WBCHSE Class 12 Bangla Chapter 3.1 Solution | Bengali Medium

Class 12 Chapter 3.1 Solution

বিভাব

1. MCQs Question Answer

১. শম্ভু মিত্রের বহুরুপী নাট্যগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল-

ক) ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে

খ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে

গ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে

ঘ) ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে

২. ‘বহুরূপী’ প্রযোজিত প্রথম নাটক-

ক) চার অধ্যায়

খ) উলুখাগড়া 

গ) রক্তকরবী

ঘ) পুতুল খেলা

৩. ‘বহুরূপী’ নাট্যগোষ্ঠী গড়ে তোলার মূল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন কে?

ক) বিজন ভট্টাচার্য

খ) অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়

গ) মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যঘ

ঘ) তুলসী  লাহিড়ি

৪. শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকটি রচিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে?

ক) ১৯৪৬

খ) ১৯৪৮

গ) ১৯৫১

ঘ) ১৯৬৫

৫. ‘বিভাব’ নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় কত খ্রিস্টাব্দে?

ক) ১৯৪৮ 

খ) ১৯৫১

গ) ১৯৫৬ 

ঘ) ১৯৭৩

৬. ‘বিভাব’ নাটকটি প্রথম প্রকাশিত হয় কত খ্রিস্টাব্দে?

ক) ১৯৪৮ 

খ) ১৯৫১ 

গ) ১৯৫৬ 

ঘ) ১৯৭৩

৭. ‘বিভাব’ নাটকটির প্রধান চরিত্রের সংখ্যা হল-

ক) দুই 

খ) তিন

গ) পাঁচ 

ঘ) সাত

৮. ‘বিভাব’ নাটকটি হল একটি-

ক) একাঙ্কিকা 

খ) যাত্রাপালা 

গ) পঞ্চাঙ্ক 

ঘ) পূর্ণাঙ্গ নাটক

৯. শম্ভু মিত্র, অমর গাঙ্গুলি কোন্ নাট্যদলের সদস্য ছিলেন? 

ক) নান্দীকার 

খ) নান্দীমুখ 

গ) পঞ্চম বৈদিক

 ঘ) বহুরূপী 

১০. ‘বিভাব’ নাটকে ‘বৌদি’ হলেন- 

ক) শোভা সেন 

খ) তৃপ্তি মিত্র

গ চিত্রা সেন 

ঘ) শাঁওলি মিত্র

১১. “পরদা খুললে দেখা যায়…।”- 

ক) মঞ্চ ফাঁকা 

খ) মঞ্চ সম্পূর্ণ ফাঁকা

গ) মঞ্চ অন্ধকার 

ঘ) মঞ্চে নায়ক দাঁড়িয়ে আছে

১২. ‘বিভাব’ নাটকের নামকরণের ভিত্তিক 

ক) পুরোনো নাট্যশাস্ত্র 

খ) শম্ভু মিত্রের ইচ্ছা 

গ) বিজন ভট্টাচার্যের পরামর্শ 

ঘ) নাট্যদলের সমবেত সিদ্ধান্ত

১৩. “আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত…”-

ক) স্বভাব নাটক 

খ) বিভাব নাটক 

গ) অভাব নাটকঘ

 ঘ) ভাব নাটক

১৪. “আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক’।”-কারণ-

ক) এ নাটকের জন্ম দুরন্ত অভাব থেকে

খ) এ নাটকে অর্থাভাব দেখানো হয়েছে

গ) এ নাটকে চরিত্র-সংখ্যার অভাব রয়েছে 

ঘ) এ নাটকে অভিনয়-উপকরণের অভাব রয়েছে

১৫. সরকারের পেয়াদা কীসের লক্ষ্যে নাট্যদলের কাছে আসে? 

ক) নিমন্ত্রণপত্র নিতে 

খ) অনুমতিপত্র দিতে 

গ) খাজনা আদায় করতে 

ঘ) সংবর্ধনা জানাতে

১৬. ‘বিভাব’ নাটকটি কোন্ বিশেষ অভিনয় রীতির জন্য বিশিষ্ট?

ক) মূকাভিনয় 

খ) নাট্য-চরিত্রদের দেহভঙ্গির ব্যবহার

গ) আড়ম্বরপূর্ণ মঞ্চসজ্জা

ঘ) আলোর ব্যবহার 

১৭. “তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি।”-এই প্যাঁচ হল-

ক) জনমত গঠন 

খ) নিজস্ব নাট্যমঞ্চ তৈরি 

গ) ভঙ্গিনির্ভর নতুন নাট্যরীতি প্রয়োগ

ঘ) নাটকের অভিনয় বন্ধ রাখা

১৮. “এক পুরোনো নাটকে দেখি লেখা আছে…।”- 

ক) উড়ে 

খ) তামিল 

গ) বাংলা

ঘ) মারাঠি

১৯. “এক পুরোনো বাংলা নাটকে দেখি লেখা আছে…।”-কী? 

ক) রাজা ও প্রজা রথারোহণম নাটয়তি 

খ) রাজা রথারোহণম 

গ) রাজা রথারোহণম নাটয়তি

ঘ) রথারোহণম নাটয়তি

২০. “রাজা রথারোহণম নাটয়তি।”-এর অর্থ-

ক)  রাজা রথে আরোহণ করলেন 

খ) রাজা রথ থেকে নামলেন 

গ) রাজা রথে আরোহণ করার ভঙ্গি করলেন

ঘ) রাজা রথে চড়ে যুদ্ধযাত্রা করলেন

২১. “তমে ঘোড়া নেইকরি চঞ্চল খবর নেই আসিবি।”-এ কথা রাজা বলেছিলেন-

ক) মন্ত্রীকে 

খ) সেনাপতিকে 

গ) দূতকে

ঘ) অভিনেতাকে

২২. “তমে ঘোড়া নেইকরি চঞ্চল খবর নেই আসিবি।”-এটি কোন্ ভাষা? 

ক) বাংলা 

খ) অসমিয়া 

গ) হিন্দি 

ঘ) ওড়িয়া 

২৩. “সুতরাং চলো-বাইরে…” বাইরে বেরোলে পাওয়া যাবে- 

ক) মুক্ত বাতাস 

খ) মানুষ 

গ) হাসির খোরাক 

ঘ) উপযুক্ত অভিনেতা

২৪. “হেড পন্ডিত ইস্কুলে আমাকে প্রমোশন দেননি।”-কারণ- 

ক) সংস্কৃতে বারো পেয়েছিলাম 

খ) সংস্কৃতে ফেল করেছিলাম 

গ) সংস্কৃতে দশ পেয়েছিলাম 

ঘ) সংস্কৃতে তেরো পেয়েছিলাম।

২৫. “হাসির খোরাক, পপুলার জিনিসের খোরাক”-কোথায় পাওয়া যাবে? 

ক) ঘরে 

খ) বাইরে 

গ) মাঠে

ঘ) ঘাটে

২৬. হঠাৎ পেছন থেকে শোভাযাত্রীদের ক্ষীণ আওয়াজ শোনা যায়- 

ক) চাল চাই, কাপড় চাই 

খ) অন্ন চাই, গৃহ চাই 

গ) ফ্যান চাই, ভাত চাই 

ঘ) এর কোনোটিই নয় 

২৭. “… পুলিশেও ছাড়বে না, আর লোকেও দেখবে না।”-যা না দেখার কথা বলা হয়েছে লেখা নাটক

ক) মিছিল নিয়ে লেখা নাটক 

খ) জীবন নিয়ে লেখা নাটক

গ) চুরি-ডাকাতি নিয়ে 

ঘ) ব্রিটিশবিরোধী নাটক 

২৮. “লাগল ঝঞ্ঝাট।”-এর কারণ-

ক) বউদির রাগ 

খ) হাসির নাটকের অভাব 

গ) মিছিল আসা 

ঘ) পুলিশ আসা

২৯. “….কয়েকজন মেয়ে এবং কয়েকজন ছেলে। সামনের কয়েকজন হাতটা উঁচু করে থাকে।”-হাতে কী ছিল?

ক) ভাতের থালা 

খ) পতাকা বা ফেস্টুন 

গ) প্রচারপত্র 

ঘ) ফুল

৩০. শোভাযাত্রার লোকেরা কীসের জন্য দাবি জানিয়েছিল? 

ক) চাল ও কাপড় 

খ) সঠিক মজুরি 

গ) শিক্ষার সুযোগ 

ঘ) আইনশৃঙ্খলার উন্নতি

৩১. সার্জেন্টের শুধুমাত্র যা ছিল-

ক) ইউনিফর্ম 

খ) বন্দুক 

গ) ক্রস বেল্ট

ঘ) মাথায় টুপি

৩২. “… পরস্পরের দিকে তাকায়”-যারা তাকিয়েছিল- 

ক) পুলিশরা 

খ) শোভাযাত্রীরা

গ) অমর গাঙ্গুলি ও শম্ভু মিত্র 

ঘ) রাস্তার লোকেরা

৩৩. একটি ছড়িকে দু-পায়ের মধ্যে ধরে ঘোড়ায় চড়া বোঝানো হয় কোথায়?

ক) উড়িয়া নাটকে 

খ) উড়িয়া যাত্রায়

গ) অসমিয়া নাটকে 

ঘ) ছৌ নৃত্যে

৩৪. শম্ভু মিত্র ‘বিভাব’ নাটকে যে তামাশা দেখেছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন তা ছিল-

ক) উড়িয়া তামাশা 

খ) মারাঠি তামাশা

গ) রাজস্থানি তামাশা 

ঘ) অসমিয়া তামাশা

৩৫. “… অনেক কাকুতি মিনতি করল”-কে, কার কাছে কাকুতিমিনতি করেছিল? 

ক) চাষি জমিদারের কাছে 

খ) চাষি রাজার কাছে 

গ) প্রজা জমিদারের কাছে 

ঘ) পুরোহিত রাজার কাছে

৩৬. “এদিকে যে অভিনেতা জমিদার সেজে এতক্ষণ গর্জন করছিল,”—এরপর সে কী সেজেছিল? 

ক) চাষি 

খ) রাজা 

গ) চাকর 

ঘ) পুরুত 

৩৭. “এ শহরে সব কত কত ইংরিজি জানা লোক”- তারা যা করে- 

ক) ইংরেজি নভেল পড়ে 

খ) বিলিতি বায়োস্কোপ দেখে 

গ) ফিটন গাড়ি চাপে

(ঘ) সভায় বক্তৃতা দেয়

৩৮. “এমনি সময় হঠাৎই এক সাহেবের লেখা পড়লাম।”-সাহেবের নামক 

ক) আইজেনস্টাইন 

খ) আইনস্টাইন 

গ) সেরাসিম লেবেদেফ

ঘ) জর্জ বার্নড্ শ

৩৯. শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত ‘কাবুকি’ কোন্ দেশের থিয়েটার?

ক) রাশিয়া 

খ) জাপান 

গ) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 

ঘ)  ভিয়েতনাম

৪০. ‘বিভাব’ নাটকটির অনুপ্রেরণা হল- 

ক) জাপানি কাবুকি থিয়েটার 

খ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটক

গ) রবীন্দ্রনাথের নাটক

ঘ) দীনবন্ধু মিত্রের নাটক

৪১. “…এক জাপানি থিয়েটার মস্কোতে গিয়েছিল।”-এই জাপানি থিয়েটার ছিল- 

ক) নো

খ) কিয়োগেন 

গ) কাবুকি

ঘ) বানরাকু

৪২. “.. অত্যন্ত ক্ষুদ্ধ হয়ে এক দুর্গ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন-“-কার বেরিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে? 

ক) একজন নাইটের

খ) একজন দুর্গরক্ষকের

গ) একজন বিচারপ্রার্থীর

ঘ) একজন ধর্মযাজকের 

৪৩. “…ঠিক পেছনেই দুজন লোক একটা মস্ত দুর্গদ্বার হাতে করে দাঁড়িয়ে রইল।”-এই লোকেরা ছিল-

ক) পুলিশ 

খ) চৌকিদার 

গ) শিফটার 

ঘ) প্রতিপক্ষ

৪৪. “…শিফটাররা বড়ো দরজা রেখে দিয়ে একটা অপেক্ষাকৃত ছোটো দরজা ধরে দাঁড়াল”-কখন এ ঘটনা ঘটল? 

ক) নাটকের দৃশ্য বদলের সময় 

খ) খর্বাকৃতি অভিনেতার মঞ্চে প্রবেশের সময় 

গ) পরিচালক নির্দেশ দিলে 

ঘ) নাইট দু-তিন পা এগোলে 

৪৫. “… কাল্পনিক যুদ্ধ করতে করতে একজন পেটে কাল্পনিক খোঁচা খেয়ে কাল্পনিকভাবে মরে গেল”-এই মৃত্যু নাট্যকারের ভাষায়-

ক) বীভৎস 

খ) ইসথেটিক

গ) অতি সাধারণ

ঘ) বিসদৃশ

৪৬. “এই পড়ে বুকে ভরসা এল”-ভরসার কারণ- 

ক) বিষয়টি অভিনয়যোগ্য 

খ) বিষয়টি দর্শকদের কাছে আকর্ষণীয় হবে 

গ) সাহেব একে সার্টিফিকেট দিয়েছে 

ঘ) দক্ষ অভিনেতা খুঁজতে হবে না

৪৭. রুশদেশীয় এক বিখ্যাত চিত্র পরিচালক হলেন-

ক) আইজেনস্টাইন

খ) আইজেকস্টাইন 

গ) আইনস্টাইন

ঘ) রুশো

৪৮. কাল্পনিক যুদ্ধের মৃত্যুকে নাট্যকার বলেছেন- 

ক) ইসথেটিক মরা

খ) অস্বাভাবিক মরা 

গ) খুব রোমান্টিক 

ঘ) অদ্ভুত মরা

৪৯. কাবুকি থিয়েটার কোন্ দেশের? 

ক) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 

খ) ভিয়েতনাম 

গ) জাপান 

ঘ) রাশিয়া

৫০. “পৃথিবীতে সবচেয়ে পপুলার জিনিস হচ্ছে…।”-‘বৌদি’ তৃপ্তি মিত্র যাকে সবচেয়ে পপুলার জিনিস বলেছেন, সেটি হল- 

ক) সিনেমা 

খ)  আড্ডা

গ) খেলাধুলা 

ঘ) প্রেম

2. Very Short Question Answer

১. ‘বিভাব’ নাটকে অমর গাঙ্গুলি কোন্ নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন?

▶ ‘বিভাব’ নাটকে অমর গাঙ্গুলি ‘বহুরূপী’ নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

২. শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকটি আঙ্গিকের দিক থেকে কী ধরনের নাটক?

▶ শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকটি একটি একাঙ্ক নাটক।

৩. ‘বিভাব’ নাটকে ‘বৌদি’ কে ছিলেন?

▶ ‘বিভাব’ নাটকে ‘বহুরূপী’র সভ্য-স্বজনদের কাছে শম্ভু মিত্রের স্ত্রী অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্র ‘বৌদি’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।

৪. শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকটি শুরু হয়েছে কীভাবে?

▶ ‘বিভাব’ নাটকটি শুরু হয়েছে দর্শকদের সঙ্গে শম্ভু মিত্রের এক দীর্ঘ কথোপকথনের মধ্য দিয়ে।

৫. ‘বিভাব’ নাটকের নামকরণ হয়েছিল কীভাবে?

▶ কোনো এক ভদ্রলোেক পুরোনো সব নাট্যশাস্ত্র খুঁজে শম্ভু মিত্রের নাটকের নাম দিয়েছিলেন ‘বিভাব’।

৬. শম্ভু মিত্রের মতে ‘বিভাব’ নাটকের নাম কী হওয়া উচিত ছিল?

▶ শম্ভু মিত্রের মতে ‘বিভাব’ নাটকের নাম হওয়া উচিত ছিল ‘অভাব নাটক’।

৭. “এমনি সময় হঠাৎই এক সাহেবের লেখা পড়লাম।”-সাহেবের নাম কী ছিল?

▶ ‘বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত এই সাহেব ছিল বিখ্যাত রুশদেশীয় চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইন।

৮. আইজেনস্টাইন কাবুকি থিয়েটারের অভিনয় কোথায় দেখেছিলেন?

▶ আইজেনস্টাইন মস্কোতে কাবুকি থিয়েটারের অভিনয় দেখেছিলেন।

৯.”তাদের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন সাহেব অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে অনেক কথা লিখেছেন।” কাদের অভিনয়ের কথা বলা হয়েছে?

▶ আলোচ্য অংশে জাপানি থিয়েটার কাবুকির অভিনয়ের কথা বলা হয়েছে।

১০. ‘বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত ‘কাবুকি’র বৈশিষ্ট্য কী?

▶ ‘বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত ‘কাবুকি’ থিয়েটারের বৈশিষ্ট্য ছিল সেই নাটকের অভিনয়ে ভঙ্গির বহুল ব্যবহার করা হত।

১১.”এবারে নিশ্চয়ই আমাদের দেশের ইংরেজি শিক্ষিত লোকেরা এর কদর বুঝবেন।” কীসের কদর?

▶ উপকরণের বাহুল্যহীন দেহের অঙ্গভঙ্গিনির্ভর নাট্যাভিনয়ের কদরের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

১২. “আর তো কিছুই না, খালি মেনে নেওয়া।”-কী মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে?

▶ নাটকের ভঙ্গিসর্বস্ব কাল্পনিক অভিনয়কে মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

১৩. “কেন, হাসি পাচ্ছে না?” বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলেছিলেন?

▶ নিজের কল্পিত বসার ভঙ্গি নির্দেশ করে বক্তা শম্ভু মিত্র এ কথা বলেছিলেন।

১৪. অনেকদিন থেকে আমাদের দলে রয়েছেন।”-এই দল বলতে কোন্ দলের কথা বলা হয়েছে?

• প্রশ্নোদ্ভূত অংশে ‘এই দল’ বলতে ‘বহুরূপী’ নাট্যগোষ্ঠীর কথা বলা হয়েছে।

১৫. “বৌদির কথা শুনে সে স্পষ্টত হতাশ।”-কার কথা বলা হয়েছে?

▶ ‘বিভাব’ নাটকের সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলি ‘বৌদি’ তৃপ্তি মিত্রের কথা শুনে হতাশ হয়েছিলেন।

3. Short Question Answer

 ১. ‘বিভাব’-এর সূচনায় শম্ভু মিত্র নাট্য অভিনয়ের ক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ এনেছেন?

▶ নিদারুণ অভাবে শুধু ইচ্ছাশক্তির জোরে নাটক করতে নেমেও সরকারের পেয়াদাকে খাজনা দিতে হয়। পেশাদারি থিয়েটারের তুলনায় তাঁদের প্রতি সরকারের এই বি মাতৃসুলভ আচরণের কথা এখানে বলা হয়েছে।

২. শম্ভু মিত্র কেন তাঁর নাটকের নাম ‘অভাব নাটক’ রাখতে চেয়েছিলেন?

▶ শম্ভু মিত্রের মতে, দুরন্ত অভাব থেকে জন্ম নেওয়া এই নাটকের দৃশ্যায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো উপকরণই না থাকায় এর নাম ‘অভাব নাটক’ রাখা উচিত।

৩. “…তাই সরকার আমাদের গলা টিপে খাজনা আদায় করে নেন।” মন্তব্যটির প্রসঙ্গ উল্লেখ করো।

▶ নাটক নিয়ে ব্যাবসা না করলেও সরকার যেভাবে জোর করে গ্রুপ থিয়েটারগুলির কাছ থেকে খাজনা আদায় করে, তার উল্লেখ প্রসঙ্গেই মন্তব্যটি করা হয়েছে।

৪. “…সেই নেওয়াটা এমন বিচিত্র সাঁড়াশি ভঙ্গিতে”-প্রসঙ্গ উল্লেখ করো।

▶ ‘বহুরূপী’ নাট্যদলের কাছ থেকে সরকার যে কর গ্রহণ করে, সেই কর নেওয়ার কথা বলতে গিয়েই বক্তা আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

৫. অমরের বাড়িতে লেখকের আসার কারণ কী ছিল? অথবা, শম্ভু মিত্র কেন অমর গাঙ্গুলির বাড়ি গিয়েছিলেন?

▶ নাট্যদলের সম্পাদকের নির্দেশমতো নাটকে হাসির উপাদান সন্ধান করতে নাট্যকার-অভিনেতা শম্ভু মিত্র সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলির বাড়িতে গিয়েছিলেন।

৬. “তাই অনেক ভেবে চিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি”- প্যাঁচটির পরিচয় দাও।

▶ প্যাঁচটি হল এমন একটি নাট্য-প্রযোজনা রীতি প্রয়োগ করা, যেখানে মঞ্চ এবং মঞ্চসজ্জা থাকবে না। ফলে কর আদায়ের জন্য সরকারের রক্তচক্ষুও থাকবে না।

৭ “বুদ্ধিটা কী করে এল তা বলি।”-কোন্ বুদ্ধির কথা এখানে বলা হয়েছে?

▶ প্রয়োজনীয় নাট্য-উপকরণকে অগ্রাহ্য করে দর্শকের সামনে কীভাবে নাটককে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপিত করা যায়- সেই বুদ্ধির কথা এখানে বলা হয়েছে।

৮ “এক পুরোনো বাংলা নাটকে দেখি…”-নাট্যকার সেখানে কী দেখেছিলেন?

> নাট্যকার শম্ভু মিত্র একটি পুরোনো বাংলা নাটকে দেখেছিলেন যে, লেখা আছে “রাজা রথারোহণম্ নাটয়তি”। অর্থাৎ “রাজা রথে আরোহণ করার ভঙ্গি করলেন”।

৯. ‘বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত “রাজা রথারোহণম নাটয়তি” কথাটির অর্থ কী?

▶ ‘বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত “রাজা রথারোহণম নাটয়তি” কথাটির অর্থ- ‘রাজা রথে আরোহণ করার ভঙ্গি করলেন।’

১০. ওড়িয়া নাটকে দূত ঘোড়ায় চড়ার অভিনয় কীভাবে করে?

▶ ওড়িয়া নাটকে রাজা যখন দূতকে ঘোড়ায় চেপে দ্রুত খবর নিয়ে আসার কথা বলেন, তখন দূত ছোটো ছেলের মতো দুই পায়ের ফাঁকে লাঠি গলিয়ে ঘোড়ায় চড়ার ভঙ্গিতে হেট্ হেট্ করতে করতে মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

১১ “মাঠ ভর্তি লোক নিঃশব্দে এসব মেনে নিয়ে দেখলে।”-কী মেনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে?

▶ মারাঠি তামাশায় জমিদার সেজে অভিনয় করা ব্যক্তি যখন দর্শকের সামনেই মুখে দাড়ি গোঁফ এঁটে পুরুত সেজে চাষির সামনে গিয়ে আবার ধর্মীয় তর্জন শুরু করেছিল, তা মাঠ-ভরতি লোক নিঃশব্দে মেনে নিয়ে দেখেছিল।

১২ “মনে হল লোকে মানবে না।”-লোকে না মানার কারণ কী?

▶ ইংরেজি শিক্ষিত, বুচিমান দর্শকের কাছে শুধু দৈহিক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নাটকের অভিনয় যদি গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে তারা সেই পদ্ধতিটা মানবে না।

১৩. “যেমন রবিঠাকুরকে মেনেছিল।”-কারা, কেন রবিঠাকুরকে মেনেছিল?

▶ শহরের ইংরেজি-জানা লোকেরা রবিঠাকুরকে মেনেছিল; লেখকের মতে, তার কারণ হল, সাহেবরা তাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল।

১৪. “মনে হল লোকে মানবে না।”- কোন্ বিশেষ শ্রেণির লোকের কথা বক্তা উল্লেখ করেছেন?

▶ প্যান্টালুন পরা এবং ইংরেজি জানা যেসব লোক প্রতি সপ্তাহে বিলিতি বায়োস্কোপ দেখে, সেই শ্রেণির বাঙালি দর্শকের কথা এখানে বলা হয়েছে।

১৫. “অর্থাৎ Perspective রচনা হল আর কী।”-কীভাবে এই পারস্পেক্টিভ রচিত হয়েছিল?

▶ আলোচ্য নাটকে বর্ণিত কাবুকি থিয়েটারে নাইটের বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে শিফটারদের দুর্গদ্বার ধরে দাঁড়ানো এবং তার এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ ছোটো দরজার ব্যবহার-এভাবে পারস্পেক্টিভ রচিত হয়েছিল।

১৬”..খুব আর্টিস্টিক মরা, একেবারে ইসথেটিক মরা।”-এই মৃত্যু কীরকম?

▶ জাপানের কাবুকি নাটকে দেখা যায়, দুই যোদ্ধার লড়াইয়ে যার মৃত্যু হচ্ছে তার হয়তো হাতটা নড়ে উঠল, পা ধীরে কাঁপল, মুণ্ডু আর চোখ দু-বার নড়ল; এরপরেই জিভ বের করে তার মৃত্যু হল। অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বীভৎস খিঁচুনি বা রক্তাক্ততা নেই এই মৃত্যুর দৃশ্যে। তাই এই মৃত্যু খুব আর্টিস্টিক বা ইসথেটিক।

১৭ “এই পড়ে বুকে ভরসা এল…”-কী পড়ে বুকে ভরসা এল?

▶ বুশদেশীয় বিখ্যাত চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইন যে লেখায় জাপানের কাবুকি থিয়েটার অর্থাৎ দেহভঙ্গিনির্ভর নাট্যাভিনয় প্রসঙ্গে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন, সেই লেখা পড়ে নাট্যকার শম্ভু মিত্রের ভরসা এল।

১৮”… স্ত্রীর দুঃখটাই প্রধান সেখানে।”-কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে?

▶ কাবুকি থিয়েটারে যোদ্ধার কাল্পনিক মৃত্যু ঘটলে তার বিধবা স্ত্রী যখন কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসে তখন মৃত লোকটি উঠে চলে গেলেও দর্শকরা কিছু মনে করে না। কারণ ওই দৃশ্যে স্বামীর মৃত্যুর বিষয়টি গুরুত্বহীন, সেখানে স্ত্রী- র দুঃখ বা শোকপ্রকাশই প্রধান।

১৯. বিভাব’ নাটকে উল্লিখিত ‘কাবুকি’ নাটকের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখো।

▶ কাবুকি নামক জাপানি থিয়েটারের বৈশিষ্ট্য হল মঞ্চসজ্জার বদলে সেখানে অভিনয় ভঙ্গির বহুল ব্যবহার করা হয়।

২০”সে লড়াই সত্যিকার তলোয়ার দিয়ে ঝনঝন করে বাস্তব লড়াই নয়।”-শুধু ভঙ্গির মাধ্যমে লড়াইতে কীভাবে একজন মারা যাবে?

▶ এই ভঙ্গির মাধ্যমে লড়াইতে কাল্পনিক খাপ থেকে কাল্পনিক তলোয়ার বের.করে সম্পূর্ণ কাল্পনিক যুদ্ধ করতে করতে একজন পেটে কাল্পনিক খোঁচা খেয়ে কাল্পনিকভাবে মারা যাবে।

২১ “কী করে যাব? দরজা বন্ধ যে।”-কোন্ দরজার কথা এখানে বলা হয়েছে?

▶ ‘বিভাব’ নাটকে অমর গাঙ্গুলির কল্পিত বাড়ির নীচতলায় যে কল্পিত দরজাটি ছিল, যার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন শম্ভু মিত্র, সেই দরজার কথা বলা হয়েছে।

২২”এমনি এলাম-একেবারে এমনি নয়…”-বক্তার আসার কারণ কী?

▶ হাসির নাটক লেখার খোরাক জোগাড় করতে ‘বিভাব’ নাটকের নাট্যকার শম্ভু মিত্র অমরবাবুর বাড়িতে এসেছিলেন।

২৩. “বাঙালিরা শুনি কাঁদুনে জাত”-কে, কার উদ্দেশ্যে বলেছেন?

▶ উদ্ধৃত উক্তিটি আসলে বল্লভভাইয়ের মন্তব্য হলেও এখানে অমর গাঙ্গুলি শম্ভু মিত্রকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছেন।

২৪. “সম্পাদক বলেছে হাসির নাটক করতে হবে”-এ কথা বলার কারণ কী?

▶ হাসির নাটকের ‘দারুণ বক্স অফিস’ অর্থাৎ দর্শকচাহিদা বেশি থাকার জন্য সম্পাদক হাসির নাটক করতে বলেছেন।

২৫. ‘বিভাব’ নাটকের নাট্যকার শম্ভু মিত্রকে নাট্যদলের সম্পাদক কী বলেছিলেন?

▶ ‘বিভাব’ নাটকের নাট্যকার শম্ভু মিত্রকে নাট্যদলের সম্পাদক হাসির নাটক করতে বলে এই কথা জানিয়েছিলেন যে, হাসির নাটকের বক্স অফিস দারুণ।

২৬ “হ্যাঁ বল্লভভাই বলে গেছেন-“বল্লভভাই বলে গেছেন বলে কী করতে হবে?

▶ ‘বিভাব’ নাটকে অমর গাঙ্গুলি বলেছেন, বল্লভভাই বলে গেছেন তাই, হাসতে হলে বেশ কোমর বেঁধে হাসতে হবে।

২৭ “ওঃ দাতাকর্ণ যে।”-বক্তা কাকে, কেন ‘দাতাকর্ণ’ বলেছেন?

▶ ‘বৌদি’র আনা কল্পিত চা খেতে গিয়ে শম্ভু মিত্রের কল্পিত সিগারেটটি নষ্ট হলে অমর গাঙ্গুলি তাঁকে আবার সিগারেট দেওয়ার কথা বলায় শম্ভু মিত্র এ কথা বলেন।

২৮”কী হে, সিগারেট আছে নাকি?” বক্তা এ কথার কী উত্তর পেয়েছিলেন?

▶ শম্ভু মিত্রের উদ্ধৃত প্রশ্নের উত্তরে অমর গাঙ্গুলি বলেছিলেন যে, তিনি যা চাইবেন তাই অমর গাঙ্গুলির কাছে পাবেন।

২৯ “পুলিশেরা বসে পড়ে এবং কল্পিত বন্দুক তাগ করে ধরে…”- পুলিশরা কেন এইরূপ আচরণ করে?

▶ সার্জেন্টের নির্দেশমতো চাল-কাপড়ের দাবিতে মিছিল করে যাওয়া মানুষেরা ফিরে যেতে না চাইলে সার্জেন্টের নির্দেশে পুলিশরা বন্দুক তাগ করে।

৩০”অমর দৌড়ে ঢোকে”-কখন অমর গাঙ্গুলিকে এভাবে দেখা যায়?

▶ পুলিশের গুলিচালনার পরে মঞ্চে যখন হাহাকার আর গোঙানির শব্দ শোনা যায়, আর পুলিশেরা চলে যায়-তখনই অমর গাঙ্গুলি দৌড়ে মঞ্চে আসেন।

৩১. “এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে?” -কী দেখে বক্তা এই মন্তব্য করেছেন?

▶ পুলিশের গুলিতে নিহত এবং আহত মানুষের হাহাকার ও গোঙানির দিকে তাকিয়ে সস্তা হাসি খোঁজার প্রবণতাকে ব্যঙ্গ করে শম্ভু মিত্র মন্তব্যটি করেছেন।

4. Long Question Answer

প্রশ্ন ১”সংস্কৃত হিসাবে তিনি ঠিক কী বেঠিক সে বিবেচনা করবেন সংস্কৃত পণ্ডিতেরা, কিন্তু নামের দিক থেকে আমাদের একটা সামান্য আপত্তি আছে।” নাট্যকারের এই মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর কথামুখ: জনৈক ভদ্রলোক পুরোনো নাট্যশাস্ত্র ঘেঁটে শম্ভু মিত্র রচিত নাটকের নাম দিয়েছিলেন ‘বিভাব’। ‘বিভাব’ শব্দটির অর্থ হল মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া নয়টি রসানুভূতির কারণ। লেখকের আপত্তির কারণ: নিজের নাট্যভাবনা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে এই নামের বিরোধ খুঁজে পেয়েছেন স্বয়ং নাট্যকারই। তাঁর মনে হয়েছে, তাঁদের নাটকের নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক’। কারণ প্রবল অভাব থেকেই তাঁদের এই নাটকের জন্ম। আপত্তির কারণ বিশ্লেষণ: সেখানে ভালো মঞ্চ নেই, নেই আলো বা ঝালর ইত্যাদি মঞ্চসজ্জার বিবিধ উপকরণ। থাকার মধ্যে শুধু আছে নাটক করার অদম্য ইচ্ছা। এর ওপর রয়েছে সরকারের চূড়ান্ত অসহযোগিতাও। এত কষ্ট করে সব কিছু জোগাড় করে অভিনয়ের ব্যবস্থা করা হলেও উঠে আসে খাজনার দাবি। পেশাদারি মঞ্চকে এই খাজনা দিতে হয় না, কিন্তু গ্রুপ থিয়েটারকে তা দিতে হয়। সরকারের এই বিমাতৃসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিকে তীব্র শ্লেষে বিদ্ধ করে নাট্যকার এরপর নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান- “…আমরা তো নাটক নিয়ে ব্যবসা করি না, তাই সরকার আমাদের গলা টিপে খাজনা আদায় করে নেন।” শেষের কথা: এই চূড়ান্ত প্রতিকূলতায় গ্রুপ থিয়েটারের পক্ষে নিজের পায়ে দাঁড়ানো অনেক সময়েই সম্ভব হয়ে ওঠে না। গ্রুপ থিয়েটারের প্রবল অভাব এবং সমস্যার জন্যই নাট্যকার নাটকটির নামের ক্ষেত্রেও আপত্তি জানিয়েছেন।

প্রশ্ন ২ “তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি।”-কে, কোন্ প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করেছেন তা আলোচনা করো।

উত্তর উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: শম্ভু মিত্র তাঁর ‘বিভাব’ নাটকের সূচনায় গ্রুপ থিয়েটারের নাটক অভিনয়ের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। প্রসঙ্গ: গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ‘দুরন্ত অভাব’। তাঁদের অভিনয়ের জন্য ভালো মঞ্চ নেই, নেই মঞ্চসজ্জার উপকরণ বা আলো। শুধু নাটক করার অদম্য

 ইচ্ছাকে পাথেয় করেই চলে গ্রুপ থিয়েটার। কিন্তু সেখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ। পেশাদার থিয়েটারকে ছাড় দিলেও গ্রুপ থিয়েটারের কাছ থেকে সরকার খাজনা আদায় করে। ফলে চূড়ান্ত আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হয় গ্রুপ থিয়েটার। সমস্যামুক্তির পথ: এই সমস্যা থেকে মুক্তির পথও তাই তাঁরা নিজেদের মতো করেই খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। এমন এক অভিনয়ের পরিকল্পনা তাঁরা করেন, যেখানে মঞ্চের কোনো প্রয়োজন হবে না। যে-কোনোরকম একটা প্ল্যাটফর্ম হলেই চলবে। কোনোরকম মঞ্চসজ্জা বা নাট্য-উপকরণ যেমন-দরজা-জানলা, টেবিল-বেঞ্চ, সিনসিনারি ইত্যাদির দরকার পড়বে না। নাটকের প্রাচীন ঐতিহ্য থেকেই এই অভিনয়রীতির সমর্থন পান নাট্যকার শম্ভু মিত্র। শেষের কথা: এভাবেই যাবতীয় প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে গ্রুপ থিয়েটারের এগিয়ে চলার পথ সন্ধান প্রসঙ্গেই তিনি মন্তব্যটি করেছেন।

প্রশ্ন ৩ “আমাদের মনে হয় এর নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক’।”-

অভাবের চিত্র ‘বিভাব’ নাটকে কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে লেখো।

উত্তর কথামুখ: শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকে আমরা দেখি, জনৈক ভদ্রলোক পুরোনো নাট্যশাস্ত্র ঘেঁটে শম্ভু মিত্র রচিত নাটকের নাম দিয়েছিলেন ‘বিভাব’। ‘বিভাব’ শব্দটির অর্থ হল মনের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া নয়টি রসানুভূতির কারণ। লেখকের উপলব্ধি: নিজের নাট্যভাবনা ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে এই নামের বিরোধ খুঁজে পেয়েছেন স্বয়ং নাট্যকারই। একারণেই তাঁর মনে হয়েছে, তাঁদের নাটকের নাম হওয়া উচিত ‘অভাব নাটক’। প্রবল অভাব থেকেই তাঁদের এই নাটকের জন্ম। উপলব্ধির কারণ: এই নাটকে ভালো মঞ্চ নেই, নেই আলো বা ঝালর ইত্যাদি মঞ্চসজ্জার বিবিধ উপকরণ। থাকার মধ্যে শুধু আছে নাটক করার অদম্য আকাঙ্ক্ষা। এর ওপর রয়েছে সরকারের চূড়ান্ত অসহযোগিতাও। এত কষ্ট করে সব কিছু জোগাড় করার পর অভিনয়ের ব্যবস্থা করা হলেও উঠে আসে খাজনার দাবি। পেশাদারি মঞ্চকে যে খাজনা দিতে হয় না, গ্রুপ থিয়েটারকে তা দিতে হয়। সরকারের এই বিমাতৃসুলভ দৃষ্টিভঙ্গিকে তীব্র শ্লেষে বিদ্ধ করে নাট্যকার এরপর নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে জানান- “…আমরা তো নাটক নিয়ে ব্যবসা করি না, তাই সরকার আমাদের গলা টিপে খাজনা আদায় করে নেন।” শেষের কথা: এই চূড়ান্ত প্রতিকূলতায় গ্রুপ থিয়েটারের পক্ষে নিজের পায়ে দাঁড়ানো অনেক সময়েই সম্ভব হয়ে ওঠে না। গ্রুপ থিয়েটারের প্রবল অভাবের এই চিত্রই ‘বিভাব’ নাটকে প্রকাশ পেয়েছে।

প্রশ্ন ৪ “বুদ্ধিটা কী করে এল তা বলি।”-কোন্ বুদ্ধি এবং তা কীভাবে এল-নাট্যকারকে অনুসরণ করে আলোচনা করো।

উত্তর বুদ্ধির পরিচয়: শম্ভু মিত্র তাঁর ‘বিভাব’ নাটকে গ্রুপ থিয়েটারের নানারকম সমস্যার পাশাপাশি সেই সমস্যা থেকে মুক্তির পথও সন্ধান করেছেন। মঞ্চ বা মঞ্চসজ্জার উপকরণসমূহ না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে নাটক মঞ্চস্থ করা যায়, তার উপায় খুঁজে বের করার কথাই ‘বুদ্ধি’ শব্দটির প্রয়োগের মাধ্যমে নাট্যকার বোঝাতে চেয়েছেন।

▶ বুদ্ধি আসার পন্থা: নাট্যকারের চোখে পড়ে, কোনো এক পুরোনো বাংলা নাটকে ‘রাজা রথারোহণম নাটয়তি’ অর্থাৎ রাজা রথে আরোহণ করার ভঙ্গি করলেন-এ কথা লেখা ছিল। কোনো উপকরণ ছাড়াই কেবল ভঙ্গির মাধ্যমে অভিনয় সম্পন্ন করার একটি রেওয়াজ বাংলা নাটকে আগে থেকেই। ছিল। উড়িষ্যার যাত্রাতেও ঘোড়ার অনুপস্থিতিতেই একটিমাত্র লাঠি সম্বল করে। রাজার নির্দেশে দূতের খবর নিয়ে আসার উদাহরণ রয়েছে। একইভাবে মারাঠি তামাশাতেও ভঙ্গিনির্ভর অভিনয়ের সাহায্যে জমিদারের কাছে চাষির কাতর আবেদন, কিংবা ব্যর্থ মনোরথ হয়ে মন্দিরে গিয়ে ভগবানের কাছে নালিশের দৃশ্য। অভিনীত হতে দেখেছেন নাট্যকার। এভাবেই দর্শকদের কল্পনার সাহায্য নিয়ে

ভঙ্গিনির্ভর নাট্য অভিনয়ের যে ঐতিহ্য রয়েছে, সেখান থেকেই নিজেদের নাটক মঞ্চস্থ করার বুদ্ধি পেয়েছিলেন নাট্যকার শম্ভু মিত্র।

প্রশ্ন ৫ “তবে হ্যাঁ, মানতে পারে, যদি সাহেবে মানে। যেমন রবি- ঠাকুরকে মেনেছিল।”-মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো।

উত্তর। তাৎপর্য বিশ্লেষণ: যে অজস্র প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গ্রুপ থিয়েটারকে নাটকে অভিনয় করতে হয়, সেই প্রতিকূলতার উল্লেখ করেছেন শম্ভু মিত্র তাঁর ‘বিভাব’ নাটকের সূচনায়। সমস্যার বিষয়: এইসব সমস্যার মধ্যে একদিকে যেমন আছে সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ তেমনই অন্যদিকে রয়েছে মঞ্চ, মঞ্চসজ্জা, আলো ইত্যাদি অভিনয়ের প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবও। সমস্যামুক্তির উপায়: এইসব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য নাট্যকার শম্ভু মিত্র নিজের মতো করে সমাধানের পথ সন্ধান করেছেন। প্রাচীন বাংলা নাটক, উড়ে যাত্রা কিংবা মারাঠি তামাশায় তিনি দেখেছেন যে, শুধু ভঙ্গিকে আশ্রয় করে কল্পনার সাহায্য নিয়ে বিষয়কে দর্শকের সামনে ফুটিয়ে তোলা হয়। এই ধরনের বিভিন্ন নাট্যকৌশল থেকে অভিনয়ের এক নিজস্ব আঙ্গিক আবিষ্কারের চেষ্টা করেন শম্ভু মিত্র। গ্রহণযোগ্যতা: কিন্তু পরমুহূর্তে শহরের তথাকথিত শিক্ষিত এবং সাহেবি কেতায় অভ্যস্ত ইংরেজি জানা মানুষদের কাছে এই ধরনের অভিনয় গ্রহণযোগ্য হবে কি না সে বিষয়ে নাট্যকারের মধ্যে সংশয়ও দেখা দেয়। তাঁর মনে হয়েছে, যদি ইংরেজরা বা সাদা চামড়ার সাহেবরা এই অভিনয় ধারাকে মেনে নেয়, তাহলেই তা সহজে এ দেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে। এরূপ হয়েছিল নোবেল পদক পাওয়ার পর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের ক্ষেত্রে। ইতিকথা: বলা বাহুল্য, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালির ঔপনিবেশিক মানসিকতাকেই এখানে নাট্যকার ব্যঙ্গ করেছেন।

প্রশ্ন ৬ “আর একবার এক মারাঠি তামাশায় দেখেছিলাম”-কী দেখেছিলেন বর্ণনা করো এবং তার কোনো দূরবর্তী ছায়া কি ‘বিভাব’-এ দেখা যায়?

উত্তর দৃশ্যমান বিষয়: ‘বিভাব’ নাটকের প্রস্তাবনায় নাট্যকার শম্ভু মিত্র জানিয়েছেন যে, মারাঠি তামাশায় তিনি দেখেছিলেন মঞ্চের একপাশে দাঁড়িয়ে চাষি তার জমিদারের কাছে কাতর প্রার্থনা করে এবং শেষে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে মন্দিরে যায় ভগবানের কাছে নালিশ জানাতে। এই যাওয়ার অর্থ মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়া নয়। সে তক্তার উপরে কয়েকবার গোল হয়ে এমনভাবে ঘুরপাক খেল যেন মনে হল গ্রামটা অতিক্রম করে যাচ্ছে। তারপরে অন্যপাশে গিয়ে কাল্পনিক মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ভগবানকে মনের দুঃখের কথা নিবেদন করতে থাকল। এদিকে জমিদার সেজে যে অভিনেতা এতক্ষণ অভিনয় করছিল,

সে দর্শকদের সামনেই মুখে দাড়ি-গোঁফ এঁটে পুরোহিত সেজে অন্যদিকে চাষির সামনে গিয়ে ধর্মীয় তর্জন শুরু করে দিল। মাঠ ভরতি দর্শক চোখের সামনে দৃশ্য ও সাজসজ্জার এই রূপান্তর মেনে নিয়েছিল।

▶ ‘বিভাব’-এ দৃশ্যমান বিষয়ের প্রভাব: মারাঠি তামাশার এই ভঙ্গিনির্ভর অভিনয়শৈলী নাট্যকারকে ‘বিভাব’ নাটকের পরিকল্পনায় অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই দেখা যায়, ‘বিভাব’ নাটকে মঞ্চসজ্জার কোনো উপকরণ ছাড়াই শুধু ভঙ্গির সাহায্যে বিষয়ের কাল্পনিক উপস্থাপন ঘটেছে। দোতলায় ওঠা কিংবা শেষে নীচে রাস্তায় নেমে যাওয়া থেকে সিগারেট খাওয়া, চেয়ারটেবিল সরানো, ঘরকে রাস্তায় বদলে ফেলা, একেবারে শেষে নানারকম যানবাহনের ছবি ধরে মুখের সাহায্যে সেগুলোর মতো শব্দ করা-এই সামগ্রিক নাট্যভাবনাতেই নাট্যকার দর্শকের কল্পনাশক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এই সাহস তিনি যেমন সঞ্চয় করেছিলেন উড়িষ্যার যাত্রা থেকে সেরকমই মারাঠি তামাশা থেকেও।

প্রশ্ন ৭ “আর একবার এক মারাঠি তামাশায় দেখেছিলাম”-বক্তা মারাঠি তামাশায় কী দেখেছিলেন? বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে মারাঠি তামাশার কথা বলেছিলেন?

উত্তর মারাঠি তামাশায় দেখা বিষয়: শম্ভু মিত্রের লেখা ‘বিভাব’ নাটক থেকে সংকলিত এই উদ্ধৃতিটিতে নাট্যকারের দেখা মারাঠি তামাশার প্রসঙ্গ রয়েছে। নাট্যকার শ্রী শম্ভু মিত্র মারাঠি তামাশায় দেখেন যে, মঞ্চের একদিকে দাঁড়িয়ে থেকে চাষি জমিদারের কাছে অনেক অনুরোধ-উপরোধ করে। তার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হলে সে মন্দিরে যায় ভগবানের কাছে অভিযোগ জানাতে। চাষি মন্দিরে গেলেও মঞ্চের বাইরে সে গেল না, মঞ্চের তক্তার ওপর কয়েকবার সে এমনভাবে ঘুরপাক খেল যে, তাকে দেখে মনে হল সে যেন গ্রামটা পেরিয়ে গেল। তারপর একপাশে গিয়ে সে কাল্পনিক মন্দিরকে লক্ষ করে ভগবানের উদ্দেশে তার মনের দুঃখ কথা নিবেদন করতে লাগল। কিছু আগে যে জমিদারের পাঠ করেছিল, সে মঞ্চে দাঁড়িয়েই মুখে দাড়ি-গোঁফ এঁটে পুরোহিত সাজল এবং মন্দিরের সামনে দাঁড়ানো চাষির কাছে এসে ধর্মীয় তর্জনগর্জন করতে লাগল। শ্রী শম্ভু মিত্র মারাঠি তামাশার এই দৃশ্যই দেখেছিলেন এবং তিনি এও লক্ষ করেছিলেন যে, মাঠ-ভরতি দর্শক এই আজব অভিনয় নিঃশব্দে বিনা বাক্যে দেখে চলেছে।

প্রসঙ্গ: নাট্যকার শম্ভু মিত্র গ্রুপ থিয়েটারের নানাবিধ অসুবিধার কথা বলতে গিয়ে বলেন যে, মঞ্চ বা মঞ্চসজ্জার উপকরণসমূহ না থাকা সত্ত্বেও নাটক মঞ্চস্থ করা যায়। এই সিদ্ধান্তটা কীভাবে তার মাথায় এল, তার কারণ হিসেবেই নাট্যকার মারাঠি তামাশার প্রসঙ্গ এনেছেন।

 প্রশ্ন ৮ “এমনি সময় হঠাৎই এক সাহেবের লেখা পড়লাম।”-‘এমনি সময়’ বলতে কোন্ পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে? সাহেবের নাম কী? তিনি কী লিখেছিলেন?

উত্তর শম্ভু মিত্র তাঁর নাট্যদলে অভিনয় করতে গিয়ে নানারকম বাধার মুখোমুখি হচ্ছিলেন। আর্থিক সীমাবদ্ধতায় তাদের ভালো মঞ্চ, দৃশ্যসজ্জার উপকরণ সংগ্রহ ইত্যাদি কিছুই সম্ভব হচ্ছিল না, অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকে ছিল খাজনা আদায়ের জবরদস্তি। এই অবস্থায় এক বিকল্প নাট্য প্রযোজনার পথ খুঁজছিলেন নাট্যকার, যেখানে মঞ্চ, দৃশ্যসজ্জা বা সরকারের অনুমোদন ইত্যাদি কোনো কিছুরই প্রয়োজন হবে না। উড়িয়া যাত্রাপালা কিংবা মারাঠা তামাশা থেকে তিনি ভঙ্গিসর্বস্ব এক অভিনয়রীতি খুঁজে পান, যেখানে মঞ্চলজ্জার কোনো প্রয়োজনই নেই। কিন্তু নাট্যকার দ্বিধায় থাকেন যে, শহরের শিক্ষিত ইংরেজি জানা বাঙালি এই রীতি গ্রহণ করবে কি না। এই দোলাচলতার সময়কেই ‘এমনি সময়’ বলে বুঝিয়েছেন নাট্যকার শম্ভু মিত্র।

• নাটকে উল্লিখিত সাহেব হলেন রাশিয়ার বিখ্যাত চিত্র পরিচালক আইজেনস্টাইন।

▶ মস্কোতে অনুষ্ঠিত ভঙ্গিসর্বস্ব জাপানের কাবুকি থিয়েটারের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। সেখানে এক ‘নাইট’ ক্ষুদ্ধ হয়ে দুর্গ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন এবং কতদূরে চলে এলেন তা বোঝাতে তিনি স্টেজের পিছন দিক থেকে গম্ভীরভাবে এগোতে থাকেন আর শিফটাররা তাঁর ঠিক পিছনে মস্ত দুর্গদ্বার ধরে দাঁড়ায়। নাইট এগোনোর সঙ্গেই এই দরজার মাপ ক্রমশ ছোটো হতে থাকে এবং একই সাথে নাইটের আরও দূরে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রচিত হয়ে যায়। কোনো মৃত্যুদৃশ্য রচনাতেও এই ভঙ্গিকে অবলম্বন করে তাকে আর্টিস্টিক করে তোলা হয়।

প্রশ্ন ৯ “এই পড়ে বুকে ভরসা এল-কারণ সাহেবে একে সার্টিফিকেট দিয়েছে।” কী পড়ে এবং কেন বক্তার ভরসা এসেছিল? 

উত্তর পড়ার বিষয়: আলোচ্য মন্তব্যে খ্যাতনামা রুশদেশীয় চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইনের নাটকের রীতি সম্পর্কিত একটি লেখা পড়ার কথা বলা হয়েছে। প্রাচীন নাটকের ধারা: শম্ভু মিত্র তাঁর ‘বিভাব’ নাটকের সূচনায় প্রাচীন বাংলা নাটক, উড়ে যাত্রা, মারাঠি তামাশা ইত্যাদি থেকে ভঙ্গিনির্ভর অভিনয় এবং দর্শকের কল্পনার উপর নির্ভরশীল নিজস্ব ধরন আবিষ্কারের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁর মনে এই সংশয়ও ছিল যে, শহরের ইংরেজি শিক্ষিত ও সাহেবি কেতায় অভ্যস্ত মানুষদের এই অভিনয়রীতি আদৌ ভালো লাগবে কি না। আইজেনস্টাইন প্রদত্ত বর্ণনা: এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ান চিত্রপরিচালক আইজেনস্টাইনের লেখায় উৎসাহিত হন তিনি। মস্কোতে অনুষ্ঠিত ভঙ্গিসর্বস্ব জাপানের কাবুকি থিয়েটারের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন। সেখানে এক ‘নাইট’ ক্ষুদ্ধ হয়ে দুর্গ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন এবং কতদূর চলে এলেন তা বোঝাতে তিনি স্টেজের পিছন দিক থেকে গম্ভীরভাবে এগোতে থাকেন আর শিফটাররা তাঁর ঠিক পিছনে মস্ত দুর্গদ্বার ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। নাইট এগোনোর সঙ্গেই এই দরজার মাপ ক্রমশ ছোটো হতে থাকে আর একই সাথে নাইটের দূরে চলে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিত রচিত হয়ে যায়। এই ভঙ্গিকে অবলম্বন করে কোনো মৃত্যুদৃশ্য রচনাকেও আর্টিস্টিক করে তোলা হয়।

• বক্তার ভরসার কারণ: এই লেখা শম্ভু মিত্রকে ভরসা দেয়, কারণ সাহেবরা এই ভঙ্গিনির্ভর নাট্যরীতিকে সমর্থন করায় ঔপনিবেশিকতায় বিশ্বাসী শহুরে দর্শকরাও এই রীতিকে মেনে নেবেন বলে তিনি মনে করেন।

  প্রশ্ন ১০ “তাদের অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইন সাহেব অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত হয়ে অনেক কথা লিখেছেন।”-আইজেনস্টাইন সাহেব কে? তিনি কাদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন? সেই অভিনয় দেখে তিনি কী লিখেছিলেন?

উত্তর আইজেনস্টাইন সাহেবের পরিচয়: নাট্যকার শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটক থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে উল্লিখিত আইজেনস্টাইন সাহেব হলেন প্রখ্যাত এক রাশিয়ান চিত্রপরিচালক।

▶ উদ্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গ: তিনি জাপানের নৃত্যনির্ভর, ঐতিহ্যশালী কাবুকি থিয়েটারের অভিনেতাদের অভিনয় দেখে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন।

▶ অভিনয় দেখে আইজেনস্টাইনের লেখা: আইজেনস্টাইন লেখেন যে, কাবুকি থিয়েটারে দেহ এবং মুখভঙ্গি বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মঞ্চে এক ‘নাইট’ ক্ষুব্ধ হয়ে দুর্গ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন

এবং কতদূর চলে এলেন তা বোঝাতে তিনি স্টেজের পিছন দিক থেকে গম্ভীরভাবে এগোতে থাকেন। শিফটাররা তাঁর ঠিক পিছনে মস্ত দুর্গদ্বার ধরে দাঁড়ায়।

তলোয়ার-যুদ্ধের দৃশ্যে দেখা যায়, দুই যোদ্ধা খাপ থেকে কাল্পনিক তলোয়ার বের করলেন এবং কাল্পনিক যুদ্ধ করতে লাগলেন। একজন অন্যজনের কাল্পনিক খোঁচা খেয়ে লুটিয়ে পড়লেন। মরার আগে একবার তাঁর হাতটা নড়ে উঠল, তারপর একটা পা তিরতির করে কাঁপল, চোখটা দুবার ঘুরল, মাথাটা দুবার নড়ল। শেষে তাঁর জিভ বেরিয়ে গেল। তারপর স্টেজে তাঁর সদ্যবিধবা স্ত্রী ঢুকে যখন প্রবল কান্নাকাটি শুরু করল, তখন সেই মৃত লোকটা উঠে আস্তে করে চলে গেল। কারণ, তখন দর্শকদের কাছে মহিলার শোকপ্রকাশটাই কাঙ্ক্ষিত দৃশ্য, তার মৃত স্বামীর উপস্থিতি নয়। কাবুকি থিয়েটারের এইসব প্রাসঙ্গিক দৃশ্যগুলির বর্ণনাই দিয়েছিলেন আইজেনস্টাইন।

প্রশ্ন ১১ “আমরা বাঙালিরা শুনি কাঁদুনে জাত…”-উক্তিটি কার? মন্তব্যটি নাটকের ক্ষেত্রে কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে আলোচনা করো।

উত্তর। বক্তা: শম্ভু মিত্রের ‘বিভাব’ নাটকে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন সহ-অভিনেতা অমর গাঙ্গুলি।

▶ নাটকের প্রেক্ষিতে মন্তব্যটির গুরুত্ব: আলোচ্য ‘বিভাব’ নাটকে দেখা যায়, শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলির বাড়িতে এসেছিলেন এবং তাঁর সেই আগমনের কারণ ছিল ‘হাসির খোরাক’ জোগাড় করা। বক্স অফিসের চাহিদার কথা ভেবে নাট্যদলের সম্পাদক একটি হাসির নাটক মঞ্চস্থ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই সূত্র ধরে হাসির উপকরণ খুঁজতে নাটকের অন্যতম চরিত্র শম্ভু মিত্র অমর গাঙ্গুলির বাড়িতে হাজির হলে অমর গাঙ্গুলি এই মন্তব্যটি করেন। এই প্রসঙ্গটির মধ্য দিয়ে নাটক তার মূল বিষয়ে প্রবেশ করে বলেই মন্তব্যটি যথেষ্ট

গুরুত্বপূর্ণ। এরপর শম্ভু মিত্র, অমর গাঙ্গুলি এবং বউদি তৃপ্তি মিত্র একের পর এক প্রেমের দৃশ্য তৈরি করে হাস্যরস সৃষ্টির চেষ্টা করেন। কিন্তু সেইসব দৃশ্য স্বতঃস্ফূর্ত হয় না। এককথায়, নাটকে হাস্যরস সৃষ্টির যে কৃত্রিম প্রচেষ্টা, তার নানা রূপকেই মূলত ব্যঙ্গ করা হয় এই নাট্যদৃশ্যে। শুধু তাই নয়, এই দৃশ্যে বাঙালি দর্শকদের জোর করে হাসার চেষ্টার প্রতিও ব্যঙ্গ থাকে। ক্ষুধার্ত মানুষদের মিছিলে পুলিশের গুলি আর মানুষের হাহাকার ও গোঙানির আওয়াজ শুনে শম্ভু মিত্র যখন বলেন-“কী অমর-এবার হাসি পাচ্ছে?”-তখন জীবনকে অস্বীকার করে কাল্পনিক আনন্দ খুঁজে নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদই যেন ঘোষিত হয়। আর এই বক্তব্যের মধ্যেই থেকে যায় নাটকের প্রায় প্রথম পর্বে করা অমর গাঙ্গুলির উদ্ধৃত মন্তব্যটি।