Class 7 Chapter 6 Solution
নগর, বণিক ও বাণিজ্য
MCQs Question Answer
১.১ ‘নগর’ শব্দটা এসেছে- ভাষা থেকে
(ক) সংস্কৃত ✓
(খ) ফারসি
(গ) আরবি
(ঘ) বাংলা
১.২ দিল্লি শহর গড়ে ওঠার ভিত্তি ছিল-
(ক) গঙ্গা নদী
(খ) যমুনা নদী ✓
(গ) ব্রহ্মপুত্র নদ
(ঘ) সিন্ধু নদ
১.৩ মধ্যযুগে দিল্লি শহরের উৎপত্তি ও বিকাশের পর্যায় ছিল-
(ক) একটি
(খ) দুটি ✓
(গ) তিনটি
(ঘ) চারটি
১.৪ খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকের শেষে যমুনার তীরে কিলোঘড়ি প্রাসাদ তৈরি করেছিলেন-
(ক) গিয়াসউদ্দিন বলবন
(খ) জালালউদ্দিন খলজি
(গ) কায়কোবাদ ✓
(ঘ) কুতুবউদ্দিন আইবক
১.৫ গিয়াউদ্দিন তুঘলক অনুচরদের নিয়ে বসবাসের জন্য তৈরি করেছিলেন-
(ক) সিরি
(খ) শাহজাহানাবাদ
(গ) দিল্লি
(ঘ) তুঘলকাবাদ ✓
১.৬ মুঘল সম্রাট শাহজাহান শাহজাহানাবাদ তৈরি করেছিলেন-
(ক) ষোড়শ শতকে
(খ) সপ্তদশ শতকে ✓
(গ) অষ্টাদশ শতকে
(ঘ) উনবিংশ শতকে
১.৭ সুলতান ইলতুৎমিসের আমলে দিল্লি শহর গড়ে ওঠার সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন-
(ক) ইসামি ✓
(খ) আবুল ফজল
(গ) আলবেরুনি
(ঘ) মিনহাজ-ই-সিরাজ
১.৯ ‘হনুজ দিল্লি দূর অন্ত’- কথাটি বলেছিলেন-
(ক) খাজা মইনউদ্দিন চিশতিখ
(খ) শেখ সুরহাবর্দি
(গ) নিজামউদ্দিন আউলিয়া ✓
(ঘ) সোলিম চিশতি
১.১০ যমুনা নদীর পাড় বরাবর ফিরোজাবাদ শহর তৈরি করেন-
(ক) গিয়াসউদ্দিন তুঘলক
(খ) ফিরোজ শাহ তুঘলক ✓
(গ) মহম্মদ বিন তুঘলক
(ঘ) আলাউদ্দিন খলজি
১.১১ দিল্লি শহরের প্রধান সমস্যা ছিল-
(ক) খাদ্যের অভাব
(খ) অর্থের অভাব
(গ) কাজের অভাব
(ঘ) জলের অভাব ✓
১.১২ দিল্লি শহরের জল সরবরাহের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল-
(ক) নদী
(খ) হৌজ বা তালাও ✓
(গ) খাল
(ঘ) নলকূপ
১.১৩ ‘হৌজ-ই-শামসি’ বা ‘হৌজ-ই-সুলতানি’ খনন করেছিলেন-
(ক) ইলতুৎমিস ✓
(খ) গিয়াসউদ্দিন বলবন
(গ) আলাউদ্দিন খলজি
(ঘ) গিয়াসউদ্দিন তুঘলক
১.১৪ দিল্লি ও দৌলতাবাদের মধ্যে পথ বানানো হয়-
(ক) ইলতুৎমিশের সময়ে
(খ) শের শাহের সময়ে
(গ) মহম্মদ বিন তুঘলকের সময়ে ✓
(ঘ) ফিরোজ শাহ তুঘলকের সময়ে
১.১৫ সুলতানি শাসনের সাড়ে তিনশো বছরে দিল্লির শাসকরা তাঁদের শাসনকেন্দ্র বদলিয়েছেন-
(ক) সাতবার
(খ) নবার
গ) দশবার
(ঘ) এগারোবার ✓
১.১৬ সুলতানদের দিল্লি টিকেছিল-
(ক) একশো বছর
(খ) দু’শো বছর
(গ) তিনশো বছর ✓
(ঘ) চারশো বছর
১.১৭ শের শাহের শাসনকালে তাঁর রাজধানী ছিল যমুনার পশ্চিমদিকে অবস্থিত-
(ক) কিলা রাই পিথোরা শহরে
(খ) জাহানপনাহ শহরে
(গ) কিলা-ই-কুহনা শহরে ✓
(ঘ) আগ্রা শহরে
১.১৮ গঙ্গা ও যমুনার সন্ধিস্থলে বানানো হয়েছিল-
(ক) এলাহাবাদ দুর্গ ✓
(খ) আটক দুর্গ
(গ) রোহটাস দুর্গ
(ঘ) অসিরগড় দুর্গ
১.১৯ ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে ‘শাহজাহানাবাদ’ শহর তৈরি করেছিলেন-
(ক) শের শাহ
(খ) আকবর
(গ) শাহজাহান ✓
(ঘ) ঔরঙ্গজেব
১.২০ শাহজাহানাবাদ শহরের সবচেয়ে বড়ো ও সুন্দর বাড়িগুলোকে বলা হত-
