতে কী বোঝো?

উত্তর: রাঢ় অঞ্চলের ভাগ: প্রাচীন বাংলার রাঢ় বা লাঢ় অঞ্চলের দুটি ভাগ ছিল-উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণ রাঢ়।

• উত্তর রাঢ়: জৈনদের প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে উত্তর রাঢ় ছিল ‘বজ্জভূমি’ বা ‘বজ্রভূমি’।

• দক্ষিণ রাঢ় দক্ষিণ রাঢ় ছিল ‘সুক্তভূমি বা ‘সুগ্মভূমি’ এলাকা।

• উত্তর রাঢ় বর্তমানের মুর্শিদাবাদ জেলার পশ্চিম ভাগ, বীরভূম জেলা, সাঁওতাল পরগনার একাংশ এবং বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমার উত্তর ভাগ ছিল উত্তর রাঢ় অঞ্চল।

• দক্ষিণ রাঢ়: দক্ষিণ রাঢ় বলতে আজকের হাওড়া, হুগলি এবং বর্ধমান জেলার বাকি অংশ এবং অজয় ও দামোদর নদের মধ্যবর্তী বিরাট এলাকাকে বোঝানো হত। এই অঞ্চলটি ছিল বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী এলাকা। মহাকাব্যের গল্পে এবং কালিদাসের কাব্যে আছে

যে ভাগীরথী এবং কাঁসাই (কংসাবতী) নদীর মাঝে সমুদ্র পর্যন্ত বিরাট এলাকা এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

৪.৩ কোন্ কোন্ প্রাচীন গ্রন্থে শশাঙ্ককে বৌদ্ধবিদ্বেষী বলে নিন্দা করা হয়েছে? শশাঙ্ককে কেন বৌদ্ধবিদ্বেষী বলা হয়েছে?

উত্তর: গ্রন্থের নাম: শশাঙ্ককে বৌদ্ধবিদ্বেষী বলে নিন্দা করা হয়েছে- (i) ‘আর্যমঞ্জুশ্রীমূলকল্প’ নামক বৌদ্ধ গ্রন্থে। (ii) সুয়ান জাং (হিউয়েন সাঙ)-এর ভ্রমণবৃত্তান্ত ‘সি-ইউ-কি’ গ্রন্থে। (iii) হর্ষবর্ধনের সভাকরি বাণভট্টের ‘হর্ষচরিত’ গ্রন্থে।

• শশাঙ্ককে বৌদ্ধবিদ্বেষী বলার কারণ: শশাঙ্ক ধর্মীয় বিশ্বাসে ছিলেন শৈব বা শিবের উপাসক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয় যে-

(i) তিনি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যা করেছিলেন। (ii) তিনি বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মীয় স্মারক ধ্বংস করেছিলেন।

এই কারণে সুয়ান জাং (হিউয়েন সাঙ), বাণভট্ট তাঁকে ‘বৌদ্ধবিদ্বেষী’ বলে নিন্দা করেছেন।

৪.৫ বাংলায় পাল রাজাদের ক্ষমতা কোন্ সময় বেড়েছিল এবং কোন্ সময় কমেছিল তা উল্লেখ করো।

উত্তর: ভূমিকা : ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে গোপাল বাংলায় পাল বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে ধর্মপাল, দেবপাল, প্রথম মহীপাল, রামপাল প্রভৃতি পালরাজারা বাংলায় শাসন করেন।

• ক্ষমতা বৃদ্ধি: পাল শাসনে প্রথম একশো বছর (খ্রিস্টীয় অষ্টম • শতকের মধ্যভাগ থেকে নবম শতকের মধ্যভাগ) অর্থাৎ গোপালের সময় থেকে দেবপালের সময় পর্যন্ত পাল রাজাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

• ক্ষমতা হ্রাস: পাল রাজত্বের পরবর্তী একশো তিরিশ বছর ধরে অর্থাৎ খ্রিস্টীয় নবম শতকের মধ্যভাগ থেকে দশম শতকের শেষভাগ পর্যন্ত পালদের ক্ষমতা কমতে থাকে।

• পুনরায় বৃদ্ধি: আবার দশম শতকের শেষ দিকে পালেদের ক্ষমতা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছিল।

৪.৬ তুমি কি মনে করো যে ত্রিশক্তি সংগ্রাম শুধু রাজনৈতিক কারণেই হয়েছিল? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দেখাও।

