Class 12 Political Science Solution
ভারতের বিচার বিভাগ
1. MCQs Question Answer
1. ভারতের বিচারব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে-
A) সুপ্রিমকোর্ট ✔
B) হাইকোর্ট
C) লোক আদালত
D) ক্রেতা সুরক্ষা আদালত
2. ভারতের বিচারব্যবস্থার প্রকৃতি হল-
A) খণ্ডিত
B) অখণ্ড ✔
C) দ্বৈত
D) যুক্তরাষ্ট্রীয়
3. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন-
A) প্রধানমন্ত্রী
B) উপরাষ্ট্রপতি
C) রাষ্ট্রপতি ✔
D) স্পিকার
4. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির সংখ্যা হল-
A) ২৬ জন
B) ২৭ জন
C) ২৮ জন
D) ৩০ জন ✔
5. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অবসরগ্রহণের বয়স হল-
A) ৬০ বছর
B) ৬২ বছর
C) ৬৫ বছর ✔
D) ৭০ বছর
6. বিচারপতিদের পদচ্যুত করে সরকারের-
A) শাসন বিভাগ
B) আইন বিভাগ ✔
C) বিচার বিভাগ
D) জনগণ
7. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিগণ নিযুক্ত হন-
A) আইন বিভাগের দ্বারা
B) শাসন বিভাগের দ্বারা ✔
C) বিচার বিভাগের দ্বারা
D) জনগণের দ্বারা
৪. ভারতের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হল-
A) সুপ্রিমকোর্ট ✔
B) হাইকোর্ট
C) লোক আদালত
D) অধস্তন আদালত
9. ভারতের সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তা হল/হলেন-
A) রাষ্ট্রপতি
B) প্রধানমন্ত্রী
C) আইনমন্ত্রী
D) সুপ্রিমকোর্ট ✔
10. ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হল-
A) সুপ্রিমকোর্ট ✔
B) হাইকোর্ট
C) লোক আদালত
D) অধস্তন আদালত
11. সুপ্রিমকোর্টের কার্যক্ষেত্রের সংখ্যা হল-
A) ২টি
B) ৩টি
C) ৪টি ✔
D) ৫টি
12. সুপ্রিমকোর্টের আপিল এলাকার সংখ্যা হল-
A) ৩টি
B) ৪টি ✔
C)৫টি
D) ৬টি
13. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন হ্রাস হয়-
A) ৩৫২ নং ধারা প্রয়োগ হলে
B) ৩৫৬ নং ধারা প্রয়োগ হলে
C) ৩৬০ নং ধারা প্রয়োগ হলে ✔
D) ৩৫৫ নং ধারা প্রয়োগ হলে
14. রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসা করেন-
A) প্রধানমন্ত্রী
B) আইনমন্ত্রী
C) সুপ্রিমকোর্ট ✔
D) হাইকোর্ট
15. মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য সুপ্রিমকোর্ট এবং হাইকোর্ট লেখ জারি করে-
A) ৩টি
B) ৪টি
C) ৫টি ✔
D) ৭টি
16. দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন আদালত হল-
A) মুনসেফ আদালত
B) দায়রা আদালত
C) মহকুমা আদালত
D) ন্যায় পঞ্চায়েত ✔
17. স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধান বিচারপতি হলেন-
A) হরিলাল কানিয়া ✔
B) ফতেমা বিবি
C) কে জি বালাকৃয়ণ
D) পি সদাশিবম
18. বর্তমানে (২০১৭-১৮) সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি হলেন-
A) কে জি বালাকৃয়াণ
B) আলতামাস কবির
C) দীপক মিশ্র ✔
D) ওয়াই এস কুরেশি
19. ভারতের অভিলেখ আদালত হল-
A) সুপ্রিমকোর্ট ✔
B) হাইকোর্ট
C) লোক আদালত
D) ন্যায় পঞ্চায়েত
20. কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব বা রাজ্য বনাম রাজ্যের বিরোধ সুপ্রিমকোর্টের-
A) মূল এলাকার মধ্যে পড়ে ✔
B) আপিল এলাকার মধ্যে পড়ে
C) পরামর্শদান এলাকার মধ্যে পড়ে
D) লেখ জারির এলাকার মধ্যে পড়ে
21. “পৃথিবীর যে-কোনো সুপ্রিমকোর্টের চেয়ে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট অধিক ক্ষমতার অধিকারী” বলেছেন-
A) কৃয়স্বামী আয়ার ✔
B) আর আম্বেদকর
C) কে শান্তানাম
D) হরিলাল কেনিয়া
22. রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের কাছে পরামর্শ চান সংবিধানের-
A) ১৪৩ নং ধারা অনুযায়ী ✔
B) ১৩৬ নং ধারা অনুযায়ী
C) ১৩১ নং ধারা অনুযায়ী
D) ১৩২ নং ধারা অনুযায়ী
23. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের পদচ্যুত করেন-
A) প্রধানমন্ত্রী
B) রাষ্ট্রপতি ✔
C) উপরাষ্ট্রপতি
D) প্রধান বিচারপতি
24. সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের পদচ্যুত করা হয়-
A) স্বেচ্ছায়
B) ক্যাবিনেটের পরামর্শে
C) সংসদে ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে ✔
D) জনগণের দ্বারা
25. শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে সংবিধানের-
A) ৩০ নং ধারায়
B) ৩১ নং ধারায়
C) ৩২ নং ধারায় ✔
D) ৪৫ নং ধারায়
26. সুপ্রিমকোর্টের গঠন বিষয়ে বলা আছে সংবিধানের-
A) ১২৪ নং ধারায় ✔
B) ১২৬ নং ধারায়
C) ১৩১ নং ধারায়
D) ১৩২ নং ধারায়
27 . ভারতের শাসনব্যবস্থা কীরূপ?
A) এককেন্দ্রিক
B) যুক্তরাষ্ট্রীয় ✔
C) সমাজতান্ত্রিক
D) রাষ্ট্রপতি-শাসিত
28. ভারতে শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচার বিভাগকে মুক্ত রাখার কথা সংবিধানের কত নং ধারায় উল্লিথিত আছে?
A) ৪ নং ধারা
B) ৪২ নং ধারা
C) ৪৫ নং ধারা
D) ৫০ নং ধারা ✔
29. ভারতে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রচলিত জ্যেষ্ঠতার নীতিকে প্রথমবার অমান্য করা হয় কত সালে?
A) ১৯৭৩ সালে ✔
B) ১৯৭৪ সালে
C) ১৯৭৫ সালে
D) ১৯৭৬ সালে
30 ভারতে সুপ্রিমকোর্টে প্রধান বিচারপতির নিয়োগের ক্ষেত্রে নীতিকে দ্বিতীয়বার অমান্য করা হয়ে কত সালে?
A) ১৯৭৫ সালে
B) ১৯৭৬ সালে
C) ১৯৭৭ সালে ✔
D) ১৯৭৮ সালে
31. ২০১১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্টে বকেয়া মামলার সংখ্যা কত?
A) ৫০,২০০টি
B) ৫১,০০০টি
C) ৫২,০০০টি
D) ৫২,১৭৯টি ✔
32. ভারতে দরিদ্র ব্যক্তিরা যাতে বিনা ব্যয়ে আইনের সাহায্য পেতে পারে তার জন্য সংবিধানের কততম সংশোধন করা হয়?
A) ৪০তম
B) ৪১তম
C) ৪২তম ✔
D) ৪৩তম
33. ভারতীয় সংবিধানের ৪২ তম সংশোধন কবে হয়?
A) ১৯৭৬ সালে ✔
B) ১৯৭৭ সালে
C) ১৯৭৮ সালে
D) ১৯৭৯ সালে
34 . ভারতের মূল সংবিধানে সুপ্রিমকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা সম্পর্কে কী বলা হয়েছিল?
A) ১ জন প্রধান বিচারপতি ও ৫ জন বিচারপতি
B) ১ জন প্রধান বিচারপতি ও ৬ জন বিচারপতি
C) ১ জন প্রধান বিচারপতি ও ৭ জন বিচারপতি ✔
D) ১ জন প্রধান বিচারপতি ও ৮ জন বিচারপতি
35. কত সালের আইনে বলা হয় যে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ১ জন প্রধান বিচারপতি ও ৩০ জন বিচারপতি নিয়ে গঠিত হবে?
A) ২০০৮ সালে
B) ২০০৯ সালে
C) ২০১০ সালে
D) ২০১১ সালে ✔
36 বর্তমানে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে বিচারকের সংখ্যা কত ?
A) ২৫ জন
B) ২৭ জন
C) ২৮ জন
D) ২৯ জন ✔
37. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের অন্যান্য বিচারপতি নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির সাথে অবশ্যই পরামর্শ করতে হবে?
A) ১২৪ (২) নং ধারা ✔
B) ১২৫ (২) নং ধারা
C) ১২৬ (১) নং ধারা
D) ১২৭ (১) নং ধারা
38. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিচারককে পদচ্যুত করতে পারেন?
A) ১২৩ নং ধারা
B) ১২৪ (৪) নং ধারা ✔
C) ১২৫ (১) নং ধারা
D) ১২৬ (১) নং ধারা
39. ভারতের সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির মাসিক বেতন কত?
A) ৮০,০০০ টাকা
B) ৮৫,০০০ টাকা
C) ৯০,০০০ টাকা
D) ১,০০,০০০ টাকা ✔
40. ভারতের সুপ্রিমকোর্টের অন্যান্য বিচারপতিদের মাসিক বেতন কত?
A) ৮০,০০০ টাকা
B) ৯০,০০০ টাকা ✔
C) ৯৫,০০০ টাকা
D) ১,০০,০০০ টাকা
41. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ মানা ইচ্ছামূলক?
A) ১৪০ নং ধারা
B) ১৪১ (১) নং ধারা
C) ১৪৩ (১) নং ধারা
D)১৪৩ (১) নং ধারা ✔
42. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য নাগরিকগণ সুপ্রিমকোর্টের কাছে আবেদন জানাতে পারে?
A) ৩০ নং ধারা
B) ৩২ নং ধারা ✔
C) ৩৩ নং ধারা
D) ৩৪ নং ধারা
43. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী নাগরিকদের ২০ ও ২১ নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকার ছাড়া অন্যান্য মৌলিক অধিকারগুলি বলবৎ করার জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করার অধিকার খর্ব করা যায়?
A) ৩৫৯ (১) নং ধারা ✔
B) ৩৬০ (১) নং ধারা
C) ৩৬১ নং ধারা
D) ৩৬২ নং ধারা
44. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট কোনো ব্যক্তিকে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে?
A) ১৪১ (২) নং
B) ১৪২ (২) নং ✔
C) ১৪৩ (২) নং
D) ১৪৪ (১) নং
45. ভারতে কত সালে ব্যাংক জাতীয়করণ আইন পাস হয়?
A) ১৯৬৭ সালে
B) ১৯৬৮ সালে
C) ১৯৬৯ সালে ✔
D) ১৯৭০ সালে
46. ভারতে রাজন্য ভাতা বিলোপ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ রাষ্ট্রপতি কোন্ বছর জারি করেন?
A) ১৯৭০ সালে ✔
B) ১৯৭১ সালে
C) ১৯৭২ সালে
D) ১৯৭৩ সালে
47. গোলকনাথ বনাম পাঞ্জাব রাজ্য মামলার রায় সুপ্রিমকোর্ট কবে দান করে?
A) ১৯৬৫ সালে
B) ১৯৬৬ সালে
C) ১৯৬৭ সালে ✔
D) ১৯৬৮ সালে
48. কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরল রাজ্য মামলার রায় সুপ্রিমকোর্ট কবে প্রদান করে?
A) ১৯৬৭ সালে
B) ১৯৭০ সালে
C) ১৯৭১ সালে
D) ১৯৭৩ সালে ✔
49. মিনার্ভা মিলস্ ও অন্যান্য বনাম ভারত সরকার মামলায় সুপ্রিমকোর্ট কোন্ বছর রায় দেন?
A) ১৯৬৭ সালে
B) ১৯৭৩ সালে
C) ১৯৮০ সালে ✔
D) ১৯৮৩ সালে
50. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারায় বলা হয়েছে যে মৌলিক অধিকার বিরোধী আইন বাতিল হয়ে যাবে?
A) ১২ নং ধারা
B) ১৩ নং ধারা ✔
C) ১৪ নং ধারা
D) ১৫ নং ধারা
51. সুপ্রিমকোর্ট তাঁর কোন্ সালে দেওয়া রায়ে মিসা আইনের ১৭(ক) ধারাটি বাতিল করে দেয়?
A) ১৯৭০ সালে
B) ১৯৭১ সালে
C) ৯৭২ সালে
D) ১৯৭৩ সালে ✔
52. বধূহত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চরম দণ্ড দেওয়ার পক্ষে সুপ্রিমকোর্ট কবে রায় দেয়?
A) ১৯৮২ সালে
B) ১৯৮৩ সালে ✔
C) ১৯৮৪ সালে
D) ১৯৮৫ সালে
53. কোন্ সালে শাহবানু মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিমকোর্ট তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীকে বহন করার নির্দেশ দেয়?
A) ১৯৮৫ সালে ✔
B) ১৯৮৬ সালে
C) ১৯৮৭ সালে
D) ১৯৮৮ সালে
54. আমলাদের দুর্নীতির তদন্ত করার ক্ষেত্রে সি বি আই-কে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্ট কোন্ সালের রায়ের মাধ্যমে প্রদান করে?
A) ১৯৯৫ সালে
B) ১৯৯৬ সালে
C) ১৯৯৭ সালে ✔
D) ১৯৯৮ সালে
55. সুপ্রিমকোর্ট কবে বন্ধকে বেআইনি ও অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে?
A) ১৯৯৬ সালে
B) ১৯৯৭ সালে ✔
C) ১৯৯৮ সালে
D) ১৯৯৯ সালে
56. সরকারি কর্মচারীদের ধর্মঘট করার অধিকার খর্ব করে সুপ্রিমকোর্ট কবে রায় দেয়?
A) ২০০০ সালে
B) ২০০১ সালে
C) ২০০২ সালে
D) ২০০৩ সালে ✔
57. ভারতের সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের যোগ্যতাবলি সংবিধানের কোন্ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত আছে?
A) ১২৩ নং ধারা
B) ১২৪ (১) নং ধারা
C) ১২৪ (২) নং ধারা
C) ১২৪ (৩) নং ধারা ✔
58. জেলার সর্বোচ্চ দেওয়ানি আদালত হল-
A) সাবজজের আদালত
B) জেলা জজের আদালত ✔
C) ন্যায় আদালত
D) দায়রা আদালত
59. জেলার সর্বোচ্চ ফৌজদারি আদালত হল-
A) দায়রা আদালত ✔
B) সাবজজের আদালত
C) জেলা জজের আদালত
D) কোনোটিই নয়
60. রাজ্যের অধস্তন আদলতগুলিতে বিচারপতি নিয়োগের সময় রাজ্যপাল পরামর্শ গ্রহণ করেন-
A) সুপ্রিমকোর্টের
B) হাইকোর্টের
C) জেলা আদালতের ✔
D) কোনোটিই নয়
61. মহানগরীয় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়-
A) হাইকোর্টে ✔
B) লোক আদালতে
C) জেলা আদালতে
D) দায়রা আদালতে
62. মহানগরীয় অঞ্চলে ফৌজদারি মামলায় বিচার করেন-
A) নগর দায়রা আদালত ✔
B) মুনসেফ আদালত
C) দায়রা-জজের আদালত
D) জেলা বিচারপতি
63. ভারতের সুপ্রিমকোর্ট এমন একটি বিচারালয়, যার-
A) কেবল আপিল এলাকা আছে
B) কেবল মূল এলাকা আছে
C) মূল এলাকা ও আপিল এলাকা উভয়ই আছে
D) মূল এলাকা, আপিল এলাকা এবং পরামর্শ দানের এলাকা আছে ✔
64. ভারতের সুপ্রিমকোর্ট-
A) মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের মত ক্ষমতাশালী
B) ব্রিটেনের বিচারবিভাগের অনুরূপ
C) ফ্রান্সের সুপ্রিমকোর্টের মতন ক্ষমতাশালী
D) কোনোটিই নয় ✔
65. ভারতের সংবিধানের অভিভাবক-
A) রাষ্ট্রপতি
B) প্রধানমন্ত্রী
C) সুপ্রিমকোর্ট ✔
D) কেউই নন
66. অবসর গ্রহণের পর সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা ভারতের কোনো আদালতে আইনজীবী রূপে কাজ করতে-
A) পারেন
B) পারেন না ✔
C) রাষ্ট্রপতির অনুমতি সাপেক্ষে পারেন
D) কোনোটিই নয়
67. যুক্তরাষ্ট্রীয় বিরোধ মীমাংসা হয় সুপ্রিমকোর্টের-
A) মূল এলাকায় ✔
B) মূল ও আপিল এলাকায়
C) আপিল এলাকায়
D) কোনোটিই নয়
68. সুপ্রিমকোর্ট লেখ জারি করতে পারে-
A) দেশে জাতীয় জরুরি আবস্থা জারি হলে
B) নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ✔
C) দেশে আর্থিক জরুরি অবস্থা জারি হলে
D) নির্বাচনের সময়
69. ভারতের সুপ্রিমকোর্ট পরামর্শ দেয়-
A) রাষ্ট্রপতিকে ✔
B) প্রধানমন্ত্রীকে
C) রাজ্যপালকে
D) মুখ্যমন্ত্রীকে
70. সংবিধানের ব্যাখ্যার দায়িত্ব-
A) বিচার বিভাগের ✔
B) আইন বিভাগের
C) শাসন বিভাগের
D) কোনোটিরই নয়
71. “ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত শাসনব্যবস্থা প্রবর্তিত হলেও দ্বৈত এবং অধস্তন আদালতসমূহকে নিয়ে একটি অখণ্ড বিচারব্যবস্থা গড়ে বিচারব্যবস্থা আদৌ প্রবর্তিত হয়নি। এখানে সুপ্রিমকোর্ট, হাইকোর্ট উঠেছে”- মন্তব্য করেছেন-
A) নেহরু
B) প্যাটেল
C) আম্বেদকর ✔
D) দুর্গাদাস বসু
72. দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে রাষ্ট্রপতি আদেশ জারি করে যে দুটি মৌলিক অধিকার ছাড়া অন্য সব মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করার অধিকার খর্ব করতে পারেন, সেই দুটি মৌলিক অধিকার হল-
A) ১৯ এবং ২০ নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকার
B) ১৪ এবং ১৯ নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকার
C) ২০ এবং ২১ নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকার ✔
D) ২১ এবং ২২ নং ধারায় বর্ণিত মৌলিক অধিকার
73. সুপ্রিমকোর্ট ১৯৭৬ সালে প্রণীত ৪২তম সংবিধান সংশোধন আইনের কিছু অংশ বাতিল করে দিয়েছিল-
A) গোলকনাথ মামলায় (১৯৬৭)
B) কেশবানন্দ ভারতী মামলায় (১৯৭৩)
C) মিনার্ভা মিলস্ মামলায় (১৯৮০) ✔
D) এ কে গোপালন মামলায় (১৯৫০)
74. ‘পার্লামেন্ট সংবিধানের মৌলকাঠামো ছাড়া অন্য সব অংশ সংশোধন করতে পারে’- সুপ্রিমকোর্ট এই রায় দিয়েছিল-
A) গোলকনাথ মামলায়
B) কেশবানন্দ ভারতী মামলায় ✔
C) বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ মামলায়
D) মিনার্ভা মিলস্ মামলায়
75. ‘আইনের যথাবিহিত পদ্ধতি’ (Due Process of Law) স্বীকৃত হয়েছে-
A) ভারতের সুপ্রিমকোর্টে
B) মার্কিন সুপ্রিমকোর্টে ✔
C) হাইকোর্টে
D) লোক আদালতে
76. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে দেওয়া হয়, এই ব্যবস্থা পার্লামেন্টের-
A) অনুমোদন সাপেক্ষ
B) অনুমোদন সাপেক্ষ নয় ✔
C) পার্লমেন্টের সংখ্যগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন সাপেক্ষ
D) কোনোটিই নয়
77. “বিচার বিভাগ তার সতর্ক প্রহরা নিয়ে এগিয়ে এসেছে কারণ সরকারের অন্য বিভাগগুলি তাদের কর্তব্য যথাযথভাবে সম্পাদন করছে না” বলেছেন-
A) জোহারি
B) পাইলি
C) এ এম আহমদি ✔
D) দুর্গাদাস বসু
78. “বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তা হল বিচারবিভাগীয় অনাচার বা এক দুঃসাহসিক কর্মপ্রচেষ্টার নামান্তর, যা পরিণামে দেশকে বিচারবিভাগীয় স্বৈরাচারের দিকে নিয়ে যায়”- উক্তিটি করেছেন-
A) ননী পালখিওয়ালা ✔
B) জোহারি
C) ভগবতী
D) পাইলি
79. ________ আইন বিভাগের উচ্চকক্ষ দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালতের কাজ করে।
A) ব্রিটেনের ✔
B) ভারতের
C) কানাডার
D) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
৪০. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের পদচ্যুত করা-
A) সম্ভব ✔
B) অসম্ভব
C) আংশিকভাবে সম্ভব
D) আংশিকভাবে সম্ভব নয়
81. সুপ্রিমকোর্টের কর্মক্ষেত্রকে ভাগে বিভক্ত করা হয়।
A) এক
B) দুই
C) তিন
D) চার ✔
82. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হতে হলে ন্যূনতম বয়স হতে হয়-
A) 30 বছর
B) 35 বছর
C) 45 বছর
D) বয়সের কোনো শর্ত নেই ✔
83. প্রত্যেক রাজ্যে একটি হাইকোর্ট স্থাপনের কথা বলা আছে সংবিধানের-
A) ২১০ নং ধারায়
B) ২১৪ নং ধারায় ✔
C) ২১৫ নং ধারায়
D) ২২০ নং ধারায়
84. রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হল-
A) সুপ্রিমকোর্ট
B) লোক আদালত
C) হাইকোর্ট ✔
D) ক্রেতা সুরক্ষা আদালত
85. হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি করেন- নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি আলোচনা করেন-
A) সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে
B) সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে ✔
C) সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অধ্যক্ষের সঙ্গে
D) সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আইনমন্ত্রীর সঙ্গে
86. বর্তমানে ভারতে হাইকোর্টের সংখ্যা হল-
A) ১৮
B) ২০
C) ২১ ✔
D) ২৫
87. হাইকোর্টের বিচারপতিদের অবসরকালীন বয়স হল-
A) ৬০ বছর
B) ৬২ বছর ✔
C) ৬৫ বছর
D) ৭০ বছর
88. রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতিদের নিয়োগ করেন-
A) ১ বছরের জন্য
B) ২ বছরের জন্য ✔
C) ৩ বছরের জন্য
D) ৫ বছরের জন্য
89. হাইকোর্টের ক্ষমতার এলাকা হল-
A) ২টি ✔
B) ৩টি
C) ৪টি
D) ৫টি
90. পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া কলকাতা হাইকোর্টের এলাকায় রয়েছে-
A) ত্রিপুরা
B) নাগাল্যান্ড
C) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ✔
D) মণিপুর
91. জেলা বিচারপতিকে নিয়োগ করেন-
A) রাজ্যপাল ✔
B) রাষ্ট্রপতি
C) প্রধানমন্ত্রী
D) মুখ্যমন্ত্রী
92. ২০১১ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত হাইকোর্টগুলিতে বকেয়া মামলার সংখ্যা কত?
A) ৪০,০০,০০০টি
B) ৪২,১৭,৯০৩টি
C) ৪৩,১৫,৭১২টি
D) ৪৫,১৬,৪১০টি ✔
93. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী পার্লামেন্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দুই বা ততোধিক রাজ্যের জন্য একটি হাইকোর্ট স্থাপন করতে পারে?
A) ২৩০ নং ধারা
B) ২৩০ (১) নং ধারা
C) ২৩১ নং ধারা
D) ২৩১ (১) নং ধারা ✔
94. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের অন্যান্য বিচারপতির সংখ্যা স্থির করেন?
A) ২১৪ নং ধারা
B) ২১৫ নং ধারা
C) ২১৬ নং ধারা ✔
D) ২১৭ নং ধারা
95. ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কোনো হাইকোর্টে কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেন?
A) ২২০ নং ধারা
B) ২২১ নং ধারা
C) ২২২ নং ধারা
D) ২২৩ নং ধারা ✔
96. ভারতের রাষ্ট্রপতি সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগ করতে পারেন?
A) ২২২ নং ধারা
B) ২২৩ নং ধারা
C) ২২৪ (১) নং ধারা
D) ২২৪ (২) নং ধারা ✔
97. ভারতের কোনো হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগের যোগ্যতাবলি সংবিধানের কোন্ ধারায় উল্লেখিত হয়েছে?
A) ২১৫ নং ধারা
B) ২১৬ নং ধারা
C) ২১৭ নং ধারা ✔
D) ২১৮ নং ধারা
98. এক হাইকোর্টের বিচারপতিকে অন্য হাইকোর্টে বদলি করার নিয়ম সংবিধানের কত নং ধারায় উল্লেখিত আছে?
A) ২২২ (১) নং ধারা ✔
B) ২২২ (২) নং ধারা
C) ২২৩ নং ধারা
D) ২২৪ নং ধারা
99. হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির মাসিক বেতন কত?
A) ৮০,০০০ টাকা
B) ১,০০,০০০ টাকা ✔
C) ১,১০,০০০ টাকা
D) ৯০,০০০ টাকা
100. হাইকোর্টের অন্যান্য বিচারকদের মাসিক বেতন কত?
A) ৭০,০০০ টাকা
B) ৭৫,০০০ টাকা
C) ৮০,০০০ টাকা ✔
D) ৯০,০০০ টাকা
101. কত সালের ফৌজদারি দণ্ডবিধি অনুযায়ী হাইকোর্টের ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতার বিলোপসাধান করা হয়েছে?
A) ১৯৭০ সালের
B) ১৯৭১ সালের
C) ১৯৭২ সালের
D) ১৯৭৩ সালের ✔
102 ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করতে পারে?
A) ৩২ নং ধারা
B) ১১০ নং ধারা
C) ২০০ নং ধারা
D) ২১৬ নং ধারা ✔
103. সংবিধানের কততম সংশোধনের দ্বারা হাইকোর্টের কেন্দ্রীয় আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়?
A) ৪২ তম ✔
B) ৪৩ তম
C) ৪৪ তম
D) ৪৫ তম
104. সংবিধানের কততম সংশোধনের দ্বারা হাইকোর্টের কেন্দ্রীয় আইনের বৈধতা বিচারের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়?
A) ৪২ তম
B) ৪৩ তম
C) ৪৪ তম ✔
D) ৪৫ তম
105. দিল্লির জন্য পৃথক হাইকোর্ট কত সালে গঠন করা হয়?
A) ১৯৬৪ সালে
B) ১৯৬৫ সালে
C) ১৯৬৬ সালে ✔
D) ১৯৬৭ সালে
106. জেলার সর্বোচ্চ আদালত হল-
A) দায়রা আদালত
B) ন্যায় পঞ্চায়েত
C) জেলা জজের আদালত ✔
D) মুনসেফ আদালত
107. বড়ো বড়ো শহরে দেওয়ানি মামলার বিচার হয়-
A) নগর দেওয়ানি আদালতে ✔
B) জেলা জজের আদালতে
C) ন্যায় পঞ্চায়েতে
D) দায়রা আদালতে
108. মুনসেফ আদালত হল-
A) দেওয়ানি আদালত ✔
B) দায়রা আদালত
C) জেলা জজের আদালত
D) ন্যায় পঞ্চায়েত
109. অবর বিচারকের আদালতে কত টাকা মূল্যের মামলার বিচার হয়?
A) ৪০০০ টাকা
B) ৪০০০ টাকার অধিক
C) ৫০০০ টাকা
D) ৫০০০ টাকার অধিক ✔
120. মুনসেফের আদালতে কত টাকা মূল্যের সম্পতির বিচার হয়?
A) ১,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা ✔
B) ২,০০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা
C) ৩,০০০ টাকা থেকে ৬,০০০ টাকা
D) ৩,০০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা
121. আইনগত পরিসেবা কর্তৃপক্ষ আইনটি কত সালে সংশোধিত হয়?
A) ১৯৯২ সালে
B) ১৯৯৩ সালে
C) ১৯৯৪ সালে ✔
D) ১৯৯৫ সালে
122. জেলার সর্বোচ্চ দেওয়ানি আদালত হল-
A) সাবজজের আদালত
B) জেলা জজের আদালত ✔
C) ন্যায় আদালত
D) দায়রা আদালত
123. জেলার সর্বোচ্চ ফৌজদারি আদালত হল-
A) দায়রা আদালত ✔
B) সাবজজের আদালত
C) জেলা জজের আদালত
D) কোনোটিই নয়
124. রাজ্যের অধস্তন আদলতগুলিতে বিচারপতি নিয়োগের সময় রাজ্যপাল পরামর্শ গ্রহণ করেন-
A) সুপ্রিমকোর্টের
B) হাইকোর্টের ✔
C) জেলা আদালতের
D) কোনোটিই নয়
125. মহানগরীয় আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়-
A) হাইকোর্টে ✔
B) লোক আদালতে
C) জেলা আদালতে
D) দায়রা আদালতে
126. মহানগরীয় অঞ্চলে ফৌজদারি মামলায় বিচার করেন-
A) নগর-দায়রা আদালত ✔
B) মুনসেফ আদালত
C) দায়রা-জজের আদালত
D) জেলা বিচারপতি
127. মুনসেফ আদালতের ওপরে রয়েছে-
A) সাবজজের আদালত ✔
B) দায়রা-জজের আদালত
C) মহানগরীয় আদালত
D) কোনোটিই নয়
128. জেলার জজকে নিয়োগ করেন-
A) রাষ্ট্রপতি
B) রাজ্যপাল ✔
C) হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি
D) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী
129. ভূমি, বিষয়সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় বিচার হয়-
A) ফৌজদারি আদালতে
B) দেওয়ানি আদালতে ✔
C) লোক আদালতে
D) দায়রা আদালতে
130. খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি মামলার বিচার হয়-
A) দেওয়ানি আদালতে
B) ফৌজদারি আদালতে ✔
C) লোক আদালতে
D) দায়রা আদালতে
131. ন্যায় পঞ্চায়েতের সদস্যসংখ্যা হল-
A) ৩ ✔
B) ৫
C) ৭
D) ১০
132. জেলাস্তরে ক্রেতা আদালতগুলির সদস্যরা নিযুক্ত হন-
A) একটি নির্বাচন কমিটির দ্বারা
B) নির্বাচন কমিটির সুপারিশক্রমে রাজ্য সরকারের দ্বারা ✔
C) জেলা শাসকের দ্বারা
D) রাজ্য কমিশনের দ্বারা
133. জেলা আদালতে কোনো ক্রেতা অভিযোগ করলে ওই আদালত সর্বাধিক যে সময়সীমার মধ্যে বিরুদ্ধ পক্ষকে তার বক্তব্য পেশ করার নির্দেশ দেয়, তা হল-
A) ৩০ দিন
B) ৪৫ দিন ✔
C) ৬০ দিন
D) ৯০ দিন
2. Very Short Question Answer
1. অধস্তন আদালতব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
▶ হাইকোর্টের পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে অধস্তন আদালত। এই অধস্তন আদালতগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়-① জেলার অধস্তন আদালত মহানগরীয় অঞ্চলের অধস্তন আদালত।
2. জেলার সর্বোচ্চ দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত কোন্টি?
▶ জেলার সর্বোচ্চ দেওয়ানি আদালত হল জেলা জজের আদালত এবং সর্বোচ্চ ফৌজদারি আদালত হল দায়রা আদালত।
3. জেলা বিচারক ও মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়োগ, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে রাজ্যপাল কার পরামর্শ নেন?
▶ জেলা বিচারক ও মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের নিয়োগ, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে রাজ্যপাল হাইকোর্টের পরামর্শ নেন।
4. দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জেলা আদালতের নিম্নে কোন্ আদালত অবস্থিত?
▶ জেলা বিচারকের আদালতের নিম্নে হল অবর বিচারকের আদালত।
5. দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে অবর বিচারকের আদালতের নিম্নে কোন্ আদালত অবস্থিত?
▶ দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে অবর বিচারকের আদালতের নিম্নে মুনসেফের আদালত অবস্থিত।
6. দেওয়ানি আদালতসমূহের সর্বনিম্নে কোন্ আদালত অবস্থিত?
▶ দেওয়ানি আদালতসমূহের সর্বনিম্নে ন্যায় পঞ্চায়েত অবস্থিত।
7. ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দায়রা আদালতের নিম্নে কোন্ আদালত অবস্থিত?
▶ ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দায়রা আদালতের নিম্নে অবর ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত অবস্থিত।
৪. জেলার ফৌজদারি আদালতসমূহের সর্বনিম্নে কোন্ আদালত অবস্থিত?
▶ জেলার ফৌজদারি আদালতসমূহের সর্বনিম্নে পঞ্চায়েত আদালত অবস্থিত।
9. মহানগরের সর্বোচ্চ আদালতের নাম কী?
▶ মহানগরের সর্বোচ্চ আদালত হল মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত।
10. দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের নীচে কোন্ আদালত অবস্থিত?
▶ দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের নীচে নগর দেওয়ানি আদালত অবস্থিত।
11. মহানগরের দেওয়ানি আদালতসমূহের সর্বনিম্নে কোন্ আদালতের অবস্থান?
▶ মহানগরের দেওয়ানি আদালতসমূহের সর্বনিম্নে ক্ষুদ্র আদালতের অবস্থান।
12. ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে মহানগরীয় ম্যজিস্ট্রেটের আদালতের নিম্নে কোন্ আদালত অবস্থিত?
▶ ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে মহানগরীয় ম্যজিস্ট্রেটের আদালতের নিম্নে নগর দায়রা অদালত অবস্থিত।
13. মহানগরের ফৌজদারি আদালতসমূহের সর্বনিম্নে কোন্ আদালতের অবস্থান?
▶ মহানগরের ফৌজদারি আদালতসমূহের সর্বনিম্নে প্রেসিডেন্সি ক্ষুদ্র আদালতের অবস্থান।
14. জেলা আদালতের সদস্য হওয়ার জন্য কমপক্ষে কত বছর বয়স্ক হতে হবে?
▶ জেলা আদালতের সদস্য হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক হতে হবে।
15. জেলা আদালতের সদস্য হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
▶ জেলা আদালতের সদস্য হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা হল স্নাতক ডিগ্রি।
16. জেলা আদালতের সদস্যগণ কত বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে থাকতে পারেন?
▶ জেলা আদালতের সদস্যগণ ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে থাকতে পারেন।
17. অভিযোগ পাওয়ার পর কত দিনের মধ্যে জেলা আদালতকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়?
▶ অভিযোগ পাওয়ার পর ২১ দিনের মধ্যে জেলা আদালতকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়।
18. জেলা আদালতের সভাপতি কে হন?
▶ একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত জেলা বিচারক জেলা কমিশনের সভাপতি হওয়ার যোগ্য।
19. জেলা আদালতের সদস্যগণ কীভাবে নির্বাচিত হন?
▶ রাজ্য সরকার কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে জেলা আদালতের সদস্যগণ নির্বাচিত হন।
20. সাবজজের আদালতের ওপরে কোন্ আদালত আছে?
▶ সাবজজের আদালতের ওপরে আছে জেলা জজের আদালত।
21. জেলা জজের আদালতের ওপরে কোন্ আদালত আছে?
▶ জেলা জজের আদালতের ওপরে হল হাইকোর্ট।
22. ন্যায় পঞ্চায়েত কী?
▶ ন্যায় পঞ্চায়েত হল গ্রাম পঞ্চায়েতের আদালত।
23. জেলার দেওয়ানি আদালতগুলি ক-টি স্তরে অবস্থিত এবং কী কী?
▶ জেলার দেওয়ানি আদালতগুলি চারটি স্তরে অবস্থিত। এগুলি হল- ① জেলা বিচারের আদালত, ② অবর বিচারের আদালত, ③ মুনসেফের আদালত, ④ ন্যায় পঞ্চায়েত।
24. জেলার ফৌজদারি আদালতগুলিকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী?
▶ জেলার ফৌজদারি আদালতগুলি তিন ভাগে বিভক্ত। এগুলি হল- ① দায়রা আদালত, ② অবর ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত, ও পঞ্চায়েত আদালত।
25. মহানগরীয় অঞ্চলে ফৌজদারি মামলায় বিচার কীভাবে হয়?
▶ মহানগরীয় অঞ্চলে ফৌজদারি মামলায় নগর ন্যায়-দায়রা আদালতে বিচার হয়।
26. নগর দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে কোথায় আপিল করা যায়?
27. লোক আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়গুলি কী?
▶ লোক আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়গুলি হল পথ-দুর্ঘটনা সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ, সম্পত্তি বিষয়ক বিরোধ, দাম্পত্য বিরোধের মীমাংসা ইত্যাদি।
28. কে, কবে বিচারব্যবস্থার সংস্কারের উদ্দেশ্যে লোক আদালত গঠনের প্রস্তাব দেন?
▶ ১৯৮৫ সালে দিল্লিতে, বিচারব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে আহূত এক সম্মেলনে বিচারপতি পি এন ভগবতী লোক আদালত গঠনের কথা বলেন।
29. পারিবারিক আদালত কী?
▶ ১৯৮৪ সালের পার্লামেন্ট-প্রণীত আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকার বিবাহ বা তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক সমস্যার দ্রুত সমাধানের উদ্দেশ্যে পারিবারিক আদালত গঠন করতে পারে।
30. লোক আদালত গঠনের দুটি কারণ লেখো।
▶ লোক আদালত গঠনের দুটি কারণ হল-① এই আদালত গঠনের মাধ্যমে দ্রুত এবং সহজে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয় এবং ② এই আদালত ব্যয়বহুল নয়।
31. লোক আদালতের দুটি উপযোগিতা উল্লেখ করো।
▶ লোক আদালতের দুটি উপযোগিতা হল-① লোক আদালত সমাজের দুর্বলতর শ্রেণিকে বিনামূল্যে আইনি সাহায্য দেওয়ার জন্য কাজ করে, ② লোক আদালতগুলিতে মামলার নিষ্পত্তি দ্রুত হয়ে থাকে।
32. ক্রেতা আদালত কাকে বলে?
▶ কোনো ক্রেতা যখন কোনো জিনিস বা পরিসেবা কিনতে গিয়ে প্রতারিত বা বঞ্চিত হন, তখন যে আইনগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি প্রতিকার পেতে পারেন, তাকে বলা হয় ক্রেতা আদালত। ক্রেতা আদালত প্রধানত ক্রেতাদের সুরক্ষা প্রদান করে।
33. ক্রেতা আদালতের প্রধান উদ্দেশ্য কী?
▶ ক্রেতা আদালতের প্রধান উদ্দেশ্য হল ক্রেতাদের সুরক্ষা প্রদান। ক্রেতার স্বার্থ দেখাই ক্রেতা আদালতের মূল কাজ। প্রবঞ্চিত বা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতার অভিযোগ বা নালিশের আইনসম্মত সুষ্ঠু প্রতিকার বা নিষ্পত্তিবিধানই এর উদ্দেশ্য।
34. ক্রেতা আদালতের ক-টি স্তর রয়েছে এবং এগুলি কী কী?
▶ ক্রেতা আদালতের তিনটি স্তর রয়েছে। এগুলি হল-① জেলা স্তরে জেলা ক্রেতা আদালত, ② রাজ্য স্তরে রাজ্য ক্রেতা আদালত এবং ③ জাতীয় স্তরে জাতীয় ক্রেতা আদালত।
35. রাজ্য ক্রেতা আদালত কীভাবে গঠিত হয়?
▶ রাজ্য ক্রেতা আদালত একজন সভাপতি এবং অন্য দুজন সদস্য, মোট তিনজনকে নিয়ে গঠিত হয়।
36. রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে কাকে নিযুক্ত করা হয়?
▶ হাইকোর্টের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজ্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন।
37. জেলা ক্রেতা আদালতের সভাপতি হিসেবে কাকে নিযুক্ত করা হয়?
► একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজকে জেলা ক্রেতা আদালতের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
38. জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশনের সভাপতি হিসেবে কাকে নিযুক্ত করা হয়?
▶ সুপ্রিমকোর্টের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
39. কোন্ আইনে এবং কত সালে ক্রেতা আদালত গঠন করা হয়?
▶ ১৯৮৬ সালে ‘ক্রেতা সুরক্ষা আইন’ অনুসারে ক্রেতা আদালত গঠন করা হয়।
40. ক্রেতা আদালতে কি আইনজীবীর প্রয়োজন হয়?
▶ ক্রেতা আদালতে নালিশ রুজু করার জন্য বা অভিযোগপত্র দায়ের করার জন্য কোনো আইনজীবীর প্রয়োজন নেই।
41. ক্রেতা আদালতের আদেশ অমান্য করা হলে কী হতে পারে?
▶ ক্রেতা আদালতের আদেশ অমান্য করা হলে অমান্যকারীর সম্পত্তি ক্রোক করা হতে পারে। এমনকি আদেশ অমান্যকারীর জেল ও জরিমানা, দুই হতে পারে।
42. লোক আদালত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী?
▶ আদালতের বাইরে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধের নিষ্পত্তি করাই লোক আদালতের উদ্দেশ্য।
43. লোক আদালত সম্পর্কে কী বলা হয়?
▶ লোক আদালত ব্যবস্থাকে ‘বিরোধ নিস্পত্তির এক অভিনব বিকল্প রূপ’ বলে চিহ্নিত করা হয়।
44. ভারতে লোক আদালত ব্যবস্থার সূত্রপাত কোথায় হয়?
▶ ভারতে লোক আদালত ব্যবস্থার সূত্রপাত গুজরাটে হয়।
45. বর্তমানে লোক আদালতগুলি কীসের মাধ্যমে আইনগত ভিত্তি লাভ করেছে?
▶ আইনগত পরিসেবা কর্তৃপক্ষ আইন, ১৯৮৭-এর মাধ্যমে বর্তমানে লোক আদালতগুলি আইনগত ভিত্তি লাভ করেছে।
46. লোক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করা যায় কি?
▶ না, লোক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় না।
48. কত সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইনে ত্রিস্তরবিশিষ্ট ক্রেতা আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে?
▶ ১৯৮৬ সালে ক্রেতা সুরক্ষা আইনে ত্রিস্তরবিশিষ্ট ক্রেতা আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
49. ক্রেতা আদালতগুলিকে কী বলে চিহ্নিত করা হয়?
▶ ক্রেতা আদালতগুলিকে ‘বিশেষ আদালত’ বা ‘বিশেষ উদ্দেশ্যসাধক আদালত’ বলে চিহ্নিত করা যায়।
50. ক্রেতা আদালতের গঠন কীরূপ?
▶ ক্রেতা আদালতের গঠন পিরামিডের মতো।
51. ক্রেতা আদালতের সর্বনিম্নস্তরের আদালতের নাম কী?
▶ ক্রেতা আদালতের সর্বনিম্নস্তরের আদালতের নাম হল জেলা আদালত।
52. ভারতের প্রতিটি রাজ্যে ক-টি করে রাজ্য কমিশন থাকে?
▶ ভারতের প্রতিটি রাজ্যে একটি করে রাজ্য কমিশন থাকে।
53. ক্রেতা সুরক্ষা-সম্পর্কিত রাজ্য কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য ন্যূনতম বয়স কত হতে হবে?
▶ ক্রেতা সুরক্ষা-সম্পর্কিত রাজ্য কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য ৩৫ বছর বয়স হতে হয়।
54. ক্রেতা সুরক্ষা-সম্পর্কিত রাজ্য কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
▶ ক্রেতা সুরক্ষা-সম্পর্কিত রাজ্য কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক হতে হয়।
55 . রাজ্য কমিশনের সদস্যদের মধ্যে মহিলা সদস্য থাকা কি বাধ্যতামূলক?
▶ হ্যাঁ, রাজ্য কমিশনের সদস্যদের মধ্যে একজন মহিলা সদস্য থাকতেই হবে।
56. রাজ্য কমিশনের সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ কত বছর?
▶ রাজ্য কমিশনের সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ ৫ বছর অথবা ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত।
57.রাজ্য কমিশনের সদস্যগণ পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন কি?
▶ হ্যাঁ, রাজ্য কমিশনের সদস্যগণ পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন।
58. রাজ্য কমিশনের কোনো সদস্য কত দিনের জন্য পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন?
▶ রাজ্য কমিশনের কোনো সদস্য পাঁচ বছরের জন্য পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন।
59. রাজ্য কমিশনের সভাপতি পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন?
▶ হ্যাঁ, রাজ্য কমিশনের সভাপতি পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন।
60. রাজ্য কমিশনের সভাপতি কত দিনের জন্য পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন?
▶ রাজ্য কমিশনের সভাপতি পাঁচ বছরের জন্য পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন।
61. জেলা কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে কোথায় আপিল করা যায়?
▶ জেলা কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য কমিশনে আপিল করা যায়।
62. রাজ্য কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি কার দ্বারা নির্ধারিত হয়?
▶ রাজ্য কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি রাজ্য সরকার দ্বারা নির্ধারিত হয়।
63. ভোগ্যপণ্য বা পরিসেবার ক্ষেত্রে কত মূল্য সম্পর্কিত বিষয় রাজ্য কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত?
▶ ভোগ্যপণ্য বা পরিসেবার ক্ষেত্রে ২০ লক্ষ টাকার বেশি, কিন্তু ১ কোটি টাকার কম মূল্য-সম্পর্কিত বিষয় রাজ্য কমিশনের এক্তিয়ারভুক্ত।
64. জাতীয় কমিশনের সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
▶ জাতীয় কমিশনের সদস্যদের যে-কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হতে হয়।
65. রাজ্য কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় কমিশনে আপিল করার জন্য কী করতে হয়?
▶ রাজ্য কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে জাতীয় কমিশনে আপিল করার জন্য রাজ্য কমিশনের রায়ে যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়, তার ৫০ শতাংশ বা ৩৫০০০ টাকার মধ্যে যেটি কম হবে, তা জমা দিতে হয়।
67. জেলা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে রাজ্য কমিশনে আপিল করতে হলে কত পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয়?
▶ জেলা আদালতের রায়ে যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়, তার ৫০ শতাংশ বা ২৫০০০ টাকার মধ্যে যেটি কম হবে, সেই পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয়।
68. জাতীয় কমিশন কাদের নিয়ে গঠিত হয়?
▶ জাতীয় কমিশন একজন সভাপতি ও কিছু সদস্য নিয়ে গঠিত হয়।
69.জাতীয় কমিশনের সভাপতি হওয়ার যোগ্য কে?
▶ সুপ্রিমকোর্টের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক জাতীয় কমিশনের সভাপতি হওয়ার যোগ্য।
70. জাতীয় কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কমপক্ষে কত বছর বয়স হতে হয়?
▶ জাতীয় কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স হতে হয়।
71. জাতীয় কমিশনের সদস্যদের মধ্যে কমপক্ষে কতজন মহিলা থাকে?
▶ জাতীয় কমিশনের সদস্যদের মধ্যে একজন মহিলা থাকে।
72. রাজ্য কমিশনের সভাপতি কে হন?
▶ সংশ্লিষ্ট রাজ্যের হাইকোর্টের কোনো কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রাজ্য কমিশনের সভাপতি হন।
73.রাজ্য কমিশনের সদস্যগণ কীভাবে নির্বাচিত হন?
▶ রাজ্য সরকার কর্তৃক গঠিত এক নির্বাচন কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে রাজ্য কমিশনের সদস্যগণ নির্বাচিত হন।
74. জাতীয় কমিশনের সদস্যগণ কীভাবে নির্বাচিত হন?
▶ কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক গঠিত এক নির্বাচন কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে জাতীয় কমিশনের সদস্যগণ নির্বাচিত হন।
75. জাতীয় কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ কত বছর?
▶ জাতীয় কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের কার্যকালের মেয়াদ পাঁচ বছর অথবা ৭০ বছর বয়স পর্যন্ত।
76. জাতীয় কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের পুনর্নির্বাচিত করা যায় কি?
▶ হ্যাঁ, ৫ বছরের জন্য জাতীয় কমিশনের সভাপতি ও সদস্যদের পুনর্নির্বাচিত করা যায়, তবে ৭০ বছর বয়স হলেই অবসর নিতে হয়।
78. জাতীয় কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে কোথায় আপিল করা যায়?
▶ জাতীয় কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়।
79. জাতীয় কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করার নিয়মাবলি কী?
▶ জাতীয় কমিশনের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করার নিয়মাবলি হল জাতীয় কমিশন যে পরিমাণ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছে, তার ৫০ শতাংশ বা ৫০,০০০ টাকার মধ্যে যেটি কম হবে, সেই পরিমাণ টাকা জমা দিতে হয়।
80. কোনো ব্যক্তির অভিযোগকে জাতীয় কমিশন অসার বা হয়রানিমূলক মনে করলে কমিশন কী করতে পারে?
▶ কমিশন অভিযোগটি বাতিল করে দেয় এবং এই ধরনের অভিযোগ আনার জন্য অনধিক ১০,০০০ টাকা জরিমানা করতে পারে।
81. জেলা ক্রেতা আদালতে কীভাবে অভিযোগ দায়ের হয়?
▶ জেলা ক্রেতা আদালতে ব্যক্তিগতভাবে অথবা কোনো প্রতিনিধির মাধ্যমে অথবা ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে অভিযোগপত্রটি আদালতে জমা দেওয়া যায়।
▶ নগর দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে আপিল করা যায়।
80. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের কোন্ বিভাগের ভূমিকা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ?
▶ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের বিচার বিভাগের ভূমিকা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
81. ভারতের বিচারব্যবস্থার স্বরূপ কীরূপ?
▶ ভারতের বিচারব্যবস্থার স্বরূপ হল অখণ্ড।
82. ভারতের সর্বোচ্চ ফৌজদারি আদালতের নাম কী?
▶ ভারতের সর্বোচ্চ ফৌজদারি আদালতের নাম সুপ্রিমকোর্ট।
83. ভারতীয় সংবিধানের কততম সংশোধন অনুযায়ী পার্লামেন্ট প্রশাসনিক আদালত গঠন করতে পারে?
▶ ভারতীয় সংবিধানের ৪২তম সংশোধন অনুযায়ী পার্লামেন্ট প্রশাসনিক আদালত গঠন করতে পারে।
84. ভারতীয় সংবিধানের ৪২তম সংশোধন কত সালে হয়?
▶ ভারতীয় সংবিধানের ৪২তম সংশোধন ১৯৭৬ সালে হয়।
85. মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট যেমন কোনো আইন স্বাভাবিক ন্যায়নীতি বোধের বিরোধী কি না তা বিচার করতে পারে, ভারতের সুপ্রিমকোর্ট কি তা পারে?
▶ না, ভারতের সুপ্রিমকোর্ট মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের মতো কোনো আইন স্বাভাবিক ন্যায়নীতি বোধের বিরোধী কি না তা বিচার করতে পারে না।
86. ভারতের সুপ্রিমকোর্টে বকেয়া মামলার সংখ্যা ৫২ ১৭৯ টি. এ কথা জানা যায়?
▶ভারতের তৎকালীন আইনমন্ত্রী ২০১১ সালে রাজ্যসভায় এই তথ্য পেশ করেন।
87. ভারতীয় বিচারব্যবস্থার গঠন কীসের মতো?
▶ ভারতীয় বিচারব্যবস্থার গঠন মিশরের পিরামিডের মতো।
88. সুপ্রিমকোর্টের কার্যনির্বাহী বিচারপতি কাদের মধ্যে থেকে নিযুক্ত হন?
▶ সুপ্রিমকোর্টের কার্যনির্বাহী বিচারপতি সুপ্রিমকোর্টের অন্য বিচারপতিদের মধ্যে থেকে নিযুক্ত হন।
89. ১৯৭৩ সালে জ্যেষ্ঠতার নীতি ভেঙে কাকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়?
▶ ১৯৭৩ সালে জ্যেষ্ঠতার নীতি ভেঙে এ এন রায়কে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়।
90. সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টের বিচারপতিকে অপসারণ করার রাষ্ট্রপতির নির্দেশ কি আদালতে বিচারযোগ্য?
▶ হ্যাঁ, সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টের বিচারপতিকে অপসারণ করার রাষ্ট্রপতির নির্দেশ আদালতে বিচারযোগ্য।
91. বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি যে পার্লামেন্ট প্রণীত, তা কত সালের আইনানুযায়ী স্থির হয়েছে?
▶ বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি ২০০৯ সালের পার্লামেন্ট-প্রণীত আইনের মাধ্যমে স্থির হয়েছে।
92. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি কোন্ তহবিল থেকে প্রদান করা হয়?
▶ বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে প্রদান করা হয়।
93. ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকা বলতে কী বোঝায়?
▶ কোনো মামলা সরাসরি সুপ্রিমকোর্টের যে এলাকায় দাখিল করা যায়, তাকেই মূল এলাকা বলে।
94. আপিল এলাকা বলতে কী বোঝায়?
▶ সুপ্রিমকোর্টের যে এলাকায় নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যায়, সেই এলাকাকেই আপিল এলাকা বলে।
95. বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে আপিল বলতে কী বোঝায়?
▶ ভারতের যে-কোনো আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্ট আপিল করার বিশেষ অনুমতি দিলে, সেই আপিলকে বিশেষ অনুমতির মাধ্যমে আপিল বলে।
96. ভারতের সুপ্রিমকোর্ট সম্পর্কে আল্লাদি কৃয়স্বামী আয়ার কী বলেছেন?
▶ আল্লাদি কৃয়স্বামী আয়ারের মতে, ভারতের সুপ্রিমকোর্ট যে কোনো দেশের সর্বোচ্চ আদালত অপেক্ষা অধিক ক্ষমতার অধিকারী।
97. ১৯৬৭ সালে গোলকনাথ মামলায় সুপ্রিমকোর্ট কী রায় দেয়?
▶ ১৯৬৭ সালে গোলকনাথ মামলায় সুপ্রিমকোর্ট রায় দেয় যে পার্লামেন্ট মৌলিক অধিকার বিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারবে না।
98. ১৯৮০ সালের মিনার্ভা মিলস্ মামলায় সুপ্রিমকোর্ট কী রায় দেয়?
▶ পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানের মৌল কাঠামোর কোনো পরিবর্তন করতে পারবে না।
99. ১৯৭৩ সালে সুপ্রিমকোর্ট ‘মিসা’ সম্পর্কে কী রায় দেয়?
▶ ‘মিসা’র ১৭ (ক) অনুচ্ছেদটি বাতিল করা হয়।
100. ভারতীয় সংবিধানের ১৩ নং ধারায় কী ব্যবস্থা করা হয়েছে?
▶ ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলিকে আইনসভার স্বেচ্ছাচারিতার হাত থেকে রক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
101. ১৯৭৩ সালের কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সুপ্রিমকোর্ট কী রায় দেয়?
▶ ১৯৭৩ সালের কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সুপ্রিমকোর্ট রায় দেয় যে পার্লামেন্ট সংবিধানের মৌল কাঠামো ছাড়া অন্য সব অংশের পরিবর্তন করতে পারে।
102. ভারতের সুপ্রিমকোর্টে দায়ের হওয়া শাহবানু মামলার মূল বিষয় কী ছিল?
▶ ভারতের সুপ্রিমকোর্টে দায়ের হওয়া শাহবানু মামলার মূল বিষয় হল তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীকে বহন করতে হবে।
103. ভারতের বিচারব্যবস্থা কী ধরনের?
▶ ভারতের বিচারব্যবস্থা এক ও অখণ্ড প্রকৃতির।
104. সুপ্রিমকোর্ট কী ধরনের আদালত?
▶ সুপ্রিমকোর্ট প্রধান আপিল আদালত।
105. ভারতের শাসনব্যবস্থায় কি দ্বৈত বিচারব্যবস্থার নীতি অনুসৃত হয়েছে?
▶ না, ভারতের শাসনব্যবস্থায় দ্বৈত বিচারব্যবস্থার নীতি অনুসৃত হয়নি।
106. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন কখন হ্রাস করা যায়?
▶ সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন জরুরি অবস্থায় হ্রাস করা যায়।
107. রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসা কোথায় হয়?
▶ রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসা সুপ্রিমকোর্টে হয়।
108 দুই বা ততোধিক রাজ্য সরকারের মধ্যে অথবা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে আইনগত প্রশ্নে বিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসা কোথায় হয়?
► দুই বা ততোধিক রাজ্য সরকারের মধ্যে অথবা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে আইনগত প্রশ্নে বিরোধ দেখা দিলে তার মীমাংসা সুপ্রিমকোর্টে হয়।
109. ভারতের সুপ্রিমকোর্টের আইনের ন্যায়সংগত যৌক্তিকতা বিচারের ক্ষমতা আছে কি?
▶ না, ভারতের সুপ্রিমকোর্টের আইনের ন্যায়সংগত যৌক্তিকতা বিচারের ক্ষমতা নেই।
110. রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান কে?
▶ সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করান।
111. কোন্ বিভাগকে ‘মৌলিক অধিকারের রক্ষক’ বলা হয়?
▶ বিচার বিভাগকে ‘মৌলিক অধিকারের রক্ষক’ বলা হয়।
112. ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তা কোন্ সময় থেকে লক্ষ করা যায়?
▶ ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়।
113. বিচারপতিদের কোনো রায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে পার্লামেন্টে কি আলোচনা করা যায়?
▶ সংবিধানের ১২১ নং ধারা অনুসারে বিচারপতিদের কোনো রায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে পার্লামেন্টে কোনো প্রশ্ন তোলা বা আলোচনা করা যায় না।
114. কোন্ কোন্ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যেতে পারে?
▶① দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জেলা জজ ও অধস্তন জেলা জজের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে এবং ② কয়েকটি নির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে সহকারী দায়রা জজ বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যেতে পারে।
115. রাষ্ট্রপতি কী কারণে হাইকোর্টের কোনো বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে পারেন?
▶ রাষ্ট্রপতি প্রমাণিত অসদাচরণ বা অক্ষমতার অভিযোগে হাইকোর্টের বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে পারেন।
116. হাইকোর্ট কীভাবে গঠিত হয়?
▶ সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি হাইকোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও অন্য কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হয়। অন্যান্য বিচারপতির সংখ্যা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করেন (২৫১ নং ধারা)।
117. হাইকোর্টের কোন্ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকায় আপিল করা যায়?
▶ সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকায় আপিল করা যায়।
118. এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে একজন বিচারকের বদলি সম্পর্কে সংবিধানে কী বলা হয়েছে?
▶ ভারতের সংবিধানের ২২২(১) নং ধারা অনুযায়ী, ভারতের রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির পরামর্শ অনুযায়ী এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে কোনো বিচারপতিকে বদলি করতে পারেন।
119. ভারতের কোনো হাইকোর্ট জারি করতে পারে এমন পাঁচটি হুকুমনামার নাম করো।
▶ ভারতীয় সংবিধানের ২২৬ (১) নং ধারা অনুসারে ভারতের কোনো হাইকোর্ট যেসব হুকুমনামা জারি করতে পারে তা হল-① বন্দী- প্রত্যক্ষীকরণ, ② পরমাদেশ, ③ প্রতিষেধ, অধিকারপৃচ্ছা এবং ⑤ উৎপ্রেষণ।
120. হাইকোর্টের বিচারকরা কীভাবে নিযুক্ত হন?
▶ ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতিরা ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিযুক্ত করেন।
121. কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আর কোন্ অঞ্চলের মামলার বিচার করে?
▶ কলকাতা হাইকোর্ট পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আন্দামান ও নিকোবর দীপপুঞ্জের মামলার বিচার করে।
122. রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতিকে কত বছরের জন্য নিয়োগ করতে পারেন?
▶ রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতিকে অনধিক ২ বছরের জন্য নিয়োগ করতে পারেন।
123. হাইকোর্টের বিচারকদের বেতন, ভাতা, ইত্যাদি কোন্ তহবিল থেকে প্রদান করা হয়?
▶ হাইকোর্টের বিচারকদের বেতন, ভাতা, ইত্যাদি রাজ্যের সঞ্চিত তহবিল থেকে প্রদান করা হয়।
124. ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে কার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়?
▶ ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দায়রা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়।
125. হাইকোর্ট ভারতীয় সংবিধানের কত নং ধারা অনুযায়ী লেখ জারি করতে পারে?
▶ সংবিধানের ২২৬ নং ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট লেখ জারি করতে পারে।
126. হাইকোর্ট কোন্ উদ্দেশ্যে লেখ জারি করতে পারে?
▶ মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ও অন্য যে-কোনো উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট লেখ জারি করতে পারে।
3. Short Question Answer
1. ভারতে বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা রক্ষায় যে-কোনো দুটি সাংবিধানিক ব্যবস্থার উল্লেখ করো।
▶ ভারতের বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা রক্ষার দুটি সাংবিধানিক ব্যবস্থা হল-① প্রমাণিত ‘অসদাচরণ’ ও ‘অক্ষমতা’ ছাড়া অন্য কোনো কারণে কোনো বিচারপতিকে তাঁর কার্যকাল শেষ হওয়ার আগে অপসারণ করা যায় না, ② পার্লামেন্টে বিচারপতিদের রায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলা যায় না।
2. সুপ্রিমকোর্ট কীভাবে গঠিত হয়?
▶ বর্তমানে একজন প্রধান বিচারপতি এবং ৩০ জন সহকারী বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত হয়।
3. সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টের কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতিকে কখন নিয়োগ করা হয়?
▶ প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হলে বা অনুপস্থিতির কারণে কিংবা প্রধান বিচারপতি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে রাষ্ট্রপতি ‘কার্যনির্বাহী প্রধান বিচারপতি’ নিয়োগ করেন।
4. সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত যে-কোনো একটি বিষয় উল্লেখ করো।
▶ সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত একটি বিষয় হল-আইনগত অধিকারের প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এক বা একাধিক রাজ্যের বিরোধের মীমাংসা।
5. সুপ্রিমকোর্টের আপিল এলাকাভুক্ত যে-কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।
▶ দেওয়ানি, ফৌজদারি বা অন্য কোনো মামলায় হাইকোর্ট যদি এই মর্মে প্রমাণপত্র দেয় যে সংশ্লিষ্ট মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত, তাহলে ওই মামলার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়।
6. সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি কীভাবে নিযুক্ত হন?
▶ সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। অবশ্য নিয়োগের আগে রাষ্ট্রপতি প্রয়োজনমতো সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।
7. বিচারবিভাগীয় স্বাতন্ত্র্য বলতে কী বোঝ?
▶ বিচারপতিদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য আবশ্যক। বিচারবিভাগীয় স্বাতন্ত্র্য বলতে বোঝায় বিচার বিভাগকে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা।
৪.বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তা বলতে কী বোঝায়?
অথবা, বিচার বিভাগীয় অতিসক্রিয়তা বলতে কী বোঝ?
▶ বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তা বলতে আদালতের সেই ভূমিকাকে বোঝায় যা আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের কর্মক্ষেত্রের ওপর বিচার বিভাগের প্রাধান্য বিস্তারকে সূচিত করে।
9. রাষ্ট্রপতি কখন সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করেন?
▶ রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন আইন বা তথ্য-সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সর্বজনীন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বা দেখা দিতে পারে, তাহলে তিনি সেই বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ চাইতে পারেন [১৪৩ (১) নং ধারা]।
10. সংবিধানের কোন্ ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্য লেখ জারি করতে পারে?
▶ ৩২ নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট এবং ২২৬ নং ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট মৌলিক অধিকার রক্ষায় লেখ জারি করতে পারে।
11. জনস্বার্থমূলক মামলার সঙ্গে সাধারণ মামলার তফাত কী?
▶ জনস্বার্থমূলক মামলায় শুধুমাত্র জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিই আদালত বিচারবিবেচনা করে থাকে। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিকে নিয়ে সাধারণ মামলা উত্থাপিত হয়।
12. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের কীভাবে অপসারণ করা যায়?
▶ সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ করার ব্যাপারে ইমপিচমেন্ট পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়। এই পদ্ধতি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কোনো বিচারপতিকে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগের ভিত্তিতে অপসারণ করতে পারেন।
13. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের কীভাবে নিযুক্ত করা হয়?
▶ সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। তাঁদের নিয়োগের আগে রাষ্ট্রপতিকে অবশ্যই প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করতে হবে।
14. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের কার্যকাল কত দিন?
▶ সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন।
15. ট্রাইবিউনাল কী?
▶ ট্রাইব্যুনাল হল আইন নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে গঠিত অস্থায়ী আদালত, যার উদ্দেশ্য হল নির্দিষ্ট বিষয় বিচার করা।
16. ভারতে অখণ্ড বিচারব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
▶ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে দ্বৈত বিচারব্যবস্থার পরিবর্তে সারা দেশের জন্য অখণ্ড বিচারব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই অখণ্ড বিচারব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। এ ছাড়া রয়েছে অঙ্গরাজ্যগুলির হাইকোর্ট এবং বিভিন্ন ধরনের অধস্তন আদালত।
17. ভারতে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য দুটি লেখ-এর নাম উল্লেখ করো। অথবা, ভারতের সুপ্রিমকোর্টের দুটি লেখ উল্লেখ করো।
▶ মৌলিক অধিকার বলবৎ করার জন্য দুটি লেখ হল① অধিকারপৃচ্ছা এবং ② পরমাদেশ।
18. ভারতের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন আদালতের নাম লেখো।
▶ ভারতের সর্বোচ্চ আদালত হল সুপ্রিমকোর্ট এবং সর্বনিম্ন আদালত হল ন্যায় পঞ্চায়েত।
19. ভারতের বিচারব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
▶ ভারতের বিচারব্যবস্থার দুটি বৈশিষ্ট্য হল-① ভারতের বিচারব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত এবং খণ্ড প্রকৃতির, ② সারা ভারতে প্রায় একই দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইন অনুযায়ী বিচারকার্য সম্পাদন করা হয়।
20. ‘দেওয়ানি আপিল’ বলতে কী বোঝায়? অথবা, দেওয়ানি মামলায় সুপ্রিমকোর্টে কখন আপিল করা যায়?
▶ সংবিধানের ১৩৪ নং ধারা অনুযায়ী কোনো দেওয়ানি মামলায় হাইকোর্ট যদি এই মর্মে প্রমাণপত্র দেয় যে① মামলাটির সঙ্গে আইনের সাধারণ রূপের কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে এবং② হাইকোর্টের মতে, প্রশ্নটির মীমাংসা সুপ্রিমকোর্টে হওয়া প্রয়োজন, তাহলে সুপ্রিমকোর্টে এরূপ দেওয়ানি মামলার জন্য আপিল করা যাবে।
21. রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ চেয়েছেন এমন কয়েকটি উদাহরণ দাও।
▶ ১৯৫৭ সালে কেরালা শিক্ষা বিল বিষয়ক প্রশ্নে, ১৯৫৯ সালে বেরুবাড়ি সম্পর্কে ভারত-পাকিস্তান চুক্তি, ১৯৮২ সালে জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্বাসন বিল, কাবেরীর জলবণ্টন প্রশ্নে কর্ণাটক-তামিলনাড়ু বিরোধ ইত্যাদি।
22. ভারতের সুপ্রিমকোর্টকে ‘গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা’ বলা হয় কেন?
▶ সুপ্রিমকোর্ট মৌলিক অধিকারগুলিকে যথাযথভাবে রক্ষা করে এবং যাবতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধের মীমাংসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে বিচারের দায়িত্ব পালন করে গণতন্ত্রকে স্বচ্ছ এবং পবিত্র রাখার চেষ্টা করে। তাই সুপ্রিমকোর্টকে ‘গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা’ বলে অভিহিত করা হয়।
23. সুপ্রিমকোর্টের বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা বলতে কী বোঝায়?
▶ কেন্দ্র ও অঙ্গরাজ্যগুলির দ্বারা প্রণীত সাংবিধানিক আইন, আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা বিচারকে সুপ্রিমকোর্টের বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা বলে।
24. কোন্ কোন্ পদাধিকারীর বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট পরমাদেশ জারি করতে পারে না?
▶ ভারতের রাষ্ট্রপতি এবং কোনো রাজ্যের রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট পরমাদেশ জারি করতে পারে না।
25. ‘আইনের যথাবিহিত পদ্ধতি’ (Due Process of Law) বলতে কী বোঝায়?
▶ ‘আইনের যথাবিহিত পদ্ধতি’ অনুযায়ী, সুপ্রিমকোর্ট আইনটি যথাযথ সাংবিধানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি হয়েছে কি না দেখে এবং তা স্বাভাবিক ন্যায়নীতি লঙ্ঘন করেছে কি না তাও বিচার করে। উল্লেখ্য যে, ভারতের সুপ্রিমকোর্টের এই ক্ষমতা নেই।
26. মার্কিন বিচারবিভাগীয় সমীক্ষার সঙ্গে ভারতীয় বিচারবিভাগীয় সমীক্ষার পার্থক্য দেখাও।
▶ মার্কিন বিচার বিভাগ এবং ভারতীয় বিচার বিভাগ উভয়ই আইনটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এবং যথাযথ পদ্ধতিতে প্রণীত হয়েছে কি না বিচার করে দেখে। তবে আইনটি ন্যায়সংগত বা যুক্তিসংগত কি না তা বিচার করে দেখতে পারে মার্কিন বিচার বিভাগ, কিন্তু ভারতীয় বিচার বিভাগের সেই ক্ষমতা নেই।
27. ‘আইন নির্দিষ্ট পদ্ধতি’ বলতে কী বোঝায়?
▶ ‘আইন নির্দিষ্ট পদ্ধতি’ বলতে উপযুক্ত আইনসভা কর্তৃক বিধিসম্মতভাবে প্রণীত আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত পদ্ধতিকে বোঝানো হয়। এখানে আইন বলতে পার্লামেন্ট ও রাজ্য আইনসভা প্রণীত আইনের কথা বলা হয়েছে।
28. বিচারব্যবস্থায় ‘প্রবীণতার নীতি’ কাকে বলে?
▶ সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতির পদে নিযুক্ত করা হয়। একে বলে প্রবীণতার নীতি।
29. সুপ্রিমকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি কীভাবে নিযুক্ত হন?
▶ কোনো মামলার বিচারের সময় প্রয়োজনীয় সংখ্যক অর্থাৎ ‘কোরাম’ সংখ্যক বিচারপতি পাওয়া না গেলে, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমতিতে এবং সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে সেই হাইকোর্ট থেকে কোনো বিচারপতিকে সুপ্রিমকোর্টের অস্থায়ী বিচারপতি হিসেবে কাজ করার অনুরোধ জানাতে পারেন।
30. সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির পদপ্রার্থীর দুটি যোগ্যতা নির্দেশ করো। অথবা, সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগের দুটি যোগ্যতামানের উল্লেখ করো।
▶ সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি পদপ্রার্থীর দুটি যোগ্যতা হল-① ভারতীয় নাগরিকত্ব। ② অন্তত একাদিক্রমে পাঁচ বছর কোনো হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা।
31. কোন্ ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট নিজেই আপিল করার অনুমতি দিতে পারে?
▶ বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে হাইকোর্ট শংসাপত্র প্রদানে অস্বীকৃত হলে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত প্রশ্ন জড়িত এমন যে-কোনো মামলার বিচারের জন্য সুপ্রিমকোর্ট নিজেই আপিল করার বিশেষ অনুমতি দিতে পারে।
32. ফৌজদারি মামলার জন্য যে তিনটি ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়, তার মধ্যে যে-কোনো দুটির উল্লেখ করো।
▶ নিম্নতর আদালতের বিচারে নির্দোষ বলে প্রমাণিত কোনো ব্যক্তিকে মতাদণ্ডে দণ্ডিত করলে অথবা নিম্ন আদালতে বিচার চলাকালীন কোনো মামলা নিজের হাতে তুলে নিয়ে হাইকোর্ট অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রাণদণ্ডের আদেশ দিলে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়।
33. যেসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন, সেগুলির মধ্যে যে-কোনো দুটির উল্লেখ করো।
▶ রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন যে, আইন বা তথ্য সংক্রান্ত কোনো সর্বজনীন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অথবা সংবিধান চালু হওয়ার আগে সম্পাদিত সন্ধি, চুক্তি, সনদ, অঙ্গীকারপত্র প্রভৃতির মধ্যে যেগুলি সংবিধান চালু হওয়ার পরেও বলবৎ আছে সেগুলি নিয়ে কোনোরকম বিরোধ দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ চাইতে পারেন।
34. নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সুপ্রিমকোর্টের দুটি ইতিবাচক ভূমিকার উদাহরণ দাও।
▶ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় সুপ্রিমকোর্টের দুটি ইতিবাচক ভূমিকা হল বধূহত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চরম দণ্ড দেওয়ার সপক্ষে রায় দেওয়া (১৯৮৩) এবং বেগার শ্রমিকদের মুক্তি ও পুনর্বাসনের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেওয়া (১৯৮৩)।
35. সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে সুপ্রিমকোর্টের ইতিবাচক ভূমিকার যে-কোনো দুটি উদাহরণ দাও।
▶ সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে সুপ্রিমকোর্টের ইতিবাচক ভূমিকার দুটি উদাহরণ হল তালাকপ্রাপ্ত মুসলিম মহিলাদের ভরণ- পোষণের দায়িত্ব স্বামীকে বহন করার নির্দেশদান (১৯৮৬) এবং সরকারি আমলাদের দুর্নীতির তদন্ত করার ক্ষেত্রে সিবিআই-কে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান (১৯৯৭)।
36. সাম্প্রতিককালে ভোটদানের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্টের ঐতিহাসিক রায় কী ছিল?
▶ সম্প্রতি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিমকোর্ট ভারতীয় নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারসাধনের উদ্দেশ্যে এক যুগান্তকারী রায়ে ভোটদানের অপছন্দের সময় কোনো প্রার্থীকে পছন্দ না হলে ভোটদাতাদের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ‘না’ সূচক ভোটদানকে বৈধ বলে ঘোষণা করে।
37. কোন্ কোন্ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যেতে পারে?
▶① দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জেলা জজ ও অধস্তন জেলা জজের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে এবং ② কয়েকটি নির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে সহকারী দায়রা জজ বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যেতে পারে।
38. রাষ্ট্রপতি কী কারণে হাইকোর্টের কোনো বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে পারেন?
▶ রাষ্ট্রপতি প্রমাণিত অসদাচরণ বা অক্ষমতার অভিযোগে হাইকোর্টের বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে পারেন।
39. হাইকোর্ট কীভাবে গঠিত হয়?
▶ সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি হাইকোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও অন্য কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হয়। অন্যান্য বিচারপতির সংখ্যা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করেন (২৫১ নং ধারা)।
40. হাইকোর্টের কোন্ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকায় আপিল করা যায়?
▶ সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকায় আপিল করা যায়।
41. এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে একজন বিচারকের বদলি সম্পর্কে সংবিধানে কী বলা হয়েছে?
▶ ভারতের সংবিধানের ২২২(১) নং ধারা অনুযায়ী, ভারতের রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির পরামর্শ অনুযায়ী এক হাইকোর্ট থেকে অন্য হাইকোর্টে কোনো বিচারপতিকে বদলি করতে পারেন।
42. ভারতের কোনো হাইকোর্ট জারি করতে পারে এমন পাঁচটি হুকুমনামার নাম করো।
▶ ভারতীয় সংবিধানের ২২৬ (১) নং ধারা অনুসারে ভারতের কোনো হাইকোর্ট যেসব হুকুমনামা জারি করতে পারে তা হল-① বন্দী- প্রত্যক্ষীকরণ, ② পরমাদেশ, ③ প্রতিষেধ, অধিকারপৃচ্ছা এবং ⑤ উৎপ্রেষণ।
43. হাইকোর্টের বিচারকরা কীভাবে নিযুক্ত হন?
▶ ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতিরা ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিযুক্ত করেন।
44. হাইকোর্টের বিচারপতির পদে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতা কী?
▶ হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য-① বিচারপতিকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, ② ভারতের কোনো বিচারালয়ে কমপক্ষে ১০ বছর যে-কোনো বিচারবিভাগীয় পদে কাজের অভিজ্ঞতা অথবা অন্তত ১০ বছর কোনো হাইকোর্টে বা দুই বা ততোধিক হাইকোর্টে একাদিক্রমে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
45. কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্টের চেয়ে বেশি ক্ষমতা ভোগ করে?
▶ হাইকোর্ট সুপ্রিমকোর্টের চেয়ে বেশি ক্ষমতা ভোগ করে এমন দুটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র হল-① নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ছাড়াও ‘অন্য যে-কোনো উদ্দেশ্যে’ হাইকোর্ট লেখ/নির্দেশ জারি করতে পারে। কিন্তু এই ক্ষমতা ভারতের সুপ্রিমকোর্টের নেই। তা ছাড়া জরুরি অবস্থাতেও হাইকোর্টের ‘বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ’ ইত্যাদি লেখ জারির অধিকারকে সাময়িকভাবেও খর্ব করা যায় না।
46. কোন্ ক্ষেত্রে হাইকোর্ট অধস্তন আদালত থেকে নিজের হাতে মামলা তুলে নিতে পারে?
▶ সংবিধানের ২২৮ নং ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট যদি মনে করে মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত আছে, তাহলে নিম্ন আদালত থেকে কোনো মামলা হাইকোর্ট নিজের হাতে তুলে নিতে পারে।
47. হাইকোর্টগুলির মূল এলাকা কী?
▶ রাজস্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় হাইকোর্টের মূল এলাকায় স্থান পেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলাকেও মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে সব হাইকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা নেই। শুধুমাত্র কলকাতা, চেন্নাই ও মুম্বাই হাইকোর্টের এই ক্ষমতা রয়েছে।
4. Long Question Answer
1. ভারতীয় বিচারব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভারতীয় বিচারব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য
ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোয় বিচারব্যবস্থার একটি স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ ভূমিকা স্বীকৃত হয়েছে। ভারতীয় বিচারব্যবস্থার লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
[1] এক ও অখণ্ড বিচারব্যবস্থা: ভারতে দ্বৈত বিচারব্যবস্থার পরিবর্তে সারা দেশের জন্য এক ও অখণ্ড বিচারব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এই অখণ্ড বিচারব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। এ ছাড়া আছে অঙ্গরাজ্যগুলির সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট এবং বিভিন্ন ধরনের অধস্তন আদালত।
[2] যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের উপস্থিতি: ভারতীয় বিচারব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালতের উপস্থিতি। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টকে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত বলা হয়। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট একাধারে সংবিধানের অভিভাবক ও চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা হিসেবেও সুপ্রিমকোর্টের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
[3] অভিন্ন বিধিব্যবস্থার প্রচলন: ভারতের বিচারব্যবস্থার অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল সারা দেশের জন্য অভিন্ন বিধিব্যবস্থার প্রচলন। ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এবং অঙ্গরাজ্যগুলিতে কোনো পৃথক দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনের অস্তিত্ব নেই।
[4] বিশেষ আদালতের অস্তিত্ব: ভারতের বিচারব্যবস্থায় কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ আদালতের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শিল্প আদালত (Industrial Court and Tribunals), সামরিক বাহিনীর জন্য সামরিক আদালত (Military Courts), সরকারি কর্মচারী, স্থানীয় সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের চাকরি-সম্পর্কিত যাবতীয় বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রশাসনিক আদালত (Administrative Tribunal) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
[5] লোক আদালতের অস্তিত্ব: অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এবং মামলার ব্যয়ভার ও সময় হ্রাসের জন্য লোক আদালত গঠন করা হয়। ১৯৮৫ সালে লোক আদালতের সূচনা ঘটে। প্রসঙ্গত বলা যায়, ফৌজদারি বিরোধের ক্ষেত্রে লোক আদালতের কোনো এক্তিয়ার নেই। লোক আদালতে পথ-দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণজনিত দাবি এবং বিবাহ- সম্পর্কিত বিরোধের দ্রুত মীমাংসা করা হয়। লোক আদালত ভারতের বিচারব্যবস্থায় একটি সাম্প্রতিক মৌলিক সংযোজন।
[6] ক্রেতা আদালতের অস্তিত্ব: ক্রেতাদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্য ১৯৮৬ সালে ‘ক্রেতা সুরক্ষা আইন’ অনুসারে ক্রেতা আদালত গঠন করা হয়। ভারতীয় বিচারব্যবস্থার এটি একটি অভিনব বৈশিষ্ট্য। ক্রেতাদের স্বার্থ দেখাই হল এই আদালতের মূল কাজ। কোনো ক্রেতা যখন কোনো জিনিস বা পরিশোর কিনতে গিয়ে প্রতারিত বা বঞ্চিত হন তখন যে আইনগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি প্রতিকার পেতে পারেন তাকে বলা হয় ক্রেতা আদালত।
[7] স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা: ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় বিচারপতিরা যাতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সম্পাদন করতে পারেন সেজন্য সংবিধানে কয়েকটি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত বিধিব্যবস্থা, অবসরগ্রহণের পর কোনো আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা, বিচারপতিদের রায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টিকে পার্লামেন্টের ক্ষমতার বাইরে রাখা ইত্যাদি।
[৪] আইনগত সাম্যের স্বীকৃতি: ভারতের সংবিধানে আইনের দৃষ্টিতে সমতা (Equality before the law) ও আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষিত হওয়ার (Equal Protection of Law) নীতিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় এই দুটি নীতিকে অনুসরণ করা হয়েছে। তবে এই নীতিটির কিছু ব্যতিক্রমও লক্ষ করা যায়। সংবিধানের ৩৬১ নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপাল স্বপদে থাকাকালীন কয়েকটি বিশেষ ধরনের সুযোগসুবিধা ও অব্যাহতি ভোগ করে থাকেন। অন্যদিকে, আবার বিদেশি রাষ্ট্রের শাসক, বৈদেশিক রাষ্ট্রদূত এবং তাঁদের দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট বিদেশি কর্মীরা ভারতীয় আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত নন।
[9] প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ: ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাস্বতন্ত্রীকরণ নীতি পূর্ণাঙ্গরূপে গৃহীত হয়নি। এই কারণে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ বর্তমান। এই প্রসঙ্গে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগে শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণের কথা উল্লেখ করা যায়।
[10] বিশেষ আইনি সাহায্য: ভারতের মতো দেশে দরিদ্র জনসাধারণের পক্ষে অনেক সময় মামলার বিপুল ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হয় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী জনগণ যথাযথ ন্যায়বিচার লাভ থেকে বঞ্চিত হন। ভারতে বর্তমানে এই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য সরকারি আইনি সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
[11] বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা: ভারতীয় বিচারব্যবস্থার অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তা (Judicial Activism)। বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বলতে সেই কাজকে বোঝায় যা আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের কর্মক্ষেত্রের ওপর বিচার বিভাগের প্রাধান্য বিস্তারকে সূচিত করে। এক্ষেত্রে বিচারপতিরা শুধু যে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তাই নয়, তাঁরা গৃহীত ব্যবস্থাদির তদারকিও করে থাকেন। বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তায় সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট প্রচলিত এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত অনেক বিষয়ে ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে। এর ফলে বিচার বিভাগের ভূমিকার সম্প্রসারণ ঘটেছে।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ভারতীয় বিচারব্যবস্থা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে। সামঞ্জস্য রেখে ভারতীয় বিচারব্যবস্থা বর্তমানে সক্রিয় ও প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করে চলেছে। ভারতীয় শাসনব্যবস্থার এ এক আশাব্যঞ্জক দিক।
প্রশ্ন 2. ভারতে বিভিন্ন ধরনের আদালতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দাও।
উত্তর: বিভিন্ন ধরনের আদালতের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
[1] সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট: ভারতের অখন্ড বিচারব্যবস্থায় সবার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিমকোর্ট (Supreme Court)। সুপ্রিমকোর্টকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত বলা হয়। সুপ্রিমকোর্টের পরবর্তী পর্যায়ে আছে রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হাইকোর্ট (High Court)। সংবিধানের ২১৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের প্রত্যেক রাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট থাকবে। তবে সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অনুসারে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে দুই বা ততোধিক রাজ্যের বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য মাত্র একটি হাইকোর্ট গঠন করতে পারে। ভারতে বর্তমানে ২৯টি অঙ্গরাজ্য এবং ৭টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য সর্বমোট ২১টি হাইকোর্ট রয়েছে।
[2] অধস্তন আদালতসমূহ: হাইকোর্টের পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে অধস্তন আদালতগুলি (Subordinate Courts)। এই অধস্তন আদালতগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়① জেলার অধস্তন আদালতসমূহ, ② মহানগরীয় অঞ্চলের অধস্তন আদালত। জেলার অধস্তন আদালতগুলিকে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়-[i] দেওয়ানি আদালত, [ii] ফৌজদারি আদালত। দেওয়ানি আদালতগুলি আবার ৪টি পর্যায়ে বিভক্ত- (a) জেলা বিচারকের আদালত, (b) অবর বিচারকের আদালত, (c) মুন্সেফের আদালত, (d) ন্যায় পঞ্চায়েত। অন্যদিকে, জেলার ফৌজদারি আদালতগুলির ৩টি শ্রেণি রয়েছে। এগুলি হল- (a) দায়রা আদালত, (b) অবর ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত [এই আদালতে দু- ধরনের ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন-বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) (c) পঞ্চায়েত আদালত [ফৌজদারি আদালতের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থিত এই আদালতে গ্রামের ছোটোখাটো বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয়]।
মহানগরীয় অঞ্চলের (কলকাতা, চেন্নাই, মুম্বাই প্রভৃতি মহানগরীতে) সর্বোচ্চ আদালত হল মহানগরীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত। এর পরবর্তী পর্যায়ে রয়েছে নগর দেওয়ানি আদালত এবং ক্ষুদ্র আদালত। মহানগরীয় অঞ্চলের ফৌজদারি আদালতগুলি হল নগর দায়রা আদালত এবং প্রেসিডেন্সি ক্ষুদ্র আদালত।
[3] অন্যান্য আদালতসমূহ: ভারতের বিচারব্যবস্থায় এ ছাড়া রয়েছে অন্যান্য আদালতসমূহ। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল শিল্পক্ষেত্রে শ্রমিক-মালিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শিল্প আদালত (Industrial Court and Tribunals), সামরিক বাহিনীর জন্য সামরিক আদালত (Military Courts), সরকারি কর্মী, স্থানীয় সংস্থা ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য প্রশাসনিক আদালত (Administrative Tribunal)।
[4] লোক আদালত: লোক আদালত ভারতের বিচারব্যবস্থার একটি সাম্প্রতিক মৌলিক সংযোজন। বিগত শতাব্দীতে ১৯৮০-এর দশকে লোক আদালতের সূচনা ঘটে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এবং মামলার ব্যয়ভার হ্রাসের জন্য লোক আদালত গঠিত হয়।
[5] ক্রেতা আদালত: ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় ক্রেতা আদালতও সাম্প্রতিককালের একটি অভিনব সংযোজন। ফৌজদারি বা দেওয়ানি আদালতের মতো চিরাচরিত আদালতগুলির থেকে এর গঠন ও কার্যাবলি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। মূলত ক্রেতা সাধারণের স্বার্থ দেখাই এর প্রধান কাজ। কোনো ক্রেতা যখন কোনো দ্রব্য বা পরিষেবা অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করতে গিয়ে প্রতারিত বা বস্থিত হন তখন তার প্রতিকারের জন্য এগিয়ে আসে ক্রেতা আদালত। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ‘ক্রেতা সুরক্ষা আইন’ অনুসারে এই আদালত গঠন করা হয়।
প্রশ্ন 3. ভারতের সুপ্রিমকোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো।
অথবা, ভারতের সুপ্রিমকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করো।
উত্তর: লুয়িসকোর্টের পঠন
ভারতের কেন্দ্রীভূত ও অখণ্ড নিচারব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। এই আদালতকে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত বা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত বলা হয়।
সংবিধানের ১২৪-১৪৭ নং ধারাগুলিতে সুপ্রিমকোর্টের গঠন বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে।
[1] বিচারপতির সংখ্যা: পার্লামেন্টের নতুন আইন (২০১১) অনুসারে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতির সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ জন করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য ৩০ জন সহকারী বিচারপতি। বর্তমানে (জানুয়ারি, ২০১৪) সর্বমোট ৩১ জন বিচারপতি নিয়ে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত হওয়ার কথা নতুন আইনে বলা হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনে সুপ্রিমকোর্টে অস্থায়ী বিচারপতি নিয়োগের কথা সংবিধানে বলা হয়েছে (১২৮ নং ধারা)।
[2] বিচারপতিদের নিয়োগ: সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। বিচারপতি নিয়োগের আগে রাষ্ট্রপতি দরকার মতো সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। এই পরামর্শ গ্রহণ করা রাষ্ট্রপতির পক্ষে বাধ্যতামূলক নয়। অবশ্য প্রধান বিচারপতি ছাড়া অন্যান্য বিচারপতি নিয়োগের আগে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করা রাষ্ট্রপতির পক্ষে বাধ্যতামূলক। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা অনেকটা তত্ত্বগত। বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীর দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এই নিযুক্তির কাজ সম্পন্ন করেন।
[3] বিচারপতিদের যোগ্যতা, কার্যকাল ও পদচ্যুতি: ভারতের সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের যোগ্যতার বিষয়ে বলা হয়েছে① বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ভারতের নাগরিক হতে হবে, ② তাঁকে অন্তত একাদিক্রমে পাঁচ বছর কোনো হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে কাজ করতে হবে অথবা ১০ বছর একাদিক্রমে কোনো হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করতে হবে অথবা রাষ্ট্রপতির বিবেচনা অনুযায়ী তাঁকে একজন প্রখ্যাত আইনজ্ঞ হতে হবে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারেন। কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে বা সংসদের প্রস্তাব অনুসারে রাষ্ট্রপতি তাঁকে পদচ্যুত করলে অথবা তাঁর মৃত্যু হলে বিচারপতির পদ শূন্য হতে পারে। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিকে পদচ্যুত করতে হলে ইমপিচমেন্ট পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয়। কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগ- সংবলিত প্রস্তাব পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের মোট সদস্যসংখ্যার অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ভোটে সমর্থিত হলে প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা ‘ভারতের সঞ্চিত তহবিল’ থেকে দেওয়া হয়।
সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
সুপ্রিমকোর্টের কার্যক্ষেত্রকে চার ভাগে ভাগ করা হয়- [1] মূল এলাকা, [2] আপিল এলাকা, [3] পরামর্শদান এলাকা, [4] নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারির এলাকা।
অনুযায়ী, যেসব বিষয়ের মামলা হাইকোর্ট বা অন্য কোনো অধস্তন আদালতে দায়ের করা যায় না সেইগুলি সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত। আইনগত অধিকারের প্রশ্নে① কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের বিরোধ বাধলে অথবা ② কেন্দ্রীয় সরকার এবং এক বা একাধিক রাজ্য সরকারের সঙ্গে অন্যান্য কয়েকটি বা একটি রাজ্য সরকারের বিরোধ দেখা দিলে অথবা ③ দুই ও ততোধিক রাজ্য সরকারের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ দেখা দিলে একমাত্র সুপ্রিমকোর্ট-ই তার নিষ্পত্তি করে। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতি/উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত যে-কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত।
[2] আপিল এলাকা: আপিল এলাকাকে চার ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন- i. সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপিল, ii. দেওয়ানি আপিল, iii ফৌজদারি আপিল এবং iv, বিশেষ অনুমতিসূত্রে আপিল।
i. সংবিধানের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত আপিল: সংবিধানের ১৩২(১) নং ধারা অনুসারে দেওয়ানি, ফৌজদারি বা অন্য যে-কোনো মামলায় হাইকোর্ট যদি এই মর্মে প্রমাণপত্র দেয় যে সংশ্লিষ্ট মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত, তাহলে ওই মামলার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়। তা ছাড়া হাইকোর্ট এ ধরনের প্রমাণপত্র না দিলেও সুপ্রিমকোর্ট যদি মনে করে যে মামলাটির সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত, তাহলে সুপ্রিমকোর্ট নিজেই মামলাটির বিচারের জন্য আপিলের ‘বিশেষ অনুমতি’ (Special leave) দিতে পারে [১৩৬ (১) নং ধারা]।
ii. দেওয়ানি আপিল: ১৯৭২ সালে সংবিধানের ৩০তম সংশোধনের পর বর্তমানে কোনো দেওয়ানি মামলায় হাইকোর্ট যদি এই মর্মে প্রমাণপত্র দেয় যে সংশ্লিষ্ট মামলাটির সঙ্গে আইনের সাধারণ প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রশ্ন জড়িত, তাহলে সেই মামলাটির বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়। তা ছাড়া সংবিধানের ১৩৩ (১) নং ধারা অনুসারে হাইকোর্ট যদি মনে করে যে, কোনো দেওয়ানি মামলার বিচার সুপ্রিমকোর্টে হওয়া উচিত তবে সেই মামলা সম্বন্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়।
iii. ফৌজদারি আপিল: ফৌজদারি মামলার বিষয়ে তিনটি ক্ষেত্রে হাইকোর্টের রায়, ডিক্রি বা চূড়ান্ত আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়-① নিম্নতর আদালতের রায়ে নির্দোষ বলে প্রমাণিত কোনো ব্যক্তিকে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড দিলে, ② নিম্ন আদালতে বিচার চলাকালীন কোনো মামলা নিজের হাতে তুলে নিয়ে হাইকোর্ট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিলে, ও কোনো মামলা সুপ্রিমকোর্টে আপিলযোগ্য বলে হাইকোর্ট প্রমাণপত্র দিলে। তা ছাড়া বর্তমানে সংবিধানের ১৩৪(২) নং ধারা অনুসারে পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত ১৯৬৯ সালের একটি আইন অনুযায়ী স্বল্পমেয়াদি অথবা দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত যে-কোনো নাগরিক সুপ্রিমকোর্টে আপিল করতে পারে।
iv. বিশেষ অনুমতিসূত্রে আপিল: সংবিধানের ১৩৬ (১) নং ধারা অনুযায়ী ভারতের সামরিক আদালত বা সামরিক ট্রাইবিউনাল ছাড়া যে-কোনো আদালত বা ট্রাইবিউনালের রায়, আদেশ বা দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য সুপ্রিমকোর্ট ‘বিশেষ অনুমতি’ দিতে পারে। ১৯৭৮ সালের ৪৪তম সংবিধান সংশোধনের পর থেকে হাইকোর্ট কোনো মামলার রায় দেওয়ার সময়েই সুপ্রিমকোর্টে আপিলের অনুমতি দিতে পারে, অথবা বিবদমান কোনো পক্ষের মৌখিক আবেদনের ভিত্তিতে তৎক্ষণাৎ আপিলের অনুমতি দিতে পারে।
[3] পরামর্শদান এলাকা: সংবিধানের ১৪৩ (১) নং ধারা অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন আইন বা তথ্য সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সর্বজনীন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বা দিতে পারে তাহলে তিনি সে-বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন। এক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট পরামর্শ দিতে বাধ্য নয়। তবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শুনানির পর সুপ্রিমকোর্ট তার মতামত জানাতে পারে। তা ছাড়া সংবিধান চালু হওয়ার আগে সম্পাদিত সন্ধি, চুক্তি, অঙ্গীকারপত্র, সনদ ইত্যাদির মধ্যে যেগুলি সংবিধান চালু হওয়ার পরও বলবৎ রয়েছে, সেগুলির বিষয়ে কোনো বিরোধ দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ চেয়ে পাঠাতে পারেন [১৪৩ (২) নং ধারা]। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে সুপ্রিমকোর্ট বাধ্য।
[4] নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারির এলাকা: মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে তা বলবৎ ও কার্যকর করার জন্য নাগরিকরা সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করতে পারে। সুপ্রিমকোর্ট এই উদ্দেশ্যে বন্দি-প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকারপৃচ্ছা, উৎপ্রেষণ প্রভৃতি নির্দেশ, আদেশ বা লেখ জারি করতে পারে।
অন্যান্য ক্ষমতা
এ ছাড়াও সুপ্রিমকোর্টের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। যেমন, সংবিধানের ১২৯ নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের অভিলেখ আদালত বা Court of Records হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা রয়েছে। বিভিন্ন মামলায় নিজের দেওয়া যে-কোনো রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনা করার অধিকারার সুপ্রিমকোর্টের আছে। সংবিধানের ১৪২(২) নং ধারা অনুযায়ী, আদালত- অবমাননার জন্য সুপ্রিমকোর্ট অবমাননাকারীর শাস্তিবিধানের ব্যবস্থা পালাতে পারে। সংবিধানের ১৪১ নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক ঘোষিত রাতে অনুসরণ করা ভারতের সমস্ত আদালতের পক্ষে বাধ্যতামূলক। তা ছাড়া, যে- কোনো বিষয়ে পূর্ণ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ডিক্রি ও আদেশ জারি করার ক্ষমতাও সুপ্রিমকোর্টের রয়েছে। নিজের কাজকর্ম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী নিয়োগের ক্ষমতাও সুপ্রিমকোর্টকে দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন 4. সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকার মূল্যায়ন করো।
অথবা, সুপ্রিমকোর্টের মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা
সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সুইটজারল্যান্ড, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের তুলনায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা যথেষ্ট ব্যাপক ও শক্তিশালী। কৃয়স্বামী আয়ারের মতে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের শীর্ষ আদালতের চেয়ে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট অধিক ক্ষমতা ভোগ করে (The Supreme Court in the Indian Union has more powers than any Supreme Court in any part of the world)। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট একাধারে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত, সর্বোচ্চ আপিল আদালত, সংবিধানের অভিভাবক ও চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা এবং মৌলিক অধিকারের সংরক্ষক। তা ছাড়া রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা হিসেবেও সুপ্রিমকোর্টের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
[1] সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা: সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে সুপ্রিমকোর্ট এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভারতীয় সংবিধানের যে-কোনো অংশের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের রয়েছে। তাঁর এই ব্যাখ্যা অস্বীকার করার ক্ষমতা পার্লামেন্টের নেই। পার্লামেন্টের আইনকানুন এবং সংবিধানের যে-কোনো অংশের ব্যাখ্যা সুপ্রিমকোর্ট করতে পারে।
[2] মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা: ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অংশে বর্ণিত নাগরিকদের মৌলিক অধিকার যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টের। ভারতীয় সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে সুপ্রিমকোর্টের এই ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। সংবিধান রচয়িতারা মৌলিক অধিকারগুলির গণতান্ত্রিক কাঠামো সংরক্ষণের দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টকে দিয়ে ১৩ (২) নং ধারায় বলেছেন, মৌলিক অধিকারগুলিকে ক্ষুণ্ণ করে, এমন কোনো আইন রাষ্ট্র প্রণয়ন করতে পারবে না। সুপ্রিমকোর্ট নাগরিক অধিকার সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এভাবে বিভিন্ন সময়ে পার্লামেন্ট-প্রণীত আইন এবং রাষ্ট্রপতির নির্দেশ বাতিল করেছে।
[3] সর্বোচ্চ আপিল আদালত: দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা ও সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিমকোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। সামরিক আদালত বা ট্রাইবিউনাল ছাড়া অন্য যে-কোনো আদালত বা ট্রাইবিউনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়।
[4] রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা: ভারতীয় সংবিধানের ১৪৩(১) ও ১৪৩ (২) নং ধারা অনুযায়ী কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিতে পারে।
[5] বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা: পার্লামেন্টের আইন, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের আদেশ সংবিধানবিরোধী কি না তা বিচার করে দেখার ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের রয়েছে। পার্লামেন্টের আইন বা রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের আদেশ বা নির্দেশ সংবিধানসম্মত না হলে সুপ্রিমকোর্ট তা অবৈধ ঘোষণা করতে পারে। সুপ্রিমকোর্টের অবৈধ ঘোষণার ফলে সংশ্লিষ্ট আইন, আদেশ বা নির্দেশটি বাতিল হয়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে ‘বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা’ বলা হয়। এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে সুপ্রিমকোর্ট ১৯৭০ সালে রাজন্যভাতা বিলোপ-সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ বাতিল করে দেয়।
মূল্যায়ন
[1] মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের সঙ্গে তুলনা: ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের ‘বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনার ক্ষমতা’র প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যেতা কোনোমতেই মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের সমগোত্রীয় নয়। এক্ষেত্রে ভারতের সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা যথেষ্ট কম। ‘যথাবিহিত আইন পদ্ধতি’ অনুসারে কোনো আইন যথাযথ সাংবিধানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে তৈরি হয়েছে কি না মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট তা দেখে, সেই সঙ্গে এটাও দেখে যে আইনটি ‘স্বাভাবিক ন্যায়নীতি বোধের’ বিরোধী কি না। অর্থাৎ কোনো আইন ন্যায়সংগত কি না তা বিচার করার ক্ষমতা মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের রয়েছে। ভারতের সুপ্রিমকোর্টের ‘যথাবিহিত আইন পদ্ধতি’ অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদনের কোনো ক্ষমতা নেই। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট শুধু দেখে ‘আইননির্দিষ্ট পদ্ধতি‘ অনুসৃত হয়েছে কি না।
[2] পার্লামেন্ট কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ: ভারতীয় সংবিধানের নমনীয় চরিত্রের জন্য সুপ্রিমকোর্ট-প্রদত্ত রায়কে অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে পার্লামেন্ট সংবিধান সংশোধনের পথ গ্রহণ করে থাকে। ২৪তম সংবিধান সংশোধনীর সাহায্যে সুপ্রিমকোর্টের গোলকনাথ মামলার (১৯৬৭) রায়কে অতিক্রম করা হয়। এইভাবে পার্লামেন্টের কর্তৃত্বের ফলে সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে সুপ্রিমকোর্টের যথাযথ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
উপসংহার: ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে আজও স্বীয় ক্ষমতায় আসীন। ৪৪তম সংবিধান সংশোধনে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের মতো শক্তিশালী না হলেও ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ব্রিটেনের বিচার বিভাগের মতো দুর্বলও নয়। সুপ্রিমকোর্ট স্বয়ং একটি মামলার রায়ে জানিয়েছিল যে, এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান মধ্যবর্তী পর্যায়ে। ভারতের সাম্প্রতিককালের সাংবিধানিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সুপ্রিমকোর্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্ভীক ও নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করে চলেছে। সাম্প্রতিককালে সুপ্রিমকোর্ট প্রচলিত এক্তিয়ারের বাইরে জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত যাবতীয় বিষয়ে (বিচারপতিদের বদলি, নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, পরিবেশ সংরক্ষণ, রাজনৈতিক দুর্নীতি প্রভৃতি) ঐতিহাসিক রায়দানের পরিপ্রেক্ষিতে তার ভূমিকাকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। অনেকে একে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বা ‘Judicial activism’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রশ্ন 5. বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা কাকে বলে? বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার প্রকৃতি পর্যালোচনা করো।
উত্তর: বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিচার বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। সংবিধানের ব্যাখ্যাকর্তা ও অভিভাবক হিসেবে বিচার বিভাগের প্রাধান্য ইতিমধ্যেই গণতান্ত্রিক দেশগুলিতে স্বীকৃত হয়েছে। দেশের সাংবিধানিক বিধিব্যবস্থা এবং আইনকানুনের মৌলিক কাঠামো সংরক্ষণের দায়ভার বিচার বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা পরিচালিত আইন ও শাসন বিভাগ যখন তার নির্দিষ্ট সীমা লঙ্ঘন, ক’রে ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটায়, তখন বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার উদ্ভব ঘটে।
সাধারণভাবে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বা ‘Judicial Activism’ বলতে বিচার বিভাগের সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাকে বোঝায়। বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার ফলে শীর্ষ আদালত প্রচলিত এক্তিয়ারের বাইরে জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত যাবতীয় বিষয়ে ঐতিহাসিক রায়দানের পরিপ্রেক্ষিতে তার ভূমিকাকে সম্প্রসারিত করেছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. জে সি জোহারির মতে, ১৯৮০ সালের পর থেকে ভারতে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার উদ্ভব ঘটে। রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে দুর্নীতিমুক্ত করা, মহামারী দূরীকরণে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেওয়া, পরিবেশদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট সরকারের প্রতি এই সময় থেকে নির্দেশ জারি করতে শুরু করে। এসব বিষয়ের ক্ষেত্রে জনস্বার্থ মামলার আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে করতে শুরু করলে ভারতে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার সৃষ্টি হয়। এভাবে আটের দশকের পর থেকে সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারের সঙ্গে সম্পর্কিত জীবনের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার ও সমতার অধিকারের পরিধিকে প্রসারিত করে জনস্বার্থে আরও সক্রিয় এবং ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণে প্রয়াসী হয়। বস্তুত এই প্রবণতার জন্য যেসব বিষয় শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে তা বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার মূল বিষয় হয়ে ওঠে। এর ফলে সরকারি আবাসন বণ্টনে দুর্নীতি, পেট্রল পাম্প ও গ্যাসের ডিলারশিপের বণ্টনে বৈষম্য, নদীবাঁধের ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ, শিশুশ্রম ও বেগারশ্রমের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দান, পরিবেশ দূষণজনিত কারণে কারখানা বন্ধের নির্দেশ প্রভৃতি সুপ্রিমকোর্টের বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার বিচার্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
সংজ্ঞা
বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার সংজ্ঞা কী হতে পারে সেসম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বিচারপতি সাওন্ত তাঁর Judicial Activism: Trends and Prospects প্রবন্ধে এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বলতে সেই কাজকে বোঝায় যা আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের কর্মক্ষেত্রের ওপর বিচার বিভাগের প্রাধান্য বিস্তারকে সূচিত করে। এক্ষেত্রে বিচারপতিরা শুধু যে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন তাই নয়, তাঁরা গৃহীত ব্যবস্থাদিরও তদারকি করে থাকেন।
বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার প্রকৃতি
দুটি শ্রেণি
বিচারপতি পি বি সাওন্ত তাঁর Judicial Activism: Trends and Prospects রচনায় বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তাকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। তাঁর মতে, একটি হল সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য, অন্যটি অনুমোদনসাপেক্ষ নয়। (One is largely acceptable, while the other is not permissible)। বিচারপতি সাওন্ডের মতে, বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার প্রথম শ্রেণিটিতে জনস্বার্থ সংরক্ষণের নতুন ধ্যানধারণা, নতুন রীতিনীতি, নতুন প্রথাপদ্ধতি ও নতুন আচরণবিধির সৃষ্টি হয়। বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার দ্বিতীয় শ্রেণির মাধ্যমে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলিকে চিহ্নিত করা হয় এবং নীতি ও কর্মসূচি রূপায়ণের ব্যাপারে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দান
গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরীরূপে সুপ্রিমকোর্ট জনকল্যাণ সাধন ও সমাজপ্রগতির উদ্দেশ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যথাযথ দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দান করেছে। এসম্পর্কে কতকগুলি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যায়। যেমন-বেগার শ্রমিকদের মুক্তিদান ও পুনর্বাসনের বিষয়ে ১৯৮৩ সালের ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার ও হরিয়ানা সরকারকে নির্দেশদান, ১৯৮৫ সালের এপ্রিলে একটি বিশেষ ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরিদানের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশদান, ২০০২ সালে দারিদ্র্য সীমারেখার নীচে বসবাসকারী মানুষের তালিকা প্রণয়নের জন্যে পশ্চিমবঙ্গসহ কতকগুলি রাজ্যকে নির্দেশদান প্রভৃতি।
সংবিধানের মৌল কাঠামো রক্ষায় ঐতিহাসিক রায়
সংবিধানের মৌল কাঠামো রক্ষায় এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জটিলতা দূরীকরণের বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট তার ঐতিহাসিক রায়ে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ২০০২ সালের অক্টোবরে সুপ্রিমকোর্ট নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার মূল্যায়ন করতে গিয়ে ঘোষণা করেন যে, – মিংবিধানের আওতায় নির্বাচন কমিশনের ভোটের দিনক্ষণ স্থির করার নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন এককভাবে সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী, সংসদ বা বিধানসভা কোনো আইন করে কমিশনের এই ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করতে পারে না।
জনকল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তাবিধানে সক্রিয় ভূমিকা
জনকল্যাণ ও সামাজিক নিরাপত্তাবিধানে সুপ্রিমকোর্ট বহুক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা প্রয়োগ করেছে। এক্ষেত্রে ১৯৮৭ সালে ওড়িশার কালাহান্ডিতে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকার বিষয়ে তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা জজের প্রতি নির্দেশদান, অনাথ শিশুদের অবৈধ লেনদেন সম্পর্কে সমস্ত রাজ্যের জেলাশাসক ও সমাজকল্যাণ দফতরের প্রতি নির্দেশদানের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সামাজিক সংস্কারসাধনের ক্ষেত্রেও সুপ্রিমকোর্ট সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে। ১৯৮৫ সালে শাহবানু মামলার রায়ে সুপ্রিমকোর্ট স্বামীপরিত্যক্তা মুসলিম মহিলাদের আইনগত অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার উদ্ভবের কারণ
বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার উদ্ভবের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে বলে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এই কারণগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
[1] মৌলিক অধিকারের সংরক্ষণ: ভারতীয় সংবিধান অনুসারে, বিচার বিভাগ হল নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের সংরক্ষক ও অভিভাবক। আইন বিভাগ বা শাসন বিভাগ কর্তৃক কোনোভাবে মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে সেক্ষেত্রে তার প্রতিকারের দায়িত্ব বিচার বিভাগের। আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ভোগ সুনিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। নাগরিকদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য জীবনের অধিকারসহ যেসব ব্যক্তিগত ও সামাজিক অধিকারের প্রয়োজন হয়, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ তা সংরক্ষণে অসফল হলে বিচার বিভাগকে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়।
[2] জনস্বার্থ সংরক্ষণে সরকারের ব্যর্থতা: সংবিধান বিশেষজ্ঞ জে সি জোহারির মতে, ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্টের জন্য দুর্বল সরকার গঠিত হলে জনস্বার্থ সংরক্ষণে সরকার ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগের সক্রিয় উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়ে। তা ছাড়া অনেক সময় ক্ষমতায় টিকে থাকার কারণে সৎ ও সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকার ব্যর্থ হয়। স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সরকারের ক্ষমতা হারানোর ভয় থাকে। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগের কাছে বিষয়টি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উদাহরণ হিসেবে সাম্প্রতিককালে অযোধ্যায় রামমন্দির ও বাবরি মসজিদ ইস্যুর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিমকোর্টের দ্বারস্থ হয়। বিতর্কিত বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন রয়েছে।
[3] আইনি কাঠামোর অপব্যবহার: অনেক সময় অতিমাত্রায় ক্ষমতাশালী ও কর্তৃত্বসম্পন্ন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সমগ্র আইনি কাঠামোর অপব্যবহার ঘটে। ১৯৭৬ সালে জরুরি অবস্থার সময় এই ধরনের পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগের দায়িত্ব ও সক্রিয়তা এক নতুন মাত্রা লাভ করে। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে সস্তা জনপ্রিয়তা বা প্রচারের প্রলোভনে পড়ে বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার উদ্ভব লক্ষ করা যায়।
সমালোচনা
বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে।
[1] অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ: অনেকের মতে, বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা বা Judi- cial Activism আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের কাজকর্মের ওপর বিচার বিভাগের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়। এর ফলে বিচার বিভাগ তার সাংবিধানিক এক্তিয়ার অতিক্রম করে।
[2] স্বৈরাচার: সমালোচকদের মতে, বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা এক ধরনেরস্বৈরাচারের জন্ম দেয়। একে বিচার বিভাগীয় স্বৈরাচার বলে আখ্যা দেওয়া যেতে পারে। বিশিষ্ট আইনবিদ ননী পালখিওয়ালার মতে, বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তা হল বিচার বিভাগীয় অনাচার বা এক দুঃসাহসিক কর্মপ্রচেষ্টার নামান্তর। যা পরিণামে দেশকে বিচার বিভাগীয় স্বৈরাচারের দিকে নিয়ে যায় (Judicial activism becomes another name for judicial adventurism or judicial excessivism that may ultimately lead to judicial despo- tism in the country.)।
[3] নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য নীতির লঙ্ঘন: সংবিধান বিশেষজ্ঞ জোহারির মতে, বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার ফলে আদালত ভারতীয় সংবিধান রচয়িতাদের প্রণীত নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতি লঙ্ঘন করেছে। আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের ওপর বিচার বিভাগ এভাবে তার নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে।
মল্যায়ন: ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বিচার বিভাগীয় সক্রিয়তার গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না। রাজনীতিবিদরা তাঁদের জনপ্রিয়তার স্বার্থে যে-কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন, কিন্তু বিচার বিভাগে বিচারপতিরা গুণগত যোগ্যতার নিরিখে নিযুক্ত হওয়ায় বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। যখন আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে তখন দেশের মৌলিক আইনকে রক্ষা করার জন্য বিচার বিভাগকে সক্রিয় হতে হয়। উদারনৈতিক গণতন্ত্রে সাংবিধানিক ব্যাখ্যার দায়িত্ব শীর্ষ আদালতের হাতে ন্যস্ত রয়েছে। সাম্প্রতিককালের ভারতে জোট রাজনীতিপ্রসূত অভূতপূর্ব সমস্যাগুলির মীমাংসায় আদালতের শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প রাস্তা নেই বলেও অনেকে মনে করেন।
প্রশ্ন 6. ভারতে বিচারপতিদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য সাংবিধানিক ব্যবস্থাসমূহের ব্যাখ্যা দাও।
উত্তর: বিচারপতিদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা রক্ষা
গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হল বিচারপতিদের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও নির্ভীকতা। তাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিচারপতিদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সাংবিধানিক বিধিব্যবস্থা গৃহীত হয়। ভারতীয় সংবিধান রচয়িতারা বিচারপতিদের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও নির্ভীকতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থাসমূহ লিপিবদ্ধ করেছেন।
সাংবিধানিক ব্যবস্থা
[1] বিচারপতিদের নিয়োগ: বিচারপতিদের নিয়োগ-সম্পর্কিত ব্যবস্থার ওপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নির্ভরশীল। এই কারণে বিচারপতিদের নিয়োগের বিষয়টিকে দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা উচিত। ভারতে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করে থাকেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রিমকোর্ট এবং হাইকোর্টের যেসব বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন, রাষ্ট্রপতি তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে পারেন [১২৪(২) নং ধারা]। তবে প্রধান বিচারপতি ছাড়া সুপ্রিমকোর্টের অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগের পূর্বে রাষ্ট্রপতিকে অতি অবশ্যই সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়। সংবিধানের ২১৭ নং ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। তবে হাইকোর্টের অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে অতি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করতে হয়।
[2] বিচারপতিদের যোগ্যতা: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতাকে [ নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের
যোগ্যতার বিষয়টিকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সংবিধানের ১২৪(৩) নং ধারা অনুসারে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি হতে গেলে① প্রার্থীকে অবশ্যই ভারতীয় নাগরিক হতে হবে, ② কমপক্ষে ৫ বছর এক বা একাধিক হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে কাজ করতে হবে অথবা কমপক্ষে ১০ বছর একটানা কোনো হাইকোর্টের অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজ করতে হবে অথবা রাষ্ট্রপতির বিবেচনা অনুযায়ী একজন ‘বিশিষ্ট আইনজ্ঞ’ হতে হবে [২২৪(৩) নং ধারা]।
[3] কার্যকাল ও অপসারণ পদ্ধতি: বিচারপতিদের কার্যকাল ও অপসারণ
পদ্ধতির স্বচ্ছতার ওপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নির্ভর করে। ভারতে সুপ্রিমকোর্ট এবং হাইকোর্টের বিচারপতিদের কার্যকাল ও অপসারণ সংক্রান্ত বিধিব্যবস্থাদি সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত বিধিব্যবস্থার ক্ষেত্রে সংবিধানে বলা হয়েছে যে, প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্য ছাড়া অন্য কোনো কারণে সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিচারপতিকে অপসারিত করা যাবে না। কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের অভিযোগ থাকলে সেটি পার্লামেন্টের উভয়কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভায় প্রস্তাব আকারে পেশ করতে হয়। তারপর সেই প্রস্তাবটিকে উভয়কক্ষে উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে গৃহীত হতে হয়। এভাবে প্রস্তাবটি গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে অপসারিত করতে পারেন [১২৪(৪) নং ধারা]।
[4] বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা: বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা- সম্পর্কিত ব্যয়টি পার্লামেন্টের অনুমোদনের মুখাপেক্ষী নয়। সংবিধান অনুসারে, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা পার্লামেন্টের অনুমোদন-সাপেক্ষ নয়। ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা-সম্পর্কিত ব্যয় নির্বাহ করা হয়। জরুরি অবস্থা ছাড়া অন্য কোনো অবস্থাতে বিচারপতিদের বেতন, ভাতা ও কার্যকালের সময়সীমা হ্রাস করা যায় না।
[5] অবসরগ্রহণের পর আইন ব্যাবসা বা সরকারি পদ গ্রহণে বিধিনিষেধ: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতার স্বার্থে ভারতে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা অবসরগ্রহণের পর ভারতের কোনো আদালতে আইনজীবীরূপে কাজ করতে অথবা সরকারি চাকরি গ্রহণ করতে পারেন না [১২৪(৭) নং ধারা]। কোনো হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সংবিধানের ২২০ নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট ছাড়া অন্য কোনো আদালতের কাছে ওকালতি করতে পারেন না।
[6] বিচার বিভাগের বিভাগীয় কর্মী নিয়োগের স্বাধীনতা: বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য সুপ্রিমকোর্টে বিভিন্ন শ্রেণির কর্মী নিয়োগের ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া হয়েছে (১৪৮ নং ধারা)। তা ছাড়া সুপ্রিমকোর্টের পদস্থ কর্মচারী এবং অন্যান্য কর্মীদের চাকরির শর্তাদি বিষয়ে নিয়মকানুন প্রণয়ন করার ক্ষমতাও ভারতের প্রধান বিচারপতিকে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায়, সুপ্রিমকোর্টের প্রশাসনিক ব্যয়কে ভারতের সঞ্চিত তহবিলের ওপর ধার্য ব্যয় হিসেবে গণ্য করা হয়।
[7] বিচারপতিদের রায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে পার্লামেন্টে সমালোচনার বিধিনিষেধ: সংবিধানের ১২১ নং ধারা অনুসারে বিচারপতিদের কোনো রায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে পার্লামেন্টে কোনো প্রশ্ন তোলা বা আলোচনা করা যায় না। এভাবে বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তকে শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের সমালোচনার ঊর্ধ্বে রেখে বিচারব্যবস্থার মর্যাদা ও স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে।
সমালোচনা
ভারতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার পদ্ধতি ত্রুটিমুক্ত নয়।
[1] সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি: সাংবিধানিক বিধি অনুসারে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। কিন্তু সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার রীতি অনুসারে নিয়মতান্ত্রিক শাসকপ্রধান রাষ্ট্রপতি এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা বিশেষত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করে থাকেন। এই কারণে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ব্যাপারে তত্ত্বগতভাবে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা স্বীকৃত হলেও বাস্তবে প্রধানমন্ত্রী মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে বলা বাহুল্য যে, প্রধানমন্ত্রী তাঁর পছন্দসই ব্যক্তিকে সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি পদে মনোনীত করার সুযোগ পান। এর ফলে বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতিটি রাজনৈতিক মাত্রা লাভ করে।
[2] বিশিষ্ট আইনজ্ঞরূপে বিচারপতিদের নিয়োগ: সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতি হতে গেলে যেসব যোগ্যতার কথা সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে রাষ্ট্রপতির বিবেচনা অনুযায়ী একজন ‘বিশিষ্ট আইনজ্ঞ’ হতে হবে [২২৪(৩) নং ধারা]। এক্ষেত্রে বিচারপতি নিয়োগের সময় রাষ্ট্রপতি কার্যত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের দ্বারা পরিচালিত হন। ফলে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত দলীয় কোনো ব্যক্তিকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সুযোগ থেকে যায়। সমালোচকদের মতে, এই ধরনের রাজনৈতিক নিয়োগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য সম্পাদনের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
[3] অপসারণ পদ্ধতির অসংগতি: সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিদের প্রমাণিত অসদাচরণ অথবা অসামর্থ্যের ভিত্তিতে অপসারিত করা যায়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কোনো সংজ্ঞা সংবিধানে দেওয়া হয়নি। এর ফলে পার্লামেন্টে ক্ষমতাশীল দল বা জোট, অর্থাৎ শাসকগোষ্ঠী সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে যে-কোনো বিচারপতিকে অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত করার প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে। এতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারকার্য বাধাপ্রাপ্ত হয়।
[4] অবসরগ্রহণের পর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ: সংবিধানের নিয়ম অনুসারে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা অবসরগ্রহণের পর কোনো আদালতে আইন ব্যবসা বা ওকালতির কাজে নিযুক্ত হতে পারেন না। অবশ্য অবসরপ্রাপ্ত কোনো বিচারপতিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সুপারিশক্রমে রাজ্যপাল, রাষ্ট্রদূত, উপাচার্য বা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। এই ধরনের নিয়োগের বহু দৃষ্টান্ত অতীতে দেখা গেছে। এর ফলে সরকারি আনুকূল্যলাভের প্রত্যাশায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারকার্য বিঘ্নিত হয়। হাজতিয়ান্ট
উপসংহার: বিচারপতিদের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য সাংবিধানিক ব্যবস্থাসমূহ যথেষ্ট নয়। অনেকে মনে করেন, দেশের আর্থসামাজিক তথা রাজনৈতিক ব্যবস্থার মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিচারপতিদের এক বৃহত্তর ভূমিকা রয়েছে। এজন্য নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও প্রসারিত করে জনগণের তথা রাষ্ট্রের কল্যাণে প্রগতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণে বিচারপতিদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে ড. জোহারি বলেন, বিচারপতিদের এটা অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের মতো বিচার বিভাগও সামাজিক বিপ্লবের একটি হাতিয়ার।
7. ভারতের বিচারব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করো।
উত্তর: পৃষ্ঠা নং 176-এর বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক 1 নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।
প্রশ্ন 8. মহাধর্মাধিকরণ বা হাইকোর্টের গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো। অথবা, ভারতের হাইকোর্টগুলির গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করো। অথবা, ভারতের হাইকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: হাইকোর্টের গঠন
সংবিধানের ২১৪ নং ধারায় বলা হয়েছে, ভারতের প্রত্যেক রাজ্যে একটি করে হাইকোর্ট বা মহাধর্মাধিকরণ থাকবে। তবে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে দুই বা ততোধিক রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জন্য মাত্র একটি হাইকোর্ট গঠন করতে পারে। ভারতে বর্তমানে ২৯টি রাজ্যে মোট ২১টি হাইকোর্ট রয়েছে। সংবিধানের ২১৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি হাইকোর্ট একজন প্রধান বিচারপতি ও কয়েকজন অন্যান্য বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত হবে। অন্যান্য বিচারপতিদের সংখ্যা রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করেন। হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির রয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি পদে নিযুক্ত হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ভারতীয় নাগরিকত্ব, যে-কোনো বিচারবিভাগীয় পদে কমপক্ষে ১০ বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা, হাইকোর্ট বা দুই বা ততোধিক এই ধরনের আদালতে ১০ বছর একটানা আইনজীবী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যিক। হাইকোর্টের বিচারপতিরা বর্তমানে ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত পদে আসীন থাকতে পারেন। তবে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অক্ষমতার অভিযোগের ভিত্তিতে পার্লামেন্টের উভয়কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি অভিযুক্ত বিচারপতিকে অপসারিত করতে পারেন। রাজ্যের সঞ্চিত তহবিল থেকে হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতন, ভাতা ইত্যাদি দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
হাইকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলিকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করে আলোচনা করা যেতে পারে-
[1] মূল এলাকা-সম্পর্কিত ক্ষমতা: রাজস্ব সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় হাইকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্গত। অনেক ক্ষেত্রে দেওয়ানি মামলাকেও মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে সব হাইকোর্টের মূল এলাকাভুক্ত ক্ষমতা নেই। শুধুমাত্র কলকাতা, চেন্নাই ও মুম্বাই হাইকোর্টের এই ক্ষমতা রয়েছে।
[2] আপিল এলাকা-সম্পর্কিত ক্ষমতা: রাজ্যের সর্বোচ্চ আপিল আদালত হল হাইকোর্ট। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার বিষয়ে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে জেলা জজ ও অধস্তন জেলা জজের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। হাইকোর্টের কোনো বিচারকের একক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যায়। এ ছাড়া আইন ও পদ্ধতিগত প্রশ্নে কোনো অধস্তন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মামলায় ঊর্ধ্বতন আদালত যে রায় দেয় তার বিরুদ্ধেও হাইকোর্টে আপিল করা যায়। অন্যদিকে ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দায়রা জজ এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ কোনো ব্যক্তিকে সাত বছরের অধিক কারাদণ্ড দিলে, সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যায়। এ ছাড়া কয়েকটি নির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে সহকারী দায়রা জজ বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করা যেতে পারে।
[3] লেখ জারির ক্ষমতা: সুপ্রিমকোর্টের মতো হাইকোর্টগুলি নিজ নিজ এলাকায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ, পরমাদেশ, প্রতিষেধ, অধিকারপৃচ্ছা, উৎপ্রেষণ প্রভৃতি লেখ, নির্দেশ ও আদেশ জারি করতে পারে [২২৬ (১) নং ধারা]। প্রসঙ্গত বলা যায়, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি সংরক্ষণ করা ছাড়াও হাইকোর্ট অন্য যে-কোনো উদ্দেশ্যে লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারে। এমনকি জরুরি অবস্থার সময়েও হাইকোর্টের ‘বন্দী-প্রত্যক্ষীকরণ’ ধরনের লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করার ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ করা যায় না।
[4] সাংবিধানিক বৈধতা বিচারের ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সাংবিধানিক বৈধতা বিচার করার ক্ষমতাও হাইকোর্টের হাতে রয়েছে। এক্ষেত্রে অসাংবিধানিক পদ্ধতিতে প্রণীত যে- কোনো আইনকে হাইকোর্ট অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারে।
[5] তত্ত্বাবধান-সম্পর্কিত ক্ষমতা: সংবিধানের ২৭৭ নং ধারা অনুযায়ী সামরিক আদালত ও সামরিক ট্রাইবিউনাল ছাড়া নিজ এলাকাভুক্ত অন্য সব আদালত ও ট্রাইবিউনালগুলির তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অধস্তন আদালতগুলিকে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতাও হাইকোর্টের রয়েছে।
[6] মামলা অধিগ্রহণের ক্ষমতা: সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত আছে এমন কোনো মামলা নিম্ন আদালত থেকে নিজের হাতে নেওয়ার ক্ষমতা হাইকোর্টকে দেওয়া হয়েছে (২২৮ নং ধারা)।
[7] নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা: অধস্তন আদালতগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে। জেলা আদালত ও অন্যান্য অধস্তন আদালতের বিচারপতি, কর্মচারীদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি বিষয়ে হাইকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
[৪] অন্যান্য ক্ষমতা: ① হাইকোর্ট নিজের অবমাননার জন্য অবমাননাকারীকে শাস্তি দিতে পারে। ② হাইকোর্ট বিচারকার্য সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন নিজে তৈরি করতে পারে। ও হাইকোর্ট অভিলেখ আদালত হিসেবে (Court of Records) কাজ করে থাকে।
উপসংহার: অঙ্গরাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে হাইকোর্টের ভূমিকা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে হাইকোর্টের গঠন ও ক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এই আদালত প্রকৃত অর্থেই সর্বভারতীয় বিচারব্যবস্থার একটি অঙ্গ। হাইকোর্টের গঠন ও কাজকর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিচারপতিদের নিয়োগ, বদলি, অপসারণ, নতুন হাইকোর্ট গঠন, এক্তিয়ার সীমিতকরণ, বিচারপতিদের বেতন ও ভাতার বৃদ্ধি কিংবা হ্রাস ইত্যাদি বিষয় সুনির্দিষ্টভাবেই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। তা ছাড়া হাইকোর্টের যে-কোনো সিদ্ধান্ত সুপ্রিমকোর্ট বাতিল করে দিতে পারে এবং সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশিত বিধিবিধান অনুসরণ করা হাইকোর্টের পক্ষে বাধ্যতামূলক। সুতরাং, হাইকোর্টকে সুপ্রিমকোর্টের অধীনে থেকে সহায়ক আদালত হিসেবে বিচারকার্য সম্পদান করতে হয়।
প্রশ্ন 9. ক্রেতা আদালত কাকে বলে? ক্রেতা আদালতের উদ্দেশ্য কী? ক্রেতা আদালতের গঠন ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। অথবা, ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।
অথবা, ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের গঠন, উদ্দেশ্য লেখো। [কেবলমাত্র ‘গঠন’ ও ‘উদ্দেশ্য’ অংশ দুটি লিখতে হবে।]
উত্তর: ক্রেতা আদালত
ক্রেতা আদালত এক বিশেষ ধরনের আদালত। দেওয়ানি ও ফৌজদারির মতন চিরাচরিত আদালতগুলি এমনকি হাল আমলের লোক আদালতের থেকেও এর প্রকৃতি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ধরনের। ক্রেতা আদালতের অপর নাম ক্রেতা সুরক্ষা আদালত।
আইনের ভাষায় ‘ক্রেতা’-কে বলা হয় ‘কনজিউমার’ উপভোক্তা। সাধারণভাবে যাঁরা হাট, বাজার, দোকান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে মূল্য দিয়ে কোনো জিনিস বা পরিসেবা ক্রয় করে থাকেন তাঁদের ক্রেতা বা কনজিউমার বলা হয়। এই ক্রেতা কোনো জিনিস বা পরিসেবা কিনতে গিয়ে প্রতারিত হলে আইনগত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারেন, তাকে বলা হয় ক্রেতা আদালত (Consumer Court) |
প্রসঙ্গত বলা যায়, ভারতে ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে ‘ক্রেতা সুরক্ষা আইন’ (Con- sumer Protection Act, 1986) অনুসারে ক্রেতা আদালত গঠন করা হয়।
ক্রেতা আদালতের উদ্দেশ্য
ক্রেতা আদালতের প্রধান উদ্দেশ্য হল ক্রেতাদের সুরক্ষা প্রদান। ক্রেতার স্বার্থ দেখাই তার মূল কাজ। প্রবঞ্চিত বা ক্ষতিগ্রস্ত ক্রেতার অভিযোগ বা নালিশের আইনসম্মত সুষ্ঠু প্রতিকার বা নিষ্পত্তিবিধানই এর উদ্দেশ্য। দেশের ক্রেতা সাধারণের উপকার ও সুরক্ষার মহৎ উদ্দেশ্যেই গঠিত হয় ক্রেতা আদালত।
ক্রেতা আদালতের গঠন
ক্রেতা আদালতের তিনটি স্তর রয়েছে। এগুলি হল-① জেলা স্তরের ক্রেত আদালত, ② রাজ্য স্তরের ক্রেতা আদালত এবং জাতীয় স্তরের ক্রেত আদালত। ক্রেতা সুরক্ষা আইনে অবশ্য এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে আদালতের পরিবর্তে ‘কনজিউমার ডিসপিউটস রিড্রেসাল এজেন্সিজ’ ক্রেতা বিরোধ নিষ্পত্তির এজেনি বলে অভিহিত করা হয়েছে। যাই হোক, বর্তমানে সারা ভারতে জেলাস্তরে ক্রেত আদালত রয়েছে ৪৫০টিরও বেশি। রাজ্যস্তরে প্রতি রাজ্যে আছে রাজ্য ক্রেত আদালত বা রাজ্য কমিশন ও জাতীয় স্তরে রয়েছে জাতীয় ক্রেতা আদালত ব জাতীয় কমিশন।
[1] জেলা ক্রেতা আদালত: সাধারণভাবে প্রতিটি জেলায় একটি করে জেলা ক্রেতা আদালত রয়েছে। অবশ্য রাজ্য সরকার প্রয়োজন মনে করলে একটি জেলায় একাধিক ক্রেতা আদালতও স্থাপন করতে পারেন। জেলা ক্রেতা আদালত ৩ জন সদস্যকে নিয়ে গঠিত হয়। এর মধ্যে রয়েছেন একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ, বাকি দুজন হলেন কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক স্নাতক ডিগ্রিধারী মহিলা এবং পুরুষ। এই আইন অনুসারে জেলা জজ হবেন জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের সভাপতি। বাকি দুজন হবেন এর সদস্য। এর প্রত্যেক সদস্য পাঁচ বছরের জন্য অথবা ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত ওই পদে থাকতে পারবেন।
[2] রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন: রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন রাজ্যস্তরে কাজ করে। একজন সভাপতি ও অন্য দুজন সদস্য, মোট তিনজনকে নিয়ে রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন গঠিত হয়। হাইকোর্টের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। অন্য দুজন সদস্য হলেন কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক স্নাতক ডিগ্রিধারী একজন মহিলা ও একজন পুরুষ। রাজ্য কমিশনের সদস্যরা পাঁচ বছরের জন্য অথবা ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারবেন। জেলা ক্রেতা আদালত ও রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশনের সদস্যদের বেতন, ভাতা এবং চাকরির শর্তাবলি রাজ্য সরকার নির্ধারণ করে।
[3] জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন: জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন জাতীয় স্তরে কাজ করে। জাতীয় কমিশন একজন সভাপতি ও চারজন সদস্যসহ মোট পাঁচজনকে নিয়ে গঠিত হয়। সুপ্রিমকোর্টের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশনের সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। অন্য চারজন সদস্যকে কমপক্ষে ৩৫ বছর বয়স্ক ও স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। এঁদের মধ্যে একজন হবেন মহিলা। এই সদস্যরা পাঁচ বছরের জন্য বা সত্তর বছর বয়স পর্যন্ত স্বপদে বহাল থাকতে পারবেন। জাতীয় কমিশনের সদস্যদের বেতন ও চাকরির শর্তাবলি কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারণ করে। জাতীয় কমিশন নতুন দিল্লিতে অবস্থিত। তবে সার্কিট বেঞ্চ হিসেবে এই কমিশন দেশের অন্য জায়গাতেও তার কাজ করতে পারে।
ক্রেতা আদালতের বৈশিষ্ট্য
ক্রেতা আদালত প্রচলিত আদালতগুলির চেয়ে একেবারে ভিন্ন। ক্রেতা আদালতের কতকগুলি মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে-
[1] শুধু ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার জন্য গঠিত: ক্রেতা আদালত শুধুমাত্র ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষার জন্য গঠিত। এই আদালতে ক্রেতা বা উপভোক্তা ছাড়া অন্য কেউ এখানে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন না। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে যে আইনে ক্রেতা আদালতের জন্ম হয়, সেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে এই আইনের লক্ষ্য হল শুধুমাত্র ক্রেতার সুরক্ষা, বিক্রেতার নয়। বিক্রেতা বা পরিসেবা প্রদানকারী তার নিজের অভিযোগ নিয়ে ক্রেতা আদালতে আসতে পারেন না এবং ক্রেতা আদালতও ওই নালিশ গ্রহণ করতে বা বিচার করতে পারেন না।
[2] তিনটি স্তরে বিন্যস্ত: ক্রেতা আদালত তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। শীর্ষে রয়েছে জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন, তার পরবর্তী ধাপে রয়েছে রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন এবং সর্বনিম্ন ধাপে রয়েছে জেলা ক্রেতা আদালত। এই আইনে ক্রেতা-বিবাদের নিষ্পত্তির জন্য গঠিত এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে ‘এজেন্সি’ বলা হয়ে থাকে।
[3] শুধুমাত্র বাদী পক্ষ বা অভিযোগকারীর নালিশ: ক্রেতা আদালতের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এখানে শুধুমাত্র বাদী পক্ষ অর্থাৎ ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে নালিশ গ্রহণ করা হয়। অন্যান্য আদালতে বাদী ও বিবাদী দু-পক্ষেরই নালিশ বা অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে।
[4] শুধু জিনিস নয়, পরিসেবাও অন্তর্ভুক্ত: ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে ক্রেতাদের ক্রয় করা জিনিস নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির সাথে ক্রেতারা অর্থের বিনিময়ে যে সমস্ত পরিসেবা গ্রহণ করেন তাও অন্তর্ভুক্ত থাকে। চিকিৎসা পরিসেবাও ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের এক্তিয়ারের মধ্যে চলে এসেছে। সুপ্রিমকোর্টের রায় অনুসারে মূল্যের বিনিময়ে যে চিকিৎসা পরিসেবা দেওয়া হয় আইনের আওতায় না বিশেষ ক্ষেত্রে বিনামূল্যে দেওয়া চিকিসেবা দেওয়া হয় এই আইনের আওতায় আসবে। অনুরূপভাবে, একজন আইনজীবী তার মক্কেলকে মূল্যের বিনিময়ে যে আইনি পরিসেবা দেন তাও এই আইনের আওতায় পড়ে।
[5] স্বল্প ব্যয়ে নালিশ জানানোর সহজ পদ্ধতি: ক্রেতা আদালতে ক্রেতারা অত্যন্ত অল্প খরচে সহজ সরল পদ্ধতির মাধ্যমে তাদের নালিশ বা অভিযোগ জানাতে পারেন। স্ট্যাম্প ছাড়া সাদা কাগজে ইংরেজি বা বাংলায় পরিষ্কার হস্তাক্ষরে বা টাইপ করে অভিযোগপত্র সরাসরি জমা দেওয়া যায়। দারিদ্র্যসীমার নীচে অবস্থিত অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার কার্ডধারীদের অভিযোগপত্রের সঙ্গে কোনোরকম ফি দিতে হয় না।
[6] আইনজীবীর প্রয়োজন নেই: ক্রেতা আদালতে নালিশ রুজু করার জন্য বা অভিযোগপত্র দায়ের করার জন্য কোনো আইনজীবীর প্রয়োজন নেই। ক্রেতা সুরক্ষা রেগুলেশনে এ কথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ক্রেতা আদালত আইনজীবী নিয়োগের জন্য পীড়াপীড়ি করবে না। এমনকি শুনানির জন্যও আইনজীবী নিয়োগের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অভিযোগকারী ক্রেতা নিজেই তাঁর মামলা পরিচালনা করতে পারেন। কেউ যদি আইনজীবী নিয়োগ করতে চান তা তিনি করতে পারেন।
[7] ক্রেতা আদালতের আদেশ আপিলযোগ্য: এখানে তিন স্তরের আদালতের আদেশই আপিলযোগ্য বলে বিবেচিত হয়, যেমন, জেলা আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রাজ্য কমিশনে আপিল করা যায়। অনুরূপভাবে, রাজ্য কমিশনের আদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় কমিশনে আপিল করা যায়। সর্বশেষ পর্যায়ে জাতীয় কমিশনের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা যায় সুপ্রিমকোর্টে।
[৪] দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি ও ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রয়োগ: ক্রেতা আদালতের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এখানে মামলা বিচারের সময় প্রয়োজন হলে দেওয়ানি কার্যবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি ও ভারতীয় দণ্ডবিধির প্রয়োগ ঘটানো যায়। যেমন, কোনো সাক্ষী বা প্রতিপক্ষকে সমন পাঠিয়ে ক্রেতা আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা, হলফনামার আকারে সাক্ষ্য গ্রহণ করা ইত্যাদি।
প্রশ্ন 10. ক্রেতা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ক্রেতা আদালতের ক্ষমতা ও কার্যাবলি
ক্রেতা আদালতের যেসব ক্ষমতা ও কার্যাবলি রয়েছে তা হল-
[1] ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষিত করা: ক্রেতা আদালতের প্রথম ও প্রধান কাজ হল ক্রেতার স্বার্থ সুরক্ষিত করা। এর উদ্দেশ্যেই ক্রেতা আদালতের সৃষ্টি। প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত ক্রেতারা কীভাবে ন্যায্য প্রতিকার বা ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন তা সুনিশ্চিত করাই এর প্রধান কাজ।
[2] এক্তিয়ার পর্যালোচনা করা: অন্যান্য আদালতের মতো ক্রেতা আদালতও কোনো অভিযোগ বা নালিশ বিচার করার আগে সেই বিষয়ে তার এক্তিয়ার আছে কি না দেখে নেয়। এক্তিয়ারের মধ্যে না পড়লে সেই অভিযোগ বা নালিশের বিচার করা হয় না।
[3] অন্তর্বর্তী আদেশ জারির ক্ষমতা: ২০০২ খ্রিস্টাব্দের সংশোধিত ক্রেতা ইরক্ষা আইন ক্রেতা আদালতকে মামলা চলাকালীন অন্তর্বর্তী আদেশ জারির ক্ষমতা আছে। সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে যে, মামলা চলাকালীন ক্রেতা আদালত প্রয়োজনে মামলার ঘটনা ও অবস্থার বিচারবিবেচনা করে অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করতে পারে।
[4] ভারতীয় দণ্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনে ক্রেতা আদালতকে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে দেওয়ানি ও ফৌজদারি কার্যবিধি এবং ভারতীয় দণ্ডবিধি প্রয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই বিশেষ ক্ষেত্রগুলি হল- ① কোনো সাক্ষী বা প্রতিপক্ষকে সমন পাঠিয়ে ক্রেতা আদালতে হাজির হতে বাধ্য করা। ② সাক্ষ্য প্রমাণের জন্য প্রয়োজনীয় দলিল দস্তাবেজ বা দ্রব্য সংগ্রহ করে সেগুলিকে উপস্থাপিত করা। ও সাক্ষীকে হলফনামা দিয়ে সাক্ষ্য দিতে বলা ইত্যাদি।
[5] নালিশ খারিজ করার ক্ষমতা: দেশের অসংখ্য ক্রেতা সাধারণের উপকার ও তাদের সুরক্ষার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে ক্রেতা আদালত গঠিত হয়েছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অনেক সময় ক্রেতারা এর অপব্যবহারও করে থাকেন। এক্ষেত্রে ক্রেতার নালিশ অতিতুচ্ছ (Frivolous) বা হয়রানিমূলক (Vexa- tious) বলে প্রমাণিত হলে তা খারিজ করে দিয়ে তাকে জরিমানা করার ক্ষমতা ক্রেতা আদালতের রয়েছে। যেমন, সোডা ওয়াটারের বোতলের ভিতর একটি ভাসমান বস্তু দেখা যাচ্ছিল বলে একজন ক্রেতা ক্রেতা আদালতে নালিশ করে ১২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে। জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশন এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বিস্মিত হয়ে শেষ পর্যন্ত বাদীকে ভর্ৎসনা করে তার নালিশ খারিজ করে দেয় (P. A. Pouran Vs MC Dowell & Co., 1989) |
[6] আদেশ বলবৎ করার ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ২৫ নং ধারা অনুসারে ক্রেতা আদালতকে তার আদেশ বলবৎ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইন অনুসারে যদি জেলা ক্রেতা আদালত, রাজ্য কমিশন বা জাতীয় কমিশনের দেওয়া কোনো অন্তর্বর্তী আদেশ না মানা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা আদালত আদেশ অমান্যকারীর সম্পত্তি ক্রোক করতে পারে। এ ছাড়া ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ২৭ নং ধারায় আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, ক্রেতা আদালতের দেওয়া আদেশ মানতে ব্যর্থ হলে আদেশ অমান্যকারীর জেল ও জরিমানা দুই হতে পারে। এই উদ্দেশ্যে জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরের ক্রেতা আদালতকে প্রথম শ্রেণির বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের যাবতীয় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
[7] স্থানান্তর করার ক্ষমতা: বাদীর আবেদনক্রমে অথবা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নিজে থেকেই রাজ্য কমিশন রাজ্যের কোনো জেলা ক্রেতা আদালতে বিচারাধীন কোনো মামলা ন্যায়বিচারের স্বার্থে রাজ্যের অন্য কোনো জেলা ক্রেতা আদালতে স্থানান্তরিত করতে পারেন। জাতীয় কমিশনও ন্যায়বিচারের স্বার্থে কোনো মামলা এক রাজ্যের কোনো জেলা ক্রেতা আদালত থেকে রাজ্যের অন্য কোনো জেলা ক্রেতা আদালতে অথবা এক রাজ্য কমিশন থেকে অন্য রাজ্য কমিশনে স্থানান্তরিত করতে পারেন।
[৪] পুনর্বিচারের ক্ষমতা: ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ১৭ নং ধারা অনুসারে রাজ্য ক্রেতা আদালত বা রাজ্য কমিশন এবং জাতীয় ক্রেতা আদালত বা জাতীয় কমিশনের হাতে মামলার রায় পুনর্বিচার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই ক্ষমতাবলে রাজ্য কমিশন যদি মনে করে রাজ্যের কোনো জেলা ক্রেতা আদালত বিচারাধীন অথবা বিচার নিষ্পত্তিকৃত কোনো মামলায় নিজের এক্তিয়ারের বাইরে কাজ করেছে বা আইনসংগত ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে কমিশন মামলার নথিপত্র তলব করে যথাযোগ্য আদেশ জারি করতে পারে। অনুরূপভাবে, জাতীয় কমিশন যদি মনে করে ভারতের কোনো রাজ্য কমিশন বিচারাধীন অথবা বিচার নিষ্পত্তিকৃত কোনো মামলায় নিজের এক্তিয়ারের বাইরে কাজ করেছে বা আইনসংগত ক্ষমতা প্রয়োগে ব্যর্থ হয়েছে তাহলে সেই মামলার নথিপত্র তলব করে জাতীয় কমিশন যথাযোগ্য আদেশ জারি করতে পারে।
প্রশ্ন 11. ক্রেতা সুরক্ষা আদালত সম্বন্ধে একটি টীকা লেখো।
উত্তর: পৃষ্ঠা নং 192-এর বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক ২ নং প্রশ্নের উত্তর দ্যাখো।