(ক) মকান
(খ) হাভেলি ✓
(গ) কোঠি
(ঘ) কোঠরি
১.২১ ‘চিরাগ-ই-দিল্লি’ বা ‘দিল্লির প্রদীপ’ বলা হত-
(ক) নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে
(খ) সেলিম চিশতিকে
(গ) শেখ নাসিরউদ্দিনকে ✓
(ঘ) খাজা মইনউদ্দিন চিশতিকে
১.২২ শাহজাহানাবাদে একই পেশার মানুষ একসাথে থাকত-
(ক) নগরে
(খ) কসবায়
(গ) নিগমে
(ঘ) মহল্লায় ✓
১.২৩ শাহজাহানাবাদের প্রধান রাজপথ ছিল-
(ক) দুটি ✓
(খ) তিনটি
(গ) চারটি
(ঘ) পাঁচটি
১.২৪ খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ভারতে ব্যাবসা-বাণিজ্যের যাতায়াতের মাধ্যম ছিল-
(ক) রেলপথ ও আকাশপথ
(খ) রেলপথ ও জলপথ
(গ) আকাশপথ ও সড়কপথ
(ঘ) সড়কপথ ও জলপথ ✓
১.২৫ ভারতে প্রথম কাগজ তৈরি করা শুরু হয়-
(ক) সুলতানি যুগে ✓
(খ) মুঘল যুগে
(গ) গুপ্তযুগে
(ঘ) ব্রিটিশ যুগে
১.২৬ সুলতানি যুগে রুপোর মুদ্রার নাম ছিল-
(ক) রূপি
(খ) দাম
(গ) তঙ্কা ✓
(ঘ) জিতল
১.২৭ মুঘল আমলে ভারতের প্রধান বন্দর ছিল-
(ক) তাম্রলিপ্ত
(খ) কালিকট
(গ) ক্যাম্বে
(ঘ) সুরাট ✓
১.২৮ সড়কপথে ভারতীয় সামগ্রীর প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল-
(ক) গুজরাট
(খ) মালাবার
(গ) মুলতান ✓
(ঘ) মহারাষ্ট্র
১.২৯ আলেকজান্দ্রিয়া, ইরাক ও চিন থেকে আসত-
(ক) ঘোড়া
(খ) ব্রোকেড ও রেশম ✓
(গ) কাচের তৈরি সামগ্রী
(ঘ) মশলা
১.৩০ ইউরোপ থেকে জলপথে প্রথম ভারতে আসে-
(ক) ওলন্দাজরা
(খ) ফরাসিরা
(গ) ইংরেজরা
(ঘ) পোর্তুগিজরা
১.৩১ কালিকট বন্দরটি ছিল-
(ক) বঙ্গোপসাগরের তীরে
(খ) আরব সাগরের তীরে ✓
(গ) ভারত মহাসাগরের তীরে
(ঘ) প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে
১.৩২ ইংরেজ বণিকরা প্রথমে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেছিল-
(ক) সুরাটে
(খ) কালিকটে
(গ) মসুলিপট্টনমে ✓
(ঘ) আগ্রায়
১.৩৩ ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের দূত টমাস রো যে মুঘল সম্রাটের রাজসভায় এসেছিলেন তিনি হলেন-
(ক) আকবর
(খ) জাহাঙ্গির ✓
(গ) শাহজাহান
(ঘ) ঔরঙ্গজেব
১.৩৪ মুঘল বাদশাহ শাহজাহান দাস ব্যাবসা করার অপরাধে হুগলি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন-
(ক) ইংরেজদের
(খ) ফরাসিদের
(গ) ডাচদের
(ঘ) পোর্তুগিজদের ✓
১.৩৫ ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গড়ে উঠেছিল-
(ক) ১৫০৫ খ্রিস্টাব্দে
(খ) ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে ✓
(গ) ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে
(ঘ) ১৬৬৪ খ্রিস্টাব্দে
১.৩৬ বাংলায় ফরাসিদের ঘাঁটি ছিল-
(ক) কলকাতায়
(খ) ব্যান্ডেলে
(গ) চন্দননগরে ✓
ঘ) শ্রীরামপুরে
১.৩৭ মুঘল আমলে ভারতীয় অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল-
(ক) শিল্প
(খ) ব্যাবসা-বাণিজ্য
(গ) কৃষি ✓
Short Question Answer
(ক) তুমি যদি সুলতানি আমলে দিল্লির একজন বাসিন্দা হও তাহলে কী কী ভাবে তুমি দৈনন্দিন প্রয়োজনে জল পেতে পারো?