উত্তরঃ ভূমিকা: উত্তরাপথের কনৌজকে কেন্দ্র করে বাংলার পাল, পশ্চিম ভারতের গুর্জর-প্রতিহার এবং দক্ষিণ ভারতের রাষ্ট্রকূট বংশের মধ্যে যে সংগ্রাম চলেছিল। তা ‘ত্রিশক্তি সংগ্রাম’ নামে পরিচিত।

• আমার মতামত: আমার মনে হয় শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণ নয়, অর্থনৈতিক কারণেও ‘ত্রিশক্তি সংগ্রাম’ হয়েছিল।

(i) কনৌজ অঞ্চলের নদীভিত্তিক বাণিজ্য এবং খনিজ দ্রব্য আর্থিক

দিক থেকে লোভনীয় ছিল।

(ii) কনৌজ ছিল গাঙ্গেয় উপত্যকার কৃষি সম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চল।

৪.৭ চোল রাজ্য সম্প্রসারণে প্রথম রাজেন্দ্র চোলের ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তর: ভূমিকা: প্রথম রাজরাজের পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র চোল (১০১৬-১০৪৪ খ্রি.) ছিলেন চোল বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক।

(i) সামরিক অভিযান:

• প্রথম রাজেন্দ্র চোল কল্যাণীর চালুক্যশক্তিকে পরাজিত করেন।

• বাংলার পালবংশের বিরুদ্ধে এক অভিযান চালিয়ে গঙ্গা নদীর তীরে পালরাজাদের হারিয়ে দেন। এরপর তিনি ‘গঙ্গাইকোন্ডচোল’ উপাধি গ্রহণ করেন।

(ii) নৌবাহিনী গঠন:

• পিতার আদর্শ অনুসরণ করে তিনি এক শক্তিশালী ও দক্ষ নৌবাহিনী গঠন করেন।

• এই দক্ষ নৌবাহিনীর সাহায্যে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতীয় বাণিজ্যকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন।

৪.৮ সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য কী ছিল? 

উত্তর: ভূমিকা : গজনির সুলতান মাহমুদ আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় সতেরো বার উত্তর ভারত আক্রমণ করেছিলেন।

উদ্দেশ্য: সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা একমত নন।

(i) ধনসম্পদ লুণ্ঠন করা: মাহমুদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় মন্দিরগুলি থেকে ধনসম্পদ লুণ্ঠন করা। এখানে কোনো স্থায়ী সাম্রাজ্য তিনি

প্রতিষ্ঠা করতে চাননি।

(ii) মধ্য এশিয়ায় সাম্রাজ্য স্থাপন: মধ্য এশিয়ায় সুবিস্তৃত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে তিনি ভারতের ধনসম্পদ লুণ্ঠন করেন।

(iii) ধর্মীয় উন্মাদনা: অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, ধর্মীয় উন্মাদনার জন্য তিনি ভারত অভিযানে এসেছিলেন, তাই তিনি হিন্দু

মঠ-মন্দিরগুলির লুণ্ঠন করতেন।

৪.১০ বখতিয়ার খলজি কীভাবে নদিয়া জয় করেন?

উত্তর: • ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজের লেখা “তবকাত-ই-নাসিরি” গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, বখতিয়ায় খলজি এবং তাঁর তুর্কি বাহিনী ঘোড়া ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে নদিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন।

• কথিত আছে যে, বখতিয়ার খলজি মাত্র সতেরো জন সৈন্য নিয়ে নদিয়ায় প্রবেশ করেছিলেন। তবে এই ধারণা সঠিক নয়। কারণ সেই সময় উত্তর ভারত থেকে বাংলায় আসার একাধিক রাস্তা ছিল। সাধারণত বিহার থেকে বাংলায় আসার সময়ে রাজমহল পাহাড়ের উত্তর দিকের পথ ধরেই আসা হত। তাই রাজা লক্ষ্মণ সেন ওই পথে তুর্কি আক্রমণ ঠেকানোর জন্য সৈন্য মোতায়েন করেছিলেন। কিন্তু বখতিয়ার খলজি তাঁর সৈন্যদের অনেকগুলি ছোটো ছোটো দলে ভাগ করে ঝাড়খণ্ডের দুর্গম জঙ্গলের মধ্য দিয়ে বাংলায় এসেছিলেন।

• অরক্ষিত রাজধানীতে তুর্কি সেনারা ঢুকে পড়েছে শুনে বৃদ্ধ লক্ষ্মণ সেন পূর্ববঙ্গে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। ফলে বখতিয়ার খলজি বিনা যুদ্ধেই নদিয়া দখল করেন এবং ‘লক্ষ্মণাবতীতে’ রাজধানী স্থাপন করেন।

৫১ বঙ্গ, বাংলা, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের নাম কীভাবে হয়েছে?

