Class 12 Chapter 5 Solution
নিরপেক্ষ ন্যায়
1. MCQs Question Answer
1. ন্যায় অনুমানের দ্বিতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করলে যে দোষের উদ্ভব হয়, তা হল-
a) অব্যাপ্য হেতু দোষ
b) চতুষ্পদঘটিত দোষ ✔
c) অবৈধ সাধ্য দোষ
d) অবৈধ পক্ষ দোষ
2. অনেকার্থক হেতু দোষ যে দোষের প্রকার, তা হল-
a) অব্যাপ্য হেতু দোষ
b) অবৈধ সাধ্য দোষ
c) অবৈধ পক্ষ দোষ
d) চতুষ্পদঘটিত দোষ ✔
3. ন্যায়ের তৃতীয় নিয়মটি লঙ্ঘন করলে যে দোষের আবির্ভাব হয়, তা হল-
a) অবৈধ সাধ্য দোষ
b) চারিপদঘটিত দোষ
c) অবৈধ পক্ষ দোষ
d) অব্যাপ্য হেতু দোষ ✔
4. সাধ্যপদটি যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হলে যে দোষ হয়, সেটি হল-
a) অবৈধ সাধ্য দোষ ✔
b) অবৈধ পক্ষ দোষ
c) অব্যাপ্য সাধ্য দোষ
d) অব্যাপ্য হেতু দোষ
5. পক্ষপদটি যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হলে যে দোষের উদ্ভব হয়, সেটি হল-
a) অবৈধ সাধ্য দোষ
b) অবৈধ পক্ষ দোষ ✔
c) হেতু দোষ
d) চতুষ্পদঘটিত দোষ
6. দুটি যুক্তিবাক্য নঞর্থক হলে যে দোষের উদ্ভব হয়, তা হল-
a) সদর্থক বাক্যজনিত দোষ
b) দুটি নঞর্থক বাক্যজনিত দোষ ✔
c) নঞর্থক অব্যাপ্য হেতু দোষ
d) অবৈধ সাধ্য দোষ
7. অবৈধ সাধ্য ও অবৈধ পক্ষ দোষ যে নিয়মের লঙ্ঘনে হয়, তা হল-
a) প্রথম নিয়ম
b) দ্বিতীয় নিয়ম
c) তৃতীয় নিয়ম
d) চতুর্থ নিয়ম ✔
8 . যুধিষ্ঠির হয় দুর্যোধনের বন্ধু (A)
দুর্যোধন হয় শকুনির বন্ধু (A)
.: যুধিষ্ঠির হয় শকুনির বন্ধু (A)
যুক্তিটিতে যে দোষ হয়, তা হল-
a) অব্যাপ্য হেতু দোষ
b) অবৈধ সাধ্য দোষ
c) অবৈধ পক্ষ দোষ
d) চতুষ্পদঘটিত দোষ ✔
9. নিরপেক্ষ ন্যায়ের অনুপপত্তি হল-
a) নিরপেক্ষ ন্যায়ের উদ্দেশ্য
b) নিরপেক্ষ ন্যায়ের অর্থ
c) নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মভঙ্গজনিত দোষ ✔
d) ন্যায়ের উৎস সম্পর্কিত বিষয়
10. চতুষ্পদঘটিত দোষে পদের সংখ্যা থাকে
a) একটি
b) চারটি ✔
c) তিনটি
d) দুটি
9. ন্যায় অনুমানের সংস্থানের ক্ষেত্রে কোন্ পদের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ?
a) হেতুপদের ✔
b) সাধ্যপদের
c) পক্ষপদের
d) যে-কোনো পদের
10. ন্যায় অনুমানের সংস্থান কয়টি?
a) একটি
b) দুটি
c) তিনটি
d) চারটি ✔
11. প্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয়তে এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্যতে হেতুপদের অবস্থানে কোন্ সংস্থান হয়?
a) প্রথম
b) দ্বিতীয়
c) তৃতীয়
d) চতুর্থ ✔
12. উভয় যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্যতে হেতুপদ অবস্থান করলে কোন্ সংস্থান হয়?
a) প্রথম
b) দ্বিতীয়
c) তৃতীয় ✔
d) চতুর্থ
13. প্রধান যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্যতে এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয়তে হেতুপদের অবস্থানে কোন্ সংস্থান হয়?
a) প্রথম সংস্থান ✔
b) দ্বিতীয় সংস্থান
c) তৃতীয় সংস্থান
d) চতুর্থ সংস্থান
14. ন্যায়ের মূর্তির ক্ষেত্রে কীসের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ?
a) গুণের
b) পরিমাণের
c) গুণ ও পরিমাণের ✔
d) এদের কোনোটিরই নয়
15. ন্যায় অনুমানের মোট সম্ভাব্য মূর্তি কতগুলি?
a) 16 টি
b) 256 টি ✔
c) 64 টি
d) 108 টি
16. ন্যায়ের বৈধ মূর্তির সংখ্যা কতগুলি?
a) 4 টি
b) 18 টি
c) 19 টি ✔
d) 24 টি
17. নিরপেক্ষ ন্যায়ের প্রথম সংস্থানে বৈধ মূর্তির সংখ্যা
a) চার ✔
b) পাঁচ
c) ছয়
d) সাত
18. দ্বিতীয় সংস্থানের বৈধ মূর্তি কয়টি?
a) 2 টি
b) 4 টি ✔
c) 5 টি
d) 6 টি
19. তৃতীয় সংস্থানের বৈধ মূর্তি কয়টি?
a) 4 টি
b) 6 টি ✔
c) 5 টি
d) 3 টি
20. চতুর্থ সংস্থানে বৈধ মূর্তির সংখ্যা হল-
a) তিনটি
b) চারটি
c) পাঁচটি ✔
d) ছয়টি
21. BARBARA-কোন্ সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তি?
a) প্রথম ✔
b) দ্বিতীয়
c) তৃতীয়
d) চতুর্থ
22. CAMESTRES-কোন্ সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তি?
a) প্রথম
b) দ্বিতীয় ✔
c) তৃতীয়
d) চতুর্থ
23. DARAPTI-কোন্ সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তি?
a) প্রথম
b) দ্বিতীয়
c) তৃতীয় ✔
d) চতুর্থ
24. দুটি যুক্তিবাক্যের একটি বিশেষ হলে সিদ্ধান্তটি কী হবে?
a) সামান্য
b) সামান্য অথবা বিশেষ
c) সামান্য নঞর্থক
d) বিশেষ ✔
25. দুটি যুক্তিবাক্য বিশেষ হলে সিদ্ধান্তটি কী হবে?
a) বিশেষ
b) সামান্য
c) বিশেষ অথবা সামান্য
d) কোনো সিদ্ধান্তই হবে না ✔
26. প্রধান যুক্তিবাক্যটি বিশেষ এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্য নঞর্থক হলে সিদ্ধান্তটি কী হবে?
a) বিশেষ
b) সামান্য
c) বিশেষ নঞর্থক
d) কোনো সিদ্ধান্ত হবে না ✔
27. ন্যায়ের যে-সমস্ত নিয়মকে প্রমাণ করতে হয় সেগুলিকে কী বলা হয়?
a) সম্পাদ্য
b) উপপাদ্য ✔
c) প্রতিপাদ্য
d) খণ্ডপাদ্য
28. ন্যায়ের যা কিছুই যুক্তি দ্বারা সম্পাদনযোগ্য, তাকে কী বলা হয়?
a) সম্পাদ্য ✔
b) উপপাদ্য
c) প্রতিপাদ্য
d) খণ্ডপাদ্য
29. উপপাদ্যের ক্ষেত্রে কী করতে হয়?
a) অনুমান
b) কল্পনা
c) প্রমাণ ✔
d) অপ্রমাণ
30. সম্পাদ্যের ক্ষেত্রে কী করতে হয়?
a) প্রমাণ
b) সমাধান ✔
c) অপ্রমাণ
d) সংশয়
31. আংশিক ন্যায়কে ন্যায় অনুমানে কী বলা হয়?
a) আংশিক ন্যায়
b) সংক্ষিপ্ত ন্যায় ✔
c) অপূর্ণ ন্যায়
d) পূর্ণ ন্যায়
32. কয় প্রকারের সংক্ষিপ্ত ন্যায় দেখা যায়?
a) এক প্রকারের
b) দু-প্রকারের
c) তিন প্রকারের
d) চার প্রকারের ✔
33. “মৃণালবাবু প্রণম্য, কারণ তিনি আমার গুরু”-এটি কোন্ ধরনের ন্যায়?
a) পূর্ণাঙ্গ ন্যায়
n) দুষ্ট ন্যায়
c) সংক্ষিপ্ত ন্যায় ✔
d) সংশয়াত্মক ন্যায়
34. নিরপেক্ষ ন্যায় বৈধ হয়-
a) যখন নিয়মগুলিকে যথাযথভাবে মানা হয় ✔
b) যখন নিয়মগুলিকে যথাযথভাবে মানা হয়
c) যখন একটি নিয়ম থেকে আর-একটি নিয়ম নিঃসৃত হয়
d) যখন ন্যায়টি বাস্তবসম্মত হয় না
35. নিরপেক্ষ ন্যায় অবৈধ হয়-
a) যখন নিয়মগুলিকে মানা হয়
b) যখন নিয়মগুলিকে মানা হয় না ✔
c) যখন যুক্তিবাক্য ও সিদ্ধান্ত একই গুণসম্পন্ন
d) হয় যখন যুক্তিবাক্য ও সিদ্ধান্ত ভিন্ন গুণসম্পন্ন হয়
36. AAA মূর্তিটি বৈধ হয়-
a) প্রথম সংস্থানে ✔
b) দ্বিতীয় সংস্থানে
c) তৃতীয় সংস্থানে
d) চতুর্থ সংস্থানে
37. ‘লোকটি বুদ্ধিমান, কারণ সে রোগা’-এটি হল-
a) পূর্ণাঙ্গ ন্যায়
b) সংক্ষিপ্ত ন্যায় ✔
c) সাপেক্ষ ন্যায়
d) বৈকল্পিক ন্যায়
3৪. সংক্ষিপ্ত ন্যায়ের প্রকার হল-
a) দুটি
b) তিনটি
c) চারটি ✔
d) পাঁচটি
39. সংক্ষিপ্ত ন্যায়ের প্রথম প্রকারে যে যুক্তিবাক্যটি উহ্য থাকে, তা হল-
a) প্রধান যুক্তিবাক্য
b) অপ্রধান যুক্তিবাক্য
c) সিদ্ধান্ত
d) এদের কোনোটিই নয়
40. সংক্ষিপ্ত ন্যায়ের দ্বিতীয় প্রকারে যে বচনটি উহ্য থাকে, তা হল-
a) প্রধান যুক্তিবাক্যের বচন
b) অপ্রধান যুক্তিবাক্যের বচন ✔
c) সিদ্ধান্তের যুক্তিবাক্যের বচন
d) এদের কোনোটিই নয়
41. তৃতীয় প্রকারের সংক্ষিপ্ত ন্যায়ে
a) প্রধান যুক্তিবাক্য অযুক্ত থাকে
b) অপ্রধান যুক্তিবাক্য অযুক্ত থাকে
c) সিদ্ধান্ত অযুক্ত থাকে ✔
d) এদের কোনোটিই থাকে না
42. চতুর্থ প্রকারের সংক্ষিপ্ত ন্যায়ে উহ্য থাকে-
a) প্রধান যুক্তিবাক্য
b) অপ্রধান যুক্তিবাক্য
c) সিদ্ধান্ত
d) যে-কোনো একটি বচন ✔
43. দাঁতালো হাতি মাত্রই মারাত্মক, কারণ তারা হিংস্র-এটি হল-
a) সংক্ষিপ্ত ন্যায় ✔
b) পূর্ণাঙ্গ ন্যায়
c) সাপেক্ষ ন্যায়
d) বৈকল্পিক ন্যায়
44. সে খুবই খুশি, কারণ, সে পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালো ফল করেছে ন্যায়টি হল-
a) সাপেক্ষ ন্যায়
b) বৈকল্পিক ন্যায়
c) সংক্ষিপ্ত ন্যায় ✔
d) পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ ন্যায়
45. নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈধতা যুক্তিবাক্যের সত্যতার ওপর নির্ভর করে না। এটি হল-
a) সত্য ✔
b) মিথ্যা
c) আপতিক
d) সংশয়াত্মক
2. Long Question Answer
প্রশ্ন 1 নিরপেক্ষ ন্যায় কাকে বলে? উদাহরণ-সহ ব্যাখ্যা করো। অথবা, উপযুক্ত উদাহরণ সহকারে সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো: নিরপেক্ষ ন্যায়।
উত্তর নিরপেক্ষ ন্যায়
যে অবরোহমূলক মাধ্যম অনুমানের বচনগুলি সবই নিরপেক্ষরূপে গণ্য, সেই অবরোহ অনুমানকেই বলা হয় নিরপেক্ষ ন্যায় (categorical syllogism) নিরপেক্ষ ন্যায়ে দুটি পরস্পর সম্পৃক্ত নিরপেক্ষ যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তে একটি নিরপেক্ষ বচন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সিদ্ধান্তটি আবার অনিবার্যভাবে যুক্তিবাক্য দুটি থেকে নিঃসৃত হয় এবং কখনোই তা যুক্তিবাক্যের ব্যাপকতাকে অতিক্রম করে না।
কোপি প্রদত্ত সংজ্ঞা
আধুনিক যুক্তিবিজ্ঞানী আই.এম. কোপি (I.M. Copi) নিরপেক্ষ ন্যায়ের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন যে, নিরপেক্ষ ন্যায় হল তিনটি নিরপেক্ষ বচন দিয়ে গঠিত একটি অবরোহাত্মিক যুক্তি যেখানে তিনটি পদ দুবার করে ব্যবহৃত হয়।
ব্যাখ্যা 1
ওপরের উদাহরণ দুটির প্রথমটি হল একটি নিরপেক্ষ ন্যায় এবং দ্বিতীয়টি হল একটি নিরপেক্ষ ন্যায়ের আকার। প্রথমটির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, দুটি নিরপেক্ষ বচন থেকে সিদ্ধান্তটি একটি নিরপেক্ষ বচন হিসেবে অনিবার্যভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আরও দেখা যায় যে, এই সিদ্ধান্তটি কখনোই যুক্তিবাক্য থেকে ব্যাপকতর নয়। সেকারণেই এটি একটি নিরপেক্ষ ন্যায়রূপে গণ্য।
ব্যাখ্যা 2
অনুরূপভাবে দ্বিতীয় উদাহরণটির ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে, এখানে দুটি নিরপেক্ষ বচনের আকার থেকে সিদ্ধান্তে একটি নিরপেক্ষ বচনাকার অনিবার্যভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখানেও সিদ্ধান্তটি কখনোই যুক্তিবাক্য থেকে ব্যাপকতর নয়। সেকারণেই একে একটি নিরপেক্ষ যুক্তির আকার (categorical syllogistic form)-রূপে গণ্য করা হয়।
প্রশ্ন 2 নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি লেখো।
উত্তর নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈশিষ্ট্য বা প্রকৃতি
নিরপেক্ষ ন্যায়ের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, সেই সংজ্ঞাকে বিশ্লেষণ করলে নিরপেক্ষ ন্যায়ের কতগুলি বৈশিষ্ট্য বা স্বরূপ ফুটে ওঠে। সেই স্বরূপ বা বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
[1] মাধ্যম অনুমান হিসেবে নিরপেক্ষ ন্যায়: নিরপেক্ষ ন্যায় হল একটি মাধ্যম অনুমান। কারণ, এখানে পরস্পর সম্পৃক্ত দুটি যুক্তিবাক্য থেকে একটি সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ, প্রধান যুক্তিবাক্য থেকে অপ্রধান যুক্তিবাক্যের মাধ্যমে সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠিত। এই অপ্রধান যুক্তিবাক্য তথা পক্ষবাক্যের মাধ্যম ছাড়া সিদ্ধান্তটিকে প্রতিষ্ঠা করা আদৌ সম্ভব নয়। সেকারণেই এরূপ অনুমানকে মাধ্যম অনুমানরূপে গণ্য করা হয়।
[2] অবরোহ অনুমান হিসেবে নিরপেক্ষ ন্যায়: প্রকৃতিগত দিক থেকে
ন্যায় অনুমান হল এক ধরনের অবরোহ অনুমান (deductive argument)। অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি কখনোই যুক্তিবাক্যের ব্যাপকতাকে অতিক্রম করে না। এখানেও সিদ্ধান্তটির ব্যাপকতা যুক্তিবাক্যের ব্যাপকতার চেয়ে কখনোই বেশি নয়। সেকারণেই নিরপেক্ষ ন্যায়কে অবরোহাত্মক অনুমানরূপে গণ্য করা হয়।
[3] যুক্তিবাক্য দুটির অনিবার্য পরিণতি হিসেবে নিরপেক্ষ ন্যায়:
নিরপেক্ষ ন্যায়ের সিদ্ধান্তটি যুক্তিবাক্য দুটি থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত। অর্থাৎ, যুক্তিবাক্য দুটির অনিবার্য পরিণতি হিসেবে নিরপেক্ষ ন্যায়ের সিদ্ধান্তটিকে উল্লেখ করা যায়। কারণ, ন্যায়ের সিদ্ধান্তটিতে এমন কিছুই প্রমাণ বা প্রতিষ্ঠা করা হয় না, যা যুক্তিবাক্য দুটির মধ্যে নিহিত নয়। যুক্তিবাক্য দুটির মধ্যে অস্পষ্ট বিষয়টিই আরও স্পষ্টরূপে সিদ্ধান্তে গৃহীত ও প্রমাণিত হয়।
[4] ত্রি-অবয়বী হিসেবে নিরপেক্ষ ন্যায়: প্রত্যেকটি নিরপেক্ষ ন্যায়ের প্রকৃতিতে তিনটি অবয়ব বচন লক্ষ করা যায়। এই তিনটি অবয়ব বচনের মধ্যে প্রথম দুটিকে বলা হয় যুক্তিবাক্য এবং শেষেরটিকে বলা হয় সিদ্ধান্ত। যুক্তিবাক্য দুটির প্রথমটিকে বলা হয় প্রধান যুক্তিবাক্য বা সাধ্যবাক্য এবং দ্বিতীয়টিকে বলা
হয় অপ্রধান যুক্তিবাক্য বা পক্ষবাক্য। এই পক্ষবাক্যের সাহায্যে সাধ্যবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়।
[5] তিনটি পদের দ্বিত্ব প্রয়োেগ হিসেবে নিরপেক্ষ ন্যায়: প্রত্যেকটি নিরপেক্ষ ন্যায়ের প্রকৃতিতে সাধ্য, পক্ষ এবং হেতু-এই তিনটি পদের অবস্থান দেখা যায়। এই তিনটি পদ আবার দুবার করে ব্যবহৃত হয়। যাকে প্রমাণ করা হয়, তাকে বলে সাধ্যপদ। যেখানে সাধ্যকে প্রমাণ করা হয়, তাকে বলে পক্ষপদ। আর যে পদের দ্বারা সাধ্যকে পক্ষে প্রমাণ করা হয়, তাকে বলে হেতুপদ। যুক্তিবাক্য দুটিতে হেতুপদ একবার সাধ্য ও আর-একবার পক্ষপদের সঙ্গে মিলিত হয়। সিদ্ধান্তে কিন্তু হেতুপদের কোনো স্থান নেই। সেখানে থাকে শুধু পক্ষপদ ও সাধ্যপদ।
[6] আকারগত সত্যতার নির্ণায়ক হিসেবে নিরপেক্ষ ন্যায়: নিরপেক্ষ ন্যায়ের আরও একটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য এই যে, তা শুধু যুক্তি বা অনুমানের আকারগত বৈধতার (formal validity) ওপরই সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে, কখনোই বস্তুগত সত্যতার (material validity) ওপর নয়। কারণ, নিরপেক্ষ ন্যায়ে কেবল দেখা হয় যে, সিদ্ধান্তটি যুক্তিবাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়েছে কি না। বস্তুগতভাবে যুক্তিটি সত্য কি না, তা আদৌ বিচার করা হয় না।
[7] বৈধ ও অবৈধ হিসেবে নিরপেক্ষ ন্যায়: যে-কোনো নিরপেক্ষ ন্যায় সবসময়ই বৈধ (valid) অথবা অবৈধ (invalid)-রূপে গণ্য। নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মগুলিকে যদি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়, তবে তা বৈধরূপে গণ্য হয়। আর নিয়মগুলিকে যদি যথাযথভাবে অনুসরণ করা না হয়, তবে তা অবৈধ বা দোষযুক্ত রূপে গণ্য হয়। নিরপেক্ষ ন্যায়কে তাই কখনোই সম্ভাব্য (probable) রূপে গণ্য করা যায় না।
প্রশ্ন 3 নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠন আলোচনা করো।
উত্তর নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠন
নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে যেসব বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল-
নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে তিনটি নিরপেক্ষ বচন: যে-কোনো নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে তিনটি বচনের ভূমিকা দেখা যায়। অর্থাৎ তিনটি পরস্পর সম্পৃক্ত নিরপেক্ষ বচন দ্বারাই নিরপেক্ষ ন্যায় গঠিত হয়। যে তিনটি নিরপেক্ষ বচন দ্বারা নিরপেক্ষ ন্যায় গঠিত হয় তার প্রথম দুটিকে বলা হয় যুক্তিবাক্য (premises), এবং শেষেরটিকে বলা হয় সিদ্ধান্ত (conclusion)। যুক্তিবাক্য দুটির আবার প্রথমটিকে বলা হয় প্রধান যুক্তিবাক্য বা সাধ্যবাক্য, আর তার পরেরটিকে বলা হয় অপ্রধান যুক্তিবাক্য বা পক্ষবাক্য। এই সাধ্য ও পক্ষ বাক্য থেকেই সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে সাধ্য, পক্ষ ও হেতু নামক তিনটি পদ
প্রত্যেকটি নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে তিনটি পদ লক্ষ করা যায়। এই তিনটি পদ হল সাধ্যপদ, পক্ষপদ এবং হেতুপদ। এই তিনটি পদ আবার তিনটি নিরপেক্ষ বচনের মধ্যে দুবার করে ব্যবহৃত হয়। সাধ্যপদ হল সেই পদ যাকে সিদ্ধান্তে প্রমাণ করা হয়। এই সাধ্যপদ একবার প্রধান যুক্তিবাক্যে এবং আর-একবার সিদ্ধান্তে অবস্থান করে। পক্ষপদ হল সেই পদ যেখানে সাধ্যকে প্রমাণ করা হয়। এই পক্ষপদ একবার অপ্রধান যুক্তিবাক্যে এবং আর-একবার সিদ্ধান্তে অবস্থান করে। হেতুপদ হল সেই পদ যার দ্বারা সাধ্যকে পক্ষে প্রমাণ করা হয়। এই হেতুপদ একবার প্রধান যুক্তিবাক্যে এবং আর-একবার অপ্রধান যুক্তিবাক্যে অবস্থান করে।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে হেতুপদের ভূমিকা
যে-কোনো নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে হেতুপদের যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে-তা আদৌ অস্বীকার করা যায় না। কারণ, হেতুপদের সাহায্য ছাড়া আমরা কখনোই সাধ্যকে পক্ষে প্রমাণ করতে পারি না। হেতুপদটি তাই সাধ্য ও পক্ষপদের মধ্যে একটি সম্বন্ধকারী বা মিলনকারী পদ রূপেই গণ্য। এই হেতুপদ একবার প্রধান যুক্তিবাক্যে সাধ্যপদের সঙ্গে মিলিত হয় এবং আর একবার অপ্রধান যুক্তিবাক্যে পক্ষপদের সঙ্গে মিলিত হয়। এভাবেই হেতুপদটি সিদ্ধান্তে পক্ষ ও সাধ্যপদের মিলন ঘটিয়ে একসূত্রে আবদ্ধ করে।
প্রশ্ন 4 নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে হেতুপদের ভূমিকা কী? আলোচনা করো।
উত্তর নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে হেতুপদের ভূমিকা
নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে হেতুপদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাগুলি হল-
[1] মাধ্যম অনুমানের মর্যাদাদানকারীরূপে হেতুপদ: নিরপেক্ষ নায় অনুমানে যে তিনটি পদ স্বীকৃত হয়েছে, তাদের মধ্যে হেতুপদ হল অন্যতম। আরমা হেতুপদের ভূমিকা ছাড়া ন্যায় অনুমানের বিষয়টিকে কখনোই কল্পনা করা যায় না। আমরা জানি যে, ন্যায় অনুমান হল একপ্রকার মাধ্যম অনুমান। কারণ, এখানে অপ্রধান যুক্তিবাক্যের মাধ্যমে প্রধান যুক্তিবাক্য থেকে সিদ্ধান্তটিকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। আর এখানে মাধ্যম হিসেবে যে পদটি কাজ করে থাকে, তা হল হেতুপদ। এই হেতুপদের জন্যই নিরপেক্ষ ন্যায়কে অমাধ্যম অনুমান থেকে পৃথক করা সম্ভব।
[2] প্রধান ও অপ্রধান যুক্তিবাক্যের মর্যাদাদানকারীরূপে হেতুপদ।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের ক্ষেত্রে আমরা তিনটি নিরপেক্ষ বচন লক্ষ করে থাকি। এই তিনটি নিরপেক্ষ বচনের প্রথম দুটিকে বলা হয় যুক্তিবাক্য (premises)। যুক্তিবাক্য দুটির প্রথমটিকে বলা হয় প্রধান যুক্তিবাক্য বা সাধ্যবাক্য এবং দ্বিতীয় যুক্তিবাক্যটিকে বলা হয় অপ্রধান যুক্তিবাক্য বা পক্ষবাক্য। হেতুপদ একবার প্রধান যুক্তিবাক্যে এবং আর-একবার অপ্রধান যুক্তিবাক্যে অবস্থান করে। অর্থাৎ, হেতুপদ প্রধান ও অপ্রধান যুক্তিবাক্যের মধ্যে সাধারণ পদ (common) রূপে গণ্য। সেকারণেই কোনো নিরপেক্ষ বচন দুটি যুক্তিবাক্যরূপে গণ্য, তা আমরা সহজেই চিনতে পারি। সুতরাং, দাবি করা যায় যে, প্রধান ও অপ্রধান যুক্তিবাক্যের মর্যাদাদানকারীরূপে হেতুপদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবশ্যই আছে।
[3] পক্ষপদ ও সাধ্যপদের মিলনকারীরূপে হেতুপদ: যে-কোনো নিরপেক্ষ ন্যায়-অনুমানে আমরা তিনটি পদ লক্ষ করে থাকি। এই তিনটি পদ আবার দু-বার করে ব্যবহৃত হয়। এই তিনটি পদ হল সাধ্যপদ (P), পক্ষপদ (S) এবং হেতুপদ (M)। নিরপেক্ষ ন্যায়ে সাধ্যপদকে পক্ষে হেতুপদ দ্বারা প্রমাণ করা হয়। প্রত্যেকটি নিরপেক্ষ ন্যায়ের সিদ্ধান্তে পক্ষপদ (S) এবং সাধ্যপদ (P)-এর অবস্থান দেখা যায়। অর্থাৎ, সিদ্ধান্তে পক্ষপদ ও সাধ্যপদের মিলন ঘটে। এদের মিলন সম্ভব হয় একমাত্র হেতুপদের জন্যই। কারণ, এই হেতুপদ একবার প্রধান যুক্তিবাক্যে সাধ্যপদের (P) সঙ্গে মিলিত হয়, এবং আর-একবার অপ্রধান যুক্তিবাক্যে পক্ষপদের (S) সঙ্গে মিলিত হয়। এভাবেই সিদ্ধান্তে নিজে অনুপস্থিত থেকে পক্ষ (S) ও সাধ্য (P) পদের মিলন ঘটাতে সমর্থ হয়। অর্থাৎ, হেতুপদই মাধ্যম হিসেবে পক্ষপদ (S) ও সাধ্যপদ (P)-কে সিদ্ধান্তে সংযুক্ত করে।
[4 ] নিরপেক্ষ ন্যায়ের সংস্থান নির্ণায়করূপে হেতুপদ: হেতুপদই হল
নিরপেক্ষ ন্যায়ের সংস্থান নির্ণায়ক। কারণ, ন্যায়ের সংস্থানের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, হেতুপদের অবস্থান অনুযায়ী ন্যায় অনুমানের যে বিশেষ বিশেষ রূপ বা আকৃতি হয়-তাকেই বলে ন্যায়ের সংস্থান। হেতুপদের অবস্থান অনুযায়ী ন্যায়ের সংস্থানেরও পরিবর্তন হয়। এই সংস্থান হল চার প্রকার-প্রথম সংস্থান, দ্বিতীয় সংস্থান, তৃতীয় সংস্থান ও চতুর্থ সংস্থান। এই চারপ্রকার সংস্থানের ক্ষেত্রে হেতুপদের অবস্থানও চার রকমের। প্রথম সংস্থানে হেতুপদ প্রধান যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয় স্থানে অবস্থান করে। দ্বিতীয় সংস্থানে হেতুপদ প্রধান ও অপ্রধান-উভয় যুক্তিবাক্যেরই বিধেয় স্থানে অবস্থান করে। তৃতীয় সংস্থানে হেতুপদ উভয় যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে অবস্থান করে। আর চতুর্থ সংস্থানে প্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয় স্থানে
এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে অবস্থান করে। সুতরাং দেখা যায় যে, হেতুপদের অবস্থান অনুযায়ী ন্যায়ের সংস্থানও নির্ণীত হয়। ন্যায় অনুমানের এই সংস্থানগুলি যে চারটি ভিন্নভিন্ন রূপ বা আকৃতিকে উপস্থাপিত করে তা প্রখ্যাত তর্কবিদ কার্ভেথ রিড (Carveth Read) নীচের ছকগুলির সাহায্যে তুলে ধরেছেন।
প্রশ্ন 5 নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মসমূহ
নিরপেক্ষ ন্যায় যাতে যথাযথভাবে সম্পন্ন হতে পারে, তার জন্য তর্কবিদগণ কতকগুলি নিয়মের উল্লেখ করেছেন। এই সমস্ত নিয়মকেই বলা হয় ন্যায় অনুমানের সাধারণ নিয়ম (general rules of categorical syllogism)। নিয়মগুলির সংখ্যা হল দশটি এবং সেকারণেই এগুলিকে বলা হয় ন্যায় অনুমানের দশটি বিধি বা নিয়ম (ten rules of syllogism)। এই নিয়মগুলিকে যথাযথভাবে মেনে চললে ন্যায় অনুমান বৈধ বা যথার্থ রূপে গণ্য হয়। আর এগুলিকে অনুসরণ করে না চললে ন্যায় অনুমান দোষযুক্ত বা অবৈধ (fallacious) রূপে গ্রাহ্য হয়। নিরপেক্ষ ন্যায়ের এই নিয়মগুলি হল-
প্রথম নিয়ম: প্রত্যেকটি ন্যায় অনুমানে কেবল তিনটি পদই থাকবে (A valid syllogism must have three terms only)। এই তিনটি পদের বেশি বা কম পদ থাকবে না। তিনটি পদের কম বা বেশি পদ থাকলে তা দোষযুক্ত হবে।
দ্বিতীয় নিয়ম: প্রত্যেকটি ন্যায় অনুমানে কেবল তিনটি বচন থাকবে (A valid syllogism must have three propositions only)। তিনটি বচনের বেশি বা কম বচন থাকতে পারে না। এরূপ হলে তা দোষযুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।
তৃতীয় নিয়ম: হেতু পদটিকে দুটি আশ্রয়বাক্যের মধ্যে একবার ব্যাপ্য হতেই হবে (The middle term must be distributed atleast once in the premises)। তা নাহলে ন্যায় অনুমানটি দোষযুক্ত হবে।
চতুর্থ নিয়ম: যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য নয়, সেই পদ কখনোই সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না (No term can be distributed in the conclusion unless it is distributed in the premises)। যদি তা হয়, তাহলে ন্যায় অনুমানটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে।
পঞ্চম নিয়ম: আশ্রয়বাক্য দুটি যদি নঞর্থক হয়, তাহলে তা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে না (From two negative premises no conclusion can be drawn)। যদি তা করা হয়, তাহলে ন্যায় অনুমানটি দোষযুক্ত হয়ে পড়ে।
ষষ্ঠ নিয়ম: আশ্রয়বাক্য দুটির একটি নঞর্থক হলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই নঞর্থক হবে। অথবা বলা যায় যে, সিদ্ধান্তগুলি নঞর্থক হলে আশ্রয়বাক্য দুটির একটি নঞর্থক হবে (If one of the premises is negative, conclusion must be negative and certainly vice-versa)।
সপ্তম নিয়ম: দুটি আশ্রয়বাক্যই যদি সদর্থক হয়, তাহলে সিদ্ধান্তও সদর্থক হবে, অথবা সিদ্ধান্ত সদর্থক হলে আশ্রয়বাক্য দুটিই সদর্থক হবে (If both the premises be affirmative, the conclusion must be affirmative, and vice-versa)।
অষ্টম নিয়ম: দুটি বিশেষ আশ্রয়বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে না (No conclusion can be drawn from two particular premises)।
নবম নিয়ম: আশ্রয়বাক্য দুটির একটি বিশেষ হলে সিদ্ধান্তটিও বিশেষ হবে (If one premise be particular, concluion must be particular)।
দশম নিয়ম: প্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে, কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে না (If the major premise be particular and minor premise be negative, no conclusion can be drawn)।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মগুলির প্রকৃতি
নিরপেক্ষ ন্যায়ের যে দশটি সাধারণ নিয়মের উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলির প্রকৃতি বা স্বরূপ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, নিয়মগুলিকে মোটামুটিভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়- [1] গঠনগত নিয়ম [2] বৈধতা সম্পর্কিত নিয়ম এবং [3] অনুসিদ্ধান্তমূলক নিয়ম। দশটি নিয়মের মধ্যে প্রথম দুটিকে গঠন সংক্রান্ত নিয়মের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তৃতীয় থেকে সপ্তম নিয়ম পর্যন্ত নিয়মগুলিকে বলা হয় অনুমান সংক্রান্ত বা বৈধতা সংক্রান্ত নিয়ম। আর অষ্টম থেকে দশম-এই শেষের তিনটি নিয়মকে অনুসিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নিয়মরূপে উল্লেখ করা হয়।
প্রশ্ন 6 প্রমাণ করো যে, দুটি যুক্তিবাক্যের একটি বিশেষ হলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বিশেষ হবে।
উত্তর প্রমাণ: দুটি যুক্তিবাক্যের একটি বিশেষ হলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বিশেষ হবে
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মগুলির মধ্যে নবম নিয়মে দাবি করা হয়েছে যে, দুটি যুক্তিবাক্যের একটি যদি বিশেষ বচনরূপে গণ্য হয়, তাহলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বিশেষ বচনরূপে গণ্য হবে। নিরপেক্ষ ন্যায়ের এই দাবি অনুযায়ী উল্লেখ করা যায় যে, একটি যুক্তিবাক্য বিশেষ হলে অপরটি অবশ্যই সামান্য বচন হবে। কারণ, অষ্টম নিয়মে দাবি করা হয়েছে যে, দুটি বিশেষ যুক্তিবাক্য থেকে কখনোই একটি বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। আর তাই যদি হয় তাহলে এরূপ দাবি করা সংগত যে, এরূপ পরিস্থিতিতে দুটি সম্ভাবনা দেখা যেতে পারে। যথা-
প্রথম সম্ভাবনা: প্রথম যুক্তিবাক্যটি বিশেষ আর অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি সামান্য বচন।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা: প্রধান যুক্তিবাক্যটি সামান্য আর অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি বিশেষ বচন।
প্রথম সম্ভাবনা অনুযায়ী সম্ভাব্য জোড়: প্রধান যুক্তিবাক্যটি বিশেষ আর অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি সামান্য হলে, সম্ভাব্য জোড়গুলি হল: IA, IE, OA এবং OE।
দ্বিতীয় সম্ভাবনা অনুযায়ী সম্ভাব্য জোড়: আবার, প্রধান যুক্তিবাক্যটি সামান্য আর অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি বিশেষ হলে দ্বিতীয় সম্ভাবনা অনুযায়ী সম্ভাব্য জোড়গুলি হল: AI, EI, AO এবং EO।
সুতরাং দেখা যায় যে, প্রথম ও দ্বিতীয় সম্ভাবনা অনুযায়ী মোট সম্ভাব্য জোড় হল আটটি। এগুলি হল যথাক্রমে-
(i) IA, (ii) IE, (iii) OA, (iv) OE (v) AI, (vi) EI, (vii) AO, (viii) EO
এখন এই জোড়গুলিকে পরীক্ষা করে দেখা যাক যে, এগুলি থেকে কী সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
(i) IA এবং (v) AI নম্বর জোড়গুলিকে পরীক্ষা করলে দেখা যায় যে,
দুটি ক্ষেত্রেই যুক্তিবাক্যে মাত্র একটি করে পদই ব্যাপ্য হতে পারে এবং বাকি দুটি পদ অব্যাপ্য থেকে যায়। এক্ষেত্রে এই অব্যাপ্য হেতু দোষকে পরিহার করার জন্য ওই ব্যাপ্য পদটিকে হেতুপদরূপে গণ্য করতে হয়। এর ফলে বাকি দুটি পদ তথা পক্ষ ও সাধ্যপদকে সিদ্ধান্তে যাতে ব্যাপ্য না হতে হয়, তার জন্য সিদ্ধান্তে এমন বচন হতে হয়-যা কোনো পদকেই ব্যাপ্য করবে না। আর বিশেষ সদর্থক তথা I বচনই হল সেই বচন। সুতরাং সিদ্ধান্ত করা যায় যে, দুটি যুক্তিবাক্যের একটি বিশেষ বচন হলে সিদ্ধান্তটিও বিশেষ হতে বাধ্য।
(ii) নং তথা IE-র আকার থেকে যদি সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করতে হয় তাহলে তা ০ বচন হতে বাধ্য। আর সিদ্ধান্তটি যদি ০ বচন হয় তাহলে সেক্ষেত্রে অবৈধ
সাধ্য দোষের সম্ভাবনা থেকেই যায়। এর ফলে যুক্তিটি অবৈধ হয়। (vi) নং জোড় অনুযায়ী অর্থাৎ EI অনুযায়ী সিদ্ধান্তটিকে ০ বচন করতে
হয়। এর ফলে যুক্তিবাক্যে দুটি পদ ব্যাপ্য হতে পারে। এই দুটি ব্যাপ্য পদের একটিকে হেতুপদ এবং আর-একটিকে সাধ্যপদরূপে গণ্য করতে হবে। আর ০ বচন যেহেতু বিধেয়কে ব্যাপ্য করে সেহেতু সিদ্ধান্তে সাধ্যপদটিও ব্যাপ্য হবে। অর্থাৎ অবৈধ পক্ষ দোষের আর কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। এরূপ যুক্তিটি তাই বৈধরূপে গণ্য হয়। সুতরাং দাবি করা সংগত যে, একটি যুক্তিবাক্য বিশেষ হলে সিদ্ধান্তটিকেও বিশেষ বচন হতে হয়।
(iii) নং এবং (vii) নং জোড় অনুযায়ী অর্থাৎ OA এবং AO-জোড় দুটি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দুটিকেও ০ বচন হতে হয়। এর ফলে প্রত্যেকটি জোড়ের যুক্তিবাক্য দুটিতে দুটি করে পদ ব্যাপ্য হয়। এই দুটি পদকে হেতুপদ ও সাধ্যপদ হতেই হয়। কারণ, তা নাহলে অব্যাপ্য হেতু দোষের উদ্ভব ঘটে, অথবা অবৈধ সাধ্য দোষের উদ্ভব হয়। সিদ্ধান্তটি ০ বচন হলে তার বিধেয় পদটি ব্যাপ্য হয় আর সিদ্ধান্তের এই বিধেয় পদটিই হল সাধ্যপদ। এক্ষেত্রে তাই সিদ্ধান্তটি বিশেষ হলে যুক্তিটি বৈধরূপে গণ্য হয়।
(iv) নং এবং (viii) নং তথা OE এবং EO জোড়গুলির ক্ষেত্রেও দেখা যায় যে, এগুলি থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত নিষ্কাশিত হতে পারে না। কারণ, এরূপ জোড় দুটি ন্যায় অনুমানের পঞ্চম নিয়মের বিরোধী। ন্যায়ের পঞ্চম নিয়ম অনুযায়ী দাবি করা হয় যে, দুটি যুক্তিবাক্য নঞর্থক হলে তা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না।
সুতরাং, ওপরের পরীক্ষাগুলির পরিপ্রেক্ষিতে এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, বৈধ ন্যায়ের ক্ষেত্রে দুটি যুক্তিবাক্যের একটি যদি বিশেষ বচন হয়, তবে সিদ্ধান্তটিও বিশেষ বচন হবে।
প্রশ্ন 7 প্রমাণ করো যে, দুটি যুক্তিবাক্য অথবা হেতুবাক্য বিশেষ হলে তা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না।
উত্তর প্রমাণ: দুটি যুক্তিবাক্য অথবা হেতুবাক্য বিশেষ হলে তা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না
ধরা যাক, একটি নিরপেক্ষ ন্যায়ের দুটি যুক্তিবাক্যই হল বিশেষ। কোনো ন্যায় অনুমানের দুটি যুক্তিবাক্যই বিশেষ হলে প্রধান যুক্তিবাক্যটি যেমন বিশেষ বচনরূপে গণ্য, তেমনই অপ্রধান যুক্তিবাক্যটিও বিশেষ বচনরূপে গণ্য হবে। বিশেষ বচন বলতে আমরা 1 অথবা 0 বচনকেই বুঝে থাকি। আর প্রধান যুক্তিবাক্য এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্য-উভয়েই যদি বিশেষ বচন হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সম্ভাব্য জোড়গুলি হল: (i) II, (ii) IO, (iii) OI এবং (iv) 00 নামক চারটি জোড়। এখন এই চারটি সম্ভাব্য জোড়কে পরীক্ষা করে দেখা যাক যে, এগুলি থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত নিষ্কাশিত হতে পারে কি না।
(i) নং জোড় তথা II জোড়ের পরীক্ষা: II-এই সম্ভাব্য জোড় থেকে সিদ্ধান্তটিকে ন্যায়ের নিয়ম অনুযায়ী । বচনরূপে গণ্য করতে হয়। এর ফলে দেখা যায় যে, সেক্ষেত্রে অব্যাপ্য হেতু দোষের উদ্ভব ঘটে। কারণ, । বচন কোনো পদকেই ব্যাপ্য করে না। অথচ ন্যায় অনুমানের নিয়ম অনুযায়ী হেতুপদকে অবশ্যই একবার না একবার ব্যাপ্য হতেই হয়। সুতরাং সিদ্ধান্ত করা যায় যে, II এই সম্ভাব্য জোড় থেকে কোনো বৈধ মূর্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
(ii) নং জোড় তথা 10 জোড়ের পরীক্ষা: 10-এই সম্ভাব্য জোড় থেকে ন্যায়ের নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্তটিকে ০ বচন হতে হয়। এর ফলে দেখা যায় যে, সেক্ষেত্রে অবৈধ সাধ্য দোষের উদ্ভব হয়। কারণ, সিদ্ধান্ত ০ বচন হওয়ায় তার বিধেয় পদটি ব্যাপ্য হয়। আর সিদ্ধান্তের এই বিধেয় পদটিই হল সাধ্যপদ। সুতরাং, সাধ্যপদটি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হওয়া সত্ত্বেও প্রধান যুক্তিবাক্যে তা ব্যাপ্য হতে পারে না। কারণ, প্রধান যুক্তিবাক্যটি । বচন হওয়ায় কোনো পদকেই ব্যাপ্য করে না। সুতরাং সিদ্ধান্ত করা যায় যে, 10 এই সম্ভাব্য জোড় থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়।
(iii) নং জোড় তথা OI জোড়ের পরীক্ষা: OI-এই সম্ভাব্য জোড় থেকে
ন্যায়ের নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্তটিকে ০ বচন হতে হয়। এর ফলে দেখা যায় যে, সেক্ষেত্রে দুটি দোষের সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই দুটি সম্ভাব্য দোষের একটি হল অবৈধ সাধ্য দোষ এবং অপরটি হল অব্যাপ্য হেতু দোষ। যুক্তিটিকে অব্যাপ্য হেতু দোষের হাত থেকে রক্ষা করতে গেলে সেক্ষেত্রে অবৈধ সাধ্য দোষের পথটি নিশ্চিত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, অবৈধ সাধ্য দোষকে পরিহার করতে গেলে, অব্যাপ্য হেতু দোষের পথটি প্রশস্ত হয়ে ওঠে। সুতরাং দাবি করা যায় যে, এরূপ সম্ভাব্য জোড় থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়।
(iv) নং জোড় তথা ০০ জোড়ের পরীক্ষা: এই সম্ভাব্য জোড়টি থেকে যে-কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়, তা নিরপেক্ষ ন্যায়ের পঞ্চম নিয়ম দ্বারা প্রমাণিত। কারণ, ন্যায়ের পঞ্চম নিয়মে বলা হয়েছে যে, দুটি যুক্তিবাক্যই যদি নঞর্থক হয়, তাহলে তা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে
যুক্তি বা অনুমানটি দুটি নঞর্থক যুক্তিবাক্যজনিত দোষে দুষ্ট। সিদ্ধান্ত: এই সম্ভাব্য জোড়গুলির পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, দুটি যুক্তিবাক্যই যদি বিশেষ বচন হয়, তাহলে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। অর্থাৎ, যুক্তিবাক্য দুটির একটি বিশেষ বচন হলে, অপরটি অবশ্যই সামান্য বচন হবে।
প্রশ্ন ৪ প্রমাণ করো যে, দুটি যুক্তিবাক্যই নঞর্থক হলে, তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়। অথবা, দুটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে তা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না।
উত্তর প্রমাণ: দুটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে তা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না
ন্যায়ের পঞ্চম নিয়মে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দুটি যুক্তিবাক্যই যদি নঞর্থক বচন হয়, তাহলে তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। দুটি যুক্তিবাক্য নঞর্থক হওয়া সত্ত্বেও যদি কোনো সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাহলে তা অবৈধ রূপে গণ্য হয়। আর এরূপ দোষকে বলা হয়-দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্যজনিত
দোষ।
এরূপ দোষের হেতু বা কারণ: নঞর্থক বচন হল সেই বচন যেখানে বিধেয় পদটি উদ্দেশ্য পদ সম্পর্কে কোনো কিছুকে অস্বীকার করে। আর বিধেয় পদটি যদি উদ্দেশ্য সম্পর্কে কোনো কিছুকে অস্বীকার করে, তাহলে এটা প্রমাণিত হয় যে, নঞর্থক বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধই স্থাপিত হয় না। এর ফলে দেখা যায় যে, দুটি যুক্তিবাক্যেই তথা প্রধান ও অপ্রধান যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য ও বিধেয়র মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকে না। প্রধান যুক্তিবাক্যে থাকে সাধ্যপদ এবং হেতুপদ। সেকারণেই প্রধান যুক্তিবাক্যে সাধ্যপদ ও হেতুপদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধ স্থাপিত হতে পারে না। আবার অপ্রধান যুক্তিবাক্যে থাকে পক্ষপদ ও হেতুপদ এবং সেজন্যই এই দুটি পদের মধ্যেও কোনো সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায় না। এর ফলে দাবি করা সংগত যে, দুটি যুক্তিবাক্যই যদি নঞর্থকরূপে গণ্য হয়, তাহলে হেতুপদের সঙ্গে সাধ্যপদের ও পক্ষপদের কোনো সম্বন্ধই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। আর হেতুপদ নিজেই যদি সাধ্য ও পক্ষ পদের সঙ্গে সম্বন্ধহীন হয়, তাহলে তার পক্ষে সিদ্ধান্তে পক্ষ ও সাধ্য পদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা আদৌ সম্ভব নয়। সুতরাং প্রমাণ করা যায় যে, দুটি যুক্তিবাক্যই যদি নঞর্থক হয়, তাহলে তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না।
উদাহরণের সাহায্যে প্রমাণের যথার্থতা: পক্ষান্তরে তাই বলা যায় যে, দুটি যুক্তিবাক্যের একটি নঞর্থক হলে অপরটি অবশ্যই সদর্থক হবে।
9 প্রমাণ করো যে, প্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্যটি নঞর্থক হলে, কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়।
অথবা, প্রমাণ করো যে, একটি ন্যায় অনুমানে প্রধান আশ্রয়বাক্য (হেতুবাক্য) বিশেষ হলে এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্য (হেতুবাক্য) নঞর্থক হলে তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় না।
উত্তর প্রমাণ: প্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্যটি নঞর্থক হলে, কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়
ন্যায় অনুমানের দশম নিয়মে বলা হয়েছে যে, প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি বিশেষ বচন হয় এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি নঞর্থক বচন হয়, তাহলে তা থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়। এরূপ দাবির সমর্থনে যে প্রমাণের উপস্থাপনা করা যায়, তা হল-
ধরা হল যে, [1] কোনো ন্যায় অনুমানের প্রধান যুক্তিবাক্যটি হল বিশেষ বচন, তাহলে তা হবে হয় । বচন অথবা 0 বচন। আরও ধরা হল যে, [2] কোনো ন্যায় অনুমানের অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি হল নঞর্থক বচন, তাহলে তা হবে হয় E বচন অথবা ০ বচন। এই দুটি শর্তে প্রধান ও অপ্রধান যুক্তিবাক্যের সম্ভাব্য জোড়গুলি হল: IE, IO, OE, OO। এই চারটি জোড় ছাড়া ন্যায় অনুমানের আর কোনো সম্ভাব্য জোড় হতে পারে না। এখন এই চারটি সম্ভাব্য জোড়কে একে একে পরীক্ষা করে দেখা যাক যে, সেগুলি থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় কি না।
10 নীচের উপপাদ্য দুটি প্রমাণ করো:
(a) A বচন কেবল প্রথম সংস্থানেই সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য হতে পারে।
(b) কোনো ন্যায় অনুমানের সিদ্ধান্তটি যদি সামান্য বচন হয়, তাহলে হেতুপদটি যুক্তিবাক্য দুটিতে মাত্র একবারই ব্যাপ্য হবে।
উত্তর [a] প্রমাণ: A বচন কেবল প্রথম সংস্থানেই সিদ্ধান্ত হিসেবে গণ্য হতে পারে।
কোনো শুদ্ধ ন্যায় অনুমানে যদি A বচন সিদ্ধান্তরূপে গণ্য হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে যুক্তিবাক্য দুটি অবশ্যই A বচনরূপে গণ্য হবে। কারণ, আমরা জানি যে, যুক্তিবাক্য দুটির মধ্যে একটি যদি বিশেষ বচন হত, তাহলে সিদ্ধান্তটিও বিশেষ বচনরূপে গণ্য হত। আবার যুক্তিবাক্য দুটি নঞর্থকও হতে পারে না, কারণ তা যদি হত, তাহলে সিদ্ধান্তটিও নঞর্থক হত। সুতরাং, যুক্তিবাক্য দুটি যেহেতু নঞর্থক বা বিশেষ কোনোটিই নয়, সেজন্য তা সামান্য সদর্থক তথা A বচন হতে বাধ্য। আবার, সিদ্ধান্তটি যদি সামান্য সদর্থক তথা A বচন হয়, তাহলে তার উদ্দেশ্য তথা পক্ষপদ ব্যাপ্য হবে। এক্ষেত্রে যাতে অবৈধ পক্ষ দোষের উদ্ভব না ঘটে, তার জন্য অপ্রধান যুক্তিবাক্যের A বচনের উদ্দেশ্য পদই পক্ষপদ হবে। ফলে অপ্রধান যুক্তিবাক্যে হেতুপদটি ব্যাপ্য হবে না। অথচ হেতুপদকে অবশ্যই একবার ব্যাপ্য হতে হবে। তার জন্য প্রধান যুক্তিবাক্যে A বচনের উদ্দেশ্য পদকেই হেতুপদ হতে হবে। তাহলে হেতুপদটি সেক্ষেত্রে ব্যাপ্য হয়ে অব্যাপ্য হেতু দোষ পরিহার করতে সমর্থ হবে। এমন যদি হয়, তাহলে সংস্থানটি অবশ্যই প্রথম সংস্থান হিসেবে গণ্য হবে। কারণ, প্রথম সংস্থানে হেতুপদ প্রধান যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয় স্থানে অবস্থান করে। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে, A
বচন যদি সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে যুক্তিটি প্রথম সংস্থানের রূপ হবে।
[b] প্রমাণ: কোনো ন্যায় অনুমানের সিদ্ধান্তটি যদি সামান্য বচন হয়, তাহলে ছেতুপদটি যুক্তিবাক্য দুটিতে মাত্র একবারই ব্যাপ্য হবে।
কোনো ন্যায় অনুমানের সিদ্ধান্তটি সামান্য বচন হলে, তা A বচন অথবা E বচন হবে। সিদ্ধান্তটি যদি A বচন হয়, তাহলে যুক্তিবাক্য দুটিও A বচন হবে। যুক্তিবাক্য দুটি A বচন হলে মাত্র দুটি পদ সেক্ষেত্রে ব্যাপ্য হবে, তৃতীয়টি ব্যাপ্য হবে না। সিদ্ধান্তটি A বচন হলে, পক্ষপদটি ব্যাপ্য হবে। এক্ষেত্রে অবৈধ পক্ষ দোষকে এড়িয়ে চলার জন্য যুক্তিবাক্য দুটির মধ্যে অপ্রধান যুক্তিবাক্যের পক্ষপদকে ব্যাপ্য হতে হবে। সুতরাং, সেক্ষেত্রে হেতুপদটি একবারই ব্যাপ্য হবে।
অপরদিকে, সিদ্ধান্তটি যদি E বচন হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সাধ্যপদ এবং পক্ষপদ উভয়কেই ব্যাপ্য হতে হবে এবং যুক্তিবাক্য দুটির একটি A এবং একটি E বচন হবে। তাই যদি হয়, তাহলে দুটি যুক্তিবাক্যে মোট তিনটি পদ ব্যাপ্য হবে। এদের মধ্যে একটি সাধ্যপদ এবং আর-একটি পক্ষপদ হলে, সেক্ষেত্রে অবশিষ্ট পদটি হেতুপদ হবে এবং তা একবারই ব্যাপ্য হবে।
প্রশ্ন 11 নীচের উপপাদ্য দুটি প্রমাণ করো:
(a) কোনো ন্যায় অনুমানের অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি নঞর্থক হয়, তবে প্রধান যুক্তিবাক্যটি সামান্য হবে।
(b) কোনো ন্যায় অনুমানে হেতুপদটি যদি দুবার ব্যাপ্য হয়, তবে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বিশেষ হবে।
উত্তর [a] প্রমাণ: কোনো ন্যায় অনুমানের অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি নঞর্থক হয়, তবে প্রধান যুক্তিবাক্যটি সামান্য হবে।
কোনো ন্যায় অনুমানের অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি নঞর্থক হয়, তাহলে প্রধান যুক্তিবাক্যটি সদর্থক এবং সিদ্ধান্তটি অবশ্যই নঞর্থক হবে। আর সিদ্ধান্তটি যদি নঞর্থক হয়, তাহলে তার বিধেয় পদ তথা সাধ্যপদটি ব্যাপ্য হবে। এই সাধ্যপদ আবার প্রধান যুক্তিবাক্যে অবস্থান করে। অবৈধ সাধ্য দোষ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তাই সাধ্যপদটিকে প্রধান যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য হতে হবে। এটা একমাত্র তখনই সম্ভব হবে, যদি প্রধান যুক্তিবাক্য সামান্য সদর্থক তথা A বচন হয় এবং সাধ্যপদটি উদ্দেশ্য স্থানে অবস্থান করে। সুতরাং প্রমাণ করা যায় যে, অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি নঞর্থক হয়, তবে প্রধান যুক্তিবাক্যটিও অবশ্যই সামান্য হবে।
[b] প্রমাণ: কোনো ন্যায় অনুমানে হেতুপদটি যদি দুবার ব্যাপ্য হয়, তবে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বিশেষ হবে।
ধরা যাক, সিদ্ধান্তটি বিশেষ না হলে, তা অবশ্যই সামান্য হবে। আর সিদ্ধান্তটি যদি সামান্য হয়, তাহলে তা A অথবা E বচন হবে। যদি সিদ্ধান্তটি A বচনরূপে গণ্য হয়, তাহলে দুটি যুক্তিবাক্যই A বচন হবে। সেক্ষেত্রে পক্ষপদটি ব্যাপ্য হবে এবং অবৈধ পক্ষ দোষ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য পক্ষপদটিকে অপ্রধান যুক্তিবাক্যে A বচনের উদ্দেশ্য স্থানে অবস্থান করতে হবে। কিন্তু হেতুপদটি যেহেতু দুটি যুক্তিবাক্যেই ব্যাপ্য হবে, সেজন্য অবৈধ পক্ষ দোষকে এড়ানো যাবে না। একে এড়াতে গেলে সিদ্ধান্তটিকে তাই বিশেষ সদর্থক তথা I বচন হতেই হয়।
অপরদিকে, সিদ্ধান্তটি যদি E বচন হয়, তবে একটি যুক্তিবাক্য A এবং আর-একটি E বচন হবে। তা যদি হয়, তাহলে সিদ্ধান্তে সাধ্যপদ এবং পক্ষপদ উভয়ই ব্যাপ্য হবে। এক্ষেত্রে অবৈধ সাধ্য দোষ এবং অবৈধ পক্ষ দোষ এড়ানোর জন্য যুক্তিবাক্য দুটিতে উভয়কেই ব্যাপ্য হতে হবে। কিন্তু তা সম্ভব নয়, কারণ এক্ষেত্রে যুক্তিবাক্য দুটিতে মোট তিনটি পদ ব্যাপ্য হয়। এর মধ্যে হেতুপদটি যদি দু-বার ব্যাপ্য হয়, তাহলে অবৈধ সাধ্য দোষ অথবা অবৈধ পক্ষ দোষ ঘটে। সুতরাং, এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটিকে অবশ্য বিশেষ বচন হতেই হবে।
প্রশ্ন 12 নীচের উপপাদ্য দুটি প্রমাণ করো:
(a) একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদ যদি যুক্তিবাক্যের বিধেয় হয়, তাহলে যুক্তিবাক্য অবশ্যই সদর্থক হবে।
(b) প্রথম সংস্থানে হেতুপদ দুবার ব্যাপ্য হতে পারে না।
উত্তর [a] প্রমাণ: একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদ যদি যুক্তিবাক্যের বিধেয় হয়, তাহলে যুক্তিবাক্য অবশ্যই সদর্থক হবে।
ধরা যাক, অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি সদর্থক না হয়, তবে তা নর্থক। হবে। তাই যদি হয়, তাহলে প্রধান যুক্তিবাক্যটি অবশ্যই সদর্থক এবং সিদ্ধান্তটি অবশ্যই নঞর্থক বচনরূপে গণ্য হবে। সিদ্ধান্তটি নঞর্থক রূপে গণ্য হওয়ায়, তার বিধেয় তথা সাধ্যপদটি ব্যাপ্য হবে। আবার এক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, সাধ্যপদটি যুক্তিবাক্যের বিধেয়রূপে গণ্য হয়। কিন্তু প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি সদর্থক হয়, তবে সাধ্যপদটি সেক্ষেত্রে অব্যাপ্য হবে। ফলে, অবৈধ সাধ্য দোষের উদ্ভব ঘটবে। সুতরাং প্রমাণ করা যায় যে কোনো বৈধ ন্যায়ে সাধ্যপদটি যদি যুক্তিবাক্যের বিধেয় হয়, তাহলে অপ্রধান যুক্তিবাক্য অবশ্যই নঞর্থক না হয়ে, সদর্থক হবে।
[b] প্রমাণ: প্রথম সংস্থানে হেতুপদ দুবার ব্যাপ্য হতে পারে না। প্রথম সংস্থানে হেতুপদকে যদি দুবার ব্যাপ্য হতে হয়, তাহলে প্রধান যুক্তিবাক্য অবশ্যই সামান্য বচন এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্য অবশ্যই নঞর্থক
M——————P
S——————M
S…………………P
বচন হবে। যদি তা-ই হয়, তাহলে সিদ্ধান্তটি নঞর্থক হতে বাধ্য। আর সিদ্ধান্তটি নঞর্থক হলে, সাধ্যপদটি তথা বিধেয় পদটি ব্যাপ্য হবে। এই সাধ্যপদটি আবার প্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয় স্থানে অবস্থান করায়, তা ব্যাপ্য হবে না। ফলে, অবৈধ সাধ্য দোষের উদ্ভব ঘটবে। সুতরাং প্রমাণ করা যায় যে, প্রথম সংস্থানে হেতুপদ কখনোই দুবার ব্যাপ্য হতে পারে না।
প্রশ্ন 13 নীচের সম্পাদ্য দুটির সমাধান করো।
(a) কোনো একটি বৈধ ন্যায়ে একটিমাত্র পদ ব্যাপ্য হলে সিদ্ধান্তটি কোন্ বচন হবে?
(b) কোনো একটি বৈধ ন্যায়ের যুক্তিবাক্যে একটি পদ যদি দুবার ব্যাপ্য হয়, তাহলে তার পূর্ণাঙ্গ মূর্তি বা রূপটি কী হবে?
উত্তর [a] সমাধান: কোনো একটি বৈধ ন্যায়ে একটিমাত্র পদ ব্যাপ্য হলে সিদ্ধান্তটির বচন নির্ণয়
কোনো একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে একটিমাত্র পদ যদি ব্যাপ্য (distributed) হয়, তাহলে সেই পদটি অবশ্যই হবে হেতুপদ (middle term)। কারণ, আমরা ন্যায়ের নিয়ম অনুযায়ী জানি যে, হেতুপদকে অবশ্যই একবার ব্যাপ্য হতে হবে। সুতরাং, যুক্তিবাক্য দুটির হেতুপদ ছাড়া আর কোনো পদই ব্যাপ্য না হওয়ায়, সাধ্যপদ (major term) এবং পক্ষপদ (minor term) উভয়ই অব্যাপ্য হবে। এই সাধ্যপদ ও পক্ষপদকে আবার সিদ্ধান্তে অব্যাপ্য থাকতে হবে। এজন্য সিদ্ধান্তকে অবশ্যই বিশেষ সদর্থক তথা । বচন হতে হবে।
[b সমাধান: কোনো একটি বৈধ ন্যায়ের যুক্তিবাক্যে একটি পদ যদি দুবার ব্যাপ্য হয়, তাহলে তার পূর্ণাঙ্গ মূর্তি বা রূপ নির্ণয়
যুক্তিবাক্য দুটিতে যদি কোনো-একটি পদ দুবার ব্যাপ্য হয়, তাহলে তা অবশ্যই হেতুপদ হবে। কারণ, একমাত্র হেতুপদই যুক্তিবাক্য দুটিতে দুবার অবস্থান করে। এই হেতুপদটি যদি যুক্তিবাক্য দুটিতে দুবার ব্যাপ্য হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সাধ্যপদ এবং পক্ষপদ দুটি ব্যাপ্য হবে না। সুতরাং, সিদ্ধান্তেও এই সাধ্য ও পক্ষপদকে অব্যাপ্য থাকতে হবে। একমাত্র সিদ্ধান্তটি যদি I. বচন হয় তবেই তা সম্ভব হবে।
এক্ষেত্রে, ন্যায়ের পূর্ণাঙ্গ রূপটি হবে-
সকল M হয় P (A)।
সকল M হয় S (A)।
:: কোনো কোনো S হয় P (I)।
M——————P
M——————S
S…………………P
ন্যায়ের তৃতীয় সংস্থানের এই শুদ্ধ মূর্তিটির নাম হল DARAPTI।
14 নীচের সম্পাদ্য দুটির সমাধান করো।
(a) কোনো শুদ্ধ ন্যায় অনুমানে যদি সাধ্যপদটি যুক্তিবাক্যে অব্যাপ্য হয় এবং পক্ষপদটি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়, তাহলে ন্যায়ের পূর্ণরূপটি কী?
(b) কোনো বৈধ ন্যায়ে প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি । বচন হয়, তাহলে তার মূর্তি ও সংস্থান কী হবে?
উত্তর [a] সমাধান: কোনো শুদ্ধ ন্যায় অনুমানে যদি সাধ্যপদটি যুক্তিবাক্যে অব্যাপ্য হয় এবং পক্ষপদটি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়, তাহলে ন্যায়ের পূর্ণরূপ নির্ণয়
কোনো শুদ্ধ ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদটি যদি যুক্তিবাক্যে অব্যাপ্য থাকে, তাহলে তা সিদ্ধান্তেও অব্যাপ্য থাকবে। সাধ্যপদটি যদি সিদ্ধান্তে অব্যাপ্য হয় তাহলে সিদ্ধান্তটিকে অবশ্যই সদর্থক বচন হতে হবে। আবার পক্ষপদটি যদি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয় তাহলে সিদ্ধান্তটিকে অবশ্যই সামান্য বচন হতে হবে। অর্থাৎ, সিদ্ধান্তটি হবে সামান্য সদর্থক তথা A বচন।
সিদ্ধান্ত A বচন হওয়ায় এবং অনুমানটি শুদ্ধ হওয়ায় প্রধান এবং অপ্রধান উভয় যুক্তিবাক্যই হবে A বচন। পক্ষপদটি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হলে তাকে অপ্রধান যুক্তিবাক্যেও ব্যাপ্য হতে হবে। আর পক্ষপদটিকে ব্যাপ্য হতে গেলে A বচনের উদ্দেশ্য স্থানে অবস্থান করতে হবে। আবার, অব্যাপ্য হেতু দোষ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য প্রধান যুক্তিবাক্যে হেতুপদকে ব্যাপ্য হতেই হবে এবং তা হতে গেলে, A বচনের উদ্দেশ্য স্থানে হেতুপদ অবস্থান করবে। সেক্ষেত্রে ন্যায়টির পূর্ণরূপ হবে-
সকল M হয় P (A)।
সকল S হয় M (A)।
*** কোনো কোনো S হয় P (I)।
ন্যায়ের তৃতীয় সংস্থানের এই শুদ্ধ মূর্তিটির নাম হল DARAPTI।
[b] সমাধান: কোনো বৈধ ন্যায়ে প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি I বচন হয়, তাহলে তার মূর্তি ও সংস্থান নির্ণয়
কোনো বৈধ ন্যায়ে প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি I বচন হয়, তাহলে অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি অবশ্যই A বচন হবে। কারণ, এক্ষেত্রে ন্যায়ের নিয়ম অনুযায়ী অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি কখনোই E কিংবা I অথবা 0 বচন হতে পারে না। সুতরাং, যুক্তিবাক্য দুটির সম্ভাব্য জোড় হল IA এবং এই IA থেকে প্রথম সংস্থানে কোনো বৈধ মূর্তি পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আমরা জানি যে, প্রথম সংস্থানের বিশেষ নিয়ম অনুযায়ী প্রধান যুক্তিবাক্যটি সামান্য হবে। আবার দ্বিতীয় সংস্থানেও এই IA থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ, দ্বিতীয় সংস্থানের বিশেষ নিয়ম অনুযায়ী আমরা জানি যে, হেতুপদ উভয় যুক্তিবাক্যের বিধেয় স্থানে অবস্থান করে এবং সদর্থক বচনের বিধেয় কোনো ক্ষেত্রেই ব্যাপ্য নয়। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ সংস্থানে IA এই সম্ভাব্য জোড় থেকে বৈধ মূর্তি পাওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে ন্যায়ের রূপটি হবে IAI। তৃতীয় সংস্থানের এই শুদ্ধ মূর্তিটির নাম হল DISAMIS এবং চতুর্থ সংস্থানের এই শুদ্ধ মূর্তিটির নাম হল DIMARIS |
15 নীচের সম্পাদ্য দুটির সমাধান করো।
(a) কোনো বৈধ ন্যায়ে প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি ০ বচন হয়, তাহলে ন্যায়ের রূপটি কী হবে?
(b) কোনো বৈধ ন্যায় অনুমানে সিদ্ধান্তটি যদি A বচন হয়, তাহলে তার পূর্ণাঙ্গ রূপটি নির্ণয় করো।
উত্তর [a] সমাধান: কোনো বৈধ ন্যায়ে প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি ০ বচন হয়, তাহলে ন্যায়ের রূপ নির্ণয়
কোনো বৈধ ন্যায় অনুমানে প্রধান যুক্তিবাক্যটি যদি ০ বচন হয়, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী সিদ্ধান্তটিও ০ বচন হবে। এক্ষেত্রে অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি হবে A বচন। সুতরাং, ন্যায়ের রূপটি হবে OAO। এই OAO দ্বারা
প্রথম, দ্বিতীয় এবং চতুর্থ সংস্থানে কোনো মূর্তি পাওয়া যায় না। একমাত্র তৃতীয় সংস্থানেই একটি বৈধ মূর্তি পাওয়া যায়। তৃতীয় সংস্থানে ন্যায়ের বৈধ রূপটি হল-
M——————P
M——————S
S…………………P
কোনো কোনো M নয় P (O)।
সকল M হয় S (A)।
: কোনো কোনো S নয় P (I)।
তৃতীয় সংস্থানের OAO দ্বারা গঠিত বৈধ মূর্তিটির নাম হল
BOCARDO।
[b] সমাধান: কোনো বৈধ ন্যায় অনুমানে সিদ্ধান্তটি যদি A বচন হয়, তাহলে তার পূর্ণাঙ্গ রূপ নির্ণয়
কোনো বৈধ ন্যায় অনুমানে সিদ্ধান্তটি যদি A বচন হয়, তাহলে প্রধান এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্য দুটিও অবশ্যই A বচন হবে। সিদ্ধান্তটি যদি A বচন হয় তাহলে তার উদ্দেশ্য তথা পক্ষপদ ব্যাপ্য হবে। এই পক্ষপদকে আবার অপ্রধান যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য হতে হবে এবং তার জন্য A বচনের উদ্দেশ্য স্থানে অবস্থান করতে হবে। আবার হেতুপদটিকে একবার ব্যাপ্য করার জন্য তাকে প্রধান যুক্তিবাক্যের A বচনের বিধেয় স্থানে অবস্থান করতে হবে। তাহলে ন্যায় অনুমানের পূর্ণরূপটি হবে-
M——————P
S—————M
S…………………P
সকল M হয় P (A)।
সকল S হয় M (A)।
.. সকল S হয় P (A)।
প্রথম সংস্থানের এই শুদ্ধ মূর্তির নাম হল BARBARA |
প্রশ্ন 16 নীচের সম্পাদ্য দুটির সমাধান করো।
(a) কোনো একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদটি যদি প্রধান যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য হয় এবং সিদ্ধান্তে অব্যাপ্য থাকে, তাহলে সেই অনুমানের সংস্থান ও মূর্তি কী হবে?
(b) কোনো একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদটি যদি প্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয় হয়, তাহলে অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি কী হবে?
উত্তর [a] সমাধান: কোনো একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদটি যদি প্রধান যুক্তিবাক্যে ব্যাপ্য হয় এবং সিদ্ধান্তে অব্যাপ্য থাকে, তাহলে সেই অনুমানের সংস্থান ও মূর্তি নির্ণয়
আমরা জানি যে, বৈধ ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদটি সিদ্ধান্তের বিধেয় স্থানে
অবস্থান করে। এই সাধ্যপদটিকে যদি অব্যাপ্য (undistributed) হতে হয়, তাহলে সিদ্ধান্তটিকে অবশ্যই সদর্থক হতে হবে। আবার হতোন্তটি যেহেতু সদর্থক, সেজন্য ন্যায়ের নিয়ম অনুযায়ী উভয় মুক্তিবাক্যকেই সদর্থক হতে হবে। কারণ, সদর্থক বচন কোনো ক্ষেত্রেই বিধেয়কে ব্যাপ্য করে না। সুতরাং, সাধ্যপদটিকে যদি প্রধান যুক্তিবাকো। ব্যাপ্য হতে হয়, তাহলে প্রধান যুক্তিবাক্যের A বচনের উদ্দেশ্য স্থানে তাকে অবস্থান করতে হবে। আবার হেতুপদকে একবার ব্যাপ্য হওয়ার জন্য অপ্রধান যুক্তিবাক্যটিকেও A বচন হতে হবে এবং হেতুপদকে সেক্ষেত্রে উদ্দেশ্য স্থানে অবস্থান করতে হবে। আবার অবৈধ পক্ষ দোষ এড়ানোর জন্য সিদ্ধান্তটিকে অবশ্যই I বচন হতে হবে। তাহলে ন্যায় অনুমানের রূপ ও সংস্থান হবে-ন্যায়ের রূপটি যদি এইরকম হয়, তাহলে কোনো দোষেরই উদ্ভব হবে না এবং ন্যায় অনুমানটি এক শুদ্ধ মূর্তিতে পরিণত হবে। চতুর্থ সংস্থানের এই শুদ্ধ মূর্তিটির নাম হল BRAMANTIP।
[b] সমাধান: কোনো একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদটি প্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয় হলে, অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি নির্ণয়
কোনো বৈধ ন্যায়ে সাধ্যপদটি যদি প্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয় স্থানে অবস্থান করে, তাহলে তা ব্যাপ্য হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। যদি তা ব্যাপ্য হয়, তাহলে প্রধান যুক্তিবাক্যটি অবশ্যই নঞর্থক হবে। কারণ একমাত্র নঞর্থক যুক্তিবাক্যই বিধেয়কে ব্যাপ্য করে, সদর্থক যুক্তিবাক্য করে না। তাই এক্ষেত্রে বৈধ মূর্তি পাওয়ার জন্য অপ্রধান যুক্তিবাক্যকে অবশ্যই সদর্থক হতে হবে। আবার সাধ্যপদটি যদি প্রধান যুক্তিবাক্যে অব্যাপ্য হয়, তাহলে সিদ্ধান্তে সাধ্যপদটি কোনো মতেই ব্যাপ্য হতে পারে না। সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটিও অবশ্যই সদর্থক হবে। কারণ, কোনো সদর্থক বচনই বিধেয়কে ব্যাপ্য করে না। আবার সিদ্ধান্তটি যদি সদর্থক হয়, তাহলে প্রধান যুক্তিবাক্য এবং অপ্রধান যুক্তিবাক্য উভয়ই সদর্থক হতে বাধ্য। সুতরাং, সিদ্ধান্ত করা যেতে পারে যে, কোনো একটি বৈধ ন্যায় অনুমানে সাধ্যপদটি যদি প্রধান যুক্তিবাক্যের বিধেয় হয়, তাহলে অপ্রধান যুক্তিবাক্যটি অবশ্যই A বচন অথবা I বচন হবে।
প্রশ্ন 1 ন্যায়ের সংস্থান কী? সংস্থান কুয় প্রকার ও কী কী?
উত্তর ন্যায়ের সংস্থান
ন্যায় অনুমানের অন্তর্গত যুক্তিবাক্য দুটির মধ্যে হেতুপদের অবস্থান অনুযায়ী ন্যায়ের যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ বা আকৃতি হয়, তাকেই বলা হয় ন্যায়ের সংস্থান (figure of syllogism)।
ন্যায় অনুমানে হেতুপদের অবস্থান
প্রত্যেকটি ন্যায় অনুমানে সাধ্য, পক্ষ এবং হেতু-এই তিনটি করে পদ থাকে। এই তিনটি পদেরই ব্যবহার হল দু-বার করে। সুতরাং, হেতুপদেরও ব্যবহার দু-বার। এই দু-বারের মধ্যে হেতুপদটি একবার থাকে প্রধান যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য অথবা বিধেয়তে আর-একবার থাকে অপ্রধান যুক্তিবাক্যের উদ্দেশ্য অথবা বিধেয়তে। হেতুপদটি তাই বিভিন্ন সময়ে যুক্তিবাক্য দুটির বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করে। এর ফলে ন্যায় অনুমানের বিভিন্ন রকম আকৃতি দেখা যায়। ন্যায়ের এই সমস্ত আকৃতি বা রূপকেই বলা হয় ন্যায়ের সংস্থান।
ন্যায় সংস্থানের প্রকার
হেতুপদের (M) অবস্থান অনুযায়ী ন্যায়ের সংস্থান হল মোট চারপ্রকার। এই চারপ্রকার সংস্থান হল যথাক্রমে: [1] প্রথম সংস্থান (first figure) [2] দ্বিতীয় সংস্থান (second figure) [3] তৃতীয় সংস্থান (third figure) এবং [4] চতুর্থ সংস্থান (fourth figure)।
প্রশ্ন 3 ন্যায় অনুমানের বৈধ মূর্তিগুলি কী তা সংস্থান অনুযায়ী উল্লেখ করো।
উত্তর সংস্থান অনুযায়ী ন্যায় অনুমানের বৈধ মূর্তি
ন্যায়ের যে-সমস্ত মূর্তির ক্ষেত্রে ন্যায়ের দশটি নিয়মকে যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়েছে, সেগুলিকেই বলা হয় ন্যায়ের বৈধ মূর্তি (valid modes of syllogism)। ন্যায় অনুমানের এরূপ বৈধ মূর্তি হল মোট 19 টি। চারটি সংস্থানে ব্যাপক অর্থে মোট 256টি মূর্তি দেখা গেলেও, এদের মধ্যে মাত্র 19টি মূর্তিই বৈধ (valid) রূপে গণ্য। এই 19 টি শুদ্ধ বা বৈধ মূর্তি চারটি সংস্থানের মধ্যে অবস্থিত। মাত্র 19 টি মূর্তি শুদ্ধ বা বৈধরূপে গণ্য হওয়ায়, 256-19 = 237 টি মূর্তিই অবৈধ (invalid) রূপে গণ্য। এগুলি অবৈধ একারণেই যে, এগুলি ন্যায়ের নিয়মগুলির কোনোটি-না-কোনোটিকে ভঙ্গ করে। এখন কোন্ সংস্থানে কটি শুদ্ধ মূর্তি আছে-তা সংস্থান অনুযায়ী উল্লেখ করা হল
প্রথম সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তি: প্রথম সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তি হল মোট চারটি।
প্রথম সংস্থানে অবস্থান করে, এই চারটি মূর্তি যথাযথভাবে ন্যায়ের নিয়মগুলিকে অনুসরণ করেছে বলে এগুলিকে শুদ্ধ মূর্তির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। প্রথম সংস্থানের এই চারটি শুদ্ধ মূর্তির নাম হল:
1. BARBARA – [AAA-1]
2. CELARENT – [EAE – 1]
3. DARII-[AII – 1]
4. FERIO – [ΕΙΟ – 1]
দ্বিতীয় সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তি: প্রথম সংস্থানের ন্যায় দ্বিতীয় সংস্থানেও শুদ্ধ মুর্তি হল মোট চারটি। এই চারটি মূর্তি দ্বিতীয় সংস্থানে অবস্থান করে ন্যায় অনুমানের নিয়মগুলিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করেছে বলে এগুলিকে শুদ্ধ মূর্তির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় সংস্থানের এই চারটি শব্দ। মূর্তি হল:
1. CESARE – [EAE – 2]
2. CAMESTRES – [AEE – 2]
3. FESTINO – [ΕΙΟ – 2]
4. BAROCO-[AOO-2]
তৃতীয় সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তি: তৃতীয় সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তির সংখ্যা হল মোট ছয়টি। এই ছয়টি মূর্তি তৃতীয় সংস্থানে অবস্থান করে ন্যায় অনুমানের নিয়মগুলিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করেছে বলে, এগুলিকে শুদ্ধ মূর্তির মর্যাদা। দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় সংস্থানেই শুদ্ধ মূর্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এই শুদ্ধ মূর্তিগুলি হল যথাক্রমে:
1. DARAPTI – [AAI-3]
2. DISAMIS – [IAI -3]
3. DATISI- [AII-3]
4. FELAPTON – [EAO-3]
5. BOCARDO – [OAO-3]
6. FERISON – [ΕΙΟ – 3]
চতুর্থ সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তি: চতুর্থ সংস্থানের শুদ্ধ মূর্তির সংখ্যা হল পাঁচটি। এই পাঁচটি মূর্তি ন্যায়ের চতুর্থ সংস্থানে অবস্থান করে ন্যায় অনুমানের নিয়মগুলিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে সমর্থ হয়েছে বলে, এগুলি শুদ্ধ মূর্তির মর্যাদা লাভ করেছে। এই পাঁচটি শুদ্ধ মূর্তি হল:
1. BRAMANTIP – [AAI – 4]
2. CAMENES – [AEE – 4]
3. DIMARIS – [IAI – 4]
4. FESAPO- [EAO – 4]
5. FRESISON [ΕΙΟ – 4]