উত্তর: ভূমিকা: আমি সুলতানি আমলে দিল্লির একজন বাসিন্দা। আমি বিভিন্ন উপায়ে দৈনন্দিন প্রয়োজনের জল পেতে পারি।
Long Question Answer
(ক) কী কী ভাবে মধ্যযুগের ভারতে শহর গড়ে উঠেছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ‘শহর’ কথাটা ফারসি শব্দ থেকে এসেছে। মধ্যযুগে অর্থাৎ সুলতানি ও মুঘল যুগে ভারতে বাণিজ্যকেন্দ্র, তীর্থকেন্দ্র, শিল্পকেন্দ্র ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন শহর গড়ে উঠতে থাকে।
(i) বাণিজ্যকেন্দ্র: মধ্যযুগে কিছু শহর গড়ে উঠেছিল আর্থিক লেনদেন ও ব্যাবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে। যেমন-সুরাট, বুরহানপুর।
(ii) ধর্মীয় স্থান: মধ্যযুগে ধর্মীয় স্থান বা মন্দির-মসজিদকে ঘিরে কোনো কোনো শহর গড়ে উঠেছিল। যেমন-কাশী, নবদ্বীপ।
(iii) প্রশাসনিক কেন্দ্র: মধ্য যুগে রাজধানীকে কেন্দ্র করে অনেক শহর গড়ে উঠেছিল। সুলতান বা বাদশাহগণ অনেক অনেক নতুন নতুন রাজধানী শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যেমন- আগ্রা, ফতেহপুর সিকরি, শাহজাহানাবাদ।
(iv) শিল্পকেন্দ্র: বিভিন্ন শিল্পকে কেন্দ্র করে অনেক শহর গড়ে উঠেছিল। যেমন-ঢাকা, আহমেদাবাদ।
(খ) কেন সুলতানদের সময়কার পুরোনো দিল্লির আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়েছিল?
উত্তর: ভূমিকা: সুলতানি আমলে ভারতের প্রধান শাসনকেন্দ্র ছিল দিল্লি। পরবর্তীকালে সুলতানি আমলের প্রথম দিল্লি বা কুতুব দিল্লির আস্তে আস্তে ক্ষয় হয়েছিল।
• কারণ: খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ফিরোজ শাহ তুঘলক আরাবল্লির পাথুরে এলাকায় শহর তৈরি না করে যমুনা নদী পাড় বরাবর ফিরোজ শাহ কোটলাকে ঘিরে গড়ে তোলেন ফিরোজাবাদ শহর। এই পরিকল্পনার ফলে-
(i) শহরে জলের সমস্যা মিটে যায়।
(ii) নদীপথে বয়ে আনা জিনিসপত্র শহরের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সহজ হয় ও তার জন্য খরচও অনেক কমে যায়।
এইসব কারণে ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমল থেকে পুরোনো দিল্লির গুরুত্ব আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
(গ) কেন, কোথায় ‘শাহজাহানাবাদ’ শহরটি গড়ে উঠেছিল?
উত্তর: অবস্থান: মুঘল সম্রাট শাহজাহান আনুমানিক ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে যমুনা নদীর পশ্চিমে একটি উঁচু জায়গায় শাহজাহানাবাদ শহরটি গড়ে তুলেছিলেন। এটি দিল্লিতে সুলতানি আমলে যে শহরগুলি গড়ে উঠেছিল তাদের থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত ছিল।
• প্রতিষ্ঠার কারণ:
(i) যমুনা নদীর পাড় ভেঙে আগ্রা শহর ক্রমশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।
(ii) শহরের পথঘাট ঘিঞ্জি হয়ে পড়েছিল।
(iii) আগ্রার প্রাসাদ দুর্গ মুঘল বাদশাহ শাহজাহানের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট বড়ো ছিল না।
এইসব কারণে ‘শাহজাহানাবাদ’ শহরটি গড়ে উঠেছিল।
(ঘ) ইউরোপীয় কোম্পানির কুঠিগুলি কেমন ছিল?
উত্তর: খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতকে ইউরোপে অনেকগুলো বাণিজ্যিক কোম্পানি গড়ে ওঠে। এর মধ্যে পোর্তুগিজ, ইংরেজ, ডাচ বা ওলন্দাজ, ফরাসি, দিনেমার প্রমুখ বণিকরা ভারতে বাণিজ্য করতে এসেছিল। ভারতে আগত ইউরোপীয় বণিক কোম্পানি গুলি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কুঠি নির্মাণ করেছিল।
• কোম্পানির কুঠিগুলিতে ইউরোপীয় বণিকরা নিজেদের মতো করে বাড়িঘর তৈরি করত।
• কুঠিগুলিকে অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে দুর্গের মতো সুরক্ষিত করে রাখা হত।
• কুঠিগুলিতে মালের গুদাম থাকত।
(ঙ) মুঘল শাসকরা কীভাবে ব্যাবসা-বাণিজ্যে উৎসাহ দিতেন?
উত্তর মুঘল শাসকরা বাণিজ্য করতে বণিকদের উৎসাহ দিতেন।
(i) মুঘল সম্রাটগণ বণিকদের ব্যাবসা-বাণিজ্যের সুবিধার জন্য বিভিন্ন জায়গায় কুঠি বানানোর অনুমতি দিতেন। সম্রাটগণ বণিকদের নিরাপত্তা দিতেন। তা ছাড়া তাঁরা বণিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করতেন না।
(ii) তাঁরা বিভিন্ন জিনিসপত্রের ওপর শুল্ক ছাড় দিয়ে বণিকদের ব্যাবসাবাণিজ্য করতে সাহায্য করতেন।
(ii) মুঘল সম্রাটগণ প্রচুর রাস্তা নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছিলেন। বণিকদের মালপত্র নিয়ে বিশ্রাম করার জন্য রাস্তার ধারে-ধারে সরাইখানা বা বিশ্রামাগার তৈরি করে দিয়েছিলেন।
(ক) খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে দিল্লি কেন একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর হয়ে উঠেছিল?
উত্তর ভূমিকা: খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতক থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে ভারতে অনেক নতুন শহর গড়ে উঠেছিল, তাদের মধ্যে
সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল দিল্লি।
• দিল্লি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণ:
(1) ভৌগোলিক অবস্থান: ভৌগোলিকভাবে দিল্লি আরাবল্লি শৈলশিরার একটি প্রান্তে ও যমুনা নদীবিধৌত সমতলের সংযোগস্থলে অবস্থিত ছিল। যার ফলে এখানে আরাবল্লির পাথর দিয়ে জমির ঢাল অনুয়ায়ী সুরক্ষিত দুর্গনির্মাণ করা সহজ ছিল।
(ii) যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবিধা: যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ার জন্য জলপথে যাতায়াতের সুবিধা ছিল। আবার ভারতের উত্তরদিকের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগেরও সুবিধা ছিল। যার ফলে এখানে বাণিজ্যের প্রসার ঘটে।
(iii) বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা: যমুনা নদী দিল্লি শহরের
পূর্বদিকে অবস্থিত। এই নদী বহিঃশত্রুর আক্রমণের হাত থেকে দিল্লিকে অনেকটাই রক্ষা করত।
(iv) ব্যাবসা-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র: সুলতানি আমল থেকে দিল্লি ব্যাবসা-বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। সুলতানি আমলের দিল্লিতে অনেকগুলো বাজারের কথা জানা যায়। এখানে দেশ-বিদেশের বণিকরা নানা ধরনের পণ্য নিয়ে আসত।
(v) প্রশাসনিক কেন্দ্র: প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে দিল্লি ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সুলতানি ও মুঘল যুগের বিখ্যাত শাসকরা দিল্লির সিংহাসনে বসে দক্ষতার সঙ্গে দেশ শাসন করে গেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন-ইলতুৎমিস, ফিরোজ শাহ তুঘলক, আলাউদ্দিন খলজি, বাবর, আকবর, শাহজাহান প্রমুখ।
• উপসংহার: দিল্লি থেকে শাসনকার্য পরিচালনা করার সুবিধার জন্য, সাম্রাজ্য নিরাপত্তা রক্ষা, অর্থনীতি কেন্দ্রীকরণের নানা সুবিধা থাকার জন্য ইলতুৎমিসের সময় থেকে সমস্ত শাসকরা দিল্লিকে গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করে গেছেন। তাই ইবন বতুতা দিল্লিকে ইসলামি প্রাচ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ শহর বলে উল্লেখ করেছেন।
(খ) শাহজাহানাবাদের নাগরিক চরিত্র কেমন ছিল?
উত্তর: ভূমিকা: ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট শাহজাহান যমুনা
নদীর পশ্চিমে শাহজাহানাবাদ শহরটি গড়ে তুলেছিলেন।
নাগরিক চরিত্র:
(i) মিশ্র প্রকৃতি: শাহজাহানাবাদের নাগরিক বসতি ছিল মিশ্র প্রকৃতির। এখানে নানা শ্রেণির মানুষ বসবাস করত।
(ii) নাগরিকদের বাসস্থান ধন-সম্পদের তারতম্য অনুসারে ঘরবাড়িরও তারতম্য হত।
• রাজপুত্র ও উচ্চপদস্থ আমিররা সুন্দর বাগানবাড়িতে থাকত।
• ধনী বণিকরা টালি দিয়ে সাজানো ইট ও পাথরের বাড়িতে থাকত।
• সাধারণ ব্যবসায়ীরা থাকত নিজেদের দোকানের উপরে বা পেছন দিকের ঘরে।
• বড়ো বড়ো বাড়ির আশেপাশে মাটি ও খড় দিয়ে তৈরি
বহু, ছোটো ছোটো কুঁড়েঘর ছিল। এইসব কুঁড়েতে সাধারণ সৈনিক, দাসদাসী, কারিগর প্রমুখ মানুষজন থাকত।
(iii) সামাজিক সমতা: শাহজাহানাবাদের বসতি এলাকার মধ্যে কোনো বিভাজন ছিল না। উচ্চপদস্থ আমির ও গরিব কারিগর একই মহল্লায় পাশাপাশি থাকত।
(iv) রাজপথ: শাহজাহানাবাদের প্রধান রাজপথ ছিল দুটি। রাজপথকে বাজার বলা হত, কারণ তার দু-পাশে সারিবদ্ধ দোকান ছিল।
(v) নাগরিক সম্প্রীতি: শাহজাহানাবাদের বিভিন্ন ধর্মের নাগরিকরা যে-কোনো ধর্মীয় উৎসব একসঙ্গে পালন করত। যেমন- দেওয়ালির সময় হিন্দু-মুসলমান একইসঙ্গে দিল্লির প্রখ্যাত সুফি সাধক শেখ নাসিরউদ্দিন ‘চিরাগ-ই-দিল্লি’র (দিল্লির প্রদীপ) দরগায় আলোর উৎসব পালন করত। মহরমে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায় যৌথভাবে অংশ নিত।
• উপসংহার: শাহজাহানাবাদের বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষরা বসবাস করলেও প্রত্যেকের সঙ্গে এক আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
(গ) দিল্লির সুলতানদের আমলে ব্যাবসা-বাণিজ্যের বিস্তার কেন ঘটেছিল?
উত্তর: ভূমিকা: দিল্লিতে কুতুবউদ্দিন আইবক ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ৩২০ বছরের সুলতানি রাজত্বকালে ব্যাবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
• ব্যাবসা-বাণিজ্যের বিস্তারের কারণ:
(i) নতুন শহর প্রতিষ্ঠা ও সংস্কার: খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতকে দিল্লির সুলতানরা নতুন নতুন শহর তৈরি করেন এবং পুরোনো শহরগুলির সংস্কার করেন। যা ব্যাবসা-বাণিজ্য বিস্তারে সাহায্য করে।
(ii) উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা: এই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছিল। নতুন রাস্তা তৈরি করা হয়। পুরোনো রাস্তাগুলিও সারানো হয়। রাস্তার ধারে-ধারে বণিকদের মালপত্র-সহ বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সরাইখানা তৈরি করা হয়।
• (iii) মুদ্রা প্রবর্তন: দিল্লির সুলতানরা ব্যাবসা-বাণিজ্যের সুবিধার জন্য দু-ধরনের মুদ্রা চালু করেছিলেন। রুপোর মুদ্রার নাম ছিল ‘তঙ্কা’ ও তামার মুদ্রার নাম ছিল ‘জিতল’।
(iv) হুন্ডি ব্যবস্থা: তুর্কি শাসকদের আমলে সরাফরা ‘হুন্ডি’ নামে এক ধরনের কাগজ চালু করেছিল। বণিকরা কোনো এক জায়গায় সরাফকে টাকা জমা দিয়ে সেই কাগজ কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় তা প্রয়োজনমতো ভাঙিয়ে নিত। এতে বণিকদের এক জায়গা থেকে আর-এক জায়গায় টাকা নিয়ে যাওয়ার খুব সুবিধা হয়েছিল।
(v) আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শহরগুলিতে সুলতান ও তাঁদের অভিজাতরা, সৈনিকরা ও সাধারণ মানুষ বসবাস করতে শুরু করলে শহরগুলি জনবহুল হয়ে ওঠে। শহরগুলিতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও বাড়ি-ঘর তৈরির কাঁচামালের চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানি-রপ্তানির বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল।
• উপসংহার: সুলতানি আমলে ব্যাবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ, পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের যেমন প্রসার ঘটে তেমনি এই সময় বিদেশিদের আগমনের ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যেরও বিস্তার ঘটে।
(ঘ) মধ্যযুগে ভারতে দেশের ভেতরে বাণিজ্যের ধরনগুলি কেমন ছিল তা লেখো।
উত্তর: ভূমিকা: মধ্যযুগে দেশের-অভ্যন্তরে ব্যাবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। ভারতবর্ষের মতো বিশাল দেশে বিভিন্ন বণিক সম্প্রদায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাদের পণ্যসামগ্রী সাজিয়ে বাণিজ্য করত।
• দেশের ভিতরে বাণিজ্য: দেশের ভেতরে দুই ধরনের বাণিজ্য হত।
(i) গ্রাম ও শহরের বাণিজ্য।
(ii) দুটি শহরের মধ্যেকার বাণিজ্য।
(i) গ্রাম ও শহরের বাণিজ্য: মধ্যযুগে জনবহুল শহরের অধিবাসীদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য গ্রামে উৎপন্ন পণ্যসামগ্রী শহরে রপ্তানি করা হত। এইসব পণ্যসামগ্রীর মধ্যে ছিল নানা রকমের খাদ্যশস্য, খাবার, তেল, ঘি, আনাজ, ফল, লবণ ইত্যাদি। শহরের বাজারে এইসব পণ্য বিক্রি হত। আলাউদ্দিন খলজির আমলে দিল্লিতে চারটি বড়ো বাজার ছিল। এখানে শস্য, কাপড়, ঘোড়া প্রভৃতি বিক্রি হত। সুলতানি যুগে প্রথম চরকায় সুতো কেটে কাপড় বোনার কাজ শুরু হয়।
(ii) দুটি শহরের মধ্যে বাণিজ্য এক শহর থেকে আর-এক শহরে রপ্তানি হত বেশি দামের শৌখিন জিনিসপত্র। এইসব জিনিস পত্র শিল্পী ও কারিগররা ধনী, অভিজাতদের জন্য তৈরি করত। সুলতানদের রাজধানী দিল্লি শহরে সাম্রাজ্যের নানা এলাকা থেকে দামি মদ, সূক্ষ্ম মসলিন বস্ত্র আমদানি করা হত। বাংলাদেশ, করমণ্ডল ও গুজরাত থেকে সুতি ও রেশমের কাপড় দেশের সর্বত্র রপ্তানি করা হত।
(iii) হস্তশিল্প বাণিজ্য: সুলতানি যুগে হস্তশিল্প বাণিজ্যের মধ্যে ছিল চামড়া, কাঠ ও ধাতু দিয়ে তৈরি জিনিস, গালিচা ইত্যাদি। এই যুগেই প্রথম কাগজ তৈরি হয়।
(iv) মুদ্রা: দিল্লির সুলতানরা ‘তঙ্কা’ (রূপোর মুদ্রা) ও ‘জিতল’ (তামার মুদ্রা) নামে দু-ধরনের উন্নতমানের মুদ্রা চালু করেছিলেন।
ও ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির আমদানি-রপ্তানির রেখচিত্র থেকে ওই যুগের বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্বন্ধে তোমার কী ধারণা হয়?
উত্তর ভূমিকা: ইউরোপীয় বণিকদের মধ্যে পোর্তুগিজরা প্রথম জলপথে ব্যাবসা করার জন্য ভারতে আসে। তারপর ভারতে ব্যাবসা করার জন্য ইউরোপে অনেকগুলো বাণিজ্যিক কোম্পানির পত্তন ঘটে। এদের মধ্যে ইংরেজ, ডাচ বা ওলন্দাজ, ফরাসি, দিনেমার প্রমুখ ইউরোপীয় বণিকরা ভারতে ব্যাবসাবাণিজ্য করতে আসে।
• আমদানি দ্রব্য: আলোচ্য রেখচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ভারত পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মশলা, টিন, তামা আমদানি করত।
ভারতের প্রয়োজনীয় রূপো আমেরিকা থেকে ইউরোপে আসত, ইউরোপ থেকে ভারতে আসত।
ইউরোপ থেকে সোনাও ভারতে আমদানি করা হত।
• রপ্তানি দ্রব্য: আলোচ্য রেখচিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে যে ভারত পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রপ্তানি করত সুতিবস্ত্র, আফিম। ভারত ইউরোপের দেশগুলিতে রপ্তানি করত গোলমরিচ, নীল, সোরা, সুতি বস্ত্র, কাঁচা রেশম, রেশম বস্ত্র প্রভৃতি।
কল্পনা করে লেখো (১০০-১৫০টি শব্দের মধ্যে):
গ) খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতকের গোড়ায় বঙ্গোপসাগরে ভাগীরথীর মোহনা থেকে তুমি ক্রমাগত দক্ষিণ দিকে যাচ্ছে। পথে তুমি কোথায় কোথায় ইউরোপীয় কুঠি দেখতে পাবে। তা মানচিত্রের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর: খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতকের গোড়ায় গঙ্গোপসাগরে ভাগীরথীর মোহানা থেকে আমি নৌকা করে ক্রমশ উত্তরদিকে যাওয়ার পথে পোর্তুগিজ, ডাচ, ফরাসি, ইংরেজ, দিনেমারদের কুঠিগুলি দেখতে পাব।
• কলকাতা : ভাগীরথী নদীর পথ ধরে উত্তর দিকে যাওয়ার পথে প্রথমে যে জায়গায় পৌঁছলাম, সেটি হল কলকাতা। কলকাতায় ছিল ইংরেজদের বাণিজ্যকুঠি।
• শ্রীরামপুর: এরপর নৌকা করে ভাগীরথী নদীর পথ ধরে আরও উত্তরে গিয়ে পৌঁছোলাম শ্রীরামপুরে। শ্রীরামপুরে ছিল
• চন্দননগর : ভাগীরথী নদী বরাবর আরও উত্তরদিকে এগিয়ে ফরাসিদের বাণিজ্যকুঠি চন্দননগরে পৌঁছোলাম।
• চুঁচুড়া : এইভাবে ভাগীরথী নদী বরাবর আরও উত্তরদিকে যাবার পর ডাচ বা ওলন্দাজদের বাণিজ্যকুঠি চুঁচুড়ায় পৌঁছে গেলাম।
• ব্যান্ডেল : ভাগীরথী নদীর পথ ধরে আরও উত্তরদিকে যাত্রা শুরু করলাম। কিছুদূর এগোনোর পর পোর্তুগিজদের বাণিজ্যকুঠি ব্যান্ডেলে পৌঁছোলাম। এখানকার চার্চের সুন্দর পরিবেশ দেখে আমি আবার যাত্রা শুরু করলাম।
অতিরিক্ত প্রশ্নোত্তর