উত্তর: ভূমিকা: বর্তমানে আমরা ভারতের যে অংশে বসবাস করি, তার নাম পশ্চিমবঙ্গ। প্রাচীনকাল থেকে এই অঞ্চল ‘বঙ্গ’, ‘বাংলা’, ‘বেঙ্গালা’ প্রভৃতি বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। বিভিন্ন গ্রন্থ, লেখক, বিদেশি ভ্রমণকারী ও বণিকদের বিবরণ থেকে এইসব নামকরণের কথা জানতে পারি।

• বঙ্গ নামের উদ্ভব: (i) ঋক্কেদের ঐতরের আরণ্যক: ‘বঙ্গ’ নামটির প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ‘ঋবেদের ঐতরেয় আরণ্যক’-এ। তখন ‘বঙ্গ’ ছিল প্রাচীন বাংলার জনপদগুলির মধ্যে একটি বিভাগ।

(ii) মহাভারত: ‘মহাভারতে’ বঙ্গ, পুন্ড্র, সুপ্ন ও তাম্রলিপ্তকে আলাদা আলাদা রাজ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

(iii) অর্থশাস্ত্র: মৌর্যযুগে কৌটিল্যের ‘অর্থশাস্ত্রে’ ‘বঙ্গ’ নামের উল্লেখ আছে।

(iv) রঘুবংশম: কালিদাসের লেখা ‘রঘুবংশম’ কাব্যেও ‘বঙ্গ’ ও

‘সুঘ্ন’ নাম দুটির উল্লেখ পাওয়া যায়।

(v) মিনহাজ-ই-সিরাজের লেখা সুলতানি যুগের ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজের লেখাতেও ‘বঙ্গ’ নামের উল্লেখ আছে।

• সুবা বাংলা: মুঘল আমলের ঐতিহাসিক আবুল ফজল তাঁর ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থে বঙ্গকেই ‘সুবা বাংলা’ বলে অভিহিত করেছেন।

• বেঙ্গালা, বাংলাদেশ ষোড়শ, সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে ইউরোপীয় ভ্রমণকারী ও বণিকরা এই দেশের নাম দিয়েছিলেন ‘বেঙ্গালা’। স্বাধীনতার আগে এই ভূখণ্ড ‘বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ’ বা ‘বেঙ্গল’ নামে পরিচিত ছিল।

• পশ্চিমবঙ্গ ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সময় বাংলার পশ্চিমভাগের নাম হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ’। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ স্বাধীন ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য।

• বাংলাদেশ রাষ্ট্র: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব বাংলা চলে যায়

নতুন দেশ পাকিস্তানে। পরে তার নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান’। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মুক্তি যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন দেশ হয়, তার নতুন নাম হয় ‘বাংলাদেশ’।

• সিদ্ধান্ত: প্রাচীনকালেই ‘বঙ্গ’ নামের উৎপত্তি হয়েছে। ‘বঙ্গ’ নামটির বিবর্তন থেকেই অন্যান্য নামগুলি এসেছে। বিভিন্ন যুগে এই অঞ্চলকে ভিন্ন ভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়েছে।

• বিভিন্ন গ্রন্থের নাম ও রচয়িতাদের নাম :

Fil In The Blanks

১। শূন্যস্থান পূরণ করো।

(ক) ‘বঙ্গ’ নামের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়— আরণ্যক/আইন-ই-আকবরি/অর্থশাস্ত্র) গ্রন্থে। (ঐতরের

উত্তর: ঐতরের আরণ্যক

(খ) প্রাচীন বাংলার সীমানা তৈরি হয়।— এবং (ভাগীরথী, পদ্মা, মেঘনা/গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র/সিন্ধু/ কৃষ্ণা, কাবেরী, গোদাবরী) নদী দিয়ে।

উত্তর: ভাগীরথী, পদ্মা, মেঘনা

(গ) ‘সকলোত্তরপথনাথ’ উপাধি ছিল— (শশাঙ্কের/ হর্ষবর্ধনের/ ধর্মপালের)।

উত্তর: হর্ষবর্ধনের

(ঘ) কৈবর্ত বিদ্রোহের একজন নেতা ছিলেন— রামপাল/প্রথম মহীপাল)। (ভীম/

উত্তর: ভীম

(ঙ) সেন রাজা— (বিজয় সেনের/বল্লাল সেনের/ লক্ষ্মণ সেনের) আমলে বাংলায় তুর্কী আক্রমণ ঘটে।

উত্তর: লক্ষ্মণ সেনের

(চ) সুলতানি যুগের একজন ঐতিহাসিক ছিলেন—, (মহম্মদ ঘুরি/মিনহাজ-ই সিরাজ/ইখতিয়ারউদ্দিন/ মহম্মদ বখতিয়ার খলজি)।

উত্তর: মিনহাজ-ই সিরাজ

Ture And False

২.১ ইউরোপীয় ভ্রমণকারী ও বণিকরা ‘বেঙ্গালা’ নামটি দিয়েছিলেন।

উত্তর: ঠিক।

২.২ প্রাচীন বাংলার প্রধান অঞ্চলগুলির নাম সেই অঞ্চলে বসবাসকারী অধিবাসীদের নাম অনুসারে রাখা হত।

উত্তর: ঠিক।

২.৩ পালযুগে ‘পুন্ড্রবর্ধন’ ছিল একটি ভুক্তি বা শাসন-এলাকা।

উত্তর: ভুল। সঠিক উত্তর: গুপ্তযুগে “পুণ্ড্রবর্ধন” ছিল একটি ভুক্তি বা শাসন-এলাকা।

২.৪ পদ্মা ও ভাগীরথী নদীর মাঝে ত্রিভুজের মতো দেখতে বদ্বীপ এলাকাকে “বঙ্গ” বলা হত।

উত্তর: ঠিক।

২.৫ “দক্ষিণ রাঢ়” ছিল আরব সাগরের নিকটবর্তী এলাকা।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: দক্ষিণ রাঢ় ছিল বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী এলাকা।

 ২.৬ বাংলাদেশের চট্টগ্রামের উপকূল অঞ্চল প্রাচীন যুগে ‘হরিকেল’ নামে পরিচিত ছিল।

উত্তর: ঠিক।

২.৭ শশাঙ্কের আমলে বাণিজ্যের গুরুত্ব কমে যাওয়ার ফলে নগরের গুরুত্বও কমে যায়।

উত্তর: ঠিক।

২.৮ শশাঙ্কের মৃত্যুর পরের সময়কাল বাংলার ইতিহাসে মাৎস্যন্যায়ের যুগ নামে পরিচিত।

উত্তর: ঠিক।

২.৯ গোপালের উত্তরাধিকারী ধর্মপাল ত্রিশক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

উত্তর: ঠিক।

২.১০ সেনরা বংশগতভাবে প্রথমে ছিলেন ব্রাহ্মণ, পরে তাঁরা ক্ষত্রিয় হয়ে যান।

উত্তর: ঠিক।

২.১১ দাক্ষিণাত্যে কর্ণাটকের চালুক্যশক্তি রাষ্ট্রকূটদের অধীন ছিল।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: দাক্ষিণাত্যে রাষ্ট্রকূটরা কর্ণাটকের চালুক্যশক্তির অধীন ছিল।

২.১২ রাজা মুট্টাবাইয়াকে সরিয়ে বিজয়ালয় চোল রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।

উত্তর: ঠিক।

২.১৩ ভারতের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম ভাগে আরব উপদ্বীপ অবস্থিত।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: ভারতের পশ্চিমে আরব সাগর পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশের পশ্চিম ভাগে আরব উপদ্বীপ অবস্থিত।

২.১৪ খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপে ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব হয়।

উত্তর: ভুল।

সঠিক উত্তর: খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপে ইসলাম ধর্মের জন্ম হয়।

২.১৫ বখতিয়ার খলজির আক্রমণের সময় বাংলার শাসক ছিলেন লক্ষ্মণ সেন।

উত্তর: ঠিক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *