WBBSE Class 8 History Chapter 6 জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক বিকাশ Solution | Bengali Medium

Class 8 Chapter 6 Solution

জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক বিকাশ

1. MCQs Question Answer

1 জাতীয় কংগ্রেস-এর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়-

(a) বোম্বাইতে

(b) গোয়ায়

(c) মাদ্রাজে

(d) লাহোরে

উত্তর: (a) বোম্বাইতে।

1.2 কংগ্রেস-এর প্রথম অধিবেশনে বেশির ভাগ প্রতিনিধি যোগ দিয়েছিলেন-

(a) বাংলা থেকে

(b) মাদ্রাজ থেকে

(c) বোম্বাই থেকে

(d) দিল্লি থেকে

উত্তর: (c) বোম্বাই থেকে।

1.3 চরমপন্থার প্রবক্তা ছিলেন না-

(a) অরবিন্দ ঘোষ

(b) বিপিনচন্দ্র পাল

(c) গোপালকৃয় গোখলে

(d) ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়

উত্তর: (c) গোপালকৃষ্ণ গোখলে।

1.4 স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার বলেছেন-

(a) সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী

(b) রমেশচন্দ্র দত্ত

(c) দাদাভাই নৌরজী

(d) বালগঙ্গাধর তিলক

উত্তর: (d) বালগঙ্গাধর তিলক।

1.5 Poverty and Un-British Rule in India গ্রন্থটি রচন করেন-

(a) গোপাল কৃষ্ণ গোখলে

(b) দাদাভাই নৌরজি

(c) জওহরলাল নেহরু

(d) বিপিনচন্দ্র পাল

উত্তর: (b) দাদাভাই নৌরজি।

1.6 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের সরকারি ঘোষণা করা হয়

(a) 16 অক্টোবর

(b) 19 জুলাই

(c) 30 ডিসেম্বর

(d) 30 এপ্রিল

উত্তর: (a) 16 অক্টোবর।

1.7 জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়-(কুম্ভচক পল্লিশ্রী বিদ্যাভ

(a) 1880 খ্রিস্টাব্দে

(b) 1905 খ্রিস্টাব্দে

(c) 1906 খ্রিস্টাব্দে

(d) 1911 খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: (c) 1906 খ্রিস্টাব্দে।

1.8 জাতীয় শিক্ষা প্রসারের সঙ্গে যুক্ত ছিল- 

(a) বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ 

(b) অনুশীলন সমিতি

(c) থিওসোফিক্যাল সোসাইটি

(d) পুনা সার্বজনিক সই

উত্তর: (a) বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ।

1.9 ভারতের রাজধানী দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়-

(a) 1905 খ্রিস্টাব্দে

(b) 1906 খ্রিস্টাব্দে

(c) 1910 খ্রিস্টাব্দে

(d) 1911 খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: (d) 1911 খ্রিস্টাব্দে।

1.10 লোকমান্য রূপে পরিচিত ছিলেন-

(a) বিপিনচন্দ্র পাল

(b) লালা লাজপত রায়

(c) বাল গঙ্গাধর তিলক

(d) গোপালকৃষ্ণ গোখলে

উত্তর: (c) বাল গঙ্গাধর তিলক।

1.11 দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইনটি তুলে নেন-

(a) লর্ড বেন্টিঙ্ক

(b) লর্ড রিপন

(c) লর্ড ক্যানিং

(d) লর্ড লিটন

উত্তর: (b) লর্ড রিপন।

1.12 অনুশীলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ছিল-

(a) সতীশচন্দ্র বসু

(b) বিপিনচন্দ্র পাল

(c) সতীশচন্দ্র মুখার্জী

(d) অরবিন্দ ঘোষ

উত্তর: (a) সতীশচন্দ্র বসু।

1.13 গদর শব্দের অর্থ হল-

(a) বন্দনা করা

(b) বিশ্বাসঘাতক

(c) বিপ্লব

(d) দেশপ্রেম

উত্তর: (c) বিপ্লব।

1.14 বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল-

(a) ভারত সভা

(b) জাতীয় কংগ্রেস

(c) সন্তান দল

(d) যুগান্তর দল

উত্তর: (d) যুগান্তর দল।

1.15 ‘বঙ্গের শিয়াল’ পত্রিকাটির লেখক হলেন-

(a) কৃষ্ণকুমার মিত্র

(b) অজিত সিংহ

(c) অশ্বিনীকুমার দত্ত

(d) ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত

উত্তর: (b) অজিত সিংহ।

2. Very Short Question Answer

 1. ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগঠন কোনটি?

উত্তর: ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী সংগঠন হল-বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা।

2. ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন কোন্টি?

উত্তর: জমিদার সভা হল প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন।

3. ইন্ডিয়ান লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর: 1875 খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

4. রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে জমিদার সভা কত খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়েছিল?

উত্তর: রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে জমিদার সভা ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে গঠিত হয়েছিল।

5. কত খ্রিস্টাব্দে ভারত সভা প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর: 1876 খ্রিস্টাব্দে ভারত সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

6. ইলবার্ট কে ছিলেন?

উত্তর: ভারতের ভাইসরয় লর্ড রিপনের আইন সচিব ছিলেন ইলবার্ট।

7. থিয়োসফিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতার নাম কী?

উত্তর: থিয়োসফিক্যাল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা হলেন কর্ণেল অলকট এবং মাদাম ব্লাভাটস্কি।

8. জাতীয় সম্মেলন প্রথম কবে অনুষ্ঠিত হয়?]

উত্তর: 1883 খ্রিস্টাব্দে প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

9. জাতীয় কংগ্রেস এর জনক কাকে বলে?]

উত্তর: এলান অক্টাভিয়ান হিউমকে জাতীয় কংগ্রেস-এর জনক বলা হয়।

10. কে কবে নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করে?

উত্তর: লর্ড নর্থব্রুক 1876 খ্রিস্টাব্দে নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ করেছিলেন।

11. দেশীয় ভাষায় মুদ্রণ আইন কে পাশ করেন?

উত্তর: লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় মুদ্রণ আইন পাশ করেন।

12. জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতির নাম কী?

উত্তর: উমেশচন্দ্র ব্যানার্জী ছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি।

13. কাদের নীতিকে রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তি বলা হয়?

উত্তর: কংগ্রেস-এর নরমপন্থী নেতাদের নীতিকে রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তি বলা হয়। 

14. বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা কে করেছিলেন?

উত্তর: লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা করেছিলেন।

15. অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য কী ছিল?

উত্তর: অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের মূল লক্ষ্য ছিল ভারতের দরিদ্রাবস্থা এবং ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থার মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করা।

16. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী একজন নেতার নাম লেখো।

উত্তর: সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, কৃষ্ণকুমার মিত্র, প্রভৃতিরা ছিলেন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী নেতা।

17. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী একজন মুসলমান নেতার নাম লেখো।

উত্তর: লিয়াকত হোসেন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের নেতা।

18. বয়কট আন্দোলনের ডাক কে দেন?

উত্তর: কৃষ্ণকুমার মিত্র বয়কট আন্দোলনের ডাক দেন।

19. কোন্ পত্রিকায় প্রথম বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিল?

উত্তর: সঞ্জীবনী পত্রিকায় প্রথম বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিল।

20. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ কবে গঠিত হয়?

উত্তর: 1906 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়।

22. ভারতে বিপ্লববাদের জনক কাকে বলা হয়?

উত্তর: বাসুদেব বলবন্ত ফাদকেকে ভারতে বিপ্লববাদের জনক বলা হয়।

23. অনুশীলন সমিতি কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: সতীশচন্দ্র বসু অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

24. কার নেতৃত্বে ঢাকা অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়?

উত্তর: পুলিন বিহারী দাশ-এর নেতৃত্বে ঢাকা অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়।

25. মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন কবে পাশ হয়?

উত্তর: 1909 খ্রিস্টাব্দে মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন পাশ হয়।

26. কত খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়?

উত্তর: 1911 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়।

27. হিন্দুমেলার প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর: নবগোপাল মিত্র হিন্দুমেলার প্রতিষ্ঠাতা।

28. কোন্ পত্রিকা বাংলার বিপ্লবীদের মুখপত্র ছিল?

উত্তর: যুগান্তর পত্রিকা বাংলার বিপ্লবীদের মুখপত্র ছিল।

29. এন সোসাইটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য কী ছিল?

উত্তর: বাংলার যুবকদের বিপ্লববাদে উৎসাহিত করা, তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করা।

30. কিংসফোর্ডকে মারার উদ্যোগ কারা নিয়েছিল?

উত্তর: ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি কিংসফোর্ডকে মারার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

31. সাভারকার প্রতিষ্ঠিত বিপ্লবী সংস্থার নাম কী?

উত্তর: অভিনব ভারত হল সাভারকরের বিপ্লবী সংস্থা।

32. গ্রন্থটি কার আত্মজীবনী?

উত্তর: সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর আত্মজীবনী।

3. Short Question answer

1 জমিদার সভা কে, কবে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: রাজা রাধাকান্ত দেব, দ্বারকানাথ ঠাকুর ও অন্যান্যদের উদ্যোগে জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়। 1838 খ্রিস্টাব্দে জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

2. অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের মূল বক্তব্য কী ছিল?

উত্তর: জাতীয় কংগ্রেস এর নরমপন্থী নেতৃবৃন্দ মনে করতো যে, ঔপনিবেশিক শোষণের ফলে এবং অবাধ বণিজ্যনীতির ফলে ভারত ইউরোপে উৎপাদিত পণ্য সম্ভারের বিশাল বাজারে পরিণত হয় এবং ভারতের কৃষিনির্ভর অর্থনীতি ধ্বংস হয়। তাদের এই সমালোচনাই ছিল অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের মূল বক্তব্য।

3.  হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব কী?

উত্তর: হিউম ও বড়োলাট ডাফরিনের মধ্যে সিমলায় অনুষ্ঠিত দীর্ঘ বৈঠকের পরই হিউম জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় অগ্রসর হয়েছিলেন। এজন্য রজনীপাম দত্ত হিউম-ডাফরিনের এই বৈঠককে ষড়যন্ত্র বলেছেন। কংগ্রেস এর প্রতিষ্ঠা ছিল এই ষড়যন্ত্রের ফল।

4. নরমপন্থীদের কার্যকলাপকে কে, কেন তিনদিনের তামাশা বলেছেন?

উত্তর: অশ্বিনী কুমার দত্ত কংগ্রেস এর কার্যকলাপকে তিনদিনের তামাশা বলেছেন। আসলে প্রথমদিকের কংগ্রেস নেতারা বছরে একবার ভারতের বিভিন্ন শহরে তিনদিনের জন্য সম্মেলনে মিলিত হয়ে সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ পাঠানো ছাড়া আর কিছু করতো না। এজন্য তাদের কার্যকলাপকে তিনি তামাশা বলেছেন।

5. কংগ্রেস-এর চরমপন্থী ও নরমপন্থীদের মধ্যে মূল পার্থক্য কী ছিল?

উত্তর: কংগ্রেস-এর নরমপন্থীরা ব্রিটিশ সরকারের অধীনতা থেকে স্বায়ত্তশাসনের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। পক্ষান্তরে চরমপন্থীরা পূর্ণ স্বরাজ বা স্বাধীনতা লাভের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন।

6. কংগ্রেস এর সুরাট অধিবেশনের গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তর: সুরাট অধিবেশনে কংগ্রেস এর নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে ব্যাপক বিরোধ বাধে। শেষ পর্যন্ত 1907 খ্রিস্টাব্দের এই অধিবেশন চরমপন্থীদের দল থেকে বিতাড়ন করে।

7. কে, কেন অনুশীলন সমিতি তৈরি করেন?

উত্তর: প্রমথনাথ মিত্রের উদ্যোগে সতীশচন্দ্র বসু অনুশীলন। সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। শরীরচর্চার অন্তরালে বিপ্লবী কাজকর্ম পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে অনুশীলন সমিতি তৈরি করা হয়।

8. স্বদেশি ও বয়কট কথার অর্থ কী?

উত্তর: স্বদেশি কথার অর্থ নিজদেশে উৎপাদিত সামগ্রী ব্যবহার করা ও স্বদেশি উৎপাদনে সাহায্য করা। অপরদিকে বয়কট কথার অর্থ বর্জন করা। ব্রিটিশ পণ্য বর্জন করার ডাক দেওয়া হয়েছিল।

9. স্বদেশি আন্দোলন বাংলায় কোন কোন শিল্পের বিকাশ ঘটায়?

উত্তর: স্বদেশি আন্দোলন এর ফলে বাংলায় বস্ত্র শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে। বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিলস স্থাপিত হয়। এছাড়া বেঙ্গল কেমিক্যাল, সাবান কারখানা এবং লৌহ-ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। কুটির শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে।

10. লর্ড কার্জন কেন বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা করেন?

উত্তর: লর্ড কার্জন মুখে প্রশাসনিক সুবিধার কথা বললেও বঙ্গ বিভাজনের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক। বঙ্গভঙ্গের মধ্য দিয়ে তিনি বাংলার হিন্দু-মুসলমান ঐক্য ভেঙে দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিলেন।

11. রেশমি রুমাল ষড়যন্ত্র মামলা কী?

উত্তর: কাবুলে গঠিত অস্থায়ী ভারত সরকারের প্রধান ওবেদুল্লা সিন্ধি সিল্কের কাপড়ে লেখা একটি গোপন চিঠি মক্কার মৌলানা মাসুদ হাসানকে পাঠান। ব্রিটিশ সরকার এই চিঠি পায় এবং তার উপর ভিত্তি করে যে মামলা শুরু করে তা রেশমি রুমাল ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত হয়।

12. ভারতীয় শিক্ষা প্রসারের দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

উত্তর: জাতীয় শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্য হল- (ⅰ) যুব সম্প্রদায়কে দেশাত্মবোধে উদবুদ্ধ করা। (ii) হাতে কলমে কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা। (iii) স্বদেশি শিল্পের উন্নতি ঘটানো। 

13. ক্ষুদিরাম বসু স্মরণীয় কেন? 

উত্তর: ক্ষুদিরাম বসু ছিলেন ভারতের প্রথম শহিদ বিপ্লবী। কিংসফোর্ডকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে সরকার তাকে 1908 খ্রিস্টাব্দে 11ই আগস্ট ফাঁসি দিয়েছিল।

4. Long Question Answer

1. সভাসমিতির যুগ কাকে বলে?

উত্তর: 1857-1885 খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা থেকে শুরু করে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত ভারতে বহুসংখ্যক সভাসমিতি গড়ে উঠেছিল। জাতীয়তাবাদ প্রসারে এদের গুরুত্ব ছিল অসীম। এজন্য ঐতিহাসিক অনিল শীর্ল এই সময়কালকে সভাসমিতির যুগ বলে অভিহিত করেছেন।

2. কংগ্রেস-এর নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যেকার দুটি মূল পার্থক্য উল্লেখ করো।

উত্তর: কংগ্রেস-এর নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যেকার মূল দুটি পার্থক্য হল-1. আদর্শগত দিক থেকে নরমপন্থীরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সমর্থক ছিলেন। পক্ষান্তরে চরমপন্থীরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান চাইতেন। 2. নরমপন্থীরা মূলত আবেদন নিবেদন নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু চরমপন্থীরা প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পথেই মুক্তি আনার লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন।

3. 1907 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস এর সুরাট অধিবেশনের গুরুত্ব উল্লেখ করো।

উত্তর: কংগ্রেস-এর সুরাট অধিবেশন-এর গুরুত্ব ছিল অসীম। যেমন-

(i) আদর্শগত দিক থেকে এসময় কংগ্রেস নরমপন্থী ও চরম পন্থী গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে যায়।

(ii) কংগ্রেসের ভাঙনের সুযোগে সরকার জাতীয়তাবাদী আন্দোলন দমনে তৎপর হয়।

(iii) ক্রমশ নরমপন্থীরা জাতীয় রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন।

(iv) চরমপন্থীদের উত্থানের ফলে ভারতে সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের সূচনা হয়।

4. বিংশ শতকের প্রথম দিকে বাংলায় বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি গড়ে উঠেছিল কেন?

উত্তর: বিংশ শতকের প্রথম দিকে বাংলায় নানা কারণে বিভিন্ন গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে। যেমন- অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর প্রভৃতি।

কারণ:

(i) প্রতিবাদ: ইংরেজ সরকার ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসন লাভের অযোগ্য ও ‘পৌরুষহীন’ জাত বলে অভিহিত করে। যার প্রতিবাদে নানা গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে।

(ii) আন্তর্জাতিক প্রভাব: ইতালির কার্বোনারি সমিতি এবং রাশিয়ার নিহিলিস্টদের কাকিলাপ ভারতীয় যুবসমাজকে প্রভাবিত করেছিল।

(iii) স্বদেশিদের ব্যর্থতা: স্বদেশি আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণে সহিংস আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

এইসব কারণে বাংলায় নানা বিপ্লবী গুপ্ত সমিতি গড়ে ওঠে।

5. জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হিউমের ভূমিকার সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করো। তোমার কি মনে হয় হিউম না থাকলেও জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হত? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর: হিউমের ভূমিকা : এলান অক্টাভিয়ান হিউম-এর জীবনীকার ওয়েডার বার্ন হিউমকে জাতীয় কংগ্রেসের জনক আখ্যায় ভূষিত করেছেন। অনেক ইউরোপীয় ঐতিহাসিক এই তত্ত্বকে মেনে নিয়েছেন।

ওয়েডার বার্ন তত্ত্ব: ভারত সরকারের অর্থ দপ্তরের সচিব হিসাবে হিউম অন্তত ৩০ হাজার ফাইল দেখেছিলেন। তিনি লক্ষ করে ছিলেন যে, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের ক্ষোভ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অচিরেই যদি এর প্রতিকার করা না হয়, তাহলে মহাবিদ্রোহের চেয়েও ভয়ংকর কোন বিদ্রোহ ভারতে ঘটে যেতে পারে।

অবসর নেওয়ার পর তিনি তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ডাফরিন এর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার পর জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। তাঁর কাছে জাতীয় কংগ্রেস ছিল জনসাধারণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম। তিনি মনে করতেন, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ক্ষোভ দূরীভূত হবে এবং ব্রিটিশ শাসন সুরক্ষিত থাকবে। অর্থাৎ জাতীয় কংগ্রেসকে তিনি সেফটি ভাল্ব হিসাবে ব্যবহার করে ব্রিটিশ শাসনকে নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।

সমালোচনা : ওয়েডার বার্ন-এর তত্ত্ব মেনে নেওয়া যথেষ্ট কঠিন। কারণ হিউমের কর্মকেন্দ্র ছিল সিমলা। সেখানে বসে দিল্লির প্রতিরক্ষা দপ্তরের ফাইল ঘেঁটে দেখা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাছাড়া চাকুরি করার সময় এসংক্রান্ত কোন রিপোর্ট তিনি কখনো দেননি।

আমার মনে হয় হিউম উদ্যোগ না নিলেও একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান ভারতীয়রা গড়ে তুলতে পারত। ইতিমধ্যেই সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর জাতীয় সম্মেলন যথেষ্ট সফল হয়েছিল। আসলে তাঁর তৈরি ভারত সভা কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পরই কংগ্রেস জাতীয় রূপলাভ করেছিল।

6. অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের মূল বক্তব্য কী ছিল? এই বক্তব্যের সঙ্গে বয়কট ও স্বদেশি আন্দোলনের কোনো যোগ তুমি খুঁজে পাও কি? যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করো। 

উত্তর: অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের মূল কথা: জাতীয়তাবাদ হল একটি ধারণা। যার মূল কথা হল ভারত ব্রিটেনের কাঁচা মাল সরবরাহকারী দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। তাছাড়া ব্রিটেনে উৎপাদিত দ্রব্যগুলির বাজার রূপে ভারতকে তৈরি করেছে ঔপনিবেশিক সরকার। আসলে ভারতের অর্থনীতিকে ব্রিটেনের স্বার্থেই ব্যবহার করা হত। ফলে ভারতের সম্পদ বিদেশে চলে যেতে থাকে। যা সম্পদের নির্গমন’ নামে পরিচিত। ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ভারতের আর্থিক দুরবস্থার জন্য ব্রিটিশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। যা ‘অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ’ নামে পরিচিত। এক্ষেত্রে দাদাভাই নৌরজি, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে ও রমেশচন্দ্র দত্তের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ: বয়কট ও স্বদেশি আন্দোলন : অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের সঙ্গে বয়কট ও স্বদেশি আন্দোলনের যোগাযোগ থাকার ফলে

(i) বিদেশি দ্রব্য বয়কট করা হয়।

(ii) বিদেশি দ্রব্য বয়কট করার ফলে স্বদেশি দ্রব্য উৎপাদনের উপর জোর দেওয়া হয়। এই আন্দোলনকারীরা বয়কট ও স্বদেশি আন্দোলনের মাধ্যমে সম্পদের নির্গমন বন্ধ করতে পেরেছিলেন।

7. চরমপন্থী আন্দোলনের মূল বক্তব্য কী ছিল? তাঁদের আন্দোলনে ধর্মীয় প্রতীকের ব্যবহারকে কি তুমি সমর্থন করো? তোমার বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দাও। 

উত্তর: স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ভারতে কংগ্রেস এর দ্বিমুখী আন্দোলন পরিলক্ষিত হয়। একটি ছিল আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তি অর্জন যা চরমপন্থী আন্দোলন নামে পরিচিত। 

মূল বক্তব্য : চরমপন্থী আত্ম ন্দোলনের মূল বক্তব্য ছিল ভারতীয়দের Ner জন্য স্বায়ত্বশাসনের অধিকার লাভ। অর্থাৎ প্রশাসনকে ভারতীয়করণ করা। বালগঙ্গাধর তিলক আয়ারল্যান্ডের মত প্রশাসক এর দাবি জানালেও বিপিনচন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষের মতো ব্যক্তিরা পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে আন্দোলন পরিচালনার পক্ষপাতী ছিলেন। 

চরমপন্থী আন্দোলনে ধর্মীয় প্রতীকের ব্যবহার: চরমপন্থীরা আন্দোলনের নানা ধর্মীয় প্রতীক ও ব্যবহার করতেন। এক্ষেত্রে বালগঙ্গাধর তিলক শিবাজি ও গণপতি উৎসবের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ সময় ভারতমাতা চিত্র আঁকা ও তাঁর পূজার প্রচলন হয়। এর মাধ্যমেই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রচার চালানো হয়। তবে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস গভীরভাবে এই ধর্মীয় প্রতীক ব্যবহারের বিষয়টি মেনে নেয়নি।

8. বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পটভূমি কীভাবে তৈরি হয়েছিল? কেন বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদীদের অনেক উদ্যোগই ব্যর্থ হয়েছিল বলে তোমার মনে হয়?

উত্তর: বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ বা সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদ: ভারতীয় জাতীয়তাবাদের সর্বাপেক্ষা উগ্র রূপ হল সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদ। কোনো স্বাধীন বা পরাধীন কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠী কোনো বিষয়ে সংগ্রামী হয়ে উঠলে, তাদের মানসিকতাকে বলা হয় সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদ, যা বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ নামেও পরিচিত। 

বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের পটভূমি:

(i) স্বদেশি আন্দোলনের ব্যর্থতা: স্বদেশি আন্দোলনে সর্বস্তরের মানুষকে সামিল করতে পারেনি। এই আন্দোলনের ব্যর্থতা বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্য-কলাপের ভিত্তিভূমি রচনা করেছিল।

(ii) সমকালীন সংবাদপত্রের প্রচার: সমকালীন নানা সংবাদপত্র যেমন- বন্দেমাতরম, যুগান্তর প্রভৃতি সংবাদপত্রে কংগ্রেসের নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধের তীব্র সমালোচনা করা হয়।

(iii) আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির প্রভাব: এসময় ঘটে যাওয়া আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি যেমন: ইটালির কাবেনিয়ারি দলের আত্মত্যাগ, ম্যাৎসিনি এবং রাশিয়ার নিহিলিস্টদের কার্যকলাপ এই বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্যপলাপের পটভূমি নির্মাণ করেছিল। 

ব্যর্থতার কারণ: বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের নানা কারণ ছিল।

(i) এসময় গড়ে ওঠা নানা সংগঠনগুলি সাংবিধানিক দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল ছিল। ফলে বিপ্লবীরা ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে পারেনি।

(ii) বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদীদের কার্যকলাপ সবক্ষেত্রে এক ছিল না, তাঁদের মধ্যে সংহতি ও সমন্বয়ের অভাব ছিল।

(iii) সর্বোপরি ঔপনিবেশিক সরকারের কঠোর দমননীতি এই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল।

9. ধরা যাক তুমি একজন চরমপন্থী নেতা। বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে তোমায় আন্দোলন সংগঠিত করতে হবে। জনগণের কাছে তোমার বক্তব্য তুলে ধরে একটি বক্তৃতার খসড়া তৈরি করো।

উত্তর: আমার শ্রদ্ধেয় সুধীজন ও বন্ধুবর্গ! এক বিশেষ উদ্দেশ্যে রায়পুরের এই বাজারে আমরা উপস্থিত হয়েছি। আপনারা জানেন, আমাদের শ্রদ্ধেয় কংগ্রেসি নেতৃবৃন্দ আবেদন-নিবেদন নীতিতে বিশ্বাসী। তাঁরা মনে করেন যে, সভ্য ব্রিটিশদের ভারতীয়দের প্রয়োজন ঠিকমতো বোঝাতে পারলে নিশ্চয়ই তাঁরা তার সমাধান | করবেন। আমরাও তাঁদের কথা বিশ্বাস করেছিলাম।

1885 থেকে আজ 1907 খ্রিস্টাব্দে পৌঁছে আমরা কী দেখলাম? সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্তির ভান্ডার একে বারে শূন্য। বছরে একবার তিনদিনের জন্য ভারতের কোনো অঞ্চলে মিলিত হয়ে খাওয়া দাওয়া করা আর সরকারকে কিছু সুপারিশ পাঠানোর মতো তামাশা ছাড়া জাতীয় কংগ্রেস সেই অর্থে আর কিছুই করেনি।

এজন্য আমার আবেদন, আসুন আমরা ব্রিটিশ বিরোধী গণ আন্দোলন গড়ে তুলি। সম্মিলিত ভাবে সরকারের কাছে দাবি জানাই, সরকারকে বাধ্য করি আমাদের দাবি মানতে। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে বিক্ষোভ আন্দোলনে গড়ে তুলি সরকারী কাজকর্মকে অচল করে তুলি। আমাদের দাবি না মেটা পর্যন্ত আমরা থামবো না। সমস্বরে বলুন-বন্দে মাতরম, ভারত মাতার জয় হোক।

10. সভাসমিতির যুগ বলতে কী বোঝো? জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত সভাসমিতিগুলির বিবরণ দাও।

উত্তর: সংজ্ঞা: 1836 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1885 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গভাষা প্রকাশিকা থেকে শুরু করে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত সময়কালে এদেশে বহু রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এজন্য এই সময়কালকে ঐতিহাসিক অনিল শীল সভাসমিতির যুগ বলে অভিহিত করেছেন।

বিভিন্ন সভাসমিতি : ভারতে গড়ে ওঠা সভাসমিতিগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল-

(i) বঙ্গ ভাষা প্রকাশিকা সভা: দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর ও কালীনাথ রায়চৌধুরীর উদ্যোগে 1836 খ্রিস্টাব্দের ৪ই ডিসেম্বর বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

উদ্দেশ্য: বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভার উদ্দেশ্য হল-(i) নিষ্কর জমির ওপর আরোপিত করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকরা। (ii) ঔপনিবেশিক শাসনের ভালো ও খারাপ দিক নিয়ে আলোচনা করা।

গুরুত্ব : এটি ছিল ভারতের প্রথম জাতীয়তাবাদী সভা।

(ii) জমিদার সভা : 1838 খ্রিস্টাব্দের 12 নভেম্বর জমিদার সভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠাতা : দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্ন কুমার ঠাকুর ও রাজা রাধাকান্ত দেব জমিদার সভা প্রতিষ্ঠা করেন।

উদ্দেশ্য: জমিদার সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল- (i) জমিদারদের স্বার্থ রক্ষা করা এবং (ii) দেশবাসীর মঙ্গল সাধন করা।

গুরুত্ব : এটি ছিল ভারতের প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন।

(iii) ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি: 1839 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠাতা: মিশনারি অ্যাডাম এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা।

উদ্দেশ্য: ভারতীয়দের প্রকৃত অবস্থা ব্রিটিশ জনগণকে জানানো ছিল এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য।

(iv) বেঙ্গল-ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি: 1843 খ্রিস্টাব্দে ভারতে বেঙ্গল-ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠাতা : ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক নেতা জর্জ টমসন এবং ভারতে প্যারিচাঁদ মিত্র এই সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

উদ্দেশ্য: সভার উদ্দেশ্য ছিল- (i) ভারতবাসীর জন্য ইংল্যান্ড থেকে বিভিন্ন সুযোগসুবিধা আদায় করা। (ii) ভারতবাসীর কল্যাণ সাধনে সচেষ্ট হওয়া।

(v) ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন: 1851 খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে।

প্রতিষ্ঠাতা : জমিদার সভা ও বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি মিলিত হয়ে এই সমিতি গড়ে ওঠে। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রাজা রাধাকান্তদেব ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা।

উদ্দেশ্য: সমিতির উদ্দেশ্য ছিল-(ⅰ) ভারতের সম্পদ রক্ষা করা এবং (ii) সনদ আইনে ভারতীয়দের জন্য নানাবিধ সুযোগ সুবিধা আদায় করা।

(vi) ইন্ডিয়ান লিগ : 1875 খ্রিস্টাব্দে ইন্ডিয়ান লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠাতা : শিশির কুমার ঘোষ ও হেমন্ত কুমার ঘোষ এই | সভা প্রতিষ্ঠা করেন।

উদ্দেশ্য: নাগরিকদের ভোটে পৌরসভা সদস্যদের নির্বাচন এবং কারিগরি শিক্ষা প্রসারের দাবি জানিয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।

(vii) ভারতসভা: 1876 খ্রিস্টাব্দের 26শে জুলাই ভারতসভা প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠাতা: সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর উদ্যোগে ভারতসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। আনন্দমোহন বসু ও শিবনাথ শাস্ত্রী ছিলেন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

উদ্দেশ্য: ভারতসভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল-(i) আই সি এস পরীক্ষায় অংশগ্রহণেচ্ছু ভারতীয়দের বয়স কমানোর প্রতিবাদ করা। (ii) অস্ত্র আইন, দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করা, এবং (iii) ইলবার্ট বিলের সমর্থনে ভারতব্যাপী প্রচার ও জনমত তৈরি করা।

মূল্যায়ন: ভারতে প্রতিষ্ঠিত সভা সমিতিগুলি প্রথম দিকে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। তবে পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠানগুলি ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে ওঠে এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এর সূচনা করে।

11. ইলবার্ট বিল বিরোধী আন্দোলন বলতে কী বোঝো? এর গুরুত্ব কী ছিল? (বেথুন কলেজিয়েট স্কুল) 

অথবা, টীকা লেখো: ইলবার্ট বিল বিতর্ক। (বেহালা হাইস্কুল) 

উত্তর: ভূমিকা: গভর্নর জেনারেল লর্ড রিপনের শাসনকাল ছিল যথেষ্ট অশান্ত তাঁর আমলে প্রথম আলোড়ন সৃষ্টি হয় ইলবার্ট বিলকে কেন্দ্র করে।

মূলবক্তব্য: লর্ড রিপনের আইন সচিব স্যার কোটনি ইলবার্ট 1883 খ্রিস্টাদে একটি বিল এর খসড়া প্রকাশ করেন। খসড়ার মূল বক্তব্য ছিল এখন থেকে ভারতীয় দায়রা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেটগণ ইউরোপীয়দের বিচার করার অধিকার লাভ করবে।

উদ্দেশ্য: ইলবার্ট বিলের উদ্দেশ্য ছিল-

(i) ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় বৈষম্যের অবসান ঘটানো।

(ii) ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের একই আইনে বিচার করা। 

(iii) ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয়দের সমতুল্য মর্যাদা দেওয়া।

(iv) ভারতীয় বিচারপতি কর্তৃক শ্বেতাঙ্গ অপরাধীদের বিচার করার অধিকার দান করা।

বির্তকের সূচনা: ইলবার্ট বিল প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিতর্কের সূচনা হয়।

ইউরোপীয়দের বিরোধিতা: ইলবার্ট বিলের বিরোধিতার সূচনা করেন কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার ব্রানসন। তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন। বিরোধিতা করার কারণগুলি হল-

(I) ইলবার্ট বিল অনুযায়ী ভারতীয়দের ইউরোপীয়দের সমতুল্য বলে ঘোষণা করা নিজেদের মর্যাদা হানি বলে তারা মনে করেছিল। 

(II) উভয় সম্প্রদায়ের একই আইনে বিচার করার প্রস্তাব তাদের কাছে অপমানকর ছিল।

(iii) এই বিল শ্বেতাঙ্গদের জাতিগত অহমিকায় আঘাত করেছিল।

বিলের স্বপক্ষে আন্দোলন: ভারত সভার নেতৃত্বে ভারতীয়রা ইলবার্ট বিলের স্বপক্ষে আন্দোলন শুরু করে। তবে সেই অর্থে ভারতীয়রা ঐক্যবদ্ধভাবে বিলের স্বপক্ষে আন্দোলন পরিচালনা করতে পারেনি।

পরিণতি: ইউরোপীয়দের প্রবল চাপের কাছে নতিস্বীকার করে শেষ পর্যন্ত নতুন আকারে বিলটি পেশ করা হলে ভারতীর বিচারপতিদের অধিকার ও মর্যাদা বহুলাংশে হ্রাস করা হয়।

গুরুত্ব : ইলবার্ট বিল থেকে ভারতীয়রা যথেষ্ট শিক্ষালাভ করেছিল। যেমন-

(i) ইংরেজ শাসনের বৈষম্যমূলক নীতি সম্পর্কে তারা উপলব্ধি করে।

(ii) সংঘবদ্ধ গণআন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা তারা উপলব্ধি করে।

(iii) ইংরেজ শাসনের প্রয়োজনীয়তার যে মোহ তাদের মধ্যে। ছিল, তার অবসানের সূচনা হয়।

মূল্যায়ন: আপাতদৃষ্টিতে ইলবার্ট বিল এর মূল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হলেও এই বিলের পরিণতি ভারতে জাতীয়তাবাদের সূচনা করে। মাত্র দুবছরের মধ্যে সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান রূপে জাতীয় কংগ্রেস এর উত্থান ঘটে।

12. ভারত সভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল? ভারত সভার গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তর: ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী যেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, ভারতসভা তাদের মধ্যে অন্যতম।

উদ্দেশ্য: ভারতসভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি হল-

(i) ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী জনমত গঠন করা।

(ii) হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য আনয়ন করা।

(iii) আন্দোলনে জনগণকে সামিল করা।

(iv) সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন জাতি ও মতাবলম্বী গোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করা।

আন্দোলনে নেতৃত্ব দান: ভারতসভা যে সকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেগুলি হল-

(i) ইংল্যান্ডে ও ভারতে একই সঙ্গে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করা।

(ii) পরীক্ষার্থীদের বয়স 19 থেকে বৃদ্ধি করে 23 বছর করা। 

(iii) অস্ত্র আইনের বিরোধিতা করা।

(iv) দেশীয় ভাষায় প্রকাশিয় সংবাদপত্র আইনের বিরোধিতা করা। 

(v) ইলবার্ট বিলের স্বপক্ষে প্রচার করা।

মূল্যায়ন : ভারতসভার নেতৃত্বেই 1883 খ্রিস্টাব্দে জাতীয় | সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ভারত সভা সদলবলে জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করার পরই প্রকৃত অর্থে কংগ্রেস সর্বভারতীয় রূপ লাভ করেছিল।

13. চরমপন্থী রাজনীতির উত্থানের মূল কারণগুলি কী ছিল?

উত্তর: ভূমিকা : 1885 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরবর্তী দুই দশক কংগ্রেস এর নেতৃবৃন্দ ব্রিটিশ সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে আবেদন-নিবেদন নীতিতে আস্থাশীল ছিল। কিন্তু 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের সময় থেকে কংগ্রেসের একটি গোষ্ঠী পূর্ণ স্বরাজের দাবিতে আন্দোলন পরিচালনার পক্ষপাতী ছিল। ফলে কংগ্রেসে দেখা দেয় চরমপন্থী মতাদর্শ।

উত্থানের কারণ: চরমপন্থী রাজনীতির উত্থানের কারণগুলি হল-

(i) নরমপন্থীদের সীমাবদ্ধতা: কংগ্রেস এর প্রথম দিকের নেতৃবৃন্দ আবেদন-নিবেদন নীতির মাধ্যমে দেশবাসীর জন্য কোনরূপ সুযোগ-সুবিধা আদায় করতে না পারায়, অপেক্ষাকৃত তরুণ সদস্যরা তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

(ii) মনীষীদের অবদানঃ চরমপন্থী আদর্শের সূচনা হয়েছিল বেশ-কয়েক জন মনীষীর কণ্ঠ নিঃসৃত বাণী দ্বারা। স্বামী বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দয়ানন্দ সরস্বতী প্রমুখ ব্যক্তিগণ তাদের মতবাদ দ্বারা চরমপন্থী মতবাদের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। 

(ii) ঔপনিবেশিক অর্থনীতি: ব্রিটিশ সরকারের অর্থনৈতিক শোষণ নীতি জাতীয় কংগ্রেস এর নব্য সদস্যদের চরমপন্থী করে তোলে। দাদাভাই নৌরজি ও রমেশচন্দ্র দত্তের গ্রন্থদ্বয় যথাক্রমে Poverty and Un British rule in India এবং Economic History of India গ্রন্থে ব্রিটিশ শোষণের ভয়াবহ রূপ তুলে ধরা হয়েছিল।

(iv) বঙ্গভঙ্গের প্রতিক্রিয়া: লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কংগ্রেস এর একটি গোষ্ঠী ব্রিটিশ বিরোধী গণ আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু নেতৃবৃন্দ এই নীতি গ্রহণ না করায় কংগ্রেস এর অভ্যন্তরে ক্ষোভ বৃদ্ধি পেতে থাকে।

(v) আন্তর্জাতিক ঘটনাবলি: জাপানের হাতে রাশিয়ার পরাজয়, আবিসিনিয়া থেকে ইতালির পিছুহটা তুরস্কের স্বাধীনতা আন্দোলন, আয়ারল্যান্ডের সিনফিন আন্দোলন ভারতীয়দের মনে যে আশার আলো জ্বেলেছিল, চরমপন্থার উত্থানে তা সাহায্য করেছিল।

গোষ্ঠীদ্বন্দু : কংগ্রেস-এর গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব চরমপন্থী মতাদর্শের উত্থানের একটি কারণ ছিল বলে অনেকে মনে করেন। লালা লাজপত রাই, বিপিনচন্দ্র পাল, বালগঙ্গাধর তিলক, চিদাম্বরম পিল্লাই, অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখেরা প্রতিপক্ষ গোষ্ঠীকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য চরমপন্থাকে বেছে নিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

মূল্যায়ন: চরমপন্থীদের সঙ্গে নরমপন্থীদের বিরোধ বাধে সুরাট কংগ্রেসে। 1907 খ্রিস্টাব্দের এই অধিবেশনে নরমপন্থী-চরমপন্থী বিভাজন স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

14. কংগ্রেস এর সুরাট অধিবেশনের গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তর: ভূমিকা: প্রতিষ্ঠার 22 বছর পর 1907 খ্রিস্টাব্দে আদর্শগত কারণে কংগ্রেস এর প্রথম ভাঙন সম্পূর্ণ হয়।

পটভূমিকা: সুরাট ভাঙনের পটভূমিকা সৃষ্টি হয়েছিল 1905 খ্রিস্টাব্দে বারাণসী অধিবেশনে। এই অধিবেশনে চরমপন্থীদের মতামতকে অস্বীকার করে বয়কট ও স্বদেশি আন্দোলনকে বাংলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

1906 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা অধিবেশনে আশাকরা হয়েছিল যে কংগ্রেস সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব নেবে। কিন্তু সভাপতি হিসাবে দাদাভাই নৌরজি সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

সুরাট অধিবেশন: সুরাট অধিবেশনে চরমপন্থীরা কংগ্রেসের সভাপতি পদ চেয়েছিলেন। কিন্তু নরমপন্থীরা রাসবিহারী ঘোষকে সভাপতি করতে চাইলে উভয়পক্ষের মধ্যে মারপিট চেয়ার, টেবিল ভাঙা জুতো ছোঁড়াছুড়ি চলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘু চরমপন্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

গুরুত্ব: সুরাট অধিবেশনে কংগ্রেস-এর ভাঙনের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল যথেষ্ট ব্যাপক। যেমন-

ভাবমূর্তি: সুরাট ভাঙনের মধ্যে দিয়ে জাতীয় কংগ্রেস এর ভাবমূর্তি যথেষ্ট নষ্ট হয়েছিল।

সরকারের সুবিধা: চরমপন্থীরা দল থেকে বিতাড়িত হওয়ায় ব্রিটিশ সরকার স্বস্তিলাভ করেছিল। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। চরমপন্থীদের বিচ্ছিন্নতা দল থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর চরমপন্থীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তারা নিজনিজ রাজ্যে আন্দোলনে মনোনিবেশ করে।

নরমপন্থীদের কর্তৃত্ব: রাসবিহারী ঘোষকে সভাপতি নির্বাচিত করে নরমপন্থীরা দলে নিজেদের কর্তৃত্ব পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।

বিপ্লববাদের উত্থান: সুরাট কংগ্রেসে চরমপন্থীদের বিতাড়ন যুব সমাজকে কংগ্রেস সম্পর্কে আশাহত করে। তারা মুক্তির পথ হিসাবে বিপ্লববাদের আদর্শের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে।

মূল্যায়ন: পরবর্তী দশ বছর জাতীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব হীনতায় ভুগতে থাকে। চরমপন্থীরা আঞ্চলিক ভাবে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত মহাত্মা গান্ধির হস্তক্ষেপে 1916 খ্রিস্টাব্দে চরমপন্থীদের কংগ্রেসে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

15. বঙ্গভঙ্গের পিছন সরকার কী কারণ দেখিয়েছিল? তাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল? বঙ্গভঙ্গের ফলাফল সম্পর্কে কী জানা যায়? (উচ্চ বালিকা বিদ্যাপীঠ, বড়িশা)

উত্তর: ভূমিকা: চরম স্বৈরাচারী শাসক লর্ড কার্জনের কুখ্যাত সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা। 1905 খ্রিস্টাব্দের 16 অক্টোবর এই পরিকল্পনা কার্যকর করা হয়।

পরিকল্পনা: বঙ্গভঙ্গ পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাকে দুটি প্রদেশে ভাগ করা হয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, আসাম, পার্বত্য ত্রিপুরা, রাজশাহী, মালদহ ও দার্জিলিং নিয়ে তৈরি হয় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ। এর রাজধানী হয় ঢাকা।

অপর দিকে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যাকে নিয়ে তৈরি হয় বাংলা প্রদেশ। কলকাতা হয় এর রাজধানী।

সরকারি যুক্তি: বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে বলা হয় যে,

(i) একজন গভর্নর এর হাতে এতো বড় প্রদেশের শাসন ভার ছেড়ে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।

(ii) বঙ্গভঙ্গ হলে আসাম ও পূর্ববঙ্গের উন্নতি করা সম্ভব হবে। 

(iii) চট্টগ্রাম বন্দর গুরুত্ব লাভ করবে।

(iv) সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের মীমাংসা করা সহজতর হবে।

প্রকৃত উদ্দেশ্য: বঙ্গভঙ্গের পিছনে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল-

(1) বাংলায় গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দুর্বল করে দেওয়া।

(II) উভয় প্রদেশেই বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়কে সংখ্যালঘু শ্রেণিতে পরিণত করা।

(III) হিন্দু-মুসলিম ঐক্যকে বিনষ্ট করা।

ফলাফল: বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে বাঙালি সমাজ ত্রিমুখী আন্দোলন পরিচালনা করে। এগুলি হল-

বয়কট আন্দোলন: কৃষ্ণ কুমার মিত্র তাঁর ‘সঞ্জীবনী’ পত্রিকায় বয়কট আন্দোলনের প্রস্তাব দিলে নেতৃবৃন্দ তা অনুমোদন করে। ঠিক হয় যে,

(1) সমস্ত রকম বিলাতি পণ্য বর্জন করা হবে।

(ii) বিলাতি দ্রব্যের দোকানগুলির সামনে বিক্ষোভ দেখানো হবে।

(iii) বিলাতি পণ্য সম্ভার বিশেষ করে কাপড় সংগ্রহ করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।

(iv) বিদেশি শাসকের কর্মচারীদেরও সামাজিক ভাবে বয়কট করা হবে।

স্বদেশি আন্দোলন: বিলাতি পণ্য বয়কট করার পাশাপাশি স্বদেশি দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করা হবে। এর ফলে শুরু হয় স্বদেশি জাগরণ। যেমন-

(i) প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গল কেমিক্যাল।

(ii) নীল রতন সরকার জাতীয় সাবান কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

(iii) জামসেদজি টাটা তৈরি করেন লৌহ-ইস্পাত কারখানা।

জাতীয় শিক্ষার ব্যবস্থা: সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে ওঠে। এই শিক্ষা পরিষদের অধীনে বেশ কিছু কারিগরি কলেজ ও বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। শুধুমাত্র 1908 খ্রিস্টাব্দেই জাতীয় শিক্ষা পরিষদ 1,25,000 টাকা শিক্ষা খাতে ব্যয় করেছিল।

মূল্যায়ন: ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী মানসিকতা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। ব্রিটিশ সরকার আন্দোলনের চাপে 1911 খ্রিস্টাব্ে বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্তকে বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল।

16. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন কেন প্রকৃত গণআন্দোলন হয়ে উঠতে পারেনি? (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন)

উত্তর: ভূমিকা: 1905 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1911 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারকে এতই বিচলিত করেছিল যে 1911 খ্রিস্টাব্দে সরকার বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেয়। তথাপি এই আন্দোলন গণআন্দোলন হয়ে উঠতে পারেনি।

কারণ: এর কারণগুলি হল- 

(i) উপযুক্ত কর্মসূচির অভাব: এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সামিল করার মতো কোন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। 

(ii) শহর কেন্দ্রিকতা: আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান ও অংশ গ্রহণ সবটাই ছিল শহর কেন্দ্রিক। শিক্ষিত শ্রেণি দ্বারা এই আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল বলে গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ আন্দোলনের অর্থ বুঝতে অপারগ হয়েছিল।

শ্রমিক ও কৃষক শ্রেমির যোগদানে অনীহা: দরিদ্র ও শোষিত বাঙালি কৃষক ও কারিগর শ্রেণির আর্থিক দুর্দশা হেতু আন্দোলনে অংশগ্রহণের কোন ইচ্ছা তাদের ছিল না। মাঝে মাঝে শ্রমিক ধর্মঘটের

ডাক দেওয়া হলেও হিন্দুস্তানি ও বাগিচা শ্রমিকদের অন্তর্ভুক্ত করা হতো না বলেও শ্রমিক শ্রেণি এই আন্দোলনে অংশ নেয়নি।

ধর্মকেন্দ্রিকতা: বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে ধর্মীয় প্রতীক ও দেবদেবীর আরাধনা করার কথা বলা হলে মুসলমান সম্প্রদায় আন্দোলন সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে ওঠে।

কর্মসূচির ত্রুটি: স্বদেশি আন্দোলনের কর্মসূচিও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। যেমন-(1) স্বদেশি জিনিস ব্যবহার করার জন্য সাধারণ মানুষের উপর জুলুম করা হতো। (ii) বিদেশি দ্রব্যের তুলনায় স্বদেশি জিনিস ছিল যথেষ্ট দামি। গুণমানেও যথেষ্ট খারাপ। (iii) প্রয়োজনের তুলনায় জোগান ছিল যথেষ্ট কম।

মূল্যায়ন : বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন বাংলায় দ্বি-জাতি তত্ত্বের অবতারণা করেছিল বলে ঐতিহাসিকদের একাংশ মনে করেন। আন্দোলন গণ আন্দোলনে পরিণত না হওয়ার জন্য এটিও যথেষ্ট দায়ী ছিল।

17. বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন প্রসারে অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলের ভূমিকা কী ছিল? (রায়গঞ্জ হাইস্কুল)

উত্তর: ভূমিকা : বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন প্রসারে অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

অনুশীলন: বাংলার প্রথম গুপ্ত সমিতি হল অনুশীলন সমিতি। প্রতিষ্ঠা: 1902 খ্রিস্টাব্দের 24 মার্চ 12নং মদন মিত্র লেনে অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা : প্রমথনাথ মিত্রের পৃষ্ঠপোষকতায়, সতীশচন্দ্র বসু অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন।

নেতৃত্বদান: সতীশচন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, বারীন্দ্রনাথ ঘোষ, যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অনুশীলন সমিতির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

আদর্শ: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুশীলন তত্ত্বের আদর্শে বিশ্বাসী ছিল অনুশীলন সমিতি।

উদ্দেশ্য: অনুশীলন সমিতির উদ্দেশ্য ছিল- (i) শরীরচর্চা ও লাঠিখেলার মাধ্যমে যুবসমাজকে বলীয়ান করে তোলা।

(ii) ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে অনুশীলন সমিতির শাখা সংগঠন সারা বাংলায় ছড়িয়ে দেওয়া।

(iii) গোপনে বিপ্লবী কার্যকলাপ পরিচালনা করা। গুপ্ত হত্যার মাধ্যমে সরকারি স্তরে আতঙ্ক তেরি করা।

কার্যকলাপ: অনুশীলন সমিতির সদস্যরা-

(i) রাজনৈতিক ডাকাতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করত।

(ii) বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে যেমন-ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রংপুর, ফরিদপুর অঞ্চলে শাখা সংগঠন গড়ে তুলেছিল।

(iii) কলকাতার মানিকতলা অঞ্চলে নিজস্ব বোমা তৈরির কারখানা স্থাপন করেছিল।

যুগান্তর দল: অনুশীলন এ সমিতির কার্য পদ্ধতি নিয়ে মতবিরোধের ফলে অরবিন্দ । ঘোষ, বারীন্দ্র কুমার ঘোষ প্রভৃতিরা  যুগান্তর নামে একটি নতুন দল ন প্রতিষ্ঠা করেন।

প্রতিষ্ঠা: 1906 খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর দল প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রচার: যুগান্তর পত্রিকা প্রকাশ করে এই পত্রিকার মাধ্যমে তারা  নিজেদের বৈপ্লবিক আদর্শ প্রচার করতো।

কার্যকলাপ: যুগান্তর দল এর কার্যকলাপ এর মধ্যে – উল্লেখযোগ্য ছিল- (i) বিপ্লবী আদর্শ প্রচার করা। (ii) অস্ত্র সংগ্রহ ও বোমা তৈরির পরীক্ষা নিরীক্ষা করা। (iii) সশস্ত্র আন্দোলন পরিচালনা করা। (iv) 1908 খ্রিস্টাব্দে যুগান্তর দলের দুই সদস্য ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকি কিংসফোর্ডকে হত্যা করতে গিয়ে মিসেস কেনেডিকে হত্যা করে। বিচারে ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়।

নিষিদ্ধ ঘোষণা: বৈপ্লবিক কার্যকলাপে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ব্রিটিশ সরকার অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

মূল্যায়ন: নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও যুগান্তর দল গোপনে তার কার্যকলাপ চালিয়ে গিয়েছিল। বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন গড়ে ওঠার পিছনে এই দুটি দলের যথেষ্ট অবদান ছিল।

18. টাকা লেখো: দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন।

উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশ সরকার ভারতের জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন ছিল তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

প্রণয়ন: 1878 খ্রিস্টাব্দের 14 মার্চ দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন পাশ হয়। 

প্রণয়নকারী: চরম প্রতিক্রিয়াশীল শাসক গভর্নর জেনারেল লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন প্রণয়ন করেন।

কারণ: ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট বা দেশীয় মুদ্রণ আইন বা দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন প্রবর্তন-এর কারণ হল-

(i) সংবাদপত্রগুলিতে ইংরেজদের শোষণ ও নিপীড়নের কথা তুলে ধরা হতো।

(ii) ভারতবাসীর আর্থিক দুর্দশার জন্য ব্রিটিশ সরকারের শাসন নীতিকে দায়ী করা হত।

(iii) ভারতের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে মহারানি ভিক্টোরিয়াকে খেতাব দানের সমালোচনা করেছিল পত্রিকাগুলি। 

(iv) দুর্ভিক্ষ তহবিলের অর্থ আফগান যুদ্ধে খরচ করার সংবাদ প্রকাশিত হলে জন মানসে সরকার বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি পায়। 

মূল বক্তব্য: দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইনে বলা হয়েছিল-

(i) দেশীয় সংবাদপত্রগুলিতে সরকারি কাজের সমালোচনা করা যাবে না।

(ii) সরকারি কাজের সমালোচনা করা হলে সেই পত্রিকার ছাপাখানা বাজেয়াপ্ত করা হবে।

(iii) পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশককে চরম শাস্তি প্রদান করা হবে।

ফলাফল: এই আইন এর ফলে-

(i) সোমপ্রকাশ, সহচর প্রভৃতি পত্রিকার প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।

(ii) আইনের হাত থেকে বাঁচার জন্য অমৃতবাজার পত্রিকা রাতারাতি ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়।

মূল্যায়ন : ভারত সভার নেতৃত্বে দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরবর্তী গভর্নর জেনারেল লর্ড রিপন 1881 খ্রিস্টাব্দে আইনটি প্রত্যাহার করে নেন।

19. মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের মূল্যায়ন করো।

উত্তর: সূচনা: ভারত সচিব জন মর্লে ও গভর্নর জেনারেল লর্ড মিন্টোর মিলিত উদ্যোগে 1909 খ্রিস্টাব্দে ভারতে যে শাসনতান্ত্রিক সংস্কার প্রণয়ন করা হয়েছিল, তা মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন নামে পরিচিত।

পটভূমিকা: সমকালীন কিছু ঘটনা মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন প্রণয়নের পটভূমি তৈরি করেছিল। যেমন-

(i) 1907 খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস এর ভাঙনকে কাজে লাগিয়ে চরমপন্থীদের দমন করা ও নরমপন্থীদের কিছু দাবি মেনে নিয়ে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা।

(ii) মুসলিম লিগের মতো রাজনৈতিক দলকে উৎসাহ দিয়ে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য বিনষ্ট করা।

(iii) মুসলিম লিগ নেতা আগা খানকে প্রদত্ত লর্ড মিন্টোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা।

(iv) ভারতীয়দের স্বায়ত্তশাসনের দাবির কিছুটা মেনে নেওয়া। 

আইনের মূল বক্তব্য : মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন অনুযায়ী-

(i) বড়োলাটের কার্যনির্বাহী পরিষদে একজন ভারতীয়কে নিয়োগ করার কথা বলা হয়।

(ii) মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের কার্য নির্বাহক পরিষদের সংখ্যা দুই থেকে বৃদ্ধি করে চার করা হয়।

(iii) কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা 16 থেকে বৃদ্ধি করে 60 করা হয়। এদের মধ্যে সরকারি কর্মচারী 5 জন, জমিদারদের মধ্য থেকে 27 জন বড়োলাট কর্তৃক মনোনীত হবেন। বাকিরা বিভিন্ন প্রাদেশিক আইন সভা দ্বারা নির্বাচিত হবেন।

(iv) প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা 30 থেকে বৃদ্ধি করে 50 করা হয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশ হতেন ছোটোলাট কর্তৃক মনোনীত।

(v) এতে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।

মূল্যায়ন : মর্লে-মিন্টো আইন দ্বারা ভারতীয়রা সরাসরি সরকারের আইন রচনার কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। তবে এই আইনে প্রকৃত ক্ষমতা বড়োলাটের হাতেই রাখা হয়েছিল। প্রাদেশিক আইনসভার ক্ষেত্রে ছোটোলাট চরম ক্ষমতার অধিকারী ছিল।

সর্বোপরি এই প্রথম মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দ্বি-জাতি তত্ত্বের অবতারণা করা হয়।

5. Fill In The Blanks

1. জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম সভাপতি ছিলেন   |

উত্তর: উমেশেচন্দ্র ব্যানার্জী 

2. পুলিন বিহারী দাস গড়ে তোলেন। 

উত্তর : ঢাকা অনুশীলন সমিতি 

3. সুরাট অধিবেশন হয় খ্রিস্টাব্দে। 

উত্তর: 1907

4. পি.এন. ঠাকুর ছদ্মনাম নেন   |

উত্তর: রাসবিহারী বসু

 5.   ইন্ডিয়া লিগ প্রতিষ্ঠা করেন।

উত্তর: রামতনু লাহিড়ি 

6.   খ্রিস্টাব্দে চালু হয় বঙ্গলক্ষ্মী কটন মিলস।

উত্তর: 1906

7. ভারতমাতার ছবি আঁকেন  ।

উত্তর: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

8. হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেন 

উত্তর: নবগোপাল মিত্র

9. হিউমের জীবনী রচনা করেন  ।

উত্তর: ওয়েডারবার্ন

6. True And False

1. কংগ্রেস এর প্রথম সভাপতি ছিলেন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।

উত্তর: ঠিক।

2. নরমপন্থীরা চরমপন্থীদের কার্যকলাপকে ‘তিনদিনের তামাশা’ বলতেন।

উত্তর: ভুল।

3. অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা ছিলেন অরবিন্দ ঘোষ।

উত্তর: ভুল।

4. ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্লচাকি কিংসফোর্ডকে মারতে গিয়েছিলেন।

উত্তর: ঠিক।

5. 1922 খ্রিস্টাব্দে ভারতের রাজধানী হয় দিল্লি।

উত্তর: ভুল।

6. জাতীয় কংগ্রেস এর প্রতিষ্ঠা লগ্নে বড়োলাট ছিলেন-লর্ড ডাফরিন।

উত্তর: ঠিক।

7. ভারত সভা প্রতিষ্ঠা করেন সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী।

উত্তর: ঠিক।

8. নরমপন্থীরা পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করেছিল।

উত্তর: ভুল।

9. বাঘাযতীন নামে পরিচিত ছিলেন যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

উত্তর: ঠিক।

10. মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন 1919 খ্রিস্টাব্দে পাশ হয়। 

উত্তর: ভুল।

11. লর্ড কার্জন প্রথম বঙ্গ বিভাগের পরিকল্পনা করেন। (হিন্দুস্কুল)

উত্তর: ঠিক।

12. অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হলেন অরবিন্দ ঘোষ।

উত্তর: ঠিক।

13. মহারাষ্ট্রে বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ এর জনক ছিলেন বাসুদেব বলবন্ত ফাদকে।

উত্তর: ঠিক।

14. ইলবার্ট বিলের উদ্দেশ্য ছিল ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের মধ্যেকার বৈষম্য দূর করা।

উত্তর: ঠিক।