WBCHSE Class 12 Political Science Chapter 6 Solution | Bengali Medium

Class 12 Chapter 6 Solution

সব়কাব়েব় বিভিন্ন বিভাগ

1. Very Short Question Answer

1. সরকার ছাড়া কি রাষ্ট্রের কথা ভাবা যায়?

▶ সরকার ছাড়া রাষ্ট্রের কথা ভাবা যায় না। কারণ সরকার হল রাষ্ট্রের পরিচালকমন্ডলী।

2. সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় কত ধরনের শাসক থাকেন?

▶ সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় দুই ধরনের শাসক থাকেন। যথা- ① প্রকৃত শাসক এবং ② নামসর্বস্ব শাসক।

3. অ্যারিস্টট্ল সরকারের কাজকে ক-টি ভাগে বিভক্ত করেছেন?

▶ অ্যারিস্টট্ল সরকারের কাজকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- ① সিদ্ধান্তমূলক কাজ, ② শাসন সংক্রান্ত কাজ এবং বিচার সংক্রান্ত কাজ।

4. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূলকথা কী?

▶ রাষ্ট্র পরিচালনার তিন প্রধান স্তম্ভ আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য হল ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূলকথা।

5. আংশিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলতে কী বোঝায়?

▶ আংশিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলতে বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা এবং কর্মপদ্ধতির স্বতন্ত্রীকরণকে বোঝায়।

6. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির একটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির একটি বৈশিষ্ট্য হল যে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য স্বীকৃত হয়।

7. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কয়েকজন প্রবক্তার নাম লেখো।

▶ অ্যারিস্টটল, পলিবিয়াস, সিসেরো, বোদাঁ, জন লক, মঁতেস্কু, ব্ল‍্যাকস্টোন প্রমুখ হলেন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির অন্যতম প্রবক্তা।

৪. বর্তমানে কোন্ কোন্ দেশের সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বীকৃত হয়েছে?

▶ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল ইত্যাদি দেশের সংবিধানে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বীকৃত হয়েছে।

9. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির একটি সমালোচনা লেখো।

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বাস্তব প্রয়োগ যেমন দুরূহ, তেমনি এর বাস্তব প্রয়োগও কাম্য নয়।

10. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চারজন সমালোচকের নাম করো।

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চারজন সমালোচক হলেন স্যাবাইন, গিলক্রিস্ট, ল্যাস্কি ও লিপ্সন।

11. সরকারের ক-টি ভাগ ও কী কী?

▶ সরকারের তিনটি বিভাগ, যথা-

① আইন বিভাগ,

② শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ।

12. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে একটি যুক্তি দাও।

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পক্ষে একটি যুক্তি হল, এটি স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।

13. গণতান্ত্রিক সরকার কোন্ কোন্ বিভাগের সাহায্যে কার্যাবলি সম্পাদন করে?

▶ গণতান্ত্রিক সরকার শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সাহায্যে কার্যাবলি সম্পাদন করে।

14. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কাকে বলে?

▶ সরকারের তিনটি বিভাগ যখন সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে, তখন তাকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলে।

15. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির কত প্রকার অর্থ করা যায়?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিন প্রকার অর্থ করা যায়।

16. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রথম অর্থ কী?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রথম অর্থ হল সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজ করবে না।

17. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির দ্বিতীয় অর্থ কী?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির দ্বিতীয় অর্থ হল সরকারের এক বিভাগ অন্য বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করবে না।

18. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তৃতীয় অর্থ কী?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তৃতীয় অর্থ হল একই ব্যক্তি সরকারের একাধিক বিভাগের সাথে কোনোভাবেই যুক্ত থাকবে না।

19. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চরম বিকাশ কার হাতে ঘটে?

▶ ফরাসি দার্শনিক মতেস্কু এবং ইংরেজ দার্শনিক ব্ল্যাকস্টোনের হাতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির চরম বিকাশ ঘটে।

20. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি তাত্ত্বিক আলোচনা থেকে প্রয়োগের স্তরে উন্নীত হয় কোন্ সময়ে?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি তাত্ত্বিক আলোচনা থেকে প্রয়োগের স্তরে উন্নীত হয় আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ফরাসি বিপ্লবের সময়ে।

21. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পীঠস্থান হিসেবে কোন্ রাষ্ট্রকে মনে করা হয়?

▶ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পীঠস্থান মনে করা হয়।

22. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর ভিত্তি করে কীরূপ শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির ওপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

23. কোন্ ধরনের শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়?

▶ সংসদীয় বা মন্ত্রীসভা-চালিত শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়।

29. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি কি ভারতে গৃহীত রয়েছে?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি ভারতে গৃহীত হয়নি।

30. দুটি বহু-পরিচালকবিশিষ্ট শাসনবিভাগের উদাহরণ দাও।

► দুটি বহু-পরিচালকবিশিষ্ট শাসনবিভাগের উদাহরণ হল এথেন্স, স্পার্টা।

31. মতেস্কু কোন্ গ্রন্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির আলোচনা করেছেন?

► মতেস্ক The Spirit of the Laws গ্রন্থে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির আলোচনা করেছেন।

32. “চিরন্তন সতর্কতাই স্বাধীনতার মূল্য এবং সাহসিকতাই স্বাধীনতার মূলমন্ত্র”-কার উক্তি?

▶ “চিরন্তন সতর্কতাই স্বাধীনতার মূল্য এবং সাহসিকতাই স্বাধীনতার মূলমন্ত্র”-এটি পেরিক্লিসের উক্তি।

33. উইলোবির মতে সরকারের বিভাগ ক-টি?

▶ উইলোবির মতে সরকারের বিভাগ পাঁচটি।

34. পূর্ণ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ সম্ভব কি?

▶ না, পূর্ণ ক্ষমতা স্বাতন্ত্রীকরণ নীতি সম্ভব নয়।

35. কোন্ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির সমর্থন করেন?

▶ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বোঁদা প্রথম ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির সমর্থন করেন।

36. সরকারের তিনটি বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের নীতিকে কী বলে?

▶ সরকারের তিনটি বিভাগকে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদানের নীতিকে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বলে।

37. মার্কিন সংবিধান রচনাকালে কারা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সমর্থন জানান?

▶ মার্কিন সংবিধান রচনাকালে হ্যামিলটন, ম্যাডিসন ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে সমর্থন জানান।

38. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্য কোন্ দেশগুলিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়?

▶ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশগুলিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ দেখা যায়।

40. The Spirit of the Laws গ্রন্থটির রচয়িতার নাম উল্লেখ করো।

► The Spirit of the Laws গ্রন্থটির রচয়িতার নাম হল মতেস্কু।

 18. শাসন বিভাগের যে-কোনো একটি কাজ উল্লেখ করো।
▶ শাসন বিভাগের একটি কাজ হল নীতি নির্ধারণ করা।

 30. একজন প্রকৃত শাসকের উদাহরণ দাও।

▶ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হলেন একজন প্রকৃত শাসক।

 33. নির্বাচিত শাসকের উদাহরণ দাও।
▶ নির্বাচিত শাসকের উদাহরণ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি।

 63. একদলীয় রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র কাদের নিয়ন্ত্রণাধীন?

► একদলীয় রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র দলীয় কর্মীদের নিয়ন্ত্রণাধীন।

64. সামরিক-শাসিত আমলাতন্ত্র কোথায় দেখা যায়?

▶ চিলি ও ইন্দোনেশিয়াতে সামরিক-শাসিত আমলাতন্ত্র দেখা যায়।

 22. ভারতের আইনসভা ক-টি কক্ষ নিয়ে গঠিত?

 ▶ ভারতের আইনসভা দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত।

23. নিম্নকক্ষের সদস্যগণ কীভাবে নির্বাচিত হন?

▶ নিম্নকক্ষের সদস্যগণ সাধারণত জনসাধারণের দ্বারা নির্বাচিত হন।

24. সাধারণত উচ্চকক্ষের সদস্যগণ কীভাবে নির্বাচিত হন?

▶ সাধারণত উচ্চকক্ষের সদস্যগণ পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হন।

25. ব্রিটেনের আইনসভার নিম্নকক্ষের নাম কী?

▶ ব্রিটেনের আইনসভার নিম্নকক্ষের নাম কমন্সসভা।

26. সিনেটের সদস্যগণ কীভাবে নির্বাচিত হন?

▶ সিনেটের সদস্যগণ জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত হন।

27. এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার একজন সমর্থকের নাম লেখো।

▶ এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার একজন সমর্থকের নাম হল আবে সিঁয়ে।

28. ল্যাস্কি কীরূপ আইনসভার সমর্থক ছিলেন?

▶ ল্যাস্কি এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক ছিলেন।

29. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার একজন সমর্থকের নাম লেখো।

▶ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার একজন সমর্থকের নাম হল লর্ড ব্রাইস।

30. জন স্টুয়ার্ট মিল কীরূপ আইনসভার সমর্থক ছিলেন?

▶ জন স্টুয়ার্ট মিল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক ছিলেন।

31. ফ্রাংকলিন কীরূপ আইনসভার সমর্থক ছিলেন?

▶ ফ্রাংকলিন এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক ছিলেন।

32. গেটেল কীরূপ আইনসভার সমর্থক ছিলেন?

▶ গেটেল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক ছিলেন।

33. হেনরি মেইন কীরূপ আইনসভার সমর্থক ছিলেন?

▶ হেনরি মেইন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক ছিলেন।

34. লর্ড অ্যাক্টন কীরূপ আইনসভার সমর্থক ছিলেন?

▶ লর্ড অ্যাক্টন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক ছিলেন।

35. দ্যুগুই কীরূপ আইনসভার সমর্থক ছিলেন?

► দ্যুগুই দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সমর্থক ছিলেন।

36. সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে কার ক্ষমতা বেশি?

▶ সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় সরকারের তিনটি বিভাগের মধ্যে আইন বিভাগের ক্ষমতা বেশি।

43. আইন বিভাগের প্রধান কাজ কী?

▶ আইন বিভাগের প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন।

44. সুইটজারল্যান্ডে সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা কে?

▶ সুইটজারল্যান্ডে সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা যুক্তরাষ্ট্রীয় পার্লামেন্ট।

45. ভারতে ১৯৬৫-৭৭ সালে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিপীড়ন বিষয়ে তদন্তের জন্য কোন্ কমিশন গঠিত হয়?

▶ ভারতে ১৯৬৫-৭৭ সালে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিপীড়ন বিষয়ে তদন্তের জন্য শাহ্ কমিশন গঠিত হয়।

46. আইন বিভাগের দুটি কাজ কী কী?

▶ আইন বিভাগের দুটি কাজ হল আইন তৈরি বা প্রণয়ন করা ও সংবিধান সংশোধন করা।

50. এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা আছে এমন দুটি রাষ্ট্রের নাম করো।

▶ এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা আছে এমন দুটি রাষ্ট্রের নাম চিন ও গ্রিস।

51. এমন একটি দেশের নাম করো যার আইনসভার উচ্চকক্ষ আইন প্রণয়ন ছাড়াও বিচারের কাজ করে।

▶ ব্রিটেন হল এমন একটি দেশ যার আইনসভার উচ্চকক্ষ আইন প্রণয়ন ছাড়াও বিচারের কাজ করে।

52. ব্রিটিশ আইনসভার নাম কী?

▶ ব্রিটিশ আইনসভার নাম পার্লামেন্ট।

53. “আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে তা একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে”-কে বলেছেন?

▶ “আইনসভা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট হলে তা একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে”-এ কথা বলেছেন গেটেল।

54. সংবিধানের ব্যাখ্যা ও সংশোধন করতে পারে সরকারের কোন্ বিভাগ?

▶ সংবিধানের ব্যাখ্যা ও সংশোধন করতে পারে আইন বিভাগ।

55. চিন ছাড়া আরও পাঁচটি দেশের নাম উল্লেখ করো যেখানে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা আছে।

▶ চিন ছাড়া আরও পাঁচটি দেশ হল বাংলাদেশ, আলবেনিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বুলগেরিয়া এবং কিউবা যেখানে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা আছে।

56. কোন্ দেশের আইন বিভাগকে ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় পার্লামেন্ট’ বলা হয়?

▶ সুইটজারল্যান্ডের আইন বিভাগকে ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় পার্লামেন্ট’ বলা হয়।

57. এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভার বিপক্ষে একটি যুক্তি দাও।

▶ এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিপক্ষে একটি যুক্তি হল এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে অনুকূল নয়।

59. ছাঁটাই প্রস্তাব কয় প্রকার?

▶ ছাঁটাই প্রস্তাব সাধারণত ৩ প্রকার।

2. Short Question Answer

1. এককক্ষবিশিষ্ট আইনবিভাগের সপক্ষে একটি যুক্তি দাও।

▶ এককক্ষবিশিষ্ট আইনবিভাগের সপক্ষে একটি যুক্তি হল এককক্ষবিশিষ্ট আইন বিভাগ দ্রুত আইন প্রণয়নের পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক, জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত আইন প্রণয়ন একমাত্র এককক্ষ বিশিষ্ট আইন সভাতেই সম্ভব।

2. জিরো আওয়ার কাকে বলে?

▶ পার্লামেন্টের দুটি কক্ষে প্রশ্নোত্তর পর্বের অব্যবহিত পরের সময়টিকে জিরো আওয়ার বলা হয়। সাধারণত দুপুর ১২টার পর থেকে জিরো আওয়ার শুরু হয়।

3 “নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে সঠিক সংবাদ ও তথ্য তুলে ধরাই আইনসভার প্রধান কাজ”-এ কথা কে বলেছেন?

▶ “নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে সঠিক সংবাদ ও তথ্য তুলে ধরাই আইনসভার প্রধান কাজ”-এ কথা বলেছেন বার্নাড ক্লিক।

4. “উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষের সঙ্গে একমত হলে তা বাহুল্যমাত্র আর উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষের সঙ্গে যদি একমত না হয় তবে তা ক্ষতিকর”-কে বলেছেন?

▶ “উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষের সঙ্গে একমত হলে তা বাহুল্যমাত্র আর উচ্চকক্ষ নিম্নকক্ষের সঙ্গে যদি একমত না হয় তবে তা ক্ষতিকর”- এ কথা বলেছেন আবে সিঁয়ে।

5. “আইনবিভাগ ছাড়া সরকারের কল্পনা করা সম্ভব হলেও বিচারবিভাগ ছাড়া সভ্য রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না”- উক্তিটি কার?

▶ “আইনবিভাগ ছাড়া সরকারের কল্পনা করা সম্ভব হলেও বিচারবিভাগ ছাড়া সভ্য রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না”- উক্তিটি অধ্যাপক গার্নারের।

6. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা থাকলে কীভাবে জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা যায়?

► দুটি কক্ষের নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয় বলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় পরিবর্তনশীল জনমতের সুষ্ঠু প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা যায়।

7. দ্যুগুই কীরূপ আইনসভাকে শ্রেষ্ঠ বলে অভিহিত করেছেন?

► দ্যুগুইয়ের মতে সেই আইনসভা শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হবে যার এককক্ষ সমগ্র জনগণের এবং অন্য কক্ষ বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে।

8. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা কীভাবে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটায়?

▶ আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে আলাপ-আলোচনা, তর্কবিতর্ক ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয় এবং তা দূরদর্শন, সংবাদপত্র ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচারিত হয়। ফলে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে।

9. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভাকে কেন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অপরিহার্য বলে মনে করা হয়?

▶ আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে নিম্নকক্ষ জাতীয় স্বার্থ এবং উচ্চকক্ষ আঞ্চলিক স্বার্থরক্ষা করতে পারে বলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে অপরিহার্য।

10. আইনসভায় দ্বিতীয় কক্ষের অপ্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আবে সিঁয়ে কী মন্তব্য করেছেন?

▶ আবে সিঁয়ের মতে, ‘দ্বিতীয় কক্ষ যদি প্রথম কক্ষের সঙ্গে একমত হয়, তবে তা অনাবশ্যকচ আর যদি ভিন্নমত পোষণ করে, তবে তা ক্ষতিকর

11. আইনসভার দ্বিতীয় কক্ষকে কেন অপচয়মূলক বলা হয়?

▶ দ্বিতীয় কক্ষের সদস্যদের বেতন, ভাতা ইত্যাদির জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় বলে এরূপ কক্ষকে অপচয়মূলক বলা হয়।

12. উত্তরাধিকারসূত্রে মনোনীত শাসক কাকে বলে?
▶ যখন কোনো দেশের শাসকপ্রধান নির্বাচনের পরিবর্তে উত্তরাধিকারসূত্রে মনোনীত হন, তাঁকে উত্তরাধিকারসূত্রে মনোনীত শাসক বলে।

13. নির্বাচিত শাসক কাদের বলা হয়?

▶ যেসকল শাসকপ্রধান প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতাসীন হয়, তাঁদের নির্বাচিত শাসক বলা হয়।

14. ব্যাপক অর্থে শাসন বিভাগ বলতে কী বোঝায়?
▶ ব্যাপক অর্থে শাসন বিভাগ বলতে রাষ্ট্রের প্রধান পরিচলক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যে নিযুক্ত সাধারণ কর্মচারী পর্যন্ত সকলকেই বোঝায়।
15. শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ কীভাবে দায়িত্ব লাভ করে?
▶ শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্ব লাভ করে এবং সম্পাদিত কার্যাবলির জন্য জনসাধারণের কাছে দায়িত্বশীল থাকে।

16. শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক অংশ কাদের বলে?
▶ শাসন বিভাগের প্রশাসনিক কাজে স্থায়ীভাবে নিযুক্ত কর্মচারীদের অর্থাৎ আমলাদের অ-রাজনৈতিক অংশ বলে।

17. সংকীর্ণ অর্থে শাসন বিভাগ বলতে কী বোঝায়?

▶ সংকীর্ণ অর্থে রাষ্ট্রের প্রধান শাসক এবং প্রশাসনিক বিষয়ে নীতি নির্ধারণকারী মুখ্যসচিবদের নিয়ে শাসন বিভাগ গঠিত হয়।

18. একক-পরিচালকের একটি দৃষ্টান্ত দাও।

▶ মার্কিন রাষ্ট্রপতি হলেন একক-পরিচালকের দৃষ্টান্ত।

19. বহু-পরিচালক শাসক বলতে কী বোঝায়?
▶ একজনের পরিবর্তে শাসনবিভাগীয় ক্ষমতা যদি সমক্ষমতাসম্পন্ন বহুজন ব্যক্তির হাতে অর্পিত থাকে, সেরূপ শাসনব্যবস্থাকে বহুপরিচালক বা যৌথ শাসক বলা হয়।

20. যৌথ পরিচালক কর্তৃক পরিচালিত শাসনব্যবস্থার একটি দৃষ্টান্ত দাও।

▶যৌথ পরিচালক কর্তৃক পরিচালিত শাসনব্যবস্থার একটি দৃষ্টান্ত হল সুইটজারল্যান্ডের শাসনব্যবস্থা।

21. সুইটজারল্যান্ডে কতজনকে নিয়ে শাসন বিভাগ গঠিত হয়?

▶ সুইটজারল্যান্ডের শাসন বিভাগ সাতজনকে নিয়ে গঠিত হয়।

22. ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে গ্রিভস কী বলেছেন?
▶ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে গ্রিভস বলেছেন ব্রিটেনে সরকার দেশের প্রভ এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারের প্রভু।29. নামসর্বস্ব শাসক কাকে বলে?

 23. শাসন বিভাগ কাদের নিয়ে গঠিত হয়?
▶ ব্যাপক অর্থে শাসন বিভাগ রাষ্ট্রপ্রধানসহ প্রশাসনের সাধারণ পদাধিকারীদের সকল কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত।

24. গঠন ও কার্যাবলির ভিত্তিতে শাসন বিভাগকে ক-টি অংশে ভাগ করা যায়?
▶ গঠন ও কার্যাবলির ভিত্তিতে শাসন বিভাগকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়। যথা- ①রাজনৈতিক অংশ এবং ② অ-রাজনৈতিক অংশ।

25. রাষ্ট্রকৃত্যক বা আমলা কারা?

▶ আমলা বা রাষ্ট্রকৃত্যক বলতে শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক অংশ হিসেবে প্রশাসনের কাজে নিযুক্ত স্থায়ী কর্মচারীদের বোঝায়।

26. একক-পরিচালকনির্ভর শাসন বিভাগ কাকে বলে?

▶ শাসনব্যবস্থার সমস্ত কাজকর্ম যখন শুধুমাত্র একজনের নেতৃত্বে বা নির্দেশে পরিচালিত হয় তখন তাকে একক-পরিচালকনির্ভর শাসন বিভাগ বলে।


27. বহু-পরিচালকনির্ভর বা যৌথ শাসকনির্ভর শাসন বিভাগ কাকে বলে?
▶ যখন শাসন বিভাগের প্রকৃত ক্ষমতা সমক্ষমতাসম্পন্ন বহুজন ব্যক্তির হাতে ন্যস্ত থাকে, তখন তাকে বহু-পরিচালকনির্ভর বা যৌথ শাসকনির্ভর শাসন বিভাগ বলা হয়।

28. ভারতের শাসন বিভাগ একক না বহু-পরিচালকবিশিষ্ট শাসকযুক্ত?

▶ ভারতের শাসন বিভাগের ক্ষেত্রে একক-পরিচালক এবং বহু- পরিচালকযুক্ত শাসনব্যবস্থা, উভয়েরই সংমিশ্রণ ঘটেছে বলে মনে করা হয়।

29. শাসন বিভাগের দুটি কাজ উল্লেখ করো।
▶ শাসন বিভাগের দুটি কাজ হল-① দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার ব্যবস্থা করা এবং ② নীতি নির্ধারণ ও রূপায়ণ করা।

30. শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ কারা?
▶ শাসন বিভাগের যেসব ব্যক্তি জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হন এবং কাজের জন্য জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকেন তাঁরাই হলেন শাসন বিভাগের রাজনৈতিক অংশ।

31. প্রকৃত শাসক বলতে কী বোঝ?
▶ তত্ত্বগতভাবে যিনি দেশের সর্বোচ্চ শাসনক্ষমতার অধিকারী নন, কিন্তু বাস্তবে প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী এবং শাসন বিভাগের কর্ণধার, তাঁকে প্রকৃত শাসক বলা হয়। যেমন-ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী।


32 শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক অংশ বলতে কী বোঝ?
▶ শাসন বিভাগের যেসব ব্যক্তি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে শাসন বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হন তাঁদের শাসন বিভাগের অ-রাজনৈতিক অংশ বলা হয়।

33 গেটেল, উইলোবি প্রমুখ সরকারের কী কী বিভাগের কথা উল্লেখ করেছেন?
▶ গেটেল, উইলোবি প্রমুখ সরকারের ① সিদ্ধান্তমূলক, ② আইনমূলক, ③ প্রশাসনিক, ④ বিচার-সংক্রান্ত ও ⑤ শাসনমূলক বিভাগের কথা উল্লেখ করেছেন।

34. গুডনাউ, জেঙ্কস প্রমুখের মতে সরকারের বিভাগ ক-টি ও কী কী?

▶ গুডনাউ, জেঙ্কস প্রমুখ সরকারের দুটি বিভাগের কথা বলেছেন, যথা-① আইন বিভাগ ও② শাসন বিভাগ।

35. মার্লি ফেনসড কীভাবে আমলাতন্ত্রের শ্রেণিবিভাগ করেছেন?
▶মার্লি ফেনসড আমলাতন্ত্রকে পাঁচভাগে ভাগ করেছেন-

① প্রতিনিধিত্বমূলক আমলাতন্ত্র, ② একদলীয় রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্র, ③ সামরিক-শাসিত আমলাতন্ত্র, ④ শাসক-শাসিত আমলাতন্ত্র এবং

⑤ আমলা-শাসিত আমলাতন্ত্র।

36. আমলাতন্ত্রের একটি ত্রুটি উল্লেখ করো।

▶ আধুনিক উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিতে আমলাতন্ত্রের মারাত্মক ত্রুটি লক্ষ করা যায়। সেগুলির মধ্যে একটি হল দীর্ঘসূত্রতা বা ‘লাল ফিতে’র বাঁধন।

37. বর্তমানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন বিভাগের বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতার একটি উদাহরণ দাও।
▶ বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের নিযুক্ত করে শাসন বিভাগ। যেমন, ভারতের শাসন বিভাগ সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নিযুক্ত করে।

38. আমলাদের একটি কাজ উল্লেখ করো।
▶ আমলাদের একটি কাজ হল দেশের শাসনব্যবস্থায় নিরবচ্ছিন্নতা বজায় রাখা।

39. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির শর্ত তিনটি কী কী?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির তিনটি শর্ত হল-

① সরকারের তিনটি বিভাগ (শাসন, আইন ও বিচার) নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে সম্পূর্ণ

② এক বিভাগ অন্য বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করবে না।

③ একই ব্যক্তি একাধিক বিভাগের সঙ্গে যুক্ত থাকবে না।

40. কারা মনে করেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে বাস্তবে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘর্ষ দেখা দেবে?

▶ জন স্টুয়ার্ট মিল, ব্লন্টসলি, ফাইনার ল্যাস্কি প্রমুখ মনে করেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটি কার্যকর হলে বাস্তবে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতার পরিবর্তে সংঘর্ষ দেখা দেবে।

41. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটিকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে স্বীকার করতে কারা সম্মত নয়?

▶ স্যাবাইন, গিলক্রিস্ট প্রমুখ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটিকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে স্বীকার করতে সম্মত নয়।

42. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে জৈব মতবাদের সমর্থকরা কী বলেন।

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে জৈব মতবাদের সমর্থকরা বলেন জীবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি যেমন পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে কাজ করতে পারে না, তেমনই সরকারের বিভাগগুলি কখনোই স্বতন্ত্রভাবে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করতে পারে না।

43. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে সমাজতন্ত্রবাদীরা কী বলেন?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি সম্পর্কে সমাজতন্ত্রবাদীরা বলেন যে সরকার প্রভুত্বকারী শ্রেণির স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করে, সেই সরকারের বিভিন্ন বিভাগও একই কাজ করবে। সুতরাং ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ অর্থহীন।

45. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমালোচকগণ ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের পরিবর্তে কীসের ওপর গুরুত্বারোপ করেন?

▶ ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির সমালোচকগণ ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষার জন্য ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের পরিবর্তে স্বাধীনতার অনুকূল পরিবেশ এবং স্বাধীনতাকামী সদাসতর্ক জনগণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

46 শাসন বিভাগের পক্ষে কোন্ দফতর কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে?
▶ শাসন বিভাগের পক্ষে স্বরাষ্ট্র দফতর কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

47 সরকারের কোন্ দফতর পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ বা কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করে?
▶ পররাষ্ট্র দফতর পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ বা কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করে।

48. মন্ত্রীসভা চালিত শাসনব্যবস্থায় কে আইনসভার অধিবেশন আহ্বান, স্থগিত ইত্যাদি করেন?
▶ মন্ত্রীসভা চালিত শাসনব্যবস্থায় শাসন বিভাগীয় প্রধান আইনসভার অধিবেশন আহ্বান, স্থগিত ইত্যাদি করেন।

49 ‘অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন’ কাকে বলে?

▶ আইনসভার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয়গুলি নির্ধারণের ভার আইনসভা শাসন বিভাগের হাতে অর্পণ করে। শাসন বিভাগ-প্রণীত এইরূপ আইনকে ‘অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন’ বলে।

50. প্রশাসনিক ন্যায়বিচার কাকে বলে?

▶ শাসন বিভাগীয় কোনো কর্মচারীর অন্যায় আচরণের বিচার, শাস্তিদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে শাসন বিভাগের দায়িত্ব পালনকে প্রশাসনিক ন্যায়বিচার বলে।

51. শব্দগত অর্থে ব্যুরোক্রেসি বলতে কী বোঝায়?

▶ শব্দগত অর্থে ব্যুরোক্রেসি বলতে বোঝায় টেবিল-শাসনব্যবস্থা।

3. Long Question Answer

1. এককক্ষবিশিষ্ট ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলতে কী বোঝায়? দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগুলি আলোচনা করো।

উত্তর এককক্ষবিশিষ্ট ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভাঃ

আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারের শক্তিশালী অঙ্গ হিসেবে শাসন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলেও আইনসভার একটি স্বতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। আইনসভা আজও একটি দেশের সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গার্নারের মতে, “Of the several organs through which the will of the State is expressed and carried out, the legislature unquestionably occupies the Paramount place”….. 1

গঠনকাঠামো ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সাধারণত দুটি ভাগে আইনসভাগুলিকে ভাগ করা হয়েছে। এগুলি হল- এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, ② দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা। যে আইনসভা একটিমাত্র কক্ষ নিয়ে গঠিত হয় তাকে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা (Unicameral Legislature) বলা হয়, যেমন গণসাধারণতন্ত্রী চিনের আইনসভা জাতীয় গণ কংগ্রেস। অন্যদিকে, যে সকল আইনসভা দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত তাকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা (Bicameral Legislature) বলা হয়। যেখানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা রয়েছে সেখানে আইনসভার নিম্নকক্ষ (Lower House) জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। এজন্য নিম্নকক্ষকে জনপ্রিয় কক্ষও (Popular Chamber) বলা হয়। উচ্চকক্ষের গঠনকাঠামো কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকেন না। উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিত্বের নীতি সব দেশে সমান নয়। যেমন, ব্রিটেনের উচ্চকক্ষ লর্ডসভা সমাজের অভিজাত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত হয়, ভারতের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা জনগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চকক্ষ সিনেটের প্রতিনিধিরা সরাসরি জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চকক্ষ সিনেটে সমপ্রতিনিধিত্ব নীতি অনুসারে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের ২ জন করে প্রতিনিধি প্রেরণের ক্ষমতা রয়েছে। ভারতে অবশ্য রাজ্যগুলির সমপ্রতিনিধিত্বের নীতি উচ্চকক্ষে স্বীকৃত হয়নি। ক্ষমতা ও পদমর্যাদাগত প্রশ্নে বিভিন্ন দেশের উচ্চকক্ষের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন ব্রিটেনের আইনসভা পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ লর্ডসভার ক্ষমতা নিম্নকক্ষ কমন্সসভার চেয়ে অনেক কম। পদমর্যাদাগত প্রশ্নেও কমন্সসভা বেশি ক্ষমতাশালী। ভারতের আইনসভার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার ক্ষমতা অনুরূপ না বলা গেলেও নিম্নকক্ষ লোকসভার চেয়ে অনেক কম এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার উচ্চকক্ষ সিনেটের ক্ষমতা সে দেশের নিম্নকক্ষ জনপ্রতিনিধি সভার তুলনায় অনেক বেশি।

2. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসডার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি

উত্তরঃ

এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাঃ

যে আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকে, সাধারণভাবে তাকেই এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা বলা হয়। এই ধরনের আইনসভায় আইন প্রণয়নের যাবতীয় কাজ একটিমাত্র কক্ষের দ্বারা হয়। আধুনিক যুগের গোড়ার দিকে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা জনপ্রিয় ছিল। ফ্রান্সে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবের পর এককক্ষবিশিষ্ট জাতীয় আইনসভার (National Assembly for France) সপক্ষে অভিমত প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘকাল যাবৎ প্রায় ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই আইনসভা বলবৎ ছিল। সেই সময় ইংল্যান্ডে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার অনুকূলে জোরালো সওয়াল করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেরিমি বেশ্বাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন ছিলেন এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার কট্টর সমর্থক। তিনি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভাকে ঘোড়ার গাড়ির সঙ্গে যুক্ত দুটি বিপরীতমুখী ঘোড়ার সঙ্গে তুলনা করেন (“Compared a bicameral legislature to a cart with a horse hitched to each end both pulling in opposite directions.”)

বর্তমান যুগে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার জনপ্রিয়তা হারিয়ে যেতে বসেছে। এককথায় বলা যায়, এই ধরনের আইনসভার চল আর নেই। নিকারাগুয়া, পানামা এবং বাংলাদেশের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার অস্তিত্ব রয়েছে। এ ছাড়া গণসাধারণতন্ত্রী চিনের মতো বৃহৎ রাষ্ট্রেও এই আইনসভা টিকে আছে। চিনের এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাটির নাম হল জাতীয় গণ কংগ্রেস।

এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিঃ

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্যোম, আবে সিঁয়ে, ল্যাস্কি, ফ্রাংকলিন প্রমুখরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার বিরোধিতা করে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার সপক্ষে যুক্তির অবতারণা করেন। অন্যদিকে, লর্ড ব্রাইস, স্টুয়ার্ট মিল, লেকি, হেনরি মেইন, লর্ড অ্যাক্টন, গেটেল প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এর কঠোর সমালোচনা করেন। এই প্রসঙ্গে, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তিগুলি পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা যেতে পারে।

সপক্ষে যুক্তিঃ

[1] একতার প্রতীক: এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাকে একতার প্রতীক বলে মনে করা হয়। আইনসভায় আইন প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ-সেখানে সুচিন্তিত ও ঐক্যবদ্ধ মতামতের যথাযথ প্রতিফলন হওয়া বাঞ্ছনীয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেতা বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিনের বক্তব্য অনুসারে আইনসভার একাধিক কক্ষের অর্থ হল একাধিক ‘সার্বভৌমত্বের’ অস্তিত্ব (Two or three houses would be like two or three ‘sovereignties’)।

[2] জনমতের যথার্থ প্রতিফলন: অনেকে মনে করেন, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় জনমতের যথার্থ প্রতিফলন ঘটে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবে সিঁয়ের বক্তব্য অনুসারে, জনগণের সম্মতি হল আইন, জনগণ কখনও একই বিষয়ের ওপর একই সময়ে দু-রকমের মতামত দিতে পারে না। কাজেই জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী আইনসভার কক্ষও দু-রকমের হতে পারে না (The law is the will of the people; the people cannot, at the same time, have two different wills on the same subject, therefore, the legisla- tive body which represents the people ought to be essentially one.)।

[3] সুষ্ঠু ও সহজ পদ্ধতিতে আইন প্রণয়ন: এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় সুষ্ঠু ও সহজ পদ্ধতিতে আইন প্রণয়ন সম্ভব হয়। কোনোরকমের জটিলতা এখানে দেখা যায় না। বস্তুত আইনসভায় দুটি কক্ষে দুটি দলের প্রাধান্য থাকলে আইন প্রণয়নের বিষয় নিয়ে জটিল মতবিরোধের ফলে যে অচলাবস্থা দেখা যায় তার সম্ভাবনা এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় থাকে না।

[4] দায়বদ্ধতা: এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার প্রবক্তারা মনে করেন, আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে, সম্পাদিত কার্যাবলির বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উঠলে এককভাবে কোনো একটি কক্ষকে দায়ী করা যায় না। এরূপ ক্ষেত্রে দায় এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দুটি কক্ষের মধ্যে লক্ষ করা যায়। এর ফলে অহেতুক জটিলতার | সৃষ্টি হয়। এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় এই ধরনের কোনো সম্ভাবনা থাকে না। যেহেতু আইনসভার একটিমাত্র কক্ষই আইন প্রণয়নের ব্যাপারে যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে, তাই এখানে দায়বদ্ধতার বিষয়টিকে নিশ্চিত করা যায়।

[5] দ্রুত আইন প্রণয়নের সহায়ক: এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা দ্রুত আইন প্রণয়নের পক্ষে অত্যন্ত সহায়ক বলে অনেকে মনে করেন। জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত আইন প্রণয়ন একমাত্র এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাতেই সম্ভব। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় আইন প্রণয়নের ব্যাপারে বিশেষত অর্থবিলের ক্ষেত্রে যে অহেতুক বিলম্ব দেখা যায়, তার সম্ভাবনা এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় থাকে না।

[6] স্বল্প ব্যয়: আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে তা যেমন স্বভাবতই ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকায় তা হয় না। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় দুটি কক্ষের সদস্যদের বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুযোগসুবিধার জন্য যে পরিমাণ অর্থের অপচয় ঘটে তা এখানে দেখা যায় না।

7] অধিকতর গণতান্ত্রিক: আইনসভায় দুটি কক্ষের অস্তিত্ব যেখানে দেখা [ যায়, সেখানে উচ্চকক্ষের প্রতিনিধিরা সাধারণত (ব্যতিক্রম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট) জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন না। ব্রিটিশ আইনসভার উচ্চকক্ষ লর্ডসভায় মনোনীত লর্ড ছাড়াও উত্তরাধিকারসূত্রে লর্ড-এর সংখ্যাও কম নয়। ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষের অর্থাৎ রাজ্যসভার সাংসদরা জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হন না। আমাদের দেশের যে পাঁচটি রাজ্যে (বিহার, উত্তরপ্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, জম্মু ও কাশ্মীর) আইনসভার উচ্চকক্ষ বিধান পরিষদের অস্তিত্ব রয়েছে, তার সঙ্গেও জনগণের রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব দিক বিচারবিশ্লেষণ করে অনেকে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভাকে অধিকতর গণতান্ত্রিক বলে অভিহিত করেছেন।

বিপক্ষে যুক্তিঃ

[1] সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন অসম্ভব: আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকলে কখনোই সুচিন্তিত আইন প্রণয়ন সম্ভব নয় বলে মনে করা হয়। যথেষ্ট বিচারবিশ্লেষণের পর আইন প্রণয়ন এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় দেখা যায় না। এর ফলে তড়িঘড়ি সাময়িক আবেগ ও উত্তেজনার বশে অথবা জনমতের চাপে অবিবেচনাপ্রসূত আইন প্রণয়নের আশঙ্কা থেকে যায়।

[2] যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে প্রতিকূল: এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পক্ষে অনুকূল নয়। কারণ আইনসভায় একটিমাত্র কক্ষ থাকলে জাতীয় ও আঞ্চলিক স্বার্থের সামগ্রিক প্রতিনিধিত্ব সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।

[3] স্বৈরাচারী প্রবণতার আশঙ্কা: একটিমাত্র কক্ষ নিয়ে আইনসভা গঠিত হলে স্বৈরাচারী আশঙ্কা দেখা দিতে পারে, কারণ সেক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণকারী থাকে না। এই কারণে লর্ড ব্রাইস মনে করেন, আইনসভার অসংযত স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিপরায়ণ প্রবণতা প্রতিরোধের জন্য সমক্ষমতাসম্পন্ন দুটি কক্ষের অস্তিত্ব থাকা দরকার।

[4] জনমতের যথাযথ প্রতিফলনের অভাব: এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় সমস্ত সদস্যের নির্বাচন একই সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। নির্দিষ্ট কার্যকালের মেয়াদ অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত আইনসভার সদস্যরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকেন। কিন্তু ইতিমধ্যে জনমতের পরিবর্তন ঘটতে পারে। এই পরিবর্তনশীল জনমতের কোনো প্রতিফলন এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় ঘটার উপায় নেই।

[5] জ্ঞানীগুণী মানুষের প্রতিনিধিত্বের অনুপস্থিতি: দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় (বিশেষত ব্রিটেন ও ভারতে) যেরকম দেশের জ্ঞানীগুণী মানুষদের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় তা হয় না। বস্তুত এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় এই ধরনের যোগ্য মানুষদের জায়গা নেই।

[6] রাজনৈতিক শিক্ষা বিস্তারের সুযোগের অভাব: আইনসভায় দুটি কক্ষ থাকলে আইন প্রণয়নের সময় বিভিন্ন দল ও মতের প্রতিনিধিদের যে ধরনের তর্কবিতর্ক ও আলোচনার সুযোগ থাকে, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় তা – দেখা যায় না। ফলে আইনসভায় বিল নিয়ে তর্কবিতর্ক, বাদানুবাদ, আলোচনা প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলিতে (দূরদর্শন, সংবাদপত্র ইত্যাদিতে) প্রচারিত হতে পারে না। এর ফলে জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষা বিস্তারের সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়।

[7] সমাজের সংখ্যালঘু শ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষণের অভাব:
এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভার নির্বাচন প্রত্যক্ষভিত্তিক হওয়ার ফলে সমাজের সব সংখ্যালঘু শ্রেণির উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব সেখানে দেখা যায় না। এর ফলে সংখ্যালঘু শ্রেণির স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়।

• [৪] আইনসভার ব্যাপক কাজকর্ম সম্পাদনের পক্ষে অনুপযুক্ত :
আধুনিক যুগে আইনসভার কাজকর্মের পরিধি দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। আইনসভার এই ব্যাপক কাজকর্মের প্রেক্ষিতে এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা অনুপযুক্ত বলে অনেকে মনে করেন। তাঁদের মতে, আইনসভার ব্যাপক কাজকর্ম একটিমাত্র কক্ষের পক্ষে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব নয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা আজকের বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক যুগের পক্ষে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে এই ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়নি।

3. আধুনিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের ভূমিকা ও কার্যাবলি আলোচনা করো।

উত্তরঃ

বিচার বিভাগের ভূমিকা ও কার্যাবলি

রাজনৈতিক ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত প্রভাবশালী কাঠামো হল বিচার বিভাগ। প্রকৃতপক্ষে বিচার বিভাগ ব্যতীত রাষ্ট্র একটি কষ্টকল্পনামাত্র। গার্নারের মতে, বিচার বিভাগ ছাড়া কোনো সভ্য রাষ্ট্রের কল্পনা করা যায় না (“… a civilized State without judicial organs and machinery is hardly conceiv- able”)²। বিচার বিভাগের ভূমিকা ও কার্যাবলিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়-

[1] দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার নিষ্পত্তি: দেশের চলতি আইন অনুসারে দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার নিষ্পত্তি করা বিচার বিভাগের অন্যতম কাজ। বিচার বিভাগ তার রায় ঘোষণার মাধ্যমে অপরাধীর শাস্তি ঘোষণা করে। বিচারপতিরা কোনো মামলার নিষ্পত্তি করতে গিয়ে আইনসভা প্রণীত আইন ছাড়াও প্রচলিত প্রথা, রীতিনীতি, লোকাচার প্রভৃতির সাহায্য নিয়ে থাকেন।

[2] ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা: বিচার বিভাগের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। কোনো ধরনের পক্ষপাতিত্ব, লোভ, ভীরুতা ইত্যাদি ছাড়াই অপরাধীর যথাযথ শাস্তি ঘোষণার মাধ্যমে ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করা বিচার বিভাগের একটি প্রধান দায়িত্ব। ল্যাস্কির মতে, বিচারকার্য পরিচালনার মধ্যে দিয়ে একটি রাষ্ট্রের নৈতিক চরিত্র অনুধাবন করা যায়। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিককালে বিচার বিভাগ আইনি ন্যায়বিচার ছাড়াও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিচার বিভাগ বর্তমানে জনস্বার্থ বিষয়ক মামলা (Public Interest Litigation) হাতে নিয়ে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

[3] বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা: বিচার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল সরকারি আইন, আদেশ ও নির্দেশের বৈধতা বিচার করা। সব রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের হাতে এ ধরনের সাংবিধানিক ক্ষমতা থাকে না। গণতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় বিচার বিভাগের সাংবিধানিক ক্ষমতা যেভাবে পরিলক্ষিত হয় তেমনটি এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থায় দেখা যায় না। যেমন, ব্রিটিশ আদালত পার্লামেন্টের কোনো আইনকে সংবিধান-বিরোধী ঘোষণা করে বাতিল করতে পারে না। ভারতে সুপ্রিমকোর্ট আইন ও আদেশের সাংবিধানিক বৈধতা পর্যালোচনা করে দেখতে পারে, কিন্তু তার ক্ষমতা মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের মতো বিস্তৃত নয়। বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার সাহায্যে ভারতের বিচার বিভাগ এটা খতিয়ে দেখে যে, সংবিধানের সঙ্গে আইনসভার আইন বা শাসন বিভাগের নির্দেশ বা আদেশের সংগতি রয়েছে কি না। যেক্ষেত্রে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট আইন, আদেশ বা নির্দেশের প্রকৃতি সংবিধান-বিরোধী, সেক্ষেত্রে ওই আইন, আদেশ বা নির্দেশকে বিচার বিভাগ বাতিল ঘোষণা করে। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক বৈধতা বিচার ছাড়াও আইনটি স্বাভাবিক ন্যায়নীতিবোধকে লঙ্ঘন করেছে কিনা তাও পর্যালোচনা করে দ্যাখে।

[4] আইন ও সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদান: আইন ও সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রদান বিচার বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ ধরনের ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিচার বিভাগ সংবিধানের উদ্দেশ্য ও মতাদর্শকে বাস্তবায়িত করে, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সংবিধানের সংগতিবিধানের চেষ্টা করে। অবশ্য সব দেশে বিচার বিভাগ সমানভাবে এই ব্যাখ্যা প্রদান করার অধিকারী নয়।

[5] নতুন আইনের সৃষ্টি: অনেক সময় প্রচলিত আইনের সাহায্যে সমস্ত মামলার নিষ্পত্তি করা যায় না। সেক্ষেত্রে বিচারকরা ব্যক্তিগত বিবেকবুদ্ধি, স্বাভাবিক ন্যায়নীতি প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বিচারকদের এইসব সিদ্ধান্ত পরবর্তীকালে অনুরূপ মামলায় আইন হিসেবে গণ্য হয়। এভাবে বিচারকরা নতুন আইন সৃষ্টি করেন।

[6] নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ: বিচার বিভাগের আর-একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নাগরিক অধিকার রক্ষা করা। আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব পালন করে বিচার বিভাগ।

[7] বিরোধ মীমাংসা: বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আইনসভা ও শাসন বিভাগ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বিচার বিভাগ পালন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের মীমাংসায় সুপ্রিমকোর্টের প্রধান ভূমিকা স্বীকৃত হয়েছে। ভারত ও জার্মানিতেও সাংবিধানিক আদালতের হাতে এ ধরনের ক্ষমতা রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধের মীমাংসার দায়িত্বও বিচার বিভাগের হাতে ন্যস্ত।

[৪] পরামর্শ প্রদান: বিচার বিভাগ অনেক সময় শাসন বিভাগকে পরামর্শ দিয়ে থাকে। ভারতে রাষ্ট্রপতি কোনো সাংবিধানিক বিষয়ে পরামর্শ চাইলে সুপ্রিমকোর্ট তা দিয়ে থাকে।

[9] অন্যান্য কার্যাবলি: বিচার বিভাগ কিছু অন্যান্য দায়িত্ব পালন করে থাকে। যেমন-নাবালকের অভিভাবক নিয়োগ, অছি নিয়োগ প্রভৃতি।

উপসংহার: বিচার বিভাগের ভূমিকা ও কার্যাবলি প্রধানত রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। এই কারণে যেসব দেশের সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে সেখানে বিচার বিভাগ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

2 বিচারবিভাগীয় সমীক্ষা বলতে কী বোঝ? বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা কীভাবে রক্ষিত হতে পারে তা আলোচনা করো। 2+6 [HS ’16; The Park Institution; The Scottish Church Collegiate School]

অথবা, বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা কীভাবে রক্ষা করা যায়? অথবা, আধুনিক রাজ্যে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা কীভাবে রক্ষিত হয়? [Sri Ramkrishna Sikshalaya]

অথবা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতার শর্তাবলি বিশ্লেষণ করো।

বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা

বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা হল বিচার বিভাগের এক বিশেষ ক্ষমতা। এই ক্ষমতাবলে বিচার বিভাগ দেশের আইন বিভাগের প্রণীত কোনো আইন এবং শাসন বিভাগের কোনো আদেশ বা নির্দেশ সংবিধানবিরোধী কিনা সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট আইন বা আদেশ ও নির্দেশকে সংবিধানবিরোধী বলে মনে করলে বাতিল করে দিতে পারে, বিচার বিভাগের এই বিশেষ ক্ষমতাকে ‘বিচার বিভাগীয় সমীক্ষা (বা Judicial Review) বলে অভিহিত করা হয়।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার শর্তাবলি

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা এবং কর্মকুশলতার ওপর আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আবার কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। সেগুলি হল-

[1] বিচারপতিদের যোগ্যতা:

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত হল সৎ, সাহসী ও নিরপেক্ষ, আইনজ্ঞ বিচারপতি। দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে প্রার্থীদের গুণগত যোগ্যতা সঠিকভাবে পরীক্ষা করে বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন। অযোগ্য ব্যক্তি রাজনৈতিক কারণে বিচারকপদে নিযুক্ত হলে ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

[2] বিচারপতিদের নিয়োগ পদ্ধতি:

আধুনিক রাষ্ট্রে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিচারপতি নিয়োগ পদ্ধতির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে বিচারপতিদের নিয়োগ করা হয়, যথা-। জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে, ii. আইনসভা কর্তৃক মনোনয়নের মাধ্যমে, iii. শাসন বিভাগের মাধ্যমে।

i. জনগণের দ্বারা প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে এবং সুইটজারল্যান্ডের কয়েকটি ক্যান্টনে চালু রয়েছে। তবে এই পদ্ধতি ত্রুটিমুক্ত নয়। অধ্যাপক হ্যারল্ড ল্যাস্কি একে একটি নিকৃষ্ট পদ্ধতি হিসেবে অভিহিত করেছেন। এতে অযোগ্য ব্যক্তির বিচারক হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

ii. আইনসভা কর্তৃক মনোনয়নের মাধ্যমেও বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যে ও সুইটজারল্যান্ডের যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতে এই পদ্ধতি দেখা যায়। এই পদ্ধতিকেও ত্রুটিমুক্ত বলা যায় না। এই পদ্ধতিতে আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের মনোনীত  ব্যক্তিরা সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে বিচারপতি পদে নির্বাচিত হন। ফলে ন্যায়বিচার ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

iii. বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে শাসন বিভাগের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। অনেকে একেই কাম্য ব্যবস্থা বলে মনে করেন। কারণ এর ফলে বিচারপতিরা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার সম্পাদনের সুযোগ পান। অধস্তন বিচারপতিরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার দ্বারা এবং ঊর্ধ্বতন বিচারপতিরা সাধারণত অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক নিযুক্ত হন। ভারত, ব্রিটেন ও কানাডায় এই ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে।

[3] বিচারপতিদের কার্যকাল:

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার コ জন্য বিচারপতিদের একটি নির্দিষ্ট বয়ঃক্রম পর্যন্ত স্থায়ীভাবে নিয়োগ করা প্রয়োজন। স্বল্পকালের জন্য নির্বাচিত বা মনোনীত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে 5 সন্তুষ্ট রাখতে বিচারপতিরা সর্বদাই ব্যস্ত থাকবেন কিংবা তাঁরা দুর্নীতিপরায়ণও হয়ে উঠতে পারেন। সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচার উপেক্ষিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিচারপতিরা অক্ষম না হলে ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারেন। ভারতে এই মেয়াদ সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের ক্ষেত্রে ৬৫ এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের ক্ষেত্রে ৬২ বছরে সীমিত রাখা হয়েছে।

[4] বিচারপতিদের অপসারণ:

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার শর্তাবলির ং ক্ষেত্রে বিচারপতিদের অপসারণ প্রক্রিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অকারণে র্ক অপসারিত হওয়ার ভয় থাকলে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ন্যায়বিচার সম্পাদন ক সম্ভব হয় না। কেবলমাত্র দুর্নীতি ও গুরুতর অপরাধের প্রমাণিত তথ্য ছাড়া এই বিচারপতিদের অপসারণের ব্যবস্থা থাকা উচিত নয়।

[5] বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা:

অনেকে বিচারপতিদের বেতন ভাতার বিষয়টিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। স্বল্প বেতনভোগী বিচারপতিদের দুর্নীতিপরায়ণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া, বেতন পর্যাপ্ত না হলে শ্রেষ্ঠ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে এই পদের প্রতি র আকৃষ্ট করা যায়না। বিচারপতিদের বেতন ও ভাতার বিষয়টি শাসন বিভাগের অনুমোদনসাপেক্ষ হওয়া উচিত নয় বলে অনেকে মনে করেন।

[6] বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য:

বিচার বিভাগের স্বাধীনতার একটি অপরিহার্য শর্ত হল এর স্বাতন্ত্র্য। বস্তুত, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ স্বতন্ত্র না হলে ন্যায়বিচারের সুযোগ থাকে না। এমনকি এর ফলে স্বৈরাচারের আশঙ্কাও দেখা দিতে পারে। অধ্যাপক ল্যাস্কি বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্যকে স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য অত্যাবশ্যক বলে রায় দিয়েছেন। বিচারপতিদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের প্রভাব থেকে বিচার

. বিভাগকে মুক্ত রাখা প্রয়োজন।

■ [7] বিচারপতিদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি:

বিচারপতিদের দৃষ্টিভঙ্গিকেও অনেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অন্যতম শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিচারপতিদের সামাজিক এবং পারিবারিক অবস্থান, শ্রেণিচেতনা, অর্থনৈতিক ও শিক্ষাগত প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক চেতনা প্রভৃতির সম্মিলিত প্রভাবে তাঁদের – দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। এই দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক না হলে তা ন্যায়বিচারের পক্ষে অন্তরায় হতে পারে।

উপসংহার: আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিচার বিভাগের স্বাধীনতার উপরোক্ত – শর্তাবলিকে অবশ্য পর্যাপ্ত বলে মনে করেন না। তাঁদের মতে, বিচার বিভাগ রাষ্ট্র ও সমাজনিরপেক্ষ নয়। সাধারণত বিচারপতিরা রাষ্ট্রপ্রকৃতি অনুসারে। পরিচালিত হন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল।