WBBSE Class 8 History Chapter 5 ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ Solution | Bengali Medium

Class 8 Chapter 5 Solution

ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ

1. MCQs Question Answer

1. মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভবের একটি অন্যতম কারণ হল-

(a) জমিদারদের অত্যধিক রাজস্ব আদায়

(b) রেলপথের বিস্তার

(c) ঔপনিবেশিক শাসন

(d) পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার 

উত্তর: (d) পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার।

2. যার আন্দোলনের ফলে সতীদাহ প্রথা রদ হয়-

(a) রাজা রামমোহন রায়-এর

(b) বিদ্যাসাগর-এর

(c) ডিরোজিও-এর

(d) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর

উত্তর: (a) রাজা রামমোহন রায়-এর।

3. ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ হলেন-

(a) রাজা রামমোহন রায়

(b) স্বামী বিবেকানন্দ

(c) বিদ্যাসাগর

(d) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

উত্তর: (a) রাজা রামমোহন রায়।

4. বিধবা বিবাহ আন্দোলন শুরু করেছিলেন-

(a) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

(b) রাজা রামমোহন রায়

(c) কেশবচন্দ্র সেন

(d) রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক

উত্তর: (a) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

5. সতীদাহ প্রথা রদ হয়-

(a) 1829 খ্রিস্টাব্দে

(b) 1729 খ্রিস্টাব্দে

(c) 1830 খ্রিস্টাব্দে

(d) 1828 খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: (a) 1829 খ্রিস্টাব্দে।

6. বিধবা বিবাহ আইন প্রণীত হয়-

(a) 1843 খ্রিস্টাব্দে

(b) 1829 খ্রিস্টাব্দে

(c) 1856 খ্রিস্টাব্দে

(d) 1830 খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: (c) 1856 খ্রিস্টাব্দে।

7. আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন-

(a) রামমোহন রায়

(b) স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী

(c) রাজনারায়ণ বসু

(d) বিষুশাস্ত্রী পণ্ডিত

উত্তর: (a) রামমোহন রায়।

8. ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি লেখেন-

(a) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

(b) মহাকবি কালিদাস

(c) দীনবন্ধু মিত্র

(d) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

উত্তর: (c) দীনবন্ধু মিত্র।

9. জ্যোতিরাও ফুলে ছিলেন-

(a) রাজনীতিক

(b) লেখক

(c) সমাজ সংস্কারক

(d) ধর্মপ্রচারক

উত্তর: (c) সমাজ সংস্কারক।

10. আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন-

(a) স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী

(b) স্বামী সহজানন্দ

(c) স্বামী বিবেকানন্দ

(d) মহাদেব গোবিন্দ রানাডে

উত্তর: (a) স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী।

11. সৈয়দ আহমদ খান প্রতিষ্ঠিত কলেজটি হল-

(a) মহমেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ

(b) জামিয়া মিলিয়া কলেজ

(c) কলকাতা মাদ্রাসা

(d) লেডি আরউইন কলেজ

উত্তর: (a) মহমেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ।

12. প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন-

(a) আত্মারাম পান্ডুরং

(b) মহাদেব গোবিন্দ রানাডে

(c) স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী

(d) স্বামী সহজানন্দ

উত্তর: (a) আত্মারাম পান্ডুরং।

13. শিকাগো বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে অংশ নেন-

(a) স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী

(b) স্বামী সহজানন্দ

(c) স্বামী অঘোরানন্দ

(d) স্বামী বিবেকানন্দ

উত্তর: (d) স্বামী বিবেকানন্দ।

14. প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকাটি হল-

(a) দিগদর্শন

(b) বেঙ্গল গেজেট

(c) সমাচার দর্পণ

(d) হিন্দু প্যাট্রিয়ট

উত্তর: (c) সমাচার দর্পণ।

15. বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকা হল-

(a) দিগদর্শন

(b) সংবাদ প্রভাকর

(c) সমাচার দর্পণ

(d) বেঙ্গল গেজেট

উত্তর: (a) দিগদর্শণ।

16. উলগুলান সৃষ্টি করেছিল-

(a) সাঁওতালরা

(b) মুন্ডারা

(c) পাইকরা

(d) ভিলরা

উত্তর: (b) মুন্ডারা।

17. ‘হুল’ শব্দের অর্থ-

(a) মহাজন

(b) জমিদার

(c) বিদ্রোহ

(d) বহিরাগত

উত্তর: (c) বিদ্রোহ।

18. ‘দামিন-ই-কোহ’ কথার অর্থ হল-

(a) জঙ্গলের প্রান্তদেশ

(b) গ্রামের প্রান্তদেশ

(c) সাগরের প্রান্তদেশ

(d) পাহাড়ের প্রান্তদেশ

উত্তর: (d) পাহাড়ের প্রান্তদেশ।

19. 1857 খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন-

(a) লর্ড ক্যানিং

(b) লর্ড ডালহৌসি

(c) লর্ড ওয়েলেসলি

(d) লর্ড কর্নওয়ালিস

উত্তর: (a) লর্ড ক্যানিং।

20. ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন লোপ পেয়েছিল-

(a) 1865 খ্রিস্টাব্দে

(b) 1858 খ্রিস্টাব্দে

(c) 1947 খ্রিস্টাব্দে

(d) 1875 খ্রিস্টাব্দে

উত্তর: (b) 1858 খ্রিস্টাব্দে।

2. Very Short Question Answer

1. ভারতে প্রচলিত প্রথম ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা কোনটি?

উত্তর: হিকির গেজেট হল ভারতে প্রচলিত প্রথম ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা।

2. বাংলায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র কোন্টি?

উত্তর: বাংলায় প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র হল হিকির গেজেট।

3. বাংলা ভাষায় প্রথম মাসিক পত্রিকা কোনটি?

উত্তর: বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম মাসিক পত্রিকা হল ‘দিগদর্শন’।

4. সতীদাহ প্রথা কবে নিষিদ্ধ হয়?

উত্তর: 1829 খ্রিস্টাব্দে বড়োেলাট লর্ড বেন্টিঙ্ক সতীদাহপ্রথা নিষিদ্ধ করেন।

5. কন্যাশিশু সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রথা কোন ইংরেজ গভর্নর নিষিদ্ধ করেছিলেন?

উত্তর: কন্যাশিশু সাগরে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রথা নিষিদ্ধ করেন লর্ড ওয়েলেসলি।

6. কাকে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলা হয়?

উত্তর: রাজা রামমোহন রায়কে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলা হয়।

7. আত্মীয়সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: রাজা রামমোহন রায় আত্মীয়সভা প্রতিষ্ঠা করেন।

8. ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর: ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা হলেন রাজা রামমোহন রায়।

9. ব্রহ্মানন্দ উপাধি কে কাকে দিয়েছিলেন?

উত্তর: দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কেশবচন্দ্র সেনকে ব্রহ্মানন্দ উপাধি দিয়েছিলেন।

10. নববিধান ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর: নববিধান ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কেশবচন্দ্র সেন।

11. আর্য সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।

12. প্রার্থনা সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন আত্মারাম পান্ডুরঙ্গ ও মহাদেব গোবিন্দ রানাডে।

13. শুদ্ধি আন্দোলন কে শুরু করেন?

উত্তর: স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী শুদ্ধি আন্দোলন শুরু করেন।

14. হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর: নবগোপাল মিত্র হলেন হিন্দু মেলার প্রতিষ্ঠাতা।

15. সাবিত্রী বাঈ কে ছিলেন?

উত্তর: বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক। তিনি ছিলেন জ্যোতিরাও ফুলের স্ত্রী।

16. পন্ডিতা রমাবাঈ কে ছিলেন?

উত্তর: পশ্চিম ভারতের একজন মহিলা সমাজ সংস্কারক।

17. ইয়ং বেঙ্গল-এর প্রতিষ্ঠাতা কে?

উত্তর: ডিরোজিও ইয়ং বেঙ্গল-এর প্রতিষ্ঠাতা।

18. সত্যশোধক সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: জ্যোতিরাও ফুলে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।

19. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে কার নেতৃত্বে বিধবাবিবাহ আন্দোলন শুরু হয়?

উত্তর: বীরেশ লিঙ্গম পাণ্ডুলুর নেতৃত্বে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে বিধবাবিবাহ শুরু হয়।

20. কে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন?

উত্তর: লর্ড বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।

21. শিকাগো ধর্ম সম্মেলন কত খ্রি. হয়েছিল?

উত্তর: শিকাগো ধর্ম সম্মেলন ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল।

22. ‘দাক্ষিণাত্যের বিদ্যাসাগর’ নামে কে পরিচিত?

উত্তর: জ্যোতিরাও ফুলে ‘দাক্ষিণাত্যের বিদ্যাসাগর’ নামে পরিচিত।

23. কার আমলে বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়?

উত্তর: লর্ড ক্যানিং-এর আমলে বিধবা বিবাহ আইন পাশ হয়।

24. কাকে মুসলমান সমাজের রামমোহন বলা হয়?

উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমেদকে মুসলমান সমাজের রামমোহন বলা হয়।

25. ভারতের প্রথম কৃষক বিদ্রোহ কোনটি?

উত্তর: সন্নাসী বিদ্রোহ বা ফকির বিদ্রোহ ভারতের প্রথম কৃষক বিদ্রোহ।

26. সাঁওতাল বিদ্রোহের দুজন নেতার নাম লেখো।

উত্তর: সিধু ও কানহু হলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের দুজন নেতা। 

27. সাঁওতাল বিদ্রোহকে কোন্ পত্রিকা সমর্থন করে?

উত্তর: হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা সাঁওতাল বিদ্রোহকে সমর্থন করে।

28. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক কে?

উত্তর: হরিশচন্দ্র মুখার্জী ছিলেন হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক। 

29. ‘ফরাজি’ কথার অর্থ কী?

উত্তর: ‘ফরাজি’ কথার অর্থ ইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য।

30. ওয়াহাবি আন্দোলনের দুজন নেতার নাম লেখো।

উত্তর: হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ এবং তিতুমির ছিলেন ওয়াহাবি আন্দোলনের দু-জন নেতা।

31. ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা কে করেন?

উত্তর: হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ এবং উত্তর প্রদেশের রায় বেরিলির বাসিন্দা সৈয়দ আহমেদ ভারতে ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা করেন।

32. কোন্ কোন্ পত্রিকা নীলচাষিদের পক্ষে দাঁড়ায়?

উত্তর: হিন্দু প্যাট্রিয়ট ও সোমপ্রকাশ পত্রিকা নীলচাষিদের পক্ষ দাঁড়ায়। 

33. মোপলা বিদ্রোহ কোথায় হয়েছিল?

উত্তর: দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূল অঞ্চলে মোপলা বিদ্রোহ হয়েছিল।

34. ‘দামিন-ই-কোহ’ কথার অর্থ কী?

উত্তর: ‘দামিন-ই-কোহ’ কথার অর্থ পাহাড়ের প্রান্তদেশ।

35. সিপাহি বিদ্রোহের সূচনা কোথায় হয়?

উত্তর: বাংলাদেশের ব্যারাকপুরে সিপাহি বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল।

36. ‘উলগুলান’ কথার অর্থ কী?

উত্তর: ‘উলগুলান’ কথার অর্থ বিশৃঙ্খলা।

37. সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম শহিদ কে?

উত্তর: সিপাহি মঙ্গল পান্ডে ছিলেন সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম শহিদ।

38. লক্ষ্মীবাঈ কে ছিলেন?

উত্তর: ঝাঁসির রাজা দামোদর রাও-এর স্ত্রী ও সিপাহি বিদ্রোহের একজন নেত্রী ছিলেন লক্ষ্মীবাঈ।

39. নানাসাহেব কে ছিলেন?

উত্তর: নানাসাহেব ছিলেন পেশোয়া দ্বিতীয় বাজীরাও এর দত্তক পুত্র এবং সিপাহি বিদ্রোহের একজন নেতা।

40. তাঁতিয়া টোপী কী জন্য বিখ্যাত?

উত্তর: তাঁতিয়া টোপী ছিলেন নানা সাহেব এর সেনাপতি। তিনি সিপাহি বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

41. মহাবিদ্রোহের সময় ইংল্যান্ডের রানি কে ছিলেন?

উত্তর: মহাবিদ্রোহের সময় ইংল্যান্ডের রানি ছিলেন ভিক্টোরিয়া।

42. মহাবিদ্রোহের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল কে ছিলেন?

উত্তর: মহাবিদ্রোহের সময় ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড ক্যানিং।

43. ভারতের প্রথম ভাইসরয় কে ছিলেন?

উত্তর: লর্ড ক্যানিং ভারতের প্রথম ভাইসরয়।

44. ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান কবে হয়?

উত্তর: 1858 খ্রিস্টাব্দে ভারতে কোম্পানির শাসনের অবসান হয়।

45. শেষ মুঘলসম্রাট কে ছিলেন?

উত্তর: দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ ছিলেন শেষ মুঘল সম্রাট।

46. দু-তিনটি বাক্যে উত্তর দাও:

47. কে, কবে কন্যাসন্তান বিসর্জন প্রথা বন্ধ করেন?

উত্তর: লর্ড ওয়েলেসলি কন্যাসন্তান বিসর্জন প্রথা বন্ধ করেন। 1803 খ্রিস্টাব্দে কন্যাসন্তান বিসর্জন প্রথা বন্ধ করা হয়।

48. কে কবে আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: রাজা রামমোহন রায় আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন 1815 খ্রিস্টাব্দে।

49. কে, কবে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন? 

উত্তর: রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

50. কে, কবে প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন? 

উত্তর: আত্মারাম পান্ডুরং প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। 1867 খ্রিস্টাব্দে প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

51. প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠার দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

উত্তর: প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল-(i) অস্পৃশ্যতা বর্জন করা, (ii) পণপ্রথার অবসান ঘটানো।

 52. কে, কবে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন?

উত্তর: লর্ড বেন্টিঙ্ক সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন। 1829 খ্রিস্টাব্দে আইন দ্বারা সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করা হয়।

53. কার উদ্যোগে কে বিধবা বিবাহ আইন চালু করেন? 

উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে লর্ড ক্যানিং বিধবা বিবাহ আইন চালু করেন।

 54. তিতুমিরের প্রকৃত নাম কী? তাঁর নির্মিত দুর্গটির নাম কী?

উত্তর: তিতুমির-এর প্রকৃত নাম হল মির নিশার আলি। তাঁর নির্মিত দুর্গটি বাঁশের কেল্লা নামে পরিচিত ছিল।

2. Short Question Answer

1. আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: 1815 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে একেশ্বরবাদ প্রচার ও সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলা।

2. নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কোন কোন প্রথার বিরোধিতা করেছিল?

উত্তর: নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী ভারতে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার যেমন-সতীদাহ প্রথা, কৌলীন্য প্রথা, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ প্রথার পাশাপাশি মূর্তিপূজার বিরোধিতা করেছিল।

3. স্যার সৈয়দ আহমদের সংস্কারগুলির প্রধান উদ্দেশ্য কি ছিল?

উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমদের সংস্কারগুলির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল- (i) মুসলিম সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারগুলি দূর করা। (ii) মুসলিম নারীদের সার্বিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো। (iii) তালাক প্রথা, বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহ, পণপ্রথার অবসান ঘটানো, এবং (iv) পশ্চিমি শিক্ষার আলোকে একটি যুক্তিনিষ্ঠ আধুনিক মুসলিম সমাজ গড়ে তোলা।

4. তিতুমির কাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন?

উত্তর: ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতারূপে তিতুমির এর বিদ্রোহের লক্ষ ছিল-নীলকর সাহেব, হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের অত্যাচারী স্থানীয় জমিদার, মহাজন এবং খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক তথা পাদরি শ্রেণি।

 5. কে, কী উদ্দেশ্যে হিন্দুমেলা স্থাপন করেন?

উত্তর: নবগোপাল মিত্র হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠা করেন। 1867 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু ধর্মের মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে হিন্দুমেলা স্থাপিত হয়। তাছাড়া দেশীয় শিল্প ও সাহিত্যের উন্নতি ঘটানো ছিল হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠার আর একটি উদ্দেশ্য।

6. ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার দুটি উদ্দেশ্য লেখো।

উত্তর: ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল- (i) একেশ্বরবাদ বা নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করা এবং (ii) হিন্দুধর্মে প্রচলিত কুসংস্কারগুলি দূর করা।

7. শ্রীরামপুর ত্রয়ী কাদের বলা হয়?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনের তিনজন মিশনারি উইলিয়াম কেরি, যোশুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড একত্রে শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে পরিচিত ছিলেন।

8. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুজন মহিলা স্নাতকের নাম লেখো।

উত্তর: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুজন মহিলা স্নাতক হলেন কাদম্বিনী গাঙ্গুলি ও চন্দ্রমুখী বসু।

9. মাদ্রাজে বীরেশ লিঙ্গম পাণ্ডুলু কীভাবে সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন?

উত্তর: আধুনিক অন্ধ্রপ্রদেশে নবজাগরণের অগ্রদূত ছিলেন বীরেশ লিঙ্গম পাণ্ডুলু। তিনি ধর্মীয় কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে, সামাজিক শিক্ষা, নারীদের শিক্ষা ও সাহিত্যের উন্নতির জন্য আজীবন সচেষ্ট ছিলেন।

10. সত্যশোধক সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন? এর উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: জ্যোতিরাও ফুলে সত্যশোধক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। সত্যশোধক সমাজ এর মাধ্যমে তিনি মহারাষ্ট্রে নারী শিক্ষার প্রসার, বিধবা বিবাহ প্রচলন, সামাজিক অস্পৃশ্যতা দূর করার চেষ্টা করেছিলেন।

11. নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী কোন কোন প্রথার বিরোধিতা করেছিল?

উত্তর: নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী হিন্দুধর্মের ও সমাজে প্রচলিত কু-সংস্কারগুলির বিরোধিতা করেন। এছাড়াও তাঁরা অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ প্রথা, সতীদাহ প্রথা, পৌত্তলিকতা প্রথার বিরোধিতা করেছিলেন। যুক্তিবাদের প্রতিষ্ঠা ছিল তার মূল উদ্দেশ্য। 

12. শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে কোন্ ভারতীয় কবে বক্তব্য রাখেন?

উত্তর: শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন স্বামী বিবেকানন্দ। 1893 খ্রিস্টাব্দে এই বিশ্বধর্ম সম্মেলনে তিনি বক্তব্য রেখেছিলেন।

13. কে, কবে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন?

উত্তর: স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। 1897 খ্রিস্টাব্দের মে মাসে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়।

14. জ্যোতিরাও ফুলে কীজন্য স্মরণীয়?

উত্তর: জ্যোতিরাও ফুলে ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন সমাজ সংস্কারক। তিনি ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রীবাঈ ফুলের নেতৃত্বে মহারাষ্ট্রে জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতার বিরোধিতার পাশাপাশি পাশ্চাত্য শিক্ষা ও নারী শিক্ষার প্রচলনের আন্দোলন হয়েছিল।

15. শুদ্ধি আন্দোলন বলতে কী বোঝো?

উত্তর: ধর্মান্তরিত হিন্দুদের শুদ্ধির মাধ্যমে পুনরায় হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনকে শুদ্ধি আন্দোলন বলা হয়। স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর নেতৃত্বে এই আন্দোলন অনেকাংশ সাফল্য লাভ করেছিল।

16. দুদুমিঞা কে ছিলেন?

উত্তর: দুদুমিঞা ছিলেন ফরাজি আন্দোলনের একজন নেতা। তাঁর নেতৃত্বে ফরাজি আন্দোলন একটি ধর্মীয় আন্দোলন থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়।

16. ওয়াহাবি আন্দোলনের আদর্শ বা লক্ষ্য কি ছিল? 

উত্তর: ওয়াহাবি আন্দোলনের আদর্শ বা লক্ষ্যগুলি হল-(i) ইসলামের শুদ্ধিকরণ, কুসংস্কার দূর করা। (ii) অত্যাচারী জমিদারদের বিরোধিতা করা। (iii) জমিদারদের রক্ষাকারী ইংরেজদের বিরোধিতা করা।

 17. সাঁওতাল বিদ্রোহের দুটি কারণ লেখো।

উত্তর: সাঁওতাল বিদ্রোহের দুটি কারণ হল- (ⅰ) ইংরেজ কর্মচারী, জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচার থেকে পরিত্রাণ পাওয়া।

(ii) সাঁওতালদের জমি ফেরৎ পাওয়া ও পুলিশের নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদ করা।

18. তিতুমির কীভাবে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করেন?

উত্তর: তিতুমীরের আন্দোলন প্রথমে জমিদার বিরোধী হলেও অচিরেই তা ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে ওঠে। তিনি বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে কোম্পানির শাসনকে অস্বীকার করেন। 1831 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি প্রাণত্যাগ করেন।

3. Long Question Answer

1. সতীদাহ বিরোধী আন্দোলন ও বিধবা বিবাহের পক্ষে আন্দোলনের মধ্যে মূল মিলগুলি বিশ্লেষণ করো। বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার জন্য কীভাবে চেষ্টা করেছিলেন।

উত্তর: সতীদাহ বিরোধী আন্দোলন ও বিধবা বিবাহের পক্ষে আন্দোলন এর মধ্যে প্রায় 25 বছর ব্যবধান থাকলেও উভয় আন্দোলনের মধ্যে বেশ কিছু মিল ছিল যেমন-

(i) উভয় আন্দোলন পরিচালনা করা হয়েছিল হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন বিধি ও গ্রন্থের সাহায্য নিয়ে নারী স্বার্থ রক্ষার জন্য।

(ii) হিন্দু-সমাজে প্রচলিত কুপ্রথা ও কুসংস্কার, দূর করা ছিল উভয় আন্দোলনের মূল লক্ষ।

(iii) উভয় আন্দোলন সফল করার জন্য সরকারি সাহায্য লাভের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল।

(iv) উভয় আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ছিলেন দুই প্রথিত যশা বাঙালি। যথা: রামমোহন এবং বিদ্যাসাগর।

(v) উভয় আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল নারী সমাজের কল্যাণসাধন।

নারী শিক্ষা বিস্তারে বিদ্যাসাগর: নারী শিক্ষা বিস্তারে যেসব মনীষী এগিয়ে এসেছিলেন বিদ্যাসাগর ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।

বিভিন্ন পদক্ষেপ: (i) ড্রিংক ওয়াটার বেথুনের উদ্যোগে যে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়, বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় সেখানে 21 জন ছাত্রী পড়াশোনা শুরু করেন।

(ii) বিদ্যালয় পরিদর্শক রূপে বিদ্যাসাগর বর্ধমান, নদিয়া, হুগলি জেলার বিভিন্ন গ্রামে 35টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

(iii) বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগর মাতার নামে ভগবতী বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

(iv) তাঁরই উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন।

মূল্যায়ন : জীবনের শেষ বছরগুলি তিনি ঝাড়গ্রামের নিরিবিলি অঞ্চলে কার্মাটারে অতিবাহিত করেন। এখানেও গড়ে তোলেন কয়েকটি বিদ্যালয়।

2. ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল বক্তব্য কী ছিল? ব্রাহ্ম আন্দোলনের সীমাবদ্ধতাগুলি লেখো।

উত্তর: ভূমিকা : বাংলা তথা ভারতে সমাজ সংস্কার আন্দোলনে যে কটি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ব্রাহ্ম সমাজ পরিচালিত ব্রাহ্ম আন্দোলন ছিল তার মধ্যে অন্যতম। এক্ষেত্রে রাজা রামমোহনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

মূলবক্তব্য: ব্রাহ্ম আন্দোলনের মূল বক্তব্য হল-

(i) ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়।

(ii) একেশ্বরবাদের পৃষ্ঠপোষক রূপে ব্রাহ্মরা একমাত্র পরম ব্রহ্মের উপাসনার কথা বলেন।

(iii) ব্রাহ্মদের মতে উপাসনার দ্বারা আত্ম উৎকর্ষের পাশাপাশি জনকল্যাণ সম্ভব।

(iv) হিন্দু ধর্মে প্রচলিত মূর্তি পূজা, জাতিভেদ প্রথা, ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং সামাজিক বৈষম্য দূর করা ছিল ব্রাহ্মদের মূল লক্ষ। 

সীমাবদ্ধতা : ব্রাহ্ম আন্দোলনের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা লক্ষ করা যায়। যেমন-

(i) এই আন্দোলন ছিল মূলত শহর তথা কলকাতা কেন্দ্রিক।

(ii) উচ্চবর্ণের ভদ্রলোকদের মধ্যেই ব্রাহ্ম আন্দোলন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল।

(iii) শিক্ষা-দীক্ষায় পাশ্চাত্য ভাবধারা পন্থীরাই ব্রাহ্ম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

(iv) ব্রাহ্মরা হিন্দু ধর্মের মধ্যে থেকেও নিজেদের একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী রূপে গড়ে তুলতে চেয়েছিল।

(v) বর্ণ ও জাতি প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চিন্তা-ভাবনা ব্রাহ্মদের মধ্যে দেখা যায়নি।

(vi) যুক্তি ও তাত্ত্বিকতার উপর ব্রাহ্মরা এত বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল যে সাধারণ মানুষের কাছে তা বোধগম্য হয়নি।

মূল্যায়ন: সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ব্রাহ্ম আন্দোলনের ফলেই উনিশ শতকে ভারতে নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।

3. তুমি কি মনে করো যে 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ কেবল সিপাহি বিদ্রোহ ছিল? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

উত্তর: ভূমিকা: 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের চরিত্র নিয়ে ঐতিহাসিকরা একমত হতে পারেননি। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা বিচার বিশ্লেষণের ফলে এই বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে নানাবিধ মতামত দেখা যায়। এগুলি হল-

(i) সিপাহি বিদ্রোহ: 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে যারা নিছক সিপাহি বিদ্রোহ বলে মনে করেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন চার্লস রেইকস, হোমস, কিশোরী চাঁদ মিত্র, সৈয়দ আহমদ খান, দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। এরা বলেন-

(i) শুধুমাত্র সিপাহিরাই এই বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল।

(ii) বিদ্রোহে দেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় সমর্থন জানায়নি।

(iii) ভারতের কয়েকটি অঞ্চলে এই বিদ্রোহ সীমাবদ্ধ ছিল। 

(iv) সিপাহিদের একটি মাত্র অংশ এই বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল। অধিকাংশ সিপাহি বিদ্রোহ দমনে সরকারকে সাহায্য করেছিল। সুতরাং এটি ছিল নিছক একটি সিপাহি বিদ্রোহ।

কৃষক বিদ্রোহ: মার্কসবাদে বিশ্বাসী ঐতিহাসিকরা এমনকি কার্লমার্কসও 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে কৃষক বিদ্রোহ আখ্যায় ভূষিত করেছেন। তাঁরা বলেন প্রায় একশত বছর ধরে ব্রিটিশ কোম্পানি কর্তৃক অত্যাচারিত ও নিপীড়িত হয়ে কৃষকরা বিদ্রোহ শুরু করেছিল। কৃষক পরিবারের সন্তান সিপাহিরা তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল। 

জাতীয় বিদ্রোহ: ঐতিহাসিক নর্টন, ম্যালেসন, জন কে, রমেশচন্দ্র মজুমদার, সুশোভন চৌধুরী প্রমুখেরা এই বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে-

(i) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল।

(ii) বিদ্রোহী সিপাহিরা দিল্লির মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে নিজেদের সম্রাট বলে ঘোষণা করে জাতীয়তাবাদের পরিচয় দিয়েছিল।

(iii) বহু পরিবার সিপাহিদের আশ্রয় ও তাদের খাদ্যের ব্যাবস্থা করেছিল।

(iv) এক নতুন ধরনের শাসন ব্যাবস্থা প্রণয়নের জন্য তারা মুঘল সম্রাটকে অনুরোধ করেছিল।

(v) বিশেষ করে অযোধ্যায় এটি জাতীয় বিদ্রোহের রূপ নিয়েছিল। ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম স্বাধীনতা সংগ্রামী বীর সাভারকার 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম আখ্যায় ভূষিত করেছেন।

 সিদ্ধান্ত: উপরিউক্ত মতামতের ভিত্তিতে বলতে পারি যে 1857 | খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ নিছক সিপাহি বিদ্রোহ ছিল না, আবার জাতীয় বিদ্রোহ বা স্বাধীনতা সংগ্রামের যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার তার সবগুলি এই বিদ্রোহে দেখা যায়নি। মীরাট, অযোধ্যা ও ঝাঁসিতে বিদ্রোহটি জাতীয় বিদ্রোহের রূপ নিয়েছিল। আবার বাংলা প্রদেশে বিদ্রোহের কোনো প্রভাব পড়েনি।

সুতরাং 1857 সালের বিদ্রোহকে যথা-সিপাহি বিদ্রোহ আখ্যায় ভূষিত করা অধিক যুক্তিযুক্ত বলেই আমার মনে হয়।

4. কল্পনা করে লেখো (200 শব্দের মধ্যে):

(ক) মনে করো তোমার সঙ্গে রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র ভ বিদ্যাসাগরের দেখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে সতীদাহ রদ ও বিধবা বিবাহ প্রবর্তন বিষয়ে তোমার একটি কথোপকথন লেখো।

উত্তর: (রামমোহন ও বিদ্যাসাগরের মধ্যে কথোপকথন)

আমি: প্রথমেই আপনারা আমার প্রণাম নেবেন। আমি আড়িয়াপাড়া হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রচনা মণ্ডল। আমাদের বিদ্যালয়ের বার্ষিক পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লেখার জন্য আপনাদের কাছে এসেছি।

রামমোহন: দীর্ঘজীবী হও। এসো বসো।

বিদ্যাসাগর: আশীর্বাদ করি স্বাধীন ভারতের উপযুক্ত নাগরিক হয়ে ওঠ। এখন বলো আমরা কীভাবে তোমার প্রয়োজন মেটাতে পারি।

আমি: প্রথমে আমি আপনাদের জানাই যে আপনাদের দেখানো পথ অনুসরণ করেই এখন নারী সমাজ শিক্ষাদীক্ষায় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছে। এখন আমি শ্রদ্ধেয় রামমোহন রায়কে জিজ্ঞাসা করতে চাই, হঠাৎ কেন আপনি সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন শুরু করলেন?

রামমোহন: হঠাৎ নয়, নানাভাবে বাংলার নারীদের দুঃখ দুর্দশার কথা যত শুনছিলাম, দেখছিলাম, ততই তাদের মুক্তির উপায় খুঁজে পেতে মরীয়া হয়ে উঠেছিলাম। আমার বৌদির সতী হওয়াও আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল।

আমি: আন্দোলন চালাতে গিয়ে আপনি কী ধরনের সমস্যার সামনে পড়েন?

রামমোহন: রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ আমার এই কাজকে মোটেই ভালো চোখে দেখেনি। বিশেষ করে ব্রাহ্মণরা আমার বিরুদ্ধে সরব হয়ে ওঠে। একটা সময় আমাকে তারা প্রাণে মেরে ফেলারও চেষ্টা করেছিল।

আমি: (বিদ্যাসাগরকে) এবার আপনি বলুন বিধবা বিবাহের অনুপ্রেরণা আপনি কোথা থেকে পেয়েছিলেন?

বিদ্যাসাগর: সদ্য বিধবা 10-12 বছরের মেয়েদের দেখে আমার হৃদয় কেঁপে উঠত। তারা সংসারে কোনো মর্যাদা, সম্মান পেত না। তাছাড়া পরাশর সংহিতায় দেখলাম প্রাচীন ভারতে বিধবা বিবাহ প্রচলিত ছিল। তাই সংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু করি।

আমি: আপনার পুত্রের সঙ্গে তো আপনার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। বিদ্যাসাগর: আসলে নারায়ণ চন্দ্র বিধবা বিবাহের পর থেকেই আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবদের কটুক্তি শুনে শুনে কেমন যেন হয়ে যায়। আমার সঙ্গে তার বিরোধের মূল কারণ ছিল এটাই।

আমি: আপনাদের দুজনকে অন্তরের অন্তিম স্থল থেকে প্রণাম জানাই। অনুমতি দিলে এবার আমি আসব।

রামমোহন ও বিদ্যাসাগর : অবশ্যই, খুব ভালো থেকো। দরকার পড়লে আবার এসো।

5. মনে করো তুমি একজন সাংবাদিক 1857 খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত বিদ্রোহের সময় ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বিদ্রোহ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা হয়েছে তোমার। এই অভিজ্ঞতা থেকে একটি সংবাদ প্রতিবেদন লেখো।

উত্তর: বিশেষ প্রতিবেদন,

দিল্লি, 24শে জুলাই, 1857 : প্রায় দুমাস অতিক্রান্ত হল, বিদ্রোহ চরমতম রূপ লাভ করেছে। মিরাটের ব্রিটিশ ছাউনি পুড়িয়ে দিয়ে ইংরেজ সেনাদের নির্বিচারে হত্যা করে সিপাহিরা কয়েকদিন আগে দিল্লিতে প্রবেশ করেছে। বিদ্রোহী নেতারা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে তাদের নেতা বলে ঘোষণা করে। বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তারা সম্রাটকে আহ্বান জানায়। কিন্তু মারাঠা নেতা নানা সাহেবের কাছ থেকে কোনো বার্তা না পেয়ে তিনি যথেষ্ট দ্বিধায় রয়েছেন।

উত্তর ভারতে ইংরেজরা ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। যা খবর পাচ্ছি, তা থেকে বোঝা যাচ্ছে বিহার, অযোধ্যা, লক্ষ্মৌ, মিরাট, দিল্লি বিদ্রোহী সিপাহিদের দখলে চলে গেছে। পশ্চিম  ভারতে মারাঠারা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। নাগপুর, সাঁতারা, ঝাঁসি প্রভৃতি জায়গায় ব্রিটিশ শাসনের কোন চিহ্ন নেই। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল রাজপুতরা বিদ্রোহ থেকে নিজেদের সরিয়ে রেখেছে। গোর্খা রেজিমেন্ট এখনো ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গেই রয়েছে। শিখরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেনি।

একটা নতুন জিনিস দেখা যাচ্ছে বিদ্রোহ সরাসরি অংশ না নিলেও নারীদের একাংশ বিদ্রোহীদের যথেষ্ট সাহায্য করছে। তারা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর গতিবিধি সিপাহিদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। সিপাহিদের খাবার যোগাচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।

বিদ্রোহের আর একটি দিক হল হিন্দু-মুসলমান ঐক্য, তারা মিলেমিশে পরিষদ গড়ে তুলে নতুন ধরনের শাসন ব্যাবস্থা প্রণয়নের চেষ্টা করছে। দিল্লি, বেরিলি, লক্ষ্ণৌতে অনুরূপ ব্যবস্থা গড়ে উঠছে। শেষ খবর অনুযায়ী মুঘল সম্রাট সিপাহিদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের নেতৃত্ব দিতে সম্মত হয়েছেন।

 6. মহাবিদ্রোহের দুটি কারণ লেখো। (আড়িয়াপাড়া হাইস্কুল)

উত্তর: মহাবিদ্রোহের দুটি কারণ হল-(ⅰ) লর্ড ডালহৌসি কর্তৃক স্বত্ববিলোপ নীতির ফলে রাজ্যচ্যুত দেশীয় রাজারা বিদ্রোহ করেছিল। (ii) প্রায় 100 বছর ধরে ক্রমাগত শোষণের ফলে দরিদ্র ও নিপীড়িত কৃষকরা ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি চাইছিল।

7. মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল? (হিন্দু স্কুল) 

উত্তর: মহাবিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল এনফিল্ড রাইফেল এর প্রবর্তন। এই রাইফেল এর টোটা দাঁত দিয়ে কেটে বন্দুকে পুরতে হতো। গুজব রটে যে এই টোটা গোরু ও শূকরের চর্বি দিয়ে তৈরি। ফলে ধর্মভীরু হিন্দু ও মুসলমান সিপাহিরা তাদের ধর্মনাশের ফলে একযোগে বিদ্রোহে অংশ নিয়েছিল।

8. সমাজসংস্কার আন্দোলনে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান কী ছিল? (বালিগঞ্জ গভঃ হাইস্কুল)

উত্তর: ভূমিকা : উনিশ শতকের বাংলায় নবজাগরণের পথিকৃৎ ছিলেন রাজা রামমোহন রায়।

সমাজসংস্কারক রামমোহন : সমাজ সংস্কারক হিসাবে রামমোহনের অবদানগুলি হল-

ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা : একেশ্বরবাদ ও পরম ব্রহ্মের আরাধনায় বিশ্বাসী রামমোহন 1815 খ্রিস্টাব্দে তাঁর আদর্শ প্রচারের জন্য আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন।

1828 খ্রিস্টাব্দে এটি ব্রাহ্মসভা ও 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিত হয়। এক সময় ব্রাহ্মসমাজ হয়ে ওঠে এদেশের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দু।

সতীদাহ প্রথা বিরোধী আন্দোলন : হিন্দু সমাজে প্রচলিত সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি

তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। মনুসংহিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বোঝান যে প্রাচীন ভারতে সতীদাহ প্রথা ছিল না।

তাঁর আন্দোলনের ফলে গভর্নর জেনারেল লর্ড বেন্টিক 1829 খ্রিস্টাব্দে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন।

নারীমুক্তি আন্দোলন : ভারতে নারীদের মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি যথেষ্ট যত্নশীল ছিলেন। তিনি-

(i ) বাল্য বিবাহ ও পুরুষের বহু বিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।

(ii) স্বামীর মৃত্যুর পর তার সম্পত্তিতে স্ত্রীর অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারের কাজে আবেদন জানান।

(iii) অসবর্ণ বিবাহ ও বিধবা বিবাহের জন্য তিনি ব্রাহ্ম সমাজকে আন্দোলন গড়ে তোলার নির্দেশ দেন।

মূল্যায়ন : সারাজীবন তিনি কুসংস্কার ও জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে তিনি সচেষ্ট ছিলেন। এজন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ‘ভারতের

প্রথম আধুনিক মানুষ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।

9. সমাজ সংস্কার ও নারী শিক্ষার প্রসারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখো।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতের সমাজ সংস্কার ও স্ত্রী শিক্ষার প্রসারে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

সমাজ সংস্কার: বিদ্যাসাগরের সমাজসংস্কার মূলক কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হল-

(i) বিধবা বিবাহ প্রবর্তন: বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের সমর্থনে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলেন। তিনি পরাশর সংহিতা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দেখান যে প্রাচীন ভারতে বিধবা বিবাহ প্রচলিত ছিল।

তাঁর আন্দোলনের ফলে 1856 খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্যানিং বিধবা বিবাহ আইন পাশ করেন।

(ii) বহুবিবাহের বিরোধিতা: বিদ্যাসাগর পুরুষের বহু বিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। জেনে রাখা ভালো

(iii) বাল্যবিবাহ : নারীর বাল্য বিবাহের তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

(iv) বর্ণব্যবস্থা: ভারতে প্রচলিত জাতিভেদ ও বর্ণভেদ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তিনি বিভিন্ন প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন।

নারী শিক্ষা: বিদ্যাসাগর অনুভব করেছিলেন যে, নারী জাতির উন্নতি ব্যতীত হিন্দু সমাজের উন্নতি সম্ভব নয়। এজন্য তিনি নারীদের শিক্ষার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। যেমন-

(i) বেথুন বিদ্যালয় স্থাপনে সাহায্যঃ ড্রিংক ওয়াটার বেথুন 1849 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় বিদ্যাসাগরের সাহায্য লাভ করেন। এমনকি 21 জন বালিকাকে বিদ্যালয়ে পড়তে রাজি করান। 

(ii) বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: বিদ্যাসাগর বিদ্যালয় পরিদর্শক রূপে 35টি বালিকা বিদ্যালয় বাংলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে স্থাপন করেন। অন্তত 1300 ছাত্রী এইসব বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। 

(iii) বিদ্যাসাগর কলেজ প্রতিষ্ঠা: ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বিদ্যাসাগর যেসব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন’। পরবর্তীকালে এটি বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত হয়।

(iv) পুস্তক রচনা: পাঠ্যপুস্তকের অভাব মেটানোর জন্য তিনি বর্ণপরিচয়, বোধোদয়, কথামালা প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন।

মূল্যায়ন: বাংলায় সমাজ সংস্কার ও নারী মুক্তি আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের সমাজ ও নারী জাতির উন্নয়নে প্রচেষ্টা তাঁকে চির স্মরণীয় করে রেখেছে।

10. ব্রাহ্ম আন্দোলন সমাজের নীচু তলার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েনি। যুক্তিসহ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতে সমাজ সংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে ব্রাহ্মসমাজের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। বাংলার সীমানা পার করে ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও ব্রাহ্ম আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু ব্রাহ্ম আন্দোলন সমাজের নীচু তলার মানুষকে আলোড়িত করতে পারেনি। কারণ ব্রাহ্ম আন্দোলনের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল।

সীমাবদ্ধতা: ব্রাহ্ম আন্দোলনের সীমাবদ্ধতাগুলি হল-

(i) ব্রাহ্ম আন্দোলন সমাজের উচ্চবর্ণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, তা নীচু তলার মানুষের মধ্যে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

(ii) এই আন্দোলন কলকাতা ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। বাংলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রাহ্ম আন্দোলনের কোন প্রভাব পড়েনি।

(iii) মূলত উচ্চবিত্ত ও পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিরাই ব্রাহ্ম আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। সমাজের অন্যান্য অংশ ব্রাহ্ম আন্দোলন সম্পর্কে নিস্পৃহ ছিল।

(iv) ব্রাহ্মরা নিজেদের একটি স্বতন্ত্র গোষ্ঠী বা ধর্মীয় গোষ্ঠী রূপে পরিচয় দিত। স্বাভাবিক কারণেই তারা নীচু স্তরের মানুষদের মধ্যে মেলামেশা পছন্দ করত না।

(v) হিন্দু সমাজের নিম্নবর্গের জন্য ব্রাহ্মসমাজ নিজেদের দরজা উন্মুক্ত করেনি। ফলে তারা ব্রাহ্মদের সন্দেহের চোখে দেখতো।

(vi) ভারতীয় সমাজে প্রচলিত বর্ণ ও জাতিভেদ প্রথা সম্পর্কে ব্রাহ্মরা নীরব ছিল। স্বাভাবিক কারণেই নীচু তলার মানুষ ব্রাহ্মদের মতাদর্শের আলো লাভে বঞ্চিত ছিল।

মূল্যায়ন: যুক্তিবাদী মানসিকতা ও তার তাত্ত্বিক প্রয়োগের উপর ব্রাহ্মরা এতো বেশি গুরুত্ব দিত যে সাধারণ মানুষ থেকে তারা যে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে, তা বোঝা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। 

11. সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ডিরোজিও এবং তাঁর ইয়ং বেঙ্গল-এর ভূমিকা লেখো। 

উত্তর: ভূমিকা: ডিরোজিও হিন্দু বাংলার সমাজ জীবনে সংস্কারের যে ঢেউ তুলে ছিলেন, সমকালীন রক্ষণশীল বাঙালি সমাজকে তা ভাসিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। (আড়িয়াপাড়া হাইস্কুল) কলেজ-এর শিক্ষক রূপে জেনে রাখা ভালো জাতীয়তাবাদী নেতা সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নব্যবঙ্গীয়দের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, এরাই আমাদের জাতির পিতা।

শিক্ষকরূপে ডিরোজিও: মাত্র 17 বছর বয়সে হিন্দু কলেজ এর শিক্ষক রূপে ডিরোজিওর আবির্ভাব ঘটে। তাঁর সুন্দর বাগ্মিতা ও প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ব অচিরেই হিন্দু কলেজের ছাত্রদের মধ্যে আলোড়ন তোলে। দলে দলে ছাত্ররা তাঁর অনুগামীতে পরিণত হয়।

ইয়ংবেঙ্গল: অনুগামী ছাত্রদের নিয়ে তিনি ইয়ং বেঙ্গল দল গঠন করেন। হিন্দুসমাজের কুসংস্কার ও কু-প্রথা দূর করার জন্য তিনি তাঁর অনুগামীদের উদ্বুদ্ধ করেন।

উল্লেখযোগ্য সদস্য : ইয়ং বেঙ্গল এর উল্লেখযোগ্য সদস্য ছিলেন-প্যারিচাঁদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার, রামতনু লাহিড়ি, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ।

সংস্কার আন্দোলন: ইয়ংবেঙ্গল-এর সদস্যরা সংস্কার অন্দোলনে অগ্রসর হন। তাঁরা-

(1) জাতিভেদপ্রথা, অস্পৃশ্যতা ও সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন।

(ii) তাঁর অনুগামীরা নিজেদের পৈতে বিসর্জন দিয়ে বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে।

(iii) প্রকাশ্যে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়কে লাঞ্ছনা করে তাদের ভীত সন্ত্রস্ত করে তোলে।

(iv) কালিঘাটের কালির উদ্দেশ্যে ‘গুড মর্নিং ম্যাডাম সম্বোধন করে পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকে।

অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন: অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তুলে তারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব, পৌত্তলিকতা, পুরোহিত তন্ত্র, সামাজিক কুসংস্কার দূর ও নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য আলোচনার মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপর হতো।

মূল্যায়ন: ইয়ং বেঙ্গল এর উগ্র কার্যকলাপের ফলে ডিরোজিওকে হিন্দু কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। অল্পদিনের মধ্যে তিনি কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে নেতৃত্বহীন ডিরোজিও পন্থীরা পূর্বাবস্থায় ফিরে যান তবে পরবর্তী জীবনে তাঁরা প্রত্যেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

12. স্বামী বিবেকানন্দ স্মরণীয় কেন?

উত্তর: ভূমিকা: রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ভাব শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন নব ভারতের রূপকার ও আত্মবিশ্বাস এবং স্বদেশ প্রেম এর মূর্ত প্রতীক।

আদর্শ: স্বামী বিবেকানন্দ মানুষ তৈরির আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর কাছে ধর্ম ছিল ‘Man Making religion.

গ্রন্থাবলি: জীবনের অভিজ্ঞতা ও তাঁর স্বদেশ প্রেম এর কাহিনি তিনি লিপিবদ্ধ করেছেন বর্তমান ভারত, পরিব্রাজক, জ্ঞানযোগ, রাজযোগ প্রভৃতি গ্রন্থগুলিতে।

বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে যোগদান: 1893 খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগোতে বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি হিন্দুধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের বিজয় পতাকা উড়িয়ে

সমন্বয়ের আদর্শ: স্বামীজি পাশ্চাত্যের অন্ধসমর্থক ছিলেন এই আদর্শ নব্য বেদান্তবাদ নামে না। তিনি প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠত্বকে গ্রহণ করার পাশাপাশি পাশ্চাত্যের উপর চিন্তা ভাবনা গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। তাঁর এই সমন্বয়ের আদর্শ নতুন ভারত গঠনে সাহায্য করেছিল। 

সমাজ সংস্কার: বিবেকানন্দ সর্বদাই জাতিভেদ, ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক অনাচার ও অসাম্য এবং অশিক্ষার বিরুদ্ধে মানুষকে সোচ্চার হতে বলেছেন।

রামকৃষ্ণ মিশন: গুরুদেব রামকৃষ্ণ পরমহংসের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শে অনুপ্রাণীত হয়ে তিনি 1897 খ্রিস্টাব্দে বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। মানবসেবা ছিল এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য।

জাতীয়তাবাদের অগ্রদূতঃ জীবনে কখনো প্রকাশ্যভাবে রাজনৈতিক কথা না বললেও তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়ে যে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা তিনি তুলে ধরেছিলেন যা ছিল বিপ্লবীদের কাছে বেদতুল্য।

মূল্যায়ন: ধর্মের থেকে তিনি দেশকে সর্বদাই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ধর্মাচরণের বদলে তিনি যুবকদের শরীর চর্চার প্রতি গুরুত্ব দিতে বলেছেন। ভারতমাতাকে তিনি একমাত্র আরাধ্য দেবতা হিসাবে গ্রহণ করতে বলেছেন। প্রকৃত অর্থে তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক।

13. প্রার্থনা সমাজের কার্যাবলি কী ছিল?

উত্তর: ভূমিকা: মহারাষ্ট্রে সমাজ সংস্কার আন্দোলনে যে সকল প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল প্রার্থনা সমাজ ছিল তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য।

প্রতিষ্ঠা: 1867 খ্রিস্টাব্দে প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠাতা: কেশবচন্দ্র সেন এর দ্বারা অনুপ্রাণীত হয়ে আত্মারাম পান্ডুরং প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।

নেতৃবৃন্দ: আত্মারাম পান্ডুরং ছাড়াও প্রার্থনা সমাজের প্রাণ পুরুষ ছিলেন মহাদেব গোবিন্দ রানাডে। এছাড়া রামকৃষ্ণ ভান্ডারকর ছিলেন প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য নেতা।

উদ্দেশ্য: প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি হল- (1) সমাজ থেকে সমস্ত ধরনের কুসংস্কার দূর করা এবং (ii) নারীজাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সাধন।

কার্যাবলি: প্রার্থনা সমাজ-

(i) বিধবা বিবাহ প্রচলন, অসবর্ণ বিবাহ ও নারী শিক্ষার প্রসারে জনমত গড়ে তোলে। 

(ii) দুঃস্থদের উন্নয়ন ও অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়।

(iii) সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলে। 

(iv) বাল্য বিবাহ, বহুবিবাহ, অস্পৃশ্যতা ও পণপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে।

(v) বিধবা বিবাহ সমিতি ও সারদাসদন গড়ে তুলে বাল্য বিধবাদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারে সচেষ্ট হয়।

মূল্যায়ন: প্রার্থনা সমাজ ব্রাহ্মসমাজের মতো নিজেদের হিন্দুধর্ম থেকে পৃথক ভাবেনি বলে জনমানসে অধিক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। সমগ্র মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ ও মাদ্রাজ অঞ্চলেও তারা জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

14. আর্য সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন? আর্য সমাজের কার্যাবলি কী ছিল?

উত্তর: ভূমিকা: উত্তর ভারতে সমাজ সংস্কার আন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল আর্য সমাজ। প্রতিষ্ঠা: 1875 খ্রিস্টাব্দে আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

প্রতিষ্ঠাতা: স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন।

আদর্শ: আর্য সমাজ বেদ এর অভ্রান্ততা নীতিতে বিশ্বাসী ছিল।

উদ্দেশ্য: আর্য সমাজের উদ্দেশ্য ছিল-

(i) বৈদিক যুগের পবিত্র আদর্শে হিন্দু ধর্মকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা।

(ii) সমাজে প্রচলিত সমস্ত কুসংস্কার দূর করা।

(iii) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো।

কার্যাবলি: আর্য সমাজ-

(1) বিধবা-বিবাহের পক্ষে প্রচার চালায়।

(ii) নারী পুরুষের সমান অধিকার নীতকে সমর্থন জানায়।

(iii) জাতিভেদ প্রথা ও বহু বিবাহের নিন্দা করে।

শুদ্ধি আন্দোলন: ধর্মান্তরিত হিন্দু ও অ-হিন্দুদের হিন্দুধর্মে ফিরিয়ে আনার জন্য দয়ানন্দ সরস্বতী শুদ্ধি আন্দোলনের সূচনা করেন।

আশ্রম ও স্কুল প্রতিষ্ঠা: আর্য সমাজের উদ্যোগে গুরকুল আশ্রম এবং অ্যাংলো-বৈদিক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।

মূল্যায়ন: দয়ানন্দ সরস্বতী সত্যার্থ প্রকাশ ও বেদভাষ্য নামে দুটি গ্রন্থের মাধ্যমে নিজ আদর্শ প্রচার করেন।

9.৪ টীকা লেখো: স্যার সৈয়দ আহমেদ খান।

উত্তর: ভূমিকা: স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলিম সমাজের সংস্কারক হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

আলিগড় আন্দোলন: স্যার সৈয়দ আহমেদ খান-এর আন্দোলন আলিগড় কলেজ কেন্দ্রিক ছিল বলে একে আলিগড় আন্দোলন বলা হয়ে থাকে।

উদ্দেশ্য: আলিগড় আন্দোলনের উদ্দেশ্যগুলি হল-

(i) ইংরেজদের সঙ্গে মুসলমানদের সখ্যতা স্থাপন করা।

(ii) মুসলমান সমাজে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো। 

(iii) মুসলমান সমাজের কুসংস্কার দূর করা।

(iv) নারী সমাজের উন্নতি বিধানে যত্নবান হওয়া।

কার্যাবলি: সৈয়দ আহমদ খান-

(i) 1863 খ্রিস্টাব্দে সায়েন্টিফিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করে বিজ্ঞান চর্চার সূচনা করেন।

(ii) গাজিপুর ও মোরাদাবাদে দুটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। 

(iii) 1875 খ্রিস্টাব্দে আলিগড় মহমেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।

(iv) 1886 খ্রিস্টাব্দে মহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স প্রতিষ্ঠা করেন।

মূল্যায়ন: স্যার সৈয়দ আহমেদ খান পুরুষের বহুবিবাহ ও তালাক প্রথার বিরোধিতা করার ফলে মুসলিম উলেমা ও মৌলবিরা এর বিরোধিতা করেছিল। এজন্য মুসলিম সমাজের সর্বত্র তার আদর্শ পৌছাতে পারেনি।

9.9 উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনগুলির সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো। 

15. অথবা, উনবিংশ শতকের সামাজিক সংস্কারগুলি উচ্চবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল-যুক্তিসহ মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: ভূমিকা: উনবিংশ শতকের সমাজসংস্কার আন্দোলন উচ্চবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। মন্তব্যের সমর্থনে নিম্নলিখিত যুক্তিগুলি প্রদান করা যায়-

পৃষ্ঠপোষকতা: উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল সমাজের উচ্চবর্গের মানুষ। কারণ তারা পাশ্চাত্য শিক্ষার সুযোগে আর্থিক সুবিধা লাভ করেছিল।

নেতৃত্ব: এসময়কার সমাজ সংস্কারে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষ। সাধারণত এরা নিজেদের স্বার্থ দ্বারাই পরিচালিত হয়েছিল।

ভাষার ব্যবহার: সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ইংরেজি ও সংস্কৃত ঘেষা বাংলা ভাষা ব্যবহার করতো বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়।

ধর্মীয় প্রাধান্য: সমাজ সংস্কারকরা প্রাচীন শাস্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হতো বলে সেই অর্থে বর্ণবৈষম্য বা ধর্মীয় বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে খুব একটা প্রতিবাদ জানায়নি। ফলে নিম্নবর্গের মানুষ সংস্কারের কোন সুফল পায়নি।

কর্মসূচি: সমাজসংস্কার আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সামিল করার মতো কোন গ্রহণযোগ্য কর্মসূচি সংস্কারকরা গ্রহণ করেননি।

মূল্যায়ন: একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনগুলি উচ্চবর্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছিল।

16. টীকা লেখো: সাঁওতাল হুল (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন) 

উত্তর: ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনের কুফল হিসাবে ভারতে যে সকল ব্রিটিশ বিরোধী অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়েছিল সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম।

বিদ্রোহের কারণ: সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণগুলি হল-

(i) বাজস্ব আরোপ: সাঁওতালদের বাসভূমিকে জমিদারি বন্দোবস্তের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের উপর রাজস্ব চাপানো হলে সাঁওতালরা ক্ষুব্ধ হয়।

(ii) জমিদারি অত্যাচার: রাজস্ব আদায় এর নামে জমিদাররা সাঁওতালদের উপর অত্যাচার চালালে তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। 

(iii) মহাজনি শোষণ: নগদে কর মেটাতে গিয়ে সাঁওতালরা মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ নেয় তারপর শুরু হয় তাদের শোষণ। অর্থলোভী মহাজন ও দিকুদের অত্যাচার তাদের বিদ্রোহী করে তোলে।

(iv) ধর্মান্তরিতকরণ: খ্রিস্টান মিশনারিরা নানাবিধ প্রলোভন দেখিয়ে সাঁওতালদের ধর্মান্তরিত করা শুরু করলে তারা বিদ্রোহের পথে অগ্রসর হয়।

(v) রমণীদের উপর অত্যাচার: বহিরাগতদের দ্বারা সাঁওতাল রমণীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা হলেও সাঁওতালরা কুদ্ধ হয়ে পড়ে।

(vi) রেলপথ নির্মাণ: সাঁওতাল পরগনায় রেলপথ নির্মাণকালে সাঁওতালদের বিনা মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য করা হলে, তাদের হাঁস মুরগি কেড়ে খেয়ে নিলে এবং রমনীদের দিকে লালসার হাত বাড়ালে সাঁওতালরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

সূচনা: 1855 খ্রিস্টাব্দের ১০শে জুন ভাগনাডিহির মাঠে দশ হাজার সাঁওতাল জমায়েত হয়ে ব্রিটিশ সরকার ও জমিদারদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।

নেতৃত্ব দান: সিধু-কানহু প্রভৃতিরা এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দান করে।

বিদ্রোহ দমন: সরকার অত্যন্ত নিষ্ঠুরতার সঙ্গে এই বিদ্রোহ দমন করে। 23 হাজার বিদ্রোহী সাঁওতালকে হত্যা করা হয়। সিধু-কানহুর ফাঁসি হয়।

ফলাফল: বিদ্রোহ দমন করলেও সরকার বিদ্রোহের কারণ অনুসন্ধানের পর বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যেমন- (i) রাজস্বের পরিমাণ হ্রাস করা হয়।

(ii) নয় হাজার কিলোমিটার জায়গা নিয়ে সাঁওতাল পরগনা গড়ে তোলা হয়।

(iii) সাঁওতালদের জন্য পৃথক বিচার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়।

(iv) সাঁওতাল পরগনায় বহিরাগত এমনকি মিশনারিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।

(v) সাঁওতালদের উপজাতি তালিকা ভুক্ত করা হয়।

মূল্যায়ন: অনেকেই সাঁওতাল বিদ্রোহের বিশালতা ও তীব্রতা লক্ষ করে একে ভারতে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম আখ্যা প্রদান করেন। 

17. নীল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল লেখো।

উত্তর: ভূমিকা: ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী কৃষক আন্দোলনগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বাংলার নীল বিদ্রোহ।

কারণ: নীল বিদ্রোহের কারণগুলি হল-

(i) দাদন প্রথা: নীল চাষ করার জন্য চাষিদের দাদন বা অগ্রিম অর্থ দেওয়া হতো। একবার দাদন নিলে চাষি বংশ পরম্পরায় নীল চাষ করতে বাধ্য হত।

(ii) অত্যাচার: নীলকর সাহেবরা নীল চাষে অনিচ্ছুক চাষিদের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালাতো। তাদের বাড়িঘরে আগুন লাগানো, স্ত্রী, মেয়েকে আটকে রাখা কিছুই বাদ যেত না।

(iii) সরকারি আইন: সরকার এ সময় নীলকরদের পক্ষ অবলম্বন করতেন এবং নীলচাষ ও নীল চুক্তি বৈধ বলে ঘোষণা করলে চাষিরা ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে।

(iv) প্রত্যক্ষকারণ: 1859 খ্রিস্টাব্দে বিচারক অ্যাসলি ইডেন নীল চাষ চাষিদের স্বেচ্ছাধীন বিষয় বলে ঘোষণা করলে চাষিরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং নীল চাষ না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

(v) নেতৃত্ব: বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস নীল চাষিদের নেতৃত্ব দেন।

ফলাফল: বাংলার ছোটোলাট পিটার গ্রান্ট এর নেতৃত্বে 1860 খ্রিস্টাব্দ নীল তদন্ত কমিশন গঠিত হয়। এমন সময় কৃত্রিম উপায়ে নীল উৎপাদন পদ্ধতি আবিষ্কৃত হলে বাংলায় নীল চাষ বন্ধ হয়ে যায়।

মূল্যায়ন: বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ, নীলদর্পণ নাটক ও সোম প্রকাশ পত্রিকা নীল চাষিদের সমর্থনে এগিয়ে আসে। বাংলায় ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় আন্দোলনের সূচনা হয় নীল বিদ্রোহের মাধ্যমে।

18. বারাসাত আন্দোলনে তিতুমিরের ভূমিকা কী ছিল?

উত্তর: ভূমিকা: বাংলাদেশে সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ওয়াহাবি আন্দোলন। তিতুমির এর নেতৃত্বে এই আন্দোলন চরমে পৌঁছেছিল।

কারণ: ওয়াহাবি আন্দোলনের কারণগুলি হল-

(i) বাংলার মহাজন ও জমিদারগণ কৃষকদের উপর অত্যাচার চালাতো।

(ii) পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় প্রত্যেক প্রজার উপর আড়াই টাকা হারে খাজনা আরোপ করলে ওয়াহাবিরা ক্ষুব্ধ হয়।

(iii) নীলকর সাহেবরা এই অঞ্চলের কৃষকদের উপর অত্যাচার চালাতো।

(iv) ওয়াহাবিরা ভারতকে দার-উল হারব থেকে দার উল ইসলামে পরিণত করার আদর্শে বিশ্বাসী ছিল। এজন্য তিতুমির ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।

বিদ্রোহ ঘোষণা: 1830 খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তিতুমির নিজেকে বাদশা বলে ঘোষণা করেন।

বাঁশের কেল্লা: নারকেলবেড়িয়া গ্রামে, বাঁশ, কাঠ মাটি দিয়ে তিনি একটি কেল্লা নির্মাণ করেন এবং গোলাম মাসুমকে সেনাপতি ও মৈনুদ্দিন নামক একজন মৌলবিকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ করেন। 

বিদ্রোহ দমন: 1831 খ্রিস্টাব্দে সরকার তিতুমির এর বিরুদ্ধে একদল সেনা পাঠায়। 19 নভেম্বর যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিতুমির মারা যান। তাঁর সেনাপতি গোলাম মাসুমকে ফাঁসি দেওয়া হয়। 

মূল্যায়ন: তিতুমিরের নেতৃত্বে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কৃষক যোগদান করে এই বিদ্রোহকে সর্বধর্ম সমন্বয়ে পরিণত করেছিল।

19. মহাবিদ্রোহের কারণগুলি আলোচনা করো।

উত্তর: ভূমিকা: 1857 খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্যানিং এর শাসনকালে সারা ভারতে যে ব্রিটিশ বিরোধী বিদ্রোহ অনুষ্ঠিত হয়েছিল সাধারণভাবে তা সিপাহি বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

কারণ: সিপাহি বিদ্রোহের কারণগুলি হল-

রাজনৈতিক কারণ: সিপাহি বিদ্রোহের রাজনৈতিক কারণগুলি হল-(i) লর্ড ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণকারী দেশীয় রাজ্যগুলি লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি দ্বারা অধিগ্রহণ করলে দেশীয় রাজারা ক্রুদ্ধ হন।

(ii) দ্বিতীয় বাজীরাও এর দত্তকপুত্র নানা সাহেব এর পেশোয়া পদ দিতে অস্বীকার করলে মারাঠারা ইংরেজদের বিরোধিতা করে। 

(iii) কুশাসনের অভিযোগে অযোধ্যা রাজ্যটি গ্রাস করা হলে অযোধ্যাবাসীর ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে ওঠে।

(iv) রাজ্যচ্যুত রাজাদের সেনাবাহিনী, কর্মচারী ও পদস্থ ব্যক্তিরা ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে ওঠে।

অর্থনৈতিক কারণ: সিপাহি বিদ্রোহের মূলকারণ হিসাবে অনেকে অর্থনৈতিক কারণকে দায়ী করেছেন। যেমন-

(i) ইংরেজরা এদেশকে কাঁচামাল রপ্তানি ও শিল্পজাত পণ্য আমদানিকারক দেশে পরিণত করলে ভারতীয়রা ক্রমশ দারিদ্র্যের শিকার হয়।

(ii) রাজ্যহারা রাজাদের আশ্রিত ব্যক্তিবর্গ, কর্মচারী ও অভিজাতবর্গ বেকার হয়ে পড়লে তাদের দুর্দশা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।

(iii) অবশিল্পায়নের ফলে কর্মচ্যুত কারিগর শ্রেণি কৃষিকর্মে ভিড় জমালে কৃষির উপর অত্যধিক চাপ পড়লে কৃষকরাও ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে পড়ে।

সামাজিক কারণ: ইংরেজরা সামাজিক দিক দিয়েও ভারতীয়দের অবজ্ঞা করতো। তারা-

(i) সাধারণ ভারতীয়দের সঙ্গে মেলামেশা করতো না।

(ii) ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে ইংরেজরা যথেষ্ট অবজ্ঞা করতো।

(iii) সম্মাননীয় ভারতীয়দের সাথেও তারা অপমানসূচক ব্যবহার করতো।

(iv) ইউরোপীয়দের জন্য তৈরি পানশালা, হোটেল, ক্লাব ও রেস্তোরাঁ-য় ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।

ধর্মীয় কারণ: সিপাহি বিদ্রোহের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ ছিল ধর্মীয় অসন্তোষ। যেমন-

(i) সতীদাহ প্রথা রদ, বিধবা বিবাহ প্রচলন প্রভৃতি সমাজসংস্কারমূলক কাজগুলিকে ভারতীয়রা ধর্মীয় হস্তক্ষেপ বলে মনে করতেন।

(ii) খ্রিস্টান মিশনারিদের ধর্মপ্রচার ও হিন্দু-মুসলমান ধর্ম সম্পর্কে নানাবিধ কুৎসা রটনা উভয় সম্প্রদায়কে ব্রিটিশ বিরোধী করে তোলে।

সামরিক কারণ: নানা কারণে দেশীয় সিপাহীরা ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে পড়ে। যেমন-

(i) ইউরোপীয়দের তুলনায় দেশীয় সিপাহিদের বেতন ছিল অনেক কম।

(ii) যোগ্যতা থাকলেও ভারতীয়দের উচ্চপদে নিয়োগ করা হতো না।

(iii) জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ভারতীয়দের চুল দাড়ি কাটার কথা বলা হলে শিখ ও মুসলমান সিপাহিরা ক্রুদ্ধ হয়।

(iv) যুদ্ধের জন্য অন্যদেশে, তথা কালাপানি পার করানো হলে হিন্দু সিপাহিরা জাতি চ্যুত হয়। ফলে তারাও ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষ কারণ: উপরি উক্ত কারণে যখন সিপাহিরা বিদ্রোহের জন্য প্রস্তুত, সেসময় এনফিল্ড রাইফেল নামে নতুন এক ধরনের রাইফেল প্রবর্তিত হয়। এই রাইফেল এর টোটা দাঁত দিয়ে কেটে বন্দুকে পুরতে হতো। গুজব রটে যে এই টোটা গোরু ও শূকরের চর্বি দ্বারা নির্মিত। ধর্ম নষ্টের ভয়ে হিন্দু মুসলমান সিপাহিরা বিদ্রোহ শুরু করে।

মূল্যায়ন: 1857 খ্রিস্টাব্দের 29 শে মে ব্যারাকপুরে সিপাহি মঙ্গল পান্ডে প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তাঁর প্রাণদণ্ড দেওয়া হলেও অচিরেই সারা ভারতে সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হয়।

20. শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালিরা কেন মহাবিদ্রোহকে সমর্থন করেননি?

উত্তর: ভূমিকা : 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহকে বাঙালিরা সেই অর্থে সমর্থন করেনি। বস্তুত বাংলায় বিদ্রোহের সুচনা হলেও তেমন প্রভাব পড়েনি।

কারণ: এক্ষেত্রে বাঙালিদের উদাসীনতার কারণ হল-

(i) বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায় এই বিদ্রোহকে সামন্ততান্ত্রিক – বিদ্রোহ বলে মনে করতো।

(ii) বাঙালি সম্প্রদায় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করতো। তাই সিপাহি বিদ্রোহ তাদের কাছে উৎপাত বলে মনে হয়েছিল।

(iii) শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী ও শান্তিপ্রিয় বাঙালিরা সিপাহিদের বিদ্রোহকে অশান্তির কারণ বলে মনে করতো।

(iv) নবাবি শাসনের অবসানের পর সেই অর্থে বাংলার কোন রাজ পরিবার ইংরেজদের দ্বারা অত্যাচারিত হননি। এজন ইংরেজ বিরোধী কোন ক্ষোভ এখানে সৃষ্টি হয়নি।

মূল্যায়ন: সমাজসংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্রে নবজাগ্রত বাঙালি সমাজ ইংরেজদের সাহায্য প্রয়োজন বলে মনে করতো। তাছাড়া সামন্ততান্ত্রিক স্বার্থপরতার প্রতি তাদের কোন আগ্রহ ছিল না। এজন্য – এই বিদ্রোহ সম্পর্কে বাঙালি সমাজ উদাসীন ছিল।

21. 1857-র বিদ্রোহে জমিদার ও কৃষকদের অসন্তোষ মিশে = ছিল-মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো। (পর্ষদ নমুনা প্রশ্ন)

উত্তর: 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের – মধ্যে মতবিরোধের অন্ত নেই। নানাবিধ মতামতের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অভিমত হল বিদ্রোহের মধ্যে জমিদার ও কৃষকদের অসন্তোষ মিশে ছিল।

ব্যাখ্যা: যারা মনে করেন বিদ্রোহে জমিদার ও কৃষক অসন্তোষ – মিশে ছিল, তাঁদের মতে-(i) ব্রিটিশদের অর্থনৈতিক শোষণের ফলে ভারতের বিপুল সংখ্যক কৃষক, শিল্পী ও কারিগররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। 

(ii) বহু জমিদার ও রাজ পরিবার ব্রিটিশ শাসনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

(iii) ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর দেশীয় সিপাহিরা ছিল মূলত কৃষক পরিবারের সন্তান। তারা তাদের পরিবারের উপর অত্যাচারের – কাহিনি শুনে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে।

(iv) ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণের ফলে বহু কৃষক মহাজনের কাজ থেকে ঋণ নেয়। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে তারা – নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে। এর জন্য তারা ব্রিটিশ শাসনকেই – দায়ী করেছিল।

(v) কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বন্দোবস্তের নীতি প্রবর্তনের ফলে বহু জমিদার নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব দিতে না পারায় – তাদের জমিদারি হারাতে হয়। জমিদারি হারিয়ে এই জমিদার শ্রেণি ইংরেজ বিরোধী বিদ্রোহে অংশ গ্রহণ করে।

মূল্যায়ন: জমিদার ও কৃষক সম্প্রদায় ইংরেজ বিরোধী হয়ে ওঠে। সিপাহিরা বিদ্রোহে অংশ নিলে এইসব জমিদার ও কৃষকেরা তাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে বিদ্রোহকে চরমতম পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

4. Fill In The Blanks

1. লোক হিতবাদী নামে পরিচিত ছিলেন     ।

উত্তর: গোপাল হরি দেশমুখ

2. সত্যার্থ প্রকাশের রচয়িতা হলেন    ।

উত্তর: দয়ানন্দ সরস্বতী

3. ‘ওয়াহাবি’ শব্দটির অর্থ হল   ।

উত্তর: নবজাগরণ 

4. নব্যবঙ্গ চিত্র কলা রীতির অগ্রদূত ছিলেন  

উত্তর: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

5.   ভারতে দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবর্তক ছিলেন।

উত্তর: স্যার সৈয়দ আহমেদ

6. হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়   খ্রিস্টাব্দে।

উত্তর: 1817 খ্রিস্টাব্দে

7. বিষুচরণ বিশ্বাস হলেন    বিদ্রোহের নেতা।

উত্তর: নীল

8. সাগরে সন্তান বিসর্জন প্রথা বন্ধ করেন    ।

উত্তর: লর্ড ওয়েলেসলি

9. হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠা করেন 

উত্তর: নব গোপাল মিত্র 

10. আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা হলেন

উত্তর: দয়ানন্দ সরস্বতী

5. True And false

1. স্বামী বিবেকানন্দের গুরুদেব ছিলেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।

উত্তর: ঠিক। 

2. 1829 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন জারি হয়।

উত্তর: ভুল।

3. ‘দিকু’ শব্দের অর্থ হল বহিরাগত।

উত্তর: ঠিক।

4. ‘দীন’ শব্দের অর্থ হল অবিশ্বাস।

উত্তর: ভুল।

5. ‘হুল’ শব্দের অর্থ হল ভালোবাসা।

উত্তর: ভুল।

6. মোপালা বিদ্রোহ হয় মালাবার উপকূলে।

উত্তর: ঠিক।

7. পণ্ডিতা রমাবাঈ একজন শূদ্রকে বিবাহ করেন।

উত্তর: ঠিক।

8. সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয় 1829 খ্রিস্টাব্দে।

উত্তর: ঠিক।

9. ওয়াহাবি আন্দোলনের সূচনা হয় আরবে।

উত্তর: ঠিক।

10. নীল বিদ্রোহ হয়েছিল মাদ্রাজে।

উত্তর: ভুল।

12. সিপাহি বিদ্রোহের প্রথম শহিদ মঙ্গল পাণ্ডে।

উত্তর: ঠিক।

13. প্রথম সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হয় কলকাতার সেনা ছাউনিতে।

উত্তর : ভুল 

14. কেশবচন্দ্র সেন আত্মীয় সভা প্রতিষ্ঠা করেন।

উত্তর: ভুল।

15. পণ্ডিতা রমাবাঈ ছিলেন ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে।

উত্তর: ঠিক।

16. তিতুমির ছিলেন ফরাজি আন্দোলনের নেতা।

উত্তর: ভুল।

17. কোম্পানির সমস্ত সিপাহি বিদ্রোহে যোগ দেয়নি।

উত্তর: ঠিক।

18. শিক্ষিত বাঙালির সিপাহি বিদ্রোহকে সমর্থন জানিয়েছিল।

উত্তর: ভুল।

19. কোম্পানির শাসনের অবসানের জন্য সিপাহি বিদ্রোহ দায়ী ছিল।

উত্তর: ঠিক।

20. ভারতের শেষ গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসি।

উত্তর: ভুল।

21. ভারতের প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং।

উত্তর: ঠিক।