WBCHSE Class 12 Bangla Chapter 2.2 Solution | Bengali Medium

Class 12 Chapter 2.2 Solution

শিকার

1. MCQs Question Answer

১. সারারাত হরিণ নিজেকে কার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল? 

ক) শিকারির 

খ) চিতাবাঘিনির 

গ) হৃদয়হীনের 

ঘ) রাতের হিংস্র পশুদের

২. সারারাত হরিণটি ঘুরেছিল- 

ক) শাল-পিয়ালের বনে 

খ) অর্জুন-সুন্দরীর বনে 

গ) মেহগনি-অর্জুনের বনে

ঘ) মেহগনি-সুন্দরীর বনে

৩. ‘সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে’ কীসের মতো অন্ধকার ছিল? 

ক) মেহগনির মতো 

খ) অশ্বত্থের মতো 

গ) অর্জুনের মতো 

ঘ) সুন্দরীর মতো 

৪. চিতাবাঘিনির তাড়া খাওয়া হরিণটি ছিল-

ক) সজীব সতেজ 

খ) সতেজ বাদামি 

গ) সুন্দর বাদামি 

ঘ) সুন্দর সতেজ

৫. সুন্দর বাদামি হরিণ যার জন্য অপেক্ষা করেছিল-

ক) অন্ধকারের জন্য 

খ) সবুজ ঘাসের জন্য 

গ) ঝরনার জলের জন্য 

ঘ) ভোরের জন্য 

৬. “সুন্দর বাদামি হরিণ এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল।”-কারণ-

ক) রাত তার ভালো লাগছিল না 

খ) সে তার সঙ্গীদের খুঁজে পাচ্ছিল না 

গ) রাতে খাবারের খোঁজ করা অসম্ভব 

ঘ) চিতাবাঘিনির হাত থেকে বাঁচার জন্য 

৭. “এসেছে সে ভোরের আলোয় নেমে;”-কে? 

ক) ঘাসফড়িং 

খ) চিতাবাঘিনি 

গ) শিকারি 

ঘ) হরিণ

৮. “এসেছে সে ভোরের আলোয় নেমে;”-এর কারণ কী? 

ক) জল খাওয়া 

খ) বিশ্রাম নেওয়া 

গ) ঘাস খাওয়া 

ঘ) খেলা করা

৯. ‘শিকার’ কবিতায় কচি বাতাবিলেবুর মতো ছিল- 

ক) ভোরের সুবাস 

খ) সবুজ সুগন্ধি ঘাস 

গ) হরিণের হৃদয়

ঘ) ময়ূরের ডানার রং

১০. সবুজ সুগন্ধি ঘাসকে কবি যার সঙ্গে তুলনা করেছেন-

ক) নতুন ধান 

খ) শরতের সকাল

গ) কচি বাতাবিলেবু

ঘ) রূপসি মেয়ে

১১. হরিণ কী ‘ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে’? 

ক) দুর্বাঘাস 

খ) বাতাবিলেবুর পাতা 

গ) সুগন্ধি ঘাস 

ঘ) পেয়ারা পাতা

১২. হরিণটি ভোরের আলোয় যেখানে নেমেছিল- 

ক) ঝরনার জলে 

খ) নদীর জলে 

গ) অন্ধকারের সমুদ্রে 

ঘ) অর্জুন-সুন্দরীর বনে

১৩. “নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে সে নামল…”-কে? 

ক) চিতাবাঘিনি 

খ) শিকারি 

গ) বাদামি হরিণ 

ঘ) একটি সিংহ

১৪. নদীর জলে নামা হরিণের শরীর ছিল- 

ক) ঘুমহীন ক্লান্ত বিহ্বল

খ) বিহ্বল ক্লান্ত ঘুমহীন 

গ) ঘুমহীন বিহ্বল ক্লান্ত

ঘ) ক্লান্ড ঘুমহীন বিহ্বল 

১৫. নদীর ঢেউয়ে হরিণটি নেমেছিল-

ক) তৃয়া মেটানোর জন্য 

খ) আত্মরক্ষার জন্য 

গ) স্রোতের মতো আবেশ পাওয়ার জন্য 

ঘ) হরিণীর খোঁজে

১৬. “একটা আবেশ দেওয়ার জন্য;” -এই আবেশের সঙ্গে কার তুলনা করা হয়েছে? 

ক) স্রোতের 

খ) বৃষ্টির 

গ) জলপ্রপাতের 

ঘ) ঝড়ের 

১৭. হরিণটি যে উল্লাস খুঁজে নিতে চেয়েছিল তা ছিল- 

ক) বিবর্ণ ইচ্ছার মতো 

খ) ভোরের রৌদ্রের মতো 

গ) সূর্যের সোনার বর্শার মতো 

ঘ) ময়ূরের  সবুজ-নীল ডানার মতো

১৮. “এই নীল আকাশের নীচে সূর্যের বর্শার মতো জেগে উঠে..”

ক) আলোর 

খ) রঙের 

গ) সোনার

ঘ) তীক্ষ্ণ

১৯. হরিণটি জেগে উঠতে চেয়েছিল- 

ক) তীক্ষ্ণ ধনুকের মতো 

খ) সূর্যের রশ্মির মতো 

গ) ময়ূরের ডানার মতো 

ঘ) সূর্যের সোনার বর্শার মতো 

২০. ‘হরিণীর পর হরিণীকে’ হরিণটি চমকে দিতে চেয়েছিল- 

ক) সাধে সাহসে সৌন্দর্যে 

খ) সাহসে সাধে সৌন্দর্যে  

গ) সৌন্দর্যে সাধে সাহসে 

ঘ) সাধে সৌন্দর্যে সাহসে 

২১. “একটা অদ্ভুত শব্দ।” কীসের শব্দ? 

ক) চিতাবাঘিনির গর্জনের 

খ) হৃদয়ের বিদীর্ণ ইচ্ছার 

গ) সুগন্ধি ঘাস ছিঁড়ে খাওয়ার 

ঘ) বন্দুকের 

২২. “নদীর জল – মতো লাল।” 

(ক) মোরগফুলের পাপড়ির 

(খ) জবাফুলের পাপড়ির 

(গ) মচকাফুলের পাপড়ির 

ঘ) নারীর পায়ের আলতার

২৩. “নদীর জল মচকাফুলের পাপড়ির মতো লাল।” -নদীর জল লাল হওয়ার কারণ? 

ক) নদীর জলে দূষণ ঘটেছে 

খ) হরিণের রক্ত জলে মিশেছে 

গ) নদীর পাশে আগুন জ্বালানো হয়েছে 

ঘ) দূর থেকে তেমনই দেখতে লাগছে

২৪. হরিণশিকারের ফলে নদীর জল কেমন লাল হয়েছিল? 

ক) মচকাফুলের পাপড়ির মতো 

খ) কুঙ্কুমের মতো 

গ) মোরগফুলের মতো 

ঘ) সোনার বর্শার মতো

২৫. “আগুন জ্বলল আবার”- কখন আবার আগুন জ্বলল? 

ক) হরিণশিকারের পর 

খ) ভোরবেলায় 

গ) চিতাবাঘিনি হত্যার পর 

ঘ) দুপুরে

২৬. ‘শিকার’ কবিতায় দ্বিতীয়বার আগুন জ্বলেছিল যে কারণে- 

ক) হরিণের মাংস তৈরি করার জন্য 

খ) কৃষকদের উৎসবের জন্য 

গ) নক্ষত্রের আলোরকারণে 

ঘ) দেশোয়ালিদের পরবের জন্য

২৭. “আগুন জ্বলল আবার-“-এর আগে কেন আগুন জ্বলেছিল? 

ক) অন্ধকার দূর করার জন্য 

খ) শরীর গরম রাখার জন্য 

গ) হরিণের মাংস তৈরির জন্য 

ঘ) চিতাবাঘিনির হাত থেকে বাঁচার জন্য

২৮. ঘাসের বিছানা ছিল-

ক) নক্ষত্রের নীচে 

খ) মেহগনির বনে 

গ) পাড়াগাঁতে 

ঘ) নদীর ধারে

29. ‘নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায়” যা হয়েছিল- ঘুম 

(ক) চকোরের জ্যোৎস্না পান 

(খ) অনেক পুরোনো শিশিরভেজা গল্প

(গ) নবান্নের আয়োজন 

(ঘ) অনন্ত

৩০. “নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায়” কী গল্প হত? 

ক) পুরোনো রূপকথার গল্প

খ) পুরোনো শিশিরভেজা গল্প

গ) পুরোনো বৃষ্টিভেজা গল্প

ঘ) পুরোনো রৌদ্রভেজা গল্প

৩১. টেরিকাটা মানুষেরা খায়-

ক) বিড়ি 

খ) আঙুর 

গ) পেয়ারা 

ঘ) সিগারেট 

৩২. যে মানুষগুলোকে ঘাসের বিছানায় দেখা গিয়েছিল তারা ছিল-

ক) রক্তচক্ষু 

খ) সজ্জন স্বভাবের 

গ) উন্মাদ 

ঘ) টেরিকাটা 

৩৩. “টেরিকাটা কয়েকটা মানুষের মাথা;”-কোথায় অবস্থান করছিল? 

ক) টেন্টে 

খ) বাঁশের মাচায় 

গ) ঘাসের বিছানায়

ঘ) শতরঞ্চিতে

৩৪. “টেরিকাটা কয়েকটা মানুষের মাথা;”-এরা হল-

ক) পুলিশ 

খ) ডাকাত 

গ) সৈন্য 

ঘ) শিকারি 

৩৫. ‘শিকার’ কবিতাটিতে কোন্ ঋতুর বর্ণনা পাই আমরা? 

ক) শরৎ 

খ) হেমন্ত

গ) শীত

ঘ) বসন্ত

৩৬. ‘শিকার’ কবিতায় শিকারটি সংঘটিত হয়েছিল- 

ক) ভোরবেলায় 

খ) বিকেলবেলায় 

গ) সন্ধ্যাবেলায় 

ঘ) রাতের বেলায়  

৩৭. ভোরবেলা হরিণটি কী খাচ্ছিল? 

ক) ঘাস 

খ) সুগন্ধি ঘাস

গ) নরম ঘাস 

ঘ) কোমল ঘাস

৩৮. “ঘুমহীন ক্লান্ত বিহ্বল শরীরটাকে স্রোতের মতো/একটা আবেশ দেওয়ার জন্য” হরিণটি কী করল? 

ক) নরম ঘাসের উপর শুয়ে পড়ল 

খ) নদীর তীক্ষ্ণ শীতল জলে নামল

গ) অর্জুন বনের ছায়ায় বসে রইল 

ঘ) দেশোয়ালিদের জ্বালানো আগুনের উত্তাপ নিল 

2. Very Short Question Answer

১. নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে…”- তীক্ষ্ণ শীতলতা কীসের ইঙ্গিত দেয়?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় তীক্ষ্ণ শীতলতা ঠান্ডার তীব্রতাকে নির্দেশ করে।

২. “ঘুমহীন ক্লান্ত বিহ্বল শরীরটাকে…”-কার ঘুমহীন শরীরের কথা বলা হয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সুন্দর বাদামি হরিণের ঘুমহীন শরীরের কথা বলা হয়েছে।

৩. অন্ধকারের হিম কুঞ্চিত জরায়ু ছিঁড়ে…”-কী বা কে কুঞ্চিত জরায়ু ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘অন্ধকারের হিম কুঞ্চিত জরায়ু ছিঁড়ে’ ভোরের রোদ বেরিয়ে আসে।

৪. একটা অদ্ভুত শব্দ।” শব্দটা কীসের?  

▶ “একটা অদ্ভুত শব্দ” বলতে শিকারির বন্দুকের গুলির শব্দের কথা বলা হয়েছে।

৫. একটা অদ্ভুত শব্দ।”-কখন এই অদ্ভুত শব্দ হয়?

 ▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় অদ্ভুত শব্দটি হয় ভোরবেলায়।

 ‘৬. শিকার’ কবিতায় উল্লিখিত নদীর জলের রং কেমন?  

▶ ‘শিকার’ কবিতায় নদীর জলের রং মচকাফুলের পাপড়ির মতো লাল।

৭. “আগুন জ্বলল আবার…”-কারা ‘আবার’ আগুন জ্বালাল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘আবার’ আগুন জ্বালিয়েছিল শিকারি মানুষের দল।

‘৮. শিকার’ কবিতায় প্রদত্ত দুটি গাছের নাম লেখো। 

▶ ‘শিকার’ কবিতায় উল্লিখিত গাছগুলির অন্যতম হল পেয়ারা ও নোনার গাছ।

৯.. “চারিদিকে পেয়ারা ও নোনার গাছ”-পেয়ারা ও নোনার গাছের রংকে কবি কার সঙ্গে তুলনা করেছেন?

▶ পেয়ারা ও নোনার গাছের রংকে কবি টিয়াপাখির পালকের সবুজ রঙের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

১০. একটি তারা এখনও আকাশে রয়েছে…”-কবি কোন্ তারার কথা বলেছেন?

▶ ভোরের আকাশে একটি তারা বলতে কবি শুকতারার কথা বলতে চেয়েছেন।

১১ “একটি তারা এখনও আকাশে রয়েছে…”-‘এখনও’ বলতে কোন্ সময়কে বোঝানো হয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘এখনও’ বলতে রাতশেষের ভোরকে বোঝানো হয়েছে।

১২…গোধূলিমদির মেয়েটির মতো;”-মেয়েটিকে কোথায় দেখতে পাওয়া যায়?

> গোধূলিমদির মেয়েটিকে পাড়াগাঁর বাসরঘরে দেখতে পাওয়া যায়।

১৩ …তার বুকের থেকে যে মুক্তা…”-কার বুকের মুক্তার কথা বলা হয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় মিশরের মানুষীর বুকের মুক্তার কথা এখানে বলা হয়েছে।

১৪. “…তার বুকের থেকে যে মুক্তা …”-মুক্তাটি কোথায় রেখেছিল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় মিশরের মানুষী তার বুকের মুক্তাটি কবির নীল মদের গেলাসে রেখেছিল।

 ১৫. হিমের রাতে শরীর উম্ রাখার জন্য কী করা হচ্ছে?

▶ হিমের রাতে শরীর উম্ অর্থাৎ গরম রাখার জন্য সারারাত ধরে মাঠে দেশোয়ালিরা আগুন জ্বেলেছে।

১৬. কুঙ্কুমের মতো নেই আর;”-কীসের মতো হয়ে গেছে?

▶ আগুনের রং রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো হয়ে গেছে।

১৭. ‘শিকার’ কবিতায় ময়ূরের ডানার রং কী ছিল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ময়ূরের ডানার রং ছিল সবুজ- নীল।

3. Short Question Answer

১. জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সারারাত হরিণটি কীসের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করেছিল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সারারাত হরিণটি চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করেছিল।

২. সুন্দর বাদামি হরিণ চিতাবাঘিনির হাত থেকে বাঁচতে কোন্ কোন্ বনে ঘুরেছিল? 

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় চিতাবাঘিনির হাত থেকে বাঁচতে সুন্দর বাদামি হরিণটি সারারাত সুন্দরী বন থেকে অর্জুনের বনে ঘুরেছিল।

৩. “…চিতাবাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে…”- চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে কে, কীসের জন্য অপেক্ষা করছিল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সুন্দর বাদামি হরিণটি ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল।

৪. “… চিতাবাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে…”- চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর পর সে কেন নদীর জলে নামল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে হরিণটি নদীর জলে নেমেছিল তার ঘুমহীন ক্লান্ত শরীরে স্রোতের আবেশ দেওয়ার জন্য।

৫. “…চিতাবাঘিনীর হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে বাঁচিয়ে…”- চিতাবাঘিনির হাত থেকে বাঁচলেও হরিণটি কি বেঁচে থাকতে পেরেছিল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় হরিণটি চিতাবাঘিনির হাত থেকে বাঁচলেও শিকারির গুলি শেষপর্যন্ত তাকে বাঁচতে দেয়নি।

৬. “… মেহগনির মতো অন্ধকারে…”-‘মেহগনির মতো অন্ধকারে’ বলতে কী বোঝ?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘মেহগনির মতো অন্ধকারে’ বলতে গভীর অন্ধকারকে বোঝানো হয়েছে।

৭. “… মেহগনির মতো অন্ধকারে…”- মেহগনির মতো অন্ধকারে কী ঘটেছিল?

• জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় মেহগনির মতো অন্ধকারে সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে ঘুরে ঘুরে সুন্দর বাদামি হরিণটি ভোরের জন্য অপেক্ষা করেছিল।

৮. “… অর্জুনের বনে ঘুরে ঘুরে।”-কে, কেন ঘুরেছিল?

▶ সুন্দর বাদামি হরিণটি সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে ঘুরেছিল চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য।

৯. “এসেছে সে ভোরের আলোয় নেমে…”-কার, কেন নেমে আসার কথা বলা হয়েছে?

▶ এখানে কচি বাতাবিলেবুর মতো সবুজ, সুগন্ধি ঘাস ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য সুন্দর বাদামি হরিণের নেমে আসার কথা বলা হয়েছে।

১০. “কচি বাতাবিলেবুর মতো…”-কীসের কথা বলা হয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘কচি বাতাবিলেবুর মতো’ সবুজ সুগন্দি ঘাসের কথা বলা হয়েছে।

১১. “কচি বাতাবিলেবুর মতো…”-কাকে বাতাবিলেবুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং কেন?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় কচি বাতাবিলেবুর সঙ্গে ঘাসের তুলনা করা হয়েছে তার সবুজ রং ও সুগন্ধের জন্য।

১২. হরিণটি ‘কচি বাতাবিলেবুর মতো সবুজ, সুগন্ধি ঘাস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল কেন?  

• চিতাবাঘিনির হাত থেকে রক্ষা পেতে সারারাত ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ায় হরিণটি ভোরে সবুজ, সুগন্ধি ঘাস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল।

১৩. ‘শিকার’ কবিতায় সুন্দর বাদামি হরিণটি কী খাচ্ছিল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সুন্দর বাদামি হরিণটি কচি বাতাবিলেবুর মতো সবুজ, সুগন্ধি ঘাস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল।

১৪. ঘুমহীন ক্লান্ত বিহ্বল শরীরটাকে…”-কেন তার শরীর ঘুমহীন ও ক্লান্ত?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সারারাত জেগে চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর কারণে সুন্দর বাদামি হরিণের শরীর ঘুমহীন এবং  ক্লান্ত।

১৫ “ঘুমহীন ক্লান্ত বিহ্বল শরীরটাকে…”-ঘুমহীন ক্লান্ত শরীর নিয়ে হরিণটি কী করল?

• জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ঘুমহীন ক্লান্ত শরীর নিয়ে হরিণটি নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে নেমে গিয়েছিল।

১৬. “… স্রোতের মতো একটা আবেশ দেওয়ার জন্য…”-কার কথা বলা হয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সুন্দর বাদামি হরিণের ক্লান্ত, ঘুমহীন শরীরে স্রোতের মতো আবেশ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

১৭. “…স্রোতের মতো একটা আবেশ দেওয়ার জন্য…”-‘স্রোতের মতো আবেশ’ বলতে কী বোঝ?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘স্রোতের মতো আবেশ’ বলতে স্বাভাবিক গতিশীলতাকে বোঝানো হয়েছে।

১৮. একটা বিস্তীর্ণ উল্লাস পাবার জন্য;”-বিস্তীর্ণ উল্লাস পাওয়ার জন্য হরিণটি কী করেছিল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় বিস্তীর্ণ উল্লাস পাওয়ার জন্য সুন্দর বাদামি হরিণ নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে তার ক্লান্ত, বিহ্বল শরীরকে ভাসিয়ে দিয়েছিল।

১৯ “… সূর্যের সোনার বর্শার মতো জেগে উঠে”-কে, কেন জেগে উঠতে চায়?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সুন্দর বাদামি হরিণটি সাহসে, সাধে ও সৌন্দর্যে অন্য হরিণীদের চমক লাগানোর জন্য জেগে উঠতে চায়।

২০. “হরিণীর পর হরিণীকে চমক লাগিয়ে দেবার জন্য।”-কীভাবে চমক লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল?

অথবা, “সোনার বর্শার মতো জেগে উঠে” হরিণটি কী করতে চেয়েছিল? 

▶ “নীল আকাশের নীচে সূর্যের সোনার বর্শার মতো জেগে উঠে” হরিণটি সাহসে, ইচ্ছাশক্তিতে এবং সৌন্দর্যে অন্য হরিণীদের চমক লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল।

২১. “…চমক লাগিয়ে দেবার জন্য।”-কে, কাকে চমক লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সুন্দর বাদামি হরিণটি অন্য হরিণীদের চমক লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল।

২২. “…চমক লাগিয়ে দেবার জন্য।”-কীভাবে চমক লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সুন্দর বাদামি হরিণ “নীল আকাশের নীচে সূর্যের সোনার বর্শার মতো জেগে উঠে” চমক লাগিয়ে দিতে চেয়েছিল।

২৩. আগুন জ্বলল আবার…”-আবার আগুন জ্বলার কথা বলা হয়েছে কেন?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় প্রথমবার আগুন জ্বালিয়েছিল দেশোয়ালিরা, তাই ‘আবার’ শব্দটির সাহায্যে শিকারিদের আগুন জ্বালানোকে বোঝানো হয়েছে।

২৪. “…নিস্পন্দ নিরপরাধ ঘুম।”-ঘুমকে কেন ‘নিস্পন্দ’ বলা হয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ঘুমকে ‘নিস্পন্দ’ বলা হয়েছে, কারণ তা হরিণের চিরনিদ্রা অর্থাৎ মৃত্যুকে নির্দেশ করে।

২৫. “নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায়…”- কোন্ সময়ের কথা বলা হচ্ছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সকালবেলায় হরিণের মৃত্যুর পরে যখন তার মাংস রান্না করা হচ্ছিল, সেই সময়ের কথা বলা হয়েছে।

২৬ “নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায়…”-কী হয়?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায়’ সিগারেটের ধোঁয়ায় অনেক পুরোনো শিশিরভেজা গল্প হয়।

২৭. “নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায়…”- সেখানে কারা বসে রয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায়’ বসেছিল টেরিকাটা শিকারি মানুষের দল।

২৮. “নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায়… ধোঁয়া;”-কীসের ধোঁয়ার কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায় বসে থাকা শিকারিরা সিগারেট খাচ্ছিল। তারই ধোঁয়ার কথা এখানে উল্লিখিত হয়েছে।

২৯. ‘শিকার’ কবিতায় শিকারি মানুষদের উপস্থিতির কী কী চিহ্ন পাওয়া যায়?

▶ সিগারেটের ধোঁয়া, টেরিকাটা কয়েকটা মানুষের মাথা এবং কয়েকটা বন্দুকই ছিল শিকারি মানুষদের উপস্থিতির চিহ্ন।

৩০ “… নিস্পন্দ নিরপরাধ ঘুম।”কীসের বা কার কথা বলা হয়েছে?

▶ আলোচ্য অংশে জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সুন্দর বাদামি হরিণের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে।

৩১. “আগুন জ্বলল আবার…”-আগুন জ্বলার পর কী হল? 

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় আবার অর্থাৎ দ্বিতীয়বার আগুন জ্বালিয়ে মৃত হরিণের মাংস রান্না করা হল।

৩২ “… নিস্পন্দ নিরপরাধ ঘুম।”-ঘুমকে ‘নিরপরাধ’ বলা হয়েছে কেন?  

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ঘুমকে ‘নিরপরাধ’ বলা হয়েছে, কারণ হরিণের মৃত্যু তার নিজের অপরাধের কারণে ঘটেনি, ঘটেছে মানুষের লালসার কারণে।

৩৩. ‘শিকার’ কবিতায় ‘টেরিকাটা কয়েকটা মানুষের মাথা’ পঙ্ক্তিটি কেন ব্যবহৃত হয়েছে?

▶ ‘শিকার’ কবিতায় প্রকৃতিকে ধ্বংসকারী ও উদ্ধত নাগরিক সংস্কৃতির প্রতিনিধি হৃদয়হীন, শিকারি মানুষগুলির বেশভূষা ও স্বভাব-চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতেই কবি আলোচ্য পঙ্ক্তিটি ব্যবহার করেছেন।

৩৪ ‘শিকার’ কবিতায় কবি ‘এলোমেলো কয়েকটা বন্দুক’ কথাটা বলেছেন কেন?

▶ ‘শিকার’ কবিতায় বন্দুকের মতো ভয়ংকর মারণাস্ত্রের সঙ্গে মানুষের মনুষ্যত্বহীন সংযোগকে এবং একইসঙ্গে শিকারি মানুষগুলির অমানবিক মানসিকতাকে প্রকাশ করতে কবি আলোচ্য কথাটি ব্যবহার করেছেন।

৩৫. “একটি তারা এখনও আকাশে রয়েছে।”-আকাশের তারাকে কেন্দ্র করে কবির কোন্ ভাবনা এখানে প্রকাশিত হয়েছে? 

▶ ভোরের আকাশে তারাটির উপস্থিতিকে কবি তুলনা করেছেন পাড়াগাঁর বাসরঘরের গোধূলিমদির মেয়েটির সঙ্গে কিংবা হাজার বছর আগের মিশরের মানুষীর বুকের থেকে কবির নীল মদের গেলাসে রাখা মুক্তার সঙ্গে।

৩৬”একটি তারা এখনও আকাশে রয়েছে;”-তারাটিকে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?  

▶ কবি জীবনানন্দ দাশ ‘শিকার’ কবিতায় রাতজাগা তারাটিকে প্রথমে পাড়াগাঁর বাসরঘরের সবথেকে গোধূলিমদির মেয়েটির সঙ্গে এবং পরে মিশরের মানুষীর বুকের মুক্তার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

৩৭ “তেমনি একটি তারা আকাশে জ্বলছে এখনও”-তারাটিকে দেখে কবির কী কী মনে হয়েছে? 

▶ তারাটিকে দেখে কবির পাড়াগাঁয়ের বাসরঘরের লজ্জাশীলা মেয়ে এবং মিশরের মানুষীর বুকের থেকে নীল মদের গেলাসে রাখা মুক্তো মনে হয়েছিল।

৩৮. “…গোধূলিমদির মেয়েটির মতো…”-কার বা কীসের কথা বলা হয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় “গোধূলিমদির মেয়েটির মতো” ভোরের আকাশে জেগে থাকা তারার কথা বলা হয়েছে।

৩৯. …শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো।”-কীসের কথা বলা হয়েছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সারারাত জ্বলতে থাকা আগুনের র সূর্যের আলোয় ম্লান হয়ে যে বিবর্ণ রূপ ধারণ করেছে, তার কথাই এখানে বলা হয়েছে।

৪০. “সকালের আলোয় টলমল শিশিরে … ঝিলমিল করছে।” -কী, কীভাবে ঝিলমিল করছে?

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘সকালের আলোয় টলমল শিশিরে’ চারদিকের বন ও আকাশ ময়ূরের সবুজ-নীল ডানার মতো ঝিলমিল করছে।

৪১. ‘শিকার’ কবিতায় সকালের আলোয় বন ও আকাশকে দেখে কবির কী মনে হয়েছিল?

▶ ‘শিকার’ কবিতায় সকালের আলোয় টলমল করা শিশিরে, বন ও আকাশকে দেখে কবির মনে হয়েছিল তা ময়ূরের সবুজ-নীল ডানার মতো ঝিলমিল করছে।

৪২. সবুজ নীল ডানার মতো…”-তুলনাটি উল্লেখ করো।

▶ জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় সকালের আলোয় টলমল করা শিশিরে চারদিকের বন ও আকাশকে ময়ূরের সবুজ-নীল ডানার মতো ঝিলমিল করতে দেখেছেন কবি।

4. Long Question Answer

১”একটি তারা এখন আকাশে রয়েছে;”-‘এখন’ বলতে কোন্ সময়ের কথা বোঝানো হয়েছে? আকাশের তারাকে কেন্দ্র করে কবির ভাবনার যে বিশিষ্টতা প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো। 

উত্তর.  উদ্দিষ্ট সময়: রাত্রিশেষে ভোরের আকাশ যখন ঘাস ফড়িংয়ের শরীরের মতো কোমল নীল হয়ে ওঠে, ‘এখন’ বলতে কবি সেই সময়টির কথা বলতে চেয়েছেন।

▶ কবিভাবনার বিশিষ্টতা: কথামুখ: জীবনানন্দ দাশের মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘শিকার’ কবিতাটি রচিত হয়েছে একটি ‘ভোর’-এর পটভূমিতে। আকাশে তারার উপস্থিতি: অন্ধকারের জরায়ু থেকে জন্ম নেওয়া ভোরে যখন আকাশের রং পালটে যায়, পেয়ারা এবং নোনার গাছের সবুজ ফুটে ওঠে-তখনই আকাশে দেখা যায় একটি তারাকে। যেন রাতের বিদায়ী অস্তিত্বকে সে ধারণ করে রাখে। ভোরের এই তারাকে কবি তুলনা করেন ‘পাড়াগাঁর বাসরঘরে সব চেয়ে গোধূলিমদির’ মেয়েটির সঙ্গে। অর্থাৎ, তারাটির উপস্থিতির সঙ্গে কবি গ্রামবাংলার বাসরঘরের মেয়েটির মতো লজ্জা আর কুণ্ঠাকে তুলনা করেছেন। ‘বাসরঘরে’ আর ‘মদির’ শব্দের ব্যবহারে কবি সেই সলজ্জ স্বভাবকে আরও গভীর করে তোলেন। তারাটির উপস্থিতির সঙ্গে তুলনা: এরপরেই তারাটির উপস্থিতিকে কবি তুলনা করেন ‘মিশরের মানুষী’- র সঙ্গে, যে হাজার হাজার বছর আগে এক রাতে তার বুকের থেকে মুক্তা নিয়ে রেখেছিল কবির নীল মদের গেলাসে। একটু আগে গ্রাম্য মেয়ের সঙ্গে তুলনায় যে সহজতা ছিল তা ভেঙে যায় ঐতিহাসিক আড়ম্বরে। নীল আকাশের ক্যানভাসে রাত-জাগা তারা আর নীল মদের পাত্রে রাখা মুক্তা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ‘মিশরের মানুষী’ আর ‘হাজার হাজার বছর’ মিলে ছবিটি দেশকালের সীমা অতিক্রম করে চিরকালীন বিস্তৃতি পায়। ইতিকথা: ভোরের আকাশের তারা কবির চেতনায় অসামান্য শিল্পরূপ লাভ করে। প্রকৃতির যে স্নিগ্ধ, অমলিন পটভূমি তৈরি করা এখানে কবির লক্ষ্য ছিল, ভোরের তারা তাতে যেন এক নতুন মাত্রা যোগ করে।

২ ‘শিকার’ কবিতাটির প্রথম স্তবকে ব্যবহৃত উপমাগুলি ব্যাখ্যা- সহ আলোচনা করো

 উত্তর ভূমিকা: চিত্ররূপময় কবি জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতাটির সূচনা হয়েছে একটি ভোরের দৃশ্যকে পটভূমি করে। সেই সূত্র ধরেই কবি উপমার জগতে প্রবেশ করেছেন। প্রথম উপমা: প্রথমেই কবি জীবনানন্দ ভোরবেলায় আকাশের রংকে ঘাসফড়িঙের শরীরের মতো কোমল নীল বলে মনে করেছেন। ঘাসফড়িঙের সঙ্গে ভোরের আকাশকে তুলনা করায় প্রকৃতির মধ্যে প্রাণের একটি চাঞ্চল্য স্পষ্টভাবে অনুভব করা যায়। দ্বিতীয় উপমা:

তারপরেই তিনি এই ভোরবেলায় চারদিকের পেয়ারা আর নোনার গাছকে টিয়ার পালকের মতো সবুজ বলেছেন। গাছের পাতাকে পাখির পালকের সঙ্গে তুলনা করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতিরাজ্যে প্রাণের স্পর্শ এবং গতিশীলতাকে তুলে ধরা হয়েছে। একটি তারা তখনও আকাশে জেগে রয়ে গেছে-যেন সে রাতের বিদায়ী অস্তিত্বকে নিজের মধ্যে ধারণ করে রেখেছে। তৃতীয় উপমা: ভোরের এই তারাকে কবি তুলনা করেছেন পাড়াগাঁর বাসরঘরে ‘সব চেয়ে গোধূলিমদির মেয়েটির’ সঙ্গে। অর্থাৎ তার উপস্থিতির মধ্যে কবি লক্ষ করেন গ্রামবাংলার মেয়েদের মতো লজ্জা এবং কুণ্ঠাকে। ‘বাসরঘরে’ আর ‘মদির’ শব্দের ব্যবহারে কবি সেই লজ্জাকে আরও গভীর ও জীবন্ত করে তুলতে চান। চতুর্থ উপমা: এরপরে তারাটির উপস্থিতিকে কবি তুলনা করেছেন সেই ‘মিশরের মানুষী’র সঙ্গে, যে হাজার হাজার বছর আগে এক রাতে তার বুকের থেকে মুক্তা নিয়ে রেখেছিল কবির নীল মদের গেলাসে। একটু আগে গ্রাম্য মেয়ের সঙ্গে তুলনায় প্রকৃতির যে সহজতা ছিল, তাও ভেঙে যায় মিশরের এই মানুষীর ঐতিহাসিক আড়ম্বরে। ইতিকথা: ‘মিশরের মানুষী’ আর ‘হাজার হাজার বছর’ মিলে ছবিটি এভাবেই দেশের সীমা অতিক্রম করে এক চিরকালীন বিস্তৃতি পায়।

৩ “হয়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো।”- মন্তব্যটির প্রেক্ষাপট ‘শিকার’ কবিতাটি অবলম্বনে আলোচনা করো।

উত্তর… শুরুর কথা: জীবনানন্দ দাশের মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া ‘শিকার’ কবিতার প্রথম অংশে কবি ভোরের আগমনে প্রকৃতির যে রূপান্তর ঘটে তার বর্ণনা দিয়েছেন। প্রকৃতি দৃশ্যের পরিবর্তন: সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আকাশের রং যেমন পালটে যায়, প্রকৃতি হয়ে ওঠে সবুজ-ঠিক সেভাবেই হিমের রাতে দেশোয়ালি মানুষরা তাদের শরীর গরম রাখার জন্য সারারাত মাঠে যে আগুন জ্বেলেছিল-“মোরগফুলের মতো লাল আগুন”-সে আগুনও নিভে আসে। আগুনের রূপের পরিবর্তন: শুকনো অশ্বত্থপাতায় সে আগুনের অবশেষ জ্বলতে থাকে, কিন্তু তার তেজ আর রং আগের মতো থাকে না। কবির কথায়, সূর্যের আলোয় সেই আগুনের রং আর কুঙ্কুমের মতো থাকে না, হয়ে যায় “রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো।” একটি অসাধারণ উপমানের ব্যবহার করেছেন কবি এখানে, যার সম্পূর্ণটাই আসলে এক অসামান্য চিত্রকল্প। আগুন ও প্রকৃতির অনুষঙ্গ: রাতের অবসানে আগুন নিভে আসে, সূর্যের আলোয় তা ম্লান হয়ে যায়, আর তাকে কবি মিলিয়ে দেন অল্পপ্রাণ এক শালিকের হৃদয়ের ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া ইচ্ছার সঙ্গে। সামান্য একটি স্পর্শযোগ্য বিষয় এখানে অনুভূতির বিষয় হয়ে ওঠে। আর তার থেকে অনেক দীপ্তিমান হয়ে ওঠে চারদিকের বন ও আকাশ, যা সকালের আলোয় টলমল শিশিরে ময়ূরের সবুজ- নীল ডানার মতো ঝিলমিল করে।

৪ “হয়ে গেছে রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো।”- কীসের কথা বলা হয়েছে? কবিতার বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটি গুরুত্বপূর্ণ কেন?  

উত্তর.. উদ্দিষ্ট বিষয়: জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘শিকার’ কবিতার প্রশ্নোদ্ভূত অংশে হিমের রাতে শরীর গরম রাখার জন্য দেশোয়ালি মানুষেরা সারারাত মাঠে যে আগুন জ্বেলেছিল, এখানে সেই আগুনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মোরগফুলের মতো সেই লাল আগুন সূর্যের আলোয় ঔজ্জ্বল্য হারিয়েছে। শুকনো অশ্বত্থপাতায় আগুন জ্বলতে থাকলেও সূর্যের আলোয় সে আগুনের কুঙ্কুমের মতো অসাধারণ দীপ্তি ম্লান হয়ে গেছে। ভোরের আলোয় বিবর্ণ হয়ে যাওয়া সেই আগুনের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

▶ মন্তব্যটির গুরুত্ব: ইঙ্গিতধর্মিতা: সারারাত জ্বলতে থাকা আগুনের ম্লান হয়ে যাওয়া আসলে ভোর হওয়ার ইঙ্গিত। তখনই সকালের আলোয় টলমল করা শিশিরে চারদিকের বন আর আকাশ ঝিলমিল করে ওঠে। যেন রাতের অস্পষ্টতা থেকে গভীর নিশ্চিন্তে জীবনের জাগরণের পটভূমি রচিত হয়। কিন্তু সবটাই কাল্পনিক ধারণা মাত্র। নির্মম বাস্তবতার প্রকাশ: কবিতার শেষে তার নির্মম বাস্তবতা নৃশংস রূপ প্রকাশ করে। সারারাত চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সুন্দর বাদামি হরিণ যেন এই ভোরের কাছ থেকে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পেয়েছিল। ভোরের আলোয় তাই সে কচি বাতাবিলেবুর মতো সবুজ, সুগন্ধি ঘাস ছিঁড়ে খাচ্ছিল। তারপর যখন সে নদীর জলে নামে ক্লান্তি কাটানোর জন্য, তখনই শিকারির বন্দুকের গুলিতে মৃত্যু হল তার। নদীর জল মচকাফুলের মতো লাল হয়ে উঠল। বৈপরীত্যময় প্রতীক: এক আগুন নিভে গিয়ে আর-এক আগুন জ্বলল, হরিণের মাংস তৈরির জন্য। তাই প্রশ্নোদৃত মন্তব্যটি যেন হয়ে ওঠে এই নৃশংসতার এক বৈপরীত্যময় প্রতীক।

৫ “সুন্দর বাদামি হরিণ এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল”- হরিণের ভোরের জন্য অপেক্ষার কারণ এবং সেই ভোরকে উপভোগের বর্ণনা দাও।  

উত্তর… হরিণের ভোরের জন্য অপেক্ষার কারণ: মহাপৃথিবী কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ভোরের মনোরম বনভূমিতে সুন্দর বাদামি রঙের হরিণটির আবির্ভাব হয়। “নক্ষত্রহীন, মেহগনির মতো অন্ধকারে” সারারাত চিতাবাঘিনির গ্রাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে ঘুরে বেড়িয়েছিল হরিণটি। দিনের আলোয় নিজেকে রক্ষার তাগিদেই সে অপেক্ষা করেছিল ভোরের জন্য।

ভোর উপভোগ: ভোরের আলোয় নেমে আসা: ভোরের আলোয় হরিণটি

বনের বাইরে বেরিয়ে আসে এবং কচি বাতাবিলেবুর মতো সবুজ, সুগন্ধি ঘাস ছিঁড়ে খায়। তারপরে নেমে যায় নদীর শীতল জলে-তার ঘুমহীন ক্লান্ত শরীরকে সতেজ করার জন্য, বিহ্বল শরীরটাকে স্রোতের মতো একটা শীতল আবেশ দেওয়ার জন্য। জীবনের উল্লাস খোঁজার প্রয়াস: অন্ধকারের জরায়ু থেকে জন্ম নেওয়া ভোরের রোদের মতোই জীবনের উল্লাস খুঁজে নিতে চেয়েছিল হরিণটি। চেয়েছিল নীল আকাশের নীচে ‘সূর্যের সোনার বর্শার মতো’ জেগে উঠতে। কবির অনুভবে, সেই হরিণের লক্ষ্য ছিল ‘সাহসে সাধে সৌন্দর্যে’ অন্যান্য হরিণীকে চমকে দেওয়া। মেলে ধরার সুযোগ: এইভাবে মনোরম অরণ্যপ্রকৃতিতে হরিণটি যেন নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেয়ে যায়। প্রাণবন্ত, চঞ্চল হরিণটি প্রকৃতিকে নিজের স্বচ্ছন্দ বিচরণের ক্ষেত্র মনে করে। সম্ভবত হরিণটির নির্মম পরিণতির কথা চিন্তা করেই জীবনের এই উদ্যাপন কবি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন।

৬ “এসেছে সে ভোরের আলোয় নেমে; “-কেন সে নেমে এসেছে? তার পরিণতির আক্ষরিক ও রূপকার্থ বিশ্লেষণ করো। ২+৩ অথবা, “এসেছে সে ভোরের আলোয় নেমে;”-সেই ভোরের বর্ণনা দাও। ‘সে’ ভোরের আলোয় নেমে আসার পর কী কী ঘটল, লেখো।  

উত্তর.. নেমে আসার কারণ: জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় ‘ভোর’- এর পটভূমিতে যখন চারপাশ উদ্ভাসিত, সকালের আলোয় শিশিরভেজা চারদিকের বন ও আকাশ যখন ‘ময়ূরের সবুজ নীল ডানার মতো ঝিলমিল করছে’, সেই সময় একটি সুন্দর বাদামি হরিণকে ভোরের আলোয় নেমে আসতে দেখা যায়। সমস্ত রাত চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য হরিণটি ‘নক্ষত্রহীন, মেহগনির মতো অন্ধকারে’ সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে ঘুরে বেড়িয়েছিল। তার ভোরের জন্য অপেক্ষার কারণ ছিল মুক্তির পরিসর খুঁজে পাওয়া।

▶ পরিণতির বিশ্লেষণ: আক্ষরিক অর্থ: হরিণটির পরিণতি ছিল মর্মান্তিক। প্রথমে বন্দুকের গুলির শব্দ শোনা যায়। তারপরই নদীর জল যেন মচকাফুলের পাপড়ির মতো লাল হয়ে ওঠে। যে হরিণটি ভোরের আলোয় নদীতে নেমেছিল নিজের ঘুমহীন ক্লান্ত শরীরকে স্রোতের মতো একটা আবেশ দেওয়ার জন্য, তাকেই দেখা যায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ‘উয় লাল’ মাংসপিন্ডে রূপান্তরিত হতে। রূপক অর্থ: এই পরিণতি এক গভীর সমাজবাস্তবতাকে নির্দেশ করে। প্রকৃতির বুকে নাগরিক সভ্যতার আগ্রাসনের নিদর্শন হয়ে থাকে হরিণের এই মৃত্যু। ‘নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায়’ সিগারেটের ধোঁয়া আর ‘টেরিকাটা কয়েকটা মানুষের মাথা’ নিশ্চিত করে দেয় নগরসভ্যতার বিকৃত লালসা মেটাতেই প্রাণ দিতে হয়েছে হরিণটিকে। হরিণটি আসলে সমগ্র প্রকৃতির প্রতীক, আসলে প্রকৃতিকেই এভাবে আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে উদ্ধত মানবসভ্যতার কাছে।

৭ “সাহসে সাধে সৌন্দর্যে হরিণীর পর হরিণীকে চমক লাগিয়ে দেবার জন্য।”-মন্তব্যটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করো। এই আকাঙ্ক্ষা কি পূরণ হয়েছিল? ৩+২

উত্তর.. প্রসঙ্গ: জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘শিকার’ কবিতায় সারারাত

চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে গভীর অন্ধকারে সুন্দরীর বন থেকে অর্জুনের বনে ঘুরে ঘুরে একটি সুন্দর বাদামি হরিণ চলে এসেছিল ভোরের আলোয়। ঝলমল করে ওঠা সকালের কাছে সে খুঁজেছিল নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি। ছিঁড়ে খেয়েছিল বাতাবিলেবুর মতো সবুজ সুগন্ধি ঘাস। তারপরে গা ভাসিয়েছিল নদীর কনকনে ঠান্ডা জলে। ঘুমহীন, ক্লান্ত, বিহ্বল শরীরকে সে দিতে চেয়েছিল স্রোতের আবেশ। অন্ধকারের জরায়ু থেকে জন্ম নেওয়া ভোরের রোদের মতোই জীবনের উল্লাস খুঁজে নিতে চেয়েছিল হরিণটি। নীল আকাশের নীচে সে জেগে উঠতে চেয়েছিল সূর্যের “সোনার বর্শার মতো।” অন্যান্য হরিণীকে চমকে দেওয়ার জন্য নিজেকে এভাবেই যেন সাজিয়ে তুলতে চেয়েছিল সেই সুন্দর বাদামি হরিণটি।

▶ আকাঙ্ক্ষার পরিণতি: তথাকথিত সভ্যসমাজ হরিণের এই আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করতে দেয়নি। প্রকৃতির কোমলতার মাঝে হঠাৎ ভেসে এসেছিল এক অদ্ভুত শব্দ। আর তারপরই নদীর জল হয়ে উঠেছিল মচকাফুলের মতো লাল। প্রাণবন্ত হরিণটি পরিণত হল নিষ্প্রাণ মাংসপিণ্ডে। ঘুমের দেশেই যেন সে হারিয়ে গেল। সিগারেটের ধোঁয়ায় আর গল্পে মশগুল নাগরিক সমাজের বিকৃত জীবন উদ্যাপনে হরিণের সাধ ও আহ্লাদের অবসান ঘটে। হয়তো নাগরিকজীবনের কাছে প্রকৃতির পরাজয়ের প্রতীক হয়ে থাকে হরিণের এই মৃত্যু।

৮ “এই ভোরের জন্য অপেক্ষা করছিল!”-কে অপেক্ষা করছিল? তার পরিণতি কী হয়েছিল?  

উত্তর.. অপেক্ষাকারী: ‘শিকার’ কবিতায় উল্লিখিত অংশে সুন্দর বাদামি হরিণের অপেক্ষার কথা বলা হয়েছে।

▶ অপেক্ষাকারীর পরিণতি: ‘পঙ্ক্তি: ১৮-৩৬’-এর বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী

৩ নং প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশের উত্তর দ্যাখো।

৯ “আগুন জ্বলল আবার…”- ‘আবার’ শব্দটি প্রয়োগের তাৎপর্য কী? এখানে এই ঘটনা কীসের ইঙ্গিত দেয়? ৩+২

উত্তর  ‘আবার’ শব্দপ্রয়োগের তাৎপর্য: জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতায় আগুনের চিত্রকল্পটি দু-বার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমবার দেশোয়ালি মানুষেরা শীতের রাতে শরীর গরম রাখার জন্য এই আগুন জ্বালিয়েছিল। মোরগফুলের মতো সেই লাল আগুন ভোর হওয়ার পরেও জ্বলছিল। কিন্তু সকালের আলোয় ‘রোগা শালিকের হৃদয়ের বিবর্ণ ইচ্ছার মতো’ ম্লান হয়ে যাওয়া সেই আগুনেই ছিল ভোরের ইঙ্গিত, জীবনের জেগে ওঠার আভাস। দ্বিতীয়বার এই আগুনের প্রসঙ্গ ফিরে এসেছে কবিতার শেষে। সুন্দর বাদামি হরিণ সারারাত চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিশ্চিন্ত ভোরে বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু শিকারির গুলি নদীর জলে আবেশ খোঁজা তার ক্লান্ত শরীরকে ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল। এরপরেই আবার আগুন জ্বলেছিল। কিন্তু সেখানে জীবনের জাগরণ ছিল না। ছিল জীবন নাশের আয়োজন। জ্বলন্ত আগুনে উয় লাল হরিণের মাংস তৈরি হয়ে আসে। ‘আবার’ শব্দটির সাহায্যে এই দ্বিতীয়বারের আগুন জ্বলার কথাই বলা হয়েছে।

▶ ঘটনার ইঙ্গিতময়তা: দ্বিতীয়বার আগুন জ্বলার ঘটনা শুধু একটা হরিণশিকারের কাহিনি নয়। নির্মল প্রকৃতির বুকে নাগরিক সমাজের যে আগ্রাসন তারও প্রতীক এই ঘটনা। তার সঙ্গে সিগারেটের ধোঁয়া, টেরিকাটা মাথা-এসব মিলে নাগরিক নৃশংসতার যে আয়োজন হয়, প্রকৃতির সারল্য আর নিজস্বতা হারিয়ে যায় সেই অন্ধ মানবসভ্যতার কাছে। সেই ইঙ্গিতই যেন দেখা যায় প্রশ্নোদ্ভূত পঙ্ক্তিতে।

১০ “উয় লাল হরিণের মাংস তৈরি হয়ে এল।” -মাংসলোভী মানুষের যে হিংস্রতার পরিচয় ‘শিকার’ কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর.. মানুষের হিংস্রতার পরিচয়: প্রাক্কথন: জীবনানন্দ দাশের ‘শিকার’ কবিতার পটভূমিতে আছে এক নির্মল ‘ভোর’। প্রকৃতির রূপ: সেখানে ‘আকাশের রং’ ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল। টিয়ার পালকের মতো সবুজ পেয়ারা ও নোনার গাছ। সকালের আলোয় টলমলে শিশিরে চারদিকের বন ও আকাশ ঝিলমিল করছে। এই অসামান্য ভোরেই বেঁচে থাকার পরিসর খুঁজেছিল সুন্দর বাদামি হরিণ। হরিণের বেঁচে থাকার উল্লাস: সারারাত এক বন থেকে অন্য বনে পালিয়ে চিতাবাঘিনির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে এই ভোরের আলোয় হরিণটি বেঁচে থাকার উল্লাস উপভোগ করতে চেয়েছিল। সে ভোরের আলোয় ছিঁড়ে খেয়েছিল কচি বাতাবিলেবুর মতো সবুজ সুগন্ধি ঘাস আর ‘নদীর তীক্ষ্ণ শীতল ঢেউয়ে’ নেমেছিল রাতজাগার ক্লান্তি মেটাতে। নাগরিক মানুষের লালসা: ভোরের আলোয় হরিণটি যখন জীবনের উল্লাস খুঁজে নিচ্ছিল, ঠিক তখনই ভেসে আসে বন্দুকের গুলির শব্দ আর নদীর জল হরিণের রক্তে হয়ে ওঠে ‘মচকাফুলের পাপড়ির মতো লাল’। নাগরিক মানুষের লালসা মেটাতে নিষ্পাপ হরিণটি ‘উয় লাল’ মাংসে পরিণত হয়। উপসংহার: নক্ষত্রের নীচে ঘাসের বিছানায় বসে অনেক পুরোনো শিশিরভেজা গল্প আর সিগারেটের ধোঁয়ায় সভ্যতার যে চিহ্ন দেখা যায় তাতে স্পষ্ট হয় সভ্যসমাজের নৃশংসতায় চিরকালের ঘুমের দেশে নিষ্পাপ জীবনের হারিয়ে যাওয়ার কাহিনিই।