Class 7 Chapter 20 Solution
স্মৃতিচিহ্ন
Very Short Question Answer
৯.১ ‘স্মৃতিচিহ্ন’ কবিতাটি কার রচনা?
উত্তর: ‘স্মৃতিচিহ্ন’ কবিতাটি কামিনী রায়ের লেখা।
৯.২ কবিতাটি তাঁর কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
উত্তর: কবিতাটি তাঁর ‘নির্মাল্য’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
৯.৩ কবিতাটি কী জাতীয় রচনা?
উত্তর: কবিতাটি ‘সনেট’ বা চতুর্দশপদী কবিতা।
Short Question Answer
(ক) মহৎ মানুষদের জীবনকথা আমরা পাঠ করে থাকি কেন?
উত্তর: আমরা মহৎ মানুষদের জীবনকথা পাঠ করি। কারণ, তাঁরা সমাজ-সংসারের জন্য, মানুষের জন্য ভালো কাজ করে গেছেন। নিজের স্বার্থ ভুলে মানুষের কল্যাণ করেছেন। মানুষের মধ্যে দয়া, প্রেম, ভালোবাসা ছড়িয়ে দিয়েছেন। আমরাও আদর্শ মানুষ হয়ে ওঠার জন্য, তাঁদের শিক্ষণীয় জীবনকথা পাঠ করি।
(খ)অত্যাচারী কোন্ কোন্ সাম্রাজ্যলোভী জাতির কথা তুমি ইতিহাস পড়ে জেনেছো? (Open Ended Question)
উত্তর: ইতিহাস থেকে আমরা শক্, হুন, মোগল, পাঠান, ইংরেজ প্রভৃতি সাম্রাজ্যলোভী জাতির কথা জানতে পেরেছি।
(গ) অতীত ইতিহাসের ধূসর হয়ে আসা কোন্ স্মারক/ সৌধ/মিনার তুমি দেখেছ? (Open Ended Question)
উত্তর: আমি অতীত ইতিহাসের কুতুবমিনার দেখেছি। এছাড়া শহিদ মিনার, গৌড়ের রাজপ্রাসাদ, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলও আমি দেখেছি।
(ঘ) তোমার দৃষ্টিতে কাদের কথা সমাজের সকলের চিরকাল মনে রাখা উচিত? (Open Ended Question)
উত্তর: যারা নিজের কথা না ভেবে অন্যের মঙ্গলচিন্তায় জীবন কাটায়, যারা প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা ও শান্তির বাণী প্রচার করে, পরার্থে জীবন উৎসর্গ করা সেই মহান ব্যক্তিদের কথা সমাজের সকলের মনে রাখা উচিত।
(ঙ) মানুষ নিজেকে স্মরণীয় করে রাখতে চায় কেন?
উত্তর: মায়াময় এই পৃথিবীতে মানুষ চায় তার নাম সবাই জানুক; বেঁচে থাকতে চায় মানুষের চিন্তা-চেতনায়, সেই অমরত্বের বাসনা থেকেই মানুষ নিজেকে স্মরণীয় করে রাখে।
৩. নীচে দেওয়া শব্দগুলির বিপরীতার্থক শব্দ লেখো:
উত্তর: মনোহর কুৎসিত। বিশাল-ক্ষুদ্র। মূঢ়-পণ্ডিত। ব্যর্থ- সফল। ভগ্ন-গঠন। লুপ্ত-প্রচলিত। শুষ্ক-সিক্ত। অধিকার- অনধিকার। দৃঢ়-শিথিল। অক্ষুণ্ণ-ক্ষুণ্ণ। ধৌত-অধৌত। নিত্য-অনিত্য; সমুজ্জ্বল-অনুজ্জ্বল।
৯.৪ কবিতায় কবি কাদের ‘মূঢ়’ ও ‘ব্যর্থ মনস্কাম’ বলেছেন?
উত্তর: ‘স্মৃতিচিহ্ন’ নামাঙ্কিত কবিতায় কবি কামিনী রায় সাম্রাজ্যবাদী, পররাজ্যগ্রাসী ও প্রতিহিংসাপরায়ণ শাসকদের ‘মূঢ়’ রূপে চিহ্নিত করেছেন। একই সঙ্গে যারা নিজেদের নামকে জগৎময় প্রসারিত করতে ব্যক্তি স্বার্থের বাইরে এক পা-ও কাজ করেননি তাদের সেই মানসিকতা বোঝাতে গিয়ে কবি ‘ব্যর্থ মনস্কাম’ কথাটি প্রয়োগ করেছেন।
৯.৫ তাদের স্মৃতি কীভাবে লুপ্ত হয়ে যায়?
উত্তর: বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত মহিলা কবি কামিনী রায় প্রণীত
‘স্মৃতিচিহ্ন’ নামাঙ্কিত কবিতায় কবি জানিয়েছেন যারা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তাদের কথা কেউ মনে রাখেন না। আসলে ব্যক্তিগত ক্ষমতায় যারা স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করেছেন, অট্টালিকা কিংবা জয়স্তম্ভ তুলে ধরেছেন; তাদের সেই কীর্তি ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। আসলে কালের বহমান ধারায় ব্যক্তিগত কোনো স্মৃতিচিহ্ন চিরস্থায়ী হয়ে থাকে না।
৯.৭ ‘কাল’-কে কবিতায় কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: ‘স্মৃতিচিহ্ন’ নামাঙ্কিত কবিতায় কবি কামিনী রায় লিখেছেন, ‘শুদ্ধ তৃণ কাল-নদী জলে/ভেসে যায় নামগুলি’। এখানে ‘কাল’কে বহমান নদীর জলের স্রোতের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
৯.৮ কবিতায় ‘শুল্ক তৃণ’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ১৯ শতকের বাংলা কবিতার ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় কবি কামিনী রায় ‘স্মৃতিচিহ্ন’ কবিতায় ‘শুষ্ক তৃণ’ বলতে সাম্রাজ্যলোভী তথা ক্ষমতাশালী ব্যক্তিদের প্রতিষ্ঠিত স্মারক চিহ্ন লুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।
১০.২ ‘মূঢ় ওরা’-কবিতায় তাদের মূঢ় বলার কারণ কী?
উত্তর: কবিতায় তাদের মূঢ় বলা হয়েছে কারণ তারা তাদের নাম চিরস্থায়ী করার জন্য যা করেছে তা অতি নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। কেননা, ওভাবে বেঁচে থাকা যায় না, মানুষ মনে রাখে মহৎ কাজকে। মহৎ কাজের মধ্যেই মানুষের স্মৃতি বেঁচে থাকে, কিন্তু যশোলোভী ওই মানুষগুলো তা না করে অর্থহীন অট্টালিকা, সৌধ নির্মাণ করেছে। তাই তারা মূঢ়।
১০.৩ ‘কেবা রক্ষা করে’- কী রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে?
তা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না কেন?***
উত্তর: প্রাচীন কালে নির্মিত বিভিন্ন সৌধের কথা বলা হয়েছে। > কালের প্রকোপে পার্থিব যা কিছু তা ধ্বংস হয়ে যায়। সেই কারণে কালের নিয়মে ধ্বংস হয়ে যায় এইসমস্ত সৌধ। তা কেউ রক্ষা করতে পারে না।
১০.৫ কালস্রোতে কাদের নাম ধুয়ে যায়? সেই স্রোত কাদের স্মৃতি গ্রাস করতে পারে না? **
উত্তর: যারা মানুষের উপকারের কথা না ভেবে নিজেদের স্মরণীয় রাখার জন্য বিশাল বিশাল সৌধ নির্মাণ করেছিল কালস্রোতে তাদের নাম ধুয়ে যায়।
> আর যাঁরা নিজের কথা না ভেবে অন্যের উপকারের কথা ভেবেছিলেন। জগৎ-সংসারের মঙ্গলের জন্য সারা জীবন কাজ করেছেন তাঁদের নাম, তাঁদের স্মৃতি কালস্রোত গ্রাস করতে পারে না।
Fil In The Blanks
১.১ ইট-পাথরে গড়া সৌধ কাউকে চিরস্মরণীয় করে রাখে না।
উত্তর: ✔
১.২ যাঁরা নিজেদের সৌধ গড়ে কীর্তিকে অমর করে রাখতে চান তাঁরা বরেণ্য।
উত্তর: X
১.৩ সাধারণ মানুষের মনে যাঁরা স্থান পেয়েছেন, তাঁদের নাম ভেসে যায়।
উত্তর: X
১.৪ এমন বহু সহায়-সম্বলহীন, দরিদ্র মানুষ আছেন, মহাকাল যাঁদের স্মৃতি মুছে দিতে পারেনি।
উত্তর: ✔
১.৫ ‘মানব হৃদয়-ভূমি’ অধিকার করতে হলে মানুষের জন্য কল্যাণকর কাজ করতে হবে।
উত্তর: ✔
Long Question Answer
১০.১ “ওরা ভেবেছিল মনে…” কাদের কথা বলা হয়েছে? তারা
কী ভেবেছিল?**
উত্তরের প্রথমাংশ: রবীন্দ্র-সমসাময়িক কবি কামিনী রায় প্রণীত – ‘স্মৃতিচিহ্ন’ নামাঙ্কিত কবিতায় ‘ওরা’ বলতে কবি সাম্রাজ্যলোভী ও – ব্যক্তিগত স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের কথা বুঝিয়েছেন।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: রবীন্দ্রনাথের ‘ওরা কাজ করে’ কবিতার মতো কামিনী রায়ের ‘স্মৃতিচিহ্ন’ কবিতায় সাম্রাজ্যলোভী এবং বিত্তভোগী – মানুষদের অপরিমিত লোভ-লালসার কথা বলা হয়েছে। অফুরান অর্থ আর প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে যারা নিজেদের নামে আকাশস্পর্শী অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন, তাঁরা শেষপর্যন্ত অমরতা পাবেন না বলে কবির মনে হয়েছে। কেননা, বিপুল অর্থ খরচ করে স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করলেই বিশ্ববাসীর কাছে শ্রদ্ধার আসন পাওয়া যায় না। এই সত্যটি তাঁরা বোঝেননি। ফলে শুধু অট্টালিকা ও স্মৃতিসৌধ তৈরি করলেই অমরত্ব পাওয়া যাবে, তারা সেই ভুল ধারণা করেছিলেন।
১০.৪ ‘দরিদ্র আছিল তারা’- কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের রাজত্ব কীভাবে অক্ষুণ্ণ রয়েছে বলে কবি মনে করেন?***
উত্তর: যাঁরা মানুষের কল্যাণের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, সেই মহাপুরুষদের কথা বলা হয়েছে।
> তাঁরা প্রেম-প্রীতি-ভালোবাসা-দয়া-মায়া দিয়ে জগৎ- সংসারকে আপনার করে নিয়েছিলেন। মানুষের ভালোর জন্য সারাজীবন কাজ করে গেছেন। তাঁদের সেই কাজের জন্যই তাঁরা মানুষের হৃদয়ভূমিতে
জায়গা করে নিয়েছিলেন। আর সে নাম যুগযুগান্তর ধরে উজ্জ্বলরূপে বিরাজ করে মানুষের মনের মধ্যে।
১০.৬ ‘মানবহৃদয়-ভূমি করি অধিকার’- কারা, কীভাবে মানবহৃদয়ভূমি
অধিকার করে?’***
উত্তরের প্রথমাংশ: যাঁরা মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিঃস্বার্থে সমর্পণ করেন, কবি কামিনী রায় মনে করেন তাঁরাই ‘মানব হৃদয়-ভূমি’ অধিকার করে থাকবেন।
উত্তরের দ্বিতীয়াংশ: ‘স্মৃতিচিহ্ন’ নামাঙ্কিত কবিতায় কামিনী রায় স্পষ্ট জানিয়েছেন, যারা নিঃস্বার্থে কাজ করে চলেন মানুষের মনে তাঁরা স্থায়ী আসন লাভ করবেন। কেননা, যাঁরা ‘আপনার নাম’ প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘বিশাল অক্ষরে’ ইট-পাথর-অট্টালিকার বুকে স্মরণচিহ্ন লিখে রাখেন, তাঁরা একসময় কালের নদীতে হারিয়ে যান। কিন্তু যেসব মানুষ দীন-দরিদ্র, অসহায়-বিপন্ন মানুষের পাশে থাকেন; তারাই জগতে অমরত্ব পান। অন্যের জন্যে যে মহামানব সবসময় ভেবেছিলেন, তাঁর কথা মানব হৃদয়-ভূমিতে চিরকালের জন্যে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকবে বলে কবি মন করেন।
১০.৭ কবিতায় কবি কোন্ ‘স্মৃতি’কে কেন অবিনশ্বর ও ‘নিত্য
সমুজ্জ্বল’ বলেছেন?***
উত্তর: যে স্মৃতি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে, সেটাই অবিনশ্বর ও সমুজ্জ্বল। কেননা, তাঁদের কৃতিত্বের জন্যই তাঁরা মানবহৃদয়ে স্থান পেয়েছেন। মানব সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন তাঁরা। তাই ‘তাদের নাম মনের মণিকোঠায় ঠাঁই পেয়েছে। তা চিরস্থায়ী। প্রস্তর নির্মিত সৌধ ক্ষণস্থায়ী। তাই তা ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু মানুষের মনে যে আসন তা ধ্বংস হয় না, তা অবিনশ্বর। তাঁদের কীর্তি-কাহিনি প্রতিদিন লোকমুখে আলোচিত হয়।
১৩. কবিতাটি থেকে যে শিক্ষা পেলে, সে বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো।
উত্তর: পৃথিবীতে নানারকম মানুষ আছে। কেউ ক্ষমতা, অর্থ, প্রতিপত্তি
–
চায়; নিজের করে রাখতে চায় সমস্ত সম্পদ। আবার কেউ কেউ আছে যাঁরা অপরের জন্য তাঁদের সর্বস্ব দিয়ে দেন। প্রায় সকলেই চায়, তার নাম চিরকাল অক্ষয় থাকুক। তাই তারা প্রচুর অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করে বড়োবড়ো স্মৃতিসৌধ, অট্টালিকা আরও কতো কী। কিন্তু কালের স্রোতে সব হারিয়ে যায়। কেউ তাদের নাম মনে রাখে না। আবার কেউ কেউ আছেন, যাঁরা মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, দেশের কল্যাণের জন্য, মানুষের ভালোর জন্য সারা জীবন অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাঁদের যা কিছু সম্বল সব মানুষের কল্যাণকর্মে ব্যবহার করেছেন। তাঁরা মানুষের হৃদয়ে চিরকালের জন্য আসন লাভ করেন। তাঁরা না চাইলেও তাঁদের নাম চিরকালের জন্য অমর হয়ে থাকে। যুগ যুগ ধরে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তাঁদের নাম-গুণ-কীর্তন করে মানুষ। কালের স্রোত তাদের নামকে আরও উজ্জ্বল করে দেয়। তাই প্রত্যেকটি মানুষকেও এইরকম কার্যেই আত্মনিয়োগ করতে হবে। এই শিক্ষাই দিল এই কবিতাটি।