WBBSE Class 10 History Chapter 3 প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ Solution | Bengali Medium

Class 10 History Chapter 3 Solution

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ: বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

1. MCQs Question Answer

1. সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের অন্যতম নেতা ছিলেন-

(a) রানি কর্ণাবতী

(b) রানি শিরোমণি

(c ) দেবী চৌধুরানি

(d) রানি দুর্গাবতী                 

উত্তরঃ(c ) দেবী চৌধুরানি

2. ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে ভারতে সংঘটিত প্রথম কৃষকবিদ্রোহ হল-

(a) রংপুর বিদ্রোহ

(b) পাবনা বিদ্রোহ

(c ) নীল বিদ্রোহ

(d) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ

উত্তরঃ(d) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ

3. সন্ন্যাসী বিদ্রোহের নেতা ছিলেন-

(a) তিতুমির

(b) হাজি শরিয়ত উল্লাহ

(c ) ভবানী পাঠক

(d) নোয়া মিঞা

উত্তরঃ(c ) ভবানী পাঠক

4. সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের প্রথম শুরু হয়-

(a) ঢাকায়

(b) রংপুরে

(c ) ময়মনসিংহে

(d)ফরিদপুরে

উত্তরঃ(a) ঢাকায়

5. ‘সন্ন্যাসী বিদ্রোহ’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন-

(a) ভিনসেন্ট স্মিথ

(b) জেমস মিল

(c ) ওয়ারেন হেস্টিংস

(d) লর্ড কর্নওয়ালিশ               

উত্তরঃ(b) জেমস মিল

6. সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের সময় রংপুরের যুদ্ধে যে ইংরেজ সেনাপতি নিহত হন তিনি হলেন-

(a) এডওয়ার্ড

(b) সেনাপতি হ্যাভল

(c ) সেনাপতি টমাস

(d) সেনাপতি নেলসন

উত্তরঃ(c ) সেনাপতি টমাস

7. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস রচনা করেন-

(a) পাগলপন্থী বিদ্রোহের পটভূমিতে

(b) সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমিতে

(c ) চুয়াড় বিদ্রোহের পটভূমিতে

(d)নীল বিদ্রোহের পটভূমিতে

উত্তরঃ(b) সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমিতে

8. ‘দেবী চৌধুরানি’ রচনা করেন।

(a) বিদ্যাসাগর

(b) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

(c ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

(d)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তরঃ(c ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

9. ভারতে প্রথম ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রসার ঘটান-

(a) সৈয়দ আহমেদ

(b) আবদুল ওয়াহাব

(c ) তিতুমির

(d) গোলাম মাসুম

উত্তরঃ(a) সৈয়দ আহমেদ

10. তিতুমিরের প্রকৃত নাম ছিল-

(a) চিরাগ আলি

(b) হায়দর আলি

(c ) মির নিসার আলি

(d) তোরাপ আলি             

উত্তরঃ(c ) মির নিসার আলি

11. মির নিশার আলি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন-

(a) বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন

(b) ফরাজি আন্দোলন

(c ) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ

(d) নীল বিদ্রোহ            

উত্তরঃ(a) বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলন

12. তিতুমির কর্তৃক ঘোষিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন-

(a) তিতুমির

(b) গোলাম মাসুম

(c ) সৈয়াম আহমেদ

(d) মৈনুদ্দিন

উত্তরঃ(d) মৈনুদ্দিন

13. ‘জমি আল্লাহ-র দান’- কথাটি বলেছিলেন?

(a) তিতুমির

(b) শরিয়ত উল্লাহ

(c ) মইনউদ্দিন

(d) মহম্মদ মহসিন

উত্তরঃ (d) মহম্মদ মহসিন

14. বাঁশের কেল্লা তৈরি হয়েছিল-

(a) চৌগাছা গ্রামে

(b) নারকেলবেড়িয়া গ্রামে

(c ) বসিরহাটে

(d) দিনাজপুরে

উত্তরঃ(b) নারকেলবেড়িয়া গ্রামে

15. তিতুমির কর্তৃক ঘোষিত সরকারের সেনাপতি ছিলেন-

(a) তিতুমির

(b) মৈনুদ্দিন

(c ) গোলাম মাসুম

(d) সৈয়দ আহমেদ

উত্তরঃ(c ) গোলাম মাসুম

16. বাংলায় তরিকা-ই-মহম্মদীয়ার ভাবধারা প্রচার করেন-

(a) টিপু শাহ

(b) তিতুমির

(c ) হাজি শরিয়ত উল্লাহ

(d) দুদু মিঞা

উত্তরঃ(b) তিতুমির

17. ‘তারিকা-ই-মহম্মদীয়া’ কথার অর্থ হল-

(a) মহম্মদের ধর্ম

(b) মহম্মদের নির্দেশ

(c ) মহম্মদের বাণী

(d) মহম্মদের পথ

উত্তরঃ(d) মহম্মদের পথ

18. বারাসাত বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন-

(a) দুদু মিঞা

(b) দিগম্বর বিশ্বাস

(c ) তিতুমির

(d) বিরসা মুন্ডা 

উত্তরঃ(c ) তিতুমির

19. পাগলপন্থী বিদ্রোহের নেতা ছিলেন

(a) সুই মুন্ডা

(b) ঝিন্দরাই মানকি

(c ) করিম শাহ

(d) কানু

উত্তরঃ(c ) করিম শাহ

20. পাগলপন্থী বিদ্রোহ হয়েছিল-

(a) ময়মনসিংহ অঞ্চলে

(b) ছোটোনাগপুর অঞ্চলে

(c ) খান্দেশ অঞ্চলে

(d) ফরিদপুরে

উত্তরঃ(a) ময়মনসিংহ অঞ্চলে

21. পাগলপন্থী সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন-

(a) মজনু শাহ

(b) করিম শাহ

(c ) টিপু শাহ

(d) মুসা শাহ

উত্তরঃ(b) করিম শাহ

22. ‘ফরাজি’ নামে ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন-

(a) হাজি শরিয়ত উল্লাহ

(b) দুদু মিঞা

(c ) তিতুমির

(d) মজনু শাহ

উত্তরঃ(a) হাজি শরিয়ত উল্লাহ

23. ‘দার-উল-হারব’ কথার অর্থ হল-

(a) ইসলামের দেশ

(b) শত্রুর দেশ

(c ) বিপ্লবের দেশ

(d) মিত্রদেশ

উত্তরঃ(b) শত্রুর দেশ

24. ‘ফরাজি’ কথার অর্থ হল-

(a) আল্লাহর কাছে নিজেকে নিবেদন

(b) নবজাগরণ

(c ) আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত বাধ্যতামূলক কর্তব্য

(d) মহম্মদ নির্দেশিত পথ

উত্তরঃ(c ) আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত বাধ্যতামূলক কর্তব্য

25. ফরাজি আন্দোলনের সূচনা করেন-

(a) শরিয়ত উল্লাহ

(b) তিতুমির

(c ) দুদু মিঞা

(d) সৈয়দ আহমদ

উত্তরঃ(a) শরিয়ত উল্লাহ

26. সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী কৃষক বিদ্রোহটি হল-

(a) চুয়াড় বিদ্রোহ

(b) ফরাজি আন্দোলন

(c ) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ

(d) সাঁওতাল বিদ্রোহ                    

উত্তরঃ(b) ফরাজি আন্দোলন

27. ফরাজি আন্দোলনের আর-এক নাম-

(a) শুদ্ধি আন্দোলন

(b) মিঞা আন্দোলন

(c ) হোসেন আন্দোলন

(d) ইসলামিক আন্দোলন

উত্তরঃ(d) ইসলামিক আন্দোলন

2. Very Short Question Answer

1. ভারতীয় উপজাতিদের দ্বারা অরণ্যের সম্পদ আহরণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার কোন্ আইন পাস করে?

>> ভারতীয় উপজাতিদের দ্বারা অরণ্যের সম্পদ আহরণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার ‘ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন’ পাস করে।

2. ভারতে ব্রিটিশ সরকার প্রথম কোন্ পদক্ষেপের দ্বারা অরণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে?

> ভারতে ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে অরণ্য সনদ-এর দ্বারা অরণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে।

3. দিয়েত্রিখ ব্র্যান্ডিস কে ছিলেন?

>> দিয়েত্রিখ ব্র্যান্ডিস ছিলেন ভারতে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গঠিত বনবিভাগের (১৮৬৪ খ্রি.) প্রথম ইনস্পেকটর-জেনারেল।

4. ভারতীয় অরণ্য আইন কবে পাস হয়?

>> ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতীয় অরণ্য আইন’ পাস হয়।

5. সরকার কোন্ আইনের দ্বারা অরণ্যকে- [i] সংরক্ষিত অরণ্য, [ii] সুরক্ষিত অরণ্য ও [iii] গ্রামীণ অরণ্য-এই তিন ভাগে বিভক্ত করে?

 » ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দের ‘অরণ্য আইন’-এর দ্বারা সরকার অরণ্যকে [i] সংরক্ষিত অরণ্য, [ii] সুরক্ষিত অরণ্য ও [iii] গ্রামীণ অরণ্য-এই তিন ভাগে ভাগ করে।

6. কার প্রচেষ্টায় ভারতে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস চালু হয়?

>> দিয়েত্রিখ ব্র্যান্ডিসের প্রচেষ্টায় ভারতে ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিস চালু হয়।

7. বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আদিবাসীদের শায়েস্তা করতে সরকার কী আইন পাস করে?

>> বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আদিবাসীদের শায়েস্তা করতে সরকার ‘ক্রিমিনাল ট্রাইব্‌ক্স অ্যাক্ট’ পাস করে।

8. রম্পা বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?

>> রম্পা বিদ্রোহ হয়েছিল ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে।

9. রংপুরের স্থানীয় স্বাধীন সরকারের নবাব নুরুলউদ্দিনের সহকারী কে ছিলেন?

>> রংপুরের স্থানীয় স্বাধীন সরকারের নবাব নুরুলউদ্দিনের সহকারী ছিলেন দয়ারাম শীল।

10. রংপুর বিদ্রোহ দমনে কে ব্রিটিশ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন?

>> রংপুর বিদ্রোহ দমনে ম্যাকডোনাল্ড ব্রিটিশ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।

11. কে ‘মেদিনীপুরের লক্ষ্মীবাই’ নামে পরিচিত?

>> মেদিনীপুরের রানি শিরোমণি ‘মেদিনীপুরের লক্ষ্মীবাই’ নামে পরিচিত।

12. কার বিরুদ্ধে, কবে রংপুর বিদ্রোহ শুরু হয়?

>> রংপুরের অত্যাচারী ইজারাদার দেবী সিংহের বিরুদ্ধে ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে রংপুর বিদ্রোহ শুরু হয়।

13. রংপুরের কৃষকরা কবে, কোথায় বিদ্রোহ ঘোষণা করে?

>> রংপুরের কাজীর হাট, কাকিনা, ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি স্থানের কৃষকরা ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে তেপা গ্রামে অত্যাচারী ইজারাদার দেবী সিংহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

14. ‘ডিং খরচা’ কী?

>> রংপুর বিদ্রোহের (১৭৮৩ খ্রি.) সময় বিদ্রোহীরা বিদ্রোহের ব্যয় নির্বাহের জন্য চাঁদা ধার্য করে যা ‘ডিং খরচা’ নামে পরিচিত।

15. কেন রংপুর বিদ্রোহ বন্ধ হয়ে যায়?

>> রংপুরের বিদ্রোহীরা মোগলহাট ও পাটগ্রামের যুদ্ধে ব্রিটিশ সেনাপতি ম্যাকডোনাল্ডের বাহিনীর কাছে পরাজিত হলে বিদ্রোহ বন হয়ে যায়।

16. কোম্পানির শাসনকালে সংঘটিত প্রথম কৃষকবিদ্রোহ কোন্টি?

>> কোম্পানির শাসনকালে সংঘটিত প্রথম কৃষকবিদ্রোহটি হল চুয়াড় বিদ্রোহ।

17. চুয়াড় বিদ্রোহ কতগুলি পর্বে সংঘটিত হয় ও কী কী?

>> চুয়াড় বিদ্রোহ দুটি পর্বে সংঘটিত হয়। প্রথম পর্বের বিদ্রোহ ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে এবং দ্বিতীয় পর্বের বিদ্রোহ ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়।

18. চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান নেতাদের নাম লেখো।

>> চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন জগন্নাথ সিংহ, দুর্জন সিং, রানি শিরোমণি প্রমুখ।

19. কোন্ অঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল জেলা গঠন করা হয়?

>> বিষ্ণুপুর শহরকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলার দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল জেলা গঠন করা হয়।

20. ভয়েলকার কে ছিলেন?

> ভয়েলকার ছিলেন একজন জার্মান কৃষিবিদ, যিনি ভারতে এসেছিলেন।

21. কোল উপজাতি কোথায় বসবাস করত?

>> কোল উপজাতি প্রধানত বিহারের ছোটোনাগুপর ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে বসবাস করত।

22. কোল বিদ্রোহ কোন্ অঞ্চলে প্রসার লাভ করে?

>> কোল বিদ্রোহ সিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ ও পালামৌ জেলার সর্বত্র প্রসার লাভ করে।

23. কোল বিদ্রোহের প্রধান নেতা কারা ছিলেন?

> কোল বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন বুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত, সিংরাই, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখ।

24. মহারাষ্ট্রের ভিল-অধ্যুষিত খান্দেশ অঞ্চল কবে ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসে?

>> মহারাষ্ট্রের ভিল-অধ্যুষিত খান্দেশ অঞ্চল ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনাধীনে আসে।

25. ভিল উপজাতি কার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ করে?

> ভিল উপজাতি মারাঠা নেতা ত্রিম্বকজির প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিদ্রোহ করে।

26. ভিল বিদ্রোহ কে দমন করেছিলেন?

>> ভিল বিদ্রোহ দমন করেছিলেন ব্রিটিশ সেনাপতি কর্নেল আউট্রাম।

27. হো-বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?

>> হো-বিদ্রোহ হয়েছিল ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে।

28. হো-বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল?

>> হো-বিদ্রোহ হয়েছিল ছোটোনাগপুরের সিংভূম অঞ্চলে।

29. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কবে ছোটোনাগপুর অঞ্চলের শাসনভার হাতে নেয়?

>> ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ছোটোনাগপুর অঞ্চলের শাসনভার হাতে নেয়।

30. কোল বিদ্রোহ কবে হয়েছিল?

>> ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে কোল বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল।

31. কোল বিদ্রোহীদের ওপর ব্রিটিশ বাহিনীর আক্রমণে কে নেতৃত্ব দেন?

>> কোল বিদ্রোহীদের ওপর ব্রিটিশ বাহিনীর আক্রমণে নেতৃত্ব দেন ক্যাপটেন উইলকিনসন।

32. বিদ্রোহের পর কোলদের জন্য কোন্ ভূখণ্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়?

>> বিদ্রোহের পর কোলদের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।

33. গুন্ডা ধুর কে ছিলেন?

>> গুন্ডা ধুর ছিলেন বাস্তার বিদ্রোহের নেতা।

34. মহাজনরা সাঁওতালদের ঋণের ওপর কী পরিমাণ সুদ আদায় করত?

>> মহাজনরা সাঁওতালদের ঋণের ওপর ৫০ থেকে ৫০০ শতাংশ সুদ আদায় করত।

35. ‘কেনারাম’ নামে বাটখারা কী কাজে ব্যবহার করা হত?

>> ‘কেনারাম’ নামে বাটখারা সাঁওতালদের কাছ থেকে পণ্য কেনার জন্য ব্যবহার করা হত।

36. ‘বেচারাম’ নামে বাটখারা কী কাজে ব্যবহার করা হত?

>> ‘বেচারাম’ নামে বাটখারা সাঁওতালদের কাছে পণ্য বিক্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হত।

37. বিদ্রোহের আগে সাঁওতাল কৃষকদের কোন্ ধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়?

>> বিদ্রোহের আগে সাঁওতাল কৃষকদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়।

38. সাঁওতাল বিদ্রোহ কবে শুরু হয়?

>> ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয়।

39. চাঁদ কোন্ বিদ্রোহের নেতা ছিলেন?

>> চাঁদ সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা ছিলেন।

40. কালো প্রামাণিক ও ডোমন মাঝি কোন্ বিদ্রোহের নেতা ছিলেন?

>> কালো প্রামাণিক ও ডোমন মাঝি সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা ছিলেন।

41. মহেন্দ্রলাল দত্ত কোন্ বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন?

>> মহেন্দ্রলাল দত্ত সাঁওতাল বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন।

42. ‘উলঘুলান’ বলতে কী বোঝায়?

>> ‘উলঘুলান’ শব্দের অর্থ ‘ভয়ংকর বিশৃঙ্খলা’ বা ‘প্রবল বিক্ষোভ’।

3. Short Question Answer

1. ঔপনিবেশিক শাসনকালে জমিদাররা কৃষকদের ওপর কীভাবে অত্যাচার চালাত?

উত্তরঃ ঔপনিবেশিক শাসনকালে জমিদাররা কৃষকদের ওপর- [1] উচ্চহারে ভূমিরাজস্ব আরোপ করত, [2] ভূমিরাজস্ব ছাড়াও অন্যান্য বেশ কিছু নতুন কর আরোপ করত, [3] রাজস্ব ও অন্যান্য কর আদায়ে কৃষকদের ওপর অত্যাচার চালাত, [4] কর দিতে ব্যর্থ হলে কৃষকদের জমি থেকে উৎখাত করত।

2. ব্রিটিশ শাসনের আগে অরণ্য কীভাবে আদিবাসীদের জীবিকানির্বায়ে সাহায্য করত?

উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসনের আগে অরণ্য আদিবাসীদের জীবিকানির্বাহে নানাভাবে সাহায্য করত। আদিবাসীরা অরণ্যের কাঠ, ফলমূল ও বিভিন্ন বনজ সম্পদ সংগ্রহ, পশুপাখি শিকার প্রভৃতির দ্বারা জীবিকানির্বাহ করত। তার অরণ্যের সম্পদ ভোগ এবং বিক্রি দুই-ই করত।

3.অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশ সরকার কী উদ্দেশ্যে অরণ্যের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে?

উত্তরঃ অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশ সরকার ভারতে নতুন শহরের নির্মাণকার্য জাহাজ তৈরি, রেলপথ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির প্রয়োজনে অরণ্যের ওপর আধিপত প্রতিষ্ঠা করে।

4. আদিবাসীদের কৃষিজমিতে সরকার রাজস্ব আরোপ করলে আদিবাসীরা ক্ষুব্ধ হয় কেন?

উত্তরঃ আদিবাসীরা কঠোর পরিশ্রম করে বনভূমি পরিষ্কার করে, অনুবা পতিত জমি উদ্ধার করে সেখানে চাষবাস শুরু করে। তাদের পরিশ্রমে উদ্ধার হওয়া এই জমিতে ব্রিটিশ সরকার রাজস্ব আরোপ করলে তারা ক্ষুদ্ধ হয়। 

 5. ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে অরণ্য আইনকে কটি স্তরে ভাগ করা হয় এবং ভাগগুলি কী?

উত্তরঃ ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে অরণ্য আইনকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়। এগুলি হল-[1] সংরক্ষিত (Reserved), [2] সুরক্ষিত (Protected) এবং [3] অ-শ্রেণিবিভক্ত (Unclassified)।

6. অরণ্যের অধিকার হারিয়ে জীবিকানির্বাহে ব্যর্থ বহু আদিবাসী কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে?

উত্তরঃ অরণ্যের অধিকার হারিয়ে জীবিকানির্বাহে ব্যর্থ হয়ে-[1] বহু আদিবাসী সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়। [2] অনেকে চুরি, ডাকাতি শুরু করে। [3] অনেকে বসতি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়।

7. ব্রিটিশ সরকার কবে, কোথায় ইম্পিরিয়াল ফরেস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করে? 

উত্তরঃ ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে দেরাদুনে ব্রিটিশ সরকার ‘ইম্পিরিয়াল ফরেস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করে।

 8. সরকার কোন্ কোন্ বছর ক্রিমিনাল ট্রাইবস্ অ্যাক্ট পাস করে? কী উদ্দেশ্যে এই আইন পাস হয়?

উত্তরঃ সরকার ১৮৭১, ১৯১১ ও ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে পৃথক পৃথক ক্রিমিনাল ট্রাইবস্ অ্যাক্ট পাস করে।

ক্রমিনাল ট্রাইবস্ অ্যাক্ট পাসের উদ্দেশ্য ছিল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আদিবাসীদের শায়েস্তা করা।

9. বিদ্রোহ কাকে বলে? বিদ্রোহের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে বিরোধী জনগোষ্ঠীর আন্দোলন সাধারণভাবে বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

বিদ্রোহের একটি উদাহরণ হল নীলকরদের বিরুদ্ধে বাংলার কৃষকদের পরিচালনায় ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে সংগঠিত ‘নীল বিদ্রোহ’।

10.অভ্যুত্থান বলতে কী বোঝ? অভ্যুত্থানের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজ গোষ্ঠীর একাংশের সংগ্রাম সাধারণভাবে অভ্যুত্থান নামে পরিচিত।

উত্তরঃ অভ্যুত্থানের একটি উদাহরণ হল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে সরকারের বিরুদ্ধে সেনাদের একাংশের বিদ্রোহ ঘোষণা।

11.বিপ্লব বলতে কী বোঝায়?

উত্তরঃ কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তনকে বিপ্লব বলা হয়। বিপ্লবের একটি উদাহরণ হল ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি বিপ্লব। কেন-না, এই বিপ্লবের দ্বারা ফরাসি সমাজ ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন ঘটে।

12. ‘বাংলায় ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত কয়েকটি কৃষকবিদ্রোহের নাম লেখো।

উত্তরঃ বাংলায় ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত কয়েকটি কৃষকবিদ্রোহ হল-[1] চুয়াড

বিদ্রোহ (১৭৬৭ ও ১৭৯৮-৯৯ খ্রি.) [2] রংপুর বিদ্রোহ (১৭৮৩ খ্রি.) [3] ভিল বিদ্রোহ (১৮১৯ খ্রি.) [4] কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩২ খ্রি.) [5] সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫-৫৬ খ্রি.) (6) নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-৬০ খ্রি.) [7] মুন্ডা বিদ্রোহ (১৮৯৯-১৯০০ খ্রি.) প্রভৃতি।

13. ঔপনিবেশিক বাংলায় কয়েকটি উপজাতি কৃষকবিদ্রোহের নাম লেখো।

উত্তরঃ ঔপনিবেশিক বাংলায় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপজাতি বিদ্রোহ হল-[1] চুয়াড় বিদ্রোহ (১৭৬৭ ও ১৭৯৮-৯৯ খ্রি.) [2] ভিল বিদ্রোহ (১৮১৯ খ্রি.) [3] কোল বিদ্রোহ (১৮৩১-৩২ খ্রি.) [4] সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫-৫৬ খ্রি.) [5] মুন্ডা বিদ্রোহ (১৮৯৯-১৯০০ খ্রি.) প্রভৃতি।

14.ঔপনিবেশিক অরণ্য আইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিদ্রোহগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো। 

উত্তরঃ ঔপনিবেশিক অরণ্য আইনের বিরুদ্ধে সংঘটিত বিদ্রোহগুলির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল [1] এই বিদ্রোহগুলি ছিল মূলত উপজাতি বিদ্রোহ, [2] বিদ্রোহীরা অরণ্যের ওপর তাদের চিরাচরিত অধিকার রক্ষা করতে প্রাণপাত করে। [3] বিদ্রোহে ব্রিটিশ-বিরোধিতা ছিল স্পষ্ট ও তীব্র। [4] বিদ্রোহগুলি অধিকাংশ সময়ই ছিল সশস্ত্র।

15. বনাঞ্চলগুলির ওপর ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব বৃদ্ধির দুটি কারণ উল্লেখ করো।

উত্তরঃ বনাঞ্চলগুলির ওপর ঔপনিবেশিক কর্তৃত্ব বৃদ্ধির দুটি কারণ হল- [1] সরকার ভারতে নতুন নতুন শহরের নির্মাণকার্য করতে গিয়ে বনাঞ্চলের কাঠের প্রয়োজন বোধ করে। [2] জাহাজ তৈরি, রেলপথ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি প্রয়োজনে সরকার বনাঞ্চলের কাঠের ওপর একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

16. দেবী সিংহ কে ছিলেন?

উত্তরঃ দেবী সিংহ ছিলেন দিনাজপুর, রংপুর ও এদ্রাকপুর পরগনার একজন ইজারাদার। তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলের ইজারা নিয়ে এখানকার জমিদার ও প্রজাদের ওপর রাজস্বের হার বহুগুণ বৃদ্ধি করলে তাঁর বিরুদ্ধে রংপুর বিদ্রোহ (১৭৮৩ খ্রি.) শুরু হয়।

17.দেবী সিংহ জমিদার ও কৃষকদের ওপর কী ধরনের অত্যাচার চালাতেন?
উত্তরঃ দিনাজপুর, রংপুর জেলা এবং এদ্রাকপুর পরগনার ইজারাদার দেবী সিংহ সেই অঞ্চলের জমিদার ও প্রজাদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার চালান। [1] তিনি তাদের ওপর রাজস্বের হার বহুগুণ বৃদ্ধি করেন। [2] বিভিন্ন নতুন কর আরোপ করেন। [3] এই অর্থ আদায়ে তাদের ওপর চরম অত্যাচার চালানো হয়। কৃষকদের কারাগারে অনাহারে বন্দি রাখা, বেত্রাঘাত প্রভৃতি চলতে থাকে।

18. রংপুর বিদ্রোহের স্বাধীন সরকার সম্পর্কে কী জান?
উত্তরঃ ইজারাদার দেবী সিংহ ও ব্রিটিশ কোম্পানির বিরুদ্ধে ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে রংপুর বিদ্রোহ শুরু হয়। বিদ্রোহীরা একটি ‘স্থানীয় স্বাধীন সরকার’ গঠন করে নুরুলউদ্দিন-কে নেতা বা নবাব এবং দয়ারাম শীলকে সহকারী নেতা বলে ঘোষণা করে।

 19. চুয়াড়দের পেশা কী ছিল?

উত্তরঃ চুয়াড়রা- [1] কেউ কেউ কৃষিকাজ করত। [2] কেউ কেউ পশুশিকারের সঙ্গে যুক্ত ছিল। [3] কেউ কেউ স্থানীয় জমিদারদের অধীনে পাইক বা সৈনিকের কাজ করত।

20. প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে কী জান?

উত্তরঃ প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত হয়। ইংরেজ কোম্পানি মেদিনীপুরের জমিদারের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে দিলে ঘাটশিলার ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। জমিদারদের পক্ষ নিয়ে চুয়াড়রা বিদ্রোহে অংশ নেয়।

 21. দুর্জন সিং কে ছিলেন?

উত্তরঃ দুর্জন সিং ছিলেন বাঁকুড়ার রায়পুরের জমিদার ও চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম নেতা। তিনি প্রায় ১৫০০ জন অনুগামী নিয়ে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং প্রায় ৩০টি গ্রামে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন।

22. রানি শিরোমণি কে ছিলেন?

উত্তরঃ রানি শিরোমণি ছিলেন মেদিনীপুরের রানি এবং চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম নেত্রী। বিদ্রোহে অসামান্য অবদানের জন্য রানি শিরোমণি ‘মেদিনীপুরের লক্ষ্মীবাই’ নামে পরিচিত হন।

23. কবে, কাদের মধ্যে ‘চাইবাসার যুদ্ধ’ হয়েছিল? এই যুদ্ধে কারা পরাজিত হয়?

উত্তরঃ ১৮২০-২১ খ্রিস্টাব্দে কোল উপজাতি এবং পোড়াহাটের জমিদার ও সেনাপতি রোগসেস-এর নেতৃত্বাধীন ইংরেজবাহিনীর মধ্যে ‘চাইবাসার যুদ্ধ’ হয়েছিল।

24. কোল বিদ্রোহের প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলি কী ছিল? 

উত্তরঃ কোল বিদ্রোহের প্রধান সীমাবদ্ধতাগুলি ছিল [1] এই বিদ্রোহে সুযোগ্য নেতার অভাব ছিল। [2] আঞ্চলিকতার সীমাবদ্ধতার ফলে এই বিদ্রোহ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। [3] শিক্ষিত সমাজ কোল বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করেনি। [4] বিদ্রোহীদের মধ্যে যোগাযোগের যথেষ্ট অভাব ছিল।

25. ভিল কারা?

উত্তরঃ ভিল হল ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়। পশ্চিম ভারতের বর্তমান গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের খান্দেশ ও তার সংলগ্ন সুবিস্তৃত অঞ্চলে ভিল জাতির একটি অংশ বসবাস করত।

26.কেনারাম’ কী?

উত্তরঃ ছোটোনাগপুরের সাঁওতাল-অধ্যুষিত অঞ্চলে বহিরাগত ব্যবসায়ীরা প্রকৃত যা ওজন হওয়া উচিত তার থেকে বেশি ওজনের বাটখারা দিয়ে ওজন করে সাঁওতালদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কিনত। এই বাটখারা ‘কেনারাম’ নামে পরিচিত।

27.’বেচারাম’ কী?

উত্তরঃ ছোটোনাগপুরের সাঁওতাল-অধ্যুষিত অঞ্চলে বহিরাগত ব্যবসায়ীরা প্রকৃত যা ওজন হওয়া উচিত তার থেকে কম ওজনের বাটখারা দিয়ে ওজন করে সাঁওতালদের কাছে লবণ, চিনি প্রভৃতি পণ্য বিক্রি করত। এই বাটখারা ‘বেচারাম’ নামে পরিচিত।

28.ব্যবসায়ীরা সাঁওতালদের কীভাবে শোষণ করত?

উত্তরঃ ব্যবসায়ীরা ‘কেনারাম’ নামে কম ওজনের বাটখারা ব্যবহার করে সাঁওতালদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনার সময় এবং ‘বেচারাম’ নামে বেশি ওজনের বাটখারা ব্যবহার করে নিজেদের পণ্যগুলি সাঁওতালদের কাছে বিক্রির সময় ঠকাত।

29 ‘দিকু’ কাদের বলা হত?

উত্তরঃ ছোটোনাগপুরে সাঁওতাল-অধ্যুষিত অঞ্চলে আগত বহিরাগত জমিদার, মহাজন ও ব্যবসায়ীদের ‘দিকু’ বলা হত।

30.সিধু ও কানু কবে, কোথায় স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন?

উত্তরঃ সিধু ও কানুর নেতৃত্বে প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের ৩০ জুন ভাগনাডিহির মাঠে জড়ো হয়। সেখানে সিধু ও কানু শোষণমুক্ত স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন।

11. সাঁওতাল বিদ্রোহীরা বিদ্রোহে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়?

উত্তরঃ সাঁওতাল বিদ্রোহীরা বিস্তীর্ণ অঞ্চলে রেলস্টেশন, থানা, ডাকঘর, ইউরোপীয়দের বাসস্থান, দেশীয় জমিদারদের বাসস্থান, মহাজনদের গদি প্রভৃতি আক্রমণ করতে থাকে। তারা সাধারণ তিরধনুক, বর্শা, বল্লম প্রভৃতি নিয়ে আধুনিক অস্ত্রসজ্জিত ব্রিটিশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যায়।

4. Long Question Answer

1 ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে সংঘটিত বিভিন্ন কৃষক ও আদিবাসী বিদ্রোহের প্রধান কারণ কী ছিল?

উত্তরঃ ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে সংঘটিত কৃষক ও আদিবাসী বিদ্রোহের কারণ

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের কৃষক ও উপজাতি গোষ্ঠীর ওপর সরকার এবং তাদের সহযোগী জমিদার ও মহাজন শ্রেণির শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন ও বিদ্রোহ শুরু হয়। এসব আন্দোলন বা বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল নিম্নরূপ- 

[1] ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধি: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কৃষকদের ওপর ভূমিরাজস্বের বোঝা বিপুল পরিমাণে বাড়িয়ে দিলে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে যায়।

[2] ব্রিটিশ আইন ও বিচারব্যবস্থা: ইংরেজরা ভারতের চিরাচরিত আইনকানুন ও বিচারব্যবস্থা বাতিল করে তাদের নিজস্ব আইন ও বিচারব্যবস্থা চালু করে। ভারতীয় সমাজে এরূপ বিদেশি হস্তক্ষেপে দেশবাসী ক্ষুদ্ধ হয়।

[3] চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ত্রুটি: সরকার প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (১৭৯৩ খ্রি.) ফলে কৃষকরা তাদের জমির মালিকানা হারায় এবং জমির মালিকানা চলে যায় একশ্রেণির নতুন জমিদারদের হাতে। তারা নিজের ইচ্ছামতো কৃষকদের ওপর কর বৃদ্ধি করে।

[4] অত্যাচার: জমিদার শ্রেণি কর আদায়ে কৃষকদের ওপর সীমাহীন নির্যাতন শুরু করে এবং যখনতখন কৃষককে জমি থেকে উৎখাত করতে থাকে।

[5] খাদ্যাভাব: সরকার কৃষকদের ধানের পরিবর্তে নীল, পাট, তুলো প্রভৃতি চাষে বাধ্য করলে কৃষকদের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয়।

[6] ঋণের জাল: মহাজন শ্রেণি দরিদ্র প্রজাদের নানাভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে দেয়। ফলে প্রজাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।

[7] কুটিরশিল্প ধ্বংস: ব্রিটেনে শিল্পবিপ্লব ঘটার পর সেখানকার শিল্পজাত পণ্য ভারতের বাজারগুলি দখল করে নিলে ভারতের কুটিরশিল্প ধ্বংস হয় এবং শিল্পী ও কারিগররা বেকার হয়ে পড়ে।

উপসংহার: সীমাহীন শোষণ-নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতের কৃষক ও আদিবাসী সম্প্রদায় বিদ্রোহী হয়ে উঠতে বাধ্য হয়। তাদের বিদ্রোহগুলি বহুক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও পরবর্তীকালের বৃহৎ সংগ্রামের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল।

2. ভারতের আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায় কীভাবে অরণ্যের ওপর নির্ভর করে জীবিকানির্বাহ করত এবং ব্রিটিশ সরকার কীভাবে তাদের অরণ্যের অধিকার হরণ করে নেয়?

উত্তরঃ ভারতের আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের অরণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা-

ভূমিকা: ভারতের প্রাচীন বাসিন্দা আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়ে মানুষজন ছিল খুবই সরল প্রকৃতির। তারা মূলত অরণ্যের ওপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত।

[1] বাসস্থান: ভারতের উপজাতি বা আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি সাধারণত তথাকথিত সভ্য সমাজ থেকে অনেক দূরে প্রত্যন্ত অরণ্যসংকুল ও পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করত।

[2] অরণ্যসম্পদ সংগ্রহ: ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আদিবাসীরা অরণ্যের কাঠ, ফলমূল ও বিভিন্ন বনজ সম্পদ সংগ্রহ, পশুপাখি শিকার প্রভৃতির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত।

[3] জীবিকানির্বাহ: আদিবাসী সম্প্রদায়গুলি অরণ্যের সম্পদ ভোগ এবং বিক্রি দুই-ই করত। তারা কঠোর পরিশ্রম করে বনভূমি পরিষ্কার করে, অনুর্বর পতিত জমি উদ্ধার করে সেখানে চাষবাস শুরু করে।

আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার হরণ-

কিন্তু অষ্টাদশ শতক থেকে ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর সরকার নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেয়। যেমন-

[1] অরণ্যে সরকারি আধিপত্য: ব্রিটিশ সরকার এদেশে নতুন নতুন শহরের নির্মাণকার্য, জাহাজ তৈরি, রেলপথ প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি প্রয়োজনে ভারতের অরণ্য সম্পদের ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

[2] আদিবাসীদের অধিকারহরণ: সরকার নানা বাধানিষেধের মাধ্যমে আদিবাসীদের অরণ্যের বনজ সম্পদ আহরণের অধিকার কেড়ে নেয়। এ ছাড়া অরণ্য সনদ, বনবিভাগ গঠন, অরণ্য আইন প্রবর্তন প্রভৃতির ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের অরণ্যের অধিকার হারাতে থাকে।

[3] খাজনা আরোপ: আদিবাসীরা নিজ পরিশ্রমে যে কৃষিজমি উদ্ধার করে তার ওপর সরকার খাজনা নির্ধারণ করে। ব্রিটিশ সরকারের এই অরণ্যনীতির ফলে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায় ক্ষুদ্ধ হয়।

উপসংহার: সামগ্রিকভাবে অরণ্যই ছিল আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর জীবনজীবিকার মূল উৎস। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার অরণ্যের ওপর হস্তক্ষেপ করলে এইসব সহজসরল মানুষগুলোর ওপর তীব্র অর্থনৈতিক শোষণ নেমে আসে। 

3.ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতে অরণ্যের ওপর আধিপত্য বৃদ্ধির পদক্ষেপগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতে অরণ্যের ওপর আধিপত্য বৃদ্ধির পদক্ষেপ-

ভূমিকা: ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারতের আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেয় বা ধ্বংস করে। যেমন-

[1] অরণ্য সনদ, ১৮৫৫ খ্রি.:

ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ‘অরণ্য সনদ’ পাস করে। এর দ্বারা সরকার অরণ্যের কাঠ সংগ্রহ ও কাঠের ব্যাবসার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। অরণ্যের শাল, সেগুন প্রভৃতি মূল্যবান কাঠ সরকারের সম্পত্তিতে পরিণত হয়। ফলে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের জীবন ও জীবিকায় টান পড়ে।

[2] বনবিভাগ গঠন: ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে বনবিভাগ গঠন করে। দিয়েত্রিখ ব্র্যান্ডিস নামে জনৈক জার্মানকে বনবিভাগের ইনস্পেকটর জেনারেল হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

[3] প্রথম অরণ্য আইন, ১৮৬৫ খ্রি.: সরকার ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ‘ভারতীয় অরণ্য আইন’ পাস করে এদেশের অরণ্য সম্পদের ওপর ভারতীয়দের অধিকার খর্ব করে এবং অরণ্যকে সংরক্ষণের আওতায় এনে সেখানে নিজের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে। সরকার ঘোষণা করে যে, অরণ্যে ঘেরা যে-কোনো ভূমিই হল সরকারি সম্পত্তি।

[4] দ্বিতীয় অরণ্য আইন, ১৮৭৮ খ্রি.: ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দের দ্বিতীয় ‘অরণ্য আইন’-এর দ্বারা সরকার অরণ্যের ওপর নিজের অধিকার আরও সুপ্রতিষ্ঠিত করে।

উপসংহার: ব্রিটিশ সরকারের এই সকল পদক্ষেপের ফলে অরণ্যের ওপর নির্ভরশীল ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায় তাদের শতসহস্র বছরের অরণ্যের অধিকার হারিয়ে এক চরম দুর্দশার শিকার হয়। ফলে তারা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের পথে পা বাড়ায়।

জেনে রাখো• ব্রিটিশ সরকার আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নিলে বহু আদিবাসী জীবিকানির্বাহের জন্য চুরি-ডাকাতি শুরু করে বা বসতি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। সরকার ১৮৭১, ১৯১১ ও ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে পৃথক পৃথক ‘ক্রিমিনাল ট্রাইবস্ অ্যাক্ট’ পাস করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আদিবাসীদের শায়েস্তা করতে থাকে।

• অরণ্যের অধিকার হারিয়ে ভারতের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ সরকারের ওপর প্রচন্ড ক্ষুদ্ধ হয় এবং বিদ্রোহে শামিল হয়। এসব বিদ্রোহগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চুয়াড় বিদ্রোহ, কোল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ, মুন্ডা বিদ্রোহ, ভিল বিদ্রোহ প্রভৃতি।

4. কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন?

উত্তরঃ অরণ্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য-

অরণ্য আইন: ঔপনিবেশিক শাসনকালে ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে ভারতে সরকারি বনবিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম অরণ্য আইন ও ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় অরণ্য আইন পাস করে ব্রিটিশ সরকার বনভূমির ওপর তাদের অধিকার নিশ্চিত করে।

অরণ্য আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য: এদেশে অরণ্য আইন প্রণয়নের নানা উদ্দেশ্য ছিল। যেমন- [1] ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দের পর কোম্পানির জাহাজ নির্মাণের জন্য ওক কাঠের প্রয়োজন দেখা দেয়। ফলে কোম্পানি ভারতীয় বনজ সম্পদের দিকে নজর দেয়। [2] উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ভারতে রেলপথের নির্মাণ ও তার বিস্তার শুরু হলে রেললাইনের স্লিপার নির্মাণ ও অন্যান্য কাজে কাঠের প্রয়োজন দেখা দেয়, যার ফলে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে বনভূমি সংরক্ষণের তাগিদ দেখা দেয়। [3] ভারতের অরণ্যগুলিতে বসবাসকারী উপজাতিরা যাতে যথেচ্ছভাবে গাছ কাটতে না পারে সেদিকেও নজর দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

উপসংহার: উনিশ শতকের শেষের দিকে ঔপনিবেশিক সরকার দ্বারা অরণ্য আইন প্রণয়নের ফলে অরণ্য জীবন অশান্ত হয়ে ওঠে এবং নানা বিদ্রোহ দেখা দেয়।

5. উত্তর ব্রিটিশ সরকার প্রচলিত বিভিন্ন অরণ্য আইন

ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে অরণ্য সম্পদের ওপর নির্ভর করে এদেশের আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়গুলি জীবিকা নির্বাহ করত। পরবর্তীকালে ব্রিটিশ শাসনকালে একাধিক অরণ্য আইন পাস করে আদিবাসীদের অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়।

[1] ভারতীয় অরণ্য আইন, ১৮৬৫ খ্রি: ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ‘ভারতীয় অরণ্য আইন’ পাস করে। এর দ্বারা- [i] এদেশের অরণ্য সম্পদের ওপর ভারতীয়দের অধিকার খর্ব করা হয়। [ii] সরকার অরণ্যকে সংরক্ষণের আওতায় আনে। [iii] সরকার ঘোষণা করে যে, অরণ্যে ঘেরা যে-কোনো ভূমিই হল সরকারের সম্পত্তি।

[2] ভারতীয় অরণ্য আইন, ১৮৭৮ খ্রি: ব্রিটিশ সরকার ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় ‘ভারতীয় অরণ্য আইন’ পাস করে। এর দ্বারা- [i] ব্রিটিশ সরকার ভারতে অরণ্যের ওপর নিজের অধিকার আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে। [ii] অরণ্যের ওপর আদিবাসীদের অধিকার ধ্বংস করা হয়।

[3] ভারতীয় অরণ্য আইন, ১৯২৭ খ্রি: ব্রিটিশ সরকার ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে অপর একটি ‘ভারতীয় অরণ্য আইন’ পাস করে। এই আইনের দ্বারা অরণ্যকে- [i] সংরক্ষিত অরণ্য, [ii] সুরক্ষিত অরণ্য ও [iii] গ্রামীণ অরণ্য-এই তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়। কোন্ কোন্ বিষয়গুলি ‘অরণ্য বিষয়ক অপরাধ’ অর্থাৎ, অরণ্যের অভ্যন্তরে কোন্ কোন্ কাজ নিষিদ্ধ, অরণ্য আইন লঙ্ঘন করলে কী শাস্তি হবে তা উল্লেখ করা হয়।

উপসংহার: ব্রিটিশ সরকার অরণ্য আইনগুলির মাধ্যমে আদিবাসীদের কাছ থেকে অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেয়। ফলে আদিবাসী সম্প্রদায় জীবনজীবিকার উৎস হারিয়ে শেষপর্যন্ত চুরি-ডাকাতি শুরু করে অথবা বসতি ছেড়ে অন্যত্র ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়।

6. ‘বিদ্রোহ, অভ্যুস্থান ও বিপ্লব’-এর ধারণাটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ ভূমিকা: ইতিহাসের আলোচনায় আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ধারা হল ‘বিদ্রোহ’, ‘অভ্যুত্থান’ ও ‘বিপ্লব’। বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন দেশে শোষক ও অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ জনগোষ্ঠী প্রতিবাদে শামিল হয়েছে। এই প্রতিবাদ বা ক্ষোভের প্রকাশ বিভিন্ন ‘বিদ্রোহ’ বা ‘অভ্যুত্থান’ বা ‘বিপ্লব’-এর মাধ্যমে হতে পারে। ‘বিদ্রোহ’, ‘অভ্যুত্থান’ ও ‘বিপ্লব’-এর মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে। যেমন-

বিদ্রোহ

[1] বিদ্রোহ কী?: বিদ্রোহ বলতে বোঝায় কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে বিরোধী জনসমষ্টির আন্দোলন। বিদ্রোহ স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। বিদ্রোহ সফল হলে পূর্বতন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে, ব্যর্থ হলেও বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন সম্ভব।

[2] উদাহরণ: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে রংপুর বিদ্রোহ, পাবনা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ প্রভৃতি কৃষকবিদ্রোহ এবং সিপাহি বিদ্রোহ (১৮৫৭ খ্রি.) প্রভৃতি হল বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

অভ্যুত্থান

[1] অভ্যুত্থান কী?: অভ্যুত্থান বলতে বোঝায় কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজ গোষ্ঠীর একাংশের সংগ্রাম। অভ্যুত্থান দীর্ঘমেয়াদী হয় না। অভ্যুত্থান সাধারণত খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়। অভ্যুত্থানে বিরোধী গোষ্ঠ ভূমিকা থাকতে পারে, না-ও থাকতে পারে। তবে নিজ গোষ্ঠ একাংশের স্বার্থসিদ্ধির বিষয়টি ‘অভ্যুত্থান’-এ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

[2] উদাহরণ: ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একাংশ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহ বা মহাবিদ্রোহ সংঘটিত করে

বিপ্লব 

[1] ‘বিপ্লব’ কী?: বিপ্লব’ বলতে বোঝায় প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাঙ্গ ও আমূল পরিবর্তন। ‘বিপ্লব’ হল ‘বিদ্রোহ’ এবং ‘অভ্যুত্থান’-এর চো অনেক বেশি ব্যাপক।

[2] উদাহরণ: ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা ফ্রান্সের পূর্বজ সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত ও আমা পরিবর্তন ঘটে। বিদ্রোহকে আবার বিপ্লবের প্রাথমিক ধাপ বলা যায়।

 উপসংহার: ‘বিদ্রোহ’, ‘অভ্যুত্থান’ ও ‘বিপ্লব’-এই তিনটি বিষয়কে অনে সময়ই সুস্পষ্টভাবে পৃথক করা মুশকিল হয়ে পড়ে। কারণ, এই গণবিক্ষোভ বা আন্দোলনকে কেউ কেউ ‘অভ্যুত্থান’ আবার কেউ শে ‘বিদ্রোহ’ হিসেবে ব্যাখ্যা করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যেয়ে পারে-১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে কেউ কেউ ‘বিদ্রোহ’, ‘আক কেউ কেউ ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

7.বিদ্রোহ বলতে কী বোঝায় এবং এর কয়েকটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ বিদ্রোহ-

ভূমিকা: বিভিন্ন দেশে ক্ষুব্ধ বা অসন্তুষ্ট মানুষজন যে উপায়ে নিজেদে ক্ষোভ বা প্রতিবাদ প্রকাশ করে থাকে সেগুলির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ উপায় বা ধারা হল বিদ্রোহ।

[1] বিদ্রোহ কী? কোনো সমাজে বা রাষ্ট্রে কোনো প্রচলিত ব্যবসা পরিবর্তনের দাবিতে বিরোধী জনগোষ্ঠী সুসংগঠিত অসংগঠিতভাবে যে আন্দোলন গড়ে তোলে তা সাধারণভাবে বিদ্রো নামে পরিচিত।

[2] বৈশিষ্ট্য: বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-[i] বিদ্রোহ স্বরব দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে। [ii] বিদ্রোহ পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিতভা শুরু হতে পারে। [iii] বিদ্রোহ সফল হলে পূর্বতন ব্যবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে। [iv] বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে পূর্বতন ব্যবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে না।

[3] উদাহরণ: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে রংপুর বিদ্রোহ, পাকা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ প্রভৃতি কৃষকবিদ্রোহ, সিপাহি বিদ্রোহ (১৮৫ খ্রি.) প্রভৃতি হল বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। [i] ভারতে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহ ছিল স্বল্পকালীন বিদ্রোহ, আবার চিলো তাইপিং বিদ্রোহ দীর্ঘদিন ধরে চলেছিল। [ii] নীল বিয়ো পরিকল্পিতভাবে শুরু হলেও সিপাহি বিদ্রোহ অপরিকল্পিতভাবে শ হয়েছিল। [iii] নীল বিদ্রোহ সফল হওয়ায় সরকার নীল কমিশন গঠ করে নীলচাষিদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগ নোয় [iv] সিপাহি বিদ্রোহ ব্যর্থ হওয়ায় ভারতীয় সিপাহিদের দুর্দশা হয়নি। [v] অনেকসময় বিদ্রোহ এক বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষের মা সীমাবদ্ধ থাকে।

উপসংহার: ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে বহুবার বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে এগুলি বহুক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও প্রচলিত ব্যবস্থার কিছু-না-কিছু পরিবর্ত ঘটিয়েছে।

8.অভ্যুত্থান বলতে কী বোঝায় এবং এর কয়েকটি উদাহরণ দাও।

উত্তরঃ  অভ্যুত্থান-

ভূমিকা: বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্ধ বা অসন্তুষ্ট মানুষজন যে উপায়ে নিজেদের ক্ষোভ বা প্রতিবাদ প্রকাশ করে থাকে সেগুলির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উপায় বা ধারা হল ‘অভ্যুত্থান’।

[1] অভ্যুত্থান কী? অভুত্থান বলতে বোঝায় কোনো দেশ বা সমাজে কিংবা প্রশাসনে কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজ গোষ্ঠীর একাংশের সংগ্রাম। এক্ষেত্রে নিজেদের নেতা বা প্রভুদের বিরুদ্ধেই তাদের অধীনস্থ মানুষ সংগ্রাম করে।

[2] বৈশিষ্ট্য: অভ্যুত্থানের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-[i] নিজ গোষ্ঠীর ক্ষুব্ধ লোকজন অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পতন বা পরিবর্তন ঘটাতে চায়। [ii] অভ্যুত্থানের দ্বারা শুধু ক্ষমতার কেন্দ্রের পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। [iii] অভ্যুত্থান সফল বা ব্যর্থ যাই হোক না কেন তাতে সমাজ বা রাষ্ট্রের মূল কাঠামোর পরিবর্তন ঘটে না।

[3] উদাহরণ: অভ্যুত্থানের প্রধান উদাহরণগুলি হল- [i] ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একাংশের উদ্যোগে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সিপাহি বিদ্রোহ। [ii] ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সেনাদের একাংশের নেতৃত্বে নৌবিদ্রোহ, [iii] বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান সরকারের পতন (১৯৮৫ খ্রি.) ঘটিয়ে তাঁর সেনাপতি এরশাদের ক্ষমতা দখল।

উপসংহার: প্রচলিত ব্যবস্থার বদলের পরিবর্তে ক্ষমতার হস্তান্তরই হয়ে ওঠে অভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্যে। তাই বিপ্লব বা বিদ্রোহের মধ্যে যে ব্যাপক আর্থসামাজিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে, ততটা সম্ভাবনা অভ্যুত্থানের মধ্যে থাকে না।

9.বিপ্লব বলতে কী বোঝায় এবং এর কয়েকটি উদাহরণ দাও। 

উত্তরঃ বিপ্লব-

ভূমিকা: বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্ধ বা অসন্তুষ্ট মানুষজন যে উপায়ে নিজেদের ক্ষোভ বা প্রতিবাদ প্রকাশ করে থাকে সেগুলির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উপায় বা ধারা হল বিপ্লব।

[1] বিপ্লব কী? বিপ্লব কথার অর্থ হল কোনো প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন। কোনো দেশ বা সমাজে জনগণ প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন ঘটালে তাকে ‘বিপ্লব’ বলে অভিহিত করা হয়।

[2] বৈশিষ্ট্য: বিপ্লবের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-[i] বিপ্লব হল মানুষের সফল আন্দোলন। [ii] বিপ্লবের দ্বারা দেশ বা সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থা বাতিল হয়ে নতুন ব্যবস্থা চালু হয়। [iii] বিপ্লবের দ্বারা প্রচলিত ব্যবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।

[3] উদাহরণ: বিপ্লবের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল- [i] অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে সংঘটিত শিল্পবিপ্লব, [ii] ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব। শিল্পবিপ্লবের দ্বারা ইউরোপের শিল্পব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। ফরাসি বিপ্লবের দ্বারা ফ্রান্সে পূর্বতন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত ও আমূল পরিবর্তন ঘটে।

উপসংহার: সব পরিবর্তনই বিপ্লব নয়। বিপ্লবের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন ঘটে, অবশ্যই তাকে ইতিবাচক হতে হয়। অর্থাৎ বিপ্লব হল সেই আমূল পরিবর্তন, যা হবে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, ক্ষুধা থেকে অন্নের দিকে, শূন্যতা থেকে পূর্ণতার দিকে।

10. ‘রংপুর বিদ্রোহ’ সম্পর্কে কী জান?

উত্তরঃ রংপুর বিদ্রোহ (১৭৮৩ খ্রি.)-

ভূমিকা: দেবী সিংহ নামে জনৈক ব্যক্তি ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে সরকারের কাছ থেকে দিনাজপুর, রংপুর ও এদ্রাকপুর পরগনা ইজারা নেন। কিছুদিনের মধ্যেই দেবী সিংহের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলে যে কৃষকবিদ্রোহ শুরু হয় তা ‘রংপুর বিদ্রোহ’ (১৭৮৩ খ্রি.) নামে পরিচিত।

[1] বিদ্রোহের কারণ: রংপুর বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার বিভিন্ন কারণ ছিল-[i] দেবী সিংহ দিনাজপুর, রংপুর ও এদ্রাকপুর পরগনার ইজারা নিয়ে সেখানকার জমিদার ও প্রজাদের ওপর রাজস্বের হার বহুগুণ বৃদ্ধি করেন এবং নানা নতুন কর আরোপ করেন। [ii] রাজস্ব আদায়ে এখানকার জমিদার ও কৃষকদের ওপর চরম অত্যাচার শুরু হয়। রংপুর পরগনায় এই অত্যাচার চরমে ওঠে। কৃষকদের কারাগারে অনাহারে বন্দি রাখা, বেত্রাঘাত প্রভৃতি চলতে থাকে। [iii] কৃষকরা গোরুবাছুর, সম্পত্তি, এমনকি নিজ সন্তানদের বিক্রি করেও দেবী সিংহের শোষণ থেকে মুক্ত হতে পারত না।

[2] বিদ্রোহের সূত্রপাত: দেবী সিংহের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরের কাজীর হাট, কাকিনা, ফতেপুর, ডিমলা প্রভৃতি স্থানের কৃষকরা ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি তেপা গ্রামে মিলিত হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এটি ‘রংপুর বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

[3] স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা: বিদ্রোহীরা একটি ‘স্থানীয় স্বাধীন সরকার’ গঠন করে। এই সরকারের নবাব বা নেতা হন নুরুলউদ্দিন এবং তাঁর সহকারী নেতা হন দয়ারাম শীল।

[4] বিদ্রোহের প্রসার: বিদ্রোহীরা দেবী সিংহকে খাজনা দেওয়া বন্ধ করে এবং তার রাজস্ব বিভাগের কর্মচারীদের বিতাড়িত করে। বহু কর্মচারী নিহত হয়। বিদ্রোহের ব্যয় নির্বাহের জন্য ‘ডিং খরচা’ নামে চাঁদা ধার্য করা হয়। 

[5] বিদ্রোহ দমন: রংপুরের কালেক্টর গুডল্যান্ড বিদ্রোহ দমনে সুবিশাল ব্রিটিশবাহিনী পাঠান। মোগলহাট ও পাটগ্রামের যুদ্ধে বিদ্রোহীরা সেনাপতি ম্যাকডোনাল্ডের নেতৃত্বাধীন ব্রিটিশবাহিনীর কাছে পরাজিত হলে বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘটে। ব্রিটিশবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, অসংখ্য বিদ্রোহীকে হত্যা করে।

উপসংহার: রংপুর বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ শাসনকালের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। জমিদার ও কৃষকদের মিলিত এই বিদ্রোহ যতটা দেবী সিংহের বিরুদ্ধে ছিল, ঠিক ততটাই ছিল ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনাস্থার প্রকাশ।

11. চুয়াড় বিদ্রোহের (প্রথম পর্ব, ১৭৬৭ খ্রি.) বিবরণ দাও।

উত্তরঃ চুয়াড় বিদ্রোহের (প্রথম পর্ব, ১৭৬৭ খ্রি.) বিবরণ-

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনকলে ভারতে যেসব আদিবাসী কৃষকবিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল চুয়াড় বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ দুটি পর্বে সংঘটিত হয়। প্রথম পর্বের বিদ্রোহ হয় ১৭৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে।

[1] চুয়াড়দের পরিচয়: আদিবাসী চুয়াড় বা চোয়াড় জনগোষ্ঠী বাংলার মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিমাংশ ও বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে বসবাস করত। চুয়াড়রা কৃষিকাজ ও পশুশিকারের পাশাপাশি স্থানীয় জমিদারদের অধীনে পাইক বা সৈনিকদের কাজও করত। কাজের বিনিময়ে তারা জমিদারদের কিছু নিষ্কর জমি ভোগ করত।

[2] বিদ্রোহের কারণ: প্রথম পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল-[1] ব্রিটিশ কোম্পানি চুয়াড়দের অধিকাংশ জমিজমা কেড়ে নিলে তাদের জীবিকানির্বাহ কঠিন হয়ে পড়ে। [ii] কোম্পানিচুয়াড়দের কৃষিজমির ওপর রাজস্বের হার যথেষ্ট বাড়িয়ে দেয়। [iii] রাজস্ব আদায়কারী ও অন্যান্য সরকারি কর্মচারীরা চুয়াড়দের ওপর চরম অত্যাচার চালাতে শুরু করে।

[3] বিদ্রোহের সূচনা: ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথম কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। চুয়াড়রা এই বিদ্রোহে সক্রিয়ভাবে যোগ দেয়।

[4] বিদ্রোহের প্রসার: জগন্নাথ সিংহের নেতৃত্বে চুয়াড়রা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এরপর ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে চুয়াড়রা ধাদকার শ্যামগঞ্জনের নেতৃত্বে আবার বিদ্রোহ শুরু করে।

উপসংহার: চুয়াড়দের প্রথম পর্বের বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও চুয়াড়দের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন ধিকিধিকি জ্বলতেই থাকে। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে এই আগুন চুয়াড়দের দ্বিতীয় পর্বের বিদ্রোহের সময় দাবানলের চেহারা নেয়।

12.দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-৯৯ খ্রি.) বিবরণ দাও। 

উত্তরঃ চুয়াড় বিদ্রোহের (দ্বিতীয় পর্ব, ১৭৯৮-১৯ খ্রি.) বিবরণ-

ভূমিকা: ভারতের আদিবাসী চুয়াড় বা চোয়াড় জনগোষ্ঠী বাংলার মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিমাংশ ও বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে বসবাস করত। চুয়াড়রা কৃষিকাজ ও পশুশিকারের পাশাপাশি স্থানীয় জমিদারদের অধীনে পাইক বা সৈনিকের কাজ করত।

[1] দ্বিতীয় পর্বের বিদ্রোহের সূচনা: ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঘাটশিলায় ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ চুয়াড়দের নিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলে পরবর্তীকালে ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহ শুরু হয়।

[2] বিদ্রোহের কারণ: দ্বিতীয় পর্বের চুয়াড় বিদ্রোহের (১৭৯৮-৯৯ [ খ্রি.) বিভিন্ন কারণ ছিল-[i] ব্রিটিশ সরকার ও তাদের কর্মচারীরা আদিবাসী চুয়াড় এবং স্থানীয় জমিদারদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। [ii] ইংরেজরা দরিদ্র চুয়াড়দের জমির মালিকানা বাতিল করে তাদের জমি থেকে উৎখাত করে। [iii] সরকার বহু চুয়াড়কে তাদের পাইকের পেশা থেকে বরখাস্ত করে। [iv] জমিদারদের ওপর রাজস্বের পরিমাণ যথেষ্ট বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব কারণে জমিদার ও চুয়াড় কৃষকরা ক্ষুদ্ধ হয়।

[3] বিদ্রোহের প্রসার: জঙ্গলমহল-সহ মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চুয়াড় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহে নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন বাঁকুড়ার রায়পুরের জমিদার দুর্জন সিং,মেদিনীপুরের রানি শিরোমণি প্রমুখ। তাঁরা বিভিন্ন জমিদার ও আদিবাসী চুয়াড়দের বিদ্রোহে শামিল করতে সক্ষম হন। দুর্জন সিং প্রায় ১৫০০ জন অনুগামী নিয়ে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং প্রায় ৩০টি গ্রামে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেন। বিদ্রোহীরা সরকারি দপ্তরেও আক্রমণ চালায়।

[4] বিদ্রোহের অবসান: বিদ্রোহীদের চাপে ইংরেজ পুলিশ ও কর্মচারীরা বিদ্রোহের মূল কেন্দ্র রায়পুর ছেড়ে পালিয়ে গেলেও শীঘ্রই সশস্ত্র ব্রিটিশ সেনা এসে বিদ্রোহী জমিদার ও আদিবাসী চুয়াড়দের পরাজিত করে। রানি শিরোমণিকে হত্যা এবং দুর্জন সিংকে গ্রেফতার করা হয়। এর ফলে বিদ্রোহ থেমে যায়।

উপসংহার: এই বিদ্রোহের পর চুয়াড়দের কঠোর নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার চুয়াড়-অধ্যুষিত এলাকায় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটায়। বিষ্ণুপুর শহরটিকে কেন্দ্র করে দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘জঙ্গলমহল’ নামে একটি বিশেষ জেলা (১৮০০ খ্রি.)।

13.চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য-

ভূমিকা: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর থে কোম্পানি ও তার কর্মচারীরা এদেশের আদিবাসী কৃষক ও দেশী জমিদারদের ওপর তীব্র শোষণ-পীড়ন চালাতে শুরু করে। এর বিরুদ্ধে আদিবাসী চুয়াড় সম্প্রদায় বিদ্রোহ শুরু করে যা চুয়াড় বিদ্রোহ নামে পরিচিত এই বিদ্রোহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন-

[1] সশস্ত্র উপজাতি বিদ্রোহ: চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল সশস্ত্র আদিবাসী। উপজাতি সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ।

[2] ব্রিটিশ-বিরোধিতা: চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল মূলত ব্রিটিশ-বিরোধী একা বিদ্রোহ। ভারতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শোষণ অত্যাচারের বিরুদ্ধে চুয়াড় সম্প্রদায় গর্জে উঠেছিল।

[3] জমিদার-কৃষক ঐক্য: চুয়াড় বিদ্রোহ দেশীয় জমিদারদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়নি। বরং দেশীয় জমিদাররা ব্রিটিশ-বিরোধী এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়ে আদিবাসী চুয়াড় কৃষকদের নিজেদের পকে শামিল করেছিল।

[4] দীর্ঘস্থায়িত্ব: চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল একটি দীর্ঘস্থায়ী বিদ্রোহ। ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০ বছরেরও বেশি সমা ধরে ব্রিটিশ-বিরোধী এই বিদ্রোহ চলে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বারি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন।

[5] দুটি পর্যায়: দীর্ঘস্থায়ী চুয়াড় বিদ্রোহে দুটি পর্যায় লক্ষ করা যায়। প্রথম পর্যায়টি শুরু হয়েছিল ১৭৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে এবং দ্বিতীয় পর্যায়টি চলেছিল ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে।

উপসংহার: অস্ত্রচালনা ও যুদ্ধ ছিল আদিবাসী চুয়াড়দের সহজাত বৈশিষ্ট্য। এই প্রবণতাই তাদের বিদ্রোহমুখী করেছিল এবং ব্রিটিশ-বিরোধী লড়াইকে দীর্ঘস্থায়ী করেছিল।

14.চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফলগুলি বিশ্লেষণ করো।

অথবা, চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব বিবৃত করো।

উত্তরঃ চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফল-

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনের সূচনালগ্নে বর্তমান মেদিনীপুর জেলার উত্তর পশ্চিমাংশ ও বাঁকুড়া জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে চুয়াড় বা চোয়াড় নামে একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করত। ব্রিটিশ কোম্পানির শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে বিদ্রোহে শামিল হয়। এই বিদ্রোহের গুরুত্ব বা ফলাফলগুলি ছিল নিম্নরূপ-

[1] দমনপীড়ন: চুয়াড় বিদ্রোহ দমনের জন্য ইংরেজ পুলিশবাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালায়। তারা রানি শিরোমণিকে হত্যা করে এবং দুর্জন সিংকে গ্রেফতার করে।

[2] বিদ্রোহের পথপ্রদর্শক: ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে পশ্চাৎপদ চুয়াড়রা বিদ্রোহ শুরু করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে। কেননা নিরক্ষর চুয়াড়রা অষ্টাদশ শতকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ শুরু করেছিল তা ভারতের শিক্ষিত সম্প্রদায় শুরু করে আরও অন্তত এক শতাব্দী পরে।

[3] জমিদার ও কৃষকদের ঐক্য: চুয়াড় বিদ্রোহ জমিদারদের বিরুধে নয়, অত্যাচারী ইংরেজ শাসকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। জমিদার ও চুয়াড় কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ব্রিটিশ-বিরোধী বিদ্রোহে শামিল হয়।

[4] জঙ্গলমহল গঠন: চুয়াড়দের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সরকার এখানকার শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটায়। বিষ্ণুপুর শহরটিকে কেন্দ্র করে দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল নামে একটি পৃথক জেলা গঠন করা হয়।

উপসংহার: চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল অষ্টাদশ-ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষকবিদ্রোহ। সেদিনের দুর্গম ‘জঙ্গলমহল’ অর্থাৎ আজকের বাঁকুড়ার একাংশের কৃষক-সম্প্রদায় আজও চুয়াড় বিদ্রোহের স্মরণে গর্ববোধ করেন।

15.কোল বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কোল বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ-

ভূমিকা: বর্তমান বিহারের ছোটোনাগপুর, সিংভূম, মানভূম প্রভৃতি অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনকালে কোল উপজাতির মানুষ বসবাস করত। তাদের ওপর ব্রিটিশ সরকার, বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের তীব্র শোষণের ফলে তারা বিদ্রোহ শুরু করে যা ‘কোল বিদ্রোহ’ (১৮৩১-৩২ খ্রি.) নামে পরিচিত। কোল বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল-

[1] রাজস্ব আদায়: আগে কোলরা রাজস্ব দিতে অভ্যস্ত ছিল না। কিন্তু ছোটোনাগপুর অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এখানে নতুন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা চালু করে। বহিরাগত (দিকু) হিন্দু, মুসলিম ও শিখ মহাজনদের হাতে এখানকার জমির ইজারা দিয়ে তাদের হাতে রাজস্ব আদায়ের অধিকার তুলে দেওয়া হয়।

[2] রাজস্ব বৃদ্ধি: জমিদাররা দরিদ্র কোলদের ওপর রাজস্বের পরিমাণ অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয় এবং নতুন নতুন কর আরোপ করে। এই কর আদায় করতে গিয়ে তাদের ওপর চরম অত্যাচার চালানো হয়। কোলদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পানীয় মদের ওপর উচ্চহারে কর ধার্য করা হয়।

[3] জমি থেকে উৎখাত: ইজারাদাররা কোলদের সর্বস্ব কেড়ে নিতে থাকে, এমনকি জমি থেকেও তাদের উৎখাত করতে শুরু করে।

[4] নির্যাতন: কোলদের ওপর নানাভাবে নির্মম নির্যাতন চালানো হত। এক্ষেত্রে অনেকসময়ই কোল রমণীদের মর্যাদা নষ্ট করা হত এবং নানা অজুহাতে কোল পুরুষদের বন্দি করে রাখা হত।

[5] অর্থনৈতিক শোষণ: রাস্তা তৈরির জন্য বিনা পারিশ্রমিকে কোলদের বেগার শ্রম দিতে বাধ্য করা হত। কোলদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের খাদ্যশস্যের পরিবর্তে আফিম চাষে বাধ্য করা হত।

[6] কোল ঐতিহ্য ধ্বংস: কোলদের নিজস্ব আইনকানুন, বিচার পদ্ধতি প্রভৃতি ধ্বংস করে তাদের ওপর জোর করে ব্রিটিশদের আইনকানুন ও বিচারপদ্ধতি চাপিয়ে দেওয়া হত। তাই কোলরা ক্ষুব্ধ হয়েই বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।

উপসংহার: এইসব শোষণ, নির্যাতন ও উৎপীড়নের অবসান ঘটাতে বুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত, সুই মুন্ডা প্রমুখের নেতৃত্বে আদিবাসী কোলরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। এদের সঙ্গে মুন্ডা, ওঁরাও প্রভৃতি উপজাতি যোগ দিলে বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে।

16.কোল বিদ্রোহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উত্তরঃ কোল বিদ্রোহ-

ভূমিকা: বিহারের ছোটোনাগপুর অঞ্চলে বসবাসকারী কোলরা নিজেদের প্রচলিত আইনকানুন ও বিচারপদ্ধতি অনুসারে সমাজ পরিচালনা করত। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছোটোনাগপুর অঞ্চলের শাসনভার গ্রহণ করে।

[1] কোল বিদ্রোহের সূচনা: ব্রিটিশ কোম্পানি কোল-অধ্যুষিত অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সেই অঞ্চল বহিরাগত জমিদারদের ইজারা দেয়। এরপর থেকে কোলদের ওপর সরকার, জমিদার ও মহাজনদের তীব্র শোষণ শুরু হয়। এর প্রতিবাদে ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ আদিবাসী কোলরা শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে যা ‘কোল বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

[2] বিদ্রোহের কারণ: কোল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল- [i] কোলদের ওপর রাজস্ব বৃদ্ধি, [ii] রাজস্ব আদায় করতে গিয়ে কোলদের ওপর অত্যাচার, (iii) জমি থেকে কোলদের উৎখাত, [iv] কোলদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, [v] কোলদের বেগার শ্রমদানে বাধ্য করা, [vi] কোলদের নিজস্ব আইন ও বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করা প্রভৃতি।

[3] বিদ্রোহের প্রসারঃ কোল বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর তা দ্রুত সিংভূম, মানভূম, হাজারিবাগ ও পালামৌ জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এই বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিলেন বুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত, সিংরাই, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখ।

[4] বিদ্রোহের অবসান: বিদ্রোহীরা ইংরেজ কর্মচারী, জমিদার, জোতদার, মহাজন, ব্যবসায়ীদের আক্রমণ করে, তাদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং বহু লোককে হত্যা করে। শীঘ্রই ক্যাপটেন উইলকিনসনের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী বিদ্রোহীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালায় এবং বহু আদিবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করলে বিদ্রোহ বন্ধ হয়ে যায়।

[5] ফলাফল: কোল বিদ্রোহের গুরুত্বপূর্ণ ফলাফলগুলি ছিল- [i] বিদ্রোহের ফলে কোল অধ্যুষিত অঞ্চলে সরকারি নীতির কিছু পরিবর্তন ঘটে। [ii] কোলদের জন্য ‘দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি’ নামে একটি পৃথক ভূখণ্ড নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় (১৮৩৪ খ্রি.)। [iii] সেখানে ব্রিটিশ আইনকানুনের পরিবর্তে কোলদের নিজস্ব আইনকানুন চালু করা হয়। [iv] জমিদাররা যেসব জমি দখল করে নিয়েছিল তা কেড়ে নিয়ে কোলদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

উপসংহার: ব্রিটিশ শাসনকালে উপজাতি বিদ্রোহের ইতিহাসে কোল বিদ্রোহ ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। ব্রিটিশ শাসকদের সাথে কোলদের এই অসম লড়াইয়ে কোলদের পরাজয় ছিল এই বিদ্রোহের দুঃখজনক পরিণতি।

17. কোল বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ কোল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য-

ভূমিকা: ব্রিটিশ সরকার, ব্রিটিশদের মিত্র বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে ছোটোনাগপুর অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী কোলরা ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন-

[1] আদিবাসীদের বিদ্রোহ: কোল বিদ্রোহে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল আদিবাসী কোলরা। তাদের সঙ্গে নিম্নবর্ণের অন্যান্য চাষি, কামার, কুমোর প্রভৃতি মানুষও যোগদান করে।

[2] ঐক্যবদ্ধতা: বিদ্রোহ চলাকালীন আদিবাসী কোলরা ইংরেজ শাসক, জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করেছিল।

[3] অরণ্যের অধিকার: কোলদের বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে অরণ্য সম্পদের ওপর কোলদের চিরাচরিত অধিকার রক্ষার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছিল।

[4] ব্রিটিশ বিরোধিতা: কোল বিদ্রোহীদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইংরেজ ও বহিরাগত জমিদার। চার্লস মেটকাফ-এরমতে, ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানোই বিদ্রোহীদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল।

[5] বিদ্রোহের বার্তা: বিদ্রোহী কোলরা নাকাড়া বাজিয়ে, আমগাছের শাখা বা যুদ্ধের তির বিলি করে নিজেদের মধ্যে বিদ্রোহের বার্তা ছড়িয়ে দিত।

[6] সহযোগিতার অভাব: কোল বিদ্রোহের প্রতি শহুরে শিক্ষিত সম্প্রদায়ের সমর্থন ও সহযোগিতার অভাব লক্ষ করা গিয়েছিল। 

উপসংহার: শহুরে শিক্ষিত বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন ও সহযোগিতা না পেলেও কোলরা যেভাবে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সংঘটিত করে, তাতে ইংরেজরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। চার্লস মেটাকাফ স্বীকার করেছেন, বিদ্রোহী কোলদের উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানো। 

18. কোল বিদ্রোহের নেতাদের নাম লেখো এবং এই বিদ্রোহের ফলাফলগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো। 

উত্তরঃ কোল বিদ্রোহের ফলাফল-

ভূমিকা: ১৮৩১-৩২ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান বিহারের ছোটোনাগপুর অঞ্চলে আদিবাসী কোলরা ব্রিটিশ সরকার এবং তাদের সহযোগী জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এই বিদ্রোহে বুদ্ধু ভগত, জোয়া ভগত, ঝিন্দরাই মানকি, সুই মুন্ডা প্রমুখ নেতা নেতৃত্ব দেন।

কোল বিদ্রোহের ফলাফলগুলি ছিল নিম্নরূপ-

[1] ব্রিটিশ নীতির পরিবর্তন: কোল বিদ্রোহের ফলে কোল-অধ্যুষিত অঞ্চলে ব্রিটিশ কোম্পানি তাদের নীতির কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটায়।

[2] দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি: ব্রিটিশ সরকার ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে কোল উপজাতি-অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে কোলদের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি নামে একটি অঞ্চল গঠন করে।

[3] ব্রিটিশ আইন বাতিল: দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি অঞ্চলে ব্রিটিশ আইন বাতিল হবে এবং কোলদের নিজস্ব আইনকানুন কার্যকর হবে বলে সরকার ঘোষণা করে।

[4] জমি ফেরত: জমিদাররা কোলদের যেসব জমিজমা অন্যায়ভাবে দখল করে নিয়েছিল তা তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে কোলদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

উপসংহার: কোল বিদ্রোহের ফলে ইংরেজ সরকার কোলদের প্রতি কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঠিকই কিন্তু তাদের প্রতি শোষণের মাত্রা হ্রাস পায়নি। তার ওপর কোলদের এলাকায় খাজনার হার ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছিল।

19. ভিল বিদ্রোহ সম্পর্কে কী জান?

উত্তরঃ ডিল বিদ্রোহ-

ভূমিকা: ভিল সম্প্রদায় হল ভারতের প্রাচীন আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি শাখা। খান্দেশ অঞ্চল-সহ পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন স্থানে তারা বসবাস করত। তারা ছিল সৎ, স্বাধীন, স্বনির্ভর জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ভিলরা এক শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে।

[1] বিদ্রোহের কারণ: ভিল বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল- [i] ইংরেজরা ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ভিলদের বসতি অঞ্চল খান্দেশ দখল করলে তারা ক্ষুদ্ধ হয়। [ii] ভিলদের ওপর উচ্চহারে ভূমিরাজস্ব

চাপানো হয় এবং তা আদায় করতে গিয়ে তাদের ওপর ব্যাস্ত হলে অত্যাচার চালানো হয়। [iii] ভিলদের বসতি অঞ্চলে ব্রিটিশ আইন বিচারব্যবস্থার প্রবর্তন ভিলরা মেনে নিতে পারেনি। [iv] মাড়োয়ার সাউকার ও মহাজনরা সুকৌশলে ভিলদের ঋণের জালে জড়িগ ফেলে। সেই ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের ওপর নিদারুণ ও নির্যাতন চালানো হত। অত্যাচার ও নির্যাতন চালনো হত ।

[2] বিদ্রোহের সূচনা: ভিলদের ওপর নানা ধরনের শোষণ। অত্যাচারের ফলে তারা ব্রিটিশ কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে বিদ্রোহীদের অন্যতম প্রেরণা ছিলেন মহারাষ্ট্রের নেতা ত্রিম্নকড়ি ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই বিদ্রোহ ব্যাপক আকার ধারণ করে বিদ্রোহীদের নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন সেওয়ারাম।

[3] ব্যর্থতা: কর্নেল আউট্রামের নেতৃত্বে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী জি বিদ্রোহীদের ওপর তীব্র দমনপীড়ন চালালে ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দের চির বিদ্রোহ থেমে যায়।

[4] গুরুত্ব: ভিল বিদ্রোহের ফলে-[i] বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাক ভিলরা ঐক্যবদ্ধ হয়। [ii] মাড়োয়ারি মহাজন শ্রেণি গুজরাটও রাজস্থান অঞ্চল থেকে পালিয়ে যায়।

উপসংহার: তীব্র দমনপীড়ন সত্ত্বেও ভিলদের বিদ্রোহের আগুন কখনোই একেবারে নিভে যায়নি। তাই ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে আপাতদৃষ্টিতে বিদ্রোহ থেমে গেলেও পরবর্তীকালে ১৮২৫, ১৮৩৬ এবং ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দে ভিল জাতি বারবার বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল।

20. ভিল বিদ্রোহের কারণগুলি কী ছিল?

উত্তরঃ ডিল বিদ্রোহের কারণ-

ভূমিকা: ভারতের প্রাচীন আদিবাসী বা উপজাতি সম্প্রদায়ের একটি অন্যতম শাখা ছিল ভিল উপজাতি। তারা বর্তমান গুজরাট, মহারাষ্ট্র-সহ পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করত। ভিলরা ১৮১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন-

[1] কোম্পানির আধিপত্য: ইংরেজরা ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ভিলদের বসতি অঞ্চল খান্দেশ দখল করে সেই অঞ্চলে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। ফলে ভিলরা ক্ষুদ্ধ হয়।

[2] ভূমিরাজস্ব আরোপ: ইংরেজ কোম্পানি ভিল অঞ্চলে ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা চালু করে। এই রাজস্বের পরিমাণ শীঘ্রই অত্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে দরিদ্র ভিলরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

[3] উৎপীড়ন: ব্রিটিশ কোম্পানি ভিল কৃষকদের কাছ থেকে ভূমিরাজস্ব আদায় করতে গিয়ে তাদের ওপর ব্যাপক অত্যাচার ও উৎপীড়ন চালায়।

[4] ভিলদের ঐতিহ্য বাতিল: ব্রিটিশ কোম্পানি ভিল অনালে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে সেই অঞ্চলে ভিলদের নিজস্ব আইন ও বিচারব্যবস্থা বাতিল করে এবং ব্রিটিশ আইন ও বিচারব্যবস্থা চালু করে। ভিলরা এই ব্রিটিশ ব্যবস্থা মেনে নিতে পারেনি।

[5] মহাজনদের শোষণ: মাড়োয়ারি সাউকার ও মহাজনরা সুকৌশলে ভিলদের তীব্র ঋণের জালে জড়িয়ে ফেলে। ভিলরা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তাদের ওপর নিদারুণ অত্যাচার ও নির্যাতন চালানো হত।

উপসংহার: ব্রিটিশ আধিপত্য, উপজাতিদের ওপর অত্যাচার, উৎপীড়ন এবং ভিলদের নিজস্ব আইনকানুন ও বিচারব্যবস্থার ওপর আঘাতের ফলে ভিল জাতি বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ আপাতদৃষ্টিতে বাথ হলেও এই বিদ্রোহের মাধ্যমেই ভিলরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল-এ কথা অস্বীকার করা যায় না।

21.সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি কী ছিল?

অথবা, ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন?

উত্তরঃ সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান কারণ-

ভূমিকা: ছোটোনাগপুরের সাঁওতাল উপজাতি ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকার এবং তাদের সহযোগী জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল। যেমন-

[1] রাজস্ব আরোপ: আদিবাসী সাঁওতালরা অরণ্য অঞ্চলের পতিত জমি উদ্ধার করে চাষবাস করে সেই জমিকে উর্বর করে তোলে। ব্রিটিশ শাসনকালে সরকার-নিযুক্ত জমিদাররা সেই জমির ওপর উচ্চহারে রাজস্ব চাপালে সাঁওতাল কৃষকরা জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

[2] অন্যান্য কর: ভূমিরাজস্ব ছাড়াও সরকার, জমিদার প্রমুখ সাঁওতালদের ওপর বিভিন্ন ধরনের করের বোঝা চাপিয়ে দেয়। ফলে দরিদ্র সাঁওতালদের দুর্দশা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়।

[3] মহাজনদের শোষণ: সাঁওতালরা নগদে ভূমিরাজস্ব ও অন্যান্য কর পরিশোধ করতে গিয়ে মহাজনদের কাছ থেকে অত্যন্ত চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হত। পরবর্তীকালে ঋণের দায়ে তার জমি, ফসল, বলদ কেড়ে নেওয়া হত।

[4] ব্যবসায়ীদের প্রতারণা: বহিরাগত ব্যবসায়ীরা কেনারাম নামক বাটখারা ব্যবহার করে সাঁওতালদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনার সময় এবং বেচারাম নামক বাটখারা ব্যবহার করে নিজেদের পণ্যগুলি সাঁওতালদের কাছে বিক্রির সময় ঠকাত।

[5] রেলপথ নির্মাণ: সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণের কাজে সাঁওতাল শ্রমিকদের নিয়োগ করে তাদের খুব কম মজুরি দেওয়া হত। তা ছাড়া রেলের ঠিকাদার ও ইংরেজ কর্মচারীরা সাঁওতাল পরিবারগুলির ওপর নানাভাবে অত্যাচার করত।

[6] সাঁওতাল আইন বাতিল: সরকার সাঁওতালদের নিজস্ব আইন ও বিচারপদ্ধতি বাতিল করে সাঁওতাল এলাকায় ইংরেজদের জটিল আইন ও বিচারব্যবস্থা চালু করে।

[7] খ্রিস্টধর্ম প্রচার: খ্রিস্টান মিশনারিরা সাঁওতালদের ধর্মকে অবজ্ঞা করত এবং সুকৌশলে সাঁওতালদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করত।

[8] নীলচাষ: নীলকর সাহেবরা সাঁওতাল কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের নীলচাষে বাধ্য করত।

উপসংহার: নানা দিক থেকে শোষণ ও নিপীড়নের ফলে একসময় সাঁওতালদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। এরপর তারা সিধু, কানু ও অন্যান্যদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে।

22. সাঁওতাল বিদ্রোহের বিবরণ দাও।

উত্তরঃ সাঁওতাল বিদ্রোহের বিবরণ-

ভূমিকা: ভারতের প্রাচীন বাসিন্দা আদিবাসী সাঁওতালরা বর্তমান বিহারের ছোটোনাগপুর, পালামৌ, মানভূম এবং বাংলার বীরভূম, বাঁকুড়া ও মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ বনভূমি অঞ্চলে বসবাস করত। তারা ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ইংরেজ সরকার, জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যা ‘হুল বিদ্রোহ’ বা ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

[1] বিদ্রোহের কারণ: সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল- [i] সাঁওতাল কৃষকদের ওপর বিপুল পরিমাণ ভূমিরাজস্ব এবং অন্যান্য কর আরোপ, [ii] নগদে রাজস্ব পরিশোধের অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে মহাজনদের হাতে দরিদ্র সাঁওতালদের উচ্চ সুদে ঋণের জালে জড়ানো, [iii] পণ্য ক্রয়বিক্রয়ে ব্যবসায়ীদের দ্বারা সরল সাঁওতালদের প্রতারণা, [iv] রেলের কাজে নিযুক্ত সাঁওতাল শ্রমিকদের কম মজুরি প্রদান, [v] সাঁওতালদের নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থার বদলে ব্রিটিশ ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া, [vi] সাঁওতালদের নীলচাষে বাধ্য করা প্রভৃতি।

[2] বিদ্রোহের প্রসার: ক্ষুদ্ধ সাঁওতালরা ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে [ ইংরেজ কোম্পানি, দেশীয় জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন সিধু, কানু, চাঁদ, ভৈরব, বীর সিং, কালো প্রামাণিক, ডোমন মাঝি প্রমুখ। ৩০ জুন প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে জড়ো হয়ে শোষণমুক্ত স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করে। বিদ্রোহীরা রেলস্টেশন, থানা, ডাকঘর প্রভৃতি আক্রমণ করে এবং বহু জমিদার ও মহাজনকে হত্যা করে।

[3] বিদ্রোহের অবসান: সাঁওতাল বিদ্রোহ দমনে বিশাল ব্রিটিশবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে। সিধু, কানু-সহ বেশ কয়েকজন নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়। প্রায় ২৩ হাজার বিদ্রোহীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বহু বিদ্রোহীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই নিষ্ঠুরতার ফলে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্রোহ থেমে যায়।

উপসংহার: ব্রিটিশ শাসনকালের প্রথম পর্বে আদিবাসী কৃষক আন্দোলনগুলির মধ্যে সাঁওতাল বিদ্রোহই সর্বপ্রথম ব্যাপক আকার ধারণ করে। পি. সি. যোশী বলেছেন যে, সাঁওতাল বিদ্রোহের একটি বিশেষ দিক ছিল স্বাধীনতার কামনা, সাঁওতাল অঞ্চল ও সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার চিন্তা।

23.সাঁওতাল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

উত্তরঃ সাঁওতাল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্য-

ভূমিকা: ভারতের সুপ্রাচীন আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায় ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকার ও তাদের সহযোগী জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ছিল-

[1] সর্বস্তরের অংশগ্রহণ: সাঁওতাল বিদ্রোহে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের এবং সব বয়সের সাঁওতালরা অংশগ্রহণ করে। ফলে বিদ্রোহ ব্যাপক আকার নেয়।

 [2] গণবিদ্রোহ: সাঁওতালরা ছাড়াও স্থানীয় নিম্নবর্ণের বিভিন্ন মানুষ যেমন-কামার, কুমোর, তাঁতি, গোয়ালা, ডোম প্রভৃতি বর্ণ ও পেশার মানুষও সাঁওতাল বিদ্রোহে অংশ নেয়। ফলে সাঁওতাল বিদ্রোহ প্রকৃত গণবিদ্রোহে পরিণত হয়।

[3] অসম অস্ত্রের লড়াই: সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল সাঁওতাল ও ইংরেজ বাহিনীর মধ্যে অসম অস্ত্রশস্ত্রের লড়াই। আদিবাসী সাঁওতালরা সেকেলে তিরধনুক, বল্লম নিয়ে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ব্রিটিশবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হয়।

[4] ব্রিটিশ-বিরোধিতা: সাঁওতাল-অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ শক্তির আধিপত্য লুপ্ত করাই ছিল বিদ্রোহীদের মূল লক্ষ্য।

[5] ব্রিটিশ সহযোগীদের বিরোধিতা: শুধু ব্রিটিশ শাসন নয়, ব্রিটিশদের সহযোগী বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের বিরোধিতা এবং তাদের ধ্বংসসাধনও বিদ্রোহীদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল।

[6] আক্রমণের কেন্দ্র: সাঁওতাল বিদ্রোহীদের আক্রমণের মূল কেন্দ্র ছিল থানা, ডাকঘর, রেলস্টেশন, ইউরোপীদের বাংলো, জমিদার ও মহাজনদের বাড়ি প্রভৃতি।

উপসংহার: সাঁওতাল বিদ্রোহ আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছিল ঠিকই, তবে এই বিদ্রোহ ব্রিটিশ সরকারকে যে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল সে কথা অস্বীকার করা যায় না।

24. সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র-

ভূমিকা: ১৮৫৫-৫৬ খ্রিস্টাব্দের সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল দরিদ্র সাঁওতালদের আপসহীন এক সংগ্রাম। তবে এই বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র নিয়ে বিতর্ক আছে। যেমন-

[1] আদিবাসী বিদ্রোহ: সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল বিহারের ছোটোনাগপুর অঞ্চলের আদিবাসী বা উপজাতি সাঁওতালদের বিদ্রোহ। আদিবাসী সাঁওতালরাই ছিল এই বিদ্রোহের প্রাণশক্তি।

[2] কৃষকবিদ্রোহ: সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল মূলত একটি কৃষকবিদ্রোহ। দরিদ্র ও শোষিত আদিবাসী সাঁওতাল কৃষকরা জমিদার, মহাজন ও ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল।

[3] ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহ: সাঁওতাল বিদ্রোহ শুধু জমিদার। মহাজন-বিরোধী বিদ্রোহ ছিল না। এই বিদ্রোহ ছিল স্পষ্টতই প্রিয় বিরোধী। বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হ্যালিডে বলেন যে, দি শাসনের অবসান ঘটানোই এই বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল।

[4] গণবিদ্রোহ: সাঁওতাল কৃষকদের উদ্যোগে এই বিদ্রোহ শুরু হলে স্থানীয় কামার, কুমোর, তেলী, গোয়ালা, মুসলিম তাঁতি, চাম ডোম প্রভৃতি সম্প্রদায় ও পেশার মানুষও এই বিদ্রোহে শামিল হল তাই নরহরি কবিরাজ একে সকল সম্প্রদায়ের দরিদ্র জনগণে মুক্তিযুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন।

[5] ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্রোহ: কেউ কেউ সাঁওতাল বিদ্রোহে ধর্মের প্রশ্ন দেখতে পেলেও এই বিদ্রোহ প্রকৃতপক্ষে ধর্মকেন্দ্রিক ছিল। বিদ্রোহী সাঁওতালরা ঈশ্বরকে কোনো গুরুত্বই দেয়নি। বরং ত চিৎকার করে বলত- “ঈশ্বর মহান, কিন্তু তিনি থাকেন বহু বহু দৃক্ত আমাদের বাঁচাবার কেউ নেই।’

উপসংহার: বিতর্ক থাকলেও এ কথা সত্য যে, বহুমুখী অন্যায়-অত্যাচার শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সাঁওতাল উপজাতির এই বিদ্রোহ এর আপসহীন সংগ্রামের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছিল।

25.মুন্ডা বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা, মুন্ডা বিদ্রোহের বিবরণ দাও।

উত্তরঃ মুন্ডা বিদ্রোহ-

ভূমিকা: বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের ছোটোনাগপুর ও তার নিকটবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায় বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ যে শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে তা সাধারণভাবে মুন্ডা বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

[1] বিদ্রোহের কারণ: মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল [i] জমিতে মুন্ডাদের চিরাচরিত যৌথ মালিকানা ব্যবস্থা (খুংকার প্রথা) বাতিল করা, [ii] মুন্ডাদের নিজস্ব আইন, শাসন ও বিচারব্যবস্থা বাতিল করা, [ii] মুন্ডাদের ওপর ভূমিরাজস্বের হার বৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ধরনের নতুন কর আরোপ, [iv] মুন্ডা শ্রমিকদের বেগার শ্রমদানে বাধা। করা, [v] মুন্ডাদের জমিজমা বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের দ্বারা দখল, [vi] মুন্ডাদের খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরণ প্রভৃতি।

[2] স্কোন্ডের সূত্রপাত: বিরসা এক নতুন ধর্ম প্রচার করে মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করেন। তিনি মুন্ডাদের খাজনা দিতে নিষেধ করেন এবং বিদেশিদের বহিষ্কারের নির্দেশ দিয়ে এক স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন। এর ফলে তাঁকে দুই বছর (১৮৯৫-৯৬ খ্রি.) জেলে থাকতে হয়।

[3] বিদ্রোহের প্রসার: বিরসা ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে একটি সেনাদল গঠন করে নতুন উদ্যমে বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়েন। খুঁটি, রাঁচি, চক্রধরপুর, বুন্দু, তামার, তোরপা, কারা বাসিয়া প্রভৃতি স্থানে তাঁর গোপন ঘাঁটি গড়ে ওঠে। ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। ইংরেজ কর্মচারী, পুলিশ, জমিদার, মহাজনদের পাশাপাশি থানা, গির্জা প্রভৃতির ওপরও আক্রমণ চলে।

[4] বিদ্রোহের অবসান: প্রবল বিক্রমে লড়াই করেও বিদ্রোহী মুন্ডারা শেষপর্যন্ত আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। বহু বিদ্রোহীর ফাঁসি বা কারাদণ্ড হয়। এভাবে বিদ্রোহ থেমে যায়। বিরসা মুন্ডা রাঁচি জেলে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

উপসংহার: মুন্ডা উপজাতিদের বিদ্রোহ ছিল এক অর্থে কৃষকবিদ্রোহ। দরিদ্র মুন্ডা কৃষকরাই ছিল এই বিদ্রোহের প্রধান চালিকাশক্তি। নরহরি কবিরাজও মুন্ডা বিদ্রোহকে কৃষকবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন।

26. বিরসা মুন্ডা কে ছিলেন?

উত্তরঃ বিরসা মুন্ডা-

ভূমিকা: ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ছোটোনাগপুর ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে আদিবাসী মুন্ডা সম্প্রদায় শক্তিশালী বিদ্রোহ শুরু করে। বিরসা মুন্ডা ছিলেন এই বিদ্রোহের প্রধান নেতা।

[1] প্রথম জীবন: বিরসা মুন্ডা ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে রাঁচি জেলার উলিহাত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সুগান মুন্ডা ছিলেন একজন বর্গাচাষি। বিরসা বাল্যকালে খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে পড়াশোনা করেন।

[2] ধর্মপ্রচার: বিরসা ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এক নতুন ধর্মমত প্রচার করেন। তিনি নিজেকে অবতার বলে ঘোষণা করেন এবং দাবি করেন যে, তিনি ভগবানের দর্শন পেয়েছেন। তিনি মহাপ্লাবনের ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি মুন্ডা সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারের বিরোধিতা করেন, পশুবলি

বন্ধ এবং মাদক বর্জন করার কথা বলেন। তিনি মুন্ডাদের উপবীত ধারণ করতে বলেন।

[3] প্রথম আন্দোলন: ১৮৯৩-৯৪ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সরকারি বনবিভাগ মুন্ডা গ্রামের পতিত জমি অধিগ্রহণ করতে শুরু করলে বিরসা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন।

[4] বিদ্রোহের সূচনা: বিরসা ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করে সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করনে। ২৪ ডিসেম্বর (১৮৯৯ খ্রি.) বিদ্রোহের দিন ঠিক হয়।

[5] বিদ্রোহের প্রসার: ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বিরসার নেতৃত্বে বিদ্রোহ প্রবল আকার ধারণ করে। বিদ্রোহীরা সরকারি অফিস, থানা, ইংরেজ পুলিশ ও কর্মচারীদের আক্রমণ করতে থাকে।

[6] মৃত্যু: প্রবল বিক্রমে লড়াই করেও বিরসা-র বাহিনী শেষপর্যন্ত ব্রিটিশবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। বিরসাকে রাঁচি জেলে বন্দি করা হয়। সেখানে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২৫ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়।

উপসংহার: মুন্ডা সমাজে বিরসা মুন্ডা ছিলেন ত্রাতাস্বরূপ। তাঁর অসামান্য প্রতিভা মাত্র একুশ বছর বয়সেই তাঁকে মুন্ডাদের নেতৃত্বের আসনে বসিয়েছিল।

27. মুন্ডা বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ মুন্ডা বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র-

ভূমিকা: ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিল মুন্ডা বিদ্রোহ (১৮৯৯- ১৯০০ খ্রি.)। এই বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র ছিল বহুমুখী। যেমন-

[1] ঐক্য: বিরসার নেতৃত্বে মুন্ডাদের ঐক্য ছিল চোখে পড়ার মতো। বিরসা প্রথমে নতুন ধর্মপ্রচারের মাধ্যমে মুন্ডাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেন। পরে প্রবল বিদ্রোহের সময় এই ঐক্য আরও জোরদার হয়। পরবর্তীকালে বিদ্রোহের অবসান ঘটলেও বিরসার ঐক্যবদ্ধ অনুগামীরা ‘বিরসাইট’ বা ‘বিরসা সম্প্রদায়’ প্রতিষ্ঠা করে।

[2] আদিবাসী বিদ্রোহ: মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল মূলত একটি আদিবাসী বা উপজাতি বিদ্রোহ। কারণ আদিবাসী মুন্ডারাই ছিল এই বিদ্রোহের চালিকাশক্তি।

[3] কৃষকবিদ্রোহ: মুন্ডা বিদ্রোহে মূলত কৃষকরা অংশ নিয়েছিল। এজন্য অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ মুন্ডা বিদ্রোহকে ‘কৃষকবিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেছেন।

[4] ব্রিটিশ বিরোধিতা: মুন্ডা বিদ্রোহ ছিল ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী একটি গণসংগ্রাম। ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোই ছিল বিদ্রোহীদের প্রধান লক্ষ্য।

[5] স্বাধীনতার দাবি: মুন্ডা বিদ্রোহে স্বাধীনতার দাবি খুবই স্পষ্ট ছিল। বিরসা মুন্ডা বিদেশিদের বিতাড়িত করে স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন।
উপসংহার: মুন্ডা বিদ্রোহে ধর্মীয় ভাবধারার যথেষ্ট প্রভাব ছিল। বিদ্রোহের নেতা বিরসা মুন্ডা নিজেকে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করেছিলেন যে তিনি ‘ঈশ্বরের আদেশ’ অনুযায়ী মুন্ডাদের উদ্ধারের কাজে নেমেছেন।

5. Fill in The Blanks

1. ব্রিটিশ সরকার ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে_____এর দ্বারা ভারতীয় অরণ্যের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করে।

উত্তরঃ অরণ্য সনদ ।

2. ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৪ খ্রিস্টাব্দে_____গঠন করে।

উত্তরঃ বন বিভাগ ।

3. ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের গণ আন্দোলন হল_____-এর একটি উদাহরণ।

উত্তরঃ বিপ্লব ।

4. ঘাটশিলার ধলভূমের রাজা ছিলেন______।

উত্তরঃ জগন্নাথ সিংহ।

5. ফরাজি বা ওয়াহাবি আন্দোলন ছিল একটি _____-এর উদাহরণ।

উত্তরঃ বিদ্রোহ।

6. রংপুর বিদ্রোহ প্রথম শুরু হয়েছিল____গ্রামে।

উত্তরঃ তোপা।

7. চুয়াড় বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল_____বিরুদ্ধে।

উত্তরঃ ব্রিটিশদের 

৪. মহারাষ্ট্রের খান্দেশ অঞ্চলে বাস করত_____উপজাতি।

উত্তরঃ ভিল ।

9. ইংরেজ কোম্পানি কোলদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের খাদ্যশস্যের পরিবর্তে_____চাষে বাধ্য করত।

উত্তরঃ আফিম ।

10. কোল বিদ্রোহ দমনে নেতৃত্ব দেন ক্যাপটেন_____।

উত্তরঃ  উইলকিনসন।

11. কেনারাম ও বেচারাম নামে বাটখারা ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা____ঠকাত।

উত্তরঃ সাঁওতালদের 

12. নীলকর সাহেবরা_____কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের নীলচাষে বাধ্য করত।

উত্তরঃ সাঁওতাল ।

13. বিদ্রোহের আগে সাঁওতালদের______ধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা  চলত। 

উত্তরঃ খ্রিস্ট 

14. সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা ছিলেন_____। 

উত্তরঃ বীর সিং ।

15. _____মাঠের জমায়েতে সিধু ও কানু স্বাধীন সাঁওতাল রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন।

উত্তরঃ ভাগনাডিহির।

16. ১০ হাজার সাঁওতাল ভাগনাডিহির মাঠে জড়ো হয়েছিল ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দের____জুন।

উত্তরঃ ৩০

17. সাঁওতাল বিদ্রোহে অত্যাচারী দারোগা______নিহত হন।

উত্তরঃ মহেন্দ্রলাল দত্ত।

18. ব্রিটিশরা_____হাজার সাঁওতাল বিদ্রোহীকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

উত্তরঃ ২৩

19. পাকুড়ের রাজবাড়ি দখল করে_____।

উত্তরঃ সাঁওতালরা।

20. সাঁওতালরা বহিরাগত জমিদার ও মহাজনদের বলত_____।

উত্তরঃ দিকু।

21. _____ছিলেন মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান নেতা।

উত্তরঃ বিরসা মুন্ড।

22. বিরসা মুন্ডা প্রথমে এক নতুন_____প্রচারের দ্বারা মুন্ডাদের ঐক্যবদ্ধ করেন। 

উত্তরঃ ধর্ম ।

23. প্রথম স্বাধীন মুন্ডারাজ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন_____ মুন্ডা।

উত্তরঃ বিরসা।

24 বিরসা মুন্দা নিজেকে_____বলে ঘোষণা করেন।

উত্তরঃ ধরতি আবা।

6. True And False

1. ভারতীয় উপজাতিগুলিকে অরণ্যের অধিকার দানের উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন প্রণীত হয়।

উত্তরঃ ভুল ।

2. সরকার আদিবাসীদের সমভূমিতে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের অরণ্যের সম্পদ সংগ্রহ থেকে বঞ্চিত করে।

উত্তরঃভুল ।

3. বিপ্লবের একটি উদাহরণ হল ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯ খ্রি.)।

উত্তরঃ ঠিক ।

4. দেবী সিংহের নেতৃত্বে রংপুরের কৃষকরা জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকরেছিল।

উত্তরঃ ভুল ।

5. রংপুর বিদ্রোহের নেতা হলেন টিপু শাহ।

উত্তরঃ ভুল ।

6. জঙ্গলমহল-সহ মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দ্বিতীয় পর্যায়ের চুয়াড় বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে।

উত্তরঃ ঠিক ।

7. চুয়াড় বিদ্রোহের পর ইংরেজরা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরটিকে কেন্দ্র করে দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল নামে একটি জেলা গঠন করে। 

উত্তরঃ ঠিক ।

৪. ‘হুল’ নামে ভিল বিদ্রোহ পরিচিত ছিল।

উত্তরঃভুল ।

9. ঝিন্দরাই, সুই মুন্ডা প্রমুখ সাঁওতাল বিদ্রোহের নেতা ছিলেন।

উত্তরঃভুল ।

10. ‘দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত এজেন্সি’-তে ব্রিটিশ আইনকানুনের পরিবর্তে কোলদের নিজস্ব আইনকানুন চালু করা হয়।

উত্তরঃ ঠিক ।

11. ক্যাপটেন উইলকিনসনের নেতৃত্বাধীন ইংরেজবাহিনী কোল বিদ্রোহ দমনে নিয়োজিত হয়েছিল।

উত্তরঃ ঠিক ।

12. নীলকর সাহেবরা সাঁওতাল কৃষকদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের নীলচাষে বাধ্য করত।

উত্তরঃ ঠিক ।

13. কেনারাম ছিল কম ওজনের এবং বেচারাম ছিল বেশি ওজনের বাটখারা।

উত্তরঃ ভুল ।

14. সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান নেতা ছিলেন বীর সিং ও কালো প্রামাণিক।

উত্তরঃ ভুল ।

15. চাঁদ ও ভৈরব ছিলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের দুই নেতা।

উত্তরঃ ঠিক ।

16. সাঁওতাল বিদ্রোহ ‘উলঘুলান’ নামে পরিচিত ছিল।

উত্তরঃ ভুল ।

17. সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রতীক ছিল শালগাছ।

উত্তরঃ ঠিক ।

18. মুন্ডা সমাজে জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানার নাম ছিল ‘খুঁৎকাঠি’ প্রথা।

উত্তরঃ ভুল ।

19. মুন্ডা বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে মহাশ্বেতা দেবী রচনা করেন ‘অরণ্যের অধিকার’।

উত্তরঃ ঠিক ।

20. ‘ধরতি আবা’ কথার অর্থ হল মুন্ডাদের পিতা।

উত্তরঃ ভুল ।

21. ‘দামিন-ই-কোহ্’ কথার অর্থ হল সাঁওতালগণের বিচরণভূমি।

উত্তরঃ ভুল ।

22. সাঁওতালদের বাসভূমি ছিল ‘দামিন-ই-কোহ’।

উত্তরঃ ঠিক ।

23. দিয়েত্রিখ ব্র্যান্ডিস ছিলেন একজন আমেরিকান উদ্ভিদবিদ।

উত্তরঃ ভুল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *